banner

বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 996 বার পঠিত

 

ফাল্গুন

নিবরাজ জাহান হুজায়রা


বিসমিললাহ্ হির রহমানির রহিম, আসসালামুয়ালাইকুম সন্মানিত ভাই ও বোনেরা যাত্রা পথে আপনারা নিরাপদ ভাবে বাড়ীতে পৌঁছে যান এই কামনায় শুরু করছি। এই যে দেখছেন আমার কাছে একটা কলম এটা যে সে কলম নয় এর এক দিকে কালো কালি অন্যদিকে লাল কালি, এই একটি কলম বাইরে থেকে কিনলে দাম পড়বে ৫০ টাকা, কোমপানি দিবে ৩০ টাকা আর আমার থেকে কিনলে দাম পড়বে মাত্র ১০ টাকা,১০ টাকা !!আপনার সোনামণির জন্য একটা কিনে নিয়ে যান” এই কথা গুলো নিত্য শুনতে শুনতে মুখস্থ হয়ে গেছে সুষমার,সুষমা ভাবে এরা প্রতিদিন কত টাকার কলম বিক্রি করে?
সুষমার ভাবনার মধ্যে ছেদ পরে পাশের খালাম্মা গোছের এক মহিলা দাঁড়িয়ে থাকতে ব্যালানস করতে অসুবিধা হচেছ তাই উনার কুনুইয়ের গুতো খেয়ে সুষমা বাস্তবে ফিরে এল খালাম্মা ওর দিকে তাকিয়ে একটা ফিকে হাসি দিলেন। সুষমা লক্ষ্য করল ওদের সামনেই দুই হাতের কর ভরে লাল মেহেদি দিয়ে এক তামাটে রং এর যুবক ৩২টা দাঁত বের করে জনৈক মেয়ের সাথে বাজে রসিকতা করছে অথচ এক বারের জন্য ভাবছে না মার বয়সী এই মহিলাকে বসতে দেয়া ওর সামাজিক দায়িত্ব। সুষমা বাসের ভেতরেই একটা টিপ্পনিও শুনতে পেল, একটা অল্প বয়সী মেয়ে বেশ বুঝা যাচেছ বাসে উঠার পূর্ব অভিজ্ঞতা তার নেই, তাই ইচ্ছাকৃত বিশেষ অজ্ঞের খোঁচার থেকে বাঁচতে একটা আর্তনাদ করে উঠেছিল,ব্যাস আর যায় কোথায়,অমনি ২জন সম-স্বরের চেঁচিয়ি উঠল, এত বড়লোকি তো বাসে কেন পেরাইভেটে চড়লেই তো হয়, ২ জনেই এই কথা বলে সেকি বীভৎস হাসি, বেচারা অপমানে লাল হয়ে চোখের পানি সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। সুষমা শাহবাগ থেকে রামপুরা যাবে মোঘোল আমলে বাসে চড়েছে এখনও ৭১ সালেই এসে পৌছায়নি কখন ২০১৮ তে আসবে তার হিসাব খোদ ড্রাইভার সাহেবও বলতে পারেননা…… আর সিট তো সোনার হরিণ, সুষমাতো মাকে বলেছিল নামায পড়ে ওর জন্য দোয়া করতে একটা সিট যেন ও পায় কিন্তু বিধি বাম, যখন বাসে উঠেও দেখতে পায় কোন জনৈক সৌভাগ্যবান জানালার ধারে বসে মহা সুখে ঘুমাতে ঘুমাতে পরে যাচেছ তখন সত্যি সুষমার রাগ, হিংসা কান্না সব এক সাথে পায়।
জোরে ব্রেক করে বাস এসে থামল কাকরাইল স্টপেজে, ওমনি হুরমুর করে অনেকের সাথে সুষমাও নিজেকে সামলে নিল পরে যাবার থেকে। কেউ ধাক্কা দিতে দিতে এবং ধাক্কা খেতে খেতে নামল, উঠল। এই ফাঁকেই শুরু হয়ে গেল মিউজিক্যাল চেয়ার খেলা এবার সুষমা জিতে গেল, বসতে পারল সোনার হরিণ নামক সিটে, ওখানে আগে থেকেই একজন বসে ছিল এবার আরেক যাত্রী উঠল (বয়স আনুমানিক ৩৫/৩৭ হবে) পাশেই হেল্পপারের সাথে এক কলেজ ড্রেস পরা ছেলের সাথে বেশ গরম কথাবার্তা চলছে হাফ পাশ আছে কি নেই তা নিয়ে। ২০ টাকা ভাড়া ৮ টাকায় রফা হলো, এবার এলো সুষমাদের দিকে নতুন যাত্রীকে হেলপার বলল আনটি বাড়াডা……
বোমটা ফাটল এখন, উনি ২৫ টাকার ভাড়া মেটালেন ৫ টাকা দিয়ে, হেল্পার তেড়ে প্রশ্ন করল কই যাবেন,;উনি তার চাইতে ক্ষিপ্র গতিতে উত্তর দিলেন কি মনে করছ আমরা হিসটুডেনট(student)।হেল্পার বেচারা খুবই কমজোরি গলায় বলল “এ্যাঁ!!” উনি আবার বলে উঠলেন হ্যাঁ, আমরা হিসটুডেনট আমাদের বাড়া এডাই। হেল্পার কোন কথা না বলে ওই ৫ টাকা নিয়ে ওই স্থান ত্যাগ করল। এবার মৌচাক থেকে একজন মেয়ে উঠল, উঠেই সুষমার পাশে বসে থাকা যাত্রীকে খুবই করুণ স্বরে অনুরোধ করল, আপু আমার মোবাইলে কোন ব্যালানস নেই একটা ইমার্জেনসি কল করা যাবে? মহিলা সাথে সাথে ফোনটাএগিয়ে দিল মেয়েটাকে। সে ফোনে বলে উঠল” আসসালামুয়ালাইকুম হ্যাঁ, আব্বা আইসেননি বাসায়, হুনেন আমি মাছ রান্না করচি আপনের কিছু করন লাগব না শুধু বাতটা বসাই দেন, ইছ মিষ্টি কোমবা(কুমড়া) আমি খাই না আননে খাইলে রানদেন, আমি আসি খাট্টা(টক)রান্না করি দিব” ইমার্জেনসি কলের নামে বাপ-মেয়েতে এমন আলাপ চারিতায় জনৈক ভদ্রমহিলা রীতিমত কাঁদো কাঁদো চেহারা করে সুষমার দিকে চাইল………।
এগুলো সুষমা প্রতিদিনই দেখে
যখন বাসে চড়ত না তখন ফাল্গুন নামটা দেখে সুষমা আপন মনে গুনগুনি উঠত,’
কেউ বলে ফাল্গুন, কেউ বলে পলাশের মাস……।
আমার সর্বানাশ…’এখন সুষমা মিলিয়ে দেখে আসলেই তো সর্বনাশ, না সর্বনাশও ঠিক ক না এই ফাল্গুন বাসে না উঠলে জীবনের এই দিকটা সম্পর্কে, এত বিচিত্র মানসিকতা সম্পর্কে একদম অজানা থেকে যেত। জীবনের সব কষ্ট থেকেও শেখার আছে।

নিবরাজ জাহান হুজায়রা
কাউন্সিলিং সাইকোলজিষ্ট

Facebook Comments