banner

রবিবার, ০৫ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 944 বার পঠিত

 

ছোট ছোট বালুকণা – ৬


রেহনুমা বিনত আনিস


সামিয়া সিদ্ধান্ত নেয় এবার সাহস করে মাসরুরের সাথে কথা বলতেই হবে, আর এভাবে চলতে পারেনা। তবে বান্ধবী পরামর্শ দিয়েছে সুস্থিরভাবে কথা বলতে হবে, কারণ ঝগড়ার মুডে চলে গেলে দু’জনই কথা বলতে থাকে, কিন্তু কেউ কারো কথা শোনেনা। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে পাঁচ মিনিট ভেবে নেয় সামিয়া কিভাবে কথা শুরু করা যায়, তারপর দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে। মাসরুর মাথা তুলেও তাকায়না। ঢোঁক গিলে সামিয়া। তারপর গলাটাকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক করে বলে, ‘আপনার পড়া শেষ হলে একবার ভেতরে আসবেন প্লিজ। কথা আছে’।

মাসরুর অবাক হয়ে তাকায়, ‘কি কথা? এখনই বলতে পারো’।

সামিয়া মাথা দুলিয়ে বলে, ‘নাহ। আপনি শেষ করেই আসুন’।

মাসরুরকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায় সামিয়া। পাঁচ মিনিট পর দেখে মাসরুর এসে উপস্থিত। অভাবনীয় এই ঘটনায় বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে বেচারাকে।

দরজার দুই ইঞ্চি ভেতরে দাঁড়িয়ে মাসরুর জিজ্ঞেস করে, ‘কোন সমস্যা হয়েছে সামিয়া?’

সামিয়া মুচকি হেসে বলে, ‘আহা, এভাবে কি কথা বলা যায়? আসুন, এখানে এসে বসুন। নইলে যে চিৎকার করতে হবে!’

মাসরুর এসে বিছানার পায়ের কাছে বসে। সামিয়ার মাথায় দুষ্টুমী চাপে, বলে, ‘আরাম করে বসুন প্লিজ। ভয় পাবেন না, আমি কোন হিংস্র পশু নই যে সুযোগ পেয়েই শিকারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ব’।

এবার মাসরুরের গম্ভীর মুখেও হাসি ফোটে।

সামিয়া এবার সিরিয়াস হয়ে বলে, ‘আমি বুঝতে পারছি আমি কিছু একটা অন্যায় করেছি, কোনভাবে আপনার মনে কষ্ট দিয়েছি। কিন্তু তাই বলে এভাবে দিনের পর দিন আপনি আমাকে চার্জ গঠন, তদন্ত বা সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়া শাস্তি দিয়ে যাবেন এটাও তো কোন কাজের কথা না। আপনি যদি আমাকে খোলাখুলিভাবে বলতেন আমার কোন জিনিসটি আপনাকে কষ্ট দিয়েছে তাহলে আমি অন্তত নিজেকে সংশোধনের সুযোগ পেতাম। এটুকু অধিকার তো আমার থাকা উচিত, না’কি?’

মাসরুর অবাক হয়, ‘শাস্তি?!’

‘আমাদের বিয়ে হয়েছে আজ তিনমাস। আপনি আমার সাথে কাজের বাইরে ক’টা কথা বলেছেন? আমরা একসাথে কবে কোথায় বেড়াতে গিয়েছি? মারযান আজ জিজ্ঞেস করছিলো আমরা আলাদা থাকি কেন। আমি কোন উত্তর দিতে পারিনি, কারণ আমি নিজেই জানিনা …’

মাসরুর মনের ভেতর কথাগুলো গুছিয়ে নেয়, তারপর ধীরে ধীরে বলে, ‘সামিয়া, বিশ্বাস কর, বিয়ের রাতেই প্রথম আমি বুঝতে পারি আমার কারণে তোমার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। কিন্তু তখন আমার আর কিছুই করার ছিলোনা, তোমার অধিকার নিশ্চিত করা ছাড়া। একদিন আগেও যদি তুমি আমাকে জানাতে তাহলে আমি নিজে তোমাকে আবদুল্লাহ ভাইয়ের সাথে বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতাম। কিন্তু তখন আর আমার পরিবারকে এসব কথা জানানো সম্ভব ছিলোনা। তাই আমি চেষ্টা করেছি এখানে সবার সাথে যেন তুমি মিলেমিশে থাকতে পারো, এতে হয়ত তোমার এখানে মানিয়ে নেয়াটা সহজ হবে। ওদের আমি তোমার কষ্ট বোঝাতে পারতাম না, কিন্তু অন্তত চেষ্টা করেছি আমার নিজেকে তোমার ওপর বোঝা হিসেবে চাপিয়ে না দিতে …’।

রাগে মুখ লাল হয়ে যায় সামিয়ার, ‘আপনি কি ভেবেছেন, ভেবেছেন কি আপনি? আবদুল্লাহ ভাইয়ের সাথে আমার প্রেম ছিলো? আমি আপনাকে আমার মনের কথা খুলে বললাম যেন আমাদের বন্ধুত্ব দৃঢ় হয়, আপনাকে আমার গোপন ইচ্ছার কথা জানালাম যা আমি কোনদিন আমার বাবামার সাথেও শেয়ার করিনি। আপনাকে উদাহরণ হিসেবে একজন চালচুলোহীনের কথা বললাম, যে এমন কেউ হলে হয়ত আমি তাঁর অভাব পূরণ করতে পারতাম, আর ওমনি আপনি ধরে নিলেন …’

বেশি রেগে গেলে সামিয়ার মুখে কথা জোগায়না, মাসরুরের মনোযোগী ভঙ্গিতে কথা শোনা ওকে আরো ক্ষেপিয়ে তোলে, নিজের অক্ষমতায় চোখের কোণে জল জমতে থাকে ওর, কিন্তু সে দাঁতে দাঁত চেপে সামলাতে থাকে, এই মূহূর্তে কিছুতেই দুর্বলতা প্রকাশ করা চলবেনা।

মাসরুর সব শুনে বলে, ‘সরি, এখন বুঝতে পারলাম আমি তোমার কথার ভুল ব্যাখ্যা করেছিলাম। কিন্তু তুমিও তো আমার অর্থনৈতিক অবস্থানের কারণে আমাকে ভুল বুঝেছ! তুমি আমাকে একজন মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন না করে টাকায় মেপেছ, যেন যার টাকা আছে তার আর কিছুর অভাব থাকতে পারেনা! সামিয়া, আবদুল্লাহ ভাইয়ের অনেক কিছুর অভাব ছিলো যা স্পষ্টভাবে চোখে পড়ে। কিন্তু তুমি কি একবারও ভাবোনি প্রাচুর্যের মাঝেও আমার কিছু অভাব থাকতে পারে, একজন ভালো বন্ধুর প্রয়োজন থাকতে পারে যার কাছে আমি আমার মনটাকে মেলে ধরতে পারি যেন সেখানে তুমি তোমার মমতার পরশ বুলিয়ে কষ্টগুলো মুছে দিতে পারো?’

সামিয়া মুখ নামিয়ে নীচুস্বরে বলে, ‘আমি আমার ভুলটা পরদিনই বুঝতে পেরেছি, আপনাকে না বুঝে কষ্ট দেয়ার জন্য প্রতিটা দিন অনুশোচনায় দগ্ধ হয়েছি, কিন্তু আপনার গড়ে তোলা প্রাচীর পেরিয়ে আপনার কাছে স্বীকার করতে পারিনি’।

(চলবে ইনশা আল্লাহ)

Facebook Comments