banner

রবিবার, ০৫ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 1157 বার পঠিত

 

স্তন ক্যানসার : সচেতনতাই যার প্রতিকার – ২য় পর্ব


নুসাইবা ইয়াসমীন


বাংলাদেশে স্তন ক্যানসারের সঠিক কোন পরিসংখ্যান না পাওয়া গেলেও বিভিন্ন সুত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বিগত পাঁচ বছরে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে এলার্মিং হারে। পাশ্চাত্যের স্তন ক্যানসারের তীব্রতা অনেক আগে থেকে থাকলেও আমাদের দেশ তা থেকে ছিল অনেকটাই মুক্ত । বিশেষজ্ঞদের মতে সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের খাদ্যাভাস এবং জীবনপদ্ধতির পরিবর্তন এর জন্য দায়ী। বর্তমানে প্রাচ্যের মত আমাদের দেশের নারীদের মধ্যেও জন্মনিয়ন্ত্রণকারী পিল বা পিরিয়ড বন্ধকারী পিল খাওয়ার প্রবনতার ঝুঁকি আরও বেড়ে যাচ্ছে।
তবে আশার ব্যাপার হলো প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ সনাক্ত করা গেলে আপনি মৃত্যু ঝুঁকি থেকে অনেকটাই মুক্ত। প্রয়োজন নিয়মিত স্তনের সেল্ফ পর্যবেক্ষণ করা। কখনও যদি স্তনে অস্বাভাবিক কিছু লক্ষণীয় দিক দেখা যায় তা দেখে বিচলিত হবেন না। শরণাপন্ন হন কোন গাইনোকলজিস্টের কাছে। আপনার ডাক্তার যদি প্রাথমিক পর্যায়ে কোন অস্বাভাবিকতা লক্ষণ বের করে থাকেন তাহলে আপনাকে কিছু টেস্টের মাধ্যমে ব্যাপারটি নিশ্চিত হতে হবে। টেস্টের রির্পোটে যদি অস্বাভাবিক কিছু পাওয়া না যায় তবে নিয়মিত চেকআপে থাকুন আর যদি ক্যান্সারের সেল সনাক্ত হয় তবে চলে যান একজন সাইকোলজিস্ট ও একজন সার্জনের কাছে।

ব্রেসট ক্যানসার সনাক্তকরনে যে সকল টেস্ট করা হয়ে থাকে তা হল

১. ব্রেসটে আলট্রা সাউনড: ব্রেসটে কোন ধরনের অস্বাভাবিকতা লক্ষণ দেখা গেলেই। প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য সাধারনত ত ব্রেসটের কতকগুল টেস্ট করার মাধ্যমে ব্রেসট লাম্বের সাইজ ও ধরন নির্নয় করা যায়।

২। এফ এন এ সি ( ফাইন নিডেল এ্যাসপিরেশন সাইটোলজি): এফ এন এ সির পদ্ধতিতে একটি সুই এর মাধ্যমে ব্রেসট থেকে স্যাম্পল নিয়ে পরীকখা করা হয় স্যাম্পলটি ক্যানসারিয়াস কিনা। এই টেস্টে সুই ব্যবহৃত হলেও এতে কোন ব্যথা অনুভূত হয় না।এ পরীকখাটি সাশ্রয়ী ও রিপোর্ট দ্রুত পাওয়া সম্ভব।

৩. কোর বায়োপসি / ট্রু কাট বায়োপসি: ক্যানসার পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত করার জন্য কোর বায়োপসি করা হয়ে থাকে। এ পরীকখাটি সাধারনত লোকাল এনেসথেসিয়া দিয়ে করা হয়। এতে ব্রেসটের খুব সামান্য পরিমান (সাধারনত ২ সে. মি) অংশ কেটে স্যাম্পল নেয়া হয়। এ পরীকখা কিছুটা ব্যয়বহুল। সাধারনত টেস্টের রেজাল্ট পেতে সাত দিনের মত সময় লাগে।

৪. ম্যামগ্রাম: বায়োপসিতে যদি ক্যানসার সনাক্ত হয়ে থাকে তবে ম্যামগ্রামের মাধ্যমে ক্যানসার সেলের বৃদ্ধ পাওয়ায় ও ধরন নির্নয় করা হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে ম্যামগ্রাম প্রাথমিক টেস্ট হিসেবে ক্যানসার সনাক্তকরনে ব্যবহৃত হয়। ম্যামগ্রাম এক্সরের মত এক প্রকার ইস্ত্রিনিং পদ্ধতি। এতে রেডিও একটিভ রে ব্যবহৃত হয় বলে গর্ভবতি মহিলাদের এ টেস্ট না করার পরামর্শ দেয়া হয়।

অনেক সময় ক্যানসার সনাক্তকরণে এমআরআই ও করা হয়ে থাকে।

যদি আপনার বা আপনার পরিবারের কোন সদস্যের ক্যানসার সনাক্ত হয় খুব দ্রুত চিকিৎসা শুরু করে দিতে হবে। মনে রাখবেন ক্যানসার খুব দ্রুত বিস্তার লাভ করে তাই এক দিন বিলম্ব আপনার জীবনের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে অনেকখানি।
এখেএে সর্ব প্রথম যে সমস্যায় অামরা সমুখখিন হই তা হল সঠিক তথ্য ও দিকনিদের্শনার অভাব।তাই চিকিত্সা শুরুর পূর্বেই যে বিষয়গুলোর ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারনা থাকার প্রয়োজন তা হলো:

১. ঠিক কি কি ধরণের স্তন ক্যান্সার হতে পারে?

২. ক্যান্সার যদি টিউমারজনিত হয় তাহলে এর সাইজ বর্তমানে কত?

৩. কোথায় বা কোন স্থানে এটা হতে পারে?

৪. স্তন ক্যান্সার কি অন্যান্য লিমপফ নোড এ প্রসারিত হয়েছে কিনা।

৫. ক্যান্সারের স্তর বা স্টেজ কি এবং বর্তমানে কোন স্তর এ অাছে।

৬. চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কি অন্য কোন পরীক্ষার প্রয়োজন অাছে কিনা।

৭. অন্য কোনও ডাক্তার (ফার্টিলিটি, ডেনটিসট,কার্ডিও) অথবা অন্য কোন স্বাস্থ্যকর্মীদের দেখান দরকার আছে কিনা?

৮. ক্যান্সারের হরমোন রিসেপটর অবস্থা কি? এটার মানে কি? ক্যান্সারের HER2 অবস্থা কী? এটার মানে কি?

৯. কিভাবে এই বিষয়গুলি আমার চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করবে এবং চিকিৎসার খেএ্রে কি কি অপশন অাছে।

১০. ক্যান্সারের স্টেজ এর উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কতটুকু?

১১. আমাদের জিনগত পরীক্ষা সম্পর্কে চিন্তা করা উচিত কি? টেস্টিং এর বিকল্প কি?

১২. কিভাবে আমরা আমাদের প্যাথলজি রিপোর্টের একটি কপি পেতে পারি?

১৩.রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার জন্য সর্বমোট কত খরচ লাগতে পারে।
বেসরকারি পর্যায়ে ক্যানসারের চিকিৎসা বেশ ব্যয়বহুল। তাই চিকিৎসা শুরুর আগেই পরিবারের সাথে বসে এ ব্যাপারে প্রস্তুতি নিয়ে নেয়া জরুরী।

ব্রেসট ক্যানসারের ঝুঁকি ও এর প্রকপ অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে।সচেতনতা ও সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসাই পারে মৃত্যুর হাত থেকে ফিরিয়ে আনতে একটি সুন্দর জীবন।

Facebook Comments