banner

বুধবার, ০৮ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 866 বার পঠিত

 

গল্পে গল্পে প্যারেন্টিং : একটি ঘড়ি


কানিজ ফাতিমা


একদেশে একটা ছোট্ট ছেলে ছিল – ওর নাম ছিল রনি। তার বয়স ছিল ছয় বছর। রনির বোনের নাম মিনি। রনির অনেক কিছুর শখ ছিল। যেমন সে খেলতে পছন্দ করত, ছবি আঁকতে পছন্দ করত, বই পড়তে পছন্দ করত; আর সব থেকে বেশী পছন্দ করত বন্ধুদের সঙ্গে মজা করতে। প্রতি গ্রীষ্মের ছুটিতে সে তার বন্ধুদের নিয়ে অনেক অনেক মজা করত। ঈদ ছিল তার খুবই প্রিয়। কারণ ঈদের দিনে তারা সবাই মিলে অনেক মজা করতে পারতো ।

রনি খুব ভাল ছেলে। কিন্তু তার ছোট একটা সমস্যা ছিল- সে তার বাবা-মায়ের টেবিল ঘড়িটা নিয়ে খেলতে চাইত। রনি তার বাবা-মার রুমে গেলেই ঘড়িটির লাল রঙের কাটা দু’টির দিকে তাকিয়ে থাকতো। তার মনে হতো কাটা দু’টি খুবই ধীরে ধীরে ঘুরছে । তাই রনি ঘড়ির চাবি ঘুরিয়ে কাটা গুলোকে জোরে ঘুরিয়ে দিত। রনি প্রায়ই তার বাবা-মায়ের ঘড়ি নিয়ে চাবি ঘুরানো খেলা করত। এই খেলাটি ছিল তার অনেক পছন্দের একটা খেলা। কিন্তু যখন তার বাবা-মা এটা পছন্দ করতেন না, তারা রনির হাত থেকে ঘড়িটি সরিয়ে নিতেন আর বলতেন, “রনি, আর কখনও ঘড়ি নিয়ে খেল না। এটা খেলনা না। এটা কাজের জিনিস। ঘড়ি নিয়ে খেললে আমরা সঠিক সময় বুঝতে পারবো না।”

বাবা-মায়ের সমস্যা হোক তা রনি চাইতো না। কিন্তু সে ঘড়ি নিয়ে খেলতে এতই মজা পেতো যে সুযোগ পেলেই সে এই কাজ করতো।

তখন ঈদের মাত্র দুই দিন বাকী । রনি মিনির সঙ্গে খেলছিল আর তখনই মায়ের ফোন বেজে উঠলো।

মা ফোন ধরলেন। “আস্সালামু আলাইকুম।”

“ও হ্যাঁ জয়নব, কেমন আছো?…. … …আমি ভাল আছি আলহামদুলিল্লাহ। … … … …রনি এটা শুনে খুবই খুশী হবে। ও এখন পাশের রুমে মিনির সঙ্গে খেলা করছে। দাঁড়াও, আমি ওকে ফোন দিচ্ছি।”

একথা শুনে রনি দৌড়ে মায়ের কাছে চলে আসলো।
“মা, জয়নব আন্টি কি বলছেন?” রনি তার মায়ের কাছে জানতে চাইলো।
“ওমর তোমার সঙ্গে কথা বলবে” রনির মা বললেন।
রনি ফোন নিল এবং বললো “আস্সালামু আলাইকুম।”
ওমর উত্তর দিল, “ওয়ালাইকুম আস্সালাম। তোমার জন্য একটি সুসংবাদ আছে।”
“কি সুসংবাদ?” রনি খুবই উত্তেজিত হয়ে বললো।
“দুদিন পরেই ঈদ । আমি ঠিক করেছি এবারের ঈদে স্পেশাল কিছু করবো।” ওমর বললো
“কি করবে?” রনি জিঞ্জাসা করলো।
“Guess করো তো।” ওমর বললো
রনি চিন্তা করে বললো “তুমি কার্টুন দেখবে” “তুমি পার্কে বেড়াতে যাবে’”
”না”
“তুমি কি আমাকে তাহলে গিফট করবে ?”
“না, তাও না”
“আমি পারছি না”- রনি হার মানলো।
“আমি আমার বাসায় সব বন্ধুদের দাওয়াত করবো। তার পরে সবাই মিলে আনন্দ করবো। তুমি আসবে কিন্তু । সিয়াম , তাদভীন, আহমদ সবাই আসবে।”
রনি তার মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে অনুমতি চাইল, “মা, আমি কি যেতে পারি ?”
মা বললেন, “ঠিক আছে, তুমি যেতে পার।”
“আলহামদুলিল্লাহ” রনি খুবই খুশী হল, বললো,” ওমর আমি আসবো। ইনশাল্লাহ”
ওমরও অনেক খুশী হল। রনি ওমরকে সালাম দিয়ে ফোন রেখে দিল। তারপর মাকে জড়িয়ে ধরে বললো , “এবারের ঈদে অনেক মজা হবে। আমরা সব বন্ধুরা একসঙ্গে মজা করবো। খুবই মজা হবে !”

রনির মা হাসলেন।“হ্যাঁ এটা খুবই আনন্দের। তবে এখনও ঈদের দু’দিন বাকী। এখন অনেক রাত হয়েছে। শুতে যাও।”
রনি তার মাকে চুমু দিল এবং বললো “আস্সালামু আলাইকুম।”
মা বললেন, “ওয়ালাইকুম আস্সালাম। তোমার দাত ব্রাশ করতে ভুলে যেও না।”

রনি বাথরুমে গেল, দাত ব্রাশ করলো, হাত-পা ধুয়ে নিজের বেডরুমের দিকে রওনা হল। পথে সে যখন তার বাবা মায়ের রুমের সামনে এল তখন তার চোখ গিয়ে পড়লো টেবিল ঘড়িটির ওপর। সে ঘড়িটির লাল কাটা গুলো ঘুরতে দেখলো। কাটাগুলো খুবই সুন্দর লাগছিল। সে একটু থামলো -তারপর গুটি গুটি পায়ে ঘড়িটির সামেনে এসে দাঁড়ালো । কাটাগুলো খুবই আস্তে আস্তে ঘুরছে। সে ঘড়ির চাবি ঘুরিয়ে কাটাগুলোকে দ্রুত ঘোরাল। এটা খুবই মজার একটা খেলা। হঠাৎ সে শুনতে পেল তার বাবা বাইরে থেকে ফিরে তার আর মিনির নাম ধরে ডাকছেন। সে দৌড়ে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো।
“আস্সালামু আলাইকুম বাবা”
বাবাও তাকে চুমু দিলেন, “ওয়ালাইকুম আস্সালাম। তুমি এখনো জেগে আছে ?”
বাবা তাকে কোলে করে তার রুমে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলেন।
বন্ধুদের পার্টির কথা ভাবতে ভাবতে রনি ঘুমিয়ে গেল। ঘোমের মধ্যেও সারারাত সে ঈদের পার্টি নিয়ে স্বপ্ন দেখতে থাকলো।
পরের দিন সকালে যখন সে ঘুমিয়ে ছিল তখন খাবার ঘর (ডাইনিং রুম) থেকে সে হুড়োহুড়ির শব্দ শুনতে পেল। সে ঘুম থেকে জাগলো। বিছানায় উঠে বসলো এবং দোয়া পড়ল “আশাহাদু আল্ লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্ম্দার রাসুল আল্লাহ”।
তারপর বিছানা থেকে তাড়াতাড়ি নেমে এক দৌড়ে খাবার ঘরে এলো। তার মা-বাবা ছুটোছুটি করছেন রান্নঘর থেকে বসার ঘর পর্যন্ত।
“কি ব্যাপার ? ”-সে তার বাবাকে জিজ্ঞাসা করলো।
বাবা গোসল খানার দরজা বন্ধ করতে করতে বললেন, “আমার অনেক দেরী হয়ে গেল।”
মা রান্নাঘর থেকে বাবাকে বললেন, “তাড়াতাড়ি করো। আমি সকালের নাস্তা আর দুপুরের খাবার টিফিন বক্সে দিয়ে দিচ্ছি। তাড়াতাড়ি করো। নয়তো তুমি তোমার মিটিং এ ঠিক সময়ে পৌঁছাতে পারবে না।”
রনি রান্না ঘরে গিয়ে তার মাকে বললো-‘আস্সালামু আলাইকুম মা’
“ওয়ালাইকুম আসসালাম,” তার মা তার দিকে না তাকিয়েই বললেন, “ঘড়ি নিয়ে খেলা করা তোমার ঠিক হয়নি। আমরা ঠিক সময় মত জাগতে পারিনি। তোমার বাবার অফিসে যেতে দেরী হয়ে গেল। সে সকালে নাস্তাও করতে পারবে না।”
রনির খুব মন খারাপ হল। সে বলল “আমি দুঃখিত”
মা বললেন, ”ঠিক আছে, মুখ ধুয়ে নাস্তা খাবার জন্য তৈরী হয়ে নাও।”

আগামীকাল ঈদ। আজ রনি ও মিনি তাদের মায়ের সাথে মার্কেটে যাবে এবং ঈদের জন্য অনেক কিছু কিনবে- ঈদের নতুন জামা কিনবে,কাল পার্টিতে বন্ধুদের দেবার জন্য ঈদ কার্ড কিনবে,ওমরের জন্যও কিছু কিনবে। তারা নাস্তা সেরে তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নিল।
সারাদিন রনি অপেক্ষা করলো ঈদের দিনের জন্য। “জান, কাল আমরা কি কি করবো?” রনি মিনিকে জিজ্ঞাসা করলো।
মিনি জানতে চাইলো, “কি করবে ?’
“আমরা লুকোচুরি, মিউজিক, চেয়ার, আর মনোপলি খেলবো।”
মিনি বললো, “তাহলে আমিও যাবো।”
রনি বললো, “ওটাতো আমার বন্ধুদের পার্টি। তুমি কি করবে ?”
মিনি জিজ্ঞাসা করলো, “ওমরের কি বোন আছে ? সে আমাদের জন্য একটা পার্টি করতে পারে না?”
“না, ওমরের বোন নেই” রনি বললো।
“তোমাদের ভাগ্য ভালো। ক’টায় পার্টি শুরু হবে ?” মিনি জিজ্ঞাসা করল।
“৫ টায় শুরু হবে আর ৭ টা পর্যন্ত চলবে। তারপর ওমর ওর দাদার বাড়ী বেড়াতে যাবে” রনি উত্তর দিল।

রনি মাকে বলল, “আমি পার্টিতে কিছু কেক নিতে চাই।মা, তুমি কি আমাকে কিছু কেক তৈরী করে দিতে পারবে ?”
মা বললেন, “তুমি তোমার বন্ধুদের জন্য নিজেই কেক তৈরী করে নিয়ে যেতে পারো। আমি তোমাকে সাহায্য করবো”

রনি এ কথা শুনে তো মহাখুশী, “অবশ্যই আমি নিজেই কেক তৈরী করবো। কী মজা !”
তার মা তাকে পরিমাণ মত ময়দা, তেল, কোকো পাউডার, দুধ ও অন্যান্য উপাদান নিতে সাহায্য করলেন। বাটিতে এ গুলোর সঙ্গে ঘী নিয়ে রনি ভাল করে মিশালো। তারপর সে এগুলোকে কেকের ছাঁচে ঢেলে ওভেনে দিল। মা ওভেন অন করে দিলেন।

রনি উৎসাহ নিয়ে ওভেনের দিকে তাকিয়ে আছে। সে অপেক্ষা করতে থাকলো কখন কেক বেক শেষ হবে। ক্লান্ত হয়ে কতক্ষন পরে সে মিনির সঙ্গে খেলতে চলে গেল।

কিছুক্ষন পরেই তার মা তাকে ডাকলেন, “রনি তোমার কেক হয়ে গেছে, দেখে যাও ।”
রনি আর মিনি এক দৌড়ে রান্না ঘরে এলো, কেকটা দেখতে খুবই সুন্দর হয়েছে। সে গন্ধ নিল। খুবই সুন্দর গন্ধ……..! তার বন্ধুরা কেকটি খুবই পছন্দ করবে।

রাতে যখন বাবা বাসায় এলো সে তাকে তার নতুন জামা দেখলো, ওমরের জন্য কেনা গাড়ীটা ও দেখালো।
তার বাবা বললেন, “মাশা আল্লাহ, ওমর গাড়ীটা খুব পছন্দ করবে।”
তার পর সে তার বাবাকে খাবার ঘরে নিয়ে গেল তার কেক দেখানোর জন্য। বাবা খুবই খুশী হলেন। রনিতো খুব ভাল রান্না শিখেছে।
রাতের খাবার এর জন্য তারা সবাই একসাথে খাবার টেবিলে বসলো। রনি পার্টির কথা, খেলার কথা, গিফটের কথা বলতেই থাকলো। খাবারের পর বাবা তাকে সাহায্য করলেন উপহারগুলো প্যাকটে করতে। এরপরে তারা বড় বড় টুকরো করে কেকটা কাটলো ।
রনি খুবই খুশী, আজ সে অনেক কিছু করেছে।
বাবা তাকে শোবার ঘরে দিয়ে ঘুমাতে গেলেন। রনি রাতের কাপড় পরে দাত ব্রাশ করে শুতে এল। কাল ঈদ। সে ভোরে উঠে ঈদের নামাজে যাবে। সারারাত সে স্বপ্ন দেখলো- সে তার বন্ধুদের সঙ্গে অনেক মজা করছে, কেক খাচ্ছে, আর খেলা করছে।

ঈদের দিন সে খুব সকালে ঘুম ভেঙ্গে জাগল- দোয়া পড়ে সে বিছানা থেকে নেমে এল। সে তার বাবা-মায়ের রুমে গিয়ে দেখলো তারা ঘুমিয়ে আছেন। সে খাবারের ঘরে গিয়ে নিজের কেকটা দেখলো। তারপর নিজের রুমে এসে ঈদের জামাটি দেখলো। এটা পরে সে আজকে পার্টিতে যাবে। সে মনে মনে ভাবল আজ সে সবার আগে পার্টিতে যাবে।
আজ বিকালেই পার্টি । কখন যে বিকাল হবে! কখন যে সে পার্টিতে যাবে! তার আর দেরী সইছে না।
তার বাবা-মা ঘুম থেকে উঠলেন। বাবা মিনি ও রনিকে গোসল করিয়ে দিলেন। তারা সবাই নতুন কাপড় পরে ঈদের নামাজ পড়তে গেল। ঈদগাহে নামাজ শেষে রনি তার কিছু বন্ধুদের দেখতে পেল- তারা সবাই সবাইকে ঈদ মোবারক জানিয়ে কোলাকুলি করল। তারপর তারা গরীব মানুষদের কিছু দান করল। শেষে তারা বাসায় ফিরে এল।

এরপর বাবার কিছু বন্ধু বেড়াতে এল। বাবা তাদের সঙ্গে কোলাকুলি করলেন আর মা তাদের জন্য কিছু মজার খাবার তৈরী করে দিলেন। রনি ও রনির বাবা টেবিলে খাবার সাজাতে তার মাকে সাহায্য করলো। রনির বাবা খুবই ভাল। সে সব কাজে রনির মাকে সাহায্য করে। রনিও তার মাকে ঘরের কাজে সাহায্য করে। রনিকে তার বাবা বলেছে আমাদের নবীও ঘরের কাজে সাহায্য করতেন।

দুপুরে রনির মায়ের কিছু বান্ধবী এল। মা তাদের দেখে খুবই খুশী হলেন। তাদের সঙ্গে বসার ঘরে বসে গল্প করলেন। রনি ও রনির বাবা তাদের জন্য টেবিলে খাবার সাজালেন। এরপর রনি মিনির সঙ্গে খেলতে চলে গেলো । কিছুক্ষণ খেলার পরে সে তার বাবাকে জিজ্ঞাসা করলো- “এখন কি পার্টির সময় হয়েছে ? আমি কি তৈরী হব ?”
”না রনি, এখনও অনেক সময় বাকী। তোমাকে আরেকুটু ধৈর্য্য ধরতে হবে। তুমি এই বইটা আমার ঘরে একটু রেখে আস, প্লীজ ।”
সে যখন বই রেখে নিজের রুমের দিকে আসছিল তখন সে তার বাবা-মায়ের ঘড়িটি দেখতে পেল। তার লাল কাটা গুলো টিক্ টিক্ করে ঘুরছে। কিন্তু খুব ধীরে ধীরে ঘুরছে। রনি আস্তে আস্তে করে ঘড়িটির দিকে গেল, আর তারপর ঘড়ির চাবিটি ঘুরিয়ে দিলো।
রনির খুব মজা লাগছে – কাটাগুলো ঘুরছে !
এমন সময় সে মিনির ডাক শুনতে পেলো, “ভাই-য়া- -”
রনি মিনির ঘরে এলো।
”তুমি কি আমাকে এই ফুলটা একটু রঙ করে দিতে পারবা ?”
রনি মিনির জন্য ছবি রঙ করতে লাগল।
কিছুক্ষণ পরে রনি তার মাকে জিজ্ঞাসা করল, “ মা, আমি কি এখন তৈরী হব ?” রনির মা নিজের রুমে গিয়ে ঘড়ি দেখে বললেন ”না, এখনও সময় হয়নি।”
রনি নিজের রুমে গিয়ে পাঁচটা বাজার জন্য অপেক্ষা করলো। অপেক্ষা যেন শেষই হয়না – কখন সে পার্টিতে যাবে, বন্ধুদের তার কেক দেখাবে, তাদের সঙ্গে খেলা করবে, আর তাদের উপহার গুলো দিবে। রনি আর দেরী করতে পাছিল না।
অবশেষে তার মা ডেকে বললেন, ”এখন রেডি হয়ে নাও, সময় হয়েছে।”
রনি রেডি হল। তারপর কেক, কার্ড ও ওমরের গাড়ী নিয়ে সে তার বাবার সঙ্গে রওনা হয়ে গেল। সারা পথ রনি খুবই আনন্দ লাগছিলো – ঈদের পার্টিতে যাচ্ছে, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে!
অবশেষে সে ওমরদের বাড়ীতে এল এবং বেল বাজালো। সে অপেক্ষা করছিল দরজা খুলেই সে তার বন্ধুদের দেখতে পাবে।
রিয়াদ চাচা দরজা খুললেন-
– আস্সালামু আলাইকুম
– ওয়ালাইকুম আস্সালাম- রনি ও তার বাবা উত্তর দিলেন।
রনি বললো, “আমরা পাটিৃতে এসেছি।”
“পার্টি ?” রিয়াদ চাচা বললেন, “পার্টিতো শেষ। এখন সাড়ে সাতটা বাজে।”
রনির বাবা হাতের ঘড়ির দিকে তাকালেন এবং দেখলেন সত্যিই সাড়ে সাতটা বাজে। সে রনিকে জিজ্ঞাসা করলো- “তুমি কি আমার রুমের টেবিল ঘড়িটা নিয়ে খেলেছিলে?”
রনি দুঃখিত হল, -হ্যাঁ।
“তোমাকে বলেছি ঘড়ি নিয়ে খেলবে না। তুমি ঘড়ির কাটা ঘুরিয়েছিলে। তাই আজ আমরা সঠিক সময় জানতে পারিনি। আর এজন্যই আজ তুমি পার্টিতে ঠিক সময়ে আসতে পারোনি।” বাবা বললেন।
“আমি পার্টির জন্য কেক তৈরী করেছি। ওমরের জন্য উপহার কিনেছি। অমি বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করতে চাই” – রনির চোখ পানিতে ভরে গেল। ওর প্রচন্ড কান্না পেল।
রিয়াদ চাচা বললেন, “আমি দুঃখিত, রনি। তোমার বন্ধুরা পার্টিতে এসেছিল,তারা একসঙ্গে খাবার খেয়েছে, খেলা করেছে, তারপর সবাই বাড়ী ফিরে গেছে। ”
রনি একথা শুনে খুবই কষ্ট পেলো । সে কান্না করে ফেললো, “আমি ওমরকে এই গাড়ীটা দিতে চাই।”
“আমি দুঃখিত রনি। ওমরতো পার্টি শেষে তার দাদা বাড়ী চলে গেছে।”
রনির বাবা রিয়াদ চাচাকে ধন্যবাদ ও সালাম দিয়ে গাড়ীতে উঠলেন বাসায় ফেরার জন্য। রনি চুপচাপ গাড়ীতে বসে থাকল। তার দু’গাল বেয়ে চোখের পানি পড়ছিল। সে ওমরের সঙ্গে, ওর অন্যান্য বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করতে চায়। কিন্তু সে আজ সবকিছু থেকে বঞ্চিত হল। সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো সে আর কোনদিন ঘড়ি নিয়ে খেলবে না। কাজের জিনিস নিয়ে কখনও দুষ্টুমি করা ঠিক না। কাজের জিনিস আর খেলনা এক কথা না।

এরপরে রনি আর কোনদিন কাজের জিনিস নিয়ে খেলা করেনি।

গল্প শেষে:

গল্প শেষে শিশুর সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন গল্পের শিক্ষা নিয়ে। প্রশ্ন করুন –

১. কাজের জিনিস আর খেলনার মধ্যে পার্থক্য কি?
২. কাজের জিনিস নিয়ে খেলা করা কেন উচিত না ? এতে কি ধরণের সমস্যা হতে পারে?
৩. বাসার কোন কোন কাজের জিনিস নিয়ে বছর খেলতে চাইতে পারে- কয়েকটি উদাহরণ দাও ?
৪. এগুলো নিয়ে খেললে আমাদের কি কি সমস্যায় পড়তে হতে পারে?

গল্পে গল্পে প্যারেন্টিং :কাজের জিনিস নিয়ে খেলতে নেই
একটি ঘড়ি

Facebook Comments