banner

সোমবার, ০৬ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 2047 বার পঠিত

 

গল্পে গল্পে বাবুদের শেখানো

কানিজ ফাতিমা


বাচ্চারা উপদেশ অপছন্দ করে, আর গল্প শুনতে ভালোবাসে। গল্প ব্যবহার করে আপনার শিশুকে দিতে পারেন প্রয়োজনীয় উপদেশ –

লিমার প্রতিজ্ঞা

লিমার ক্লাসে একটা মজার ইভেন্ট হতে যাচ্ছে। শুক্রবার সবাই তাদের প্রিয় খেলনা ক্লাসের সবাইকে দেখতে পারবে। লিমা গত মাসেই খালামনির কাছ থেকে একটা মজার খেলনা উপহার পেয়েছে – পেট ক্যাট। ক্যাটটা খুবই মজার, মজার সব কান্ড করে। কেউ হাতে তালি দিলে সে তার দিকে এগিয়ে যায়, কখনো খেতে চায়. কখনো ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরে। আনন্দ পেলে তার চোখ হলুদ হয়ে জ্বলতে থাকে, আর দুঃখ পেলে চোখ নীল হয়ে যায়। লিমা একটুও অপেক্ষা করতে পারছে না, শুক্রবার আর কতদিন পরে আসবে? উহ – এতো দিন লাগছে কেন? সে জানে সবাই তার খেলনা টা পছন্দ করবেই আর সেটা হবে ক্লাসে সবার সেরা খেলনা। লিমা তার খেলনা একটা সুন্দর ব্যাগে যত্ন করে গুছিয়ে রাখলো যাতে শুক্রবার সে সেটা নিতে ভুলে না যায়।

বৃহস্পতিবার লিমার প্রিয় কাজিন ফারিহা বেড়াতে এসেছে তাদের বাসায়। লিমা খুবই খুশী। সারা বিকাল ওরা দুজন খেলা করে কাটিয়ে দিলো।

সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ শেষে ওরা গল্প করতে বসলো। লিমা ওর স্কুলে কাল যে ইভেন্ট আছে সেটা ফারিহাকে বললো।
লিমা: জানো, কাল আমাদের ক্লাসে শেয়ার এন্ড টেল হবে। টিচার বলেছে আমরা আমাদের প্রিয় খেলনা নিয়ে যেতে পারবো। যার খেলনা বেশী ছেলে-মেয়েরা পছন্দ করবে তার খেলনা সেরা হবে। আমি আমার পেট ক্যাট নিয়ে যাবো।
ফারিহা : দেখিতো তোমার পেট ক্যাট?

ফারিহা আর লিমা পেট ক্যাট টা নিয়ে অনেক্ষন খেললো।

মামনি পাশের রুম থেকে বললেন, ” তোমরা এশার নামাজ পরে ঘুমিয়ে পড়ো। কাল সকালে উঠতে হবে, নামাজ পড়তে হবে আর স্কুলের জন্য রেডী হতে হবে”

“ঠিক আছে, মামনি” লিমা বললো।
কিন্তু তারা ভাবলো আর একটু খেললে কোনো ক্ষত নেই। তাই তারা আবার খেলা করতে লাগলো।

খেলতে খেলতে কখন যে রাট দশটা বেজে গেলো খেয়ালি করেনি ওরা। মামনি বিছানায় যাবার আগে প্রতিদিন লিমার ঘর চেক করে যায়। আজ এসে সে দেখলো লিমা আর ফারিহা এখনো খেলছে।

মামনি অসন্তুষ্ট হলেন, কিন্তু খুব রাগ করলেননা। ” তোমাদের কথা ছিল এক ঘন্টা আগে বিছনায় যাবার। আমি দেখতে পাচ্ছি এখনো তোমরা খেলছো। তোমরা কি নামাজ শেষ করেছো ?”

লিমা আর ফারিহা লজ্জা পেলো। কিন্তু মায়ের কাছে সেটা না বলে বললো ” এইতো পড়ছি”

মামনি এবার সত্যি রাগ হলেন। “তোমরা এখনই নামাজ পড়বে ও ঘুমাতে যাবে। আমি খুবই অসন্তুষ্ট হয়েছি ” – বলে মামনি বেরিয়ে গেলেন।

ফারিহা আর লিমা নামাজ সেরে বিছানায় আসলো। কিন্তু না ধুমিয়ে তারা গল্প শুরু করে দিলো।

লিমা – মামনি, মাঝে মাঝে খুব বিরক্ত করে, সব কিছু সময় মতো করতে বলে। সবসময় এসব ভালো লাগে না। ”
ফারিহা – আমার আম্মুও এরকম। সব মায়েরাই একই রকম।
লিমা – ‘এখন খাবার সময় খেতে আসো, এখন পড়ার সময়, এখন ঘুমানোর সময়
ফারিহা’ – একটু রাত করে ঘুমালে কি হয় ?
লিমা – আম্মু বলে রাত করে ঘুমালে সকালে ওঠা যায় না। আর সকালে না উঠতে পারলে দিন সুন্দর করে শুরু করা যায় না, পুরো দিনটাই এলোমেলো হয়ে যায়।
ফারিহা – আমার মনে হয়না একটু রাত জাগলে এত সমস্যা হবে –

লিমা, ফারিহা এভাবে কথা বলতে বলতে অনেক রাত হয়ে গেলো ঘুমাতে।

পরের দিন সকালে লিমার মনে হলো মামনি তাকে অনেক দূর থেকে ডাকছে।
– লিমা, তুমি এখনো উঠোনি, স্কুলে দেরী হয়ে যাচ্ছে, তুমি ফজরের নামাজও পড়োনি। লিমা ওঠো , চোখ খোলো

লিমার মনে হচ্ছে অনেক দূর থেকে মায়ের গলা ভেসে আসছে। লিমা চোখ খুলে দেখলো মা তার ওপরে ঝুকে আছেন, ওকে জাগানোর চেষ্টা করছেন।
‘সেই কখন থেকে ডাকছি, তাড়াতাড়ি ওঠো – স্কুলে দেরী হয়ে যাচ্ছে -‘

লিমা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো অনেক বেজে গেছে –
বাথরুমের দিকে দৌড়াতে দৌড়াতে বললো ” আমাকে আগে ডাকোনি কেন ”
” আমি তোমাকে ডেকে দিয়ে রান্না ঘরে গিয়েছি নাস্তা রেডি করতে, এসে দেখি তুমি তখনও ওঠোনি – তাড়াতাড়ি নামাজ পরে রেডি হয়ে নাও ”

লিমা কোনো রকম বাথরুম সেরে নামাজ পরে রেডি হয়েই বেরিয়ে গেলো। ওর নাস্তা খাওয়ার সময় আর হলোনা।

স্কুলে গিয়ে লিমার শরীর খারাপ লাগলে শুরু করলো। খুব ঘুম পাচ্ছিলো। টিচার কি পড়ালো সে কিছুই বুঝলো না। সেকেন্ড পিরিয়ডে ওর মাথা ঘুরাতে লাগলো আর বমি লাগলো।

টিচার জিজ্ঞাসা করলেন , ” লিমা, তুমি কি অসুস্থ?”
“না, টিচার ”
পরের পিরিয়ডে লিমার পেটে ব্যাথা শুরু হলো। টিচার তাকে ক্লাসের পাশে নিয়ে সিক বেড়ে শুইয়ে দিলেন।
” আজ সকালে কি দিয়ে নাস্তা করেছো লিমা?- টিচার জিজ্ঞাসা করলেন।
” নাস্তা করিনি”
“কাল রাতে ভালো ঘুম হয়েছে ? তোমাদের বয়সে ৮ ঘন্টা ঘুম হয় জরুরী”
লিমা কিছু বললো না, সে তার ভুল বুজতে পারলো। তার নিজের কার্যকারিতার জন্য তার লজ্জা লাগছিলো।
টিচার তার লাঞ্চপ্যাক থেকে স্নাকস বেরকরে ওকে খেতে বললেন।
“কম ঘুম আর সকালে নাস্তা না খাওয়ার জন্য এমনটা হয়েছে। ইটা খেয়ে নাও আর একটু শুয়ে থাকো , দেখবে ভালো লাগবে ইনশাআল্লাহ। ”

সত্যিই কিছুক্ষনের মধ্যেই লিমার ভালো লাগতে শুরু করলো। লিমা উঠে গিয়ে তার ক্লাসে বসলো।
লিমার ভাগ্য খুব ভালো, সে শেয়ার এন্ড টেল শুরু হবার আগেই ক্লাসে এসেছে।
“তোমার তোমাদের পছন্দের খেলনা নিয়ে রেডি হও। আমরা এখন শেয়ার এন্ড টেল শুরু করবো ”

সবাই তাদের ব্যাকপ্যাক থেকে নিজ নিজ খেলনা বের করে ডেস্কে রাখলো। লিমাও তার ব্যাকপ্যাকের দিকে এগিয়ে গেলো – তার প্রিয় পেট ক্যাট বের করে আনতে।
লিমা ব্যাগ খুলে খেলনাটা দেখতে পেলোনা।
নিশ্চয়ই বইয়ের পেছনে আছে – লিমা ভাবলো
নাহ – ওখানেও নেই
লিমার দুশ্চিন্তা হতে শুরু করলো – তবে কি ?

লিমার এবার মনে পড়লো – কাল রাতে সে ফারিহার সঙ্গে খেলার পর ব্যাগে ওটা ঢুকাতে ভুলে গেছে। গল্প করতে করতে সে ভুলেই গিয়েছিলো যে তাকে স্কুলের ব্যাগ আগের রাতে গুছিয়ে রাখতে হবে। সকালে দেরী করে ওঠার জন্য সে ঠিকভাবে সব কিছু চেক করতে পারেনি – তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে পড়তে হয়েছে।

লিমার চোখে পানি চলে আসলো, সে উঠে গিয়ে ধীরে ধীরে নিজে ডেস্কে গিয়ে বসলো –
আম্মু ঠিকই বলেছে, রাত জেগে থাকলে পরের দিনটা একেবারে এলোমেলো হয়ে যায়। ঠিক সময়ে ঘুমাতে যাওয়া আর স্কুলে আসার আগে সময় নিয়ে প্রিপারেশন নেয়া খুবই জরুরী। লিমার খুব মন খারাপ লাগছে – আর কোনোদিন সে এমনটা করবেনা।

গল্প শেষে:
গল্প শেষে আপনি আলোচনা করতে পারেন গল্পের শিক্ষা নিয়ে। প্রশ্ন করুন –
১. লিমা কেন সকালে উঠতে দেরী করলো ?
২. এতে তার কি কি সমস্যা হয়েছিল?
৩. তোমার কোনো বন্ধু বেড়াতে এলে তুমি কি কি করতে চাও?
৪. বন্ধুর সঙ্গে মজা করার সময় কি কি বিষয়ে খেয়াল রাখা দরকার?
৫. প্রস্তুতি বলতে কি বুঝায়? কি কি ভাবে আমরা প্রস্তুতি নিতে পারি? কয়েকটা উদাহরণ দাও –
৬. স্কুলে যাবার আগে কি কি প্রস্তুতি নেয়া দরকার? সেজন্য কত সময় প্রয়োজন ?
৭. রাতে ঘুমাতে যাবার আগে কি কি প্রস্তুতি নেয়া জরুরী?

Facebook Comments