All posts by Oporajita

 

বুড়ি আজ খুশী


দ্য স্লেভ


মবিন শেখ বড় বড় প্যাকেটে বড় বড় রুই,ইলিশ,ইলিশের ডিম,চিংড়ী মাছ,বিলের বড় বড় কৈ মাছ কিনে বাড়ির কাজের ছেলেটার কাধে চাপিয়েছে। নদীর রুইমাছটা আজ বেশ তাজা কিনতে পেরেছে। ভোরে আসলে আসলে সবকিছু ভালোমত পাওয়া যায়,তবে কৈ এর ব্যপারটা আলাদা। বিলের এত বড় বড় কৈ সহসা পাওয়া যায়না। প্রতি পিত কৈ ৫০০ টাকা পড়ল, তা পড়ুক,, সহসা এতবড় কৈ পাওয়া দুষ্কর। আজ দুপুরে বড় জামাই বন্ধুদের নিয়ে খেতে আসবে,,, বড় কৈ তার পছন্দ। ইলিশ মাছও পেয়েছে বড় বড় সাইজের। টাকা একটু বেশী গেছে কিন্তু সম্মানটা তার থাকবে। ৫ কেজী খাসীর গোস্ত কিনেছে। জামাইয়ের সামনে শুধু গরু রাখলে ইজ্জত থাকেনা।
নানান সব তরিতরকারী,মুরগী কিনে আরেক কাজের লোকের ঘাড়ে চাপানো। মবিন শেখ বাজার থেকে বেরোনোর পথে বুড়িকে দেখলো জীর্ণ-শীর্ণ দেহে মলিন পোষাকে,মলিন তরকারী নিয়ে বসে আছে। দেখেই শেখের মনে পড়ল,,আরে কাঁচা মরিচ আর পেঁয়াজ তো কেনা হয়নি !
মবিন শেইখ: ওই বুড়ি কি ব্যাচো ?
বুড়ি: এই যে বাবা,,,এইসব বেচী।
:হুমম এ তো ময়লা মাটি,,,বাজার থেকে কুড়াইছো নাকি ??
: না বাজান ,, জিনিস ভালো আছে..
: ভালো না মন্দ সে তো দেখতেই পাচ্ছি। তা পেঁয়াজের ভাগা কত ?
: নেন বাজান,, দশ টাকা করে দেন ভাগা….
: হ্যা !!! কও কি ?? ১০ টাকা ! আহারে বাজার থেকে কিনলেই ভালো করতাম,,,কত সুন্দর চকচকে পেঁয়াজ,,দামেও কম ছিলো,,,নাকি আবার বাজারে যাব !!
: বাজান নেন, কম রাখবানে,,,,আপনি ৮ টাকা করে দেন।
:আরে বুড়ি এই টুকানো পেয়াজ ২টাকাও হয়না,,৫ টাকা করে দেব,,,৩ ভাগা দাও….।
: না বাজান ঠকা হয়,,, আপনি ৭ টাকা করে দেন,,,,আপনারা দাম না দিলে খাব কি কন ? সকাল থেকে বসে আছি,,,কেউ কিনতে চায়না….
:কিনবে ক্যামনে ?? ময়লা মাটি মানুষ কিনে? আর ৫ টাকার জিনিস ১০ টাকা চাইলে জীবনেও বিক্রী করতে পারবা না,,,জুলুম করলে এমনই হয় ! ৫ টাকায় দাও,,,আমি বলে ৫টাকা বলছি,,অন্যরা আরও কম বলত।
: বাজান তাইলে ৪ ভাগা পেয়াজই নেন,,২০ টাকাই দেন।
:এই তো লাইনে আসছো ! তোমাদের আবার আমি চিনিনা,,,,মানুষ চিনতে চিনতে চুল পাকায় ফেলছি….। আচ্ছা মরিচ কত রাখবা ? অর্ধেক তো পচা….
: বাজান নিয়ে যান, ভালো জিনিস,,,। ৫ টাকা করেই রাখব।…
:বুড়ির বুদ্ধি আছে দেখছি,,,৫টাকায় পেয়াজ কিনেছি দেখে একই দাম বলল…..দ্যাখো আমার সময় নেই,,,আর মরিচ কেনার দরকারও নেই,,,কিন্তু তোমার উপকার হবে বলেই কিনছি। ভালো করে দাম কও…
: বাজান ৪ টাকা করে দেন,কিন্তু নিয়ে যান। আচ্ছা নিলাম,,,,অন্য মানুষ হলে নিত না।….টমেটোগুলো কততে দিবা ?
: বাজান আপনি ইজ্জতদার মানুষ ইনসাফ করে দিয়েন। আমার বাড়ির উঠোনে লাগানো টমেটো,,,,আমি দাম জানিনা…। বাজারে যেই দামে কিনেন তার চেয়ে কিছু কমে দেন। বাড়ির জিনিস তো কমে বেচা যাবে……ওষুধ দেওয়া নেই…।
:হুমম টমেটো তো কেনা দরকার না,,,তাও দেখী..আচ্ছা অারও ৫ টাকা দিচ্ছি,,দিয়ে দাও…।
:বাজান মাত্র ৫টাকা ?
: হ্যা,,তোমার বাড়ির জিনিস,,ওইটা কি আর বিকেল পর্যন্ত থাকবে,,,পচে যাবে,,দাও দাও দিয়ে দাও….
মবিন শেইখ বাজার করে আজ ব্যপক খুশী,,,,বড়ই জিতেছে আজ। অবশ্য বুড়ির কথা তার মাথায় নেই,,,,জামাই আর তার বন্ধুরা মাছ,গোস্ত দিয়ে কি মজায় ভাত খাবে সেই দৃশ্য কল্পনা করতে করতে সে বাড়ির পথ ধরল।
বুড়িও আজ খুশী। একজন কাস্টমারের কাছে সে অনেক কিছু বিক্রী করতে পেরেছে। তবে আরও কিছু তরকারী বিক্রী করতে বাকী আছে। সেগুলো বেচা হলেই সে পুরো দেড় কেজী চাল কিনতে পারবে লাভের টাকায়। পেছনের সারের ব্যাগে বাজার থেকে কুড়ানো কিছু পোকা লাগা বেগুন রাখা আছে। কুড়ানো তরকারীতে তাদের পেট চলে। মাঝে মাঝে দু একটা ভালো বেগুনও পায় সে। বাজারে তরকারী কুড়াতে গেলে কিছু লোক ভালো আচরন করে। ওদের কেউ কেউ অল্প পোকা লাগা তরকারীও দিয়ে দেয়। ওসব ঘুমে মুটে খেয়ে ওরা বেঁচে থাকে !
আহা,,,পেটের ভেতরটা চিনচিন করে ওঠে বুড়ির,,, সেই কাকডাকা ভোরে দুটো পান্তা খেয়ে নিস্তেজ দূর্বল শরীর নিয়ে বেরিয়েছে। এরপর আর একটা দানাও পেটে পড়েনি। খালি পেটে পানি খেলে পেটে খিল লেগে ধরে। সন্ধ্যার আগেই বাড়ি পৌছাতে হবে, নইলে বুড়োর পেটেও ভাত যাবে না। ঝাপসা দৃষ্টি নিয়ে সন্ধ্যার পর পথ চলতে কষ্ট হয়। তবে বুড়ি আজ আশাবাদী,,, তরকারী বিক্রীর টাকায় সে আরেকটু বেশী চাল কিনে বাড়ি যাবে। বুড়োটা আলুভর্তা আর জাও-ভাত পছন্দ করে। আজ রাতে ওরা ভরপেট খাবে , ভাবতেই আনন্দাশ্রুতে বুড়ির চোখ ঝাপসা হয়ে আসে !

 

মাদ্রিদে কাটানো মায়াবী মুহূর্তগুলো …


হালিমা সাদিয়া খাতুন


জীবনের বালুচড়ে চলার পথে সয্তনে কুঁড়িয়ে নেয়া নুড়ি গুলোর সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে বন্ধুত্বের মায়াবী নীড়। যে নীড়ের প্রতিটি নূড়ি অমূল্য এবং অনন্য যার ভাঁজে ভাঁজে জড়িয়ে আছে, লুকিয়ে আছে বন্ধুত্বের মূল্যবান প্রাপ্তি। যে প্রাপ্তির উপলব্ধি মনে ভালোলাগার দোলা দিয়ে যায়, রেখে যায় গুচ্ছ গুচ্ছ ভালোবাসার সুখের শিশির বিন্দু ..
জানুয়ারীতে আমাদের ভ্যাকেশন উপলক্ষে উড়াল দিয়েছিলাম আফরোজা হাসান পরিবার ডোরে । সেখানে কাটানো সময়গুলো বন্ধুত্বের নীড় কে করেছে সমৃদ্ধ , দিয়েছে চির অমলীন মূল্যবান কিছু মুহূর্ত যা কখনো ভুলবার নয়!
আমাদের এখান থেকে মাদ্রিদ যেতে লেগেছিলো মাত্র দু ঘন্টা। এয়ারপোর্ট থেকে আফরোজার বাসাও খুব কাছে, পূর্ব পরিচিত ভাতিজার সাথে মাদ্রিদ শহরের গল্প শুনে এবং দৃশ্য উপভোগ করতে করতে অল্প সময়েই পৌঁছে গিয়েছিলাম ওদের বাসায় ।
দীর্ঘ বিরতির পর দেখা, কাছে পাওয়া আর মধুর আলিংগনটুকু মুছে দিয়েছিলো সমস্ত ক্লান্তি। গল্প, হাসি কথা মালায় দু পরিবারের পুনর্মিলন মুহূর্তেই জমিয়ে তুলেছিলো গুন গুন কথা -স্মৃতি চারণ সন্মেলন!

ঘুরাঘুরি ১- হেরোন সিটি
সন্ধা বেলায় বেড়িয়েছিলাম হেরোন সিটির উদ্দেশ্যে। মাদ্রিদ শহরটি পুরোটাই পাহাড়ের মাঝে, রাস্তায় বে্রোলেই চোখে পড়বে উঁচু নিচু রাস্তা, কখনো আঁকা বাঁকা মোড় তো আবার কখনো লম্বা টানেল । টানেলগুলো সব পাহাড় কেটে কেটে তৈরি করা হয়েছে। রাত হয়ে গিয়েছিলো, রাস্তার দুপাশের ল্যাম্পপোস্টের আলোর সাথে সাঁ সাঁ করে ছুটে চলা সাথে ছিলো ননস্টপ মধুঝরা গল্প!

ঘুরাঘুরি ২- আতোচা স্টেশন
রাজধানী মাদ্রিদের চমৎকার স্থান গুলোর একটা হলো এই আতোচা স্টেশন । এই স্টেশনটির নির্মান কাজ ১৮৮৯ সালে প্রথম শুরু হলেও পরবর্তীতে ১৯৮০ সালে আর্কিটেক্ট রাফায়েল মোনেও এর অধীনে স্টেশনটির ডিজাইনে মডিফিকেশন করা হয় । দূর দূরান্তের ক্লান্ত পথিকরা যখন স্টেশনটিতে আসবেন, স্টেশনটির সৌন্দর্য দেখে এক পলকেই মুগ্ধ হবেন । ঘন সবুজ সুউচ্চ প্লাম ট্রি, নানান রকমের পাতাবাহার, বিভিন্ন ধরণের লাগানো গাছগুলোর সজীবতা তো আছেই সাথে কবুতর, ঝাঁকে ঝাঁকে ছোট মাছ আর কচ্ছপ বাহিনীর লম্ফ ঝম্ফ উপভোগ করার মতোন।
শুধু সুন্দরের দিক থেকেই নয় বরং ইউরোপের প্রথম দশটি সেরা স্টেশন এর মধ্যে স্পেনের মাদ্রিদের এই আতোচা স্টেশন সেরা তিন নাম্বারের গৌরব অর্জন করে আছে সুদীর্ঘ সময় কাল থেকে!

ঘুরাঘুরি ৩- স্টেডিয়াম রিয়েল মাদ্রিদ
বিখ্যাত স্টেডিয়াম রিয়েল মাদ্রিদের নাম শুনেন নি এমন মানুষ কম। নাম আমিও অনেক শুনেছি, সুযোগ যখন পেলাম তাই এবার স্টেডিয়াম এর সামনে দিয়ে ঘুরে কিছু ছবি তুলে চলে আসলাম। স্টেডিয়ামটির মূল নাম হলো Santiago Bernabéu Stadium।

ঘুরাঘুরি ৪- জোয়ান কার্লোস পার্ক স্পেনিশ উচ্চারণে খোয়ান 🙂
মাদ্রিদ এর উত্তর পূর্বকোনে অবস্থিত জোয়ান কার্লোস পার্ক টি প্রায় ১৬০ হেক্টর জায়গা নিয়ে গঠিত, এই পার্কটি মাদ্রিদের সবচাইতে বড় পার্ক গুলোর একটি। শিশু থেকে বয়স্ক সবার জন্য রয়েছে নির্মল বিনোদনের ব্যবস্থা। এতে রয়েছে দশ হাজার ভিন্ন প্রজাতির গাছ এবং নব্বই হাজার প্রজাতির ফুলের সমাবেশ । বিকেল থাকতেই রওয়ানা হয়েছিলাম আমরা , ঘুরে ফিরে ক্লান্ত হয়ে যখন সবাই বাসায় ফিরছিলাম তাকিয়ে দেখলাম মাদ্রিদ গগনে বিশাল পূর্নিমার চাঁদ মিটি মিটি হেসে আলো ছড়াচ্ছে….

ঘুরোঘুরি ৫- বৃষ্টি ভেজা সন্ধায় চুররোস উইথ কাপুচিনো
আমি, আফ্রু আর সারামণি মিলে বাসার নিচের চুররোস শপে-

ঘুরাঘুরি ৬- হালাল বার্গার এর সন্ধানে
এদিন আমরা দুই পরিবারের সব সদস্যরা মিলে রাটের খাবার খেতে এসেছিলাম আমাদের ভাতিজার হালাল বার্গার শপে।

ঘুরাঘুরি ৭- মাদ্রিদ সেন্টার কাইয়ো
এদিন অবশ্য আমরা শুধু পতি -পত্নী মিলে বের হয়েছিলাম। যেতে হয়েছিলো মেট্রো দিয়ে। ভয় পেতে পেতে অবশেষে ঠিক ভাবে এসে পৌঁছেছিলাম সেন্টারে । আনন্দরা মুঠো মুঠো সুখ ছড়িয়েছিলো সর্বক্ষণ …
ঘুরে ফিরে দুজনে পথ হারিয়েছিলাম তবু টেনশন লাগে নি একটুও! পাশে উনি আছেন এটা ছিলো পরম নির্ভরতার কারণ! তারপর আবার পথ খুঁজে পেয়ে মেট্রো ধরে বাসায় ফিরে এসেছিলাম, স্মৃতিরা কল্পনার বুননে এঁকে নিয়েছিলো নতুন স্বপ্ন কাঁথা!

 

ইরানি বংশোদ্ভুত নারী সাংবাদিককে গ্রেফতারের কথা নিশ্চিত করলো যুক্তরাষ্ট্র


নারী সংবাদ


যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত শুক্রবার ইরানি টেলিভিশনের এক নারী সাংবাদিককে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। একটি মামলায় সাক্ষ্য প্রদানের জন্য তাকে আটক করা হয়েছে। তবে তিনি ওই অপরাধের সঙ্গে জড়িত নন।
খবর বার্তা এএফপি’র।
ইরানি বংশোদ্ভুত ওই সাংবাদিক যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেন। তার নাম মার্জিয়া হাশেমি। তিনি ইরানের ইংলিশভাষী চ্যানেল প্রেস টিভির উপস্থাপিকা।
তার এই গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে দুদেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা চলছে।
ওয়াশিংটনে এক শুনানীতে ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট ফর দ্য ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ার প্রধান বিচারক বেরিল হোয়েল রায়ে বলেন, হাসেমিকে ওয়াশিংটনের একটি মামলার হুলিয়ায় গ্রেফতার করা হয়েছে।
রায়ে তার আগের নাম মেলানি ফ্রাঙ্কলিন উল্লেখ করা হয়।
‘যুক্তরাষ্ট্রের ফৌজদারী আইন লংঘনের’ একটি মামলায় গ্র্যান্ড জুরির সামনে সাক্ষ্য দেয়া শেষে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে।
রায়ে আরো বলা হয়, ‘ফ্রাঙ্কলিনের পক্ষে একজন এটর্নী নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবং তাকে কোন অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়নি।’
হাশেমি একজন ইরানিকে বিয়ে করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
তিনি মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন নীতি এবং মুসলিম ও আফ্রিকান আমেরিকানদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আচরণের সমালোচনা করে প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেছেন।
প্রেস টিভি জানিয়েছে, তাকে রোববার সেন্ট লুইস বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি সেখানে এক অসুস্থ আত্মীয়কে দেখতে যাচ্ছিলেন।
এদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাভেদ জারিফ বুধবার বলেন, ‘মার্জিয়া হাশেমির গ্রেফতার একটি অগ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক আচরণ এবং মার্কিন কর্তৃপক্ষের মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে পদদলিত করার প্রমাণ।’
সুত্র: বাসস ডেস্ক।

 

মদ, গাঁজায় মেতে আছে সেই সৌদি তরুণী


নারী সংবাদ


পরিবারের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ এনে বিশ্বে হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন সৌদি আরবের মেয়ে রাহাফ মোহাম্মেদ আল-কুনুন (১৮)। পরিবার থেকে পালিয়ে থাইল্যান্ডে গিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত বহির্বিশ্বের হস্তক্ষেপে কানাডায় আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। কানডায় গিয়েই রাহাফ তার ‘নতুন জীবনযাত্রার’ কিছু ছবি শেয়ার করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তাতে দেখা গেছে মদ, শুকরের মাংস আর গাঁজা হয়ে উঠেছে তার জীবনসঙ্গী।

তাকে দেখা গেছে পশ্চিমা ধাঁচের পোশাক পরিহীত। গায়ে হাঁটু পর্যন্ত উলের পোশাক দেখা গেছে । গত মঙ্গলবার স্ন্যাপচ্যাটে কিছু ছবি শেয়ার করেছেন রাহাফ। এতে তিনি জীবনে প্রথম কানাডিয়ান স্টাইলে বেকন খাচ্ছেন (শূকরের হিমায়িত মাংস) বলে জানিয়েছেন।

এই ছবির সঙ্গেই তিনি মদ এবং সিগারেটের টুকরার ছবি দিয়ে সেগুলো দারুণ উপভোগ করছেন বলে জানিয়েছেন। কানাডায় সাধারণ এভাবে গাঁজা ভরে সিগারেট খাওয়া হয়। সম্প্রতি দেশটি গাঁজাকে বৈধতা দিয়েছে। বিভিন্ন প্রদেশের নিজস্ব রীতি মেনে ১৮/১৯ বছর বয়সী থেকে সবাই গাঁজা সেবন করতে পারেন।

সিগারেট খাওয়ার ও মদের ছবি শেয়ার করেছেন রাহাফ। একটি ছবিতে ক্যাপশন দিয়েছেন, মাইনাস ৮ ডিগ্রি তাপমাত্রায় বসে ‘বাষ্প’ উড়াচ্ছি।

পরিবারের বিরুদ্ধে নানান নির্যাতন আর নিপীড়নের অভিযোগ তুলে শেষ পর্যন্ত কানাডায় আশ্রয় পেয়েছে মেয়েটি। ইতোমধ্যে তার নতুন জীবনের এক সপ্তাহ পার হয়েছে। আর এই এক সপ্তাহ জীবনযাপনের চিত্রই পাওয়া গেছে তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা ছবি ও অভিজ্ঞতায়। সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

সন্তান লালন পালনের চারটি স্টাইল


প্যারেন্টিং


‘প্যারেন্টিং’ বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্যারেন্টিং এর ক্ষেত্রে মা-বাবা সন্তানের সাথে কত বেশি সময় পার করছেন তার চেয়ে কিভাবে সময় কাটাচ্ছেন সেটা অনেক দরকারি। মা-বাবা তাদের সন্তানের লালন-পালনের সময় প্রয়োগ করেন অজান্তে নানান প্যাটার্ন বা স্টাইল। আজকে আমরা প্রধান চারটি স্টাইল নিয়ে জানবো।

প্যারেন্টিং স্টাইল

মা-বাবা’র প্যারেন্টিং স্টাইল সন্তানের ব্যক্তিত্ব গঠনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে। প্যারেন্টিং স্টাইল এর সাথে পড়াশুনা, ব্যক্তিক, সম্পর্ক, সামাজিকতা বিকাশের অনেক ভূমিকা তা জানার চেষ্টা করব আমরা। চলুন আগে আমরা প্যারেন্টিং স্টাইলের ধরণ গুলো সম্পর্কে একটু জেনে নেইঃ

ডিয়ানা বাউমিন্ড দেওয়া চারটি প্যারেন্টিং স্টাইল নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করেন।

স্বৈরাচারী স্টাইল

মা-বাবার কাছে সন্তানদের মতামতের গুরুত্ব কম। সন্তানের কাছে বড় কিছু আশা করলেও তাদের প্রতি কম সহানুভূতি প্রকাশ করেন। তারা সন্তানের কাছ থেকে বিনা শর্তে আনুগত্য পেতে পছন্দ করেন। ছেলে-মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি প্রদান করেন। তাদের কিছু শক্ত নিয়ম কানুন থাকে এবং তাদের মতের সাথে দ্বিমত হওয়া তারা মোটেও পছন্দ করেন না।

গণতান্ত্রিক স্টাইল
প্যারেন্টিং স্টাইল যা যুক্তিপূর্ণ, পরিমিত নিয়ম ও নির্দেশনা ঠিক করে দেয়। যেখানে সন্তানের চিন্তা-ভাবনা, আচরণকে গুরুত্ব সহকারে বোঝার চেষ্টা করা হয়। এখানে সন্তানের জন্য নিয়ম-কানুনগুলো পরিষ্কার করে দেখানো হয়। সর্বোত্তম, স্টাইল এসময় মা-বাবা সন্তানেরা গ্রহণযোগ্যভাবে আচরণ করতে শেখে।
মা-বাবা সন্তানের কাছে বিভিন্ন প্রত্যাশা করেন আবার সন্তানের প্রতিও সহানুভূতিশীল। সন্তানের দায়িত্ব কি হবে, কিভাবে সমাজে চলাফেরা করবে তা তাদেরকে জানিয়ে দেন এ পরিষ্কার ভাবে সব মা-বাবা।

প্রশ্রয়কারী স্টাইল:
মা-বাবাকে প্রশ্রয়দানকারী মা-বাবা বলা হয়। তারা সন্তানের প্রতি অতি সহানুভূতিশীল হন এবং তার কাছে চাওয়া পাওয়া কম থাকে। এসব মা-বাবা নরম প্রকৃতির অর্থাৎ গতানুগতিক মা-বাবা থেকে আলাদা, এরা সন্তানের উপর কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করেন না। তারা সন্তানকে যে নির্দেশনা দেন সেগুলো প্রায় অসামজ্ঞস্যপূর্ণ হয়ে থাকে।

উদাসীন স্টাইল:
মা-বাবা সন্তানের প্রতি কম সহানুভূতিশীল এবং তাদের উপর প্রত্যাশাও কম তাকে। সন্তানের উপর কোন আবেগীয় বন্ধন থাকে না বরং ছেলে-মেয়ে অবজ্ঞা, অবহেলার মধ্যে মানুষ হতে থাকে। সন্তানকে শুধু খাদ্য,বস্ত্র, আশ্রয় দেওয়াই তাদের দায়িত্ব বলে মনে করেন বলে তাদের উপর আগ্রহও কম থাকে। এসব মা-বাবার সন্তান প্রায়ই শারীরিক ও মানসিক নিগ্রহের শিকার হয়।

আপনি আপনার সন্তানের সাথে একটা বিকেল কাটিয়েছেন কিন্তু আপনি নিজের কাজ করলেও সন্তানের দিকে খেয়াল করছেন না।

প্রতিদিন গড়ে সন্তানের সাথে ৩০ মিনিট সময় কাটানো দরকার মা-বাবার। আর ঐ সময়টা শুধুমাত্র সন্তানের জন্য বরাদ্দ থাকা উচিত। বাবা আলাদাভাবে ৩০মিনিট এবং মা আলাদা ভাবে ৩০ মিনিট কাটাবেন।

 

রাস্তা পার হতে গিয়ে কলেজছাত্রীর মৃত্যু


নারী সংবাদ


গতকাল বুধবার মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় সরকারি সিটি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক বাণিজ্য বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সোমা বড়ুয়ার (১৮) মৃত্যবরণ করেন। সকালে কলেজে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয় শিক্ষার্থী সোমা। বাসযোগে কোতোয়ালির মোড়ে নেমে পার হচ্ছিল রাস্তা।

সকাল ১০টার দিকে নগরের কোতোয়ালি থানার মোড়ে কাভার্ড ভ্যানচাপায় সে প্রাণ হারায়। সোমা চান্দগাঁও থানাধীন বাহির সিগন্যাল এলাকার বড়ুয়াপাড়ার রূপায়ণ বড়ুয়ার মেয়ে। পরিবারে তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট সে। তাদের গ্রামের বাড়ি বোয়ালখালী উপজেলায়।

মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সোমার স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে আশপাশের পরিবেশ।

এ ঘটনায় পুলিশ কাভার্ড ভ্যানটি ও ঘাতক চালক জসিম উদ্দীনকে আটক করেছে। কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক সজল দাশ সমকালকে বলেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) কার্যালয়ের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

এদিকে সোমার সহপাঠীরা বন্ধুকে হারিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। নগরে দিনের বেলায় ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান চলাচল বন্ধে আইন কার্যকর করতে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে স্মারকলিপি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। প্রশাসনের কাছে আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাচ্ছি। সুত্র ও ছবি :ইন্টারনেট।

 

আকিজের তিন চাকাওয়ালা ই-বাইক ‘সাথী’, কম দামে অনেক সুবিধা..


অন্যান্য


সাইকেল চালাতে শারীরিক শক্তি আর মোটরসাইকেলে চালাতে জ্বালানি প্রয়োজন। মাঝামাঝি কোনও বাহন নিয়ে নিজের মতো আরাম করে বসে সহজে গন্তব্যে পৌঁছে যেতে চান, আর পয়সাও বাঁচাতে ইচ্ছুক হন, তাহলে ইলেকট্রিক বাইক হবে সহজ সমাধান।
ব্যাটারিচালিত তিন চাকার এমন বাইক নিয়ে এসেছে আকিজ মোটরস। ‘সাথী’ নামের এই বাইকটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, সাইকেল বা মোটর বাইক চালানো না শিখেও খুব সহজে এটি চালানো যাবে। তিন চাকার এই বাইকটিতে ভারসাম্য রক্ষা করার কোনও ঝামেলা নেই।

আকিজ মটরসের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মুহাম্মাদ আবুল হাশেম বলেন, “যানজটের এই শহরে বাসে ভ্রমণ এক দুঃসহ যন্ত্রণা। কিন্তু ‘সাথী’ থাকলে অফিসে যাওয়া-আসাসহ বাচ্চাকে স্কুলে দিয়ে আসা কর্মজীবীদের জন্য এখন আর কষ্টের নয়। নেই কোনও বাইক রেজিস্ট্রেশনের ঝামেলা। জীবন হবে অনেক সহজ।” তিনি আরোও জানান, ‘সাথী’তে ৬০০ ওয়াটের ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে একবার পূর্ণচার্জে ই-বাইকটি শহরে ৫০-৫৫ কিলোমিটার এবং হাইওয়েতে ৬০-৬৫ কিলোমিটার যেতে পারে। ঘণ্টায় ৩৫ থেকে ৪৫ কিলোমিটার বেগে চলতে পারে ই-বাইকটি।

নিরাপত্তার জন্য ‘সাথী’র তিন চাকাতেই রয়েছে হাইড্রোলিক ডিস্ক ব্রেক। ৩০০-১০ সাইজের চাকা এবং যথেষ্ট গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স থাকাতে উঁচু-নিচু বা গতিরোধকগুলোও ‘সাথী’ সহজে টপকে যাবে। আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য ই-বাইকটির পিছনের দুই চাকাতেই শক অ্যাবসর্ভার রয়েছে।
শব্দ ও জ্বালানিবিহীন এসব ই-বাইকে শক্তিশালী ও উন্নতমানের জেল ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে। ‘সাথী’তে সিটের মাঝখানে জিনিসপত্র রাখার সুপরিসর জায়গা রয়েছে। এছাড়া সিটের নিচের অংশে অনায়াসে নিজের হেলমেট থেকে শুরু করে আনুসঙ্গিক জিনিসপত্র লক করে রাখার ব্যবস্থা রয়েছে।সিটের হেলান দেয়ার পেছনের অংশেও রয়েছে খাঁচাসদৃশ স্টোরেজ। মোটকথা, নিজের প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র অনায়াসে এই ই-বাইকে নিয়ে চলে যেতে পারবেন এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়।ই-বাইকটিতে থ্রটলের নিচে সুইচে রয়েছে গিয়ার। তিন পুশ গিয়ার সমৃদ্ধ এই ই-বাইকটিতে সহজে গিয়ার চেঞ্জ করে যেকোনো প্রতিকুল রাস্তাও অনায়াসে পাড়ি দেয়া যাবে। গিয়ার সুইচের পরেই রয়েছে ব্যাক গিয়ার। সুইচটি চেপে বাইক থেকে না নেমে মোটরের সাহায্যে সহজে ই-বাইকটিকে পেছনে নেয়া যাবে। এই বাইকে পায়ের কোন কাজ নেই। দুই হাতে ব্রেক রয়েছে। কোথাও পার্ক করে রাখার জন্য রয়েছে ব্রেক লকার।

‘সাথী’র ডান হাতে রয়েছে থ্রটল। থ্রটল যত ঘোরানো হবে ততই গতি বাড়বে। থ্রটল ছেড়ে দিলে ধীরে ধীরে বাইকের গতি কমে আসবে। চুরির হাত থেকে ই-বাইকটিকে রক্ষা করতে বাইকটিতে কি লকের পাশাপাশি রিমোট লক ব্যবহার করা হয়েছে। তাই সিটে বসার সময় হাতল ঘুরিয়ে সহজেই বসা যায়। পেছনের যাত্রীর পা রাখার জন্য বাইকটিতে অতিরিক্ত ফুট রেস্ট বা পাদানি সংযোজন করা হয়েছে।ই-বাইকটি সম্পর্কে আকিজ মটরস এর ইলেকট্রিক মটর সাইকেল সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মাদ ফারুক বলেন, ‘পরিবেশ বান্ধব এই ই-বাইকটি ২৫০ কেজি পর্যন্ত ধারণ করতে পারে। সম্পূর্ণ মেইন্টেনেন্স মুক্ত ড্রাইসেলের ব্যাটারি ব্যবহার করাতে ই-বাইকটি আলাদা কোন যত্ন নেবার বিষয় নেই।’
‘কিনুন এবং চালান’ এই থিউরিতেই মূলত আকিজের ই-বাইক বাজরে ছাড়া হয়েছে।

আকিজের এই ই-বাইকটির দাম জানতে এবং এটি কিনতে ভিজিট করুন- https://akijmotors.com
এই ঠিকানায়। ভিজিট করতে পারেন ফেসবুকও: https://www.facebook.com/AkijMotors
হটলাইন নম্বরেও যোগাযোগ করতে পারেন। মোবাইল ফোন নম্বর: 01770794917
রাজধানীর তেজগাঁও এর আকিজ মোটরস এর প্রদর্শনী কেন্দ্রসহ সারাদেশে ই-বাইকটি পাওয়া যাচ্ছে। সুত্র: ইন্টারনেট।

 

শিশুদের ওপর মোবাইল ফোনের প্রভাব


নারী সংবাদ


পুরনো ঢাকার অধিবাসী নজরুল ইসলামের পাঁচ বছরের শিশু কন্যা জারা এখন অনেক পাওয়ারী চশমা পরে। চশমা ছাড়া পড়তে সমস্যা হয়, টিভি দেখতে ও সমস্যা হয়।
একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ সারাক্ষণ জারাকে চশমা পড়ার উপদেশ দিয়ে সতর্ক করেছেন নিয়মিত চশমা ব্যবহার না করলে তার চোখের অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে।
জারার মা ঝর্না বেগম অশ্রুসিক্ত নয়নে বলেন, দুই-আড়াই বছর বয়স থেকেই জারা মোবাইল ফোনে গেম খেলে। গত কয়েকদিন আগে সে আমাকে জানায় যে,সে ঠিকমত টিভি দেখতে পারে না, অস্পষ্ট দেখে। সেই সময় ওর চোখের নীচে কাল দাগও আমরা লক্ষ্য করি।
চোখের ডাক্তারকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, মোবাইলের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের কারনেই ওর চোখের এই অবস্থা হয়েছে।
সম্প্রতি ভারতের চার্টার বিশ্ববিদ্যালয় তাদের একটি গবেষণায় দেখিয়েছে, স্মাট ফোনের অধিক ব্যবহার চোখের রেটিনা,কর্নিয়া এবং অন্যান্য অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
১৬ বছর বয়সী মেহেদি প্রাঞ্জলের বাবা আব্দুল বারাক বলেন,”সম্প্রতি আমি লক্ষ্য করলাম যে আমার ছেলে আমার মানি ব্যাগ থেকে টাকা চুরি করা শুরু করেছে। কারণ এবার এসএসসি ফেল করার কারণে আমি ওকে হাত খরচ দেয়া বন্ধ করে দিয়েছি।”
“সব আমার দোষ, আমি কেন যে ওকে ফোন কিনে দিলাম,” হাহাকার করে ওঠেন বারাক।
তিনি জানান মেহেদি যখন অস্টম শ্রেণিতে পড়ে তখন তিনি ওকে ফোন কিনে দেন।
বারাক জানান, মেহেদি সারাক্ষণ ফোন নিয়ে থাকতেই পছন্দ করে। কারো সাথে কথা পর্যন্ত বলেনা। ফোন কেড়ে নিলে প্রচন্ড হিংসাত্মক হয়ে ওঠে।
এতে কোন সন্দেহ নেই যে, ফোন আমাদের জন্য অনেক কিছু সহজ করে দিয়েছে। পাশাপাশি আমাদের জন্য বয়ে নিয়ে এসেছে বিবিধ সমস্যা। বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে ১৩ কোটি মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে কারণ বতর্মান সরকার দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
লিটেল জুয়েল স্কুলের শিক্ষিকা সাইদা ইয়াসমিন বাসস’কে জানান, মাঝে মাঝে কিছু বাচ্চা স্কুলে ফোন নিয়ে আসে। এমনকি শিক্ষকদের উপস্থিতিতে তারা ক্লাসে ফোন ব্যবহার করে।
“ক্লাসে তাদের মন বসেনা, বাড়ির কাজ করে না যার প্রভাব পড়ে তাদের পরীক্ষার রেজাল্টের ওপর”।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক উম্মে কাওসার বলেন “সবচেয়ে খারাপ দিক হল তারা পরিবারের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। তারা ফোনে মেসেজ, নোটিফিকেশন চেক করতেই ব্যস্ত থাকে। ফোন তাদের হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিলে তারা ক্ষেপে যায়।”
শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ এ এসএম মাহমুদুজ্জান বলেন, আজকের শিশুরা রেডিও ফ্রেকুয়েন্সি ঘেরা এক পরিবেশের মধ্যে বড় হচ্ছে, ফোন থেকে যে রেডিও ফ্রিকুয়েন্সি নির্গত হয় তা তাদের জন্য ভয়ংকর পরিণতি নিয়ে আসতে পারে।
যে সমস্ত শিশুরা ফোন ব্যবহার করে তারা অপেক্ষাকৃত অনিদ্রা এবং অস্থিরতায় ভুগে থাকে।
তবে তিনি কিছু পরামর্শ দিয়েছেন, যার মাধ্যমে শিশুদের উপর ফোনের কু প্রভাব কমে যাবে। সেগুলো হল, কথা বলার সময় এয়ারফোন ব্যবহার করা, বাচ্চাদেরকে স্কুলে ফোন নিয়ে যাওয়ার অনুমতি না দেয়া, শোয়ার ঘরে ফোন নিতে না দেয়া এবং বাচ্চাদের সাথে মোবাইলের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে
কাউন্সেলিং করা। সুত্র: রোকসানা ইয়াসমিন (বাসস)।

 

জোনাক নগরের আঙিনায়…৪


আফরোজা হাসান


চায়ের পানি বসাতে বসাতে আড় চোখে মাহার দিকে তাকালো নূরি। কান্না করে চোখ মুখ ফুলিয়ে লাল করে ফেলেছে মেয়েটা। ছয়মাস হয়েছে মাহার সাথে পরিচয় হয়েছে নূরির। তারপর থেকেই সপ্তাহে অন্তত একদিন কান্না করতে করতে অবশ্যই তার কাছে এসে হাজির হয় মাহা। বাচ্চাদেরকে স্কুল থেকে আনতে যাবার সময় হবার আগ পর্যন্ত চলতে থাকা কান্না আর জীবনকে ঘিরে থাকা দুঃখ-কষ্টের বর্ণনা। মাহার দিকে তাকিয়ে মায়ায় মনটা ভরে উঠলো নূরির। প্রায় তার সমবয়সীই অথচ চার ও তিন বছর বয়সী দুটি বাচ্চার মা হয়ে গিয়েছে। ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ার সময় বিয়ে হয়েছিল। নয় মাস পরেই হাজবেন্ডের কাছে প্রবাসে চলে এসেছে। বাবা-মায়ের খুব আদরের ছোট মেয়ে ছিল তাই সাংসারিক তেমন কোন জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে। প্রবাসে এসে নিজেই হিমশিম খাচ্ছিলো এমন অবস্থায় আবার নতুন প্রাণেদের আগমন জীবনে। নিজেকে ঠিকমতো গুছিয়ে নেয়ার সুযোগই পায়নি সেভাবে। সবকিছু মিলিয়ে কাজেকর্মে যেমন খুব একটা চটপটে না, স্বভাবেও তেমন গোছানো না মাহা। স্বামীর সাথে ওর খিটপিট লেগে থাকাটা তাই অস্বাভাবিক লাগে না নূরির কাছে। চা বানিয়ে মাহার কাছে বসে নূরি বলল, মাত্র না চোখ-মুখ ধুয়ে এলে তুমি, আবার কেন কান্না করছো? চোখ মোছ তো এখন। চা নাও দেখবে মাথা ধরা ছেড়ে দেবে।
তুমি তো জানো না নূরি কি হয়েছে গতরাতে।
মাহা তোমাকে একটা কথা বলি প্লিজ কষ্ট পেয়ো না। এই যে তুমি তোমার স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি, দেবরদের অন্যায়ের কথা আমাকে বলো এটা কিন্তু ঠিক না। কেননা এটাও গীবতের পর্যায়ে পরে।
গীবতের পর্যায়ে পরবে ক্যান? আমি তো আমার কষ্টের কথা তোমাকে বলি।
দেখো মাহা কষ্টের কথা বলা এক জিনিস আর অন্যের দোষ বর্ণনা করা আরেক জিনিস। তুমি অবশ্যই তোমার কষ্টের কথা আমাকে বলতে পারো কিন্তু সেটা হবে হবে অন্যের সমালোচনা করা ছাড়া।
কিন্তু আমি তো তোমার কাছে পরামর্শের জন্য বলি।
তুমি ভেবে দেখো তো ঠিক কি কি বলো আমাকে? তোমার সাথে কে কি করেছে অতীতে সেসব বলো নয়তো তোমার স্বামী কি বলেছে সেসব বলো। কিন্তু একতরফা কিছু শুনে কি পরামর্শ দেয়া সম্ভব? তুমি সবার ভুল আর দোষ বলো কিন্তু তোমার ভুল ও দোষ গুলো তো আড়ালেই থেকে যায় তাই না? আর নিজের কথা বললেও তোমার কাজের স্বপক্ষে যুক্তি দিয়ে বলো। যার ফলে তোমাকে সঠিক আর বাকি সবাইকে বেঠিক লাগাটাই স্বাভাবিক।
মাহা বেশ দৃঢ় কন্ঠে বলল, আমি কখনোই আমার দোষ গোপন করি না। আর মিথ্যাও কথা বলি না আমি আলহামদুলিল্লাহ।
নূরি হেসে বলল, তুমি মিথ্যা বলো বা গোপন করো এমন কথা কিন্তু আমি বলিনি। দেখো আমাদের স্বভাব হচ্ছে নিজেকে বা নিজের কাজকে পজেটিভ ভাবে দেখা। আর এখানে স্বভাবেরও কোন দোষ নেই। সমস্যা হচ্ছে আমাদের চোখ। কারণ আমাদের চোখ নিজেকে ছাড়া আর সবাইকে দেখে। যার ফলে সবার ভুল-অন্যায় গুলো দেখলেও নিজেরটা অদেখাই থেকে যায় তার কাছে। যারফলে আমাদের কাছেও অজানা থাকে যে কিছু ভুল আমারো আছে।
তারমানে তুমি বলতে চাইছো আমার স্বামী ঝগড়া করে এতে আমারো দোষ আছে?
নূরি হাসি মুখে বলল, কিছু না কিছু দোষ তো নিশ্চয়ই আছে। কি মুখ ভার হলো কেন? আচ্ছা বাদ দাও এসব কথা। তুমি চিন্তা-ভাবনা করে আমাকে একটা প্রশ্নের জবাব দাও। তুমি কি সত্যিই সুখী হতে চাও জীবনে?
এটা আবার কেমন প্রশ্ন? কে না সুখী হতে চায় জীবনে?
কে না চায় সেটা জানতে চাইনি তোমার কাছে। তুমি চাও কিনা সেটা বলো।
অবশ্যই চাই।
তাহলে খুঁজে বের করে তোমার জীবনে সুখী হবার পথে প্রতিবন্ধকতা গুলো কি কি? তোমরা সুখী হতে পারছো না এতে তোমার ঘাটতি কতটুকু আর তোমার স্বামীর কতটুকু? দাম্পত্য কলহ কেন বাঁধছে তোমাদের? স্বামীর কোন জিনিস গুলোকে তোমার গুণ আর কোন জিনিসগুলোকে দোষ মনেহয়? কতটুকু ভালোবাসো স্বামীকে? তার কষ্ট কি তোমাকে এতটা ব্যথিত করে যে না চাইতেও চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়ে?
কিছুক্ষণ চুপ থেকে মাহা বলল, এসব প্রশ্নের উত্তর আমি কিভাবে জানবো?
প্রতিটা সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমরা যদি ব্যক্তিকে তার ভালো ও মন্দ দুটি দিক থেকে আলাদা করে দেখতে চেষ্টা করি। তাহলে সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়ন অনেক কমে যায় জানো। আমার জন্য কি করেনি চিন্তা না করে যদি ভেবে দেখি কি কি করেছে, তাহলে মনের অপ্রাপ্তির ঘরে প্রাপ্তির দেখা পাওয়া অনেক সহজ হয়ে যায়। আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে বা কষ্ট দিয়েছে এটা ভাবার সাথে সাথে যদি নিজের ভুলটাও অনুসন্ধান করে দেখতে দেখি তাহলে জীবনের অনেক জটিলতা এমনিতেই কমে যায়। তুমি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করার চেষ্টা করো। তারপর আমরা এই বিষয়ে কথা বলবো।
তোমার কি এসব প্রশ্নের উত্তর জানা আছে নূরি?

চলবে…..

পর্ব-৩

 

কলেজছাত্রী ধর্ষণ মামলায় একজনের যাবজ্জীবন


নারী সংবাদ


মানিকগঞ্জে কলেজ শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ মামলার আসামি সাইদুর রহমানকে যাবজ্জীবন সশ্রম করাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল সোমবার মানিকগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ আলী হোসাইন এ রায় দেন। তবে আসামি জামিন নিয়ে পলাতক আছে।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি একেএম নূরুল হুদা রুবেল জানান, শিবালয় উপজেলার বনদুর্গ এলাকায় ২০০৭ সালে ৯ মার্চ রাতে ওই কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ করে জগৎদিয়া গ্রামের মুদি দোকানদার সাইদুর। এ সময় কলেজছাত্রীর চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে সাইদুরকে ধরে ফেলে। ঘটনার দু’দিন পর ওই কলেজছাত্রী বাদী হয়ে শিবালয় থানায় ধর্ষণ মামলা করেন। ওই বছরের ৭ জুন তদন্ত কর্মকর্তা শিবালয় থানার এসআই রঞ্জিত কুমার দাস আদালতে আসামি সাইদুরের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আদালত ১১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯(১) ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় গতকাল রায় ঘোষণা করেন বিচারক।

 

রেসিপি- “ঝাল মাংস পুলি”


ঘরকন্যা


ঝাল মাংস পুলি

উপকরণ

  • ২ কাপ মাংস সেদ্ধ,
  • ১ কাপ আলু কুচি করে সেদ্ধ করা,
  • ২/১ চা চামচ কাবাব মসলা,
  • ২ টি পেঁয়াজ কুচি,
  • ৫/৬ টি মরিচ কুচি,
  • আধা চা চামচ আদা-রসুন বাটা,
  • লবন স্বাদমতো,
  • টেস্টিং সল্ট সামান্য,
  • তেল ভাজার জন্য,
  • ২ কাপ ময়দা,
  • ২ চিমটি কালোজিরা,
  • পানি পরিমাণমতো।

 

প্রণালি‏

  • পুর তৈরির জন্য একটি প্যানে সামান্য তেল দিয়ে গরম করে এতে আদা-রসুন বাটা দিয়ে দিন। ঘ্রাণ ছড়ালে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে নেরে নরম করে নিন। এরপর মরিচ কুচি ও বাকি মসলা দিয়ে ভালো করে কষে নিন।
  • মসলা কষে এলে সেদ্ধ মাংস একটি পিষে দিয়ে দিন যাতে আঁশ আলাদা হয়। ভালো করে নেড়ে নিয়ে সেদ্ধ আলু কুচি দিয়ে ভালো করে নেরে ভাজা ভাজা হয়ে এলে নামিয়ে নিন।
  •  ময়দা সামান্য তেল দিয়ে খাস্তা করে নিয়ে লবন ও কালি জিরা দিয়ে পরিমাণমতো পানি মিশিয়ে রুটি বেলার ডো তৈরি করে নিন। এরপর পাতলা ছোট রুটি তৈরি করে মাঝে পুর দিয়ে দুভাজ করে অর্ধচন্দ্রের মতো তৈরি করে দুপাশ আটকে দিন।
  •  কড়াইয়ে ডুবো তেলে ভাজার মতো তেল গরম করে লালচে করে ভেজে তুলুন। কিচেন টিস্যুর উপরে তুলে রেখে বাড়তি তেল শুষে নিন। ব্যস, এবার পরিবেশন করুন গরম গরম।

রেসিপি : বাংলাদেশি রেসিপি।

 

সাভারে গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগে আটক – ২


নারী সংবাদ


সাভারের কাউন্দিয়া এলাকায় এক গৃহবধুকে গণধর্ষণের অভিযোগে দুই জনকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা হলো আল আমিন ওরফে জয় (২২) ও রায়হান (২৫)। রোববার ধর্ষণের শিকার ওই গৃহবধুকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) তে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাভারের কাউন্দিয়া এলাকায় ওই গৃহবধুর স্বামী একটি মোবাইল ফোন ক্রয় করার সূত্র ধরে রায়হানের সাথে টাকা লেনদেন নিয়ে ঝগড়া হয়। পরে গত শুক্রবার রায়হান নামের ওই যুবক গৃহবধূর স্বামীর নিকট টাকা চাইলে সে টাকা দিতে না পারায় রাস্তা থেকে গৃহবধুকে কৌশলে একটি নির্জন স্থানে যায় রায়হান। পরে ওই গৃহবধুকে কয়েকজন যুবক পালাক্রমে গণধর্ষণ করে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আল আমিন ওরফে জয় ও রায়হানকে আটক করে।

সাভার মডেল থানার (এসআই) প্রাণ কৃষ্ণ রায় বলেন, এ ব্যাপারে থানায় মামলা হয়েছে। আটককৃত দুই আসামীতে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

সুখস্মৃতি


রেহনুমা বিনত আনিস


কিছু গন্ধ, কিছু স্বাদ, কিছু স্পর্শ, কিছু মূহূর্ত আবছা অস্পষ্ট অশরীরি স্মৃতি হয়ে ঘুরে বেড়ায় ব্যাস্ত মনের আনাচে কানাচে। অবসরের মূহূর্তে হঠাৎ দুষ্ট শিশুর মত মনের দরজায় এক ঝলক উঁকি দিয়ে পালায়। কিন্তু মন তাকে কিছুতেই হারাতে চায়না, পিছু ধাওয়া করে। কখনো জীবনের ব্যাস্ততা তাকে ফিরিয়ে আনে বাস্তবতায়, কখনো স্মৃতির সাথে চলে লুকোচুরি খেলা, আর কখনো নাছোড়বান্দা মন স্মৃতির পিছু ধাওয়া করে পৌঁছে যায় সেই সোনালী বন্দরে যেখান থেকে জাহাজ ছাড়বেনা আর কোনদিন। কিন্তু সৈকতে বসে মিষ্টি রোদে একটু হাওয়ার পরশ, এক পশলা বৃষ্টি পটে আঁকা ছবির মত তাকে মুগ্ধ করে দিয়ে যায়, এটাই প্রাপ্তি।
এমনই এক স্মৃতির পিছু ধাওয়া করছিলাম গত সাত বছর। আমার স্মৃতির শেলফগুলোতে থরে থরে সাজানো জ্ঞানীদের জ্ঞানের পসরা। নিজের নেই বলে অন্যের জ্ঞানের আলোয় নিজেকে উদ্ভাসিত করতে লজ্জা করিনি কখনো।

বইগুলোর একেকটার একেক স্বাদ, একেক গন্ধ, একেক মর্ম – ভালো লাগায় ভরপুর অনুভূতির সৃষ্টি করত দিনরাত। তখন পর্যন্ত আমার বিচরণক্ষেত্র সীমিত ছিলো বিজ্ঞান, ইতিহাস, ধর্ম, জীবনী এবং বাংলা ও বিশ্বসাহিত্যের বিখ্যাত গ্রন্থগুলোর মাঝে। সাহিত্যের মাঝে ভালো লাগত গোয়েন্দা কাহিনী, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, ভ্রমণ ও অ্যাডভেঞ্চার। একদিন, আমাদের হেডমিস্ট্রেস – যিনি অংক টিচার হিসেবেই সুপরিচিত – তাঁর কন্যা রাকা আপু আমার সাথে নানান বিষয়ে আলাপ হবার পর বললেন, ‘এই বয়সে কি সব কঠিন কঠিন জিনিস পড় তুমি!’ আমাকে ভিন্ন স্বাদের কিছু বইয়ের সাথে পরিচিত করিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে ওনার সংগ্রহ থেকে কিছু বই পড়তে দিলেন আপু। অনেকটা ঐতিহাসিক ধাঁচে লেখা হওয়ায় প্রথমেই ঝাঁপিয়ে পড়লাম Prisoner of Zenda বইটির ওপর। একে একে শেষ করলাম আরো কয়েকটি বই। অবশেষে বাকী রইলো একটা। বইটা দেখে এমন আহামরি কিছু মনে হয়নি। পরদিন আপুদের বাসায় দাওয়াত, পরিকল্পনা ছিলো বইগুলো ফিরিয়ে দিয়ে আরো কিছু নিয়ে আসব। কিন্তু না পড়ে বই ফিরিয়ে দেয়া আমার ধাতে সয়না, মনের ভেতর খুঁতখুঁত করতে থাকে না জানি বইটাতে কি অমূল্য জ্ঞান ছিলো, সেটি আহরণের সুযোগ আমি হারিয়ে ফেললাম। আবার browse করে পড়াও আমার মত অপদার্থের দ্বারা হয়না। মনের ভেতর খচখচ করে কোন শব্দ বা কোন লাইন বাদ দিলে যদি মর্মার্থটাই বাদ পড়ে যায়! পড়ার প্রতি এই গন্ডমূর্খের মত মানসিকতার কারণে জীবনে অনেক অখাদ্যই আদ্যোপান্ত গিলে খেয়েছি। কিন্তু অনেক অসাধারন কিছুও খুঁজে পেয়েছি।
যোহরের নামাজ পড়ে বইটা নিয়ে বসলাম। তারপর শুধু নামাজ ছাড়া আর কোন বিরতির কথা মনে পড়েনা। রাত জেগে বই পড়া ছিলো নিত্যনৈমিত্তিক। কিন্তু সেই প্রথম সারা রাত জেগে পড়া। তারপর বই শেষ করে ফজর নামাজ পড়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলা। যাক, লেখিকা হবার স্বপ্ন নিয়ে পথ চলা বোকা মেয়েটা অবশেষে সুখী হবার পথ খুঁজে পেলো!
সে ২৮/২৯ বছর আগের ঘটনা। সাত বছর আগে ক্যানাডা আসার পর থেকে বইটার কথা খুব মনে পড়তে থাকে। কারণ বইয়ের লেখিকা ক্যানাডিয়ান, পটভূমি ক্যানাডা। কিন্তু বইয়ের নাম, লেখকের নাম, নায়িকার নাম, নায়কের নাম কিছুই মনে নেই, মনে আছে শুধু নায়িকার বান্ধবীর নাম আর গল্পটা। বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বললাম, বুঝলাম বইটা এমন বিখ্যাত নয় যে গল্পের সার বললে কেউ বলতে পারবে বইটার নাম কি। কেন যেন মনে হচ্ছিলো লেখিকা তিনিই যিনি Anne of the Green Gables লিখে বিখ্যাত হয়েছেন। কিন্তু সেদিকেও বেশী দূর অগ্রসর হতে পারলাম না। কারণ যাচাই করার মত যথেষ্ট তথ্য আমার স্মৃতিতে সংরক্ষিত নেই।
আজ হঠাৎ মনে হোল তারাটার নাম দিয়ে গুগলে সার্চ দিলে কেমন হয়? গল্পটার খুব হৃদয়স্পর্শী একটি দৃশ্য ছিলো – ছোটবেলা থেকে একসাথে বেড়ে ওঠা দু’টি ছেলেমেয়ে, ছেলেটি লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে গ্রাম ছেড়ে চলে যাচ্ছে অনেক দূরে, আর কোনদিন ফিরবে কি’না ঠিক নেই; সে মেয়েটিকে বলল, ‘আকাশ আমার সবচেয়ে প্রিয় তারা Lyre নক্ষত্রমন্ডলীর সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র Vega. এই তারাটির দিকে তাকালেই আমি তোমার কথা স্মরণ করব’। ভেগার সাথে সংশ্লিষ্ট কল্পকাহিনীমতে নায়িকা এবং নায়ক আকাশে এক নদী তারা (মিল্কি ওয়ে/ আকাশগঙ্গা) দ্বারা পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন। ফলে তারাটির তাৎপর্য এখানে কেবল এর ঔজ্জ্বল্যে সীমাবদ্ধ নয়।
দিলাম ‘Vega of the Lyre in Fiction’ লিখে সার্চ। সাথে সাথে বেরিয়ে এলো আমার স্মৃতি থেকে একটি সবুজ পত্র! বইটির নাম Emily’s Quest! অবশেষে আমার quest সমাপ্ত হোল। বেঁচে থাকো বাবা গুগল! আমি কল্পনাও করতে পারিনা এর প্রতিষ্ঠাতারা কতখানি মেধা এবং অধ্যাবসায়ের অধিকারী, ভাবতেই পারিনা গুগলের আগের যুগে মানুষ কিভাবে তথ্যের অনুসন্ধান করত!
এই বিজয়ে আরেকটা ঘটনা মনে পড়ে গেল। আমার বিয়ের সময় আমার দাদা এক অদ্ভুত উপহার দিয়েছিলো। এক বিরাট বাক্স, এর ভেতর থেকে ক্রমান্বয়ে বের হতে রইলো আরো অনেক অনেকগুলো বাক্স। সবার শেষে বেরোল ছোট্ট একটা বাক্স। অনেক কুচি করা কাগজের মাঝে একটা বড় কাগজে লেখা, ‘যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন’। দাদা বলল, ‘দেখ তো বাক্সের ভেতর আর কিছু খুঁজে পাও কি’না!’ বাক্সের নীচে পাওয়া গেল একটা ল্যামিনেট করা চেক, ৫০,০০০ টাকা! দাদার অব্যবহিত ছোটবোন দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন প্রচন্ড মেধাবী, ব্যাক্তিত্বসম্পন্না। সবার ধারণা আমি দেখতে তাঁর মত। যদিও তিনি ছিলেন রত্ন, আমি ছাই, কিন্তু চেহারায় মিল থাকার ফলে দাদার ছিলো আমার প্রতি বিশেষ দুর্বলতা। পরিবারের বড় সন্তানের বড় সন্তান হওয়াটা এখানে বোনাস।
ঘটনাটা এজন্য বললাম, টাকাটা বড় ব্যাপার না, চেহারাটা পাওয়ার ব্যাপারেও আমার কোন হাত নেই, কিন্তু ভালোবাসা একটা অমূল্য সম্পদ, সেটা যেভাবেই পাওয়া যাক না কেন। এই বইটার নাম জেনে আমার কোন লাভক্ষতি নেই, কিন্তু স্মৃতির পেছনে পিছু ধাওয়া করে যে সময়টুকু কেটেছে সুখস্মৃতি রোমন্থন করে সেটাই অমূল্য। কারণ আজকের এই ঘটনাটাই হয়ে উঠবে আগামী দিনের জন্য আরেক সুখস্মৃতি!

 

সুস্থ শিশুর জন্য নিশ্চিত করুন নিরাপদ মাতৃত্ব


নারী সংবাদ


নিরাপদ মাতৃত্ব একজন নারীর অধিকার। সুস্থ সন্তানই আগামী দিনের সুস্থ নাগরিক। একটি সুস্থ শিশুর জন্মের জন্য নিশ্চিত করতে হবে নিরাপদ মাতৃত্ব।
একজন নারীর পূর্ণতা আসে মাতৃত্বে। মা সুস্থ থাকলে সন্তান সুস্থ থাকবে। মা হওয়া একজন নারীর জন্য, পরিবারের জন্য, এক সুখকর অনুভূতি। তবে মা হওয়া নারীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণও বটে। কারণ, একজন নারী যতবার গর্ভধারণ করে, ততবারই তার জীবনের ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। তাই, একজন মাকে সুস্থ সন্তান জন্ম দিতে হলে পরিবারের সবাইকে সচেতন ও দায়িত্বশীল হওয়া খুবই জরুরি।
অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের মতে নিরাপদ মাতৃত্ব ও সুস্থ সন্তান নিশ্চিত করার জন্য সুষম খাবার ও চিকিৎসার পাশাপাশি স্বাস্থ্য সচেতনতার গুরুত্বও অপরিসীম। এই সচেতনতা পরিবারের সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।
গর্ভবতী মায়ের প্রতি যথাযথ যতœ নিতে হবে। স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়িকে বুঝতে হবে যে, সুস্থ ও স্বাভাবিক সন্তান জন্ম দেয়া এবং ভবিষ্যৎ সন্তানের দায়ভার শুধু প্রসূতির ওপর এককভাবে চাপিয়ে দিলে চলবে না। একটি নতুন মুখের জন্য সবাইকে প্রস্তুতি নিতে হয় গর্ভাবস্থায়। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ এবং সুষম খাবার গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে।
স্বাস্থ্য কর্মী আবুল বাশার বলেন, গর্ভাবস্থায় নিজের সম্বন্ধে সচেতন না থাকা বা নিজের যথাযথ যতœ না নেয়ায় অনেক মায়েরই শরীরে প্রয়োজনীয় উপাদানের ঘাটতি দেখা দেয়। গর্ভাবস্থায় যদি মা অতিরিক্ত মোটা হতে থাকে এবং হাত-পায়ে পানি এসে যায়, ঘন ঘন মাথা ব্যথা হতে থাকে, রক্তচাপ বেড়ে যেতে থাকে। এ সময় দেরী না করে রোগীকে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
মাতৃত্ব নিরাপদ করার জন্য প্রথমে নারীকে শিক্ষিত করে তুলতে হবে। সে লক্ষেই সরকার জাতিকে ১শ’ ভাগ শিক্ষিত মা উপহার দেয়ার জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে মেয়েদের শিক্ষা উপ-বৃত্তি দেয়ার পাশাপাশি ঝরে পড়া শিশুদের স্কুলমুখী করতে সরকার বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য পুষ্টিকর খাবারের যোগান দেয়ার পাশাপাশি আগামী দিনের মা ও বর্তমান কিশোর-কিশোরীদেরও স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনতে হবে।
গ্রাম পর্যায়ে মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে সরকারি উদ্যোগে যে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, তা থেকে জনগণ স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলের গর্ভবতী মায়েদের কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়মিত চেক-আপ করাতে হবে।
বিশিষ্ট ধাত্রীবিদ্যা বিশেষজ্ঞ ডা. ইসমাত আরা বলেন, গর্ভাবস্থায় প্রতিটি মায়ের শরীরে প্রয়োজনীয় উপাদানের ঘাটতি দেখা দেয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়, প্রয়োজন হয় বাড়তি যতেœর। গর্ভাবস্থায় একজন মাকে প্রচুর বিশ্রাম নিতে হয় এসময় প্রসূতিকে পর্যাপ্ত সুষম খাবার দিতে হবে।
তিনি বলেন, গর্ভাবস্থায় রক্তক্ষরণ মোটেই স্বাভাবিক ঘটনা নয়। প্রথমত গর্ভাবস্থায় ৫ মাসের মধ্যে রক্তক্ষরণ হওয়ার অর্থ হলো গর্ভের ভ্রুণটি নষ্ট হয়ে যাওয়ার বা গর্ভপাত হবার আশংকা। রক্তক্ষরণ হবার পরপরই যদি ব্যথা শুরু হয়, তাহলে বুঝতে হবে যে, ভ্রুণটি আর গর্ভে স্বাভাবিক অবস্থায় থাকছে না, জরায়ু থেকে বেরিয়ে আসছে। এ অবস্থায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই রকম অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া খুবই জরুরি।
তিনি বলেন, গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি পরিমাণে সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। এ সময় ভারি কোন কাজ করা একেবারে নিষিদ্ধ। নিজের এবং গর্ভস্থ শিশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মাঝে মাঝেই চিকিৎসক বা স্বাস্থ্য কর্মীর কাছে নিয়ে যেতে হবে।
পরিবার থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে মাকে তার স্বাস্থ্যসেবা সম্বন্ধে সচেতন করে তুলতে হবে। নিয়মিত ও পরিমিত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। রঙীন এবং সবুজ শাক-সবজি তরি-তরকারি খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এ সময়ে সেবা, পরিচর্যা ও ভালবাসা পাবার অধিকার আছে প্রতিটি নারীর। এ অধিকার তাকে অবশ্যই দিতে হবে। তাদের এই অধিকার পূরণ হলে, আর অসচেতনতা দূর করে জটিলতার দ্রুত মোকাবেলা করতে পারলে, ঝুঁকিমুক্ত মাতৃত্ব সম্ভব।
সুত্রঃ বাসস।

 

M A R R I A G E (বিয়ে)


দাম্পত্য


বিয়ে হল সমাজের ভাষায় একজন নারী ও একজন পুরুষের একত্রে বসবাসের জন্য অর্থনৈতিক ও দৈহিক সুব্যবস্থাযুক্ত অনুমতি। কি কঠিন বলে তাই না, তবে বিয়েকে একটি সু-সংগঠিত স্কুল বলতে পারো। যেখানে দুজন ব্যক্তি নয় দুটি পরিবার প্রতিনিয়ত নতুনকে মেনে নেবার জন্য সব সময় নতুন নতুন কৌশল শেখবে। জীবনসঙ্গীরা নিজেদের সম্পর্ককে নতুন করে উন্নত আর জাগ্রত করার চেষ্টা অবিরত রাখবে। উভয়পক্ষকে মিলে মিশেই এই বন্ধন মুল রহস্য খুঁজে নেওয়ার জন্য মানুষ বিয়ে করে। বিশ্বাস রাখো।

M A R R I A G E অর্থই হল ‘বিবাহ’ বা বলতে পার ‘বিয়ে’। এখন আসো দেখি বিয়েকে কিভাবে বিশ্লেষণ করা যায়।

ভুলকে সন্মান কর
জীবনসাথীর প্রতি সন্মান দেখানো বলতে
আসলে বুঝায়, একজন মানুষের মধ্যে অনেক দূর্বলতা থাকে বা থাকবেই। আবার অক্ষমতা দেখা যাবে বা যায়। মানুষ সব কাজ করতে পারে না, এটায় সত্য। আবার অনেক কাজ করতে গিয়ে ভুল করে ফেলো তুমি নিজেও। সাথীর দূর্বলতা ও অক্ষমতার প্রতি সন্মান দেখাও।

জীবনসাথীকে মেনে নাও
মানুষের মাঝে থাকে একটু রুক্ষতা, গম্ভীরতা, কোমলতা, রাগ, স্নেহশীলতা, আন্তরিকতা এবং সহনশীল মন। জান! ছোট বেলায় থেকে কেউ একটু রাগী। কেউ একটু কোমল। কেউ চালাক বা কেউ তুলনা মুলক বোকা। এই সবকিছু মিলেই একজন মানুষের স্বভাব। তাই মেনে নেওয়ার ক্ষমতা এখনই তৈরি কর। কারণ যার যত সুন্দর এবং দ্রুত এই মেনে নেবার ক্ষমতা থাকবে সে তত সুন্দর করে জীবনকে উপভোগ করবে।

পরস্পরের প্রয়োজন বুঝ
দরদ দিয়ে অপরের চাওয়া বুঝার চেষ্টা কর। ভালবেসে অপরের জন্য একটু হাসি দেওয়া। এবং ছোটখাটো সব ধরনের কাজ আন্তরিকতা ও ভালবেসে কর।

সমাধান চেষ্টা কর
একসাথে কিছুটা সময় বা পথ হাটার জন্য নিজেদের মাঝে অক্ষমতা আর দূর্বলতার জন্য সমস্যার সৃষ্টি হবেই। তাই কথা বলে। শেয়ার করে। সমস্যার সুন্দর সমাধানে দিকে হাটার চেষ্টা তোমাকে করতে হবে। যাতে অন্তত রাতে সব কিছু মিটিয়ে আরামের ঘুম দিতে পার।

ভালবাসার তীব্রতা মেপো না
যদি ভালবাসার তীব্রতা কমে গেছে বলে মনে হয় তোমার। আর তুমি দেখছো যে তুমি সেভাবে তাকে ভালবাসতে পারছো না,তাহলে এটাতেই অভ্যস্ত হয়ে যাও। জীবনে তো অল্প সময়ের জন্য দেখতে দেখতে সময় কেটে যাবে।

ভালবাসো সহজভাবে
ভালবাসাকে এত সহজলভ্য কর। চাইলেই যেন তুমি ভালবাসাময় পরিবেশ বানিয়ে ফেলতে পারো। যেখানে আত্মা, দেহ, মন এবং হৃদয় একত্রে থাকবে নিজেদের।

মতামত বিনিময় কর
মনে রাখতে হবে বিয়ের অন্যতম সুন্দর এবং মূল্যবান বিষয় হল ‘দেওয়া বা বিনিময়’। আপনার পক্ষ থেকে সবটুকু চেষ্টা মাধ্যমে মূল্যবান সময়, শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, ভালবাসা অঢেল বিলি করুন।

হাটুন কল্যাণের পথে
সৃষ্টিকর্তা সব আমাদেরকে খুব চমৎকার হৃদয় দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং দুইজন দু জনার সাহায্যকারী, দুই জনই ঘনিষ্ঠ বন্ধু, যারা দুজনে কল্যাণকর বন্ধন গড়ে তোলার জন্য সবসময় সর্তকভাবে হাটতে ভালবাসে।

বিয়ে হল পরিবার

এই বিষয়টা খুবই সহজ একটা শব্দ ‘পরিবার’! রাষ্ট্রে সবচেয়ে সুন্দর সংগঠন পরিবার। বউ ও জামাই মিলে গড়ে উঠে একটি পরিবার। পরস্পর একত্রে হল একটি রাষ্ট্র।

বিয়ে সম্পর্কিত অজস্র পোস্ট, বিয়ে হচ্ছে পৃথিবীতে নতুন এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি বন্ধন। তাই আমাদের সঠিক জ্ঞান নিয়ে হাটা শিখতে হবে।

মুল সুত্রঃ Elika maholy
অনুবাদঃ ফাতেমা শাহরিন।

 

মহেশপুরে সজিব ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি মায়ের মৃত্যু

 


নারী সংবাদ


ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ভৈরবা বাজারের সজিব প্রাইভেট হাসপাতাল এন্ড ক্লিনিকে ভুল অপারেশনে এক প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হয়েছে। রোগীর স্বজনরা জানান, অদক্ষ নার্স ও হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে ভুল অপারেশনের কারণে রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

বাঁশবাড়ীয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক জানান, বৃহস্পতিবার রাতে ভৈরবার সজিব প্রাইভেট হাসপাতাল এন্ড ক্লিনিকে এক প্রসূতির মায়ের মৃত্যু হয়েছে। নিহত এই প্রসূতি মায়ের নাম মোসুমী খাতুন। ডেলিভারী করানোর সময় তার মৃত্যু হয় বলে জানা যায়।

সজীব প্রাইভেট হাসপাতাল এন্ড ক্লিনিকের মালিক সামাউল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সামন্তা গোপালপুর গ্রামের আল-আমিনের স্ত্রী মৌসুমী খাতুনকে সিজার আপারেশন করানোর জন্য আমার ক্লিনিকে নিয়ে আসে। এরপর তাকে ভর্তি করে একজন নার্সের মাধ্যমে নরমাল ডেলিভারী করানোর চেষ্টা করা হয়। তাতে ব্যর্থ হলে রাত ৮টার দিকে ডাঃ সোহেল রানা মৌসুমী খাতুনের সিজার অপারেশন করেন। রাত ৯টার দিকে মৌসুমী খাতুনের অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে যশোরে পাঠানো হয়। কিন্তু রাস্তার মধ্যেই মৌসুমী খাতুনের মৃত্যু হয়, তবে প্রসূতির সন্তান জীবিত আছে।

নিহত প্রসূতি মৌসুমী খাতুনের স্বজনরা জানান, ক্লিনিকে ভর্তি হওয়ার পর অবস্থা খারাপ হলে আমরা মৌসুমীকে যশোরে নিয়ে যেতে চাই। কিন্তু ক্লিনিক মালিক তাতে বাধা দিয়ে অদক্ষ এক মহিলা দিয়ে ডেলিভারী করানোর চেষ্টা করে। তারপর সোহেল নামক একজনকে দিয়ে সিজার অপরেশন করানো হয়। এতে প্রসূতির অবস্থা আরো খারাপ হলে ক্লিনিক মালিক তাড়াতাড়ি যশোর নিয়ে যেতে বলে। যশোর নেয়ার পথে রাস্তায় তার মৃত্যু হয়।

এদিকে যে ডাক্তার দিয়ে সিজার করানো হয়েছে সেই ডাক্তারের ফোন নাম্বার চাইলে ক্লিনিক মালিক সামাউল তা দেননি বলে জানান তারা।

মহেশপুর থানার ওসি রাশেদুল আলম জানান, আমি রোগী মৃত্যুর ঘটনাটি লোক মুখে শুনেছি। ডাক্তার সোহেলের কুকীর্তি সম্বন্ধে আমি মোড়েলগঞ্জ থানায় থাকা অবস্থায় অবগত। তার বাড়ি বাগেরহাট। সে নেশাগ্রস্থ অবস্থায় রোগী অপারেশন করে মর্মে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আসতো। প্রসূতির মৃত্যুতে থানায় এখনো কোনো অভিযোগ হয়নি। সুত্র: নয়াদিগন্ত

 

টাইম ম্যানেজমেন্ট


মেইক ইউরসেলফ


সময়

‘সময় এবং স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না।’ সময় ম্যানেজমেন্ট টার্ম দিয়ে বুঝানো হয় যে, সুনির্দিষ্ট সময়ে কাজের কার্যকারিতা, নিজের দক্ষতা এবং প্রতিটি কাজের তাৎপরতা বৃদ্ধি করার জন্য সময় প্রতি সচেতন হয়ে সঠিক সময়ে কাজ সম্পাদন। মনে রাখবেন, সময়ের ব্যবহার সঠিকভাবে না করলে জীবনে চলার পথে নানানরকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

কাজের তালিকা করুণ
প্রথমে আপনাকে জানতে চাইতে হবে, সারাদিনে আপনি কী কী কাজ করেন।
সকাল, দুপুর, বিকাল & সন্ধ্যায়।

বেশি সময়
খেয়াল করুন দৈনন্দিন কী কী কাজের জন্য বেশির ভাগ সময় চলে যাচ্ছে। উদাহরণ: ফেসবুক ও ইউটিউব ভিডিও দেখতে কয় ঘন্টা।

পদক্ষেপ
আপনার যে প্রতিদিন কিছু সময় নষ্ট হচ্ছে সুতরাং সময় বাঁচাতে আপনি কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন এখন পর্যন্ত।

নিজেই কলম কাগজ নিয়ে বসুন,

১.ঘুম দৈনিক কত ঘন্টা,
২.গোসল,
৩.সাজুগুজু কত ঘন্টা,
৪.রান্না ও খাওয়া ও ক্লিনিং কত ঘন্টা,
৫.কাজ কত ঘন্টা,
৬.ব্রাউজিং, সোশ্যালাইজিং ইত্যাদি ইত্যাদি..

একসপ্তাহের একটি চিত্র নিজের সামনে তুলে ধরুন। সব কিছু মিলিয়ে মোট কত ঘন্টা হয় সেটা যোগ করে। সপ্তাহের মোট যে ১৬৮ ঘন্টা – তার থেকে বিয়োগ করতে হবে।

সময় ধরে লিস্ট করার উদ্দেশ্য
উদ্দেশ্য হচ্ছে হিসাব কষে দেখানো, যে কোন কাজ কত ঘন্টা সময় ব্যয় করবেন। পড়াশুনা করার জন্য বা যে কাজ করা ভীষণ দরকার তার জন্য কত সময় ব্যয় হচ্ছে।

হারিয়ে যাওয়া সময়কে ধরতে একটা সপ্তাহ একটু ট্র্যাক করুন,

সময় জোরা লাগান
কী কী কাজ করছেন।
জিমেইলে ত একটা ক্যালেন্ডার ফ্রি ফ্রি আছেই। সেখানে লিখতে থাকুন পুরো এক সপ্তাহ প্রতি ঘন্টার হিসেব। দেখবেন একটা প্যাটার্ণ খুঁজে পাচ্ছেন। তখন বুঝতে সুবিধা হবে কোথা থেকে সময় কেটে কোথায় জোড়া লাগাতে হবে।

টাইম ম্যানেজমেন্ট অপরিহার্য
এখন কীভাবে সময় কাটাচ্ছি,
আর কীভাবে কাটানো উচিৎ – সেটার মধ্যে সামঞ্জস্য করাই টাইম ম্যানেজমেন্ট। মুসলিমদের জন্য ত টাইম ম্যানেজমেন্ট অপরিহার্য। সূরা আসরে ত আল্লাহ বলেই দিয়েছেন টাইম ম্যানেজমেন্ট না জানা সব মানুষ বিপদের মধ্যে আছে।

মাল্টিটাস্কিং
মাল্টিটাস্কিং (একই সাথে কয়েকটা কাজ করা।) কিন্তু মাল্টিটাস্কিং করা যায় একটা হাল্কা কাজের সাথে একটা প্রিয় কাজকে জোড়া লাগিয়ে।

কঠিন কাজ
সমান গুরুত্বপূর্ণ দু’টো কাজ থাকলে, তাহলে কঠিন আর করতে ভাল লাগেনা এমন কাজটা আগে করা।

রেফারেন্স : গুগল & নুসরাত রহমান লেখা থেকে।

 

চাকরি-বিয়ের প্রলোভন, অতঃপর আটকে গণধর্ষণ


নারী সংবাদ


মোবাইল ফোনে অপরিচিত নাম্বারে পরিচয়। এরপর কথা বলা। ধীরে ধীরে তা গড়িয়েছে প্রেমের সম্পর্কে। ছয় মাসের মাথায় মা-বাবার সাথে দেখা করার প্রলোভনে ফেনীতে ডেকে এনে তাকে গণধর্ষণ করে কয়েকজন বখাটে। গতকাল সকালে শহরের রামপুর সৈয়দ বাড়ি সড়কের বাসা থেকে তিন মাস পর রাজধানীর কলেজপড়–য়া ওই তরুণীকে উদ্ধারের পর চাঞ্চল্যকর এ তথ্য বেরিয়ে আসে। এ সময় গণধর্ষণের শিকার আরো দুই নারীকে উদ্ধার করা হয়। তাদের লোভনীয় বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখানো হয়। এ ঘটনায় জড়িত প্রতারক প্রেমিকসহ তিন বখাটেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

সূত্র জানায়, রাজধানীর মিরপুর এলাকার ১০ নম্বর মোল্লা ভিলার বাসিন্দা মো: মোজাম্মেল হকের কলেজপড়–য়া মেয়ের সাথে পরিচয় হয় রামপুরের সৈয়দ বাড়ি লেনের মো: কাশেম কটেজের বাসিন্দা মো: কাশেমের ছেলে কাওসার বিন কাশেম নিলয়ের মোবাইল ফোনে পরিচয় হয়। বিগত বছরের অক্টোবরে ওই তরুণী পরিবারের সদস্যদের সাথে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে যায়। কক্সবাজার থেকে ঢাকায় ফেরার পথে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে মা-বাবার সাথে দেখা করবে বলে সুকৌশলে মহিপালে তাকে নামানো হয়। এরপর সৈয়দ বাড়ির কাশেম কটেজ ১২/এ নিয়ে মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। বাসায় প্রবেশের পরই চক্ষু ছানাবড়া ওই তরুণীর। বাসায় আটক আরো দুই নারী। তারা পরস্পর জানতে পারে লোভনীয় অফারে চাকরি দেয়ার প্রলোভনে তাদের আনা হয়। এ ঘটনায় ওই তরুণীর পরিবারের পক্ষ থেকে মিরপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। এরপর তাদের ওপর নেমে আসে পাশবিক নির্যাতনের খড়গ।

বন্ধু-বান্ধবদের বাসায় এনে প্রতিদিনই দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা হতো। প্রতিবেশীরা টের পেয়ে খবর দিলে শহর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই শাহজাহান মিয়া তালা ভেঙে হানা দেয়। জিম্মি দশা থেকে তিন নারীকে উদ্ধার ও নিলয় ছাড়াও ফেনী সদর উপজেলার মধ্যম কাছাড় গ্রামের আবু ইউছুপের ছেলে সায়েম, সোনাগাজী উপজেলার বগাদানা ইউনিয়নের ব্রামনী বাজার গ্রামের আলী ফরহাজী বাড়ির আবুল কালামের ছেলে আলিফুল ইসলাম আরমানকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় ওই কলেজ ছাত্রী বাদি হয়ে ফেনী মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

ফেনী মডেল থানার ওসি মো: আবুল কালাম আজাদ তিন তরুণীকে উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, গ্রেফতারকৃত তিন বখাটেকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

জোনাক নগরের আঙিনায়…৩


আফরোজা হাসান


আপনি সত্যি সত্যিই এমন করবেন আমার সাথে?

যায়েদ হেসে বলল, আচ্ছা চলো তোমাকে আমার আরো এক ক্লাসমেট দম্পতির গল্প শোনাই। ওরাও পরিবারের অমতে বিয়ে করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওদের বিয়েটা টেকেনি। মজার ব্যাপার হচ্ছে, যেই পরিবারের অমতে ওরা বিয়ে করেছিল সেই পরিবারের কারণেই আবার বিয়েটা ভেঙে দিয়েছিল। ওদের ভালোবাসার কলোকাকলি দাম্পত্য কলহে রূপান্তরিত হয়েছিল একে অন্যের পরিবারের প্রতি বিদ্বেষ আর নিজ নিজ পরিবারের প্রতি সন্তোষের কারণে। পরিবারের কথা উঠলেই দু’জন নিজ নিজ পরিবারের পক্ষে সুপারিশ করতো এবং একে অপরের পরিবারকে দোষারোপ করতো। ফ্যামেলি ইগো যাকে বলে। অর্থাৎ, তোমার পরিবারের চেয়ে কিসে কম আমার পরিবার? তোমার চেয়ে কি আমার যোগ্যতা কোনদিন দিয়ে কম? এই ধরণের মানসিক দৈন্যতায় ভুগতো দুজন। যা ধীরে ধীরে ঘুণ পোকার মত ক্ষয় করে দিয়েছিল সম্পর্কের মধ্যে বিরাজমান মিষ্টতা ও স্বিগ্ধতা। পরিণতিতে দুজনার দুটি পথ দুটি দিকে গেল বেঁকে। গত কয়েক বছরে এমন অসংখ্য কেস এসেছে যেখানে স্বামী-স্ত্রীর একে অন্যের প্রতি ভালোবাসার কোন কমতি ছিল না। যাদের মধ্যে বেশ কিছু দম্পতি একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান, বিশ্বাসও লালন করতো মনে। একে অপরকে ভালো মানুষ স্বীকৃতিও দিতো। কিন্তু তবুও দু’জনের মধ্যে মনোমালিন্য ও ঝগড়া লেগেই থাকতো। সেই ঝগড়ার বিষয় ছিল দু’জনের পরিবার। কার পরিবার বেশি খারাপ কিংবা দ্বায়িত্বহীন এটা প্রমাণ করাটাই যেন সার্থকতা। একে অন্যের পরিবার দ্বারা কে কতটা বেশি কষ্ট পেয়েছে সেটা খুঁজে বের করাটা পার্ট টাইম জবের মত ছিল তাদের কাছে। যার সেলারি হিসেবে তারা লাভ করতো মানসিক অশান্তি।

নূরি বলল, মানুষ কেন জেনে বুঝেও ছোট থেকে ছোট কারণকে ইস্যু করে নিজেদের জীবনের এভাবে অশান্তি ডেকে আনে?

এই প্রশ্নটা নিয়ে আমিও প্রায়ই ভাবি। মানুষ কেন এত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কারণে নিজের জীবনের শান্তি ও স্বস্থিকে নষ্ট করে অবলীলায়?! পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কারণে কেন মানুষ নিজের সুখের সংসারে অশান্তি ডেকে আনে?! কেন মনটাকে একটু বড়, একটু উদার করতে পারে না?! কেন সবসময় শুধু অন্যের দোষটাকেই দেখে?! কেন ক্ষমা করে দিতে বা ভুলে যেতে পারে না অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলো?! কেন সবসময় নিজেকে সঠিক আর অন্যেকে বেঠিক মনে করে?! কেন ভাবে না যে যদি সংসারের সুখের কথা চিন্তা করে ধৈর্য্য ধারণ করে তাহলে এর কল্ল্যাণময়তা তাকেই ঘিরে আবর্তিত হবে? এমন আরো অসংখ্য কেন ঘুরতে থাকে মাথায়। মাঝে মাঝে কিছু কিছু ক্যাপলকে দেখে মনেহয় সংসার না বরং কোন একটা প্রতিযোগিতা চলছে। পরিবারের দোহাই দিয়ে কে কাকে হারাতে পারবে বা দাবিয়ে রাখতে পারবে সেই প্রতিযোগিতা। এতে তারা এতটাই হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়ে যে বুঝিতেই পারে না জিত একজনের হলেও হার মূলত দু’জনেরই হয় এই প্রতিযোগিতাতে।
কিন্তু এর সমাধান কি?
যায়েদ হেসে বলল, তুমি নিশ্চয়ই জানো সবজি রান্নার ব্যাপারে আমার এলার্জি আছে। আমার কথা হচ্ছে তেল, মশলা সবকিছু দিয়ে রান্না করবো। কিন্তু কিছুতেই সবজির রঙ চেঞ্জ হতে পারবে না। রান্না করার পরও প্রতিটা সবজিতে নিজ নিজ রঙ ঠিক থাকবে। এরজন্য অনেক রাঁধুনির সাথে কথা বলেছি, নিজে বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করেছি। শেষপর্যন্ত এখন রান্নার পরও সবজির রঙ মোটামুটি ঠিক থাকে আলহামদুলিল্লাহ। এই যেমন এখন আমরা বাপীর জন্য মিক্সড সবজি রান্না করলাম। দেখো আগুনের তাপে তেল, মসলা, পানি ইত্যাদি দিয়ে সেদ্ধ করার পরও প্রতিটি সবজির আলাদা রঙ একদম ঠিক আছে আলহামদুলিল্লাহ। এর কারণ সবজির রঙ যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য আমি অনেক চেষ্টা ও সাধনা করেছি। এই বিষয়ে যারা পারদর্শী তাদের সাথে আলোচনা করেছি, পরামর্শ নিয়েছি। সবকিছু মিলিয়ে আমি এই যোগ্যতাটুকু অর্জন করেছি আলহামদুলিল্লাহ। এখন তুমি জীবন বলো, পারিবারিক জীবন বলো কিংবা দাম্পত্য জীবন। দুঃখ-কষ্ট, হতাশা-নিরাশা, বেদনা অপ্রাপ্তি আসবেই, থাকবেই। এসবের প্রভাব থেকে নিজেকে, নিজের মনকে মুক্ত রাখতে চাইলে চেষ্টা ও সাধনার প্রয়োজন। প্রয়োজন জীবন সম্পর্কে অভিজ্ঞ ও জ্ঞানী কারো সাহচর্য ও পরামর্শ। এবং প্রয়োজন নিরলস ভাবে লেগে থাকার। এভাবেই আসলে ধীরে ধীরে আয়ত্তে আসে কোন বিশেষ যোগ্যতা। তবে যে কোন ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আল্লাহর উপর ভরসা। কেননা আল্লাহ বলেছেন“ যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন।”
হুম, সমস্যা বা বিপদে মানুষ এতটাই অস্থির হয়ে যায় যে, আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতেই ভুলে যায়।
আসলে নিজের মনের চাওয়া-পাওয়ার বিপরীত কিছু হলে, প্রতিকূল পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে আমরা মানসিক ভাবে বিক্ষিপ্ত ও এলোমেলো হয়ে পড়বো এটাই স্বাভাবিক। যখন বিরূপ বা নেতিবাচকতা ঘিরে ধরবে বিরক্তি, রাগ, হতাশা মনকে আঁকড়ে ধরতে চাইবে এটাও স্বাভাবিক। নির্ভরতার আশ্রয় পরিবারই যখন জীবনের অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে তখন হাল ছেড়ে দিতে চাইতেই পারে কেউ। এই সব অবস্থা থেকে মুক্তি পাবার একমাত্র পথ হচ্ছে একমাত্র আল্লাহর উপরে ভরসা করা, সাহায্য প্রার্থনা করা। কিন্তু মানুষ বেশির ভাগ সময়ই লেগে থাকে অন্য মানুষের পেছনে। স্ত্রী স্বামীকে বলে সব ঠিক করে দাও। স্বামী স্ত্রীর কাছে দাবী করে শান্তি প্রতিষ্ঠার। একে অন্যের কাছে চাইতে গিয়ে নিজেদের করণীয় তো ভুলে যায়ই, সাথে সাথে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতেও ভুলে যায়। যারফলে মন অতৃপ্ত ও অশান্তির বেড়াজাল ছিঁড়ে বেড়োতে পারে না। তুমি সমাধান কি জিজ্ঞেস করেছিলে।
হুম!
যায়েদ হেসে বলল, একটা বাণী মনে পড়ে গেলো “কিছু কিছু প্রশ্ন অনেক কঠিন কিন্তু তার উত্তরটা খুবই সহজ।” ঠিক তেমনই মনেহয় কিছু কিছু সমস্যা খুব জটিল কিন্তু তার সমাধানটা খুবই সহজ। দাম্পত্য কলহের কারণ যদি পরিবার হয়, একটি সুন্দর সম্পর্ক যদি পরিবারের কারণে টানাপোড়নের স্বীকার হয়, তাহলে বিবেচনা করে দেখতে হবে কে সঠিক। আর সঠিক বেঠিকের মানদন্ড হিসেবে শরীয়ত তো আছেই। মানুষ যখন আল্লাহর বিধান মেনে চলে তখন তাদের মনের আকার এমনিতেই বড় হয়ে যায়। তারা নিজ নিজ স্বার্থের গন্ডিকে পেরিয়ে স্বাধীন ভাবে চিন্তা করতে শেখে। সর্বাবস্থায় আমিই সঠিক এই ক্ষুদ্র ও কলুষিত চিন্তা থেকে বেড়িয়ে আসতে পারে। আসলে দাম্পত্য সম্পর্কটাকে হওয়া উচিত সকল প্রকার প্রভাব মুক্ত। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এই বোঝাপড়া টুকুন যদি থাকে যে একমাত্র শরীয়ত ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোন কিছু বা অন্য কেউ তাদের জীবনের করণীয়-বর্জনীয়র মানদন্ড হবে না। তাহলে পরিবারের কারণে দাম্পত্য কলহ মুক্ত থাকা সম্ভব হয়। আরেকটা বোঝাপড়া অবশ্যই থাকা উচিত স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কেউ বা কোন কিছুই যেন তাদের মনে একে অপরের প্রতি বিদ্বেষের বীজ বপন করে দিতে না পারে। পরিবারকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে যেন আত্মকেন্দ্রিক না হয়ে যায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। এখন তুমি আমার একটা কথা মন দিয়ে শোনো।
জ্বি বলুন।
রান্না করতে আমি খুব বেশি পছন্দ করি। তাই তুমি যদি দাম্পত্য কলহ এড়াতে চাও কখনোই এই আনন্দময় কাজটি করার সময় তোমার ঝুড়ি থেকে এইসব সমস্যা বের করবে না। ক্লিয়ার?
নুরি হেসে বলল, অল ক্লিয়ার স্যার।
যায়েদ হেসে বলল, তাহলে সমস্যার ঝুড়ি বন্ধ। গত সপ্তাহে যে তোমাকে আমি এত সময় লাগিয়ে ভেজিটেবল স্টু বানানো শেখালাম। আজ তাহলে পরীক্ষা হয়ে যাক কেমন স্টুডেন্ট তুমি।
ওক্কে স্যার। বলে হাসি মুখে নূরি ভেজিটেবল স্টু বানানোতে মনোযোগ দিলো।

চলবে…

 

শীলা বিয়ের পর থেকে শ্বশুড় বাড়ীতে থাকে

কানিজ ফাতিমা


শীলা বিয়ের পর থেকে শ্বশুড় বাড়ীতে থাকে ৷ শীলার শ্বাশুড়ী জাহানারা বেগম ৷ শীলা বা জাহানারা বেগম কেউই খারাপ মানুষ না ৷ কিন্তু তাদের সম্পর্ক খুব একটা মধুর না ৷ জাহানারা বেগম গোছানো স্বভাবের ৷ সবকিছু, বিশেষ করে রান্না ঘরের জিনিস পত্র তার গোছানো থাকা চাই ৷ রান্না ঘরের প্রত্যেকটি জিনিস যত্ন করে জায়গামত রাখা, সবকিছু ঝকঝকে তকতকে করে রাখার ব্যাপারে তিনি খুবই সচেতন৷ কেউ এগুলো তার মত গুছিয়ে ব্যবহার করতে না পারলে তিনি খুবই বিরক্ত বোধ করেন এবং অভিযোগ করেন৷ অন্যদিকে শীলা স্বভাবে ঠিক উল্টো৷ সে দ্রুত কাজ করে, একেবারেই গোছালো না এবং তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে জিনিসপত্রের খুব একটা যত্ন নিতে পারে না৷ ফলে রান্নাঘর ব্যবহার করে সে প্রায়ই এটাকে এলোমেলো করে রাখে৷ তার এ স্বভাব নিয়ে জাহানারা বেগম প্রায়ই অভিযোগ তোলেন ৷ শীলা চেষ্টা করে কিছুটা গুছিয়ে কাজ করতে৷ কিন্তু সে খুব একটা সফল হয়না ৷তাছাড়া শীলা চাকুরী করে বলে তার পক্ষে রান্না ঘরে খুব বেশী সময় দেয়া সম্ভব না ৷ফলে বউ-শ্বাশুড়ী সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে৷ জাহানারা বেগমের অভিযোগ, “বউ একেবারেই কাজের না ৷ খুবই অগোছালো, এলোমেলো ৷পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না ৷” শীলার অভিযোগ, ” শাশুড়ী সকাল-বিকাল তার পিছনে লেগেই থাকে, সবকিছু নিয়ে খ্যাচ খ্যাচ করে, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতেই থাকে৷” এর সঙ্গে পর্যায়ক্রমে যুক্ত হয় শীলার মা ও ননদ৷ শীলার মা দুঃখ করে বলে, ” শ্বাশুড়ী টা আমার মেয়েটাকে শুধু জ্বালায়”৷ ননদ বলে, “শীলা আমার মায়ের বদনাম করে বেড়ায়৷”

এ ঘটনায় আমরা যা দেখতে পাই তাহলো, শীলা ও জাহানারা বেগম দু’জনের কারো চাওয়াই (expectation) অযৌক্তিক না এবং দু’জনের অভিযোগই সত্যি৷ শ্বাশুড়ী চাচ্ছেন বউ তার মত গুছিয়ে কাজ করুক৷ অন্যদিকে, বউ চাচ্ছে শ্বাশুড়ী তার বিরুদ্ধে সকাল বিকাল অভিযোগ করা বন্ধ করুক ৷ এক্ষেত্রে দু’জনই ঠিক ৷ তাহলে সমস্যা কোথায় ? সমাধানই বা কি?

সমস্যাটা হলো দু’জনের দু’জনকে বোঝায়৷ জাহানারা বেগম ও শীলা দু’জন ভিন্ন প্রকৃতির মানুষ৷ তাদের Personality type ভিন্ন ৷ তারা একজন আরেকজনের মত হতে পারবে না ৷ জাহানারা বেগম যদি মনে করেন শীলাকে তার মত হতে হবে তবে তিনি ভুল করছেন৷ মানুষ তার Personality type পুরোপুরি বদলাতে পারে না ৷ তাই জাহানারা বেগমকে শীলার অগোছালো স্বভাবকে মেনে নিতে হবে এবং এ নিয়ে অভিযোগ করা বন্ধ করতে হবে ৷ অভিযোগ বন্ধ করে শীলাকে ধীরে ধীরে কাজের পদ্ধতি দেখিয়ে দিলে long term এ শীলার এ যোগ্যতা কিছুটা বাড়বে (skill development)৷ কিন্তু অভিযোগ (বা nag) সম্পর্কের অবনতি ছাড়া আর কিছুই ঘটাবে না ৷

একই সাথে শীলাকেও স্বীকার করতে হবে তার শ্বাশুড়ীর একটি ভালো গুন বা (Skill) আছে৷ যতটা সম্ভব এ গুনটির অনুকরণ করা তার নিজের জন্যই ভালো ৷ সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো তাদের দু’জনকেই বুঝতে হবে অন্যজন ‘খারাপ মানুষ’ না, সে তার থেকে ‘ভিন্ন প্রকৃতির’ মানুষ৷ আল্লাহ তা’আলাই মানুষকে ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির করে সৃষ্টি করেছেন৷

এর পরও যদি দু’জন দু’জনের এই ভিন্নতা মেনে নিতে না পারে তবে আলাদা থাকাই তাদের জন্য ভালো৷ একসাথে থেকে পরস্পর সম্পর্কে বিরক্ত হওয়ার থেকে ভিন্ন থেকে পারস্পরিক সম্মান বজায় রাখা কল্যানকর ৷

 

যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীর শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন


নারী সংবাদ


মাথাসহ সারা শরীরে ব্যান্ডেজ। নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তৃতীয় তলার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিছানায় শুয়ে পোড়া শরীরের যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। বিড়বিড় করে বলছিলেন, ‘আমি মরে যাব, আমার শিশুসন্তানদের তোমরা যত্ন নিও।’ গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে গৃহবধূ রেনজিনা বেগম যখন অশ্রুভেজা চোখে এমন আকুতি জানাচ্ছিলেন, তখন হাসপাতালের পরিবেশ নীরব হয়ে উঠেছিল। আশপাশের যারা এ দৃশ্যের সাক্ষী হয়েছিলেন, সবার চোখ গড়িয়ে পড়ছিল অশ্রু। যৌতুকের দাবিতে স্বামী হাফেজ শাহাদাত হোসেন আফসার সোমবার ভোরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিলে গতকাল সকালে রেনজিনাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ ঘটনায় গৃহবধূর বড় ভাই তসলিম উদ্দিন সন্দ্বীপ থানায় হাফেজ আফসারের বিরুদ্ধে সোমবার মামলা করেন। পুলিশ রাতেই তাকে গ্রেফতার করে। এর আগে

স্থানীয়রা আফসারকে গণধোলাই দেয়। রেনজিনা স্বামীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে বলেছেন, দেশে যেন কোনো নারীর এমন পরিণতি না হয়।

হাতিয়া উপজেলার জাহাজমারা ইউনিয়নের পূর্ব বিরবিরি গ্রামের নুর রহমানের মেয়ে রেনজিনা বেগম ২০১৩ সালে হাতিয়া দ্বীপ সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ওই বছরের ১৭ ডিসেম্বর রেনজিনার সঙ্গে হাতিয়ার পার্শ্ববর্তী উপজেলা চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের মুসাপুর গ্রামের সিদ্দিক টেন্ডরের ছেলে হাফেজ শাহাদাত হোসেন আফসারের বিয়ে হয়। তাদের আরাফাত সিদ্দিক বুখারী (৫), খাদিজা নাহার হাফসা (৩) ও আবদুল্লাহ সিদ্দিক তিরমিজি (৬ মাস) নামে সন্তান রয়েছে।

গৃহবধূর বড় ভাই দিদার উদ্দিন ও রহমত উল্যাহ সমকালকে বলেন, বিয়ের পর আফসার সৌদি আরব, কাতার ও আবুধাবি ছিলেন। সেখানে তিনি বিভিন্ন মসজিদে ইমামতি করেন। প্রবাসে যাওয়ার সময় তাকে দফায় দফায় রেনজিনার পরিবার আর্থিক সহযোগিতা করে। ২০১৬ সালে দেশে ফিরে এসে তিনি নোয়াখালীর কবিরহাটে একটি মসজিদে ইমামতি শুরু করেন। এ সময় আফসার রেনজিনার কাছে আবার যৌতুক দাবি করেন। রেনজিনা এর প্রতিবাদ করে অপারগতা প্রকাশ করলে তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু হয়।

রেনজিনা ও তার পরিবার সূত্রে জানা যায়, তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে আফসার প্রায়ই তাকে নির্যাতন করতেন। পৌষ মাসের শীতে তাকে কম্বলও গায়ে দিতে দিতেন না। গত রোববার সকালে আফসার রেনজিনাকে বাবার বাড়ি থেকে কম্বল ও টাকা আনার জন্য চাপ দেন। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে ঝগড়া হয়। এরপর রাতে খাওয়া শেষে রেনজিনা তিন সন্তান নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। সোমবার ভোর ৪টার দিকে আফসার তাকে ডেকে তোলেন এবং আগুন পোহানোর প্রস্তাব দেন। রেনজিনা এ প্রস্তাবে অসম্মতি জানিয়ে ফের ঘুমাতে যান। এ সময় আফসার তাকে মারধর শুরু করেন। এক পর্যায়ে তাকে একটি রুমে নিয়ে আটকে রাখেন। কিছুক্ষণ পর বোতলভর্তি পেট্রোল এনে রেনজিনার মাথা ও শরীরে ঢেলে দিয়ে অগ্নিসংযোগ করেন। এ সময় তার চিৎকারে প্রতিবেশী কয়েকজন ঘটনাস্থলে এসে পানি ঢেলে আগুন নেভায়। ততক্ষণে রেনজিনার মাথা, চোখ, গলা, বুক, পিঠ ও বাঁ হাত সম্পূর্ণ দগ্ধ হয়ে যায়।

প্রতিবেশীরা সকালেই তাকে সন্দ্বীপ মেডিকেলে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাবার পরিবারকে খবর দেয়। খবর পেয়ে ভাই দিদার উদ্দিন ও রহমত উল্যাহ তাকে মঙ্গলবার সকালে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ঢাকায় পাঠানো হয়।

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ও মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহাবুবুল আলম চৌধুরী সমকালকে বলেন, ওই গৃহবধূর পুরো মাথা, একটি হাত, পিঠ ও বুক দগ্ধ হয়েছে। রোগীর অবস্থা ভালো নয় বলে তিনি জানান। সুত্র: সমকাল।

 

‘ব্যাকবেঞ্চার সবুজ’


মেহেদী আরিফ


আমি আর সবুজ, আমরা একই ক্লাসে পড়তাম। সবুজ খুব দুরন্ত ছিল, তেমন পড়া পারতো না। ক্লাসের সবচেয়ে দুষ্ট ছেলে হিসেবে ওর সুনাম ছিল। মেধাবী ছিল সে, কিন্তু পড়া করে ক্লাসে আসতো না। ওকে দেখলেই ক্লাসের সব ছেলেমেয়েরা অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিতো, কেউ পাশে বসতে নিত না। এতে ওর অবশ্য মন খারাপ হতো না, সয়েই গিয়েছিল একরকম। আমি ক্লাসে ফাস্ট বয় ছিলাম। বোধকরি সব শিক্ষকরা আমাকে অনেক বেশি আদর করতেন। কিন্তু সবুজের সাথে সখ্যতা তারা মেনে নিতে পারেন নি। আমাকে সবসময় হেড স্যার কাদের মিয়া সংকেত করে দিতেন যাতে আমি সবুজের সাথে না মিশি। কিন্তু কে শোনে কার কথা!
আমার সাথে সবুজের সখ্যতা কিভাবে হয়েছিল তার একটা ছোট্ট ইতিহাস আছে। আমি তখন ফাইভে পড়ি। সাধারণত স্কুল ছুটির পর স্কুলের পাশের কালভার্টের পাশে দাঁড়িয়ে অন্যদের মাছ ধরা দেখতাম। কত মাছ! পুটি, টেংরা, শোল, বাইন, চিংড়ি, কৈ। আমরা তন্ময় হয়ে দেখতাম। হঠাৎ একদিন আমার স্কুল ব্যাগ কালভার্টের উপর থেকে পড়ে গেল পানিতে। আমি চিৎকার করে উঠলাম। তখন পুরো বর্ষার মৌসুম চলছে। পানি দুকূল ছাপিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যেন। যে খালে ব্যাগ পড়েছে ওখানে পানির স্রোত খুব বেশি। আমার ব্যাগ ভেসে যাচ্ছে, অথচ কেউ পানিতে নামার কোন ইচ্ছায় পোষণ করছে না। আমি সম্পূর্ণ নিরুপায়। দুচোখ বেয়ে আমার অশ্রুর ফোয়ারা নেমেছে। হঠাৎ দেখি একজন পানিতে লাফ দিয়েছে। এ কারণে শোরগোল পড়ে গেলো। এত পানিতে যে কেউ ডুবে যাবে, তাই আগে কেউ সাহস করে নামেনি। কিয়ৎক্ষণ পরে উপলব্ধি করলাম এতো আর কেউ নয়, ক্লাসের দুরন্ত ছেলে সবুজ। প্রায় আধা কিলোমিটার দূর থেকে সাঁতরিয়ে আমার ব্যাগ উদ্ধার করেছিল সে। আমার ব্যাগের ভিতরের বইগুলি অনেক ভিজে গিয়েছিল বটে কিন্তু আমি সবকিছু পেয়েছিলাম। এরপর থেকে সবুজের সাথে আমার বন্ধুত্ব। মিতুল নামে আমার এক ক্লাসমেট ছিল যে একদিন আমার একটি কলম চুরি করেছিল। আমি খুব মন খারাপ করে বসে আছি। মিতুল যে কলম চুরি করেছিল তা আমি পরে জেনেছিলাম। সে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির ছেলে হওয়াতে কোন বড় ধরনের অপরাধ করেও প্রায়ই মুক্তি পেত। আবার ক্লাসে তার রোল নম্বরও ছিল দুই। কিভাবে তার রোল দুই হতো বারেবারে তার গাণিতিক হিসাব করার মত ক্ষমতা আমার ঐ ক্ষুদ্র বয়সে হয় নি। যাইহোক, কলম চুরির ঘটনা সবুজ জেনেছিলো। মিতুলের কাছে সবুজ ঐ কলম দেখার পর ওকে বলেছিল, ” কিরে, লালমিয়া! কলম পাইলি কই?” মিতুলকে সবুজ লাল মিয়া বলে ডাকতো হরহামেশাই। এর জন্য স্যারদের কাছে কত বকাই না খেয়েছে সে। মিতুল ঢং করে বলল, “আমার কি কওয়া লাগবে নাই তোর?” এই কথা শোনামাত্র মিতুলের কানের নিচে সশব্দে দুইটি চড় বসিয়ে দিল সে। মিতুলের তীব্র কান্নার চিৎকারে হেডস্যার সহ অন্যান্য স্যারেরা দৌঁড়ায়ে আসলেন। কান্নার হেতু আবিষ্কারে তারা অপারেশন সার্চলাইট শুরু করলেন। অবশেষে যখন জানতে পারলেন যে, সবুজই নাটের গুরু তখন হেডস্যার জোড়া বেত দিয়ে তার পিঠে পাঁচটি কসিয়ে দিলেন। সবুজ কাঁতরাচ্ছে মার খেয়ে, অন্যদিকে মিতুল কান্না থামিয়ে পুতুলের মত বসে আছে।
স্কুল ছুটির পর সবাই বাড়িতে চলে গেল, গেল সবুজও। প্রায় এক সপ্তাহ তার কোন হদিস মিলল না। আমাদের বাড়ি আরেক পাড়ায় হওয়াতে তাদের বাড়িতে যাওয়া কষ্টকর হলো। ক্লাসের ফাস্ট বয় হওয়াতে আমাকে অনেক নিয়মনীতি মেনে চলতে হতো পরিবারে। সবার আশা ছিল আমি দেশের সবচেয়ে সেরা মানুষ হই। তাই সবুজদের মত বখাটে ছেলের সাথে আমি মিশি এটা পরিবার কখনও চাইতো না। তারপরও স্কুলের ক্লাস শেষ করে অপুকে নিয়ে চলে গেলাম সবুজদের বাড়িতে। একটা বিশাল বাঁশ বাগানের পর দিঘি, তারপর সবুজদের বাড়ি। বাঁশ বাগানের মধ্য দিয়ে খস খস আওয়াজ করে হেঁটে চলেছি আমি আর অপু। সবুজদের বাসায় কখনও যাই নি আমি। অনেক সময় লাগলো ওর বাসায় পৌঁছাতে। বিছানায় সবুজ কাতরাচ্ছে! দূর থেকে কাতরানোর আওয়াজ অনুসরণ করে তার বাসায় পৌঁছালাম। আহ্ কত ব্যথা পেয়েছে বেচারা ছেলেটা! আমরা যাওয়ার সাথে সাথে ওর মা পিড়ি ঠেলে দিলেন। আমি ভয়ে ভয়ে বসলাম কিন্তু অপু ভীতুর ডিমটা বসলোই না। ও কাঁপছিলো যেন। হঠাৎ করে সবুজ চিৎকার করে অপুকে বলল, “বস্! ভীতুর ডিম, তা না হলি তোরে ভেজি খেয়ি ফ্যালবো।” এ কথা শুনে অপু পালিয়ে চলে যাওয়ার উপক্রম। অমনি আমি আমার ছোট হাত দিয়ে ওর ব্যাগ টেনে ধরলাম, কোনো মতে ওকে বসালাম পিড়িতে। সবুজ বকবক করেই চলেছে, আর ওর মা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। আমি আন্টিকে স্বান্তনা দিয়ে বিদায় নিলাম। ঐ দিন বাড়ি ফেরার পর আমার উপর দিয়ে টর্নেডো বয়ে গেল যেন। ঠিক কি ঘটেছিল তা না জানলেও চলবে। তবে এতটুকু বলে রাখি, আমার নাক দিয়ে অনেক রক্ত পড়েছিল।
প্রতিদিন স্কুলে গিয়ে আমি আগে খুঁজতাম সবুজকে। দিন পনেরো পর ঘাড়ে ব্যাগ নিয়ে একটা ছেলেকে হাঁটতে হাঁটতে স্কুল অভিমুখে আসতে দেখলাম। সে আর কেউ নয়, সবুজ! অন্য দিনের মত তার মাঝে চঞ্চলতার কোনো চিহ্ন পেলাম না আজ। হেতু না খুঁজে পেয়ে বেশ অবাক হলাম। ক্লাসে সবার পিছনে বসলো সে। বাংলা ক্লাসে হেডস্যার প্রবেশ করেই সবুজের খোঁজ নেওয়া শুরু করলেন। তিনি বললেন,”সেই জানোয়ারটা কোথায়?” সবুজ কোনো উত্তর না করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে গেল। হেডস্যার কটাক্ষ করে বললেন,”বসে পড়ো শুদ্ধোধন!” সবুজ একবারও স্যারের দিকে তাকালো না। ওর মনটা খুব খারাপ দেখে আমার মনটা খুব খারাপ হল। কারণ সবুজ যতই দুষ্টামি করুক অন্যদের সাথে, ও আমার খুব প্রিয় বন্ধু। ক্লাস শেষে বাড়ি ফেরার পথে সবুজকে আস্তে আস্তে বললাম,”সবুজ! তোর মন খারাপ?” সবুজ যা শোনালো তাতে আমার মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। সবুজের মাকে ওর বাবা খুব মারধোর করে যা সবুজের মোটেও সহ্য হয় না। নিজের বাবা তো, তাই বাবার গায়ে হাত তোলে না ও। কিন্তু ওর হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়, মাথায় খুন চাপে কিন্তু মায়ের দিকে তাকিয়ে ও কিছুই করতে পারে না। সবুজ আমাকে বলল,” দোস্ত, তুই আমার হেল্প করবি? আমাকে তে কেউ ভালবাসে না! তুই আমার পড়ালিখায় হেল্প করবি? আমি বড় হয়ি একজন পুলিশ হবো, আমার আব্বার ধরি নে থানায় বন্দি করি রাখবো”। এ কথা বলে ও আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি ওকে হেল্প করার আশ্বাস দিলাম।
ক্লাসে চুপচাপ অবস্থায় থাকে সবুজ। খুব দরকার ছাড়া কোন কথা বলে না সে। ক্লাসের সবাই ওকে খুব করে পঁচাতো। কিন্তু ও কাউকে কিছুই বলতো না, শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকতো। আমি ওকে পাশে বসাতাম, কিন্তু স্যাররা এসে ওকে শেষ বেঞ্চে বসিয়ে দিতো। আমারও ভীষণ খারাপ লাগতো কিন্তু কিছুই করতে পারতাম না। ওকে শেষ বেঞ্চেই বসতে হবে এমন একটা রীতি হয়ে গিয়েছিলো। আমি ওকে হেল্প করার চেষ্টা করতাম খুব। ছেলেটার মেধা আছে বেশ, পড়লে ও পারবে। কিন্তু মিতুল ওকে দেখলেই মুখ বাঁকা করে একটা কটাক্ষের হাসি হাসতো, ওর গায়ের পরে গিয়ে পড়তো যেন আর বলতো, “আমার বাপ স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, আমার যা ইচ্ছা তাই করবো। পারলি তুই কিছু করিস! আর শোন! যদি আমার কিছু করিস তাইলে সান্ডে মান্ডে ক্লোস করি দোবো”। আমার একদম সহ্য হত না মিতুলের কাজকর্ম। কিন্তু সে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির ছেলে বলে কথা!
সবুজ সবকিছুকে মুখ বুজে সহ্য করে পড়াশুনা করতে লাগলো। আমি আর সবুজ টিফিন পিরিয়ডে স্কুলের দোতলা ছাদের পর উঠে সিংগারা খেতে খেতে গল্প করতাম। সবুজ খুব সুন্দর সুন্দর গল্প করতো। ওর নানার বাড়ির গল্প শুনে আমি হতবাক হয়ে যেতাম। সবুজের মা খুব সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে, ভাগ্য দোষে এক টাউটের সংসার করছে জেনে আমার ও খুব খারাপ লাগলো। ওর বাবা একজন মাদকসেবী। জমিজমা বিক্রি করে মদের আড্ডায় পড়ে থাকে। অনেক জমি বেচে এখন তারা নিঃস্ব প্রায়। প্রায়ই তাই ওর মাকে মারধর করে, বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য চাপ দিতে থাকে। জামাইয়ের এই অাচরণের কারণে সবুজের মামাবাড়ি থেকে কেউ আসতো না তাদেরকে দেখতে। ওর মা খুব কষ্ট সহ্য করে স্বামীর সংসার করে। সবুজের মনের আকাশের কালো মেঘ সরে না যেন।
ডিসেম্বর মাস। স্কুলের বিজয় দিবসের জন্য ও প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রাকটিস সেশনে সবুজ মিতুলের সাথে মারামারিতে লিপ্ত হল। পরে হেড স্যার এসে অন্যায়ভাবে সবুজকে মারলেন। এক বারের জন্যও উনি জানতেই চাইলেন না যে আসল ঘটনা কি! বেধড়ক পিটাতে লাগলেন আর বললেন,” ব্যাকবেঞ্চার কোথাকার! ভালো ছেলেদের গায়ে হাত দিতে পয়সা লাগে না, না?” মিতুলকে হেডস্যার কিছুই বললেন না দেখে স্যারের প্রতি আমার সম্মান ও ভক্তি কমে গেলো, খুব ব্যথিত হলাম। আমি সবুজকে একপাশে নিয়ে ওর কান্না থামানোর চেষ্টা করছি। সবুজের কান্না দেখে আমারও খুব কান্না পেলো। শিক্ষকদের থেকে এমন একপক্ষ সমর্থন করার সংস্কৃতি আমার ভিতরটাকে দারুণভাবে আন্দোলিত করলো। হেডস্যার এর আগেও সবুজকে কত অন্যায়ভাবে মেরেছেন। তাঁর দেখাদেখি অন্যান্য স্যাররাও সবুজকে কত বার ভৎসনা করেছেন। এগুলি আমার কাছে শিক্ষকসুলভ আচরণ বলে মনে হত না। শিক্ষকতা পেশাকে খুব ঘৃণা করতে লাগলাম।
বিনা বেঘে বজ্রপাতের মত এক ঘটনা ঘটে গেলো। সবুজের মা আত্মহত্যা করেছে। আমার ক্লাসমেট কবিরের মায়ের থেকে সংবাদ শুনে সবুজদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম আমি আর অপু। ভীতুর ডিম অপুর হাতে লাইট। রাত তখন সাড়ে নয়টা বাজে। আমি আর অপু বাঁশবাগানের ভিতর দিয়ে দৌঁড়াইতে দৌঁড়াইতে চলে আসলাম সবুজদের বাড়িতে। কান্না আর প্রিয়জনদের আহাজারিতে আকাশ বাতাস মুখরিত যেন। সবুজ নির্বাক! পৃথিবীর কোনো এক অজানা শক্তি তাকে স্থিমিত করে দিয়েছে। কোনো সুমধুর ডাক সবুজকে ওর নির্জীব অবস্থা থেকে সজীব করবে না। আমি আর অপু ওকে জড়িয়ে ধরলাম। সবুজ কান্নার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। আহ! কোন শক্তি বলে আমরা সবুজকে হাসিতে ভরিয়ে রাখবো। এ ব্যথার কি কোন ওষুধ আছে! সবুজের বাবাকে দেখে ভীষণ মেজাজ গরম হলো। সিগারেটে টান দিতে দিতে আত্মীয় স্বজনদের সাথে স্বাভাবিকভাবেই কথা বলে চলেছেন যেন। যেন বাসায় বিয়ের রমরমা আয়োজন চলছে।
সবুজের মায়ের মৃত্যুর তেরো দিন পর ওর নানা এসে ওকে নিয়ে গেলো। ও যাওয়ার সময় একটা চমৎকার কম্পাস দিয়ে গেল আর বলে গেল, “আমাকে মনে পড়লে কম্পাসটির দিকে তাকাবি, দেখবি তুই আর আমি কত কাছাকাছি।” এতটুকু ছেলের এই বয়সে এমন অনুভূতি সেদিন যেমন বিস্মিত করেছিল আজ করে তার চেয়েও বেশি। ও নানাবাড়িতে যাওয়ার পর অনেক দিন ওর কোন খোঁজ খবর পেলাম না। হঠাৎ একদিন একটা চমৎকার চিঠি পেলাম। তার চিঠিটা এমন:
প্রিয় ভদ্র ছেলে,
আশাকরি, ভালো আছিস। তোর পড়াশুনা কেমন চলছে রে? তুই না অসাধারণ শিক্ষক হবি! তবে শিক্ষক হলে হেড স্যারের মত হবি না। আচ্ছা! মিতুল কেমন আছে রে? হেড স্যার, মিতুল, ওদেরকে ভীষণ মিস করি রে। জানিস, এখানে আমার কেউ মারে না, কেউ বকে না, মিতুলের মত কেউ গায়ে ধাক্কা মারে না। ঐ দিন গুলো খুব মিস করি, জানিস? এখানে সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। কেউ তোর মত করে পাশে বসতে বলে না, কেউ শোনে না সকালে ভাত খেয়েছি কি না, কেউ ভুলেও জিজ্ঞাসা করে না আমার মা কেমন আছে! তোদের অনেক মিস করি। তোকে আমি কখনও ভুলতে পারবো না। তুই আমার জীবনের সবচেয়ে সেরা বন্ধু।
ভালো থাকিস বন্ধু। অনেক ভালো। আচ্ছা আমার কম্পাসটা ঠিকঠাক মত আছে কি?
ইতি———
ব্যাকবেঞ্চার সবুজ।
চিঠিটি পড়ার পর সেদিন অনেকক্ষণ কেঁদেছিলাম আর ভেবেছিলাম সবুজ কত পরিণত হয়েছে আচার-আচরণ, চিন্তা-চেতনায়।
এক যুগ কেটে গেছে সবুজের সাথে আর কোনো যোগাযোগ নেই আমার। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম। নতুন পরিবেশ, বন্ধুবান্ধব পেয়ে আমি সবুজকে ভুলেই গিয়েছিলাম। হঠাৎ একদিন বাক্সের মধ্যে রাখা কম্পাসটার দিকে নজর যেতেই বুক কেঁপে উঠলো। সবুজকে ভীষণ মিস করতে লাগলাম। সবচেয়ে অবাক হলাম যে, জীবনের খেলাঘরে ইতোমধ্যে একটি যুগের বেশি পার হয়ে গেছে অথচ সবুজের কোনো খোঁজ খবর পেলাম না। পড়াশুনা শেষ করে আমি শিক্ষকতা করি রসুলপুর শহীদ স্মৃতি কলেজে। নিজেকে নিয়ে অনেক ব্যস্ত সময় কাটাই। আমাদের স্কুলের হেড স্যারের বিদায় অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে আমাকে দাওয়াতপত্র পাঠানো হয়েছে। দিনটি ছিল রবিবার। আমি গিয়েছিলাম আমাদের প্রাইমারী স্কুলে হেডস্যার কাদের মিয়াকে বিদায় জানাতে। বিদায় অনুষ্ঠানে জেলার গণ্যমান্য অনেক ব্যক্তি হাজির হয়েছেন। একজন এএসপি অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি। খুব স্মার্ট দেখাচ্ছিল তাকে। নেম প্লেটে লেখা আফতাব। আমি একটা বিষয় অবলোকন করলাম যে, হেড স্যার চেয়ারে না বসা পর্যন্ত এএসপি সাহেব চেয়ারে বসছেন না। হেডস্যার ওনাকে চেয়ারে বসতে বললেন কিন্তু উনি বসছেন না, বরং প্রধান অতিথির আসন ছেড়ে উনি বাইরে এসে দাঁড়িয়েছেন। হেড স্যার তখন বললেন,”আমি সামান্য প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক, আপনি বড় পুলিশ অফিসার! প্লিজ, বসেন না, স্যার, প্লিজ”। এএসপি আফতাব বললেন,” আপনি না বসলে যে আপনার স্টুডেন্ট বসতে পারে না, স্যার”।
“স্টুডেন্ট! তুমি কে বাবা?” হেডস্যার বললেন।
আফতাব বললেন,” আমাকে চিনতে পারেন নি, স্যার? আমি ব্যাকবেঞ্চার সবুজ”!

 

বংশালের রাস্তায় মহিলার গলাকাটা লাশ


নারী সংবাদ


রাজধানীর পুরনো ঢাকার বংশালে রানী (২৮) নামে এক মহিলাকে গলা কেটে হত্যার অভিযোগে সোহাগ (১৯) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই যুবক ও নিহত মহিলা দু’জনেই ড্যান্ডি নামক মাদকে আসক্ত বলে পুলিশ জানিয়েছে।
বংশাল থানার এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাব ইন্সপেক্টর আলাউদ্দিন শেখ গতকাল নয়া দিগন্তকে জানান, গত রোববার ভোর রাতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাছ থেকে সংবাদ পেয়ে ২১/১ নাজিরাবাজার ওয়ালটন গলির সামনের রাস্তায় পড়ে থাকা রানী বেগম নামে মহিলার লাশ উদ্ধার করে স্যার সলিমুল্লাহ হাসপাতাল মর্গে পাঠাই। তার আগে ওই মহিলার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে তার কথিত স্বামী সোহাগকে জিপিও এলাকা থেকে গ্রেফতার করি।
সে জানায়, তারা দু’জনে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ওই এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছিল। নিহত রানীর মা তার মেয়ের বিয়ে হয়নি বলে জানালেও সোহাগ দাবি করছে তিন বছর আগেই তাদের বিয়ে হয়েছে। গ্রেফতার সোহাগের বাবার নাম হাফেজ। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে সে বলে, কথিত স্বামী-স্ত্রী দু’জনই ড্যান্ডি মাদকে আসক্ত। লাশের সুরতহাল করার সময় নিহত মহিলার বুকে মাদক ড্যান্ডির কৌটা পাওয়া গেছে। পুলিশ জানায়, গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে সোহাগ স্বীকার করেছে সে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে ধারালো ব্লেড ছুরি চালিয়েছে। সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

চিকেনের মচমচা রেসিপি

চিকেন মোমো

উপকরণ

১. ময়দা ২ কাপ,
২. তেল ২ টেবিল চামচ,
৩. মুরগির কিমা দেড় কাপ,
৪. রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ,
৫. আদা কুচি ৩ চা-চামচ,
৬. পেঁয়াজপাতা কুচি ২টি,
৭. লবণ স্বাদমতো
৮. সয়াসস ২ চা-চামচ,
৯. গোলমরিচ গুঁড়া আধা চা-চামচ,
১০. লেবুর খোসা কুচি আধা টেবিল চামচ,
১১. মাখন ১ টেবিল চামচ।

প্রণালি

  • ময়দার সঙ্গে আধা চা-চামচ লবণ, তেল ও পরিমাণমতো পানি মিশিয়ে ময়ান দিতে হবে।
    কিমার সঙ্গে পেঁয়াজ, আদা-রসুন কুচি, সয়াসস, লবণ ও গোলমরিচ গুঁড়া মিশিয়ে মেখে রাখতে হবে।
  • ফ্রাইপ্যানে মাখন গলিয়ে কিমার মিশ্রণ অল্প আঁচে রান্না করুন।
  • কিমার পানি শুকিয়ে গেলে পেঁয়াজপাতার কুচি দিয়ে নেড়ে আরও ২ থেকে ৩ মিনিট ঢেকে রাখুন।
  • এবার ঢাকনা খুলে কাঁচা মরিচ কুচি ও লেবুর খোসার কুচি দিয়ে নেড়ে আবার ঢেকে দিয়ে মৃদু আঁচে দুই মিনিট রাখুন।
  • এদিকে ময়দার খামি থেকে ছোট আকৃতির রুটি বেলুন। রুটির কিনার বেশি পাতলা থাকবে।
  • রুটির মাঝখানে ১ টেবিল চামচ করে কিমার পুর দিয়ে অর্ধেকটা মুড়ে দিয়ে ও পেঁচিয়ে এনে বাকি অর্ধেক চেপে দিন, যেন মুখ খোলা না থাকে।
  • সব গুলো মোমো তৈরি হয়ে গেলে মাইক্রোওয়েভ কুকারে বা পানি ভর্তি বড় পাতিলের মুখে কাপড় বেধেও ভাপ দিয়ে নিতে পারেন। পাতিলের মুখে ভাপ দিতে হলে মিনিট দশেকই যথেষ্ট।

পরিবেশন

ভালোভাবে ভাপ দেয়া হলে নামিয়ে এন সসের সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করুন মজাদার মোমো।

চিকেন অনথন

উপকরণ

১. ১ কাপ ময়দা
২. ১/২ কাপ কর্ন ফ্লাওয়ার,
৩. ২ চা চামচ মাখন,
৪. লবণ স্বাদমতো,
৫. ৩/৪ কাপ গরম পানি,
৬. ১ কাপ মুরগির কিমা,
৭. ১ চা চামচ তিলের তেল,
৮. ১/২ কাপ বাঁধাকপি,
৯. ২টি ডিমের কুসুম,
১০. ১ চা চামচ সয়াসস,
১১. ১ টেবিল চামচ হইসিন সস (ইচ্ছা),
১২. ১ মুঠো ধনিয়া পাতা,
১৩. ১ টেবিল চামচ পেঁয়াজ পাতা কুচি,
১৪. ১ টেবিল চামচ গাজর,
১৫. ১ চা চামচ কাঁচামরিচ কুচি,
১৬. ১ চা চামচ আদাকুচি,
১৭. ১ চা চামচ রসুন কুচি,
১৮. তেল ভাজার জন্য,
১৯. ১/২ চা চামচ গোলমরিচ গুঁড়া।

প্রণালি

  • প্রথমে ময়দা, কর্ন ফ্লাওয়ার, মাখন, লবণ এবং গরম পানি দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে ডো তৈরি করে নিন।
  • এখন একটি পাত্রে মুরগির মাংস বাটা, তিলের তেল, লবণ, বাঁধাকপি কুচি, দুটি ডিমের কসুম, সয়া সস, হইসিন সস, ধনিয়া পাতা কুচি, পেঁয়াজ পাতা কুচি, গোলমরিচ গুঁড়া, গাজর কুচি, কাঁচামরিচ, আদা কুচি, রসুন কুচি দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন।
  • এখন মাংসের কিমার মাঝে অল্প একটু পানি দিয়ে মিশিয়ে নিন।
  • এখন ময়দার ডো দিয়ে ছোট ছোট রুটির মত পাতলা অন্থন শিট তৈরি করে নিন।
  • শিটের মাঝখানে মুরগির কিমা দিয়ে আঙ্গুলে পানি নিয়ে শিটের চারপাশে লাগিয়ে দিন।
  • এবার শিট একপাশ থেকে ভাঁজ করে কিমার অংশটুকু ঢেকে মুড়িয়ে নিন।
  • এরপর শিটের মাথা দুটোর মুখ মাঝখানে এনে লাগিয়ে দিন।
  • তারপর গরম তেলে চিকেন অনথন দিয়ে দিন।
  • সোনালি রঙ হয়ে এলে নামিয়ে ফেলুন।

পরিবেশন

সোনালি রঙের চিকেন অনথন একটি বাটিতে সস এর সাথে গরম গরম পরিবেশন করুন।

রেসিপি সুত্র

বাংলাদেশি রেসিপি

 

ব্যাংকক বিমানবন্দরে সৌদি নারী আটক


নারী সংবাদ


ব্যাংকক বিমানবন্দরে আটক এক সৌদি নারী বলেছেন, দেশে পাঠানো হলে তাকে হত্যা করা হবে।
রোববার ১৮ বছর বয়সী ওই তরুণীকে থাইল্যান্ডে ঢুকতে দেয়া হয়নি।
সৌদি আরবের সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার তদন্তের ব্যাপারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। গতবছর সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার ঘটনায় সৌদি আরবে বিরুদ্ধে নতুন করে মানবাধিকার লংঘন করা হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক মহলে নিন্দার ঝড় উঠে। খবর এএফপি’র।
রাহাফ মাহাম্মদ আল-কুনুন নামের ওই তরুণী বলেন, তিনি সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর সৌদি ও কুয়েতি কর্মকর্তারা তাকে থামিয়ে তার কাছ থেকে ভ্রমণ কাগজপত্র জোর করে কেড়ে নেয়।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তার এই দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘তারা আমার পাসপোর্ট কেড়ে নিয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘তার পুরুষ অভিভাবক তার অনুমতি ছাড়া ভ্রমণ করার জন্য তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন।’
কুনুন বলেন, তিনি তার পরিবারের কাছ থেকে পালাতে চাইছিলেন। তার পরিবারের সদস্য তার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়।
তিনি আরো বলেন, ‘আমি চুল কাটায় আমার পরিবার আমাকে ছয় মাস ধরে একটি রুমে আটকে রাখে।’
সৌদি তরুণী বলেন, তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হলে তাকে কারাগারে আটক রাখা হবে।
তিনি বলেন, ‘আমি শতভাগ নিশ্চিত সৌদি জেল থেকে বেরুবার পর যত দ্রুত সম্ভব আমাকে হত্যা করা হবে।’
থাইল্যান্ডের ইমিগ্রেশন প্রধান সুরাচাতে হাকপার্ন বলেন, রোববার কুয়েত থেকে একটি ফ্লাইটে করে থাইল্যান্ডে পৌঁছলে তাকে দেশটিতে ঢুকতে দেয়া হয়নি।
তিনি বলেন, ‘ওই তরুণীর রিটার্ন টিকিট অথবা অর্থ নেই।’
তিনি আরো জানান, রাহাফকে বিমানবন্দরের একটি হোটেলে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বিয়ে না করার জন্য তিনি তার পরিবার থেকে পালিয়ে এসেছেন।’
থাই কর্তৃপক্ষ ঘটনাটির ব্যাপারে সৌদি দূতাবাসকে বিষয়টি অভিহিত করেছে।
কুনুন বলেন, তিনি অস্ট্রেলিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ার জন্য সেখানে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সুবর্ণ ভূমি বিমানবন্দরে পৌঁছলে সৌদি ও কুয়েতি দূতাবাসের প্রতিনিধিরা তাকে আটক করে।
তিনি টুইটারে জানান, ‘আমি বাঁচতে চাই।’
তিনি জানান, তার একটি অস্ট্রেলীয় ভিসা থাকার পরও তার বাবা সৌদি দূতাবাস কর্মকর্তাদের জানান যে তিনি একজন মানসিক রোগী।
কুনুন, বলেন- ‘আমি বিমানবন্দর থেকে বের হতে পারিনি। আমি চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু নিরাপত্তা কর্মকর্তারা আমাকে পর্যবেক্ষণ করছেন।’ অভিবাসন প্রধান সুরাচাতে বলেন, সোমবার সকালে কুনুনকে সৌদি আরব পাঠিয়ে দেয়া হবে। তবে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, থাই কর্তৃপক্ষকে ওই কিশোরীকে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর এর আশ্রয় নিয়ে দিতে হবে। সুত্রঃ বাসস

 

গল্পে গল্পে প্যারেন্টিং : একটি ঘড়ি


কানিজ ফাতিমা


একদেশে একটা ছোট্ট ছেলে ছিল – ওর নাম ছিল রনি। তার বয়স ছিল ছয় বছর। রনির বোনের নাম মিনি। রনির অনেক কিছুর শখ ছিল। যেমন সে খেলতে পছন্দ করত, ছবি আঁকতে পছন্দ করত, বই পড়তে পছন্দ করত; আর সব থেকে বেশী পছন্দ করত বন্ধুদের সঙ্গে মজা করতে। প্রতি গ্রীষ্মের ছুটিতে সে তার বন্ধুদের নিয়ে অনেক অনেক মজা করত। ঈদ ছিল তার খুবই প্রিয়। কারণ ঈদের দিনে তারা সবাই মিলে অনেক মজা করতে পারতো ।

রনি খুব ভাল ছেলে। কিন্তু তার ছোট একটা সমস্যা ছিল- সে তার বাবা-মায়ের টেবিল ঘড়িটা নিয়ে খেলতে চাইত। রনি তার বাবা-মার রুমে গেলেই ঘড়িটির লাল রঙের কাটা দু’টির দিকে তাকিয়ে থাকতো। তার মনে হতো কাটা দু’টি খুবই ধীরে ধীরে ঘুরছে । তাই রনি ঘড়ির চাবি ঘুরিয়ে কাটা গুলোকে জোরে ঘুরিয়ে দিত। রনি প্রায়ই তার বাবা-মায়ের ঘড়ি নিয়ে চাবি ঘুরানো খেলা করত। এই খেলাটি ছিল তার অনেক পছন্দের একটা খেলা। কিন্তু যখন তার বাবা-মা এটা পছন্দ করতেন না, তারা রনির হাত থেকে ঘড়িটি সরিয়ে নিতেন আর বলতেন, “রনি, আর কখনও ঘড়ি নিয়ে খেল না। এটা খেলনা না। এটা কাজের জিনিস। ঘড়ি নিয়ে খেললে আমরা সঠিক সময় বুঝতে পারবো না।”

বাবা-মায়ের সমস্যা হোক তা রনি চাইতো না। কিন্তু সে ঘড়ি নিয়ে খেলতে এতই মজা পেতো যে সুযোগ পেলেই সে এই কাজ করতো।

তখন ঈদের মাত্র দুই দিন বাকী । রনি মিনির সঙ্গে খেলছিল আর তখনই মায়ের ফোন বেজে উঠলো।

মা ফোন ধরলেন। “আস্সালামু আলাইকুম।”

“ও হ্যাঁ জয়নব, কেমন আছো?…. … …আমি ভাল আছি আলহামদুলিল্লাহ। … … … …রনি এটা শুনে খুবই খুশী হবে। ও এখন পাশের রুমে মিনির সঙ্গে খেলা করছে। দাঁড়াও, আমি ওকে ফোন দিচ্ছি।”

একথা শুনে রনি দৌড়ে মায়ের কাছে চলে আসলো।
“মা, জয়নব আন্টি কি বলছেন?” রনি তার মায়ের কাছে জানতে চাইলো।
“ওমর তোমার সঙ্গে কথা বলবে” রনির মা বললেন।
রনি ফোন নিল এবং বললো “আস্সালামু আলাইকুম।”
ওমর উত্তর দিল, “ওয়ালাইকুম আস্সালাম। তোমার জন্য একটি সুসংবাদ আছে।”
“কি সুসংবাদ?” রনি খুবই উত্তেজিত হয়ে বললো।
“দুদিন পরেই ঈদ । আমি ঠিক করেছি এবারের ঈদে স্পেশাল কিছু করবো।” ওমর বললো
“কি করবে?” রনি জিঞ্জাসা করলো।
“Guess করো তো।” ওমর বললো
রনি চিন্তা করে বললো “তুমি কার্টুন দেখবে” “তুমি পার্কে বেড়াতে যাবে’”
”না”
“তুমি কি আমাকে তাহলে গিফট করবে ?”
“না, তাও না”
“আমি পারছি না”- রনি হার মানলো।
“আমি আমার বাসায় সব বন্ধুদের দাওয়াত করবো। তার পরে সবাই মিলে আনন্দ করবো। তুমি আসবে কিন্তু । সিয়াম , তাদভীন, আহমদ সবাই আসবে।”
রনি তার মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে অনুমতি চাইল, “মা, আমি কি যেতে পারি ?”
মা বললেন, “ঠিক আছে, তুমি যেতে পার।”
“আলহামদুলিল্লাহ” রনি খুবই খুশী হল, বললো,” ওমর আমি আসবো। ইনশাল্লাহ”
ওমরও অনেক খুশী হল। রনি ওমরকে সালাম দিয়ে ফোন রেখে দিল। তারপর মাকে জড়িয়ে ধরে বললো , “এবারের ঈদে অনেক মজা হবে। আমরা সব বন্ধুরা একসঙ্গে মজা করবো। খুবই মজা হবে !”

রনির মা হাসলেন।“হ্যাঁ এটা খুবই আনন্দের। তবে এখনও ঈদের দু’দিন বাকী। এখন অনেক রাত হয়েছে। শুতে যাও।”
রনি তার মাকে চুমু দিল এবং বললো “আস্সালামু আলাইকুম।”
মা বললেন, “ওয়ালাইকুম আস্সালাম। তোমার দাত ব্রাশ করতে ভুলে যেও না।”

রনি বাথরুমে গেল, দাত ব্রাশ করলো, হাত-পা ধুয়ে নিজের বেডরুমের দিকে রওনা হল। পথে সে যখন তার বাবা মায়ের রুমের সামনে এল তখন তার চোখ গিয়ে পড়লো টেবিল ঘড়িটির ওপর। সে ঘড়িটির লাল কাটা গুলো ঘুরতে দেখলো। কাটাগুলো খুবই সুন্দর লাগছিল। সে একটু থামলো -তারপর গুটি গুটি পায়ে ঘড়িটির সামেনে এসে দাঁড়ালো । কাটাগুলো খুবই আস্তে আস্তে ঘুরছে। সে ঘড়ির চাবি ঘুরিয়ে কাটাগুলোকে দ্রুত ঘোরাল। এটা খুবই মজার একটা খেলা। হঠাৎ সে শুনতে পেল তার বাবা বাইরে থেকে ফিরে তার আর মিনির নাম ধরে ডাকছেন। সে দৌড়ে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো।
“আস্সালামু আলাইকুম বাবা”
বাবাও তাকে চুমু দিলেন, “ওয়ালাইকুম আস্সালাম। তুমি এখনো জেগে আছে ?”
বাবা তাকে কোলে করে তার রুমে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলেন।
বন্ধুদের পার্টির কথা ভাবতে ভাবতে রনি ঘুমিয়ে গেল। ঘোমের মধ্যেও সারারাত সে ঈদের পার্টি নিয়ে স্বপ্ন দেখতে থাকলো।
পরের দিন সকালে যখন সে ঘুমিয়ে ছিল তখন খাবার ঘর (ডাইনিং রুম) থেকে সে হুড়োহুড়ির শব্দ শুনতে পেল। সে ঘুম থেকে জাগলো। বিছানায় উঠে বসলো এবং দোয়া পড়ল “আশাহাদু আল্ লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্ম্দার রাসুল আল্লাহ”।
তারপর বিছানা থেকে তাড়াতাড়ি নেমে এক দৌড়ে খাবার ঘরে এলো। তার মা-বাবা ছুটোছুটি করছেন রান্নঘর থেকে বসার ঘর পর্যন্ত।
“কি ব্যাপার ? ”-সে তার বাবাকে জিজ্ঞাসা করলো।
বাবা গোসল খানার দরজা বন্ধ করতে করতে বললেন, “আমার অনেক দেরী হয়ে গেল।”
মা রান্নাঘর থেকে বাবাকে বললেন, “তাড়াতাড়ি করো। আমি সকালের নাস্তা আর দুপুরের খাবার টিফিন বক্সে দিয়ে দিচ্ছি। তাড়াতাড়ি করো। নয়তো তুমি তোমার মিটিং এ ঠিক সময়ে পৌঁছাতে পারবে না।”
রনি রান্না ঘরে গিয়ে তার মাকে বললো-‘আস্সালামু আলাইকুম মা’
“ওয়ালাইকুম আসসালাম,” তার মা তার দিকে না তাকিয়েই বললেন, “ঘড়ি নিয়ে খেলা করা তোমার ঠিক হয়নি। আমরা ঠিক সময় মত জাগতে পারিনি। তোমার বাবার অফিসে যেতে দেরী হয়ে গেল। সে সকালে নাস্তাও করতে পারবে না।”
রনির খুব মন খারাপ হল। সে বলল “আমি দুঃখিত”
মা বললেন, ”ঠিক আছে, মুখ ধুয়ে নাস্তা খাবার জন্য তৈরী হয়ে নাও।”

আগামীকাল ঈদ। আজ রনি ও মিনি তাদের মায়ের সাথে মার্কেটে যাবে এবং ঈদের জন্য অনেক কিছু কিনবে- ঈদের নতুন জামা কিনবে,কাল পার্টিতে বন্ধুদের দেবার জন্য ঈদ কার্ড কিনবে,ওমরের জন্যও কিছু কিনবে। তারা নাস্তা সেরে তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নিল।
সারাদিন রনি অপেক্ষা করলো ঈদের দিনের জন্য। “জান, কাল আমরা কি কি করবো?” রনি মিনিকে জিজ্ঞাসা করলো।
মিনি জানতে চাইলো, “কি করবে ?’
“আমরা লুকোচুরি, মিউজিক, চেয়ার, আর মনোপলি খেলবো।”
মিনি বললো, “তাহলে আমিও যাবো।”
রনি বললো, “ওটাতো আমার বন্ধুদের পার্টি। তুমি কি করবে ?”
মিনি জিজ্ঞাসা করলো, “ওমরের কি বোন আছে ? সে আমাদের জন্য একটা পার্টি করতে পারে না?”
“না, ওমরের বোন নেই” রনি বললো।
“তোমাদের ভাগ্য ভালো। ক’টায় পার্টি শুরু হবে ?” মিনি জিজ্ঞাসা করল।
“৫ টায় শুরু হবে আর ৭ টা পর্যন্ত চলবে। তারপর ওমর ওর দাদার বাড়ী বেড়াতে যাবে” রনি উত্তর দিল।

রনি মাকে বলল, “আমি পার্টিতে কিছু কেক নিতে চাই।মা, তুমি কি আমাকে কিছু কেক তৈরী করে দিতে পারবে ?”
মা বললেন, “তুমি তোমার বন্ধুদের জন্য নিজেই কেক তৈরী করে নিয়ে যেতে পারো। আমি তোমাকে সাহায্য করবো”

রনি এ কথা শুনে তো মহাখুশী, “অবশ্যই আমি নিজেই কেক তৈরী করবো। কী মজা !”
তার মা তাকে পরিমাণ মত ময়দা, তেল, কোকো পাউডার, দুধ ও অন্যান্য উপাদান নিতে সাহায্য করলেন। বাটিতে এ গুলোর সঙ্গে ঘী নিয়ে রনি ভাল করে মিশালো। তারপর সে এগুলোকে কেকের ছাঁচে ঢেলে ওভেনে দিল। মা ওভেন অন করে দিলেন।

রনি উৎসাহ নিয়ে ওভেনের দিকে তাকিয়ে আছে। সে অপেক্ষা করতে থাকলো কখন কেক বেক শেষ হবে। ক্লান্ত হয়ে কতক্ষন পরে সে মিনির সঙ্গে খেলতে চলে গেল।

কিছুক্ষন পরেই তার মা তাকে ডাকলেন, “রনি তোমার কেক হয়ে গেছে, দেখে যাও ।”
রনি আর মিনি এক দৌড়ে রান্না ঘরে এলো, কেকটা দেখতে খুবই সুন্দর হয়েছে। সে গন্ধ নিল। খুবই সুন্দর গন্ধ……..! তার বন্ধুরা কেকটি খুবই পছন্দ করবে।

রাতে যখন বাবা বাসায় এলো সে তাকে তার নতুন জামা দেখলো, ওমরের জন্য কেনা গাড়ীটা ও দেখালো।
তার বাবা বললেন, “মাশা আল্লাহ, ওমর গাড়ীটা খুব পছন্দ করবে।”
তার পর সে তার বাবাকে খাবার ঘরে নিয়ে গেল তার কেক দেখানোর জন্য। বাবা খুবই খুশী হলেন। রনিতো খুব ভাল রান্না শিখেছে।
রাতের খাবার এর জন্য তারা সবাই একসাথে খাবার টেবিলে বসলো। রনি পার্টির কথা, খেলার কথা, গিফটের কথা বলতেই থাকলো। খাবারের পর বাবা তাকে সাহায্য করলেন উপহারগুলো প্যাকটে করতে। এরপরে তারা বড় বড় টুকরো করে কেকটা কাটলো ।
রনি খুবই খুশী, আজ সে অনেক কিছু করেছে।
বাবা তাকে শোবার ঘরে দিয়ে ঘুমাতে গেলেন। রনি রাতের কাপড় পরে দাত ব্রাশ করে শুতে এল। কাল ঈদ। সে ভোরে উঠে ঈদের নামাজে যাবে। সারারাত সে স্বপ্ন দেখলো- সে তার বন্ধুদের সঙ্গে অনেক মজা করছে, কেক খাচ্ছে, আর খেলা করছে।

ঈদের দিন সে খুব সকালে ঘুম ভেঙ্গে জাগল- দোয়া পড়ে সে বিছানা থেকে নেমে এল। সে তার বাবা-মায়ের রুমে গিয়ে দেখলো তারা ঘুমিয়ে আছেন। সে খাবারের ঘরে গিয়ে নিজের কেকটা দেখলো। তারপর নিজের রুমে এসে ঈদের জামাটি দেখলো। এটা পরে সে আজকে পার্টিতে যাবে। সে মনে মনে ভাবল আজ সে সবার আগে পার্টিতে যাবে।
আজ বিকালেই পার্টি । কখন যে বিকাল হবে! কখন যে সে পার্টিতে যাবে! তার আর দেরী সইছে না।
তার বাবা-মা ঘুম থেকে উঠলেন। বাবা মিনি ও রনিকে গোসল করিয়ে দিলেন। তারা সবাই নতুন কাপড় পরে ঈদের নামাজ পড়তে গেল। ঈদগাহে নামাজ শেষে রনি তার কিছু বন্ধুদের দেখতে পেল- তারা সবাই সবাইকে ঈদ মোবারক জানিয়ে কোলাকুলি করল। তারপর তারা গরীব মানুষদের কিছু দান করল। শেষে তারা বাসায় ফিরে এল।

এরপর বাবার কিছু বন্ধু বেড়াতে এল। বাবা তাদের সঙ্গে কোলাকুলি করলেন আর মা তাদের জন্য কিছু মজার খাবার তৈরী করে দিলেন। রনি ও রনির বাবা টেবিলে খাবার সাজাতে তার মাকে সাহায্য করলো। রনির বাবা খুবই ভাল। সে সব কাজে রনির মাকে সাহায্য করে। রনিও তার মাকে ঘরের কাজে সাহায্য করে। রনিকে তার বাবা বলেছে আমাদের নবীও ঘরের কাজে সাহায্য করতেন।

দুপুরে রনির মায়ের কিছু বান্ধবী এল। মা তাদের দেখে খুবই খুশী হলেন। তাদের সঙ্গে বসার ঘরে বসে গল্প করলেন। রনি ও রনির বাবা তাদের জন্য টেবিলে খাবার সাজালেন। এরপর রনি মিনির সঙ্গে খেলতে চলে গেলো । কিছুক্ষণ খেলার পরে সে তার বাবাকে জিজ্ঞাসা করলো- “এখন কি পার্টির সময় হয়েছে ? আমি কি তৈরী হব ?”
”না রনি, এখনও অনেক সময় বাকী। তোমাকে আরেকুটু ধৈর্য্য ধরতে হবে। তুমি এই বইটা আমার ঘরে একটু রেখে আস, প্লীজ ।”
সে যখন বই রেখে নিজের রুমের দিকে আসছিল তখন সে তার বাবা-মায়ের ঘড়িটি দেখতে পেল। তার লাল কাটা গুলো টিক্ টিক্ করে ঘুরছে। কিন্তু খুব ধীরে ধীরে ঘুরছে। রনি আস্তে আস্তে করে ঘড়িটির দিকে গেল, আর তারপর ঘড়ির চাবিটি ঘুরিয়ে দিলো।
রনির খুব মজা লাগছে – কাটাগুলো ঘুরছে !
এমন সময় সে মিনির ডাক শুনতে পেলো, “ভাই-য়া- -”
রনি মিনির ঘরে এলো।
”তুমি কি আমাকে এই ফুলটা একটু রঙ করে দিতে পারবা ?”
রনি মিনির জন্য ছবি রঙ করতে লাগল।
কিছুক্ষণ পরে রনি তার মাকে জিজ্ঞাসা করল, “ মা, আমি কি এখন তৈরী হব ?” রনির মা নিজের রুমে গিয়ে ঘড়ি দেখে বললেন ”না, এখনও সময় হয়নি।”
রনি নিজের রুমে গিয়ে পাঁচটা বাজার জন্য অপেক্ষা করলো। অপেক্ষা যেন শেষই হয়না – কখন সে পার্টিতে যাবে, বন্ধুদের তার কেক দেখাবে, তাদের সঙ্গে খেলা করবে, আর তাদের উপহার গুলো দিবে। রনি আর দেরী করতে পাছিল না।
অবশেষে তার মা ডেকে বললেন, ”এখন রেডি হয়ে নাও, সময় হয়েছে।”
রনি রেডি হল। তারপর কেক, কার্ড ও ওমরের গাড়ী নিয়ে সে তার বাবার সঙ্গে রওনা হয়ে গেল। সারা পথ রনি খুবই আনন্দ লাগছিলো – ঈদের পার্টিতে যাচ্ছে, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে!
অবশেষে সে ওমরদের বাড়ীতে এল এবং বেল বাজালো। সে অপেক্ষা করছিল দরজা খুলেই সে তার বন্ধুদের দেখতে পাবে।
রিয়াদ চাচা দরজা খুললেন-
– আস্সালামু আলাইকুম
– ওয়ালাইকুম আস্সালাম- রনি ও তার বাবা উত্তর দিলেন।
রনি বললো, “আমরা পাটিৃতে এসেছি।”
“পার্টি ?” রিয়াদ চাচা বললেন, “পার্টিতো শেষ। এখন সাড়ে সাতটা বাজে।”
রনির বাবা হাতের ঘড়ির দিকে তাকালেন এবং দেখলেন সত্যিই সাড়ে সাতটা বাজে। সে রনিকে জিজ্ঞাসা করলো- “তুমি কি আমার রুমের টেবিল ঘড়িটা নিয়ে খেলেছিলে?”
রনি দুঃখিত হল, -হ্যাঁ।
“তোমাকে বলেছি ঘড়ি নিয়ে খেলবে না। তুমি ঘড়ির কাটা ঘুরিয়েছিলে। তাই আজ আমরা সঠিক সময় জানতে পারিনি। আর এজন্যই আজ তুমি পার্টিতে ঠিক সময়ে আসতে পারোনি।” বাবা বললেন।
“আমি পার্টির জন্য কেক তৈরী করেছি। ওমরের জন্য উপহার কিনেছি। অমি বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করতে চাই” – রনির চোখ পানিতে ভরে গেল। ওর প্রচন্ড কান্না পেল।
রিয়াদ চাচা বললেন, “আমি দুঃখিত, রনি। তোমার বন্ধুরা পার্টিতে এসেছিল,তারা একসঙ্গে খাবার খেয়েছে, খেলা করেছে, তারপর সবাই বাড়ী ফিরে গেছে। ”
রনি একথা শুনে খুবই কষ্ট পেলো । সে কান্না করে ফেললো, “আমি ওমরকে এই গাড়ীটা দিতে চাই।”
“আমি দুঃখিত রনি। ওমরতো পার্টি শেষে তার দাদা বাড়ী চলে গেছে।”
রনির বাবা রিয়াদ চাচাকে ধন্যবাদ ও সালাম দিয়ে গাড়ীতে উঠলেন বাসায় ফেরার জন্য। রনি চুপচাপ গাড়ীতে বসে থাকল। তার দু’গাল বেয়ে চোখের পানি পড়ছিল। সে ওমরের সঙ্গে, ওর অন্যান্য বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করতে চায়। কিন্তু সে আজ সবকিছু থেকে বঞ্চিত হল। সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো সে আর কোনদিন ঘড়ি নিয়ে খেলবে না। কাজের জিনিস নিয়ে কখনও দুষ্টুমি করা ঠিক না। কাজের জিনিস আর খেলনা এক কথা না।

এরপরে রনি আর কোনদিন কাজের জিনিস নিয়ে খেলা করেনি।

গল্প শেষে:

গল্প শেষে শিশুর সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন গল্পের শিক্ষা নিয়ে। প্রশ্ন করুন –

১. কাজের জিনিস আর খেলনার মধ্যে পার্থক্য কি?
২. কাজের জিনিস নিয়ে খেলা করা কেন উচিত না ? এতে কি ধরণের সমস্যা হতে পারে?
৩. বাসার কোন কোন কাজের জিনিস নিয়ে বছর খেলতে চাইতে পারে- কয়েকটি উদাহরণ দাও ?
৪. এগুলো নিয়ে খেললে আমাদের কি কি সমস্যায় পড়তে হতে পারে?

গল্পে গল্পে প্যারেন্টিং :কাজের জিনিস নিয়ে খেলতে নেই
একটি ঘড়ি

 

ড্রেনে মিলল নবজাতক শিশু


নারী সংবাদ


টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের ড্রেন থেকে এক নবজাতক শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই নবজাতককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাকে হাসপাতালের অধিকতর সেবা ইউনিটে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. নারায়ন চন্দ্র সাহা নয়া দিগন্তকে বলেন, গত শুক্রবার বিকেলে এক নারী পরিচ্ছন্নতাকর্মী হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের পেছনে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করতে গিয়ে ড্রেনের মধ্যে ওই নবজাতক শিশুকে (ছেলে) পড়ে থাকতে দেখেন। সঙ্গে সঙ্গে ওই শিশুকে উদ্ধার করে তিনি হাসপাতালে এনে ভর্তি করেন। বর্তমানে শিশুটি হাসপাতালের অধিকতর সেবা ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ভূমিষ্ট হওয়ার পরপরই কে বা কারা শিশুটিকে সেখানে ফেলে রেখে যায়।

তিনি বলেন, একটি সদ্যভূমিষ্ট শিশুর স্বাভাবিক ওজন আড়াই কেজি হলেও উদ্ধারকৃত এই শিশুর ওজন মাত্র এক কেজি ৩০০ গ্রাম। এ ধরনের শিশু খুব ঝুঁকিপূর্ণ হয়। তারপরও আমরা শিশুটির জন্য সবরকম চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি। আইন অনুযায়ী এখন এই শিশুটির দায়-দায়িত্ব সমাজ সেবা অধিদপ্তর নিয়েছে বলে তিনি জানান।

টাঙ্গাইল সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল হামিদ নয়া দিগন্তকে বলেন, ড্রেন থেকে নবজাতক উদ্ধারের খবর শুনে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ছুটে যাই। সরকারিভাবে এ ধরনের শিশুর সকল দায়-দায়িত্ব সমাজ সেবা অধিদপ্তরই নিয়ে থাকে। সে মোতাবেক আমরা এই শিশুটির যাবতীয় দেখাশোনা করছি। শিশুটি সুস্থ হয়ে উঠলে আদালতের মাধ্যমে আমরা তাকে ঢাকায় ছোটমনি নিবাসে পাঠিয়ে দেব। এছাড়া আদালত চাইলে অন্য যে কেউ শিশুটিকে নিতে পারবেন। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত শিশুটির শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে তিনি জানান। সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা, স্বামী পলাতক


নারী সংবাদ


রাজধানীর মতিঝিলে স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বিকালে আরামবাগের ১২৪/১ নম্বর বাড়ির একটি রুম থেকে শরিফা বেগমের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠিয়েছে।

মতিঝিল থানার এস আই জালাল জানান, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর একটার মধ্যে যে কোনো সময় শরিফা বেগমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। লাশ উদ্ধারের সময় তার গলায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ঘটনাস্থল থেকে কিছু আলামতও জব্দ করা হয়েছে। তবে ময়নাতদন্তের পর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।

তিনি জানান, নিহত শরিফার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের কোতোয়ালী থানার কাউনিয়া গ্রামে। তিনি ঢাকায় গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন। আরামবাগের ১২৪/১ নম্বর বাড়ির এক রুম ভাড়া নিয়ে স্বামী মনির হোসেন নয়নকে নিয়ে থাকতেন। শুক্রবার সকালে দাম্পত্য কলহের জের ধরে এ হত্যার ঘটনা ঘটতে পারে। ঘটনার পর থেকে স্বামী নয়ন পলাতক রয়েছেন। নয়ন পেশায় রিকশাচালক। তাকে গ্রেফতার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সুত্র:ইত্তেফাক।

 

বই পড়া সংক্রান্ত কতিপয় টিপস


মেহেদী আরিফ


বুঝে পড়ুন
বই পড়ুন, যথাসম্ভব বুঝে বুঝে।

দাগিয়ে পড়ুন
বই দাগিয়ে পড়ুন। (আপনার জন্য বই, বইয়ের জন্য আপনি নন।)

অভিধান
বারবার অভিধানে শব্দ খুঁজবেন না। এই বদ অভ্যাস বই পড়াতে বিঘ্ন ঘটায়। যে শব্দগুলি না দেখলেই নয় সেই শব্দগুলির অর্থই কেবলমাত্র খুঁজুন।

নোট
কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নোট করুন।

লিখুন
সাথে ডায়েরি রাখুন, গুরুত্বপূর্ণ শব্দ, বাক্যাংশ, বাক্য কিংবা লাইনগুলি লিখে রাখুন।

কলম, পেন্সিল
বিভিন্ন রংয়ের কলম, পেন্সিল, মার্কার কিংবা হাইলাইটার ব্যবহার করুন।

বিরতি
কিছুক্ষণ পর পর বিরতি দিয়ে পড়ুন।
দুই-এক দিন বিরতি নিন। চিন্তার সাগরে ডুব দিন।

ভাবুন
যা পড়েছেন তা নিয়ে ভাবুন। ভাবনা আপনাকে সেরা লেখক তৈরি করবে।

আলাপ
বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে অন্যের সাথে আলাপ করুন।

শেষ করুন
কোনো বই অনেক মজার কিংবা গুরুত্বপূর্ণ হলে তার কোন ক্ষুদ্র অংশ ফেলে রাখবেন না। কষ্ট হলেও শেষ করেই অন্য কাজ করুন।

রিভিউ লিখুন
সময় করে রিভিউ লিখে ফেলুন। বইয়ের রিভিউ একটা চমৎকার দলিল। কোনো বই দ্বিতীয় বার পড়ার সুযোগ না হলে রিভিউ দেখে তার সার সংক্ষেপ উদ্ধার করা সহজ হবে। আগামী দশ/বিশ বছর পর এটা একটা চমৎকার নোট হতে পারে।

লিখুন
বই পড়ে প্রতিদিন কিছু কিছু লিখুন।

নিয়মিত
প্রতিদিন অল্প হলেও পড়ুন। পড়াকে অভ্যাসে পরিণত করুন।

কখন বই পড়বেন না
মন যখন ভীষণ খারাপ থাকে, তখন বই পড়বেন না। মাথায় যখন কিছু ঢুকবে না, তখন বই পড়বেন না।

 

জোনাক নগরের আঙিনায়…২


আফরোজা হাসান


প্রচন্ড রকম ভালো লাগা নিয়ে নূরি যেই কাজগুলো করে তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে যায়েদ যেদিন রান্না করে হেল্পার হিসেবে সাথে থাকা। বিয়ের আগে মামণিকে দেখে প্রায় সব ধরণের রান্নাই শিখে নিয়েছিল। কিন্তু বিয়ের পর গত দেড় বছরে যায়েদের হেল্পারের কাজ করে পাকা রাঁধুনি বনে গিয়েছে। তবে যায়েদের সাথে যখন রান্না করতে আসে তখন রাঁধুনির চেয়ে হেল্পার হিসেবেই সাথে থাকতে ভালো লাগে নূরির। অন্যান্য ছুটির দিনের মতো আজও বাড়ির সবার জন্য সকালের নাস্তা বানানোর দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিলো যায়েদ। নূরির হাজির হয়ে গেলো হেল্পার হিসেবে। অন্যান্য দিনের তুলনায় কেমন যেন চুপচাপ লাগছিল যায়েদকে নূরির কাছে। কিন্তু এই অনুভূতিটা কি তার নিজের মনের খুঁতখুঁত নাকি সত্যিই যায়েদ আজ চুপচাপ ঠিক বুঝে উঠতে পারছিল না। গতরাতে নিজেকে অনেক শাসন করেছে। এরপর বুঝিয়েও বলেছে আর কখনো অন্যকারো সমস্যার প্রভাব নিজের জীবনে পড়তে দেবে না। অন্যের সমস্যা নিয়ে মশগুল না থেকে বরং যায়েদকে খুলে বলবে। কারণ যায়েদ শুধু বোঝেই না, তাকেও বুঝিয়ে দেয় অনেক সহজ করে সবকিছু। আরো কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, আপনার সাথে একটা ব্যাপার শেয়ার করতে চাচ্ছি।

যায়েদ নূরির দিকে তাকিয়ে হেসে বলল, হুম, বলো।

সমস্যাটা আমার এক ফ্রেন্ড আছে। ওর নাম ইলমা। মাস চারেক আগে বিয়ে হয়েছে ইলমার।

হুম, শুনেছিলাম বিয়ের কথা। তুমি বলেছিলে। কি সমস্যা ইলমার?

সমস্যা ওর শ্বশুরবাড়ির মানুষজন। আমার কাছে ইলমা পরামর্শ চেয়েছিল কিভাবে আপন করে নেবে শ্বশুরবাড়ির সবাইকে। এমন কি করবে যাতে শ্বশুরবাড়ির সবাইও ওকে আপন করে নেবে। আমি ওকে আমার মতো করে পরামর্শ দিয়েছিলাম। আইমিন, আপনি যেমন আমাদের বিয়ের পর আপনার পরিবারের সবার সম্পর্কে জানিয়েছিলেন। এবং আমি যেভাবে আম্মি আর বাপীর পছন্দ- অপছন্দ, ভালো লাগা ইত্যাদি জেনে এবং সেই মতো খেয়াল রাখতে চেষ্টা করেছি। জাকিয়া, জারিফা, রাওনাফ ভাবী, মাঈশা ফুপির সাথে যেভাবে বন্ধুত্ব হয়েছিল আমার। সেভাবেই সবকিছু করার পরামর্শ দিয়েছিলাম।

যায়েদ হেসে বলল, এটাকে কি ইলমার শ্বশুরবাড়ির মানুষেরা নেগেটিভ ভাবে নিয়েছে?

জ্বি। আপনি কি করে বুঝলেন?

এক মুহুর্ত সময় নিয়ে যায়েদ বলল, আমাদের পাশের ঐ বাড়িটাকে আগে আমার বড় ফুপি থাকতেন নিশ্চয়ই শুনেছো?

জ্বি আমি শুনেছি।

ফুপির বড় ছেলে মঈন আর আমি প্রায় সমবয়সী। আমরা দুইজন পড়াশোনাও করেছি একই সাবজেক্টে। ফুপির খুব ইচ্ছে ছিল জাকিয়ার সাথে মঈনের বিয়ে দেবার। কিন্তু মঈন আমাদের এক ক্লাসমেট ফারিয়াকে পছন্দ করার কারণে অমত থাকা স্বর্ত্বেও ফুপি বাধ্য হয়ে ওদের বিয়েতে রাজী হয়েছিলেন। বিয়ের পর প্রথম মাস খানেক ফুপি চুপচাপই ছিলেন। কিন্তু এরপর শুরু করেছিলেন কিচেন পলিটিক্স।

নূরি হেসে ফেলে বলল, কিচেন পলিটিক্স?

হুম, হোম পলিটিক্সকে পরিকল্পনা সমূহকে যেখানে আনজাম দেয়া হয়। কাঁটা-ছেঁড়া, জ্বালানো-পুড়ানো, বয়েলড-হাফ বয়েলড ইত্যাদি ইত্যাদি। যাইহোক, ফারিয়া চমৎকার একটি মেয়ে ছিল। ভীষণ আন্তিরক, মানিয়ে চলা স্বভাবের। ওর ফ্যামেলি খুব একটা ইসলামিক ছিল না। কিন্তু যেহেতু আমরা স্কুল থেকেই একসাথে ছিলাম। আমাদের উৎসাহে এবং নিজের চেষ্টায় ফারিয়া যথাসাধ্য চেষ্টা করতো শরীয়তের সবকিছু মেনে চলতে। বিয়ের পরেও ফারিয়া আপ্রাণ চেষ্টা করতো শ্বশুর-শ্বাশুড়ি, দুই ননদ আর দেবরদের মন জুগিয়ে চলার। মঈন আর ফারিয়ার যখন বিয়ে হয়েছিল তখন আমরা মেডিকেল ফাইনাল ইয়ারে ছিলাম। এত পড়াশোনা চাপ থাকার পরেও যখনই সময় পেত ফারিয়া ছুটে আমাদের বাড়িতে চলে আসতো আম্মির কাছে রান্না শেখার জন্য। ক্লাস থেকে ফেরার পথে ননদদের জন্য চকলেট, কেক বা ওদের পছন্দের কিছু না নিয়ে আসতো না কখনোই। প্রায়ই ফুপির জন্য টুকটাক গিফট নিয়ে আসতো। এসব ফারিয়া করতো শ্বশুরবাড়ির সবাইকে আপন করে নেবার জন্য। তাদের ভালোবাসা পাবার জন্য। প্রায়ই আমার কাছে এসে পরামর্শ চাইতো আর কি করা যায় শ্বশুরবাড়ির মানুষগুলোর জন্য। আমি আমার জ্ঞানানুযায়ী পরামর্শ দেবার চেষ্টাও করতাম। ফারিয়াকে দেখে আমি জীবনে প্রথম জেনেছিলাম কখনো কখনো মানুষের প্রতি অকৃত্রিম আন্তরিকতা দেখানোর অনেক কঠিন প্রতিদান পেতে হয়। কারণ অকৃত্রিম আন্তরিকতা প্রদর্শনের জন্য যেমন বিশাল বড় একটা মনের দরকার হয়। ঠিক তেমনি কারো অকৃত্রিম আন্তরিকতাকে গ্রহণ করার জন্যও অনেক উদার দৃষ্টিভঙ্গীর অধিকারী হতে হয়।

ফারিয়া ভাবীর আন্তরিকতাকে কি কেউ সহজ ভাবে মেনে নেয়নি?

মেনে তো নেয়ইনি উল্টো ফারিয়ার আন্তরিকতাকে ওর চালাকি, ধোঁকা দিয়ে মন জয় করার চেষ্টা ইত্যাদি নামকরণ করা হয়েছিল। আইমিন, সামনে সামনে ঠিকই ফারিয়াকে ভালো বলতো কিন্তু আড়ালে ওর উত্তম গুণাবলীর প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন করা হতো। ফুপি যখনই সুযোগ পেতেন মঈনের কাছে ফারিয়ার ভালো কাজগুলোকে মন্দ ভাবে উপস্থাপন করতেন। ফুপির দুই কন্যাও নিষ্ঠার সাথে মায়ের সহযোগী হিসেবে একই ডিউটি পালন করতো।

সবকিছু মিলিয়ে শান্ত, সমঝদার স্বভাবের মঈন কেমন যেন অস্থির স্বভাবের হয়ে যেতে শুরু করেছিল। নিজের ভালো কাজগুলোকে অবমূল্যায়নের পাশাপাশি নিন্দিত হতে দেখে ফারিয়ার মনেও ধীরে ধীরে ক্ষোভের জন্ম হয়েছিল। আর ফুপি এটাই চাইছিলেন। মঈন আর ফারিয়ার মধ্যে সমস্যা তৈরি করতে। তাই ওদের মানসিক অস্থিরতার আগুণে ফুপি বিদ্বেষের ঘি ঢালতেন খুব যত্ন সহকারে। ফলশ্রূতিতে বিয়ের সাত মাসের মাথাতেই ডিভোর্স। ফারিয়া নিজেকে সামলে নিতে পারলেও মঈন পারেনি। সবকিছু মিলিয়ে মঈনের নার্ভাস ব্রেকডাউন হয়েছিল। এরপর আর মেডিকেলও কমপ্লিট করলো না। জীবনের প্রতি মঈনের সমস্ত আকর্ষণ, ভালো লাগা সব শেষ হয়ে গিয়েছিল। এখনো মঈন ছন্নছাড়া। পরবর্তীতে ফুপি আবার বিয়ে দিয়েছেন মঈনকে। কিন্তু তাতেও কোন লাভ হয়নি। কোথায় হারিয়ে গিয়েছে ওর জীবনের উচ্ছলতা, আনন্দময়তা।

আর ফারিয়া ভাবী?

আলহামদুলিল্লাহ ফারিয়া অনেক ভালো আছে। আমার হসপিটালেই জব করছে চাইল্ড স্পেশালিষ্ট হিসেবে। তবে এরপর আর এখন পর্যন্ত বিয়ে করেনি। কিন্তু বদলে গিয়েছে ভীষণ রকম ওর চরিত্র। একমাত্র শিশুরা ছাড়া আর সবার সাথে ফারিয়ার আচরণ খুব বেশি কঠোর। মনেহয় যেন আন্তরিকতার রেশ মাত্র অবশিষ্ট নেই আর ফারিয়ার ভিতরে। কোমলতা, ভালোবাসা এখন ওর সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী। মঈন আর ফারিয়া আমার জীবনের অনেক বড় একটা শিক্ষা। বড় ফুপি যখন আমাদের বাড়িতে এসে মঈনের কথা বলেন আর আঁচলে মুখ লুকিয়ে কাঁদেন তখন আমার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটা কথা মনে পড়ে।

কি কথা?

“মেয়ের সম্মান মেয়েদের কাছেই সব চেয়ে কম। তারা জানেও না যে, এইজন্যে মেয়েদের ভাগ্যে ঘরে ঘরে অপমানিত হওয়া এত সহজ। তারা আপনার আলো আপনি নিবিয়ে বসে আছে”। নূরি একটু চিন্তা করলে তুমিও বুঝতে পারবে আমাদের সমাজে মেয়েরা সবচেয়ে বেশি ব্যথিত, অপমানিত মেয়েদের দ্বারাই হয়। শ্বাশুড়ি হয়ে বৌকে, বৌ হয়ে শ্বাশুড়িকে, ননদ হয়ে ভাবীকে, ভাবী হয়ে ননদকে, ছেলের মা হয়ে মেয়ের মাকে, প্রতিবেশিনী হয়ে প্রতিবেশিনীকে, মেয়েরাই মেয়েদেরকে ছোট করে। একে অন্যের সুখের ঘরে বিষধর সাপ ঢুকিয়ে দেয়। মেয়েরাই আসলে মেয়েদের সবচেয়ে বড় শত্রু। একজন শ্বশুর বা দেবরের কারণের কোন মেয়ের ঘর ভেঙেছে এমন কথা কিন্তু সচারচর শোনা যায় না। কিন্তু মেয়েরাই যে মেয়েদের ঘর ভাঙে সেই উদাহরণ চোখ মেলে তাকালেই দেখা মেলে। সংসারে তাই মেয়েদের সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকা উচিত অপর মেয়েদের থেকেই। বুঝেছো?

হুম! কিন্তু এমনটা হবার কারণ কি?

যায়েদ হেসে বলল, আচ্ছা তুমি সারাদিন চিন্তাভাবনা করো এই কথাগুলো নিয়ে। তারপরও যদি কারণ খুঁজে বের করতে না পারো আমি রাতে বুঝিয়ে বলবো ইনশাআল্লাহ।

এতটা ক্ষণ আমাকে টেনশন দেবেন আপনি?

হুম, দেবো। কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয় সেটা তো জানোই। ঠিক তেমনি জীবনকে নতুন উপলব্ধির রঙে রাঙাতে হলে চিন্তার সাগরে হাডুবুডু তোমাকে খেতেই হবে। সো তুমি হাবুডুবু খেতে খেতে খেতে ভেজিটেবল স্টু রান্না করো।

চলবে…

 

আসুন “জরায়ু ক্যান্সার’ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই


ফাতেমা শাহরিন


জরায়ু মুলত কি?

জরায়ু বা uterus হল, স্ত্রী প্রজনন তন্ত্রের একটি অন্যতম প্রধান অঙ্গ। জরায়ু একটি হরমোন প্রতিক্রিয়াশীল অঙ্গ। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন হরমোন ক্ষরণের দ্বারা এর কার্যপ্রণালী নিয়ন্ত্রিত হয়। গর্ভধারণ কালে ফিটাস (শিশু) জরায়ুর অভ্যন্তরে বড়ো ও বিকশিত হয়। – উইকিপিডিয়া

জরায়ু ক্যান্সার কি?

হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচ. পি. ভি) এর দীর্ঘমেয়াদী সংক্রমণ জরায়ু-মুখ ক্যান্সারের প্রধান কারণ। জরায়ু ক্যান্সারকে মৃত্যুর মুল কারণ মুলত সাইলেন্ট কিলার অর্থাৎ এই অসুখ দেখা দিলে অনেক সময় নারীরাই কোন লক্ষণ বুঝতে পারেন না। ফলে রোগ সনাক্ত করায় বিলম্বিত হয়।

জরায়ু ক্যান্সার কয় ধরনের হয়?

জরায়ুর ক্যান্সার বা যা গর্ভাশয় ক্যান্সার মুলত জরায়ু কলা থেকে উদ্ভূত। তা অনেক ধরনের ক্যান্সারকেই বোঝায়।

এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার এন্ডোমেট্রিয়াম (জরায়ুর ভেতরের আবরণ) গ্রন্থিগুলোর কোষ থেকে এন্ডোমেট্রিয়াল কার্সিনোমাসের সৃষ্টি হয়। যার মাঝে সহজে চিকিৎসাযোগ্য এন্ডোমেট্রোয়েড এডেনোকার্সিনোমা, ছাড়াও ইউটেরিন প্যাপিলারি সেরোস কার্সিনোমা এবং ইউটেরিন ক্লিয়ার-সেল কার্সিনোমার মত ভয়াবহ ক্যান্সার অন্তর্ভুক্ত।’ এন্ডোমেট্রিয়াল স্ট্রোমাল সারকোমার উৎপত্তি এন্ডোমেট্রিয়াম (জরায়ুর ভেতরের আবরণ) সংযোজক কলা থেকে, তবে এন্ডোমেট্রিয়াল কার্সিনোমাসের তুলনায় এর বিস্তার অনেক কম।’ ম্যালিগন্যান্ট মিক্সড মুলেরিয়ান টিউমার অত্যন্ত বিরল এন্ডোমেট্রিয়াল টিউমার যেখানে গ্ল্যান্ডুলার (কার্সিনোমাটাস) এবং স্ট্রোমাল (সার্কোম্যাটাস) উভয় বিভাজন লক্ষ্য করা যায়- কার্সিনোসারকোমা উচ্চতর কার্সিনোমার মতো আচরণ করে।’

সার্ভিকাল ক্যান্সার  জরায়ুর নীচের অংশের সাথে যোনির উপরের অংশের সাথে সংযোগ সৃষ্টিকারি জরায়ুমুখের ক্যান্সার।

ইউটেরিন সারকোমা মায়োমেট্রিয়ামের সারকোমা, বা জরায়ুর পেশী স্তর, সাধারণত লেইওমায়োসারকোমাস।

গর্ভকালীন ট্রফোব্লাস্ট রোগ গর্ভাবস্থার কলা থেকে উদ্ভূত নিউপ্লাস্টিক প্রক্রিয়াগুলির সাথে সম্পর্কিত যা প্রায়শই জরায়ুতে অবস্থিত।

কোন বয়সে নারীদের বেশি হয়?

জরায়ু মুখের ক্যান্সার প্রাপ্ত বয়স্ক হলে হওয়ার কথা বলে কেউ কেউ ভাবতে পারেন, এটি ভুল ধারণা । যেকোন বয়সেই নারীদের জরায়ু ক্যান্সার হতে পারে। জরায়ুর ক্যান্সার সাধারনত ৩০ থেকে ৫৫ বছর বয়সী মহিলাদের মধ্যে বেশী হয়ে থাকে। এবং আরও বলা হয় যে, যৌন সঙ্গম এর পরবর্তীকালীন সময়ে রোগটি হয়ে থাকে।

জরায়ু ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ার স্তরসমুহ

চারটি স্তর রয়েছে। রোগীর চিকিৎসা পদ্ধতিও নির্ভর করে এই চারটি স্তরের উপর। মূলত ক্যান্সার কতটা ছড়িয়ে পড়েছে, তার উপর নির্ভর করে স্তরের বিন্যাস।

স্তর-১: প্রাথমিক পর্যায়, ক্যান্সার শুধুমাত্র জরায়ু মুখে সীমাবদ্ধ রয়েছে।

স্তর-২: ক্যান্সার জরায়ু মুখের পাশে যোনীপথে কিছুটা ছড়িয়েছে।

স্তর-৩: ক্যান্সার যোনীপথের নিচের দিকে অথবা পাশে ছড়িয়েছে

স্তর-৪: ক্যান্সার সামনে মূত্রথলি, পেছনে অন্ত্রথলি অথবা দূরে যেমন ফুসফুস বা মস্তিষ্কে ছড়িয়েছে।

স্তর অনুসারে চিকিৎসার নিয়ম

অপারেশন এখানে স্তর (১ ও ২) এর প্রাথমিক অবস্থা পর্যন্ত সাধারণত ডাক্তার অপারেশন ও ঔষধ সেবন করতে বলেন। তবে এটি জরায়ুর অনেক বড় একটি অপারেশন।

রেডিওথেরাপী বাকী স্তর (৩ ও ৪) এর জন্য রশ্মি চিকিৎসা (রেডিওথেরাপী) অথবা ক্যান্সার নির্মূল ওষুধ (কেমোথেরাপি) দেওয়া হয়।

সর্তকতা ও সন্তান

রোগী গর্ভবতী থাকাবস্থায় জরায়ু মুখের ক্যান্সার ধরা পড়লে, তখন গর্ভের শিশুর জীবনের নিশ্চয়তা না দিয়ে রোগীকে বাঁচানোর জন্য রশ্মি চিকিৎসা অথবা অপারেশন করা জরুরী হয়।

জরায়ু ক্যান্সারের সাধারণ কারণ

-বাল্য বিবাহ।
-অল্প বয়সে সন্তান হওয়া।
-ঘন ঘন সন্তান হওয়া।
-ব্যক্তিগত অপরিচ্ছন্নতা।
-দীর্ঘদিন সময় জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন।
-একাধিক সেক্স সঙ্গী।

জরায়ু ক্যান্সারের হওয়ার পূর্ববর্তী কিছু লক্ষণ

-তলপেট ও কোমরে ব্যথা
-ঘন ঘন মূত্রত্যাগ করা ।
-গ্যাস , বদহজম , কোষ্ঠকাঠিন্য।
-হালকা খাবারের পর পেট ভর্তি লাগা , পেটে অস্বস্তি লাগা , ইত্যাদি পেটের কোন সমস্যা খুব বেশি হলে তা জরায়ু ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে ।
-পেটে অতিরিক্ত ব্যথা কিংবা পেট ফুলে থাকা ।
-বমি বমি ভাব কিংবা বার বার বমি হওয়া।
-ক্ষুধা কমে যাওয়া ।
-অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পাওয়া।
-ওজন অনেক বেশি কমে যাওয়া।
-সেক্স করার সময় রক্তপাত।
-সেক্স করার সময় ব্যথা পাওয়া।
-অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করা ।
-নারীদের মেনোপজ হওয়ার পরেও ব্লিডিং হওয়া ।
-দুর্গন্ধযুক্ত সাদা স্রাব।

বাংলাদেশে এই রোগের অবস্থা

বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১১ হাজার নারী জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। আর এতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন প্রায় পাঁচ কোটি নারী। এর মধ্যে নিরক্ষর ও যৌনকর্মীদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।

“লজ্জা” কি সমস্যা বাংলাদেশের নারীদের

আন্তর্জাতিক ক্যান্সার গবেষণা এজেন্সি সাম্প্রতিক এক জরীপে বলছে, বাংলাদেশে বছরে সাড়ে ছয় হাজারের বেশি নারী জরায়ু মুখের ক্যান্সারে মারা যাচ্ছে। প্রতি বছর নতুন করে ১২ হাজারের মতো নারীর শরীরে এই ক্যান্সার সনাক্ত হচ্ছে। অথচ অন্য ধরনের ক্যান্সারের তুলনায় জরায়ু মুখের ক্যান্সার খুব সহজে নির্ণয় করা যায়। বাংলাদেশের নারীরা শুধুমাত্র লজ্জার কারণে তাদের সমস্যার কথা বলতে চান না।

জরায়ু ক্যান্সারের সরকারী স্বাস্থ্যসেবা

সরকারি হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও জরায়ু মুখের ক্যান্সার নির্ণয়ের প্রাথমিক ধাপটি বিনামূল্যে দেওয়া হয়।

পরীক্ষার মাধ্যমে জরায়ু ক্যান্সার সনাক্ত

– সাধারনত DNA অথবা Pap Test এর মাধ্যমে সম্ভাব্য জরায়ু ক্যান্সার বা Dysplasia সনাক্ত করা হয়
– DNA পরীক্ষার মাধ্যমে HPV সংক্রমণের ঝুঁকি নির্ধারণ করা হয়
– বায়পসির মাধ্যমে Pre-cencer বা ক্যান্সার কোষ নিশ্চিত করা হয়।

a. Paps smear test.
b. Ultasonography.
c. Biopsy.
d. CT Scan.

জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধ

সচেতনতা সচেতনতা থাকলেই এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব।
পরিছন্নতা ব্যাক্তিগত পরিছন্নতা রক্ষা করা।
পয়ঃ প্রণালী সাস্থ্য সম্মত পয়ঃ প্রণালীর ব্যাবস্থা করা।
খাবার পচাঁ বাসি, খাবার না খাওয়া।

মনে রাখবেন, বিশ্বে প্রতি ২ মিনিটে একজন মা এই মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে করুণ ভাবে মৃত্যু বরণ করেন। আমাদের দেশে মাতৃমৃত্যুর অন্যতম কারণ এই জরায়ুতে ক্যান্সার। একটা কথা মনে রাখা দরকার, জরায়ু ক্যান্সারের রোগীকে সারাজীবন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রাখা দরকার। রোগীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থা অথবা ক্যান্সারের পুনরুত্থান-ইত্যাদি কারণে রোগীকে নিয়মিত ডাক্তারের নিবিড় তত্ত্বাবধানে রাখার নিয়ম।

রেফারেন্স

  • ১. উইকিপিডিয়া
    ২. বিবিসি নিউজ
    ৩. পরিবার পরিকল্পনা পরিষদ
    ৪. ন্যাশনাল ডাক্তার ফোরাম
    ৫. ক্যান্সার অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
    ৬. ইউনাইটেড হাসপাতাল বাংলাদেশ
  • ছবিসুত্র: ইন্টারনেট

 

ন্যান্সির সংসারে ভাঙনের পদধ্বনি


নারী সংবাদ


ন্যান্সি তার স্বামী নাজিমুজ্জামানের সাথে বর্তমানে থাকছেন না। শুধু তা না তাদের দুই সন্তান দুজনের কাছে দুই মাস ধরেই আলাদা রয়েছেন বলে জানা গেছে।

জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সির সংসারে ভাঙনের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। ন্যান্সি জানান, স্বামী নাজিমুজ্জামান জায়েদের সাথে দুই মাস ধরে থাকা হচ্ছে না। পারস্পরিক আলাপের মাধ্যমেই তারা পৃথক থাকছেন।

জানা গেছে, তাদের মধ্যে বনিবনা না হওয়ায়ই আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দু’জন মিলেই। ন্যান্সি তার বাসায় রয়েছেন।

তিনি বলেন, আমরা দুই মাস ধরে আলাদা থাকছি। অস্ট্রেলিয়া সফর থেকে দেশে আসার পর থেকেই আমরা একসাথে থাকছি না। জায়েদের বাসায় সে থাকছে আর আমার বাসায় আমি। বড় মেয়ে রোদেলা থাকছেন ন্যান্সির সাথে আর জায়েদের সাথে থাকছেন ছোট মেয়ে নায়লা।

ন্যান্সি বলেন, আমাদের মধ্যে এখনো বন্ধুত্বের সম্পর্ক অটুট রয়েছে। নিয়মিতই আমাদের কথা হয়। তবে আলাদা থাকার সিদ্ধান্তও আমাদের। ভবিষ্যৎ সম্পর্কে এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না।
সুত্র: নয়াদিগন্ত

 

জোনাক নগরের আঙিনায়…১


আফরোজা হাসান


সূর্য না থাকলে মনেহয় আমাদের জানাই হতো না নিজে ডুবে যেতে যেতেও চারিদিকে মুগ্ধময় সৌন্দর্যের বিচ্ছুরণ ঘটানো যায়, তাই না? ডুবন্ত সূর্যের দিকে তাকিয়ে আপন মনের প্রশ্নটা করলো নূরি।

নূরির পাশে বসা যায়েদও মুগ্ধ চোখে সূর্যাস্তই দেখছিল। প্রশ্ন শুনে নূরির দিকে তাকালো। একটু ক্ষণ চুপ থেকে বলল, সূর্যাস্তের প্রতীক্ষাতে উন্মুখ হয়ে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয়। যদি এমনটা না হতো তাহলে কি হতো?

ঘুরে যায়েদের দিকে তাকিয়ে নূরি বলল, জ্বি? আপনার প্রশ্নটা ঠিক বুঝিনি আমি।

যায়েদ হেসে বলল, আমরা জানি আজকের সূর্যটা ডুবে যাচ্ছে বলেই, আগামীকাল নতুন প্রভাতের আহ্বান নিয়ে হাজির হবে নতুন সূর্যোদয়। কিন্তু যদি এমনটা না হতো তাহলে কি হতো?

এবারো বুঝিনি আপনার প্রশ্ন।

বোঝনি কারণ তোমার চিন্তার ফোকাস এখন আমার কথার দিকে নেই। তুমি এখন অন্য জগতের বাসিন্দা।

এতই যখন বোঝেন তখন না প্যাঁচিয়ে সহজ কথায় বলে দিলেই তো হচ্ছে। হাসি মুখে বললো নূরি।

আমরা যদি আগামীকালের সূর্যোদয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত না থাকতাম, তাহলে কিন্তু সূর্যাস্তের সৌন্দর্য আমাদেরকে মুগ্ধ বা ভাবুক করতে পারতো না। বরং শঙ্কিত ও আতঙ্কিত করতো চির আঁধারে ঢেকে যাবার চিন্তা। তাছাড়া ডুবে যাওয়ার পথে সূর্য তো অনেক সুন্দরের স্বপ্নও দিয়ে যায়।

সেটা কিভাবে?

নক্ষত্রের রাতের স্বপ্ন! আকাশের শামিয়ানায় তারার ফুলদের বিচ্ছুরণ, জোছনার শিশির, জোনাকির টিমটিমে আলো। আরো কতো কি!

তারমানে ডুবন্ত কিছু তখনই আমাদের মনে আনন্দের আবহ তৈরি করতে পারে, যখন তার ফিরে আসার ব্যাপারে নিশ্চয়তা থাকে? যখন তার পরেও সুন্দরের আয়োজন থাকে, এই তো?

হুম, শূন্যতার সৌন্দর্য পূর্ণতার আশায় লুকায়িত।

আপনার সাথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে আসাই ঠিক না। অদ্ভুত সব তথ্য দিয়ে মনের মুগ্ধতার বারোটা বাজিয়ে দেন।

কারো সামান্য কথাতেই যে মুগ্ধতার বারোটা বেজে যায়। সেটা আসলেই মুগ্ধতা ছিল কিনা সেটা গবেষণার দাবীদার। তুমি তোমার তথ্যের দ্বারা আমার মনের একটা মুগ্ধতার বারোটা বাজিয়ে দেখাও তো দেখি!

মাফ চাই। আমি নামাজে যাচ্ছি মাগরীবের।

যাচ্ছো যাও। কিন্তু জেনে রাখো, অন্যের কথার স্রোতে যার ভালো লাগা, ভালোবাসা, পছন্দ কিংবা মুগ্ধতা ভেসে যায়। তার শেখা উচিত কিভাবে ভালোবাসতে হয়, মুগ্ধ হতে হয়।

বেশ তো! একটা ইন্সিটিউট খুলে ফেলুন আপনি। তার সামনে বড় বড় করে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিন, এখানে সঠিক পদ্ধতিতে ভালো লাগা, ভালোবাসা এবং মুগ্ধ হতে শেখানো হয়।

যায়েদ হেসে বলল, তুমি যদি সেই ইন্সটিউটের ফার্স্ট স্টুডেন্ট হতে রাজী থাকো। তাহলে আজই আমি প্রজেক্ট হাতে নিয়ে নেব ইনশাআল্লাহ।

মাফ চাই।

না না এখনই মাফ চেয়ে কাজ নেই। আমি মসজিদ থেকে মাগরীবের নামাজ আদায় করে আসি। তুমিও ততক্ষণে চিন্তা-ভাবনা করে দেখো। এরপর নাহয় জবাব দিয়ো।

আর কিছু না বলে হাসি মুখে রুমের দিকে পা বাড়ালো নূরি। যায়েদও উঠে মসজিদে রওনা হলো। মাগরীবের নামাজ আদায় করে বাড়িতে ফিরে কিছুক্ষণ আম্মি আর বাপীর সাথে বসে গল্প করে যায়েদ। আজও বাপী আর আম্মির সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে রুমে এলো। নূরিকে চুপচাপ জানালার কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে প্রচন্ড রকম বিরক্তি ভাব ঘিরে ধরলো মনকে। খানিকটা বিরক্তি মাখানো স্বরে বলল, আমার ভয়াবহ রকমের রাগ হয় কখন জানো?

প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে যায়েদের দিকে তাকালো নূরি।

যায়েদ বলল, যখন তুমি খুব কাছে থেকেও আমার সাথে থাকো না। আইমিন, শারীরিক ভাবে তো পাশে থাকো কিন্তু তোমার চিন্তা-চেতনা ব্যস্ত থাকে অন্য কিছু নিয়ে।

তখন আপনার কি করতে ইচ্ছে করে?

ছুটি কাটানোর উদ্দেশ্যে তোমাকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দিতে ইচ্ছে করে।

হেসে ফেললো নূরি। যায়েদ চেহারায় গাম্ভীর্য ধরে রেখেই বলল, কি হয়েছে সেটা কি দয়া করে বলবে? হসপিটাল থেকে ফেরার পর থেকেই দেখছি তোমার বসবাস অন্য কোথাও। তোমার মুড যদি এমনই থাকে তাহলে দয়াকরে আমাকে আগে জানিয়ে দিও। আমি সেদিন তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফিরবো না।

আপনি রাগ করছেন কেন? মন খারাপের সুরে বললো নূরি।

কারণ তুমি রাগ করার মতোই কাজ করো। আজ নতুন তো নয় এটা। গত আট মাসে একাধিক বার এমন হয়েছে। অন্য মানুষের চিন্তায় তুমি আমাদের সুন্দর সময় গুলোকে নষ্ট হয়ে যেতে দিয়েছো। হ্যা একসময় আমার স্বভাবে এই সমস্যাটি ছিল। এখন কিন্তু আমি বাইরের প্রভাব পড়তে দেই না আমাদের ব্যক্তিগত সময়ে।

আপনি আমার মতো হয়ে গিয়েছেন তো তাই আমি আপনার মতো হয়ে গিয়েছি। এখানে দোষ আমার না। দোষ নিউটনের তৃতীয় সূত্রের। “প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে”৷

যায়েদ হেসে বলল, তোমাকে আসলেই ছুটিতে পাঠাতে হবে বুঝেছো? ব্যাগ গুছিয়ে রাখো আগামীকাল সকালে হসপিটালে যাবার আগে তোমাকে বাবার বাসায় নামিয়ে দেবো।

এত সামান্য কারণে আপনি আমাকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দেবেন?

অদৃশ্য দুরুত্ব মিটিয়ে ফেলার উদ্দেশ্যে কখনো কখনো দৃশ্যমান দুরুত্ব অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়ায়। কাছাকাছি থেকে একে অন্যের উপর বিরক্ত হবার চেয়ে, কিছু সময়ের জন্য দূরে গিয়ে একে অন্যের ব্যাপারে এবং নিজ নিজ ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা সুযোগ তৈরি করে নেয়া উচিত। যাইহোক, তোমার আর আমার মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্যটা কি জানো?

কি?

তুমি যখনই আমার কোন দোষ বলো আমি বিনা তর্কে সেটা মেনে নেই। এবং শুধু মেনে নিয়েই বসে থাকি না। সেটাকে রিকোভার করার চেষ্টা করি। কিন্তু তোমাকে কিছু বললে প্রথমত তুমি মনখারাপ করো, এরপর যুক্তি দেখাও তোমার আচরণের পেছনে, সবশেষে গাল ফুলিয়ে বলো, এটুকু তো আপনি মেনে নিলেও পারেন।

ঠিকই তো মেনে নিলেই তো পারেন। আমি তো কখনোই নিজের জন্য অস্থির হই না।

এখানেই তো আপত্তি আমার। অন্যের জন্য তোমার অস্থিরতা আমি কেন মেনে নেবো? দাম্পত্য জীবনে কম্প্রোমাইজ করতে হয় এটা নিয়ে আমার কোন দ্বিমত নেই। প্রয়োজনে কম্প্রোমাইজ, স্যাক্রিফাইস করতেও আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু এসব আমি করবো আমাদের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ, অমিল বা সমস্যার ক্ষেত্রে। যাতে আমাদের সম্পর্ক আরো সুন্দর ও সহজ হয় সেই উদ্দেশ্যে। বাট অন্যদের সমস্যা কারণে তোমার এলোমেলো মুডের জন্য অবশ্যই আমি কম্প্রোমাইজ, স্যাক্রিফাইস করবো না। কেননা এই ধরণের কম্প্রোমাইজ, স্যাক্রিফাইসই একসময় গিয়ে আমাদের দুরুত্ব ও অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

হুম্ম!

তোমার হুম্ম বলার ধরণই জানিয়ে দিচ্ছে আমার কথাতে তুমি সন্তুষ্ট নও। তুমি চাও নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা স্বভাবের মানুষদের জন্য তোমার তৈরি ‘দুর্দশা দমন কমিটিতে’ আমিও নাম লেখাই। বাড়ির বাইরে সারাক্ষণ আমি এই কাজটিই করি। সুতরাং, বাড়িতে আমি শান্তি চাই। সাউন্ড স্লীপ শান্তি।

নূরি হেসে বলল, শান্তি আবার সাউন্ড স্লীপ হয় কিভাবে?

যখন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা ও সমঝদারির বন্ডিংটা এতখানিক দৃঢ় হয় যে, বাইরের মানুষদের অকারণ হৈ-হুল্লোর তাতে কোন প্রভাবই ফেলতে পারে না। সেটাই হচ্ছে দাম্পত্য প্রশান্তি।

আমাদের উপর কবে কার প্রভাব পড়লো? অবাক কন্ঠে প্রশ্ন করলো নূরি।

এখনো পড়েনি। কিন্তু তুমি যে পথে চলছো তাতে খুব শিঘ্রীই যে পড়তে শুরু করবে তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। কারণ তুমি যুক্তি মানি কিন্তু তালগাছ আমার স্বভাবের মানুষ।

হায় আল্লাহ! এক বসাতে আর কত অপবাদ চাপাবেন আপনি আমার উপর? আমি কবে তালগাছ নিয়ে যুক্তিতর্ক করলাম আপনার সাথে?

এই যে তোমাকে যখনই বোঝাতে যাই তুমি হুম্ম বলো। এরপর যা করছিলে সেটাই করতে থাকো। এর মানে কি?

আপনিই বলেন কি এর মানে?

এরমানে আমার যুক্তিতে তোমার কোন আপত্তি নেই। আবার একই সাথে নিজের করণীয়তেও তোমার পূর্ন সম্মতি বিদ্যমান। অন্যেকে নিয়ে চিন্তাভাবনার ফলে আমাদের ব্যক্তিগত সময় নষ্ট হচ্ছে, হয় এটা তুমিও জানো। কিন্তু তাই বলে তুমি অন্যেদের নিয়ে ভাবনা ছেড়ে দেবে না। বরং তুমিও সঠিক সেই ব্যাপারে আমাকে কনভিন্স করার চেষ্টা করবে।

আপনি আমাকে কি করতে বলছেন? আমার সামনে কেউ সমস্যাগ্রস্ত থাকবে, কষ্টে থাকবে আর আমি দেখেও না দেখার ভান করবো?

তোমার সাথে অনর্থক কথা বলার চাইতে ঘুমোনো উত্তম। কথা শেষ করেই হাত বাড়িয়ে রুমের বাতি নিভিয়ে দিয়ে চাদর টেনে নিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো যায়েদ।

অন্ধকারের মাঝেও বিস্ময় ভরা দৃষ্টিতে যায়েদের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ বসে রইলো নূরি। এরপর ধীরে ধীরে বলল, বিরুপ পরিস্থিতিতে আপনজনদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া অনেক সহজ। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সমস্যার মোকাবিলায় ভূমিকা রাখাটা হচ্ছে কঠিন। সবসময় হয়তো চাইলেও সম্ভব হয়না কাউকে তার সমস্যা থেকে বের করে নিয়ে আসা। কিন্তু এর ফলে সমস্যায় পতিত ব্যক্তির মনে অন্তত এইটুকু স্বস্থি থাকে যে সে একা নয়। কেউ আছে তার পাশে ঝড়ের মোকাবিলায়। আমরা যদি কোন প্রিয়জনকে বৃষ্টি কিংবা খরতাপ থেকে বাঁচানোর জন্য ছাতা নিয়ে ছুটে গিয়ে তার পাশে দাঁড়াই। কখনো কি সম্ভব বৃষ্টির কিছু ফোঁটা কিংবা রোদের একটুও তাপ গায়ে না লাগিয়ে এমনটা করা? তাহলে এমন আশা কিভাবে করি যে, কারো মানসিক ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধতা সময় পাশে গিয়ে দাঁড়াবো। কিন্তু আমাদের মন থাকবে সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত? কন্দনরত কারো পাশে যদি হাসি মুখে কাউকে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় দেখতে পাই সেটাই কি অস্বাভাবিক হবে না? আবার বেদনাক্ত কারো পাশ থেকে উঠে এসেই যদি আনন্দ উল্লাসে মগ্ন হয় কেউ, তাকে মুখোশধারী বা হিপোক্রেট ভাবাটাই স্বাভাবিক নয়?

নূরির কথা চুপচাপ শুনছিল যায়েদ। নূরি থামার পর হাত বাড়িয়ে বাতি জ্বালিয়ে উঠে বসে বলল, তুমি ঠিক কি বোঝাতে চাইছো না প্যাঁচিয়ে সহজ করে বলো।

আমি এটাই বলতে চাইছি যে আপনজনদের দুঃখে যদি আমাদের জীবনে কোন প্রভাবই না পড়ে। আমাদের জীবনের সবকিছু যদি স্বাভাবিক ভাবেই চলতে থাকে। তারমানে আমরা আসলেই তার আপন কেউ কিনা সেটা গবেষণার দাবী রাখে।

আমার কি মনে হয় জানো?

কি?

তোমার কথা মেনে নেবার আগ পর্যন্ত যে পরিমাণ নিষ্ঠার সাথে তুমি আমার পেছনে লেগে থাকো। এতে সন্দেহের কোন অবকাশই নেই যদি নেপোলিয়নের যুগে তোমার জন্ম হতো, তাহলে অধ্যবসায়ের উদাহরণে মাকড়সার বদলে তোমার নাম ব্যবহৃত হতো। ছোট ছোট শিশুরা অধ্যবসায় রচনায় মাকড়সা নয় নূরির পুনঃ পুনঃ চেষ্টার কাহিনী পড়ে উৎসাহিত হতো।

হেসে ফেলতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলো নূরি। গাল ফুলিয়ে আদুরে কন্ঠে বলল, আমার সম্পর্কে আপনার ধারণা এমন?

যায়েদ হেসে বলল, নূরি মনে আছে তুমিই আমাকে একদিন বলেছিলে যে, কেউ যখন আমাদের পাশে থাকে তখন তার কথা ও কাজের দিকে মনোযোগ না দেয়াটা এক অর্থে তাকে অসম্মান করা। তোমার এই কথাটাকে আমি প্রচন্ড রকম সিরিয়াস ভাবে নিয়েছিলাম। যা আমাকে আমার এই বদভ্যাসটা থেকে বেড়িয়ে আসতে সহায়তা করেছিল। কারণ আমি নিজেও ফিল করেছিলাম আসলেই এটা খুবই অশোভন কিছু। একজন মানুষ আমার পাশে বসে কথা বলছে অথচ আমি সম্পূর্ণ রূপে তাকে ইগনোর করে নিজের ভাবনাতে মশগুল। আর এই ব্যাপারটা সেই ব্যক্তির জন্যও বেদনাদায়ক যে খুব আশা করে তার মনের কথা প্রিয় কারো সাথে শেয়ার করতে চেয়েছিল। কিন্তু সেই প্রিয়জন তার কথাটা শুনে দেখার প্রয়োজনও বোধ করেনি।

জ্বি আমি এই বেদনার সাথে পরিচিত।

তাহলে সেই বেদনা অন্যেকে কেন দাও? অভিজ্ঞতা আনন্দময় হোক কিংবা বেদনাদায়ক। জীবনকে সেটা প্রয়োগ করার জন্যই তো, তাই না?

আই এম সরি।

হাত বাড়িয়ে নূরিকে কাছে টেনে নিয়ে যায়েদ বলল, এই বিষয়গুলো খুব সিম্পল নূরি। আমরা তাই তেমন গুরুত্ব দিয়ে ভাবি না অন্যের প্রতি আমাদের এই অবহেলা সমূহকে। অথচ সত্যি কথা হচ্ছে, এমন ছোট ছোট বিষয়গুলোর প্রতি এক্সট্রা কেয়ারই সম্পর্কের মধ্যে মাধুর্য বৃদ্ধি ও অক্ষুণ্ণ রাখে। আমি তাই কখনোই চাই না অন্য কোন ভাবনার গোলকধাঁধায় মগ্ন থেকে আমরা পরস্পরের প্রতি বেখায়ালী আচরণ করি।

আমিও এমনটা চাই না। কখনোই চাই না।

আমি জানি তুমি চাও না। সাথে সাথে আমি এটাও জানি যে, সবসময় নিজের ভাবনার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব নয় আমাদের দ্বারা। তাই আজ আবারো বলছি তোমার যদি কখনো ভালো না লাগে, কথা বলতে ইচ্ছে না করে, এমন কোন বিষয় যদি থাকে যা তুমি আমার সাথে শেয়ার করতেও ইচ্ছুক নও। আমাকে সরাসরি বলবে। আমি তোমাকে সময় দেব এবং তুমি নিজেকে গুছিয়ে নেবার আগ পর্যন্ত ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষাও করবো ইনশাআল্লাহ। কিন্তু যখন আমরা একসাথে সময় কাটাবো তখন তোমার কোন ধরণের বিষণ্ণতা, উদাসীনতা আমি মেনে নেব না। যতক্ষণ তুমি আমার সাথে থাকবে হান্ডেড পার্সেন্ট ফোকাস থাকতে হবে তোমাকে। তুমি এমনটা ভেবো না যে আমি তোমার উপর এটা চাপিয়ে দিচ্ছি। কারণ আমি নিজেও তোমার সাথে কাটানো প্রতিটি মূহুর্তে ফোকাস থাকতে আপ্রাণ চেষ্টা করি। সো এই একই নিয়ম আমার জন্যও।

নূরি বলল, আমি বুঝতে পেরেছি। ইনশাআল্লাহ আমি খেয়াল রাখবো।

যায়েদ হেসে বলল, এই তো গুড গার্ল। এখন তাহলে চলো ঘুমোনোর আয়োজন করা যাক!

নূরি হাসি মুখে বলল, জ্বি।

চলবে….

 

নববধূকে ধর্ষণে সহায়তা করলো স্বামী!


নারী সংবাদ


মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে এক নববধূকে ধর্ষণে সহায়তার অভিযোগে তার স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অপর ঘটনায় স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে একজনকে আটক করেছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শ্রীনগর উপজেলার পশ্চিম কোলাপাড়া গ্রামে স্বামীর সহযোগিতায় এক গৃহবধূকে হাত-পা বেঁধে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার রাত আনুমানিক ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

প্রায় তিন মাস আগে উপজেলার কোলাপাড়া গ্রামের মৃত বাছের শেখের ছেলে আজিজুলের সাথে বিয়ে হয় একই উপজেলার শ্যামসিদ্ধি গ্রামের ওই নারীর। স্বামী আজিজুলের শারীরিক অক্ষমতার কারণে বিয়ের পর থেকে এ পর্যন্ত তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনো দৈহিক ও শারীরিক সম্পর্ক হয়নি।

এক পর্যায়ে স্বামীর শারীরিক অক্ষমতার কারণে সংসার না করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে বিয়ের সময় দেয়া যৌতুকের টাকা ও অন্যান্য উপঢৌকন ফিরিয়ে দিতে বলেন ওই নারী। স্বামী আজিজুল যৌতুক ফিরিয়ে না দেয়া ও তার শারীরিক অক্ষমতা বাইরে যাতে প্রকাশ না হয় সে বিষয়ে ভিন্ন কৌশলের পরামর্শ নেন তার আপন মামা সিদ্দিকের কাছে।

সিদ্দিকের পরামর্শ অনুযায়ী আজিজুল তার আপন খালা ও খালাতো ভাই নুরুল ইসলামকে কোলাপাড়ায় তার নিজ বাড়ির একটি ঘরে রাত্রি যাপন করান। এক পর্যায়ে রাত ১০টার দিকে নুরুল ইসলামের মা মাথা ব্যাথার মলম নেওয়ার কৌশলে ঘুমন্ত আজিজুল ও তার স্ত্রীকে ঘরের দরজা খুলতে বলে।

পরামর্শ ও পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আজিজুল তার নিজের ঘরের দরজা খুলে দেয়। ঘরের ভিতর ঢুকে নুরুল ইসলামের মা, নুরুল ইসলাম ও আজিজুল সবাই মিলে ওই নারীকে হাত-পা বেঁধে ফেলে এবং মুখে কাপড় গুঁজে দেয়। এরপর নুরুল ইসলাম, ধর্ষিতার স্বামী আজিজুল ও নুরুল ইসলামের মা ব্লেড দিয়ে ওই নারীর শরীরের বিভিন্ন অংশের কাপড় কেটে তাকে উলঙ্গ করে ফেলে। এর পর নুরুল ইসলাম হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তাকে ধর্ষণ করে। এ সময় ধর্ষিতার স্বামী আজিজুল এই ধর্ষণের দৃশ্য মোবাইল ফোনে ভিডিও করতে থাকে।

অপরদিকে একই রাতে উপজেলার কোলাপাড়া ইউনিয়নের ব্রাহ্মণ পাইকসা গ্রামের এক স্কুলছাত্রী রাত পৌনে ১২টার দিকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘর থেকে বের হলে একই গ্রামের মাজেদ শেখের বখাটে ছেলে রাকিব হাসান (২৫) ঘরে ঢুকে লুকিয়ে থাকে। পরে কোলাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ওই ছাত্রীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এসময় স্কুলছাত্রীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে ধর্ষক রাকিব হাসানকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।

শ্রীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো: ইউনুচ আলী জানান, দুটি ঘটনায়ই আলাদা আলাদা ভাবে দুটি মামলা হয়েছে। ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য স্কুলছাত্রীকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে আর নববধূকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। গৃহবধূর স্বামী ও স্কুলছাত্রীর ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্তকে আটক করা হয়েছে। নববধূর ধর্ষককে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
সুত্র:নয়াদিগন্ত।

 

‘অপরাজিতাবিডি’ ২০১৮ সালের সালতামামি

 


নারী সংবাদ


২০১৮ সালের সালতামামি লেখার চেষ্টা। ২০১৮ সাল কেমন গেল— এ প্রসঙ্গে বলতে গেলে প্রথমে আমাদের অনলাইন ম্যাগাজিন ‘অপরাজিতাবিডির’ এ বছর সম্পর্কে একটু ছোট্ট ধারণা দিতে চাই।

এ বছর ১৬টি ক্যাটাগরি ঠিক করা হয়।
উল্লেখযোগ্য ক্যাটাগরি গুলো হল, অপরাজিতা/ মেইক ইউরসেলফ/ ইন্টারন্যাশনাল উইমেন্স/ঘরকন্যা/ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা/প্যারেন্টিং/নারীর জন্য আইন/স্বাস্থ্যকথা/নারী সংবাদ/ মনের জানালা/সাহিত্য/ দাম্পত্য /কি পড়বেন, অন্যান্য ।

এ বছরের উল্লেখযোগ্য পোস্ট হল,

অপরাজিতা

১.অধ্যাপিকা চেমন আরা

অধ্যাপিকা চেমন আরা

২.বিশিষ্ট সাহিত্যিক ফরিদা হোসেনের সাক্ষাৎকার

বিশিষ্ট সাহিত্যিক ফরিদা হোসেনের সাক্ষাৎকার

দাম্পত্য

১.দাম্পত্য জীবনের কিছু কথা

দাম্পত্য জীবনের কিছু কথা

২.বৈবাহিক সমস্যা ও কোরআনের সমাধান

বৈবাহিক সমস্যা ও কোরআনের সমাধান -৫

৩.দাম্পত্য জীবনে দুইটা ব্যাপার

দাম্পত্য জীবনে দুইটা ব্যাপার

প্যারেন্টিং

১.খেলনার বদলে শিশুর মোবাইল চাই!

খেলনার বদলে শিশুর মোবাইল চাই!

২.ভাল প্যারেন্টিং এর জন্য ৫টি টিপস

ভাল প্যারেন্টিং এর জন্য ৫টি টিপস

৩.নবজাতকে দেখতে যাবার সময় কি করবেন

নবজাতকে দেখতে যাবার সময় কি করবেন

মনের জানালা

১.অনাবিল এক প্রশান্তি

অনাবিল এক প্রশান্তি

২.‘গায়ের রঙ এবং আমাদের মানসিকতা’

‘গায়ের রঙ এবং আমাদের মানসিকতা’

৩.জ্ঞানার্জন আমাকে বিনয়ী করছে তো?

জ্ঞানার্জন আমাকে বিনয়ী করছে তো?

স্বাস্থ্যকথা

১.শিশুর ডায়াবেটিকস ঝুঁকি

শিশুর ডায়াবেটিকস ঝুঁকি

২.‘মাথাব্যথা আর সমস্যা নয়’

‘মাথাব্যথা আর সমস্যা নয়’

৩.স্তন ক্যানসার : সচেতনতাই যার প্রতিকার

স্তন ক্যানসার : সচেতনতাই যার প্রতিকার – ২য় পর্ব

৪.‘প্রেগনেন্সি’

‘প্রেগনেন্সি’

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা

১.শুধু প্রণোদনা নয়, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য প্রশিক্ষণও প্রয়োজন

শুধু প্রণোদনা নয়, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য প্রশিক্ষণও প্রয়োজন

২.‘নিজের কাজকে সন্মান করুন’

‘নিজের কাজকে সন্মান করুন’

৩.“আমাকে পারতেই হবে”

“আমাকে পারতেই হবে”

মেইক ইউরসেলফ

১.সুন্দর কথা হল ‘শিল্প’

সুন্দর কথা হল ‘শিল্প’

২.কিভাবে স্মার্ট হবেন?

কিভাবে স্মার্ট হবেন?

৩.ব্যক্তিত্ব প্রকাশে হাসির ভূমিকা

ব্যক্তিত্ব প্রকাশে হাসির ভূমিকা

৪.‘ফটোগ্রাফি নারীদের কি ক্যারিয়ার হতে পারে’

‘ফটোগ্রাফি নারীদের কি ক্যারিয়ার হতে পারে’

সাহিত্য

১.“কৃষ্ণচূড়ার কিশোরী জীবন”

“কৃষ্ণচূড়ার কিশোরী জীবন”

২.সুবহে সাদিক

সুবহে সাদিক

৩.ক্লান্তিহীন ভালোবাসা

ক্লান্তিহীন ভালোবাসা

কি পড়বেন

১.বুক রিভিউ – ‘সফলদের স্বপ্নগাথা’

বুক রিভিউ – ‘সফলদের স্বপ্নগাথা’

২.বইয়ের নামঃ জ্ঞানতাপস ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্

বইয়ের নামঃ জ্ঞানতাপস ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্

৩.কাবিলের বোন

কাবিলের বোন

কয়েকটি পোস্ট জানলে পুরো ম্যাগাজিন সম্পর্কে জানা যাবে। অর্থাৎ ভাতের একটা দানা টিপে সব ভাত সিদ্ধ হয়েছে কিনা দেখা।

এ বছরটি  বিস্তর নারী সাফল্য সম্পর্কে পড়েছি, লেখালেখি করেছি। আশা করি স্বল্প পরিসরে নারীর সাফল্য ও নারী নির্যাতনের একটা চিত্র খুঁজে পাবেন।

নারীর সাফল্য

নারী শিক্ষা

সরকারের গত ৯ বছরের নিরন্তর প্রচেষ্টায় বর্তমানে দেশে নারী শিক্ষার হার ৫০ দশমিক ৫৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) হিসেব অনুযায়ী বর্তমানে প্রাথমিক পর্যায়ে মোট ছাত্রছাত্রীর প্রায় ৫১ শতাংশ, মাধ্যমিক পর্যায়ে ৫৪ শতাংশ, এইচএসসি পর্যায়ে ৪৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ ছাত্রী। নারীশিক্ষার হার বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯ নম্বরে।

প্রথম নারী মেজর জেনারেল

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম নারী মেজর জেনারেল হয়েছেন সুসানে গীতি। ২০১৮ সালে এটিও নারীর উল্লেখযোগ্য অর্জনের মধ্যে একটি।

টু ফিঙ্গার টেস্ট নিষিদ্ধ

ধর্ষণের শিকার নারী ও শিশুর শারীরিক পরীক্ষার জন্য আগে টু ফিঙ্গার টেস্ট ব্যবহৃত হতো। বিগত বছর টু ফিঙ্গার টেস্ট নিষিদ্ধ করেছেন হাইকোর্ট। ধর্ষণ প্রমাণে শারীরিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে এই টেস্টের কোনো বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি নেই। তাছাড়া ধর্ষণের ক্ষেত্রে পিভি টেস্ট নামে বায়ো ম্যানুয়াল টেস্ট করাও নিষিদ্ধ করেছেন হাইকোর্ট। শুধু তাই নয়, ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীর স্বাস্থ্যগত সেবাসহ অন্যান্য সেবা সবার আগে নিশ্চিত করার ব্যাপারটিও ২০১৮ সালেই কার্যকর হয়েছে।

নারী উন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগ

নারী উন্নয়ন ও সমতার লক্ষ্যে মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (MDG) ও দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্রের (NSAPR) আলোকে নারী উন্নয়ন নীতিমালা বাস্তবায়নকল্পে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রালয়ের অধীন মহিলাবিষয়ক অধিদফতরের মাধ্যমে উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

নারী নির্যাতনের চিত্র

২০১৭ সালের চিত্র…..

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ২০১৭ সালের নারী নির্যাতনের পরিসংখ্যান মতে, জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১ হাজার ৭৯, যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১৫৫, উত্ত্যক্ত করা হয়েছে ২৫৫ জনকে। এ বছর এ পর্যন্ত নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১ হাজার ৭৩৭ জন। ২০১৬ সালে ছিল ১ হাজার ৪৫৩ জন। এ বছর তা বেড়েছে। গ্রন্থনা : রীতা ভৌমিক, আবুল বাশার ফিরোজ ও শিল্পী নাগ।

২০১৮ সালের চিত্র….

২০১৮ সালে প্রথম ১০ মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৬৪৬ জন নারী। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছেন ৫৩ জনকে। আর যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৪১ জন নারী। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আজ রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশে নারী ও কন্যা নির্যাতন চিত্র ২০১৮-এর সমীক্ষায় এসব তথ্য তুলে ধরে।

সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৬৫ জন নারী, ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ১১৫ জন নারীকে এবং শ্লীলতাহানির শিকার ৫৫ জন নারী। এ ছাড়া উত্ত্যক্তের শিকার হয়েছেন ১৪০ জন নারী এবং উত্ত্যক্তে শিকার হওয়ার কারণে আত্মহত্যা করেছেন ১৪ জন নারী।

 

দেশে বছরে জরায়ু ক্যান্সারে মারা যায় প্রায় ১১ হাজার নারী


নারী সংবাদ


বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১১ হাজার নারী জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। আর এতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন প্রায় পাঁচ কোটি নারী। এর মধ্যে নিরক্ষর ও যৌনকর্মীদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। সম্প্রতি পরিচালিত একটি গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। দেশের চারটি জেলায় সহস্রাধিক নারী ও যৌনকর্মীর ওপর জরিপ চালিয়ে গবেষণার এ ফলাফল প্রকাশ করেছে একদল জরায়ু ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ।
গবেষণার ফলাফলে প্রকাশ- অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক, বাল্যবিবাহ, ধূমপান বা তামাক সেবন, অধিক সন্তান প্রসবসহ সাতটি কারণে জরায়ু ক্যান্সার হয়ে থাকে। তবে, সঠিক সময়ে জরায়ু ক্যান্সারের উপস্থিতি নির্ণয় করতে পারলে তা নিরাময়যোগ্য।
গবেষক দলের প্রধান ছিলেন স্কয়ার হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সুলতানা রাজিয়া বেগম। তার সহযোগীরা হলেন- ডা. নাসিমা শাহীন, ডা. সামছুন্নাহার, ডা. সোনিয়া পারভীন এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি অনুষদের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এ কে এম আনিসুর রহমান ও ড. তৌহিদুল ইসলাম।
সম্প্রতি চীনের বেইজিংয়ে এশিয়া-ওশেনিয়া রিসার্চ অর্গানাইজেশন আয়োজিত ‘জেনিটাল ইনফেকশেন অ্যান্ড নিওপাশিয়া’ বিষয়ের ওপর ষষ্ঠ দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে বাংলাদেশের জরায়ু ক্যান্সারের ওপর এ গবেষণাটি পোস্টার আকারে প্রদর্শন করা হয়। সম্মেলনে প্রদর্শিত এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ২৫টি অংশগ্রহণকারী দলের ৩৫টি পোস্টারের মধ্যে বাংলাদেশি গবেষকদের এই পোস্টারটি প্রথম স্থান লাভ করে।
প্রজনন শিক্ষা এবং প্রজনন স্বাস্থ্য খাতে সঠিক নীতিমালার অভাবে দিন-দিন জরায়ু ক্যান্সার মারাত্মক আকার ধারণ করছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে এটি মহামারী আকার ধারণ করতে পারে বলে জানিয়েছেন গবেষক দলের সদস্য অধ্যাপক ড. মোজাহিদ উদ্দিন আহমেদ।
ড. মোজাহিদ বলেন, খাগড়াছড়ি, জামালপুর, টাঙ্গাইল, গাজীপুর জেলার প্রায় সহস্রাধিক নারী ও যৌনকর্মীদের ওপর গবেষণাটি চালানো হয়েছে। এতে দেখা যায়, প্রায় ১১ শতাংশ গ্রামীণ নারী এবং ৩১ শতাংশ যৌনকর্মী জরায়ু ক্যান্সার সৃষ্টিকারী প্যাপিলোমা ভাইরাস বহন করে।
ভাইরাস বহনকারী এসব নারীদের আপাত দৃষ্টিতে দেখতে সুস্থ মনে হলেও যেকোন সময় তারা জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন। অনিয়মিত ও অধিক সময় ধরে রক্তস্রাব, কারণ ছাড়াই জরায়ু থেকে রক্তপাত, সঙ্গমের সময় রক্তপাত, তলপেটে প্রচন্ড ব্যথা জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ। এর যেকোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলে বুঝতে হবে জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তিনি জানান, জরায়ু ক্যান্সারের মূল সাতটি কারণ হলোÑ অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক, বাল্যবিবাহ, অধিক সন্তান প্রসব, ধুমপান বা তামাক সেবন, ঘন ঘন সন্তান প্রসব, স্বেচ্ছায় গর্ভপাত এবং প্রজনন শিক্ষার অভাব। তবে, যেসব পুরুষ একাধিক নারীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হন, তিনি বাহক হিসেবে প্যাপিলোমা ভাইরাস অন্য নারীর দেহে ছড়াতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে ওই পুরুষও লিঙ্গ ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন।
ড. মোজাহিদ আরো জানান, জরায়ু ক্যান্সার এমন একটি ক্যান্সার যা নিরাময়যোগ্য। যখন সংক্রমণ প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে তখনই এর উপস্থিতি নির্ণয় ও নিরাময় করা সম্ভব। এছাড়া, প্রতিষেধক টিকা গ্রহণ করে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। বছরে একবার জরায়ু পরীক্ষার মাধ্যমে সতর্কতা অবলম্বন করে এ রোগের হাত থেকে মুক্ত থাকা যেতে পারে।
গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুলতানা রাজিয়া বেগম বলেন, বাংলাদেশের নারীদের আক্রমণকারী ১০ ধরনের ক্যান্সারের মধ্যে জরায়ুর ক্যান্সার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে, যা শতকরা ১৯ দশমিক ২ ভাগ। অনেক নারী জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন। অথচ তার পরিবার জানেন না তিনি কি কারণে মারা যাচ্ছেন।
লজ্জাবশত অনেক নারীই জরায়ু ক্যান্সারের প্রাথমিক উপসর্গগুলো লুকিয়ে রাখেন, পরীক্ষা করতে চান না। ফলে তারা ধীরে-ধীরে জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। যৌন ও প্রজনন শিক্ষা এবং সচেতনতাই পারে জরায়ু ক্যান্সার থেকে মুক্তি দিতে। সে ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা, গ্রামে এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলে ক্যাম্পেইন করা গেলে এ রোগ থেকে দেশের নারী সমাজকে পরিত্রাণ দেওয়া সম্ভব বলে জানান ডা. সুলতানা রাজিয়া।
সুত্রঃ বাসস।

 

নিরালাপুঞ্জী।


ফাতিমা খান


শহর থেকে দূরে পাহাড়ের উপর ছিমছাম ছোট্ট একটা গ্রাম বলা যায়। যদিও এখানকার সরল মানুষগুলোর ধারণা তারা কোন গ্রামেও থাকে না আর শহর থেকে অনেক দূরেও তাদের আবাস না, এর থেকেও প্রত্যান্ত অঞ্চলে মানুষজন আছে এবং থাকছে। তারা আছে তো বেশ! আমার ‘সোয়ামী’ ডাক্তার সাহেব গিয়েছিলেন সরকারী সফরে আর আমি গিয়েছিলাম ওদের দেখতে।

গ্রামটার একদম শেষ মাথায় ঘন জংগল। আকাশ ছুঁইছুঁই করা বেশ কিছু গাছ, কিছু নিরপরাধ গুল্ম আর কিছু নামহীন ফুলের ঝোপঝাড়, এগুলোই জংগলের শোভা। সবুজ ঘাস আর ফার্ণ জাতীয় উদ্ভিদগুলো জংগলের ঘনত্ব বাড়িয়েছে দিগুণ। কম প্রস্থের মেঠো পথগুলোর দুপাশে বিশাল বিশাল খাদ। কিনারে দাঁড়িয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আমার গা শিয়রে উঠেছিল। খাদের শেষ আমি দেখতে পাইনি। অথচ কেবল হাটতে শেখা গ্যাদা বাচ্চাগুলো দিব্যি কিনার দিয়ে দৌড়ে বেড়াচ্ছে। আমি যখন খাদের তলানি খুঁজতে ব্যস্ত তখন ৪/৫ বছরের এক খোকা খাদের গা ঘেঁষে বেড়ে উঠা এক সুঠাম গাছের দুর্বল বাহুতে দিব্যি দোলা খেতে খেতে আমাকে একটা ভেংচি কাটল। এই বাচ্চাগুলো বড় হলে ওদের ঝুলিতে জমে থাকবে অনেক দূরন্ত, দুঃসাহসী স্মৃতি। আমি ওদের সামনে সত্যি এক আনাড়ি !

দুইপাশে সারি সারি মাটির ঘর। এদের বাসিন্দাদের বেশীরভাগই পান শ্রমিক, নয়ত পান ব্যবসায়ী ।ওরা থাকে এসব মাটির ঘরে। অনেকেই খাসিয়া দলের না, জীবিকার সন্ধানে এখান ওখান থেকে আসা মানুষ।

ওদের দলনেতাকে ওরা মন্ত্রী বলে। মন্ত্রী আর তার পরিবারের সদস্যদের বাড়িগুলো শুধু আধুনিক মানের, পাকা বিল্ডিং পরিপাটি।

পুরাটাই জংগল এলাকা বলে সাপের ভয়ও আছে এখানে। বর্ষাকালে সাপের আনাগোনা বেশী, শীতকালে যে একদম নাই, এমনটাও না। শেয়াল, বনবিড়াল, হাতি, সজারু, বানর, অন্যান্য বন্য প্রানীগুলোর সাথে এখানকার মানুষ ভালই ভাব জমিয়ে রেখেছে।

নিরালাপুঞ্জীর মানুষগুলো মূলত খাসিয়া উপজাতির। বাংলাদেশ ইন্ডিয়ার বর্ডার এর থেকে শুধু ২ কিলো মিটার দক্ষিণপূর্ব দিকে পাহাড় আর সবুজ দিয়ে ঘেরা এই নিরালাপুঞ্জী। এখানকার মানুষগুলোর নিজস্ব ভাষা, পোষাক আর সংস্কৃতি আছে। কোন এক সময় তাদের অবস্থা যেমনই থাকুক না কেন দিনকে দিন তারা উন্নতি করে চলেছে, এর পেছনের একমাত্র রহস্য তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম। দলনেতা বা মন্ত্রীর সাথে কথা বলে জানলাম, তার ছেলেমেয়েরা প্রতিবেশী দেশ ভারতে লেখাপড়া করছে।

চলতে চলতে আমার সাথে এসেছিল ওই মাটির বাড়িগুলোর কোন একটা বাড়ির বউ। সে খাসিয়া নয়, বাড়ি কুমিল্লা। শ্বশুর শাশুড়ি বাবা মা সবাইকে নিয়েই সে এক কক্ষের মাটির ঘরটায় থাকে। বয়স পচিশ হবে, চোখ জোড়া কোটরে ঢুকানো, হাসতে গেলে চোয়ালের হাড় খানিকটা নড়ে চড়ে উঠে, অবয়বে বোঝা যায় অপুষ্টে বেড়ে উঠা শরীর।

এই ফ্যাকাশে হাসিখুশী মেয়েটাকেই জিজ্ঞেস করলাম,

“আচ্ছা, তোমাদের এখানে সাপ আসে না? “

“আসে, তয় কিছু করে না। লাডি নিয়া দৌড়াইলে উলটা ওরাই ভয় পায়। আপনি যান ম্যাডাম। সাপ আপনারে ধরব না। ”
এই অভয়বাণীতে সান্তণা পেলাম বটে, কিন্তু ভয় দূর হল না একটুও। সাপ তো সাপই, সে আবার কিছু না করে কেমনে? বুঝলাম তারা নিতান্ত প্রাকৃতিক জীবনযাপন করছে।

প্রকৃতির কোলে বেড়ে ওঠা এই মানুষগুলো প্রকৃতির অতিচেনা আপনজন। সময় বা পরিস্থিতি বিশেষ কখনও লাঠি তুলে নেয়া প্রয়োজন হলেও কারণ বিনা তারা একান্ত পড়শী। দিনশেষে সন্ধ্যা নামছিল, এখানেও আলোর পর আধার আসে, রাতের পরে দিন। মনে হয়েছিল মাটির দেশে সবুজের আবেশে মাটির ঘরগুলোতে চাইনিজ পুতুলের মত মাটির মানুষগুলোই বসবাস করে।

 

নারীদের ঝগড়ায় সংঘর্ষ, নিহত ১


নারী সংবাদ


সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় নারীদের ঝগড়াকে কেন্দ্র করে প্রতিবেশী দুই পক্ষের সংঘর্ষে সাইফুল ইসলাম (৪০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার সকাল ৮টার দিকে উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

সাইফুল মহেশপুর গ্রামের সোনা মিয়া তালুকদারের ছেলে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে শনিবার সকাল ৭টার দিকে সাইফুল ইসলামের স্ত্রী তাসলিমা বেগমের সঙ্গে প্রতিবেশী মিষ্টার মিয়ার স্ত্রী রোজিনা আক্তারের ঝগড়া হয়। এরই জেরে সাইফুল ও মিষ্টার মিয়ার মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে সাইফুল অচেতন হয়ে মাটিতে লুটে পড়েন। স্থানীয় লোকজন সাইফুলকে উদ্ধার করে জয়শ্রী বাজারে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে সেখানে ওই চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।। সুত্র:সমকাল।

 

“হারমোনিয়াম”


মোঃ দেলোয়ার হোসেন


পাত্রপক্ষ ও কন্যাপক্ষের মধ্যে ঘটকালির কাজটি সারলেন আমার দূরসম্পর্কের এক মুরুব্বি দুলাভাই l মুরুব্বি বললাম এই কারণে যে , দুলাভাইয়ের বড়ো ছেলে আমার চেয়েও বয়সে কিছুদিনের বড়ো ! কথাবার্তা মোটামুটি পাকাপাকি হবার পরেও দুলাভাই কন্যাপক্ষের কানে আমার বিষয়ে অতিরিক্ত একটি বিশেষণ লাগিয়ে দিলেন, “ ছেলে সারাদিন মাথায় টুপী পরে থাকে!” কন্যার পিতা জানতে চাইলেন….
: ছেলে কি মাদ্রাসা লাইনে লেখাপড়া করেছে ?
: না , জেনারেল লাইনে পড়েছে !
: ছেলের মাথায় কি টাক আছে?
: না তা নয় !
: তাহলে?
: ছেলে কিছুটা “হুজুর” টাইপের !
: আলহামদুলিল্লাহ ! ভালো খবর ! তাহলে ছেলে মেয়ে উভয়ের দেখা সাক্ষাৎ ও সম্মতিক্রমে কথাবার্তা ফাইনাল হয়ে যাক !
একদিন শুভ ক্ষনে আমাদের বিয়ের সানাই বাজলো ! মধ্যবিত্তের সাদামাঠা বিয়ে ! মনের মধ্যে একরাশ আনন্দ অনুভূতি নিয়ে বিয়ে শেষে বৌ সহ বাড়ি ফিরলাম !
কয়েকদিন পর যাওয়া হলো বৌকে নিয়ে শশুর বাড়ি ! যথারীতি গিন্নীর কামরাই এখন রূপান্তর হলো আমাদের দুজনের ঘুমঘর হিসেবে ! মাঝারি সাইজের রুম ! খাট ড্রেসিংটেবিল , বসার জন্য দুটি চেয়ার আর একটি স্টিলের আলমারি l পরদিন সকাল বেলা আবিষ্কার করলাম , স্টিলের আলমারির উপরে সুন্দর করে কাপড়ে মোড়ানো একটি চারকোনা সাইজের বস্তু ! গিন্নী কে জিজ্ঞাসা করলাম ……
: আলমারির উপর কাপড়ে মোড়ানো বস্তুটি কি ?
: হারমোনিয়াম !
: কে বাজায় ?
: এখন কেউ বাজায় না ! শখ করে কিনে রেখে দেওয়া হয়েছে !
: তুমি বাজাতে পারো নাকি ?
: একটু একটু পারি !
: আমাকে একটু বাজিয়ে শোনাও তো ! গানও গাইতে পারো নাকি ?
: অল্প অল্প পারি !
: বাহ ! বেশতো ! চলো তবে হয়ে যাক একটা “সংগীত সকাল !”
: আমার লজ্জা লাগছে ! বাসায় যখন কেউ থাকবেনা তখন শোনাবো !
: বেশ ! তবে সেই কথায় রইলো !
টুকটাক প্রশ্ন করে জানতে পারলাম , গিন্নী বাসায় একজন মহিলা উস্তাদ রেখে হারমোনিয়াম বাজানো ও গান শিখতো ! নিতান্তই শখের বশে শেখা ! প্রশিক্ষণ প্রায় শেষ পর্যায়ে থাকার সময় বিয়ে হয়ে গেলো ! সেই সাথে ইতি ঘটলো সংগীত সাধনার ! ঢাকা শহরে তাঁর জন্ম , পড়াশোনা ও বেড়ে উঠার সুবাদে খুব সহজেই সে এই ধরণের সুযোগ করে নিতে পেরেছিলো !
অন্যদিকে আমার জন্ম ও বেড়ে উঠা পল্লীগ্রামে ! তবে ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি ছিল দুর্বার আকর্ষণ ! রেডিও, টেপরেকর্ডার নিয়মিত শোনা হতো ! আর বিশেষ করে বয়াতীদের পালাগানের ছিলাম পাগল ভক্ত ! গ্রামে উৎসব উপলক্ষে মাঝে মাঝে আয়োজন করা হতো বিখ্যাত গাতকদের নিয়ে সারারাত ব্যাপী গানের আসর ! তাঁদের ইনস্ট্যান্ট বানানো ছন্দ ও অন্তমিল দিয়ে , কখনো কবিতা আবার কখনো গানের মাধ্যমে সব শ্রেণীর শ্রোতাদেরকে গভীর রাত পর্যন্ত মোহাবিষ্ট করে রাখতো! আমি তন্ময় হয়ে শুনতাম আর ভাবতাম, এভাবে হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান গেয়ে গেয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারলে মন্দ হতো না !
যাই হউক, সেদিন বিকেলেই সুযোগ হাতের নাগালে, বাসার মুরুব্বিরা কি একটা কাজে সবাই বাইরে! আর দুয়েকজন পিচ্চিপাচ্চা, ওরা হিসেবের মধ্যে পড়েনা ! গিন্নীর রুমের দরজা বন্ধ করে আয়োজন করা হলো “ একক সংগীত বিকাল”! শ্রোতা আমি একাই ! শিল্পীকে উৎসাহ দিয়ে বললাম ,
: শুরু করো ! শ্রোতা হিসেবে আমি একাই তিনশো !
: প্রথম কোন গানটা শুনতে চাও?
: যেটা জীবনে প্রথম শিখিছিলে, সেটা দিয়েই শুরু করো !
: আচ্ছা ! ঠিক আছে !
মাত্র কয়েকদিন হলো বিয়ে হয়েছে ! এখনো কথা বলার মধ্যেও জড়তা কাটেনি ! চলাফেরায় কেমন একটা লাজরাঙ্গা ভাব ! গিন্নি গাওয়া শুরু করলো আর আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ! রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লিখা সেই বিখ্যাত গানটি …
“ফুলে ফুলে ঢ’লে ঢ’লে বহে কি’বা মৃদু বায় ।।
তটিণী-র হিল্লোল তুলে কল্লোলে চলিয়া যায় ।
পিক কি’বা কুঞ্জে কুঞ্জে ।।
কুউহু কুউহু কুউহু গায়,
কি জানি কিসের লাগি প্রাণ করে হায় হায় ।”
আমি তন্ময় হয়ে শুনছি ! মোটামোটি মিষ্টি গানের গলা ! গানের সাথে সুর মিলিয়ে বাজছে হারমোনিয়াম ! গান শেষ হওয়ার পর বললাম….
“ অসাধারণ গেয়েছো তুমি ! আমি মুগ্ধ !”
আমার কথা শুনে আনন্দে তাঁর চোখে পানি এসে গেলো ! ধরা গলায় বললো ,
: তোমার পছন্দ হয়েছে ?
: খুব পছন্দ হয়েছে ! আরও একটা শোনাও !
সে আবার গান ধরলো ! এবার নজরুল গীতি ! কিন্তু আগের মতো সাবলীল ভাবে আর গাইতে পারছে না ! আবেগে গলা বসে যাচ্ছে ! চোখ থেকে নেমে আসছে আনন্দ অশ্রুধারা ! আমি মিটিমিটি হাসছি ! বললাম…
: থাম! আর কষ্ট করে গাইতে হবে না ! যা গেয়েছো , মনের ভিতর বসে গেছে ! সারা জীবন মনে রাখার জন্য যথেষ্ট !
: এখন থেকে আমি শুধু তোমার জন্যই গাইবো ! আমার গান তোমার ভালো লেগেছে এটাই আমার পরম পাওয়া ! আমার গান শেখা সার্থক হলো ! দোআ করো , আমি যেন কথা রাখতে পারি !মাথায় হাত বুলিয়ে অন্তর থেকে দোআ করে দিলাম !
হঠাৎ মাথায় একটা খেয়াল উদয় হলো ! আরে! আমিতো অনেক দিন থেকে মনের ভিতর সযতনে লালিত ইচ্ছা এখনই পূরণ করতে পারি ! সাহস করে বলেই ফেললাম গিন্নীকে …
: এখন আমি একটা গান গাইতে চাই, তুমি আমার গানের সাথে সুর মিলিয়ে হারমোনিয়াম বাজাবে !
: বলো কি ? তুমিও গাইতে পারো নাকি ?
: যেমন পারি তেমনি গাইবো ! অডিশন তো দিচ্ছি না ! শুনে শুনে অনেক গান আমার মুখস্ত করা আছে !
গিন্নীর পরিচিত গানের মধ্যে থেকেই একটা গাইতে শুরু করলাম ! গলায় তেমন জোর পাচ্ছিলাম না ! মনে হচ্ছে গলার ভিতরটা ছোট হয়ে আসছে ! হারমোনিয়াম সুর মতোই বাজছে, কিন্তু গানের সুর পিছলে চলে যাচ্ছে অন্যদিকে!আমিও নাছোড় বান্দার মতো দাঁতমুখ খিঁচে সুরকে টেনে আনার চেষ্টা করছি হারমোনিয়ামের দিকে !
গিন্নী বেশীক্ষন নিজেকে স্থির রাখতে পারলোনা ! হাসি চাপতে না পেরে হারমোনিয়াম রেখেই দিলো দৌড় ! এক দৌড়ে ঘরের বাইরে! আর আমি শরমে বিছানার উপর চ্যাগায়ে পরে রইলাম আধা ঘণ্ট, আধা বেহুশের মতো!সেটাই ছিল হারমোনিয়ামের সুরের সাথে আমার গান গাওয়ার প্রথম ও শেষ অপচেষ্টা !
বেশ কয়েক বছর পরের কথা ! জীবিকার প্রয়োজনে দেশের বাইরে চলে আসা হলো ! কিছুদিন পর গিন্নিও চলে আসলো আমার কাছে ! গিন্নীর সাধের হারমোনিয়াম অতিরিক্ত ওজনের কারণে সাথে আনা গেলো না! তাঁর খুব মন খারাপ হলো ! এতদিনের প্রিয় জিনিস রেখে আসতে হচ্ছে ! আমি সান্তনা দিয়ে বললাম “ মন খারাপ করোনা ! তোমাকে একটা সুন্দর দেখে পিয়ানো কিনে দেবো!” আর মনে মনে ভাবলাম , এইবার আমার সংগীত সাধনা ঠেকায় কে? বাসায় পিয়ানো থাকলে গিন্নীর কাছ থেকেই বাজানো শিখতে পারবো ! এরপর নিজের গানে নিজেই বাজাবো !
গিন্নী আসার পর আবার নতুন করে শুরু হলো আমাদের টুনাটুনির সংসার ! হাইস্পিড ইন্টারনেটের কল্যানে সারা দুনিয়ার গানের গ্যাং চলে আসলো হাতের মুঠোয়! আমার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ ! গিন্নী সারাদিন বাসায় থাকার ফলে You tube দেখে নিত্য নতুন গানের খবর মাথার ভিতর টুকে রাখে ! রাতে আমি বাসায় ফিরলে শুরু হয় সংগীতের সংবাদ প্রবাহ ! কান ঝালাপালা অবস্থা!
এর কিছুদিন পর আমাদের সংসারে নতুন অতিথি আগমনের বার্তায় দুজনের মনেই আনন্দের জোয়ার বইতে লাগলো ! ডাক্তার পরীক্ষা করে বললেন , সে কন্যা সন্তানের মা হতে চলেছে ! খুশিতে তখন আমার আবার আধপাগল অবস্থা ! আমি পরামর্শ দিলাম…
:You Tube এ খালি গানবাজনা আর নাচানাচি দেখোনা ! কন্যা তো পেটের ভিতরেই লাফালাফি শুরু করবে ! অনেক সুন্দর সুন্দর ইসলামিক আলোচনা আছে ! বাদ্যবাজনা ও অশ্লীলতামুক্ত সংগীত আছে ! মাঝে মাঝে ওগুলোও দেখো!
: আমি দেখি একটু একটু ! তুমি যখন বলছো আরো সময় নিয়ে দেখবো !
: তোমার জন্য একটি পিয়ানো কিনে আনি ?
: আর কিছুদিন যাক ! এই মুহূর্তে এসব ভালো লাগবে না !
: সব সময় হাসি খুশি থেকো !বাচ্চাও হাসতে হাসতে দুনিয়ায় চলে আসবে !
সেই বছরের রমজান মাস চলে আসলো ! তখনও আমাদের কন্যার পৃথিবীতে আসার সময় হয়নি ! পবিত্র রমজানের রোজার শুরুতে গিন্নী সদর্পে ঘোষণা দিলো ,
: এই মাসে আমরা কোনো গানবাজনা ও নাচানাচির অনুষ্ঠান দেখবোনা ! ওয়াজ মাহফিল ও হামদ-নাত শুনবো ! বেশীবেশী কোরআন তিলাওয়াত করবো ! অনাগত সন্তানের জন্য এটা হবে শান্তি ও রহমত স্বরূপ!
: আলহামদুলিল্লাহ ! অতি উত্তম প্রস্তাব !আমি আছি তোমার সাথে !
দুই সদস্য বিশিষ্ট সংসদে পূর্ণ ভোটে বিলটি পাশ হয়ে গেলো ! আর আমরা দুজন নিয়মিত তাফসীর মাহফিল, ইসলামিক গানের অনুষ্ঠান দেখা শুরু করলাম ! আমার চেয়ে গিন্নী অধিক সময় নিয়ে দেখার কারণে , সে এসব অনুষ্ঠানের ভক্ত শ্রোতায় পরিণত হলো এবং ঈদের পরেও সেই ধরণের অনুষ্ঠান উপভোগ করা পুরু দমে চলতে থাকলো ! আর আমার পিয়ানো কিনার ও বাজানো শিখার স্বপ্ন ধীরে ধীরে মাঠে মারা যাওয়ার উপক্রম হলো !
একসময় ঘর আলো করে আমাদের সন্তান পৃথিবীর বুকে পা রাখলো এবং দেখতে দেখতে পার হলো একটি বছর ! এখন মধুর সুরে বাবা,মা, দাদা , নানা , মামা শব্দগুলি স্পষ্ট উচ্চারণ করে ! আরও বিচিত্র চিৎকার ও চেঁচামেচিতে সারাদিন ঘরবাড়ি মুখরিত করে রাখে, যার বেশীরভাগ শব্দই বুঝা যায় না ! মায়ের সাথে তাল মিলিয়ে সেও এই বয়সেই ইসলামী সংগীতের ভক্তে পরিণত হলো ! ভক্ত বললাম এই কারণে যে , খাওয়ার সময় ইসলামী গান না শুনলে সে খেতে চায়না!কান্নার সময় তাঁর কানের কাছে এই ধরণের গানের কলি গাইলে , সাথে সাথে কান্না বন্ধ করে দেয় ! এমনকি ঘুম পাড়ানোর সময়ও তাঁর কানের কাছে মিনমিন করে গাইতে হয় !
এই দেশে বাচ্চা জন্মের পর হতে চারবছর বয়স পর্যন্ত একজন “ চাইল্ড কেয়ার “ নার্স নিয়মিত রুটিন মাফিক বাচ্চাকে দেখাশুনা করেন ও স্বাস্থ্য, বৃদ্ধি , টিকা , খাবারদাবার , মানসিক বিকাশ ইত্যাদির বিষয়ে মূল্যবান পরামর্শ দিয়ে থাকেন ! এখন যেহেতু বাচ্চা কথা বলা শুরু করেছে , তাই নার্স পরামর্শ দিলো বেবি কে মিউজিক্যাল টাইপ কোনো খেলনা কিনে দিতে ! আমি ভাবলাম এই সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না ! গিন্নিকে বললাম…
: নার্স বলেছে , বাচ্চাকে পিয়ানো টাইপ খেলনা কিনে দিতে !
: তাহলে তো কিনতেই হবে ! ছোটোখাটো ও হালকা দেখে একটা নিয়ে আসো !
আমি বেছে বেছে মাঝারি টাইপ একটা কিনে ফেললাম ! বাচ্চা সেটা দুই হাতে তুলতে পারেনা ! তাতে কি? দুই হাতে অনবরত টিপে বিভিন্ন ধরণের সুর বাঁজিয়ে কান তছনছ করে দেয় ! এরমাঝে একদিন গিন্নীকে বলেই ফেললাম আমার পিয়ানো শিখার ইচ্ছার কথা ! গিন্নী বললো…
: দেখ , আমি আর এসব বাজাতে চাই না ! আমি চাইনা তুমিও এসব শিখো !
: কেন ?
: আমি কয়দিন আগে এক হুজুরের ওয়াজে শুনেছি , অনর্থক গানবাজনায় মেতে থাকলে পাপ হয় ! গানের সাথে যদি বাদ্যবাজনা ও পর্দাহীন মহিলাদের ভিডিও থাকে তবে পাপের পরিমান আরও বেড়ে যায় ! এসো আমরা এসব পরিত্যাগ করি ! ভালো কিছু শুনি ও দেখি !
: সেইটা আবার কেমন ?
: ঐ সমস্ত গান আমরা শুনতে পারি, যাতে আল্লাহর তাওহীদের কথা আছে অথবা রাসূলের সা. মহব্বত ও তার শামায়েল আছে অথবা যাতে চরিত্রকে দৃঢ় করতে উদ্ধুদ্ধ করা হয়।
: আর ?
: সেই সমস্ত গান, কবিতা ও শুনা যেতে পারে, যা শুনে মুসলিমদের একে অন্যের প্রতি মহব্বত ও সুসম্পর্ক সৃষ্টি হয় !
: আর ?
: সেই সব গীত বা সংগীতও উপভোগ করা যেতে পারে, যাতে ইসলামের মৌলিক নীতি বা সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । অথবা এই জাতীয় অন্যান্য কথা বা আলোচনা শোনা যেতে পারে যা সমাজকে আহবান করে দ্বীনি আমলের দিকে কিংবা উত্তম চরিত্র গঠনের দিকে !
: তুমি তো দেখি পুরা মহিলা হুজুর হয়ে গেছ !
: এসব মানতে পারলে , আমরা দুনিয়াতে পাপমুক্ত থাকবো এবং আখেরাতেও লাভবান হবো ! চলো আমরা নিয়ত করি মেনে চলার ! দুজনে একসাথে চেষ্টা করলে আশাকরি পারবো ইন্শাআল্লাহ !
: ইন্শাআল্লাহ ! নিয়ত করলাম !
এরপর আমরা খুব বেছে বেছে অনুষ্ঠান দেখি ও গান শুনি ! আর পিয়ানো টা শুধু ব্যবহার হতে থাকলো বাচ্চার খেলনা হিসেবেই ! আমাদের এক ছোট্ট কন্যা, ইচ্ছামতো পিয়ানোর কি বোর্ড চেপে পোঁ পোঁ আওয়াজ তুলে ! আর মনের সুখে গলা দিয়ে আওয়াজ করে , আয়ি-আয়ি- আয়ি -আ-আ-আ ! আমি আর গিন্নী তাঁর কান্ড দেখে মনের সুখে হাসি !
আর হাঁ ! গিন্নি যে আমাকে কথা দিয়েছিলো , সে , আমি ছাড়া আর কারো সামনে গান গাইবে না , সে এখন পর্যন্ত সেকথা রেখেছে ! তারপর থেকে, সে আর কারো সামনে গান গায়নি ! এমনকি তার ভাইবোন অথবা কোনো বান্ধবীর সামনেও না !

 

তবুও শহর


জিনাত তাসনিম


নিশুতি রাতেও নিশ্চুপ হয়না যে শহর
পিচ্ ঢালা পথগুলো সাক্ষী হয়ে যায়
কত ঘটনা আর অঘটনের।
কত শতবার লালে লাল হয়
কোনো স্বপ্নচারী মানুষের অন্তিম
গোধূলির শবযাত্রা ভীড়ে।
ডাস্টবিনের ফ্যালনার বুকে
জীবনের আকুতি জানায়
হতভাগা নবজাতকের কান্না।
তবু নতুন নতুন স্বপ্নেরা জন্মে
পরগাছা মানবের এ শহরে
মুয়াজ্জিনের আহবানে আসে নতুন ভোর
বাড়ে আরো কিছু স্বপ্নালু মুখ।

 

বিয়ের মেহেদীর রং হাতেই লাশ হলেন লতিফা


নারী সংবাদ


যশোরের চৌগাছায় মেহেদীর রং হাতে নিয়েই লাশ হলেন লতিফা খাতুন (২০) নামে এক নববধূ। বিয়ের মাত্র সাত দিনের ব্যবধানে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। লতিফার পরিবারের দাবি তাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার পাঁচ বাড়ীয়া গ্রামে।

এ ঘটনায় লতিফার বড় ভাই ইনতাজ আলী বাদী হয়ে মহেশপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

জানা যায়, গত ১৬ ডিসেম্বর উপজেলার জামিরা গ্রামের ওয়াজেদ আলীর কন্যা লতিফা খাতুনকে (২০) পাশের ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার মান্দারবাড়ীয়া ইউনিয়নের পাঁচবাড়িয়া গ্রামের তোরাব আলীর ছেলে রাজু আহমেদের সাথে বিয়ে হয়। ২৩ ডিসেম্বর রাতে তার শ্বশুরবাড়ির একটি ঘরে লতিফার লাশ ঝুলে থাকতে দেখা যায়। এ খবর পেয়ে মহেশপুর থানা পুলিশ তার লাশটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ঝিনাইদহে পাঠায়।

লতিফার বড় ভাই ইনতাজ আলী বলেন, বিয়ের পর থেকেই ছেলের পরিবারের পক্ষ থেকে মোটা অংকের যৌতুকের টাকা দাবি করা হয়। আমরা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তারা আমার ফুলের মতো ছোট বোনকে হত্যা করেছে। এ ঘটনার রাত থেকেই রাজুর পরিবারের সবাই পলাতক রয়েছে।

এদিকে ময়না তদন্ত শেষে চৌগাছা উপজেলার জামিরা গ্রামে বাপের বাড়ি লতিফার দাফন করা হয়।

এ মামলার তদন্তকারী অফিসার মহেশপুর থানার এস আই শামীম হোসেন বলেন, লাশের ময়না তদন্তের রির্পোট হাতে পেলেই বলা যাবে এটা হত্যা, না আত্মহত্যা।

এ ব্যাপারে মহেশপুর থানার ওসি রাশেদুল আলম বলেন, আমরা মেয়েটির লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ঝিনাইদহে পাঠিয়েছি। এ ঘটনায় লতিফার বড় ভাই ইনতাজ আলী বাদী হয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

বুক রিভিউ – ‘সফলদের স্বপ্নগাথা’


মেহেদী আরিফ


বইয়ের নামঃ সফলদের স্বপ্নগাথা
সম্পাদকঃ ফিরোজ জামান চৌধুরী
ধরনঃ অনুপ্রেরণামূলক।
প্রকাশনীঃ অন্বেষা।
পৃষ্ঠাঃ ১৬০।
সফলতার নেপথ্যে নানা কথা থাকে, ঘটনা থাকে, থাকে নানা দুর্ঘটনাও। সফলতা এসে গেলে ভিতরের কথাগুলি বের হয়ে আসে, যেমনভাবে বের হয়ে আসে গর্ত থেকে সাপ। ফিরোজ জামান চৌধুরী সম্পাদিত “সফলদের স্বপ্নগাথা” একটি স্বপ্ন জাগানো বই, জেগে থাকার বই, সাফল্যের সিঁড়ি ভেঙে উপরে ওঠার বই। প্রথিতযশা তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, লেখক, রাষ্ট্রনায়ক, মানবাধিকার কর্মী, সংগীতশিল্পী, চলচ্চিত্রশিল্পী, সংগীতশিল্পী ও খেলোয়াড়দের জীবনের সফলতার বয়ান হল এই বইটি।
মাত্র বিশ বছর বয়সে ফেসবুক নামক সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম চালু করে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দেন বিস্ময়কর যুবক মার্ক জাকারবার্গ। হার্ভার্ডের পড়াশুনা না চুকিয়েই ফেসবুকে ডুব দেন এই তরুণ। তিনি একাডেমিক পড়াশুনা শিকেয় তুলে নেমে পড়েন ফেসবুক নামক ওয়েবসাইটের উন্নয়ন সাধনে। ঈর্ষণীয়ভাবে সফলতার প্রদীপ শিখার দেখা পান তিনি। বর্তমানে ১৫০ কোটিরও বেশি মানুষ ফেসবুক চালান, নিজেদের মতামত শেয়ার করেন, পুরনো বন্ধুদের খুঁজে ফেরেন, বাইরের রাজ্যের সাথে ভিতরের রাজ্যের মেলবন্ধন ঘটান। এর নেপথ্যে জাকারবার্গ। ২০১১ সালে ফোর্বস সাময়িকী ঘোষিত ৩০-এর কম বয়সী সফল ব্যক্তিদের তালিকায় তিনি আছেন। জাকারবার্গ মনে করেন, কাজ করা ও শেখার সময়ে অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার মাঝে শেখার মাত্রা বাড়ে। আর শেখার মাত্রা বাড়লে সফলতা তো হাতের মুঠোয় চলে আসে।
বিশ্বব্যাপী সাড়া জাগানো অ্যাপল কম্পিউটারের স্রষ্টা স্টিভ জবস উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তাতে কি! সফলতার দ্বারে তিনি ঠিকই ভিড়িয়েছিলেন তরী। এই মহারথী ব্যবহৃত কোকের বোতল ফেরত দিয়ে পাঁচ সেন্ট করে উপার্জন করে খাবার কিনে খেতেন। বন্ধুদের কক্ষের মেঝেতে ঘুমাতেন। শুধু কি এখানেই শেষ? না, এখানে শেষ না। তিনি প্রতি রোববার রাতে সাত মাইল হেঁটে হরেকৃষ্ণ মন্দিরে যেতেন একবেলা ভাল খাবারের আশায়। নিজের প্রতিষ্ঠিত অ্যাপল কোম্পানি থেকে তিনি বিতাড়িত হয়েছিলেন। তাঁর সফলতার নেপথ্যে বিতাড়িত হওয়ার ঘটনার মূল্যমান অনেক। স্টিভ জবস প্রত্যেক দিনকে মনে করতেন জীবনের শেষ দিন। এভাবে তিনি তাঁর কাজ সম্পাদন করেছেন। প্রতিদিন তিনি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবতেন আজ তিনি যা যা করছেন মরে যাওয়ার আগে কি তাই তাই তিনি করতেন?
বিশ্বের সবচেয়ে বড় সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট কর্পোরেশনের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিলগেটস হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা শেষ করতে পারেন নি। অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার ৩৩ বছর পর তিনি সেখানে ফিরে আসেন শিক্ষার্থী হিসেবে নয়, বরং শিক্ষার্থীদের সমাবর্তনের বক্তা হয়ে। জীবনের নানা চড়াইউতরাই পেরিয়ে সাফল্যের শিখর স্পর্শ করেছেন এই মানবতাবাদী। তিনি শিক্ষার্থীদের কর্মী হওয়ার জন্য আহবান করেছিলেন সমাবর্তনের বক্তৃতায়। সাথে সাথে বড় ধরনের বৈষম্য নিয়ে সবাইকে কাজ করার উদাত্ত আহবান জানিয়েছিলেন।
ইন্টারনেটের জগতে সার্চ ইঞ্জিন গুগলকে কে না চেনে! ল্যারি পেইজ হলেন এই সার্চ ইঞ্জিনের উদ্ভাবক। তিনি মনে করেন, মূল রাস্তায় থেকে কাজ করার মাঝে সফলতা আসে। আরো মনে করেন, স্বপ্নের মাঝে বেঁচে থাকে কোনো মানুষকে আলাদা করার ক্ষমতা।
ইয়াহু’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা জেরি ইয়াং-এর সফলতার নেপথ্যে পরিশ্রমকে দাঁড় করিয়েছেন। ম্যালকম গডওয়েলের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘যেকোন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হতে হলে ওই বিষয়ে অন্তত ১০ বছর অথবা ১০ হাজার ঘন্টা সময় দিতে হবে।’ ঘর থেকে বেরিয়ে বিশ্বকে দেখার উদাত্ত আহবান জেরি ইয়াং-এর। মনীষী অগাস্টিন বলেছেন, ‘পৃথিবী হলো একটা বিশাল বই, আর যারা পৃথিবী ঘুরে দেখেনি, তারা এই বইয়ের শুধু একটা পাতা পড়েছে।’ জেরি ইয়াং ২০০৯ সালে ইউনিভার্সিটির সমাবর্তন অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন , ‘জীবনের পথে যাদের পাশে পেয়েছ তাদের কখনো ভুলে যেও না।’
উইকিপিডিয়ার সহ-প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি স্যাঙ্গার অর্থপূর্ণ জীবনের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি মনে করেন সারাজীবন মানুষের ভাবা উচিত তার প্রিয়জনদের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য কি কি করা উচিত তা সম্পর্কে। সততার উপর বেঁচে থাকা কঠিন তারপরও তিনি সৎভাবে বেঁচে থাকার উপর জোর দেন। তিনি মনে করেন সৎভাবে বেঁচে থাকার মধ্য দিয়ে মানুষ অর্থপূর্ণ জীবনে অভ্যস্ত হয়।
ডেল ইনকের প্রতিষ্ঠাতা মাইকেল ডেল মনে করেন, সফলতার সবচেয়ে বড় নিয়ামক হল কৌতুহল। কৌতুহল মানুষকে চারপাশের মানুষকে জানতে, বুঝতে সহায়তা করে। জগৎটাকে বোঝার জন্য তিনি যেমন বই পড়তে উদ্বুদ্ধ করেছেন, একইসাথে তিনি ওয়েবসাইট দেখতে বলেছেন, সাথে সাথে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার উন্নয়ন ঘটাতে বলেছেন।
ফেসবুকের চিফ অপারেটিং অফিসার শেরিল স্যান্ডবার্গ মনে করেন যে, সফলতা পেতে মানুষের চিন্তার জগৎকে প্রসারিত করতে হবে, আকাঙ্ক্ষার শূন্য পূরণ করতে হবে। তিনি আরো মনে করেন যে, জীবনের নানাবিধ মোড় আমাদের সম্ভাবনা তৈরি করে ও এগিয়ে নিয়ে যায়।
পাঠক মাত্রই হ্যারি পটার সিরিজের নামের সাথে পরিচিত। সারা বিশ্বব্যাপী সাড়া জাগানো হ্যারি পটার সিরিজের লেখক জে কে রাউলিংয়ের সফলতার পেছনে প্রধান কারণ হল তাঁর নিজেকে চেনার বিশাল ক্ষমতা। তাঁর কল্পনা করার ক্ষমতাও ছিল খুবই প্রখর যা তাকে হ্যারি পটার সিরিজ লেখার নেপথ্যে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে।
বর্তমান সময়ে ভারতের অন্যতম সেরা লেখক চেতন ভগত মনে করেন, সফলতার জন্য সিরিয়াস হওয়া নয়, দরকার সিনসিয়ার হওয়ার। প্রথম বই প্রকাশের জন্য নয়জন প্রকাশকের কাছে গিয়ে তিনি না শুনেছিলেন। নয় জন প্রকাশকই তাঁর লেখাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তবুও তিনি থেমে থাকেন নি। নিজের কাজ করে গেছেন খুব দৃঢ়তার সাথে। তিনি মনে করেন, আগে নিজেকে ভালবাসতে হয়, তারপর অন্যকে।
১৯৯৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়া মার্কিন মহিলা সাহিত্যিক ও সাংবাদিক টনি মরিসন মনে করেন, সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে অতীতের প্রয়োজন রয়েছে। বিপর্যস্ত বসুন্ধরাকে সুন্দরভাবে সাজানোর জন্য তিনি বিনীতভাবে অনুরোধ করেছেন। তিনি মনে করেন, আত্মতৃপ্তি মাঝেমাঝে মানুষের এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবে তা যদি কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে আসে তবে তাতে ক্ষতি নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের লেখক, বক্তা ও সাংবাদিক ডেভিড শেংক মনে করেন, জিন, জ্ঞান-বুদ্ধি বা প্রতিভা নিয়ে যা কিছু বলা হয়েছে তা ভুল। তিনি মনে করেন, সবার জিনেই আছে সুপ্ত প্রতিভা। সেই প্রতিভার স্ফূরণ ঘটানোর জন্য প্রয়োজন তীব্র ইচ্ছা, মনঃসংযোগ ও অবিরত অনুশীলন।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো বহু চড়াই উতরাই পেরিয়ে হয়েছিলেন পাকিস্তানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। বেনজির মনে করতেন, যে সফল হয় এবং যে হেরে যায়, তাদের মধ্যে মূল পার্থক্যের জায়গা হল, কে তার সফলতা কিংবা বিফলতাকে কতটুকু গ্রহণ করতে পারে ও সেখান থেকে ফিরে আসতে পারে।
ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং মনে করেন, জাতি, ধর্ম ও বর্ণের আঙ্গিকে কোন মানুষকে বিচার করা ঠিক না। সবাইকে সমান দেখার মাঝেই লুকিয়ে থাকে গণতন্ত্রের বীজ।
মিসাইল ম্যান নামে পরিচিত আধুনিক ভারতের রূপকার এ পি জে আবদুল কালাম স্বপ্ন, দৃঢ় সংকল্প, জ্ঞানচর্চা, কঠোর পরিশ্রম ও নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতাকে জীবনের সফলতার সবচেয়ে বড় উপকরণ মনে করেন।
‘Change we need’ স্লোগানকে ধারণ করে যুক্তরাষ্ট্রের মসনদে বসেছিলেন প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ওবামা শিক্ষাকে রাষ্ট্র বা সমাজ পরিবর্তনের সবচেয়ে সেরা নিয়ামক মনে করেন।
‘মাদিবা’ নামে পরিচিত বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের পুরোধা দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি নেলসন ম্যান্ডেলা উদ্ভাবনের দিকে নজর দেয়ার জন্য তরুণদেরকে আহবান জানিয়েছেন। তিনি মনে করেন দরিদ্রতাকে জয়লাভ করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তারপর জয় করা অশিক্ষা ও অজ্ঞানতা।
এ বইটিতে অংসান সুচি, শিরিন এবাদি, কফি আনান, বান কি মুন, আল গোর, প্রিন্সেস ডায়ানা, শাকিরা, মাইকেল জ্যাকসন, বন জোভি, ড্যানিয়েল রাডক্লিফ, টম হ্যাঙ্কস, শোয়ার্জনেগার, জেমস ক্যামেরন, অমিতাভ বচ্চন, রোয়ান সেবাস্টাইন অ্যাটকিনসন ( মি. বিন), বিশ্বনাথন আনন্দ, ব্রায়ান লারা ও শচীন টেন্ডুলকরের জীবনের সাফল্যগাথা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বইটি তরুণদের জন্য হতে পারে অনুপ্রেরণার এক চমৎকার উৎস।।

 

যৌতুক না পেয়ে নববধূকে শ্বাসরোধে হত্যা


নারী সংবাদ


মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের পয়সা গ্রামে যৌতুকের টাকা না পেয়ে নববধূ মিনারা আক্তার রুমাকে শ্বাসরোধে হত্যা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘাতক স্বামী ইলিয়াছ খান তার বসতঘরে রুমাকে গলাটিপে শ্বাসরোধে হত্যা করে বলে অভিযোগ গৃহবধূর পরিবারের। এদিকে ঘটনার পরপরই গৃহবধূর লাশ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ফেলে রেখেই স্বামী-শ্বশুর-শাশুড়িসহ বাড়ির লোকজন আত্মগোপনে চলে গেছে। খবর পেয়ে মঙ্গলবার রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নেয়। এ ঘটনায় গৃহবধূর ভাই মিজানুর রহমান তালুকদার লৌহজং থানায় অভিযোগ দাখিল করে। গতকাল বুধবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।

অভিযোগে জানা যায, এক বছর আগে উপজেলার খিদিরপাড়া গ্রামের মৃত সুরুজ তালুকদারের মেয়ে মিনারা আক্তার রুমাকে বিয়ে করে পয়সা গ্রামের আলাউদ্দিন খানের ছেলে ইলিয়াছ খান। বিয়ের সময় ভাই মিজানুর রহমান সাধ্যমতো দাবি পূরণ করলেও যৌতুকের টাকার দাবিতে রুমাকে নির্যাতন শুরু করে। মঙ্গলবার দুপুরে মোবাইলে রুমা টাকার জন্য ইলিয়াছ তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার কথা জানালে কষ্ট হলেও টাকার ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দেন মিজানুর। এর মধ্যে সন্ধ্যার আগে রুমা অসুস্থ হওয়ায় হাসপাতালে নেওয়ার খবর পেয়ে লৌহজং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে তার নিথর দেহ পড়ে থাকাতে দেখেন মিজানুর। এ সময় হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে আনার আগেই রুমার মৃত্যু হয়েছে।

রুমার পরিবারের অভিযোগ, গত এক বছরে রুমাকে তার স্বামী ইলিয়াছসহ সবাই মিলে একাধিকবার নির্যাতন করেছে। এ নিয়ে সর্বশেষ পারিবারিক সালিশ বৈঠকে রুমার ছোট ভাই বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর পর দাবি করা টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও যৌতুকলোভী ইলিয়াছ রুমাকে মঙ্গলবার সন্ধ্যার আগে গলাটিপে শ্বাসরোধে হত্যা করে। বিষয়টি বুঝতে পেরে অসুস্থ হওয়ার কথা বলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর রুমার মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে স্বামী ইলিয়াছ খান, শ্বশুর আলাউদ্দিন ও শাশুড়ি আনোয়ারা বেগমসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন গা-ঢাকা দেয়।

লৌহজং থানার ওসি মো. মনির হোসেন জানান, খবর পেয়ে লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্ত করতে বুধবার সকালে মুন্সীগঞ্জ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় গৃহবধূর ভাই মিজানুর রহমান তালুকদারের দাখিল করা অভিযোগ মামলায় নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।
সুত্রঃ সমকাল।

 

সন্তানকে ইতিবাচক মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে চান? জেনে নিন ৫ টি কৌশল


প্যারেন্টিং


১.নানান পরিবেশ দেখে

বিচিত্র সব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করার জন্য বাচ্চাকে হসপিটাল, বস্তি, এতিমখানাসহ নানান জায়গায় নিয়ে যান। এবং শিশুদের প্রতিটি পরিবেশকে ইতিবাচক দিক তুলে ধরুন। অভিনব সব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করতে হবে। আর জীবনের বিচিত্র সব অভিজ্ঞতাকে বাচ্চার দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে হবে।

২. বাচ্চাকে প্রশ্ন করুন এবং বই দিন

শিক্ষার মূল বিষয়টা হল জানার আগ্রহ।
বাচ্চাকে জিজ্ঞাস করুন তার কাছে ইতিবাচক আর নেতিবাচক দিক কোনগুল। সেখানে ভুল থাকলে তা বুঝে কৌশলে তা ইতিবাচক দিক তুলে ধরুন।
ধৈর্য না হারিয়ে বুদ্ধি বিকাশের জন্য ‘বই’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাচ্চার শিক্ষা গ্রহণের প্রক্রিয়াকে বেশী প্রশংসা করতে হবে।

৩. গুরু জনের সাহচর্য

বাচ্চাদেরকে শিক্ষক, দাদা-দাদী, বাবা-মা সহ গুরুজনদের সাথে যোগাযোগ গতি বিকশির করুন। ওকে শিখতে সাহায্য করুন একা একা। চলতি শিক্ষা ব্যবস্থায় ইতিবাচক জ্ঞান নয় বরং গ্রেড বাড়াতে সহযোগিতা করে তাই এর মাঝে ইতিবাচক ভাবে গড়ে তুলতে, তাদের সেই বিশেষ চাহিদা পূরণে বাবা-মাকে শিক্ষকদের সাথে নিয়মিত পরামর্শ করতে হবে।

৪. বাইরে খেলতে দিন নিয়মিত

মাঠে বাচ্চাদের খেলতে নিয়ে যান। নানান বয়সের নানান পরিবারের বাচ্চাদের সাথে খেলতে ও মিশতে উৎসাহ দিন। বাসায় এসে বাচ্চার সাথে কথা বলুন ইতিবাচক মনোভাব জাগ্রত করে।

৫. কথা বলুন বাচ্চার সাথে

বাচ্চার সঠিক মানসিক বিকাশের জন্য বাচ্চার সাথে খোলামেলা কথা বলার বিকল্প নেই। তার ইতিবাচক, নেতিবাচক, আনন্দ, দুঃখ, কষ্ট, ভাল, মন্দ সব ধরনের বিষয় কথা বলার জন্য মা- বাবা বা কাছের কাউকে সঙ্গী হতে হবে। এর ফলে বাচ্চার চিন্তা ধারা সম্পর্কে ক্লিয়ার একটি ধারণা পাওয়া যাবে। এতে বাচ্চাকে সহযোগিতা করা সহজ হবে।

 

সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজকুমারী কোথায়?


নারী সংবাদ


নিখোঁজ হয়েছেন বা হারিয়ে গেছেন বলে ভাবা হয় এমন একজন আরব রাজকুমারীর ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। সোমবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শেখ লতিফার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দূতকে জানানো হয়েছে।

এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় বলেছে, রাজকুমারীর নিখোঁজ হওয়া সংক্রান্ত ‘মিথ্যা’ প্রচারণার জবাব দেওয়া হয়েছে তাতে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, রাজকুমারী শেখ লতিফা জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সাবেক হাই কমিশনার ও আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট ম্যারি রবিনসনের সঙ্গে বসে আছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “সন্ধ্যায় তারা দু’জন একসঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন এমন একটি মুহূর্তের ছবি সেটি, আর তাদের দু’জনের সম্মতির ভিত্তিতে সেটি প্রকাশ করা হয়েছে। রাজকুমারী শেখ লতিফা নিজ দেশে প্রয়োজনীয় সেবা ও সমর্থন পাচ্ছেন বলে ম্যারি রবিনসনের দুবাই সফরের সময় তাকে আশ্বস্ত করা হয়েছে।” তবে, এই বিবৃতির ব্যাপারে জাতিসংঘ এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

দুবাই’র শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাখতুমের কন্যা শেখ লতিফা বিনতে মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাখতুম গত মার্চ থেকে নিখোঁজ রয়েছেন এমন খবর প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। ৩৩ বছর বয়সী রাজকুমারী মার্চে দুবাই থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। ফরাসী গোয়েন্দা হার্ভি হুবার্টের সহায়তায় তিনি পালানোর চেষ্টা করেছিলেন বলে শোনা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাজকুমারীকে ভারতের কাছে এক ইয়ট থেকে ধরে জোর করে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

মিঃ হুবার্ট ওই ইয়টের মালিক, তিনি অভিযোগ করেছেন, রাজকুমারী অন্য দেশে অ্যাসাইলাম বা আশ্রয় চাইবার পরেও তাকে জোর করে দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। তবে নিখোঁজ হবার পর শেখ লতিফা ইউটিউবে এক ভিডিও পোস্টে জানিয়েছিলেন, তিনি দুবাই থেকে পালাচ্ছেন, কারণ সেখানে তিনি পরিবারের হাতে নানা দুর্ব্যবহারের শিকার এবং তার ওপর নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ঐ ভিডিও পোস্টে শেখ লতিফা জানিয়েছিলেন, তার বাবা হচ্ছেন দুবাইর শাসক মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাখতুম এবং মা আলজিরিয়ান হুরিয়া আহমেদ।
সুত্রঃ বিবিসি।

 

ড্রাইভার


জাহেদ উদ্দীন মোহাম্মদ


আজ দিনটা খারাপ যাবে, নিশ্চিত। অফিস হতে বের হবার সময়, বড় স্যারের সাথে একদফা গরম-গরম হয়ে গেছে।
ভীষণ বিরক্তিতে রমিজ গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল। কিছুদূর গিয়ে আবার ফিরলো। গাড়ির কাগজপত্র নেয়া হয়নি। স্যারের রুমে ঢুকতে আর ইচ্ছে করছে না। পিয়ন কামাল ভাইকে কাগজ আনতে পাঠালো।
-কি ব্যাপার, কামাল?
-গাড়ির কাগজ নিতে এলাম,স্যার।
-রমিজ কোথায়?
-অফিসের ফোর্চের নীচে গাড়িতে।
-আচ্ছা, যাও।
স্কুল ডিউটিতে গিয়ে মনটা ভালো হয়ে গেল। স্যারের মেয়ে মিমি ক্লাস থ্রিতে পড়ে। মেয়েটা এমন মোলায়েম স্বরে চাচ্চু ডাকে, মনটা এমনিতে ভালো হয়ে যায়। কোন কোন সময় মনে হয়, এ যেন সাক্ষাৎ ফেরেশতা!
-চাচ্চু, এসেছ? আমি ঐ সিঁড়িতে উঠে, কতক্ষণ ধরে ডাকছি! সেই খেয়াল আছে?
-সরি মা, ভুল হয়ে গেছে । আর হবে না।
-সরি বললেই হলো! তুমি সবসময় এইরকম করো। দাও, এবার চকলেটগুলো দাও।
-আচ্ছা মা, দিচ্ছি দিচ্ছি। তুমি চোখ বড় বড় করে এভাবে তাকিয়ো না। আমি ভয় পাই, মা।
মেয়েটি ফিক করে হেসে ফেলেল। সামনের দুটি দাঁত নেই, হাসলে আরো মায়াবতী লাগে।
রমিজ শার্টের বুক পকেট হাতড়িয়ে চকলেট বের করে হাতে দিলো।
-কি চাচ্চু, চকলেট দু’টো কেন? আমি এখন ক্লাস থ্রিতে পড়ি। তোমার মনে থাকে না, কেন?
-সরি মা, সরি।
রমিজ পকেট উল্টিয়ে আরো একটা চকলেট মিমির হাতে দিল। রমিজে সাথে মিমির শর্ত হলো, ক্লাস যত চকলেট তত।
প্রতিদিন স্কুল শেষে এই চকলেট তার চাই। তারপর ১৫কিমি পথ পাড়ি দিতে দিতে দু’জন মিলে রাজ্যের কথার ঝাঁপি খুলে বসে।
-জানো চাচ্চু, আমাদের ক্লাসে দুটো ভুত আছে। যারা বেশি কিউট তাদেরকে ওরা চিমটি কাটে।
-কি বলো! সত্যি? তুমি দেখেছ?
– আমি দেখিনি। আজ শ্রাবন্তীকে চিমটি কাটলো। ও চিৎকার দেয়ার পর পর পালিয়ে গেলো। ও অনেক কিউট তো, তাই। সবাই ওকে “কিউটের ডিব্বা” বলে ডাকে।
-ও হ্যা, আমাদের অঙ্ক স্যারের বিয়ে হবে। আমাকে বলেছে, তোমাকেও নিয়ে যেতে। দাওয়াত করেছে। তুমি যাবে?
-তোমার চ্যার আমাকে দাওয়াত করেছে। চত্যি বলছো?
মিমি ছোটকালে স’কে উচ্চারণ করতো ‘চ’। তখন আধো আধো আদুরে কথাগুলো শুনতে খুব ভালো লাগত। রমিজ প্রশ্নটা করে মুখ ফিরিয়ে চুপচাপ হাসতে লাগলো।
-চাচ্চু, ভালো হবে না বলছি। একদম ভালো হবে না।
মিমি চোখ বড় বড় করে রমিজের দিকে কটমট করে তাকালো।
কিছুই হয়নি এমন ভাব নিয়ে রমিজ বলল,
-কেন মা? কি হয়েছে?
– কি হয়েছে বুঝনি? আর একবার বললে, একদম আড়ি দিয়ে দেব। তুমি আমাকে টিজ করছো কেন?
-আমি? কি করলাম আবার? বলেই এবার হো হো করে হাসতে লাগলো।
-সরি মা, সরি। ভুল হয়ে গেছে, মা। আর হবে না। এবার মাফ করে দাও। কেমন?
– তুমি প্রত্যেকদিন ভুল করবে। আর বলবে- সরি! এই সরিকে কাছে পেলে আমি…..।
মিমির চোখমুখের এই ভাবটা রমিজের খুব ভালো লাগে। নিজের মেয়েটার কথা মনে পড়ে। মেয়েটা এখন বড় হয়ে গেছে। ছোটকালে সে ছিল এমন আদুরে আর বাবা-পাগলী।
রমিজ ড্রাইভারের দুই ছেলে এক মেয়ে। বড় ছেলে ঢাকায় চাকরি করে। বিয়ে দিয়েছেন। পরিবার নিয়ে ঢাকা থাকে। ছেলে অফিসে গেলে, ছেলের বৌ বাসায় একা একা থাকে। ছেলের বাসায় ফিরতে কখনো কখনো রাত হয়ে যায়। বৌমা একা থাকতে খুব ভয় পায়, তাই বড়টা ছোটভাইকে ঢাকা নিয়ে গেছে। ওখানে কলেজে পড়ে।
মেয়েটা চিটাগাং ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। ইকোনমিক্স সেকেন্ড ইয়ার। মেয়েটার জন্য বুকে তার বড় মায়া। এক একটা বছর যায় আর মেয়েটার জন্য বুক ধকধক করে উঠে।
মনে হয়, মেয়েটা বড় হচ্ছে মানে শ্বশুর বাড়ির দিকে এক’পা এক’পা করে এগোচ্ছে। এইসব ভাবতে ভাবতে রমিজ কখন যে অফিস ক্যাম্পাসে পৌছে গেছে, খেয়াল করেনি।
মিমির “চাচ্চু- চাচ্চু” ডাকে সম্বিত ফিরে এলো। অনেকক্ষণ চুপচাপ দেখে মিমি বলল,
– বকা দিয়েছি, তাই রাগ করেছ, চাচ্চু? আমি আড়ি দিইনি তো!
-না, মা। রাগ করিনি। মা’র সাথে কি ছেলে রাগ কর‍তে পারে? এসো মা, তোমাকে নামিয়ে দিই।
মিমিকে পাজাকোলা করে বাসায় নামিয়ে দিয়ে, মাথায় হাত বুলিয়ে চলে এলো।
মেয়েটা আজকাল রমিজকে বেশি কেয়ার করছে। মিমির কান্ডকীর্তি দেখে, কয়েকদিন যাবত মনে একটা প্রশ্ন কেবল ঘুরপাক খাচ্ছে,
-আচ্ছা, প্রতিটি মেয়ে কি অন্য মেয়ের বাবার না বলা বেদন বুঝতে পারে?
-কি জানি। হবে হয়তো।
ছেলেমেয়েদের ছাড়া রমিজের বাসা এখন নিসঙ্গতায় ভুগছে। ছোট ছেলের পোষা গিরিবাজ কবুতরের বাকবাকুম ডাক কিংবা লাভ বার্ডগুলোর কিচিরমিচির শব্দে বেঁচে আছে রমিজের বৌ।
কিন্তু আজকাল রমিজ বড় একলা লাগে। মেয়ের শূন্য খাটপালং এর দিকে তাকালে বুকে কেমন করে উঠে।
বাপ-পাগলী মেয়েটা জন্য রমিজের মন হুহু করে। যতক্ষণ মিমির সাথে থাকে, ততক্ষণ মনে হয় নিজের মেয়েটার কাছে আছে।
এখন তার সকল আদর-মায়া-মমতা যেন মিমিকে ঘিরে।
এখন তার দৃঢ় বিশ্বাস, দুনিয়াতে মেয়েরা অন্য মেয়ের বাবার মনটাও বুঝতে পারে। হয়তো মিমিও পেরেছে।
রমিজের চাকরি পঁয়ত্রিশ বছর চলছে। কত স্যার এলো গেলো। কত জনের ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজে আনা-নেয়া করলো। কিন্তু মিমির মতো কেউ তার মনে দাগ কাটেনি। মনে নানা রকম কত কত ভাবনাচিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। রমিজ মনে মনে যুক্তি খাড়া করে,
-তখন তাঁর ছেলেমেয়েরা কাছে ছিল। অফিস শেষে সবাই তার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়তো। সারাদিনের ক্লান্তি নাশ হয়ে যেত। তাই হবে হয়তো।
কয়েক মাস আগে মিমির এক ঘটনা রমিজকে একদম কাঁদিয়ে ছাড়লো। তখন মিমির অর্ধবাষিকী পরীক্ষা শুরু হলো। ম্যাডাম অসুস্থ। তাই রমিজকে বলল,
-রমিজ, আমি তো যেতে পারছি না। ভাই, তুমি আমার মেয়েকে একটু দেখো।
মিমিকে রমিজ স্কুলের গেটে ঢুকিয়ে দিয়ে যেই ফিরে আসছে। ওমনি পিছন হতে ডাক। পিছন ফিরতেই দেখে চাচ্চু, চাচ্চু, বলতে বলতে মিমি দৌড়ে আসছে।
বিপদের আচঁ পেয়ে রমিজ দৌড়ে গেল।
মিমি কাছে এসে টুপ করে তাঁকে কদমবুচি করলো। কপালে একটা চুমু দিতে দিতে বলল,
-চাচ্চু, আমি পরীক্ষা দিতে গেলে সবসময় মাকে সালাম করি আর কপালে চুমু দিই। আজ মা আসেনি, তাই তোমাকে দিলাম। দোয়া করিও। কেমন।
মিমি এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে পরীক্ষা হলের দিকে দৌড় দিল।
রমিজের মুখে হঠাৎ কোন কথা সরে না। চোখ ছলছল করে উঠে। এত ছোট্ট একটা মেয়ে,এটা কি করলো!!!
অদৃশ্য এক আহবানে তাঁর দু’হাত যেন আকাশের দিকে উঠে গেলো।
-খোদা, এই পঁয়ত্রিশ বছরের ড্রাইভারের চাকরিতে কত তুচ্ছতাচ্ছিল্য পেয়েছি! তুমি আজ যে সম্মান আমায় দিলে, তুমি তাঁর হেফাজত করো, তুমি তাঁর হেফাজত করো। আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন।
রমিজের এই আকুল মুনাজাতে চারপাশে জড়ো হওয়া ফেরেশতারা কেবল আমিন-আমিন বলছিল।
কেউ শুনেনি, শুধু রমিজ শুনেছে।
অদৃশ্য ফেরেশতাদের কেউ দেখেনি, শুধু রমিজ দেখেছে।

ছবি সূত্র: ইন্টারনেট।

 

নির্যাতিত নারী, শিশুদের সেবায় ওসিসি


নারী সংবাদ


দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই নারী। সমাজে নারী-পুরুষ সমানাধিকার ভোগ করার কথা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই নারীরা সেটা ভোগ করতে পারছেনা। হচ্ছে নানাভাবে নির্যাতিত। নারীদের পাশাপাশি শিশুরাও বিভিন্নভাবে হচ্ছে নির্যাতিত। শিশুরাও হচ্ছে মানুষরূপী পিশাচদের লালসার শিকার। সরকোরের স্বদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় আর্থিক সংকট কিংবা নানাবিধ কারণে সমাজে নারী ও শিশু নির্যাতন থামানো যাচ্ছেনা। তবে নির্যাতিত এ সব নারী ও শিশুদের সাহায্যার্থে সরকার গঠন করেছে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি)। যেখানে সমাজের নির্যাতিত নারী ও শিশুরা সেবা পেয়ে থাকে।
দেশে অনেক জায়গায়ই নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। যেমন সিলেটের ঝুমকা (ছদ্ম নাম)। বয়স মাত্র আট বছর। এই আট বছর বয়সী এই শিশু ঝুমকাকে ধর্ষণ করেছে তারই গৃহ শিক্ষক নামের নরপশু তেইশ বছর বয়সী কাউসার। সকাল বেলা নাস্তা দিতে গিয়ে কাউসারের ধর্ষণের শিকার হয় ঝুমকা। পরে ঝুমকা তার মাকে সব ঘটনা জানালে তার মা জকিগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করে। পুলিশ স্থানীয় এক মসজিদের ইমাম কাউসারকে গ্রেফতার করে।
বর্তমানে ঝুমকা সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন। ঝুমকার মায়ের একটাই দাবী-দোষী কাউসারের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড।
২০১১ সালের ৫ আগস্ট রাহেলার সাথে ৪৫,০০০ টাকা দেনমোহরে বিয়ে হয় আকমলের সাথে। বিয়ের সময় মেয়ে জামাইকে নগদ ৩০,০০০ টাকাসহ ঘরের অন্যান্য আসবাবপত্র যৌতুক দেয় রাহেলার বাবা। দু’জনই ঢাকায় গার্মেন্টস কর্মী। প্রথম সন্তানের জন্মের পর রাহেলা চাকরী ছেড়ে দেয় এবং পরে আকমল তাকে সন্তানসহ বাড়ী পাঠিয়ে দেয়।
কিন্তু কয়েক মাস পরই আকমল ব্যবসা করার জন্য রাহলোর বাবার কাছ থেকে এক লাখ টাকা দাবী করে। কিন্তু রাহেলার গরীব বাবা টাকা দিতে না পারায় আকমল আর তার মা মিলে শুরু করে রাহেলার উপর অমানুষিক শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন। এক পর্যায়ে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে রাহেলা মামলা করে স্বামীর বিরুদ্ধে। এরপর তার দুই মেয়ে নিয়ে বাবার বাড়ী চলে আসে রাহেলা। এরই মধ্যে রাহেলার অনুপস্থিতিতে আরেকটি বিয়ে করে আকমল।
এ ঘটনা জানতে পেরে আকমল আবার তার স্বামীর গিয়ে দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়ে জানতে চায়। এ সময় আকমল তাকে এক লাখ টাকা নিয়ে আসলে দ্বিতীয় স্ত্রীকে তালাক দিবে বলে জানায়। কিন্তু রাহেলা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আকমল আর শাশুড়ি তার উপর আবার শুরু করে নির্যাতন। এসময় তার আর্তচিৎকারে আশপাশের মানুষ ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে এবং তার ভাইকে খবর দেয়। ভাই এসে রাহেলাকে উদ্ধার করে এবং খুলনা মেডিকেল কলেজের ওসিসি বিভাগে ভর্তি করে।
পরে রাহেলা স্থানীয় এক থানায় স্বামী আকমলের বিরুদ্ধে আরো একটি নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করে। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন হলেও অভিযুক্ত আসামী পলাতক রয়েছে।
এ পর্যন্ত সাতটি বিভাগীয় শহরের হাসপাতালে এবং ফরিদপুরে ওসিসি স্থাপন করা হয়েছে। ‘মাল্টি সেক্টোরাল প্রোগ্রাম অন ভায়োল্যান্স এগেইনস্ট ওমেন’ এই প্রকল্পের আওতায় প্রতিষ্ঠিত এইসব সেন্টারে মূলত মহিলা ও শিশুদের বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানসহ আইনি ও পুলিশি সহায়তা, ডিএনএ পরীক্ষা, মানসিক কাউন্সেলিং, আশ্রয় এবং সমাজে পুনর্বাসনের সহায়তা প্রদান করা হয়।
প্রকল্পটি বাংলাদেশ এবং ডেনমার্কের সরকারের সহযোগিতায় মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে জাতীয় ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টার চালু করেছে যার মাধ্যমে নিপীড়িত নারীদের কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করা হয়।
যেসব নারীরা হতাশার মধ্যে ভুগছে অথবা আত্মহত্যা করতে চাইছে, উদ্বিগ্ন অথবা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত সেসব নারীরা এখান হতে কাউন্সেলিং সেবা নিতে পারেন।
এছাড়াও যেসব মহিলা ও শিশু যারা নির্যাতনের শিকার তাদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতার লক্ষ্যে সরকার চালু করেছেন জাতীয় হেল্প সেন্টার। নির্যাতনের শিকার এসব নারী ও শিশুরা সরাসরি টোল ফ্রি ১০৯২১ এই নাম্বারে কল করে যেকোন ধরনের সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন।
ওসিসি ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সমন্বয়ক ড. বিলকিস বেগম বলেন ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠার পর হতে অনেক নারী এবং শিশু এই সেন্টার হতে সেবা গ্রহণ করেছেন। তাদের অধিকাংশই এসেছেন তাদের কোন না কোন অত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে। এদের অনেকেই পুলিশের কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করতে চাইত না ভয়ে।
তিনি বলেন, মহিলা ও শিশুদের সেবা দিতে সরকার সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে এ পর্যন্ত ৬০টি ওসিসি স্থাপন করেছে। যার মধ্যে ৪০ টি জেলা সদর হাসপাতালে এবং বাকী ২০ টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
তিনি বলেন, ওসিসি সেলের কার্যক্রম চালু হয় ২০১২ সালের ডিসেম্বরে। আর ওএসসি সেল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের মধ্যে সমন্বয় করে নির্যাতনের শিকার হওয়া নারী ও শিশুদের দ্রুত বিচার পেতে সহযোগিতা করে। এছাড়াও যেসব নারী ও শিশু শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার, যৌন নির্যাতনের শিকার, অগ্নিদগ্ধ এবং এসিড নিক্ষেপের শিকার হওয়াদের নিয়ে কাজ করে ওসিসি সেল।
ওসিস’র প্রকল্প পরিচালক আবুল হোসেন বলেন, অধিকাংশ নারী শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন মূলত পরিবারে অশান্তি, পূর্ব শত্রুতা, জমি-জমা বিরোধ এবং যৌতুকের কারণে।
বাসস/ইউনিসেফ ফিচার/ফই/স্বব/০৯২০/আহো/-ওজি

 

ছাত্রী অপহরণের ঘটনায় যুবক গ্রেফতার


নারী সংবাদ


রাজারহাটে মাদ্রাসা শিক্ষক কর্তৃক এক দাখিল পরীক্ষার্থী অপহরণের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

গত ৩০ নভেম্বর নিজ বাড়ি থেকে ওই ছাত্রী অপহরণের শিকার হয়। ওই ছাত্রী জেডিসি পরীক্ষা দেওয়ার সময় পরীক্ষা কেন্দ্রে ডিউটিরত উপজেলার পূর্ব বালাকান্দি দাখিল মাদ্রাসার ইবতেদায়ি শিক্ষক নুরন্নবী সরকারের সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপর থেকে এক সন্তানের জনক নুরন্নবী ওই ছাত্রীকে প্রেমের প্রস্তাব ও বিয়ের প্রলোভন দিয়ে আসছিল। এক পর্যায়ে ওই ছাত্রীকে নুরন্নবী তার সহযোগীসহ অপহরণ করে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়।

এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ গত শনিবার রাতে অপহরণকারী নুরন্নবীর ছোট ভাই নুর আলমকে গ্রেফতার করে। তবে ঘটনার ২৩ দিন অতিবাহিত হলেও অপহৃত ছাত্রী ও অপহরণকারীর সন্ধান পায়নি পুলিশ।

রাজারহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃষ্ণ চন্দ্র সরকার জানিয়েছেন, অপহৃতাকে উদ্ধারে চেষ্টা চলছে। সুত্র: সমকাল।

 

খেলনার বদলে শিশুর মোবাইল চাই!


নজরুল ইসলাম টিপু


শিশুর সারাদিনের কর্মব্যস্ততার প্রতি নজর রাখুন। দেখবেন সে পুরোদিন কাজ করে চলেছে। এটা হাত থেকে খসিয়ে নিলেন তো অন্যতা হাতে নিচ্ছে! আশ্চর্য হলেও সত্যি যে, একজন সুস্থ-সামর্থ্য মানুষ একটি প্রাণ চঞ্চল শিশুর মত অনবরত কাজ করতে পারবে না…………
মানব শিশু দুনিয়াতে আসার কিছুদিন পরেই সে বুঝতে শিখে যে, তাকে সর্বত্র অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। তখন সে খুশিতে আপ্লুত হয়। একপর্যায়ে দেখে, খাদ্য ও খেলনা সামগ্রীর ক্ষেত্রে সে অগ্রাধিকার পেলেও, কিছু ব্যাপারে তাকে সে অধিকার দেওয়া হয় না। বড়দের টস-লাইট, মোবাইল, ছুরি, দা, বটি ধরতে গেলে তাকে বারণ করা হয়। অথচ এটা ধরে দেখা ও কাজে লাগাতে তারও মন চায়। এটা আদায় করতে পরিস্থিতি অনুসারে সে দুটি পদ্ধতি গ্রহণ করতে চায়। একটি হল জেদ করা অন্যটি হল আবদার করা। জেদের বিষয়টিতে পরে আসা হবে। তবে বেশীর ভাগ শিশুই কিন্তু আবদার করে।
শিশুর দুটি পদ্ধতির মধ্যে, আবদার করার পদ্ধতিটি হল মানবিয় পদ্ধতি। এটা শিশু জীবনের বড় ইতিবাচক দিক। সে ভালবাসা অর্জন করেই জিনিষটি হস্তগত করতে চায়। তখন সে বলতে থাকবে, “আমি তোমাদের ছোট না! তুমি আমার আপু না”! ইত্যাদি। এখানে সে স্বার্থ অর্জনের জন্য ভালবাসাকেই পূঁজি বানাতে চায়। দেখা যায় বড় জনেরা এই ধরনের আদরণীয় আবদারে ছাড় দিয়ে জিনিষটা কিছুক্ষণের জন্য হলেও তাকে দেয়। এখান থেকেই শুরু হয় শিশুর প্রথম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ। সে বুদ্ধি খাটিয়ে জিনিষ হস্তগত করার মানবিয় একটি বৈশিষ্ট্য অর্জন করল।
কিছুদিনের মধ্যেই শিশু একটি পরিবর্তন বুঝতে পারে। সে দেখতে পায়, সর্বত্র ছোট বলে বাহানা দিলেও, কিছু জিনিষ হস্তগত হয়না! সে সব জিনিস শুধুমাত্র বড়দের জন্যই নির্ধারিত। সেই পরিস্থিতিতে শিশু ভিন্নভাবে ভাবতে শিখে। তখন সে বড় হবার ভাব নেয় এবং বড়দের আচরণ গুলো অবিকল অনুসরণ, অনুকরণ করে। বড়দের জুতো, স্যান্ডেল, চশমা, বস্ত্র পরিধানের কসরত করে। এটার মাধ্যমে সে বুঝাতে চেষ্টা করে যে, সে এখন বড় হচ্ছে। অতঃপর সে তার কাঙ্ক্ষিত জিনিষে হাত দিতে চাইবে। যখন বলা হবে তুমি এখনও ছোট, বড় হলেই এসব ধরা যাবে। শিশু তৎক্ষণাৎ বলে দিবে আমিতো বড় হয়েছি। ঐ যে স্যান্ডেল পড়া হল, চশমা লাগানো হল এসব তো বড় হবারই আলামত। শিশুর এই চরিত্রও মানবীয় গুণাবলীর অন্তর্ভুক্ত।
আমি-আপনি হয়ত এসব কে তামাশা মনে করছি। সে কিন্তু প্রতিটা ধাপকে খুব সিরিয়াসলি নিয়েই অগ্রসর হচ্ছে। তার মনের আয়নায় ধাপে ধাপে বহু স্বপ্ন গেঁথে পথ পরিক্রমায় ব্যস্ত। কোন একদিন দিয়াশলাই দিয়ে, মোমবাতি ধরানো হয়েছিল। এই স্মৃতিই তাকে পেরেশান করে ছাড়ছে। সে দিয়াশলাই আর মোমবাতির সন্ধানেই ব্যস্ত। সে তার মনের কথা বড়দের বুঝাতে পারছে না। এজন্য অগণিত চিন্তা ও কাজ তাকে সারাদিন কর্মব্যস্ত করে রাখছে। পাখির প্রয়োজনীয় লাফালাফি দেখে মানুষ নাচ বিবেচনা করে আনন্দ পায়। সেভাবে শিশুর এই সমস্ত অপ্রয়োজনীয় কাজকে খেলনা মনে করে; মা-বাবা, দাদা-দাদী আনন্দ পায়। কিন্তু চিন্তাশীল মানুষ দেখতে পায়, শিশু সারাদিন ভেবে চলেছে, কিভাবে নিজেকে বড় হিসেবে জাহির করা যায়, কিভাবে বড় হওয়া যায়।
শিশুর সারাদিনের কর্মব্যস্ততার প্রতি নজর রাখুন। দেখবেন সে পুরোদিন কাজ করে চলেছে। এটা হাত থেকে খসিয়ে নিলেন তো অন্যতা হাতে নিচ্ছে! আশ্চর্য হলেও সত্যি যে, একজন সুস্থ-সামর্থ্য মানুষ একটি প্রাণ চঞ্চল শিশুর মত অনবরত কাজ করতে পারবে না! তার অবিরাম কাজের প্রেরণা, নতুন নতুন ইচ্ছা তাকে বড়দের হয়ে কাজ করতে আরো উদ্যমী করে তুলে। তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে, যখনই তার কাঙ্ক্ষিত জিনিষ পেতে বাধা প্রাপ্ত হবে তখনই সে উত্তেজিত ও ক্ষিপ্ত হবে। একটি শিশুর উত্তেজনা ও ক্ষিপ্রতা দুটোই উপরোক্ত জিনিষের আবর্তে ঘুরপাক খেতে থাকে। বাচ্চা দিনে দিনে উত্তেজিত হতে থাকলে এক পর্যায়ে এটা তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। তখন সে জানতে শিখে, আবদার করলে যা পাওয়া যায় না; রুক্ষ ও বাজে আচরণ করলে তা সহজে পাওয়া যায়। শিশুর এই চরিত্র পিতা-মাতা কিংবা তার পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে।
শিশুদের সঙ্গ দিলে রুক্ষ খাসিয়ত কম হয় কিংবা হয়ই না। অনেক শিশু এমনিতেই শান্ত থাকে, কর্মে দক্ষ হয়; যাদের ঘরে বেকার দাদা-দাদী থাকে! তারা শিশুদের অদৃশ্যমান অভাব পূরণে অনেক কাজে আসে। যদিও অধুনা অনেক পিতা-মাতা বুঝতে পারে না দাদা-দাদীর উপকারিতা কি? ওদিকে শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য অকাতরে টাকা খরচ করে নিজেরা সুখে থাকার জন্য। শিশুদের এই চিন্তার খোরাক জোগাতে কোম্পানিগুলো, শিশুদের চেনা-জানা জিনিষের বাহারি পণ্য নিয়ে বাজার সয়লাব করে দিচ্ছে। সে সব বস্তুর অনুকরণে প্লাস্টিক সামগ্রীর বিশাল খেলনা বাজার আজ দুনিয়া জোড়া বিস্তৃত হচ্ছে।
অনেক পিতা-মাতা হয়ত আশা করে এসব খেলার সামগ্রী সন্তানের মনোবৃত্তি গঠনে সহায়ক হবে। শিশুর চাহিদা সৃষ্টি কিংবা আবদার হবার আগেই তাদের খেলনা সামগ্রী কিনে দিচ্ছে। শিশুর আগ্রহ আছে কিনা সে বিবেচনাও তারা করছে না। কিন্তু দেখা গেছে প্রচুর খেলার সামগ্রীর বিপরীতে শিশু একটি মোবাইলের জন্য অনেক বেশী আগ্রহী হচ্ছে। এটা জন্য জেদ করা হচ্ছে, সাময়িক সমস্যা দূর করার নিমিত্তে মা-বাবা তার ইচ্ছা পূরণ করছে। এটাতেই শিশুর অভ্যাস বদলাচ্ছে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে জেদি শিশু পিতা-মাতার ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই হয়। শিশুরা বড়দের অনুসরণ করে দেখতে পায়, সবাই মোবাইল নিয়েই বেশী আগ্রহী, তাই তারাও সেটা হাতে নিয়ে দেখতে ও খেলতে চায়! তাকে মূল্যায়ন না করলেই বিপত্তির শুরু হয়।
শিশুকে যদি যথাযথ সঙ্গ দেওয়া হয় এবং সে দেখে, তার পিতা-মাতা, ভাই-বোন, দাদা-দাদী, দা, বটি, থালা-বাসন, মাস্তুল, পেরেক, করাত, পানের বাটি, হামান-দিস্তা দিয়ে একটা সময় পার করছে, তাহলে সেও সে সব সামগ্রীর প্রতি আকৃষ্ট হবে। দাদা-দাদীর সঙ্গ পেলে, শিশুরা কিছুটা হলেও ভিন্ন মাত্রার সঙ্গী পেত। যদিও বর্তমানের গৃহীনীরা দাদা-দাদীকে উপদ্রব কিংবা ঘরের চাকরানীর বিকল্প মনে করে। তাই দিনের একটি বিরাট সময় শিশুরা সঙ্গ বিহীন থাকে। আমরা যেভাবে লুডুর মত তুচ্ছ খেলা খেলতেও দু’জনের সান্নিধ্য চাই, সেভাবে শিশুরাও বড়দের সঙ্গ এবং জীবনোপকরণ দুটোকে একসাথে পেতে আশা করে। এর একটির অভাবেই শিশু একমুখো, জেদি ও বদমেজাজি হয়ে বেড়ে উঠবে। এটা প্রতিকারে তাকে যত টাকার খেলনাই সরবরাহ হউক না কেন, কোন কাজেই আসবেনা।

 

শিশুর পুষ্টিতে বুকের দুধের বিকল্প নেই


নারী সংবাদ


আজকের শিশুই আগামীর ভবিষ্যত। সুতরাং সুন্দর আগামীর জন্য প্রতিটি শিশুকে হড়ে তুলতে হবে স্বযতেœ। জন্মের পর থেকে বেড়ে ওঠার জন্য প্রতিটি শিশুকে দিতে হবে সুষম খাদ্য। তবে বিশেষ করে জন্মের পর পরই প্রতিটি শিশুর জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মায়ের বুকের দুধ। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় আজ অনেকেই সমাজের নারীরাও ব্যস্ত। তাদেরকেও অনেককেই অফিস কিংবা কর্ম ক্ষেত্রে যেতে হয়। যে কারণে অনেক মা-ই সন্তানকে ঠিক মত বুকের দুধ দিতে পারেন না, নির্ভর করতে হয় বাজারে পাওয়া বিভিন্ন কৌটা কিংবা প্যাকেট দধের ওপড়। তাদেরই একজন নাইমা খাতুন। একটি বেসরকারী অফিসের কর্মকর্তা। দিনের বেশিরভাগ সময় অফিসে থাকেন তাই ‘পুষ্টি নিশ্চিত’ করতে পাঁচ মাসের ছেলেকে গুঁড়োদুধ খাওয়ান নাজমা। বাচ্চাকে যে ব্র্যান্ডের দুধ তিনি খাওয়ান, সেটির নাম নেসলে ল্যাক্টোজেন-১। এর প্যাকেটের গায়ে লেখা আছে ‘জন্ম থেকে দেয়া যায়’! প্লাস্টিকের যে ফিডারে করে নাইমার বাচ্চা দুধ খায়- সেটির গায়ে বড় করে লেখা ‘ফর এ্যাঞ্জেল’ (দেবশিশুর জন্য)! এমন চটকদার বিজ্ঞাপন এবং ভুল তথ্যে বিভ্রান্ত হয়ে নাজমার মতো অনেক অভিভাবকই তাদের আদরের সন্তানদের মুখে তুলে দিচ্ছেন বিকল্প শিশুখাদ্য। বাড়ছে গুঁড়োদুধ খাওয়া শিশুর সংখ্যা। অথচ এই শিশুরা ভুগছে অপুষ্টিতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমছে তাদের। আর অভিভাবকদের অসচেতনতার সুযোগ নিয়ে এ সংক্রান্ত আইনকেও ‘বুড়ো আঙ্গুল’ দেখাচ্ছে সংশ্লিষ্টরা।
মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে শিশুদের জন্য কৌটা বা প্যাকেটজাত গুঁড়োদুধ, অন্যান্য খাদ্য ও সরঞ্জামাদির প্রলুব্ধকর বিজ্ঞাপন বা প্রচারের ক্ষেত্রে আইনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে । ২০১৩ সালের এ সংক্রান্ত আইনে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, প্যাকেট ও কৌটাজাত পণ্যের গায়ে লেখা থাকতে হবে ‘শিশুর জন্য মায়ের দুধের সমতুল্য বা শ্রেষ্ঠতর কোন খাদ্য নেই।’ আরও লেখা থাকতে হবে ‘এই (কৌটা/প্যাকেট) খাদ্য সম্পূূর্ণ রোগজীবাণুমুক্ত নয়। এটা খেলে শিশুর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি আছে।’ বিকল্প শিশুখাদ্য বিপণন ও ক্রয়ের ক্ষেত্রেও রয়েছে নির্দেশনা। তবে রাজধানীর বিভিন্ন সাধারণ দোকান ও সুপার শপে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বিকল্প শিশু খাদ্য ও সরঞ্জামের বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান ও বিক্রেতারা এসব নির্দেশনা মানছেন না। এ বিষয়ক আইন সম্পর্কেও ক্রেতা-বিক্রেতাদের কেউ তেমন কিছু জানেন না। শিশু স্বাস্থ্যের জন্য কল্যাণকর আইনটির প্রচার বিষয়েও নেই কোন সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগ। তাই ‘মাতৃদুগ্ধ বিকল্প শিশুখাদ্য বিক্রয় ও বিপণন’ নামের এ আইন যেন অনেকটা কাগজেই সীমাবদ্ধ হয়ে রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েক বছর হয়ে গেলেও বিকল্প শিশুখাদ্য আইনের তেমন প্রচার নেই। তাই না জেনেই দোকানে এসব গুঁড়োদুধ ও অন্যান্য খাদ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করছেন সাধারণ দোকানীরা। একই সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন সুপার শপে। শিশুর মা-বাবাসহ অভিভাবকরাও মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে এসব খাদ্যের বিষয়ে সচেতন নন। চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা বলছেন, জন্মের পর থেকে দুই বছর পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধই শিশুর জন্য শ্রেষ্ঠ পুষ্টিকর খাদ্য। বিকল্প হিসেবে গুঁড়ে াদুধ শিশুর জন্য খুবই ক্ষতিকর। এ দুধ নবজাতকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। শিশু ঘন ঘন অসুস্থ হয়, শারীরিক বিকাশ ঠিকমতো হয় না। বাজারে সাধারণত দুই ধরনের বিকল্প শিশুখাদ্য পাওয়া যায়। একটি শিশুর জন্মের পর থেকে ছয় মাস, এক বছর বা দুই বছর বয়সী শিশুদের জন্য ‘বিশেষ ফর্মুলায়’ তৈরি গুঁড়োদুধ। অন্যটি ছয় মাসের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য মায়ের দুধের পাশাপাশি সম্পূরক খাবার হিসেবে দেয়া ‘ফর্মুলা ফুড’।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, এমনিতে যে কোন খাদ্যে পুষ্টিগুণ থাকলে তা মানসিক বিকাশে সাহায্য করবে। কিন্তু দুই বছর পর্যন্ত বাচ্চার বিকাশের জন্য বিকল্প শিশুখাদ্যের কোন গুরুত্ব নেই। এজন্য মায়ের বুকের দুধই যথেষ্ট। মায়ের বুকের দুধে যে পুষ্টি আছে, এর কাছাকাছি পুষ্টি অন্য কোন খাবারে নেই। তবে মায়ের অসুস্থতা বা মা এমন কোন ওষুধ খাচ্ছেন, যাতে শিশুকে বুকের দুধ দেয়া যাবে না- এমন ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
জন্মের পর শিশুদের মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো নিশ্চিত করার উদ্যোগ রয়েছে সারাবিশ্বে। ১৯৮১ সালে জেনেভায় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা মায়ের দুধের বিকল্প খাদ্য বিপণন নিয়ন্ত্রণে একটি নীতিমালা তৈরি করে, যা ‘ইন্টারন্যাশনাল কোড অব মার্কেটিং অব ব্রেস্ট মিল্ক সাবস্টিটিউটস’ নামে পরিচিত। সেই নীতিমালার আলোকে ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশে ‘মাতৃদুগ্ধ বিকল্প খাদ্য (বিপণনের নীতিমালা) আইন’ প্রণয়ন করা হয়। ২০১৩ সালের ২২ অক্টোবর আইনটি সংশোধন করা হয়। পাঁচ বছর পর্যন্ত শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিকল্প খাদ্যের বিপণন নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে আইনে।
বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশন (বিবিএফ) নিজস্ব উদ্যোগ এবং সরকারের সহযোগিতা নিয়ে বিকল্প শিশুখাদ্যের বিপণন কার্যক্রম তদারক করে থাকে। বিবিএফের চেয়ারপার্সন ডাঃ এস কে রায় বলেন, দেশে প্রতিবছর প্রায় ৩০ লাখ শিশু জন্মায়। তাই বছর ঘুরতেই দুই বছর বয়সী বাচ্চার সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৬০ লাখ। এই বিপুল সংখ্যক শিশুর প্রত্যেককে দুই বছর পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো নিশ্চিত করাটা একটা চ্যালেঞ্জ। অভিভাবকদেরই এ বিষয়ে অসচেতনতা রয়েছে। তাছাড়া আইনের প্রচার ও সচেতনতা কার্যক্রম লোকবল ও অর্থ বরাদ্দের ওপর নির্ভর করে। সরকার বরাদ্দ বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এ সংক্রান্ত প্রচার বাড়ানোর জন্য বিবিএফ এবং জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান পাঁচ বছর মেয়াদী একটি কর্মকৌশল তৈরি করছে বলে জানান তিনি। সুত্রঃ বাসস।

 

প্রতিবেশিনী….৬


আফরোজা হাসান


“একরাশ অভিযোগ ভরা কন্ঠে কাঠকে উদ্দেশ্যে করে পেরেক বলল, তুমি আমাকে অনেক ব্যথা দিচ্ছো, আমাকে আহত করছো। জবাবে পেরেক বলল, তুমি যদি আমার মাথায় হাতুড়ির আঘাত দেখতে তবে আমাকে ক্ষমা করতে।” রুপক হলেও এই উক্তিটিতে পেরেক আর কাঠের কথোপকথনটুকু ভীষণ তাৎপর্যপূর্ণ। অনেক সময়ই প্রিয়জন, কাছের বা দূরের কারো কথা, কাজ ও আচরণ আমাদেরকে কষ্ট দেয়, ব্যথিত করে। তাদের উপর অভিযোগ, অভিমান করার আগে একবার অন্তত তাদের পরিস্থিতি দেখা ও বোঝার চেষ্টা করা উচিত। আমার অভিজ্ঞতা বলে সম্পর্ক কাছের হোক কিংবা দূরের কাউকে কোন ব্যাপারে দোষারোপ কিংবা কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করার আগে একবার অন্তত তার অবস্থাটা বোঝার চেষ্টা করা উচিত। এই চেষ্টা বেশিরভাগ সময়ই সম্পর্কের মাঝে অকারণ কিংবা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কারণে দুরুত্ব ও তিক্ততা তৈরির পথকে রুদ্ধ করে। তোমার কি মনেহয়?

আমার মনেহয় আপনি সারাক্ষণ আমাকে অনুসরণ করেন, চোখে চোখে রাখেন।

মাহামের জবাব শুনে হেসে ফেললো আয়ান। হাসতে হাসতে বলল, মেয়েদের এই আরেক সমস্যা। হাজবেন্ড চোখ না রাখলে অভিযোগের শেষ থাকে না। আবার চোখে চোখে রাখলেও সীমাহীন বিরক্তির উদ্রেক হয়।

ভারসাম্য বলেও তো জগতে একটা জিনিস আছে। মধ্যমাবস্থা যাকে বলে। ছেলেদেরও আরেক সমস্যা হলো তাদের মাঝে এই মধ্যমাবস্থা নেই। কেউ কেউ আছে বৌয়ের দিকে চোখ ই রাখেনা। আর কেউ কেউ চোখ মোটে সরায় ই না।

তাহলে এখন করণীয় কি?

করণীয় হচ্ছে চোখ রাখতে হবে, পলক ফেলতে হবে এবং ভাবুক চোখ আকাশ-বাতাস, চাঁদ-তারা, ফুল-পাখী ইত্যাদিও দেখতে হবে।

কিন্তু কেউ কেউ যদি আকাশ-বাতাস, চাঁদ-তারা, ফুল-পাখী সবকিছুই তার স্ত্রীর ভেতর দেখতে পায়। তাহলে?

হেসে ফেললো মাহাম। জবাব না দিয়ে হাসতে হাসতে রান্নাঘরে রওনা দিলো।রান্নাঘরে ঢুকে বাটিতে অনেকগুলো পেঁয়াজ মাঝখান থেকে কেটে ভিজিয়ে রাখা দেখে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তার পেছন পেছন এসে রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়ানো আয়ানের দিকে তাকালো।

রান্নাঘরের ভেততে ঢুকতে ঢুকতে আয়ান বলল, অনেক করেছি কিন্তু আর সম্ভব না পেঁয়াজের সাথে তোমাকে শেয়ার করা।

মানে?

মানে আমার জীবনের সবচেয়ে বিমুগ্ধকর মূহুর্তগুলোর একটি যখন আমার ভালোবাসাকে তোমার চোখে প্রাপ্তির অশ্রু রুপে ঝরতে দেখি। তোমাকে কাঁদাতে চাই না কখনোই। কিন্তু যখন আমার কোন কথা বা কাজের ফলশ্রুতিতে তোমার চোখে আনন্দাশ্রু দেখি তখন নিজের প্রাপ্তির ভান্ডারকে আরো সমৃদ্ধ মনেহয়। তোমার চোখের আনন্দাশ্রু শুধু আমার একার। এতে আর কারো কোন অধিকার নেই।

মাহাম হেসে বলল, কিন্তু এরসাথে পেঁয়াজের কি সম্পর্ক?

সম্পর্ক হচ্ছে প্রায় দিনই আমরা দুজন গল্প করতে করতে রান্না করি। তুমি তখন মোটেই ব্যথিত থাকো না। বরং অনেক আনন্দে থাকো। সেইসব আনন্দের মূহুর্তে তোমার চোখ থেকে অশ্রু আমার কারণে ঝরে না। ঝরে পেঁয়াজ কাটতে গিয়ে। এটা আমার পক্ষে কিছুতেই মেনে নেয়া সম্ভব না। আমার অধিকারহরণের শাস্তি স্বরুপ তাই মাথা কেটে দুই ফালি করে পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়েছে পেঁয়াজকে।

মাঝেমাঝে কিছু কর্মকাণ্ড দেখলে তোমাকে ছোট্ট বাবু মনেহয়। হাসতে হাসতে বললো মাহাম।

মাহামকে কাছে টেনে নিতে নিতে আয়ান বলল, যেসব কর্মকাণ্ড দেখতে আমার বৌ মন খারাপ ভাব ছেড়ে এমন মনের আনন্দে হাসবে। সেসব কর্মকাণ্ড করার জন্য ছোট্ট বাবু হতে আমার কোন আপত্তি নেই।

শাবাবের বাসা থেকে আসার পর থেকেই দেখছি নানান কথা বলে তুমি মন ভালো করার চেষ্টা করছো। আমার মন খারাপ কে বললো?

সে কি তুমি জানো না কে বলেছে? মাহামের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বিস্ময় মাখা কন্ঠে উল্টো প্রশ্ন করলো আয়ান।

শাবাব বলেছে? কিন্তু বাবা মামণির কথা ভেবে হঠাৎ আমার খুব মনখারাপ লাগছে সেকথা তো শাবাবকে বলিনি আমি। বললে শাবাবেরও মন খারাপ হতো।

আমাকেও শাবাব বলেনি।

তাহলে?

তুমি আর আমি ছাড়াও এই ফ্ল্যাটে যার অস্তিত্ব বিদ্যমান সে বলেছে।

তুমি আর আমি ছাড়া এই ফ্ল্যাটে তো আর কেউই থাকে না।

থাকে থাকে। তুমি হয়তো খেয়াল করোনি।

থাকে? কে থাকে? আমি খেয়াল করিনি মানে? আমার অজ্ঞাতে আমার বাসায় কেউ কিভাবে থাকবে? বিস্মিত কন্ঠে প্রশ্ন করলো মাহাম।

তোমার অজ্ঞাতে তোমার বাসায় কারো থাকাটা অসম্ভব হলেও, সে সম্ভব করে নিয়েছে।

কিন্তু সে কে?

তোমার আচরণ।

এতক্ষণের বিস্ময়, উত্তেজনা মূহুর্তেই মিলিয়ে গেলো মাহামের। হেসে ফেললো। আয়ানও হেসে বলল, কি তুমি আর আমি ছাড়া তার আলাদা অস্তিত্ব নিয়ে এখন নিশ্চয়ই আর দ্বিমত নেই?

দ্বিমতের তো প্রশ্নই আসে না। একইসাথে তোমার রসবোধের অস্তিত্বেও দ্বিমত নেই।

দাম্পত্য জীবনে রসবোধের প্রয়োজনীয়তা কিন্তু অপরিসীম। অনেক কঠিন বিষয়কেও রসে কোট করে সহজ করে তোলা যায়। এটাও একটা আর্ট। লাল মোহন মিষ্টির কথাই ধরো। তেলে ভাজার পর কেমন কালচে আর শক্ত থাকে। অথচ রসে দেয়া মাত্রই কি চমৎকার নরম ও সুস্বাদু হয়ে যায়। দেখতেও কত লোভনীয় লাগে। শুকনো, বিমর্ষ সম্পর্ককেও এমন ভালোবাসা, সমঝদারির রসে ভিজিয়ে আকর্ষণীয় করে তোলা সম্ভব।

আমার বাবা এই শিল্পে খুবই দক্ষ একজন শিল্পী। এই শিল্পে আমার গুরু কিংবা আইডলও বলতে পারো।

সেজন্যই মনেহয় বাবার ছেলেও মাশাআল্লাহ বিরাট দক্ষ এই শিল্পে। হাসতে হাসতে বললো মাহাম।

আয়ানও হেসে বলল, মার রাগ, বিরক্তি, ক্লান্তিকর মূহুর্তগুলোকে বাবা এত চমৎকার করে রাঙিয়ে দিতেন। সেসব দেখে তখন থেকেই আমার শখ ছিল আমিও ওমন সঙ্গী হবো আমার স্ত্রীর তরে।

সন্তানদের উপর বাবা-মার দাম্পত্যজীবনের প্রভাব অনেক বেশি তাই না? সুখী, সমঝদার দম্পতিদের সন্তানরা স্বভাবগত ভাবেই অনেক সমঝদার, হাসিখুশি হয়। অন্যকে সম্মান দিতে জানে, আন্তরিকতা, সহমর্মিতা নিয়ে পাশে এসে দাঁড়াতে জানে অসহায় মূহুর্তে। ভালোবাসতে জানে ভালোবাসার মতো করে। অপরদিকে বাবা-মার নিত্য কলহ দেখতে দেখতে যেসব ছেলেমেয়েরা বড় হয়, তারা নিজেদের অজান্তেই ঐ সমস্ত নেতিবাচক গুণ নিজ চরিত্রে ধারণ করে ফেলে। নাজমুল ভাইয়ের সাথে মনেহয় এমনটাই ঘটেছে। ইলমা একদিন বলেছিল ওর শ্বশুর নাকি এখনো সামান্য কারণেই ওর শ্বাশুড়ির গায়ে হাত তোলেন। নাজমুল ভাই বাবা-মায়ের এসব দ্বন্দ্ব-সংঘাত দেখতে দেখতেই বড় হয়েছে। স্ত্রীর গায়ে হাত তোলা, অসম্মানজনক কথা বলা, মানুষের সামনে স্ত্রীকে হেয় করা ইত্যাদি তাই স্বাভাবিক অবস্থায় উনার কাছে খারাপ কিছু মনেহলেও, রাগের সময় খুব স্বাভাবিক ভাবে নিজেই এই কাজগুলো করতে পারে।

তুমি এখনো ইলমা আর নাজমুলকে নিয়েই ভাবছো? কারো সমস্যা শুনে নিজেই যদি মন খারাপের চাদর জড়িয়ে বসে যাও, তাহলে সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখবে কি করে? আগামীকাল তো ইনশাআল্লাহ দেখা হচ্ছেই আমাদের সবার। তখন আলোচনা করা যাবে এই বিষয়ে। এখন তাই ইলমা আর নাজমুলের ভাবনা ছেড়ে এমন কিছু ভাবো যাতে তোমার মনে ভালো লাগা গুঞ্জন তুলবে। অনেকদিন তোমার গল্প লেখার বিষয়ে কিছুই বলছো না। নাকি অবসর অন্য কোন ভালো লাগা খুঁজে নিয়েছে লেখালেখির বদলে?

মাহাম হেসে বলল, না অন্য কোন ভালো লাগা খুঁজে নেয়নি অবসর। তাছাড়া নিজের ভাবনাদের শব্দের ফ্রেমে বেঁধে রাখাটা আমার কোন শখ কিংবা শুধুই ভালো লাগা না। লিখতে আমি ভালোবাসি। ঠিক যেমন করে বৃষ্টি ভালোবাসি, জোছনা ভালোবাসি, প্রকৃতির সান্নিধ্য ভালোবাসি। তবে আমিও অনেকদিন থেকেই ভাবছিলাম নতুন কোন গল্প লেখার কথা। জীবনের গল্প। পরিবারের গল্প। পরিবারের সাথে জড়িয়ে থাকা মায়াময় বন্ধনের গল্প। সেইসব মায়াবী বন্ধনের ভাঁজে ভাঁজে ছড়িয়ে থাকা ছোট ছোট ঢেউ, চড়াই-উৎরাই, আশা-নিরাশা, তিক্ততা-মিষ্টতার গল্প। যে গল্পে থাকবে জীবনের সমস্ত রঙ, রুপ, আলো-ছায়ায় সংমিশ্রণ। যে গল্প চিন্তার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে, সরলতা, কোমলতা, স্বিগ্ধতায় ফুল ফোটাবে মন বাগিচায়। যে গল্প অজানতেই ঠোঁটের কোণে ফুটিয়ে তুলবে এক চিলতে হাসি, কখনো ঝরে পড়বে দু’ফোঁটা অশ্রু রূপে। অমাবস্যার ঘোর আঁধার পেরিয়ে, সুবহে সাদিকের সন্ধানে অক্লান্ত পথ চলে সুহাসিনী ভোরের স্বপ্ন দেখাবে যে গল্প। যে গল্প আশা জাগানিয়া গান শুনিয়ে উন্মুক্ত করবে রুদ্ধ মনের আলোকিত বাতায়ন।

তাহলে আর দেরি কেন যতদ্রুত সম্ভব শুরু করে দাও তোমার গল্প লেখা।

ইনশাআল্লাহ শুরু করবো। কিন্তু তারআগে আগামীকাল মেহমান আপ্যায়নের আয়োজন শুরু করি। শাবাবের বাসা থেকে ফোন দিয়েছিলাম ইলমাকে। বলেছে রাত পোহালেই নাকি হাজির হয়ে যাবে। সকালের নাস্তা করবে আমাদের সাথে, দুপুরে খাবে, বিকেলে আবারো নাস্তা করবে, এরপর রাতের খাবার খেয়ে তবেই যাবে। অবশ্য বিকেলের নাস্তা আর রাতের খাবারের আয়োজন শাবাব আর আরিফী ভাইয়া করবে বলেছে। আমাদেরকে শুধু সকাল আর দুপুরের আয়োজন করতে হবে।

ঠিকআছে। চলো তোমাকে সাহায্য করি।

এরপর দুজন মিলে গল্প করতে করতে মেহমান আপ্যায়নের আয়োজনে মনোযোগ দিলো।

পর্ব-৫

 

ফেসবুকে ভিডিও দেখে নির্যাতিত শিশু উদ্ধার গৃহকর্ত্রী গ্রেফতার


নারী সংবাদ


ফেসবুকে আছমা নামে ১২ বছরের নির্যাতিত এক শিশুর ভিডিও পোস্ট করেন এক ব্যক্তি। ভিডিওতে শিশুটি কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার ওপর গৃহকর্ত্রীর নির্যাতনের বর্ণনা দিচ্ছিল। অল্প সময়ের মধ্যেই ভিডিওটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ কর্মকর্তাদেরও নজরে আসে। এরপর দ্রুত অভিযান চালিয়ে রাজধানীর মধ্য বাসাবো থেকে শিশু আছমাকে উদ্ধার করা হয়। একইসঙ্গে গ্রেফতার করা হয় গৃহকর্ত্রী সেলিনা আক্তার শিলাকে।

সংশ্নিষ্টরা জানান, মধ্য বাসাবোর ১৬৯/১ নম্বর বাসার তৃতীয় তলায় সেলিনা আক্তার শিলার বাসায় দেড় বছর ধরে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে আসছিল আছমা। বাসার সব কাজ করলেও প্রায় প্রতিদিনই তাকে মারধর করা হতো। বেধড়ক পেটানো হতো সামান্য ভুল-ভ্রান্তির কারণে। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, বারান্দার গ্রিলের পাশে দাঁড়িয়ে আছে আছমা। সে বলছে, গৃহকর্ত্রী তার গলা টিপে ধরে গলা কেটে হত্যা করে বস্তায় ভরে ফেলে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। শিলার স্বামী চাঁদপুর আদালতের ক্রিমিনাল ল’ইয়ার। আছমার বাড়ি ময়মনসিংহে বলে জানা গেছে।

সবুজবাগ থানার ওসি আবদুল কুদ্দুস ফকির সমকালকে বলেন, নির্যাতিত শিশুটিকে বৃহস্পতিবার রাতে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পাঠানো হয়েছে। সেখানে শিশুটিকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হবে। এ ঘটনায় শিশুটির ভাই রুহুল আমিন বাদী হয়ে মামলা করেছেন। শুক্রবার সেই মামলায় গৃহকর্ত্রী শিলাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
সুত্র : সমকাল।

 

অজ্ঞাত মহিলার গলাকাটা লাশ উদ্ধার


নারী সংবাদ


নওগাঁর আত্রাইয়ে একটি ডোবা থেকে আনুমানিক ২৫ বছর বয়সী এক অজ্ঞাত মহিলার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার সকালে উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নে বড়কালিকাপুর তিন নাম্বার সুইটগেটের নিচে ডোবা থেকে মহিলার লাশটি উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ জানায়, সকালে এলাকার লোকজন মহিলার লাশটি ডোবার পানিতে ভাসতে দেখে পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে লাশটি উদ্ধার করে।

আত্রাই থানার ওসি মোবারক হোসেন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মহিলার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নওগাঁ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

শিশুর মত প্রকাশের স্বাধীনতার গুরুত্ব


নারী সংবাদ


ছোট্ট সুমনের আজ অনেক মন খারাপ। স্কুলে অনুষ্ঠান চলছে, কিন্তু তার যাওয়া হয়নি। প্রধান শিক্ষক স্বয়ং তাকে উপস্থিত থাকতে বলেছিলেন। খুব সুন্দর গান গাইতে পারে বলে অনুষ্ঠানের তার বেশ কয়েকটি গান গাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার মা-বাবা চান না সে গান করুক। তাদের এক কথা- ছেলে পড়ালেখা করে বড় হয়ে ভালো চাকরি করবে। ছোট থেকেই গান বাজনা করে বখে যাবে, তা তারা কোনো ভাবেই হতে দেবেন না।
বাবা-মায়ের এমন ভাবনা থেকেই, ছোট্ট সুমনের মতামত গুরুত্ব পায় না! কিন্তু বাবা-মাকে সুমন কোনোভাবেই বোঝাতে পারে না যে তারও ইচ্ছা-অনিচ্ছা বলতে একটা বিষয় আছে। কিন্তু বাবা- মাকে অনেক বলার পরও কোন লাভ হয়নি। উল্টো মার খেতে হয়েছে। এসবের কারণে পড়াশোনাতেও মন বসাতে পারে না সুমন। তার কিচ্ছু ভালো লাগে না!
আমাদের সমাজের অনেক শিশুর মধ্যেই রয়েছে সুমনের মত এমন মনে কষ্ট। পড়াশোনার বাইরেও যে বিশেষ গুণাবলীর দ্বারা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়া যায় তা অনেক মা-বাবাই মেনে নিতে চান না। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে সমাজ বিজ্ঞানী ও নীতি-নির্ধারকেরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, সামাজিক বিকাশে ও সমাজের অমূল পরিবর্তন এবং উন্নতিতে নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ সকলের মতামতসহ পূর্ণ অংশগ্রহণ অত্যন্ত প্রয়োজন। সমাজের সকলের মতো শিশুদেরও সমাজে অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, রয়েছে অধিকার।
শিশুদের অংশগ্রহণের বিশেষ কয়েকটি অধিকারের মধ্যে রয়েছে অন্যের সঙ্গে অবাধে মেলামেশার অধিকার, তথ্য ও ধারণা চাইবার, গ্রহণ করার ও প্রকাশের অধিকার এবং মতামতের মূল্য পাবার অধিকার।
জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ ধারা- ১২’তে শিশুদের অংশগ্রহণ সম্পর্কিত সব বিষয়ের মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে অবাধে মত প্রকাশের অধিকার দেয়া হয়েছে। সমগ্র বিশ্বের সাথে সাথে আমাদের দেশও এই অধিকার বাস্তবে রূপদানে উদ্যোগ নিয়েছে। যদিও তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে বাস্তব পরিস্থিতি কিছুদিন আগেও তেমন অনুকূলে ছিল না।
এব্যাপারে সাবেক তত্ত্বাবধায় সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, “অধিকাংশ স্বল্প শিক্ষিত কিংবা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত পরিবারগুলোয় প্রায় ক্ষেত্রেই শিশুদের অপরিণত হিসাবে মনে করে, তাদের মতামতকে খুবই কম গুরুত্ব দেয়া হয় অথবা আদৌ দেওয়া হয় না। শিশুরা তাদের মা-বাবা বা অভিভাবকের হেফাজতে থাকে এবং তারাই তার পক্ষে অধিকাংশ সিদ্ধান্তু গ্রহণ করেন। যা একেবারেই ঠিক নয়। ”
তিনি আরও বলেন, “শিক্ষার ধরন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাসস্থান বা কি ধরনের জীবন ব্যবস্থা অনুসরণ করা হবে সচরাচর তা নির্ধারণ করেন মা-বাবা বা অভিভাবক। অবশ্য শিক্ষিত শহুরে মধ্যবিত্ত্ব শ্রেণী বা উচ্চ শ্রেণীর পরিবারে এর কিছুটা ব্যাতিক্রম লক্ষ্য করা যায়।”
সরকারের বিশেষ উদ্যোগের ফলে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটাই অনুকূলে এসেছে।
শিশুদের মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রধান যে দিক, তা হলো সমাজের সকলের মাঝে এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা। পরিবারের ভেতর অভিভাবকেরা যদি তার শিশু সন্তানটির মতামত বিবেচনায় নেয় এবং শিশুটি যদি বুঝতে পারে সংসারে তারও মতামতের একটি স্থান আছে, গুরুত্ব আছে তবে সেই শিশুটি পরবর্তিতে হয় বিচক্ষণ। তার চারিত্রিক গঠন ও মেধা বিকাশের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটি একটি বড় ভূমিকা পালন করে।
দেখা যায়, পরবর্তীতে সে একজন দায়িত্ববান মানুষ হিসাবে সমাজে আত্মপ্রকাশ করে। শিশুর মত প্রকাশের স্বাধীনতা শুধুমাত্র শিশুর মেধার বিকাশ বা তার অধিকারের স্বার্থেই সীমাবদ্ধ নয়। সমাজ সংসার সর্বোপরি দেশও এর ফলে ভবিষ্যতে লাভ করে মেধাবী, দায়িত্বশীল এবং উদার মনোভাবাপন্ন একটি উন্নত জাতি।
কিন্তু শিশুটির মত প্রকাশের অধিকার ক্ষুন্ন হলে এক সময় দেখা যায় যে সে তার অনাগ্রহের ফলে একজন স্বল্প শিক্ষিত, অদক্ষ ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে সমাজে আত্মপ্রকাশ করে বা আদৌ সে এগুলোর কোনোটাই হয় না।
কাজেই শিশুদের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার খর্ব না করে বরং তাদের মতামত প্রকাশে উৎসাহ দান এবং মতামতের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে অভিভাবকসহ সমাজের সকলের আন্তরিক হওয়া একান্ত দরকার।

সুত্র: বাসস (খালিদ বিন আনিস)।

 

বাল্য বিয়ে রোধে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক পর্যায়ে ব্যাপক সচেতনতা প্রয়োগ


নারীকুল

সংবাদ


বাল্য বিয়ের কারণ, প্রতিকার ও করণীয় বিষয়ের আলোচনায় বক্তারা বলেছেন, বাল্য বিয়ে রোধে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক পর্যায়ে ব্যাপক গণসচেতনতা প্রয়োজন। আজ বুধবার জেলা ব্র্যাক অফিসে ফোকাসড গ্রুপ ডিসকাশন (এফজিডি) আয়োজন করা হয়।
জেলা ব্র্যাক প্রতিনিধি মো: আকতারুল ইসলাম বাল্য বিয়ের কারণ, প্রতিকার ও করণীয় বিষয়ক আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন। বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে বিভিন্ন মতামত তুলে ধরে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সহকারি কমিশনার (ভূমি) তাহমিনা রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে আলোচনা করেন জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সাবিনা সুলতানা, সাংবাদিক শাহাদুল ইসলাম সাজু, এ্যাড: আরাফাত রহমান, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা উমা রানী দাস, একতা মা ও শিশু কল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক নিলুফা জহুর লিলি, তেঘর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মোত্তালেব, সদর থানা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: আবুল বাশার মন্ডল, মোহাম্মাদাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান, পারুলিয়া মসজিদের ঈমাম লুৎফর রহমান, তেঘর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী তাসনুভা, নিকাহ রেজিষ্টার একরামুল হক ও সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।
বাল্য বিয়ের কারণ, প্রতিকার ও করণীয় বিষয়ের আলোচনায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবক পর্যায়ে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টির প্রতি গুরুত্বারোপ করে বক্তারা ইউনিয়ন পর্যায়ে মেম্বার ও চেয়ারম্যানদের সজাগ থাকার আহবান জানান।
জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সাবিনা সুলতানা বলেন, বাল্য বিয়ে রোধে সরকার নানা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে। বর্তমান সরকারের নির্দেশনায় বর্তমানে ইউনিয়ন পর্যায়ে কিশোরী ক্লাব গঠন কার্যক্রম চলছে এ ক্লাব বাল্য বিয়ে রোধে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। সুত্র: বাসস

 

শীতে মজাদার নাস্তার রেসিপি


ঘরকন্যা


চিকেন নাগেটস

উপকরণ
১. আধা কেজি মুরগির হাড় ছাড়া মাংস (কিমা নিতে পারলে ভালো হয়),
২. ৬ পিস পাউরুটি,
৩. ১ টি পেঁয়াজ,
৪. ২ টি ডিম,
৫. ১ কাপ ব্রেড ক্রাম্ব ( না থাকলে বিস্কিটের গুঁড়া বা কর্নফ্লেক্সের গুঁড়া),
৬. ১ কাপ ময়দা,
৭. স্বাদমতো লবণ,
৮. ১ চা চামচ আদা বাটা,
৯. ১/৪ কাপ পানি,
১০. ১/৪ চা চামচ গোলমরিচ গুঁড়া।

প্রণালী

  • প্রথমে গ্রাইন্ডারে পাউরুটি ও মুরগির মাংস একসাথে দিয়ে কিমার মতো তৈরি করে ফেলুন বা গ্রাইন্ড করে নিন।
  • এরপর মাংসের মিশ্রনে ১ টি ডিম, আদা, গোলমরিচ গুঁড়া, পেঁয়াজ বাটা ও লবণ দিয়ে ভালো করে মেখে নিন। মিশ্রন যদি অনেক নরম হয় তাহলে সামান্য ময়দা দিয়ে ভালো করে মেখে ছোটো ছোটো অংশে ভাগ করে নাগেটসের আকার দিন।
  • একটি ডিমে পানি দিয়ে ভালো করে ফেটিয়ে নিন। এরপর প্রতিটি নাগেটস ডিমে ডুবিয়ে ব্রেড ক্রাম্বের উপরে গড়িয়ে আলাদা করে রাখুন।
  • একটি প্যানে ডুবো তেলে ভাজার জন্য তেল গরম করে নিন এবং নাগেটস তেলে ছেড়ে লালচে করে ভেজে তুলে নিন। যদি স্বাস্থ্যকর ভাবে খেতে চান তাহলে নাগেটসগুলো একটি বেকিং ট্রে তে সাজিয়ে উপরে সামান্য তেল ব্রাশ করে ২৮০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে লালচে হয়ে উঠা পর্যন্ত বেক করে নিন।

পরিবেশন
প্লেটে পরিবেশন করুন খুব সহজে তৈরি করা দারুণ সুস্বাদু এই ‘চিকেন নাগেটস’।

মাছের চপ

উপকরণ
১. যেকোনো মাছ (ভেটকি, রুই বা ইলিশ) পাঁচছয়টি বড় টুকরা,
২. আলু মাঝারি ৩টি,
৩. একটি বড় পাউরুটির টুকরা,
৪. পেঁয়াজ মিহিকুচি আধা কাপ,
৫. আদাবাটা ১ চা-চামচ,
৬. রসুনবাটা ১ চা-চামচ,
৭. কাঁচামরিচ-কুচি ১ টেবিল-চামচ,
৮. মরিচগুঁড়া ১ চা-চামচ,
৯. হলুদগুঁড়া ১ চা-চামচ,
১০. ধনিয়াগুঁড়া ১ চা-চামচ,
১১. ভাজা জিরাগুঁড়া আধা চা-চামচ,
১২. লবণ স্বাদমতো,
১৩. তেল ভাজার জন্য।

প্রণালি

  • মাছের টুকরাগুলো ভাপে সেদ্ধ করে কাঁটা বেছে নিতে হবে।
  • সেদ্ধআলু ভালোভাবে চটকে নিন।
  • এবার পাউরুটি পানিতে ভিজিয়ে সঙ্গে সঙ্গে তুলে নিতে হবে।
  • তারপর মাছ, আলু, রুটি খুব ভালো করে মেখে নিতে হবে। একে একে তেল বাদে সব উপকরণ খুব ভালো করে মিশিয়ে হাতে পছন্দ মতো আকার দিন।
  • এবার গরম তেলে চপগুলো ছেড়ে দিয়ে মাঝারি আঁচে ভাজতে হবে। হালকা বাদামী রঙ আসলে নামিয়ে নিলেই হল।

পরিবেশন
বাদামী রঙ আসলে নামিয়ে পরিবেশন করুন সস, কাচা মরিচ আর পিয়াজের সঙ্গে। মনে রাখবেন, খেতে মাছের চপের জুড়ি নেই।

সুত্রঃ বাংলাদেশি রেসিপি

 

নারী ও শিশু নির্যাতন আইন


নারীর জন্য আইন


নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল. বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও বেড়েছে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা।
বাংলাদেশে ৪৬ জেলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা এখন ৫৪টি৷ প্রতিটি জেলায় একটি করে ট্রাইব্যুনাল থাকার কথা থাকলেও তা এখনো হয়নি৷ আর এই ৫৪টি ট্রাইব্যুনাল এখন মামলা জটের কবলে৷ যেহেতু নারী ও শিশু নির্যাতনমূলক অপরাধসমূহ কঠোরভাবে দমনের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় বিধান প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়। সংবিধানের ২৬ নং ধারার ১, ২, ৩ ও ৪ নিম্নে আলোচনা করা হল:

সেহেতু এতদ্‌দ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইল :-
২৬৷ (১) এই আইনের অধীন অপরাধ বিচারের জন্য প্রত্যেক জেলা সদরে একটি করিয়া ট্রাইব্যুনাল থাকিবে এবং প্রয়োজনে সরকার উক্ত জেলায় একাধিক ট্রাইব্যুনালও গঠন করিতে পারিবে; এইরূপ ট্রাইব্যুনাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল নামে অভিহিত হইবে৷

(২) একজন বিচারক সমন্বয়ে ট্রাইব্যুনাল গঠিত হইবে এবং সরকার জেলা ও দায়রা জজগণের মধ্য হইতে উক্ত ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিযুক্ত করিবে৷

(৩) সরকার, প্রয়োজনবোধে, কোন জেলা ও দায়রা জজকে তাহার দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসাবে ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিযুক্ত করিতে পারিবে৷

(৪) এই ধারায় জেলা জজ ও দায়রা জজ বলিতে যথাক্রমে অতিরিক্ত জেলা জজ ও অতিরিক্ত দায়রা জজও অন্তর্ভুক্ত৷

সুত্র:
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন,
bdlaws.minlaw.gov.bd

 

মানিকগঞ্জে গৃহবধূকে মারধর, খুন্তির ছ্যাঁকা


নারী সংবাদ


নারীঘটিত অপকর্মের প্রতিবাদ করায় ও যৌতুকের দাবিকৃত ২০ লাখ টাকা না দেওয়ায় মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ষষ্টি গ্রামের তিন সন্তানের জননী শিউলী আক্তার নেহাকে মারধর ও খুন্তি দিয়ে ছ্যাঁকা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার স্বামীর বিরুদ্ধে। শিউলী এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

জানা গেছে, ২০০৯ সালে ষষ্টি গ্রামের খেরু শিকদারের ছেলে আবদুল কুদ্দুসের সঙ্গে শিউলি আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শিউলীকে নির্যাতন করে আসছিল স্বামী ও তার পরিবার। গত ১৪ ডিসেম্বর রাতে স্বামী ও স্বামীর পরিবারের অন্যরা মিলে শিউলীকে বেধড়ক মারধর করে। মারধরের এক পর্যায়ে শিউলীর দু’হাতে গরম খুন্তি দিয়ে ছ্যাঁকা দেয় তারা।

এ ছাড়া স্বামীর নারীঘটিত নানা বিষয়ের প্রতিবাদ করার কারণে তাকে মারধর করে আসছিল কুদ্দুস। তিন সন্তানের ভরণ-পোষণও ঠিকমতো দিচ্ছে না বলে মামলায় উল্লেখ করেছেন শিউলী।

শিউলী জানান, ঘটনার দিন তার স্বামী ও তার দুই ভাই, শাশুড়ি, ভাইয়ের স্ত্রীসহ ৭ জন তার ওপর হামলা চালায়। স্বামীর ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ২০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। যৌতুক হিসেবে টাকাগুলো তার বাবার বাড়ি থেকে আনতে চাপ প্রয়োগ করে। যৌতুকের টাকা দিতে পারবে না বলার সঙ্গে সঙ্গে তাকে বেদম প্রহারের পাশাপাশি গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দেওয়া হয়। এতে তার হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। পরে তার বাবার বাড়ির লোকজন খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।

শিউলীর বোন নাসরিন আক্তার জানান, নির্যাতনের পর শিউলীকে উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি ঘটলে ডাক্তারের পরামর্শে মানিকগঞ্জ থেকে সোমবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এখন বোনের স্বামী ও তার পরিবার তাদের হুমকি দিচ্ছে। তারা এখন নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছেন বলে জানান তিনি।

মানিকগঞ্জ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার লুৎফর রহমান বলেন, ওই রোগীর শরীরের বিভিন্ন অংশে খুন্তি আগুনে পুড়িয়ে ছ্যাঁকা দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া তলপেট ও শরীরে প্রচণ্ড আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। তার অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়।

হরিরামপুর থানার ওসি আমিনুর রহমান জানান, শনিবার এ বিষয়ে মামলা করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।

যৌতুক ও স্বামীর অপকর্মের প্রতিবাদ
মানিকগঞ্জে গৃহবধূকে মারধর, খুন্তির ছ্যাঁকা সুত্রঃ সমকাল

 

ভাল প্যারেন্টিং এর জন্য ৫টি টিপস


প্যারেন্টিং


প্যারেন্টিং হচ্ছে শিশুর শারীরিক, জ্ঞানীয়, বুদ্ধি ও আবেগকের যথাযথ বিকাশের মাধ্যম, যে যে বয়স সেই বয়স অনুযায়ী সঠিকভাবে প্রকাশ করছে কিনা, সঠিক আবেগ নিয়ে বড় হচ্ছে কিনা, তাদের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ তৈরি হচ্ছে কিনা সে বিষয়গুলো প্রতি খেয়াল রাখা এবং পরিচর্যা করা। মুলত কঠিন ধৈর্য ও পরিশ্রমের অপর নাম হল গুড প্যারেন্টিং।

১. মডেলিং (Modeling)
শিশুর আচরণ নির্ভর করে সে যে পরিবেশে বড় হয়, বাস করে, যাদের সাথে থাকে এবং মেলামেশা করে। সুতরাং মডেলিং হল এগুলোর ওপর এবং শিশুর চারপাশের মানুষেরা হল মডেল।

২. অফুরন্ত ভালবাসা (Loving)
শিশুকে অপরিসীম ভালোবাসার মতো এত চমৎকার আর দ্বিতীয় কোন বিষয় আর নেই শিশু শিক্ষায় সব কিছুই ভালবাসা আর যত্নে হলেই শিশু সুন্দরভাবে গড়ে উঠবে।

৩. ইতিবাচক প্যারেন্টিং (Positive parenting)
শিশুর প্রতি সবসময় ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি মনোভাব নিয়ে আগলে রাখা দরকার। কারণ শিশুর আত্মসম্মানবোধের জন্ম হয় ইতিবাচক ধারণা থেকেই। ইতিবাচকতা শিশুর মননের পরিচর্যা ভুমিকা রাখে।

৪.যোগাযোগ কার্যকর হওয়া (Communicating)
শিশুর ভাল-মন্দে কোন একটা আলোচনায় যোগ দিতে গেলে আগে শোন দরকার। হুট করে কোন মন্তব্য করা বোকামির কাজ। মূল বিষয়টি নিয়ে কিছুক্ষণ চিন্তা করা। তারপর শিশুর মনোভাব বুঝে কথা বলার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা।

৫. দৃষ্টিভঙ্গীর প্রতি খেয়াল রাখা (Keeping Perspective)
সন্তানের ভাল-মন্দে পাশে থাকা এবং খেয়াল রাখা। বকা-ঝকা নয় বরং শিশুদেরকে আনন্দের মাঝে রাখা দরকার। কোনো কাজে বাধা না দিয়ে বা কোন কাজ খুবই জোর করে শিশুকে করতে বাধ্য না করে ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রতি খেয়াল রাখা

ভাল প্যারেন্টিং বলতে আসলে বুঝায়, বাচ্চার প্রতিটি পদক্ষেপ সজাগভাবে পর্যবেক্ষন এবং তার সব রকম উন্নতির জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা।
সুত্রঃ Parenting For Brain.

 

রৌমারীতে গৃহবধূকে পুড়িয়ে মারল স্বামী ও সতিন


নারী সংবাদ


রৌমারীতে স্বামী ও সতিনের বিরুদ্ধে সখিতন ওরফে জোসনা নামে এক গৃহবধূর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় স্বামী ও সতিন দু’জনই পলাতক। শনিবার রাতে উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের কাশিয়াবাড়ী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের কাশিয়াবাড়ী গ্রামে শনিবার রাতে সখিতন ওরফে জোসনার চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে তার শরীরে আগুন জ্বলতে দেখতে পান। পরে আগুন নিভিয়ে তাকে উদ্ধার করে রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় এলাকাবাসী। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার তার মৃত্যু হয়।

রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. অনুপ কুমার বিশ্বাস জানান, নিহত জোসনা বেগমের শরীরের ৮৫ ভাগ পুড়ে যাওয়ায় তারা শনিবার রাতেই তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করেছিলেন; কিন্তু রোগীর আত্মীয়-স্বজন তাকে নিয়ে যাননি।

জোসনার বোন তারাবানু বলেন, সতিনের ঘরে থাকতে না পেরে তার বোন জোসনা ঢাকায় একটি গার্মেন্টে চাকরি করছিলেন। স্বামী সাইফুল ইসলাম মোবাইল ফোনে তাকে ফুসলিয়ে গত বৃহস্পতিবার বাড়িতে নিয়ে আসে। জোসনা বাড়িতে এলে তার কাছে টাকা চায় সাইফুল ও তার ছোট স্ত্রী মুনিকা। তার বোন টাকা দিতে না চাওয়ায় শনিবার রাতে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে শনিবার রাত ৯টার দিকে সাইফুল ইসলাম ও সতিন মুনিকা মিলে তার বোনের হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।

এ ব্যাপারে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (রৌমারী সার্কেল) শহীদ সরোওয়ার্দী জানান, ওই গৃহবধূর গায়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে কি-না তা তদন্ত করে দেখা হবে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। লাশের ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সুত্র: ইত্তেফাক।

 

অধ্যাপিকা চেমন আরা


অপরাজিতা


অধ্যাপিকা চেমন আরা সুসাহিত্যিক, ভাষা সৈনিক, শিক্ষাবিদ সমাজসেবক, সুগৃহিণী, আদর্শ মা,নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় আপোষহীণ পাঞ্জেরী। এ সমস্ত বিশেষণই তাকে বিশেষায়িত করা যায়। তিনি ৪৭ এর ভারত বিভাগ দেখেছেন, ৫২ ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। ‘৭০ এর নির্বাচন আর ৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধ এ সমস্ত ঘটনার দীপ্যমান স্বাক্ষী হয়ে রয়েছেন।

জন্ম পরিচয়: অধ্যাপিকা চেমন আরা ১৯৩৫ সালে চট্টগ্রামের এক সম্ভ্রান্ত শিক্ষিত এবং ধর্মপ্রাণ পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। চট্টগ্রামে শিক্ষা প্রসারে তাদের পরিবারটি উনিশ শতকে বিরাট ভূমিকা পালন করেছে। তার পূর্ব পুরুষ সুফি, পদস্থ সরকারী কর্মকর্তা ও বহু গ্রন্থের প্রণেতা মওলানা আবুল হাসান। এবং তার পুত্র, পৌত্র, প্রপৌত্র-প্রপৌত্রী বংশ পরস্পরায় ধর্মীয় সামাজিক ও শিক্ষা জগতে অনন্য গৌরবের অধিকারী। তার পিতা এ.এস. এম. মোফাখখার ছিলেন অবিভক্ত ভারতবর্ষের কলকাতা হাইকোর্টের কতিপয় মুসলিম আইনজীবিদের অন্যতম। তিনি রাজনৈতিক ও সমাজকর্মী ছিলেন। পিতামাতার পাঁচ পুত্র ও চার কন্যার মাঝে অধ্যাপিকা চেমন আরা তৃতীয়। মা দোরদানা খাতুন ও দাদী আছফা খাতুনের স্নেহ আর তত্ত্বাবধানেই ধর্মীয় পরিবেশ ও শিক্ষিত পারিবারিক ঐতিহ্যে তার শৈশব অতিবাহিত হয়েছে।

অপরাজিতা: আপনার শৈশবের দিনগুলো কি এখনও আপনাকে নাড়া দিয়ে যায়? কেমন কেটেছে আপনার শৈশব?
চেমন আরা: অবশ্যই! এক কথায় বলা যায় আমি তো রাজকীয়ভাবে আমার শৈশবকে উপভোগ করেছি। আমাদের ছেলেবেলা ধর্মীয় পরিবেশে লেখাপড়ার পরিবেশে, সাংস্কৃতিক পরিম-লে কেটেছে। ধর্মীয় গোড়ামী বা কুসংস্কার ছিলো না। আমরা প্রতিদিন ভোরে উঠে নামাজ পড়ে আমপড়া পড়তে বসতাম। এরপর গোসল করতে পুকুরে যেতাম। সেখানে ছেলে মেয়েদের আলাদা ঘাট ছিলো। দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষে আমরা একটু ঘুমিয়ে নিতাম। তারপর বিকালের অবসরে বাড়ির আঙ্গিনায় মা, দাদীর সাথে সবজি বাগানের পরিচর্যা করতাম। তখন একটা বিষয় এমন ছিলো যে, আমরা ছোটরা সবসময় বড়দের সম্মান করতাম। তাদের অবধি হব এটাই ভাবাই যেতো না।

অপরাজিতা: তখনকার সামাজিক প্রেক্ষাপট আর আজকের প্রেক্ষাপটকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ণ করবেন?
চেমন আরা : সেকালের আর একালের সামাজিক প্রেক্ষাপটের মধ্যে অনেক বেশি পার্থক্য আছে বলে আমি মনে করি। আমার সময়টায় ভাতৃত্ববোধ, পারস্পরিক সহমর্মিতা, সহযোগিতা, পাড়া-পড়শীর অভিভাবক সূলভ ব্যবহার ইত্যাদি সব ছিলো। আর এখন আমরা পাশের ফ্ল্যাটে কে আছে তাই জানি না। সামান্য স্বার্থের কারণে হত্যা, খুন, অনৈতিকতা ইত্যাদির যেন সঅয়লাব শুরু হয়ে গেছে। আমাদের সময় ছোটদের প্রতি স্নেহ, আদর, শাসন যেমন ছিলো তেমন আমরা যারা ছোট ছিলাম তারা বড়দেরকে তাদের সমান আর মর্যাদার আসনে বসিয়ে রাখতাম। এক কথায় বলা যায় এখন যেমন ঐশী তৈরি হচ্ছে তশ ঐশী তৈরির হওয়ার মতো কোন পরিবেশেই ছিলো না। শান্তি,স্থিতি আর নিরাপত্তা ছিলো। ভিন্ন মতাবলম্বীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা ছিলো।

অপরাজিতা: ‘চল্লিশের দশকে নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে হিন্দু মেয়েরা ছিলো এগিয়ে আর মুসলিম মেয়েরা পিছিয়ে’ এ বিষয়টি আপনি কেমন দেখছেন?
চমেন আরা : আমি ম্রেট্রিক পাশ কোন দেখি নাই। হ্যা বিষয়টি এমনই ছিলো। হিন্দু মেয়েরা দল বেঁধে স্কুলে যেত। মুসলিম মেয়েরা শুধু চিঠি পড়ে আর আরবী কোরআন শরীফ পড়া এতটুকুই শিখতো। ওরা বাহে নামা নামক একটি বই পড়তো কিন্তু আমাদের পরিবারে মেয়েদের শিক্ষিত হওয়া উচিত এই দৃষ্টিভঙ্গিই ছিলো। আমায় বাবা সবসময় বলতেন তোমরা কি করছো। পড়ালেখা শিখছো না কেন?
হিন্দু মেয়েরা বড় এগিয়ে যাচ্ছে। তোমাদেরকেও এগিয়ে যেতে হবে। তবে তখন মুসলিম মেয়েদেরকেও যে লেখাপড়া শিখে এগিয়ে যেতে হবে এ উপলব্ধিটা সবার মধ্যে সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিলো।
চেমন আরার শিক্ষাজীবন : অধ্যাপিকা চেমন আরার প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি মা দোরদানা খাতুন ও দাদি আছফা খাতুনের কাছে। তিনি ১৯৪১ সালে চট্টগ্রাম শহরের গুল-এজার বেগম স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫১ সালে ঐতিহ্যবাহী কামরুন্নেসা উচ্চ ইংরেজি বালিকা বিদ্যালয় থেকে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯৫৩ সালে ইডেন কলেজ থেকে আই.এ পাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে অনার্স ভর্তি হন। ১৯৫৬ সালে বি.এ অনার্স এবং পরের বছর এম. এ পাশ করেন।
অধ্যাপিকা চেমন আরা যখন ইডেনে আই.এ পড়ছিলেন তখনই সক্রিয়ভাবে ভাষা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন।

অপরাজিতা: ভাষা আন্দোলনে আপনার অংশগ্রহণটা কিভাবে হয়েছিলো।
চেমন আরা : আমি তখন সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। প্রিন্সিপাল আবুল কাশেমসহ তমুদ্দন মজলিশের অন্যান্য কর্মীর সাথে পরিচিত হই এবং এ সংগঠনের কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ি। মূলতঃ আমার বাবার সুবাদেই । কারণ ১৯৪৭ সালের পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর তৎকালিন সরকার সংখ্যারিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা বাংলাকে অগ্রাহ্য করে উর্দূকে রাষ্ট্র ভাষা করার প্রচেষ্টা চালালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুন অধ্যাপক আবুল কাশেম সমমনা তরুন যুবকদের সংগঠিত তরে ১৯৪৭ সালের ১লা সেপ্টেম্বর প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠন তমদ্দুন মজলিশ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৫ সেপ্টেম্বর তমদ্দুন মজলিশের পক্ষ থেকে ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দূ না বাংলা’ শীর্ষক ১৮ পৃষ্ঠার একটি পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়। ১৯৪৮ সালের ১৪ নভেম্বর প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম প্রকাশ করেন ভাষা আন্দোলনের মুখপাত্র ‘সাপ্তাহিক সৈনিক’। তিনি চট্টগ্রামের অধিবাসী হওয়ায় বিভিন্ন পরামর্শের জন্য আমার আব্বার কাছে যেতেন। সে থেকেই তার আন্দোলনের সম্পৃক্ত হওয়া। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করায় দাবীতে তমদ্দুন মজলিশের বিভিন্ন সভা-সমাবেশ সেমিনার, সাহিত্য সভায় যোগদান করা, বাংলা ভাষার জন্য পোস্টার লেখা সেগুলো স্কুল কলেজের দেওয়ালে লাগানো, প্রচার পত্র বিলি করা ইত্যাদি আমরা স্কুলে থাকা অবস্থায় করেছি। তারপর যখন ইডেনে ভর্তি হলাম অর্থাৎ ৫১-৫২ সালের সেই উত্তাল দিনগুলোতে সক্রিয় কর্মী হিসাবে কাজ বাকি। বিশেষ করে একুশ ফেব্রুয়ারী পুলিশের গুলিতে শহীদ আবুল বরকতের রক্তমাখা শার্ট নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা যে মিছিল বের করেন অন্যান্য ছাত্রীদের সাথে আমিও যে মিছিলে ছিলাম। একুশে ফেব্রুয়ারী আমতলায় ছাত্রসভা শেষে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে যে মিছিল হয় সেই মিছিলেও আমি অন্যান্যদের সাথে ছিলাম।

অপরাজিতা: ভাষা আন্দোলনের প্রাপ্তি কতটা হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
চেমন আরা : ভাষা আন্দোলনেরে পথ ধরেই তো স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং আজকের বাংলাদেশ। তবে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা যে তমদ্দুন সংস্কৃতির প্রসার চেয়েছিলাম তা অর্জিত হয়নি। মাঝে মাঝে দেশের সংস্কৃতি, মানুষের ভাব বোধের অবস্থা দেখে অপসংস্কৃতির সয়লাব হিন্দি সিরিয়ালের প্রভাব আমাদের নতুন প্রজন্মের মধ্যে হিন্দি প্রীতি দেখে সত্যিই খুব কষ্ট হয়। তখন মনে হয়, আমরাতো আমাদের ঐতিহ্য সংস্কতিকে হারাতে চাইনি বলেইতো ভাষা আন্দোলন করেছিলাম। আমরা কি আমাদের নতুন প্রজন্মকে এ কথা বুঝাতে ব্যার্থ হলাম।

কর্মজীবন : অধ্যাপিকা চেমন আরা শুধু একজন ভাষা সৈনিকই ছিলেন না। দীর্ঘ ৩৬ বছরের কর্মজীবনে তিনি হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে শিক্ষার আলো বিস্তার করে গেছেন। তিনি ১৯৫৯ সালে নারায়নগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ গার্লস হাই স্কুলে প্রধান শিক্ষিকা হিসাবে যোগ দেন। সে বছরই বাদশা মিয়া চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রামে প্রথম মহিলা কলেজে বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেন। ১৯৫৯-৬১ সালে চেমন আরা আন্দরকিল্লাস্থ  মুসলিম এডুকেশন সোসাইটির স্কুলে প্রাতঃকালীন শিফ্টে সহকারী প্রধান শিক্ষিকা হিসাবে কাজ করেন। ১৯৬২ সালের মাঝামাঝি সময়ে ইডেন কলেজে আসেন। পরে সহকারী অধ্যাপক পদে ১৯৬৭-৬৮ আবার চট্টগ্রামে সরকারী কলেজে বাংলা বিভাগে যোগদান করেন। ১৯৭০ সালে আবার ইডেন এ আসেন এবং অধ্যাপনার পাশাপাশি নতুন হোস্টেলের তত্ত্বাবধায়ক হিসাবেও কাজ করেন। এ দায়িত্ব পালন করেন দীর্ঘ ১২ বছর অর্থাৎ ৮২ সাল পর্যন্ত। তিনি ৮২-৮৬ পর্যন্ত চট্টগ্রাম সরকারী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন এবং ১৯৯৩ সালে তীতুমীর কলেজ ঢাকা থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

অপরাজিতা: ইডেন কলেজে আপনার যে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়েছে সে বিশেষ করে হোস্টেল সুপারেন্টন হিসাবে আপনার দায়িত্ব পালন সম্পর্কে জানতে চাই।
চেমন আরা : আমি ইডেনে নতুন হোস্টেলের সুপার ছিলাম। চেষ্টা করেছি ছাত্রীদের ভালো রাখতে। ওদেরকে নানা রকম সামাজিক কর্মকা-ে অংশগ্রহণ করাতে। হোস্টেলে মেয়েদেরকে নিয়ে সাপ্তাহিক ইসলামী আলোচনা হতো। এছাড়াও আমি যখন চট্টগ্রামে ছিলাম সেখানেও মহিলা কলেজে ‘ইসলামী পাঠচক্র’ চালু করেছিলাম। সেই পাঠচক্রে মুসলিম মহিয়সীদের কর্মজীবনের উপর ধারাবাহিক আলোচনা হতো।
ইডেনে হোস্টেল যে ইসলামী আলোচনা অনুষ্ঠান হতো ‘মহিলা মজলিস’ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করতো। আমি চেষ্টা করেছি তাদেরকে সার্বিক সাহায্য সহযোগিতা করার।

অপরাজিতা: আপনার সাহিত্য হাতেখড়ি কবে থেকে? এক্ষেত্রে আপনার পথ চলাÑ
চেমন আরা : মূলতঃ আমার পিতা-পিতামহ ও স্বামী উভয়দিক থেকেই আমি সাহিত্যে উত্তরাধিকার লাভ করেছিলাম বলা যায়। যখন আমি অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী তখন ‘সাপ্তাহিক সৈনিকে’ আমার প্রথম গল্প ছাপা হয়। এরপর থেকে সাপ্তাহিক সৈনিকে নিয়মিত লেখা শুরু করি। চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল খালেক সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘কহিনূর’ পত্রিকায় ‘নাসরিন’ ছদ্মনামে লিখতাম। এছাড়াও কলিকাতা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক কাফেলা পত্রিকায় এবং বিভিন্ন দৈনিকে নিয়মিত লেখতে থাকি। সে থেকেই এ অঙ্গনে পথ চলা। এ পর্যন্ত আমার প্রকাশিত বইগুলো হলো।

১. হৃদয় নামের সরোবর
২. ঘরে ফেরা
৩. হজ্জ ও ওমরার স্মৃতি
৪. কান্না হাসির এই মেলায়
৫. স্বাগত ভাবনা
৬. নিরুদ্দেশের অভিযাত্রী
৭. সত্তরের সিড়িতে দাড়িয়ে।

এছাড়াও সম্পাদন করেছি এ ‘অনন্য জীবন সঠিক  (এ.এস.এম মোফাখখার) ইয়াদগারে বখতিয়ার। সহজ মিলাদ পাঠ শাহেদ আলী ৫টি স্মারক গ্রন্থ।

এখনও অপ্রকাশিত গল্প ও কবিতার বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৪টি। মূলত গল্প, কবিতা, ভ্রমণ কাহিনী, স্মৃতি কথাই আমার লেখার মূল বিষয়বস্তু।

অপরাজিতা: পারিবারিক জীবনের চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে সন্তান, সাহিত্য আর কর্মজীবন সব কিছুর সমন্বয় কিভাবে করছেন?
চেমন আরা : ১৯৫০ সালে তখন আমি দশম শ্রেণির ছাত্রী, সেই সময় সাপ্তাহিক সৈনিকে প্রকাশিত আমার লেখা পছন্দ করে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন শাহেদ আলী এবং বিয়েও হয়ে যায়। ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক বিশিষ্ট সাহিত্যিক শাহেদ আলী সাহেবের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সাহিত্যাঙ্গনে আমার পথ চলা আরো সংহত হয়েছে এবং ভাষা আন্দোলনের সাথে আমার সম্পৃক্ততা বহুগুণে বৃদ্ধি পায় এবং এ আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী হিসাবে আমি নিজেকে তৈরি করে নেই। তার সাথে ৪১ বছরের আমায় বিবাহিত জীবনের নানান সমস্যা ঘাত-প্রতিঘাত দুজনে মিলেই সামলিয়েছি। আমার তিন ছেলে তিন মেয়ে। আলহামদুলিল্লাহ ছেলে মেয়েরা সবাই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত এবং স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।

স্বীকৃত ও সম্মননা : অধ্যাপিকা চেমন আরা ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ ও অবদান, শিক্ষকতা, সাহিত্য, সেবা, সামাজিক সাংস্কৃতিক চর্চা এবং অবহেলিত নারী ও শিশুদের জীবন মান উন্নয়নে অবদানের জন্য

১. ২০০৪ সালে মহিলা সাংবাদিক ফোরাম
২. ২০০৪ সালে ফুলের মেলা জাতীয় শিশু সংগঠন পুরস্কার
৩. ২০০৬ সালে কিশোর কণ্ঠ সাহিত্য পুরস্কার
৪. ২০০৭ সালে চিল্ড্রেন অ্যান্ড উইমেন ভিশন ফাউন্ডেশন স্বর্ণপদক।
৫. ২০০৮ সালে নবীন কর্ণ সাহিত্য সাংস্কৃতিক পুরস্কার
৬. ২০০৮ সালে জালালাবাদ ফাউন্ডেশন কর্তৃক হাসান রাজা পুরস্কার সম্মাননা।
৭. ২০০৯ সালে মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী স্বর্ণপদক
৮. ২০১১ সালে ভাষা আন্দোলনে অসামান্য অবদানের জন্য চট্রগ্রামের কৃতি সন্তান হিসাবে চট্টগ্রামে সমিতি থেকে সম্মাননা।
৯. ২০০৯ সালে রুরাল জার্নালিস্ট ফোরাম পুরস্কার
১০. ২০১২ সাপ্তাহিক সমধারা থেকে ভাষা সৈনিক সম্মাননা।
১১. ২০১২ সালে ফুলকুঁড়ি ও ঝিঁঙ্গেফুল শাখা শ্রেষ্ঠ মা সম্মাননা।
১২. চিলড্রেন অ্যান্ড ওমেন ভিশন থেকে বিজয় দিবস সম্মাননা।

অপরাজিতা : আজকের বাংলাদেশ মুসলিম ঐতিহ্য ও ইসলামী সংস্কৃতি ইত্যাদি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি?
চেমন আরা : আজকের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মুসলিম ঐতিহ্য সংস্কৃতি অবহেলায়, অযতেœ রয়েছে। আমরা যে ঐতিহ্যে বড় হয়েছি, নতুন প্রজন্মের কাছে তা একেবারেই অচেনা। রাষ্ট্রীয়ভাবে এর কোন পৃষ্টপোষকতা করা হচ্ছে না বরং নতুন নতুন উৎসব যেগুলোর সাথে আমাদের সংস্কৃতি ভাববোধের কোন সম্পর্ক নেই তার প্রসার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ইদানিং শোনা যাচ্ছে ‘ধর্ম যার উৎসব সবার’ এটা তো ইসলামী সংস্কৃতি  এবং তাওহীদের বিশ্বাসের পরিপন্থী। থার্টি ফাস্ট নাইট, ভালোবাসা দিবস, পহেলা বৈশাখের নামে যে সমস্ত আচার-অনুষ্ঠান উদযাপিত হচ্ছে এতে করে ইসলামের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমি বলব পরিকল্পিতভাবে ইসলামকে নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। হিন্দী সিরিয়াল, মুভি, এপার বাংলা ওপার বাংলার সংস্কৃতির আদান প্রাদন ইত্যাদি সমস্ত কিছুই তাওহীদের পরিপন্থী। অথচ আমাদের মুসলমানদের মূলভিত্তিই তাওহীদের উপর প্রতিষ্ঠিত। ইদানিং বিজ্ঞাপনগুলো মিউজিক শোগুলো যেভাবে আমাদের তরুনদেরকে ভুল ম্যাসেজ দিচ্ছে তাতে করে আমি সন্দিহান। এরা বড় হয়ে ইসলামকে কেমনভাবে জানাবে। এ অবস্থা থেকে তো এদেরকে বের করে আনতে হবে।

সমাজকর্ম : অধ্যাপিকা চেমন আরা সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে যে সমস্ত কাজ করেছেন যেগুলো হলো।

১. ১৯৫৪ সালে ডানপন্থী ছাত্রীদের সমন্বয়ে ফরমান উল্লাহ খানের তত্বাবধানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ছাত্রী পরিষদ’ গঠন করেন। এখানে তিনি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
২. ১৯৬৩ সালে শিশু কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক উৎকর্ষ সাধন এবং এদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে ‘সবুজ সেনা’ গঠন করেন এবং ১৯৭০ সাল পর্যন্ত এ সংগঠনের দায়িত্ব পালন করেন।
৩. চট্টগ্রাম মহিলা কলেজে ‘ইসলামী পাঠচক্র‘ নামে মহিলাদের জন্য একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠ করেন। এখানে ইসলামী দর্শণ, মানবতাবোধ, হযরত খাদিজা (রাঃ), হযরত ফাতেমা (রাঃ)সহ মুসলিম মহিলাদের কর্মজীবন ধারাবাহিভাবে আলোচনা হতো।
৪. তিনি অবসরে যাবার পর ইসলাম প্রিয় মহিলাদের নিয়ে ‘নারী’ অধিকার আন্দোলন সনামে একটি সংগঠন গঠিত হলে তিনি যেখানে সভানেত্রী নির্বাচিত হন। সূচনালগ্ন থেকে তিনি এ সংগঠনের চেয়ারপার্সন।
৫. ১৯৮৭ সালে কথাশিল্পী শাহেদ আলী, ড. কাজী দীন মুহাম্মদ. ড. শমশের আলী, জাতীয় অধ্যাপক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ এবং অনেক প্রাজ্ঞজনের আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় একটি স্কুল ‘তামরিন’ প্রতিষ্ঠিত হলে চেমন আরা এই স্কুলের পরিচালনার ভার নেন।

অপরাজিতা: জীবনের এই শেষ বেলায় এসেও আপনি জাতিগঠনের কাছে নিয়োজিত রয়েছেন কোন উপলব্ধি থেকে?
চেমন আরা : আমি মনে করি সমাজের প্রতি আমার একটা দায়বদ্ধতা আছে। আমি যতটুকু জানি, উপলব্ধি করি তা যেন সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারি। আমার দ্বারা যদি একজনও উপকৃত হন তাহলেই আমি স্বার্থক । আলহামদুলিল্লাহ  কলেজে অধ্যাপনা কালীন সময়ে আল্লাহ আমাকে এ সূযোগ করে দিয়েছেন আমি হাজার হাজার ছাত্রীদের মাঝে আমার আদর্শ, মূল্যবোধ ছড়িয়ে দেবার চেষ্টা করছি। যখনই যে ধরনের কাজের সূযোগ পেয়েছি আমি আন্তরিকতার সাথে তা করার চেষ্টা করেছি। আমি সবসময়ই চাই ইসলামী সংস্কৃতি ও মুসলিম ঐতিহ্য রক্ষায় আজীবন কাজ করে যাব। আপনারা দোয়া করবেন আল্লাহ যেন আমাকে সেই তৌফিক দেন। আমীন॥

 

সুন্দর কথা হল ‘শিল্প’


মেইক ইউরসেলফ


পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছে যারা শুধু সুন্দর কথার মাধ্যমেই অনেক সমস্যার সমাধান নিমিষেই করে ফেলেন। কথা বলার ধরনের সাথে কথা বলার কিছু কৌশলও রয়েছে।

১. পরিস্থিতি বুঝে কথা
বাহ্যিক সৌন্দর্যের মধ্যে ভাব প্রকাশের সৌন্দর্য হচ্ছে পরিস্থিতি বুঝে কথা বলা।
ফলে মানুষ অপর মানুষের অনুভূতির সাথে একাত্মতা অনুভব করে।

২. শান্তভাবে কথা বলুন
শান্তভাবে কথা বলতে দেখলে তাকে ফলো করতে পারেন। কেউ যদি অনেক সুন্দর করে উপস্থাপন করে তবে তাকে অনুসরণ করা যেতে পারে।

৩. অধিক কথা না বলা
আলোচনায় যোগ দিতে গেলে মনে রাখবেন অধিক কথা বলার দরকার নেই। মূল বিষয়টি নিয়ে কিছুক্ষণ চিন্তা করে কথা বলুন।

৪. ক্ষমা প্রার্থনা করুন
হুট করে কোন মন্তব্য করে বসলে সুন্দর ভাবে ক্ষমা চেয়ে নিন।

৫. অর্থহীন কথা পরিহার করুন
খুব ভালো মনের মানুষ, আবার দেখতেও সুন্দর কিন্তু অর্থহীন কথা পরিহার না করতে পারলে, তিনি ভাল কথা বললেও কেউই শুনতে আগ্রহী হবে না।

৬. মার্জিতস্বরে কথা বলা
মনে রাখুন, নিজের চেষ্টা এবং সামান্য কিছু নিয়ম মেনে চলায় যথেষ্ট। উপস্থাপন আরও চমকপ্রদ করতে মার্জিতস্বরে কথা বলা খুবই দরকার।

৭. শুধু নিজে কথা না বলা
শুধু নিজে কথা বলতে গিয়ে মূল বিষয় থেকে অনেকে সরে পড়ে। তা শ্রোতার কাছে অস্বস্তিকর। কারণ তারা তাদের মূল্যবান সময় গল্পে নষ্ট করতে চান না।

৮. কথা বলতে সুযোগ দিন
অন্যের কথার মাঝে কথা বলাটা অনেকেই পছন্দ করে না। সুতরাং কেউ কথা বললে তাকে বলার সুযোগ দিন।

৯. শ্রোতা বুঝার মত স্পষ্ট কথা বলুন
মূল বিষয় থেকে সরে পড়ে। তখন শ্রোতারা খুব বিরক্তবোধ করে। কারণ তারা তাদের মূল্যবান সময় গল্পে নষ্ট করতে চান না।

মুখের বুলি যদি হয় তিক্ত তাহলে জয়ের পরিবর্তে বিপর্যয়ই নেমে আসবে। যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ‘কথা’, এবং বর্তমানে সফলতা অর্জনের একটি বড় হাতিয়ার। আর সুন্দর করে কথা বলা এক ধরনের আর্ট।

 

বাংলাদেশি নারী হত্যায় মার্কিন যুবকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড


নারী সংবাদ


দুই বছরের বেশি সময় আগে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশি নাজমা খানমকে হত্যার দায়ে এক যুবককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে সেখানকার একটি আদালত। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত মার্কিন যুবকের নাম ইয়োনাতান গেলভেজ-ম্যারিন (২৫)। এই রায়ের ফলে তার ২৫ বছর কারাভোগ করতে হবে। গত ১১ ডিসেম্বর নিউ ইয়র্কের কুইন্স সুপ্রিম কোর্টের জজ মাইকেল বি এলোইস এ রায় দেন বলে জানিয়েছেন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি রিচার্ড এ ব্রাউন।

২০১৬ সালের ৩১ অগাস্ট রাত ৯টার দিকে নিউ ইয়কেআ কুইন্সে নরম্যাল রোডের বাড়ির সামনেই দুর্বৃত্তের হামলার শিকার হন ৬০ বছর বয়সী নাজমা। সঙ্গে সঙ্গে নাজমাকে জ্যামাইকা হাসপাতালে নেওয়া হলেও তাকে বাঁচানো যায়নি। ঘটনার তিনদিন পর ঘাতক ইয়োনাতান গেলভেজ-ম্যারিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি রিচার্ড এ ব্রাউন জানান, অন্ধকারে হত্যাকারী ইয়োনাতান নাজমার কাছে যা আছে সব দিয়ে দিতে বলে। নাজমা খানম তা দিতে অস্বীকার করলেই তাকে বুকে ছুরিকাঘাত করে। তিনি বলেন, অসহায় একজন নারীকে এভাবে হত্যার মতো বর্বরোচিত ঘটনা দ্বিতীয়টি হতে পারে না। এজন্য ঘাতককে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হয়েছে। একই আদালতে গত ২৬ অক্টোবর এই ঘাতককে সেকেন্ড ডিগ্রির মার্ডার, ছিনতাইয়ের চেষ্টা এবং বেআইনি অস্ত্র বহনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায়ের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয় সপ্তাহব্যাপী জুরি ট্রায়ালের পর।

তিন সন্তানের জননী নাজমার এক সন্তান নিউ ইয়র্কে থাকেন। অন্য দুই ছেলে-মেয়ে থাকেন বাংলাদেশে। শরীয়তপুর জেলার বাসিন্দা নাজমা বাংলাদেশে স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। প্রায় ১০ বছর আগে ডিভি লটারিতে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন শরীয়তপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক নাজমা। তার স্বামীও শরীয়তপুর সরকারি কলেজের শিক্ষক ছিলেন। সুত্র: ইত্তেফাক

 

“কৃষ্ণচূড়ার কিশোরী জীবন”


আবু হেনা মোস্তফা কামাল পিন্টু


কৃষ্ণচূড়া গাছ কতদিন বাঁচে? যতটা দিন তাতে কুঠারাঘাত না পড়ে? যে কিশোরী জীবন দেখেছে কৃষ্ণচূড়ার লালে, ফাগুন চিনেছে কৃষ্ণচূড়ার জাগরনে এবং সেই দেখা আর চেনা বয়ে চলেছে গোটা জীবনভর, কৃষ্ণচূড়ারা কি ঐ কিশোরীর জীবনেও বাঁচে না! জীবনকালব্যাপী বাঁচে না! কষ্টে উঁকি দেয়, সুখে দোলা দেয়, স্বস্তিতে দেয় উদাস! প্রথম যেদিন কৃষ্ণচূড়ার লালে অবাক হয় কিশোরী সেই মুহূর্তটি, সেই স্থানটিও কি বাঁচতে থাকে না কিশোরীর জীবনভর? হোক সে মাঠের ধার বদলে পাকা রাস্তা, হোক সে খালের উপরের সাঁকোটি আজ কালভার্টের চেহারায়, থাকলোই বা সে কিশোরী আজ শত ক্রোশ দূরের কংক্রিটের রাস্তার পাশে ন্যাড়া কৃষ্ণচূড়ার দিকে তাকিয়ে.. তবুও আমি নিশ্চিত, সে কিশোরী সেখানে থাকে না; যেখানে সে থাকছে।
এ তো এক অনাদিকালীন অদৃশ্য মনোদূর্ঘটনা। বারবার জিদ আর আবেগের সংঘর্ষ। কৃষ্ণচূড়া ভূপাতিত সেই কবে! জানতেও পারেনি কিশোরী। যখন কিশোরী সংসারে ঢোকার ক’বছর পর নিঃশ্বাস নিতে কৈশোরে ফিরেছিল..। বাস থেকে নেমে ভ্যানে করে পা ঝুলিয়ে মন দুলিয়ে বাড়িতে পৌঁছেই সোজা গিয়ে মাঠের ধারে, খালের পাড়ে। ঘাড় উঁচিয়ে, বাঁকিয়ে বিভিন্ন উপায়ে নোনতা স্বাদের হাহাকার আর ঘন নিঃশ্বাসের পতন নিয়েও খুঁজে কৃষ্ণচূড়াকে পায়নি। খুব মন খারাপ করে বাড়ি ফিরেছিল এই ভেবে যে, কিশোরীবেলাটা কি তবে তার সত্যিই হারিয়ে গেছে? প্রশ্নটা কাকে যে করতে পারা যাবে সে উত্তরও পায় না। বিষন্ন মনে ভাবে কালই শহরে ফিরে যাবে সে। সংসারে ঢুকে যাবে। তাহলে আর কোনো প্রশ্নই জন্মাবে না মাথায় মনে।
গ্রীষ্মের দুপুরে উঁচুতলার জানালার শার্সির ভেতর দিয়ে চোখ ছড়িয়ে দেবে দূরের কোনো শহুরে কৃষ্ণচূড়ায়; ধুলোয় যেখানে লাল কিছুটা বয়সী, ফিকে আর ক্লান্ত। উদাস হবে, আনমন হবে, বুকের ভেতর ঢেউ জাগলে কিছুটা কেঁদেও নেবে। কেউ তো আর দেখছে নাহ্! কিন্তু কোনদিন আর গ্রামে ফিরে গিয়ে কৈশোরের কৃষ্ণচূড়াটিকে খুঁজবে না। স্থিরসংকল্প করে। শুধু কোথায় কোন্ স্থানটিতে সে দাঁড়িয়ে ছিল সেই স্থানটিকে স্মরণের আবরণে যত্নে ঢেকে রাখবে। কোন্ টানে আর গ্রামে ফিরবে সে! কৈশোরের কৃষ্ণচূড়া, যে তাকে অপার মায়ায় রঙ চিনিয়েছিল, যে লালের সাথে মিলেমিশে নিজের রক্তলাল বয়ঃসন্ধি বুঝতে শিখিয়েছিল, সে কৃষ্ণচূড়া আজ আর নেই, সাথে তার কৈশোরবেলাটাও নেই। সব হারিয়ে গেছে!
তবুও কিশোরী কোনো এক অদৃশ্য সামর্থ্যে কল্পলোকে ভাসতে থাকে। ডোবে গহীন ঘোরের অতলে। মানষচোখে স্পষ্টতই দৃশ্যমান কৃষ্ণচূড়া। মূল থেকে শরীর বেয়ে প্রতিটি ডালপালা, পাতার শেষ প্রান্ত অবধি চাহনির ভ্রমন..। টের পেতে থাকে কিশোরী… বুকের ভেতর কালভার্টটি নিমিষেই বিলীন; দিব্যি সাঁকো পার হয়ে পৌঁছে গেছে কৈশোরে.. কৃষ্ণচূড়াটি জীবন্ত দাঁড়িয়ে আছে, আকাশে ছোপ ছোপ রক্ত বিছিয়ে, অসংখ্য আগুন ছেয়ে আছে আকাশ জুড়ে..। প্রতিটি কৃষ্ণচূড়া কিশোরীর দিকে হাত বাঁড়িয়ে কাছে ডাকছে আর বলে চলেছে, “ও মেয়ে, আলতা নেবে গো আলতা…”
ঝরঝর করে গড়িয়ে নামা নোনতা চোখের জল মুছতে আঁচল তোলে কিশোরী। ওদিকে উনুনে চাপানো প্রেশার কুকারের সিটি ক্রমাগত বেজেই চলেছে।

 

স্ত্রীর অপমানের প্রতিশোধে লাঞ্চিত স্বামী, অতঃপর গলায় ফাঁস


নারী সংবাদ


ঢাকার শহরতলী আশুলিয়ায় টর্ক ফ্যাশন লিমিটেড নামের একটি পোশাক তৈরীর কারখানায় নারী পোশাক শ্রমিক সাবিনা খাতুন মীম (২০) তার স্বামীকে ফোন করায় কর্মকর্তারা তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। বিষয়টি ওই নারী পোশাক শ্রমিকের স্বামী অনিক মিয়া জানতে পেরে কারখানায় গিয়ে এর প্রতিবাদ করে। পরে কারখানার ৫ কর্মকর্তা তাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করলে বাসায় গিয়ে সে লজ্জায় গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। পরে তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে হাসপাতাল নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে। ঘটনায় আশুলিয়া থানায় ওই কারখানার ৫ কর্মকতার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা (নং ৩২) দায়ের করা হয়েছে।

বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টায় আশুলিয়ার সাধুপাড়া টর্ক ফ্যাশন লিমিটেড কারখানার গেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
মামলায় আসামীরা হলো- টর্ক ফ্যাশন লিঃ এর এ্যাডমিন অফিসার পিন্টু (৫০), সহকারি এ্যাডমিন অফিসার রুবেল, ফ্লোর ইনচার্জ হারুন (৪৫), সুপারভাইজার পারভেজ এবং অপারেটর রাকিব (২৫)।

নিহত অনিক মিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলাধীন আড়াইসিদা গ্রামের আনিস মিয়ার ছেলে এবং সে স্ত্রীকে নিয়ে আশুলিয়ার সাধুপাড়া এলাকার মনিরের ভাড়া বাড়িতে থেকে রং মিস্ত্রীর কাজ করতো। তার স্ত্রী সাবিনা খাতুন মীম আশুলিয়ার সাধুপাড়া এলাকার টর্ক ফ্যাশন লিঃ কারখানার অপারেটর পদে চাকুরী করে।

নিহত অনিকের স্ত্রী সাবিনা খাতুন মীম জানান, বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় তার স্বামীর সাথে মোবাইলে কথা বলেন। বিষয়টি কারখনার এ্যাডমিন অফিসার পিন্টুসহ পারভেজ, রুবেল, রাকিব ও হারুন দেখতে পেয়ে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। এসময় মোবাইলে তার স্বামী গালিগালজ শুনতে পান। পরে অনিক কারখানার গেইটে স্ত্রীকে আনতে যায়। এসময় কারখানার ওই কর্মকর্তারা অনিককে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে এবং হুমকি দেয়।

এতে অনিক অপমানিত হয়ে বাসায় ফিরে যায়। এরপর আবার দুপুর ১টায় পূণরায় তাকে আনতে যায় অনিক। বিষয়টি ওই কর্মকর্তারা জানতে পেরে আবারও তাকে পিটিয়ে আহত করে এবং গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। এ অপমান সহ্য করতে না পেরে অনিক বাসায় গিয়ে ঘরের আড়ার সাথে রশি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগায়। এসময় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে এবং সেখান থেকে তুরাগ থানা এলাকার ইষ্ট ওয়েষ্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

খবর পেয়ে আশুলিয়া থানা পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

ঘটনায় বুধবার রাতেই আশুলিয়া থানায় ওই কারখানার ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলা হয়েছে।
আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রকিবুল ইসলাম জানান, মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ঘটনায় থানায় হত্যার প্ররোচনায় মামলা হয়েছে। তবে এখনো কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।

সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

বিয়ে বৈধ হবার শর্তাবলী


কানিজ ফাতিমা


একটি বিয়ে বৈধ হওয়ার জন্য যেসব শর্তাবলী পূরণ হওয়া বাধ্যতামূলক- তা নিয়েই সামনের আলোচনা। ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ে কেবল একজন নারী ও একজন পুরুষের একত্রে বসবাসের জন্য অর্থনৈতিক ও দৈহিক সুব্যবস্থাযুক্ত নয় (Financila and physical arrangement) বরং এটি আল্লাহর দেয়া একটি নেয়ামত, যার মাধ্যমে মানুষ সুখ ও স্বস্তি লাভ করে, জীবনকে উপভোগ করে এবং নিজের বংশধারা অব্যাহত রাখে। বিয়ের শর্তের ব্যাপারে আমাদের সমাজে নানা ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে। যা দূরীভূত হলে জীবন সহজ ও সুন্দর হতো। অনেকে বিয়েতে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান বা মহাভোজের (Grand feast) আয়োজনকে বিয়ের জন্য অপরিহার্য মনে করে। আবার ভারী স্বর্ণের অলংকার আদান প্রদান না করলে বিয়েটা যেন ঠিক সামাজিক বৈধতা পায় না। এগুলো একেবারেই ভুল ধারণা। এর ফলে পাত্র, পাত্রের পরিবার এবং পাত্রীর অভিভাবকের উপরে একটি বড় খরচের বোঝা এসে পড়ে- যা বিবাহকে কঠিন করে তোলে। এ খরচের কথা চিন্তা করে অনেক মুসলিম যুবাই বিয়ের ব্যাপারে পিছপা হন এবং পাত্রীর পরিবারও কঠিন আর্থিক সমস্যায় নিপতিত হয়। অথচ ইসলামে বিবাহকে যতটা সম্ভব সহজ করতে বলা হয়েছে।মহাভোজ, জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান বা ভারী স্বর্ণালংকার কোনটিই বিবাহ বৈধ করার শর্ত নয়। বিশেষতঃ স্বর্ণালংকারের দাম যেভাবে বেড়েই চলছে তাতে অধিক পরিমাণ স্বর্ণ দেয়া বর, বরপ, পাত্রী, এমনকি দেশের অর্থনীতি কোনটির জন্যই কল্যাণকর নয়। ভারী অলংকার কিনতে বর বা বরপরে একবারে মোটা অংকের টাকা খরচ করতে হয় (কিস্তিতে অলংকার কেনার রেওয়াজ যেহেতু নেই)। পাত্রীর জন্যও এটা ততটা লাভজনক নয়। কারণ স্বর্ণালংকার কেনার টাকাটা তার মোহরানার উসুল হিসেবে ধরা হয়। এটি স্বর্ণ হিসেবে আলমারীতে থাকার চেয়ে ক্যাশ হিসেবে ব্যাংকে থাকার সুবিধাটা বেশী। প্রয়োজনে এটাকে কাজে লাগানো সহজ হয়। অনেকে বলতে পারেন স্বর্ণ বিক্রি করে ক্যাশ পাওয়া সম্ভব। বাস্তবে এটা সত্যিই সহজ নয়। স্বর্ণ বিক্রিতে বর বা বরপরে আপত্তি থাকতে পারে। এটা বিক্রি করা ঝামেলাপূর্ণ। তাছাড়া বিক্রির সময় স্বর্ণের খাদ বাবদ মূল স্বর্ণ থেকে অনেকটা বাদ দেয়া হয়। ফলে মূল্য অনেক কম পাওয়া যায়। উপরন্তু ছিনতাই বা চুরি হওয়ার ভয়তো রয়েছেই। বর্তমানে কিছুদিন পরপরই গহনার ফ্যাশন বা ডিজাইনে পরিবর্তন আসে। সেেেত্র বাজারে অনেক ধরনের অলংকার পাওয়া যায় যেমন ইমিটিশন, সিটি গোল্ড ইত্যাদি। এর ডিজাইন বাহারী, রঙ টেকসই, খরচও কম। অনায়াসে এক দেড় বছর চালানো যায়, তাই ফ্যাশন সচেতনদের জন্য এটাই উত্তম পন্থা। আমরা জানি স্বর্ণের যাকাত দিতে হয়। যেসব নারীদের নিজেদের উপার্জন নেই তারা এ ব্যাপারটিতে এক ধরনের দোটানায় ভোগেন। যেমন- স্বর্ণেল মালিক তার স্বামী নন। তাই যাকাত দিতে তিনি বাধ্য নন। স্বর্ণের মালিক হিসেবে যাকাত ঐ মহিলার উপর ফরজ (অনেক আলেমদের মতে)। অথচ যাকাত দেয়ার মতো ক্যাশ তার নেই। সেক্ষেত্রে হয় ঐ স্বর্ণ বি ক্রি করে ঐ স্বর্ণের যাকাত দিতে হবে নতুবা স্বামীর নিকট থেকে অর্থ নিয়ে যাকাত দিতে হবে। এ সমস্যার সব থেকে সহজ সমাধান স্বর্ণ কমিয়ে সাড়ে সাত ভরির নীচে নামিয়ে আনা। এটা আপনার সমস্যাকে যেমন হাল্ক করে তেমনি দেশের অর্থনীতিতেও পজিটিভ ভূমিকা রাখে। কারণ স্বর্ণটা স্থবির অবস্থায় আপনার আলমারিতে পরে থাকা অর্থনীতির জন্য ভালো নয়। এটা লিকুইড করলে তা কোন না কোন উপায়ে দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের কাজে আসে। আর মুসলমান হিসেবে আমাদের সেটাই করা উচিত যেটা আমাদের জন্য সহজ কিন্তু অধিক কল্যাণকর। এবার দেখা যাক একটি বিবাহ বৈধ হবার শর্তগুলো কী কী- বিয়ে মূলত একটি সামাজিক চুক্তি। ইসলামী বিধান অনুযায়ী নিুলিখিত শর্তসমূহ বিয়ের বৈধতার জন্য অপরিহার্য – ১. পাত্র ও পাত্রীর পূর্ণ সম্মতি : বিয়েতে পাত্র ও পাত্রীর পূর্ণ ও স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি প্রয়োজন যা ইজাব (প্রস্তাব) ও কবুল (গ্রহণ) এর মাধ্যমে গৃহীত হয়। এক্ষেত্রে সাধারণত পাত্র প্রস্তাব করে ও পাত্রী কবুল করে। তবে পাত্রীর প্রস্তাব করা ও পাত্রের গ্রহণ বা বর্জন করার নীতিও ইসলামে স্বীকৃত। দ্রষ্টব্য বুখারী, কিতাবুন নিকাহ। অনেক আলেম মনে করেন পাত্রী পরে অভিবাবকের সম্মতিও বিবাহ বৈধতার শর্ত। তবে অনেক আলেম ভিন্নমত পোষণ করেন। যেমন আবু হানিফার মতে সাবালক নারীর ক্ষেত্রে তার মতই যথেষ্ট, অভিভাবকের সম্মতি বাধ্যতামূলক নয়। অর্থাৎ সাবালক নারীর অভিভাবকের সম্মতি ব্যতীত তার নিজের সম্মতিতে বিবাহ বৈধ হবে। ২. স্বামী : বিবাহ দু’জন নির্ভরযোগ্য স্বামী থাকতে হবে। ৩. . প্রচার : স্কলাররা এ ব্যাপারে একমত যে বিয়ের ব্যাপারটি গোপন রাখা ঠিক নয় বরং সেটিকে সমাজে প্রচার (Publicize) করা জরুরী। এজন্য বর (বা বর প) তার সামর্থ্য অনুযায়ী ভোজের ব্যবস্থা করবে। আগেই বলা হয়েছে যে, বড় ভোজের আয়োজন করা বাধ্যতামূলক নয়। বড় বা ছোট ভোজ এ ব্যাপারে ইসলাম কোন বাধ্য-বাধকতা দেয় নি। বরং সামর্থ্য অনুযায়ী ভোজকেই (কৃপণতা বা বিলাসিতা দু’ই ইসলাম অপছন্দ করে) ইসলাম উৎসাহিত করে। এখানে উল্লেখ্য আমাদের সমাজে বেশীর ভাগ সেক্ষেত্রে পাত্রী পরে ওপর বড় ভোজ আয়োজনের দায়িত্ব বেশী থাকে। অথচ ইসলাম ভোজ আয়োজনের দায়িত্ব দিয়েছে বরপকে। তবে পাত্রী প যদি স্বেচ্ছায় সামর্থ্য অনুযায়ী ভোজের আয়োজন করে তাতে দোষের কিছু নেই। পাত্র পরে উচিত হবে না পাত্রী পরে উপরে এ ভোজ আয়োজনের জন্য প্রত্য বা পরো চাপ প্রয়োগ করা। আমাদের দেশে অনেকেই বরযাত্রীর নাম করে একটি বড় সংখ্যা পাত্রীপরে উপর চাপিয়ে দেন। ৪. দেনমোহর : আর একট গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো দেনমোহর (Bridal gift)। এটি আদায় করা প্রতিটি স্বামীর জন্য ফরজ, তা মিলনের পূর্বে হোক বা পরেই হোক। এক্ষেত্রে স্বামীর উচিত তার সামর্থ্য অনুযায়ী যতটা সম্ভব দ্রুত দেনমোহর আদায় করায় সচেষ্ট হওয়া। অনেকে মনে করেন কেবল তালাক হলেই মোহর দিতে হয়। এটি একেবারেই ভুল ধারণা। দেনমোহর বিয়ে বৈধতার একটি শর্ত। কাজেই বিয়ের সময়ই দেনমোহর ফরজ হয়ে যায়। এবার জানা যাক বিয়ের সময় একজন ইমাম বা কাজীর উপস্থিতি বাধ্যতামূলক কি না। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কাজী বা ইমামের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক নয়। উপরোক্ত চারটি শর্ত পূরণ হলেই ধর্মীয়ভাবে বিয়ে হয়ে যাবে। তবে বিয়ে পড়ানোর জন্য (Solemnize) বিয়ে পড়ানোর অনুমতি প্রাপ্ত (Authorized) কেউ উপস্থিত থাকা উচিত। যেমন আমাদের দেশে রেজিষ্টার্ড কাজী। এবার আলোচনা করবো আইনগত ব্যাপারটি নিয়ে। উল্লিখিত চারটি শর্ত পূরণের মাধ্যমে বিয়ে ধর্মীয় বৈধতা পেয়েও আইনগত বৈধতা পাবার জন্য দেশীয় আইন মতে কিছু কাগজপত্র (Legal paper) তৈরী করা বাধ্যতামূলক। এটা না করা হলে বিবাহের েেত্র কোন সমস্যা দেখা দিলে (Event to dispute) তার আইনী সমাধান পাবার কোন সম্ভাবনা থাকবে না। এক্ষেত্রে আমাদের দেশের চাহিদা কাবিন করা ও বিবাহ রেজিস্ট্রি করা আইনগত বাধ্যতামূলক যাতে মোহরানা ও অন্যান্য শর্তাবলী উল্লেখ থাকে। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এ আইনী কাগজপত্র বাধ্যতামূলক না হলেও বর্তমানে আলেম সমাজ এ ব্যাপারে একমত যে এটা প্রতিটা মুসলমানের করা কর্তব্য।

 

এসিড দগ্ধ নারীদের অনন্য উদ্যোগ ‘প্রেসার গার্মেন্টস’


মোঃ মাহদী-আল-মুহতাসিম নিবিড়


বাংলাদেশে এসিড-হামলার শিকার নারীর সংখ্যা কম নয়। শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হওয়ার পর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা তাদের জন্য খুব কষ্টের। কিন্তু এসিড-সন্ত্রাসের শিকার হবার পরও জীবনযুদ্ধে বিজয়ী ক’জন নারী নিজেরা যেমন স্বাবলম্বী হয়েছেন, তেমনি দেশের স্বাস্থ্যখাতে অবদান রাখছেন। বিভিন্ন হাসপাতালে এসিড-আক্রান্তদের জন্য প্রেসার গার্মেন্টস তৈরি করছেন পাঁচ এসিডদগ্ধ নারী।
প্রেসার গার্মেন্টস হল লায়েক্রা নামক বিশেষ ধরনের কাপড়ের তৈরি পোশাক, যা রোগীর শরীরের মাপ অনুযায়ী বানানো হয়। এটি আক্রান্ত স্থানে সার্বক্ষণিকভাবে একই পরিমাণে চাপ দিতে পারে, যে ক্ষত তৈরি হয় তার বৃদ্ধি কমিয়ে দেয়। কোলাজেন ফাইবার, যা শরীরের এক প্রকার তন্তু-জাতীয় প্রোটিন, দগ্ধ স্থানের স্কার ফুলিয়ে তোলে। প্রেসার গার্মেন্টসের চাপের কারণে কোলাজেন সমান থাকে। অর্ডার অনুযায়ী প্রত্যেক অঙ্গের জন্য আলাদাভাবে এগুলো বানানো হয়।
বর্তমানে এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে চলছে এই পোশাক তৈরির কাজ।
মিরপুর চৌদ্দতে অবস্থিত এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ২০০২ সালে অস্ট্রেলিয়ান প্রশিক্ষকদের কাছ থেকে প্রেসার গার্মেন্টস তৈরির প্রশিক্ষণ নেন দুই এসিডদগ্ধ- আয়েশা বেগম ও রহিমা আকতার ডলি। পরে প্রশিক্ষণ নেন শামীমা আকতার, তসলিমা আকতার, নার্গিস আকতার রানু ও রোকসানা পারভীন। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ফাউন্ডেশন থেকে তারা মাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেতন পান। এদের মধ্যে রহিমা ডলি এখন বিদেশে আছেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহিদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনে আকারভেদে এসব গার্মেন্টস ৮০০ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৮০ হাজার টাকার প্রেসার গার্মেন্টস বিক্রি হয় এই তিন ইউনিট থেকে।
এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন হাসপাতালের ব্যবস্থাপক ডা. ফেরদৌস ওয়াহিদ জানালেন, “২০০২ সালের আগে যখন প্রেসার গার্মেন্টস ছিল না, অপারেশনের পর শুধু মলম ও মেডিসিন ব্যবহারেই সীমাবদ্ধ থাকতে হত। যার ফলে রোগীদের শরীর চুলকাত, ফোসকা পড়ে যেত, ফুলে যেত চামড়া। সার্জারির পর যে চামড়া লাগানো হয় সেটি যেন ফুলে না যায় সেজন্য প্রেসার গার্মেন্টস ব্যবহার করা হয়। আর যদি ফুলেও যায়, পরে যেন চামড়া আবার মসৃণ হয়ে ওঠে।”
২০ শয্যার এ হাসপাতালে ৭ জন ডাক্তার রয়েছেন। বিনা খরচে নারীসহ সহিংসতার শিকার দগ্ধ রোগীরা চিকিৎসা পাচ্ছেন এখান থেকে। বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠীর কাছ থেকে অর্থের সঙ্কুলান হয় বলে জানান ওয়াহিদ।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে নারীদের প্রেসার গার্মেন্টস বিক্রির জন্য রুম তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। যেখানে রোকসানা ও তাসলিমা নিজেদের তৈরি সামগ্রী বিক্রি করছেন। রোকসানা বলেন, “একসময় আমিও এমন রোগী ছিলাম। এখন আমি কাজটা শিখে নিজে করছি। অন্যরা আমার তৈরি জিনিস পরছে।”
এ কাজে গত বছর থেকে যুক্ত হন শামীমা। নওগাঁর পতœীতলা থানার চকদুরগা গ্রামের শামীমা ২০১১ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পর স্বপ্ন দেখছিলেন সেনাবাহিনীতে চাকরি করার। বিয়ের পর পড়াশুনা করতে দেবে এমন শর্তে ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলামের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। পড়ার সুযোগ না-দেওয়া নিয়ে একদিন ঝগড়ার পর ঘুমন্ত শামীমাকে এসিডে ঝলসে দেয় স্বামী।
শামীমা বলেন, “২০১২ সালে বিয়ের ছ’মাস পর এ দুর্ঘটনার শিকার হলে এখানে চিকিৎসা নিই। তখন আয়েশা আপার বানানো প্রেসার গার্মেন্টস পরেছিলাম। গত বছর থেকে আমিও এটি তৈরি করছি। মাসে ১০ হাজার টাকা আয় করি।”
স্বাবলম্বী শামীমা এখন ¯œাতক পর্যায়ে পড়াশুনা করছেন।
২০০২ সাল থেকে এ পেশায় যুক্ত চট্টগ্রামের আয়েশা জানান, বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ২০০০ সালে যখন তিনি এসিডে ঝলসে যান তখন প্রেসার গার্মেন্টস ছিল না। বছরের পর বছর ভুগতে হয়েছিল তাকে।
“আমার চামড়ার অনেক জায়গায় কুঁচকে আছে, সেটা থাকত না। চৌদ্দটা অপারেশন করতে হয়েছে, সেটারও দরকার হত না। সমাজে সবসময় মেয়েদের দায়ী করা হয়। তাই যখন ওদের কথা শুনি, তখন নিজের কথা মনে পড়ে। আমিও তো ওদের মতো ছিলাম।”
২০০৬ সালে বিয়ের পর এক মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে তিনি এখন স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। মেয়েটি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। আর তিন বছরের ছেলে মায়ের সঙ্গে তার কর্মক্ষেত্রে আসে।
এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, ১৯৯৯ সাল থেকে দেশে ৩৩৮৬টি এসিড-হামলার ঘটনা ঘটেছে। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তারা ১৫টি এসিড-হামলার বিষয়ে জেনেছেন।
ফাউন্ডেশনের এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি সুমাইয়া নূরের মতে, এসিডে ওদের শরীরের নানা অঙ্গ ঝলসে গেলেও এরা পরাজয় মেনে না নিয়ে বাঁচতে শিখছেন।
ফাউন্ডেশনের সার্বিক সহযোগিতায় চিকিৎসা পেয়ে সুস্থ হওয়া এই পাঁচ নারী ছাড়াও আরও ১৭ জন নানা কাজ শিখে স্বাবলম্বী হয়ে উঠে এ প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন।

সুত্র: বাসস।

 

মানসিক উদ্বিগ্নতা সারিয়ে তুলতে পারে দাদা দাদী


নারী সংবাদ


মানসিক বিকাশে সাহায্য করে পিতা-মাতামহ। শিশু-কিশোর বা তরুণ তরুণীর মধ্যে মানসিক অসুস্থতা বা উদ্বিগ্নতা দেখা দিলে, সেটা কাটিয়ে উঠতে বড় ধরণের ভূমিকা রাখতে পারে দাদা-দাদী বা নানা-নানী।
এ কারণে শিশু বা অল্পবয়সীদের মধ্যে এমন সমস্যা দেখা দিলে তাদের দাদা-দাদীর সংস্পর্শে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
টেলিফোন হেল্প-লাইন পরিষেবা চাইল্ড-লাইনের প্রতিষ্ঠাতা ডেইম এস্থার রান্টজেন বলেছেন, “যৌথ পরিবারের ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে এবং নিকটবর্তী আত্মীয় স্বজনের সাহচর্যের অভাবে কারণে শিশুদের বেড়ে ওঠা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”
তার মতে, শিশুদের, তাদের পিতামহ ও মাতামহদের সঙ্গে দেখা করার আইনগত অধিকার দেয়া উচিত। যেটা কি-না ফ্রান্সে আছে।
তিনি বলেন, অনেক বাবা-মা এতোটাই ব্যস্ত থাকেন যে তারা শিশুদের মানসিক চাহিদা পূরণ করতে পারেন না।
আত্মহত্যার প্রবণতা ঠেকানো যায়
চাইল্ড-লাইন পরিচালনাকারী দাতব্য সংস্থা এনএসপিসিসির হিসাব অনুযায়ী, গত দুই বছরে শিশুদের উদ্বেগ কাটাতে সহযোগিতার চাহিদা দ্বিগুণ বেড়ে গেছে।
এই প্রতিষ্ঠানটি মানসিক উদ্বিগ্নতায় ভূগছে এমন তরুণদের জন্য গত দুই বছরে ২১ হাজারেরও বেশি সেবা দিয়েছে।
তারা মূলত টেলিফোনের মাধ্যমে আক্রান্তের সঙ্গে খোলামেলা আলাপ-আলোচনা করে যা প্রাথমিক অবস্থায় অনেককেই আত্মহত্যা থেকেও ফিরিয়ে আনতে পেরেছে।
এ থেকে আন্দাজ করা যায় যে, একজন অপরিচিত মানুষের সঙ্গেও মন খুলে কথা বলতে পারার সুযোগ কতোটা সহায়ক হতে পারে। আর সেই মানুষটা যদি পরিবারের কাছের মানুষ হয়, তাহলে তো কথাই নেই।

মানসিক উদ্বিগ্নতা কাটাতে, বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে পিতা-মাতামহ।
আরও পড়তে পারেন:
ছাত্রীদের কাউন্সেলিং-এর ব্যবস্থা হবে ভিকারুননিসা স্কুলে
বাংলাদেশে বাড়ছে নারী প্রধান পরিবার
‘জন্মের পরপরই মেয়ে বদলে ছেলে নিয়ে আসতে বলছিল সবাই’
পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা
প্রতিনিয়ত মানসিক উদ্বিগ্নতায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা যে হারে বাড়ছে সেক্ষেত্রে এ ধরণের হেল্প-লাইন পরিসেবা যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন ডেম এস্থার। এক্ষেত্রে তিনি পরিবারের ভূমিকাকে সবচেয়ে বড় করে দেখছেন।
ডেম এস্থার বলেছেন, “যখন আমি ছোট ছিলাম, তখন আমি যৌথ পরিবারে বেড়ে উঠেছিলাম। আমি যে বিষয়গুলো নিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলতে পারতাম না, সেটা নিয়ে হয়তো পরিবারের অন্যদের সঙ্গে কথা বলতাম। সেই সুযোগটা আমার ছিল।”
তাই পরিবারগুলোর আসলে বোঝা উচিত যে পরিবারের শিশু বা তরুণ সদস্যদের যথেষ্ট মানসিক সহায়তা দেয়ার মতো অবস্থা তাদের রয়েছে কিনা।
যদি না থাকে তাহলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

অল্পবয়সীদের মানসিক সুস্থতার জন্য দাদা- দাদীর সঙ্গে দেখা করাটাকে অধিকার হিসেবে দেখতে চাইছেন বিশেষজ্ঞরা।
সহায়ক ভূমিকা পালন
“মানুষ সারা দিন ব্যস্ত থাকে – অনেকেই দুই থেকে তিনটা চাকরি করে থাকেন, অথবা তারা যেখানে কাজ করছেন সেখানে হয়তো তার পরিবার থাকে না। আবার অনেককেই চাকরির কারণে পরিবারের থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে। এমন নানা কারণে দিন দিন পরিবারগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে।
আবার ছোট পরিবারগুলোর সদস্যরাও সময় দিতে না পারার কারণে এক ধরণের বিচ্ছিন্নতায় ভুগছে।
ডেইম এস্থারের মতে, আজকাল বড় পরিবারগুলো ভেঙ্গে যাচ্ছে এবং পরিবার একীভূত রাখাটাকে এখন আর কেউ গুরুত্ব দিয়ে দেখছেনা।
অথচ এটা সত্যি যে, শিশুদের মানসিক বিকাশে বা উদ্বিগ্নতা কাটাতে এই বড় পরিবারের কোন বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, “যে পরিবারের শিশুরা দাদা- দাদী বা নানা-নানীর সংস্পর্শে বেড়ে ওঠে তারা বুঝতে শেখে যে জীবনকে তারা যতোটা জটিল ভাবে, জীবন এতোটা খারাপ না।” মাতামহ ও পিতামহের সংস্পর্শে শিশু বুঝতে শেখে যে জীবন এতোটা খারাপ না।

আবারও যোগাযোগ স্থাপন
বর্তমান পরিস্থিতিতে নবীনদের মানসিক সুস্থতার জন্য দাদা- দাদী বা নানা-নানীর সঙ্গে দেখা করাটাকে অধিকার হিসেবে দেখতে চাইছেন ডেম এস্থার।
তিনি বলেন, “আমাদের এখন প্রত্যেক শিশুকে তাদের পিতামহ বা মাতামহের সাথে যোগাযোগ রাখার অধিকার দিতে হবে, যেটা কিনা ফ্রান্সে আছে।”
ডেম এস্থার এক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যে দিন দিন বাড়তে থাকা পারিবারিক বিচ্ছিন্নতার বিষয়টি উল্লেখ করেন।
পরিবারগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কারণে ওই শিশুদের সঙ্গে দেখা করার জন্য তাদের পিতা-মাতামহের অনেক সময় আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়।
তবে ফ্রান্সের মতো দেশে, সবারই তাদের মাতামহ- পিতামহের সঙ্গে দেখা করার অধিকার রয়েছে।

ফ্রান্সে সবার তাদের মাতামহ- পিতামহদের সঙ্গে দেখা করার অধিকার রয়েছে। এবং এই নিয়ম যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশের গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করেন ডেম এস্থার।
তিনি বলেন, “ডিউক অব ক্যামব্রিজ এবং ডিউক অফ সাসেক্সসহ উচ্চ মার্গীয় ব্যক্তিরাও এই সমস্যাগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করছেন। পরিবারের বিচ্ছিন্নতা রোধ, সেইসঙ্গে নবীনদের মানসিক উদ্বিগ্নতা কাটিয়ে উঠতে খোলামেলা কথাবার্তার ওপরও জোর দিচ্ছেন তারা।”
ডেইম এস্থারের মতে পরিবারের কেউ যদি মানসিক উদ্বিগ্নতায় ভোগে, এবং দ্রুত যদি এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেয়া না হয় তাহলে যে কারও মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বা দীর্ঘস্থায়ী মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার দেখা দিতে পারে।

সুত্র: বিবিসি

 

মাজার ব্যথায় অত্যাধুনিক ম্যানুয়াল চিকিৎসা


প্রফেসর আলতাফ হোসেন সরকার


যেকোন অসুস্থ্যতাই আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় সুস্থ থাকাটা কত জরুরী শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতঙ্গের সুস্থতার উপর নির্ভর করে আমাদের ভাল থাকা।এদের কোনটিতে একটু সমস্যা দিলেই ঘটে নানা বিপত্তি। জীবনটাই হয়ে উঠে দুর্বিসহ। আর যদি হয় ব্যথা জনিত অসুস্থতা তবে তা আমাদেরকে ফেলে দেয় রীতিমত দুর্ভাবনায়। তবে সমস্যা যাই আসুক চেষ্টা আর সঠিক পথ জানা থাকলে তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় খুব সহজেই। সুপ্রিয় পাঠক, আজকের আমার এই লেখা আশা করি কিছুটা হলেও আপনাদের উপকারে আসবে।
মতি লাল সাহা। বয়স ৩৭ বৎসর। এসেছিলেন আমার কাছে তাঁর- মাজাব্যথার চিকিৎসার জন্য। তিনি গত আগষ্ট ২০১৪ সাল থেকে মাজার ব্যথায় ভুগছেন। ব্যথা হলে মাঝে মাঝে বিভিন্ন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করে থাকেন। কখনও একটু ভাল থাকেন আবার কখনও ব্যথা বেড়ে যায়। এ ভাবে পার হয়েছে জীবনের বেশ কিছূ মুল্যবান সময়। এখন আর বেশিক্ষন টেবিলে বসে বা সামনে ঝুঁকে কাজ করতে পারছেন না। আর সে জন্য তিনি গত জীবনের মেধাবী-পদবী যেন হারাতে বসেছে। আমি যখন তাঁর সংগে রোগের ইতিহাসের কথা জিজ্ঞাসা করছিলাম, এক পর্যায় তিনি বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেলেন। কারন বসে থাকার জন্য তাঁর ব্যথা তীব্রতর হচ্ছে। এমআরআই এবং এক্স-রে রিপোর্টে বলা হয়েছে কোন হাঁড় এবং ডিক্স এ কোন অসুস্থতা নেই। কিন্তু মতি লাল সাহার ফিজিক্যাল পরীক্ষা করে দেখা গেল তাঁর কোমরের লংগীসিমাস ও স্পাইনালিস মাসেল-লাম্বার রিজিওনে প্রচন্ড ব্যথা ও টেনডার এবং পেটের নিচের মাসেল ও দূর্বল। এই মাংসগুলো আমাদের শরীরের পেছনের দিকে মাজায় বা কোমরে এবং পেঁট, লোয়ার লাম্বার ও ফিমারের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। মি. মতি লাল-এর ঐ মাংসগুলোর শক্তি কমে গেছে। সে কারনে বসে কাজ করার সময়, সামনের দিকে তিনি যখন ঝুঁকেন, তখন তাঁর ঐ মাংস গুলো তাঁর শরীরের(মাথা, ঘাড়, বুক এবং মাজা) ওজন ধরে রাখতে পারে না। চিকিৎসা শুরু করার পূর্বেই সঠিক ফিজিক্যাল ইক্সামিনেশন করে অসুস্থ স্ট্রাকচার বের করতে হবে অর্থাৎ ফাইন্ড দ্যা সিক স্ট্রাকচার এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। মি. মতি লাল-এর চিকিৎসার জন্য তাঁর অসুস্থ সফ্ট টিসু বা মাংসগুলোর মোবালাইজেশন, স্পাইনের রেন্জ বাড়ানোর জন্য বায়োমেকানিকস অনুযায়ী সঠিক ব্যায়াম, আলট্রা সাউন্ডথেরাপি এবং অবশ্যই কাইনিসিওলজী বেজ্ড এক্সারসাইজ দরকার। এই চিকিৎসার সাথে অবশ্যই অত্যাধুনিক লো-লেভেল লেজার থেরাপি দ্বারা চিকিৎসা করতে হবে। তাঁর পর আর যেন ব্যাথা না হয় সে জন্য প্রতিরোধ মুলক ব্যায়াম(স্ট্রেনথেসিং, স্ট্রেচিং ও স্ট্রাবিলাইজেশন) অবশ্যই করতে হবে।
আমি মনে করি সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে তাঁর ব্যথা ভাল হবেই ইন-শাহ-আল্লাহ। আর যেন ব্যাথা না হয় সে জন্য প্রতিরোধ মুলক ফিজিওথেরাপি নিতেই হবে। প্রতিদিন ৮-৯ ঘন্টা ঘুমাবেন। প্রচুর পানি খাবেন। বসা, দাঁড়ানো, ঁহাটা ও জিনিস উত্তলনের সময় মেরুদন্ডের সঠিক ভঙ্গি মেনে চলুন।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের দ্রুত প্রসারের সাথে সাথে ব্যাকপেইন চিকিৎসার জন্য আমার অত্যাধুনিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা সঠিক যায়গায় স্থান করে নিয়েছে এভাবেই তার নিজেস্ব প্রযুক্তি ও সঠিক ম্যানুয়াল থেরাপির মাধ্যমে। কোমর ব্যথার চিকিৎসার জন্য আর বিদেশ নয় দেশেই এখন বিশ্বমানের অত্যাধুনিক চিকিৎসা আমরা দিয়ে আসছি। সুতরাং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করুন। মাজা ব্যথার কষ্ট মুক্ত থাকার জন্য আমার অপারেশন বিহীন সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করুন। মনে রাখবেন পৃথীবির উন্নত দেশগুলোর বিভিন্ন গবেষনায় বলা হয়েছে শিড়দাঁড়ার চিকিৎসার জন্য নন-অপারেটিভ ম্যানুয়াল ও মোবালাজেশন চিকিৎসা অত্যাধিক কার্যকর। আমি আমার এই লেখার মাধ্যেমে অসুস্থ জনগণের জন্য সামান্য হলেও ধারণা দিতে চেষ্টা করেছি যে, আপনি আপনার মাজার কষ্টে জন্য কি করবেন। মেরুদন্ডের সঠিক চিকিৎসা নিন, সুস্থ জীবন-যাপন করুন।
——————–
ব্যাকপেইন বিশেষজ্ঞ
লেজার ফিজিওথেরাপি সেন্টার
পান্থপথ, ঢাকা।
সুত্র: ইবনে সিনা হেলথ ম্যাগাজিন।

 

গজারিয়ায় যৌতুকের বলি হলেন গৃহবধূ


নারী সংবাদ


মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার টেংগাচর গ্রামে যৌতুক না পেয়ে মারধর করায় বিষপানে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, এক বছর আগে টেংগারচর ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা গ্রাম পুলিশের সদস্য নাসিমা বেগমের মেয়ে স্বর্ণার সঙ্গে পাশের বাড়ির সুমনের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে ৩০ হাজার টাকা দাবি করে সুমনের পরিবার।

নাসিমা অভিযোগ করেন, এক সপ্তাহ আগে যৌতুকের ২৫ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়। পাঁচ হাজার টাকা কম দেওয়ায় শ্বশুর বাড়ির লোকজন ও স্বামী সুমন গত বোববার স্বর্ণাকে মারধর করে।

এই অপমান সইতে না পেরে স্বর্ণা গতকাল দুপুরে হোসেন্দী বাজারে গিয়ে বিষপানে অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্থানীয় কয়েকজন শিক্ষার্থী তাকে অচেতন অবস্থায় গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিনই স্বর্ণার মৃত্যু হয়।
সুত্র: সমকাল

 

প্যারেন্টিং প্ল্যান


কানিজ ফাতিমা


একটি শিশুর ভালোভাবে গড়ে উঠার প্রয়োজন শুধুমাত্র বাবা-মায়ের মানসিক শান্তি আর পরিবারের সুখের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি সমাজ এবং সভ্যতারও মূল ভিত্তি। পূর্বের অধ্যায়গুলোতে আমরা শিশু লালন-পালনের ক্ষেত্রে লক্ষ্য নির্ধারনের গুরুত্ব এবং পিতামাতাদের যেসব চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে পূর্ব থেকেই সতর্ক থাকতে হবে সে বিষয়ে আলোচনা করেছি। এই অধ্যায়ে আমরা কিছু বহুল প্রচলিত ভুলধারনা তুলে ধরবো, সেই সাথে এমন কিছু “ফাঁদ” নিয়েও আলোচনা করব যেগুলোতে পিতামাতারা সহজেই পরতে পারেন। এখানে আরো থাকবে কিভাবে এ ফাঁদগুলো এড়িয়ে চলা যায় সে বিষয়ে আলোচনা । সবশেষে থাকবে প্রচলিত কিছু জনশ্রুতি (Myth) এবং তার খন্ডন । এসব ভুল ধারনাগুলো তুলে ধরার কারন হচ্ছে, প্যারেন্টিংএ কি কি বাধা আসতে পারে তা সম্পর্কে পিতা-মাতাদের সচেতনত করা । কারণ প্যারেন্টিং এর চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে আগে থেকেই ভালো ধারণা ছাড়া একটি ভালো প্যারেন্টিং প্ল্যান কখনোই সম্ভব হয়না।

প্রচলিত ভ্রান্তি দূর করা ও গুপ্ত ফাঁদগুলো সম্পর্কে সচেতন করা

উত্তারিধকারসূত্রে প্রাপ্ত প্যারেন্টিং পদ্ধতিগুলোর অন্ধ অনুসরন

অনেকসময়ই আমরা আমাদের আচরণগত অভ্যাসগুলো আমাদের বাবা-মায়ের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সুত্রে অর্জন করি। এইগুলো যে সবসময় কার্যকর বা সর্বোত্তম তা কিন্তু নয়। বরং অনেক সময়ই দেখা যায় এদের অনেকগুলোই ঠিক যুগোপযোগী নয়, এমনকি কোনো কোনটি অনেকক্ষেত্রে ক্ষতিকরও বটে। একজন মা বলেছিলেন, “যে মুহূর্তে আমি গর্ভবতী হলাম, সে মুহূর্ত থেকে আমি আমার মা এর মত হয়ে গেলাম ”। কিছু মা-বাবা, বিনয় আর কৃতজ্ঞতা থেকে ঘোষণা করে দেন যে তাদের বাবা-মা তাদেরকে সর্বশ্রেষ্ঠ উপায়ে বড় করেছেন। একথা সত্যি যে, আমাদের সবারই আমাদের বাবা-মায়ের কাছ থেকে অনেক বেশি আদর-ভালোবাসা পাওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে, কিন্তু তাদের সবারই যে ইতিবাচক প্যারেন্টিং সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান বা দক্ষতা ছিল- তা কিন্তু বলা যাবে না।

অপরের অন্ধ অনুকরন

অন্য কোনো পিতা-মাতার পুরোপুরি অন্ধ অনুকরন প্যারেন্টিং এর সঠিক পদ্ধতি হতে পারেনা। মনে রাখতে হবে প্রতিটি শিশুরই নিজস্ব কিছু বিশেষত্ব থাকে যা অন্য বাচ্চার থেকে ভিন্ন । তাই এক বাচ্চার জন্য যা ভালো তা অন্য বাচ্চার জন্য ভালো নাও হতে পারে। মা-বাবার উচিত তাদের সন্তানকে ভালো ভাবে জানা ও সেই সন্তানের জন্য কোনটা ভালো তা খুঁজে বের করা। অন্য পিতা-মাতাদের পরামর্শ নেয়া অবশ্যই জরুরী তবে এ সময় মনে রাখতে হবে যে প্যারেন্টিং এর বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে , ক্ষেত্র বিশেষে এসব পদ্ধতির কার্যকারীতা পরিবির্তিত হয়, অর্থাত একেক ক্ষেত্রে একেক পদ্ধতি বেশী কার্যকর। যেমন, অনেক পিতামাতা সন্তানদের সাথে বেশ নমনীয় আর উদার থাকেন, আবার কেউ হয়তো সন্তানদের বেলায় কঠোরতা অবলম্বন করতে পছন্দ করেন।

প্রতি পদক্ষেপেই নতুন চমক

“ নতুন বাবারা দ্রুতই বুঝে যান যে সন্তান মানুষ করা কোনো পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই ক্রমাগত উদ্ভাবনের এক মরীয়া প্রয়াস। ” (Bill Cosby,, অভিনেতা)
“প্যারেন্টিং এমন বিষয় যে আমরা শিখে নিয়ে তারপর শুরু করি, বরং এটা শুরু হওয়ার করতে করতে শিখি” (ELKIND,১৯৯৫)

সন্তানের মাধ্যমে নিজের অপূর্ণ ইচ্ছার পূর্ণতা

সন্তানের মাধ্যমে নিজের অপূর্ণ ইচ্ছা পূরণ আমাদের সমাজে খুবই প্রচলিত একটি ভুল প্যারেন্টিং আচরন। এমন অনেক বাবা-মাই আছেন যারা নিজেদের সন্তানদের মাধ্যমে নিজেদের অপূর্ণ ইচ্ছা পূরন করার চেষ্টা করেন। এমনকি অনেক সময় সন্তানের ইচ্ছা অনিচ্ছার প্রতি তোয়াক্কা না করেই তাদের উপর নিজেদের পছন্দ চাপিয়ে দেন। যেমন, আমরা অনেককে দেখি নিজেরা ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে চেয়েছিলেন কিন্তু পারেননি; ফলে সেই অপূর্ণতা থেকে সন্তানদের বাধ্য করেন তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য। আমাদের মনে রাখা উচিত, সন্তান কখনোই বাবা-মার সংযোজন নয়।

সন্তানদের নিজেদের স্বাধীন ইচ্ছা অনিচ্ছা রয়েছে।

বাবা-মায়েরা অনেক সময় সন্তানদের নিজেদের একটি বর্ধিত অংশ ভাবতে পছন্দ করেন। তাই তারা নিজেদের অপূর্ণতা গুলো সন্তানের মাধ্যমে পূরণ করতে চান, নিজেদের ভুলগুলো সন্তানদের মাধ্যমে শুধরে নিতে চান, এমনকি তাদের নিজেদের বাবা-মায়ের প্রতি করা অতীতের ভুলগুলোও নিজের সন্তানের মাধ্যমে শুধরাতে চান। যদি কোনো বাবা-মা খেলাধুলায় নিজের আকাঙ্খানুযায়ী ভাল না করতে পারেন, তারা চান তাদের সন্তানরা চ্যাম্পিয়ন হোক। যদি তারা অংক বা বিজ্ঞানে খারাপ করে থাকেন, তারা চান তাদের সন্তান আইন্সটাইন হোক। কেউ যদি রাজনীতিতে সফলতা না পান, তবে তারা চান তাদের সন্তান বড় রাজনীতিবিদ হোক । কিন্তু বাবা-মায়ের মনে রাখতে হবে, মাতৃত্ব বা পিতৃত্ব কখনোই দ্বিতীয় শৈশব নয়, আর সন্তানও মা-বাবার ক্ষুদ্র সংস্করণ নয়। জীবনের শুরু থেকেই সন্তানদের স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব রয়েছে এবং তাদের সেই ব্যক্তি স্বাতন্ত্রকে শ্রদ্ধা করতে হবে।

পিতৃত্ব-মাতৃত্বের দ্বায়িত্বভার অন্যের কাঁধে অর্পন করা

অনেকে মনে করেন যে প্যারেন্টিং এর দায়িত্ব মা কিংবা বাবা একজনের পক্ষে পালন করা সম্ভব। সত্যিকার অর্থে, বাম হাত যেমন ডান হাতের বিকল্প হতে পারেনা আর ডান হাত যেমন বাম হাতের দায়িত্ব নিতে পারেনা, তেমনি মা বা বাবা কেউই একজন আরেকজনের স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন না। একটি সন্তানের বেড়ে ওঠার পেছনে বাবা-মা দু’জনেরই নির্দিষ্ট এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। দাদা-দাদী, নানা-নানী, অন্য কোনো আত্বীয়, বেবি সিটার বা কাজের বুয়া কেউই কখনোই বাবা-মায়ের স্থলাভিসিক্ত হতে পারেননা। তারা বাবা -মায়ের সাহায্যকারী হতে পারেন ঠিকই কিন্তু কখনোই মা-বাবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার বিকল্প হতে পারেননা।

শিশুকে শুধুমাত্র যুক্তি দিয়ে বুঝানোকেই যথেষ্ট মনে করা

সন্তান ও পিতামাতার সম্পর্ক শুধুমাত্র যুক্তি নির্ভর সরল সমীকরণ নয়। মা-বাবা আর সন্তানের মধ্যে সম্পর্ক একমাত্র যুক্তির উপর ভিত্তি করে হয়না, এই সমীকরণে অভ্যাস, আবেগ-অনুভুতিরও স্থান রয়েছে। যেমন ধরুন, কোনো মা-বাবা যদি সন্তানকে ফলমূল বা শাক-সবজি খেতে উদ্বুব্ধ করতে চান তাহলে, “খাও, এসব খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, তোমার শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন আর মিনারেল এই খাবারে রয়েছে” – এরকম যুক্তি দিলেই কাজ হয়ে যাবে এমনটা না, এক্ষেত্রে ভালবাসা-আবেগ ইত্যাদিরও প্রয়োগ করে তাকে বোঝাতে হবে । মনে রাখতে হবে যে যুক্তির প্রয়োজন রয়েছে ঠিকই, কিন্তু শধুমাত্র যুক্তিই যথেষ্ট নয়।

 

মগবাজারে বাসা থেকে গৃহকর্মীর লাশ উদ্ধার


নারী সংবাদ


রাজধানীর মগবাজারে একজন সরকারি কর্মকর্তার বাসায় নিপা (১৪) নামে এক গৃহকর্মীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় পুলিশ গ্রিনওয়ে এলাকার একটি বাসার বাথরুম থেকে ওই গৃহকর্মীর লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায়।
হাতিরঝিল থানার ওসি আবু মো: ফজলুল করিম জানান, মগবাজারে একজন সরকারি কর্মকর্তার বাসার বাথরুম থেকে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় ওই কিশোরীর লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, গৃহকর্মী নিপা গলায় কাপড় পেঁচিয়ে বাথরুমের ঝরনার পাইপের সাথে ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে থাকে। তবে সে আত্মহত্যা করেছে, নাকি হত্যাকাণ্ড তা পোস্টমর্টেম রিপোর্টে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
তবে গৃহকর্তার বিস্তারিত পরিচয় জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করেছে পুলিশ। একটি সূত্র জানিয়েছে, গৃহকর্মী নিপার গৃহকর্তা কৃষি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলে জানা গেছে। সুত্র:নয়াদিগন্ত।

 

প্রতিবেশিনী…৫


আফরোজা হাসান


বইয়ের মধ্যে ডুবে থাকা মাহামের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেললো আয়ান। ইচ্ছে করেই খানিকটা লম্বা ও শব্দ করে দীর্ঘশ্বাসটা ফেললো যাতে মাহামের ধ্যানভঙ্গ হয়। কিন্তু তাতেও ধ্যানমগ্নতায় বিন্দুমাত্র বিঘ্ন না ঘটলো না। বাইরের জগত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বইয়ের সাথে এমন বন্ধনে জুড়েছে যে বইয়ের ঘটনাপ্রবাহের রেশ ফুটে উঠছে চেহারা জুড়ে। কাজ করতে করতে অনেকক্ষণ থেকেই মাহামের চেহারার বৈচিত্র্যময় অভিব্যক্তি খেয়াল করছিল আয়ান। সাথে সাথে আরেকটা জিনিসও খেয়াল করলো আজ আবারো। কোন কিছুতেই মাহামের কোন অভিযোগ নেই। বাসায় ফিরতে দেরি হবে বলে যাবার পর যেমন হাসিমুখে অভ্যার্থনা জানায়, না বলে দেরি করে ফিরলেও একইরকম হাসিমাখা চেহারা নিয়ে সামনে এসে দাঁড়ায়। এই যেমন আজ বাসায় ফিরেই ঘোষণা দিয়েছিল অনেক কাজ সাথে করে নিয়ে এসেছে। এখন সেসব করতে হবে। তাদের বাইরে যাবার প্ল্যান ছিল। আয়ান ভেবেছিল সামান্য হলেও মনখারাপ করবে মাহাম। কিন্তু হাসি মুখে চা-নাস্তা দিয়ে চুপচাপ বই নিয়ে পাশে বসে গিয়েছে। কোন অভিযোগ নেই, অভিমান নেই। ভালো লাগে, খুব বেশি ভালো লাগে যে কোন পরিস্থিতিতেই মাহামের সাপোর্টিভ আচরণ। কিন্তু মাঝে মধ্যে কেমন যেন পানসা পানসাও মনেহয়। দাম্পত্যজীবনে অল্পস্বল্প অভিযোগ, অনুযোগ, অভিমান থাকাটা মন্দ না। স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরকে বোঝার চেষ্টা করা, স্পেস দেয়ার অর্থ এমনটা আবার নয় যাইকিছু করা হবে চুপচাপ মেনে নিতে হবে সর্বদাই। মেনে নেবার সাথে সাথে পরস্পরের তরে মানিয়ে চলার অপশনও রাখা উচিত। গিট তখনই মজবুত হয় যখন দুইপাশ থেকে টানা হয়। সম্পর্কের বন্ধনের মজবুতির জন্যও উভয় পক্ষেরই সরব অংশগ্রহণ জরুরি। একজনের নিশ্চুপ স্যাক্রিফাইস, কম্প্রোমাইজ বন্ধনের প্রাণচাঞ্চল্য, উচ্ছ্বলতা হ্রাস করে দিতে পারে। এই ব্যাপারটা নিয়ে অতি দ্রুত কথা বলতে হবে মাহামের সাথে। আরো কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, তারপর..

গভীর মনযোগ সহকারে আয়ানের আনা নতুন বইটা পড়ছিল মাহাম। ‘তারপর’ শব্দটা কানে আসতেই বই থেকে চোখ তুলে আয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল, তারপর কি?

আয়ান হেসে বলল, তোমাদের দুই বোনের প্রতিবেশিনী প্রতিবেশিনী খেলা শেষ তাহলে? আমি কিন্তু বেশ উপভোগ করছিলাম তোমাদের দুজনের প্রতিবেশিনী মূলক কর্মকান্ড।

মাহাম হেসে বলল, এই কথা যদি শাবাবের কানে যায় নির্ঘাৎ আবারো বোন থেকে প্রতিবেশিনীতে রুপান্তরিত হয়ে যাবে। তবে আমিও কিন্তু বেশ এনজয় করেছি। শাবাবের সাথে হাসি-আনন্দের ছলে প্রতিবেশীর হক আদায় সহ ইত্যাদি সবকিছু খেয়াল রাখতে যেয়ে একটা পরিকল্পনাও নিয়েছি গত কয়েকদিনে। তোমার সাথে শেয়ার করবো করবো করেও করা হয়ে ওঠেনি।

এখন করে ফেলো শেয়ার তোমার পরিকল্পনা।

মাহাম হেসে বলল, শাবাবের স্বভাব তো তোমার জানাই আছে। মানুষ সামাজিক জীব। একা একা বাস করতে পারে না। এর জীবন্ত উদাহরণ হচ্ছে শাবাব। আমাদের এপার্টমেন্টের প্রায় সব ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের সাথেই কম বেশি পরিচয়, যোগাযোগ, যাতায়াত আছে শাবাবের। ওর সাথে সাথে আমারও সৌজন্যমূলক পরিচয়, দেখা-সাক্ষাৎ, কথাবার্তা হয়েছে, হয় অনেকের সাথেই। মানুষের দোষ অনুসন্ধানের অভ্যাস আমার নেই। সবার মধ্যে থেকে ভালো কিছু খুঁজে নেবার চেষ্টাই করি সবসময়। কিন্তু না চাইতেও অনেকের মাঝেই কিছু না কিছু সমস্যা চোখে পড়েছে। আমি কি দু’একটা উদাহরণ দেবো তোমার বোঝার সুবিধার্থে?

আয়ান হেসে বলল, হ্যা দাও।

যেমন, এক বোন আছেন সারাক্ষণ ই বাচ্চাদেরকে অকারণ শাসন-শোষণের মধ্যে রাখেন। উনার বাচ্চাদেরকে দেখলেই বোঝা যায় মাকে প্রচন্ড ভয় পায়। বাবা-মা সন্তানের তরে প্রশান্তির অপর নাম। বাবা-মাকে দেখে যদি সন্তানরা আতঙ্কিত বোধ করে তাহলে কোথায় যাবে প্রশান্তির সন্ধানে? তাছাড়া বাবা-মার সাথে সন্তানদের সুন্দর সম্পর্কের উপর নির্ভর করে সন্তানদের সুন্দর আগামী। কিন্তু ঐ বোনটি হয়তো না বুঝেই কিংবা সন্তানদের কল্ল্যাণের নিয়্যাতে নিজের অজান্তেই উনার সন্তানদের মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ব্যহত করছেন চরমভাবে। আরেকজন মাকে দেখেছি একেবারেই উদাসীন বাচ্চার ব্যাপারে। প্রায়ই দেখি উনার বারো বছর বয়সী মেয়েটাকে বাসায় একা রেখেই এদিক ওদিক চলে যান। উনার বাসায় আত্মীয়-স্বজনের আনাগোনা খুব। এমন না যে সবাইকেই অবিশ্বাস করতে হবে। কিন্তু সচেতন থাকাটাও জরুরি বাচ্চার ব্যাপারে। আমার মনে হয়েছে এই দুই বোনকে হেলদি প্যারেন্টিং সম্পর্কে বুঝিয়ে বলাটাও প্রতিবেশীর হকের মধ্যে পরে। ছোট্ট একটা ছেলে আছে আরেক বোনের। দেখা হলেই বাচ্চাকে বলে আন্টিকে হ্যালো বলো। শুনলেই মনটা খারাপ হয়ে যায়। ছোটবেলা থেকেই বাচ্চাদেরকে সালামের অভ্যাস করতে হয়। যে শিক্ষাটা পরিবার থেকে পাচ্ছে না বাচ্চাটা। তারপর আমাদের মতোই নিউলি ম্যারেড এক ক্যাপল আছে। মাঝে মাঝেই মেয়েটাকে দেখি বারান্দায় বসে উদাস চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। ওকে সুখী দাম্পত্য জীবনের টুকটাক টিপস দেয়াটাও নিজের দায়িত্ব বলে মনেহয়।

আচ্ছা।

আচ্ছা মানে কি?

আচ্ছা মানে হচ্ছে, আমরা তাহলে নিউলি ম্যারেড ক্যাপল?

মাহাম হেসে বলল, কেন মনে নেই বুঝি?

কিভাবে থাকবে বলো? মনে থাকার মতো কিছু তো আমার নিউলি ম্যারেড ওয়াইফ করে না।

যেমন?

যেমন, কোন ব্যাপারে কোন আবদার নেই, কোন বিষয়ে কোন অভিমান নেই, অভিযোগ নেই। হাজবেন্ডের ব্যস্ততাকে বিশেষ করে বাসায় এসে কাজ করাকে মেয়েরা নাকি সতীনের মতো ভাবে। কিন্তু আমার নিউলি ম্যারেড ওয়াইফ তো তার হাজবেন্ডের কাজকে নিজের সখী ভেবে নিশ্চিন্তে তার পাশে বসে লাভস্টোরি পড়ছে।

মাহাম হাসতে হাসতে বলল, আসলেই যে যা পায় তা চায় না। যা পায় না সেটা নিয়েই আপসোস, আহাজারি করে। অবশ্য এটাই স্বাভাবিক। কারণ মানুষ বড়ই অতৃপ্ত প্রাণী। কোন অবস্থাতেই মানুষ তৃপ্ত হতে পারে না সম্পূর্ণ রূপে। একটা যাওয়া পূরণ হতে না হতেই আর না পাওয়ার হিসাব কষতে শুরু করে আবারো অপ্রাপ্তিতে গা ভাসায়।

হুম, সেটা ঠিকআছে। কিন্তু তোমার আমার মধ্যে হঠাৎ করে পুরো মনুষ্যজাতি চলে এলো কেন?

উপযুক্ত কারণেই এসেছে।

যেমন?

যেমন, আজ সকালেও ইলমা ফোন করে কান্নাকাটি করেছে কিছুক্ষণ। ওর হাজবেন্ড গতরাতে আবারো ওর গায়ে হাত তুলেছে। কারণ সেই একটাই। দেরি করে বাসায় ফিরেছে কেন এই প্রশ্ন করা মাত্রই ইলমার হাজবেন্ড রেগে গিয়েছে। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে গায়ে হাত তুলেছে। ইলমা খুব ভালো করেই জানে ওর হাজবেন্ড দেরি করে ফিরেছো কেন? ফোন দিয়েছিলাম রিসিব করোনি কেন? ম্যাসেজের জবাব দাওনি কেন? আমাকে সময় দাও না। ইত্যাদি ধরণের অভিযোগ পছন্দ করে না। বিয়ের পর থেকেই এই একটা ব্যাপারে ওদের ঝগড়াঝাঁটি লেগেই আছে। এখন তো ঝগড়া গায়ে হাত তোলার পর্যায়েও চলে গিয়েছে। দুজন তো চাইলেই পারে নিজ নিজ অবস্থান থেকে একটু সরে এই সমস্যাটার সমাধান করতে। কিন্তু তারচেয়ে ঝগড়াঝাঁটি, মারামারি ওদের কাছে সহজ। অথচ দেখো মানুষ হিসেবে কিন্তু ইলমা, নাজমুল ভাই দুজনই ভালো। একজন অভিযোগ করা ছাড়তে পারছে না, অন্যজন অভিযোগ শোনা মাত্র মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। শুধুমাত্র এই একটা কারণে নিত্য দ্বন্দ্ব লেগেই আছে দুজনের মধ্যে। মানুষ কেন এমন অবুঝের মতো আচরণ করে সত্যিই আমার বুঝে আসে না। যাকে ভালোবাসার দাবী করে তাকে আঘাত কিভাবে করে? যার সাথে জীবনের সুখ-দুঃখ বাঁধা তার অপছন্দীয় একটা কাজ বর্জন করতে এত কিসের আপত্তি? কতবার বলেছি ইলমাকে যেহেতু পছন্দ করে না প্রশ্ন করো না। কখনো যদি প্রশ্ন নাও করে তখন গাল ফুলিয়ে বসে থাকে। এতে আরো বেশি রেগে যায় ওর হাজবেন্ড।

আয়ান হেসে বলল, সারাদিন পর বাইরে থেকে ফিরে বৌয়ের ভোঁতা মুখ দেখলে রাগ করাটা স্বাভাবিক। অবশ্য ঘরে ফিরে যাতে বৌয়ের হাসিমুখের দেখা মেলে সেজন্যও ভূমিকা থাকা জরুরি। যাইহোক, এখন মানুষের কথা থাক।

মোটেই না। এই ব্যাপারেও আমি কথা বলতে চাচ্ছিলাম। আমাদের দুই ব্লিডিং পরেই থাকে ইলমারা। তারমানে ওরাও আমাদের প্রতিবেশি। শুধু আমি একা একা প্রতিবেশির হক আদায় করবো তাতো হবে না। তোমাকেও আদায় করতে হবে প্রতিবেশির হক।

ছিঃ মাহাম এসব তুমি কি বলছো? তুমি আর আমি বুঝি আলাদা? আমি করি আর তুমি করো একই কথা।

মাহাম হেসে ফেলে বলল, জ্বিনা মোটেই এক কথা না। আগামীকাল ছুটি। আমি ইলমা আর নাজমুল ভাইকে দাওয়াত দিয়েছি। ইলমাকে বুঝিয়ে বলে আমি আমার হক আদায় করবো। নাজমুল ভাইয়ের সাথে কথা বলে প্রতিবেশির হক আদায়ের দায়িত্ব তোমার।

আচ্ছা বুঝলাম। কিন্তু দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে তুমি কোথায় যাচ্ছো?

দুপুরে যা রান্না করেছিলাম আমার প্রতিবেশিনী ভগ্নী তার দুই বান্ধবী নিয়ে এসে খেয়ে দেয়ে হাঁড়িপাতিল ধুয়ে রেখে গিয়েছে। রাতের রান্না করতে হবে এখন।

তারচেয়ে চলো এক কাজ করি। তোমার প্রতিবেশিনী ভগ্নীকেও সুযোগ দেই প্রতিবেশির হক আদায়ের। ওদের দরজা নক করে বলবো, আমাদের ঘরে রান্না করা কোন খাবার নেই। অভুক্ত প্রতিবেশিদের রেখে আপনারা মজাদার খাবার খেয়ে গোনাহগার হবেন সেটা আমরা চাই না। তাই আপনাদের বাসায় দাওয়াত খাওয়ার মাধ্যমে আপনাদেরকে নেকী অর্জনের সুযোগ করে দিতে চলে এসেছি আমরা দুজন।

হেসে ফেললো মাহাম। হাসিতে যোগ দিলো আয়ানও। হাসতে হাসতে দুজন রওনা দিলো শাবাব আর আরিফীর বাসায়।

পর্ব-৪

 

কিশোর-কিশোরীদের জন্য ‘কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্য সেবা’ কর্নার


নারী সংবাদ


ভোলা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের রায়পুরা গ্রামের দশ বছর বয়সী রুবায়েত হোসেন প্রায়ই অসুস্থ থাকে। মূলত কিছুদিন পরপরই সে ডায়রিয়া আর জ্বরেও ভোগে। যার ফলে প্রতি মাসেই স্কুলে অনুপস্থিত থাকতে হয় তাকে।
একই এলাকার নবম শ্রেণীর ছাত্রী সালমা বেগম। মেয়েটি সব সময় ক্লাসের সবাইকে মাতিয়ে রাখত। খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কখনোই স্কুলে সে অনুপস্থিত থাকতো না। কিন্তু গত কয়েক দিন যাবত সে স্কুলে আসছে না। কারণ প্রথমবারের মত পিরিয়ড হয়েছে তার। খবর পেয়ে স্থানীয় এক নারী এনজিও কর্মী দেখা করতে যায় তার সাথে। ওই এনজিও কর্মী সালমাকে নিয়ে আসেন ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে। সেখান হতে সালমাকে দেওয়া হয় পিরিয়ডকালীন পরিচর্যার পরামর্শ এবং কিছু আয়রন ট্যাবলেট।
বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে অন্যান্য সব খাতের মতই স্বাস্থ্য সেবাও জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প। আর সরকারের এ সকল উদ্যোগকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও)।
স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ভোলা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে চালু করা হয়েছে কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্যসেবা।
ফলে এ অঞ্চলের সকল স্তরের কিশোর-কিশোরীরা এসব কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে এসে বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা, বাল্য বিয়ের কুফল, পুষ্টি, আয়রন ট্যাবলেট খাবার নিয়ম, পিরিয়ডকালীন পরিচর্যা, ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ বিভিন্ন বিষয় সেবা পেয়ে থাকে। ইতোমধ্যে এর সুফল পেতে শুরু করেছে ভোলা সদর, লালমোহন ও চরফ্যাশন উপজেলার একেবারে গ্রাম পর্যায়ের কিশোর-কিশোরীরা। আর এ কেন্দ্র পরিচালনায় সার্বিক সহযোগিতা করছে ইউনিসেফ বাংলাদেশ।
সালমা বলে, পিরিয়ড হওয়ার পর আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আমি ভেবেছিলাম আমার খুব বড় কোন অসুখ হয়েছে। ভয়ে মাকেও কিছু বলতে পারিনি। নোংরা কাপড় ব্যবহার করতাম। এরফলে আমি আরো অসুস্থ হয়ে যাই। পরে এই সেবা কেন্দ্রর কিশোরী কর্নারে গিয়ে পিরিয়ডকালীন সময়ের পরিচর্যা এবং করণীয় সম্পর্কে জেনে অনেকটা হাল্কা হলাম।
সালমার বান্ধবী ফিরোজা আক্তারও জানায়, তার অভিব্যক্তি। ফিরোজা বলে, প্রথমবার যখন পিরিয়ড হয় তখন আমি ভেবেছিলাম আমার অনেক বড় কোন অসুখ হয়েছে। আমি হয়ত আর বেশি দিন বাঁচব না। স্কুলে যাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছিলাম। পরে বাড়ীর পাশের এক বড় আপাকে সব জানালে তিনি আমাকে এই স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের কিশোরী কর্ণারে নিয়ে আসেন। এখন আমি নিয়মিতই এখানে আসি। আবার কেউ সমস্যায় পড়লে তাকেও এখানে নিয়ে আসি পরামর্শের জন্য।
অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র রফিক উদ্দিন বলে, আমি প্রায় সময় ডায়রিয়াতে ভুগতাম। মাসে একবার দু’বার আমার ডায়রিয়া হত। পরে এক বন্ধু আমাকে এই সেবা কেন্দ্রে নিয়ে আসে। এখান থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ অন্যান্য পরামর্শ পাওয়ার পর থেকে আমি অনেকটা সুস্থ। এখন আমি খাওয়ার আগে এবং পরে ভালো করে হাত ধুঁেয় নিই। এছাড়াও অন্যান্য কাজ করার পরেও আমি হাত ধুঁেয় নিই।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শিকা রাহেলা বেগম জানান, আগে সেবা নেয়ার ক্ষেত্রে কিশোরীদের সংখ্যা কম থাকলেও বর্তমানে তা বেড়ে গেছে কয়েক গুন। মূলত এই কেন্দ্রে কিশোরী কর্নার হওয়ায় তাদের সেবা নেয়ার সংখ্যা বাড়ছে।
এখানে কিশোর-কিশোরীদের আমরা বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরিচর্যার বিষয়ে যেমন স্বাস্থ্য, কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য, পুষ্টি, বয়:সন্ধিকালে করনীয়, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি পরামর্শ দিয়ে থাকি। এছাড়াও কিশোরীদের স্যানিটারি প্যাডের ব্যাবহার, বয়ঃসন্ধি সময়ের খাবার-দাবার, বয়ঃসন্ধিকালসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকি।
এই সেবা কেন্দ্রের সাথে জড়িত স্থানীয় এক ক্লিনিকের ডা. সাইদুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কিশোরী কর্নার হওয়ায় কিশোরীরা এখানে নিয়মিত সেবা নিচ্ছে। ফলে এলাকায় অসুস্থ কিশোর-কিশোরীর হার কমে যাচ্ছে।

সুত্রঃ বাসস

 

মুরগির গোস্তের রেসিপি


রেসিপি


মুরগির মাংসের সাদা ভুনা

যা যা লাগবে:
মুরগির মাংস ১/২ কেজি
টকদই ১/২ কাপ
পেঁয়াজ কুচি ৩টি
পেঁয়াজ বেরেস্তা ৩ টেবিল চামচ
আদ বাটা ১ টেবিল চামচ
রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ
জিরা গুড়া ১ চা চামচ
গোলমরিচ গুড়া ১ চা চামচ
লবণ স্বাদমত, চিনি স্বাদমত
টেস্টিং সল্ট ১/২ চা চামচ
তেজপাতা ১টি
কাঁচামরিচ ১২টি
সয়াবিন তেল ২ টেবিল চামচ

রান্নার প্রক্রিয়া:

প্রথমে মুরগির মাংস, টকদই, অর্ধেকটা পেঁয়াজ কুচি, আদ বাটা, রসুন বাটা, জিরা গুড়া, গোলমরিচ গুড়া, লবণ ভালভাবে মেখে আধাঘন্টা মেরিনেট করে রাখতে হবে। এবার তেল গরম করে বাকি পেঁয়াজ কুচি ভেজে নিতে হবে। এবার মেরিনেট করা মাংস কড়াতে ঢেলে একটু ভেজে ঢেকে দিতে হবে পানি বের হবার জন্য।

মুরগির মাংসের টিক্কা

যা যা লাগবে:
মুরগির মাংসের কিমা ২ কাপ,
পেঁয়াজ বাটা আধা কাপ,
কাঁচা মরিচ ৩টি,
রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ,
আদা বাটা ২ টেবিল চামচ,
সয়াবিন তেল ১ কাপের চার ভাগের এক ভাগ,
ঘি ৩ টেবিল চামচ, টকদই আধা কাপ,
পেঁয়াজ বেরেস্তা আধা কাপ,
গরম মসলা গুঁড়া ১ চা চামচ,
কাজু ও পোস্ত বাটা একসঙ্গে মিলিয়ে ৩ টেবিল চামচ,
লবণ পরিমাণমতো।

রান্নার প্রক্রিয়া:

১. মুরগির কিমা, লবণ, আদা বাটা দিয়ে একসঙ্গে মেখে ছোট ছোট মার্বেলের মতো বল করে ২০ মিনিট রেখে দিন।
২. এবার কড়াইয়ে তেল দিয়ে পেঁয়াজ বাটা, রসুন বাটা, আদা বাটা, কাজু ও পোস্ত বাটা দিয়ে মসলা ভুনে বলগুলো দিন। সঙ্গে দই দিয়ে কষান। পানি দেওয়া যাবে না।
৩. ঘন হয়ে এলে কাঁচা মরিচ, ঘি, গরম মসলা গুঁড়া ও পেঁয়াজ বেরেস্তা দিয়ে নামিয়ে পরিবেশন করুন।

মাংস কষে যখন পানি কমে আসবে তখন ৬-৭টি মরিচ ফালি দিয়ে আর একটু কষাতে হবে। পুরোপুরি কষান হয়ে গেলে পরিমাণমত পানি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। মাংস হয়ে আসলে তাতে বেরেস্তা, বাকি মরিচ ফালি, টেস্টিং সল্ট ও চিনি দিয়ে নেড়ে আর দুই মিনিট রান্না করে চুলা নিবিয়ে দিতে হবে। এ অবস্থায় ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে আরো ১৫ মিনিট। এরপর পরিবেশনের জন্য তৈরি মজাদার মুরগির মাংসের সাদা ভুনা।

 

নৈশপ্রহরীর বিরুদ্ধে ছাত্রীর শ্লীলতাহানীর অভিযোগ ‘ভাঙ্গুড়া’


নারী সংবাদ


পাবনার ভাঙ্গুড়ায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরীর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় শ্রেণির একছাত্রীর শ্নীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার পার-ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের পাটুলীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী এক সন্তানের জনক মো. শরিফুল ইসলাম ওরফে তানজুর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে মীমাংসার জন্য ওই ছাত্রীর পরিবার ও নৈশপ্রহরীর পরিবারের মধ্যে কয়েক দফা দেনদরবারও হয়েছে বলে জানা গেছে।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কানিজ ফাতেমা মায়া জানান, গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রী সবার আগে বিদ্যালয়ে আসে। তখন নৈশপ্রহরী শরিফুল ইসলাম ওই ছাত্রীকে বেশ কয়েকটি শ্রেণিকক্ষের টেবিল পরিস্কার করতে বলে। এ সময় ছাত্রী তার কথামতো কয়েকটি টেবিল পরিস্কার করে। শেষে শ্রেণিকক্ষের পাশে একা পেয়ে শরিফুল তার শ্নীলতাহানির চেষ্টা করে। ছাত্রী ছাড়া পেয়ে শ্রেণিকক্ষ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় শরিফুল তার হাতে পাঁচ টাকা দিয়ে বিষয়টি কাউকে বলতে নিষেধ করে। কিন্তু সে বাড়িতে গিয়ে তার মাকে ঘটনার বিষয়ে খুলে বলে। তার মা বিদ্যালয়ে এসে শিক্ষকদের কাছে ঘটনা জানিয়ে এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।

এ নিয়ে বুধ ও বৃহস্পতিবার গোপনে দফায় দফায় চলে দেনদরবার। ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবদুল হাই বলেন, বিষয়টি শুনেছি এবং ওই ছাত্রীর পরিবারকে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে ওই বিদ্যালয়ের ক্লাস্টার এটিও সোলিম হোসেন জানান, বিষয়টি সম্পর্কে প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে তিনি মৌখিকভাবে শুনেছেন। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খ ম জাহাঙ্গীর জানান, লিখিত অভিযোগ পেলে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে ইউএনও মো. মাছুদুর রহমান জানান, বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সুত্রঃ সমকাল।

 

ওরা কেন এতো অভিমানী হয়ে উঠছে


ডা. কবীর জুয়েল


অরিত্রী আর ফিরে আসবে না, ওর জন্য আমাদের অফুরান ভালোবাসা রইলো,আমরা আর দ্বিতীয় কোন অরিত্রী-র এমন অকাল প্রস্থান চাইনে, তবে ——-
এ দায় কি শুধু শিক্ষকদের??????
আমাদের চিন্তার খোরাক আরো বিস্তৃত হওয়া উচিৎ—
১)অরিত্রী-রা কেন এতো অভিমানী হয়ে যাচ্ছে?
২)কেন এমন হঠকারিতা ওদের মনে বাসা বাঁধবে?
৩)কেন আড়ালে আবডালে থেকে ওরা নিজের মতো করে জীবন-কে পরিচালনা করছে?
৪)একটি টিন এজ মেয়ে কেন স্মার্ট ফোনাসক্ত হবে?
৫)একটি নামি দামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে-র ছাত্রী হয়ে কেন সে পরীক্ষায় অসদোপায় অবলম্বন করলো,তার পাঠদানে ও তা গ্রহণে কি কোন ঘাটতি ছিলো?
এ জন্য শিক্ষক,সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় ও সর্বোপরি
অভিভাবকদের কি ভূমিকা রয়েছে?
৬)বিদ্যালয়-কলেজ গুলোর পরিচালনা কমিটি গুলো কি যথার্থ যোগ্য সৎ লোক দিয়ে গঠিত হচ্ছে?
৭)আমাদের শিশু-কিশোর-কিশোরীদের বেড়ে ওঠা-র প্রকৃয়া-টি কতোটুকু বিজ্ঞানসম্মত? এ নিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রের করনীয় কি?
আরো বিস্তর সুদূর প্রসারী ভাবনা প্রয়োজন।
ঘটনা একটা ঘটে গেলে সবাই অনেক সমীকরন দাঁড় করাতে চেষ্টা করেন,নানা বক্তৃতা,বিবৃতি আসতে থাকে,
কিন্তু দুদিন পর পূর্বাপর অবস্থা বিরাজ করে,এজন্য-ই
অরিত্র বিষয়ক ঘটনাগুলো-র পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।
গত সপ্তাহে(১লা ডিসেম্বর’১৮) ফরাসী পার্লামেন্ট আইন করেছে, শিশু কিশোরী-দের ওপর পিতামাতা বা শিক্ষকরা মৃদূ নির্যাতন( Smacking)-ও করতে পারবেনা,এ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশে-ই বেশ কিছু কঠোর আইন রয়েছে যা শিশু-কিশোরদের বাসা ও বিদ্যালয়ে সম সামাজিক মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থাকে বটে,অতি উৎসাহীরা আমাদের দেশেও এমন আইনের প্রয়োগ চাইবে,মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার কোন দেশে আবার এমন আইন নেই,কারণ
এর উল্টো চিত্র-ও রয়েছে।
আমাদের এখনো আইন প্রনয়নের কথা ভাবার দরকার নেই,দু-একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা ব্যতীত আমাদের সমাজে অন্তত নিজ বাবা মা-কে নিরাপদ ভাবা-ই যায়।
আমাদের শিক্ষকরাও সহানুভূতিশীল,কিন্তু এহেন পরিস্থিতিতে কি করনীয়,এর ফলশ্রুতিতে (After Effect) কি হতে পারে তা কেবল মানসিক সাস্থ্য বিষয়ে
জ্ঞাত-রাই অগ্রিম অনুধাবন করতে পারে,এ ক্ষেত্রে হাই কোর্টের আদেশ-টি প্রনিধান যোগ্য, ছাত্র শিক্ষক সকলকে মানসিক সাস্থ্য সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে,প্রয়োজনে এমন পরিস্থিতিতে কাউন্সিলিং এর ব্যবস্থা ও চাপ নিবারণকারী ঔষধ দিতে হতে পারে।
সে বিষয়ে সকল শিক্ষক অবগত নাও থাকতে পারে,তাই শিক্ষকদের দিকে সমসরে অংগুলি নির্দেশ
আমাদের শিশুদের প্রতি স্কুল টিচার-দের নির্মোহ করে তুলবে,তারা ন্যুনতম শাসন করতেও কুন্ঠা বোধ করবে। আকাশ সংস্কৃতির বহুল প্রসার ও দ্রুত নগরায়নে অভিভাবকদের জীবন যাত্রায় ব্যস্ততা বেড়েছে এবং কিশোর কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালীন সমস্যা ( Adolescent Crisis)ও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাবা মায়ের সাথে সখ্যতা কমে যাওয়ায়,নিজ কক্ষে স্মার্টফোন কেন্দ্রীক জীবনাচারে ওরা অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে যা এই বয়সের সাভাবিক মনোবিকাশে বিরুপ প্রভাব ফেলছে,ওরা ক্রমশ আত্মকেন্দ্রিক ও আবেগপ্রবণ হয়ে উঠছে,সেই সাথে Observational learning -এর মাধ্যমে বহির্বিশ্বের অসামঞ্জস্য পূর্ণ
আচারে অভ্যস্ত হচ্ছে।
জীবনে পরাজয়ের গ্লানী সইবার ক্ষমতা অর্জন করতে শিখতে হবে,সময় সুযোগ এলে আবার বিজয়ী হয়ে সেই পরাজয়ের গ্লানি ঘুচাতে হবে।
ফ্রান্স কি আইন পাশ করলো, আমেরিকা কি বললো,
বৃটেন কি শিশুদের বিষয়ে কি উপদেশ দিলো, তা আমি পুরোপুরি মানতে নারাজ,ওদের সমাজ ব্যবস্থা ও আর্থ সামাজিক সংস্কৃতি পরিবেশ ওদের এগুলো করতে বাধ্য করছে, আমাদের বাবা মা আমদের Smacking করেছে,আমরা কি উচ্ছন্নে গেছি, মনে হয় এখনো যাইনি, যা হোক তবে Smacking(চাপড়ানো/প্রহার)-এর একটা মাত্রা থাকতে হবে, অহেতুক কারনে অকারণে বকা ঝকা, ছিদ্রান্নেসী হয়ে বাচ্চাকে বা ছাত্র-ছাত্রীকে প্রতিপক্ষ ভাবা কক্ষনো ভালো ফল দেবেনা, নিজের রুটিন একটু বদলে নিন ‘বাচর্চা’ করুন, শব্দটি নতুন মনে হচ্ছে তাই-না আসলে আমি বোঝাতে চাচ্ছি নিজের ঔরসজাত বাচ্চাকে নিয়ে একটু চর্চা করুন, ওকে নিয়ে বাদাম চিবোতে চিবোতে পার্কে বৈকালীক ভ্রমন কাম ব্যায়ামটা সেরে ফেলুন, ওকে নিয়ে তানপুরায় নতুন সুর তুলুন,ওকে নিয়ে শখের সপিংটা সেরে আসতে পারেন। লক্ষ্য রাখুন-কোন ভাবেই সে যেন ঘরকুনো হয়ে ‘Device Centric’ না হয়ে ওঠে।
আর শিক্ষকদের জন্য পরামর্শ একই – আমাদের সন্তান , আপনাদের হাতে সঁপে দিয়ে আমরা নিশ্চিন্তে থাকতে চাই, আমদের সন্তানকে আপনার অনুগত
শিষ্য করে বন্ধু করে নিন,ওর কষ্ট, দুঃখ গুলো বোঝার চেষ্টা করুন, আমাদের জানান। একজন দরদি শিক্ষক অনেক আপন হতে পারেন, আমি নিজে দেশে বিদেশে শিক্ষকতা করে এতোটুকু অন্তত বুঝতে পেরেছি,ওরা বাবা মা-এর সাথে যা আলোচনা করতে দিধা করে তা আমাদের সাথে নি:সংকোচে করে থাকে,হয়তো একজন মনোবিদ হওয়াতে আমার এ ব্যাপারে অভিজ্ঞতা একটু বেশী,তবে একজন সহানুভূতিশীল শিক্ষক ( Empathic Teacher) হলে আপনিও অরিত্রীদের আরো আপন করে নিয়ে হদয়ের ক্ষতগুলো
মুছে দিতে পারবেন,তাহলে কোন অরিত্রী-ই আর আমদের ফাঁকি দিয়ে এভাবে চলে যেতে চাইবে না।

 

একদিন তো চলে যাব, পরের ঘরনী হব – ২


রেহনুমা বিনত আনিস


এমন কেন হয়? এর কয়েকটি কারণ চোখে পড়ে। আবারও বলছি, আমি কেবল শিক্ষিত শ্রেণীর কথাই বলছি এবং খুব মোটা দাগে আলোচনা করছি।

১/ স্ত্রীর ত্রুটি – বাবামায়ের আদরে আহ্লাদে বেড়ে ওঠা একটি মেয়ে প্রায়ই বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে অবস্থান করে। ফলে সে একটি নতুন পরিবেশে এসে নতুন নিয়মনীতি বুঝে উঠতে অনেক সময় নিতে পারে। এর মাঝে ঘটতে পারে নানান ত্রুটিবিচ্যূতি। দক্ষতার অভাব থাকতে পারে, থাকতে পারে অভিজ্ঞতার অভাব। পরিপক্কতার অভাবে কথাবার্তায় বেহিসাবী হতে পারে, হতে পারে আহ্লাদী কিংবা অভিযোগপ্রবণ। যত্নের মাঝে বড় হওয়া মেয়েটি অতিরিক্ত কাজের চাপে হিমসিম খেতে পারে, সব দিক সামলে ওঠা কঠিন হতে পারে। সন্তান নিয়ে রাত জাগা, খাওয়া ঘুমের অভাবে, কিংবা শারীরিক অসুস্থতার অভাবে হতে পারে খিটখিটে। কিন্তু যত কিছুই হোক, না থাকুক তার প্রতি ভালোবাসা, অন্তত মানবিকতার খাতিরে কি তার সাথে উপরোক্ত আচরণ করা যায়? অপরদিকে টেলিভিশনের কল্যাণে আমাদের নারীজাতির মাঝে জ্ঞানতৃষ্ণা এমনভাবে হ্রাস পাচ্ছে যে তারা নিজেদের মূল্যায়ন করার কোন উপায়ই রাখছেনা। ভালো পোষাক, ভালো সজ্জা সবই বাইরের জন্য বরাদ্দ। অথচ ঘরের পুরুষটি তাকে অরিজিনাল রূপেই দেখে। তবে এই সজ্জা কার জন্য? বরং একটি মেয়ের নিজেকে এমনভাবে গড়ে তোলাই বাঞ্ছনীয় যাতে তার স্বামী তাকে সম্মান করতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়।

২/ স্বামীর ত্রুটি – অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছেলেরা বিয়ে করার জন্য উদগ্রীব থাকে কিন্তু প্রস্তুত থাকেনা। ‘বিয়ে’ শব্দটি শোনার সাথে সাথে তারা টেকনিকালারে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে মেয়েটি দেখতে কতখানি সুন্দরী হবে, সে কতখানি বাধ্য অনুগত হবে, সে কি কি রান্না করে খাওয়াবে, সে ত্যাগের মহিমায় কতখানি উদ্বুদ্ধ হবে। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দু’টি জিনিস তাদের মাথায়ই আসেনা। রক্তমাংসে গড়া মেয়েটি যখন তার জীবনে পদার্পণ করবে সে ঠিক স্বপ্নের মেয়েটির মত হবেনা – সে সারাক্ষণ সেজেগুজে বসে থাকলে ঘরের কাজকর্ম করবে কে? সে সারাক্ষণ স্বামীর সাথে বসে গল্প করলে বাকীদের প্রতি দায়িত্ব পালন হবে কিভাবে? এসব কাজ করতে গিয়ে তার ঘাম হবে, চেহারা চুলে ক্লান্তির ছাপ পড়বে, মেজাজ খিটখিটে হবে, মাঝে মাঝে সে অসুস্থ হবে। কিন্তু এই বাস্তবতার জন্য স্বামীটি প্রস্তুত থাকেনা মোটেই। ফলে এক সময় সেই কাঙ্খিত স্ত্রীটিকে স্বামীটির আর ভালো লাগেনা। অথচ এই সমস্ত কিছু মেয়েটি করে তার স্বামীর জন্যই! অপরদিকে পুরুষরা ভুলে যায় তারা সমাজ সংসার এবং বিশ্বাসী হলে তাদের প্রভুকে সাক্ষী রেখে মেয়েটির দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। সুতরাং, ভালোমন্দ সর্বাবস্থায় মেয়েটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তাদের। এই দায়িত্বটিকে নেহাৎ ছেলেখেলা হিসেবে দেখার কোন উপায় নেই। বিয়ে মানে শুধু নিজের চাহিদা এবং প্রাপ্তির হিসেব করা নয়, অপরের চাহিদা এবং প্রাপ্তির হিসেব কষাও বিয়ের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত।

৩/ জবাবদিহিতার অনুভূতির অভাব – আল্লাহ স্বামীস্ত্রীর সম্পর্কটিকে পোশাকের সাথে তুলনা করেছেন। পোশাক যেমন আমাদের বাইরের আবহাওয়ার বৈরীতা থেকে সংরক্ষণ করে, এই দুইজন সঙ্গী পরস্পরকে সকলপ্রকার অন্যায়, অনাচার, অবিচার, বিপদাপদ, স্খলন কিংবা সমালোচনা থেকে দূরে রাখবে; পরস্পরকে সুন্দর এবং সত্যের পথে অগ্রসর হতে সহযোগিতা করবে; দু’জনে মিলে একটি সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করবে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য। আল্লাহ পুরুষদের তাদের গৃহস্থিত নারীদের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিযুক্ত করেছেন। কিন্তু স্বামী যদি নিজেই আক্রমনকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হোন তখন কেবল স্ত্রীর জন্যই নয়, সন্তানদের জন্যও একটি আতঙ্কজনক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বর্তমানে এই ধরনের পুরুষদের সংখ্যাধিক্য কয়েকটি ইঙ্গিত বহন করে। প্রথমত, এটি আমাদের প্রভুর সামনে আমাদের জবাবদিহিতার সম্পর্কে ধারণার অভাব অথবা অসচেতনতা প্রকাশ করে। নারীরা যা করে তার জন্য নারীরা জবাবদিহি করবে, কিন্তু পুরুষরা যা করবে অথবা করতে ব্যার্থ হবে তার জন্য জবাবদিহি করতে হবে তাদেরই। দ্বিতীয়ত, আমরা ভুলে যাচ্ছি, আমাদের সবচেয়ে কাছের মানুষরাই জানেন আমরা প্রকৃতপক্ষে কতখানি ভালো বা মন্দ, আল্লাহ আখিরাতে এদের কাছেই সাক্ষ্য নেবেন আমাদের ব্যাপারে; সুতরাং ফেসবুকে কিংবা অনুষ্ঠানে কিংবা দাওয়াতে কেউ আমাদের কথা শুনে আমাদের ব্যাপারে কি ভাবল তাতে কিছু যায় আসেনা, আমি যখন বাসায় ফিরি তখন আমাকে দেখে আমার স্ত্রী পুত্র কন্যা খুশি হয় না আতঙ্কিত হয় সেটাই আমার পরিচয়। তৃতীয়ত, আমাদের জ্ঞানের অভাব আমাদের মাঝে এমন এক শ্রেনীর সৃষ্টি করছে যারা পোশাকী আচরণ সম্পর্কে যতখানি সচেতন, ভেতরকার পবিত্রতা সম্পর্কে ততখানি সচেতন নন। একসময় পারিবারিক এবং সামাজিক বন্ধনগুলো এমন ছিলো যে স্বামীস্ত্রীর মাঝে সমস্যা দেখলে আত্মীয়পরিজন বন্ধুবান্ধবরা হস্তক্ষেপ করে এর সমাধান করে দিতেন। বর্তমান যুগে ‘প্রাইভেসী’ এবং ‘পার্সোনাল’ জাতীয় কতগুলো শব্দ, যেগুলোর অর্থ সম্পর্কে প্রকৃতপক্ষে ব্যাক্তির নিজের ধারণাও খুব একটা স্পষ্ট নয়, ব্যাক্তির স্বেচ্ছাচারীতাকে দিয়ে দিচ্ছে সীমাহীন স্বাধীনতা। ঐশী জবাবদিহিতার পাশাপাশি সামাজিক জবাবদিহিতার ধারণাটিও হয়ে যাচ্ছে বিলুপ্ত।

তবে সব কথারই একটা শেষ কথা থাকে। একটু ধৈর্য্য ধরে শেষ কথাটি শুনুন। আমার মা এক অসাধারন সুন্দরী মহিলা যার মনে আজীবন দুঃখ তার মেয়েটি কিভাবে দেখতে এত খারাপ হোল। মাদ্রাজে আমাদের প্রতিবেশীনি এক প্রফেসর ছিলেন, অসাধারন এক ভালোমানুষ, কিন্তু দেখতে আমার মায়ের ভাষায় ‘গোরিলার মত’। এই কথা শুনে বাবা ভীষণ রাগ করল, ‘আমার মেয়ে দেখতে যেমনই হোক, আমার চোখে সে রাজকন্যা। তিনিও তাঁর বাবামায়ের চোখে রাজকন্যা। তাঁর অসাধারন সুপুরুষ ডাক্তার স্বামী যেমন তাঁকে নিয়ে সুখে সংসার করছেন, আমি চাই কোন একদিন আমার মেয়েটিরও এমন এক স্বামী হবে যে তাকে মূল্যায়ন করবে, মর্যাদা দেবে’।

ভেবে দেখুন, আপনার কাছেও আপনার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ আপনার মেয়েটি যে একটু আদর পাবার জন্য কাতর হয়, একটু ভালোবাসা পাবার জন্য আপনার ঘরটিকে জান্নাত বানিয়ে রাখে এবং যে আদতেই হবে আপনার জান্নাতে যাবার উসিলা। ভাবুন তো আপনার এই মেয়েটিকে কেউ কথায় কষ্ট দিচ্ছে কিংবা অত্যাচার করছে! আমার তো লিখতে গিয়েই আমার মেয়ের কথা ভেবে দু’চোখে নদী প্রবাহিত হচ্ছে! আপনি আজ আপনার স্ত্রীর সাথে যে আচরণ করছেন সেটি সযত্নে সংরক্ষিত হচ্ছে এমন এক খাতায়, পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেলেও যে খাতার অস্তিত্ব বিলীন হবেনা। সে কথা পরে হবে। কিন্তু আপনার স্ত্রীর সাথে আপনার আজকের আচরন যদি আপনার প্রভু আপনার প্রানাধিক প্রিয় কন্যার জীবনে প্রতিফলিত করেন, আপনি সহ্য করতে পারবেন তো? পারবেন না, কিছুতেই পারবেন না। সেদিনের কথা ভেবে, আগামীবার যখন স্ত্রীর কোন কথায় কিংবা আচরনে ধৈর্য্যহারা হয়ে যাবেন, তখন আপনার প্রভুর বিচারকে ভয় করুন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহন করুন। মানুষের সামনে ভালো হবার পরিবর্তে আপনার প্রভুর সামনে উত্তম চরিত্রের পরিচয় উপস্থাপন করুন। আপনার সংসারটিকে পরিণত করা অথবা তাতে আগুন জ্বালানোর সিদ্ধান্ত আপনারই হাতে।

পর্ব-১

 

সচেতনতায় কমছে কর্মক্ষেত্রে নারীর যৌন হয়রানি


নারী সংবাদ


সাভারের এক জুতার কারখানায় কাজ নেয় একুশ বছর বয়সী রুমা আক্তার। মূলত সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা মারা যাওয়ার পর পাঁচ সদস্যের পরিবারে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। তাই পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে পড়ালেখার ইতি টেনে হাল ধরতে হয় সংসারের। কাজ শুরুর দুই মাসের মাথায় তার সেকশনের ম্যানেজার বারবার কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার নাম করে রুমাকে রুমে ডেকে নিয়ে যেত। প্রথম প্রথম ভালো আচরণ করলেও পরে নানা ধরনের প্রস্তাব দিতে থাকে ম্যানেজার। প্রথম কয়েকদিন মুখ বুঁজে সহ্য করলেও এক সময় প্রতিবাদ করে বসেন রুমা। সরাসরি ফ্লোর লিডারকে জানায় ঘটনা। ফ্লোর লিডার জানায় কারখানার জেনারেল ম্যানেজারকে। দু’দিনের আল্টিমেটাম দেন তিনি। দু’দিনের মধ্যে যদি ব্যবস্থা না নেয় তবে কাজ বন্ধ করে রাস্তায় অবরোধের পাশাপাশি আদালতে মামলা করারও হুমকি দেন ফ্লোর লিডার তাহমিনা হক।
অবস্থা বেগতিক দেখে পরদিনই কারখানার পক্ষ থেকে গঠন করা হয় তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে চাকরি হারায় ওই ম্যানেজার।
তবে দেশের সব কারখানার সকল নারী কর্মীরা রুমার মত অত সাহসী নয়। মুখ বুঁজে সহ্য করেন পুরুষ সহকর্মীদের নির্যাতন। অনেকে আবার সহ্য করতে না পেরে চাকরিও ছেড়ে দেন।
সুমাইয়া তাদের মতই একজন নারী। কাজ করেন নারায়ণগঞ্জ শিল্প এলাকার একটি পোশাক কারখানায়। কাজ শুরু করার এক বছর পর তার সেকশনের ম্যানেজার হিসেবে নতুন চাকরিতে যোগ দেন এক পুরুষ। নাম মো. জুবায়ের। একমাসের মাথায় নজর পড়ে সুমাইয়ার উপর। এরপর থেকেই স্বামী পরিত্যাক্তা সুমাইয়াকে নানা ইঙ্গিত দিতে থাকে জুবায়ের। কাজে-অকাজে রুমে ডেকে নিয়ে যাওয়া ছিল তার নিত্যদিনের কাজ। প্রথম প্রথম বুঝতে না পারলেও পরে কৌশলে এড়িয়ে যেতে থাকেন সুমাইয়া। কিন্তু তারপরও পিছু ছাড়েনি জুবায়ের।
সুমাইয়া বলেন, অনেকবার ভেবেছি চাকরি ছেড়ে দিব। আর তখনই আমার দুই সন্তানের মুখ ভেসে উঠে চোখে। এই কারখানায় বেতন একটু বেশি আর নিয়মিত তা পাওয়া যায়। ফলে চাকরিও ছাড়তে পারছি না। তাই মুখ বুজে এখানে পড়ে আছি।
শ্রমিক নেতা সোহেলুর রহমান বলেন, প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি করার নির্দেশনা রয়েছে আদালতের। কিন্তু অনেক কারখানা তা মানছে না। আবার মালিক পক্ষ এসব দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। তাই অধিকাংশ কারখানায় নারী নির্যাতন নিয়মিত ঘটনা ছিল একসময়। তবে এখন পরিস্থিতি অনেকটা পাল্টে গেছে।
এখন অনেক নারী শ্রমিক নিজেরাই প্রতিবাদ করেন। তাদের প্রতিবাদের কারণে অনেক পুরুষ কর্মীর চাকরি চলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে বর্তমান সময়ে। যা আজ থেকে ১০-১৫ বছর আগে ভাবাই যেত না।
কর্মজীবী নারী’র করা ‘এস্টেট অব রাইটস ইমপ্লিমেন্টেশন অব উইম্যান রেডিমেড গার্মেন্টস ওয়াকার্স’ শীর্ষক এক গবেষণা থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের পোশাক তৈরি কারখানাগুলোতে শতকরা ১৩ শতাংশ নারী যৌন হয়রানির শিকার।
মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট মনোয়ারা বলেন, কারখানাগুলো যদি আদালতের দেওয়া গাইডলাইন মেনে চলত তবে যৌন হয়রানী অনেকাংশে কমে যেত। কিন্তু এখনও পর্যন্ত অনেক কারখানা এই গাইডলাইন মেনে চলে না। আবার অনেকে এ বিষয়ে কিছু জানেও না। তিনি আদালতের এই গাইডলাইন মেনে চলার জন্য এবং এ বিষয়ে কারখানার মালিকদের জানানোর জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটির করার দাবী জানান। এই কমিটি সম্পূর্ণ বিষয়টি মনিটর করবে। যদি কোন কারখানা এই গাইডলাইন না মানে তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবী জানান এডভোকেট মনোয়ারা। সুত্র: বাসস

 

একদিন তো চলে যাব, পরের ঘরনী হব -১


রেহনুমা বিনত আনিস


ছোটবেলায় টিভিতে একটা গান প্রায়ই শুনতে পেতামঃ
একদিন তো চলে যাব, পরের ঘরনী হব,
আঁচলে বাঁধতে পারবিনা।
ও মা তোর পায়ে পড়ি, দুষ্টুমী যদি করি,
কখনো মা তুই রাগ করিসনা, মা তুই রাগ করিসনা!
তখন গানটার মর্ম বুঝতাম না। মনে হত একটি মেয়ে মায়ের আঁচলের ছায়াতলে থেকেও মায়ের রাগের ভয়ে এত কাতর হবে কেন? মেয়েরা কেন এতটা আবেগপ্রবণ? ওরা কেন বোঝেনা এই আবেগ তাদের কতখানি দুর্বল করে ফেলে, ভীত করে রাখে?
এখন বয়স বেড়েছে, আজকাল প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ অভিজ্ঞতার ঝুলিটার ভারও কিছুটা অনুভব করি। ইদানিং একটি সমস্যা প্রায়ই আমার কাছে আসছে যেটি নিয়ে কেউ প্রকাশ্যে কথা বলতে চায়না, লোকলজ্জার ভয়ে। অথচ লজ্জা যাদের পাওয়া উচিত তারা সমাজে ভদ্রলোক হিসাবে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ান। এই সমস্যা দেশী বিদেশী, মুসলিম অমুসলিম, নামাজী বেনামাজী অনিয়মিত, বিবাহিত প্রাক্তন-বিবাহিত অবিবাহিত সকল শ্রেনীর মাঝেই দেখা যায়। সমস্যাটা মূলত মানবিকতার বিপর্যয়ের ফল। কিন্তু সমস্যাটা জাবাবদিহিতার অভাবের ফসলও বটে।
সময়ের পরিক্রমায় বাবামায়ের আদরে আহ্লাদে লালিত পালিত কন্যাটি এক সময় তাদের ছেড়ে ‘পরের’ ঘরনী হয়। হৃত স্বজনদের স্থলে ‘পর’কে আপন করে নেয়ার সংকল্প নিয়ে অগ্রসর হয়। অনেক সময়ই এই ‘পর’রা আপন হতে নারাজ থাকেন। কিন্তু যে মানুষটাকে কেন্দ্র করে এই প্রচেষ্টা, সে যখন মেয়েটিকে মূল্যায়ন করেনা, তাকে বোঝার চেষ্টা করেনা, এমনকি তাকে কষ্ট দিতেও কুণ্ঠিত হয়না তখন মেয়েটির আসলেই মনে হয়, ‘হে ধরণী, তুমি দ্বিধা হও, আমি তোমাতে প্রবেশ করি’।
যে সমস্যাগুলো কানে আসছে বা চোখে দেখেছি সেগুলো খুব মোটা দাগে নিম্নরূপ, অবিশ্বাস্য হলেও সত্য আমি এখানে মূলত শিক্ষিত শ্রেণীর কথা বলছিঃ

১/ গালি

যে মেয়েটি স্ত্রী হয়ে আসে সে তো আর ফেরেস্তা নয়! মানুষ হিসেবে তার দোষত্রুটি রয়েছে, স্বামীর মেজাজ খারাপ হতেই পারে, সে অবস্থায় ধৈর্য্য হারিয়ে বকা দেয়াটাও অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু গালি দেয়া, যে গালি শুরুই হয় ‘বেশ্যা’ অর্থসূচক শব্দাবলী দিয়ে! যে মেয়েটি বাবামায়ের কাছে রাজকন্যার মর্যাদা পেয়ে বড় হয়েছে, পেয়েছে সর্বোচ্চ শিক্ষা এবং আদবকায়দার প্রশিক্ষণ, তার কাছে এই শব্দগুলো শোনা মৃত্যুর চাইতেও কঠিন যন্ত্রণাদায়ক। কিন্তু তার চেয়েও বড় প্রশ্ন এই ধরণের শব্দ প্রয়োগের মাধ্যমে স্বামীরা কি ধরণের রুচিবোধের পরিচয় দিচ্ছেন? তারা মর্যাদা চান, কিন্তু মর্যাদা দিতে নারাজ। স্ত্রীকে হেয় প্রতিপন্ন করতে গিয়ে তারা নিজেরা যে স্ত্রীর দৃষ্টিতে নিজেদের কোথায় নামিয়ে নিচ্ছেন তা কি তারা ভেবে দেখেন না?

২/ অশালীন মন্তব্য

স্ত্রীর ওপর অসন্তুষ্টির বহিঃপ্রকাশ ঘটে তাকে এবং তার পরিবারকে নিয়ে নানারকম অশালীন মন্তব্যের মাধ্যমে। এর মধ্যে স্ত্রীর চেহারা সুরত, স্বভাব, আচরণ, চরিত্র, কর্মপদ্ধতি কোনকিছুরই সমালোচনা বাদ পড়েনা। সময় সময় এই সমালোচনা তার পরিবার পর্যন্ত গড়ায়। অধিকাংশ মেয়েরা এর প্রতিবাদ পর্যন্ত করার সাহস পায়না। কারণ তখন এর সাথে যোগ হবে প্রথম কিংবা তৃতীয় সমস্যাটি। একজন স্বামী যদি স্ত্রীর দোষত্রুটি উদ্ঘাটন করতে শুরু করেন, মানুষ হিসেবে তার পরিপূর্ণতার অভাবকে মেনে নিতে নারাজ হোন, এই কারণে মেয়েটির পরিবারকে দায়ী করেন তখন স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে – তিনি নিজে কি ত্রুটিমুক্ত, নিখুঁত? যে স্ত্রীকে তিনি ‘লিবাস’ হয়ে রক্ষা করার ওয়াদা দিয়ে বিয়ে করে এনেছেন, যে মেয়েটি তাকে বিশ্বাস করে নিজের ঘর ছেড়ে এসেছে, তাকে যখন স্বামী খোলা বাজারের পণ্যের মত সমালোচনা করেন তখন প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক, তার ত্রুটিবিচ্যূতি বিশ্লেষণ করতে বসলে তার অবস্থান কোথায় পাওয়া যাবে?

৩/ গায় হাত উঠানো

যাকে মেয়েটির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিশ্বস্ত মনে করে বাবামা তাদের মমতার ছায়ায় বেড়ে ওঠা কন্যাকে অর্পন করেন, তাকে যখন রক্ষক নিজেই আক্রমন করে বসে তখন মেয়েটি কোথায় যাবে, কি করবে বলতে পারেন? বিশেষ করে শিক্ষিত পরিবারের মেয়েরা এতটা মায়াময় পরিবেশে বড় হয় যেখানে বাবামা তাদের গায় ফুলের টোকাটিও লাগতে দেন না। সেখান থেকে এসে, যার জন্য আসা, তার কাছে এমন আচরণ পেয়ে মেয়েটির কাছে জীবন যে কি পরিমাণ বিষাক্ত মনে হয় বলাই বাহুল্য।

৪/  স্ত্রীর সুবিধা অসুবিধা না বোঝা

উপরোক্ত স্বামীরা সমাজে আশ্চর্যরকম শিক্ষিত, ভদ্র, শালীন, সামাজিক, সংবেদশীল, সাহায্যপরায়ন এবং অসংখ্য গুনের আধার হিসেবে পরিচিত। এদের মাঝে নারীজাতির প্রতি সম্মানবোধ এবং সহানুভূতি প্রবল। এমনকি সিনেমার নায়িকার কল্পিত দুঃখ দেখে তাদের দু’চোখ বেয়ে জলের ধারা নেমে আসে। কিন্তু নিজের ঘরের রানী করে আনা মেয়েটির প্রতি তাদের সহানুভূতির অদ্ভুতরকম অভাব। যে মেয়েটি তার পরিবার পরিজন ফেলে এসে স্বামীর পরিবার পরিজনের পরিচর্যা করে, তার সংসার সাজায়, তার সন্তান ধারণ করে, তার সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ করে, তার সন্তানদের প্রতিপালন করে, তার ক্লান্তি, অসুস্থতা, দুঃখ বেদনা কিছুই স্বামীটিকে স্পর্শ করেনা! তিনি যা পান তা নিজের অধিকার মনে করেন, তাতে কোন একদিন কিছু একটা ঘাটতি হলে অভিযোগ করেন, মেজাজ খারাপ হলে প্রথম তিনটির যেকোন একটি বা কয়েকটির অবতারণা ঘটে – অথচ তিনি কখনোই ভেবে দেখেন না তার কি পরিমাণ ত্রুটি বিচ্যুতি অভাব অভিযোগকে সঙ্গী করে মেয়েটি তার সাথে সংসার করে যাচ্ছে। প্রায়ই স্বামীরা অন্যের স্ত্রীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে থাকেন, সাথে নিজের স্ত্রীর সমালোচনা। অথচ সেই ভদ্রমহিলার স্বামীর কি অবস্থা তা তিনিই জানেন!

চলবে….

 

রাজধানীতে বাসের ধাক্কায় নারী চিকিৎসক নিহত


নারী সংবাদ


রাজধানীর বিজয় সরণি মোড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় আক্তার জাহান রুমা (২৮) নামে এক নারী চিকিৎসক নিহত হয়েছেন। গতকাল ভোর ৫টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে। ভোর সোয়া ৫টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, নিহত আক্তার জাহান চট্টগ্রামের হালিশর এলাকার বাসিন্দা। তার বাবার নাম আক্তারুজ্জামান। তিনি চট্টগ্রাম ওসমানীনগরে একটি চু হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন।

জানা গেছে, রাজধানীর একটি চু হাসপাতালে পরীক্ষা দেয়ার জন্য চট্টগ্রাম থেকে এসেছিলেন আক্তার জাহান রুমা।

গতকাল সকালে মহাখালী থেকে সিএনজি অটোরিকশায় চড়ে ফার্মগেটের দিকে যাচ্ছিলেন তিনি। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বাস সিএনজিকে ধাক্কা দিলে সেটি রাস্তায় উল্টে পড়ে। এ ঘটনায় নারী চিকিৎসক আক্তার জাহান গুরুতর আহত হন। আশপাশের লোকজন এ সময় ওই নারী চিকিৎসককে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পরে তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় সিএনজি চালকও আহত হয়েছেন। তাকে স্থানীয় একটি হসপিটালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। সুত্র: নয়াদিগন্ত

 

নারীর অধিকারে যত আইন


নারীর জন্য আইন


রাষ্ট্রে নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে কোনো রূপ বৈষম্য নেই। আইনের দৃষ্টিতে সব নাগরিক সমান অধিকারী। প্রতিটি রাষ্ট্রে তাদের নিজস্ব আইন রয়েছে।
তবুও অনেক আইন থাকা সত্ত্বেও এখনো অনেক নারী বঞ্চিত ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। অধিকার আদায়ে প্রতিনিয়ত লড়াই করছেন নারীরা।

আশির দশকের নারী আইন:
নারী নির্যাতন বন্ধে আইন প্রণয়নের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আশির দশকের শুরুর দিকে বিশেষ আইন প্রণয়ন করা হয়। নারী ও শিশু নির্যাতন আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় তা দমনে ১৯৮৩ সালে এ আইন প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু নারী নির্যাতন বন্ধে এ আইন খুব বেশি কার্যকর হচ্ছিল না।

নম্বই দশকের নারী আইন:
আশির দশকের আইনে কাজ না হওয়ায় আরো কঠোর আইন তৈরির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। পরে ১৯৯৫ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন আইন পাস করা হয়। এ আইন পাসের পর নারী নির্যাতন কিছুটা বন্ধ হয়।

বিংশ শতকের নারীর আইন:
তবে পরে আইনটি বাতিলক্রমে ২০০০ সালে নতুন করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন প্রণয়ন করা হয়। আইনটিকে আরো শক্তিশালী করতে ২০০৩ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন প্রণয়ন করা হয়। এছাড়া এসিড-সন্ত্রাস দমন আইন ২০০২ ও যৌতুক নিষিদ্ধকরণ আইন ১৯৮০, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন ২০১০ প্রভৃতি আইন রয়েছে।
এ ছাড়া নারীনীতিসহ কিছু নীতি ও আইন আছে, যেখানে পরোক্ষভাবে নারীর অধিকার ও স্বার্থকে রক্ষা করা হয়েছে।

দেশে প্রথমবার নারীনীতি আইন প্রণয়ন করা হয় ১৯৯৭ সালে, এরপর ২০০৪ ও ২০০৮ সালে তা সংশোধন করা হয়। সর্বশেষ ২০১১ সালে পুনরায় নারীনীতি প্রণয়ন করা হয়।

নারীর তালাকের বিধান:
এ ছাড়া পুরুষকে তালাক দেওয়ার ক্ষেত্রে আইন না থাকলেও মুসলিম পারিবারিক আইন ১৯৬১ মোতাবেক নারীদের বিবাহবিচ্ছেদেরও অধিকার দেওয়া হয়। পারিবারিক আইনে নারীর অধিকার স্বীকৃত হয়েছে। কিন্তু সামাজিকভাবে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি না থাকায় নারী তার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সংবিধান এবং আইনে থাকলেও নারীর প্রতি বৈষম্য বিরাজ করছে সমাজের সর্বক্ষেত্রেই।

নারীর অধিকার বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় বাধা হলো পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মানুষের মানসিকতা। পুরুষদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে পারলে সমাজে নারীদের অধিকার সহজেই প্রতিষ্ঠা পাবে।

 

ভিকারুন নেসা নূন স্কুলের ছাত্রীর আত্মহত্যা


নারী সংবাদ


ভিকারুন নিসা নূন অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণীর ছাত্রী অরিত্রি অধিকারী (১৫) আত্মহত্যা করেছেন। গতকাল দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
নিহতের পরিবারের অভিযোগ, মেয়ের সামনে তার বাবা ও মাকে স্কুলশিক্ষক বকাঝকা করার কারণেই অরিত্রি আত্মহত্যা করেছে।
অরিত্রির বাবা দিলীপ অধিকারী জানান, তিনি পরিবার নিয়ে শান্তিনগর এলাকার একটি বাসার সাত তলায় ভাড়া থাকেন। তাদের গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদরে। তিনি বলেন, গতকাল সকালে পরীক্ষা দেয়ার জন্য স্কুলে যায় অরিত্রি। কিন্তু তাকে পরীক্ষায় অংশ নিতে দেননি স্কুল কর্তৃপক্ষ। এই অবস্থায় স্কুলকর্তৃপক্ষ অরিত্রির বাবা মাকে স্কুলে যেতে বলেন। খবর পেয়ে বাবা মা দুজনই স্কুলে যায়। তখন স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের জানিয়ে দেয়, অরিত্রি পরীক্ষায় মোবাইল দিয়ে নকল করছিল। তাকে স্কুল থেকে টিসি দেয়া হয়েছে। তখন অরিত্রির বাবা মা স্কুলের শিক্ষকদের কাছে অনেক অনুরোধ করেন তাকে টিসি না দেযার জন্য। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাদের কথা না শুনে অরিত্রিকে স্কুলে রাখা যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়।
অরিত্রির বাবার আরো জানান, স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে আমি বাসায় চলে আসি। তাদেরকে বাসায় রেখে বিভিন্ন জায়গায় ফোন করে তদবির শুরু করি। হঠাৎ বাসা থেকে ফোন আসে, অরিত্রি ঘরের দরজা খুলছে না। পরে দরজা ভেঙে তাকে ফ্যানের সাথে ওড়না দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নেয়া হলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত অরিত্রির বাবার অভিযোগ অরিত্রিকে যদি টিসি না দিয়ে আরেকবার সুযোগ দেয়া হতো তাহলে হয়তো তার মেয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতো না। মেয়ের সামনে তাকে ও তার স্ত্রীকে অকথ্য ভাষায় বকাবকি করেন শিক্ষক। তা হয়তো মেয়ে সহ্য করতে পারেনি। এসব তথ্য জানান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সাব ইন্সপেক্টর বাচ্চু মিয়া।
সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

“আর নয় হতাশা”


নিশাত জাহান নিশা


কেন যেন দিন দিন হতাশা বেরেই যাচ্ছে, জীবনের সব প্রাপ্তি কেন জানি বিস্বাদ লাগে। আপনি হতাশায় আছেন এর কারণ এই না যে আপনার অনেক দুঃখ আছে। এর কারণ হল আপনি নিজেকে একজন দুঃখী মানুষ ভাবছেন। আপনি আসলে আপনার ব্রেইনে বিষয় বা ঘটনা গুলো এভাবেই প্রোগ্রামিং করে রেখেছেন।
মনোবিজ্ঞানীরা বলছে, আমাদের আবেগ ও আচরণের ধরন নির্ধারিত হয়, জীবন সম্পর্কে কী ধরণের চিন্তা আমরা মনের ভেতরে গড়ে তুলেছি সেটার উপর। (এটা কে schema বলে)

যে ঘটনা আপনার সাথে ঘটে গেছে একই ঘটনা ঘটে যাওয়া আরেকজন মানুষকে দেখবেন তার reaction or response দুটো’ই ভিন্ন কেননা সেই মানুষটি অন্যভাবে সব কিছু তার ব্রেইনে প্রোগ্রামিং করেছেন, তার schema ভিন্ন।

আপনি যতবেশি বিষণ্ণতায় ডুবে যাচ্ছেন ততবেশি নেতিবাচক চিন্তা স্বয়ংক্রিয় ভাবে আপনার মস্তিস্কের ভেতরে ঘুরপাক খেতে থাকবে। একটি সময় বিষয় গুলো আপনি বিশ্বাস করতে শুরু করবেন এবং আরও বেশি বিষণ্ণতায় ডুবে যাবেন।
আর তখন আপনি চাইলেই সব কিছু ইতিবাচক ভাবে ভাবতে পারছেন না কেননা ততক্ষনে আপনার চারপাশ সম্পর্কে, নিজের অথবা নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আপনার Negative Core Belief তৈরি হয়ে গিয়েছে। তখন আপনার ব্রেইনে কতগুলো Irrational Belief যা কিনা chain আকারে আপনাকে সব কিছুতে ই নেতিবাচক অনুভূতি দিবে, সুখের স্বাদ ভুলিয়ে দিবে, সব কিছুই দুঃখকর/ হতাশা আর বিষণ্ণ লাগবে।

তাই প্রথমেই নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর চেষ্টা করুন। বেশিরভাগ মানুষ আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে অন্যদের বিশ্বাসের কথা চিন্তা করে। অন্যদের চিন্তা বাদ দিয়ে নিজের positive দিক গুলো র প্রতি আলোকপাত করুন, confidence বাড়বে; নিজের achievement গুলো কে count করুন Self Esteem boost up হবে।

মনে রাখবেন, আপনি জীবনে সুখি হবেন না দুঃখি হবেন এই responsibility আপনার নিজের’ই নিতে হবে।

আমাদের জীবনের স্বপ্ন কী , জানতে চাইলে অনায়শে কত কথা বলি কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য আমরা কী কী করেছি , জানতে চাইলে আমরা চুপ করে থাকছি। ব্যাপারটি কী পরস্পর বিরোধী হয়ে গেল না ?

আপনি নিজেকে যেভাবে সময় দিবেন সময়ও আপনাকে ঠিক সেরকম একটি জীবন দেবে।

আপনি যদি পৃথিবীর সব চেয়ে সুখি মানুষটিকে দেখতে চান সেটি আপনি, যদি পৃথিবীর সব চাইতে বিপর্যস্ত মানুষটিকে দেখতে চান তাহলে সেটি ও আপনি। আপনি নিজেকে যে দৃষ্টিকোণ থেকে দেখবেন আপনি আসলে তাই।
ধন্যবাদ।

Nishat Jahan Nisha
Assistant Clinical Psychologist.
Dept. Of Clinical Psychology
MPhil Part -1.

 

দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের স্কুল সংখ্যা বাড়ানো দরকার


নারী সংবাদ


বার বছর বয়সী রাইয়ান দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। খুব আবেগ নিয়ে দু’হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে আছে বই। চোখে কোন আলো নেই। আর দশটি বাচ্চার মত সাধারণ নয় সে। প্রতিটি দিন তার শুরু হয় নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আর নতুন নতুন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে।
পরিসংখ্যান মতে বাংলাদেশে প্রায় পঞ্চাশ হাজার শিশু রয়েছে যাদের চোখে কোন ধরনের আলো নেই। আবার তাদের অধিকাংশই খুবই গরীব ঘরের সন্তান। আর এ ধরনের বাচ্চাদের জন্য খুব অল্প সংখ্যক বিশেষ স্কুল রয়েছে যেখান হতে তারা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। আর অধিকাংশ পরিবারের কাছে সরকার পরিচালিত এসব বিশেষ স্কুলই একমাত্র জায়গা যেখান হতে তাদের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বাচ্চারা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
কিন্তু এসব বিশেষ স্কুলের অধিকাংশই অপর্যাপ্ত প্রয়োজনীয় বই এবং প্রশিক্ষিত শিক্ষকের অভাবে প্রাইমারী স্তরের পরে আর শিক্ষা প্রদান করতে পারে না।
এসব দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বাচ্চাদের জন্য বিশেষ করে মেয়ে শিশুদের জন্য ব্যাপ্টিষ্ট মিশন ইন্টিগ্রেটেড স্কুল বাংলাদেশ সরকারের অধীনস্ত সমাজ সেবা অধিদপ্তর এবং ক্রিস্টোফেল ব্লাইন্ডেন মিশন (সিবিএম)-জার্মানীর সহযোগীতায় কাজ করে যাচ্ছে যাতে করে তারা শিক্ষা ব্যবস্থার সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা পায়।
১৯৭৭ সালে মিরপুরে পাঁচ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মেয়ে শিশু নিয়ে যাত্রা শুরু হয় ব্যাপটিষ্ট সংঘ স্কুলের। পরে ১৯৮৩ সালের ২৩ জানুয়ারী ১০০-আসনের ছাত্রী হোস্টেল সহ স্কুলটি তার নিজস্ব জায়গায় যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে স্কুলটিতে ২৭০ জন পড়ালেখা করছে যার মধ্যে ৩৫ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মেয়ে শিশু।
স্কুলের অধ্যক্ষ মমতাজ বৈরাগী বলেন আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মেয়ে শিশুদের উন্নত শিক্ষা প্রদান করা এবং তারা যেন তাদের আশপাশের সকল পরিস্থিতি বুঝতে পারে। যাতে করে তারা তাদের জীবনকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে পারে এবং নিজের পরিবার ও সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে।
তিনি বলেন, সঠিক যতœ এবং উৎসাহ পেলেই এ ধরনের শিশুরা ভালভাবে বেড়ে উঠতে পারে এবং পরিবার ও সমাজে ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ব্যাপ্টিষ্ট মিশন ইন্টিগ্রেটেড স্কুলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এবং স্বাভাবিক বাচ্চাদের শিক্ষা প্রদান করছে। স্বাভাবিক বাচ্চারা এই স্কুলে প্রথম শেণী হতে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার সুযোগ পায়। আর দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বাচ্চারা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার সুযোগ রয়েছে।’
মমতাজ বৈরাগী বলেন জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের ৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মেয়েরা সবাই এই স্কুলে পড়ার সুযোগ পাবে।
স্কুলের উপাধক্ষ্য রুথ মিত্র বলেন, ‘দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মেয়েদের জন্য এটিই একমাত্র আবাসিক স্কুল। এই স্কুলের আবাসিক হোস্টেলে ১০০-জন ছাত্রীর জন্য আসন রয়েছে। যারা মূলত অত্যন্ত দরিদ্র এবং অনগ্রসর পরিবারের সন্তান… তাদের এই হোস্টেলে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। হোস্টেলে অবস্থান করা ছাত্রীদের জন্য ফ্রি থাকা, খাওয়া, কাপড়, চিকিৎসা এবং তাদের সকল নিত্য প্রয়োজনের ব্যবস্থা স্কুল কর্তৃপক্ষ করে থাকে।’
তিনি জানান, ২০০৭ সালের জানুয়ারী হতে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এবং স্বাভাবিক দৃষ্টি সম্পন্ন বাচ্চাদের জন্য যৌথ পড়াশোনার ব্যবস্থা চালূ করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এসময় স্কুলের নাম বদলিয়ে রাখা হয় ব্যাপ্টিষ্ট মিশন ইন্টিগ্রেটেড স্কুল (বিএমআইএস)। আর স্কুল ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাপ্টিষ্ট চার্চ সংঘের স্যোশাল হেলথ এডুকেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট (শেড) বোর্ড।
বিএমআইএস’র রয়েছে নিজস্ব ব্রেইলিং প্রেস যেখান হতে প্রাইমারী এবং সেকেন্ডারী লেভেলের সকল ব্রেইলিং পদ্ধতির বই ছাপানো হয়। এখান হতে বই সংগ্রহ করে বাইরের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বাচ্চারাও। এসব বই মূলত বিনা খরচে দেশের সকল দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বাচ্চারা সংগ্রহ করে।
বাংলাদেশ ভিজুয়্যালি ইমপায়ার্ড পিপলস সোসাইটি’র সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন ভূইঁয়া বলেন বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় পঞ্চাশ হাজার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুর জন্য মাত্র সাতটি বিশেষ প্রাইমারী স্কুল রয়েছে।
তিনি বলেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা উপকরণ অত্যন্ত ব্যয় বহুল। যার ফলে অনেক বাচ্চাই শিক্ষা হতে বঞ্চিত হয়। এছাড়াও অভিভাবকদের রয়েছে সচেতনতার অভাব।
ব্লাইন্ড এডুকেশন এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইযেশন, সাইটসেভার্স ইন্টারন্যাশনাল, বিভিআইপিএস, চাইল্ড সাইট ফাউন্ডেশসহ আরো বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের সর্বোত্তম শিক্ষা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে।
সুতরাং দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হলে দেশে স্কুল সংখ্যা আরো বাড়াতে হবে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থা (এনজিও) ও সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিদের এগিয়ে এসে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের পাশে দাঁড়াত হবে। তাদেরকে যথাযথ শিক্ষার সুযোগ দিয়ে সমাজের মূল সামিল করতে হবে। তাদেরকে গড়ে তুলতে হবে সমাজেরই অংশ হিসেবে। উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে পারলে তারাও সমাজে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। কেননা আজকাল প্রতিবন্ধীরা ব্যবসা, চাকুরির পাশাপাশি বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনেরর অংশ। শেষ কথা হলো দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য স্কুল সংখ্যা আরো বাড়াতে হবে।
সুত্র: বাসস।

 

লামায় স্কুলছাত্রীকে ইভটিজিং, যুবকের ৪ মাসের জেল


নারী সংবাদ


লামায় স্কুলছাত্রীকে ইভটিজিং করার অপরাধে এক যুবককে ৪ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। শুক্রবার রাতে লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নূর-এ-জান্নাত রুমি এ দণ্ডাদেশ দেন।

দণ্ডিত যুবকের নাম আজিজুল হাকিম সুমন। তিনি লামা পৌরসভার চেয়ারম্যানপাড়া এলাকার আব্দুল লতিফের ছেলে। শনিবার সকালে তাঁকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই স্কুলছাত্রীকে ওই যুবক দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে রাস্তাঘাটে নানাভাবে বিরক্ত করা এবং মোবাইল ফোনে বিরক্ত করে আসছিল। স্কুলছাত্রী ও তার বাবা বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার সকালে লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে প্রতিকার চেয়ে অভিযোগ করেন।

অভিযোগের ভিত্তিতে লামা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. গিয়াস উদ্দিন ও মো. খালেদ মোশারফ অভিযুক্ত যুবককে পৌরসভার চেয়ারম্যান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করেন। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় শুক্রবার রাত ৭টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নূর-এ-জান্নাত রুমি বখাটে যুবক আজিজুল হাকিম সুমনকে ৪ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন। এ সময় দণ্ডিত যুবকের কাছ থেকে একটি মোবাইল ফোন জব্দ করে ধ্বংস করা হয়।

লামা থানা উপ-পরিদর্শক মো. গিয়াস উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, দণ্ডিত যুবককে শনিবার সকালেই বান্দরবান জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
সুত্র:কালের কন্ঠ।

 

কিভাবে স্মার্ট হবেন?


মেইক ইউরসেলফ


চিরস্থায়ী স্মার্টনেসের জন্য নিয়মিত কিছু কাজ করা দরকার। আপনার শার্ট-প্যান্ট নিয়ে ভাববেন না। কেবল খেয়াল রাখুন এগুলো পরিস্কার কিনা, ইস্ত্রি করা কিনা, ব্যাস। চুল নিয়ে কখনোই বেশি দুশ্চিন্তা করবেন না যেমন আছে থাকতে দিন।

১. জ্ঞান অর্জন করা
প্রচুর পড়াশোনা করেন, দেখেন, শোনেন। দরকারি বিষয়গুলো পড়ার সাথে সাথেই একটু করে লিখে রাখেন। স্মার্ট হওয়ার প্রথম শর্ত হলো আপনাকে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। পোশাক আশাক সুন্দর করেই যে আপনি স্মার্ট হবেন তা হবে না।

২.কথা বলা
গুছিয়ে কথা বলা; উপস্থিত বুদ্ধি; পরিষ্কার পরিছন্ন উপস্থাপনা। বেশি বকবক করবেন না, বেশি করে লোকজনের কথাবার্তা শোনেন। এর মধ্যে থেকে ভালো জিনিসগুলো নেয়ার চেস্টা করেন।

৩. খারাপ আচরণ করবেন না
মাথাটাকে সবসময় ঠান্ডা রাখুন, ফ্রেশ রাখুন। বাসার কাজের লোক হোক অথবা অফিসের বস কখনোই কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করবেন না।

৪. কাজের লিস্ট করুন
দিনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলোকে সুন্দর করে লিখে রাখেন।স্টুডেন্ট, চাকরিজীবী, বেকার আপনি যেই হন, আপনার কাজের একটা লিস্ট তৈরি করেন।

৫. বুদ্ধির খেলা খেলুন
বুদ্ধির খেলা খেলেন, পাজল গেম হতে পারে, দাবা, শব্দজট অথবা আপনার পছন্দসই কিছু একটা।

৬. বন্ধু নির্বাচন
স্মার্ট হওয়ার খুবই গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে ভালো বন্ধু নির্বাচন। হাজার হাজার বন্ধু থাকার চেয়ে পাঁচ জন বিবেকবান, বুদ্ধিমান, শিক্ষিত বন্ধু থাকা লক্ষগুণ ভালো, এদেরকে আপনার একদিনেই জোগার করতে হবে তা না, জীবনে চলারপথে এরকম পাঁচজন মানুষ আপনি চিন্তাভাবনা করে বেঁছে নেন।

৭. পর্যাপ্ত ঘুমান
যথেষ্ট পরিমাণে ঘুমান। প্রতিদিন ভালো ঘুম হওয়াটা জরুরি।

যে কোনো পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেয়া এবং নিজের আশে পাশের সম্পর্কে ভালো জানা শোনা থাকা স্মার্ট হওয়ার কিছু অন্যতম দিক। এই সব দিক গুলো নিয়মিত চর্চার মাধ্যমেই অর্জন করা সম্ভব।

 

সিংড়ায় বৃদ্ধা মাকে বাড়িছাড়া করল ছেলে


নারী সংবাদ


‘বৃদ্ধা হওয়াটাই যেন সবচেয়ে বড় অপরাধ! আমার ঘর-সংসার, ছেলে-মেয়ে সব থাকার পরও আজ আমি বড় অসহায়। জায়গা-জমি সব লিখে দিয়েছি। ঘর-বাড়ি সব কিছু নিয়ে মুখে লাথি মেরে ফেলে দিল। পেটের ছেলে এই ভাবে মারবে মেনে নেয়া যায় না। আমার বাপ, মা, ভাই, আত্মীয়-স্বজন কেউই নেই। তাই বিচারের আশায় এই থানার সামনে সকাল থেকে বসে আছি।’ বলছিলেন নাটোরের সিংড়া উপজেলার কুষাবাড়ী গ্রামের ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা রহিমা বেওয়া।

নিতান্ত অসহায়ভাবে শুক্রবার সকাল থেকে নাটোরের সিংড়া থানার সামনে বসেছিলেন তিনি। শুক্রবার দুপুর ১২টায় থানার সামনে বসে থাকার সময় এই প্রতিবেদককে কাতর কন্ঠে কথাগুলো বলছিলেন রহিমা বেওয়া।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলা কুষাবাড়ী গ্রামের মৃত হুসেন প্রামাণিকের স্ত্রী রহিমা বেওয়া প্রায় ১০ বছর পূর্বে তার স্বামীকে হারিয়ে বিধবা হন। এরপর তিনি তার ৭ ছেলেমেয়ের পরিবারের সাথে জীবনযাপন করতে থাকেন।

সম্প্রতি মেজ ছেলে বেল্লাল হোসেনকে জমি-জমা ও ঘর-বাড়ি লিখে দেন। শুক্রবার সকাল ৭টায় ছেলের কাছে টাকা চাইলে মায়ের মুখে লাথি মেরে ফেলে দেয় ছেলে বেল্লাল হোসেন। গ্রাম্য প্রধানদের সামনেই বৃদ্ধা মাকে করা হয় উপর্যপরি মারপিট।

এদিকে থানার সামনে মাটিতে বসে একজন ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা মহিলাকে কাঁদতে দেখে এগিয়ে আসেন বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন সিংড়া উপজেলার সাংগঠনিক সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক। পরে স্থানীয় সাংবাদিকদের সহযোগিতায় বিষয়টি সিংড়া থানার ওসি মনিরুল ইসলামকে অবগত করা হয়।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন সিংড়া উপজেলার সভাপতি অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, বৃদ্ধা মায়ের মুখে লাথি মেরে ফেলে দেয়া দুঃখজনক বিষয়। ওই বৃদ্ধা মহিলাকে সহযোগিতা করার জন্য মানবাধিকার কমিশনের সদস্যরা পাশে রয়েছেন।

সিংড়া থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, কোনো ছেলে তার মায়ের মুখে লাথি মেরে ফেলে দেয়ার ঘটনাটি একটি অমানবিক বিষয়। ছেলে বেল্লাল হোসেনকে আটক করতে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

আসুন, তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেই আপনাদের সাথে


জিয়াউল হক


তাঁর বয়স বিরাশি বৎসর। তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে আজ প্রায় চারটি বৎসর ধরে শয্যাশায়ী। নিজের শোবার ঘর, নিজের খাটটাই হলো তাঁর পৃথিবী। শরীরের একটা পাশ পুরোপুরি অচল। দেখতে পারেন, কথাও বলতে আর বুঝতে, বুঝাতেও পারেন, তবে একটু আধটু আড়ষ্ঠতা আছে, যথেষ্ঠ স্লোও বটে।
বিছানায় পড়ে থাকলেও তিনি সবার খোঁজ নিতে চান, জানতে চান কে কোথায় এবং কেমন আছে? বুড়ো বুড়িরা আবার এতসব জানতে চাইবেন কেন? এটাই তো আমাদের অধিকাংশদের ধারনা। তারা বসে বসে আল্লাহ আল্লাহ করবেন, সংসারের এত খোঁজ রেখে তাদের কি লাভ?
আমরা কি ভাবি যে, এই সংসার আর পরিবার নামের যে জিনিসটা নিয়ে আমরা এত বেশি তৎপর, তা কিন্তু এই বুড়ো-বুড়িরাই গড়েছেন। নিজের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান নিয়ে কার না আগ্রহ থাকে! সংসারে বাস্তব-অবাস্তব নানা ব্যস্ততার কারণে অনেকেই তাঁর কথা ততটা মনোযোগ দিয়ে শুনতে না চাইলেও আমি শুনি তাঁর কথা। মন দিয়ে শুনি।
তিনি এক নাগাড়ে বলে যান, আমি বসে বসে শুনি। মাঝে মাঝে হাঁপিয়ে গেলে তিনি চোখ মুদে বসে একটু জিরিয়ে নেন। তখন তার মুখ পানে চেয়ে থাকি। একদিন তাঁর ঐ মুখটা সজিব ছিল, ভরাট ও প্রাণবন্ত ছিল। নিজের চোখেই তো সেটা দেখেছি। আজ সে জৌলুস নেই, সেই লাবন্য নেই, চামড়া ঝুলে গেছে মুখের। কিন্তু আমি যেন সেখানেই এক অবর্ণনীয় লাবণ্য দেখি, চুপ করে চেয়ে চেয়ে দেখি আর শিহরিত হই।
অনেক সময় তাঁর কথাগুলো অসংলগ্ন হয়ে যায়। তিনি একই কথা বার বার বলেন। সম্মুখে বসে থাকাদের কেউ কেউ বিরক্ত হন। ইশারায় বারণ করি, তা প্রকাশ করতে। আমি বরং সে সময় তাঁর দিকে অতিমাত্রায় মনোযোগ দেই। অন্তত তাকে তেমনটাই বুঝতে দেই যে, তার কথাগুলো মন দিয়ে শুনছি। তিনি খুশি হন। একজন মনোযোগী শ্রোতা পেয়ে তিনি বলে চলেন। বসে বসে শুনি, তন্ময় হয়ে শুনি আর চেষ্টা করি, তিনি যা বলছেন তা বুঝে উঠতে। সে সাথে সেটাও বা সেটুকুও বুঝার চেস্টা করি, যেটা তিনি বলছেন না বা বলতে পারছেন না।
সেদিনও তার সামনে বসে বসে সময় কাটাচ্ছিলাম। তাঁর কথা শুনছিলাম। তিনি আতংকিত, কারণ, সুরা ইয়াসিনটা তাঁর পুরোটাই মুখস্থ ছিল, ইদানিং কেন যেন সেটা তিনি পুরোটা মনে করতে পারছেন না। ভুল হয়ে যাচ্ছে। তিনি চাইছেন, স্মৃতি থেকে মুখস্থ বলে যাবেন আর আমি শুনে দেখবো, ঠিক আছে কিনা, সেটা। বললাম, জি। আপনি বলতে থাকেন, আমি শুনছি।
তিনি আড়ষ্ঠ কন্ঠে তেলওয়াত করে চলেছেন সুরা ইয়াসিন। কখনও কখনও একটু থেমে আবার শুরু করেন। ঘাড় দুলিয়ে, মাথা হেলিয়ে বিরাশি বৎসরের এক বুড়ি সুরা ইয়াসিন শোনাচ্ছেন। প্রথম মুবিন পর্যন্ত এসে চোখ খুলে জানতে চাইলেন ঠিক আছে তো? বললাম; জি। ঠিক আছে, কোথাও ভুল হয়নি। তিনি খুশি হলেন। তার চোখ মুখ উজ্জল হয়ে উঠলো।
আবার শুরু করলেন; ওয়াদ্বরিব লাহুম মাসালান আসহাবাল ক্বারিয়া—। তিনি তেলওয়াত করে চলেছেন, আমি বসে বসে শুনছি। দ্বিতীয় মুবিনও শেষ করলেন। জানতে চাইলেন একইভাবে, ঠিক আছে তো? বললাম; জি। ঠিক আছে। তিনি আবারও শুরু করলেন; ——।
ঘরে আর কেউ নেই। তিনি খাটের উপরে বসে আছেন, আমি পাশেই এক কোণে বসে বসে তাঁর তেলাওয়াত শুনছি। মাঝখানে একবার আটকে গেলেও নিজে থেকেই আবার শুধরে নিয়ে তিনি তৃতীয় মুবিন পর্যন্ত শেষ করে চোখ খুললেন। আমার দিকে চেয়ে জানতে চাইলেন, ঠিক আছে তো । বললাম; জি। ঠিক আছে।
তিনি বললেন, দেখলে তো? ঐ যে একবার ঠেকে গিয়েছিলাম, এরকম মাঝে মাঝে ভুল হয়ে যায়। বললাম, ও রকম সবারই হয়। আপনি এ বয়সে অসুস্থ শরীর নিয়ে মনে রাখতে পেরেছেন! আলহামদুলিল্লাহ। তিনি নিজেও কন্ঠ মেলালেন, আলহামদুলিল্লাহ। তার চেহারার উজ্জলতা যেন আরও বেড়ে গেল নিমেষেই।
তিনি আবার ডায়াবেটিকসের রুগীও বটে। গলা শুকিয়ে যায় ঘন ঘন, পানি খেতে হয়। একটু পানি চাইলেন, মুখে তুলে দিতে চাইলাম কিন্তু তিনি হাত বাড়িয়ে দিয়ে নিজের হাতে গ্লাসটা নিলেন, এর পরে ধীরে ধীরে দু’ঢোক গিলে তা আবার আমার দিকেই ফেরত দিলেন। গ্লাসটা নিয়ে পাশের লকারের উপরে রেখে দিলাম।
তিনি একটুখানি থেমে আবারও শুরু করলেন। কোথায় যেন ছিলেন? মনে করতে পারছিলেন না। বললাম তৃতীয় মুবিন শেষ করেছেন। তৃতীয় মুবিনের পরে কোথা হতে শুরু হবে, সেটা তার মনে নেই। ধরিয়ে দিলাম; ওয়াইয়াকুলুনা মাতা হাজাল ওয়াদু ইন কুনতুম সদিক্বিন-।
তিনি ধরলেন এবং আবার শুরু করলেন। কিন্তু সামান্য কিছুদুর এগিয়ে থেমে গেলেন। ওয়ানুফিখা ফিসসুরি পর্যন্ত গিয়ে আর মনেই করতে পারলেন না। বার বার তাকে মনে করিয়ে দেবার চেষ্টা করলাম, সেখান থেকে ধরে এগিয়ে যাবার চেষ্টা করলেন কিন্তু আটকে গেলেন আবারও।
তিনি বিব্রত হলেন, কষ্ট পেলেন। তার চোখের কোণে জমে উঠলো অশ্রু। কষ্ট পেলাম। শান্তনা দেবার চেষ্টা করলাম, বললাম; বয়স হলে এরকম হয়। কিন্তু তাতেও তার মনটা শান্ত হচ্ছে না। আক্ষেপ করতে করতে সচল থাকা হাতটা তুললেন, দুআ করার জন্য। দুআর শুরু করে দিলেন।
তিনি দুআ করে চলছেন; হে আল্লাহ, আমার অক্ষমতা মাফ করে দিও। মনে মনে বললাম; আমিন।

তিনি বলে চলেছেন; হে আল্লাহ যতদিন বাঁচি, যতক্ষণ বাঁচি, তোমার স্বরণটা যেন না ভুলে যাই, তোমার অবাধ্য যেন না হই। বললাম; আমিন।

তিনি যখন দুআ করতে ব্যস্ত, তখন তাঁর অচল হাতটি বালিশের উপর থেকে গড়িয়ে বিছানায় ঢলে পড়লো, সেটাকে আবার যথাস্থানে বালিশের উপরে তুলে দিলাম। সেদিকে তার খেয়াল নেই, তিনি দুআতে ব্যস্ত।
“হে আল্লাহ আমার সন্তানেরা যে যেখানে আছে, সবাইকে সুস্থ রাখো, ভালো রাখো। বললাম; আমিন।”

তিনি বলে চলেছেন; “হে আল্লাহ, যত বিপদ আপদ দিতে চাও আমার উপরেই দাও। আমার পাঁচ সন্তানের উপরে কোন বিপদ আপদ দিও না!”

আমার চোখ ভিজে এলো। চলৎশক্তি হারিয়েছেন তিনি। ব্লাডপ্রেশার, আর্থাইটিস, চোখের সমস্যা, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস এরকম কত অসুখ তার! আজ চারটি বৎসর শয্যাশায়ী, নিজের কাজটুকুও কারো সহযোগীতা ছাড়া করতে পারেন না, অথচ তিনি আরও অসুখ, আর বিপদ চাইছেন আল্লাহর কাছে তাঁর পাঁচ সন্তানের সুস্থতার বিনিময়ে!
আমার চোখ দিয়ে তপ্ত অশ্রু গড়িয়ে পড়লো তাঁর অলক্ষ্যেই। এবারে আমিন না বলতে পেরে নিজের হাতটাই তুললাম এই মহীয়সী নারীর সাথে তাঁর দুআতে অংশ নিতে।
বলে উঠলাম; “রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি ছগিরা।”

আর হ্যাঁ, আপনাদের তো বলাই হয়নি, ইনিই আমার মমতাময়ী মা। আমার জান্নাত।

 

ধর্ষণে বাধা, ছাত্রীর বাবার দুই হাতের রগ কাটল বখাটে


নারী সংবাদ


বরগুনার পাথরঘাটায় অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার সময় ছাত্রীর বাবা বাধা দিতে গেলে তাকে ধারালো ছোরা দিয়ে কুপিয়ে হাতের রগ কেটে দিয়েছে প্রতিবেশী বখাটে ইয়াছিন। পুলিশ গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ইয়াছিনকে রক্তমাখা ছোরাসহ আটক করেছে। আহত ছাত্রী ও তার বাবাকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বুধবার রাত ৩টার দিকে পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নে এক বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে।

ছাত্রীর বাবা জানান, স্কুলে যাওয়ার পথে ইয়াছিন তার মেয়েকে প্রেম নিবেদন করে নিয়মিত উত্ত্যক্ত করত। বিষয়টি তার মেয়ের কাছে শুনেও লোক লজ্জার ভয়ে তিনি কাউকে বলেননি। এক পর্যায়ে ইয়াসিন বেপরোয়াভাবে মানসিক নির্যাতন শুরু করলে বিষয়টি স্থানীয় কিছু গণ্যমান্য লোকদের জানানো হয়। এতে ইয়াসিন ক্ষিপ্ত হয়। পরে বুধবার রাতে ঘরের জানালা ভেঙে ইয়াছিন ঘরে প্রবেশ করে তার মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। মেয়ের চিৎকারে সজাগ হয়ে ইয়াছিনকে জাপটে ধরেন বাবা। এ সময় ইয়াছিন সঙ্গে থাকা ছোরা দিয়ে কুপিয়ে বাবা-মেয়েকে রক্তাক্ত যখম করে। ছোরার আঘাতে বাবার দু’হাতের রগ কেটে যায়। এলাকাবাসী তাৎক্ষণিক বাবা ও মেয়েকে পাথরঘাটা হাসপাতালে

ভর্তি করালে সকালে তাদের শেবাচিমে রেফার করা হয়।

পাথরঘাটা থানার ওসি মো. হানিফ সিকদার জানান, ইয়াসিন ঘটনার সময় তার মোবাইল ও জামাকাপড় ফেলে দু’জনকে কুপিয়ে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে কয়েক জায়গায় অভিযান চালিয়ে ইয়াছিনকে আটক করা হয়। ইয়াছিনের স্বীকারোক্তিতে রক্তমাখা ছোরাটি উদ্ধার করা হয়। এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
সুত্র: সমকাল

 

বইয়ের নামঃ জ্ঞানতাপস ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্


রায়হান আতাহার


বইয়ের নামঃ জ্ঞানতাপস ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্
লেখিকাঃ শান্তা মারিয়া
প্রকাশনীঃ হাতেখড়ি
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ৮০
মুদ্রিত মূল্যঃ ৭০ টাকা

ছোট পরিসরে জীবনীগ্রন্থ পড়তে খুব ভালো লাগে। এরকমই একটি বই ‘জ্ঞানতাপস ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্’। সবচেয়ে চমকপ্রদ ব্যাপার বইটির লেখিকা সম্পর্কে ডঃ শহীদুল্লাহর পৌত্রী। কাজেই ডঃ শহীদুল্লাহ সম্পর্কে জানতে এরচেয়ে নির্ভরযোগ্য বই পাওয়া যাবে না। বইটিতে এই জ্ঞানতাপসের জন্ম, শৈশব, লেখাপড়া, কর্মজীবন, সাহিত্যকর্ম ও মৃত্যুকে গুছিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর জন্ম ১৮৮৫ সালের ১০ জুলাই চব্বিশ পরগণা জেলার বসিরহাট মহকুমার পেয়ারা গ্রামে। প্রথমে তাঁর নাম রাখা হয়েছিল মুহম্মদ ইবরাহীম। এ নামে আকিকাও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু মায়ের আপত্তিতে পরবর্তীতে তাঁর নাম রাখা হয় মুহম্মদ শহীদুল্লাহ।

স্কুল জীবন থেকেই ভাষা শেখার নেশা পেয়ে বসে তাঁকে। সে সময় ছাত্রদের বাংলা-ইংরেজির পাশাপাশি ফারসি বা সংস্কৃত পড়তে হতো। সাধারণত মুসলমান ছাত্ররা ফারসি, আর হিন্দু ছাত্ররা সংস্কৃত পড়তো। কিন্তু শহীদুল্লাহ্ সংস্কৃত নিয়ে পড়া শুরু করেন এবং নিয়মিত এ বিষয়ে প্রথম হতেন। তার হিন্দু বন্ধুরা কৌতুক করে পন্ডিত মশাইকে বলতো, “স্যার, আমরা বামুন কায়েতের ছেলে থাকতে, আপনি ঐ মুসলমান ছেলেটাকে সবসময় ফাস্ট করে দেন, এতো ভারি অন্যায়।” উত্তরে পণ্ডিত মশাই বলতেন, “আমি কী করবো, সিরাজুদ্দৌলা (তিনি শহীদুল্লাহর না কিছুতেই মনে রাখতে পারতেন না, বলতেন সিরাজুদ্দৌলা) লেখে ভালো। তোরা তো ওর মতো লিখতে পারিস না।”

সংস্কৃত ছিলো ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর প্রিয় বিষয়। এ বিষয়ে তিনি বি.এ পাশ করেন। কিন্তু একই বিষয়ে এম.এ পড়ার সময় এক গোঁড়া হিন্দু পণ্ডিতের কারণে তিনি পড়া শেষ করতে পারেননি। পরবর্তীতে ‘তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বে’ এম.এ পাশ করেন তিনি।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ কর্মজীবন শুরু করেন সীতাকুণ্ড উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাধান শিক্ষক হিসেবে। বছরখানেক পর সেখান থেকে জন্মস্থান বশিরহাটে ফিরে এসে আইনজীবী হিসেবে ওকালতি শুরু করেন। কিন্তু ওকালতিতে কখনোই তাঁর মন বসেনি। ১৯১৯ সালে তিনি স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের মাধ্যমে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পান। এখানে চাকরি করার সময়ে তিনি ‘আঙুর’ নামক একটি শিশুতোষ পত্রিকা বের করেন। বিখ্যাত এই পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ-নজরুলসহ নামিদামি সাহিত্যিকেরা লিখতেন।

১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি এখানে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি তাঁর ভালোবাসার কারণে তিনি শান্তি নিকেতনের বিশ্বভারতীর শিক্ষক হবার প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। জ্ঞানার্জন করাই ছিলো তাঁর জীবনের মূল লক্ষ্য। এজন্য তাঁকে ‘জ্ঞানতাপস’ বলা হয়। অবশ্য ছাত্র ও সহকর্মীরা তাঁকে ‘চলিষ্ণু শব্দ কম্প ধ্রুম’ বা চলন্ত অভিধান নামে ডাকতেন। যে কোনো শব্দের অর্থ বা উৎপত্তি সম্পর্কে তাৎক্ষণিক উত্তর দেয়ার ক্ষমতার কারণে তাঁকে এ নামে ডাকা হত।

এছাড়াও বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা কলেজে তিনি অধ্যাপনা করেছেন। উচ্চতর শিক্ষার জন্য প্যারিসের সোরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন শহীদুল্লাহ্। চর্যাপদ নিয়ে গবেষণা করেন তিনি। এ গবেষণার ফলে তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের মধ্যে প্রথম ডিলিট ডিগ্রী পান। এছাড়া বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব নিয়ে গবেষণার জন্য তিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম ডিপ্লোমা অর্জন করেন।

বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার পেছনে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর অবদান অনস্বীকার্য। সেই ১৯২০ সালে তিনি ভারতের সাধারণ ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষাকে উত্থাপন করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানিদের উপর উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেয়া শুরু করে পশ্চিম পাকিস্তানি সরকার। শহীদুল্লাহ এর প্রতিবাদ করলেন। একাধিক জায়গায় তিনি বাংলা ভাষার সপক্ষে যুক্তি দিলেন। ১৯৪৮ সালে এ বিষয়ে তিনি ‘আমাদের ভাষা সমস্যা’ শীর্ষক একটি বই লিখে ছাত্র-শিক্ষকসহ দেশের সচেতন জনগোষ্ঠীর কাছে বিনামূল্যে বিতরণ করলেন৷ সশরীরে মিটিং মিছিলেও অংশগ্রহণ করেন৷ এসব কারণে তিনি সরকারের চক্ষুশূল হলেন। তারপরেও তিনি আপোষ করেননি।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ পীরের বংশধর ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ ছিলেন। কিন্তু ধর্মান্ধতা তাঁকে কখনো ছুঁতে পারেনি৷ এজন্যই তিনি বলেছেন, “আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য, তার চেয়ে বেশি সত্য আমরা বাঙালি। এটা কোন আদর্শের কথা নয়, এটা একটি বাস্তব কথা। মা প্রকৃতি নিজের হাতে আমাদের চেহারায় ও ভাষায় বাঙালিত্বের এমন ছাপা মেরে দিয়েছেন যে মালা তিলক টিকিতে কিংবা টুপি লুঙ্গি দাঁড়িতে ঢাকবার জো-টি নেই।” ধর্ম নিরপেক্ষ স্বাধীন বাঙালি রাষ্ট্রই ছিল তাঁর ঐকান্তিক কামনা।

১৯৬৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর সেরিব্রাল থ্রম্বোসিসে আক্রান্ত হয়ে পক্ষাগাতগ্রস্থ হলেন ড. শহীদুল্লাহ্। এর প্রায় দেড় বছর পর ১৯৬৯ সালের ১৩ জুলাই না ফেরার দেশে চলে যান এই জ্ঞানতাপস। সহজ-সরল জীবন আর জ্ঞানের সাধনা ছিলো তাঁর সারা জীবনের দর্শন। মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে তাঁর রুহের মাগফেরাত কামনা করছি।

 

পথের কাঁটা দূর করতে শিশুসন্তানকে হত্যা


নারী সংবাদ


পারিবারিকভাবে পটুয়াখালী জেলার বিলকিস বেগম ও একই এলাকার নাসিরের বিয়ে হয়। বছর ঘুরতেই তাদের কোলজুড়ে আসে কন্যাসন্তান। কিন্তু এরই মধ্যে বিলকিস বেগমের সঙ্গে জামালপুরের সোলেমানের পরকীয়ার সম্পর্ক হয়। প্রেমের টানে প্রথম স্বামীকে ছেড়ে ছয় মাসের কন্যা মরিয়মকে নিয়ে সোলেমানের সঙ্গে জামালপুর পালিয়ে যায় বিলকিস। এরপর দু’জনে কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করে। সেখান থেকে দু’জনে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পাগলা এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নেয়। কিন্তু আগের পক্ষের মেয়েকে নিয়ে বিলকিস ও সোলেমানের মধ্যে ঝগড়া হতে থাকে। এক সময় দু’জনই সিদ্ধান্ত নেয়, তাদের দু’জনের পথের কাঁটা ছয় মাসের মরিয়মকে তারা মেরে ফেলবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি শ্বাসরোধে ছয় মাসের মরিয়মকে হত্যা করে বিলকিস ও সোলেমান। হত্যার পর শিশুকন্যার লাশ লুঙ্গিতে মুড়িয়ে রাস্তার ধারে ফেলে রাখে তারা।

গতকাল বুধবার বিকেলে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাওসার আলম ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ন কবিরের পৃথক আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে ঘাতক সোলেমান ও বিলকিস।

১৭ ফেব্রুয়ারি ফতুল্লার পাগলা এলাকার রাস্তার ধারে লুঙ্গিতে মোড়ানো একটি শিশুর লাশ অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে উদ্ধার করে পুলিশ। এর পর ফতুল্লা থানা পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করে। পরে পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে তদন্তের জন্য হস্তান্তর করে। পিবিআইর নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান মুন্সির নেতৃত্বে এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান পিবিআইর উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলমের ওপর। পিবিআই তদন্ত করে ঘটনার সঙ্গে বিলকিস বেগম ও সোলেমানের সম্পৃক্ততা খুঁজে পায়।

এরপর তদন্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে সঙ্গীয় ফোর্স সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. শুকরিয়া ও কনস্টেবল মিষ্টি আক্তার জামালপুর ও পটুয়াখালীতে পৃথক অভিযান চালিয়ে ২৫

নভেম্বর সোলেমান ও বিলকিসকে গ্রেফতার করে। সুত্র: সমকাল।

 

শৈত্যের শুভ উদ্বোধন


নিশাত তাম্মিম


শীতের শুরুটা পুরোদমে না হলেও শেষরাতের ঝিরঝিরে বাতাসে যখন কাথাটি অবচেতনভাবেই গায়ের উপরে স্থান করে নেয় কিংবা সূর্য ঊদয়োত্তর মিষ্টি রোদের আলতো স্পর্শে কর্মচাঞ্চল্য শুরু হয়, তখনই মনে পড়ে যায় শীত বুঝি এসেই পড়লো। তবে কাব্যিকভাবে শীতের আগমণ যতটা সুন্দর, বাস্তবতার সাথে লড়াই করে টিকে থাকা মানুষগুলির জন্য সেটি হয়তো ততটা সুখকর নয়। শীতের হিম কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশ যতটা সফেদ, কিছু ভাগ্যাহত মানুষের জীবনে ওর অধ্যায়টা ঠিক ততটাই কালো।

IPS না থাকার সুবাদে বরাবরের মতই এবারো অনিচ্ছাস্বত্তেও হাতপাখার সাথে সম্পর্কটা বেশ গাঢ়ই হয়ে উঠেছিল। কোন এক রাতে বৃষ্টির আগমণে এই পাখার সাথে সম্পর্কটা ছিন্ন করার আনন্দে যখন অতিশয় পুলকিত হচ্ছিলাম ঠিক তখনি মনের দরজায় বিবেক সত্ত্বার কড়া নাড়ার শব্দ শুনতে পেলাম। ভেবে দেখেছো, সেই মানুষগুলোর কথা? শীত নামক কাব্যিক শব্দটার উচ্চারণও যাদের চোখে জল এনে দেয় অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশংকায় আকাশপানে চেয়ে যাদের চোখ ঝাপসা হয়ে আসে? নিজের মন আজকাল খুব বেশি ভালো নেই বলে বিবেকের কড়া নাড়ার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করার তেমন ইচ্ছে ছিলোনা। তবুও পারিনি, আমার হয়তো একটি দীর্ঘশ্বাস, আর অজস্র ভাগ্যাহত মানুষের জীবনের প্রশ্ন। তাই হয়তো মনের সাথে অনেকটা জোর করেই কিছু লিখতে চাওয়ার প্রয়াস….

শীতের সকালে রাস্তার পাশে সামান্য একটি আধোছেঁড়া কাপড়ের আশ্রয়ে মা ও সন্তানের শীত নিবারণের প্রচেষ্টা, কিংবা সারারাত হাড় জিরজিরে বাতাসের সাথে যুদ্ধের পর এক বিন্দু সূর্যালোকের প্রতীক্ষায় ফুটপাথে বসে থাকা মানুষগুলোর আকুতি- এ দৃশ্য নিশ্চয়ই কারো অপরিচিত নয়। প্রতিবছর শীত আসে…. এবারো আসবে….. আবারো শুরু হবে অভাগা এই প্রাণীগুলোর বেঁচে থাকার সংগ্রাম….. ওপরের দিগন্ত বিস্তৃত আকাশ নিচের চিরচেনা জমিন দুটোই নিমজ্জিত হবে ক্ষমতার স্বেচ্ছাচারিতা প্রদর্শনের সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতায়….

অট্টালিকাবাসীদের না পেয়ে সমস্ত আক্রোশে জাপটে ধরবে ওদের….. যারা পারবে শেষ পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যেতে, তারা হয়তো কৈ মাছের প্রাণ নিয়ে বেঁচে থাকবে কোন রকমে আর যারা পরাজিত হবে তারা ধরা দেবে নিশ্চিত মৃত্যুর ছোবলে। জীবন মৃত্যুর এ খেলা চলেছে আজীবন, চলবেও হয়তো। কোথা এর শেষ সে হিসেব কষতে গেলে ইনফিনিটিতে গিয়ে ঠেকবে কিনা জানা নেই। আমাদের কারো একার পক্ষে হয়তো সম্ভব ও নয় গোটা পৃথিবীর প্রেক্ষাপট দুইদিনে চেঞ্জ করে ফেলা। তারপরও হয়তো এতখানি সম্ভব নিজের আয়ত্ত্বের মধ্যে যতটুকু আছে ততটুকু চেষ্টা করা। আমিরুল মুমেনিন খলিফা উমর (রাঃ) এর সেই ইতিহাস জানা নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ছদ্মবেশে রাস্তায় জনগণের দুর্দশার খোঁজ নিতে গিয়ে ক্ষুধার্ত শিশুদের কান্নার শব্দ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গেলেন…..রাজকোষ থেকে নিজ কাঁধে বয়ে নিয়ে এলে আটার বোঝা- “আমার রাষ্ট্রের একটি কুকুরও যদি না খেয়ে মারা যায় সে দায়ভার আমার”। আমরা সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে পারবোনা জানি তবু হয়ত শীতের সকালে রাস্তায় বেরিয়ে দেখতে পারি সেই মানুষগুলোর ভোগান্তির করুণ দৃশ্য। মিলিয়ে দেখতে পারি আমাদের সাথে ওদের জীবনধারার পার্থক্য। কোন এক বিখ্যাত ব্যক্তির একটি উক্তি পড়েছিলাম-

“When the Rain comes, go outside without umbrella, when the winter comes, go without clothes…..that u can feel what life is!”

হয়ত হতে পারবোনা তৃতীয় উমর….তবুও কি পারিনা নিজের অব্যবহৃত বিলাসিতার আস্তরণে রেখে দেওয়া শীতের কাপড়টি রাস্তার পাশে বরফ জমে যাওয়া শরীরটিকে এগিয়ে দিতে? আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে আমাকেও যে জবাবদিহি করতে হবে ঐ স্রষ্টার দরবারে।লেপের তলায় আরাম নিদ্রাযাপনের সময় ভাবতে পারি এই মুহুর্তে হয়তো আমারই মত আর একটি প্রাণ জাপটে ধরা শীতের আক্রমণে বেঁচে থাকার লড়াই করে যাচ্ছে।

মনে হতে পারে আমার এই ক্ষুদ্র সাহায্যে কি আর হবে? এই অসীম দারিদ্র্য সাগরে আমার এ দান একবিন্দু নীহারিকার মতই মিশে যাবে। ব্যাপারটি অন্য ভাবেও ভাবা যেতে পারে। আমার society তে দশজন মানুষ যদি দশজন দরিদ্রের পাশে দাড়াঁয়, দশটি পরিবার যদি দশটি পরিবারের পাশে দাড়াঁয়, দশটি গ্রুপ যদি আর দশটি বঞ্চিত গোষ্ঠির পাশে দাড়াঁয়, দেশের প্রেক্ষাপট চেঞ্জ করে ফেলা কি খুব বেশি কঠিন হবে??

হয়তো সেদিন আসবেনা তবুও আমাকে এগিয়ে যেতে হবে সে দিনের স্বপ্নকে সামনে রেখেই। Robert Frost এর এ উক্তিটি হতে পারে চলার পথের প্রেরণা
“…..but i have promises to keep
And miles to go before i sleep
And miles to go before i sleep.”

আসুন আমরা এই শীতার্ত মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াই। ব্যক্তিগতভাবে কিংবা সমষ্টিগতভাবে যেভাবেই হোক…… আর একটি জীবন প্রদীপও যেন কেবলি শীতবস্ত্রের অভাবে নিভে না যায়….. এই মন্ত্রেই সূচিত হোক এবারে শীতের উদ্বোধন, শৈত্যের শুভ বরণ…….!

 

সোহেলের বটির কোপে স্কুল ছাত্রী নিহত


নারী সংবাদ


১৫ বছরের স্কুলছাত্রী শারমিন রাজধানীর ওয়ারীর গোপীবাগে বখাটের বটির কোপে নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে গোপীবাগ রেললাইনের পাশে এ ঘটনা ঘটে। এক বরাতে পুলিশ জানায়, দীর্ঘদিন ধরে বখাটে সোহেল শারমিনকে উত্ত্যক্ত করে আসছে। শারমিনের ঘাড়ে কোপ দেবার পর সোহেল পালানোর চেষ্টা করে। স্থানীয়রা সোহেলকে (২৫) ধরে
গনধোলাই দেয়।

ওয়ারীর থানার (এসআই) হারুন অর রশিদ জানান, ‘নিহত শারমিন পরিবারে সঙ্গে সূত্রাপুর কে এম দাস লেনে থাকত এবং সায়েদাবাদ কাজী আরিফ হাই স্কুলের দশম শ্রেনীর ছাত্রী ছিল। তার বাবার নাম মৃত আবদুর সাত্তার। গতকাল তার শেষ ক্লাস উপলক্ষে স্কুলে ক্লাস পার্টি করে কয়েক বান্ধবীসহ বাসায় ফিরছিল। পথিমধ্যে গোপীবাগ রেললাইন এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় ওই বখাটে শারমিনের ঘাড়ে বটি দিয়ে কোপ দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। তিনি আরো জানান, ঘাতক সোহেল ৬-৭ মাস ধরে শারমিনকে উত্ত্যক্ত করত। ঘটনাস্থল থেকে বটিটি জব্দ করা হয়েছে। হত্যাকান্ডের বিস্তারিত খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন। ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি স্যার সলিমুল্লা মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) মর্গে পাঠানো হয়েছে।’

সোহেলের বাসা সায়দাবাদ এলাকায়। শারমিনের স্কুলের পাশে একটি কাগজের খামের দোকানে কাজ করে। সোহেল বলে, ‘শারমিনের সাথে তার এক বছর ধরে সম্পর্ক ছিল। দুই পরিবার বিষয়টি জানতো। শারমিনের জন্য অনেক টাকা-পয়সাও খরচ হয়েছে। কিছুদিন ধরে শারমিন তার সাথে খারাপ আচরণ করতে থাকে। সেই জন্য তাকে দাও দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।’

 

বৈবাহিক সমস্যা ও কোরআনের সমাধান -৫


কানিজ ফাতিমা


সূরা নিসার ৩৪-৩৫ নং আয়াতকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিবাদ ও সমস্যার সমাধান ও তাদের পুনঃসম্পর্ক স্থাপনের জন্য দু’টি পন্থার কথা এখানে উল্লেখ করা হয়েছে-

প্রথম পন্থা হল: যখন স্বামীর এই তিনটি প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হবে তখন স্বামী ও স্ত্রী উভয়ই নিজ নিজ পরিবার থেকে একজন করে মধ্যস্থতাকারী বা তৃতীয় পক্ষের সাহায্য ছাড়াই নিজেরা মিটিয়ে ফেলবে। এই পদক্ষেপটি স্বামী গ্রহণ করবেন এবং তিনি তিনটি পর্যায়ে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাবেন–

০১। স্ত্রীকে মৌখিকভাবে বোঝানো
০২। তার থেকে বিছানা পৃথক করা
০৩। সবশেষে দারাবা করা

দ্বিতীয় পন্থা হল: যখন স্বামীর এই তিনটি প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হবে তখন স্বামী ও স্ত্রী উভয়ই নিজ নিজ পরিবার থেকে একজন করে মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ করবেন, যারা তাদের সম্পর্কের তাদের সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করবে, তাদেরকে উপদেশ দেবে।

“যদি তাদের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হওয়ার মত পরিস্থিতিরই আংশকা কর, তবে স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিশ নিযুক্ত করবে। তারা উভয়ের মীমাংসা চাইলে আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সব কিছু অবহিত।” (সূরা নিসা- আয়াত ৩৫)

আল কোরআনের এই সব কটি উপদেশেরই মূল উদ্দেশ্য হল: কার্যকরীভাবে গঠনমূলক পন্থায় স্বামী- স্ত্রীর মধ্যে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। কাজেই যখন স্ত্রী (স্বামী বা সংসারের প্রতি) প্রকাশ্য অবজ্ঞা, উপেক্ষা বা অবহেলা প্রদর্শন করে(নুশূজ) তখন আল কোরআন স্বামীকে আদেশ করেছে স্ত্রীকে উপদেশ দিতে, অনুরোধ ও অনুনয় করতে এবং প্রয়োজনে ভৎর্সনা করতে। এর মাধ্যমে সে তার কথা ও চিন্তাগুলো স্ত্রীকে বলতে ও বোঝাতে পারবে। এ যোগাযোগের মাধ্যমে দু’জনের ভেতরকার পার্থক্যগুলো সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে, সম্ভাব্য সমাধানগুলো বের হয়ে আসবে। এভাবে ন্যায়সঙ্গতভাবে বৈবাহিক সমস্যায় বা বিবাদে সমাধানের জন্য প্রাথমিক পন্থা হিসেবে আলোচনা করা, মতামতের আদান প্রদান করা ও উপদেশ দেয়াকে উৎসাহিত করা হয়েছে। এবং এর মাধ্যমে স্ত্রীর মধ্যে বিবেক ও যুক্তিবোধ বা কান্ডজ্ঞান জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে।
যদি স্ত্রীর তার নিজের অজ্ঞতা বা ঔদ্ধত্যপূর্ণ মানসিকতার কারণে এ ধরনের উপদেশে কোন কর্ণপাত না করে, তখন স্বামীটিকে আর এক ধাপ সামনে আগাতে হবে। এমতাবস্থায় তার উচিত হবে স্ত্রীর সঙ্গে একই বিছানায় না থেকে বরং পৃথক বিছানায় শোয়া। অর্থাৎ বিছানা পৃথক করা। এটা এজন্য করা দরকার যাতে স্ত্রী পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবনে সক্ষম হয়। স্ত্রী যাতে এমনটা ভাবতে না পারে যে, স্ত্রীর প্রতি দুর্বলতা বা তাকে কাছে পাবার আকর্ষণের স্বামীটি তার এরূপ অবহেলা, অবজ্ঞা ও ঔদ্ধত্যর্পর্ণ আচরণকে মেনে নেবে। বরং স্ত্রীর প্রতি এ অবহেলা বা আগ্রহের অভাব দেখালে স্ত্রীর সেই ভুল ধারণা ভাঙ্গবে এবং সে সমস্যার গভীরতা ও এর পরিণামের ভয়াবহতা উপলদ্ধি করতে পারবে। এর ফলে স্ত্রীও একটি সুযোগ পাবে তার এরূপ অবহেলা ও বিরোধী প্রতিকূল আচরণ পরিত্যাগ করার ও পুরো ব্যাপারটি নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা করার। সে বুঝতে পারবে যে, সে একটি সন্ধিক্ষণে এসে পৌঁছেছে; তাকে এ বিবাদ মীমাংসা করে পুনরায় ভালবাসা ও সহানুভূতির সম্পর্ক তৈরির একটা পথ খুঁজে বের করতে হবে। কিন্তু স্ত্রী যদি এটা উপলদ্ধি না করতে পারে এবং একগুয়েমিভাবে তার আগের আচরণে বহাল থাকে, তবে এতে কোন সন্দেহ থাকে না যে, তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হয়ে গেছে। বিচ্ছিন্নতার চিহ্ন পরিবারটির ভাগ্যের দিগন্তে উঁকি দিয়েছে।
এমনই এক কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে একটি অপরিহার্য প্রশ্ন হল: দুই পরিবারের মধ্যস্থতাকারীদের সাহায্য চাওয়ার পূর্বে এমন কি করা যেতে পারে, যাতে স্বামী ও স্ত্রী তাদের বৈবাহিক সম্পর্কে যে কঠিন হুমকির সম্মুখীন হয়েছে তা সঠিকভাবে উপলদ্ধি করতে পারে এবং বিবাহ ভেঙ্গে যাবার পূর্বেই তারা এ ভয়াবহতা পরিমাপ করতে পারে? আল কোরআন সূরা নিসায় এ প্রশ্নের যে জবাব দিয়েছে, তাহল দারাবা।
এখন প্রশ্ন দাঁড়ায়, দারাবার সঠিক ব্যাখ্যা কি? এজন্য প্রেক্ষাপটটি মনে রাখতে হবে। এখানে প্রেক্ষাপটটি এমন যে, দু’জন বিবাদমান বা সমস্যা আক্রান্ত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পুনঃসম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করা হচ্ছে, স্বামীটি শান্তি স্থাপনের ও বনিবনার জন্য মৌখিকভাবে প্রচেষ্টা করেছেন, বিছানা আলাদা করার মাধ্যমে নিজের অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এমন প্রেক্ষাপটে ‘দারাবার’ ব্যাখ্যা কি হতে পারে সেটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
এখানে দারাবার অর্থ কি ‘আঘাত করা’, ‘শারীরিক শাস্তি প্রদান’ হবে যা কষ্ট, ব্যথা ও অপমানের জন্ম দেয়? যদি তাই হয় তবে এরুপ চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে বশ্যতা স্বীকার বা দমনের উদ্দেশ্য কি? শারীরিক আঘাত বা অপমানের মাধ্যমে দমন কি ভালবাসা বা আনুগত্য তৈরীতে সহায়ক হয়? বা এর মাধ্যমে কি একটি পারিবারিক সম্পর্ক ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করা যায়? ইসলাম যেখানে স্বামীর নির্যাতনমূলক আচরণের ক্ষেত্রে স্ত্রীকে বৈবাহিক সম্পর্ক অবসানের সিন্ধান্ত নেবার অধিকার দিয়েছে সেখানে এরুপ দমন কি স্ত্রীকে আরও বেশি সেদিকে (তালাক বা খুলা ) ঠেলে দিবে না? আর যদি তাই হয়, তবে কি এক্ষেত্রে চাপ প্রয়োগ, দমন বা আঘাতের কোন সুযোগ রয়েছে, যা পরিবারকে পুনঃগঠনের পরিবর্তে বরং ভাঙ্গার দিকে আরও ঠেলে দেবে?
কাজেই দারাবা ক্রিয়াটির অর্থ যদি শারীরিক বা মানসিক আঘাত না হয় (স্বামীরা স্ত্রীদের প্রতি তাদের নির্দয় ব্যবহারের পক্ষের যুক্তি হিসেবে কোরআনের এই শব্দটির অর্থকে এভাবে ভুলভাবে ব্যবহার করেন) তবে এর অর্থ কি হতে পারে? দ্রুত মন্তব্য বা উপসংহারে না গিয়ে এই ব্যাপারটিকে বিস্তারিতভাবে এবং বিভিন্ন আঙ্গিকে এর অর্থ সম্পর্কে গভীর জ্ঞান নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হবে। কোরআন দারাবাকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালবাসা, দয়া ও অন্তরঙ্গতা তৈরি হয়। অর্থাৎ দারাবা একটি মাধ্যম, যাতে তাদের মধ্যে ভালবাসা, দয়া ও অন্তরঙ্গতা ও ঘনিষ্ঠতা পুনঃ স্থাপিত হয় এবং বিয়ের উদ্দেশ্য পূরণ হয়। কোরআন দারাবাকে এ উদ্ধেশ্য পূরনের সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবে সুপারিশ করেনি। এরপরও আর একটি ধাপ রয়েছে। তাহল- স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের পক্ষ থেকে উপদেষ্টা নিয়োগ করা। এথেকেও বোঝা যাচ্ছে দারাবার উদ্ধেশ্য ভালবাসা, দয়া ও ঘনিষ্ঠতা স্থাপন। সন্ত্রাস, আঘাত বা ব্যথার পক্ষে কোন অজুহাতকেই সমর্থন না করে, তবে এই ক্রিয়াটির সঠিক ব্যাখ্যা কি হতে পারে?
দারাবা ক্রিয়াটি আল কোরআনে সকর্মক ক্রিয়া হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন “আল্লাহ একটি দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন।” (১৬:৭৫)
আবার এটি অকর্মক ক্রিয়া হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছে- “তোমরা যখন যমীনে সফরে বের হও” (৪:১০১)
এক্ষেত্রে একটি সহযোগী অব্যয় ক্রিয়াটির সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।
দারাবা সম্পর্কে ধারণা করা বা সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে ভুল অর্থ নেবার সুযোগ রাখা ঠিক নয় এবং এই ধরনের অপব্যবহার বা এর দ্বারা অসদাচরণের কোন সুযোগ রাখাও ঠিক নয়। এরুপ সতর্কতা শরীয়াহর প্রকৃত উদ্দেশ্য ভালবাসা, দয়া ও সম্মান হবে পরিবারের ভিত্তি এর সঙ্গে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যশীল। কাজেই আমি পুরো ব্যাপারটিকে এর ভিতরেও পুনর্বার নতুনভাবে চিন্তা করেছি। এক্ষেত্রে আল্লাহর বাণীর শাশ্বত চরিত্রকে সামনে রেখেছি, ধর্মীয় আদর্শকে বোঝার প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব এবং নিয়মতান্ত্রিক বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তাকে বিবেচনায় রেখেছি। যার ফলে আমি কোরআনে দারাবা শব্দের ভিন্ন অর্থ এবং এর উৎপত্তিকে পরীক্ষা করার চেষ্টা করেছি। কেননা কোরআনকে কোরআন দিয়েই ব্যাখ্যা করা সর্বাপেক্ষা উত্তম উপায়। কোরআনের সর্বোত্তম ব্যাখ্যা এই আল্লাহর বাণী কোরআন দিয়ে এবং শরীয়াহ্র সাধারণ মাকাসিদ বা উদ্দেশ্য দ্বারা এর সামঞ্জস্য বিধান সম্ভব।

চলবে…

পর্ব-৪

 

‘ধর্ষণের শিকার’ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নারী খেলোয়াড়!


নারী সংবাদ


নারী ভারোত্তোলককে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ফেডারেশনের অফিস সহকারী সোহাগ আলীর বিরুদ্ধে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পুরোনো ভবনে ১৩ সেপ্টেম্বরের দিকে ঘটনাটি ঘটে তবে গতকাল সোমবার ফেডারেশনে এসে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করেছেন ওই নারী খেলোয়াড়ের পরিবার।

জাতীয় ক্লাব ভারোত্তলনে সোনাজয়ী এই নারী ভারোত্তোলক ঘটনার পর থেকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। তিনি এখন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

ঘটনাটি মুলত গত ১৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পুরোনো ভবনের চতুর্থ তলায় ধর্ষণের শিকার হন। ১৫ সেপ্টেম্বর খেলা ছিল। যার জন্য ১৩ সেপ্টেম্বর অনুশীলনের জন্য ডেকে আনা হয়। দেখানো হয়েছিল চাকরির লোভও। ফলে পুরোনো জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চারতলায় ডেকে এনে রুম লাগিয়ে দেওয়া হয়। পরে রুমে নিয়ে আসতে সহায়তা করেছে কর্মচারী মালেক ও আরেকজন নারী ভারোত্তোলক।

খেলা থাকলে ঢাকার বাইরে থেকে আসা খেলোয়াড়েরা সাধারণত জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে অবস্থান করে থাকেন। সেই নারী ভারোত্তোলক গত ১৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ভবনে অবস্থান করছিলেন।

এত বড় ঘটনার পরও নারী ভারোত্তোলকের পরিবার কেন মামলা করেনি? এর কারণ সম্পর্কে মেয়ের মা বলেন, ‘মামলা হলে বাড়িতে থানা-পুলিশ যাবে। গ্রামে মুখ দেখানো যাবে না। এ ছাড়া টাকা-পয়সার ব্যাপার তো আছেই।’

ফেডারেশনে এসে অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা। ফেডারেশনের সহসভাপতি উইং কমান্ডার মহিউদ্দিন আহমেদ বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠনের কথাও জানিয়েছেন

 

শিক্ষিকাকে উত্যক্তের প্রতিবাদ করায় প্রাণ গেল যুবকের


নারী সংবাদ


সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় বখাটের ছুরিকাঘাতে আলাউর রহমান রনি (৩০) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন।

রোববার দুপুরে উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের রগারপাড় গ্রামের লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট স্কুলের সামনে এই ঘটনা ঘটে। এ সময় ঘাতককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে স্থানীয়রা।

নিহত রনি ওই গ্রামের মো. রইছ আলীর ছেলে ও নরসিংপুর বাজারের জিয়া টেলিকমের সত্ত্বাধিকারী।

স্থানীয়রা জানান, গ্রামের নুরুল হকের ছেলে বখাটে সালেহ আহমেদ বিভিন্ন সময় এক শিক্ষিকাকে রাস্তাঘাটে উত্যক্ত করতেন। আলাউর রহমান রনি এর প্রতিবাদ করেন। দুপুরে স্কুলের সামনের রাস্তায় রনিকে একা পেয়ে সালেহ আহমদ ছুরি দিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করেন। পরে আশপাশের লোকজন রনিকে উদ্ধার করে ছাতক উপজেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়ও স্থানীয়রা ধাওয়া করে ঘাতক সালেহ আহমদকে আটক করে থানায় খবর দেন।

দোয়ারবাজার থানার ওসি সুশিল রঞ্জন দাস ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, রাস্তাঘাটে এক শিক্ষিকা ইভটিজিং করার জের ধরে ঘটনাটি ঘটেছে বলে জানা গেছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি। সুত্র: সমকাল।

 

দাম্পত্য সম্পর্কের কিছু বিষয়


দাম্পত্য


পারস্পরিক মিলগুলো থেকে আনন্দ খুঁজে পাওয়া দাম্পত্য জীবনে সুখী হবার একটা কৌশল। সবার চেয়ে সুন্দর, আর তাদের মধ্যে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি, যে নিজের স্ত্রীর জন্য সর্বোত্তম। বাস্তবতার খাতিরে মাঝে মাঝে নীরবতা পালন করা একটি অসাধারন উপায়।

ভালোবাসুন সঙ্গীকে
আপনার সঙ্গী বা সঙ্গিনীর কাছে আপনার সর্বোত্তম প্রশ্নগুলোর একটি হতে পারে, “আমি কীভাবে তোমাকে আরও বেশি ভালোবাসতে পারি?” নতুন সম্পর্কের ঔজ্জ্বল্য সবসময়ই ক্ষণস্থায়ী হয়ে থাকে।

অনুমান করা থেকে বিরত থাকুন
চাইলেই দাম্পত্য জীবনকে চিরসবুজ করে রাখা যায়। যৌক্তিক অনুমানের ভিত্তিতে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। তবে পদক্ষেপ নেওয়ার পূর্বে অনুমানকে যাচাই করে নেওয়াই আবশ্যক।

সম্পর্ক নির্মাণে সহায়তা
সার্থক যৌন সম্পর্ক সার্থক দাম্পত্য সম্পর্কের নিশ্চয়তা দেয় না। তবে তা সার্থক দাম্পত্য সম্পর্ক নির্মাণে সহায়তা করে। মনের ইচ্ছা বা উদ্দেশ্যই সবকিছু নয়, কিন্তু তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর একটি।

গোপনীয়তা রক্ষা
ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করলে তা দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষতি করবে না। তবে সন্দেহজনক বিষয় নিয়ে লুকোচুরি করলে তা দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষতি করবে।

ভয় দূর করুন
সঙ্গী/সঙ্গিনীকে আঁকড়ে ধরে রাখার প্রবণতা এবং ঈর্ষাপরায়ণতার জন্ম হয় ভয় থেকে, ভালোবাসা থেকে নয়। দাম্পত্য সম্পর্কে প্রেমাবেগের প্রয়োজন কখনোই ফুরিয়ে যায় না।

বিশ্বাসযোগ্যতা
বিশ্বাসযোগ্যতা বিশ্বাসযোগ্যতার জন্ম দেয় এবং বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রাখার অভ্যাস গড়ে তোলে। আপনার স্বামী বা স্ত্রী যদি কোনোকিছুকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে, তাহলে তা আপানর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

মনোযোগ দিন
নীরবতাও আক্রমণাত্মক হতে পারে যখন তা অস্ত্র হিসাবে ব্যবহৃত হয়। অধিক উত্তম হলো নিজে কীভাবে সঠিক কাজটি করতে পারেন সেদিনে মনোযোগ দেওয়া। তারপর আপনার সঙ্গী বা সঙ্গিনী কী ভুল করেছে সেদিকে মনোযোগ দেওয়া।

দাম্পত্য সম্পর্ককে মানিয়ে নেওয়া একেবারেই অসম্ভব মনে হলে, কেবল তখনই বিচ্ছেদের দিকে পা বাড়াতে পারেন।

Source: Excerpted from Al Maghrib Institute’s “Fiqh of Love” seminar with Shaykh Waleed Basyouni.

 

চিরিরবন্দরে বাঁশঝাড় থেকে নবজাতক উদ্ধার


নারী সংবাদ


চিরিরবন্দর উপজেলায় এক দিন বয়সের এক মেয়ে নবজাতককে উদ্ধার করেছেন এলাকাবাসী। উদ্ধার নবজাতককে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। গত শুক্রবার দুপুরে উপজেলার পুনট্টি ইউনিয়নের খামার কৃষ্ণপুর গ্রামের আমতলী সিঅ্যান্ডবি রোডের দক্ষিণ পাশে ভেলামতি নদীর ধারে বাঁশঝাড় থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীপাড়ার কয়েকজন মাটিতে অর্ধেক পোঁতা, রক্তাক্ত ও ধুলাবালু মাখা অবস্থায় সদ্য প্রসূত ওই শিশুটির কান্না শুনতে পায় এবং সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে। ওই এলাকার নিঃসন্তান দম্পতি লিপিন মুরমু ও আদরী বাসক শিশুটিকে গ্রহণ করেন। নিঃসন্তান আদুরী বাসক জানান, তাদের বিয়ের দীর্ঘ ১০ বছর হয়েছে। তাদের পরিবারে কোনো সন্তান না থাকায় তারা এ শিশুটি লালন-পালন করতে চান।
সংবাদ পেয়ে উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা গোলাম রব্বানী ওই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ওই দম্পতির বাড়ি থেকে নবজাতকটিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা: মতুজা আল মামুন জানান, শিশুটি হয়তো দীর্ঘক্ষণ মাটিতে পড়েছিল। তাই শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয়েছে। শিশুটির যত্ন সহকারে চিকিৎসা চলছে। দ্রুত সুস্থ হওয়ার আশা করছেন তিনি।
উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা গোলাম রব্বানী জানান, উদ্ধারকৃত শিশুটির অভিভাবককে পাওয়া গেলে তাকে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

 

বদলে যাওয়া শ্রাবণের অনুভূতি


আফরোজা হাসান


আমাদের এখানে গত কয়েকদিন ধরে ঝরঝর শ্রাবণ ঝরেই যাচ্ছে। ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি বললে অবশ্য বেশি ঠিক বলা হবে। কারণ বাংলাদেশের মতো ঝমঝম বৃষ্টি এখানে কালে ভাদ্রে হয়। এখানে যা হয় তা হচ্ছে সারাটা দিন মেঘলা আকাশ আর টিপটিপ বর্ষা পানি। আম্মুর বকুনি খেয়েও বৃষ্টিতে ভেজা, আর কিছু না হোক অন্তত হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির পানিকে স্পর্শ করার দিনগুলো মনেপরে। অথচ এখন বকুনি দেয়ার কেউ নেই কিন্তু ইচ্ছে করে না ছুঁয়ে দেখতে আকাশ থেকে নেমে আসা পানিরাশিকে। দেশে থাকতে যে বৃষ্টি আমার সবচেয়ে পছন্দের জিনিসগুলোর একটি ছিল কিন্তু স্পেন আসার পর বৃষ্টি আমার সবচেয়ে অপছন্দের জিনিসগুলোর একটাতে পরিণত হয়েছে। পরিবেশ-পরিস্থিতি যে মানুষের পছন্দ-অপছন্দের উপর বিরাট প্রভাব ফেলে, সেটা অভিজ্ঞতার দ্বারা প্রমাণিত হতে দেখলাম। গত দশ বছরে মন যে কত পুরনো পছন্দকে বিয়োগ করে নতুনকে যোগ করেছে তা হিসেব ছাড়া।

মনের যে বাগানকে সাজিয়েছিলাম রজনীগন্ধা, বেলী, শিউলি, হাসনাহেনা দিয়ে, সেখানে এখন রং ছড়াচ্ছে অর্কিড, কার্নেশান, বুগেনভিলা আর হিবিসকাস। হঠাৎ কোথাও রজনীগন্ধা, বেলী, শিউলি, হাসনাহেনা দেখলে মনে ভালোলাগা তৈরি হয় সত্যি কিন্তু আগের মতো মুগ্ধতায় ছেয়ে যায় না মন। তেমনটা মুগ্ধ অর্কিড, কার্নেশান, বুগেনভিলা আর হিবিসকাস করে এখন মনকে। ঘুম থেকে উঠেই শুনতে হতো কাকের কা কা ডাক, বারান্দায় এসে দাঁড়ালেই দেখতে পেতাম ঝুলন্ত তারে বসে থাকা কাক। স্পেনে আসার পর কাক দেখিনি একদিনও। স্বামীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এখানে কাক নেই? ইশ কতদিন কাক দেখি না, কাকের কা কা শুনি না। উনি খুব হেসেছিলেন আমার কথা শুনে। তবে অনেক কবুতর দেখতে পাই। আমার জানালায়ও এসে বসে প্রায়ই।

আব্বুর চাকরীর সুবাদে সাভারের আবাসিক এলাকাতে বসবাস করতে হয়েছে। বিশাল এলাকা নিয়ে ছিল আমাদের কলোনী। বিশাল ফুলের বাগান, নানা ধরণের গাছের বনভূমি, রাত হলেই শেয়ালের ডাক, জঙ্গলে গুইসাপের ঘোরাঘুরি….সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর ছিল আমার জানালার পাশে বিস্তৃত ধানের ক্ষেত। সকালে ঘুম থেকে উঠে আমার প্রথম কাজই ছিল জানালা খুলে ধান ক্ষেতের দিকে তাকিয়ে থাকা আম্মুর ডাক শোনার আগ পর্যন্ত। স্পেনে আমার বাসার পাশেই বিশাল বড় পার্ক। যেটি মাদ্রিদের বড় পার্কগুলোর একটি। যখন খুশি যাওয়া যায় নিজেকে প্রকৃতির নিমগ্নতার সাথে একাত্ম করার উদ্দেশ্যে….. কিন্তু ইচ্ছে করে না। অথচ দেশে থাকতে একা একা প্রকৃতির কাছে যাবার নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি থাকা স্বত্ত্বেও ইচ্ছে হতো ধান ক্ষেতের আইল ধরে হেঁটে যাই মাইলের পর মাইল। বর্ষায় ইচ্ছে হতো বৃষ্টি হয়ে ঝরতে, শরতের আকাশে মেঘ হয়ে ভাসতে, চৈত্রের আকাশে চিলের মতো ডানা মেলে উড়তে। এখন আমি স্বাধীন নিজের ইচ্ছেপূরনের ব্যাপারে কিন্তু ইচ্ছেটাই কেন জানি হয় না।

দেশের প্রকৃতি, বাতাস, রোদ, বৃষ্টি সবকিছুতেই কেমন যেন একটা মিষ্টি মিষ্টি ভাব ছিল। ধান ক্ষেতের পাশে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে বুক ভরে শ্বাস নিলে প্রকৃতির সজীবতায় মনের মধ্যে চলে আসতো। এখানে অনেকবার এমন করেছি কিন্তু মনকে সজীবতা ঘিরে ধরেনি। মনেহয় পরিবেশ-পরিস্থিতিও পারে না কিছু কিছু পছন্দকে বদলে দিতে। কিছু কিছু স্থান শূন্যই থেকে যায়, থেকে যায় অপূরণীয়…………!!!