banner

বুধবার, ০৮ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 998 বার পঠিত

 

“স্বাতীর রঙধনু” (শিশুদের মনোজগত ভ্রমণ) পর্ব-২

আফরোজা  হাসান


নিজ জীবনের আলোকে, আমার বেড়ে ওঠার পরিবেশ থেকে বুঝেছি শরীয়তের বিধান সমূহকে জীবন ধারণের অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মতোই দেখতে হবে। অর্থাৎ, ক্ষুধা লাগলে যেমন খাদ্যের সন্ধানে যাই, ঘুম পেলে যেমন ঘুমোতে যাই, আযান শুনলে তেমন নামায পড়তে যাবো। এখানে স্পেশাল বলে কিছু নেই। খাদ্য আর ঘুমের অভাবে যেমন আমার শরীর ঝিমিয়ে যাবে, নামাযের অভাবে ঝিমিয়ে যাবে আত্মা। আর সুস্থ জীবন যাপনের জন্য শরীর ও আত্মা দুটোই চনমনে থাকা প্রয়োজন।

আমার প্রতিটা সন্তানেরই নিজস্ব একটা করে স্বপ্ন আছে তাদের নিজ নিজ জীবনকে ঘিরে। যে কোন কাজই ওদেরকে দিয়ে করিয়ে নেয়া যায় শুধুমাত্র তাদের স্বপ্নটা মনে করিয়ে দিলে। আমি আর ওদের বাবা শুধু ভালোবাসা আর আদর দিয়ে ওদের মনে আরেকটা স্বপ্ন গেঁথে দিয়েছি। তবে শুধু মুখে বলে না স্বপ্নটা গেঁথে দিয়েছি আমাদের কথা, কাজ, আচার-ব্যবহার দ্বারা। মুখে সারাক্ষন উপদেশ পরামর্শ দিতে আমরা নারাজ। এতে বাচ্চারা বিরক্তও হয় মনে মনে। আমরা তাই করে দেখানোতে বিশ্বাসী। বাচ্চাদের ঘুম থেকে উঠানোর সময় জড়িয়ে ধরে আদর আর শুভ সকাল বলার আগে সালাম দিতে কখনই ভুল করিনা আমরা। আস্তে আস্তে ওরা বুঝে নিয়েছে ঘুম থেকে উঠার পর সালাম দেয়াটাই ওদের প্রথম করণীয়।

আলহামদুলিল্লাহ! আমাদের পরিবারের সবার জীবনের প্রতিটা সকাল একে অপরের কল্যাণ কামনার মধ্যে দিয়েই শুরু হয়। ঠিক একই ভাবে খাবার আগে বিসমিল্লাহ বলে, খাবার শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলে, কোন কাজ করার চিন্তা করলে ইনশাআল্লাহ বলে, বিস্ময় বা মুগ্ধতা প্রকাশে সুবহানাল্লাহ বলে বলেই আমরা বাচ্চাদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছি ওদের করণীয়। বার বার বলার চেয়ে আসলে নিজে করে দেখানোটাই অনেক বেশি সহজ। আর বাচ্চারা যেহেতু স্বভাবতই অনুকরণ প্রিয় তাই এভাবে শেখালে নতুন কিছু শিখছে ভেবে আরেকটা বোঝা ভাবারও সুযোগ থাকে না। এভাবেই আমরা অনেক কিছু শিখিয়ে ফেলতে পারি বাচ্চাদের খুব সহজেই। নিত্য প্রয়োজনীয় দোয়া গুলোও এভাবে শিখিয়ে ফেলা যায়। খুব অল্প সময়েই আমার বাচ্চারা নিত্য প্রয়োজনীয় সব গুলো দোয়া মুখস্থ করে নিয়েছিল। অথচ টেরই পায়নি আমরা ওদেরকে দিয়ে স্পেশ্যাল কিছু করিয়ে নিচ্ছি।

শিশুর আয়না বা রোল মডেল হল তার বাবা-মা। শিশু তার বাবা-মাকে দেখতে দেখতে এবং অনুকরণ করে বেড়ে ওঠে। তাই আমরা নিজেরা ভালো মানুষ না হলে আমাদের বাচ্চারাও ভালো মানুষ হবেনা। সৌভাগ্য গুনে যদি হয়েও যায় প্রতিকূল পরিবেশে গেলেই তার মধ্যের প্রবৃত্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। যেহেতু গড়ে ওঠার পথটা ইতিবাচক ছিলনা তাই নেতিবাচক চিন্তাটাই তাদের মনে আগে দোলা দেয়। চাঁদ দেখলে মুগ্ধ হবার বদলে নিজের অজান্তেই তারা চাঁদের দাগ খুঁজতে শুরু করে। কারন চলার পথে তারা শেখেনি যে পৃথিবীতে নিখুঁত বলে যেহেতু কিছু নেই, কেউ নেই সেহেতু জীবনের সার্থকতা দাগকে এড়িয়ে যাওয়া কিংবা ক্ষমা করে দেবার মধ্যেই। শিশুর আত্মিক বিকাশে মুখ্য ভূমিকা পরিবার -কেই পালন করতে হয়।
পরিবার যদি আত্মিক বিকাশের পথকে সুগম করে দিতে পারে, তাহলেই সম্ভব হয় শিশুর আত্মার বিকাশ। তবে এর সাথে সাথে ছোটবেলা থেকেই শিশুকে দায়িত্বশীল ও সচেতন হিসেবেও গড়ে তুলতে হবে। কেননা আত্মিক বিকাশের মূল দায়িত্ব ব্যক্তিকেই পালন করতে হয়। যেমন, কোন একটি বাগানের মালী পানি দিয়ে সার দিয়ে যত্ন করে বাগানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে পারে, কিন্তু মালী চাইলেই ফুল ফোটাতে পারেনা। তাই ভালো-মন্দ, কল্যাণ-অকল্যাণ, দোষ-গুণের মধ্যে যাতে পার্থক্য নির্নয় করতে পারে সে শিক্ষাও ছোটবেলা থেকেই দিতে হবে শিশুকে। যাতে জীবনে চলার পথে নিজ বিবেচনার দ্বারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। শিশু তার আশেপাশের প্রতিটা ঘটনা থেকে প্রতিনিয়ত শিক্ষা গ্রহণ করতে থাকে। শুধু তার সাথে অন্যদের সম্পর্ক বা আচরণ থেকেই নয় বরং তার আশেপাশের মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক থেকেও সে শেখে। তাই বাবা-মা ছাড়াও পরিবারের অন্যান্য সদস্য, আশেপাশের মানুষজন, এমনকি স্কুলের পরিবেশও শিশুর চাল-চলন, আচার-আচরণ, কথাবার্তাকে প্রভাবিত করে। প্রভাবিত করে তার গ্রহণ-বর্জন ক্ষমতাকেও।

চলবে….

পর্ব -১

Facebook Comments