banner

রবিবার, ০৫ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 1256 বার পঠিত

 

যে সব মেয়েরা রোজা রাখতে পারেনা তারা কিভাবে লাইলাতুল কদর পালন করবে?

বিশেষ সংখ্যা 


উমর সুলায়মানঃ

আমরা একটা প্রশ্ন পেয়েছি যে, যদি কোন মেয়ে রোজা করতে না পারে তবে সে কিভাবে রমজান মাসের সর্বোচ্চ উপকার পেতে পারে? এমন অনেক বোনেরা আছেন যারা আমার সামনে এসে এই বলে কেঁদে ফেলেছেন যে, রমজানের শেষ ১০ রাত এসে গেছে কিন্তু আমি রোজা করতে পারবো না, নামাজ পড়তে পারবো না। শেষ ১০ রাতের মধ্যে লায়লাতুল কদর, কিন্তু আমি রোজা করতে পারবোনা, নামায পড়তে পারবো না। একটা হাদীস আছে যেটা আপনাকে অনেক আশাবাদী করে তুলতে পারে। প্রথমটি হল, মহানবী (সাঃ) বলেছেন, কেউ যদি অসুস্থ্য হয়ে পরে। কিয়াসের মাধ্যমে উলামারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, কোন মেয়ে যে রোজা করতে পারছে না তাকে সাময়িকভাবে অসুস্থ্য মানুষের সমতুল্য মনে করা যাবে। মহানবী (সাঃ)বলেছেন, “কেউ যদি অসুস্থ্য হয়ে পরে বা সফরে থাকে এবং একারণে তারা সাধারণত যেই ইবাদত করত সেটা মিস করে ফেলে। সেক্ষেত্রে আল্লাহ সুবহানাওয়াতাআলা তাদের নামে এই ইবাদতের সওয়াব পুরোপুরি লিখে দেন”। আল বুখারীতে এই হাদিসটি এসেছে। আল্লাহর কি রহমত! আল্লাহ যদি জানেন যে, আপনি নামায পড়তেন এবং আপনার সেই আকাঙ্ক্ষা ও প্রয়োজন আছে তবে আল্লাহ সুবহানাওয়াতাআলা সেটা লিখে দিবেন। তবে সেটা আপনার স্ট্যান্ডার্ডে নয়, তাঁর স্ট্যান্ডার্ডে। যাই ঘটুক না কেন আপনি পুরো পুরস্কারই পাবেন। এটা হল এক নাম্বার কথা।

দুই নাম্বার হল, তখনো কুর’আন পাঠ করা। এই অবস্থায় কুর’আন পাঠ করা ফিক্‌হের এক দীর্ঘ আলোচনার বিষয়। আবু হুরায়রা (রাঃ) একদা জানাবাহ অবস্থায় ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁকে বলেছিলেন যে, সুবহানাল্লাহ! “মু’মিন, যে বিশ্বাসী, সে কখনো সত্যিকারের অপবিত্র হয় না”। ঠিক আছে? সে কখনো অপবিত্র হয় না। সহীহ মুসলিমে দীর্ঘ হাদীস আছে, সেখানে ইহুদীদের, বিশেষত গোঁড়া ইহুদীদের কথা বলা হয়েছে। হাদীসের বর্ণনা থেকে আমরা জানতে পারি যে, তারা ছিলেন বনু কুরায়দার কিছু গোঁড়া ইহুদী। তাদের মধ্যকার কোন মেয়ের মাসিকের সময়টাতে তারা সেই মেয়েকে পুরোপুরি পরিত্যক্ত করতো। তাকে বাসাতে ঘুমাতে পর্যন্ত দেয়া হত না। সুবহানাল্লাহ! তার সাথে এমন ব্যবহার করা হত যেন সে ভুল কিছু করছে। আল্লাহ সুবহানাওয়াতাআলা নাযিল করলেন- فَاعْتَزِلُواْ النِّسَا “রজঃস্রাবকালে স্ত্রী-সংগম বর্জন করবে”(সূরা বাকারাহঃ ২২২)। মহানবী (সাঃ) বলেছেন, এটা দ্বারা এটাই বোঝানো হয়েছে যে, সে সময় স্ত্রীদের সাথে পুরোপুরি ঘনিষ্ট না হতে। মহানবী (সাঃ)আমাদের উদাহরণ দেখিয়েছেন সেই অবস্থায় কিভাবে আয়েশা (রাঃ) এর সাথে মেলামেশা করতেন সেটার মাধ্যমে । মদীনার ইহুদীরা মহানবী (সাঃ) এর সমালোচনা করে বলতো যে, “তিঁনি এক্ষেত্রেও আমাদের থেকে আলাদা”। এর অর্থ হল, আমরা ব্যাপারটাকে এভাবে দেখিনা যে একজন মু’মিন সেসময় অপবিত্র হয়ে যায়। এসময় তাদের যে কাজটি করতে পুরোপুরি মানা সেটা হল মুসহাফ স্পর্শ করা। একারণে নয় যে সে অপবিত্র। একারণে যে মুসহাফ (কুরআন) ধরতে অজু করা প্রয়োজন। মুসহাফ ধরার জন্য, কুর’আনের শব্দগুলোকে ধরার জন্য গৌণ ধরণের পবিত্রতার প্রয়োজন হয়। আর একজন মেয়ে এই অবস্থায় এটা করতে পারে না। আধ্যাত্মিকভাবে সে পবিত্র থাকে। একজন মু’মিন কখনও অপবিত্র হয় না। যতটুকু যিকির, দু’আ করা সম্ভব তারা সেটা করতে পারবে। আইপ্যাড ব্যবহারের ক্ষেত্রে ঊলামারা বলেছেন, আপনি যখন আইপ্যাড ধরে আছেন তখন আপনি একটা ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র ধরে আছেন। সেই মুহূর্তে একটা মুসহাফের ক্ষেত্রে যে নিয়ম এটার ক্ষেত্রেও একই নিয়ম।এ্যাপে এমন উপায় থাকে যে শব্দকে স্পর্শ না করে পাতা উল্টানো যায়। ফিক্‌হ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে সেই মুহূর্তে আইপ্যাডটা মুসহাফের কাজ করে। সেই মুহূর্তে এটা মুসহাফ। তারপরেও, মেয়েরা সেটাকে ধরতে পারে এবং পড়তে পারে। খেয়াল রাখতে হবে শব্দগুলোকে না ধরার ব্যাপারে। সেটার জন্য পবিত্রতার দরকার হয়। এটা ধরার জন্য এক ধরণের পবিত্রতা দরকার হয়। আমি বোঝাতে চাচ্ছি, বিভিন্ন ধরণের মতামত আছে। ফিক্‌হ দৃষ্টিকোণ থেকে সেটা আলোচনা করতে গেলে অনেক দীর্ঘ হয়ে যাবে।

তবুও এটা বলা যায় যে, যিকির করা, দু’আ, কুর’আন পাঠ করা যাবে। আল্লাহর কাছে “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা ‘আফুওউন তু’হিব্বুল ‘আফ্‌ওয়া ফা’ফু ‘আন্নী” এই দু’আ করা যাবে। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে দু’আ করা। এই সব করলেও কিন্তু কম নয়। এটা করলেও আল্লাহ লিখে রাখবেন যে আপনি সেই রাতে ইবাদত করেছেন কারণ আপনি অন্তত এতটুকু করেছেন।

নুমান আলী খানঃ

আসসালামুআলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আমি একবার দারুস সালামে গিয়েছিলাম এবং সেখানকার ইমামকে একই প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিঁনি বোনদেরকে খুব সুন্দর একটা উত্তর দিয়েছিলেন। আমি আপনাদেকে আজ সেটা উত্তরটাই জানাতে চাই। তিঁনি বলেছিলেন, “এই অবস্থায় মেয়েরা নামায পড়তে পারেনা এবং বিশেষ কিছু কাজ করতে পারে না। তাদেরকে কিছু কাজ করতে মানা করা আছে। তার সেই কাজগুলো না করাই আসলে এক ধরণের ইবাদত। এই পুরো সময়ে মেয়েটা যখন ঘুমাচ্ছে এবং জেগে আছে পুরোটাই ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। অন্যসময়ে সাধারণত যে ইবাদত সে করত, এই সময়ে তার সেই ইবাদত না করাই আসলে সারাক্ষণ, সবসময় ইবাদতের সমতুল্য।

সুবহানাল্লাহ! উপরন্ত সে সুস্থ্য থাকলে, পুরোপুরি পবিত্র থাকলে ইবাদত করত তাই সেটা তো লেখা হবেই”। সুবহানাল্লাহ! (মজা করে বললেন) মনে হয় যেন মেয়েদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে। হা, হা, হা।

সংগ্রহ: nouman ali khan collection in bangla থেকে।

Facebook Comments