banner

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 1350 বার পঠিত

 

মাতৃকথন ৮

ফারিনা মাহমুদ


কাজেই আমি মনে করিনা তোমার দুশ্চিন্তার কোনো কারণ আছে। তবে তোমাকে আমি যে পরামর্শ দেবো তা হচ্ছে তুমি ডাক্তারের সাথে কথা বলে ওর একটা ব্লাড টেস্ট করে দেখতে পারো ওর ভিটামিন ডি এবং আয়রন লেভেল ভালো আছে কিনা, না থাকলে ঐটা একটু পূরণ করা জরুরি। আর তুমি ওর ফুড প্যাটার্নে লিখেছো রাতে ওকে এক বোতল দুধ দেয়া হয় এবং ও এইটা খেয়ে ঘুমায়। তুমি এই দুধ বন্ধ করে দেবে। একেবারেই পারবে না, একটু একটু করে পরিমান কমাবে এবং একসময় বন্ধ করে দেবে। শুরুটা করবে ছুটির দিনের আগের রাতে কারণ ওই রাতে ও উঠে যেতে পারে এবং কান্না করতে পারে।
আমি আশ্চর্য হয়ে বললাম, খায় ই ওই এক বোতল দুধ, ঐটা বন্ধ করে দেবো মানে?
– বাচ্চা যখন থেকে শক্ত খাবার খায়, দুধ আস্তে আস্তে কমিয়ে দিতে হয়। ১৬ মাস বয়সী বাচ্চা ২ কাপ এর বেশি দুধ বা তার সমপরিমাণ ডেইরী প্রোডাক্ট (দই, পনির) এর বেশি খাওয়ার প্রয়োজন নেই। দুধ খাওয়া সহজ, টানলেই পেট ভরে। তোমার বাচ্চা জানে রাতে ঐটা খেয়ে সহজেই তার পেট ভরবে। তাই সে কষ্ট করে শক্ত খাবারটা খায় না। আর যখন সে জানবে তার ওই অপশন বন্ধ, আস্তে আস্তে সে ডিনার ঠিক মতো করবে। শুরুতে তোমাদের দুইজনেরই একটু স্ট্রাগল হবে তবে এক সপ্তাহ ফলো করে দেখো, উন্নতি হবে অবস্থার।
ও বলে চললো , আমরা মূল যে ব্যাপারটা খেয়াল করি সেটা হচ্ছে বাচ্চা সব ফুড গ্রুপের খাবার খাচ্ছে কিনা, ফিজিক্যালি একটিভ আছে কিনা, গ্রোথ চার্ট ঠিক আছে কিনা। পাশাপাশি এটাও মনে রাখা দরকার সব বাচ্চার বৃদ্ধি এক বয়সে হয় না। কোনো কোনো সময় বৃদ্ধি একটু স্লো ডাউন হতে পারে, এটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং এটা যদি “রিমার্কেবলি লং পিরিয়ড এসোসিয়েটেড উইথ আদার সিম্পটমস” না হয় সেই ক্ষেত্রে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তোমার নিশ্চয়ই এমন কোনো সহপাঠী ছিলো যে শৈশবে বেশ লম্বা থাকলেও কৈশোরে এসে আর অতো লম্বা হয়নি বা উল্টোটা? এটা একটা উদাহরণ হতে পারে গ্রোথ স্লো ডাউনের। তেমনি মেটাবলিজম ও আপ ডাউন হয়। তোমার হয়না? কোনো কোনো দিন তোমার নিশ্চয়ই খেতে ইচ্ছে করে না, আবার কোনো কোনোদিন অনেকটা খেয়ে ফেলো! ওরও তাই। এ ছাড়া দাঁত ওঠার সময় বা অন্য কোনো সাময়িক পরিবর্তনের কারণেও বাচ্চা কম খেতে পারেনা। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে ওই ফেইজ টা কেটে গেলে বাচ্চা বেশ ভালো খাওয়া দাওয়া করে নিজে থেকেই নিজের ঘাটতি পুষিয়ে নেয় ! অসুস্থতা থেকে সুস্থ হবার পরেও বাচ্চার ক্ষুধা বাড়ে এইজন্য।
আমি রিলেট করছি মনে মনে – ভাবি, বাচ্চা ক্যামন আছে? এর উত্তরে প্রায়ই বলি, আর বৈলেন্না ভাবি, দুইদিন ঠিক মতো খায় তো তিন দিনের দিন আবার যেই সেই! আচ্ছা, ঘটনা তাইলে এই!
সুতরাং ফারিনা, ওকে তুমি ওর খাবার দেবে। ও খেতে না চাইলে আধা ঘন্টা খেলতে দেবে এরপর একই খাবার আবার একটু গরম করে দেবে। বুঝতে পারলে? পৃথিবীর কোনো জীব ক্ষুধা পেটে সামনে খাবার রেখে উপোষ থাকে না। একসময় ও খাবেই। ওকে এটা বুঝতে হবে, সারাজীবন ওকেই খাবারের পেছনে ছুটতে হবে, খাবার ওর পেছনে ছুটবে না।যত তাড়াতাড়ি তুমি ওকে এটা বুঝতে দাও, ততই মঙ্গল !
আমি মাথা নাড়লাম। আমার দ্বিধাগ্রস্থ চেহারা দেখে মহিলা হেসে বলে উঠলো,
– এটলিস্ট হি ইস গ্রোইং হাইওয়াইজ হুইচ ইউ কান্ট্ মেইক হ্যাপেন বাই ফোর্স! এন্ড এবাউট ওয়েট? ডোন্ট ওরি, প্রবাব্লি ওয়ান ডে হি উইল অলসো গো টু জিম টু গেট রীড অফ এক্সট্রা কিলোস!
আপডেট : আজ অবধি, আড়াই বছর বয়সী ছেলে আমার স্কিনি একটিভ বয়। জামা কাপড় যথারীতি ঢিলে ঢালাই ! তবে আমি রাতে ওই বোতল ভরা দুধ বন্ধ করে দিয়ে এবং খাবার নিয়ে ওকে জোরাজুরি বন্ধ করে যেই উপকারটা পেয়েছি তা হচ্ছে খাবারের প্রতি ওর আগ্রহ বেড়েছে। আমার কাছে এটাই বড় কথা। যেটুকু খায়, আনন্দ নিয়ে খায়। পছন্দের খাবার নিজে চেয়েও খায় মাঝে মাঝে। আমি এতেই খুশি। ওর খাবার পরিমান বাড়ানোর চেয়ে আমার নিজের খাবারের পরিমান কমানো নিয়েই বেশি দুশ্চিন্তায় আছি!
সতর্কতা : আমি চিকিৎসক নই, ডায়েটিশিয়ান নই, আমি যা লিখলাম তা একান্ত আমার অভিজ্ঞতা। কারো সাথে মিলবে এমন কথাও নেই। যে কোনো ব্যাপারে সন্দেহ থাকলে উপযুক্ত মানুষের পরামর্শ নেয়াই ভালো।
হ্যাপি মাদারহুড !

চলবে…
পর্ব-৭

Facebook Comments