All posts by Oporajita

 

ভিডিও ধারণ করে গৃহবধূকে গণধর্ষণ, মামলা দায়ের


নারী সংবাদ


মাদরাসায় পড়ুয়া সন্তানকে খাবার দিয়ে আসার পথে দুই সন্তানের জননী এক গৃহবধূ (২৫) কে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি ধর্ষণের দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও ধারণ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায় করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদী গ্রামে।

এদিকে গণধর্ষণের অভিযোগে মঙ্গলবার বালিয়াকান্দি থানায় ৫ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী গৃহবধূ। গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে মেডিকেল পরীক্ষা করা হয়েছে।

ধর্ষিতা ওই গৃহবধূ জানান, তার ৮ বছর বয়সী ছেলে উপজেলার ঠেঙ্গাবাড়িয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসার পড়ে। ছেলের জন্য বাড়ি থেকে তিনি ওই মাদ্রাসায় দুই বেলা খাবার দিয়ে আসেন। গত ৩ জানুয়ারী সন্ধ্যায় ছেলেকে খাবার দিয়ে ফেরার পথে কুরশী গ্রামের মোজাইর কলাবাগানের কাছে অভিযুক্ত শামীম, মর্তুজা, মনির, সোহেল, সাব্বির তাকে ঘিরে ধরে।

এ সময় মনির তার গায়ের চাদর দিয়ে মুখ বেঁধে কলাবাগানের মধ্যে নিয়ে যায়। এরপর অভিযুক্তরা তাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে পালাক্রমে ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণের দৃশ্য মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করে ও ছবি তোলে।

তিনি আরো জানান, পালাক্রমে ধর্ষণের পর অভিযুক্ত ধর্ষকরা তাকে হুমকি দিয়ে চলে যায়। এরপর অসুস্থ্য অবস্থায় তিনি বাড়ি গিয়ে স্থানীয় ডাক্তারের চিকিৎসা নেন।

এ ঘটনার দুইদিন পর মর্তুজা ধর্ষিতা গৃহবধূর বাড়িতে এসে ধর্ষণের ভিডিও দেখিয়ে ২০ হাজার টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে ভিডিও ও ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়া হবে বলে হুমকি দেয়। একপর্যায়ে লোকলজ্জার ভয়ে কাউকে কিছু না বলে ওই গৃহবধূ তাকে ২৫ হাজার টাকা দেয়। এদিকে টাকা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে অভিযুক্ত ধর্ষকদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হলে গণধর্ষণের বিষয়টি জানা-জানি হয়।

এ ব্যাপারে মঙ্গলবার বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের ঠেঙ্গাবাড়ীয়ার মৃত আবু বক্করের ছেলে শামীম (২৫), কুরশীর সোনাইডাঙ্গী গ্রামের মমিন মন্ডলের ছেলে মর্তুজা (২০), আয়ুব আলীর ছেলে মনির (২৫), খালেক শেখের ছেলে সোহেল (২৬) ও একই গ্রামের মাজেদের ছেলে সাব্বির (২০) কে আসামী করে ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন ওই গৃহবধূ।

বালিয়াকান্দি থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ওবায়দুল হক জানান, গণধর্ষণের বিষয়ে শনিবার দুপুরে রাজবাড়ী পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি, বিপিএম, পিপিএম, সহকারী পুলিশ সুপার (পাংশা সার্কেল) ফজলুল করিম, থানার ওসি একেএম আজমল হুদা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। মঙ্গলবার ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

তিনি আরো বলেন, তাকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে মেডিকেল পরীক্ষা করা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করছেন থানার ওসি একেএম আজমল হুদা। আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।
সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

জোসনার দিন বদলের চেষ্টা


নারী সংবাদ


বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে এক সময় সমাজ ব্যবস্থায় সনাতনী ধ্যান-ধারণা, মূল্যবোধে ও লিঙ্গ বৈষম্য ছিল প্রকট। বর্তমানে সেই ধ্যান-ধারণা তথা দৃষ্টি ভঙ্গীতে এসেছে অনেক পরিবর্তন। তারপরও গ্রামের লোকজনের মধ্যে এখনো সেকেলে চিন্তাধারা বিরাজমান। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা এবং শিক্ষার অভাবে এত দিন পিছিয়ে থাকলেও বর্তমানে গ্রামে বসবাসরত নারীরা সেই অচলায়তন ভেঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে এগিয়ে আসছে। বিশেষ করে গত দশ বছরে এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন এবং অগ্রগতি আজ বিশ্বে প্রশংসিত। নারীর ক্ষমতায়ন একটি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও লিঙ্গ সমতার প্রতিফলক। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের কাছ থেকে বিশ্বের বেশ কিছু শেখার আছে। বর্তমান সরকার লিঙ্গ সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়নের জন্য এমডিজি ২০১৫ অর্জন ও নারীর প্রতি সকল বৈষম্য বিলোপ (সিডও) এর বিভিন্ন ধারা বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে এমডিজি ৩ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। তার প্রতিফলন হলোÑ বাংলাদেশের গ্রামীণ অনগ্রসর নারীদের ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ।
দেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা দিনাজপুর। এক সময় উত্তর বঙ্গকে দেশের সবচেয়ে দরিদ্র অঞ্চল বলা হলেও এখন চিত্র পুরোটাই উল্টো। এখন সংসারে নারী-পুরুষ সমানভাবে অর্জন করে । আবার কখনো কখনো নারীরাই চালাচ্ছেন সংসার। দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার একইর গ্রামের নারীদের কাছে একটি প্রেরণার নাম হলেন জোসনা আরা (৪৪)। সংসারের কাজের পাশাপাশি অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তিনি নিজেও সংসারের ব্যয় নির্বাহে ভূমিকা রাখছেন। তিনি বলেন, ‘মোর জামাই যা টাকা কামায় ওলা দিয়ে হামার সংসার চলে না। দুই বেটা-বেটির খিলানোর ভার হামার উপরি’। জোসনা এক ছেলে ও এক মেয়ের জননী। বিয়ের পর থেকেই তার অভাবের সংসার। স্বামী বুদা মাঠে কাজ করে যে আয় রোজগার করতেন তা দিয়ে বেশ টানাপোড়নের মধ্যেই সংসার চলতো তাদের। তিনি কখনও শিক্ষার আলোয় আলোকিত হতে পারেননি। কিন্তু তিনি নিজের ছেলে মেয়েকে এই আলো থেকে বঞ্ছিত হতে দিতে চাননি। তাই তিনি তার ছেলে এবং মেয়ে দুজনকেই স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন। স্কুলে ভর্তি করানোর পর তাদের অভাবের মাত্রা আরও বেড়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে তিনি সিদ্ধান্ত নেন ঘরের গন্ডি থেকে বের হয়ে তিনি নিজেও সংসারের হাল ধরবেন। তাই তিনি স্থানীয় এক ফার্মে গরু পরিচর্যার কাজ নেন যেখানে তিনি পারিশ্রমিক হিসেবে মাসিক তিন হাজার টাকা পেতেন। এই টাকার পুরোটা তিনি সংসারের ব্যয় নির্বাহে খরচ করতেন না। জোসনা বললেন, ‘জিলা টাকা মুই কামাছুনু ওলাত্তে কিছু সংসারোতও দিছিনু। বাকি যা টাকা আছলো ওলা জমে থুয়ে দিছিনু। কারণ মোর মনোত্ত আছোলো নিজে নিজে কেছু এটা করার’। যখন তার কাছে জমানো মোটামোটি ১৫ হাজার টাকার মত হয় তখন তিনি যে ফার্মে কাজ করতেন তার মালিকের কাছে তার পরিকল্পনার কথা বলেন এবং আর্থিক সহায়তা চান। পরবর্তীতে ফার্মের মালিক তাকে আরও ২০ হাজার টাকা ঋণ দেন। এই ঋণের টাকা আর তার সঞ্চয় করা টাকা দিয়ে তিনি একটি উন্নত জাতের গাভী কিনেন এবং এভাবেই একটি গাভী দিয়ে তিনি তার স্বাবলম্বী হওয়ার যাত্রা শুরু করেন। এই গরুর দুধ স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে তিনি মাসে আরও কিছু আয় রোজগার করা শুরু করলেন। গরু কেনার দুই বছরের মাথায় তিনি যে ফার্ম থেকে ঋণ নেন তা তিনি পরিশোধ করে ফেলেন। ইতিমধ্যে তার বাড়িতে গরুর সংখ্যা দাঁড়িয়ে যায় দু’টিতে।
এখানেই তার স্বাবলম্বী হওয়ার যাত্রা শেষ হয়নি। তিনি বললেন, ‘ঋণ শোধ করার পর মুই ফার্মেত কাজ করা ছাড়ে দিছিনু। মর জামাই জি টাকা কামাসোলো আর মুই দুধ থিকে জি টাকা পাছুনু ওলা দিয়ে হামার সংসার ভাল চলছোলো। এই বছর মুই এনা এনা করে টাকা জমে ফির ৫০ হাজার টাকা দিয়ে একটা ফ্রিজিয়ান জাতের বকনা কিনি। তার সাথে হামার বাড়িত ৬০টা রাজ হাঁস আর ৩০টা মুরগি পালি’। তিনি এই মুরগি ও রাজ হাঁসের ডিম এবং গরুর দুধ বাজারে বিক্রি করে বর্তমানে মাসে ১৫ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা আয় করেন।
জোসনা খুব বিচক্ষণতা এবং সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে মাত্র চার বছরেরও কম সময়ে সাফল্য পেয়েছেন। তার স্বামী এবং তার আয় রোজগারে তাদের সংসার এখন ভালোভাবেই চলছে। বসত বাড়িটি করেছেন পাকা। কথায় আছে যে রাধে, সে চুলও বাঁধে! একটা সময় পর্যন্ত এ প্রবাদটা সত্যি হলেও কালের পরিক্রমায় নারীরা এখন শুধু রেঁধে কিংবা চুল বেঁধে নয়, তারা পুরুষের সাথে সংসারের হাল ধরে নিজের অবস্থার পরিবর্তন করেছেন। তার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ হলেন জোসনা।

সুত্রঃ বাসস।

 

আমার রঙে রাঙিয়ে যাব………..


আফরোজা হাসান


ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে মেঘলা আকাশ দেখে হঠাৎ মন খারাপ হয়ে গেলো নুশেরার। বৃষ্টি অসম্ভব পছন্দ করলেও গুমোট ধরা মেঘলা আকাশ সবসময়ই তার মন খারাপ করে দেয়। রুমে এসে ডায়েরী নিয়ে বসলো। গতরাতের লেখাতে চোখ বুলাতেই খুব হাসি পেলো। ভাবলো…ধ্যাত কি সব লিখেছি! ডায়েরী বন্ধ করে আবারো বারান্দায় এসে দাঁড়ালো নুশেরা। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলো মেঘ আর সূর্য জমিয়ে লুকোচুরি খেলছে। দুরন্ত দুটি শিশু যেন কেউ কারো চেয়ে কম না। মামণি এসে পেছন থেকে কাঁধে হাত রাখতেই মনের জগত থেকে বাইরে বেড়িয়ে এলো নুশেরা। মার দিকে তাকিয়ে আদুরে গলায় বলল, আমি কিন্তু আজ ক্লাসে যাবো না মামণি। এমন দিনে ক্লাসে গিয়ে কোন মজা নেই। মামণি হেসে বললেন, ঠিকআছে ইচ্ছে না হলে যাবি না। এখন চল নাস্তা করবি। নাস্তা সেরে গতরাতের অর্ধেক করে রাখা ফুলের তোড়াটা শেষ করতে বসলো সে। ছোট ভাইয়া বাইরে যাবার সময় নুশেরাকে দেখে কাছে এসে বসে বলল, কিরে সাত সকালেই ফুল নিয়ে বসেছিস যে?

-তোমার বিয়ের সময় যাতে নিজ হাতে ফুল দিয়ে সবকিছু সাজাতে পারি তাই ফ্লাওয়ার ডেকোরেশনের কোর্স করছি ভাইয়া।

-(হেসে) তাহলে বরং তুই গহনাগাঁটি বানানোর কাজ শেখ। কারণ এখনকার মেয়েরা শরীর ভর্তি গহনা না হলে বিয়ে করতে চায় না। কয়েক বছর পর দেখবি আবদার করবে বাড়িঘর ডেকোরেশনও করতে হবে হিরা-মণি-মুক্তা দিয়ে।

-মেয়েদের চাহিদা সম্পর্কে এমন ধারণার পেছনে কারণ কি তোমার?

-বন্ধুদের অবস্থা দেখে এমন ধারণা হয়েছে। এখন তো বিয়ে করতে চাওয়াটাই বিপদ।

-তুমি তাহলে এইসব বিপদে না গিয়ে মহৎ কিছু করো। শত শত অসহায় কন্যা দায়গ্রস্ত পিতা-মাতা আছেন যারা সামর্থ্য নাই তাই মেয়েদের বিয়ে দিতে পারছেন না, তাদের কাউকে বিয়ে করো। অনেক মেয়ে আছে দেখতে খুব একটা সুন্দর না, কারো গায়ের রঙ কালো, কেউ খুব বেশি খাটো, নাহয় তাদের কাউকে বিয়ে করো। এইসব অসহায় মেয়েরা তোমাদের কাছে কিছুই চাইবেনা একটু ভালোবাসা আর আশ্রয় ছাড়া।

-(হেসে) চাইবে না নিশ্চিত হচ্ছিস কিভাবে?

-নিশ্চিত হচ্ছি না জাস্ট ধারণা করছি। তুমি তোমার ধারণা বলেছো তাই আমি আমারটা বললাম।

-(হেসে) তোর সাথে কথায় পারবো না তাই আগেই সারেন্ডার করলাম। হঠাৎ ফ্লাওয়ার ডেকোরেশনের কোর্স করার কারণ কি তোর?

-সত্যিই তোমাদের বিয়ের সময়ের কথা চিন্তা করে ভর্তি হয়েছি কোর্সে। আমি নিজ হাতে সাজাতে চাই আমার ভাইয়াদের নতুন জীবনের শুভ সূচনার প্রথম অধ্যায়কে।

-তোকে দেখি সারাক্ষণই পরিবারের সবাইকে নিয়ে নানা ধরণের স্বপ্ন দেখতে। আচ্ছা নিজেকে নিয়ে কোন স্বপ্ন নেই তোর মনে?

-(হেসে) অবশ্যই আছে। তবে আমার স্বপ্নের কথা কাউকে বলতে চাই না আমি।

-কেন?

-কারণ আমি আমার স্বপ্নকে ধরে রাখতে চাই ভাইয়া। আর আপনজনদেরকে স্বপ্নের কথা বললে, তারা সেটা পূরণ করার চেষ্টা করে। এতে বেশির ভাগ সময়ই স্বপ্নটা ভেঙ্গে যায়। আর আমার ধারণা স্বপ্ন অপুর্ণ থাকার চেয়ে স্বপ্ন ভেঙ্গে যাওয়াটা বেশি কষ্টের। যদিও স্বপ্ন মানে আশা। তাই স্বপ্ন অপুর্ণ থাকা মানে আশা পূরণ না হওয়া। কিন্তু অপুর্ণ স্বপ্নের পুর্ণ হবার সম্ভাবনা থাকে কিন্তু ভেঙ্গে গেলে তো সেই সম্ভাবনার আশাটুকুও থাকে না।

-(হেসে) তোর চিন্তা-ভাবনাগুলো সত্যিই অন্যরকম। ভালো লাগে যখন তোর মতো মেয়েদের দেখি।

-(অবাক কণ্ঠে) তোর মতো মেয়ে মানে? ভাইয়া শোন আমি দুনিয়াতে সিঙ্গেল পিস। অনেক সময় তো আমার নিজের কাছেই দুঃসাধ্য মনেহয় আমার মতো মেয়ে হতে পারাটাকে।

-(হেসে বোনের কান টেনে) তোর মতো চিড়িয়া আসলে দুনিয়াতে সিঙ্গেল পিসই আছে। আর সেটা হচ্ছিস তুই নিজে। আচ্ছা ফ্লাওয়ার ডেকোরেশন কর আমি যাই।

-আমার প্রস্তাবটা কেমন লাগলো বললে নাতো?

-কোন প্রস্তাব?

-অসহায় কাউকে বিয়ে করার।

-(হেসে) অসহায় কাউকে ঝুলাতে চাইছিস মনেহচ্ছে আমার গলায়?

-ভাইয়া আমার এক ক্লাসমিট আছে। এককথায় অসাধারণ একটি মেয়ে। বিয়ের দেড় বছরের মাথায় রোড এক্সিডেন্টে ওর স্বামী মারা গিয়েছে। সাথে সাথে হারিয়ে গিয়েছে মেয়েটির জীবনের সব রঙ সব স্বপ্ন-হাসি-আনন্দ। তুমি কি পারো না ওকে বিয়ে করে ওর জীবনটাকে আবারো স্বপ্নের রঙে রাঙিয়ে দিতে?

-তুই কি সিরিয়াস?

-আমার কি ধারণা জানো ভাইয়া? আমাদের সবার মনেই একটি করে রংধনু আছে। আর সেই রংধনুর ক্ষমতা আছে নিজের সাথে সাথে অন্যের জীবনকেও রাঙিয়ে দেয়ার। তাই নিজ নিজ গণ্ডির ভিতরে কারো জীবন থেকে যদি রঙ হারিয়ে যায়, আর আমাদের যদি সুযোগ থাকে, তাহলে উচিত নিজের রঙয়ে তাকে রাঙানোর চেষ্টা করা। কথা বলছো না কেন?

-তোর কথাটা হজম করতে সময় লাগছে।

-বেশি কষ্ট হলে হজমী খাও।

-(হেসে) হজমী খেতে হবে না। আমার হজম শক্তি খুব ভালো। তবে ভেবে দেখতে চাচ্ছি তোর কথাটা।

-ভাবো। ভাবতে ভাবতে ভাবুক হয়ে যাও। তবে জেনে রাখো যখনই আমার সামনে সুযোগ আসবে নিজের রঙে কাউকে রাঙানোর আমি ভেবে সময় নষ্ট করবো না। বরং আমার রঙে রাঙিয়ে যাবো কারো মন কিংবা জীবন……………

(কাউকে নিজের রঙে রাঙিয়ে দেবার জন্য আসলে খুব বেশি কিছু করার প্রয়োজন পরে না বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই। একটু আশার বাণী, উৎসাহমূলক কিছু কথা, কষ্টের সময় একটু পাশে থেকে ভরসা দেয়া, বিপদে পড়লে সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করা ইত্যাদি দ্বারা সম্ভব অন্যেকে রাঙিয়ে দেয়া।)

 

গোসলের সময় একা পেয়ে ধর্ষণ চেষ্টা, স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা


মোঃ জাকির হোসেন


নবম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী সুমি রাণী। ক্লাসের যে কয়েকজন শিক্ষার্থী পড়ালেখাকে নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেছিল, সুমি রাণী তাদের অন্যতম। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল। সম্প্রতি এক বখাটের কুনজর পড়ে সুমির (১৪) উপর। নিজের বাড়ি ও স্কুলে যাওয়া আসার রাস্তাসহ বিভিন্ন স্থানে সুমিকে উত্যক্ত করতো এই বখাটে যুবকের। অভিযুক্ত বখাটের নাম সূর্য রায় (৩৫)।

সর্বশেষ শনিবার সুমিকে বাড়ির গোসলখানায় একা পেয়ে ধর্ষণ চেষ্টা করে লম্পট সূর্য। একপর্যায়ে সুমির ভাই এসে লম্পটের হাত থেকে তাকে রক্ষা করলেও পরে লজ্জায় ও আতঙ্কে গলায় আত্মহত্যা করে সে। ঘটনাটি ঘটেছে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নে। নিহত সুমি ওই ইউনিয়নের ভুজারীপাড়ার দিনমজুর হরেন চন্দ্র রায়ের কন্যা। সে বাঙ্গালীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিল।

এদিকে অভিযুক্ত বখাটে সূর্য রায় একই গ্রামের বাসিন্দা। সে দুই সন্তানের জনক এবং পেশায় একজন ইজিবাইক চালক বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় ২ মার্চ শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে নিহত স্কুলছাত্রী সুমির মা ময়না রাণী বাদী হয়ে সৈয়দপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

নিহত স্কুলছাত্রী সুমির পরিবারের সদস্যরা জানায়, শনিবার বিকেলে বাড়ি এসে গোসলখানায় গোসল করতে যায় সুমি। এসময় তাকে বাড়িতে একা পেয়ে গোসলখানায় সুমিকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায় বখাটে সূর্য। একপর্যায়ে সুমির পালিত ভাই বকুল চন্দ্র বাড়িতে এলে বখাটে সূর্য রায় পালিয়ে যায়।

এসময় সূর্যকে আটক করার জন্য সুমির ভাই বকুল চন্দ্র বাড়ির বাইরে আসে। এরই ফাঁকে লজ্জা ও আতঙ্কে সুমি নিজ শোয়ার ঘরে গিয়ে গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করে। পরে তাকে উদ্ধার করে সৈয়দপুর ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নেয়ার পথে সে মারা যায়।

নিহত সুমির মা ময়না রাণী জানান, দীর্ঘদিন থেকে তার মেয়ে সুমিকে উত্যক্ত করতো বখাটে সূর্য। এ উত্যক্ত করার ঘটনা ইতোপূর্বে সূর্য ও তার পরিবারকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু তারা কোনো কর্ণপাত করেনি।

প্রতিবেশী শিল্পী রাণী ও সুমীর পিসি জোসনা রাণী জানান, বখাটে ও লম্পট চরিত্রের সূর্য অনেক দিন থেকেই সুমিকে উত্যক্ত করে আসছে। স্কুলে যাওয়ার পথে প্রায়ই সে সুমির হাত ধরে টানা হেচড়া করতো। আমরাও বেশ কয়েকবার এমন ঘটনা দেখেছি। কিন্তু সূর্যকে তার পরিবারের লোকজন বাধা না দেয়ায় সে আরও বেশী বেপরোয়া হয়ে উঠে।

তারা আরো বলেন, একারণেই শনিবার বিকেলে সুমিকে একা পেয়ে স্নানের (গোসলের) সময় জাপটে ধরে শ্লীলতাহানী ও ধর্ষণের চেষ্টা করে সূর্য। বখাটে সূর্যের কারণে একজন মেধাবী ছাত্রী অকালে ঝরে গেলো। আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।

এদিকে দায়েরকৃত মামলা তুলে নেয়ার জন্য সুমির পরিবারের সদস্যদের ওপর বখাটে সূর্য রায়ের লোকজন চাপ দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি ওয়ার্ড মেম্বার বজু নিহত সুমির বাবাকে ২০ হাজার টাকা দিয়ে ঘটনা আপস-মীমাংসা করার জন্যও চাপ দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সৈয়দপুর সার্কেল) অশোক কুমার পাল বলেন, হত্যার মামলায় ৩০৬ ধারায় থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্ত আসামীকে গ্রেফতার করার জোর চেষ্টা চলছে। প্রাথমিক তদন্তে আসামী একজন লম্পট চরিত্রের বলে জানা গেছে।

ধর্ষণ চেষ্টার পর আত্মহত্যা করে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সুমি রাণী

– নয়া দিগন্ত

 

মাছের চপ


রেসিপি


উপকরণ :
১. যেকোনো মাছ (ভেটকি, রুই বা ইলিশ) পাঁচছয়টি বড় টুকরা,
২. আলু মাঝারি ৩টি,
৩. একটি বড় পাউরুটির টুকরা,
৪. পেঁয়াজ মিহিকুচি আধা কাপ,
৫. আদাবাটা ১ চা-চামচ,
৬. রসুনবাটা ১ চা-চামচ,
৭. কাঁচামরিচ-কুচি ১ টেবিল-চামচ,
৮. মরিচগুঁড়া ১ চা-চামচ,
৯. হলুদগুঁড়া ১ চা-চামচ,
১০. ধনিয়াগুঁড়া ১ চা-চামচ,
১১. ভাজা জিরাগুঁড়া আধা চা-চামচ,
১২. লবণ স্বাদমতো,
১৩. তেল ভাজার জন্য।

প্রণালি :
মাছের টুকরাগুলো ভাপে সেদ্ধ করে কাঁটা বেছে নিতে হবে। সেদ্ধআলু ভালোভাবে চটকে নিন। এবার পাউরুটি পানিতে ভিজিয়ে সঙ্গে সঙ্গে তুলে নিতে হবে। তারপর মাছ, আলু, রুটি খুব ভালো করে মেখে নিতে হবে। একে একে তেল বাদে সব উপকরণ খুব ভালো করে মিশিয়ে হাতে পছন্দ মতো আকার দিন। এবার গরম তেলে চপগুলো ছেড়ে দিয়ে মাঝারি আঁচে ভাজতে হবে। হালকা বাদামী রঙ আসলে নামিয়ে নিলেই হল। ইফতার, সাদাভাত, পোলাও বা বিরিয়ানির সঙ্গে খেতে মাছের চপের জুড়ি নেই।

রেসিপি : বাংলাদেশী রেসিপি।

 

শিশুদের কুরআন শিক্ষা – ভাবনার বিষয়


কানিজ ফাতিমা


সচরাচর মুসলমানেরা তাদের শিশুদের ছোটবেলা থেকেই শুধু জাহান্নামের আগুনের ভয় দেখান, কিন্তু আল্লাহর ভালোবাসা, দয়া এবং সমবেদনা অথবা জান্নাতের সৌন্দর্যের কথা সেভাবে তুলে ধরেননা । আমরা শিশুদেরকে ভয় যতটা জোর দিয়ে দেখাই যে তারা যদি আল্লাহর অমান্য করে, মা-বাবার কথা নাশুনে , বা পাপ কাজে লিপ্ত হয় তাহলে তাদের দোজখের আগুনে জ্বালানো হবে; ততটা তাদেরকে আশাবাদ দেই না যে তারা যদি সৎ কাজ করে, আল্লাহ ও মা-বাবাকে মান্য করে এবং কোনো ভালো কাজ করে তবে তাদেরকে পুরস্কৃত করা হবে। আমরা সবসময় তাদেরকে ভয় দেখাই, জাহন্নামের হুমকি দেই অথচ খুব কমই তাদেরকে সাহস যোগাই অথবা ভালো আচরণের জন্য আল্লাহ’র ভালোবাসার কথা, পুরুষ্কারের কথা উল্লেখ করি। এমন পরিবেশে, শিশুরা আতঙ্কগ্রস্ত ও ভীতু হিসাবে বেড়ে উঠে। ফলে তাদের মধ্যে নেতীবাচক মানসিকতা জন্মায় এবং আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি দেখা দেয় এবং তদেপেক্ষাও খারাপ যে তারা তাদের বিশ্বাসের প্রতি নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ে।

শিক্ষকরা সাধারণত: কুরআনের শেষ অধ্যায় থেকে (ত্রিশ পারা) শিশুদের পড়ানো শুরু করে। এই অধ্যায় ছোট ছোট সূরা সম্বলিত যেগুলো ওহী আসার প্রাথমিক পর্যায়ে মক্কায় নাযিল হয়। মূলত কুরাইশ গোত্রের বিপথগামী, অহংকারী এবং অত্যাচারী পৌত্তলিক নেতাদের (আবু জেহেল, আবু লাহাব) উদ্দেশ্যে এই সূরা গুলো নাযিল হয়েছিলো। তাছাড়া যারা মুসলমানদের অত্যাচার করছিলো, মুসলমানদের মধ্যে থেকে কয়েকজনকে হত্যা করেছিলো, নবীজী (সাঃ)কে হত্যার পরিকল্পনা করছিলো এবং বিশ্বাসীদের ধ্বংস করতে যুদ্ধ বাধিয়ে ছিলো-কুরআন নাযিলের সূচনার অধ্যায়গুলো মুলত তাদের উদ্দেশ্যেই। এই সূরা গুলো এসব অত্যাচারীদের তাদের হুশ/জ্ঞান ফিরিয়ে আনার জন্য ছিলো। এদিকে আয়াতের দৃঢ় কথাগুলো তাদের কানে বজ্রধ্বনি হিসাবে কাজ করতো কারণ আয়াতগুলো ভয়ানক সতর্কবার্তা সম্বলিত ছিলো। যেমন নিচের আয়াতগুলো-

“আবু লাহাবের হস্তদ্বয় ধ্বংস হোক এবং ধ্বংস হোক সে নিজে” (সূরা লাহাব, ১)

“প্রত্যেক পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারীর দুর্ভোগ” (সূরা হুমাজাহ, ১)

“আপনার কাছে আচ্ছন্নকারী কেয়ামতের বৃত্তান্ত পৌঁছেছে কি? অনেক মুখমন্ডল সেদিন হবে লাঞ্ছিত, ক্লিষ্ট, ক্লান্ত। তারা জ্বলন্ত আগুনে পতিত হবে। তাদেরকে ফুটন্ত নহর থেকে পান করানো হবে। কন্টকপূর্ণ ঝাড় ব্যতীত তাদের জন্যে কোন খাদ্য নেই” (সূরা গাসিয়া, ১-৬)

“যারা মাপে কম করে, তাদের জন্যে দুর্ভোগ (সূরা মুতাফফিফিন, ১)

“বলুন, হে কাফেরকূল” (সূরা কাফিরুন, ১)

“যখন পৃথিবী তার কম্পনে প্রকম্পিত হবে” (সূরা যিলযাল, ১)

এটা খুবই দুঃখজনক যে এসব কঠিন বার্তা কোমলমতি শিশুদের উদ্দ্যেশে নাযিল না হলেও এগুলোই শিশুদের সর্বপ্রথম শিখানো হয়। হ্যা, প্রথমেই এ সূরাগুলো শিখানোর একটা কারণ হচ্ছে এগুলো ছোট এবং সহজে মুখস্ত করা যায়। তবুও শিশুদের এ বয়সে জাহান্নাম ও শাস্তির ভয় দেখানোর বদলে আমাদের উচিত তাদেরকে আল্লাহর ভালোবাসা, মা-বাবার দয়া এবং জান্নাতের সৌন্দর্য প্রভৃতি বিষয়ে বুঝানো।এর ফলে শিশুকাল থেকে তাদের মনে নিরাপত্তার অনুভুতি, ভালোবাসা, দয়া, কোমলতা, মহত্ত্ববোধ, উদারতা এবং সহানুভুতি প্রভৃতি বৈশিষ্ট্যগুলো ধীরে ধীরে প্রবেশ করবে। আল্লাহর ভালোবাসা, দয়া, মমতা, ক্ষমাশীলতা, ধৈর্যশীলতা এবং উদারতা ইত্যাদি আল্লাহর সুন্দর গুণাবলীগুলোর শিক্ষার মধ্য দিয়েই শিশুদের প্রথম পাঠ শুরু করা উচিত। প্রথমে তাদের মনে এই বিশ্বাস দিতে হবে যে তারা ভালো এবং আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন। এরপর তাদেরকে শেখাতে হবে যে তাদেরও উচিত আল্লাহকে ভালবাসা। শিক্ষার ক্রমটি এমন হতে হবে যে , প্রথমত তাদের প্রতি আল্লাহর ভালোবাসা সম্পর্কে তাদের অবগত করা, তারপরে তাদেরকে আল্লাহকে ভালোবাসতে হবে সেই বাধ্যবাধকতা শেখানো।

এরপর যখন সন্তান কিছুটা বড় হবে এবং বুঝতে শিখবে, তখন মা-বাবা ধীরে ধীরে তাদেরকে খারাপ কাজের জন্য জাহান্নামের শাস্তির কথা বলতে শুরু করবেন। যেসব সূরাগুলো বড় বড় গুনাহের জন্য শাস্তির আগাম সতর্ক বার্তা দেয়- সেসব সূরাগুলো এসময় শুরু করা উচিত, যাতে তারা এসব থেকে ভয়ে সন্ত্রস্ত না হয়ে বরং শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।এটা তাদের শৈশবের শেষ পর্যায় কিংবা টিনেজ (১৩-১৯) বয়সের দিকে হতে পারে যখন তারা কিছুটা বড় হয়েছে এবং কিছুটা জটিল বিষয়গুলো ও কর্মের ফলাফল বুঝতে সক্ষম।

কুরআনের শিক্ষা দেবার সময় আমদের সচেতন থাকতে হবে যে আমরা শিশুর দর্শন ও মানসিকতাকে কিভাবে তৈরী করছি। এটা আবশ্যক যে, শিশুদের বেড়ে উঠার সাথে সাথে বাবা- মাকে সচেতনতার সাথে তাদের বয়সের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সুরা বা আয়াত নির্ধারণ করতে হবে।রাসূলুল্লাহ সাঃ এর বেশির ভাগ সাহাবী তাদের প্রপ্তবয়সে (শিশু বয়সে নয়) কুরআনের সাথে পরিচিত হন।

 

জীবন


কাব্যানুবাদ: আব্দুল্লাহ মাহমুদ নজীব


কারো ভাঙা বুকে যদি দিতে পারি গাঢ় মমতার ছোঁয়া
সার্থক হবে জীবন আমার, বৃথাই যাবে না খোয়া।
বিপন্ন কোন জীবনকে যদি স্বপ্ন দেখাতে পারি,
ব্যথাতুর মনে যদি হতে পারি প্রশান্তি-সঞ্চারী;
মূর্ছিত যেই দোয়েলটা চায় ফিরতে আপন নীড়ে
আমার হাতেই সে যদি আবার সুখনীড় পায় ফিরে-
সার্থক হবে বেঁচে থাকা এই অর্থহীনের ভীড়ে।

 

ফিলিপাইনকে গোল বন্যায় ভাসাল মেয়েরা


নারী সংবাদ


প্রতি বছর একাধিক ভয়াবহ ঝড়ের জন্য নামকরা হাজার দ্বীপের দেশ ফিলিপাইন। বুধবার এই ফিলিপিনোরা দেখলো বাংলাদেশ ঝড়। লাল সবুজ জার্সীধারী বাংলার মেয়েদের তাণ্ডেবে স্রেফ খড়কুটোর মতো উড়ে গেছে আসিয়ান অঞ্চলের দেশটি। এই বাংলা টর্নেডোর নেতৃত্বে তহুরা খাতুন। ময়মনসিংহের কলসিন্দুরের এই ফরোয়ার্ডের ৪ গোল ছোটন বাহিনীকে বিশাল জয়ে সাহায্য করেছে।

১০-০ গোলের জয়ে বাংলাদেশের দারুন শুরুও হলো এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ মহিলা ফুটবলের দ্বিতীয় রাউন্ডে। যা তাদের ফাইনাল রাউন্ডের পথে খানিকটা এগিয়ে নিলো। শুক্রবার মারিয়া মান্ডাদের দ্বিতীয় ম্যাচ স্বাগতিক মায়ানমারের বিপক্ষে।

মিয়ানমারের রাজধানী ইয়াংগুন থেকে ৪০০ মাইল উত্তরে ৯ ঘন্টা বাস ভ্রমণের পথ মান্ডালা শহরের। এই মান্ডলার থিরি স্টেডিয়ামে বুধবার প্রথমার্ধেই বাংলাদেশ দল তাদের জয় নিশ্চিত করে। এই পঁয়তাল্লিশ মিনিটেই হাফ ডজন গোল। বিরতির পর দুই ফরোয়ার্ড তহুরা এবং ছোট শামসুন্নাহারকে তুলে নেন কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটন। এরপরও থামেনি বাংলার বাঘিনীদের সাঁড়াশি আক্রমণ। যার ফলশ্রুতিতে বিরতির পর আরো চার বার ফিলিপাইনের জালে বল যাওয়া।

এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলের বাছাই পর্বে সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ঢাকার কমলাপুর স্টেডিয়ামে চার খেলায় ২৭ গোল করলেও ওপেন চান্স মিস করেছিল অগনিত। বুধবার বাংলাদেশ সময় দুপুর আড়াইটায় ( স্থানীয় সময় তিনটা) শুরু হওয়া ম্যাচে লাল-সবুজ মেয়েরা তেমন সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেনি। বরং কিছু হাফ চান্স থেকেও গোল আদায়। ছোটন বাহিনী আরো কয়েকটি গোল পায়নি বিপক্ষ গোলরক্ষকের দৃঢ়তায়।

বয়স ভিত্তিক মহিলা ফুটবলে এতো দিনের অচেনা প্রতিপক্ষকে (সিনিয়র লেভেলে ২০১৪ সালে দেখা এবং ০-৪- এ বাংলাদেশের হার) নিয়ে যে আতঙ্ক ছিল তা এদিন ২ মিনিটইে উধাও হয়ে যায় বড় শামসুন্নাহার – তহুরা কম্বিনেশনে। এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বাম দিক থেকে শামসুন্নাহারের ক্রসে ফাঁকা পোস্টে বল জালে পাঠান তহুরা খাতুন। ১৬ মিনিটে তহুরা ব্যবধান দ্বিগুণ করেন অধিানায়ক মারিয়া মান্ডার থ্রু পাস থেকে বল পেয়ে। ১৮ মিনিটে মারিয়ার কর্নারে ছোট শামসুন্নাহারের হেড বিপক্ষ গোলরক্ষক মারগ্রিধির হাতে লেগে জালে জড়ায়। ২৪ মিনিটে তহুরার হ্যাটট্রিক পূর্ন ছোট শামসুন্নাহারের ক্রসে হেড করে।

৩৬ মিনিটে এই ফরোয়ার্ড তার চতুর্থ গোল পান শামসুন্নাহারের ডান দিক থেকে করা ক্রসে। দুই গোলের উৎস বড় শামসুন্নাহার ৪২ মিনিটে নিজে প্রথম বারের মতো ফিলিপিনো কিপাকে পরাস্ত করেন পেনাল্টি থেকে। বক্সে হ্যান্ডবল হলে স্পট কিকের নির্দেশ হিজাব পরা ইরানী রেফারির।

বিরতির পর দুই নতুন ফরোয়ার্ড রিতুপর্না এবং রোজিনা মাঠে নামেন। তখন জ্বলে উঠে তহুরার মাঠ ত্যাগের অভাব বুঝতে দেননি স্ট্রাইকার আনুচিং মগিনি। অবশ্য ৪৮ এবং ৮৬ মিনিটে তার করা দুটি গোলেই অবদান প্রতিপক্ষ কিপারের। দুই বারই তিনি ভুল শটে বল জমা দেন আনু চিং য়ের পায়ে। তা থেকে গোল রাঙ্গামাটির ফুটবলারটি। যদিও দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ শুরু করেছিল আত্মঘাতী গোলে। ৪৭ মিনিটে নীলার শট ফিলিপিনো ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে দিক বদল করে গোল লাইন অতিক্রম করে। অধিনায়ক মারিয়া ৬৪ মিনিটে দলের স্কোর লাইন ৯-০তে উন্নীত করেন। তা বক্সের বাইরে থেকে তার ট্রেড মার্ক দূরপাল্লার শটে।

দুর্বল ফিলিপাইনের বিপক্ষে বাংলাদেশ সহজ জয় পেলেও ডিফেন্সে ফাটল ধরা পড়ে। এটা সংশোধন করতে না পারলে পরের দুই ম্যাচে মিয়ানমার এবং ৩ মার্চ চীনের বিপক্ষে সমস্যা হতে পারে। সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

ছোট ছোট বালুকণা – ৬


রেহনুমা বিনত আনিস


সামিয়া সিদ্ধান্ত নেয় এবার সাহস করে মাসরুরের সাথে কথা বলতেই হবে, আর এভাবে চলতে পারেনা। তবে বান্ধবী পরামর্শ দিয়েছে সুস্থিরভাবে কথা বলতে হবে, কারণ ঝগড়ার মুডে চলে গেলে দু’জনই কথা বলতে থাকে, কিন্তু কেউ কারো কথা শোনেনা। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে পাঁচ মিনিট ভেবে নেয় সামিয়া কিভাবে কথা শুরু করা যায়, তারপর দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে। মাসরুর মাথা তুলেও তাকায়না। ঢোঁক গিলে সামিয়া। তারপর গলাটাকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক করে বলে, ‘আপনার পড়া শেষ হলে একবার ভেতরে আসবেন প্লিজ। কথা আছে’।

মাসরুর অবাক হয়ে তাকায়, ‘কি কথা? এখনই বলতে পারো’।

সামিয়া মাথা দুলিয়ে বলে, ‘নাহ। আপনি শেষ করেই আসুন’।

মাসরুরকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায় সামিয়া। পাঁচ মিনিট পর দেখে মাসরুর এসে উপস্থিত। অভাবনীয় এই ঘটনায় বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে বেচারাকে।

দরজার দুই ইঞ্চি ভেতরে দাঁড়িয়ে মাসরুর জিজ্ঞেস করে, ‘কোন সমস্যা হয়েছে সামিয়া?’

সামিয়া মুচকি হেসে বলে, ‘আহা, এভাবে কি কথা বলা যায়? আসুন, এখানে এসে বসুন। নইলে যে চিৎকার করতে হবে!’

মাসরুর এসে বিছানার পায়ের কাছে বসে। সামিয়ার মাথায় দুষ্টুমী চাপে, বলে, ‘আরাম করে বসুন প্লিজ। ভয় পাবেন না, আমি কোন হিংস্র পশু নই যে সুযোগ পেয়েই শিকারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ব’।

এবার মাসরুরের গম্ভীর মুখেও হাসি ফোটে।

সামিয়া এবার সিরিয়াস হয়ে বলে, ‘আমি বুঝতে পারছি আমি কিছু একটা অন্যায় করেছি, কোনভাবে আপনার মনে কষ্ট দিয়েছি। কিন্তু তাই বলে এভাবে দিনের পর দিন আপনি আমাকে চার্জ গঠন, তদন্ত বা সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়া শাস্তি দিয়ে যাবেন এটাও তো কোন কাজের কথা না। আপনি যদি আমাকে খোলাখুলিভাবে বলতেন আমার কোন জিনিসটি আপনাকে কষ্ট দিয়েছে তাহলে আমি অন্তত নিজেকে সংশোধনের সুযোগ পেতাম। এটুকু অধিকার তো আমার থাকা উচিত, না’কি?’

মাসরুর অবাক হয়, ‘শাস্তি?!’

‘আমাদের বিয়ে হয়েছে আজ তিনমাস। আপনি আমার সাথে কাজের বাইরে ক’টা কথা বলেছেন? আমরা একসাথে কবে কোথায় বেড়াতে গিয়েছি? মারযান আজ জিজ্ঞেস করছিলো আমরা আলাদা থাকি কেন। আমি কোন উত্তর দিতে পারিনি, কারণ আমি নিজেই জানিনা …’

মাসরুর মনের ভেতর কথাগুলো গুছিয়ে নেয়, তারপর ধীরে ধীরে বলে, ‘সামিয়া, বিশ্বাস কর, বিয়ের রাতেই প্রথম আমি বুঝতে পারি আমার কারণে তোমার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। কিন্তু তখন আমার আর কিছুই করার ছিলোনা, তোমার অধিকার নিশ্চিত করা ছাড়া। একদিন আগেও যদি তুমি আমাকে জানাতে তাহলে আমি নিজে তোমাকে আবদুল্লাহ ভাইয়ের সাথে বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতাম। কিন্তু তখন আর আমার পরিবারকে এসব কথা জানানো সম্ভব ছিলোনা। তাই আমি চেষ্টা করেছি এখানে সবার সাথে যেন তুমি মিলেমিশে থাকতে পারো, এতে হয়ত তোমার এখানে মানিয়ে নেয়াটা সহজ হবে। ওদের আমি তোমার কষ্ট বোঝাতে পারতাম না, কিন্তু অন্তত চেষ্টা করেছি আমার নিজেকে তোমার ওপর বোঝা হিসেবে চাপিয়ে না দিতে …’।

রাগে মুখ লাল হয়ে যায় সামিয়ার, ‘আপনি কি ভেবেছেন, ভেবেছেন কি আপনি? আবদুল্লাহ ভাইয়ের সাথে আমার প্রেম ছিলো? আমি আপনাকে আমার মনের কথা খুলে বললাম যেন আমাদের বন্ধুত্ব দৃঢ় হয়, আপনাকে আমার গোপন ইচ্ছার কথা জানালাম যা আমি কোনদিন আমার বাবামার সাথেও শেয়ার করিনি। আপনাকে উদাহরণ হিসেবে একজন চালচুলোহীনের কথা বললাম, যে এমন কেউ হলে হয়ত আমি তাঁর অভাব পূরণ করতে পারতাম, আর ওমনি আপনি ধরে নিলেন …’

বেশি রেগে গেলে সামিয়ার মুখে কথা জোগায়না, মাসরুরের মনোযোগী ভঙ্গিতে কথা শোনা ওকে আরো ক্ষেপিয়ে তোলে, নিজের অক্ষমতায় চোখের কোণে জল জমতে থাকে ওর, কিন্তু সে দাঁতে দাঁত চেপে সামলাতে থাকে, এই মূহূর্তে কিছুতেই দুর্বলতা প্রকাশ করা চলবেনা।

মাসরুর সব শুনে বলে, ‘সরি, এখন বুঝতে পারলাম আমি তোমার কথার ভুল ব্যাখ্যা করেছিলাম। কিন্তু তুমিও তো আমার অর্থনৈতিক অবস্থানের কারণে আমাকে ভুল বুঝেছ! তুমি আমাকে একজন মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন না করে টাকায় মেপেছ, যেন যার টাকা আছে তার আর কিছুর অভাব থাকতে পারেনা! সামিয়া, আবদুল্লাহ ভাইয়ের অনেক কিছুর অভাব ছিলো যা স্পষ্টভাবে চোখে পড়ে। কিন্তু তুমি কি একবারও ভাবোনি প্রাচুর্যের মাঝেও আমার কিছু অভাব থাকতে পারে, একজন ভালো বন্ধুর প্রয়োজন থাকতে পারে যার কাছে আমি আমার মনটাকে মেলে ধরতে পারি যেন সেখানে তুমি তোমার মমতার পরশ বুলিয়ে কষ্টগুলো মুছে দিতে পারো?’

সামিয়া মুখ নামিয়ে নীচুস্বরে বলে, ‘আমি আমার ভুলটা পরদিনই বুঝতে পেরেছি, আপনাকে না বুঝে কষ্ট দেয়ার জন্য প্রতিটা দিন অনুশোচনায় দগ্ধ হয়েছি, কিন্তু আপনার গড়ে তোলা প্রাচীর পেরিয়ে আপনার কাছে স্বীকার করতে পারিনি’।

(চলবে ইনশা আল্লাহ)

 

‘ব্যাকবেঞ্চার সবুজ -২’


মেহেদী আরিফ


ক্লাসে চুপচাপ অবস্থায় থাকে সবুজ। খুব দরকার ছাড়া কোন কথা বলে না সে। ক্লাসের সবাই ওকে খুব করে পঁচাতো। কিন্তু ও কাউকে কিছুই বলতো না, শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকতো। আমি ওকে পাশে বসাতাম, কিন্তু স্যাররা এসে ওকে শেষ বেঞ্চে বসিয়ে দিতো। আমারও ভীষণ খারাপ লাগতো কিন্তু কিছুই করতে পারতাম না। ওকে শেষ বেঞ্চেই বসতে হবে এমন একটা রীতি হয়ে গিয়েছিলো। আমি ওকে হেল্প করার চেষ্টা করতাম খুব। ছেলেটার মেধা আছে বেশ, পড়লে ও পারবে। কিন্তু মিতুল ওকে দেখলেই মুখ বাঁকা করে একটা কটাক্ষের হাসি হাসতো, ওর গায়ের পরে গিয়ে পড়তো যেন আর বলতো, “আমার বাপ স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, আমার যা ইচ্ছা তাই করবো। পারলি তুই কিছু করিস! আর শোন! যদি আমার কিছু করিস তাইলে সান্ডে মান্ডে ক্লোস করি দোবো”। আমার একদম সহ্য হত না মিতুলের কাজকর্ম। কিন্তু সে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির ছেলে বলে কথা!
সবুজ সবকিছুকে মুখ বুজে সহ্য করে পড়াশুনা করতে লাগলো। আমি আর সবুজ টিফিন পিরিয়ডে স্কুলের দোতলা ছাদের পর উঠে সিংগারা খেতে খেতে গল্প করতাম। সবুজ খুব সুন্দর সুন্দর গল্প করতো। ওর নানার বাড়ির গল্প শুনে আমি হতবাক হয়ে যেতাম। সবুজের মা খুব সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে, ভাগ্য দোষে এক টাউটের সংসার করছে জেনে আমার ও খুব খারাপ লাগলো। ওর বাবা একজন মাদকসেবী। জমিজমা বিক্রি করে মদের আড্ডায় পড়ে থাকে। অনেক জমি বেচে এখন তারা নিঃস্ব প্রায়। প্রায়ই তাই ওর মাকে মারধর করে, বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য চাপ দিতে থাকে। জামাইয়ের এই অাচরণের কারণে সবুজের মামাবাড়ি থেকে কেউ আসতো না তাদেরকে দেখতে। ওর মা খুব কষ্ট সহ্য করে স্বামীর সংসার করে। সবুজের মনের আকাশের কালো মেঘ সরে না যেন।
ডিসেম্বর মাস। স্কুলের বিজয় দিবসের জন্য ও প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রাকটিস সেশনে সবুজ মিতুলের সাথে মারামারিতে লিপ্ত হল। পরে হেড স্যার এসে অন্যায়ভাবে সবুজকে মারলেন। এক বারের জন্যও উনি জানতেই চাইলেন না যে আসল ঘটনা কি! বেধড়ক পিটাতে লাগলেন আর বললেন,” ব্যাকবেঞ্চার কোথাকার! ভালো ছেলেদের গায়ে হাত দিতে পয়সা লাগে না, না?” মিতুলকে হেডস্যার কিছুই বললেন না দেখে স্যারের প্রতি আমার সম্মান ও ভক্তি কমে গেলো, খুব ব্যথিত হলাম। আমি সবুজকে একপাশে নিয়ে ওর কান্না থামানোর চেষ্টা করছি। সবুজের কান্না দেখে আমারও খুব কান্না পেলো। শিক্ষকদের থেকে এমন একপক্ষ সমর্থন করার সংস্কৃতি আমার ভিতরটাকে দারুণভাবে আন্দোলিত করলো। হেডস্যার এর আগেও সবুজকে কত অন্যায়ভাবে মেরেছেন। তাঁর দেখাদেখি অন্যান্য স্যাররাও সবুজকে কত বার ভৎসনা করেছেন। এগুলি আমার কাছে শিক্ষকসুলভ আচরণ বলে মনে হত না। শিক্ষকতা পেশাকে খুব ঘৃণা করতে লাগলাম।
বিনা বেঘে বজ্রপাতের মত এক ঘটনা ঘটে গেলো। সবুজের মা আত্মহত্যা করেছে। আমার ক্লাসমেট কবিরের মায়ের থেকে সংবাদ শুনে সবুজদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম আমি আর অপু। ভীতুর ডিম অপুর হাতে লাইট। রাত তখন সাড়ে নয়টা বাজে। আমি আর অপু বাঁশবাগানের ভিতর দিয়ে দৌঁড়াইতে দৌঁড়াইতে চলে আসলাম সবুজদের বাড়িতে। কান্না আর প্রিয়জনদের আহাজারিতে আকাশ বাতাস মুখরিত যেন। সবুজ নির্বাক! পৃথিবীর কোনো এক অজানা শক্তি তাকে স্থিমিত করে দিয়েছে। কোনো সুমধুর ডাক সবুজকে ওর নির্জীব অবস্থা থেকে সজীব করবে না। আমি আর অপু ওকে জড়িয়ে ধরলাম। সবুজ কান্নার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। আহ! কোন শক্তি বলে আমরা সবুজকে হাসিতে ভরিয়ে রাখবো। এ ব্যথার কি কোন ওষুধ আছে! সবুজের বাবাকে দেখে ভীষণ মেজাজ গরম হলো। সিগারেটে টান দিতে দিতে আত্মীয় স্বজনদের সাথে স্বাভাবিকভাবেই কথা বলে চলেছেন যেন। যেন বাসায় বিয়ের রমরমা আয়োজন চলছে।

সবুজের মায়ের মৃত্যুর তেরো দিন পর ওর নানা এসে ওকে নিয়ে গেলো। ও যাওয়ার সময় একটা চমৎকার কম্পাস দিয়ে গেল আর বলে গেল, “আমাকে মনে পড়লে কম্পাসটির দিকে তাকাবি, দেখবি তুই আর আমি কত কাছাকাছি।” এতটুকু ছেলের এই বয়সে এমন অনুভূতি সেদিন যেমন বিস্মিত করেছিল আজ করে তার চেয়েও বেশি। ও নানাবাড়িতে যাওয়ার পর অনেক দিন ওর কোন খোঁজ খবর পেলাম না। হঠাৎ একদিন একটা চমৎকার চিঠি পেলাম। তার চিঠিটা এমন:
প্রিয় ভদ্র ছেলে,
অাশাকরি, ভালো আছিস। তোর পড়াশুনা কেমন চলছে রে? তুই না অসাধারণ শিক্ষক হবি! তবে শিক্ষক হলে হেড স্যারের মত হবি না। আচ্ছা! মিতুল কেমন আছে রে? হেড স্যার, মিতুল, ওদেরকে ভীষণ মিস করি রে। জানিস, এখানে আমার কেউ মারে না, কেউ বকে না, মিতুলের মত কেউ গায়ে ধাক্কা মারে না। ঐ দিন গুলো খুব মিস করি, জানিস? এখানে সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। কেউ তোর মত করে পাশে বসতে বলে না, কেউ শোনে না সকালে ভাত খেয়েছি কি না, কেউ ভুলেও জিজ্ঞাসা করে না আমার মা কেমন আছে! তোদের অনেক মিস করি। তোকে আমি কখনও ভুলতে পারবো না। তুই আমার জীবনের সবচেয়ে সেরা বন্ধু।
ভালো থাকিস বন্ধু। অনেক ভালো। আচ্ছা আমার কম্পাসটা ঠিকঠাক মত আছে কি?
ইতি———
ব্যাকবেঞ্চার সবুজ।
চিঠিটি পড়ার পর সেদিন অনেকক্ষণ কেঁদেছিলাম আর ভেবেছিলাম সবুজ কত পরিণত হয়েছে আচার-আচরণ, চিন্তা-চেতনায়।
এক যুগ কেটে গেছে সবুজের সাথে আর কোনো যোগাযোগ নেই আমার। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম। নতুন পরিবেশ, বন্ধুবান্ধব পেয়ে আমি সবুজকে ভুলেই গিয়েছিলাম। হঠাৎ একদিন বাক্সের মধ্যে রাখা কম্পাসটার দিকে নজর যেতেই বুক কেঁপে উঠল। সবুজকে ভীষণ মিস করতে লাগলাম। সবচেয়ে অবাক হলাম যে, জীবনের খেলাঘরে ইতোমধ্যে একটি যুগের বেশি পার হয়ে গেছে অথচ সবুজের কোনো খোঁজ খবর পেলাম না। পড়াশুনা শেষ করে আমি শিক্ষকতা করি রসুলপুর শহীদ স্মৃতি কলেজে। নিজেকে নিয়ে অনেক ব্যস্ত সময় কাটাই। আমাদের স্কুলের হেড স্যারের বিদায় অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে আমাকে দাওয়াতপত্র পাঠানো হয়েছে। দিনটি ছিল রবিবার। আমি গিয়েছিলাম আমাদের প্রাইমারী স্কুলে হেডস্যার কাদের মিয়াকে বিদায় জানাতে। বিদায় অনুষ্ঠানে জেলার গণ্যমান্য অনেক ব্যক্তি হাজির হয়েছেন। একজন এএসপি অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি। খুব স্মার্ট দেখাচ্ছিল তাকে। নেম প্লেটে লেখা আফতাব। আমি একটা বিষয় অবলোকন করলাম যে, হেড স্যার চেয়ারে না বসা পর্যন্ত এএসপি সাহেব চেয়ারে বসছেন না। হেডস্যার ওনাকে চেয়ারে বসতে বললেন কিন্তু উনি বসছেন না, বরং প্রধান অতিথির আসন ছেড়ে উনি বাইরে এসে দাঁড়িয়েছেন। হেড স্যার তখন বললেন,”আমি সামান্য প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক, আপনি বড় পুলিশ অফিসার! প্লিজ, বসেন না, স্যার, প্লিজ”। এএসপি আফতাব বললেন,” আপনি না বসলে যে আপনার স্টুডেন্ট বসতে পারে না, স্যার”। “স্টুডেন্ট! তুমি কে বাবা?” হেডস্যার বললেন। আফতাব বললেন,” আমাকে চিনতে পারেন নি, স্যার? আমি ব্যাকবেঞ্চার সবুজ”!

(সমাপ্ত) ——– মেহেদী আরিফ।

 

শিশুর চোখের সমস্যার ব্যাপারে সচেতনতা প্রয়োজন


স্বাস্থ্যকথা


আরাফকে (১১) নিয়ে তার বাবা-মা ঢাকার ফার্মগেটে অবস্থিত ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে এসেছেন চোখ পরীক্ষা করাতে। জন্মের পর এটাই আরাফের প্রথম চোখ পরীক্ষা। কারণ, ক’দিন থেকে তার মা দেখছিলেন আরাফ খানিকটা বাঁকাভাবে টেলিভিশন দেখে। এতেই তারা তাকে চোখের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
চিকিৎসক প্রাথমিকভাবে আরাফের চোখ পরীক্ষা করার পর তার পাওয়ার (চোখের শক্তি) পরীক্ষা করার জন্য একজন টেকনিশিয়ানকে নির্দেশ দেন। টেকনিশিয়ান বলেন, আরাফের চোখের পাওয়ার অনেক বেশি এবং তার একটি চোখ অলস (লেজি) হয়ে গেছে।
বিষয়টি কী জানার জন্য চিকিৎসকে বললে তিনি আরো কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান, আরাফের ডান দিকের চোখটি অলস হয়ে গেছে এবং বাম চোখ ভালো আছে। তার ডান চোখে চশমার পাওয়ার মাইনাস চার এবং বাম চোখের পাওয়ার মাইনাস দুই। চিকিৎসক জানান, আরাফ অনেক আগে থেকেই দূরের জিনিস কম দেখত। বিষয়টি সে হয়ত বুঝতে পারেনি। অনেক ক্ষেত্রে শিশুরা এ ধরনের সমস্যা বুঝতে পারে না।
এই লেজি আই বা অলস চোখ আসলে কী? জানতে চাইলে ঐ হাসপাতালের চক্ষু শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও কনসালটেন্ট ডা. সাজ্জাদ জানান, এটা সাধারণত কম বয়সী শিশুদের হয়ে থাকে। এটা মূলত চোখের সমস্যা নয়, এটা ব্রেনের সাথে চোখের নার্ভের যে সম্পর্ক সেখানে কিছু সমস্যা হয়ে থাকে। বইয়ের ভাষায় এটাকে অ্যামব্ল্যায়োপিয়া বলা হয়। জন্মের পর প্রত্যেক শিশুর দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক থাকে না। শিশু দেখতে দেখতে তা পরিপূর্ণতা লাভ করে। শিশুর রেটিনার আলোক সংবেদনশীল কোষগুলোর ওপর আলো পড়লে আলোর উপস্থিতিতে সেগুলো পরিপূর্ণতা লাভ করতে থাকে। সাধারণত ছয় থেকে নয় বছরের মধ্যে তা পরিপূর্ণতা লাভ করে অর্থাৎ চোখ স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি প্রাপ্ত হয়। কিন্ত কোনো কারণে চোখের রেটিনায় যদি আলো না পড়ে কিংবা জন্মগত ছানি হলে অথবা লেন্স ঘোলা হলে রেটিনায় আলো পড়ে না। আবার জন্মগত ভাবে চোখের পাতা নিচের দিকে পড়ে গেলে চোখের যে স্বচ্ছ অংশ কর্ণিয়া দিয়ে আলো প্রবেশ করে, তা যদি ঢেকে যায় তাহলে পর্যাপ্ত আলো চোখে প্রবেশ করতে পারে না। এভাবে কোনো একটি চোখ ব্যবহার না হলে বা জন্মগত ট্যারা হলে ঐ চোখের দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এক সময় দৃষ্টিশক্তি পুরোপুরি হারিয়ে গিয়ে সে অন্ধ হয়ে যায়। এটাই হলো অলস চোখ বা অ্যামব্ল্যায়োপিয়া।
শিশুদের চোখে নানা ধরণের সমস্যা হতে পারে। এর মধ্যে পাওয়ারের সমস্যা বেশি দেখা যায়। তবে অলস চোখের বিষয়টি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি সময়মতো চিকিৎসা না করালে সারাজীবন তাকে ভুগতে হয়। এমনকি সে এক সময় অন্ধ হয়ে যেতে পারে। ২০১৯ সালে প্রকাশিত বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা প্রকাশিত এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ‘পৃথিবীতে ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন শিশু অন্ধত্বে ভুগছে। এরমধ্যে চার ভাগের তিন ভাগ শিশু এশিয়া ও আফ্রিকার গরীব দেশগুলোতে বাস করে। বাংলাদেশে শিশু অন্ধত্বের বিষয়টি তেমনভাবে পরিচিত নয়। এখানে প্রায় ৪০ হাজার শিশু অন্ধত্বের শিকার।’
ডা. সাজ্জাদ আরো বলেন, ‘চোখ অলস হলে, নয় বছরের মধ্যে চিকিৎসা করানো হলে, সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। কিন্তÍু অবহেলা বা অজ্ঞতার কারণে যদি এ সময় পার হয়ে যায় তাহলে চিকিৎসা করেও ভালো ফল পাওয়া সম্ভব নয়। যেসব কারণে চোখ অলস হয়ে যায় তার সঠিক চিকিৎসা করালে পুরোপুরি ভালো হয়। জন্মগতভাবে যদি শিশুর চোখে ছানি থাকে, তাহলে দ্রুত ছানির অপারেশন করাতে হবে। বয়স নয় বছর পেরিয়ে গেলে অপারেশন করেও তেমন ফল পাওয়া যায় না। এ রোগের চিকিৎসা হিসেবে শিশুকে চশমা ব্যবহার এবং প্যাচ থেরাপি দুটোই দিতে হয়।’
ডা. সাজ্জাদ বলেন, ‘প্যাচ থেরাপি কঠিন কিছু নয়। ভালো চোখটি কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে বা বন্ধ করে রাখা হয়। আর অলস চোখটি দিয়ে শিশুকে কাজ করাতে হয়। এসময় শিশু অলস চোখ দিয়ে হোমওয়ার্ক, ছবি আঁকা, গেম খেলা বা টেলিভিশন দেখার কাজ করবে। মনে রাখতে হবে এসময় যা কিছু করা হোক না কেন তা গভীর মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। এভাবে কাজ করালে চোখের রেটিনার আলোক সংবেদনশীল কোষগুলো আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ ধরণের চোখের ব্যায়াম বা অ্যাকুলেশন থেরাপি করে দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়। এ রোগে অনেক সময় শিশুর চোখ ট্যারা হয়ে যায়। চিকিৎসকের তত্ত্বাবধায়নে ট্যারা চোখের চিকিৎসা করানো যায়।’
চিকিৎসকরা বলেছেন, শিশু যদি চোখে ঝাঁপসা দেখে, তার চোখের কালো মনি ধূসর বা সাদা হয়, দূরের বা কাছের জিনিস ভালো না দেখে, টেলিভিশন খুব কাছ থেকে দেখে কিংবা স্কুলে ব্ল্যাকবোর্ডের লেখা বুঝতে না পারে তাহলে দেরি না চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন।
আরাফের মা বলেন, যে কোনো সমস্যা হলেই আরাফ তাকে জানাতো। কিন্তু চোখের সমস্যার বিষয়ে কখনো কিছু বলেনি এবং চোখে কম দেখার বিষয়ে নেতিবাচক কিছু তাদের চোখেও পড়েনি। হঠাৎ করেই এ ধরণের সমস্যা হওয়ায় তারা অনেক ঘাবড়ে গেলেও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলছেন এবং দিন দিন ছেলের চোখের অগ্রগতি হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, এখন বুঝতে পারছি চিকিৎসকরা কেন পাঁচ বছরের মধ্যে শিশুকে চোখের ডাক্তার দেখার কথা বলেন এবং কোনো সমস্যা না থাকলেও প্রত্যেক বছর একবার করে চোখের ডাক্তার দেখা কেন জরুরি। এতে শিশু একেবারে অন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে অনেক সময় পাওয়া যায়। সময়মতো চিকিৎসা এবং যত্ন নিলে শিশু অন্ধতে¦র হাত থেকে শিশু বাঁচতে পারে। এজন্য সচেতনতা প্রয়োজন। চিকিৎসকরা বলেছেন, পাঁচ বছর বয়সে বা স্কুলে দেয়ার আগে শিশুর চোখ পরীক্ষা করে নেয়া উচিৎ এবং নিয়ম করে প্রতি বছর একবার করে শিশুকে চোখের ডাক্তারের কাছে চোখ পরীক্ষা করে নিতে হবে।

সুত্র: বাসস।

 

‘ব্যাকবেঞ্চার সবুজ -১’


মেহেদী আরিফ


আমি আর সবুজ, আমরা একই ক্লাসে পড়তাম। সবুজ খুব দুরন্ত ছিল, তেমন পড়া পারতো না। ক্লাসের সবচেয়ে দুষ্ট ছেলে হিসেবে ওর সুনাম ছিল। মেধাবী ছিল সে, কিন্তু পড়া করে ক্লাসে আসতো না। ওকে দেখলেই ক্লাসের সব ছেলেমেয়েরা অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিতো, কেউ পাশে বসতে নিত না। এতে ওর অবশ্য মন খারাপ হতো না, সয়েই গিয়েছিল একরকম। আমি ক্লাসে ফাস্ট বয় ছিলাম। বোধকরি সব শিক্ষকরা আমাকে অনেক বেশি আদর করতেন। কিন্তু সবুজের সাথে সখ্যতা তারা মেনে নিতে পারেন নি। আমাকে সবসময় হেড স্যার কাদের মিয়া সংকেত করে দিতেন যাতে আমি সবুজের সাথে না মিশি। কিন্তু কে শোনে কার কথা!
আমার সাথে সবুজের সখ্যতা কিভাবে হয়েছিল তার একটা ছোট্ট ইতিহাস আছে। আমি তখন ফাইভে পড়ি। সাধারণত স্কুল ছুটির পর স্কুলের পাশের কালভার্টের পাশে দাঁড়িয়ে অন্যদের মাছ ধরা দেখতাম। কত মাছ! পুটি, টেংরা, শোল, বাইন, চিংড়ি, কৈ। আমরা তন্ময় হয়ে দেখতাম। হঠাৎ একদিন আমার স্কুল ব্যাগ কালভার্টের উপর থেকে পড়ে গেল পানিতে। আমি চিৎকার করে উঠলাম। তখন পুরো বর্ষার মৌসুম চলছে। পানি দুকূল ছাপিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যেন। যে খালে ব্যাগ পড়েছে ওখানে পানির স্রোত খুব বেশি। আমার ব্যাগ ভেসে যাচ্ছে, অথচ কেউ পানিতে নামার কোন ইচ্ছায় পোষণ করছে না। আমি সম্পূর্ণ নিরুপায়। দুচোখ বেয়ে আমার অশ্রুর ফোয়ারা নেমেছে। হঠাৎ দেখি একজন পানিতে লাফ দিয়েছে। এ কারণে শোরগোল পড়ে গেলো। এত পানিতে যে কেউ ডুবে যাবে, তাই আগে কেউ সাহস করে নামেনি। কিয়ৎক্ষণ পরে উপলব্ধি করলাম এতো আর কেউ নয়, ক্লাসের দুরন্ত ছেলে সবুজ। প্রায় আধা কিলোমিটার দূর থেকে সাঁতরিয়ে আমার ব্যাগ উদ্ধার করেছিল সে। আমার ব্যাগের ভিতরের বইগুলি অনেক ভিজে গিয়েছিল বটে কিন্তু আমি সবকিছু পেয়েছিলাম। এরপর থেকে সবুজের সাথে আমার বন্ধুত্ব। মিতুল নামে আমার এক ক্লাসমেট ছিল যে একদিন আমার একটি কলম চুরি করেছিল। আমি খুব মন খারাপ করে বসে আছি। মিতুল যে কলম চুরি করেছিল তা আমি পরে জেনেছিলাম। সে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির ছেলে হওয়াতে কোন বড় ধরনের অপরাধ করেও প্রায়ই মুক্তি পেত। আবার ক্লাসে তার রোল নম্বরও ছিল দুই। কিভাবে তার রোল দুই হতো বারেবারে তার গাণিতিক হিসাব করার মত ক্ষমতা আমার ঐ ক্ষুদ্র বয়সে হয় নি। যাইহোক, কলম চুরির ঘটনা সবুজ জেনেছিলো। মিতুলের কাছে সবুজ ঐ কলম দেখার পর ওকে বলেছিল, ” কিরে, লালমিয়া! কলম পাইলি কই?” মিতুলকে সবুজ লাল মিয়া বলে ডাকতো হরহামেশাই। এর জন্য স্যারদের কাছে কত বকাই না খেয়েছে সে। মিতুল ঢং করে বলল, “আমার কি কওয়া লাগবে নাই তোর?” এই কথা শোনামাত্র মিতুলের কানের নিচে সশব্দে দুইটি চড় বসিয়ে দিল সে। মিতুলের তীব্র কান্নার চিৎকারে হেডস্যার সহ অন্যান্য স্যারেরা দৌঁড়ায়ে আসলেন। কান্নার হেতু আবিষ্কারে তারা অপারেশন সার্চলাইট শুরু করলেন। অবশেষে যখন জানতে পারলেন যে, সবুজই নাটের গুরু তখন হেডস্যার জোড়া বেত দিয়ে তার পিঠে পাঁচটি কসিয়ে দিলেন। সবুজ কাঁতরাচ্ছে মার খেয়ে, অন্যদিকে মিতুল কান্না থামিয়ে পুতুলের মত বসে আছে।
স্কুল ছুটির পর সবাই বাড়িতে চলে গেল, গেল সবুজও। প্রায় এক সপ্তাহ তার কোন হদিস মিলল না। আমাদের বাড়ি আরেক পাড়ায় হওয়াতে তাদের বাড়িতে যাওয়া কষ্টকর হলো। ক্লাসের ফাস্ট বয় হওয়াতে আমাকে অনেক নিয়মনীতি মেনে চলতে হতো পরিবারে। সবার আশা ছিল আমি দেশের সবচেয়ে সেরা মানুষ হই। তাই সবুজদের মত বখাটে ছেলের সাথে আমি মিশি এটা পরিবার কখনও চাইতো না। তারপরও স্কুলের ক্লাস শেষ করে অপুকে নিয়ে চলে গেলাম সবুজদের বাড়িতে। একটা বিশাল বাঁশ বাগানের পর দিঘি, তারপর সবুজদের বাড়ি। বাঁশ বাগানের মধ্য দিয়ে খস খস আওয়াজ করে হেঁটে চলেছি আমি আর অপু। সবুজদের বাসায় কখনও যাই নি আমি। অনেক সময় লাগলো ওর বাসায় পৌঁছাতে। বিছানায় সবুজ কাতরাচ্ছে! দূর থেকে কাতরানোর আওয়াজ অনুসরণ করে তার বাসায় পৌঁছালাম। আহ্ কত ব্যথা পেয়েছে বেচারা ছেলেটা! আমরা যাওয়ার সাথে সাথে ওর মা পিড়ি ঠেলে দিলেন। আমি ভয়ে ভয়ে বসলাম কিন্তু অপু ভীতুর ডিমটা বসলোই না। ও কাঁপছিলো যেন। হঠাৎ করে সবুজ চিৎকার করে অপুকে বলল, “বস্! ভীতুর ডিম, তা না হলি তোরে ভেজি খেয়ি ফ্যালবো।” এ কথা শুনে অপু পালিয়ে চলে যাওয়ার উপক্রম। অমনি আমি আমার ছোট হাত দিয়ে ওর ব্যাগ টেনে ধরলাম, কোনো মতে ওকে বসালাম পিড়িতে। সবুজ বকবক করেই চলেছে, আর ওর মা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। আমি আন্টিকে স্বান্তনা দিয়ে বিদায় নিলাম। ঐ দিন বাড়ি ফেরার পর আমার উপর দিয়ে টর্নেডো বয়ে গেল যেন। ঠিক কি ঘটেছিল তা না জানলেও চলবে। তবে এতটুকু বলে রাখি, আমার নাক দিয়ে অনেক রক্ত পড়েছিল।
প্রতিদিন স্কুলে গিয়ে আমি আগে খুঁজতাম সবুজকে। দিন পনেরো পর ঘাড়ে ব্যাগ নিয়ে একটা ছেলেকে হাঁটতে হাঁটতে স্কুল অভিমুখে আসতে দেখলাম। সে আর কেউ নয়, সবুজ! অন্য দিনের মত তার মাঝে চঞ্চলতার কোনো চিহ্ন পেলাম না আজ। হেতু না খুঁজে পেয়ে বেশ অবাক হলাম। ক্লাসে সবার পিছনে বসলো সে। বাংলা ক্লাসে হেডস্যার প্রবেশ করেই সবুজের খোঁজ নেওয়া শুরু করলেন। তিনি বললেন,”সেই জানোয়ারটা কোথায়?” সবুজ কোনো উত্তর না করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে গেল। হেডস্যার কটাক্ষ করে বললেন,”বসে পড়ো শুদ্ধোধন!” সবুজ একবারও স্যারের দিকে তাকালো না। ওর মনটা খুব খারাপ দেখে আমার মনটা খুব খারাপ হল। কারণ সবুজ যতই দুষ্টামি করুক অন্যদের সাথে, ও আমার খুব প্রিয় বন্ধু। ক্লাস শেষে বাড়ি ফেরার পথে সবুজকে আস্তে আস্তে বললাম,”সবুজ! তোর মন খারাপ?” সবুজ যা শোনালো তাতে আমার মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। সবুজের মাকে ওর বাবা খুব মারধোর করে যা সবুজের মোটেও সহ্য হয় না। নিজের বাবা তো, তাই বাবার গায়ে হাত তোলে না ও। কিন্তু ওর হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়, মাথায় খুন চাপে কিন্তু মায়ের দিকে তাকিয়ে ও কিছুই করতে পারে না। সবুজ আমাকে বলল,” দোস্ত, তুই আমার হেল্প করবি? আমাকে তে কেউ ভালবাসে না! তুই আমার পড়ালিখায় হেল্প করবি? আমি বড় হয়ি একজন পুলিশ হবো, আমার আব্বার ধরি নে থানায় বন্দি করি রাখবো”। এ কথা বলে ও আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি ওকে হেল্প করার আশ্বাস দিলাম।

চলবে……

 

“এই জীবন আর রাখব না”


ফাতিমা খান


Obsessive love বলে একটা কথা আছে যেখানে কারো প্রতি আকর্ষণ এবং possessiveness এমন এক পর্যায়ে এসে পৌছায় যে ” তাকে ছাড়া বাঁচব না” বা “এই জীবন আর রাখব না” জাতীয় একটা মানসিক সমস্যার তৈরী হয়। অবশ্য কোন ব্যাপারে মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়া অসুস্থতা অথবা অপরাধ বলে আমি মনে করি। এই প্রবনতা নিয়ে বেঁচে থাকা মানুষগুলো অহরহ ভুল করে। হয়ত নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নয়ত সংগীর বড় কোন ক্ষতি করে ফেলে।
আবেগেরও একটা সীমারেখা আছে যার অন্যপাশটা প্রাণঘাতী। আপনার সাথে কেউ অন্যায় বা প্রতারণা করেছে, হোক কাছের বা দূরের – তার সমাধান অবশ্যই আছে! আত্নাহুতি দেয়া মানে নিজে হেরে যাওয়া আর অন্যায়কে জিতিয়ে দেওয়া। অনেকেই বলছে “আত্নহত্যার জন্য ছাতিতে সাহস লাগে, সবাই পারেনা”….তো এই সাহস তবে বেঁচে থাকার জন্য কাজে লাগালে কি হত? সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে তারচেয়েও বেশি সাহস লাগে!
দাম্পত্য সম্পর্কে ফাটল ধরার জন্য সবসময়ই একটা তৃতীয় পক্ষ কাজ করে যার অন্যায় অবদারগুলোকে আপনি প্রশ্রয় দিচ্ছেন বলেই আপনি দিনকে দিন বৈধ সম্পর্কের কাছে তথা জীবনের কাছে হেরে যাচ্ছেন। এই তৃতীয় পক্ষ কোন এক্সট্রা ম্যারিটাল এ্যাফেয়ার /পার্টনারই হতে হবে এমনটা জরুরী না। আপনার নিজের কুচরিত্র, অন্য কোন চাপিয়ে দেয়া দায়িত্ব অথবা আপনার উপর মাত্রাতিরিক্ত প্রভাব খাটানো তৃতীয় কোন ব্যাক্তিও হতে পারে যার বা যাদের অন্যায় আবদার আর চাহিদাগুলো টিউমারের মত আপনাকে আঁকড়ে ধরেছে, যার ফলে আপনার দাম্পত্য সম্পর্কটা দিনকে দিন প্রাণহীন হয়ে পড়ছে।
প্রত্যেকটি সম্পর্কের শুরু হয় দুইপাতার চারাগাছটার মত। নাজুক সম্পর্কটাকে নিত্যদিন প্র‍য়োজনীয় সব খোরাকের যোগান দিয়ে একটু একটু করে বাড়তে দিতে হয়। দূর্বল দিকগুলোতে মনোযোগ দিতে হয় অনেক বেশি। প্রয়োজনে একে অপরের সাথে কাউন্সিলিং করে নিলে সম্পর্কের ভিত মজবুত হয়। যে সম্পর্কের শুরু হয় অবিশ্বাস বা ভুল বুঝাবুঝি দিয়ে, বলাবাহুল্য সে সম্পর্ক অস্থায়ী।
এখন কথা হল, দাম্পত্য জীবনে হাজার রকম সমস্যা হতেই পারে। কিন্তু এই সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করা বা সমাধানের চেষ্টা করাটা আমাদের সুশীল সমাজের জনগণ মানহানীকর বলে মনে করেন। “মানুষ কি বলবে”, ” ছিঃ আমার বংশে কেউ কোনদিন বউ/ স্বামী তালাক দেয়নি”, ” চুপ, মেয়ে মানুষের এত কথা বলতে নেই, মানিয়ে নিতে হয়”, ” তুই না পুরুষ মানুষ, বউ সামলে রাখতে পারিস না!”…..কথাগুলো শোনার ভয়ে অনেকেই নীরবতার আশ্রয় নেন। নীরবে প্রতি মুহুর্তে যন্ত্রণা সহ্য করতে গিয়ে মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলেন। লোক সমাজে লাঞ্চিত হওয়ার চেয়ে পরকীয়া বা অন্য নেশায় ডুবে যান, নয়ত আত্নাহুতি দেন।
ডাঃ আকাশ আর ডাঃ মিতুর কেইসটা যদি আদ্যোপান্ত ভেবে দেখা হয় তাহলে বলব ( মিতু অবশ্যই অপরাধী) ডাঃ আকাশ কোন মহানায়ক ছিলনা ( মিডিয়া আকাশেকে সত্যি সত্যি আকাশে তুলেছ)। প্রেমকে অমর করতে গিয়ে নিজেকেই শেষতক বলি দিল… এরকম যারা ভাবছেন তারা অবশ্যই ভুল করছেন।
প্রথমত, একজন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন পুরুষ জেনেবুঝে কোন চরিত্রহীনাকে বিয়ে করার কথা না। ( আকাশের ভাষ্যমতে বিয়ের আগেই সে জেনেছিল তার হবুস্ত্রী ও প্রেমিকা একজন ব্যাভিচারিনী) ।
দ্বিতীয়ত, বিয়ে যখন করেই ফেলেছে, সম্পর্কটাকে বলিষ্ঠ করার জন্য তার নিজের সর্বাত্নক চেষ্টা করা উচিৎ ছিল। ( এমনি এমনি বলা হয়নাই ” দায়ুস জান্নাতে প্রবেশ করবেনা”)। যদি তারপরও স্ত্রীর সাথে বনিবনা না হয়, তবে সসম্মানে বিদায় করে দেয়াটাই সমিচীন হত ( ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী) ।
ডাঃ আকাশের ভাই এর বয়ানানুযায়ী মিতুকে তার স্বামী প্রায়ই মারধর করত। যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে ( মিতুর স্বীকারোক্তি) সেখানেও এটা স্পষ্ট যে তাকে বেদম মারধর করে জবাব নেয়া হচ্ছে। (ভিডিওটির অংশবিশেষ ভাইরাল হয়েছে, পুরাটা নয়। এর কারণ আমার অজানা).
একজন মানুষ সমাজে সবার চোখে অত্যন্ত সহজ, সরল, মেধাবী ও দায়িত্বশীল বলে পরিচিত হলেও দরজার আড়ালে প্রায়ই তার ঠিক বিপরীত একটা চেহারা দেখতে পাওয়া যায় যা তার খুব নিকটজন ছাড়া আর কেউ জানতে পারেনা। শুধুমাত্র আবেগের বশীভুত হয়ে সমাজ আর মানসম্মানের ভয়ে মানসিকভাবে সুস্থ একজন মানুষ কোনভাবেই আত্নহত্যা করতে পারেনা। আত্নহত্যা মহাপাপ, অনেকগুলো বছর একটু একটু অপরাধের ধারাবাহিকতায় আজ এই মহা অপরাধটা করে বসেছে ডাঃ আকাশ । আল্লাহ তাকে মাফ করুন- এইটুকুই এখন বলতে পারি।
মিতুর শাস্তি হোক, তবে যেটুকু তার পাওনা সেটুকু। মিডিয়া তাকে আবর্জনার মত রাস্তায় ছুড়ে দিয়েছে, একদল নষ্ট মানুষ আবার ভার্চুয়াল জগতে তাকে অগণিত বার বলাতকার করছে শুধুমাত্র কমেন্ট দিয়ে।
অন্যের জীবন নিয়ে আমাদের চরম উৎসাহ বরাবরই। প্রত্যেকটা ঘটনা আর তার কন্সেকুয়েন্স আমাদের জীবনের জন্য এক বিশাল শিক্ষা ( যারা শিক্ষা নিতে চায় তাদের জন্য আরকি!)। দেখে, শুনে, ঠেকে তারপরও যদি আমরা কিছু উপলব্ধি করি/ শিক্ষা নেই, তাহলে হয়ত কিছুটা হলেও আমাদের সম্পর্কগুলোর ও মন মানসিকতার সংস্কার হবে।

 

দ্বৈত


কানিজ ফাতেমা


নারীরা বসে নেই; এগিয়ে যাচ্ছে নিজ অধিকার প্রতিষ্ঠার অঙ্গনে। মুসলিম নারীরা সচেতন হয়ে উঠছে তাদের হক বা অধিকার সম্পর্কে যা আল্লাহ স্বয়ং তাদের দিয়েছেন। তারা বুঝতে শিখছে আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসুল (স: ) প্রবর্তিত এ হক কেড়ে নেবার অধিকার কারও নেই; নারীরাও আল্লাহর সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত, ঠিক যেমনি পুরুষেরা।

আমি ‘শিখেছে’, ‘উঠেছে’- এ ক্রিয়াগুলো ব্যবহার না করে ‘শিখছে’, ‘উঠছে’ ক্রিয়াগুলো ব্যবহার করেছি। কারণ আমার মতে এখনো এ প্রক্রিয়ার মাঝামাঝি কোনো একস্থানে আমরা অবস্থান করছি। পূর্ণতা অর্জন এখনও বেশ দূর। মুসলিম নারী জাগরণের, নারীর অবস্থান পরিবর্তনের এ জোয়ার মুসলিম পুরুষদের গায়েও লেগেছে। নারীদের প্রতি তাদের সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গীর বেশ একটা পরিবর্তনও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমরা এ অবস্থাকে বলতে পারি একটা Transition Period। এ অবস্থানে অধিকাংশ পুরুষের মধ্যেই লক্ষ্য করা যায় একটি দ্বৈত চরিত্র। একদিকে নারী জাগরণের এ সময় তারা তাদের সঙ্গীনীকে কল্পনা করেন বিদুষী, শিক্ষিত, কর্মচঞ্চল, ও সচেতন এক নারী রূপে। অন্যদিকে তাদের মনের কোঠরে বাস করে তাদের শৈশবে দেখে আসা সেসব নারী চরিত্র যারা স্বামী সেবাকেই জীবনের একমাত্র কাজ ও লক্ষ্য মনে করতেন; স্বামী বা স্বামীপক্ষের সব অন্যায়, অত্যাচার, গঞ্জনা মুখবুজে সয়ে যেতেন, মুখে ‘রা’ টি করতেন না। তাদের মনে রয়ে গেছে সেই ‘বুক ফাটেতো মুখ ফোটেনা’ – গোছের নিরীহ বধূটি। অর্থাৎ তারা এর একাংশ আর ওর অপরাংশ মিলিয়ে অদ্ভুত এক কল্পিত নারী চরিত্র তৈরী করেন যা স্বভাবগতভাবেই পরস্পর বিপরীত। যে নারী সচেতন, যে নারী বহির্জগতের অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহস রাখেন, সে নারী নিজ স্বামীর অবহেলা-অসম্মানকে চিহ্নিত করতে অসমর্থ হবেন, বা বুঝতে পেরেও সমাজের রক্তচক্ষুর ভয়ে গুটিশুটি মেরে যাবেন এমনটা আশা করা যুক্তিহীন।

অনেককে দেখেছি বিয়ে করার সময় বুদ্ধিমতী, চৌকষ, যোগ্য মেয়ে খোঁজেন। কিন্তু বিয়ের পরে সেই বুদ্ধিমতী মেয়েটি যখন তাকে কোনো ব্যাপারে পরামর্শ দেয় তখন অন্যদের সম্মুখে সেই পরামর্শকে মেনে নেয়াকে কাপুরুষতা মনে করেন। ভাবেন –

স্ত্রীর কথা শুনলে অন্যরা কি মনে করবে ?

সবাই বলবে আমি স্ত্রীর কোথায় উঠি-বসি।

ওরা বলবে আমি একটা স্ত্রৈণ।

অথচ এটা তো খুব স্বাভাবিক যে, যেকোনো শিক্ষিত বুদ্ধিমতী মেয়েই আশা করবে যে, তার স্বামী তার সঙ্গে পরামর্শ করবে, তার মতামতের গুরুত্ব দেবে। একদিকে বুদ্ধিমতী স্ত্রী চাওয়া অন্যদিকে স্ত্রীর মতামতকে (তা যতটা মানসম্মতই হোকনা কেন) মেনে নিলে মান যাবে এমনটা ভাবা পরস্পর বিরোধী মানসকতারই লক্ষণ।

আমার ধারণা এই Transition Period এ অনেক পুরুষই আসলে কি চাইছেন এ ব্যাপারে নিজেরাই যথেষ্ট স্বচ্ছ ধারণা রাখেন না বা একধরনের দোটানায় ভোগেন। একদিকে তারা আমাদের দেশের নারীদের অন্যদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চাইছেন, তাদেরকে সচেতন নারী রূপে দেখতে চাইছেন, আবার একই সাথে বাস্তব জীবনে নিজের ঘরের নারীটিকে নিজ অধিকার সম্পর্কে নীরব, নিশ্চুপ, বোধহীন দেখতে ভালবাসছেন। এ দ্বৈততার ফল খুব একটা সুখকর হয়না।

নারী স্বভাবতই ধৈর্যশীল। তবে ধৈর্য্য- সহিষ্ণুতা আর উপর্যুপরী অন্যায়-অবহেলা- অসম্মান চুপচাপ মেনে নেয়া এক কথা নয়। নারীর যেমন স্বামীর সন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ্য রাখা জরুরী, তেমনি স্ত্রীর সন্তুষ্টির প্রতিও স্বামীর লক্ষ্য রাখা জরুরী। স্ত্রীর অধিকার সচেতনতাকে ‘বিদ্রোহ’ হিসাবে দেখার সুযোগ নেই। ‘স্ত্রীর আনুগত্য নয়’ নয় , বরং পরস্পরের প্রতি সম্মান ও সহানুভূতিই আমাদের পারিবারিক জীবনকে সফল করে তুলতে পারে।

 

ছোট ছোট বালুকণা – ৫


রেহনুমা বিনত আনিস


একদিন কলেজে গিয়ে সামিয়া জানতে পারে আজ ক্লাস হবেনা। বাসায় চলে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিল সে। এমন সময় একটা মেয়ের সাথে দেখা। সামিয়া আর্টসে পড়ে আর ঐ মেয়েটা সায়েন্সে। কিছু ক্লাস ওদের একসাথে হলেও অধিকাংশই ওদের দেখা হয় বারান্দায় বা মাঠে, কথা হয় কালেভদ্রে। আজ হাতে সময় আছে। দু’জনে গল্প করতে করতে হঠাৎ সামিয়া নিজের বিবাহপূর্ব স্বপ্ন থেকে বর্তমান অচলাবস্থা পর্যন্ত সবকিছু উগড়ে দেয় অকপটে। সে নিজেই অবাক হয়, যে কথা সে তার বাবামা ভাইদের বলেনি, এমনকি একসাথে থেকেও বাড়ীর কেউ টের পায়নি, তা সে কেন ওকে বলতে গেল। সম্ভবত যাদের সাথে লেনাদেনা থাকে তাদের প্রতিক্রিয়ার কথা ভেবে মানুষ অনেক কথাই বলতে পারেনা, কিন্তু একজন অপরিচিতের সাথে সেটা শেয়ার করা যায় নির্দ্বিধায়। নাকি কারো কারো চেহারা দেখলেই মনে হয় তাকে বিশ্বাস করা যায়? সে কথাগুলো বলল নিজেকে নির্ভার করার জন্য, কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে মেয়েটা ব্যাপারটাকে খুব সুন্দর করে বিশ্লেষণ করে ওকে বুঝিয়ে দিলো সমস্যাটা ঠিক কোথায় এবং এর সমাধানের ব্যাপারেও একটা দিকনির্দেশনা দিলো। সব শুনে মেয়েটির কথাগুলো ওর কাছে যৌক্তিক মনে হোল। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে? বাঁধার প্রাচীর পেরোনোর জন্য কথা বলার বিকল্প নেই। কিন্তু সেই কথাই তো সে বলতে পারছেনা আজ তিনমাস ধরে!

বান্ধবীর পরামর্শমত সামিয়া প্রতি রাতে তাহাজ্জুদ পড়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে লাগল। সাতদিন পর, রাতে খাবার পর যথারীতি বাবাকে রুমে দিয়ে এসে মাসরুর অফিস রুমে পড়তে বসল। ওদিকে সামিয়া আর মারযান রান্নাঘরের খাবার গুছিয়ে গল্প করতে করতে যার যার রুমের দিকে এগোলো। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে মারযান হঠাৎ সামিয়াকে প্রশ্ন করল, ‘আচ্ছা ভাবী, একটা প্রশ্ন করি? তুমি কিছু মনে করবেনা তো?’

সামিয়া ওর গলা জড়িয়ে ধরে বলে, ‘তোর সাথে কি আমার কিছু মনে করাকরির সম্পর্ক? বল, কি বলবি?’

মারযান কিঞ্চিত ইতস্তত করে বলে, ‘তোমাদের বিয়ে হয়েছে তিনমাস। কিন্তু আজ পর্যন্ত ভাইয়া আর তোমাকে একসাথে থাকতে দেখিনি। তোমাদের মাঝে কি কোন সমস্যা হচ্ছে?’

প্রমাদ গোণে সামিয়া, তারপর মুখে হাসি টেনে বলে, ‘না তো! তোর ভাইয়া রাত জেগে পড়ে, আবার ভেতরে যেতে গেলে আমার ঘুমের ডিস্টার্ব হবে বলে ওখানেই শুয়ে যায়। সমস্যা না করার স্বার্থেই এই ব্যাবস্থা’।

মারযান হাসল, কিন্তু বিশ্বাস করল বলল মনে হোল না।

(চলবে ইনশা আল্লাহ)

 

পানি খাওয়ার ছলে ঘরে ঢুকে এসএসসি পরীক্ষার্থীকে ধর্ষণ


নারী সংবাদ


পানি খাওয়ার অজুহাতে ঘরে ঢুকে এসএসসি পরীক্ষার্থী এক স্কুলছাত্রীকে (১৬) ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের চাঙ্গুরিয়া গ্রামে।

এ ঘটনায় ধর্ষিতা স্কুল ছাত্রী নিজেই বাদী হয়ে শনিবার রাতে অভিযুক্ত বেল্লাল সরদারের (২২) বিরুদ্ধে উজিরপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন। অভিযুক্ত মাহেন্দ্র চালক বেল্লাল সরদার উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের চাঙ্গুরিয়া গ্রামের বজলু সরদারের ছেলে এবং ধর্ষণের শিকার মেয়েটি স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী।

এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ওই স্কুলছাত্রীকে গুরুত্বর আহতাবস্থায় শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন রয়েছে।

এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ওই স্কুল ছাত্রী চলমান এসএসসি পরীক্ষায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করছেন। গত শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিজ ঘরেই লেখাপড়া করছিল ওই ছাত্রী। এ সময় তার মা পাশের বাড়িতে গেলে মাহেন্দ্র চালক বেল্লাল সরদার পানি খাওয়ার ছলে ঘরে ঢুকে ওই স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করে। তখন মেয়েটির চিৎকারে তার মা ঘরে চলে আসলে বেল্লাল দ্রুত পালিয়ে যায়।

উজিরপুর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিশির কুমার পাল মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, ওই স্কুলছাত্রী নিজেই বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। সেই সাথে অভিযুক্ত বেল্লালকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

ছোট ছোট বালুকণা – ৪


রেহনুমা বিনত আনিস


সবাই খেতে বসে। সামিয়ার শ্বশুর টেবিলের মাথায়, একপাশে স্ত্রী একপাশে বড়ছেলে, স্ত্রীর পাশে ছোটছেলে, মারযান অভ্যাসবশত বড় ভাইয়ের পাশে বসতে গিয়ে জিভ কেটে উঠে দাঁড়ায়, সামিয়াকে হাত ধরে টেনে এনে বলে, ‘আরে ভাবী, এটা তো তোমার জায়গা!’ ওর আত্মত্যাগ সামিয়ার দৃষ্টি এড়ায়না। সে আপত্তি জানালে মারযান চোখ টিপে বলে, ‘টেবিলের মাথায় বসার শখ আমার বহুদিনের। তুমি আসতে দেরী করছিলে বলেই তো এতদিন বসতে পারিনি। এখনও যদি বসতে না দাও!’ আসিয়া রুটি নিয়ে সবার প্লেটে দিতে শুরু করেন, মাসরুর আলুভাজি বেড়ে দিতে থাকে। আনোয়ারা প্রথম রুটিটা দেন স্বামীকে, তারপর সামিয়াকে, তারপর ক্রমান্বয়ে তাঁর তিন সন্তানকে, সব শেষে নেন নিজের পাতে, ছেলেও তাঁকে অনুসরন করে। সামিয়া একটু লজ্জাই পায়, কিন্তু এই পরিবারে সবার পরার্থপরতা ওকে মুগ্ধ করে। খাবার বাড়া শেষ হতেই শুরু হয় গল্প। শ্বশুর সাহেব প্রথম শুরু করেন সামিয়ার বাসায় নাস্তায় কি খাওয়া হয়, ক’টায় নাস্তা খাওয়া হয় ইত্যাদি প্রশ্ন দিয়ে। উত্তর দিতে দিতে সামিয়া খেয়াল করে শাশুড়ি শ্বশুরের প্লেটের দিকে হাত বাড়াতে যাচ্ছিলেন, সম্ভবত রুটি ছিঁড়ে দেয়ার জন্য, কিন্তু মাসরুরের চোখের ইশারায় তিনি আবার হাত সরিয়ে নেন।

খাওয়া শেষে মাসরুর আর মাসউদ আগের পদ্ধতিতেই বাবাকে নিয়ে যায় সামনের আঙ্গিনায়, ফুলবাগানে হাঁটতে। মারযান বলে, ‘চল ভাবী, তোমার জিনিসগুলো স্যুটেকেস থেকে আলমারীতে তুলতে সাহায্য করি’। কিন্তু শাশুড়ি বলেন, ‘আমাকেও কিছু কথা বলার সুযোগ দিবি তো! মেয়েটা এসেই লেগে গেল রান্নাঘরে! তুই যা, নিজের রুম গুছিয়ে এসে তোর ভাবীকে নিয়ে যা’।

মারযান চলে গেলে তিনি সামিয়াকে বললেন, ‘শোন মা, তুমি আমার কাছে আমার তিনটা সন্তানের চেয়ে আলাদা নও। তুমি আসার আগেও ত্রিশ বছর আমার সংসারের সব কাজকর্ম চলেছে, আরো কিছুদিন এভাবে চললে কোন ক্ষতি নেই। এখন তোমার প্রয়োজন ঘরের সবার সাথে বন্ধুত্ব করার, সবার পছন্দ অপছন্দ বুঝে নেয়ার, আমাদের তোমার পছন্দ অপছন্দ বুঝার সুযোগ দেয়ার, বিশেষ করে মাসরুরের সাথে অ্যাডজাস্ট করার’।

নিজের অজান্তেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে যায় তাঁর, ‘আট বছর আগে মাসরুরের বাবা ব্যাবসায় বিরাট লস করেন। কিন্তু নিজের ক্ষতির চাইতেও তাকে পীড়া দিতে থাকে শেয়ার হোল্ডারদের লস, কর্মচারীদের কি হবে এইসব ভাবনা। একদিন সারারাত চিন্তা করার পর সকালে উঠে দেখেন আর হাতপা নাড়তে পারছেন না। তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। ওরা বলল রাতে কোন একসময় স্ট্রোক হয়েছে, বেঁচে আছেন এটাই বেশি, হয়ত সুস্থ হবেন, কিন্তু আর কোনদিনই বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে পারবেন না। ভাবলাম ব্যাবসা বাণিজ্য সব বিক্রি করে দেই, যা পাওয়া যাবে তা দিয়ে হয়ত মাসরুরের লেখাপড়া শেষ হওয়া পর্যন্ত সংসার চালিয়ে নিতে পারব। কিন্তু ছেলে আমার বেঁকে বসল। বলল, ‘না মা, মানুষের টাকা কর্জ থাকা পর্যন্ত বাবা সুস্থ হবেন না। তাছাড়া এতগুলো পরিবার আমাদের ওপর নির্ভরশীল, তাদের কথা ভুলে গেলেই বা কিভাবে চলবে?’ ছেলে সব ছেড়েছুড়ে ব্যাবসার হাল ধরল, হাল ধরল পরিবারেরও। কুড়ি বছর বয়স ছিলো ওর, হুট করেই বড় হয়ে যেতে হোল ছেলেটাকে। সেই থেকে পরিশ্রম করে ব্যাবসাটাকে আবার টেনেটুনে ঠিক করল, সবার ধার দেনা শোধ করল, ব্যাবসা বর্ধিত করল, নিজে আরেকটা নতুন ব্যাবসা শুরু করল, যেসব কর্মচারীরা এই বিপদের দিনে আমাদের পাশে ছিলো তাদের সবার জন্য বাড়ীর পেছনে ঘর করল, এখন ওরা আমাদের পরিবারেরই অংশ। পরিবারের গায়েও আঁচড়টি লাগতে দেয়নি আমার মাসরুর। বছরের পর বছর আমরা ডাল ভাত ভর্তা খেয়ে সংসার চালিয়েছি ঋণের টাকা শোধ করার জন্য, ঈদেও একটা কাপড় কিনতে পারিনি; কিন্তু ওর বাবার চিকিৎসা কিংবা ভাইবোনদের লেখাপড়ার জন্য কখনও টাকার অভাব বুঝতে দেয়নি মাসরুর। আমার ছেলেটা সারাদিন পরিশ্রম করে এসে বাবার মাথায় হাত না বুলিয়ে, ভাইবোনদের সাথে খুনসুটি করে তাদের মুখে হাসি না ফুটিয়ে কোনদিন ঘুমাতে যেতনা। ক্লাসের প্রতিশ্রুতিশীল ছাত্র ছিলো আমার ছেলে। ব্যাবসার ফাঁকে ফাঁকে, রাত জেগে পড়ে অনার্সটা তো শেষ করল, কিন্তু মাস্টার্সটা করব করব করেও এখনো করা হোলনা’।

আরেকটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন তিনি, ‘মাগো, কেউ যখন সবার মাথার ওপর ছাতা হয়ে তাদের নিরাপদ রাখতে যায়, তখন রোদ বৃষ্টি তুফানের ঝাপ্টা সব তার ওপর দিয়েই যায়। আমার ছেলেটা সবসময় হাসিখুশি, কিন্তু ওর মনের কষ্টগুলো সে আমাকেও বলেনা; সারাক্ষণ বকবক করে, কিন্তু এর মাঝে নিজের কথা একটিও বলেনা, সব অন্যের সুবিধা অসুবিধার কথা। তুমি যদি ওর মনের গোপন কুঠুরীতে সঞ্চিত কষ্টগুলো বের করে এনে ওখানে আলোয় ভরিয়ে দিতে পারো, সেটাই হবে আমার পরম পাওয়া। তোমার কাছে আমি এর বাইরে আর কিছুই চাইনা’।

তন্ময় হয়ে শুনতে শুনতে সামিয়া খেয়ালই করেনি কখন মারযান পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। ওদের সামিয়ার রুমে গিয়ে জিনিসপত্র গুছাতে বলে আনোয়ারা বেগম বাগানে যান যেখানে তাঁর স্বামী ছেলের কাঁধে ভর দিয়ে একটা ফুটবলে লাথি মারতে পেরে আনন্দে কিশোরদের মত হুঙ্কার ছাড়ছেন!

নিজের রুমে যেতে যেতে সামিয়ার মনটা মেঘাচ্ছন্ন হয়ে আসে। সে গতরাতে মাসরুরকে বলেছে, ‘আপনার ঝোঁক টাকার প্রতি, আমার পড়ার প্রতি’। অথচ এখন সে বুঝতে পারছে টাকা সে নিজের জন্য উপার্জন করেনা, বা লেখাপড়ার প্রতি ওর আগ্রহ নেই এই কথাটাও সত্য নয়। না জেনে কত বড় একটা আঘাত দিয়ে ফেলেছে সে! একজন কষ্ট হরণকারীকে কষ্ট দিয়ে ভীষণ অনুশোচনায় ভুগছে সামিয়া। কিন্তু কথাটা সে বলবে কি করে?

তিনমাস কেটে যায়। সামিয়ার শ্বশুর শাশুড়ি দেবর ননদ এমনকি প্রতিবেশীরাও ওকে ভীষন ভালোবাসে, ওদের উদারতা ওকে আপ্লুত করে। কিন্তু যাকে কেন্দ্র করে এই ভালবাসা সে পাচ্ছে তার মতিগতি সে কিছুই বুঝতে পারেনা। মাসরুর ওর সুবিধা অসুবিধা খেয়াল রাখে, বাড়ীর সবার সাথে সম্পর্ক ভালো রাখার ব্যাপারে উপদেশ উৎসাহ দেয়, বাপের বাড়ী বা কলেজে আসা যাওয়ার সব সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে। কিন্তু এর বাইরে সে সামিয়ার সাথে কোন কথাই বলেনা, ঘুমায় অফিসরুমের সেই সিঙ্গেল খাটে। মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছে, সারাদিন কাজ শেষে রাতের খাবার খেয়ে পড়তে বসে। ভোরবেলা নামাজের আগে কুর’আন পড়ে, নামাজ পড়ে ঘুমায়। সামিয়া সুযোগ পায়না কোন কথা বলার, আবার লজ্জাবোধের কারণে বলতে পারেনা ভেতরে এসে ঘুমোতে। এক অস্বস্তিকর পরিবেশে কাটতে থাকে তার দিনরাত। ঘরের কেউ কিছু টের না পেলেও মারযান বুঝতে পারে কিছু একটা অমিল হচ্ছে, কিন্তু সে ঠিক ধরতে পারেনা সেটা কি।

(চলবে- ইনশাআল্লাহ)

 

কই ভাত বানানোর আগ মূহুর্তে…


তাহনিয়া খান


আমার শাশুড়ি শিখেছেন আমার শশুড়ের কাছ থেকে… এটা আমার শশুড়ের দেশী রান্না… আমার শশুড় শাশুড়ি দুজনেই মাশা আল্লাহ্‌ ভালো রান্না করেন… আমি এখনো নিজে কই ভাত বানাইনি… শিখে নিয়েছি আর বানানোর সময় শাশুড়িকে হেল্প করি… আজকে আমার মেয়েকে বললাম শিখে নাও… আজকে সে তার দাদী’র হেল্পিং হ্যান্ড… এভাবেই প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম শিখে নেয় সবকিছু… সেটা খাবার হোক, আচারব্যবহার হোক বা যা কিছুই হোক না কেন… এভাবেই ঐতিহ্য বজায় থাকে।

উপকরণ

১.কই মাছ
২.কদু পাতা
৩.অর্ধেক রান্না করা চাল
৪.পেয়াজ
৫.জিরা বাটা,
৬.সরিষা তেল
৭.আদা বাটা,
৮.রসুন বাটা,
৯.হলুদ গুড়া,
১০.মরিচ গুড়া,
১১.লবণ,
১২.কাঁচামরিচ মিসিং।

প্রক্রিয়া
কই মাছগুলো সরিষার তেল এর সাথে আদা, রসুন, পেয়াজ আর জিরা বাটা ,হলুদ গুড়া, মরিচের গুড়া, লবণ ও কাঁচামরিচ দিয়ে কিছুক্ষন মেরিনেট করে রেখে কদু পাতায় মুড়িয়ে রাখতে হবে। ভাত বসাতে হবে। ভাতে লবণ দিতে হয়। ভাত কিছুটা হয়ে গেলে অর্ধেক ভাত নামিয়ে তার মাঝে মাছগুলো দিতে হবে । বাকি ভাত উপরে দিয়ে দিতে হবে। দমে রেখেই বাকি ভাত সিদ্ধ হবে, মাছও হয়ে যাবে। কদু পাতায় মাছ রাখার আগে একটু সরিষার তেল মাখিয়ে নিতে হবে।

 

বাচ্চাদের প্রশ্নের উত্তর


কানিজ ফাতিমা


বাচ্চাদের সরাসরি উত্তর না দিয়ে পাল্টা চিন্তা উদ্রেককারী প্রশ্ন করুন। বাচ্চাকে তার প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দিলে বাচ্চা শুধু তথ্যই পায় কিন্তু তার জ্ঞানের গভীরতা বাড়ে না। তথ্য যাচাই বাছাই করে গ্রহনের দক্ষতা তৈরী হয় না। আপনার সন্তান হতে যাচ্ছে “তথ্য” যুগের বাসিন্দা। সে তথ্যের সাগরে বসবাস করবে- হাতের মোবাইলে তথ্য, মিডিয়ায় তথ্য , বাসের গায়ে তথ্য স্টিকার ফ্লাইয়ারে তথ্য। চারিদিকে তথ্যের ছড়াছড়ি – যা আমদের বেড়ে ওঠার সময় থেকে আলাদা। এসব তথ্যের সবটাই কি ঠিক?- না, তা হতে পারে না। সত্য, মিথ্যা , অর্ধসত্য, সত্যের রঙ্গে মিথ্যা – এমন কোটি কোটি তথ্য সাগরে ভাসবে আপনার সন্তান। কাজেই আপনার সন্তানকে সেই দক্ষতা নিয়ে বড় হতে হবে যাতে সে জানে কিভাবে তথ্যের যাচাই বাছাই করে গ্রহণ বর্জন করতে হয়।

বাচ্চার প্রশ্নের উত্তরে পাল্টা প্রশ্ন করে বাচ্চার তথ্য যাচাইয়ের শক্তিকে বাড়িয়ে দিতে পারেন।

একটা উদাহরণ দিচ্ছি-

রিনি- আম্মু, কুকুররা ছেলে আর বিড়ালরা মেয়ে, তাই না আম্মু?

(বলেননা যে, না আম্মু। কুকুর – বিড়ালরা ছেলে মেয়ে দুই হতে পারে)

মা- কেনো তোমার এমন মনে হচ্ছে? ( এরূপ প্রশ্নে আপনার বাচ্চা নিজের চিন্তার পেছনের কারণ চিন্তা করতে শিখবে – একে বলে Meta cognition, যা উচ্চ পর্যায়ের জ্ঞান)

রিনি – কুকুরগুলো বড় আর অনেক জোরে ডাকে ছেলেদের মতো। আর বেড়ালগুলো ছোট আর নরম আর মিউ মিউ করে ডাকে – মেয়েদের মত।

এবার আপনি যা করতে পারেন তাহলো বাচ্চাকে ছোট কুকুরের ছবি বা ভিডিও দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করতে পারেন –

মা-এগুলো কি ?

রিনি- এগুলো কুকুর।

মা- এরা কি বড়?

রিনি- না ছোট।

মা- তারমানে কুকুররা সব সময়ে বড় হয়না।

এবার আপনার বাচ্চাকে বাচ্চাসহ মা-কুকুর দেখান বা অন্তত ছবি দেখান ।

মা- এটা কি?

রিনি- কুকুর

মা- ছেলে নাকি মেয়ে ?

রিনি- মা কুকুর

এভাবে সরাসরি উত্তর বা তথ্য না দিয়ে প্রশ্নের মাধ্যমে আপনার সন্তানকে কিভাবে জ্ঞান আহরণ করতে হয় তা শিখিয়ে দিন।

চাইনিজ একটা প্রবাদ আছে –

‘কাউকে একটা মাছ দেবার পরিবর্তে মাছ ধরা শিখিয়ে দিন। সে সারা জীবন মাছ খেতে পারবে।’

আপনার সন্তানের সামনে তথ্য দেবার পরিবর্তে শিখিয়ে দিন কিভাবে সঠিক তথ্য পেতে হয় – সারা জীবন এটা তার কাজে লাগবে ।

 

সমুদ্রজয়েও এগিয়ে যাচ্ছে বাংলার সাহসী নারীরা


নারী সংবাদ


বাংলার নারীরা এখন শুধু করপোরেট কিংবা স্কুল-কলেজেই নয় আকাশে যেমন শান্তির পায়রা ওড়ান তেমনই উত্তাল সমুদ্রও পাড়ি দেন। তারা হাজার নর্টিক্যাল মাইল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে বিশ্বের বড় বড় বন্দরে নোঙর করাচ্ছেন লাল-সবুজের পতাকাবাহী জাহাজগুলোকে।
বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) অত্যাধুনিক এসব জাহাজ শুধু পণ্য পরিবহন-ই নয়, বিশ্বজুড়ে বার্তা দিচ্ছে বাংলার নারীদের অগ্রযাত্রার গৌরবগাঁথা, নারীর ক্ষতায়নের কথা।
বিএসসি সূত্র জানায়, সংস্থাটির ‘এমভি বাংলার জয়যাত্রা’, ‘এমভি বাংলার অর্জন’, ‘এমটি বাংলার অগ্রযাত্রা’ নামের তিনটি বড় জাহাজে ১৭ জন নারী অফিসার ও ক্যাডেট রয়েছেন।
বহরে যুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় থাকা ‘এমটি বাংলার অগ্রদূত’ জাহাজের জন্য তৈরি রয়েছেন আরও ছয়জন নারী ক্যাডেট ও অফিসার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব জাহাজে কর্মরত কর্মকর্তাদের মাসিকভিত্তিতে এবং ক্যাডেটরা দৈনিকভিত্তিতে তাদের ভাতা পান। যা বেশ সম্মানজনকও বটে। এর বাইরে জাহাজে ওঠার জন্য চীন যাওয়ার ফ্লাইট ভাড়া, কর্মরত থাকাবস্থায় থাকা-খাওয়া, ইউনিফর্মসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র বিনামূল্যে পান তারা।
মেরিটাইম আইন অনুযায়ী, সমুদ্রে জাহাজে কর্মরতদের প্রত্যেকের ইন্স্যুরেন্স রয়েছে এবং রয়েছে প্রোটেকশন অ্যান্ড ইনডেমনিটি (পিঅ্যান্ডআই) কাভারেজও।
বিএসসির মহাব্যবস্থাপক ক্যাপ্টেন জামাল হোসাইন তালুকদার বলেন, এছাড়া বন্দরে অবস্থানকালে ক্যাডেট ও কর্মকর্তারা ইন্টারনেটের আওতায় থাকলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ই-মেইল ও টেলিফোনে পরিবারের সদস্যদের কুশল জানতে পারে। যে কোন জরুরি মুহূর্তে স্যাটেলাইট ফোনে জাহাজ থেকে স্বজনদের সঙ্গে কথাও বলতে পারেন তারা ।
তিনি বলেন, ‘বাংলার মেয়েরা এখনও সব ক্ষেত্রেই ভালে করছে। আকাশ, সমুদ্রসহ অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজেও তারা বেশ সুনামের সঙ্গে কাজ করছে। এটা নারীর ক্ষমতায়নেরই একটি প্রতীক।’ বিএসসি’র তিনটি নতুন জাহাজ বিশ্বের বিভিন্ন বন্দর ও সমুদ্রে অবস্থান করছে। এসব জাহাজে কর্মরত আমাদের নারী অফিসার ও ক্যাডেটরা সব চ্যালেঞ্জ জয় করে সততা, পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে ক্যাপ্টেন জামাল বলেন, বর্তমান সরকারের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমুদ্রগামী জাহাজে সাহসী নারীরা কাজ করে তাদের যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ পেয়েছেন। এটি একটি বড় মাইলফলক।
‘বাংলার জয়যাত্রা’ জাহাজে রয়েছেন ক্যাডেট আতিয়া সৈয়দা, আনজুমান আরা, সৈয়দা সাবরিনা বাবুর, সোহানা পারভিন ও শতাব্দী হোসাইন। আর ‘বাংলার অর্জন’ জাহাজে চীনের সাংহাই থেকে উঠেছেন থার্ড অফিসার বিউটি আক্তার, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার লাভলী দাস, ক্যাডেট মৌটুসি তালুকদার বৃষ্টি, ইসরাত জাহান সেতু, তাসনিমুল বাহার ও সাজিয়া আফরিন। বেশ দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন তারা।
‘বাংলার অগ্রযাত্রা’য় নিয়োগ পেয়ে বর্তমানে চীনে অবস্থান করছেন ফোর্থ অফিসার ফারজানা আক্তার ফাইজা, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার খাদিজা আক্তার, ক্যাডেট কানিজ ফাতেমা, মেমি আফরোজা, নাফিসা আহমেদ নোভা ও ফারজানা ইয়াসমিন।
চলতি মাসেই বিএসসির বহরে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে ‘এমটি বাংলার অগ্রদূতে’র। এ জাহাজে নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে ক্যাডেট সানজিদা করিম মুমু, বিলকিস আক্তার, আয়েশা সিদ্দিকা এলিনুর, সাবিনা ইয়াসমিন, সুস্মিতা দাস ও রিক্তা আজিজকে। প্রশিক্ষণে বেশ দক্ষতার প্রমাণ রেখেছেন তারা।
তাদের একজন মেরিন একাডেমির ৪৯তম ব্যাচের ক্যাডেট সানজিদা করিম মুমু। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের অর্থাৎ ৪৯ তম ব্যাচের ক্যাডেট আমরা। নারী ক্যাডেটদের এটি দ্বিতীয় ব্যাচ।
‘বিএসসি’র জাহাজে আমাদের এক বছরের ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের সুযোগ দিলেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কাজ করার সুযোগ মেলেনি। পরিবারের সদস্য, অভিভাবক ও স্বজনরা প্রেরণা দিয়েছেন, আমাদের শিক্ষকরা সাহস দিয়েছেন। আজ আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে।’
আরেক ক্যাডেট রিক্তা আজিজ বলেন, ক্যাডেট হিসেবে বেশ পরিশ্রম করে এই পর্যায়ে এসেছি। এখন যোগ্যতা প্রমাণের অপেক্ষায় আছি। কাজটা চ্যালেঞ্জের হলেও আমরা সমুদ্রেও জয়ী হবো।
এ বিষয়ে মানবাধিকার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, নারীরা বাইরে বেরিয়ে আসছেন এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক। তবে সমতা এখনও নিশ্চিত হয়নি। একদিকে নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ পুরস্কার পাচ্ছে, অন্যদিকে যত্রতত্র যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন নারী। কারণ, পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে পারছি না আমরা। ফলে ক্ষমতায়নের সুফল পাচ্ছেন না নারী।
তবে, স্থলে, আকাশে এবং সমুদ্রে নারীদের সাফল্যের প্রমাণ বেশ ভালো খবর বলেই মনে করেন এই নারী নেত্রী। সুত্র: ॥ তাসলিমা সুলতানা (বাসস)।

 

ট্রাম্পকে কড়া জবাব দিলেন ইলহান


নারী সংবাদ


কংগ্রেস থেকে পদত্যাগের আহ্বান জানানো সংবলিত বক্তব্যের কড়া সমলোচনা করেছেন ডেমোক্র্যাটিক দলের মুসলিম সদস্য ইলহান ওমর।

এক টুইটে তিনি বলেন, হাই@রিয়েলডোনাল্ডট্রাম্প! আপনি আপনার জীবনভর শুধু ঘৃণা ছড়িয়ে গেছেন, ইহুদি, মুসলিম, আদিবাসী, অভিবাসী, কৃষ্ণাঙ্গসহ সবার বিরুদ্ধেই আপনি ঘৃণা ছড়িয়েছেন। আমি শিখেছি মানুষকে একত্র করতে।

এর আগে এক টুইটার যুদ্ধে ইলহান ওমরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়। তবে বলা হয়, অ্যামেরিকান ইসরাইল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি (আইপ্যাক) মার্কিন রাজনীতিকদের ইসরাইলপন্থী হওয়ার জন্য অর্থ প্রদান করে।

ডেমোক্র্যাট এই সদস্য তার বক্তব্যের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে বলেন, আমি কখনোই এ বক্তব্যের দ্বারা সকলকে ইঙ্গিত করা উদ্দেশ্য ছিল না। একই সাথে আমি আবারো মার্কিন রাজনীতিতে এইসব লবিস্টদের ভূমিকা পুনর্বিবেচনা করতে চাই। এসব লবিস্টের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আইপ্যাক, এনআরএ ইত্যাদি।

তবে ট্রাম্প তার এই ক্ষমাপ্রার্থনাকে খোঁড়া ও অসম্পূর্ণ আখ্যা দিয়ে বলেন, মার্কিন কংগ্রেসে ইহুদীবিদ্বেষীদের কোনো স্থান নেই। একই সময় তিনি ওমরের মন্তব্যকে ভয়াবহ বলেও মন্তব্য করেন।

ট্রাম্প বলেন, আমি মনে করি, হয় তিনি কংগ্রেস থেকে অথবা কংগ্রেসের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটি থেকে পদত্যাগ করবেন। কারণ তিনি যা বলেছেন, আসলে এগুলো তার অন্তরে গভীরভাবে বসে আছে।
সূত্র : সিয়াসত ডেইলি

 

‘আমি দুঃখিত’: থাই রাজকন্যা


নারী সংবাদ


থাই রাজকন্যা উবলরাতানা নির্বাচনে তার প্রার্থী ঘোষণার জন্যে ক্ষমা চেয়েছেন।
মঙ্গলবার রাতে ইনস্ট্রগ্রামে দেয়া এক পোস্টে ৬৭ বছর বয়সী রাজকন্যা রাজনৈতিক নাটকে তার ভূমিকার জন্যে ক্ষমা চেয়ে বলেছেন, ‘দেশের জন্যে কাজ করার আমার আন্তরিক ইচ্ছের কারণে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে এই সময় তা উচিত হয়নি। আমি দুঃখিত। ’
থাই রাজকন্যা উবলরাতানা গত শুক্রবার আগামী ২৪ মার্চ অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে থাই রাকসা চার্ট পার্টি থেকে প্রধানমন্ত্রী পদে লড়াইয়ের ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই দেশটির রাজনৈতিক নাটক বেশ জমে ওঠে। তিনি যে থাই রাকসা চার্ট পার্টি থেকে লড়াইয়ের ঘোষণা দেন সে পার্টি দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্কিত। থাকসিন বর্তমানে কারাদন্ড এড়াতে স্বেচ্ছানির্বাসনে রয়েছেন।
এদিকে উবলরাতানার প্রার্থীতা ঘোষণার পরপরই তার ভাই ও থাই রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন এক বিবৃতিতে বলেন, রাজপরিবারের উচ্চপর্যায়ের কোন সদস্যের নির্বাচনে অংশগ্রহণ সংবিধান পরিপন্থী।
এর পর থাই রাজকন্যাকে সোমবার প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থী হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে অযোগ্য ঘোষণা করে দেশটির নির্বাচন কমিশন। সুত্রঃ বাসস।

 

ছোট ছোট বালুকণা – ৩


রেহনুমা বিনত আনিস


সে জামা পাল্টে রেডি হবার একটু পরই দরজা ঠেলে মাসরুর ঘরে ঢুকল, ‘চল, আমি তোমাকে রান্নাঘর দেখিয়ে দিচ্ছি’।

রুম থেকে বেরিয়ে সামিয়া দেখল ওর ঘরটা আসলে একটা সুইটের মত। গতরাতে এত বড় বাড়ীর আগামাথা ঠাহর করতে পারেনি, সবকিছু দেখতে দেখতে কেমন ধাঁধাঁ লেগে গেছিল। ওর ঘর দু’টো রুম আর একটা বাথরুম মিলিয়ে। বাইরের অংশে মাসরুরের অফিস – রুমের মধ্যখানে একটা বড় টেবিল, টেবিলের একপাশে একটা আরামদায়ক রিভলভিং চেয়ার আরেকপাশে দু’টো গেস্ট চেয়ার, রিভলভিং চেয়ারের পেছনে ফ্লোর থেকে ছাদ পর্যন্ত উঁচু একটা বুকশেলফ নানান রকম বইপত্রে ঠাঁসা, টেবিলের ডানপাশে একটা সোফা আর বাঁপাশে একটা সিঙ্গেল খাট যেটা দেখে বোঝা যাচ্ছে রাতে মাসরুর কোথায় ছিল। সামিয়া ধরে নিল ওকে লজ্জা পেতে দেখে ওকে আশ্বস্ত করার জন্য মাসরুর এখানে ছিল। সুতরাং, সে আর কোন প্রশ্ন করলনা।

রান্নাঘরে গিয়ে তো সামিয়া পুরাই হতভম্ব! এই ভোর সকালেই পুরো রান্নাঘর লোকে গমগম করছে। রান্নাঘরের দু’টো দরজা- একটা খাবার ঘরের সাথে, আরেকটা বাড়ীর পেছনে উঠোনে। উঠোনে বটি নিয়ে বসে একজন মুরগী কাটছে, একজন মাছ, একজন নানান জাতের সব্জী। দরজায় বসে একজন মসলা বাটছে। রান্নাঘরের ভেতর একজন রুটি বেলছে, একজন চিরল চিরল করে আলু কাটছে, দেখেই বুঝা যাচ্ছে ভাজি করা হবে। মধ্যখানে চুলোর পাশে বসে ওর শাশুড়ি এক চুলোয় রুটি ভাজছেন, আরেক চুলায় কড়াইয়ে তেল দেয়া, আলুভাজির জন্য প্রস্তুত- কিছুক্ষণ পর পর একে ওকে ডেকে কাজের তাড়া দিচ্ছেন। সামিয়াকে দেখে তিনি ভীষণ অবাক হলেন, তারপর ওর পেছনে থেকে মাসরুরকে সরে যেতে দেখে সব বুঝে নিলেন। তিনি একজনকে ডাক দিয়ে বললেন, ‘শায়লা, তোর ভাবীকে একটা মোড়া দে তো!’

সামিয়াকে বললেন, ‘শোন মা, আমার ছেলেটা বেশি বেশি করে। এটা তো তোমারই সংসার, তুমি আস্তেধীরে সব বুঝে নেবে। কিন্তু এখনই রান্নাঘরে নিয়ে আসার কি হোল? তুমি চুপচাপ বোস, আমরা কথা বলি’।

সামিয়া মোড়ায় বসে বলল, ‘মা, আম্মু কাজ করার সময় আমি সবসময় হাত লাগাতাম। সবাই কাজ করছে, এর মধ্যে আমি চুপ করে বসে থাকলে কি করে হবে? আমি অন্তত রুটিগুলো ভাজি!’

শাশুড়ি আনোয়ারা বেগম ছেলের কান্ডে যথেষ্ট বিরক্ত হয়েছেন সেটা তাঁর চেহারা দেখে বুঝা যাচ্ছে। কিন্তু তিনি সায়মাকে সস্নেহে বললেন, ‘মা, চল তোমাকে আগে আমাদের প্রতিবেশীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই’।

শায়লাকে রুটি দেখতে বলে তিনি সামিয়াকে নিয়ে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে লাগলেন। সামিয়া দেখল উঠোনে নানান জাতের সব্জীর বাগান আর বাড়ীর দু’পাশে ফলের বাগান, বাড়ীর সামনে ফুলের বাগান গতকাল এই বাড়ীতে ঢোকার সময়ই চোখে পড়েছে। উঠোনের ওপাশে কতগুলো ঘর দেখা গেল, একই বাউন্ডারীর ভেতর। গ্যারেজ আর দারোয়ানের ঘর বাড়ীর দু’পাশে। সুতরাং, ওগুলো কিসের ঘর সে বুঝতে পারলনা। আনোয়ারা বেগম সবাইকে প্রতিবেশী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিলেও সামিয়া বুঝতে পারল এরা সবাই এই বাসার কাজ করে- কিন্তু তাঁর ব্যাবহার থেকে সামিয়ার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল এদের সাথে কেমন আচরন করতে হবে, ওর খুব ভাল লাগল শাশুড়ি মায়ের এই অভ্যাসটি। সে সবার সাথে অল্পসল্প কথা বলে শাশুড়ির সাথে চুলোর কাছে ফিরে এলো। কিছু না বলেই শায়লার কাছ থেকে খুন্তি নিয়ে রুটি ভাজতে শুরু করল। আনোয়ারা বেগম আর কিছু বললেন না। তিনি ভাজির জন্য তেলে পেঁয়াজ দিলেন।

হঠাৎ কে যেন সামিয়াকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে চটাস চটাস দুই গালে চুমো দিল। সামিয়া অবাক হয়ে পেছন ফিরে মারযানকে দেখে হেসে ফেলল। ননদিনি যে কখন চুপি চুপি ওর পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে সামিয়া টেরই পায়নি! সামিয়া আলতো করে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। এই সুযোগে আনোয়ারা বেগম ওর হাত থেকে খুন্তিটা নিয়ে মারযানকে বললেন, ‘তোরা দু’জন গিয়ে টেবিলে বস। মাসউদকে বল মাসরুরকে ডেকে আনতে, ওকে বল এত কাজ করতে হবেনা। একটা দিন হয়নি বিয়ে হয়েছে আর বৌটাকে রান্নাঘরে ছেড়ে দিয়ে পালিয়েছে!’

মারযান ভাবীকে হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল, ‘মা ভালই ক্ষেপেছে। ভাইয়া মনে হয় কাজ ছাড়া কিছু বোঝেনা। কোথায় বাগানে বসে তোমাকে নিয়ে গল্প করবে, আমরা চা নিয়ে যাবার ভান করে আড়ি পেতে শোনার চেষ্টা করব! বেরসিক একটা …’

ডাইনিং রুমে এক কোণে চুপচাপ ছায়ামূর্তির মত বসে থাকা ছেলেটাকে খেয়ালই করতনা সামিয়া সে সালাম না দিলে। মারযান বলল, ‘এই নাও ভাবী, তোমার দেবর মহাশয়, মাসউদ উল হাসান। যা, এবার গিয়ে ভাইয়াকে ডেকে নিয়ে আয়’।

মাসউদকে বিয়েতে দেখেছে বলে মনে করতে পারেনা সামিয়া। বয়স চৌদ্দ হবে হয়ত, নতুন গোঁফ গজাচ্ছে, তাই হয়ত লজ্জায় কারো সামনে আসেনা, ওকে দেখেই বোঝা যার ছেলেটা খুব লাজুক টাইপের, এই ছাড়া সে যেন মাসরুরের ছোটবেলার সংস্করণ। বোনের কথামত ভাইকে ডাকতে চলে গেল মাসউদ।

মারযান বলল, ‘ভাগ্য ভাল, তুমি ছিলে। নইলে সে আমার চুল টেনে দিত হুকুম দেয়ার অপরাধে। আমি ওর তিনবছরের বড়, কিন্তু একটুও মানতে চায়না আমাকে’।

ননদের পাকা পাকা কথা শুনে হাসি পায় সামিয়ার। ভাবখানা যেন সে মাসরুরের বড় বোন!

মাসরুরের সাথে ওর বাবাও এলেন, ছেলের হাত ধরে, কিঞ্চিত ভর ছেলের গায়ে ছেড়ে দিয়ে। তাঁর চলাফেরা তেমন স্বচ্ছন্দ নয়। পেছন পেছন মাসউদ এলো বাবার উইলচেয়ার নিয়ে। মারযান সামিয়াকে কানে কানে বলল, ‘বাবার উইলচেয়ারে বসা ভাইয়ার একদম পছন্দ না। ভাইয়া থাকলে বাবা না হেঁটে পার পায়না। কিন্তু আবার বাবা উইলচেয়ার ছাড়া সাহস পায়না বলে ওটা কেউ পেছন পেছন নিয়ে আসে। বাবা ভাইয়ার উপর প্রচন্ড ক্ষেপলেও আসল কথা হোল বাবার স্ট্রোকের পর যেখানে আমরা ভেবেছিলাম বাবা বিছানা থেকেই কোনদিন উঠতে পারবেনা, সেখানে আজ বাবা হাঁটতে পারছেন!’

সামিয়ার আবছা আবছা মনে পড়ে, সম্ভবত বছর দশেক আগে সে ভাইদের সাথে লুডো খেলার সময় শুনতে পায় বাবা মায়ের কাছে আহাজারি করছেন, ‘আহারে! ছেলেটা এই বয়সেই সব হারিয়ে ফেলল! বিজনেসের লস তো তবু পোষানো যেত, কিন্তু এই বয়সে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে সে কিভাবে সংসার চালাবে? তিনটা ছোট ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে আনোয়ারা এখন কি করবে?’

(চলবে ইনশা আল্লাহ)

 

সৌন্দর্য বদলায় না, বদলায় কেবল দেখার চোখ


জান্নাতুন নুর দিশা


আমার কৈশোরে আমাকে কেউ কখনো প্রপোজ করে নি। কেউ আমার জন্য গোলাপ হাতে পথের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে নি। স্কুল থেকে ফেরার পথে কখনোই কেউ আমার পিছু নেয় নি। এমনকি ক্লাসের যে ছেলেগুলো প্রত্যেক সহপাঠিনীকেই প্রপোজ করে বেড়াতো, দেখা গেছে তারাও কখনো আমার দিকে তাকায় নি।
সে সময় বিষয়গুলো আমাকে কখনো ভাবায় নি। এমনকি এটা ভেবেও আমার তখন আফসোস হতো না যে আমাকে কেন কেউই প্রপোজ করলো না।

কৈশোরে আসলে এসব নিয়ে ভাববার মত মানসিক পরিপক্বতাই আমার হয় নি। বাবা-মায়ের কঠোর নিয়ন্ত্রণে বড় হওয়া মেয়ে আমি। যেসব সন্তানদের বাবা-মায়েরা বেশি নিয়ন্ত্রণে রাখে তাদের মানসিক পরিপক্বতা আসে দেরীতে। এই নিয়ন্ত্রণটুকুর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
যৌবনে পদার্পণের পর আমার যখন মানসিক পরিপক্বতা এলো, কৈশোরে একটিও প্রেমের আহবান না পাবার বিষয়টি আমাকে বেশ ভাবিয়েছে।
ভেবে ভেবে আমি কারণটা বের করেছি।
খেয়াল করে দেখলাম, পারিবারিক এলবামে আমার শৈশবের অসংখ্য ছবি, সে সময় আমি ছিলাম তুমুল ফ্যাশনাবল শিশু। মূলত আমার মা অত্যন্ত ফ্যাশন সচেতন রমণী। তিনি নিজের বাচ্চাকে বেশ ফ্যাশনদুরস্ত চালচলনে রাখতেন।
আশ্চর্যজনকভাবে, এলবামে আমার কৈশোরের ছবি খুব কম। সে সময় আমি তেমন একটা ছবিই তুলতাম না। এই বয়সের সন্তানের পোশাক, সাজসজ্জা ইত্যাদির উপর মায়ের নিয়ন্ত্রণ কমতে থাকে। আমার ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে।
আমি কৈশোরেই ছিলাম সবচেয়ে ক্ষ্যাত! ক্ষ্যাত মানে চরম ক্ষ্যাত! ঢোলা ঢোলা জামাকাপড় পরতাম, কাজল দিতে জানতাম না, লিপস্টিক দিলে ঠোঁটের দুপাশে লেপ্টে থাকতো। সমসাময়িক মেয়েরা যেখানে চুলে বেণী করে স্কুলে যেতো, আমি কোনো রকম কাঁধ পর্যন্ত লম্বা চুলটায় ব্যান্ড লাগিয়ে মারতাম দৌড়।
তার উপর আমি ছিলাম চরম হেলদি। আমার মত মাঝামাঝি উচ্চতার মেয়েরা পায়ে পেন্সিল হিল পরে। আমি পেন্সিল হিল কিনেছি জীবনে একবার। পরিধানের প্রথম দিনেই পড়ে গিয়ে এলাহি কান্ড বাঁধিয়েছিলাম নানাবাড়ীতে। ফ্ল্যাট স্যান্ডেলে মাঝামাঝি উচ্চতার আমাকে মোটামুটি খাটোই তো লাগতো! গায়ের রঙও ময়লা। মেকআপ টেকঅাপ আমি এখনো চিনি না। তখন রঙ কিছুটা খোলানোর জন্য একমাত্র জিনিশই যা আমি চিনতাম তা হল ট্যালকম পাউডার! সেই টেলকম পাউডার মুখে দিলে ধোঁয়াশার মত ঘামে ভেজা মুখে লেপ্টে লেপ্টে থাকতো।
এরকম মদনমার্কা সাজসজ্জার মেয়েকে কেউ প্রপোজ করার কথাও না।
প্রথম যৌবনে ছেলেরা ক্রাশ খায় লিকলিকে ধবধবা মেয়েদের উপর, এদের কোমরের বাঁকেবাঁকে যৌবন খেলে। কাজল টেনেটেনে এরা চোখকে করে হরিণীর মত। ঠোঁটে লালটাল মেখে সদ্য ফুটন্ত গোলাপের মত বানিয়ে ফেলে। বেণী দুলিয়ে হাঁটে।
এমন সুন্দরী মেয়েরা কৈশোরে অসংখ্য প্রপোজাল পায়। তাদের কেউ কেউ আঠারো-ঊনিশে পা রাখতে রাখতেই দশবারোজনকে ছ্যাঁকাও দিয়ে ফেলে! এতে অবশ্য দোষের কিছু নেই। অপ্রাপ্তবয়স্ক একটা মেয়ের স্কুলজীবনে যাকে ভালো লেগেছে, কলেজে উঠেই সে দেখে ছেলেটি তার চেয়ে সামাজিক অবস্থানে, পড়ালেখায়, যোগ্যতায় অনেক নিচে। মেয়েরা এসব বিষয়ে অনেক সচেতন। অসফল পুরুষদের মেয়েরা নিজেদের জীবনে রাখে না, আবেগের উপর মেয়েদের প্রচণ্ড নিয়ন্ত্রণ। তাছাড়া সুন্দরীদের হাতে অসংখ্য অপশন, পেছনে অসংখ্য আসিক!
যাই হোক, যৌবনে আসার পরই যে আমি ব্যাপক ফ্যাশনদুরস্ত হয়ে গেছি তা নয়। আমি এখনো হেলদি, এখনো আমার উচ্চতা মাঝামাঝিই, এখনো আমার গায়ের রঙ ময়লা। পরিবর্তন এসেছে সামান্য, যেমন পোশাকে। এখন আমি গুছিয়ে শাড়ি পরতে জানি।
আমি কাজল লাগাতে জানি, লিপস্টিক লাগালে ঠোঁটের দুপাশে লেপ্টে যায় না। কপালে মধ্যম আকারের উজ্জ্বল রঙের টিপ পরি।
যৌবনে আমি অসংখ্য প্রপোজ পেয়েছি! কিন্তু কেন! গুছিয়ে সাজি বলে?
এই প্রশ্ন মনে বারবার ঘুরপাক খেয়েছে। তাই কেউ প্রপোজ করলে জানতে চেয়েছি আমাকে কেন ভালো লাগে।
কেউ বলেছে আমার চোখ সুন্দর, কেউ বলেছে নাক বা ঠোঁট, চাহনি, চুল, হাসি, কন্ঠ, কথা!
এসব কি কৈশোরে ছিলো না আমার? আমি কি যৌবনে এসে আমার নাক, চোখ, ঠোঁট, কন্ঠ পরিবর্তন করেছি?
এ প্রশ্ন তাদের অবশ্য করি নি। করলে তারা বলতো, কৈশোরে কেন আপনার সাথে পরিচয় ঘটলো না? তখনই প্রেমে পড়তাম!
পুরুষ প্রচণ্ড রকম ফ্লাটারার জাতি! এরা মেয়ে পটাতে মিথ্যের পর মিথ্যে বলতে পারে।
কৈশোর আর যৌবনের এই দুই চলন আমাকে মিথ্যে ধরতে শিখিয়েছে।
আমি যা ছিলাম, তাই আছি, তাই থাকবো।
যারা বলে আমি সুন্দর তাই প্রেমে পড়েছে, সৌন্দর্য ফুরোলেই ওদের প্রেম ফুরোবে জানি।
যারা বলে আমার কন্ঠে কবিতা শুনে প্রেমে পড়েছে, কন্ঠা হারালেই তারা হারাবে জানি।
যারা বলে আমার লেখা পড়ে প্রেমে পড়েছে, লেখা ছেড়ে দিলেই ওরা ফিরবে না আর জানি।
পুরুষের প্রেমে কি তবে আমার বিশ্বাস নেই তবে?
অবশ্যই আছে।
পুরুষ পরিপক্ব হলে লিকলিকে ধবধবে সাদা আর খোঁজে না। তারা খোঁজে একজন ব্যক্তিত্ববান, দায়িত্ববান প্রেয়সী।
আসলে প্রেম আসে এক মুহূর্তের জন্য। সেই প্রেমটা সৌন্দর্য দেখে আসে না, আসে অকারণেই, অহেতুক।
তারপর মোহ আসে, মায়া বাড়ে। এক সময় সেসবও কেটে যায়। তারপর যা থাকে তার নাম দায়িত্ববোধ। এটাই বাস্তবতা। কোনো প্রেমই স্থায়ী নয়। স্থায়ী হয় নির্ভরতা।
আমি যদি কৈশোরে অসুন্দর ছিলাম, এখনো আমি তাই।আসলে তা নয়।
আমি তখনও সুন্দর ছিলাম, এখনো সুন্দর।
সৃষ্টিকর্তা প্রতিটি মানুষকেই গড়েছেন সুন্দর গড়নে। আর নারীকে গড়েছেন আরো বেশি সৌন্দর্য দিয়ে।
প্রতিটি নারীই সুন্দর। শুধু দেখার চোখটাই বদলায় পুরুষের।

জান্নাতুন নুর দিশা
১৭/০৫/২০১৮

 

বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নারী ও বালিকাদের অধিক সুযোগ সৃষ্টি করতে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহের প্রতি বাংলাদেশের আহবান


নারী সংবাদ


বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নারী ও বালিকাদের অধিক সুযোগ সৃষ্টি করতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে।
আজ ঢাকায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন গত ১১ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘে ‘নারী ও বালিকাদের বিজ্ঞান বিষয়ক চতুর্থ আন্তর্জাতিক দিবস’ উদযাপন অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্যে এই আহবান জানান।
জাতিসংঘ এবং এর সদস্যরাষ্ট্রসমূহ, এনজিও ও সিভিল সোসাইটি যৌথভাবে এই দিবসটি উদযাপন করে।
‘সামগ্রিক সবুজ প্রবৃদ্ধিতে নারী ও বালিকাদের জন্য বিনিয়োগের মূল্যায়ন’ বিষয়ক আলোচনায় মাসুদ বিন মোমেন আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ নারী ক্ষমতায়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে বালিকাদের উচ্চ বিদ্যালয়ের ভর্তির ক্ষেত্রে সাফল্য এবং গত এক দশক ধরে নারী ও বালিকারা ধারাবাহিকভাবে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অগ্রসর হচ্ছে।
স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, “কলেজ পর্যায়ে মেয়েরা প্রায় সমপর্যায়ে উঠে এসেছে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে বিশেষ করে চিকিৎসা ও জীবন সম্বন্ধীয় বিজ্ঞানে তারা ছেলেদের থেকেও ভাল করছে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ২২ ডিসেম্বর সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত রেজ্যুলেশন ৭০/২১২ অনুযায়ী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ প্রতিবছর ১১ ফেব্রুয়ারিকে নারী ও বালিকাদের বিজ্ঞান বিষয়ক আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। দিবসটি ২০১৬ সাল থেকে পালিত হয়ে আসছে। সুত্র: বাসস।

 

ছোট ছোট বালুকণা – ২


রেহনুমা বিনত আনিস


সামিয়ার বিয়ে হয়ে গেল মাসরুরের সাথে। বিয়ের অনুষ্ঠানে মাসরুরকে দেখে মনে হচ্ছিল সে আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে, কিন্তু সামিয়াকে দেখে মনে হচ্ছিল ওর আকাশের চাঁদটা কোথাও খোয়া গিয়েছে। ব্যাপারটা সবাই নববধূর স্বাভাবিক লজ্জাবোধ মনে করলেও মাসরুরের দৃষ্টি এড়ায়নি। রাতে শ্বশুরবাড়ীতে নিজের রুমে বসে ননদ মারযানের সাথে কথা বলছিল সামিয়া। মারযানের নতুন ভাবীর সম্পর্কে জানার আগ্রহের শেষ নেই। কিন্তু সামিয়াকে প্রচন্ড ক্লান্ত পরিশ্রান্ত দেখাচ্ছিল। ভাইয়াকে ঘরে প্রবেশ করতে দেখে কেটে পড়ল মারযান। সামিয়া সচকিত হয়ে সোজা হয়ে উঠে বসল। মাসরুর ঘরের দরজা বন্ধ করতে গিয়ে সামিয়ার বিচলিত চেহারা দেখে আধখোলা রেখে দিলো। ওর মায়া হোল সামিয়ার জন্য। বেচারী না জানে বাসর রাতের ব্যাপারে কি ভয়ানক সব কথা শুনে এসেছে! সে কাছে এসে বলল, ‘সামিয়া, আমি জানি তুমি খুব ক্লান্ত, আমি নিজেও টায়ার্ড। চল আমরা জামাকাপড় বদলে এশার নামাজটা পড়ে ঘুমিয়ে পড়ি। আর তুমি যদি চাও তাহলে আমরা কিছুক্ষণ গল্প করতে পারি। তুমি তো জানোই আমি গপ্পবাজ মানুষ!’

তারপর একটু ইতস্তত করে বেদনার্ত কন্ঠে বলল, ‘আর শোন, তোমার ভয় পাওয়া চেহারাটা দেখে আমি খুব কষ্ট পাচ্ছি। সামিয়া, আমি কোন হিংস্র পশু নই যে সুযোগ পেয়েই শিকারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ব। তুমি আমার বিবাহিতা স্ত্রী, আমরা সারাজীবন একসাথে থাকব। আমরা একে অপরকে জেনে বুঝে বন্ধু হবার সময় নিই। বাকীটা যখন সময় হবে তখন দেখা যাবে’।

কাপড় বদলাতে বাথরুমে চলে যায় মাসরুর। অবাক হয় সামিয়া। মাসরুরের খোলামেলা স্বভাব দেখে প্রকৃতপক্ষে মনের গোপন কুঠুরীতে এমনই একটা ধারণা সৃষ্টি হয়েছিল সামিয়ার, কিন্তু ওর প্রকৃত মানসিকতা বুঝতে পেরে মনে মনে লজ্জাই পায় সে।

দু’জনে নামাজ পড়ে জায়নামাজে বসেই গল্প শুরু করে। মাসরুর দেয়ালে হেলান দিয়ে আরাম করে বসে, সামিয়া দুই হাঁটুর ওপর মুখ গুঁজে বসে। মাসরুর জানায় ওর বাবামা ভাই বোন কি কি পছন্দ করে, কি তাদের অপছন্দ, যেন সামিয়া তাদের বুঝতে পারে। ওর কথাবার্তায় সামিয়ার বাবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ পায়। নিজের কথা শেষ করে মাসরুর সামিয়াকে বলে, ‘এবার তোমার ব্যাপারে কিছু বল যা আমি জানিনা’।

সামিয়া লজ্জা পায়। ওর কথা তো কেউ কখনো জানতে চায়নি! কিন্তু মাসরুরের বন্ধুসুলভ আচরনে ওর মনের কথাগুলো ভুরভুর করে বেরিয়ে আসে যা সে নিজের বাবাকেও বলতে পারেনি, ‘জানেন, আমি না স্বপ্ন দেখতাম আমি কোন দরিদ্র হতভাগা লোককে বিয়ে করব, ধরেন আবদুল্লাহ ভাইয়ের মত। তারপর আমার যত্ন দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে তার জীবনের সমস্ত দুঃখ কষ্ট মুছে দেব। কিন্তু আমার তাক্কদীরে ছিলেন আপনি যার কোন অভাবই নেই! আপনার সাথে বিয়ের কথা আমি কোনদিন কল্পনাই করিনি!’

‘আমার কথা তোমার কল্পনায়ও আসেনি! কেন সামিয়া?’

সামিয়া খুব স্বাভাবিকভাবেই বলল, ‘নাহ! ভাবিইনি কোনদিন। আপনার জন্য বুঝি মেয়ের অভাব হত? তাছাড়া আপনারা অনেক বড়লোক, আমরা গরীব; আপনি দেখতে ভাল, আমি খুবই সাধারন; আপনার ঝোঁক টাকার প্রতি, আমার পড়ার প্রতি- সব মিলেই ভাবিনি আমাদের বিয়ে হবার কোন সম্ভাবনা থাকতে পারে’।

মাসরুর আর কথা বাড়ালোনা, বলল, ‘অনেক রাত হয়েছে, চল শুয়ে পড়ি’।

সামিয়া জায়নামাজ ভাঁজ করে টেবিলের ওপর রেখে পেছন ফিরে দেখে মাসরুর কোথায় উধাও হয়ে গিয়েছে। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরেও মাসরুরের দেখা নেই। একসময় সে বসা অবস্থাতেই ঘুমের কোলে ঢলে পড়ল।

ঘুম ভাঙ্গলো ফজরের আজান শুনে। তখনও মাসরুরের হদিস নেই। সামিয়া বুঝে পায়না একটা লোক বিয়ের রাতে বৌকে কিছু না বলে কোথায় হাওয়া হয়ে যেতে পারে? নামাজ পড়ে কিছুক্ষণ কুর’আন তিলাওয়াত করে সামিয়া। মনটা একটু শান্ত হয়ে আসে, যদিও সে জানেনা ওর বিবাহিত জীবনের প্রথম লগ্নেই এমন অদ্ভুত ঘটনা কেন ঘটছে। এমন সময় দরজা ঠেলে ঘরে ঢোকে মাসরুর, চোখেমুখে গভীর ঘুমের চিহ্ন। ওর দিকে তাকিয়ে আছে সামিয়া, কিন্তু সে মনে হোলনা খেয়াল করল। বাথরুমে ওজু করে এসে নামাজে দাঁড়াল সে। সামিয়া ভাবল নামাজ শেষ হলে কথা বলবে, মনকে শান্ত রাখার জন্য আবার কুর’আন পড়ায় মনোযোগ দিল সে। একটু পর চোখ তুলে দেখে আবার মাসরুর উধাও!

ঘুম আর নির্ঘুমের মাঝে এক অদ্ভুত অবস্থায় কাটল সামিয়ার পরবর্তী কয়েক ঘন্টা। সাতটার সময় মাসরুরের ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো সামিয়ার, ‘সামিয়া, আমি জানি গত রাতে নিশ্চয়ই তোমার ভাল ঘুম হয়নি। নতুন জায়গায় গেলে প্রথম প্রথম ঘুমোতে একটু কষ্ট হয়। তবু অনুরোধ করব উঠে রান্নাঘরে যাও। মা নাস্তা বানাচ্ছেন। তোমার কিছু করতে হবেনা, মা তোমাকে কিছু করতে দেবেনও না। তুমি শুধু পাশে দাঁড়িয়ে ওনার সাথে কথাবার্তা বল। এটা তোমাদের মাঝে গুড আন্ডারস্ট্যান্ডিং তৈরী করার একটা ভাল সুযোগ। এখন সবাই ঘুম। তোমাদের কথাবার্তায় কেউ ডিস্টার্ব করবেনা’।

সামিয়া ভালভাবে চোখ খোলার আগেই আবার মাসরুর উধাও। লোকটা বার বার যায় কোথায়?

চলবে……

 

ইডেনের সাবেক অধ্যক্ষ মাহফুজার শ্বাসরোধে খুন


নারী সংবাদ


রাজধানীর ইডেন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাহফুজা চৌধুরী পারভীনের মৃত্যু শ্বাসরোধে হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডে একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের এসব দিক তুলে ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘ময়নাতদন্ত শেষে আমরা দেখতে পাই, মৃত নারীর ঠোঁটে, মুখে, আঙুলে ধস্তাধস্তির চিহ্ন পাওয়া গেছে। একটা আঙুল ভাঙা ছিল। তাকে মুখ চেপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড একজনের পক্ষে সম্ভব না। একাধিক ব্যক্তি এই হত্যার সঙ্গে জড়িত।’

আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মাহফুজা চৌধুরী পারভীনের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। সাংবাদিকদের ময়নাতদন্তের ব্যাপারে অবহিত করেন চিকিৎসক।

সায়েন্স ল্যাব এলাকায় সুকন্যা টাওয়ারের ১৬/সি নম্বর ফ্ল্যাটে থাকতেন মাহফুজা চৌধুরী পারভীন। তিনি সত্তরের দশকের ছাত্রলীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সহসভাপতি ইসমত কাদির গামার স্ত্রী। গতকাল রাত ৮টায় বাসা থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনার পর থেকেই ওই বাসায় কর্মরত দুই গৃহকর্মী রেশমা (৩০) ও স্বপ্না (৩৬) নিখোঁজ রয়েছেন। পুলিশের ধারণা, তারাই মাহফুজা চৌধুরীকে হত্যা করে পালিয়েছে।

গতকাল রাতেই তাদের দুজনকে আসামি করে মামলা করেন ইসমত কাদির গামা। সুত্রঃ নয়াদিগন্ত

 

শিশুদের প্রতি যত্নবান হই-১


ফাতেমা শাহরিন


পরিবার হল প্রথম এবং প্রধান স্থান বাচ্চাদের সুষ্ঠু বিকাশের জন্য। তাই বাচ্চাদের প্রতি যত্নশীল হওয়া চেষ্টা অবিরত প্রক্রিয়া। একটি সন্তান পৃথিবীতে আসে সুন্দর জীবনবোধ নিয়ে, পরবর্তীতে সমাজে উপযুক্ত নৈতিকতার সহিত গড়ে তোলার দায়িত্ববহন করে পরিবারের সব সদস্য। পরিবারের সদস্যদের জন্য কিছু টিপস,

১. চিঠি লিখুন
খুব ছোট করে হলেও বাচ্চাকে চিঠি লিখতে পারেন, আবার নিজেও চিঠি পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করুন! এতে সে লেখার প্রতি আগ্রহ পাবে।

২. কাঁদতে দিন
হাসির মতো কান্নাও একটি স্বাভাবিক আবেগ। বাচ্চা ব্যথা পেলে বা জেদ করলে তাকে কাঁদতে দিন। জোর করে তার কান্না থামাবেন না যদি না তা খুব বেশি দীর্ঘ না হয়। ধৈর্য ধরুণ সে থেমে যাবে।

৩. টিভি & মোবাইল
টিভিতে বিশেষ কোন প্রোগ্রাম এক সাথে বসে দেখন। হতে পারে খেলা। মোবাইলে শিক্ষণীয় ভিডিও কালেক্ট করে এক সাথে দেখতে পারেন।

৪. গানের সুরে শেখানো
বাচ্চারা গানের সুরে পড়তে ভালোবাসে। এবং সহজে আয়ত্ত করে নিতে পারে। গানের সুরে কবিতা এবং কঠিন সুত্র গুলো, নামগুলো শেখাতে পারেন।

৫. ঝাঁকিয়ে বা ছুঁড়ে মারা
বাচ্চারা বড়দের মতো খুব ভাল চিন্তাভাবনা করে ভুল করে না সুতরাং সেই দুষ্টমির জন্য বাচ্চাদের গায়ে কিছু ছুঁড়ে মারা বা ঝাঁকিয়ে আঘাত করা থেকে বিরত থাকুন।

৬. পড়ানো
বাচ্চারা অনুকরণ প্রিয়। আপনি যখন পড়েন ওর বয়স উপযোগী একটি বই ওর সামনে দিতে পারেন। এতে পড়ার আগ্রহ বাড়বে।

৭. কার্টুন দেখা
শিক্ষামুলক কার্টুন ‘মিনা কার্টুন বা সিসিমপুর’ বাচ্চার সাথে বসে মাঝেমধ্যে দেখুন এবং বর্নণা করুন আপনি কি কি দেখছেন।

৮. শিশুর নাম
বাচ্চাকে তার আসল অর্থবহ নাম ধরে ডাকুন। তাকে আজেবাজে নিক নামে ডাকবে না।

রেফারেন্স:
প্যারেন্টিং বই এবং নেট

 

মানব পাচারকারী চক্রের ২ সদস্যকে আটক: তরুণী উদ্ধার


নারী সংবাদ


মানব পাচারকারী শেফালী বেগম ও মামুন – নয়া দিগন্ত

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে মানব পাচারকারী চক্রের দুই সদস্যকে আটক করেছে র্যাব-১১। আটককৃতরা হলো শেফালী বেগম (৫০) ও মামুন (৩৫)। এ সময় পাচারের শিকার ২২ বছর বয়সী এক তরুণীকে উদ্ধার করে র্যাব। রোববার বিকেলে র্যাব-১১ এর ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দীন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

র‌্যাব জানায়, সিদ্ধিরগঞ্জ ভূমিপল্লী আবাসিক এলাকায় শনিবার রাত সাড়ে ১১টায় অভিযান চালিয়ে মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যে শেফালী বেগমকে (৫০) আটক করা হয়। পরে শেফালী বেগমের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী কদমতলী এলাকা হতে মামুন (৩৫) নামের মানব পাচারকারী চক্রের আরেক সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।

শেফালী বেগম বেশ কয়েক বছর যাবৎ নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে ফ্যামিলি বাসার ছদ্মবেশে পতিতাবৃত্তির ব্যবসা করে আসছে।

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে একটি সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী চক্রের মাধ্যমে যুবতী মেয়েদের অধিক বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে এসে জিম্মি করে জোরপূর্বক অসামাজিক কাজে ব্যবহার করত।

গ্রেফতারকৃত মামুন তার একজন সহযোগী ও নিয়মিত খদ্দের। পরিচয়ের সূত্রে মামুন উদ্ধারকৃত ভিকটিমকে অধিক বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকায় নিয়ে আসে। প্রথমে ভিকটিমকে ঢাকার কমলাপুর এলাকায় একটি আবাসিক হোটেলে রাখে।

মামুন হোটেল কক্ষে জোরপূর্বক ভিকটিমের শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করে। পরে চাকরি দেয়ার নামে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে ভিকটিমকে শেফালী বেগমের হাতে তুলে দেয়। শেফালী বেগম ভিকটিমকে তার বাসায় জিম্মি ও মারধর করে নিয়মিত অসামাজিক কাজে বাধ্য করত।

গ্রেফতারকৃত শেফালী বেগম ও মামুনের বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মানবপাচার আইনে মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

 

ছোট ছোট বালুকণা – ১


রেহনুমা বিনত আনিস


সামিয়া ছিল একেবারেই অন্য ধাঁচের একটা মেয়ে। শিক্ষক পিতার সন্তান বলেই হয়ত ওর মাঝে পার্থিব কামনা বাসনার উর্ধ্বে স্থান পেয়েছিল মানবিকতাবোধ এবং পরোপকারের অদম্য ইচ্ছা। যেখানে ওর সহপাঠিনীরা স্বপ্ন দেখত কোন বড়লোকের ছেলেকে বিয়ে করে লন্ডন প্যারিস অ্যামেরিকা ঘুরে ঘুরে জীবন কাটিয়ে দেয়ার, সামিয়ার জীবনের লক্ষ্য ছিল এমন কাউকে বিয়ে করার যার জীবনের সকল অভাব এবং শূন্যতাবোধ সে ভালোবাসা এবং যত্ন দিয়ে কানায় কানায় পরিপূর্ণ করে দেবে। মনের সঙ্গোপনে ওর একটা সুপ্ত ইচ্ছা ছিল ওর বাবার প্রিয় ছাত্র আবদুল্লাহ ভাইকে বিয়ে করার। ছেলেটি জীবনের কাছে কিছুই পায়নি। বাবামা ছিলোনা, মানুষ হয়েছে চাচা চাচীর কাছে। একটা বিয়ে করেছিল, বউটা মরে গেল এক বছরের মাথায়। মেধার অভাব ছিলোনা মোটেই, কিন্তু তদবীর করার কেউ ছিলোনা, সামান্য একটা চাকরী করে, চলে কোনক্রমে। ওর শার্টের ছেঁড়া পকেটটা দেখলে সামিয়ার ইচ্ছে করে সেলাই করে দিতে। ওর ঘর্মাক্ত, ক্লান্ত, বিষন্ন মুখটা দেখলে সামিয়ার বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে ওঠে, ইচ্ছে করে আঁচল দিয়ে মুছিয়ে দিতে। আবার আবদুল্লাহ যখন নামাজে দাঁড়িয়ে সুমধুর স্বরে তিলাওয়াত করে তখন ওর মনটা এক স্নিগ্ধ প্রশান্তিতে ভরে যায়। আবদুল্লাহ কখনো ওর দিকে তাকায়না, চোখ পড়লে দ্রুত চোখ নামিয়ে নেয়, কথা বলার তো প্রশ্নই ওঠেনা। এতে বরং আবদুল্লাহর প্রতি ওর শ্রদ্ধা বেড়ে যায়। তবে সামিয়া নিজেও ওর বাবার ছাত্রদের সামনে তেমন আসেনা।

শুধু একজনের সাথে সে পেরে ওঠেনা – মাসরুর ভাই। এই ছাত্রটি যেমন আমুদে তেমন গপ্পবাজ। বাবা না থাকলে রান্নাঘরে এসে মায়ের সাথে গল্প জুড়ে দেয়। সামিয়া মাকে সাহায্য করতে গেলে ওর সাথেও গল্প শুরু করে দেয়, সে হুঁ হাঁ করে পালিয়ে বাঁচে। বিরাট বড়লোকের ছেলে মাসরুর। কিন্তু সেটাই তার একমাত্র পরিচয় নয়, অল্প বয়সেই সে নিজেও প্রতিষ্ঠিত ব্যাবসায়ী। দেখতে সুন্দর, ভাল পোশাক আর সুগন্ধী তাকে আরো আকর্ষনীয় করে তোলে। সামিয়াদের বাসার সামনে মাসরুরের গাড়ী দেখলেই কিভাবে যেন পাড়ার চাচী, খালা, ফুপুরা দলে দলে তাদের মেয়ে, ভাগনী, ভাতিজিদের নিয়ে ওদের বাসায় বেড়াতে আসতে থাকে। বাসায় কাজ বাড়ে প্রচুর। তাই মাসরুরের আসাটা সামিয়ার পছন্দ নয়। বান্ধবীরা বলে, ‘আহা, উনি আমাদের বাসায় এলে আমরা ধন্য হয়ে যেতাম! তুই একটা নিরামিষ’।

একদিন বিকালে মাসরুর বেড়াতে এসেছে ওর মা বাবাকে নিয়ে। মেহমান দেখেই সামিয়া রান্নাঘরে ছুটলো মাকে সাহায্য করতে। গিয়ে দেখে মা ফ্রিজ থেকে সেমাই, মিষ্টি, দই ইত্যাদি বের করছেন। বুঝলো মাসরুর মাকে আগে জানিয়েছে। যাক, লোকটার কিছু হুঁশজ্ঞান আছে তাহলে! সামিয়াকে দেখে মা বললেন, ‘তুই একটা ভাল কিছু পর, মাসরুরের আম্মাকে ভিতরের ঘরে নিয়ে বসাই। আর শোন, সাইফ সাইদকে বল বাসায় মেহমান এসেছে, সামনের ঘরে গিয়ে বসতে’।

সামিয়া আঁতকে উঠে বলে, ‘ও মাগো! আমি ভাইয়াদের কিছু বলতে পারবনা। ওরা দু’জনই পড়ছে, কিছু বলতে গেলে হত্যাকান্ড হয়ে যাবে! বসার ঘরে আব্বুর গলা শুনেছি, ওদের যেতে হবেনা। ’

মা জোর দিয়ে বললেন, ‘বল, আমি বলেছি সামনের ঘরে যেতে, কিছু বলবেনা’।

বুকের ভেতর হৃৎপিন্ডটার ধড়াস ধড়াস শব্দ যেন কানে শুনতে পাচ্ছে সামিয়া। দুই ভাই মনোযোগ দিয়ে পড়ছে। সে দরজায় দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে সাহস করে বলে ফেলল, ‘ভাইয়া, মা বলেছে ঘরে মেহমান এসেছে, সামনের ঘরে যেতে’। চোখ খুলে দেখে সাইদ আয়নার সামনে চুলে চিরুনী বুলাচ্ছে, সাইফ পাশে দিয়ে যেতে যেতে মাথায় হাত বুলিয়ে ওর চুলগুলো এলোমেলো করে দিলো। যাক, তবু বকা তো দেয়নি!

নিজের ঘরে গিয়ে কাঠের আলমারিটা খুলল সামিয়া। এককালে এটা ওর দাদীর ছিল, এখন এটা ওর সম্পত্তির আধার। আলমারীর অর্ধেকটা জুড়ে বই। বাকীটায় ক’খানা জামাকাপড় আর কিছু ইমিটেশনের গহনা, নিজের আঁকা কিছু ছবি আর কিছু ডায়রী যার পাতায় পাতায় ওর লেখা কবিতা। গতকাল যে জামাটা নাবিহার বাসায় পরে গেছিল সে জামাটা ভাঁজ করা হয়ে ওঠেনি, ওটাই গায়ে চাপিয়ে নিলো সে। কাপড় বদলে রুমের দরজা খুলতেই দেখে মাসরুরের মাকে নিয়ে আম্মু হাজির। সালাম দিয়ে ওনাকে বিছানায় বসার ব্যাবস্থা করে দিয়ে চলে যাচ্ছিল সামিয়া, মা ডেকে বললেন, ‘তুই ওনার সাথে গল্প কর, আমি নাস্তা দিয়ে আসছি’।

সামিয়া বলল, ‘আমি ভাইয়াদের দিয়ে সামনের ঘরে নাস্তা পাঠিয়ে দিচ্ছি, তুমি ওনার সাথে বোস’।

কিন্তু মা ওকে বসিয়ে রেখে চলে গেলেন। সামিয়া মাসরুরের মায়ের সাথে কি কথা বলবে? উনি নানারকম কথা জিজ্ঞেস করতে লাগলেন, কি পড় কি কর জাতীয়,যা সচরাচর মুরুব্বীরা জিজ্ঞেস করে থাকেন, সে উত্তর দিয়ে গেল।

খাওয়া দাওয়া গল্পগুজব শেষ, মেহমান চলে গেল। কিছুক্ষণ পর বাবা এসে সামিয়াকে ডাকলেন, ‘মা, কি করিস?’

‘কিছু না আব্বু, পড়তে বসব’।

‘আচ্ছা। আগে চল তোর সাথে কিছু কথা বলি। তুই এখানে আমার সামনে বস’।

বাবাকে বিছানায় বসতে দেখে সামিয়া সামনে দাঁড়িয়ে রইল। বাবা ওকে হাত ধরে পাশে বসালেন।

‘শোন মা, মেয়ে বড় হলে বাবামায়ের চিন্তার অন্ত থাকেনা – একটা ভাল ছেলে পাব তো? শ্বশুরবাড়ীতে মেয়েটাকে আদর যত্ন করবে তো? মেয়েটা ভাল থাকবে তো? আল্লাহ আমাদের চিন্তা শুরু করার আগেই সেই চিন্তা থেকে মুক্তি দিলেন। মাসরুরের আগে ওর বাবা আমার ছাত্র ছিল। তখন আমি মাত্র শিক্ষকতা শুরু করেছি। সে ছিল আমার বছর চারেকের ছোট। ওর বিয়ে, মাসরুরের জন্ম সব আমার চোখের সামনে। ওর মা খুব ভাল মেয়ে রে। আজ ওরা যখন মাসরুরের জন্য তোকে চাইল আমি তোর সাথে কথা না বলেই হ্যাঁ করে দিলাম। তোর মা, সাইফ, সাইদ সবাই খুশি। কি রে মা? আমরা তোকে জিজ্ঞেস না করেই সিদ্ধান্ত দিয়ে দিলাম বলে মনে খুব কষ্ট পেয়েছিস?’

সামিয়ার পাংশুটে মুখ দেখে বাবা ভাবলেন ওর সাথে আলাপ না করেই সিদ্ধান্ত দেয়ায় সে মর্মাহত হয়েছে। কিন্তু তিনি বুঝলেন না ঐ মূহূর্তে সামিয়ার সারা জীবনের লালিত স্বপ্ন ধূলিস্যাত হয়ে গেল, সে তো রাজরানী হতে চায়নি কখনো, চেয়েছিল ঘুঁটেকুড়ানী হতে! কিন্তু ওর ভুল হয়েছিল এই ভেবে যে পরিবারের সবাই ওর মত করে ভাববে। কিন্তু ওদেরই বা দোষ কোথায়? যার জন্য ঘুঁটেকুড়ানী হতে পারে তেমন কেউ তো আজও আসেনি! রাজা রানী যদি যেচে রাজপুত্রের জন্য ঘুঁটেকুড়ানীকে নিতে চায় তাহলে কোন স্বাভাবিক পরিবার কোন যুক্তিতে মানা করবে? সে জানে মাসরুরের বাবা মা ওর বাবার প্রতি শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতাবশত ওকে বৌ করে নিতে চেয়েছেন, নইলে আর্থিক এবং সামাজিক দিক থেকে ওদের পার্থক্য আকাশ পাতাল। কিন্তু যে মাসরুরের জন্য দুনিয়ার সুন্দরী মেয়েরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে সে কেন ওকে বিয়ে করতে রাজী হোল সেটা কিছুতেই ওর মাথায় এলোনা।

‘কি মা, কিছু বলবিনা?’

বাস্তবতায় ফিরে এলো সামিয়া। মাথা নাড়লো, ‘তোমরা যা ভাল মনে কর আব্বু’।

…..(চলবে)

 

করি পুষ্প রে বিকশিত-৪

আফরোজা হাসান


নাস্তা করা শেষ হলে বাচ্চাদেরকে নিয়ে পার্কে ঘুরতে বের হলো অন্তরা আর নায়লা। বাচ্চাদেরকে খেলা করতে বলে দুজন এক পাশে গিয়ে বসলো। ছুটোছুটি করে খেলতে থাকা বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে নায়লা হেসে বলল, যখনই বাচ্চাদেরকে নিয়ে পার্কে আসি খুব ছোট হয়ে যেতে ইচ্ছে করে জানো? নিজের ছোটবেলাটাকে তখন খুব মনে পড়ে। কত ধরণের খেলা খেলেছি আমরা। আর আমাদের বাচ্চারা খেলা বলতে বোঝে নানা ধরণের ইলেক্ট্রনিক্স গেমস। যান্ত্রিকতা বাচ্চাদের মধ্যে আনন্দ, উচ্ছ্বাসকে কেমন যেন হ্রাস করে দিচ্ছে দিনকে দিন, তাই না?

অন্তরা বলল, বাচ্চাদের মধ্যে যাতে আনন্দ, উচ্ছ্বাস অক্ষুণ্ণ থাকে সেই দায়িত্ব বাবা-মাকেই পালন করতে হয়। আর তুমি যেভাবে ওদেরকে বড় করছো তা কিন্তু মুগ্ধ হবার মত। তুমি তোমার সবটা সময় বাচ্চাদের পিছনেই ব্যয় করো। আমি তো যখনই তোমাকে দেখি অনুভব করি তাশফিনকে আরো সময় দেয়া প্রয়োজন আমার।

এত ব্যস্ততার পরও তুমি ছেলেকে অনেক সুন্দর ভাবে বড় করেছো। অবশ্য তোমার তাশফিন তো এমনিতেই সবকিছু বোঝে। যে সুন্দর করে যুক্তি দেয়, মাশাআল্লাহ। আমার গুলোর মত হলে পাগল হয়ে যেতে।

অন্তরা হেসে বলল, তাশফিনের কর্মকান্ড তুমি দেখো না তাই এভাবে ভাবছো। মাছের কাঁটার কথাই ধরো। ওর কান্না বন্ধ করার জন্য আমি হাদিসটা বলেছিলাম। সাথে সাথে কাজও হয়েছিল। কিন্তু কয়েকদিন পর তাশফিন ইচ্ছে করে মাছের কাঁটা গলায় বাঁধিয়েছিল গোনাহ মাফ হবে সেজন্য। শুধু তাই না বাগানে গিয়ে গায়ে গোলাপের কাঁটার খোঁচা লাগাতো, ক্যাকটাসের খোঁচা লাগাতো। এরপর যখন বুঝিয়ে বললাম যে, নিজেই নিজেকে কষ্ট দিলে আল্লাহ গোনাহ তো মাফ করবেনই না উল্টো তোমার উপর আরো বিরক্ত হবেন, তখন গিয়ে এসব বন্ধ করেছে।

নায়লা হাসতে হাসতে বলল, আমি তো আরো মনেকরি তাশফিন তোমাকে একদম যন্ত্রণা করে না। যা বলো সবই বুঝে নিতে দেখি তো তাশফিনকে।

অন্তরা হেসে বলল, এমনিতে তো আর সব বোঝে না ভাবী। সারাটা ক্ষণ কিভাবে প্রশ্ন করতে থাকে সেটা তো দেখোই। যদিও বাচ্চাদের প্রশ্ন করার স্বভাবটা খুবই ভালো। এতে ওদের মনে কি ভাবনা চিন্তা চলছে সেটা জানা যায়। বুঝিয়ে বলে দেয়া সম্ভব হয় সবকিছু। এখনো আমার মনেআছে যখন চাইল্ড সাইকোলজির উপর কোর্স করেছিলাম প্রফ ক্লাসে ঢুকে বলেছিলেন, তোমরা কি তৈরি এই পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত, সবচেয়ে বুদ্ধিমান, সবচেয়ে চিন্তাশীল প্রাণীটির নতুন প্রজন্মকে জানা-বোঝা ও চেনার জন্য? তাদের মনের রাজ্যে অবাধ বিচরণের জন্য? তাদের কল্পনার রাজ্যে হাবুডুবু খাওয়ার জন্য? তাদের সাথে আকাশে উড়ার জন্য? খন্ড খন্ড মেঘের উপর লাফিয়ে লাফিয়ে চলার জন্য? ছোট্ট থেকে ছোট্ট বিষয়ে বিস্ময়ে বিকশিত হবার জন্য? প্রশ্ন বিশারদ হয়ে যাবার জন্য? এই যেমন, পাখী কেন উড়ে, ফুল কেন ফোটে, প্রজাপতি কেন এত রঙিন? আমার কেন ডানা নেই? দাদুর কেন দাঁত নেই? বাবা কেন রোজ অফিসে যায়? ধূর ছাই সব্জি কেন খেতে গোশতের মত লাগে না? আচ্ছা দিদার চামড়াকে প্রেস করে দিলে কি কুঁচকানো ভাব কেটে যাবে?

হেসে ফেললো নায়লা। বাহ! বেশ মজার ছিলেন তো তোমাদের প্রফ।

 

চলবে…

 

গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ


নারী সংবাদ


তিনজনকে আসামি করে মামলা।
পানি দিতে দেরী হওয়ায় লক্ষ্মীপুরে গৃহবধূ শিল্পী আক্তারকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে শ্বশুর বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার ভোররাতে সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জের চরভূতা এলাকা থেকে ওই গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে পুলিশ। নিহত গৃহবধূ কুমিল্লার লালমাই উপজেলার আবদুল জব্বারের মেয়ে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই আমির হোসেন বাদী হয়ে গৃহবধূর দেবর নিরব হোসেন, শ্বশুর মোসলেম মিয়া ও শাশুড়িসহ তিনজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সকালে সদর থানায় এ মামলা দায়ের করেন তিনি। ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে সবাই।

লক্ষ্মীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. লোকমান হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনায় তিনজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে আসামি সবাই পলাতক রয়েছে। তাদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

ওরস্যালাইন বানানো নিয়ে কিছু কথা


ডা. মারুফ রায়হান খান


আজকে একজন ডাক্তার সাহেবের স্টেটাস মারফত জানতে পারলাম তার কাছে আসা এক ছোট্ট শিশু মারা গেছে। কারণ কী? অনুসন্ধান করে জানা গেলো শিশুটির ডায়রিয়া হয়েছিল। মা ওরস্যালাইন খাবার যে নিয়মটি তা জানতেন না অথবা মানেননি। ফলে শিশুটির শরীরের লবণের মাত্রা ভীষণ রকমের বেড়ে যায় এবং অবধারিতভাবে মারা যায়। একটি ফুটফুটে শিশুর জীবনবাতি চিরতরে নিভে গেলো।

একটা ছোট্ট শিশু পৃথিবীর কোনোকিছু বোঝে না, তার লালন-পালনের সমস্ত দায়িত্ব পালন করে তার মা-বাবা। ফলে একজন মা কিংবা বাবার কিন্তু কিছু প্রিলিমিনারি জ্ঞান থাকা প্রয়োজন শিশুর লালন-পালন সম্পর্কে এবং অতি অবশ্যই শিশুর স্বাস্থ্য সম্পর্কে। আমি কোনোভাবেই বলব না এই মা’টির ভালোবাসা, স্নেহ বা ডেইডিকেশানের কোনো অভাব ছিল তবে খুব সম্ভবত জ্ঞান বা সচেতনতার অভাব ছিল। যদিও জীবন-মৃত্যু সবকিছু আল্লাহর ইশারায় হয়, তবুও বোধহয় তিনি নিজেকে কিছুটা অপরাধী ভাববেন।

আসলে ঘটনাটা কী হয়েছে। সবার বোঝার জন্যে খুব সিম্পলিফাই করে বলা যাক। ওরাল রিহাইড্রেশান সল্টের (যাকে পানিতে মেশানোর পর আমরা স্যালাইন বলছি) মধ্যে থাকে লবণ অর্থাৎ সোডিয়াম ক্লোরাইড, পটাশিয়াম ক্লোরাইড, থাকে গ্লুকোজ এবং ট্রাইসোডিয়াম সাইট্রেট৷ নিয়ম হচ্ছে আমাদের যে স্যালাইনের প্যাকেটটি পাওয়া যায় তা হাফ লিটার পানির মধ্যে মিশিয়ে খাওয়তে হয়। এখন কেউ যদি এরচেয়ে অল্প পানিতে মিশিয়ে খাওয়ায় তাহলে কী হবে? শরীরে লবণের মাত্রা বেড়ে যাবে অনেক বেশি। এর প্রভাবে কোষ থেকে পানি বেরিয়ে আসবে, বিশেষ করে ব্রেইনের। কোষগুলো নষ্ট হবে। এবং তা থেকে মৃত্যু হওয়া অস্বাভাবিক না৷ যেমনটি হয়েছে এই শিশুর ক্ষেত্রে। সোডিয়াম ক্লোরাইডে রক্তে থাকার কথা ১৩৫-১৪৫ মিলিমোল/লিটার, সেখানে শিশুটির হয়ে গিয়েছিল ১৬৫ মিলিমোল/লিটার! তার মা না কি একটু একটু করে সল্ট নিয়ে একটু একটু করে পানিতে মেশাচ্ছিলেন৷ ফলে লবণ পানির যে রেশিওটি মেইন্টেইন করার কথা ছিল তা সম্ভব হয়নি।

প্রশ্ন : তাহলে স্যালাইন কীভাবে বানাতে হবে?

উত্তর : হাফ লিটার পানি নিতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় হাফ লিটারের একটা বোতল দিয়ে মেপে নিলে। এবার পুরো প্যাকেটটির সবটুকু ঢেলে দিয়ে মিশিয়ে নিতে হবে৷ এরপর পরিমাণমতো খাওয়াতে হবে।

প্রশ্ন : কী ধরনের পানির সাথে মেশাব? ডিসটিলড ওয়াটার না কি আমরা যে পানি খাই সেটা?

উত্তর : আমরা রেগুলার যে ট্যাপ ওয়াটার খাই সেটাই ব্যবহার করব; ডিসটিলড ওয়াটার না। কারণ সে পানিতে বেশ কিছু মিনারেল আছে। ডায়রিয়ার সাথে মিনারেল বেরিয়ে যায় শরীর থেকে।

প্রশ্ন : একটু একটু করে সল্ট পানির সাথে মেশালে হবে না?

উত্তর : না, হবে না। লবণের তুলনায় পানি কম-বেশি হয়ে উপরের কেইসের মতো ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনতে পারে। তাই পুরোটা একসাথেই বানাতে হবে।

প্রশ্ন : স্যালাইন বানিয়ে কতোক্ষণ রাখা যাবে?

উত্তর : ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত খাওয়ানো যাবে।

প্রশ্ন : ১২ ঘণ্টা পর স্যালাইন রয়ে গেলে সেটা কী করব?

উত্তর : ফেলে দিতে হবে।

প্রশ্ন : টাকা দিয়ে কিনেছি নষ্ট কেন করব?

উত্তর : এটা নষ্ট করা না। এরমধ্যে গ্লুকোজ থাকে। যে পানিতে গ্লুকোজ থাকে তা জীবাণু বেড়ে ওঠার জন্যে একটা চমৎকার মিডিয়া হিসেবে কাজ করে। আর ১২ ঘণ্টা পর সেখানে জীবাণুর সংক্রমণ হবার সম্ভাবনা খুব বেশি। এই স্যালাইন খাওয়ালে শরীরে জীবাণুর সংক্রমণ হতে পারে।

প্রশ্ন : গ্লুকোজ যখন খারাপই, তাহলে এখানে গ্লুকোজ দেবারই বা কী দরকার ছিল?

উত্তর : একটা মানুষের যখন বারবার লুজ স্টুল পাস হতে থাকে, সে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। এই গ্লুকোজ তাকে এনার্জি দেয়। তাছাড়া ডায়রিয়ার সময় প্রচুর লবণ বেরিয়ে যায় শরীর থেকে, এখন স্যালাইনের মধ্যে যে লবণ (সোডিয়াম) থাকে তা কোষের ভেতরে ঢোকাতে গ্লুকোজের সহায়তা লাগে।

প্রশ্ন : এতো যখন ঝামেলা তো স্যালাইন বারবার খাওয়াবার দরকার কী? শুনেছি বাজারে ইমোটিল নামে একটা ওষুধ পাওয়া যায় সেটা খেলে না কি ডায়রিয়া বন্ধ হয়ে যায়? সেটা খাইয়ে দিই?

উত্তর : না। ২০ বারের বেশি ডায়রিয়া হলে চিকিৎসকরা এটা দিয়ে থাকেন। তাছাড়া এই ওষুধটার কিছু সমস্যা আছে। ডায়রিয়ার সাথে শরীরের বিষাক্ত পদার্থ/জীবাণুগুলো বেরিয়ে যায়, এখন আমরা যদি এই ওষুধ দিই তাহলে স্টুল পাস হওয়াই বন্ধ হয়ে যাবে৷ ফলে সেগুলো শরীর থেকে বের হবে না, যা ক্ষতিকর। এছাড়া ছোট বাচ্চাদের ক্ষুদ্রান্ত্রের মুভমেন্ট বন্ধ করে দিয়ে ‘প্যারালাইটিক আইলিয়াস’-এর মতো ভয়াবহ অবস্থা করতে পারে।

আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন সবসময়। মনে রাখবেন আপনার চিকিৎসক আপনার আপনজন। তিনি কোনোভাবেই চান না তার রোগী খারাপের দিকে যাক। এটা তার জন্যে গ্লানিকর। না জানা দোষের কিছু না, জানতে চেষ্টা না করা দোষের কিছু হবার সম্ভাবনা বেশি। আমাদের আপনজনদের জানানো আমাদেরই দায়িত্ব।

ডা. মারুফ রায়হান খান
লেকচারার, ডিপার্টমেন্ট অফ ফার্মাকোলজি
এনাম মেডিকেল কলেজ

 

মেহেদী রং না মুছতেই লাশ নববধূ, স্বামী আটক


নারী সংবাদ


হাতের মেহেদী রং এখনো রয়েছে তাজা। স্বপ্ন ছিল স্বামীকে নিয়ে সুখের সংসারে বসবাস করবে। কিন্তু সেই আশা চুরমার করে দিয়ে বিয়ের এক মাসের মাথায় দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলো এক নববধূ। নিহত নববধূর নাম নাঈমা আক্তার(২১)।

বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টায় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের নতুন বাজার এলাকার হান্নান মিয়ার ভাড়া বাসা থেকে নাঈমার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় নববধূ নাঈমা আক্তারের ঝুলন্ত লাশ দেখে পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয় লোকজন। পরে পুলিশ নাঈমার লাশ উদ্ধার ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় নিহত নাঈমার স্বামী শহিদুল ইসলামকে আটক করেছে পুলিশ।

জানা গেছে, মাসখানেক পূর্বে বাগেরহাট জেলার দেলোয়ারের কন্যা নাঈমা আক্তারকে বিয়ে করেন খুলনা জেলার রূপসা থানার তালিমপুরের বাসিন্দা নুরুল ইসলামের ছেলে শহিদুল ইসলাম। বিয়ের পর সিদ্ধিরগঞ্জের নতুন বাজার এলাকায় ছোটভাই আমিনুল ইসলামের বাসায় স্ত্রী নাঈমাকে নিয়ে বসবাস করছিল সে। বৃহস্পতিবার সকালে খাবারের জন্য আমিনুল ইসলামের স্ত্রী খাদিজা বেগম ডাক দিতে গেলে হাত, মুখ ও পা বাঁধা অবস্থায় ঘরের আড়ার সাথে নাঈমা আক্তারের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পায়।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম জানান, ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক কলহের জের ধরে স্বামী শহিদুল নববধূ নাঈমাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখে। তবে ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর সঠিক কারণ বলা যাবে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মোঃ শাহীন শাহ্ পারভেজ বলেন, গৃহবধূ নাঈমার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এটা আত্মহত্যা নাকি হত্যা তা ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে। তবে এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের স্বামীকে থানায় আনা হয়েছে। সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

চৌগাছায় স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা


নারী সংবাদ


যশোরের চৌগাছায় এক স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। নিহত স্কুলছাত্রীর নাম আখি আক্তার (১৩)। নিহত আখি খুলনা জেলার তেতুলবাড়িয়া গ্রামের প্রবাসি নজরুল ইসলামের কন্যা এবং চৌগাছা ছারা পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেনীর ছাত্রী। নিহত স্কুল ছাত্রী আখি চৌগাছায় বড় বোন তামান্না ইয়াসমিনের বাসায় থেকে লেখাপড়া করতো।

জানা যায়, সোমবার সন্ধ্যায় স্কুলছাত্রী আখির মা পারিবারিক কলহের কারণে মোবাইল ফোনে তাকে বকাঝকা করে। এতে মায়ের ওপর অভিমান করে সিলিং ফ্যানের সাথে গালায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে আখি। স্থানীয় লোকজন বুঝতে পেরে ঘরের দরজা ভেঙ্গে তাকে উদ্ধার করে চৌগাছা মডেল সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ব্যাপারে নিহত স্কুলছাত্রীর নানা রুহুল আমিন জানান, কি নিয়ে মায়ের সাথে আখির মোবাইলে ঝগড়া হয়েছে তা আমার জানা নেই। তবে দুপুরের পরে বাসায় কেউ ছিল না। সে সময় সে সিলিং ফ্যানের সাথে গলায় ফাঁস দেয়। বুঝতে পেরে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

চৌগাছা থানার ডিউটি অফিসার এএসআই রবিউল ইসলাম এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে চৌগাছা থানার পুলিশ মেয়েটির লাশ উদ্ধার করে। মঙ্গলবার মেয়েটির পরিবারের লোকজন তাদের কোনো অভিযোগ নেই, মর্মে থানায় লিখিত দিয়ে লাশ নিয়ে গেছে।
সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

বয়স হার মেনেছে বৃদ্ধা মালঞ্চির জীবন সংগ্রামের কাছে


নারী সংবাদ


বর্তমানে বাংলাদেশের লোক সংখ্যা সাড়ে ষোল কোটির উপড়ে। যার মধ্যে ৬ দশমিক শতাংশের বয়স ৬০ বছরের ওপড়ে। বাংলাদেশে একজন ব্যক্তি যখন ৫৫ কিংবা ৫৭ বছরে পা রাখেন তখন তাঁকে সাধারণত প্রবীণ কিংবা বৃদ্ধ হিসেবে ধরে নেয়া হয়। কর্মক্ষম থাকলেও তাকে চাকরি এবং কাজ থেকে অব্যাহত দেয়া হয়। অনেক সময়ই তিনি কাজ করতে চাইলেও তাকে কাজে নেয়া হয় না। যে কারণে বৃদ্ধ বয়সে একজন মানুষের ভরসার পাত্র হয় তার সন্তান। তবে এ ক্ষেত্রে সমাজে গরীব মানুষের বেলায় ঘটে ভিন্ন কিছু। গরীবদের বেলায় কিছু কিছু সন্তানের নিষ্ঠুরতার কাছে মানবিকতা হার মানে। হার মানে অনেক বৃদ্ধ মা-বাবা। কারও নতুন ঠিকানা হয় বৃদ্ধাশ্রম। গরীবদের বেলায় কারও ঠাঁই মেলে রাস্তার ফুটপাতে। আবার কেহ কেহ সন্তানের ধিক্কার এবং নিষ্ঠুরতার কাছে না হেরে নিজেরাই নিজেদের বাকি জীবনটাকে নতুনভাবে গোছাতে শুরু করে। কেহ কেহ সফল হয়। তাদেরই একজন ৬৬ বছর বয়সী মালঞ্চি । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মালঞ্চি বেশ পরিচিত মুখ।
চারুকলা অনুষদের সামনে একটি বড় কাঠের বাক্সে চুড়ি নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায় তাকে। প্রায় ১৮ বছর ধরে চুড়ির ব্যবসা করছেন মালঞ্চি। স্বামী, তিন ছেলে এবং দুই মেয়েকে নিয়ে ছিল মালঞ্চির সংসার। অভাব অনটনের কারণে তিন ছেলেকে অষ্টম শ্রেণীর পর আর পড়াতে পারেননি তিনি। সংসারের টানাপোড়নের মধ্যেই তিনি তার ছেলে মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। এরপর মালঞ্চি এবং তার স্বামীর জীবন অনাকাঙ্খিত মোড় নেয়। তাদের ছেলে-মেয়ে তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল। মালঞ্চি এবং তার স্বামীকে দেখাশোনা করতে চাইতো না তারা। তখন মালঞ্চি এবং তার স্বামীকে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের শিকার হতে হয়। এই বুড়ো-বুড়ি আলাদা একটি বস্তিতে থাকা শুরু করল। হাতে যে শেষ সম্বল নিয়ে তারা বের হয়েছিলেন তাও শেষ হবার পথে। পূর্ব থেকেই মালঞ্চির সংসারে অভাব-অনটন ছিল। তবে বুড়ো বয়সে সন্তানের সেবা পাবেন সেই আশায় ছিলেন তারা। তাদের আশা ছিল, ‘আমগো ছাওয়াল এই বুড়া-বুড়ীরে দেখব। জীবনে বড় কিছু হইব’। কিন্তু এই আশা যখন ভেঙ্গে গেল তখন তারা চোখের সামনে সরষে ফুল দেখতে লাগলেন। পরবর্তীতে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, ‘আবার সংসারের হাল ধরন লাগব। এমনে বয়সের দোহাই দিয়া বইসা থাকলে চলবো না। আল্লাহ্ দিলে অহনও শরীরে যে শক্তি আছে কাজ কাম কইরা খাইতে পারমু’। চুড়ির ব্যবসা শুরু করার নিদ্ধান্ত নিলেন মালঞ্চি। কিন্তু তাদের এই সিদ্ধান্তে প্রথম বাধা হয়ে দাঁড়ায় মূলধনের অভাব। তিনি বললেন, ‘ঐ সময় খাওনের পর্যন্ত টেকা আছিল না। কিন্তু একটা কাজ শুরু করন লাগব। আমার জামাই(স্বামী)তখন রিক্সা চালাইত। কিন্তু বুড়া মানুষটার কষ্ট বেশি হইত। বেশি একটা আয়-রোজগারও হইত না। পরে আল্লাহর নাম নিয়া নামলাম এই ব্যবসায়ে। মাইনষের থেইক্কা সাত হাজার টেকা ধার নিয়া শুরু করছিলাম’।
ব্যবসায়ী হিসেবে মালঞ্চিকে বেশ দূরদর্শী বলা যেতে পারে। তিনি ব্যবসায়ের জন্য এমন স্থান বেছে নিলেন যেখানে হরহামেশা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া কিশোরীদের আনাগোনা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গন হওয়ায় বেচা-কেনাও ভাল হয়। এখানে কোন প্রকার সমস্যারও সমুখীন হতে হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এহানের পোলাপানগুলাই আমার মাইয়া, হ্যারাই আমার পোলা। আমার কোন সমস্যা হইলে এরাই আমার দেখভাল করে। এই শীতে আমি যহন কম্বল চাইছি তহনই দিছে। এত বছর হইয়া গেলো এরা কেউ আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেনাই।’ তিনি ৪০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০ টাকা দামের চুরি বিক্রি করেন। তাঁর দৈনিক এক থেকে দুই হাজার টাকা আয় হয়। প্রথম দুই বছর কোন লাভের মুখ দেখতে পাননি মালঞ্চি। তিনি তার ব্যবসার মালামাল আনতেন চকবাজার থেকে বাকিতে। মাস শেষে যে আয় হত তা পাওনা পরিশোধ করতেই ফুঁড়িয়ে যেত। তবে পরবর্তীতে মালঞ্চি তার দক্ষতা এবং একাগ্রতার মাধ্যমে সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন। বর্তমানে তার এই ব্যবসা থেকে যা লাভ হয় তা দিয়ে এই বুড়ো-বুড়ীর সংসার চলছে। মালঞ্চির বয়স প্রায় ৬৬। এই বয়সেও তিনি যেভাবে এই ব্যবসা অকপটে চালিয়ে যাচ্ছেন তা আমাদের সমাজের মানুষের জন্য একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তিনি প্রমাণ করেছেনÑ বয়স তো একটি সংখ্যা মাত্র। মনোবল থকালে একটি মানুষের পক্ষে অনেক কিছুই করা সম্ভব।
কেবলমাত্র মালঞ্চি নন, আমাদের দেশে অনেক গরীব মানুষ আছেন যারা পরের কাছে হাত না পেতে পরিশ্রম করে নিজেদের সংসার চালান। এমন কাজ সত্যিই অনুকরণীয়। সুত্র: আবিদা হক লোরা (বাসস)

 

এক ধনী মহিলার গল্প


সাহিত্য


একবার এক ধনী মুসলিম মহিলার সাথে আমার আজব এক কথোপকথন হয়েছিল। আমেরিকার একটি অঙ্গরাজ্যে যার নাম আমি বলবো না, একটি প্রোগ্রামে আলোচনার পর আমাকে রাতের খাবার খেতে এক বাসায় আমন্ত্রণ জানানো হয়। আর সেটি ছিল ১৫ হাজার বর্গ ফুটের বিশাল এক প্রাসাদ। আমি গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করার সময় বাড়ির সৌন্দর্য দেখে মনে মনে ভাবতে লাগলাম, কে এই এল-ক্যাপনের (আমেরিকার এক বিখ্যাত গ্যাংষ্টার) বাড়িতে বাস করে!!! তারপর আমরা ম্যানশনে প্রবেশ করলাম। আমাদেরকে ডিনার পরিবেশন করা হয়েছিল কিং আর্থারের টেবিলের মত প্রকান্ড এক টেবিলে। সম্ভবত টেবিলের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে কথা পৌঁছাতে হলে মাইক্রোফোনের প্রয়োজন হবে, এত লম্বা এক টেবিল!

যাইহোক, আমরা সবাই এক পাশে বসে খাবার খেলাম। তারপর কথা-বার্তা বলতে লাগলাম। বাড়ির কর্তী বললো – “আমার একটি ব্যক্তিগত প্রশ্ন আছে।” আমি বললাম – “ঠিকাছে, বলুন।” তিনি বললেন – “না, আমি সবার সামনে এটা বলতে পারবো না।” তখন আমি অন্য সবাইকে বললাম – “আপনারা টেবিলের অপর প্রান্তে গিয়ে বসুন, (যার অবস্থান ভিন্ন আরেকটি জিপ কোডে 🙂 ) যেন আমি তার সাথে কথা বলতে পারি।” সবাই দূরে গিয়ে বসলো।

তারপর ঐ মহিলা বললেন – “আমি জানি, আমাদের সবাইকে মরতে হবে, এবং কিয়ামতের দিন উঠতে হবে….কিন্তু আমি এই বাড়ি ছেড়ে যেতে চাই না।”

তাদের লিভিং রুমের আয়তন হবে এই মসজিদের আয়তনের মত। পেছনে রয়েছে কৃত্রিম ঝর্ণা, প্রায় সব ওয়ালে গ্লাস লাগানো। তাদের বাসার ভেতরের সিঁড়িটি ছিল অসম্ভব সুন্দর মার্বেল পাথরে ঝড়ানো, দেখে মনে হয় যেন উপর থেকে সিল্ক গড়িয়ে পড়ছে। আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি এটা আসলে কী? পরে বুঝতে পেরে চমৎকৃত হয়ে গেলাম। তারা আমাকে জানালো, বাড়িতে ২৭ টি বেড রুম রয়েছে। আমি ভাবলাম – ঘুমান তো এক রুমে, বাকিগুলো দিয়ে কী করেন।

কিন্তু ঐ মহিলা ম্যানসনটি নিয়ে এতো বেশি আচ্ছন্ন এবং সম্মোহিত…. প্রতিটি ফার্নিচার সে অনেক যত্ন করে কিনেছে। তাই সে বললো – “আমি এই বাড়ি ছেড়ে যেতে চাই না, আমি এখন কী করি?” আমি বললাম – “আপনার যা ইচ্ছা করতে পারেন, কিন্তু আপনাকে এটা একদিন ছাড়তেই হবে। দুঃখিত, আপনার এ ক্ষেত্রে কিছু করার নেই। “

এই দুনিয়াতে এমন অনেক জিনিস আছে যা আমাদেরকে ছেড়ে চলে যেতে হবে। আমাদেরকে এই বিষয়টা হৃদয়ঙ্গম করতে হবে। এমনকি এই শরীরও একদিন ছেড়ে দিতে হবে। আল্লাহ আমাদেরকে নতুন শরীর দিবেন। যখন আপনি এটা উপলব্ধি করতে পারবেন তখন আপনি আর এমনসব বিষয় নিয়ে আচ্ছন্ন হয়ে পড়বেন না, যা এক সময় এমনিতেই ছেড়ে দিতে হবে। এটাই বাস্তবতা। আপনি তখন আর আপনার শারীরিক সৌন্দর্য নিয়ে আচ্ছন্ন হয়ে পড়বেন না। গাড়ি নিয়ে, বাড়ি নিয়ে বা জামা-কাপড় নিয়ে আর আচ্ছন্ন হয়ে পড়বেন না।

এসব বিষয় ভোগ করতে পারেন, কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু এসব জিনিস আপনার জীবনের সবকিছু হয়ে পড়া উচিত নয়। অনেকেই বাসা থেকে বের হওয়ার পূর্বে আয়নাতে তাদের কেমন দেখায় সেটাতে অনেক মনোযোগ এবং গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আপনি এ সম্পর্কে যা ইচ্ছা বলতে পারেন, কিন্তু আপনার কাজ বলে দিচ্ছে আপনার প্রায়রিটি কোথায়। আমি বলছি না যে, আপনি শরীরের যত্ন নিবেন না, দাঁত ব্রাশ করবেন না, শুধু পরকাল নিয়ে পড়ে থাকবেন….আমি এটা বলছি না। আপনি অবশ্যই শরীরের যত্ন নিবেন…..কিন্তু আপনার জীবন যদি মুভি, ভিডিও গেইমস, শারীরিক সৌন্দর্য, আর বিনোদনে আবর্তিত হতে থাকে এবং আপনার আচরণ দেখে মনে হয় যেন এসব জিনিস চিরকাল থাকবে …তাহলেই সেটা সমস্যাপূর্ণ। কিয়ামতের দিন আপনি উপলব্ধি করতে পারবেন কিসব জিনিস আপনি সামনে প্রেরণ করেছেন আর কিসব জিনিস পেছনে ফেলে এসেছেন।

[সূরা ইনফিতারের ৫ নাম্বার আয়াত – عَلِمَتْ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ وَأَخَّرَتْ – “তখন প্রত্যেকে জেনে নিবে সে কি অগ্রে প্রেরণ করেছে এবং কি পশ্চাতে ছেড়ে এসেছে।” আয়াতের আলোচনায় উস্তাদ নোমান আলী খান।]

সংগৃহীত

 

হারিয়ে ফেলা পরিচয়

কানিজ ফাতিমা

প্রকৃতিতে আমার কোনো ক্লান্তি নাই, ঘন্টা কেন, দিনের পর দিন একই দৃশ্যে তাকিয়ে থেকেও চোখ ফেরেনা আমার। কেউ হয়ত ভাববে, কি দেখে এত চেয়ে চেয়ে ? নিরত দু’চোখ মেলে পথের ধারের বনফুল দেখি,ছোট্ট ডোবায় হাসের নিস্তব্দ ভেসে যাওয়া দেখি, আকাশের মেঘ দেখি- সাদা মেঘ, ধুসর মেঘ, ঘন মেঘ, তুলির ছোপ মেঘ আর চপলা মেঘ – ক্লান্তিরা কখন ক্লান্ত হয়ে ফিরে যায় আমার অক্লান্ত চেয়ে থাকা দেখে। সাদা কয়েকটা মেঘের টুকরায় এত দেখার কি আছে ? আমার আছে। একটা কালো পাখির লেজ দোলানো, গাছের ডালে মৃদু-মন্দ বাতাসে পলকা বরফের ঝুর ঝুর ঝরে পরা, শীতের বাতাসে শুকনো পাতার ফুরুত ফুরুত ওড়া, পথিকের হেটে যাওয়া, হাত নাড়ানো, স্কুলের সামনের গাছটার সোজা উপরের দিকে উঠতে উঠতে হতাঠ বেঁকে যাওয়া, গাড়ীর দরজা খুলে একজন মহিলার বের হয়ে আসা – এসব সাধারণ দৃশ্যেও আমার বিস্তর আগ্রহ। সিনেমা দেখে, গল্প করে, আড্ডা দিয়ে আমার বিনোদনের দরকার হয় না, চারপাশই আমার বিনোদনের উত্স। প্রকৃতির পানে নীরব চাহনীতেই লুকিয়ে থাকে আমার মনের খোরাক।

স্টাফ রুমের পুরো দেয়াল জুড়ে কাচের জানালাটা আমার খুব প্রিয়। অতি ব্যস্ত সিডিউলেও সুযোগ করে জানলার ধরে বসে একটু জিরিয়ে নেই। কলিগরা সবাই যখন গল্পে বা পেশাগত আলাপচারিতায় ব্যস্ত, আমি তখন হারিয়ে যাই আমার গোপন দৃষ্টির ভুবনে, পেছনের কিছুই টানেনা আর – জেগে থাকে শুধু সামনের দিগন্তে দু’চোখের তাপসী ধ্যান। দু’টো বাচ্চা নিয়ে এক মা বেরিয়ে এলো গাড়ী থেকে, মাঝারী ঠান্ডা, তাই ওদের কারো পায়েই ভারী বুট নেই, হালকা জুতো। ওরা হেটে আসছে আমার দিকে। মানুষের হাটাও যে কত বিচিত্র! – উলম্ব হাটা, ঝুলন্ত হাটা , ক্লান্ত হাটা, আত্ববিশ্বাসী হাটা, বিষন্ন হাটা , কৃত্রিম হাটা- আরো কত কী ! মহিলাটি অত্ববিশাসী হাটা হাটছে, বাচ্চা দু’টোকে একটু আগলে নিয়ে। তার মুখ আমি দেখতে পাচ্ছিনা , কিন্তু এত দূর থেকেও তার বাচ্চা আগলে দৃঢ় হাটার ভঙ্গীতে তাকে অপূর্ব লাগছে। ওই যে পেছনের পার্কিং লট থেকে বেরিয়ে এলেন আরেক মহিলা। বয়স পূর্বের মহিলার মতই হবে বোধ করি, কিন্তু হাটছেন কিশোরী ছন্দে, জ্যাকেটের জীপার এর মধ্যখান থেকে বেরিয়ে এসে একটা সরু সাদা রেখা দুভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়ে দু’ কানে মিশেছে – আশংকা করি সে গাড়ী চালানোর সময়ও এ দু’টোকে কান থেকে নামাননি। অদ্ভুত ভাবে হাটছেন মহিলা। বরফ কিছুটা গলে গেলেও এখানে সেখানে স্তুপ স্নো এখনো রয়ে গেছে, আর তার নীচে লুকিয়ে থাকা ছোপ ছোপ বরফ জমে আছে কোথাও কোথাও। এর মাঝ দিয়ে মহিলাটা একে বেকে হাটছে, নতুন হাটতে শেখা বাচ্চদের মত – পার্থক্য শধু এইযে তার পুরোটাই কৃত্তিম, বাচ্চদের অকৃত্তিম টলমলে হাটা নয়। দোতলার জানালায় বসে দেখলাম পার্কিং লটের মাঝা মাঝি থেকে স্কুলের গেটে ঢোকা পর্যন্ত এতগুলো পদক্ষেপের একটিতেও মহিলার দৃঢ়তা ছিলনা একফোটা। ভাবছিলাম এই বয়সের এক মহিলা কেন বরফের পিচ্ছিল পথে হাটার জন্য বেছে নিয়েছেন সরু হিলের বুট, কেন তিনি নিজেই নিজের চলাকে করেছেন বিপজ্জনক, কেন তিনি তার নিজের কোমরে, মেরুদন্ডে সৃষ্টি করছেন অতিরিক্ত ক্ষতিকর চাপ? এবং সর্বপরি যে “সৌন্দর্য” বা “স্মার্ট নেস” এর জন্য তিনি এই কষ্ট ও বিপদকে মেনে নিয়েছেন সেটার লেশ মাত্রও তো দেখতে পাচ্ছিনা আমি তার ভীরু, আত্ববিশ্বাসহীন, অনেকটা ভাড়ীয় হাটায়। তারপরও কেনো তিনি এটাকেই মনে করছেন “ফ্যাশন”?

ফেসবুকে ঢাকার উঠতি বয়সের কিছু তরুনীদের ছবি দেখি টাইট জিন্সের প্যান্টে। এসব প্যান্ট তৈরী করা হয় শীতের দেশের জন্য। বাংলাদেশের গরম আবহাওয়ায় যে তাদের অনেক কষ্টে এই “ফ্যাশন” কে ধারণ করতে হচ্ছে তা বুঝতে কারো কষ্ট হবার কথা নয়। কষ্ট হোক তবু “স্মার্ট” তো হতে হবে।

আচ্ছা, স্মার্টনেসের সংগাটা কি? বরফের ওপর বিপজ্জনক ও ক্ষতিকর উচু হিল? গরমে মোটা টাইট প্যান্ট? নাকি আবহাওয়া অনুযায়ী সঠিক পোশাক নির্ধারণের মত মগজের ক্ষমতা? কে বেশী স্মার্ট, যে টিভির বিজ্ঞাপন দেখে বরফের মধ্যেও হিল পরে ভাড়ীয় হাটা হাটে নাকি যে আবহাওয়া সম্পর্কে অবগত থাকে এবং নিজের মাথার ব্যাবহার করে সঠিক জুতা নির্ধারণ করার ক্ষমতা রাখে? যে হকার্সে গিয়ে টাইট জিন্স কিনে টেনে টুনে শরীরে ঢুকায়, নাকি যে জানে যে গরম আবহাওয়ায় ঢিলা ঢালা পোষাক আর হালকা মেকআপ বেশী উপযোগী? কে বেশী স্মার্ট, যে নিজের মাথার ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত নেয়, নাকি যে নিজের চোখের মাথা খেয়ে মিডিয়ায় দেখানো অখ্যাদ্য কুখাদ্যকে বিশেষ “সুখাদ্য” হিসাবে চোখ বুজে গেলে?

সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমান প্রাণী হয়েও আমরা কিভাবে নিজের মস্তিস্কের হালটা নিশ্চিন্তে ছেড়ে দিতে পারি মিডিয়ার ওপরে? আমরা যখন নিজের ভাবনা নিজে নাভেবে মিডিয়াকে ভাবিয়ে নিতে দেই তখনই মিডিয়ার প্রচারে মিথ্যা আর অসুন্দর গুলো আমাদের মস্তিস্ককোষে বাসা বাধে সুন্দর আর সত্য রূপে। ক্রমে ক্রমে আমরা মানুষেরা হারিয়ে ফেলি আমাদের দৃষ্টিশক্তি, ক্ষয়ে যায় আমাদের চিন্তাশক্তি- চরম অসুন্দর দৃশ্যগুলো রুপান্তরিত হর সুন্দরতমে; দৃষ্টিকটু হয়ে ওঠে আকর্ষনীয়, মিথ্যা রুপান্তরিত হয় একমাত্র সত্যে, চক্রান্ত মূর্ত হয় চেতনায়। অবশেষে সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমান মানুষ হয়ে যায় বুদ্ধিহীন মিডিয়াধীন এক পরজীবীতে, এভাবেই হারিয়ে যায় তার স্বাধীনতা আর শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয়।

 

হিজাবে ভিন্নমাত্রার নান্দনিকতায় নারী


ঘরকন্যা


রংপুর মহানগরীর বিভিন্ন সড়কে গতকাল শুক্রবার বিকেলে দেখা গেল যানবাহনে ও হাঁটা বহু নারীর মাথায় হিজাব। সর্বাধুনিক ডিজাইনের বাহারি রঙের হিজাবে সব বয়সী নারীর মুগ্ধ পদচারণা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আড্ডারত দুই তরুণীর কাছে মাথায় হিজাবের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানালেন মাথার চুল আবৃত করতেই হিজাব পরি। এটা এখন আমার ফ্যাশন। এক দিকে চুলও আবৃত করা হলো। চুলও ধুলাবালু থেকে রেহাই পেল। ধর্মীয় অনুশাসনও মানা হলো অন্য দিকে আধুনিক ফ্যাশনও করা হলো। তবে ১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব হিজাব দিবস সম্পর্কে কিছু জানা নেই তাদের। বস্তুত নানা রঙের নানা ডিজাইনের হিজাবে আবৃত নারীদের ফ্যাশনে এনে দিয়েছে ভিন্নমাত্রার নান্দনিকতা। নারী পোশাকে এই বৈপ্লবিক পরিবর্তন আবহমান বাংলার চিরায়ত সাংস্কৃতিতে এনে দিয়েছে নতুন মাত্রা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, হিজাবকে স্মরণীয় করে রাখা এবং পর্দার ব্যাপারে ইসলামী বিধান অনুসরণকারী সব মুসলিম নারীর মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রতি বছর ১ ফেব্রুয়ারি পালিত হচ্ছে বিশ্ব হিজাব দিবস। এবার হিজাব দিবসের স্লোগান ‘হিজাব ইজ মাই ফ্রিডম’, ‘হিজাব ইজ মাই প্রটেকশন’, ‘হিজাব ইজ মাই চয়েস’, ‘হিজাব ইজ মাই কভার’। কয়েক বছর আগে আমেরিকার নিউ ইয়র্ক সিটিতে নাজমা খান নামে এক বাংলাদেশী ছাত্রী পোশাকের কারণে জ্যামাইকায় আক্রান্ত হন। ওই ঘটনার প্রতিবাদ, নিন্দা এবং সর্বসাধারণকে সচেতন করার জন্য গত ছয় বছর থেকে আমেরিকায় হিজাব দিবস পালন শুরু হয়।
রংপুর মহানগরসহ এখন সারা দেশে সব বয়সী নারীরাই নানা রঙের শাড়ি কিংবা জামার সাথে মাথায় নানা ডিজাইন-রঙের হিজাব ব্যবহার করছেন। হিজাব দিবসের সাথে ইতোমধ্যে সংহতি প্রকাশ করেছেন ৪৫টি দেশের ৭০ জনের অধিক রাষ্ট্রদূত, খ্যাতনামা রাজনীতিক ও স্কলারসহ টাইম ম্যাগাজিন, সিএনএনের মতো বিশ্বখ্যাত গণমাধ্যম। ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে ওয়ার্ল্ড হিজাব ডে ডট কম পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, শতকরা ৯৪ ভাগ নারী হিজাবে নিজেদের নিপীড়িত মনে করেন না। শতকরা ৯৩ ভাগ নারী মনে করেন তাদের ওপর হিজাব চাপিয়ে দেয়া হয়নি।
বাংলাদেশে নারীদের হিজাবের দিকে আকৃষ্ট হওয়ার মাত্রা বেড়ে গেছে বহুগুণ। এক সময় রাস্তায় পাশ্চাত্যের আদলে শর্ট কামিজ, খোলামেলা পোশাক পরিধানের যে ধুম পড়েছিল, তা থেকে এখন বেরিয়ে আসছেন নারীরা।
বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে জানা গেল নানান কথা। হিজাব শুধু নান্দনিক ফ্যাশনই নয়, এটি নারীদের মর্যাদাকেও বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে হিজাবে রীতিমতো বিপ্লব ঘটে গেছে। শাড়ি, জামার সাথে হিজাব পরে কর্মক্ষেত্রসহ সব ক্ষেত্রে নারীদের সরব উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। প্রাচীন বাংলার জনগণ দেশের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি টিকিয়ে রেখে যা করেছিলেন হালের নারীরাও তা আবার ফিরিয়ে আনছেন। যে দেশের নারীরা বেশি বোরকা কিংবা হিজাব পরবেন তারা অধিকতর ডান, গোঁড়া বা রক্ষণশীল বলে কথিত যে বুলি আওড়ানো হচ্ছিল একবিংশ শতাব্দীতে। বাংলাদেশের নারীরা সেই বুলিকে অগ্রাহ্য করে হিজাবকে নান্দকিভাবে উপস্থাপন করেছেন। হিজাব এখন নারীদের কাছে এতটাই গ্রহণযোগ্য পোশাক হয়েছে যে বাংলাদেশের বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তাদের পণ্যের প্রচারেও মডেল হিসেবে হিজাব পরিহিতা নারীকে বেছে নিয়েছে।
জানতে চাইলে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মাসুমা আখতার নদী নয়া দিগন্তকে জানান, জাতি হিসেবে মুসলিমরা সেরা। তাই তাদের ফ্যাশনের নান্দনিকতাও ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্যে সেরা হওয়া উচিত। এখন তাই আমরা মুসলিম নারীরা শালীন পোশাকের সাথে হিজাব ব্যবহার করে বিশ্বের সর্বাধুনিক নারী হিসেবে উপস্থাপিত হচ্ছি। আমরা শাড়ি ও জামার সাথে হিজাব পরে সব উৎসবকে নান্দনিক করে তুলছি। এর মাধ্যমে ইসলামের প্রগতিশীলতাকে আমরা রিপ্রেজেন্ট করছি।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী লুবনা হক জানালেন, মুসলিম নারীদের যারা গোঁড়া রক্ষণশীল বলে গালমন্দ করার চেষ্টা করে থাকেন মুসলিম নারীরা সর্বাধুনিক হিজাব পরিধান করে বড় বড় অনুষ্ঠানসহ সর্বক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করে তাদের মুখে কুলুপ এঁটে দিয়েছে।
রংপুর হোমিও কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মুমতাহিনা কাউছার নয়া দিগন্তকে জানান, প্রথমত আমি একজন মুসলিম নারী হিসেবে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতেই হিজাব পরি। এর বাস্তব সুবিধা অনেক। যেমন এক দিকে হালের সবচেয়ে ফ্যাশন হচ্ছে এই হিজাব। অন্য দিকে চলতে-ফিরতে খারাপ মানসিকতার লোকদের থেকে রক্ষা করা যায়। এ ছাড়াও হিজাব পরা নারীদের চলতে-ফিরতে সম্মান করে সবাই। কিন্তু খোলামেলাভাবে পোশাক পরলে মানুষ একটু অন্যভাবে দেখে। তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় উপকার হয় স্বাস্থ্যের। ধুলাবালু থেকে নিরাপদ থাকা যায়। কারণ নারীদের ত্বক নরম। ধুলাবালুতে দ্রুত ত্বক নষ্ট হয়ে যায়। বাড়তি পরিচর্যার দরকার হয়। কিন্তু হিজাবের কারণে চুল এবং ত্বক রক্ষা পায়। বাড়তি পরিচর্যার সময় বেঁচে যায়।
কারমাইকেল কলেজ ইসলামের ইতিহাসের ছাত্রী ফারহানা আখতার নয়া দিগন্তকে জানান, কথিত খোলামেলা পোশাকের এই সময়ে নারীরা যে সর্বাধুনিক ফ্যাশন হিসেবে হিজাব ব্যবহার করছে, এটা খবুই তাৎপর্যপূর্ণ। এর মাধ্যমে মুসলিম নারী হিসেবে আধুনিক বিশ্বকে প্রভাবিত করতে পারছি আমরা।
জাতীয়ভাবে স্বীকৃত সেরা ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রংপুর ধাপসাতপাড়া মডেল কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ আনম হাদিউজ্জামান নয়া দিগন্তকে বলেন, নারীদের হিজাব পরার এই মানসিকতা একটি সভ্যসমাজ বিনির্মাণের জন্য ইতিবাচক দিক। বাংলাদেশের নারীদের মধ্যে এখন নৈতিকতাবোধ সৃষ্টি হচ্ছে। তারা গড্ডালিকা প্রবাহে থাকতে চান না। এ ছাড়াও মানুষের মধ্যে এখন যে ধর্মই পালন করুক না কেন সেই ধর্মের অনুশাসন মেনে চলার আগ্রহ বেড়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন স্টাডিজ সেন্টার সব থেকে প্রিয় পোশাক কী তা জানতে একটি সমীক্ষা করে। ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পরিচালিত সমীক্ষায় ৩২ শতাংশ পাকিস্তানি নারী-পুরুষ বলেছেন, তাদের প্রিয় পোশাক নেকাব। সমীক্ষায় থাকা দেশগুলো ছিলথÑ তিউনিসিয়া, পাকিস্তান, মিসর, ইরাক, লেবানন, সৌদি আরব ও তুরস্ক। ওই সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়, ইরান, ইরাক ও লেবাননে এই পোশাকের চল রয়েছে। এতে হাত ও মুখের কিছু অংশ খোলা থাকে। তবে জনপ্রিয়তার শীর্ষে যে পোশাকটি রয়েছে, সেটা মাথায় স্কার্ফ ধরনের এবং লম্বা পোশাকের সাথে পুরো মুখাবয়ব খোলা থাকে। মিসরের নারীদের ৫২ শতাংশ এটি পরেন। রিপোর্টে বলা হয়, বর্তমান মুসলিম বিশ্বের নারীরা সব থেকে আধুনিক হিসেবে এই পোশাকটিকেই বেছে নিয়েছেন। বিশেষ করে ইরান ও তুরস্কের আধুনিক নারীরা এই পোশাক পছন্দ করছেন। এর সাথে আরো একটি স্টাইল রয়েছে। সেটি হলো হাল ফ্যাশনের রঙিন লম্বা ধরনের পোশাক, কিন্তু মাথায় বড় মাপের ওড়না দিয়ে মাথা শিথিলভাবে মোড়ানো। আর পাশ্চাত্য রীতির মিশেলে সালোয়ার কামিজসহ যেকোনো ধরনের পোশাক। সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

বউ-শাশুড়ি মেলা রংপুরে


নারী সংবাদ


সমাজে যখন শাশুড়ি ও পুত্রবধূর সম্পর্ক নিয়ে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক কথা ওঠে, ঠিক তখনই এই দু’জনের সম্পর্কের মধ্যে নিবিড় সেতুবন্ধন তৈরি করে দিতে রংপুরের মিঠাপুকুরে অনুষ্ঠিত হলো শাশুড়ি-পুত্রবধূ মেলা। গত বৃহস্পতিবার দিনভর মেলায় শতাধিক জোড়া বউ-শাশুড়ির উপস্থিতি তাদের আন্তরিকতায় সেখানে সৃষ্টি হয় ভিন্ন রকম এক নান্দনিকতার ঢেউ।

মিঠাপুকুরের চেংমারী ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা কমিটির আয়োজনে এবং ল্যাম্ব বর্ণ অন টাইম প্রকল্পের সহায়তায় বউ-শাশুড়ি মেলায় প্রধান অতিথি ছিলেন রংপুর পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপপরিচালক ডা: শেখ মো: সাইদুল ইসলাম। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করীম টুটুলের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এ কে এম রেজাউল করীম ও এফপিআই মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন।

উদ্বোধনের পরই বউ-শাশুড়িরা বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। তারা একে অপরের প্রতি আরো নিবিড় হয়ে যান। পুরো চত্বরে ধ্বনিত হয় পুত্রবধূ ও শাশুড়ির নির্ভেজাল নিবিড় সম্পর্কের দ্যোতনা। এ সময় উপস্থিত দর্শনার্থীরা বিমুগ্ধ হন।

দর্শনার্থী মাইদুল ইসলাম জানান, আমাদের সমাজে এখন প্রতিনিয়ত পুত্রবধূ ও শাশুড়িদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে টানাপড়েন দৃশ্যমান। এ ধারণাকে পাল্টে দিয়েছে এ মেলা। আমি মনে করি এ ধরনের মেলা আয়োজন করতে পারলে সমাজে এ বিষয়ে আরো সচেতনতা তৈরি হবে।

মেলায় অংশগ্রহণকারী শাশুড়ি মালেকা বেগম জানান, আমার তিন ছেলের তিনটি বউ। সবার সাথেই আমার সম্পর্ক মায়ের মতো। মেলায় এসেও দেখলাম, আয়োজকেরাও বললেন শাশুড়িকে পুত্রবধূদের মনে করতে হবে মা। আর পুত্রবধূদের শাশুড়িদের মনে করতে হবে মেয়ে। এভাবেই পারস্পরিক বোঝাপাড়ার মাধ্যমে শাশুড়ি ও পুত্রবধূদের সম্পর্ক হবে মা ও মেয়ের মতো। এটি হলে সমাজে ও পরিবারে অনেক ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকা যাবে বলে মনে করেন এই শাশুড়ি।
অন্য দিকে মেলায় অংশ নেয়া কোহিনুর বেগম নামের এক পুত্রবধূ বলেন, আমার শাশুড়ির সাথে আমার অনেক দূরত্ব ছিল। আজকে মেলায় এসে আমার সেই দূরত্বটা কমলো। আজ থেকে আমাদের মাঝে আর কোনো দূরত্বই থাকবে না। মা ও মেয়ে হয়ে বাকি জীবন কাটাবো আমরা।
মেলার প্রধান অতিথি রংপুর পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপপরিচালক ডা: শেখ মো: সাইদুল ইসলাম জানান, এ সমাজের বউ-শাশুড়ি সম্পর্কে সমাজের প্রচলিত ধারণাকে পাল্টে দিয়েছে এ মেলা। এর মাধ্যমে এই দু’টি সম্পর্কের যে নেতিবাচক ধারণা আছে তা থেকে সবাইকে বের করে আনতে এ ধরনের আয়োজন ভূমিকা রাখবে। মেলায় বিভিন্ন ধরনের আলোচনা ও প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বউ-শাশুড়ির মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে পজেটিভ ধারণা দেয়া হয়েছে।
মেলা আয়োজকদের মধ্যে অন্যতম ল্যাম্ব বর্ণ অন টাইম প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার লিটন বালা জানান, আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্যে বউ ও শাশুড়িদের মধ্যে নিবিড় সেতুবন্ধন তৈরি করতে আমাদের এ প্রকল্প। আশা করি অংশগ্রহণকারীরা বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। তারা বাড়িতে ফিরে তাদের আশপাশের বউ-শাশুড়িদের মধ্যে এই সেতুবন্ধনের বার্তা পৌঁছে দেবেন।

আয়োজনে শতাধিক বউ-শাশুড়ি, সাংবাদিক, এনজিও প্রতিনিধি ও গর্ভবতী মা, কিশোর-কিশোরী, গণ্যমান্য ব্যক্তিরা অংশ নেন। মেলায় বউ-শাশুড়ি সম্পর্কে স্বাস্থ্য বিভাগ, পবিবার পরিকল্পনা বিভাগ, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেবা ও ল্যাম্ব বিভিন্ন স্টল এবং নাটক প্রদর্শন করে। সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

শিশু ও নারী নির্যাতন বন্ধে প্রয়োজন সচেতনতা


নারী সংবাদ


গভীর রাত। সবাই ঘুমে অচেতন। হঠাৎ পাশের বাড়ির তিনতলা থেকে বাচাঁও বাচাঁও বলে চিৎকার করে ওঠে মধ্য বয়সী এক নারী। তাঁর চিৎকারে ঘুম থেকে জেগে ওঠে অনেকেই। মুহূর্তের মধ্যেই স্পষ্ট বোঝা গেল যে, মধ্যরাতে ঘরে ফিরে এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে প্রহার করছে। এক পর্যায়ে ঐব্যক্তি চিৎকার করে কাটা চামচ দিয়ে তার স্ত্রীর চোখ তুলে নেয়ার হুমকি দিলে, ঘরের বাইরে এসে আক্রান্ত নারী তার সর্ব শক্তি দিয়ে বলে বাচাঁও বাচাঁও বলে চিৎকার করতে থাকে। ওই মহিলার স্বামী মাঝে মধ্যেই তাকে এই ধরনের অত্যাচার-নির্যাতন করে। অসহায় স্ত্রী মান-সম্মানের ভয়ে কাউকে কিছু না বলে নীরবে সব যন্ত্রণা সহ্য করে যায়।

আমাদের দেশে নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। শারীরিক নির্যাতন, যৌতুক, এসিড নিক্ষেপ, পাচার, খুন বা হত্যার মতো নানান ঘটনার খবর প্রায়ই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। যদিও দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী নারী ও শিশু নির্যাতন জঘন্য একটি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। বৈষম্যমুলক সমাজ কাঠামোর ভেতরে দেশের নারীরা নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তারা কর্মস্থলে বৈষম্য ও হয়রানীর শিকার হচ্ছে, ইভটিজিংয়ের শিকার হয়ে কিশোরীদের কেউ কেউ আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে। নারী ও কিশোরীদের অপহরণ করে সীমান্ত পার করে বিদেশে পাঁচার করা হচ্ছে।

এ ধরনের নির্যাতনের ফলে নারীর যেমন শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হয় তেমনি তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়।
দেশে নারীর প্রতি সহিংসতার অন্যতম কারণ হচ্ছে ‘যৌতুক’। সমাজে যৌতুক প্রথা একটি বড় অভিশাপ। আমাদের দেশে যৌতুক প্রথা যে সব কারণে এখন পর্যন্ত টিকে আছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, অর্থনৈতিক পরনির্ভরশীলতা, সামাজিক কুসংস্কার, বাল্য বিয়ে, রেজিষ্ট্রিবিহীন বিয়ে, আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকা প্রভৃতি।

অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন (এএসএফ)-এর তথ্য অনুযায়ী গত ১৯ বছরে প্রায় দেড় হাজার নারী ও শিশু অ্যাসিড-সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে। এই অপরাধের দায়ে সাজা হয়েছে মাত্র ৩৪৩ জনের। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী অ্যাসিডের মামলায় গত ১৬ বছরে ১৪ আসামীকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। তবে, এখন পর্যন্ত কারও সাজা কার্যকর করা হয়নি। অ্যাসিড অপরাধ দমন আইন, ২০০২ অনুযায়ী ৯০ কর্মদিবসের মধ্যে মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষ করার কথা বলা আছে।

জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম দেশ। দেশটিতে নারীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে সাত কোটি। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সূচকে গত এক দশকে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। গত এক দশকে মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর হার কমেছে, নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত হয়েছে, আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক খাতে নারীর প্রবেশ ঘটেছে।
তবে, দুর্ভাগ্যক্রমে এই অগ্রগতির যাত্রার মধ্যেও এদেশের নারীরা নানাভাবে সহিংসতার শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ ২০১১ এর প্রতিবেদন দেখা যায়, এ দেশের ৮৭ শতাংশ নারী ও কন্যা শিশু সহিংসতার শিকার হচ্ছে। লিঙ্গভিত্তিক অসমতার সূচকে ১৮৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৬তম।

বাংলাদেশে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ১৯৮৩ সালে প্রথম প্রণীত হয় নারী নির্যাতন (ন্যূনতম শাস্তি) অধ্যাদেশ ১৯৮৩ (১৯৮৩ সালের ৬০ নম্বর অধ্যাদেশ)। অন্যান্য আইনের ওপর প্রাধান্য দিয়ে প্রণীত এই আইনটিতে মোট নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিতকরণ ও এর শাস্তি নির্ধারণ করার বিধান আছে এবং ২০০০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ছাড়াও বখাটেদের উৎপাতের জন্য দন্ডবিধি আইন প্রচলিত আছে। প্রচলিত আইনে বখাটেদের যে শাস্তির বিধান আছে তা হলো- ঢাকা মহানগর পুলিশ আইনের ৭৬ ধারা ও দ-বিধির ৫০৯ ধারা অনুযায়ী এ অপরাধের জন্য এক বছরের কারাদ-সহ ২ হাজার টাকা জরিমানার বিধান আছে এবং নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ১০ নম্বর ধারায় যৌন নিপীড়ন ও শ্লীলতাহানীর জন্য ১০ বছরের কারাদ- দেয়ার বিধান আছে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। এই নির্যাতন অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সমাজে বসবাসরত সকল শ্রেণীর মানুষকে সচেতন করতে হবে।
নারীর প্রতি সহিংসতার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশ তার সাড়ে সাত কোটি নারী ও কন্যা শিশুর জন্য অনুকূল পরিবেশে সৃষ্টি করতে পারে, যাতে তারা দেশের সামগ্রিক উন্নতিতে অবদান রাখতে পারে।
সুত্র: মুসলিমা খাতুন ॥ (বাসস)।

 

এক দিনের রেসিপি


ঘরকন্যা


করলা ভাজি

উপকরণ,

১. বড় সাইজের করলা ২টি,
২. কাঁচা মরিচ,
৩. পেঁয়াজ ৪টা,
রসুন কয়েকটি কোয়া,
৫. লবণ স্বাদমতো ও তেল ৪ টেবিল চামচ।

প্রণালি, করলা পাতলা করে কুচিয়ে নিন। এবার চুলায় তেল গরম হলে পেঁয়াজ, রসুন ও মরিচ দিয়ে একটু ভেজে হালকা লাল হলে করল্লা দিন। লবণ দিয়ে নেড়ে অল্প সময় ঢেকে রাখুন। চুলায় রেখে ভাজা ভাজা হলে তুলে নিন। করলা বেশি নাড়বেন না।

মাছের ভাজি

উপকরণ,
১. ছোট মাছ ৫০০গ্রাম,
২. পেঁয়াজ কুচি ১.৫ কাপ,
৩. কাঁচা মরিচ পরিমাণ মত,
৪. হলুদ গুঁড়া আধা চা-চামচ,
৫. মরিচ গুঁড়া হাফ চামচ,
৬. তেল ৩ টেবিল চামচ,
৭. ধনেপাতা ও লবণ স্বাদমতো।

প্রণালি,  কড়াই গরম হলে তাতে তেল দিন। কাঁচা মরিচ ও পেঁয়াজ দিয়ে নাড়ুন। একটু পানিতে মসলাগুলো গুলিয়ে ঢেলে দিন। তারপর একটু পানি দিয়ে মসলা কষিয়ে মাছ ঢেলে দিন। ঢেকে রাখুন। পানি শুকিয়ে গেলে ধনেপাতা দিয়ে নামিয়ে নিন। আপনি ভাজাভাজা পছন্দ করলে লালসে রং হলে নামিয়ে ফেলতে পারেন।

পোড়া বেগুন ভর্তা

উপকরণ,
১. বেগুন পোড়া ১টি,
২. শুকনা মরিচ ২টি,
৩. পিঁয়াজ হাফ কাপ,
৪. লবণ স্বাদমতো ও সরিষার তেল ১ চা-চামচ।

প্রণালি, পোড়া বেগুন করতে পারেন গ্যাসের চুলাতেই। পোড়া অংশ পরিষ্কার করে ফেলে চটকে নিন। লবণ, মরিচ, পেঁয়াজ ও তেল দিয়ে একসঙ্গে ডলে নিয়ে বেগুন দিন। সব একসঙ্গে মিশিয়ে আবার খানিকটা চটকে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে বেগুন ভর্তা।

 

৯ বন্ধু মিলে গলা টিকে হত্যা করল তরুণীকে


নারী সংবাদ


৯ বন্ধু মিলে শ্বাসরোধে হত্যা করে এক তরুণীকে। ঘটনার ২০ দিন পর হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত জুয়েল আদালতে জবানবন্দী দিয়েছে। জুয়েলকে গ্রেফতারের পর গত মঙ্গলবার আদালতে তোলা হয়। সে ১৬৪ ধারায় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ুন কবিরের আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দী দেয়। জবানবন্দীতে জুয়েল জানায়, সে এবং তার আট বন্ধু মিলে তরুণীকে হত্যা করেছে। যৌনকর্মের পর টাকা নিয়ে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে তারা শ্বাসরোধে ওই তরুণীকে হত্যা করে। তবে তরুণীর নাম ঠিকানা জানা যায়নি।

গত ৮ জানুয়ারি অসামাজিক কাজ করার জন্য রাতে রাস্তা থেকে ২২ বছরের এক তরুণীকে ফতুল্লার ভোলাইলের একটি মাঠে নিয়ে যায় জুয়েল ও তার বন্ধুরা। পরে টাকা নিয়ে ওই তরুণীর সাথে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়। একপর্যায়ে জুয়েল ও তার বন্ধুরা মিলে মেয়েটিকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই তরুণীকে হত্যা করে মাঠেই ফেলে রেখে যায় তারা। গত ৯ জানুয়ারি ওই তরুণীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনার ২০ দিনের মাথায় জুয়েলকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

জুয়েল জবানবন্দীতে জানান, ওই রাতে তারা ৯ জন ছিল। টাকা নিয়ে ঝামেলা হওয়াতে একপর্যায়ে সবাই মিলে ওই তরুণীকে খুন করে। জুয়েল আদালতে বাকি আসামিদেরও নাম প্রকাশ করেছে। গ্রেফতার জুয়েল ভোলাইল এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (আইসিপি) গোলাম মোস্তফা জানান, আসামি আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দী দিয়েছে ও কিলিংমিশনে থাকা বাকিদের নাম জানিয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে সবার নাম প্রকাশ করা সম্ভব নয়। হত্যাকাণ্ডে জড়িত বাকি আসামিদের গ্রেফতার ও নিহতের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।
সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

করি পুষ্প রে বিকশিত-৩


আফরোজা হাসান


সেটা কিভাবে?

হেসে, এই যে মুসআব আর মাশফিয়া কিছু করার আগে চিন্তা করে তোমার প্রতিক্রিয়া কেমন হবে। এই চিন্তাটাই যদি ওদের আল্লাহকে ঘিরে হত তাহলে ব্যাপারটা কেমন হত ভেবে দেখো! বাবা-মার কাছে চাইলেই কোন কিছু গোপন করা যায়, মিথ্যা বলা যায়। কিন্তু এটা শিশুরাও জানে যে আল্লাহর কাছে কিছুই গোপন রাখা সম্ভব নয়। আল্লাহ সবকিছু জানেন ও দেখেন। আমি তো আসফিনকে এভাবেই ভাবতে শিখিয়েছি। ভাবী এই কথা তো আমরা খুব ভালো করে জানি যে মানুষকে খুশি করা কতটা কঠিন। আর মানুষকে খুশি করার প্রবনতা যে কোন মুহুর্তে ভুল পথে নিয়ে যেতে পারে। তাই ছোটবেলা থেকেই বাবা-মার উচিত সন্তানদের ভাবনার কেন্দ্রবিন্দুতে যাতে আল্লাহ থাকেন সেই চেষ্টা করা। কোন কিছু করার আগে যাতে ওদের মনে এই চিন্তার উদ্রেক হয় এরফলে আল্লাহর প্রতিক্রিয়া কেমন হবে।

হুম…আসলেই আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। তুমি কি আমাকে সাহায্য করবে এই ব্যাপারে। আমি বাচ্চাদেরকে নিয়ে ভীষণ ভয়ের মধ্যে আছি।

অন্তরা হেসে বলল, সন্তানের শৈশবে বাবা-মার প্রথম উল্লেখযোগ্য কাজ সমূহের মধ্যে প্রথমেই থাকা উচিত ওদের কচি মনে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার বীজ বুনে দেয়া। তারপর নিয়মিত আদর-যত্নের মাধ্যমে সেই বীজ থেকে চারা, চারা থেকে পুস্পকে বিকশিত হতে সহায়তা করা। ইনশাআল্লাহ আমি অবশ্যই তোমাকে সাহায্য করবো ভাবী। এখন আগে চলো পিজা বানাতে সাহায্য করি তোমাকে। তুমি প্লিজ আমার জন্য একটু চা করো।

হেসে ননদের জন্য চায়ের আয়োজনে মন দিলো নায়লা। কিছুটা স্বস্থি বোধ করছে এখন। ফুপ্পিকে প্রচন্ড ভালোবাসে মুসআব আর মাশফিয়া। আর শুধু নিজের বা পরিবারের বাচ্চারাই না, দুনিয়ার সব বাচ্চাদের ঘিরে অন্তরার মনে বয়ে চলে মায়া-মমতা ও ভালোবাসার নিরবধি ঝর্ণাধারা। আর নিঃস্বার্থ ভালোবাসা যে কোন কাজকে অনেক বরকতময় করে দেয়। কারণ তাতে সমন্বিত থাকে আল্লাহর রাহমাহ।

@
নাস্তা করতে এসে টেবিলে পিজা দেখে বিশাল হাসি ফুটে উঠলো মুসআবের চেহারাতে। ছুটে এসে আম্মুকে জড়িয়ে ধরলো। নায়লাও আদর করে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। তাশফিন আর মাশফিয়ারও পিজা অনেক পছন্দ। দেরি না করে তিনজনই তাই বসে গেলো নাস্তা করতে। তাড়াহুড়া করে গরম পিজাতেই কামড় বসিয়ে দিলো মুসআব। সাথে সাথেই চিৎকার করে উঠলো। কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল, খুব জ্বালা করছে মুখ। মনেহয় আমার জিভ পুড়ে গিয়েছে।

তাশফিন আনন্দিত কণ্ঠে বলল, মুসআব ভাইয়া মামীর কাছে কথা গোপন করে তুমি যে দুষ্টু কাজ করেছিলে সেটা আল্লাহ মাফ করে দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ বলো।

কেন এমন করো বাবা? জানোই তো যে অনেক গরম! বলতে বলতে ছেলের দিকে ছুটে যাচ্ছিলো নায়লা কিন্তু তাশফিনের কথা শুনে দাঁড়িয়ে গেল। হাসি চেপে একরাশ কৌতুক ভরা চোখে অন্তরাও তাকালো ছেলের দিকে।

মাশফিয়া বিরক্ত কণ্ঠে বলল, তাশফিন তুমি সবসময় শুধু বেশি কথা বলো। ভাইয়ার জিভ পুড়ে গিয়েছে আর তুমি বলছো আল্লাহ দুষ্টু কাজ মাফ করে দিয়েছেন। আর দিলেও তুমি কিভাবে জানো? ছোট্ট বয়সে বাচ্চারা অ্যাঞ্জেল থাকে। তুমি এখন আর অ্যাঞ্জেল নাই। তুমি হচ্ছো মহা পাজী।

তাশফিন নিজের স্বপক্ষে প্রবলভাবে মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলল, আপ্পি আমি সত্যি বলছি। তুমি আম্মুতাকে জিজ্ঞেস করো। আমি মাছ খেতে গিয়ে গলায় কাঁটা বেঁধে গিয়েছিল। আমি অনেক কান্না করছিলাম। আম্মুতা তখন আমাকে বলেছিল, “রাসূল(সঃ বলেছেন, মুসলিমদের যে কোন অসুখ, মনখারাপ, এমনকি কাঁটা বিধলেও সে কারনে আল্লাহ্ তার গুনাহ ক্ষমা করে দেন।” আমি তখন আর কান্না করিনি। পরে ডক্টর আঙ্কেল আমার কাঁটা বের করে দিয়েছিলেন। ঠিক বলেছি না আম্মুতা?

অন্তরা হেসে বলল, হ্যা বাবা তুমি একদম ঠিক বলেছো। আচ্ছা এখন তোমরা খেয়ে চাপ চুপচাপ। পরে তোমাদের সবাইকে বুঝিয়ে বলবো এই বিষয়ে, ইনশাআল্লাহ। এখনো অনেক গরম তাই আস্তে আস্তে সাবধানে খাও।

চলবে…..

 

প্রেমিক’ ও সহযোগীদের গণধর্ষণের শিকার এসএসসি পরীক্ষার্থী


নারী সংবাদ


রাজবাড়ী জেলা শহরে ড্রাইআইস ফ্যাক্টরি এলাকায় এক এসএসসি পরীক্ষার্থী গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। ওই ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে পাঁচ ধর্ষককে গ্রেফতার করেছে।

এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ওই ছাত্রী বাদী হয়ে ছয়জনকে আসামি করে রাজবাড়ী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। মেয়েটি বর্তমানে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।

গ্রেফতারকৃতরা হলো, সুজন খা, আল আমিন ফকির, আকাশ সরকার, ফজলুর রহমান ও বাবু ব্যাপারী। তবে এজাহারভুক্ত আসামি মোস্তফা ফকিরকে এখনো গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। এদের সকলের বাড়ি জেলা শহরের ড্রাইআইস ফ্যাক্টরি ও বড়লক্ষিপুর গ্রামে।

রাজবাড়ী থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদার বলেন, প্রায় ৪ মাস আগে সুজন খা’র সাথে ওই ছাত্রীর পরিচয় ও প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ওই সম্পর্কের অংশ হিসেবে গত সোমবার বিকালে সুজন জেলা শহরের ড্রাইআইস ফ্যাক্টরি এলাকার একটি পরিত্যক্ত মেসে নিয়ে যায় ওই ছাত্রীটিকে। সেখানে সে ও তার সহযোগীরা মেয়েটিকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। সে সময় বাঁচতে মেয়েটি কান্নাকাটি করে।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। সেই সাথে রাজবাড়ীর এসপি আসমা সিদ্দিকা মিলির নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করে তারা ওই পাঁচজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন। সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

ধর্ষিতা শিশুর মায়ের আহাজারি


নারী সংবাদ


‘আমার মা কই। তোমরা আমার মায়েরে ফিরায়া দাও। কে আছো আমার পাশে, দেখ আমার মা (ব্যানারের ছবি দেখিয়ে) সবার দিকে তাকিয়ে হাসছে। কোথায় আমার সরকার। আমারে সাহায্য করতে বলো। আমি আমার মায়ের ধর্ষণকারীর বিচার চাই, ফাঁসি চাই। আসামির হয়ে সবাই আমারে হুমকি দেয়, টাকা নিয়া পুলিশও আসামির পক্ষে কথা কয়। আমার কেউ নাই, আমি কী করুম, কার কাছে বিচার চামু।’ এভাবেই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের ফুটপাথে গতকাল বিলাপ করছিলেন ধর্ষণের পর হত্যার শিকার দুই বছরের শিশু আয়েশা মনির মা রাজিয়া সুলতানা।

গতকাল দুপুর থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত তিনি প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়ে ধর্ষকের বিচার দাবি করেন। তিন শিশুসন্তান নিয়ে অবস্থানের পুরো সময়টাই তিনি চিরতরে চলে যাওয়া সন্তানের স্মৃতিচারণ করে পাগলের মতো বিলাপ করছিলেন। অনেকে এসে তার আর্তনাদ থামাতে পারেননি। অবশেষে পুলিশ অনেক বুঝিয়ে রিকশায় তুলে দিয়ে তাকে গেণ্ডারিয়ায় বাড়িতে পাঠায়।

এর আগে রাজিয়া সুলতানা সাংবাদিকদের প্রশ্নে জানান, তার মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যাকারী এলাকায় খুব প্রভাবশালী। তাকে পুলিশ আটক করলেও সে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। ভয়ে তার স্বামী মো: ইদ্রিস তাকে ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করেছে। অবশেষে তিনি স্বামীর অগোচরে এখানে এসেছেন। তার ধারণা ধর্ষকের বিচার হবে না। সে যেকোনো সময় বের হয়ে তার এবং সন্তানদের ক্ষতি করবে।

গত ৫ জানুয়ারি রাজধানীর গেন্ডারিয়ার দীননাথ সেন রোডের ৫৩/১/ছ নম্বর চারতলা বাড়ির পাশে টিনশেড বস্তিতে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় শিশু আয়েশা মণিকে। মা-বাবা ও তিন বোনের সাথে থাকত শিশুটি। প্রতিদিন সকালে আয়েশার মা-বাবা কাজে যেতেন। এ সময় গেন্ডারিয়ার সাধনা ঔষধালয়ের সামনের গলিতে খেলে বেড়াত শিশুটি। অন্য দিনের মতো বিকেলে খেলতে বের হয় আয়েশা। সন্ধ্যার দিকে টিনশেড বস্তির পাশের চারতলা বাড়ির সামনে আয়েশার নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। আয়েশার পরিবার ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, শিশুটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। চারতলা বাড়ির চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া নাহিদ (৪৫) শিশুটিকে ধর্ষণ করে। পরে ভবনের তিনতলা থেকে নিচে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় ৬ জানুয়ারি শিশুটির বাবা ইদ্রিস আলী বাদি হয়ে গেন্ডারিয়া থানায় একটি মামলা করেন। এরপর নাহিদকে আটক করে আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গেন্ডারিয়া থানার এসআই হারুন অর রশিদ। নাহিদ স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। কিন্তু পরে নাহিদ জবানবন্দী দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর ঢাকা মহানগর হাকিম নিবারা খায়ের জেসি তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

শিশুদের সাথে সংলাপ


কানিজ ফাতিমা


কথা বলুন! আপনার সন্তানের সাথে আলোচনা করুন যে কোনো বিষয়ে এবং সকল বিষয়ে, আপনি সারা দিনে কী করেছেন তা নিয়ে, বিভিন্ন বিষয়ে আপনার অনুভূতি কী এবং আপনার সন্তান এটা-সেটা নিয়ে কী ভাবছে সে বিষয়ে। যোগাযোগকে অগ্রাধিকার দিন; আপনার সন্তানকে চিনুন, জানুন। আপনি আপনার চিন্তাকে কিভাবে প্রকাশ করছেন তা আপনার সন্তানের জানা জরুরী। সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটানো ছাড়াও ভাষার উন্নয়ন এবং স্পষ্টভাষিতার জন্যও কথা বলা জরুরী। আপনাকে যাতে ‘বিরক্ত’ না করতে পারে সেইজন্য দূরে রাখার উদ্দেশ্যে টেলিভিশন, ইন্টারনেট অথবা কম্পিউটার গেম দিয়ে তাকে ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করবেন না। মনে রাখবেন কথা বলার অভাবের ফল হলো নির্জীব মেধা এবং জড়তা।

যোগাযোগের মধ্যে যেমন থাকা উচিত গুরুগম্ভীর আলোচনা তেমনি এবং পারস্পরিক হাসি-কৌতুক। মা-বাবার অবশ্যই সন্তানদের সাথে হাসি-কৌতুক এবং খেলাধুলা করা উচিত। কারণ হাসি-কৌতুক সম্পর্ক মজবুত করে এবং একঘেয়েমি ভাব দূর করে। অনেকসময় বাচ্চাদেরকে বড় করার কাজে বাবা-মা এত বেশী ব্যস্ত হয়ে পড়েন যে, তারা এ বিষয়টিকে উপভোগ করতে ভুলে যান । এটা একটি বড় ভুল। শিশুদের ভুবন আনন্দ আর খেলায় পরিপূর্ণ। তাদের আনন্দ করার এবং খেলাধুলার চাহিদা অসীম। সেসব বাবা-মা বাচ্চাকে নিয়ে খেলতে বা বাইরে ঘুরতে যাওয়ার বদলে টিভি বা কম্পিউটারে মুখ গুজে পরে থাকতে পছন্দ করেন বাচ্চারা তাদের প্রতি বিরক্ত হয়। জীবন যখন নানামুখী চাপ আর উদ্বেগে পরিপূর্ণ, তখন শিশুরাই পারে কিছুক্ষণের জন্য হলেও চাপ কমানোর সর্বোত্তম ওষুধ দিতে (মা-বাবাকে তাদের শিশুসুলভ জগতে হারিয়ে যেতে সাহায্য করার মাধ্যমে)। কিছু মা-বাবা মনে করেন বাচ্চাদের সাথে খেলাধুলা নিজেদের গাম্ভীর্য ও সিরিয়াস ব্যক্তিত্বের জন্য ক্ষতিকর; এর মানে হলো জীবনের ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কাজকে অবহেলা করা। বাস্তবতা হলো, আপনি যখন শিশুদের সাথে হাসেন, তখন তারা আপনার সঙ্গে সহজ ও নির্ভয় হতে ভরসা পায়। এতে আপনার সঙ্গে তাদের ভালোবাসার এক অদৃশ্য বন্ধন তৈরী হয় এবং বাচ্চারা তাদের আত্মপ্রকাশে সাবলীল হয়। কৌতুক এবং হাসি-ঠাট্টা করা যোগাযোগের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

অনুবাদ Parent Child Relations

 

সন্তানদের জিম্মি করে গৃহবধূকে ধর্ষণ


নারী সংবাদ


সাতক্ষীরার তালায় দুই সন্তানের জননী এক গৃহবধূ ধর্ষনের শিকার হয়েছে। রোববার ভোর রাত ২টার দিকে তালা উপজেলার বালিয়াদহ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ধর্ষিতা গৃহবধূকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ধর্ষক পলাতক রয়েছে।

ধর্ষকের নাম মোঃ মনিরুল সরদার (৩০)। তালা উপজেলার বালিয়াদহ গ্রামের মোঃ আফছার আলী সরদারের ছেলে।

গৃহবধূর চাচা স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ নেতা করিম সরদার জানান, গৃহবধূর স্বামী বরিশালে একটি ইটভাটায় কাজ করেন। স্বামী বাড়ি না থাকার সুযোগে প্রতিবেশী লম্পট ও মাদক ব্যবসায়ী মনিরুল তাকে প্রায়ই উত্তক্ত করতো। এরই জের ধরে রোববার ভোর রাত ২টার দিকে মনিরুল লোহার সাবল দিয়ে দরজার ছিটকিনি ভেঙ্গে গৃহবধূর ঘরে ঢোকে।

এসময় সে গৃহবধূর দুই সন্তান সুমনা (৭) ও সোহানাকে (আড়াই বছর) ছুরি দিয়ে হত্যা করার ভয় দেখিয়ে তাকে জোর পূর্বক ধর্ষন করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। ডাক্তারি পরিক্ষা শেষে বর্তমানে সেখানে তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় ধর্ষিতার স্বামী আলামিন সরদার থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে তিনি জানান।

তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী রাসেল জানান, বিষয়টি লোকমুখে শুনেছি। তবে, এ ঘটনায় থানায় এখনও পর্যন্ত কেউ কোন অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

সুইসাইড প্রতিক্রিয়া


হাবিবা মৃধা


সুইসাইড নিয়ে অনেক গবেষণা প্রবন্ধ বই বের হয়েছে, প্রতিরোধী অনেক সংগঠন কাজ করছে। তাছাড়া পবিত্র কোরআন ও হাদীস শরীফে অসংখ্য নিষেধাজ্ঞা বাণী এসেছে।মহান আল্লাহ বলেনঃ
তোমরা নিজেদের হত্যা করোনা! অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু!
যে কেউই বাড়াবাড়ি ও যুলুম করতে গিয়ে এই হত্যার কাজ করে অচিরেই আমি তাকে আগুনে পুড়িয়ে দিব, আল্লাহর পক্ষে এটা একেবারেই সহজ!
সুরা নিসা(আয়াত আংশিক ২৯ -৩০)

আবু হোরায়রা [রা.] থেকে বর্ণিত মহানবী [সা.] বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে অনুরূপভাবে আত্মহত্যা করতেই থাকবে এবং এটিই হবে তার স্থায়ী বাসস্থান। যে ব্যক্তি বিষ পান করে আত্মহত্যা করবে, তার বিষ তার হাতে থাকবে, জাহান্নামে সে সর্বক্ষণ বিষ পান করে আত্মহত্যা করতে থাকবে। আর এটা হবে তার স্থায়ী বাসস্থান। আর যে ব্যক্তি লৌহাস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করবে, সে লৌহাস্ত্রই তার হাতে থাকবে। জাহান্নামে সে তা নিজ পেটে ঢুকাতে থাকবে, আর সেখানে সে চিরস্থায়ীভাবে থাকবে।’ [বোখারি ও মুসলিম]

সুইসাইড প্রতিক্রিয়ায় কেন জানি আমি কিছু লিখতে গেলেই থেমে যাই, আমার কাছে মনে হয় ধর্মীয় চিন্তা, আল্লাহর প্রতি ভরসা বা ভয় কোনটিই থাকেনা তার!শুধু পৃথিবীর অনিয়ম অনাচারের প্রতি ক্ষোভ রেখে নিজেকে সরিয়ে নেয়।

কয়েকমাস আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় লাইফকেয়ার হাসপাতালের ছাদ থেকে সন্তান ফেলে দিয়ে, পরে মায়ের ও একই ভাবে আত্মহত্যার ভিডিও দেখেছিলাম ২৪ এর নিউজে।

রিপোর্টে দেখলাম সিজারের টাকা পরিশোধ করা নিয়ে মা মেয়ের বাকবিতণ্ডা এবং প্রবাসী স্বামীর দ্বায়িত্ব অবহেলায় এরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে!
একজন মা একটা সন্তান কত কষ্টে পৃথিবীতে এনে আবার নিজ হাতে শেষ করে দিতে পারেন? যাদের প্রতি ক্ষোভে এরকম করলেন তাদের আদৌ কিছু হবে কি?

কোরিয়ান একটা ভিডিও পাঠিয়েছিল কে যেন, সেখানে দৃশ্য ছিল সদ্যভূমিষ্ট মৃতবাচ্চাটা কোলে নিয়ে আদর করছেন মা! কারণ একজন মা ই কেবল অনুভব  করেন মাতৃত্ব ও এর পিছনের কষ্টের গল্প গুলো!

গত ডিসেম্বরে চাঁদ পুরে ফুটফুটে দুই সন্তান ও স্ত্রী সহ যে যুবক আত্মহত্যা পূর্ববর্তী ভিডিও আপলোড করেন সেখানে বলেন  আমার পরিবারের এ অবস্থার জন্য শশুর বাড়ির লোকজন দায়ী!

আজ আবার একজনকে বলতে শুনলাম তার সহকর্মীকে উদ্দেশ্য করে ভাই আমার কিছু হয়ে গেলে অমুক দায়ী, আপনি সাক্ষী থাকেন!
আমার প্রশ্ন হল মানুষের মধ্যে এই প্রবণতা
কেন আসছে যে চলে গেলেই কেউ  দায়ী থাকে? আর দায়ী থাকলেও তো যে চলে যায় তার কোনকালে দেখার সুযোগ হলোনা!
সম্প্রতি আত্মহত্যা প্ররোচনাকারী ও আত্মহত্যা চেষ্টা কারী উভয়ের জন্যই শাস্তির বিধান চালু হয়েছে! কিন্তু সে বিধান কতটুকু কার্যকর তা প্রতিদিন আত্মহত্যার গড় রিপোর্ট দেখলে বোঝা যায় !

মরে গেলেই কেহ অমর হয়ে যায়? আর যারা সৃষ্টি কর্ম দ্বারা অমর হয়ে আছেন তাদের ই তো এজাতির মনে রাখার সময় নেই! ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ সবার প্রতি ক্ষোভ আর নিজের প্রতি ঘৃণা নিয়ে কেউ চলে গেল তবে সমাজের কি হল?

এনিয়ে যারা কাজ করছেন তারও হয়ত এ প্রশ্ন খুঁজছেন! প্রথমত সমাজ সচেতনতা জরুরী ব্যক্তি স্বার্থে যারা মানুষকে অন্ধকুপে ঠেলে দেয় তাদের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন দরকার
দ্বিতীয়ত মানুষের মধ্যে মৃত্যু পরবর্তী শাস্তি অনুভব করানো।

আত্মহত্যা মহাপাপ একথা সকল ধর্ম স্বীকৃত এমনকি অনেক আত্মহত্যাকারীর শেষ বক্তব্য ও এটা।
প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনা থেকে শুরু করে কতজন কতভাবে চলে যাচ্ছে, কেউ যে ফিরছেনা এও স্বীকার করছি তবে কেন মৃত্যুকে এত সহজ মনে হয়?
ক্ষনিকের নরক থেকে বাঁচার জন্য মানুষ চিরস্থায়ী জাহান্নামে জায়গা করে নেয়।

মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় কথায় কথায় যারা মরে যাবার কথা বলে তাদের মৃত্যুপরবর্তী শাস্তি দুনিয়ায়  প্রাকটিকাল দিয়ে বোঝানো।
কেউ যেমন নিজের ইচ্ছায় পৃথিবীতে আসেনি, তাকে যে দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছে তা পালনের শেষ চেষ্টা পর্যন্ত তিনি চলে যাবার অধিকার রাখেন না।পৃথিবীতে অনেক মানুষ সর্বহারা হয়েও জীবনযুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন কারণ আল্লাহর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হতে পারলে চিরসুখী জান্নাত কি করে অর্জন হবে।

একজন মানুষ যখন ক্ষয়ে যেতে শুরু করে, ভিতরে ভিতরে  মরে যায় দিনের আলোয় তারাও স্বাভাবিক মানুষ! তখন প্রয়োজন চারপাশের মানুষের সহযোগিতা কিন্তু আমরাই শেয়ার করিনা অথবা শেয়ার করার মত আস্হাবান জায়গা পাওয়া যায়না।

ঢাবি শিক্ষিকা তাওহীদা আপুর প্রতিটা লেখায় তার আত্মহত্যাকারী ভাইয়ের প্রতি করুণ আকুতি প্রকাশ পায়! ভাই কি জানতনা যে তার চলে যাওয়া আপনজনদের অস্বাভাবিক জীবনে ঠেলে দিবে?

হ্যা জানলেও তার সাথে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের জবাব তিনি এভাবে দিয়েছেন?
আসলে কি তাই হয়েছে?

যুক্তরাষ্ট্র তারকা মেরেলিনা আত্মহত্যা পরবর্তী সময়ে যেমন সেখানকার স্বেচ্ছায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে  গিয়েছিল ঠিক বাংলাদেশেও মিডিয়ায় প্রচার, ফেসবুকে ডিপ্রেশন স্ট্যাটাস,  মৃত্যু পূর্ববর্তী ভিডিও আপলোড আত্মহত্যা প্ররোচনা হিসাবে কাজ করছে! যে সকল মিডিয়া
আত্মহত্যা কারীদের সাহসী হিসাবে তুলে ধরেন তাদের প্রতি ধিক্বার জানাই!

মানুষকে স্ট্যাটাস দিয়ে বিচার না করে সাধারণ জীবনেও যে বেঁচে থাকার সৌন্দর্য আছে এজায়গা গুলো নিয়ে কাজ করা দরকার, মৃত্যুই শেষ কথা নয়! বেঁচে থাকতে যাদের মুল্যায়ন পাওয়া যায়নি মরে গেলেও তাদের কিছু আসে যায়না।

এমনকি আমাদের সমাজ, বিচার কোন কিছুতে তাদের নুনতম অনুশোচনা ও আসবেনা! সাময়িক জেদ /ক্ষোভ/অভিমানে নিজেকে ধ্বংস করা ছাড়া আর  কিছুই না।

নিজের জন্য বাঁচতে হয় নয়ত পরিবার সমাজের জন্য! সমাজের যে জায়গাগুলো পঁচন ধরছে বেঁচে থেকেই তার প্রতিষেধক হতে হবে! একজনের অনুপস্থিতিতে দিনশেষে কেউই দায়ী থাকেনা ঠিক কবরেও কেহ কারো শাস্তি ভোগ করবেনা।

 

করি পুষ্প রে বিকশিত-২


আফরোজা হাসান


আম্মুকে মন খারাপ করে বড় ভাইয়ার সাথে কথা বলতে দেখে বই নিয়ে পড়তে বসে গেলো মাশফিয়া। কিছুক্ষণ যেতেই মনে মনে অস্থির হয়ে উঠলো। এখনো আসছে না কেন ভাইয়া? কি এত কথা বলছে আম্মুর সাথে? সেকি গিয়ে দেখবে? কিন্তু আম্মু বলে দিয়েছে যখন একজনের সাথে কথা বলা হয় তখন যাতে অন্যজন সেখানে না যায়। মামীমা কি মুসআব ভাইয়াকে মারবে আপ্পি? প্রশ্নটা শুনে পাশে বসে থাকা দুই বছরের ছোট ফুপাতো ভাইয়ের দিকে তাকালো মাশফিয়া। চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে জবাবের অপেক্ষা করছে তাশফিন।

মাশফিয়া বিরক্ত কন্ঠে বলল, আম্মু কখনোই আমাদেরকে মারে না বুঝেছো?

ডানে বামে মাথা নাড়াতে নাড়াতে তাশফিন বলল, আমার আম্মুতাও আমাকে কক্ষনো মারে না। কিছুক্ষন চুপ থেকে আবার বলল, আপ্পি মুসআব ভাইয়া পঁচা কাজ করেছে তাই না? আম্মুতাকে সব বলতে হয়। আমি আম্মুতাকে সব বলি।নয়তো আল্লাহ বিরক্ত হন।আর আল্লাহ বিরক্ত হলে মারা যাবার পর আমাদেরকে জান্নাত দেবেন না। জান্নাতে যেতে না পারলে তো সব শেষ। আমি কত কিছু লিখে রেখেছি জান্নাতে গিয়ে আল্লাহর কাছে চাইবার জন্য।

মাশফিয়া বিরক্ত কণ্ঠে বলল, তুমি কথা বেশি বলো, বুঝেছো? মুসআব ভাইয়া আর আমিও আম্মুকে সব বলি। মুসআব ভাইয়া আম্মুকে কষ্ট দিতে চাইনি তাই ক্লাসে মারামারি করার কথা বলেনি।

তাশফিন মনখারাপ করে বলল, আম্মুতা বলেছে কোন কাজ করার আগে ভেবে দেখতে সেটা করলে আল্লাহ খুশি হবেন নাকি কষ্ট পাবেন! কারণ আম্মুতা-বাবা আমাকে সবসময় দেখতে পায় না। কিন্তু আল্লাহ সবসময় আমাকে দেখতে পায়। তাই আমাকেও আল্লাহর খুশি আর কষ্ট দেখতে হবে।তুমি জানো আমাদের দুই কাঁধে দুইটা অ্যাঞ্জেল আছে? তারা সবকিছু লিখে রাখেন। তুমি যদি চুপিচুপি কিছু করো সেটাও লিখে ফেলেন। আর অ্যাঞ্জেলরা কক্ষনো ঘুমায়ও না। বলে লম্বা একটা দীর্ঘাশ্বাস ছাড়ল তাশফিন।

মাশফিয়ার বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে ভাতিজী আর ছেলের কথোপকথন চুপচাপ শুনছিল অন্তরা। ছেলের দীর্ঘশ্বাস শুনে হেসে ফেললো। উঠে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে বলল, অ্যাঞ্জলরা ঘুমায় না বলে কি তোমার মনখারাপ লাগে তাশফিন?

তাশফিন বলল, মাঝে মাঝে একটু একটু লাগে আম্মুতা?

অন্তরা হেসে বলল, তারমানে তো তোমারো অনেক দুষ্টু কাজ করতে ইচ্ছে করে?

মনের ইচ্ছারা আম্মুতার কাছে ধরা পরে যাচ্ছে বুঝতে পেরে নিজেকে তাড়াতাড়ি সামলে নিলো তাশফিন। কথার মোড় ঘুরিয়ে দেবার জন্য বলল, আজ আমি যে গল্পটা পড়েছি সেটা থেকে কি শিখেছি জানো আম্মুতা?

অন্তরা হাসি চেপে বলল, কি শিখেছো?

কখনোই আমাদের স্বার্থপর হওয়া উচিত না। স্বার্থপর হয়ে অন্যের ক্ষতি করতে গেলে নিজেরই ক্ষতি হয়।

অন্তরা বলল, মাশাআল্লাহ। অনেক সুন্দর কথা শিখেছো তো। আচ্ছা এখন তুমি লিখো যে পুরো গল্পটা থেকে তুমি কি বুঝেছো। রাতে আমরা বাসায় ফেরার পর আম্মুতা দেখবো, ইনশাআল্লাহ।

বিছানা থেকে নেমে মাশফিয়া আর তাশফিনকে আদর করে দিয়ে রুম থেকে বের হলো অন্তরা। করিডোরে মুসআবের সাথে দেখা হলে ফুপ্পিকে জড়িয়ে ধরলো মুসআব।

অন্তরা আদর করে বলল, কি আম্মু বেশি বকা দিয়েছে?

মুসআব বলল, না আম্মু কিছুই বলেনি। তুমি কিন্তু আজ যেতে পারবে না ফুপ্পি। আরো দু’দিন থাকতে হবে তোমাকে।

হাত দিয়ে মুসআবের চুল এলোমেলো করে দিয়ে অন্তরা হেসে বলল, আচ্ছা এই ব্যাপারে আমরা পরে কথা বলবো। তুমি যাও হোমওয়ার্ক সেরে ফেলো। এরপর আমরা সবাই মিলে পার্কে ঘুরতে যাবো।

রান্নাঘরে ঢুকে পিজা বানানোর জন্য সবকিছু তৈরি করছিল নায়লা। দরজায় নক শুনে তাকিয়ে ননদকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল, সেকি তুমি উঠে এলে কেন? তোমার না মাথা ব্যথা করছে বলে ঘুমোতে গেলে কিছুক্ষণ!

অন্তরা রান্নাঘরে ঢুকে হেসে বলল, ঘুমিয়েছি কিছুটা। মাথা ব্যথাও কমে গিয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ। পিজা বানানো হবে বুঝি?

নায়লা বলল, হুম…মুসআবের খুব পছন্দ। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, আচ্ছা অন্তরা আমার চেহারাটা কেমন বলো তো?

অন্তরা হেসে বলল, মাশাআল্লাহ একদম পরে না চোখের পলক ধরনের। সাধে তো আর আমার ভাইয়া এমন পাগল না তোমার জন্য।

নায়লা হেসে বলল, ধাৎ, তোমার সবকিছুতেই শুধু দুষ্টুমি। আমি বুঝি না আমার চেহারাতে এমন কি আছে যার কারণে বাচ্চারা আমাকে এত ভয় পায়। তুমি জানো মুসআব ওর কথা গোপন করার পেছনে কি কারণ বলেছে?

আমি জানি ভাবী। মুসআবের সাথে আমার কথা হয়েছে। আমার তো মনেহয় এখানে তোমার মন খারাপ না করে বরং আনন্দিত হওয়া উচিত তোমার বাচ্চারা তোমাকে এতটা ভালোবাসে যে তোমাকে কষ্ট দিয়ে চায় না। ভাবী বাচ্চাদের মনের এই ভালোবাসাটাই যদি তুমি আল্লাহর দিকে ঘুরিয়ে দিতে পারতে তাহলেই অনেক সমস্যা কমে যেত।

 

বাচ্চাদের সাথে সক্রিয় সময় কাটান


কানিজ ফাতিমা


মা-বাবা অনেক সময় দাবি করেন যে, তারা তাদের বাচ্চাদের সাথে প্রচুর সময় কাটান। আসলে তারা যেটা বোঝাতে চান, তা হলো তারা তাদের বাচ্চাদের ‘সাথে’ নয়, বরং তাদের কাছাকাছি থাকেন।

অর্থাৎ তাদের বাচ্চারা যে ঘরে আছে, তারাও সে ঘরেই আছেন; কিন্তু টিভি দেখছেন, পড়ায় মগ্ন আছেন, ফোনে আছেন, ই-মেইল চেক করছেন অথবা অন্য মেহমানদের সাথে আলাপ করছেন।

দরকার হচ্ছে বাচ্চাদের সাথে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা। এ কথার মানে হলো একসাথে পড়া, একসাথে খেলাধুলা করা, একসাথে ধাঁধার সমাধান করা, একসাথে রান্না করা ও খাওয়া, একসাথে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা, একসাথে কৌতুক করা, একসাথে বাজার করা, একসাথে বিল্ডিং ব্লক খেলা এবং একইসাথে থালা-বাসন পরিষ্কার করা।

অন্য কথায়, বাচ্চাকে একা ছেড়ে দিয়ে বাচ্চার কাছে থাকা নয়; বরং সক্রিয় অংশগ্রহণ করা এবং বাচ্চার কর্মকান্ডে অংশীদার হওয়া।

একেই বলে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে যথেষ্ট পরিমাণ সময় দেয়া। যাকে খুব সুন্দর সময় বা good quality of time বলা যায়।

আর হ্যা, বেবি সিটিং বা অন্য কারো সময় দান বাবা-মায়ের সাথে সন্তানের পারস্পরিক কার্যকলাপের বিকল্প হতে পারে না। সুত্র অনুবাদ- হাসান আল তালিব।

 

ফাইটিং ফোর্সের প্রথম ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক হলেন চার নারী


নারী সংবাদ


সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে গতকাল পদোন্নতিপ্রাপ্ত দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের মেজর সানজিদা হোসেন, আর্টিলারি; মেজর সৈয়দা নাজিয়া রায়হান, আর্টিলারি; মেজর ফারহানা আফরীন, আর্টিলারি এবং মেজর সারাহ্ আমির, ইঞ্জিনিয়ার্স লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদের র্যাংক ব্যাজ পরিধান শেষে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের সঙ্গে এক ফটোসেশনে অংশগ্রহণ করেন। ছবি : আইএসপিআর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে আরেকটি অধ্যায়ের সূচনা হলো। চারজন নারী সেনা কর্মকর্তা প্রথমবারের মতো সেনাবাহিনীর আর্টিলারি এবং ইঞ্জিনিয়ার্স ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক হিসেবে নিয়োগ পেলেন।

সেনাবাহিনীতে পেশাগত দক্ষতা প্রদর্শনে সফল এই চার নারী কর্মকর্তাকে মেজর থেকে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। তাঁদের এত দূর পথ হাঁটার গল্পের শুরু ১৯ বছর আগে অর্থাত্ ২০০০ সালে। ওই বছর ৪৭ বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্সে প্রথমে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় শুধু পুরুষ কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য। পরে এ কোর্সে নারী কর্মকর্তা নিয়োগের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আবার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ওই কোর্সের জন্য পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মনোনীত হন তাঁরা। পরের বছর জানুয়ারি থেকে তাঁদের দুই বছর মেয়াদি প্রশিক্ষণ শুরু হয়। প্রশিক্ষণ শেষে তাঁরা নিয়মিত কমিশন লাভ করেন।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, অধ্যায়টিকে স্মরণীয় রাখতে গতকাল বৃহস্পতিবার সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে পদোন্নতিপ্রাপ্ত এই চারজন নারী কর্মকর্তাকে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদের র্যাংক ব্যাজ পরিয়ে দেন। এ সময় ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পদোন্নতিপ্রাপ্ত চারজন নারী কর্মকর্তা হলেন আর্টিলারির সানজিদা হোসেন, সৈয়দা নাজিয়া রায়হান ও আর্টিলারির ফারহানা আফরীন এবং ইঞ্জিনিয়ার্সের সারাহ্ আমির।

আইএসপিআরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রীর নারীর ক্ষমতায়নের অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দীর্ঘমেয়াদি কোর্সে নিয়মিতভাবে নারী অফিসার নিয়োগ করা হচ্ছে। ৪৭তম দীর্ঘমেয়াদি কোর্স থেকে শুরু হওয়া এই নারী অফিসাররা এরই মধ্যে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে পেশাগত দক্ষতা প্রদর্শনে সফল হয়েছেন। তাঁদের এই সক্ষমতার অংশ হিসেবে চারজন নারী অফিসারকে মেজর থেকে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে। ’

জানা যায়, ৪৭তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্সে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মুস্তাফিজুর রহমানের মেয়েও ছিলেন। ওই কোর্সে মোট ৩০ জন মনোনীত

হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ২০০২ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম ২০ জন তরুণী নিয়মিত কমিশন লাভ করেন। ওই কোর্সের বাকি ১০ জনের মধ্যে কয়েকজন ৪৮তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্সে অংশ নিয়ে প্রশিক্ষণ শেষ করার সুযোগ পান। দ্বিতীয় এ কোর্স শেষে ২০০৩ সালের জুলাইয়ে আরো ২১ জন নারী কমিশন লাভ করেন। এরপর ৪৯তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্স শেষে ২২ জন এবং ৫০তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্স শেষে আরো ১৩ জন নারী কমিশন লাভ করেন। এরপর প্রতি ছয় মাস পরপরই সেনাবাহিনীতে নারী কর্মকর্তার সংখ্যা বাড়তে থাকে। সেনাবাহিনী ছাড়াও নারী কর্মকর্তাদের সংখ্যা বাড়ছে নৌ ও বিমানবাহিনীতেও।

সশস্ত্র বাহিনীতে নারীদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে আরেকটি মাইলফলক হয়ে রয়েছে ২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারি। এদিন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাসে প্রথম সংযোজিত ৮৭৯ জন নারী সৈনিকের মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণ শেষে শপথ গ্রহণ করেন।

উল্লেখ্য, সেনাবাহিনীতে মেডিক্যাল কোরে সর্বোচ্চ মেজর জেনারেল পদে রয়েছেন একজন নারী কর্মকর্তা। তিনি হলেন ডা. সুসানে গীতি।

আইএসপিআরের গত বছর ৬ মার্চের তথ্য অনুসারে, সেনাবাহিনীতে ওই সময় নারী কর্মকর্তার সংখ্যা ছিল চিকিৎসকসহ এক হাজার ২৮০ জনের কাছাকাছি। এ ছাড়া নারী সৈনিকের সংখ্যা ছিল এক হাজার ৮৬০ জনের কাছাকাছি। ) সুত্র: কালের কন্ঠ।

 

চ্যানেল ২৪-এর নারী নিরাপত্তাকর্মীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা, বাঁচালেন পুলিশ কর্তা


নারী সংবাদ


চ্যানেল ২৪-এর এক নারী নিরাপত্তাকর্মীকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা ও মারধরের অভিযোগে আলমগীর নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার ভোর ৬টায় রাজধানীর মহাখালী এলাকার আমতলী ক্রসিংয়ে ওই তরুণী অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় তাকে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আলমগীর কুপ্রস্তাব দেয়। এতে ওই তরুণী প্রতিবাদ করায় সড়কেই তার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে ওই বখাটে। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়, ওই তরুণীকে পিটিয়ে জখম করে বখাটে আলমগীর। এ সময় আশপাশে অনেক সিএনজি অটোরিকশা ও রিকশাচালক থাকলেও কেউই ওই তরুণীকে উদ্ধারে এগিয়ে আসেনি। অনেকেই এই দৃশ্য দাঁড়িয়ে দেখছিলেন, আবার কেউ কেউ দেখে এড়িয়ে চলে যান।

তখনই রাতের ডিউটি শেষে অফিস থেকে গাড়িতে বাড়ি ফিরছিলেন ডিএমপির ক্যান্টনমেন্ট জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) তাপস কুমার দাস। এ সময় ওই তরুণীর চিৎকার শুনে এগিয়ে যান তিনি। তরুণীকে উদ্ধার করেন এবং হাতেনাতে আটক করেন বখাটে যুবককে।

এডিসি তাপস কুমার দাস বলেন, গুলশান ডিভিশনের ছয়টা থানার নাইট রাউন্ডে ছিলাম। ভোরে আমতলী দিয়ে যাওয়ার সময় এক তরুণীর চিৎকার শুনতে পাই। দেখি এক যুবক ওই তরুণীকে লাঠি দিয়ে পিটাচ্ছে। তখন বডিগার্ড ও ড্রাইভারসহ আমি নেমে দৌড়ে আলমগীরকে ধরে ফেলি। ওই তরুণীর ঠোঁট দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। তাকে দ্রুত কুর্মিটোলা হাসপাতালে পাঠাই।

এ ঘটনায় বনানী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা হয়েছে। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আলমগীর নামের এক বখাটে ওই তরুণীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে ও তাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করতে থাকে। ওই সময় এডিসি তাপস কুমার দাস তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান এবং বনানী থানা পুলিশ আলমগীরকে গ্রেফতার করে।

জানা গেছে, আসামি আলমগীর কড়াইল বস্তিতে মাছের ব্যবসায় করে। বস্তির বৌবাজারে তার বাসা। গ্রামের বাড়ি শেরপুর। আলমগীরের বাবার নাম আশরাফ আলী। সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

করি পুষ্প রে বিকশিত- ১


আফরোজা হাসান


মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিজের রুমে ঢুকে কম্পিউটারের সামনে বসে নিজের কাজে মন দিল নায়লা। বাচ্চাদেরকে সঠিক ভাবে গড়ে তুলতে যা যা করণীয় সবকিছু করতে আপ্রাণ চেষ্টা করে সে। বাচ্চারা ভুল করবে, দুষ্টুমি করবে এসব স্বাভাবিক। এসব নিয়ে তাই কোন আপত্তি নেই নায়লার। কিন্তু বাচ্চারা মিথ্যা বলবে বা কোন কিছু গোপন করবে এটাতে প্রচন্ড আপত্তি তার। সবসময়ই স্কুল থেকে ফেরার পর স্কুলে কি কি হয়েছে জানতে চায় বাচ্চাদের কাছে। কিন্তু গতকাল সব কথা বললেও ক্লাসে মারামারি করেছে সেকথা চেপে গিয়েছে মুসআব। আজ স্কুলের টিচারের কাছ থেকে জানতে পেরেছে নায়লা সেই ঘটনা। কেন বাসায় এসে কিছু বলেনি জানতে চাইলে কোন জবাব না দিয়ে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রইলো মুসআব। সাথে সাথে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো নায়লার। বাচ্চারা মিথ্যা বলে বা গোপন করে যখন বাবা-মাকে সর্বাবস্থায় নিজের আশ্রয় ভাবতে পারে না তখন। কিন্তু সেতো আদর-ভালোবাসা ও মমতার দেবার সাথে সাথে সব ব্যাপারেই ভীষণ রকম আন্তরিক। তাহলে? প্রশ্নের জবাব খুঁজে না পেয়ে তাই রুমে চলে এসেছে।

মায়ের পেছন পেছন মুসআবও রুমে ঢুকলো। এমনিতে আম্মুই তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। কিন্তু আম্মু যখন রাগ করে তখন খুব ভয় লাগে মুসআবের। কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে খুকখুক করে কয়েকবার কাশি দিয়ে মায়ের দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করে ব্যর্থ মুসআব বলল, আম্মু আমি সরি তো! আমি আর কখনো তোমার কাছে কিছু গোপন করবো না। আম্মু ও আম্মু তুমি কথা বলছো না কেন? আমি কিন্তু কান্না করে দেব বলছি। এই যে তুমি শুধু রাগ করো সেজন্যই তো আমি তোমার কাছে বলিনি।

এবার ঘুরে ছেলের দিকে তাকালো নায়লা। আমি কি কোনদিন অকারণে তোমার উপর রাগ করেছি?

আমতা আমতা করে মুসআব বলল, নাতো আম্মু।

তাহলে কেন বললে আমি রাগ করি বলে তুমি কথা গোপন করো?

সব কথা গোপন করি না তো। শুধু ক্লাসে মারামারি করেছি সেটা গোপন করেছি।

নায়লা বলল, ক্লাসে মারামারি করে তুমি একটা অন্যায় করেছো আর সেটা গোপন করে করেছো আরেকটা অন্যায়। আম্মু যদি সেজন্য রাগ করি সেটা ভুল হবে?

মুসআব কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল, কিন্তু তুমি যখন মুখ কালো করে কথা বলো আমার একটুও ভালো লাগে না।

নায়লা বলল, তাহলে তোমার কাজও তেমন হওয়া উচিত যাতে আম্মু মুখ কালো না করে। ছেলেকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নায়লা বলল, আম্মু যখন তোমাকে আদর করি, কোন উপহার দেই তুমি কি খুব আনন্দিত হও?

মুসআব বলল, হ্যা অনেক বেশি।

আর আম্মু রাগ করলে বা বকা দিলে খুব কষ্ট পাও তাই না?

মুহুর্তে চেহারা আবার কাঁদো কাঁদো হয়ে গেলো মুসআবের। অনেক অনেক অ-নে-ক বেশি কষ্ট পাই আম্মু।

ছেলেকে কাছে টেনে নিয়ে আদর করে নায়লা বলল, ঠিক তেমনি তুমি যখন ভালো কাজ করো আম্মু অনেক খুশি হই। আর যখন দুষ্টু কাজ করো আম্মু বিরক্ত হই। এমনটা কেন হয় জানো?

কেন হয় আম্মু?

কারণ ভালো কিছু হলে মানুষ খুশি হবে আর খারাপ কিছু হলে মানুষ কষ্ট পাবে এটা হচ্ছে নিয়ম। আচ্ছা ক্ষুধা পেলে তুমি কি করো?

আমি খাবার খাই।

আর ঘুম পেলে কি করো?

ঘুমাই আম্মু।

একদম ঠিক। এখন দেখো ক্ষুধা পেলে আমরা খাই আর ঘুম পেলে ঘুমাই। আমাদের ঠিক তেমনই আরেকটা স্বভাব হচ্ছে খুশিতে চেহারায় আলো আলো হয়ে উঠে আর রাগে চেহারা কালো হয়ে যায়। বুঝেছো?

হ্যা আম্মু।

কি বুঝেছো?

খুশিতে চেহারায় আলো আলো হয়ে উঠে আর রাগে চেহারা কালো হয়ে যায়।

মাশাআল্লাহ। এই তো তুমি বুঝে ফেলেছো। তারমানে তো এটাও বুঝেছো যে, তোমার দুষ্টু কাজ শুনে আম্মুর চেহারা যে কালো হয় সেটাই স্বাভাবিক?

জ্বী আম্মু।

কিন্তু তুমি যে আম্মুর কাছে কথা গোপন করেছো সেটা অস্বাভাবিক। দেখো সোনা তুমি তো এখনো অনেক ছোট। তুমি দুষ্টুমি করবে, ভুল করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তুমি যদি সেসব আমাকে না বলো তাহলে আমি তোমাকে কিভাবে বুঝিয়ে বলবো কোনটা ঠিক আর কোন ভুল? তুমি তো গুডু বয় হতে চাও তাই না?

হ্যা আম্মু।

এখন বলো আম্মুর সাহায্য ছাড়া তুমি কি একা একা গুডু বয় হতে পারবে?

কিছুক্ষণ চিন্তা ভাবনা করে মুসআব বলল, না।

তাহলে তুমি কেন আম্মুকে বলোনি? আম্মু যদি না জানি তাহলে কিভাবে তোমাকে ভুল বুঝিয়ে বলবো?

আমি আর তোমার কাছে কিছু গোপন করবো না আম্মু। প্রমিস।

নায়লা ছেলে কাছে টেনে আদর করে হেসে বলল, ঠিকআছে এখন তুমি যাও পড়তে বোস।

ছেলে চলে গেলে ঘুরে আয়নায় নিজের দিকে তাকালো নায়লা। মনের অনুভূতিগুলো সবসময় চেহারাতে ফুটে ওঠা ঠিক না। বিশেষ করে বাচ্চাদের সাথে কথা বলার সময়। এরআগেও খেয়াল করেছে বাচ্চারা প্রথমেই চেহারার দিকে তাকিয়ে পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা নিতে চেষ্টা করে। সুতরাং, এই ব্যাপারে তাকে আরো সতর্ক হতে হবে বুঝতে পারলো। কাজ বন্ধ করে রান্নাঘরের রওনা করলো। বাচ্চাদের জন্য নাস্তা বানাতে হবে। মুসআব পিজা খুব পছন্দ করে। আজ সবার জন্য তাই পিজা বানানোর সিদ্ধান্ত নিলো।

 

মারা গেলেন রাশিয়ার সবচেয়ে বয়স্ক নারী


নারী সংবাদ


রাশিয়ার সবচেয়ে বয়স্ক নারী নানু শাওভা ১২৮ বছর বয়সে মারা গেছেন। দেশটির কাবারদিনো বালকারিয়ার নর্থ ককেশিয়ান রিপাবলিকের বাসিন্দা ছিলেন তিনি। সোমবার স্থানীয় প্রশাসন একথা জানিয়েছে। খবর তাসের।

রাশিয়া বুক অব রেকর্ডস অনুযায়ী, কাবারদিনো-বালকারিয়ার বকসান জেলার জায়ুকোভো গ্রামের শতবর্ষী নানু শাওভা রাশিয়ার সবচেয়ে বয়স্ক নারী ছিলেন। তিনি ১২৮ বছর বয়সে মারা যান।

এক প্রেস বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মে মাসে তার বয়স ১২৯ বছর হতো। বাকসান জেলা প্রশাসন তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছে।’

নানুকে ২০১৭ সালে রাশিয়া বুক অব রেকর্ডস সনদ দেয়া হয়।

 

স্বাবলম্বিতা ও সহযোগিতাই ঠেকাতে পারে ডিভোর্স

জান্নাতুন নুর দিশা


অনেকেই মনে করেন ধর্মীয় অনুশাসনের সাথে ডিভোর্স হওয়া না হওয়ার বিষয়টা ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
ডিভোর্স নিয়ে বিভিন্ন সময়ে লিখতে গেলেও দেখা যায় অনেকেই ধর্মীয় অনুশাসনের কথা টেনে আনেন, অনেকেই ঢালাওভাবে দোষারোপ করেন নারীদের স্বাধীনচেতা মানসিকতার উত্থানকে।
ডিভোর্স বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া যে মোটেও ধর্মীয় অনুশাসনের সাথে সম্পর্কিত কোনো বিষয় নয় তা এই দুটো ছবি থেকেই পরিষ্কার হওয়ার কথা।
বিবাহ, সংসার, বিচ্ছেদ এই বিষয়গুলো যতটা না ধর্ম সম্বন্ধীয়, তার চেয়ে বেশি সামাজিক ও অর্থনৈতিক। বৈবাহিক বন্ধন টিকে থাকা এবং না টিকে থাকার বিষয়টি একটি সমাজের অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও সামাজিক সংস্কার-কুসংস্কারের উপর নির্ভর করে।
পৃথিবীতে সবচেয়ে কম ডিভোর্স হয় ভারতে। ধর্মীয় দিক থেকে হিন্দু ধর্মালম্বীদের ডিভোর্সের হার অন্য ধর্মাবলম্বীদের তুলনায় অনেক অনেক কম।
তারমানে কি এই দাঁড়ায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তুলনায় অন্য ধর্মাবলম্বীরা নিজেদের ধর্মীয় অনুশাসন কম মানেন? বিষয়টা কিন্তু মোটেও তেমন নয়।
হিন্দু ধর্মে গত শতকেও সতীদাহপ্রথার মত ভয়াবহ কুসংস্কার ছিল। ছিল না বিধবাদের বিবাহের অনুমতি। হিন্দু ধর্মের সংস্কারকরাই এসব রদে রেখেছিলেন ভূমিকা।
এখনো হিন্দু ধর্মালম্বীরা বিয়েকে জন্ম-জন্মান্তরের বন্ধন মনে করে। সাত জন্মের জন্য সঙ্গী হবার ধারণাও রয়েছে অনেকের মধ্যে।
ভারতের নাটকগুলো দেখলেই বুঝা যায় পারিবারিক কলহ, দাম্পত্য কলহ, সাংসারিক অশান্তি নিয়ে এক একটা পরিবার কতটা ভোগে। কিন্তু বিচ্ছেদের কথা তারা ভাবতে পারে না। পারিবারিক কলহ থেকে সহিংসতার পর্যায়ে চলে গেলেও উপমহাদেশে পরিবারগুলো বিচ্ছেদের কথা ভাবতে পারে না।
বিচ্ছেদ হচ্ছে না মানেই একটি সমাজ আদর্শ সমাজ আর বিচ্ছেদ বাড়লেই সমাজ ধ্বংস হয়ে গেছে এই ধারণা ভ্রান্ত। সাংসারিক কলহ, পারস্পরিক অন্তর্দ্বন্দ্ব, ভুল বুঝাবুঝি, অশান্তি, খুনাখুনি, মেরিটাল রেইপ, পারিবারিক সহিংসতা না কমিয়ে কেবল বিচ্ছেদ ঠেকিয়ে রাখা গেলেই মূল্যবোধ ঠিক থাকে এমনটা ভাবা অনেকটা “উপরে ফিটফাট, ভেতরে সদরঘাট” প্রবাদের মতই হয়ে যায়।
হিন্দু ধর্ম ছাড়া অন্যান্য ধর্মে ডিভোর্সের ব্যাপারে ফ্লেক্সিবিলিটি থাকায় এসব ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠী পারিবারিক সংঘাতের চেয়ে বিচ্ছেদকে উত্তম সমাধান মনে করছে। যে কারণে এসব ধর্মের মানুষের ডিভোর্স রেট কাছাকাছিই।
অনেক ধর্ম বিচ্ছেদ নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম তৈরি করে নি। তাই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী, খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা নিজেদের জাতিগতভাবে নিয়ম তৈরি করে নেয় বিভিন্ন দেশে। ইসলাম ধর্মে বিচ্ছেদের ব্যাপারে বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম দিয়ে দেয়া হয়েছে।
ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা সৌদি আরবেও ডিভোর্সের হার খুব যে কম তা কিন্তু নয়। তারাও সংঘাতের চেয়ে বিচ্ছেদকেই বেছে নিতে পছন্দ করে। মোহরানা পরিশোধ বিয়ের সময়ই হয়ে যাওয়ায় তাদের বিচ্ছেদে বিশেষ আইনি জটিলতাও পোহাতে হয় না।
আমাদের দেশে যে বিয়েতে উচ্চ মোহরানা ধার্য করা হয়, এটা কিন্তু বিচ্ছেদ আটকে রাখতেই করা হয়। পাত্রের সামর্থ্যের বাইরে একটি অর্থ ধরা হলে এবং বাকির খাতায় রেখে দেয়া গেলে সহজে ডিভোর্স দেয়া যাবে না, করা যাবে না বহুবিবাহ। অর্থাৎ দিনশেষে বিয়ে অর্থনৈতিক চুক্তিই! এভাবেই আর্থিক চুক্তিনামায় বৈবাহিক সমস্যাদির বিচার-আচার আগে সামাজিক ভাবে এবং এখন কোর্ট-কাচারিতে হয়। মোহরানা বাকি রাখা ধর্মীয় অনুশাসন না হলেও উভয়পক্ষই নিজেদের স্বার্থ বিবেচনায় এই নিয়ম মেনে নিচ্ছে।
তাই দিনশেষে বিবাহবিচ্ছেদ বা বৈবাহিক সম্পর্কের স্থায়িত্ব নির্ভর করছে উভয়পক্ষের সামাজিক ও আর্থিক স্ট্যাটাসের উপর। খেয়াল করে দেখবেন পত্রিকায় ডিভোর্সি পাত্রীর জন্য “পাত্র চাই” বিজ্ঞাপন দেয়ার সময় “ধনী, প্রবাসী অভিজাত ডিভোর্সি পাত্রী” এইভাবে সামাজিক আর্থিক ব্যাপারগুলো ফলাও করে লেখা হয়। অর্থাৎ আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী পাত্রীর ডিভোর্সি হলেও ঠিকই পাত্র মিলছে। অথচ দরিদ্র হলে কুমারীর পিতার কাছেও চাওয়া হচ্ছে যৌতুক।
ছেলের অর্থনৈতিক অবস্থান দেখা তো বিয়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য। উপার্জনহীন পুরুষের সংসারে সুখ থাকেনা।
মানুষ যত বাড়ছে, একজনের উপার্জনে একটা সংসার চালিয়ে নেয়া তত চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে। তাই সংসারে প্রাপ্তবয়স্ক উপার্জনহীন নারী বা পুরুষ যত বেশি, সংসারে অন্তঃসংঘাত তত বাড়ছে।
গার্মেন্টস শিল্প গড়ে উঠবার পর দরিদ্র পরিবারগুলোতেও কলহ, সংঘাত কমে গেছে। মধ্যবিত্তের চেয়ে দরিদ্রদের সংসারে এখন টানাপোড়ন কম। নারীদের উপার্জনহীন বসে থাকবার প্রবণতা এদেশে মধ্যবিত্ত সমাজেই বেশি। আর যারা ক্যারিয়ারে আসছে, তাদের হাজবেন্ডের ফেক্সিবল মেনটালিটি না রাখা ও রুলিং মাইন্ড জন্ম দিচ্ছে আরেক ধরণের সংঘাতের। একে বলে ব্যক্তিত্বের সংঘাত।
মধ্যবিত্তের এসব ঘুণে ধরা সেন্টিমেন্ট থেকে বেরিয়ে আসা খুব জরুরী।
সম্প্রতি ছেলেদের ওয়ালে ওয়ালে ঘুরে বেড়াচ্ছে একটি নিউজ। “সৌদি নারীদের পছন্দের তালিকায় বাংলাদেশী ছেলেরা।” যদিও এই নিউজের কোনো নির্ভরযোগ্য সোর্স খুঁজে পাই নি, তবু কেন এত উৎসাহ নিয়ে এই ফান নিউজ শেয়ার করছেন ছেলেরা?
যদি নিউজটা হত আফ্রিকান কোনো দরিদ্র দেশের মেয়েদের পছন্দের তালিকায় বাংলাদেশের ছেলেরা। এত পুলকিত হতো কেউ?
সৌদিআরব, কাতার এসব দেশ এদেশের মানুষের কাছে আর্থিক স্বাবলম্বী হবার একটা নির্ভরযোগ্য গন্তব্য। তাই সৌদি নারীরা তাদের পছন্দ করলে সেখানে যে বঞ্চনা সহ্য করতে হয় তা আর করতে হবে না। তাই সৌদি নারী মানে কেবল নারী নয়, সৌদি নারী মানে আর্থিক নিশ্চয়তার প্রতীক। তাই এই অনির্ভরযোগ্য খবরটিও এত মুখরোচক।
মজার ব্যাপার হল, সৌদি নারীরা আসলেও বিদেশী বিবাহে ঝুঁকেছেন।তাদের পরিসংখ্যান বলছে ইদানীংয়ে মোট বিয়ের প্রায় দশ ভাগ বিয়ে হয়েছে বিদেশি পুরুষের সাথে।
এর কারণ হিসেবে ভাবা হচ্ছে সেখানে প্রচলিত বহুবিবাহ এবং ডিভোর্স হার। অর্থাৎ বিদেশী বিশেষ করে এশিয়ান পুরুষদের আরবদের মত অধিক বিবাহ প্রবণতা কম থাকা ও সৌদি স্ত্রীর প্রতি অনুগত থাকার মনোভাবই এশিয়ানদের প্রতি তাদের আকৃষ্ট করছে।
সবশেষে বলা যায়, পরিবারে প্রত্যেক সক্ষম ব্যক্তির আর্থিক উপার্জন ও স্বাবলম্বিতা, পরস্পরের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, সহযোগিতামূলক ও সহনশীল আচরণ ও ব্যক্তিত্ব গঠনই পারিবারিক ভাঙন এবং বিবাহ বিচ্ছেদ কমাতে পারে। মানসিক উৎকর্ষ সাধন করে এসব গুণাবলী আনতে না পারলেও পারিবারিক সংঘাতে প্রতিনিয়ত লিপ্ত থাকার চেয়ে বিচ্ছেদেরই তো উত্তম!

আসলেই কি বিচ্ছেদ উত্তম? নাকি স্বাবলম্বিতা ও সহযোগিতা জরুরী?

সিদ্ধান্ত আপনার!

 

আবার বিয়ে করলেন কণ্ঠশিল্পী সালমা


নারী সংবাদ


আবার বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন ক্লোজআপ ওয়ান খ্যাত কণ্ঠশিল্পী সালমা। তার বর সানাউল্লাহ নূরে সাগর। যিনি ঢাকা জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট। তিনি ময়মনসিংহ হালুয়াঘাটের ছেলে। বর্তমানে লন্ডনে ‘বার অ্যাট ল’ করছেন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদকর্মীদের ডেকে সালমা তার দ্বিতীয় বিয়ের খবর জানান। তিনি বলেন, ৩১ ডিসেম্বর বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সাগর আবার ফিরে গেছেন লন্ডনে।

সালমা জানান, চারমাস পর তার স্বামী ‘বার অ্যাট ল’ শেষ করে দেশে ফিরবেন। তখন ঘটা করে অনুষ্ঠান হবে।

কুষ্টিয়ার মেয়ে মৌসুমি আক্তার সালমা ‘ক্লোজআপ ওয়ান’ দ্বিতীয় সিরিজের বিজয়ী ছিলেন। এরপর কয়েকটি লোকগীতি দিয়ে সালমা সারা দেশে ব্যাপক পরিচিতি পান। ২০১১ সালে পারিবারিকভাবে শিবলী সাদিককে বিয়ে করেন সালমা।

২০১১ সালে দিনাজপুর-৬ আসনের এমপি শিবলী সাদিকের সঙ্গে বিয়ে হয় সালমার। ২০১৬ সালে বনিবনা না হওয়া সেই সংসারে বিচ্ছেদ ঘটে। তাদের সংসারে স্নেহা নামের এক কন্যা রয়েছে। স্নেহা এখন মায়ের কাছেই থাকে।
সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

বাবা-মায়ের মানসিক প্রস্তুতি


কানিজ ফাতিমা


সন্তান আগমনের সাথে সাথে পরিবারের ওপর একটা চাপের সৃষ্টি হয়। একথা সত্যি যে পিতৃত্ব ও মাতৃত্ব একটি অসামান্য পাওয়া, কিন্তু এর অভিজ্ঞতা সবসময় রোমাঞ্চকর হয় না। বাবা-মা হবার সাথে সাথে দম্পতিকে মেনে নিতে হবে যে, জীবনটা আর আগের মত থাকবে না; সেই সাথে সামনে যেসব সমস্যা আসবে তার জন্যও নিজেদেরকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করতে হবে। বাবা-মাকে সন্তানদের স্বার্থে নিজেদের অনেক স্বার্থকেই বিসর্জন দিতে হবে, এমনকি তাদের পিতা -মাতা হবার যোগ্যতা প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। বাবা-মা’দের জন্য, বিশেষ করে মা’দের জন্য শিশুর অবিরাম চাহিদা পূরণের ধকল ও ক্লান্তিকে মেনে নেয়া সহজ ব্যাপার হবে না। অপরদিকে বাবারা ঘরে ফিরে হয়তো দেখবেননা স্ত্রীর আনন্দময় মুখ, হাসিখুশী শিশু অথবা গুছালো পরিপাটি ঘরদোর। অনেক বাবাই নিজের স্ত্রীকে অধিক কাজের চাপে বিধ্বস্ত দেখবেন এবং পূর্বের মতো স্ত্রীকে তাদের প্রতি অতটা যত্নশীল পাবেননা।

মাতৃত্বের সাথে যুক্ত থাকে শারীরিক, আবেগ-আনুভূতিক ও মানসিক ক্লান্তি। অল্প ঘুম এবং অবিরত শিশুর যত্ন অনেক মজবুত সম্পর্কেও প্রভাব ফেলে এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে বৈবাহিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।

সন্তানের যত্নের পাশাপাশি দম্পতি যখন পরিবার ও কর্মক্ষেত্রের দায়িত্ব পালন করতে হিমশিম খায় তখন অর্থনৈতিক বিষয়গুলোও বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে। বিবাহিত জীবনের উপর এসব কিছুর প্রতিকূল প্রভাব পড়তে পারে। ফুল টাইম চাকরী করেন এমন বাবা-মায়েদের জন্য এসময়টা অনেক বেশী কঠিন হয়ে পড়ে। আবার কিছু বাবা-মা সন্তানদের চাইল্ড কেয়ার সেন্টারে (Child care centre) না রেখে পালাক্রমে ভিন্ন ভিন্ন শিফটে চাকরী করেন যাতে সবসময় কোনো একজন শিশুর সঙ্গে বাসায় থাকতে পারেন। যদিও এটা শিশুর জন্য ভালো, কিন্তু স্বামী স্ত্রীর জন্য সবসময় অনুকুল হয় না। এক্ষেত্রে বাবা মার মধ্যে দ্রুত সম্পর্কের অবনতি হতে পারে। কার ভাগে ঘর পরিস্কার করা বা বাসন কোসন ধোয়া পড়েছে এ ধরনের তুচ্ছ বিষয় নিয়ে বিবাদ এবং অসম্মানজনক মানহানিকর প্রতিদ্বন্দিতা দেখা দিতে পারে। অপরদিকে যেসব বাবা মার মধ্যে সন্তানের সাথে পর্যাপ্ত সময় কাটাতে না পারার অপরাধবোধ কাজ করে – তারা ‘দাম্পত্য সময়’টা কমিয়ে ‘সন্তানের জন্য সময়’কে বর্ধিত করতে পারেন। আবার কিছু মা-বাবা সেটা পুষিয়ে নিতে চান সন্তানদের উপহার, টাকা এবং অস্বাস্থ্যকর ফাস্ট ফুড দিয়ে যা পরিনামে বাচ্চাদের নষ্ট করে, আর বাবা-মা আরো বেশী সামাজিক ও অর্থনৈতিক চাপের মুখে পরেন।

এ ধরনের চাপ বৈবাহিক সম্পর্ককেই প্রতিকূলতার মুখে ফেলতে পারে, বিশেষ করে যখন দম্পতি তাদের সীমিত সময় আন্তরিক আলাপের চেয়ে পরস্পরের প্রতি অনুযোগ-অভিযোগ করেই অতিবাহিত করে। বাবা-মার মধ্যকার বৈবাহিক দ্বন্দ সন্তানের উপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। যথেষ্ট পরিমান পারস্পারিক যোগাযোগের অভাবে অনেক বাবা-মায়ের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয় এবং তা তাদের অবিরত দ্বন্দ্বের দিকে ঠেলে দেয়।

নিচে কিছু পরামর্শ দেয়া হলো- বাবা-মাকে তাদের প্যারেন্টহুড তথা অভিভাবকত্বে উত্তরণের ক্ষেত্রে সাহায্য করবার জন্য: আশা করা যায় স্বামী-স্ত্রী থেকে বাবা-মা হওয়ার পথে পরিবারের গতিময় পরিবর্তনে এই পরামর্শগুলো অনেকটা চাপ কমাবে।

১. দৈনিক কিংবা সপ্তাহে স্বামী-স্ত্রী একসাথে নিজস্ব সময় কাটানোর জন্য কিছু সময় বরাদ্দ করুন। একসাথে বেড়াতে যান, কিছু কাজ একসাথে করুন, কিংবা রাতের খাবারটা একসাথে খান। দিনের বেলা প্রয়োজনীয় ফোনালাপ সেড়ে ফেলে অথবা সকালে কিছুটা আগে জেগে কিছু সময় সঞ্চয় করুন- যাতে পরষ্পরের দিকে দৃষ্টি দেয়ার কিছুটা সময় বের করতে পারেন। শিশুর দেখাশুনার দায়িত্বটা অন্য কোনো বিশ্বস্ত বাবা-মার সঙ্গে নেয়াটাও একটা ভালো ব্যবস্থা।(যেমন ধরুন সেই দম্পতির সাপ্তাহিক বেড়াতে যাবার সময়টায় আপনারা তাদের সন্তানদের দেখাশোনা করলেন আবার তারা আপনাদের সময়ে আপনাদের সন্তানদের ভার নিলেন)।

২. জীবনসঙ্গীর সাথে প্রত্যাশাগুলো ভাগাভাগি করে নিন। প্যারেন্ট হিসাবে নতুন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যা আপনি লক্ষ্য করছেন সেইসব উদ্বেগের বিষয় তার সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করুন। আপনার স্বাস্থ্য, পারষ্পারিক সম্পর্ক এবং চাকুরীর উপর প্যারেন্টহুডের প্রভাব নিয়ে কথা বলুন।

৩. জীবনসঙ্গীর সাথে একত্রে খাদ্য গ্রহণ, ইবাদত, যৌন মিলন এবং শরীর চর্চায় সময় দিন। যদিও শিশুর চাহিদা আপনার সময়ের প্রায় সবটুকু নিয়ে নেয় তারপরও জীবনসঙ্গীর জন্য সময় বের করে নিন। এমনকি ময়লা কাপড় অথবা অপরিষ্কার বাসনকোসন ধোয়ার জন্য পড়ে থাকলে তেমন ক্ষতি নেই ।

৪. আপনার মতবিরোধ প্রকাশ করুন; দ্বন্ধকে গুরুত্বহীন ভেবে এড়িয়ে যাবেন না। কোনো ব্যাপারে বিবাদকে সম্পর্কের মধ্যকার কোন ফাটলের ইঙ্গিত হিসাবে নিন এবং দুজনে মিলে পরামর্শ (counselling) পাবার চেষ্টা করুন।

৫. বিশ্বস্ত বন্ধু বা অভিজ্ঞ সহকর্মীর সাথে কথা বলুন যার- বাবা/মা হওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। এটা আপনার বিষন্নতা দূর করতে সাহায্য করবে। কথা বলার জন্য একই লিঙ্গের ব্যক্তি নির্বাচন করুন এবং কোনো অবস্থাতেই আপনার স্বামী বা স্ত্রীর একান্ত ব্যক্তিগত ও গোপনীয় কোনো বিষয় প্রকাশ করবেন না।

রেফারেন্স অনুবাদ: Parent-child relations.

 

বুড়ি আজ খুশী


দ্য স্লেভ


মবিন শেখ বড় বড় প্যাকেটে বড় বড় রুই,ইলিশ,ইলিশের ডিম,চিংড়ী মাছ,বিলের বড় বড় কৈ মাছ কিনে বাড়ির কাজের ছেলেটার কাধে চাপিয়েছে। নদীর রুইমাছটা আজ বেশ তাজা কিনতে পেরেছে। ভোরে আসলে আসলে সবকিছু ভালোমত পাওয়া যায়,তবে কৈ এর ব্যপারটা আলাদা। বিলের এত বড় বড় কৈ সহসা পাওয়া যায়না। প্রতি পিত কৈ ৫০০ টাকা পড়ল, তা পড়ুক,, সহসা এতবড় কৈ পাওয়া দুষ্কর। আজ দুপুরে বড় জামাই বন্ধুদের নিয়ে খেতে আসবে,,, বড় কৈ তার পছন্দ। ইলিশ মাছও পেয়েছে বড় বড় সাইজের। টাকা একটু বেশী গেছে কিন্তু সম্মানটা তার থাকবে। ৫ কেজী খাসীর গোস্ত কিনেছে। জামাইয়ের সামনে শুধু গরু রাখলে ইজ্জত থাকেনা।
নানান সব তরিতরকারী,মুরগী কিনে আরেক কাজের লোকের ঘাড়ে চাপানো। মবিন শেখ বাজার থেকে বেরোনোর পথে বুড়িকে দেখলো জীর্ণ-শীর্ণ দেহে মলিন পোষাকে,মলিন তরকারী নিয়ে বসে আছে। দেখেই শেখের মনে পড়ল,,আরে কাঁচা মরিচ আর পেঁয়াজ তো কেনা হয়নি !
মবিন শেইখ: ওই বুড়ি কি ব্যাচো ?
বুড়ি: এই যে বাবা,,,এইসব বেচী।
:হুমম এ তো ময়লা মাটি,,,বাজার থেকে কুড়াইছো নাকি ??
: না বাজান ,, জিনিস ভালো আছে..
: ভালো না মন্দ সে তো দেখতেই পাচ্ছি। তা পেঁয়াজের ভাগা কত ?
: নেন বাজান,, দশ টাকা করে দেন ভাগা….
: হ্যা !!! কও কি ?? ১০ টাকা ! আহারে বাজার থেকে কিনলেই ভালো করতাম,,,কত সুন্দর চকচকে পেঁয়াজ,,দামেও কম ছিলো,,,নাকি আবার বাজারে যাব !!
: বাজান নেন, কম রাখবানে,,,,আপনি ৮ টাকা করে দেন।
:আরে বুড়ি এই টুকানো পেয়াজ ২টাকাও হয়না,,৫ টাকা করে দেব,,,৩ ভাগা দাও….।
: না বাজান ঠকা হয়,,, আপনি ৭ টাকা করে দেন,,,,আপনারা দাম না দিলে খাব কি কন ? সকাল থেকে বসে আছি,,,কেউ কিনতে চায়না….
:কিনবে ক্যামনে ?? ময়লা মাটি মানুষ কিনে? আর ৫ টাকার জিনিস ১০ টাকা চাইলে জীবনেও বিক্রী করতে পারবা না,,,জুলুম করলে এমনই হয় ! ৫ টাকায় দাও,,,আমি বলে ৫টাকা বলছি,,অন্যরা আরও কম বলত।
: বাজান তাইলে ৪ ভাগা পেয়াজই নেন,,২০ টাকাই দেন।
:এই তো লাইনে আসছো ! তোমাদের আবার আমি চিনিনা,,,,মানুষ চিনতে চিনতে চুল পাকায় ফেলছি….। আচ্ছা মরিচ কত রাখবা ? অর্ধেক তো পচা….
: বাজান নিয়ে যান, ভালো জিনিস,,,। ৫ টাকা করেই রাখব।…
:বুড়ির বুদ্ধি আছে দেখছি,,,৫টাকায় পেয়াজ কিনেছি দেখে একই দাম বলল…..দ্যাখো আমার সময় নেই,,,আর মরিচ কেনার দরকারও নেই,,,কিন্তু তোমার উপকার হবে বলেই কিনছি। ভালো করে দাম কও…
: বাজান ৪ টাকা করে দেন,কিন্তু নিয়ে যান। আচ্ছা নিলাম,,,,অন্য মানুষ হলে নিত না।….টমেটোগুলো কততে দিবা ?
: বাজান আপনি ইজ্জতদার মানুষ ইনসাফ করে দিয়েন। আমার বাড়ির উঠোনে লাগানো টমেটো,,,,আমি দাম জানিনা…। বাজারে যেই দামে কিনেন তার চেয়ে কিছু কমে দেন। বাড়ির জিনিস তো কমে বেচা যাবে……ওষুধ দেওয়া নেই…।
:হুমম টমেটো তো কেনা দরকার না,,,তাও দেখী..আচ্ছা অারও ৫ টাকা দিচ্ছি,,দিয়ে দাও…।
:বাজান মাত্র ৫টাকা ?
: হ্যা,,তোমার বাড়ির জিনিস,,ওইটা কি আর বিকেল পর্যন্ত থাকবে,,,পচে যাবে,,দাও দাও দিয়ে দাও….
মবিন শেইখ বাজার করে আজ ব্যপক খুশী,,,,বড়ই জিতেছে আজ। অবশ্য বুড়ির কথা তার মাথায় নেই,,,,জামাই আর তার বন্ধুরা মাছ,গোস্ত দিয়ে কি মজায় ভাত খাবে সেই দৃশ্য কল্পনা করতে করতে সে বাড়ির পথ ধরল।
বুড়িও আজ খুশী। একজন কাস্টমারের কাছে সে অনেক কিছু বিক্রী করতে পেরেছে। তবে আরও কিছু তরকারী বিক্রী করতে বাকী আছে। সেগুলো বেচা হলেই সে পুরো দেড় কেজী চাল কিনতে পারবে লাভের টাকায়। পেছনের সারের ব্যাগে বাজার থেকে কুড়ানো কিছু পোকা লাগা বেগুন রাখা আছে। কুড়ানো তরকারীতে তাদের পেট চলে। মাঝে মাঝে দু একটা ভালো বেগুনও পায় সে। বাজারে তরকারী কুড়াতে গেলে কিছু লোক ভালো আচরন করে। ওদের কেউ কেউ অল্প পোকা লাগা তরকারীও দিয়ে দেয়। ওসব ঘুমে মুটে খেয়ে ওরা বেঁচে থাকে !
আহা,,,পেটের ভেতরটা চিনচিন করে ওঠে বুড়ির,,, সেই কাকডাকা ভোরে দুটো পান্তা খেয়ে নিস্তেজ দূর্বল শরীর নিয়ে বেরিয়েছে। এরপর আর একটা দানাও পেটে পড়েনি। খালি পেটে পানি খেলে পেটে খিল লেগে ধরে। সন্ধ্যার আগেই বাড়ি পৌছাতে হবে, নইলে বুড়োর পেটেও ভাত যাবে না। ঝাপসা দৃষ্টি নিয়ে সন্ধ্যার পর পথ চলতে কষ্ট হয়। তবে বুড়ি আজ আশাবাদী,,, তরকারী বিক্রীর টাকায় সে আরেকটু বেশী চাল কিনে বাড়ি যাবে। বুড়োটা আলুভর্তা আর জাও-ভাত পছন্দ করে। আজ রাতে ওরা ভরপেট খাবে , ভাবতেই আনন্দাশ্রুতে বুড়ির চোখ ঝাপসা হয়ে আসে !

 

মাদ্রিদে কাটানো মায়াবী মুহূর্তগুলো …


হালিমা সাদিয়া খাতুন


জীবনের বালুচড়ে চলার পথে সয্তনে কুঁড়িয়ে নেয়া নুড়ি গুলোর সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে বন্ধুত্বের মায়াবী নীড়। যে নীড়ের প্রতিটি নূড়ি অমূল্য এবং অনন্য যার ভাঁজে ভাঁজে জড়িয়ে আছে, লুকিয়ে আছে বন্ধুত্বের মূল্যবান প্রাপ্তি। যে প্রাপ্তির উপলব্ধি মনে ভালোলাগার দোলা দিয়ে যায়, রেখে যায় গুচ্ছ গুচ্ছ ভালোবাসার সুখের শিশির বিন্দু ..
জানুয়ারীতে আমাদের ভ্যাকেশন উপলক্ষে উড়াল দিয়েছিলাম আফরোজা হাসান পরিবার ডোরে । সেখানে কাটানো সময়গুলো বন্ধুত্বের নীড় কে করেছে সমৃদ্ধ , দিয়েছে চির অমলীন মূল্যবান কিছু মুহূর্ত যা কখনো ভুলবার নয়!
আমাদের এখান থেকে মাদ্রিদ যেতে লেগেছিলো মাত্র দু ঘন্টা। এয়ারপোর্ট থেকে আফরোজার বাসাও খুব কাছে, পূর্ব পরিচিত ভাতিজার সাথে মাদ্রিদ শহরের গল্প শুনে এবং দৃশ্য উপভোগ করতে করতে অল্প সময়েই পৌঁছে গিয়েছিলাম ওদের বাসায় ।
দীর্ঘ বিরতির পর দেখা, কাছে পাওয়া আর মধুর আলিংগনটুকু মুছে দিয়েছিলো সমস্ত ক্লান্তি। গল্প, হাসি কথা মালায় দু পরিবারের পুনর্মিলন মুহূর্তেই জমিয়ে তুলেছিলো গুন গুন কথা -স্মৃতি চারণ সন্মেলন!

ঘুরাঘুরি ১- হেরোন সিটি
সন্ধা বেলায় বেড়িয়েছিলাম হেরোন সিটির উদ্দেশ্যে। মাদ্রিদ শহরটি পুরোটাই পাহাড়ের মাঝে, রাস্তায় বে্রোলেই চোখে পড়বে উঁচু নিচু রাস্তা, কখনো আঁকা বাঁকা মোড় তো আবার কখনো লম্বা টানেল । টানেলগুলো সব পাহাড় কেটে কেটে তৈরি করা হয়েছে। রাত হয়ে গিয়েছিলো, রাস্তার দুপাশের ল্যাম্পপোস্টের আলোর সাথে সাঁ সাঁ করে ছুটে চলা সাথে ছিলো ননস্টপ মধুঝরা গল্প!

ঘুরাঘুরি ২- আতোচা স্টেশন
রাজধানী মাদ্রিদের চমৎকার স্থান গুলোর একটা হলো এই আতোচা স্টেশন । এই স্টেশনটির নির্মান কাজ ১৮৮৯ সালে প্রথম শুরু হলেও পরবর্তীতে ১৯৮০ সালে আর্কিটেক্ট রাফায়েল মোনেও এর অধীনে স্টেশনটির ডিজাইনে মডিফিকেশন করা হয় । দূর দূরান্তের ক্লান্ত পথিকরা যখন স্টেশনটিতে আসবেন, স্টেশনটির সৌন্দর্য দেখে এক পলকেই মুগ্ধ হবেন । ঘন সবুজ সুউচ্চ প্লাম ট্রি, নানান রকমের পাতাবাহার, বিভিন্ন ধরণের লাগানো গাছগুলোর সজীবতা তো আছেই সাথে কবুতর, ঝাঁকে ঝাঁকে ছোট মাছ আর কচ্ছপ বাহিনীর লম্ফ ঝম্ফ উপভোগ করার মতোন।
শুধু সুন্দরের দিক থেকেই নয় বরং ইউরোপের প্রথম দশটি সেরা স্টেশন এর মধ্যে স্পেনের মাদ্রিদের এই আতোচা স্টেশন সেরা তিন নাম্বারের গৌরব অর্জন করে আছে সুদীর্ঘ সময় কাল থেকে!

ঘুরাঘুরি ৩- স্টেডিয়াম রিয়েল মাদ্রিদ
বিখ্যাত স্টেডিয়াম রিয়েল মাদ্রিদের নাম শুনেন নি এমন মানুষ কম। নাম আমিও অনেক শুনেছি, সুযোগ যখন পেলাম তাই এবার স্টেডিয়াম এর সামনে দিয়ে ঘুরে কিছু ছবি তুলে চলে আসলাম। স্টেডিয়ামটির মূল নাম হলো Santiago Bernabéu Stadium।

ঘুরাঘুরি ৪- জোয়ান কার্লোস পার্ক স্পেনিশ উচ্চারণে খোয়ান 🙂
মাদ্রিদ এর উত্তর পূর্বকোনে অবস্থিত জোয়ান কার্লোস পার্ক টি প্রায় ১৬০ হেক্টর জায়গা নিয়ে গঠিত, এই পার্কটি মাদ্রিদের সবচাইতে বড় পার্ক গুলোর একটি। শিশু থেকে বয়স্ক সবার জন্য রয়েছে নির্মল বিনোদনের ব্যবস্থা। এতে রয়েছে দশ হাজার ভিন্ন প্রজাতির গাছ এবং নব্বই হাজার প্রজাতির ফুলের সমাবেশ । বিকেল থাকতেই রওয়ানা হয়েছিলাম আমরা , ঘুরে ফিরে ক্লান্ত হয়ে যখন সবাই বাসায় ফিরছিলাম তাকিয়ে দেখলাম মাদ্রিদ গগনে বিশাল পূর্নিমার চাঁদ মিটি মিটি হেসে আলো ছড়াচ্ছে….

ঘুরোঘুরি ৫- বৃষ্টি ভেজা সন্ধায় চুররোস উইথ কাপুচিনো
আমি, আফ্রু আর সারামণি মিলে বাসার নিচের চুররোস শপে-

ঘুরাঘুরি ৬- হালাল বার্গার এর সন্ধানে
এদিন আমরা দুই পরিবারের সব সদস্যরা মিলে রাটের খাবার খেতে এসেছিলাম আমাদের ভাতিজার হালাল বার্গার শপে।

ঘুরাঘুরি ৭- মাদ্রিদ সেন্টার কাইয়ো
এদিন অবশ্য আমরা শুধু পতি -পত্নী মিলে বের হয়েছিলাম। যেতে হয়েছিলো মেট্রো দিয়ে। ভয় পেতে পেতে অবশেষে ঠিক ভাবে এসে পৌঁছেছিলাম সেন্টারে । আনন্দরা মুঠো মুঠো সুখ ছড়িয়েছিলো সর্বক্ষণ …
ঘুরে ফিরে দুজনে পথ হারিয়েছিলাম তবু টেনশন লাগে নি একটুও! পাশে উনি আছেন এটা ছিলো পরম নির্ভরতার কারণ! তারপর আবার পথ খুঁজে পেয়ে মেট্রো ধরে বাসায় ফিরে এসেছিলাম, স্মৃতিরা কল্পনার বুননে এঁকে নিয়েছিলো নতুন স্বপ্ন কাঁথা!

 

ইরানি বংশোদ্ভুত নারী সাংবাদিককে গ্রেফতারের কথা নিশ্চিত করলো যুক্তরাষ্ট্র


নারী সংবাদ


যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত শুক্রবার ইরানি টেলিভিশনের এক নারী সাংবাদিককে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। একটি মামলায় সাক্ষ্য প্রদানের জন্য তাকে আটক করা হয়েছে। তবে তিনি ওই অপরাধের সঙ্গে জড়িত নন।
খবর বার্তা এএফপি’র।
ইরানি বংশোদ্ভুত ওই সাংবাদিক যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেন। তার নাম মার্জিয়া হাশেমি। তিনি ইরানের ইংলিশভাষী চ্যানেল প্রেস টিভির উপস্থাপিকা।
তার এই গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে দুদেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা চলছে।
ওয়াশিংটনে এক শুনানীতে ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট ফর দ্য ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ার প্রধান বিচারক বেরিল হোয়েল রায়ে বলেন, হাসেমিকে ওয়াশিংটনের একটি মামলার হুলিয়ায় গ্রেফতার করা হয়েছে।
রায়ে তার আগের নাম মেলানি ফ্রাঙ্কলিন উল্লেখ করা হয়।
‘যুক্তরাষ্ট্রের ফৌজদারী আইন লংঘনের’ একটি মামলায় গ্র্যান্ড জুরির সামনে সাক্ষ্য দেয়া শেষে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে।
রায়ে আরো বলা হয়, ‘ফ্রাঙ্কলিনের পক্ষে একজন এটর্নী নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবং তাকে কোন অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়নি।’
হাশেমি একজন ইরানিকে বিয়ে করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
তিনি মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন নীতি এবং মুসলিম ও আফ্রিকান আমেরিকানদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আচরণের সমালোচনা করে প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেছেন।
প্রেস টিভি জানিয়েছে, তাকে রোববার সেন্ট লুইস বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি সেখানে এক অসুস্থ আত্মীয়কে দেখতে যাচ্ছিলেন।
এদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাভেদ জারিফ বুধবার বলেন, ‘মার্জিয়া হাশেমির গ্রেফতার একটি অগ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক আচরণ এবং মার্কিন কর্তৃপক্ষের মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে পদদলিত করার প্রমাণ।’
সুত্র: বাসস ডেস্ক।

 

মদ, গাঁজায় মেতে আছে সেই সৌদি তরুণী


নারী সংবাদ


পরিবারের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ এনে বিশ্বে হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন সৌদি আরবের মেয়ে রাহাফ মোহাম্মেদ আল-কুনুন (১৮)। পরিবার থেকে পালিয়ে থাইল্যান্ডে গিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত বহির্বিশ্বের হস্তক্ষেপে কানাডায় আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। কানডায় গিয়েই রাহাফ তার ‘নতুন জীবনযাত্রার’ কিছু ছবি শেয়ার করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তাতে দেখা গেছে মদ, শুকরের মাংস আর গাঁজা হয়ে উঠেছে তার জীবনসঙ্গী।

তাকে দেখা গেছে পশ্চিমা ধাঁচের পোশাক পরিহীত। গায়ে হাঁটু পর্যন্ত উলের পোশাক দেখা গেছে । গত মঙ্গলবার স্ন্যাপচ্যাটে কিছু ছবি শেয়ার করেছেন রাহাফ। এতে তিনি জীবনে প্রথম কানাডিয়ান স্টাইলে বেকন খাচ্ছেন (শূকরের হিমায়িত মাংস) বলে জানিয়েছেন।

এই ছবির সঙ্গেই তিনি মদ এবং সিগারেটের টুকরার ছবি দিয়ে সেগুলো দারুণ উপভোগ করছেন বলে জানিয়েছেন। কানাডায় সাধারণ এভাবে গাঁজা ভরে সিগারেট খাওয়া হয়। সম্প্রতি দেশটি গাঁজাকে বৈধতা দিয়েছে। বিভিন্ন প্রদেশের নিজস্ব রীতি মেনে ১৮/১৯ বছর বয়সী থেকে সবাই গাঁজা সেবন করতে পারেন।

সিগারেট খাওয়ার ও মদের ছবি শেয়ার করেছেন রাহাফ। একটি ছবিতে ক্যাপশন দিয়েছেন, মাইনাস ৮ ডিগ্রি তাপমাত্রায় বসে ‘বাষ্প’ উড়াচ্ছি।

পরিবারের বিরুদ্ধে নানান নির্যাতন আর নিপীড়নের অভিযোগ তুলে শেষ পর্যন্ত কানাডায় আশ্রয় পেয়েছে মেয়েটি। ইতোমধ্যে তার নতুন জীবনের এক সপ্তাহ পার হয়েছে। আর এই এক সপ্তাহ জীবনযাপনের চিত্রই পাওয়া গেছে তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা ছবি ও অভিজ্ঞতায়। সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

সন্তান লালন পালনের চারটি স্টাইল


প্যারেন্টিং


‘প্যারেন্টিং’ বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্যারেন্টিং এর ক্ষেত্রে মা-বাবা সন্তানের সাথে কত বেশি সময় পার করছেন তার চেয়ে কিভাবে সময় কাটাচ্ছেন সেটা অনেক দরকারি। মা-বাবা তাদের সন্তানের লালন-পালনের সময় প্রয়োগ করেন অজান্তে নানান প্যাটার্ন বা স্টাইল। আজকে আমরা প্রধান চারটি স্টাইল নিয়ে জানবো।

প্যারেন্টিং স্টাইল

মা-বাবা’র প্যারেন্টিং স্টাইল সন্তানের ব্যক্তিত্ব গঠনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে। প্যারেন্টিং স্টাইল এর সাথে পড়াশুনা, ব্যক্তিক, সম্পর্ক, সামাজিকতা বিকাশের অনেক ভূমিকা তা জানার চেষ্টা করব আমরা। চলুন আগে আমরা প্যারেন্টিং স্টাইলের ধরণ গুলো সম্পর্কে একটু জেনে নেইঃ

ডিয়ানা বাউমিন্ড দেওয়া চারটি প্যারেন্টিং স্টাইল নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করেন।

স্বৈরাচারী স্টাইল

মা-বাবার কাছে সন্তানদের মতামতের গুরুত্ব কম। সন্তানের কাছে বড় কিছু আশা করলেও তাদের প্রতি কম সহানুভূতি প্রকাশ করেন। তারা সন্তানের কাছ থেকে বিনা শর্তে আনুগত্য পেতে পছন্দ করেন। ছেলে-মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি প্রদান করেন। তাদের কিছু শক্ত নিয়ম কানুন থাকে এবং তাদের মতের সাথে দ্বিমত হওয়া তারা মোটেও পছন্দ করেন না।

গণতান্ত্রিক স্টাইল
প্যারেন্টিং স্টাইল যা যুক্তিপূর্ণ, পরিমিত নিয়ম ও নির্দেশনা ঠিক করে দেয়। যেখানে সন্তানের চিন্তা-ভাবনা, আচরণকে গুরুত্ব সহকারে বোঝার চেষ্টা করা হয়। এখানে সন্তানের জন্য নিয়ম-কানুনগুলো পরিষ্কার করে দেখানো হয়। সর্বোত্তম, স্টাইল এসময় মা-বাবা সন্তানেরা গ্রহণযোগ্যভাবে আচরণ করতে শেখে।
মা-বাবা সন্তানের কাছে বিভিন্ন প্রত্যাশা করেন আবার সন্তানের প্রতিও সহানুভূতিশীল। সন্তানের দায়িত্ব কি হবে, কিভাবে সমাজে চলাফেরা করবে তা তাদেরকে জানিয়ে দেন এ পরিষ্কার ভাবে সব মা-বাবা।

প্রশ্রয়কারী স্টাইল:
মা-বাবাকে প্রশ্রয়দানকারী মা-বাবা বলা হয়। তারা সন্তানের প্রতি অতি সহানুভূতিশীল হন এবং তার কাছে চাওয়া পাওয়া কম থাকে। এসব মা-বাবা নরম প্রকৃতির অর্থাৎ গতানুগতিক মা-বাবা থেকে আলাদা, এরা সন্তানের উপর কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করেন না। তারা সন্তানকে যে নির্দেশনা দেন সেগুলো প্রায় অসামজ্ঞস্যপূর্ণ হয়ে থাকে।

উদাসীন স্টাইল:
মা-বাবা সন্তানের প্রতি কম সহানুভূতিশীল এবং তাদের উপর প্রত্যাশাও কম তাকে। সন্তানের উপর কোন আবেগীয় বন্ধন থাকে না বরং ছেলে-মেয়ে অবজ্ঞা, অবহেলার মধ্যে মানুষ হতে থাকে। সন্তানকে শুধু খাদ্য,বস্ত্র, আশ্রয় দেওয়াই তাদের দায়িত্ব বলে মনে করেন বলে তাদের উপর আগ্রহও কম থাকে। এসব মা-বাবার সন্তান প্রায়ই শারীরিক ও মানসিক নিগ্রহের শিকার হয়।

আপনি আপনার সন্তানের সাথে একটা বিকেল কাটিয়েছেন কিন্তু আপনি নিজের কাজ করলেও সন্তানের দিকে খেয়াল করছেন না।

প্রতিদিন গড়ে সন্তানের সাথে ৩০ মিনিট সময় কাটানো দরকার মা-বাবার। আর ঐ সময়টা শুধুমাত্র সন্তানের জন্য বরাদ্দ থাকা উচিত। বাবা আলাদাভাবে ৩০মিনিট এবং মা আলাদা ভাবে ৩০ মিনিট কাটাবেন।

 

রাস্তা পার হতে গিয়ে কলেজছাত্রীর মৃত্যু


নারী সংবাদ


গতকাল বুধবার মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় সরকারি সিটি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক বাণিজ্য বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সোমা বড়ুয়ার (১৮) মৃত্যবরণ করেন। সকালে কলেজে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয় শিক্ষার্থী সোমা। বাসযোগে কোতোয়ালির মোড়ে নেমে পার হচ্ছিল রাস্তা।

সকাল ১০টার দিকে নগরের কোতোয়ালি থানার মোড়ে কাভার্ড ভ্যানচাপায় সে প্রাণ হারায়। সোমা চান্দগাঁও থানাধীন বাহির সিগন্যাল এলাকার বড়ুয়াপাড়ার রূপায়ণ বড়ুয়ার মেয়ে। পরিবারে তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট সে। তাদের গ্রামের বাড়ি বোয়ালখালী উপজেলায়।

মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সোমার স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে আশপাশের পরিবেশ।

এ ঘটনায় পুলিশ কাভার্ড ভ্যানটি ও ঘাতক চালক জসিম উদ্দীনকে আটক করেছে। কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক সজল দাশ সমকালকে বলেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) কার্যালয়ের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

এদিকে সোমার সহপাঠীরা বন্ধুকে হারিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। নগরে দিনের বেলায় ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান চলাচল বন্ধে আইন কার্যকর করতে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে স্মারকলিপি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। প্রশাসনের কাছে আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাচ্ছি। সুত্র ও ছবি :ইন্টারনেট।

 

আকিজের তিন চাকাওয়ালা ই-বাইক ‘সাথী’, কম দামে অনেক সুবিধা..


অন্যান্য


সাইকেল চালাতে শারীরিক শক্তি আর মোটরসাইকেলে চালাতে জ্বালানি প্রয়োজন। মাঝামাঝি কোনও বাহন নিয়ে নিজের মতো আরাম করে বসে সহজে গন্তব্যে পৌঁছে যেতে চান, আর পয়সাও বাঁচাতে ইচ্ছুক হন, তাহলে ইলেকট্রিক বাইক হবে সহজ সমাধান।
ব্যাটারিচালিত তিন চাকার এমন বাইক নিয়ে এসেছে আকিজ মোটরস। ‘সাথী’ নামের এই বাইকটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, সাইকেল বা মোটর বাইক চালানো না শিখেও খুব সহজে এটি চালানো যাবে। তিন চাকার এই বাইকটিতে ভারসাম্য রক্ষা করার কোনও ঝামেলা নেই।

আকিজ মটরসের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মুহাম্মাদ আবুল হাশেম বলেন, “যানজটের এই শহরে বাসে ভ্রমণ এক দুঃসহ যন্ত্রণা। কিন্তু ‘সাথী’ থাকলে অফিসে যাওয়া-আসাসহ বাচ্চাকে স্কুলে দিয়ে আসা কর্মজীবীদের জন্য এখন আর কষ্টের নয়। নেই কোনও বাইক রেজিস্ট্রেশনের ঝামেলা। জীবন হবে অনেক সহজ।” তিনি আরোও জানান, ‘সাথী’তে ৬০০ ওয়াটের ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে একবার পূর্ণচার্জে ই-বাইকটি শহরে ৫০-৫৫ কিলোমিটার এবং হাইওয়েতে ৬০-৬৫ কিলোমিটার যেতে পারে। ঘণ্টায় ৩৫ থেকে ৪৫ কিলোমিটার বেগে চলতে পারে ই-বাইকটি।

নিরাপত্তার জন্য ‘সাথী’র তিন চাকাতেই রয়েছে হাইড্রোলিক ডিস্ক ব্রেক। ৩০০-১০ সাইজের চাকা এবং যথেষ্ট গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স থাকাতে উঁচু-নিচু বা গতিরোধকগুলোও ‘সাথী’ সহজে টপকে যাবে। আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য ই-বাইকটির পিছনের দুই চাকাতেই শক অ্যাবসর্ভার রয়েছে।
শব্দ ও জ্বালানিবিহীন এসব ই-বাইকে শক্তিশালী ও উন্নতমানের জেল ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে। ‘সাথী’তে সিটের মাঝখানে জিনিসপত্র রাখার সুপরিসর জায়গা রয়েছে। এছাড়া সিটের নিচের অংশে অনায়াসে নিজের হেলমেট থেকে শুরু করে আনুসঙ্গিক জিনিসপত্র লক করে রাখার ব্যবস্থা রয়েছে।সিটের হেলান দেয়ার পেছনের অংশেও রয়েছে খাঁচাসদৃশ স্টোরেজ। মোটকথা, নিজের প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র অনায়াসে এই ই-বাইকে নিয়ে চলে যেতে পারবেন এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়।ই-বাইকটিতে থ্রটলের নিচে সুইচে রয়েছে গিয়ার। তিন পুশ গিয়ার সমৃদ্ধ এই ই-বাইকটিতে সহজে গিয়ার চেঞ্জ করে যেকোনো প্রতিকুল রাস্তাও অনায়াসে পাড়ি দেয়া যাবে। গিয়ার সুইচের পরেই রয়েছে ব্যাক গিয়ার। সুইচটি চেপে বাইক থেকে না নেমে মোটরের সাহায্যে সহজে ই-বাইকটিকে পেছনে নেয়া যাবে। এই বাইকে পায়ের কোন কাজ নেই। দুই হাতে ব্রেক রয়েছে। কোথাও পার্ক করে রাখার জন্য রয়েছে ব্রেক লকার।

‘সাথী’র ডান হাতে রয়েছে থ্রটল। থ্রটল যত ঘোরানো হবে ততই গতি বাড়বে। থ্রটল ছেড়ে দিলে ধীরে ধীরে বাইকের গতি কমে আসবে। চুরির হাত থেকে ই-বাইকটিকে রক্ষা করতে বাইকটিতে কি লকের পাশাপাশি রিমোট লক ব্যবহার করা হয়েছে। তাই সিটে বসার সময় হাতল ঘুরিয়ে সহজেই বসা যায়। পেছনের যাত্রীর পা রাখার জন্য বাইকটিতে অতিরিক্ত ফুট রেস্ট বা পাদানি সংযোজন করা হয়েছে।ই-বাইকটি সম্পর্কে আকিজ মটরস এর ইলেকট্রিক মটর সাইকেল সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মাদ ফারুক বলেন, ‘পরিবেশ বান্ধব এই ই-বাইকটি ২৫০ কেজি পর্যন্ত ধারণ করতে পারে। সম্পূর্ণ মেইন্টেনেন্স মুক্ত ড্রাইসেলের ব্যাটারি ব্যবহার করাতে ই-বাইকটি আলাদা কোন যত্ন নেবার বিষয় নেই।’
‘কিনুন এবং চালান’ এই থিউরিতেই মূলত আকিজের ই-বাইক বাজরে ছাড়া হয়েছে।

আকিজের এই ই-বাইকটির দাম জানতে এবং এটি কিনতে ভিজিট করুন- https://akijmotors.com
এই ঠিকানায়। ভিজিট করতে পারেন ফেসবুকও: https://www.facebook.com/AkijMotors
হটলাইন নম্বরেও যোগাযোগ করতে পারেন। মোবাইল ফোন নম্বর: 01770794917
রাজধানীর তেজগাঁও এর আকিজ মোটরস এর প্রদর্শনী কেন্দ্রসহ সারাদেশে ই-বাইকটি পাওয়া যাচ্ছে। সুত্র: ইন্টারনেট।

 

শিশুদের ওপর মোবাইল ফোনের প্রভাব


নারী সংবাদ


পুরনো ঢাকার অধিবাসী নজরুল ইসলামের পাঁচ বছরের শিশু কন্যা জারা এখন অনেক পাওয়ারী চশমা পরে। চশমা ছাড়া পড়তে সমস্যা হয়, টিভি দেখতে ও সমস্যা হয়।
একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ সারাক্ষণ জারাকে চশমা পড়ার উপদেশ দিয়ে সতর্ক করেছেন নিয়মিত চশমা ব্যবহার না করলে তার চোখের অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে।
জারার মা ঝর্না বেগম অশ্রুসিক্ত নয়নে বলেন, দুই-আড়াই বছর বয়স থেকেই জারা মোবাইল ফোনে গেম খেলে। গত কয়েকদিন আগে সে আমাকে জানায় যে,সে ঠিকমত টিভি দেখতে পারে না, অস্পষ্ট দেখে। সেই সময় ওর চোখের নীচে কাল দাগও আমরা লক্ষ্য করি।
চোখের ডাক্তারকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, মোবাইলের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের কারনেই ওর চোখের এই অবস্থা হয়েছে।
সম্প্রতি ভারতের চার্টার বিশ্ববিদ্যালয় তাদের একটি গবেষণায় দেখিয়েছে, স্মাট ফোনের অধিক ব্যবহার চোখের রেটিনা,কর্নিয়া এবং অন্যান্য অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
১৬ বছর বয়সী মেহেদি প্রাঞ্জলের বাবা আব্দুল বারাক বলেন,”সম্প্রতি আমি লক্ষ্য করলাম যে আমার ছেলে আমার মানি ব্যাগ থেকে টাকা চুরি করা শুরু করেছে। কারণ এবার এসএসসি ফেল করার কারণে আমি ওকে হাত খরচ দেয়া বন্ধ করে দিয়েছি।”
“সব আমার দোষ, আমি কেন যে ওকে ফোন কিনে দিলাম,” হাহাকার করে ওঠেন বারাক।
তিনি জানান মেহেদি যখন অস্টম শ্রেণিতে পড়ে তখন তিনি ওকে ফোন কিনে দেন।
বারাক জানান, মেহেদি সারাক্ষণ ফোন নিয়ে থাকতেই পছন্দ করে। কারো সাথে কথা পর্যন্ত বলেনা। ফোন কেড়ে নিলে প্রচন্ড হিংসাত্মক হয়ে ওঠে।
এতে কোন সন্দেহ নেই যে, ফোন আমাদের জন্য অনেক কিছু সহজ করে দিয়েছে। পাশাপাশি আমাদের জন্য বয়ে নিয়ে এসেছে বিবিধ সমস্যা। বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে ১৩ কোটি মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে কারণ বতর্মান সরকার দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
লিটেল জুয়েল স্কুলের শিক্ষিকা সাইদা ইয়াসমিন বাসস’কে জানান, মাঝে মাঝে কিছু বাচ্চা স্কুলে ফোন নিয়ে আসে। এমনকি শিক্ষকদের উপস্থিতিতে তারা ক্লাসে ফোন ব্যবহার করে।
“ক্লাসে তাদের মন বসেনা, বাড়ির কাজ করে না যার প্রভাব পড়ে তাদের পরীক্ষার রেজাল্টের ওপর”।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক উম্মে কাওসার বলেন “সবচেয়ে খারাপ দিক হল তারা পরিবারের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। তারা ফোনে মেসেজ, নোটিফিকেশন চেক করতেই ব্যস্ত থাকে। ফোন তাদের হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিলে তারা ক্ষেপে যায়।”
শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ এ এসএম মাহমুদুজ্জান বলেন, আজকের শিশুরা রেডিও ফ্রেকুয়েন্সি ঘেরা এক পরিবেশের মধ্যে বড় হচ্ছে, ফোন থেকে যে রেডিও ফ্রিকুয়েন্সি নির্গত হয় তা তাদের জন্য ভয়ংকর পরিণতি নিয়ে আসতে পারে।
যে সমস্ত শিশুরা ফোন ব্যবহার করে তারা অপেক্ষাকৃত অনিদ্রা এবং অস্থিরতায় ভুগে থাকে।
তবে তিনি কিছু পরামর্শ দিয়েছেন, যার মাধ্যমে শিশুদের উপর ফোনের কু প্রভাব কমে যাবে। সেগুলো হল, কথা বলার সময় এয়ারফোন ব্যবহার করা, বাচ্চাদেরকে স্কুলে ফোন নিয়ে যাওয়ার অনুমতি না দেয়া, শোয়ার ঘরে ফোন নিতে না দেয়া এবং বাচ্চাদের সাথে মোবাইলের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে
কাউন্সেলিং করা। সুত্র: রোকসানা ইয়াসমিন (বাসস)।

 

জোনাক নগরের আঙিনায়…৪


আফরোজা হাসান


চায়ের পানি বসাতে বসাতে আড় চোখে মাহার দিকে তাকালো নূরি। কান্না করে চোখ মুখ ফুলিয়ে লাল করে ফেলেছে মেয়েটা। ছয়মাস হয়েছে মাহার সাথে পরিচয় হয়েছে নূরির। তারপর থেকেই সপ্তাহে অন্তত একদিন কান্না করতে করতে অবশ্যই তার কাছে এসে হাজির হয় মাহা। বাচ্চাদেরকে স্কুল থেকে আনতে যাবার সময় হবার আগ পর্যন্ত চলতে থাকা কান্না আর জীবনকে ঘিরে থাকা দুঃখ-কষ্টের বর্ণনা। মাহার দিকে তাকিয়ে মায়ায় মনটা ভরে উঠলো নূরির। প্রায় তার সমবয়সীই অথচ চার ও তিন বছর বয়সী দুটি বাচ্চার মা হয়ে গিয়েছে। ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ার সময় বিয়ে হয়েছিল। নয় মাস পরেই হাজবেন্ডের কাছে প্রবাসে চলে এসেছে। বাবা-মায়ের খুব আদরের ছোট মেয়ে ছিল তাই সাংসারিক তেমন কোন জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে। প্রবাসে এসে নিজেই হিমশিম খাচ্ছিলো এমন অবস্থায় আবার নতুন প্রাণেদের আগমন জীবনে। নিজেকে ঠিকমতো গুছিয়ে নেয়ার সুযোগই পায়নি সেভাবে। সবকিছু মিলিয়ে কাজেকর্মে যেমন খুব একটা চটপটে না, স্বভাবেও তেমন গোছানো না মাহা। স্বামীর সাথে ওর খিটপিট লেগে থাকাটা তাই অস্বাভাবিক লাগে না নূরির কাছে। চা বানিয়ে মাহার কাছে বসে নূরি বলল, মাত্র না চোখ-মুখ ধুয়ে এলে তুমি, আবার কেন কান্না করছো? চোখ মোছ তো এখন। চা নাও দেখবে মাথা ধরা ছেড়ে দেবে।
তুমি তো জানো না নূরি কি হয়েছে গতরাতে।
মাহা তোমাকে একটা কথা বলি প্লিজ কষ্ট পেয়ো না। এই যে তুমি তোমার স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি, দেবরদের অন্যায়ের কথা আমাকে বলো এটা কিন্তু ঠিক না। কেননা এটাও গীবতের পর্যায়ে পরে।
গীবতের পর্যায়ে পরবে ক্যান? আমি তো আমার কষ্টের কথা তোমাকে বলি।
দেখো মাহা কষ্টের কথা বলা এক জিনিস আর অন্যের দোষ বর্ণনা করা আরেক জিনিস। তুমি অবশ্যই তোমার কষ্টের কথা আমাকে বলতে পারো কিন্তু সেটা হবে হবে অন্যের সমালোচনা করা ছাড়া।
কিন্তু আমি তো তোমার কাছে পরামর্শের জন্য বলি।
তুমি ভেবে দেখো তো ঠিক কি কি বলো আমাকে? তোমার সাথে কে কি করেছে অতীতে সেসব বলো নয়তো তোমার স্বামী কি বলেছে সেসব বলো। কিন্তু একতরফা কিছু শুনে কি পরামর্শ দেয়া সম্ভব? তুমি সবার ভুল আর দোষ বলো কিন্তু তোমার ভুল ও দোষ গুলো তো আড়ালেই থেকে যায় তাই না? আর নিজের কথা বললেও তোমার কাজের স্বপক্ষে যুক্তি দিয়ে বলো। যার ফলে তোমাকে সঠিক আর বাকি সবাইকে বেঠিক লাগাটাই স্বাভাবিক।
মাহা বেশ দৃঢ় কন্ঠে বলল, আমি কখনোই আমার দোষ গোপন করি না। আর মিথ্যাও কথা বলি না আমি আলহামদুলিল্লাহ।
নূরি হেসে বলল, তুমি মিথ্যা বলো বা গোপন করো এমন কথা কিন্তু আমি বলিনি। দেখো আমাদের স্বভাব হচ্ছে নিজেকে বা নিজের কাজকে পজেটিভ ভাবে দেখা। আর এখানে স্বভাবেরও কোন দোষ নেই। সমস্যা হচ্ছে আমাদের চোখ। কারণ আমাদের চোখ নিজেকে ছাড়া আর সবাইকে দেখে। যার ফলে সবার ভুল-অন্যায় গুলো দেখলেও নিজেরটা অদেখাই থেকে যায় তার কাছে। যারফলে আমাদের কাছেও অজানা থাকে যে কিছু ভুল আমারো আছে।
তারমানে তুমি বলতে চাইছো আমার স্বামী ঝগড়া করে এতে আমারো দোষ আছে?
নূরি হাসি মুখে বলল, কিছু না কিছু দোষ তো নিশ্চয়ই আছে। কি মুখ ভার হলো কেন? আচ্ছা বাদ দাও এসব কথা। তুমি চিন্তা-ভাবনা করে আমাকে একটা প্রশ্নের জবাব দাও। তুমি কি সত্যিই সুখী হতে চাও জীবনে?
এটা আবার কেমন প্রশ্ন? কে না সুখী হতে চায় জীবনে?
কে না চায় সেটা জানতে চাইনি তোমার কাছে। তুমি চাও কিনা সেটা বলো।
অবশ্যই চাই।
তাহলে খুঁজে বের করে তোমার জীবনে সুখী হবার পথে প্রতিবন্ধকতা গুলো কি কি? তোমরা সুখী হতে পারছো না এতে তোমার ঘাটতি কতটুকু আর তোমার স্বামীর কতটুকু? দাম্পত্য কলহ কেন বাঁধছে তোমাদের? স্বামীর কোন জিনিস গুলোকে তোমার গুণ আর কোন জিনিসগুলোকে দোষ মনেহয়? কতটুকু ভালোবাসো স্বামীকে? তার কষ্ট কি তোমাকে এতটা ব্যথিত করে যে না চাইতেও চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়ে?
কিছুক্ষণ চুপ থেকে মাহা বলল, এসব প্রশ্নের উত্তর আমি কিভাবে জানবো?
প্রতিটা সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমরা যদি ব্যক্তিকে তার ভালো ও মন্দ দুটি দিক থেকে আলাদা করে দেখতে চেষ্টা করি। তাহলে সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়ন অনেক কমে যায় জানো। আমার জন্য কি করেনি চিন্তা না করে যদি ভেবে দেখি কি কি করেছে, তাহলে মনের অপ্রাপ্তির ঘরে প্রাপ্তির দেখা পাওয়া অনেক সহজ হয়ে যায়। আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে বা কষ্ট দিয়েছে এটা ভাবার সাথে সাথে যদি নিজের ভুলটাও অনুসন্ধান করে দেখতে দেখি তাহলে জীবনের অনেক জটিলতা এমনিতেই কমে যায়। তুমি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করার চেষ্টা করো। তারপর আমরা এই বিষয়ে কথা বলবো।
তোমার কি এসব প্রশ্নের উত্তর জানা আছে নূরি?

চলবে…..

পর্ব-৩

 

কলেজছাত্রী ধর্ষণ মামলায় একজনের যাবজ্জীবন


নারী সংবাদ


মানিকগঞ্জে কলেজ শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ মামলার আসামি সাইদুর রহমানকে যাবজ্জীবন সশ্রম করাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল সোমবার মানিকগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ আলী হোসাইন এ রায় দেন। তবে আসামি জামিন নিয়ে পলাতক আছে।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি একেএম নূরুল হুদা রুবেল জানান, শিবালয় উপজেলার বনদুর্গ এলাকায় ২০০৭ সালে ৯ মার্চ রাতে ওই কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ করে জগৎদিয়া গ্রামের মুদি দোকানদার সাইদুর। এ সময় কলেজছাত্রীর চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে সাইদুরকে ধরে ফেলে। ঘটনার দু’দিন পর ওই কলেজছাত্রী বাদী হয়ে শিবালয় থানায় ধর্ষণ মামলা করেন। ওই বছরের ৭ জুন তদন্ত কর্মকর্তা শিবালয় থানার এসআই রঞ্জিত কুমার দাস আদালতে আসামি সাইদুরের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আদালত ১১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯(১) ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় গতকাল রায় ঘোষণা করেন বিচারক।

 

রেসিপি- “ঝাল মাংস পুলি”


ঘরকন্যা


ঝাল মাংস পুলি

উপকরণ

  • ২ কাপ মাংস সেদ্ধ,
  • ১ কাপ আলু কুচি করে সেদ্ধ করা,
  • ২/১ চা চামচ কাবাব মসলা,
  • ২ টি পেঁয়াজ কুচি,
  • ৫/৬ টি মরিচ কুচি,
  • আধা চা চামচ আদা-রসুন বাটা,
  • লবন স্বাদমতো,
  • টেস্টিং সল্ট সামান্য,
  • তেল ভাজার জন্য,
  • ২ কাপ ময়দা,
  • ২ চিমটি কালোজিরা,
  • পানি পরিমাণমতো।

 

প্রণালি‏

  • পুর তৈরির জন্য একটি প্যানে সামান্য তেল দিয়ে গরম করে এতে আদা-রসুন বাটা দিয়ে দিন। ঘ্রাণ ছড়ালে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে নেরে নরম করে নিন। এরপর মরিচ কুচি ও বাকি মসলা দিয়ে ভালো করে কষে নিন।
  • মসলা কষে এলে সেদ্ধ মাংস একটি পিষে দিয়ে দিন যাতে আঁশ আলাদা হয়। ভালো করে নেড়ে নিয়ে সেদ্ধ আলু কুচি দিয়ে ভালো করে নেরে ভাজা ভাজা হয়ে এলে নামিয়ে নিন।
  •  ময়দা সামান্য তেল দিয়ে খাস্তা করে নিয়ে লবন ও কালি জিরা দিয়ে পরিমাণমতো পানি মিশিয়ে রুটি বেলার ডো তৈরি করে নিন। এরপর পাতলা ছোট রুটি তৈরি করে মাঝে পুর দিয়ে দুভাজ করে অর্ধচন্দ্রের মতো তৈরি করে দুপাশ আটকে দিন।
  •  কড়াইয়ে ডুবো তেলে ভাজার মতো তেল গরম করে লালচে করে ভেজে তুলুন। কিচেন টিস্যুর উপরে তুলে রেখে বাড়তি তেল শুষে নিন। ব্যস, এবার পরিবেশন করুন গরম গরম।

রেসিপি : বাংলাদেশি রেসিপি।

 

সাভারে গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগে আটক – ২


নারী সংবাদ


সাভারের কাউন্দিয়া এলাকায় এক গৃহবধুকে গণধর্ষণের অভিযোগে দুই জনকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা হলো আল আমিন ওরফে জয় (২২) ও রায়হান (২৫)। রোববার ধর্ষণের শিকার ওই গৃহবধুকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) তে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাভারের কাউন্দিয়া এলাকায় ওই গৃহবধুর স্বামী একটি মোবাইল ফোন ক্রয় করার সূত্র ধরে রায়হানের সাথে টাকা লেনদেন নিয়ে ঝগড়া হয়। পরে গত শুক্রবার রায়হান নামের ওই যুবক গৃহবধূর স্বামীর নিকট টাকা চাইলে সে টাকা দিতে না পারায় রাস্তা থেকে গৃহবধুকে কৌশলে একটি নির্জন স্থানে যায় রায়হান। পরে ওই গৃহবধুকে কয়েকজন যুবক পালাক্রমে গণধর্ষণ করে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আল আমিন ওরফে জয় ও রায়হানকে আটক করে।

সাভার মডেল থানার (এসআই) প্রাণ কৃষ্ণ রায় বলেন, এ ব্যাপারে থানায় মামলা হয়েছে। আটককৃত দুই আসামীতে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

সুখস্মৃতি


রেহনুমা বিনত আনিস


কিছু গন্ধ, কিছু স্বাদ, কিছু স্পর্শ, কিছু মূহূর্ত আবছা অস্পষ্ট অশরীরি স্মৃতি হয়ে ঘুরে বেড়ায় ব্যাস্ত মনের আনাচে কানাচে। অবসরের মূহূর্তে হঠাৎ দুষ্ট শিশুর মত মনের দরজায় এক ঝলক উঁকি দিয়ে পালায়। কিন্তু মন তাকে কিছুতেই হারাতে চায়না, পিছু ধাওয়া করে। কখনো জীবনের ব্যাস্ততা তাকে ফিরিয়ে আনে বাস্তবতায়, কখনো স্মৃতির সাথে চলে লুকোচুরি খেলা, আর কখনো নাছোড়বান্দা মন স্মৃতির পিছু ধাওয়া করে পৌঁছে যায় সেই সোনালী বন্দরে যেখান থেকে জাহাজ ছাড়বেনা আর কোনদিন। কিন্তু সৈকতে বসে মিষ্টি রোদে একটু হাওয়ার পরশ, এক পশলা বৃষ্টি পটে আঁকা ছবির মত তাকে মুগ্ধ করে দিয়ে যায়, এটাই প্রাপ্তি।
এমনই এক স্মৃতির পিছু ধাওয়া করছিলাম গত সাত বছর। আমার স্মৃতির শেলফগুলোতে থরে থরে সাজানো জ্ঞানীদের জ্ঞানের পসরা। নিজের নেই বলে অন্যের জ্ঞানের আলোয় নিজেকে উদ্ভাসিত করতে লজ্জা করিনি কখনো।

বইগুলোর একেকটার একেক স্বাদ, একেক গন্ধ, একেক মর্ম – ভালো লাগায় ভরপুর অনুভূতির সৃষ্টি করত দিনরাত। তখন পর্যন্ত আমার বিচরণক্ষেত্র সীমিত ছিলো বিজ্ঞান, ইতিহাস, ধর্ম, জীবনী এবং বাংলা ও বিশ্বসাহিত্যের বিখ্যাত গ্রন্থগুলোর মাঝে। সাহিত্যের মাঝে ভালো লাগত গোয়েন্দা কাহিনী, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, ভ্রমণ ও অ্যাডভেঞ্চার। একদিন, আমাদের হেডমিস্ট্রেস – যিনি অংক টিচার হিসেবেই সুপরিচিত – তাঁর কন্যা রাকা আপু আমার সাথে নানান বিষয়ে আলাপ হবার পর বললেন, ‘এই বয়সে কি সব কঠিন কঠিন জিনিস পড় তুমি!’ আমাকে ভিন্ন স্বাদের কিছু বইয়ের সাথে পরিচিত করিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে ওনার সংগ্রহ থেকে কিছু বই পড়তে দিলেন আপু। অনেকটা ঐতিহাসিক ধাঁচে লেখা হওয়ায় প্রথমেই ঝাঁপিয়ে পড়লাম Prisoner of Zenda বইটির ওপর। একে একে শেষ করলাম আরো কয়েকটি বই। অবশেষে বাকী রইলো একটা। বইটা দেখে এমন আহামরি কিছু মনে হয়নি। পরদিন আপুদের বাসায় দাওয়াত, পরিকল্পনা ছিলো বইগুলো ফিরিয়ে দিয়ে আরো কিছু নিয়ে আসব। কিন্তু না পড়ে বই ফিরিয়ে দেয়া আমার ধাতে সয়না, মনের ভেতর খুঁতখুঁত করতে থাকে না জানি বইটাতে কি অমূল্য জ্ঞান ছিলো, সেটি আহরণের সুযোগ আমি হারিয়ে ফেললাম। আবার browse করে পড়াও আমার মত অপদার্থের দ্বারা হয়না। মনের ভেতর খচখচ করে কোন শব্দ বা কোন লাইন বাদ দিলে যদি মর্মার্থটাই বাদ পড়ে যায়! পড়ার প্রতি এই গন্ডমূর্খের মত মানসিকতার কারণে জীবনে অনেক অখাদ্যই আদ্যোপান্ত গিলে খেয়েছি। কিন্তু অনেক অসাধারন কিছুও খুঁজে পেয়েছি।
যোহরের নামাজ পড়ে বইটা নিয়ে বসলাম। তারপর শুধু নামাজ ছাড়া আর কোন বিরতির কথা মনে পড়েনা। রাত জেগে বই পড়া ছিলো নিত্যনৈমিত্তিক। কিন্তু সেই প্রথম সারা রাত জেগে পড়া। তারপর বই শেষ করে ফজর নামাজ পড়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলা। যাক, লেখিকা হবার স্বপ্ন নিয়ে পথ চলা বোকা মেয়েটা অবশেষে সুখী হবার পথ খুঁজে পেলো!
সে ২৮/২৯ বছর আগের ঘটনা। সাত বছর আগে ক্যানাডা আসার পর থেকে বইটার কথা খুব মনে পড়তে থাকে। কারণ বইয়ের লেখিকা ক্যানাডিয়ান, পটভূমি ক্যানাডা। কিন্তু বইয়ের নাম, লেখকের নাম, নায়িকার নাম, নায়কের নাম কিছুই মনে নেই, মনে আছে শুধু নায়িকার বান্ধবীর নাম আর গল্পটা। বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বললাম, বুঝলাম বইটা এমন বিখ্যাত নয় যে গল্পের সার বললে কেউ বলতে পারবে বইটার নাম কি। কেন যেন মনে হচ্ছিলো লেখিকা তিনিই যিনি Anne of the Green Gables লিখে বিখ্যাত হয়েছেন। কিন্তু সেদিকেও বেশী দূর অগ্রসর হতে পারলাম না। কারণ যাচাই করার মত যথেষ্ট তথ্য আমার স্মৃতিতে সংরক্ষিত নেই।
আজ হঠাৎ মনে হোল তারাটার নাম দিয়ে গুগলে সার্চ দিলে কেমন হয়? গল্পটার খুব হৃদয়স্পর্শী একটি দৃশ্য ছিলো – ছোটবেলা থেকে একসাথে বেড়ে ওঠা দু’টি ছেলেমেয়ে, ছেলেটি লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে গ্রাম ছেড়ে চলে যাচ্ছে অনেক দূরে, আর কোনদিন ফিরবে কি’না ঠিক নেই; সে মেয়েটিকে বলল, ‘আকাশ আমার সবচেয়ে প্রিয় তারা Lyre নক্ষত্রমন্ডলীর সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র Vega. এই তারাটির দিকে তাকালেই আমি তোমার কথা স্মরণ করব’। ভেগার সাথে সংশ্লিষ্ট কল্পকাহিনীমতে নায়িকা এবং নায়ক আকাশে এক নদী তারা (মিল্কি ওয়ে/ আকাশগঙ্গা) দ্বারা পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন। ফলে তারাটির তাৎপর্য এখানে কেবল এর ঔজ্জ্বল্যে সীমাবদ্ধ নয়।
দিলাম ‘Vega of the Lyre in Fiction’ লিখে সার্চ। সাথে সাথে বেরিয়ে এলো আমার স্মৃতি থেকে একটি সবুজ পত্র! বইটির নাম Emily’s Quest! অবশেষে আমার quest সমাপ্ত হোল। বেঁচে থাকো বাবা গুগল! আমি কল্পনাও করতে পারিনা এর প্রতিষ্ঠাতারা কতখানি মেধা এবং অধ্যাবসায়ের অধিকারী, ভাবতেই পারিনা গুগলের আগের যুগে মানুষ কিভাবে তথ্যের অনুসন্ধান করত!
এই বিজয়ে আরেকটা ঘটনা মনে পড়ে গেল। আমার বিয়ের সময় আমার দাদা এক অদ্ভুত উপহার দিয়েছিলো। এক বিরাট বাক্স, এর ভেতর থেকে ক্রমান্বয়ে বের হতে রইলো আরো অনেক অনেকগুলো বাক্স। সবার শেষে বেরোল ছোট্ট একটা বাক্স। অনেক কুচি করা কাগজের মাঝে একটা বড় কাগজে লেখা, ‘যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন’। দাদা বলল, ‘দেখ তো বাক্সের ভেতর আর কিছু খুঁজে পাও কি’না!’ বাক্সের নীচে পাওয়া গেল একটা ল্যামিনেট করা চেক, ৫০,০০০ টাকা! দাদার অব্যবহিত ছোটবোন দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন প্রচন্ড মেধাবী, ব্যাক্তিত্বসম্পন্না। সবার ধারণা আমি দেখতে তাঁর মত। যদিও তিনি ছিলেন রত্ন, আমি ছাই, কিন্তু চেহারায় মিল থাকার ফলে দাদার ছিলো আমার প্রতি বিশেষ দুর্বলতা। পরিবারের বড় সন্তানের বড় সন্তান হওয়াটা এখানে বোনাস।
ঘটনাটা এজন্য বললাম, টাকাটা বড় ব্যাপার না, চেহারাটা পাওয়ার ব্যাপারেও আমার কোন হাত নেই, কিন্তু ভালোবাসা একটা অমূল্য সম্পদ, সেটা যেভাবেই পাওয়া যাক না কেন। এই বইটার নাম জেনে আমার কোন লাভক্ষতি নেই, কিন্তু স্মৃতির পেছনে পিছু ধাওয়া করে যে সময়টুকু কেটেছে সুখস্মৃতি রোমন্থন করে সেটাই অমূল্য। কারণ আজকের এই ঘটনাটাই হয়ে উঠবে আগামী দিনের জন্য আরেক সুখস্মৃতি!

 

সুস্থ শিশুর জন্য নিশ্চিত করুন নিরাপদ মাতৃত্ব


নারী সংবাদ


নিরাপদ মাতৃত্ব একজন নারীর অধিকার। সুস্থ সন্তানই আগামী দিনের সুস্থ নাগরিক। একটি সুস্থ শিশুর জন্মের জন্য নিশ্চিত করতে হবে নিরাপদ মাতৃত্ব।
একজন নারীর পূর্ণতা আসে মাতৃত্বে। মা সুস্থ থাকলে সন্তান সুস্থ থাকবে। মা হওয়া একজন নারীর জন্য, পরিবারের জন্য, এক সুখকর অনুভূতি। তবে মা হওয়া নারীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণও বটে। কারণ, একজন নারী যতবার গর্ভধারণ করে, ততবারই তার জীবনের ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। তাই, একজন মাকে সুস্থ সন্তান জন্ম দিতে হলে পরিবারের সবাইকে সচেতন ও দায়িত্বশীল হওয়া খুবই জরুরি।
অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের মতে নিরাপদ মাতৃত্ব ও সুস্থ সন্তান নিশ্চিত করার জন্য সুষম খাবার ও চিকিৎসার পাশাপাশি স্বাস্থ্য সচেতনতার গুরুত্বও অপরিসীম। এই সচেতনতা পরিবারের সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।
গর্ভবতী মায়ের প্রতি যথাযথ যতœ নিতে হবে। স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়িকে বুঝতে হবে যে, সুস্থ ও স্বাভাবিক সন্তান জন্ম দেয়া এবং ভবিষ্যৎ সন্তানের দায়ভার শুধু প্রসূতির ওপর এককভাবে চাপিয়ে দিলে চলবে না। একটি নতুন মুখের জন্য সবাইকে প্রস্তুতি নিতে হয় গর্ভাবস্থায়। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ এবং সুষম খাবার গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে।
স্বাস্থ্য কর্মী আবুল বাশার বলেন, গর্ভাবস্থায় নিজের সম্বন্ধে সচেতন না থাকা বা নিজের যথাযথ যতœ না নেয়ায় অনেক মায়েরই শরীরে প্রয়োজনীয় উপাদানের ঘাটতি দেখা দেয়। গর্ভাবস্থায় যদি মা অতিরিক্ত মোটা হতে থাকে এবং হাত-পায়ে পানি এসে যায়, ঘন ঘন মাথা ব্যথা হতে থাকে, রক্তচাপ বেড়ে যেতে থাকে। এ সময় দেরী না করে রোগীকে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
মাতৃত্ব নিরাপদ করার জন্য প্রথমে নারীকে শিক্ষিত করে তুলতে হবে। সে লক্ষেই সরকার জাতিকে ১শ’ ভাগ শিক্ষিত মা উপহার দেয়ার জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে মেয়েদের শিক্ষা উপ-বৃত্তি দেয়ার পাশাপাশি ঝরে পড়া শিশুদের স্কুলমুখী করতে সরকার বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য পুষ্টিকর খাবারের যোগান দেয়ার পাশাপাশি আগামী দিনের মা ও বর্তমান কিশোর-কিশোরীদেরও স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনতে হবে।
গ্রাম পর্যায়ে মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে সরকারি উদ্যোগে যে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, তা থেকে জনগণ স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলের গর্ভবতী মায়েদের কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়মিত চেক-আপ করাতে হবে।
বিশিষ্ট ধাত্রীবিদ্যা বিশেষজ্ঞ ডা. ইসমাত আরা বলেন, গর্ভাবস্থায় প্রতিটি মায়ের শরীরে প্রয়োজনীয় উপাদানের ঘাটতি দেখা দেয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়, প্রয়োজন হয় বাড়তি যতেœর। গর্ভাবস্থায় একজন মাকে প্রচুর বিশ্রাম নিতে হয় এসময় প্রসূতিকে পর্যাপ্ত সুষম খাবার দিতে হবে।
তিনি বলেন, গর্ভাবস্থায় রক্তক্ষরণ মোটেই স্বাভাবিক ঘটনা নয়। প্রথমত গর্ভাবস্থায় ৫ মাসের মধ্যে রক্তক্ষরণ হওয়ার অর্থ হলো গর্ভের ভ্রুণটি নষ্ট হয়ে যাওয়ার বা গর্ভপাত হবার আশংকা। রক্তক্ষরণ হবার পরপরই যদি ব্যথা শুরু হয়, তাহলে বুঝতে হবে যে, ভ্রুণটি আর গর্ভে স্বাভাবিক অবস্থায় থাকছে না, জরায়ু থেকে বেরিয়ে আসছে। এ অবস্থায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই রকম অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া খুবই জরুরি।
তিনি বলেন, গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি পরিমাণে সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। এ সময় ভারি কোন কাজ করা একেবারে নিষিদ্ধ। নিজের এবং গর্ভস্থ শিশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মাঝে মাঝেই চিকিৎসক বা স্বাস্থ্য কর্মীর কাছে নিয়ে যেতে হবে।
পরিবার থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে মাকে তার স্বাস্থ্যসেবা সম্বন্ধে সচেতন করে তুলতে হবে। নিয়মিত ও পরিমিত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। রঙীন এবং সবুজ শাক-সবজি তরি-তরকারি খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এ সময়ে সেবা, পরিচর্যা ও ভালবাসা পাবার অধিকার আছে প্রতিটি নারীর। এ অধিকার তাকে অবশ্যই দিতে হবে। তাদের এই অধিকার পূরণ হলে, আর অসচেতনতা দূর করে জটিলতার দ্রুত মোকাবেলা করতে পারলে, ঝুঁকিমুক্ত মাতৃত্ব সম্ভব।
সুত্রঃ বাসস।

 

M A R R I A G E (বিয়ে)


দাম্পত্য


বিয়ে হল সমাজের ভাষায় একজন নারী ও একজন পুরুষের একত্রে বসবাসের জন্য অর্থনৈতিক ও দৈহিক সুব্যবস্থাযুক্ত অনুমতি। কি কঠিন বলে তাই না, তবে বিয়েকে একটি সু-সংগঠিত স্কুল বলতে পারো। যেখানে দুজন ব্যক্তি নয় দুটি পরিবার প্রতিনিয়ত নতুনকে মেনে নেবার জন্য সব সময় নতুন নতুন কৌশল শেখবে। জীবনসঙ্গীরা নিজেদের সম্পর্ককে নতুন করে উন্নত আর জাগ্রত করার চেষ্টা অবিরত রাখবে। উভয়পক্ষকে মিলে মিশেই এই বন্ধন মুল রহস্য খুঁজে নেওয়ার জন্য মানুষ বিয়ে করে। বিশ্বাস রাখো।

M A R R I A G E অর্থই হল ‘বিবাহ’ বা বলতে পার ‘বিয়ে’। এখন আসো দেখি বিয়েকে কিভাবে বিশ্লেষণ করা যায়।

ভুলকে সন্মান কর
জীবনসাথীর প্রতি সন্মান দেখানো বলতে
আসলে বুঝায়, একজন মানুষের মধ্যে অনেক দূর্বলতা থাকে বা থাকবেই। আবার অক্ষমতা দেখা যাবে বা যায়। মানুষ সব কাজ করতে পারে না, এটায় সত্য। আবার অনেক কাজ করতে গিয়ে ভুল করে ফেলো তুমি নিজেও। সাথীর দূর্বলতা ও অক্ষমতার প্রতি সন্মান দেখাও।

জীবনসাথীকে মেনে নাও
মানুষের মাঝে থাকে একটু রুক্ষতা, গম্ভীরতা, কোমলতা, রাগ, স্নেহশীলতা, আন্তরিকতা এবং সহনশীল মন। জান! ছোট বেলায় থেকে কেউ একটু রাগী। কেউ একটু কোমল। কেউ চালাক বা কেউ তুলনা মুলক বোকা। এই সবকিছু মিলেই একজন মানুষের স্বভাব। তাই মেনে নেওয়ার ক্ষমতা এখনই তৈরি কর। কারণ যার যত সুন্দর এবং দ্রুত এই মেনে নেবার ক্ষমতা থাকবে সে তত সুন্দর করে জীবনকে উপভোগ করবে।

পরস্পরের প্রয়োজন বুঝ
দরদ দিয়ে অপরের চাওয়া বুঝার চেষ্টা কর। ভালবেসে অপরের জন্য একটু হাসি দেওয়া। এবং ছোটখাটো সব ধরনের কাজ আন্তরিকতা ও ভালবেসে কর।

সমাধান চেষ্টা কর
একসাথে কিছুটা সময় বা পথ হাটার জন্য নিজেদের মাঝে অক্ষমতা আর দূর্বলতার জন্য সমস্যার সৃষ্টি হবেই। তাই কথা বলে। শেয়ার করে। সমস্যার সুন্দর সমাধানে দিকে হাটার চেষ্টা তোমাকে করতে হবে। যাতে অন্তত রাতে সব কিছু মিটিয়ে আরামের ঘুম দিতে পার।

ভালবাসার তীব্রতা মেপো না
যদি ভালবাসার তীব্রতা কমে গেছে বলে মনে হয় তোমার। আর তুমি দেখছো যে তুমি সেভাবে তাকে ভালবাসতে পারছো না,তাহলে এটাতেই অভ্যস্ত হয়ে যাও। জীবনে তো অল্প সময়ের জন্য দেখতে দেখতে সময় কেটে যাবে।

ভালবাসো সহজভাবে
ভালবাসাকে এত সহজলভ্য কর। চাইলেই যেন তুমি ভালবাসাময় পরিবেশ বানিয়ে ফেলতে পারো। যেখানে আত্মা, দেহ, মন এবং হৃদয় একত্রে থাকবে নিজেদের।

মতামত বিনিময় কর
মনে রাখতে হবে বিয়ের অন্যতম সুন্দর এবং মূল্যবান বিষয় হল ‘দেওয়া বা বিনিময়’। আপনার পক্ষ থেকে সবটুকু চেষ্টা মাধ্যমে মূল্যবান সময়, শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, ভালবাসা অঢেল বিলি করুন।

হাটুন কল্যাণের পথে
সৃষ্টিকর্তা সব আমাদেরকে খুব চমৎকার হৃদয় দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং দুইজন দু জনার সাহায্যকারী, দুই জনই ঘনিষ্ঠ বন্ধু, যারা দুজনে কল্যাণকর বন্ধন গড়ে তোলার জন্য সবসময় সর্তকভাবে হাটতে ভালবাসে।

বিয়ে হল পরিবার

এই বিষয়টা খুবই সহজ একটা শব্দ ‘পরিবার’! রাষ্ট্রে সবচেয়ে সুন্দর সংগঠন পরিবার। বউ ও জামাই মিলে গড়ে উঠে একটি পরিবার। পরস্পর একত্রে হল একটি রাষ্ট্র।

বিয়ে সম্পর্কিত অজস্র পোস্ট, বিয়ে হচ্ছে পৃথিবীতে নতুন এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি বন্ধন। তাই আমাদের সঠিক জ্ঞান নিয়ে হাটা শিখতে হবে।

মুল সুত্রঃ Elika maholy
অনুবাদঃ ফাতেমা শাহরিন।

 

মহেশপুরে সজিব ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি মায়ের মৃত্যু

 


নারী সংবাদ


ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ভৈরবা বাজারের সজিব প্রাইভেট হাসপাতাল এন্ড ক্লিনিকে ভুল অপারেশনে এক প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হয়েছে। রোগীর স্বজনরা জানান, অদক্ষ নার্স ও হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে ভুল অপারেশনের কারণে রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

বাঁশবাড়ীয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক জানান, বৃহস্পতিবার রাতে ভৈরবার সজিব প্রাইভেট হাসপাতাল এন্ড ক্লিনিকে এক প্রসূতির মায়ের মৃত্যু হয়েছে। নিহত এই প্রসূতি মায়ের নাম মোসুমী খাতুন। ডেলিভারী করানোর সময় তার মৃত্যু হয় বলে জানা যায়।

সজীব প্রাইভেট হাসপাতাল এন্ড ক্লিনিকের মালিক সামাউল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সামন্তা গোপালপুর গ্রামের আল-আমিনের স্ত্রী মৌসুমী খাতুনকে সিজার আপারেশন করানোর জন্য আমার ক্লিনিকে নিয়ে আসে। এরপর তাকে ভর্তি করে একজন নার্সের মাধ্যমে নরমাল ডেলিভারী করানোর চেষ্টা করা হয়। তাতে ব্যর্থ হলে রাত ৮টার দিকে ডাঃ সোহেল রানা মৌসুমী খাতুনের সিজার অপারেশন করেন। রাত ৯টার দিকে মৌসুমী খাতুনের অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে যশোরে পাঠানো হয়। কিন্তু রাস্তার মধ্যেই মৌসুমী খাতুনের মৃত্যু হয়, তবে প্রসূতির সন্তান জীবিত আছে।

নিহত প্রসূতি মৌসুমী খাতুনের স্বজনরা জানান, ক্লিনিকে ভর্তি হওয়ার পর অবস্থা খারাপ হলে আমরা মৌসুমীকে যশোরে নিয়ে যেতে চাই। কিন্তু ক্লিনিক মালিক তাতে বাধা দিয়ে অদক্ষ এক মহিলা দিয়ে ডেলিভারী করানোর চেষ্টা করে। তারপর সোহেল নামক একজনকে দিয়ে সিজার অপরেশন করানো হয়। এতে প্রসূতির অবস্থা আরো খারাপ হলে ক্লিনিক মালিক তাড়াতাড়ি যশোর নিয়ে যেতে বলে। যশোর নেয়ার পথে রাস্তায় তার মৃত্যু হয়।

এদিকে যে ডাক্তার দিয়ে সিজার করানো হয়েছে সেই ডাক্তারের ফোন নাম্বার চাইলে ক্লিনিক মালিক সামাউল তা দেননি বলে জানান তারা।

মহেশপুর থানার ওসি রাশেদুল আলম জানান, আমি রোগী মৃত্যুর ঘটনাটি লোক মুখে শুনেছি। ডাক্তার সোহেলের কুকীর্তি সম্বন্ধে আমি মোড়েলগঞ্জ থানায় থাকা অবস্থায় অবগত। তার বাড়ি বাগেরহাট। সে নেশাগ্রস্থ অবস্থায় রোগী অপারেশন করে মর্মে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আসতো। প্রসূতির মৃত্যুতে থানায় এখনো কোনো অভিযোগ হয়নি। সুত্র: নয়াদিগন্ত

 

টাইম ম্যানেজমেন্ট


মেইক ইউরসেলফ


সময়

‘সময় এবং স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না।’ সময় ম্যানেজমেন্ট টার্ম দিয়ে বুঝানো হয় যে, সুনির্দিষ্ট সময়ে কাজের কার্যকারিতা, নিজের দক্ষতা এবং প্রতিটি কাজের তাৎপরতা বৃদ্ধি করার জন্য সময় প্রতি সচেতন হয়ে সঠিক সময়ে কাজ সম্পাদন। মনে রাখবেন, সময়ের ব্যবহার সঠিকভাবে না করলে জীবনে চলার পথে নানানরকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

কাজের তালিকা করুণ
প্রথমে আপনাকে জানতে চাইতে হবে, সারাদিনে আপনি কী কী কাজ করেন।
সকাল, দুপুর, বিকাল & সন্ধ্যায়।

বেশি সময়
খেয়াল করুন দৈনন্দিন কী কী কাজের জন্য বেশির ভাগ সময় চলে যাচ্ছে। উদাহরণ: ফেসবুক ও ইউটিউব ভিডিও দেখতে কয় ঘন্টা।

পদক্ষেপ
আপনার যে প্রতিদিন কিছু সময় নষ্ট হচ্ছে সুতরাং সময় বাঁচাতে আপনি কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন এখন পর্যন্ত।

নিজেই কলম কাগজ নিয়ে বসুন,

১.ঘুম দৈনিক কত ঘন্টা,
২.গোসল,
৩.সাজুগুজু কত ঘন্টা,
৪.রান্না ও খাওয়া ও ক্লিনিং কত ঘন্টা,
৫.কাজ কত ঘন্টা,
৬.ব্রাউজিং, সোশ্যালাইজিং ইত্যাদি ইত্যাদি..

একসপ্তাহের একটি চিত্র নিজের সামনে তুলে ধরুন। সব কিছু মিলিয়ে মোট কত ঘন্টা হয় সেটা যোগ করে। সপ্তাহের মোট যে ১৬৮ ঘন্টা – তার থেকে বিয়োগ করতে হবে।

সময় ধরে লিস্ট করার উদ্দেশ্য
উদ্দেশ্য হচ্ছে হিসাব কষে দেখানো, যে কোন কাজ কত ঘন্টা সময় ব্যয় করবেন। পড়াশুনা করার জন্য বা যে কাজ করা ভীষণ দরকার তার জন্য কত সময় ব্যয় হচ্ছে।

হারিয়ে যাওয়া সময়কে ধরতে একটা সপ্তাহ একটু ট্র্যাক করুন,

সময় জোরা লাগান
কী কী কাজ করছেন।
জিমেইলে ত একটা ক্যালেন্ডার ফ্রি ফ্রি আছেই। সেখানে লিখতে থাকুন পুরো এক সপ্তাহ প্রতি ঘন্টার হিসেব। দেখবেন একটা প্যাটার্ণ খুঁজে পাচ্ছেন। তখন বুঝতে সুবিধা হবে কোথা থেকে সময় কেটে কোথায় জোড়া লাগাতে হবে।

টাইম ম্যানেজমেন্ট অপরিহার্য
এখন কীভাবে সময় কাটাচ্ছি,
আর কীভাবে কাটানো উচিৎ – সেটার মধ্যে সামঞ্জস্য করাই টাইম ম্যানেজমেন্ট। মুসলিমদের জন্য ত টাইম ম্যানেজমেন্ট অপরিহার্য। সূরা আসরে ত আল্লাহ বলেই দিয়েছেন টাইম ম্যানেজমেন্ট না জানা সব মানুষ বিপদের মধ্যে আছে।

মাল্টিটাস্কিং
মাল্টিটাস্কিং (একই সাথে কয়েকটা কাজ করা।) কিন্তু মাল্টিটাস্কিং করা যায় একটা হাল্কা কাজের সাথে একটা প্রিয় কাজকে জোড়া লাগিয়ে।

কঠিন কাজ
সমান গুরুত্বপূর্ণ দু’টো কাজ থাকলে, তাহলে কঠিন আর করতে ভাল লাগেনা এমন কাজটা আগে করা।

রেফারেন্স : গুগল & নুসরাত রহমান লেখা থেকে।

 

চাকরি-বিয়ের প্রলোভন, অতঃপর আটকে গণধর্ষণ


নারী সংবাদ


মোবাইল ফোনে অপরিচিত নাম্বারে পরিচয়। এরপর কথা বলা। ধীরে ধীরে তা গড়িয়েছে প্রেমের সম্পর্কে। ছয় মাসের মাথায় মা-বাবার সাথে দেখা করার প্রলোভনে ফেনীতে ডেকে এনে তাকে গণধর্ষণ করে কয়েকজন বখাটে। গতকাল সকালে শহরের রামপুর সৈয়দ বাড়ি সড়কের বাসা থেকে তিন মাস পর রাজধানীর কলেজপড়–য়া ওই তরুণীকে উদ্ধারের পর চাঞ্চল্যকর এ তথ্য বেরিয়ে আসে। এ সময় গণধর্ষণের শিকার আরো দুই নারীকে উদ্ধার করা হয়। তাদের লোভনীয় বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখানো হয়। এ ঘটনায় জড়িত প্রতারক প্রেমিকসহ তিন বখাটেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

সূত্র জানায়, রাজধানীর মিরপুর এলাকার ১০ নম্বর মোল্লা ভিলার বাসিন্দা মো: মোজাম্মেল হকের কলেজপড়–য়া মেয়ের সাথে পরিচয় হয় রামপুরের সৈয়দ বাড়ি লেনের মো: কাশেম কটেজের বাসিন্দা মো: কাশেমের ছেলে কাওসার বিন কাশেম নিলয়ের মোবাইল ফোনে পরিচয় হয়। বিগত বছরের অক্টোবরে ওই তরুণী পরিবারের সদস্যদের সাথে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে যায়। কক্সবাজার থেকে ঢাকায় ফেরার পথে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে মা-বাবার সাথে দেখা করবে বলে সুকৌশলে মহিপালে তাকে নামানো হয়। এরপর সৈয়দ বাড়ির কাশেম কটেজ ১২/এ নিয়ে মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। বাসায় প্রবেশের পরই চক্ষু ছানাবড়া ওই তরুণীর। বাসায় আটক আরো দুই নারী। তারা পরস্পর জানতে পারে লোভনীয় অফারে চাকরি দেয়ার প্রলোভনে তাদের আনা হয়। এ ঘটনায় ওই তরুণীর পরিবারের পক্ষ থেকে মিরপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। এরপর তাদের ওপর নেমে আসে পাশবিক নির্যাতনের খড়গ।

বন্ধু-বান্ধবদের বাসায় এনে প্রতিদিনই দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা হতো। প্রতিবেশীরা টের পেয়ে খবর দিলে শহর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই শাহজাহান মিয়া তালা ভেঙে হানা দেয়। জিম্মি দশা থেকে তিন নারীকে উদ্ধার ও নিলয় ছাড়াও ফেনী সদর উপজেলার মধ্যম কাছাড় গ্রামের আবু ইউছুপের ছেলে সায়েম, সোনাগাজী উপজেলার বগাদানা ইউনিয়নের ব্রামনী বাজার গ্রামের আলী ফরহাজী বাড়ির আবুল কালামের ছেলে আলিফুল ইসলাম আরমানকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় ওই কলেজ ছাত্রী বাদি হয়ে ফেনী মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

ফেনী মডেল থানার ওসি মো: আবুল কালাম আজাদ তিন তরুণীকে উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, গ্রেফতারকৃত তিন বখাটেকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

জোনাক নগরের আঙিনায়…৩


আফরোজা হাসান


আপনি সত্যি সত্যিই এমন করবেন আমার সাথে?

যায়েদ হেসে বলল, আচ্ছা চলো তোমাকে আমার আরো এক ক্লাসমেট দম্পতির গল্প শোনাই। ওরাও পরিবারের অমতে বিয়ে করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওদের বিয়েটা টেকেনি। মজার ব্যাপার হচ্ছে, যেই পরিবারের অমতে ওরা বিয়ে করেছিল সেই পরিবারের কারণেই আবার বিয়েটা ভেঙে দিয়েছিল। ওদের ভালোবাসার কলোকাকলি দাম্পত্য কলহে রূপান্তরিত হয়েছিল একে অন্যের পরিবারের প্রতি বিদ্বেষ আর নিজ নিজ পরিবারের প্রতি সন্তোষের কারণে। পরিবারের কথা উঠলেই দু’জন নিজ নিজ পরিবারের পক্ষে সুপারিশ করতো এবং একে অপরের পরিবারকে দোষারোপ করতো। ফ্যামেলি ইগো যাকে বলে। অর্থাৎ, তোমার পরিবারের চেয়ে কিসে কম আমার পরিবার? তোমার চেয়ে কি আমার যোগ্যতা কোনদিন দিয়ে কম? এই ধরণের মানসিক দৈন্যতায় ভুগতো দুজন। যা ধীরে ধীরে ঘুণ পোকার মত ক্ষয় করে দিয়েছিল সম্পর্কের মধ্যে বিরাজমান মিষ্টতা ও স্বিগ্ধতা। পরিণতিতে দুজনার দুটি পথ দুটি দিকে গেল বেঁকে। গত কয়েক বছরে এমন অসংখ্য কেস এসেছে যেখানে স্বামী-স্ত্রীর একে অন্যের প্রতি ভালোবাসার কোন কমতি ছিল না। যাদের মধ্যে বেশ কিছু দম্পতি একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান, বিশ্বাসও লালন করতো মনে। একে অপরকে ভালো মানুষ স্বীকৃতিও দিতো। কিন্তু তবুও দু’জনের মধ্যে মনোমালিন্য ও ঝগড়া লেগেই থাকতো। সেই ঝগড়ার বিষয় ছিল দু’জনের পরিবার। কার পরিবার বেশি খারাপ কিংবা দ্বায়িত্বহীন এটা প্রমাণ করাটাই যেন সার্থকতা। একে অন্যের পরিবার দ্বারা কে কতটা বেশি কষ্ট পেয়েছে সেটা খুঁজে বের করাটা পার্ট টাইম জবের মত ছিল তাদের কাছে। যার সেলারি হিসেবে তারা লাভ করতো মানসিক অশান্তি।

নূরি বলল, মানুষ কেন জেনে বুঝেও ছোট থেকে ছোট কারণকে ইস্যু করে নিজেদের জীবনের এভাবে অশান্তি ডেকে আনে?

এই প্রশ্নটা নিয়ে আমিও প্রায়ই ভাবি। মানুষ কেন এত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কারণে নিজের জীবনের শান্তি ও স্বস্থিকে নষ্ট করে অবলীলায়?! পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কারণে কেন মানুষ নিজের সুখের সংসারে অশান্তি ডেকে আনে?! কেন মনটাকে একটু বড়, একটু উদার করতে পারে না?! কেন সবসময় শুধু অন্যের দোষটাকেই দেখে?! কেন ক্ষমা করে দিতে বা ভুলে যেতে পারে না অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলো?! কেন সবসময় নিজেকে সঠিক আর অন্যেকে বেঠিক মনে করে?! কেন ভাবে না যে যদি সংসারের সুখের কথা চিন্তা করে ধৈর্য্য ধারণ করে তাহলে এর কল্ল্যাণময়তা তাকেই ঘিরে আবর্তিত হবে? এমন আরো অসংখ্য কেন ঘুরতে থাকে মাথায়। মাঝে মাঝে কিছু কিছু ক্যাপলকে দেখে মনেহয় সংসার না বরং কোন একটা প্রতিযোগিতা চলছে। পরিবারের দোহাই দিয়ে কে কাকে হারাতে পারবে বা দাবিয়ে রাখতে পারবে সেই প্রতিযোগিতা। এতে তারা এতটাই হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়ে যে বুঝিতেই পারে না জিত একজনের হলেও হার মূলত দু’জনেরই হয় এই প্রতিযোগিতাতে।
কিন্তু এর সমাধান কি?
যায়েদ হেসে বলল, তুমি নিশ্চয়ই জানো সবজি রান্নার ব্যাপারে আমার এলার্জি আছে। আমার কথা হচ্ছে তেল, মশলা সবকিছু দিয়ে রান্না করবো। কিন্তু কিছুতেই সবজির রঙ চেঞ্জ হতে পারবে না। রান্না করার পরও প্রতিটা সবজিতে নিজ নিজ রঙ ঠিক থাকবে। এরজন্য অনেক রাঁধুনির সাথে কথা বলেছি, নিজে বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করেছি। শেষপর্যন্ত এখন রান্নার পরও সবজির রঙ মোটামুটি ঠিক থাকে আলহামদুলিল্লাহ। এই যেমন এখন আমরা বাপীর জন্য মিক্সড সবজি রান্না করলাম। দেখো আগুনের তাপে তেল, মসলা, পানি ইত্যাদি দিয়ে সেদ্ধ করার পরও প্রতিটি সবজির আলাদা রঙ একদম ঠিক আছে আলহামদুলিল্লাহ। এর কারণ সবজির রঙ যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য আমি অনেক চেষ্টা ও সাধনা করেছি। এই বিষয়ে যারা পারদর্শী তাদের সাথে আলোচনা করেছি, পরামর্শ নিয়েছি। সবকিছু মিলিয়ে আমি এই যোগ্যতাটুকু অর্জন করেছি আলহামদুলিল্লাহ। এখন তুমি জীবন বলো, পারিবারিক জীবন বলো কিংবা দাম্পত্য জীবন। দুঃখ-কষ্ট, হতাশা-নিরাশা, বেদনা অপ্রাপ্তি আসবেই, থাকবেই। এসবের প্রভাব থেকে নিজেকে, নিজের মনকে মুক্ত রাখতে চাইলে চেষ্টা ও সাধনার প্রয়োজন। প্রয়োজন জীবন সম্পর্কে অভিজ্ঞ ও জ্ঞানী কারো সাহচর্য ও পরামর্শ। এবং প্রয়োজন নিরলস ভাবে লেগে থাকার। এভাবেই আসলে ধীরে ধীরে আয়ত্তে আসে কোন বিশেষ যোগ্যতা। তবে যে কোন ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আল্লাহর উপর ভরসা। কেননা আল্লাহ বলেছেন“ যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন।”
হুম, সমস্যা বা বিপদে মানুষ এতটাই অস্থির হয়ে যায় যে, আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতেই ভুলে যায়।
আসলে নিজের মনের চাওয়া-পাওয়ার বিপরীত কিছু হলে, প্রতিকূল পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে আমরা মানসিক ভাবে বিক্ষিপ্ত ও এলোমেলো হয়ে পড়বো এটাই স্বাভাবিক। যখন বিরূপ বা নেতিবাচকতা ঘিরে ধরবে বিরক্তি, রাগ, হতাশা মনকে আঁকড়ে ধরতে চাইবে এটাও স্বাভাবিক। নির্ভরতার আশ্রয় পরিবারই যখন জীবনের অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে তখন হাল ছেড়ে দিতে চাইতেই পারে কেউ। এই সব অবস্থা থেকে মুক্তি পাবার একমাত্র পথ হচ্ছে একমাত্র আল্লাহর উপরে ভরসা করা, সাহায্য প্রার্থনা করা। কিন্তু মানুষ বেশির ভাগ সময়ই লেগে থাকে অন্য মানুষের পেছনে। স্ত্রী স্বামীকে বলে সব ঠিক করে দাও। স্বামী স্ত্রীর কাছে দাবী করে শান্তি প্রতিষ্ঠার। একে অন্যের কাছে চাইতে গিয়ে নিজেদের করণীয় তো ভুলে যায়ই, সাথে সাথে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতেও ভুলে যায়। যারফলে মন অতৃপ্ত ও অশান্তির বেড়াজাল ছিঁড়ে বেড়োতে পারে না। তুমি সমাধান কি জিজ্ঞেস করেছিলে।
হুম!
যায়েদ হেসে বলল, একটা বাণী মনে পড়ে গেলো “কিছু কিছু প্রশ্ন অনেক কঠিন কিন্তু তার উত্তরটা খুবই সহজ।” ঠিক তেমনই মনেহয় কিছু কিছু সমস্যা খুব জটিল কিন্তু তার সমাধানটা খুবই সহজ। দাম্পত্য কলহের কারণ যদি পরিবার হয়, একটি সুন্দর সম্পর্ক যদি পরিবারের কারণে টানাপোড়নের স্বীকার হয়, তাহলে বিবেচনা করে দেখতে হবে কে সঠিক। আর সঠিক বেঠিকের মানদন্ড হিসেবে শরীয়ত তো আছেই। মানুষ যখন আল্লাহর বিধান মেনে চলে তখন তাদের মনের আকার এমনিতেই বড় হয়ে যায়। তারা নিজ নিজ স্বার্থের গন্ডিকে পেরিয়ে স্বাধীন ভাবে চিন্তা করতে শেখে। সর্বাবস্থায় আমিই সঠিক এই ক্ষুদ্র ও কলুষিত চিন্তা থেকে বেড়িয়ে আসতে পারে। আসলে দাম্পত্য সম্পর্কটাকে হওয়া উচিত সকল প্রকার প্রভাব মুক্ত। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এই বোঝাপড়া টুকুন যদি থাকে যে একমাত্র শরীয়ত ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোন কিছু বা অন্য কেউ তাদের জীবনের করণীয়-বর্জনীয়র মানদন্ড হবে না। তাহলে পরিবারের কারণে দাম্পত্য কলহ মুক্ত থাকা সম্ভব হয়। আরেকটা বোঝাপড়া অবশ্যই থাকা উচিত স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কেউ বা কোন কিছুই যেন তাদের মনে একে অপরের প্রতি বিদ্বেষের বীজ বপন করে দিতে না পারে। পরিবারকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে যেন আত্মকেন্দ্রিক না হয়ে যায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। এখন তুমি আমার একটা কথা মন দিয়ে শোনো।
জ্বি বলুন।
রান্না করতে আমি খুব বেশি পছন্দ করি। তাই তুমি যদি দাম্পত্য কলহ এড়াতে চাও কখনোই এই আনন্দময় কাজটি করার সময় তোমার ঝুড়ি থেকে এইসব সমস্যা বের করবে না। ক্লিয়ার?
নুরি হেসে বলল, অল ক্লিয়ার স্যার।
যায়েদ হেসে বলল, তাহলে সমস্যার ঝুড়ি বন্ধ। গত সপ্তাহে যে তোমাকে আমি এত সময় লাগিয়ে ভেজিটেবল স্টু বানানো শেখালাম। আজ তাহলে পরীক্ষা হয়ে যাক কেমন স্টুডেন্ট তুমি।
ওক্কে স্যার। বলে হাসি মুখে নূরি ভেজিটেবল স্টু বানানোতে মনোযোগ দিলো।

চলবে…

 

শীলা বিয়ের পর থেকে শ্বশুড় বাড়ীতে থাকে

কানিজ ফাতিমা


শীলা বিয়ের পর থেকে শ্বশুড় বাড়ীতে থাকে ৷ শীলার শ্বাশুড়ী জাহানারা বেগম ৷ শীলা বা জাহানারা বেগম কেউই খারাপ মানুষ না ৷ কিন্তু তাদের সম্পর্ক খুব একটা মধুর না ৷ জাহানারা বেগম গোছানো স্বভাবের ৷ সবকিছু, বিশেষ করে রান্না ঘরের জিনিস পত্র তার গোছানো থাকা চাই ৷ রান্না ঘরের প্রত্যেকটি জিনিস যত্ন করে জায়গামত রাখা, সবকিছু ঝকঝকে তকতকে করে রাখার ব্যাপারে তিনি খুবই সচেতন৷ কেউ এগুলো তার মত গুছিয়ে ব্যবহার করতে না পারলে তিনি খুবই বিরক্ত বোধ করেন এবং অভিযোগ করেন৷ অন্যদিকে শীলা স্বভাবে ঠিক উল্টো৷ সে দ্রুত কাজ করে, একেবারেই গোছালো না এবং তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে জিনিসপত্রের খুব একটা যত্ন নিতে পারে না৷ ফলে রান্নাঘর ব্যবহার করে সে প্রায়ই এটাকে এলোমেলো করে রাখে৷ তার এ স্বভাব নিয়ে জাহানারা বেগম প্রায়ই অভিযোগ তোলেন ৷ শীলা চেষ্টা করে কিছুটা গুছিয়ে কাজ করতে৷ কিন্তু সে খুব একটা সফল হয়না ৷তাছাড়া শীলা চাকুরী করে বলে তার পক্ষে রান্না ঘরে খুব বেশী সময় দেয়া সম্ভব না ৷ফলে বউ-শ্বাশুড়ী সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে৷ জাহানারা বেগমের অভিযোগ, “বউ একেবারেই কাজের না ৷ খুবই অগোছালো, এলোমেলো ৷পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না ৷” শীলার অভিযোগ, ” শাশুড়ী সকাল-বিকাল তার পিছনে লেগেই থাকে, সবকিছু নিয়ে খ্যাচ খ্যাচ করে, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতেই থাকে৷” এর সঙ্গে পর্যায়ক্রমে যুক্ত হয় শীলার মা ও ননদ৷ শীলার মা দুঃখ করে বলে, ” শ্বাশুড়ী টা আমার মেয়েটাকে শুধু জ্বালায়”৷ ননদ বলে, “শীলা আমার মায়ের বদনাম করে বেড়ায়৷”

এ ঘটনায় আমরা যা দেখতে পাই তাহলো, শীলা ও জাহানারা বেগম দু’জনের কারো চাওয়াই (expectation) অযৌক্তিক না এবং দু’জনের অভিযোগই সত্যি৷ শ্বাশুড়ী চাচ্ছেন বউ তার মত গুছিয়ে কাজ করুক৷ অন্যদিকে, বউ চাচ্ছে শ্বাশুড়ী তার বিরুদ্ধে সকাল বিকাল অভিযোগ করা বন্ধ করুক ৷ এক্ষেত্রে দু’জনই ঠিক ৷ তাহলে সমস্যা কোথায় ? সমাধানই বা কি?

সমস্যাটা হলো দু’জনের দু’জনকে বোঝায়৷ জাহানারা বেগম ও শীলা দু’জন ভিন্ন প্রকৃতির মানুষ৷ তাদের Personality type ভিন্ন ৷ তারা একজন আরেকজনের মত হতে পারবে না ৷ জাহানারা বেগম যদি মনে করেন শীলাকে তার মত হতে হবে তবে তিনি ভুল করছেন৷ মানুষ তার Personality type পুরোপুরি বদলাতে পারে না ৷ তাই জাহানারা বেগমকে শীলার অগোছালো স্বভাবকে মেনে নিতে হবে এবং এ নিয়ে অভিযোগ করা বন্ধ করতে হবে ৷ অভিযোগ বন্ধ করে শীলাকে ধীরে ধীরে কাজের পদ্ধতি দেখিয়ে দিলে long term এ শীলার এ যোগ্যতা কিছুটা বাড়বে (skill development)৷ কিন্তু অভিযোগ (বা nag) সম্পর্কের অবনতি ছাড়া আর কিছুই ঘটাবে না ৷

একই সাথে শীলাকেও স্বীকার করতে হবে তার শ্বাশুড়ীর একটি ভালো গুন বা (Skill) আছে৷ যতটা সম্ভব এ গুনটির অনুকরণ করা তার নিজের জন্যই ভালো ৷ সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো তাদের দু’জনকেই বুঝতে হবে অন্যজন ‘খারাপ মানুষ’ না, সে তার থেকে ‘ভিন্ন প্রকৃতির’ মানুষ৷ আল্লাহ তা’আলাই মানুষকে ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির করে সৃষ্টি করেছেন৷

এর পরও যদি দু’জন দু’জনের এই ভিন্নতা মেনে নিতে না পারে তবে আলাদা থাকাই তাদের জন্য ভালো৷ একসাথে থেকে পরস্পর সম্পর্কে বিরক্ত হওয়ার থেকে ভিন্ন থেকে পারস্পরিক সম্মান বজায় রাখা কল্যানকর ৷

 

যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীর শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন


নারী সংবাদ


মাথাসহ সারা শরীরে ব্যান্ডেজ। নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তৃতীয় তলার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিছানায় শুয়ে পোড়া শরীরের যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। বিড়বিড় করে বলছিলেন, ‘আমি মরে যাব, আমার শিশুসন্তানদের তোমরা যত্ন নিও।’ গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে গৃহবধূ রেনজিনা বেগম যখন অশ্রুভেজা চোখে এমন আকুতি জানাচ্ছিলেন, তখন হাসপাতালের পরিবেশ নীরব হয়ে উঠেছিল। আশপাশের যারা এ দৃশ্যের সাক্ষী হয়েছিলেন, সবার চোখ গড়িয়ে পড়ছিল অশ্রু। যৌতুকের দাবিতে স্বামী হাফেজ শাহাদাত হোসেন আফসার সোমবার ভোরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিলে গতকাল সকালে রেনজিনাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ ঘটনায় গৃহবধূর বড় ভাই তসলিম উদ্দিন সন্দ্বীপ থানায় হাফেজ আফসারের বিরুদ্ধে সোমবার মামলা করেন। পুলিশ রাতেই তাকে গ্রেফতার করে। এর আগে

স্থানীয়রা আফসারকে গণধোলাই দেয়। রেনজিনা স্বামীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে বলেছেন, দেশে যেন কোনো নারীর এমন পরিণতি না হয়।

হাতিয়া উপজেলার জাহাজমারা ইউনিয়নের পূর্ব বিরবিরি গ্রামের নুর রহমানের মেয়ে রেনজিনা বেগম ২০১৩ সালে হাতিয়া দ্বীপ সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ওই বছরের ১৭ ডিসেম্বর রেনজিনার সঙ্গে হাতিয়ার পার্শ্ববর্তী উপজেলা চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের মুসাপুর গ্রামের সিদ্দিক টেন্ডরের ছেলে হাফেজ শাহাদাত হোসেন আফসারের বিয়ে হয়। তাদের আরাফাত সিদ্দিক বুখারী (৫), খাদিজা নাহার হাফসা (৩) ও আবদুল্লাহ সিদ্দিক তিরমিজি (৬ মাস) নামে সন্তান রয়েছে।

গৃহবধূর বড় ভাই দিদার উদ্দিন ও রহমত উল্যাহ সমকালকে বলেন, বিয়ের পর আফসার সৌদি আরব, কাতার ও আবুধাবি ছিলেন। সেখানে তিনি বিভিন্ন মসজিদে ইমামতি করেন। প্রবাসে যাওয়ার সময় তাকে দফায় দফায় রেনজিনার পরিবার আর্থিক সহযোগিতা করে। ২০১৬ সালে দেশে ফিরে এসে তিনি নোয়াখালীর কবিরহাটে একটি মসজিদে ইমামতি শুরু করেন। এ সময় আফসার রেনজিনার কাছে আবার যৌতুক দাবি করেন। রেনজিনা এর প্রতিবাদ করে অপারগতা প্রকাশ করলে তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু হয়।

রেনজিনা ও তার পরিবার সূত্রে জানা যায়, তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে আফসার প্রায়ই তাকে নির্যাতন করতেন। পৌষ মাসের শীতে তাকে কম্বলও গায়ে দিতে দিতেন না। গত রোববার সকালে আফসার রেনজিনাকে বাবার বাড়ি থেকে কম্বল ও টাকা আনার জন্য চাপ দেন। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে ঝগড়া হয়। এরপর রাতে খাওয়া শেষে রেনজিনা তিন সন্তান নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। সোমবার ভোর ৪টার দিকে আফসার তাকে ডেকে তোলেন এবং আগুন পোহানোর প্রস্তাব দেন। রেনজিনা এ প্রস্তাবে অসম্মতি জানিয়ে ফের ঘুমাতে যান। এ সময় আফসার তাকে মারধর শুরু করেন। এক পর্যায়ে তাকে একটি রুমে নিয়ে আটকে রাখেন। কিছুক্ষণ পর বোতলভর্তি পেট্রোল এনে রেনজিনার মাথা ও শরীরে ঢেলে দিয়ে অগ্নিসংযোগ করেন। এ সময় তার চিৎকারে প্রতিবেশী কয়েকজন ঘটনাস্থলে এসে পানি ঢেলে আগুন নেভায়। ততক্ষণে রেনজিনার মাথা, চোখ, গলা, বুক, পিঠ ও বাঁ হাত সম্পূর্ণ দগ্ধ হয়ে যায়।

প্রতিবেশীরা সকালেই তাকে সন্দ্বীপ মেডিকেলে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাবার পরিবারকে খবর দেয়। খবর পেয়ে ভাই দিদার উদ্দিন ও রহমত উল্যাহ তাকে মঙ্গলবার সকালে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ঢাকায় পাঠানো হয়।

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ও মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহাবুবুল আলম চৌধুরী সমকালকে বলেন, ওই গৃহবধূর পুরো মাথা, একটি হাত, পিঠ ও বুক দগ্ধ হয়েছে। রোগীর অবস্থা ভালো নয় বলে তিনি জানান। সুত্র: সমকাল।

 

‘ব্যাকবেঞ্চার সবুজ’


মেহেদী আরিফ


আমি আর সবুজ, আমরা একই ক্লাসে পড়তাম। সবুজ খুব দুরন্ত ছিল, তেমন পড়া পারতো না। ক্লাসের সবচেয়ে দুষ্ট ছেলে হিসেবে ওর সুনাম ছিল। মেধাবী ছিল সে, কিন্তু পড়া করে ক্লাসে আসতো না। ওকে দেখলেই ক্লাসের সব ছেলেমেয়েরা অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিতো, কেউ পাশে বসতে নিত না। এতে ওর অবশ্য মন খারাপ হতো না, সয়েই গিয়েছিল একরকম। আমি ক্লাসে ফাস্ট বয় ছিলাম। বোধকরি সব শিক্ষকরা আমাকে অনেক বেশি আদর করতেন। কিন্তু সবুজের সাথে সখ্যতা তারা মেনে নিতে পারেন নি। আমাকে সবসময় হেড স্যার কাদের মিয়া সংকেত করে দিতেন যাতে আমি সবুজের সাথে না মিশি। কিন্তু কে শোনে কার কথা!
আমার সাথে সবুজের সখ্যতা কিভাবে হয়েছিল তার একটা ছোট্ট ইতিহাস আছে। আমি তখন ফাইভে পড়ি। সাধারণত স্কুল ছুটির পর স্কুলের পাশের কালভার্টের পাশে দাঁড়িয়ে অন্যদের মাছ ধরা দেখতাম। কত মাছ! পুটি, টেংরা, শোল, বাইন, চিংড়ি, কৈ। আমরা তন্ময় হয়ে দেখতাম। হঠাৎ একদিন আমার স্কুল ব্যাগ কালভার্টের উপর থেকে পড়ে গেল পানিতে। আমি চিৎকার করে উঠলাম। তখন পুরো বর্ষার মৌসুম চলছে। পানি দুকূল ছাপিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যেন। যে খালে ব্যাগ পড়েছে ওখানে পানির স্রোত খুব বেশি। আমার ব্যাগ ভেসে যাচ্ছে, অথচ কেউ পানিতে নামার কোন ইচ্ছায় পোষণ করছে না। আমি সম্পূর্ণ নিরুপায়। দুচোখ বেয়ে আমার অশ্রুর ফোয়ারা নেমেছে। হঠাৎ দেখি একজন পানিতে লাফ দিয়েছে। এ কারণে শোরগোল পড়ে গেলো। এত পানিতে যে কেউ ডুবে যাবে, তাই আগে কেউ সাহস করে নামেনি। কিয়ৎক্ষণ পরে উপলব্ধি করলাম এতো আর কেউ নয়, ক্লাসের দুরন্ত ছেলে সবুজ। প্রায় আধা কিলোমিটার দূর থেকে সাঁতরিয়ে আমার ব্যাগ উদ্ধার করেছিল সে। আমার ব্যাগের ভিতরের বইগুলি অনেক ভিজে গিয়েছিল বটে কিন্তু আমি সবকিছু পেয়েছিলাম। এরপর থেকে সবুজের সাথে আমার বন্ধুত্ব। মিতুল নামে আমার এক ক্লাসমেট ছিল যে একদিন আমার একটি কলম চুরি করেছিল। আমি খুব মন খারাপ করে বসে আছি। মিতুল যে কলম চুরি করেছিল তা আমি পরে জেনেছিলাম। সে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির ছেলে হওয়াতে কোন বড় ধরনের অপরাধ করেও প্রায়ই মুক্তি পেত। আবার ক্লাসে তার রোল নম্বরও ছিল দুই। কিভাবে তার রোল দুই হতো বারেবারে তার গাণিতিক হিসাব করার মত ক্ষমতা আমার ঐ ক্ষুদ্র বয়সে হয় নি। যাইহোক, কলম চুরির ঘটনা সবুজ জেনেছিলো। মিতুলের কাছে সবুজ ঐ কলম দেখার পর ওকে বলেছিল, ” কিরে, লালমিয়া! কলম পাইলি কই?” মিতুলকে সবুজ লাল মিয়া বলে ডাকতো হরহামেশাই। এর জন্য স্যারদের কাছে কত বকাই না খেয়েছে সে। মিতুল ঢং করে বলল, “আমার কি কওয়া লাগবে নাই তোর?” এই কথা শোনামাত্র মিতুলের কানের নিচে সশব্দে দুইটি চড় বসিয়ে দিল সে। মিতুলের তীব্র কান্নার চিৎকারে হেডস্যার সহ অন্যান্য স্যারেরা দৌঁড়ায়ে আসলেন। কান্নার হেতু আবিষ্কারে তারা অপারেশন সার্চলাইট শুরু করলেন। অবশেষে যখন জানতে পারলেন যে, সবুজই নাটের গুরু তখন হেডস্যার জোড়া বেত দিয়ে তার পিঠে পাঁচটি কসিয়ে দিলেন। সবুজ কাঁতরাচ্ছে মার খেয়ে, অন্যদিকে মিতুল কান্না থামিয়ে পুতুলের মত বসে আছে।
স্কুল ছুটির পর সবাই বাড়িতে চলে গেল, গেল সবুজও। প্রায় এক সপ্তাহ তার কোন হদিস মিলল না। আমাদের বাড়ি আরেক পাড়ায় হওয়াতে তাদের বাড়িতে যাওয়া কষ্টকর হলো। ক্লাসের ফাস্ট বয় হওয়াতে আমাকে অনেক নিয়মনীতি মেনে চলতে হতো পরিবারে। সবার আশা ছিল আমি দেশের সবচেয়ে সেরা মানুষ হই। তাই সবুজদের মত বখাটে ছেলের সাথে আমি মিশি এটা পরিবার কখনও চাইতো না। তারপরও স্কুলের ক্লাস শেষ করে অপুকে নিয়ে চলে গেলাম সবুজদের বাড়িতে। একটা বিশাল বাঁশ বাগানের পর দিঘি, তারপর সবুজদের বাড়ি। বাঁশ বাগানের মধ্য দিয়ে খস খস আওয়াজ করে হেঁটে চলেছি আমি আর অপু। সবুজদের বাসায় কখনও যাই নি আমি। অনেক সময় লাগলো ওর বাসায় পৌঁছাতে। বিছানায় সবুজ কাতরাচ্ছে! দূর থেকে কাতরানোর আওয়াজ অনুসরণ করে তার বাসায় পৌঁছালাম। আহ্ কত ব্যথা পেয়েছে বেচারা ছেলেটা! আমরা যাওয়ার সাথে সাথে ওর মা পিড়ি ঠেলে দিলেন। আমি ভয়ে ভয়ে বসলাম কিন্তু অপু ভীতুর ডিমটা বসলোই না। ও কাঁপছিলো যেন। হঠাৎ করে সবুজ চিৎকার করে অপুকে বলল, “বস্! ভীতুর ডিম, তা না হলি তোরে ভেজি খেয়ি ফ্যালবো।” এ কথা শুনে অপু পালিয়ে চলে যাওয়ার উপক্রম। অমনি আমি আমার ছোট হাত দিয়ে ওর ব্যাগ টেনে ধরলাম, কোনো মতে ওকে বসালাম পিড়িতে। সবুজ বকবক করেই চলেছে, আর ওর মা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। আমি আন্টিকে স্বান্তনা দিয়ে বিদায় নিলাম। ঐ দিন বাড়ি ফেরার পর আমার উপর দিয়ে টর্নেডো বয়ে গেল যেন। ঠিক কি ঘটেছিল তা না জানলেও চলবে। তবে এতটুকু বলে রাখি, আমার নাক দিয়ে অনেক রক্ত পড়েছিল।
প্রতিদিন স্কুলে গিয়ে আমি আগে খুঁজতাম সবুজকে। দিন পনেরো পর ঘাড়ে ব্যাগ নিয়ে একটা ছেলেকে হাঁটতে হাঁটতে স্কুল অভিমুখে আসতে দেখলাম। সে আর কেউ নয়, সবুজ! অন্য দিনের মত তার মাঝে চঞ্চলতার কোনো চিহ্ন পেলাম না আজ। হেতু না খুঁজে পেয়ে বেশ অবাক হলাম। ক্লাসে সবার পিছনে বসলো সে। বাংলা ক্লাসে হেডস্যার প্রবেশ করেই সবুজের খোঁজ নেওয়া শুরু করলেন। তিনি বললেন,”সেই জানোয়ারটা কোথায়?” সবুজ কোনো উত্তর না করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে গেল। হেডস্যার কটাক্ষ করে বললেন,”বসে পড়ো শুদ্ধোধন!” সবুজ একবারও স্যারের দিকে তাকালো না। ওর মনটা খুব খারাপ দেখে আমার মনটা খুব খারাপ হল। কারণ সবুজ যতই দুষ্টামি করুক অন্যদের সাথে, ও আমার খুব প্রিয় বন্ধু। ক্লাস শেষে বাড়ি ফেরার পথে সবুজকে আস্তে আস্তে বললাম,”সবুজ! তোর মন খারাপ?” সবুজ যা শোনালো তাতে আমার মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। সবুজের মাকে ওর বাবা খুব মারধোর করে যা সবুজের মোটেও সহ্য হয় না। নিজের বাবা তো, তাই বাবার গায়ে হাত তোলে না ও। কিন্তু ওর হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়, মাথায় খুন চাপে কিন্তু মায়ের দিকে তাকিয়ে ও কিছুই করতে পারে না। সবুজ আমাকে বলল,” দোস্ত, তুই আমার হেল্প করবি? আমাকে তে কেউ ভালবাসে না! তুই আমার পড়ালিখায় হেল্প করবি? আমি বড় হয়ি একজন পুলিশ হবো, আমার আব্বার ধরি নে থানায় বন্দি করি রাখবো”। এ কথা বলে ও আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি ওকে হেল্প করার আশ্বাস দিলাম।
ক্লাসে চুপচাপ অবস্থায় থাকে সবুজ। খুব দরকার ছাড়া কোন কথা বলে না সে। ক্লাসের সবাই ওকে খুব করে পঁচাতো। কিন্তু ও কাউকে কিছুই বলতো না, শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকতো। আমি ওকে পাশে বসাতাম, কিন্তু স্যাররা এসে ওকে শেষ বেঞ্চে বসিয়ে দিতো। আমারও ভীষণ খারাপ লাগতো কিন্তু কিছুই করতে পারতাম না। ওকে শেষ বেঞ্চেই বসতে হবে এমন একটা রীতি হয়ে গিয়েছিলো। আমি ওকে হেল্প করার চেষ্টা করতাম খুব। ছেলেটার মেধা আছে বেশ, পড়লে ও পারবে। কিন্তু মিতুল ওকে দেখলেই মুখ বাঁকা করে একটা কটাক্ষের হাসি হাসতো, ওর গায়ের পরে গিয়ে পড়তো যেন আর বলতো, “আমার বাপ স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, আমার যা ইচ্ছা তাই করবো। পারলি তুই কিছু করিস! আর শোন! যদি আমার কিছু করিস তাইলে সান্ডে মান্ডে ক্লোস করি দোবো”। আমার একদম সহ্য হত না মিতুলের কাজকর্ম। কিন্তু সে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির ছেলে বলে কথা!
সবুজ সবকিছুকে মুখ বুজে সহ্য করে পড়াশুনা করতে লাগলো। আমি আর সবুজ টিফিন পিরিয়ডে স্কুলের দোতলা ছাদের পর উঠে সিংগারা খেতে খেতে গল্প করতাম। সবুজ খুব সুন্দর সুন্দর গল্প করতো। ওর নানার বাড়ির গল্প শুনে আমি হতবাক হয়ে যেতাম। সবুজের মা খুব সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে, ভাগ্য দোষে এক টাউটের সংসার করছে জেনে আমার ও খুব খারাপ লাগলো। ওর বাবা একজন মাদকসেবী। জমিজমা বিক্রি করে মদের আড্ডায় পড়ে থাকে। অনেক জমি বেচে এখন তারা নিঃস্ব প্রায়। প্রায়ই তাই ওর মাকে মারধর করে, বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য চাপ দিতে থাকে। জামাইয়ের এই অাচরণের কারণে সবুজের মামাবাড়ি থেকে কেউ আসতো না তাদেরকে দেখতে। ওর মা খুব কষ্ট সহ্য করে স্বামীর সংসার করে। সবুজের মনের আকাশের কালো মেঘ সরে না যেন।
ডিসেম্বর মাস। স্কুলের বিজয় দিবসের জন্য ও প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রাকটিস সেশনে সবুজ মিতুলের সাথে মারামারিতে লিপ্ত হল। পরে হেড স্যার এসে অন্যায়ভাবে সবুজকে মারলেন। এক বারের জন্যও উনি জানতেই চাইলেন না যে আসল ঘটনা কি! বেধড়ক পিটাতে লাগলেন আর বললেন,” ব্যাকবেঞ্চার কোথাকার! ভালো ছেলেদের গায়ে হাত দিতে পয়সা লাগে না, না?” মিতুলকে হেডস্যার কিছুই বললেন না দেখে স্যারের প্রতি আমার সম্মান ও ভক্তি কমে গেলো, খুব ব্যথিত হলাম। আমি সবুজকে একপাশে নিয়ে ওর কান্না থামানোর চেষ্টা করছি। সবুজের কান্না দেখে আমারও খুব কান্না পেলো। শিক্ষকদের থেকে এমন একপক্ষ সমর্থন করার সংস্কৃতি আমার ভিতরটাকে দারুণভাবে আন্দোলিত করলো। হেডস্যার এর আগেও সবুজকে কত অন্যায়ভাবে মেরেছেন। তাঁর দেখাদেখি অন্যান্য স্যাররাও সবুজকে কত বার ভৎসনা করেছেন। এগুলি আমার কাছে শিক্ষকসুলভ আচরণ বলে মনে হত না। শিক্ষকতা পেশাকে খুব ঘৃণা করতে লাগলাম।
বিনা বেঘে বজ্রপাতের মত এক ঘটনা ঘটে গেলো। সবুজের মা আত্মহত্যা করেছে। আমার ক্লাসমেট কবিরের মায়ের থেকে সংবাদ শুনে সবুজদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম আমি আর অপু। ভীতুর ডিম অপুর হাতে লাইট। রাত তখন সাড়ে নয়টা বাজে। আমি আর অপু বাঁশবাগানের ভিতর দিয়ে দৌঁড়াইতে দৌঁড়াইতে চলে আসলাম সবুজদের বাড়িতে। কান্না আর প্রিয়জনদের আহাজারিতে আকাশ বাতাস মুখরিত যেন। সবুজ নির্বাক! পৃথিবীর কোনো এক অজানা শক্তি তাকে স্থিমিত করে দিয়েছে। কোনো সুমধুর ডাক সবুজকে ওর নির্জীব অবস্থা থেকে সজীব করবে না। আমি আর অপু ওকে জড়িয়ে ধরলাম। সবুজ কান্নার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। আহ! কোন শক্তি বলে আমরা সবুজকে হাসিতে ভরিয়ে রাখবো। এ ব্যথার কি কোন ওষুধ আছে! সবুজের বাবাকে দেখে ভীষণ মেজাজ গরম হলো। সিগারেটে টান দিতে দিতে আত্মীয় স্বজনদের সাথে স্বাভাবিকভাবেই কথা বলে চলেছেন যেন। যেন বাসায় বিয়ের রমরমা আয়োজন চলছে।
সবুজের মায়ের মৃত্যুর তেরো দিন পর ওর নানা এসে ওকে নিয়ে গেলো। ও যাওয়ার সময় একটা চমৎকার কম্পাস দিয়ে গেল আর বলে গেল, “আমাকে মনে পড়লে কম্পাসটির দিকে তাকাবি, দেখবি তুই আর আমি কত কাছাকাছি।” এতটুকু ছেলের এই বয়সে এমন অনুভূতি সেদিন যেমন বিস্মিত করেছিল আজ করে তার চেয়েও বেশি। ও নানাবাড়িতে যাওয়ার পর অনেক দিন ওর কোন খোঁজ খবর পেলাম না। হঠাৎ একদিন একটা চমৎকার চিঠি পেলাম। তার চিঠিটা এমন:
প্রিয় ভদ্র ছেলে,
আশাকরি, ভালো আছিস। তোর পড়াশুনা কেমন চলছে রে? তুই না অসাধারণ শিক্ষক হবি! তবে শিক্ষক হলে হেড স্যারের মত হবি না। আচ্ছা! মিতুল কেমন আছে রে? হেড স্যার, মিতুল, ওদেরকে ভীষণ মিস করি রে। জানিস, এখানে আমার কেউ মারে না, কেউ বকে না, মিতুলের মত কেউ গায়ে ধাক্কা মারে না। ঐ দিন গুলো খুব মিস করি, জানিস? এখানে সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। কেউ তোর মত করে পাশে বসতে বলে না, কেউ শোনে না সকালে ভাত খেয়েছি কি না, কেউ ভুলেও জিজ্ঞাসা করে না আমার মা কেমন আছে! তোদের অনেক মিস করি। তোকে আমি কখনও ভুলতে পারবো না। তুই আমার জীবনের সবচেয়ে সেরা বন্ধু।
ভালো থাকিস বন্ধু। অনেক ভালো। আচ্ছা আমার কম্পাসটা ঠিকঠাক মত আছে কি?
ইতি———
ব্যাকবেঞ্চার সবুজ।
চিঠিটি পড়ার পর সেদিন অনেকক্ষণ কেঁদেছিলাম আর ভেবেছিলাম সবুজ কত পরিণত হয়েছে আচার-আচরণ, চিন্তা-চেতনায়।
এক যুগ কেটে গেছে সবুজের সাথে আর কোনো যোগাযোগ নেই আমার। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম। নতুন পরিবেশ, বন্ধুবান্ধব পেয়ে আমি সবুজকে ভুলেই গিয়েছিলাম। হঠাৎ একদিন বাক্সের মধ্যে রাখা কম্পাসটার দিকে নজর যেতেই বুক কেঁপে উঠলো। সবুজকে ভীষণ মিস করতে লাগলাম। সবচেয়ে অবাক হলাম যে, জীবনের খেলাঘরে ইতোমধ্যে একটি যুগের বেশি পার হয়ে গেছে অথচ সবুজের কোনো খোঁজ খবর পেলাম না। পড়াশুনা শেষ করে আমি শিক্ষকতা করি রসুলপুর শহীদ স্মৃতি কলেজে। নিজেকে নিয়ে অনেক ব্যস্ত সময় কাটাই। আমাদের স্কুলের হেড স্যারের বিদায় অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে আমাকে দাওয়াতপত্র পাঠানো হয়েছে। দিনটি ছিল রবিবার। আমি গিয়েছিলাম আমাদের প্রাইমারী স্কুলে হেডস্যার কাদের মিয়াকে বিদায় জানাতে। বিদায় অনুষ্ঠানে জেলার গণ্যমান্য অনেক ব্যক্তি হাজির হয়েছেন। একজন এএসপি অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি। খুব স্মার্ট দেখাচ্ছিল তাকে। নেম প্লেটে লেখা আফতাব। আমি একটা বিষয় অবলোকন করলাম যে, হেড স্যার চেয়ারে না বসা পর্যন্ত এএসপি সাহেব চেয়ারে বসছেন না। হেডস্যার ওনাকে চেয়ারে বসতে বললেন কিন্তু উনি বসছেন না, বরং প্রধান অতিথির আসন ছেড়ে উনি বাইরে এসে দাঁড়িয়েছেন। হেড স্যার তখন বললেন,”আমি সামান্য প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক, আপনি বড় পুলিশ অফিসার! প্লিজ, বসেন না, স্যার, প্লিজ”। এএসপি আফতাব বললেন,” আপনি না বসলে যে আপনার স্টুডেন্ট বসতে পারে না, স্যার”।
“স্টুডেন্ট! তুমি কে বাবা?” হেডস্যার বললেন।
আফতাব বললেন,” আমাকে চিনতে পারেন নি, স্যার? আমি ব্যাকবেঞ্চার সবুজ”!

 

বংশালের রাস্তায় মহিলার গলাকাটা লাশ


নারী সংবাদ


রাজধানীর পুরনো ঢাকার বংশালে রানী (২৮) নামে এক মহিলাকে গলা কেটে হত্যার অভিযোগে সোহাগ (১৯) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই যুবক ও নিহত মহিলা দু’জনেই ড্যান্ডি নামক মাদকে আসক্ত বলে পুলিশ জানিয়েছে।
বংশাল থানার এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাব ইন্সপেক্টর আলাউদ্দিন শেখ গতকাল নয়া দিগন্তকে জানান, গত রোববার ভোর রাতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাছ থেকে সংবাদ পেয়ে ২১/১ নাজিরাবাজার ওয়ালটন গলির সামনের রাস্তায় পড়ে থাকা রানী বেগম নামে মহিলার লাশ উদ্ধার করে স্যার সলিমুল্লাহ হাসপাতাল মর্গে পাঠাই। তার আগে ওই মহিলার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে তার কথিত স্বামী সোহাগকে জিপিও এলাকা থেকে গ্রেফতার করি।
সে জানায়, তারা দু’জনে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ওই এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছিল। নিহত রানীর মা তার মেয়ের বিয়ে হয়নি বলে জানালেও সোহাগ দাবি করছে তিন বছর আগেই তাদের বিয়ে হয়েছে। গ্রেফতার সোহাগের বাবার নাম হাফেজ। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে সে বলে, কথিত স্বামী-স্ত্রী দু’জনই ড্যান্ডি মাদকে আসক্ত। লাশের সুরতহাল করার সময় নিহত মহিলার বুকে মাদক ড্যান্ডির কৌটা পাওয়া গেছে। পুলিশ জানায়, গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে সোহাগ স্বীকার করেছে সে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে ধারালো ব্লেড ছুরি চালিয়েছে। সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

চিকেনের মচমচা রেসিপি

চিকেন মোমো

উপকরণ

১. ময়দা ২ কাপ,
২. তেল ২ টেবিল চামচ,
৩. মুরগির কিমা দেড় কাপ,
৪. রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ,
৫. আদা কুচি ৩ চা-চামচ,
৬. পেঁয়াজপাতা কুচি ২টি,
৭. লবণ স্বাদমতো
৮. সয়াসস ২ চা-চামচ,
৯. গোলমরিচ গুঁড়া আধা চা-চামচ,
১০. লেবুর খোসা কুচি আধা টেবিল চামচ,
১১. মাখন ১ টেবিল চামচ।

প্রণালি

  • ময়দার সঙ্গে আধা চা-চামচ লবণ, তেল ও পরিমাণমতো পানি মিশিয়ে ময়ান দিতে হবে।
    কিমার সঙ্গে পেঁয়াজ, আদা-রসুন কুচি, সয়াসস, লবণ ও গোলমরিচ গুঁড়া মিশিয়ে মেখে রাখতে হবে।
  • ফ্রাইপ্যানে মাখন গলিয়ে কিমার মিশ্রণ অল্প আঁচে রান্না করুন।
  • কিমার পানি শুকিয়ে গেলে পেঁয়াজপাতার কুচি দিয়ে নেড়ে আরও ২ থেকে ৩ মিনিট ঢেকে রাখুন।
  • এবার ঢাকনা খুলে কাঁচা মরিচ কুচি ও লেবুর খোসার কুচি দিয়ে নেড়ে আবার ঢেকে দিয়ে মৃদু আঁচে দুই মিনিট রাখুন।
  • এদিকে ময়দার খামি থেকে ছোট আকৃতির রুটি বেলুন। রুটির কিনার বেশি পাতলা থাকবে।
  • রুটির মাঝখানে ১ টেবিল চামচ করে কিমার পুর দিয়ে অর্ধেকটা মুড়ে দিয়ে ও পেঁচিয়ে এনে বাকি অর্ধেক চেপে দিন, যেন মুখ খোলা না থাকে।
  • সব গুলো মোমো তৈরি হয়ে গেলে মাইক্রোওয়েভ কুকারে বা পানি ভর্তি বড় পাতিলের মুখে কাপড় বেধেও ভাপ দিয়ে নিতে পারেন। পাতিলের মুখে ভাপ দিতে হলে মিনিট দশেকই যথেষ্ট।

পরিবেশন

ভালোভাবে ভাপ দেয়া হলে নামিয়ে এন সসের সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করুন মজাদার মোমো।

চিকেন অনথন

উপকরণ

১. ১ কাপ ময়দা
২. ১/২ কাপ কর্ন ফ্লাওয়ার,
৩. ২ চা চামচ মাখন,
৪. লবণ স্বাদমতো,
৫. ৩/৪ কাপ গরম পানি,
৬. ১ কাপ মুরগির কিমা,
৭. ১ চা চামচ তিলের তেল,
৮. ১/২ কাপ বাঁধাকপি,
৯. ২টি ডিমের কুসুম,
১০. ১ চা চামচ সয়াসস,
১১. ১ টেবিল চামচ হইসিন সস (ইচ্ছা),
১২. ১ মুঠো ধনিয়া পাতা,
১৩. ১ টেবিল চামচ পেঁয়াজ পাতা কুচি,
১৪. ১ টেবিল চামচ গাজর,
১৫. ১ চা চামচ কাঁচামরিচ কুচি,
১৬. ১ চা চামচ আদাকুচি,
১৭. ১ চা চামচ রসুন কুচি,
১৮. তেল ভাজার জন্য,
১৯. ১/২ চা চামচ গোলমরিচ গুঁড়া।

প্রণালি

  • প্রথমে ময়দা, কর্ন ফ্লাওয়ার, মাখন, লবণ এবং গরম পানি দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে ডো তৈরি করে নিন।
  • এখন একটি পাত্রে মুরগির মাংস বাটা, তিলের তেল, লবণ, বাঁধাকপি কুচি, দুটি ডিমের কসুম, সয়া সস, হইসিন সস, ধনিয়া পাতা কুচি, পেঁয়াজ পাতা কুচি, গোলমরিচ গুঁড়া, গাজর কুচি, কাঁচামরিচ, আদা কুচি, রসুন কুচি দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন।
  • এখন মাংসের কিমার মাঝে অল্প একটু পানি দিয়ে মিশিয়ে নিন।
  • এখন ময়দার ডো দিয়ে ছোট ছোট রুটির মত পাতলা অন্থন শিট তৈরি করে নিন।
  • শিটের মাঝখানে মুরগির কিমা দিয়ে আঙ্গুলে পানি নিয়ে শিটের চারপাশে লাগিয়ে দিন।
  • এবার শিট একপাশ থেকে ভাঁজ করে কিমার অংশটুকু ঢেকে মুড়িয়ে নিন।
  • এরপর শিটের মাথা দুটোর মুখ মাঝখানে এনে লাগিয়ে দিন।
  • তারপর গরম তেলে চিকেন অনথন দিয়ে দিন।
  • সোনালি রঙ হয়ে এলে নামিয়ে ফেলুন।

পরিবেশন

সোনালি রঙের চিকেন অনথন একটি বাটিতে সস এর সাথে গরম গরম পরিবেশন করুন।

রেসিপি সুত্র

বাংলাদেশি রেসিপি

 

ব্যাংকক বিমানবন্দরে সৌদি নারী আটক


নারী সংবাদ


ব্যাংকক বিমানবন্দরে আটক এক সৌদি নারী বলেছেন, দেশে পাঠানো হলে তাকে হত্যা করা হবে।
রোববার ১৮ বছর বয়সী ওই তরুণীকে থাইল্যান্ডে ঢুকতে দেয়া হয়নি।
সৌদি আরবের সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার তদন্তের ব্যাপারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। গতবছর সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার ঘটনায় সৌদি আরবে বিরুদ্ধে নতুন করে মানবাধিকার লংঘন করা হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক মহলে নিন্দার ঝড় উঠে। খবর এএফপি’র।
রাহাফ মাহাম্মদ আল-কুনুন নামের ওই তরুণী বলেন, তিনি সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর সৌদি ও কুয়েতি কর্মকর্তারা তাকে থামিয়ে তার কাছ থেকে ভ্রমণ কাগজপত্র জোর করে কেড়ে নেয়।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তার এই দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘তারা আমার পাসপোর্ট কেড়ে নিয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘তার পুরুষ অভিভাবক তার অনুমতি ছাড়া ভ্রমণ করার জন্য তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন।’
কুনুন বলেন, তিনি তার পরিবারের কাছ থেকে পালাতে চাইছিলেন। তার পরিবারের সদস্য তার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়।
তিনি আরো বলেন, ‘আমি চুল কাটায় আমার পরিবার আমাকে ছয় মাস ধরে একটি রুমে আটকে রাখে।’
সৌদি তরুণী বলেন, তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হলে তাকে কারাগারে আটক রাখা হবে।
তিনি বলেন, ‘আমি শতভাগ নিশ্চিত সৌদি জেল থেকে বেরুবার পর যত দ্রুত সম্ভব আমাকে হত্যা করা হবে।’
থাইল্যান্ডের ইমিগ্রেশন প্রধান সুরাচাতে হাকপার্ন বলেন, রোববার কুয়েত থেকে একটি ফ্লাইটে করে থাইল্যান্ডে পৌঁছলে তাকে দেশটিতে ঢুকতে দেয়া হয়নি।
তিনি বলেন, ‘ওই তরুণীর রিটার্ন টিকিট অথবা অর্থ নেই।’
তিনি আরো জানান, রাহাফকে বিমানবন্দরের একটি হোটেলে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বিয়ে না করার জন্য তিনি তার পরিবার থেকে পালিয়ে এসেছেন।’
থাই কর্তৃপক্ষ ঘটনাটির ব্যাপারে সৌদি দূতাবাসকে বিষয়টি অভিহিত করেছে।
কুনুন বলেন, তিনি অস্ট্রেলিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ার জন্য সেখানে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সুবর্ণ ভূমি বিমানবন্দরে পৌঁছলে সৌদি ও কুয়েতি দূতাবাসের প্রতিনিধিরা তাকে আটক করে।
তিনি টুইটারে জানান, ‘আমি বাঁচতে চাই।’
তিনি জানান, তার একটি অস্ট্রেলীয় ভিসা থাকার পরও তার বাবা সৌদি দূতাবাস কর্মকর্তাদের জানান যে তিনি একজন মানসিক রোগী।
কুনুন, বলেন- ‘আমি বিমানবন্দর থেকে বের হতে পারিনি। আমি চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু নিরাপত্তা কর্মকর্তারা আমাকে পর্যবেক্ষণ করছেন।’ অভিবাসন প্রধান সুরাচাতে বলেন, সোমবার সকালে কুনুনকে সৌদি আরব পাঠিয়ে দেয়া হবে। তবে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, থাই কর্তৃপক্ষকে ওই কিশোরীকে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর এর আশ্রয় নিয়ে দিতে হবে। সুত্রঃ বাসস

 

গল্পে গল্পে প্যারেন্টিং : একটি ঘড়ি


কানিজ ফাতিমা


একদেশে একটা ছোট্ট ছেলে ছিল – ওর নাম ছিল রনি। তার বয়স ছিল ছয় বছর। রনির বোনের নাম মিনি। রনির অনেক কিছুর শখ ছিল। যেমন সে খেলতে পছন্দ করত, ছবি আঁকতে পছন্দ করত, বই পড়তে পছন্দ করত; আর সব থেকে বেশী পছন্দ করত বন্ধুদের সঙ্গে মজা করতে। প্রতি গ্রীষ্মের ছুটিতে সে তার বন্ধুদের নিয়ে অনেক অনেক মজা করত। ঈদ ছিল তার খুবই প্রিয়। কারণ ঈদের দিনে তারা সবাই মিলে অনেক মজা করতে পারতো ।

রনি খুব ভাল ছেলে। কিন্তু তার ছোট একটা সমস্যা ছিল- সে তার বাবা-মায়ের টেবিল ঘড়িটা নিয়ে খেলতে চাইত। রনি তার বাবা-মার রুমে গেলেই ঘড়িটির লাল রঙের কাটা দু’টির দিকে তাকিয়ে থাকতো। তার মনে হতো কাটা দু’টি খুবই ধীরে ধীরে ঘুরছে । তাই রনি ঘড়ির চাবি ঘুরিয়ে কাটা গুলোকে জোরে ঘুরিয়ে দিত। রনি প্রায়ই তার বাবা-মায়ের ঘড়ি নিয়ে চাবি ঘুরানো খেলা করত। এই খেলাটি ছিল তার অনেক পছন্দের একটা খেলা। কিন্তু যখন তার বাবা-মা এটা পছন্দ করতেন না, তারা রনির হাত থেকে ঘড়িটি সরিয়ে নিতেন আর বলতেন, “রনি, আর কখনও ঘড়ি নিয়ে খেল না। এটা খেলনা না। এটা কাজের জিনিস। ঘড়ি নিয়ে খেললে আমরা সঠিক সময় বুঝতে পারবো না।”

বাবা-মায়ের সমস্যা হোক তা রনি চাইতো না। কিন্তু সে ঘড়ি নিয়ে খেলতে এতই মজা পেতো যে সুযোগ পেলেই সে এই কাজ করতো।

তখন ঈদের মাত্র দুই দিন বাকী । রনি মিনির সঙ্গে খেলছিল আর তখনই মায়ের ফোন বেজে উঠলো।

মা ফোন ধরলেন। “আস্সালামু আলাইকুম।”

“ও হ্যাঁ জয়নব, কেমন আছো?…. … …আমি ভাল আছি আলহামদুলিল্লাহ। … … … …রনি এটা শুনে খুবই খুশী হবে। ও এখন পাশের রুমে মিনির সঙ্গে খেলা করছে। দাঁড়াও, আমি ওকে ফোন দিচ্ছি।”

একথা শুনে রনি দৌড়ে মায়ের কাছে চলে আসলো।
“মা, জয়নব আন্টি কি বলছেন?” রনি তার মায়ের কাছে জানতে চাইলো।
“ওমর তোমার সঙ্গে কথা বলবে” রনির মা বললেন।
রনি ফোন নিল এবং বললো “আস্সালামু আলাইকুম।”
ওমর উত্তর দিল, “ওয়ালাইকুম আস্সালাম। তোমার জন্য একটি সুসংবাদ আছে।”
“কি সুসংবাদ?” রনি খুবই উত্তেজিত হয়ে বললো।
“দুদিন পরেই ঈদ । আমি ঠিক করেছি এবারের ঈদে স্পেশাল কিছু করবো।” ওমর বললো
“কি করবে?” রনি জিঞ্জাসা করলো।
“Guess করো তো।” ওমর বললো
রনি চিন্তা করে বললো “তুমি কার্টুন দেখবে” “তুমি পার্কে বেড়াতে যাবে’”
”না”
“তুমি কি আমাকে তাহলে গিফট করবে ?”
“না, তাও না”
“আমি পারছি না”- রনি হার মানলো।
“আমি আমার বাসায় সব বন্ধুদের দাওয়াত করবো। তার পরে সবাই মিলে আনন্দ করবো। তুমি আসবে কিন্তু । সিয়াম , তাদভীন, আহমদ সবাই আসবে।”
রনি তার মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে অনুমতি চাইল, “মা, আমি কি যেতে পারি ?”
মা বললেন, “ঠিক আছে, তুমি যেতে পার।”
“আলহামদুলিল্লাহ” রনি খুবই খুশী হল, বললো,” ওমর আমি আসবো। ইনশাল্লাহ”
ওমরও অনেক খুশী হল। রনি ওমরকে সালাম দিয়ে ফোন রেখে দিল। তারপর মাকে জড়িয়ে ধরে বললো , “এবারের ঈদে অনেক মজা হবে। আমরা সব বন্ধুরা একসঙ্গে মজা করবো। খুবই মজা হবে !”

রনির মা হাসলেন।“হ্যাঁ এটা খুবই আনন্দের। তবে এখনও ঈদের দু’দিন বাকী। এখন অনেক রাত হয়েছে। শুতে যাও।”
রনি তার মাকে চুমু দিল এবং বললো “আস্সালামু আলাইকুম।”
মা বললেন, “ওয়ালাইকুম আস্সালাম। তোমার দাত ব্রাশ করতে ভুলে যেও না।”

রনি বাথরুমে গেল, দাত ব্রাশ করলো, হাত-পা ধুয়ে নিজের বেডরুমের দিকে রওনা হল। পথে সে যখন তার বাবা মায়ের রুমের সামনে এল তখন তার চোখ গিয়ে পড়লো টেবিল ঘড়িটির ওপর। সে ঘড়িটির লাল কাটা গুলো ঘুরতে দেখলো। কাটাগুলো খুবই সুন্দর লাগছিল। সে একটু থামলো -তারপর গুটি গুটি পায়ে ঘড়িটির সামেনে এসে দাঁড়ালো । কাটাগুলো খুবই আস্তে আস্তে ঘুরছে। সে ঘড়ির চাবি ঘুরিয়ে কাটাগুলোকে দ্রুত ঘোরাল। এটা খুবই মজার একটা খেলা। হঠাৎ সে শুনতে পেল তার বাবা বাইরে থেকে ফিরে তার আর মিনির নাম ধরে ডাকছেন। সে দৌড়ে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো।
“আস্সালামু আলাইকুম বাবা”
বাবাও তাকে চুমু দিলেন, “ওয়ালাইকুম আস্সালাম। তুমি এখনো জেগে আছে ?”
বাবা তাকে কোলে করে তার রুমে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলেন।
বন্ধুদের পার্টির কথা ভাবতে ভাবতে রনি ঘুমিয়ে গেল। ঘোমের মধ্যেও সারারাত সে ঈদের পার্টি নিয়ে স্বপ্ন দেখতে থাকলো।
পরের দিন সকালে যখন সে ঘুমিয়ে ছিল তখন খাবার ঘর (ডাইনিং রুম) থেকে সে হুড়োহুড়ির শব্দ শুনতে পেল। সে ঘুম থেকে জাগলো। বিছানায় উঠে বসলো এবং দোয়া পড়ল “আশাহাদু আল্ লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্ম্দার রাসুল আল্লাহ”।
তারপর বিছানা থেকে তাড়াতাড়ি নেমে এক দৌড়ে খাবার ঘরে এলো। তার মা-বাবা ছুটোছুটি করছেন রান্নঘর থেকে বসার ঘর পর্যন্ত।
“কি ব্যাপার ? ”-সে তার বাবাকে জিজ্ঞাসা করলো।
বাবা গোসল খানার দরজা বন্ধ করতে করতে বললেন, “আমার অনেক দেরী হয়ে গেল।”
মা রান্নাঘর থেকে বাবাকে বললেন, “তাড়াতাড়ি করো। আমি সকালের নাস্তা আর দুপুরের খাবার টিফিন বক্সে দিয়ে দিচ্ছি। তাড়াতাড়ি করো। নয়তো তুমি তোমার মিটিং এ ঠিক সময়ে পৌঁছাতে পারবে না।”
রনি রান্না ঘরে গিয়ে তার মাকে বললো-‘আস্সালামু আলাইকুম মা’
“ওয়ালাইকুম আসসালাম,” তার মা তার দিকে না তাকিয়েই বললেন, “ঘড়ি নিয়ে খেলা করা তোমার ঠিক হয়নি। আমরা ঠিক সময় মত জাগতে পারিনি। তোমার বাবার অফিসে যেতে দেরী হয়ে গেল। সে সকালে নাস্তাও করতে পারবে না।”
রনির খুব মন খারাপ হল। সে বলল “আমি দুঃখিত”
মা বললেন, ”ঠিক আছে, মুখ ধুয়ে নাস্তা খাবার জন্য তৈরী হয়ে নাও।”

আগামীকাল ঈদ। আজ রনি ও মিনি তাদের মায়ের সাথে মার্কেটে যাবে এবং ঈদের জন্য অনেক কিছু কিনবে- ঈদের নতুন জামা কিনবে,কাল পার্টিতে বন্ধুদের দেবার জন্য ঈদ কার্ড কিনবে,ওমরের জন্যও কিছু কিনবে। তারা নাস্তা সেরে তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নিল।
সারাদিন রনি অপেক্ষা করলো ঈদের দিনের জন্য। “জান, কাল আমরা কি কি করবো?” রনি মিনিকে জিজ্ঞাসা করলো।
মিনি জানতে চাইলো, “কি করবে ?’
“আমরা লুকোচুরি, মিউজিক, চেয়ার, আর মনোপলি খেলবো।”
মিনি বললো, “তাহলে আমিও যাবো।”
রনি বললো, “ওটাতো আমার বন্ধুদের পার্টি। তুমি কি করবে ?”
মিনি জিজ্ঞাসা করলো, “ওমরের কি বোন আছে ? সে আমাদের জন্য একটা পার্টি করতে পারে না?”
“না, ওমরের বোন নেই” রনি বললো।
“তোমাদের ভাগ্য ভালো। ক’টায় পার্টি শুরু হবে ?” মিনি জিজ্ঞাসা করল।
“৫ টায় শুরু হবে আর ৭ টা পর্যন্ত চলবে। তারপর ওমর ওর দাদার বাড়ী বেড়াতে যাবে” রনি উত্তর দিল।

রনি মাকে বলল, “আমি পার্টিতে কিছু কেক নিতে চাই।মা, তুমি কি আমাকে কিছু কেক তৈরী করে দিতে পারবে ?”
মা বললেন, “তুমি তোমার বন্ধুদের জন্য নিজেই কেক তৈরী করে নিয়ে যেতে পারো। আমি তোমাকে সাহায্য করবো”

রনি এ কথা শুনে তো মহাখুশী, “অবশ্যই আমি নিজেই কেক তৈরী করবো। কী মজা !”
তার মা তাকে পরিমাণ মত ময়দা, তেল, কোকো পাউডার, দুধ ও অন্যান্য উপাদান নিতে সাহায্য করলেন। বাটিতে এ গুলোর সঙ্গে ঘী নিয়ে রনি ভাল করে মিশালো। তারপর সে এগুলোকে কেকের ছাঁচে ঢেলে ওভেনে দিল। মা ওভেন অন করে দিলেন।

রনি উৎসাহ নিয়ে ওভেনের দিকে তাকিয়ে আছে। সে অপেক্ষা করতে থাকলো কখন কেক বেক শেষ হবে। ক্লান্ত হয়ে কতক্ষন পরে সে মিনির সঙ্গে খেলতে চলে গেল।

কিছুক্ষন পরেই তার মা তাকে ডাকলেন, “রনি তোমার কেক হয়ে গেছে, দেখে যাও ।”
রনি আর মিনি এক দৌড়ে রান্না ঘরে এলো, কেকটা দেখতে খুবই সুন্দর হয়েছে। সে গন্ধ নিল। খুবই সুন্দর গন্ধ……..! তার বন্ধুরা কেকটি খুবই পছন্দ করবে।

রাতে যখন বাবা বাসায় এলো সে তাকে তার নতুন জামা দেখলো, ওমরের জন্য কেনা গাড়ীটা ও দেখালো।
তার বাবা বললেন, “মাশা আল্লাহ, ওমর গাড়ীটা খুব পছন্দ করবে।”
তার পর সে তার বাবাকে খাবার ঘরে নিয়ে গেল তার কেক দেখানোর জন্য। বাবা খুবই খুশী হলেন। রনিতো খুব ভাল রান্না শিখেছে।
রাতের খাবার এর জন্য তারা সবাই একসাথে খাবার টেবিলে বসলো। রনি পার্টির কথা, খেলার কথা, গিফটের কথা বলতেই থাকলো। খাবারের পর বাবা তাকে সাহায্য করলেন উপহারগুলো প্যাকটে করতে। এরপরে তারা বড় বড় টুকরো করে কেকটা কাটলো ।
রনি খুবই খুশী, আজ সে অনেক কিছু করেছে।
বাবা তাকে শোবার ঘরে দিয়ে ঘুমাতে গেলেন। রনি রাতের কাপড় পরে দাত ব্রাশ করে শুতে এল। কাল ঈদ। সে ভোরে উঠে ঈদের নামাজে যাবে। সারারাত সে স্বপ্ন দেখলো- সে তার বন্ধুদের সঙ্গে অনেক মজা করছে, কেক খাচ্ছে, আর খেলা করছে।

ঈদের দিন সে খুব সকালে ঘুম ভেঙ্গে জাগল- দোয়া পড়ে সে বিছানা থেকে নেমে এল। সে তার বাবা-মায়ের রুমে গিয়ে দেখলো তারা ঘুমিয়ে আছেন। সে খাবারের ঘরে গিয়ে নিজের কেকটা দেখলো। তারপর নিজের রুমে এসে ঈদের জামাটি দেখলো। এটা পরে সে আজকে পার্টিতে যাবে। সে মনে মনে ভাবল আজ সে সবার আগে পার্টিতে যাবে।
আজ বিকালেই পার্টি । কখন যে বিকাল হবে! কখন যে সে পার্টিতে যাবে! তার আর দেরী সইছে না।
তার বাবা-মা ঘুম থেকে উঠলেন। বাবা মিনি ও রনিকে গোসল করিয়ে দিলেন। তারা সবাই নতুন কাপড় পরে ঈদের নামাজ পড়তে গেল। ঈদগাহে নামাজ শেষে রনি তার কিছু বন্ধুদের দেখতে পেল- তারা সবাই সবাইকে ঈদ মোবারক জানিয়ে কোলাকুলি করল। তারপর তারা গরীব মানুষদের কিছু দান করল। শেষে তারা বাসায় ফিরে এল।

এরপর বাবার কিছু বন্ধু বেড়াতে এল। বাবা তাদের সঙ্গে কোলাকুলি করলেন আর মা তাদের জন্য কিছু মজার খাবার তৈরী করে দিলেন। রনি ও রনির বাবা টেবিলে খাবার সাজাতে তার মাকে সাহায্য করলো। রনির বাবা খুবই ভাল। সে সব কাজে রনির মাকে সাহায্য করে। রনিও তার মাকে ঘরের কাজে সাহায্য করে। রনিকে তার বাবা বলেছে আমাদের নবীও ঘরের কাজে সাহায্য করতেন।

দুপুরে রনির মায়ের কিছু বান্ধবী এল। মা তাদের দেখে খুবই খুশী হলেন। তাদের সঙ্গে বসার ঘরে বসে গল্প করলেন। রনি ও রনির বাবা তাদের জন্য টেবিলে খাবার সাজালেন। এরপর রনি মিনির সঙ্গে খেলতে চলে গেলো । কিছুক্ষণ খেলার পরে সে তার বাবাকে জিজ্ঞাসা করলো- “এখন কি পার্টির সময় হয়েছে ? আমি কি তৈরী হব ?”
”না রনি, এখনও অনেক সময় বাকী। তোমাকে আরেকুটু ধৈর্য্য ধরতে হবে। তুমি এই বইটা আমার ঘরে একটু রেখে আস, প্লীজ ।”
সে যখন বই রেখে নিজের রুমের দিকে আসছিল তখন সে তার বাবা-মায়ের ঘড়িটি দেখতে পেল। তার লাল কাটা গুলো টিক্ টিক্ করে ঘুরছে। কিন্তু খুব ধীরে ধীরে ঘুরছে। রনি আস্তে আস্তে করে ঘড়িটির দিকে গেল, আর তারপর ঘড়ির চাবিটি ঘুরিয়ে দিলো।
রনির খুব মজা লাগছে – কাটাগুলো ঘুরছে !
এমন সময় সে মিনির ডাক শুনতে পেলো, “ভাই-য়া- -”
রনি মিনির ঘরে এলো।
”তুমি কি আমাকে এই ফুলটা একটু রঙ করে দিতে পারবা ?”
রনি মিনির জন্য ছবি রঙ করতে লাগল।
কিছুক্ষণ পরে রনি তার মাকে জিজ্ঞাসা করল, “ মা, আমি কি এখন তৈরী হব ?” রনির মা নিজের রুমে গিয়ে ঘড়ি দেখে বললেন ”না, এখনও সময় হয়নি।”
রনি নিজের রুমে গিয়ে পাঁচটা বাজার জন্য অপেক্ষা করলো। অপেক্ষা যেন শেষই হয়না – কখন সে পার্টিতে যাবে, বন্ধুদের তার কেক দেখাবে, তাদের সঙ্গে খেলা করবে, আর তাদের উপহার গুলো দিবে। রনি আর দেরী করতে পাছিল না।
অবশেষে তার মা ডেকে বললেন, ”এখন রেডি হয়ে নাও, সময় হয়েছে।”
রনি রেডি হল। তারপর কেক, কার্ড ও ওমরের গাড়ী নিয়ে সে তার বাবার সঙ্গে রওনা হয়ে গেল। সারা পথ রনি খুবই আনন্দ লাগছিলো – ঈদের পার্টিতে যাচ্ছে, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে!
অবশেষে সে ওমরদের বাড়ীতে এল এবং বেল বাজালো। সে অপেক্ষা করছিল দরজা খুলেই সে তার বন্ধুদের দেখতে পাবে।
রিয়াদ চাচা দরজা খুললেন-
– আস্সালামু আলাইকুম
– ওয়ালাইকুম আস্সালাম- রনি ও তার বাবা উত্তর দিলেন।
রনি বললো, “আমরা পাটিৃতে এসেছি।”
“পার্টি ?” রিয়াদ চাচা বললেন, “পার্টিতো শেষ। এখন সাড়ে সাতটা বাজে।”
রনির বাবা হাতের ঘড়ির দিকে তাকালেন এবং দেখলেন সত্যিই সাড়ে সাতটা বাজে। সে রনিকে জিজ্ঞাসা করলো- “তুমি কি আমার রুমের টেবিল ঘড়িটা নিয়ে খেলেছিলে?”
রনি দুঃখিত হল, -হ্যাঁ।
“তোমাকে বলেছি ঘড়ি নিয়ে খেলবে না। তুমি ঘড়ির কাটা ঘুরিয়েছিলে। তাই আজ আমরা সঠিক সময় জানতে পারিনি। আর এজন্যই আজ তুমি পার্টিতে ঠিক সময়ে আসতে পারোনি।” বাবা বললেন।
“আমি পার্টির জন্য কেক তৈরী করেছি। ওমরের জন্য উপহার কিনেছি। অমি বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করতে চাই” – রনির চোখ পানিতে ভরে গেল। ওর প্রচন্ড কান্না পেল।
রিয়াদ চাচা বললেন, “আমি দুঃখিত, রনি। তোমার বন্ধুরা পার্টিতে এসেছিল,তারা একসঙ্গে খাবার খেয়েছে, খেলা করেছে, তারপর সবাই বাড়ী ফিরে গেছে। ”
রনি একথা শুনে খুবই কষ্ট পেলো । সে কান্না করে ফেললো, “আমি ওমরকে এই গাড়ীটা দিতে চাই।”
“আমি দুঃখিত রনি। ওমরতো পার্টি শেষে তার দাদা বাড়ী চলে গেছে।”
রনির বাবা রিয়াদ চাচাকে ধন্যবাদ ও সালাম দিয়ে গাড়ীতে উঠলেন বাসায় ফেরার জন্য। রনি চুপচাপ গাড়ীতে বসে থাকল। তার দু’গাল বেয়ে চোখের পানি পড়ছিল। সে ওমরের সঙ্গে, ওর অন্যান্য বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করতে চায়। কিন্তু সে আজ সবকিছু থেকে বঞ্চিত হল। সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো সে আর কোনদিন ঘড়ি নিয়ে খেলবে না। কাজের জিনিস নিয়ে কখনও দুষ্টুমি করা ঠিক না। কাজের জিনিস আর খেলনা এক কথা না।

এরপরে রনি আর কোনদিন কাজের জিনিস নিয়ে খেলা করেনি।

গল্প শেষে:

গল্প শেষে শিশুর সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন গল্পের শিক্ষা নিয়ে। প্রশ্ন করুন –

১. কাজের জিনিস আর খেলনার মধ্যে পার্থক্য কি?
২. কাজের জিনিস নিয়ে খেলা করা কেন উচিত না ? এতে কি ধরণের সমস্যা হতে পারে?
৩. বাসার কোন কোন কাজের জিনিস নিয়ে বছর খেলতে চাইতে পারে- কয়েকটি উদাহরণ দাও ?
৪. এগুলো নিয়ে খেললে আমাদের কি কি সমস্যায় পড়তে হতে পারে?

গল্পে গল্পে প্যারেন্টিং :কাজের জিনিস নিয়ে খেলতে নেই
একটি ঘড়ি

 

ড্রেনে মিলল নবজাতক শিশু


নারী সংবাদ


টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের ড্রেন থেকে এক নবজাতক শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই নবজাতককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাকে হাসপাতালের অধিকতর সেবা ইউনিটে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. নারায়ন চন্দ্র সাহা নয়া দিগন্তকে বলেন, গত শুক্রবার বিকেলে এক নারী পরিচ্ছন্নতাকর্মী হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের পেছনে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করতে গিয়ে ড্রেনের মধ্যে ওই নবজাতক শিশুকে (ছেলে) পড়ে থাকতে দেখেন। সঙ্গে সঙ্গে ওই শিশুকে উদ্ধার করে তিনি হাসপাতালে এনে ভর্তি করেন। বর্তমানে শিশুটি হাসপাতালের অধিকতর সেবা ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ভূমিষ্ট হওয়ার পরপরই কে বা কারা শিশুটিকে সেখানে ফেলে রেখে যায়।

তিনি বলেন, একটি সদ্যভূমিষ্ট শিশুর স্বাভাবিক ওজন আড়াই কেজি হলেও উদ্ধারকৃত এই শিশুর ওজন মাত্র এক কেজি ৩০০ গ্রাম। এ ধরনের শিশু খুব ঝুঁকিপূর্ণ হয়। তারপরও আমরা শিশুটির জন্য সবরকম চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি। আইন অনুযায়ী এখন এই শিশুটির দায়-দায়িত্ব সমাজ সেবা অধিদপ্তর নিয়েছে বলে তিনি জানান।

টাঙ্গাইল সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল হামিদ নয়া দিগন্তকে বলেন, ড্রেন থেকে নবজাতক উদ্ধারের খবর শুনে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ছুটে যাই। সরকারিভাবে এ ধরনের শিশুর সকল দায়-দায়িত্ব সমাজ সেবা অধিদপ্তরই নিয়ে থাকে। সে মোতাবেক আমরা এই শিশুটির যাবতীয় দেখাশোনা করছি। শিশুটি সুস্থ হয়ে উঠলে আদালতের মাধ্যমে আমরা তাকে ঢাকায় ছোটমনি নিবাসে পাঠিয়ে দেব। এছাড়া আদালত চাইলে অন্য যে কেউ শিশুটিকে নিতে পারবেন। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত শিশুটির শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে তিনি জানান। সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা, স্বামী পলাতক


নারী সংবাদ


রাজধানীর মতিঝিলে স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বিকালে আরামবাগের ১২৪/১ নম্বর বাড়ির একটি রুম থেকে শরিফা বেগমের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠিয়েছে।

মতিঝিল থানার এস আই জালাল জানান, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর একটার মধ্যে যে কোনো সময় শরিফা বেগমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। লাশ উদ্ধারের সময় তার গলায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ঘটনাস্থল থেকে কিছু আলামতও জব্দ করা হয়েছে। তবে ময়নাতদন্তের পর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।

তিনি জানান, নিহত শরিফার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের কোতোয়ালী থানার কাউনিয়া গ্রামে। তিনি ঢাকায় গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন। আরামবাগের ১২৪/১ নম্বর বাড়ির এক রুম ভাড়া নিয়ে স্বামী মনির হোসেন নয়নকে নিয়ে থাকতেন। শুক্রবার সকালে দাম্পত্য কলহের জের ধরে এ হত্যার ঘটনা ঘটতে পারে। ঘটনার পর থেকে স্বামী নয়ন পলাতক রয়েছেন। নয়ন পেশায় রিকশাচালক। তাকে গ্রেফতার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সুত্র:ইত্তেফাক।

 

বই পড়া সংক্রান্ত কতিপয় টিপস


মেহেদী আরিফ


বুঝে পড়ুন
বই পড়ুন, যথাসম্ভব বুঝে বুঝে।

দাগিয়ে পড়ুন
বই দাগিয়ে পড়ুন। (আপনার জন্য বই, বইয়ের জন্য আপনি নন।)

অভিধান
বারবার অভিধানে শব্দ খুঁজবেন না। এই বদ অভ্যাস বই পড়াতে বিঘ্ন ঘটায়। যে শব্দগুলি না দেখলেই নয় সেই শব্দগুলির অর্থই কেবলমাত্র খুঁজুন।

নোট
কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নোট করুন।

লিখুন
সাথে ডায়েরি রাখুন, গুরুত্বপূর্ণ শব্দ, বাক্যাংশ, বাক্য কিংবা লাইনগুলি লিখে রাখুন।

কলম, পেন্সিল
বিভিন্ন রংয়ের কলম, পেন্সিল, মার্কার কিংবা হাইলাইটার ব্যবহার করুন।

বিরতি
কিছুক্ষণ পর পর বিরতি দিয়ে পড়ুন।
দুই-এক দিন বিরতি নিন। চিন্তার সাগরে ডুব দিন।

ভাবুন
যা পড়েছেন তা নিয়ে ভাবুন। ভাবনা আপনাকে সেরা লেখক তৈরি করবে।

আলাপ
বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে অন্যের সাথে আলাপ করুন।

শেষ করুন
কোনো বই অনেক মজার কিংবা গুরুত্বপূর্ণ হলে তার কোন ক্ষুদ্র অংশ ফেলে রাখবেন না। কষ্ট হলেও শেষ করেই অন্য কাজ করুন।

রিভিউ লিখুন
সময় করে রিভিউ লিখে ফেলুন। বইয়ের রিভিউ একটা চমৎকার দলিল। কোনো বই দ্বিতীয় বার পড়ার সুযোগ না হলে রিভিউ দেখে তার সার সংক্ষেপ উদ্ধার করা সহজ হবে। আগামী দশ/বিশ বছর পর এটা একটা চমৎকার নোট হতে পারে।

লিখুন
বই পড়ে প্রতিদিন কিছু কিছু লিখুন।

নিয়মিত
প্রতিদিন অল্প হলেও পড়ুন। পড়াকে অভ্যাসে পরিণত করুন।

কখন বই পড়বেন না
মন যখন ভীষণ খারাপ থাকে, তখন বই পড়বেন না। মাথায় যখন কিছু ঢুকবে না, তখন বই পড়বেন না।

 

জোনাক নগরের আঙিনায়…২


আফরোজা হাসান


প্রচন্ড রকম ভালো লাগা নিয়ে নূরি যেই কাজগুলো করে তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে যায়েদ যেদিন রান্না করে হেল্পার হিসেবে সাথে থাকা। বিয়ের আগে মামণিকে দেখে প্রায় সব ধরণের রান্নাই শিখে নিয়েছিল। কিন্তু বিয়ের পর গত দেড় বছরে যায়েদের হেল্পারের কাজ করে পাকা রাঁধুনি বনে গিয়েছে। তবে যায়েদের সাথে যখন রান্না করতে আসে তখন রাঁধুনির চেয়ে হেল্পার হিসেবেই সাথে থাকতে ভালো লাগে নূরির। অন্যান্য ছুটির দিনের মতো আজও বাড়ির সবার জন্য সকালের নাস্তা বানানোর দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিলো যায়েদ। নূরির হাজির হয়ে গেলো হেল্পার হিসেবে। অন্যান্য দিনের তুলনায় কেমন যেন চুপচাপ লাগছিল যায়েদকে নূরির কাছে। কিন্তু এই অনুভূতিটা কি তার নিজের মনের খুঁতখুঁত নাকি সত্যিই যায়েদ আজ চুপচাপ ঠিক বুঝে উঠতে পারছিল না। গতরাতে নিজেকে অনেক শাসন করেছে। এরপর বুঝিয়েও বলেছে আর কখনো অন্যকারো সমস্যার প্রভাব নিজের জীবনে পড়তে দেবে না। অন্যের সমস্যা নিয়ে মশগুল না থেকে বরং যায়েদকে খুলে বলবে। কারণ যায়েদ শুধু বোঝেই না, তাকেও বুঝিয়ে দেয় অনেক সহজ করে সবকিছু। আরো কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, আপনার সাথে একটা ব্যাপার শেয়ার করতে চাচ্ছি।

যায়েদ নূরির দিকে তাকিয়ে হেসে বলল, হুম, বলো।

সমস্যাটা আমার এক ফ্রেন্ড আছে। ওর নাম ইলমা। মাস চারেক আগে বিয়ে হয়েছে ইলমার।

হুম, শুনেছিলাম বিয়ের কথা। তুমি বলেছিলে। কি সমস্যা ইলমার?

সমস্যা ওর শ্বশুরবাড়ির মানুষজন। আমার কাছে ইলমা পরামর্শ চেয়েছিল কিভাবে আপন করে নেবে শ্বশুরবাড়ির সবাইকে। এমন কি করবে যাতে শ্বশুরবাড়ির সবাইও ওকে আপন করে নেবে। আমি ওকে আমার মতো করে পরামর্শ দিয়েছিলাম। আইমিন, আপনি যেমন আমাদের বিয়ের পর আপনার পরিবারের সবার সম্পর্কে জানিয়েছিলেন। এবং আমি যেভাবে আম্মি আর বাপীর পছন্দ- অপছন্দ, ভালো লাগা ইত্যাদি জেনে এবং সেই মতো খেয়াল রাখতে চেষ্টা করেছি। জাকিয়া, জারিফা, রাওনাফ ভাবী, মাঈশা ফুপির সাথে যেভাবে বন্ধুত্ব হয়েছিল আমার। সেভাবেই সবকিছু করার পরামর্শ দিয়েছিলাম।

যায়েদ হেসে বলল, এটাকে কি ইলমার শ্বশুরবাড়ির মানুষেরা নেগেটিভ ভাবে নিয়েছে?

জ্বি। আপনি কি করে বুঝলেন?

এক মুহুর্ত সময় নিয়ে যায়েদ বলল, আমাদের পাশের ঐ বাড়িটাকে আগে আমার বড় ফুপি থাকতেন নিশ্চয়ই শুনেছো?

জ্বি আমি শুনেছি।

ফুপির বড় ছেলে মঈন আর আমি প্রায় সমবয়সী। আমরা দুইজন পড়াশোনাও করেছি একই সাবজেক্টে। ফুপির খুব ইচ্ছে ছিল জাকিয়ার সাথে মঈনের বিয়ে দেবার। কিন্তু মঈন আমাদের এক ক্লাসমেট ফারিয়াকে পছন্দ করার কারণে অমত থাকা স্বর্ত্বেও ফুপি বাধ্য হয়ে ওদের বিয়েতে রাজী হয়েছিলেন। বিয়ের পর প্রথম মাস খানেক ফুপি চুপচাপই ছিলেন। কিন্তু এরপর শুরু করেছিলেন কিচেন পলিটিক্স।

নূরি হেসে ফেলে বলল, কিচেন পলিটিক্স?

হুম, হোম পলিটিক্সকে পরিকল্পনা সমূহকে যেখানে আনজাম দেয়া হয়। কাঁটা-ছেঁড়া, জ্বালানো-পুড়ানো, বয়েলড-হাফ বয়েলড ইত্যাদি ইত্যাদি। যাইহোক, ফারিয়া চমৎকার একটি মেয়ে ছিল। ভীষণ আন্তিরক, মানিয়ে চলা স্বভাবের। ওর ফ্যামেলি খুব একটা ইসলামিক ছিল না। কিন্তু যেহেতু আমরা স্কুল থেকেই একসাথে ছিলাম। আমাদের উৎসাহে এবং নিজের চেষ্টায় ফারিয়া যথাসাধ্য চেষ্টা করতো শরীয়তের সবকিছু মেনে চলতে। বিয়ের পরেও ফারিয়া আপ্রাণ চেষ্টা করতো শ্বশুর-শ্বাশুড়ি, দুই ননদ আর দেবরদের মন জুগিয়ে চলার। মঈন আর ফারিয়ার যখন বিয়ে হয়েছিল তখন আমরা মেডিকেল ফাইনাল ইয়ারে ছিলাম। এত পড়াশোনা চাপ থাকার পরেও যখনই সময় পেত ফারিয়া ছুটে আমাদের বাড়িতে চলে আসতো আম্মির কাছে রান্না শেখার জন্য। ক্লাস থেকে ফেরার পথে ননদদের জন্য চকলেট, কেক বা ওদের পছন্দের কিছু না নিয়ে আসতো না কখনোই। প্রায়ই ফুপির জন্য টুকটাক গিফট নিয়ে আসতো। এসব ফারিয়া করতো শ্বশুরবাড়ির সবাইকে আপন করে নেবার জন্য। তাদের ভালোবাসা পাবার জন্য। প্রায়ই আমার কাছে এসে পরামর্শ চাইতো আর কি করা যায় শ্বশুরবাড়ির মানুষগুলোর জন্য। আমি আমার জ্ঞানানুযায়ী পরামর্শ দেবার চেষ্টাও করতাম। ফারিয়াকে দেখে আমি জীবনে প্রথম জেনেছিলাম কখনো কখনো মানুষের প্রতি অকৃত্রিম আন্তরিকতা দেখানোর অনেক কঠিন প্রতিদান পেতে হয়। কারণ অকৃত্রিম আন্তরিকতা প্রদর্শনের জন্য যেমন বিশাল বড় একটা মনের দরকার হয়। ঠিক তেমনি কারো অকৃত্রিম আন্তরিকতাকে গ্রহণ করার জন্যও অনেক উদার দৃষ্টিভঙ্গীর অধিকারী হতে হয়।

ফারিয়া ভাবীর আন্তরিকতাকে কি কেউ সহজ ভাবে মেনে নেয়নি?

মেনে তো নেয়ইনি উল্টো ফারিয়ার আন্তরিকতাকে ওর চালাকি, ধোঁকা দিয়ে মন জয় করার চেষ্টা ইত্যাদি নামকরণ করা হয়েছিল। আইমিন, সামনে সামনে ঠিকই ফারিয়াকে ভালো বলতো কিন্তু আড়ালে ওর উত্তম গুণাবলীর প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন করা হতো। ফুপি যখনই সুযোগ পেতেন মঈনের কাছে ফারিয়ার ভালো কাজগুলোকে মন্দ ভাবে উপস্থাপন করতেন। ফুপির দুই কন্যাও নিষ্ঠার সাথে মায়ের সহযোগী হিসেবে একই ডিউটি পালন করতো।

সবকিছু মিলিয়ে শান্ত, সমঝদার স্বভাবের মঈন কেমন যেন অস্থির স্বভাবের হয়ে যেতে শুরু করেছিল। নিজের ভালো কাজগুলোকে অবমূল্যায়নের পাশাপাশি নিন্দিত হতে দেখে ফারিয়ার মনেও ধীরে ধীরে ক্ষোভের জন্ম হয়েছিল। আর ফুপি এটাই চাইছিলেন। মঈন আর ফারিয়ার মধ্যে সমস্যা তৈরি করতে। তাই ওদের মানসিক অস্থিরতার আগুণে ফুপি বিদ্বেষের ঘি ঢালতেন খুব যত্ন সহকারে। ফলশ্রূতিতে বিয়ের সাত মাসের মাথাতেই ডিভোর্স। ফারিয়া নিজেকে সামলে নিতে পারলেও মঈন পারেনি। সবকিছু মিলিয়ে মঈনের নার্ভাস ব্রেকডাউন হয়েছিল। এরপর আর মেডিকেলও কমপ্লিট করলো না। জীবনের প্রতি মঈনের সমস্ত আকর্ষণ, ভালো লাগা সব শেষ হয়ে গিয়েছিল। এখনো মঈন ছন্নছাড়া। পরবর্তীতে ফুপি আবার বিয়ে দিয়েছেন মঈনকে। কিন্তু তাতেও কোন লাভ হয়নি। কোথায় হারিয়ে গিয়েছে ওর জীবনের উচ্ছলতা, আনন্দময়তা।

আর ফারিয়া ভাবী?

আলহামদুলিল্লাহ ফারিয়া অনেক ভালো আছে। আমার হসপিটালেই জব করছে চাইল্ড স্পেশালিষ্ট হিসেবে। তবে এরপর আর এখন পর্যন্ত বিয়ে করেনি। কিন্তু বদলে গিয়েছে ভীষণ রকম ওর চরিত্র। একমাত্র শিশুরা ছাড়া আর সবার সাথে ফারিয়ার আচরণ খুব বেশি কঠোর। মনেহয় যেন আন্তরিকতার রেশ মাত্র অবশিষ্ট নেই আর ফারিয়ার ভিতরে। কোমলতা, ভালোবাসা এখন ওর সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী। মঈন আর ফারিয়া আমার জীবনের অনেক বড় একটা শিক্ষা। বড় ফুপি যখন আমাদের বাড়িতে এসে মঈনের কথা বলেন আর আঁচলে মুখ লুকিয়ে কাঁদেন তখন আমার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটা কথা মনে পড়ে।

কি কথা?

“মেয়ের সম্মান মেয়েদের কাছেই সব চেয়ে কম। তারা জানেও না যে, এইজন্যে মেয়েদের ভাগ্যে ঘরে ঘরে অপমানিত হওয়া এত সহজ। তারা আপনার আলো আপনি নিবিয়ে বসে আছে”। নূরি একটু চিন্তা করলে তুমিও বুঝতে পারবে আমাদের সমাজে মেয়েরা সবচেয়ে বেশি ব্যথিত, অপমানিত মেয়েদের দ্বারাই হয়। শ্বাশুড়ি হয়ে বৌকে, বৌ হয়ে শ্বাশুড়িকে, ননদ হয়ে ভাবীকে, ভাবী হয়ে ননদকে, ছেলের মা হয়ে মেয়ের মাকে, প্রতিবেশিনী হয়ে প্রতিবেশিনীকে, মেয়েরাই মেয়েদেরকে ছোট করে। একে অন্যের সুখের ঘরে বিষধর সাপ ঢুকিয়ে দেয়। মেয়েরাই আসলে মেয়েদের সবচেয়ে বড় শত্রু। একজন শ্বশুর বা দেবরের কারণের কোন মেয়ের ঘর ভেঙেছে এমন কথা কিন্তু সচারচর শোনা যায় না। কিন্তু মেয়েরাই যে মেয়েদের ঘর ভাঙে সেই উদাহরণ চোখ মেলে তাকালেই দেখা মেলে। সংসারে তাই মেয়েদের সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকা উচিত অপর মেয়েদের থেকেই। বুঝেছো?

হুম! কিন্তু এমনটা হবার কারণ কি?

যায়েদ হেসে বলল, আচ্ছা তুমি সারাদিন চিন্তাভাবনা করো এই কথাগুলো নিয়ে। তারপরও যদি কারণ খুঁজে বের করতে না পারো আমি রাতে বুঝিয়ে বলবো ইনশাআল্লাহ।

এতটা ক্ষণ আমাকে টেনশন দেবেন আপনি?

হুম, দেবো। কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয় সেটা তো জানোই। ঠিক তেমনি জীবনকে নতুন উপলব্ধির রঙে রাঙাতে হলে চিন্তার সাগরে হাডুবুডু তোমাকে খেতেই হবে। সো তুমি হাবুডুবু খেতে খেতে খেতে ভেজিটেবল স্টু রান্না করো।

চলবে…

 

আসুন “জরায়ু ক্যান্সার’ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই


ফাতেমা শাহরিন


জরায়ু মুলত কি?

জরায়ু বা uterus হল, স্ত্রী প্রজনন তন্ত্রের একটি অন্যতম প্রধান অঙ্গ। জরায়ু একটি হরমোন প্রতিক্রিয়াশীল অঙ্গ। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন হরমোন ক্ষরণের দ্বারা এর কার্যপ্রণালী নিয়ন্ত্রিত হয়। গর্ভধারণ কালে ফিটাস (শিশু) জরায়ুর অভ্যন্তরে বড়ো ও বিকশিত হয়। – উইকিপিডিয়া

জরায়ু ক্যান্সার কি?

হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচ. পি. ভি) এর দীর্ঘমেয়াদী সংক্রমণ জরায়ু-মুখ ক্যান্সারের প্রধান কারণ। জরায়ু ক্যান্সারকে মৃত্যুর মুল কারণ মুলত সাইলেন্ট কিলার অর্থাৎ এই অসুখ দেখা দিলে অনেক সময় নারীরাই কোন লক্ষণ বুঝতে পারেন না। ফলে রোগ সনাক্ত করায় বিলম্বিত হয়।

জরায়ু ক্যান্সার কয় ধরনের হয়?

জরায়ুর ক্যান্সার বা যা গর্ভাশয় ক্যান্সার মুলত জরায়ু কলা থেকে উদ্ভূত। তা অনেক ধরনের ক্যান্সারকেই বোঝায়।

এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার এন্ডোমেট্রিয়াম (জরায়ুর ভেতরের আবরণ) গ্রন্থিগুলোর কোষ থেকে এন্ডোমেট্রিয়াল কার্সিনোমাসের সৃষ্টি হয়। যার মাঝে সহজে চিকিৎসাযোগ্য এন্ডোমেট্রোয়েড এডেনোকার্সিনোমা, ছাড়াও ইউটেরিন প্যাপিলারি সেরোস কার্সিনোমা এবং ইউটেরিন ক্লিয়ার-সেল কার্সিনোমার মত ভয়াবহ ক্যান্সার অন্তর্ভুক্ত।’ এন্ডোমেট্রিয়াল স্ট্রোমাল সারকোমার উৎপত্তি এন্ডোমেট্রিয়াম (জরায়ুর ভেতরের আবরণ) সংযোজক কলা থেকে, তবে এন্ডোমেট্রিয়াল কার্সিনোমাসের তুলনায় এর বিস্তার অনেক কম।’ ম্যালিগন্যান্ট মিক্সড মুলেরিয়ান টিউমার অত্যন্ত বিরল এন্ডোমেট্রিয়াল টিউমার যেখানে গ্ল্যান্ডুলার (কার্সিনোমাটাস) এবং স্ট্রোমাল (সার্কোম্যাটাস) উভয় বিভাজন লক্ষ্য করা যায়- কার্সিনোসারকোমা উচ্চতর কার্সিনোমার মতো আচরণ করে।’

সার্ভিকাল ক্যান্সার  জরায়ুর নীচের অংশের সাথে যোনির উপরের অংশের সাথে সংযোগ সৃষ্টিকারি জরায়ুমুখের ক্যান্সার।

ইউটেরিন সারকোমা মায়োমেট্রিয়ামের সারকোমা, বা জরায়ুর পেশী স্তর, সাধারণত লেইওমায়োসারকোমাস।

গর্ভকালীন ট্রফোব্লাস্ট রোগ গর্ভাবস্থার কলা থেকে উদ্ভূত নিউপ্লাস্টিক প্রক্রিয়াগুলির সাথে সম্পর্কিত যা প্রায়শই জরায়ুতে অবস্থিত।

কোন বয়সে নারীদের বেশি হয়?

জরায়ু মুখের ক্যান্সার প্রাপ্ত বয়স্ক হলে হওয়ার কথা বলে কেউ কেউ ভাবতে পারেন, এটি ভুল ধারণা । যেকোন বয়সেই নারীদের জরায়ু ক্যান্সার হতে পারে। জরায়ুর ক্যান্সার সাধারনত ৩০ থেকে ৫৫ বছর বয়সী মহিলাদের মধ্যে বেশী হয়ে থাকে। এবং আরও বলা হয় যে, যৌন সঙ্গম এর পরবর্তীকালীন সময়ে রোগটি হয়ে থাকে।

জরায়ু ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ার স্তরসমুহ

চারটি স্তর রয়েছে। রোগীর চিকিৎসা পদ্ধতিও নির্ভর করে এই চারটি স্তরের উপর। মূলত ক্যান্সার কতটা ছড়িয়ে পড়েছে, তার উপর নির্ভর করে স্তরের বিন্যাস।

স্তর-১: প্রাথমিক পর্যায়, ক্যান্সার শুধুমাত্র জরায়ু মুখে সীমাবদ্ধ রয়েছে।

স্তর-২: ক্যান্সার জরায়ু মুখের পাশে যোনীপথে কিছুটা ছড়িয়েছে।

স্তর-৩: ক্যান্সার যোনীপথের নিচের দিকে অথবা পাশে ছড়িয়েছে

স্তর-৪: ক্যান্সার সামনে মূত্রথলি, পেছনে অন্ত্রথলি অথবা দূরে যেমন ফুসফুস বা মস্তিষ্কে ছড়িয়েছে।

স্তর অনুসারে চিকিৎসার নিয়ম

অপারেশন এখানে স্তর (১ ও ২) এর প্রাথমিক অবস্থা পর্যন্ত সাধারণত ডাক্তার অপারেশন ও ঔষধ সেবন করতে বলেন। তবে এটি জরায়ুর অনেক বড় একটি অপারেশন।

রেডিওথেরাপী বাকী স্তর (৩ ও ৪) এর জন্য রশ্মি চিকিৎসা (রেডিওথেরাপী) অথবা ক্যান্সার নির্মূল ওষুধ (কেমোথেরাপি) দেওয়া হয়।

সর্তকতা ও সন্তান

রোগী গর্ভবতী থাকাবস্থায় জরায়ু মুখের ক্যান্সার ধরা পড়লে, তখন গর্ভের শিশুর জীবনের নিশ্চয়তা না দিয়ে রোগীকে বাঁচানোর জন্য রশ্মি চিকিৎসা অথবা অপারেশন করা জরুরী হয়।

জরায়ু ক্যান্সারের সাধারণ কারণ

-বাল্য বিবাহ।
-অল্প বয়সে সন্তান হওয়া।
-ঘন ঘন সন্তান হওয়া।
-ব্যক্তিগত অপরিচ্ছন্নতা।
-দীর্ঘদিন সময় জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন।
-একাধিক সেক্স সঙ্গী।

জরায়ু ক্যান্সারের হওয়ার পূর্ববর্তী কিছু লক্ষণ

-তলপেট ও কোমরে ব্যথা
-ঘন ঘন মূত্রত্যাগ করা ।
-গ্যাস , বদহজম , কোষ্ঠকাঠিন্য।
-হালকা খাবারের পর পেট ভর্তি লাগা , পেটে অস্বস্তি লাগা , ইত্যাদি পেটের কোন সমস্যা খুব বেশি হলে তা জরায়ু ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে ।
-পেটে অতিরিক্ত ব্যথা কিংবা পেট ফুলে থাকা ।
-বমি বমি ভাব কিংবা বার বার বমি হওয়া।
-ক্ষুধা কমে যাওয়া ।
-অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পাওয়া।
-ওজন অনেক বেশি কমে যাওয়া।
-সেক্স করার সময় রক্তপাত।
-সেক্স করার সময় ব্যথা পাওয়া।
-অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করা ।
-নারীদের মেনোপজ হওয়ার পরেও ব্লিডিং হওয়া ।
-দুর্গন্ধযুক্ত সাদা স্রাব।

বাংলাদেশে এই রোগের অবস্থা

বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১১ হাজার নারী জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। আর এতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন প্রায় পাঁচ কোটি নারী। এর মধ্যে নিরক্ষর ও যৌনকর্মীদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।

“লজ্জা” কি সমস্যা বাংলাদেশের নারীদের

আন্তর্জাতিক ক্যান্সার গবেষণা এজেন্সি সাম্প্রতিক এক জরীপে বলছে, বাংলাদেশে বছরে সাড়ে ছয় হাজারের বেশি নারী জরায়ু মুখের ক্যান্সারে মারা যাচ্ছে। প্রতি বছর নতুন করে ১২ হাজারের মতো নারীর শরীরে এই ক্যান্সার সনাক্ত হচ্ছে। অথচ অন্য ধরনের ক্যান্সারের তুলনায় জরায়ু মুখের ক্যান্সার খুব সহজে নির্ণয় করা যায়। বাংলাদেশের নারীরা শুধুমাত্র লজ্জার কারণে তাদের সমস্যার কথা বলতে চান না।

জরায়ু ক্যান্সারের সরকারী স্বাস্থ্যসেবা

সরকারি হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও জরায়ু মুখের ক্যান্সার নির্ণয়ের প্রাথমিক ধাপটি বিনামূল্যে দেওয়া হয়।

পরীক্ষার মাধ্যমে জরায়ু ক্যান্সার সনাক্ত

– সাধারনত DNA অথবা Pap Test এর মাধ্যমে সম্ভাব্য জরায়ু ক্যান্সার বা Dysplasia সনাক্ত করা হয়
– DNA পরীক্ষার মাধ্যমে HPV সংক্রমণের ঝুঁকি নির্ধারণ করা হয়
– বায়পসির মাধ্যমে Pre-cencer বা ক্যান্সার কোষ নিশ্চিত করা হয়।

a. Paps smear test.
b. Ultasonography.
c. Biopsy.
d. CT Scan.

জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধ

সচেতনতা সচেতনতা থাকলেই এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব।
পরিছন্নতা ব্যাক্তিগত পরিছন্নতা রক্ষা করা।
পয়ঃ প্রণালী সাস্থ্য সম্মত পয়ঃ প্রণালীর ব্যাবস্থা করা।
খাবার পচাঁ বাসি, খাবার না খাওয়া।

মনে রাখবেন, বিশ্বে প্রতি ২ মিনিটে একজন মা এই মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে করুণ ভাবে মৃত্যু বরণ করেন। আমাদের দেশে মাতৃমৃত্যুর অন্যতম কারণ এই জরায়ুতে ক্যান্সার। একটা কথা মনে রাখা দরকার, জরায়ু ক্যান্সারের রোগীকে সারাজীবন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রাখা দরকার। রোগীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থা অথবা ক্যান্সারের পুনরুত্থান-ইত্যাদি কারণে রোগীকে নিয়মিত ডাক্তারের নিবিড় তত্ত্বাবধানে রাখার নিয়ম।

রেফারেন্স

  • ১. উইকিপিডিয়া
    ২. বিবিসি নিউজ
    ৩. পরিবার পরিকল্পনা পরিষদ
    ৪. ন্যাশনাল ডাক্তার ফোরাম
    ৫. ক্যান্সার অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
    ৬. ইউনাইটেড হাসপাতাল বাংলাদেশ
  • ছবিসুত্র: ইন্টারনেট

 

ন্যান্সির সংসারে ভাঙনের পদধ্বনি


নারী সংবাদ


ন্যান্সি তার স্বামী নাজিমুজ্জামানের সাথে বর্তমানে থাকছেন না। শুধু তা না তাদের দুই সন্তান দুজনের কাছে দুই মাস ধরেই আলাদা রয়েছেন বলে জানা গেছে।

জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সির সংসারে ভাঙনের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। ন্যান্সি জানান, স্বামী নাজিমুজ্জামান জায়েদের সাথে দুই মাস ধরে থাকা হচ্ছে না। পারস্পরিক আলাপের মাধ্যমেই তারা পৃথক থাকছেন।

জানা গেছে, তাদের মধ্যে বনিবনা না হওয়ায়ই আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দু’জন মিলেই। ন্যান্সি তার বাসায় রয়েছেন।

তিনি বলেন, আমরা দুই মাস ধরে আলাদা থাকছি। অস্ট্রেলিয়া সফর থেকে দেশে আসার পর থেকেই আমরা একসাথে থাকছি না। জায়েদের বাসায় সে থাকছে আর আমার বাসায় আমি। বড় মেয়ে রোদেলা থাকছেন ন্যান্সির সাথে আর জায়েদের সাথে থাকছেন ছোট মেয়ে নায়লা।

ন্যান্সি বলেন, আমাদের মধ্যে এখনো বন্ধুত্বের সম্পর্ক অটুট রয়েছে। নিয়মিতই আমাদের কথা হয়। তবে আলাদা থাকার সিদ্ধান্তও আমাদের। ভবিষ্যৎ সম্পর্কে এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না।
সুত্র: নয়াদিগন্ত

 

জোনাক নগরের আঙিনায়…১


আফরোজা হাসান


সূর্য না থাকলে মনেহয় আমাদের জানাই হতো না নিজে ডুবে যেতে যেতেও চারিদিকে মুগ্ধময় সৌন্দর্যের বিচ্ছুরণ ঘটানো যায়, তাই না? ডুবন্ত সূর্যের দিকে তাকিয়ে আপন মনের প্রশ্নটা করলো নূরি।

নূরির পাশে বসা যায়েদও মুগ্ধ চোখে সূর্যাস্তই দেখছিল। প্রশ্ন শুনে নূরির দিকে তাকালো। একটু ক্ষণ চুপ থেকে বলল, সূর্যাস্তের প্রতীক্ষাতে উন্মুখ হয়ে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয়। যদি এমনটা না হতো তাহলে কি হতো?

ঘুরে যায়েদের দিকে তাকিয়ে নূরি বলল, জ্বি? আপনার প্রশ্নটা ঠিক বুঝিনি আমি।

যায়েদ হেসে বলল, আমরা জানি আজকের সূর্যটা ডুবে যাচ্ছে বলেই, আগামীকাল নতুন প্রভাতের আহ্বান নিয়ে হাজির হবে নতুন সূর্যোদয়। কিন্তু যদি এমনটা না হতো তাহলে কি হতো?

এবারো বুঝিনি আপনার প্রশ্ন।

বোঝনি কারণ তোমার চিন্তার ফোকাস এখন আমার কথার দিকে নেই। তুমি এখন অন্য জগতের বাসিন্দা।

এতই যখন বোঝেন তখন না প্যাঁচিয়ে সহজ কথায় বলে দিলেই তো হচ্ছে। হাসি মুখে বললো নূরি।

আমরা যদি আগামীকালের সূর্যোদয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত না থাকতাম, তাহলে কিন্তু সূর্যাস্তের সৌন্দর্য আমাদেরকে মুগ্ধ বা ভাবুক করতে পারতো না। বরং শঙ্কিত ও আতঙ্কিত করতো চির আঁধারে ঢেকে যাবার চিন্তা। তাছাড়া ডুবে যাওয়ার পথে সূর্য তো অনেক সুন্দরের স্বপ্নও দিয়ে যায়।

সেটা কিভাবে?

নক্ষত্রের রাতের স্বপ্ন! আকাশের শামিয়ানায় তারার ফুলদের বিচ্ছুরণ, জোছনার শিশির, জোনাকির টিমটিমে আলো। আরো কতো কি!

তারমানে ডুবন্ত কিছু তখনই আমাদের মনে আনন্দের আবহ তৈরি করতে পারে, যখন তার ফিরে আসার ব্যাপারে নিশ্চয়তা থাকে? যখন তার পরেও সুন্দরের আয়োজন থাকে, এই তো?

হুম, শূন্যতার সৌন্দর্য পূর্ণতার আশায় লুকায়িত।

আপনার সাথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে আসাই ঠিক না। অদ্ভুত সব তথ্য দিয়ে মনের মুগ্ধতার বারোটা বাজিয়ে দেন।

কারো সামান্য কথাতেই যে মুগ্ধতার বারোটা বেজে যায়। সেটা আসলেই মুগ্ধতা ছিল কিনা সেটা গবেষণার দাবীদার। তুমি তোমার তথ্যের দ্বারা আমার মনের একটা মুগ্ধতার বারোটা বাজিয়ে দেখাও তো দেখি!

মাফ চাই। আমি নামাজে যাচ্ছি মাগরীবের।

যাচ্ছো যাও। কিন্তু জেনে রাখো, অন্যের কথার স্রোতে যার ভালো লাগা, ভালোবাসা, পছন্দ কিংবা মুগ্ধতা ভেসে যায়। তার শেখা উচিত কিভাবে ভালোবাসতে হয়, মুগ্ধ হতে হয়।

বেশ তো! একটা ইন্সিটিউট খুলে ফেলুন আপনি। তার সামনে বড় বড় করে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিন, এখানে সঠিক পদ্ধতিতে ভালো লাগা, ভালোবাসা এবং মুগ্ধ হতে শেখানো হয়।

যায়েদ হেসে বলল, তুমি যদি সেই ইন্সটিউটের ফার্স্ট স্টুডেন্ট হতে রাজী থাকো। তাহলে আজই আমি প্রজেক্ট হাতে নিয়ে নেব ইনশাআল্লাহ।

মাফ চাই।

না না এখনই মাফ চেয়ে কাজ নেই। আমি মসজিদ থেকে মাগরীবের নামাজ আদায় করে আসি। তুমিও ততক্ষণে চিন্তা-ভাবনা করে দেখো। এরপর নাহয় জবাব দিয়ো।

আর কিছু না বলে হাসি মুখে রুমের দিকে পা বাড়ালো নূরি। যায়েদও উঠে মসজিদে রওনা হলো। মাগরীবের নামাজ আদায় করে বাড়িতে ফিরে কিছুক্ষণ আম্মি আর বাপীর সাথে বসে গল্প করে যায়েদ। আজও বাপী আর আম্মির সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে রুমে এলো। নূরিকে চুপচাপ জানালার কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে প্রচন্ড রকম বিরক্তি ভাব ঘিরে ধরলো মনকে। খানিকটা বিরক্তি মাখানো স্বরে বলল, আমার ভয়াবহ রকমের রাগ হয় কখন জানো?

প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে যায়েদের দিকে তাকালো নূরি।

যায়েদ বলল, যখন তুমি খুব কাছে থেকেও আমার সাথে থাকো না। আইমিন, শারীরিক ভাবে তো পাশে থাকো কিন্তু তোমার চিন্তা-চেতনা ব্যস্ত থাকে অন্য কিছু নিয়ে।

তখন আপনার কি করতে ইচ্ছে করে?

ছুটি কাটানোর উদ্দেশ্যে তোমাকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দিতে ইচ্ছে করে।

হেসে ফেললো নূরি। যায়েদ চেহারায় গাম্ভীর্য ধরে রেখেই বলল, কি হয়েছে সেটা কি দয়া করে বলবে? হসপিটাল থেকে ফেরার পর থেকেই দেখছি তোমার বসবাস অন্য কোথাও। তোমার মুড যদি এমনই থাকে তাহলে দয়াকরে আমাকে আগে জানিয়ে দিও। আমি সেদিন তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফিরবো না।

আপনি রাগ করছেন কেন? মন খারাপের সুরে বললো নূরি।

কারণ তুমি রাগ করার মতোই কাজ করো। আজ নতুন তো নয় এটা। গত আট মাসে একাধিক বার এমন হয়েছে। অন্য মানুষের চিন্তায় তুমি আমাদের সুন্দর সময় গুলোকে নষ্ট হয়ে যেতে দিয়েছো। হ্যা একসময় আমার স্বভাবে এই সমস্যাটি ছিল। এখন কিন্তু আমি বাইরের প্রভাব পড়তে দেই না আমাদের ব্যক্তিগত সময়ে।

আপনি আমার মতো হয়ে গিয়েছেন তো তাই আমি আপনার মতো হয়ে গিয়েছি। এখানে দোষ আমার না। দোষ নিউটনের তৃতীয় সূত্রের। “প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে”৷

যায়েদ হেসে বলল, তোমাকে আসলেই ছুটিতে পাঠাতে হবে বুঝেছো? ব্যাগ গুছিয়ে রাখো আগামীকাল সকালে হসপিটালে যাবার আগে তোমাকে বাবার বাসায় নামিয়ে দেবো।

এত সামান্য কারণে আপনি আমাকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দেবেন?

অদৃশ্য দুরুত্ব মিটিয়ে ফেলার উদ্দেশ্যে কখনো কখনো দৃশ্যমান দুরুত্ব অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়ায়। কাছাকাছি থেকে একে অন্যের উপর বিরক্ত হবার চেয়ে, কিছু সময়ের জন্য দূরে গিয়ে একে অন্যের ব্যাপারে এবং নিজ নিজ ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা সুযোগ তৈরি করে নেয়া উচিত। যাইহোক, তোমার আর আমার মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্যটা কি জানো?

কি?

তুমি যখনই আমার কোন দোষ বলো আমি বিনা তর্কে সেটা মেনে নেই। এবং শুধু মেনে নিয়েই বসে থাকি না। সেটাকে রিকোভার করার চেষ্টা করি। কিন্তু তোমাকে কিছু বললে প্রথমত তুমি মনখারাপ করো, এরপর যুক্তি দেখাও তোমার আচরণের পেছনে, সবশেষে গাল ফুলিয়ে বলো, এটুকু তো আপনি মেনে নিলেও পারেন।

ঠিকই তো মেনে নিলেই তো পারেন। আমি তো কখনোই নিজের জন্য অস্থির হই না।

এখানেই তো আপত্তি আমার। অন্যের জন্য তোমার অস্থিরতা আমি কেন মেনে নেবো? দাম্পত্য জীবনে কম্প্রোমাইজ করতে হয় এটা নিয়ে আমার কোন দ্বিমত নেই। প্রয়োজনে কম্প্রোমাইজ, স্যাক্রিফাইস করতেও আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু এসব আমি করবো আমাদের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ, অমিল বা সমস্যার ক্ষেত্রে। যাতে আমাদের সম্পর্ক আরো সুন্দর ও সহজ হয় সেই উদ্দেশ্যে। বাট অন্যদের সমস্যা কারণে তোমার এলোমেলো মুডের জন্য অবশ্যই আমি কম্প্রোমাইজ, স্যাক্রিফাইস করবো না। কেননা এই ধরণের কম্প্রোমাইজ, স্যাক্রিফাইসই একসময় গিয়ে আমাদের দুরুত্ব ও অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

হুম্ম!

তোমার হুম্ম বলার ধরণই জানিয়ে দিচ্ছে আমার কথাতে তুমি সন্তুষ্ট নও। তুমি চাও নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা স্বভাবের মানুষদের জন্য তোমার তৈরি ‘দুর্দশা দমন কমিটিতে’ আমিও নাম লেখাই। বাড়ির বাইরে সারাক্ষণ আমি এই কাজটিই করি। সুতরাং, বাড়িতে আমি শান্তি চাই। সাউন্ড স্লীপ শান্তি।

নূরি হেসে বলল, শান্তি আবার সাউন্ড স্লীপ হয় কিভাবে?

যখন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা ও সমঝদারির বন্ডিংটা এতখানিক দৃঢ় হয় যে, বাইরের মানুষদের অকারণ হৈ-হুল্লোর তাতে কোন প্রভাবই ফেলতে পারে না। সেটাই হচ্ছে দাম্পত্য প্রশান্তি।

আমাদের উপর কবে কার প্রভাব পড়লো? অবাক কন্ঠে প্রশ্ন করলো নূরি।

এখনো পড়েনি। কিন্তু তুমি যে পথে চলছো তাতে খুব শিঘ্রীই যে পড়তে শুরু করবে তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। কারণ তুমি যুক্তি মানি কিন্তু তালগাছ আমার স্বভাবের মানুষ।

হায় আল্লাহ! এক বসাতে আর কত অপবাদ চাপাবেন আপনি আমার উপর? আমি কবে তালগাছ নিয়ে যুক্তিতর্ক করলাম আপনার সাথে?

এই যে তোমাকে যখনই বোঝাতে যাই তুমি হুম্ম বলো। এরপর যা করছিলে সেটাই করতে থাকো। এর মানে কি?

আপনিই বলেন কি এর মানে?

এরমানে আমার যুক্তিতে তোমার কোন আপত্তি নেই। আবার একই সাথে নিজের করণীয়তেও তোমার পূর্ন সম্মতি বিদ্যমান। অন্যেকে নিয়ে চিন্তাভাবনার ফলে আমাদের ব্যক্তিগত সময় নষ্ট হচ্ছে, হয় এটা তুমিও জানো। কিন্তু তাই বলে তুমি অন্যেদের নিয়ে ভাবনা ছেড়ে দেবে না। বরং তুমিও সঠিক সেই ব্যাপারে আমাকে কনভিন্স করার চেষ্টা করবে।

আপনি আমাকে কি করতে বলছেন? আমার সামনে কেউ সমস্যাগ্রস্ত থাকবে, কষ্টে থাকবে আর আমি দেখেও না দেখার ভান করবো?

তোমার সাথে অনর্থক কথা বলার চাইতে ঘুমোনো উত্তম। কথা শেষ করেই হাত বাড়িয়ে রুমের বাতি নিভিয়ে দিয়ে চাদর টেনে নিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো যায়েদ।

অন্ধকারের মাঝেও বিস্ময় ভরা দৃষ্টিতে যায়েদের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ বসে রইলো নূরি। এরপর ধীরে ধীরে বলল, বিরুপ পরিস্থিতিতে আপনজনদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া অনেক সহজ। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সমস্যার মোকাবিলায় ভূমিকা রাখাটা হচ্ছে কঠিন। সবসময় হয়তো চাইলেও সম্ভব হয়না কাউকে তার সমস্যা থেকে বের করে নিয়ে আসা। কিন্তু এর ফলে সমস্যায় পতিত ব্যক্তির মনে অন্তত এইটুকু স্বস্থি থাকে যে সে একা নয়। কেউ আছে তার পাশে ঝড়ের মোকাবিলায়। আমরা যদি কোন প্রিয়জনকে বৃষ্টি কিংবা খরতাপ থেকে বাঁচানোর জন্য ছাতা নিয়ে ছুটে গিয়ে তার পাশে দাঁড়াই। কখনো কি সম্ভব বৃষ্টির কিছু ফোঁটা কিংবা রোদের একটুও তাপ গায়ে না লাগিয়ে এমনটা করা? তাহলে এমন আশা কিভাবে করি যে, কারো মানসিক ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধতা সময় পাশে গিয়ে দাঁড়াবো। কিন্তু আমাদের মন থাকবে সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত? কন্দনরত কারো পাশে যদি হাসি মুখে কাউকে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় দেখতে পাই সেটাই কি অস্বাভাবিক হবে না? আবার বেদনাক্ত কারো পাশ থেকে উঠে এসেই যদি আনন্দ উল্লাসে মগ্ন হয় কেউ, তাকে মুখোশধারী বা হিপোক্রেট ভাবাটাই স্বাভাবিক নয়?

নূরির কথা চুপচাপ শুনছিল যায়েদ। নূরি থামার পর হাত বাড়িয়ে বাতি জ্বালিয়ে উঠে বসে বলল, তুমি ঠিক কি বোঝাতে চাইছো না প্যাঁচিয়ে সহজ করে বলো।

আমি এটাই বলতে চাইছি যে আপনজনদের দুঃখে যদি আমাদের জীবনে কোন প্রভাবই না পড়ে। আমাদের জীবনের সবকিছু যদি স্বাভাবিক ভাবেই চলতে থাকে। তারমানে আমরা আসলেই তার আপন কেউ কিনা সেটা গবেষণার দাবী রাখে।

আমার কি মনে হয় জানো?

কি?

তোমার কথা মেনে নেবার আগ পর্যন্ত যে পরিমাণ নিষ্ঠার সাথে তুমি আমার পেছনে লেগে থাকো। এতে সন্দেহের কোন অবকাশই নেই যদি নেপোলিয়নের যুগে তোমার জন্ম হতো, তাহলে অধ্যবসায়ের উদাহরণে মাকড়সার বদলে তোমার নাম ব্যবহৃত হতো। ছোট ছোট শিশুরা অধ্যবসায় রচনায় মাকড়সা নয় নূরির পুনঃ পুনঃ চেষ্টার কাহিনী পড়ে উৎসাহিত হতো।

হেসে ফেলতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলো নূরি। গাল ফুলিয়ে আদুরে কন্ঠে বলল, আমার সম্পর্কে আপনার ধারণা এমন?

যায়েদ হেসে বলল, নূরি মনে আছে তুমিই আমাকে একদিন বলেছিলে যে, কেউ যখন আমাদের পাশে থাকে তখন তার কথা ও কাজের দিকে মনোযোগ না দেয়াটা এক অর্থে তাকে অসম্মান করা। তোমার এই কথাটাকে আমি প্রচন্ড রকম সিরিয়াস ভাবে নিয়েছিলাম। যা আমাকে আমার এই বদভ্যাসটা থেকে বেড়িয়ে আসতে সহায়তা করেছিল। কারণ আমি নিজেও ফিল করেছিলাম আসলেই এটা খুবই অশোভন কিছু। একজন মানুষ আমার পাশে বসে কথা বলছে অথচ আমি সম্পূর্ণ রূপে তাকে ইগনোর করে নিজের ভাবনাতে মশগুল। আর এই ব্যাপারটা সেই ব্যক্তির জন্যও বেদনাদায়ক যে খুব আশা করে তার মনের কথা প্রিয় কারো সাথে শেয়ার করতে চেয়েছিল। কিন্তু সেই প্রিয়জন তার কথাটা শুনে দেখার প্রয়োজনও বোধ করেনি।

জ্বি আমি এই বেদনার সাথে পরিচিত।

তাহলে সেই বেদনা অন্যেকে কেন দাও? অভিজ্ঞতা আনন্দময় হোক কিংবা বেদনাদায়ক। জীবনকে সেটা প্রয়োগ করার জন্যই তো, তাই না?

আই এম সরি।

হাত বাড়িয়ে নূরিকে কাছে টেনে নিয়ে যায়েদ বলল, এই বিষয়গুলো খুব সিম্পল নূরি। আমরা তাই তেমন গুরুত্ব দিয়ে ভাবি না অন্যের প্রতি আমাদের এই অবহেলা সমূহকে। অথচ সত্যি কথা হচ্ছে, এমন ছোট ছোট বিষয়গুলোর প্রতি এক্সট্রা কেয়ারই সম্পর্কের মধ্যে মাধুর্য বৃদ্ধি ও অক্ষুণ্ণ রাখে। আমি তাই কখনোই চাই না অন্য কোন ভাবনার গোলকধাঁধায় মগ্ন থেকে আমরা পরস্পরের প্রতি বেখায়ালী আচরণ করি।

আমিও এমনটা চাই না। কখনোই চাই না।

আমি জানি তুমি চাও না। সাথে সাথে আমি এটাও জানি যে, সবসময় নিজের ভাবনার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব নয় আমাদের দ্বারা। তাই আজ আবারো বলছি তোমার যদি কখনো ভালো না লাগে, কথা বলতে ইচ্ছে না করে, এমন কোন বিষয় যদি থাকে যা তুমি আমার সাথে শেয়ার করতেও ইচ্ছুক নও। আমাকে সরাসরি বলবে। আমি তোমাকে সময় দেব এবং তুমি নিজেকে গুছিয়ে নেবার আগ পর্যন্ত ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষাও করবো ইনশাআল্লাহ। কিন্তু যখন আমরা একসাথে সময় কাটাবো তখন তোমার কোন ধরণের বিষণ্ণতা, উদাসীনতা আমি মেনে নেব না। যতক্ষণ তুমি আমার সাথে থাকবে হান্ডেড পার্সেন্ট ফোকাস থাকতে হবে তোমাকে। তুমি এমনটা ভেবো না যে আমি তোমার উপর এটা চাপিয়ে দিচ্ছি। কারণ আমি নিজেও তোমার সাথে কাটানো প্রতিটি মূহুর্তে ফোকাস থাকতে আপ্রাণ চেষ্টা করি। সো এই একই নিয়ম আমার জন্যও।

নূরি বলল, আমি বুঝতে পেরেছি। ইনশাআল্লাহ আমি খেয়াল রাখবো।

যায়েদ হেসে বলল, এই তো গুড গার্ল। এখন তাহলে চলো ঘুমোনোর আয়োজন করা যাক!

নূরি হাসি মুখে বলল, জ্বি।

চলবে….

 

নববধূকে ধর্ষণে সহায়তা করলো স্বামী!


নারী সংবাদ


মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে এক নববধূকে ধর্ষণে সহায়তার অভিযোগে তার স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অপর ঘটনায় স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে একজনকে আটক করেছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শ্রীনগর উপজেলার পশ্চিম কোলাপাড়া গ্রামে স্বামীর সহযোগিতায় এক গৃহবধূকে হাত-পা বেঁধে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার রাত আনুমানিক ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

প্রায় তিন মাস আগে উপজেলার কোলাপাড়া গ্রামের মৃত বাছের শেখের ছেলে আজিজুলের সাথে বিয়ে হয় একই উপজেলার শ্যামসিদ্ধি গ্রামের ওই নারীর। স্বামী আজিজুলের শারীরিক অক্ষমতার কারণে বিয়ের পর থেকে এ পর্যন্ত তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনো দৈহিক ও শারীরিক সম্পর্ক হয়নি।

এক পর্যায়ে স্বামীর শারীরিক অক্ষমতার কারণে সংসার না করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে বিয়ের সময় দেয়া যৌতুকের টাকা ও অন্যান্য উপঢৌকন ফিরিয়ে দিতে বলেন ওই নারী। স্বামী আজিজুল যৌতুক ফিরিয়ে না দেয়া ও তার শারীরিক অক্ষমতা বাইরে যাতে প্রকাশ না হয় সে বিষয়ে ভিন্ন কৌশলের পরামর্শ নেন তার আপন মামা সিদ্দিকের কাছে।

সিদ্দিকের পরামর্শ অনুযায়ী আজিজুল তার আপন খালা ও খালাতো ভাই নুরুল ইসলামকে কোলাপাড়ায় তার নিজ বাড়ির একটি ঘরে রাত্রি যাপন করান। এক পর্যায়ে রাত ১০টার দিকে নুরুল ইসলামের মা মাথা ব্যাথার মলম নেওয়ার কৌশলে ঘুমন্ত আজিজুল ও তার স্ত্রীকে ঘরের দরজা খুলতে বলে।

পরামর্শ ও পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আজিজুল তার নিজের ঘরের দরজা খুলে দেয়। ঘরের ভিতর ঢুকে নুরুল ইসলামের মা, নুরুল ইসলাম ও আজিজুল সবাই মিলে ওই নারীকে হাত-পা বেঁধে ফেলে এবং মুখে কাপড় গুঁজে দেয়। এরপর নুরুল ইসলাম, ধর্ষিতার স্বামী আজিজুল ও নুরুল ইসলামের মা ব্লেড দিয়ে ওই নারীর শরীরের বিভিন্ন অংশের কাপড় কেটে তাকে উলঙ্গ করে ফেলে। এর পর নুরুল ইসলাম হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তাকে ধর্ষণ করে। এ সময় ধর্ষিতার স্বামী আজিজুল এই ধর্ষণের দৃশ্য মোবাইল ফোনে ভিডিও করতে থাকে।

অপরদিকে একই রাতে উপজেলার কোলাপাড়া ইউনিয়নের ব্রাহ্মণ পাইকসা গ্রামের এক স্কুলছাত্রী রাত পৌনে ১২টার দিকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘর থেকে বের হলে একই গ্রামের মাজেদ শেখের বখাটে ছেলে রাকিব হাসান (২৫) ঘরে ঢুকে লুকিয়ে থাকে। পরে কোলাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ওই ছাত্রীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এসময় স্কুলছাত্রীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে ধর্ষক রাকিব হাসানকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।

শ্রীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো: ইউনুচ আলী জানান, দুটি ঘটনায়ই আলাদা আলাদা ভাবে দুটি মামলা হয়েছে। ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য স্কুলছাত্রীকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে আর নববধূকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। গৃহবধূর স্বামী ও স্কুলছাত্রীর ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্তকে আটক করা হয়েছে। নববধূর ধর্ষককে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
সুত্র:নয়াদিগন্ত।

 

‘অপরাজিতাবিডি’ ২০১৮ সালের সালতামামি

 


নারী সংবাদ


২০১৮ সালের সালতামামি লেখার চেষ্টা। ২০১৮ সাল কেমন গেল— এ প্রসঙ্গে বলতে গেলে প্রথমে আমাদের অনলাইন ম্যাগাজিন ‘অপরাজিতাবিডির’ এ বছর সম্পর্কে একটু ছোট্ট ধারণা দিতে চাই।

এ বছর ১৬টি ক্যাটাগরি ঠিক করা হয়।
উল্লেখযোগ্য ক্যাটাগরি গুলো হল, অপরাজিতা/ মেইক ইউরসেলফ/ ইন্টারন্যাশনাল উইমেন্স/ঘরকন্যা/ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা/প্যারেন্টিং/নারীর জন্য আইন/স্বাস্থ্যকথা/নারী সংবাদ/ মনের জানালা/সাহিত্য/ দাম্পত্য /কি পড়বেন, অন্যান্য ।

এ বছরের উল্লেখযোগ্য পোস্ট হল,

অপরাজিতা

১.অধ্যাপিকা চেমন আরা

অধ্যাপিকা চেমন আরা

২.বিশিষ্ট সাহিত্যিক ফরিদা হোসেনের সাক্ষাৎকার

বিশিষ্ট সাহিত্যিক ফরিদা হোসেনের সাক্ষাৎকার

দাম্পত্য

১.দাম্পত্য জীবনের কিছু কথা

দাম্পত্য জীবনের কিছু কথা

২.বৈবাহিক সমস্যা ও কোরআনের সমাধান

বৈবাহিক সমস্যা ও কোরআনের সমাধান -৫

৩.দাম্পত্য জীবনে দুইটা ব্যাপার

দাম্পত্য জীবনে দুইটা ব্যাপার

প্যারেন্টিং

১.খেলনার বদলে শিশুর মোবাইল চাই!

খেলনার বদলে শিশুর মোবাইল চাই!

২.ভাল প্যারেন্টিং এর জন্য ৫টি টিপস

ভাল প্যারেন্টিং এর জন্য ৫টি টিপস

৩.নবজাতকে দেখতে যাবার সময় কি করবেন

নবজাতকে দেখতে যাবার সময় কি করবেন

মনের জানালা

১.অনাবিল এক প্রশান্তি

অনাবিল এক প্রশান্তি

২.‘গায়ের রঙ এবং আমাদের মানসিকতা’

‘গায়ের রঙ এবং আমাদের মানসিকতা’

৩.জ্ঞানার্জন আমাকে বিনয়ী করছে তো?

জ্ঞানার্জন আমাকে বিনয়ী করছে তো?

স্বাস্থ্যকথা

১.শিশুর ডায়াবেটিকস ঝুঁকি

শিশুর ডায়াবেটিকস ঝুঁকি

২.‘মাথাব্যথা আর সমস্যা নয়’

‘মাথাব্যথা আর সমস্যা নয়’

৩.স্তন ক্যানসার : সচেতনতাই যার প্রতিকার

স্তন ক্যানসার : সচেতনতাই যার প্রতিকার – ২য় পর্ব

৪.‘প্রেগনেন্সি’

‘প্রেগনেন্সি’

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা

১.শুধু প্রণোদনা নয়, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য প্রশিক্ষণও প্রয়োজন

শুধু প্রণোদনা নয়, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য প্রশিক্ষণও প্রয়োজন

২.‘নিজের কাজকে সন্মান করুন’

‘নিজের কাজকে সন্মান করুন’

৩.“আমাকে পারতেই হবে”

“আমাকে পারতেই হবে”

মেইক ইউরসেলফ

১.সুন্দর কথা হল ‘শিল্প’

সুন্দর কথা হল ‘শিল্প’

২.কিভাবে স্মার্ট হবেন?

কিভাবে স্মার্ট হবেন?

৩.ব্যক্তিত্ব প্রকাশে হাসির ভূমিকা

ব্যক্তিত্ব প্রকাশে হাসির ভূমিকা

৪.‘ফটোগ্রাফি নারীদের কি ক্যারিয়ার হতে পারে’

‘ফটোগ্রাফি নারীদের কি ক্যারিয়ার হতে পারে’

সাহিত্য

১.“কৃষ্ণচূড়ার কিশোরী জীবন”

“কৃষ্ণচূড়ার কিশোরী জীবন”

২.সুবহে সাদিক

সুবহে সাদিক

৩.ক্লান্তিহীন ভালোবাসা

ক্লান্তিহীন ভালোবাসা

কি পড়বেন

১.বুক রিভিউ – ‘সফলদের স্বপ্নগাথা’

বুক রিভিউ – ‘সফলদের স্বপ্নগাথা’

২.বইয়ের নামঃ জ্ঞানতাপস ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্

বইয়ের নামঃ জ্ঞানতাপস ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্

৩.কাবিলের বোন

কাবিলের বোন

কয়েকটি পোস্ট জানলে পুরো ম্যাগাজিন সম্পর্কে জানা যাবে। অর্থাৎ ভাতের একটা দানা টিপে সব ভাত সিদ্ধ হয়েছে কিনা দেখা।

এ বছরটি  বিস্তর নারী সাফল্য সম্পর্কে পড়েছি, লেখালেখি করেছি। আশা করি স্বল্প পরিসরে নারীর সাফল্য ও নারী নির্যাতনের একটা চিত্র খুঁজে পাবেন।

নারীর সাফল্য

নারী শিক্ষা

সরকারের গত ৯ বছরের নিরন্তর প্রচেষ্টায় বর্তমানে দেশে নারী শিক্ষার হার ৫০ দশমিক ৫৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) হিসেব অনুযায়ী বর্তমানে প্রাথমিক পর্যায়ে মোট ছাত্রছাত্রীর প্রায় ৫১ শতাংশ, মাধ্যমিক পর্যায়ে ৫৪ শতাংশ, এইচএসসি পর্যায়ে ৪৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ ছাত্রী। নারীশিক্ষার হার বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯ নম্বরে।

প্রথম নারী মেজর জেনারেল

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম নারী মেজর জেনারেল হয়েছেন সুসানে গীতি। ২০১৮ সালে এটিও নারীর উল্লেখযোগ্য অর্জনের মধ্যে একটি।

টু ফিঙ্গার টেস্ট নিষিদ্ধ

ধর্ষণের শিকার নারী ও শিশুর শারীরিক পরীক্ষার জন্য আগে টু ফিঙ্গার টেস্ট ব্যবহৃত হতো। বিগত বছর টু ফিঙ্গার টেস্ট নিষিদ্ধ করেছেন হাইকোর্ট। ধর্ষণ প্রমাণে শারীরিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে এই টেস্টের কোনো বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি নেই। তাছাড়া ধর্ষণের ক্ষেত্রে পিভি টেস্ট নামে বায়ো ম্যানুয়াল টেস্ট করাও নিষিদ্ধ করেছেন হাইকোর্ট। শুধু তাই নয়, ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীর স্বাস্থ্যগত সেবাসহ অন্যান্য সেবা সবার আগে নিশ্চিত করার ব্যাপারটিও ২০১৮ সালেই কার্যকর হয়েছে।

নারী উন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগ

নারী উন্নয়ন ও সমতার লক্ষ্যে মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (MDG) ও দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্রের (NSAPR) আলোকে নারী উন্নয়ন নীতিমালা বাস্তবায়নকল্পে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রালয়ের অধীন মহিলাবিষয়ক অধিদফতরের মাধ্যমে উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

নারী নির্যাতনের চিত্র

২০১৭ সালের চিত্র…..

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ২০১৭ সালের নারী নির্যাতনের পরিসংখ্যান মতে, জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১ হাজার ৭৯, যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১৫৫, উত্ত্যক্ত করা হয়েছে ২৫৫ জনকে। এ বছর এ পর্যন্ত নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১ হাজার ৭৩৭ জন। ২০১৬ সালে ছিল ১ হাজার ৪৫৩ জন। এ বছর তা বেড়েছে। গ্রন্থনা : রীতা ভৌমিক, আবুল বাশার ফিরোজ ও শিল্পী নাগ।

২০১৮ সালের চিত্র….

২০১৮ সালে প্রথম ১০ মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৬৪৬ জন নারী। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছেন ৫৩ জনকে। আর যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৪১ জন নারী। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আজ রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশে নারী ও কন্যা নির্যাতন চিত্র ২০১৮-এর সমীক্ষায় এসব তথ্য তুলে ধরে।

সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৬৫ জন নারী, ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ১১৫ জন নারীকে এবং শ্লীলতাহানির শিকার ৫৫ জন নারী। এ ছাড়া উত্ত্যক্তের শিকার হয়েছেন ১৪০ জন নারী এবং উত্ত্যক্তে শিকার হওয়ার কারণে আত্মহত্যা করেছেন ১৪ জন নারী।

 

দেশে বছরে জরায়ু ক্যান্সারে মারা যায় প্রায় ১১ হাজার নারী


নারী সংবাদ


বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১১ হাজার নারী জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। আর এতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন প্রায় পাঁচ কোটি নারী। এর মধ্যে নিরক্ষর ও যৌনকর্মীদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। সম্প্রতি পরিচালিত একটি গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। দেশের চারটি জেলায় সহস্রাধিক নারী ও যৌনকর্মীর ওপর জরিপ চালিয়ে গবেষণার এ ফলাফল প্রকাশ করেছে একদল জরায়ু ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ।
গবেষণার ফলাফলে প্রকাশ- অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক, বাল্যবিবাহ, ধূমপান বা তামাক সেবন, অধিক সন্তান প্রসবসহ সাতটি কারণে জরায়ু ক্যান্সার হয়ে থাকে। তবে, সঠিক সময়ে জরায়ু ক্যান্সারের উপস্থিতি নির্ণয় করতে পারলে তা নিরাময়যোগ্য।
গবেষক দলের প্রধান ছিলেন স্কয়ার হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সুলতানা রাজিয়া বেগম। তার সহযোগীরা হলেন- ডা. নাসিমা শাহীন, ডা. সামছুন্নাহার, ডা. সোনিয়া পারভীন এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি অনুষদের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এ কে এম আনিসুর রহমান ও ড. তৌহিদুল ইসলাম।
সম্প্রতি চীনের বেইজিংয়ে এশিয়া-ওশেনিয়া রিসার্চ অর্গানাইজেশন আয়োজিত ‘জেনিটাল ইনফেকশেন অ্যান্ড নিওপাশিয়া’ বিষয়ের ওপর ষষ্ঠ দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে বাংলাদেশের জরায়ু ক্যান্সারের ওপর এ গবেষণাটি পোস্টার আকারে প্রদর্শন করা হয়। সম্মেলনে প্রদর্শিত এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ২৫টি অংশগ্রহণকারী দলের ৩৫টি পোস্টারের মধ্যে বাংলাদেশি গবেষকদের এই পোস্টারটি প্রথম স্থান লাভ করে।
প্রজনন শিক্ষা এবং প্রজনন স্বাস্থ্য খাতে সঠিক নীতিমালার অভাবে দিন-দিন জরায়ু ক্যান্সার মারাত্মক আকার ধারণ করছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে এটি মহামারী আকার ধারণ করতে পারে বলে জানিয়েছেন গবেষক দলের সদস্য অধ্যাপক ড. মোজাহিদ উদ্দিন আহমেদ।
ড. মোজাহিদ বলেন, খাগড়াছড়ি, জামালপুর, টাঙ্গাইল, গাজীপুর জেলার প্রায় সহস্রাধিক নারী ও যৌনকর্মীদের ওপর গবেষণাটি চালানো হয়েছে। এতে দেখা যায়, প্রায় ১১ শতাংশ গ্রামীণ নারী এবং ৩১ শতাংশ যৌনকর্মী জরায়ু ক্যান্সার সৃষ্টিকারী প্যাপিলোমা ভাইরাস বহন করে।
ভাইরাস বহনকারী এসব নারীদের আপাত দৃষ্টিতে দেখতে সুস্থ মনে হলেও যেকোন সময় তারা জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন। অনিয়মিত ও অধিক সময় ধরে রক্তস্রাব, কারণ ছাড়াই জরায়ু থেকে রক্তপাত, সঙ্গমের সময় রক্তপাত, তলপেটে প্রচন্ড ব্যথা জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ। এর যেকোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলে বুঝতে হবে জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তিনি জানান, জরায়ু ক্যান্সারের মূল সাতটি কারণ হলোÑ অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক, বাল্যবিবাহ, অধিক সন্তান প্রসব, ধুমপান বা তামাক সেবন, ঘন ঘন সন্তান প্রসব, স্বেচ্ছায় গর্ভপাত এবং প্রজনন শিক্ষার অভাব। তবে, যেসব পুরুষ একাধিক নারীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হন, তিনি বাহক হিসেবে প্যাপিলোমা ভাইরাস অন্য নারীর দেহে ছড়াতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে ওই পুরুষও লিঙ্গ ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন।
ড. মোজাহিদ আরো জানান, জরায়ু ক্যান্সার এমন একটি ক্যান্সার যা নিরাময়যোগ্য। যখন সংক্রমণ প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে তখনই এর উপস্থিতি নির্ণয় ও নিরাময় করা সম্ভব। এছাড়া, প্রতিষেধক টিকা গ্রহণ করে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। বছরে একবার জরায়ু পরীক্ষার মাধ্যমে সতর্কতা অবলম্বন করে এ রোগের হাত থেকে মুক্ত থাকা যেতে পারে।
গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুলতানা রাজিয়া বেগম বলেন, বাংলাদেশের নারীদের আক্রমণকারী ১০ ধরনের ক্যান্সারের মধ্যে জরায়ুর ক্যান্সার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে, যা শতকরা ১৯ দশমিক ২ ভাগ। অনেক নারী জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন। অথচ তার পরিবার জানেন না তিনি কি কারণে মারা যাচ্ছেন।
লজ্জাবশত অনেক নারীই জরায়ু ক্যান্সারের প্রাথমিক উপসর্গগুলো লুকিয়ে রাখেন, পরীক্ষা করতে চান না। ফলে তারা ধীরে-ধীরে জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। যৌন ও প্রজনন শিক্ষা এবং সচেতনতাই পারে জরায়ু ক্যান্সার থেকে মুক্তি দিতে। সে ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা, গ্রামে এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলে ক্যাম্পেইন করা গেলে এ রোগ থেকে দেশের নারী সমাজকে পরিত্রাণ দেওয়া সম্ভব বলে জানান ডা. সুলতানা রাজিয়া।
সুত্রঃ বাসস।

 

নিরালাপুঞ্জী।


ফাতিমা খান


শহর থেকে দূরে পাহাড়ের উপর ছিমছাম ছোট্ট একটা গ্রাম বলা যায়। যদিও এখানকার সরল মানুষগুলোর ধারণা তারা কোন গ্রামেও থাকে না আর শহর থেকে অনেক দূরেও তাদের আবাস না, এর থেকেও প্রত্যান্ত অঞ্চলে মানুষজন আছে এবং থাকছে। তারা আছে তো বেশ! আমার ‘সোয়ামী’ ডাক্তার সাহেব গিয়েছিলেন সরকারী সফরে আর আমি গিয়েছিলাম ওদের দেখতে।

গ্রামটার একদম শেষ মাথায় ঘন জংগল। আকাশ ছুঁইছুঁই করা বেশ কিছু গাছ, কিছু নিরপরাধ গুল্ম আর কিছু নামহীন ফুলের ঝোপঝাড়, এগুলোই জংগলের শোভা। সবুজ ঘাস আর ফার্ণ জাতীয় উদ্ভিদগুলো জংগলের ঘনত্ব বাড়িয়েছে দিগুণ। কম প্রস্থের মেঠো পথগুলোর দুপাশে বিশাল বিশাল খাদ। কিনারে দাঁড়িয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আমার গা শিয়রে উঠেছিল। খাদের শেষ আমি দেখতে পাইনি। অথচ কেবল হাটতে শেখা গ্যাদা বাচ্চাগুলো দিব্যি কিনার দিয়ে দৌড়ে বেড়াচ্ছে। আমি যখন খাদের তলানি খুঁজতে ব্যস্ত তখন ৪/৫ বছরের এক খোকা খাদের গা ঘেঁষে বেড়ে উঠা এক সুঠাম গাছের দুর্বল বাহুতে দিব্যি দোলা খেতে খেতে আমাকে একটা ভেংচি কাটল। এই বাচ্চাগুলো বড় হলে ওদের ঝুলিতে জমে থাকবে অনেক দূরন্ত, দুঃসাহসী স্মৃতি। আমি ওদের সামনে সত্যি এক আনাড়ি !

দুইপাশে সারি সারি মাটির ঘর। এদের বাসিন্দাদের বেশীরভাগই পান শ্রমিক, নয়ত পান ব্যবসায়ী ।ওরা থাকে এসব মাটির ঘরে। অনেকেই খাসিয়া দলের না, জীবিকার সন্ধানে এখান ওখান থেকে আসা মানুষ।

ওদের দলনেতাকে ওরা মন্ত্রী বলে। মন্ত্রী আর তার পরিবারের সদস্যদের বাড়িগুলো শুধু আধুনিক মানের, পাকা বিল্ডিং পরিপাটি।

পুরাটাই জংগল এলাকা বলে সাপের ভয়ও আছে এখানে। বর্ষাকালে সাপের আনাগোনা বেশী, শীতকালে যে একদম নাই, এমনটাও না। শেয়াল, বনবিড়াল, হাতি, সজারু, বানর, অন্যান্য বন্য প্রানীগুলোর সাথে এখানকার মানুষ ভালই ভাব জমিয়ে রেখেছে।

নিরালাপুঞ্জীর মানুষগুলো মূলত খাসিয়া উপজাতির। বাংলাদেশ ইন্ডিয়ার বর্ডার এর থেকে শুধু ২ কিলো মিটার দক্ষিণপূর্ব দিকে পাহাড় আর সবুজ দিয়ে ঘেরা এই নিরালাপুঞ্জী। এখানকার মানুষগুলোর নিজস্ব ভাষা, পোষাক আর সংস্কৃতি আছে। কোন এক সময় তাদের অবস্থা যেমনই থাকুক না কেন দিনকে দিন তারা উন্নতি করে চলেছে, এর পেছনের একমাত্র রহস্য তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম। দলনেতা বা মন্ত্রীর সাথে কথা বলে জানলাম, তার ছেলেমেয়েরা প্রতিবেশী দেশ ভারতে লেখাপড়া করছে।

চলতে চলতে আমার সাথে এসেছিল ওই মাটির বাড়িগুলোর কোন একটা বাড়ির বউ। সে খাসিয়া নয়, বাড়ি কুমিল্লা। শ্বশুর শাশুড়ি বাবা মা সবাইকে নিয়েই সে এক কক্ষের মাটির ঘরটায় থাকে। বয়স পচিশ হবে, চোখ জোড়া কোটরে ঢুকানো, হাসতে গেলে চোয়ালের হাড় খানিকটা নড়ে চড়ে উঠে, অবয়বে বোঝা যায় অপুষ্টে বেড়ে উঠা শরীর।

এই ফ্যাকাশে হাসিখুশী মেয়েটাকেই জিজ্ঞেস করলাম,

“আচ্ছা, তোমাদের এখানে সাপ আসে না? “

“আসে, তয় কিছু করে না। লাডি নিয়া দৌড়াইলে উলটা ওরাই ভয় পায়। আপনি যান ম্যাডাম। সাপ আপনারে ধরব না। ”
এই অভয়বাণীতে সান্তণা পেলাম বটে, কিন্তু ভয় দূর হল না একটুও। সাপ তো সাপই, সে আবার কিছু না করে কেমনে? বুঝলাম তারা নিতান্ত প্রাকৃতিক জীবনযাপন করছে।

প্রকৃতির কোলে বেড়ে ওঠা এই মানুষগুলো প্রকৃতির অতিচেনা আপনজন। সময় বা পরিস্থিতি বিশেষ কখনও লাঠি তুলে নেয়া প্রয়োজন হলেও কারণ বিনা তারা একান্ত পড়শী। দিনশেষে সন্ধ্যা নামছিল, এখানেও আলোর পর আধার আসে, রাতের পরে দিন। মনে হয়েছিল মাটির দেশে সবুজের আবেশে মাটির ঘরগুলোতে চাইনিজ পুতুলের মত মাটির মানুষগুলোই বসবাস করে।

 

নারীদের ঝগড়ায় সংঘর্ষ, নিহত ১


নারী সংবাদ


সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় নারীদের ঝগড়াকে কেন্দ্র করে প্রতিবেশী দুই পক্ষের সংঘর্ষে সাইফুল ইসলাম (৪০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার সকাল ৮টার দিকে উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

সাইফুল মহেশপুর গ্রামের সোনা মিয়া তালুকদারের ছেলে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে শনিবার সকাল ৭টার দিকে সাইফুল ইসলামের স্ত্রী তাসলিমা বেগমের সঙ্গে প্রতিবেশী মিষ্টার মিয়ার স্ত্রী রোজিনা আক্তারের ঝগড়া হয়। এরই জেরে সাইফুল ও মিষ্টার মিয়ার মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে সাইফুল অচেতন হয়ে মাটিতে লুটে পড়েন। স্থানীয় লোকজন সাইফুলকে উদ্ধার করে জয়শ্রী বাজারে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে সেখানে ওই চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।। সুত্র:সমকাল।

 

“হারমোনিয়াম”


মোঃ দেলোয়ার হোসেন


পাত্রপক্ষ ও কন্যাপক্ষের মধ্যে ঘটকালির কাজটি সারলেন আমার দূরসম্পর্কের এক মুরুব্বি দুলাভাই l মুরুব্বি বললাম এই কারণে যে , দুলাভাইয়ের বড়ো ছেলে আমার চেয়েও বয়সে কিছুদিনের বড়ো ! কথাবার্তা মোটামুটি পাকাপাকি হবার পরেও দুলাভাই কন্যাপক্ষের কানে আমার বিষয়ে অতিরিক্ত একটি বিশেষণ লাগিয়ে দিলেন, “ ছেলে সারাদিন মাথায় টুপী পরে থাকে!” কন্যার পিতা জানতে চাইলেন….
: ছেলে কি মাদ্রাসা লাইনে লেখাপড়া করেছে ?
: না , জেনারেল লাইনে পড়েছে !
: ছেলের মাথায় কি টাক আছে?
: না তা নয় !
: তাহলে?
: ছেলে কিছুটা “হুজুর” টাইপের !
: আলহামদুলিল্লাহ ! ভালো খবর ! তাহলে ছেলে মেয়ে উভয়ের দেখা সাক্ষাৎ ও সম্মতিক্রমে কথাবার্তা ফাইনাল হয়ে যাক !
একদিন শুভ ক্ষনে আমাদের বিয়ের সানাই বাজলো ! মধ্যবিত্তের সাদামাঠা বিয়ে ! মনের মধ্যে একরাশ আনন্দ অনুভূতি নিয়ে বিয়ে শেষে বৌ সহ বাড়ি ফিরলাম !
কয়েকদিন পর যাওয়া হলো বৌকে নিয়ে শশুর বাড়ি ! যথারীতি গিন্নীর কামরাই এখন রূপান্তর হলো আমাদের দুজনের ঘুমঘর হিসেবে ! মাঝারি সাইজের রুম ! খাট ড্রেসিংটেবিল , বসার জন্য দুটি চেয়ার আর একটি স্টিলের আলমারি l পরদিন সকাল বেলা আবিষ্কার করলাম , স্টিলের আলমারির উপরে সুন্দর করে কাপড়ে মোড়ানো একটি চারকোনা সাইজের বস্তু ! গিন্নী কে জিজ্ঞাসা করলাম ……
: আলমারির উপর কাপড়ে মোড়ানো বস্তুটি কি ?
: হারমোনিয়াম !
: কে বাজায় ?
: এখন কেউ বাজায় না ! শখ করে কিনে রেখে দেওয়া হয়েছে !
: তুমি বাজাতে পারো নাকি ?
: একটু একটু পারি !
: আমাকে একটু বাজিয়ে শোনাও তো ! গানও গাইতে পারো নাকি ?
: অল্প অল্প পারি !
: বাহ ! বেশতো ! চলো তবে হয়ে যাক একটা “সংগীত সকাল !”
: আমার লজ্জা লাগছে ! বাসায় যখন কেউ থাকবেনা তখন শোনাবো !
: বেশ ! তবে সেই কথায় রইলো !
টুকটাক প্রশ্ন করে জানতে পারলাম , গিন্নী বাসায় একজন মহিলা উস্তাদ রেখে হারমোনিয়াম বাজানো ও গান শিখতো ! নিতান্তই শখের বশে শেখা ! প্রশিক্ষণ প্রায় শেষ পর্যায়ে থাকার সময় বিয়ে হয়ে গেলো ! সেই সাথে ইতি ঘটলো সংগীত সাধনার ! ঢাকা শহরে তাঁর জন্ম , পড়াশোনা ও বেড়ে উঠার সুবাদে খুব সহজেই সে এই ধরণের সুযোগ করে নিতে পেরেছিলো !
অন্যদিকে আমার জন্ম ও বেড়ে উঠা পল্লীগ্রামে ! তবে ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি ছিল দুর্বার আকর্ষণ ! রেডিও, টেপরেকর্ডার নিয়মিত শোনা হতো ! আর বিশেষ করে বয়াতীদের পালাগানের ছিলাম পাগল ভক্ত ! গ্রামে উৎসব উপলক্ষে মাঝে মাঝে আয়োজন করা হতো বিখ্যাত গাতকদের নিয়ে সারারাত ব্যাপী গানের আসর ! তাঁদের ইনস্ট্যান্ট বানানো ছন্দ ও অন্তমিল দিয়ে , কখনো কবিতা আবার কখনো গানের মাধ্যমে সব শ্রেণীর শ্রোতাদেরকে গভীর রাত পর্যন্ত মোহাবিষ্ট করে রাখতো! আমি তন্ময় হয়ে শুনতাম আর ভাবতাম, এভাবে হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান গেয়ে গেয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারলে মন্দ হতো না !
যাই হউক, সেদিন বিকেলেই সুযোগ হাতের নাগালে, বাসার মুরুব্বিরা কি একটা কাজে সবাই বাইরে! আর দুয়েকজন পিচ্চিপাচ্চা, ওরা হিসেবের মধ্যে পড়েনা ! গিন্নীর রুমের দরজা বন্ধ করে আয়োজন করা হলো “ একক সংগীত বিকাল”! শ্রোতা আমি একাই ! শিল্পীকে উৎসাহ দিয়ে বললাম ,
: শুরু করো ! শ্রোতা হিসেবে আমি একাই তিনশো !
: প্রথম কোন গানটা শুনতে চাও?
: যেটা জীবনে প্রথম শিখিছিলে, সেটা দিয়েই শুরু করো !
: আচ্ছা ! ঠিক আছে !
মাত্র কয়েকদিন হলো বিয়ে হয়েছে ! এখনো কথা বলার মধ্যেও জড়তা কাটেনি ! চলাফেরায় কেমন একটা লাজরাঙ্গা ভাব ! গিন্নি গাওয়া শুরু করলো আর আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ! রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লিখা সেই বিখ্যাত গানটি …
“ফুলে ফুলে ঢ’লে ঢ’লে বহে কি’বা মৃদু বায় ।।
তটিণী-র হিল্লোল তুলে কল্লোলে চলিয়া যায় ।
পিক কি’বা কুঞ্জে কুঞ্জে ।।
কুউহু কুউহু কুউহু গায়,
কি জানি কিসের লাগি প্রাণ করে হায় হায় ।”
আমি তন্ময় হয়ে শুনছি ! মোটামোটি মিষ্টি গানের গলা ! গানের সাথে সুর মিলিয়ে বাজছে হারমোনিয়াম ! গান শেষ হওয়ার পর বললাম….
“ অসাধারণ গেয়েছো তুমি ! আমি মুগ্ধ !”
আমার কথা শুনে আনন্দে তাঁর চোখে পানি এসে গেলো ! ধরা গলায় বললো ,
: তোমার পছন্দ হয়েছে ?
: খুব পছন্দ হয়েছে ! আরও একটা শোনাও !
সে আবার গান ধরলো ! এবার নজরুল গীতি ! কিন্তু আগের মতো সাবলীল ভাবে আর গাইতে পারছে না ! আবেগে গলা বসে যাচ্ছে ! চোখ থেকে নেমে আসছে আনন্দ অশ্রুধারা ! আমি মিটিমিটি হাসছি ! বললাম…
: থাম! আর কষ্ট করে গাইতে হবে না ! যা গেয়েছো , মনের ভিতর বসে গেছে ! সারা জীবন মনে রাখার জন্য যথেষ্ট !
: এখন থেকে আমি শুধু তোমার জন্যই গাইবো ! আমার গান তোমার ভালো লেগেছে এটাই আমার পরম পাওয়া ! আমার গান শেখা সার্থক হলো ! দোআ করো , আমি যেন কথা রাখতে পারি !মাথায় হাত বুলিয়ে অন্তর থেকে দোআ করে দিলাম !
হঠাৎ মাথায় একটা খেয়াল উদয় হলো ! আরে! আমিতো অনেক দিন থেকে মনের ভিতর সযতনে লালিত ইচ্ছা এখনই পূরণ করতে পারি ! সাহস করে বলেই ফেললাম গিন্নীকে …
: এখন আমি একটা গান গাইতে চাই, তুমি আমার গানের সাথে সুর মিলিয়ে হারমোনিয়াম বাজাবে !
: বলো কি ? তুমিও গাইতে পারো নাকি ?
: যেমন পারি তেমনি গাইবো ! অডিশন তো দিচ্ছি না ! শুনে শুনে অনেক গান আমার মুখস্ত করা আছে !
গিন্নীর পরিচিত গানের মধ্যে থেকেই একটা গাইতে শুরু করলাম ! গলায় তেমন জোর পাচ্ছিলাম না ! মনে হচ্ছে গলার ভিতরটা ছোট হয়ে আসছে ! হারমোনিয়াম সুর মতোই বাজছে, কিন্তু গানের সুর পিছলে চলে যাচ্ছে অন্যদিকে!আমিও নাছোড় বান্দার মতো দাঁতমুখ খিঁচে সুরকে টেনে আনার চেষ্টা করছি হারমোনিয়ামের দিকে !
গিন্নী বেশীক্ষন নিজেকে স্থির রাখতে পারলোনা ! হাসি চাপতে না পেরে হারমোনিয়াম রেখেই দিলো দৌড় ! এক দৌড়ে ঘরের বাইরে! আর আমি শরমে বিছানার উপর চ্যাগায়ে পরে রইলাম আধা ঘণ্ট, আধা বেহুশের মতো!সেটাই ছিল হারমোনিয়ামের সুরের সাথে আমার গান গাওয়ার প্রথম ও শেষ অপচেষ্টা !
বেশ কয়েক বছর পরের কথা ! জীবিকার প্রয়োজনে দেশের বাইরে চলে আসা হলো ! কিছুদিন পর গিন্নিও চলে আসলো আমার কাছে ! গিন্নীর সাধের হারমোনিয়াম অতিরিক্ত ওজনের কারণে সাথে আনা গেলো না! তাঁর খুব মন খারাপ হলো ! এতদিনের প্রিয় জিনিস রেখে আসতে হচ্ছে ! আমি সান্তনা দিয়ে বললাম “ মন খারাপ করোনা ! তোমাকে একটা সুন্দর দেখে পিয়ানো কিনে দেবো!” আর মনে মনে ভাবলাম , এইবার আমার সংগীত সাধনা ঠেকায় কে? বাসায় পিয়ানো থাকলে গিন্নীর কাছ থেকেই বাজানো শিখতে পারবো ! এরপর নিজের গানে নিজেই বাজাবো !
গিন্নী আসার পর আবার নতুন করে শুরু হলো আমাদের টুনাটুনির সংসার ! হাইস্পিড ইন্টারনেটের কল্যানে সারা দুনিয়ার গানের গ্যাং চলে আসলো হাতের মুঠোয়! আমার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ ! গিন্নী সারাদিন বাসায় থাকার ফলে You tube দেখে নিত্য নতুন গানের খবর মাথার ভিতর টুকে রাখে ! রাতে আমি বাসায় ফিরলে শুরু হয় সংগীতের সংবাদ প্রবাহ ! কান ঝালাপালা অবস্থা!
এর কিছুদিন পর আমাদের সংসারে নতুন অতিথি আগমনের বার্তায় দুজনের মনেই আনন্দের জোয়ার বইতে লাগলো ! ডাক্তার পরীক্ষা করে বললেন , সে কন্যা সন্তানের মা হতে চলেছে ! খুশিতে তখন আমার আবার আধপাগল অবস্থা ! আমি পরামর্শ দিলাম…
:You Tube এ খালি গানবাজনা আর নাচানাচি দেখোনা ! কন্যা তো পেটের ভিতরেই লাফালাফি শুরু করবে ! অনেক সুন্দর সুন্দর ইসলামিক আলোচনা আছে ! বাদ্যবাজনা ও অশ্লীলতামুক্ত সংগীত আছে ! মাঝে মাঝে ওগুলোও দেখো!
: আমি দেখি একটু একটু ! তুমি যখন বলছো আরো সময় নিয়ে দেখবো !
: তোমার জন্য একটি পিয়ানো কিনে আনি ?
: আর কিছুদিন যাক ! এই মুহূর্তে এসব ভালো লাগবে না !
: সব সময় হাসি খুশি থেকো !বাচ্চাও হাসতে হাসতে দুনিয়ায় চলে আসবে !
সেই বছরের রমজান মাস চলে আসলো ! তখনও আমাদের কন্যার পৃথিবীতে আসার সময় হয়নি ! পবিত্র রমজানের রোজার শুরুতে গিন্নী সদর্পে ঘোষণা দিলো ,
: এই মাসে আমরা কোনো গানবাজনা ও নাচানাচির অনুষ্ঠান দেখবোনা ! ওয়াজ মাহফিল ও হামদ-নাত শুনবো ! বেশীবেশী কোরআন তিলাওয়াত করবো ! অনাগত সন্তানের জন্য এটা হবে শান্তি ও রহমত স্বরূপ!
: আলহামদুলিল্লাহ ! অতি উত্তম প্রস্তাব !আমি আছি তোমার সাথে !
দুই সদস্য বিশিষ্ট সংসদে পূর্ণ ভোটে বিলটি পাশ হয়ে গেলো ! আর আমরা দুজন নিয়মিত তাফসীর মাহফিল, ইসলামিক গানের অনুষ্ঠান দেখা শুরু করলাম ! আমার চেয়ে গিন্নী অধিক সময় নিয়ে দেখার কারণে , সে এসব অনুষ্ঠানের ভক্ত শ্রোতায় পরিণত হলো এবং ঈদের পরেও সেই ধরণের অনুষ্ঠান উপভোগ করা পুরু দমে চলতে থাকলো ! আর আমার পিয়ানো কিনার ও বাজানো শিখার স্বপ্ন ধীরে ধীরে মাঠে মারা যাওয়ার উপক্রম হলো !
একসময় ঘর আলো করে আমাদের সন্তান পৃথিবীর বুকে পা রাখলো এবং দেখতে দেখতে পার হলো একটি বছর ! এখন মধুর সুরে বাবা,মা, দাদা , নানা , মামা শব্দগুলি স্পষ্ট উচ্চারণ করে ! আরও বিচিত্র চিৎকার ও চেঁচামেচিতে সারাদিন ঘরবাড়ি মুখরিত করে রাখে, যার বেশীরভাগ শব্দই বুঝা যায় না ! মায়ের সাথে তাল মিলিয়ে সেও এই বয়সেই ইসলামী সংগীতের ভক্তে পরিণত হলো ! ভক্ত বললাম এই কারণে যে , খাওয়ার সময় ইসলামী গান না শুনলে সে খেতে চায়না!কান্নার সময় তাঁর কানের কাছে এই ধরণের গানের কলি গাইলে , সাথে সাথে কান্না বন্ধ করে দেয় ! এমনকি ঘুম পাড়ানোর সময়ও তাঁর কানের কাছে মিনমিন করে গাইতে হয় !
এই দেশে বাচ্চা জন্মের পর হতে চারবছর বয়স পর্যন্ত একজন “ চাইল্ড কেয়ার “ নার্স নিয়মিত রুটিন মাফিক বাচ্চাকে দেখাশুনা করেন ও স্বাস্থ্য, বৃদ্ধি , টিকা , খাবারদাবার , মানসিক বিকাশ ইত্যাদির বিষয়ে মূল্যবান পরামর্শ দিয়ে থাকেন ! এখন যেহেতু বাচ্চা কথা বলা শুরু করেছে , তাই নার্স পরামর্শ দিলো বেবি কে মিউজিক্যাল টাইপ কোনো খেলনা কিনে দিতে ! আমি ভাবলাম এই সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না ! গিন্নিকে বললাম…
: নার্স বলেছে , বাচ্চাকে পিয়ানো টাইপ খেলনা কিনে দিতে !
: তাহলে তো কিনতেই হবে ! ছোটোখাটো ও হালকা দেখে একটা নিয়ে আসো !
আমি বেছে বেছে মাঝারি টাইপ একটা কিনে ফেললাম ! বাচ্চা সেটা দুই হাতে তুলতে পারেনা ! তাতে কি? দুই হাতে অনবরত টিপে বিভিন্ন ধরণের সুর বাঁজিয়ে কান তছনছ করে দেয় ! এরমাঝে একদিন গিন্নীকে বলেই ফেললাম আমার পিয়ানো শিখার ইচ্ছার কথা ! গিন্নী বললো…
: দেখ , আমি আর এসব বাজাতে চাই না ! আমি চাইনা তুমিও এসব শিখো !
: কেন ?
: আমি কয়দিন আগে এক হুজুরের ওয়াজে শুনেছি , অনর্থক গানবাজনায় মেতে থাকলে পাপ হয় ! গানের সাথে যদি বাদ্যবাজনা ও পর্দাহীন মহিলাদের ভিডিও থাকে তবে পাপের পরিমান আরও বেড়ে যায় ! এসো আমরা এসব পরিত্যাগ করি ! ভালো কিছু শুনি ও দেখি !
: সেইটা আবার কেমন ?
: ঐ সমস্ত গান আমরা শুনতে পারি, যাতে আল্লাহর তাওহীদের কথা আছে অথবা রাসূলের সা. মহব্বত ও তার শামায়েল আছে অথবা যাতে চরিত্রকে দৃঢ় করতে উদ্ধুদ্ধ করা হয়।
: আর ?
: সেই সমস্ত গান, কবিতা ও শুনা যেতে পারে, যা শুনে মুসলিমদের একে অন্যের প্রতি মহব্বত ও সুসম্পর্ক সৃষ্টি হয় !
: আর ?
: সেই সব গীত বা সংগীতও উপভোগ করা যেতে পারে, যাতে ইসলামের মৌলিক নীতি বা সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । অথবা এই জাতীয় অন্যান্য কথা বা আলোচনা শোনা যেতে পারে যা সমাজকে আহবান করে দ্বীনি আমলের দিকে কিংবা উত্তম চরিত্র গঠনের দিকে !
: তুমি তো দেখি পুরা মহিলা হুজুর হয়ে গেছ !
: এসব মানতে পারলে , আমরা দুনিয়াতে পাপমুক্ত থাকবো এবং আখেরাতেও লাভবান হবো ! চলো আমরা নিয়ত করি মেনে চলার ! দুজনে একসাথে চেষ্টা করলে আশাকরি পারবো ইন্শাআল্লাহ !
: ইন্শাআল্লাহ ! নিয়ত করলাম !
এরপর আমরা খুব বেছে বেছে অনুষ্ঠান দেখি ও গান শুনি ! আর পিয়ানো টা শুধু ব্যবহার হতে থাকলো বাচ্চার খেলনা হিসেবেই ! আমাদের এক ছোট্ট কন্যা, ইচ্ছামতো পিয়ানোর কি বোর্ড চেপে পোঁ পোঁ আওয়াজ তুলে ! আর মনের সুখে গলা দিয়ে আওয়াজ করে , আয়ি-আয়ি- আয়ি -আ-আ-আ ! আমি আর গিন্নী তাঁর কান্ড দেখে মনের সুখে হাসি !
আর হাঁ ! গিন্নি যে আমাকে কথা দিয়েছিলো , সে , আমি ছাড়া আর কারো সামনে গান গাইবে না , সে এখন পর্যন্ত সেকথা রেখেছে ! তারপর থেকে, সে আর কারো সামনে গান গায়নি ! এমনকি তার ভাইবোন অথবা কোনো বান্ধবীর সামনেও না !

 

তবুও শহর


জিনাত তাসনিম


নিশুতি রাতেও নিশ্চুপ হয়না যে শহর
পিচ্ ঢালা পথগুলো সাক্ষী হয়ে যায়
কত ঘটনা আর অঘটনের।
কত শতবার লালে লাল হয়
কোনো স্বপ্নচারী মানুষের অন্তিম
গোধূলির শবযাত্রা ভীড়ে।
ডাস্টবিনের ফ্যালনার বুকে
জীবনের আকুতি জানায়
হতভাগা নবজাতকের কান্না।
তবু নতুন নতুন স্বপ্নেরা জন্মে
পরগাছা মানবের এ শহরে
মুয়াজ্জিনের আহবানে আসে নতুন ভোর
বাড়ে আরো কিছু স্বপ্নালু মুখ।

 

বিয়ের মেহেদীর রং হাতেই লাশ হলেন লতিফা


নারী সংবাদ


যশোরের চৌগাছায় মেহেদীর রং হাতে নিয়েই লাশ হলেন লতিফা খাতুন (২০) নামে এক নববধূ। বিয়ের মাত্র সাত দিনের ব্যবধানে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। লতিফার পরিবারের দাবি তাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার পাঁচ বাড়ীয়া গ্রামে।

এ ঘটনায় লতিফার বড় ভাই ইনতাজ আলী বাদী হয়ে মহেশপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

জানা যায়, গত ১৬ ডিসেম্বর উপজেলার জামিরা গ্রামের ওয়াজেদ আলীর কন্যা লতিফা খাতুনকে (২০) পাশের ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার মান্দারবাড়ীয়া ইউনিয়নের পাঁচবাড়িয়া গ্রামের তোরাব আলীর ছেলে রাজু আহমেদের সাথে বিয়ে হয়। ২৩ ডিসেম্বর রাতে তার শ্বশুরবাড়ির একটি ঘরে লতিফার লাশ ঝুলে থাকতে দেখা যায়। এ খবর পেয়ে মহেশপুর থানা পুলিশ তার লাশটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ঝিনাইদহে পাঠায়।

লতিফার বড় ভাই ইনতাজ আলী বলেন, বিয়ের পর থেকেই ছেলের পরিবারের পক্ষ থেকে মোটা অংকের যৌতুকের টাকা দাবি করা হয়। আমরা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তারা আমার ফুলের মতো ছোট বোনকে হত্যা করেছে। এ ঘটনার রাত থেকেই রাজুর পরিবারের সবাই পলাতক রয়েছে।

এদিকে ময়না তদন্ত শেষে চৌগাছা উপজেলার জামিরা গ্রামে বাপের বাড়ি লতিফার দাফন করা হয়।

এ মামলার তদন্তকারী অফিসার মহেশপুর থানার এস আই শামীম হোসেন বলেন, লাশের ময়না তদন্তের রির্পোট হাতে পেলেই বলা যাবে এটা হত্যা, না আত্মহত্যা।

এ ব্যাপারে মহেশপুর থানার ওসি রাশেদুল আলম বলেন, আমরা মেয়েটির লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ঝিনাইদহে পাঠিয়েছি। এ ঘটনায় লতিফার বড় ভাই ইনতাজ আলী বাদী হয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

বুক রিভিউ – ‘সফলদের স্বপ্নগাথা’


মেহেদী আরিফ


বইয়ের নামঃ সফলদের স্বপ্নগাথা
সম্পাদকঃ ফিরোজ জামান চৌধুরী
ধরনঃ অনুপ্রেরণামূলক।
প্রকাশনীঃ অন্বেষা।
পৃষ্ঠাঃ ১৬০।
সফলতার নেপথ্যে নানা কথা থাকে, ঘটনা থাকে, থাকে নানা দুর্ঘটনাও। সফলতা এসে গেলে ভিতরের কথাগুলি বের হয়ে আসে, যেমনভাবে বের হয়ে আসে গর্ত থেকে সাপ। ফিরোজ জামান চৌধুরী সম্পাদিত “সফলদের স্বপ্নগাথা” একটি স্বপ্ন জাগানো বই, জেগে থাকার বই, সাফল্যের সিঁড়ি ভেঙে উপরে ওঠার বই। প্রথিতযশা তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, লেখক, রাষ্ট্রনায়ক, মানবাধিকার কর্মী, সংগীতশিল্পী, চলচ্চিত্রশিল্পী, সংগীতশিল্পী ও খেলোয়াড়দের জীবনের সফলতার বয়ান হল এই বইটি।
মাত্র বিশ বছর বয়সে ফেসবুক নামক সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম চালু করে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দেন বিস্ময়কর যুবক মার্ক জাকারবার্গ। হার্ভার্ডের পড়াশুনা না চুকিয়েই ফেসবুকে ডুব দেন এই তরুণ। তিনি একাডেমিক পড়াশুনা শিকেয় তুলে নেমে পড়েন ফেসবুক নামক ওয়েবসাইটের উন্নয়ন সাধনে। ঈর্ষণীয়ভাবে সফলতার প্রদীপ শিখার দেখা পান তিনি। বর্তমানে ১৫০ কোটিরও বেশি মানুষ ফেসবুক চালান, নিজেদের মতামত শেয়ার করেন, পুরনো বন্ধুদের খুঁজে ফেরেন, বাইরের রাজ্যের সাথে ভিতরের রাজ্যের মেলবন্ধন ঘটান। এর নেপথ্যে জাকারবার্গ। ২০১১ সালে ফোর্বস সাময়িকী ঘোষিত ৩০-এর কম বয়সী সফল ব্যক্তিদের তালিকায় তিনি আছেন। জাকারবার্গ মনে করেন, কাজ করা ও শেখার সময়ে অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার মাঝে শেখার মাত্রা বাড়ে। আর শেখার মাত্রা বাড়লে সফলতা তো হাতের মুঠোয় চলে আসে।
বিশ্বব্যাপী সাড়া জাগানো অ্যাপল কম্পিউটারের স্রষ্টা স্টিভ জবস উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তাতে কি! সফলতার দ্বারে তিনি ঠিকই ভিড়িয়েছিলেন তরী। এই মহারথী ব্যবহৃত কোকের বোতল ফেরত দিয়ে পাঁচ সেন্ট করে উপার্জন করে খাবার কিনে খেতেন। বন্ধুদের কক্ষের মেঝেতে ঘুমাতেন। শুধু কি এখানেই শেষ? না, এখানে শেষ না। তিনি প্রতি রোববার রাতে সাত মাইল হেঁটে হরেকৃষ্ণ মন্দিরে যেতেন একবেলা ভাল খাবারের আশায়। নিজের প্রতিষ্ঠিত অ্যাপল কোম্পানি থেকে তিনি বিতাড়িত হয়েছিলেন। তাঁর সফলতার নেপথ্যে বিতাড়িত হওয়ার ঘটনার মূল্যমান অনেক। স্টিভ জবস প্রত্যেক দিনকে মনে করতেন জীবনের শেষ দিন। এভাবে তিনি তাঁর কাজ সম্পাদন করেছেন। প্রতিদিন তিনি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবতেন আজ তিনি যা যা করছেন মরে যাওয়ার আগে কি তাই তাই তিনি করতেন?
বিশ্বের সবচেয়ে বড় সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট কর্পোরেশনের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিলগেটস হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা শেষ করতে পারেন নি। অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার ৩৩ বছর পর তিনি সেখানে ফিরে আসেন শিক্ষার্থী হিসেবে নয়, বরং শিক্ষার্থীদের সমাবর্তনের বক্তা হয়ে। জীবনের নানা চড়াইউতরাই পেরিয়ে সাফল্যের শিখর স্পর্শ করেছেন এই মানবতাবাদী। তিনি শিক্ষার্থীদের কর্মী হওয়ার জন্য আহবান করেছিলেন সমাবর্তনের বক্তৃতায়। সাথে সাথে বড় ধরনের বৈষম্য নিয়ে সবাইকে কাজ করার উদাত্ত আহবান জানিয়েছিলেন।
ইন্টারনেটের জগতে সার্চ ইঞ্জিন গুগলকে কে না চেনে! ল্যারি পেইজ হলেন এই সার্চ ইঞ্জিনের উদ্ভাবক। তিনি মনে করেন, মূল রাস্তায় থেকে কাজ করার মাঝে সফলতা আসে। আরো মনে করেন, স্বপ্নের মাঝে বেঁচে থাকে কোনো মানুষকে আলাদা করার ক্ষমতা।
ইয়াহু’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা জেরি ইয়াং-এর সফলতার নেপথ্যে পরিশ্রমকে দাঁড় করিয়েছেন। ম্যালকম গডওয়েলের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘যেকোন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হতে হলে ওই বিষয়ে অন্তত ১০ বছর অথবা ১০ হাজার ঘন্টা সময় দিতে হবে।’ ঘর থেকে বেরিয়ে বিশ্বকে দেখার উদাত্ত আহবান জেরি ইয়াং-এর। মনীষী অগাস্টিন বলেছেন, ‘পৃথিবী হলো একটা বিশাল বই, আর যারা পৃথিবী ঘুরে দেখেনি, তারা এই বইয়ের শুধু একটা পাতা পড়েছে।’ জেরি ইয়াং ২০০৯ সালে ইউনিভার্সিটির সমাবর্তন অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন , ‘জীবনের পথে যাদের পাশে পেয়েছ তাদের কখনো ভুলে যেও না।’
উইকিপিডিয়ার সহ-প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি স্যাঙ্গার অর্থপূর্ণ জীবনের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি মনে করেন সারাজীবন মানুষের ভাবা উচিত তার প্রিয়জনদের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য কি কি করা উচিত তা সম্পর্কে। সততার উপর বেঁচে থাকা কঠিন তারপরও তিনি সৎভাবে বেঁচে থাকার উপর জোর দেন। তিনি মনে করেন সৎভাবে বেঁচে থাকার মধ্য দিয়ে মানুষ অর্থপূর্ণ জীবনে অভ্যস্ত হয়।
ডেল ইনকের প্রতিষ্ঠাতা মাইকেল ডেল মনে করেন, সফলতার সবচেয়ে বড় নিয়ামক হল কৌতুহল। কৌতুহল মানুষকে চারপাশের মানুষকে জানতে, বুঝতে সহায়তা করে। জগৎটাকে বোঝার জন্য তিনি যেমন বই পড়তে উদ্বুদ্ধ করেছেন, একইসাথে তিনি ওয়েবসাইট দেখতে বলেছেন, সাথে সাথে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার উন্নয়ন ঘটাতে বলেছেন।
ফেসবুকের চিফ অপারেটিং অফিসার শেরিল স্যান্ডবার্গ মনে করেন যে, সফলতা পেতে মানুষের চিন্তার জগৎকে প্রসারিত করতে হবে, আকাঙ্ক্ষার শূন্য পূরণ করতে হবে। তিনি আরো মনে করেন যে, জীবনের নানাবিধ মোড় আমাদের সম্ভাবনা তৈরি করে ও এগিয়ে নিয়ে যায়।
পাঠক মাত্রই হ্যারি পটার সিরিজের নামের সাথে পরিচিত। সারা বিশ্বব্যাপী সাড়া জাগানো হ্যারি পটার সিরিজের লেখক জে কে রাউলিংয়ের সফলতার পেছনে প্রধান কারণ হল তাঁর নিজেকে চেনার বিশাল ক্ষমতা। তাঁর কল্পনা করার ক্ষমতাও ছিল খুবই প্রখর যা তাকে হ্যারি পটার সিরিজ লেখার নেপথ্যে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে।
বর্তমান সময়ে ভারতের অন্যতম সেরা লেখক চেতন ভগত মনে করেন, সফলতার জন্য সিরিয়াস হওয়া নয়, দরকার সিনসিয়ার হওয়ার। প্রথম বই প্রকাশের জন্য নয়জন প্রকাশকের কাছে গিয়ে তিনি না শুনেছিলেন। নয় জন প্রকাশকই তাঁর লেখাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তবুও তিনি থেমে থাকেন নি। নিজের কাজ করে গেছেন খুব দৃঢ়তার সাথে। তিনি মনে করেন, আগে নিজেকে ভালবাসতে হয়, তারপর অন্যকে।
১৯৯৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়া মার্কিন মহিলা সাহিত্যিক ও সাংবাদিক টনি মরিসন মনে করেন, সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে অতীতের প্রয়োজন রয়েছে। বিপর্যস্ত বসুন্ধরাকে সুন্দরভাবে সাজানোর জন্য তিনি বিনীতভাবে অনুরোধ করেছেন। তিনি মনে করেন, আত্মতৃপ্তি মাঝেমাঝে মানুষের এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবে তা যদি কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে আসে তবে তাতে ক্ষতি নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের লেখক, বক্তা ও সাংবাদিক ডেভিড শেংক মনে করেন, জিন, জ্ঞান-বুদ্ধি বা প্রতিভা নিয়ে যা কিছু বলা হয়েছে তা ভুল। তিনি মনে করেন, সবার জিনেই আছে সুপ্ত প্রতিভা। সেই প্রতিভার স্ফূরণ ঘটানোর জন্য প্রয়োজন তীব্র ইচ্ছা, মনঃসংযোগ ও অবিরত অনুশীলন।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো বহু চড়াই উতরাই পেরিয়ে হয়েছিলেন পাকিস্তানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। বেনজির মনে করতেন, যে সফল হয় এবং যে হেরে যায়, তাদের মধ্যে মূল পার্থক্যের জায়গা হল, কে তার সফলতা কিংবা বিফলতাকে কতটুকু গ্রহণ করতে পারে ও সেখান থেকে ফিরে আসতে পারে।
ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং মনে করেন, জাতি, ধর্ম ও বর্ণের আঙ্গিকে কোন মানুষকে বিচার করা ঠিক না। সবাইকে সমান দেখার মাঝেই লুকিয়ে থাকে গণতন্ত্রের বীজ।
মিসাইল ম্যান নামে পরিচিত আধুনিক ভারতের রূপকার এ পি জে আবদুল কালাম স্বপ্ন, দৃঢ় সংকল্প, জ্ঞানচর্চা, কঠোর পরিশ্রম ও নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতাকে জীবনের সফলতার সবচেয়ে বড় উপকরণ মনে করেন।
‘Change we need’ স্লোগানকে ধারণ করে যুক্তরাষ্ট্রের মসনদে বসেছিলেন প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ওবামা শিক্ষাকে রাষ্ট্র বা সমাজ পরিবর্তনের সবচেয়ে সেরা নিয়ামক মনে করেন।
‘মাদিবা’ নামে পরিচিত বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের পুরোধা দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি নেলসন ম্যান্ডেলা উদ্ভাবনের দিকে নজর দেয়ার জন্য তরুণদেরকে আহবান জানিয়েছেন। তিনি মনে করেন দরিদ্রতাকে জয়লাভ করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তারপর জয় করা অশিক্ষা ও অজ্ঞানতা।
এ বইটিতে অংসান সুচি, শিরিন এবাদি, কফি আনান, বান কি মুন, আল গোর, প্রিন্সেস ডায়ানা, শাকিরা, মাইকেল জ্যাকসন, বন জোভি, ড্যানিয়েল রাডক্লিফ, টম হ্যাঙ্কস, শোয়ার্জনেগার, জেমস ক্যামেরন, অমিতাভ বচ্চন, রোয়ান সেবাস্টাইন অ্যাটকিনসন ( মি. বিন), বিশ্বনাথন আনন্দ, ব্রায়ান লারা ও শচীন টেন্ডুলকরের জীবনের সাফল্যগাথা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বইটি তরুণদের জন্য হতে পারে অনুপ্রেরণার এক চমৎকার উৎস।।