banner

রবিবার, ০৫ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 614 বার পঠিত

 

করি পুষ্প রে বিকশিত-৩


আফরোজা হাসান


সেটা কিভাবে?

হেসে, এই যে মুসআব আর মাশফিয়া কিছু করার আগে চিন্তা করে তোমার প্রতিক্রিয়া কেমন হবে। এই চিন্তাটাই যদি ওদের আল্লাহকে ঘিরে হত তাহলে ব্যাপারটা কেমন হত ভেবে দেখো! বাবা-মার কাছে চাইলেই কোন কিছু গোপন করা যায়, মিথ্যা বলা যায়। কিন্তু এটা শিশুরাও জানে যে আল্লাহর কাছে কিছুই গোপন রাখা সম্ভব নয়। আল্লাহ সবকিছু জানেন ও দেখেন। আমি তো আসফিনকে এভাবেই ভাবতে শিখিয়েছি। ভাবী এই কথা তো আমরা খুব ভালো করে জানি যে মানুষকে খুশি করা কতটা কঠিন। আর মানুষকে খুশি করার প্রবনতা যে কোন মুহুর্তে ভুল পথে নিয়ে যেতে পারে। তাই ছোটবেলা থেকেই বাবা-মার উচিত সন্তানদের ভাবনার কেন্দ্রবিন্দুতে যাতে আল্লাহ থাকেন সেই চেষ্টা করা। কোন কিছু করার আগে যাতে ওদের মনে এই চিন্তার উদ্রেক হয় এরফলে আল্লাহর প্রতিক্রিয়া কেমন হবে।

হুম…আসলেই আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। তুমি কি আমাকে সাহায্য করবে এই ব্যাপারে। আমি বাচ্চাদেরকে নিয়ে ভীষণ ভয়ের মধ্যে আছি।

অন্তরা হেসে বলল, সন্তানের শৈশবে বাবা-মার প্রথম উল্লেখযোগ্য কাজ সমূহের মধ্যে প্রথমেই থাকা উচিত ওদের কচি মনে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার বীজ বুনে দেয়া। তারপর নিয়মিত আদর-যত্নের মাধ্যমে সেই বীজ থেকে চারা, চারা থেকে পুস্পকে বিকশিত হতে সহায়তা করা। ইনশাআল্লাহ আমি অবশ্যই তোমাকে সাহায্য করবো ভাবী। এখন আগে চলো পিজা বানাতে সাহায্য করি তোমাকে। তুমি প্লিজ আমার জন্য একটু চা করো।

হেসে ননদের জন্য চায়ের আয়োজনে মন দিলো নায়লা। কিছুটা স্বস্থি বোধ করছে এখন। ফুপ্পিকে প্রচন্ড ভালোবাসে মুসআব আর মাশফিয়া। আর শুধু নিজের বা পরিবারের বাচ্চারাই না, দুনিয়ার সব বাচ্চাদের ঘিরে অন্তরার মনে বয়ে চলে মায়া-মমতা ও ভালোবাসার নিরবধি ঝর্ণাধারা। আর নিঃস্বার্থ ভালোবাসা যে কোন কাজকে অনেক বরকতময় করে দেয়। কারণ তাতে সমন্বিত থাকে আল্লাহর রাহমাহ।

@
নাস্তা করতে এসে টেবিলে পিজা দেখে বিশাল হাসি ফুটে উঠলো মুসআবের চেহারাতে। ছুটে এসে আম্মুকে জড়িয়ে ধরলো। নায়লাও আদর করে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। তাশফিন আর মাশফিয়ারও পিজা অনেক পছন্দ। দেরি না করে তিনজনই তাই বসে গেলো নাস্তা করতে। তাড়াহুড়া করে গরম পিজাতেই কামড় বসিয়ে দিলো মুসআব। সাথে সাথেই চিৎকার করে উঠলো। কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল, খুব জ্বালা করছে মুখ। মনেহয় আমার জিভ পুড়ে গিয়েছে।

তাশফিন আনন্দিত কণ্ঠে বলল, মুসআব ভাইয়া মামীর কাছে কথা গোপন করে তুমি যে দুষ্টু কাজ করেছিলে সেটা আল্লাহ মাফ করে দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ বলো।

কেন এমন করো বাবা? জানোই তো যে অনেক গরম! বলতে বলতে ছেলের দিকে ছুটে যাচ্ছিলো নায়লা কিন্তু তাশফিনের কথা শুনে দাঁড়িয়ে গেল। হাসি চেপে একরাশ কৌতুক ভরা চোখে অন্তরাও তাকালো ছেলের দিকে।

মাশফিয়া বিরক্ত কণ্ঠে বলল, তাশফিন তুমি সবসময় শুধু বেশি কথা বলো। ভাইয়ার জিভ পুড়ে গিয়েছে আর তুমি বলছো আল্লাহ দুষ্টু কাজ মাফ করে দিয়েছেন। আর দিলেও তুমি কিভাবে জানো? ছোট্ট বয়সে বাচ্চারা অ্যাঞ্জেল থাকে। তুমি এখন আর অ্যাঞ্জেল নাই। তুমি হচ্ছো মহা পাজী।

তাশফিন নিজের স্বপক্ষে প্রবলভাবে মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলল, আপ্পি আমি সত্যি বলছি। তুমি আম্মুতাকে জিজ্ঞেস করো। আমি মাছ খেতে গিয়ে গলায় কাঁটা বেঁধে গিয়েছিল। আমি অনেক কান্না করছিলাম। আম্মুতা তখন আমাকে বলেছিল, “রাসূল(সঃ বলেছেন, মুসলিমদের যে কোন অসুখ, মনখারাপ, এমনকি কাঁটা বিধলেও সে কারনে আল্লাহ্ তার গুনাহ ক্ষমা করে দেন।” আমি তখন আর কান্না করিনি। পরে ডক্টর আঙ্কেল আমার কাঁটা বের করে দিয়েছিলেন। ঠিক বলেছি না আম্মুতা?

অন্তরা হেসে বলল, হ্যা বাবা তুমি একদম ঠিক বলেছো। আচ্ছা এখন তোমরা খেয়ে চাপ চুপচাপ। পরে তোমাদের সবাইকে বুঝিয়ে বলবো এই বিষয়ে, ইনশাআল্লাহ। এখনো অনেক গরম তাই আস্তে আস্তে সাবধানে খাও।

চলবে…..

Facebook Comments