banner

রবিবার, ০৫ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 536 বার পঠিত

 

করি পুষ্প রে বিকশিত-৪

আফরোজা হাসান


নাস্তা করা শেষ হলে বাচ্চাদেরকে নিয়ে পার্কে ঘুরতে বের হলো অন্তরা আর নায়লা। বাচ্চাদেরকে খেলা করতে বলে দুজন এক পাশে গিয়ে বসলো। ছুটোছুটি করে খেলতে থাকা বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে নায়লা হেসে বলল, যখনই বাচ্চাদেরকে নিয়ে পার্কে আসি খুব ছোট হয়ে যেতে ইচ্ছে করে জানো? নিজের ছোটবেলাটাকে তখন খুব মনে পড়ে। কত ধরণের খেলা খেলেছি আমরা। আর আমাদের বাচ্চারা খেলা বলতে বোঝে নানা ধরণের ইলেক্ট্রনিক্স গেমস। যান্ত্রিকতা বাচ্চাদের মধ্যে আনন্দ, উচ্ছ্বাসকে কেমন যেন হ্রাস করে দিচ্ছে দিনকে দিন, তাই না?

অন্তরা বলল, বাচ্চাদের মধ্যে যাতে আনন্দ, উচ্ছ্বাস অক্ষুণ্ণ থাকে সেই দায়িত্ব বাবা-মাকেই পালন করতে হয়। আর তুমি যেভাবে ওদেরকে বড় করছো তা কিন্তু মুগ্ধ হবার মত। তুমি তোমার সবটা সময় বাচ্চাদের পিছনেই ব্যয় করো। আমি তো যখনই তোমাকে দেখি অনুভব করি তাশফিনকে আরো সময় দেয়া প্রয়োজন আমার।

এত ব্যস্ততার পরও তুমি ছেলেকে অনেক সুন্দর ভাবে বড় করেছো। অবশ্য তোমার তাশফিন তো এমনিতেই সবকিছু বোঝে। যে সুন্দর করে যুক্তি দেয়, মাশাআল্লাহ। আমার গুলোর মত হলে পাগল হয়ে যেতে।

অন্তরা হেসে বলল, তাশফিনের কর্মকান্ড তুমি দেখো না তাই এভাবে ভাবছো। মাছের কাঁটার কথাই ধরো। ওর কান্না বন্ধ করার জন্য আমি হাদিসটা বলেছিলাম। সাথে সাথে কাজও হয়েছিল। কিন্তু কয়েকদিন পর তাশফিন ইচ্ছে করে মাছের কাঁটা গলায় বাঁধিয়েছিল গোনাহ মাফ হবে সেজন্য। শুধু তাই না বাগানে গিয়ে গায়ে গোলাপের কাঁটার খোঁচা লাগাতো, ক্যাকটাসের খোঁচা লাগাতো। এরপর যখন বুঝিয়ে বললাম যে, নিজেই নিজেকে কষ্ট দিলে আল্লাহ গোনাহ তো মাফ করবেনই না উল্টো তোমার উপর আরো বিরক্ত হবেন, তখন গিয়ে এসব বন্ধ করেছে।

নায়লা হাসতে হাসতে বলল, আমি তো আরো মনেকরি তাশফিন তোমাকে একদম যন্ত্রণা করে না। যা বলো সবই বুঝে নিতে দেখি তো তাশফিনকে।

অন্তরা হেসে বলল, এমনিতে তো আর সব বোঝে না ভাবী। সারাটা ক্ষণ কিভাবে প্রশ্ন করতে থাকে সেটা তো দেখোই। যদিও বাচ্চাদের প্রশ্ন করার স্বভাবটা খুবই ভালো। এতে ওদের মনে কি ভাবনা চিন্তা চলছে সেটা জানা যায়। বুঝিয়ে বলে দেয়া সম্ভব হয় সবকিছু। এখনো আমার মনেআছে যখন চাইল্ড সাইকোলজির উপর কোর্স করেছিলাম প্রফ ক্লাসে ঢুকে বলেছিলেন, তোমরা কি তৈরি এই পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত, সবচেয়ে বুদ্ধিমান, সবচেয়ে চিন্তাশীল প্রাণীটির নতুন প্রজন্মকে জানা-বোঝা ও চেনার জন্য? তাদের মনের রাজ্যে অবাধ বিচরণের জন্য? তাদের কল্পনার রাজ্যে হাবুডুবু খাওয়ার জন্য? তাদের সাথে আকাশে উড়ার জন্য? খন্ড খন্ড মেঘের উপর লাফিয়ে লাফিয়ে চলার জন্য? ছোট্ট থেকে ছোট্ট বিষয়ে বিস্ময়ে বিকশিত হবার জন্য? প্রশ্ন বিশারদ হয়ে যাবার জন্য? এই যেমন, পাখী কেন উড়ে, ফুল কেন ফোটে, প্রজাপতি কেন এত রঙিন? আমার কেন ডানা নেই? দাদুর কেন দাঁত নেই? বাবা কেন রোজ অফিসে যায়? ধূর ছাই সব্জি কেন খেতে গোশতের মত লাগে না? আচ্ছা দিদার চামড়াকে প্রেস করে দিলে কি কুঁচকানো ভাব কেটে যাবে?

হেসে ফেললো নায়লা। বাহ! বেশ মজার ছিলেন তো তোমাদের প্রফ।

 

চলবে…

Facebook Comments