banner

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 922 বার পঠিত

 

জ্ঞানার্জন আমাকে বিনয়ী করছে তো?


আফরোজা হাসান


ছোটবেলা থেকে যদি জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যটা পরিষ্কার থাকে তাহলে সামনে এগিয়ে যাওয়াটা অনেক সহজ হয়ে যায়। তেমনি শিক্ষার লক্ষ্য-উদ্দেশ্যটা জানা থাকলে জ্ঞানার্জন করাটাও অনেক আনন্দদায়ক হতে পারে। কিন্তু এরজন্য শিক্ষায় থাকতে হবে গভীর নিষ্ঠা। কোনমতে দু’চার দিন শিখেই বাজিমাত করে দেয়া কখনোই সম্ভব নয়। মানুষের স্বভাব হচ্ছে কোন একদিকে মনকে স্থির রাখতে চেষ্টা করেনা। নানা দিকে মনকে ছড়িয়ে দেয়। তাই শেষ পর্যন্ত কিছুই করতে পারেনা। শিক্ষা দ্বারা না পারে নিজেকে গড়তে, না পারে অন্যকে সাহায্য করতে। আমার মতে জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্য হতে হবে নিজের পা দুটোকে মাটিতে শক্তভাবে স্থাপন করা। জ্ঞান দ্বারা প্রথমে একনিষ্ঠ ভাবে নিজের উন্নয়নে মনোযোগ দিতে হবে। নিজেকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে সবার আগে। তাহলেই কেবল সম্ভব হবে জ্ঞানকে যথাযথ কাজে লাগানো।

মানবজীবনের উদ্দেশ্যে সফল হওয়ার জন্য আমাদেরকে নম্র ও বিনয়ী হতে হবে। কারন মানুষ যত নম্র ও বিনয়ী হয় ততই তার মর্যাদা উন্নত হয়। কুরআনে আল্লাহ বলেছেন-“ আমি তাদের পরকালে শাস্তি দেবোনা, যারা উদ্ধত স্বভাবের নয়, আর যারা অন্যের অনিষ্ঠ করার ইচ্ছে পোষণ করেনা।” ঔদ্ধত্য মানুষের চরিত্র মাধুর্য নষ্ট করে, অহংকার বাড়িয়ে দেয়। আর অহংকার মানুষকে অধঃপতনের সর্বনিম্ন স্তরে নিয়ে যায়। অহংকার মানুষকে আত্মচিন্তায় বিভোর রাখে। কিন্তু কর্তব্যবোধ ও পরমতসহিষ্ণুতা মানুষকে কল্যাণকামী মানুষে পরিণত করে। কৃতজ্ঞতাবোধ যেমন সকল সৎ গুনের জননী, শিক্ষা তেমন বিনয়ের জননী।

শিক্ষা অর্জনে জ্ঞানের প্রসারতা বাড়ে, আর জ্ঞান মানুষকে বিনয়ী, নম্র ও ভদ্র হতে শেখায়। যিনি অহংকার পরিত্যাগ করে ফলবান বক্ষের ন্যায় গুনভারে নুয়ে পড়ে এবং ছোট বড়, ধনী দরিদ্র সকলকে সমভাবে ভালবাসতে পারেন তিনিই প্রকৃত মানুষ। অহংকার সর্বাবস্থায় পরিত্যাজ্য। কেননা আল্লাহ অহংকারীদের ভালোবাসেন না। রাসুল সঃ বলেছেন-“ যারা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য বিনয়ী মনোভাব পোষণ করে, আল্লাহ তাদের সম্মান ও মর্যাদা বাড়িয়ে দেন।” তাই সবার আগে লক্ষ্য রাখতে হবে জ্ঞান বিনয়ী হতে ও নম্র হতে সহায়তা করছে কিনা। কারণ বিনয় ও নম্রতা দ্বারা মানুষ পরম শত্রুকেও বন্ধুতে পরিণত করতে পারে।আর উদ্ধত বা অহংকারে বন্ধুও পরিণত হয় শত্রুতে। তাই বিনয় ও নম্রতার প্রয়োজনিতা অপরিসীম।

জীবনের সর্বক্ষেত্রে অবশ্যই বিনয়ী আচরণ করতে হবে কিন্তু সাথে সাথে মনে রাখতে হবে বিনয়ী মানে এমন নয় যে অনুচিত কাজ বা ভ্রান্ত কথা শুনেও চুপ করে থাকবে হবে। মানুষের প্রতি মানুষের সুবিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য, সুন্দর ও কল্যাণের জন্য, সত্য ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার জন্য বিনয় ও নম্র ব্যবহার যতখানি প্রয়োজন, ঠিক ততখানিই প্রয়োজন অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা। একথা স্মরণ রেখেই নম্র, ভদ্র ও বিনয়ী হতে হবে।

Facebook Comments