banner

রবিবার, ১৯ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 721 বার পঠিত

 

একই দিনে তিনটা নারী নির্যাতন কেস!

ডা. মিথিলা ফেরদৌস


প্রথম কেস: মা মেয়েকে নিয়ে আসছে,স্বামী মেরেছে। ইনজুরি গুরুতর না। সারা শরীরে মারের চিহ্ন। চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দিলাম, তারা যাচ্ছেনা সার্টিফিকেট চায়। এই কাজ আমি সাধারণত এভোয়েড করি তাই ইমার্জেনসীতে যেতে বললাম। যদি উপকার হয় কিছু।

দ্বিতীয় কেস: স্বামী স্ত্রী দুইজন একসাথেই এসেছে। মেয়েটার থুতনীতে কাট ইনজুরি।দেখেই বোঝা যায় কেউ মেরেছে। পুরুষটি এসেই বলে।
: সেলাই করে দেন।
: কখন কেটেছে?
: ৫/৬ঘন্টা হবে।

এই পর্যায়ে মহিলা বলে,
: শেষ রাতে।
হিসাব করে দেখলাম প্রায় ৮/৯ ঘন্টা। ৬ ঘন্টার মধ্যে হলে স্টিচ দেয়া যেতো।
: এখন আর সেলাই দেয়া যাবেনা, চিকিৎসা দিচ্ছি, আর ড্রেসিং করে নিয়ে যান।ভাল হয়ে যাবে। খুব ডিপ ক্ষত না।
পুরুষ টি ক্ষিপ্ত
: ডাঃ বলেছে, সেলাই দিতে।
: আমি কি তাহলে?
: ছেলে ডাঃ বলেছে।
: কেনো,মেয়ে ডাঃ কি চিকিৎসা জানে
না?
: আপনি সেলাইয়ের ব্যবস্থা করেন।
: কিভাবে হইছে?
: স্বামী স্ত্রীর কথা কাটাকাটি।
মনে মনে ভাবলাম, কথা কাটাকাটিতে স্বামীর কিছুই হইলো না!!
বুঝলাম, অশিক্ষিত শ্রেণী, নারীর প্রতি অবজ্ঞা, এরে বুঝায় লাভ নাই। ছেলে ডাক্তারের কাছে পাঠায় দিলাম।

তৃতীয় কেস: মোটামুটি অবস্থাপন্ন ঘরের, শিক্ষিতই মনে হলো। মেয়েটা দুই চোখ ফুলে কালো হয়ে গেছে, মেয়েটা টলতেছে। মাথায় ব্যথা পেয়েছে।
টিকিট নিয়েই হেড ইনজুরী কেস লিখে, নিউরো সার্জারি ডিপার্টমেন্ট এ পাঠায় দিলাম। ডিপার্টমেন্ট এর ওপিডি বন্ধ। তারা ফিরে আসছে।

এই ছেলের মধ্যেও উদ্ধত ভাব।
: আপনি চিকিৎসা দেন। এইটা নরমাল কেস।মাথার বাইরে ব্যথা পাইছে।
বুঝলাম নিউরোর পিওন, এইটা বুঝায় পাঠায় দিছে, ঝামেলা কমানোর জন্যে।বললাম,

: আমি নিউরোসার্জারিতে ট্রেনিং করে আসছি, কোনটা ভিতরের ব্যথা আর কোনটা বাইরের আমি বুঝি। আমরা যেকোন সময় জ্ঞান হারাতে পারে, তখন বিপদে পরতে পারেন।

ছেলেটা ভর্তি করবেনা, এখানে আইনত কিছু সমস্যা আছে তাই কোনমতে চিকিৎসা নিয়েই বাড়ি নিয়ে যাবে। আমি আরও বুঝলাম, ছেলেটা কাপুরুষ শ্রেণীর, মেয়েদের সাথে এই শ্রেণীর পুরুষরা খারাপ ব্যবহার করে বিকৃত আনন্দ পায়। যেহেতু হাসপাতাল আমাদের সিকিউরিটি দেয় না। তাই আমিও বললাম,
: পাশের রুমে ভাল ডাক্তার আছে দেখান।

শিক্ষিত অশিক্ষিত সব শ্রেণীতে কিছু ছেলেমানুষ আছে যারা মেয়েদের নিম্ন চোখে দেখে, বউ পিটানো বীর পুরুষ এরা।এরা পিওন বা কোয়াককেও গুরুত্ব দিবে, কিন্তু শিক্ষিত মেয়ে ডাক্তার হোক, ব্যাংকার হোক, টিচার হোক পারলে তাদের সাথেও খারাপ আচরণ করবেই।এইটাই তাদের বীরত্ব। এইটাকেই তারা পুরষত্ব মনে করে। অসভ্য ইতর নিম্নশ্রেনীর এই সব পুরুষ মানুষ,যত উচু বা নীচু পরিবার থেকেই আসুক, মেয়েদের সবসময় নিম্নজাতের মনে করে, কারন হয়তো পরিবারে নিজের মাকেও এমন অপমানিত হতে দেখেছে। এরা শিক্ষিত হলেও তাই এদের মানসিকতার পরিবর্তন আসে না।

এর আগের পোস্টে নারী শিক্ষা তথা আমাদের সার্বিক শিক্ষা নিয়েই বলেছি।আজ এইসব কাপুরুষদের জেনেটিক্স নিয়ে বললাম। কিছু অমানুষ বীর পুরুষ যুগে যুগে বুঝবেনা, নারীদের সম্মান করাই প্রকৃত শিক্ষা।

নারী নির্যাতনে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষে। যেভাবেই হোক শীর্ষে তো আছি তাইনা?

ডা. মিথিলা ফেরদৌস
বিসিএস স্বাস্থ্য
সাবেক শিক্ষার্থী, রংপুর মেডিকেল কলেজ।

Facebook Comments