banner

রবিবার, ০৫ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 600 বার পঠিত

 

জোনাক নগরের আঙিনায়…৪


আফরোজা হাসান


চায়ের পানি বসাতে বসাতে আড় চোখে মাহার দিকে তাকালো নূরি। কান্না করে চোখ মুখ ফুলিয়ে লাল করে ফেলেছে মেয়েটা। ছয়মাস হয়েছে মাহার সাথে পরিচয় হয়েছে নূরির। তারপর থেকেই সপ্তাহে অন্তত একদিন কান্না করতে করতে অবশ্যই তার কাছে এসে হাজির হয় মাহা। বাচ্চাদেরকে স্কুল থেকে আনতে যাবার সময় হবার আগ পর্যন্ত চলতে থাকা কান্না আর জীবনকে ঘিরে থাকা দুঃখ-কষ্টের বর্ণনা। মাহার দিকে তাকিয়ে মায়ায় মনটা ভরে উঠলো নূরির। প্রায় তার সমবয়সীই অথচ চার ও তিন বছর বয়সী দুটি বাচ্চার মা হয়ে গিয়েছে। ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ার সময় বিয়ে হয়েছিল। নয় মাস পরেই হাজবেন্ডের কাছে প্রবাসে চলে এসেছে। বাবা-মায়ের খুব আদরের ছোট মেয়ে ছিল তাই সাংসারিক তেমন কোন জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে। প্রবাসে এসে নিজেই হিমশিম খাচ্ছিলো এমন অবস্থায় আবার নতুন প্রাণেদের আগমন জীবনে। নিজেকে ঠিকমতো গুছিয়ে নেয়ার সুযোগই পায়নি সেভাবে। সবকিছু মিলিয়ে কাজেকর্মে যেমন খুব একটা চটপটে না, স্বভাবেও তেমন গোছানো না মাহা। স্বামীর সাথে ওর খিটপিট লেগে থাকাটা তাই অস্বাভাবিক লাগে না নূরির কাছে। চা বানিয়ে মাহার কাছে বসে নূরি বলল, মাত্র না চোখ-মুখ ধুয়ে এলে তুমি, আবার কেন কান্না করছো? চোখ মোছ তো এখন। চা নাও দেখবে মাথা ধরা ছেড়ে দেবে।
তুমি তো জানো না নূরি কি হয়েছে গতরাতে।
মাহা তোমাকে একটা কথা বলি প্লিজ কষ্ট পেয়ো না। এই যে তুমি তোমার স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি, দেবরদের অন্যায়ের কথা আমাকে বলো এটা কিন্তু ঠিক না। কেননা এটাও গীবতের পর্যায়ে পরে।
গীবতের পর্যায়ে পরবে ক্যান? আমি তো আমার কষ্টের কথা তোমাকে বলি।
দেখো মাহা কষ্টের কথা বলা এক জিনিস আর অন্যের দোষ বর্ণনা করা আরেক জিনিস। তুমি অবশ্যই তোমার কষ্টের কথা আমাকে বলতে পারো কিন্তু সেটা হবে হবে অন্যের সমালোচনা করা ছাড়া।
কিন্তু আমি তো তোমার কাছে পরামর্শের জন্য বলি।
তুমি ভেবে দেখো তো ঠিক কি কি বলো আমাকে? তোমার সাথে কে কি করেছে অতীতে সেসব বলো নয়তো তোমার স্বামী কি বলেছে সেসব বলো। কিন্তু একতরফা কিছু শুনে কি পরামর্শ দেয়া সম্ভব? তুমি সবার ভুল আর দোষ বলো কিন্তু তোমার ভুল ও দোষ গুলো তো আড়ালেই থেকে যায় তাই না? আর নিজের কথা বললেও তোমার কাজের স্বপক্ষে যুক্তি দিয়ে বলো। যার ফলে তোমাকে সঠিক আর বাকি সবাইকে বেঠিক লাগাটাই স্বাভাবিক।
মাহা বেশ দৃঢ় কন্ঠে বলল, আমি কখনোই আমার দোষ গোপন করি না। আর মিথ্যাও কথা বলি না আমি আলহামদুলিল্লাহ।
নূরি হেসে বলল, তুমি মিথ্যা বলো বা গোপন করো এমন কথা কিন্তু আমি বলিনি। দেখো আমাদের স্বভাব হচ্ছে নিজেকে বা নিজের কাজকে পজেটিভ ভাবে দেখা। আর এখানে স্বভাবেরও কোন দোষ নেই। সমস্যা হচ্ছে আমাদের চোখ। কারণ আমাদের চোখ নিজেকে ছাড়া আর সবাইকে দেখে। যার ফলে সবার ভুল-অন্যায় গুলো দেখলেও নিজেরটা অদেখাই থেকে যায় তার কাছে। যারফলে আমাদের কাছেও অজানা থাকে যে কিছু ভুল আমারো আছে।
তারমানে তুমি বলতে চাইছো আমার স্বামী ঝগড়া করে এতে আমারো দোষ আছে?
নূরি হাসি মুখে বলল, কিছু না কিছু দোষ তো নিশ্চয়ই আছে। কি মুখ ভার হলো কেন? আচ্ছা বাদ দাও এসব কথা। তুমি চিন্তা-ভাবনা করে আমাকে একটা প্রশ্নের জবাব দাও। তুমি কি সত্যিই সুখী হতে চাও জীবনে?
এটা আবার কেমন প্রশ্ন? কে না সুখী হতে চায় জীবনে?
কে না চায় সেটা জানতে চাইনি তোমার কাছে। তুমি চাও কিনা সেটা বলো।
অবশ্যই চাই।
তাহলে খুঁজে বের করে তোমার জীবনে সুখী হবার পথে প্রতিবন্ধকতা গুলো কি কি? তোমরা সুখী হতে পারছো না এতে তোমার ঘাটতি কতটুকু আর তোমার স্বামীর কতটুকু? দাম্পত্য কলহ কেন বাঁধছে তোমাদের? স্বামীর কোন জিনিস গুলোকে তোমার গুণ আর কোন জিনিসগুলোকে দোষ মনেহয়? কতটুকু ভালোবাসো স্বামীকে? তার কষ্ট কি তোমাকে এতটা ব্যথিত করে যে না চাইতেও চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়ে?
কিছুক্ষণ চুপ থেকে মাহা বলল, এসব প্রশ্নের উত্তর আমি কিভাবে জানবো?
প্রতিটা সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমরা যদি ব্যক্তিকে তার ভালো ও মন্দ দুটি দিক থেকে আলাদা করে দেখতে চেষ্টা করি। তাহলে সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়ন অনেক কমে যায় জানো। আমার জন্য কি করেনি চিন্তা না করে যদি ভেবে দেখি কি কি করেছে, তাহলে মনের অপ্রাপ্তির ঘরে প্রাপ্তির দেখা পাওয়া অনেক সহজ হয়ে যায়। আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে বা কষ্ট দিয়েছে এটা ভাবার সাথে সাথে যদি নিজের ভুলটাও অনুসন্ধান করে দেখতে দেখি তাহলে জীবনের অনেক জটিলতা এমনিতেই কমে যায়। তুমি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করার চেষ্টা করো। তারপর আমরা এই বিষয়ে কথা বলবো।
তোমার কি এসব প্রশ্নের উত্তর জানা আছে নূরি?

চলবে…..

পর্ব-৩

Facebook Comments