banner

রবিবার, ০৫ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 970 বার পঠিত

 

পথেঘাটে নারীদের নিরাপত্তা নেই

ডা. মিথিলা ফেরদৌস


সি এন জি বাপ ছেলেকে ছেড়ে দিয়ে, ভাবলাম এক কিলো রাস্তা হেটেই যাই। সি এন জি থেকে নেমে, রিক্সা খুঁজলাম একটু, তারপর হেটেই রওনা দিলাম।

ঈদের পর রাস্তা পুরাই ফাঁকা। ফুটপাথ ধরে হেটে যাচ্ছি। ঘ্যাচ করে একটা মাইক্রো এসে পাশে দাঁড়ায় কয়,
:আপা কই যাইবেন?
আমি কোন কথা না বলে হন হন করে হাটতে থাকি।
কিছুক্ষন পর একটা মোটরসাইকেল পাশে এসে থামলো।
:কই যাবেন?
আমি কোন কথা বলিনা।
এরপর একটা ভাঙাচোরা প্রাইভেট কার বেশ কিছু সামনে এসে থেমে, গ্লাস নামাচ্ছিলো।
আমি কাছে আসতেই
:আপা কই যাবেন?
এবারও কথা বলিনা, কিন্তু গাড়িটা পাশে পাশে চলতেই থাকে। রাস্তায় দুই একজন লোক আছে দূরে দূরে। একটু ভয় ভয় করছে। আমি আরও জোরে হাটতে থাকি।মুখ ঘেমে টুপ টুপ করে পরছে। গাড়িটা চলে যায়।

আলতাফ বার বার বলতেছিলো, ওকে অফিসে নামায় ওই সি এন জি নিয়ে আসতে। পাত্তা দেইনি। ভাবলাম রাস্তা ফাঁকা, হাটা হয় না। একটু হাটি।

সামনেই পথ ঘুরে গেছে। ঠিক সেই জায়গায় একটা বেশ দামী প্রাইভেট কার এসে দাঁড়ালো। এইবার খুব ভয় হচ্ছিলো।এমন হচ্ছে কেন?
এইটাই কি স্বাভাবিক? রাস্তায় হাটলে কিছুক্ষন পর পর কি এমন প্রাইভেট কার, মাইক্রো, বাইক এসে দাঁড়ায়? আলতাফের সাথে যখন রাস্তায় চলি, কখনও এমন হয় নাই তো। এইবার আরও জোরে হাটতে থাকি, গাড়িটা রেখেছেও এমন জায়গায় যেদিক দিয়েই যাই, গাড়ির ঠিক পাশ দিয়ে যেতে হবে। ড্রাইভার মুখ বাড়িয়ে
:কি ম্যাডাম কই যাবেন?
গলায় স্বরেই বোঝা যায় টিজিং। ইচ্ছা করতেছিলো কষে দুই চড় দিই। সেইটা তো অসম্ভব। আমি জোরে জোরে হাটতে থাকি। গাড়ি স্লো আমার পাশে পাশে কিছুদুর চলে, এরপর জোরে চালায় চলে যায়।

হাসপাতালের কাছে, আসতেই ডাক্তারদের গাড়ি চোখে পরে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি। এবার ধীরে ধীরে হাটি।
এইটুকু রাস্তায়, দিনের বেলায়ই আমার মত একজন মহিলার জন্যেই যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে অন্যদের জন্যে কি অবস্থা!

যদি আমার গাড়ি লাগতোই তাহলে আমি দাঁড়ায় ডেকে নিতাম, যদিও আমি বা যে কারো এমন কারো কাছে লিফট নেয়া কখনই উচিৎ না। একটা মানুষ হেটে যাচ্ছে মানেই হয়তো তার গন্তব্য কাছেই, তাকে লিফট দিতে চাওয়ার তো কোন কারণ দেখিনা।

যেহেতু আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এমন দুর্বল(আশে পাশে কোথাও কোন পুলিশ আমি দেখিনি।অথচ ভি আই পি রোড।প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের পাশ দিয়েই যাচ্ছিলাম।) সেহেতু আমাদের নিজেদের ব্যাপারে নিজেদের সচেতন হওয়া খুব জরুরী।
আমি বলছিনা, আমাকে যতজন লিফট দিতে চেয়েছে, তাদের সবার উদ্দেশ্যই খারাপ ছিলো। কিন্তু এই চারজনের সবার উদ্দেশ্যই কি ভাল ছিল? আমার কাছে লিফট নেয়ার ব্যাপারটা কখনওই ভাল মনে হয় না।
অনেক সময় এমন হয়, হাটতে হাটতে হয়রান হয়ে মনে হয়, কিছু একটা পেলেই উঠে যাবো, তখনও সাবধান হতে হবে।

একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, নিজেদের মধ্যেই একটা রিফ্ল্যাক্স আনতে হবে, কোনটা ভাল কোনটা মন্দ!নিজেদের নিরাপত্তার কথা নিজেকেই ভাবতে হবে, দেশ আপনার নিরাপত্তা না দিলেও, কোন ঝামেলায় পরলে, কিছু নেগেটিভ মানুষ আপনাকে নিয়ে কথা বলতে ছাড়বেনা। কিছু অঘটন ঘটলেই একদল ঝাঁপায় পরে, বিপদে পরা মেয়ের চারিত্রিক সনদপত্র বিতরণ করতে।

  • ডা. মিথিলা ফেরদৌস
    বিসিএস স্বাস্থ্য
    সাবেক শিক্ষার্থী, রংপুর মেডিকেল কলেজ।
Facebook Comments