All posts by Oporajita

 

বই ও বেপরোয়া আমি ২

তাহেরা সুলতানা


আমি বরাবরি ডিটেক্টিভ থ্রিলার ধরনের বইয়ের বেশী ভক্ত ছিলাম। ছিচকাদুনে টাইপ প্রেমের গল্প উপন্যাস কখনোই খুব একটা ভালো লাগতো না। তবে আজ আর বাইরের বই না, আজ আমার গল্পের সঙ্গী পাঠ্যপুস্তক। আমার কাছে বই মানেই শুধু বই। পাঠ্যপুস্তক না বাইরের বই, সেটা কখনোই আলাদা করতে পারতাম না! ‘পড়তে বস’, এই কথাটা আমাকে আল্লাহর রহমতে কোনদিন বলতে হয়নি। পড়াই যেন ছিল আমার জীবনের সবকিছু! নতুন ক্লাসে ওঠার অনেক আগেই পুরনো বই সংগ্রহ করে রাখতাম। ক্লাস শুরু হওয়ার আগেই প্রায় সব বই পড়া হয়ে যেত। এখনো আমার হাতে যেকোন বই আসলেই আফিমের নেশা ধরে যায়! শুনলে অবাক হবে, আমি এখনো স্কুলের সিলেবাসভুক্ত বইগুলো পড়ি! আর বাংলাদেশে আমার ৭/৮ বছরের শিক্ষকতা পাঠ্যবইয়ের সাথে নতুন করে সখ্যতা তৈরী করেছে। তবে বইয়ের প্রতি বেপরোয়া ভাব আমাকে যে শুধু বিপদেই ফেলেছে, তা কিন্তু নয়! অনেক কঠিন সময় থেকে উৎরাতেও সাহায্য করেছে!
যখন ভারতে বাবরি মসজিদ ভাঙল, সেই সময়টাতে বাংলাদেশেও উত্তাল অবস্থা বিজার করছিল। আমরা যেখানে থাকতাম, সেখানে প্রায় ৫০ ভাগ লোকই হিন্দু ছিল। আব্বা তখন টানা ৩ রাত বাসায় ছিলেন না। আমি বাসার বড়, তাই আম্মার সাথে প্রায় সারারাতই জেগে থাকতে হতো, কখন আব্বা ফিরেন! আমার কাছে কৌতুহল ছিল, আব্বা কোথায় যেতেন! পরে জেনেছিলাম, আব্বা তার ২/৩ জন কলিগসহ সারারাত গ্রামের কালিমন্দির পাহারা দিতেন। বলতেন, “অনেক মুসলমান খেপে গিয়ে মন্দির ভাঙছে। এটা তো ঠিক না। এই দেশের সাধারণ হিন্দুরা তো কোন দোষ করেনি।”
তখন একমাত্র বইই ছিল আমার আমার রাত জাগার সঙ্গী!
পানি সবার আগে ঢুকে। আমরা যে বাসাটায় থাকতাম, সেটায় বন্যার পানি ঢুকতো না, কিন্তু চারপাশে হাটু পানি থাকতো। স্কুল, কলেজ সব বন্ধ! কোন কাজ নেই! স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য যতটা না মন খারাপ হতো, অনেক বই পড়তে পারবো, সেই আনন্দই বেশী কাজ করতো। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে বাড়িতে বেশ সাপের উপদ্রব হতো। আব্বা আম্মা খুব সজাগ থাকতেন।

একদিন রাতের বেলা, আমার ভাইবোনরা সবাই ঘুমিয়ে গেছি। তখন হালকা শীত পড়েছে। আমি একা মেঝেতে পাটি পেতে বসে বই পড়ছিলাম। গল্পের বই না, পাঠ্যপুস্তক। আম্মার একটা লাল চাঁদর ছিল, ওইটা ছড়িয়ে দিয়ে সারা গা, মাথা, পা ঢেকে পড়ছি। আমি আগেই বলেছি, বই হাতে থাকলে দুনিয়ার কিচ্ছু মাথায় থাকে না! তাই আমি খেয়ালই করিনি, কখন যে একটা সাঁপ এসে আমার চাঁদরের উপর কুণ্ডলী পাকিয়ে বসেছে! আমার স্পষ্ট মনে আছে! হঠাৎ করে মনে হলো ঠান্ডাটা একটু বেশীই লাগছে! বাম দিকে ফিরেই আমার মুখ দিয়ে শুধু একটা আওয়াজ বের হলো, “আব্বা!” এরপর মুখ দিয়ে শুধু আ! আ! বেরুচ্ছে। কোন আওয়াজ নেই! আব্বা আম্মা বারান্দায় আধো আধো চাঁদের আলোয় বসে গল্প করছিলেন (আব্বা আম্মা ২ জনই অসম্ভব রোমান্টিক মানুষ! এখনো তারা একজন আর একজনকে ছাড়া কিছুই বুঝেন না)।

‘আব্বা’ ডাক শোনার সাথে সাথে ২ জনই ছুটে আসেন। আম্মার সিক্স সেন্স অসম্ভব প্রখর! আর উনি অনেক বেশী সাহসী আর ধৈর্যশীল একজন মানুষ। আম্মার এই বিশেষ ৩ টা গুনের জন্য আমরা সবাই আল্লাহর রহমতে বহুবার বহু বিপদ থেকে উদ্ধার পেয়েছি। সে গল্প না হয় আর একদিন করা যাবে! আম্মা হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন, তাই একটা বড় লাঠি নিয়ে ঘরে ঢুকলেন। তারপর যে ঘটনাটা হয়, সেটা আমার পরে আম্মার কাছ থেকে শোনা। আম্মা নাকি দেখেন, সোডিয়াম আলো আর চাঁদরের লাল রং এর প্রতিক্রিয়ায় সাঁপটা আর তাকাতে পারছিলো না, তাই ওই চাঁদরের উপরই কুণ্ডলী পাকিয়ে বসে ছিল! আব্বা আমাকে দ্রুত কোলে করে খাটে তোলেন আর আম্মা সাঁপটা মারেন। আমি তো চোখ বন্ধ করে মটকা মেড়ে আব্বাকে জড়িয়ে ধরে আছি! আব্বা আমাকে সাহস দেয়ার জন্য সাঁপের গুষ্টি উদ্ধার করছেন আর এদের সবচেয়ে কম ক্ষমতাসপন্ন প্রজাতির জীব হিসাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছেন! অবশেষে আমি চক্ষু মেলিয়া তাহাকে দেখিলাম! প্রায় ৫ হাত লম্বা একটি ঢোড়া সাঁপ! ততক্ষণে মরে ভূত! পরেরদিনই আব্বা আমাদের জন্য পড়ার টেবিল আর চেয়ারের ওর্ডার দেন। পরে জেনেছিলাম, আম্মা নাকি আব্বাকে বারান্দায় টেবিলের কথাই বলেছিলেন! আমার এতো পড়ার নেশা! এভাবে মেঝেতে বসে পড়ি! সাঁপ পোকামাকড় আসে কিনা! আমি আজও সাঁপ ভীষণ ভয় পাই! আজও সাঁপের কোন মুভি তো দেখতে পারিই না, কোন মুভিতে সাঁপ থাকলে হয় টেনে দেই, নয়তো চোখ কান বন্ধ করে রাখি।

আর একটা ঘটনা এখনো মনে খুব নাড়া দেয়! ১৯৯৮ সালের ৫ মার্চ। সামনে এইচএসসি পরীক্ষা। খাবার টেবিলে পড়ে আছে। আর আমি পড়েই যাচ্ছি। আম্মা বারবার ঘুম ভেঙে উঠে বলছেন, দ্রুত খেয়ে শুয়ে পড়তে, নইলে শরীর খারাপ করবে। আমার মনে হচ্ছিল, আম্মা জেগেই আছে, ঘুমাচ্ছে না। আমি শুধু “উঠছি আম্মা” বলেই যাচ্ছি, কিন্তু উঠার নাম নেই! তখন অনেক রাত পর্যন্ত পড়া ছিল নিয়মিত ব্যাপার।

রাত ১টার দিকে আমাদের পোষা বিড়ালটা খুব দাপাদাপি করে! আমরা ওর নাম রেখেছিলাম চুমকি! আমি বিরক্ত হচ্ছি আর বারবার চুমকিকে ধমক দিচ্ছি! ও আরও বেশি করে দাপাদাপি শুরু করলো! হঠাৎ আমি জানালার ফাক দিয়ে বাইরে আগুন দেখতে পাই! আমাদের রান্নাঘরটা পুড়ছে। আম্মা কখন যে দরজা খুলে টিউবওয়েলের পাড়ে পানি ঢালতে চলে গেছেন, খেয়ালই করিনি! আব্বা আমাকে শুধু চিৎকার করে বলছেন, আমি যেন উনার সার্টিফিকেটের ফাইলটা হাতে নিয়ে সবাইকে নিয়ে বের হয়ে যাই। আশেপাশের সবাই ততক্ষণে চলে আসে। আব্বার অনেক ছাত্ররা আশেপাশে মেসে থাকতো। সবাই আসে। কিন্তু আগুন কিছুতেই নিভছে না! আমাদের ঘরের গা ঘেসে দাঁড়ানো আমগাছটাতেও আগুন ধরে গেছে! বড়ই গাছটা জলছে! আমার ছোট ছোট ভাইবোনরা ভয়ে চিৎকার করে কাঁদছে। আব্বা অস্থির হয়ে গেছেন! কি করবেন, বুঝতে পারছেন না! আম্মা কিছুতেই কাউকে টিউবওয়েল পাড়ে যেতে দিচ্ছেন না! মধ্যবিত্ত সংসারে একটা সুই কিনলেও খুব হিসাব করে কিনতে হয়! এভাবে সব শেষ হয়ে যাবে! বইগুলো পুড়লে কি করে কিনবো! কি করে পরীক্ষা দিবো! তবে সেদিন আমার কি যেন হয়েছিল! বারবার মনে হচ্ছিল, আমিই তো এখন অভিভাবক! আমাকে অস্থির হলে চলবে না! সেটাও কিন্তু ডিটেক্টিভ গল্প পড়ার সুফল!

আমি দ্রুত একটা ব্যাগে করে আব্বার সার্টিফিকেট আর আমাদের সবার পড়ার বইগুলো পাশের বাসায় রেখে আসলাম আর আব্বা পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম! আব্বার ছাত্র আর আশেপাশের চাচারা আব্বাকে শান্ত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে! আশেপাশের খালাম্মা, আপু আর ভাবীরা ততক্ষণে আমার ভাই বোনদের কোলে করে বের করে আনলো!

হযরত ইব্রাহিম (আ)কে আগুনে ফেলে দেয়া হলে মহান আল্লাহপাক উনাকে যে দোয়া পড়তে বলেন, তার বদৌলতে আগুন ইব্রাহীম (আ) এর জন্য শীতল হয়ে যায়। এই গল্প প্রায় সবার জানা। সেদিন আমিও এক অলৌকিক ঘটনার সাক্ষীও হয়েছিলাম! কিছুতেই যখন আগুন নিভানো যাচ্ছে না, তখন আব্বা তার এক ছাত্রকে এক বাটি পরিষ্কার বালু আনতে বললেন। আব্বা বালু হাতে নিয়ে ওই একই দোয়া পড়ছিলেন, আর আগুনের দিকে ছুড়ে মারছিলেন। কিছুক্ষণ পড় দেখা গেলো, আগুনের কুণ্ডলী বিভিন্ন জায়গায় গোল গোল চাকতির মতো হয়ে গেছে! যেখানে যেখানে দোয়াযুক্ত বালি পড়ছে, সেখানেই এ রকম হয়ে যাচ্ছে! একটা সময় আগুন একদম শান্ত হয়ে গেল! আল্লাহর রহমতে আমাদের ঘরের কোন জিনিস সেদিন নষ্ট হয়নি। শুধু রান্নাঘর, বড়ইগাছ আর আমগাছ পুড়েছিল। আর আগুনের আঁচে আম্মার মুখের একটা পাশ লাল হয়ে গিয়েছিল!

পরে থানা থেকে পুলিশ আসে। তদন্তে বের হয়, আমাদের বাসার রান্নাঘরের ঠিক পিছনেই একটা ছনের ঘর ছিল। কেউ থাকতো না। ওখান থেকেই আগুনটা লাগে। ওই ঘরের পাশ দিয়ে একটা রাস্তা বাজারের দিকে চলে গেছে। হরদম লোক যাতায়াত করতো। হয়তো কেউ সিগারেট খেয়ে ওই ঘরের চালে ফেলেছিল! সেদিন যদি রাতজেগে বই না পড়তাম, তাহলে কি যে হতো, আল্লাহ মালুম! এতো বছর পরও মনে হলে শরীর শিউড়ে ওঠে! ওই ঘটনার পর আমরা বহুদিন ঠিকমতো ঘুমাতে পারতাম না! খেতে পারতাম না! তোমাদের হয়তো মনে হতে পারে, আমি কোন গাঁজাখুরি গল্প বলছি।

চলবে…

পর্ব-১

 

লাভ ম্যারেজেই ডিভোর্স বেশি?

জান্নাতুন নুর দিশা


অনেক বছর প্রেম করে বিয়ে করেছে। বছর না গড়াতেই ডিভোর্স। এরকম ঘটনাগুলো আজকাল অহরহ দেখা যাচ্ছে আমাদের শহুরে সমাজে।

এতগুলো বছর যে দুটো মানুষ পারস্পরিক বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে একটা সম্পর্ককে গড়ে, এক ছাদের নিচে আসতেই সে সম্পর্কের ভিত কেন নড়বড়ে হয়ে যায়? অদ্ভুত নয়? ভালোবাসার ঘাটতি থাকলে নিশ্চয়ই এতগুলো বছর প্রেম করা যেতো না?

ভালোবাসায় আসলে ঘাটতি নেই। ঘাটতিটা অন্য জায়গায়। বিয়ের আগে প্রেমিক এবং প্রেমিকা উভয়েই চেষ্টা করে নিজের সব চমৎকার দিকগুলো একে অপরের সামনে উপস্থাপন করতে।
একটা মানুষ কখনোই কি পারফেক্ট হয়?
না, ভালো খারাপ মিলিয়েই মানুষ। আপনার ভালোবাসার মানুষটিরও ঘাটতি আছে, ত্রুটি আছে, খারাপ দিক আছে, সীমাবদ্ধতা আছে।
এই সত্যটুকু মেনে নিয়েই ভালোবাসুন, সম্পর্কে আসুন।

নিজের ভালোবাসার মানুষটির সামনে পারফেক্ট হবার অভিনয় করবেন না বিয়ের আগে। আপনি যা, তার সামনে তাই থাকুন, স্বাভাবিক থাকুন। জানিয়ে দিন আপনার আচরণের, চিন্তার সীমাবদ্ধতাটুকু। সবটুকু জেনেই তিনি ঘর বাঁধতে আসুক। ঘর বাঁধার পর যদি আপনার ইমপারফেকশন প্রকাশ পায়, ঘর ভেঙে পড়বে তাসের ঘরের মতই।

“বিয়ের পর ও আর আগের মত আমার কেয়ার করে না।”
প্রেমিকা থেকে সদ্য স্ত্রী হওয়া নারীদের কমন ডায়ালগ। এই ভুল বুঝার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সদ্য বিবাহিত পুরুষ হুট করেই প্রচন্ড দায়িত্বের চাপে পড়ে। উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে ভবঘুরে জীবনে অভ্যস্ত ছেলেটার মাথার উপর হুট করে চলে আসে আস্ত একটা সংসার নামক ভার, ভবিষ্যতের একরাশ স্বপ্ন আর চিন্তা। ক্যারিয়ার নিয়ে তুমুল ব্যস্ত হয়ে পড়া ছেলেটি দিনরাত এক করে কাজ করে কার জন্য? নিজ স্ত্রী, অনাগত সন্তান আর সুন্দর এক টুকরো ভবিষ্যতের জন্য। আপনার জন্যই নিজের ঘামের দামে সুখ কিনতে চাওয়া বরটি নাহয় আগের মত নিয়ম করে আপনাকে কল করে জিজ্ঞেস করতে পারছে না আপনি খেয়েছেন কিনা। তারমানে কি তিনি আর কেয়ার করছেন না?
আপনাকে নিয়ে যিনি ঘর বেঁধেছেন, আপনাকে নিয়ে সুন্দর ভবিষ্যৎ সাজাবার স্বপ্নে যিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন তার এই কেয়ারের চেয়ে বড় কেয়ার আর কিছু হয় না।
“খেয়েছো, ভালো আছো, কী করছো” জানতে চেয়ে কেয়ার দেখানো মানুষের অভাব নেই পৃথিবীতে, আপনার জন্য, আপনাকে নিয়ে ভবিষ্যৎ সাজাতে চাওয়া বরটিকে সাপোর্ট দিন। তার ব্যস্ততায় মিথ্যে অভিমানে দূরে সরে যাওয়া আপনারই বড় ভুল।

“ও আর আগের মত নেই। আগের মত আমাকে আর বোঝে না। এত এত চাহিদা ওর আজকাল, ভালো লাগে না।”

প্রেমিক থেকে সদ্য স্বামী হওয়া ছেলেটির কমন ডায়ালগ।
আসলেই কি তিনি অনেক কিছু চান? হয়তো বরের একটু সাপোর্ট, একটু যত্ন ছাড়া তিনি আর কিছুই চান না। অন্য একটা সংসার থেকে এসে আপনার সংসারে মেয়েটি কিছুটা হলেও একা হয়ে পড়ে নি? বাবা মায়ের রাজকন্যা মেয়েটি হয়তো না চাইতেই সবটা পেয়েছে নিজের ঘরে, আপনার কাছে তাকে চাইতে হবে এটাই উচিত নয়। তার ছোট ছোট আক্ষেপগুলোই একদিন বড় শূন্যতায় রূপ নেয়। তার চোখ, চুল, ঠোঁট নিয়ে পাতার পর পাতা কবিতা লেখা আপনি যেন এতখানিও ব্যস্ত হয়ে যাবেন না যে তার কপালে হাত রেখে মাঝেমাঝে এটুকু জিজ্ঞেস করার সময়ও না থাকে, “তুমি ভালো আছো তো?”
ভালোবেসে বিয়ে করেছে বলেই আপনার কাছে এক্সপেকটেশনটা একটু বেশিই থাকে স্ত্রীর। কাড়ি কাড়ি টাকার চেয়ে একটু যত্মের মূল্য অনেক বেশি।

হুট করে দুজন দুজনকে ভুল না বোঝে ধীরেধীরে মানিয়ে নিতে হয়। প্রেমের ফ্যান্টাসি জগতটা আর বাস্তবের সংসার জীবনে যোজন যোজন ফারাক। এখানে প্রতি মুহূর্তে সংগ্রাম, প্রতি ধাপে অসংখ্য অগ্নিপরীক্ষা। তাই দুটো ভুবনের পার্থক্য বুঝবার আগেই দূরত্ব বাড়াবেন না, আলাদা হয়ে যাবেন না। কাছে আসতে সময় লাগে অনেক, দূরে যেতে বেশি সময় লাগে না। অভিমান ভালো সম্পর্কে, অতি অভিমান নয়। অভিমান জমতে দিতে হয় না। জমাতে হয় ভালোবাসা।

 

রেসিপি: খোসা-নামা

সামিয়া কালাম


এটা আমি শিখেছি নগর চাষী শাওন মাহামুদ আপার কাছ থেকে। নিজের যা আছে সেই টুকু নিয়েই তাঁর সন্তুষ্টি। মাঝে মাঝে মাসের শেষের দিকে আমাদের মত অনেকেরই সূতোয় টান খায়। কিন্তু আদি-অকৃত্রিম মধ্যবিত্তের মত আমরা সেটাকে সফল ভাবে গোপন করি। ভালো কোনো রেস্তোরাঁ গেলে চেক-ইন দেই। কিন্তু যেদিন খুব মামুলি রান্না গুলো দিয়ে কাজ চালিয়ে নিতে হয়! সেদিনের পোষ্ট অন্তত আমি কখনো দেইনি। সেই অবস্থান থেকে আজ সরে এলাম।

এটা একটা ভর্তার প্রিপারেশান। কচি লাউ এর খোসা, পাকা পটল এবং খোসা, খোসা সহ কচি মিষ্টি কুমড়ো, আস্ত রসুন, লবন আর কাঁচা মরিচ। সব কিছু দিয়ে সেধ্য বসিয়ে দেই। আমরা হয়তো জানি সবজি অনেক টুকু পুষ্টি রয়ে যায় খোসায়। এই খোসা গুলো আমার ফেলে দিতে ইচ্ছে করেনা। মাসের শেষ কিংবা শুরু বলে কথা নয়। আমি চাই কিছুটা ভিন্নতা এবং উপযোগ সৃষ্টি করতে।

হয়তো বাটাবাটির ঝামেলায় অনেকেই যেতে চান না। তাহলে মিক্সি তো আছেই। সেধ্য হওয়া খোসা গুলো মিক্সিতে মিক্স করে নিতে হবে। তারপর পেঁয়াজ কুচি, রসুন কুচি এক চিমটি কালো জিরে, দু একটা শুকনো মরিচ দিয়ে তেলে বাগার দিতে হবে। খোসার ভর্তা আমার বাসায় মাঝে মাঝেই তৈরি করা হয়। এর স্বাদ বৃদ্ধির জন্য সেধ্য করা খোসা বাটার সময় চিংড়ি মাছ যোগ করা যেতে পারে।
আজ দুপুরে এই খোসা সেধ্য যখন উনুনে চাপিয়েছি, একটু পর আগুনের তাপে সবুজের উজ্জ্বলতা বেড়ে গেল। ঝক ঝকে সবুজ সে রঙ প্রশান্তি দেয়, অন্তত আমায়।

 

অভিজ্ঞতা প্রসূত ধারণা অতঃপর সন্দেহ

আফরোজা হাসান


পরিচিত এক বোন বলছিলেন তিনি প্রায় রাতেই স্বামীকে নিয়ে উল্টা পাল্টা স্বপ্ন দেখেন। যেমন, কখনো দেখেন স্বামী তার মেয়ে কলিগের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, কখনো দেখেন স্বামী আরেকটা বিয়ে করেছেন। এই ধরণেরই আরো অনেক স্বপ্ন দেখেন। খুবই চিন্তিত এটা নিয়ে তিনি। কি করবেন না করবেন ভেবে দিশেহারা। স্বপ্ন নিয়ে কয়েকদিন আগে একটা আর্টিকেল পড়েছিলাম। সেখান থেকে জেনেছিলাম বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন যে, রাতের দেখা স্বপ্নের প্রভাব পড়তে পারে বাস্তবে জীবনেও। গবেষকরাও বলেছেন, অনেক সময় রাতের স্বপ্ন প্রভাবিত করে আমাদের আচার-আচরণকে। যারফলে দিনের বেলায় মেজাজ থাকতে পারে বিক্ষিপ্ত ও চিড়চিড়ে। সঙ্গী বা সঙ্গিনীর প্রতি বাড়িয়ে দিতে পারে সন্দেহ। আবার এমন দেখা যায় যে, দিনের বেলায় যা কিছু দেখি , শুনি বা ভাবি, রাতে ঘুমের মধ্যে সেসবই স্বপ্নে দেখি।
আমার জানা মতে পরিচিত সেই বোনটি টিভি সিরিয়ালের খুব ভক্ত। তাদের কয়েকজনের একটা গ্রুপ আছে যারা নিজ নিজ বাচ্চাদেরকে স্কুলে দিয়ে সিরিয়ালের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করেন। আর বর্তমান টিভি সিরিয়াল গুলোতে যেহেতু পরকীয়ার ছড়াছড়ি। সুতরাং, স্বামীকে নিয়ে ঐ ধরনের স্বপ্ন দেখা মোটেই অস্বাভাবিক নয় উনার জন্য। উনাকে বুঝিয়ে বললাম যে আসলে আপনি সারাদিন যা দেখেন, ভাবেন সেটার প্রভাবই পড়ছে আপনার স্বপ্নে। মানুষ খুব সহজেই সেসব জিনিস দ্বারা প্রভাবিত হয় যা তার মনকে আন্দোলিত করে। ভালোবাসা, রাগ, ঘৃণা, সন্দেহ কিংবা বেদনা অনুভূতি যেটাই হোক না কেন মনকে যা স্পর্শ করবে তার রেশ রয়ে যাবে মনের কোণে। যার ফলে তা চেতন, অবচেতন, অচেতন সব মনেই নিজ নিজ জায়গা দখল করে নেয়। এবং খেলা করে সমস্ত সত্ত্বা জুড়েই।
আরেক বোন বলছিলেন তার সারাক্ষণই মনেহয় যে তার মেয়ে তাকে মিথ্যা বলছে। যেমন,মেয়ে পেট ব্যথার কথা বললে উনার মনেহয় স্কুলে না যাবার বাহানা এটা। হোমওয়ার্ক নেই বললেও বার বার তিনি ব্যাগ চেক করেন। মেয়ে স্কুল থেকে এসে কিছু বললে উনি ক্লাসের অন্যান্য বাচ্চাদের ফোন করে নিশ্চিত হন সঠিক কিনা ইত্যাদি। আমি জানতে চেয়েছিলাম আচ্ছা আপনি কি ছোটবেলায় নানা বাহানা করে স্কুল ফাঁকি দিতেন? হোমওয়ার্ক করতে ইচ্ছে হতো না বলে কি লুকিয়ে রাখতেন? স্কুলের ব্যাপারে মিথ্যা বলে কি বাবা-মার কাছ থেকে কিছু হাসিল করতেন? উনি বিস্ময় ও লজ্জা মেশানো কণ্ঠে বললেন, আপনি কিভাবে জানলেন আপু? হেসে জবাব দিয়েছিলাম, আন্দাজ করেছি কারণ আমি জানা আছে অন্যেকে যাচাই মানুষ নিজ অভিজ্ঞতার আলোকেই করে বেশির ভাগ সময়।
নব বিবাহিত এক দম্পতির সাথে পরিচয় হয়েছিলো। সাজানো গোছানো ছোট্ট টুনাটুনির সংসার যেন একদম। কিন্তু মেয়েটির মনে শান্তি ছিল না একদমই। স্বামীর সাথে তার অফিসে গিয়ে মেয়ে কলিগদেরকে দেখার পর থেকে সারাক্ষণ মনে এই ভাবনা কাজ করতো বিয়ের পর তাকে দেশ থেকে প্রবাসে নিয়ে আসতে যে দশমাস লেগেছিল তখন অন্যকোন মেয়ের সাথে স্বামীর অবৈধ কোন সম্পর্ক তৈরি হয়নি তো? স্বামী অনৈতিক কিছু করেনি তো তার অবর্তমানে? তার স্বামী পবিত্র তো সম্পুর্ণ রূপে? আমি যেদিন ওর মনের ভাবনা জানতে পেরেছিলাম জিজ্ঞেস করেছিলাম, তুমি কি এমন কিছু দেখেছো যাতে এমন ধারণার জন্ম হয়েছে তোমার মনে? জবাব দিলো, না। তবে আমার দাদী বলেছেন পুরুষ মানুষের পক্ষে নাকি কখনোই সম্ভব না স্ত্রীর সঙ্গ ছাড়া বেশিদিন থাকা। দাদার এমন অনেক ঘটনা দাদী বলেছেন আমাকে। তখন বুঝিয়ে বললাম অন্যের অভিজ্ঞতার দ্বারা নিজের সুখী ও সুন্দর জীবনকে নিজ হাতে নষ্ট করো না। তোমার দাদী-নানী, মা-খালা, চাচী-ফুপির অভিজ্ঞতা দিয়ে কেন তুমি তোমার স্বামীকে যাচাই করবে? এটা কি স্বামীর প্রতি অন্যায় আচরণ করা হচ্ছে না? মেয়েটা বুঝেছিল এবং নিজেকে সংশোধন করেছিল।
ছোটবেলায় খাওয়ার ব্যাপারে আমি প্রচণ্ড পরিমাণে যন্ত্রণা করেছি মামণিকে। খাবার দিয়ে আমার সামনে থেকে সরলেই আমি সেই খাবার খাটের নীচে, সোফার পেছনে, ফোম উঁচু করে তার নীচে, কোমডে আরো কত জায়গায় যে লুকাতাম খাওয়ার ভয়ে। বাবার পাঞ্জাবীর পকেট, কাগজ-পত্র রাখার ব্রিফকেস পর্যন্ত পৌছে যেত আমার খাদ্যরা। আরো চার বছর আগে কোন কারণে নাকীবকে সামনে বসিয়ে না খাওয়ালে আমার মনের মধ্যে খুঁতখুঁত লাগতো যে খাবার খেয়েছে নাকি ফেলে দিয়েছে? আমি সত্যি সত্যি সোফার পেছনে, ওর খেলনা বাক্সের পিছনে খুঁজে দেখতাম খাবার ফেলেছে কিনা। এই কাজটা আমি করতাম আমার অবচেতন মনে বসে থাকা নিজ অভিজ্ঞতার মানদণ্ডে। আমি যেহেতু দুষ্টু কাজ করেছি, আমার ছেলেও করতে পারে এই ধারণার আলোকে। (আমার পুত্র অবশ্য তার মায়ের চেয়ে অনেক বেশি স্মার্ট ছিল। সে চারতলার বারান্দা দিয়ে খাবার নীচে ফেলে দিয়ে প্রমাণও ধুয়ে মুছে দিত)
আসলে হচ্ছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসংখ্য অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে গঠিত হয় আমাদের ভাবনার জগত। পরিস্থিতির আলোকে না আমরা বেশির ভাগ সময়ই ধারণা করি আমাদের মনে জমে থাকা অভিজ্ঞতার আলোকে। হতে পারে সেই অভিজ্ঞতাটা নিজের বা অন্যের থেকে শোনা কিংবা নাটক-সিনেমাতে দেখা। গল্প উপন্যাস থেকে পড়ে অর্জিত অভিজ্ঞতাও অনেক সময় প্রভাবিত করে আমাদের চিন্তাকে। সেই আলোকে আমরা ধারণা করতে শুরু করি চারপাশের মানুষদের সম্পর্কে। আবার কখনো একজনের গুণাবলী দিয়ে যাচাই করি আরেকজনকে। নিজের ধারণার সাথে কারো স্বভাব মিলে গেলে হাসি তৃপ্তির হাসি। গর্ব করে বলি আমি মানুষকে দেখে, কথা বলেই তার সম্পর্কে অনেক কিছু বুঝে ফেলি। মানুষকে বোঝার ব্যাপারে আমার অভিজ্ঞতা অনেক। কথায় বলে যে, ঝড়ে বক মরে ফকিরের কেরামতি বাড়ে। আসলেই ব্যাপারটা তাই। প্রতিটা মানুষ আলাদা হলেও তাদের অনুভূতির প্রকাশ কিন্তু মোটামুটি একই। যেমন কষ্ট পেলে মানুষ কান্না করে, প্রিয়জন আঘাত দিলে বিমর্ষ হয়, ব্যর্থতা এলে হতাশ হয় ইত্যাদি। আর এটা দেখেই কেউ কেউ ভেবে নেয় মানুষকে বুঝতে তার কোন তুলনা নেই।
তবে মনের কোন জমে থাকা এইসব ধারণা প্রায়ই সন্দেহে রূপ নিয়ে নষ্ট করে দেউ অনেক সুন্দর সম্পর্ক। এমন অযৌক্তিক অভিজ্ঞতারা মনে ঝরিয়ে যায় সংশয়ের অঝোর শ্রাবণ। সন্দেহ তখন মনকে করে দেয় বিক্ষিপ্ত, এলোমেলো। আর সন্দেহ যেখানে থাকে, শত ভালোবাসা থাকলেও সেখানে সম্পর্ককে মুখোমুখি হতে হয় নানান জটিলতার। অনেক সময় বলা হয় যে সন্দেহ ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ। অনেকে বলে সন্দেহের উৎস ভালোবাসার সাগরেই। কিন্তু সন্দেহের উৎস আসলে কি? অবিশ্বাস+আস্থাহীনতা+অনিশ্চয়তা+দ্বিধাদ্বন্দ্ব+উদ্বেগ+দুশ্চিন্তা+আশঙ্কা+ব্যাকুলতা,+সংশয়+অপ্রত্যয়+অনুমান+ খুঁতখুঁত+ভয়। আর এই সবগুলোই থাকে অভিজ্ঞতার রঙে রাঙানো। যে অভিজ্ঞতা অর্জিত হয় বিভিন্ন মাধ্যমে। যা ধারণার রূপে সুপ্ত থাকে মনে কোণে এবং যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে সন্দেহে।
তবে এটা ঠিক যে সন্দেহ মানুষের একটি সহজাত বৈশিষ্ট্য। সন্দেহবিহীন কোন মানুষ খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। যেহেতু আমাদের চিন্তার জগত টইটুম্বুর নানান ধরণের অভিজ্ঞতা দিয়ে তাই কোন ঘটনা বা ব্যক্তিকে সেই আলোকে যাচাই করবে এটাই স্বাভাবিক। তাই কোন কারণে বা কারো প্রতি মনে সন্দেহ হানা দিলে ঘাবড়ে যাবার বা হতাশ হয়ে যাবার কিছু নেই। তবে ভালোমত যাচাই করে দেখতে হবে এর পেছনে আসলে মনের কোন অনুভূতি কাজ করছে এবং কিসের দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে এই সন্দেহ। সন্দেহকে যদি আমরা যাচাই করে না দেখি, মনের মধ্যে খুব সহজেই জায়গা করে নিতে দেই তাহলে তা জীবনকে করে তুলবে জটিল থেকে জটিলতর।
নিজের ধারণাকে মূল্য দিতে গিয়ে বেশির ভাগ সময়ই আমরা একথা ভুলে যাই যে, কাউকে সন্দেহ করা মানে তাকে অবিশ্বাস করা, তার প্রতি ভরসার দোদুল্যমনতা। অথচ বিশ্বাস ও ভরসা ভালবাসার মূল ভিত্তি। ভিত্তিই যদি নড়বড়ে হয় তাহলে যে কোন ভালবাসার বাঁধন ছিঁড়ে যাওয়া কেবলমাত্র সময়ের ব্যাপার। বলা হয় সম্পর্ক গড়া অনেক সহজ। সম্পর্ক ভেঙ্গে ফেলা তারচেয়েও সহজ। কঠিন হচ্ছে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা। আসলেই কিন্তু তাই। অনেক সময় দেখা যায় সন্দেহ-সংশয় বা অবিশ্বাসের ছোট্ট একটা চিড় ধসিয়ে দেয় সম্পর্কের বিশাল দেয়ালকে। অনেক সুন্দর ও পবিত্র সম্পর্ক ঢাকা পড়ে যায় সন্দেহের কুৎসিত কালিমায়। ছড়িয়ে যায় সম্পর্কের মোতিগুলো কারণ সন্দেহ আঘাত হানে বিশ্বাসের সুতোয়। কঠিন এই পৃথিবীর চলার পথকে সন্দেহ করে তোলে কন্টকাকীর্ণ। সন্দেহের ফলে অবনতি ঘটে আপনজনদের সাথে বন্ধনের। হযরত আলী (রা.) বলেছেন, “সন্দেহপ্রবণ ব্যক্তি, বন্ধু ও প্রিয়জনের সঙ্গেও শান্তিতে থাকতে পারে না।”
রাসূল(সা.) বলেছেন-“ এক মুসলমানের জীবন, রক্ত ও সম্পদ অন্য মুসলমানের কাছে পবিত্র। এক মুসলমানকে অন্য মুসলমান সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা করা থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।” পবিত্র কোরআনেও আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত স্পষ্টভাবে অনুমান ও কুচিন্তাকে পাপ ও মন্দকাজ হিসেবে অভিহিত করেছে এবং মুসলমানদের পরস্পরের প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করা সম্পর্কে সতর্ক করেছে। আল্লাহ বলেছেন- “হে বিশ্বাসীগণ ! [ যতদূর সম্ভব ] সন্দেহ সংশয় থেকে দূরে থাক । কারণ কোন কোন ক্ষেত্রে সন্দেহ পাপের কারণ হয়। এবং একে অপরের উপরে গোয়েন্দাগিরি করো না, একে অপরের অসাক্ষাতে নিন্দা করো না।(সূরা হুজরাত-১২)
আমাদের সবার তাই চেষ্টা থাকা উচিত নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে ধারণা-সংশয় ও সন্দেহ করা থেকে দূরে থাকার। কারণ এসবের দ্বারা আমরা নিজেরাই আমাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পর্কগুলোতে জমতে দেই দুরুত্বের আস্তর। কাউকে যদি যাচাই করতেই হয় সেটা যেন করি তাকে দিয়েই। অন্যের রঙে না রাঙাই থাকে। হলুদ আর সবুজকে মিলালে দুটি রঙই হারিয়ে ফেলে নিজ নিজ স্বকীয়তা। রুপান্তরিত হয় নতুন এক রঙে। দুজন মানুষকে মিলাতেও গেলেও কিন্তু এমনটাই হয়। এই ভুল না করি আমরা। ফিকে হতে না দেই সম্পর্কের বন্ধনগুলোকে। বুলিয়ে দেই তাতে ভালোবাসার তুলিতে বিশ্বাসের রঙ।

 

বদলে ফেলুন নিজেকে

জান্নাতুন নুর দিশা


মানলাম আপনি একজন মেয়ে। আপনি তো শিক্ষিত হয়েছেন। হ্যাঁ, আমি শিক্ষিত বাঙালি নারীদেরকেই বলছি। আপনাদের মধ্যে বেশিরভাগেরই শিক্ষিত হলেও অজ্ঞদের সাথে কোনো পার্থক্য করা যাবে না। একজন মেয়ে হয়ে এই কথা কেন বলছি? আসুন, আলোচনা করা যাক। আপনাদের ফেসবুক একটিভিটি দেখলেও আপনাদের মানসিক দৈন্য সম্পর্কে একটা মোটামুটি আইডিয়া পাওয়া যায়।

ফেসবুকে আপনাদের সারাদিনের আলোচনার বিষয়বস্তু,
১/ শপিং
২/ রূপচর্চা
৩/ রান্না
৪/ বিএফ/জামাই

কোন ক্রিম ব্যবহার করলে মুখের কালো চামড়া সাদা হবে, ব্রণ যাবে, চুল পড়া কমাতে, চুলকে আলকাতরার মত কালো করতে কোন কোন উপাদান ব্যবহার করতে হবে, কোন জামার কোন চুমকি কত টাকা দিয়ে কেনা, কোন জামার হাতা কতটুকু হলে ট্যান্ড মানা হবে, কোন মাটি মুখে মেখে বসে থাকলে ক্যাটরিনা কাইফ হয়ে যাওয়া যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি।

সিরিয়াসলি?! কিভাবে পারেন এসব নিয়ে দিনরাত পড়ে থাকতে? এসব নিয়ে আলোচনা করা যাবে না তা বলছি না। কিন্তু চব্বিশটা ঘন্টা?

দেশ যদি রসাতলেও যায় এই আপুরা হাতে আয়না ধরে ঠোঁটে লিপস্টিক লাগাবেন, বাহারি ডিজাইনের হিজাব খুঁজবেন অনলাইনে, আর একে অপরের সাথে গসিপ করবেন নিজেদের বিএফ নিয়ে।

বেশিরভাগ গার্ল কমিউনিটিতে এসব আলোচনাই থাকে সারা বছর।

বিশ্বের কোনো বিষয় নিয়ে এমনকি কোনো মানবিক বিপর্যয় হলেও দেখা যায় খুব কম মেয়েদেরই সেসব নিয়ে চিন্তা থাকে, মেয়েরা ঠিক উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো নিয়ে পড়ে থাকে।

আমি খুব কম মেয়েকেই দেখেছি যারা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে, চাকরির দুষ্প্রাপ্যতা নিয়ে দুশ্চিন্তা করে কিছু লিখছে। খুব কম মেয়েই দেশ নিয়ে, সাম্প্রতিক বিশ্ব ভূ-রাজনীতি নিয়ে ভাবে, দেশের অর্থনীতি, শিল্পসাহিত্য নিয়ে ভাবে। এমনকি ধর্মীয় বিষয়ে মেয়েদের জ্ঞানও ভীষণ সীমাবদ্ধ। কোনো মেয়েকে যদি ইসলামের ইতিহাস, হাদিস, ইসলামের যুদ্ধসমূহ, খলিফাদের শাসন এসব বিষয়ে প্রশ্ন করেন বেশির ভাগই উত্তর দিতে পারবে না। ওনারা মনে করেন মাথায় বাঁধাকপির মত ফুলিয়ে বাহারি ডিজাইনের হিজাব পরলেই ধর্মচর্চা হয়ে যায়!

অথচ ইসলামও মূর্খের প্রার্থনার চেয়ে জ্ঞানীর ঘুমকে উত্তম বলে।

এবার আসা যাক মেয়েদের সামাজিক অবস্থা নিয়ে মেয়েরা কতটা সচেতন সেই বিষয়ে। কোথাও কোনো মেয়ে হ্যারেজ হলে ছেলেরা যতটা উদ্বেগ প্রকাশ করে, মেয়েরা ততটাও প্রতিবাদ করে না।
মেয়েদেরকে আমি কখনো দেখি নি কোনো হ্যারেসমেন্টের সম্মিলিত প্রতিবাদ করতে। ফেসবুকে এত এত সাধারণ মেয়েদের বিশাল প্লার্টফর্মের গার্লস কমিউনিটি, কোনো হ্যারেসমেন্টের প্রতিবাদে এইসব কমিউনিটি একটা মানববন্ধন করে না। বরং তখনো মেয়েরা সেই সাজগোজ, ফ্যাস্টিভাল নিয়ে ব্যস্ত থাকে।

আজ অন্য একটা মেয়ে হ্যারেস হলে আপনি শপিং, সাজসজ্জা আর ফেস্টিভাল নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। কালকের মেয়েটি আপনি নয় তো?

মাঝেমাঝে এদেশের শিক্ষিত মেয়েদের বৃহৎ একটা অংশকে আমার এলিয়েন মনে হয়! কোনো কিছু নিয়ে কোনো সামাজিক দায়বদ্ধতা নেই, সস্তা আলাপে দিনরাত মজে থাকাই যেন ওনাদের কাজ!

আমি কেন এসব বলছি আজ? আমি সবসময় মেয়েদের জন্য লিখে এসেছি। মেয়েদের সামাজিক যে নড়বড়ে অবস্থান তার পেছনে সব দায় ছেলেদের নয়। শিক্ষিত মেয়েরাই যখন মেয়েদের নেতৃত্ব দেবার অযোগ্য হয়, শিক্ষিত হয়েও যখন মূর্খের ন্যায় আচরণ করে, তখন অসচেতন অংশের অগ্রযাত্রার পথ আসলেই অনেক কঠিন হয়ে যায়।
বিশাল প্লাটফর্মে একসাথে দাঁড়িয়ে এদেশের শিক্ষিত মেয়েরা “সস্তা মেয়েলি বিষয়” নামে পরিচিত বিষয়গুলো নিয়ে সারাক্ষণ মেতে না থেকে সামাজিক একতা গড়ে তুললেই কেবল নারীদের এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। নতুবা ব্যক্তিগতভাবে অনেক মেয়ে সমাজের উঁচু আসনে প্রতিষ্ঠিত হলে একত্রে নারী সমাজের উন্নতি সম্ভব নয়।

জান্নাতুন নুর দিশা
০৭/০৬/২০১৮

 

চিঠি

ফাতিমা খান


বান্ধবী,

কেমন আছ? আমার চিঠি দেখে খুব অবাক হচ্ছো, তাই না? আমি কিন্তু একদম চিঠি লিখতে পারিনা। সেই যে স্কুল জীবনে শিখেছিলাম, ও-ই শেষ।

কেমন কাটছে তোমার দিন সুদূর আমেরিকায়? তুমি চলে যাওয়ার পর তো আর তোমার সাথে মন খুলে কথা বলা হয় না! আমিও চলে আসলাম এই আরবে। এখানে আসার পর মনে হল যুগ শেষে আমি আবার আমার ঘরে ফিরে এসেছি! কে যেন আমাকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিল, মেয়াদ পুরা হলে আমি যেন মুক্তির উৎসবে মেতেছি !! এখানে বদলে গিয়েছে অনেক কিছু… শুধু বদলায়নি আমার প্রিয়জনেরা! এখানকার আলো, বাতাস, প্রকৃতি বহুদিন থেকে আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছিল, আমিও ছুটে এসেছি, কিন্তু অ-নে-ক দিন পর….। বুক ভরে নিশ্বাস নিয়েছি কিছুদিন।

সময়ে অসময়ে তোমার কথা খুব বেশী মনে পড়ে। আমাদের প্রজাপতি রঙ্গিন দিনগুলো তো আর ফিরে আসবে না….. বেলা শেষে রঙ ধুয়ে যাওয়া সাদা-কালো ছবিগুলো হৃদয়পটে এখনও ঝলমল করে। আমি স্মৃতির আ্যলবামটা খুলে বসি! কোথা থেকে যেন এক দমকা বাতাস আমাকে জানিয়ে দেয় তার দুরন্ত অস্তিত্বের কথা। আমি পেছন ফিরে তাকাই। আরবের লু হাওয়া মাঝে মাঝে আমাকে খুব বিষণ্ণ করে দেয়। পরিষ্কার আকাশটা হঠাৎ হলদেটে হয়ে গেলে মনটা খারাপ হয়ে যায়! একাকী বসে চোখ বুঁজে কত কি যে ভাবি……..! তোমার কি সেই পুরানো দিনগুলোর কথা মনে পড়ে? আমার কিন্তু স্মৃতি রোমন্থন করতে ভাল লাগে। গিফট বক্সের মোড়কটা একটানে ছিঁড়ে না ফেলে আস্তে আস্তে খুলতে যেমন আনন্দ, ঠিক তেমন স্মৃতির পাতাগুলো ও ধীরে ধীরে উল্টে দেখতেই বেশী ভাল লাগে। তুমি চলে যাওয়ার পর আমার পৃথিবীর ছোট্ট জানালাটা হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে গেল। এই জানালা দিয়েই তো দুজন বিশাল আকাশটাকে দেখতাম, কত গল্প করতাম , কথার মালা গাঁথতাম!!

আমাদের দিনগুলো কিন্তু খারাপ কাটেনি। তৃপ্তি ছিল, তুষ্টি ছিল, ছিল ভাবনাহীন এক জীবন। কে জানে, এখন থেকে কয়েক বছর পর হয়তো মনে হবে আজকের দিনগুলোর কথা… আর মনে মনে বলব… ভালই তো ছিলাম! এই হল মানুষের মন………! আমরা অতীতের মধ্যে ডুবে থাকতে পছন্দ করি, একরকম বলতে পারো ‘দুঃখ বিলাসিতা’ করি! ‘আজ’কের মাঝে আমরা সুখ খুঁজি না। এই ‘আজ’ যখন ‘কাল’ হয়ে যায়, তখন একে আমরা স্মৃতির জাদুঘরে বন্দী করে সময়ে-অসময়ে স্মরণ করি। দূর হয়ে যাওয়া অতীতের অনেক স্মৃতি বারবার আমাদের পিছু ডাকে। ছোটবেলার দিনগুলি কখনও কি কেউ ভুলেছে বল? আমার গম্ভীর আব্বা যখন সেই বিশাল বৃক্ষশূণ্য মাঠ, তার একপাশে স্ব-গর্বে দাঁড়িয়ে থাকা কেওড়া গাছ, পাশে কপোতাক্ষ নদের বুকে পাল তোলা নৌকা আর ভাটিয়ালী গানের গল্প করেন, তখন আমি অবাক হয়ে শুনি! মানুষের জীবন কত ছোট্ট , কিন্তু কত দীঘল তার স্মৃতিচারণ! জ়ীবন যেখানে শেষ সেখানে নাকি স্মরণের সূচনা। জীবনসায়াহ্নে এসে মানুষ তার ছেলেবেলায় ফিরে যায়, বারবার স্মরণ করে অনাবিল সুখের দিনগুলোকে!

এখানে আসার পর আমার সারাদিন কাটে বাবুকে নিয়ে আর ঘর-কন্নার কাজ করে। বহুদিন পর গিন্নীপনা করতে একেবারে খারাপ লাগছে না। খাঁটি বাঙ্গালী বধূর পাট বলতে পারো এদেশে এসেই শুরু। বাবুকে স্কুলে দিয়ে এখন আবার নতুন করে আরেকটু ব্যস্ত হয়েছি। মাঝে মাঝে relax হতে বাবার বাড়ি , মার্কেট বা পার্কে ঘুরে আসি। তোমার ভাইয়ার দিনের বেশীটুকু সময় কাটে রোগীদের সাথে। রোগ আর রোগীদের মাঝে যে কি অনাবিল আনন্দ, তা ওকে না দেখলে বুঝবে না।

বাবুকে নিয়ে যখন স্কুলে যাই, তখন এখানকার প্রখর রোদের ঝাঁঝালো আঁচটুকু খুব বেশী টের পাই। এখানে সারা বছর রোদের তীব্রতা অনেক বেশী, সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকা নিমগাছের ছায়াগুলোও এর কাছে রীতিমত হার মানে। গাছগুলোর অসহায় চাহনীর দিকে তাকিয়ে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ি। এত প্রখর রৌদ্র থেকে অনেকদিন দূরে ছিলাম। এখানে এক পশলা বৃষ্টির জন্য মসজিদ গুলোতে নামায হয়… তারপর ও রোদের তেজ কমে না। মনে পড়ে, বৃষ্টির দিনে তোমার সাথে কলেজে যাওয়ার কথা ! বৃষ্টির স্রোতে ধুয়ে যাওয়া পরিষ্কার পিচঢালা রাস্তায় দুজন গল্প করতে করতে বাসায় ফিরতাম। আমাদের গল্প যেন আর ফুরাতো না। এভাবেই তো শেষ হল চারটি বছর! তোমার কি মনে আছে …….বাহারী হ্যাট মাথায় মাস্তানা স্যারের চিকন দুইটা বেণী দুলিয়ে চমৎকার সেই পড়ানোর স্টাইল, জাকির স্যার এর Osazone test, বনিক স্যারের দুর্বোধ্য ভাষার Pharmacology পড়ানো, এন আই খান স্যারের Lub-Dub bhroosh (heart sound) , Oral pathology আর জোয়ারদার স্যারের বিভীষিকা… বাপরে ! এখনও ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন দেখি!! একেকবার ফাইনাল পরীক্ষার সময় আমাদের কি অবস্থা হতো তোমার মনে পড়ে? মনে হত আমরা Bermuda Triangle পার হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি !!!! সব ঝঞ্জাই তো আমরা একসাথে পাড়ী দিলাম হাতে হাত ধরে, ওই বৃষ্টির পানি উপচে পড়া রাস্তাগুলো পার হওয়ার মত ! মাঝে মাঝে মনে হয়, তুমি না থাকলে আমার কি হত কে জানে। এখন বই এর পাতাগুলো উল্টানোর সময় তোমাকে খুব বেশি মিস করি! প্রতিটা পাতার আড়ালে লুকিয়ে আছে কিছু সাদা-কালো গল্প, আমি তাতে ইচ্ছেমত রঙ মিশাই, তারপর মনের চোখ মেলে তাকিয়ে থাকি অনেকক্ষণ!

তোমার কি খবর বল? আমি শুধু নিজের কথাই বলে যাচ্ছি। আমার বকবক করার অভ্যাসটা এখনও গেল না। তুমি কাছে থাকলে কান দুটোকে নির্ঘাত ঝালাপালা করে দিতাম। তোমার ছোট্ট দুই গোলাপপরী কেমন আছে? ওদের ছবি দেখলে মনটা ভরে যায়। ওরা কি জানে যে ওদের একটা খালামণি আছে যে ওদেরকে গালের সাথে মিশিয়ে আদর করতে চায়? আরেকটু বড় হলে না হয় বলে দিও। এখন আমার হয়ে তুমি ওদের একটু আদর করে দিও ।

আমার এলোমেলো চিঠি পড়ে হেসো না কিন্তু! গুছিয়ে লিখতে পারি না যে, কি করবো? মন যা বলতে চায়, লিখে ফেললাম। তোমার সাথে আবার ফরমালিটি কিসের? কিন্তু নির্ঘাৎ আমার স্কুলের ব্যাকারণ টিচার এ চিঠি দেখলে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকতেন।

আজ আসি।
বুকভরা শুভেচ্ছা নিও, আর আরবের তীব্র উত্তাপের সহনীয় মিষ্ট উষ্ণতাটুকু তোমাকে দিলাম। আল্লাহ তোমাদের সবাইকে ভালো রাখুন !!
৫ই মে, ২০১০।

 

“স্বাতীর রঙধনু” (শিশুদের মনোজগত ভ্রমণ) পর্ব -৪


আফরোজা হাসান


উমায়ের, নুবাইদ, আয়াত আর নাযীবের জন্য একই রুমের চারকোণায় চারটা বিছানা থাকলেও নাযীব নিজের বিছানায় খুব কমই ঘুমায়। একেকদিন একেক ভাইয়ের সাথে ঘুমায়। কখনো কখনো আবার বড় দুই ভাইয়া কিংবা আপ্পির সাথেও ঘুমোতে চলে যায় নাযীব। দুষ্টু-মিষ্টি কথা আর কর্মকান্ডের জন্য ভাইবোনদের সবার কাছেই অতি প্রিয়, অতি আদরের নাযীব। অবশ্য একইরকম অতি আদরের আর অতি প্রিয় বাড়ির বড়দের কাছেও নাযীব। তাই তো স্বাতীর বেনিআসহকলা’র ‘লা’ অর্থাৎ, লাল রঙ টা হচ্ছে নাযীব। নাযীবের স্পর্শে রঙিন হয়ে ওঠে চারপাশ। লাল রঙের বৈশিষ্ট্যও তাই। আরো উজ্জ্বল, আরো মনোহর করে তোলে চারিপাশ। রুমে ঢুকে উমায়েরকে জড়িয়ে ধরে নাযীবকে ঘুমোতে দেখে হাসি বিস্তৃত হলো স্বাতীর চেহারায়। ঘুমের যাতে ব্যাঘাত না ঘটে তাই খুব সাবধানে মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে কপালে আদর এঁকে দিলো দুই ছেলেরই। নাযীবের উপর থেকে চোখ সরিয়ে উমায়ের এর দিকে তাকাতেই একরাশ স্বিগ্ধতার ঢেউ খেলে গেলো স্বাতীর মনে। বেনিআসহকলা’র প্রথম এবং স্বাতীর ভীষণ প্রিয় রঙধারী উমায়ের। বেগুনি রঙটা উমায়ের কে দেবার পেছনে আরভের যুক্তি ছিল উমায়ের এর স্বভাবগত স্বিগ্ধতা। উমায়ের মানেই ছোট থেকে ছোট অনুভূতিগুলোকেও খুব যত্ন করে নিজ মনে লালন করা। ভীষণ ইমোশনাল উমায়ের। একটুতেই খুশি হয় আবার একটুতেই অভিমান করে। ওর ব্যাপারে তাই বাড়তি খেয়াল ও মনোযোগ রাখতে হয় সর্বদাই। আসমানি রঙটা আয়াতকে স্বাতীই দিয়েছিল। আসমানি শুদ্ধতার রঙ। জগতের প্রতিটি শিশুই শুদ্ধ। কিন্তু কেউ কেউ সেই শুদ্ধতার প্রতীক থাকে। আয়াত ঠিক তেমন একটি শিশু। মাত্র সাড়ে সাত বছর বয়সেই নিজের প্রতিটি কাজের ব্যাপারে খুবই সচেতন আয়াত। বিশাল উদারতা নিয়ে সবকিছুর সাথে মানিয়ে নেবার জন্য সদা প্রস্তুত থাকে। অনেকটা আয়াতের মতোই নুবাইদ। অবশ্য হতেই হবে দুজন জমজ বলে কথা। সেজন্যই নীল রঙটা নুবাইদের দখলে। নীল বিশালত্বের রঙ, গভীরত্বের রঙ। প্রিয়জনদের তরে ভালোবাসার টলটলা গভীর সরোবর প্রবাহিত ছোট্ট নুবাইদের বিশাল অন্তরে। সাবধানে আয়াত আর নুবাইদকেও আদর করে দিয়ে ড্রয়ার থেকে সেলফোন নিয়ে বড় তিন সন্তানের রুমের দিকে পা বাড়ালো স্বাতী।
একই রুমের একপাশে বড় ছেলে মুসআব আর অন্যপাশে মেঝ ছেলে নাহিবের বিছানা। তবে রুম একটা হলেও দুইপাশের জগত ভিন্ন। মুসআব যতটা গোছানো স্বভাবের নাহিব ঠিক ততটাই এলোমেলো স্বভাবের। রুমে ঢুকে মুসআবের দিকে তাকাতেই শান্তি শান্তি আবহ ঘিরে ধরলো স্বাতীকে। এক টুকরো সজীব প্রকৃতি মনেহয় মুসআবকে। স্বভাবেও ভীষণ শান্ত, বয়সের তুলনায় অনেক সমঝদার। তাই তো স্বাতীর কাছে মুসআব সবুজের আহবায়ক। আর নাহিব মানেই একদন্ড স্থিরতা নেই যার মাঝে। মাথাভর্তি নিত্যনতুন আইডিয়া আর মনের মাঝে থইথই আবেগ। যুক্তি প্রদর্শনে জুড়ি নেই নাহিবের। একই সাথে আবার অন্যের যুক্তি যে কান দিয়ে শোনে সে কান দিয়েই বের করে দেয়ায়েও জুড়ি নেই নাহিবের। অস্থির, পাগলাটে ছেলেটার জন্য তাই হলুদ রঙটাকেই বেছে নিয়েছিল স্বাতী। তবে স্বভাবে যতই অমিল থাক না কেন দুই ভাইয়ের ঘুমের ধরণ একদম অভিন্ন। এই প্রচণ্ড ঠান্ডার রাতেও মুসআব আর নাহিব দুজনই কম্বল ফেলে ঘুমোচ্ছে বেঘোরে। দুই ছেলের গায়ে কম্বল ঠিক করে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে দিয়ে কন্যার রুমে রওনা করলো। মিসেস রাবেয়া নাতনীকে আদর করে ডাকেন বাসন্তী পরী। নানুমণির দেয়া নামটা ভীষণ পছন্দ মহিমার। কন্যার জন্য নামটা ভীষণ পছন্দ স্বাতীরও। বাবা-মার জীবনে কন্যারা তো বসন্তেরই প্রতীক। আরভ স্বাতীর জীবনেও বারোমাসি বসন্ত মহিমা। চঞ্চল, মায়াবী, বর্ণিল এক প্রজাপতি মনেহয় মহিমাকে। যায় উপস্থিতিই যথেষ্ট মনকে খুশির রঙে রাঙিয়ে দেবার জন্য। মহিমার রুমের দরজায় আরভকে দাঁড়ানো দেখে হাসি মুখে সালাম দিলো স্বাতী।
সালামের জবাব দিয়ে আরভ বলল, কন্যা তো ঘুমোয়নি এখনো। গল্পের বই পড়ছে নিমগ্ন হয়ে। একদম মায়ের আত্মমগ্নতার গুণে গুণানিত্বা কন্যা। মায়ের যেমন কোন কাজে ডুবলে চারপাশের কোনকিছুর খবর থাকে না। একই অবস্থা মায়ের কন্যারও। পাঁচমিনিট ধরে দরজায় দাঁড়িয়ে আছি। কন্যার কোন খেয়ালই নেই।
বই হাতে আত্মমগ্ন বাসন্তী পরীর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে দরজা চাপিয়ে দিয়ে স্বাতী বলল, যদি পথে পাওয়া কোন পাবলিসিটিতেও চোখ বুলাও গভীর মনোযোগের সাথে বুলাবে। তাহলে দেখবে তারমধ্যেও কোন না কোন শিক্ষা পেয়ে যাবে। এই বাণী কন্যার মায়ের না, কন্যার পিতার। তাই মনোযোগের সাথে অধ্যায়নরত হইয়া কন্যা মূলত পিতৃ পরামর্শকেই সম্মান প্রদর্শন করছেন।
হেসে ফেললো আরভ। হাসতে হাসতে বলল, তা কিছুক্ষণ আগে কন্যার মাতা কার পরামর্শকে সম্মান প্রদর্শন করছিলেন লেখনীতে নিমগ্ন থেকে? কন্যার আগে তার মাতার দরজাতেও পাঁচমিনিট দাঁড়িয়ে থেকে এসেছি। একটা সময় ছিল যখন বাড়িতে আসার আগেই কন্যার মাতা টের পেয়ে দরজা ধরে অপেক্ষা করতো। আর এখন বাড়িতে পৌঁছে দরজা ধরে দাঁড়িয়ে থেকেও তার মনোযোগ আকর্ষণ করা সম্ভব হয়না।
জ্বি পরিবর্তনশীলতাই জীবনের ধরণ, না করে আহাজারি করে নিন একে বরণ। তাহলে অকারণ বাড়বে না মনের ওজন, সুখানন্দ তুলবে প্রতিক্ষণে জোনাক জোনাক গুঞ্জন। হাসতে হাসতে বললো স্বাতী।

চলবে….

পর্ব-৩

 

নারীর নির্যাতনের আরেক রূপ

নারী সংবাদ


ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠানগরের উত্তর হরিপুর গ্রাম থেকে অর্ধবস্ত্রহীন হাতে-পায়ে শিকল বাঁধা নির্যাতনের শিকার এক গৃহবধুকে রোববার সন্ধায় উদ্ধার করেছে পুলিশ । ওই গৃহবধুর কেটে ফেলা হয়েছে মাথার চুল । চার দিন ধরে বাঁধা তাহেরা আক্তার রিনা নামের ওই গৃহবধুকে বোতলে ভরে জোরপূর্বক স্বামীর প্রসাব পান করান সহ সাংবাদিকদের কাছে নির্যাতনের বিভিন্ন অভিযোগ করেছেন ওই গৃহবধূ।

জানা গেছে, ফেনী সদর উপজেলার কাতালিয়া গ্রামের মৃত আমিনুল আহছান বাবুলের দশম শ্রেণি পড়ুয়া এতিম মেয়ে তাহেরা আক্তার রিনাকে (২০) ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠাননগর ইউনিয়নের উত্তর হরিপুর গ্রামের হাজারী বাড়ির দুই সন্তানের জনক মনজুরুল আলম বাদল হাজারীর (৫৪) সঙ্গে গত বছরের মার্চ মাসে বিয়ে হয়। মেয়ের মা বিবি ফাতেমা পারুল ও তার মামারা মিলে এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে রিনাকে বাদল হাজারীর কাছে বিয়ে দিলেও বিয়েতে রিনার মত ছিল না।

বিয়ের পর রিনা জানতে পারে এর আগে বাদল হাজারীর আরো দুইটি স্ত্রী ছিল। তাদেরকে সে নির্যাতন করে তাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা। বিয়ের পর থেকে বাদল চৌধুরী ও মেয়ের মাসহ স্বজনদের চেষ্টার পরও রিনা বাদল হাজারীকে স্বামী হিসেবে মেনে না নিয়ে পালিয়ে যায়।

গত কয়েকদিন আগে রিনা ঢাকা থেকে কুমিল্লার ছিওয়াড়ায় তার নানীর বাড়িতে যায়। সেখান থেকে তাকে মামা, মা ও ছোট ভাই ধরে স্বামীর হাতে তুলে দেয়। গত চার দিন ধরে বাদল চৌধুরী তার বাড়িতে রিনাকে হাত-পায়ে শিকল পরিয়ে নির্জন কক্ষে আটকে রাখে।

পালিয়ে যাওয়া ঠেকাতে তার মাথার চুল কেটে ফেলা হয়েছে। পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে তার কাপড়-ছোপড়। স্বামীর কথা মানতে অস্বীকার করায় শরীর থেকে জোরপূর্বক বেশিরভাগ কাপড় খুলে অর্ধবিবস্ত্র করে রাখা হয় তাকে। রিনার সামনে প্রস্রাব করে বোতলে ভরে জোরপূর্বক প্রসাব পান করানোসহ কয়েক দিন ধরে তার ওপর চালানো হয় শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন। এ কথাগুল থানায় বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন রিনা ।

নির্যাতনের ফলে তোড় শোর চিৎকার করে সাহায্য চাইলেও তার স্বামীর ভয়ে বাড়ির কেউ এগিয়ে আসেননি বলে অভিযোগ এতিম রিনার।

এলাকা থেকে গোপনে সংবাদ পেয়ে রোববার বিকেলে ছাগলনাইয়া থানা পুলিশের এসআই নাঈম উদ্দিনের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য বাড়ি ঘেরাও করে গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঘরের তালা ভেঙ্গে শিকলসহ রিনাকে উদ্ধার করে । পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে স্বামী বাদল চৌধুরী পালিয়ে যায়। নির্যাতিতা গৃহবধু তাহেরা আক্তার রিনা তাকে নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন।

ছাগলনাইয়া থানার ওসি এমএম মুর্শেদ পিপিএম উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে নয়া দিগন্তকে জানান, গৃহবধূকে আটকে রেখে নির্যাতনের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে ।

বাংলাদেশে নারী নির্যাতন বাড়ছে : বিবিসি বাংলা

বাংলাদেশের একটি বেসরকারী সংস্থার পরিচালিত গবেষণায় বলা হয়েছে যে দেশটিতে নারী নির্যাতন বাড়ছে এবং গত তিন বছরে পনের বছরের কম বয়সী কিশোরীরা বেশী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বেসরকারী সংস্থা, ব্র্যাক, বুধবার ঢাকায় গবেষণাটির ফলাফল প্রকাশ করে বলেছে যে বিভিন্ন জেলা থেকে তারা নারী নির্যাতন সংক্রান্ত যেসব তথ্য পেয়েছেন তাতে দেখা গেছে এসময়ে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ কিশোরী ধর্ষনের শিকার হয়েছেন এবং ৫৯ শতাংশের ওপর ধর্ষনের চেষ্টা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের একশ’ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ঐ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

ব্র্যাকের গবেষকরা বলছেন যে ২০০৬ সালের জুন থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত নারী নির্যাতনের প্রায় তিন হাজার তথ্য সংস্থাটির ঢাকা সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছিলো। ব্র্যাকের মাঠ পর্যায়ের নিজস্ব কর্মীরাই এসব তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন।

এসব তথ্য বিশ্লেষন করেই নারী নির্যাতন সম্পর্কিত ব্র্যাকের গবেষণা রিপোর্টটি তৈরী করা হয়েছে বলে জানান সংস্থাটির গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগের উর্ধতন গবেষক ড. ফজলুল করিম।

তিনি বলেন যে ৫০ শতাংশ কিশোরী ধর্ষিতা হলেও ২৫-৩০ বছরের মহিলাদের মধ্যে ধর্ষনের শিকার হয়েছেন ৩৮ শতাংশ।

অ্যাসিড সন্ত্রাসের যারা শিকার তাদের যেমন পূনর্বাসনের ব্যবস্থা আছে, ধর্ষনের শিকার যারা তাদের বেলায তেমনটি নেই
ড. করিম
এটা দেখা গেছে যে বয়স যত বেড়েছে ধর্ষনের ঘটনা তত কমেছে, আর ধর্ষনের শিকার বেশী হচ্ছেন স্কুলগামী মেয়েরা।

ড. করিম বলেন যে অ্যাসিড সন্ত্রাসের যারা শিকার তাদের যেমন পূনর্বাসনের ব্যবস্থা আছে, ধর্ষনের শিকার যারা তাদের বেলায তেমনটি নেই।

আর তাই গবেষণায় দেখা গেছে যে আদালতের দ্বারস্থ না হয়ে ধর্ষনের শিকার অনেক কিশোরীই হয় নিরবে তা সহ্য করেছেন কিংবা আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন।

তিনি বলেন বাংলাদেশের আইন-কানুন এমন যে অনেক সময় ধর্ষনের ঘটনা আদালতে প্রমান করার ক্ষেত্রে ধর্ষনের শিকার মেয়েদেরকে অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়। সূত্র: নয়াদিগন্ত

 

মাতৃকথন (মূল সমস্যা বাচ্চা খায় না) ৯

ফারিনা মাহমুদ


মূল সমস্যা – বাচ্চা খায় না ।­

১) প্রথমত, জয় গুরু শেক্সপিয়ার! আই মাস্ট বি ক্রূয়েল, অনলি টু বি কাইন্ড। পরিবারের সবার সাথে বসে আগে আলোচনা করে একমত হন, খাওয়া নিয়ে এই নাটকের অবসান সবাই চান কি না। এরপর মাথায় রাখবেন এপ্রোচ কখনো কখনো আপাত দৃষ্টি তে রুড হতে পারে। দুর্গম গিরি কান্তার মরু পার হতে গিয়ে গেইম প্ল্যানে কচ্ছপ কামড় দিয়ে পড়ে থাকুন। নিজেদের মধ্যে মাঝপথে মারামারি করে রণে ভঙ্গ দিলে মিশন ইম্পসিবল। শত্রু পক্ষ অর্থাৎ আপনার অর্থাৎ আপনার ঘাউড়া বাচ্চা এই সুযোগ ষোলো আনা নিবে।

২) একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাচ্চার খাবার শেষ করবেন। ঘন্টার পর ঘন্টা খাবার নিয়ে সামনে মা মুখে খাবার নিয়ে বাচ্চার বসে থাকা চলবে না। স্কুলের টিফিনের ঘন্টার মতো একটা সময় বেঁধে নেবেন। এর মধ্যে খাইলে খা, না খাইলে যা কেইস। এই ট্রিক্স বিফলে মূল্য ফেরত ট্রিক্স। ৭ দিন কষ্ট করে এই ট্রিক্স পালন করে দেখেন। আলো আসবেই। এইখানেই মূলত বাবা মায়ের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়, বাচ্চাটা খাচ্ছে না, এই নাটকের কোনো মানে হয়… কোথাকার কোন ফারিনা মাহমুদ ফেসবুকে কি লিখলো, তা নিয়ে আমার সংসারে আগুন… ব্যাস, একজন ব্যাকফায়ার করে বসে! পরিকল্পনার পরী ডানা মেলে উড়ে যায়, কল্পনা পড়ে থাকে!

৩) বাচ্চা খায় না খায় না করে ঘন ঘন খাবার সাধবেন না। সকালের নাস্তা ঠিক মতো খাক না খাক, ঠিক স্ন্যাক টাইমেই তাকে আবার খাবার দেবেন। দিনে ৫ বার রুটিন ধরে খাবার দিলে বাচ্চা আপনা থেকেই বুঝে যাবে খাবার যখন সামনে আসে, তখন তা খেতে হবে, নাইলে বিপদ, কপালে খাবার নাই আগামী ৩ ঘন্টা !

৪) বাচ্চাকে চেয়ে খাওয়ার সুযোগ দিন। অর্থাৎ তার ক্ষুধা লাগার সুযোগ তৈরী করুন। তাকে পর্যাপ্ত খেলতে দিন। একসময় সে নিজেই খেতে চাইবে। এইটা জীবের ধর্ম। বাকি জীবন খাবারের পেছনেই সে ছুটবে, খাবার তার পিছে ছুটবে না!

৫) যত বড় বাচ্চা তত বড় ঘাউড়া। সাধারণত বলা হয় যত বছর বয়স, তত মাস লাগে অভ্যাস চেঞ্জ হতে। তাই ছোট থাকতেই লাইনে আনেন। আর অলরেডি যদি বেলাইনে নিয়েই থাকেন তো এখনই ধৈর্য ধরে শুরু করে দিন।

৬) শুরু করাটা খুব মুশকিল। একদিনে সব সম্ভব না। শুরু করবেন এক বেলার খাবার দিয়ে। আস্তে আস্তে অন্যবেলা গুলিতেও জোরাজুরি বন্ধ করে স্বাভাবিক ভাবে খাবার অভ্যাস করবেন।

৭) সুস্থ্যতার মাপকাঠি কখনোই গাপলু গুপলু মোটাসোটা হওয়া না। বরং বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ওবেসিটি একটা ভয়ঙ্কর জিনিস। আমি ওভারওয়েট বাচ্চার মা কে চোখের পানি ফেলতে দেখেছি এই বলে যে ওকে ওর কোনো ফ্রেন্ডের বার্থডে তে যেতে দেই না, কেক মিষ্টি বার্গার খেয়ে ফেলবে, তাই!

আর উপরের কোনো তরিকাই যদি কাজ না করে, তো আয়নার সামনে চলে যান । নিজের দিকে ভালো করে দেখুন, এরপর মনে মনে বলুন – তু চীজ বাড়ি হ্যায় মাস্ত মাস্ত …. ! আমার ঘরে আমার মতোই আরেকটা চীজ হয়েছে! নো ওন্ডার! নিশ্চই আমিও বাপ মা কে কম প্যারা দেই নাই! হিস্টোরি রিপিটস ইটসেলফ ! আমার ধারণা ইংরেজী প্যারেন্টহুড শব্দটার উৎপত্তি বাংলা প্যারা শব্দটা থেকে ।
প্যারেন্ট হবেন প্যারা খাবেন না, তা হবেনা তা হবেনা !

হ্যাপি প্যারেন্টহুড অল !

চলবে  Continue reading

 

বিয়ে ও পরিবার সমকালীন জিজ্ঞাসা – ৬

কানিজ ফাতিমা


গত দু’টি পর্বে মাসিককালীন ও এর পূর্বে নারীর শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করেছি। এ পর্বে আলোচনা করবো গর্ভকালীন সময়ে একজন নারীর মানসিক অবস্থা নিয়ে।

মূলতঃ গর্ভকালীন সময়ে নারীর শারীরিক পরিবর্তন ও কষ্টগুলো সম্পর্কে কমবেশী আমরা সবাই অবগত। কিন্তু এ সময়ে নারীকে যে বিরাট মানসিক পরিবর্তন ও চাপ সহ্য করতে হয় সে ব্যাপারে বেশীরভাগ মানুষই সচেতন নন। এ সময়টি মূলতঃ স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের জন্যই একটি সংকট মুহূর্ত। একদিকে সুখ ও আশা অন্যদিকে নানা রকম ভয় ও শঙ্কা এ সময়টিকে উভয়ের জন্য কঠিন করে তোলে। বিশেষ করে একজন নারী এ অবস্থায় প্রতিটা মুহূর্তে নানা রকম চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে। ফলে তার জন্য আশেপাশের মানুষগুলো বিশেষ করে স্বামীর সার্বক্ষনিক সহযোগিতার প্রয়োজন পড়ে। সব থেকে বেশী দরকার স্বামীর পক্ষ থেকে তাকে আশা ও নির্ভরতার গ্যারান্টি দেয়া। আমি অবাক হয়েছি এটা জেনে যে, এ সময় অনেক পুরুষ স্ত্রীর কাছ থেকে কিছুটা দুরত্ব বজায় রাখতে সচেষ্ট হন এই ভয়ে যে তার আশেপাশের লোকজন বা আত্মীয়রা তাকে নিয়ে ঠাট্টা করবে বা বলবে “ কেমন পুরুষ মানুষ, বউয়ের সেবা করে…”। আমি এটাও শুনেছি গর্ভকালীন শারীরিক কষ্ট বিশেষ করে সকাল বেলার দুর্বলতা (Morning Sickness) এর কারণে গর্ভবতী বিছানায় শুয়ে থাকলে তাকে অনেক সময় শাশুড়ী- ননদরা বলেন, “ দেখে মনে হয় তোমার একলারই বাচ্চা হবে। ছেলে-পুলে তো আমাদেরও হয়েছে…”। এ সকল পরিস্থিতিতে স্বামীর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বামীর মনে রাখতে হবে যে, স্ত্রীর সেবা করায় দোষের কিছু নেই। এটা কোন দুর্বলতার লক্ষণ না, বরং ‘পাছে লোকে কিছু বলে’- এই সংকোচ ঝেড়ে ফেলে নিজ দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকতে পারা সবল মানসিকতা সম্পন্নদের পক্ষেই সম্ভব।
তাছাড়া হাদিসেও এর পক্ষে সবল দৃষ্টান্ত রয়েছে ৷ বদর যুদ্ধের সময় সংখ্যায় মুসলমানরা কম ছিলেন ৷ সেসময় মদীনাতে মাত্র ৭৭ জন সমর্থ মোহাজির পুরুষ ছিলেন ৷ তিনজন বাদে এদের সবাই যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন ৷ তালহা ও সা’দ (রা:) সেই মুহুর্তে সংবাদ সংগ্রহের কাজে মদীনার বাহিরে ছিলেন বলে বাহিনীতে যোগ দিতে পারেননি ৷ আর তৃতীয় ব্যক্তি যিনি মদীনাতে উপস্থিত থেকেও বাহিনীতে যোগ দেননি তিনি হলেন ইসলামের ইতিহাসে প্রথম সারির সাহাবী উসমান (রা:) ৷ যদিও সে সময় মুসলিম বাহিনীতে বেশী সংখ্যক যোদ্ধার দরকার ছিল তথাপি রাসুল (সা:) নিজেই উসমান (রা:) কে মদীনায় থাকতে নির্দেশ দেন কারণ সেই সময় তার স্ত্রী রোকাইয়া (রাসুল সা: এর কন্যা) অসুস্থ ছিলেন ৷ ” the Prophet had told his son-in-law ‘Uthman’ to stay at home and tend his sick wife” ( MUHAMMAD –his life based on the earliest sources by Martin Lings, পৃষ্ঠা: ১৩৮ ) আমরা এখানে স্পষ্ট দেখতে পাই শুধুমাত্র অসুস্থ স্ত্রীর দেখাশোনার জন্য তিনি বদর যুদ্ধের বাহিনীতে যোগদান থেকে বিরত থাকলেন স্বয়ং রাসুল (সা:) এর নির্দেশে ৷ অথচ সে সময় মদীনাতে অন্যান্য নারীগণ উপস্থিত ছিলেন যারা সহজেই তার সেবা করতে পারতেন ৷ সাওদা (রা:) ( রাসুল সা: এর স্ত্রী); ফাতেমা রা: ও উম্মে কুলসুম রা: (রোকাইয়ার দু’ বোন); উম্মে আয়মান ও খাওলা সহ অনেকেই রোকাইয়ার খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন ৷ তদুপরী রাসুল (সা:) স্ত্রীর সেবার জন্য স্বামীকেই দ্বায়িত্ব দিলেন। আমরা সবাই জানি গর্ভকালীন সময়ে যে সমস্যাগুলো হয় তা একেক জনের একেক মাত্রায় হয়। বিশেষ করে প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে মায়ের পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় একদিকে তার ভীতির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে, অন্যদিকে সমস্যাগুলো মোকাবেলার পদ্ধতিগুলো অজানা থাকে। ফলে এ পরিস্থিতিটি তার কাছে কঠিন থেকে কঠিনতর আকার ধারণ করে। এজন্য স্বামী ও স্ত্রীর উভয়েরই যদি আগে থেকেই এই সময়কার নারীর শরীরিক ও মানসিক পরিবর্তনগুলো জানা থাকে তবে এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।
যেহেতু গর্ভকালীন সময়ে নারীর শারীরিক কষ্ট ও পরিবর্তনগুলো চিকিৎসক দ্বারা নির্ণিত হয় সেহেতু আমি ঐদিকে না গিয়ে, নারীর মানসিক অবস্থা ও পরিবর্তন, যা অনেক সময়ই আলোচনার বা নজরের বাইরে থাকে, সেদিকে আলোকপাত করবো। তবে আগে বলে রাখা ভালো যে কোন কোন নারীর ক্ষেত্রে মানসিক সমস্যাগুলো মারাত্মক হতে পারে। সে অবশ্যই চিকিত্সকের পরামর্শ নিতে হবে। আমি কেবল মাত্র সাধারণ পরিবর্তনগুলো (Common changes) নিয়ে আলোচনা করবো। গর্ভকালীন পুরো সময়টাকে আমরা তিনভাগে ভাগ করতে পারি।
১. First Trimester : ১ম সপ্তাহ থেকে ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত ১ম একতৃতীয়াংশ বা First Trimester ধরা হয়।
২. Second Trimester : ১৩তম সপ্তাহ থেকে ২৭তম সপ্তাহ পর্যন্ত দ্বিতীয় একতৃতীয়াংশ বা Second Trimester: ধরা হয়।
৩. Third Trimester : ২৮তম সপ্তাহ থেকে ৪২তম সপ্তাহ পর্যন্ত তৃতীয় একতৃতীয়াংশ বা Third Trimester ধরা হয়।
অনেকে কিভাবে সপ্তাহ গণনা করতে হয় সে ব্যাপারে নিশ্চিত নন। সর্বশেষ মাসিক যেদিন শুরু হয়েছিল সেদিন থেকেই সপ্তাহ গণনা শুরু হয় (মাসিক শেষের দিন নয়)।
যদিও গর্ভকালীন সময়ের পরিবর্তনগুলো কমবেশী একই রকম তবুও প্রত্যেকটি কেসই কোন না কোন দিক দিয়ে স্বতন্ত্র। শরীরের আকারের পরিবর্তন, হরমোনের পরিবর্তন, Culture বা সাংস্কৃতিক অবস্থা, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ধরন, মানসিক প্রস্তুতি এসব কিছুর সংমিশ্রনেই গর্ভকালীন অভিজ্ঞতা তৈরি হয়। যেমন ধরুন কোন স্বামী-স্ত্রী যদি সন্তান আশা করে এবং সন্তানের জন্য অপেক্ষা করে তবে গর্ভধারনের সংবাদ দু’জনই আনন্দের সঙ্গে নিবে। অন্যদিকে তারা যে সময়ে এটা চাচ্ছিল না তখন যদি এ সংবাদ পায় তবে তাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে। তারা আনন্দ ও দুঃশ্চিন্তা এ দু’য়ের মাঝামাঝি দুলতে থাকবে।
ভাবী মায়ের মানসিক অবস্থা তার শারীরিক অবস্থা ও সন্তানের বিকাশে সরাসরি প্রভাব ফেলে। যা পরিণামে পরিবারের অন্যান্যদের সাথে সম্পর্ককেও প্রভাবিত করে। যেমন কোন গর্ভবতী যদি মানসিক চাপে ভোগে তবে তার বমিভাব ও দুর্বলতা বেশী হবার সম্ভাবনা থাকে। তার এই শারীরিক কষ্ট তার মানসিক চাপকে বাড়িয়ে দেবে। ফলে সে পরিবারের অন্যান্যদের সঙ্গে বিশেষ করে স্বামীর সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখতে সক্ষম হবে না। যা পরিণামে তার মানসিক চাপ আরও বাড়াবে। এভাবে প্রক্রিয়াটি চক্রের আকারে চলতে থাকবে।
এবার দেখা যাক প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় Trimester এ গর্ভবতীর অবস্থা কেমন হয়:
First Trimester : যে মুহূর্তে একজন নারী জানতে পারে যে সে মা হতে যাচ্ছে ঠিক সেই মুহূর্তেই তার চিন্তা ও অনুভূতিতে এক বিরাট পরিবর্তন ঘটে। এ সময় অনেকেরই Emotional Swing খুব দ্রুত ঘটতে তাকে। খুব অল্পতেই তারা হতাশ অনুভব করে, রাগান্বিত হয় বা আনন্দিত হয়। সব নারীরই কম বেশী Emotional Swing হয় তবে তার পরিণাম নির্ভর করে নারীর Personality Type (ব্যক্তিত্বের ধরন) এর উপর। অনেক সহিষ্ণু ও দৃঢ় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নারীকেও এ সময় অল্পতেই কান্না-কাটি করতে দেখা যেতে পারে। স্বামী ও পরিবারের অন্যদের সহযোগিতা ও সহমর্মিতা এ অবস্থাকে মোকাবিলা করতে সহযোগিতা করে।
এই সময়ই গর্ভপাতের আশংকা থাকে। ফলে এই ভয় বা অনিশ্চয়তা নারীর উপর বাড়তি চাপ তৈরি করে, অনেককে দেখা যায় যে তারা হাঁটতেও ভয় পায়। বিশেষ করে Miscarriage এর পূর্ব অভিজ্ঞতা যাদের থাকে তাদের উপর এ চাপের মাত্রা এতটাই বেড়ে যায় যে অনেকেক্ষেত্রে তারা স্বাভাবিক জীবন যাপনেও ভয় পেতে পারে। এই দুশ্চিন্তা ও চাপের মাত্রা আরও বেড়ে যায় যদি ঐ নারীর মনে হয় যে গর্ভপাত হলে স্বামী বা শশুর বাড়ীর লোকজন তাকেই এর জন্য দায়ী করবে। এ পরিস্থিতিতে স্বামীর পক্ষ থেকে মানসিক সান্ত্বনা নারীর একান্ত প্রয়োজন। সফল গর্ভধারণ বা গর্ভপাত যাই ঘটুক নারী তার স্বামীর সহমর্মিতা থেকে বঞ্চিত হবে না- স্বামীকে এই নিশ্চয়তা দিতে হবে। এই নিশ্চয়তা নারীকে সংকট কাটিয়ে উঠতে অনেকটাই সাহায্য করে।
এক্ষেত্রে আরও একটি ব্যাপার লক্ষ্যনীয়। এ সময় স্বামী স্ত্রীর দৈহিক মিলনেও অনেক স্ত্রী ভয় পায়। এবং মিলনের পরের দু’এক দিনের মধ্যে যদি গর্ভপাত ঘটে তবে স্ত্রীর মনে স্বামীকে দায়ী করার প্রবণতা তৈরি হয়। স্ত্রীদের জানা থাকা দরকার এর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। অন্যদিকে স্বামীর জানা প্রয়োজন স্ত্রী গর্ভজনিত মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছে। কাজেই স্ত্রীকে কোন কিছুতে বাধ্য করা বা বাড়তি চাপ প্রয়োগ করা ঠিক নয়।

পর্ব-৫

 

বই এবং বেপরোয়া আমি ১

তাহেরা সুলতানা


বইপড়ার প্রতি পাগলামি আমাকে অনেকবার বিব্রত অবস্থায় ফেলেছে। বিপদেও পড়েছি বহুবার। ক্লাস ফাইভে স্কুল, স্কলারশিপ এবং সেন্টার পরীক্ষা শেষে অনেকটা সময় পেয়েছিলাম। তখন সারাক্ষণ হাতে ‘তিন গোয়েন্দা’ থাকতো। বাড়িতে ডাইনিং টেবিল ছিলনা। মেঝেতে পাটি পেতে পড়তাম। বিদ্যুৎ চলে গেলে হারিকেন অথবা মোমবাতিই ভরসা ছিল। একটা কথা না বললেই নয়। কোন বই পড়ার আগে আব্বা সবসময় বলতেন,

“যখন কোন ঐতিহাসিক বা কাহিনীমূ্লক লেখা পড়বে, তখন নিজেকে ওই জায়গায় গিয়ে এমনভাবে দাঁড় করাবে, যেন তুমি চোখের সামনে দৃশ্যগুলো দেখতে পাও। তাহলেই পড়ে মজা পাবে।”

একদিন সন্ধ্যার সময় বিদ্যুৎ ছিলনা, মোমের আলোয় ‘তিন গোয়েন্দা’ পড়ছিলাম। চুল হাতাচ্ছি, আর পড়ছি। কি যে মনোযোগ! কখন যে চুলে আগুন ধরে যায়, টেরই পাইনি। আম্মা রান্নাঘর থেকে গন্ধ পেয়ে ছুটে আসে। তারপর তো পুরা ইতিহাস! আম্মা সেদিন যে মারটাই না দিছিলেন! অনেকদিন গল্পের বই আর হাতেই নিতে দেননি! আম্মা সব বই আলমারীতে তালা মেরে রেখে চাবি আঁচলে নিয়ে ঘুরতেন। বইয়ের বিরহ যে কি জিনিস, সেদিন বুঝেছিলাম!

আরও সাংঘাতিক একটা ঘটনা ঘটেছিল, যেটা আজও কাউকে বলা হয়নি। ক্লাস এইট এর স্কলারশিপ পরীক্ষার পর আমরা ৩ বোন ট্রেনে করে ছোটমামার সাথে নানুবাড়ি যাচ্ছিলাম। ছোটমামা তখন সিরাজগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে বিকম পড়ছিলেন এবং আমরা খুব ভালো বন্ধুও ছিলাম। কারণ মামা তখন আমাদের একজন বড়ধরনের বই আর ক্যাসেট এর যোগানদাতা। ‘প্রিয় বন্ধু’ নামে শ্রুতিনাটকের ক্যাসেটটা মামাই প্রথম আমাদের উপহার হিসাবে দিয়েছিলেন। মামা খুব ভালো লিখতেন। একটা করে কবিতা লিখতেন আর আমাদের পড়ে শুনাতেন। খুব ভালো গানও গাইতেন।

যাইহোক, আব্বা কিছুতেই মামার সাথে একা ছাড়বেন না। আর উনি কখনোই আম্মাকে ছাড়া আমাদের একা ছাড়েননি। সেবারই এর ব্যতিক্রম ঘটে। মামা কিছুতেই মানতে নারাজ, তাই জোড় করেই নিয়ে যান। বাসেই যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমরা বোনেরা ট্রেনে যাব বলে জিদ ধরলাম। তখন সিরাজগঞ্জ থেকে দিনাজপুর যাওয়ার জন্য সরাসরি কোন ট্রেন ছিলনা। ভেংগে ভেংগে যেতে হতো। তাই অনেক সময় লাগতো। পার্বতীপুর গিয়ে যখন চিরিরবন্দরের উদ্দেশ্যে আবার ট্রেনে চড়ি, তখন প্রায় সন্ধ্যা। আমাদের ৩ বোনের হাতেই ট্রেনে চড়ার পর থেকেই কিন্তু বই ছিলো! স্পষ্ট মনে আছে, আমি মাসুদরানার কোন একটা সিরিজ পড়ছিলাম। আমার ছোট ২ বোন মামার কাছে বসেছিল। ওখানে আর সিট খালি না থাকায় আমি ঠিক বিপরীতদিকে জানালার পাশে বসেছিলাম। বোনদের সাথে অনেকটা যুদ্ধ করেই সিটটা নিয়েছিলাম। ওপাশে জানালার ধারে চাচার বয়সী একজন মানুষ বসে ছিল এবং আমাকে মা বলেই সম্মোধন করছিল। আমি বরাবরি একটু বোকা টাইপ ছিলাম! তাই সমাজের নোংরা চেহারাটা সবসময় চোখ এড়িয়ে যেতো! তখনকার যুগটা তো আর এখনকার মতো এতোটা খারাপ ছিল না! রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও চাচা তো চাচাই ছিল! আর মা বলে ডাকলে তো কথাই নেই! আমার গায়ে লম্বা গাউন আর মাথায় হিজাব ছিল। অবশেষে ওই চাচার পাশেই একটু দূরত্ব রেখে জানালার সাথে সেটে বসলাম। এরপর তো পুরোপুরি বইয়ে ডুবে গেলাম! ততক্ষণে রাতের আধার ফুটতে শুরু করেছে। হঠাৎ মনে হলো, ওই চাচা আমার গা ঘেসে বসার জন্য বারবার এগিয়ে আসছে। আমি বইয়ে এতোটাই ডুবে ছিলাম যে প্রথমদিকে খেয়ালই করিনি! তারপর যখন বুঝতে পারলাম, তখন মামাকে ইশারা করে বোঝাতে চাইলাম। মামা উল্টো ধমক দিয়ে বসিয়ে দিলেন। কারন আমি নিজেই ওইপাশে বসতে চেয়েছি, মামা নিষেধ করেছিলেন। মামাও হয়তো এতোটা সাংঘাতিক কিছু আঁচ করতে পারেননি! ততক্ষণে ভয়ে কান্না শুরু করে দিয়েছি! এরপর মামা পুরোপুরি বুঝে যায়, কি সমস্যা হচ্ছে! তখন মামা নিজে সিটটা চেঞ্জ করে ওইপাশে বসেন। মামা চাইলেই একটা হেস্তনেস্ত করতে পারতেন। কিন্তু আমাদের কথা ভেবে চুপ করে গেছেন।

আব্বা আমাদের ৩ বোনকে এভাবে পাঠিয়ে সে রাতে কিছুতেই ঘুমাতে পারেননি। পরের দিনই আম্মাকে নানাবাড়ির উদ্দেশ্যে বাসে তুলে দেন। ছোটমামা আব্বার কাছে বকা খাওয়ার ভয়ে আমাকে হাওয়াই মিঠাই কিনে দিয়ে বশ করেছিলেন। তাই আর কোনদিনই এই ঘটনা তাদের কান পর্যন্ত পৌছায়নি।

(চলবে)

 

“স্বাতীর রঙধনু” (শিশুদের মনোজগত ভ্রমণ) পর্ব-৩

আফরোজা হাসান


এই পর্যন্ত লিখে থামলো স্বাতী। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে কিঞ্চিৎ কুঞ্চিত হলো ভ্রু দ্বয়। রাত পনে একটা বাজে। বারোটার মধ্যেই চলে আসার কথা ছিল আরভের। ফিরতে কখনো দেরি হলে সবসময়ই ফোন করে জানিয়ে দেয়। আজ সেটাও করেনি।

নিজেই ফোন করার জন্য সেলফোনের সন্ধানে আশেপাশে খোঁজ করতেই মনে পড়লো নুবাইদ, উমায়ের আর নাযীব কে ঘুম পাড়ানোর সময় একবার এক ফ্রেন্ডের, আরেকবার ছোটমামার ফোন এসেছিল। তিন পুত্র মিলে তখন স্বাতীর কাছ থেকেও সেলফোন ছিনিয়ে নিয়ে বন্ধ করে রেখে দিয়েছিল ওদের টেবিলের ড্রয়ারে। মাকে কিছু সময় ওরা কারো সাথে শেয়ার করতে চায়না। ঘুমের সময়টা তারমধ্যে অন্যতম।

নাযীবের কথা মনে পড়তেই হেসে ফেললো স্বাতী। বয়স ছয় বছর হয়ে গেলেও এখনো কিছু কিছু শব্দ সঠিক ভাবে উচ্চারণ করতে পারে না নাযীব। এই যেমন “র” কে সবসময়ই “ল” উচ্চারণ করে। পরাপর দু’বার ফোন আসাতে ভয় দেখানো সূচক কন্ঠে বড় বড় চোখ করে স্বাতীকে উদ্দেশ্যে করে নাযীব বলেছিল, এক্ষুণি তোমাল মোবাইল বন্ধ কলে আমাল কাছে দাও। নয়তো কিন্তু তোমাল মোবাইল কমোডে ফেলে ফ্ল্যাশ কলে দেবো। স্বাতী সাথে সাথে বাধ্য মাতার মতো সেলফোন বন্ধ করে দিয়ে দিয়েছিল পুত্রদের কাছে। কিন্তু ওদেরকে ঘুম পাড়িয়ে রুমে আসার সময় সেলফোনের কথা মনেই ছিল না। আরভ নিশ্চয়ই ফোন করেছে। সেলফোন বন্ধ থাকার কারণে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। বাচ্চাদের নিয়ে ব্যস্ত আছে ভেবে হয়তো ল্যান্ড লাইনেও কল দেয়নি। আজকের মতো লেখাতে সমাপ্তি টেনে ল্যাপটপ বন্ধ করে বাচ্চাদের রুমে রওনা দিলো স্বাতী।

দূর থেকে হাসির শব্দ শুনতে পেয়ে থমকে দাঁড়িয়ে গেলো স্বাতী। এতরাতে শ্বশুর সাহেবের এমন প্রাণখোলা হাসির কারণ একটাই হতে পারে। শ্বশুর সাহেব তাঁর প্রাণপ্রিয় বড় পুত্রের সাথে গল্প করছেন। তারমানে আরভ বাড়িতে ফিরে বাবার সাথে গল্পে মশগুল হয়েছে। এটা অবশ্য নতুন কিছু না। একবার নাতী-নাতনীদের আসরে পৌঁছে গেলে পুত্রকে যে আর কাছে পাওয়া যাবে না এতদিনে খুব ভালো করেই বোঝা হয়ে গিয়েছে রায়হান সাহেবের। তাই গল্পের ইচ্ছে থাকলে আরভ বাড়িতে ফেরার সময় হলেই বাগানে গিয়ে বসে থাকেন। তা না হলে ছেলের সাথে কথা বলতে চাইলেও নাতীদের হাজারটা প্রশ্নের জবাব দিতে হয় তাকে। বিশেষ করে নাযীবের। চোখ বড় বড় করে ব্যারিস্টার সাহেব স্টাইলে নাযীব একের পর প্রশ্ন করতেই থাকে। কেন তুমি আমাল পাপাল সাথে কথা বলবে? তুমি দেখছো না পাপা আমাদেল সাথে খেলা কলছে? কেন আমাদেল কে বিলক্ত কলছো? আমাল পাপাল সাথে তোমালে কথা বলতে দেবো না। কথা বললে তোমালে কামল দেবো। দুইটা কামল দেবো। কামড় দেবার হুমকিটা নাযীবের একমাত্র অস্ত্র। এই অস্ত্রবলে নিজের মরজি প্রতিষ্ঠিত করে বাড়ির সবার উপরে। বাড়ির সবাই তাই সম্মিলিত ভাবে নাযীবের নাম রেখেছে “কামল বাবা”। কামল বাবার দুষ্টু-মিষ্টি কথা ও কর্মের স্মরণে অন্য আর সব ভাবনা বিস্মৃত হয়ে গেলো স্বাতীর মন থেকে। ঘুমন্ত বাব্বুটাকে দেখার ও আদর করার জন্য বাচ্চাদের রুমের দিকে ছুটলো।

চলবে…

পর্ব-২

 

নারীদের মলদ্বারের রোগঃ এনাল ফিসার, পাইলস, ফিস্টুল

ডা. মিথিলা ফেরদৌস


এক, দুই তারিখ ব্যাক্তিগত কাজে ছুটি নিয়েছিলাম। তিন তারিখে অফিসে গিয়ে দেখি দরজার সামনে কয়জন মহিলা দাঁড়ায় আছে। আমি অফিস গিয়ে নাস্তা করে রুগী দেখতে বসি। কিন্তু এটেন্ডেন্ট বলল ম্যাডাম এই কয়জনকে একটু দেখে দেন। এরা কয়েকদিন হলো ঘুরতেছে। কি আর করা।
প্রথমজনকে ডাকলাম। পুরান রুগী।গাজিপুর থেকে কয়দিন এসে ঘুরে গেছে।আমি অবাক বললাম ‘কেনো অন্য ডাক্তার ছিলো তো? ‘বলে ‘না,আপনার চিকিৎসায় আমার ব্রেস্টের সমস্যাটা ভালো হইছে, তাই আপনাকেই দেখাবো বলে আসছি। ‘এরপর আর কি বলবো। মন ভাল হয় এমন শুনলে। অন্য সমস্যা শুনে চিকিৎসা দিয়ে বিদায় দিলাম। পরেরজনকে পাঠাইছে আরেকজন রুগী। সেই রুগীর যে সমস্যা ছিল, একই সমস্যা তাই সে আমার নাম ধাম দিয়ে আমার হাসপাতালে আমার কাছে পাঠাইছে। সেও দূর থেকেই আসা।পর পর এমন কয় টা রুগী দেখলাম।প্রথমেই মন ভাল হয়ে গেলো। সবাই যে আমাকে পছন্দ করে তা না। সবার মন রক্ষা করা সম্ভবও হয় না। এত রুগী থাকে। তাদের অনেক গল্প থাকে। তারা তা বলতে চায়। কিন্তু শোনার সময় থাকেনা।তাই বাইরে গিয়ে কিছু শুনায় দিয়েও যায়।সরকারী হাসপাতালের ডাক্তারের ব্যবহার খারাপ কমন কথা। তবে ১০% ও যদি খুশি হয় তাহলেও মন ভালো হয়ে যায়।

আমার রুগী বেশির ভাগ মহিলা। তাদের ৪০% ব্রেস্ট এর,৪০% পায়খানার রাস্তার সমস্যা। আর ২০% অন্যান্য। ব্রেস্ট নিয়ে কিছু বলেছি আজ বলবো পায়খানার রাস্তার মেয়েদের সমস্যা।

যদিও পায়খানার রাস্তার সমস্যা দেখার জন্যে আলাদা জায়গা আছে, সেখানে পরিক্ষা নিরীক্ষা করে চিকিৎসা দেয়া হয়।তারপর ও প্রাথমিক যেসব চিকিৎসা দেয়া যায় সেই গুলা আমি দিয়ে থাকি।

তবে যেহেতু সার্জারিতে চার বছরের ট্রেনিং আছে এ সম্পর্কে আমার প্রচুর অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে আমি যে স্যারের ট্রেনি ছিলাম। উনি ব্রেস্ট আর পাইলস ফিসচুলা মেয়েদের ছেড়ে দিতেন। ‘তোদের তো এইগুলা করেই খেতে হবে’ এই বলে। তাই প্রচুর ব্রেস্ট আর এনাল কেস অপারেশান করার সুযোগ হয়েছে।আর তাদের অনেক দুক্ষের কথাও জেনেছি। এই জন্যে আমি শ্রদ্ধেয় স্যারের কাছে কৃতজ্ঞ।

তাই এ ব্যাপারে কিছু কথা বলতে চাই।মেয়েদের মুল যে সমস্যা, তা হলো কন্সটিপেসান। আর বেশি লজ্জার কারণে প্রাথমিক অবস্থায় তারা ডাক্তারের কাছে যেতে চায় না। ফলে রোগ গাড়ায় নিয়ে আসে। হাসপাতালে এসেও খোঁজে মহিলা ডাক্তার আছে কিনা? না হলে কবিরাজি।এই কবিরাজি যে কি ভয়ংকর তা আমি অনেক দেখেছি।

আমার মনে আছে, একবার এক মহিলার অপারেশান করার সময় তার পায়খানার রাস্তার মাংস খুলে খুলে আসতেছিলো।পুরা পায়খানার রাস্তায় দগদগে ঘা।পায়খানার রাস্তায় যন্ত্র কেন একটা আঙুল দিতে পারতেছিলাম না। অনেক কষ্টে তার পায়খানার রাস্তা বড় করে নতুন করে তৈরি করে দিয়ে আসতে হইছে। এই মহিলা আমার কাছে অনেকদিন পর অনেকদুর থেকে দেখা করতে এসে আমাকে টাকা দিচ্ছিলো, আমি রেগে গিয়েছিলাম ‘টাকা কেনো? ‘সে বলে ‘মা তুমি আমার মেয়ের মত আমি অনেকদুর থেকে আসছি তোমাকে বলতে আমি খুব কষ্টে ছিলাম, এখন আরাম পাইছি’। আমি বললাম ‘দোয়া করেন মা। ‘আমার এখনও মনে আছে মহিলা কাঁদতে কাঁদতে সূরা পড়ছিলো আর মাথায় গায়ে হাত দিয়ে ফু দিয়েছিলো। আমি অভিভুত,আপ্লুত। মাঝে মাঝে এইসবের জন্যে মনে হয় ডাক্তার হওয়া স্বার্থক।

জীবনে এমন অনেক সুখের স্মৃতি আছে আমার। সেইসব বলে বিরক্ত করবোনা।

পায়খানার রাস্তার সমস্যার উপসর্গ হলোঃ

শক্ত পায়খানা,
ফলে রক্তপরা,ব্যাথা, চুলকানো,বাড়তি চামড়া ঝুলে থাকা, কিছু বের হয়ে আসা ইত্যাদি। এছাড়া পায়খানার রাস্তার আসে পাশে ফোঁড়া হয়ে ফেটে যায়, অপরিচ্ছন্নতার কারনে। তারপর তারা কোন ডাক্তারে শরনাপন্ন হয় না, যার ফলে এই ফোঁড়া অনেক ভিতরে চলে যায়। একে বলে ফিস্টুলা। কখনও কখনও অনেক বড় অপারেশান লাগে এই জন্যে।

এছাড়া হিমোরয়েড বা পাইলস একটি কমন সমস্যা। এতেও যদি প্রাথমিক অবস্থায় কেউ আসে। ডায়েট, ড্রাগ দিয়ে সারানো সম্ভব।

সবচেয়ে কমন যে সমস্যা, তাহলো ফিসার বা পায়খানার রাস্তা ফেটে যাওয়া, এইটা খুব পেইনফুল। সাধারণত বাচ্চা হবার পর অনেক মেয়ের এই সমস্যা হয়।প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা করলে ভাল হয়ে যায়। না হলে ঘা হতে হতে একসময় পায়খানার রাস্তা ছোট হয়ে যায়। তখন অপারেশান ছাড়া এর চিকিৎসা করা সম্ভব হয় না। আমি বেশির ভাগ রুগীর পায়খানার রাস্তা ছোট করে নিয়ে আসা দেখেছি। কারণ ইনডোরে কাজ করলে এইসব বেশি দেখা যায়।

এছাড়া পায়খানার রাস্তা বের হয়ে যাওয়া বা প্রোলাপ্স, ক্যান্সার, পলিপ(বংশগত ক্ষেত্রে ক্যান্সারে রুপ নেয়), পায়খানার রাস্তা প্রস্রাবের রাস্তার সঙ্গে লেগে যাওয়া(দাই দিয়ে বাচ্চা হবার ক্ষেত্রে টানা হেচড়ায়)। অনেকে সিজারের বিপক্ষে অনেক কথা বললেও আমি বলবো আমি এ ক্ষেত্রে সিজারের পক্ষেই অবস্থান নিতে চাই।

পায়খানার রাস্তার সমস্যা মেয়েদের বেশি হয় কারণ, তাদের লজ্জার জন্যে রোগের বারোটা বাজায় তারপর ডাক্তাদের কাছে যায়। সবচেয়ে বড় কথা সচেতনতা।

ডাক্তারদের ক্ষেত্রে কেনো ছেলে মেয়ে বিচার করতে হবে? এইটা,শরীরের একটা অংশ। এতে লজ্জার কিছু নাই। তবুও যদি লজ্জাই পান তাহলে বলবো দেশে এখন মোটামুটি সব জেলায় মহিলা সার্জন আছে। খোঁজ নিয়ে তাকে দেখান। তবুও রোগ নিয়ে বসে থাকবেন না বা কবিরাজি করবেন না। আরও আশার কথা দেশে খুব কম হলেও কলোরেক্টাল মহিলা সার্জন আছেন। অদূর ভবিষ্যতে আরও অনেকেই আসবেন ইনশাআল্লাহ।

বেশি করে পানি খাবেন, শাক সবজি খাবেন। পায়খানা নরম রাখবেন আর পায়খানার রাস্তার কোন সমস্যা হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।আপনাদের সুস্থতাই আমার কাম্য।

 

নি‌জের জানটা আগলা

হাবীবাহ্ নাসরীন


 

সব দেখেশুনে চুপ হয়ে যা, কথা কস না ‌রে পাগলা
যে মরে মরুক, তুই বেঁচে থাক, নিজের জানটা আগলা!

ভাই লাথি খাক, বোন ঘুষি খাক, তুই খাবি মাছ গোশতো
ছোটাছুটি বাদ, মরিবার সাধ? চুপ হয়ে তুই বোস তো!

একটা সাধের প্রাণ পেয়েছিস বেঁচে থাকবার সম্বল
সেটিও খোয়ালে তুই ভেবে বল কার তাতে হবে মঙ্গল!

তিনবেলা খাস, চুল আঁচড়াস, ভদ্রলোকের কারবার
দ্যাখ ফুটবল, গা বাঁচিয়ে চল, দেশ পুড়ে হোক ছাড়খার!

জেগে থেকে আর লাভ কী রে বল, ঘুমালে তবেই হবে ভোর,
গুম হয়ে যাবি নাকি রে ঘুমিয়ে- সিদ্ধান্তটা শুধু তোর।

 

“স্বাতীর রঙধনু” (শিশুদের মনোজগত ভ্রমণ) পর্ব-২

আফরোজা  হাসান


নিজ জীবনের আলোকে, আমার বেড়ে ওঠার পরিবেশ থেকে বুঝেছি শরীয়তের বিধান সমূহকে জীবন ধারণের অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মতোই দেখতে হবে। অর্থাৎ, ক্ষুধা লাগলে যেমন খাদ্যের সন্ধানে যাই, ঘুম পেলে যেমন ঘুমোতে যাই, আযান শুনলে তেমন নামায পড়তে যাবো। এখানে স্পেশাল বলে কিছু নেই। খাদ্য আর ঘুমের অভাবে যেমন আমার শরীর ঝিমিয়ে যাবে, নামাযের অভাবে ঝিমিয়ে যাবে আত্মা। আর সুস্থ জীবন যাপনের জন্য শরীর ও আত্মা দুটোই চনমনে থাকা প্রয়োজন।

আমার প্রতিটা সন্তানেরই নিজস্ব একটা করে স্বপ্ন আছে তাদের নিজ নিজ জীবনকে ঘিরে। যে কোন কাজই ওদেরকে দিয়ে করিয়ে নেয়া যায় শুধুমাত্র তাদের স্বপ্নটা মনে করিয়ে দিলে। আমি আর ওদের বাবা শুধু ভালোবাসা আর আদর দিয়ে ওদের মনে আরেকটা স্বপ্ন গেঁথে দিয়েছি। তবে শুধু মুখে বলে না স্বপ্নটা গেঁথে দিয়েছি আমাদের কথা, কাজ, আচার-ব্যবহার দ্বারা। মুখে সারাক্ষন উপদেশ পরামর্শ দিতে আমরা নারাজ। এতে বাচ্চারা বিরক্তও হয় মনে মনে। আমরা তাই করে দেখানোতে বিশ্বাসী। বাচ্চাদের ঘুম থেকে উঠানোর সময় জড়িয়ে ধরে আদর আর শুভ সকাল বলার আগে সালাম দিতে কখনই ভুল করিনা আমরা। আস্তে আস্তে ওরা বুঝে নিয়েছে ঘুম থেকে উঠার পর সালাম দেয়াটাই ওদের প্রথম করণীয়।

আলহামদুলিল্লাহ! আমাদের পরিবারের সবার জীবনের প্রতিটা সকাল একে অপরের কল্যাণ কামনার মধ্যে দিয়েই শুরু হয়। ঠিক একই ভাবে খাবার আগে বিসমিল্লাহ বলে, খাবার শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলে, কোন কাজ করার চিন্তা করলে ইনশাআল্লাহ বলে, বিস্ময় বা মুগ্ধতা প্রকাশে সুবহানাল্লাহ বলে বলেই আমরা বাচ্চাদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছি ওদের করণীয়। বার বার বলার চেয়ে আসলে নিজে করে দেখানোটাই অনেক বেশি সহজ। আর বাচ্চারা যেহেতু স্বভাবতই অনুকরণ প্রিয় তাই এভাবে শেখালে নতুন কিছু শিখছে ভেবে আরেকটা বোঝা ভাবারও সুযোগ থাকে না। এভাবেই আমরা অনেক কিছু শিখিয়ে ফেলতে পারি বাচ্চাদের খুব সহজেই। নিত্য প্রয়োজনীয় দোয়া গুলোও এভাবে শিখিয়ে ফেলা যায়। খুব অল্প সময়েই আমার বাচ্চারা নিত্য প্রয়োজনীয় সব গুলো দোয়া মুখস্থ করে নিয়েছিল। অথচ টেরই পায়নি আমরা ওদেরকে দিয়ে স্পেশ্যাল কিছু করিয়ে নিচ্ছি।

শিশুর আয়না বা রোল মডেল হল তার বাবা-মা। শিশু তার বাবা-মাকে দেখতে দেখতে এবং অনুকরণ করে বেড়ে ওঠে। তাই আমরা নিজেরা ভালো মানুষ না হলে আমাদের বাচ্চারাও ভালো মানুষ হবেনা। সৌভাগ্য গুনে যদি হয়েও যায় প্রতিকূল পরিবেশে গেলেই তার মধ্যের প্রবৃত্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। যেহেতু গড়ে ওঠার পথটা ইতিবাচক ছিলনা তাই নেতিবাচক চিন্তাটাই তাদের মনে আগে দোলা দেয়। চাঁদ দেখলে মুগ্ধ হবার বদলে নিজের অজান্তেই তারা চাঁদের দাগ খুঁজতে শুরু করে। কারন চলার পথে তারা শেখেনি যে পৃথিবীতে নিখুঁত বলে যেহেতু কিছু নেই, কেউ নেই সেহেতু জীবনের সার্থকতা দাগকে এড়িয়ে যাওয়া কিংবা ক্ষমা করে দেবার মধ্যেই। শিশুর আত্মিক বিকাশে মুখ্য ভূমিকা পরিবার -কেই পালন করতে হয়।
পরিবার যদি আত্মিক বিকাশের পথকে সুগম করে দিতে পারে, তাহলেই সম্ভব হয় শিশুর আত্মার বিকাশ। তবে এর সাথে সাথে ছোটবেলা থেকেই শিশুকে দায়িত্বশীল ও সচেতন হিসেবেও গড়ে তুলতে হবে। কেননা আত্মিক বিকাশের মূল দায়িত্ব ব্যক্তিকেই পালন করতে হয়। যেমন, কোন একটি বাগানের মালী পানি দিয়ে সার দিয়ে যত্ন করে বাগানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে পারে, কিন্তু মালী চাইলেই ফুল ফোটাতে পারেনা। তাই ভালো-মন্দ, কল্যাণ-অকল্যাণ, দোষ-গুণের মধ্যে যাতে পার্থক্য নির্নয় করতে পারে সে শিক্ষাও ছোটবেলা থেকেই দিতে হবে শিশুকে। যাতে জীবনে চলার পথে নিজ বিবেচনার দ্বারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। শিশু তার আশেপাশের প্রতিটা ঘটনা থেকে প্রতিনিয়ত শিক্ষা গ্রহণ করতে থাকে। শুধু তার সাথে অন্যদের সম্পর্ক বা আচরণ থেকেই নয় বরং তার আশেপাশের মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক থেকেও সে শেখে। তাই বাবা-মা ছাড়াও পরিবারের অন্যান্য সদস্য, আশেপাশের মানুষজন, এমনকি স্কুলের পরিবেশও শিশুর চাল-চলন, আচার-আচরণ, কথাবার্তাকে প্রভাবিত করে। প্রভাবিত করে তার গ্রহণ-বর্জন ক্ষমতাকেও।

চলবে….

পর্ব -১

 

আমার বই পড়া (শেষ পর্ব)

রায়হান আতাহার


ছোটবেলা থেকে বইয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল। পড়তে ভালোবাসতাম। নতুন বই পেলেই পড়ার জন্য উশখুশ করতাম। সেই আমি হঠাৎ করে বইয়ের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেললাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার সময় এত পড়ার চাপ ছিল যে, এরপর থেকে বই দেখলেই কেন যেন অভক্তি কাজ করতো। একেবারে না পড়লে নয়, ওটুকুই পড়তাম পরীক্ষা পাশের জন্য। পাঠ্যবইয়ের বাইরে অন্য বই বলতে গেলে পড়াই হত না। এই সময়টাতে যা পড়েছি তার একটা বড় অংশজুড়ে ছিল স্যার হেনরি রাইডার হ্যাগার্ডের বই। টানা বেশ কয়েকটা বই পড়েছি তাঁর। লেখাগুলো ভালো লাগতো। কিন্তু নেশা তৈরি করতে পারেনি।

ফেসবুকিং আর মুভি দেখে সময় পার করে দিচ্ছিলাম। এমন সময় বইপড়ুয়া কিছু মানুষের সান্নিধ্য পেলাম। তাদের বই পড়া, বই নিয়ে আলোচনা, ফেসবুকে পোস্ট দেখে বই পড়ার আগ্রহ আবার ফেরত আসলো। আমি বিশ্বাস করি, বই পড়তে দেখলে ও বই পড়ুয়াদের সান্নিধ্যে থাকলে বই পড়ার স্পৃহা তৈরি হয়। আমার মাঝেও তাই হয়েছিলো।

নতুন করে বই পড়ার প্রতি আগ্রহ জন্মানোর পর বইয়ের প্রতি আমি বলতে গেলে সর্বভুক হয়ে গেলাম। সবার লেখাই পড়তে ভালো লাগতো। এর মাঝে পরিচয় হয়ে গেল আহমদ ছফার সাথে। বাংলাদেশের সবচেয়ে আন্ডাররেটেড লেখকদের তালিকা তৈরি করলে আহমদ ছফার নাম প্রথমে থাকবে। তাঁর লেখা প্রথম যে বইটি পড়েছি, তা হলো ‘যদ্যপি আমার গুরু’। ছফা ও প্রফেসর আবদুর রাজ্জাকের সাথে পরিচয় হবার পর নিজের মাঝে পরিবর্তন আবিষ্কার করতে লাগলাম। ছফার আরো কিছু বই পড়েছি এবং এখনো পড়ছি। প্রতিটি লেখাতেই মুগ্ধতা ছড়িয়ে গেছেন প্রিয় এই লেখক।

আহমদ ছফার লেখার প্রতি ভালোলাগার পাশাপাশি আরো কিছু লেখকদের বই পড়েছি এবং এখনো পড়ছি। বই পড়ার ক্ষেত্রে আমার প্রাথমিক লক্ষ্য হলো, সেরা লেখকদের সেরা বইগুলো পড়ে ফেলা। নতুন-পুরাতন সবার সেরা বইগুলোর নাম দিয়ে একটি ‘বাকেট লিস্ট’ বানানো আছে আমার। ভালো কোন বইয়ের সন্ধান পেলেই ঐ লিস্টে যোগ করে রাখি। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘কবি’ উপন্যাসে আক্ষেপ করে লিখেছিলেন, “হায়, জীবন এত ছোট কেনে?” বই পড়ার ক্ষেত্রে এ কথাটি আরো বেশি প্রযোজ্য। জানি না, তালিকার কত ভাগ বই পড়তে পারবো।
তবে জীবনের শেষভাগে এটুকু তৃপ্তি পেতে চাই যে ভালো কিছু বই সংগ্রহ করেছি ও পড়েছি। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে বই পড়ার নেশা ধরিয়ে দিয়ে যেতে পারলে জীবনের চাওয়া-পাওয়ার একটি বড় অংশ পূরণ হবে। সৃষ্টিকর্তা মনের ইচ্ছা পূরণ করুন।

Raihan Atahar
Postgraduate Researcher at Bernal Institute
Material and Metallurgical Engineering at BUET

 

ফাল্গুন

নিবরাজ জাহান হুজায়রা


বিসমিললাহ্ হির রহমানির রহিম, আসসালামুয়ালাইকুম সন্মানিত ভাই ও বোনেরা যাত্রা পথে আপনারা নিরাপদ ভাবে বাড়ীতে পৌঁছে যান এই কামনায় শুরু করছি। এই যে দেখছেন আমার কাছে একটা কলম এটা যে সে কলম নয় এর এক দিকে কালো কালি অন্যদিকে লাল কালি, এই একটি কলম বাইরে থেকে কিনলে দাম পড়বে ৫০ টাকা, কোমপানি দিবে ৩০ টাকা আর আমার থেকে কিনলে দাম পড়বে মাত্র ১০ টাকা,১০ টাকা !!আপনার সোনামণির জন্য একটা কিনে নিয়ে যান” এই কথা গুলো নিত্য শুনতে শুনতে মুখস্থ হয়ে গেছে সুষমার,সুষমা ভাবে এরা প্রতিদিন কত টাকার কলম বিক্রি করে?
সুষমার ভাবনার মধ্যে ছেদ পরে পাশের খালাম্মা গোছের এক মহিলা দাঁড়িয়ে থাকতে ব্যালানস করতে অসুবিধা হচেছ তাই উনার কুনুইয়ের গুতো খেয়ে সুষমা বাস্তবে ফিরে এল খালাম্মা ওর দিকে তাকিয়ে একটা ফিকে হাসি দিলেন। সুষমা লক্ষ্য করল ওদের সামনেই দুই হাতের কর ভরে লাল মেহেদি দিয়ে এক তামাটে রং এর যুবক ৩২টা দাঁত বের করে জনৈক মেয়ের সাথে বাজে রসিকতা করছে অথচ এক বারের জন্য ভাবছে না মার বয়সী এই মহিলাকে বসতে দেয়া ওর সামাজিক দায়িত্ব। সুষমা বাসের ভেতরেই একটা টিপ্পনিও শুনতে পেল, একটা অল্প বয়সী মেয়ে বেশ বুঝা যাচেছ বাসে উঠার পূর্ব অভিজ্ঞতা তার নেই, তাই ইচ্ছাকৃত বিশেষ অজ্ঞের খোঁচার থেকে বাঁচতে একটা আর্তনাদ করে উঠেছিল,ব্যাস আর যায় কোথায়,অমনি ২জন সম-স্বরের চেঁচিয়ি উঠল, এত বড়লোকি তো বাসে কেন পেরাইভেটে চড়লেই তো হয়, ২ জনেই এই কথা বলে সেকি বীভৎস হাসি, বেচারা অপমানে লাল হয়ে চোখের পানি সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। সুষমা শাহবাগ থেকে রামপুরা যাবে মোঘোল আমলে বাসে চড়েছে এখনও ৭১ সালেই এসে পৌছায়নি কখন ২০১৮ তে আসবে তার হিসাব খোদ ড্রাইভার সাহেবও বলতে পারেননা…… আর সিট তো সোনার হরিণ, সুষমাতো মাকে বলেছিল নামায পড়ে ওর জন্য দোয়া করতে একটা সিট যেন ও পায় কিন্তু বিধি বাম, যখন বাসে উঠেও দেখতে পায় কোন জনৈক সৌভাগ্যবান জানালার ধারে বসে মহা সুখে ঘুমাতে ঘুমাতে পরে যাচেছ তখন সত্যি সুষমার রাগ, হিংসা কান্না সব এক সাথে পায়।
জোরে ব্রেক করে বাস এসে থামল কাকরাইল স্টপেজে, ওমনি হুরমুর করে অনেকের সাথে সুষমাও নিজেকে সামলে নিল পরে যাবার থেকে। কেউ ধাক্কা দিতে দিতে এবং ধাক্কা খেতে খেতে নামল, উঠল। এই ফাঁকেই শুরু হয়ে গেল মিউজিক্যাল চেয়ার খেলা এবার সুষমা জিতে গেল, বসতে পারল সোনার হরিণ নামক সিটে, ওখানে আগে থেকেই একজন বসে ছিল এবার আরেক যাত্রী উঠল (বয়স আনুমানিক ৩৫/৩৭ হবে) পাশেই হেল্পপারের সাথে এক কলেজ ড্রেস পরা ছেলের সাথে বেশ গরম কথাবার্তা চলছে হাফ পাশ আছে কি নেই তা নিয়ে। ২০ টাকা ভাড়া ৮ টাকায় রফা হলো, এবার এলো সুষমাদের দিকে নতুন যাত্রীকে হেলপার বলল আনটি বাড়াডা……
বোমটা ফাটল এখন, উনি ২৫ টাকার ভাড়া মেটালেন ৫ টাকা দিয়ে, হেল্পার তেড়ে প্রশ্ন করল কই যাবেন,;উনি তার চাইতে ক্ষিপ্র গতিতে উত্তর দিলেন কি মনে করছ আমরা হিসটুডেনট(student)।হেল্পার বেচারা খুবই কমজোরি গলায় বলল “এ্যাঁ!!” উনি আবার বলে উঠলেন হ্যাঁ, আমরা হিসটুডেনট আমাদের বাড়া এডাই। হেল্পার কোন কথা না বলে ওই ৫ টাকা নিয়ে ওই স্থান ত্যাগ করল। এবার মৌচাক থেকে একজন মেয়ে উঠল, উঠেই সুষমার পাশে বসে থাকা যাত্রীকে খুবই করুণ স্বরে অনুরোধ করল, আপু আমার মোবাইলে কোন ব্যালানস নেই একটা ইমার্জেনসি কল করা যাবে? মহিলা সাথে সাথে ফোনটাএগিয়ে দিল মেয়েটাকে। সে ফোনে বলে উঠল” আসসালামুয়ালাইকুম হ্যাঁ, আব্বা আইসেননি বাসায়, হুনেন আমি মাছ রান্না করচি আপনের কিছু করন লাগব না শুধু বাতটা বসাই দেন, ইছ মিষ্টি কোমবা(কুমড়া) আমি খাই না আননে খাইলে রানদেন, আমি আসি খাট্টা(টক)রান্না করি দিব” ইমার্জেনসি কলের নামে বাপ-মেয়েতে এমন আলাপ চারিতায় জনৈক ভদ্রমহিলা রীতিমত কাঁদো কাঁদো চেহারা করে সুষমার দিকে চাইল………।
এগুলো সুষমা প্রতিদিনই দেখে
যখন বাসে চড়ত না তখন ফাল্গুন নামটা দেখে সুষমা আপন মনে গুনগুনি উঠত,’
কেউ বলে ফাল্গুন, কেউ বলে পলাশের মাস……।
আমার সর্বানাশ…’এখন সুষমা মিলিয়ে দেখে আসলেই তো সর্বনাশ, না সর্বনাশও ঠিক ক না এই ফাল্গুন বাসে না উঠলে জীবনের এই দিকটা সম্পর্কে, এত বিচিত্র মানসিকতা সম্পর্কে একদম অজানা থেকে যেত। জীবনের সব কষ্ট থেকেও শেখার আছে।

নিবরাজ জাহান হুজায়রা
কাউন্সিলিং সাইকোলজিষ্ট

 

“স্বাতীর রঙধনু”-(শিশুদের মনোজগত ভ্রমণ)পর্ব-১

আফরোজা হাসান


বাচ্চাদের মধ্যে মূল্যবোধ থেকে নিয়ে শুরু করে ধর্মবোধ সবকিছু ঢোকানো ই অনেক বেশি সহজ। কারন বাচ্চারা একটা কথা শুনেই বিচার করতে বসে যায়না। যুক্তি-তর্ক বা অভিজ্ঞতার আলোকে যাচাই করতে চায়না। দোষ-গুনও মাপতে বসেনা। শুধু একটু কষ্ট করে ওদের বুঝিয়ে বলতে পারলেই ওরা মেনে নেয় এবং সর্বাত্মক চেষ্টা করে সে মতো কাজ করার। কখনোই বড়দের মত জাজমেন্টাল হয়ে সব কথার পেছনে “কিন্তু” খোঁজে না। সুন্দর করে কিছু বললে ওরা মুগ্ধ হয়, কখনোই ভাবেনা যে এত সুন্দর করে কথা বলছে “রহস্যটা” কি? যে কথা শুনে একটা শিশু চোখ বড় বড় করে আগ্রহ নিয়ে তাকায়, একই কথা বয়স্ক কাউকে বলতে গেলে চোখ সরু করে তাকায়। বাচ্চারা অতিরিক্ত আন্তরিকতা দেখলে খুশি হয় আর বড়রা সন্দেহে পরে যায় আন্তরিকতার পেছনে কোন “উদ্দেশ্য” আছে কিনা ভেবে। সুন্দর কোন পরামর্শ দিলে ছোটরা মুখভরা হাসি দিয়ে ধন্যবাদ জানায় আর বড়রা ভাবে নিজের “জ্ঞান” জাহির করতে এসেছে। না আমি ছোটদের প্রশংসা আর বড়দের সমালোচনা করতে লিখছিনা। বাচ্চাদের সাথে প্রচুর সময় কাটানোর ফলে এই পার্থক্য গুলো নজরে পড়েছে। আমাকে একজন পরামর্শ দিয়েছিলেন-“ ঘরে বসে কেউ যদি শুদ্ধ মানুষ হতে চায় তার উচিত বাচ্চাদের সাথে সময় কাটানো। সমাজকে পরিবর্তন করতে চাইলে তার উচিত বাচ্চাদের নিয়ে কার্যক্রম শুরু করা। কারো জীবনের স্বপ্ন যদি থাকে একজন মানুষকে হলেও আলোকিত করবে তার উচিত একটা বাচ্চাকেই বেছে নেয়া। কারন বাচ্চারা জার্জ হয়ে বিচার করতে বসবেনা, সমালোচক হয়ে সমালোচনা করবেনা। বাচ্চাদের মন যেহেতু পবিত্র নিন্দা, গীবত বা অপবাদের স্বীকারও হতে হবেনা।” এখন বড় হয়ে তো আর কেউ জন্মগ্রহন করেনা। এরঅর্থ হচ্ছে বাচ্চা থেকে বড় হবার পথে হাঁটতে হাঁটতে শুদ্ধতা হারায় একজন মানুষ।

একটি শিশু যাতে বড় হয়ে একজন আদর্শ মানুষ হতে পারে তারজন্য সবচেয়ে জরুরি সঠিক অভিভাবকত্ব। একমাত্র সঠিক অভিভাবকত্বই পারে একটি শিশুকে সত্যিকার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলে তাকে সুখী সুন্দর এবং উন্নত জীবনবোধ দিতে। শিশুকে গড়ে তোলার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ জীবনের প্রথম ৫-৬টি বছর। গবেষণার দ্বারা এটা প্রমাণিত যে ৪-৬ বছর বয়সে একটি শিশু নিজেকে নিয়ন্ত্রণের যে দক্ষতা অর্জন করে তাঁর উপর নির্ভর করেই পরবর্তিতে পরিচালিত হয় তাঁর জীবনের গতিপথ। শিশুর জন্মের প্রথম ৫-৬টি বছর যেহেতু বাবা-মাই থাকে তার সব। সুতরাং তারাই পারেন তাদের শিশুকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে এবং এই মূল্যায়নটুকুই শিশু সারাজীবন বহন করবে। সাধারণত এতো ছোট বয়সে শিশুদের পরিকল্পনা মাফিক কিছু শেখানো হয়না। অথচ এই বয়সেই শিশুরা শেখে সবচেয়ে বেশি। আবার যারা পরিকল্পনা মাফিক শেখাতে চেষ্টা করেন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের পরিকল্পনাটা বাচ্চাদের জন্য খুব বেশি কষ্টকর হয়ে যায়। যার ফলে পরিকল্পনা থাকলেও তা থেকে শিশু বা অভিভাবক কেউই তেমন উপকৃত হতে পারেননা। তাই বুদ্ধিমান অভিভাবক হচ্ছেন তারাই যারা বাচ্চার ধারণ ক্ষমতার কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন কৌশলে প্রয়োজনীয় শিক্ষার মাধ্যমে বাচ্চাকে গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করে। আমি খুব বেশি জানিনা। আমার জীবনের গণ্ডিটাও খুব ছোট। কিন্তু একজন আদর্শ মা হতে চাই। এমন সন্তানের মা বিচার দিবসে যার কাছ থেকে আমাকে পালাতে হবেনা। কি কষ্ট একটা শিশুকে অচেনা অজানা একটা জগত থেকে পৃথিবীতে নিয়ে আসা তা বাবা-মা দুজনেই জানেন। আমি একজনকে ক্রেডিট দিতে চাইনা। কারন আমাদের প্রতিটা সন্তানের জন্মের পর আমার মতোই কষ্ট স্বীকার করতে ওদের বাবাকেও দেখেছি। কত আদর কত ভালোবাসায় কত যত্নে আমরা গড়ে তুলি একটি সন্তানকে। যে সন্তানের সামান্য একটু জ্বর হলে সারারাত ঘুমোতে পারিনা। তাকে আগুনে জ্বলতে কিভাবে দেখবো আমি? পরকালে নিজের চিন্তায় নাহয় ভুলে যাব মাতৃত্বকে কিন্তু এখন?

আমার সন্তানরা যাতে ছোট থেকে বড় হবার পথে নিজের শুদ্ধতাকে হারিয়ে না ফেলে তার খেয়াল রাখার দায়িত্ব তো আমার। এখন তো “অবুঝ” ভেবে আমরা বাচ্চাদের গড়ার সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন সময়টাকে হেলায় খেলায় চলে যেতে দেই। নিজেকে দিয়েই ভাবি বিশ বছর আগে বাবার কথা কত সুন্দর মনে হতো আর মেনেও নিতাম বিনা দ্বিধায়। মেনে চলতে চেষ্টা করতাম আপ্রাণ। কিন্তু এখন বাবা কিছু বললে যাচাই করতে লেগে যাই। দুই বছর আগে আমার পাঁচ বছর বয়সি ছেলেটাকে নতুন কিছু শেখানো যতটা সহজ ছিল এখন আর তা নেই। সাত বছরের ছেলেটার যুক্তি শুনে অবাক না হয়ে পারিনা মাঝে মাঝে। একেকটা দম্পতি তাদের সন্তানকে একেক ভাবে একেক আদর্শে গড়ে তুলতে চান। নিজে মুসলিম হবার কারনে আমি চাই আমার সন্তানকে ইসলামের আলোকে গড়ে তুলতে। আর এরজন্য খুব বেশি কিছু করিনি আমি। আসলে একটু সতর্ক হলে বেশি কিছু করার প্রয়োজনও পড়ে না।

চলবে…

 

মনে হচ্ছে, আমি আর বাঁচবোনা (২)

 প্রবাসী মজুমদার


ফাহিম তাসনিয়া গাড়ির পেছনে নিশ্চুপ বসে আছে। কোন শব্দ নেই। অন্য দিনের মত ভাই বোনের মাঝে আজ ঝগড়া নেই। চিমটি কাটা কাটি নেই। অভিযোগের সুরে তাসনিয়া বলছেনা

– এ মাম্মি দ্যাখ। ভাইয়া আমাকে মুখ ভেংচী দিচ্ছে।

– এ ফাহিম.. ধমক দিতে, মাম্মি আমি কি করিছি। ও খালি খালি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে।

– তাসু। ও তোমার বড় ভাই না।

– তোমরা খালি আমাকে বকা দাও। রাগ করে তাসনিয়া চুপ মেরে গেছে।

আজ তাদের মাম্মি অসুস্থ। কারো মুখে কোন শব্দ নেই। দুষ্টমি ও নেই।

আগামী কাল সকালে তাদের স্কুলের ক্লাস টেষ্ট। কিন্তু মায়ের অসুস্থতায় পরীক্ষার কথা ভুলে গেছে। গলা শুকিয়ে কাঠ। নিষ্পাপ শিশু দুটি গাড়ির জানালা দিয়ে অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে মিছে প্রকৃতি দেখার ভান করছে।

রাস্তায় চলতে চলতে হাজারো কথা মনে উকি দিলেও বার বার এড়িয়ে যাচ্ছি। নাজুকে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছি। ও বলেই যাচ্ছে, আমার কেন এমন হল। ও তো সব কিছুই কন্ট্রোল করে চলে। আবার বড় দীর্ঘশ্বাস ফেলে কতগুলো কষ্টের কথা মুখ থেকে বের হয়ে আসতেই আমি পাশ কাটানোর চেষ্টা করছি।

ও খুব নরম মনের। জীবনে কাউকে কষ্ট দিয়েছে কিনা তার জানা নেই। তাই আজ তার নিজের কাছে প্রশ্ন, আমার এমনটি হবে কেন? আমিতো কারো ক্ষতি করিনি। সব পরীক্ষা আমার জন্য হবে কেন?

…এতক্ষণে হাসপাতালে গেটে এসে পৌছে গেছি। রাত আনুমানিক পৌনে বারোটা। হাসপাতালের বাহিরে নীরব নিস্তব্ধতা। গাড়ি টা পার্কিং করে বের হতেই দুর থেকে দেখছি, ডাক্তার সিহাব উদ্দীন আমাদের অপেক্ষায় দাড়িয়ে আছে। তার এ আগ্রহ আর সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসার ঢং দেখে মনটা ভরে গেল।

আমাদেরকে এগিয়ে নিয়ে সোজা রিসিপশনে নিয়ে গেল। আমার পকেটের দিকে ইশারা দিয়ে বললেন

– আপনার ইকামাটা দিন।

– নেই।

– মানে?

– এক বছর হল মেয়াদোত্তীর্ন হয়ে গেছে। স্পন্সার সমস্যা।

– আরে…তাহলে এখন কি করা যায়। মাথায় চুল খোঁচাতে খোঁচাতে ডাক্তার সিহাব উদ্দীন উপায় খুঁজছেন। কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে নিজের পকেট হতে মানি ব্যাগটা বের করে বলল,

– ভাবী, আপনি ভেতরে বসুন। ভাই, আপনি অপেক্ষা করুন। আমি আসছি – বলে সোজা ভেতরে চলে গেলেন।

অজানা ভয় নিয়ে এক পাশে দাড়িয়ে আছি। স্ত্রীকে বুঝতে দিচ্ছিনা যে আমি খুব চিন্তিত। শুধু বলছি, দুত্তরি। এটা কোন রোগই নয়। হয়তবা মাসল ব্যথা। কোন বিষয়ে ফাইনাল জানা ছাড়া এত ভয় করা উচিত নয়। তাহলে মনের বাঘেই তোমাকে কাবু করে ফেলবে। কিন্তু মন যতই অভয় দিক না কেন, রোগীর মন যে মানে না।

এতক্ষণে ডাঃ সিহাব উদ্দীনকে দ্রুত গতিতে ভেতর থেকে আসতে দেখে মনে হল, কিছু একটা করে এসেছে। রিসিপশনের পেছনের গেট দিয়েই সোজা ভেতরে চলে গেলেন। কর্তব্যরত ডাক্তারের সাথে ফিস ফিস করে কি যেন বললেন। তার পর একটা কাগজ নিয়ে বের হয়ে এসে বললেন

– চলুন। কাজ হয়ে গেছে।

– মানে?

– আমার ইকামা দিয়ে ইমারজেন্সী ডিপার্টমেন্ট এর হেডকে বলেছি, আমার বন্ধুর স্ত্রীর সমস্যা। ইকামা নবায়ন করতে দিয়েছে। ভাবীর অবস্থা খুব খারাপ। এমতাবস্থায় আমার ইকামা দেয়া ছাড়া উপায় নেই। ভাগ্যিস ডাক্তার ভ্রু না কুচকিয়েই অনুমতিটা দিয়ে দিল। হাসপাতালের যে অবস্থা, সৌদিরাও এখন ট্রিটমেন্ট নিতে হিমশিম খেতে হয়।

ইমারজেন্সীতে গিয়েই দুতিনটা নার্সকে এক করে নাজুকে আপন লোক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিলেন। দুর থেকে দাড়িয়ে দেখলাম, নার্সগুলো নাজুকে দিয়ে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়ল। মুহুর্তেই কয়েকটা টেষ্ট করে ফেলল। টেষ্ট গুলো ফলাফল আসতে যাতে বিলম্ব না হয়, তাই ডাঃ সিহাব উদ্দীন নিজেই সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টে গিয়ে রিপোর্টের অনুমোদন নিয়ে কম্পিউটারাইজড করে ফেললেন।

কিছুক্ষণ পর এসে বললেন, আমাকে ফলো করুন। বিশাল হাসপাতালের আঁকা বাকা গলি দিয়ে হেটে কখনো ডানে, কখনো বামে, আবার কখনো লিফট বেড়ে চার তলায় নিয়ে গেলেন। বললেন, এখন যার কাছে যাবো, তিনি এ হাসপাতালের সব চেয়ে বড় হার্ট স্পেশালিষ্ট। সব চেকআপ সেরে সিরিয়ালে তার কাছে আসতে তিন দিন লাগে। তাই আপনাদের সরাসরি নিয়ে আসলাম।

সালাম দিয়ে ডাক্তারের রুমে ঢুকেই আমাদের পরিচয় করিয়ে দিলেন। বিস্তারিত খুলে বলে ফাইল নাম্বারটা দিলেন কম্পিউটারে সব রিপোর্ট দেখার জন্য। ডাক্তার এক নজর দেখে চেয়ার থেকে উঠে আমাদের নিয়ে একেবারে নিচে নেমে আসলেন। নার্সকে বললেন একটি সীট খালি করে দিতে। কিছুক্ষণ পর নাজুর প্রেসার মাপতে মাপতে জানতে চাইলেন

– আপনার ব্যথাটা কোন দিকে?

– বা দিকে।

– এটি কি প্রথম?

– জ্বী।

– অন্য কোন রোগ আছে?

– আছে। ডায়াবেটিকস।

– সুগার কি কন্ট্রোলে?

– জ্বী।

– সিড়ি বেড়ে উঠতে কি ব্যাথা করে?

– না।

– জোরে হাটলে?

– না।

স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ডাক্তার বললেন, ইকো টেষ্ট করতে হবে। এটি ছাড়া হার্টের গতিবিধি হুবহু বুঝা যায়না। আর হার্ট বিষয়ে অনুমান নির্ভর কোন সিদ্ধান্ত দেয়া বিপদজনকও বটে।

ডাক্তার সিহাব উদ্দীন পাশেই ছিলেন। বললেন, ইকো টেষ্টের জন্য
ডাক্তার সিহাবউদ্দীন পাশেই ছিলেন। বললেন, ইকো টেষ্টের জন্য তুমি যদি একটা অনুমোদন দিয়ে দাও, তাহলে ভাল হয়।

ডাক্তার রিসিপশনের একটি কম্পিউটারে নিজস্ব পাসওয়ার্ড দিয়ে ঢুকে অনুমতি দিয়ে দিলেন। এ হাসপাতালে যত রুগী ইমারজেন্সীতে এসেছে, সবার রিপোর্ট গুলো রিসিপশনে ডিসপ্লেতে রাখা কম্পিউটার স্ক্রীনে স্ক্রলিং হচ্ছে। তাকিয়ে দেখলাম ৯০% রোগীর হার্টের সমস্যা।

ডাঃ সিহাব উদ্দীন হতে বিদায় নিতে রাত একটা বেজে গেল। ধন্যবাদ দিয়ে বাসার দিকে রওয়ানা হলাম। বাসায় গিয়ে খাবার তেমন কিছু নেই। চুলোয় রাখা আধা পাকা তরকারী গরম করে খাওয়াই একমাত্র পথ। নাজু সন্তান দুটোর মাথায় হাত দিয়ে আদর করে বলছে

– ওমারে মা। আল্লাহ় এমন রোগ দিয়েছে যে, আমার বাচ্চাগুলোকে পর্যন্ত কষ্ট করতে হয়েছে।

– ওকে মাম্মি। কিচ্ছু হবেনা, ওরা সমস্বরে জবাব দিল।

ব্যাবাচ্যাকা ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম, নাজুর বুকের ব্যথা এখনও কমেনি।

গত রাতে আমার ঘুমটা বেশী ভাল হয়নি। কোন এক অজানা কারণে বার বার জেগে উঠেছি। মানসিক অস্থিরতার কারণে নাক ডেকে গভীর ঘুমে অভ্যস্ত আমার ঘুম যেন অনেক পাতলা হয়ে গেছে। রাতে জেগে উঠতেই দেখছি – নাজু ঠিক আছে কিনা। ওর কোন কিছু হয়নি, এমনটি নিশ্চিত করতেই খুব সতর্কতার সাথে ডান হাতের আঙ্গুলটা ওর নাকের ডগার সামনে ধরে অনুমান করছি – নিঃশ্বাস ঠিক আছে কিনা?

– না। মন মানে না। ভাবছি আর কি টেষ্ট করা যায়? হুম। পাইছি। ইশারায় নিজের হাতটা ওর হাতের শিরার উপর রেখে বোদ্ধা ডাক্তারের মত চোখ দুটো বন্ধ করে রক্তের গতিবিধি অনুভব করছি। কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারছি হার্ট থেকে ছুটে আসা রক্তগুলো টিক টিক করে প্রবাহিত হচ্ছে।

আশ্বস্ত হলাম, ও ঠিক আছে। কিন্তু বুকের ব্যথাটার কি অবস্থা জানা হল না। থাক। জেগে উঠলে জানা যাবে। এভাবেই বার বার উঠে প্রতি রাতে ওকে দেখছি।

ইকো টেস্টের আরও তিনদিন বাকী। ইস। এর ভেতর যদি কোন অঘটন ঘটে যায়। দুত্তরী। আল্লা ভরসা। কিচ্ছু হবেনা। না। কিছুক্ষণ পরেই আবার মনে পড়ছে নিজের চোখের সামনে হার্ট এ্যাটার্ক করে মরে যাওয়া মানুষগুলোর কথা। দুশ্চিন্তা এড়ানোর জন্য নিজেকে বার বার অভয় দিচ্ছি।

যাক, সময় অনেকটা ঘনিয়ে এসেছে। আগামীকাল টেষ্ট। প্রতিটি মিনিট আর ঘন্টা গুনে গুনে আগামীকাল আজ হয়ে গেল।

আজ ইকো টেস্টের দিন। দুপুর একটায় গিয়ে পৌছাল হবে। রাস্তায় জ্যাম জনিত অনাকাঙ্খিত সমস্যা এড়ানোর জন্য বারোটায় গিয়েই উপস্থিত। পার্কিং এ কিছুক্ষণ বসে থাকলাম। তার পর নির্দিষ্ট সময়ে সংশ্লিষ্ট ইকো টেস্টের ডাক্তারের কাছে রিপোর্ট করলাম। ইকো টেষ্টে বেশী সময় লাগেনি। কিন্তু ইকো টেষ্টের পর ডাক্তারের বক্তব্য শুনে মনে হল, সামনে কোন এক অশনি সংকেত অপেক্ষা করছে। ডাঃ সিহাব উদ্দীনকে ফোন করে বিস্তারিত জানালাম। তিনি আশ্বস্ত করলেন, চিন্তা করবেন না। আমি দেখছি কি করা যায়। আপনারা বাসায় চলে যান। ইকো টেষ্ট নিয়ে আমি বড় ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত দেবো কি ভাবে কি করা যায়।

(চলবে)

পর্ব -১

 

সম্পর্কের মূল্যায়ন -শেষ পর্ব

রেহনুমা বিনতে আনিস


সবচেয়ে বড় কথা, মানুষকে মূল্যায়ন করতে শিখতে হবে। কোন মানুষই পার্ফেক্ট হয়না। আমিও না। এমনকি বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও বিশ্বাস করুন, আপনিও না। সুতরাং, মানুষের মাঝে ত্রুটির অনুসন্ধান করলে আপনি ত্রুটির অভাব পাবেন না। কিন্তু গুণের অনুসন্ধান করলেও আপনি নিরাশ হবেন না। আমরা যদি অপরের ত্রুটির পরিবর্তে ভালো গুণের ওপর ফোকাস করি এতে নানাবিধ লাভ।
প্রথমত, আমরা তাঁর উদাহরণ থেকে কিছু শিক্ষা লাভ করতে পারি।
দ্বিতীয়ত, তাঁকে অ্যাপ্রিশিয়েট করা আমাদের জন্য সহজ হয়ে যায়।
তৃতীয়ত, আমরা একটি সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারি। এতে নিজেও শান্তিতে থাকা যায়, অপরেরও অশান্তির কারণ হতে হয়না।

রাসূল (সা) শিখিয়েছেন অ্যাপ্রিশিয়েট করার পাশাপাশি তা প্রকাশ করতে। কারণ আমরা কেউ মানসবেত্তা নই যে কারো মুখ দেখে বলে দেব সে কি ভাবছে। অবশ্য আমার ধারণা এতে ভালই হয়েছে, কারণ আমাদের ভাবনাগুলো মাঝে মাঝে ভয়ংকর হতে পারে। সে যাই হোক, আমরা অপরের অনুমতি ব্যতিরেকে তাদের মনের ভেতর প্রবেশ করতে পারিনা বিধায় আমাদের আশেপাশের লোকজনকে আমাদের জানানো প্রয়োজন আমরা তাদের কতখানি ভালবাসি, কতখানি অ্যাপ্রিশিয়েট করি, তাদের আচরণগুলো আমাদের কতখানি আনন্দ দেয় বা ব্যাথা।

অধিকাংশ ভুল বুঝাবুঝির উৎস communication-এর অভাব, কোন যুক্তি ছাড়াই ধরে নেয়া যে অপর ব্যক্তি বুঝে নেবে আমি কি চাই বা আমি কি অনুভব করছি। আপনি যদি কারো ব্যপারে মায়া পোষণ করেন তবে কেন বলার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তাঁকে এমন কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন করতে চান? এ’ কেমন ভালোবাসা যা ভালোবাসাকেই ধ্বংস করে দেয়?

সুতরাং, পরবর্তীতে হা হুতাশ করার পরিবর্তে সময় থাকতেই নিজের মনের ভাব স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে শিখুন। প্রয়োজন না হলে রাগারাগি করা থেকে বিরত থাকুন। প্রয়োজন হলে বলার আগেই ভাবুন কি বলছেন কেন বলছেন, কিভাবে বলছেন, যে উদ্দেশ্যে বলছেন তা স্পষ্ট হবার মত করে বলছেন কিনা।

‘Please’, ‘ধন্যবাদ’, ‘দুঃখিত’ এই ধরনের শব্দগুলো আপনার প্রতিদিনের vocabulary-র অবিচ্ছেদ্য অংশ বানিয়ে নিন। চেহারায় হাসি রাখুন। আপনার আশেপাশের মানুষগুলোকে বুঝতে দিন তারা আপনার জীবনে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ। হয়ত দেখবেন আপনার জীবনে হঠাৎ করে বন্ধু এবং শুভাকাঙ্ক্ষীর সয়লাব হয়ে যাবে যারা আগে আপনার কাছে ভিড়তে সাহস পেতনা।

১ম পর্ব

 

সম্পর্কের মূল্যায়ন -১ম পর্ব

রেহনুমা বিনতে আনিস


স্ত্রী বিগত হবার পর এক ব্যক্তি দুঃখ প্রকাশ করছিলেন, ‘আহারে! ওর সাথে কত সময় কত রাগারাগি, কত দুর্ব্যবহার করেছি! কত সময় সে আমার জন্য কতকিছু করেছে, অথচ আমি কোন অ্যাপ্রিশিয়েশন দেখাইনি! এখন আমি এসব খুব অনুভব করি। কিন্তু সে বেচারী তো জানতেও পারল না আমি আসলে তাকে কতখানি ভালবাসতাম। এই মূহূর্তে হয়ত সে আল্লাহর সামনে আমার নামে নালিশের ফিরিস্তি নিয়ে বসে আছে!’
এমন আফসোস অনেকেই করে থাকেন। যেমন স্বামীকে তালাক দিয়ে চলে যাবার বিশ বছর পর এক ভদ্রমহিলা অনুশোচনা করে বলছিলেন, ‘তখন বয়স কম ছিল। রাগের মাথায় তালাক দিয়ে চলে এসেছিলাম। কিন্তু এতে করে যে কেবল ওর ক্ষতি হয়েছে তা নয়, আমার জীবনটাও এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। ছেলেমেয়েদের গড়ে তোলার জন্য বাবা বা মা কেউ এককভাবে যথেষ্ট নয়। আমার সর্বাত্মক চেষ্টা সত্ত্বেও আমি আমার ছেলেমেয়েদের কাঙ্ক্ষিতভাবে মানুষ করতে পারিনি। আমার জেদ বিজয়ী হয়েছে, কিন্তু আমার সন্তানগুলোর জীবন তছনছ হয়ে গিয়েছে। সেদিন যদি আমার আজকের মত মানসিক পরিপক্বতা থাকত, তাহলে আমি আমার সংসারটাকে বাঁচানোর জন্য যুদ্ধ করতাম’।

পরিণত বয়সী এক ভদ্রমহিলা। স্বামী সন্তান নিয়ে গুছানো সংসার। কিন্তু পরম সুখের মূহূর্তগুলোতেও তিনি হঠাৎ হঠাৎ আনমনা হয়ে যান, বিষণ্ণতায় ভোগেন। কারণ তিনি সার্বক্ষণিক একটা মৃত্যুকে বয়ে নিয়ে বেড়ান। নিজেকে দায়ী করেন, ‘আমি যদি একটু সচেতন হতাম, হয়ত আজ সে জীবিত থাকত। হয়ত তার একটা চমৎকার সংসার থাকত, একটা ফুটফুটে বৌ থাকত, তিন চারটা বাচ্চাকাচ্চা থাকত!’ কিন্তু কিছু কিছু আক্ষেপের কোন প্রতিকার থাকেনা। তাঁরও নেই। কিশোরী বয়সে যখন তিনি পর্দা করতেন না তখন এক ছেলে তাঁর প্রেমে পড়ে যায়। প্রেম নিবেদন করায় তিনি তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন, সবার সামনে তাকে অপদস্থ করেন। অপমানের জ্বালা সইতে না পেরে ছেলেটি পরদিন আত্মহত্যা করে বসে। তিনি আজও ভাবেন, যদি সে সময় তিনি পর্দা করতেন, সিগনাল দিতেন, ‘I am not available’, হয়ত ছেলেটি তাঁর দিকে তাকাতও না, প্রেম নিবেদনের প্রশ্নও আসতনা, তিনি কটু কথা বলে ঝাল ঝাড়তেন না, ছেলেটি সুইসাইড করতনা, তিনি এই অপরাধবোধ আজীবন বয়ে বেড়াতে বাধ্য হতেন না। কিন্তু মাঝে মাঝে চোর পালালে যখন বুদ্ধি বাড়ে তখন আর হৃত সম্পদ ফিরে পাবার কোন উপায় থাকেনা।

এক মূহূর্ত রাগ সংবরণ করতে না পারার ফলে কত সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়, মনের ঝাল ঝাড়তে পারার আনন্দ কিছুতেই সেই বিচ্ছেদের বেদনা নিবারণ করতে পারেনা। একটা ‘ধন্যবাদ’ কিংবা একটু মৃদু হাসি দিতে কার্পণ্য করার কারণে কত আশা ভালোবাসার ফুল কুঁড়িতেই ঝরে যায়, শত উপহার উপঢৌকনে সেই না পাওয়ার কষ্ট মুছে দেয়া যায়না। কত হৃদয়বিদারক কথা ক্ষোভের মূহূর্তে বাক্যবাণ হয়ে বেরিয়ে যায়, যে ক্ষত পরে আর কোন মলম দিয়ে সারানো যায়না। কত অবুঝ আচরণ সারাজীবনের জন্য দুঃস্বপ্ন বনে যায়, যার কোন প্রতিকার করা যায়না।
হুম, জানি, আমরা সবাই ভুল করি। বুঝবোনা কেন ভাই, আমি নিজে কি সেই পথ পাড়ি দিয়ে আসিনি? মানসিক পরিপক্বতা যে বয়সে আসে তার আগে অপরিণত অবস্থাতেই আমরা জীবনের অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে ফেলি। সেই পথ যেমন পদে পদে কন্টকাকীর্ণ তেমনই বিপদসংকুল। সে বয়সে সবারই মনে হয় শুনিয়ে দেয়া, দেখিয়ে দেয়া, নিজেকে জাহির করা এক বিরাট কৃতিত্বের ব্যাপার। এখানেই নিজের মনের চাকায় ঈমানের ব্রেক লাগানোর প্রয়োজন পড়ে। কারণ, একজন মানুষের মাঝে অপরিণামদর্শিতা থাকতে পারে। আবেগের সামনে বিবেকের ব্রেক ফেল করতে পারে। কিন্তু যার ঈমান আছে তাঁর নিজেকে প্রতিরোধ করার জন্য ‘আমি আল্লাহর সামনে কি জবাব দেব?’-এর চেয়ে ভাল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আর নেই। কারণ, আমাদের সম্পর্কগুলো তো আল্লাহর সন্তুষ্টির মাধ্যম! এগুলোর প্রত্যেকটির হক আদায় করার ব্যাপারে আমাদের আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। এজন্যই আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং প্রতিটি সম্পর্কের স্বরূপ নির্ধারণ করে দিয়েছেন, সম্পর্কগুলোর দাবী বিশ্লেষণ করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, এগুলোর সীমারেখাগুলোও অংকন করে দিয়েছেন। হ্যাঁ, এই কাজগুলো সহজ কিংবা মসৃণ হবে মনে করার কোন কারণ নেই। কিন্তু পরীক্ষা সহজ হলে কি পাশ করায় কোন কৃতিত্ব থাকে? সম্পর্কগুলো জিইয়ে রাখার জন্য হয়ত কখনো আমাদের নিজেদের, কখনো অন্যদের ঘষামাজা করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু সেটা কিভাবে এবং কতটুকু হবে তার জন্যও নীতিমালা দিয়ে দেয়া হয়েছে।
আমাদের প্রত্যেকের অবস্থান আমাদের জন্য একটি পরীক্ষা। আমার অবস্থানে আমি হয়ত অপর কোন ব্যক্তির সাথে অযাচিত আচরণ করতে পারি, তবে তার মূল্য দেয়ার জন্য আমাকে প্রস্তুত থাকতে হবে। নতুবা ন্যায়সঙ্গত আচরণ করার জন্য সর্বদা সচেতন থাকতে হবে। আমার আচরণ সঠিক হচ্ছে কিনা তা নিরূপণ করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হোল সেই ব্যক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁর প্রতি আমার ব্যবহার যাচাই করার চেষ্টা করা। কাজটি নিঃসন্দেহে কঠিন, কারণ আমাদের মন কেবল অন্যের ত্রুটিগুলো দেখে, নিজেরগুলো কিভাবে যেন দৃষ্টিগোচর হয়না। কিন্তু চর্চা করলে এই বোধ নিজের মাঝে গড়ে তোলা অসম্ভব নয়।কারণ অতিরিক্ত অনুভূতিপ্রবণ লোকজন ব্যাতিরেকে সাধারণত সব মানুষ একই ধরণের আচরণে আনন্দিত হয় কিংবা কষ্ট পায়।
আবঞ্ছিতভাবে কাউকে আঘাত দিয়ে ফেলা থেকে বিরত থাকার সবচেয়ে সহজ উপায়ঃ ‘ভাবিয়া করিয়ো কাজ করিয়া ভাবিওনা’। যেকোন অবস্থায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার পরিবর্তে খানিক সময় নিয়ে চিন্তাভাবনা করে কথা বললে বা কাজ করলে অসাবধানতাবশত অপরের কষ্টের কারণ হওয়া থেকে আত্মরক্ষা করা যায়। আমাদের সমাজে, যেখানে ভদ্রতাকে দুর্বলতা হিসেবে দেখা হয়, হয়ত আমাদের আত্মনিয়ন্ত্রণকে কমজোরী হিসেবে দেখা হতে পারে, জনসমক্ষে আপনার ইমেজ হেয় হতে পারে। কিন্তু যে কঠিন মূহূর্তে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারে তাঁর ইমেজ আল্লাহর কাছে অনেক উচ্চে স্থান পায়। কারণ তিনিই বলেছেনঃ
‘রাহমানের বান্দা তারাই যারা পৃথিবীর বুকে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং মূর্খরা তাদের সাথে কথা বলতে থাকলে বলে দেয়, ‘তোমাদের সালাম’ (সুরা ফুরক্কানঃ আয়াত ৬৩)৷
আবার তিনিই উল্লেখ করেছেনঃ
‘আর মানুষের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কথা বলো না, পৃথিবীর বুকে উদ্ধত ভঙ্গিতে চলো না, আল্লাহ পছন্দ করেন না আত্মম্ভরী ও অহংকারীকে৷ নিজের চলনে ভারসাম্য আনো এবং নিজের আওয়াজ নীচু করো৷ সব আওয়াজের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ হচ্ছে গাধার আওয়াজ’ (সুরা লুকমানঃ আয়াত ১৮-১৯)৷
সুতরাং, যতই কঠিন মনে হোকনা কেন, অপরের সাথে সেই আচরণ করাই সঙ্গত যে ব্যবহার আমরা নিজেরা অপরের কাছে পেতে চাই। একইভাবে অপরের প্রতি সেই ব্যবহার বর্জনীয় যা আমাদের কষ্ট দেয়।
তখন প্রশ্ন আসে, তাহলে কি আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখাব না? হুম, সেখানে চুপ থাকলে আবার আমরা আল্লাহর কাছে আটকে যাব। প্রতিক্রিয়া দেখাতেই হবে। তবে কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাব সে ব্যাপারে কিছু নীতিমালা দিয়ে দেয়া হয়েছে। রাসূল (সা) বলেছেন শুধু নির্যাতিত ব্যক্তিকে নয়, নির্যাতনকারীকেও সাহায্য করতে। কারণ, তাঁর এই আচরণ তাঁকে শাস্তির জন্য নির্ধারিত করে ফেলছে অথচ তিনি তা বুঝতে পারছেন না। তবে আমরা নির্যাতিত ব্যক্তিকে ধৈর্য্যধারণের উপদেশ দেই, কিংবা নির্যাতনকারীকে আত্মনিয়ন্ত্রণের উপদেশ দেই, পদ্ধতি একই। প্রথমে সেই ব্যক্তিকে ব্যক্তিগতভাবে বুঝানোর উদ্যোগ নিতে হবে। তাঁকে নিয়ে আড়ালে বসতে হবে যেন তিনি অপরের সামনে লজ্জা না পান। তাঁর মুখোমুখি বসে, তাঁর চোখে চোখ রেখে, সম্ভব হলে তাঁর হাতে হাত রেখে, চেহারায় আন্তরিকতা মেখে, কণ্ঠে আন্তরিকতা ঢেলে, বার বার প্রিয় সম্বোধনে সম্ভাষন করে তাঁকে নিজের আন্তরিকতার ব্যাপারে আশ্বস্ত করতে হবে। কোন পর্যায়ে তাঁকে অভিযুক্ত করে বা হেয় করে কথা বলা যাবেনা। মনে রাখতে হবে, আমার আচরণ বা কথা যদি ব্যক্তিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের পর্যায়ে নিয়ে যায় তাহলে আমি ব্যর্থ হয়েছি। কারণ একজন মানুষ যখন defensive mode-এ চলে যায় তখন সে আর আপনার কথা গ্রহণ করতে প্রস্তুত কিংবা ইচ্ছুক থাকেনা। কিন্তু আপনি যদি আন্তরিকতা দিয়ে তাঁকে বুঝাতে পারেন আপনি কথাগুলো কোন ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে নয় বরং তাঁর কল্যাণ কামনায় বলছেন, সেক্ষেত্রে মানুষ অনেক তিক্ত কথাও সহজভাবে গ্রহণ করে পারে।

চলবে

 

স্মার্ট হবার উপায়

লাইফস্টাইল


Smart কি?

Smart নয় বরং Smartness নিয়েই আজকের আলোচনা- “সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করতে পারা যেখানে উপস্থিত বুদ্ধি, মানবিকতাবোধ, পাণ্ডিত্য, সাহসিকতা, সামাজিকতা, পোশাকে মাধুর্যতা এবং পরিস্থিতি মোকাবেলায় দক্ষতার সাথে নিজেকে উপস্থাপনকে বুঝায়।”

Smart হওয়ার প্রয়োজনীয়তা

আসলে স্মার্ট হবার প্রয়োজনীয়তা কেন তা নিয়ে ভাবনা থাকা দরকার ভাবুন ত,
কোনো একজন মানুষ যদি,’বিবেক বুদ্ধি অনুযায়ী সঠিক কাজ করেন এবং সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, জ্ঞানের সাথে থাকে যদি বিনয়, নিজের ভুল নিজেই বুঝতে পারেন এবং তা থেকে শিক্ষা নেন এবং সর্বদা নিজেকে আরো সুন্দর করার চেষ্টা করেন, পজেটিভ সুন্দর কথা বলতে পারেন, রুচিশীলতার পরিচয় দিতে পারেন তার আচার আচরণ এবং পোশাকে মানুষটি সব রূপ ফুটে উঠে ‘কত সুন্দর হবেন’, আর এই বিষয়টিই হল স্মার্টনেস। আপনি যত বেশি মানুষকে কনভেন্স করতে পারবেন, ততই কাজের গতি আপনার সহজ হবে। আপনি সহজেই সাফল্যের দেখা পাবেন। সুতরাং Smart হবার প্রয়োজনীয়তা অনেক।

Smart হতে যে সকল গুন দরকার

সঠিক যোগাযোগ
খেয়াল করুন, ১.সঠিক শব্দচয়ন,
২. নিজের কাছে ইমোশন ব্যাংক বা শব্দ ভান্ডার, ৩.সহজ শব্দ ও বাক্য।
কথা বলার সময় উপরের তিনটি পয়েন্ট গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে বাড়তি কথা বলা একটু কমিয়ে দিন। যতটুকু প্রয়োজন কথা ঠিক ততটুকু বলার অভ্যাস করুন।

চশমার ব্যবহার
জৌলুশ বা স্মার্টনেস কিছুটা হলেও বাড়িয়ে তুলতে পারে একটি আকর্ষণীয় চশমার ব্যবহার।

কৌতুক বা হাসিমুখ
গম্ভীর ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষদের সাধারণ মানুষ পছন্দ করেন না। মানুষ পছন্দ করেন সদা সহাস্য মানুষদের।স্মিতহাস্যে কথা বলুন সবার সাথে। মানুষটি যদি বিরক্তিকরও হয়, আপনার কথা শুনে সে যেন আপনার বিরক্তিটুকু ধরতে না পারে।

ভাল ভাল বই পড়া
বই পড়া আপনার সৃজনশীল ক্ষমতাকে প্রখর করে তুলবে। কথা বলার দক্ষতা এবং শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ করতে সহায়তা করবে।

মনকে উজ্জীবিত রাখা
স্মার্টনেস হলো অভ্যন্তরীণ মানসিক ব্যাপার। আপনি যা, নিজেকে ঠিক সেভাবেই উপস্থাপন করা হলো স্মার্টনেস সুতরাং তা আপনার মনকে উজ্জীবিত রাখতে পারে।

যা জানি না তা অন্যদের কাছ থেকে জানার চেষ্টা করা
প্রতি সপ্তাহে আপনি নিজে কতটা এগোলেন, নিজের কাছেই পরীক্ষা দিন এজন্য যা আপনি জানেন না তা অন্য আরেক জনের কাছে গিয়ে জানার চেষ্টা করা।

যেসব বিষয় জানি তা অন্যদের জানান
পুরনোটা মনে রাখতে পারছেন না ত সহজ উপায় হল, সেটা দেখে আরও জানুন, শিখুন। যেসব বিষয় অন্যদের শেখান পুরনো টাও নিশ্চিত থাকুন মনে থাকবে। সুত্র: Google, Youtube channel (pi fingers motivation), (Career intelligence)

 

১৫ বছরের প্রেমিকাকে ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে ধর্ষণ

নারী সংবাদ


রংপুরের পীরগাছায় প্রেমের টানে প্রেমিকের বাড়িতে এসেছিলেন প্রেমিকা। কৌশলে তাকে ঘুমের ট্যালেট খাইয়ে রাতভর ধর্ষণ করেছে১৫ বছরের প্রেমিকাকে ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে ধর্ষণ

নারী সংবাদ প্রেমিক! এমন অভিযোগের ভিত্তিতে প্রেমিক ধর্ষককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, উপজেলার সদর ইউনিয়নের বুলবুলির ডোবা গ্রামের শাহজাহান মিয়ার ছেলে জাহিদ মিয়ার (২০) সঙ্গে পারুল ইউপির গুঞ্জর খাঁ গ্রামের আব্দুল হাকিম মিয়ার মেয়ের (১৫) প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রেমের সুবাদে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় জাহিদ মিয়া প্রেমিকাকে তার বাড়িতে নিয়ে আসে। পরে ভাতের সঙ্গে ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে প্রেমিকাকে রাতভর ধর্ষণ করে জাহিদ। এ ঘটনায় প্রেমিকা অসুস্থ হয়ে পড়লে এলাকাবাসী পুলিশকে খবর দেয়।

পুলিশ আজ মঙ্গলবার দুপুরে প্রেমিকাকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় জাহিদের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে প্রথমে পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করায়।

পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রেমিক জাহিদকে আটক করেছে। থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

পীরগাছা থানার ওসি (তদন্ত) জাকির হোসেন জানান, জাহিদের বাড়ি থেকে অসুস্থ অবস্থায় ১৫ বছরের এক মেয়েকে উদ্ধার করা হয়েছে। অসুস্থতার কারণ এখনো জানা যায়নি।

পীরগাছা থানার ওসি সরেস চন্দ্র জানান, এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। মামলা দায়ের হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সুত্র: ইত্তেফাক/নূহু

 

আমি আগের ঠিকানায় আছি

মুক্তারা বেগম নদী


আজ ১লা আষাঢ়, বর্ষার প্রথম দিন। কিন্তু আজ আমি কোথাও যাব না, মন ভাল নেই। আজ অসম্ভব ইচ্ছে করছিল অঝোর ধারায় বৃষ্টি হোক কিন্তু আমি জানি আজ বৃষ্টি হবে না, আমি যে বৃষ্টিকে অনেক অনেক ভালবাসি। আমি যা ভালবাসি, যা চাই তা কখনও হবে না, হতে নেই। বৃষ্টির কাছে আমার অসীম কৃতজ্ঞতা, কারন বৃষ্টি আমার কান্নার নোনা জল মুছে দেয়। বৃষ্টি নিয়ে আমার অনেক আদিখ্যেতা আছে, বৃষ্টি হলেই আমার মন এলোমেলো হয় যায়। তুমি তো জানো অরন্য আমি বৃষ্টিতে ভিজতে ভীষণ ভালবাসি। আরও ভালবাসি শাড়ি পড়তে কিন্তু আজ প্রিয় রঙের নীল শাড়ি, চুড়ি, টিপে নিজেকে সাজাবো না, ঘন কালো চুলগুলো বেলী ফুলের মালা দিয়ে জড়াবো না, কোন এক শান্ত নদীর জলে পা ডুবিয়ে বসা হবে না, বৃষ্টি ভেজা কদম ফুল নিয়ে আসবে না আমার জন্য, তবু আমি অপেক্ষা করব।

আজ সারাটা দিন কষ্টের নীল চাদর জড়িয়ে থাকব, আমার কষ্টের রূপ আর অপেক্ষা কোনটাই যক্ষের বিরহের মত নয় যে কালিদাস তার অলংকার দিয়ে সাজাতে পারবেন। কারণ আমার কষ্ট আর অপেক্ষায় আর যাই হোক কোন অলংকার নেই। আমার অপেক্ষা বা কষ্টগুলো অনেক বেশী সাধারণ, কখনো কখনো হয়ত তার রঙ বদলায় লাল, নীল, বেগুনি হয় কিন্তু কষ্টগুলো কষ্টই থেকে যায়। আমি এমনই একজনকে ভালবাসি যে আমার স্বপ্নে আছে কিন্তু জীবনে নেই। ভীষণ অবাক লাগে, খুব বেশী কিছু চাইনি, শুধু চেয়েছিলাম একদিন ঝুম বৃষ্টিতে তোমার হাতে হাত রেখে পথ চলতে, কোন এক বৃষ্টি ভেজা বিকালে তোমার চোখে চোখ রেখে রংধনু দেখতে, কোন এক সোনালী সন্ধ্যায় মুখোমুখি বসে থাকতে মৌন সুখে, বসন্তের প্রথম প্রহরে পাশাপাশি পথ চলতে, জ্যোৎস্না ভেজা রাত্রিতে তোমাকে নিয়ে ভেসে যেতে।

প্রতিটা সন্ধ্যায় আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করি, এই বুঝি তুমি এলে আমার দুয়ারে, হাতে আমার প্রিয় বেলী ফুলের মালা নিয়ে। সমস্ত শহর তন্ন তন্ন করে তুমি আমার জন্য কোন একদিন একটি নীল গোলাপ নিয়ে আসবে ভেবে ভেবে ফুরিয়ে গেল আমার সারাটি বেলা। তাই দেখে খুশিতে মাতাল হব না কোনদিন জেনেও অপেক্ষার ক্ষণগুলো রক্তাক্ত করে দিয়ে যায় আমায়, আমি পড়ে থাকি জমাট লাল রঙের মাঝে। তোমাকে সঙ্গে নিয়ে কোনদিন শিউলি কুড়ানো হবে না জেনেও আমি অপেক্ষা করি, অপেক্ষা করি আর মলিন হই।

ভোরের আলোয় তোমাকে দেখার ভীষণ সাধ ছিল, রাঙ্গা ভোরে তুমি আসনি, দুপুরের কড়া রোদে তোমাকে কেমন দেখায় তা অজানাই থেকে গেল। কারণ দুপুরের পথও আমাকে নিরাশ করেছে। শেষ বিকালের রক্তিমায় তোমার রঙ কি বদলায়? তাও জানি না কারণ বিকালেও আসনি তুমি। খুব বেশী কি চেয়েছিলাম? এই ভেবে ভিজে যায় আমার চোখ, চোখের পাতা, ভিজে যায় আমার সনাতনী মন।

সমুদ্রের খুব কাছে গিয়ে জলকে স্পর্শ করার বড্ড বেশী সাধ হয়, ইচ্ছে করে তোমাকে সাথে নিয়ে ঝিনুক কুড়াই। ভীষণ ইচ্ছে করে লাল, নীল, বেগুনি ছবি আঁকার। কিন্তু সে জানি তা কোনদিন হবে না, হতে নেই। ভীষণ ইচ্ছে তোমাকে পাশে নিয়ে কোন এক সবুজ পাহাড়ের গায়ে হেলান দিতে। বুকের ভিতর ঘাপটি মেরে বসে আছে এক বিশাল নীলাঞ্জনা আকাশ, চোখের তারায় নাচে একশ কোটি নক্ষত্র। ফিরে আসি একই আবর্তে, নৈবদ্য সাজাই ভীষণ গোপনে।

জানো অরন্য, প্রত্যেক মানুষের মনের ভিতরেই একটা ছোট ঘর থাকে, একটা মাত্র দুয়ার তার। ঘরের ভিতরে থাকে আসল মন আর দুয়ার থাকে বদ্ধ। বদ্ধ ঘরে বসে সে মন শুধু কাঁদে শুধু একজনের কথা ভাবে। কিন্তু বেশীর ভাগ মানুষই মনের সে মানুষটাকে পায় না। মনের কথা বলার মানুষটাকে পায় না। দুয়ার বদ্ধ ঘরে বসে শুধু সারাজীবন কাঁদে, শুধু কাঁদে। যখন তোমায় কথা মনে পড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস হৃদয়ে গুমড়ে উঠে-আমি লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদি যখন পৃথিবী ঘুমিয়ে পড়ে। আর বাতাস যখন উঠে তখন বুকের মধ্যে ঢেউ থাকে না,পড়ে থাকে আমার পুস্পিত ভালবাসা, অনাদর, অবহেলায়।

মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে হ্রদয় থেকে ভালবাসার অনুভূতিটাকে ছিঁড়ে নিয়ে নির্লিপ্তে ছুড়ে ফেলি বঙ্গোপসাগরে, মৌসুমী সমুদ্রের পেটের মতো দুঃখগুলো যখন ফুলে ফেঁপে উঠে, তখন ইচ্ছে করে চোখ বুজে চলে যাই ব্যবলিনের শূন্য উদ্যানে। তোমাকে না পাওয়ার কষ্টে নিজেকে পোড়াতে পোড়াতে ভাবি জীবনের এতটা পথ একাই হেঁটেছি, একাই থেকেছি, বাকীটাও না হয়।

অরন্য, আমার কাছে তোমার কোন ঠিকানা নেই, তাই এই না বলা কথাগুলো কখনই পৌছাবে না তোমার কাছে। তুমি কখনই জানবে না কতটা তীব্রতা ছিল তোমাকে পাবার। কেমন করে তোমাকে খুঁজে বেড়াই দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। তোমাকে ভুলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেই জ্বলে উঠে আমার দমিয়ে রাখা ভালবাসা।

তারপর কোনে এক বসন্ত বিকালে ঝড়ে যাবে জীবন বৃক্ষের পাতা ক্লান্ত বাতাসে ভাসবে আমার না বলা কথা। বাতাসের কানে তবু বলাবলি হবে।

এতো ভালবাসে কি আর কেউ? এমন করে?

তোমার বন্যা

 

পরিষ্কার_পরিচ্ছন্ন রান্নাঘর

ঘরকন্যা


রান্নাঘর ভালো থাকলেই পরিবারের সবার সুস্বাস্থ্যও বজায় থাকবে। রান্নাঘরই হচ্ছে বাসা-বাড়ির সেই স্থান, যা সবেচেয়ে বেশি নোংরা হয়। কিছু সহজ টিপস, আপনার রান্নাঘর পরিষ্কার রাখার জন্য।

সাবান ও গরম পানি

থালাবাসন এবং রান্নাঘরের দেয়াল এর তেল-চর্বি পরিষ্কার করতে সাবানের সাথে গরম পানি। ফলে চর্বি ভাব দূর হবে।

কাগজে কাটাকাটি
পুরনো খবরের কাগজ বিছিয়ে নিয়ে কাটাকাটির কাজ করুণ। রান্নাঘরের মেঝেতে কাটাকাটির কাজ করবেন না।

পোকা মারা স্প্রে
ময়লার ঝুরিও নোংরা হবে কম। আর রোজ ময়লার ঝুরির আশেপাশে একটু পোকা মারার স্প্রে ছিটিয়ে দিন। এতে ময়লার ঝুড়িতে পিঁপড়াও ধরবে না।

টিস্যুর ব্যবহার
প্রত্যেকবার চুলার কাজ শেষ হলে চুলাটি একটি কাপড় বা টিস্যু দিয়ে মুছে ফেলুন।
রান্নাঘর অনেকটাই কম ময়লা হবে।

এয়ার ফ্রেশনার অবশ্যই
রান্নাঘরে ব্যবহারের জন্য পছন্দের ফ্লেভারের এয়ার ফ্রেশনার অবশ্যই কিনে নেবেন। এর মাধ্যমেও গন্ধের হাত থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

লবণ ও গরম পানি
রান্না করার সময় চুলার ওপর চা,তরকারির ঝোল ছলকে পরে এবং শুকিয়ে শক্ত হয়ে যায়। এক চামচ লবন আর গরম পানি দিয়ে ভাল করে ঘষে নিলে তা সহজেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।

পানিতে ভিজিয়ে রাখুন
পেঁয়াজ বা রসুন ইত্যাদি যেসব খাবারের খোসা বাতাসে ওড়ে, সেগুলো কাটার আগে পানিয়ে ভিজিয়ে রাখুন। খোসা উড়ে ঘর নোংরা হবে না।

রান্নাঘরে সম্ভবপর কম জিনিস রাখা গেলে স্বাচ্ছন্দ্য ও সুন্দর থাকবে। নোংরাও হবে কম।

 

মাতৃকথন ৮

ফারিনা মাহমুদ


কাজেই আমি মনে করিনা তোমার দুশ্চিন্তার কোনো কারণ আছে। তবে তোমাকে আমি যে পরামর্শ দেবো তা হচ্ছে তুমি ডাক্তারের সাথে কথা বলে ওর একটা ব্লাড টেস্ট করে দেখতে পারো ওর ভিটামিন ডি এবং আয়রন লেভেল ভালো আছে কিনা, না থাকলে ঐটা একটু পূরণ করা জরুরি। আর তুমি ওর ফুড প্যাটার্নে লিখেছো রাতে ওকে এক বোতল দুধ দেয়া হয় এবং ও এইটা খেয়ে ঘুমায়। তুমি এই দুধ বন্ধ করে দেবে। একেবারেই পারবে না, একটু একটু করে পরিমান কমাবে এবং একসময় বন্ধ করে দেবে। শুরুটা করবে ছুটির দিনের আগের রাতে কারণ ওই রাতে ও উঠে যেতে পারে এবং কান্না করতে পারে।
আমি আশ্চর্য হয়ে বললাম, খায় ই ওই এক বোতল দুধ, ঐটা বন্ধ করে দেবো মানে?
– বাচ্চা যখন থেকে শক্ত খাবার খায়, দুধ আস্তে আস্তে কমিয়ে দিতে হয়। ১৬ মাস বয়সী বাচ্চা ২ কাপ এর বেশি দুধ বা তার সমপরিমাণ ডেইরী প্রোডাক্ট (দই, পনির) এর বেশি খাওয়ার প্রয়োজন নেই। দুধ খাওয়া সহজ, টানলেই পেট ভরে। তোমার বাচ্চা জানে রাতে ঐটা খেয়ে সহজেই তার পেট ভরবে। তাই সে কষ্ট করে শক্ত খাবারটা খায় না। আর যখন সে জানবে তার ওই অপশন বন্ধ, আস্তে আস্তে সে ডিনার ঠিক মতো করবে। শুরুতে তোমাদের দুইজনেরই একটু স্ট্রাগল হবে তবে এক সপ্তাহ ফলো করে দেখো, উন্নতি হবে অবস্থার।
ও বলে চললো , আমরা মূল যে ব্যাপারটা খেয়াল করি সেটা হচ্ছে বাচ্চা সব ফুড গ্রুপের খাবার খাচ্ছে কিনা, ফিজিক্যালি একটিভ আছে কিনা, গ্রোথ চার্ট ঠিক আছে কিনা। পাশাপাশি এটাও মনে রাখা দরকার সব বাচ্চার বৃদ্ধি এক বয়সে হয় না। কোনো কোনো সময় বৃদ্ধি একটু স্লো ডাউন হতে পারে, এটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং এটা যদি “রিমার্কেবলি লং পিরিয়ড এসোসিয়েটেড উইথ আদার সিম্পটমস” না হয় সেই ক্ষেত্রে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তোমার নিশ্চয়ই এমন কোনো সহপাঠী ছিলো যে শৈশবে বেশ লম্বা থাকলেও কৈশোরে এসে আর অতো লম্বা হয়নি বা উল্টোটা? এটা একটা উদাহরণ হতে পারে গ্রোথ স্লো ডাউনের। তেমনি মেটাবলিজম ও আপ ডাউন হয়। তোমার হয়না? কোনো কোনো দিন তোমার নিশ্চয়ই খেতে ইচ্ছে করে না, আবার কোনো কোনোদিন অনেকটা খেয়ে ফেলো! ওরও তাই। এ ছাড়া দাঁত ওঠার সময় বা অন্য কোনো সাময়িক পরিবর্তনের কারণেও বাচ্চা কম খেতে পারেনা। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে ওই ফেইজ টা কেটে গেলে বাচ্চা বেশ ভালো খাওয়া দাওয়া করে নিজে থেকেই নিজের ঘাটতি পুষিয়ে নেয় ! অসুস্থতা থেকে সুস্থ হবার পরেও বাচ্চার ক্ষুধা বাড়ে এইজন্য।
আমি রিলেট করছি মনে মনে – ভাবি, বাচ্চা ক্যামন আছে? এর উত্তরে প্রায়ই বলি, আর বৈলেন্না ভাবি, দুইদিন ঠিক মতো খায় তো তিন দিনের দিন আবার যেই সেই! আচ্ছা, ঘটনা তাইলে এই!
সুতরাং ফারিনা, ওকে তুমি ওর খাবার দেবে। ও খেতে না চাইলে আধা ঘন্টা খেলতে দেবে এরপর একই খাবার আবার একটু গরম করে দেবে। বুঝতে পারলে? পৃথিবীর কোনো জীব ক্ষুধা পেটে সামনে খাবার রেখে উপোষ থাকে না। একসময় ও খাবেই। ওকে এটা বুঝতে হবে, সারাজীবন ওকেই খাবারের পেছনে ছুটতে হবে, খাবার ওর পেছনে ছুটবে না।যত তাড়াতাড়ি তুমি ওকে এটা বুঝতে দাও, ততই মঙ্গল !
আমি মাথা নাড়লাম। আমার দ্বিধাগ্রস্থ চেহারা দেখে মহিলা হেসে বলে উঠলো,
– এটলিস্ট হি ইস গ্রোইং হাইওয়াইজ হুইচ ইউ কান্ট্ মেইক হ্যাপেন বাই ফোর্স! এন্ড এবাউট ওয়েট? ডোন্ট ওরি, প্রবাব্লি ওয়ান ডে হি উইল অলসো গো টু জিম টু গেট রীড অফ এক্সট্রা কিলোস!
আপডেট : আজ অবধি, আড়াই বছর বয়সী ছেলে আমার স্কিনি একটিভ বয়। জামা কাপড় যথারীতি ঢিলে ঢালাই ! তবে আমি রাতে ওই বোতল ভরা দুধ বন্ধ করে দিয়ে এবং খাবার নিয়ে ওকে জোরাজুরি বন্ধ করে যেই উপকারটা পেয়েছি তা হচ্ছে খাবারের প্রতি ওর আগ্রহ বেড়েছে। আমার কাছে এটাই বড় কথা। যেটুকু খায়, আনন্দ নিয়ে খায়। পছন্দের খাবার নিজে চেয়েও খায় মাঝে মাঝে। আমি এতেই খুশি। ওর খাবার পরিমান বাড়ানোর চেয়ে আমার নিজের খাবারের পরিমান কমানো নিয়েই বেশি দুশ্চিন্তায় আছি!
সতর্কতা : আমি চিকিৎসক নই, ডায়েটিশিয়ান নই, আমি যা লিখলাম তা একান্ত আমার অভিজ্ঞতা। কারো সাথে মিলবে এমন কথাও নেই। যে কোনো ব্যাপারে সন্দেহ থাকলে উপযুক্ত মানুষের পরামর্শ নেয়াই ভালো।
হ্যাপি মাদারহুড !

চলবে…
পর্ব-৭

 

যৌতুক না দেওয়ায় রাণীনগরে তালাকের পর দ্বিতীয় বিয়ে : সাফিয়া বিবির আত্মহত্যা

নারী সংবাদ


নওগাঁর রাণীনগরে যৌতুকের টাকা না পাওয়ায় তালাক দিয়ে স্বামী অনত্র বিয়ে করায় সাফিয়া বিবি (২৫) নামে এক গৃহবধু বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার পারইল ইউনিয়নের বোদলা গ্রামে এই ঘটনাটি ঘটে। শুক্রবার রাতে রাণীনগর থানা পুলিশ সাফিয়া বিবি মৃত্যুর খবর পেয়ে লাশটি উদ্ধার করে শনিবার সকালে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে।
সাফিয়া বিবি উপজেলার সদর ইউনিয়নের দাউদপুর গ্রামের মো: মুক্তার এর স্ত্রী ও বোদলা গ্রামে মৃত শহীদ উদ্দীন সরদারের মেয়ে।
এলাকাবাসি ও পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে, স্বামী মুক্তার হোসেন তার স্ত্রী সাফিয়া বিবিকে শশুরবাড়ী থেকে ২ লাখ টাকা এনে দেয়ার জন্য শারিরিক নির্যাতন চালায়। বাধ্য হয়ে সাফিয়া ২০ হাজার টাকা এনে স্বামীকে দেয়। পরে আরো টাকার জন্য নির্যাতন করে সাফিয়াকে বাপের বাড়ীতে তাড়িয়ে দেয়।
এর পর থেকে সাফিয়া বাপের বাড়ীতে থাকছেন। এরই স্বামী গোপনে তালাকনামা পাঠিয়ে দিয়ে অন্যত্র বিয়ে করে। পারইল ইউনিয়ন পরিষদে তালাকের কাগজ পৌঁছিলে বিষষটি সাফিয়াকে জানানো হয়। তালাক ও স্বামীর অন্যত্র বিয়ে করার সংবাদ জানতে পেরে শুক্রবার দুপুরে বাবার বাড়ির সবার অজান্তে সাফিয়া বিষপান করে। পরে তার পরিবারের লোকজন জানতে পেরে সাফিয়াকে রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে দেয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে নওগাঁ সদর হাসপাতালে রেফাট করেন। নওগাঁতেও তার অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মধ্যে তার মৃত্যু হয়। শুক্রবার রাতে রাণীনগর থানা পুলিশ খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে শনিবার সকালে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।

রাণীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এএসএম সিদ্দিকুর রহমান জানান, টাকা-পয়সা নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোন্দল চলছিল। এছাড়াও তাকে তালাক দিয়ে স্বামী অন্যত্র বিয়ে করায় সাফিয়া বিবি আত্নহত্যা করেছে। যৌতুকের বিষয়ে আদালতে মামলা করতে পারে। লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এঘটনায় থানায় একটি ইউডি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সুত্র: নয়াদিগন্ত

 

মনে হচ্ছে, আমি আর বাঁচবোনা -১

প্রবাসী মজুমদার


মসজিদ হতে মাগরিবের নামাজ পড়ে এসেছি মাত্র। অন্দর মহলে ঢুকতেই নাজুকে চোখে পড়ল। জায়নামাজে চুপ করে বসে আছে। সালামের জবাবটা এত ক্ষীণ ছিল যে, মনে হল কিছু একটা হয়েছে। জিজ্ঞেস করলাম

– কি হয়েছে তোমার? এমন করে বসে আছ কেন?

– বুকে ব্যথা।

– বেশী।

– অনেকটা তাই-ই।

– কোন দিকে?

– বা দিকে।

– শুরুটা কিভাবে হল? জানতে চাইলাম।

নাজু বলতে লাগল, নামাজে রুকু থেকে সিজদায় যাবার সময় হঠাৎ বাম দিকে টান লেগেছে। ভেবেছিলাম চলে যাবে। এমনটি মাঝে মধ্যে হয়। কিন্তু কফ দিয়ে কিংবা ম্যাচেজ করেও যেন ব্যথাটি যাচ্ছে না। কিট কিটি ব্যথ্যাটা যেন রয়েই গেল।

– আচ্ছা। ব্যথাটা কি এক জায়গায় আছে, নাকি বাম হতেও ছড়িয়ে পড়ছে?

– না। এক জায়গায়। কিন্তু কেমন জানি মনে হচ্ছে। ইতি পুর্বে এমন আর কখনো অনুভব হয়নি।

– ডাক্তারের কাছে যেতে হবে?

– গেলেই ভাল। আমার খুব ভয় হচ্ছে।

নাজু অসুস্থতাকে সব সময়ই উপেক্ষা করতে অভ্যস্ত। দ্বিতীয়ত সামান্য সর্দি জ্বরের জন্যও হাসপাতালে টেস্টের নামে ডাক্তারদের হয়রানি আর দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাড়িয়ে থাকা খুবই বিরক্তিকর। হাসপাতালের এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলা এড়িয়ে চলার জন্য অনেক রোগীই টোকেন নিয়ে দু এক ঘন্টার মার্কেটিং ও সেরে আসে।

যাইহোক, হার্ট জনিত কারণে নাজু যেহেতু আজ হাসপাতালে যাবার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে। তাকে এতটুকু ভয় পেতে দেখে আমিও তাড়াতাড়ি প্রস্তুত হয়ে গেলাম। সন্তান দুটোকে বাসাতেই রেখে গেলাম।

বিদ্যুতের গতিতেই হাসপাতালের দরজায় গিয়ে পৌছলাম। আল আবির সাসপাতাল। জেদ্দা। রিসিপশনে লম্বা লাইন।অনেক্ষণ দাড়িয়ে সিরিয়াল পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। পাকেট থেকে ইনসিওরেন্সের মেডিক্যাল কার্ডটি বের করে এগিয়ে দিতেই রিসিপশনিষ্ট জানতে চাইল,

– কোন ডাক্তারের কাছে যাবেন?

– হার্ট স্পেশালিষ্ট ডাক্তার তাহির।

– সরি। একেবারে ওভার বুকড হয়ে আছে।

– মানে?

– রোগীর সংখ্যা এত বেশী যে, রাত একটায় ও রোগী দেখা শেষ করতে পারবেনা। এখন আর একজন বাড়তি রোগী নেয়ার কথা বললে ডাক্তার আমাকে উল্টো মারবে।

অসহায় রিসিপশনিষ্ট এর কথা শুনে থ হয়ে গেলাম। জিজ্ঞেস করলাম

– তাহলে আমি এখন কি করবো? আমাকে যে ডাক্তার দেখাতেই হবে।

– আপনি একজন জেনারেল ফিজিশিয়ানকে দেখান। ও যদি হার্ট এর ডাক্তার দেখাতে রিকমান্ড করে, তাহলেই আপনাকে রেফার করা যাবে।

তাৎক্ষণিক্ষ রাজী হয়ে গেলাম। জেনারেল ফিজিশিয়ানের সাথে দেখা করার জন্য স্লিপ দেয়া হল। ডাক্তারের সাথে দেখা করলাম। রোগীর মুখে বিস্তারিত শুনে হাতে আরও একটা স্লিফ ধরিয়ে দেয়া হল। ইসিজি টেস্ট। হার্টবিট দেখতে হবে। না দেখে অগ্রীম কোন কিছু বলা যাবেনা।

মাসের শেষ। পকেটের দাপট অনেকটা ক্ষীণ। দোয়া কালেমা পড়েও টেষ্ট হতে বাঁচার উপায় নেই। তাই অযথা টেস্টের যন্ত্রনায় নিজের হার্টবিট বেড়ে না যাবার জন্য নিজের জন্যও এখন দোয়া পড়ছি।

প্রাথমিক টেষ্ট ইসিজির পয়সাটা দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। রোগীকে নিয়ে ইসিজি করে সীট দেখিয়ে শুয়ে থাকতে বলল। নাজুর চেহারার দিকে তাকিয়ে বুঝলাম, ওর অনুমান একেবারে ঠিক। হার্টের কিছু একটা অবশ্যই হয়েছে। না জানি কি হয়।

অভয় দিয়ে রোগীকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আনার চেষ্টা করলেও যেন মন মানছে না। হার্টের রোগে মারা যাওয়া মানুষগুলোর দৃশ্য ওকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। বার বার বলছে, ওমুকের এ হয়েছে। তমুকের ও হয়েছে। হায় আল্লাহরে তুমি আমার বাচ্চা গুলোর দিকে তাকিয়ে একটা ভাল সংবাদ শোনাও।

কিছুক্ষণ জেনারেল ফিজিশিয়ান মহিলাটা রিপোর্ট হাতে এগিয়ে আসল। খুব গাম্ভীর্যতার সাথে বলতে লাগল, তোমার হাটের ইজিসি হার্টের ডাক্তার তাহিরকে দেখিয়েছি। রিপোর্ট এ্যবনরমাল।

– এখন কি করতে হবে? জানতে চাইলাম।

– অন্য হাসপাতালে যেতে হবে। আমাদের এখানে চিকিৎসা সম্ভব নয়।

– এখনি যেতে হবে? নাকি আগামীকাল?

– এ রিক্স আপনাদের। আমার পরামর্শ হল এখনি কোন বড় হাসপাতালে গেলে ভাল হবে, ডাক্তার সাফ জানিয়ে দিয়ে চলে গেল।

নাজুকে বুঝিয়ে রাখার কিছুই বাকী রইলনা। ওর হতাশার মাত্রাটা বেড়ে গেল। সন্তান দুটি কথা ভেবে ওর দু চোখ বেড়ে পানি পড়ছে।

আমি ডাক্তার নই। তবুও ডাক্তারের কান্ডজ্ঞানহীন পরামর্শের নমুনা দেখে নিজেই বকাবকি করলাম।
বললাম,

– তোমার মনে আছে? দ্বিতীয় সন্তানের সময় তুমি কতো দোয়া করছিলে আল্লাহ আমাদের একটি কন্যা সন্তান দেয়ার জন্য। কিন্তু ডাক্তার বার বার ছেলে সন্তানের কথা নিশ্চিত করে বললেও অবশেষে কন্যা সন্তান তাসনিয়াকে পেয়ে বিশ্বাসই হচ্ছিলনা। কি আর করবো, অবশেষে ছেলে সন্তানের জন্য কেনা জামাই মেয়ে সন্তানকে পরিয়ে হাসপাতাল হতে বিদায় নিলাম।

প্রথমাবস্থায়, সিফা মেডিকেলের ডাক্তার আয়েশাতো আল্ট্রাসোনোগ্রাম করতে গিয়ে আশ্চার্য হয়ে বলতেই লাগল, বাচ্চা কৈ? বাচ্চাতো খুঁজে পাইনা। এ নিয়েও তুমি কেঁদেছিলে। কিন্তু অবশেষে সবই ভুল প্রমাণিত হল। আমার মনে হয়, এসব ডাক্তারগুলো মেডিকেলে পিছনের টেবিলের ছাত্র ছিল। খোঁজ নিয়ে হয়তবা দেখবে, মেডিক্যালের শিক্ষা বোর্ড এ সব আদুভাইদের যন্ত্রণা থেকে বাঁচার জন্যই হয়তবা সাটিফিকেট দিয়ে বিদায় দিয়েছে…।

কোথায় যাবো সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। ভাবলাম আগে সন্তান দুটোকে বাসা থেকে গাড়ীতে তুলে নেই। বাসায় যেতে যেত বিল্ডিং এর ডাক্তার সাহাবুদ্দিনকে ফোন করলাম। বিষয়টা খুলে বলতেই জানাল, আজ আমার ডিউটি নেই। তবে হাসপাতালে এসেছি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়ার জন্য। ইচ্ছে করলে হাসপাতালে চলে আসুন। দেখি রিপোর্টে কি লিখা আছে।

ডাক্তার সাহাবুদ্দিন জেদ্দাস্থ কিং আব্দুল আজি ইউনিভার্সিটি মেডিকেলের আই,সি. ইউ. ডিপার্টমেন্টের ইনসেনটিভ কেয়ার এর ইনচার্জ ও স্পেশালিষ্ট। যে কোন বাংলাদেশীর সহযোগীতায় সে সবার অগ্রভাবে। তার কর্মদক্ষতা, ডাক্তারদের সাথে লিয়াজোসহ একজন সিনিয়র ডাক্তার হিসেবে সবার শ্রদ্ধাভাজন।

রাত ১১টা। সন্তানদের গাড়ীতে নিয়ে ছুটে চলেছি ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের দিকে। দুরত্ব বাসা হতে প্রায় ৭-৮ কিলো মিটার।

(চলবে)

 

জীবন যখন গোলকধাঁধা

আফরোজা হাসান


মেইল খুলে চোখ বড় বড় হয়ে গেলো অধরার। একশো বাইশটা মেইল এসে জমেছে। তিন সপ্তাহ ইচ্ছে করেই মেইল চেক করেনি। কিন্তু এখন মনেহচ্ছে বিরাট বড় ভুল করে ফেলেছে। এই মেইল দেখতে এখন আরো তিন সপ্তাহ লাগবে। আর চলতি তিন সপ্তাহে যেসব মেইল আসবে সেসব কি করবে? জীবন থেকে পিছিয়ে পড়া কি এটাকেই বলে? এভাবেই কি নানা ধরণের কাজে ছোট ছোট অবহেলা বা গাফলতি মানুষকে একটু একটু করে পিছিয়ে দেয় জীবনের পথে? মনের অসৎ ইচ্ছে গুলোকে মূল্য দিয়ে গিয়ে এভাবেই অবমূল্যায়ন করা হয় মহামূল্যবান সময়ের! মোবাইলের শব্দে ভ্রু কুঁচকে গেলো অধরার। এখন কারো সাথেই কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু পর মুহুর্তেই মনে হলো যে, এটাও মনের একটা অসৎ ইচ্ছা। এমন তো হতে পারে কেউ খুব প্রয়োজনে ফোন করেছে।

মোবাইল হাতে নিয়ে স্ক্রীনে জুম্মির নাম্বার দেখে হাসলো। না জানি আবার কি আজগুবি কথা বলার জন্য ফোন করেছে। মাঝে মাঝে কিছু মানুষকে বোঝাতে গেলে মনে হয় বিশাল এক মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। যার কোথাও কিছু নেই, চারিদিকে শুধু ধূ ধূ প্রান্তর। যা বলা হয় সেটা প্রতিধ্বনিত হয়ে নিজের কাছেই ফিরে আসে। আবার কারো ক্ষেত্রে মনে হয় কালবৈশাখীর ঝড়ের কবলে পড়েছে। চারপাশে মটমট করে ভাঙছে ডালপালা, উড়ে যাচ্ছে টিনের চাল। কখন না জানি কি এসে আঘাত হানে এই আতঙ্কে জড়োসড়ো হয়ে উঠে মন। আবার কিছু মানুষকে বোঝাতে গেলে তাদের মনের কোমলতা ও নিজেকে শুধরানোর আকাঙ্ক্ষা মনে ঝরিয়ে দেয় এক পশলা বৃষ্টি। কেউ বা ফুলে ফুলে ভরিয়ে দেয় মনের আঙিনা। জুম্মি ঠিক এমন একজন যার ভুল গুলোকে ফুল করে দিতে কখনোই বিড়ম্বনার স্বীকার হতে হয় না অধরাকে।

সালাম বিনিময়ের পর জুম্মি বলল, ম্যাম আমি জানি আজ আপনি ভীষণ ব্যস্ত। আমি বেশিক্ষণ সময় নেব না। আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেটা জানিয়েই ফোন রেখে দেবো।

অধরা হেসে বলল, হুমম…বুঝলাম। আচ্ছা বলো শুনি আবার কি সিদ্ধান্ত নিয়েছো তুমি!

ম্যাম ঠিক করেছি সন্ন্যাসী হয়ে যাবো। আইডিয়াটা কেমন বলেন তো?

অধরা হেসে বলল, আইডিয়ার পেছনে কারণগুলো জানার আগে বলতে পারছি না যে আইডিয়াটা ঠিক কেমন।

অনেকগুলো কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি ম্যাম। তবে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে জীবনের এত সব জটিলতা, কুটিলতা ভালো লাগে না। মানুষের ক্ষণে ক্ষণে রূপ বদল খুব কষ্ট দেয় আমাকে। তারচেয়েও বেশি কষ্ট দেয় মানুষের মধ্যের ক্ষুদ্রতা। মানুষকে জার্জ করতে চাই না আমি কিন্তু বেসিক বিবেকবোধের ঘাটতি যখন দেখি চোখ ফিরিয়েও নিতে পারি না।

এর জন্য তুমি ঠিক করেছো সন্ন্যাসী হয়ে যাবে?

জ্বী ম্যাম। এইসব কারণে আমার মনের ভিতর যে রাজ্যটা আছে সে রাজ্যের রাণী একা থাকাটাকেই ভালো মনে করছে। তাছাড়া নিরবতা, নিস্তব্ধতা, নিবিড়তা, শান্ত-স্বিগ্ধ পরিবেশে তীব্র ভাবে আকর্ষণ আমাকে। ইচ্ছে মত যখন যেখানে ইচ্ছে ঘুরতে বেড়াতে ইচ্ছে করে। চাই যখন আপন মনে চিন্তা ভাবনা করবো তখন কেউ এসে বাঁধাগ্রস্ত না করুক আমাকে। গুহা আর পাহাড়ে ধ্যান করাটাকে এখন জীবনের একমাত্র স্বপ্ন মনেহয়। রাসুল (সাঃ) হিরা গুহাতে ধ্যানরত ছিলেন, সেটা উপলব্ধি করার পর থেকেই এই ইচ্ছাটা মনে বাসা বেঁধেছে। আপনি কি আমার কথাতে বিরক্ত হচ্ছেন?

অধরা হেসে বলল, উহু আমার তো শুনতে বেশ লাগছে তোমার কথা। তুমি নিশ্চিন্তে তোমার মনের সব কথা বলো আমাকে।

আপনি তো জানেন ম্যাম আমি বড্ড স্বাধীনচেতা কিন্তু বিদ্রোহী নই। মনে প্রাণে চাই যে আমার নিজের একান্ত একটা সিদ্ধান্তের অধিকার থাকবে। কেউ যেখানে নাক গলাতে আসবে না, কেউ নাক উঁচুও করবে না যে সিদ্ধান্ত শুনে। মোটকথা এমন অন্ধ বন্ধন থাকবে না যাতে করে চাইলে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে পারবো আমি। তবে সন্ন্যাসীরা সাধারণত ঘর ছাড়া কিন্তু আমি ঘরে থেকে সন্ন্যাসী হতে চাই। আর আমি সন্ন্যাসী হতে চাই সমাজকে নতুন করে নতুন রূপে সাজাতে। ম্যাম এবার বলেন আইডিয়াটা কেমন?

অধরা হেসে বলল, তোমার আইডিয়াটা কেমন সেটা পরে বলছি। তবে তোমার সন্ন্যাসী হতে চাইবার কারণটা অনেক সুন্দর। কিন্তু সমাজকে নতুন করে নতুন রূপে সাজাতে হলে আগে নিজেকে নতুন করে নতুন রূপে সাজাতে হবে। নিজেকে গড়ো অতঃপর জগতটাকে। সুতরাং, আগে নিজেকে গড়তে হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে নিজেকে গড়ার জন্য সন্ন্যাস জীবন ধারণ করার যোগ্যতা তোমার আছে কিনা?

প্রশ্নটা বুঝিনি ম্যাম।

আচ্ছা বুঝিয়ে বলছি। যেমন ধরো আমাদের এই দুনিয়াবী জীবনের লক্ষ্য হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে জান্নাত লাভ। এখানে লক্ষ্য হচ্ছে জান্নাত আর মাধ্যম হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি। এখন যদি প্রশ্ন করা হয় জান্নাত লাভের জন্য কি করতে হবে? জবাব হচ্ছে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে। আল্লাহর সন্তুষ্টি কিভাবে অর্জন করবো? আল্লাহর পাঠানো শরীয়তের বিধান মত জীবন যাপন করে। ঠিক তেমনি তোমার লক্ষ্য সমাজকে নতুন করে নতুন রূপে সাজানো। মাধ্যম হিসেবে তুমি বেছে নিয়েছো সন্ন্যাস জীবনকে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে তোমার সন্ন্যাস জীবনের ভিত্তি কি? কিসের আলোকে তুমি সমাজকে নতুন করে নতুন রূপে সাজাতে চাও?

অবশ্যই শরীয়তের আলোকে ম্যাম।

কিন্তু শরীয়ত তো সন্ন্যাস জীবন সমর্থন করে না। সূরা নাহলের ৯নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-“ সরল পথ আল্লাহ্‌র দিকে পরিচালিত করে,কিস্তু পথগুলির মধ্য বক্রপথও আছে। আল্লাহ্‌ যদি ইচছা করতেন তবে তিনি সকলকেই সৎ পথে পরিচালিত করতে পারতেন।” এই আয়াতের তাফসীরে বলা হয়েছে-“ এই পার্থিব জীবন, হাসি, কান্না, ভালোবাসা, হিংসা-দ্বেষ, লোভ-লালসা দ্বারা আবৃত। আর এ সব মিলেই আমাদের পৃথিবীর জীবন। সংসার ত্যাগ করে বনে গিয়ে আল্লাহ্‌কে পাওয়ার ইবাদত ইসলাম স্বীকার করে না। এই পার্থিব জীবনের মাধ্যমে স্রষ্টাকে পাওয়ার সাধনাই হচেছ ইসলামের শিক্ষা। আল্লাহ্‌ ইচছা করলে মানুষকে “সীমিত স্বাধীন ইচছা শক্তি”দান না করলেও পারতেন। তাহলে ফেরেশতা বা অন্যান্য জীবন্ত প্রাণীজগতের মত তাকে পরকালে জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হতো না। কিন্তু স্রষ্টার পরিকল্পনা হচেছ মানুষের ইচছা শক্তিকে প্রশিক্ষিত করা,যেনো সে স্ব-ইচছায় স্রষ্টার ইচছার কাছে আত্মসর্ম্পন করে।” সুতরাং, আল্লাহ যদি চাইতেন তাহলে দুনিয়াতে কোন সমস্যাগ্রস্ত মানুষ ও সমস্যা কিছুই থাকতো না। তাহলে আমাদের জীবনটা পরীক্ষাও হতো না। তাই প্রতিকূলতার মধ্যেই দিনযাপন করতে করতে আমাদেরকে নিজ নিজ লক্ষ্য পানে ছুটে চলতে হবে। কি মুখ ভার হয়ে গেলো?

হেসে, আপনি কি করে বুঝলেন আমার মুখ ভার হয়েছে?

অধরা হেসে বলল, তুমি যে রাস্তায় চলছিলে আর আমি তোমাকে নিয়ে এলাম আরেক রাস্তায়। মুখ ভার হওয়া তো স্বাভাবিক। দেখো নিজের সাথে কিছুটা সময় একা কাটানো অবশ্যই উচিত সবার। কিন্তু মন যদি সবসময় একা থাকতে চায় সেটা শুধু অনুচিতই নয়, মনের এই চাওয়া অতি ভয়ংকর। একাকী মানে তার ভুলকে দেখার ও শুধরে দেবার কেউ নেই। আর এই দাবী কেউ করতে পারবে না যে অন্যের সাহায্য ছাড়াই সে নিজের দোষ-ত্রুটি সর্বাবস্থায় যাচাই বাছাই করতে পারে। সুতরাং, মন সর্বদা একা থাকতে চাইলে তাকে কান ধরে হিড়হিড় করে টেনে জনসম্মুখে নিয়ে আসতে হবে।

জুম্মি হাসতে হাসতে বলল, আপনি সত্যিই আরেক রাস্তায় চলে গিয়েছেন ম্যাম। আমি এভাবে ভাবিনি।

তাহলে এখন ভাবো। দেখো সমাজকে গড়তে হলে আগে নিজকে গড়তে হবে। আর একা একা কখনোই নিজকে গড়া সম্ভব নয়। কুরআন ও হাদীস থেকে জ্ঞানার্জন করতেও তোমার অন্যের সাহায্য প্রয়োজন হবে। আর তোমার মন যা কিছু কল্যাণকর ভাবছে, তার সবই যে তোমার জন্য কল্যাণকর হবে এমন তো কোন গ্যারান্টি নেই। সুতরাং, তোমার স্বাধীন ইচ্ছাকে বা চিন্তাকে বাঁধাগ্রস্ত করার মত কেউও থাকা দরকার পাশে। যাতে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষন করা যায় নিজের চাওয়া গুলোকে। তাছাড়া জীবনে যা চাইবো তার সবই আমাকে পেতে হবে এমনো তো কোন নিয়ম নেই। কোন কিছু চাওয়ার পথে যদি কেউ বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় তবে ধরে নেবে ঐটা তোমার প্রাপ্য ছিলই না। আর আমার অভিজ্ঞতা তো অন্য কথা বলে।

কি ম্যাম?

কোন কিছু মনে প্রাণে চাওয়ার পরও যখন আমরা সেটা পাই না। তার অর্থ হচ্ছে এরচেয়েও ভালো কিছু আমাদের জন্য প্রতীক্ষ মান। দেখো আমার মতে সন্ন্যাসী হওয়া মানে নিজের সংশোধনের পথ বন্ধ করে দেয়া। আর সংস্কার বিহীন কারো পক্ষে সমাজকে দেবার মত কিছু থাকতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি না। তাই আমাদেরকে সংসারের মাঝেই থাকতে হবে। এবং সব প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করতে করতেই নিজেকে গড়তে হবে এবং সমাজকে সাজানোর চেষ্টা করতে হবে। তাছাড়া জীবনটা আল্লাহর দেয়া এক আমানত আমাদের জন্য। এটাকে তাই অজ্ঞতা-অসন্তোষ ও আত্ম-অত্যাচারের দ্বারা নষ্ট করার কোন অধিকার আমাদের নেই। আর একমাত্র জ্ঞানার্জনের দ্বারাই মনে এই বোধের জন্ম হওয়া সম্ভব। মন ও মনন যদি সঠিক জ্ঞানের আলোতে আলোকিত না হয় তাহলে নিজেকে ঠিকভাবে দেখতে পারে না মানুষ।

আমি বুঝতে পেরেছি ম্যাম।

অধরা হেসে বলল, আলহামদুলিল্লাহ। বুঝতে পারলে তো ভালো। আসলে কি জানো জীবন মাঝে মাঝে গোলকধাঁধার মত হাজির হয় আমাদের সামনে। সেই গোলকধাঁধায় ঘুরপাক খাওয়ার হাত থেকে বাঁচার একটাই উপায়। জ্ঞানার্জন করা। যত তোমার জ্ঞান বাড়বে তুমি বুঝে নিতে পারবে পরিস্থিতি অনুযায়ী করনীয়কে। যাইহোক, তুমি ভেবে দেখতে পারো আমার কথাগুলো। সবসময় যে আমার সব কথা তোমার পছন্দ হতেই হবে এমন কোন নিয়ম নেই। এখন তাহলে আমি রাখি। পরে কথা হবে আবার, ইনশাআল্লাহ।

জুম্মিকে বিদায় জানিয়ে আবার মেইল নিয়ে বসলো অধরা। মনের সৎ ইচ্ছা ও অসৎ ইচ্ছার একটা তালিকা বানিয়ে চোখের সামনে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। তাতে কোন ইচ্ছাকে আদর করে কাছে টেনে নেবে আর কোন ইচ্ছাকে জালিবেত দিয়ে সপাৎ সপাৎ দুটা লাগাতে হবে সেটা জানা থাকবে। নয়তো ভুল ইচ্ছারাও জীবনকে পরিণত করে দেয় স্বনির্মিত গোলকধাঁধায়। আর গোলকধাঁধা তৈরি হচ্ছে এই সচেতনতা যেহেতু থাকে না। নিজেকেই তখন ঘুরপাক খেতে হয় নিজের তৈরি গোলকধাঁধার মাঝে।

প্রথম মেইলটা ওপেন করতে করতে অধরা মনে মনে বলল, হে প্রভু রক্ষা করো মোরে নিজেই নিজের জন্য এমন গোলকধাঁধা তৈরি করা থেকে।

 

বিয়ে ও পরিবার সমকালীন জিজ্ঞাসা -৫

কানিজ ফাতিমা


পূর্বের কয়েকটি পর্বে দ্বন্দ ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা করেছি। দ্বন্দ ব্যবস্থাপনার অন্যতম একটি উপায় হল Avoiding বা নিশ্চুপ থাকা। স্বামী বা স্ত্রী যদি কোন কারণে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ বা চাপের মুখে থাকে (Streesed) কিংবা অসুস্থ থাকে তবে তার মধ্যে দ্বন্দ ও বিরোধ সৃষ্টির প্রবণতা বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে অন্যপক্ষের দায়িত্ব হল Avoid বা নিশ্চুপ ও নিষ্ক্রিয় থাকা। কারণ সময়ের ব্যবধানে আপনা আপনিই এ সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। এক্ষেত্রে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা বিবাহোপযোগী প্রতিটি নারী-পুরুষের জানা প্রয়োজন তা হল মাসিক কালীন ও মাসিক পূর্ব নারীর শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ও এর কারণে সৃষ্ট দ্বন্দ। গবেষণায় দেখা গেছে মাসিকের সঙ্গে দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ (Stress) এর সম্পর্ক রয়েছে। মাসিকপূর্ব ও মাসিক কালীন নারীদেহে যে হরমোনের পরিবর্তন ঘটে তার প্রভাব কেবল নারীর শরীরে পড়ে না, নারীর মনের ওপরও এর সুস্পষ্ট প্রভাব রয়েছে। ইংরেজিতে এ অবস্থাকে বলা হয় Premenstrual Syndrome বা PMS. দুইশ’রও বেশি লক্ষণ রয়েছে PMS এর। তবে সব থেকে বেশি দেখা যায় তিনটি-

১. Irritability বা খিটখিটে ভাব
২. Tension বা দুশ্চিন্তা
৩. Dysphoria (Unhappiness) ভাল না লাগা।

মাসিকের সময় যে শারীরিক কষ্ট হয় তার মধ্যে রয়েছে-
১. বমি ভাব
২. অরুচি
৩. মাথা ব্যথা
৪. দুর্বলতা (Fatigue)
৫. ঘুমের সমস্যা ও
৬. তলপেটে ব্যথা/কোমর ব্যথা ইত্যাদি।
মাসিক বা মাসিকপূর্ব (PMS) সময়ে যে মানসিক পরিবর্তনগুলো গবেষণায় বের হয়ে এসেছে সেগুলো হল-
১. Depression – অনেক সময় মাসিকপূর্ব Depression যখন মারাত্মক আকার নেয় তখন একে বলা হয় Premenstrual Dysphoric Disorders (PMDD) যে নারীদের PMS রয়েছে তাদের মধ্যে প্রায় ৫% এর (PMDD) হবার সম্ভাবনা প্রবল।
২. Anxiety and panic Attack বা Insomnia
৩. Stress and tension
মাসিক ও মাসিকপূর্ব এই Depresson, Anxiety এর কারণে এই সময় নারীদের stress বা মনের অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন ঘটে। যার ফলে এই সময় নারীরা অল্পতেই রেগে যায় (Out bursts of anger), সব সময় বিরক্তিভাব প্রকাশ করে (Irritability) এবং অন্যের প্রতি বিরূপ বা শত্রুভাবাপন্ন (Hostility)হয়। এর মাত্রা বেশি হলে সে নিজের প্রতি বা অন্যের প্রতি আক্রমনাত্মক (Violence and agressive) হয়ে ওঠে। কোন কোন নারী এ সময় অন্যদের সঙ্গে মিশতে চায় না এবং একাকী থাকতে চায় (Withdrawl from others)।

এ সময় দুর্ঘটনা প্রবণ মানসিকতা লক্ষ্য করা যায়। এই সময় নারীদের মনে যে অসহায় দুঃখী ভাবের (Sadness and hopelessness) জন্ম হয় তা থেকে অনেকে আত্মহত্যা প্রবণও হয়ে পড়ে। গবেষণায় আরও এসেছে যে এ সকল কারণে এই সময়গুলোকে নারীদের এই মানসিক অবস্থা তার দৈনন্দিন কার্যকলাপে বাধা সৃষ্টি করে এবং পরিবারের অন্যদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটায়। কাজেই স্বামীর যখন জানা থাকে যে তার স্ত্রীর মাসিক ও মাসিকপূর্ব সময়ে প্রাকৃতিকভাবেই শরীরিক ও মানসিক কিছু পরিবর্তন ঘটে এবং এ সময় তার স্ত্রী শারীরিক কষ্ট ও মানসিক চাপ ভোগ করছে তখন এই সময়ে স্ত্রীর বিরোধপূর্ণ আচরণে স্বামীর ধৈর্যধারণ
করা কর্তব্য। স্ত্রীর খিটখিটে ভাব বা আক্রমণাত্মক আচরণকে আমলে না এনে বরং তার প্রতি দয়া ও সহানুভূতি প্রকাশ করা উচিত। সূরা রুমের ২১ নং আয়াতে আল্লাহ পাক স্বামী স্ত্রীর পরস্পরের প্রতি ভালবাসা ও সহানুভূতির কথা বলেছেন। স্ত্রী যখন শারীরিক ও মানসিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি থাকে স্বামীর সহানুভূতি পাবার হক স্ত্রীর তখন বেশি হয়।

চলবে…

পর্ব-৪

 

বাংলাদেশে ঈদ আনন্দ

নিবরাজ জাহান হুজায়রা


ঈদ নিয়ে একটা কিছু লিখতে ইচ্ছে হলো কিন্তু কোথা থেকে শুরু করব, কি ভাবে কি লিখব? যা হোক ঈদ যেহেতু এক মাস সিয়াম সাধনের পর আসে তাই রোযা দিয়ে শুরু করি এই লেখা। বারো মাসের এই একটা মাস যার একটা জাদুকরী ক্ষমতা আছে, আমরা এমনিতেও কিন্তু অন্যান্য মাসেও রোযা রাখি, কিন্তু এই মাসের ব্যাপারটাই আলাদা। স্কুল কলেজ বন্ধ হয়ে যায়, মা-দের কোচিং এ মাসব্যাপী দৌড় ঝাঁপ করতে হয় না, ঘরে ঘরে একটা ইবাদতের পরিবেশ বিরাজ করে, এই পরিবেশটা আগে অবশ্য পুরো দেশেই বিরাজ করত কিন্তু ইদানিং যা অবস্থা হয়েছে তাতে বিরক্ত, লজ্জা এবং মাঝে মাঝে ভীষণ রাগও হয় !

রোযা নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের চিন্তা ভাবনা রয়েছে: সাধারণত পুরুষরা রোযা রাখতে গরিমসি করে! তবে তাদেরকে কিছু বলা হলে অবশ্য কোন মন্তব্য করে না শুধু লাজুক একটা হাসি দেয়া ছাড়া। কিছু অল্প বয়স্ক মেয়ে আছে (কলেজ থেকে ভার্সিটি লেভেলের) যারা রোযা রাখে না, কিছু বলা হলে উত্তর দেয় আম্মু রাখতে দেয় না, কেউ উত্তর দেয় আমার সমস্যা আছে, ডাক্তার বারণ করেছে, এবং সত্যি সত্যি কারো মা সন্তানের কষ্ট হবে মনে করে সন্তান কে রোযা রাখা থেকে আসলেই বিরত রাখে!

রোযার মধ্যে কেনাকাটার জন্য মার্কেটে গিয়ে তো আমি বোকা হয়ে গেছি, প্রচুর ছেলে-মেয়েরা এমন ভাবে খাওয়া দাওয়া করছে এবং মার্কেটের দোকান থেকে এমন ভাবে ডাকাডাকি করছে যে কোন অবস্থাতেই বুঝার উপায় নেই এটা রোযার মাস! আমার ক্লাস টুতে পড়া সন্তানটি খুবই অবাক হয়ে হিজাব পরা একটি মেয়েকে দেখিয়ে প্রশ্ন করলো, মা এই আপুটা রোযা রাখেনি কেন? আমি আমার সন্তানটিকে বুঝালাম, আপুটা সম্ভবত অসুস্থ তাই !!!

রোযারই শেষের দিকে আমার এক হিন্দু বন্ধু আমার সাথে মার্কেটে গেল, ও কিছু কেনাকাটা করবে, এর মধ্যে ও ২/৩ বার বলল পানি খেতে ইচ্ছে করছে, আমি ওকে কতবার করে বললাম, আমার কোন সমস্যা হবে না, তুমি পানিটা খাও, ও শেষ পর্যন্ত পানিটা খেল না। ওর একটাই কথা তোমার সামনে আমি কিছুতেই পানি খাব না, ভদ্রতাবোধ বলে একটা ব্যাপার আছে।

কাগজে কলমে শুধু নয়, অন্তরে বিশ্বাসের কারণে এই দেশটা এখনও ইসলাম প্রধান দেশ হিসেবে পরিচিত। রোযার মধ্যে কোনমতে একটা ছেঁড়া লুঙ্গি, ছেঁড়া চাদর টেনে সবাই কব্জি ডুবিয়ে খাওয়া দাওয়া করবে, বড় বড় মার্কেট গুলো খাবারের ব্যবস্থা থাকবে এই অবস্থা আইন করেও উঠানো যাবে না, কারণ আমরা আইন না মানতেই ভালোবাসি! এটা একটা বোধের ব্যাপার।

এই শিক্ষাটা আমাদের পরিবার থেকেই হতে হবে। মেয়ের সাথে তার শ্বশুর বাড়ীর লোকজন খারাপ ব্যবহার করলে মনের কষ্ট মনে চেপে মারা যদি সামাজিকতার ভয়ে মেয়েকে শিক্ষা দিতে পারেন, মানিয়ে নেবার চেষ্টা করতে তবে আল্লাহ্ র ভয় কেন মায়েরা পাবেন না, কেন মেয়ের গুনাহের ভাগ দার হতে যাবেন? সন্তানটি পরিনত বয়সে যদি ধর্মের দিকে ঝুঁকে যায়, তবে অল্প বয়সে আহ্লাদ করে রোযা রাখতে না দেবার জন্য আপনারই সমালোচনা করবে! সন্তানের সমালোচনা সহ্য করা খুব কষ্টের, কেন মিছেমিছি কাঠগড়ায় দাঁড়াবেন?

রোযা সংযমের শিক্ষা দেয়, ত্যাগের শিক্ষা দেয়(যাকাত প্রদানের মাধ্যমে), তওবা করা শেখায়(ফিতরাহর মাধ্যমে), ইফতার বন্টনের মাধ্যমে ভ্রাতৃত্ববোধ বাড়ায়।
এই রোযাতেই দোকানীদের বছরের আয় হয়ে যায়, শুধু বড় বড় শপিং মলের নয় ফুটপাতের দোকানীরও তৃপ্তির হাসি ফোঁটায় মুখে।

রোযা শুধু না খেয়ে থাকা নয়, রোযা ঈদের আনন্দ বারতা। এক ঈদেই আমরা পুরো পরিবারের সবাই কে প্রীতি উপহার দেই এবং পেয়ে থাকি। দেবার মধ্যে যে এক অনাবিল আনন্দ আছে তা কিন্তু ঈদেই বেশী অনুভব হয়। জীবনের ঝুঁকি আছে জানার পরও ঈদের মধ্যে মা-বাবার সাথে সবাই দল বেঁধে ঈদ করতে চলে যাওয়া কি কেউ আটকাতে পারে?

ঈদের নামাজ, ঈদের জামাত, নামাজ শেষে কোলাকুলি এই অপার সৌন্দর্য শুধু ঈদ-ই দেয়। ঈদের সালামি ২০টাকা হোক বা ১০০০টাকা হোক(তাও যদি হয় জোর করে আদায় করা তবে তো কথাই নেই) এর আনন্দ অন্য কোন কিছুর সাথে তুলনাই চলে না। মহান আল্লাহ্ র কাছে শুকরিয়া ঈদ আনন্দ সবার সাথে উৎযাপন করতে পারার জন্য।
সবাইকে ঈদ মোবারক।

নিবরাজ জাহান হুজায়রা
কাউন্সেলিং সাইকোলজিষ্ট

 

মেঘের দেশে ছোট্ট শহর

তাহেরা সুলতানা


গেন্টিং হাইল্যান্ডস, যাকে মালয়েশিয়াতে বলে ‘সিটি অফ এন্টারটেইনমেন্ট’! ঈদের পরদিন এবার ফ্যামিলি ট্যুরে গেন্টিং হাইল্যান্ডসকেই টার্গেট করলাম। এর আগে অবশ্য ২ বার গিয়েছি। ২০১২ সালে একবার আর ২০১৪ সালে আর একবার গিয়েছি। প্রথমবার তো কেবল কারে উঠে ভয়ে যেই একটা চিৎকার দিয়েছিলাম, আজো আমার হাসবেন্ড সেইটা মনে করে খেপায়! এর পরেরবার কিন্তু ভয় লাগেনি! এবার কিছুটা ভয় আর টেনশন হচ্ছিল, কিন্তু সেটা প্রথমবারের মতো অতোটা ছিল না!

আমার বাসা সুবাং জায়াতে। বাসা থেকে যখন গেন্টিং রওনা দিয়েছিলাম তখন সকাল ৯ টা, কটকটা রোদ। কিন্তু যখন থেকেই শুরু হলো পিচঢালা পাহাড়ি পথ, তখন থেকেই আকাশ মেঘলা হতে শুরু করলো। পাহাড়ি পথ বেয়ে আমাদের গাড়ী (গ্রাব) আস্তে আস্তে এঁকে বেঁকে উপরের দিকে উঠছিল। উপরে মেঘের কাছাকাছি বৃষ্টিও হচ্ছিল, বৃষ্টির ছাট গাড়ীর গ্লাসে বার বার বাড়ি খাচ্ছিল। অল্প অল্প ঠাণ্ডা লাগছিল, নির্মল প্রকৃতি আর বৃষ্টিস্নাত আকাশ মনটাকে কোন এক অজানা শহরের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল!

আমি মালয়েশিয়াতে এসে প্রথমদিকে গোমবাক (ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভারসিটি এর কাছাকাছি) থাকতাম। তখন আমার বাসা থেকে গেন্টিং এর চূড়াটা দেখা যেত। মনে মনে ভাবতাম, এতো উঁচূতে কি করে একটা শহর বানানো হলো! কি করে ওইখানে ইট, কাঠ, সিমেন্ট বালি এবং বাকি সব সরঞ্জাম নিয়ে গেল! রাতের বেলা আলোকচ্ছটায় শহরটা আরো বেশি স্পষ্ট হতো! আর বিশেষ বিশেষ দিন কিংবা চাইনিজ নিউ ইয়ারের সময় যেন বাঁধভাংগা আলোকরাজির সম্মিলন ঘটতো! আর সেই আলোকরাজির ছটা মনটাকে গেন্টিং এর চূড়ায় নিয়ে গিয়ে ফেলতো, কখনো ঘুমের ঘোরে নিজেকে খুঁজে পেতাম মেঘের সারিতে ভেসে বেড়ানো মেঘবালিকার বেশে।

কুয়ালালামপুর থেকে মাত্র ১ ঘন্টার দূরত্বে ১৮৬০ মিটার উচ্চতায় তৈরী গেন্টিং সিটিতে আছে রিসোর্টস, থিম পার্ক আর ক্যাসিনো। বাস থেকে নেমে ৩.৩৮ কিমি. স্কাই ওয়ে পেরিয়ে ওখানে যেতে হয় (স্কাই ওয়ে বাই পাস করে সরাসরিও ওখানে যাওয়া যায়)। স্কাই ওয়ের যাত্রা পথ আর নৈসর্গিক দৃশ্য অসাধারণ, অবর্ণনীয় ! গেন্টিংকে মালয়েশিয়ার মন্টিকার্লো বলা হয় এবং এটি এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ ক্যাবল কারের সংযোগ।

আমরা বিশাল লম্বা লাইন পার করে টিকিট কেটে কেবল কারে চড়ে বসলাম। বাচ্চারা বেশ মজাই পাচ্ছিল! আমরা তখন মাটি থেকে হাজার মিটার ওপরে! নিচের দিকে তাকালে মনে হয়, গহীন জঙ্গলে যেন এক ভৌতিক অবস্থা বিরাজ করছে, শুণ্যে ঝুলে ঝুলে চলেছি আর নিচে গভীর ঘন জংগল! বনের মাঝখান দিয়ে রাস্তাটাও উপর থেকে দেখা যাচ্ছে। নির্জন, নিরিবিলি, কেমন যেন ভূতুরে! আমাদের ক্যাবল কার হালকা হালকা মেঘ আলতো হাতে সরিয়ে সরিয়ে যাচ্ছিল। মনের ভেতর কেমন যেন ছমছম করে উঠছিল! তার ছিড়ে যদি এ জঙ্গলে পড়ি, তবে হাড় গোড় থাকলেও হিংস্র প্রাণী কিন্তু আমাদের টেনে হিঁচড়ে খেয়ে ফেলবে!

প্রায় আধঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে ক্যাবল কার থেকে নেমে যখন শৈল শিখরে পৌছালাম, মনে হলো যেন এক স্বপ্নের দেশে আসলাম! যেন হিমালয়ের কোনো দেশে এসে পাড়ি জমালাম! চারিদিকে আলো ঝলমলে। হাঁটতে শুরু করলাম। এখানে আছে হোটেল, ক্যাসিনো, থিক পার্ক, দোকানপাট, ভিডিও গেম ও অন্যান্য নানা রকম খেলাধুলা ও চিত্ত বিনোদনের ব্যবস্থা। মেঘের উপরে এতো সুন্দর শহর যেনো অন্য একটা জগৎ! এই শহরটাকে তাই ‘মেঘের ভেতর মজার শহর’ ও বলা হয়। শহরের লেকে রয়েছে বোটে ভ্রমণের ব্যাবস্থা। গেন্টিং থিমপার্কে আছে ট্রেন ভ্রমণ, কর্ক স্ক্র, গ্রান্ড প্রিক্স গোকার্ট, ফ্লাইং কোস্টার, স্পেস শট, স্পিনার এবং বাচ্চাদের জন্য এরকম আরও অনেক খেলার ব্যবস্থা। তাছাড়া রয়েছে চকলেটের ফ্যাক্টরি। চারপাশে চোখ ঘুরলে মনে হবে যেন চকলেটের এক রাজ্যে এসে পৌছেছি! থিম পার্ক ঘুরে এসে প্রবেশ করলাম চকলেটের দোকাগুলোতেও। মজার বিষয় হচ্ছে, চকলেটগুলো খেয়ে টেস্ট করা যায়। প্রায় একশ ধরনের চকলেট। গ্রাম হিসেবে বিক্রি করে। একটার টেস্ট অন্যটার চেয়ে ভিন্ন। সত্যিই অনেক সুস্বাদু! না খেলে এ স্বাদ বোঝা খুব কঠিন!

ঘুরতে ঘুরতে ক্যাসিনোর গেটে চলে আসলাম।
বুঝলাম কেন এখানে পৃথিবীর বিখ্যাত সব জুয়াড়িরা এসে মাসের পর মাস পড়ে থাকে। এটাকে ক্যাসিনোর জগৎ বলতেই হবে। ক্যাসিনোতে ঢুকতে হলে টাই কিংবা বাটিকের শার্ট পরতে হয়। পাশেই বাটিকের শার্ট ভাড়া পাওয়া যায়। নির্ধারিত ফি দিয়ে শার্ট ভাড়া করে ভেতরে যাওয়া যায়। এ এক বিশাল ব্যাপার!

বাইরে হালকা বৃষ্টি হচ্ছিল, ওর মধ্যেই দাঁড়িয়ে কিছু ছবি তুললাম আর ছুটে চলা মেঘের ভিডিও করলাম। কিছুক্ষণ পর পর মেঘ এসে ঘিরে ফেলছিল আমাদের। মাঝে মাঝে মেঘগুলো হাতের উপর দিয়ে উড়ছিল।
ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। চারিদিকের সবুজ পাহাড়গুলো আমাদের থেকে নীচে। পাহাড়ের এক পাশে ঘন কালো মেঘের অন্ধকার। কিছুক্ষণের মধ্যেই বড় বড় বিল্ডিংগুলো মেঘে ঢাকা পড়ে গেলো। দূরে দেখা যায় রোদের রেখা। রোদের মাঝেই হঠাৎ বৃষ্টি। এ যেন এক মেঘের রাজ্য। মনে হচ্ছে যেন আকাশের উপর বসে থেকে আমরা দেশটাকে দেখছি। চারিদিকের পাহাড় ও বন, নিস্তব্ধ প্রকৃতি, অনেক মানুষের কোলাহলও নিস্তব্ধতা ম্লান করতে পারছিল না।

ঘুরাঘুরি শেষ করে সন্ধ্যার দিকে আমরা ট্যাক্সি নিয়ে মসজিদ জামেক চলে আসলাম। সেখান থেকে ট্রেনে আসলাম সুবাং জায়া। রাত ৯ টা নাগাত বাসায় পৌছে গেলাম।

গেন্টিংয়ের জগৎ মানুষকে মোহাবিষ্ট করে তোলে, আচ্ছন্নতায় ভরিয়ে রাখে। সব বয়সের মানুষের জন্য সব ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা এখানে রয়েছে। একজন মানুষকে অনায়াসে ব্যস্ত সময় থেকে গেন্টিং দূরে, বহুদূরে ছুটিয়ে নিয়ে যেতে পারে! ভুলিয়ে দিতে পারে সকল রকম ব্যস্ততা! মেঘের পরে মেঘ, তার উপরে আরও অনেক সারি সারি মেঘপুঞ্জের ভীরে হারিয়ে ফেলতে পারে! তথ্য এবং ছবির উৎস (কিয়দংশ): গুগোল।

 

আগুন

রেহনুমা বিনত আনিস



মানুষের মন এক অদ্ভুত চিজ। চোখের সামনে এমন অভাবনীয় দৃশ্য ঘটমান, আর আমার মন কি’না আমাকে নিয়ে চলে গেল বেড়াতে, তিন বছর আগে, যখন প্রথম এই ছেলেটিকে দেখেছিলাম।

সেদিন ছিলো আমাদের ছাত্রজীবনের সমাপ্তি দিবস। রায়হান বলল, ‘চল, আজ সেলেব্রেট করি। কি করা যায়? কি করা যায়? পেয়েছি! চল, তোকে কাবাব খাওয়াব, পোড়া মাংসের গন্ধে খাবার এসে পৌঁছবার আগেই তোর ঠোঁটের কোণ বেয়ে লোল পড়বে, দেখে দেখে আমি হাসব। সিরিয়াস মজা হবে’।

রায়হান আর আমার বন্ধুত্ব হোল যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলে সিম্বায়োটিক রিলেশনশিপ, পরস্পরনির্ভরশীলতাই যার ভিত্তি। সে বিশাল বড়লোকের ছেলে, ওর দাদার দেয়া হাসপাতাল ওদের পারিবারিক সম্পদের একটি অংশ। সুতরাং, মেধা থাক বা না থাক, ওকে ডাক্তার হতেই হবে। আর আমি হলাম গরীবের মেধাবী ছেলে। মেধার জোরে ভর্তি পেয়েছি বটে, কিন্তু নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। রায়হানের সুবিধা আমি ওকে পড়াশোনায় সাহায্য করি, আমার সুবিধা সে আমার পকেটের অবস্থা বুঝে আমাকে কিছু বুঝতে না দিয়ে আমার সুবিধা অসুবিধার দিকে খেয়াল রাখে। সব দিক মিলিয়ে এই বন্ধুত্বে উভয়ের লাভ। আমরা উভয়ই জানি আমরা পাশ করব। কিন্তু রায়হান পাশ করা মাত্র গিয়ে বসবে ওর দাদার হাসপাতালে, কয়েক বছরের ভেতর সে পৌঁছে যাবে এম ডির চেয়ারে; আর আমার চিন্তা আমাকে কোন পাহাড়ে বা কোন অজ পাড়াগাঁয়ে পাঠানো হবে। যাক, এই সুযোগে একবার কাবাব খাওয়া হয়ে যাবে, এটাই লাভ।

দোকানে গিয়ে পোড়া মাংসের গন্ধে আসলেই আমার জিভে জল আসতে লাগল। অপেক্ষার প্রহর যেন আর শেষ হয়না। এমন সময় আজকের এই ছেলেটা একটা মেয়ে নিয়ে প্রবেশ করল। গিয়ে বসল রায়হানের পেছনের টেবিলটায়। ওদের অন্তরঙ্গতা দেখে মনে হচ্ছিল যেন ওরা স্বামী স্ত্রী। কিন্তু স্বামী স্ত্রী পাবলিক প্লেসে এতটা অন্তরঙ্গতা প্রকাশ করেনা, কারণ ওদের অন্তরঙ্গ হবার জন্য বাড়ীঘর রয়েছে। মেয়েটা হোল যাকে বলে আগুনে সুন্দরী, হাসিতে মুক্তো ঝরে টাইপের। এত সুন্দর মেয়েটা কেন কারো ঘর আলো না করে এমন একটা ছেলের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে যে তার মানসম্মানের কোন পরোয়াই করেনা, সেটা বুঝতে পারলাম না। যাক, বড় বড় লোকের বড় বড় কারবার আমার মত গরীবের ছেলেরা বুঝবে তাই বা আশা করি কি করে? নিজের অজান্তেই বার বার চোখ চলে যাচ্ছিল মেয়েটার দিকে। মন বলল, ‘হে ফাইয়াজ, তোমার প্রভু তোমাকে যে চোখ দিয়েছেন তার হিসেব কিন্তু তাঁকে বুঝিয়ে দিতে হবে, ভুলে যেয়োনা’। মনের ওপর জোর খাটিয়ে রায়হানকে বললাম, ‘নাহ, আজ কাবাব খাবনা। চল, চাইনিজে যাই’। ওর আপত্তি উপেক্ষা করে, অর্ডার ক্যান্সেল করে, দোকানের বাইরে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। মহাখাপ্পা হয়েছিলো রায়হান সেদিন, কিন্তু আমি ওকে আজও বলিনি কেন সেদিন এমন অদ্ভুত আচরণ করেছিলাম।

পোড়া মাংসের তীব্র গন্ধ অতীত থেকে টেনে ফিরিয়ে নিয়ে এলো। মেয়েটা দু’দিন হোল হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। প্রতিটি শ্বাসপ্রশ্বাসে কষ্টের শব্দ। কিন্তু এই কষ্ট তার নিজের হাতে সৃষ্ট। চার বছর প্রেম করার পর বয়ফ্রেন্ড বিয়ে করবেনা জানিয়ে দেয়াতে সে নিজের গায়ে আগুন দিয়েছে। পরিবারের সবাই মিলে আগুন নিভাতে নিভাতে ততক্ষণে শরীরের অধিকাংশ পুড়ে কয়লা হয়ে গিয়েছে। মাথার চুল জ্বলে গিয়ে দগদগে লাল পোড়া চামড়া বেরিয়ে পড়েছে, মুখের রঙ কালো আর লালের সংমিশ্রনে ভয়াবহ হয়ে রয়েছে, ঠোঁট গলে গিয়ে কথা পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছেনা। তবু যতবার কাছে যাচ্ছি ওর পাপড়িবিহীন চোখে দু’টো করুণ দৃষ্টিতে বলার চেষ্টা করছে, ‘আউয়ি আর ওয়াচতে চাইয়াঁ, আওয়াকে ওয়েরে হ্যালেন’।

আমি বুঝতে পারছি এটা ওর অভিমানের কথা নয়। ওর বাবা সেদিন থেকে এক মূহূর্তের জন্য ওকে ফেলে নড়েননি। মা এই দৃশ্য সহ্য করতে পারছেন না বলে রুমের বাইরে চেয়ার নিয়ে বসে অবিরাম কেঁদে চলেছেন, আর সাথে সাথে চলছে বিড়বিড় করে দু’আ পড়া। বড় বোনটা মনে হয় ঘটনার আকস্মিকতায় বোকা বনে গিয়েছে। বোনের বিছানার পাশে খুব সুন্দর ফ্রুট বোলে সাজানো নানারকম ফলফলাদি, ছুরি, কাঁটা চামচ, বাটি সাজিয়ে রেখেছে। অথচ সে তো কিছুই খেতে পারবেনা! ভাইটা আজই এসেছে ঢাকা থেকে। এসে সব শুনে কিচ্ছুটি না বলে বেরিয়ে গেল। কিন্তু মেয়েটির বর্ণনাতীত কষ্টের সামনে এই স্নেহমায়ার বন্ধন যে বড় ঠুনকো!

ভাইটা এইমাত্র ফিরে এলো তিন বছর আগে দেখা ছেলেটিকে নিয়ে। ওর কলার চেপে ঘাড় ধরে ঠেলতে লাগল মেয়েটির দিকে, ‘তুই আজ এখনই ওকে বিয়ে করবি’। ছেলেটি মেয়েটিকে দেখে শিউড়ে উঠে পিছিয়ে আসতে চাইল। ভাইটি ধাক্কা দিয়ে সামনে এগিয়ে দিলো, ‘কেন, ওর সাথে চার বছর ঘুরার সময় এত ভালো লেগেছে। এখন আর আমার বোনকে তোর ভালো লাগছেনা, তাইনা? আব্বা, ওকে চোখে চোখে রাখবেন, ও যেন কোনদিকে পালাতে না পারে। আমি এখনই বিয়ে পড়াবার ব্যাবস্থা করছি’।
বাবা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছেন। আমি হতবাক। চোখের সামনে যা ঘটছে তার চেয়েও হতবাক এই ভেবে যে এই সেই আগুনে সুন্দরী! এই মূহূর্তে ওর চেহারা, ওর গন্ধ, ওর কষ্টের শব্দ ডাক্তার হয়েও আমি সহ্য করতে পারছিনা, এই ছেলে তাকে সহ্য করবে কি করে?

খবর পেয়ে রায়হান হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো। ওহ, বলা হয়নি, আমাকে আর শেষ পর্যন্ত পাহাড়ে জঙ্গলে যেতে হয়নি, রায়হানের বুন্ধুত্ব আমাকে ওর দাদার হাসপাতালেই একটা কাজ জুটিয়ে দিয়েছিলো। এখন দু’জনে মিলে পরামর্শ করে ঠিক করলাম পুলিশ ডাকাই সবচেয়ে নিরাপদ। রায়হান রুমের বাইরে গিয়ে মোবাইলে কল দিলো পুলিশে। ততক্ষণে প্যাসেজে মেয়ের ভাইয়ের হুংকার শুনে বোঝা যাচ্ছে সে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে। হঠাৎ ছেলেটা লাফিয়ে উঠল। ফ্রুট বোল থেকে ছুরিটা তুলে নিয়ে বাতাসে পোঁচ দিতে দিতে বলল, ‘আমি ওকে বিয়ে করতে পারবনা, আমাকে বাধ্য করার চেষ্টা করলে ভালো হবেনা’। মেয়ের বড়বোনের ওপর মেজাজটা খুব খারাপ হোল। ফ্রুট কাটার জন্য এত বড় সাইজের ছুরি লাগে নাকি? এটা দিয়ে গরু জবাই করা যাবে! ছোট ছুরি হলে চেষ্টা চালিয়ে দেখতাম ওকে নিরস্ত্র করা যায় কি’না। মেয়ের ভাই ঘরে ঢুকে ওর কান্ড দেখে রাগে ঠোঁট কুঁচকে ফেলল, আক্রমনোদ্যত কুকুরের মত ক্যানাইন দাঁত বেরিয়ে পড়ল তার। তারপরের ঘটনাগুলো অকল্পনীয় দ্রুতগতিতে ঘটতে লাগল। স্লো মোশানে দেখা গেলে দর্শক দেখতেন, রায়হান আমার মনোভাব বুঝতে পেরে আমাকে শক্ত করে ধরে ফেলল যেন আমি ছুরি হাতে প্রলাপরত ছেলেটির দিকে এগোতে না পারি। মেয়েটির ভাই ছেলেটির দিকে এগিয়ে যাবার চেষ্টা করছে, বুড়ো বাপ বাঁধা দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারছেনা। ভেতরে হুটোপুটির শব্দ শুনে বড়বোন কি ঘটছে দেখার জন্য এসে বেহুঁশ হয়ে দরজার পাশেই এলিয়ে পড়েছে। মেয়েকে ধরতে এসে মা ঘরের ভেতর দৃশ্য দেখে দিলেন এক গগনবিদারী চিৎকার। ছুরি হাতে ছেলেটা ওদিকে তাকাতেই মেয়েটির ভাই ওর কাছ থেকে ছুরি ছিনিয়ে নিতে পা বাড়াল। সাথে সাথে ছেলেটা সবাইকে হতভম্ব করে দিয়ে মেয়েটার হৃৎপিণ্ড বরাবর ছুরিটা বসিয়ে দিলো। সাথে সাথে সব স্তব্ধ, মেয়েটার সামান্য একটা দীর্ঘশ্বাস, তারপর ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটলো। রায়হান এবার আমাকে ছেড়ে দিয়ে গিয়ে ছেলেটাকে ধরে ফেলল। ছেলেটা নিজেও বিশ্বাস করতে পারছেনা সে এইমাত্র কি করেছে। সে বার বার বলছে, ‘আমি ওকে বিয়ে করতে পারবনা, আমি ওকে বিয়ে করতে পারবনা …’। আমি ততক্ষণে ছুটে গিয়েছি মেয়েটার পাশে। না, মনে হচ্ছেনা ওকে বাঁচানো যাবে। ওর শরীর এমনিতেই গত দু’দিন ধরে যুদ্ধ করে ক্লান্ত। ছুরিটা বিঁধেছে ঠিক ওর হৃৎপিন্ড বরাবর, ওর নিঃশ্বাসের শব্দ বলছে ও এবার এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চায়। মেয়েটার বাবা ঘটনার আকস্মিকতায় পাথরবৎ দাঁড়িয়ে রয়েছেন, চলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন যেন। মেয়েটার ভাই দুই হাতে মাথার সমস্ত চুল আঁকড়ে ধরে হাঁটু মুড়ে বসে পড়েছে, যেন সে পারলে পুরো ঘটনা আবার রিওয়াইন্ড করে এবার ঠিকভাবে করত। দরজার কাছে নার্স মা মেয়ের নিথর দেহগুলোতে জ্ঞান ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। এর মাঝে মেয়েটার আত্মা ওর দেহ থেকে মুক্ত হয়ে উড়ে গেল।

মনে মনে ভাবলাম, যাক সে অন্তত এই নরকযন্ত্রনা থেকে তো মুক্তি পেল! পরক্ষণেই মনের আয়নায় ভেসে উঠল, ‘যে ভয় করে সে উপদেশ গ্রহন করবে, আর যে হতভাগা সে তা উপেক্ষা করবে, সে মহা অগ্নিতে প্রবেশ করবে, অতঃপর সেখানে সে মরবেও না জীবিতও থাকবেনা’ (সুরা আলাঃ আয়াত ১০-১৩)। আমার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল। এই জীবনে আমাদের কৃতকর্মের শাস্তি যতই কঠিন হোক, মৃত্যু এক সময় তার সমাপ্তি টেনে আনে, শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়। কিন্তু এর পরবর্তী অধ্যায়ে মৃত্যুর অনুপস্থিতি এক বিরাট পার্থক্যসূচনাকারী ফ্যাক্টর। সেখানে কোন মৃত্যু, চেতনাহীনতা বা দুর্বলতা আমাদের আগুনের তেজ থেকে সাময়িক নিরাপত্তাও প্রদান করতে পারবেনা। তবে কিসের আশায় আমরা এই জীবনটা হেলাফেলায় কাটিয়ে দেই যেখানে এটিই একমাত্র ফলাফলনির্ধারনী পরীক্ষা? হঠাৎ মেয়েটির জন্য করুণা এবং বিষাদে ছেয়ে গেল মন। বেচারী! ওর প্রভু ওকে উজার করে দিয়েছিলেন। কিন্তু বিবেচনার অভাবে সে এদিকেও কিছু পেলোনা, ওদিকেও কিছু পাবার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছেনা। নিজের জন্য আশংকায় কেঁপে উঠলাম, ‘হে আমাদের পালনকর্তা, সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্য লংঘনে প্রবৃত্ত কোরোনা, আমাদের তোমার অনুগ্রহ দান কর, তুমিই তো সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা’!

 

সুস্থতার যাদুর বাক্সঃ ইতিবাচক চিন্তন (Positive Thinking)

ড. লিপি গ্লোরিয়া রোজারিও (সিস্টার গ্লোরিয়া), জেমস্ শিমন দাস


প্রাচীণগুহাবাসী মানুষ থেকে শুরু করে আজকের উন্নত, সভ্য গ্রহান্তরিত মানুষ পর্যন্ত নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য আজীবন লড়াই করে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত মানুষ ও সমাজ ব্যবস্থা বিবর্তিত, রূপান্তরিত ও পরিবর্তিত হচ্ছে। যে মানুষ সুস্থতার জন্য লতা গুল্ম দিয়ে চিকিৎসা শুরু করেছিল আজকে সে রোগের জীবাণুর জিনোম পর্যন্ত আবিষ্কার ও রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা করছে। চিকিৎসকদের সংগে সমান্তরালভাবে মানসিক সুস্থতা আনয়ন ও রক্ষার উদ্দেশ্যে মনোবিজ্ঞানীগণও আপ্রান প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে সময় এসেছে “আমরা কি অনুভব করছি” তা না ভেবে “আমরা কিভাবে চিন্তা করছি” তা নিয়ে চিন্তা করার। মানুষের সুস্থতার যাবতীয় রহস্য এই চিন্তন প্রক্রিয়ার মধ্যে নিহিত। নিচের গল্প থেকে আমরা ইতিবাচক চিন্তন প্রক্রিয়া সমন্ধে শিক্ষা নিতে পারি।

ইতিবাচক চেষ্টা বা ইতিবাচক চিন্তন প্রক্রিয়া সম্পর্কে অধিকাংশ সময়ে লোকজন ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে থাকে। তারা ভাবে যে, ইতিবাচক চিন্তন মানে স্বপ্নের এক জগৎ, সেখানে মেঘে ভাসা যায়, অসাধারণ কিছু স্বপ্নের ছোঁয়া পাওয়া যায়, সকলকিছুই কাল্পনিক বাস্তবতাবিবর্জিত, জীবনের সকল কিছুই সুন্দর, সকল কিছুই রঙিন। তারা এর মধ্যে এতোটায় বিভোর থাকে যে, সাদাসিধা সাধারণ ঘটনাকেও তারা বাস্তবতার প্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা করতে পারে না।

ইতিবাচক চিন্তন অর্থ এমন নয় যে, শুধু ভালো কিছু আপনার জীবনে ঘটবে বা এর মানে এমন নয় যে আপনি অসুস্থ হবেন না, কিংবা আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার মধ্যে এমন নেতিবাচক কিছু ঘটবে না যেটা আপনাকে সমস্যাগ্রস্থ করে তুলে বা এমন কিছু ঘটবে না যার জন্য আপনি কষ্ট পান। এর অর্থ আবার এমনও নয় যে সবাই আপনাকে ভালোবাসবে, যার জন্য আপনি কখনোই কষ্ট পাবেন না এবং সব সময় আপনি জয়ী হবেন। ইতিবাচক হওয়ার অর্থ এমন নয় যে, আপনি সবসময়ই হাসবেন এবং আনন্দ, প্রেম, শান্তি ছাড়া আর অন্য কোন আবেগ অনুভব করবেন না বা কখনোই আপনি কোন বিপদের সম্মুখীন হবেন না।

কিন্তু ইতিবাচক চিন্তনের অর্থ এমনই যে, কোন একটি খারাপ/বিপরীত/বিপদসংকুল পরিস্থিতি/ঘটনা/ব্যক্তিকে একটু ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকেই একটি আশীর্বাদ হিসেবে দেখা, জীবন চলার পথে সকল বাঁধা বিপত্তিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহন করা, সেগুলোর মুখোমুখি হওয়া যা আপনাকে সামনে এগুতে এবং জীবনের বৃদ্ধি ও উন্নতিতে সহায়তা করবে। সহজভাষায়, ইতিবাচক চিন্তন প্রক্রিয়া হচ্ছে একটা মনোভাব। শুধুমাত্র আপনার মনোভাব পরিবর্তন করুন পৃথিবীর সকল কিছুই পরিবর্তিত হয়ে যাবে। দেখবেন, মনোভাবের পরিবর্তনের সাথে সাথে আপনার মন্দভাগ্য ও অপকারিতাসমূহ উপকারীতায় রূপান্তরিত হয়েছে, নেতিবাচক যাবতীয় কিছু ইতিবাচক ও গঠনমূলক কিছুতে পরিবর্তিত হবে। রুশদেশের একটি প্রবাদ বাক্য এইরকম যে, “যখন তোমাকে লেবু দেওয়া হয়, তখন সেটাকে লেবুর রস বানিয়ে খাও।” অর্থাৎ জীবন যতক্ষণ আছে ততক্ষণ এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে এটাকে উপভোগ এবং এটার ভালো,মন্দ,টক, মিষ্টি সকল স্বাদই গ্রহণ কর। ইতিবাচক চিন্তনের ফলে ব্যক্তি ও সমাজের অভূতপূর্ব কল্যাণ সাধিত হয় এবং অনেক অসাধ্য ও অসম্ভব কাজও সম্ভব হয়ে উঠে। ইতিবাচক চিন্তনের ফলে ব্যক্তি জীবনে নিম্নরূপ উপকারীতাসমূহ পরিলক্ষিত হয়। যেমনঃ দৈনন্দিন জীবনের মানসিক চাপ ও ভুলের সংখ্যা হ্রাস, সুস্বাস্থ্য অর্জন, আত্মবিশ্বাস গঠন ও বৃদ্ধি , সুখী জীবন যাপন, জীবনের দীর্ঘায়ূ , দ্রুত ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজকরণ এবং বন্ধু-বান্ধবের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।

ইতিবাচক চিন্তন যেহেতু ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে সুখ, শান্তি ও সাফল্য বয়ে আনে, সেহেতু ইতিবাচক চিন্তা করার জন্য কতগুলো ছোট ছোট টিপস্ আমরা আপনাকে জানাতে চাই।

১. ঘুম থেকে উঠেই একটি আয়নার সামনে দাঁড়ান এবং আয়নার দিকে হাঁসিমুখে তাকিয়ে বলুন,“মি: সাইমন,আমি জানি তুমি সকল কিছু করতে পারবে। আজকের দিনটা তোমার জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন। আজকে তুমি একটা অসাধারণ ব্যস্ত দিন কাটাবে। তোমার জন্য শুভ কামনা রইল”। যদিও এইসব আপনার কাছে মনে হয় একটু বোকা বোকা কথা-বার্তা কিন্তু এক সপ্তাহ চেষ্টা করুন তারপর ফলাফল আপনি নিজেই মূল্যায়ণ করতে পারবেন।

২. আপনি আপনার ছোটবেলার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক এ্যালবাম ঘেঁটে দেখতে পারেন যেন ছোটবেলার আনন্দ পুনরায় উপভোগ করতে পারেন।

৩. অতীতের কোন ঘটনার কথা যেটা আপনাকে সুখ দেয়, যেটাতে আপনি স্বস্তিবোধ করেন এমন স্মৃতির কথা স্মরণ করতে পারেন।

৪. ছোট ছোট ভালো কাজের প্রতি মনোযোগ দিন। সফলতা ও সুখ যেমনই হোক না কেন সেগুলোকে গ্রহণ করুন এবং সেগুলোর প্রতি সচেতন হোন।

৫. আপনি অফিসে যাচ্ছেন, এমন সময় যানজটে আটকা পড়েছেন, আপনি ভীষণ রকম অস্বস্তিবোধ করছেন। সেই সময় আপনি গান শুনতে পারেন। এটা আপনার জন্য একটা সুযোগ কারণ গান শুনার মতো সময় আপনার নাই। তাই বিরক্ত হয়ে বসে না থেকে গান শুনুন।

৬. প্রতিটি ভুল থেকে কী শিক্ষা নিতে পারেন তা খুঁজে বের করুন। কথায় বলে, যে নিজের ভুল থেকে শিখে সে বুদ্ধিমান আর যে অন্যের ভুল থেকে শিখে সে আরো বেশী বুদ্ধিমান।

৭. যারা ইতিবাচক পরামর্শদাতা, বন্ধুবান্ধব তাদের সাথে চলাফেরা করুন। যারা নেতিবাচক কথাবার্তা বলে তাদের কাছ থেকে দুরে থাকুন।

৮. খারাপ ঘটনা থেকেও কৌতুকরস বা মজা খোঁজার চেষ্টা করুন।

সুতরাং আমরা দেখছি যে, ইতিবাচক চিন্তনের ফলে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার পাশাপাশি একটি সফল ও সুখী জীবন এবং এমন কি আমরা সমাজ গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবো। আসুন আমরা যা করতে পারবো না তা নিয়ে চিন্তা করে সময় ও অর্থ অপচয় না করে, আমরা যা সৃষ্টি করতে পারবো তাতে সময় ব্যয় করি এবং জীবনে সফল হই। কারণ জগৎবিখ্যাত নাট্যকার ও সাহিত্যক স্যার উইলিয়াম শেকস্ পিয়ারের ভাষায়,
“পৃথিবীতে ভালো বা মন্দ কিছুই নাই কিন্তু আমাদের চিন্তন প্রক্রিয়ায় সেগুলো নির্ধারণ করে।”
সমস্ত পৃথিবীতে পরিবর্তন আনয়নের জন্য একটি ইতিবাচক চিন্তাই যথেষ্ট। চিন্তার ধরণ পরিবর্তন করুন, পৃথিবীই পরিবর্তন হয়ে যাবে।

 

আমার বই পড়া (তৃতীয় পর্ব)

রায়হান আতাহার


কিশোর বয়সে যে লেখকদের লেখা পড়ে আমি মুগ্ধ হয়েছি, তার মধ্যে মুহম্মদ জাফর ইকবালের নাম সবার আগে স্মরণ করতে হয়। স্যারের লেখা ‘কিশোর উপন্যাসসমগ্র ১’ আমার সংগ্রহে থাকা সেরা বইগুলোর মধ্যে অন্যতম। সমগ্রটিতে ছয়টি কিশোর উপন্যাস ছিলো- ‘হাতকাটা রবিন’, ‘দীপু নাম্বার টু’, ‘দুষ্টু ছেলের দল’, ‘আমার বন্ধু রাশেদ’, ‘টি-রেক্সের সন্ধানে’ ও ‘জারুল চৌধুরীর মানিকজোড়’। প্রতিটি উপন্যাস যেন এক একটি ভালোবাসার নাম। কতবার করে যে পড়েছি উপন্যাসগুলো!

সিনেমার পর্দায় ‘দীপু নাম্বার টু’ দেখার পর মুগ্ধতা যেন আরো বাড়লো। সেসময় ইটিভিতে ধারাবাহিকবাভাবে ‘হাতকাটা রবিন’-এর সিরিয়াল দেখাতো। চোখের সামনে ভাসে এখনো। ‘জারুল চৌধুরীর মানিকজোড়’-ও টিভিতে দেখাতো। আর ‘আমার বন্ধু রাশেদ’-এর চলচ্চিত্রায়ন তো এই সেদিনের কথা। ‘টি-রেক্সের সন্ধানে’ ও ‘দুষ্টু ছেলের দল’-কেও হয়তো কোন এক সময় টিভির পর্দায় দেখতে পাবো।

এরপর স্যারের যে বইটি হাতে এল তা হল ‘বেজি’। একই সাথে সাইন্স ফিকশন আর এডভেঞ্চার। সাইন্স ফিকশনের প্রতি আগ্রহ জন্মানোর জন্য এই একটি বই যথেষ্ট ছিলো আমার জন্য। এরপর সাইন্স ফিকশন সমগ্র কিনেছিলাম। দিন নেই, রাত নেই; সাইন্স ফিকশন নিয়ে পড়ে থাকতাম। পরবর্তীতে ম্যাথ অলম্পিয়াডে অংশগ্রহণের জন্য স্যারের গণিত নিয়ে লেখা বইগুলোও পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে।

মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার আমার চাইল্ডহুড হিরো। তাঁর লেখাগুলো যেন ঠিক আমার মত মানুষদের জন্যই লেখা। কিশোর বয়সের মুগ্ধতা বজায় আছে এখনো। সুযোগ পেলেই তাঁর লেখা পড়ি। তাঁকে নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা আছে, সেদিকে যাবো না। আমার কিশোর বয়সকে রঙিন করার জন্য স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞ আমি।

জাফর ইকবাল স্যারের লেখার প্রতি ছোটবেলা থেকে যে ভালোলাগা ছিলো, হুমায়ূন আহমেদের লেখার প্রতি ততটা ভালোলাগা ছোট থেকে ছিলো না। হুমায়ূন আহমেদের লেখার সাথে পরিচয় হয়েছিলো ছোটবেলায় “বোতল ভূত” বইটির মাধ্যমে। বইটির অনেকগুলা গল্পের মাঝে একটি গল্পের চরিত্র ছিলো ‘পিপলী বেগম” নামের একটি পিঁপড়া – এখনো মনে আছে। এরপর কেন যেন তাঁর লেখা পড়া হয়নি ছোটবেলায়।

একটু বড় হয়ে (সম্ভবত নবম শ্রেণিতে) পড়লাম “হিমু রিমান্ডে”। এক অদ্ভুত নেশা পেয়ে বসলো এরপর থেকে। হুমায়ূন আহমেদের কতগুলো গল্প-উপন্যাস পড়েছি আমার নিজেরও জানা নেই। হার্ডকপিতো পড়েছি, সফটকপিও কম পড়িনি। তখন রিভিউ লেখার অভ্যাস ছিলো না বলে কাহিনীও ভুলে গেছি অনেকগুলোর।

“জোছনা ও জননীর গল্প”, “বহুব্রীহি”, “জীবনকৃষ্ণ মেমোরিয়াল হাইস্কুল”, “দেয়াল”, “তেতুল বনে জোছনা”সহ স্যারের অসংখ্য সৃষ্টি দাগ কেটে গেছে মনের ভেতর। তিনি অসংখ্য নাটক-সিনেমা উপহার দিয়েছেন। কিন্তু আমার কাছে লেখক হুমায়ূন আহমেদকেই বেশি ভালো লাগে। অতি সাধারণ জিনিসগুলোকেও অসাধারণ করে তোলার এক অদ্ভুত ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছিলেন মানুষটি। হিমু, রূপা, মিসির আলী, শুভ্র, বাকের ভাইদের মাঝে তিনি বেঁচে আছেন এবং থাকবেন সবার মাঝে।

(চলবে)

Raihan Atahar
Postgraduate Researcher at Bernal Institute
Material and Metallurgical Engineering at BUET

 

গেমের নেশাকে ‘মানসিক রোগ’ বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

শিশু স্বাস্থ্য


কম্পিউটারে গেম খেলার প্রতি নেশাকে এই প্রথম একটি মানসিক রোগ হিসেবে তালিকাভুক্ত করতে যাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

১১তম ইন্টারন্যাশনাল ক্লাসিফিকেশন অব ডিজিজেস বা আইসিডি-তে এটিকে ‘গেমিং ডিজঅর্ডার’ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এ সংক্রান্ত খসড়া দলিলে এই গেমিং আসক্তিকে বর্ণনা করা হয়েছে এমন এক ধরণের আচরণ হিসেবে, যা জীবনের আর সব কিছুর আকর্ষণ থেকে একজনকে দূরে সরিয়ে নেয়।

বিশ্বের কিছু দেশে গেমিং আসক্তিকে ইতোমধ্যে একটি প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্ণিত করা হয়েছে।

যুক্তরাজ্যসহ কিছু দেশে তো ইতোমধ্যে এর চিকিৎসার জন্য প্রাইভেট এডিকশন ক্লিনিক পর্যন্ত রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৯২ সালে সর্বশেষ ইন্টারন্যাশনাল ক্লাসিফিকেশন অব ডিজিজেস বা আইসিডি তৈরি করেছিল। নতুন গাইডলাইনটি প্রকাশিত হবে এ বছরই।

এই গাইডে বিভিন্ন রোগের কোড, লক্ষণ এবং উপসর্গ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য থাকে। চিকিৎসক এবং গবেষকরা এটির সঙ্গে মিলিয়ে রোগ নির্ণয়ের করার চেষ্টা করেন।

গেমিং আসক্তিকে কখন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে বর্ণনা করা হবে, তার বিস্তারিত থাকছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই গাইডলাইনে।

এতে বলা হয়েছে, ১২ মাস সময় ধরে অস্বাভাবিক গেমিং আসক্তি বা আচরণ দেখা গেলে তা নির্ণয়ের পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে যদি অস্বাভাবিক আচরণের মাত্র অনেক বেশি তীব্র হয়, তখন ১২ মাস নয়, তার আগেই ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।

যেসব লক্ষণের কথা এতে উল্লেখ করা হয়েছে:

• গেমিং নিয়ে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা (বিশেষ করে কত ঘন ঘন, কতটা তীব্র এবং কত দীর্ঘ সময় ধরে গেমিং করছে, সে বিষয়ে)

• গেমিং-কেই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া

• নেতিবাচক প্রভাব সত্ত্বেও গেমিং অব্যাহত রাখা বা আরও বেশি গেমিং করা

লন্ডনের নাইটিংগেল হাসপাতালের টেকনোলজি এডিকশন স্পেশালিস্ট ড. রিচার্ড গ্রাহাম বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন।

‘এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর ফলে আরও বিশেষায়িত চিকিৎসার সুযোগ তৈরি হবে। এতে করে এ ধরণের গেমিং আসক্তিকে লোকে আরও গুরুত্বের সঙ্গে নেবে।’

তবে যারা গেমিং আসক্তিকে একটি মানসিক ব্যাধি হিসেবে দেখার বিপক্ষে, তাদের প্রতিও তিনি সহানুভূতিশীল।

তিনি স্বীকার করছেন যে অনেক বাবা-মা এ নিয়ে বিভ্রান্ত হতে পারেন। কেবল গেমিং এ উৎসাহী বলে সন্তানদের তারা ‘অসুস্থ’ বলে ভাবতে পারেন।

ড. রিচার্ড গ্রাহাম জানান, বছরে তিনি ডিজিটাল আসক্তির প্রায় ৫০টির মতো কেস দেখেন। এই আসক্তির কারণে এদের ঘুম, খাওয়া-দাওয়া, সামাজিক মেলা-মেশা এবং শিক্ষার ওপর কি প্রভাব পড়ে, সেটার ওপর ভিত্তি করে আসক্তির সমস্যার মাত্রা বোঝার চেষ্টা করা হয়।

রোগী দেখার সময় একটা জিনিসকেই তিনি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন। এই গেমিং আসক্তি ‘নিউরোলজিক্যাল সিস্টেম’কে কতটা প্রভাবিত করছে। এটি চিন্তার ক্ষমতা বা নিবিষ্ট থাকার ক্ষমতার ওপর কি প্রভাব ফেলছে।

বিশ্বের অনেক দেশই গেমিং এর আসক্তি নিয়ে চিন্তিত। দক্ষিণ কোরিয়ায় তো সরকার এমন আইন করেছে যাতে ১৬ বছরের কম বয়সী শিশুরা মধ্যরাত হতে ভোর ছটা পর্যন্ত অনলাইন গেম খেলতেই না পারে।

জাপানে কেউ যদি একটি নির্দিষ্ট সময়ের বেশি গেম খেলে তাকে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়। চীনে সেখানকার সবচেয়ে বড় ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠান টেনসেন্ট শিশুরা কতক্ষণ গেম খেলতে পারে তার সময় বেঁধে দিয়েছে।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির এক সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হচ্ছে, শিশুরা যদিও প্রচুর সময় স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে কাটায়, কিন্তু তারা তাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে এই ডিজিটাল জগতকে ভালোই খাপ খাইয়ে নিতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে, মেয়েদের তুলনায় ছেলেরাই ভিডিও গেম খেলায় বেশি সময় দেয়।

গবেষণক কিলিয়ান মুলান বলেন, ‘মানুষের ধারণা শিশুরা দিন-রাত চব্বিশ ঘন্টা স্ক্রীনের সামনে বসে থাকছে, আর কিছু করছে না। আসলে তা নয়। আমাদের গবেষণায় আমরা দেখছি, তারা প্রযুক্তিকে নানা কাজে ব্যবহার করছে। এমনকি স্কুলের হোমওয়ার্ক করার জন্যও তারা প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।’

‘আমরা বড়রা যেভাবে করি, অনেকটা সেভাবে শিশুরাও আসলে তাদের ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারটা সারাদিন ধরেই অন্য অনেক কিছুর ফাঁকে ফাঁকে করছে, একবারে নয়।’ সুত্র: বিবিসি। সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

পথেঘাটে নারীদের নিরাপত্তা নেই

ডা. মিথিলা ফেরদৌস


সি এন জি বাপ ছেলেকে ছেড়ে দিয়ে, ভাবলাম এক কিলো রাস্তা হেটেই যাই। সি এন জি থেকে নেমে, রিক্সা খুঁজলাম একটু, তারপর হেটেই রওনা দিলাম।

ঈদের পর রাস্তা পুরাই ফাঁকা। ফুটপাথ ধরে হেটে যাচ্ছি। ঘ্যাচ করে একটা মাইক্রো এসে পাশে দাঁড়ায় কয়,
:আপা কই যাইবেন?
আমি কোন কথা না বলে হন হন করে হাটতে থাকি।
কিছুক্ষন পর একটা মোটরসাইকেল পাশে এসে থামলো।
:কই যাবেন?
আমি কোন কথা বলিনা।
এরপর একটা ভাঙাচোরা প্রাইভেট কার বেশ কিছু সামনে এসে থেমে, গ্লাস নামাচ্ছিলো।
আমি কাছে আসতেই
:আপা কই যাবেন?
এবারও কথা বলিনা, কিন্তু গাড়িটা পাশে পাশে চলতেই থাকে। রাস্তায় দুই একজন লোক আছে দূরে দূরে। একটু ভয় ভয় করছে। আমি আরও জোরে হাটতে থাকি।মুখ ঘেমে টুপ টুপ করে পরছে। গাড়িটা চলে যায়।

আলতাফ বার বার বলতেছিলো, ওকে অফিসে নামায় ওই সি এন জি নিয়ে আসতে। পাত্তা দেইনি। ভাবলাম রাস্তা ফাঁকা, হাটা হয় না। একটু হাটি।

সামনেই পথ ঘুরে গেছে। ঠিক সেই জায়গায় একটা বেশ দামী প্রাইভেট কার এসে দাঁড়ালো। এইবার খুব ভয় হচ্ছিলো।এমন হচ্ছে কেন?
এইটাই কি স্বাভাবিক? রাস্তায় হাটলে কিছুক্ষন পর পর কি এমন প্রাইভেট কার, মাইক্রো, বাইক এসে দাঁড়ায়? আলতাফের সাথে যখন রাস্তায় চলি, কখনও এমন হয় নাই তো। এইবার আরও জোরে হাটতে থাকি, গাড়িটা রেখেছেও এমন জায়গায় যেদিক দিয়েই যাই, গাড়ির ঠিক পাশ দিয়ে যেতে হবে। ড্রাইভার মুখ বাড়িয়ে
:কি ম্যাডাম কই যাবেন?
গলায় স্বরেই বোঝা যায় টিজিং। ইচ্ছা করতেছিলো কষে দুই চড় দিই। সেইটা তো অসম্ভব। আমি জোরে জোরে হাটতে থাকি। গাড়ি স্লো আমার পাশে পাশে কিছুদুর চলে, এরপর জোরে চালায় চলে যায়।

হাসপাতালের কাছে, আসতেই ডাক্তারদের গাড়ি চোখে পরে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি। এবার ধীরে ধীরে হাটি।
এইটুকু রাস্তায়, দিনের বেলায়ই আমার মত একজন মহিলার জন্যেই যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে অন্যদের জন্যে কি অবস্থা!

যদি আমার গাড়ি লাগতোই তাহলে আমি দাঁড়ায় ডেকে নিতাম, যদিও আমি বা যে কারো এমন কারো কাছে লিফট নেয়া কখনই উচিৎ না। একটা মানুষ হেটে যাচ্ছে মানেই হয়তো তার গন্তব্য কাছেই, তাকে লিফট দিতে চাওয়ার তো কোন কারণ দেখিনা।

যেহেতু আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এমন দুর্বল(আশে পাশে কোথাও কোন পুলিশ আমি দেখিনি।অথচ ভি আই পি রোড।প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের পাশ দিয়েই যাচ্ছিলাম।) সেহেতু আমাদের নিজেদের ব্যাপারে নিজেদের সচেতন হওয়া খুব জরুরী।
আমি বলছিনা, আমাকে যতজন লিফট দিতে চেয়েছে, তাদের সবার উদ্দেশ্যই খারাপ ছিলো। কিন্তু এই চারজনের সবার উদ্দেশ্যই কি ভাল ছিল? আমার কাছে লিফট নেয়ার ব্যাপারটা কখনওই ভাল মনে হয় না।
অনেক সময় এমন হয়, হাটতে হাটতে হয়রান হয়ে মনে হয়, কিছু একটা পেলেই উঠে যাবো, তখনও সাবধান হতে হবে।

একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, নিজেদের মধ্যেই একটা রিফ্ল্যাক্স আনতে হবে, কোনটা ভাল কোনটা মন্দ!নিজেদের নিরাপত্তার কথা নিজেকেই ভাবতে হবে, দেশ আপনার নিরাপত্তা না দিলেও, কোন ঝামেলায় পরলে, কিছু নেগেটিভ মানুষ আপনাকে নিয়ে কথা বলতে ছাড়বেনা। কিছু অঘটন ঘটলেই একদল ঝাঁপায় পরে, বিপদে পরা মেয়ের চারিত্রিক সনদপত্র বিতরণ করতে।

  • ডা. মিথিলা ফেরদৌস
    বিসিএস স্বাস্থ্য
    সাবেক শিক্ষার্থী, রংপুর মেডিকেল কলেজ।

 

ঈদ উৎসবে সৌদি আরব

ডা. ফাতিমা খান


সৌদি আরবে ঈদের আনন্দ শুরু হয়ে যায় রমজান শুরু হওয়ার আগে থেকে। আমার কাছে যে আরব দেশীয়রা চিকিৎসা নিতে আসে, তাদের মাঝে আমি এ ব্যাপারটা প্রত্যক্ষ করেছি। এদেশের সংস্কৃতি অনেকটা মিশ্র ধরনের। যুগ যুগ ধরে ইয়েমেনি, মিশরীয়, ফিলিস্তিনি, জর্ডানি, সিরিয়ানসহ ইন্ডিয়ানরা তাদের কিছু কিছু কালচার এদেশে প্রচলিত করে দিয়েছে। যার কারণে ওদের অভ্যাস আর কালচারের মাঝেও বিভিন্নতা দেখা যায়। অনেক গুলো বছর এদেশে কাটানোর পরও সৌদিদের সাথে খুব বেশী পারিবারিক ভাবে মেলামেশা বা সামাজিকতা রক্ষা করা হয়নি। তবে ওদের উৎসব বা আনুষ্ঠানিকতা সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা হয়ে গিয়েছে।

রমজানের সময় দেখতাম আমভাবে রোগীরা বিদায় নেয়ার সময় বলত, “কুল্লু আ’ম ওয়া আনতুম বি খায়ের” অথবা “কুল্লু সানা আনতুম তাইয়্যেবীন”। দুইটা বাক্যই হল একটা শুভকামনার প্রকাশ যার অর্থ হল “সারাবছর তোমরা ভাল থেকো”। এই একই কথা তারা ঈদের সময়ও বলে থাকে। সাথে যুক্ত হয় আরো কিছু দোয়ামূলক বাক্য, যেমন তাকাব্বাল মিন্না ওয়া মিনকুম (আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের নেক আমলগুলোকে কবুল করুন) বা ঈদ সাঈদ ( আনন্দময় ঈদ) অথবা ঈদ মোবারাক।

রোজার মাসে এখানে সবাই রাতে জেগে ইবাদত করে , সেহরির পর ঘুমায়। দুপুরে যুহর নামাজের সময় তাদের দিন শুরু হয়। সেই অভ্যাসমত চাঁদ রাতেও নিদ্রাহীন ভাবে এখানে সবাই ঈদের দিনটার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত থাকে। মসজিদে তাকবীর শোনার পর সবার মাঝে ঈদের আমেজ শুরু হয়। পটাকা বা বাজী ফুটিয়ে, ঘরদোর সাজিয়ে, বাখুর ( সুগন্ধী কাঠের গুড়া বা টুকরা) জ্বালিয়ে, প্রতিবেশীদের চকলেট বা মিষ্টি জাতীয় খাবার পাঠিয়ে তারা চাঁদ রাতে ঈদেকে স্বাগতম জানায়। বাড়িতে আত্নীয় স্বজনদের সমাগম হয়। অন্দরমহলে চলে মেহেদী লাগানোর ধুম। ছোট থেকে বড় সবার ফ্যাশন, মেকাপ আর ড্রেসাপ এর জল্পনা কল্পনায় ঘরবাড়ি সরব হয়ে ওঠে। ঘরের মুরব্বীরা কনিষ্ঠদের জন্য সামর্থ অনুযায়ী ঈদের সেলামী বা মিনি গিফট প্যাক তৈরী করে। সুঘ্রানের এরাবিয়ান কফি বা “কাহওয়া” পান চলে সারারাত। সাথে থাকে “হালা” বা যেকোন মিষ্টিজাতীয় খাবার।

ঈদের সময় ওদের ঘরে যে সুসাদু মিষ্টি জাতীয় খাবারগুলো তৈরী হয় তারমধ্যে বাসবুসা, বাকলাভা, কুনাফা, কাতায়েফ, ফ্রুট ক্যারামেল, ক্ষীর, পুডিং, মাহালাবিয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এগুলো বেশীরভাগই ওভেন বেকড এবং দুগ্ধজাত। এর মধ্যে কয়েকটি লেবানিজ বা মিশরীয় কুস্যিন।

দান দখিনায় এদেশের ধনী ও ধার্মিক মানুষগুলোর জুড়ি নেই। একাজে তাদের অনেকেই নবী, রাসূল ও সাহাবাদের আদর্শের অন্ধ অনুসারী। ধনীর দৌলতের অংশ থেকে গরীবদের প্রাপ্তিটুকু বুঝে নিতে ঈদের আগের দিন বা ঈদের দিন পর্যন্ত সোমালি, হাবাশী, ইথিওপিয়ানসহ কিছু গরীব দেশের মানুষদের দেখা যায়, যারা যাকাত ফিতরা বা কিছু সাদাকা প্রাপ্তির আশায় অপেক্ষা করে।

ঈদগাহে মানুষের সমাগম হয় দেখার মত। বিশাল ঈদগাহ গুলোতে সব দেশের, সব বয়সের পুরুষ, মহিলা ও বাচ্চাতে জনাকীর্ণ হয়ে যায়।

দেশ, জাতি নির্বিশেষে নাড়ীর সাথে বাড়ীর সাথে মানুষের বন্ধন চিরন্তন। আমাদের দেশের মত এদেশেও ব্যস্ত কমার্শিয়াল শহরগুলোর একটা বড় অংশ ঈদের সময় ফাকা হয়ে যায়। সবার গন্তব্য থাকে যার যার গ্রামের বাড়ির দিকে। গ্রাম বা মফস্বল জাতীয় এলাকাগুলোকে তারা বলে ‘ক্বারিয়া’ (যদিও কোরআন শরীফে বিভিন্ন জায়গায় ‘ক্বারিয়া’ বলতে জনপদকে বোঝানো হয়েছে)।ঈদের কয়েকদিন আগে থেকেই তাদের আনন্দমিশ্রিত অস্থিরতা শুরু হয়ে যায় “ক্বারিয়া” গমনের জন্য। ঈদের দিন এখানকার পার্ক, সি-বীচ আর রিসোর্টগুলো থাকে ভিড়ে আকীর্ণ।

বাংলাদেশী পরিবারগুলো দেশী রীতি রেওয়াজ অনুযায়ী ঈদ উদযাপন করে। উপমহাদেশের অন্য দেশগুলোর প্রবাসীদের ঈদ যাপন অনেকটা আমাদের মতই। বাঙালি নারীদের ঐতিহ্যবাহী অভ্যাস হল ঈদের সারাটা দিন রসুইঘরে মুখরোচক রান্না করে কাটানো। নিজের পরিবার, মেহমান, পাড়া প্রতিবেশীদের আপ্যায়নের জন্য তাদের ঈদের দিন রীতিমত কোরবানী করার মাঝেই তাদের ঈদ আনন্দ। স্বামী সন্তানদের নতুন কাপড় পরিয়ে নিজের কাপড়খানা কোন অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার পরিকল্পনা করেই তারা খুশি থাকেন। অবশ্য কেউ কেউ ঈদের ছুটি কাটাতে অন্য কোন শহরে ঘুরতে যান পরিবারসহ। বিশেষ করে আমাদের মত চাকুরীজীবী মায়েরা কর্মব্যস্ততার ক্লান্তি দূর করতে ও বাচ্চাদের সাথে একটু আনন্দময় সময় কাটাতে দু একদিনের জন্য দূরে কোথাও বা প্রকৃতির কাছাকাছি কোথাও বেরিয়ে আসেতে পছন্দ করেন।

এখানকার প্রবাসী পরিবারগুলোর ঈদ আনন্দের আরেকটি বড় উৎস হল ঈদ পূনর্মিলনী অনুষ্ঠানগুলো। অনুষ্ঠানগুলোতে প্রত্যেক দেশের মানুষগুলো যার যার দেশীয় খাওয়া দাওয়া ও বিনোদনের আয়োজন করে থাকে। স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোতে স্বদেশের প্রচারিত অনুষ্ঠানমালা উপভোগ করতে অন্তত বাংলাদেশীদের ভুল হয়না।

ঈদকে পুরাপুরি উপভোগ করতে পারেননা প্রবাসী শ্রমিক গোছের মানুষগুলো। যারা পরিবার পরিজন রেখে এখানে একা থাকেন তাদের ঈদের দিনটা নিতান্ত মলিন। দেশে পরিবার পরিজনদেরকে নিজের সবটুকু উপার্জন আর উপহার পাঠানোর মাঝেই তারা আনন্দ খুঁজে নেন। তারপরও অনেকেই পরিবারের মন রক্ষা করতে পারেননা । ঈদের দিনেও তাদের কেউ কেউ ওভারটাইম করেন আরো কিছু বাড়তি অর্থের যোগান দিতে। ঈদের আনন্দঘন দিনটির সুশীতল আমেজ তাদের ঘর্মাক্ত দেহ আর ক্লান্ত মনকে একটু স্বস্তি দিতে পারেনা।

ডা. ফাতিমা খান
লেখিকা কর্মরত: আল হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ, জেদ্দা, সৌদি আরব।

 

‘সুখী দাম্পত্যজীবন’ কিছু টিপস

দাম্পত্য


ভালোবাসা
একে অপরকে জানিয়ে দিন যে আপনারা পরস্পরকে ভালোবাসেন। দিনে অন্তত একবার আপনার জীবনসঙ্গী/জীবন সঙ্গিনীর প্রশংসা করুন কিংবা তাকে ভালোবেসে দয়ামাখা গলায় কথা বলুন।

বুঝে রাগ করুন 
একই সময়ে দু’জন একসাথে রেগে যাবেন না। কোন তর্ক জিইয়ে রেখে ঘুমাতে যাবেন না, সমাধান করে নিন আগেই। মনে রাখবেন, ঝগড়া করতে দুই জনের প্রয়োজন হয়।

সমালোচনা
সমালোচনা যদি করতেই হয়, ভালোবাসা দিয়ে বলুন। আপনি যখন কোন ভুল করে ফেলবেন, তা স্বীকার করে নিন।

অতীত স্মৃতি
পুরোনো ভুলগুলোকে তুলে আনবেন না।
একে অপরকে উপেক্ষা করার পরিবর্তে বরং গোটা দুনিয়াকে আগে উপেক্ষা করুন।

নামাজ পড়ুন
দিনে কমপক্ষে একবার একসাথে সালাত আদায় করুন।

মন দিয়ে শুনন
আপনার জীবনসঙ্গী যখন কিছু বলে, তা মন দিয়ে শুনুন। মনে রাখবেন, আপনার জীবনসঙ্গী/জীবনসঙ্গিনী কিন্তু একটা ক্রিকেট বা ফুটবল ম্যাচ, মুভি, সিরিয়াল, ইউটিউব ভিডিওর চেয়ে বেশি মূল্যবান।

খেয়াল করুন
আপনার জীবনসঙ্গী/জীবনসঙ্গিনীকে যখন নতুন কোন পোশাক পরে তথবা তার চুল ভিন্নভাবে আঁচড়ায় তখন খেয়াল করুন। আপনাদের বিবাহবার্ষিকী এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোকে স্মরণ রাখতে চেষ্টা করুন।

ধন্যবাদ দিন
আপনাদের পক্ষ থেকে আপনার সঙ্গী কাউকে কোন উপহার দিলে বা কোন কাজ করে দিলে আপনার পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ দিন।

লক্ষ্য করুন
আপনার জীবনসঙ্গী/জীবনসঙ্গিনীকে যদি ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত দেখায় তবে তা লক্ষ্য করুন এবং তার জন্য কিছু করুন।

আপনার জীবনসঙ্গী/জীবনসঙ্গিনীকে কখনো সমালোচনা করে আহত করবেন না এবং জনসমক্ষে কখনো তাকে অপমান করবেন না৷ বৈবাহিক বন্ধনকে বেঁধে রাখুন অটুট। সুত্রঃ সংগ্রহ এবং সংকলিত।

 

সবুজ প্রাণে হিন্দোল

অনবরত বৃক্ষের গান


পড়ার টেবিলে মুনিবা,পাশে ডেস্কে বসে পড়ছে ওর ভাইয়া। দুষ্টোমিতে সেরা মুনিবা, তবে ভাইয়া যখন পড়তে বলে, মন দিয়ে পড়ে। ছাত্র সে, আর মুনিবা ক্লাস ফোর এ। ছোট্ট বাটিতে আমলকি, জলপাই নিয়ে এসে রাখলেন আম্মা।

বললেন, “জুবায়ের, মুনিবা, তোমাদের দাদুভাই পাঠিয়েছেন সকালে, গ্রাম থেকে। “ভাইয়া টিপ্পনী কেটে বলে,”মুনিবার মাথায় যা দুষ্ট বুদ্ধি, ওর টক খাওয়া ঠিক হবে না,বরং আমি খেয়ে ফেলি।” এ নিয়ে একদফা অভিমান,খুনশুটি। মুনিবা তো পড়বেই না,ভাইয়ার সাথে রাগ। অনেক বুঝিয়ে ঠিক হলো, ভাইয়া বেড়াতে নিয়ে যাবে।

রাতে খাওয়ার টেবিলে, আব্বুর কাছে নালিশ করলো মুনিবা। শাস্তি হিসেবে যে বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে, সেটাও জানালো। তাদের বাবা বললেন, তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করো, গল্প শুনাবো তোমাদের। গল্পের কথা শুনে, দুই-ভাই বোন নড়েচড়ে বসলো।

সবাই এসে বারান্দায় বসলে, মুনিবার আব্বু গল্প শুরু করলেন। আজকে তোমাদের দাদুভাই কতো কি পাঠিয়েছেন বলতো, মুনিবা। মুনিবা হাতের কড় গুনে বলতে শুরু করল, বাতাবি লেবু, চালতা, আমলকি, জলপাই, নারকেল, কতো সবজি। ও থামলে, মাহবুব সাহেব বললেন, এই যে বাতাবী লেবু গাছ, যখন বুনেছি, তখন জুবায়ের অনেক ছোট। মুনিবা নড়েচড়ে বসে, আমার জন্য কোন গাছ বুনোনি! তিনি বললেন,হ্যা আম্মু,বলছি শোন। তোমার আম্মা গাছ লাগাতে ভালোবাসেন, খুব। রাসূল (সা) এর প্রিয় হাদীসটি ভাইয়া শোনায়নি তোমাকে?

‘যখন কোনো মুসলমান একটি ফলবান বৃক্ষের চারা রোপণ করে, আর এতে ফল আসার পর সে নিজে অথবা অন্য কোনো মানুষ তা থেকে যা ভক্ষণ করে তা তার জন্য সাদকা (দানস্বরূপ), যা চুরি হয়, যা কিছু (খোসা, আঁটি ইত্যাদি) গৃহপালিত পশু খাবে এবং বিভিন্ন পাখপাখালি যা খাবে, সবগুলো তার জন্য সাদকা।’ (বুখারি ও মুসলিম) মুনিবা বলে,তাহলে তো পাখি পেপে খেতে আসলে,তাড়িয়ে দেওয়া যাবে না।ওর আব্বু হাসেন,আবার বলতে শুরু করেন।
আমি বাড়িতে গেলে, প্রতিমাসে গাছের চারা নিয়ে যেতে হতো। বাড়ির সামনে যে শিউলী গাছটা,আর পশ্চিমে দাড়িয়ে থাকা কৃষ্ণচূড়াটা, তোমার জন্য বুনেছিলেন। মুনিবা খুশিতে বাক-বাকুম করে ওঠে।আম্মুকে আহ্লাদে জড়িয়ে ধরে সে। সেদিনকার মতো গল্প শেষ করে ঘুমাতে যায় সবাই।

সকালে স্কুলে সামাজিক বিজ্ঞান ক্লাসে ফাতিমা ম্যাম পড়াচ্ছিলেন। জলবায়ু কনফারেন্স নিয়ে অডিও, ভিজ্যুয়াল দেখালেন, কিভাবে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে, অক্সিজেনের পরিমান কমে যাচ্ছে। আটলান্টিক এ পানির উচ্চতা বেড়ে, নিম্নভূমির দেশগুলো তলিয়ে যেতে পারে। মুনিবার ছোট্ট মন চিন্তায় ভরে গেলো, সে ম্যামকে জিজ্ঞেস করল, “আমাদের বাংলাদেশটার কি হবে?”  ম্যাম হাসলেন,আমাদের পরিবেশকে অনেক সুন্দর রাখতে পারি, বেশী করে গাছ লাগাতে পারি। টেবিলের উপর কিছু ফুল, আর ফল। তার ছাত্র -ছাত্রীদের জন্য এনেছেন, বাসার ছাদে করা বাগান থেকে। সকলে খুব উৎসাহ পেলো। পরের সপ্তাহে সবাই মিলে ফাতিমা ম্যামের বাগান দেখতে গেলো।

সেদিন রাতে আবার মুনিবারা গল্প করতে বসল। ফাতিমা মিসের করা বাগান দেখে, খুব আগ্রহ ছোট্ট বাগান করার। ভাইয়ের শাস্তি আরো বেড়ে গেছে, বাগান করায় সহকারী হতে হবে। চারা কিনে এনে , মাটি-সার দিয়ে টব তৈরি করে দিতে হবে। ভাইয়া হাসিমুখে রাজি হলো। পরেরদিন থেকে শুরু হলো, মুনিবার বাগান করা। প্রথমে, স্ট্রবেরী চারা বুনেছে, আর আম্মুর জন্য বেলী ফুলের চারা। প্রতিদিন ক্লাস থেকে ফিরে বারান্দায় চলে যায়। একটু করে গাছগুলো বড়ো হয়, কুড়ি আসে। একদিন সাদা বেলী ফুলে গাছটা ভরে আসে,সুগন্ধে মনটা ভরে আসে। নিজের হাতে বোনা গাছে ফুল, খুশিতে সে উদ্বেল হয়ে উঠে। (এতোটা আনন্দ সে কখনোই পায়নি)।আর,যেদিন মুনিবার স্ট্রবেরী গাছ পাকা পাকা ফল ভরে যায়-দাদাভাই, আম্মু আর ভাইয়াকে নিয়ে খেতে কি যে আনন্দ পায় সে। দাদাভাই খুশিতে নাতনিকে নার্সারি থেকে দশটি ফলের চারা গিফট করেন।মুনিবার বাগান এখন বেশ বড়, বাসার সামনে ফুলেফলে ভরে আছে। বান্ধবীদের সে ফুলের চারা গিফট করে, তাদের হাসিমুখ দেখে প্রান ভরে ওঠে। #বৃক্ষরোপণ

 

মালয়েশিয়ার বৈচিত্রময় ঈদ

তাহেরা সুলতানা


মালয় ভাষায় ‘ঈদ মুবারাক’ কে বলে ‘সালামাত হারি রাইয়া’ যার অর্থ ‘রোজা ভাংগার শুভ উৎযাপন’ অথবা ‘রোজা ভাংগার উৎসব’।
আমি প্রায় ৬ বছর যাবত মালয়েশিয়াতে অবস্থান করছি। আমার অভিজ্ঞতা থেকে ঈদকে ঘিরে মালয়েশিয়ার সংস্কৃতির কিছুটা অংশ আমি এখানে শেয়ার করার চেষ্টা করছি। যেহেতু আমার বিদেশে ঈদ উৎযাপন ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভারসিটি থেকেই শুরু হয়েছিল, তাই আমি সেখান থেকেই শুরু করছি।
মালয়েশিয়াতে আমার প্রথম ঈদ উৎযাপন ২০১১ সালে। তখন আমার স্বামী ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভারসিটিতে মাস্টার্স করছিল। আমি কোনদিন ঈদের নামাজ পড়তে মসজিদে যাইনি। এমনকি দেশে থাকতে জুম্মার নামাজ পড়তেও কখনো যাওয়া হয়নি। আসলে মেয়েরা মসজিদে নামাজ পড়তে যেতে পারে, এরকম কোন ধারনাই আমার ছিল না! সে যাই হোক, সেবার ইসলামিক ইউনিভারসিটির মসজিদে ঈদের নামাজ পড়তে আসলাম। অনেকটা দ্যোদুল্যমান মনেই আসলাম। এখানে বলে রাখি, এই ইউনিভারসিটিতে প্রায় ১৩৫ টি দেশের মুসলিম ছেলেমেয়েরা পড়াশুনা করে। মসজিদের প্রতিটি ফ্লোরে ২ টি ইউনিট। একটি ছেলেদের, আর একটি মেয়েদের। ঈদের নামাজ পড়তে এসে আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো সবার দিকে তাকিয়েছিলাম! নানান দেশের ছেলেমেয়েরা নানান রঙে আর ডিজাইনে সুসজ্জিত হয়ে মসজিদ প্রাঙ্গণকে আলোকিত করে রেখেছে। অপরূপ সে দৃশ্য! নামাজ শেষে আমরা মেয়েরা একে অপরের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে, হাতে চুমু খেয়ে অথবা কারো কারো সাথে কোলাকুলি করে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করলাম। একবারের জন্যও মনে হয়নি, আমি এদের চিনি না! যেন আত্মার গভীর থেকে টান অনুভব করেছিলাম! অনেক নতুন নতুন বাংলাদেশী মেয়ে, আপু এবং ভাবীর সাথেও সেদিন পরিচয় হয়েছিল। দেশে ফেলে আসা বাবা-মা, ভাই-বোন আর আত্নীয় স্বজনদের বাদ দিয়ে বিদেশের মাটিতে ঈদ করার কষ্টটা কিছুটা হলেও লাঘব হয়েছিল।
ইসলামিক ইউনিভারসিটি হলেও এখানকার রেক্টর (এখানে ভিসিকে রেক্টর বলে) কিন্তু একজন মহিলা, যার নাম ড. জালেহা কামারুদ্দিন। ঈদের দিন ইউনিভারসিটি ক্যাম্পাসে উনি নিজে হাতে সৌজন্যমূলকভাবে স্টুডেন্ট দের খাবার সার্ভ করেন এবং সবার সাথে একসাথে বসে, খেয়ে, ঈদ উৎযাপন করেন। ইউনিভারসিটি ছাড়াও বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে সারাদিন ব্যাপী নানান পদের মুখরোচক খাবার সরবরাহ করা হয়। বাংলা কমিউনিটি থেকেও আলাদাভাবে ঈদ উৎযাপন করা হয়।
মালয়েশিয়ায় সংস্কৃতির একটা বিশেষ অংশ হলো, ঈদের দিন সব বাচ্চাদের হাতে ‘ডুয়েট রাইয়া’ (একই মানের ২ টি রিংগিটের ২ টি মূদ্রা একটি খামে ভরে প্রতিটি বাচ্চাকে দেয়া) একটি তুলে দেয়া। এমনকি প্রতিটি মালয় স্কুল থেকেও বাচ্চাদের এই ‘ডুয়েট রাইয়া’ দেয়া হয়। এখানে ছেলেরা ঈদের দিন যে ড্রেস পরে, তাকে বলে ‘বাজু মেলাউ’ (উপরের অংশটা ফতুয়া আর নিচেরটা পায়জামা আর তার উপরে লুঙ্গীর মতো) এবং মেয়েরা যে ড্রেস পরে, তাকে বলে ‘বাজু কুরুং’ (উপরের অংশটা কামিজ আর নিচেরটা স্কার্ট)। প্রায় সব মুসলিম মালয় মেয়েরা মাথায় হিজাব ব্যবহার করে। ঈদের দিনও এর ব্যতিক্রম দেখা যায় না।
অধিকাংশ মালয় ঈদের দিন খাবার সার্ভ করার ক্ষেত্রে পরিবার, আত্নীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব আর প্রতিবেশীর জন্য ‘ওপেন হাউস’ প্রোগ্রাম করে। এইদিন সবাই ইচ্ছেমতো সবার বাড়িতে গিয়ে খেতে পারে। ঈদের দিন মালয়েশিয়ানদের সবচেয়ে পরিচিত এবং সবচেয়ে পছন্দনীয় খাবার হচ্ছে ‘কেতুপাত’ (Ketupat)। এক ধরনের আঠালো ভাতের ভর্তা পরিমস একটা কলাপাতা বর্গাকারে কেটে এর মধ্যে রেখে চারপাশ থেকে মুড়িয়ে দেয়া হয়। এই ‘কেতুপাত’ ২/৩ ধরনের সস আর তরকারীর সাথে সার্ভ করা হয়। আর একটি বিখ্যাত খাবার হলো ‘নাসি পান্দাং’ ( Nasi Pandang)। এই রেসিপিতে ভাতের সাথে নানান ধরনের তরকারী পরিবেশন করা হয়। এছাড়া নানা ধরনের কেক, পেস্ট্রি আর স্নাক্সও সার্ভ করা হয়। সেইসাথে থাকে বিভিন্ন রংগ আর বিভিন্ন ফ্লেভারের সিরাপ, যেটাকে মালায় ভাষায় ‘মিনুম’ বলে, যার অর্থ হচ্ছে পানীয়। মালয়েশিয়ানরা ‘তেও পানাস’ (গরম চা) বা ‘কপি পানাস’ (গরম কফি) এর পরিবর্তে ‘তেও আইস’ (ঠান্ডা চা) কিংবা ‘আইস কপি’ (ঠান্ডা কফি) বেশী পছন্দ করে, যেটার চল ঈদের দিনও দেখা যায়।
বাংলাদেশীদের মতো মালয়েশিয়ারাও ‘কাম্পুং’ (গ্রাম) এগিয়ে আত্নীয় স্বজনদের সাথে ঈদ উৎযাপন করতেই বেশী পছন্দ করে। সবার সাথে একত্রিত হয়ে বার বি কিউ পার্টি করা আর ‘হারি রাইয়া’ গান শোনা এদের সংস্কৃতিরই অংশ।
যেহেতু মালয়েশিয়ানরা জাতিগতভাবেই খাদ্যপ্রেমী, তাই তারা যেকোন উৎসবে খাবারে ভিন্নতা আনতে এতোটুকু কার্পণ্য করে না। তাছাড়া এখানে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষাভাষী এবং নানান সংস্কৃতির লোকের বসবাস। তাই এখানে সবসময় একটা মিশ্র সংস্কৃতি বিরাজ করে, যার সবচেয়ে বেশি প্রভাব খাবারে গিয়ে পড়ে।

সালামাত হারি রাইয়া!

 

আব্বার ঈদ

মনির মোহাম্মদ


আমার পিতা শিক্ষক মানুষ। একজন আদর্শ শিক্ষক বলতে আমরা যা বুঝি উনি ঠিক তাই। সুযোগ পেলেই সন্তানদের বই কিনে দিতেন। আর কিছুদিন পর পর বলতেন ঐ গল্পের সেই কথাটা মনে আছে। আমরা মনে না থাকলেও বলতাম হ্যা হ্যা হ্যা মনে আছে। আব্বা সব সময় বলেন শুধু পড়লে হবে না, বুঝে পড়তে হবে। তবেই দেশ আলোকিত হবে। মুখস্ততো ময়না পাখিও করে।
আমরা ভাই বোনরা বই পড়া শিখেছি পিতার কাছ থেকে। আমার পিতা একজন বোদ্ধা পাঠক। আমার প্রথম গল্পের বই নীলাদ্রির সবচেয়ে বড় সমালোচক আব্বা । আব্বা নাকি আমার বই পড়ে মুগ্ধ হয়েছে। এর চেয়ে বড় পাওয়া আর নেই আমার জীবনে। এবার আসুন মূল গল্পে যাই।
প্রতি ঈদেই আব্বাকে কিছু দিলে কেন জানি তার সাইজ মিলেনা, সাইজ মিললে আম্মা বোনদের কাররই পছন্দ্র হয়না। অবশেষে ঈদের শপিং এর দায়িত্ব নিল আম্মা আর আমার বোনরা এবং আমারটা সহ, আমি এখন চিন্তা মুক্ত সাইজ আর পছন্দ্র নিয়ে ঝামেলা নেই ,আমি আমার শব্দ খুঁজায় ব্যাস্থ থাকতে পারি।
গতকাল রাত্রে একটা মেসেজ দিল আব্বা আমার মোবাইলে, তখন প্রায় দু’টো বাজে। মেসেজে একটা লিস্ট। লিস্ট দেখে আমি অবাক, একটা বিরাট বইয়ের লিস্ট। এত বই একদিনে কোথায় পাব? তার উপর কিছু উপহার এর বইও আছে। হাতে সময়ও কম। বিকালেই ছুটলাম বই এর খুঁজে। অবশেষে সারা ঢাকা শহর তন্নতন্ন করে খুঁজে অবশেষে সবগুলো বই কিনে আব্বাকে মেসেঞ্জারে ছবি পাঠালাম। আব্বা খুশি এবং বিরাট খুশি! এবার ঈদ কাটবে আমাদের বাপ-বেটার বই পড়ে ইনশাআল্লাহ্‌!
সবাই ভাল থাকবেন,
ধন্যবাদ,

ম নি র মো হা ম্ম দ
তরুন কথা সাহিত্যিক।

 

“আয় খুকু আয়, আয় খুকু আয়”

দিবা রুমি


★ সকালে উঠেই মনে পড়ে গেল চিরচেনা এবং ভীষণ প্রিয় এ গানটার কথা। কেন মনে পড়লো? হঠাৎ নিউজ পেলাম আজ বাবা দিবস, সেজন্যই কি গানটা মনে পড়লো? কিন্তু একটি নির্দিষ্ট দিনেই শুধু বাবার প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করতে হবে কেন? যিনি জন্মদাতা তার প্রতি ভালোবাসা যদি প্রদর্শন করতেই হয় তাতো প্রতিটা ক্ষণ প্রতিটা দিন করতে হবে।

★ এই যে এতো বড় হলাম কার আদর্শে, ভালোবাসায়, সহযোগীতায়, আত্মবলিদানে? অবশ্যই বাবা- মা এর যৌথ উদ্যোগ আর রব্বুল আলামিন এর অপার করুণায়।

এবার লেখার একটু ভিতরে ঢুকি

★ আদর্শ সন্তান গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন বাবা-মা উভয়ের যৌথ উদ্যোগ।

★ কিন্তু “আদর্শ কি” এই বিষয় সম্পর্কিত জ্ঞান যদি বাবা- মা এর না থাকে বা জানার আগ্রহ না থাকে বরং নিজের চিন্তাধারা ও কর্মপন্থাকে সঠিক বলে বিবেচনা করে তাহলে সেই সন্তান কখনোই আদর্শবান হবেনা।

★ খুব কম ক্ষেত্রেই আছে যারা মায়ের ছায়াতলে থাকলেও গড়ে ওঠে বাবার আদর্শ নিয়ে। তবে বেশির ভাগ সন্তানই মাকে অনুসরণ করতে পছন্দ করে। মায়ের আচরন যেমন হবে সন্তান তেমনটাই শিখবে। তেমনি বাবার আচরনেরও প্রতিফলন ঘটবে সন্তানের আচরনে। তাই সন্তানের মন্দ আচরনের জন্য সন্তানকে দায়ী করা যায়না।

যেহেতু বাবা দিবসে লেখতে বসলাম তাই বাবাকেই একটু হাইলাইট করি

★ আমাদের এই যান্ত্রিক জীবনের জ্যামঘটিত টানা হেঁচড়ায় বাবা মানুষটা কতটুকু সময়ইবা পায় সন্তানকে সময় দেবার? যেহেতু অধিকাংশ পরিবারই চলে বাবার উপার্জনে। আর এই সময় না দেয়ার কারনে সন্তানের মূল্যবোধ সঠিকভাবে গড়ে উঠে না।

★ একটা মজার ঘটনা না বলে পারছিনা। এক ব্যাক্তি তার কলিগকে জিজ্ঞেস করলেন-
৩ বছরতো হয়ে গেলো আপনার বাচ্চা কত বড় হলো?
– তিনি দু’হাত দু’দিকে প্রসারিত করে বললেন ‘এইটুকু।’
– তিন বছর আগেওতো এটুকুই দেখালেন।
– কি ভাবে বলব? আমি যখন বাসায় যাই তখন বাবু ঘুমায়, আবার যখন অফিসে আসি তখনো বাবু ঘুমায়।

★ এই হচ্ছে আমাদের বাবাদের দায়িত্ব! হাজার কষ্ট হলেও বাবাদের উচিত বাবা হওয়ার চেষ্টা করা, প্রয়োজনে বাবা হওয়ার শিক্ষা গ্রহণ করা উচিৎ কারণ শুধু জন্মদান এ অংশগ্রহনই সমাপ্তি নয়। তেমনি- যে মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত সেই মায়েরও আদর্শ মা হওয়ার শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত, যেহেতু মায়ের ভূমিকাই মুখ্য।

(আমার এই পোস্ট এর কথাগুলো পারিপার্শ্বিক সমাজ জীবন থেকে নেয়া কিছু যন্ত্রণাদায়ক অনুভূতির সামান্য বহিঃপ্রকাশ মাত্র।)

★ আজ মহান বাবা দিবস; আমার নিজের বাবা এবং সব বাবাদের প্রতি রইলো অকৃত্রিম ভালোবাসা।

 

একটি অসমাপ্ত ঈদগল্প

রায়হান আতাহার


১.
সকালে ঘুম থেকে উঠে মোবাইল হাতে নিল জাহিদ। ওয়াইফাই চালু করতেই একগাদা ম্যাসেজ আসলো। ঘুমের রেশ কেটে গেলো। কারণ সাধারণত তাকে কেউ প্রয়োজন অথবা শুভেচ্ছা জানানো ছাড়া ম্যাসেজ করে না। আজ এতগুলো ম্যাসেজ এসেছে, কারণ আজ ঈদ।

ঈদের দিন মানুষের মাঝে এক ধরনের উচ্ছ্বাস কাজ করে। কিন্তু জাহিদের মাঝে কোন উচ্ছ্বাস নেই। পরিবার ছাড়া দেশের বাইরে প্রথম ঈদ জাহিদের। মাস ছয়েক হলো স্কলারশিপ নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রবাসে পাড়ি জমিয়েছে সে।

বাংলাদেশের সাথে সময় ব্যবধানের কারণে বলতে গেলে একদিন আগেই তার ঈদ চলে গেছে। গত রাতেই অনেকের ‘ভার্চুয়াল শুভেচ্ছা’ পেয়েছে। বাসায় বাবা-মায়ের সাথে ঈদের কুশল বিনিময় হয়ে গেছে। নামেই শুধু কুশল বিনিময়, ভৌগোলিক দূরত্ব ঈদের দিনটিতে জাহিদ ও তার পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে পারেনি। ম্যাসেজগুলো পড়তে ইচ্ছে করলো না জাহিদের। ইচ্ছে করলেও লাভ হতো না। নাস্তা করে ক্যাম্পাসে চলে যেতে হবে তাকে। হাতে সময় কম।

২.
বারবার মোবাইলের দিকে তাকাচ্ছে জাহিদ। আসমানি ফোন দেয়ার কথা এ সময়ে। হুমায়ূন আহমেদের ‘জোছনা ও জননীর গল্প” উপন্যাসের আসমানি চরিত্রটি জাহিদের খুব ভালো লেগেছিলো। তাই প্রিয় মানুষটিকে ‘আসমানি’ বলে ডাকে সে।

ফোন আসার সময় পার হয়ে যায়নি। কিন্তু অপেক্ষার সময়গুলো কেন যেন কাটতে চায় না। নিজেই ফোন দেবে কি? না, ঠিক হবে না। ঈদের দিন ব্যস্ততা থাকে সবারই। ভাবতে ভাবতেই মোবাইল বেজে উঠলো। হ্যাঁ, ফোনটা আসমানিরই। মোবাইল কানে দিয়ে অন্য দশটা দিনের মতই বের হয়ে গেল জাহিদ। (অণুগল্প)

Raihan Atahar
Postgraduate Researcher at Bernal Institute
Material and Metallurgical Engineering at BUET

 

ঈদের শুভেচ্ছা

অপরাজিতা


“আকাশের বাঁক ঘুরে চাঁদ এল ছবির মতন
নতুন কিশ্তী বুঝি এল ঘুরে অজানা সাগর
আজ এ স্বপ্নের মাঠে রাঙা মেঘ হল ঘন।

আতরের ঘন গন্ধে মাটি চায় হাওয়ার বাঁধন
ঈদের আনন্দ, স্বপ্ন রেখায়িত গোধূলি আকাশ।”

ফররুখ আহমেদ

‘ঈদের শুভেচ্ছা’ বাংলায় মনের জানালা, গদ্য, কবিতা ও অপরাজিতা নিয়ে লেখক, পাঠক এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের।
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে ঈদ। প্রতি বছর ঈদকে সামনে রেখে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় দেখা যায় নানা আয়োজন। প্রবন্ধ, গান, ছড়া-কবিতা, গল্প, উপন্যাস, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান কোন কিছুই বাদ যায় না। ঈদকে কেন্দ্র করে কবি- সাহিত্যিক, লেখক, শিল্পী, অভিনেতাদের ব্যস্ত সময় কাটে। সত্যি বলতে কী, এমন কোন মুসলিম কবি-সাহিত্যিক কিংবা লেখককে হয়তো পাওয়া যাবে না যিনি ঈদ নিয়ে কোন লেখা লিখেননি। বাংলা ভাষাভাষী কবি-সাহিত্যিকরাও এগিয়ে আছেন।

ঈদকে নিয়ে কবি কায়কোবাদ ‘ঈদ আবাহন’ নামে একটি কবিতা লিখেছেন। কবিতাটি কয়েকটি লাইন-

“ এই ঈদ বিধাতার কি যে শুভ উদ্দেশ্য মহান,
হয় সিদ্ধ, বুঝে না তা স্বার্থপর মানব সন্তান।
এ ত নহে শুধু ভবে আনন্দ উৎসব ধুলা খেলা।
এ শুধু জাতীয় পুণ্যমিলনের এক মহামেলা। ”

কবি কায়কোবাদ ঈদকে পুণ্যমিলনের মহামেলা হিসেবে অভিহিত করলেও ইসলামের নির্দেশনা সঠিকভাবে অনুসরণ না করার কারণে ঈদের দিনেও গরিব-দুঃখী ও অসহায়দের কষ্টের যেন শেষ থাকে না।

এ দিকটি ফুটে ওঠেছে শাহাদাত হোসেনের ‘বাংলার ঈদ’ কবিতায়। কবি লিখেছেন,

“বাংলার মুসলমান
শুধু চেয়ে রয়-
মৌন ম্লান ক্লিষ্ট মুখ নির্বাক নিশ্চল।
ফিত্রার খুশী কোথা তার?
কি দান সে দিবে ক্ষুধিতেরে?
নিজেই কাঙাল রিক্ত-
ভিক্ষা মাগি ফিরে দ্বারে দ্বারে।”
এ কবিতায় কবি ফিতরা আদায়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।

কবি গোলাম মোস্তফা ঈদকে মানবতার বিরাট প্লাটফর্ম হিসেবে কল্পনা করেছেন। ঈদ উৎসব কবিতায় তিনি লিখেছেন-

“ কণ্ঠে মিলনের ধ্বনিছে প্রেম-বাণী, বক্ষে ভরা তার শান্তি,
চক্ষে করুণার স্নিগ্ধ জ্যোতি ভার,বিশ্ব-বিমোহন কান্তি
প্রীতি ও মিলনের মধুর দৃশ্যে
এসেছে নামিয়া যে নিখিল বিশ্বে
দরশে সবাকার মুছেছে হাহাকার বিয়োগ-বেদনার শ্রান্তি।”

ঈদ নিয়ে সবচেয়ে বেশি কবিতা ও গান লিখেছেন, কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তার লেখা – ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ।
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানি তাকিদ।’ এ গানটি ছাড়া ঈদের আনন্দ যেন পূর্ণতা পায় না। সুত্র: Subornolota-সুবর্ণলতা

 

ফিতরা

দ্য স্লেভ


আমরা যাকাতের বিষয়ে জানি কিন্তু ফিতরার বিষয়ে অবগত নই বললেই চলে। যাকাত অবশ্য সঠিকভাবে প্রদান করিনা আমরা। আর রমজানেই কেবল যাকাত নিয়ে আলোচনা করাই তার প্রমান। অথচ বিষয়টা রমজান কেন্দ্রীক নয়। এটা নিসাব পরিমান অর্থ সংক্রান্ত এবং তা এক বছর অতিবাহিত হতে হবে।

জাকাতের ২টা পরিমাপক আছে, একটা স্বর্ণ অন্যটা রৌপ্য। যেটার সাথে মিলে, সেটায় নিয়মানুযায়ী জাকাত দিতে হবে। যদি রুপার তুলা(প্রায় ১০ গ্রাম) ৫০০ টাকা হয় তাহলে সাড়ে ৫২ তুলার দাম ২৬২৫০(রুপার বর্তমান দাম সম্ভবত আরেকটু বেশী) হয় । আর এই পরিমান টাকা কারো ব্যাংকে বা ঘরে ১ বছর পড়ে থাকলে তার উপর ২.৫% জাকাত দিতে হবে। জাকাত সর্ব প্রথম আপন লোকদেরকে দিতে হবে, এতে জাকাতও আদায় হবে আবার আত্মীয়তাও রক্ষিত হবে। এমনকি স্ত্রী তার গরিব স্বামীকেও জাকাত দিতে পারে।

কিন্তু ফিতরার ব্যাপারে আমরা প্রায় জানিনা বললেই চলে। এটা রমজানে প্রদান করতে হয় শেষের দিকে এবং ঈদের নামাজের পূর্বে। ভালো হয় যদি ঈদের আগের দিন প্রদান করা হয়। রসূল(সাঃ) খেজুর,কিসমিস,বার্লি ইত্যাদীর এক সা(আনুমানিক আড়াই কেজী বা ৩ কেজী বা কিছু কম বেশী পরিমান) পরিমান ফিতরা দিতেন। তবে আলেমরা বলেন এটা প্রচলিত প্রধান খাদ্য দ্বারাও আদায় করা যাবে। তবে কেউ খেজুর বা উক্ত দামী খাদ্য দ্বারাও করতে পারে। বিশেষ করে ধনীরা ফিতরা দিবে দামী খাবারের পরিমানে। সেটাই উত্তম।

ফিতরা খাদ্য দ্বারা দিতে হবে এটাই সুন্নাহ কিন্তু অনেকে উক্ত পরিমান টাকা দ্বারাও ফিতরা দেওয়া যাবে বলেছেন। তবে খাদ্য দ্বারা দেওয়াই উত্তম। যারা বিদেশে আছে এবং আশপাশে গরিব মানুষ নেই, তারা দেশে টাকা পাঠালে সেটা দিয়ে অন্যরা খাদ্য কিনে খেতে পারে। এটা প্রত্যেক সক্ষম ব্যক্তি আদায় করবে যার মোটামুটি খেয়ে পরে চলে যায়। ফিতরার জন্যে যাকাতের নিসাব পরিমান সম্পদ হওয়া জরুরী নয়।

আমি ভাবছিলাম খেজুর কিনে দেব, কিন্তু মসজিদ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তারা টাকা সংগ্রহ করছে এবং এটা দ্বারা তারা খাদ্য কিনে এখানে বসবাসকারী গরিবদেরকে প্রদান করবে। ইমাম বললেন খাদ্য দিয়েই ফিতরা দিতে হবে,, তাদের হাতে টাকা দিলে হবেনা। এর একটা আলাদা অর্থ আছে। ঈদে গরিব লোকেরা যাবে ভালো খাবার খেতে পারে তার জন্যেই ফিতরা। বাস্তবে দেখা গেছে গরিবদেরকে টাকা দিলে তারা সেটা দিয়ে পরিবারের জন্যে খাবার না কিনে গরিবি হালে ঈদ করে, এতে তাদের পরিবার ভালো খাবার খেতে পারেনা। ফিতরা আসলে তাদের ঈদের দিন উত্তম খাবার নিশ্চিত করে।

সুন্নাহ থেকে আমার মনে হয়েছে যেই লোক যেই মানের খাবার ঈদের দিন খায়,তিনি সেই মানের খাবার ফিতরা হিসেবে প্রদান করবেন। এ কারনেই তৎকালীন আরবের বিভিন্ন ধরনের প্রচলিত খাদ্যের উপর রসূল(সাঃ) ফিতরা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আমার লেখা পড়ে যারা ভাবছেন ফিতরা তার উপর কর্তব্যরূপে আরোপিত হয়েছে কিনা,,, তারা এত না ভেবে ফিতরা দিয়েই ঈদের নামাজ পড়তে যাবেন দয়া করে

আল্লাহ আমাদের সকল ইবাদতকে কবুল করুন এবং সম্মান বৃদ্ধি করুন।

 

ভালো থাকাটাও একটি শিল্প

আফরোজা হাসান


খুব ছোটবেলায় শখ করে গান (হামদ, নাত, গজল) শিখেছিলাম। মামণির এক বান্ধবী বাসায় এসে গান শিখাতেন। উনার কাছেই প্রথম জেনেছিলাম যে, গান হচ্ছে একটা শিল্প। আর শিল্পর প্রয়োগে শিল্পী হতে প্রয়োজন অনেক সাধনার। সত্যি অনেক সাধনা করেছিলাম। সেই সময় আইসক্রিম খুব পছন্দ করতাম কিন্তু কণ্ঠস্বর খারাপ হয়ে যাবে সেই ভয়তে আইসক্রিম খেতাম না। কুসুম গরম পানি, আদা, লেবু, মধু, যষ্টিমধু আরো কত কি খেতাম সুন্দর কণ্ঠস্বরের জন্য। আর সকালে উঠে খালি গলার আ-আ-আ-আ- সেতো ছিলোই। এইসব কষ্ট খুব মনের আনন্দ নিয়ে করতাম কারণ আমার শখ ছিলো শিল্পী হবার। আর মানুষ যখন মন থেকে কোন কিছু হতে চায়, তখন তারজন্য নিরলস পরিশ্রম করে যেতে পারে। আমিও পেরেছিলাম। আর সেই কষ্ট ও ত্যাগের ফল স্বরূপ কিছু পুরষ্কার, আপনজনদের প্রশংসা, স্পেশ্যাল মূল্যায়ন যোগ হয়েছিলো জীবন ঝুলিতে।

ছোটবেলা থেকেই রান্নার ভীষণ শখ ছিল। স্বপ্ন দেখতাম সবাই আমার রান্না খেয়ে পরিতৃপ্তির ধ্বনি তুলছে। সবচেয়ে পছন্দ করতাম যেই মানুষটির রান্না তাকে গিয়ে ধরেছিলাম আমাকেও তার মত রাঁধুনী বানিয়ে দেবার জন্য। উনি হেসে বলেছিলেন, আমার রান্না মজা হবার সবচেয়ে বড় কারণ হলো আমি রান্না করতে ভালোবাসি। উপভোগ করি রান্না করাটাকে। আসলে উপভোগ না করলে মানুষের কোন গুণ বিকশিত হয় না পরিপুর্ণ ভাবে। কারণ কোন কিছুকে উপভোগ না করলে মানুষ সেই কাজে মনোনিবেশ করতে পারে না। আর মন যেখানে অস্থির বা অমনোযোগী সেখান থেকে ভালো কিছু আশা করাটাই আসলে ঠিক না। তাই কোন কিছুতে পারদর্শী হতে সেই জিনিসকে ঘিরে মনে সুখ সুখ আবেশ থাকাটা খুব জরুরি। তাই ভালো রান্না করতে হলে তোমাকে সবার আগে ভালবাসতে হবে রান্নাকে। কেননা রান্না একটি সাংঘাতিক আর্ট। একদম ছবি আঁকার মতো। মনের মাধুরী মিশিয়ে যে শিল্পকে রূপদান করতে হয়। রান্নাকে আমি ছবি আঁকার মতই বহু যতনে আয়ত্ত্ব করতে চেষ্টা করেছি এরপর থেকে।

মানুষের মন নিয়ে স্টাডি করতে করতে আজ হঠাৎ একটা উপলব্ধি হলো। মনে হলো শিল্পর প্রয়োগে শিল্পী হতে হলে সেই সম্পর্কে জ্ঞানের প্রয়োজন। প্রয়োজন যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জনের। এবং সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন চেষ্টার। নিরলস ভাবে লেগে থাকার ইচ্ছার। শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে যার প্রচেষ্টা যত বেশি থাকে, সে তত বেশি সফল হয়। ঠিক তেমনি ভালো থাকতে জানাটাও মনে হয় এক ধরনের শিল্প। কেননা এমন অনেক মানুষকে দেখেছি যারা ভালো থাকার জীবনাপোকরণে ভরপুর থাকা স্বত্ত্বেও হতাশা-নিরাশায় দিনযাপন করছে। জীবনকে ঘিরে শুধুই হাহাকার ধ্বনি তোলে তারা। আবার কিছু মানুষ দেখেছি যারা জীবনাপোকণেরর সন্ধানে ছুটে চলছে একরাশ তৃপ্ততা নিয়ে। তাদের কণ্ঠে সর্বদা ধ্বনিত হয় “আলহামদুলিল্লাহ”।

আসলে ভালো যে আছি সেটা বুঝে নিতে জানতে হয়, শিখতে হয়। আর সেজন্য প্রয়োজন হয় জ্ঞানের। প্রয়োজন হয় যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জনের। দরকার হয় প্রচণ্ড চেষ্টা ও নিরলস লেগে থাকার ইচ্ছার। ত্যাগ করতে হয় অনেক অ-নে-ক কিছুকে। তা না হলে কখনোই অর্জন করা যায় না মনের আরাধ্য প্রশান্তিকে।

 

নতুন ভোরের গল্প

ডা. ফাতিমা খান


অফিসের পাশে সুপার শপে বাজার করছি, হঠাতই সাওসান এর সাথে দেখা। আমি খেয়াল না করলেও সে ঠিকই আমার কাছে অনেকটা ছুটে এসেই সালাম দিল। এখানকার রেওয়াজ অনুযায়ী পরিচিত কারো সাথে সাক্ষাৎ হলে সালাম বিনিময়ের পর কোলাকুলি করা হয়, যেমনটা আমরা ঈদের দিনে করে থাকি।
– কেমন আছ তুমি ডক্টর? কত্তদিন পর!
– সাওসান! কেমন আছ তুমি?
– খুব ভাল আছি আমি, আল্লাহ আমাকে অনেক ভাল রেখেছেন। তোমাকে একটা ভাল খবর দিতে চাই ডিয়ার; guess what?… আচ্ছা বলেই ফেলি। আমি সিগারেট, সিসা আর ওই যে বাকী ওইসব… সব ছেড়ে দিয়েছি। তোমার কথা গুলো আমার বারবার মনে পড়ে, সম্ভবত এজন্যই নিজেকে বদলাতে পেরেছি। ঐ যে বলেছিলে না Almighty created you with divine beauty and strength not to chase for the empty things that harm you, but to find your ownself and realize that you belong to Him only! “.
হুম, একবার বলেছিলাম বটে, অনেক কথাই তো বলতাম। ওকে কাউন্সিলিং করতাম মাঝে মাঝে। ওরাল থেরাপি হল সর্বোত্তম থেরাপি। আমার উদ্দেশ্য ছিল ফুলের মত মেয়েটা যেন অকালে ঝরে না পড়ে। বললাম,
– আচ্ছা, বেশতো! আজকে আমার সারাদিনের সবচেয়ে ভাল খবরটা তুমি আমাকে দিলে সাওসান। হ্যাপি টু হিয়ার দা বেস্ট নিউজ অফ দা ডে!
মেয়েটা কথায় কথায় অনেক কথাই মনে করিয়ে দিল। আমার খুব সাধারন উপদেশগুলোকে সে যে কত দামী উক্তি ভেবে যত্ন করে মনে রেখেছে তা ও না বললে হয়ত জানতাম না।
সাওসান ফিলিস্তিনি মেয়ে। “ফিলিস্তিন” নাম শুনলে যেমন একটা বিদ্ধস্ত দেশ, বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত পরিবার আর গোলা বারুদের ধোয়ায় ঝাপসা একটা ছবি ভেসে ওঠে, এখানে ফিলিস্তিনিদের অবস্থা কিন্তু সেরকম নয়। সৌদিআরবে প্রচুর ফিলিস্তিনিদের বসবাস, তাদের বাপ দাদাদের আমল থেকে। বেশীরভাগই ব্যবসায়ী। স্বভাবগত ভাবে তাদের মধ্যে একতা অনেক বেশী। সম্ভবত ‘একতার বল’ এর জন্যই তারা এদেশে অর্থনৈতিক আর সামাজিক খুটি মজবুত করে নিয়েছে। ফিলিস্তিনি মেয়েরা দেখতে সুন্দর আর তুলনামূলক ভাবে সৌদি মেয়েদের থেকে নমনীয় বলে পাত্রী হিসেবে এখানে তাদের চাহিদা আছে বেশ।
একুশ কি বাইশ বছরের উচ্ছল, চপল তরুণী সাওসান। খুব সাধারণ কিন্তু শিক্ষিত মেয়ে সে। এখনো তার মাঝে শিশুসুলভ কিছু স্বভাব রয়ে গিয়েছে। বছর পাচেক আগে বিয়ে হয়েছে এক ফিলিস্তিনি ধনকুবেরের ছেলের সাথে। যৌথ পরিবার, লোকজনে জমজমাট শ্বশুরবাড়ি। বাসায় বড় থেকে ছোট মোটামুটি সবাই ধুমপায়ী, অবসরে মজলিশে বসে সবাই একসাথে ধোয়া ছাড়ে, সিসা টানে। এমনকি ষাটোর্ধ শাশুড়িও তার কুঞ্চিত চামড়ার সরু দুই ঠোঁটের মাঝখানে সিগারেট সেটে লম্বা টান দেয়। শ্বশুরমশাই দেখতে কিছুটা Anthony Bardain এর মত, আমি যখন দেখেছি তখন তিনি তার টোবাকো পাইপ খানা দুই ঠোটের মাঝ খানটায় ধরে ছিলেন। মাথায় কাওবয় হ্যাট, ব্ল্যাক স্যুটে নিজেই তার হলুদ ‘হামার’ হাকিয়ে পুত্রবধূকে নিয়ে ক্লিনিকে এসেছিলেন। আমার ক্লিনিক থেকে মাইল খানেক দূরেই তদের ডুপ্লেক্স বাসা। অনেকবার তার বাসায় আমন্ত্রণ জানালেও সময়ের অভাবে যাওয়া হয়নি। তার সাথে আমার দেখা হত আমার ডেন্টাল অফিসে। যেদিন আমার ব্যস্ততা কম থাকত সেদিন তার রাজ্যের গল্প শুনতাম ।
অনেকদিন মেয়েটার চিকিৎসা করেছি। অতিরিক্ত ধুমপান আর অবহেলার জন্য তার সব দাঁতই প্রায় নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ট্রিটমেন্ট চলাকালে সে তার জীবনের ভাল মন্দ অনেক গল্পই শেয়ার করত। আমি তার ধূসর নীল চোখের স্ফূর্ত চাহনীর দিকে তাকিয়ে শুনতাম আর ভাবতাম.. পরিবার বা পারিপার্শ্বিকতা মানুষের অভ্যাসকে কি ভীষণভাবেই না প্রভাবিত করে! কে বলবে এই মেয়ে টুয়েন্টি স্টিকস পার ডে স্মোক করে বা সিসাতে কয়েক টান না দিয়ে ঘুমুতে যেতে পারেনা! অথচ সতের বছর বয়সে হিশামের সাথে বিয়ের আগে পর্যন্ত কখনো নাকি সে সিগারেট ছুঁয়েও দেখেনি! প্রথমবার মদে চুমুক দিয়েছিল দুবাইয়ের এক হোটেলে হিশামের সাথে বসেই, শ্বশুরের এক বিজনেস পার্টনারের ডিনার পার্টিতে। তারপর ধীরে ধীরে সে অভ্যস্ত হয়ে যায়। হুইস্কি, বিয়ার, ভোদকার প্রথম স্বাদ গ্রহনের অভিজ্ঞতার গল্পগুলোও সে আমাকে শোনাতে বাদ দেয়নি। তবে আসক্তি ছিল শুধু সিগারেট আর সিসাতে। প্রেগ্ন্যান্সিতে অতিরিক্ত ধূমপানের কারণে তার একমাত্র ছেলেটা ক্রনিক লাং ইনফেকশনে ভুগছিল।
ডেন্টাল চেয়ারে তার সাথে শেষ সিটিং এর পর তাকে কিছু নাসীহা করেছিলাম।
– বুঝলে সাওসান, তোমার নামটা যেমন সুন্দর ( সাওসান অর্থ ফুল) , তুমি দেখতেও সেরকম অপরূপা। আচ্ছা বলতো কি লাভ এসব ছাইপাঁশ খেয়ে? মন্দ ছাড়া ভাল কি কিছু পেয়েছ এই ধোয়া ফুঁকে? তোমার বাবা মা যদি বেচে থাকতেন তাহলে তাদের ফুলের মত মেয়েটাকে আসক্ত দেখলে কি খুশী হতেন? আমি জানি তোমার একটা নিষ্পাপ অন্তর আছে। আমি চাই তুমি ভেতরে ও বাইরে অপরূপা হও, অদ্বিতীয়া হও। আমি তোমাকে আজই স্মোকিং ছেড়ে দিতে বলছিনা, বরং তুমি প্রতি সপ্তাহে একটা করে স্টিক কমিয়ে দাও। আগামী একবছর পর তোমার সাথে যদি আমার দেখা হয় তখন আমি তোমার মুখে শুনতে চাই.. বাহান্ন সপ্তাহে তুমি তোমার সব বাজে অভ্যাস ছেড়ে দিয়েছ। পারবে না ?
সাওসান কথা দিয়েছিল, কথা রেখেছেও। গত রমজান থেকে এই রমজান মাস, প্রায় একবছর পরই তার সাথে আমার এই সুপারশপে দেখা হল। সাওসান চলে যাচ্ছে জর্ডানে, তার চাচার কাছে যিনি ছোটকাল থেকে তার লালন পালন করেছেন। ” আই ওয়ান্ট টু টেইক আ টার্ন ইন মাই লাইফ । আই নিড আ চেইঞ্জ” – এরকম কিছু একটা বলল। ঠিক কি বোঝালো জানতে চাইনি। যেখানেই যাক ভাল থাকুক সওসান। নিজেকে গড়ে নিক। জীবনের পুরোটাই ওর এখনো বাকী প্রায়। শুদ্ধি আছে বলেই মানুষ ভুল করে, উপলব্ধি আত্নসংস্কারের মূল।
আলো, অন্ধকার , মেঘ, বৃষ্টি, রোদ, ছায়া, রংধনু – সবকিছুই মানুষের জীবনে একটু একটু চাই। পেইন্টিং এর প্যালেট এর মত জীবনটা, একেক খাপে একেক রঙ থাকতেই হয়। দুই তিন রঙ মিশে নতুন আরেকটা রঙ তৈরী না করলে যেমন ক্যানভাসের কিছু অংশ সাদাই থেকে যায়, আবার ভুল বাছাই করা রংগুলোর মিশ্রণে বেমানান রংটা ক্যানভাসের পুরো সৌন্দর্যটা নাশ করে ফেলে।। সবার জীবন রঙিন হোক, না হয় শুভ্রই থাকুক।

 

রাজশাহীতে গৃহবধূর আত্মহত্যা স্বামী শাশুড়ি গ্রেফতার

নারী সংবাদ


রাজশাহীতে গলায় ফাঁস দিয়ে শিউলী খাতুন (১৬) নামে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন। গত মঙ্গলবার রাতে শোয়ার ঘর থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত শিউলী নগরীর শালবাগান এলাকার সামিউল বাশিরের স্ত্রী। এ ঘটনায় নিহতের স্বামী ও শাশুড়িকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এ ঘটনায় থানায় একটি আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা দায়ের হয়েছে। শিউলীর বাবা মোখলেসুর রহমান বাদি হয়ে মঙ্গলবার রাতেই মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় শিউলীর স্বামী সামিউল বাশির (২৩) ও শাশুড়ি তানিয়া সানজিদাকে (৪৩) আসামি করা হয়। মামলার পর ওই রাতেই তারা গ্রেফতার হন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রায় আট মাস আগে শালবাগানের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে সামিউলের সাথে নওদাপাড়া এলাকার মোখলেসুর রহমানের মেয়ে শিউলীর বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের পর থেকে তাদের দাম্পত্য কলহ ছিল। এরই জের ধরে শিউলী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মর্গে শিউলীর লাশের ময়নাতদন্ত করা হবে। এ ঘটনায় থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা হলে দুই আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়। তদন্ত শেষে পরবর্তী আইনানুগ পদপে গ্রহণ করা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। সুত্র:নয়াদিগন্ত

 

টিনএজারদের জন্য প্রেমের গল্প

আফরোজা হাসান


গতকাল ক্লাস শেষে যখন সবাই মিলে গল্প করছিলাম এক স্টুডেন্ট তার জীবনে পড়া প্রথম প্রেমের গল্প বিষয়ক অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছিল ক্লাসের সবার সাথে। প্রেম ব্যাপারটা আসলে কি বোঝার জন্যই সে উপন্যাস হাতে তুলে নিয়েছিল। এবং প্রেম সম্পর্কে ধারণা আরো ঘোলাটে করার মধ্যে দিয়ে তার উপন্যাস শেষ হয়। সে বলছিল টিনএজারদের জন্য স্বচ্ছ, সুন্দর ও সঠিক প্রেমের গল্প লেখা দরকার। যেখানে গল্পে গল্পে তারা জেনে ও বুঝে যাবে প্রেম ব্যাপারটা আসলে কি এবং শরীয়তে এই বিষয়ে কি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া টিনএজে দেহ ও মনে যে পরিবর্তন সাধিত হয় তার ফলে আবেগের যে জোয়ার-ভাটার সৃষ্টি হয় এবং যে যে রূপে তা বাইরে বেড়িয়ে আসতে চায় সেই ব্যাপার গুলোও সুন্দর করে বিশ্লেষণ করা থাকবে গল্পের বইতে। যাতে আবেগকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেই ব্যাপারেও একটা ধারণা পেয়ে যায় গল্প পড়ে।

বেশ কিছুদিন আগে এক বোন ফোন করে খুব চিন্তিত কণ্ঠে জানিয়েছিলেন তার বারো বছর বয়সি মেয়েটি আজকাল খুব প্রেমের গল্প-উপন্যাস পড়তে পছন্দ করে। বারবী কার্টুন গুলোর খুব ভক্ত হয়ে উঠেছে। কার্টুনে যখন প্রিন্স ও প্রিন্সেস রোমান্টিক মুহুর্তে থাকে বা কথা বলে বোনটি খেয়াল করেছেন তার মেয়ের চেহারাতে গোলাপী আভা ছড়িয়ে পড়ে! ঠোঁট টিপে মেয়ে হাসে! মাঝে মাঝে নাকি দীর্ঘশ্বাসও ফেলে মৃদু মৃদু! বোনটি খুবই চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন মেয়েকে নিয়ে। চিন্তায় পরাটা অবশ্য স্বাভাবিক। সন্তানের চিন্তায় মায়ের মন সবসময় চিকন একটা দড়ির উপর দাঁড়িয়ে থাকে। যার নীচে থাকে জ্বলজ্বলে আগুণ কিংবা অথৈ পানি। এখন সার্কাসের দড়কাবাজের ট্রেনিং তো আর সব মায়েদের থাকে না। সুতরাং প্রতি মুহুর্তে ‘কি হয়’ ‘কি হয়’ অর্থাৎ, পড়ে যাবার ভয়।

গতবছর বড় ভাইয়ার কন্যারত্নাটি রোমিও-জুলিয়েট পড়ার আবদার করেছিল। ভাইয়া আমাকে ফোন দিয়ে বললেন, এটা আমি কিছুতেই মানতে পারছি না যে, আমার মেয়ে তার জীবনের প্রথম লাভ স্টোরি পড়বে রোমিও-জুলিয়েট! শিক্ষণীয় তো কিছুই নেই এই গল্পে। ধোঁকা, মিথ্যা, আত্মহত্যার মত জঘন্য সব উপাদানে ঘেরা পথে চলে আমার মেয়ে ভালোবাসার ভুবনে প্রবেশ করবে? ভালোবাসার কারণে সবকিছু তুচ্ছ করা কি ঠিক? সম্পর্ক বা ভালোবাসার দাবী কি জীবনের চেয়ে বেশি হওয়া উচিত? আমার মনেহয় না। কারণ আমাদের জীবন তো প্রকৃত পক্ষে আমাদের নিজের না। আমাদের জীবন আমাদের কাছে আল্লাহর দেয়া আমানত। তাই জীবনের চেয়ে মূল্যবান কিছুই থাকা ঠিক না মানুষের কাছে। জীবন নেই তো কিছুই নেই। জীবনই যদি না থাকে ভালবাসা, স্বপ্ন, বন্ধন সবই তো অর্থহীন।কাউকে ভালোবেসে জীবন দিয়ে দেয়ার মত ইউজলেস আর কিছুই নেই দুনিয়াতে। তাহলে এমন ইউজলেস কাহিনী কেন পড়তে দেবো আমার মেয়েকে?

আমি সত্যি খুব অবাক হয়েছিলাম সেদিন ভাইয়ার কথা শুনে। এভাবে আমি কখনোই চিন্তা করিনি। গল্প-উপন্যাস-নাটক-সিনেমা-কার্টুন মনকে প্রভাবিত করে সেটা আমিও জানি। কিন্তু কোন মনে যখন সবকিছুর সংজ্ঞা তৈরি হচ্ছে সেই মনকে এইসব ভুল উদাহরণ থেকে বাঁচিয়ে রাখাটা কতটা জরুরি সেটা সেদিন অনুভব করেছিলাম। প্রেম-ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে যাদের নাম ব্যবহার করা হয় অর্থাৎ, রোমিও-জুলিয়েট, লায়লা-মজনু, রাধা-কৃষ্ণ, রজকিনী-চণ্ডিদাস ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব প্রেম কাহিনীর মধ্যে ভালোবাসা কোথায় সেটাই আমি খুঁজে পাইনা। এসব হচ্ছে মোহ, আবেগ আর পরকিয়ার কাহিনী। একে-অন্যের জন্য আত্মহত্যা মানে হচ্ছে জাহান্নামের কাহিনী। আর এসবকে যদি কেউ ভালোবাসা বলে তাহলে এমন ভালোবাসা থেকে আমি নিজেকে মাহরুম রাখাই পছন্দ করবো। জীবন দেয়া কখনোই ভালোবাসার গভীরতা বোঝায় না। সেটা তো ভালোবাসাই না যা জীবনকে ধ্বংস করে দেয়।ভালবাসা তো সেটা যা আমাদেরকে নতুন করে বাঁচতে শেখায়। জীবনকে ফুলে-ফলে গড়তে শেখায়। অনন্ত জীবন একসাথে কাটানোর স্বপ্ন দেখায়। দুনিয়ার ক্ষণিকের জীবনকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতে শেখায়।

ভাইয়া কাগজ-কলম নিয়ে বসে গিয়েছিলেন প্রেমের গল্প লিখতে। লিখেছিলেন উনার সাংসারিক জীবনের ভালোবাসার গল্প। ভাইয়ার কন্যার জীবনে পড়া প্রথম প্রেমের গল্প ছিল ওর বাবা-মার সংসার জীবনের ভালোবাসার গল্প। সেদিন আবারো মনে হয়েছিল বাবা- মা’ই তো সন্তানদেরকে দেখাবে সামনে চলার পথ, পথের দিশা, পথ মাঝের চরাই-উৎড়াই, অতঃপর গন্তব্য। বাবা-মা যদি কোন ক্ষেত্রে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে অবহেলা করে, ব্যর্থ হয়। তাহলে সন্তানদের উপর সেটার প্রভাব পড়বেই। বাবা-মা না শেখালে কিন্তু সন্তানরা অজ্ঞ থেকে যাবে না। তারা হয়তো কোন ভুল মাধ্যম থেকে সেই জ্ঞানটা অর্জন করবে। যারফলে ভুলের পথে চলা সহজ হয়ে যাবে তাদের জন্য। বাবা-মা যেমন আঙ্গুল ধরে সন্তানদেরকে হাঁটতে শেখায়, চলতে চলতে পড়ে গেলে হাত বাড়িয়ে দেয় তাদের সামনে, যাতে আবার উঠে দাঁড়াতে পারে তারা। সন্তানদের মনোজগতেও বাবা-মার অবস্থান এমনটাই হওয়া উচিত। আঙ্গুল ধরে মনের আঁকাবাঁকা, উঁচুনিচু পথে বাবা-মাকেই হতে হবে সন্তানদের পথ প্রদর্শক। যতবার হোঁচট খেয়ে পড়বে সামনে বাড়িয়ে দিতে হবে হাত উঠে দাঁড়াবার জন্য।

কনসেপ্টটা অসাধারণ মনে হয়েছিল আমার কাছে। আসলেই কতই না সুন্দর হতো যদি প্রতিটা সন্তান ভালোবাসাকে জানতো বাবা-মাকে দিয়ে! প্রতিটা সন্তানের জীবনে পড়া প্রথম প্রেমের গল্প হত তাদের বাবা-মাদের জীবনের ভালোবাসার উপাখ্যান। তাহলে শুধু যে ভালোবাসার সঠিক জ্ঞান অর্জিত হতো সেটাই না। সাথে সাথে অর্জিত হতো জীবন-যাপনের নানাবিধ শিক্ষা। সন্তানরা জানতে পারতো জীবনে সুখী হবার পথে করণীয়-বর্জনীয়। এবং সেই আলোকে তারা আলোকিত করে নিতে পারতো তাদের জীবনের পথ। বর্তমানে আমরা এমন একটা সময় পার করছি যা সবদিক থেকে বৈরী আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। তাই এটা সময়ের দাবী হয়ে দাঁড়িয়েছে জীবনের প্রতিটি ধাপের প্রয়োজনীয় শিক্ষা বাবা-মাকেই সকল দ্বিধা-সংকোচ ঝেড়ে ফেলে সন্তানদের সামনে উপস্থাপন করতে হবে।

টিনএজারদেরকে যে কোন ব্যাপারে বোঝানোর ক্ষেত্রে আরেকটা বিষয় খেয়াল রাখা দরকার। সেটি হচ্ছে, ওদের প্রশ্নের জবাবে শরীয়তের বিধান বা কুরআন ও হাদিস থেকে বাছাইকৃত অংশ বলে দেয়াটা আসলে খুব সহজ। কুরআন বা হাদিসের রেফারেন্স শুনে ওরাও হয়তো বেশির ভাগ সময় চুপচাপ মেনে নেয়। কেননা শরিয়তের বিধানের ব্যাপারে দ্বিমতের কোন অবকাশ নেই।কিন্তু এতে প্রায় সময়ই ওদের অনুসন্ধিৎসু মন পুরোপুরিভাবে পরিতৃপ্ত হয় না। কারন সমাধান পেলেও মনের খোঁড়াক পায় না যথাযথ। তাই ইসলামিক ভাবে সমস্যার সমাধান দেবার সময় প্রথমেই খুঁজে বের করতে হবে কোন উৎস থেকে এই চিন্তাটা বা প্রশ্নটা ওদের মনে জেগেছে। অতঃপর প্রাসংগিক আলোচনা কোনদিকে প্রভাবিত হবে সেটা নির্ধারিত করে নিয়ে সেই আলোকে বিশ্লেষণ করতে হবে পুরো বিষয়টাকে। এবং সবশেষে মন্তব্যে কুরআন বা হাদিসের রেফারেন্স দিয়ে বুঝিয়ে দিতে হবে।

 

যে সব মেয়েরা রোজা রাখতে পারেনা তারা কিভাবে লাইলাতুল কদর পালন করবে?

বিশেষ সংখ্যা 


উমর সুলায়মানঃ

আমরা একটা প্রশ্ন পেয়েছি যে, যদি কোন মেয়ে রোজা করতে না পারে তবে সে কিভাবে রমজান মাসের সর্বোচ্চ উপকার পেতে পারে? এমন অনেক বোনেরা আছেন যারা আমার সামনে এসে এই বলে কেঁদে ফেলেছেন যে, রমজানের শেষ ১০ রাত এসে গেছে কিন্তু আমি রোজা করতে পারবো না, নামাজ পড়তে পারবো না। শেষ ১০ রাতের মধ্যে লায়লাতুল কদর, কিন্তু আমি রোজা করতে পারবোনা, নামায পড়তে পারবো না। একটা হাদীস আছে যেটা আপনাকে অনেক আশাবাদী করে তুলতে পারে। প্রথমটি হল, মহানবী (সাঃ) বলেছেন, কেউ যদি অসুস্থ্য হয়ে পরে। কিয়াসের মাধ্যমে উলামারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, কোন মেয়ে যে রোজা করতে পারছে না তাকে সাময়িকভাবে অসুস্থ্য মানুষের সমতুল্য মনে করা যাবে। মহানবী (সাঃ)বলেছেন, “কেউ যদি অসুস্থ্য হয়ে পরে বা সফরে থাকে এবং একারণে তারা সাধারণত যেই ইবাদত করত সেটা মিস করে ফেলে। সেক্ষেত্রে আল্লাহ সুবহানাওয়াতাআলা তাদের নামে এই ইবাদতের সওয়াব পুরোপুরি লিখে দেন”। আল বুখারীতে এই হাদিসটি এসেছে। আল্লাহর কি রহমত! আল্লাহ যদি জানেন যে, আপনি নামায পড়তেন এবং আপনার সেই আকাঙ্ক্ষা ও প্রয়োজন আছে তবে আল্লাহ সুবহানাওয়াতাআলা সেটা লিখে দিবেন। তবে সেটা আপনার স্ট্যান্ডার্ডে নয়, তাঁর স্ট্যান্ডার্ডে। যাই ঘটুক না কেন আপনি পুরো পুরস্কারই পাবেন। এটা হল এক নাম্বার কথা।

দুই নাম্বার হল, তখনো কুর’আন পাঠ করা। এই অবস্থায় কুর’আন পাঠ করা ফিক্‌হের এক দীর্ঘ আলোচনার বিষয়। আবু হুরায়রা (রাঃ) একদা জানাবাহ অবস্থায় ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁকে বলেছিলেন যে, সুবহানাল্লাহ! “মু’মিন, যে বিশ্বাসী, সে কখনো সত্যিকারের অপবিত্র হয় না”। ঠিক আছে? সে কখনো অপবিত্র হয় না। সহীহ মুসলিমে দীর্ঘ হাদীস আছে, সেখানে ইহুদীদের, বিশেষত গোঁড়া ইহুদীদের কথা বলা হয়েছে। হাদীসের বর্ণনা থেকে আমরা জানতে পারি যে, তারা ছিলেন বনু কুরায়দার কিছু গোঁড়া ইহুদী। তাদের মধ্যকার কোন মেয়ের মাসিকের সময়টাতে তারা সেই মেয়েকে পুরোপুরি পরিত্যক্ত করতো। তাকে বাসাতে ঘুমাতে পর্যন্ত দেয়া হত না। সুবহানাল্লাহ! তার সাথে এমন ব্যবহার করা হত যেন সে ভুল কিছু করছে। আল্লাহ সুবহানাওয়াতাআলা নাযিল করলেন- فَاعْتَزِلُواْ النِّسَا “রজঃস্রাবকালে স্ত্রী-সংগম বর্জন করবে”(সূরা বাকারাহঃ ২২২)। মহানবী (সাঃ) বলেছেন, এটা দ্বারা এটাই বোঝানো হয়েছে যে, সে সময় স্ত্রীদের সাথে পুরোপুরি ঘনিষ্ট না হতে। মহানবী (সাঃ)আমাদের উদাহরণ দেখিয়েছেন সেই অবস্থায় কিভাবে আয়েশা (রাঃ) এর সাথে মেলামেশা করতেন সেটার মাধ্যমে । মদীনার ইহুদীরা মহানবী (সাঃ) এর সমালোচনা করে বলতো যে, “তিঁনি এক্ষেত্রেও আমাদের থেকে আলাদা”। এর অর্থ হল, আমরা ব্যাপারটাকে এভাবে দেখিনা যে একজন মু’মিন সেসময় অপবিত্র হয়ে যায়। এসময় তাদের যে কাজটি করতে পুরোপুরি মানা সেটা হল মুসহাফ স্পর্শ করা। একারণে নয় যে সে অপবিত্র। একারণে যে মুসহাফ (কুরআন) ধরতে অজু করা প্রয়োজন। মুসহাফ ধরার জন্য, কুর’আনের শব্দগুলোকে ধরার জন্য গৌণ ধরণের পবিত্রতার প্রয়োজন হয়। আর একজন মেয়ে এই অবস্থায় এটা করতে পারে না। আধ্যাত্মিকভাবে সে পবিত্র থাকে। একজন মু’মিন কখনও অপবিত্র হয় না। যতটুকু যিকির, দু’আ করা সম্ভব তারা সেটা করতে পারবে। আইপ্যাড ব্যবহারের ক্ষেত্রে ঊলামারা বলেছেন, আপনি যখন আইপ্যাড ধরে আছেন তখন আপনি একটা ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র ধরে আছেন। সেই মুহূর্তে একটা মুসহাফের ক্ষেত্রে যে নিয়ম এটার ক্ষেত্রেও একই নিয়ম।এ্যাপে এমন উপায় থাকে যে শব্দকে স্পর্শ না করে পাতা উল্টানো যায়। ফিক্‌হ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে সেই মুহূর্তে আইপ্যাডটা মুসহাফের কাজ করে। সেই মুহূর্তে এটা মুসহাফ। তারপরেও, মেয়েরা সেটাকে ধরতে পারে এবং পড়তে পারে। খেয়াল রাখতে হবে শব্দগুলোকে না ধরার ব্যাপারে। সেটার জন্য পবিত্রতার দরকার হয়। এটা ধরার জন্য এক ধরণের পবিত্রতা দরকার হয়। আমি বোঝাতে চাচ্ছি, বিভিন্ন ধরণের মতামত আছে। ফিক্‌হ দৃষ্টিকোণ থেকে সেটা আলোচনা করতে গেলে অনেক দীর্ঘ হয়ে যাবে।

তবুও এটা বলা যায় যে, যিকির করা, দু’আ, কুর’আন পাঠ করা যাবে। আল্লাহর কাছে “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা ‘আফুওউন তু’হিব্বুল ‘আফ্‌ওয়া ফা’ফু ‘আন্নী” এই দু’আ করা যাবে। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে দু’আ করা। এই সব করলেও কিন্তু কম নয়। এটা করলেও আল্লাহ লিখে রাখবেন যে আপনি সেই রাতে ইবাদত করেছেন কারণ আপনি অন্তত এতটুকু করেছেন।

নুমান আলী খানঃ

আসসালামুআলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আমি একবার দারুস সালামে গিয়েছিলাম এবং সেখানকার ইমামকে একই প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিঁনি বোনদেরকে খুব সুন্দর একটা উত্তর দিয়েছিলেন। আমি আপনাদেকে আজ সেটা উত্তরটাই জানাতে চাই। তিঁনি বলেছিলেন, “এই অবস্থায় মেয়েরা নামায পড়তে পারেনা এবং বিশেষ কিছু কাজ করতে পারে না। তাদেরকে কিছু কাজ করতে মানা করা আছে। তার সেই কাজগুলো না করাই আসলে এক ধরণের ইবাদত। এই পুরো সময়ে মেয়েটা যখন ঘুমাচ্ছে এবং জেগে আছে পুরোটাই ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। অন্যসময়ে সাধারণত যে ইবাদত সে করত, এই সময়ে তার সেই ইবাদত না করাই আসলে সারাক্ষণ, সবসময় ইবাদতের সমতুল্য।

সুবহানাল্লাহ! উপরন্ত সে সুস্থ্য থাকলে, পুরোপুরি পবিত্র থাকলে ইবাদত করত তাই সেটা তো লেখা হবেই”। সুবহানাল্লাহ! (মজা করে বললেন) মনে হয় যেন মেয়েদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে। হা, হা, হা।

সংগ্রহ: nouman ali khan collection in bangla থেকে।

 

‘আম্মু বলেই ডাকি’

ডা. সাকলায়েন রাসেল


এই নারী বয়সে আমার প্রায় ১৭ বছর বড়! প্রথম যেদিন তিনি মা হন। সেদিন আমি প্রথম পৃথিবীতে আসি। সেদিন ছিল সোমবার, ৯ নভেম্বর…।

আমার প্রথম জন্মদিন, তাঁর প্রথম মা হওয়ার দিন! বছর ঘুরে ৯ নভেম্বর আসে…।
মা মুচকি হাসে, চোখে আনন্দ নাচে, বয়স হয়ে গেছে আমার…।বয়স হয়েছে তাঁরও…।

কিন্তু পার্থক্যটা রয়ে গেছে সেই ১৭ তেই! আমি তাই আটকে আছি সেই কৈশোরে..আম্মু বলেই ডাকি…অনেকে মুচকি হাসে…বুড়া ছেলে মা কে এখনো আম্মু ডাকে!!
ক্যামনে বোঝাই তাদের…পার্থক্যটা যে এখনো সেই ১৭ তে! তাই থাকবে শেষ দিন পর্যন্ত! জন্মদিন এলে তাই আগের মত কম বয়সী উচ্ছ্বাস দেখায় না মা। বলতে পারে না হালের সুরে…হ্যাপি বার্ডে বাবা!

জন্মদিন এলে তাই যেনতেন ভাবে বলে…আরে! তোর না আজ জন্মদিন!
ভাবখানা এমন যেন ভুলেই গিয়েছিল। একটু আগে মনে পড়ল!
অথচ টেবিলে বসলে…মিস নাই…। ছেলের জন্য ভালোমন্দ কত আয়োজন! উপলক্ষ জন্মদিন!

মিস হয়ে গেল শুধু এবার…৯ নভেম্বর!
ভাইরাল ইনফেকশন ও এর নানা জটিলতায় কয়েক ঘন্টার মধ্যেই শয্যাশায়ী মা। বিকালের দিকে শুধু চোখ মেলে ফ্যালফ্যাল করে বললেন, ‘তোর জন্মদিনে এবার কিছুই করতে পারলাম না বাবা!’
আমিও চাইনি আম্মু কিছু করুক। শুধু চেয়েছি তাঁর রিপোর্টগুলো ভাল আসুক। চোখ মেলে তাকালে, এলোমেলো কথাগুলো সাজিয়ে উঠুক। আমার বুকের ধড়পড় ভাবটা একটু স্বাভাবিক হোক!
সেদিন থেকেই অপেক্ষায় আছি…মা সুস্থ হয়ে একবার হাসিমুখে তাকাবে! আজো সেই ক্ষণটা এলো না!

গত ৪৮ ঘন্টা হাসপাতালেই আছি…। এমন অপেক্ষায় থাকে অনেক সন্তানেরা।
প্রতিদিনই দেখি…কাল ছিলে তুমি, আজ আমি…কাল হয়ত সে!

পার্থক্য শুধু…মা আছেন আমারই আঙ্গিনায়…কিংবা আমি আছি তাঁর আঁচলে! ইব্রাহিম কার্ডিয়াকে!

আজ এন্ডোক্রাইন, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট, মেডিসিন, নেফ্রোলজিস্ট, কার্ডিওলজিস্ট সবাই মাকে দেখেছেন..ভাল আশ্বাস শুনিয়েছেন।

তবুও মন অস্থির…কতোক্ষণে বাসায় যাব! মাকে নিয়ে…সেখানে যে আরেক মা আছে! মা ডাকতে ডাকতে অনেক সময় মনেই হয় না-নাম তার আরিবা!
আরিবা…আমার ৫ বছরের বুড়িমা…আমার সবটুকু কোলাহল!

সহকারী অধ্যাপক, ভাসকুলার সার্জারী
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক, বারডেম

 

দাম্পত্য জীবন: স্বামী-স্ত্রীর রাগারাগি এবং স্বামীকে বা স্ত্রীকে কেন ক্ষমা করবেন?

দাম্পত্য জীবন:
স্বামী-স্ত্রীর রাগারাগি এবং স্বামীকে বা স্ত্রীকে কেন ক্ষমা করবেন?

মোহাম্মদ জামাল উদ্দীন

শাশুর-শাশুড়ির সেবা করতে বললে, বেশী দিন বাপের বাড়িতে থাকতে নিষেধ করলে, পকেট থেকে চাহিবামাত্র অর্থ বের করে দিতে না পারলে, সেজেগুজে বেপর্দা হয়ে ঘরের বাইরে চলাফেরা করতে নিষেধ করলে, মা-বাবার অনুমতি ছাড়া বাসার বাইরে যেতে নিষেধ করলে, স্ত্রীর কথামতো ও শাশুরবাড়ির পরামর্শ মত না চললে, হিন্দী চ্যানেল দেখা থেকে বিরত থাকতে বললে, ছোট ভাইকে চাকরী ব্যবস্থা করে দিতে না পারলে, বেশী রাত করে বাসায় ফিরলে, সিগারেট খেতে দেখলে, অসৎ পথে হলেও বেশী অর্থ উপার্জনের জন্য চাপ সৃষ্টি করলে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে দেখলে, নিজের মা-বাবার বিরুদ্ধে উল্টাপাল্টা কথা বললে, বোনেরা বেড়াতে আসলে স্ত্রী মুখ কালো করে থাকলে, ভাই-বোন-ভাবীদের সাথে ঝগড়া করলে, বাসায় অপরিস্কার-অপরিচ্ছন্ন করে রাখলে, বাবা-মায়ের সামনে সন্তানদেরকে মারপিট করতে দেখলে, পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে গ্যাঞ্জাম সৃষ্টি করতে চাইলে। যৌথ পরিবারের সুখের সংসার থেকে বের হয়ে আলাদা হয়ে বসবাস করার জন্য বাধ্য করলে।

আরো অনেক কারণে স্বামী-স্ত্রী রাগ করে থাকে। এই রাগারাগি থেকে অনেক সময় দীর্ঘদিন পর্যন্ত দুজন কথা বলা থেকে বিরত থাকে। রাগারাগির কারনে স্বামী-স্ত্রীর মধুর সম্পর্কে ফাটল ধরে। রাগারাগি চরম পর্যায়ে পৌছে গেলে অনেক সময় ছাড়াছাড়িও হয়ে থাকে। তাই বলি কি, দুই দিনের এই দুনিয়ায় বেশী রাগারাগি না করে সবকিছু হাসি-মুখে মেনে নিয়ে একটু ত্যাগ স্বীকার করে সংসার করলে সেই সংসার সুখের হয়, শান্তির হয়।

আরও একটি বিষয়,

দাম্পত্য জীবনঃ স্বামীকে বা স্ত্রীকে কেন ক্ষমা করবেন?

দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়েই থাকে। ঝগড়ার এক পর্যায়ে রাগ করে স্বামী-স্ত্রী দুজনে কিছু কিছু বাক্য বিনিময় করে।

এই যেমন,

“আমি তোমাকে আর ক্ষমা করবো না”, বা
“আমার পক্ষে তোমার সঙ্গে আর সম্পর্ক রাখা সম্ভব না”, বা “জীবনেও আমি তোমাকে ক্ষমা করবো না”, বা “এটা আমার পক্ষে কোনোভাবেই মেনে নেওয়া সম্ভব না”…ইত্যাদি, ইত্যাদি।

মনে রাখতে হবে যখনই আপনি “পারবো না”, “করবো না”, “মানবো না”, “মানা সম্ভব না”, “ক্ষমা করবো না”— এই জাতীয় শব্দগুলো ব্যবহার করেন, তখন এক অর্থে আপনার অক্ষমতাই প্রকাশ পায়। অর্থাৎ আপনার আর ক্ষমতা নেই মাপ করার বা মেনে নেওয়ার।

কিন্তু মহান আল্লাহর এক অন্যতম গুণ হচ্ছে ক্ষমা। এই ক্ষমা যদি আমরা করতে পারি তাহলে কিন্তু ক্ষমতা আবার প্রথম থেকে শুরু হয়ে যায় এবং ক্রমাগত ক্ষমা ক্রমাগত ক্ষমতার আধার। এটাই মহান আল্লাহর রীতি। তাই আসুন হে বিবাহিত ভাই-বোন, দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রী মিলেমিশে পরিবারের সবাইকে নিয়ে একটি সুন্দর সংসার সাজান। দুজনের ছোট-খাট ভুলগুলি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখুন। কোন বড় ভুল হয়ে থাকলে অবশ্যই পরিবারের মুরব্বীদের পরামর্শ নিয়ে সমাধান করুন। (সুত্রঃ সিটিজি৪বিডি এর ব্লগ)

 

‘কদর রাত’

আমিনুল ইসলাম


মাহে রমজান যাচ্ছে চলে
কদর খুঁজি শুধু,
না পেলে হায় জীবন হবে
শুকনো মরু ধূ ধূ।
ভাগ্য আমার বদলে যাবে
পেলে কদর রাত,
জীবন হবে রঙিন রঙিন
থাকবে না জুলমাত।

 

গল্পে গল্পে বাবুদের শেখানো

কানিজ ফাতিমা


বাচ্চারা উপদেশ অপছন্দ করে, আর গল্প শুনতে ভালোবাসে। গল্প ব্যবহার করে আপনার শিশুকে দিতে পারেন প্রয়োজনীয় উপদেশ –

লিমার প্রতিজ্ঞা

লিমার ক্লাসে একটা মজার ইভেন্ট হতে যাচ্ছে। শুক্রবার সবাই তাদের প্রিয় খেলনা ক্লাসের সবাইকে দেখতে পারবে। লিমা গত মাসেই খালামনির কাছ থেকে একটা মজার খেলনা উপহার পেয়েছে – পেট ক্যাট। ক্যাটটা খুবই মজার, মজার সব কান্ড করে। কেউ হাতে তালি দিলে সে তার দিকে এগিয়ে যায়, কখনো খেতে চায়. কখনো ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরে। আনন্দ পেলে তার চোখ হলুদ হয়ে জ্বলতে থাকে, আর দুঃখ পেলে চোখ নীল হয়ে যায়। লিমা একটুও অপেক্ষা করতে পারছে না, শুক্রবার আর কতদিন পরে আসবে? উহ – এতো দিন লাগছে কেন? সে জানে সবাই তার খেলনা টা পছন্দ করবেই আর সেটা হবে ক্লাসে সবার সেরা খেলনা। লিমা তার খেলনা একটা সুন্দর ব্যাগে যত্ন করে গুছিয়ে রাখলো যাতে শুক্রবার সে সেটা নিতে ভুলে না যায়।

বৃহস্পতিবার লিমার প্রিয় কাজিন ফারিহা বেড়াতে এসেছে তাদের বাসায়। লিমা খুবই খুশী। সারা বিকাল ওরা দুজন খেলা করে কাটিয়ে দিলো।

সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ শেষে ওরা গল্প করতে বসলো। লিমা ওর স্কুলে কাল যে ইভেন্ট আছে সেটা ফারিহাকে বললো।
লিমা: জানো, কাল আমাদের ক্লাসে শেয়ার এন্ড টেল হবে। টিচার বলেছে আমরা আমাদের প্রিয় খেলনা নিয়ে যেতে পারবো। যার খেলনা বেশী ছেলে-মেয়েরা পছন্দ করবে তার খেলনা সেরা হবে। আমি আমার পেট ক্যাট নিয়ে যাবো।
ফারিহা : দেখিতো তোমার পেট ক্যাট?

ফারিহা আর লিমা পেট ক্যাট টা নিয়ে অনেক্ষন খেললো।

মামনি পাশের রুম থেকে বললেন, ” তোমরা এশার নামাজ পরে ঘুমিয়ে পড়ো। কাল সকালে উঠতে হবে, নামাজ পড়তে হবে আর স্কুলের জন্য রেডী হতে হবে”

“ঠিক আছে, মামনি” লিমা বললো।
কিন্তু তারা ভাবলো আর একটু খেললে কোনো ক্ষত নেই। তাই তারা আবার খেলা করতে লাগলো।

খেলতে খেলতে কখন যে রাট দশটা বেজে গেলো খেয়ালি করেনি ওরা। মামনি বিছানায় যাবার আগে প্রতিদিন লিমার ঘর চেক করে যায়। আজ এসে সে দেখলো লিমা আর ফারিহা এখনো খেলছে।

মামনি অসন্তুষ্ট হলেন, কিন্তু খুব রাগ করলেননা। ” তোমাদের কথা ছিল এক ঘন্টা আগে বিছনায় যাবার। আমি দেখতে পাচ্ছি এখনো তোমরা খেলছো। তোমরা কি নামাজ শেষ করেছো ?”

লিমা আর ফারিহা লজ্জা পেলো। কিন্তু মায়ের কাছে সেটা না বলে বললো ” এইতো পড়ছি”

মামনি এবার সত্যি রাগ হলেন। “তোমরা এখনই নামাজ পড়বে ও ঘুমাতে যাবে। আমি খুবই অসন্তুষ্ট হয়েছি ” – বলে মামনি বেরিয়ে গেলেন।

ফারিহা আর লিমা নামাজ সেরে বিছানায় আসলো। কিন্তু না ধুমিয়ে তারা গল্প শুরু করে দিলো।

লিমা – মামনি, মাঝে মাঝে খুব বিরক্ত করে, সব কিছু সময় মতো করতে বলে। সবসময় এসব ভালো লাগে না। ”
ফারিহা – আমার আম্মুও এরকম। সব মায়েরাই একই রকম।
লিমা – ‘এখন খাবার সময় খেতে আসো, এখন পড়ার সময়, এখন ঘুমানোর সময়
ফারিহা’ – একটু রাত করে ঘুমালে কি হয় ?
লিমা – আম্মু বলে রাত করে ঘুমালে সকালে ওঠা যায় না। আর সকালে না উঠতে পারলে দিন সুন্দর করে শুরু করা যায় না, পুরো দিনটাই এলোমেলো হয়ে যায়।
ফারিহা – আমার মনে হয়না একটু রাত জাগলে এত সমস্যা হবে –

লিমা, ফারিহা এভাবে কথা বলতে বলতে অনেক রাত হয়ে গেলো ঘুমাতে।

পরের দিন সকালে লিমার মনে হলো মামনি তাকে অনেক দূর থেকে ডাকছে।
– লিমা, তুমি এখনো উঠোনি, স্কুলে দেরী হয়ে যাচ্ছে, তুমি ফজরের নামাজও পড়োনি। লিমা ওঠো , চোখ খোলো

লিমার মনে হচ্ছে অনেক দূর থেকে মায়ের গলা ভেসে আসছে। লিমা চোখ খুলে দেখলো মা তার ওপরে ঝুকে আছেন, ওকে জাগানোর চেষ্টা করছেন।
‘সেই কখন থেকে ডাকছি, তাড়াতাড়ি ওঠো – স্কুলে দেরী হয়ে যাচ্ছে -‘

লিমা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো অনেক বেজে গেছে –
বাথরুমের দিকে দৌড়াতে দৌড়াতে বললো ” আমাকে আগে ডাকোনি কেন ”
” আমি তোমাকে ডেকে দিয়ে রান্না ঘরে গিয়েছি নাস্তা রেডি করতে, এসে দেখি তুমি তখনও ওঠোনি – তাড়াতাড়ি নামাজ পরে রেডি হয়ে নাও ”

লিমা কোনো রকম বাথরুম সেরে নামাজ পরে রেডি হয়েই বেরিয়ে গেলো। ওর নাস্তা খাওয়ার সময় আর হলোনা।

স্কুলে গিয়ে লিমার শরীর খারাপ লাগলে শুরু করলো। খুব ঘুম পাচ্ছিলো। টিচার কি পড়ালো সে কিছুই বুঝলো না। সেকেন্ড পিরিয়ডে ওর মাথা ঘুরাতে লাগলো আর বমি লাগলো।

টিচার জিজ্ঞাসা করলেন , ” লিমা, তুমি কি অসুস্থ?”
“না, টিচার ”
পরের পিরিয়ডে লিমার পেটে ব্যাথা শুরু হলো। টিচার তাকে ক্লাসের পাশে নিয়ে সিক বেড়ে শুইয়ে দিলেন।
” আজ সকালে কি দিয়ে নাস্তা করেছো লিমা?- টিচার জিজ্ঞাসা করলেন।
” নাস্তা করিনি”
“কাল রাতে ভালো ঘুম হয়েছে ? তোমাদের বয়সে ৮ ঘন্টা ঘুম হয় জরুরী”
লিমা কিছু বললো না, সে তার ভুল বুজতে পারলো। তার নিজের কার্যকারিতার জন্য তার লজ্জা লাগছিলো।
টিচার তার লাঞ্চপ্যাক থেকে স্নাকস বেরকরে ওকে খেতে বললেন।
“কম ঘুম আর সকালে নাস্তা না খাওয়ার জন্য এমনটা হয়েছে। ইটা খেয়ে নাও আর একটু শুয়ে থাকো , দেখবে ভালো লাগবে ইনশাআল্লাহ। ”

সত্যিই কিছুক্ষনের মধ্যেই লিমার ভালো লাগতে শুরু করলো। লিমা উঠে গিয়ে তার ক্লাসে বসলো।
লিমার ভাগ্য খুব ভালো, সে শেয়ার এন্ড টেল শুরু হবার আগেই ক্লাসে এসেছে।
“তোমার তোমাদের পছন্দের খেলনা নিয়ে রেডি হও। আমরা এখন শেয়ার এন্ড টেল শুরু করবো ”

সবাই তাদের ব্যাকপ্যাক থেকে নিজ নিজ খেলনা বের করে ডেস্কে রাখলো। লিমাও তার ব্যাকপ্যাকের দিকে এগিয়ে গেলো – তার প্রিয় পেট ক্যাট বের করে আনতে।
লিমা ব্যাগ খুলে খেলনাটা দেখতে পেলোনা।
নিশ্চয়ই বইয়ের পেছনে আছে – লিমা ভাবলো
নাহ – ওখানেও নেই
লিমার দুশ্চিন্তা হতে শুরু করলো – তবে কি ?

লিমার এবার মনে পড়লো – কাল রাতে সে ফারিহার সঙ্গে খেলার পর ব্যাগে ওটা ঢুকাতে ভুলে গেছে। গল্প করতে করতে সে ভুলেই গিয়েছিলো যে তাকে স্কুলের ব্যাগ আগের রাতে গুছিয়ে রাখতে হবে। সকালে দেরী করে ওঠার জন্য সে ঠিকভাবে সব কিছু চেক করতে পারেনি – তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে পড়তে হয়েছে।

লিমার চোখে পানি চলে আসলো, সে উঠে গিয়ে ধীরে ধীরে নিজে ডেস্কে গিয়ে বসলো –
আম্মু ঠিকই বলেছে, রাত জেগে থাকলে পরের দিনটা একেবারে এলোমেলো হয়ে যায়। ঠিক সময়ে ঘুমাতে যাওয়া আর স্কুলে আসার আগে সময় নিয়ে প্রিপারেশন নেয়া খুবই জরুরী। লিমার খুব মন খারাপ লাগছে – আর কোনোদিন সে এমনটা করবেনা।

গল্প শেষে:
গল্প শেষে আপনি আলোচনা করতে পারেন গল্পের শিক্ষা নিয়ে। প্রশ্ন করুন –
১. লিমা কেন সকালে উঠতে দেরী করলো ?
২. এতে তার কি কি সমস্যা হয়েছিল?
৩. তোমার কোনো বন্ধু বেড়াতে এলে তুমি কি কি করতে চাও?
৪. বন্ধুর সঙ্গে মজা করার সময় কি কি বিষয়ে খেয়াল রাখা দরকার?
৫. প্রস্তুতি বলতে কি বুঝায়? কি কি ভাবে আমরা প্রস্তুতি নিতে পারি? কয়েকটা উদাহরণ দাও –
৬. স্কুলে যাবার আগে কি কি প্রস্তুতি নেয়া দরকার? সেজন্য কত সময় প্রয়োজন ?
৭. রাতে ঘুমাতে যাবার আগে কি কি প্রস্তুতি নেয়া জরুরী?

 

মাহে রমজানে সবাইকে স্বাগতম!

প্রবাসী মজুমদার


এসেছে রমজান সাজিয়ে গগন
নেমেছে ধরায় আষাঢ় ও শ্রাবণ,
ধুয়ে মুছে যেতে জীবনের গ্লানি
সিয়াম সাধনায় গড়িতে জীবন।

ভেঙ্গে দিয়ে সব জটের অনিয়ম
শৃঙ্খলে আবার বাঁধিব নিজেকে
সকাল বিকেল নিশীথে জেগে
সেজদায় লুটাব প্রভুর বিধিতে।

খুলে দাও তোমার আকাশ দ্বার
ভরে দাও ধরার পাতাল জমিন,
শুধিতে তোমার করে নাও মোকে
রোজায় যেন পাই পরপারে জামিন।

রাহমাত,মাগফেরাত আর নাজাতের সওগাত নিয়ে আবারও শুরু হয়েছে নিজেকে পরিশুদ্ধি করার মাসিক কর্মশালা – মাহে রমজান। সিয়াম সাধনার এক কঠিন অনুশীলনের মধ্য দিয়ে নিজেকে আবারও প্রস্তুত করার এ শুভ যাত্রায় সবাইকে মাহে রমজানের শুভেচ্ছা।

ফেলে আসা জীবনে ‘মাহে রমজানের’ এ প্রশিক্ষণ অসংখ্যবার পেলেও এর শিক্ষা, উদ্দেশ্য এবং অভিষ্ট লক্ষ্য যেন বরাবরের মতই ‘তাঁকে বন্দী কোরানের’ মত অনাদর আর অবহেলার গেলাপে যতন করে রেখে দিয়েছি । রমজানের পুর্বে রেখে আসা কু-অভ্যাস গুলোই বার বার লালন করা যেন জাতিগত অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। শিক্ষা বিমুখ মানুষের মতই নিজেকে মিছে উপোস রেখে যেন আল্লাহর কাছে নিজেকেই তামাশায় পরিণত করেছি।

নীতি নৈতিকতাহীন স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুব্ধ আজ আমরা যেন ধেয়ে আসা উলঙ্গ সভ্যতার সংস্কৃতির হিংস্র স্রোতে ভেসে চলেছি কোন এক অজানার দিকে। তীর হারা জাহেলিয়াতের এ ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে যেন নিজেদের গন্তব্যকে হারিয়ে ফেলেছি জনমের মত।

সৌর্য বীর্য আর খ্যাতিতে কালজয়ী ইতিহাস সৃষ্টিকারী স্রষ্টার অকুতভয় সেই দুঃসাহসী মানুষগুলোর ঈর্ষণীয় কৃতিত্বের দাবীদার এ ‘রমজান’ হোক আমাদের সীসা ঢালা প্রাচীর সম চরিত্র গড়ার অঙ্গীকার। সত্যর পতাকা উড্ডয়নে প্রতিটি নির্যাতিত মুসলমান হোক হিমালয় পাহাড় সম ঈমানের মুর্ত প্রতীক। বরফ গলা সমুদ্রের নোনা পানিতে ধূয়ে মুছে যাক সব অতীতের গ্লানি। আল্লাহর দ্বীনকে বুকে ধারণ করার মাধ্যমে প্রতিটি হৃদয় হোক প্রশান্ত মহাসাগরের মত উদার। আখেরাতে জান্নাতের প্লট এবং ফ্লাট পাওয়ার প্রত্যাশায় দুনিয়ার প্রতিটি জনপদ হোক দায়ীদের একচ্ছত্র বিচরণ ভূমি। কাবার মিনার থেকে ভেসে আসা আজান ইথারে ভেসে ভেসে আঘাত হানুক প্রতিটি ঘুমন্ত নামধারী আর অবিশ্বাসীর কর্ণকুহরে। আকাশ বাসীদের পদচারণায় বছরের প্রতি মাস হোক মাহে রমজানের মত বরকতময়।

কলমের কালিতে উগলে দেয়া প্রতিটি শব্দ হিরোশিমা আর নাগাসাকির মত অবিশ্বাসীদের বিদ্রোহী মনকে জ্বালিয়ে দিয়ে তৈরী হোক ভ্রাতৃত্ব বোধ আর সহমর্মিতায় ভরা এক নতুন বিশ্ব –
এ প্রত্যাশায়।

প্রবাসী মজুমদার
জেদ্দা, সৌদি আরব।

 

মাক্সিম গোর্কির ‘মা’: শ্রমিকের অধিকার

নাজমুল হক


‘হ্যাঁরে, এমনি করে যদি মদ খাস, আমায় খাওয়াবী কী করে বল তো?
চোখ সেঁটে বন্ধ করে জবাব দেয় পাভেল:
‘সব্বাই তো মদ খায়….
মায়ের দীর্ঘশ্বাস পড়ে। ঠিকই তো বলছে। ও নিজে তো জানে, এক ওই শুড়িখানায়ই যা হোক ছিটেফোটা সুখের সোয়াদ পায় মানুষগুলো।

তবু বলে, ‘তাই বলে তুই মদ ধরিস নি, বাবা। তোর বাপ তো অনেক খেয়ে গিয়েছে। তার হাতে আমার দশাটা দেখেছিস তো…. তুইও আমার মুখের দিকে চাইবি না?’

গাল বেয়ে চোখের জল গড়িয়ে পড়ে মায়ের।
ছেলে আস্তে আস্তে বলল, ‘কেঁদো না মা। একটু জল দাও।’
‘দাঁড়া, বরফ দিয়ে জল নিয়ে আসি…..’

বই নিয়ে আসতে লাগলো পাভেল্ বাড়িতে। লুকিয়ে লুকিয়ে পড়ে। পড়া শেষ হলে লুকিয়ে রেখে দেয়। মাঝে মাঝে কি সব যেন টোকে বই থেকে। তাও লুকিয়ে রাখে।…….

‘এই শুধোচ্ছিলাম, মুখ গুঁজে এ সব কী পড়িস তুই!’ আস্তে আস্তে জিজ্ঞাসা করে।
বই বন্ধ করে পাভেল্ বলে, ‘বস মা।….’
‘এই যেসব বই পড়ছি দেখছ, এসব পড়া নিষেধ। আমরা যারা খেটেখুটে খাই তাদের সম্বন্ধে সব সত্যি কথা লেখা আছে কিনা, তাই পড়া নিষেধ এসব বই।… এগুলো গোপনে ছাপা হয়। এসবের খবর পেলেই আমাকে টেনে নিয়ে জেলে পুরবে।
হাঠাৎ যেন নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে মায়ের। জিজ্ঞাসা করে, ‘আচ্ছা খোকা, তা হলে এসব পড়িস কেন?’
‘ভাব তো মা’, পাভেল্ বলে চলল, ‘কী জীবন আমাদের এখানে? তোমর বয়স চল্লিশ, তুমি কি সত্যি করে বেঁচেছ? বাবার মার খেয়েছ-এখন আমি বুঝি কেন তোমায় বাবা মারত। নিজে নরক ভোগ করেছে, তার শোধ তুলেছে তোমার উপর। কষ্ট পেয়েছে, অসহ্য মনে হয়েছে; কিন্তু কখনও বোঝেছে কেন এমন হয়। বাবা এই কারখানায় কাজ করেছে ত্রিশ বছর। শুরু করেছিল সেই যখন মোটে দুটো বাড়ি নিয়ে। সেই জায়গায় এখন সাতটা।’
‘কোন দিন একটুকু আনন্দ পেয়েছ, মা? মনে করে রাখার মত কী ছিল তোমার জীবনে?’
মা- ‘কী করতে চাস এখন?’
পাভেল্ বলে- ‘প্রথমে নিজের পড়াশোনা। তারপর অন্যদের। আমাদের শ্রমিকদের পড়তে হবে, জানতে হবে আমাদের জীবনে এতো কষ্ট কেন?’
মা ভাবে ছেলের মাঝে কত পরিবর্তন! কি বুদ্ধিদীপ্ত।

মায়ের চোখের সামনে সব অন্ধকার…. বোঁ-বোঁ করে ঘুরছে সব। সকল অবসাদ ঝেড়ে ফেলে যেটুকু শক্তি বাকি ছিল, তাই দিয়ে চিৎকার করে জড় হওয়া হাজার হাজার মানুষের উদ্যেশে বলে:
‘এক হও, এক হও, সব মানুষ এক হয়ে এক বিরাট শক্তি গড়ে তোল!’
একজন পুলিশ থাবা দিয়ে কলার ধরে মাকে ঝাঁকুনি দিয়ে বলে- ‘চোপরাও!’
মা বলে- ‘কিছুতেই ভয় পেও না।
আর বেশি কী ভয়ঙ্কর আছে বলতো?
যে জীবন তোমরা কাটাচ্ছ তার চাইতে?’
‘মুখ বন্ধ করলি’ এই বলে হ্যাঁচকা টানে মাকে নিয়ে চলে পুলিশ।

এটি ছিল মাক্সিম গোর্কির ‘মা’ উপন্যাসের কিছু অংশ।

কত টুকু অধিকার শ্রমিক পেয়েছে জানিনা। তবে মে দিবস ও শ্রমিককে পুজি করে আনেক সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তার উদাহারন আমাদের আশেপাশে অনেক।

আমি তখন ছোট। ১৯৯৩ সালে মে দিবসের শ্রমিক সমাবেশ শেষে আমাদের কাপড়ের দোকানের কারিগর মালেক ভাই দুপুর ৩টায় দোকানে এলে বললাম কি খবর ভাই- মুখ শুকনা কেন? মন খারাপ কেন?

আর বলো না একটা বাজে গালি দিয়ে বলল- ‘কেউ খাবে, কউ খাবে না’ এই শ্লোগান দিয়ে নেতারা ৪/৫টা করে খাবার প্যাকেট নিলো আর আমরা সারা দিন না খেয়ে রোদে মিছিল করে এক প্যাকেটও পেলাম না। আর জীবনে এই সব সমাবেশে যাব না।

মালেক ভাই না গেলেও অনেকেই এখন যায়। শ্লোগান দেয় দুনিয়ার মজদুর এক হও। এলাকার অনেকেই শ্রমিক মালেকদের সমনেই আজ অনেক সম্পদ ও ক্ষমতার মালিক এই মে দিবস ও মালেকদের পুঁজি করে। কত মে দিবস আসে যায় ভাগ্য বদলায় না শুধু মালেকদের।

 

ফলের খোসা দিয়ে রূপচর্চা

লাইফস্টাইল


ফলে রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টিগুণ তেমনি ফলের পাশাপাশি ফলের খোসাতেও রয়েছে পুষ্টি। সুতরাং রূপচর্চায় ফলের খোসা ব্যবহার করা যেতে পারে।

কি উপকার হবে
দাগ দূর করে,
ত্বকের উজ্জ্বলতা ও
মসৃণ ও সুন্দর করে তোলে।

কিভাবে ব্যবহার করবেন
কিছু ফলের খোসা সরাসরিই ব্যবহার করা যায়। যেমন, লেবু। কিছু আবার গুঁড়া করে সংরক্ষণ করেও ব্যবহার করা হয়। যেমন, কমলার খোসা।

কি কি ফলের খোসা ব্যবহার করবেন ত্বকের উজ্জ্বলতার জন্য

কলার খোসা
সরাসরি ত্বকে ঘষুন। সপ্তাহ দুয়েক নিয়মিত ঘষলে ত্বকের জৌলুস বাড়বে।

কমলার খোসা
ত্বক উজ্জ্বল করতে কমলার খোসার গুঁড়া ব্যবহার করতে পারেন বিভিন্ন ফেসপ্যাকে।

পেঁপের খোসা
ত্বক প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল করতে পেঁপের খোসা অতুলনীয়। সরাসরি ত্বকে ঘষে লাগান পেঁপের খোসা।

আপেলের খোসা
আপেলের খোসা পানিতে ফুটিয়ে নরম করে মুখ ও গলার ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন। এটি বাড়াবে ত্বকের জৌলুস।

লেবুর খোসা
লেবুর খোসাও ব্যবহার করতে পারেন রূপচর্চায়। এজন্য লেবুর খোসা শুকিয়ে গুঁড়া করে নিন।

বিভিন্ন ফেসপ্যাকের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করুন ফলের খোসা। হাতের কাছে পাওয়া যায় এসব ফল সহজে সুতরাং ঘরে বসেই তৈরি করুণ ফলের খোসা দিয়ে রূপচর্চার উপকরণ।

 

অবশ্যই তোমাকে পরীক্ষায় প্রথম হতে হবে

ডা. তাজুল ইসলাম


মসজিদে গেলে সেখানে সামাজিক যুদ্ধ চলে কার ছেলে/মেয়ে কত ভালো করছে, কোথায় চান্স পেয়েছে, যখন ক্লাশে ফার্স্ট হতে শুরু করলাম বাবাসহ সবাই বলতে লাগলো অন্য ছেলেরা কম পড়েছে তাই তুমি ফার্স্ট হয়েছ।

কাহিনী সংক্ষেপ :রোগীর মা বলেন স্যার দিনাজপুর থেকে এসেছি –

বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ নিউরোলজিস্ট দ্বীন মোহাম্মদ স্যার আমার সব কথা শুনে তাৎক্ষনিভাবে আপনার ঠিকানা দিয়ে বলেন এখনি ওনার কাছে চলে যান।

মা,খালা ও রোগী আজমি যা বললেন :

বাবা একটি সরকারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক, মা প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। আজমির বাবা গ্রাম থেকে উঠে আসা ব্রিলিয়্যান্ট ছাত্র। বোর্ডে স্টান্ড করা। দারিদ্র ও পারিপার্শ্বিকতা কারনে তিনি পরবর্তীতে তত ভালো করতে পারেননি।

তাই তিনি এখন তার অপূর্ণ স্বপ্ন একমাত্র ছেলেকে দিয়ে পূরণ করতে চান। ছেলেকে সব সময় কন্ট্রোল করা ও আগলে রাখার চেষ্টা করেন। প্রতিদিন ভোরে উঠার জন্য ১ বার, দুপুরে খাবার ব্রেকে ১ বার ও বিকেলে হাটতে গেলে ১ বার ফোন করবেনই।

যদি ফোন রিসিভ না করে তাহলে ১৫-১৬ বার ফোন করতে থাকে( বলে তোমার কিছু হলে আমি বাঁচবো না)।
পড়ার সময় আত্মীয় স্বজন এলে বলে ওর কাছে যেও না ওর পড়ার ডিস্টার্ব হবে, কিন্তু নিজে ছেলের পাশে বসে স্কুলের নানাবিধ সমস্যার কথা ছেলের কাছে শেয়ার করে।

বন্ধুদের বার বার ফোন করে জানতে চায় আজমি ক্লাশে আছে কিনা, কোথায় খাচ্ছে, কি খাচ্ছে। এতে বন্ধুরা মজা পেয়ে তারা বলে আঙ্কেল ও তো ক্লাশ করে না, বাজে হোটেলে খায় ইত্যাদি।

এভাবে ওনার টেনশন আরো বাড়িয়ে দেওয়া হয়। ছুটির দিনও হল থেকে বাসায় আসতে মানা করে কেন না এতে পড়াশোনার ক্ষতি হবে। সারাক্ষণ খবরদারি করতো টিভি দেখো কেন, এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না ইত্যাদি।

বানান ভুল করলে মারধর করতো। বলতো ওমুকের ছেলের রোল ১ বা ২ আর তুমি সবসময় ৮-৯ এ থাকো।

আজমি বলে ক্লাশ সিক্স এ উঠার পর আমার রেজাল্ট ভালো হতে থাকে। আমি ফার্স্ট হতে শুরু করি। কিন্তু বাবাসহ অন্যরা বলে বাকী সবাই তেমন পড়াশুনা করে নাই, তাই তুমি ফার্স্ট হয়েছো। সন্ধ্যার পর কোন আড্ডায় যাওয়া নিষিদ্ধ। তুলনা করে বলে পাশের বাড়ীর মেয়েটি স্কলারশিপ পেয়েছে, ওমুকে তেমন করেছে। এরকম তুলনা করলে মন খারাপ হতো।

আজমি আরো বলে, স্যার মসজিদে নামাজ পড়ার পর এক সামাজিক যুদ্ধ বাঁধে- সবাই বড় গলায় বলতে থাকে কার ছেলে/ মেয়ে কত ভালো রেজাল্ট করেছে বা কত ভালো জায়গায় ভর্তি হতে পেরেছে। এগুলো বাবার মনে জিদ তৈরি করে, আমার ছেলে পিছিয়ে থাকবে কেন?

আজমির সমস্যা শুরু ৫ বছর আগ থেকে যখন সে ক্লাশ টেনে পড়ে। এক সময় সে লক্ষ করে লিখতে গেলে তার আঙ্গুল শক্ত হয়ে যায়, লিখতে অসুবিধা হয়। তবে নিজেই মনের জোরে চেষ্টা করে ভালো হই। আড়াই বছর পর আবার এ সমস্যা দেখা দেয় যখন এইচএসসি পরীক্ষার ২ মাস বাকী। একই সঙ্গে অতিরিক্ত স্বপ্ন দোষ হতে থাকে।ডাক্তার বলে এগুলো নরমাল।

আরো সমস্যা যোগ হয়- ঘাড় ভার হয়ে আসে, যেন কেউ একজন ঘাড়ে বসে আছে। এই ভারে হাটতে গেলে মাথা নিচু হয়ে যেতো। পড়তে গেলে মাথা জ্বলে।

একদিন দেখি পুরো ঘরে ধোয়ায় ভরা,একটি লোকের লম্বা আঙ্গুল আমার গলা চেপে ধরতে আসছে। আমি পা দিয়ে খাটে আঘাত করি যাতে শব্দ শুনে কেউ আসে। তারা আমার পা ও চোখ চেপে ধরে। আয়াতুল কুরসি পড়তে থাকি।কিছুক্ষণ পর সব পরিষ্কার। এর সঙ্গে আরেক সমস্যা শুরু হয়, কে যেন বলে আমি জানালার পাশে আছি, তোকে মেরে ফেলবো।

মনে হয় কে যেন পা ধরে টানে,মনে হয় বাতাসে উড়ে বেড়াচ্ছি। এসব কারনে পড়া শুনা বন্ধ হয়ে যায়। খালাতো ভাই হুজুর আনে। তিনি অন্য একজনের উপর জ্বীন ঢেকে আনেন। সে বলে তাবিজ আছে, জ্বীন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব বলে হুজুর বলে ওকে আর ঝামেলা করবেন না। এরপর হাত ঠিক হয়ে যায়। পরীক্ষার আর মাত্র ৩ দিন বাকি। তবু ও পড়া শুরু করি। পরীক্ষার আগের দিন কাউকে চিনি না, উদভ্রান্ত হয়ে পড়ি। সকালে ৪ জনে ধরে নিয়ে হলে বসিয়ে দেয়( বাবা চান না ইয়ার লস হোক)। ম্যাডাম বলে যা পারো লেখো।

৫ বার উঠি,ম্যাডাম প্রতিবার বসিয়ে দেয়( যেহেতু বাবা বলে গেছে)। সে পরীক্ষায় ৮৬% এন্সার করে ৮২% মার্ক পেয়েছিলাম।

পরের দিন পরীক্ষা দেবো না। তখন নিউরোলজিস্ট দেখানো হয়। তিনি সিটি স্ক্যান করে বলেন কোন সমস্যা নাই। তবু পরীক্ষা দেই। বন্ধুরা, বিশেষ করে মেয়েগুলো বলতে থাকে বেশী বেশী পড়তো বলে আজ এ অবস্থা।

প্রতিটি পরীক্ষা দেই আর হাতের সমস্যা তত বাড়তে থাকে। শেষ দিন হাতের আঙ্গুল একেবারে বেকে যায়, কোন রকমে টেনে টেনে লিখা শেষ করি। এরপর খালার বাসায় নিয়ে অন্য হুজুর দেখানো হয়। তিনিও একই কথা বলেন। এরপর হাতের সমস্যা কমে যায়।

খালা বলে স্যার ওর সমস্যা দেখা দিলেই হুজুরকে ফোন করে, আর হুজুর টাকা চায়। এভাবে অনেক টাকা দেওয়া হয়ে গেছে। এরপর ভার্সিটির এডমিশন টেস্ট। সেখানেও কষ্ট করে পরীক্ষা দেই।তবু বি- ইউনিটে ৩৪ তম হয়ে ঢাকা ভার্সিটিতে’ল সাবজেক্টে ভর্তি হই( জগন্নাথে ২১ তম হই)।

এরপর হাতের সমস্যার জন্য অর্থোপেডিক ডাক্তার দেখাই। একজন বলেন ট্রিগার আঙ্গুলে সমস্যা কিন্তু পিজিতে বলে কোন সমস্যা নেই। কোনভাবে ফার্স্ট টার্ম দেই। সেকেন্ড টার্মের আগে আব্বুকে বলি দ্বীন মোহাম্মদ স্যারকে দেখাতে। ভালো হইনি। তখন ম্যাডামের অনুমতি নিয়ে ” রাইটার” নিয়ে ৬টি পরীক্ষা দিলাম।

এরপর অন্য সমস্যা দেখা দেয় ঘুমাতে যাই কে যেন পা টেনে অন্য দিকে নেয়, আঙ্গুল শক্ত করে দেয়, হাত- পায়ের রগ দিয়ে বাতাস ঢুকে আমাকে অস্হির করে তুলে, মনে হয় সবাইকে মেরে ফেলবো,ভাংচুর করবো। এবার দ্বীন মোহাম্মদ স্যারের কাছে গেলে সরাসরি আপনার কাছে পাঠিয়ে দেয়।

এ কাহিনী থেকে যা শিক্ষনীয়:

১। লিখতে গেলে আঙ্গুল শক্ত হয়ে গিয়ে লিখতে না পারার রোগের নাম ” writer’s cramp”।

২। এটি একটি উদ্বেগ জনিত রোগ হলেও মূলত যারা পারফেক্টশনিস্ট( অতিরিক্ত নিখুত হতে চায় ) তাদের এ সমস্যা বেশি দেখা দেয়।

৩। শিশু লালন পালন পদ্ধতি : মূলত ৪ ধরনের।তবে এখানে বাবা কে একাধারে অতি নিয়ন্ত্রণ ও অতি আগলে রাখার প্রব্ণতা দেখতে পাচ্ছি ( over control and over possessiveness)। এটি একটি মিশ্র পদ্ধতি। উভয় প্রবণতাই ক্ষতিকর।

৪। নিজেদের অপূর্ন স্বপ্ন সন্তানদের দ্বারা পূরণ করার অবাস্তব চেষ্টা তাদের উপর বাড়তি চাপ তৈরি করে।

৫। সারাক্ষণ অন্যদের সঙ্গে তুলনা করে আমরা সন্তানদের মনোবল ভেঙ্গে দেই,তাদের মনে হীনমন্যতা ঢুকিয়ে দেই।

৬। সামাজিক যুদ্ধ – কার ছেলে/মেয়ে কত ভালো করেছে- এটি আমাদের সমাজে একটি ব্যাধি হয়ে দাড়িয়েছে।জিপিএ-৫ এর নেশায় অভিভাবকরা মরিয়া হয়ে সন্তানদের পিছে লাগছে

৭। বাবার অতি নিখুত হওয়ার প্রবনতা আজমি পেয়েছে,অতি নিয়ন্ত্রণ, আগলে রাখার কারনে আত্মবিশ্বাস দুর্বল হয়েছে, অতি সামাজিক তুলনা ও সমালোচনায় হীনমন্যতা তৈরি হয়েছে,অতি প্রত্যাশা মনে আশঙ্কা তৈরি করেছে।

সব মিলিয়ে পরীক্ষা তার কাছে মূর্তিমান দৈত্য হিসেবে হাজির হয়- তার অবচেতন মন শঙ্কা ও উদ্বেগে ভারাক্রান্ত হয়।ফলে পরীক্ষার সামনে লিখতে গেলে তার ” রাইটারস ক্রাম্প” শুরু হয়।

৮। একই মানসিক দ্বন্দ্ব, সংঘাতের কারনে তার অবচেতন মনে অনেক চাপ পরে, যা তার ধারন ক্ষমতার বাইরে।

ফলে”dissociative- conversion”- রোগের লক্ষণ দেখা দেয়-

যার বেশীরভাগ লক্ষণকে আমাদের দেশে ” জ্বীন-ভুতে” ধরার লক্ষণ মনে করা হয়।
৯। মনে রাখতে হবে শুধু মেধা থাকলে হবে না,মানসিক জোর,আত্মবিশ্বাস ও থাকতে হবে।তানাহলে মেধা কোন কাজে আসবে না।

১০। যেহেতু মানসিক রোগ – তাই হুজুর ও ধর্ম বিশ্বাস -রোগীর মনে এই বিশ্বাস ও আস্হা তৈরি করে যে এবার সে জ্বীনের কবল থেকে মুক্ত হয়েছে,তাই সাময়িকভাবে সে লক্ষণ মুক্ত হয়( আমরা একে বলি ” placebo effect “।

১১। কিন্তু রোগের মূল যে কারন তার অবচেতন মনের চাপ,দ্বন্দ্ব সেটির নিরসন না হওয়ার কারনে এবং মানসিক সক্ষমতা না বাড়ানোর কারনে, যখনি পরীক্ষা বা কোন চাপের মুখে পড়ে তখনি তার পূর্বের সমস্যা আবার দেখা দেয়।

১২। তাই জ্বীন- ভূত তাড়ানো নয়,তাদের দরকার মনোরোগ বিশেষজ্ঞের চিকিৎসা

লিখেছেন- প্রফেসর তাজুল ইসলাম

 

দৈনিক ১৮ মা ও ঘন্টায় ৮ শিশুর মৃত্যু হয়

নারী সংবাদ


দক্ষ হাতে প্রসব না হওয়ায় বাংলাদেশে দৈনিক ১৮ মা ও ৮ নবজাতক মারা যাচ্ছে। এভাবে বছরে মৃত্যু হয় ছয় হাজার ৫৬৯ জন মায়ের ও ৭৪ হাজারটি নবজাতকের। মা ও শিশু মৃত্যুর বেশি ঘটনা ঘটে বাড়িতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ও অদক্ষ দাইয়ের হাতে সন্তান প্রসবে।

গবেষণায় দেখা গেছে, দক্ষ দাই অথবা চিকিৎসকের হাতে সন্তান প্রসবের ব্যবস্থা নেয়া হলে মা ও শিশু উভয়ের মৃত্যু ঝুঁকি কমে যায়। গ্রামের মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিক ওষুধ-পত্র পেয়ে থাকলেও প্রসবসেবা সেখান থেকে পান না। কাছের ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো সেবা প্রদানকারী থাকলেও পরিবেশ নেই। আবার পরিবেশ থাকলেও সেবা প্রদানকারীরা থাকেন না। সরকারি সহযোগিতায় ইউএস এআইডি’র প্রকল্প ‘মামণি এইচএসএস’ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সংশ্লিষ্ট করে কিছু সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে সপ্তাহের সাত দিনই ২৪ ঘন্টা খোলা রাখার ব্যবস্থা করায় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সন্তান প্রসবের সংখ্যা বেড়েছে। এতে করে মা ও শিশু মৃত্যুও রোধ করা গেছে। নোয়াখালী, লক্ষীপুর, হবিগঞ্জ, ঝালোকাঠি জেলায় আগের ১১টি থেকে ‘মামণি এইচএসএস’ এখন ১০০টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রসব পূর্ববতি ও প্রসব পরবর্তি সেবাদানে প্রস্তুত করে গত চার বছরে সাড়ে ১৫ হাজার নিরাপদ প্রসব সম্পন্ন করেছে।

২০১৪ সালে এসব ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেখানে ১ শতাংশ ডেলিভারি হতো ২০১৭ সালে সেখানে ৭ শতাংশ প্রসব হচ্ছে। এই চার উপজেলায় আগে যেখানে বাড়িতে ৭০ শতাংশ প্রসব হতো ২০১৭ সালে হয়েছে ৫৬ শতাংশ। গতকাল সোমবার হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘সরকারী স্বাস্থ্য কেন্দ্র শক্তিশালী করে প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি বৃদ্ধি করা’ শীর্ষক সেমিনারে সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা উপরের চিত্রটি তুলে ধরেন।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য সেবা মেডিক্যাল অ্যাডুকেশন সচিব সিরাজুল হক খান, মেডিক্যাল অ্যাডুকেশন সচিব ফয়েজ আহমেদ, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, পরিবার পরিকল্পণা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. কাজী মুস্তাফা সারোয়ার, সেভ দ্য চিলড্রেন, বাংলাদেশের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. ইশতিয়াক মান্নান প্রমুখ।

তারা বলেছেন, সরকারী স্বাস্থ্য কেন্দ্র, বিশেষ করে ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্য কেন্দ্র সমূহকে শক্তিশালী করারমাধ্যমে দূর্গম ও সুবিধা বঞ্চিত জনপদে মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যের ব্যাপক উন্নতি ঘটানো সম্ভব। পরিবার পরিকল্পণা অধিদপ্তর এই সেমিনারের আয়োজন করে।

মা মণি এইচএসএস’র সাথে স্থানীয় সরকার, পরিবার পরিকল্পণা বিভাগ ও স্থানীয় কমিউনিটি সম্মিলিতভাবে স্ব স্ব ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উন্নয়নে এগিয়ে আসে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের নানা ঘাটতি (যেমন আয়া নিয়োগ, ওষুধ, আসবাপত্র ক্রয় করা) মেটাতে স্থানীয় সরকার অর্থ বরাদ্দ করে এবং নিবিড় তদারকির মাধ্যমে জবাবদিহিতা নিশ্চত করে। অন্যদিকে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ প্রয়োজন মাফিক লোকবল নিয়োগ দিয়ে,কখনো বা অবকাঠামো সারিয়ে তুলে স্বাস্থ্য কেন্দ্রকে সেবা প্রদানের জন্য তৈরি করেছে। সুত্র: নয়াদিগন্ত।
ছবি:ইন্টারনেট।

 

রমজানে ইফতারির রেসিপি

রেসিপি


উপকরণ :
ময়দা ১-১/২সোয়া কাপ,
পানি ১ কাপ,
ছোলার ডালের বেসন (১ কাপ),
বেকিং পাউডার (আধা চা চামচ),
চিনি (দুই কাপ),
তেল,
লাল ফুড কালার (ন্যাচারাল ফুড কালার ব্যবহার করুন)…. ,
তেল-ভাজার জন্য হালকা ঘি ব্যবহার করতে পারেন,
পরিবেশনের জন্য ফল ও
খেজুর৷

সিরার জন্য :
চিনি আধা কেজি,
পানি ২ কাপ,
এলাচ ৪টি৷

প্রণালী :
১.প্রথমে বেসন ও ময়দা একসঙ্গে পানি দিয়ে মিশিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করুন৷ ভালো করে ফেটা হলে ডিশে বেসন ঢেলে নিন৷

২.এবার গোলা অর্ধেক ভাগ করে অন্য একটি পাত্রে রং মিশিয়ে নিন৷

৩.এবার কড়াইয়ে তেল গরম করে ঝাঁঝরি মধ্যে গোলা রেখে কড়াইয়ের উপর রেখে হাতা দিয়ে ঘষে ঘষে তেলের উপর ছোট ছোট গোলা ফেলুন৷ ডুবো তেলে মচমচে করে ভেজে তুলুন৷

৪.অন্য একটি পাত্রে আগেই সিরা করে রাখুন ভাজা মাত্রই সিরায় ছেড়ে দিন৷ সব বুন্দিয়া ভাজা হয়ে গেলে সিরাসহ বুন্দিয়া চুলায় দিয়ে কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে ভাজুন৷

৫.হাত দিয়ে চেপে দেখুন নরম হলে নামিয়ে নিন৷

পরিবেশন:
সুন্দর একটি প্লেটে খেজুর এবং ফল
দিয়ে মাঝে কালার ফুল বুরিন্দা গরম গরম পরিবেশন করুন।

 

চক্ষু অবনমিত জাতি

শামছুন নাহার মলি


এই প্রথম বারের মত প্রবাসে বেশি দিন থাকা। মানুষে বলে প্রবাস জীবন দুনিয়ার জান্নাত। বলার কারণ আছে। তবে কষ্ট ও যে নেই তা না।

ইউরোপ কে দুনিয়ার জান্নাত মনে করে,মনে মনে তাদের খুব রাগ প্রবাসিদের উপর। “আরামে আছো তো,তাই টের পাওনা” টাইপের কথা শুনতে হয়। সেজন্য এখানে এত সুখের জীবন কাউকে বলতেও ভয় হয়, ভয় হয় দেশের কোন সমস্যা বলতে। আমরা দেশে থাকিনা বলে দেশের বদনাম করতে পারবো না। যাইহোক।

ফিনল্যান্ড খুব ছিমছাম, গোছালো, শান্তিময় একটা দেশ। আয়তনে বাংলাদেশের তুলনায় অনেক অনেক গুন বড় হওয়া সত্বেও জনসংখ্যা এখনো
৫৫লাখের মত। যেখানে আমাদের শ্যামনগর থানাতেই এদেশের ডাবল হবে মানুষ।

ঠান্ডার দেশ, বিশ্বস্ত দেশ, খুন, ধর্ষন, চুরি ডাকাতি নাই। সিকোরিটি খুব স্ট্রং।বোরখা, হিজাব, নিকাব করে চলতে ফিরতে কখনো সমস্যা হয়নি আজ পর্যন্ত আলহামদুলিল্লাহ্‌। শিক্ষা ব্যবস্থা, চিকিৎসা অনেক উন্নত।

সব মিলিয়ে আরাম প্রিয়, শান্তি প্রিয়দের জন্য এদেশ ভালো। সবচে ভালো লাগে সবাই সবাইকে এত রেসপেক্ট করে, হেল্প করে। বাচ্চার স্ট্রলার সহ মা যেখানে খুশি যাতায়াত করতে পারবে ফ্রিতে।
কখনো গৃহবন্দী লাগেনি এজন্য।

ধর্মীয় প্রোগ্রামে কখনো বাঁধা আসেনি আলহামদুলিল্লাহ্‌। সেজন্য ঈমান আমল বেঁচে দিতে হয়নি এই অমুসলিমদের কাছে। প্রতিবেশি গুলোর সাথে মিশেও মনে হয়নি মুসলিম বলে আমাদের ভিন্ন চোখে দেখে।

পথে, বাসে, ট্রেনে সব খানে নিশ্চিতায় চলা ফেরা করা যায়, আজ পর্যন্ত দেখিনি কোন ইভটিজিং। বা খারাপ দৃশ্য। অবশ্য আমার চোখ সব সময় বেবি স্ট্রলার আর রাস্তার দিকে থাকায় হয়তো আমি এখনো চেহারা দেখেই বলে দিতে পারবো না কে কোন দেশের।

এদের একটা ভালো গুন হলো এরা কারো নিয়ে নাক গলায় না, কাপড় এত কম পরে বের হয় তবুও গিলে খাওয়ার চাহনি দেখা যায় না। যেটা দেশে বেশি ফেইস করে প্রত্যেকটা মেয়ে, হোক হিজাবি, হোক নন-হিজাবি।

বাসে, মেট্রোতে বসা অবস্থায় আগে দেখতাম বই পড়তে, এখন মোবাইল নিয়ে নত মস্তকে থাকতে দেখি। কেউ কাউকে নিয়ে গবেষণা চালায় না। অথচ বাঙালীরা যদি একজন হিজাবিকেও দেখে তার উপর চালায় গবেষণা কোন দেশের, পরিচিত কিনা হাবিজাবি। এক ভাবি বলেন, বাইরে সে নেকাব দেন না কিন্তু বাংলাদেশি কমিউনিটির কোন অনুষ্ঠান বা দাওয়াতে গেলে মুখ ঢেকে যান।
আমার বান্ধবীর অভিযোগ, প্লেনে বাঙালীরা এত ছ্যাচড়ামি করছে যে ছোট বাবুটাকে খাওয়াতেও পারেনি।

দেশে গিয়ে আমার কিছু দিন বোরখা পরেও পা চলে না। এত মানুষের দৃষ্টি ভয় লাগে। কিন্তু কেন? এত বেশি নির্লজ্জ হয়ে গেছে কেনো মানুষ?
কোথায় চোখের পর্দা? হযরত সালাবার (রা) গল্প গল্পটা সাম্মানকে শুনিয়েছি। যদিও অথেনটিক কিনা সিওর না। কিন্তু তবুও চেয়েছি অন্তত চোখটা নত রাখা শিখুক।

সামারে বাইরে গেলে গল্প করে ওর মুখ ঘুরিয়ে রাখি। মাঝে মাঝে বলে আম্মু ওরা তোমার মত বোরখা পরে না কেন? আমি বলি ওরা কোরআন পড়ে না, মুসলিম না তাই। অনেক মুসলিমদের কে দেখেও বলে এরা কেন তোমার মত হিজাব, নেকাব পরে না? বলেছি ওরা কোরআন আরো পড়লে জানতে পারবে কিভাবে হিজাব করতে হয়।

কি বলবো বুঝিনা। শুধু শিখিয়েছি বেশি মানুষের দিকে তাকাবা না, পথ চলতে এদিক ওদিক তাকালে পড়ে যেতে হয়।আর মানুষের দিকে তাকালেও বেশিক্ষণ না দেখতে, কারণ শয়তান দ্বিতীয় দৃষ্টিতে তোমার সঙ্গী হয়ে যাবে। বেচারা ছোট মানুষ, আর কিই বা বলা যায়। এই ছোট দেশে যে এত মহিলা, পুরুষ কম। হসপিটাল, মার্কেট, স্কুল সবখানে মেয়ে বেশি।

আল্লাহ যেন আমাদের কে দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তিতে রাখেন। শকুনি চোখ থেকে রক্ষা করেন।

 

একটি শিশুর নামাজ শেখার গল্প

আফরোজা হাসান


বিভিন্ন সময় বোনদের সাথে যেসব হালাকাতে অংশগ্রহণ করি তাতে প্রায় সবাই যে প্রশ্নটা করেন তা হচ্ছে, সন্তানদের কিভাবে নামাজে অভ্যস্ত করাবেন! আমি সবসময় যে পরামর্শ দিতাম তা হচ্ছে, শিশুদেরকে মুখে বলে করানোর চাইতে, করে দেখিয়ে শেখানোটা অনেক বেশি সহজ। সুতরাং, বাবা-মা যদি নিয়মিত নামাজ আদায় করেন শিশুরা দেখে দেখে সেটা রপ্ত করে ফেলবে ইনশাআল্লাহ। সুতরাং বাবা-মাকে নিয়মিত নামাজ আদায় করতে হবে। এবং সন্তানদেরকেও উৎসাহিত করতে হবে নামাজের ব্যাপারে। ছোটদের ভাষায় ওদেরকে বুঝিয়ে বলতে হবে নামাজ কেন পড়তে হবে, নামাজ পড়লে আল্লাহ অনেক খুশি হবেন ইত্যাদি। তবে এখন কিন্তু আমি এই পরামর্শ ঠিক এমন করে বলি না কাউকেই। কেন?! কারণ আমার পুত্র সেই উপায় রাখেনি। ছোটবেলায় নাকীবও অন্য আর সব বাচ্চাদের মত আমরা যখন নামাজ পড়তাম পাশে এসে দাঁড়িয়ে যেত। আমাদের সাথে রুকু, সিজদাহ দিতো, কখনো ওর বাবার পিঠে উঠে বসে থাকতো, কখনো বা গলা ধরে ঝুলতো নামাজের সময়। এসব কর্মকান্ড করে কিছুক্ষণ পর আবার নিজের খেলায় ফিরে যেত। ছয় বছর পর্যন্ত এমনই চলছে। এরপর হাসানজ্বি বললেন, এখন থেকে আমাদের নামাজের ব্যাপারে সিরিয়াসলি একটু একটু করে তৈরি করানো উচিত নাকীবকে।

আমরা দুজন মিলে ঠিক করলাম যে, বাকি সব ওয়াক্ত নাকীব ওর ইচ্ছে মত নামাজ আদায় করবে শুধু যোহর ছাড়া। যোহরের চার রাকআত ফরজ ওকে পুরোটাই আদায় করাবো আমরা। আগের মত আর দু’এক রাকাত আদায় করেই দৌড় দিতে দেয়া যাবে না। আমরা দুজন মিলে বসে খুব সুন্দর করে নাকীবকে বুঝিয়ে বললাম, নামাজের মাঝখান থেকে ইচ্ছে মত উঠে যাওয়া ঠিক নয়। পুরো নামাজ শেষ করে সালাম ফিরিয়ে এরপর তুমি আবার খেলা করবে। সে নিজে যেহেতু জ্ঞান হবার পর থেকেই যুক্তিবাদী(মাশাআল্লাহ) তাই যুক্তি বোঝে এবং মেনেও নয়। সপ্তাহ খানেক খুবই সোনা বাচ্চা হয়ে আমাদের সাথে যোহরের চার রাকআত ফরজ নামাজ আদায় করলো। এক সপ্তাহ পর থেকে তার উসখুস শুরু হয়ে গেলো। সে হচ্ছে জাম্পিং বেবী। এক মূহুর্ত স্থির থাকে না। সেখানে সাত-আট মিনিট চুপচাপ দাড়িঁয়ে থাকাটা কষ্টসাধ্যই তার জন্য। তো একদিন ঠিক নামাজের আগ মূহুর্তে সে ওয়াশরুমে যেতে চাইলো। দুপুরে তাড়া থাকে আমাদের দুজনেরই। নাকীব দেরি করবে বের হতে তাই ওকে ছাড়াই নামাজ আদায় করে নিলাম। দ্বিতীয় দিনও সে একই সময়ে ওয়াশরুমে যেতে চাইলো। তৃতীয়দিনও যখন একই কথা বললো নামাজের আগে আমাদের দুজনের বুঝতে বাকি রইলো না যে, আমাদের সুপুত্র কেন ওয়াশরুমে গিয়ে বসে থাকেন। সে আসলে নামাজে ফাঁকি দিতে চায়। আমরা দুজন সেদিন নামাজ না পড়ে বসে রইলাম। নাকীব বেড়িয়ে যখন দেখলো আমরা ওর জন্য বসে আসি। সে খুবই আহত (মানসিকভাবে) হয়ে চুপচাপ আমাদের সাথে নামাজে দাঁড়িয়ে গেলো।

প্রথম প্রথম আমরা নাকীবকে নামাদের ভেতরের সূরা, তাসবীহ কিছুই পড়াইনি। ও শুধু আমাদের সাথে উঠ-বোস করতো। বেশ কিছু সূরা তার মুখস্ত ছিল। আর আমি প্রতিদিন ঘুমোতে যাবার সময় দু’তিন বার নামাজের ভেতরের সব দোয়া সমূহ ওকে পড়াতাম। আমরা চাইনি নামাজের ব্যাপারে বাড়তি কোন চাপ দিতে ওর উপর। কিংবা এভাবে বললে ভালো যে, ওকে বুঝতে দিতে চাইনি বাড়তি কিছু করানো হচ্ছে ওকে দিয়ে। ওয়াশরুমের আইডিয়া ফেল করার পর তিন-চার দিন পুত্র আমাদের চুপচাপই রইলো। এরপর একদিন ঠিক নামাজের আগে প্রচন্ড পেটব্যথা শুরু হলো তার। নড়তেই পারে না ব্যথার প্রচন্ডতায়। ওকে শুইয়ে দিয়ে আমরা দুজন নামাজ আদায় করে নিলাম। আমাদের নামাজ শেষ আর পুত্রের ব্যথা ভালো হয়ে জাম্পিং জাম্পিং শুরু। পরদিন যখন আবারো পেটব্যথা শুরু হলো হাসানজ্বি ছেলেকে আদর করে হেসে বললেন, কোন সমস্যা নেই বাবা তুমি শুয়ে থাকো। বাবা আর আম্মুতা নামাজ শেষ করে তোমাকে শিখিয়ে দেব শুয়ে শুয়ে কিভাবে নামাজ আদায় করতে হয়। নাকীব চোখ বড় বড় করে বলল, শুয়ে শুয়েও নামাজ পড়া যায়? হাসানজ্বি হেসে বলল, হুম যায় তো। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে এত বেশি ভালোবাসেন যে, যদি আমাদের কষ্ট হয় তাহলে যাতে বসে বা শুয়েও নামাজ পড়তে পারি সেই সুযোগও দিয়ে দিয়েছেন। নাকীব তখন উঠে বসে বলল, বাবা ব্যথা কমে গিয়েছে তোমাদের সাথেই নামাজ পড়বো। আলহামদুলিল্লাহ এরপর আর কোনদিনও নামাজ ফাঁকি দেবার নতুন কোন বুদ্ধি বের করেনি নাকীব।

আমরা যখন দেখলাম যোহরের চার রাকআত ফরজ নামাজ পড়াতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে নাকীব। তখন আসরের নামাজেও ওকে সাথে নিতে শুরু করলাম। যোহর ও আসর নামাজ বেশ কিছুদিন নিয়মিত আদায় করার পর মাগবীবের সময় ওকে সাথে রাখলাম। যখন দেখলাম যে নামাজের সময় হবার পর ডাকলেই নাকীব চলে আসছে। তখন আমরা ওকে বোঝালাম নামাজের সময় শুধু উঠ বোস করলেই হবে না। সূরা ও দোয়াও পড়তে হবে। ততদিনে সবকিছু ওর মুখস্ত হয়ে গিয়েছিল। আমরা তখন ওকে আমাদের সাথে নামাজ না পড়িয়ে একা একা পড়ালাম কয়েকদিন। জোড়ে জোড়ে পড়তো নাকীব সবকিছু তাই ভুল হলে ধরিয়ে দিতাম।

এর মাস খানেক পর আমরা ওকে ঈশার ফরজ নামাজ পড়ানো শুরু করেছিলাম। ছয় বছর বয়স থেকে নাকীবকে নামাজের ব্যাপারে উৎসাহিত করতে শুরু করেছিলাম আমরা। মোটামুটি পুরো এক বছর লেগেছিল নাকীবকে খুশি মনে নামাজ আদায়ে অভ্যস্ত করতে। এর মাঝে আমরা কখনোই ওর সাথে রাগ করিনি। ফাঁকি দেয়ার যেসব পন্থা বের করেছিল সেসব যে আমরা বুঝতে পেরেছি সেটাও ওকে বুঝতে দেইনি। পেট ব্যথার মিথ্যা বাহানা করছে সেজন্য কোন ভৎর্সনাও দেইনি। আমাদের হাতে যথেষ্ট সময় ছিল ধীরে সুস্থে নাকীবের মধ্যে নামাজের অভ্যাস তৈরি করার। তাই হুট করে কোন কিছু চাপিয়ে দেবার প্রয়োজন পড়েনি।

আর প্রথম মাসখানেক ছাড়া নাকীবও কখনোই বিরক্ত বা দুঃখী মন নিয়ে নামাজ আদায় করেনি। আমরা খেয়াল রেখেছি ওর ইচ্ছার দিকে। হয়তো বা আমাদের তাড়া ছিল বাইরে যাবার। কিন্তু তখন নাকীবের পছন্দের কার্টুন চলছিল টিভিতে। আমরা ওকে বলেছি ঠিক আছে তুমি এখন কার্টুন দেখো পরে একা নামাজ আদায় করে নিয়ো। কার্টুন শেষ হবার সাথে সাথে নিজেই জায়নামাজ বিছিয়ে খুশি মনে নামাজে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। আমাকে বলতেও হয়নি। কোথাও বেড়াতে গিয়ে দু’একদিন যদি নামাজ পড়বে না এমন বলেছে, আমরা জোড় করে বাধ্য করিনি যেহেতু ওর উপর নামাজ ফরজ নয়। কিন্তু পড়ে অন্য সময় আদর করে বুঝিয়ে বলেছি কখনোই নামাজ ছেড়ে দেয়া ঠিক নয়। হিসাব করে দেখেছি পুরো আড়াই বছর লেগেছে আমাদের নাকীবকে মোটামুটি নামাজের বিষয়ে শেখাতে এবং খুশি মনে আদায় করতে অভ্যস্ত করতে।
এখন আলহামদুলিল্লাহ বলাও লাগে না। সে নিজেই নামাজের ব্যাপারে অনেক সতর্ক ও আগ্রহী। গত বছর প্রচন্ড জ্বর করেছিল নাকীবের। এত অসুস্থ্য বাচ্চাকে উঠিয়ে নামাজে ডাকতে ইচ্ছে করেনি তাই একাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলাম। কিছুক্ষণ পর টের পেলাম নাকীব বিছানা থেকে উঠে এসে পাশে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ। সেদিন আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতায় আনন্দ ও প্রাপ্তির অশ্রু গড়িয়ে পড়েছিল চোখ দিয়ে। যখন নাকীবকে বসে থাকতে দেখি কখন তার বাবা বাসায় ফিরবে এবং সে বাবার সাথে জামায়াতে নামাজ আদায় করবে! কিংবা বার বার ফোন করে ওর বাবাকে তাগাদা দেয় যখন যে, বাসায় এসো একসাথে নামাজ আদায় করবো! আলহামদুলিল্লাহ প্রশান্তিতে ভরে যায় মন।
আসলে আমরা চেষ্টা করলেই বিন্দু বিন্দু করে শরীয়তের ভালোবাসার সিন্ধু গড়ে তুলতে পারি আমাদের সন্তানদের মনের ভেতরে। সেজন্য আমাদেরকে শুধু একটু কৌশলী এবং কিছুটা ধৈর্য্যশীল হতে হবে। তাড়াহুড়া করা চলবে না একদমই। শরীয়তের বিধান সারাজীবন মেনে চলতে হবে আমাদের সন্তানদেরকে। তাই সতর্ক থাকতে হবে গোড়ায় যেন গলদ থেকে না যায়। ভিত্তি যেন মজবুত হয়। সন্তানদের উপর শরীয়তের বিধান কখনোই চাপিয়ে দেয়া উচিত নয়। কেননা চাপিয়ে দিলে সেটা বোঝাতে পরিণত হবে, কখনোই ভালোবাসাতে নয়। সুযোগ পাওয়া মাত্রই নিজের উপর থেকে সেই বোঝা সরিয়ে দিতে সচেষ্ট থাকবে। তাই শরীয়তের প্রতিটা বিধান নিজেরা মেনে চলতে হবে, কেন মেনে চলছি সেটা সন্তানদেরকে বুঝিয়ে বলতে হবে। এবং সন্তানরাও যাতে মেনে চলতে পারে সেজন্য ধীরে ধীরে ওদেরকে সেই ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলতে হবে। ফজরের নামাজ আমরা নাকীবকে পড়াতে শুরু করেছিলাম ওর আট বছর হবার পর। তাও ঘুম থেকে উঠার পর পড়ে নিতো। এখনো ঘুম থেকে উঠার পরই ফজরের নামাজ পড়ে। কেননা এখন আমাদের এখানে সূর্যোদয় হয় সাড়ে আটটায়। নাকীব আটটায় ঘুম থেকে উঠে ওয়াক্ত থাকতে থাকতেই নামাজ আদায় করে নিতে পারে। যেহেতু খুব শিঘ্রীই নাকীবের দশ বছর হয়ে যাবে। ইনশাআল্লাহ ইচ্ছে আছে এখন থেকেই ছুটির দিনগুলোতে ওকে উঠিয়ে ধীরে ধীরে ফজরের আযানের পরপরই নামাজ আদায়ের অভ্যস্ত করে তোলার।

 

আমার বই পড়া (দ্বিতীয় পর্ব)

রায়হান আতাহার


“হ্যাল্লো কিশোর বন্ধুরা-
আমি কিশোর পাশা বলছি অ্যামিরিকার রকি বীচ থেকে। জায়গাটা লস অ্যাঞ্জেলসে, প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে, হলিউড থেকে মাত্র কয়েকমাইল দূরে। যারা এখনও আমাদের পরিচয় জানো না, তাদের বলছি, আমরা তিন বন্ধু একটা গোয়েন্দা সংস্থা খুলেছি। নাম- তিন গোয়েন্দা।

আমি, বাঙালী। থাকি চাচা-চাচীর কাছে। দুই বন্ধুর একজনের নাম মুসা আমান, ব্যায়ামবীর, অ্যামিরিকার নিগ্রো। আরেকজন রবিন মিলফোর্ড, আইরিশ অ্যামিরিকান, বইয়ের পোকা। একই ক্লাসে পড়ি আমরা। পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ডে লোহা-লক্কড়ের জঞ্জালের নিচে পুরোন এক মোবাইল হোম-এ আমাদের হেডকোয়ার্টার। তিনটি রহস্যের সমাধান করতে চলেছি, এসো না , চলে এসো আমাদের দলে…”

আমার সবচেয়ে প্রিয় লাইনগুলোর মধ্যে প্রথম দিকে থাকবে এই লাইনগুলো। ক্লাস সিক্সে উঠার পর এক বন্ধুর কল্যাণে “তিন গোয়েন্দা”-র সাথে পরিচয় হয়। এরপর আমাকে আর পায় কে! এক নাগাড়ে পড়তে থাকলাম। ঐ সময়টাতে “তিন গোয়েন্দা” ছাড়া কিছু ভাল লাগতো না।

কিশোর-মুসা-রবিনের পাশাপাশি রাশেদ পাশা, মেরি চাচী, জর্জিনা পারকার, রাফিয়ান, টেরিয়ার ডয়েল, ওমর শরীফ, ডেভিস ক্রিস্টোফার, ভিক্টর সাইমন, ফগ র‍্যাম্পারকট, হ্যানসন সবাইকে বাস্তবে খুঁজে ফিরতাম। এখনো ভালোলাগা অনুভূতিটুকু একটুও কমেনি।

তিন গোয়েন্দার সবগুলো ভলিউম সংগ্রহ করা আমার জীবনের অন্যতম একটি লক্ষ্য। কৈশোরের যে এডভেঞ্চার প্রীতি “তিন গোয়েন্দা” দিয়ে শুরু হয়েছিলো তা পূর্ণতা পায় “শার্লক হোমস” দিয়ে। একুশে বইমেলায় “শার্লক হোমস রচনাসমগ্র” কিনেছিলাম, যা আজ অবধি আমার সংগ্রহকৃত অন্যতম সেরা বই।

বিশ্ববিখ্যাত গোয়েন্দা কাহিনী লেখক স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের অনবদ্য কীর্তি “শার্লক হোমস”। শার্লক হোমস, ডাক্তার ওয়াটসন, মাইক্রফট হোমস, প্রফেসর জেমস মরিয়ার্টি, মিসেস হাডসন- প্রতিটি চরিত্র যেন একেকটি মুগ্ধতার নাম। রচনাসমগ্র পড়তে যেয়ে “দ্য ফাইনাল প্রব্লেম” গল্পে শার্লক হোমসের মৃত্যুর ঘটনা পেলাম। স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম গল্পটি পড়ে। আবার অবাকও হলাম, কারণ রচনাসমগ্র শেষ হতে তখনো বাকি ছিলো। পরে জানতে পেরেছি, শার্লক হোমসকে পাঠকের চাপে ফিরিয়ে এনেছিলেন ডয়েল। কী যে ভালো লেগেছিলো!

শার্লক হোমসের গোয়েন্দাগিরি তখন আমাকে পেয়ে বসেছিলো। নিজের মাঝে “গোয়েন্দা গোয়েন্দা” ভাব! তবে সেটি স্বাভাবিকভাবেই বেশি দূর এগোয়নি। কিন্তু বইয়ের পাতায় শার্লককে খুঁজেছি বারবার। আমার মত অলস প্রকৃতির পাঠক, যে কিনা এক বই সহজে দ্বিতীয়বার পড়ে না, সেই আমি রচনা সমগ্রটি কতবার পড়েছি তার কোন হিসেব নেই। “২২১/বি, বেকার স্ট্রীট, লন্ডন”- এখনো আমাকে ঠিক আগের মতই টানে। টিভি সিরিজ কিংবা মুভিতে যখনই শার্লককে দেখার সুযোগ পেয়েছি, হাতছাড়া করিনি।
অগণিত এডভেঞ্চারপ্রেমীদের মতো শার্লক হোমস আমার স্মৃতিতে বেঁচে থাকবেন আজীবন।

…..চলবে

১ম পর্ব

Raihan Atahar
Postgraduate Researcher at Bernal Institute
Material and Metallurgical Engineering at BUET

 

একই দিনে তিনটা নারী নির্যাতন কেস!

ডা. মিথিলা ফেরদৌস


প্রথম কেস: মা মেয়েকে নিয়ে আসছে,স্বামী মেরেছে। ইনজুরি গুরুতর না। সারা শরীরে মারের চিহ্ন। চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দিলাম, তারা যাচ্ছেনা সার্টিফিকেট চায়। এই কাজ আমি সাধারণত এভোয়েড করি তাই ইমার্জেনসীতে যেতে বললাম। যদি উপকার হয় কিছু।

দ্বিতীয় কেস: স্বামী স্ত্রী দুইজন একসাথেই এসেছে। মেয়েটার থুতনীতে কাট ইনজুরি।দেখেই বোঝা যায় কেউ মেরেছে। পুরুষটি এসেই বলে।
: সেলাই করে দেন।
: কখন কেটেছে?
: ৫/৬ঘন্টা হবে।

এই পর্যায়ে মহিলা বলে,
: শেষ রাতে।
হিসাব করে দেখলাম প্রায় ৮/৯ ঘন্টা। ৬ ঘন্টার মধ্যে হলে স্টিচ দেয়া যেতো।
: এখন আর সেলাই দেয়া যাবেনা, চিকিৎসা দিচ্ছি, আর ড্রেসিং করে নিয়ে যান।ভাল হয়ে যাবে। খুব ডিপ ক্ষত না।
পুরুষ টি ক্ষিপ্ত
: ডাঃ বলেছে, সেলাই দিতে।
: আমি কি তাহলে?
: ছেলে ডাঃ বলেছে।
: কেনো,মেয়ে ডাঃ কি চিকিৎসা জানে
না?
: আপনি সেলাইয়ের ব্যবস্থা করেন।
: কিভাবে হইছে?
: স্বামী স্ত্রীর কথা কাটাকাটি।
মনে মনে ভাবলাম, কথা কাটাকাটিতে স্বামীর কিছুই হইলো না!!
বুঝলাম, অশিক্ষিত শ্রেণী, নারীর প্রতি অবজ্ঞা, এরে বুঝায় লাভ নাই। ছেলে ডাক্তারের কাছে পাঠায় দিলাম।

তৃতীয় কেস: মোটামুটি অবস্থাপন্ন ঘরের, শিক্ষিতই মনে হলো। মেয়েটা দুই চোখ ফুলে কালো হয়ে গেছে, মেয়েটা টলতেছে। মাথায় ব্যথা পেয়েছে।
টিকিট নিয়েই হেড ইনজুরী কেস লিখে, নিউরো সার্জারি ডিপার্টমেন্ট এ পাঠায় দিলাম। ডিপার্টমেন্ট এর ওপিডি বন্ধ। তারা ফিরে আসছে।

এই ছেলের মধ্যেও উদ্ধত ভাব।
: আপনি চিকিৎসা দেন। এইটা নরমাল কেস।মাথার বাইরে ব্যথা পাইছে।
বুঝলাম নিউরোর পিওন, এইটা বুঝায় পাঠায় দিছে, ঝামেলা কমানোর জন্যে।বললাম,

: আমি নিউরোসার্জারিতে ট্রেনিং করে আসছি, কোনটা ভিতরের ব্যথা আর কোনটা বাইরের আমি বুঝি। আমরা যেকোন সময় জ্ঞান হারাতে পারে, তখন বিপদে পরতে পারেন।

ছেলেটা ভর্তি করবেনা, এখানে আইনত কিছু সমস্যা আছে তাই কোনমতে চিকিৎসা নিয়েই বাড়ি নিয়ে যাবে। আমি আরও বুঝলাম, ছেলেটা কাপুরুষ শ্রেণীর, মেয়েদের সাথে এই শ্রেণীর পুরুষরা খারাপ ব্যবহার করে বিকৃত আনন্দ পায়। যেহেতু হাসপাতাল আমাদের সিকিউরিটি দেয় না। তাই আমিও বললাম,
: পাশের রুমে ভাল ডাক্তার আছে দেখান।

শিক্ষিত অশিক্ষিত সব শ্রেণীতে কিছু ছেলেমানুষ আছে যারা মেয়েদের নিম্ন চোখে দেখে, বউ পিটানো বীর পুরুষ এরা।এরা পিওন বা কোয়াককেও গুরুত্ব দিবে, কিন্তু শিক্ষিত মেয়ে ডাক্তার হোক, ব্যাংকার হোক, টিচার হোক পারলে তাদের সাথেও খারাপ আচরণ করবেই।এইটাই তাদের বীরত্ব। এইটাকেই তারা পুরষত্ব মনে করে। অসভ্য ইতর নিম্নশ্রেনীর এই সব পুরুষ মানুষ,যত উচু বা নীচু পরিবার থেকেই আসুক, মেয়েদের সবসময় নিম্নজাতের মনে করে, কারন হয়তো পরিবারে নিজের মাকেও এমন অপমানিত হতে দেখেছে। এরা শিক্ষিত হলেও তাই এদের মানসিকতার পরিবর্তন আসে না।

এর আগের পোস্টে নারী শিক্ষা তথা আমাদের সার্বিক শিক্ষা নিয়েই বলেছি।আজ এইসব কাপুরুষদের জেনেটিক্স নিয়ে বললাম। কিছু অমানুষ বীর পুরুষ যুগে যুগে বুঝবেনা, নারীদের সম্মান করাই প্রকৃত শিক্ষা।

নারী নির্যাতনে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষে। যেভাবেই হোক শীর্ষে তো আছি তাইনা?

ডা. মিথিলা ফেরদৌস
বিসিএস স্বাস্থ্য
সাবেক শিক্ষার্থী, রংপুর মেডিকেল কলেজ।

 

বিয়ে ও সমাজ (পর্ব-৪)

কানিজ ফাতিমা


পরিবারে দ্বন্দ নিরসন এর পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করছিলাম গত সংখ্যায়। আমরা জেনেছি যে, Conflict Management বা বিরোধ ব্যবস্থাপনার উপায়গুলো হল-

1. Forcing
2. Accommodating
3. Avoiding
4. Compromising
5. Collaborating

Forcing (চাপ প্রয়োগ), ও Accommodating (মেনে নেয়া) পদ্ধতি দু’টি সম্পর্কে আমরা জেনেছি। এবার বাকী তিনটি পদ্ধতি জানা যাক-

Avoiding বা সরে যাওয়া
দ্বন্দ সম্পর্কে নিশ্চুপ থাকা, কোনরূপ মনোযোগ না দেয়া এবং দ্বন্দ নিরসনে কোন ভূমিকা পালন না করা ও নিস্ক্রিয় থাকা। এটি Non-assertive ও non co-operative অর্থাৎ এ পদ্ধতিতে কোন চাপ প্রয়োগ নেই আবার কোন সহযোগিতাও নেই। যদি দ্বন্দের বিষয়টি খুবই নগণ্য হয় অথবা যদি আপনি মনে করেন যে কিছু সময় পরে প্রতিপক্ষ নিজে থেকেই চুপ হয়ে যাবে তবে এই Avoidance বা অগ্রাহ্য পদ্ধতিটি প্রয়োগ করা উত্তম। অনেক ছোট-খাট দ্বন্দ পারিবারিক জীবনে ঘটে যা সময়ের ব্যবধানে আপনা থেকেই সমাধান হয়ে যায়। এই সব টুকিটাকি ব্যাপারে Avoiding খুবই কার্যকরী পন্থা। যেমন ধরুন যদি আপনার স্ত্রীর উপরে কোন কারণে Stress বা চাপ বেড়ে যায় (যেমন সন্তান অসুস্থ, বাসায় অতিরিক্ত মেহমানের চাপ ইত্যাদি), এবং এ কারণে তার মেজাজ কিছুটা খিটখিটে হয় এবং আপনার সঙ্গে দ্বন্দে লিপ্ত হয় হবে এক্ষেত্রে Avoiding সর্বাপেক্ষা উত্তম পন্থা। তবে অন্যপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ বা মৌলিক দাবীর মুখে লাগাতার নিশ্চুপ থাকা বা Avoiding পদ্ধতির ব্যবহার একটি অকার্যকরী পন্থা।

Collaborationবা সংযোগিতামূলক:
এটি সর্বাপেক্ষা উত্তম পন্থা। দ্বন্দ নিরসনের এ পদ্ধতিতে অন্যপক্ষের মতামতকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হয় সাথে সাথে নিজ মতামতকেও সুদৃঢ়ভাবে উত্থাপন করা হয়। এ পদ্ধতিতে দু’পক্ষকেই মনে রাখতে হয় যে মতামতের ভিন্নতা থাকা স্বাভাবিক এবং প্রত্যেকেরই নিজস্ব মত পোষণের অধিকার আছে। এ পদ্ধতিতে দু’পক্ষের আলোচনার ভিত্তিতে এমন একটি পথ খুঁজে বের করা হয় যাতে দুপক্ষের দাবীই পরিপূর্ণরূপে পূরণ হয়। এজন্য একে Win-Win পদ্ধতি বলা হয়।
যেমন ধরুন, স্বামী বললো আজ আমরা পার্কে বেড়াতে যাবো। স্ত্রী বললো আমি আজ চায়নিজ (ফুড) খেতে চাই। তারা যদি পার্কে বেড়িয়ে ফেরার পথে চায়নিজ খেয়ে আসে তবে তারা Collaboration পদ্ধতির মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করলো। এই পদ্ধতিটি বিরোধ নিরসনের সর্বাপেক্ষা উত্তম পন্থা। কিন্তু সমস্যা হল সব সমস্যায় এমন উপায় খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন যাতে দু’পক্ষের দাবী পূর্ণরূপে পূরণ হয়।

Compromise বা আপোসমূলক পদ্ধতি হল সম্ভবত:
সর্বাপেক্ষা বেশী ব্যবহৃত বিরোধ নিরসন পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে দু’পক্ষের দাবীর কিছু অংশ মেনে নেয়া হয় এবং দু’পক্ষই তাদের অবস্থান থেকে সরে এসে মাঝামাঝি কোন স্থানে আপোস রফা করে। যদি Collaborating সম্ভব না হয় তখন স্বামী-স্ত্রীর উচিত Compromise-এর মাধ্যমে বিরোধ নিরসনের প্রচেষ্টা চালানো। যেমন ধরুন স্বামী চাইলো তার অফিসের কাছাকাছি বাড়ি ভাড়া করতে। স্ত্রী চাইলো তার অফিসের কাছাকাছি বাসা নিতে। তারা যদি দু’জনের অফিসের মাঝামাঝি কোন স্থানে বাসা নেয় তবে তারা Compromise পদ্ধতির মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করলো।

উপরোক্ত পাঁচটি পদ্ধতি জানার পর আপনি প্রশ্ন করতে পারেন কোন পদ্ধতিটি সর্বাপেক্ষা উত্তম? মূলত: প্রত্যেকটি পদ্ধতিরই কিছু ভাল ও কিছু দুর্বল দিক রয়েছে। তাছাড়া অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে একেক সময় একেকটি পদ্ধতি বেশি কার্যকরী প্রমাণিত হয়। তবে সাধারণভাবে বলা যায় স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে Forcing পদ্ধতি যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত। এবং Collaborating ও Compromising পদ্ধতি দু’ টি সর্বাপেক্ষা বেশী অনুসরণ করার চেষ্টা করা উচিত।

(চলবে)

পর্ব-৩

 

মাহে রমজানে ইফতারির রেসিপি

ফল, সবজি ও ছোলার সালাদ

উপকরণ
– ছোলা পৌনে ১ কাপ,
– যেকোনো সবজি টুকরা আধা কাপ,
– বিটলবণ আধা চা চামচ,
– শসা ১ টেবিল চামচ,
– আনারস আধা কাপ,
– কাঁচা মরিচ কুচি ১ চা চামচ,
– খেজুর আধা কাপ,
– ধনিয়াপাতা কুচি ১ টেবিল চামচ,
আলু সিদ্ধ ৩টি,
-ডালিম পরিমাণমতো,
-নাশপাতি ১টি,
-লেবুর রস ১ টেবিল চামচ,
-লবণ পরিমাণমতো।

প্রণালি
১. ছোলা সারা রাত ভিজিয়ে রেখে অল্প সিদ্ধ করে নিন।

২. আনারস, খেজুর, আলু সিদ্ধ, নাশপাতি চারকোনা করে কাটুন।

৩. সবজি হালকা লবণ দিয়ে সিদ্ধ করে নিন।

পরিবেশন: এরপর ছোলা, সবজি ও ফলের সঙ্গে বিটলবণ, কাঁচা মরিচ কুচি, ধনিয়াপাতা কুচি, লবণ, লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে পরিবেশন করুন। রেসিপি : কালের কন্ঠ

গোলাপ পিঠা

প্রয়োজনীয় উপকরন
ডো তৈরির জন্যঃ
– চালের গুড়া ২ কাপ
– চিনি আধা কাপ
– ডিম ১ টি
– তেল ২ টেবিল চামচ
– দুধ ১ কাপ
– ঘি ১ টেবিল চামচ
– তেল ডুবো তেলে ভাজার জন্য পরিমান মত ।

সিরা তৈরির জন্যঃ
– চিনি ২ কাপ
– পানি ২ কাপ
– সাদা এলাচ ২ টি
– লং ১ টি

প্রস্তুত প্রনালী
( ১ ) প্রথমে চিনি, পানি, এলাচ ও লং একসঙ্গে জ্বাল দিয়ে সিরা তৈরি করে রাখতে হবে ।

( ২ ) এরপর একটি পাত্রে দুধের সাথে চিনি দিয়ে ফুটতে দিতে হবে । দুধ ফুটতে শুরু করলে চালের গুঁড়া দিয়ে সিদ্ধ শক্ত কাই বানাতে হবে ।

( ৩ ) এবার শক্ত সিদ্ধ কাই একটু ঠান্ডা করে নিয়ে এর সাথে ডিম ভেঙে দিয়ে এর মধ্যে ঘি দিয়ে খুব ভালোভাবে ময়ান করতে হবে । এভাবে সুন্দর ভাবে ময়ান করে মসৃন ডো বানাতে হবে ।

( ৪ ) এখন মসৃন ডো থেকে অল্প করে আটা নিয়ে ছোট ছোট গোল পাতলা রুটি বানাতে হবে। এরপর ৬ টা ছোট রুটি নিয়ে একটার উপর আরেকটা রেখে ছবির মত করে সাজাতে হবে । তারপর রুটি গুলোকে গোল করে ভাঁজ করে রোল বানিয়ে চাকু দিয়ে কেটে দুই টুকরো করলেই দুইটা গোলাপ হবে । কমেন্টে ছবি দেয়া আছে, দেখুন ।

( ৫ ) ভালো ভাবে বুঝার জন্য ছবিতে দেখুন । তারপর গোলাপ গুলোর নিচের দিকে হাত দিয়ে একটু চেপে দিলে খুলে যাবে না ।

( ৬ ) এভাবে একই পদ্ধতিতে সব টুকু আটা দিয়ে অনেক গুলো গোলাপ তৈরী করতে হবে। এরপর গোলাপ গুলো ডুবো তেলে বাদামী করে ভেজে সিরায় ছাড়ুন ।

( ৭ ) এটা সিরায় ভেজানো গোলাপ পিঠা । তাই সিরাতেই ভিজিয়ে রাখতে হবে । সিরায় ভেজানোর পর ঢেকে ২-৩ ঘন্টা রেখে দিন । তৈরী হয়ে গেল মজাদার গোলাপ পিঠা ।

পরিবেশন: গোলাপ পিঠা সিরায় ভিজে নরম হলে পরিবেশন করতে হবে । এই উপকরনে ৫-৬ জনকে পরিবেশন করা যাবে । রেসিপি- আফরুজা শিল্পী।

 

‘সত্যি বলছি পবিত্র হব’

তামান্না সাদিকা


এই সময় তীব্র কড়া রোদের মাঝে হুট করে যে বৃষ্টি চলে আসে ছোটবেলায় আমি এই বৃষ্টিটাকে কান্না মনে করতাম। নিঃসঙ্গতার কান্না। এই বৃষ্টিটাই গাছে গাছে নতুন পাতা এনে দেয়। আমার জানালার সামনে গাছের কচি কচি পাতা গুলো দেখতে কি পবিত্র লাগছে…! বৃষ্টি যেন সব অপবিত্রতা মুছে নিয়ে গেছে…। কেমন যেন একা লাগছে … খুব একা ।। নিঃসঙ্গ… গাছের পাতা গুলোর মতো পবিত্র হতে ইচ্ছে করছে।

একটা সময় খুব চেষ্টা করেছিলাম পবিত্র হবার … কে জানে হয়তবা হয়েছিলাম কিছুটা।
ইদানিং ফেসবুকে জঘন্য সব ধর্ষণের ঘটনা পড়ে বুক ভরতি করে বমি করে এসে ক্লান্ত লাগে। পাশে শুয়ে থাকা বেবিদের দিকে তাকিয়ে অজানা আতঙ্ক আচ্ছন্ন করে ফেলে …। নামাজের সাথে সংমিশ্রিত পরের অনিষ্ঠ, পশুত্ব, মানসিক যৌন চর্চা। আমার পাশের প্রিয় গুড বয়টি দিনের আড়ালে দ্বিধাহীন মাতাল। একাকীত্বের মুহূর্তগুলোতে চেনা যায় আমার আমি কে …। রোজার সাথে মিথ্যা, ভ্রান্তি …। ছোট ছোট ভাল কাজ গুলো না করতে পারলে বড় বড় ভালো কাজ কিভাবে করবো …।
যারা পৃথিবী বদলে দেবার স্বপ্ন দেখে তাদের তর্জনীর আঙ্গুলটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে রেখে পথ চলতে হয় …। সত্যিই বলছি পবিত্র হব ।
এসবের সাথে নিজের জীবন আচরণ মিলে গেলে, কেমন অপবিত্র অপবিত্র লাগে …। সহজ, সাবলীল সুন্দর কাজে যেগুলো বাঁধা হয়। গতিকে slow করে দেয়, আর হয় spritual অন্তরে বোধের বিনাশ…। বোধের উদয় না হলে কি ধর্ষণ আইন দিয়ে ঠেকানো যাবে …। ভয় লাগে এখন আমার বোধের সাথে আমার সন্তানের বোধ তৈরি হচ্ছে …। সব ভুলতে চাই।
সব …সব ভুলে পবিত্র হতে চাই…
আমরা কেউ পরিপূর্ণ না কাছের মানুষ গুলো একজন আরেকজনের gap গুলো পূর্ণ করে করবে …। তাহলেই সহজ হবে … …।
আহা, আমার এলোমেলো অগোছালো চুলগুলোতে উষ্ণ ছোঁয়ায় যদি সে বলে “এসো পবিত্র হই” … এর চেয়ে প্রশান্তির আর কিইবা হতো …।

‘ হে প্রভু পবিত্র এই মাসে আমাকে একটু পবিত্র করো পবিত্রতার রূপে যেন সব অনিষ্ঠ গুলো ঝলসে যায় … অপার্থিব ঘ্রাণে সুরভিত হোক প্রত্যেক অন্তর ….।”
Inspired by : ( sura all mayeda 100)
قُل لاَّ يَسْتَوِي الْخَبِيثُ وَالطَّيِّبُ وَلَوْ أَعْجَبَكَ كَثْرَةُ الْخَبِيثِ فَاتَّقُواْ اللّهَ يَا أُوْلِي الأَلْبَابِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
বলে দিনঃ অপবিত্র ও পবিত্র সমান নয়, যদিও অপবিত্রের প্রাচুর্য তোমাকে বিস্মিত করে। অতএব, হে বুদ্ধিমানগণ, আল্লাহকে ভয় কর-যাতে তোমাকে মুক্তি পাও।

Say: “Not equal are things that are bad and things that are good, even though the abundance of the bad may dazzle thee; so fear Allah, O ye that understand; that (so) ye may prosper.”

 

সম্মানের মৃত্যুর সন্ধানে

ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস


মৃত্যু একদিন প্রমাণ করে দিবে, আমরা এই পৃথিবীর কেউই নই, আহামরি কোন গুরুত্বপূর্ণ কেউই নই। এরপর আমরা হারিয়ে যাব বিস্মৃতির অতল তলে। বন্ধু বান্ধব এবং পরিবারের সদস্যরা এক দিন দুদিন, এক মাস, এক বছর এক যুগ কাঁদবে এর বেশি নয়।

সত্যি করে বুকে হাত দিলে বলেন তো, পাঁচ বছর আগে মারা যাওয়া আপনার কোন ফ্যামিলি মেম্বারের জন্য আপনি কি এখনো নিয়মিত কান্না করেন?

– অবশ্যই না।

– তাহলে?

– মৃত্যুর পরেও কীভাবে বেঁচে থাকব?

– হুম, উপায় আছে।

উপায় হচ্ছে বিশ্ববাসীর জন্য দীর্ঘমেয়াদী কিছু করে যাওয়া, জীবনকে পরার্থে বিলিয়ে দেওয়া, নিজের চিন্তা এবং কর্মের উত্তরসূরি রেখে যাওয়া।

বেঁচে থাকার এটিই সহজতম পথ।

আসুন মানুষের জন্য স্বচ্ছ এবং পবিত্র নিয়তে কিছু করি।

এই মৃত্যু আমাদের আরও শিখিয়ে গেল যে, সার্টিফিকেট বা ডিগ্রি অর্জন জীবনের মূল লক্ষ্য হতে পারে না, ডিগ্রির ফল ভোগ করার সুযোগ স্রষ্টা নাও দিতে পারেন। কাজেই জীবনের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিৎ একজন ভাল মানুষ হওয়া, মানুষের মত মানুষ হওয়া।

আজ আমাদের কিছু কলিগ মারা গেল। কাল এই মৃত্যু আমার আপনার ও হতে পারে। গতকাল এই সময়ও মানুষ গুলো জানত না যে তারা আজ এই সময়ে বেঁচে থাকবে না। আমরাও জানি না, কাল আমরা সবাই এই সময় বেঁচে থাকব কিনা।

যারা মারা গেছে তারা অনেক অনেক ভাগ্যবান। আল্লাহ হয়ত এই বড় ধরনের দুর্ঘটনায় তাদের মাফ করবেন।

আমার আপনার কী হবে, কীভাবে সম্মানজনক মৃত্যু হবে সেই চিন্তা ই করা উচিৎ আমাদের।

বিশ্বনবী বলেছেন “কেউ যদি সুস্থ বরকত পূর্ণ হায়াত এবং সম্মানের মৃত্যু কামনা করে – সে যেন মানুষের উপকার করে আর আত্মীয় স্বজনের সাথে ভাল ব্যবহার করে”

সম্মানের_মৃত্যুর_সন্ধানে
Dr. Mohammad Ilias
Phase B Resident
Department of Neuromedicine
BSMMU

 

রাত জাগার ভয়াবহ কুফল

লাইফ স্টাইল


রাত হল অন্ধকার, অস্পষ্টতা যখন সূর্যের আলো অস্ত যায় তখন নেমে আসে রাত। আর চার্লস সিজিলার এর মতে, সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পরপরেই মানুষের ঘুমের হরমোনগুলো কাজ করতে শুরু করে। মানুষ যদি রাতের প্রথম অংশ না ঘুমায়, তাহলে ক্যান্সার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও বিষণ্ণতা সহ অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়। রাতের প্রথমাংশে ঘুমালে খুব সহজে এসব অসুখগুলো শরীরে দানা বাঁধতে পারে না।

রাত জাগার ভয়াবহ কুফল

ইচ্ছাকৃত আর অনিচ্ছাকৃতভাবেই হোক না কেন, ইদানিং রাত জাগাটা এক ধরনের ট্রেন্ড হয়ে গিয়েছে। আমরা এখন রাত জেগে কাজ করি আর ভোর হলে ঘুমাতে যাই। আমরা অনেকেই এখন রাত জেগে কাজ করতে পছন্দ করি ।

বিশাল কর্মব্যস্ততার এই ব্যস্ত নগরীতে আমরা এখন ভুলে যাই নিজেদের যত্ন নিতে। যার পরিণতি অল্প বয়সেই বুড়িয়ে যাওয়া সহ নানান জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়া। চলুন জেনে নেওয়া যাক রাতের বেলা না ঘুমালে কিংবা কম ঘুমালে আমরা কী ধরনের অসুবিধার
সম্মুখীন হই।

১) ক্ষুধা বেড়ে যায় এবং আপনি বেশি খেতে শুরু করেন। যার পরিণতি হচ্ছে অবেসিটি বা স্থুলতা।
২) স্ট্রোক করার ঝুঁকি চারগুণ বেড়ে যায়।
এছাড়াও অন্যান্য হৃদরোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায় ।
৩) টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৪) মস্তিষ্কের টিস্যু নষ্ট হওয়া শুরু হয়।
৫) ধীরে ধীরে স্মৃতিশক্তি হ্রাস পেতে শুরু করে।
৬) অ্যাসিডটি যেটা পরবর্তীতে পাকস্থলীতে আলসারে রূপ নেয় ।
৭) কর্মের ধারাবাহিকতা বিপর্যস্ত হয় এবং
কর্মচঞ্চলতা হ্রাস পায় ।
৮) কোন ব্যাপারে পূর্ণ মনোযোগ দেয়াটা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার হয়ে যায় ।
৯) সারাদিন একটা ক্লান্তি অনুভুতি হয় ।
১০) গ্যামিট কম তৈরি হয়। ফলে রিপ্রোডাকশন সিস্টেমের ফার্টিলিটি কমে যায় ।
১১) উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যায় ।
১২) চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পড়ে ।
১৩) ত্বকে ছোপ ছোপ দাগ পড়ে এবং ত্বকের রঙ নষ্ট হয়ে যায় ।
১৪) চামড়া দ্রুত কুঁচকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে ।
১৫) মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় ।
১৬) সারকোপেনিয়া হবার প্রবণতাও বেশি দেখা যায়। সারকোপেনিয়া হলো এমন এক জটিলতা যাতে রোগি ধীরে ধীরে পেশী হারাতে থাকেন ।
১৭) নারীদের মাঝে মেদবহুল পেট এবং মেটাবলিক সিনড্রোম হতে দেখা যায় বেশি।
১৮) স্তন ক্যান্সার এবং প্রস্টেট ক্যান্সারের
মতো ক্যান্সারের কোষ দেহে গঠন হয়ে থাকে অতিরিক্ত রাত জাগার কারণে !
অনেকদিন তারুণ্য ধরে রাখতে ঘুমের কোন বিকল্প নেই। নিয়ম মেনে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমালে শারীরিক এবং মানসিকভাবে খুব সহজেই সুস্থ্য থাকা যায়। সুত্র & ছবি: ইন্টারনেট

 

রূপনগরে ইসলামী ব্যাংকের প্রথম মহিলা শাখা উদ্বোধন

নারী সংবাদ


ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ৩৩৩তম ও প্রথম মহিলা শাখা হিসেবে মিরপুর মহিলা শাখা গতকাল ঢাকার মিরপুরে রূপনগর আবাসিক এলাকায় উদ্বোধন করা হয়।
ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য মো: আসলামুল হক প্রধান অতিথি হিসেবে এ শাখা উদ্বোধন করেন। ব্যাংকের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ও প্রধান নির্বাহী মো: মাহবুব উল আলম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন জাতিসঙ্ঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড: এ কে এম আব্দুল মোমেন ও ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টর আবু রেজা মো: ইয়াহিয়া। স্বাগত বক্তৃতা দেন ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ঢাকা সেন্ট্রাল জোনপ্রধান মো: শফিকুর রহমান।
ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ব্যাংকের সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও শাখাপ্রধান হাসনে আরা বেগম। গ্রাহক ও সুধীবৃন্দের পক্ষে বক্তব্য রাখেন লন্ডনের লেবার ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবুল বাশার ও নারী উদ্যোক্তা কানিজ শারমিন মুক্তা। ব্যাংকের নির্বাহী-কর্মকর্তা, স্থানীয় ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
মো: আসলামুল হক প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বলেন, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। ইসলামী ব্যাংকে উন্নয়নের সহযোগী হিসেবে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দেশের চলমান উন্নয়নে ইসলামী ব্যাংক আরো বেশি ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দেশের তরুণ সমাজকে মাদকের আগ্রাসন থেকে মুক্ত করার জন্য জনমত সৃষ্টি করতে হবে। ইসলামী ব্যাংকের কল্যাণমুখী সেবা গ্রহণ করতে তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান।
মো: মাহবুব উল আলম সভাপতির বক্তৃতায় বলেন, ইসলামী ব্যাংক দক্ষিণ ও দক্ষিণ এশিয়ার সর্বপ্রথম সুদমুক্ত ও শরিয়াহর ভিত্তিতে পরিচালিত ব্যাংক। এ ব্যাংক দেশের উন্নয়ন নীতিমালার সাথে সামঞ্জস্য রেখে সব নিয়মনীতি পরিপালন করে ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। এই ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সততা, পেশাগত দক্ষতা ও আন্তরিক সেবা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্বীকৃত। জনগণের আস্থার ফলেই ইসলামী ব্যাংক বিশ্বের সেরা এক হাজার ব্যাংকের মধ্যে অন্যতম। বিজ্ঞপ্তি। সুত্র:নয়াদিগন্ত

 

কৈশোর স্মৃতিতে রমজান

হাবিবা মৃধা


রমজান মাস এলেই ছোট্ট প্রানটা নেচে  উঠত খুশিতে!আম্মুর  সাথে তারাবী পড়ার সে কি আনন্দ!যদিও তখন নামাজের নিয়মকানুন কিছুই জানতাম না যতটুকু মনে পড়ে আম্মু কতবার সিজদায় যায় এটা দিয়ে রাকাত পূর্ণ করা হত!

আর এখন দেখি জেনেবুঝেও মানুষ শুধু রাকাত পূর্ণ করতে তারাবী পড়ে অথচ সময় নিয়ে নিষ্ঠার সাথে তারাবীতেই রয়েছে সফলতা রাকাত পূর্ণ এরপরেই গুরুত্বপূর্ণ!

সবচেয়ে প্রিয় সময় ছিল ভোর রাতের সেহরী!ভোর রাতে ইমাম সাহেব কাকার কুরআন তিলাওয়াত আর সেহরী আহব্বানেই আমাদের ঘুম ভাঙত!মনে পড়ে এখনো গ্রামের সেই রমজান মাসের বেহেশতি পরিবেশের কথা!

সবচেয়ে আনন্দের  ছিল দিনে যে আমার দুই তিনটা রোজা হত!কিন্তু সে পনেরো দিনে ত্রিশ রোজা পূর্ণ হওয়ার খুশি আর বেশি দিন টিকেনি ছোটভাইয়ার জন্য!

ভোর রাতে বড়ভাইয়া,মেজোদাদা,মেজোআপু সবাইকে ডেকে ডেকে উঠানো হত আমাদের  দুইভাইবোনের মনে হয় ঘুম পূর্ণ হতনা ভোর রাতে জাগার আশায়!

সবাই সেহরী খেয়ে আমাদের একটু শেষের দিকে খেতে ডাকত এখন মনে হচ্ছে সেটার কারণ ছিল দেরি করে খাবার খেয়ে যাতে দিন বারোটায় একটা রোজা হয়ে গেছে বলে খাবার খাই!

দ্বিতীয়ত আম্মু যাতে একটু শান্তি মত নামাজ পড়ে নিতে পারেন!আম্মু  কাজের ফাঁকেই সবসময় নামাজ তিলাওয়াতের জন্য সময় নিতে চাইতেন!

আমরা দোতলার সিঁড়িতে বসে থাকতাম কখন আম্মু বলবে তোমরা হাতমুখ ধুয়ে খাবার খাও!কিন্তু তাদের খাবার শেষ হতে না হতেই ছোটভাইয়া বলত সেহরীর সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে এরপর রোজা হবেনা তুমি কান্না করে দাও।

যেইকথা সেইকাজ! কিন্তু খাবারের জায়গা থেকে আদেশ আসত ঠিক আছে হাত মুখ ধুয়ে এসো কাল ঠিক দশটার পরে ই খাবার খেতে হবে!

একদিন নিয়মের বিপরীত ঘটল,পাশাপাশি  ঘুমিয়ে ছিলাম ছোটভাইয়া কে চুপি করে ডেকে নিয়ে এসেছে মেজো আপু,ঘুম ভেঙ্গে সে কি মনখারাপ!সেদিন সিঁড়িতে বসে কেদেছিল এই অবুঝ প্রাণীটি!

সকালে ছোটভাইয়ার সাথে অভিমান!কোন কথা নেই!অতঃপর তার সুন্দর বাণী ছিল এমন শোন!আমাকে এখন ডেকেই উঠানো হবে আমার পুরো রোজা থাকার বয়স হয়ে গেছে আর তুমি আরেক টু বড় হলে!আর দিনে যে দুইটা রোজা এগুলো কোন সত্যি রোজা নয় দিনে কিছু খেলেই রোজা হবেনা!

আম্মু কে একটু বেশি ই জ্বালিয়েছি এখন মনে পড়ে খুব মন খারাপ হয়!আম্মু চাইতেন ভোর রাত্রে একটু একা নিভৃতে নামাজ পড়তে আমরা ভাই বোন মিলে পুরো ঘরে বাইরে সেহরী আমেজ গড়ে তুলতাম!বড় ভাইয়া খেতে বসে কি মজার মজার ঘটনা ঘটাত আর সেই নিয়ে হাঁসি !!

ছোটভাইয়ার প্লেট থেকে মাছ ভাতের নিচে লুকিয়ে রেখে বলত বিড়াল নিয়ে গেছে আর সে সন্দেহ করতে নীরব চুপচাপ খেয়ে বাঁচতে চাওয়া মেজোদাদাকে!একটু পর প্লেটের ভাতে হাত দিয়ে মাছ পেতেই শুরু হত হাঁসি!

আম্মু বলতেন আশেপাশের মানুষেরা আগেই সেহরী খেয়ে ইবাদত বন্দেগী করছে তোমরা হইহুল্লোর করে পুরো বাড়ি মাথায় তুলছ!

আম্মু কে সবচেয়ে বেশি জ্বালিয়েছি সেহরীর তরকারি নিয়ে!আমার একটা সাথী ছিল যার ঘরে রমজান মাসেও খুব একটা মাছ মাংস হতনা হয়ত বিশেষ উপলক্ষ ছাড়া!ও রাতে আমার কাছে ঘুমাতে আসত বেশিরভাগ সময় ই আমি জিজ্ঞেস করতাম আজ রাতে ওরা কি খেয়েছে ,ভোর রাত্রে কি খাবে??

কখনো ডিমরান্না,সবজি আর বেশিরভাগই আলুভর্তার কথা বলত!একদিন রাতে ও বলল আজ ওদের শুধু আলুভর্তা কিন্তু ওটা খুব মজা!! পেঁয়াজ তেলে নেড়ে বানিয়েছে ওর মা!আমার শুনে ই খেতে ইচ্ছে করল কিন্তু ওকে বলিনি সম্ভবত!

আমাদের ঘরে সেদিন ইলিশ মাছ কিন্তু একটাই মাছ যাতে ছটুকরো মাছ মাথা লেজ সহ আট পিচ হয়!আম্মুর হয়তো খেয়াল ছিল ওদের ঘরে দুই টুকরো রান্না করা মাছ পাঠিয়ে দিবে যেহেতু আমাদের ঘরে ছয়জন আমরা!

আমার এখনো মনে পড়ে আম্মু ওদের জন্য তরকারি দিতেই আমি বলি আম্মু দুই টুকরো মাছ পাঠালে ওর ছোট ভাইবোনদের জন্য ও খেতে পায়না আমার মাছ টুকরো আমি ওকে দিতে চাই আমাকে শুধু মাছের ডিম দিলেই হবে!আম্মু সহজ করে বললেন আজকে আশেপাশে সবাই মাছ এনেছে ওদের কে দিবে তো!

রাতে আবার সাথীকে জিজ্ঞেস করলাম কেউ তরকারি দিয়েছে ওর উত্তর নাতো!

আম্মু কে নামাজের ভিতরে গিয়ে আবার বলি আম্মু কেউ তরকারি দেয়নি ওদের ! আমার কথায় আম্মু সেদিন হয়ত বিরক্ত হয়েছেন কিন্তু রাগ করেন নি মোটেও তাছাড়া রাগমুখে আমি আম্মু কে দেখিনি!

এরপরে আম্মু নিজের টুকরো আমার সহ চারটুকরো মাছ দিয়ে আমতা আমতা করে কিছু একটা বলছিলেন শান্তি থাক এবার এমন!ভোর রাতে আম্মু আলুর ঝোল দিয়ে খেয়েছিলেন আর আমার জন্য ডিম রেখেছিলেন!

আজ খুব করে মনে পড়ছে সেই দিনটির কথা !আসলে নিজেরা মাছ গোশত দিয়ে পেটপুরে খেলেই বুঝি রোজা হয়!সমাজের মানুষের সেহরী আমেজ দেখে তাই মনে হয়!

তবে এর বিপরীতে ভালো মানুষ ও থাকেন সবসময় ই কম বেশি!আমাদের ইমাম সাহেব কাকার বাবা যাকে মাষ্টার দাদা ডাকি আমরা!এখনো পর্যন্ত রমজান মাসে তিনি ইফতারী নিয়ে সবার ঘরে ঘরে ঘুড়ে বেড়ান বিশেষ করে যাদের একটু আয়োজন কম হত তাদের জন্য!

প্রথম প্রথম যখন রোজা রাখতে শুরু করেছিলাম সেটাই বেশি মজার ছিল বার বার হাদীসে কুদসীর সেই হাদীস মনে পড়ত আল্লাহ্ নিজেই প্রতিদান দিবেন

তখন ভিতরে শুধু ভাইয়ার কাছে শোনা #বুখারী  শরীফের হাদীসের কথা মনে পড়ে খুশি লাগত:রোজাদারের মুখের গন্ধ কস্তুরীর চেয়ে ও উত্তম!রোজাদার দুইবার খুশি হয় একবার ইফতারে দ্বিতীয়বার রবের সাথে সাক্ষাত লাভে!!

!ভাইয়া দুষ্টামি করে বলত তুমি ডুব দিয়ে পানি খেয়েছ গোসলের সময় আর আমি ভাবতাম সত্যি!!আবার আম্মুর কাছে গিয়ে কান্না!

আম্মুর ইফতার বানাতে বানাতে বেশিরভাগ সময় ই আজান দিয়ে দিত আর  আম্মু খুব আফসোস করতেন সময় নিয়ে ইফতারের আগে দোয়া ও করতে পারিনা!! মায়েদের সংসারের সব কাজ সেরেই আবার সবার মুখে খাবার দিতে ইফতার তৈরি রান্নাবান্না আরো কতকাজ!

পাশের ঘরে ইফতার নিয়ে যেতে যেতে প্রায় সময় ই আজান দিয়ে দিত আর আমার ইফতার হত তাদের সাথে অবশ্য তারাও রখুব খুশি হতেন আর ঘরে ফিরে সবার কতরকম কথা শুনতাম!!
পবিত্র ক্বদরের রাত্রিতে সাথীরা মিলে গোসল করতাম প্রতি ফোঁটা পানিতে গুনাহ মাফ হবে তাই বেশি করে সাবান মাখা তবে আজো কোথাও এমন দলীল পাইনি একসাথে তারাবী,একসাথে কদর পড়তাম আমরা সাথীদের খুব মিস করি এসবের জন্য এখনো!

ছোট চাচাতো বোনটা একটু মাঝে মাঝে তারাবীতে আলসেমি দেখালে আম্মু শিখিয়ে দিতেন চার রাকাত পর পর মোনাজাত করতে আর প্রতি বার এটা মনে করতে প্রথমবার তারাবী শুরু করছি!সত্যি ই আম্মুর কথামত আমরা তাই করতাম বিশ রাকাত তারাবী কখন শেষ হত এতটুকু বিরক্তি আসত না!তাই ভাবছি রমজান মাস রোজার সাথে তারাবী আমাদের জন্য বিশেষ এক নেয়ামত সুস্থ মানুষদের রাকাত সংখ্যা নিয়ে কিসের এত বিরোধ!তাছাড়া প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীগন যেহেতু বিশ রাকাত পড়েছেন!

কৈশোরের ইবাদত খুব নির্ভেজাল হয় বার বার ইচ্ছে করে আবার সেই কৈশোরের রমজানে ফিরে যাই আম্মু কে জ্বালানোর মুহূর্ত গুলো ফেরত দিয়ে দেই আম্মু আজ তোমার যতখুশি নামাজ পড় কারণ আব্বুর পরিশ্রম আর আম্মুর দোয়া ই হয়তো আমাদের যতটুকু সফলতা তার পিছনের চাবিকাঠি!!কতদিন আম্মুর সাথে ইফতার হয়না ভোর রাত পেরিয়ে উঠানে হাটতে হাঁটতে  সুবহে সাদিক দেখা

হয়না! আবার কবে সব ভাইবোন মিলে আমেজ পূর্ণ সেহরী ইফতার হবে আম্মুর সাথে!!সবাই অনেক বড় হয়ে গেছি এই শহরে যে যারমত বন্ধু বান্ধবের সাথে ইফতার করি আম্মু হয়তো সেই আগের মতোই ইফতার নিয়ে বসেন আর আমাদের জন্য দোয়া করেন!!

হাবিবা মৃধা!!
শিক্ষার্থী ঢাবি!

 

জুতাচোর

জাহেদ উদ্দীন মোহাম্মদ


নাহিনের বাসায় এখন তুলকালাম অবস্থা। বিকালে বাবা এসেছে। রাতে খাবার পরেই ঘটনার শুরু। নাহিন ভাবছে, সব দোষ তার একার। কেন যে সে বাবাকে আসতে বলল!
এই নিয়ে এখন আফসোসের শেষ নেই।
নাহিনের মা সরকারী চাকুরে। বাবার বেসরকারি । পোস্টিং বরিশাল। নাহিনরা দুই ভাই, এক বোন। সবার বড় নাহিন, তারপর জাহিন, ক্লাস ফাইভে পড়ে। পিচ্ছি বোন অরিন, পড়ে ক্লাস টু’তে। খুবই বাবার ন্যওটা। ওরা সবাই চট্টগ্রামে মা’র নামে বরাদ্ধকৃত সরকারী কোয়ার্টারে থাকে। ।
নাহিনদের একটা হাসিখুশির সংসার। মা’র যা একটু ঝনঝনে মেজাজ। এইটুকু ছাড়া পুরা ঘরটা যেন শান্তির নহরে ভাসে। মাস শেষে বাবা ছুটিতে বাসায় এলেই পিচ্ছিদের কাছে ঈদের আমেজ। অরিন বাবার কাঁধে, জাহিন পিঠে আর নাহিনের হাত ধরে বাবা বাসার ছাদে চক্কর দেয়। তখন খুব মজা। বাবার দখল নিয়ে অরিনের সাথে জাহিনের খুব ঝগড়া। অরিন বলে,
-এটা আমার বাব্বা, কেউ বাব্বার গায়ে হাত দিবে না। বাব্বা শুধু আমার।
ছোট্ট জাহিন মুখ আধাঁর করে ব্যালকানিতে পালিয়ে যায়। লোহার গ্রীল ধরে আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে ভেঁউ ভেঁউ করে কাঁদে। এই নিয়ে সবাই হাসাহাসি করে।
মা পিছনে গিয়ে জাহিনের চুলে বিলি কেটে কেটে আদর করে। তারপর জাহিনের যা শান্তি। ভাবখানা এমন-
-সবাই দ্যাখো, মা কিন্তু আমার।
বরিশালে গিয়ে নাহিনের বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে। তখন ছোট অরিনের বয়স মাত্র এক বছর। সবাই বলে মা’টা কি বোকা! বিয়ের দুই বছর পর এই কথা জানতে পারলো! কিন্তু বাবার বিয়ের সাথে মায়ের বোকামীর কি সম্পর্ক, নাহিনের মাথায় আসে না।
দ্বিতীয় বিয়ের পরও বাবা দুই-তিন মাস পর পর চট্টগ্রাম আসতো। সবাইকে খুব আদর করতো। তখন নাহিনের খুব রাগ হতো।, যখন দেখতো মা তুচ্ছ কারনেও বাবার সাথে ঝগড়া করে। একবার এক ফাগুন মাসে মা’র জন্য বাবা একটা লাল টগবগে শাড়ী আনলো। রঙ দেখে মা’র খুব চেছামেছি! সে কি রাগারাগি! তিনি রাগের মাথায় বাবার মুখে শাড়ী ছুড়ে মারে।
ভ্যাগিস, সেদিন কেউ বাবার মুখখানি দেখেনি।
সেদিনের পর হতে বাবা আর কখনো বাসায় আসেননি।
আগামী বিষুধবার নাহিনের জেএসসি পরীক্ষা। তাই ছেলের আবদার রাখতে আজ বাবার এই চলে আসা। রাতে বাবার নতুন কেনা জুতা চুরি হবে, সেই চুরি নিয়ে এতো কিছু ঘটে যাবে, কে জানতো? ঝগড়ার সুত্রপাত এখানে থেকেই। রাতেই বাবা চলে যাবেন তাই জুতা খুলে দরজার বাইরে রেখেছেন। । ছেলেমেয়েদেরকে নিয়ে একসাথে খাওয়া দাওয়া করলেন। মা খেতে বসলেন ন।
ফেরার সময় বাইরে এসে দেখেন নতুন জুতা নাই।
নাই মানে নাই।
একেবারে তাজ্জ্বব ব্যাপার!
প্রথমে কাজের লোককে জেরা করা হলো। তারপর কোয়ার্টার এর দাড়োয়ান। এমনকি ছোট্ট অরিনকেও জিজ্ঞাসা করা হলো।
কেউ কিছু স্বীকার করছে না।
বাবা রাগে গজ গজ করছেন। বারবার বলছিলেন-
– কদিন আগে ৬৯৯০ টাকায় কেনা নতুন জুতা আমার। মাত্র দুইবার পড়েছি।
বাবার প্লান ছিলো,ছেলেমেয়েদের সাথে দেখা করে নাইটকোচে রাতে ঢাকা চলে যাবেন। পরদিন অফিসের বার্ষিক সাধারন সভায় যোগ দেবেন। কিন্তু এখন উপায়!
তিনি অরিনকে আদর করে কাছে ডেকে মোলায়েম স্বরে বললেন-
-দেখো মা, জুতাগুলো তুমি নিয়ে থাকলে, দিয়ে দাও। কথা দিচ্ছি, আমি আবার আসবো। তোমাদের সাথে অনেকদিন থাকবো। লক্ষী মা আমার!
-না, বাব্বা আমি জুতা নিই নাই তো!
উপায় না দেখে হঠাৎ চোখ-মুখ গরম করে মেয়েকে ধমক দিতেই, সে হাউমাউ কেদেঁ উঠলো।
আর এই নিয়ে শুরু হলো স্বামী-স্ত্রী মধ্যে তুমুল ঝগড়া। বাবা পইপই করে পুরা বাসা খুঁজে দেখলো। কিন্তু জুতার কোন হদিস নাই।
নাহিন কিছু একটা বলতে চাইলেই ঘেউ ঘেউ করে উঠলো।
-চুপ! একদম চুপ, হারামজাদা কোথাকার! বলেই থামিয়ে দিলো।
পাশের ফ্লাটের লোকজন বেরিয়ে আসাতেই এই ঝগড়ার ঘুর্নি থামে।
বাবা নাহিনের স্পন্জ সেন্ডেল পা গলিয়ে হনহন করে বেরিয়ে গেলো।
এই জুতাচুরি নিয়ে আবাসিক এলাকায় নানা রকম আলোচনা।
কেউ কেউ নিশ্চিত দাঁড়োয়ান নিয়ে গেছে। এগুলো এরাই করে বা করাই।
কেউ বললো, কাজের মেয়ে ময়লার ঝুড়িতে করে বাহিরে নিয়ে গেছে।
তবে বেশীর ভাগের ধারনা, কুকুর নিয়ে গেছে। নতুন জুতার গন্ধে কুকুর মাতাল হয়ে যায়। আগে এভাবে অনেকের জুতা হারিয়েছে। সবার কথা শুনে নাইট গার্ড বলল, নাহিনের বাবার পিছপিছ একটা কুকুর এসেছিল। তবে দোতলা পর্যন্ত উঠেছে কিনা নিশ্চিত নন। কিছু লোক মা’র দিকে অশ্লীল ইঙ্গিত করে।
জুতা চুরির পর হতে নাহিনের বাবা পরিবারের কোন খোঁজ খবর নেন না।
তিন বছর পর….
নাহিন এসএসসি দিলো। জাহিন জেএসসি। অরিন পিএসসি দিলো।
নাহিনের বাবা এক ছুটির বিকালে বরিশালে নিজের বাসার বারান্দায় বসে আয়েশ করে চা খাচ্ছিলেন। এমন সময় তার তিন বছরের মেয়ে একটি হলুদ খাম দিয়ে বলল,
-বাপ্পা, এইতা মা ডিলো।
ছোট্ট একটি চিঠি। খামের উপর শুধু চট্টগ্রাম লেখা।
বাবা,
সালাম নিও। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও। বাবা, সেদিন তোমার জুতা আমিই চুরি করেছি। জানতাম, তুমি চলে যাবে কিন্তু পরদিন আমার যে পরীক্ষা! সবাই বাবাকে সালাম করে পরীক্ষার হলে যাবে। আমি কাকে সালাম করবো? তাই জুতা সরিয়েছি। প্রতিদিন পরীক্ষার হলে যাবার আগে লুকিয়ে তোমার জুতা জোড়া সালাম করতাম।
তুমি কিছুই টের পাওনি, বাবা?
বাবা, তুমি কি কখনো বাবাহীন ছিলে?
তুমি কি জানো, বাবাছাড়া সন্তানেরা কিভাবে বড় হয়?
জানো বাবা, এইবছর আমরা তিনজনেই পরীক্ষার্থী ছিলাম । গোপনে আমরা তোমার জুতা জোড়ায় সালাম করে, তারপর পরীক্ষার হলে যেতাম। আমাদের পরীক্ষার শেষদিন মা ঠিকই ধরে ফেললো।
যত ঝামেলার মুল তোমার মেয়ে ঐ অরিন। সে তোমার জুতা ধরে অনেকক্ষন কাঁদছিল আর বলছিল,
-বাবা, দোয়া করো। অ-নে-ক দোয়া!
-আচ্ছা বাবা, জুতা কি কখনো দোয়া করতে পারে? জুতা কি কখনো বাবা হয়? অথচ দেখো, কি বোকা মেয়ে অরিন! তোমার জুতাকেই বাবা ডাকে।
ইতি,
নাহিন।
চিঠি পড়াশেষে বাবা খানিক চোখ বন্ধ করে করে রইলেন।
ছলছল করে উঠে চোখ।
নিজের উপর প্রবল ঘৃনা আর তাচ্ছিল্যে কুকড়ে রইলেন।
আবার হঠাৎ দাড়িয়ে গেলেন…..
মনে হলো দুনিয়ায় এখনি গজব নাজিল হবে।

 

আমার বই পড়া (প্রথম পর্ব)

রায়হান আতাহার 


ছোটবেলায় রিডিং পড়তে শেখার আগে আমার মায়ের মুখে ছড়া শুনে ওগুলো মুখস্ত করে ফেলতাম। এরপর যখন রিডিং পড়তে শিখলাম, তখন থেকে কোন লেখা রিডিং করে পড়তে পারার মাঝে অদ্ভুত আনন্দ পেতাম। রাস্তায় বের হলেই আম্মুকে বিরক্ত করে ফেলতাম। বিভিন্ন পোস্টার, বিলবোর্ড রিডিং পড়তাম আর আম্মু ঠিক হয়েছে কিনা বলে দিত। ভুল হলে শুদ্ধ করে দিত।

আমার মনে আছে, একবার রাগ করে ছিলাম। আব্বু বাসায় ফেরার পথে একটা ভূতের গল্পের বই নিয়ে আসলো। আমার রাগ নিমেষেই গায়েব। ঐ বইটাই পাঠ্য বইয়ের বাইরে আমার পড়া প্রথম বই।

যে স্কুলে পড়তাম, সে স্কুলে একবার ছোটখাটো একটা বইমেলা হচ্ছিলো। নিজের পছন্দ অনুযায়ী সেবারই প্রথম বই কিনলাম। কিনেছিলাম “ছোটদের আরব্য রজনী”। কিনে আনার ঘন্টা খানেকের মধ্যে বই পড়া শেষ। খুব মন খারাপ হয়েছিল কেন যে এত তাড়াতাড়ি বই শেষ হয়ে গেল। ঐ বই ফেরত দিয়ে অন্য বই আনার চিন্তাও মাথায় এসেছিল, যদিও বাস্তবায়ন করা হয়নি।

বাসায় এক হুজুর আরবি পড়াতেন। উনি একবার গিফট করলেন সুকুমার রায়ের “পাগলা দাশু”। খুব ভাল লেগেছিল। ভাল লাগার পরিমাণ এতটাই ছিল যে, গত বছরেও সুকুমার রায়ের সব গল্পগুলো আবার পড়েছিলাম।

ছোটবেলায় একটা নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত একেক ধরনের বই পড়ার অভ্যাস ছিল। (এখন অবশ্য সর্বভুক)

প্রথম যখন স্কুলে যাওয়া শুরু করি, তখন কমিকস বইয়ের প্রতি খুব আগ্রহ ছিল। বিশেষত চাচা চৌধুরীর কমিকস। চাচা চৌধুরী, সাবু, রকেট, পিংকি, বিল্লু, এমনকি চাচাজির গাড়ি ডগডগ- এগুলোর জন্য পাগল ছিলাম বলা যায়। প্রতিটি কমিকস কম করে হলেও একশ বার করে পড়া ছিল।

চাচা চৌধুরী চরিত্রের নির্মাতা হলেন কার্টুনিস্ট প্রাণ। মজার ব্যাপার হল, আমি ভাবতাম কার্টুনিস্ট প্রাণ হলেন বাংলাদেশের প্রাণ কোম্পানির মালিক। তাই ঐ সময় প্রাণের জুস ছাড়া অন্য কোন কোম্পানির জুস খেতে চাইতাম না।

একটু বড় হয়ে যাওয়ার পর কমিকসগুলো ছোট এক কাজিনকে দিয়েছিলাম পড়তে। আর ফেরত পাই নাই।

(চলবে)

লেখক পরিচিতি:

Raihan Atahar
Postgraduate Researcher at Bernal Institute
Material and Metallurgical Engineering at BUET

 

অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ

আফরোজা হাসান


কয়েকদিন আগে এক বাসায় দাওয়াত থেকে ফিরে এসেই আমার কাজিন ঘোষণা দিলো ঐ বাসায় জীবনে আর কোনদিন যাবে না। কারণ জানতে চাইলে বলল, বাচ্চারা মিলে দুষ্টুমি করার সময় একটা শোপিস পড়ে ভেঙ্গে যাওয়াতে মেজবান ভাবী খুবই অসন্তুষ্ট হয়েছেন। বিভিন্ন কথার ফাঁকে কৌশলে মেজবান ভাবীটি বাচ্চাদের ভদ্রতা শেখানোর ব্যাপারে ছোটখাট কিছু পরামর্শও দিয়ে দিয়েছেন উপস্থিত অন্যান্য ভাবীদেরকে। এতে করে সবাই কম-বেশি অপমানিত বোধ করেছেন। সামাজিকতা রক্ষার্থে অনেক সময়ই আমাদেরকে এই ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের স্বীকার হতে হয়। বিশেষ করে যখন বাচ্চাদেরকে সাথে করে কোন বাসায় দাওয়াতে যাওয়া হয় তখন অনেক সময় না চাইতেও মেহমান ও মেজবানদের মধ্যে সূক্ষ্ম ভুল বোঝাবুঝির তৈরি হয়ে যায়। শিশুরা স্বভাবতই দুরন্ত, ছটফটে, চঞ্চল। আর কিছু কিছু শিশু তো আছে যারা মাত্রাতিরিক্ত ছটফটে ও চঞ্চল। এক মুহুর্ত এক জায়গায় স্থির থাকতে চায় না, সবকিছুতেই দুষ্টুমি করা চাই। সব বাসাতেই মুল্যবান কিংবা গুরুত্বপুর্ণ নানা জিনিসপত্র থাকে। শিশুরা না বুঝে সেসব ধরে এবং অনেকসময় না চাইতেও নষ্ট করে ফেলে। এই ধরণের পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হচ্ছে যদি শিশুদেরকে দিয়েই শিশুদের বোঝানোর কাজটা করিয়ে নেয়া যায়।

আমার বাসায় সবচেয়ে মূল্যবান বলতে যা আছে তা হচ্ছে বই। আমার ছেলে যখন হাঁটতে শিখলো তার সবচেয়ে প্রিয় কাজ ছিল সেলফ থেকে বই নামানো আর উঠানো এবং আমি খেয়াল না করলেই বই থেকে পৃষ্ঠা ছিড়ে সেটা খেয়ে ফেলা।

কি করা যায় ছেলেকে নিয়ে জানতে চাইলে ছেলের বাবা হেসে বললেন, এক কাজ করো ভক্ষককে রক্ষক বানিয়ে ফেলো। রাজকন্যা আর রাক্ষসের গল্প জানা থাকার কারণে আমার ছেলে জানতো যে রাক্ষসের প্রাণ থাকে সাগরের গভীর নীচে এক নীল ভোমরার ভিতর। ওকে বললাম রাক্ষসের প্রাণ যেমন ভোমরার ভেতর থাকে আম্মুর মন তেমন এই বইয়ের ভেতর। চোখ বড় বড় করে বলল, বইয়ের পাতা ছিঁড়লে কি তোমার হাত ছিড়ে পড়ে যাবে আম্মু? বললাম, আম্মুর হাত ছিড়ে যাবে না, আম্মু মারাও যাবো না কিন্তু আম্মুর মনে অনেক কষ্ট হবে। আম্মুর চোখ কান্নাও করতে পারে। করুণ স্বরে বলল, আমি চাই না তোমার মন কষ্ট পাক, তোমার চোখ কান্না করুক। এরপর থেকে আর কোনদিন সে আমার বই ধরে না আর ধরলেও ছিড়ে না। বাসার যখনি ওর বন্ধুরা আসে আগেই বলে দেয় যাতে বইয়ের সেলফের কাছে না যায়। এবং বইয়ের যতটুকু যত্ন তার পক্ষে করা সম্ভব করার আপ্রাণ চেষ্টা করে।

আমার বাসায় যেহেতু অনেক বাচ্চা আসে তাই ওদেরকে বোঝানোর দায়িত্ব আমি আমার ছেলেকেই দিয়েছি। বন্ধুরা আসার পর নিজেই বুঝিয়ে বলে যে, কিচেনে যাওয়া যাবে না, কোন কিছু খেতে ইচ্ছে করলে আম্মুর কাছে চাইতে হবে, ওয়াশরুম গিয়ে কোনকিছু নোংরা করা যাবে না, খেলনা ছাড়া অন্য কোন কিছু অনুমতি ছাড়া ধরা যাবে না ইত্যাদি। এতে আরেকটা সুবিধা হচ্ছে এই কাজগুলো সে অন্য কারো বাসায় বেড়াতে গেলেও করে না। আসলে বাচ্চাদেরকে যদি প্রত্যেকটা জিনিসের গুরুত্ব বুঝিয়ে বলা যায় তাহলে তারা বোঝে এবং মেনে চলতে চেষ্টা করে।

বন্ধুরা বাসায় আসলে তাদের সাথে কোন কোন খেলনা দিয়ে, কোথায় বসে খেলতে হবে, কোন কোন জিনিস ধরা যাবে না, কোন কোন কাজ করা যাবে না ইত্যাদি বাচ্চাকে সুন্দর মতো বুঝিয়ে বলে দিতে হবে। যাতে বাচ্চারাই করণীয় বর্জনীয় বুঝে সেইমতো চলতে পারে। বিষয়টা একটু কঠিন তবে বাবা-মা ধৈর্য্য ধরে চেষ্টা করলে ধীরে ধীরে বাচ্চারা এসব রপ্ত করে ফেলতে পারে। আর বাবা-মা মুক্ত থাকতে পারেন অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের স্বীকার হওয়া থেকে।

 

দূরে বহুদূরে হেরার রাজতোরণ

ফাতিমা শাহীন


কবি ফররুখ আহমেদ এর কবিতার সাথে আমাদের পরিচয় শৈশব থেকেই। দেশের শিশু কিশোর পাঠ্যক্রমে আগে সেসব বিষয়ই নির্বাচিত করা হত যেসব রচনায় থাকত নিষ্পাপ কচিপ্রাণ শিশু কিশোরদের মন ও মননকে বিকশিত করার সমৃদ্ধ উপাদান। ছোট্ট বেলা থেকেই যেন মনুষ্যত্বের পূর্ণ রূপটি শিশুদের নিষ্পাপ অন্তরে স্থায়ী আসন গড়ে নিতে পারে , শিক্ষা কার্যক্রমে থাকত সেই প্রচেষ্টা। এরই অংশ হিসেবে আমরা পড়েছি কবি কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী সাহিত্য সম্ভার , কবি গোলাম মোস্তফার অসাধারণ বিনির্মানগুলো , কবি ফররুখ আহমেদের উদ্দীপনাময় কাব্যসৃষ্টি সমূহ। এভাবে পড়তে পড়তে কবে থেকেই যেন ফররুখ আহমেদের পাঞ্জেরীর সাথে আমি হয়ে গেছি একাত্ম , অভিন্ন হৃদয় :

“রাত পোহাবার কত দেরী পাঞ্জেরী ,

এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘে

সেতারা , হেলাল এখনো ওঠেনি জেগে ?

তুমি মাস্তুলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে

অসীম কুয়াশা জাগে শুন্যতা ঘেরি। ”

তাইতো , ফররুখ আহমেদ আমার প্রানের কবি , আত্ম জাগরণের কবি , প্রিয় কবি !

ফররুখ আহমেদ বাংলা সাহিত্যের এক কালজয়ী প্রতিভার নাম। তিনি মুসলিম রেনেসাঁর কবি নামেই বেশি পরিচিত। বাংলা সাহিত্যের যে ক’জন স্বপ্নমুগ্ধ কবি ইসলামী মূল্যবোধ ও ভাবধারার মধ্যে থেকে পাঠকের চোখে ও অন্তরে তাদের স্বপ্ন ও মুগ্ধতাকে সমানভাবে ছড়িয়ে দিয়ে পারঙ্গম হয়েছিলেন , নি:সন্দেহে কবি ফররুখ আহমেদ তাঁদের মধ্যে একজন। ঘুনে ধরা , পাপ দগ্ধ এক সমাজের অন্ধকারের পর্দা সরিয়ে সুবেহ সাদিকের পবিত্র আভায় উদ্ভাসিত এক ভোরের পরম আকাঙ্খী ছিলেন তিনি , যা প্রকাশ পেয়েছে তাঁর ‘ সাত সাগরের মাঝি ‘ কবিতার বহু ছত্রে :

” কত যে আঁধার পর্দা পারায়ে ভোর হ’ল জানিনা তা’

নারঙ্গী বনে কাঁপছে সবুজ পাতা

দুয়ারে তোমার সাত সাগরে জোয়ার এনেছে ফেনা ,

তবু জাগলেনা ? তবু তুমি জাগলেনা ? ”

যে সুন্দরতম আদর্শকে আশ্রয় করে মানবতা হয়ে ওঠে মহীয়ান , গরীয়ান … তাকে তিনি বাঙ্ময় কাব্যজ্যোতির প্রদীপ্ততায় উদ্ভাসিত করে ফুঁটিয়ে তুলেছেন তাঁর ‘ সিরাজুম মুনীরা ‘ কবিতা নিজস্ব মহিমায় :

” কে আসে , কে আসে সাড়া পড়ে যায়

কে আসে , কে আসে নতুন সাড়া !

জাগে সুষুপ্ত মৃত জনপদ , জাগে শতাব্দী ঘুমের পাড়া।

হারা সম্বিত ফিরে দিতে বুকে তুমি আনো প্রিয় আবহায়াত ,

জানি সিরাজাম-মুনীর তোমার রশ্মিতে জাগে কোটি প্রভাত ,

তব বিদ্যুত্কনা – স্ফুলিঙ্গে লুকানো রয়েছে লক্ষ দিন

তোমার আলোয় জাগে সিদ্দিক , জিন্নুরাইন , আলী নবীন। ”

তাঁর অসাধারণ রচনাসমূহের মধ্যে একটি তাত্পর্যপূর্ণ অংশ জুড়ে রয়েছে দিগন্ত ছোঁয়া নীল সমুদ্র , উত্তাল উর্মীমালার বিক্ষুব্ধ সন্তরণ। এর মাধ্যমে তিনি কবিতার ছত্রে ছত্রে ফুঁটিয়ে তুলতে চেয়েছেন সৃষ্টি লগ্ন থেকে মানুষের প্রাত্যহিক জীবনাচারে নিরন্তন সংগ্রাম ও আন্দোলনকেই :

” এ ঘুমে তোমার মাঝি মাল্লার ধৈর্য্য নেইকো আর

সাত সমুদ্র নীল আক্রোশে তোলে বিষ ফেনভার ,

এদিকে অচেনা যাত্রী চলেছে আকাশের পথ ধ’রে

বেসাতী তোমার পূর্ণ করে কে মারজানে মর্মরে ? ”

আজ এ যুগে , এ ক্ষয়রোগে ধরা মুমূর্ষ সমাজে , যেখানে পাপ পঙ্কিলতা ও অশুভ আচার নির্বিবাদে বাড়িয়ে চলেছে তাদের অশুভ কালো বাহু , যেখানে অনৈতিকতার বিষবাষ্প সমাজকে পতনের শেষ সীমায় ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে একটু একটু করে , সেখানে আজ ফররুখ আহমেদের মত ভোরের নকীবদের আজ বড় প্রয়োজন! যিনি ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সমুদ্রের অশান্ত তরঙ্গমালা সামাল দিয়ে সাত সাগরের মাঝিদেরকে হেরার রাজ তোরণের দিক নির্দেশনা দিতে পারেন , পাঞ্জেরীকে দিতে পারেন ধ্রুব তারার খোঁজ , এমন কবি ও লেখকদেরকেই এ সমাজে আজ বড় বেশি দরকার।

আর তাই , কবিকে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করে খ্যাতিমান কবি জাহানারা আরজু লিখেছিলেন ,

” এক মঞ্জিল , এক নিশানা হেরার রাজতোরণ

জীবন বোররাখ ছুটে চলেছে ঊর্ধ্বে গতিময়

তৌহিদের বাণী বয়ে , বুকে যার অসীম বিস্ময় ,

কলমের পুষ্পিত পরাগে জাগে অনন্য ভুবন ! ”

প্রানপ্রিয় এ কবির জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন এর দরবারে মাগফিরাত কামনা করি।

 

মায়ের প্রতিবিম্ব

তাহেরা সুলতানা


কোন এক চৈত্রসংক্রান্তিতে যখন তোমায় বলতে গেলাম, “মা, এবার আমায় দাও গো বিদায়।”
তুমি অশ্রুভেজা চোখে হাতটা ধরে বলেছিলে, “মারে!
বছরের প্রথম দিনটি কি আমার সাথে কাটানো যায়!”
আমি মনে মনে বলেছিলাম,
“মা, তোমাকে কি করে বোঝাই!
এ সংসারে আমার ইচ্ছে অনিচ্ছের আছে কি দায়!
কেন আমায় চোখের জলে দিচ্ছো মা বিদায়!”

চোখের পানি লুকিয়ে হাসতে হাসতে বলেছিলাম, “মা, তোমার মেয়ের যে অন্য দেশে সংসার!
আমায় যে ফিরতেই হবে মা!
লক্ষ্মী মা আমার! আর করোনা মুখটা ভার!
অনলাইন আছে তো!
কেনো এতো ভাবছো?”

মা যেন কিছুতেই পারছে না মানতে!
আমিও কি পারছি মা, সহজে, তোমায় ছাড়তে!
যেদিন তোমায় ছেড়ে এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি গিয়েছি,
সেদিনই সব আনন্দগুলো তোমারি শেখা পথে,
ও বাড়ির সবার সাথে ভাগ করে নিয়েছি।
শুধু বুকের বাম পাশটায় একটা চিনচিনে ব্যাথা আজও সাথী করে রেখেছি।
সে ব্যথার কথা তুমি ছাড়া কেই বা জানে বলো! কেই বা দেখে আমার সে দু’চোখ ছলোছলো!

তোমার মনে আছে? ছোটবেলায় বৈশাখ এলে, সারারাত জেগে সাদা জামায়,
পাইপেন আর সুতোর ছোয়ায়,
তোমার হাতের পরশ ফুটিয়ে তুলতে লালে!
কি যে মায়া! কি যে ভালোলাগা!
সেই দিনগুলো আজও আমায় স্মৃতিকাতর করে তোলে!

আমিও একদিন মেয়ের মা হবো, যদি জানতাম!
সেই জামাগুলো বড় যত্ন করে তুলে রাখতাম,
বড় যতনে সাজাতাম তাকে,
ঠিক তুমি যেমন চাইতে আমাকে,
আমি হয়তো ওর মধ্যেই তোমায় খুঁজে পেতাম!

আলমারীতে সাজানো অনেক শাড়ীর ভিড়ে,
আমি সেই জামাগুলোই খুঁজেছি বহুবার,
হয়তো জামা নয়, তোমারই পরশ খুঁজেছি। তোমাকেই খুঁজে ফিরেছি বারংবার।
প্রযুক্তি আমাদের দেখার সুযোগটা করে দিয়েছে।
তাই বলে হয়তো তোমায় চোখের দেখাটা দেখতে পাই।
কিন্তু মনের তৃষ্ণা কি করে মেটাই?
তোমার হাতের পরশ কি করে পাই?

আজ বৈশাখের প্রথম দিন।
এক আগত বৈশাখে তোমায় ছেড়ে আসার দিন।
মা, তুমি কেমন আছো?
আমার পাঠানো শাড়ীটা কি পড়েছো?
সেদিন বলেছিলে, আজকাল তোমার নাকি,
চশমা পড়েও সব কিছু বড্ড বেশি দূরের মনে হয়!
আমাকেও নাকি ঝাপসা দেখতে পাও!
চশমার গ্লাসের পাওয়ারটা কি বাড়িয়েছো?

মা, তোমাকে বলতে ভুলেই গেছি,
আমার চোখেও চশমা উঠেছে।
একটি করে বছর বিদায় জানাচ্ছি!
আজকাল ভিডিওকলে তোমাকেও বড্ড ঝাপসা দেখছি!
কি জানি, চশমার অভাব!
নাকি চোখের জলরেখার প্রভাব!

তুমি জানো, আমার মেয়ে এখন পুরোদস্তুর আমার মা হয়ে উঠেছে!
আমার জীবনে ও হয়তো তোমার ছায়া ধরেই এসেছে!
আমায় শাসন করে রীতিমতো!
ঠিক যেন তোমারই মতো!
সে যে কতো কাজের মেয়ে হয়েছে এই ক’দিন!
সে ফিরিস্তি না হয় শুনো আরেকদিন!

 

রমজানের ইফতারিতে মরক্কান বাগরির

মুনিম সিদ্দিকী


আসুন এই রমজানের ইফতারিতে মরক্কান বাগরির তৈরি করি।

মরক্কান বাগরির রেসিপি

শীত আর গ্রীষ্মে বাগরির বানিয়ে খেতে পারেন। একবার বানালে টাওয়াল দিয়ে ঢেকে রেখে তিন দিন পর্যন্ত খেতে পারবেন, আমাদের দেশের চালের গুড়ির চিতুই পিঠার মত শক্ত হবে না, নরম তুলতুলেই থাকবে।

আমাদের দেশে চিতুই পিঠা চালের গুড়ি দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে। আমাদের চিতুই পিঠা গরম গরম খেতে হয়। ঠাণ্ডা হয়ে গেলে শক্ত হয়ে পড়ে। আমি আজ যে চিতুই পিঠার রেসিপি দিচ্ছি তা নরম তুলতুলে হবে ঠাণ্ডা হলেও শক্ত হবেনা। সকল বয়সের মানুষের কাছে সুস্বাদু লাগবে বিশেষ করে শিশু এবং বয়ঃবৃদ্ধের জন্য হবে অনন্য খাবার।

দোহাই মরক্কান বাগরিরকে চিতুই পীঠা বলবেন না। চিতুই কে চিতুই আর বাগরিরকে বাগরির বলে উল্লেখ করুন। মরক্কান বাগরিরই বলে যেন অন্যদেরকে আপ্যায়ন করেন। ধন্যবাদ।

যা লাগবে

১- ময়দা দেড় কাপ বা ১৬৫ গ্রাম।
২-সুজি দেড় কাপ বা ১৬৫ গ্রাম।
৩- চিনি ১ টেবিল চামচ বা ১৫ গ্রাম।
৪- লবণ ১ চা চামচ বা ৫গ্রাম।
৫- বেকিং পাউডার ১ চা চামচ বা ৫ গ্রাম।
৬- ইস্ট ২ চা চামচ বা ১০ গ্রাম।
৭- পানি উষ্ণ তবে গরম নয় সাড়ে চার কাপ বা ৪৯৫ গ্রাম।

প্রস্তুতি

১- প্রথমে পানি বাদে সকল উপকরণ ভালো ভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। ময়দা আর সুচির পরিমাণ কম বেশি করা যায়। তবে সুজির সাথে অবশ্য ময়দা থাকতে হবে, কিন্তু ময়দার সাথে সুজি না থাকলেও বাগরির করা যাবে। ডুরুম গমের ময়দা আর সুজি হলে রঙ হলুদাভাব দেখাবে। শুধু ময়দা হলে সাদাভাব দেখাবে। আমাদের দেশের সুজির পরিমাপ বেশি হলে কালচে ভাব দেখাবে।

২-অল্প অল্প করে ঐ মিশ্রণে উষ্ণ পানি ঢেলে মিশ্রণকে নরম থকথকে করে নিতে হবে।

৩- মেশিন থাকলে ৩০ সেকেন্ড ঐ মিশ্রণ ঘুটে নিন। না থাকলে কাঠে চামচ বা অন্য কিছু দিয়ে ভালো ভাবে ঘুটে মসৃণ করে নিন। মনে রাখবেন এই মিশ্রণ পানির মত পাতলা যেন না হয় আবার যেন ঘনও না হয়।

৪- ঘুটাঘুটির পর পরিষ্কার টাওয়াল দিয়ে ঢেকে গরম কোন স্থানে ২০ থেকে ৩০ মিনিট রেস্টে রাখুন।

৫- ২০ /৩০ মিনিট পর লক্ষ্য করুন যে ঐ মিশ্রণের উপর বুদবুদ দেখা যায় কিনা? যদি বুদবুদ দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে আপনার মিশ্রণ ঠিক হয়েছে। যদি বুদ বুদ না হয় তাহলে আরো অল্প পানি মিশিয়ে নিন এবং অপেক্ষা করুন। বুদবুদ আসা পর্যন্ত।

৬- এবার চুলার মধ্যে মৃদু তাপে ননস্টিক ফ্রাই পেন গরম করুন।

৭- গরম হলে ডাবু হাতার চামচ দিয়ে এক চামচ মিশ্রণ ননস্টিক প্যানের মধ্যখানে গোল করে ছড়িয়ে দিন।

৮- কয়েক মিনিট অপেক্ষা করুন। যখন দেখবেন পিঠার মধ্যে অসংখ্য ছিদ্র দেখা যাচ্ছে এবং কাচা ভাব চলে গেছে তখন খন্তা দিয়ে আলতো করে ফ্রাইপ্যান থেকে নামিয়ে নিন।

৯- নামিয়ে নিয়ে পরিষ্কার টাওয়ালের মধ্যে একটি একটি করে রাখুন। গরম অবস্থায় একটির উপর আরেকটি রাখবেন না। ঠাণ্ডা হবার পর একটির উপরে আরেকটি রাখতে পারবেন।

১০- এবার ফ্রাই প্যানকে উলটো করে ট্যাপের ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ঠাণ্ডা করে নিন।

এর পর ৭ নং নির্দেশের মত করতে থাকুন।

এই গুলো ঘরে রেখে তিন দিন পর্যন্ত খাওয়া যাবে। সকাল বিকালের নাস্তায় চায়ের সাথে খেতে পারেন। বাগরির তাওয়া থেকে নামিয়ে গরম থাকতে থাকতে বাটার দিয়ে গ্লেজিং করলে বাগরির সুন্দর দেখাবে খেতেও ভালো লাগবে। গরম থাকা অবস্থায় বাটার (মাখন) লাগিয়ে বা বাটার মধু লাগিয়ে খেতে পারেন। ঠাণ্ডা হলে শুধু মধু বা জালিগুড় মিশিয়ে খেতে পারবেন। আবার রান্না করা গোস্তের তরকারী দিয়েও খেতে পারবেন। আবার জ্যাম জেলি বা কন্ডেন্সমিল্ক দিয়ে বা কাচমরিচ/পুদিনা পাতার চাটনি দিয়েও খেতে পারবেন।

 

 

‘পুরুষের একাধিক বিয়ে’ -শেষ পর্ব

ডা. ফাতিমা খান


ইসলামে একাধিক বিয়ে কখন বৈধ হবে :

ওহুদের যুদ্ধের পর বহু সংখ্যক মুসলমান যখন শহীদ হলেন তখন যারা বেঁচে ছিলেন তাদের উপর ইয়াতীম ও বিধবাদের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। তখনই একাধিক বিয়ের বৈধতা ঘোষণা করে কুরআন মজীদে আয়াত নাযিল হয়।

وَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تُقْسِطُوا فِي الْيَتَامَىٰ فَانْكِحُوا مَا طَابَ لَكُمْ مِنَ النِّسَاءِ مَثْنَىٰ وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ ۖ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوا فَوَاحِدَةً أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَدْنَىٰ أَلَّتَعُولُوا

অর্থাৎ,” তোমরা যদি ইয়াতীমদের প্রতি অবিচার করতে আশঙ্কা কর, তবে যেসব স্ত্রীলোক তোমাদের পছন্দ তাদের মধ্য থেকে দুই, তিন বা চারজনকে বিয়ে কর।কিন্তু তোমাদের মনে যদি আশঙ্কা জাগে যে, তোমরা তাদের সাথে ইনসাফ করতে পারবে না, তাহলে একজন স্ত্রীই গ্রহণ কর।” (সূরা-নিসা, আয়াত-৩)

এ আয়াতটি থেকে নিম্নোক্ত সত্য গুলো স্পষ্টভাবে বোঝা যায়ঃ

১।একাধিক বিয়ে অবশ্য পালনীয় কোন কর্তব্য নয়। এ ব্যাপারে পুরুষদেরকে উৎসাহিতও করা হয়নি। শুধুমাত্র প্রয়োজনের তাগিদে অনুমতি দেয়া হয়েছে।
২।যে পরিস্থিতিতে এ আয়াত নাযিল হয়েছে, তা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে শুধুমাত্র জৈবিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য নয়, বরং বিধবা ও ইয়াতীমদের প্রতি সহানুভূতি দেখানোর জন্য একাধিক বিয়ের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
৩।যে সময় আরব দেশে এবং এর আশে-পাশের দেশগুলোতে দশজন কিংবা তারও অধিক সংখ্যক স্ত্রী গ্রহণের প্রচলন ছিল, সে সময় এই আইন অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত আইন হিসেবে বিবেচ্য।
৪।এই বহুবিবাহ আইনে প্রত্যেক স্ত্রীর সাথে ন্যায় সংগত আচরণ করা বাধ্যতামুলক করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেক স্ত্রীর বাসস্থান, খাবার, পোশাক-পরিচ্ছেদ, সদয় ব্যবহার ইত্যাদির দায়িত্ব পূর্ণভাবে স্বামীর উপর ন্যস্ত করা হয়েছে। যদি কেউ এ ব্যপারে অপারগ হয় তাহলে কুরআন মজিদে তার ব্যাপারে বলা হয়েছে ”তাহলে তোমরা একজনকেই বিয়ে কর”।

একই সূরায় অন্য একটি আয়াতে একাধিক বিয়েকে নিরুৎসাহিতও করা হয়েছে।

وَلَنْ تَسْتَطِيعُوا أَنْ تَعْدِلُوا بَيْنَ النِّسَاءِ وَلَوْ حَرَصْتُمْ ۖ فَلَا تَمِيلُوا كُلَّ الْمَيْلِ فَتَذَرُوهَا كَالْمُعَلَّقَةِ ۚ وَإِنْ تُصْلِحُوا وَتَتَّقُوا فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ غَفُورًا رَحِيمًا

অর্থাৎ ”স্ত্রীদের মধ্যে সুবিচার ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখা তোমাদের সাধ্যের অতীত। তোমরা অন্তর দিয়ে চাইলেও তা করতে সমর্থ হবে না। অতএব, একজন স্ত্রীকে একদিকে ঝুলিয়ে রেখে অপরজনের প্রতি একেবারে ঝুঁকে পড়বে না। (সূরা-নিসা, আয়াত ১২৯)

কুরআন একমাত্র কিতাব যেখানে ‘একজনকেই বিয়ে কর ‘ একথাটি বলা হয়েছে। অন্যান্য কোন ধর্ম গ্রন্থে এরকম কোন আদেশ দেয়া হয়নি। ইসলামে সময় ও পরিস্থিতিভেদে একাধিক বিয়ের অনুমতি দেয়া হয়েছে বটে কিন্তু তাও চারটির বেশী কখনই নয়। সুতরাং পুরুষেরা যত ইচ্ছা ততজন স্ত্রী গ্রহণ করবে এবং স্ত্রীদের মধ্য থেকে কাউকে সে বেশী মর্যাদা দিবে, কাউকে কম, এমনটি হতে পারবে না। ইসলামী আইনের দাবী হল, কোন পুরুষ তার স্ত্রী কিংবা স্ত্রীদের দায়িত্ব যথাযথভাবে ও সমভাবে পালন করতে ব্যর্থ হলে কিংবা স্বামী তার উপর অন্যায় অত্যাচার করলে স্ত্রী আদালতে গিয়ে বিয়ে- বিচ্ছেদের দাবী করতে পারবে।

একাধিক বিয়ের ব্যাপারে এরকম কঠিন কিছু নির্দেশাবলী থাকার পরও প্রয়োজনের তাগিদে যদি এর অনুমতি না দেয়া হত ও এ ব্যাপারে বেশ কিছু বাধ্য বাধকতা জারি করা হত তাহলে সমস্যাগুলোর সমাধান না হয়ে বেশ কিছু সামাজিক ও পারিবারিক বিশৃংখলা ও অশান্তি দেখা দিত। মহান আল্লাহ তায়ালা এ সার্বিক অবস্থা কে সামনে রেখেই মানুষের জন্য যথাযথ বিধান দিয়ে দিয়েছেন।

একাধিক বিয়ে কোন কোন ক্ষেত্রে সমস্যার সমাধান হতে পারে :

ক) ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে 

১. কোন পুরুষের স্ত্রী যদি বন্ধ্যা হয় এবং সে তার সন্তান বা উত্তরাধিকারীর জন্য উদগ্রীব হয়, তবে আরেকটি বিয়ে না করলে তাকে নিম্নের ২টি পন্থার যে কোন একটি কে গ্রহণ করতে হবে-

– আজীবন তাকে পিতৃত্বের সুখ থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে।

– তার বন্ধ্যা স্ত্রীকে তালাক দিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করতে হবে।

বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এ ২টির কোনটিকেই সঠিক সমাধান হিসেবে মেনে নেয়া যায় না। এরকম পরিস্থিতিতে আরেকটি বিয়েই সমাধান হতে পারে… এক্ষেত্রে ১ম স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক রেখেই পিতৃত্বের সুখ পাওয়া সম্ভব হবে।

অনুরূপভাবে, কোন পুরুষ যদি বন্ধ্যা হয় আর তার স্ত্রী সন্তানের জন্য উদগ্রীব হয় তাহলে সে চাইলে আদালতের মাধ্যমে বিয়ে-বিচ্ছেদ ঘটিয়ে ২য় স্বামী গ্রহণ করতে পারবে। ( মেয়েদের জন্য একাধিক স্বামী গ্রহণ বৈধ নয় কেন, সে আলোচনায় আসছি কিছুক্ষণ পর )

২. কোন পুরুষের স্ত্রী যদি দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকে তাহলেও তাকে নিম্নোক্ত ৩টি পন্থার যে কোন একটি অবলম্বন করতে হবে-

– আজীবন তাকে জৈবিক চাহিদাকে সংবরণ করতে হবে।

– অসুস্থ স্ত্রীর সাথে আপোষ করে গোপনে তাকে কোন যৌনসঙ্গী বেছে নিতে হবে।

– অসুস্থ স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা থাকা সত্ত্বেও তাকে তালাক দিয়ে অন্যত্র বিয়ে করতে হবে।

প্রথম সমাধানটি মানুষের মানবিক প্রবৃত্তির পরিপন্থি। ইসলাম মানুষকে তার জৈবিক চাহিদা পুরণের জন্য বৈধ পন্থা অবলম্বনের আদেশ দিয়েছে। দ্বিতীয় সমাধানটি সম্পূর্ণভাবে ইসলামী আইন বিরোধী। তৃতীয় সমাধানটি অত্যন্ত অমানবিক ! বিশেষতঃ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যখন খুব ভালো সম্পর্ক থাকে।

সুতরাং এ আলোচনা থেকে বুঝা যায়, এসব অবস্থায় আরেকটি বিয়েই এই সমস্যাগুলোর একমাত্র বৈধ সমাধান হতে পারে। এটি একটি ঐচ্ছিক সমাধানও বটে। এখানে অন্য কারো জোর-জবরদস্তিও চলবে না। (নিজের মা -বাবার মন রক্ষা করতে গিয়ে বা গোত্র কিংবা সমাজের চাপে পড়ে নয়।)

খ) সামাজিক ক্ষেত্রে 

১.নৃতত্ববিদদের গবেষণা থেকে দেখা যায় যে, প্রাচীন বহু গোত্র ও সমাজ তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রয়োজনে একাধিক বিয়ে করত। সে সময় কিছু দরিদ্র এলাকায় শিশু মৃত্যুর হার ছিল বেশী, আবার কেউ কেউ সন্তানদেরকে তাদের উপার্জনের উৎস মনে করত। এসব কারনে বেশী সন্তানের আশায় তারা একাধিক বিয়ে করত। প্রাচীন আফ্রিকার খ্রীষ্টান মিশনারী সমাজ বহু আগেই একাধিক বিয়েকে সমর্থন করেছে এবং ঐ সমাজের মেয়েরা তাদের স্বামীদের একাধিক বিয়ে শুধু মেনেই নিত না বরং তা সমর্থন করত।

২. কোন দেশ বা সমাজ়ে যদি পুরুষের তুলনায় মহিলারা সংখ্যায় অধিক হয় ( কাশ্মীর, আফগানিস্তান ও ইরাকে বিবাহোপযোগী মেয়েরা পাত্র সঙ্গকটে ভুগছে) সেখানেও অনেক ক্ষেত্রে পুরুষের একাধিক বিয়ে করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। আমরা যদি অতীতের যুদ্ধগুলোর কথা ভাবি তাহলে দেখা যায় ধ্বংসাত্মক এ যুদ্ধগুলোতে পুরুষেরাই অধিকাংশ মৃত্যুবরণ করেছিল। এর ফলে শুধু যে বিয়ের জন্য পাত্রের অভাব হয়েছিল তা নয়, বরং যারা বিধবা হয়েছিল এবং একটি সম্মানজনক জীবন যাপনে আগ্রহী ছিল, তাদের জীবনও কষ্টকর হয়ে গিয়েছিল। এই সব দিক বিবেচনা করে ঐ পরিস্থিতিতে ঐ সমাজে পুরুষের একাধিক বিয়েই ছিল উত্তম সমাধান।

একজন বিবাহিত কিংবা অবিবাহিত ব্যক্তি উভয়ই মানুষ। তাদের স্বভাবজাত চাহিদাগুলো যদি বৈধ উপায়ে পূর্ণ করা না হয় তবে বিকৃত ও অসাধু উপায়ে পূর্ণ করার জন্য সে প্রলুব্ধ হয়।এক্ষেত্রে নৈতিকতার দিক থেকে মেয়েরাই সবচেয়ে বেশী অপব্যবহৃত হয়। তাদের জীবনের নিরাপত্তা, নিশ্চয়তা, আবেগ কোন কিছুরই কোন মূল্য থাকেনা। আর যদি তারা অবিবাহিত অবস্থায় গর্ভবতী হয়ে পড়ে তাহলে পিতৃ-পরিচয়হীন এই সন্তানের যাবতীয় দায়-দায়িত্ব মায়ের উপর চাপিয়ে দেয়া হয় (কিছু অমুসলিম দেশে এমন নিয়ম চালু আছে)। আবার একাকী এসব দায়িত্ব্ পালন করতে গেলেও সমাজে মা ও সন্তান উভয়েরই ভোগান্তির অন্ত থাকে না। সমাজ তাদেরকে স্বাভাবিক ভাবে গ্রহণ করে না , আর পাঁচটি মানুষের মত পরিচ্ছন্ন জীবন যাপন করাও সম্ভবপর হয় না।

মেয়েদের জন্য একই সাথে একাধিক স্বামী গ্রহণ বৈধ নয় কেন ’

আল্লাহ তায়ালা নারী ও পুরুষকে দৈহিক ও মানসিকভাবে পৃথক ধাচে সৃষ্টি করছেন। পুরুষদের চরিত্রে বহুগামীতার ইচ্ছা লক্ষ্য করা যায়। তারপরও ধরা যাক, কোন মেয়ে একাধিক স্বামী গ্রহণ করছে। সম্ভাব্য সমস্যা গুলো আমরা একটু ভেবে দেখি।

১) তার যে সন্তানগুলো জন্ম নেবে তাদের কার পিতা কে হবে? কে, কোন সন্তানের পরিচয় বহন করবে?
২) একাধিক স্বামীর এই একমাত্র স্ত্রীর দায়ভার কার উপর ন্যস্ত হবে? সমাজে তার পরিচয় কার নামে হবে?
৩) ইসলাম ধর্মে পরিবারের কর্তা হলেন স্বামী। এই multi-husband এর পরিবারে কর্তা হবেন কে?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে গেলে আমরা এই সহজ সমাধানটি পেয়ে যাই যে মেয়েদের জন্য একই সাথে একাধিক স্বামী গ্রহণ কখনও যুক্তি সঙ্গত হতে পারে না। তাই ইসলাম এর বৈধতা ঘোষণা করে না।

ইসলামের সকল বিধান, এর নমনীয়তা, কঠোরতা, দূরদর্শীতা ও বাস্তবধর্মী সিদ্ধান্ত গুলোর কৃতিত্ব কোন বিশেষ গোষ্ঠী, ব্যক্তি এমন কি মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) এর ও নয়। এর গোপন কৃতিত্বের দাবীদার একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যিনি তার সৃষ্ট প্রতিটি জীবের চাহিদা ও সমস্যাবলী সম্পর্কে অবহিত আছেন।

সহায়ক বই ও লিংক:
1) Quranul Majid
2) Hadith
3) Women Under the shade of Islam – Dr. Jamal Badawi
4) ইসলামী সমাজে নারীর মর্যাদা- ডঃ মুস্তাফা আস- সিবায়ী
5) Lectures of Dr. Zakir Naik
6) মরিয়ম জামিলার লেখা বইসমূহ।

ডা. ফাতিমা খান
লেখিকা কর্মরত: আল হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ, জেদ্দা, সৌদি আরব।

পর্ব -১

 

‘পুরুষের একাধিক বিয়ে’ পর্ব-১

ডা. ফাতিমা খান


ইসলাম ধর্মে একাধিক বিয়ের অনুমোদনকে কেন্দ্র করে জনসাধারণের মাঝে বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারনা বিরাজ করছে। বিশেষত: আরব সমাজে এই অনুমোদনের অপচর্চা লক্ষ্য করা যায়। কোন কোন ইসলাম বিদ্বেষী ধর্মাবলম্বীরা ইসলামে একাধিক বিয়ের অনুমোদনের কিছু ভুল ব্যাখ্যা মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন। যার ফলে সীমিত জ্ঞানের অধিকারী সাধারণ মুসলিমরাও কখনও কখনও বিভ্রান্ত হয়ে যায়।

ইহুদী ও খ্রীষ্টান ধর্মেও বহুবিবাহের উপর কোন নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়নি। কিন্তু ইহুদী ও খৃষ্টান ধর্মের অনুকরণে নয় বরং সম্পূর্ণ স্বকীয়ভাবে ইসলাম একাধিক বিয়ে সম্পর্কে এমন কতগুলো বিধি-বিধান প্রদান করে ও মানুষকে আত্ন-সংযমের শিক্ষা দেয় যা তাদেরকে একাধিক বিয়েতে অনুৎসাহিত করে। এ আইনের উপর ইসলামের পুরোপুরি কোন নিষেধাজ্ঞা প্রদান না করার কারন হল, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ও সামাজিক বেশ কিছু সমস্যার সমাধান করা যায় একাধিক বিয়ের মাধ্যমে।

সময় ও পরিস্থিতি ভেদে বিয়ের এই নিয়ন্ত্রিত আইন অনেকগুলো অনৈসলামিক কাজ থেকে মানুষকে রক্ষা করে। তাই ইসলাম একাধিক বিয়ের অনুমোদন দেয়ার সাথে সাথে এর কিছু সীমাবদ্ধতাও প্রদান করেছে, একে মানবতাবাদী পন্থা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং সব স্ত্রীদের সমান অধিকারের আদেশ দিয়েছে, আবার প্রয়োজন ছাড়া একের অধিক বিয়ে নিষিদ্ধ করেছে।

বহুবিবাহ নয়, বরং একটি বিয়েই ইসলামের সাধারণ রীতি। কিন্তু নারী ও পুরুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক নানাবিধ সমস্যা ও সংস্কৃতির কথা বিবেচনা করে সীমাবদ্ধ আইনের মধ্যে থেকে একাধিক বিয়ের অনুমোদন ইসলামের অত্যন্ত বাস্তবধর্মী দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ। একটি উদাহরণ দিয়ে যদি বলতে চাই, তাহলে বলতে হয় যে একটি সমুদ্রে একটি ডুবন্ত জাহাজের যাত্রীদের প্রাণ বাঁচানোর জন্য যেমন ক্যাপ্টেনকে জাহাজের মালপত্র গুলো সমুদ্রে ফেলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয়…ঠিক তেমন বড় গুনাহ ও সামাজিক বিপর্যয় থেকে মানুষকে বাঁচানোর জন্য আল্লাহ তায়ালা মানুষের জন্য দুটো খারাপের মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম খারাপটিকে অনুমোদন দিয়েছেন।

চলবে…

ডা. ফাতিমা খান
লেখিকা কর্মরত: আল হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ, জেদ্দা, সৌদি আরব।

শেষ পর্ব

 

ভুল করা কন্যার লাগি মন আনচান করে

ফাতিমা মারিয়াম


সামিনার বাবা দেশের বাইরে থাকেন। দুই বা তিন বছর পরপর দেশে আসেন। ফলে ওর আম্মাই সংসারের সবকিছু দেখাশুনা করেন। সামিনার আরও তিনটি ভাইবোন আছে। সবাই পিঠাপিঠি। ওরা সব ভাইবোনই বেশ সুন্দর। তবে সামিনা সবার চাইতে বেশিই সুন্দর……… বেশ রূপবতী।

সামিনা যখন ক্লাস নাইনে পড়ে তখন তাকে এবং তার ছোট ভাইবোনদেরকে পড়ানোর জন্য উনার আম্মা একজন শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করলেন। একসময় উনি উনার পছন্দমত একজনকে পেয়েও গেলেন।

ছেলেটির নাম সবুজ। জগন্নাথ কলেজে অনার্স পড়ে। ওর পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা ততটা ভাল না। ফলে ঢাকায় থাকা, খাওয়া এবং পড়াশুনার খরচ তাকেই চালাতে হয়। তাই সে কয়েকটি টিউশনি করে।

সামিনা এবং তার ভাইবোনদেরকে সবুজ পড়ানো শুরু করল। সবুজ বেশ ভাল পড়ায়। সামিনাদের সব ভাইবোনকে সে বেশ যত্ন করেই পড়াত। ফলে সবাই বেশ খুশি।

দিন যেতে থাকে…… সবুজ ও সামিনা উভয়ে উভয়ের প্রতি এক ধরণের আকর্ষণ অনুভব করে। আকর্ষণ থেকে দুর্বলতা, আর দুর্বলতা থেকে প্রেম। মা ও ভাইবোনদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে সামিনা সবুজের সাথে প্রায় দুই বছর প্রেম চালিয়ে যায়।

ইতিমধ্যে সামিনা এসএসসি পাশ করে কলেজে ভর্তি হয়েছে।

এক পর্যায়ে সামিনা ও সবুজ সামিনার মায়ের কাছে ধরা পড়ে যায়। সামিনার মা সবুজকে উনার বাসায় আসতে নিষেধ করে দেন।

সামিনার জন্য এখন আর বাসায় শিক্ষকের প্রয়োজন নেই। তাই ছোটদের জন্য নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেন। সবুজ সামিনাদের বাসায় আর আসেনা। কিন্তু ওদের যোগাযোগ বন্ধ হয় না। বান্ধবীদের মাধ্যমে সামিনা সবুজের সাথে যোগাযোগ চালিয়ে যায়।

ইতিমধ্যে সবুজ অনার্স কমপ্লিট করেছে। এবার সে তার পরিবারের হাল ধরার জন্য প্রবাসে পাড়ি জমায়।সামিনার সাথে তার যোগাযোগ অব্যাহত থাকে। সামিনার বান্ধবীদের মাধ্যমে এই যোগাযোগ চলতে থাকে। এটা যেই সময়ের কথা তখন বাংলাদেশে মোবাইল ফোন আসেনি। বাসার ল্যান্ডফোন সামিনার জন্য নিষিদ্ধ ছিল।

তাই সে চিঠির মাধ্যমেই সব সময় সবুজের সাথে যোগাযোগ রাখত। আর এই চিঠিগুলো আসত বান্ধবীদের ঠিকানায়। মায়ের চোখকে ফাঁকি দিয়ে সে তার প্রেম চালিয়ে যায়।

এর মধ্যে সামিনার এইচএসসি পরীক্ষা কাছাকাছি এসে যায়। সামিনার মা কোনভাবেই সবুজের কাছে মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি হননি। কারণ এই ছেলের পরিবারের অবস্থা ভালো না। সবুজকেই সব দেখতে হবে। কবে সে ভালভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে আর কবে তিনি মেয়েকে বিয়ে দেবেন! এইসব সাতপাঁচ ভেবে মেয়ের তীব্র অমত স্বত্বেও টেস্ট পরীক্ষার কিছুদিন আগে ওর মা ওকে এক ব্যবসায়ী পরিবারে বিয়ে দিয়ে দেন। পাত্রের পরিবার বেশ ধনি। উভয় পক্ষই মহা ধুমধাম করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

সামিনার স্বামীর নাম কামাল।

যথা সময়ে সবুজের কানে বিয়ের খবরটা যায়। তখন সে এক ভয়ানক পরিকল্পনা করে। তার এখনো দেশে আসতে দুই/তিন বছর বাকি। সে সামিনাকে জানায়- তুমি আমার জন্য অপেক্ষা কর। আমি এসেই তোমাকে বিয়ে করব। ততদিন তুমি কামাল ও তার পরিবারের সাথে বসবাস করে যাও। কাউকে কিছু বুঝতে দিও না।

সামিনা মনে মনে স্বপ্ন দেখে একদিন সে আর সবুজ মিলে একটি ছোট সংসারে বাস করবে। এই ভাবনায় তার দিন কাটে…..।

এমন সময় সে অনুভব করে যে সে মা হতে চলেছে। শারীরিক অসুস্থতার ফলে সে আর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে নি। সুতরাং তার শিক্ষাজীবন ওখানেই শেষ হয়ে যায়।

দুই পরিবারের সবাই তার এই নতুন খবরে বেশ খুশি। কিন্তু সামিনা কোনভাবেই সবুজের কথা ভুলতে পারছেনা। সে শুধু সবুজের আসার অপেক্ষায় দিন গোনে।

যথা সময়ে তার একটি পুত্রসন্তান হয়। এমন কি ছেলের মুখের দিকে তাকিয়েও সে সবুজকে ভুলতে পারেনা।

ছেলে বড় হতে থাকে। সে মনে মনে ফন্দি করতে থাকে সবুজ দেশে এলে সে এই সংসার ছেড়ে সবুজের কাছে চলে যাবে। তবে তার মনে একান্ত ইচ্ছা সে তার ছেলেকে এদের পরিবারে রেখে যাবে না। তাকে সে সাথে করেই নিয়ে যাবে।

এদিকে সবুজের দেশে আসার দিনও প্রায় এসে গেল। এখন আর সবুজের সাথে তার যোগাযোগ করতে কোন অসুবিধা হয়না। সামিনা যখন তার মায়ের বাসায় বেড়াতে আসে তখন সে সুযোগ বুঝে সবুজকে ফোন করে। আর ওর মা বা অন্য কেউ ওকে এখন আর ফোন ব্যবহার করতে বাধা দেয়না। কারণ সবাই ভাবে বাচ্চা হয়ে গেছে, এখন কি আর ও কোন অঘটন ঘটাবে? কিন্তু ও যে নিয়মিত গোপনে সবুজের সাথে এই কয় বছর যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে তা কেউ বুঝতে পারেনি।

সবুজ দেশে আসে। এসেই সে সামিনার সাথে যোগাযোগ করে। সবুজ সামিনাকে তার সাথে দেখা করতে বলে। সুযোগ বুঝে একদিন সামিনা সবুজের সাথে দেখা করে। তারা দুজনে প্ল্যান করে তারা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করবে। সবুজের প্ল্যান অনুযায়ী সামিনা বাবার বাসায় বেড়াতে আসে।

এর কয়েকদিন পরের ঘটনা…… সে তার বাচ্চাকে মায়ের বাসায় রেখে সবুজের কাছে চলে যায়। কিভাবে যেন সামিনার শ্বশুরবাড়ির সবাই এই দুঃসংবাদ জেনে যায়। তারা এসে তাদের বাচ্চাটিকে সামিনার মায়ের কাছ থেকে নিয়ে চলে গেল।

সব কথাই সামিনা জানতে পারে। কিন্তু বাচ্চার জন্য তার আর কিছুই করার থাকে না।

কয়েকদিন কেটে গেছে। কিন্তু সামিনার কাছে সবুজের আচরণ কেমন জানি মনে হয়! সামিনা সবুজকে বলে-চল আমরা বিয়ে করে ফেলি। কিন্তু সবুজ টালবাহানা করে সময় কাটাতে থাকে।

কয়েকদিন পরে সবুজ সামিনাকে বলে যে -‘আমি তোমাকে মোটেও বিশ্বাস করিনা। একবার তুমি আমার সাথে প্রতারণা করে কামালকে বিয়ে করেছ। আবার এখন কামালের সাথে প্রতারণা করে আমার কাছে চলে এসেছ। তোমার একটি সন্তান থাকা সত্ত্বেও তুমি সংসার ত্যাগ করেছ। আবার হয়ত তুমি নতুন কাউকে পেলে আমাকে ছেড়েও চলে যাবে। এ ছাড়া আমার মনে তোমার প্রতি বেশ অনেকটা ক্ষোভ ছিল। তুমি আমার ভালবাসাকে অপমান করে কামালকে বিয়ে করেছ শুনেই আমি মনে মনে পরিকল্পনা করেছিলাম যে আমি তোমাকে একটা উচিৎ শিক্ষা দেব। সেই জন্যই আমি তোমার সাথে এই আচরণ করেছি। আমি এখন বাড়ি যাব। ওখানে আমার পরিবারের পছন্দ করা পাত্রীকে বিয়ে করব। তুমি তোমার বাবা মায়ের কাছে চলে যাও। আমার সাথে আর কোনোদিন যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না। এখানেই তোমার সাথে আমার সব সম্পর্ক শেষ।’

সবুজের কাছে চরমভাবে অপমানিত হয়ে সামিনা বাবা-মায়ের কাছে ফিরে আসে।

দিন যায়…..।

সামিনা এবং তার বাবা-মা মিটমাটের জন্য কামাল ও তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে। কামাল ও তার পরিবার জানিয়ে দেয় এই বউকে তারা কোনদিন তাদের বাড়িতে স্থান দেবে না। বাচ্চাটিকে নিজের কাছে ফিরিয়ে আনার জন্য সামিনা অনেক চেষ্টা করে। কিন্তু কামাল ও তার পরিবার তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকে। তারা বাচ্চাকেও ফেরত দেয় নি।

আরও কিছু দিন কেটে যায়।

এবার কিভাবে যেন সামিনার সাথে পুরনো ঢাকার এক ধনী ব্যবসায়ীর সাথে পরিচয় হয়। এই ভদ্রলোকের স্ত্রী আছে, ছেলেমেয়ে আছে। এক পর্যায়ে সামিনাকে সেই ভদ্রলোক বিয়ে করে। তবে তার নতুন স্বামী তাকে এই শর্তে বিয়ে করেছে যে,কোনদিনও সামিনা বা তার পরিবার এই বিয়ের কথা উনার পরিবারের নিকট প্রকাশ করতে পারবে না। যেদিন প্রকাশ করবে সেদিন থেকে তিনি আর সামিনার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবেন না।

সামিনা এই শর্ত মেনে নিয়ে জীবন যাপন করতে থাকে।

তার এই স্বামী তাকে তার মায়ের বাসার কাছে একটি ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছে। এই এলাকাতেই ওকে প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছে। টাকা-পয়সা, শাড়ি-গয়না কোন কিছুরই অভাব নেই।

একে একে সামিনার দুইটি বাচ্চা হয়েছে। বাচ্চা দুইটাও এখন বেশ বড় হয়ে গেছে। বাচ্চাগুলো সামাজিকভাবে একটু কোণঠাসা হয়েই দিন কাটায়।

নিজের জীবনের কিছু বোকামির মাশুল আজ সামিনা এভাবেই দিয়ে যাচ্ছে………।

 

অভিনেত্রী তাজিন আহমেদ আর নেই

নারী সংবাদ


ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী তাজিন আহমেদ আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে তিনি ইনতিকাল করেন।
গতকাল সকালে তাজিনের হার্ট অ্যাটাক হয়। এরপর তাৎক্ষণিকভাবে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখেন চিকিৎসকেরা। তিনি সেখানে ডা: নূর হোসেনের অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বেলা ৪টা ২০ মিনিটে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তাজিনের অসুস্থতার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান তার সহকর্মীরা। অভিনয় শিল্পী সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম, রওনক হাসান, জাকিয়া বারী মম, হুমায়রা হিমু ও আরো অনেকে তার অসুস্থতার খবরে ছুটে যান হাসপাতালে। দুপুরে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে অভিনয়শিল্পী সঙ্ঘের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রওনক হাসান লিখেছেন, ‘অভিনেত্রী তাজিন আহমেদ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে আছেন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। সবাই তার জন্য দোয়া করুন।’ রওনক হাসান পরবর্তীতে বলেন, আমরা খবর পেয়েই ছুটে এসেছি। এখন হাসপাতালেই আছি। তার অবস্থা খুবই গুরুতর ছিল। অনেক চেষ্টা করেও তাকে বাঁচানো গেল না।
আহসান হাবিব নাসিম বলেন, ‘আমরা ৩টার দিকে খবরটি পেয়েছি। যখন তাজিনের হার্ট অ্যাটাক হয় তখন বাসায় কেবলমাত্র একজন মেকাপ আর্টিস্ট ছিলেন। উনি তাজিনের সাথেই থাকতেন। তিনিই তাজিনকে উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে নিয়ে আসেন।’
জনপ্রিয় অভিনেত্রী তাজিন আহমেদ অভিনয় ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে আরণ্যক নাট্যদলের সাথে যুক্ত ছিলেন। পরে টেলিভিশন নাটকে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বিটিভির সোনালি দিনগুলোতে তিনি ছিলেন প্রথমসারির তারকাদের একজন। জাহিদ হাসান, আজিজুল হাকিম, তৌকীর আহমেদ, টনি ডায়েসদের সাথে জুটি বেঁধে নিয়মিতই তিনি হাজির হতেন টিভি দর্শকদের সামনে। অভিনয়ের পাশাপাশি মডেলিংও করেছেন বেশ কিছু। সুত্র:নয়াদিগন্ত

 

বিয়ে ও পরিবার – ৩

কানিজ ফাতিমা


বিয়ে দু’জন মানুষের মধ্যে জীবনকে ভাগাভাগি করে নেয়ার চুক্তি। জীবনে এক সাথে চলার পথে বহু বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হয়। এই বাস্তবতার অন্যতম বাস্তবতা হল Conflict বা দ্বন্দ, সংঘাত, বিরোধ ইত্যাদি। বিয়ের পূর্বে এ ব্যাপারটি নিয়ে খুব একটা চিন্তা ভাবনা করা হয় না। বিয়ের পূর্বে সম্পর্কের মধুর (Romantic) দিকটি নিয়েই বেশি জল্পনা-কল্পনা হয়। ফলে বিয়ের পরে যখন এই দ্বন্দ বা Conflict দেখা দেয় তখন অনেকেই এটিকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে পারে না। অনেকে হতাশা বোধ করে, অনেকে নানা প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে। এজন্য বিরোধ ব্যবস্থাপনা বা Conflict management সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা জরুরী। Conflict management বা বিরোধ ব্যবস্থাপনার প্রথম কথা হল সমাজে, সংগঠনে বা পরিবারে বিরোধ থাকা একটি বাস্তবতা। কেউ যদি মনে করে দু’জন মানুষ একত্রে বসবাস করবে আর তাদের মধ্যে কোন বিরোধ থাকবে না তবে তা একমাত্র রূপকথাতেই সম্ভব। বাস্তবতা হল দু’জন মানুষ একত্রে থাকলে বিরোধ বাঞ্ছনীয় তাতে দু’জনের সম্পর্ক যাই হোক না কেন। স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন, বাবা-পুত্র সবার মধ্যেই বিরোধ থাকবে।
তবে প্রশ্ন হল সেই বিরোধের মাত্রা কতটুকু? যেমন ধরা যাক বাবা জমি কিনতে চাচ্ছেন আর পুত্র ব্যবসার টাকা বিনিয়োগ করতে চাচ্ছেন। মা মেয়ের জন্য সালোয়ার কামিজ কিনতে চাচ্ছেন কিন্তু মেয়ে প্রসাধন সামগ্রী চাচ্ছে। মানুষে মানুষে বিরোধ না হওয়াটাই অস্বাভাবিক। বিরোধ, মতের পার্থক্য, চিন্তার ভিন্নতা এ পৃথিবীর অপরিহার্য একটি বৈশিষ্ট্য। Conflict সম্পর্কে দ্বিতীয় কথা হল সব Conflict বা বিরোধই খারাপ নয়। Conflict বা বিরোধ শব্দটি শুনলেই আমাদের মনে বিরূপ চিত্র ভেসে ওঠে। কিন্তু চিন্তা করে দেখুন Conflict বা বিরোধের ফলে অনেক ভাল জিনিসের তৈরী হয়। যেমন Conflict সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করে। যেমন ধরুন বাবা বললেন আমরা অমুক এলাকায় বাসা ভাড়া নিবো, মা বললেন না, এখানে বৃষ্টি হলেই পানি জমে। আমরা অমুক এলাকায় যাব। ছেলে বললো না, এখান থেকে আমার কলেজ অনেক দূরে, আমাদের কলেজের কাছাকাছি এলাকায় থাকা উচিত। এভাবে ভিন্ন মতামতের কারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজনীয় সব তথ্য বের হয়ে আসবে এবং একটি সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হবে। অপর পক্ষে অতিমাত্রায় বিরোধ, হিংসা ও সংঘর্ষ জীবনে অশান্তির কারণ। কাজেই আমরা বলতে পারি সহনশীল মাত্রার বিরোধ পরিবারের জন্য উপকারী। একজন স্বামী বা স্ত্রীকে এটি মেনে নিতে হবে যে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ ঘটবেই। তবে তাকে সহনশীল পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করাই হচ্ছে Conflict management বা বিরোধ ব্যবস্থাপনা। দ্বন্দ বা বিরোধ পুরোপুরি নিরসন বা নির্মূলকরণ অসম্ভব বা অবাস্তব। মূলতঃ দ্বন্দ বা বিরোধ ব্যবস্থাপনাই সঠিক পন্থা। তাই স্বামী ও স্ত্রীকে Conflict management বা দ্বন্দ ও বিরোধ ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা অর্জন করতে হবে। স্কলারগণ Conflict management এর নিম্নরূপ মডেল প্রদান করেছেন-

১. Forcing- বিরোধের সময়ে আপনি অন্যপক্ষের মতামত বা স্বার্থকে আমলে না এনে যদি শুধুমাত্র নিজের অবস্থানে অটল থাকেন, নিজের স্বার্থ ও মতামতকেই প্রাধান্য দেন তবে একে বলা হয় চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে দ্বন্দ নিরসন করা। আপনি যদি অন্য পক্ষের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী হন তবে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে চাইবেন। এতে অন্যপক্ষ মন থেকে নয় বরং বাধ্য হয়ে আপনার কথা মেনে নেবে। এ পদ্ধতি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের জন্য বিরোধ নিরসনের সঠিক পন্থা নয়। হুমকি, ধমকীর মাধ্যমে নিজের ইচ্ছাকে স্থাপন করার চেষ্টা নির্যাতনের আওতায় পড়ে।

২. Accommodating বা আত্মসমর্পন করা- এটি Forcing এর সম্পূর্ণ বিপরীত। আপনি যদি নিজের অবস্থান থেকে সরে আসেন এবং অপর পক্ষের মতামত পুরোপুরি মেনে নেন তবে তাকে Accommodating পদ্ধতি বলে।

দুই ক্ষেত্রে সাধারণত মানুষ এটা করে থাকে।
ক. আপনি যদি দুর্বল হন এবং আপনার প্রতিপক্ষ যদি শক্তিশালী হয় তবে আপনি বাধ্য হবেন এ পদ্ধতি অবলম্বন করতে।

খ. আপনি যদি বুঝতে পারেন যে আপনার অবস্থান ভুল এবং আপনার প্রতিপক্ষ সঠিক তখন আপনি স্বেচ্ছায় নিজ অবস্থান থেকে সরে আসবেন। স্বামী বা স্ত্রী যদি নিরপেক্ষ চিন্তায় নিজের ভুল বুঝতে পারে সেক্ষেত্রে ঐ ভুলটি আঁকড়ে ধরে না থেকে এই পদ্ধতির মাধ্যমে বিরোধ নিরসন করতে পারেন। আজ এ পর্যন্তই। এ সম্পর্কিত আরও আলোচনা থাকবে পরবর্তী সংখ্যায় ইনশাআল্লাহ।

চলবে…

পর্ব-২

 

বৃদ্ধাশ্রমে অসুস্থ মা, চিকিৎসক ছেলে লন্ডনে!

নারী সংবাদ


রাফসান আরা (৬৩)। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরশনের সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা। ২৬ বছরের চাকরি জীবন শেষে ২০০৭ সালে অবসরে যান। জীবনের শেষ দিনগুলি কাটাতে দুই বছর ধরে আছেন রাজধানীর আগারগাঁওয়ের প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরা বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানের প্রবীণ নিবাসে।

রাফসান আরার বড় ছেলে ফাহাদ হোসেন (৩৯) লন্ডনের একটি হাসপাতালে অর্থপেডিকস অ্যান্ড সার্জারি বিভাগের প্রধান। দুই মাস আগে লন্ডন থেকে কানাডায় পাড়ি জমিয়েছেন আরো বড় ডিগ্রি নিতে। ২০১০ সালে স্ট্রোক করেন রাফসান আরা। ডায়াবেটিকস ও উচ্চরক্তচাপসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছেন তিনি।

নীলফামারী জেলার ডিমলার মেয়ে রাফসান আরার স্বামী এয়ারলাইন্স কার্গো সেকশনে চাকরি করতেন। মেয়ে নাজিয়া হোসেন (৩৭) লন্ডনে অর্থনীতিতে উচ্চ ডিগ্রি নিয়েছেন। এখন তিনি সোশ্যাল ওয়েলফারের ওপর একটি এনজিওতে চাকরি করেন সেখানেই।

অবসরের পর কিছুদিন সন্তানদের সঙ্গে লন্ডনে ছিলেন রাফসান আরা। তবে সেখানে তার থাকা হয়নি বেশিদিন। এখন প্রবীণ নিবাসে একাই দিন কাটান নীরবে। বিগত দিনের স্মৃতি ভুলে থাকার চেষ্টা করেন সব হারানো রাফসানা।

সন্তানদের পড়ালেখা করানোর জন্য ২৬ বছর চাকরি করে গেছেন। নিজে টাকা জমাননি। পড়ালেখা শেষে সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় পাঠিয়েছেন লন্ডনে। সেখানে উচ্চশিক্ষা শেষে বড় ছেলে ১১ বছর ধরে ডাক্তারি করছেন। মেয়েও লন্ডনে ৭ বছর চাকরি করছেন। স্বামীকে নিয়ে দুই বছর আগে লন্ডনে গিয়েছিলেন রাফসান আরা। সেখান থেকে বর্তমানে বৃদ্ধাশ্রমে।

নিজের বেদনা ঢেকে রাফসান আরা বলেন, আমি কেমন আছি সেটা দেখার বিষয় না, আমি কেমন আছি এটাও বড় ব্যাপার না। আমি সব সময় দোয়া করবো আমার সন্তানেরা যেন দুধে-ভাতে থাকে। আল্লাহ সব সময় তাদের ভালো রাখুক। মায়ের ভালোবাসা চিরন্তন। সন্তানরা যাই করুম মায়ের দোয়া সবসময় তাদের প্রতি থাকবে।

লন্ডনে পরিবারের কাছে থাকলেন না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে চোখের লোনা জল ফেলতে থাকেন মা রাফসান। ফেলে আসা দিনের কথা মনে করতে চান না তিনি। সবকিছু ভুলে

জীবনের শেষ দিনগুলি প্রবীণ নিবাসে নির্বিঘ্নে কাটাতে চান রাফসান আরা। সুত্র: বাংলানিউজ২৪.

 

রমজানে ইফতারির রেসিপি-২

রেসিপি


মাছের চপ

উপকরণ: ১. যেকোনো মাছ (ভেটকি, রুই বা ইলিশ) পাঁচছয়টি বড় টুকরা,
২. আলু মাঝারি ৩টি,
৩. একটি বড় পাউরুটির টুকরা,
৪. পেঁয়াজ মিহিকুচি আধা কাপ,
৫. আদাবাটা ১ চা-চামচ,
৬. রসুনবাটা ১ চা-চামচ,
৭. কাঁচামরিচ-কুচি ১ টেবিল-চামচ,
৮. মরিচগুঁড়া ১ চা-চামচ,
৯. হলুদগুঁড়া ১ চা-চামচ,
১০. ধনিয়াগুঁড়া ১ চা-চামচ,
১১. ভাজা জিরাগুঁড়া আধা চা-চামচ,
১২. লবণ স্বাদমতো,
১৩. তেল ভাজার জন্য।

প্রণালি: মাছের টুকরাগুলো ভাপে সেদ্ধ করে কাঁটা বেছে নিতে হবে। সেদ্ধআলু ভালোভাবে চটকে নিন। এবার পাউরুটি পানিতে ভিজিয়ে সঙ্গে সঙ্গে তুলে নিতে হবে। তারপর মাছ, আলু, রুটি খুব ভালো করে মেখে নিতে হবে। একে একে তেল বাদে সব উপকরণ খুব ভালো করে মিশিয়ে হাতে পছন্দ মতো আকার দিন। এবার গরম তেলে চপগুলো ছেড়ে দিয়ে মাঝারি আঁচে ভাজতে হবে। হালকা বাদামী রঙ আসলে নামিয়ে নিলেই হল। ইফতার, সাদাভাত, পোলাও বা বিরিয়ানির সঙ্গে খেতে মাছের চপের জুড়ি নেই।

পরিবেশন: গরম গরম মাছের চপ হাফ বাটিতে নিয়ে তাতে লেবু ও পুটিনা পাতা দিয়ে পরিবেশন করুন।

চিকেন মোমো

উপকরণ : ১. ময়দা ২ কাপ,
২. তেল ২ টেবিল চামচ,
৩. মুরগির কিমা দেড় কাপ,
৪. রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ,
৫. আদা কুচি ৩ চা-চামচ,
৬. পেঁয়াজপাতা কুচি ২টি,
৭. লবণ স্বাদমতো,
৮. সয়াসস ২ চা-চামচ,
৯. গোলমরিচ গুঁড়া আধা চা-চামচ,
১০. লেবুর খোসা কুচি আধা টেবিল চামচ,
১১. মাখন ১ টেবিল চামচ।

প্রণালি: ময়দার সঙ্গে আধা চা-চামচ লবণ, তেল ও পরিমাণ মতো পানি মিশিয়ে ময়ান দিতে হবে। কিমার সঙ্গে পেঁয়াজ, আদা-রসুন কুচি, সয়াসস, লবণ ও গোলমরিচ গুঁড়া মিশিয়ে মেখে রাখতে হবে। ফ্রাইপ্যানে মাখন গলিয়ে কিমার মিশ্রণ অল্প আঁচে রান্না করুন। কিমার পানি শুকিয়ে গেলে পেঁয়াজপাতার কুচি দিয়ে নেড়ে আরও ২ থেকে ৩ মিনিট ঢেকে রাখুন। এবার ঢাকনা খুলে কাঁচা মরিচ কুচি ও লেবুর খোসার কুচি দিয়ে নেড়ে আবার ঢেকে দিয়ে মৃদু আঁচে দুই মিনিট রাখুন। এদিকে ময়দার খামি থেকে ছোট আকৃতির রুটি বেলুন। রুটির কিনার বেশি পাতলা থাকবে। রুটির মাঝখানে ১ টেবিল চামচ করে কিমার পুর দিয়ে অর্ধেকটা মুড়ে দিয়ে ও পেঁচিয়ে এনে বাকি অর্ধেক চেপে দিন, যেন মুখ খোলা না থাকে। সব গুলো মোমো তৈরি হয়ে গেলে মাইক্রোওয়েভ কুকারে বা পানি ভর্তি বড় পাতিলের মুখে কাপড় বেধেও ভাপ দিয়ে নিতে পারেন। পাতিলের মুখে ভাপ দিতে হলে মিনিট দশেকই যথেষ্ট।

পরিবেশন: ভালোভাবে ভাপ দেয়া হলে নামিয়ে তারপর সসের সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করুন মজাদার মোমো।
সুত্র রেসিপি: বাংলাদেশ রেসিপি

রমজানে ইফতারির রেসিপি-১

 

বাতিঘর

রেহনুমা বিনতে আনিস


কোণাচোখে তারিককে পাশের টেবিলে আরাম করে বসতে দেখে জামিল দ্রুত গলা নামিয়ে বলে, ‘শুনুন, আপনি কিন্তু কিছুতেই আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবেননা’।

ঘটনার আকস্মিকতায় থতমত খেয়ে যায় ফারজানা। সে লোকটাকে চেনেনা, জানেনা, কোন সালাম নেই, সম্ভাষন নেই, হুট করে এই আচমকা অনুরোধ! তারিকের দিকে জামিলের চোরা চাহনি, ফিসফিস কথা বলার ভঙ্গি আর এই অদ্ভুত প্রস্তাব- সব মিলিয়ে কিম্ভুত এই পরিস্থিতিতে হঠাৎ হাসি পেয়ে যায় ওর। হাসি চাপার চেষ্টা করতে করতে সে স্মিত হেসে বলে, ‘আসসালামু আলাইকুম’।

এবার নিজের অভদ্র আচরন স্মরন করে জামিল নিজেই একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে, লজ্জা লজ্জা চেহারায় টেবিলের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ওয়া আলাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’।
– ‘আমার নাম ফারজানা’।
– ‘জ্বি, তারিক ভাই এইমাত্র বললেন। আমি জামিল’।
– ‘আপনার মত আমিও আসলে এখন বিয়ে করতে উৎসাহী নই। কিন্তু আমি যদি এই মূহূর্তে উঠে চলে যাই তাহলে বিয়ে করবনা বললে ভাইয়া কিছুতেই কনভিন্সড হবেনা। সুতরাং, আমাদের মনে হয় কিছুক্ষণ অন্তত কথা বলার অভিনয় করা উচিত’।
জামিল বুঝতে পারল কথায় যুক্তি আছে, কিন্তু সে কি বলবে? ওর তো এটুকুই শুধু বলার ছিল!
ফারজানাই এগিয়ে এলো, ‘আচ্ছা, আপনি বিয়ে করতে না চাইলে দেখা করতে চাইলেন কেন? আপনি তো মেয়ে না যে কেউ আপনাকে জোর করে বাধ্য করতে পারবে!’

জামিল ওর দিকে তাকালে দেখতে পেত ওর চোখের তারায় কৌতুক, কিন্তু টেবিলের দিকে তাকিয়ে থাকায় সে ফারজানার কথায় দুষ্টুমির ভাবটা ধরতে পারলনা। খুব অপরাধী, মাটির সাথে মিশে যেতে পারলে বাঁচে এমন চেহারা করে আমতা আমতা করে বলতে লাগল, ‘আসলে আমার বাবামা ভাইবোন কেউ নেই। চাচা চাচীর কাছে মানুষ। এখন শহরে থাকি বলে তাঁদের সাথেও তেমন যোগাযোগ হয়না। একা থাকি বলে তাঁদের চিন্তার অন্ত নেই। চাচা তাঁর এক বন্ধুকে বললেন আমার জন্য মেয়ে দেখতে। আমার নিজের কোন কুলকিনারা নেই, সাধারন একটা পেটেভাতে চাকরী করি, ছোট্ট একটা দু’কামরার ঘরে ভাড়া থাকি- এই জীবনে কাউকে জড়িয়ে কষ্টে ফেলে লাভ আছে? কিন্তু চাচা চাচী কিছুতেই বুঝতে চান না। চাচার এক বন্ধু আপনার ভাইকে চেনেন। ওঁরা আমাকে এমনভাবে ধরলেন যে মেয়ে না দেখে কোন সিদ্ধান্তই তারা শুনবেন না। তাই আপনাকে কষ্ট দিতে হোল। আপনাকে এখানে আসতে বাধ্য করা হয়ে থাকলে সেজন্য আমি অত্যন্ত দুঃখিত। প্লীজ আমাকে মাফ করে দেবেন’।

জামিলের হাবভাবে এবার ফারজানা কিছুতেই হাসি চেপে রাখতে পারলনা, খিক করে একটু হাসি দিয়েই মুখে হাত চেপে ধরল। এবার জামিল থতমত খেয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘আমি কি এমন কিছু বলেছি যা আপনার অস্বাভাবিক মনে হয়েছে?’

ফারজানা হাসি সংযত করার চেষ্টা করে বলে, ‘নাহ, তবে আপনার চেহারায় কেমন যেন একটা চোর চোর মার্কা দুঃখী দুঃখী ভাব আছে, হি হি…’
-‘চোর চোর?’, কনফিউজড হয়ে যায় জামিল।
-‘জ্বি, আদিব, আমার ভাইয়ের ছেলেটা বিস্কিট চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে গেলে যেমন চেহারা বানায় আপনার চেহারাটা ঠিক তেমন লাগছে, হি হি হি…’
এবার জামিলও হেসে ফেলে।
-‘আচ্ছা, আপনি কি নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়েন?’
অপ্রত্যাশিত প্রসঙ্গ পরিবর্তনে আবার ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় জামিল, শুধু উত্তর দিতে পারে, ‘জ্বি’।
-‘আপনি কি লেখাপড়া করতে পছন্দ করেন? যেমন কুর’আন হাদিস পড়া, গল্পের বই পড়া, বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা ইত্যাদি?’
– ‘জ্বি, নিয়মিত পড়ি’।
– ‘আপনি কি সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করেন?’
– ‘জ্বি’, কথাবার্তা যে কোনদিকে যাচ্ছে কিছুই ঠাহর করতে পারেনা জামিল।
– ‘আপনি কি বিশ্বাস করেন যে সৃষ্টিকর্তা আপনাকে কোন বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন এবং তিনিই আপনাকে সেই উদ্দেশ্যের কাছে পৌঁছে দেবেন?’
– ‘জ্বি’।
– ‘তাহলে আপনার কি মনে হয় আপনার কথায় এই বিশ্বাস প্রতিফলিত হয়? নাকি আপনার মন বিশ্বাসের কথা বললেও মুখ অবিশ্বাসের সাক্ষ্য দেয়?’

বাক্যালাপ এখানে এসে ঠেকবে স্বপ্নেও কল্পনা করেনি জামিল। কিন্তু এই অপরিচিত মেয়েটি তাকে এমন এক রূঢ় সত্যের সম্মুখীন করে দিয়েছে যা সে কখনো ভেবেও দেখেনি। সময় তাকে এমন এক ব্যাক্তিতে রূপান্তরিত করে দিয়েছে যে বিশ্বাসের কথা বলে অথচ নিরাশায় ভোগে, যে আত্মীয়তার জন্য হাহাকার করে অথচ আত্মীয়তার বন্ধনের মূল্যায়ন করতে পারেনা, যে আল্লাহর ওপর নির্ভরতার কথা বলে অথচ কারো দায়িত্ব নেয়ার জন্য নিজেকে নির্ভরযোগ্য মনে করেনা। হা করে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কোন জবাব দিতে পারেনা সে।

ওদিকে তারিক উঠে দাঁড়ায়, ফারজানাও সালাম দিয়ে ভাইকে অনুসরন করে। তারিক আর ফারজানাকে বিদায় দিয়ে আবার রেস্টুরেন্টের বে-আরাম চেয়ারটাতে বসে ভাবতে থাকে জামিল, মেয়েটা তাকে কি বলে গেল?

দু’ঘন্টা পর, ফারজানার বাসায়ঃ

‘অ্যাই বলনা ছেলেটা দেখতে কেমন ছিল?’
‘সত্যি ভাবী, আমি খেয়াল করিনি। খুব বেশি খারাপ হলে হয়ত খেয়াল করতাম’।
‘তাহলে আমার যে ননদিনি এতদিন বিয়ে করতে রাজী হয়নি সে কি দেখে একঘণ্টায় বিয়ে করতে রাজী হয়ে গেল?’
‘ওহ, তুমি এটা জানতে চাও? বললেই তো হত!’, চোখ টিপে হেসে ফেলে ফারজানা।
‘জ্বি ফারজু বিবি, এটাই জানতে চাই’, গালে হাত দিয়ে কৌতুহল প্রকাশ করেন ভাবী।
‘শোন তাহলে- লোকটাকে দেখে মনে হোল আমি এই লোকটার জীবনে কিছু একটা অবদান রাখতে পারব, তার বিশ্বাসকে পূর্ণতা দান করতে সাহায্য করতে পারব, তার সাথী হতে পারব। অধিকাংশ পুরুষ বিয়ে করার সময় কাজের মেয়ে খোঁজে। ভাবী, আমার ঘরের কাজ আমি করব, তাতে আপত্তির কি আছে? কিন্তু সেটাই যদি বিয়ের একমাত্র উদ্দেশ্য হয় সেটা আমি মেনে নিতে পারিনা’।
‘তা তো ঠিক আছে ফারজু বিবি। কিন্তু তোমার ভাইয়া বলল ছেলেটাকে দেখে বিয়ের ব্যাপারে আগ্রহী মনে হয়নি, আমি ভাবছি তুমি তার জীবনে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে তা সে মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে কিনা’, চিন্তিত মনে হয় ভাবীকে।
‘ভাবী, লোকটাকে দেখে মনে হোল খুব সরল আর লাজুক প্রকৃতির কিন্তু বোকা না। উনি নানা কারণে জীবনের প্রতি আশাহত কিন্ত এই আশা জাগিয়ে তোলার মত বিশ্বাস ওনার মনের কোণে কোথাও অবশিষ্ট আছে’।
‘তাহলে আশা করি তুমি তার সেই ভঙ্গুর আশালতায় কোথাও দোলা দিতে পেরেছ’, ফারজানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে জানালা দিয়ে বাইরে তাকান ভাবী। বাপমা মরা এই মেয়েটাকে নিজের মেয়ের মত করেই বড় করেছে তিনি। কোনদিন ওর বিশ্বাসে এতটুকু চির ধরতে দেননি। এই আশার উজ্জ্বল প্রদীপ, এই বাতিঘর যদি সমুদ্রে হারিয়ে যাওয়া কোন নাবিককে পথ দেখাতে পারে, পারে আরেকটি ঘরকে আলোকিত করতে, তবে এর চেয়ে বেশি আর কি সাফল্য আশা করতে পারেন তিনি?

তিনদিন পর, নদীর ধারেঃ

‘মেয়েটা যে তোর জন্য perfect তা কি এখন তোর মাথায় ঢুকেছে না আরো সময় লাগবে?’, রোদের জন্য ভ্রূ কুঁচকে জামিলের দিকে তাকানোর চেষ্টা করে কামাল। জামিলের মুখটা ভারী উজ্জ্বল দেখাচ্ছে, ওটা কি রোদের আলো না আশার?
‘হিসেব করছি রে দোস্ত। কথায় কথায় ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদবে, বাচ্চাদের মত আবদার করে জীবন অতিষ্ঠ করে তুলবে এমন বৌয়ের ভীতি থেকেই বিয়ে করতে অনীহা বোধ করতাম। কিন্তু এই মেয়েটা প্র্যাক্টিকাল, সেন্সিবল, স্মার্ট, বুদ্ধিমতি এবং ঠিক আমার মত পরিস্থিতিতে বড় হয়েও ওর বিশ্বাসটা অত্যন্ত মজবুত। আমার জীবনের এক বিরাট সত্য সে আমাকে কি অবলীলায় বুঝিয়ে দিল মনে একটুও কষ্ট না দিয়ে! এই সাহচর্য আমার প্রয়োজন, ম্যাগ্নিফায়িং গ্লাস দিয়ে দুঃখগুলোকে দেখা বন্ধ করার জন্য ওর হাসির জোয়ার আমার জীবনে দরকার, সবচেয়ে বড় কথা ওর বিশ্বাসের শক্ত খুঁটিটা হতে পারে আমার জীবনের সে অবলম্বন যা আমি এতদিন খুঁজে খুঁজে হয়রান হচ্ছি’।
‘তাহলে তুই দেরি করছিস কিসের জন্য?’
‘মেয়েটা যে বলল সে বিয়ে করতে আগ্রহী না!’
‘তুই জিজ্ঞেস করেছিলি, কেন?’
‘নাহ’।
‘গাধা কোথাকার! জিজ্ঞেস করবিনা?’, ঈষৎ বিরক্ত হয় কামাল, পরক্ষণেই আবার আশাবাদী হয়ে ওঠে, ‘যাক, সে বুদ্ধিমতি মেয়ে, ঠিকই বুঝতে পারবে তোর জীবনে সে ফ্রেন্ড, গাইড অ্যান্ড ফিলোসফার হয়ে বিরাজ করতে পারবে। একজন বুদ্ধিমতি মেয়ের জন্য এটাই বড় প্রাপ্তি’।
‘কিন্তু ওর আমাকে পছন্দ হোল কি’না কিভাবে জানব?’
‘ওরে দোস্ত, ওর পরিবারের সাথে কথা বল, নাহলে জানবি কি করে?’
‘ওঁরা যদি না করে দেয়?’
‘হ্যাঁও তো বলতে পারে। তুই আগেই নিরাশ হলে মেয়েটা তোকে শেখালটা কি?’
মাথা নাড়ে জামিল, আজই কথা বলতে হবে।
‘তা মেয়েটা দেখতে কেমন রে?’
‘খেয়াল করিনি তো!’, নিজেই অবাক হয় জামিল, ‘কিন্তু খুব বেশি খারাপ না মনে হয়, তাহলে হয়ত খেয়াল করতাম’।
খুশি হয় কামাল, ‘যারা মানুষের অন্তর দেখে পছন্দ করে তারাই মেয়ে দেখে এসে বলতে পারে চেহারা খেয়াল করেনি। এই বিয়ে হলে তুই ঠকবি না দোস্ত’।
উঠে দাঁড়ায় দু’জনে, আনন্দের আতিশয্যে হঠাৎ স্লোগান ছাড়ে কামাল, ‘জামিল তুই এগিয়ে চল, আমরা আছি তোর সাথে’।
হো হো করে হেসে ফেলে দু’জনে।

ছয়মাস পরঃ

‘আজকে তোমার নতুন চাকরী, এত সুন্দর জামাকাপড় পরেছ অথচ চুলটা আঁচড়াওনি। একটু গেলাম রান্নাঘরে আর ব্যাস, তোমার ফাঁকিঝুঁকি শুরু! তোমাকে নিয়ে আমি কি করি বলত?’, ব্যাস্তসমস্ত হয়ে পাশের রুম থেকে চিরুনী হাতে দৌড়ে আসে ফারজানা।
টেবিলে ঠান্ডা হতে দিয়ে যাওয়া খাবারগুলো টিফিন ক্যারিয়ারে ভরতে ভরতে জামিল বলে, ‘আমি চুল আঁচড়ালে সকাবেলা আমার মাথায় তোমার হাতের স্পর্শ নিয়ে বেরোব কি করে বলত? তুমি সকালে হাত দিয়ে ছুঁয়ে দিলে আমার সারাদিন মাথা ঠান্ডা থাকে, একদম যেন তিব্বত কদুর তেলের বিজ্ঞাপনের মত!’
‘হি হি হি’, ওকে হাসতে দেখে জামিলের হাসিটাও ঠোঁটের একপাশ থেকে পুরো মুখে ছড়িয়ে পড়ে। জামিলকে শেষপর্যন্ত হাসতে শেখাতে পেরেছে ফারজানা, ওর দুষ্টুমিগুলো এখন সে কিছু কিছু বোঝে, নিজেও দুষ্টুমি করতে শুরু করেছে দেখে বেশ উৎফুল্ল হয় সে।
‘যাবার পথে চাচা চাচীকে ফোন করে জানিয়ো নতুন চাকরিতে যাচ্ছ’।
‘ওঁরা জানেন তো’।
‘তাতে কি হয়েছে? ফোন করে জানাও, খুশি হবেন। আর বিকালে ফিরলে চাচীর জন্য শাড়ি কিনব যেন আগামী বৃহস্পতিবার নিয়ে যেতে পারি। আগামী মাসে বেতন পেলে চাচাকে পাঞ্জাবী কিনে দেব’।
‘আর তুমি কি কিনবে?’
‘বাহ, তোমার মতন এমন একটা চমৎকার গিফট থাকতে আমার আর কি লাগবে?’
মনে মনে একই কথা ভাবে জামিল, কিন্তু ওর মত সাবলীলভাবে বলতে পারেনা। বেহেস্তের টুকরোর মত বৌটার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকে।
‘তুমি কি চাও তোমার নতুন অফিসে প্রথম দিন লেট হোক?’
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে জুতো পায়ে দিতে দিতে আবার ফারজানার দিকে তাকায় জামিল।
‘যাআআআও’, বলে হাতে টিফিন ক্যারিয়ারটা হাতে গুঁজে দিয়ে দরজা খুলে ওকে প্রায় ঠেলে বের করে দেয় ফারজানা।
শেষ একবার পেছন ফিরে তাকালে ফারজানা মিষ্টি হেসে বলে, ‘আসসালামু আলাইকুম’।
এই স্বর্গীয় সম্ভাষন কানে নিয়েই প্রতিদিন পৃথিবীর বন্ধুর পথে যাত্রা শুরু হয় জামিলের, সে স্মিত হেসে জবাব দেয়, ‘ওয়া আলাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’।

এখনো রিক্সা পেতে দেরী হয়, বাসে ভিড় ঠেলে উঠতে কষ্ট হয়, অফিসে ঝামেলা হয়, দোকানে দরদাম নিয়ে মন কষাকষি হয়, দু’কামরার ঘরটাতে চাপাচাপি হয়, কোন কোনদিন ভাল তরকারীও থাকেনা। তবু কেন যেন পৃথিবীটাকে আর আগের মত জটিল মনে হয়না। দিনের শেষে ওর জীবনে আছে এমন এক সাথী যে ওর সুখদুঃখ সব সমানভাবে ভাগাভাগি করে নেয়, যে ওর কষ্টগুলোকে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিতে পারে, যে ওর বিশ্বাসকে এক আলোর তৈরী মিনারের মত উচ্চকিত করে তোলে। হাসি পায় এই ভেবে যে এই দুই শ্রেষ্ঠ বন্ধুর প্রথম বাক্যালাপ ছিল, ‘আপনি কিন্তু কিছুতেই আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবেননা’!

 

রমজানে ইফতারির রেসিপি

নুডলস পাকোড়া

উপকরণ
১. ১ কাপ বেসন,
২. ২ টেবিল চামচ চালের গুঁড়া,
৩. ১ কাপ সেদ্ধ নুডলস,
৪. ১ কাপ পরিমাণে সবজি (আলু, গাজর, ক্যাপসিকাম, মাশরুম বা আপনার পছন্দের যে কোনো সবজি),
৫. ৩/৪ টি কাঁচা মরিচ কুচি,
৬. ২ টি পেঁয়াজ কুচি,
৭. ১ ইঞ্চি আদা কুচি,
৮. ২ টেবিল চামচ টমেটো সস,
৯. ২ টেবিল চামচ ধনিয়া পাতা কুচি,
১০. লবণ স্বাদমতো,
১১. পানি পরিমাণমতো,
১২. তেল ভাজার জন্য।

প্রণালি
১. প্রথমে পানি দিয়ে বেসন ও চালের গুঁড়ো ভালো করে মিশিয়ে ঘন থকথকে ব্যাটারের মতো তৈরি করে নিন। ভালো করে মিশিয়ে নেবেন যেনো বেসনে দলা না থাকে।

২. এরপর একে এঁকে বাকি সব উপকরণ (তেল ছাড়া) বেসনের মিশ্রনে দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে ফেলুন। প্রয়োজনে আরও খানিকটা পানি দিয়ে বড়া ভাজার মতো মিশ্রন তৈরি করে ফেলুন।

৩. এরপর চুলায় কড়াইয়ে ডুবো তেলে ভাজার জন্য তেল গরম করে নিন। অল্প একটু মিশ্রন হাতে নিজে বড়ার মতো গোল চ্যাপ্টা আকার দেয়ার চেষ্টা করুন এবং তেলে দিয়ে লালচে করে মুচমুচে করে ভেজে তুলে নিন।

পরিবেশন

একটি কিচেন টিস্যুতে রেখে তেল শুষে নিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন ইফতারে।

জিলাপি

উপকরণ
১. ১ কাপ ময়দা,
২. আধা কাপ টকমিষ্টি দই,
৩. ১ চা চামচের সামান্য বেশি বেকিং পাউডার,
৪. কয়েক ফোঁটা কমলা ফুড কালার,
৫. ঘি বা ডালডা ভাজার জন্য,
৬. ২ কাপ চিনি,
৭. ১ কাপ পানি।

প্রণালি

১. প্রথমেই চিনি ও পানি একসাথে দিয়ে প্যান চুলায় বসিয়ে জ্বাল করতে থাকুন শিরা তৈরির জন্য। মাঝারি আচে জ্বাল দিয়ে মাঝারি ঘন শিরা তৈরি করে নিন। শিরা ঠিকমতো হয়েছে কিনা তা দেখার জন্য ঠাণ্ডা পানিতে কয়েক ফোঁটা শিরা ফেলে দেখুন। শিরা ছড়িয়ে না পড়ে যদি গোল বলের মতো হয় তাহলে বুঝবেন শিরা তৈরি হয়ে গিয়েছে। তাহলে নামিয়ে রাখবেন।

২. শিরা জ্বাল করতে করতেই ময়দা ও বেকিং পাউডার একসাথে ভালো করে মিশিয়ে ফেলবেন। এবং এতে মেশাবেন দই ও ফুড কালার। ভালো করে মিশিয়ে পরিমাণমতো পানি দিয়ে ঘন মসৃণ ব্যটার তৈরি করে নিন।

৩. ব্যাটার খুব ঘন হবে না বা পাতলাও হবে না। বেগুনী বা আলুর চপ ভাজার জন্য যেমন অল্প ঘন ধরণের বেসনের ব্যটার তৈরি করেন ঠিক তেমনটা।

৪. কেকের উপরে ক্রিম সাজানোর যে পাইপিং ব্যাগ পাওয়া যায় তাতে নিন এই ব্যটারগুলো। যদি না থাকে একটি প্ল্যাস্টিকের ব্যাগে ভরে নিন এই ব্যটার এবং ব্যাগের এক কিনারে একটু গোল ফুটো করে দিন।

৫. একটি তলা ভারী কড়াইয়ে ডুবো তেলে ভাজার জন্য ঘি বা ডালডা দিয়ে গরম করুন। যদি ঘি বা ডালডা ব্যবহার করতে না চান তাহলে সাধারন তেলেও চলবে। তেল অতিরিক্ত গরম করবেন না। মাঝারি ধরণের গরম করে নিন।

৬. ব্যাগ চেপে হাত ঘুরিয়ে জিলাপির প্যাঁচ তৈরি করে জিলাপি ফেলুন তেল বা ঘি তে। সোনালি বাদামী রঙের করে ভেজে নিন দুপাশ এবং তুলে হালকা গরম শিরার মধ্যে ফেলুন।

পরিবেশন

৩-৪ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন শিরাতে তারপর তুলে নিন। ব্যস, এবার পরিবেশন করুন ইফতারে। ১৫ মিনিট শিরা তৈরি এবং পাশাপাশি ব্যটার তৈরি এবং ভেজে ৩-৪ মিনিট শিরায় ডুবিয়ে পরিবেশন। দেখলেন তো ৪০ মিনিটেরও কম সময়ে তৈরি করে ফেলতে পারবেন সুস্বাদু জিলাপি। সুত্র: বাংলাদেশি রেসিপি

 

শিশুদের মনে সৃষ্টিকর্তার অবস্থান

আফরোজা হাসান


নাকীবের যখন ছয় বছর বয়স তখন একদিন ওকে গেমস খেলতে দিয়ে আমি রান্না করতে গিয়েছিলাম। কিছুক্ষণ পর শুনলাম জোড়ে জোড়ে বলছে, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। কিছুক্ষণ পর শুনি আবারো বলছে একই কথা। আরো দু’বার শুনে আমি রান্নাঘর থেকে ওর রুমে গিয়ে বললাম, কি হয়েছে বাবা তুমি বার বার ‘বিসমিল্লাহ’ বলছো কেন? নাকীব বলল, আম্মু তুমি না বলেছে আল্লাহর নামে কিছু শুরু করলে তাতে বরকত হয়। আমি গেমসের প্রতিটা লেবেল পার করার সময় সেজন্য বিসমিল্লাহ পড়ে নিচ্ছি। দেখো সব লেভেলে সেজন্য হাই স্কোর হচ্ছে আমার। আমি হেসে ওকে খেলতে বলে আমার কাজে ফিরে গিয়েছিলাম।

এর কিছুদিন পরের কথা। তখন নাকীবকে আমি যা কিছু চাওয়ার আল্লাহর কাছে চাইতে হবে এই বিষয়টা মাত্র বোঝাতে শুরু করেছি। একদিন ওর প্রিয় একটা খেলনা খুঁজে পাচ্ছিলো না আমাকে এসে বললে আমি বললাম আগে নিজে খুঁজে দেবো একান্তই না পেলে আম্মু সাহায্য করবো খুঁজতে। সে মুখটা বাদলা আকাশের মত করে চলে গেলো। একটু পর শুনি চিৎকার করছে ‘গ্রাসিয়াস আল্লাহ’ ‘গ্রাসিয়াস আল্লাহ’ (ধন্যবাদ আল্লাহ)। জানতে চাইলাম কি হয়েছে? বেশ একটা মুড নিয়ে বলল, তুমি তো আমাকে খেলনা খুঁজে দিলে না। আমি আল্লাহকে বলেছি, হে আল্লাহ আমার খেলনাটা খুঁজে দাও। আল্লাহ তখন আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছেন আমি তো বন্ধুদের দেখানোর জন্য স্কুলে নিয়ে গিয়েছিলাম খেলনাটা। তাই খেলনাটা আমার স্কুল ব্যাগের মধ্যে।

নাকীবের স্কুলে এই মাসে প্রথম সপ্তাহে বেশ বাজে একটা ঘটনা ঘটেছে। যখন রিলিজিয়ন ক্লাস হয় তখন মুসলিম বাচ্চাদের জন্য এডুকেশনাল গেমসের একটা আলাদা ক্লাসের ব্যবস্থা আছে স্কুলে। নাকীবদের ক্লাসে যে ছয়জন মুসলিম বাচ্চা আছে ওরা রিলিজিয়ন ক্লাসের সময় ওদের জন্য নির্ধারিত ক্লাসে গিয়ে খেলা করছিলো। ওদের প্রফ এসে কথা প্রসঙ্গে ওদেরকে বললো যে, সৃষ্টিকর্তা বলে আসলে কিছুই নেই। এসব মানুষের বানানো ধারণা। এসব বিশ্বাস করা বোকামো ছাড়া আর কিছুই নয়। বাচ্চারা সবাই প্রফের এই কথার তীব্র প্রতিবাদ করলো। নাকীব বলেছে, তুমি সৃষ্টিকর্তা বিশ্বাস না করতে পারো কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি যে আমাদের আল্লাহ আছেন। এই কথা শেষ করেই নাকীব সূরা ইখলাস তিলাওয়াত করতে শুরু করে দিয়েছিলো প্রফের সামনেই।

ঘটনাটা নিয়ে মুসলিম অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। স্কুলের টিচার কখনোই বাচ্চাদেরকে এই কথা বলার রাইট রাখেন না যে, সৃষ্টিকর্তা বলে আসলে কিছুই নেই। এই ধরণের কথা টিচারদের বলারও কথা নয় বাচ্চাদেরকে। উনি কেন বলেছেন সেটা নিয়ে আলোচনা করার জন্য গতকাল আমরা অভিভাবকরা একসাথে হয়েছিলাম। আলোচনার সময় আমাদের সাথে বাচ্চারাও ছিলো। আমার এই পোস্টি লিখতে বসার কারণ আসলে বাচ্চারাই। ‘আল্লাহ নেই’ প্রফ কেন এই কথা বলেছে সেজন্য বাচ্চারা ভয়ংকর রকম রাগান্বিত প্রফের উপর। একটা ছেলে আছে নাম নোমান। মরক্কোর অধিবাসী। নোমানের সেই ক্ষোভ ভরা কণ্ঠ, রাগে জ্বলজ্বল করতে থাকা চোখ, প্রতিবাদী অঙ্গভঙ্গি থেকেই আমার এই লেখার সূত্রপাত।

আমি অবাক হয়েছি নোমানের আল্লাহর অস্তিত্বের উপর দৃঢ় বিশ্বাস এবং সেই বিশ্বাসের প্রকাশ দেখে। আট বছর বয়সী একটা বাচ্চা, যুক্তির প্রয়োগ সে জানে না। কিন্তু প্রতিবাদী কণ্ঠে বলছিল, এটা কি কখনো সম্ভব নাকি যে আল্লাহ নেই? আল্লাহ না থাকলে আমরা এলাম কি করে? পৃথিবী সৃষ্টি হলো কি করে? প্রফ একটা বোকা তাই এমন কথা বলেছে। অভিভাবকদের মধ্যেও নোমানের আম্মুই সবচেয়ে বেশি রাগান্বিত ছিলো। তিনিই সব গার্জিয়ানদের সাথে কথা বলে সবাইকে একত্রিত করার পুরো উদ্যোগটি নিয়েছিলেন। রাগে লাল হয়ে গিয়েছিলেন ভদ্রমহিলা। বলছিলেন, কোন সাহসে এই কথা প্রফ বললেন আমাদের বাচ্চাকে। আমরা স্কুলে পড়াশোনা শিখাতে পাঠিয়েছি তাদের কাজ শুধু সেটা শিখানো। আল্লাহ আছেন কি নাই সেটা আমরা শিখাবো আমাদের বাচ্চাকে। আমরা সবাই অভিযোগ করলে স্কুল কতৃপক্ষ ঐ প্রফকে জব থেকে বের করে দিতে বাধ্য। ইত্যাদি ইত্যাদি!

মা-ছেলের প্রতিবাদে গমগম করছিলো মাহফিল। একজন গার্জিয়ান বললেন, ভুল করে হয়তো বলে ফেলছে এটাকে এত বড় ইস্যু করার কোন প্রয়োজন দেখছি না। লক্ষ্য করলাম উনার বাচ্চাটাও বেশ নির্লিপ্ত এই ব্যাপারে। ওর কাছে ঘটনাটা জানতে চাওয়া হলে ঠিকমতো বলতেও পারলো না। কারণ বিষয়টা ওর মনে তেমন কোন প্রভাব রাখেনি। নাকীব বলল, প্রফ বলেছে তো কি হয়েছে? প্রফের বলাতে কি এসে যায়? আমি তো জানি যে আল্লাহ আছেন। (নাকীবের বাবা-মা দুজনই আসলে একটু ড্যাম কেয়ার স্বভাবের। মানুষের অপ্রয়োজনীয় বা অযৌক্তিক কথা যে কান দিয়ে শোনে সেই কান দিয়েই বের করে দেয় দু’জন ) দেখা গেলো পুত্রও বাবা-মার রঙে রঙিন।

আমি আরেকবার অনুভব করলাম কোন ঘটনাতে একটি শিশু কিভাবে রিঅ্যাক্ট করবে সেটা আসলে নির্ভর করে বাবা-মা তথা বেড়ে উঠার পরিবেশের উপর। চাইল্ড সাইকোলজিস্টরা যেমন বলেন যে, মা-বাবা হয়তো বুঝতে পারেন না কিন্তু এটা সত্যি সন্তানরা সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরার মতো তাদের অবলোকন করে এবং তাদের দেখে শিখতে থাকে। মাঝেমধ্যে কিছু কিছু আচরণ বাচ্চারা কপি করে নেয় এবং মা-বাবার রোল মডেল হয়ে অভিনয় করে দেখায়। তাই আমরা যদি চাই আমাদের সন্তান একজন আদর্শ মুসলিম হোক এর সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হচ্ছে নিজেরা চর্চার মাধ্যমে তাদের সামনে আদর্শ মুসলিমের গুণাবলী তুলে ধরা।

বেড়ে উঠার পরিবেশ থেকে জেনেছিলাম ইসলামের বিধান মেনে চলাটা জীবন ধারণের অন্যান্য জিনিসের মতোই। ক্ষুধা লাগলে যেমন আমরা খাবার খাই, ঘুম পেলে ঘুমোতে যাই, ঠিক তেমনি আযান শুনলে নামাজ পড়তে যেতে হবে। কারণ জীবন ধারণের বিভিন্ন উপকরণের মধ্যে নামাজও একটি। এটা মোটেই বাড়তি কোন দায়িত্ব না বরং জীবন যাপনের অংশ। দেহকে যেমন আমরা পোশাক ও বিভিন্ন প্রসাধন সামগ্রী দিয়ে সাজাই, মনেরও তেমন প্রসাধনী প্রয়োজন। আর মনের প্রসাধনী হচ্ছে কুরআন ও হাদীসের চর্চা। শরীর যেমন খাদ্যর দ্বারা সুস্থ্য থেকে, মন সুস্থ্য থাকে কুরআন তেলাওয়াত দ্বারা। ভিন্ন ভাষা ইংরেজির অর্থ না জানলে বা বুঝলে যেমন পরীক্ষার খাতায় সঠিক উত্তর লিখতে পারবো না। ঠিক তেমনি কুরআনের অর্থ না জানলে আখিরাতের পরীক্ষায় পাশ করা সুকঠিন হয়ে যাবে।

আমার মধ্যে এই চিন্তাগুলোই বদ্ধমূল এখনো পর্যন্ত। আমি যখন কাউকে দেখি নামাজ পড়ে না মেনে নিতে প্রচণ্ড কষ্ট হয়। একজন মুসলিম নামাজ পড়বে না চিন্তাই করতে পারি না আমি! অনেক অনেক কষ্ট পাই তাই পরিচিত কাউকে নামাজ ছেড়ে দিতে দেখলে। এর কারণ বাবা-মামণিকে দেখে এভাবেই চিন্তা করতে শিখেছি আমি। আসলে আমাদের সন্তানদের মনে সৃষ্টিকর্তার অবস্থান কেমন হবে সেটা নির্ভর করে আমরা সৃষ্টিকর্তাকে কিভাবে পেশ করছি তাদের সামনে তার উপর।

সুতরাং সন্তানের মনে সৃষ্টিকর্তার অবস্থানকে নিশ্চিত করতে হলে আগে আমাদের মনের সৃষ্টিকর্তার অবস্থান কোথায় ও কেমন সেটা যাচাই করে দেখতে হবে। তাই চলুন আমরা নিজেরা সৃষ্টিকর্তাকে আমাদের মনে দৃঢ় ভাবে স্থাপন করি, তাহলে আমাদের সন্তানদের মনেও সৃষ্টিকর্তার অবস্থান নিশ্চিত হয়ে যাবে (ইনশাআল্লাহ)।

 

মাতৃকথন ৭

ফারিনা মাহমুদ


শুরু করি সত্য ঘটনা দিয়ে । আমার ছেলের বয়স যখন ১৬ মাস, ওকে নিয়ে গেলাম আর্লি চাইল্ডহুড সেন্টারে। বাচ্চা জন্মের পর থেকে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত এই সেন্টারে শিশুর স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক বিকাশ সংক্রান্ত রুটিন চেকাপ করানো যায়, প্রয়োজনে এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নার্সদের সাথে বিশেষ সমস্যা নিয়ে কথা বলা যায় মা ও বাচ্চা উভয়ের ব্যাপারে। ওরা পরামর্শ দেবার পাশাপাশি অন্যান্য ক্লিনিকে রেফার করে দিতে পারে। এখানে যেকোনো সমস্যা নিয়েই যাওয়া যায়। যেমন ধরেন বাচ্চার ঘুমের রুটিন ঠিক করতে পারছি না, রাতে কান্না করে, খেতে চায় না, খুব ভয় পায়, সারাক্ষণ মা আঁকড়ে থাকে, বুকের দুধ ছাড়াতে পারছি না … যে কিছু ।
ওরা কিছু ট্রিক্স আর টিপস দেয়, সচরাচর খুব ত্যাঁদড় বাচ্চা না হলে ঐসব ট্রিক্স কাজ করে যদি ঠিকমতো ফলো করা যায় । আর এতে কাজ না হলে ফিডিং ক্লিনিক বা স্লিপ ক্লিনিক এর মতো স্পেশালাইজড জায়গায় পাঠানো হয় ।
আমার সমস্যা ছিলো বাংলাদেশী মায়েদের জাতীয় সমস্যা, বাচ্চা খায় না। আসলে ব্যাপারটা যতটা হালকাভাবে বলছি, ততটা হালকা না । এই ভয়ঙ্কর কষ্ট যেই মা ভোগ করেন, তিনিই শুধু জানেন এটা কতটা পীড়া দায়ক । যে বেলা বাচ্চাটা পেট ভরে খায়, মায়ের যেনো মাথাটা একটু ঠান্ডা থাকে। বাচ্চা খেলো না, ব্যাস, দুনিয়ার কিছুই আর ভালো লাগে না। ঠিক এই অবস্থায় বিদেশ বিভূঁইয়ে কর্মজীবি একজন মায়ের বাচ্চা যখন রীতিমতো খাবার সামনে দেখলে মুখে যমদুয়ারের খিল এঁটে বসে থাকে, তখন লাগে টা ক্যামন?

চোখের সামনে আমার ব্যর্থ মাতৃত্বের স্বাক্ষ্য দিতে তার জামা কাপড় সাইড দিয়ে ঢল ঢল করছে। অফিস থেকে ফিরে আমি বাচ্চার খাবার নিয়ে বসি এমনভাবে যেনো গাজা উপত্যকা নিয়ে ইসরায়েল ও প্যালেস্টাইনের মধ্যে চলমান সংকটের একটা সমাধান করার মরণপণ নিয়ে জাতিসংঘ শান্তি চুক্তিতে জেনেভায় বসছে। প্রতিরাতে সেই চুক্তি ব্যর্থ হয়, ডিপ্লোম্যাট হিসাবে আমি ফেল মারি এবং সংকট প্রকটতর হতে থাকে! বাচ্চার ঘাউড়ামি বাড়ে পাল্লা দিয়ে।

শেষ চেষ্টা হিসাবে পেন্টাগনে এপয়েন্টমেন্ট নিলাম, অর্থাৎ আর্লি চাইল্ডহুড সেন্টারে নিয়ে গেলাম ওকে। নার্স আমার সব কথা শুনলো, ওর ওজন উচ্চতা মাপলো। ওর বয়স অনুযায়ী ডেভেলপমেন্ট মাইলস্টোন গুলো কতটুকু ও এচিভ করেছে সেই ব্যাপারে আমাকে ধারাবাহিক প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে হলো । বাসায় যতক্ষণ থাকে ওকে কয়বার এবং কি ধরণের খাবার দেয়া হয় তার একটা বিবরণ দিতে হলো। এরপর আমাকে যেই প্রশ্নটা মহিলা করলো, তা শুনে আমি ভিমরি খেলাম!

– ফারিনা, তুমি কি ওভারওয়েট?
আমি আমতা আমতা করে বললাম হ্যাঁ আইডিয়াল বডি ওয়েটের চেয়ে বেশ অনেকটাই বেশী ওজন আমার ।
– ডু ইউ নো হোয়াই?
মানে কি? তুই কি কইতে চাস ছেলের খাওয়া আমি খাই? আমার ওজন ক্যানো বেশী এইটা তোর কাছ থেকে আমার জানা লাগবো? আল্লাহ গো তুমি দড়ি ফালাও, তোমার দোহাই লাগে! আমার রাগ তখন চরমে, তারপরেও মুখে হাসি ধরে বললাম – হোয়াই ?
– বিকজ ইউ ডোন্ট নো হোয়েন টু স্টপ ইটিং !
আমি তব্দা খেয়ে বসে আছি!
মহিলা বলে যাচ্ছে – সুস্থ স্বাভাবিক জীব মাত্রই তার যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু খাবার খাবে। যেখানে থামা প্রয়োজন সেখানে থামবে। মানুষই সম্ভবত একমাত্র জীব যে চোখের ক্ষুধায় খায়। পেট ভরা একটা বাঘের সামনে দিয়ে একটা হরিণ হেঁটে গেলে বাঘ লোভে পড়ে লাফ দিয়ে হরিনের পশ্চাৎদেশ থেকে এক খাবলা মাংস খেয়ে নেয় না। কিন্তু পেট ভরা অবস্থায় লোভনীয় একটা ডেজার্ট দেখলে আমরা মানুষরা হামলে পড়ি! বিপত্তিটা ঘটে তখনি, ওজন বেড়ে যায় ওভার ইটিং এর জন্য বাচ্চার এই স্টার্ট স্টপ সিগন্যালকে ইগ্নোর করে তুমি যদি ওকে জোর করে বা ট্রিক্স করে বাড়তি খাবার খাওয়াও, ওর ব্রেইন স্টার্ট স্টপ সিগন্যাল দেয়ায় গোলমাল করবে, ওর স্টমাক ক্যাপাসিটি প্রয়োজনের চেয়ে বেড়ে যাবে এবং আর্লি এইজে এটা সমস্যা না হলেও একটা বয়সে গিয়ে ও সাফার করবে – ঠিক তোমার মতো! নিজের পয়সায় খাবার খাবে আবার নিজেই পয়সা খরচ করে জিমে গিয়ে ওজন ঝরাতে স্ট্রাগল করবে! বর্তমানে তোমার ছেলের ব্রেইন জানে কখন থামতে হয়, তোমার ব্রেইন জানে না, আর এজন্যই তুমি ওভারওয়েট আর ও পারফেক্ট। ইউ শুড প্রবাব্লি লার্ন ফ্রম হিম হোয়েন টু স্টপ!

ডাহা বেইজ্জতি কারে বলে !! আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো আমার মায়ের দ্বারা অতি ভালোবাসা মাখা শৈশব ! অপরিসীম ধৈর্য্য নিয়ে ২ ঘন্টা ধরে আমাকে একটা ডিম্ খাওয়ানো, চোখের জলে মাখামাখি হয়ে নাক চেপে ধরে গ্লাস ভরা দুধ শেষ করা, ভাতের কথা নাই বা বললাম ! আহারে ! ওই যে ব্রেইনের সিগন্যাল ম্যান ইন্তেকাল করলো, এখন তার কবরে ফুল দেই আর জামাকাপড় ফেলি, গায়ে লাগেনা তাই!

আমি প্রশ্ন করলাম, ওর ব্যাপারে তাহলে তোমার সাজেশন কি ? বাচ্চা আমার প্রপারলি একটা ডিনার করে না, ওজনের পার্সেন্টাইল বলছে ওর গ্রাফ ১৮ থেকে ২৫ এর মধ্যে, তুমি বলছো আমি ওর ব্রেইনের সিগন্যালকে রেস্পেক্ট করে ওরে না খাওয়ায়ে ঘুম পড়াবো ?

মহিলা উত্তর দিলো –

এক নম্বর– তুমি যা করবে তা হচ্ছে ও “কম খায়” এই জাজমেন্ট বন্ধ করবে। তুমি ঠিক কিসের ভিত্তিতে বলছো ও কম খায়? তোমার বয়সী কেউ হয়তো এক বসায় ৪০০ গ্রামের দুইটা স্টেক শেষ করে ফেলতে পারবে, আর কেউ হয়তো আড়াইশ গ্রামের একটা স্টেক শেষ না করেই বলবে আই এম ডান! এখন দ্বিতীয়জনকে যদি আমরা ৪০০ গ্রামের দুই স্টেক দিয়ে বলি, এইটাই তোমার সঠিক পরিমান এবং এইটাই তোমাকে শেষ করতে হবে, ব্যাপারটা কি দাঁড়ায়? অত্যাচার হয় কি হয় না? সুতরাং ওর খাওয়ার পরিমান তুমি নির্ধারণ করতে পারো না, ও কম খায় এই স্টেটমেন্ট তুমি দিতে পারো না। ওর বয়সী একটা বাচ্চার স্টমাক ক্যাপাসিটির একটা উদাহরণ হচ্ছে ওর নিজের এক হাতের এক মুঠি খাবার হবে ওর বিকালের স্ন্যাক্স? মানে বুঝতে পারছো? এক টুকরো পনির ই কিন্তু যথেষ্ট, অথবা অর্ধেকটা গাঁজর বা একটা ক্র্যাকার !

দুই নম্বর– ওর গ্রোথ গ্রাফ কি বলছে তা খুব ইম্পরট্যান্ট। এই যে তুমি বললে ওর ওজনের গ্রাফে ওর অবস্থান ১৮ থেকে ২৫ পার্সেন্টাইলে, ও তো জন্মের সময় থেকেই তাই! আমরা যেইটা দেখবো সেটা হচ্ছে কার্ভটা লিনিয়ার (সরলরেখায় ও মোটামুটি সমানুপাতে ) যাচ্ছে কিনা বয়সের সাথে। আমি তো দেখছি ওর ওজন ১৮ থেকে ২৫ পার্সেন্টাইলের মধ্যেই এগুচ্ছে, যদি ১৮ এর নীচে নেমে যেতো, আমরা হায়ার লেভেলে এক্সামিন করতাম। একই ভাবে এই রেঞ্জ থেকে হটাৎ বেড়ে বেশি উপরে গেলেও আমরা ওভারওয়েট নিয়ে কনসার্ন হতাম এবং দুই ক্ষেত্রেই ডায়েটিশিয়ানের সাথে বসতে হতো তোমাকে। হাইটওয়াইজ ওর পার্সেন্টাইল হাই, ৮০ এর উপরে, জন্ম থেকে এখন পর্যন্ত ঐটাও সরলরেখায়ই আছে। কাজেই তোমার বাচ্চা বড় হচ্ছে কোনো সন্দেহ নেই !

তিন নম্বর– ওর মানসিক বিকাশ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরগুলো বলে দিচ্ছে ওর বিকাশ স্বাভাবিক।

চার নম্বর– ও যথেষ্ট একটিভ, আমি দেখতেই পাচ্ছি, এটাও একটা পজিটিভ দিক।

পাঁচ নম্বরে – তোমাকে তোমার বাচ্চার হেলদি ফুড হ্যাবিটের দিকে খেয়াল রাখতে হবে, এমফাসাইজ মোর অন কোয়ালিটি, কোয়ান্টিটি কামস লেটার । খায়না বলে অতিরিক্ত চিনি, চর্বিজাতীয় খাবার, জাঙ্ক ফুড, সস ড্রিঙ্কস এসবের লোভ দেখানো যাবেনা।

ছয় নম্বর – তোমাকে তোমার নিজের জাজমেন্ট দিয়ে ওর ইচ্ছা অনিচ্ছাকে ওভার পাওয়ার করা বন্ধ করতে হবে। এইটুকু তোমাকে শেষ করতেই হবে, খাও , হা করো .. এইসব ধমক বাচ্চাকে খাবার নিয়ে একটা ট্রমার মধ্যে ফেলে। মিল টাইম কখনোই ব্যাটেল টাইম হওয়া উচিত না। মিল টাইম হওয়া উচিত আনন্দময় ।

চলবে…

মাতৃকথন ৬

 

মেজাজ খারাপ হবার কারণ

লাইফস্টাইল


এক গবেষণায় বলা হচ্ছে, মানুষের ‘দেহ ঘড়ির’ ছন্দে কোন উল্টোপাল্টা হলেই তার ‘মুড ডিজঅর্ডার’ বা মেজাজ খারাপ হবার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোর গবেষকরা ৯১ হাজার লোকের ওপর এক জরিপ চালানোর পর বলছেন, বিষণ্ণতা, হঠাৎ ভীষণ রেগে যাওয়া, একাকীত্ব, অসুখী মনোভাব, আরো অনেক মানসিক সমস্যার সাথে মানবদেহের স্বাভাবিক ছন্দ বিঘ্নিত হবার সম্পর্ক আছে।

দিনে জেগে থাকা আর রাতে ঘুম’ – এই হচ্ছে মানবদেহের স্বাভাবিক ছন্দ – যা অনুযায়ী দেহের প্রতিটি কোষ, শারীরিক প্রক্রিয়া এবং স্নায়ুতন্ত্র কাজ করে, বলছেন বিজ্ঞানীরা।

গবেষকরা বলছেন, কেউ যদি রাত জেগে বেশি কাজকর্ম করে বা সক্রিয় থাকে, বা দিনে নিষ্ক্রিয় থাকে তাদেরকেই দেহঘড়ির বিঘ্নের আওতায় ফেলা হয়েছে।

এদের মানসিক নানা সমস্যায় আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা স্বাভাবিক জীবনযাপনকারীদের চেয়ে ৬ থেকে ১০ শতাংশ বেশি।

গবেষকরা বলছেন, অনেক সমাজেই এই স্বাভাবিক মানুষের জীবনযাপনে এই স্বাভাবিক দিনরাতের চক্র বদলে যাচ্ছে এবং তাদের জন্য এই জরিপের ফলাফল একটি সতর্কবাণী।

তবে দেহঘড়ির এই ছন্দ-বিভ্রাটই কি মানসিক রোগের কারণ, নাকি এটা তার লক্ষণ মাত্র? জরিপটিএ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে নি। এ জন্য আরো গবেষণা দরকার হবে।

দেহঘড়ির এই ছন্দকে বলে সার্কেডিয়ান রিদম। মানুষের মনমেজাজ, হর্মোনের স্তর, শরীরের তাপমাত্রা, এবং দেহের বিপাক ক্রিয়া – এই সবকিছুর ওপরই এর প্রভাব ব্যাপক।

দিনের শুরুতে সকালবেলা যখন মানবদেহ জেগে ওঠার পর জোরেশোরে কাজ করতে শুরু হরে – ঠিক যেমন একটা গাড়ির ইঞ্জিন চালু করার মতো – তখন এমনকি হৃদরোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। যা দেহঘড়ির গুরুত্বের আরো একটি দৃষ্টান্ত।

বিবিসিকে গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং মনোবিজ্ঞানী ড্যানিয়েল স্মিথ বলেন, এই জরিপে দেহঘড়ির সমস্যায় আক্রান্ত এমন যারা অংশ নিয়েছেন – তাদের কেউ কেউ হয়তো রাত জেগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেছেন – এটা হতে পারে।

তবে আমার জন্য কড়া নিয়ম – আমি রাত ১০টা বাজলেই আমার মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেই – বলেন ড. স্মিথ।

‘কারণ, বিবর্তন অনুযায়ী মানুষ এমন ভাবে তৈরি হয়নি যে যখন তার ঘুমিয়ে থাকার কথা, তখন সে মোবাইলের পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকবে’ – বলেন তিনি।

সুত্র: বিবিসি বাংলা

 

একজন রোজাদারের সারাবেলা

আকলিমা ফেরদৌস আখি


রোজার প্রকৃত হক আদায় করার জন্য আমরা আমাদের সময়গুলোকে এ ভাবে ভাগ করে নিতে পারি (এটি একটি নমুনা মাত্র)।

রাতের শেষাংশে

সালাতুল তাহাজ্জুদ-২:৪৫-৩:১৫
(তাহাজ্জুদ নামাজের আগে আকাশের দিকে তাকিয়ে রাসূল সা: সূরা আলে ইমরানের শেষ রুকু তেলওয়াত করতেন।এই আমলটির অভ্যাস করা যেতে পারে।)

সেহেরী গ্রহণ- (৩:১৫ থেকে ৩:৪৪মি:)
সালাতুল ফজর ও সকাল বেলার
আযকার পাঠ- (৩:৪৫মি: থেকে ৫:০০মি:) (হিসনূল মুসলিম অথবা কতিপয় প্রয়োজনীয় দোয়া বই গুলোর সাহায্য নেয়া যেতে পারে)

কোরআন তেলওয়াত অর্থসহ
(চার পৃষ্ঠা)- (৫:০০ থেকে ৬:০০)
সালাতুল দুহা বা ইশরাক- (৬:০০ থেকে ৬:১৫মি)

বিশ্রাম ও ঘুম- (৬:২০ থেকে ৮:৩০)

সকাল বেলা

ঘুম থেকে ওঠা- (৮:৩০ থেকে ৯:০০)
দৈনন্দিন কাজ শেষ করা-
(৯:০০টা থেকে-১০:৩০টা)
(এ ক্ষেত্রে বাচ্চাদের জন্য সারাদিনের খাবার রেডি করা,ইফতার কি হবে , রাতের খাবার ও সেহেরী কি হবে তা রেডি করে রাখা। মাছ, সবজি কেটে ধুয়ে রাখা যেতে পারে)

কোরআন অধ্যায়ন অর্থসহ, ইসলামী বই পড়া, হাদীস ইত্যাদি-(১০:৩০ থেকে ১২:০০)

দুপুর বেলা

বিশ্রাম ও সালাতুল যোহরের প্রস্তুতি সালাত পরবর্তী মুস্তাহাব তাসবীহ ও যিকির পাঠ-(১২:০০ থেকে ১:০০)
কোরআন তেলওয়াত অর্থসহ(চার পৃষ্ঠা)-(১:০০ থেকে ১:৩০মি)
সন্তানদের (প্রতিবেশীর সন্তানদেরও সাথে নেওয়া যেতে পারে)
কোরআন পড়ানো, হাদিসের গল্প বলা, ইসলামী বই পড়িয়ে শুনানো, স্কুলের পড়া ইত্যাদি-(১:৩০ থেকে ৩:০০)

ইস্তেগফার পাঠ (আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ ১০০বার তওবার অনুভুতি নিয়ে)
-(৩:০০ থেকে ৩:১৫)
বিশ্রাম-(৩:১৫ থেকে ৩:৩০)
কোরআনের সূরা মুখস্ত
(এ ক্ষেত্রে আগে থেকেই ঠিক করে রাখতে হবে কোন সূরা গুলো মুখস্ত করা হবে।)
প্রতিদিন অন্তত: একটি দোয়া মুখস্ত করা (রাসূল সা: যে গুলো দৈনন্দিন জীবনে পড়েছেন)- (৩:৩০ থেকে ৪:৩০)

বিকেল বেলা

সালাতুল আসর,সালাত পরবর্তী মুস্তাহাব তাসবীহ ও যিকির এবং কোরআন পাঠ অর্থসহ-(৪:৩০ থেকে ৫:০০)

রাতের খাবার, ইফতার ও সেহেরীর জন্য প্রস্তুতি এবং রান্না শেষ করে ফেলা- (৫:০০ থেকে ৬:১৫)

এ সময় মায়েরা যেহেতু রান্না বা ইফতারের প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত থাকেন তাই বাবারা সন্তানদেরকে কিছুটা সময় দিতে পারেন।

গল্পের বই পড়ে শুনানো, হাতের লেখা প্র্যাকটিস করানো, টিভিতে ভালো কোন অনুষ্ঠান দেখানো, আল্লাহর নিরানব্বইটা নাম থেকে প্রতিদিন পাচঁটি করে শিখানো , সৃজনশীল লেখা ইত্যাদি।

ইফতার ও সন্ধ্যাবেলা

ইফতারের প্রস্তুতি নিয়ে পরিবারের সবাই একসাথে বসা:(৬:২০ থেকে সময় হওয়ার আগ পযর্ন্ত)

(এ সময় পরিবারের সদস্যদের মধ্য থেকে কেউ অর্থসহ কোরআন তেলওয়াত করতে পারে। একটি/দুইটি হাদিস পড়ে শোনানো এবং সবশেষে সবাই মিলে বা ব্যক্তিগত ভাবে দোয়ার পরিবেশ তৈরী করা যেতে পারে এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করা)।

ইফতার গ্রহণ- {৭:০০- (ইফতারের সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে সময়টা মিলিয়ে নিতে হবে।)}

সালাতুল মাগরিব ও সন্ধ্যাকালীন আযকার পাঠ (৭:০০ থেকে ৭:৩০)

(হিসনূল মুসলিম অথবা কতিপয় প্রয়োজনীয় দোয়া বই গুলোর সাহায্য নেয়া যেতে পারে)

বিশ্রাম ও প্রয়োজনীয় কাজ (৭:৩০ থেকে ৮:০০)

রাতের বেলা

সালাতুল এশা , তারাবীহ ও কোরআন তেলওয়াত অর্থসহ(চার পৃষ্ঠা)- (৮:০০ থেকে ৯:৩০)

রাতের খাবার- (৯:৩০ থেকে ১০:০০)
সূরা মূলক তেলওয়াত ও এক আয়াত মুখস্ত-(৯:৩০ থেকে ১০:০০)
ঘুমের প্রস্তুতি-(১০:০০ থেকে ১০:৩০)
ঘুম-(১০:৩০ থেকে ২:৩০)

মহান আল্লাহ আমাদের রোজার যথাযথ হক আদায়ের তৌফিক দিন।
আমীন।

(বি:দ্র- এটা একটা নমুনা মাত্র যে যার সুবিধামত নিজের কাজগুলো গুছিয়ে নিতে পারেন)

 

রমজানে নারীর সাথে যেমন আচরণ করা দরকার

অন্যান্য


চিত্র ১:

তামিমার বিয়ে হয়েছে আজ বেশ কয়েক বছর। বউ বউ ভাবটা চলে গেছে। এখন সে নিছক একজন রাঁধুনি। স্বামী কাস্টমসে জব করে। কাজ করে ফিরতে প্রায় বিকাল হয়ে যায়। এটা তাদের ৩য় রমজান মাস।তামিমা মনোযোগ দিয়ে স্বামীর জন্য বাহারী ইফতারি রেডি করলেন। স্বামী কোন রকম ইফতারের আগে বাসায় পৌঁছলেন, তামিমা সাথে সাথে ঠান্ডা পানির গ্লাসটা নিয়ে দৌঁড়ে আসলেন। মুখে দিতে রুচির মানসম্মত না হওয়ায় সাথে সাথে গ্লাস মাটিতে ছুঁড়ে মারলেন। তামিমার পরিবার ধরে ১৪ গোষ্ঠীকে কিছুক্ষণ গালিগালাজ করে ধুয়ে দিলেন।একবারও জিজ্ঞেস করলেন না, মেয়েটি সারাদিন রোজা রেখে কষ্ট করে স্বামীর জন্য ইফতার তৈরি করলেন, নিজের মুখে পানি তুলে দেয়ার আগে স্বামীকে তুলে দিলেন।

চিত্র ২:

মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে মাহমুদা। বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যে জীবনের ২য় পর্বটির বাস্তবচিত্র দেখতে পেলেন। স্বামী থেকে শুরু করে পরিবারের সকলের সন্তুষ্ট অর্জন করা যেন তার নিয়ম মাফিক দায়িত্ব। রমজানে ভোরে সেহেরি প্রস্তুত করে সবাইকে খাবার পরিবেশন করেন।সবার শেষে নিজের খাবারটা খান। কিন্তু আজ দুর্ভাগ্যক্রমে গরুর মাংসে মরিচের পরিমাণটা বেশি পরে গিয়েছিল। এ নিয়ে ভোরবেলায় তার পরিবারে ৩য় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হল। অবশেষে স্বামী রাগ সামলাতে না পেরে মাহমুদার চুলের মুঠি ধরে কিল ঘুসি আচ্ছামত দিলেন। আর অসহায় মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে বাকি দিনটা উপবাসে রোজার নিয়তে কাটিয়ে দিলেন।

আজকের কলামের অবতারণায় সমাজের ২ টি চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।এগুলো নিছক কোন কল্পনা নয়। সমাজে হরহামেশা ঘটমান দৃশ্যাবলি। এগুলোর শিকার কেবল নারীরা।

কিন্তু ইসলাম কী বলে? ইসলামে এসব ব্যাপারে কী বলা আছে?

আমরা যদি মহানবী সাঃ এর জীবনী পর্যালোচনা করি তাহলে দেখতে পাবো তিনি তার পরিবারের নারীকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছেন।

এমনকি ভোরে তাহাজ্জুদ পড়তে উঠতেন এমনভাবে যাতে তাঁর উঠার শব্দ শুনে স্ত্রীর ঘুম ভেঙ্গে না যায়। তিনি কখনো খাবারের দোষ ধরেননি। অনেক সময় রান্না ভালো না হলেও এমন ভাব নিতেন যাতে রাঁধুনী বুঝতে না পারে খাবারের মান খারাপ হয়েছে।

আমরা স্বীকার করি বা না করি মানুষ ধর্ম মানা থেকে যত দূরে যাচ্ছে তার ভেতর থেকে মানবিকতা তত হারিয়ে যাচ্ছে।সবাই সবখানে কর্পোরেট চিন্তাভাবনা শুরু করছে। কিন্তু পবিত্র রমজান আমাদের সেখান থেকে বের হওয়ার শিক্ষাদান করেন।

প্রথমে নারীদেরকে আমাদের খুব আপন ভাবতে হবে। নিজের বোন ভুল করলে যেমন ভালোবাসা আর মমতা দিয়ে শুধরিয়ে দিতেন ঠিক তেমনি স্ত্রী বা অন্য সম্পর্কের নারীর ভুলগুলো ভালোবাসা দিয়ে শুধরাতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা যখন ভোরে নাক ডেকে ঘুমাতে থাকি সে সময়ে এই নারীরাই আমাদের জন্য মুখরোচক সেহরী তৈরীতে ব্যস্ত থাকেন। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিৎ কাজ একজনের উপর চাপিয়ে না দিয়ে তারকাজে সাহায্য করা।সবাই একসাথে খাবার খেতে বসা।
আমরা যখন সারাদিন রোজা রেখে ক্লান্ত হয়ে পড়ি ঠিক সে সময়ে নারীরা আমাদের জন্য ইফতার তৈরীতে ব্যস্ত থাকেন।একবারও কী ভেবেছেন পেটে ক্ষুধা রেখে খাবার তৈরী করা কত কষ্টের?
তবুও তারা আমাদের জন্য খাবার তৈরী করেন।
তাই আমাদের উচিৎ তাদের কাজে সহযোগিতা করা।
ইফতারে সবাই একসাথে বসা।
ইফতার যিনি তৈরি করেছেন তার প্রশংসা করা। আর মেয়েরা এই ভালোবাসাটার বিনিময়ে জগতের সব কষ্ট মেনে নিতে পারেন।

পুরুষদের মনে রাখা উচিৎ , বাজার করার উদ্দেশ্যে এদিক সেদিক অযথা সময় নষ্ট না করে খুব তাড়াতাড়ি বাজার করে নিয়ে আসবেন।

যাতে মেয়েদের শক্তি এবং সময় থাকা অবস্থায় কাজটা করতে পারেন। সবসময় মনে রাখবেন,আপনার জন্য যা কষ্টকর তা অন্যের জন্যও কষ্টকর।

লজ্জার কিছু নাই, মেয়েরা প্রতিমাসে নির্দিষ্ট কিছু দিন অসুস্থ থাকেন। আল্লাহ তাইতো সে সময়টাতে তাদের শরীয়তের বিধানগুলো পালন করা থেকে অবকাশ দিয়েছেন। তাহলে আমরা কেন তাদের প্রতি অনুগ্রহ করব না?

তাই সবার মাথায় রাখা উচিৎ, কোন মেয়ে রোজা না রাখলে তাকে প্রশ্ন না করা এ বিষয়ে। বরং তার জন্য দিনের বেলায় খাবারের ব্যবস্থা রাখবেন। যাতে তাকে রোজাদারের ন্যায় উপবাসে দিন যাপন করতে না হয়।

অনেক পরিবার এমন আছে, যেখানে বউদের দিয়ে পরিবারের সবার কাপড় ধুয়ানো হয় যা জঘন্যতম এবং নিন্দনীয়।হ্যা, মানুষ অসুস্থ হলে সেবা করা যায়, কিন্তু সুস্থ থেকেও কাজের বুয়ার মত আচরণ করা চরম অন্যায়।
বিশেষ করে এ স্বভাবটা আমাদের মডার্ণ ভাইদের মাঝে বেশি।

আমরা পুরুষরা যেমন রমজানে ইবাদত করি, কোরআন তেলোয়াত করি, সেভাবে তাদেরও সুযোগ করে দিন।

সারাদিন তাদেরকে কাজের উপর রাখবেন না। তাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করুন। কাজের চাপ যত পারেন কমাবেন। নারীদের সহায়তা করাও ইবাদত।

নারীরা আমাদের মা,তারা আমাদের বোন,তারা আমাদের নিসঙ্গতার পরম বন্ধু। তাদের কে সেভাবে সম্মান করা উচিৎ যেভাবে ইসলাম আমাদের নির্দেশ দিয়েছে। মুখে মুসলিম দাবী করলাম আর কাজকর্ম সব জালেমি মার্কা, তাহলে ধরে নিতে হবে আমরা ইসলামের গন্ডি থেকে অনেক দূরে চলে গেছি।

কুরআন হাদিসে বর্ণিত রুলস অনুযায়ী পারস্পারিক মর্যাদা, সম্মান এবং সহযোগিতা পারিবারিক বন্ধনকে করে তুলবে সুদৃঢ় এবং সুখকর।

গৃহিণী শুধু নারী নয় একজন মানুষ। আর মানুষ হিসেবে তার প্রাপ্য মর্যাদা পেলেই দূর হয়ে যাবে নারীর প্রতি সকল প্রকার অসম্মান, নির্যাতন ও সহিংসতা।

আল্লাহ আমাদের মাহে রমজানের তাৎপর্য উপলদ্ধি করে, নারীদের সাথে সদাচারণ করার তাওফিক দান করুন।

সুত্র: (ফেসবুক পাতা থেকে সংগৃহীত। যেখান থেকে নেওয়া হয়েছে তিনিও সংগৃহীত লিখেছেন। তথ্য খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। দুঃখজনকভাবে লেখকের নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি।)

 

জীবনের সার্থকতা

আফরোজা হাসান


মানুষের মধ্যে রয়েছে বিবেক ও বুদ্ধি। এই বিবেক ও বুদ্ধির সাহায্যে মানুষ জ্ঞান ও মনুষ্যতের বিকাশ ঘটাতে পারে। জীবনে বয়ে আনতে পারে কল্যাণ। তবে জীবনে কোন কিছুই হঠাৎ অর্জন করা যায়না। বিবেক ও বুদ্ধির সঠিক প্রয়োগের জন্য ধীর ও কঠোর অনুশীলন ও চর্চার প্রয়োজন। আর এরজন্য দরকার গভীর আত্মিক সাধনা। মানুষের মন যখন স্থবির, নিশ্চল ও গতিহীন থাকে তখন নানা সঙ্কীর্নতা-কুসংস্কার তার মধ্যে বাসা বাঁধে। তাদের মন হয়ে পড়ে ক্ষুদ্র ও জরাগ্রস্ত। এই অবস্থা থেকে মুক্ত থাকতে হলে মনকে গতিশীল ও সচল করতে হবে। আর মনকে সচল ও গতিশীল করার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে বই পড়া। কারন বইয়ের মধ্যে জ্ঞানী-গুনীদের ভাবনা-চিন্তা নিহিত আছে। সমুদ্রের ঢেউ রাশির মতোই এসব চিন্তা প্রবাহিত হয় বইয়ের মধ্যে। কেউ যদি একনিষ্ঠ মনে চায় তাহলে অনুভব করতে পারে সেইসব চিন্তার গর্জন।

বিভিন্ন কারণে আমদের মনে সম্পুর্ন নিয়ন্ত্রনহীন ভাবে নানা ধরণের নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনা আসতে থাকে। অনেক চেষ্টা করেও সেটা যখন থামানো যায় না তখন আমরা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি এবং প্রতিদিনের কাজকর্ম ব্যাহত হয়। নানারকম মানসিক কষ্ট, হতাশা, দুরাশা, ক্লান্তি মনকে তখন ঘিরে ধরে। আমরা ভীষণ অসহায় বোধ করতে থাকি। চরমভাবে বিঘ্নিত হয় মনের শান্তি। নিজের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে মন অনেক সময়। আসলে আমাদের সবার মনেরই দুটো দিক রয়েছে।
একটি হচ্ছে আবেগপুর্ন, অন্যটি হচ্ছে যুক্তিনির্ভর। এই দুটি দিকের ভারসাম্যপুর্ন সহাবস্থানই পারে মনের শান্তিকে অক্ষুন্ন রাখতে। আর এটা তখনই সম্ভব হবে যখন আমরা চিন্তার দ্বারা আমাদের আবেগগুলোকে চিহ্নিত করে যুক্তির দ্বারা সেগুলোকে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করবো। নিজেকে চেনা-জানা-বোঝা এবং নিজের প্রতি আস্থা-বিশ্বাস-শ্রদ্ধা বোধ ছাড়া এটা সম্ভব নয়। আমরা আমাদের জীবনকে তখনই সার্থক করে তুলতে পারবো যখন সার্থকতা কোথায় সেটা জানা থাকবে।

আমার কাছে জীবনের সার্থকতা মানে হচ্ছে নিজের বিবেকের কাছে দায়ী না থাকা। আমরা অনেক সময় দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগি কোন একটা কাজ করবো কি করবো না। মানুষ যতগুলো মানসিক দ্বিধায় ভোগে তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে আবেগ এবং বাস্তবতার দ্বন্দ্ব। বাস্তবতা বলছে কাজটি করোনা, আবেগ হয়তো বলছে করো। এরফলে আমরা দ্বিধা দ্বন্দ্বে পড়ে যাই। কিন্তু তখন আমাদের উচিত স্থির হয়ে বসা এবং ঠাণ্ডা মাথায় বিবেকের সাথে কথা বলা। বিবেক যে কাজ করতে নিষেধ করে, সে কাজ কখনোই করা উচিত নয়।
সব মানুষের জীবনদর্শন যেহেতু একরকম নয় তাই একেক জন জীবনের সার্থকতাকে একেক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ব্যাখ্যা করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বিবেকের কাছে দায়ী না থাকাটাকে কেউ অনৈতিক বলতে পারবে না। বরং বিবেককের কাছে যদি স্বচ্ছতা বজায় রেখে চলা যায় তাহলে প্রতিটি মানুষই তার মূল্য বুঝতে পারে।

মানুষের মূল্য তার চরিত্র, মনুষ্যত্ব, জ্ঞান ও কর্মে। মানুষের প্রকৃত পরিচয় ফুটে ওঠে ছোট ছোট কাজের মধ্যে দিয়ে। সুশৃঙ্খল জীবন, সুন্দর আচার-ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে একজন মানুষের চরিত্রমাধুর্য ফুটে ওঠে। পৃথিবীতে কোন কিছুই ক্ষুদ্র বা সামান্য নয়।
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মুহুর্ত যেমন যুগ-যুগান্তরের জন্ম দেয় তেমনি ক্ষুদ্রের মধ্যেই বৃহৎ এর অবস্থান। আমরা আমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাজ ও সাহায্যের দ্বারা মানুষের উপকার করতে পারি। স্নেহপুর্ন ছোট ছোট সান্ত্বনার বাণী ও আন্তরিকতাপুর্ন দান পৃথিবীতে এনে দিতে পারে সুখ। আমরা একটু সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিয়ে অন্যের মনে আশা জাগাতে পারি। করে তুলতে পারি নিজেদের জীবনকে সার্থক।

 

‘আকর্ষণীয় কিছু খাবার’ যা মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে

ফাতেমা শাহরিন


পেস্ত বাদাম

পেস্ত বা কাজু বাদামের বাইরের আবরণে সাইটিক এসিড থাকে। এই সাইটিক এসিড বাদামের উপকার করে, তবে মানুষের ক্ষতি হয়, সাইটিক এসিডের গ্রহণ মানবশরীরে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা তৈরি করে। তাই খাওয়ার আগে বাদাম ভিজিয়ে রাখলে এই সাইটিক এসিড চলে যায়। পেস্তাবাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি-৬, মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা কোলেস্টেরল লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে অত্যন্ত কার্যকরী এবং পেস্তা বাদাম মানসিক চাপও কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এছাড়া দাঁতের রোগ, মাংসপেশির দুর্বলতা, চোখের ছানির সমস্যা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে প্রতিরোধে সহায়তা করে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমান বাদাম খেলে ত্বক ফর্সা ও উজ্জ্বল হয়।

সবুজ শাক-সবজি

মানসিক সুস্থ স্বাস্থ্যের জন্য সবুজ শাক-সবজি খাওয়া খুবই উপকারী। সম্প্রতি ক্যারেন তার ‘The Calendar Diet’ বইতে উল্লেখ করেছেন , ‘প্রতিদিনের খাবার তালিকায় সবুজ তাজা শাক-সবজি রাখলে তা ‘মানসিক চাপ’ কমাতে সাহায্য করে এবং নানান রকম হৃদরোগেট ঝুঁকিও কমাতে পারে।’

গাজর

গাজর আছে ভিটামিন ‘এ’, বেটা ক্যারোটিন, এন্টিওক্সিডেন্ট যা শরীর ও মনের নানান সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখে বিশেষ করে মানসিক স্বাস্থ্য ও ত্বক সুন্দর রাখতে সহায়তা করে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা যায়, সপ্তাহে ৬টির বেশি গাজর খাচ্ছেন যারা তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি অর্থাৎ মানসিক চাপ তুলনামূলক হারে কম যারা এর থেকে কম পরিমানে গাজর খাচ্ছেন তাদের তুলনায়।

শিমের বীজ

শিমের বীজে থাকে প্রচুর আমিষ ও স্নেহজাতীয় পদার্থ যা রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে। লিউকোরিয়াসহ মেয়েদের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে, শিশুদের অপুষ্টি দূরীভূত করে।

চকলেট

চকোলেটের মূল উপাদান কোকো যাতে ফ্ল্যাভানল & ম্যাগনেশিয়াম নামে উপকারী পদার্থ থাকে যা শরীরে যথাযথ রক্ত সঞ্চালন, স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এবং রিল্যাক্স থাকতে সাহায্য করে। নিউট্রিশিওনাল নিউরোসায়েন্স নামের বিজ্ঞান জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্র অনুযায়ী, চকোলেট খেলে মন ভাল হয়ে যায়। অবসাদ কমে।

মাখন

মাখন সাধারণত দুধ দিয়ে তৈরি হয়। মাখনে থাকে ভিটামিন, অ্যাক্টিভেটর এক্স নামের যৌগ উপাদান এবং আয়োডিন, সেলেনিয়াম, লেসিথিন ও লরিক এসিডের মতো কার্যকরী খনিজ উপাদান পাশাপাশি এরাকিডোনিক্স এসিডও থাকে। চোখের ছানির গতিরোধ, শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃষ্টি, ত্বক মসৃণ ও সুন্দর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মাখন খেলে নারীর গর্ভধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

আইসক্রিম

আইসক্রিম একটি জনপ্রিয় খাবার যাতে থাকে ‘টোনড মিল্ক’। আইসক্রিমের জন্মস্থান চীনে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং কিডনির পাথর হওয়ার মাত্রা কমাতে আইসক্রিমের ভূমিকা রয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, ভালো কোম্পানির আইসক্রিমে প্রচুর পরিমাণে ভেজিটেবল ওয়েল থাকে। যা শরীরের জন্য উপকারী। তাই এতে ওজন বাড়ে না।

তথ্যসুত্র: Karen Ansel, R.D. লেখকের বই The Calendar Diet মত অনুসারে লেখা এবং ইন্টারনেট।

 

বিয়ে ও পরিবার – ২

কানিজ ফাতিমা


ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে প্রতিটি ব্যক্তি তার নিজ কর্মের জন্য দায়ী হবে। নিজের প্রতিটি কাজের হিসাব নিজেকে দিতে হবে, অন্যের কর্মের জন্য সে দায়ী থাকবে না। অন্যের জন্য তাকে পাকড়াও করা হবে না। কাজেই একজন মুসলিমকে সর্বদা সচেতন থাকতে হয় নিজের সম্পর্কে, নিজের দোষ খুঁজে বের করে তা শুধরানোর জন্যই তাকে সর্বদা ব্যস্ত থাকতে হয়।

অন্যের দোষ খোঁজার সময় তার হাতে কমই থাকে। একান্তই অন্যের দোষ-ত্রুটি যখন প্রকাশ্য ও স্পষ্ট হয়ে ওঠে তখনই সে তা দেখতে পায় এবং সঠিক নিয়তে শুধরানোর উদ্দেশ্যে সহানুভূতি সহকারে ঐ দোষ সম্পর্কে কর্তাকে অবগত করে।

অপরপক্ষ একদল ব্যক্তি অন্যের দোষ খুঁজে বের করে তার কঠোর সমালোচনায় এত বেশী মনোযোগী হয় যে তার নিজের দোষ দেখার সময়ই তার হয় না। তারা ভুলে যায় ইসলাম অন্যের সমালোচনার আগে নিজের দোষ শুধরানোর বেশী পক্ষপাতী। ‘জিহাদ’ শব্দটির অনেক অর্থ রয়েছে। কিন্তু সব থেকে বড় ও মুখ্য জিহাদ হল নিজের অহংবোধ (Ego)এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সঠিক কাজটি করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।
নিজের দোষ স্বীকার করা কঠিন একটি কাজ, নিজের অহংবোধে আঘাত লাগে। অন্যপক্ষে অন্যের দোষ ধরে সমালোচনা করে তাকে ছোট প্রমাণ করে আত্মতৃপ্তি লাভ করা সহজ ও সুখকর।

কিন্তু ইসলাম চায় মুসলমানগণ নিজের এই অহংবোধের বিরুদ্ধে জিহাদ চালিয়ে যাক। প্রতিটি মুসলিম স্বামী স্ত্রীর ক্ষেত্রেও এই একই কথা প্রযোজ্য।

সর্বক্ষণ স্বামী বা স্ত্রীর দোষের পেছনে না লেগে থেকে নিজের উন্নয়নে চেষ্টা করা অনেক বেশী কল্যাণকর।

ধরুন, আপনার উন্নতির জন্য (চারিত্রিক, অর্থনৈতিক বা পেশাগত) আপনাকে একজন সঙ্গী দেয়া হবে। আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় আপনি কি একজন কড়া সমালোচককে সঙ্গী হিসেবে চান যে আপনার প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখবে আর
ছোট-বড় সব ত্রুটির সমালোচনা করবে।

নাকি এমন একজন সাহায্যকারী চান যিনি আপনাকে বিভিন্ন সমস্যায় সাহায্যের হাত (Co-operative) প্রসারিত করবে?

নিঃসন্দেহে বলা যায়, আপনি দ্বিতীয় ব্যক্তিকে বেছে নেবেন, একইভাবে আপনার উদ্দেশ্য যত মহৎ হোক না কেন আপনার স্ত্রী বা স্বামী আপনাকে ‘সমালোচক’ না, ‘সাহায্যকারী’ হিসেবে পেতে চায়।

বিবাহ ও পরিবারে যোগাযোগের (Communication) ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বক্তার দায়িত্ব নিয়ে বেশ কিছু আলোচনা করলাম, এবার আসা যাক শ্রোতার দায়িত্বে। যদিও যোগাযোগে বক্তার দায়িত্ব অনেক বেশী তবুও এতে শ্রোতারও কিছু দায়িত্ব রয়েছে।

শ্রোতার প্রথম দায়িত্ব হল মনোযোগ দিয়ে শোনা ও আগ্রহ প্রকাশ করা (showing interest)। শ্রোতার উচিত বক্তার কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে তার অঙ্গভঙ্গি খেয়াল করা। বুঝতে চেষ্টা করা যে সে শ্রোতাকে কী বলছে। শ্রোতার বক্তব্যের কোন অংশ পরিষ্কার না হলে প্রশ্ন করে বুঝে নেয়া। অনেক সময় শ্রোতা তাড়াহুড়া করে, বক্তার পুরো কথা না শুনেই ধরে নেয় যে বক্তা এটা বলতে চাচ্ছে। শ্রোতাকে বক্তার পুরো কথা শুনতে হবে, কথা অর্ধেক থাকতেই ‘আমি বুঝে ফেলেছি’ মনোভাব দুর্বল যোগাযোগ এর লক্ষণ। আবার অনেক সময় বক্তা যা বলেছে তা সম্পূর্ণ তথ্য দেয় না। শ্রোতা পাল্টা প্রশ্ন করে তথ্য সম্পূর্ণ করার পরিবর্তে কিছু একটা ধারণা করে নেয়। এতে অনেক ক্ষেত্রে শ্রোতার ধারণা সঠিক হয় না এবং ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়।

যেমন স্বামী স্ত্রীকে বললো ‘কাল রেডি হয়ে থেকো, আমরা বেড়াতে যাবো’ স্ত্রী ধরে নিলো কাল স্বামী অফিসে যাবে না। আমাকে নিয়ে বেড়াতে যাবে। স্বামী হয়তো ভেবেছে অফিস থেকে ফিরে সে বেড়াতে যাবে। এক্ষেত্রে বক্তাও বলেনি কখন বেড়াতে যাবে আর শ্রোতাও জিজ্ঞাসা না করে ধারণা করে নিয়েছে। অনেক সময় শ্রোতা বক্তার কথায় প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করে না। এতে বক্তা কথার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ব্যাপারটি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রতি নিয়ত ঘটতে থাকলে তা তাদের সম্পর্কে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলে।

যেমন একবার এক কানাডিয়ান মহিলা তার স্বামীর সঙ্গে কেন ডিভোর্স হয়েছে বলতে গিয়ে বললো যে, তার স্বামী তাকে কোন গুরুত্বই দিতো না, সে যখন তার স্বামীকে কোন কিছু বলতে চাইতো হয়তো স্বামী কম্পিউটারের মনিটরে চোখ রেখেই বলতো ‘আমি শুনছি’ অথবা অন্য রুমের দিকে হেঁটে যেতে যেতে বলতো – ‘বলো, শুনছি’। মূলত: একজন বক্তার দায়িত্ব হল শ্রোতার দিকে তাকানো এবং শারীরিক অঙ্গভঙ্গি (facial expression) দিয়ে বুঝিয়ে দেয়া যে সে শ্রোতার কথাকে গুরুত্ব দিয়ে শুনছে।

স্বামী ও স্ত্রীর সম্পর্ক উন্নয়নের একটি বড় শর্ত হল যে দু’জন দু’ জনের কথা আগ্রহ নিয়ে শুনবে।

(চলবে)

পর্ব-১

 

রোযায় খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্য ২

ডা.ফাতিমা খান


রোযার মাসে খাওয়া দাওয়া ও সাস্থ্যগত সমস্যা নিয়ে কম বেশী অভিযোগ নেই এমন মানুষ পাওয়া মুশকিল। এসিডিটি, পেটের গোলযোগ আর দুর্বলতা নিয়ে তাদের অভিযোগ লেগেই থাকে। তখন সব দোষ গিয়ে পড়ে রোযার উপর। অসুখে পড়বেন বলে রোযা রাখেন না এমন মানুষও একদম কম নেই। আসলে দোষ কিন্তু রোযা বা খাবার কোনটিরই না… সমস্যা আমাদের নিজেদের অভ্যাসের। রোযার সময় যদি আমরা প্রচলিত ভাজাভুজি বা বেশী মসলাযুক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাস বাদ দিয়ে খাবারের মেনুতে ও রান্নার প্রণালীতে একটু পরিবর্তন আনি, তাহলে কিন্তু পুরো রোযার মাসটাই সুস্থভাবে কাটানো যাবে।

সাহরীতে যা খাওয়া উচিত নয়ঃ

সাহরীতে চা পান না করাই উত্তম। চায়ে থাকে মুত্র-বর্ধক উপাদান। সাহরীতে চা পান করলে এই মুত্র-বর্ধকের প্রভাবে দেহের পানি প্রস্রাবের মাধ্যমে দ্রুত বের হয়ে যায়।

ইফতারে যা খাওয়া উচিত নয়ঃ

ভাজা-পোড়া ও অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার শরীরের জন্য সবসময়ই ক্ষতিকর। বিশেষ করে শরীরের তাৎক্ষণিক ঘাটতি পূরণ ও শক্তি যোগানের ক্ষেত্রে এদের ভূমিকা নেই বললেই চলে। এসব খাবারের উপরিভাগে তেলের আবরণ (Oily coating) থাকার কারনে এরা পাকস্থলীতে পরিপাক হয় না এবং পাকস্থলী অতিক্রম করতে অনেক সময় নেয়; তারপর অন্ত্রে গিয়ে শোষিত হয়ে রক্তে মিশে। ফলে এ ধরনের খাবার দেহে দ্রুত শক্তি যোগাতে পারে না।

রোযার সময় দাঁতের যত্নের ব্যাপারে আমরা অনেকেই বেখেয়াল হয়ে যাই। রমজান মাসে সাহরীর পর অবশ্যই টুথপেস্ট ও ব্রাশ দিয়ে দাঁত ও জিহ্বা পরিষ্কার করা উচিৎ। সম্ভব হলে একটু কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে কুলি করে নেয়া যেতে পারে। ইফতারের পর আরেকবার ব্রাশ করে নেয়া ভাল। এর মাঝে রোযা রাখা অবস্থায় মেসওয়াক অথবা শুধু ব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করতে পারেন । তাতে মুখে দূর্গন্ধ কম হবে এবং দাঁত ও মাড়ির রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।

অনেক অসুখ-বিসুখের সমাধান কিন্তু রোযা রাখা বা কম খাওয়া।

 

ডা.ওয়ান আজিজাহ মালয়েশিয়ার প্রথম মহিলা উপ-প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্কে আসুন ৭টি বিষয় জেনে নেই


অপরাজিতা


মালয়েশিয়ার ইতিহাসে নতুন এক দিগন্তের সূচনা হতে যাচ্ছে যার কারণ একজন নারী।

মালয়েশিয়ার পরবর্তী উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ‘ডা.ওয়ান আজিজাহ, দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেন বলে জানা যাচ্ছে। এর ফলে নারীর ক্ষমতায়নে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে যাচ্ছে মালয়েশিয়া। প্রথম নারী ডা.ওয়ান আজিজাহ উপ-প্রধানমন্ত্রীর হলে নতুন এক পদচিহ্নকে স্বাগত জানাবে মালয়েশিয়ার ইতিহাস।

অনুপ্রেরণা সৃষ্টকারী নারী ডা.ওয়ান আজিজাহ সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য তুলে ধরা হল,

১. শক্তিশালী ব্যাকগ্রাউন্ড

একটি শক্তিশালী ব্যাকগ্রাউন্ড খুঁজে পাওয়া যায় ডা.ওয়ান আজিজাহ। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫২ সালে পয়লা ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরে কিন্তু বড় হয়েছেন কেদা শহরে। আয়ারল্যান্ডের রয়্যাল কলেজ থেকে সার্জন মেডিসিনে পড়াশুনার পাশাপাশি সেরেবান কুশিয়াহ কলেজ থেকে তিনি তাত্ত্বিক শিক্ষাও অর্জন করেন। তিনি সেখানে প্রত্নতাত্ত্বিক ও গাইনোকোলজির উপর বিশেষ অবদান রাখার কারণে স্বর্ণ পদক পান। পরবর্তীতে ডা.ওয়ান আজিজাহ একজন যোগ্যতাসম্পন্ন চক্ষু বিশেষজ্ঞ হিসাবে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পূর্ণ করেন। ১৪ বছর ধরে একটি সরকারী হাসপাতালে কর্মরত থাকার পর ১৯৯৩ সালে তার হাজবেন্ড আনোয়ার ইব্রাহিমকে উপ-প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দেওয়া হলে পরবর্তীতে ডা.ওয়ান আজিজাহ ন্যাশনাল ক্যান্সার হসপিটালে কাউন্সিলরে একজন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন।

২. মা ও গ্রান্ডমাদার

ডা.ওয়ান আজিজাহ ছয় সন্তানের জননী এবং রয়েছে নয়জন নাতি-নাতনি
যদিওবা ওনার রাজনৈতিক দৃশ্যপটে বিশিষ্ট্য ব্যক্তি হয়ে ওঠার কারণে অনেকেই তা জানে না। একটি সাক্ষাৎকারে, তার বড় মেয়ে নুরুল ইজাহা আনোয়ার জানান, ‘ডা.ওয়ান আজিজাহ তার ব্যস্ত রাজনৈতিক কর্মজীবন থাকা সত্ত্বেও তার পরিবারকে অবহেলা করেননি।’

৩. দৃঢ় প্রত্যয় এবং একনিষ্ঠ

ডা.ওয়ান আজিজাহ একজন সুদৃঢ় মনোবল সম্পূর্ণা নারী। ১৯৯৯ সালে মালয়েশিয়ার সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহীমকে অন্যায়ভাবে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হলে তখন আনোয়ার ইব্রাহীমের অনুপস্থিতিতে তার মুক্তির জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করার লক্ষ্যে মাঠে নামেন তিনি। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ডা.ওয়ান আজিজাহ রিফর্মসি আন্দোলন, নাগরিক অধিকার আন্দোলন, এনজিও সামাজিক ন্যায়বিচার আন্দোলন (এডিআইএল) এর নেতৃত্ব দেন এবং তারপর সেই বছরেই কাদিলান নাশিয়াল (পিকেএন)পাটি প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে ডা.ওয়ান আজিজাহকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।

৪. রাজনীতিতে তার যাত্রা

ডা.ওয়ান আজিজাহ ভাষ্যমতে, “আমি একজন রাজনীতিবিদের স্ত্রী। আমি রাজনীতিবিদ নই। কিন্তু ঘটনাক্রমে, আমাদের পরিবারকে সেই সময় অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল, যার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন একটি সংগ্রামে অংশ নিই। সংগ্রাম বা যুদ্ধটি আমাদের দুজনকে নীতিগত ভাবে রাজনৈতিক অঙ্গনে কাজ করার একটি সম্ভাবনার জন্ম দেয়”।

১৯৯৯ সালে প্রথম নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে, তখন তিনি সংসদে পাঁচটি আসনে জয় লাভ করেন। নেতৃত্ব তিনি ২০০২ ও ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনেও আসন লাভ করেন। সেই বছরের মধ্যে, পুনরায় আনোয়ার ইব্রাহীম ফিরে এলে তিনি পদত্যাগ করেন। তবে, পুনরায় আনোয়ার ইব্রাহীমকে পাঁচ বছরের জন্য কারাগারে পাঠানো হলে, ২০১৪ সালে আবার রাজনৈতিক অঙ্গনে ফিরে আসেন। ২০১৫ সালে তিনি আবার সংসদীয় আসনটি পান।

৫. সুন্দর মানবিক গুনসম্পন্ন

‘মানবিকতা’ তার স্বভারর একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য। শান্ত, স্বভাবের হওয়ায় জানা যায় যে, নির্বাচনের মত সময়ও ডা. ওয়ান আজিজাহ ধীর স্থিরভাবে কাজ করতে পারেন। তার মেয়ের মতে, “তিনি হাসিখুশির অনুভূতি ছড়িয়ে দিতে পারেন সবার মাঝে।” সত্যিকার অর্থে, তিনি একজন অনুপ্রেরণাকারী অসাধারণ নারী।

৬. দৃঢ় সংকল্প

ডা.ওয়ান আজিজাহ একটি দলের সভাপতি এবং আনোয়ার ইব্রাহীমের স্ত্রী হিসেবে কাজ করা তার জন্য মোটেও সহজ ছিল না। তিনি তার নিজস্ব মতামত ভিত্তিতে এবং দৃঢ়তার সাথে সবসময় কাজ করে গিয়েছেন। অনেকে মন্তব্য করেন যে, তিনি তার হাজবেন্ডের জন্য পদটি আগলে রাখবেন। কিন্তু ডা.ওয়ান আজিজাহ বলেছেন, আমি তার জন্য কোন সিট আগলে রাখার ক্ষমতা রাখি না। আমি দৃঢ়তার সাথে মনে করি, একজন নারী হিসেবে যে কেউ ভাল ভাবে যে কোন কাজ উপস্থাপনা করতে সক্ষম।

৭. নারীদের ক্ষমতায় প্রতি তার বিশ্বাস
নারীদের ক্ষমতার প্রতি তার রয়েছে অগাধ বিশ্বাস।একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন-“আমাদের অনেক যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থী রয়েছে যারা প্রধানমন্ত্রী হবার মত।” তার মতে, “সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভূমিকা, বিশেষ করে রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে, আমরা নারীরাও একটি শক্তি হতে পারি।”

একজন রাজনীতিবিদ হয়ে উঠার এই পুরো যুদ্ধটাই তিনি করেছিলেন তার ছোট ছোট সন্তানদের সাথে নিয়ে।

সুত্র: buro 247.my থেকে অনুবাদ

 

বিয়ে ও পরিবার -১

কানিজ ফাতিমা


সুরা নিসার ১৯ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন- “তোমরা স্ত্রীদের সাথে ভাল ব্যবহার কর। কোন কারণে যদি তাদের কিছু তোমাদের কাছে ভাল নাও লাগে, তাহলে তোমরা হয়ত এমন একটি বস্তুকে খারাপ মনে করছ যার মধ্যে আল্লাহ তোমাদের জন্য মহাকল্যাণ নিহিত রেখেছেন।”

“Treat them with kindness; for even if you dislike them, it may well be that you dislike something which God has invested with abundant goodness.” (19)

এখানে দেখা যাচ্ছে স্ত্রীর কিছু দিক স্বামীর পছন্দ না হলেও স্ত্রীর সঙ্গে ভাল ব্যবহার করতে স্বামীকে স্পষ্ট নির্দেশ করা হয়েছে। এবং বলা হয়েছে স্ত্রীর কোন দোষ চোখে পড়লে শুধু সেটার কারণেই তাকে অপছন্দ না করে বরং তার ভাল দিকগুলো সামনে রেখে তাকে বিচার করতে হবে। একই কথা একজন স্ত্রীর জন্যও সমভাবে প্রযোজ্য।

অনেক সময় এমনটা দেখা যায় যে, একজন ব্যক্তি খুবই ধার্মিক, দানশীল, বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনের প্রতি যত্নশীল কিন্তু স্ত্রীর প্রতি নির্দয়, কঠিন, রুক্ষ এবং তার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করে না। এটি খুবই দুঃখজনক। অনেকে এ জন্য স্ত্রীকেই দোষারোপ করে এবং স্বামীর এরূপ ব্যবহারের জন্য স্ত্রীকেই দায়ী করে। অভিযোগটা এরকম যে, “লোকটি খারাপ হলে সবার সঙ্গেই খারাপ ব্যবহার করত। নিশ্চয়ই স্ত্রী ভাল না বলেই সে শুধু স্ত্রীর সঙ্গে এরূপ ব্যবহার করে।”

এরূপ অজুহাতে স্বামীর খারাপ ব্যবহারকে সমর্থন দেয়া ইসলামের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। আমরা দেখেছি সুরা নিসায় (১৯) আল্লাহ স্পষ্ট বলেছেন, স্ত্রীদের কিছু ব্যাপার অপছন্দ হলেও স্বামীকে ভাল ব্যবহার করতে হবে। এটা নির্দেশ আকারে এসেছে।

সুরা বাকারায় (২৩১) বলা হয়েছে- “তোমরা যখন স্ত্রীদের তালাক দাও, ইদ্দত পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই তাদেরকে নিয়ম অনুযায়ী রেখে দাও অথবা নিয়ম অনুযায়ী তাদেরকে ভাল ভাবে মুক্ত করে দাও। তাদেরকে কষ্ট দেয়ার জন্য এবং জুলুম করার উদ্দেশ্যে আটকিয়ে রেখ না।” (বাকারা ২৩১)

আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত, Believers with the most excellent faith are those with the best manners and those who are kindest to their wives.
ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সঃ) বলেছেন, The best among you are those who are kindest towards their wives and I am the kindest among you towards mine. (তিরমিযি)(The thematic commentary on the Qur’an, Shaykh Muhammad al-Ghazali, p

58)কাজেই দেখা যাচ্ছে ইসলামে স্পষ্ট নির্দেশ হল স্ত্রীর সঙ্গে ভাল ব্যবহার করা। সবার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করে স্ত্রীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার ইসলামে গ্রহণযোগ্য আচরণ নয়। এরূপ ব্যক্তিকে আপাত দৃষ্টিতে ধার্মিক মনে হলেও প্রকৃতপে তার আচরণ ইসলাম সমর্থিত নয়। হাদিসে এসেছে আদদিনু মুআ’মিলা।

এবং স্বামী বা স্ত্রীই প্রকৃতপক্ষে একজন মানুষের সত্যিকার আচরণ ও ব্যবহার দেখতে পায়। ঘরের বাইরে মানুষ যতটুকু সময় থাকে ততক্ষণ নিজেকে ঘষে মেজে ভদ্রভাবে উপস্থাপন করাটা খুবই স্বাভাবিক। মূলত: ঘরে ফিরেই মানুষ তার সত্যিকার আচরণটা প্রকাশ করে এবং ইসলাম মানুষের সেই সত্যিকার ভেতরকার আচরণকেই সুন্দর করতে চায়। ভেতরটা যাচ্ছে তাই রেখে উপরে সুন্দর একটা প্রলেপ দেয়া ইসলামের উদ্দেশ্য নয়।

স্বামী বা স্ত্রীর পারস্পরিক সমালোচনা নিয়ে আলোচনা করছিলাম না। আলোচনা করেছি সমালোচনার বাক্য গঠন নিয়ে। এ সম্পর্কিত আরও কিছু নীচে দেয়া হল-

১. সাধারণ কথার সময় আমরা Active Voice (কর্তৃবাচ্য) ব্যবহার করি। সমালোচনার সময় Passive Voice ব্যবহার করলে (কর্মবাচ্য) শ্রোতা মনে আঘাত পায় না। কারণ Passive Voice এ কাজটাকে গুরুত্ব দেয়া হয়, যে কাজটা করেছে তাকে (কর্তাকে) নয়।
যেমন-তুমি ঘর পরিষ্কার করনি। (এখানে ব্যক্তিকে দায়ী করা হচ্ছে) ঘরটা পরিষ্কার নয়। (এখানে কাউকে দায়ী করা হয়নি) কাজেই ‘তুমি ঘর পরিষ্কার করনি’ না বলে ‘ঘরটা পরিষ্কার না’ বলা উচিত।

২. নেগেটিভ কথাগুলো পজিটিভ করে বলা। মানুষ নেগেটিভ কথা শুনতে পছন্দ করে না। তাই প্রতিটি নেগেটিভ কথাকে পজিটিভে রূপান্তর করে বলুন।
যেমন- তুমি অলস, একটুও পরিশ্রম কর না। এর পরিবর্তে বলুন- তোমার একটু বেশী পরিশ্রম করা দরকার।

নীচে আরও কিছু উদাহরণ দেয়া হল-নেগেটিভ কথা পজিটিভ কথা

ক. তুমি ঠিক বলনি।
ক.আমি ভিন্নমত পোষণ করি।
খ. তুমি কাপড়টা ভাল কেননি।
খ. কাপড়টার রঙ নীল হলে বেশি ভাল হত।
গ. তুমি আজকে শফিকের বাসায় যেতে পারবে না।
গ.আজ বাসায় থেকে ছেলে-মেয়ের সঙ্গে সময় দেয়া জরুরী।
ঘ.তুমি টমেটো কিনেছো কেন?
ঘ.টমেটোর বদলে আলু কিনলে খরচ অনেক কম হত ইত্যাদি।

৩. ‘আমরা’ শব্দের ব্যবহার বাড়ানো।

নীচের বাক্যগুলো খেয়াল করুন-

ক. তুমি আমাকে বেড়াতে নিয়ে যাও না। ক. আমরা অনেকদিন বেড়াতে যাচ্ছি না।

খ. তুমি বেশি খরচ করছো।
খ. আমরা এখন থেকে বাজেট করে খরচ করবো। এতে আমরা প্রতিমাসে কিছু সঞ্চয় করতে পারবো।

এভাবে সচেতনতার সাথে বাক্য গঠন করলে অন্যকে আঘাত না করেও তাকে শুধরানো সম্ভব। সমালোচনার বাক্যে যদি ঐ ব্যক্তিকে দায়ী করা হয় তবে তার মনে আপনার সম্পর্কে বিরূপ ধারণা তৈরি হয়। তখন সে আপনার সমালোচনা গ্রহণের পরিবর্তে ঘৃণা ভরে বর্জন করে। ফলে সে শুধরাবে তো নয়ই বরং আপনার সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

 

মা-ছেলের খুনসুটি

আফরোজা হাসান


এক.

ফজরের পর বিছানাতে শোবার পর প্রচন্ড পিপাসা লাগলো কিন্তু ঠাণ্ডার মধ্যে কম্বলের নীচ থেকে আবার বেড়োতে ইচ্ছে করছিলো না কিছুতেই। পুত্রকে বললাম, বাবা যাও তো আম্মুর জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে আসো। কিন্তু সে উঠলো তো না-ই উল্টো আরো আমার কোল ঘেঁষে এলো। পিপাসা মেটানোর ইচ্ছা পরিত্যাগ করেই দিচ্ছিলাম ঠিক তখন দেখি পুত্রের পিতা পানি নিয়ে হাজির। আমার জাযাকাল্লাহ এর জবাবে উনি খোঁচা দিয়ে বললেন, ছেলেকে কি বায়েজীদ বোস্তামী মনে করেন নাকি? খালি আহ্লাদ না দিয়ে বাবা-মার প্রতি দায়িত্ব পালন বিষয়ক কিছু কথাও শেখান আপনার ছেলেকে।
এক গ্লাস পানির বদলে এত বড় কথা ছোট্ট একটা শিশু বাচ্চাকে মিন করে? মা হয়ে পুত্রের বিরুদ্ধে এত বড় অপবাদ সহ্য করা অসম্ভব। নাকীবকে তখনি বায়েজীদ বোস্তামীর মাকে পানি পান করানোর সেই ঘটনা সুন্দর করে বুঝিয়ে বলে বললাম, দেখেছো মাকে কত ভালবাসতেন। এমন হলে তুমি কি করতে? জবাবে বলল, আম্মু আমি পানি নিয়ে এসে তোমাকে ডেকে তুলতাম। তুমি উঠতে না চাইলে যন্ত্রণা দিয়ে জোর করে উঠাতাম। পিপাসা নিয়ে তোমাকে ঘুমাতে দিতাম না। পিপাসায় তুমি যদি ঘুমের মধ্যে মারা যাও তাহলে আমার কি হবে? আমি তো স্তম্ভিত! হায় আল্লাহ আমি কি বুঝালাম আর আমার পুত্র কি বুঝলো। কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা স্বরূপ পাশের ঘর থেকে ভেসে এলো পুত্রের পিতার অট্টহাসি।

দুই.

বাসায় থাকলে আমরা মা-ছেলে সবসময় একসাথে জামায়াতে নামাজ আদায় করি। গতকাল মাগরিবের সময় ওকে ডেকে নামাজে দাঁড়ালাম। কিছুক্ষণ পরই নাকীবের মনে পড়লো তার ওজু নেই। জায়নামাজ থেকে নেমে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো, আম্মু কাজটা ঠিক করেনি। নামাজে দাঁড়ানোর আগে আমাকে জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল, নাকীব ওজু করেছো? আমি বলতাম, না। আম্মু বলত, তাহলে অজু করে আসো। আমি তখন ওজু করে আসতাম, তারপর দুজন নামাজ পড়তাম। এটা আমার ভুল না কিন্তু আম্মু নামাজ শেষ করেই বলবে, এটা কি হল? কাজটা কি তুমি ঠিক করলে? অথচ ভুল আম্মুর। এমন ননস্টপ বিড়বিড় করতে করতে সে ওজু করে এসে আমার পাশে দাঁড়ালো। নামাজ শেষ করার সাথে সাথে বলল, আমার কিন্তু কোন দোষ নেই। তুমি জিজ্ঞেস না করে ভুল করেছো। বললাম, হ্যা আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। আমি খুব স্যরি। ব্যাস শুরু করলো আমাকে জ্ঞানদান করা। যার সারমর্ম হচ্ছে সবসময় যাতে নামাজে দাঁড়ানোর আগে জিজ্ঞেস করে নেই ওর ওজু আছে কিনা। আমি বাধ্য মায়ের মত সব কথা মেনে নিলাম চুপচাপ।

তিন.

স্কুল থেকে ফেরার পথে আমার যুক্তিবাদী পুত্রের সাথে একচোট যুক্তি-তর্ক হয়ে গেলো। বিষয় ছিল একা একা স্কুলে যাওয়া। আমাদের বাসার গেট থেকে নাকীবের স্কুল দেখা যায় কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই পথটুকু যেতে তিনটা সিগন্যাল পেড়োতে হয়। সুতরাং ওকে একা ছাড়ার প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু নাকীবের যুক্তি হচ্ছে, সে যথেষ্ট বড় হয়েছে এবং সিগন্যাল কিভাবে পেড়োতে হয় সেটা খুব ভালো মতো জানা আছে তার। আমি বললাম, তুমি এখনো অনেক ছোট তাই একা একা রাস্তা পেড়োতে পারবে না। জবাবে বলল, আম্মু তুমি আমাকে একদিন একা একা স্কুলে যেতে তো দাও। তখন না বুঝবে যে আমি কত বড় হয়েছি। তুমি যদি আমাকে না ছাড় তাহলে জানবে কি করে আমি কি পারি আর কি পারি না। এই যুক্তির পর আর কি বলবো খুঁজে না পেয়ে চুপ করে রইলাম। কিন্তু এত সহজে দমে যাবার পাত্র আমার পুত্রটি নয়। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, আম্মু আমার কত বছর বয়স হলে তুমি আমাকে একা একা স্কুলে যেতে দিবে? বললাম, আঠারো বছর হলে। চোখ বড় বড় করে বলল, আঠারো বছর? আমার তো মাত্র আট বছর বয়স। তারমানে তো আরো দশ বছর বাকি। উহু এটা হবে না। বারো বছর হলেই আমি একা একা স্কুলে যাবো। বললাম, আচ্ছা তোমার আগে বারো বছর হোক তখন দেখা যাবে। সন্তুষ্ট না হলেও আর কথা বাড়াল না। আমিও স্বস্থির শ্বাস ছাড়লাম। যাক আগামী চার বছরের জন্য যুক্তি-তর্কের একটা বিষয় অন্তত কমলো।

চার.

কেমন যোগ করা শিখেছে সেটা পরীক্ষা করার জন্য পুত্রকে সুপার মার্কেটে নিয়ে গিয়ে দশ ইউরো দিয়ে বললাম, দশ ইউরোর মধ্যে তোমার পছন্দনীয় খাবার কিনো। খেয়াল রাখবে যেন সব মিলিয়ে দশ ইউরোর বেশি না হয় কিছুতেই। এটা কোন ব্যাপার হল এমন ভঙ্গী করে হাত থেকে টাকা নিয়ে সে ভেতরে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর বিশ্ব জয় করেছে এমন ভাব নিয়ে ফিরে এলো। কাউন্টারে গিয়ে টাকা দিতে গিয়ে দেখা গেলো কাটায় কাটায় দশ ইউরোর বাজার করেছে। আমি তো মহা আনন্দিত হলাম। আদরে আদরে লাল করে দিলাম বাবা সোনাটাকে। কিন্তু ওর ঠোঁট টিপে হাসিটা একটু কেমন কেমন লাগাতে হাসির রহস্য কি জানতে চাইলাম। জবাবে বিচ্ছু ফিক ফিক করতে করতে বলল, আমি কি করেছি জানো? কঠিন যোগ করতে হবে এমন কোন খাবারই কিনিনি। আমি তিন ইউরো দিয়ে কেক কিনেছি, বিস্কিট কিনেছি দুই ইউরো দিয়ে, ব্রেড কিনেছি আড়াই ইউরো দিয়ে আর বাকি আড়াই ইউরো দিয়ে কিনেছি চকলেট। হিহিহি…! বললাম, হিহিহি…বন্ধ। তুমি একটা দুষ্টু বাচ্চা। বলল, আম্মু তুমি শুধু ভুল কথা বলো। আমি দুষ্টু না অনেক বুদ্ধিমান বাচ্চা। তোমার উচিত আমাকে নিয়ে গর্ব করা। মনে মনে বললাম, আলহামদুলিল্লাহ্‌! গর্ব তো করিই তোমাকে নিয়ে বাপজান কিন্তু পাগলকে সাঁকো নাড়াতে বলার মত পাগল তোমার আম্মু না।

পাঁচ.

আমাদের গেটের বাইরেই নতুন একটা আইসক্রিমের দোকান হয়েছে। আমার পুত্র একা একা সেই দোকান থেকে গিয়ে আইসক্রিম কিনে নিয়ে এলো। মাত্র একমিনিট সময় লেগেছিল আমার চোখের আড়াল হয়ে আইসক্রিম কিনে ফিরে আসতে। জীবনে এই প্রথম নাকীব একা মেইনগেটের বাইরে গেলো। ছেলের চিন্তায় একমিনিটের জন্য আমার মনের সব শান্তি বনবাসে চলে গিয়েছিলো। গেটের গ্লাসে ওর চেহারাটা দেখার পর আনন্দাশ্রু চোখের কোনে ঝিলমিল করে উঠেছিলো। আর একা একা আইসক্রিম কিনে এনে বিশ্বজয়ী বীরের বেশ ধারণ করলো নাকীব। একা কিছু করতে পারার আনন্দে আত্মহারা যাকে বলে। আমাকে শুনিয়ে দিল ছোট একটা লেকচার, এখন আর সে ছোট নেই। আমাকে ছাড়াও অনেক কিছু করতে পারে। আমি ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আদরে আদরে আবার ছোট্ট বানিয়ে ফেলার চেষ্টা করলাম কিছুক্ষণ। সব মায়েরাই চায় তাদের সন্তান অনেক বড় হোক কিন্তু সাথে সাথে মায়েরা তাদের মনের কোণে সন্তানের গুড্ডু গুড্ডু বেবী ইমেজটাও লালন করে বহু যতনে।

 

ফ্যাশন শো’তে আবায়ার ইউনিক কালেকশন

নারী সংবাদ


বদলে যাচ্ছে ফ্যাশন শো এর অঙ্গন। আর এই পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে নানামুখী পোশাকেও। মুসলমানদের দুটি উৎসব সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদ উপলক্ষ্যে
‘Online women Enterpreneur welfere Association (OWEA)’ এর উদ্দ্যোগে ৫-ই মে প্রথম প্রোগ্রামটি অংশ নেন প্রথম বারের মত অভিজাত ফ্যাশন হাউজ “R i v a J Fashion Bar”।

“R i v a J Fashion Bar”  নিয়ে এসেছেন এক্সক্লুসিভ সব আবায়া, বোরকা, কোটি/ স্রাগের বিশেষ কালেকশন। তাদের বিশাল কালেকশন নিয়ে উত্তরা ক্লাবে সেই দিনে ৫-ই মে ফ্যাশন শো’ এর আয়োজনও করা হয়।

একদিন ব্যাপী এই শো-তে  ঈদ ও পার্টির জন্য জাঁকজমক ও এক্সক্লুসিভ সব আবায়া, বোরকা এবং কোটি/ স্রাগের প্রদর্শিত হয়। দেশের বিশিষ্ট মডেলরা শো তে অংশ গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে নাট্যকার আজিজুল হাকিম, নাট্য লেখক জিনাত হাকিম এবং গায়িকা আঁখি আলমগীর সহ বেশ কিছু মডেল, গায়ক এবং অভিনেত্রীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এই আয়োজনের মধ্যে “R i v a J Fashion Bar” এর ছিল সব নতুন নতুন এবং বিভিন্ন ডিজাইনের আবায়া, বোরখা, স্কার্ফ, কোটি/স্রাগের এবং গাউন।

“R i v a J Fashion Bar” থেকে অনলাইনে যে কেউ অর্ডার করতে পারবেন, https://www.facebook.com/rivajbar/ । মুল শাখা নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা।

মুলত ‘R i v a J Fashion Bar’ রিভা মাহমুদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান। তার পুরো এই যাত্রা পথে তার সার্বিক সহযোগিতা করছেন তার হাজবেন্ট মোহাম্মদ মাহমুদ। তার ভাষ্যমতে, তার সহযোগিতায় তিনি এতদূর পথ এগিয়ে আসতে পেরেছেন।

ভবিষ্যতে দেশের পাশাপাশি বিদেশেও ফ্যাশন শো তে অংশগ্রহণ করার ইচ্ছে এবং তাদের নিজস্ব ব্রান্ড ‘R i v a J Fashion Bar’ বের করা আশা ব্যক্ত করেছেন রিভা মাহমুদ।