All posts by Oporajita

 

প্যারেন্টিং এর মূলনীতি


কানিজ ফাতিমা


অনেকেই অভিযোগ করেন যে বাচ্চার পড়ার অভ্যাস নেই। দোষটা সবসময় বাচ্চার না, আসলে বাচ্চার পড়ার অভ্যাস তৈরীতে বাবা-মায়ের সক্রিয় ভূমিকা নিতে হয় এবং সেটা হতে হয় একেবারে ছোট বয়স থেকেই। ছয়মাস বয়স থেকেই বাচ্চাকে (অনেকের মতে আরো আগে থেকে) বইয়ের প্রতি আগ্রহী করে তুলুন। বাচ্চাকে কোলে নিয়ে আপনি বই পড়ুন। মনে করছেন এতো ছোট বয়সে বাচ্চা বইয়ের কি বুঝবে? এটাই বাচ্চার সঙ্গে বইয়ের সম্পর্ক তৈরীর সময়। বাচ্চাকে বইয়ের রঙ্গীন ছবি দেখান; বাচ্চা কিছুটা বড় হলে তাকে বইয়ের গল্প পড়ে শোনান; ঘুমানোর আগে বাচ্চার সঙ্গে শুয়ে বই পড়ুন। বইয়ের সাথে এই অল্প বয়সে যে সম্পর্ক তৈরী হয় সেটা সারা জীবন তার থেকে যায়।

অন্যদিকে বাচ্চা ছোট বয়সে যদি বাড়ীতে বই না দেখে, বাবা-মাকে বই পড়তে না দেখে তবে এটা আশা করা যায় না যে সেই বাচ্চা বইকে ভালোবাসতে শিখবে। এর বিপরীতে বাচ্চা ছোট থেকেই যদি বইয়ের চেয়ে ভিডিও (কার্টুন, ভিডিও গেম) বেশী দেখে, বাবা- মাকে টিভি, বা অন্য স্ক্রিনে মগ্ন দেখে, তবে বাচ্চা বইয়ের প্রতি কখনোই আকর্ষণ বোধ করবে না এবং খুব সম্ভাবনা থাকবে বাচ্চার অস্থির প্রকৃতির হবে ।

শুধু স্কুলের কারিকুলামের বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে অন্যান্য উপকারী বই বাচ্চাকে নিয়ে পড়বেন। বাসায় বাচ্চার জন্য ও নিজেদের জন্য ছোট করে হলেও লাইব্রেরী রাখুন । মনে করছেন, অনেক জায়গা লাগবে? একটা আলমারী এমনকি আপনার ড্রেসিং টেবিলের এক পাশকেও ব্যবহার করতে পারেন লাইব্রেরী হিসাবে।

– প্যারেন্টিং এর মূলনীতি

 

‘নিজের কাজকে সন্মান করুন’


ফাতেমা শাহরিন


চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ব্যবস্থাপনা’ বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্রী অর্পিতা ব্যানার্জী। তার আরও একটি পরিচয় হল তিনি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। তার প্রতিষ্ঠানের নাম ‘বিনিসুঁতো’। ‘বিনিসুঁতো’ মুলত একটি অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা প্রকল্প। তিনি মুলত স্বত্তাধিকারী এবং ডিজাইনার হিসাবে কাজ করছেন।

‘বিনিসুঁতো’ র যাত্রা শুরু হয় তার ভাষ্যমতে, ‘আজ থেকে এক বছর আগে।’ মূলত, হাতে তৈরি গয়না ও ক্রাফটিং এর প্রতি ভালোবাসা থেকেই এই কাজের প্রতি আগ্রহ জন্মে বলে তিনি জানান। আর তাই তিনি ক্ষুদ্র জ্ঞান, পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের প্রচন্ড উৎসাহ ও নিজের আত্মবিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে এই উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন।

অর্পিতা বলেন, “একটি মানুষ তখনই সফলতা অর্জন করতে পারে যখন সে তার কাজকে ভালোবাসে।”

আর তাই, বিনিসুঁতোর  প্রতিটি কাজ কাঁচামাল সংগ্রহ থেকে শুরু করে গয়না ক্রেতার হাতে পৌছানো পর্যন্ত সকল কাজ তিনি অত্যন্ত ভালোবাসা ও যত্নের সাথে করার চেষ্টা করেন।

‘যেকোন উদ্যোগ গ্রহনের ক্ষেত্রেই প্রতিটি মানুষকে প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আর নারী উদ্যোক্তার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হল পারিবারিক ও সামাজিক গ্রহনযোগ্যতার অভাব।’ বলেও অর্পিতা জানান।

তিনি মনে করেন যে, ‘ব্যবসা করার ক্ষেত্রে নারীর অবস্থান পারিবারিক ও সামাজিকভাবে এখনো সম্পূর্ণভাবে গ্রহনযোগ্য হয়ে উঠেনি। যার ফলে অনেক নারীই তাদের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পরিবার ও সমাজের সহযোগিতার অভাবে দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও কাজে এগিয়ে আসতে পারেন না।’

অর্পিতা ব্যানার্জী আরও বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, আর নতুন উদ্যোক্তাদেরকেও একটা কথা বলব, ‘আপনার ইচ্ছা শক্তিকেই মূল পুঁজি  করুন,  নিজের কাজকে সন্মান করুন এবং ভালোবাসুন দেখবেন সফলতা আসবেই।”

সকলের জন্য বিনিসুঁতোর পক্ষ থেকে আন্তরিক  শুভকামনা অর্পিতা সবশেষে জানান।

বিনিসুঁতোর দুটো পণ্য:

১.২.

 

রাস্তায় নারী গাড়ি চালকের সংখ্যা বাড়ছে


নারী সংবাদ


ঘনবসতিপূর্ণ এই ঢাকা শহরে রাস্তায় জ্যামের পরিমাণ এতো বেশি যে, চলাচল করাটই প্রায় দুরুহ হয়ে পড়েছে। তারপর রয়েছে গণপরিবহন সংকট। বিশেষ করে নারীর গাড়িতে ওঠা যেন যুদ্ধের শামিল। কিন্তু তাতে তো চলবে না। জীবনের তাগিদে অফিস কিংবা নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতেই হবে। কেন না, রুটি-রুজির জন্য আজ মহিলারাও পুরুষের সমান তালে এগিয়ে চলছে। সড়কের এই বিশাল জ্যামের কারণে অনেক নারীই আজ নিজেই গাড়ি চালিয়ে অফিস করছেন কিংবা নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছেন। যে কারণে দিন দিন রাস্তায় বাড়ছে নারী গাড়ি চালকের সংখ্যা। অবশ্য এ জন্য পুরুষশাসিত সমাজে একজন নারীকে অনেক সময়ই বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলছেন দিয়া।
বাংলা মোটর সিগন্যালের জ্যামে অনেকক্ষণ ধরেই বসে আছে দিয়া। কিছুক্ষণ পর তার গাড়ির পাশে একটি মোটর সাইকেল এসে দাঁড়ালো। মোটর সাইকেলের পেছনে বসা ছেলেটি সামনের জনকে দেখিয়ে বলছে, ওই দ্যাখ্, মাইয়া মানুষ গাড়ী চালায়। এমন কথা শুনলে এখন আর মাথা গরম হয় না। বরং তাদের প্রতি করুণা হয়। গত কয়েক মাস ধরে নিজেই ড্রাইভিং করে অফিসে আসা-যাওয়া করছেন দিয়া। আর এ ক’মাসে হাজারবারের বেশি শুনতে হয়েছে এ কথা।
রাস্তায় মানুষের বিদ্রপাত্মক কথা শুনতে হলেও দিয়ার অফিস সতীর্থরা কিন্তু তাকে খুব সাহস যুগিয়েছেন। দিয়া বলেন, প্রথমদিকে রাস্তায় খুব ভয় পেতাম। যতক্ষণ স্টিয়ারিংয়ে থাকতাম, সারাক্ষণ খুব সতর্ক থাকতাম। প্রায় সময়ই মেয়ে ড্রাইভার বলে অনেকেই রাস্তার সাইডে চাপতে চাইতো। বিশেষ করে বাস আর ট্রাকের ড্রাইভাররা তো কখনোই ছাড় দিতে না।
সানজিদা পারুল একজন সংবাদকর্মী। তিনি প্রায় প্রতিদিনই উত্তরা থেকে পুরানা পল্টন অফিসে আসেন স্কুটি চালিয়ে। এ ছাড়াও সপ্তাহের প্রায় তিন থেকে চারদিনই বিভিন্ন এসাইনমেন্ট থাকে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে।
পারুল বলেন, অনেক স্বপ্ন নিয়ে সাংবাদিকতা করতে এসেছি। কিন্তু বাসা দূরে হওয়ায় আমার অফিসে যাতায়াতে খুব কষ্ট হতো। পরে টাকা জমিয়ে একটা স্কুটি কিনলাম। আজ প্রায় বছরখানেক হলে াআমি স্কুটি চালিয়ে অফিস করছি। শুরুতে ঢাকার রাস্তায় গাড়ি চালাতে খুব কষ্ট হতো। বিশেষ করে ট্রাক ড্রাইভাররা ফাঁকা রাস্তা পেলে আমাকে রাস্তার একপাশে চাপিয়ে দিতো। যেনো মনে হতো, এই বুঝি আমাকে চাপা দিয়ে দিলো। অনেকবার রাস্তার পাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে তাদের যেতে দিতাম। তবে এখন অনেক আত্মবিশ্বাষ নিয়ে গাড়ী চালাই।
তিনি বলেন, এখনো আমাদের সমাজের চিন্তা-ভাবনা সেই আগের মতো রয়ে গেছে। অনেকের ধারণা, মেয়েদের নির্দিষ্ট কিছু কাজের বাইরে আর অন্য কিছু করার নেই। কিন্তু এখন আর সেই দিন নেই। ঘর আর বাচ্চা সামলিয়েও মেয়েরা এখন এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে।
পারুলের মতে, ঢাকা শহরে সময়ের কাজ সময়ে করতে চাইলে নিজস্ব একটা যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকা খুবই জরুরি। আর স্কুটি এ ক্ষেত্রে ভালো একটি যোগাযোগ মাধ্যম। তার মতে, অফিস সময়ে ঢাকার পাবলিক বাসে উঠতে পারা মানে যুদ্ধ জয় করা। এ সময় কর্মজীবী মহিলাদের কষ্টের সীমা থাকে না।
মূলত এ দেশে ড্রাইভিংয়ে নারীরা নতুন নয়। তবে সংখ্যাটা এখন আগের তুলনায় বেড়েছে। তারপরও তা পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে অনেক নারীই এখন স্কুটি চালায়। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) সূত্রমতে, বর্তমানে মোটর ড্রাইভিং লাইসেন্স গ্রহিতার সংখ্যা হচ্ছে এক শতাংশ।
বাংলাদেশ ডাক বিভাগে কর্মরত নারী ড্রাইভার সানজিদা খানম বলেন, নারীদের প্রতি আমাদের সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। আমি যখন প্রথম চাকরিতে যোগদান করি তখন আমার অনেক পুরুষ সহকর্মী আমার দিকে বাঁকা চোখে তাকাতো। তাদের একটা বদ্ধমূল ধারণা ছিলো, মেয়ে মানুষ আবার ড্রাইভিং করে নাকি! কিন্তু অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই আমি তাদের ধারণা পাল্টে দিয়েছি। এমনকি তাদের অনেকেই এখন আমাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে।
এদিকে, সুমনার গল্পটা কিছুটা ভিন্ন। তার বাবা ছিলেন একজন ড্রাইভার। প্রায় সময়ই তিনি দুপুরে বাসায় খেতে আসার সময় তার বসের গাড়ীটি নিয়ে আসতেন। এ সময় সুমনা খুব বায়না ধরতো সেও গাড়ী চালানো শিখবে। বাবাও তাকে খুব আদর করে গাড়ী চালানো শিখিয়েছিলেন। কিন্তু বিধি বাম। এক সড়ক দুর্ঘটনায় তার বাবা মারাত্মক আহত হন। সেই থেকে তিনি আর বিছানা থেকে উঠতে পারেন না।
তখন পরিবারের বড় হিসেবে সুমনার কাঁধেই চলে আসে পুরো সংসারের দায়িত্ব। অনেক চেষ্টা করেও কোন চাকরি যোগাড় করতে না পেরে সুমনা সিদ্ধান্ত নেয় সেও তার বাবার মতো গাড়ী চালাবে। চলে যায় তার বাবার অফিসে। তারাও খুব আন্তরিক হয়ে সুমনাকে তার বাবার চাকরিটি দিয়ে দেয়। তারপর থেকে আজ দু’বছর হতে চললো সুমনা ড্রাইভিং করছে।
মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট মনোয়ারা বেগম বলেন, আমরা আসলে আমাদের সমাজে নারীদের একভাবে দেখতে অভ্যস্ত। আমাদের বদ্ধমূল ধারণা হচ্ছেÑ নারীরা স্বামী, সংসার আর বাচ্চা সামলাবে। কিন্তু দিন পাল্টে গেছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ, নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি ছাড়া কখনোই একটি রাষ্ট্র উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে না। সুত্র: (বাসস)।

 

লাউ শাকের রেসিপি


ঘরকন্যা


লাউ শাক

উপকরন
১.লাউ শাক,
২.আলু ১-২ টি,
৩.কাঁচামরিচ,
৪.রসুন কুচি (পরিমানটা একটু বেশি হতে হবে),
৫.পেঁয়াজ কুচি,
৬.লবণ,
৭ পাঁচ ফোড়ন ও
৮.রান্নার তেল।

প্রনালী
লাউশাক ও কচি ডগাসহ কুচি করে কেটে ভাল করে ধুয়ে নিন। ১-২ টা আলু টুকরা করে কেটে ধুয়ে লাউ শাকের মধ্যে দিন এবং লবণ, কাঁচামরিচ, পেঁয়াজ কুচি ও রসুন কুচি দিয়ে চুলায় সিদ্ধ করতে দিন। শাকের পানি শুকিয়ে গেলে ও সিদ্ধ হয়ে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে ফেলুন। এবার অন্য একটি পাত্রে পরিমাণ মত তেল দিয়ে পেঁয়াজ কুচি ও রসুন কুচি দিয়ে ভাজতে থাকুন। পেঁয়াজ ও রসুন বাদামী রঙ এ ভাজা হলে পাঁচ ফোড়ন দিয়ে একটু নেড়ে শাক ঢেলে নাড়তে থাকুন প্রায় ২ মিনিট। যখন শাক কড়াইতে লেগে আসবে তখন চুলার আঁচ কমিয়ে নামিয়ে ফেলুন। গরম গরম ভাতের সাথে লেবু ও কাঁচামরিচ দিয়ে পরিবেশন করুন।

লাউশাকের ভর্তা

উপকরণ
১. লাউয়ের পাতা ৬-৭টা,
২. পেঁয়াজ কুচি ১ টেবিল চামচ,
৩. কাঁচামরিচ– ৪/৫ টা (কুচি করা বা সেদ্ধ করা),
৪. সরিষার তেল স্বাদমত,
৫. লবণ স্বাদ মতো।

প্রণালী
লাউশাক ভালো করে ধুয়ে সেদ্ধ করুন। শাকের সাথে কাঁচামরিচও সেদ্ধ করুন। শাক সেদ্ধ করে পানি ঝরিয়ে নিন। এবার পেঁয়াজ, মরিচ, লবণ ও তেল একসঙ্গে মাখুন। মাখা হলে সেদ্ধ লাউশাক দিয়ে ভালো করে মেখে গরম গরম পরিবেশন করুন।

 

মহিলা মাদরাসার বাথরুমে ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ


নারী সংবাদ


রাজধানীর রামপুরার উলন রোডে একটি মহিলা মাদরাসা থেকে এক ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতের নাম সানজিদা রশিদ মিম (১৪)। গতকাল বেলা সাড়ে ১২টায় মাদরাসার ছাদের ওপরের একটি বাথরুম থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত মিমের মা সিমা আক্তার জানান, তার মেয়ে রামুপরা মহিলা মাদরাসায় বোডিংয়ে থেকে হাফেজি লাইনের নাজেরায় পড়াশুনা করত। গত বৃহস্পতিবার রাতে সে বাসা থেকে মাদরাসায় চলে যায়। প্রতিদিনের মতো শনিবার বেলা ১১টায় মিমের জন্য ভাত নিয়ে মাদরাসায় যান তিনি। তখন মাদরাসা কর্তৃপ তার কাছে জানতে চায়, মিমের সাথে কারুর প্রেমের সম্পর্ক আছে কিনা। হঠাৎ এমন প্রশ্ন করা হলো কেন জানতে চাইলে তারা মিমের মৃত্যুর সংবাদ দেন।
হাতিরঝিল থানার ওসি আবু মো: ফজলুল করিম জানান, মিমের মৃত্যুর কারণ জানতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। এ জন্য মাদরাসার এক শিক্ষিকাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।

 

মোগল সম্রাজ্ঞী নূরজাহান কেন নারীবাদীদের ‘আইকন’


নারী সংবাদ


মোগল সম্রাজ্ঞী নূর জাহান ছিলেন আঠারো শতকের ভারতের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী নারীদের একজন। তাকে কেন একালের নারীবাদীরা একজন ‘আইকন’ হিসেবে দেখতে চাইছে? ইতিহাসবিদ রুবি লাল বোঝার চেষ্টা করেছেন এই লেখায় :

জন্মের সময় তার নাম দেয়া হয়েছিল মিহরুন নিসা। কিন্ত স্বামী মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীর পরে তার নাম পাল্টে রেখেছিলেন নূর জাহান (জগতের আলো)। ইংল্যান্ডে রানি প্রথম এলিজাবেথের জন্মের কয়েক দশক পরে তার জন্ম। কিন্তু রানি এলিজাবেথের চেয়ে অনেক বেশি বৈচিত্র্যপূর্ণ এক সাম্রাজ্য শাসন করেছেন নূর জাহান।

ষোড়শ শতকের শুরু হতে পরবর্তী প্রায় তিন শ’ বছর ধরে ভারতবর্ষ শাসন করেছে মোগলরা। তারা ছিল ভারতের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী রাজবংশ। মোগল সম্রাট এবং মোগল রাজপরিবারের নারীরা ছিলেন শিল্প, সঙ্গীত এবং স্থাপত্যকলার বিরাট সমঝদার। তারা বিশাল সব নগরী, প্রাসাদোপম দূর্গ, মসজিদ এবং সৌধ তৈরিতে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে।

কিন্তু পুরো মোগল রাজবংশের একমাত্র নারী শাসক নূর জাহানকে নিয়ে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশে এখনো ছড়িয়ে রয়েছে অনেক লোকগাঁথা।

উত্তর ভারতের আগ্রা এবং উত্তর পাকিস্তানের লাহোর, মোগল আমলের দুটি বড় নগরী। এই দুই জায়গাতেই নূর জাহান সম্পর্কে শোনা যাবে অনেক কিংবদন্তী।

প্রবীন নারী এবং পুরুষ, ট্যুর গাইড থেকে শুরু করে ইতিহাসে আগ্রহী মানুষ আপনাকে জানাবে কিভাবে জাহাঙ্গীর এবং নুর জাহান পরস্পরের প্রেমে পড়েন। কিভাবে নূর জাহান একটি মানুষ খেকো বাঘকে মেরে রক্ষা করেছিলেন একটি গ্রামের মানুষকে।

যদিও নূর জাহানের প্রেম, তার সাহসিকতার অনেক কাহিনী ছড়িয়ে আছে, মোগল প্রাসাদের অন্দরমহলে তার রাজনৈতিক ক্ষমতা, প্রতিপত্তি এবং আকাঙ্ক্ষার সম্পর্কে বিস্তারিত খুব কমই জানা যায়।

নূর জাহান ছিলেন কবি, এদক্ষ শিকারি এবং খুবই সৃজনশীল এক স্থপতি। আগ্রায় তার তৈরি করা নকশাতেই নির্মাণ করা হয়েছিল তার বাবা-মার সমাধি সৌধ। পরে এই স্থাপত্য রীতিই নাকি তাজ মহলের স্থাপত্য নকশার অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে।

মোগলদের পুরুষ শাসিত জগতে নূর জাহান ছিলেন এক অসাধারণ নারী। কোনো রাজকীয় পরিবার থেকে তিনি আসেননি। কিন্তু তারপরও সম্রাটের হারেমে তার উত্থান ঘটে এক দূরদর্শী রাজনীতিক হিসেবে। তিনি সম্রাট জাহাঙ্গীরের সবচেয়ে প্রিয়তম স্ত্রীতে পরিণত হন। বিশাল মোগল সাম্রাজ্য আসলে তিনি এবং সম্রাট জাহাঙ্গীর মিলে একসঙ্গেই শাসন করতেন।

কিন্তু যে যুগে অন্দর মহলের বাইরে নারীর কোনো স্থান ছিল না, সেই যুগে তিনি কিভাবে এত শক্তিশালী হয়ে উঠেছিলেন?

নূর জাহানের জন্ম হয়েছিল ১৫৭৭ সালে কান্দাহারের কাছে (আজকের আফগানিস্তানে)। তার পরিবার ছিল ইরানের এক অভিজাত বংশের। কিন্ত সাফাভিদ রাজবংশের অসহিষ্ণুতার কারণে তাদের সেখান থেকে পালিয়ে মোগল সাম্রাজ্যে এসে আশ্রয় নিতে হয়।

পিতা-মাতার জন্ম স্থানের ঐতিহ্য আর মোগল রীতি-নীতি, এই দুটির আবহে বেড়ে উঠেন তিনি। নুর জাহানের প্রথম বিয়ে হয় এক মোগল রাজকর্মচারীর সঙ্গে। তার স্বামী ছিলেন এক সেনা কর্মকর্তা। স্বামীর সঙ্গে তিনি পূর্ব ভারতের বাংলায় চলে আসেন। সেখানেই তার একমাত্র ছেলের জন্ম হয়।

তবে সম্রাট জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে এক ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে নূর জাহানের স্বামীর চাকরি যায়। এক লড়াইয়ে নিহত হন নূর জাহানের স্বামী।

বিধবা নূর জাহানকে পাঠানো হয় মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের হারেমে। সেখানে নূর জাহান অন্য মোগল নারীদের আস্থা এবং বিশ্বাসের পাত্র হয়ে উঠেন। ১৬১১ সালে সম্রাজ জাহাঙ্গীর তাকে বিয়ে করেন। তিনি ছিলেন জাহাঙ্গীরের বিশতম পত্নী।

সেই সময়ের মোগল রাজদরবারের রেকর্ডে খুব কম নারীর কথাই উল্লেখ আছে। তবে সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্মৃতিকথায় ১৬১৪ সালের পর থেকে তার সঙ্গে নূর জাহানের বিশেষ সম্পর্কের উল্লেখ আছে বার পার। তিনি নূর জাহানের এক অনুরাগময় চিত্রই একেঁছেন তাতে। নূর জাহান সেখানে বর্ণিত হয়েছেন একজন বিশ্বস্ত সঙ্গী, চমৎকার সেবাদাত্রী, বিজ্ঞ পরামর্শদাতা, দক্ষ শিকারি, বিচক্ষণ কূটনীতিক এবং শিল্পবোদ্ধা হিসেবে।

অনেক ইতিহাসবিদের মতে জাহাঙ্গীর ছিলেন এক মদমত্ত সম্রাট, যার সাম্রাজ্য পরিচালনায় কোনো মনোযোগ ছিল না। আর সে কারণেই নাকি তিনি এর ভার ছেড়ে দিয়েছিলেন স্ত্রীর হাতে। কিন্তু এটি পুরোপুরি সত্য নয়।

এটি সত্য যে জাহাঙ্গীর পানাসক্ত ছিলেন, তিনি আফিমও গ্রহণ করতেন। কিন্তু তিনি একই সঙ্গে তার স্ত্রী নূর জাহানকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন। কিন্তু সেটার কারণেই নুর জাহান মোগল সাম্রাজ্য শাসনের সুযোগ পেয়েছিলেন ব্যাপারটা তা নয়। কার্যত নূর জাহান এবং জাহাঙ্গীর ছিলেন পরস্পরের পরিপূরক। স্ত্রী যে সাম্রাজ্য শাসনে তার পাশে আসন নিয়েছিলেন, সেটি নিয়ে জাহাঙ্গীরের কোনো অস্বস্তি ছিল না।

তাদের বিয়ের পরপরই নূর জাহান প্রথম যে রাজকীয় ফরমান জারি করেছিলেন তা ছিল এক রাজকর্মচারীর জমির অধিকার রক্ষায়। সেখানে তিনি স্বাক্ষর করেন নূর জাহান পাদশাহ বেগম নামে, যার অর্থ নূর জাহান, সাম্রাজ্ঞী। তিনি যে সার্বভৌম এবং তার ক্ষমতা যে বাড়ছে, এটি ছিল তারই ইঙ্গিত।

১৬১৭ সালে সম্রাট জাহাঙ্গীর এবং তার নাম লেখা মূদ্রা স্বর্ণ এবং রৌপ্য ছাড়া হয়। সে সময়ের মোগল রাজদরবারের লেখক, বিদেশি কূটনীতিক, বণিক এবং পর্যটকরা উপলব্ধি করতে শুরু করেন যে মোগল সাম্রাজ্য পরিচালনায় তার একটা বিরাট প্রভাব আছে।

একজন রাজকর্মচারী একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেছিলেন তার লেখায়। নূর জাহান একদিন রাজপ্রাসাদের বারান্দায় দেখা দিয়েছিলেন। এটি এর আগে পর্যন্ত কেবল পুরুষদের জন্যই সংরক্ষিত ছিল।

তবে পুরুষতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে নূর জাহানের এটিই একমাত্র বিদ্রোহ ছিল না।

শিকারে বের হওয়া থেকে শুরু করে নিজের নামে রাজকীয় মূদ্রা এবং রাজকীয় ফরমান জারি, বড় বড় রাজকীয় ভবনের নকশা তৈরি, দরিদ্র নারীদের কল্যাণে ব্যবস্থা গ্রহণ, এরকম নানা কাজে নুর জাহান তার স্বাক্ষর রেখেছেন। যা ছিল সেকালের নারীদের মধ্যে ব্যতিক্রম।

তার স্বামীকে যখন জিম্মি করা হয়, তখন নুর জাহান তাকে রক্ষায় সেনাবাহিনীর অধিনায়কের দায়িত্বও পালন করেছেন, যা তাকে ইতিহাসের পাতায় আর জনমানস চিরদিনের জন্য স্থায়ী জায়গা করে দিয়েছে।

রুবি লাল ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষক। তার সর্ব সাম্প্রতিক প্রকাশিত গ্রন্থ “দ্য এস্টোনিশিং রেন অব নুর জাহান।” বইটি প্রকাশ করেছে পেঙ্গুইন ইন্ডিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রে ডাব্লিউডাব্লিউ নর্টন।

সুত্রঃ বিবিসি।

 

ছাত্রীকে ধর্ষণ, শিক্ষককে নগ্ন করে ঘুরিয়ে থানায় দিল জনতা

নারী সংবাদ


দুই বছর ধরে নিজের ছাত্রীকে ধর্ষণ করে আসছিলেন তিনি। অবশেষে ধরা পড়ে যান। তবে প্রচলিত আইনের শাস্তি ছাড়াও তাকে মুখোমুখি হতে হয় জনরোষের। এলাকাবাসীই তাকে গণধোলাইয়ের পর নগ্ন করে সারা শহর ঘুরিয়ে পুলিশে সোপার্দ করে।

ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের ইলুরু শহরে। স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, রামবাবু নামের এক ইংরেজির শিক্ষকের বিরুদ্ধে দু’বছর ধরে এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। সম্প্রতি ওই ছাত্রী গর্ভবতী হয়ে পড়লে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। গর্ভপাত করানোর জন্য রামবাবু ওই ছাত্রীকে ওষুধ দেন। তারপরই ওই ছাত্রী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাধ্য হয়ে পুরো বিষয়টি নিজের বাড়িতে জানায় ওই ছাত্রী।

তার কাছে এসব কথা জানার পর ওই শিক্ষকের বাড়িতে হানা দেয় ছাত্রীর পরিজনরা। তাকে ব্যাপক মারধর করা হয়। নগ্ন করে হাঁটিয়ে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় থানায়। থানায় পৌঁছনোর পর অভিযুক্ত রামবাবুকে জামা-কাপড় দেয় পুলিশ। ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সূত্র : এনডিটিভি

 

দাম্পত্য জীবনে অশান্তি

 


দাম্পত্য


যে ৮ টি বিষয় আপনার দাম্পত্য জীবনকে অশান্তিময়, দুর্বল এবং দাম্পত্য জীবনে অশান্তি অকার্যকর করতে পারে।

আসুন জেনে নেই,

খারাপ ব্যবহার করা : তাকে এমন কিছু নিয়ে ঠাট্টা করা যাতে সে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এমন ধমক দেয়া যা অন্যদের সামনে তার অসম্মান হয়ে যায়। তাকে অপমান করা আপনার প্রতি তার শ্রদ্ধাবোধকে কমিয়ে দিবে।

উপেক্ষা করা : তার পছন্দ, ভালোলাগা কিংবা তার কথাবার্তাকে গোণায় না ধরা বা পাত্তা না দেয়া। হয়ত সে সালাম দিয়েছেন আপনাকে, আপনি উত্তর দিলেন না। বেশ কিছুদিন যাবৎ খুব আগ্রহ নিয়ে হয়ত সে কিছু বলছে কিন্তু আপনি বিশেষ কারণ ছাড়াই তার কথার পাত্তা দিচ্ছেন না।

মিথ্যা বলা : দুষ্টামি করেও মিথ্যা বলা সঠিক নয়। আল্লাহ মিথ্যাকে নিষিদ্ধ করেছেন। আল্লাহ আমাদেরকে শয়তানের এই ওয়াসওয়াসা থেকে রক্ষা করুন।

কথা দিয়ে কথা না রাখা : কথা দিয়ে কথা রাখা বা ওয়াদা রক্ষা করা একজন মু’মিনের বৈশিষ্ট্য। বিষয়টি দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষেত্রেও খুব গুরুত্বপূর্ণ।

এড়িয়ে চলা : অনেকদিন পর দেখা হলে বন্ধুদেরকে বা ভাইদের আমরা জড়িয়ে ধরি, কোলাকুলি করি। আপনার স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরতে পারেন না? পারবেন, অস্বস্তি লাগলেও তা ভেঙ্গে ফেলুন। ভালোবাসার প্রকাশ থাকা খুবই প্রয়োজন।

সন্দেহ ও গীবত করা : কখনো সন্দেহ করতে যাবেন না। সন্দেহ সম্পর্ককে ধ্বংস করে। আপনার জীবনসঙ্গী আপনার খুব কাছের মানুষ এটা সত্যি। কিন্তু খুঁতখুঁত করে যদি তার বিষয়ে অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করেন, আপনি নিঃসন্দেহে হতাশ হবেন। মানুষ কখনো নিখুঁত নয়। আর মনে রাখবেন, প্রত্যেকে তার নিজ নিজ হিসাব দিবে। তাই সন্দেহ দূর করুন। স্বামী বা স্ত্রী একে অপরের চাদরস্বরূপ, ছোট-খাটো ভুলত্রুটি বা সীমাবদ্ধতা নিয়ে অন্যদের কাছে বলে বেড়াবেন না, গীবত করবেন না।
কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেছেন :
“হে মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান কর না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমার তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।” — [আল হুজুরাত, ৪৯ : ১২]

খুব বেশি ব্যস্ততা : অপরজনের জন্য কিছু সময় রাখবেন। পারস্পরিক কথাবার্তা আর সময়গুলো সম্পর্ককে প্রগাঢ় করে। তার প্রতি আপনার কর্তব্য রয়েছে, আপনার কিছু দায়িত্ব রয়েছে। কিছুটা সময় তিনি পাওয়ার অধিকার রাখেন। এই বিষয়টি খেয়াল রাখুন।

নামাজ এবং অন্যান্য ইবাদাত না করা : যে ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদাত না করে, নামাজ না পড়ে এবং আল্লাহর নির্দেশিত পথে না চলে, আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট নন। নিয়মিত নামাজ না পড়া, অশ্লীল কাজ, হারাম উপার্জনগুলো থেকে সরে না আসার কারণে অনেক সংসার ভেঙ্গে গেছে। আল্লাহর প্রতি কর্তব্য পালনে অলসতা-উপেক্ষা করার কারণে মুসলিম সংসারে অত্যন্ত দ্রুত ভাঙ্গন ধরে যায়।
আল্লাহ আমাদেরকে ভুলত্রুটি ক্ষমা করুন এবং আমাদের সরল সঠিক পথে পরিচালিত করুন। আমাদের পরিবারগুলোতে রাহমাত এবং বারাকাহ দান করুন। সুত্র: দাম্পত্য | dampotto পেজ।

 

‘গায়ের রঙ এবং আমাদের মানসিকতা’


 সাজেদা হোমায়রা


খুব ছোটবেলা থেকেই আমরা এটা জেনেই বড় হই, সুন্দর হওয়ার প্রথম শর্ত হচ্ছে তার গায়ের রঙ সাদা। আর যার গায়ের রঙ সাদা নয় সে তথাকথিত সুন্দরের সংজ্ঞার বাইরে।
যার গায়ের রঙ সাদা নয়, কালো বা শ্যামলা সে প্রতিনিয়তই হীনমন্যতায় ভুগছে বা আফসোস করছে।
অবশ্য করবেইবা না কেন?এ আফসোস তো আর একদিনে তৈরি হয়নি।
যখন দিনের পর দিন গায়ের রঙের জন্য সে অবজ্ঞার শিকার হয়….
যখন প্রকৃত মেধা/যোগ্যতার চেয়ে ফর্সা না কালো এটিই মূল্যায়নের মাপকাঠি হয়ে উঠে…..
যখন ভাই বোনদের মধ্যে যার গায়ের রঙ সবচেয়ে অনুজ্জ্বল, সে ছোটবেলা থেকেই এটা মনের ভিতর ধারণ করতে করতে বড় হয়…..
যখন একটা ছোট বাচ্চা যার গায়েব রঙ ফর্সা নয় সে এটা জেনেই বড় হতে থাকে যে কলোত্বের ঘাটতি পুষিয়ে নিতে তাকে extra ordinary হতে হবে…..
যখন রঙ ফর্সাকারী ক্রিমের ভীড়ে বাজার সয়লাব হয়ে যায়…..
যখন একটা মেয়ে তার মনের আলোতে চারপাশ দ্যুতিময় করেও শশুর বাড়িতে প্রিয় হতে পারেনা শুধু তার গায়ের রঙের জন্য…..
তখন আসলে নিজের রঙের উপর সন্তুষ্ট থাকাটা কঠিনই হয়ে পড়ে। তখন মনে হয় এই পৃথিবীতে সুন্দর না হওয়াটা ভীষণ অপরাধ।
আশেপাশে আবার সান্ত্বনামূলক কিছু কথাও শোনা যায়।
যেমন: কালো হলেও তার মনটা ভালো বা কালো হলেও সে মেধাবী…. ইত্যাদি।
তার মানে ‘কালো হলেও’ এ কথার মাধ্যমে আমরা স্বীকার করে নিচ্ছি, কালো একটা ঘাটতি।
হ্যাঁ, বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় সৌন্দর্যেরই দরকার আছে। তবে তথাকথিত সৌন্দর্যের সংজ্ঞা দিয়ে সুন্দর/অসুন্দর নিরুপন করা কখনোই কাম্য নয়।
আসলে প্রত্যেকটি মানুষের সৌন্দর্যের ধরণ আলাদা।
একেক মানুষ একেক রকম সুন্দর।
একেক মানুষ একেক কারণে সুন্দর।
পরিবর্তন আসুক মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে!

 

বর্জ্যজীবী নারী ও শিশুরা ব্যাপক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে


পারভীন সুলতানা কাকন (নারী সংবাদ)


বাংলাদেশে অত্যন্ত দরিদ্র একজনগোষ্ঠী নানা ধরণের গৃহস্থালী বর্জ্য থেকে পুনব্যবহার যোগ্য নানা সামগ্রী সংগ্রহের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। সারাদেশে প্রায় ৪ লাখ মানুষ এই ঝূঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়েজিত রয়েছে। শুধু ঢাকা মহানগরীতেই এই সংখ্যা ১ লাখের ওপর। এদের মধ্যে কেউ রয়েছে বর্জ্য সংগ্রহের কাজে, কেউ বাছাই করার কাজে, আবার কেউ বা রয়েছে এসব বিক্রি করার কাজে। যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
সমাজে এদের পরিচয় ময়লা কুড়ানি নামে। যারা রাস্তা, ডাস্টবিন বা ডাম্পসাইট থেকে বর্জ্য সংগ্রহ ও তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। এদেরই একজন ত্রিশোর্ধ হালিমা। বিয়ের পাঁচ বছরের মাথায় স্বামী তালাক দেয়। এরই মধ্যে দু’টি সন্তানের জন্ম দেয় সে। কিন্তু সংসারের হাল ধরতে তাকে বেছে নিতে হয় এই পেশা। ভোর থেকে সন্ধ্যা সারাদিন চলে বর্জ্য সংগ্রহের কাজ। বর্জ্য বিক্রি করেই চলে তার সংসার। কখনো খাবার জোটে দু’বেলা কখনো একবেলা।
তিন সন্তানের জননী চল্লিশ উর্ধ্ব রোকসানা বেগমের স্বামী মাদকাসক্ত। সাত সদস্যের সংসারে উপার্জনক্ষম বলতে রোকসানা। দুই ছেলে, এক মেয়েকে এ কাজে লাগিয়ে চলছে তাদের সংসার। একটি শিশু বর্জ্য থেকে দিনে প্রায় ১শ’ থেকে ৩’শটাকা উপার্জন করে থাকে।
হালিমা-রুখসানার মত এই পেশায় নিয়োজিত অনেকেরই গল্প একই রকম। খেয়ে না খেয়ে দুটো টাকা পাওয়ার আশায় নিরন্তর ছুটছে বর্জ্য সংগ্রহের কাজে। কিন্তু একবারও ভেবে দেখছে না কি অপেক্ষা করছে এসব দরিদ্র মানুষের ভাগ্যে। ডাম্পিং সাইটে ট্রাকে করে বর্জ্য ফেলার পর ক্ষতিকর বর্জ্য, হাসপাতালের বর্জ্য রাসায়নিক দ্রব্য, পঁচা, বাসী গৃহস্থালীর বর্জ্য, মানুষ ও পশুর মলমুত্র সব মিলিয়ে মারাত্বক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এসব কাজের সঙ্গে সম্পৃক্তরা। ডাম্পিং সাইটে কাজ বর্জ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে সেখানে ফেলে দেয়া সুঁই, বে¬ড, সিরিঞ্জ দিয়ে প্রতিনিয়ত জখম হচ্ছে তারা। ফেলে দেয়া দূষিত পদার্থের সংস্পর্শে প্রায়শই আক্রান্ত হচ্ছে আমাশয়, ডাইরিয়া, হেপাটাইটিস ভাইরাস ও চমর্রোগসহ বিভিন্ন রোগে।
ডাম্পিং সাইটে দীর্ঘক্ষণ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থেকে সেখান থেকে ফেরার পর শিশুরা হাত না ধুয়েই সেরে নিচ্ছে তাদের দুপুরের খাবার। ফলে এসব শিশু ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব ও মাথা ঘুরানোসহ নানা সমস্যায় ভুগছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রচন্ড দুর্গন্ধের মধ্যে কাজ করে তারা সবসময় ভুগছে গ্যাস্ট্রিকে। ডাম্পিং সাইটে কাজ করার সময় তারা অনেক সময় বর্জ্যবাহী ট্রাক ও লেভেলিং মেশিন দিয়ে বা বুলডুজার দিয়ে দুর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছে। এতে করে অনেক শিশুর অঙ্গহানির মতো ঘটনা ঘটছে।
বর্জ্য সংগ্রহের সময় তারা সবসময়ই নুয়ে বর্জ্য সংগ্রহ করে এতে মেরুদন্ডের ও ঘাড়ের চাপে ভোগে তারা। পঁচা দুর্গন্ধের মধ্যে কাজ করায় শরীরের সবখানে ব্যথা, বমি বমি ভাব মাথা ঘুড়ানোসহ অনেক ধরনের অস্বস্তিতে ভোগে তারা। ফলে, একদিন কাজ করলে তিন দিন বিশ্রাম নিতে হয় তাদের। শুধু তাই নয় খালি পায়ে কাজ করে বলে চর্ম রোগ লেগেই থাকে এসব মানুষের।
চর্ম রোগ বিশেষজ্ঞ ডা: এম এন হুদা বলেন, দীর্ঘক্ষণ বর্জ্য সংগ্রহের কাজে যারা নিয়োজিত থাকছে তারা সবসময়ই কোন না কোন চর্ম রোগ যেমনঃ একজিমা, চুলকানি, ফুসকুড়ি, দাউদ ও ফাঙ্গাস জাতীয় চর্মরোগে ভুগছে। তাই দেরি না করে সবাইকে ডাক্তারের শরনাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেন এ বিশেষজ্ঞ।
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শুধু ঢাকা শহরেই প্রায় দেড়লাখ দরিদ্র মানুষ ফেলে দেয়া বর্জ্যসামগ্রী পুনঃব্যবহার করে থাকে যার মূল্য বছরে প্রায় এক হাজার ৭১ কোটি টাকা।
আর্ন্তজাতিক সংস্থা উইমেন ইন ইনফরমাল এমপ্লয়মেন্ট গে¬াবালাইজিং এন্ড অর্গানাইজিং-এর মতে, বর্জ্য সংগ্রহকারীরা জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তা এবং টেকসই পরিবেশ উন্নয়নে উল্লে¬খযোগ্য ভূমিকা রেখে থাকে। তবে তারা সর্বদাই নিম্নশ্রেনীর সামাজিক মর্যাদা লাভের পাশাপাশি নিম্ন মানের জীবন যাপন করে থাকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, স্বাস্থ্য হচ্ছে শারিরিক, মানসিক, সামাজিক কল্যাণকর পরিস্থিতি, যা শুধু অসুস্থতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটা মানব উন্নয়ন সূচকের একটি অন্যতম মাপকাঠি। তাই, প্রতিটি নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা ও মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সুস্বাস্থ্যের সুযোগ প্রাপ্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও সবচেয়ে বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন উপেক্ষা করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এসডিজি-৩ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন অপরাজেয় বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদা বানু বলেন, নগরের দরিদ্র জনগোষ্ঠী যারা বস্তি বা ফুটপাতে বসবাস করে তারা স্বাস্থ্য পুষ্টি ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা থেকে বঞ্চিত। এতে প্রতিনিয়তই বঞ্চনার স্বীকার হচ্ছে অনগ্রসর এ জনগোষ্ঠী। এ থেকে পরিত্রাণে শিশুবান্ধব সহায়ক কার্যক্রম বাস্তবায়ন জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক ঘোষণা ও চুক্তিনামায় অন্যতম স্বাক্ষরকারী দেশ। এর মধ্যে রয়েছে সবার জন্য স্বাস্থ্য বিষয়ক আলমা আতা ঘোষণা, সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি, নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ বিষয়ক সনদ, শিশু অধিকার সনদ। বাংলাদেশ এসব চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। এছাড়াও বাংলাদেশ ২০৩০ সাল নাগাদ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিষয়ে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি বাস্তবায়ন জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৬ তে বলা হয়েছে যে, শিশু শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্য পুষ্টি শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে এবং ১৮ বছরের নীচে সকল শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে বিরত রাখতে ও যৌন নির্যাতন থেকে মুক্ত রাখতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের ভিশন-২০২১ দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের একটি বৃহৎ রূপকল্প। এই রূপকল্পের অধীনে জনগণের তথা দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নয়নের একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে যেখানে দেশের খাদ্য ঘাটতি কমিয়ে শতকরা ৮৫ ভাগ জনগোষ্ঠীর পুষ্টি নিশ্চিত করা হবে। সেইসাথে সংক্রামক রোগ নির্মুল করা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা ও পয়ঃনিষ্কাষণ সুবিধা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি ২০১১-এর অন্যতম মূল নীতি হিসেবে বলা হয়েছে যে, স্বাস্থ্যসমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে সুবিধা বঞ্চিত গরিব, প্রান্তিক, বয়স্ক, শারিরিক, ও মানসিক প্রতিবন্ধী জনগণের অধিক গুরুত্বপূর্র্ণ স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া।
বর্জজীবীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশের সংবিধান স্বাস্থ্যনীতি ২০১১ ও জাতীয় নগর স্বাস্থ্য কৌশল ২০১৪-তে উল্লেখিত নগরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য ও সেবার অধিকার বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। বর্জ্যজীবীদের জন্য শিগগিরই সরকারের বিশেষ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কমর্সূচি প্রনয়ন ও তা বাস্তবায়ন প্রয়োজন। তবেই নিশ্চিত হবে বর্জ্যজীবী শিশুর পরিপূর্ণ শারিরিক, সামাজিক ও মানসিক বিকাশ।
সুত্র: বাসস।

 

স্তন ক্যান্সার : সচেতনতাই যার প্রতিকার


নুসাইবা ইয়াসমীন


ক্যান্সার মূলত একটি অনাকাঙ্ক্ষিত জীবনের গল্প। খুব সাধারন সাজানো জীবনটা মুহুর্ত্বের মধ্যে অস্বাভাবিকভাবে বদলে যেতে পারে ক্যান্সার নামক ব্যাধির কারনে। ২০১৮ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমান বিশ্বে ক্যান্সারকে মৃত্যুর দ্বিতীয় উল্লেখযোগ্য কারন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং চলতি বছর ক্যান্সারজনিত কারনে সারা বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৯৬ লাখ।

নারীদের ক্ষেত্রে অন্যান্য ক্যানসারের তুলনায় স্তন ক্যান্সার এ আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা কিছুটা বেশি দেখা যায়।
স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত দেশের শীর্ষে বেলজিয়াম, নেদারল্যানড, ফ্রান্স ইত্যাদি থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশেও এর প্রকোপ লক্ষণীয়।

অন্যান্য ক্যান্সারের তুলনায় স্তন ক্যান্সারের মৃত্যুর হার অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব যদি প্রাথমিক পর্যায়ে রোগটি সনাক্ত করা সম্ভব হয়।

মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের সঠিক ধারনার অভাব প্রতি মূহুর্তেই হাজারও নারীকে ঠেলে দিচ্ছে মৃত্যুর মুখে। একটু সচেতনতা এবং সঠিক সময়ে রোগ সনাক্ত করা সম্ভব হলে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ সনাক্ত হলে মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা সম্ভব ৯০ শতাংশ।

স্তন ক্যান্সারের মৌলিক ধারনার ক্ষেত্রে প্রথমেই যে বিষয়গুলো জানা দরকার তা হলো কে বা কারা এই ঝুঁকিতে রয়েছে এবং স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ কি কি হতে পারে!

যাদের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে যাদের:

* যেসব নারীর বয়স ৪০ বছরের বেশি তাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
* স্তন ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে
* অবিবাহিতা বা সন্তানহীনা নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
* যেসব মায়েরা সন্তানকে কখনও স্তন্যপান (breast feeding) করাননি।
* ৩০ বছরের পরে যারা প্রথম মা হয়েছেন।
* যাদের তুলনামূলক কম বয়সে মাসিক শুরু হয় ও দেরিতে মাসিক বন্ধ (menopause) হয় তাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
* একাধারে অনেকদিন (১০ বছর বা বেশি) জন্ম নিরোধক বড়ি খেলেও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
* অতিরিক্ত মদ্যপান ও অনিয়ন্ত্রিত জীবনপদ্ধতি।

যদিও উল্লেখিত বিষয়গুলো ক্যানসারের ঝুঁকির কারন হিসেবে চিহ্নিত করা হয় তবে বাস্তব চিত্র অনুযায়ী প্রতিটি নারীই এই ঝুঁকির আওতায় রয়েছে।

লক্ষণ বা উপসর্গ

• স্তনের কোন অংশে চাকা চাকা হয়ে যাওয়া অথবা কোন লাম্প দেখা যাওয়া।
• স্তনের আকার বা আকৃতির পরিবর্তন।
• স্তনবৃন্তের আকারে পরিবর্তন।
• স্তনবৃন্ত থেকে রক্ত বা তরল পদার্থ বের হওয়া।
• স্তনবৃন্তের আশেপাশে রাশ বা ফুসকুড়ি দেখা যাওয়া।
• বগলে ফুলে যাওয়া বা চাকা দেখা দেয়া।
• স্তনের ভেতরে গোটা ওঠা বা শক্ত হয়ে যাওয়া।

প্রাথমিক সচেতনতা অনুযায়ী প্রত্যেকেই উচিত নিয়মিত স্তনের স্বাভাবিক আকারকে লক্ষ্য রাখা এবং অন্তত প্রতি দুই সপ্তাহে নিজে নিজে বাসায় পরীক্ষা করা। যাদের বয়স ৪০ উর্ধ্ব তাদের বছরে একবার ম্যামগ্রাম করা প্রয়োজন। একমাত্র সচেতনতাই পারে ক্যান্সারকে জয় করে একটি সুস্থ সুন্দর জীবন ফিরিয়ে দিতে।

ক্যান্সার মরন ব্যাধি হিসেবে পরিচিত হলেও আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের খাতিরে ক্যান্সার রোগীরাও সঠিক চিকিৎসা গ্রহন করে পরিচালনা করতে পারেন সুস্থ স্বাভাবিক জীবন।

 

মেয়ের পড়াশোনায় ১২ জন সহায়ক


নারী সংবাদ


অর্থের ঝনঝনানি বোধ হয় একেই বলে। মেয়ের পড়াশোনায় যাতে অসুবিধা না হয় তাই ব্রিটেনে ১২ জন সহায়ক কর্মী নিয়োগ করলেন এক ভারতীয় ব্যবসায়ী। আর সেই সুবাদে সবচেয়ে ‘ধনী ছাত্রী’র তকমা জুটেছে ওই ছাত্রীর।

দ্য সান সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী, স্কটল্যান্ডের সেন্ট অ্যান্ড্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রীর জন্য একজন ম্যানেজার, ঘরে সাহায্যের জন্য তিনজন কর্মী, একজন মালি, একজন মহিলা পরিচারিকা, একজন প্রধান সহকারী, তিনজন পদচারী, ব্যক্তিগত রাঁধুনি ও একজন গাড়ি চালকের ব্যবস্থা করেছেন ওই ব্যবসায়ী।

সাধারণ ছাত্রীর মতো যাতে তাকে থাকতে না হয়, সেজন্য স্কটল্যান্ডের ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন তার মা-বাবা।

ওই ১২ জন কর্মী চার বছর ধরে ওই বিলাসবহুল ফ্ল্যাটেই থাকবেন। রীতিমতো খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে কর্মী সংগ্রহ করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপনেই বলা ছিল, অভিজ্ঞ কর্মী পেলে বছরে ৩০ হাজার পাউন্ড দিতেও তারা রাজি।

সুত্র: ইন্টারনেট।

 

স্বামীর দেয়া উপহার স্ত্রীর দেনমোহর নয়


সিরাজ প্রামাণিক


বিয়ের পর স্বামী তার স্ত্রীকে অনেক কিছুই দিতে পারে। স্বামী যদি দেনমোহর হিসেবে স্ত্রীকে কিছু দেয়, তবেই তা দেনমোহর বলে বিবেচিত হবে। এ ক্ষেত্রে ‘দেনমোহর বাবদ’ কথাটি লেখা থাকতে হবে। যেমন: জমি হস্তান্তর দলিলে ‘দেনমোহর বাবদ’ কথাটি লেখা না থাকলে এরূপ জমি প্রদান দেনমোহর হিসেবে ধরা হবে না।
হাইকোর্ট বিভাগের একটি মামলায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, বিয়ের সময় স্বামী তার স্ত্রীকে দেনমোহর হিসেবে পাঁচ বিঘা জমি দিতে চায়। সে মতে স্বামী ওই জমি স্ত্রী বরাবর প্রদানও করেন। পরে স্বামী তার স্ত্রীর সাথে এ মর্মে মধ্যস্থতা করে যে, ওই পাঁচ বিঘা জমি বিক্রি করে ভালো জায়গায় ১৩ বিঘা জমি ক্রয় করবে। সেখান থেকে স্ত্রীকে পাঁচ বিঘা জমি ফেরত দেবে। কথা দিয়ে কথা না রাখলে স্ত্রী স্বামীর কাছে দেনমোহর চেয়ে মামলা করে। স্বামী ওই মামলায় প্রতিযোগিতা করে। স্বামী এই মর্মে অজুহাত উত্থাপন করে যে, পারিবারিক আদালতে ওই মামলা অচল। কারণ তিনি জমিটি ঋণ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন এবং মামলাটি দেওয়ানি আদালতে বিচার্য। মামলাটিতে পারিবারিক আদালত স্ত্রীর পক্ষে ডিক্রি প্রদান করলেও স্বামী হাইকোর্ট বিভাগে আপিল দায়ের করে। মহামান্য হাইকোর্ট নি¤œ আদালতের আদেশ বহাল রাখে ১৩ বিঘা জমির মধ্যে পাঁচ বিঘা জমি তার স্ত্রীকে প্রদানের নির্দেশ দেন। (রওশন আরা বেগম বনাম মাসক আহমেদ ২৩ বিএলডি হাইকোর্ট, পৃষ্ঠা- ৩০২)
তবে মোহরানার পরিবর্তে হিবা বিল অ্যাওয়াজের রীতিও রয়েছে। ১৯৫৫ সালে ঢাকা হাইকোর্ট সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে, মোহরানার পরিবর্তে হিবা-বিল-অ্যাওয়াজ তখনই বৈধ হবে যখন স্ত্রী কোনো প্রতিদান ছাড়াই স্বামীকে মোহরানা দান করে দেয় এবং পরে স্বামী স্ত্রীর দানের ‘অ্যাওয়াজ’ স্বরূপ কোনো সম্পত্তি আলাদাভাবে দান করে। কারণ এটা মুসলিম আইনে একটি বিশুদ্ধ হিবা বিল অ্যাওয়াজ। এমনকি স্বামী যদি স্ত্রীকে কোনো কিছু দান করেন এবং স্ত্রী স্বামীর বরাবরে প্রতিদান স্বরূপ অন্য কোনো দলিল মূল্যে মোহরানার অধিকার ছেড়ে দেয় তবে তা আধুনিক প্রকৃতির একটি হিবা বিল অ্যাওয়াজ বলে গণ্য হবে (পিএলডি ১৯৫৫, ঢাকা. পৃষ্ঠা ৩৯)। দেনমোহরের পরিবর্তে স্ত্রীর বরাবর জমি সম্পত্তি হস্তান্তর এক শত টাকা মূল্যের অধিক হলে অবশ্যই রেজিস্ট্রি দলিল দ্বারা হস্তান্তর করতে হবে (৪ ডিএলআর, পৃষ্ঠা-৫১)।
বিয়ের সময়ে দেয়া শাড়ি, গয়না ইত্যাদি কখনো দেনমোহরের অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে না। অনেক ক্ষেত্রে বিয়ের সময় গয়না, শাড়ি ইত্যাদির মূল্য দেনমোহরের একটি অংশ ধরে উসুল লিখে নেয়া হয়। আসলে বিয়েতে দেয়া উপহার বা উপঢৌকন দেনমোহর নয়। এগুলোকে দেনমোহরের অংশ বলে ধরা যাবে না এবং উসুল বলা যাবে না। (আ: কাদের বনাম সালিমা, ১৮৮৬, ৮ অল. পৃষ্ঠা-১৪৯)।
ভরণপোষণ দেনমোহর বলে বিবেচিত হবে না : দেনমোহরের সাথে ভরণপোষণের কোনো সম্পর্ক নেই। বিবাহিত অবস্থায় স্ত্রীকে ভরণপোষণের জন্য স্বামীর যে খরচ তা কোনোভাবেই দেনমোহরের অংশ বলে বিবেচিত হবে না। আবার বিয়ে-বিচ্ছেদের ফলে স্বামী, স্ত্রীকে যে ভরণপোষণ দেয় তা-ও দেনমোহরের অংশ নয়। দেনমোহর এবং ভরণপোষণ দু’টি সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। একটি পরিশোধ করলে অপরটি মাফ হয়ে যায় না।
জামিনদার : যদি কোনো ব্যক্তি একজনের স্বামী-স্ত্রীর মোহরানার দায়িত্ব নেয় তবে সে তা পরিশোধের জন্য দায়ী হবে। বিবাহোত্তর দেনমোহরের জন্য জামিনদার থাকলে সে ক্ষেত্রেও জামিনদার দায়ী হবে। স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে স্ত্রীর দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে। বিধবা স্ত্রী তার দেনমোহরের জন্য মৃত স্বামীর পরিত্যক্ত সম্পত্তি দখলে রাখার অধিকারিণী। (বিবি বাচান বনাম শেখ হামিদ, ১৮৭১, ১৪ এমআইএ পৃষ্ঠা-৩৭৭)। দেনমোহরের দাবিতে কোনো বিধবা স্ত্রী তার স্বামীর সম্পত্তি দখল করে থাকলে যদি তাকে ওই সম্পত্তি থেকে অন্যায়ভাবে বেদখল করা হয়, তবে সে দখল পুনরুদ্ধারের জন্য মামলা দায়ের করতে পারে (মজিদ মিয়া বনাম বিবি সাহেব ১৯১৬, ৪০ বম. পৃষ্ঠা-৩৪)।
যদি স্বামীর উত্তরাধিকারীরা স্বামীর সম্পত্তি থেকে দেনমোহর দিতে অস্বীকার করেন তাহলে স্বামীর উত্তরাধিকারীদের বিরুদ্ধে স্ত্রী পারিবারিক আদালতে মামলা করতে পারবেন।
উল্লেখ্য, যদি স্বামীর আগে স্ত্রীর মৃত্যু হয় এবং স্ত্রীর দেনমোহর পরিশোধিত না হয়ে থাকে তাহলে স্ত্রীর উত্তরাধিকারীরা ওই দেনমোহর পাওয়ার অধিকারী। ফলে স্ত্রীর উত্তরাধিকারীরা দেনমোহর পাওয়ার জন্য আদালতে মামলা করতে পারেন।
লেখক : বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী,
seraj.prama nik@gmail.com

 

“আমাকে পারতেই হবে”


ফাতেমা শাহরিন


স্টুডেন্ট অবস্থায় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে নাম লিখেছে অনামিকা দাশ। তার প্রতিষ্ঠানের নাম “কন্যে কারিগর”। “কন্যে কারিগর” এ রয়েছে, হাতের তৈরী চুড়ি, বালা, নেকলেস, ব্রেসলেট, কানের দুল ঘর সাজানোর পন্যসহ নানা রকম আইটেম। যার পুরোটাই অনামিকা দাশ নিজ হাতে করে থাকেন। প্রতিটি কাজই স্বপ্ন, স্বপ্নীল মনের বর্ণিল রং, ছবি আঁকে তার প্রতিটি সৃষ্টি।
তিনি একজন স্টুডেন্ট, পড়াশুনা মৃৎশিল্প, মাস্টার্স, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় করেছেন।পড়াশুনার ব্যস্ততার পাশাপাশি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন এই সাহসী নারী।

ছোট বেলা থেকেই তার আকাঁ-আকিঁ ক্রাফ্টিং এর প্রতি অনেক শখ ছিল। বড় হওয়ার পর তার ইচ্ছাটা স্বপ হয়ে বেড়ে উঠতে থাকে। আর তা হলো, নিজের কিছু করতে হবে এবং একজন প্রতিষ্ঠিত মানুষ হতে হবে। আর তাই উদ্যোগ নেন একাই।

গত বছরের জুনের ৩১ তারিখে ফেইসবুকে “কারিগর…..” গ্রুপটি খুলেন। প্রথমে তিনি কাঠের উপর হ্যান্ড পেইন্ট করা গহনা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। ভগবানের কৃপায় বেশ সাড়া পান।এর কিছু দিনপর একটা ফেইসবুক পেইজ খুলেনন তিনি আর নাম দেন “কন্যে কারিগর”। এভাবেই যাত্রাশুরু হয় অনামিকা দাশের “কন্যে কারিগর”।

গয়নার পাশাপাশি ঘর সাজানোর কিছু পন্য হাতে বানানো শুরু করেন,তাছাড়া হ্যান্ড পেইন্ট করা পাঞ্জবীও তৈরী করেন।

কাজের ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতাও ছিল অনামিকার। যেহেতু অনামিকা ভার্সিটির হলে থাকতেন তাই তিনি কাজের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা পেতেন না। তবুও গ্রাহকের চাহিদা ও রুচি অনুযায়ী কাজ করে সঠিক সময়ের মধ্যে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।তাছাড়া পন্য ডেলিভারী দেওয়া নিয়েও অনেক সময় সমস্যার মুখে পরতে হয় তাকে।

যেহেতু তিনি এখনও ছাত্রী তাই পন্যের দাম এমন ভাবে নির্ধারন করার চেষ্টা করেন যাতে সবার ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে।

গহনা ৬০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকার মধ্যে।আর পাঞ্জবী ১০০০টাকা থেকে ১৪০০ টাকার মধ্যে। তার ব্যবসাটি এখন শুধুমাত্র অনলাইন ভিত্তিক। অনামিকার চাকরি করার প্রতি তেমন আগ্রহ নেই। আর তাই নিজ উদ্যোগেই স্বল্প পুজিঁ বিনিয়োগ ব্যবসাটি শুরু করেন।

অনামিকার মতে, ‘কোন মেয়ে যদি স্বনির্ভর হতে চায় তবে তার নিজ উদ্যোগটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

ভবিষ্যতে একটি সমবায়সমিতির মাধ্যমে গ্রামের অস্বচ্ছ পরিবার নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে অনামিকার।

তার ভাষ্য মতে, “একজন নারী হিসেবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, আমাকে পারতেই হবে আর যদি ভয় বা পিছিয়ে পরি তাহলে হেরে যাবো। আমাকে আমার কাঙ্খিত অবস্থান অর্জন করতেই হবে এই মনোভাব টাই সব সময় হৃদয়ে ধারণ করি।”

 

ছবিঘর:

১.

২.

৩.

 

 

মাতৃমৃত্যু রোধে সকলকে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে : স্পিকার


নারী সংবাদ


মাতৃমৃত্যু রোধে সকলকে আন্তরিকভাবে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
আজ রোববার সংসদ ভবনের শপথকক্ষে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপি)-এর যৌথ উদ্যোগে এসপিসিপিডি প্রকল্পের আওতায় আয়োজিত মাতৃস্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ক পলিসি ডায়লগে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এই আহবান জানান।
শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি এক লাখে মাতৃমৃত্যুহার ১৭৬ জন। ২০৩০ সালের মধ্যে এ হার ৭০ জনে নামিয়ে আনা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
দুর্গম এলাকা বিশেষ করে পাহাড়ী এলাকা,হাওরাঞ্চল ও চরাঞ্চলে মাতৃমৃত্যুর হার বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের যে সকল অঞ্চলে মাতৃমৃত্যুর হার বেশি সে অঞ্চলকে চিহ্নিত করে কারণ অনুসন্ধান করে সঠিক কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করে বাস্তবায়ন করতে হবে। একই সাথে অন্যান্য অঞ্চলে অর্জিত সাফল্য ধরে রাখতে পারলে কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে।
শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নিজস্ব কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক একটি সার্বজনীন মানদন্ড এসডিজি এর লক্ষ্যও নির্ধারিত হয়েছে। এ দু’য়ের সমন্বয়ে প্রত্যেকের সুনির্দিষ্ট কাজগুলো বাস্তবায়নের দিকে আমাদের দৃষ্টি স্থির করতে হবে।
মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ কমিউনিটি ক্লিনিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে উল্লেখ করে স্পিকার বলেন, এ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে যাতে জনগণ আরও বেশি সেবা গ্রহণ করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবাদানকারী জনবলকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
স্পিকার বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জন সূচকে বাংলাদেশ এশিয়ার আঞ্চলিক অগ্রগতি থেকে এগিয়ে আছে। বাংলাদেশ এমডিজি এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সফলতা দেখিয়েছে, সে ধারাবাহিকতায় ২০৩০ সালের মধ্যে অবশ্যই এসডিজি এর অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন করবে।
চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজের সভাপতিত্বে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপি) এর রিপ্রেজেনটেটিভ ড. আসা টরকেলসন, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো: আবদুর রব হাওলাদার, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক এমপি, হুইপ শহিদুজ্জামান এমপি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। পলিসি ডায়লগে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত এমপি।

সুত্র: (বাসস)

 

রান্নার জন্য রান্নাঘর পরিচ্ছন্নতা


ঘরকন্যা


সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো রান্নাঘর। কারণ এ ঘরে যে রান্না করা হয় তার পরিচ্ছন্নতা ও ভেজালহীনতার ওপর নির্ভর করে পরিবারের সবার স্বাস্থ্য। তাই রান্নাঘরে কাজ করার সময় কিছু বিষয় আমাদের মাথায় রাখতে হবে, তাহলে রান্নাঘরে থাকবে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন। এমনই কিছু টিপস দেয়া হলো এই প্রতিবেদনে-

ময়লা জমা করা:
কয়েকদিনের ময়লা জমা করবেন না রান্না ঘরে। বরং ময়লা জমা করলে

ঢাকনা দেওয়া আবর্জনা:

রান্নাঘরে ঢাকনা দেয়া আবর্জনা ফেলার বালতি ব্যবহার করুন, এতে দুর্গন্ধ ছড়াবে না।

দেওয়ালে চর্বি দূর করুন:

থালাবাসন এর পাশাপাশি দেওয়ালের তেল-চর্বি পরিষ্কার করতে সাবানের সাথে গরম পানি ব্যবহার করুন। এতে চর্বি ভাব দূর হবে।

মাছির ও পোকামাকড়ের উপদ্রপের জন্য:

প্রাকৃতিক উপায় ব্যবহার করুন। যেমন, চিনির কৌটায় কয়েকটি লবঙ্গ রাখলে পিঁপড়া আসে না। মাছি পুদিনা পাতা আর তুলশী পাতার গন্ধ সহ্য করতে পারে না।

ঝুল পরিষ্কার করুন:

সপ্তাহে একদিন করে রান্নাঘরের ঝুল পরিষ্কার করুন। দিনের অনেকটা সময় কাটে রান্নাঘরে। তাই রান্নাঘরটা হওয়া চাই পরিষ্কার আর জীবাণুমুক্ত।

 

গরু পালনে চরাঞ্চলে নারীর ভাগ্যবদল


তাসলিমা সুলতানা


পৃথিবীতে সব মানুষ সোনার চামচ নিয়ে কিংবা ধনীর ঘরে জন্মগ্রহণ করে না। অর্থাৎ ধনীর দুলাল হয়ে সকলে জন্মগ্রহণ করে না। অনেকেই গরীবের ঘরে জন্মালেও কর্ম দিয়ে নিজেদের ভাগ্য বদল করতে পারে। সে জন্য প্রয়োজন কেবল সদিচ্ছা এবং একাগ্রতা। এমনটা যে কেবল সমাজে পুরুষের বেলায় ঘটে তেমনটা নয়। আজকাল দেশের নারী সমাজও নিজেদের ভাগ্য বদলাতে পারে। তাদেরই একজন ফাতেমা বেগম। বাড়ি লালমনিরহাটের তিস্তার চরাঞ্চলে। মহাজনের কাছ থেকে বর্গা নিয়ে গরু লালন-পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন তিনি।
শুধু ফাতেমা-ই নন জেলার আদিতমারীর মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবর্ধন দ্বীপচরে বেড়ানো আরো অনেকেরই গরু কেনার সামর্থ্য নই। তাই মহাজনের কাছ থেকে বর্গা নিয়ে গরু পোষেণ সম্ভাবনাময় চরে। বর্তমানে বর্গা গরুতে ভরে উঠেছে চরাঞ্চল।
সম্প্রতি লালমনিরহাটের তিস্তা চর ঘুরে দেখা গেছে, তিস্তা নদীর ভাঙনে সবকিছু হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে যাওয়া নারী-পুরুষ জেগে ওঠা চরে বাসা গড়েছেন। এখানকার বাড়িগুলোর বেশির ভাগ পুরুষ সদস্য অন্যের জমিতে দিন মজুরির কাজ করেন।
কেউ কেউ পরিবার-পরিজন রেখে পাড়ি জমিয়েছেন দেশের বিভিন্ন শহরে, যেখানে মৌসুমি শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। সংসার চলে স্বামীর উপার্জনে। আর বাড়িতে অনেকটাই কর্মহীন সময় কাটান নারীরা।
চরের নারীরা এই প্রতিবেদককে জানান, সংসারে বাড়তি আয় করতে তারা স্থানীয় মহাজনদের কাছ থেকে ছোট গরু বর্গা নেন। সেই গরু দিনভর চরাঞ্চলের খোলা মাঠে ঘাস ও লতাপাতা খাইয়ে বড় করে বিক্রি করেন। সেখান থেকে পাওনা টাকা মহাজনকে ক্রয় মূল্য দিয়ে বাকি যে টাকা থাকে তার অর্ধেক নিজেরা রাখেন, বাকি অর্ধেক মহাজনকে দেন।
কর্মহীন না থেকে এভাবে গরু পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন চরাঞ্চলের নারীরা।
জানা যায়, গোবর্ধন চরে দুই থেকে তিনশ’ পরিবার বাস করে। এর মধ্যে প্রায় প্রতিটি পরিবারেই রয়েছে ৩ থেকে ৪টি গরু; যার সবগুলোই বর্গা নেওয়া।
চরের বাসিন্দারা বলেন, চুরি-ডাকাতির কোনো ভয় নেই। চরের বিস্তীর্ণ এলাকায় দিনভর চড়ে বেড়ায় এসব গরু। ফলে অল্পতেই বেশ মোটা-তাজা হয়ে ওঠে। এতে দামও মেলে বেশ ভালো।
চরের বাবু মিয়ার স্ত্রী ফাতেমা বলেন, ‘চরে গরু পোষার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। কিন্তু আমাদের গরু কেনার টাকা নেই। তাই মূল ভূখন্ডে এক আত্মীয়ের কাছ থেকে ৪৮ হাজার টাকা নিয়ে দু’টি ছোট গরু কিনে নিয়েছি। এক বছর লালন-পালন করার পর বর্তমানে গরু দু’টির বাজার মূল্য প্রায় লাখ টাকা।’
তিনি আরো বলেন, ‘গরু বিক্রির লভ্যাংশের অর্ধেক দিয়ে জমি বন্ধক নেবো চাষাবাদের জন্য। ঘরে চাল থাকলে পেটের চিন্তা থাকে না।’
সকাল-সকাল পরিবারের সদস্যদের রান্না-বান্না শেষে প্রতিদিন গরু নিয়ে মাঠে যান চরের আছিয়া বেগম (৪০)। দিনভর গরুর পেছনেই কেটে যায় তার। গরু মাঠে নিয়ে যাওয়া এবং দুপুরে ও সন্ধ্যায় বালতি ভরে পানি খাওয়ানো নিয়ে ব্যস্ত থাকেন তিনি। জানালেন, নিজেদের গরু কেনার টাকা নাই। তাই চারটি গরু বর্গা নিযেছেন। গত দুই বছরের গরুর লভ্যাংশ দিয়েই এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন তিনি।
আগামী দুই বছরের মধ্যে গরু বিক্রির লভ্যাংশ দিয়ে মূল ভূখন্ডে বাড়ি করার মতো দুই-তিন শতাংশ জমি কেনার স্বপ্ন দেখছেন এই চল্লিশোর্ধ নারী।
আছিয়া বলেন, দুই দিকে নদী থাকায় চরে চোর-ডাকাতের ভয় নেই। ভয় শুধু বন্যা আর নদী ভাঙনের কারণে আমরা সর্বশান্ত হয়ে পড়েছি।
বাসিন্দারা বলছেন, তিস্তা নদী শাসন করে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে স্থায়ী বসবাসের দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু বার বার আশ্বাস পেলেও কোনো ফল পাচ্ছেন না দারিদ্র্যের শিকার এসব মানুষ।
চরের বাসিন্দা সালেহা আক্তার বলেন, নদী আমাদের সবই কেড়ে নিয়েছে। ব্যাংক থেকেও কোনো ঋণ পাই না। কারণ, চরের জমি খাস খতিয়ানে হওয়ায় ব্যাংক ঋণ দেয় না।
অন্যদিকে যোগাযোগের সমস্যায় কিস্তি আদায় না হওয়ার আশঙ্কায় চরাঞ্চলের মানুষকে অনেক বেসরকারি সংস্থাও (এনজিও) ঋণ দিতে চায় না বলে জানিয়েছেন চরের বাসিন্দারা।
চরের বাসিন্দা মো. আবদুল আলিম বলেন, আসলে কোনো কোনো এনজিও ঋণ দেয়। তবে এ টাকায় গরু পালন সম্ভব নয়। কারণ, তাদের ঋণের কিস্তি পরের সপ্তাহে শুরু হয়। আর গরুর লাভ আসতে ছয় মাস থেকে এক বছর সময় লাগে। এতে আরো ঋণের বোঝা বাড়ে। তাই সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণের জন্য আবেদন জানিয়েছেন চরাঞ্চলের নারী-পুরুষরা।

সুত্র: (বাসস)

 

টাঙ্গাইলে কন্যাশিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় যুবকের মৃত্যুদণ্ড


নারী সংবাদ


টাঙ্গাইলে আট বছর বয়সী এক কন্যাশিশুকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় এক যুবককে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক খালেদা ইয়াসমিনে দেন।
দন্ডিত-প্রাপ্ত আসামি হচ্ছে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার ভুটিয়া গ্রামের সাবান আলী ওরফে ফজলুল হকের ছেলে কামরুল ইসলাম (২৪)। বর্তমানে সে জেলহাজতে রয়েছে।
টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাছিমুল আক্তার নাছিম বলেন, ২০১৪ সালের ১৯ মে বিকেলে মধুপুর উপজেলার ভুটিয়া গ্রামের আবুল কালামের মেয়ে বীথি (৮) হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির পাশের রাস্তায় গেলে কামরুল ইসলাম তাকে লিচু দেয়ার কথা বলে আকরাচনা খেলার মাঠের পাশের এক জঙ্গলে নিয়ে যায়। সেখানে কামরুল ওই শিশুটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ ফেলে রেখে যায়। এ ঘটনার ওই দিনই বীথির পিতা আবুল কালাম বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন। বীথিকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা স্বীকার করে কামরুল আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেয়।
এ মামলায় মোট ১৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বিচারক একমাত্র আসামি কামরুলের বিরুদ্ধে মৃত্যুদের আদেশ দেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক। সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

বিয়ে ও পরিবার সমকালীন জিজ্ঞাসা- ৮


কানিজ ফাতিমা


মেনোপজে যে মানসিক সমস্যাগুলোর সৃষ্টি হয় তা নারীর কর্মক্ষমতা ও পারস্পরিক সম্পর্কের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে নারীর পরিবারের সদস্যরা ও সহকর্মীরা তার আচরণে আহত ও বিরক্ত বোধ করতে পারে।

গতপর্বে বলেছিলাম এ সময়ের প্রধান তিনটি মানসিক সমস্যা হলঃ
দুঃখবোধ বা বিষন্ন হওয়া, অস্থিরচিত্ত ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়া। এ পর্বে থাকবে এ নিয়ে আরও কিছু আলোচনা।

সব মহিলা তার জীবনের এই পরিবর্তিত অবস্থাকে সমানভাবে মেনে নিতে পারেনা। যারা আগে থেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকে এবং পরিবার থেকে সহযোগিতা ও নিশ্চয়তা পায় তারা অন্যদের তুলনায় এই পরিস্থিতি অধিক সহজভাবে মোকাবিলা করে। যেমন কোন মহিলা যদি মনে করে যে, সে তার নারীত্ব হারিয়ে ফেলছে ফলে সে মূল্যহীন হয়ে যাচ্ছে, তবে তার মানসিক সমস্যা অন্যদের থেকে বেশি হবার সম্ভাবনা থাকে। যদি সে আশঙ্কা করে যে তার স্বামী আর একটি বিয়ের দিকে আগাতে পারে তবে সে আরও বেশি বিচলিত হতে পারে। এমতাবস্থায় সবকিছু নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যও নিজেকে মূল্যবান প্রমাণের জন্য সে স্বামী, পুত্র-কন্যা ও পুত্রবধুর সঙ্গে অস্বাভাবিক আচরণ করতে পারে। যদি এমনটা হয় তবে পরিবারের অন্যদের দায়িত্ব হল তাকে নিশ্চয়তা দান করা ও তার সঙ্গে এমন আচরণ করা যাতে সে বুঝতে পারে পৃথিবীতে সে মূল্যহীন হয়ে যায়নি। এ সময় মা তার পুত্রের উপর অধিক নিয়ন্ত্রণ চাইতে পারে এবং স্বাভাবিকভাবেই পুত্রবধুকে তার প্রতিদ্বন্দী মনে করতে পারে। এক্ষেত্রে পুত্রকে সচেতনতার সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করতে হয়। একদিকে মা আঘাত পায় এমন কাজ থেকে যেমন তাকে বিরত থাকতে হয় আবার অন্যদিকে মায়ের অযাচিত আবদারকেও সচেতনভাবে পাশ কাটিয়ে যেতে হয়। এ সময় মানসিকভাবে প্রস্তুত করার জন্য তাকে (মাকে)মেনপজের ওপর বই, আর্টিকেল পড়তে দেয়া যেতে পারে ।
কর্মজীবী মহিলা, যারা তার চাকুরী ও আয় নিয়ে সন্তুষ্ট, তাদের ওপর মেনোপজের প্রভাব তুলনামূলকভাবে গৃহিনী ও যারা কোন প্রকার সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত নয় সেসব নারীদের থেকে সাধারণত কম হয়ে থাকে। ফলে এ সময় তাকে সমাজসেবামূলক কোন কাজে উৎসাহী করা যেতে পারে; বাগান করা বা বাড়ীর অন্য কোন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও তাকে দেয়া যেতে পারে। এতে সে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবা শুরু করবে এবং আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবে। ফলে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ করার অস্বাভাবিক পন্থাগুলো থেকে নিজে থেকেই সরে আসবে।
মেনোপজ নারীদেহের বার্ধক্যের নির্দেশক। শৈশব থেকে কৈশোর ও যৌবনে পদার্পণ করার সব ক’টি বয়সের ধাপকেই মানুষ স্বাগত জানায়। কিন্তু যৌবনের পরে বার্ধক্য আসাকে মানুষ কখনওই স্বাগত জানায় না। ফলে অধিকাংশ নারীই এ সময়ে জীবনের মানে হারিয়ে ফেলে। সে তার যৌবন ও সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলার শোকে ভোগে। ফলে কখনও সে অসহায় বোধ করে এবং পরমুহূর্তে রাগ অনুভব করে। একারণে সে খেয়ালী ও জেদী আচরণ করে। তাছাড়া মেনোপজে যে শারীরিক সমস্যার তৈরি হয় সেগুলো অনেক সময় নিদ্রাহীনতার জন্ম দেয় এবং নিদ্রাহীনতা থেকে মেজাজ খারাপ ও খিটখিটে ভাবের জন্ম হয়।
মেনোপজের সঙ্গে যে মানসিক অবস্থাগুলো যুক্ত তার বিস্তারিত একটি তালিকা নীচে দেয়া হল-
0 Less energy and drive (শক্তি ও উদ্যম কমে যাওয়া)
0 Irritability (বিরক্তি ভাব)
0 Mood changes (মেজাজের ভারসাম্যহীনতা)
0 Headaches (মাথাব্যথা)
0 Feeling of unworthiness (নিজেকে মূল্যহীন মনে করা)
0 Loss of self-esteem (আত্মসম্মানবোধের অভাব)
0 Loss of self-confidence (আত্মবিশ্বাসের অভাব)
0 Feeling unable to cope (খাপ খাওয়াতে না পারা)
0 Difficulty in concentrating (মনোযোগ দিতে না পারা)
0 Feelings of aggressiveness (ঝগড়াটে বা আক্রমণাত্মক হওয়া)
0 Depression (হতাশ বোধ)
0 Anxiety (দুশ্চিন্তা বোধ)
0 Forgetfulness (ভুলোমনা)
0 Fear of loneliness (একাকীত্বের ভয়)
0 Unusually prove to tears (কারণে অকারণে কান্না পাওয়া)
0 Tired (ক্লান্তিবোধ)
মেনোপজের এই লক্ষণগুলো কার ক্ষেত্রে কতটুকু হবে তার অনেকখানি নির্ভর করে দেশীয় সংস্কৃতি ও পারিবারিক সংস্কৃতির উপর। সাধারণত যেসব দেশে নারীরা নিজেদেরকে অভিজ্ঞতার আসনে দেখতে পছন্দ করে ও সৌন্দর্য সম্পর্কে অত্যধিক সচেতন না, সেসব দেশের নারীরা মেনোপজে কম মানসিক সমস্যা বোধ করে। উপরন্তু অনেক সময়ই বার্ধক্যকে তারা অধিক সম্মান ও যত্ন পাবার সুযোগ হিসাবে মনে করে। তাছাড়া যেসব দেশে সন্তানরা বাবা-মা’র কাছাকাছি থাকে (Collective Society) সেসব দেশেও মেনোপজের সমস্যা নারীরা তুলনামূলকভাবে কম অনুভব করে। অপরপক্ষে, Individualistic Society- যেখানে নারীরা শরীর ও সৌন্দর্য সম্পর্কে প্রচণ্ড সচেতন এবং যারা সন্তান সন্তুতির থেকে দূরত্ব বজায় রাখে তাদের মধ্যে মেনোপজের সমস্যা তুলনামূলক বেশি হয়। একারণে গবেষণায় দেখা গেছে জাপানের নারীরা পশ্চিমা নারীদের তুলনায় এ সম্পর্কিত সমস্যায় কম ভোগে।
এ থেকে সহজেই বোঝা যায় সচেতনতার সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা এ ব্যাপারটি মোকাবিলা করলে বা সামলে নিলে নারীদের জন্য মেনোপজের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়া সহজ হয় এবং এ কারণে সৃষ্ট পারিবারিক অশান্তিগুলো সহজেই কমিয়ে আনা যায়।

পর্ব-৭

 

দক্ষ নারীর কর্মের প্লাটফর্ম ‘টু আওয়ার জব’


মাহবুব আলম


নারী মমতাময়ী মা, কখনো নারী বোন, আবার এই নারী-ই প্রাণের প্রিয়তমা; সেই নারী উদ্যোক্তাও। যিনি স্বাবলম্বী হয়ে হাল ধরেন সংসারের। সে ক্ষেত্রে নারীর কর্মক্ষেত্র হওয়া চাই নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক। তেমনই ঘরে বসে নারীর নিরাপদ কর্মক্ষেত্রের প্লাটফর্ম ‘দ্য টু আওয়ার জব’। এর মাধ্যমে দক্ষতা ও যোগ্যতাসম্পন্ন নারীরা ঘরে বসে প্রতিদিন কমপক্ষে দুই ঘণ্টা কাজ করে স্বাবলম্বী হতে পারছেন।
এই উদ্যোগটি গড়ে তুলেছেন নারী উদ্যোক্তা সানজিদা খন্দকার। প্রথমে বহুজাতিক কোম্পানিতে উচ্চপদে চাকরি করলেও সংসার ও ছেলে-মেয়েকে সময় দিতে গিয়ে একসময় তা ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। তার মতো অন্য নারীদের কথা চিন্তা করেই গড়ে তোলেন অনলাইন উদ্যোগ ‘দ্য টু আওয়ার জব.কম।’
অনলাইন এই পোর্টালে ৯টা থেকে ৫টা অফিস নয়, নিজের ঘরে বসেই নারী পছন্দের কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এখানে নিজ যোগ্যতায় সময় ও সুবিধা মতো কাজ করে পছন্দের ক্যারিয়ার গড়তে পারছেন নারীরা।
সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ‘টু আওয়ার জব’-এর কার্যালয়ে বসেই নানা পরিকল্পনা ও উদ্যোগের কার্যক্রম নিয়ে কথা বলেন সানজিদা খন্দকার।
‘টু আওয়ার জব’-এর এই প্রতিষ্ঠাতা বলেন, প্রফেশনাল মেয়েদের মধ্যেও অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বিয়ের পর তারা চাকরি ছেড়ে দেন। সন্তান-পরিবারসহ নানা কারণে আর সেটা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। এমনকি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার পরও ক্যারিয়ার হারিয়ে ফেলেন তারা। যোগ্যতাসম্পন্ন এসব নারী যাতে তাদের সুবিধামতো কাজ করতে পারেন ও তার ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারেন সে লক্ষ্য থেকেই ‘দ্য টু আওয়ার জব.কমে’র প্রতিষ্ঠা।
তিনি বলেন, ‘নিজের পরিস্থিতি থেকেই আমার মতো অন্যদের কথা বিবেচনা করে এই পোর্টাল তৈরির চিন্তা মাথায় আসে। আমার বিয়ের পরও আমি ট্রান্সকম কোম্পানির একটি শাখার ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতাম। সেখানে অফিস ছিল ৯টা থেকে ৬টা। আমার প্রথম সন্তান জন্মের পর তাকে বেশি সময় দিতে হতো। তখন দেখলাম এটা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বাসায় সন্তানকে দেখার মতোও কেউ নেই। তাই বাধ্য হয়েই জব ছাড়তে হয় আমাকে।’
সানজিদা বলেন, ‘পরে আমাকে সারাদিন সন্তান ও সংসার নিয়ে থাকতে হতো। মনে হতো আমার ক্যারিয়ার বুঝি শেষ। এই বিষয়টি নিয়ে আমি খুব হতাশায় ভুগতাম। একজন নারীর জীবনে সবচেয়ে আনন্দের সময় হলো তার মা হওয়া। কিন্তু সেই সন্তান কেনো তার হতাশার কারণ হবে? কোনো নারীর সংসার ও সন্তানকে তার ক্যারিয়ার গড়ার পথে বাধা মনে না করে, তাদের জন্যই এই ‘টু আওয়ার জব’।’
জানালেন, ‘টু আওয়ার জব’র ওয়েবসাইটে পেশাদার লেখা, ব্যবসায় সহায়তা, প্রোগ্রামিং, প্রযুক্তি, গ্রাফিকস, ডিজিটাল মার্কেটিং, অডিও সাপোর্ট, মার্কেট রিসার্চ, বিনোদন, গবেষণা, বিশ্লেষণসহ বিভিন্ন ধরনের সেবার ব্যবস্থা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে অর্ডার করলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এসব কাজ সম্পন্ন করে দেন দক্ষ নারী প্রফেশনালরা।
এসব বিষয়ে কাজ করতে চাইলে প্রথমে ‘টু আওয়ার জব’-এর ওয়েবসাইটে দক্ষ প্রফেশনালদের রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। অর্ডার আসার পর যোগ্যতা অনুযায়ী ব্যক্তিদের কাজ দেওয়া হবে।
বর্তমানে ঢাকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছেন বলে জানান সানজিদা খন্দকার।
ওয়েবসাইটে কাজ পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া খুবই সহজ। ওয়েবসাইটটা সেভাবেই তেরি করা হয়েছে। কারণ, আমরা চিন্তা করে দেখেছি যারা এখানে কাজ করবে তারা হয়তো কখনো ফ্রিল্যান্সিং করেনি। কারণ, একজন ডাক্তার কখনোই ফ্রিল্যান্সার হবেন না। তিনি হয়তো অনলাইন কনসালট্যান্ট হবেন। তাই স্টেপ বাই স্টেপ সাজিয়ে এটা তৈরি করা হয়েছে। এখানে শুধু নাম, মোবাইল নম্বর এবং ঠিকানা দিয়েই সাইন ইন করা যাবে। এরপর শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং অনান্য তথ্য দিয়ে একটি ফরম পূরণ করতে হবে। এর মাঝ থেকেই বেছে নিই যোগ্যতাসম্পন্নদের।
এ জন্য একটি টিম সব সময় অ্যালার্ট রয়েছে বলেও জানান এই নারী উদ্যোক্তা। তার মতে, এই টিমের কাজ হলো সবসময় ফোনে অ্যাকটিভ থেকে কাজ করা। যাতে যে কোনো সমস্যার সমাধান ফোন করার সঙ্গে সঙ্গেই দেওয়া সম্ভব হয়। অনেক সময় মেয়েরা ছেলে-মেয়ের কারণে বাইরে বের হতে পারেন না। তখন প্রয়োজনে তাদের বাসায় গিয়ে ওই সমস্যার সমাধান করাই হচ্ছে ওই টিমের কাজ।
এ উদ্যোগে এরই মধ্যে ব্যাপক সাড়া মিলেছে জানিয়ে সানজিদা বলেন, প্রথমে ভাবিনি এভাবে এই উদ্যোগ নারীরা গ্রহণ করবেন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকও আমাদের সহযোগিতা করেছেন।

যেহেতু অন-লাইনে বায়ারদের সঙ্গে কাজ করছি, তাই নারী কর্মীদের তথ্য খুব সতর্কভাবে পরিচালনা করতে হয়। কারণ, কেউ কোনো ধরনের সমস্যায় পড়ছেন কিনা তাও দেখতে হয়।

সূত্রঃ বাসস।

 

রূপান্তরের যাত্রা – পর্ব ৮


তাহনিয়া খান


বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
Rabbish rahli sadri wa yas-sir li amri wahloul uqdatam mil-lisaani yafqahu qawli.
O my Lord! expand me my breast; Ease my task for me; And remove the impediment from my speech, So they may understand what I say[20:25-28]

সকাল সাড়ে নয়টার দিকে জুম্মার নামাযের জন্য হারাম শরীফে চলে আসলাম। এত মানুষ যে হাটার জায়গা পর্যন্ত নেই। বসা তো দুরের কথা। ঠিক করলাম দোতালায় যাব। সেখানেও একি অবস্থা। চলে গেলাম ছাদে। সেখানে গিয়ে বসার জায়গা পেলাম। জীবনের প্রথম জুম্মার নামায পড়বো, তাও আবার হারাম শরীফে। খুবই এক্সাইটেড ছিলাম। নামাযের অনেক দেরি। অথচ সবাই বসে আছি কখন নামায শুরু হবে তার আশায়। কত ধরনের মানুষ। কালো, মোটা, ফর্সা, চিকন, লম্বা, খাটো। পৃথিবীর সব প্রান্তের মানুষকে যদি কেউ একসাথে দেখতে চায় , তাহলে এই হারাম শরীফে এসে দাড়ালেই হবে। কেউ কাউকে চিনি না, জানি না, তারপরেও মনে হয়েছে কত আপন। নিজের পাশের মানুষটার যাতে সমস্যা না হয়, সবাই এটা খেয়াল রাখে।

বসে থেকে কেউ দোয়া পড়ছে, কেউ একটু ঘুমিয়ে নিচ্ছে। কেউ খাচ্ছে। যখন কেউ কিছু খায় , তখন পাশের মানুষটাকেও তারা আপ্যায়ন করে। খুব ভাল লেগেছিল ব্যাপারটা। সবচেয়ে ভাল লেগেছে ইন্দোনেশিয়ানদের। সব সময় হাসিখুশী অবস্থায় থাকে এবং খুব হেল্পফুল। আমি সবসময় তাদের পাশে বসার চেষ্টা করতাম। একবার আসরের নামাযের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আমার পাশের এক ইন্দোনেশিয়ান মহিলা দেখি তার হিজাবটা এমন ভাবে টেনে নিল যে, তার চেহারা থেকে শুরু করে সব শরীর ঢেকে ফেললো। একটু পর দেখি ‘পিস পিস’ আওয়াজ। আর তার হিজাবের কিছু অংশ ভিজে যাচ্ছে। আমি বুঝতেই পারছি না কি হচ্ছে। তার পাশের জন আমার অবাক চাহনি দেখে মিট মিট করে হাসছিল। কিছুক্ষন পর মহিলা তার হিজাব ঠিক করে বসলেন এবং দেখলাম যে তার হাতে স্প্রে করার বোতল। সে স্প্রে করে পানি হাতে নিয়ে এতক্ষন ওজু করছিল। ব্যাপারটা বুঝতে পেরেই আমি বড় একটা হাসি দিলাম। সেও প্রতি উত্তরে হাসলো। বেশ ভালো বুদ্ধি তো ! ওজু ভেঙ্গে গেলে জায়গাতে বসেই ওজুর ফরজগুলো পালন করে ওজু করে ফেলা যায়। খেয়াল করলাম সব ইন্দোনেশিয়ানদের সাথে একটা পানি স্প্রে করার বোতল থাকে। তাদের দেখা দেখি আমিও পরে কিনে নিয়েছিলাম। এখনো কোথাও ট্র্যাভেল করার সময় সেটা সাথে রাখি। এটা খুবই ভালো বুদ্ধি, কারণ হারাম শরীফে যে ভিড় থাকে, একবার ওজু করার জন্য উঠে গেলে আর সেখানে জায়গা পাওয়া যাবে না।

একজন বয়স্ক মহিলাকে দেখেছিলাম যার কপালে ছেলেদের যেমন নামায পড়লে দাগ হয়, সেরকম দাগ হয়ে আছে। আমি উনার চেহারা কোনদিন ভুলবো না। কপালের ঐ দাগ দেখলেই বুঝা যায় দাগটা নামাযের কারনেই হয়েছে। চোখে নির্লিপ্ত ভাব। নাইজেরিয়ান ছেলেমেয়েদের দেখতাম কি লম্বা আর গায়ে কি শক্তি। আসলে নাইজেরিয়ান বলা সঠিক হবে না, আফ্রিকান কোন এক কান্ট্রি বলাই মনে হয় শ্রেয়। তারা তাদের জিনিসপত্র মাথায় করে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। এত তাড়াতাড়ি হাটে কিন্তু মাথার জিনিস পরে যায় না। আমরা দু’ ভাই বোন খেয়াল করলাম যে, তাদের বডি যতই নড়াচড়া করুক না কেন, ঘাড় সব সময় সোজা থাকে। ডানে বামে তাকালেও ঘাড় সোজা রেখে ঘুরায়। তাদের অনেকের ঘাড়ে, মুখে বিভিন্ন চিহ্ন দেখতাম। এসব চিহ্ন দিয়ে নাকি বুঝা যায় কে কোন গোত্রের।

ইরানীদের দেখতাম সবসময় চুপচাপ। দল বেধে থাকলেও তারা নিজেদের দোয়া দরুদ নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। কিছু ইরানী মহিলাদের কপালে, গালে ট্যাটু আঁকা দেখে অবাক হয়েছি। আর রাশিয়ান বেল্টের দিকের দেশগুলোর মানুষদের দেখতাম ছেলে মেয়ে সব এক কাতারে দাড়িয়ে নামায পড়তে। এক কাতারে কীভাবে ছেলে মেয়দের নামায হয় তা আল্লাহ্‌ই জানেন। ব্যাপারটা শুধু মক্কাতেই ঘটেছে। কারণ মদিনাতে মেয়েদের নামাযের জায়গা একদম আলাদা করা। ছেলেরা চাইলেও ঢুকতে পারবে না। আমার ভাই আর আমি খেয়াল রাখতাম ছেলে মেয়ে মিশানো কাতারে যেন না দাড়াই। অনেক সৌদি পুলিশ তাদের সরিয়ে দিত। পুলিশ চলে গেলেই আবার তারা হাজির হতো।

একবার এক আফ্রিকান মহিলা কাতার ফাঁকা না রাখার জন্য সবাইকে ইশারা করে বলছিল। তারপর আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে আমার ডান পায়ের সাথে তার বাম পা ঘষা দিয়ে রাখলো। আর অন্যদিকে আরেক মহিলা এত দূরে দাঁড়িয়েছিল যে তাকেও উনি কাছে ডাকছিল। কাছে না আসায় তার বাম পায়ের সাথে আফ্রিকান মহিলা নিজের ডান পা এমনভাবে রাখলো যে, সে কি নামায পড়বে নাকি জিমন্যাস্টিক খেলবে বুঝতে পারছিলাম না। আমার তো হাসি চলে আসছিল। এমনিতেই আমার একটুতেই হাসির ব্যারাম আছে। এত বড় পা ফাঁকা করে সে যে কীভাবে নামায পড়লো , আল্লাহ্‌ মালুম।

কত বয়স্ক মানুষ যে দেখেছি হজ্জে। হজ্জ করতে গায়ে অনেক অনেক শক্তি লাগে। তারপরেও আল্লাহ্‌ এদেরকে দিয়ে হজ্জ করিয়ে নিয়েছিলেন। একবার আমার পাশে এক কাজাখিস্তানের এক মহিলা বসেছিলেন। তার ব্যাগ দেখে বুঝেছিলাম তিনি কাজাখিস্তানের। মাগরিবের সময় কাছে চলে আসছিল। নামাযের জায়গা সহজে কেউ ছাড়ে না। তাই অনেক আগে থেকেই সবাই জায়নামাজ বিছিয়ে জায়গা দখল করে বসে থাকে। জায়নামাজের এই এক সুবিধা, জায়গা দখল করা যায়। আমার বাম পাশে তখনো ফাঁকাই ছিল।

আমার বাম পাশে তখনো ফাঁকাই ছিল। কোন ফাকে সেই মহিলা এসে বসলেন খেয়াল করিনি। একটু পর আমার খিদা লাগার কারনে ব্যাগ থেকে খেজুর আর বাদাম বের করে খেলাম। পাশের সবাইকেও দিলাম। ঐ মহিলার পোশাক আশাক দেখে মনে হলো উনি আর্থিকভাবে স্বচ্ছল না। আমি যেহেতু তাকে খেজুর আর বাদাম দিলাম উনিও তার ব্যাগ থেকে নাড়ু টাইপের একটা জিনিস বের করে দিলেন। দেখে খেতে ইচ্ছা করলো না। আবার ভাবলাম মাত্র দুই তিনিটা নাড়ু উনার কাছে। হয়তো এটাই উনার এক মাত্র খাবার হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। উনার চাহনি দেখে মনে হলো খুব শখ করে দিলেন , না নিলে মনে কষ্ট নিতে পারে। তাই ভেঙ্গে অর্ধেক নিলাম। উনি নিজের ভাষায় আর আকার ইংগিতে বুঝাতে চেষ্টা করলেন কি দিয়ে সেটা বানিয়েছেন। আমার হাতের বাদাম আর খেজুর দেখিয়ে ইশারা করলেন। নাড়ুটা মুখে দিয়েই বুঝলাম ছাতু, খেজুর,বাদাম আর গুড় দিয়ে বানানো। কেন জানি না উনি আমার পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন। খেয়াল করলাম তার একটা পা স্বাভাবিক, আরেকটাতে গোদ রোগ। এত মোটা আর ফুলে আছে পা টা। ভাবলাম কীভাবে এই পা নিয়ে এত হেঁটে উনি হজ্জ করবেন ? যখন নামায পড়লাম উনার উঠা বসায় কষ্টের চিহ্ন আমি দেখিনি। হয়তো আমার নামায পড়ার মনোযোগের কারণে সেভাবে উনাকে খেয়াল করিনি। সালাম ফেরানোর পর দোয়া পড়তে পড়তে পাশে তাকাতেই দেখি উনি নেই। আশেপাশে তাকালাম , কোথাও নেই। এত তাড়াতাড়ি ঐ পা নিয়ে উনি কীভাবে চলে গেলেন আমি আজও ভাবি সেটা। কত অসুস্থ মানুষকে দেখেছি, কত দরিদ্র মানুষকে দেখেছি। অবাক হয়েছি। অনেকের থাকার জায়গা নেই। মসজিদে থেকেছেন তারা। আল্লাহ্‌ এমন সব মানুষদেরকে দিয়েও হজ্জ করিয়েছেন।

এক চাইনিজ মহিলাকে দেখেছিলাম সবাইকে একটা করে মলম দিতে। প্রায় অনেকেরই ঠাণ্ডা লাগে সেখানে। আমিও একটা পেয়েছিলাম। কেউ কিছু দিলে খুশী মনে নিতাম, যাতে সেই ব্যক্তি কষ্ট না পায়। আমি সহজে কোন মলম লাগাই না। তারপরেও নিয়ে রাখলাম। রাতে রুমমেট ঘুমাতে পারছিল না ঠাণ্ডার জন্য। নিঃশ্বাসই নিতে পারছিল না। আমি সেই মলম বের করে দিলাম তাকে। শান্তিতে ঘুমালো তখন। অবাক লেগেছে আল্লাহ্‌র প্ল্যান দেখে। কোথাকার কোন চাইনিজ এর মাধ্যমে আল্লাহ্‌ আমার রুমমেটের জন্য মলম পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।

শুধু তাওয়াফ করার সময় মানুষের ধাক্কাধাক্কি ভালো লাগেনি।হাজরে আসওয়াদ কে ধরার জন্য, কাবা ঘরকে ধরার জন্য আরেকজন মানুষকে কষ্ট দিয়ে, ব্যথা দিয়ে মানুষ কি পুণ্য অর্জন করতে চায় তা আমার জানা নেই। এমন অনেক মানুষকে দেখেছি যাদের ৬/৭ টা বাচ্চা। বাবা-মা তাওয়াফ করে, সায়ি করে, বাচ্চাগুলোও সাথে সাথে থাকে। এক বাবাকে দেখেছি দু মাসের বাচ্চাকে কোলে নিয়ে তাওয়াফ করতে।
বিচিত্র সব মানুষ, বিচিত্র তার জীবন যাপন। শুধু এক আল্লাহ্‌র ডাকে সবাই এক সাথে হয়েছে। জুম্মার নামাযের প্রথম রাকআতে সূরা ফাতেহার পর সবাই একসাথে যখন ‘আমিন’ বলে উঠলো , সে সময়ের সেই শিহরণ আজীবন মনে থাকবে।

হজ্জের ৮ম শিক্ষা– জীবনে কখনো আগে জামাতে নামায পড়িনি। খোলা আকাশের নীচে এত মানুষের ‘আমিন’ বলা শুনে মনে হয়েছিল, মুসলিম উম্মাহ যদি আজ ঐক্য বজায় রাখতো , তাহলে আজ পৃথিবীর বুকে মুসলিমদের এত দুঃখ আর বঞ্চনা থাকতো না। কালো, ফর্সা , ধনী, গরীব, লম্বা, বেঁটে, সুস্থ, অসুস্থ, যুবক, বৃদ্ধ যে যেমনই হোক না কেন, হজ্জের সময় সবাই কিন্তু হাসিখুশি অথবা সামান্য মন মালিন্য হলেও এক থাকার চেষ্টা করেছে। অন্যের ভুলগুলো নিয়ে কেউ বাড়াবাড়ি করেনি। অনেক কিছুই ছাড় দিয়েছে। শুধু হজ্জের সময় না করে সারা বছর যদি এমন মন মানসিকতা আমাদের থাকতো ! এক  কষ্টে কোটি মুসলিম ভাই এগিয়ে আসতো , যেমন করে আল্লাহ্‌র আনুগত্য স্বীকার করে একসাথে আমরা ‘আমিন’ বলেছিলাম।

পর্ব-৭

 

মানবসেবায় আন্তর্জাতিক সম্মাননা পাচ্ছেন তুর্কি ফার্স্টলেডি


নারী সংবাদ


মানব সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য গ্লোবাল ডোনারস ফোরামের সম্মাননা পদক পাচ্ছেন তুরস্কের ফার্স্টলেডি আমিনা এরদোগান। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার লন্ডনে এই পুরস্কারটি গ্রহণ করার কথা তার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো ভিত্তিক সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অব মুসলিম ফিলানথ্রপিস্ট’ দুই বছর পর পর গ্লোবাল ডোনারস ফোরামের আয়োজন করে। এবার এই ফোরামে অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করবেন আমিনা এরদোগান।

দাতব্য কাজে তুর্কি ফার্স্টলেডির অবদান বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে তার ভুমিকা আন্তর্জাতিক মহলে খুবই প্রশংসিত হয়েছে, যার জন্য এই পদক পাচ্ছেন তিনি। ২০১২ সালে প্রাণনাশের হুমকি উপেক্ষা করেও তিনি মিয়ানমার সফর করেন শুধুমাত্র রোহিঙ্গাদের পাশে দাড়ানোর জন্য। সে সময় তিনি রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন নিপীড়নের খবর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখেন। রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠিটির জন্য সেবার হাত বাড়িয়ে দিতে আমিনা এরদোগানই পথপ্রদর্শক।

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু শিবিরে আমিনা এরদোগান(ফাইল ছবি)

এছাড়া গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর তিনি তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের সাথে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু শিবির পরিদর্শন করেন। সেখানে তারা তুর্কি সরকারের পক্ষ থেকে উদ্বাস্তুদের জন্য ব্যাপক ত্রাণ সহায়তা প্রদান করেন। কক্সবাজার থেকে ফিরে গিয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর সিএনএন ইন্টারন্যাশনালে একটি নিবন্ধ লেখেন আমিনা এরদোগান যার শিরোনাম ছিলো, ‘রোহিঙ্গাদের আকুতি উপেক্ষা করতে পারে না মুসলিম বিশ্ব’। এই লেখার মাধ্যেমে তিনি আরো একবার বিশ্ব সম্প্রদায়ের সামনে রোহিঙ্গাদের দুরাবস্থা তুলে ধরেন।

এছাড়া জাতিসঙ্ঘে তুর্কি পার্লামেন্ট মিশনের আয়োজনে ‘উদ্বাস্তুদের প্রতি সংহতি: ভূমধ্যসাগর, আফ্রিকা ও মিয়ানমারে মানবিক সহায়তা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানেও তিনি রোহিঙ্গাদের দুর্দশার বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরেন। এখানেই থেমে থাকেননি তুর্কি ফার্স্টলেডি, বিশ্বনেতাদের স্ত্রীদের কাছে তিনি চিঠি লেখেন রোহিঙ্গাদের প্রতি সদয় হতে।

এছাড়া ২০০৯ সালে ফিলিস্তিন ও গাজা উপত্যকায় আক্রমণের পর মানবিক দুরাবস্থার বিষয়টি নিয়েও কাজ করেন আমিনা এরদোগান। ওই সময় তিনি ইস্তাম্বুলে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেন যার শিরোনাম ছিলো, ‘শান্তির পক্ষে ফিলিস্তিনি নারীরা’। ওই সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বনেতাদের স্ত্রীদের আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং গাজায় ইসরাইলি হামলা বন্ধের দাবি জানানো হয় সম্মেলন থেকে।

তুরস্কের অভ্যন্তরেও আমিনা এরদোগান প্রচুর দাতব্য কাজ করেছেন বিভিন্ন সময়ে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে কাজ করেছেন তিনি। তুরস্কে আশ্রয় নেয়া উদ্বাস্তুদের জন্যও বিভিন্ন দাতব্য রয়েছে তার।

উল্লেখ্য, গ্লোবাল ডোনারস ফোরাম হচ্ছে ‘ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অব মুসলিম ফিলানথ্রপিস্ট’এর একটি দ্বিবার্ষিক উদ্যোগ। বিভিন্ন দেশের দাতা, ব্যবসায়ী, সামাজিক উদ্যোক্তা ও সরকারের প্রতিনিধিরা অংশ নেবে এই ফোরামে। বিশ্বে জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও রাজনৈতিক বিভেদের উর্ধ্বে উঠে অর্থসামাজিক বন্ধন তৈরির এর উদ্দেশ্যে অর্থনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক উপকরণ বৃদ্ধি এর উদ্দেশ্য। গত ৯ সেপ্টেম্বর লন্ডনে শুরু হয়েছে তিন দিন ব্যাপী গ্লোবাল ডোনারস ফোরামের ৮ম দ্বিবার্ষিক সম্মেলন। ব্রিটিশ মিউজিয়াম, হাউজ অব লর্ডস ও ম্যানসন হাউজের মতো জায়গাগুলোতে আলোচনা হবে মানুষের মর্যাদা, বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও মানব কল্যানে অনুদানের বিষয় নিয়ে।

সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

মেয়েকে অপহরণের দায়ে মায়ের জেল


নারী সংবাদ


ব্রিটিশ নারী ইন্ডিয়া ফোর্ড স্বামীর সাথে বিচ্ছেদের পর একজন আমেরিকানকে বিয়ে করেন এবং তার সাথে আলাস্কাতে বসবাসের সিদ্ধান্ত নেন।

সেইসাথে নিজের দুই সন্তানকেও তিনি আলাস্কায় নিয়ে যাবেন বলে ঠিক করেন। কিন্তু সেজন্য তিনি বেছে নেন নিজ সন্তানদের অপহরণের বুদ্ধি।

এরপর ফোর্ড তাদের নিয়ে যায় সিটকাতে। সেটা ২০১৫ সালের অক্টোবরের কথা।

৩৪ বছর বয়সী ওই নারী স্বীকার করেছেন, তিনি তার দুই শিশু সন্তানকে অপহরণ করেছেন এবং তাদের আলাস্কা নিয়ে গেছেন নিজের নতুন সঙ্গীর সাথে বসবাসের জন্য।

কিন্তু এর কিছুই জানতেন না বাচ্চাদের বাবা, তার অনুমতিও নেয়া হয়নি।

ফোর্ডকে এই অপরাধের জন্য তিনবছর ছয়মাসের কারাদণ্ডের সাজা দেয়া হয়েছে।

প্রায় ১০ বছর আগে বাচ্চাদের বাবার সাথে সাক্ষাত হয়েছিল ইন্ডিয়া ফোর্ডের। তাদের ঘরে দুই কন্যা সন্তান হয়। তবে স্বামীর সাথে তার সম্পর্ক ভেঙে যায় ২০১২ সালে।

তখন ডার্টফোর্ডের এক পারিবারিক আদালত রায়ে বলেছিল, বায়োলজিক্যাল বাবা-মাকে এই দুই শিশুর দায়িত্ব পালন করতে হবে।

শুনানিতে আদালত বলে, বাবা-মাকে মেয়েদের একজনের পাসপোর্ট সংরক্ষণ করতে হবে। ফোর্ড তখন দ্বিতীয় সন্তানের পাসপোর্ট ‘হারিয়ে গেছে’ উল্লেখ করে একটি নতুন পাসপোর্ট তোলেন।

তিনি এরপর একজন মার্কিন নাগরিককে বিয়ে করেন এবং পরের বছর শিশুদের আলাস্কা নিয়ে যাওয়া হয় । সেটা ছিল পারিবারিক আদালতের রায় এবং ভরণপোষণ সংক্রান্ত আদেশের লঙ্ঘন।

এরপর বাচ্চাদের বাবা আদালতের দ্বারস্থ হন তার সন্তানদের ফিরে পাওয়ার দাবিতে।

পরবর্তীতে ফোর্ডকে গত এপ্রিল মাসে যুক্তরাজ্যে ফিরিয়ে আনা হয়।

বাচ্চারা এখনো তাদের সৎ বাবার সাথে আলাস্কাতে আছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা

 

“মেঘমাল্য” রূপদাতা ফারিয়া


ফাতেমা শাহরিন


ফারিয়া ইসলাম শশী-University of Liberal Arts Bangladesh থেকে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনায় (Human Resource Management) এমবিএ শেষ করেছেন গত বছর। Summerfield International School এর সাথে যুক্ত আছেন প্রায় দুই বছর। বর্তমানে তার ব্যস্ততা নিজেরই প্রতিষ্ঠিত “মেঘমাল্য”র সাথে।

ছোটবেলা থেকেই দুরন্ত ফারিয়ার মুল আকর্ষণ ছিল দেশীয় সংস্কৃতিতে লালিত গহনা , ছিমছাম হলেও তারা যেন স্বমহিমায় অনিন্দ্য সুন্দর। প্রত্যেকেই যেন নিজে থেকেই গল্প বলে। কিন্তু এমন গহনা মেলা ভার। তাই নিজের জন্য, সবার জন্য  নতুনভাবে কিছু নিয়ে আসা, হারিয়ে যাওয়া সেই হাজার বছরের সংস্কৃতিকে নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরার অদম্য ইচ্ছা থেকেই জন্ম হল “মেঘমাল্য”র ।

ফারিয়ার ভাষ্যমতে,  “প্রায় বছরখানেক আগের কথা শুরুটা ছিল হুট করেই, মূলত চাকরির বাইরে নিজের আলাদা সত্ত্বা বানানোর জন্যই ছিল উদ্যোগটা নেওয়া। গহনা নিয়ে আমার উৎসাহের মূল কারণ ছিল আংটি- নানা ধরণের এন্টিক আংটির প্রতি ছিল আমার আকর্ষণ। সেই থেকে গহনা নিয়ে কাজ করার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠি। নিজের ছোট পুঁজি নিয়ে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্পটা হয়তো সেই থেকেই শুরু। কাউকে না জানিয়েই হুট করে কিনে আনলাম বেশ কিছু গহনা। সেখান থেকেই কিভাবে জানি শুরু হয়ে গেল সবকিছু।”

তবে বর্তমানে তার লক্ষ্য “মেঘমাল্য”কে আরো সম্প্রসারিত করা। এজন্য অতি শীঘ্রই তিনি অলংকার তৈরিতে মন দিচ্ছেন। পাশাপাশি নিজস্ব আউটলেট বানানোর কাজ চলছে।

নারী হিসেবে উদ্যোক্তা হওয়াটাকে কতোটুকু চ্যালেঞ্জিং বলবেন ?

এ প্রসঙ্গে ফারিয়া বলেন , “যেকোনো নতুন কিছু তৈরিতে , স্রোতের বিপরীতে গিয়ে কোন কাজ করা কখনই মসৃণ নয়। তবে এর আনন্দ অতুলনীয়। নিজের ভালোবাসার কাজ করতে পারাটাই এর পারিশ্রমিক। তবে কখনই হাল ছাড়া যাবে না। আপনার সময় আসবেই। আসলে সবকিছুর মূলকথা হচ্ছে ইচ্ছা, পরিশ্রম এবং ভালবাসা। যেকোনো কিছুর মূলে থাকে ইচ্ছাশক্তি। সাথে অবশ্যই আপনার নিজের কাজকে ভালবাসা চাই , আর তারপর চাই এগিয়ে যাওয়ার জন্য একনিষ্ঠ একাগ্রতা ও পরিশ্রম। সফল আপনি হবেনই, সফল আপনিই হবেন। সকলের জন্য “মেঘমাল্য”র পক্ষ থেকে একরাশ শুভকামনা।

ফেসবুক লিংক:

https://m.facebook.com/meghmalya/

“মেঘমাল্য”র কিছু সামগ্রীর ছবি ১:

 

নারীর আকাশে উজ্জ্বল ‘শুকতারা’


তাসলিমা সুলতানা


ছোট থেকেই ভাবতেন ভিন্ন কিছু করার। সেই ভাবনা থেকেই বাবার অনুপ্রেরণায় এগিয়ে চলা। যার পরিচিতি এখন দেশ ছাড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। নারীরাও যে বিশ্ব দরবারে সমান তালে ব্যাট-বল হাতে ক্রিকেটবিশ্ব ‘শাসন’ করতে পারে তা দেখিয়ে দিয়েছেন শুকতারা। তিনি বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের আয়শা রহমান শুকতারা।
স্কুল জীবন থেকেই ভলিবল-হ্যান্ডবলে ছিল তার পারঙ্গমতা। স্কুলেরই এক শিক্ষিকার পরামর্শে হাতে তুলে নেন ব্যাট-বল। পরিবারকে রাজি করানোর ভারও নেন ওই শিক্ষক। তবে বাবারও স্বপ্ন ছিল, যদি বাংলাদেশে কখনো নারী ক্রিকেট দল হয়, তার মেয়ে সেখানে খেলবে। বাবার স্বপ্নের পথেই যেনো পা বাড়ালেন মেয়ে শুকতারা। শুরু হলো ক্রিকেটের পানে ছুটে চলা।
ভাগ্য এতটাই পক্ষে ছিল যে, কিছুদিনের মধ্যেই খুলনা বিভাগে নারী ক্রিকেটার হান্ট শুরু হলো। শুকতারার থেকে যেনো তার বাবাই বেশি রোমাঞ্চিত এই খবরে। ফুটবলার বাবার মেয়ে ক্রিকেটার হবেন, এই স্বপ্ন তিনি সফল হতে দেখছিলেন খোলা চোখেই। নিজেই মেয়েকে নিয়ে গেলেন বাছাই পর্বের জন্য। বাছাই পর্ব পার হয়ে গেলেন খুব সহজেই। জাতীয় দলের পথটা গেল সহজ হয়ে।
বাছাই পর্ব পার হওয়ার পর একটি ওপেন টুর্নামেন্টে অংশ নিলেন শুকতারা। এরপরই এলো জাতীয় দলে খেলার সুযোগ। ভালোবাসা থেকে যে ক্রিকেটের শুরু সেটিই হয়ে গেল শুকতারার পেশা। অন্য কিছু করার আর চিন্তাই আসেনি মাথায়। হয়ে উঠলেন পুরোদস্তুর ক্রিকেটার।
ডানহাতি ব্যাটসম্যান শুকতারা ক্রিকেট খেলাটা বেশ উপভোগ করে চলেছেন। বাংলাদেশ দলের সদস্য হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ে দেশে বিদেশে জয় নিয়ে ঘরে ফিরছেন তিনি।
বললেন, খুলনাকে অনেকেই ক্রিকেটের আঁতুরঘর বলেন। এখানে জন্ম মাশরাফি বিন মর্তুজাসহ বাংলাদেশের আরো অনেক তারকা ক্রিকেটারের। পারিবারিক উৎসাহ ও সামাজিক বাধা না থাকায় নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছি।
২০০৭ সালে জাতীয় দলের হয়ে শুরু করলেও পথ যেনো সামনে এগোচ্ছিলো না। খেলছেন ঠিকই কিন্তু বের হতে পারছিলেন না হারের বৃত্ত থেকে। নারী ক্রিকেট নিয়ে নেই তেমন কোনো আলোচনা, নেই কোনো পরিকল্পনাও। তবু দলের প্রতিটি সদস্যের মতোই হাল ছাড়েননি শুকতারাও।
তার ভাষায়, সবার মনেপ্রাণে বিশ্বাস ছিল, এক দিন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল এমন কিছু করে দেখাবে যেখান থেকে শুধুই আলোই ছড়াবে, অন্ধকার আর ছুঁতে পারবে না তাদের।
আর সেই বিশ্বাস নিয়ে পথ চলার ফসল হিসেবেই যেনো পেয়েছেন এশিয়া কাপের শিরোপা, আয়ারল্যান্ড সিরিজ জয়, বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে হয়েছে সেরা দল । শুকতারা অন্তত এটাই মনে করেন, দলের প্রতিটি সদস্যের অখ- বিশ্বাস, একাগ্রতা ও পরিশ্রমই আজকের নারী দলের সাফল্যের মূলমন্ত্র।
দলের খারাপ সময়টা যেমন দেখেছেন তেমনি দেখছেন ভালো সময়টাও। নিজের জায়গা নড়বড়ে হওয়াটাও দেখেছেন। ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে বাদ পড়েন দল থেকে। সে বছর জায়গা হয়নি বিশ্বকাপ বাছাই পর্বেও। নিজেকে বুঝিয়েছেন। শক্ত থেকেছেন। পরিশ্রম করেছেন। আবারও ফিরেছেন দলে। নিজের দক্ষতা দেখিয়েছেন মারকুটে এই ব্যাটসম্যান।
এখন পাল্টে গেছে অনেক কিছুই। দল ও ক্রিকেটারদের উন্নতির পাশাপাশি নারী ক্রিকেট দলের প্রতি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) চিন্তাধারায়ও এসেছে পরিবর্তন। বেড়েছে সুযোগ-সুবিধা। দেশের ও বিদেশে প্রিয় ক্রিকেটারের নাম জানতে চাইলে যেনো একটু দ্বন্দ্বেই পরে যান শুকতারা।
একটু ভেবে বললেন, ‘আসলে ফলো তেমন কাউকে করা হয় না তবে দেশের মধ্যে তামিম (ইকবাল) ভাইয়ের খেলা ভালো লাগে। দেশের বাইরে শচীন টেন্ডুলকার ও রিকি পন্টিং। দল হিসেবে তেমন কোনো দেশ প্রিয় নেই। আমি আসলে সব দেশের সব ধরনের ক্রিকেট দেখি। সেখান থেকেই অনেক কিছু শেখার চেষ্টা করি।’
মারকুটে এই ব্যাটসম্যান দারুণ একজন ফিল্ডারও। একই সঙ্গে একজন নারী, একজন স্ত্রী। ক্রিকেটার শুকতারার স্বামীও জড়িয়ে আছেন ক্রিকেটেই। বাংলাদেশ ‘এ’ দলের প্রশিক্ষক ইফতেখারুল ইসলাম। দু’জন মানুষ ক্রিকেট নিয়ে এতটাই ব্যস্ত সময় কাটান যে নিজেদের দেওয়ার মতো সময়টা পান না।
তাই ভবিষ্যতে নিজেদের সময় দিতে চান শুকতারা। ক্যারিয়ার শেষে জীবনটা নিজের মতো করে সাজিয়ে নিতে চান এই সফল নারী।
॥ তাসলিমা সুলতানা ॥
ঢাকা, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : ছোট থেকেই ভাবতেন ভিন্ন কিছু করার। সেই ভাবনা থেকেই বাবার অনুপ্রেরণায় এগিয়ে চলা। যার পরিচিতি এখন দেশ ছাড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। নারীরাও যে বিশ্ব দরবারে সমান তালে ব্যাট-বল হাতে ক্রিকেটবিশ্ব ‘শাসন’ করতে পারে তা দেখিয়ে দিয়েছেন শুকতারা। তিনি বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের আয়শা রহমান শুকতারা।
স্কুল জীবন থেকেই ভলিবল-হ্যান্ডবলে ছিল তার পারঙ্গমতা। স্কুলেরই এক শিক্ষিকার পরামর্শে হাতে তুলে নেন ব্যাট-বল। পরিবারকে রাজি করানোর ভারও নেন ওই শিক্ষক। তবে বাবারও স্বপ্ন ছিল, যদি বাংলাদেশে কখনো নারী ক্রিকেট দল হয়, তার মেয়ে সেখানে খেলবে। বাবার স্বপ্নের পথেই যেনো পা বাড়ালেন মেয়ে শুকতারা। শুরু হলো ক্রিকেটের পানে ছুটে চলা।
ভাগ্য এতটাই পক্ষে ছিল যে, কিছুদিনের মধ্যেই খুলনা বিভাগে নারী ক্রিকেটার হান্ট শুরু হলো। শুকতারার থেকে যেনো তার বাবাই বেশি রোমাঞ্চিত এই খবরে। ফুটবলার বাবার মেয়ে ক্রিকেটার হবেন, এই স্বপ্ন তিনি সফল হতে দেখছিলেন খোলা চোখেই। নিজেই মেয়েকে নিয়ে গেলেন বাছাই পর্বের জন্য। বাছাই পর্ব পার হয়ে গেলেন খুব সহজেই। জাতীয় দলের পথটা গেল সহজ হয়ে।
বাছাই পর্ব পার হওয়ার পর একটি ওপেন টুর্নামেন্টে অংশ নিলেন শুকতারা। এরপরই এলো জাতীয় দলে খেলার সুযোগ। ভালোবাসা থেকে যে ক্রিকেটের শুরু সেটিই হয়ে গেল শুকতারার পেশা। অন্য কিছু করার আর চিন্তাই আসেনি মাথায়। হয়ে উঠলেন পুরোদস্তুর ক্রিকেটার।
ডানহাতি ব্যাটসম্যান শুকতারা ক্রিকেট খেলাটা বেশ উপভোগ করে চলেছেন। বাংলাদেশ দলের সদস্য হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ে দেশে বিদেশে জয় নিয়ে ঘরে ফিরছেন তিনি।
বললেন, খুলনাকে অনেকেই ক্রিকেটের আঁতুরঘর বলেন। এখানে জন্ম মাশরাফি বিন মর্তুজাসহ বাংলাদেশের আরো অনেক তারকা ক্রিকেটারের। পারিবারিক উৎসাহ ও সামাজিক বাধা না থাকায় নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছি।
২০০৭ সালে জাতীয় দলের হয়ে শুরু করলেও পথ যেনো সামনে এগোচ্ছিলো না। খেলছেন ঠিকই কিন্তু বের হতে পারছিলেন না হারের বৃত্ত থেকে। নারী ক্রিকেট নিয়ে নেই তেমন কোনো আলোচনা, নেই কোনো পরিকল্পনাও। তবু দলের প্রতিটি সদস্যের মতোই হাল ছাড়েননি শুকতারাও।
তার ভাষায়, সবার মনেপ্রাণে বিশ্বাস ছিল, এক দিন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল এমন কিছু করে দেখাবে যেখান থেকে শুধুই আলোই ছড়াবে, অন্ধকার আর ছুঁতে পারবে না তাদের।
আর সেই বিশ্বাস নিয়ে পথ চলার ফসল হিসেবেই যেনো পেয়েছেন এশিয়া কাপের শিরোপা, আয়ারল্যান্ড সিরিজ জয়, বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে হয়েছে সেরা দল । শুকতারা অন্তত এটাই মনে করেন, দলের প্রতিটি সদস্যের অখ- বিশ্বাস, একাগ্রতা ও পরিশ্রমই আজকের নারী দলের সাফল্যের মূলমন্ত্র।
দলের খারাপ সময়টা যেমন দেখেছেন তেমনি দেখছেন ভালো সময়টাও। নিজের জায়গা নড়বড়ে হওয়াটাও দেখেছেন। ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে বাদ পড়েন দল থেকে। সে বছর জায়গা হয়নি বিশ্বকাপ বাছাই পর্বেও। নিজেকে বুঝিয়েছেন। শক্ত থেকেছেন। পরিশ্রম করেছেন। আবারও ফিরেছেন দলে। নিজের দক্ষতা দেখিয়েছেন মারকুটে এই ব্যাটসম্যান।
এখন পাল্টে গেছে অনেক কিছুই। দল ও ক্রিকেটারদের উন্নতির পাশাপাশি নারী ক্রিকেট দলের প্রতি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) চিন্তাধারায়ও এসেছে পরিবর্তন। বেড়েছে সুযোগ-সুবিধা। দেশের ও বিদেশে প্রিয় ক্রিকেটারের নাম জানতে চাইলে যেনো একটু দ্বন্দ্বেই পরে যান শুকতারা।
একটু ভেবে বললেন, ‘আসলে ফলো তেমন কাউকে করা হয় না তবে দেশের মধ্যে তামিম (ইকবাল) ভাইয়ের খেলা ভালো লাগে। দেশের বাইরে শচীন টেন্ডুলকার ও রিকি পন্টিং। দল হিসেবে তেমন কোনো দেশ প্রিয় নেই। আমি আসলে সব দেশের সব ধরনের ক্রিকেট দেখি। সেখান থেকেই অনেক কিছু শেখার চেষ্টা করি।’
মারকুটে এই ব্যাটসম্যান দারুণ একজন ফিল্ডারও। একই সঙ্গে একজন নারী, একজন স্ত্রী। ক্রিকেটার শুকতারার স্বামীও জড়িয়ে আছেন ক্রিকেটেই। বাংলাদেশ ‘এ’ দলের প্রশিক্ষক ইফতেখারুল ইসলাম। দু’জন মানুষ ক্রিকেট নিয়ে এতটাই ব্যস্ত সময় কাটান যে নিজেদের দেওয়ার মতো সময়টা পান না।
তাই ভবিষ্যতে নিজেদের সময় দিতে চান শুকতারা। ক্যারিয়ার শেষে জীবনটা নিজের মতো করে সাজিয়ে নিতে চান এই সফল নারী। সূত্র: বাসস।

 

পানির বোতল, গ্লাস এবং কিছু উপলব্ধি…


আফরোজা হাসান


গতকাল দুপুরের খাবারটা আমাকে একা একাই খেতে হয়েছিল! একা টেবিলে বসে খেতে ভালো লাগে না তাই খাবারের প্লেট নিয়ে নাকীবের কাছে গিয়ে বসেছিলাম! নাকীব কার্টুন দেখছিল আর জাম্পিং জাম্পিং করছিল! খাবার কিছুটা শুকনো ছিল তাই মুখে দেবার পর একটু পানি পান করে নেবার প্রয়োজন অনুভব করলাম! নাকীবকে বললাম যে, বাবা আম্মুতাকে একটু পানি এনে দাও। টেবিলে থাকা পানির বোতলে অল্প একটুখানি পানি ছিল! নাকীবকে বললাম পানি ভরে আনতে! কিন্তু যেহেতু স্পাইডারম্যান কার্টুন চলছিল! যে কার্টুনের এক মূহুর্তও নাকীব মিস করতে নারাজ! তাই যে বোতল উপুড় করে সবটুকু পানি গ্লাসে ঢাললো! কয়েকবার ঝাঁকিও দিলো বোতলে যাতে পানির শেষ বিন্দুটিও গড়িয়ে গ্লাসে এসে পড়ে! এভাবে সবটুকু পানি গ্লাসে ঢেলে আমার কাছে নিয়ে এসে হাসি দিয়ে বলল, দেখেছো গ্লাস প্রায় ভরে গিয়েছে! পানি বড় বোতলে ছিল তো তাই অনেক কম দেখাচ্ছিলো বুঝলে আম্মুতা! কিন্তু দেখো গ্লাসে ঢালার পর কত বেশি দেখাচ্ছে! কথা শেষ করে আমার হাতে গ্লাস দিয়ে নাকীব আবারো নিজের কাজে ফিরে গেলো! কিন্তু আমি একবার বোতল আরেকবার গ্লাসের দিকে তাকালাম! আমার কাছেও মনেহলো বড় বোতলে থাকার কারণেই আসলে মনেহচ্ছিলো খুবই অল্প পানি! অথচ যখন গ্লাসে ঢালা হলো ঠিকই প্রায় পুরো গ্লাসটি ভরিয়ে দিলো সেই অল্প একটু পানিটুকুই।

অনেকগুলো ভাবনা এসে জড়ো হয়েছিল মনের মাঝে! গত পরশু আমার সাথে সংঘটিত আরেকটি ঘটনা মনে পড়লো। নাকীবকে আনতে যাচ্ছিলাম স্কুল থেকে। পথে ছোট্ট একটা বাচ্চাদের পার্ক আছে। প্রায়ই পার্কটির সামনে একজন বয়স্কা মহিলা বসে থাকেন। রাস্তা দিয়ে চলা প্রতিটি পথিকের দিকে তাকিয়ে মুখের কাছে হাত নিয়ে ঈশারায় বলেন, খাওয়ার জন্য তাকে কিছু দিতে। অন্যের দুঃখে দুঃখী এবং অসহায়কে সাহায্য করতে হবে এই বোধ নাকীবের মনে জাগ্রত করার লক্ষ্যে প্রায়ই ঐ মহিলাকে সাহায্য দেয়াই ওকে দিয়ে। তখন দান-সাদাকা বিষয়েও বুঝিয়ে বলি! যাকাতের ব্যাপারে বোঝাতে গিয়ে বলেছিলাম যে, পাঁচ ইউরো আমাদের কাছে হয়তো তেমন একটা ম্যাটার না! কাউকে দিতেও তেমন কষ্ট হয় না যেহেতু আল্লাহ রহমতে আমাদের কাছে আরেকটু বেশি অর্থ আছে! কিন্তু যার কাছে একটি ইউরোও নেই সে এই পাঁচ ইউরো দিয়েই অনেক কিছু করে ফেলতে পারবে ইনশাআল্লাহ! এইজন্যই আল্লাহ যাদের অর্থ আছেন তাদেরকে একদমই অর্থহীন যারা তাদেরকে সাহায্য করতে বলেছেন! যাইহোক, আমাদের বাসা থেকে নাকীবের স্কুলে যাওয়ার পথটুকু বেশ ঢালু। যাবার সময় নীচের দিকে নামতে অনেক সহজ কিন্তু ফেরার পথে উপরের দিকে উঠতে বেশ কষ্ট। গত পরশু আমার শরীরটা সামান্য অসুস্থ্য ছিল। ফেরার পথে তাই বাসে আসার ইচ্ছে ছিল। তাই যাবার পথে সেই মহিলাটি যখন সাহায্য চাইলেন নাকীবকে দিয়ে সাহায্য দেয়ানো সম্ভব হবে না ভেবে আমিই দিতে গেলাম। কিন্তু পার্স খুলে দেখি টাকা না নিয়েই বেড়িয়ে পড়েছি! আর খুচরা পয়সা যা আছে সব মিলিয়ে এক ইউরো পুরো হতেও কয়েক সেন্থ কম। মহিলার দিকে তাকিয়ে, ‘সরি আপনাকে পরে দেব’ বলে পা বাড়াতে যাচ্ছিলাম উনি তখন বলল, তোমার কাছে যা আছে তাই আমাকে দাও।

খুব সংকোচ হচ্ছিলো এত কম সাহায্য দিতে। কিন্তু আবার নাও বলতে পারলাম না। উনাকে তখন পার্স থেকে সবগুলা খুচরা পয়সা বের করে দিলাম। মহিলার চোখে মুখের সেই আনন্দের কথা কোন বাক্যে প্রকাশ করবো বুঝতে পারছি না। কোন কিছু পেয়ে হারিয়ে ফেলার পর, আবারো ফিরে পাবার আনন্দ বোধকরি এমনই হয়। ফেরার পথে বাসের জানালা দিয়ে দেখলাম মহিলাটি বসে রুটি খাচ্ছেন। উনার মুখের কাছে হাত নিয়ে ক্ষুধার অনুভূতি প্রকাশের কথাটি মনে পড়ে গেলো। মনে পড়লো পঞ্চাশ সেন্থ দিয়ে নরম্যল মানের একটি রুটি কিনতে পাওয়া যায়, সত্তর সেন্থ দিয়ে অনেক মজার ডোনাট কেনা সম্ভব, চল্লিশ সেন্থ দিয়ে ছোট এক বোতল জ্যুস পাওয়া যায়। এমন আরো কিছু খাবার আছে যা খুব সহজেই কিনে খাওয়া সম্ভব ঐ পয়সা দিয়ে যা দিতে আমি লজ্জিত ও সংকোচ বোধ করছিলাম। সেদিন সারাটা দিনই আমার মাথায় এই চিন্তাটা ঘুরপাক খেয়েছে যে, কেন আমি একদম কিছু না দেবার চেয়ে কিছু অন্তত দেয়া থেকে বিরত থাকতে চেয়েছিলাম?! আমাদেরকে ছোটবেলা থেকে শেখানো হয়েছে দানের পরিমাণ কোন ম্যাটার না। তোমার কাছে যা বিন্দু একজন অসহায়ের কাছে সেটাই হয়তো সিন্ধু হয়ে ধরা দেবে! অথচ তারপরও কেন আমি সংকোচ করেছিলাম এই ভাবনাটা খোঁচাতে লাগলো থেকে থেকে! “অল্প দান করতে লজ্জাবোধ করো না! কেননা বিমুখ করা অপেক্ষায় অল্প দান অনেক ভালো!” আমার সবচেয়ে প্রিয় বাণীর মধ্যে তো হযরত আলী(রা)বলা এই বাণীটাও আছে। তাহলে কেন এই অনুভূতিটা ভোঁতা হয়ে গিয়েছিল আমার?!

সব মিলিয়ে একসময় মনেহলো দান-সাদাকা বিষয়ে অনেকদিন কোন আলোচনা শোনা হয়নি, নিজেরও করা হয়নি! বেশ কিছুদিন এই বিষয়ে কোন চর্চা হয়নি বলেই কি তবে অল্প কিছু দান করতে আমি লজ্জিত বোধ করেছিলাম?! একটা গল্পের কথা মনে পড়লো তখন। এক যুবক ইসলামী আলোচনার মজলিসে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল ঘুরে ফিরে রোজ প্রায় একই ধরণের কথা শুনতে হয় সেজন্য। সেই মজলিস যিনি পরিচালনা করতেন তিনি একদিন যুবকের বাড়ি এলেন। কেন মজলিসে যায় না সেটা শোনার পর উনি মুখে কিছুই বললেন না। শুধু চলে যাওয়ার সময় ফায়ার প্লেস থেকে একটা কয়লার টুকরো লাঠি দিয়ে বের করে আনলেন। কিছুক্ষণ জ্বলে থাকলো ঠিকই কিন্তু এরপর ধীরে ধীরে কয়লার টুকরোটি উত্তাপহীন হয়ে গেলো। যুবকও উপলব্ধি করলো সে কি ভুল করতে বসেছিল। ইসলামি মজলিস থেকে দূরে থাকার ফলে তার ঈমানের দীপ্ততাও তো এমনি করে মিলিয়ে যেত এক সময়! অথচ নিয়মিত মজলিসে গেলে ঈমানের উজ্জ্বলতা হ্রাস পাবার সম্ভাবনা কম এবং বৃদ্ধি পাওয়াটাই স্বাভাবিক! আমি নিজেও আবারো উপলব্ধি করলাম যে, শরীয়তের বিষয়সমূহকে যত বেশি চর্চা করা হয় ব্যবহারিক জ্ঞান ততই শানিত থাকে। কর্মের আগে নিয়্যাত নির্ধারণ হয়ে যায়, নিয়্যাতে খুলুসিয়াত বৃদ্ধি পায়। অন্তরও অনেক বেশি তৃপ্ত ও প্রফুল্ল থাকে।

ভেবে দেখলাম ঐ মহিলাকে দান করার মূল উদ্দেশ্যেটা আসলে নাকীবকে দান করে দেখানো ও শেখানোতেই পরিণত হয়ে গিয়েছিল আমার কাছে! একজন অসহায় মানুষকে আমি সাহায্য করতে পারছি! এই যে ক্ষমতাটা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাকে দিয়েছেন সেজন্য শুকরিয়া আদায় করার কথা তাই স্মরণে আসেনি আমার! ঐ মহিলার জায়গায় আজ আমিও থাকতে পারতাম! এই উপলব্ধি থেকে কৃতজ্ঞ হতেও ভুলে গিয়েছিলাম! শুধু ভাবছি আমার এই অকৃতজ্ঞ দান থেকে কি সত্যিই আমার ছেলে কোন শিক্ষা নিতে পেরেছে গত দুই মাসে?! আমলের প্রতিদান দেয়া হবে নিয়্যাতের ভিত্তিতে! আমার নিয়্যাত কি ছিল? যতই ভাবছি, নিজেকে বিবেকের আয়নায় দেখার চেষ্টা করছি, ততই লজ্জিত বোধ করছি! কাজের পেছনে আসলে নিয়্যাতটা কি সেটা চিন্তা করতে অনেক সময় আমরা ভুলেই যাই। অভ্যাস বশত, বা করতে হবে তাই করে ফেলি। এরফলে হয়তো আমাদের অনেক ভালো কাজ প্রকৃত এবং কাঙ্ক্ষিত সুফল বয়ে আনতে ব্যর্থ হয় আমাদের জন্য। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদের হৃদয়ে লুকায়িত আমলের ভিত্তিতে আমাদেরকে পুরষ্কৃত করবেন! কোন কাজ করার আগে তাই পুনঃপুন নিয়্যাত বিবেচনা করে দেখা উচিত আমাদের। কেননা নিয়্যাতের স্বচ্ছতার অভাবে আমাদের অনেক কল্যাণমূলক কাজ হয়তো বিফলে চলে যাবে! রবের কাছে তাই আজ আকূল হয়ে প্রার্থনা করছি, প্রবাহমান দীনতার স্রোতে অন্তরের আলো মোর নিভু নিভু, তাওফীক দিও নিয়্যাতের খুলুসিয়াত অর্জনে হে দয়াময়, পরম করুণাময় প্রভু……..।

 

বালিয়াকান্দিতে গৃহবধূকে অপহরণের পর গণধর্ষণ


নারী সংবাদ


কিস্তির টাকা উত্তোলন করে বাড়ি ফেরার পথে এক গৃহবধূকে অপহরণ করে মাইক্রোবাসে তুলে ঢাকায় নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার রাতে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি থানায় ধর্ষণ ও সহায়তা করার অভিযোগে চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।
বালিয়াকান্দি থানার এসআই হাবিবুর রহমান জানান, ওই গৃহবধূ গত ৯ আগস্ট উপজেলার নারুয়া বাজার ব্র্যাক অফিস থেকে কিস্তির ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করে তেকাঠি গ্রামের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় তেকাঠি জামে মসজিদের সামনে পৌঁছলে কিছু দুর্বৃত্ত তাকে জোরপূর্বক সাদা রঙের মাইক্রোবাসে তুলে অপহরণ করে ঢাকায় নিয়ে যায়। ঢাকায় নিয়ে তাকে ঘরের মধ্যে আটকে রেখে সিরাজ মণ্ডল ও আরো দুইজন অজ্ঞাত ব্যক্তি তাকে ধর্ষণ করে। দুই দিন আটকে রেখে ধর্ষণের ফলে গৃহবধূ অসুস্থ হয়ে পড়েন। গত ১১ আগস্ট রাত ৯টার দিকে তাকে মোক্তার হোসেনের বাড়িতে আনলে তার অভিভাবকেরা খোঁজা পেয়ে সেখান থেকে উদ্ধার করেন। এ ব্যাপারে ওই গৃহবধূ বাদি হয়ে গত ১৪ আগস্ট রাজবাড়ী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে উপজেলা খালিয়া মধুপুর গ্রামের তায়জাল মণ্ডলের ছেলে সিরাজ মণ্ডল, সেকেন মণ্ডলের ছেলে মোস্তফা মণ্ডল, তায়জাল মোল্যার ছেলে ইউনুছ মোল্যা, বড়হিজলী গ্রামের মৃত সামাদ মোল্যার ছেলে মোক্তার হোসেনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বিচারক বালিয়াকান্দি থানার ওসিকে রেকর্ড করার নির্দেশ দেন। বৃহস্পতিবার রাতে মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। সূত্র: নয়াদিগন্ত।

 

ডিমভাজির নানান রেসিপি


 ঘরকন্যা


স্প্যানিশ অমলেট

উপকরণঃ
» ১ টি চিকেন সসেজ টুকরো করে কাটা
» ১টেবিল চামচ জলপাইয়ের তেল
» ১/২ চা চামচ পাপরিকা
» মোজারেল্লা চীজ হাফ কাপ
» ১ টি বড় পেঁয়াজ পাতলা করে কাটা
» ২ টি রসুন কুঁচি করে কাটা
» ১টি ক্যাপসিকাম স্লাইস করে কাটা
» ১ টি টমেটো স্লাইস করে কাটা
» ৬ টি ডিম
» ১/২ কাপ পানি

প্রস্তুত প্রণালীঃ
মাঝারি তাপে প্রথমে একটি নন স্টিক ফ্রাই প্যান গরম করে নিতে হবে। চিকেন সসেজটি বাদামী রঙ না হওয়া পর্যন্ত ভাজতে হবে। ভাজা হয়ে গেলে সসেজ উঠিয়ে রেখে প্যানে তেল দিয়ে পেঁয়াজ, রসুন ও ক্যাপসিকাম ভেজে উঠিয়ে রাখতে হবে। একটি বাটিতে ডিম ফেটে নিয়ে তাতে পানি, লবণ, মরিচ,টমেটো ও পাপরিকা মিক্স করে নিতে হবে। প্যানে তেল গরম করে দিয়ে ডিমের মিক্সার ঢেলে দিতে হবে।এর উপর সসেজের টুকরাগুলো ও চীজ দিয়ে ভাজুন। ভাজা হলে পেঁয়াজ, রসুন ও ক্যাপসিকাম উপরে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

ডিম-টমেটো পাকোড়া

উাপকরণঃ
» বড় টমেটো ২টি।
» চালের গুঁড়া ১ কাপ।
» কাঁচামরিচ ৩টি।
» ডিম ২টি।
» পেঁয়াজ বড় ১টি।
» ধনেপাতা-কুচি আধা আটি।
» অল্প হলুদ।
» বেকিং পাউডার আধা চা-চামচ।
» তেল ও লবণ পরিমাণমতো।

পদ্ধতিঃ
টমেটো ও পেঁয়াজ কুচি করে এতে ২টি ডিম ফেটিয়ে মেশান। চালের গুঁড়া ও ধনেপাতাও এই মিশ্রণে মেশান। হলুদ, লবণ ও বেকিং পাউডার দিন। কড়াইতে তেল গরম করে হাতায় করে গোলা তুলে লাল করে ভেজে নিন। এরপর সসের সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করুন।

 

জিডিপিতে নারীর অবদান বিস্ময়করভাবে বাড়ছে


নারী সংবাদ


নারীদের সম্পর্কে কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর কবিতায় লিখেছেন ‘বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর,/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ তাঁর কবিতার এই মর্মবাণী শতভাগ সত্যি প্রমাণ হলো বাংলাদেশের নারীদের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে। নারীরা শুধু সংসারে পারঙ্গম নয়,ঘরে-বাইরে সব খানে তাদের দৃপ্ত ও সাহসী পদচারণায় সমৃদ্ধ হচ্ছে পরিবার,সামাজরাষ্ট্র,সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনীতির গবেষণায়ও এর প্রতিফলন দেখা যায়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতির মূলধারার কর্মক্ষেত্র গুলোতে নারীর অবদান বেড়েই চলেছে। সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ি ১ কোটি ৬৮ লাখ নারী কৃষি, শিল্প ও সেবা অর্থনীতির বৃহত্তর এই তিন খাতে কাজ করছেন। অর্থনীতিতে নারীর আরেকটি বড় সাফল্য হলো, দেশের সামগ্রীক উৎপাদন ব্যবস্থায় নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ বেড়েছে। বর্তমানে জিডিপিতে নারীর অবদান ২০ শতাংশের কিছুটা বেশী। কিন্তু বাস্তবে প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নারীর অবদান স্বীকার করলে এই হার দাঁড়ায় ৪০ শতাংশের উর্ধ্বে।
অর্থনীতির অন্যতম রপ্তানীমুখী পোষাক খাতের মোট কর্মীর প্রায় অর্ধেকই এখন নারী। এ খাতে ৫০ লাখ ১৫ হাজার নারী-পুরুষ কাজ করেছেন। তাঁদের মধ্যে নারী ২২ লাখ ১৭ হাজার। তাছাড়া, কৃষি, হাস-মুরগি, মৎস্য খামার, হস্তশিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তা, আটি সংশ্লিষ্ট খাতে আউট সোর্সিংসহ যাবতীয় কাজে সম্পৃক্ত নারীরা নীরবে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। বাকিদের মধ্যে কেউ উদ্যোক্তা, কেউ চিকিৎসক, কেউ প্রশাসনে, প্রকৌশলী, কেউ শিক্ষক, কেউ বৈমানিক, কেউ পুলিশ, কেউ সৈনিক হিসেবে বিভিন্ন স্তরে কর্মরত আছেন।
বর্তমানে কৃষি খাতে নিয়োজিত আছেন ৯০ লাখ ১১ হাজার নারী। এ ছাড়া শিল্প ও সেবা খাতে কাজ করেন যথাক্রমে ৪০ লাখ ৯০ হাজার এবং ৩৭ লাখ নারী। দেশের কলকারখানায় পুরুষের চেয়ে এক লাখ বেশি নারী শ্রমিক কাজ করেন। চলতি বছরের হিসেব অনুযায়ি কারখানায় ২১ লাখ ১ হাজার ৮৩০ জন নারী শ্রমিক রয়েছেন আর পুরুষ শ্রমিকের সংখ্যা ১৯ লাখ ৯৫ হাজার ৫৫৭ জন। গত এক যুগে বাংলাদেশে কৃষির নারীকরণ হয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনার মতোই দেশের কৃষি খাতের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এখন নারীরা। বিবিএসের তথ্য হলো গত ১০ বছরে কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে ১০৮ শতাংশ। আর পুরুষের অংশগ্রহণ কমেছে দুই শতাংশ। খাদ্যনীতি বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ২০১৫ সালের একটি জরিপে দেখা গেছে, দেশের ৯০ শতাংশ বাড়িতে মুরগি পালন নিয়ন্ত্রণ করেন নারী। ছাগল ও গরু পালনে নারীদের নিয়ন্ত্রণ ৫৫ শতাংশ।
রপ্তানিমুখী শিল্পে নারী শ্রমিকের চাহিদা ও অংশগ্রহণ সর্বাধিক। তৈরি পোশাক শিল্প, হিমায়িত চিংড়ি, চামড়া, হস্ত শিল্পজাত দ্রব্য, চা ও তামাক শিল্পসহ অন্যান্য পণ্য। মোট রপ্তানি আয়ের ৭৫ ভাগ অর্জনকারী শিল্পের মূল চালিকাশক্তিই হচ্ছে নারী। পোশাকশিল্পের সঙ্গে জড়িত চার মিলিয়ন বা ৪০ লাখ কর্মীর মধ্যে ৮০ ভাগই নারী। মোট শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ ছিল ১৯৯৫-৯৬ সালে ১৫.৮ শতাংশ, ২০০২-০৩ সালে ২৬.১ শতাংশ, ২০০৫-০৬ সালে ২৯.২ শতাংশ এবং ২০১১-১২ সালে ৩৯.১ শতাংশ।
সিপিডির প্রতিবেদনে বলা হয়, গৃহস্থালিতে নারীর যে কাজ জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত হয় না সেই শ্রমের প্রাক্কলিত বার্ষিক মূল্য (২০১৩-১৪ অর্থবছর) জিডিপির ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশ। অবশ্য গৃহস্থালি কাজে দেশের নারীরা বছরে ১৬ হাজার ৬৪১ কোটি ঘণ্টা সময় ব্যয় করছেন, যার আর্থিক মূল্যমান দুই লাখ ৪৯ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা। জিডিপিতে এই আর্থিক মূল্য যোগ হলে নারীর হিস্যা বর্তমানের ২০ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ৪৮ শতাংশ। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও পিছিয়ে নেই বাংলাদেশের নারীরা। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রক সংস্থার সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২০১০ সালের জুনে এ দেশে ক্ষুদ্রঋণের গ্রাহকের সংখ্যা ছিল দুই কোটি ৫২ লাখ ৮০ হাজার। এর ৯০ শতাংশই নারী গ্রাহক। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, দেশের মোট ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের ৩৫ শতাংশই নারী উদ্যোক্তা। ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৮৬০ মিলিয়ন ডলার ৫৭ হাজার ৭২২ জন নারীকে ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে। এতে তারা গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ৯৭ থেকে ৯৯ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাই ব্যাংক থেকে জামানতবিহীন ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করেন। এটি একটি বিরাট সাফল্য।
নারী শ্রমশক্তির ৬৮ শতাংশই কৃষি উৎপাদন থেকে বিপণন পর্যন্ত বিভিন্ন কাজের সঙ্গে জড়িত। দেশের কৃষি আর গৃহে নারীরা দৈনন্দিন যে কাজ করে তার অবদান অসামান্য হলে এর স্বীকৃতি নেই। জিডিপিতেও এই অবদান উল্লেখ করা হয়না। নারীদের এই দুই খাতের অবদানকে স্বীকার করে নিলে দেশের সামগ্রীক উন্নয়নে, অর্থনীতিতে নারীর অবদান আরো উচ্চস্থানে যাবে। সেই হিসেবে জিডিপিতে নারীর আর্থিক অবদান ২০% হলেও বাস্তবে এই পরিমাণ আরো বেড়ে যাবে। সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো নারীদের অবদানকে স্বীকার করে নিয়ে সমাজ বিনির্মাণ ও জাতির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে তাদের আরো বেশী অংশগ্রহণ এবং সম্পৃক্তায় এগিয়ে যাবে উন্নত সম্বৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সেই প্রত্যাশা থাকলো।
সুত্র: বাসস: ঢাকা, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮।

 

আকর্ষণীয় মানুষ হবেন কিভাবে


মেইক ইউরসেলফ


পৃথিবীর সব মানুষই আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে চান। আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠার আকাঙ্ক্ষা সবারই থাকে।
এক ঘেয়ে হবেন না। নিজেকে আকর্ষণীয় করে তোলার খুব সহজ এই কাজগুলো কাজ করবে অবশ্যই।

আসুন তাহলে জেনে নেয়া যাক,

ভাল শ্রোতা

একজন ভলো শ্রোতা সমস্যা সমাধানে অতুলনীয় ক্ষমতার অধিকারী হন। চমৎকার ব্যক্তিত্বের অধিকারী হন। ভালো শ্রোতা সহজেই অন্যের সঙ্গে বন্ধুত্ব তৈরি করতে পারেন। ভালো শ্রোতাকে সবাই পছন্দ করে। অজানা অনেক কিছু জানা যায়। অনেক ধৈর্যশীল হন।

অন্যদের বিষয় আগ্রহ

পারস্পারিক পরিচর্যার জন্য উত্তম প্রস্তুতির জন্য অন্যদের প্রতি আমাদের ব্যক্তিগত আগ্রহ দেখানো। যখন আমরা উত্তমভাবে প্রস্তুতি নিই, তখন আমরা আমাদের উপস্থাপনা নিয়ে কম চিন্তা করে থাকি আর এর ফলে গৃহকর্তার প্রতি আমরা বেশি মনোযোগ দিতে পারি। তখন অন্যের আচরণ এর প্রতি আগ্রহ দেখানো উচিত।

বই পড়ুন

আপনি যদি বই পড়ার ভক্ত হন তাহলে যত বই পড়বেন ততই আরও পড়ার ইচ্ছে জাগবে। আর এ অতৃপ্তি থেকেই আপনার বই পড়ার আগ্রহ বাড়তে থাকবে। এতে যেমন জ্ঞানার্জন হবে তেমন আপনি অনাবিল আনন্দও লাভ করবেন।

পরিচ্ছন্ন রাখুন

মানুষকে আকর্ষণ করার অন্যতম একটি উপায় হলো পরিচ্ছন্ন থাকা। নিজেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করা। সব সময় সুন্দর হালকা কোনো সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারেন। পোশাক পরিচ্ছদেও রাখুন পরিচ্ছন্নতার ছোঁয়া।

সূত্র:Health knowledge

 

পাবলিক টয়লেট সমস্যা নারীদের


মৌসুমী ইসমাত আরা (নারী সংবাদ)


স্কুলগুলোতে এসএসসি পরীক্ষা চলছে। স্কুলের চারপাশে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এ রকমই একটি স্কুলের কাছাকাছি রাস্তার পাশে বসে আছেন মায়েরা। কেউ কেউ খবরের কাগজ, আবার কেউ কেউ বিছানার চাদর নিয়ে এসেছেন সাথে, তা বিছিয়ে বসেছেন। এখন ঘর থেকে বাইরে বের হলেই পানির বোতল, ছাতা আর নাস্তার বক্স মহিলাদের অনুষঙ্গ। অনেকে আবার একটু ছায়ার আশায় কাছাকাছি আবাসিক এলাকার বহুতল ভবনগুলোর ফটকের পাশে গিয়ে বসেছেন। তিন ঘন্টার পরীক্ষা। আসতে হয়েছে হাতে একটু সময় নিয়েই। যানজট এখানে নিত্যনৈমিত্তিক, তাই পরীক্ষার সময় কোন অভিভাবকই ঝুঁকি নিয়ে চান না। তাই বাসা থেকে একটু আগেই বের হতে হয়। আবার পরীক্ষা শেষে ছাত্র-ছাত্রীদের হল থেকে বের হতেও আধ ঘন্টা সময় লেগে যায়। তারপর বাড়ি ফেরা। সবমিলিয়ে ৬/৭ ঘন্টার ধাক্কা। এই পুরোটা সময় বাথরুমে না গিয়ে থাকাটা একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার। অপেক্ষমান মায়েদের অনেকেই রীতিমত বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এটি স্কুলগুলোর সামনে অপেক্ষমাণ নারীদের টয়লেট সমস্যার নৈমিত্তিক চিত্র।
এটি কেবল সমস্যাই না একই সঙ্গে বিড়ম্বনাও। তাহলে এখানে স্কুল কর্তৃপক্ষ এসব দেখেও দেখেন না। আর পাবলিক টয়লেট তো আশেপাশে নেই বললেই চলে।
পাবলিক টয়লেটের সমস্যাটি কোনভাবেই নতুন নয়, অনেক পুরনো একটি বিষয়। ২০১৭ সালের এক সমীক্ষায় জানা যায়, ঢাকায় ৫০ লাখ পথচারীর জন্য টয়লেট আছে মাত্র ৪৭টি। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যবহারের অযোগ্য। কতগুলো আবার বন্ধ থাকে। যেগুলো চালু আছে সেগুলোতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বলতে কিছু নেই। প্রায় পৌনে দুই কোটি ঢাকাবাসীর মধ্যে প্রায় অর্ধেক নারী হলেও তাদের জন্য পৃথক কোনো টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। টয়লেটের অভাবে ঢাকার অলিতে-গলিতে মানুষ প্র¯্রাব পায়খানা করে থাকে। এতে করে পরিবেশের মারাত্মক দূষণ হচ্ছে। টয়লেট নিয়ে ভুক্তভোগীদের অভিযোগের শেষ নেই।
ডিএসসিসির একজন কর্মকর্তা জানান, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে উন্নতমানের বেশ কয়েকটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণের কাজ চলছে। এর মধ্যে কয়েকটি চালুও হয়ে গেছে। বাকিগুলোর কাজ শেষ হলে টয়লেট সমস্যার অনেকটাই সমাধান হয়ে যাবে।
অনেক হোটেল-রেস্তোরাঁয় বাথরুমের ব্যবস্থা থাকে না। আবার মহিলাদের পক্ষে সবসময় দূরে দূরে যাওয়াও সম্ভব নয়। ছয়-সাত ঘন্টা সময় কিন্তু বেশ দীর্ঘ একটি সময়। অভিভাবকরা কেউই নিশ্চিন্তে কোথাও বসতে পারেন না। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দীর্ঘসময় টয়লেটে না গেলে রোগ সংক্রমণ হতে পারে এবং ইউরিন ইনফেকশন ও কিডনি রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। মহিলাদের অনেককেই বয়স অথবা শারীরিক সমস্যার কারণে পড়তে হয় অস্বস্তি আর লজ্জার মুখে। তাই অনেক সময় অনেক নারীকে ভবন মালিকদের কাছে অনুনয়-বিনয় করতে হয় তাদের ওয়াশরুম ব্যবহারের জন্য।
অনেক বয়স্ক মহিলা অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে ডায়াপার ব্যবহার করে। কিন্তু এই সমস্যা হাতে গোণা। ডায়াপার সহজলভ্য পণ্য নয় সবার জন্য, আবার এ দেশের মহিলারা এটি ব্যবহারে একেবারেই অভ্যস্ত নয়। শয্যাশায়ী রোগীরা অনেকেই এখন ডায়াপার ব্যবহারে কিছুটা অভ্যস্ত হয়েছেন। কিন্তু অবশ্যই ডায়াপার পাবলিক টয়লেটের কোন বিকল্প নয়। পরিচ্ছন্নতার জন্য পানির ব্যবহার এ দেশের অরিহার্য ।
যেখানে গণসমাবেশের প্রয়োজন থাকে, সেসব স্থানে, বিশেষ করে মহিলাদের জন্য পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা করা জরুরি।
ফার্মগেটে এক বিকেলে ঘরমুখী মানুষের প্রচন্ড ভিড়। বাসগুলোও থামার কোন চেষ্টা না করেই শাঁ করে ছুটে চলে যাচ্ছে গন্তব্যের দিকে। একটি দুটি লেগুনা যাত্রী নিয়ে আসছে, কিন্তু ভেতর থেকে যাত্রীরা ফার্মগেটে নামার আগেই তাতে লাফিয়ে উঠে পড়ছে। ভিড়ের মধ্যে বিভিন্ন বাসের মহিলা যাত্রীও অনেক। নিরূপায় হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। অনেকেই এক ঘন্টার বেশি সময় ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। এর মধ্যে একজন বয়স্ক নারীকে একটু এগিয়ে গিয়ে ইন্দিরা রোডের এক ভবনের দারোয়ানকে অনুরোধ করলেন তাকে একটু ওয়াশরুম ব্যবহারের অনুমতি দিতে। দারোয়ান টেলিফোনে কারো অনুমতি নিয়ে মহিলাকে তাদের জন্য নির্দিষ্ট বাথরুমে নিয়ে গেলেন। দেখাদেখি আরো কয়েকজন মহিলাও এই সুযোগটুকু নিলেন। অপরিচিত কাউকে সবসময় অনুমতি দেয়া সম্ভব হয় না বাড়ির দারোয়ানের পক্ষে। সে ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যার সমাধান হতে পারে এসব জায়গায় যথোপোযুক্ত পাবলিক টয়লেট স্থাপন।
পহেলা ফাল্গুনের উৎসব অথবা পহেলা বৈশাখের বিশাল আয়োজন হাজার হাজার মানুষ খোলা জায়গায় অংশ নেন। সেখানেও নারী ও শিশুদের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। এমন অনেকেই আছেন, যাদের বয়স একটু বেশির দিকে, ডায়াবেটিসের সমস্যা আছে এবং এসব উৎসবে গাড়ি অনেক দূরে রেখে অনেকখানি পথ হেঁটে যেতে হয় অনুষ্ঠানস্থলে। এসব কারণে তারা এখন ইচ্ছে থাকলেও উৎসবে অংশ নিতে পারেন না। এ সমস্যা সমাধানে সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও এসব বিনোদোনে অংশ নিতে চান না। সমস্যাগুলোর সাথে মানসম্মানের বিষয়টিও জড়িত। সেখানে আয়োজকরা ওপেন প্রোগ্রামের ব্যবস্থা করেন, সেখানে অবশ্যই পাবলিক টয়লেট বড় একটা চোখে পড়ে না।
কিছুদিন আগে রাজধানীর একটি রাজনৈতিক সমাবেশে দূর থেকে আসা নারী কর্মীদের এই বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হয়। সমাবেশস্থলের কাছে বেশ কয়েকটি মোবাইল টয়লেট ছিল। কিন্তু এই মোবাইল টয়লেটগুলোর ব্যবস্থাপনা ভালো ছিলো না। চার চাকার বিকশা ভ্যানের ওপরে স্থাপিত মোবাইল টয়লেটগুলোর উচ্চতা একটি বড় রকমের ঝামেলার বিষয় এবং সেখানে ওঠার জন্য ছিল একটি উঁচু প্লাস্টিকের টুল। টুলে পা রেখে সরাসরি ঢুকে পড়তে হয় টয়লেটের ভেতরে। পুরো বিষয়টি অস্বস্তিকর।
গুলিস্তানে এবং ফার্মগেটে স্থায়ী টয়লেট রয়েছে কিন্তু সবাই এগুলোর খবর জানেন না। আরো বেশ কয়েকটি জায়গায় স্থায়ী ওয়াশরুম থাকলেও সেগুলো ব্যবহার উপযোগী নয়। কোনটার দরজা-জানালা সব ভাঙ্গা, কোনটায় পানির ব্যবস্থা নেই, কোনটায় আবর্জনা স্তূপ হয়ে আছে। স্থায়ী ওয়াশরুমগুলোতে জায়গা করে নিয়েছে ছিন্নমূল ভবঘুরে মানুষ আর নেশাখোরদের একটি দল। মহিলাদের অনেকেই, বিশেষ করে যারা জানেন, সেখানে বাথরুম আছে, তারা নেশাখোরদের উপদ্রবের ভয়ে যেতে চান না।
এসব সমস্যার ভালো সমাধান হচ্ছে নাÑ এটা দুর্ভাগ্যজনক। মোবাইল টয়লেটগুলো কেমন হলে তা সবাই ব্যবহার করতে পারবেন এবং স্থায়ী টয়লেটের সংখ্যা আরো বাড়ানো ও এগুলোর সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যক্তিপর্যায়ে আগ্রহীদের দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। এতে করে সর্বস্তরের মানুষের বিশেষ করে নারী ও শিশুদের দুর্ভোগ কমবে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যেমন মোবাইল টয়লেট থাকতে পারে, সেভাবে জেলা শহরগুলোতেও একই ব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারে। রেলস্টেশনে ও বাস স্ট্যান্ডগুলোর টয়ালেটগুলোকে পরিচ্ছন্ন ও ব্যববহার উপযোগী রাখার জন্য প্রয়োজন কেবল একটু সজাগ দৃষ্টি।
এসব টয়লেট যাতে প্রয়োজনে ছিণœমূল মানুষও ব্যবহার করতে পারেন, সেজন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকতে পারে। টয়লেট ব্যবহারের বিনিময়ে অর্থের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। যারা মোবাইল টয়লেট চালুর উদ্যোগ নেবেন বা নিচ্ছেন, তারা যেন অতিরিক্ত অর্থ আদায় না করেন তার সুষ্ঠু তত্ত্বাবধান থাকতে হবে। আর এতে করেই গড়ে উঠতে পারে একটি পরিচ্ছন্ন এলাকা, পরিচ্ছন্ন দেশ।
পাবলিক টয়লেট পরিচ্ছন্ন ও তাতে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা থাকলে তা একদিকে যেমন সুস্থ জীবনের নিশ্চয়তা দেবে, অন্যদিকে পবিত্রতাও নিশ্চিত হবে। সর্বোপরি মা-বোনেরা রেহাই পাবেন অবশ্যম্ভাবী বিড়ম্বনার হাত থেকে। তাই সুস্থ নাগরিকের সুস্থ জীবন ব্যবস্থা গড়ে তোলা রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।
সূত্র: বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)।

 

রাজধানীতে স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন


নারী সংবাদ


রাজধানীর মিরপুরের শাহআলী এলাকায় স্বামীর মারধরে শাহিনা আক্তার (৩২) নামে এক গৃহবধূ নিহত হয়েছেন। গতকাল সকালে সেকশন-১ এর ডি-ব্লকের ৪ নম্বর রোডের ১৪ নম্বর টিনশেড বাড়ি থেকে পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে পোস্টমর্টেমের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায়।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, শাহিনার বাড়ি মিরপুর বেড়িবাঁধ সংলগ্ন কাউন্দিয়া এলাকায় এবং তার স্বামী নিরবের বাড়ি ভোলায়। ওই দম্পতির তিনটি সন্তান রয়েছে।
নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, নিহতের স্বামী নিরব কবুতর বেচাকেনা করে। যৌতুকের জন্য সে শাহিনাকে প্রায়ই মারধর করত। যৌতুকের টাকা না পেয়ে নিরব এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
শাহআলী থানার এসআই খন্দকার মনিরুজ্জামান জানান, মঙ্গলবার রাতে পারিবারিক বিষয় নিয়ে শাহিনা ও নিরবের মধ্যে ঝগড়া বাধে। ঝগড়ার এক পর্যায়ে নিরব স্ত্রী শাহিনাকে মারধর করে এবং গলায় তার পেঁচিয়ে ধরলে শাহিনা শ্বাসরোধে মারা যান। ঘটনার পর থেকেই নিরব পলাতক রয়েছে। তাকে ধরতে অভিযান চলছে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই বাবু মিয়া বাদি হয়ে নিরবকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

 

রূপান্তরের যাত্রা – পর্ব ৭


তাহনিয়া খান


বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

Rabbish rahli sadri wa yas-sir li amri wahloul uqdatam mil-lisaani yafqahu qawli.
O my Lord! expand me my breast; Ease my task for me; And remove the impediment from my speech, So they may understand what I say[20:25-28]

উমরাহ্‌ করার জন্য তাওয়াফ করা শুরু করলাম। সাতবার কাবা ঘরকে ঘড়ির উল্টা দিকের মত করে ঘুরলে একবার তাওয়াফ করা হয়। এত মানুষের ভিড়ে আমরাও আস্তে আস্তে মিশে গেলাম। ঘোরার সময় যা দোয়া মনে আসছিল তাই পড়ছিলাম। সাথে বই ছিল, সেটা দেখেও দোয়া পড়ছিলাম।

আমি যতবার তাওয়াফ করেছি ততবার আমার ভাইয়ের কষ্ট হয়েছে। মানুষের ধাক্কা যেন না লাগে, সেজন্য সে আমাকে আমার পিছন থেকে তার দু’হাত দিয়ে আগলে রেখে চলতো। আল্লাহ্‌র কি রহমত, এত মানুষের ভিতরে আমার এক ফোঁটাও ধাক্কা লাগেনি। যখনি মানুষের ভিড় দেখেছি তখনই আমি ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ পড়া শুরু করে দিতাম। কখনো জোরে , কখনো বা মনে মনে। আর আল্লাহ্‌ যে কীভাবে এত ভিড়ের মাঝে আমাকে রাস্তা তৈরি করে দিতেন, তা আল্লাহ্‌ই জানেন।

নীচে তাওয়াফের সময় একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটতো। যতবার নীচে তাওয়াফ করতাম, ততবার ভিড়ের মাঝে হঠাত করে সামনে ফাঁকা হয়ে যেত আর কোথা থেকে যেন ঠাণ্ডা বাতাস আসতো।

যাইহোক, তাওয়াফের পর মাকামে ইবরাহীমের পিছনে দুই রাকাআত নামাজ পড়ে জমজমের পানি খেয়ে শুরু করলাম সায়ী করা। সায়ী করার সময় আমার হাঁটার স্পীড বেড়ে গেলো। আমি কোন দিকে না তাকিয়ে হেঁটে যাচ্ছি আর দোয়া পড়ছি। ভাবছিলাম আমরা এখন সায়ী করি টাইলস দেওয়া ঠান্ডা রাস্তায়। আর বিবি হাজেরা (র: ) যখন সাতবার দৌড়িয়েছিলেন সাফা পাহাড় থেকে মারওয়া পাহাড় পর্যন্ত ঠিক এই রাস্তাতেই, তখন তো এমন টাইলস দেওয়া রাস্তা ছিল না, ফ্যান আর এসিও ছিল না। প্রখর রোদ্রে পানির খোঁজে বাচ্চাকে রেখে দুই পাহাড়ের মাঝে দৌড়াদৌড়ি করছিলেন। এসব চিন্তা করতে করতে কেমন এক ঘোর লাগা অবস্থায় ছিলাম আমি। আমার মাঝে সেই হাঁটার জোশ চলে আসছিল। একটা সময় দেখলাম আমাকে পিছন থেকে ডাকা হচ্ছে। আমি ফিরে তাকিয়ে দেখি দলের অনেক আগে চলে এসেছি। আমার ভাইও আমার সাথে নেই। আবার দলের ভিতর এসে একসাথে সায়ী করা শেষ করলাম।

উমরাহ্‌ শেষ, এখন হোটেলে গিয়ে চুল কেটে এহরাম মুক্ত হবার পালা। হোটেলের পথে যেতেই অনেক নাপিতের দোকান। আমার ভাই এক দোকানে ঢুকলো চুল কাটতে। আমি বাইরে অপেক্ষা করছিলাম। এত পানির পিপাসা পেয়েছিল যে সামনে কিছু দোকানে গিয়ে জুসের খোজ করছিলাম। ফ্রেশ দুই গ্লাস জুস কিনে আবার আসলাম ভাই যেখানে চুল কাটছিল সেখানে। চুল কাঁটা শেষ নাকি দূর থেকে উকি দিলাম। দোকান খালি। শুধু একজন কাস্টমার। আত্মা ধক করে উঠলো । আমার ভাই গেল কই ? আমি কি ঠিক দোকানের সামনেই আসলাম ? ভাইয়ের নতুন ফোন নাম্বারটাও তো নেওয়া হয়নি। এখন কি করবো ? ভাইকে খুজব নাকি হোটেলে ফিরে যাব ? কয়েক সেকেন্ডের মাঝে এত কিছু ভেবে ফেললাম। ভাবতে ভাবতেই দেখি সেই কাস্টমার নাপিতের সাথে কথা বলতে বলতে বের হচ্ছে। গলা তো ভাইয়ের মতই লাগছে দেখি। দোকান থেকে বের হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বড় এক হাসি দিল। ইয়া আল্লাহ্‌ ! এইটা দেখি আমার ভাই। পুরো বেল মাথা। আমি কি বোকা, তাকে চিনতেই পারিনি। সে যে এমন নেড়া হবে ভাবতেই পারিনি। ভেবেছিলাম চুল ছোট করবে। সে বলেছিল নেড়া হবে না। কিন্তু চুল কাটার সময় সে মত পরিবর্তন করে। আমার জানে পানি ফিরে আসলো। আমার অবস্থা শুনে সে হাসছিল।

হোটেলে গিয়ে সে আমার চুল কেটে দিল। গোসল করেই আবার মসজিদের দিকে রওনা দিলাম জুম্মার নামাজের জন্য। অসম্ভব ভালো লাগা কাজ করছিল মনে। এত সহজে উমরাহ্‌ করে ফেলেছি, ভাবতেই অবাক লাগছিল।

হজ্জের সপ্তম শিক্ষা- মানুষ যখন কোন ভাল কাজ করার চেষ্টা করে, আল্লাহতায়ালা সেই চেষ্টার জন্য কাজটাকে সহজ করে দেন। উমরাহ্‌ শেষে মনে হচ্ছিল, এত সহজ উমরাহ্‌ করা ? আসলে আল্লাহ্‌ই সহজ করে দিয়েছিলেন।

পর্ব-৬

 

রূপান্তরের যাত্রা – পর্ব ৬

তাহনিয়া খান


বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

Rabbish rahli sadri wa yas-sir li amri wahloul uqdatam mil-lisaani yafqahu qawli.
O my Lord! expand me my breast; Ease my task for me; And remove the impediment from my speech, So they may understand what I say[20:25-28]

আমাদের বাস চলা শুরু করলো মক্কার দিকে। পথ আর শেষ হয় না। মরুভূমির মাঝখান দিয়ে পিচ ঢালা রাস্তা। হঠাত করে একটা দুটো বাড়ি চোখে পরে। মাঝে মাঝে উট দেখা যায়। পথেই মাগরিবের ওয়াক্ত হয়ে যাওয়াতে বাসেই নামাজ পড়ে ফেললাম। আমার ভাই নামাজ পড়ে লম্বা এক ঘুম দিল। আমি চলন্ত বাসে বা ট্রেনে ঘুমাতে পারিনা। অন্ধকার ঘন হয়ে আসাতে দূরে তেমন কিছু দেখাও যাচ্ছিল না। শুধু মক্কার ভিতরে ঢোকার সময় রাস্তায় যে বড় করে রেহালে কোরআন শরীফ রাখার আকৃতি করে গেইট বানানো হয়েছিল সেটা দেখতে পেলাম। ভাইকে ডেকে বললাম মক্কায় ঢুকে গিয়েছি।

মক্কায় ঢুকেও নিয়মের শেষ নেই। কতবার যে বাস থামলো আর আমাদের মাথা গুনলো আর খাবার দিল, হিসাব নেই। খাবারের বাক্সের মাঝে থাকতো বিস্কিট, খেজুর, মধু আর কেক। প্রথমে একবার দু’বার এই খাবার খিদার সময় ভালোই লাগতো। কিন্তু পরবর্তিতে এই খাবারের বক্স এত পেয়েছি যে কেউ সেধে দিলেও নিতাম না।

মক্কায় যখন আমাদের হোটেলের সামনে এনে রাখা হলো, তখনই হারাম শরীফরে থেকে এশার আজান শুনতে পেলাম। মন তো আর মানে না, মনে হচ্ছিল সব ফেলে ছুটে চলে যাই মসজিদে। কিন্তু উপায় নেই। কিছু ফর্মালিটিস শেষ করে আমাদের মোয়াল্লেম সবাইকে বিশ্রাম নিতে বললেন এবং পরেরদিন সকালের জন্য প্রস্তুত থাকতে বললেন। সকালে তিনি আমাদের উমরাহ্‌ করতে নিয়ে যাবেন। তারপর আমরা নিজেদের ইচ্ছামত চলাফেরা করতে পারবো।

পরের দিন ছিল শুক্রবার। অদ্ভুত এক ঘটনা হয়েছিল আমাদের। মক্কায় প্রথম নামাজ পড়লাম জুম্মার নামাজ। মদিনায় প্রথম ও শেষ নামাজ পড়েছিলাম জুম্মার নামাজ। আমরা হোটেলে এসেই এশার নামাজ পড়ে শুয়ে গেলাম। ঘুম কি আর আসে। ফজরের নামাজ পড়েই সবাই হোটেলের নীচে চলে আসলাম। আমাদের মোয়াল্লেম আমাদের কে একটা করে কমলা রঙের কাপড়ের টুকরো দিলেন, যেখানে এজেন্সির নাম বড় করে লেখা ছিল। যাতে সবাই এক সাথে থাকতে পারি আর হারিয়ে না যাই দল থেকে, সেজন্য এই ব্যবস্থা।

হোটেল থেকে বের হয়েই ইবরাহীম খলিল রোড। একটু হাঁটলেই হারাম শরিফের দুটো মিনার দেখা যায়। হোটেল থেকে হারাম শরীফ যেতে ৫-৬ মিনিট লাগতো। একটু আগালেই দেখলাম কবুতর চত্বর। মক্কা মদিনায় এত কবুতর দেখেছি, তারা মানুষকে এক ফোঁটাও বিরক্ত করতো না, এমনকি কোথাও বাথরুমও করতো না। আশ্চর্য লেগেছে ব্যাপারটা। নামাজের সময় যখন মানুষজন নামাজ পড়তো , তখন কোথায় যেন এসব কবুতর চলে যেত।

যাই হোক, কবুতর চত্বর পার হতেই উত্তেজনায় বুক কাঁপছিল। আমার ভাই তার ডান হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে শুধু বলছিল, আপু, আল্লাহ্‌ নিয়ে আসছে আমাদের, আল্লাহ্‌ নিয়ে আসছে। সে যতবার এই কথা বলছিল , ততবার আমি আলহামদুলিল্লাহ্‌ বলছিলাম। ভাবছিলাম, দুনিয়াতে তো কত লোক আছে, সবার মাঝখান থেকে আল্লাহ্‌ আমাদের এখানে উনার মেহমান করে নিয়ে এসেছেন। এত সম্মান তিনি আমাদের দিয়েছেন। সারা জীবন সেজদায় পড়ে থাকলেও তো এর শুকরিয়া আদায় হবে না।

মসজিদের ভিতর ঢুকলাম। দূর থেকেই একটা পিলারের আড়াল থেকে কালো ঘরটা দেখা যাচ্ছে। আমি লিখে প্রকাশ করতে পারবোনা আমার মনের অবস্থা। অনেক কিছু প্ল্যান করে রেখেছিলাম যে আমি এই দোয়া করবো, সেই দোয়া করবো। আমি সব ভুলে গেলাম। শুধু বলে যেতে লাগলাম আল্লাহ্‌ আমার গুনাহ মাফ কর, প্লিজ মাফ কর। যতক্ষন পর্যন্ত না মন স্থির না হলো, আমি এই একই দোয়া পড়েই যাচ্ছিলাম। মন স্থির হওয়ার পর অন্য দোয়া করেছিলাম। দোয়া শেষে পিছনে ফিরে দেখলাম আমার ভাই তখনো দোয়া করছে। আর আমার দলের লোকেরা নেই। একটু এগিয়ে দেখি তারা সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। এর মাঝে আমার ভাই চলে আসলো।

যে কালো ঘরটা প্রায়ই টেলিভিশনে দেখতাম, সেটা এখন চোখের সামনে। এত সুন্দর ! এত বড় ! তাকিয়ে থাকতেই ইচ্ছে করে। আমি সারা জীবন এই ঘরের দিকে তাকিয়ে থাকলেও আমার চোখ কখনোই ক্লান্ত হবে না, কোন দিন না।

হজ্জের ষষ্ঠ শিক্ষা- আম্মু বলেছিল, আমরা যেই দোয়াই করি না কেন সেটা কবুল হবে। যা চাই আল্লাহ্‌ সেটাই দিবেন। যখন প্রয়োজন তখন দিবেন। যে জিনিস চাই সেটা যদি আমার দরকার না লাগে, তাহলে যেটা আমার দরকার সেটাই দিবেন। আর এই দুনিয়াতে যদি কিছু না পাই তাহলে পরকালে এই দোয়ার বিনিময় পাবো। মানে দোয়া কবুল হবেই হবে। আমার আব্বু আম্মু সবসময় দোয়া করেছেন যেন আমরা তিন ভাই বোন হজ্জ করতে পারি। আমি নিজেও দোয়া করেছি। আল্লাহ্‌র স্পেশাল রহমতে দোয়া তো কবুল হয়ে গিয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে আমি যে বয়সে হজ্জ করতে গিয়েছি সেটা আমার জন্য একদম সঠিক সময়। শারীরিক ও মানসিক ভাবে আমি ছিলাম পরিপুর্ন। আল্লাহ্‌র কাছে চেয়েছিলাম কাবার সামনে গিয়ে দাঁড়াবো। আল্লাহ্‌ আমাকে সেই ঘরের সামনে নিয়ে দাড়া করিয়েছেন। এত বড় স্বপ্ন পূরণের পর আমার হদয়ে ও মস্তিষ্কে গেঁথে গেল দোয়া কখনোই ব্যার্থ হয় না। কখনোই না।

পর্ব-৫

 

জ্ঞানার্জন আমাকে বিনয়ী করছে তো?


আফরোজা হাসান


ছোটবেলা থেকে যদি জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যটা পরিষ্কার থাকে তাহলে সামনে এগিয়ে যাওয়াটা অনেক সহজ হয়ে যায়। তেমনি শিক্ষার লক্ষ্য-উদ্দেশ্যটা জানা থাকলে জ্ঞানার্জন করাটাও অনেক আনন্দদায়ক হতে পারে। কিন্তু এরজন্য শিক্ষায় থাকতে হবে গভীর নিষ্ঠা। কোনমতে দু’চার দিন শিখেই বাজিমাত করে দেয়া কখনোই সম্ভব নয়। মানুষের স্বভাব হচ্ছে কোন একদিকে মনকে স্থির রাখতে চেষ্টা করেনা। নানা দিকে মনকে ছড়িয়ে দেয়। তাই শেষ পর্যন্ত কিছুই করতে পারেনা। শিক্ষা দ্বারা না পারে নিজেকে গড়তে, না পারে অন্যকে সাহায্য করতে। আমার মতে জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্য হতে হবে নিজের পা দুটোকে মাটিতে শক্তভাবে স্থাপন করা। জ্ঞান দ্বারা প্রথমে একনিষ্ঠ ভাবে নিজের উন্নয়নে মনোযোগ দিতে হবে। নিজেকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে সবার আগে। তাহলেই কেবল সম্ভব হবে জ্ঞানকে যথাযথ কাজে লাগানো।

মানবজীবনের উদ্দেশ্যে সফল হওয়ার জন্য আমাদেরকে নম্র ও বিনয়ী হতে হবে। কারন মানুষ যত নম্র ও বিনয়ী হয় ততই তার মর্যাদা উন্নত হয়। কুরআনে আল্লাহ বলেছেন-“ আমি তাদের পরকালে শাস্তি দেবোনা, যারা উদ্ধত স্বভাবের নয়, আর যারা অন্যের অনিষ্ঠ করার ইচ্ছে পোষণ করেনা।” ঔদ্ধত্য মানুষের চরিত্র মাধুর্য নষ্ট করে, অহংকার বাড়িয়ে দেয়। আর অহংকার মানুষকে অধঃপতনের সর্বনিম্ন স্তরে নিয়ে যায়। অহংকার মানুষকে আত্মচিন্তায় বিভোর রাখে। কিন্তু কর্তব্যবোধ ও পরমতসহিষ্ণুতা মানুষকে কল্যাণকামী মানুষে পরিণত করে। কৃতজ্ঞতাবোধ যেমন সকল সৎ গুনের জননী, শিক্ষা তেমন বিনয়ের জননী।

শিক্ষা অর্জনে জ্ঞানের প্রসারতা বাড়ে, আর জ্ঞান মানুষকে বিনয়ী, নম্র ও ভদ্র হতে শেখায়। যিনি অহংকার পরিত্যাগ করে ফলবান বক্ষের ন্যায় গুনভারে নুয়ে পড়ে এবং ছোট বড়, ধনী দরিদ্র সকলকে সমভাবে ভালবাসতে পারেন তিনিই প্রকৃত মানুষ। অহংকার সর্বাবস্থায় পরিত্যাজ্য। কেননা আল্লাহ অহংকারীদের ভালোবাসেন না। রাসুল সঃ বলেছেন-“ যারা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য বিনয়ী মনোভাব পোষণ করে, আল্লাহ তাদের সম্মান ও মর্যাদা বাড়িয়ে দেন।” তাই সবার আগে লক্ষ্য রাখতে হবে জ্ঞান বিনয়ী হতে ও নম্র হতে সহায়তা করছে কিনা। কারণ বিনয় ও নম্রতা দ্বারা মানুষ পরম শত্রুকেও বন্ধুতে পরিণত করতে পারে।আর উদ্ধত বা অহংকারে বন্ধুও পরিণত হয় শত্রুতে। তাই বিনয় ও নম্রতার প্রয়োজনিতা অপরিসীম।

জীবনের সর্বক্ষেত্রে অবশ্যই বিনয়ী আচরণ করতে হবে কিন্তু সাথে সাথে মনে রাখতে হবে বিনয়ী মানে এমন নয় যে অনুচিত কাজ বা ভ্রান্ত কথা শুনেও চুপ করে থাকবে হবে। মানুষের প্রতি মানুষের সুবিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য, সুন্দর ও কল্যাণের জন্য, সত্য ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার জন্য বিনয় ও নম্র ব্যবহার যতখানি প্রয়োজন, ঠিক ততখানিই প্রয়োজন অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা। একথা স্মরণ রেখেই নম্র, ভদ্র ও বিনয়ী হতে হবে।

 

মিতু চলে গেলো


জুয়াইরিয়া জাহরা হক


চাচা দুই দিন পরপর বাসায় আসেন ।
বক্স ভরে খাবার আনেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। সব শেষে বাসাটা বদলানোর কথা বলে যান। আমি শুনি। চলে গেলে এক কড়াইয়ে ভাত তরকারি গরম বসাই। জানালা ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে প্রায় প্রতিবারই খাবার পুড়িয়ে ফেলি।
বিল্ডিংটার পাশে একটা নর্দমা। প্রচুর মশা আসে রাত্রে। আমি মশারি টাঙাই না। মিতু থাকলে একদিন পর একদিন টাঙাতেই হত। দিন ভাগ করা ছিলো। যেদিন আমি মশারি টাঙাবো, সেদিন কোলবালিশ আমার। পরেরদিন আবার ওর। হাটু ব্যাথা-কোমর ব্যাথার জন্য মাসে দুই দিন বোনাস। সেদিন মশারিও টাঙানো লাগবে না আবার কোলবালিশও পাবো!
রাতে আমার ঘুম হয় না। বাতি নিভিয়ে দিলে সিলিং এ তারা জ্বলে। সাথে অনেকগুলো গ্রহ। নীলক্ষেত থেকে আলো জ্বলা এই স্টিকারগুলো আমিই এনে দিয়েছিলাম মিতুকে। পকেটে চিরকুট দিয়ে দিতো। টিফিন ক্যারিয়ারে চিঠি লিখে দিতো। শেষমেশ যেদিন মনে করে নিয়ে গেলাম, সেদিন তো কেঁদেই দিলো!
‘দরকার নাই। কেন আনলেন? ফেলে দেন সব ‘, এসব বলার পর চোঁখ মুছতে মুছতে চেয়ার – মোড়া দিয়ে উঠে সিলিংটা আমার সৌরমণ্ডল বানিয়ে ফেললো!
শেষরাতে একটু ঘুম হলে খুব ভাল্লাগে! যদি মিতুকে
স্বপ্নে দেখি! গত সপ্তাহে একবার দেখেছিলাম। কালো শাড়ি গায়ে। ছাদে কাপড় নাড়ছে। কি যে সুন্দর লাগছে!

মিতুর সাথে আমার বিয়েটা দেন চাচা। বাপ-মা মরা ছেলে, নীলক্ষেতের ফটোকপির দোকানের কর্মচারীর জন্য এর চাইতে ভালো রিশতা আর হয় না। মেয়েরও বাপ মা নাই। নানির কাছে থাকে। দেখতে ভয়াবহ সুন্দর। সমস্যা সামান্য, কোন এক বখার সাথে দুই একবার পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলো!
প্রথমে একটু খুতখুত লাগলেও মিতুকে দেখার পর বেমালুম সব ভুলে গেলাম। কোন সুস্থ মস্তিষ্ক এতো সুন্দর মানুষ দেখার পর ঠিক থাকতে পারে না। আমিও পারি নি! হকার্স মার্কেট থেকে সুন্দর দেখে শাড়ি কিনলাম। পায়ের মাপ আন্দাজ করে পুতি বসানো একজোড়া জুতা সাথে মায়ের একটা নাকফুল। ট্রাংক ঘেটে একটা ছোট টিকলিও পাওয়া গেলো!
এই বাসায় মিতুকে নিয়ে উঠি। এক রুমের বাসা এখন আlর পাওয়া যায় না। সাবলেট ভালো লাগে না। কার্ডবোর্ড দিয়ে আলাদা করা। একপাশ থেকে আরেকপাশের কথা দিব্যি শোনা যায়! অনেক কষ্টে শনির আখড়ার এই বাসাটা পেয়েছিলাম।
বাসায় উঠার পর মিতু সুন্দর করে ঘর গুছিয়ে ফেললো। একটা আলনা, একটা ছোট কাঠের টেবিল আর ঘুমাবার জন্য একটা তোষক। এই ছিলো সব মিলিয়ে। কিন্তু কি কারনে যেন ঘরটা অসাধারণ সুন্দর লাগতো!
এখন কেমন এলোমেলো করে রাখি। মিতু থাকলে খুব রাগ করতো। মিতু খুব গোছানো মেয়ে। চলে যাওয়ার দিনও ঘরটা গুছিয়ে রেখেছিলো।
পরিষ্কার মনে পড়ে, আমি রাত করে বাড়ি ফিরেছি। দেখি দরজা খোলা। ভেতরে ঢুকে দেখি ফ্যান ঘুরছে। একটু যেন কেমন লাগলো। মিতু বিছানা পেতে ঘুমিয়ে আছে। ডাক দিতে যেয়ে দেখলাম মুঠ করা একটা কাগজ। হাতে ছোঁয়া লাগতেই বুকটা ধক করে উঠলো! এতো ঠান্ডা কেন!
চিরকুটে কিসব আজেবাজে কথা লিখে রেখেছে! মাফ চেয়েছে। বিয়ের আগের সেই ছেলেটাকে ভুলতে পারেনি! বিষ খেয়েছে!
হাসপাতাল নিবো। হাতে একদম টাকা ছিলো না। আলনার পেছনে একটা মাটির ব্যাংকে মিতুর জমানো টাকা ছিলো। প্রতিদিন আমার থেকে নিয়ম করে ও পাঁচ টাকা নিতো। পাঁচ হাজার টাকা হলে একটা পুরান খাট কেনার প্ল্যান ছিলো।
মিতু জানতে পারলো না ও চার হাজার পঁচাত্তর টাকা জমিয়েছিলো!

 

রূপান্তরের যাত্রা – পর্ব ৫


তাহনিয়া খান


বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

Rabbish rahli sadri wa yas-sir li amri wahloul uqdatam mil-lisaani yafqahu qawli.
O my Lord! expand me my breast; Ease my task for me; And remove the impediment from my speech, So they may understand what I say[20:25-28]

বোর্ডিং হয়ে গিয়েছে, ইমিগ্রেশন হয়ে গিয়েছে, বসে আছি প্লেনে উঠার অপেক্ষায়। এর মাঝে ফজরের নামাজের সময় হয়ে গেলো। হ্যান্ডব্যাগ থেকে জায়নামাজ বের করে নামাজ পড়ে নিলাম। নামাজের জন্য একটা পার্টিশন দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অযু করাই ছিল। পালা করে মেয়েরা সব নামাজ পড়ে নিল। ছেলেরা সবাই জামাত করে নামাজ পড়ে নিল। খুব ভালো লাগছিল। সবাই এহরামের কাপড় পরা।

আমার ভাই তাপস একটু পর পর বলছিল, আপু, কাপড় ঠিক আছে তো ? শরীর দেখা যাচ্ছে না তো ? তার অস্বস্থি কাটে না। সে হজ্জে যাওয়ার আগে নতুন কেডস, মুজা কিনে বাসায় আনে। আমি দেখে বলেছিলাম, তুই সেখানে কেডস নিয়ে কি করবি? সে বললো, কেনো হাটতে হবে না অনেক, কেডস পরে স্পীডে হাটতে পারবো। তখনো সে এহরামের নিয়ম কানুন জানে না। আমি তাকে বললাম, তুই কাফনের কাপড়ের মত দুই টুকরা কাপড় আর দুই ফিতার স্যান্ডেল ছাড়া কিছুই পরতে পারবি না। সে আকাশ থেকে পরলো যেনো। বলে, কি বল এসব? নীচে কিছুই পরা যাবে না ? আমি হাসতে হাসতে শেষ। এখন এয়ারপোর্টে এসে সে অস্বস্থিতে ভুগছে। তার শুধু মনে হচ্ছে শরীর দেখা যাচ্ছে। একটু কেমন বিরক্ত। অথচ এই ছেলে, হজ্জের পড়ে বলেছে, এখন থেকে মাঝে মাঝে এহরামের কাপড় পরে বসে থাকবো। সে খুব সুন্দর করে খুব তাড়াতাড়ি এহরামের কাপড় পরতে পারে।

ফজরের নামাজের পরে প্লেনে উঠার জন্য লাইন দিয়ে আমাদের দাঁড়াতে বলা হোল। একদম প্রথমে এক ভদ্রলোক, তারপর আমি, এরপর আমার ভাই। ভদ্রলোক আগে উঠতে যাবেন প্লেনে, হঠাত কি মনে করে পিছন ঘুরে আমাকে বললেন, আপনি উঠুন আগে। আমার এত খুশী লাগলো। বিসমিল্লাহ বলে উঠে পরলাম সবার আগে। সিট খুঁজে বসে গেলাম। জানালার পাশেই সিট। আহ ! আলহামদুলিল্লাহ্‌, যাত্রা শুরু। আমাদের রুট ছিল ঢাকা থেকে কুয়েত, কুয়েত থেকে জেদ্দা। সকালের আলো চারদিকে দেখা যাচ্ছে। ঢাকা শহর আমাদের নীচে। আমার ভাই জোর করে আমার মাথা ঘুরিয়ে দিয়ে বললো, দেখো, কত সুন্দর। আমার আবার এক্রোফোবিয়া আছে। উপর থেকে নীচে তাকাতে পারি না। আমার ভাই দুষ্টমি করে বলছে, এখন যদি প্লেন ধপ্পাস করে নীচে পরে যায়, তখন কি হবে ? আমি শুধু বললাম, বাজে কথা না বলে দোয়া পড়তে থাক। সে হাসে। তার হাসির শব্দে অন্যরা ফিরে তাকালো আমাদের দিকে। আমাদের এই হজ্জ গ্রুপের মাঝে হাতে গোনা কয়েকজন ছিলাম কম বয়সের। আর সবাই ছিল বয়স্ক মানুষ। আমরা দুই ভাই বোন এত মজা করে, হাসি আনন্দ করে হজ্জ করেছিলাম যে, আমাদের সবাই আপন করে নিয়েছিল।

কুয়েত এয়ারপোর্টে নেমে যারা এহরাম পরেননি তারা এহরাম পরে নিলেন। হাজীদের জন্য যাওয়ার রাস্তা আলাদা। হাজীদের যাতে কষ্ট না হয় সেজন্য সব ফর্মালিটিস তাড়াতাড়ি শেষ করে ফেলা হোল। সেখানেই যোহরের নামাজ পড়ে আবার প্লেনে উঠলাম। জেদ্দা এয়ারপোর্টে এসে শুরু হোল নিয়ম কানুন। বয়স্কদের খুব তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেয়। কিন্তু কম বয়সি ছেলেদের দুই হাতের ছাপ নেওয়া সহ হাজারটা নিয়ম কানুন শেষ করে ঢুকতে হোল। আমার ভাইকে বার বার বলে দেওয়া হোল আমাকে একা ছাড়া যাবে না। আসলে তাদেরও কোন দোষ নেই। অনেকেই হজ্জ করতে এসে আর দেশে ফিরে যায় না। অবশেষে ইমিগ্রেশন পার হয়ে লাগেজ খুঁজে চলে গেলাম বাংলাদেশের তাঁবুর কাছে। আমাদের সবার কাছ থেকে পাসপোর্ট নিয়ে মাথা গুনে গুনে বাসে উঠানোর জন্য লাইন করানো হোল। কতবার যে এরা মাথা গুনে আর লাইন ঠিক করে। এখনো অনেক পথ বাকি, তার মাঝে লেগেছে খিদা। এদের নিয়ম কানুন শেষ হয় না। এই ফাঁকে আসরের নামাজ পড়ে ফেললাম। মোবাইলের সিম কার্ড কিনে আনলো আমার ভাই। আর এর মাঝে এজেন্সির সৌদি মোয়াল্লেমের একেকজন লোক আসে আর নতুন লাইন করা হয়, নতুন ভাবে আমাদের মাথা গুনা হয়।

হজ্জের পঞ্চম শিক্ষা- ধৈর্য। যে যত ধৈর্য ধরতে পারবে , তার তত সমস্যা কম হবে, সমস্যা তাড়াতাড়ি মিটবে। যারা বেশী হুড়াহুড়ি করে , আগে আগে প্লেনে আর বাসে উঠতে গিয়েছে, মাথা গুনার জন্য আর নতুন লাইন হওয়ার জন্য বার বার তারা পিছিয়ে গিয়েছে। অযথা মানুষের হুড়াহুড়ি দেখে অবাক লেগেছে। পরবর্তি সময়ে যে আরো ধৈর্য ধরতে হবে আর বিরক্ত হওয়া যাবে না, তখনই বুঝে গিয়েছিলাম।

চলবে….

রূপান্তরের যাত্রা – পর্ব ৪

 

যে গল্পটি কারো বোনের নয়

কুশল ইশতিয়াক


ঘটনার দিন, মন্টু যখন মাগরিব নামাজের প্রস্তুতি নেয়, তখন বাড়িতে খবরটা আসে। এরপর আর তার কিছু খেয়াল থাকে না। দৌড়াতে দৌড়াতে ধানক্ষেতের ভেতর নেমে পড়লে, কাদাপানিতে মাখামাখি হয়ে যাওয়া বোনের নগ্ন শরীরের ওপর চোখ পড়ে তার।

মন্টু ডুকরে কেঁদে ওঠে। আদালত তাকে জিজ্ঞাসা করলো- এরপর কী হল?
স্যার, শুয়ারের বাচ্চারা আমার বইনের ইজ্জত লুটছে পরথম। হেরপর জবাই দিছে।
সে তো আপনার বোন নয়।

লাশটা তার বোনের নয়? মন্টু কিছুটা বিভ্রান্ত হয়। লাশটা তাহলে কার, লিপি কোথায়? মন্টু কথাটা পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারে না। কিন্তু আদালতকে সে অবিশ্বাসও করতে পারে না। যার কাছে বিচার চাইতে এসেছে সে, তাকে অবিশ্বাস সে কীভাবে করে? যদি অবিশ্বাসই করে, তাহলে তার বিচার চাইতে আসাটাই অর্থহীন। কিন্তু মন্টুর এই বিচার চাইতে আসার প্রয়োজনটুকু আছে। কারণ আদালত ছাড়া মন্টুর অন্য কোথাও যাবার আর জায়গা নেই। কারোই নেই। আদালতের কথা বিশ্বাস করা ছাড়া কীই বা করার আছে, সে ভেবে পায় না।

যান, বাড়ি যান। লাশটা লিপির নয়।

মন্টু কিছুটা ইতস্তত বোধ করে। একবার ভাবে জিজ্ঞাসা করবে, লাশটা আসলে কার? কিন্তু পরক্ষণেই ভাবে যার আপনজন, সে নিশ্চয়ই লাশটা খুঁজে বের করবে। মন্টু তার জন্য অপেক্ষাও করে। এইবার তার লাশটির জন্য মায়া হয়। কিন্তু পরক্ষণেই লিপির নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারটি এই ভাবনাকে ঢেকে দেয়। লিপি তাহলে কোথায়?

লাশটা যে তার বোনের নয়, এ কথা অনেকেই বলেছিল তাকে। এমনকি পাজামার আর ওড়নার রঙ মিলে যাবার পরও। লাশটার ক্ষতবিক্ষত মুখ কিছুতেই আলাদা করে বোঝা যাচ্ছিল না। যদিও কাঁদাপানিতে নেমে মন্টুর বারবার মনে হচ্ছিল এই মুখ লিপির। বোনের মুখ ভাই কী করে ভোলে?

তর মাথা আউলাইছে। এই মাইয়া আমাগো লিপি? জীবনেও না।

গ্রামবাসী সকলে সায় দেয়। সায় দেয় তারা যারা লিপিকে চেনে। তারাও, যারা কখনো লিপিকে দেখে নি। মন্টুর কাছ থেকে তারা জানতে পারে, বিকেলে লিপি পেয়ারা পাড়তে ক্ষেতের ধারে এসেছিল। এ কথা তারা মেনে নিলেও ধর্ষিত লাশটি আসলে অন্য কোনো তরুণীর বলে তারা মন্টুকে আশ্বস্ত করতে চায়।

মন্টু, বাড়িত যা। গিয়া দ্যাখ, লিপি বাড়িত আইছে নি।

এই লাশটা তাইলে কার? মন্টু যে প্রশ্ন আদালতে করতে পারে নি, ঘটনার দিন সে সবার কাছেই করেছে।

মিয়া, তোমার এত খোঁজের দরকার কী? হইব পাশের গেরামের কেউ। তোমার বইনের না হইলেই তো হয়। লাশ যার হউক, তোমার তো কিছু না। যাও, বাড়িত যাও।

মন্টু ভাবতে থাকে, আসলেই, লাশটা লিপির না হলেই তো হয়। যারই হোক, তার কী আসে যায়? তার তো কিছু না।

এ কথা ভাবতে ভাবতে মন্টু বাড়ি ফেরে। কিন্তু লিপি বাড়ি ফেরে না। মন্টুর মাগরিবের নামাজ, এশার নামাজ ক্বাজা হয়ে যায়। রাতের বেলা অস্থির হয়ে তার বোনকে খুঁজতে বের হয় সে। তখন তার আযহার মাষ্টারের কথা মনে হয়।

লাশটি ততক্ষণে নিয়ে যাওয়া হয়েছে থানায়। উলঙ্গ। ওড়না আর পাজামা পড়ে ছিল ধানক্ষেতে, খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

আযহার মাষ্টারকে মন্টু তার সন্দেহের কথা বলতেই মাষ্টার তাকে একটা রামধমক দেয়। মন্টু এবার ঝরঝর করে কাঁদতে শুরু করে।

চাচা, লিপিরে তো পাইতেছি না।
বকাঝকা করছিলি নি? আযহার মাষ্টার জিজ্ঞাসা করে।
কেউই কিছু কয় নাই।
কারো লগে প্রেম পীরিত ছিল? পলাইছে?

আযহার মাষ্টারের এই সব প্রশ্ন মন্টুর কাছে এই সময় খুব বেমানান লাগে। কিন্তু আযহার মাষ্টারকে সে কিছু বলতে পারে না। এরকম করে সে নিজেও একবার ভাবার চেষ্টা করে। তার মনে পড়ে লিপির সাথে গ্রামের ছোটভাই রফিকের হাসাহাসির একটা দৃশ্য। কিন্তু এই ভাবনা বেশিদূর এগোতে পারে না। বারবার অন্য একটি ভয়, প্রেতাত্মার মতো তার সামনে ঘোমটা দিয়ে এসে দাঁড়ায়।

তখন মন্টু বিষয়টা অন্যভাবে সমাধানের চেষ্টা করে। মনে মনে। লাশের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেলে বা অন্য কারো ভাই এসে দাবী করলে সে নিশ্চিন্ত হতো, যে লাশটা মন্টুর বোনের নয়।

চাচা,মাইয়াডার কোনো খোঁজ পাওয়া গেছে?
কার?

আযহার যদিও পাল্টা প্রশ্ন করে থতমত খায়, অন্ধকারে মন্টুর মুখের অভিব্যক্তি বুঝতে তার তেমন একটা সমস্যা হয় না। সে তাই বলে, যা সে জানে। সে বলে যে, সে জানে না।

চাচা লন, একবার থানাত যাই।

মন্টুর এই এত রাত বিরাতে থানায় যাবার প্রস্তাব আযহার মাষ্টারের ঠিক পছন্দ হয় না। তবু এমন দুঃসময়ে মন্টুর এই সরাসরি অনুরোধ পুরোপুরিভাবে এড়ানোও তার পক্ষে সম্ভব হয় না। অনিচ্ছা সত্ত্বেও সে বলে- ঠিকাছে, চল যাই।

লাশটিকে একটু আগে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। এখনও মর্গে চালান করা হয় নি। ত্থানার বারান্দায় লাশটাকে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে হোগল পাটিতে। কিছু ধাড়ি ইঁদুর দৌড়াদৌড়ি করছে বারান্দার কোনায়, এরা কি জেলের ভাত খেয়ে এরকম হয় নাকি অন্য কিছু খেয়ে, কে জানে। এরই মধ্যে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে লাশটা থেকে, একটা মানুষ মারা গেলেই সুগন্ধি ছড়াবার বদলে সাথে সাথে কী করে দুর্গন্ধ ছড়ায়, এই বিষয়টা মন্টুর ঠিক বোধগম্য হয় না। সে তড়িঘড়ি করে একবার লাশের দিকে তাকায়, তারপর দ্রুত মুড়িয়ে রাখা হোগলা সরিয়ে মুখটা দেখতে উদ্যত হয়।

এই খবরদার, হাত দিবি না।

মন্টুর চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে। ওর মনে হয়, একটা বড়সড় ইটের আঘাতে কনস্টেবলের মাথাটা থেতলে দিতে। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলায়। লাশটা দেখার জন্য কী বলবে, সে ঠিক মনঃস্থির করতে পারে না।

কতক্ষণ চুপ থেকে সে বলে, একবার দেখতাম চাই।

কনস্টেবল অজ্ঞাত কারণে তাকে আর কিছু জিজ্ঞাসা করে না। অথচ প্রশ্ন করাটা স্বাভাবিক ছিল। সে জিজ্ঞাসা করতেই পারতো, কেন সে লাশটা দেখতে চায়, লাশের সাথে তার সম্পর্ক কী? যেমন আযহার মাস্টারও তাকে জিজ্ঞাসা করেছিল লিপি কারো সাথে পালিয়ে গেছে কি না। কনস্টেবল তাকে ইশারায় ওসির টেবিলের দিক নির্দেশ করে। মন্টু এবং আযহার পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে আর ইঁদুরগুলিও তাদের মুখের দিকে। আযহার মাষ্টার দুই পা এগিয়ে এসে গলা খাঁকারি দেয়।

মন্টুর তখন মনে হয়, সে অনেক বড় একটা বেকুব। থানায় তার মা’কে অথবা ফজলুটাকে নিয়ে আসার প্রয়োজন ছিল। তারা দেখে নিশ্চিত হতে পারতো লাশটা লিপির কি না। এই লাশতো এখানে থাকবে না, রাতের মধ্যেই চালান করা হবে মর্গে।

আবার এও হতে পারে, বাড়ি ফিরে মন্টু দেখবে লিপি ফিরে এসেছে। গতরাতের মতো কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে। তার কাছে গতরাত, কিংবা তার আগের রাত, বা তার আগের রাত, আরব্য রজনীর রাতের মতোই অপার্থিব সুন্দর মনে হতে থাকে। মনে হতে থাকে কোনো উপায় জানা থাকলে সে গতরাতেই ফিরে যেত।

এ্যাই, দেখা।

মন্টু, আযহার মাষ্টার এবং কনস্টেবল, অনন্তকাল ধরে লাশের দিকে আগায়। লাশের মুখ দেখে। কিন্তু মনে রাখতে পারে না। মন্টুর মনে হয় এটা লিপিরই মুখ। যদিও আযহার মাষ্টার প্রবল অসমর্থন যোগায় কিন্তু মন্টু ধীরে ধীরে বিশ্বাস করতে শুরু করে, এই মুখ দেখে সে ধর্ষকদের মুখগুলিও খুঁজে বের করতে পারবে। সে আর আগের মতো অস্থির হয়ে ওঠে না, সে খুব ক্লান্ত এবং নির্জীব বোধ করে। ফিরে আসার পথে সে আযহারের সাথে একটি কথাও বলে না।

পরদিন সকালে মন্টু থানায় একটা হত্যা মামলা করে।

লাশের ময়নাতদন্ত রিপোর্টে পাওয়া যায়, উপর্যুপরি ধর্ষণের পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে হত্যা। একটা দুধও কাটা ছিল। মন্টু আগে সেটা খেয়াল করে নি।

এরপর কী হলো? আদালত তাকে জিজ্ঞাসা করে।
ওরা আমার বইনডার ইজ্জত লুটছে পরথম। হেরপর জবাই দিছে।
বাড়ি যান। এই লাশটি আপনার বোনের নয়।
আমার বইনের।
আপনার বোন, লিপি। তিন বছর আগে মারা গেছে।

মন্টুর সবকিছু অদ্ভুত লাগে। সে আদালতকে অবিশ্বাস করতে পারে না, কিন্তু একইসাথে এটাও বিশ্বাস করে যে, তার বোন ঘরে ফেরে না আজ একমাস চারদিন হলো। তাহলে তিন বছর আগে লিপি কীভাবে মারা যায়? আদালত থেকে সে বের হতে হতে ভাবে, আদালত কি তার সাথে মশকরা করে?

কি রে মন্টু। বইনের খোঁজ পাইলি?

ইঁদুরগুলি তখনও মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। মন্টু তাকিয়ে দেখে আদালতের সামনে গাছতলায় শফিক বসা। শফিক পাগলা। মন্টুর সেই বন্ধু শফিক। মন্টুর মনে পড়ে, শফিকের একটা বড় বোন ছিল। রাবু আপা। তিন বছর আগে একদিন লাশ পাটক্ষেতে পাওয়া গেলো। কেউ এগিয়ে এল না। মন্টু তখন কোথায় ছিল? সবাই বলল- রাবু না। শফিক বললো- রাবু।

মন্টুরও মনে হয় রাবু না। ও আসলে লিপি। তিন বছর আগে পাটক্ষেতে মারা গেছে। রাবু আপা হয়তো তারও অনেক আগে। শফিক জানত না।

 

স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে অধ্যাপক গ্রেফতার

নারী সংবাদ



স্ত্রী হত্যার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে হংকং স্ত্রীকে হত্যার
অধ্যাপককে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ তার অফিসে রাখা একটি স্যুটকেসের ভেতর থেকে লাশটি উদ্ধার করে।

ওই নারীর গলায় বৈদ্যুতিক তার পেঁচানো অবস্থায় ছিল। ৫৩ বছর বয়সী চেউং কি চাং এর কার্যালয়ে একটি বড় কাঠের বাক্সে স্যুটকেসটি লুকানো ছিল।

মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী এই অধ্যাপক ২০ আগস্ট থেকে তার স্ত্রী নিখোঁজ বলে জানিয়েছিলেন। তখন জানান, তাদের মধ্যে ঝগড়া হলে তার স্ত্রী রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন।

পুলিশ সিসিটিভি থেকে তার স্ত্রীর বাড়ির বাইরে যাওয়ার ফুটেজ পায়নি। অথচ চেউংকে বড় একটি কাঠের বাক্স আঙ্গিনার বাইরে নিতে দেখে। তখন চেউয়েং কে তারা সন্দেহ করতে শুরু করেন।

মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ চেউংয়ের অফিস তল্লাশি করে। অফিসটি শিক্ষকদের ডর্মেটরি থেকে মাত্র পাঁচ মিনিটের দূরত্বে।

চেউং তার স্ত্রী ও বাচ্চাদের নিয়ে থাকতেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ঝাং জিয়াং বুধবার বলেছেন, এই হত্যার ঘটনা শুনে তিনি স্তব্ধ ও দুঃখিত।

তিনি একে একটি মর্মান্তিক ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। সূত্র: নয়াদিগন্ত

 

পরকীয়া ও ব্যভিচারঃ আইনে কে দায়ী?

সাঈদ আহসান খালিদ


বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘পরকীয়া’ ও ‘ব্যভিচার’- এই দুটো শব্দ আমরা হামেশা গুলিয়ে ফেলি এবং সমার্থক মনে করি যা আদতে বেঠিক। আইনি দায় নির্ধারণের পূর্বে দুটোর তফাৎ জানা জরুরি।

‘পরকীয়া’ বলতে অন্যের স্বামী বা স্ত্রীর সাথে বিবাহবহির্ভূত প্রেম বা প্রণয় কে বুঝায়, ইংরেজিতে আমরা বলি- ‘Extra Marital Affair’ । এখন এই প্রেম যৌন সঙ্গম অব্দি গড়াতেও পারে আবার নাও পারে। অর্থাৎ, পরকীয়া ব্যভিচারসহ বা ব্যভিচারহীন দুটোই হতে পারে। পরকীয়া ‘অনৈতিক’ হলেও বাংলাদেশের প্রচলিত আইনানুযায়ী ব্যভিচারের পরিণতি না পাওয়া পর্যন্ত ‘অপরাধ’ হিসেবে পরিগণিত হবে না। তার মানে যৌন সঙ্গমহীন বিবাহবহির্ভূত পরকীয়া আইনে অপরাধ নয় এবং এই পরকীয়ার অভিযোগে কাউকে দায়ী করা যায়না।

অপরের বিবাহিত স্ত্রীর সাথে যৌন সঙ্গম সংঘটিত হলে তখন সেটি আইনের ভাষায় ‘ব্যভিচার’ বা ‘Adultery’ হিসেবে গণ্য হবে। বাংলাদেশের ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারানুযায়ী ‘ব্যভিচার’ আইনের চোখে অপরাধ এবং শাস্তিযোগ্য। চলুন, দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারা পড়ে দেখিঃ

“‘কোনো পুরুষ যদি জেনেশুনে কোনো বিবাহিত নারীর সঙ্গে তার স্বামীর সম্মতি না নিয়ে বা তার অজান্তে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন, এবং অনুরূপ যৌন সঙ্গম যদি ধর্ষণ না হয় তাহলে তা ব্যভিচারের অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং শাস্তিস্বরূপ সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড অথবা জরিমানা কিংবা উভয়ই প্রযোজ্য হতে পারে। এক্ষেত্রে ওই বিবাহিত স্ত্রী অপরাধের সহযোগী রূপে কোন শাস্তি পাবে না”

এই ৪৯৭ ধারায় কাউকে শাস্তি প্রদান করতে হলে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো প্রমাণ করতে হবেঃ

▷ প্রথমত, আসামি কোনো নারীর সঙ্গে যৌন সঙ্গম করেছিল,

▷ দ্বিতীয়ত, ওই নারী বিবাহিত ছিল এবং তার স্বামী বর্তমান,

▷ তৃতীয়ত, অভিযুক্ত বিবাহের বিষয়টি জানত এবং তা বিশ্বাস করার কারণও ছিল,

▷ চতুর্থত, ওই যৌন সঙ্গম নারীর স্বামীর সম্মতি বা সমর্থন ব্যতিরেকে হয়েছিল,

▷ পঞ্চমত, ওই যৌন সঙ্গম নারী ধর্ষণের শামিল ছিল না অর্থাৎ, সঙ্গমে ওই নারীর সম্মতি ছিল।

মজার ব্যাপার হচ্ছে- এই ধারানুযায়ী ব্যভিচারের অপরাধে দায়ী হবে শুধু ব্যভিচারী পুরুষই, ব্যভিচারে লিপ্ত স্ত্রীলোকটির কোন আইনি দায় নেই এবং দুষ্কর্মের সহযোগী (Abettor) হিসেবে তার কোন শাস্তি হবে না। “ব্যভিচার প্রমাণিত হলেও স্ত্রীলোকটির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা যাবেনা”- ৪৯৭ ধারার‍ এই ব্যাখ্যা ১৯৭৪ সালে লাহোর হাই কোর্টের এক সিদ্ধান্তে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যা পাকিস্তান লিগ্যাল ডিসিশানে (PLD) সন্নিবেশিত আছে।

দেড়শো বছরের পুরনো এই ব্যভিচার আইনে আজ অব্দি কোন পরিবর্তন আনা হয়নি। ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির এই ৪৯৭ ধারা নিম্নোক্ত কারণে অসম্পূর্ণ, লিঙ্গ বৈষম্যমূলক, সেকেলে এবং বর্তমান সময়ের উপযোগী নয়ঃ

◾ পুরুষ ব্যভিচারী এবং বিবাহিত নারীটি ঘটনার শিকার- দেড়শো বছরের পুরনো সামাজিক সেই বাস্তবতা বর্তমানে অসার। সম্প্রতি ভারতের সুপ্রীম কোর্ট প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র ব্যভিচার সংক্রান্ত এক মামলায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারার এই বিধানের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছেন- ‘যদি কোনো বিবাহিতা নারী পরপুরুষের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তার দায়-দায়িত্ব ওই পুরুষের যেমন, তেমনি ওই নারীরও। সেই দায়িত্ব তো নারীটিকে নিতেই হবে। সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লাম, তার ফল ভোগ করলাম, কিন্তু দোষী হলো শুধু পুরুষ, সেটা তো ঠিক নয়।”

◾ ব্যভিচারে লিপ্ত নারী-পুরুষের মধ্যে নারীটির অন্যের “বিবাহিত স্ত্রী” হওয়াটা এই ধারায় একটি শর্ত, ব্যভিচারী পুরুষটির বিবাহিত হওয়াটা শর্ত নয়। ৪৯৭ ধারার এই অংশটি অসম্পূর্ণ এবং ধর্মীয় আইনের সাথে সাংঘর্ষিক। বাংলাদেশের আইনানুযায়ী একজন অবিবাহিত পুরুষ ও অবিবাহিত নারী কিংবা একজন বিবাহিত পুরুষ ও অবিবাহিত নারীর মধ্যকার পারষ্পরিক সম্মতিমূলক যৌন সঙ্গম ও একত্র বসবাস আইনসম্মত এবং তা ব্যভিচার বলে গণ্য হয়না।

৪৯৭ ধারার ব্যাখ্যানুযায়ী একজন বিবাহিত পুরুষের সঙ্গে একজন অবিবাহিত, বিধবা বা স্বামী পরিত্যাক্ত নারীর মধ্যে যদি পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে শারীরিক সম্পর্ক হয়, তাহলে তা ব্যভিচার বলে গণ্য হবে না এবং ওই লোকের স্ত্রীটি অভিযুক্ত স্বামী কিংবা পরকীয়ায় লিপ্ত নারীটির বিরুদ্ধে কোন আইনগত প্রতিকার পাবে না।

◾ ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী, স্বামীর “সম্মতি” (Consent) নিয়ে বা জ্ঞাতসারে (Connivance) তাঁর বিবাহিত স্ত্রীর সাথে অন্য পুরুষ যৌন সঙ্গম করলে তা ব্যভিচারের সংজ্ঞায় পড়বেনা। স্ত্রীর সম্মতি এখানে অপ্রাসঙ্গিক। ব্যভিচারে বিবাহিতা মহিলার স্বামীর সম্মতি থাকা মানে কী? স্ত্রী কি স্বামীর সম্পত্তি না পণ্য? আবার দৃশ্যের অন্যপিঠও আছে- এ প্রসঙ্গে সাহিত্যিক আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের “আমি সে ও সখা” গল্পটি প্রণিধানযোগ্য যেখানে স্বামী মনে করেছেন বিবাহিত জীবনের স্বাভাবিক সম্পর্ক ধরে রাখতে সে অক্ষম ৷ তাই স্বামী প্রতিবাদহীন মেনে নিয়েছে- অন্য পুরুষের সঙ্গে যদি তাঁর স্ত্রী ভালো থাকে, তো থাকুক৷ এই প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে ব্যভিচারের অভিযোগ হালে পানি পাবেনা।

পরকীয়া ও ব্যভিচার একটি সামাজিক অনাচার, সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। বিয়ে ও পরিবারের মতো গুরুত্ত্বপূর্ণ সামাজিক সম্পর্ক কে সুরক্ষা দিতেই ১৮৬০ সালে দণ্ডবিধির এই ৪৯৭ ধারার উৎপত্তি। কিন্তু কালক্রমে এই ধারাটি অকেজো এবং অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। দেড়শ বছরের পুরনো এই আইনের সংশোধন এখন সময়ের দাবি।

====================
@ সাঈদ আহসান খালিদ
আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

 

মনের কথা

কানিজ ফাতিমা


  •  প্রকৃতিতে আমার কোনো ক্লান্তি নাই, ঘন্টা কেন, দিনের পর দিন একই দৃশ্যে তাকিয়ে থেকেও চোখ ফেরেনা আমার। কেউ হয়ত ভাববে, কি দেখে এত চেয়ে চেয়ে ? নিরত দু’চোখ মেলে পথের ধারের বনফুল দেখি,ছোট্ট ডোবায় হাসের নিস্তব্দ ভেসে যাওয়া দেখি, আকাশের মেঘ দেখি- সাদা মেঘ, ধুসর মেঘ, ঘন মেঘ, তুলির ছোপ মেঘ আর চপলা মেঘ – ক্লান্তিরা কখন ক্লান্ত হয়ে ফিরে যায় আমার অক্লান্ত চেয়ে থাকা দেখে। সাদা কয়েকটা মেঘের টুকরায় এত দেখার কি আছে ? আমার আছে। একটা কালো পাখির লেজ দোলানো, গাছের ডালে মৃদু-মন্দ বাতাসে পলকা বরফের ঝুর ঝুর ঝরে পরা, শীতের বাতাসে শুকনো পাতার ফুরুত ফুরুত ওড়া, পথিকের হেটে যাওয়া, হাত নাড়ানো, স্কুলের সামনের গাছটার সোজা উপরের দিকে উঠতে উঠতে হতাঠ বেঁকে যাওয়া, গাড়ীর দরজা খুলে একজন মহিলার বের হয়ে আসা – এসব সাধারণ দৃশ্যেও আমার বিস্তর আগ্রহ। সিনেমা দেখে, গল্প করে, আড্ডা দিয়ে আমার বিনোদনের দরকার হয় না, চারপাশই আমার বিনোদনের উত্স। প্রকৃতির পানে নীরব চাহনীতেই মিশে থাকে আমার মনের খোরাক।
    স্টাফ রুমের পুরো দেয়াল জুড়ে কাচের জানালাটা আমার খুব প্রিয়। অতি ব্যস্ত সিডিউলেও সুযোগ করে জানলার ধরে বসে একটু জিরিয়ে নেই। কলিগরা সবাই যখন গল্পে বা পেশাগত আলাপচারিতায় ব্যস্ত, আমি তখন হারিয়ে যাই আমার গোপন দৃষ্টির ভুবনে, পেছনের কিছুই টানেনা আর – জেগে থাকে শুধু সামনের দিগন্তে দু’চোখের তাপসী ধ্যান। দু’টো বাচ্চা নিয়ে এক মা বেরিয়ে এলো গাড়ী থেকে, মাঝারী ঠান্ডা, তাই ওদের কারো পায়েই ভারী বুট নেই, হালকা জুতো। ওরা হেটে আসছে আমার দিকে। মানুষের হাটাও যে কত বিচিত্র! – উলম্ব হাটা, ঝুলন্ত হাটা , ক্লান্ত হাটা, আত্মবিশ্বাসী হাটা, বিষন্ন হাটা, কৃত্রিম হাটা- আরো কত কী ! মহিলাটি আত্মবিশ্বাসী হাটা হাটছে, বাচ্চা দু’টোকে একটু আগলে নিয়ে। তার মুখ আমি দেখতে পাচ্ছিনা , কিন্তু এত দূর থেকেও তার বাচ্চা আগলে দৃঢ় হাটার ভঙ্গীতে তাকে অপূর্ব লাগছে। ওই যে পেছনের পার্কিং লট থেকে বেরিয়ে এলেন আরেক মহিলা। বয়স পূর্বের মহিলার মতই হবে বোধ করি, কিন্তু হাটছেন কিশোরী ছন্দে, জ্যাকেটের জীপার এর মধ্যখান থেকে বেরিয়ে এসে একটা সরু সাদা রেখা দুভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়ে দু’ কানে মিশেছে – আশংকা করি সে গাড়ী চালানোর সময়ও এ দু’টোকে কান থেকে নামায়নি। অদ্ভুত ভাবে হাটছে মহিলা। বরফ কিছুটা গলে গেলেও এখানে সেখানে স্তুপ স্নো এখনো রয়ে গেছে, আর তার নীচে লুকিয়ে থাকা ছোপ ছোপ বরফ জমে আছে কোথাও কোথাও। এর মাঝ দিয়ে মহিলাটা একে বেকে হাটছে, নতুন হাটতে শেখা বাচ্চদের মত – পার্থক্য শধু এইযে তার পুরোটাই কৃত্তিম, বাচ্চদের অকৃত্তিম টলমলে হাটা নয়। দোতলার জানালায় বসে দেখলাম পার্কিং লটের মাঝা মাঝি থেকে স্কুলের গেটে ঢোকা পর্যন্ত এতগুলো পদক্ষেপের একটিতেও মহিলার দৃঢ়তা ছিলনা একফোটা। ভাবছিলাম এই বয়সের এক মহিলা কেন বরফের পিচ্ছিল পথে হাটার জন্য বেছে নিয়েছেন সরু হিলের বুট, কেন তিনি নিজেই নিজের চলাকে করেছেন বিপজ্জনক, কেন তিনি তার নিজের কোমরে, মেরুদন্ডে সৃষ্টি করছেন অতিরিক্ত ক্ষতিকর চাপ? এবং সর্বপরি যে “সৌন্দর্য” বা “স্মার্ট নেস” এর জন্য তিনি এই কষ্ট ও বিপদকে মেনে নিয়েছেন সেটার লেশ মাত্রও তো দেখতে পাচ্ছিনা আমি তার ভীরু, আত্ববিশ্বাসহীন, অনেকটা ভাড়ীয় হাটায়। তারপরও কেনো তিনি এটাকেই মনে করছেন “ফ্যাশন”?
    ফেসবুকে ঢাকার উঠতি বয়সের কিছু তরুনীদের ছবি দেখি টাইট জিন্সের প্যান্টে। এসব প্যান্ট তৈরী করা হয় শীতের দেশের জন্য। বাংলাদেশের গরম আবহাওয়ায় যে তাদের অনেক কষ্টে এই “ফ্যাশন” কে ধারণ করতে হচ্ছে তা বুঝতে কারো কষ্ট হবার কথা নয়। কষ্ট হোক তবু “স্মার্ট” তো হতে হবে।
    আচ্ছা, স্মার্টনেসের সংগাটা কি? বরফের ওপর বিপজ্জনক ও ক্ষতিকর উচু হিল? গরমে মোটা টাইট প্যান্ট? নাকি আবহাওয়া অনুযায়ী সঠিক পোশাক নির্ধারণের মত মগজের ক্ষমতা? কে বেশী স্মার্ট, যে টিভির বিজ্ঞাপন দেখে বরফের মধ্যেও হিল পরে ভাড়ীয় হাটা হাটে নাকি যে আবহাওয়া সম্পর্কে অবগত থাকে এবং নিজের মাথার ব্যাবহার করে সঠিক জুতা নির্ধারণ করার ক্ষমতা রাখে? যে হকার্সে গিয়ে টাইট জিন্স কিনে টেনে-টুনে শরীরে ঢুকায়, নাকি যে জানে যে গরম আবহাওয়ায় ঢিলা- ঢালা পোষাক আর হালকা মেকআপ বেশী উপযোগী? কে বেশী স্মার্ট, যে নিজের মাথার ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত নেয়, নাকি যে নিজের চোখের মাথা খেয়ে মিডিয়ায় দেখানো অখ্যাদ্য কুখাদ্যকে বিশেষ “সুখাদ্য” হিসাবে চোখ বুজে গেলে?
    সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমান প্রাণী হয়েও আমরা কিভাবে নিজের মস্তিস্কের হালটা নিশ্চিন্তে ছেড়ে দিতে পারি মিডিয়ার ওপরে? আমরা যখন নিজের ভাবনা নিজে নাভেবে মিডিয়াকে ভাবিয়ে নিতে দেই তখনই মিডিয়ার প্রচারে মিথ্যা আর অসুন্দর গুলো আমাদের মস্তিস্ককোষে বাসা বাধে সুন্দর আর সত্য রূপে। ক্রমে ক্রমে আমরা মানুষেরা হারিয়ে ফেলি আমাদের দৃষ্টিশক্তি, ক্ষয়ে যায় আমাদের চিন্তাশক্তি- চরম অসুন্দর দৃশ্যগুলো রুপান্তরিত হর সুন্দরতমে; দৃষ্টিকটু হয়ে ওঠে আকর্ষনীয়, মিথ্যা রুপান্তরিত হয় একমাত্র সত্যে, চক্রান্ত মূর্ত হয় চেতনায়। অবশেষে সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমান মানুষ হয়ে যায় বুদ্ধিহীন মিডিয়াধীন এক পরজীবীতে, এভাবেই হারিয়ে যায় তার স্বাধীনতা আর শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয়।

 

রূপান্তরের যাত্রা – পর্ব ৪

তাহনিয়া খান


বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

Rabbish rahli sadri wa yas-sir li amri wahloul uqdatam mil-lisaani yafqahu qawli.
O my Lord! expand me my breast; Ease my task for me; And remove the impediment from my speech, So they may understand what I say. [20:25-28]

যারা হজ্জে গিয়েছিলেন তারা এসে বা ফোন করে আমাকে অনেক উপদেশ দিলেন। কোথায় কি সুবিধা অসুবিধা হতে পারে খুটি নাটি অনেক কিছু জানালেন। খুব কাজে লেগেছিল তাদের উপদেশগুলো।

আমার যাওয়ার দিন চলে আসলো। একি সাথে আনন্দ আর বেদনা আমার মনে। মনে আশা আল্লাহ্‌র মেহমান হতে যাচ্ছি। আমি তো শুধু মেহমান না, আমি জিহাদেও যাচ্ছি। হজ্জ তো মেয়েদের জন্য একটা জিহাদ। এহরামের কাপড় পরে দু রাকআত নামাজ পড়ে ফেলার পর হাত পা কাপতে লাগলো। আমি রীতিমত ভয়ে কাপছি। কাউকে বুঝতে দিচ্ছি না। নামাজে তো আল্লাহ্‌র সামনে হাজির হই। কিন্তু তখনো এমন ফিলিংস মনে আসে না। মাথায় কত কি ঘুরপাক খাচ্ছে। কান্নাও আসছে বাচ্চা দুটোর জন্য। আমার বিশ্বাস তারা তাদের বাবার কাছে ভালো থাকবে। তারপরেও বুকটা কেমন খালি খালি লাগছে। তাদের জন্মের পর তো তাদের কখনো কাছ ছাড়া করিনি। এতদিন প্রস্তুতির ঘোরে বাচ্চাদের ছেড়ে থাকার বিষয়টা অতটা মাথায় আসেনি। আসলে আল্লাহ্‌র ঘরে যাবো, এইটাই বেশী গুরুত্বপুর্ন ছিল। আর যেহেতু স্বামী থাকবে তাই নিশ্চিন্তে ছিলাম। কিন্তু হঠাত যাবার বেলায় যে কি হোল। মনে হচ্ছিল আর যদি ফিরে না আসি, তখন কি হবে? বাচ্চাদের কি আর দেখতে পারবো না ? আমাকে অনেকেই কঠোর হৃদয় এর অধিকারি বলেছিল। কিভাবে আমি স্বামী সন্তান ফেলে চলে যাচ্ছি। তাদের কে আমি বুঝাতে পারিনি যে আল্লাহ্‌র কাজের জন্য এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে দুনিয়ার সম্পর্ক আল্লাহ্‌র সম্পর্কের কাছে তুচ্ছ হয়ে যায়। যদিও এসব সম্পর্কের উপর ভিত্তি করেই মানুষের জীবন চলে । আবার এসব সম্পর্কের সাথে আচার আচরণ বা লেনদেনের কারণে জবাবদিহি করতে হবে।

বাসার সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সরাসরি এয়ারপোর্টে চলে আসলাম। সাথে বাচ্চারা, স্বামী, আম্মু আর ভাইয়েরা। ফ্লাইট ছিল ভোর চারটার সময়। আমাদের এজেন্সি রাত দুটোয় আসতে বলেছিল। এয়ারপোর্টের ভিতরে হাজীদের ঢুকার জন্য আলাদা ব্যবস্থা। সেখানে অন্য কেউ ঢুকতে পারবে না। শেষ বিদায় নেওয়ার পালা।

এতক্ষন যে বুকের ভিতর বাচ্চাদের জন্য, স্বামীর জন্য কষ্ট অনুভূত হচ্ছিল, সেটা হঠাত উধাও হয়ে গেল। সবার কাছ থেকে আবারো মাফ চেয়ে বিদায় নিয়ে ভিতরে ঢুকে গেলাম। প্রথম পা ঢুকানোর সাথে সাথে মনে হোল, সব পিছুটান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম। পিছুটান না থাকার আরো প্রমান আমি পেয়েছি হজ্জে গিয়ে। খুব কম মানুষকে দেখেছিলাম যারা তাদের পরিবার নিয়ে চিন্তিত ছিল। বেশীরভাগ মানুষই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। একদিন আমার স্বামী ফোন করে কোন এক কথা প্রসঙ্গে বলেছিল যে , তুমি জানো না যে গাদ্দাফীকে মেরে ফেলা হয়েছে? আমি বলেছিলাম জানিনা। সে অবাক হয়ে বলেছিল, পেপার পড় না, টিভি দেখো না ? আমি হেসে বলেছিলাম, এ অন্য জগত। এসবের সময় নাই। সবাই নিজের কাজ করছে। দরকার হলে পাশের মানুষটাকে সাহায্য করছে। সবার মাঝেই কেমন এক ঘোর লাগা অবস্থা। নিয়মের বাইরে কোন কাজ নেই, সময় নষ্ট নেই।

হজ্জের চতুর্থ শিক্ষা— ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি যে, কেয়ামতের সময় সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। সেই অনুভূতি পেলাম এয়ারপোর্টে ঢুকার পর থেকে একেবারে হজ্জের শেষ সময়টুকু পর্যন্ত। আমার সব সময় মনে হয়েছে যে, আমার পরিবার,বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজন পৃথিবীর একপ্রান্তে,আর আমি আরেক প্রান্তে। আমি ছুটে যাচ্ছি আমার গন্ত্যবে, পাপ মোচনের আশায়, আল্লাহ্‌ কে সন্তষ্ট করার আশায়। দোয়া করা ছাড়া কেউ আর আমার জন্য কিছুই করতে পারবে না, আমিও দোয়া করা ছাড়া তাদের জন্য কিছুই করতে পারবো না। বেলা শেষে আমরা আসলে সবাই একা।

চলবে….

রূপান্তরের যাত্রা – পর্ব ৩

 

ছোটবেলার স্মৃতি

রেহনুমা বিনত আনিস


আমার জন্ম নীল আর্মস্ট্রং চাঁদে পা দেয়ার কয়েকবছর পর, এক দ্রুত পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে – যেখানে প্রতিদিন বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কার মানুষকে চমৎকৃত করছে, আগ্রহী করে তুলছে জ্ঞানের নতুন নতুন দিগন্তের প্রতি, ইউরোপ অ্যামেরিকা থেকে প্রকাশিত বই ম্যাগাজিন ডাকযোগে পৌঁছে যাচ্ছে সাধারন বাংলাদেশী পাঠকদের দুয়ারে; আজকের ব্ল্যাক অ্যান্ড ওয়াইট টিভি কাল রঙ্গিন হয়ে যাচ্ছে, টিভির পর্দায় বাংলার পাশাপাশি ভেসে আসছে ইংরেজী অনুষ্ঠানও; উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা পাজামা পাঞ্জাবী শাড়ি ছেড়ে প্যান্ট শার্ট সালোয়ার কামিজের দিকে ঝুঁকে পড়ছে, বিদেশ থেকে ক্যাটালগ এনে নকল করে জামা তৈরী হচ্ছে বাংলাদেশে; ড্যাটসান আর কচ্ছপের মত ভক্স ওয়াগন গাড়ীর পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে গরীবের টয়োটা আর আরবী শেখদের মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ী; আর শবে বরাতে তারাবাতি আর বাজিপটকা ফুটানোর পরিবর্তে নামাজ পড়ার প্রতি তাগিদ আসতে শুরু করেছে।
যেকোন পরিবর্তনশীল সমাজের মতই এই সমাজে ছিলো অস্থিতিশীলতা, পরিবর্তনের কিছু ভালো আর কিছু খারাপ ফলাফল। অল্প বয়সে পড়তে শেখায় চার পাঁচ বছর বয়সেই পরিণত হয়েছিলাম সর্বভুক পাঠকে। বাসায় ইংরেজীর চল ছিলো, যা জ্ঞানের দিগন্ত প্রসারিত করার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে যেহেতু তখনো অধিকাংশ তথ্যমূলক বই এবং অনুষ্ঠান ছিলো ইংরেজীতে। তার ওপর ছিলো লেখালেখি করার অনুপ্রেরণা যা সেই ছ’বছর বয়সেই ভাবনার কুঁড়িগুলোকে মেলতে সহায়তা করে।
স্বভাবগতভাবে ছোটবেলা থেকেই ছিলাম চিন্তাশীল ও চুপচাপ যার ভালো বাংলা হল ‘অলস’। ছুটোছুটির চেয়ে ভাল লাগত টেবিলের নীচে ঘর বানিয়ে রান্নাবাটি আর পুতুল খেলা। দুষ্টুমীর মধ্যে সবচেয়ে পছন্দ ছিলো জানালার গ্রিলের ভেতর দিয়ে পা গলিয়ে বাইরে পা ঝুলিয়ে বসে বৃষ্টি দেখা আর ফুল চুরি করা। একদিন ফুল ছেঁড়ার সময় বাবা দেখে ফেলল। বাসায় এসে পাশে বসিয়ে বলল, ‘যারা অন্যের জিনিস তাদের অনুমতি ছাড়া নিয়ে নেয় তাদের বলে চোর। এখন তুমিই বল, তুমি কি চোর?’ সেদিন থেকে এই বদস্বভাবের পরিসমাপ্তি ঘটে। এর পর থেকে ফুলটাইম মুখচুরির পেশা হয় যায়, যেখানেই যাই একটা নির্জন জায়গা দেখে বসে পড়ি একটা বই নিয়ে।
সচরাচর সমবয়সীদের তুলনায় কথা বলতাম কম, যা বলতাম তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হত ফিলোসফিকাল টাইপের, মানে এই দুনিয়ার সাথে সম্পর্কচ্যূত। এক পার্ফেক্ট পৃথিবীর স্বপ্ন দেখতাম। ছোটবেলা থেকেই খুব শেল্টারড পরিবেশ বড় হলেও বুঝতাম এই পৃথিবীটা খুব একটা ভাল জায়গা না। তাই হোসেন ভাইয়া যখন বারান্দায় মরিচ শুকাতে দিতে দিতে ক্ষ্যাপাতে থাকত তখন বলতাম, ‘দাঁড়াও, মানুষ অলরেডি চাঁদে পৌঁছে গিয়েছে, কিছুদিন পর মঙ্গলেও চলে যাবে। কিছুদিনের ভেতর পৃথিবীর সব ভাল মানুষগুলো চাঁদে চলে যাবে, আর সব পঁচা মানুষগুলো পৃথিবীতে রয়ে যাবে। তোমাকে এখানেই থাকতে হবে, কারণ তুমি যে পঁচা!’ তবে অনেক বড় হয়ে বুঝেছি ভাল আর মন্দের তফাতটা এত স্পষ্ট বা এত সহজ নয়, একই মানুষ পরিস্থিতি এবং দৃষ্টিকোণ ভেদে দু’টোই হতে পারে। তাই হয়ত এত বছর পরেও আমি আর হোসেন ভাই এই একই পৃথিবীতে অবস্থান করছি।
বইয়ের পাতায় ডাইনোসরদের সাথে প্রাগৈতিহাসিক যুগে আর কল্পনার রকেটে বিভিন্ন গ্রহতারায় ঘুরে বেড়ালেও বাস্তবতার স্পর্শ তখনো জীবনে এসে লাগেনি। ছোটবেলায় আদর করে সবাইকে ডাকতাম কদু, শুধু রঙ হত আলাদা আলাদা। মৃত্যুর কন্সেপ্ট তখনো ছিলোনা। ভাবতাম আমার এই লাল কদু নীল কদুরা সবাই বুঝি অমর! আমি যখন বড় হয়ে যাব তখন ওরা আবার ছোট হয়ে যাবে, আবার ওরা বড় হতে হতে আমি ছোট হয়ে যাব। বাবা-মাকে বলতাম, ‘চিন্তা কোর না, যখন আমি বড় হয়ে যাব তখন তো তোমরা ছোট হয়ে যাবে, তখন আমি তোমাদের দেখব’। প্রথম মৃত্যু দেখি সাত বছর বয়সে, পাশের বাসার হাজী সাহেবের, আমি নিশ্চিত ছিলাম তিনি ঘুমোচ্ছেন আর তাঁর মেয়েরা কান্নাকাটি করে তাকে ডিস্টার্ব করছে, যেকোন সময় তিনি জেগে উঠে বলবেন, ‘অ্যাই কি শুরু করলি তোরা? ঘুমোতেও দিবিনা নাকি?’
যখন মৃত্যুর কন্সেপ্টটা মাথায় ক্লিয়ার হোল, তখন আবিষ্কার করা প্রয়োজন হয়ে পড়ল এর পর মানুষটা কোথায় যায়। তখন পড়াশোনা শুরু করলাম আখিরাত এবং কিয়ামাত নিয়ে। এতটুকু বুঝলাম, আমার পার্ফেক্ট পৃথিবীর অস্তিত্ব অলীক নয়, যদিও এর অবস্থান চাঁদ কিংবা মঙ্গলে নয়, জান্নাতে। তখন আবার গবেষনা করার প্রয়োজন হয়ে পড়ল জান্নাতে যেতে হলে কি কি প্রস্তুতি লাগবে। রাসূল (সা)সহ বিভিন্ন নবী রাসূল এবং বিখ্যাত ব্যাক্তিবর্গের জীবন থেকে আবিষ্কার করার চেষ্টা করতে শুরু করলাম কি কি যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। আট বছর বয়সে তাপসী রাবেয়ার জীবনী পড়ে পুরাই উতলা হয়ে গেলাম। নানী যখন রাতে ঘুমাতে ডাকল, বললাম, ‘তোমার জান্নাতে যাবার প্রয়োজন নেই তুমি ঘুমাও। আমি সারারাত নামাজ পড়ব’। নানী বলল, ‘না ঘুমালে শরীর খারাপ হবে’।

তাপসী রাবেয়ার প্রতিধ্বনি করে বললাম, ‘কবরে গেলে ঘুমোনোর অনেক সময় পাওয়া যাবে’। আধঘন্টা পরই দেখি ঘুমে ঢুলে পড়ে যাচ্ছি! ভাবলাম, নামাজই পড়তে হবে এমন তো কথা নেই, তাপসী রাবেয়া তো জিকরও করতেন, শুয়ে শুয়ে জিকর করলে নিশ্চয়ই কোন অসুবিধা নেই! নানীর পাশে শুলাম, নানী মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল, আরামে কোথায় যে হারিয়ে গেলাম! সকালে উঠে চোখ কচলাচ্ছি, দেখি নানী সামনে বসে মিটিমিটি হাসছে, ‘কি গো তাপসী, তোমার ফজরের নামাজ গেল কই?’ ঐ প্রকল্পের ওখানেই করুণ পরিসমাপ্তি!
কিন্তু শৈশবের এই জিনিসটাই সবচেয়ে মূল্যবান। অসম্ভব স্বপ্নকেও পরিপূর্ণ সততার সাথে লালন করা কেবল একজন শিশুর পক্ষেই সম্ভব। এই ইনোসেন্সই শৈশবের শক্তি। এই স্মৃতি আমাকে কাতর করেনা, বরং প্রেরণা জোগায়।
স্কুলে ভাল ছাত্রী ছিলাম না। স্কুলের বই বড় আটপৌরে লাগত। আমি তখন বিশ্বের এনসাইক্লোপিডিয়া পড়ছি – সম্রাট অ্যালেকজান্ডারের সাথে বেরিয়ে পড়েছি বিশ্বজয়ে, রাধানাথ শিকদারের সাথে এভারেস্টের উচ্চতা মাপঝোঁক করছি, মারিয়ানাস ট্রেঞ্চে ঊঁকিঝুঁকি করে দেখার চেষ্টা করছি কিছু দেখা যায় কিনা। কিছুদিন পরপরই নতুন বইয়ের সাপ্লাই আসে বাংলাদেশ থেকে। ছুটির দিনে বাবার সাথে সমুদ্রের পাড়ে মাছ ধরতে যাই; বাবার স্পন্ডিলাইটিস, ওজন আল্গানো নিষেধ, তাই বাজার ঘাট দোকানপাটেও আমি বাবার নিত্যসঙ্গী; ছোট ভাই দু’টোর গার্ডিয়ান আমি; আমার পড়াশোনার সময় কই?
একদিন হুট করে জীবনের সব গতি স্তব্ধ হয়ে গেল। দিন কাটতে লাগল হাসপাতালে, ডাক্তার থেকে ডাক্তারের চেম্বারে। তিনমাস পর একদিন নিশিযাপনের জন্যও ভর্তি হয়ে গেলাম। এগারো বছরের একটা কিশোরী যখন মৃত্যুর মুখোমুখি হয় তখন এক ঝটকায় তার বয়স অনেক বেড়ে যায়। আবুধাবীতে ভিজিটর্স আওয়ারের বাইরে কেউ দেখতে আসার অনুমতি নেই, বয়স কম বলে পরিবারের বাইরে কেউ আসার প্রশ্নই আসেনা। বাবা অনেকগুলো রিডার্স ডাইজেস্ট দিয়ে গেল। সেই প্রথম কল্পনাপ্রবণ মেয়েটির বিজ্ঞান, ইতিহাস আর কল্পকাহিনী ছেড়ে সত্যিকার মানুষদের সত্যিকার জীবনের সত্যিকার সমস্যার সাথে পরিচয়। পরিচয় হাসপাতালে আসা দুঃখী মানুষগুলোর সাথে, তাদের কষ্টের কাহিনীর সাথে, নিজের ভালোবাসা দিয়ে অ%?৯পরের দুঃখহারিনী নার্সদের উদারতার সাথে।
তখন মাত্র নানাপ্রকার গেম বাজারে আসতে শুরু করেছে। প্রথম দিককার গেমগুলো ছিলো ঘড়ি কাম গেম, সাইজে আজকালকার গেমগুলোর রিমোটের চেয়েও ছোট, নাম ছিলো গেম অ্যান্ড ওয়াচ। এসব জিনিসের প্রতি তেমন বিশেষ আকর্ষন ছিলোনা আমার। কিন্তু নিদ্রাহীন রাতে হসপিটালের বিছানায় একা শুয়ে কাঁহাতক ব?*+৯(ই পড়া যায়? তাই বসলাম খেলনাটা নিয়ে। স্ক্রীনের দু’পাশে ওপরে নীচে দু’টো করে মুরগীর খোপ, প্রতিটি খোপ থেকে নেমে এসেছে একটি করে পাটাতন, মুরগীগুলো ডিম পাড়ে আর ডিমগুলো নাচতে নাচতে পাটাতন বেয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকে, মাঝখানে ঝুড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে মিকি মাউস ডিমগুলোকে নীচে পড়া থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করতে করতে অস্থির, কারণ মুরগীগুলো প্রথমে ডিম পাড়ে একটা দু’টো করে, তারপর ডিম পড়তে থাকে অজস্র, অথচ তিনটা ডিম মাটিতে পড়লেই গেম ওভার!
গেম খেলতে খেলতে দু’টো সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম। এক, জীবনে সব প্রজাপতির পেছনে ছুটে লাভ নেই, একটা প্রজাপতিকে লক্ষ্য সাব্যাস্ত করতে হবে, সংকল্প করতে হবে এটিই আমার চাই, পথে যদি আরো কোন প্রজাপতি জালে আটকা পড়ে ভালো, কিন্তু অন্য প্রজাপতি ধরতে গিয়ে আসলটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে চলবেনা। দুই, অসামাজিক হবার কারণে সামাজিক কথাবার্তা এবং আচরনে যে ডিপ্লোমেসি লুব্রিকেন্ট হিসেবে কাজ করে সেগুলো আমার অভাব ছিলো। মনের কথা উগড়ে দিতাম চাঁচাছোলা অবস্থায়, তেলমসলা ছাড়া! বাবামা সারাক্ষণ অস্থির থাকত আমার কথাবার্তা কিভাবে ভদ্রস্থ করা যায়। যদিও এর জন্য ওদের পরিশ্রম করতে হয়েছে বহু বছর, তবু সুন্দর করে কথা বলা শিখতে পারিনি, শিখেছি বড়জোর চুপ করে থাকা। তবে জীবনের অভিজ্ঞতা এটাই শিখিয়েছে, বোবার শত্রু নেই কথাটা ভুল। যে আমাকে ভালবাসবে সে আমার ভুলত্রুটিগুলোকেও আপন করে নেবে। আর যে আমাকে ভালোবাসেনা সে আমার নীরবতার মাঝেও ত্রুটি খুঁজে নেবে। জীবনে সব ডিম রক্ষা করা যাবেনা, করার প্রয়োজনও নেই, সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে, তারপরও ডিম ভেঙ্গে গেলে তোয়ালে দিয়ে ফ্লোর পরিষ্কার করে বাকী ডিমগুলোর দিকে নজর দিতে হবে।
এর একমাস পর আল্লাহ আলৌকিকভাবে সুস্থতার পথ বাতলে দিলেন। হসপিটাল থেকে ফিরে এসে নিজের মাঝে এক বিশাল পরিবর্তন অনুভব করলাম। কল্পনাপ্রবণ কিশোরীটা রূপকথার জগত থেকে বেরিয়ে এসে একটু একটু করে বাস্তবতার দিকে পা বাড়াতে লাগল। তেরো বছর বয়সে আমি লিখি এক ঘোড়ার আত্মকাহিনী যেটা ইয়াং টাইমসের মূল ফিচার হিসেবে প্রকাশিত হয়। আমার নিজের লেখাগুলোর মাঝে এই লেখাটা আমার খুব প্রিয়।
এর শেষ লাইনটি ছিলোঃ Wanderers of the desert, heroes of war, we now stand in dirty stables, waiting for death’.

উপসংহার হোল, জীবনের গতিপ্রকৃতির ওপর আমাদের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই, কিন্তু কোন পরিস্থিতিতে আমরা কি করব সে সিদ্ধান্তগুলো একান্তই আমাদের নিজেদের। জীবনের শেষপ্রান্তে এসে জাবর কাটার মুহূর্তে কোন আক্ষেপ যেন আমাদের মনকে আচ্ছন্ন করতে না পারে সে সংকল্প আমাদের জীবনের শুরুতেই নিতে হবে। এই আমার শৈশবের শিক্ষা। এই শিক্ষাই আমার জীবনের প্রাপ্তি।

 

মেহরিন’ অস্ট্রেলিয়ার প্রথম মুসলিম নারী সিনেটর

নারী সংবাদ


প্রথমবারের মত অস্ট্রেলিয়ার সিনেটে প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মুসলিম নারী ‘মেহরিন ফারুকি’। বুধবার তাকে সিনেটের একটি শূন্য পদে মনোনয়ন দেয়া হয়। সিনেটর নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি নিউ সাউথ ওয়েলস থেকে গ্রিন পার্টির সাংসদ ছিলেন। ২০১৩ সালে তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন।

আগামী সপ্তাহে মেহরিন সিনেটর হিসেবে শপথ নেবেন।

বিবিসিকে মেহরিন বলেন, “তার কাজ হবে একটি ইতিবাচক অস্ট্রেলিয়া গড়ার পক্ষে, যেখানে ধর্ম-বর্ণের বিচিত্রতা থাকবে। তাঁর মতে, এই বৈচিত্র্যের মধ্য দিয়ে (তাঁর সিনেটর হওয়া) অস্ট্রেলিয়ার ভবিষ্যৎ আরও শক্তিশালী হতে যাচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “সিনেটর হিসেবে আমার প্রধান দায়িত্ব হবে বর্ণবাদকে পরাজিত করা।”

মেহরিন ১৯৯২ সালে পরিবারের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া আসেন। পরিবেশ বিজ্ঞানে ডক্টরেট করা মেহরিন ক্যারিয়ার শুরু করার পরই রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এই মুসলিম নারী পেশায় পরিবেশ প্রকৌশলী। তিনি নারীবাদী হিসেবেও বেশ পরিচিত।

সুত্র: খবর বিবিসি।

 

ক্লান্তিহীন ভালোবাসা

ডা. সাকলাইন রাসেল


মন খারাপ?
কি করেন আপনি মন খারাপ হলে?

-গান শোনেন?
-লেখালেখী করেন?
-বেড়াতে যান?
-সিনেমা দেখেন?
-ঘুরতে যান?
-আড্ডা দেন?

নাকি বিড়িতে টান দেন? নাকি এর চেয়েও বড় কিছু?
নাকি ঘুমের ঔষধ খেয়ে শুয়ে পড়েন..কমপক্ষে ৮ ঘন্টা.. একেবারে অর্ধমৃত ঘুম!

আমার পরিচিত কয়েকজন মানুষ আছে..মন খারাপ হলে তারা সাজুগুজু করেন..লম্বা সময় শাওয়ার নেন..আই মিন গোসল করেন..শপিং এ যান…এবং সত্যি সত্যি তাদের মন ভাল হয়ে যায়!
অবশ্য এই মানুষগুলোর সবাই নারী প্রজাতির!

আমার স্বভাব একটু ভিন্ন..অল্প স্বল্প মন খারাপে কিছুই হয়না..বেশি হলে মা কে খুঁজি!
সত্যি বলছি.. মা কে খুঁজি!
যেখানে যে অবস্থায় আছি..সেখান থেকে দৌড়ে যাই মা’র কাছে…পথে হাঁটতে গেলে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলে মানুষ কি করে?উর্ধশ্বাসে দৌড় দেয়..আমিও তেমন হাসফাস করতে থাকি..কত দ্রুত মায়ের কাছে পৌছানো যায়!
আজও গেলাম..
মা ব্যস্ত মেহমানদারীতে.. ফাঁকে তার পাশে বসলাম..মা খাটে বসে..পা ঝুলছে ফ্লোরে..আমি ফ্লোরে বসে খাটে ঠেস দিয়ে!
একটু নীরবতা..কিছু একটা বলতে চাচ্ছিলাম..বের হল না! বড় হওয়ার এই একটা সমস্যা..কথার পাহাড় জমে বুকে..অথচ গলায় এসে আটকা পড়ে..ঢাকার জ্যামের মত..যার শুরু আছে শেষ নেই!
ছোটবেলায় এমন ছিলাম না..মন খারাপ হলেই সোজা মায়ের গলা ধরে ভ্যা ভ্যা..এখন পারিনা..না পারাই নিয়ম..অথচ বড়রাও কাঁদে..ছোটদের সাথে এ কান্নার পার্থক্য আছে..এ কান্না শব্দহীন..অশ্রু অদৃশ্যমান!
তবে মা তো..প্রকাশ করা লাগেনা..ক্যামনে জানি বুঝে ফেলেন..সেই ছোটবেলার মত আজো!
-কী রে..মুখ শুকনা ক্যান? দুপুরে কি খেয়েছিস?

তিনি আসলে মনের খবর নিতে সাহস পাচ্ছিলেন না..বড়দের মনের খবর নিতে নাই..ইগোতে লাগে!
মনে হচ্ছিল..গলাটা ধরে সেই ছোট বেলার কেঁদে উঠি..আম্মু, কিছু ভাল লাগছেনা!
প্রতিবারের মত আজও পারলাম না..মনের সব কষ্ট বড় শরীরের প্রাচীরে আটকা পড়ে গেল..সাগরের উত্তাল ঢেউ যেমন পাহাড়ের বুকে আঁচড়ে পড়ে..তেমনি!
আমার একটা হাত ঘাড়ে ছিল..মা সেদিকে তাকিয়ে বলল, কি রে, ঘাড় ব্যথা?
হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালাম!
মা ঘাড় ম্যাসাজ করে দিচ্ছেন..
কীরে, তোর গা এত্তো গরম ক্যান?..চুলগুলো কি বড় হইছে?.মাথায় তেল দিস না?
স্বভাব সূলভ এসব প্রশ্ন মা করেই যাচ্ছেন..আশ্চর্য বিষয় হল, তিনি কোন প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সুযোগ দিচ্ছেন না..কখনো দেনও না..হতে পারে এটা তার ভালোবাসা প্রকাশের অন্য এক মাধ্যম..যা কেবল বয়োবৃদ্ধ সন্তানের জন্য প্রযোজ্য!
মায়ের হাতের ছোঁয়ায় কষ্টগুলো যেন অশ্রু হয়ে গলে যাচ্ছিল..তবে চোখের কোণে পৌঁছাতে পারছিল না!..বুকের মাঝে বড় একটা বুদবুদ তৈরী করে হারিয়ে যাচ্ছিল!
মা উঠে দাঁড়াল..না, আগের মত স্বান্তনা দিল না..তবে মন ভাল করার দ্বিতীয় থেরাপি প্রয়োগ করল!
-চা খাবি?
হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালাম!
চা টা অনেকক্ষণ ধরে খেলাম..হঠাৎ মা এসে বলল, কিরে এখনো শেষ হয়নি?
কারণ, চা যতই গরম হোক..আমি তা দ্রুতই শেষ করে ফেলি!
তাড়াতাড়ি করে চা শেষ করায় মনোযোগী হলাম..মা কাপে হাত দিয়ে অবাক হলেন,
কি রে..চা তো একদম ঠান্ডা হয়ে গেছে!
কিছু বলার আগেই মা চায়ের কাপ নিয়ে সোজা রান্নাঘরে গেলেন!
মা কে আর বলাই হল না..ঐ চা ঠান্ডা হওয়ার পিছনে বাতাসের কোন ভূমিকা নাই..চোখের অনেক শীতল অশ্রু চায়ের কাপে এসে উষ্ণ হয়ে গেছে!
বোকা মা..
সব বুঝে.. কিন্তু বোঝে না..আমি এখন শুধুই তার সন্তান না..এই মানুষটাও কারো পিতা..অশ্রু লুকিয়ে তাকেও নিজ সন্তানকে আগলে রাখতে হয়..অনন্ত যাত্রার আগে ক্লান্তিহীন ভালোবাসা দিয়ে!

 

রূপান্তরের যাত্রা – পর্ব ৩

তাহনিয়া খান


বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

Rabbish rahli sadri wa yas-sir li amri wahloul uqdatam mil-lisaani yafqahu qawli.
O my Lord! expand me my breast; Ease my task for me; And remove the impediment from my speech, So they may understand what I say[20:25-28]

আমি হজ্জের উপর পড়ালেখা শুরু করলাম। আমাদের এজেন্সি আমাদের ট্রেনিং দিল। কিভাবে হজ্জ করবো, হজ্জের সময় কোথায় থাকবো, মক্কা মদিনায় অসুবিধা হলে কাকে কি জিজ্ঞেস করবো, হারিয়ে গেলে কোথায় যেতে হবে, যতরকম খুঁটিনাটি বিষয় আছে আমাদের মোয়াল্লেম দুদিন ধরে সেসব বুঝালেন। তখন অনেক কিছু না বুঝলেও শুনে রেখেছিলাম, যেটা পরবর্তীতে কাজে লেগেছিল।

মক্কা মদিনায় গিয়ে বুঝলাম যে, একটা ভালো এজেন্সির গুরুত্ব অনেক। এজেন্সির সার্ভিস পাওয়া যেমন গুরুত্বপূর্ন, তেমনি হজ্জ গ্রুপের যিনি মোয়াল্লেম হবেন, তাকে হতে হবে একজন আলেম। আল্লাহ্‌র স্পেশাল নেয়ামত হিসাবে আমরা একটা ভালো এজেন্সির মাধ্যমে যেতে পেরেছি। আর পেয়েছিলাম এমন একজন মোয়াল্লেম, যিনি শুধু আলেম না, একজন ভালো মনের মানুষ। হাজীদের খেদমতের জন্য উনি উনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে গিয়েছিলেন হাসি মুখে। একি প্রশ্ন হাজারবার করলেও উনাকে কখনো রাগ হতে দেখিনি।

সেখানে গিয়ে এমন অনেক মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে, যারা তাদের এজেন্সির বদনাম করতে করতে অস্থির। এমন অনেক লোক গিয়েছে যে হজ্জ তো দূরের কথা কিভাবে উমরা করতে হয় জানে না। তাদের এজেন্সি শুধু তাদের কে এনে ছেড়ে দিয়েছে। মোয়াল্লেমের কোন পাত্তা নেই।

যতই জেনে বুঝে আর পড়ালেখা করে যাই না কেনো , সেখানে গিয়ে একজন এক্সপার্ট সাথে থাকলে কাজের অনেক সুবিধা হয়, আর ভুল কম হয়। আমাদের মোয়াল্লেম গ্রুপ করে উমরা করিয়েছিলেন। প্রতিবার প্রতিটা গ্রুপের সাথে ছিলেন। একবার শিখে গেলেই আর সমস্যা হয় না।

এক মহিলার সাথে মক্কায় কথা হয়েছিল। উনার এজেন্সি উনাদের দুই দিন হোটেল দিতে পারেনি। তারা বাংলাদেশ হজ্জ মিশনের রাস্তার উপর ছিলেন। তারপর যখন হোটেল পেলেন, সেখান থেকে নামায পড়তে আসলেন। তখনো উমরা করেননি। জানেনও না কিভাবে উমরা করবেন। উনাকে শেখালাম কতক্ষন ধরে। একটু পরে দেখি উনার গ্রুপের এক মহিলা এসে উনাকে নিয়ে গেলেন উমরা করানোর জন্য।

যাই হোক আমি অফিস করি, বাসায় কাজ করি, বাচ্চাদের সামলাই, এর মাঝে পড়ালেখা করি। হজ্জের নিয়ম শিখি, মাসলা-মাসায়েল পড়ি, নেট সার্চ করি। আমার বাচ্চারা আমার পড়ালেখা দেখে, উত্তেজনা দেখে। বলে, ‘তুমি এত এক্সাইটেড কেনো, মা ?’

আমি আমার অনুভূতি প্রকাশ করতে পারিনা ঠিকমত। যতদিন বেঁচে থাকবো, আমি আসলে কোনদিন কাউকে এই অনুভূতি বুঝাতেও পারবো না। শুধু মনে হয় যে, আমি প্রস্তুত হচ্ছি। এমন এক জায়াগায় যাচ্ছি যেখানে নবীদের পায়ের ধুলো আছে। দুনিয়াকে পিছনে ফেলে এমন এক জায়গায় যাচ্ছি যেখান থেকে নাও ফিরে আসতে পারি। দুনিয়ার সবচেয়ে পুণ্যবান আর উৎকৃষ্ট জায়গায় আমি আল্লাহ্‌র মেহমান হয়ে যাচ্ছি। যখনি ভাবি আমার মত তুচ্ছ, পাপীকে আল্লাহ্‌ উনার বড়ত্ব দিয়ে, রহমত দিয়ে, আমাকে এত সম্মান দিতে চাচ্ছেন তখন আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনা।

যখন আমার যাওয়ার দিন স্থির হয়ে গেলো, আমি তখন আমার আত্মীয়স্বজন, বন্ধু বান্ধব, কলিগদের জানালাম যে, আমি হজ্জে যাচ্ছি। দোওয়া চাইলাম সবার কাছে, যেনো ঠিকমত হজ্জ করে আসতে পারি। আমার খুশী, আমার আনন্দ তখন বিষাদে পরিনত হলো।

আমার হজ্জে যাওয়ার কথা শুনে সবাই জিজ্ঞেস করে কার সাথে যাচ্ছি। আমি উত্তরে বলি, আমার ছোট ভাই তাপসের সাথে। সবার তখন প্রায় একি ধরনের কথা, কেউ ইনিয়ে বিনিয়ে আকার ইঙ্গিতে অথবা সরাসরি বলে , কেন আমি আমার স্বামীর সাথে যাচ্ছি না। আর স্বামীর সাথে যখন যেতে পারছি না তাহলে তার যখন সময় হবে, তখন তার সাথে গেলেই তো হয়। হাতে গোনা কয়েকজন মানুষ ছাড়া কেউ আমার হজ্জে যাওয়া নিয়ে খুশী না। কারণ একটাই, আমি আমার স্বামীর সাথে যাচ্ছি না।

আমি যখন বাসায় এহরামের কাপড় পরে এয়ারপোর্টে যাওয়ার জন্য গাড়িতে উঠতে যাবো, তখনো হাতে ‘বেহেশতি জেওর’ নিয়ে হজ্জের মাসলা-মাসায়েলের পাতা বের করে একজন বললেন, হ্যা, তুমি তোমার স্বামী ছাড়া হজ্জে যেতে পারবে। আমি অবাক দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে গাড়িতে উঠেছিলাম।

আমরা এমন এক সমাজে বাস করি, যেখানে মানুষ তার ধর্মীয় কাজ সঠিক ভাবে করতে গেলে বাধা আসে। আর হাজারটা বেদাআত করে গেলে কোন মানা নেই। মানুষকে বুঝানোর পরেও মানুষ বুঝে না যে, নিজের ইচ্ছা দিয়ে ইসলাম চলে না, সমাজের ইচ্ছা দিয়ে ইসলাম চলে না। আল্লাহ্‌র নিয়ম দিয়েই ইসলাম চলবে।

হজ্জের প্রধান দুটো শর্ত হচ্ছে শারীরিক সুস্থতা আর অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা। মানুষের যখন এই দুটি জিনিস একসাথে থাকবে, তখনই তার হজ্জ ফরয হয়ে যাবে। তাছাড়া মুসলিম হওয়া, পাগল না হওয়া, স্বাধীন থাকাও হজ্জের শর্তের মধ্যে পরে। একবার হজ্জ ফরয হয়ে গেলে তখনই হজ্জ করে ফেলতে হবে। কারণ শারীরিক সক্ষমতা থাকলেও কারো অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা হারিয়ে যেতে পারে।
আবার অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা থাকলেও শারীরিক সক্ষমতা হারাতে পারে। তখন কি হবে ?

আমার স্বামী ভবিষ্যতে হজ্জে যেতে পারবে কি না আমি সেটা জানিনা। ইন শা আল্লাহ্‌ , যদি সে হজ্জে যায়,তখন আমার কোন অবস্থা হবে সেটাও আমি জানি না। আল্লাহ্‌ না করুক, সে যদি হজ্জে না যেতে পারে , তাহলে পরে আমি কার সাথে যাবো ? একটা মানুষও এর উত্তর দিতে পারে না, কিন্তু তারা আমার হজ্জে যাওয়া নিয়ে অখুশি।

এখানে একটা জিনিস উল্লেখ করি , সেটা হলো অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার মাপকাঠি কি ? হজ্জে যাওয়া আসার ভাড়া এবং সেখানে যতদিন থাকবো, ততদিন থাকার মত টাকা পয়সা হাতে থাকলেই মূলত অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার মাপকাঠি। এখন আপনি যদি বলেন আপনি হিল্টন হোটেলে থাকবেন আর তার ভাড়া দেওয়ার মত অবস্থা আপনার নেই, আর সেজন্য আপনার হজ্জ ফরয হয় নি। তাহলে আপনি ভুল করবেন। নুন্যতম থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারলেই হবে। ইদানিং অনেক হজ্জ এজেন্সি বিভিন্ন প্যাকেজ দিয়ে থাকে। সর্বনিম্ন প্যাকেজের টাকা হাতে থাকলে কিন্তু হজ্জ করতে হবে বলে মনে করি। যেহেতু আমি কোন আলেম না, তাই কোন ফতোয়া দিতে চাই না। প্রতিটা ব্যক্তির উচিৎ তার হজ্জ ফরয হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে আগ্রহ থাকা এবং সেই অনুসারে কোন আলেমের সাথে কথা বলে জেনে নেওয়া। এ ব্যাপারে একটা লিঙ্ক দিলাম । http://islamqa.info/en/ref/41957

যাই হোক, আমি নিজেও মনের কষ্টে ভুগছিলাম যে আমি আমার স্বামীর সাথে যেতে পারছি না। তার উপর মানুষের নেতিবাচক কথা আমার উপর প্রচণ্ড মানসিক চাপ সৃষ্টি করছিল। আল্লাহ্‌তায়ালা আমাকে সেই সব চাপ উপেক্ষা করতে সাহায্য করেছিলেন। জীবনে যা কিছু করবো, শুধু আল্লাহ্‌কে খুশী করার জন্যই করবো– এই নিয়ত আমার মনকে স্থির করেছিল।

মহা উৎসাহে আমি বাচ্চাদের নিয়ে, স্বামীকে নিয়ে, আম্মু আর ভাইদের নিয়ে হজ্জের জন্য কেনাকাটা করেছি, হজ্জ ক্যাম্পে গিয়েছি, মেডিক্যাল চেকআপ করিয়েছি।

হজ্জের তৃতীয় শিক্ষা—মানুষ যা কিছুই বলুক না কেন, সত্যের পথে থেকে আল্লাহ্‌র উপর ভরসা করলে আল্লাহ্‌ সঠিক পথ দেখিয়ে মানসিক প্রশান্তি দিয়ে দেন।

চলবে…

রূপান্তরের যাত্রা পর্ব-২

 

হেভেন অফ সেভেন

ফাতিমা খান


” আমার বয়স কতই বা হবে তখন, বড়জোর পাচ কি ছয়। আমার মায়ের জন্মদিনে ‘সাম্পাগিতা’ (বেলী ফুল) ফুল দিয়ে মালা বানিয়ে ছিলাম। মা আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কেঁদেছিলেন। আমি নিশ্চুপ হয়ে মায়ের চোখে তাকিয়ে ছিলাম।স্বপ্নহীন, আশাহীন এক শূন্যতা ছিল তার দুই চোখে, এখনো ভুলিনি।”

লোরেন আমার নার্স। একটানা বলেই যাচ্ছে মায়ের কথা। ওর চোখ দুটো ছলছলে। মানুষের চোখে একই সাথে আনন্দ আর কষ্টের অশ্রু বড় মায়াবী দেখায়!

“আমার মায়ের খুব পছন্দের ফুল সাম্পাগিতা, ইংরেজীতে যাকে আমরা বলি জেসমিন। আমাদের বাড়ির ছোট্ট বাগানটায় জেসমিন ফুলের গাছটা মা ই লাগিয়ে ছিলেন। গাছটা বড় হওয়ার সাথে সাথে মায়ের স্বপ্ন গুলোও বড় হচ্ছিল প্রতিদিন। বাবা মার বিয়ের সময় আমার মায়ের গহনা বলতে ছিল শুধু এই ফুলের মালা। সাদা গাউন আর সাদা ফুলের মালা দিয়ে সাজানো মাকে ব্রাইডাল ফটো গুলোতে এঞ্জেল এর মত লাগছিল! আমার সেই রুপবতী মায়ের সাথে আজকের মায়ের চেহারার সামান্যই মিল খুঁজে পাই।

সাম্পাগিতা আমাদের ন্যাশনাল ফ্লাওয়ার, ডক। তাগালোগ ভাষায় “সাম্পা- কিতা ” অর্থ হল ”আই প্রমিস ইউ”। আমার মাকে বাবা সাম্পাগিতার মালা পরিয়েছিলেন ঠিক বাট হি ডিড নট কিপ হিস প্রমিস।

বাবার নেশা ছিল মদ আর বার বণিতায়। বাবা নেশায় বুদ হয়ে মাকে গালিগালাজ করতেন, খুব মারতেন। আধা রাতে বাড়ি এসে “লোরেনা……” বলে আমাকে ডাক দিতেন দরজা খুলে দিতে। বাবার স্মৃতি বলতে আমার এটুকুই মনে আছে। মা অনেক কষ্ট পেলেও হাসি হাসি মুখ করে আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। মায়ের এই গুণটা আমি পেয়েছি। আমিও সূক্ষভাবে এই কাজটা করতে পারি। ভেবে দেখেন দিনের একটানা আটঘন্টা আপনি আমার সাথে কাটান। বাট কুড ইউ এভার প্রেডিক্ট মাই মাইন্ড ডক?..আই বেট, নো। হাহাহা। “

শুনছি আর ভাবছি সত্যিই তো! আমি তো এই লোরেন কে চিনতাম না। আমি যে লোরেন কে চিনি সে এক জন টিপিকাল হাসিখুশী প্রফেশনাল নার্স।

“মা রাত জেগে ব্র‍্যান্ড বেকারীর অর্ডার গুলো রেডি করতেন। আলো না ফোটা ভোরে ঘুম থেকে উঠে মায়ের হাতে বানানো কেক আর বান রুটিগুলো নিয়ে যেতাম ব্র‍্যান্ড বেকারি তে। আমার দুই বছরের ছোট ভাইটা আমার সাথে ছুটে চলত তার ছোট ছোট পায়ে। আমার সাথে আসার তাড়াহুড়োতে তার জুতা পরা হত না। মা চলে যেতেন সাহেব দের বাড়ির লণ্ড্রীর কাজ করতে, বড় পাচ ভাইবোন চলে যেত স্কুলে। মায়ের বানিয়ে রেখে যাওয়া গরম গরম বান এক হাতে আর অন্য হাতে ছোট ভাইটার হাত ধরে আমি চলে যেতাম পাহাড়ের কাছে।

ইউ নোউ ডক, আমাদের প্রভিন্সটা নীল আর সবুজে সাজানো একটা হেভেনলি প্লেস। সৃষ্টিকর্তা আমাদের দুটো চমৎকার উপহার দিয়েছিলেন। একতো আমাদের মা আর দ্বিতীয় হল পাহাড় আর সাগর ঘেরা আমাদের এই প্রভিন্স। উইকেন্ডে মা আমাদের নিয়ে সমুদ্রে মাছ ধরতেন। মায়ের হাতের লেমন গার্লিক ফিশ গ্রীল…. উফফ! পাহাড়ের পাদদেশে রক্তজবার বাগানের (Gumamela garden) পাশে বসেই আমরা লাঞ্চ শেষ করতাম।

..সেই দিনগুলো আর তো ফিরে আসবে না। কষ্টের সময়গুলো একা একাই পার করেছেন মা,সবটুকু একাই সয়ে নিতেন, শুধু সুখের পুরোটুকু দিতেন আমাদের।

আমি বড় হয়েছি পাহাড়ের গায়ে ছিটকে পড়া সূর্যকিরণ আর সমুদ্রজল লাল করা সুর্যাস্ত দেখে দেখে। সমুদ্র পাড়ের একটা বড়সড় কালো রকে বসে থাকতাম যখন ইচ্ছে। নোনা পানির জোয়ার ভাটা দেখতাম। মুখে ফেনা তোলা ঢেউগুলো দৌড়ে এসে আছড়ে পড়ত পাড়ের বুকে। নীল আকাশে গোল গোল মেঘগুলো দাদুর জটাপাকানো সাদা চুলের খোপার মত মনে হত।

Have patience, do sacrifice. Bad times will fly like an arrow-
মা বলতেন। শুধু যুগের ব্যবধান, আমরা সত্যি সত্যি মায়ের জন্য সাত রত্ন হয়ে গেলাম একদিন। আমার বড় ভাইটা যেদিন মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করল সেদিন মা আনন্দে কেঁদেছিলেন। এরপর একে একে আমরা সব ভাইবোন প্রফেশনাল হয়ে গেলাম।

মাকে নিয়ে আমরা ম্যানিলায় চলে আসি। মা আমাদের নতুন বাড়ির নাম দিলেন Heaven of Seven। ম্যানিলার পশ সোসাইটির মা রাও আমার মাকে আজ ঈর্ষা করে এ‍্যন্ড উই আর প্রাউড অফ হার।

 

ও বেলার গল্প

ম নি র মো হা ম্ম দ


গল্পটা তাদের জানা যারা ৯০ দশকে আমাদের সাথে বড় হয়েছেন, তাদের জীবনের জানা অধ্যায়! যা নিজ চোখে আমরা দেখেছি আর আমাদের আগামী প্রজন্ম হয়ত গল্পটা শুনে বলবে, “বাবা আসলেই কি সত্যি?” চলুন গল্পটা শুনে আসি। গল্পটা আবেগ আর ভালোবাসার এক মিশ্রণ।

তখনকার সময় এলাকার বেশিরভাগ বাড়ি ঘরই ছিল মাটির তৈরী। একটু অবস্থাপন্ন গেরস্তদের মাটির ঘরের উপরে টিনের চালা দেওয়া হত। আশে- পাশে কয়েক ক্রোশ এর মধ্যে পাকা বাড়ি চোখে পড়ত না। চোরের উৎপাত ছিল উল্লেখ করার মত। প্রায়ই সন্ধ্যে হলেই কোন না কোন বাড়ি থেকে চিৎকার শুনা যেত। বিশেষ করে গরু চুরির কথা। কেউ কেউ গোয়াল ঘরে মাছা বেঁধে থাকত গরু পাহারা দেওয়ার জন্য। প্রায়শই চোর ধরার খবর শুনা
যেত, দল বেঁধে চোর দেখতে যেতাম। চোরের মার খাওয়া আহত চেহারা দেখে নিজেদেরই তখন খুব খারাপ লাগত।

আমার কিছু বন্ধু ছিল, যারা স্কুল শেষে বাড়ি ফিরেই তাদের বাবার কাজে হেল্প করত। তাদের খেলাগুলোও ছিল অদ্ভুত।‘চারা‘ নামক একটা খেলা ছিল। মাটির কলস এর ভাঙ্গা টুকরা ছিল চারা। মাটিতে একটা ঘর কেটে একজন চারা ছুড়ে মারত। তারপর অন্য জনকে চ্যালেঞ্জ করা হতো ওই চারার
কাছাকাছি অন্য একটা চারা পৌঁছানোর। বাজিও ধরা হতো। বাজির বিভিন্ন উপকরণ ছিল,যেমন ম্যাচের খোসা বা বিভিন্ন সিগারেটের প্যাকেট। কখনো চকলেটের মোড়ক। এই খেলাটা খেলতাম উঁচু নিচু মাটিতে বা মাটির ঢিবিতে। এছাড়াও চারা খেলার বাজি ছিল কাল এক ধরণের গাছের বিচি। (এলাকায় বড়দিরা বা রনা গাছ) নামে পরিচিত।

প্রতি সপ্তাহে অনেককেই দেখেছি ব্যাগ ভরে সেই সব বিচি নিয়ে বাজারে সের হিসেবে বিক্রি করতে। মাঝে মাঝে লুকিয়ে লুকিয়ে চারা খেলা খেলতে যেতাম। প্রায়ই কারোনা কারো কাছে ধরা পড়ে যেতাম। শাস্তি হিসেবে আব্বার হাতে বেতের বাড়ি। আহারে কী মজার খেলাই না ছিল! প্রথমে আমার কিছু বন্ধুদের কথা বলেছিলাম, তাদের কিছু ক্ষমতা দেখে চোখ কপালে তুলে ফেলতাম। বড় বড় গাছ খুঁজে খুঁজে পাখির বাসা থেকে পাখির ছানা চুরি করাই প্রধান কাজ ছিল তাদের। এদের দেখে দেখে নিজেও একবার চেষ্টা করতে গিয়ে গাছ থেকে পড়ে হাত ভেঙে এক মাস বিছানায় শুয়ে ছিলাম। তাদের অনেকের সাথেই
অনেক দিন দেখা নেই। কিন্তু সেই টানটা আজ সংসারের টানে কোথায় জানি হারিয়ে গেছে?

ধান কাটার মৌসুুমে প্রতিদিন সকাল বেলা কিছু ফেরিওয়ালা আসত। ধানের বিনিময়ে মুড়ির নাড়ু আর সেগারিন দেওয়া আটার রসগোল্লাহ খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতাম। গড়গড় শব্দ করে কটকটি ওয়ালা আসলে ভাঙা কাচের বোতল, বাতিল টিন আর পুরুনো স্যান্ডেলের ফিতা দিয়ে কটকটি খাওয়া, আহারে কী আনন্দ!

মাঝে মাঝে গলা উচিয়ে কেউ আওয়াজ করে রাস্তা দিয়ে গেলে বুঝে নিতাম গরুর চিকিৎসা করার জন্য কেউ যাচ্ছে। সেই আওয়াজ এর মাঝেও একটা ভিন্ন সুর ছিল, ছিল একটা আবেগ।

প্রতি বৃহ:পতিবার আমরা পাঁচজন নামে একটা ফকির গ্রুফ ছিল,যারা “মায়াগো আমরা পাঁচ জন” হাঁক ছেড়ে ভিক্ষা করত। বাড়িতে বাড়িতে মাটির হাড়ির পসরা সাজিয়ে আসত কুমাররা। কিছু মহিলা বিক্রেতা ছিল মসলা বিক্রিই ছিল তাদের প্রধান কাজ। মাঝে মাঝে সোয়া সের চালের বিনিময়ে মুডি ভাজার হাঁড়ি নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরত তারা। আজ তাদের কাউকেই দেখিনা। কিন্তু তাদের কথাগুলো কেন জানি মনের আঙিনায় আলো ছড়ায় আজও। কলা গাছের গেইট আর মই দিয়ে নতুন জামাই আটকে সেলামী নেওয়া হত। সেলামী বাবাদথালা ভর্তি লাল চিনি আর বাতাসা দেওয়া হত। অনেকেই গেইট ফাঁকি দেওয়ার জন্য কাক ভোরেই নতুুন শ্বশুর বাড়ি চলে যেত।

কিছু কিছু ছেলেপুলে সিরিঞ্জের ভিতর লাল রং ঢুকিয়ে সাদা কাপড় নষ্ট করে দিয়ে দাঁত বের করে হাসত। মারামারি ঝগড়া ছিল বিয়ে বাড়ির নিত্য ঘটনা। সামান্য কারনে বিয়ে ভেঙে পর্যন্ত যেত। যাই হোক সবি ওবেলার
গল্প। আহারে আজ সবই শুধু স্নৃতি! প্রায়ই সাইকেলের সাথে টেপ রেকর্ডার বেঁধে পিছনে ব্যাটারি লাগিয়ে নতুন জামাই শ্বশুর বাড়িতে আসত। জামাইয়ের পিছনে পিছনে বাচ্ছাদের লাইন লেগে যেত আর টেপরেকর্ড এ বাজতো মামু-ভাইগন্নার কিচ্ছা। কী ভালোইনা লাগতো!

ঈদের দিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেই বন্ধুদের সাথে পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়তাম। গোসল শেষ করার পর আম্মা আবার ঢলে ঢলে গোসল করাতেন। আগের দিন এক টাকা দিয়ে কিনে আনা রঙীন কাগজের টুপি মাথায় দিয়ে নতুন জামা কাপড় পরে সেমাই খাওয়া,দাদার হাত ধরে ঈদের নামাজে যাওয়া কী যে আনন্দ ! আজ সবই আছে কিন্তু শৈশবের সেই ঈদের দিনের আনন্দগুলো জীবনের পরতে হাতরে বেড়াই জানি আর পাবোনা, সব যেন হারিয়ে গেছে কালের দহনে।

একদিন চাচা বিরাট এক টেপ রেকর্ডার কিনে আনলেন। বাড়িতে বিনোদনের নতুন মাত্রা যোগ হল। কয়েক মাইল দূর থেকে ব্যাটারি চার্জ করে আনা হত। বিকাল হতেই সেই টেপ রেকর্ডার শুনার জন্য আশে-পাশের লোকজন ছুটে আসত। বিভিন্ন ধরণের ভান্ডারি আর বাংলা ছায়া ছবির গানই ছিল তখনকার জীবনের এক মাত্র আনন্দ! কেউ কেউ গান শুনে বলত আহারে কী আজব যন্ত্র! মানুষের মাথাত কত বুদ্ধি! কেউ কেউ বলত, “শেষ, শেষ দুনিয়া আর বেশি দিন নাই, কেয়ামতের আলামত।”

আহারে তাদের অনেকেই আজ বেঁচে নেই। কিন্তু তাদের কথাগুলো ছন্দের তালের মত আজও কানে বাজে।

তরুন কথা সাহিত্যিক,
মনির মোহাম্মদ।

 

স্বাস্থ্য ও ত্বকের রূপচর্চায় আলু

ঘরকন্যা


আলু হচ্ছে সব ঋতুতে পাওয়া একটি সবজি। সাধারণত সবার ঘরেই সবসময় আলু থাকে। আলুর রস ত্বক, চুল ও স্বাস্থ্যকর একটি উপাদান। আজকে আলুর রস এর কিছু ব্যবহার সম্পর্কে জানব।
আলুর রস আমাদের সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকার। গবেষণা দ্বারা তা সমর্থিত, এবং তাদের কয়েকটি অন্ধভাবে অনুসরণ করা হয়েছে।

কেন আলুর রস ব্যবহার করবেন আপনি?

কিছু উপকারিতা:

১.আলুতে গুরুত্বপূর্ণ পরিমাণ ভিটামিন সি থাকে – পুষ্টিকর যে ঠান্ডা এবং সংক্রমণ মারামারি এবং ইমিউন সিস্টেম জোরদার সাহায্য করে। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

২. আলুর রসের বিস্ময়কর হল, জয়েন্টে, জরায়ুতে, এবং নানান সংক্রামক ব্যাথায় ব্যথার উপশম করতে সাহায্য করে।

৩. মাথার Migraines এর জটিল ব্যথায় তেও আলুর রস কাজ করে।

৪.কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যার ক্ষেত্রেও আলুর রস উপকারী ভীষণ। এক গ্লাস আলুর রস ব্যবহার করে জিআই ট্র্যাক্ট পরিষ্কার করা এবং কব্জি সুস্থ করতে সাহায্য করে।

৫.কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয় আলুতে থাকা ফাইবার এবং ভিটামিন এ, বি-জটিল এবং সি মত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি সরবারহ করে। এই পুষ্টি শরীরের কোলেস্টেরল মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

৬.অ্যাল্স্স নিরাময় ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে, আলুতে আল্ট্রাসক্যাটিক অণু রয়েছে যা আলসার এবং হৃদরোগকে নিরাময় করে।

৭.কিডনি রোগের চিকিৎসায় সাহায্য করে
ক্যালরির কার্যকারিতা এবং ক্যালসিয়াম পাথর গঠনের ঝুঁকি হ্রাসে আলুর রসের ভূমিকা অনেক।

৮.ত্বকের উজ্জ্বলতা ও মসৃণ হবার জন্য আলুর রস যুগ যুগ করে ঘরে ঘরে ব্যবহার করা হয়।

৯.চোখের নিচের কাল দাগ কমাতেও আলু ব্যবহার করা হয়।

১০.চুলের জন্য, অথাৎ চুলের সিলকি ভাব বৃদ্ধি, চুল পড়া কমান, এবং খুশকি কমাতেও আলুর রস ব্যবহার করা যেতে পারে।

 

রূপান্তরের যাত্রা – পর্ব ২

তাহনিয়া খান


Rabbish rahli sadri wa yas-sir li amri wahloul uqdatam mil-lisaani yafqahu qawli.
O my Lord! expand me my breast; Ease my task for me; And remove the impediment from my speech, So they may understand what I say [20:25-28]

আমার হজ্জে যাওয়ার বছর দু’এক আগে অফিসে একদিন মেয়েদের নামাজের ঘরে নামাজ পড়ছিলাম। একজন অপরিচিত মহিলাও নামাজ পড়ছিলেন। তিনি আমাদের অফিসে কাজ করেন না। নামাজ শেষে উনার সাথে কথা বলছিলাম। কথা প্রসঙ্গে জানতে পারলাম যে, সে বছরই উনি উনার স্বামীর সাথে হজ্জে যাবেন। আমার তো আগ্রহ বেড়ে গেলো। খুঁটিনাটি জিজ্ঞেস করা শুরু করলাম। উনি উনার জীবনের আশ্চর্য ঘটনা বললেন।

উনি তার আগের বছর হজ্জের নিয়ত করে ব্যাংকে টাকা রাখা শুরু করেন। খুবই কম টাকা রাখেন প্রতিমাসে। হিসেব করে দেখলেন যে, যে পরিমান টাকা উনি রাখছেন, কমপক্ষে ২৫ বছর লাগবে নূন্যতম হজ্জের টাকা জমতে। তারপরেও হজ্জের টাকা জমাতে শুরু করলেন। এর কিছুদিন পরেই হঠাত করেই উনার স্বামী অফিস থেকে বেশ কিছু টাকা পেলেন। আর সে টাকা দিয়েই উনারা এখন হজ্জে যাবেন বলে ঠিক করে ফেললেন। উনি শুধু আমাকে বললেন, নিয়ত করে ফেলেন আপা। শুধু এই ভদ্রমহিলা না, আমি যত মানুষের কাছে হজ্জের ঘটনা শুনতে চেয়েছি, সবাই একবার করে বলেছে, ‘নিয়ত কর’।

আমি তো নিয়ত বহু আগেই করে ফেলেছি। টাকা হাতে আসে আবার খরচ হয়ে যায়। কিন্তু সেই মহিলার কথা শুনে আমি এবার শুধু হজ্জের নিয়তে টাকা জমানো শুরু করলাম। একটা বক্সে যখন যেমন পারতাম রাখতাম। হাতে নতুন টাকা আসলেই বক্সে রেখে দিতাম। সেটা কখনো পাঁচ টাকা হতো, কখনো একশ বা এক হাজার টাকার নোট হতো। খুব সামান্যই জমা হয়েছিল। বাকি সব টাকা তো আল্লাহ্‌ আম্মুর মাধ্যমেই যোগার করে দিলেন।

আমার জন্য হজ্জের দ্বিতীয় শিক্ষা—নিয়ত একটা বিশাল বড় ব্যাপার। কেউ যদি কোন কাজের নিয়ত করে তাহলে আল্লাহ্‌ কোন না কোন ভাবে সেটা পূরণ করবেনই। সেটা দেরিতে হলেও হবে। তবে নিয়ত হতে হবে একদম মনের গভীরতা থেকে। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম যে, আমি নিয়ত করলাম উত্তরা থেকে বনানী যাবো। শুধু মনে মনে ঠিক করলেই হবে না, আমাকে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে। তারপর প্রস্তুতি নিয়ে নির্দিষ্ট পথে যেতে হবে। এই প্রস্তুতি নিয়ে নির্দিষ্ট পথে যাওয়াটাই আসল নিয়ত। এখন আল্লাহ্‌ আমাকে নিয়ে যেতে পারেন বা নাও পারেন, এটা আল্লাহ্‌র ইচ্ছা। তবে বুকের গভীরে বিশ্বাস রাখতে হবে যে আল্লাহ্‌ আমাকে আমার জায়গায় পৌছিয়ে দিবেন। এটা আমার উপলব্ধি। আমার এই উপলব্ধির সাথে অনেকের মতের মিল নাও হতে পারে।

চলবে….

পর্ব ১

 

হাজেরাদের কুরবানী

কানিজ ফাতিমা


যুবতী এক মহিলা, কালো বর্ণের দাস। জীবনের স্বাভাবিক চাওয়া গুলোও যার জন্য স্বপ্নের মতো। এমন জীবনে কালো আকাশে নক্ষত্রের আলোর মতো নেমে এলো এক চিলতে সৌভাগ্য – ইব্রাহীম (আ) এর মতো ব্যক্তির স্ত্রী হওয়া আর ইসমাঈল (আ) এর মতো পুত্র সন্তানের মা হওয়ার সৌভাগ্য।

কিন্তু সে সুখও বেশীদিন যেন কপালে সইতে চায় না। আল্লাহর নির্দেশ আসলো শিশুপুত্র নিয়ে চলে যেতে হবে সুদূর মরুভূমিতে, যেখানে জনমানব তো দূরের কথা পশু-পক্ষীও যায়না। রসহীন শুষ্ক মরু প্রান্তর – যেন মৃত্যুরই আরেক নাম।

অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, নিশ্চিত মৃত্যু। – কিন্তু তাতে কি ? আল্লাহর আদেশ মেনে নিলেন যুবতী মাতা। শিশু কোলে স্বামীর পেছনে চললেন বালু সমুদ্রে।

স্বামী চলে গেছেন কিছু পানি আর খাদ্য রেখে। নির্জন মরুপ্রান্তরে কেবল দুধের শিশু নিয়ে কাটালেন তিনি কয়েক দিন, কয়েক রাত। রাতে আকাশের তারার আলো ছাড়া আর কোনো আলো নেই। গহীন নিস্তব্ধতা – গা ছম ছম করা নীরবতা। তবু তিনি প্রশান্ত – যে আল্লাহ এমন নির্দেশ দিয়েছেন তিনিই রক্ষা করবেন ; তিনিই ভরসা – এমনই অটল বিশ্বাস।

কিন্তু খাবার যে ফুরিয়ে এলো, পানিও নেই; তৃষ্ণার্ত মা, ক্ষুধার্ত শিশু। বুকে একফোঁটা দুধও নেই। কি খেয়ে বাঁচবে বুকের ধন একমাত্র সন্তান ? বিচলিত মা দৌড়ে বেড়ালেন সাফা থেকে মারওয়া, মারওয়া থেকে সাফা। একবার, দুইবার, এমনি করে সাতবার।

না, একফোঁটা পানি কোথাও নেই, মানিক বুঝি আর বাঁচে না।
স্বামী নেই, সংসার নেই, সহায় নেই , বিত্ত নেই – এমন জীবনের একমাত্র সম্বল এই শিশু পুত্র -তাও বুঝি হারিয়ে যায়।

হাজেরার বুক চিরে আহাজারী; হায় সেটা শোনার জন্যও তো একটা প্রাণী নেই।

ক্লান্ত ভারাক্রান্ত মা ফিরে এলেন শিশুর কাছে –
একি? যে আর্তনাদ কেউ শোনেনি তা শুনেছেন রব
যে ত্যাগ কেউ দেখেনি তা দেখেছেন আল্লাহ;
শিশু ইসমাইলের পায়ের কাছে বইছে পানির ফোয়ারা।

যেন ফিরে এলো সুখের পায়রা;
পানি হলো ,
পানিকে ঘিরে বসতি হলো –
ছেলে বড় হতে থাকলো সুস্বাস্থ আর সুন্দর চরিত্র নিয়ে।
স্বামীও মাঝে মাঝে এসে থেকে যায় কিছু দিন। বাবা-ছেলের ভালোবাসা দেখে নয়ন জুড়ায় মা হাজেরার। দুঃখের দিন বুঝি ঘুঁচলো।

হঠাৎ একদিন স্বামীর কপালে চিন্তার রেখা –
কোনো দুসংবাদ নয়তো? জানতে চাইলেন হাজেরা।
ছেলেকে কুরবানী করার নির্দেশ এসেছে আল্লাহর কাছ থেকে।

একমাত্র সন্তান
একমাত্র সম্বল
একমাত্র স্বজন
হারাতে হারাতে ফিরে পাওয়া বুকের মানিক
যাকে ছাড়া এই মায়ের আর কিছুই নেই;
তাকেই স্বামীর হাতে তুলে দিতে হবে চির বিদায় জানিয়ে।

স্বামী ইব্রাহীমের আরেক সন্তান আছে, গোত্র আছে; স্ত্রী সারাহ আছে;
দাসী হয়ে জন্মানো হাজেরার ইসমাইল ছাড়া তো আর কিছু নেই। – তাতে কি ? আল্লাহর নির্দেশ এবারেও তিনি পালন করলেন।
আগের বারতো নিজের সামনে ছেলের ক্ষুধা-তৃষ্ণায় মৃত্যু দেখার মতো কুরবানীতে প্রস্তুত ছিলেন; এবার তবু দেখতে হবেনা। কথাতো একই – সর্বোচ্চ ত্যাগ।

এভাবেই এক মা দুই-দুইবার নিজের একমাত্র সম্বল সন্তানকে আল্লাহর নির্দেশে ত্যাগের জন্য প্রস্তুত ছিলেন নির্দ্বিধায়।

কুরবানী কেবল ইব্রাহীম (আ) করেননি
কেবল ইসমাঈল (আ) করেননি
হাজেরাও করেছেন।

আমাদের সমাজ হাজেরাদের কোরবানী মনে রাখে তো ?

 

ঈদ মানে খুশিঃ সবাইকে পবিত্র ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা

অপরাজিতা ডেক্স


ঈদুল আযহা বা ঈদুল আজহা (আরবীতে:عيد الأضحى) ইসলাম ধর্মাবলম্বিদের সবচেয়ে বড় দু’টো ধর্মীয় উৎসবের একটি। বাংলাদেশে এই উৎসবটি কুরবানির ঈদ নামে পরিচিত। এই উৎসবকে ঈদুজ্জোহাও বলা হয়। ঈদুল আযহা মূলত আরবী বাক্যাংশ। এর অর্থ হলো ‘ত্যাগের উৎসব’।

মহান আল্লাহর আদেশে হযরত ইবরাহীম (আঃ) তাঁর আপন পুত্র ইসমাইলকে কুরবানি করার ঘটনাকে স্বরণ করে সারা বিশ্বের মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা এই উৎসবটি পালন করে।

এ দিনটিতে মুসলমানেরা তাদের সাধ্যমত ধর্মীয নিযমানুযায়ী উট,গরু,দুম্বা কিংবা ছাগল কোরবানি করে।
এ এক অনাবিল আনন্দ, যে আনন্দের কোনো তুলনা নেই। এ আনন্দ আল্লাহর নৈকট্য লাভের আনন্দ। এ আনন্দ গুনাহ মাফের এবং বৈষয়িক ব্যস্ততাকে বাদ দিয়ে পরলৌকিক জগতের পাথেয় সংগ্রহ করার আনন্দ। এ আনন্দ গরিব-দুঃখীর সাথে একাত্ত্ব হওয়ার আনন্দ। এ আনন্দ পশু কোরবানীর সাথে সাথে মনের পশুকে পরাস্থ করার আনন্দ।

অথচ বাস্তবে আমরা কি দেখি-যে আনন্দের বারতা নিয়ে মুসলমানদের ঈদ আসে সে অন্তরালে ডুকরে কাঁদে। মনের পশুকে জবেহ করার পরিবর্তে আমরা হয়ে উঠি পশু হন্তারক। অশান্তির প্রচণ্ডতায় দগ্ধ হই আমরা। কিন্তু এটাতো ইসলামের শিক্ষা নয়।

পাশবিকতাকে মন থেকে নির্মূল করে মনুষ্যত্ব ও ত্যাগের শিক্ষাদানের জন্যই বিশ্ব স্রষ্টা আল্লাহ তা’আলা দান-সদকা, কুরবানীসহ অন্যান্য ইবাদতসমূহ মানুষের উপর আরোপ করেছেন। এসব কিছুর মাধ্যমেই আমরা যাতে আমাদের মনের পাশবিকতাকে ধ্বংস করে মনুষ্যত্বসহ অন্যান্য ভালোগুণগুলো অর্জন করতে পারি।

 

রূপান্তরের যাত্রা – ১ম পর্ব


তাহনিয়া খান


Rabbish rahli sadri wa yas-sir li amri wahloul uqdatam mil-lisaani yafqahu qawli.
O my Lord! expand me my breast; Ease my task for me; And remove the impediment from my speech, So they may understand what I say[20:25-28]

জীবনের অনেক স্বপ্ন বা ইচ্ছা আমার পূরণ হয়নি। সে জন্য মাঝে মাঝে দুঃখবোধ হলেও নিজেকে বুঝাই যে, আল্লাহ্‌ যা করেন তা ভালোর জন্যই করেন। আলহামদুলিল্লাহ্‌, কিছু জিনিস আল্লাহ্‌ আমাকে না চাইতেই দিয়ে দিয়েছেন। আবার কিছু স্বপ্ন পূরণ করে দিয়েছেন একেবারে সারপ্রাইজ দিয়ে। আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে তেমনই একটি সারপ্রাইজ গিফট হচ্ছে আমার হজ্জে যাওয়া।

ছোটবেলায় হজ্জের দিন সৌদি চ্যানেল থেকে বিটিভিতে সরাসরি হজ্জ দেখাতো। আরবিতে কি সব বলতো, কিছুই বুঝতাম না। শুধু মানুষ দেখতাম। আর ‘লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক’ ধ্বনি শুনতাম। কেমন সুর করে ,ছন্দ দিয়ে সবাই একসাথে বলতো, খুব ভালো লাগতো শুনতে। ছোট থেকে শুনতে শুনতেই দোওয়াটা মুখস্ত হয়ে গিয়েছিল। প্রতি বছর আমি আগ্রহ নিয়ে হজ্জ দেখি।

যখন বড় হলাম, তখন একদিন শুনলাম যে, ইব্রাহীম (আঃ) যখন হজ্জের জন্য সবাইকে ডাক দিয়েছিলেন, তখন যার যার কানে সেই ডাক পৌছিয়েছে তারাই নাকি শুধু হজ্জে যাবে। এই কথা শোনার পর থেকেই শুধু মনে হতে লাগলো যে, ‘ আমার কানে সেই ডাক কি পৌছিয়েছে?’ প্রতিবার কোন না কোন পরিচিত লোক হজ্জে যান আর আমার মনে হয় এই লোক ডাক শুনেছেন। তখন নিজের কথা চিন্তা করি।

দিন যায় আর আকর্ষন বাড়তে থাকে। আমার স্বামীর সাথে কত প্ল্যান করি। সে বলে, আগে উমরাহ্‌ করে সব দেখে আসবে, তারপর পরেরবার হজ্জ করতে যাবে। আমি বলি, আগে হজ্জ করবো, তারপর যত ইচ্ছা ততবার উমরাহ্‌ করবো ইন শা আল্লাহ্‌। এই নিয়ে কত মনমালিন্য। অথচ দুইজনের কারোই হজ্জ বা উমরাহ্‌ করার সামর্থ্য হয়নি। চিন্তা করলে এখন হাসি আসে। আমি প্রতিদিন দোওয়া করতে থাকি, আল্লাহ্‌ হজ্জ করার তৌফিক দাও প্লিজ।

একটা সময় আমার হজ্জ করা ফরয হয়ে যায়। কিন্তু আমার স্বামীর তখনও হজ্জ ফরয হয়নি। আবার আমার এমন অবস্থাও নেই যে, দু’জনে মিলে যেতে পারবো। মন খুব খারাপ থাকে। মাহরাম ছাড়া তো যেতে পারবো না। আল্লাহ্‌র কাছে দোওয়া করি। প্রতিবার ভাবি, এ বছরই বুঝি যেতে পারবো। কিন্তু যাওয়া আর হয় না। হজ্জের দিন টেলিভিশন দেখি আর চোখ দিয়ে পানি পরে।

২০০৩ সালে আব্বু আর আম্মু হজ্জ করে আসলো। তখন আমার হজ্জ ফরয হয়নি। হলে চলে যেতাম তাঁদের সাথে। এর মাঝে টাকা পয়সা আমি খরচ করে ফেলেছি। হজ্জ ফরয হয়ে বসে আছে আর এখন টাকাও নেই। মন আরো খারাপ থাকে। ২০১১ সালে আমার ছোট দুই ভাই, তানভির আর তাপস হজ্জে যাবে বলে ঠিক হয়। খুব কম সময়ের মাঝে তারা এই সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও তানভিরের তখনো হজ্জ ফরয হয়নি, কিন্তু তাপসের হজ্জ ফরয হয়ে গিয়েছে। আম্মু তখন তানভির আর তাপসকে বললো, ‘তানিয়ার তো হজ্জ ফরয হয়ে গিয়েছে। যেহেতু তানভিরের হজ্জ ফরয হয়নি তাহলে তানিয়াই তাপসের সাথে যাক। সে তো মাহরাম ছাড়া যেতে পারবে না’। আমার ভাইয়েরাও দেখল যে আম্মু তো খারাপ কিছু বলেনি। তারাও রাজি হয়ে গেলো। এরপর আম্মু আমাকে ফোন দিল। আমি তো শুনে মহা খুশী। খুশীর চোটে আমার হার্টবিট এত বেড়ে গিয়েছিল যে আমার পাশে যদি সে সময় কেউ থাকতো তাহলে অবশ্যই তা শুনতে পেতো।

ফোন রাখার পর মন খারাপ হয়ে গেলো। শুধু মনে হলো, হায় আল্লাহ্‌ ! আমি আমার স্বামীর সাথে যেতে পারবো না ? আবার ভাবলাম যে হজ্জ ফরয তো আমার হয়েছে। আমি যদি এখন হজ্জে না যাই, তাহলে তো আল্লাহ্‌র কাছে আমাকেই জবাব দিতে হবে। আর নবীজী (সাঃ) তো বলেই দিয়েছেন যে কারো যদি হজ্জ ফরজ হয়, আর সে যদি তা পালন না করে মারা যায়, তাহলে সে ইহুদী হয়ে মারা যাক বা নাসারা হয়ে মারা যাক উনার কিছুই যায় আসে না।

আমি জানি, আমার স্বামী আমার কোন কাজে বাধা দেয় না। এ ব্যাপারেও সে কোন বাধা দিবে না। কিন্তু তার অনেক মন খারাপ হবে। তার স্বপ্ন আমাকে সাথে নিয়ে হজ্জ করা । সেদিন সে অফিস থেকে বাসায় আসলে আমি তাকে আম্মুর আর আমার সিদ্ধান্তের কথা জানালাম। তাকে বুঝালাম যে, ‘দেখো, হজ্জ ফরয আমার। তুমি যদি বাধা দাও তাহলে তুমি গুনাহর ভাগীদার হয়ে যাবে। তাছাড়া টাকা-পয়সা সব সময় হাতে থাকে না। শরীরটাও যে সবসময় আমার ভালো থাকবে তারও কোন গ্যারান্টি নেই। আর আমার সব খরচ এখন আম্মু দিয়ে দিবে। এটা তো আমার জন্য বিশাল একটা সাপোর্ট’। সে শুধু বললো, ‘ঠিক আছে তুমি হজ্জে যাও। কিন্তু আমি যখন হজ্জে যাবো আমি একাই যাবো’। বুঝলাম অনেক অভিমান নিয়ে কথা বলছে। আমি বড় হাসি দিয়ে বললাম, ইন শা আল্লাহ্‌, আল্লাহ্‌ তোমার সাথে আমার যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিবেন।

আম্মু কে সাথে সাথে ফোন দিলাম। বললাম যে, আম্মু, হজ্জে যাচ্ছি ইন শা আল্লাহ্‌। এরপর আমি ছিলাম এক ঘোরের মাঝে। আমি জানলাম আমার হাতে সময় আছে প্রায় দুই মাসের মত। এর মাঝে আমাকে এজেন্সির সাথে কথা বলতে হবে ,অফিস থেকে পারমিশন নিতে হবে, ছুটি নিতে হবে । হজ্জের ব্যাপারে লেখাপড়া করতে হবে, প্রশিক্ষন নিতে হবে, হজ্জের যাওয়ার জন্য জামা কাপড় সহ আনুসাঙ্গিক জিনিসপত্র কিনতে হবে, ডাক্তারের সাথে কথা বলতে হবে, ইত্যাদি হাজারো কাজ। সবচেয়ে বড় কথা এজেন্সি আমার ভাইয়ের বদলে আমাকে নিবে কিনা। আমি এত এক্সাইটেড যে কি বলবো। নিজেরি বিশ্বাস হতে চাচ্ছে না যে হজ্জে যাচ্ছি। তানভির দৌড়াদৌড়ি করে এজেন্সির সাথে সব কিছু ঠিক করার চেষ্টা করতে লাগলো। সে শুধু বললো, ‘আপু ,দোওয়া করতে থাকো। সব ঠিক হয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ্‌’। যতক্ষন পর্যন্ত কনফার্ম না হই ততক্ষন পর্যন্ত কাউকে বলতেও চাচ্ছিলাম না।

এরপর শুরু হলো মিরাকেলের উপর মিরাকেল। এজেন্সি রাজি হয়ে গেলো। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে অফিস থেকে দেড় মাসের জন্য ছুটি পেয়ে গেলাম। এজেন্সি ভুল ঠিকানা দেওয়াতে পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় ঝামেলা হওয়ার আগেই আল্লাহ্‌ সেই সমস্যারও সমাধান করে দিলেন। শুধু আমার জন্য কিছু ভাইয়েরা কষ্ট করলেন। এর মাঝে আর্থিক সমস্যা দেখা দিল। সেটারও সমাধান হয়ে গেলো।

হজ্জের প্রথম শিক্ষা হচ্ছে – আল্লাহ্‌ যদি কারো ভালো চান বা কাউকে ভালো কিছু দিতে চান, সেটা তিনি দিবেনই দিবেন। আল্লাহ্‌ আপনার জন্য চেয়েছেন, আর আপনি তা পাবেন। সারা দুনিয়ার মানুষ বিপক্ষে থাকলেও বা বাধা হয়ে দাঁড়ালেও কোন লাভ নেই। কারো কোন ক্ষমতা নেই আল্লাহ্‌র চাওয়াকে নষ্ট করতে।

চলবে

 

মনের জানালা সৌন্দর্য

আফরোজা হাসান


প্রতিটি মানুষের মধ্যেই হিলিং পাওয়ার আছে। হিলিং মানে আরোগ্য। হিলিং পাওয়ার মানে, আরোগ্য লাভের ক্ষমতা। যার প্রয়োগে একজন ব্যক্তি অন্য যে কারো তরে যেমন আশা জাগানিয়া হতে পারে, তেমনি হতে পারে নিজেই নিজের সাপোর্ট সিস্টেম। অর্থাৎ, যে কোন প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে নিজেই নিজেকে বের করে নিয়ে আসার ক্ষমতা কিংবা অন্তত পক্ষে প্রচেষ্টা। হতাশার ঘোর অন্ধকারে মনের দরজা জানালা বন্ধ করে বসে না থেকে চারপাশ হাতড়ে যদি কয়েকটা পাথর খন্ডও মিলে যায়, তার দ্বারা নিজকে আলোকিত করার প্রচেষ্টা। স্টিভ মারাবলি খুব চমৎকার একটা কথা বলেছেন, “দ্য মোস্ট পাওয়ারফুল রিলেশনশিপ ইউ উইল এভার হ্যাভ ইজ দ্য রিলেশনশীপ উইথ ইউর সেলফ।” শুধু তাই না মানুষের সবচেয়ে বড় শক্তিও কিন্তু সে নিজেই। মানুষের দুর্বল হবার প্রথম ধাপটাই হচ্ছে, নিজকে ভুলে যাওয়া, নিজকে মূল্যায়ন না করা, নিজের ভেতরের শক্তিকে না চেনা, নিজের মধ্যের আলোকে না খোঁজা। মানুষের সুখ, শক্তি, আশ্রয় সবকিছুই হয় অন্য মানুষকে ঘিরে। মানুষ তার মনের এক মূহুর্তের শান্তির অনুভূতির জন্য মোহতাজ হয়ে যায় অন্য মানুষের। আমার কথার অর্থ এটা নয় যে, আমরা কাউকে ভালোবাসবো না, কারো মাঝে শান্তি, স্বস্থি খুঁজবো না, কাউকে নিজের ভরসায় আশ্রয়স্থল হতে দেবো না। সবকিছুই করবো কিন্তু সেই সাথে নিজেকেও মনে রাখবো, মূল্যায়ন করবো, নিজের সাথে গড়ে তুলবো চমৎকার বন্ধুত্ব, আত্মার সম্পর্ক। যাতে চলার পথে যদি কখনো কারো হাত ছুটে যায়, কারো সাথ ছুটে যায় তখন নিজেকে আঁকড়ে ধরে নিজেকে সামলে নেয়াটা অন্তত সম্ভব হয়।

আলো আঁধার পৃথিবীর স্বাভাবিকত্ব। চড়াই উৎরাই মানুষের জীবনের স্বাভাবিকত্ব। সময় কখনোই একরকম যাবে না! প্রিয়জনরা সর্বদাই পাশে থাকবে না! ঋতু চক্রের মতো বদলাবে কাছের মানুষদের রঙ-রুপ। সম্পর্কের বাঁধনে জোয়ার যেমন আসবে, ভাটাও আসবে। আপনজনেরা হাসাবে আবার কাঁদাবেও। সবার চেয়ে আপন যে জন সেও কখনো শ্রাবণে সিক্ত করবে, কখনো তপ্ত রৌদ্রে দাহন করবে! নিজেকে সবকিছুর জন্য প্রস্তুত রাখাটা জীবনে স্বস্থি ধরে রাখার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি। জীবন কখনো কখনো এমন মোড়ে নিয়ে যায় যেখানে নিজের কোন দোষ না থাকার পরেও ভুক্তোভোগী হতে হয়। আবার কখনো কখনো অনেক বড় ভুলও ক্ষমা পেয়ে যায় সময়ের উদারতায়। কখনো আমরা নির্দিষ্ট কোন কারণই খুঁজে পাই না ভোগান্তির পেছনে! ঠিক এমনি করে অনেক প্রাপ্তি যোগ হয় জীবন ভান্ডারে, যার কারণ জানার প্রয়োজনই বোধ করিনা। হুম, এটাই বলতে চাচ্ছি যে আমরা মানুষেরা অপ্রাপ্তির হিসাবে এত মশগুল থাকি যে প্রাপ্তিগুলো তেমন করে নজরেই আসে না। প্রতিকূল পরিবেশ-পরিস্থিতি, মানুষ আমাদেরকে যতটা না হতাশ করে, তারচেয়ে বেশি নিরাশ করে ইতিবাচকতার প্রতি আমাদের উদাসীনতা। আমরা মুখে মুখেই শুধু দাবী করি জীবন একটি পরীক্ষাক্ষেত্র। আমরা এখানে প্রতিমূহুর্তে পরীক্ষা দিচ্ছি। দুনিয়া আখেরাতের শস্যক্ষেত্র। আমরা নিজের জন্য ফসল ফলাচ্ছি। কিন্তু সত্যি কথা হচ্ছে, আমরা পরীক্ষা দিতে প্রস্তুতই নই। তাই পরীক্ষা এলে প্রশ্নপত্রের দিকে ভালো মতো নোটিশ না করেই হাত-পা এলিয়ে বসে যাই। অন্যের কষ্টার্জিত ফসলের পানে চেয়ে আমরা হাহাকার করি নিজের ভাঁড়ার ঘর শূন্য বলে। কিন্তু নিজের ভাঁড়ার ঘর পূর্ণ করার জন্য পরিশ্রম করতে আমরা নারাজ, অপারগ, নানান অভিযোগ, বাহানার বেড়াজালে বন্দী।

এমন অবস্থা থেকে পেতে চাইলে মুক্তি, নিজেকেই হতে হবে নিজের শক্তি। জানতে হবে জীবনের মূল লক্ষ্য, সেই উদ্দেশ্যে নিজকে করতে হবে দক্ষ। জীবন মানেই আলো আঁধারির খেলা, কখনো পাশে থাকবে কেউ কখনো শুধুই একলা। তবুও পাড়ি দিতে হবে দুর্গম পথ, নিজের সাথে নিতে হবে দৃঢ় শপথ! দুঃখ আসুক কিংবা সুখ, অন্তর কখনো হবে না আখিরাত বিমুখ… ইনশাআল্লাহ।।

 

অধিকার

মোঃ দেলোয়ার হোসেন !


ভিক্ষা চাইতে আসিনি ,
এসেছিলাম আমার অধিকারের দাবী নিয়ে !

এ অধিকার,
আমার জন্মগত অধিকার !

এ অধিকার,
আমার খেটে খাওয়া পিতার কলিজার ঘাম ঝরানো পরিশ্রমে,
“পনেরো” টাকা উপার্জনের অধিকার !

এ অধিকার,
আমার মায়ের একআধ বেলা না খেয়ে থেকে ,
“আটত্রিশ” টাকা সঞ্চয়ের অধিকার !

এ অধিকার ,
আমার ভাইয়ের সারাদিন রোদে পোড়ে বৃষ্টিতে ভিজে, জমিতে লাঙ্গল চষে,
পুরো পরিবারের খোরাকি উৎপাদনের অধিকার !

এ অধিকার ,
আমার বোনের মাটির ব্যাংকে পরম মমতায় গুঁজে রেখে
তিল তিল করে জমানো প্রতিটি চকচকে পয়সার অধিকার !

এ অধিকার ,
আমার সারা অঙ্গে লেপ্টে থাকা সুবাসিত,
অগনিত ধূলিকণা ও কাদামাটির অধিকার !

আমার এ অধিকার চাওয়ার বিনিময়ে,
আঘাতে আঘাতে আমি ক্ষতবিক্ষত হলাম !
সেই সাথে ক্ষতবিক্ষত হলো ,
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের প্রতি ইঞ্চি মাটি !

কালের সাক্ষী হয়ে রইলো যে কলংকিত ইতিহাস ,
তা তোমাদের কখনো ক্ষমা করবেনা !
কক্ষনো না !!
কক্ষনো না !!!

 

দাম্পত্য জীবনে দুইটা ব্যাপার

কানিজ ফাতিমা


দাম্পত্য জীবনে দুইটা ব্যাপারে সচেতন থাকুন।
এক – আপনার বাবা-মা যেন পিতা-মাতার প্রতি কর্ত্যব্যের নামে আপনাকে তাদের জীবনের সব আশা-আকাঙ্খা পূরণের হাতিয়ারে পরিণত না করে। তখনই বুঝবেন আপনি সীমা ছাড়াচ্ছেন যখন দেখবেন তাদের বর্তমান জীবনের চাহিদা পূরণ করার পরও তাদের চাহিদার শেষ হচ্ছেনা। তাদের ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে এমনকি তাদের অতীতের (যেমন বাল্যকালের) সব ইচ্ছাপূরণে আপনাকে বাধ্য করা হচ্ছে। আপনার পিতা -মাতার বর্তমান আপনার দ্বায়িত্ব। যখন আপনার স্ত্রী- সন্তানের বর্তমানকে আপনার কম্প্রোমাইজ করতে হচ্ছে পিতা-মাতার ভবিষ্যত সিকিউর ও অতীতকে রোমাঞ্চকর করার জন্য – বুঝে নেবেন তখনি আপনি ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন।
দুই – আপনার স্পাউজ যেন আপনার সন্তানকে ‘মুলা’ হিসাবে ব্যবহার করে আপনাকে আপনার পিতা-মাতার দায়িত্বের প্রতি বেখেয়াল করে ফেলতে নাপারে। যখনই দেখবেন আপনার সন্তানের সাধারণ প্রয়োজনকে বেশী মাত্রায় জোর দেয়া হচ্ছে, আপনার পিতা-মাতার অতীব প্রয়োজনের থেকে ; আপনার পিতা -মাতার বর্তমানের জরুরী চাহিদার বিপরীতে আপনার সন্তানের ভবিষ্যতকে বেশী গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে তখনই বুঝবেন ভারসাম্য ব্যাহত হচ্ছে।
“বাচ্চার পরীক্ষা, তাই শশুড় – শাশুড়ী বেড়াতে আসতে পারবেনা ”
“বাবার বাড়ী গেলে বাচ্চা ভালো থাকে, শশুর বাড়ী গেলেই বাচ্চা অসুস্থ হয়ে যায় ”
“শশুড় বাড়ী এসি নাই, বাচ্চার ঘুমাতে কষ্ট হবে।”
শ্বাশুড়ীর ওষুধ কেনার সময় “বাচ্চার ব্যাগ পুরানো হয়ে গেছে, ছেলেটা কত দিন ধরে একটা ব্যাগের জন্য বলছে – সেদিকে খেয়াল নেই ” ; ” মেয়েটার পার্টিতে যাবার ভালো একটা জামাও নেই “- এই জাতীয় বাহানা পেশ করা আসলে ভারসাম্যহীনতার লক্ষণ।
বাবা-মা আর স্পাউজ – দু’ই গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। কিন্তু আমরা না বুঝেই অনেক সময় বাবা-মাকে greedy করে ফেলি , স্পাউজ আর সন্তানদের অবহেলার মধ্যে ফেলে; আবার অনেকসময় স্পাউজের বাহানার ফাঁদে পরে বাবা-মাকে নিদারুনভাবে neglect করি।
ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করুন।
ভারসাম্যই ন্যায়, ভারসাম্যহীনতাই অন্যায়, জুলুম; সেটা যেদিকেই হোক না কেন।

 

ছোট ছোট ত্যাগ জীবনকে করে তোলে স্বপ্নিল……শেষ পর্ব

আফরোজা হাসান


এইজন্যই তো আমি বলি কোনদিন বিয়ে করবো না! ছবি আঁকা বন্ধ করে বাক্যটির উৎস সন্ধানে চোখ তুলে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা ননদকে দেখে অন্তরা হেসে বলল, আবার কি হলো তোমার? ভাবীর পাশে এসে বসে শারলিন বলল, বিয়ে মানেই হচ্ছে নিজ জীবনের সব স্বপ্ন সাধের অবসান করে অন্যের রঙে রাঙিয়ে যাওয়া।

– অন্তরা হেসে বলল, একে অন্যের রঙে মিশে যাওয়া তো খারাপ কিছু না।

– একে অন্যের রঙে মিশে যাওয়া খারাপ কিছু না ঠিক, কিন্তু এমনটা তো ঘটে না। ছেলেরা নিজেদেরকে বদলায় না, বৌকে বাধ্য করে বদলাতে। এই যে তুমি এত চমৎকার ছবি আঁকো, এক সময় স্বপ্ন দেখতে পেইন্টার হওয়ার। বিয়ের পর কি সেই স্বপ্ন তোমাকে ছেড়ে দিতে হয়নি? তোমার কি মনেহয় না ভাবী তুমি তোমার প্রতিভাকে তার সঠিক পথে চলতে দাওনি? আমি হলে কখনোই এমন করতাম না। কারো জন্যই নিজের স্বপ্নকে ত্যাগ করতাম না। তুমিই বলো অন্যের জন্য নিজের জীবনের স্বপ্নকে বদলে ফেলাটা কি ভুল নয়?

-হয়তো ভুল। তবে জীবনের পথে এগিয়ে চলতে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় মানুষকে মাঝে মাঝে এমন ভুল করতে হয়। তবে ভুলটাকে ধরে বসে না থেকে যদি সামনে এগিয়ে যাওয়া যায়, তাহলে সেটা জীবনের উপর তেমন প্রভাব বিস্তার করতে পারেনা। তাছাড়া একটা স্বপ্ন পূরণ করতে হলে মানুষকে আরেকটা স্বপ্ন ছাড়তে হয়।

-এটা তো নিজেকে নিজে সান্ত্বনা দেয়া কথা।

-আমার ধারণা এটা নিজেই নিজের কষ্টের কারণ হওয়া থেকে বাঁচার উপায়। আমার একটু ত্যাগ যদি আমার জীবনকে সুখী-সুন্দর করতে পারে, তাহলে কেন আমি সেটা করতে কার্পন্য করবো বলতো। তাছাড়া আমি কিন্তু আমার স্বপ্নকে হারিয়ে যেতে দেইনি। সময় পেলে আমি ছবি আঁকি, টুকটাক ডিজাইন করি নিজেদের জন্য। আসলে আমরা চাইলেই একই সাথে নিজের এবং আপনজনদের স্বপ্নগুলোকে পূরণ করতে পারি। কিন্তু আমরা সে চেষ্টা না করে নিজের ফলস ইগোর পাল্লায় পরে শুধু শুধু জীবনকে জটিল করে তুলি। হ্যা এটা ঠিক যে একটা স্বপ্নকে ছেড়ে দিতে অনেক কষ্ট হয় আমাদের কিন্তু পুরনোকে বিদায় না দিলে তো নতুনকে পাওয়া যায়না। আর নতুনকে পাবার পথে যদি একটা স্বপ্ন বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় সে স্বপ্নটাকে ছেড়ে দেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।

-মেয়েরাই কেন ছাড় দেবে সবসময়?

-এখানে আবার ছেলে-মেয়ে আসছে কেন? সংসারের সুখের জন্য স্বামী-স্ত্রী দুজন মিলেই চেষ্টা করতে হবে। ছাড় দেয়াটা যখন যার জন্য সহজ হবে তখন সে দেবে। সংসার তো কোন প্রতিযোগিতা নয় যে সারাক্ষণ হার-জিতের চিন্তা করতে হবে।

-সবাই তো এভাবে চিন্তা করেনা। একবার মেয়েরা ছাড় দিলে ছেলেরা সুযোগ পেয়ে যায়।

-সবার চিন্তা করে আমি আমার জীবনকে কেন জটিল করবো? অন্যের অভিজ্ঞতা দিয়ে আমি আমার জীবনকে চালাতে চাইনা। সমস্যা কিন্তু ছাড় দেয়া বা না দেয়া নিয়ে নয়। সমস্যাটা হচ্ছে বেশির ভাগ মানুষই জানেনা সে কেন ছাড় দিচ্ছে। যদি জানতো তাহলে ছাড় দেয়াটা কখনোই ইস্যু তৈরি করতো না সংসারে। কিন্তু আমি জানি আমি কেন ছাড় দিচ্ছি। আমি ছাড় দিয়েছি আমার নিজের সুখের জন্য। আমি আমার ছোট্ট একটা স্বপ্নকে ত্যাগ করেছি সারাজীবনকে স্বপ্নিল করার আশা নিয়ে। আর এরজন্য যতবার আমাকে ছাড় দিতে হবে আমি দেব ইনশাল্লাহ। তোমার ভাইয়া কি করছে সেটা তাঁর ব্যাপার। আমি শুধু আমার দায়িত্ব যথাযথ পালন করতে চাই। আর একজন যখন নিঃস্বার্থভাবে তার দায়িত্ব পালন করবে, অন্যজন সেই প্রভাবমুক্ত থাকতে পারেনা বলেই আমার বিশ্বাস।

– কিন্তু সবসময় তো এমন হয় না ভাবী। নিঃস্বার্থভাবে ত্যাগ করেও অন্যকে প্রভাবিত করা যায় না। বরং এই ত্যাগের সুযোগই গ্রহণ করে সবাই।

– সেক্ষেত্রে এটাই হচ্ছে পরীক্ষা। যখন মানুষ তার ভালো কাজের মূল্য পায় না, উল্টো তাকে আরো অবহেলিত হতে হয়, আমি মনেকরি সেটাই তারজন্য পরীক্ষা। আর এরচেয়েও বড় কথা হচ্ছে আমাদের সকল কাজের প্রতিদান শুধুমাত্র আল্লাহর কাছে আশা করতে হবে।

– তারপরও ভাবী শুনতে যত সহজ শোনায়, এত সহজ নয় এসব বিষয়।

-হেসে, আচ্ছা প্রশ্ন কঠিন এই ভয়ে কি আমরা পরীক্ষা দেয়া ছেড়ে দেই? উহু বরং পরীক্ষায় পাশের লক্ষ্যে খুব ভালো মত প্রস্তুতি নেই। সম্পর্কের মাঝের সমস্যাগুলোকে যদি আমরা পরীক্ষা মনে করে, পাশ করার লক্ষ্যে নিজেদেরকে প্রস্তুত করার চেষ্টা করতাম তাহলে খুব ভালো রেজাল্ট না করলেও ফেল অন্তত করতাম না। টেনেটুনে পাশ হয়তো করেই যেতাম।

– হেসে, তোমার সাথে তো কথা বলাই মুশকিল। ঠিকই নিজের মত প্রতিষ্ঠা করে ফেলো কথা মায়াজালের ফাঁদ পেতে। এজন্যই তো সবাই তোমাকে এত পছন্দ করে।

-হেসে,আলহামদুলিল্লাহ! তোমাকে একটা গল্প বলি চল। বেতবন আর জলপাইগাছের মধ্যে নিজেদের শক্তি নিয়ে তর্ক চলছিলো। জলপাইগাছ বলল, তুমি তো একটু বাতাসেই নুয়ে পড়ো। তোমার আবার শক্তি কোথায়? বেতবন একথার কোন উত্তর দিলো না। কিছুক্ষণ পর ঝড় এলো। প্রচণ্ড ঝড়। বেতবন ঝড়ের ঝাপটাকে কোনরকম বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করলো না। বাতাসের ধাক্কায় একবার সে এদিকে নুয়ে পড়ে আরেকবার ওদিকে। ঝড় শেষে দেখা গেলো ঝড়ের ধাক্কা সামলে উঠেছে সে, দাঁড়িয়ে আছে নিজের পায়ে।
এদিকে বিরাট শক্তিশালী জলপাইগাছ তো নুতে পারেনা। সে বাতাসের ধাক্কাকে ঠেকিয়ে রাখতে না পেরে ভেঙ্গে পড়লো। এখন বলো কি শিখলে এই গল্প থেকে?

-আমাদের উচিত অবস্থা অনুযায়ী খাপ খাইয়ে চলার চেষ্টা করা।

– আমি সবার সাথে এই কাজটি করারই আপ্রাণ চেষ্টা করি। আমরা নিজেদের ইচ্ছে, আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন, কষ্ট ইত্যাদিকে বড় করে দেখি বলেই আমাদের জীবনটা জটিল হয়ে যায়। এভাবেই সম্পর্কের মাঝে দুরুত্ব আসে, ব্যবধান বাড়ে, কাছের মানুষরা দূরে চলে যায়। শুধু একটু ইচ্ছা, প্রচেষ্টা, অন্যেকে বুঝতে পারার মানসিকতাই সম্পর্কগুলোকে করে দিতে পারে স্বপ্নিল। আর যখন ভালো করেও খারাপ আচরণ পেতে হয়, তখন আমাকে রাসূল (সঃ) এর বাণী ধৈর্য্য ধরে করণীয় করে যেতে প্রেরণা যোগায়। “সে আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষাকারী নয়, যে সম্পর্ক রক্ষার বিনিময়ে সম্পর্ক রক্ষা করে। বরং প্রকৃত আত্মীয়তা-সম্পর্ক রক্ষাকারী সেই, যার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে সে তা জোড়া দেয়।” আসলে সমস্যা কি জানো?

– কি ভাবী?

– -পৃথিবীতে জানে এমন মানুষের কোন অভাব নেই, অভাব হচ্ছে জানাকে মেনে চলে এমন মানুষের। আর এর কারণ আমরা মুখেই কুরআন-সুন্নাহর বড় বড় কথা বলি কিন্তু আমাদের মননে ইসলাম অনুপস্থিত। যদি মননে ইসলাম থাকতো তাহলে আমরা শুধু মুখে বলতাম না বরং কাজের দ্বারাও প্রমাণ করতে চেষ্টা করতাম যা বলছি সেটাকে।

– একদম ঠিক বলেছো ভাবী।

– আমাদের আরেকটা বড় সমস্যা হচ্ছে কিছু একটা ত্যাগ করেই আমরা মনে মনে নিজেকে মহান ভাবতে শুরু করি। অন্যের জন্য এটা করেছি ওটা করেছি, সুতরাং স্বীকৃতি এখন বাধ্য আমার জন্য এমন হয় আমাদের মনোভাব। এক হাতে দিয়ে, অন্য হাতে প্রতিদান নেবার জন্য তৈরি হয়ে যাই আমরা। যখন হাত শূন্য থেকে যায়, সহ্য করতে পারিনা। মনের মধ্যের কুপ্রবৃত্তি গুলো মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। ভুলেই যাই আমাদের সব কাজের বহুগুণ প্রতিদান ফিরিয়ে দেবার জন্য একজন বসে আসেন। কিন্তু আমাদের ধৈর্য্য যে বড় কম, যে কোন ত্যাগের তৎক্ষণাৎ মূল্যায়ন চাই আমাদের।

– তুমি কারো কাছ থেকে কিছু পেতে চাও না তাই না ভাবী?

-হেসে, হ্যা চাই না কোন প্রতিদান। কারণ আমি যা করি নিজের জন্য করি, অন্যের জন্য না।

– মানে?

– মানে আমি বিশ্বাস করি যে, আজ যদি আমি তোমার জন্য ছোট কোন একটা ত্যাগ করি, তার বদলে আমাদের ননদ-ভাবীর সম্পর্ক আরো সুন্দর হবে। সুতরাং পরোক্ষভাবে আমিও লাভবান হবো। আবার যদি তোমার কাছ থেকে কোন স্বীকৃতি নাও পাই, আত্মীয়তার হক রক্ষার পুরস্কার আমি পাবোই, ইনশাআল্লাহ।

-হেসে, হুমম…এটাই তাহলে তোমার গিরগিটি হবার রহস্য?

– আমি জীবনে সুখী হতে চাই শারলিন। আর সুখী হবার সবচেয়ে সহজ ও ফলপ্রসূ টিপস হচ্ছে, সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা করা। তাহলেই কেবল মানুষ সবকিছুকে স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারে। সহজভাবে গ্রহণ করতে পারে জীবনের প্রতিটা চড়াই-উৎড়াইকে, করতে পারে ছোট ছোট ত্যাগ যখন প্রয়োজন, যতবার প্রয়োজন। আমরা বড় স্বার্থপর, অন্যের কিছু করতে আমাদের বড় বেশি আপত্তি। তাই যখনই কোন কিছু ত্যাগ করার বা ছাড় দেয়ার প্রশ্ন আসে, আমি নিজের লাভটা সবার আগে ভেবে নেই। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি যে, আমার ত্যাগ এই দুনিয়াতে যথার্থ মূল্যায়ন না পেলেও, আখিরাতে পাবে ইনশাআল্লাহ। আর তখনই আমার বেশি প্রয়োজন পড়বে এসবের।

– ইনশাআল্লাহ! আমিও আজকে থেকে এভাবে চিন্তা করবো ভাবি।

– কিভাবে?

-হেসে, ছোট ছোট ত্যাগ জীবনকে করে তোলে স্বপ্নিল।

-হেসে, আলহামদুলিল্লাহ্‌! আমি দোয়া করি এই চিন্তার দ্বারা তোমার জীবন হয়ে উঠুক অনেক অনেক সুন্দর-সহজ-সরল ও স্বপ্নিল।

পর্ব-৫

 

ত্বকের যত্নে নানান রস

ঘরকন্যা


শসার রস

শসার রস যে কোন অঙ্গের দাগ দূর করার জন্য দারুণ উপকারী। এতে ত্বকের ক্ষতির কোন সম্ভাবনাই থাকে না। শসার রসলাগিয়ে রাখুন ২০/২৫ মিনিট। তারপর ধুয়ে ফেলুন। কয়েকদিন ব্যবহারেই উপকার পাবেন।

আলুর রস

আলুর রস লাগানো একটু ঝামেলার হলেই এটি উপকারী শসার রসের চাইতেও বেশী। ত্বকে আলুর রস লাগিয়ে রাখুন। ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটাও ত্বকের কোন ক্ষতি করে না।

লেবুর রস

লেবুর রস হচ্ছে প্রাকৃতিক রূপচর্চা র সবচেয়ে সহজলভ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। কিন্তু সরাসরি অঙ্গে বা ত্বকে ব্যবহার না করাই উচিত, ত্বকে হতে পারে জ্বলুনি ও র্যাশ। লেবুর রসের সাথে শসার রস ও এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে নিন। তারপর একে লাগান যেতে পারে। লেবুর ও হলুদ দাগছোপ দূর করবে আর শসা রক্ষা করবে ত্বককে। ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। ধোয়ার সময় সাবান দেবেন না।

 

বগুড়ায় গণধর্ষণের শিকার নার্স

নারী সংবাদ


বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এক নার্স গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এই ঘটনায় দুপচাঁচিয়া থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।

পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত দুইজনকে গ্রেফতার করেছেন। বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার তালোড়া ইউনিয়নের ওই নার্সের মামলা সূত্রে জানা যায়, সে দুপচাঁচিয়া মেইন বাসষ্ট্যান্ডে অবস্থিত একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নার্সের কাজ করত।

প্রতিদিন বাড়ি থেকে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যাতায়াত করে। পাশের গ্রামের নূর ইসলামের ছেলে সোহান (২০) তাকে বিভিন্ন সময় প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে আসতেছিল। গত ২৭ জুলাই ওই নার্সকে বিয়ে করবে বলে প্রস্তাব দিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরাঘুরি করে তালোড়া কাজী অফিসে যাওয়ার কথা বলে দুপচাঁচিয়ার দোগাছি মানিকগঞ্জ মাঠের কাছে নিয়ে যায়।

পরে রাত ৯ টার দিকে চারযুবক মিলে তাকে জোরপূর্বক গণধর্ষণ করে। এরপর রাতে ১১টার দিকে আবারো তারা জোর পূর্বক ধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে ওই নার্স জ্ঞান হারিয়ে ফেললে আসামিরা তাকে ফেলে পালিয়ে যায়।

ভোরে সে অসুস্থ অবস্থায় তার কর্মস্থল দুপচাঁচিয়া প্রাইম ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আসে এবং সিনিয়র নার্সকে ঘটনাটি অবগত করে চিকিৎসা গ্রহণ করে।

পরে ১১ আগস্ট, শনিবার দুপচাঁচিয়া থানায় নিজেই বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করে। মামলার তদন্তকারী অফিসার থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) শহিদুল ইসলাম জানান, এজাহারভুক্ত দুইজন আসামিকে আটক করা হয়েছে।

আটককৃতরা হলেন- বেলঘড়িয়া গ্রামের আজিজুর রহমানের ছেলে জাহিদুল ইসলাম ওরফে সাজু (২৮) ও খিহালী পশ্চিমপাড়ার আব্দুল রহিমের ছেলে নাজিম (২০)। বগুড়ার আদমদিঘি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, নার্সকে গণধর্ষণের শিকার হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। রোববার ওই নার্সকে মেডিকেলে নেওয়া হতে পারে।
সূত্র: ইন্টারনেট।

 

আপনার বাসার সাহায্যকারী আপনার জন্য পরীক্ষা স্বরূপ।….শেষ পর্ব

তাহনিয়া খান


অত্যাচার করা যেমন অমানবিক, তেমনি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও তা গুরু দণ্ডনীয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাললাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম তাঁর মৃত্যুর আগেও অধিনস্ত সাহায্যকারীদের ব্যাপারে সাবধান করে দিয়েছিলেন। সাহায্যকারীদের হক আদায় কতটা গুরুত্বপুর্ন যে মৃত্যুর আগে তিনি সব কথা বাদ দিয়ে এই ব্যাপারেই সাবধান হতে বললেন! এটা আমরা কয়জন চিন্তা করি ?

ঘটনা ১,৩,৪,৫ এর ঘটনাগুলি পর্যালোচনা করি। যখন অধিনস্ত সাহায্যকারীরা ভুল করে, বেয়াদবি করে বা বড় ধরনের অঘটন ঘটায়, তখন নিজেকে স্থির রাখা অনেক সময়ই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে নিজেকে স্থির রেখে ঠাণ্ডা মাথায় কাজ করার প্রবণতা বজায় রাখতে হবে। রাগ করাও যাবে না। ব্যাপারটা যত সহজে লিখলাম, তত সহজ না। এটা প্রতি নিয়ত প্র্যাকটিসের ব্যাপার। একবার এক সাহাবী এসে নবীজীকে জিজ্ঞেস করলেন,আল্লাহর রাসূল! আমি খাদেমকে (কাজের লোক বা গোলামকে) কতবার ক্ষমা করব? নবীজী চুপ থাকলেন। সাহাবী আবার জিজ্ঞাসা করলেন। এবার নবীজী বললেন, প্রতিদিন সত্তরবার। তিরমিযী,হাদীস ১৯৪৯ রাসুলুল্লাহ সাল্লাললাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের হাদিসটি মাথায় গেঁথে ফেললে নিজেকে কন্ট্রোল করা অনেক সহজ হয়ে যায়।
যখন কোনো সাহায্যকারী কথা না শুনে, তাকে না রাখাই উত্তম। কারণ মনমালিন্য করে সংসারে অশান্তি রাখার কোনো মানে হয় না। সংসারে অশান্তির চেয়ে নিজের ঘরে দুটো কাজ বেশী করলে বরং মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকা যায়।

সাহায্যকারীদের ভালো কথা, আদর, ধর্মীয় কথা দিয়ে মোটিভেট করার চেষ্টা করাই শ্রেয়। সাহায্যকারী আপনার কাজে সাহায্য করবে। সারাক্ষণ যদি বকা ঝকা আর ধমকের মাধ্যমে তাকে অর্ডার করা হয় তাহলে সাহায্যের বদলে সে আপনাকে অসহযোগিতাই করবে। আপনি নিশ্চয়ই তার অসহযোগিতা পাওয়ার জন্য তাকে নিয়োগ দেননি। এক্ষেত্রে কৌশলী হতে হবে। অনেক পরিবারে দেখেছি তারা তাদের সাহায্যকারীদের এমন ভাবে রাখেন , দেখলে মনে হয় পরিবারেরই একজন সদস্য। ঘটনা ৯ ও ১০ এর কথা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। যদিও ঘটনা ২ এর মত ঘটনা ঘটে যেতে পারে। সেটাকে দূর্ঘটনা ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে।

কিছু মানুষ কখনোই তার স্বভাব পরিবর্তন করতে পারে না। এমন কিছু সাহায্যকারীদের দেখেছি যারা অন্যের বাসায় কাজ করে নিজের সন্তানদের শিক্ষিত করে স্বাবলম্বী করে ফেলেছে। আবার কাউকে দেখেছি স্বভাবের কারণে ভ্যান, রিক্সা, গরু,ছাগল কিনে দিয়েও কোনো লাভ করতে পারেনি। ঘটনা ৬,৭,৮ এর মত ঘটনাও আমাদের কাছে অপরিচিত নয়। অনেকেই তাদের সাহায্যকারীদের নীচু চোখে দেখে। ঠিকমত খাবার দেন না, দিলেও বাসী পচা খাবার দেন। আপনি নিজে যে খাবার পছন্দ করেন না, সেটা কেনো অন্যকে দিবেন? মুমিন তো সেই, যে নিজের জন্য যা পছন্দ করে, অন্যের জন্যও তাই পছন্দ করবে। অথচ এমন মানুষ দেখেছি, যিনি বোন প্লেট থেকে খাবার তুলে তার সাহায্যকারীকে খাবার দিয়েছেন। একটা হাদিস পড়েছিলাম, যেখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাললাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “ আল্লাাহ তাদেরকে তোমাদের অধীন করেছেন। তোমাদের কারো অধীনে যদি কেউ থাকে তাহলে সে যেন নিজে যা খায় তাকেও তা থেকে খাওয়ায়। নিজে যা পরিধান করে তাকেও তা থেকে পরিধান করায়। এবং তোমরা তাদের উপর সাধ্যের বেশি কাজ চাপিয়ে দিও না। যদি দাও তাহলে নিজেও সে কাজে তাকে সাহযোগিতা কর”। সহীহ বুখারী, হাদীস ২৫৪৫

রাসুলুল্লাহ সাল্লাললাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, “যখন খাদেম খাবার প্রস্তুত করে তোমার সামনে পেশ করে,তখন (পারলে তাকে তোমার সাথে বসিয়ে খাওয়াও) তাকে যদি তোমার সাথে বসিয়ে খাওয়াতে না পার অন্তত তার হাতে এক দুই লোকমা তুলে দাও। কারণ এ খাবার প্রস্তুত করতে গিয়ে (আগুনের তাপ ও) সকল কষ্ট তো সেই সহ্য করেছে”। সহীহ বুখারী,হাদীস ২৫৫৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৬৬৩

আমরা অনেকেই ভালো ভালো আমল করে থাকি। কিন্তু নিজের অজান্তেই সেই সব আমল নষ্ট করে ফেলি। বিশেষ করে মেয়েদের কথাই বলছি। এতক্ষণ এত কিছু লেখার মূল কারণ হচ্ছে নিজের আমলকে আগলে রাখার জন্য যত্নবান হওয়া এবং সেদিকে সজাগ দৃষ্টি স্থাপন করা। বেশীর ভাগ মহিলাই তার আমল নষ্ট করে ফেলে সাহায্যকারীদের সাথে দূর্ব্যাবহার করে এবং তাদের প্রাপ্য বা হক থেকে বঞ্চিত করে।

মনে রাখবেন, আপনার বাসার সাহায্যকারী কিন্তু আপনার জন্য পরীক্ষা স্বরূপ। তার সাথে খারাপ ব্যাবহারের কারণে আপনার আমল নষ্ট হয়ে যেতে পারে, আবার ভালো ব্যবহারের কারণে আমল বৃদ্ধি পেতে পারে।

১ম পর্ব

 

অনন্তজীবনের মূলমন্ত্র

তাহেরা সুলতানা


রবার্ট ফ্রস্টের ‘Stopping by the Woods on a Snowy Evening’ খুব পরিচিত একটি কবিতা, যা বহু সাহিত্যচর্চায় এবং প্রায়ই নির্দিষ্ট ইংরেজি সাহিত্যে পড়া হয়। উক্ত কবিতার ১৬তম লাইনে ফ্রস্ট এমন একজন ভ্রমণকারীকে চিত্রায়িত করেছেন, যে কিনা কোন এক শীতের সময় শুনসান এক ভূখণ্ডের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করে এবং যাত্রাপথে হঠাৎ তুষারে আবৃত বৃক্ষরাজির অপরুপ দৃশ্য অনুভব করার জন্য কিছুক্ষণের জন্য থমকে দাঁড়ায়। সত্যিকার অর্থে, এই ‘থমকে দাঁড়ানো’টাই আমাদের দুনিয়ায় পথ চলার জন্য সংক্ষিপ্ত সময়। আর পুরো পথচলাটা হচ্ছে মৃত্যুর পর পরবর্তী জীবন! ফ্রস্টের ভাষায়, “The woods are lovely, dark and deep. But I have promises to keep, And miles to go before I sleep, And miles to go before I sleep.” যার সারমর্ম হলো, এই অপরুপ সুন্দর বৃক্ষরাজি যতই আমাকে থামিতে রাখতে চাক না কেন, আমি ওয়াদা করছি যে, আমার যাত্রা কোনভাবেই থামাবো না এবং ঘুমিয়ে পড়ার আগেই আমি আমার লক্ষ্যে পৌছে যাব!

বন্ধুরা, হয়তো ভাবছো, রবার্ট ফ্রস্টের কবিতার সাথে আমাদের দুনিয়া এবং আখেরাতের জীবনের মিল কোথায়?

ভ্রমণকারীর ছবিটি গভীরভাবে ইসলামের শিক্ষায় আবদ্ধ।
মুজাহিদ বিন আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বললেন, “এই দুনিয়াতে তুমি এমনভাবে চল, যেন তোমাকে দেখে মনে হয়, তুমি একজন অপরিচিত বা ভ্রমণকারী।” (সহীহ বুখারী)

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন একটি খেজুরের মাদুরের উপর শুয়ে ছিলেন এবং যখন তিনি উঠে দাঁড়ালেন তখন তাঁর শিয়রের পাশে একটি চিহ্ন দেখতে পেলেন। আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনার জন্য কি একটি আচ্ছাদন তৈরি করতে পারি?’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘এই জগতের সাথে আমি কি করতে পারি? আমি এই দুনিয়াতে একজন রাইডারের মতো, যিনি কিনা বৃক্ষের নীচে ছায়া খুঁজছেন এবং তারপর ছুটে চলেছেন!”(তিরমিযী)।

হাদিস দুটো থেকে এটা স্পষ্ট যে, যেহেতু আমরা রাইডার বা ভ্রমণকারী হিসাবেই এই পৃথিবীতে এসেছি, তাই আমরা যেন সে ব্যাপারে সর্বদা সচেষ্ট থাকি, আমরা এই সংক্ষিপ্ত জীবনটা যেন খুব জাঁকজমকপূর্নভাবে না কাটাই! সাময়িকভাবে থাকার জন্য আমাদের যতটুকু দরকার, ততটুকু নিয়েই যেন সন্তুষ্ট থাকি এবং আমাদের অনন্তকালীন জীবনে ভালো থাকার যে মূলমন্ত্র, সেই লক্ষ্য অর্জনে যেন সচেষ্ট থাকি!

রবার্ট ফ্রস্টের কবিতা দ্বারা আমরা বুঝি, যে যাত্রীটি তুষার ও বৃক্ষরাজির সৌন্দর্য দেখে অভিভূত হয়ে যায়, কিন্তু সে বুঝতে পারে এই প্রশান্তি সাময়িক এবং ভ্রান্তিপূর্ণ। আসলে সচেতন মানুষ ঠিক এই জায়গা থেকেই চূড়ান্ত ভ্রমণের দিকে অগ্রসর হওয়ার আহ্বান পায়!
আমাদের মনে রাখতে হবে যে, এই লোভনীয় সাময়িক প্রশান্তি আমাদের সাথে প্রতারণা করতে পারে, আমাদের লক্ষ্যে পৌছাতে বাধার সৃষ্টি করতে পারে! কিন্তু বন্ধুরা, আমাদের ভুললে চলবে না যে, আমরা একটি উদ্দেশ্য নিয়েই এই পৃথিবীতে আবর্তিত হয়েছি এবং সেই উদ্দেশ্য সফলভাবে সম্পন্ন করেই আমাদের অনন্তজীবনে প্রবেশ করতে হবে! মহান সৃষ্টিকর্তার উপাসনা করা ও সেই বিশ্বাস সবার কাছে পৌছে দেয়া, সর্বদা মানবজাতির জন্য কল্যান বয়ে আনা এবং পরকালীন জীবনের জন্য সাধ্যমতো নিজেকে তৈরী করা-এটাই এই সংক্ষিপ্ত জীবনের মূলমন্ত্র!

‘Miles to go’ before ‘I sleep’. বন্ধুরা, আমাদের এই সংক্ষিপ্ত জীবনের প্রতিটি মুহুর্তের সঠিক ব্যবহার করতে হবে! কিভাবে আরও বেশী স্নেহশীল, আরো আন্তরিক, আরও ক্ষমাশীল, এবং আরও বুঝদার হওয়া যায়, সেগুলো শিখতে হবে এবং ব্যক্তিগত জীবনে তার প্রতিফলন ঘটাতে হবে! একজন রাইডার বা ভ্রমণকারী হিসাবে আমারা আজ বিভিন্ন ভূমিকায় অবতীর্ন হয়েছি: শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মী, নেতা, অনুসারী, কর্মী কিংবা স্বেচ্ছাসেবী। আমরা প্রত্যেকে যদি আমাদের নিজস্ব জগতে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে ভ্রমণ করতে থাকি়, তাহলে একটা সময় আমরা ঠিকই একই বিন্দুতে এসে মিলিত হতে পারবো ইনশাআল্লাহ!

আমি একজন বিশিষ্ট স্পিকারের বক্তৃতায় শুনেছি, যিনি উপস্থিত সবাইকে কল্পনা করতে বলেছিলেন, “ধরুন, এই মুহুর্তে এই হলরুম থেকে আলো হঠাৎ করে চলে গেলো! তখন কি করবেন?” তখন অংশগ্রহণকারী সবাই বলেছিল, তাদের মোবাইলের আলো জ্বালাবে, নয়তো লাইটার অন করবে, অথবা যেকোনভাবে আলোর ব্যবস্থা করবে! তখন সেই বক্তা বলেছিলেন, “সবাই একসাথে আলোর খোঁজে বের হবেন, এই তো মূল উদ্দেশ্য? আর যেভাবেই হোক, আলোর ব্যবস্থা করবেন?” আসলে তিনি এটাই আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন যে এই দুনিয়ার জীবনে আমরা আমাদের যে গুণগত সম্পদগুলো পেয়েছি, সেগুলোর সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে জানতে হবে। আমাদের প্রত্যেককে অনন্তকালীন আলো পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য যে আলো দেওয়া হয়েছে, সেই আলোকে এককাতারে সামীল হয়েই ধারন করতে হবে!

রাসূল (সা:) বলেন; “পাঁচটি বস্তু আসার পূর্বে পাঁচটি বস্তকে সুযোগ মনে করো। বার্ধক্যের পূর্বে যৌবনকে, অসুস্থ হওয়ার পূর্বে সুস্থতাকে, দারিদ্রতার পূর্বে সচ্ছলতাকে, ব্যস্ততার পূর্বে অবসরকে এবং মৃত্যুর পূর্বে জীবনকে।”

তাই বন্ধুরা, আমাদের ভুললে চলবে না, ‘Miles to go before we sleep’!

মহান আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে দুনিয়ার সকল মোহ থেকে মুক্ত রেখে অনন্তকালীন আলোর খোঁজে একসাথে সামিল হওয়ার তৌফিক দান করুন! আমিন!

 

ছোট ছোট ত্যাগ জীবনকে করে তোলে স্বপ্নিল (পর্ব -৫)

আফরোজা হাসান


শ্বশুর বাড়ির সবাই দুষ্টুমি করে অন্তরাকে ডাকে বহুরূপী গিরগিটি নামে। অবশ্য নামটা যথার্থই। কারণ বহুরুপী গিরগিটি যেমন যখন যে গাছে বাস করে সে গাছের সঙ্গে রঙ মিলিয়ে নিজের রঙ বদলায়, যাতে কেউ গাছ থেকে তাকে আলাদা করতে না পারে। অন্তরা তেমনি এই বহুরূপী গিরগিটি স্বভাবের কারণেই পরিবারের মধ্যমণিতে পরিণত হয়েছে। পরিবারের প্রতিটা সদস্যর সুখে-দুঃখে, আনন্দ-বেদনাতে তাদের পাশে থাকতে চেষ্টা করে সে। সবাইকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসে, আর তাই সে ভালোবাসা দ্বিগুণ রূপে ফিরে আসে সবসময় তার কাছে। কষ্ট-ব্যথা যে পায়না পরিবারের কাছ থেকে তা অবশ্য না কিন্তু সেগুলোকে মনে ধরে বসে থাকে না কখনোই অন্তরা। অন্তরার যুক্তি হচ্ছে, “একটা কিছুকে আঁকড়ে ধরে থেকে মানুষ কেন জীবনের সুখ-শান্তিকে নষ্ট করবে? এমন বোকামো কখনোই কারো করা উচিত নয়। কারণ জীবন হচ্ছে গতির নাম। শারীরিক ও মানসিক গতিশীলতা বাঁধাপ্রাপ্ত হতে পারে এমন সবকিছুকে তাই যথাসাধ্য এড়িয়ে যেতে হবে।” রান্নাঘরে ঢুকে মেঝো জা যাবিনকে মুখ ভার করে কাজ করতে দেখে অন্তরা দুষ্টুমির ছলে বলল, শুনতে পাচ্ছো কি ঝিঁঝিঁ পোকার আনন্দমুখর গান? ভুলে যাও না তবে অকারণ এই মান-অভিমান। তাকিয়ে যদি দেখ জোনাকির আলো বিচ্ছুরণ, মুহুর্তে মনের বিষাদ তোমার করে নেবে হরণ।

-যাবিন হেসে বলল, উফ ভাবী! তুমি আর তোমার কাব্য। অবশ্য সুখী মানুষেরা এমন সব পরিস্থিতিতেই ছন্দ মিলিয়ে ফেলতে পারে।

-অন্তরা চোখ বড় বড় করে বলল, সেকি তুমি দুঃখী মানুষে এই তথ্য তো জানা ছিল না আমার। তা হঠাৎ তোমার দুঃখী মানুষ হবার রহস্য কি?

-তোমার সামনেই তো তোমার দেবর আমাকে কত কথা শোনালো।

-তুমি তো জানোই যে ব্যবসার কারণে সাকিব অনেক চিন্তা-অস্থিরতা মধ্যে আছে।

-ক্ষোভ ঝরে পড়লো যাবিনের কণ্ঠে, ভাবী চিন্তা-অস্থিরতার সময় করা মানুষের আচরণই কিন্তু বলে দেয় তার মনে কার অবস্থান কোথায়।

-তুমি সংসারের টুকটাক মনোমালিন্যকে এই সংজ্ঞা দিয়ে বিবেচনা করলে কিন্তু জটিলটা বেড়ে যাবে জীবনের। সব সংজ্ঞা সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

-হুম…তুমি তো এমন বলবেই, কারণ ভাইয়া কখনোই তোমার সাথে মিস বিহেব করেন না।

-করেন না কথাটা কিন্তু ঠিক না যাবিন। সঠিক কথা হচ্ছে আমি সবসময় চেষ্টা করি এমন সবকিছু এড়িয়ে চলতে যাতে তোমার ভাইয়া বিরক্ত হতে পারেন। নয়তো তোমার ভাইয়াও কখনো মনোরম উদ্যান, শোভিত জনপদ, অঝোর জলপ্রপাত, আবার কখনো ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ভুমিকম্প, আগ্নেয়পাত।

-হেসে, তোমার এসব দুষ্টু দুষ্টু কথা শুনলে মেজাজ ঠাণ্ডা হয়ে যায়।

-হেসে, আলহামদুলিল্লাহ! তাহলে হয়ে যেতে দাও মেজাজকে ঠাণ্ডা।

-কিছুক্ষন চুপ থেকে যাবিন বলল, ভাবী ভাইয়া কি সত্যিই রাগ করে তোমার সাথে? মনে কষ্ট দিয়ে কথা বলে?

-হেসে, জানো সেদিন একটা মজার তথ্য জানলাম। আমরা কষ্ট পাই না বরং তৈরি করি। আমাদেরকে কেউ কষ্ট দেয়না, আমরাই কষ্ট টেনে নেই নিজের উপর।

-সেটা কিভাবে?

-সেটা এভাবে যে কোনো ঘটনা বা কথা তোমাকে কতটা বিচলিত করবে, সেটা নির্ভর করে তুমি ঘটনা বা কথাকে কীভাবে দেখছো বা গ্রহণ করছো তার ওপর। অর্থাৎ, তোমার দৃষ্টিভঙ্গির উপর। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন-মানুষ কষ্ট পায় না, কষ্ট তৈরি করে। আর কে কেমন কষ্ট তৈরি করবে সেটা তার বেড়ে ওঠা পরিবেশ, শিক্ষা, কোয়ালিটি অব ইনফরমেশন, বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে। তুমি এই কথাগুলো নিজের সাথে মিলিয়ে দেখো তাহলেই বুঝতে পারবে।

-কিন্তু সাকিব আমার সাথে মিস বিহেব করেছে বলেই আমি কষ্ট পেয়েছি। অকারণে কষ্ট তৈরি করিনি।

-হেসে, এই যে যুক্তিটা দিলে এটা কিন্তু কষ্ট তৈরিতে আরো সহায়তা করছে।

– এতো না পেঁচিয়ে তুমি বরং আমাকে বুঝিয়ে বলো।

– অন্তরা হেসে বলল, এই যেমন দেখো সাকিব তোমার স্বভাব আর অভ্যাস নিয়ে কিছু কথা বলেছে। মিথ্যা বা ভুল কিছু কিন্তু বলেনি। তুমি যা করো সেসবই বলেছে। তুমি যদি মেনে নিতে তাহলে মান-অভিমানের প্রশ্নই উঠত না। কিন্তু তুমি মেনে না নিয়ে উল্টো রাগ করেছো। তোমাকে বোঝে না, সম্মান করে না, যথেষ্ট ভালোবাসে না ইত্যাদি ইত্যাদি নানা কথা ভাবছো। অথচ সাকিব কিন্তু এসবের কিছুই বলেনি, এই প্রতিটি চিন্তা তোমার নিজের তৈরি করা। তোমার কল্পনাপ্রসূত এসব চিন্তাই তোমার মনে কষ্টের তৈরি করছে নতুন নতুন।

– লাজুক হেসে,আমি সত্যিই তো এসব ভাবছি। তুমি বুঝলে কি করে?

– হেসে, গবেষকরা তো আর শুধু শুধু বলেননি যে, মানুষ কোনো একটি ঘটনা বা কথাকে কেন্দ্র করে নেতিবাচক চিন্তা করতে করতে পাহাড়সমান কষ্ট তৈরি করে ফেলে। আর যে সকল চিন্তা তৈরি করে তার বেশির ভাগ চিন্তাই বাস্তব না। অথচ এমন অর্থহীন বা অবাস্তব চিন্তা করে সে নিজেকে কষ্ট দিয়ে জীবনকে নষ্ট করে, ধ্বংস করে। এমন ভুল করো না যাবিন। সংসার জীবনটাও একটা পরীক্ষা আর নিজেই নিজের পরীক্ষাকে জটিল করে কি লাভ বলো। নিজের ভুলকে মেনে নেবার মাঝে কিংবা হঠাৎ করে ফেলা স্বামীর কোন ভুল আচরণকে ক্ষমা করে দেবার মাঝে তো হেরে যাবার কিছু নেই।
তাছাড়া এতে তো তুমিই বেশি লাভবান হবে তাই না?

– কিন্তু নিজেকে যে সবসময় নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনা। বিশেষ করে যখন আমার অপছন্দনীয় কিছু করে তখন।

– তোমাকে সবসময় যে কথাটা মনে রাখতে হবে সেটা হচ্ছে, জগতে তোমার ইচ্ছা মতো কেউই চলবে না। কারণ তোমার নিয়ন্ত্রণে কেউ নেই। তোমার নিয়ন্ত্রণে আছো শুধু তুমি নিজে। আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই দেখবে সবকিছু নিয়ন্ত্রিত হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

– (হেসে) নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার কোন ম্যাজিক ওয়ার্ড নেই তোমার ভাবী?

– আলহামদুলিল্লাহ! অবশ্যই আছে, ম্যাজিক ওয়ার্ডটি হচ্ছে-

ছোট ছোট ত্যাগ জীবনকে করে বিকশিত

ভুল বোঝাবুঝির দ্বারা দাম্পত্য হয়না আশাহত

সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম জিনিসের প্রতি হলে অনুরক্ত

হতাশার ঘেরাটোপে মন হবে আসক্ত

সংসারটাকে করতে চাইলে দুর্লভ কোন ভাস্কর্য্য

অর্জন করতে হবে যে গুণ তার নাম ধৈর্য্য।

চলবে….

পর্ব-৪

 

একটি আত্মিক চিঠি!

                                                          হাবিবা মৃধা


প্রিয় মা মণি,

অসুস্থতার আজ সপ্তাহ পার হতে চলল! খুব করে ইচ্ছে করছিল আম্মুর হাতের আদর আর কোলে মাথা রেখে দোয়া নিতে , আল্লাহ্ আমার জাদু কে ভালো করে দাও! আম্মুকে এই ইচ্ছের কথা বললে তিনি যেকোন ভাবে চলে আসার বয়না করতেন  অথবা আব্বু নিজেই নিয়ে আসতেন! কিন্তু আবেগের এই চাওয়াটুকু একেবারেই মুল্যহীন কংক্রিটে গড়ে ওঠা স্বপ্ন ও বাস্তবতার কাছে ! চাইলেই সবটুকু আবেগ গুরুত্ব দেয়া যায় না! আম্মু দুর থেকে দোয়া করছেন আমি জানি সে দোয়া আল্লাহর আরশে পৌছে আল্লাহর ওয়াদা অনুযায়ী! মেরুদণ্ডে খুব ব্যাথা, একটু নড়াচড়া করতে পারিনা সবচেয়ে বড় কষ্ট সিজদা দিতে না পারার!

আজ তোমার ভিডিও কলের এই দোয়াটুকু আমায় যেন একেবারে ই সুস্থ করে তোলার দ্বার প্রান্তে! মাত্র আড়াই বছরের মেয়ে খেলায় দুষ্টুমিতে যার মন ছুটে বেড়ায়, সে আবার একদম মায়ের মত হাত তুলে পুরো রাব্বানা জলামনা সহ কত দোয়া করে আবার আমীন বলে শোনায়! এই দেখ ফুফি মোনাজাত করেছি এখনি তোমার ব্যাথা ভালো হয়ে যাবে!

অসুস্থতার সময় সুস্থতাকে পৃথিবীর সেরা নিয়ামত মনে হয়, কেউ একটু দোয়া করলে ভিতরটা প্রশান্তিতে ভরে যায় অথচ যিনি দোয়া করেন তিনি নিজেও উপকৃত হন কারণ দোয়া ইবাদতের মুল! তাছাড়া হাদীসের বাণী অনুযায়ী নিজের ও অন্যের জন্য দোয়া করলে এর সওয়াব নিজের আমলনামায় জমা হয়!

তুমি এখন ছোট হলেও বাবার বড় মেয়ে তাই কখনো ছোট ফুফি হতে পারবেনা তবে ফুফি হবে যদি আল্লাহ্ চান! হয়তো বুঝবে হয়তো বুঝবে না ভাতিজির জন্য কলিজাটা কিভাবে পুড়তে থাকে সারাক্ষণ!. একদিন তুমি বড় হবে, মানুষ হবার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে সামনে পা বাড়াবে ! শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পা রাখতেই তোমাকে ভুলতে হবে আজকের একলা কাটানো অবসর সময় গুলো!প্রতিযোগিতাময় পৃথিবীর মঞ্চে নিজেকে উপস্থাপন করতে তোমার ও প্রতিটি দিন হবে কোলাহল ময় বেড়ে যাবে ব্যস্ততা! হয়ত সেদিন তোমার আর আজকের মত মন কাঁদার সময়টুকু হবেনা! কোন এক বিকেলে বিস্মৃত স্মৃতিতে মনে হতে পারে ফুফির কথা!

আমি যখন হলে এসে একমিনিট ভিডিও কলে তোমাকে দেখি আর সারাক্ষণ কানে বাজে ফুফি তোমাকে খুব মিস করি!এতগুলো মিস করি সত্যি বলছি তুমি চলে এসো!

আমি কত পাষাণ তাইনা! এরপরেও থেকে যাই আমার স্বপ্নকে বাস্তবতায় রুপ দেয়ার প্রিয় আঙিনায় ! আমার দোয়া ও ভালোবাসা থাকবে সবসময়! ভালো থেকো কলিজা!!

তোমার ছোট ফুফি!

26/7/18

লেখিকা: কবি সুফিয়া কামাল হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়!!

 

‘ফিন্যান্স’ প্রেমিক যুগলের আত্মহত্যা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে

নারী সংবাদ


ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দুই শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে জানা গেছে।
আত্মহননকারীরা হলেন- মুমতাহেনা আফরোজ ও রোকনুজ্জামান রোকন।

মুমতাহেনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. আশরাফুল ইসলামের মেয়ে।

রোকনুজ্জামান রোকন সম্পর্কে প্রক্টর জানান, নিহত রোকনুজ্জামান বিভাগের অনার্সে ১ম মেধাস্থান অর্জন করেছিলেন এবং মাস্টার্সের রেজাল্টও একই।
উভয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১১-১২ সেশনের (মাস্টার্স) শিক্ষার্থী ছিলেন।

পরিবার এই সম্পর্ক মেনে না নেয়ায় প্রথমে গলায় ফাঁসি দিয়ে মুমতাহেনা আত্মহত্যা করেন। পরে প্রেমিকার মৃত্যুর খবর শুনে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে রোকনও আত্মহত্যা করেন।

নিহত মুমতাহেনার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি থানার বালিয়াখালী গ্রামে। রোকনুজ্জামানের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা থানায়।

পরিবার ও সহপাঠী সূত্রে জানা গেছে, রোকন ও মুমতাহেনা মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ করে ইন্টার্ন শিফট করছিলেন। তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল।

পারিবারিকভাবে হেনাকে অন্যত্র বিয়ে দেয়ার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছিল। পরে পরিবারের সদস্যদের রোকনের বিষয়ে জানানো হলে তারা এ সম্পর্ক মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। একই সঙ্গে গত তিন দিন ধরে দুজনের মধ্যে মনোমালিন্য চলছিল বলে জানিয়েছেন সহপাঠীরা। এতে তাদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন ঘটে। সবকিছু মিলিয়ে চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেল মেধাবী দুই মুখ।

ঝিনাইদহ শহরের ঝিনুক টাওয়ারের পঞ্চম তলার ফ্ল্যাটে হেনা তার পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হেনা তার নিজ কক্ষের ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন। পরে দরজা ভেঙে উদ্ধার করে ঝিনাইদহ মেডিকেলে নেয়া হলে কর্তৃব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন।

এদিকে মুমতাহেনার মৃত্যুর খবর শুনে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন রোকন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে রোকনুজ্জামানের মরদেহ কুষ্টিয়া শহরের মতি মিয়া রেলগেট থেকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জিআরপি থানা পুলিশ।

রোকন কুষ্টিয়া শহরের পেয়ারাতলা নামক স্থানে একটি ছাত্রাবাসে থাকতেন।পোড়াদহ জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আজিজ জানান, কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার মতি মিয়া রেলগেট নামক এলাকায় পোড়াদহ থেকে ছেড়ে যাওয়া গোয়ালনন্দগামী ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে এক যুবক আত্মহত্যা করেছে। সংবাদ পেয়ে রেল পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর ড. রেজওয়ানুল ইসলাম বলেন, রাতেই হাসপাতাল মর্গ থেকে রোকনুজ্জামানের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। একই সঙ্গে মুমতাহেনার লাশও সাতক্ষীরায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

সূত্র ও ছবি :ইন্টারনেট

 

বাংলাদেশের গোল বন্যা পাকিস্তানের জালে

নারী সংবাদ


থিম্পুর চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে ম্যাচ শুরুর আগেই উপস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিকেল থেকেই মাঠে বসে ছিলেন ভারতীয় বাংলাভাষী কুচবিহারের বাঙালিরা। প্রথম ম্যাচে ভারতকে সমর্থন করার পর তারাও বসেছিল বাংলাদেশের খেলা দেখতে। একই সাথে সমর্থন জানানোর জন্যও। তা বাংলা ভাষাভাষী এবং বাঙালি বলে। তা ছাড়া এ বাঙালিরা কাজ করেন বাংলাদেশ দলের হোটেলের পাশেই। সাথে ভুটানে বেড়াতে আসা বাংলাদেশী পর্যটকেরাও উপস্থিত মাঠে। এদের আকুণ্ঠ সমর্থনকে সম্মান দেখিয়ে বিশাল জয়ও তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৫ মহিলা দল। কাল আসরের ‘বি’ গ্রুপে পাকিস্তানকে ১৪-০ গোলের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের মতোই শুরু করেছে শামছুন্নাহার, তহুরা, মনিকা, মারিয়ারা। হ্যাটট্রিকসহ চার গোল করেছেন জুনিয়র শামছুন্নাহার। লাল-সবুজদের আগ্রাসী ফুটবলের কাছে খড়কুটোর মতো উড়ে গেছে পাকিস্তান। এর মাধ্যমে সিনিয়র-জুনিয়র মিলে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন খেলাতেই জয়ের ধারাই অব্যহত রাখল বাংলাদেশ। মারিয়া-মনিকাদের পরের ম্যাচ ১৩ তারিখে নেপালের বিপক্ষে।
তিন বছর ফিফার নিষেধাজ্ঞা কাটিয়েছে পাকিস্তান। এ পরিস্থিতিতে পাকিস্তানিদের পক্ষে ভালো ফুটবল উপহার দেয়া সম্ভব নয়। কাল এর ব্যতিক্রম করা সম্ভব হয়নি দেশটির অনূর্ধ্ব-১৫ মেয়েদের পক্ষে। তাদের পাড়া মহল্লার দলে পরিণত করে বিশাল জয় তুলে নিয়েছে গোলাম রাব্বানী ছোটনের দলের। এ জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন ডিফেন্ডার ছোট শামছুন্নাহার। তার হ্যাটট্রিকে দারুণ জয়ে আসর শুরু বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের। গোল আরো বেশি হতে পারত। কিন্তু আনু চিং মগিনি অতি মাত্রায় মিস করলে বাড়েনি গোলের সংখ্যা। তবে এ আসরে এটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়। গত বছর উদ্বোধনী ম্যাচে নেপালকে ৬-০তে পরাজিত করেছিল তারা।
সাত মিনিটে তহুরা খাতুনের গোল দিয়ে লাল-সবুজদের উৎসব শুরু। ১৮ মিনিটে মনিকা চাকমার ফ্রি-কিকে ব্যবধান দ্বিগুণ। ২১ মিনিটে তহুরা তার দ্বিতীয় গোল করেন চমৎকার ব্যাক হেডে। ডিফেন্ডার আঁখি খাতুন ভাসিয়েছিলেন লবটি। ৩৩ মিনিটে নিজের প্রথম গোল করেন হ্যাটট্রিক করা ছোট শামছুন্নাহার। বিরতির পর ৫০ ও ৫৪ মিনিটে আরো দুইবার বল জালে পাঠিয়ে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন তিনি। ৫৭ মিনিটে করেন নিজের চতুর্থ গোল। এর আগে ৪১ মিনিটে অধিনায়ক মারিয়া মান্ডা এবং ৪২ মিনিটে আঁখি দূরপাল্লার শটে গোল করেন।
প্রথমার্ধে ৬-০ এগিয়ে থাকা বাংলাদেশ দল বিরতির পর ৬০ মিনিটের মধ্যে আরো ছয়বার বল পাঠায় পাকিস্তানের জালে। ৫৮ মিনিটে সাজেদা নিজের দ্বিতীয় এবং ৬০ মিনিটে আনাই মগিনি গোল করেন। ৮৯ মিনিটে আনাই তার দ্বিতীয় গোল করেন। ৯০ মিনিটে শেষ গোল সিনিয়র শামসুন্নাহারের। সূত্র: নয়াদিগন্ত।

 

আপনার বাসার সাহায্যকারী আপনার জন্য পরীক্ষা স্বরূপ…. ১ম পর্ব

তাহনিয়া খান


ঘটনা # ১
বেগম “ক’’ এর বাসায় বহুদিন কোনো কাজের মানুষ নেই। যৌথ পরিবার উনার। বহু কষ্টে একে ধরে তাকে ধরে একজন সাহায্যকারী যোগার করলেন। কিছুদিন পর বুঝতে পারলেন আগেই ভালো ছিল। সাহায্যকারীর নিত্য নতুন যন্ত্রণায় তিনি অতিষ্ঠ। হঠাত বেগম “ক” আবিষ্কার করেন তার দাঁত মাজার ব্রাশটি তিনি ছাড়াও আরেকজন সেটা ব্যবহার করে। শ্যাম্পুর বোতলে প্রায়ই কেউ পানি ভরে রাখে। এসব তার সাহায্যকারীর কাজ। একদিন দাওয়াত থেকে বাসায় এসে দেখেন, বাসার সব চামচ চ্যাপ্টা হয়ে আছে। বাসায় বসে থাকতে থাকতে নাকি সাহায্যকারীর বোরিং লাগছিল, তাই সে বসে বসে চামচ চ্যাপ্টা করে ফেলেছে।

ঘটনা # ২
বেগম “খ” এর বাসায় বিশ বছর ধরে কাজ করেন তার সাহায্যকারী। অসম্ভব বিশ্বস্ত। এতই বিশ্বস্ত যে, বেগম “খ” এর শাড়ি গহনা সব সেই সাহায্যকারী গুছিয়ে রাখে। একদিন দাওয়াত খেয়ে ফিরে এসে দেখেন, মেইন দরজা খোলা। বাসায় ঢুকে দেখেন, তার বিশ বছরের সাহায্যকারী দেশ বিদেশ থেকে সংগ্রহ করে আনা তার শখের দামী দামী গহনাগুলো নিয়ে পালিয়েছে।

ঘটনা # ৩
বেগম “গ” এর ছোট দুটো ফুটফুটে বাচ্চা। চাকরী করে বাচ্চা সামলানো অনেক কষ্টের ব্যাপার। উনার কষ্ট দেখে উনার মা একজন সাহায্যকারী পাঠালেন। বিশ্বস্ত মানুষ পেয়ে বেগম “গ” এর ভালোই দিন কাটছিল। তিনি যেখানে থাকতেন তার চারপাশে নতুন বিল্ডিং তৈরী হচ্ছিল। মাঝে মাঝে খেয়াল করতেন তার সাহায্যকারী সেইসব বিল্ডিঙের লেবারদের সাথে আকার ইঙ্গিতে কথা বলে। বাসার দারোয়ানের সাথে গল্প করে। সাবধান করে দিয়েছিলেন তিনি। হঠাত জরুরী কাজে বেগম “গ” কে চট্টগ্রামে তার মায়ের বাসায় যেতে হয় স্বামী সন্তান্দের নিয়ে। বাসা রেখে গেলেন বিশ্বস্ত সাহায্যকারীর কাছে। পাঁচ দিন পরে ফিরবেন। তিন দিন পার হতেই বেগম “গ” এর স্বামীকে অফিসের জরুরী কাজে ঢাকায় আসতে হলো। বাসায় এসে কলিং বেল না চেপেই বাসার চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকেই হাসাহাসির শব্দ পেলেন তিনি। আস্তে করে নিজের বেডরুমের দিকে এগিয়ে গিয়ে বিছানায় বাসার সাহায্যকারী আর নতুন দারোয়ান কে দেখে হতভম্ব হয়ে যান। দারোয়ানের দোষ যেন নিজের ঘাড়ে না আসে, সেজন্য তাড়াতাড়ি বাইরে থেকে বেডরুমের দরজা লাগিয়ে দেন তিনি। এরপর আশেপাশের মানুষকে ডাক দিয়েছিলেন।

ঘটনা # ৪
বেগম “ঘ” এর হিসাবের সংসার । বাড়তি কোনো আয় নেই তার ঘরে। তাই খুব হিসাব করে চলতে হয় তাকে। প্রতি মাসেই তিনি জানেন কতটুকু চাল ডাল লাগবে তার সংসারে। কিন্তু জিনিসের বরকত পান না তিনি। চাল, ডাল, আলু, মরিচ গুঁড়া, হলুদ গুঁড়া, তেল, তরিতরকারি সহ সব কিছুই গায়েব হয়ে যেত। একদিন তার সাহায্যকারীকে হাতেনাতে ধরে ফেললেন তিনি। অভিনব পদ্ধতিতে তার সাহায্যকারী নিজের বাসায় এসব পাচার করতো। এত হিসাবের মাঝে থেকেও তিনি তার সাহায্যকারীকে খাবার সহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস দিতে কার্পণ্য করেননি কখনো। অথচ তার সাহায্যকারী আশেপাশের সবাইকে বলে বেড়িয়েছে যে বেগম “ঘ” তাকে ঠিকমত কোনো খাবার দাবার দিতেন না।

ঘটনা # ৫
বেগম “চ” এবং উনার স্বামী ডাক্তার। তাদের তিন মেয়ে। ছোট মেয়ের বিয়ের আয়োজন চলছে। বাসার নতুন সাহায্যকারী অসম্ভব মজার রান্না করে। একদিন বিয়ে বাড়ির খোঁজ নিতে বেগম “চ” এর দেবর সকাল সকাল বাসায় এসে হাজির। এসে দেখেন বাসার দরজা খোলা এবং সবাই ঘুমে অচেতন। সবাইকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। অন্যদের ঘুম ভাঙলেও বেগম “চ” এর ঘুম ভেঙ্গেছে পাঁচ দিন পর। নতুন সাহায্যকারী খাবারের সাথে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে সবাইকে অচেতন করে সব কিছু নিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছিল।

ঘটনা # ৬
বেগম “ছ” রান্না করতে বেশ পছন্দ করেন। দুপুর বেলা ভাতের সাথে কমপক্ষে চারটা আইটেম থাকতেই হবে। সারা বছর উনার বাসায় দুইজন সাহায্যকারী, দারোয়ান আর ড্রাইভার থাকে। উনার বাসায় ৪/৫ পদের আইটেম থাকলেও বাসার সাহায্যকারী, দারোয়ান আর ড্রাইভারকে ১/২ পদের তরকারী দেওয়া হয়। তাদের জন্য আলাদা করে মোটা চালের ভাত রান্না হয়। বেগম “ছ” এর ড্রাইভার আফসোস করে বলেছিল, সারা বছর স্যারের সাথে গিয়ে ঝাকা ঝাকা মুরগি কিনি, কিন্তু খাবারের সময় মুরগি পাই না।

ঘটনা # ৭
বেগম “জ” তার সাহায্যকারীকে অনেক টাকা বেতন দিয়ে রেখেছেন। সাহায্যকারী রাখার সময় বলেছিলেন কাজ শেষ হলে ছেড়ে দিতে হবে। বেতন উসুল করতে তাকে দিয়ে সারাদিন যতটুকুন পারেন কাজ করিয়ে নেন। কাজ আগে শেষ হলেও তাকে বাসায় যেতে দেন না, বসিয়ে রাখেন। বেশ কয়েক রকম রান্না হয় বেগম “জ” এর বাসায়। যথেষ্ট পরিমানে খাবার থাকা সত্ত্বেও শুধু মাত্র এক ধরণের তরকারী ও আগের দিনের বাসি ভাত দেওয়া হয় সাহায্যকারীকে, সাথে থাকে ফ্রিজের ২/৩ দিনের বাসি খাবার।

ঘটনা # ৮
বেগম “ঝ” মানসিক ভাবে অসুস্থ। কিন্তু সেটা কেউ বুঝতে পারে না। স্বামী সন্তানদের কাছ থেকে অবহেলা পেতে পেতে, টানা পোড়নের সংসার জোড়াতালি দিতে দিতে তিনি হাপিয়ে যান। কিন্তু সেটা তিনি প্রকাশ করতে পারেন না কারো কাছে। ভিতরের চাপা রাগ, দুঃখ আর অভিমানের ঝালগুলো ঝেড়ে ফেলেন সাহায্যকারীর উপর। যখন তার সাহায্যকারী কোনো ভুল করে ফেলে তখনি তিনি অশ্লীল বাক্য ও মারধর করে নিজের মনকে হাল্কা করে ফেলেন।

ঘটনা # ৯
বেগম “ট” বেশ বিত্তবান মহিলা। তার সাহায্যকারী অনেকদিন থেকেই তার সাথে থাকে। বেগম “ট” বছরের ছয় মাস দেশে থাকেন, আর ছয় মাস বিদেশে থাকেন। দেশের বাইরে থাকার সময় তার পুরো সংসার দেখাশোনা করেন তার সাহায্যকারী। তিনি সেই সাহায্যকারীকে বিয়ে দিয়েছেন, তার স্বামীকে চাকরী দিয়েছেন, তার সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন, এমনকি সন্তানকে লেখাপড়ার জন্য ল্যাপটপ কিনে দিয়েছেন। তার সাহায্যকারী অকৃতজ্ঞ হয়নি কখনো।

ঘটনা # ১০
বেগম “ড” এর সাহায্যকারী এখন তার বাসায় কাজ করে না। কিন্তু বছরে ২/৩ বার বেগম “ড” এর সাথে দেখা করতে আসে। আসার সময় হাত বোঝাই করে গাছের ফল, তরিতরকারি, পালা মুরগি, পিঠা সহ হরেক রকম জিনিস নিয়ে আসে। মধ্যবিত্ত পরিবারের বেগম “ড” নিজের হাজারো সমস্যা মাথায় নিয়েও তার সাহায্যকারীর বিপদে আপদে হাত বাড়িয়েছেন সব সময়। সেটা ভুলে যায়নি তার সাহায্যকারী।

সাহায্যকারী, গৃহপরিচারিকা বা কাজের বুয়া, যে নামেই ডাকি না কেনো, তারা যেমন ব্যবহার করে ও ব্যবহার পায় আমাদের সমাজে, তার কিছু খন্ড চিত্র তুলে ধরলাম এখানে। প্রতিটা ঘটনা বাস্তব এবং আমার পরিচিত জনদের পরিবারের কিছু ঘটনা।

আমরা সব সময় বিভিন্ন পত্রিকাতে বা টেলিভিশনে গৃহপরিচারিকাদেরকে অত্যাচারের খবর পড়ি বা দেখি। অর্থাৎ মিডিয়া শুধু সাহায্যকারীদের উপর নির্যাতনকেই হাইলাইট করে। কিন্তু বাসার সাহায্যকারীরা যেভাবে মানুষদের অত্যাচার করে তা সহজে মিডিয়াতে আসে না বা গুরুত্বও পায় না।

চলবে….

 

ছোট ছোট ত্যাগ জীবনকে করে তোলে স্বপ্নিল (পর্ব-৪)

আফরোজা হাসান


বাড়ির গেটে এসে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে শঙ্কিত বোধ করলো মঈন। বিকেলে ফেরার কথা ছিল তার, এখন বাজে রাত দশটা। ঘরে ঢুকেই আলিশবার ঘোমড়া মুখ দেখতে হবে। গতদিনের মত কান্না করতে না আবার শুরু করে দেয় সেই ভয় কাজ করতে লাগলো মনে। ইচ্ছে করে বা শখ করে দেরি করেনি এই কথাটা কেন যে বুঝতে চেষ্টা করে না…! মনখারাপ করা ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো মঈনের। ফোন করে জানাতে পারতো আলিশবাকে ফিরতে দেরি হবে একথা কিন্তু তাতে বাইরে থাকা অবস্থাতেই মনমালিন্য শুরু হয়ে যেত। তার মন খারাপ হত, সেই প্রভাব গিয়ে পড়তো কাজের উপর। এমনটা চায়নি বলেই ফোন করার রিস্ক নেয়নি সে। সমস্যা হচ্ছে একথা তো আর আলিশবাকে বলা যাবে না। এমন সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ঘরে পৌছে গেল সে। ঘরে ঢুকে যা দেখলো তার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিল না মঈন। তার পছন্দের লাল শাড়ি পড়েছে আলিশবা, সেজেছে মনের মত করে। দেখে মনে হচ্ছিল চাঁদের এক টুকরো নেমে এসেছে ধরত্রীর বুকে। কিন্তু আলিশবার হাসিমুখের সালাম শুনে ভাবুকতা মুহুর্তে উবে গিয়ে, সেখানে স্থান করে নিল সংশয়। ঝড়ের আগের শান্ত প্রকৃতি নয় তো এটা? মৃদু কণ্ঠে সালামের জবাব দিল সে।

-আলিশবা হেসে বলল, তুমি এভাবে তাকিয়ে কি দেখছো আমার দিকে? যাও ফ্রেশ হয়ে এসো। জানো অন্তরা ভাবীর কাছে শিখে আমি তোমার জন্য মাছ রান্না করেছিল। তাড়াতাড়ি চলো খেয়ে বলবে কেমন হয়েছে রান্না।

-ধীরে ধীরে আলিশবার কাছে গিয়ে মঈন বলল, দেরি হবার জন্য আমি সত্যি খুব সরি। তুমি নিশ্চয়ই অপেক্ষা করেছো, কষ্ট পেয়েছো? আসলে হঠাৎ করে কয়েকজন ফ্রেন্ডের সাথে দেখা হয়ে গিয়েছিল।

-আলিশবা বলল, এরপর থেকে এমন হলে আমাকে ফোন করে জানিয়ে দেবে। আমি রাগ করবো না বরং তোমার সমস্যা বুঝতে চেষ্টা করবো।

-হেসে, তুমি রাগ করবে ভেবে আমি ফোন করিনা সেটা কিভাবে বুঝলে?

-হেসে, সেটা তো বলবো না। তবে আজ ভাবী আমাকে এমন কিছু কথা বলেছেন, যা আমার চিন্তা ভাবনাতে অনেক পরিবর্তন এনেছে।

-কি বলেছেন ভাবী?

-বলেছেন, স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন আকাশে তৈরি হয়। আর জমিনে এই ঘরকে সাজানোর কাজ মেয়েরা করে। পুরুষ না ঘর বাঁধে, না সাজাতে পারে। এই কাজ শুধু একটা মেয়েই করতে পারে। শুধু একটা মেয়ে। কারণ পুরুষ জানেই না এই কাজ কিভাবে করতে হয়।

-হেসে, এতো সাংঘাতিক কথা।

-হেসে, সাংঘাতিক সত্যি কথা এটা। সেজন্যই তো কথাটা মেনে নিয়ে এর উপর আমল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি। এখন তুমি যাও ফ্রেশ হয়ে এসো। আমার অনেক ক্ষুধা লেগেছে। হাসিমুখে তখন ওয়াশরুমে রওনা করলো মঈন।

ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে পরিপাটি করে নেবার ফাঁকে আয়নায় মাঝে মাঝে স্বামীর দিকে তাকাচ্ছিল অন্তরা। মুখের সামনে বই ধরা কিন্তু চেহারা থমথম করছে। ভালোই রেগেছে আজ আবির তার উপর ভাবতেই দুষ্টুমির আবেশ ছেয়ে গেলো অন্তরার মনে। অবশ্য কিছুটা অপরাধ বোধও কাজ করতে লাগলো মনে। দেড় ঘন্টা আগে তাকে ডেকে পাঠিয়েছিল আবির কিন্তু সব কাজ শেষ করে আসতে আসতে দেরি হয়ে গেল অনেক। আবিরের মন ভালো হয়ে যাবে এমন কিছু শব্দ গোছানোর চেষ্টা করতে শুরু করলো মনেমনে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে অন্তরা বলল, আজ রাগের উপর দারুণ আর্টিকেল পড়েছি জানো।

-বই বন্ধ করে বলল আবির, তোমার হলে দয়া করে লাইট বন্ধ করো। ঘুম পাচ্ছে, আমি ঘুমবো এখন।

-অন্তরা হাসি চেপে বলল, জানো রাগ দমন করা ছাড়া নাকি আত্মিক সাধনার পথে অগ্রসর হওয়া সম্ভব নয়। এজন্যই তো রাগের ধ্বংসাত্মক দিন সম্পর্কে সব ধর্মেই সাবধান করা হয়েছে। আমাদের রাসূল(সঃ) বলেছেন, “ রাগান্বিত হয়ো না, যে ব্যক্তি রাগকে সংবরণ করতে পারে সেই প্রকৃত বীর। বুদ্ধদেব বলেছেন, “ রণক্ষেত্রে সহস্র যোদ্ধার উপর বিজয়ীর চেয়ে রাগ-ক্রোধ বিজয়ী বা আত্মজয়ী বীরই বীরশ্রেষ্ঠ।”বেদে আছে…

-চুপ করো তো অন্তরা। ঘুমোতে দাও আমাকে।

-আহা শোনই না। বেদে আছে, “ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অনিয়ন্ত্রিত রাগ-ক্রোধ থেকে দূরে থাকো। যিশুখ্রীস্ট বলেছেন, “ যখন কেউ তোমার সাথে অন্যায় আচরণ করে, তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও। সদাপ্রভু তোমাকে ক্ষমা করবেন।” আর অন্তরা বলেছে…, থেমে যেতে দেখে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে আবির তাকালো অন্তরার দিকে।

-আবিরের কাছে গিয়ে মিষ্টি হেসে অন্তরা বলল, জীবনে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু মুহুর্ত আসতেই পারে তাই বলে কি অভিমানের জ্বালাবো দিয়া? নক্ষত্র ভরা রাতকে ঢেকে দেবো মেঘের চাদরে? নিরানন্দে ডুবাবো জীবনের স্বাদছোট ছোট ত্যাগ জীবনকে করে তোলে স্বপ্নিল (পর্ব-৪)
আফরোজা হাসান

বাড়ির গেটে এসে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে শঙ্কিত বোধ করলো মঈন। বিকেলে ফেরার কথা ছিল তার, এখন বাজে রাত দশটা। ঘরে ঢুকেই আলিশবার ঘোমড়া মুখ দেখতে হবে। গতদিনের মত কান্না করতে না আবার শুরু করে দেয় সেই ভয় কাজ করতে লাগলো মনে। ইচ্ছে করে বা শখ করে দেরি করেনি এই কথাটা কেন যে বুঝতে চেষ্টা করে না…! মনখারাপ করা ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো মঈনের। ফোন করে জানাতে পারতো আলিশবাকে ফিরতে দেরি হবে একথা কিন্তু তাতে বাইরে থাকা অবস্থাতেই মনমালিন্য শুরু হয়ে যেত। তার মন খারাপ হত, সেই প্রভাব গিয়ে পড়তো কাজের উপর। এমনটা চায়নি বলেই ফোন করার রিস্ক নেয়নি সে। সমস্যা হচ্ছে একথা তো আর আলিশবাকে বলা যাবে না। এমন সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ঘরে পৌছে গেল সে। ঘরে ঢুকে যা দেখলো তার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিল না মঈন। তার পছন্দের লাল শাড়ি পড়েছে আলিশবা, সেজেছে মনের মত করে। দেখে মনে হচ্ছিল চাঁদের এক টুকরো নেমে এসেছে ধরত্রীর বুকে। কিন্তু আলিশবার হাসিমুখের সালাম শুনে ভাবুকতা মুহুর্তে উবে গিয়ে, সেখানে স্থান করে নিল সংশয়। ঝড়ের আগের শান্ত প্রকৃতি নয় তো এটা? মৃদু কণ্ঠে সালামের জবাব দিল সে।

-আলিশবা হেসে বলল, তুমি এভাবে তাকিয়ে কি দেখছো আমার দিকে? যাও ফ্রেশ হয়ে এসো। জানো অন্তরা ভাবীর কাছে শিখে আমি তোমার জন্য মাছ রান্না করেছিল। তাড়াতাড়ি চলো খেয়ে বলবে কেমন হয়েছে রান্না।

-ধীরে ধীরে আলিশবার কাছে গিয়ে মঈন বলল, দেরি হবার জন্য আমি সত্যি খুব সরি। তুমি নিশ্চয়ই অপেক্ষা করেছো, কষ্ট পেয়েছো? আসলে হঠাৎ করে কয়েকজন ফ্রেন্ডের সাথে দেখা হয়ে গিয়েছিল।

-আলিশবা বলল, এরপর থেকে এমন হলে আমাকে ফোন করে জানিয়ে দেবে। আমি রাগ করবো না বরং তোমার সমস্যা বুঝতে চেষ্টা করবো।

-হেসে, তুমি রাগ করবে ভেবে আমি ফোন করিনা সেটা কিভাবে বুঝলে?

-হেসে, সেটা তো বলবো না। তবে আজ ভাবী আমাকে এমন কিছু কথা বলেছেন, যা আমার চিন্তা ভাবনাতে অনেক পরিবর্তন এনেছে।

-কি বলেছেন ভাবী?

-বলেছেন, স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন আকাশে তৈরি হয়। আর জমিনে এই ঘরকে সাজানোর কাজ মেয়েরা করে। পুরুষ না ঘর বাঁধে, না সাজাতে পারে। এই কাজ শুধু একটা মেয়েই করতে পারে। শুধু একটা মেয়ে। কারণ পুরুষ জানেই না এই কাজ কিভাবে করতে হয়।

-হেসে, এতো সাংঘাতিক কথা।

-হেসে, সাংঘাতিক সত্যি কথা এটা। সেজন্যই তো কথাটা মেনে নিয়ে এর উপর আমল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি। এখন তুমি যাও ফ্রেশ হয়ে এসো। আমার অনেক ক্ষুধা লেগেছে। হাসিমুখে তখন ওয়াশরুমে রওনা করলো মঈন।

ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে পরিপাটি করে নেবার ফাঁকে আয়নায় মাঝে মাঝে স্বামীর দিকে তাকাচ্ছিল অন্তরা। মুখের সামনে বই ধরা কিন্তু চেহারা থমথম করছে। ভালোই রেগেছে আজ আবির তার উপর ভাবতেই দুষ্টুমির আবেশ ছেয়ে গেলো অন্তরার মনে। অবশ্য কিছুটা অপরাধ বোধও কাজ করতে লাগলো মনে। দেড় ঘন্টা আগে তাকে ডেকে পাঠিয়েছিল আবির কিন্তু সব কাজ শেষ করে আসতে আসতে দেরি হয়ে গেল অনেক। আবিরের মন ভালো হয়ে যাবে এমন কিছু শব্দ গোছানোর চেষ্টা করতে শুরু করলো মনেমনে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে অন্তরা বলল, আজ রাগের উপর দারুণ আর্টিকেল পড়েছি জানো।

-বই বন্ধ করে বলল আবির, তোমার হলে দয়া করে লাইট বন্ধ করো। ঘুম পাচ্ছে, আমি ঘুমবো এখন।

-অন্তরা হাসি চেপে বলল, জানো রাগ দমন করা ছাড়া নাকি আত্মিক সাধনার পথে অগ্রসর হওয়া সম্ভব নয়। এজন্যই তো রাগের ধ্বংসাত্মক দিন সম্পর্কে সব ধর্মেই সাবধান করা হয়েছে। আমাদের রাসূল(সঃ) বলেছেন, “ রাগান্বিত হয়ো না, যে ব্যক্তি রাগকে সংবরণ করতে পারে সেই প্রকৃত বীর। বুদ্ধদেব বলেছেন, “ রণক্ষেত্রে সহস্র যোদ্ধার উপর বিজয়ীর চেয়ে রাগ-ক্রোধ বিজয়ী বা আত্মজয়ী বীরই বীরশ্রেষ্ঠ।”বেদে আছে…

-চুপ করো তো অন্তরা। ঘুমোতে দাও আমাকে।

-আহা শোনই না। বেদে আছে, “ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অনিয়ন্ত্রিত রাগ-ক্রোধ থেকে দূরে থাকো। যিশুখ্রীস্ট বলেছেন, “ যখন কেউ তোমার সাথে অন্যায় আচরণ করে, তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও। সদাপ্রভু তোমাকে ক্ষমা করবেন।” আর অন্তরা বলেছে…, থেমে যেতে দেখে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে আবির তাকালো অন্তরার দিকে।

-আবিরের কাছে গিয়ে মিষ্টি হেসে অন্তরা বলল, জীবনে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু মুহুর্ত আসতেই পারে তাই বলে কি অভিমানের জ্বালাবো দিয়া? নক্ষত্র ভরা রাতকে ঢেকে দেবো মেঘের চাদরে? নিরানন্দে ডুবাবো জীবনের স্বাদ? ভালোবাসাকে করবো না ধারণ? ক্ষমাকে করি চলো আপন… আবার সাজাই সুখের স্বপন।

না চাইতেও মুগ্ধতা জড়ানো হাসি ফুটে উঠলো আবিরের মুখে। হাত বাড়িয়ে দিলো সে অন্তরার দিকে।

ভালোবাসাকে করবো না ধারণ? ক্ষমাকে করি চলো আপন… আবার সাজাই সুখের স্বপন।

না চাইতেও মুগ্ধতা জড়ানো হাসি ফুটে উঠলো আবিরের মুখে। হাত বাড়িয়ে দিলো সে অন্তরার দিকে।

চলবে….

পর্ব-৩

 

ছাত্রীকে যৌন হয়রানী শিক্ষক গ্রেফতার

নারী সংবাদ


গাজীপুরের শ্রীপুরে স্কুল ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে ওই স্কুলের এক শিক্ষককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। যৌন হয়রানীর শিকার এক ছাত্রীর মায়ের অভিযোগে ভিত্তিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত শিক্ষকের নাম ইউনূস আলী সরকার (৫৫)। সে গাইবান্দা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানার গোবিন্দগঞ্জ গ্রামের মৃত ইউসূফ আলীর ছেলে।

শ্রীপুর মডেল থানার এসআই সৈয়দ আজিজুল হক ও ছাত্রীর মা জানান, গাজীপুরে শ্রীপুরের গিলারচালা গ্রামের শফিকের বাড়ীতে ভাড়া থেকে স্থানীয় গড়গড়িয়া মাষ্টারবাড়ী এলাকার হাজী আব্দুল হাই মডেল স্কুলে শিক্ষককতা করেন ইউনুস আলী সরকার। গত সোমবার ওই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী স্কুল ছুটি শেষে বিকেলে শিক্ষক ইউনূস আলীর কাছে কোচিং করতে যায়। এসময় অন্যান্য শিক্ষার্থীরা আসতে দেরী হওয়ায় কক্ষে ওই ছাত্রীকে একা পেয়ে তার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শ কাতরস্থানে হাতাহাতি করে ও অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি এবং কথাবার্তা বলে যৌণপীড়ন করে শিক্ষক ইউনুস আলী। এক পর্যায়ে ওই ছাত্রী চিৎকার দিলে তার সহপাঠীরা এগিয়ে এলে শিক্ষক ইউনূস সেখান থেকে চলে যায়। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর মা মঙ্গলবার শ্রীপুর মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে এ ধরণের আরো ঘটনার অভিযোগ রয়েছে। সূত্র:নয়াদিগন্ত।

 

ইলিশের নানান রূপ

রেসিপি ঘর


পোলাও ইলিশ

উপকরণ :
১. পোলাওয়ের চাল ২ কাপ,
২. ইলিশের টুকরা ৬-৭টি (বড় ইলিশ), ৩. টকদই আধা কাপ, ৪. আদাবাটা ১ টেবিল-চামচ, ৫. কাঁচা মরিচ ৬-৭টি, ৬. তেল ২ টেবিল-চামচ, ৬. ঘি আধা কাপ , ৭. পেঁয়াজ বেরেস্তা ১ কাপ, ৮. লবণ পরিমাণমতো, ৯. পেঁয়াজকুচি কোয়ার্টার কাপ, ১০. পেঁয়াজবাটা কোয়ার্টার কাপ, ১১. দুধ আধা কাপ, ১২. লেবুর রস ২ টেবিল-চামচ।

প্রণালি :
কড়াইতে তেল গরম করে পেঁয়াজকুচি হালকা ভেজে নিন। এবারে আদা, দই, পেঁয়াজবাটা ও পরিমাণমতো লবণ দিয়ে কষিয়ে ইলিশ মাছ ও লেবুর রস দিয়ে মৃদু আঁচে ঢেকে , দিন। ১০ মিনিট পর মাছের টুকরাগুলো ঝোল রেখে তুলে নিন। ঝোলের কড়াইতে ঘি এবং অর্ধেক বেরেস্তা দিয়ে একটু রান্না করে চাল দিয়ে কষিয়ে গরম পানি (৪ কাপ) ও কাঁচা মরিচ দিয়ে ঢেকে দিন। পানি শুকিয়ে এলে কিছু পোলাও উঠিয়ে নিন। মাছের টুকরোগুলো পোলাওয়ের উপর বিছিয়ে দিন। এবার তুলে নেওয়া পোলাও, মাছের উপর দিয়ে বাকি বেরেস্তা ও দুধ দিয়ে ঢেকে দমে দিন। ১৫-২০ পর হয়ে গেলে নামিয়ে পরিবেশন করুন।

ইলিশ মাছের ভর্তা

উপকরণ:
১.ইলিশের পিস-২টি,
২.পেঁয়াজ কুচি-১ কাপ,
৩.রসুন মোটা কুচি-৫-৬ কোয়া, ৪.শুকনামরিচ-৭-৮টি,
৫.লবণ-প্রয়োজন হলে সামান্য, ৬.সয়াবিন তেল- ১/২ কাপ, ৭.গুঁড়া মরিচ-১ চা চামচ, ৮.হলুদ-সামান্য।

প্রণালী:
ইলিশ মাছের টুকরা গরম পানিতে ৫ মিনিট ভিজিয়ে রেখে ভালোমতো ধুয়ে নিন। বারবার ধুয়ে নেবেন যাতে লবণ কমে যায়। প্যানে অল্প তেল গরম করে শুকনামরিচ ভেজে উঠিয়ে নিন। ওই তেলেই মাছগুলো অল্প আঁচে হালকা করে ভেজে উঠান। ঠাণ্ডা করে কাঁটা বেছে ফেলুন। প্যানে বাকি তেল দিয়ে পেঁয়াজ ও রসুন কুচি দিন। গুঁড়ামরিচ ও হলুদ দিয়ে নাড়ুন। বেছে রাখা মাছ দিন। ভাজা শুকনামরিচ ভেঙে দিন। চেখে দেখে তবেই প্রয়োজনে লবণ দিন। ভালো করে নেড়েচেড়ে ৫-৬ মিনিট রান্না করুন। পেঁয়াজ ভাজা ভাজা হয়ে তেল ওপরে উঠলেই হয়ে গেল লোনা ইলিশ ভর্তা।

পরিবেশন:
পেঁয়াজ ও ভাজা শুকনামরিচ ডলে এ মাছ দিয়ে দিন। লবণ, ধনিয়া পাতা ও বাকি সরিষার তেল দিয়ে মাখিয়ে নিন। গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।
সূত্র:ইন্টারনেট

 

বিয়ে ও পরিবার সমকালীন জিজ্ঞাসা- ৭

কানিজ ফাতিমা


গত পর্বে আমরা গর্ভকালীন নারীর মানসিক অবস্থা সম্পর্কে জেনেছি। এ পর্বে আমি আলোচনা করবো মেনোপজ (Menopause) নিয়ে। তার আগে গত পর্বের রেশ ধরে দু’একটি কথা বলে নেই। আমরা অনেক সময়ই লক্ষ্য করি আমাদের সমাজে স্ত্রীর সেবা করাকে ভালো চোখে দেখা হয় না। এটা অনেকটা পৌরুষ হানিকর কাজ মনে করা হয়। অনেকে আরও একটু আগ বাড়িয়ে একে অনৈসলামিক কাজও মনে করেন। এটি সম্পূর্ণ ভুল একটি ধারণা। ইসলামে অসুস্থ স্ত্রীর দেখাশোনাকে স্বামীর গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর দৃষ্টান্ত আমরা ইসলামের ইতিহাসে দেখতে পাই। বদর যুদ্ধের সময় মুসলমানগণ সংখ্যায় কম ছিলেন। সেসময় মদীনাতে মাত্র ৭৭ জন সমর্থ মোহাজির পুরুষ ছিলেন। তিনজন বাদে এদের সবাই যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। তালহা ও সা’দ (রাঃ) সেই মুহূর্তে সংবাদ সংগ্রহের কাজে মদীনার বাইরে ছিলেন বলে বাহিনীতে যোগ দিতে পারেননি। তার তৃতীয় ব্যক্তি যিনি মদীনাতে উপস্থিত থেকেও বাহিনীতে যোগ দেননি তিনি হলেন ইসলামের ইতিহাসে প্রথম সারির সাহাবী উসমান (রাঃ)। যদিও সে সময় মুসলিম বাহিনীতে বেশী সংখ্যক যোদ্ধার দরকার ছিল তথাপি রাসূল (সাঃ) নিজেই উসমান (রাঃ) কে মদীনায় থাকতে নির্দেশ দেন কারণ তখন তার স্ত্রী রোকাইয়া (রাসূল সাঃ এর কন্যা) অসুস্থ ছিলেন। “The Prophet told his son-in-law ‘Uthman’ to stay at home and tend his sick wife.” (Muhammad his life based on the earliest sources by Martin Lings, পৃষ্ঠা ১৩৮)। আমরা এখানে সুস্পষ্ট দেখতে পাই শুধুমাত্র অসুস্থ স্ত্রীর দেখাশোনার জন্য তিনি বদর যুদ্ধের বাহিনীতে যোগদান থেকে বিরত থাকলেন স্বয়ং রাসূল (সাঃ) এর নির্দেশে। অথচ সে সময় মদীনাতে অন্যান্য নারীগণ উপস্থিত ছিলেন যারা সহজেই রোকাইয়ার সেবা করতে পারতেন। সাওদা (রাঃ) রাসূল (সাঃ)-এর স্ত্রী; ফাতেমা (রাঃ) ও উম্মে কুলসুম (রাঃ)- রোকাইয়া দু’বোন; উম্মে আয়মান ও খাওলাসহ অনেকেই রোকাইয়ার খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তদুপরী রাসূল (সাঃ) স্ত্রীর সেবার জন্য স্বামীকেই দায়িত্ব দিলেন।
এবার আসা যাক মেনোপজ সম্পর্কে। অনেক সময় স্ত্রীদের অভিযোগ থাকে তাদের শাশুড়িদের বিরুদ্ধে যে তারা খিটখিটে, ভুলো মনা হয় এবং ছোটখাট ব্যাপার নিয়ে বকবক করতে থাকে। এই সমস্যাগুলোর পেছনে একটা বড় কারণ সাধারণত মেনোপজ। মেনোপজ হল মহিলাদের মাসিক স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া। সাধারণত গড়ে ৫০ এর পরে নারীর মেনোপজে যায়। তবে ৪০ থেকে ৫৯ বয়সের মধ্যে যেকোন সময়ে এটা ঘটতে পারে। এ সময়ে মহিলাদের ডিম্বাশয়গুলো (Overies) কম পরিমাণে এসট্রোজেন ও প্রাজেসটেরন (Estrogen and Progesterone) হরমোন তৈরি করে। মূলত: এই হরমোন দু’টিই নারীদেহে মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণ করে। সাধারণত নারীরা এই বয়সেই শাশুড়ি হয়ে থাকে। ফলে অন্যান্য কারণের পাশাপাশি এ কারণটিও তার আচরণকে প্রবলভাবে প্রভাবিত করে। একজন স্ত্রীর যদি Menopause-এর লক্ষণগুলো জানা থাকে তবে শাশুড়ির সঙ্গে সম্পর্ক তৈরী অনেকটা সহজ হয়। নীচে মেনোপজ এর লণগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলঃ
১. Hot flashes:
গরম ঝাটকা লাগা মেনোপজের একটি সাধারণ লক্ষণ। এসময় বুক-মাথা গরম হয়ে যায়, অনেক সময় চামড়া লাল হয়ে যায় এবং অনেকে ঘামতে শুরু করে। এসময় অস্বস্তি ও অসুস্থ বোধ হয়ে থাকে। অনেক সময় মাথা ঘুরায়, মানসিকভাবে বিহ্বল ও হতবুদ্ধি লাগে। অনেক সময় বুক ধড়ফড় করে।
২. মাথা ব্যথা, রাতে ঘামানো, ঘুমের ব্যাঘাত ও কান্তিবোধঃ
ঘুমের সমস্যা ও ঘুমের মধ্যে হঠাৎ ঘেমে গিয়ে উঠে পরা প্রভৃতি কারণে এ সময় মেজাজ খিটখিটে ও সবকিছুতে বিরক্তিভাব তৈরি হয়। যার থেকে অল্পতেই রেগে যাওয়া বা ঘ্যানঘ্যানে স্বভাবের হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক।
মূলত: মেনোপজের শারীরিক লক্ষণগুলো একেকজনের জন্য একেক রকম ও একেক মাত্রার হয়। যেমন পশ্চিমা দেশগুলোতে ১৪% মহিলা খুব তীব্র শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় পড়ে এ সময়ে।
মেনোপজে যে মানসিক সমস্যাগুলো হয় তাও শারীরিক সমস্যাগুলোর মতই একেক জনের একেক রকম হয়। সব থেকে প্রচলিত যে মানসিক সমস্যার কথা বেশি শোনা যায় তা হলো-
১. Sadness বা দুঃখবোধ/বিষন্নভাব
২. Anxiet বা দুশ্চিন্তা
৩. Mood Swings বা অস্থিরতা
এসব সমস্যাগুলো নারীর কর্মদক্ষতা ও অন্যদের সঙ্গে সম্পর্কতে বিরূপ প্রভাব ফেলে। আজ এ পর্যন্তই। এ সম্পর্কিত আরও আলোচনা থাকবে পরবর্তী সংখ্যায়।

চলবে…

পর্ব-৬

বিয়ে ও পরিবার সমকালীন জিজ্ঞাসা – ৬

 

ছোট ছোট ত্যাগ জীবনকে করে তোলে স্বপ্নিল (পর্ব-৩)

আফরোজা হাসান


ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অভিমানে মনের আকাশ মেঘলা হয়ে উঠলো আলিসবার। বিকেলে ফেরার কথা মঈনের অথচ এখন রাত নয়টা বাজে। গত সপ্তাহেও দুই দিন এমন দেরী করে বাসায় ফিরেছে মঈন। ফিরতে দেরী হবে সেটা ফোন করেও তো জানাতে পারে, তাহলে তো আর এভাবে অস্থির হয়ে প্রতীক্ষায় প্রহর গুনতে হত না তাকে। এসে সরি সরি করবে, একশোটা কারণ দেখাবে কিন্তু একটা ফোন করতে কতটুকু সময়ই বা লাগে? কিছুক্ষণ বইপত্র নাড়া চাড়া করে দেখলো মন বসাতে না পেরে ঘর থেকে বেড়িয়ে এলো সে। শ্বশুর-শ্বাশুড়ি বাগানে বসে গল্প করছে। অজান্তেই এক টুকরো হাসি ফুটে উঠলো আলিসবার মুখে। গত চার মাসে সে এটা খুব ভালো মতো বুঝে গিয়েছে যে শ্বশুর-শ্বাশুড়ির মহা ভাব। একে অন্যেকে ছাড়া কিছুই বোঝে না দু’জন। পর মুহুর্তেই মঈনের কথা মনে পড়লো তার। অভিমানের মেঘ আরো ঘনীভূত হলো মনের মাঝে। মঈন বুঝি এখনো ফেরেনি? প্রশ্ন শুনে ঘুরে বড় জা’কে দেখে আলিসবা বলল, জ্বী না ভাবী।

-অন্তরা হেসে বলল, তাহলে আমার সাথে চলো। রান্না করতে করতে গল্প করবো।

-রাতের রান্না তো হয়ে গিয়েছে ভাবী।

-হুমম…জানি। কিন্তু তোমার ভাইয়া মাত্র ফোন করে বললেন কয়েকজন মেহমান আসবে উনার সাথে।

-রান্নাঘরে ঢুকে আলিসবা বলল, ভাইয়া বুঝি এমন প্রায়ই করেন?

-কি? হঠাৎ মেহমান নিয়ে আসা?

-জ্বী।

-হেসে, হ্যা।

-আমার আব্বুরও এই অভ্যাসটা ছিল। হঠাৎ করে মেহমান নিয়ে হাজির হতেন। আম্মুকে তখন অনেক বিপদে পড়তে হতো। হয়তো সারাদিন পর একটু বিশ্রাম নেবার জন্য ঘরে ঢুকেছেন আর আব্বুর ফোন মেহমান নিয়ে আসছি। ঘরে কি রান্না হয়েছে, বাজার আছে কিনা এইসব নিয়ে কোন কথা নেই। এক কথা মেহমান নিয়ে আসছি। এগুলো খুব অন্যায় মনে হয় আমার কাছে।

-হেসে, সমস্যা কি জানো? এগুলো যে অন্যায় সেটা ছেলেরা বোঝেই না। আমার তো মনেহয় সংসারের এসব টুকিটাকি বিষয় বোঝার ট্যালেন্টই ছেলেদের নেই। বিয়ের প্রথম প্রথম আমিও বেশ বিরক্ত হতাম। পরে দেখলাম যে এটা উনার স্বভাব। উনি মেহমানদারী করতে পছন্দ করেন। আর এটা যেহেতু খারাপ কিছু না বরং ভালো তাই নিজেকে এর সাথে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করেছি এবং ধীরে ধীরে মানিয়েও নিয়েছি।

-তারপরও ভাবী। কত রকমের সমস্যা থাকতে পারে একটা মেয়ের। হাজবেন্ডের এটা বোঝা উচিত।

-হেসে, আসলে সংসার জায়গাটাই বোঝাপড়ার। দুজনেরই বুঝতে হবে দুজনকে। হঠাৎ মেহমান নিয়ে আসার কাজটি নিশ্চয়ই আমাকে কষ্ট দেবার জন্য করেন না আবির? আবার এমনও না যে রোজ রোজ করেন এটা। হয়তো কোন ফ্রেন্ড বা পরিচিত কারো সাথে দেখা হয়ে গেলো। কখনো আবির অফার করে, কখনো উনারা নিজেরাই আসতে চান বাসায়। এখন এটাকে ইস্যু করলে অশান্তি তো আমাদের দু’জনের জীবনেই আসবে।

-কিন্তু বিষয়টা তো একেবারে ইগনোর করার মতও না।

-আই থিংক ইস্যু করার মতও না। সংসারে সচারচর যে ঘটনাগুলো ঘটে সেগুলোর সাথে মানিয়ে নেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। আমি যেমন মেহমানের জন্য মোটামুটি একটা প্রিপারেশন নিয়েই রাখি সবসময়। আলাদা করে কিছু খাবার রেডি করেই রাখি হঠাৎ আসা মেহনাদের আপ্যায়নের জন্য। তাই তেমন কোন অসুবিধায় পড়তে হয় না কখনোই। এটা না করে যদি আমি রোজ রোজ খিটপিট করতাম আবিরের সাথে, তাহলে আমার জীবনের শান্তিই তো বিঘ্নিত হতো তাই না?

-হেসে, সবসময় কি এত পজেটিভ থাকা সম্ভব ভাবী? কষ্ট হয় না আপনার?

-হয়। কিন্তু আমার কাছে সেই কষ্টের চেয়ে সংসারের শান্তি অনেক বেশি গুরুত্বপুর্ণ। সেজন্য স্বামীর দোষ ধরে সময় নষ্ট করার চাইতে, দোষটা আসলেই দোষ কিনা এবং আমার কতটুকু ছাড় আর উনার কতটুকু সংশোধন দরকার, সময়টাকে সেই কাজে ব্যয় করার চেষ্টা করি। একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে, দোষ খুঁজে আমরা যেই সময়টা ব্যয় করি, সেই সময়টা যদি একে অন্যেকে বোঝার ও সংশোধন করার জন্য ব্যয় করতে পারতাম, তাহলে সংসারটা অনেক সহজ হয়ে যেত আমাদের জন্য।

-হেসে, এত পজেটিভ চিন্তা করার শক্তি কোথায় পান আপনি?

-হেসে, জ্ঞান হবার পর বাবা প্রথম যে জিনিসটা আমাকে শিখিয়েছিলেন তা হচ্ছে, দুনিয়ার জীবন পরীক্ষাক্ষেত্র স্বরূপ। প্রতি মুহুর্তে তাই জীবন আমাদের কাছ থেকে নানা ধরনের পরীক্ষা নেবে। তাই সম্ভাব্য সবকিছুর জন্য সবসময় প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। যেমন প্রস্তুতি আমরা স্কুল-কলেজের পরীক্ষার জন্য নিয়ে থাকি অনেকটা সেরকম। অন্যের উপর ভরসা করে কি আমরা পরীক্ষার হলে যাই? কখনোই না। কারণ আমরা জানি যার যার পরীক্ষার তাকেই দিতে হবে। আমার বিয়ের দিন বাবা আমাকে এই কথাটাই মনে করিয়ে দিয়েছিলেন।

-জীবন পরীক্ষাক্ষেত্র এটা?

-হেসে, বাবা বলেছিলেন সবসময় মনে রাখবে স্কুল-কলেজের পরীক্ষায় মতো সংসারটাও একটা পরীক্ষা তোমার জন্য। কারো সাহায্য ছাড়াই শুধুমাত্র আল্লাহর দেয়া মেধা-প্রতিভা ও নিজের পরিশ্রমের জোড়ে জীবনের প্রতিটা পরীক্ষায় যেভাবে তুমি প্রথম হয়েছো, তেমনি সংসার নামক পরীক্ষাতেও প্রথম হবার ইচ্ছা ও চেষ্টা জারি রাখতে হবে তোমাকে। আর যারা জীবনের প্রতিটা পরীক্ষায় টপ করতে চায়, অন্যেরা কি করছে কি করছে না সেসব দেখার সময় তাদের থাকে না। জীবনের ছোট ছোট পরীক্ষাগুলোতে সফল হতে হতে তারা ছুটে চলে আখিরাতের চূড়ান্ত সফলতার পানে।

চলবে…..

পর্ব-২

 

শিশু চুরির ঘটনা

নারী সংবাদ


হাসপাতাল থেকে শিশু চুরির ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হলেও এবার অন্যভাবে শিশু চুরির ঘটনা ঘটেছে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে। গত রোববার গভীর রাতে পৌর এলাকার বকচর মহল্লায় এ ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, সৌদি প্রবাসী ইমরান খানের স্ত্রী রাইবিনা ১৮ মাসের এক মাত্র শিশুপুত্র ইমার খান রাফিকে নিয়ে তার বাবা এরশাদের বাড়ি বচকর মহল্লায় থাকতেন। প্রতিদিনের মতো ওই দিনই রাতে মা, খালা ও নানীর সাথে রাফি ঘুমিয়েছিল। রাত ৪টার দিকে রাফির মায়ের ঘুম ভেঙে গেলে তাকে বিছানায় না পেয়ে চিৎকার করতে থাকেন। এ সময় এলাকার লোকজন এগিয়ে এসে শিশুটিকে খোঁজাখুঁজি করেন। একপর্যায়ে তারা ঘরের পেছনের দিকে সিঁধ কাটা দেখতে পান। পরিবারের দাবি, সিঁধ কেটে শিশু রাফিকে চুরি করা হয়েছে। সেই সাথে তাদের পরিবারের ব্যবহৃত একটি মোবাইল সেট চুরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন।
চুরি হওয়া শিশুটির মা রাইবিনা বলেন, যেকোনো মূল্যে আমার সন্তানকে জীবিত অবস্থায় ফেরত চাই। এ জন্য তিনি পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ ব্যাপারে সিঙ্গাইর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো: নজরুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। চুরি হওয়া শিশুটিকে উদ্ধারসহ জড়িতদের গ্রেফতারের জোর চেষ্টা চলছে। সূূূূত্র: নয়াদিগন্ত।

 

ছোট ছোট ত্যাগ জীবনকে করে তোলে স্বপ্নিল ‘পর্ব-২’

আফরোজা হাসান


ছোট ছেলের বৌকে চুপচাপ বাগানে বসে থাকতে দেখে বুকের ভেতর কষ্টের যে নদীটা সময়ের শীতল প্রবাহে বরফে ঢেকে গিয়েছিলো তা আবার গলতে শুরু করলো আফসানা রহমানের। নিজের বিয়ের পরের সময়গুলোর স্মৃতি ভেসে উঠলো মনের পর্দার। বিশাল বড় পরিবারের বড় বৌ হিসেবে যখন শ্বশুরবাড়িতে ঢুকেছিল, মনে কত হাজারো রকমের স্বপ্নই না ছিল তার। কিন্তু মাস ঘুরতে না ঘুরতেই সেই স্বপ্নের স্থান দখল করে নিয়েছিল অনিশ্চয়তা। মনে হতো যেন মাঝ সমুদ্রে আটকা পড়েছে। চারিদিকে কোথাও কোন কূল কিনারা চোখে পড়তো না। কোন কাজ না পারলে শিখিয়ে দেবার কেউ ছিল না কিন্তু বৌ কিছুই জানে না, কিছুই পারে না, বাবা-মা কিছুই শেখায়নি এসব বলার মানুষের কোন অভাব ছিল না। ভাল-মন্দ পরামর্শ দেবার কেউ না থাকলেও দোষ খুঁজে বের করার মত অনেকেই ছিল। শত কাজ করেও কিছুতেই শাশুড়ির মন রক্ষা করা যেত না।

বুক চিড়ে লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো আফসানা রহমানের। এটা ঠিক যে সময় ভালো হোক বা খারাপ কেটেই যায় কিন্তু স্মৃতি সবসময় রয়ে যায় মনের মাঝে। তাই সময় যেমনই হোক মানুষের আপ্রাণ চেষ্টা থাকা উচিত স্মৃতি যেন যাতনাকর না হয়। কেননা অতীতের সেইসব স্মৃতিরা বর্তমানের সুন্দর সময়গুলোকেও ম্লান করে দেবার ক্ষমতা রাখে। ধীর পায়ে ছেলের বৌয়ের কাছে রওনা হলেন আফসানা রহমান। শাশুড়িকে দেখে আলিসবা উঠতে গেলে তাকে ধরে বসিয়ে আফসানা রহমান হেসে বললেন, বোস মা আমি তোমার সাথে গল্প করতেই এসেছি। বিয়ের পর নানাধরনের ব্যস্ততা, তারপর তোমাদের ঘুরতে যাওয়া সবকিছু মিলিয়ে তোমার সাথে তেমন করে কথা বলাই হয়ে ওঠেনি। জানাও হয়নি তোমার কেমন লাগছে, কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা ইত্যাদি।

-শাশুড়ির কণ্ঠের মায়া আলিশবার অন্তরকে ছুঁয়ে গেলো যেন। মৃদু গলায় বলল, আমার কোন সমস্যা হচ্ছে না মা। আর এই বাড়ির সবকিছুই ভীষণ ভালো লাগছে।

-পুত্রবধূর মাথায় হাত বুলিয়ে আফসানা রহমান হেসে বললেন, তুমি যে সময়টার ভেতর দিয়ে যাচ্ছো, আমিও একসময় এমন সময় পার করেছি। তাই জানি কেমন লাগে, কেমন লাগছে তোমার। নিজের বাবা-মা-ভাই-বোন, চির চেনা গণ্ডি ছেড়ে নতুন পরিবেশে নতুন মানুষদের মাঝে এসে একটা মেয়ের কেমন অসহায় লাগে সেটা শুধু আরেকটা মেয়েই বোঝে।

-আপনারও বিয়ের পর এমন লেগেছিলো মা?

-কিছুক্ষণ চুপ থেকে আফসানা রহমান হেসে বললেন, সময়ের তারতাম্যে পারিবারিক ও দাম্পত্য জীবনের ধরণ কিছুটা বদলে গেলেও অভিজ্ঞতা আসলে অনেকটা একই রকম। সেজন্যই তো আমি আপ্রাণ চেষ্টা করি তোমাদের অভিজ্ঞতা যেন সুন্দর হয়।

-আপনার জীবন অভিজ্ঞতা কি অনেক কঠিন ছিল মা?

-হেসে, আমাদের সময়টাই অন্যরকম ছিল। পুত্রবধূর সাথে একজন শাশুড়ি সেই আচরণই করতো যেমন আচরণ সে পেয়ে এসেছে তার শাশুড়ির কাছ থেকে। জীবনের শুরুতে শাশুড়ির প্রতি অনেক অভিমান ছিল কিন্তু একটা সময় বুঝেছি যে কন্টকাকীর্ণ পথে আমি চলছি, উনার পদযুগলও ক্ষত বিক্ষত তেমন পথে চলে। তাই তো নিজের সাথে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আমার পুত্রবধূদের এমন পথে চলতে দেবো না।

-কিন্তু এই বুঝ আসতে তো নিশ্চয়ই অনেক সময় লেগেছে তার আগে কিভাবে সহ্য করেছেন সবকিছু?

-অনেক চেষ্টার পরও যখন শ্বশুরবাড়ির কারো আচরণের মধ্যে কোন পরিবর্তন দেখলাম না আমার মনে হয়েছিল, যদি কিছু বদলায় তা শুধু আমার পক্ষ থেকেই বদলাবে, অপর পক্ষ থেকে না। তোমাদের শ্বশুর তখন আমাকে বলেছিলেন, মানুষের সবসময় আশা ধরে রাখা উচিত। এটা ঠিক যে আশা সবাই করে কিন্তু খুব কম মানুষের সেই আশার প্রতিফলে ভালো কিছু পায়। এমন তো হতে পারে যে তুমি সেই খুব কম সংখ্যক মানুষদের একজন। উনি সবসময় আমাকে আশা ধরে রাখার প্রেরণা যুগিয়েছেন এই বলে যে, একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।

-ঠিক কি হয়েছিলো মা?

-হেসে, ধীরে ধীরে অনেক কিছুই বদলে গিয়েছিল। আসলে কি জানো একটা মেয়ে চাইলেই সংসারকে গড়তে পারে। সংসার গড়ার অপরিসীম ক্ষমতা দিয়ে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন প্রতিটা মেয়েকে। সমস্যা হচ্ছে নিজের এই ক্ষমতা সম্পর্কে বেশির ভাগ মেয়েই অবগত নয়। আর যারা অবগত তাদের বেশির ভাগই সবর ধরে রাখতে পারে না বেশিদিন। বেড়ে উঠার পরিবেশ থেকে যেহেতু আমরা নিঃস্বার্থভাবে ত্যাগ করতে শিখি না তাই রাখাটা কঠিনও বটে।

-আপনি কিভাবে সবর ধরে রেখেছিলেন?

-হেসে, আমি যে দুঃখ কষ্ট ব্যথা বেদনার মুখোমুখি হয়েছি, কাউকে আমি এরজন্য দায়ী মনে করিনি কখনোই। সবকিছুকে আমার নিয়তি মনেকরে নিয়েছি। তাই হয়তো আমার সাথে যা কিছু হয়েছে সবই আমাকে আরো মজবুত হতে সাহায্য করেছে। আমাকে কম্প্রোমাইজ ও সবর করতে শিখিয়েছে। এরপরও কখনোই যে ভেঙ্গে পড়িনি তা না। পালাতেও চেয়েছি একেকবার কিন্তু তোমাদের শ্বশুরের জন্য পারিনি।

-হেসে, বাবা সবসময় আপনার সাথে ছিলেন সেজন্যই আসলে আপনি কঠিন পথ পাড় করে আসতে পেরেছেন।

-হেসে, আলহামদুলিল্লাহ্‌! সত্যিই উনি পাশে না থাকলে আমি হাল ছেড়ে দিতাম। তবে সবচেয়ে বড় কথা কি জানো? যেদিন থেকে আমি শ্বশুর-শাশুড়িকে নিজের বাবা-মা, দেবর-ননদেরকে ভাইবোন ভাবতে পেড়েছিলাম মন থেকে সবকিছু অনেক সহজ হয়ে গিয়েছিল আমার জন্য। থাক এসব কথা এখন। তোমার কথা বলো।

-আজ বিকেলের নাস্তা সবার জন্য আমি বানাতে চাই মা।

-হেসে, রান্না করতে কি খুব পছন্দ করো?

-হেসে, জ্বী মা ভীষণ।

-হেসে, ঠিকআছে চলো নাস্তা বানানোর ফাঁকে ফাঁকে তোমার কথা শুনবো।

চলবে…….

১ম পর্ব

 

রক্তাক্ত স্কুলব্যাগ

তাহেরা সুলতানা


“আম্মু, জানো! আইজ শাম্মী কি যে সুন্দর একখান ব্যাগ কান্ধে কইরা স্কুলে আসছিল! শাম্মীর জন্মদিনে ওর মায়ে ওরে কিন্যা দিছে! আমার জন্মদিনে তুমিও কিন্তু ওইরকম একখান ব্যাগ কিন্যা দিবা! না হইলে আমি কিন্তক আর স্কুলেই যামু না! এই আমি কইয়া রাখলাম!” পুরনো স্কুলব্যাগটা বিছানার উপর রাখতে রাখতে রিতা মায়ের কাছে বায়না করে।

রমিছা বেগমের স্বামী ছিলো রিকশাচালক। রিতার যখন ৩ বছর বয়স, তখন তার স্বামী আফাস মিয়া ফুসফুসের ক্যান্সারে মারা যায়! আফাস মিয়া ২ বছর বিছানায় পড়ে ছিল। সেসময় থেকেই রমিছা মানুষের বাসায় কাজ করে সংসার চালাচ্ছে আর মেয়েটাকে মানুষ করছে। মেয়ের পড়াশুনার মাথা খুব ভালো! ক্লাস ফাইভে জিপিএ ৫ পেয়েছে। এখন ক্লাস এইটে পড়ে। সামনেই ফাইনাল পরীক্ষা। এই মেয়েটাই রমিছার ভবিষ্যৎ! মেয়ের কোন অভাব সে কখনো বুঝতে দেয় না!

কাল মেয়েটার জন্মদিন! রমিছা আগেই ওর জন্য একটা নতুন ব্যাগ কিনে রেখেছে। কিন্তু মেয়েটাকে চমকে দেয়ার জন্য আগে থেকে কিছুই বলছে না। তাই সে রান্নাঘরে কাজ করছে আর মেয়ের অভিমানভরা কথাগুলো শুনে মুচকি মুচকি হাসছে!

রিতা মায়ের কাছ থেকে কোন উত্তর না পেয়ে আবারও বলতে লাগলো, “তুমি কিন্তু গতবছর আমার জন্মদিনে কইছিলা, এইবার নতুন ব্যাগ কিন্যা দিবা! আব্বু থাকলে এতোদিনে ঠিকই কিন্যা দিতো!”

কথাটা কানে যাওয়া মাত্রই রমিছার দুচোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো! সে কোনদিন মেয়ের সামনে বাপের খারাপ কোন দিক উপস্থাপন করেনি! অথচ সত্যিটা একমাত্র সেই জানে! আফাস মিয়া কোনমতে রিকশা চালিয়ে যা পাইতো, তা ওই আর দশজনের সাথে তাসের আড্ডায় আর বিড়ি খেয়ে উড়াতো। সংসার কেমনে চলতো, কোনদিন খোঁজও নেয়নি! বাচ্চা মেয়েটার কথাও কোনদিন ভাবতো না। কিছু বললেই মারধোর করতো। রমিছা ক্লাস ফোর পর্যন্ত পড়াশুনা করেছিল। বাপের বাড়ির অবস্থাও ভালো ছিল না। তাই ফাইভে ওঠার পরই বিয়ে হয়ে যায়। তাই তার স্বপ্ন, মেয়েটারে অনেকদূর পর্যন্ত পড়াবে!

আফাসের যখন মরণ ব্যাধিতে ধরলো, তখন রমিছা নিজেই সংসারের হাল ধরলো! রিকশা, ঘর সব বেঁচে চিকিৎসা করানো শুরু করলো। রিকশাটা আফাস বিয়ের সময় রমিছার বাপের কাছ থেকে যৌতুক হিসাবে পেয়েছিল। সব বিক্রি করে অসুস্থ্য স্বামী আর মেয়েটাকে নিয়ে দূরের এক বস্তিতে ঘর ভাড়া নিলো।

আফাসের শরীর দিন দিন খারাপ হতে লাগলো! ডাঃও সময় বেঁধে দিলো! একদিন সন্ধ্যারাতে ঘরে একফোঁটা চালও ছিল না! আফাসের অসুধও শেষ! মেয়েটা ক্ষুধায় চিৎকার করে কাঁদছিল! রমিসা তখন দিশেহারা হয়ে গেলো! হঠাৎ মাথায় আঁচল টেনে মেয়েটারে কোলে নিয়ে কাজের খোঁজে বেড়িয়ে পড়লো। এবাড়ি ওবাড়ি করে ২/৩ জায়গায় কিছু ছুটা কাজও পেয়ে গেলো। তারপর চাল, তরিতরকারি আর অসুধ কিনে মধ্য রাতে বস্তিতে ফিরলো।

ঘরে ঢুকতে না ঢুকতেই আফাসের চড়াগলা শুনতে পেলো। আর সেইসাথে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ! চরিত্র নিয়ে আজেবাজে কথা বলতেও ছাড়লো না! রমিছা কোন কথায় কান না দিয়ে ঘরের এক কোনে স্টোভে ভাত চড়াতে চলে গেলো। আফাস তো অনর্গল বকবক করেই যাচ্ছে! ও কোন প্রতিত্তোর করলো না। মেয়েটা ততক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে। ২/৩ বাসা থেকে মেয়েটারে আদর করে যা দিয়েছে, তাতেই ওর পেট ভরে গেছে। আর আদর করবেই না বা কেন! এমন ফুটফুটে মেয়ে কয়জনের হয়!

রমিছা থালা ভরে ভাত আর আলুভর্তা নিয়ে যখন আফাসের সামনে দিলো, তখনও সে গজগজ করছিল! রমিছা যত তাকে শান্ত করছে, সে তত রাগ দেখাচ্ছে! কিন্তু যখন ভাতের থালাটা ছুড়ে ফেলে দিলো, তখন রমিছা অগ্নিমূর্তি ধারণ করলো! আফাস বিনাকারনে অনেকবার রমিছার গায়ে হাত তুলেছে! রমিছা কিচ্ছু বলেনি কোনদিন। কিন্তু কস্টের উপার্জিত টাকায় কেনা ভাতগুলো যখন মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখলো, তখন যেন রক্ত চড়ে গেলো! যা মনে ছিল, সব যেন ঝেড়ে দিলো! সেদিনের পর আফাস সেই যে নিশ্চুপ হলো, আর কোনদিনই গলা উঁচু করে কথা বলেনি। এর কিছুদিন পরেই আফাস মারা যায়!

রমিছার তখন অল্প বয়স! দেখতেও সুন্দর! কতজন বিয়ের লোভ দেখাতো! কেউ কেউ কুপ্রস্তাব দিতেও ছাড়তো না। রাতের বেলা দরজায় এসে ধাক্কাতো! সবসময় রমিছার ভয় ভয় করতো! মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে গুটিসুটি হয়ে পড়ে থাকতো। দুই এক বাসায় কাজ করতে গিয়ে সেখানেও নানান সমস্যায় পড়তে লাগলো! অবশেষে একটা ভালো সদায়াসকবাসায় কাজ পেলো। বাসার মালিক মেজবাহউদ্দিন একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা এবং উনার স্ত্রী ফাহমিদা বেগমও একটা স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন, কিছুদিন হলো অবসরে গেছেন ! বাসায় তারা দুইজন আর একজন কেয়ারটেকার থাকে। ৩ ছেলেমেয়ের কেউই দেশে থাকে না। উনারা রিতাকে খুব আদর করতেন। তাছাড়া রমিছার আচার ব্যবহার দেখেও তাদের ভালো লেগে যায়। রমিছা উনাদের খালাম্মা-খালুজান বলেই ডাকে।

একদিন রমিছা সাহস করে বস্তিতে তার যে সমস্যাগুলো হচ্ছে, সেগুলো ফাহিমা বেগমের কাছে খুলে বলে। আর সেইসাথে মেয়েকে নিয়ে তার স্বপ্নের কথাও জানায়। সবকথা শুনে মেজবাহউদ্দিন সাহেব একদিন সন্ধ্যায় রমিছাকে সাথে করে বস্তিতে আসেন। উনাকে এলাকায় সবাই খুব ভালো জানে বলে, তারপর বেশ কিছুদিন কেউ আর রমিছাকে ডিস্টার্ব করতে আসেনি। এরপর বেশি রাত হলে সেদিন মেয়েকে নিয়ে রমিছা মেজবাহ সাহেবের বাসাতেই থেকে যেতো। অনেক চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে যে মেয়েকে এতোটা বড় করলো, সে কিনা আজ বলছে, “আব্বু থাকলে ঠিক কিনে দিতো!”
এতো কিছু করছে, আর ব্যাগটা না দেয়ার কারণে সব মিথ্যা হয়ে গেলো! রমিছার কস্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছিল! মেয়ের কাল জন্মদিন বলে একটু পায়েস রাঁধছিল। চোখের পানিতে সব যেন ঝাপছা দেখতে লাগলো! মেয়ের ডাকে সম্বিত ফিরে পেলো! মেয়ের আবার একই কথা!

“আম্মু, আমি কি কইছি, শুনছো! কাল আমারে নতুন ব্যাগ না দিলে স্কুলেও যামু না। পড়ালেখাও করমু না। বান্ধবীরা হাসাহাসি করে! এক ব্যাগ নিয়া ৩ বছর ধইর‍্যা স্কুলে যাইতেছি! আমার কোন মানসম্মান নাই!”

রিতা হঠাৎই মায়ের চোখে পানি দেখতে পায়! সে কোনদিন মাকে কাঁদতে দেখেনি! ততক্ষণাৎ দৌড়ে এসে মাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আর কাঁদতে কাঁদতে বলে, “আম্মু! আমার ব্যাগ লাগবো না! তুমি আর কাইন্দো না! লক্ষী আম্মু! এই আমি কানে ধরলাম! আর কোনদিন নতুন ব্যাগ চামু না! আমার ভুল হইয়া গেছে! আব্বুর কথা বইল্যা তোমারে কষ্ট দিছি! আমারে তুমি মাফ কইর‍্যা দাও!”
একনিমিষে রমিছার সব কস্ট যেন নি:শ্বেষ হয়ে গেলো! মনে হলো যেন, তার মতো সুখী মা এই পৃথিবীতে আর একটাও নাই! ঠিক যেদিন রিতার পিএইসসি এর রেজাল্ট বের হলো, সেদিনের মতো অনুভূতি হলো!

রমিছা মেয়েকে দুহাত দিয়ে সামনে টেনে আনলো আর চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বললো, “পাগলি মাইয়া আমার! আমি তো ব্যাগ কবেই কিন্যা রাখছি! দেখ গিয়া! শিতানের কাছে বালিশের নিচে লুকাইয়া রাখছি। তোমারে চমকাইয়া দিবো দেইখ্যা আগে থাইক্যা কিছু কই নাই! তুমি মার্কেটে গিয়া যেইটা দেইখ্যা পছন্দ করছিলা, ওইটাই কিনছি! যাও, দেখো গিয়া!”

রিতা খুশিতে আরও শক্ত করে মাকে জড়িয়ে ধরলো! বললো, “সত্যই! তুমি আমার লিগা ব্যাগ কিনছো! এই জন্যই তো তোমারে আমি এত্ত ভালোবাসি!”

“হইছে! আর আল্লাদ করতে হইব না! এইবার যাও তো মা! হাত-মুখ ধুইয়া খাইতে আসো! তয় একখান কথা মা! আমারে কিন্তু ভালো রেজাল্ট আইন্যা দিবা! খাতায় যেন মেলা নম্বর দেখবার পারি! তোমারে যেন ডাঃ হওয়া দেইখ্যা মরতে পারি! এইডাই কিন্তু আমার স্বপ্ন!” রমিছার হাসিমুখ ভরা অভিব্যক্তি!

রিতা হেসে জবাব দেয়, “পাইবা আম্মু, পাইবা! আমার লিগা খালি এট্টু দোয়া কইরো! তোমার মাইয়া একদিন বড় ডাক্তার হইয়া তোমার সব কস্ট ভুলাইয়া দিবো! দেইখ্যো! কিন্তু আর একবার যদি মরার কথা কইছ, তাইলে কিন্তুক তোমার খবর আছে!”
রমিছা গালভরা হাসি দিয়ে বলে, “আইচ্ছা! আর কমু না! খুশী! এইবার যাও! সন্ধ্যা হইয়া যাইতেছে তো! পড়তে বসবা না!”

“হ! যাইতেছি তো!” এই বলে রিতা এক দৌড়ে ঘরে চলে গেলো।

দূর থেকে মাগরিবের নামাজের সুমধুর আজানের সুর ভেসে আসে। রমিছা দ্রুত কলঘরে অযু করতে চলে যায় আর মেয়েকেও নামাজের জন্য তাগাদা দিয়ে যায়।

মা আর মেয়ে মিলে সেদিন খুব গল্প করে! জানালার ফাঁক দিয়ে চাঁদের আলো এসে পড়ায় ছোট্ট ঘরটাকে যেন একটা স্বপ্নপূরী মনে হচ্ছিল! আর মেয়েটা যখন দুই হাত নেড়ে, মাথা ঝাঁকিয়ে গল্প করছিল, তখন চাঁদের আলোয় ওকে যেন একদম রাজকন্যার মতো লাগছিল! রমিছা মুগ্ধ হয়ে থাকিয়ে থাকে! নিজের মেয়েকেও যেন সে চিনতে পারে না! এই কবছরে মেয়েটা যেন হঠাৎ করেই অনেক বড় হয়ে গেছে! আজ যেন গল্প শেষই হচ্ছে না! মেয়েটাকেও কাছছাড়া করতে ইচ্ছে করছে না! কখন যে রাত ১২ বেজে গেছে, রমিছা টেরই পায়নি! দ্রুত গিয়ে পায়েসের বাটিটা নিয়ে আসে। মেয়ের মুখে পায়েস তুলে দেয় আর মাথায় হাত বুলিয়ে অনেক দোয়া করে! রিতাও মাকে খাইয়ে দেয়!

প্রতিদিনের মতো আজকে সকালেও রিতা স্কুল ড্রেস পড়ে, কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে স্কুলের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লো। সকালে কোনদিনই ওর মায়ের সংগে দেখা হয় না! মা সেই ভোরবেলা কাজে বেড়িয়ে যায়! কিন্তু আজ বের হওয়ার সময় কেন যেন মাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে! এদিকে ক্লাসেরও দেরী হয়ে যাচ্ছে! নতুন ব্যাগ কাঁধে স্কুলে যাওয়ার জন্য যতটা না খুশী হওয়ার কথা, ওর ততটা খুশীও লাগছে না! রিতা অনেকটা আনমনা হয়েই আজ বাসা থেকে বের হলো। স্কুলে যাওয়ার পথেই শাম্মীদের বাসা! আজও দেখলো, শাম্মী ওর জন্য বাসার সামনে অপেক্ষা করছে। অনেকটা হাটার পথ! মা যদিও রিকশা ভাড়া দিয়ে দেয়, কিন্তু রিতা প্রায় দিনই হেটে যেতে চেষ্টা করে! প্রতিদিনের মতো আজও ওরা একসাথে গল্প করতে করতে যাচ্ছিল। হঠাৎই একটা গাড়ী ঝড়ের গতিতে ওদের ধাক্কা দিয়ে চলে গেলো! শাম্মী রাস্তার এ পাশে ছিল বলে ও তেমন ব্যথা পেলো না। কিন্তু রিতা কিছু বুঝে উঠার আগেই মাটিতে পড়ে গেলো! সাথে সাথে রক্তের বন্যা বয়ে গেলো! আশেপাশের লোকজন ধর ধর বলে ছুটে আসলো! কিন্তু ঘাতক গাড়ীর আর হদিস মিললো না! সবাই ধরাধরি করে রিতাকে সিএনজিতে তুললো! শাম্মীসহ সিএনজি তখন নিকটস্থ হাসপাতালের উদ্দেশ্যে ছুটলো! রিতার মাথাটা শাম্মীর কোলে! ভয়ে, আতংকে ও যেন ভাষা হারিয়ে ফেললো! খালি একটু পর পর ডুকরে কেঁদে উঠলো!

রমিছা আজ তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে চায়! মেয়েটার জন্মদিন! তাই ওর জন্য একটু পোলাও আর মুরগীর গোস্ত রান্না করবে! বিকেলে মেয়েটা স্কুল থেকে ফিরেই যাতে খেতে পারে! রমিছা যেসব বাসায় কাজ করে, ভালো ছাত্রী বলে রিতাকে সবাই খুব ভালোবাসে! তাই ওর জন্মদিনের কথা শুনে সবাই কিছু না কিছু দিলো। রমিছা সব গুছিয়ে নিয়ে দ্রুত কাজ সেরে বাড়ির পথ ধরলো! ফেরার পথে বাজার থেকে হাফ কেজি পোলাও এর চাল আর একটা বয়লার মুরগী নিয়ে নিলো। বাড়ির পথটাও যেন আজ বেশী লম্বা মনে হচ্ছে!

বস্তির কাছাকাছি আসতেই দেখলো, একদল লোকের জটলা! বুকটা ধক করে উঠলো! কার আবার কি হলো! দোয়া পড়তে পড়তে নিজের ঘরের দিকে আসতেই রমিছা দেখলো, জটলাটা ওর ঘরের সামনেই! রমিছা এক দৌড়ে ঘরে ঢুকলো! তারপর ও যে দৃশ্য দেখলো, তাতে আর স্বাভাবিক থাকতে পারলো না! জ্ঞান হারিয়ে ফেললো! সবাই ওর চোখে মুখে পানি দিয়ে জ্ঞান ফিরালো ঠিকই! কিন্তু রমিছা যেন পাথর হয়ে গেছে! মেয়ের রক্তাক্ত দেহ আর রক্তমাখা স্কুল ব্যাগটার দিকে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো! সবাই মিলে রমিছাকে কাঁদানোর খুব চেষ্টা করলো! কিন্তু কেউই একফোঁটা চোখের পানি বের করতে পারলো না!

আজও রমিছা রক্তমাখা স্কুল ব্যাগটা বুকে করে রিতার স্কুলের পথটায় বসে থাকে! কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে বলে, “তার মেয়ের আজ জন্মদিন! নতুন ব্যাগ কিনে এনেছে! মেয়ে স্কুল থেকে বের হলেই ব্যাগটা ওকে দিবে!” বি:দ্র: বাসের ধাক্কায় মৃত বাচ্চাগুলোর স্মরণে।

 

ছোট ছোট ত্যাগ জীবনকে করে তোলে স্বপ্নিল ‘পর্ব-১’

                                                 আফরোজা হাসান


রান্নাঘরের দরজায় এসে শাশুড়িকে ভেতরে দেখে থমকে দাঁড়িয়ে গেলো আলিসবা। ভেতরে ঢুকবে কি ঢুকবে না এই দ্বিধা দ্বন্দ্বে পড়ে গেলো সে। বিয়ের দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো সে ঠিক মানিয়ে নিতে পারেনি শ্বশুরবাড়ির সবার সাথে। বাবা-মা আর দুই ভাইবোনকে নিয়ে ছোট পরিবার ছিল তাদের। কিন্তু বিয়ের পর এসে পড়েছে বিশাল বড় যৌথ পরিবারে। যদিও শ্বশুরবাড়ির সবাইকে খুব ভালোই মনে হয়েছে তার কাছে কিন্তু সবাই যেন কেমন নিজের মত থাকতে পছন্দ করে। তাই কি করবে, কি করণীয় ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না আলিসবা। বড় জা অন্তরাকে রান্নাঘরের দিকে আসতে দেখে হেসে সালাম দিলো সে। সালামের জবাব দিয়ে জা হেসে বলল, তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো যে?

-মা নাস্তা বানাচ্ছেন সাহায্য করতে যাবো ভাবছিলাম।

-হেসে, সকালের নাস্তা মা নিজ হাতে বানান ছেলেদের জন্য। এই বাড়ির মা ভক্ত ছেলেরা সবাই দিনের শুরু মায়ের হাতের খাবার খেয়ে করতে চায় তো সেজন্য। আমি বাগানে যাচ্ছি গাছে পানি দেবো, চলো তুমিও।

জা’য়ের পেছন পেছন আলিসবাও বাগানে গেলো।

-কিছুক্ষণ চুপ থেকে অন্তরা হেসে বলল, কিছু বলছো না যে? তোমাদের ভ্রমণ কেমন হল সেটাই তো জানা হয়নি।

-জ্বী ভাবী ভালো হয়েছে। এই বাগানের সব ফুল বেগুনী কেন?

-হেসে, কারণ এটা তোমাদের বড় ভাইয়ার ব্যক্তিগত বাগান।

-ভাইয়ার বুঝি বেগুনী রং খুব পছন্দ?

-হেসে, উহু আমার বেগুনী রং খুব পছন্দ। বাগানের আদর-যত্ন উনিই করেন সাধারণত। উনি শহরের বাইরে গিয়েছেন তাই আমি করছি। তোমার কথা বলো কেমন লাগছে বাড়ির সবাইকে?

-জ্বী ভালো।

-হেসে, তোমাকে খুব আপসেট দেখাচ্ছে। অবশ্য প্রথম প্রথম সবারই এমন হয়। পুরোপুরি নতুন একটা পরিবেশ, নতুন লোকজন, নতুন সম্পর্কের ভিড়ে নিজেকে মানিয়ে নিতে না পারাটাই স্বাভাবিক।
-আপনারও হয়েছিলো এমন?

-হুম…তবে আমাকে মা খুব সাপোর্ট করেছেন পরিবারের প্রতিটা বিষয়ে। ইনশাআল্লাহ! দেখবে তোমাকেও করবেন। শাশুড়ি বৌয়ের সমস্যার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে কমুনিকেশন গ্যাপ। একে অন্যের সাথে কথা তো বলে কিন্তু একে অন্যেকে বোঝানোর বা বোঝার চেষ্টা করে না। আলহামদুলিল্লাহ্‌! আমাদের শাশুড়ি তেমন নন। উনি উনার সব কথা যেমন বুঝিয়ে বলেন, ঠিক তেমনি আমাদের সবার কথাও মন দিয়ে শোনেন এবং বোঝার চেষ্টা করেন।

-হ্যা মার সাথে আমার যখনই কথা হয়েছে খুব ভালো লেগেছে। আমাকে যেদিন দেখতে গিয়েছিলেন মা সেদিন বলেছিলেন, নিজ জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে জেনেছি ও বুঝেছি যে, বিয়ে কোন রূপকথার কাহিনী না। আর যদি হয়ও বা সেই কাহিনীতে একটা হলেও জ্বীন থাকে। আর সেই জ্বীনের সাথে লড়াই করে চলতে হয় সংসারের পথে। কথাটা আমার ভীষণ ভালো লেগেছিলো।

-হেসে, মা সত্যিই অনেক সুন্দর কথা বলেন। সংসারের মূলমন্ত্র গুলো আমি মার কাছেই শিখেছি। আমার কি মনেহয় জানো? একজন শাশুড়ি যদি তার দীর্ঘ জীবনের সাংসারিক অভিজ্ঞতা গুলো তুলে দেন পুত্রবধূর হাতে, এরচেয়ে বড় দোয়া আর কিছুই হতে পারে না সেই পুত্রবধূর জন্য।

-সত্যিই অনেক সহজ হয়ে যেতো তাহলে সংসারের সবকিছু জানা ও বোঝা।

-হুম…ভেবে দেখো কত চমৎকার হতো যদি বিয়েতে অন্যান্য সবকিছুর সাথে প্রতিটা মেয়ের জন্য তার শাশুড়ির সাংসারিক অভিজ্ঞতার একটা প্যাকেজ দেবারও প্রচলন থাকতো। তাতে পরিবারের প্রতিটা সদস্য সম্পর্কে বেসিক ধারণা নিয়ে জীবনের নতুন সফর শুরু করতে পারতো প্রতিটা মেয়ে। চলার পথের খাঁদা-খন্দ সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা থাকতো, চারিদিক অনিশ্চিত অন্ধকারে ঢাকা থাকতো না।

-আপনিও অনেক সুন্দর করে কথা বলেন ভাবী। সত্যি অনেক ভালো হত এমন হলে।

-হেসে, এই কথাগুলো মা আমাকে বলেছিলেন আমার বিয়ের পর। কারণ মার বিয়ের পর মাকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। মা নাকি তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে কষ্ট উনি করছেন উনার ছেলের বৌদেরকে কখনোই এমন কষ্ট সহ্য করতে দেবেন না। যাইহোক, আমি চাই আমার মত তুমিও এসব কথা মার কাছ থেকেই জানো। তবে কি জানো?

-কি ভাবী?

-মার সংসার জীবনের অভিজ্ঞতাকে উপহার স্বরূপ না পেলে আমিও হয়তো জীবনের শেষ প্রান্তে গিয়ে বুঝতাম যে, ছোট ছোট ত্যাগ জীবনকে করে তোলে স্বপ্নিল। শুধুমাত্র জানা না থাকার কারণে ত্যাগ গুলো আমরা করতে পারি না, যারফলে বেশির ভাগ সময়ই স্বপ্নিল করে সাজাতে ব্যর্থ জীবনটাকে।

-আপনার কথা শুনে আমার মনে আশার প্রদ্বীপ জ্বলে উঠেছে ভাবী। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছোট ছোট ত্যাগের মাধ্যমে জীবনকে স্বপ্নিল করে গড়ে তোলার প্যাকেজ আমি পেয়ে যাবো, ইনশাআল্লাহ।

-হেসে, ইনশাআল্লাহ। তুমি যাও সবাইকে নাস্তার জন্য ডাকো। আমি মার কাছে যাচ্ছি।

চলবে…

 

গাজীপুরে পোশাককর্মী স্ত্রীকে খুন

নারী সংবাদ


গাজীপুরে দাম্পত্য কলহের জেরে এক পোশাককর্মীকে কুপিয়ে খুন করে তার স্বামী পালিয়েছে। গতকাল পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করেছে। নিহতের নাম চম্পা (২৩)। তিনি পটুয়াখালীর গলাচিপা থানার বালির হাওলা গ্রামের নুরুল ইসলাম গাজীর মেয়ে। গাজীপুর জেলা সদরের এনএজেড পোশাক কারখানার চাকরি করতেন চম্পা।
হোতাপাড়া পুলিশ ক্যাম্পের এসআই মো: সাইফুল ইসলাম ও স্থানীয়রা জানান, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নিজমাওনা এলাকার বাসিন্দা মো: ইসমাইলের ছেলে রফিকুল ইসলামকে প্রায় ১০ বছর আগে ভালোবেসে বিয়ে করেন চম্পাকে। এটি তাদের দ্বিতীয় বিয়ে। তারা দু’জনই একই পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। তাদের এ সংসারে সাত বছরের তামিম নামের এক ছেলে রয়েছে।
বিয়ের কিছুদিন পর থেকে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। সম্প্রতি রফিক গোপনে তৃতীয় বিয়ে করেন। এ বিয়ের খবর প্রকাশ পেলে রফিক ও চম্পার সম্পর্কের আরো অবনতি হয়। কয়েক মাস আগে চম্পা তার ছেলেসহ গাজীপুর সদর উপজেলার ভাওয়াল গড় ইউনিয়নের নয়নপুর এলাকায় মনু মিয়ার বাড়িতে ভাড়া বাসায় আলাদা বসবাস শুরু করেন। গত বুধবার রাতে রফিক তার দ্বিতীয় স্ত্রী চম্পার বাসায় আসেন। তাদের মধ্যে বাগ-বিতণ্ডার একপর্যায়ে রাত আড়াইটায় রফিক ধারালো অস্ত্র দিয়ে চম্পাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই চম্পা নিহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গতকাল ভোরে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। সূত্র :নয়াদিগন্ত।

 

লিটল হজ্জ্ব

তাহেরা সুলতানা


লিটল হজ্জ্ব! হয়তো ভাবছেন, বাচ্চাদের আবার কিসের হজ্জ্ব! কিন্তু শেখাতে তো সমস্যা নেই! এখন তো হজ্জ্বের মৌসুম চলছে! ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মতো হজ্জ্বও একটি গুরুত্বপূর্ন স্তম্ভ।
আর একটি বিষয় নিশ্চয় আমরা জানি যে, হজ্জ্ব পালনের সাথে সামর্থ্যের সম্পর্ক, বয়সের না। বাবা-মা হজ্জ্ব করার জন্য সামর্থ্যবান হলে সন্তানদেরও সাথে নিয়ে হজ্জ্বে যেতে পারবেন। কিন্তু আমরা বড়রা হয়তো স্বল্প সময়ে হজ্জ্বের নিয়মকানুন শিখে সঠিকভাবে হজ্জ্ব পালন করতে পারলেও কখনো কি ভেবে দেখেছি যে, বাচ্চারা এই অল্প সময়ের মধ্যে কিভাবে হজ্জ্বের কঠিন কঠিন ধাপগুলো শিখবে?
আর সেই বাচ্চা যদি একবারও ওমরা করতে না যায়, তাহলে তো আরও কঠিন হয়ে যায়, তাই না?
যদি এমন হয়, প্রি-স্কুল থেকেই বাচ্চাদের ইসলামের বাকি স্তম্ভগুলো শিখানোর পাশাপাশি হজ্জ্বের উপর ব্যবহারিক ক্লাস নেয়া হয়, তাহলে কেমন হয়!
মালয়েশিয়ার একটি নামকরা ইসলামিক প্রি-স্কুল সেটাই সম্পন্ন করে দেখিয়েছে! আলহামদুলিল্লাহ! স্কুলটির নাম ‘Little Caliphs Creative’।
গত ১২ই জুলাই একটি স্থানীয় মসজিদ প্রাংগনে (পুত্রজায়া মসজিদ) সারাদিনব্যাপী হজ্জ্বের উপর ব্যবহারিক ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়!
প্রতিষ্ঠানটির ৩০০ ব্রাঞ্চ থেকে ৬ বছর বয়সী প্রায় ৯০০০ বাচ্চাকে নিয়ে ‘লিটল হজ্জ্ব’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে বাচ্চাদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে হজ্জ্বের প্রতিটি ধাপ খুব সুন্দরভাবে শেখানো হয়!
এই অনুষ্ঠানের পরিপ্রেক্ষিতে ‘লিটল হজ্জ্ব’ প্রোগ্রামের জন্য মালয়েশিয়ার রেকর্ড বুকে উক্ত স্কুলের নাম উঠে আসে, যা অত্যন্ত সম্মানের! এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি এবার শ্রেষ্ঠ প্রি-স্কুল হিসাবে গোল্ড মেডেলও পায়। মজার বিষয় হচ্ছে, এই স্কুলটি একটি আধাসরকারী প্রতিষ্ঠান এবং এটি এখানকার সবচেয়ে কম খরচের স্কুলগুলোর মধ্যে একটি। আমি কিছু ছবি এবং একটি ভিডিও শেয়ার করছি। ছবি আর ভিডিও দেখলেই অনেক কিছু জানতে পারবেন। আমরা চাইলেই আমাদের দেশে অল্প খরচে এরকম প্রতিষ্ঠান দাঁড় করাতে পারি। আমাদের দেশে সম্পদশালী এমন অনেকেই আছেন, যারা সবসময় ভালো কিছু করার চিন্তায় মগ্ন থাকেন। চাইলে স্কুলগুলোতেও সেরকমভাবে ক্লাস নেয়ার ব্যবস্থা করতে পারেন, হোক সেটা স্বল্পপরিসরে!আবার অনেকে মালয়েশিয়াতেও স্থায়ীভাবে বসবাসের সামর্থ্য রাখেন, যাতে বাচ্চাকে সুন্দর একটি শিক্ষার পরিবেশ দিতে চান। আমাদের ভুললে চলবে না যে, একটি বাচ্চাই কিন্তু একটি দেশের ভবিষ্যৎ, একটি জাতির কর্নধার!

ছবি কর্ণার:

অংশগ্রহণকারী লিটল হাজ্জ্বী
তাওয়াফ করা
সাফা-মারওয়া সাঈ
জমজম কূপের পানি পান
মিনায় অবস্থানস্থল
শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের উদ্দেশ্যে পাথর সংগ্রহ
শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করা

 

‘মিম হত্যাকারী চালকদের অণুঘটক কে’

ডা. এম এস কবীর জুয়েল


“এই সব ‘বিকৃত হাসি’-ই ওই সব পাষাণ হৃদয়ের অনুপ্রেরণা ও অনুঘটক, যাহাদের কারনে আমরা সারা মাস ব্যাপিয়া ওদের কাউন্সিলিং করিয়া রাস্তায় ছাড়িয়া দিলে-ও তাহারা পূর্বাবস্থায় ফিরিয়া যায়”

রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের বাসের চাপায় দুই কলেজশিক্ষার্থী নিহত। ওই দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া দুইজন হলেন- শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল করিম রাজিব।

আমার অভিজ্ঞানে পরিবহন কর্মীদের ৫৬% মাদকাসক্ত ও বিকৃত মানসিকতায় আক্রান্ত, আমাদের CSR(Corporate Social Responsibility) -এর অধীনে স্বল্পমূল্যের মাদকাসক্তি চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র গুলোর পরিসংখ্যান তা-ই বলে। ব্যস্ততা সত্ত্বেও অভিজাত এলাকার সেন্টারগুলো থেকে সময় বের করে আমি অনেক কাঁদা জল পেরিয়ে নগরীর ঘিঞ্জি এলাকায় সপ্তাহে এক দিন হলেও যাই। ওদেরকে সৎ ও সুন্দর জীবনবোধ, পেশাগত শৃঙ্খলা, মানবতা ও সর্বোপরি মাদকমুক্ত ধর্মাশ্রয়ী উপার্জনের ওপর গুরুত্তারোপ করে থাকি।

রাজধানীতে চলাচলরত যানবাহনের অধিকাংশরই লুকিং গ্লাস, ব্রেক লাইট ও সিগন্যাল লাইট নেই। থাকলেও সেগুলো কাজ করে না। এমনকি অনেক যানবাহনের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক ফিটনেসও নেই। মরদেহ দুটি পড়েছিল রাস্তায়। নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে গেছে। থেঁতলে গেছে মুখ। হাত-পা ভেঙে খণ্ড খণ্ড। কংক্রিটের কালছে বর্ণের রাস্তা লাল রক্তে ভাসছে। মরদেহ দুটি ঘিরে চলছে সহপাঠীদের আহজারি, হাউমাউ কান্না আর বিলাপ।

এ দায় তো পরিবহন কর্মীদের ও, তাই অন্যদের জীবনাচারে ওদের পেশার ভূমিকা শীর্ষক আলোচ্য বিষয়াদি আমাদের কাউন্সিলিং সেশন গুলোতে প্রাধান্য পায়।
উন্নত মডেলের যানবাহন হলেও দ্রুতগামীতার জন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে-ও ভয়ংকর রকম সড়ক দূর্ঘটনা হয়ে থাকে। তবে সেক্ষেত্রে পার্থক্য হলো ঔসব দূর্ঘটনাতে মদ্যপ চালক নিজেও পগার পার হন, সাধারণ মানুষের ওপর এর ধকল পড়েনা। কারন ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর কঠোর নিয়ন্ত্রণ, চালকদের শিষ্টাচার,অধিক লেনের চওড়া রাস্তা ও সুশৃঙ্খল ট্রাফিকিং ব্যবস্থা এবং মদ্যপ্রবণদের জন্য নিয়মিত কাউন্সিলিং ও প্রয়োজনানুসারে Occupational Therapy -এর বিধান রয়েছে। আমরাও ইচ্ছে করলে রাষ্ট্রীয় ভাবে চালকদের প্রশিক্ষণ দিতে পারি, ওদের আরো অধিক সৎ পেশাদার মনোভাবাপন্ন করে গড়ে তুলতে পারি, এ জন্য দরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যহীন সুশৃঙ্খল পরিবহন শ্রমিকসংঘ দরকার।

এ দেশের রাজনীতিজ্ঞরা পরিবহন সেক্টরকে কেবল কলুষিত-ই করেননি বরং রাজিব, আয়েশা, পায়েল, মিম-দের মতো অসংখ্য নিরীহ আত্মার বর্বর খুনী তৈরী করেছেন। যারা নিজেদের দোষ ঢাকতে আহত পায়েল-এর মুখ থেঁতলে নদীতে ফেলে দিতে এক চিলতে দ্বিধান্বিত হয়নি। কারন তারা জানে এ দেশে তাদের শাস্তিদাতার চেয়ে অনুপ্রেরকের সংখ্যা অনেক বেশী, শুধু দলাশ্রয়ী হলেই সব খুন মাফ। ছবিসূত্র: ডা. এম এস কবীর জুয়েল

ডা. এম এস কবীর জুয়েল
এমবিবিএস, বিসিএস, এম.ফিল(নিউরো-সাইকিয়াট্রি), ডক্টর অফ মেডিসিন(এম.ডি) মনোরোগ
সৌদি বিশেষায়ীত স্বাস্থ্য কমিশন সার্টিফাইড ইন সাইকিয়াট্রি এন্ড সাইকোথেরাপী
ভূতপূর্ব মনোরোগ ও মাদকাসক্তি বিশেষজ্ঞ, সাইকিয়াট্রিক হাসপাতাল, আল জউফ, সৌদি আরব
ভূতপূর্ব সহযোগী অধ্যাপক
এশিয়ান ইনষ্টিটিউট অফ মেডিসিন, সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি কেদাহ্, মালয়েশিয়া
ইউনিট প্রধান, সাইকোথেরাপি ও কাউন্সিলিং ইউনিট, মনোরোগ বিভাগ
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল

 

সংসার সুখের হয় পুরুষের গুণে

আফরোজা হাসান


“সংসার সুখের হয় পুরুষের গুণে” ভাবছি এই শিরোনামে একটা সিরিজ লিখবো। নারীর গুণে সংসার সুখের হবার বা জীবনে হাসি-আনন্দ বিকশিত হবার অনেক কাহিনী শুনেছি, পড়েছি, দেখেছিও। কিন্তু একটা সংসার সুখী হবার পিছনে একজন পুরুষের অবদান কতখানিক হতে পারে এটা নিয়ে তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু পড়া বা শোনা আমার অন্তত হয়নি। তবে দেখা? হুমম…অনেক দেখা হয়েছে। নানুমণি, মামণি, খালামণি, মামীমা, চাচীমা, ফুপ্পিদের থেকে নিয়ে শুরু করে নিজেকে, বোনদেরকে, বান্ধবীদেরকে এমনকি কয়েকদিন আগে হওয়া ভাতিজীর সংসার দেখেও এই চিন্তাটাই আরো দৃঢ় হয়েছে যে, আমাদের পরিবারের প্রতিটি সংসারের সুখের পেছনে নারীদের চেয়ে পুরুষদের অবদানই বেশি।

গতকাল আমাদের বোনদের সাপ্তাহিক আলোচনা সভাতে হঠাৎ করেই সংসারে সুখী হবার পেছনে কার অবদান বেশি সেটা নিয়ে কথা উঠলো। ভাবী ও বোনেরা মিলে আমরা তেরো জন এক বাক্য স্বীকার করে নিয়েছিলাম যে, আমরা সুখী এর নাইনটি পারসেন্ট ক্রেডিট আমাদের হাজবেন্ডদের। তখন মনেহলো কেমন হয় নিজেদের সংসার গুলোকে নিয়ে একটু গবেষণা করে দেখলে? যেই মানুষগুলো দ্বারা জীবন অনিন্দ্য সুন্দর রূপ ধারণ করে এসেছে আমাদের কাছে। সেই মানুষগুলোর এত ভালো হবার রহস্য কি? নারীদের মহিমা নিয়ে তো অনেক কাব্য, মহাকাব্য লেখা হয়েছে। আমরা একটু ভিন্ন কিছু লেখার চেষ্টা করে দেখি না নিজ নিজ অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার থেকে।

খুঁজতে গিয়ে দেখলাম আমাদের সবার হাজবেন্ডদেরই কিছু বিষয় কমন। উনারা প্রত্যেকেই ভয়াবহ রকমের ব্যস্ত মানুষ। তবে পরিবারের জন্য যতটুকু সময় নির্ধারিত চেষ্টা করেন সেই সময়টুকুর সবটুকু দিতে। পারুক বা না পারুক নিজ নিজ স্ত্রীকে সাহায্য করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকেন উনারা। মেয়েদের রাগ হচ্ছে অনেকটা আগুনের মত। উনারা কখনোই আগুনে তেল বা বাতাস দেন না। বরং এমন পরিমাণ পানি ঢালেন যাতে ধোঁয়াও না বের হয়। নারী জাতি স্বভাবগত ভাবে বাঁকা। আর প্রচলিত আছে সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকা করতে হয়। কিন্তু উনারা আঙুল বাঁকা না করে এমন মাত্রায় উত্তাপ দেন যে ঘি গলে গিয়ে নিজ থেকেই বেড়িয়ে আসে। এমন আরো অনেককিছু আছে যা আসলে উদাহরণ ছাড়া ঠিক বোঝানো সম্ভব নয়।

তবে সিরিজটা আমি মজা করার জন্য লিখতে চাচ্ছি না। লিখতে চাচ্ছি কারণ জীবনের ভাঁজে ভাঁজে ছড়িয়ে থাকে ভালো থাকার নানা উপকরণ। কিন্তু দৃষ্টিভঙ্গীর কারণে অনেক সময় আমরা সেসব দেখতে বা খুঁজে নিতে পারি না সেই । অনেক সময় অন্যের অভিজ্ঞতা শুনে উপলব্ধি করি যে, আরে এমন অনেক মুহুর্ত তো আমার জীবনেও প্রায়ই আসে। এর মধ্যে যে এত আনন্দ ও সুখ থাকতে পারে সেটা তো জানাই ছিল না। হুমম…এই উপলব্ধিটুকুই মনে জাগিয়ে যেতে চাই গল্পে গল্পে। স্বাভাবিক বলে যে সুখ মানুষের নজরেই আসে না, অন্যের অভিজ্ঞতা শুনে বা জেনে তখন রঙতুলির ছোঁয়া লাগে ভাবনাতে। আবার অনেক সময় জানাই থাকে না যে স্যাক্রিফাইস কিভাবে করতে হয়। স্যাক্রিফাইস শব্দটা শুনলেই বিশাল কিছু ছাড় দেবার ইমেজ চলে আসে মনে। অথচ ছোট ছোট ত্যাগই জীবনকে করে তোলে স্বপ্নিল।

যাইহোক, অনেক লম্বা প্রাসঙ্গিক সূচনা দেয়া হয়ে গিয়েছে। আমি এখন বিশ্লেষণের দিকে যাই……।

 

নীরু

জান্নাতুন নুর দিশা


“আচ্ছা রশীদ, নীরুকে তুই ছেড়ে দিয়েছিলি কেন?”

“আর বলিস না রে, আকাশ! ওমন আত্মভোলা মেয়ের সাথে সংসার করা যায়?”

“তোদের তো প্রেমের বিয়ে ছিলো।”

“তা ছিলো।”

“তবে ছাড়লি কেন ওকে বিয়ের ছ’মাসের মাথায়?”

“অসহ্য লাগছিলো ওকে। সংসারী ছিলো না একদম। ধর অফিস থেকে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরেছি, ও বলতো টংয়ের চা খেতে যাবে। আচ্ছা বল, এসব ভালো লাগে? বাসায় এসে বউয়ের হাতের এক কাপ চা না পেলে?।

“তা বটে!”

“এত রোমান্টিসিজম কোথা থেকে আসতো ওর কে জানে! আমাদের বিয়ের সময়টা ছিলো আষাঢ় মাস। বিয়ের পর প্রায় বৃষ্টি থাকতো। এই মেয়ে বৃষ্টিতে ভিজবে। তাও একা না, আমাকেও ভিজতে হবে। এভাবে প্রতিদিন প্রতিদিন বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর বাঁধিয়ে ফেলতাম দুজন। ওর এসব অত্যাচার অসহ্য লাগতো।”

“বিয়ের আগেও তো নীরু এমনই ছিলো। তখন অসহ্য লাগতো না?”

“বিয়ের আগের ব্যাপারটা ভিন্ন। বিয়ের পরে তো সংসারী হতে হয় তাই না?”

“সংসারী ছিলো না ও?”

“একদম না। টাকাপয়সা গুছিয়ে রাখতে জানতো না। আমার হাতেই রাখতে হতো সব টাকা। ওর হাতে দিলে তো বেলি ফুলের মালা, আর্ট এক্সিবিশন থেকে ছবি, কবিতার বই এসব কিনে নষ্ট করতো টাকা।”

“সব টাকা নিজের কাছে রাখতি? নীরু কিছু চাইতো না তোর কাছে? কিছু কিনে দিতে বলতো না?”

“বিয়ের পর ছ’মাসে একবার একটা টাঙ্গাইল শাড়ি চেয়েছিলো শুধু। আর ডিভোর্সের আগের দিন বলেছিলো পরদিন যেন কোর্টে এক গুচ্ছ লাল গোলাপ নিয়ে যাই।”

“গোলাপ হাতে দিয়েই তারপর ডিভোর্স দিয়েছিলি?”

“হ্যাঁ।”

“একটুও কষ্ট হয় নি তোর? নীরু কি কাঁদে নি?”

“আমার একটুও কষ্ট হয় নি। নীরুও কাঁদে নি। ডিভোর্স ও চায় নি। যেদিন রাতে।ওকে জানিয়েছিলাম রুমাকে আমি বিয়ে করবো। সেদিন খুব কেঁদেছিলো। এর পরের একমাস প্রতিটা দিন কেঁদেছে। কিন্তু ডিভোর্সের দিন কাঁদে নি। ডিভোর্স পেপারে সাইন করে গোলাপ গুচ্ছ হাতে নিয়ে চুপচাপ চলে গেছে।”

“ওহ। কি অদ্ভুত মেয়ে তাই না?”

“অদ্ভুত তো বটে! ওকে নিয়ে সংসার করলে দেউলিয়া হতে হতো।”

” তা রুমাকে নিয়ে এখন সুখে আছিস এখন?”

“এখন? রুমাকে নিয়ে?”

“হ্যাঁ?”

“জানি না। নারী জাতি বড় অদ্ভুত! এদের কিছু দিয়েই খুশী করা যায় না রে।”

“নীরু তো কিছু না পেলেও খুশী ছিলো। সে কি নারী ছিলো না রশীদ?”

“এসব বাদ দে, আকাশ।”

“ভয় হয় এসব প্রশ্নে? উত্তর খুঁজে পাস না?”

“বিদেশ থেকে এত বছর পর এসেছিস বন্ধুর খবর নিতে না জেরা করতে?”

“না রে, আমার বিয়ের দাওয়াত দিতে এসেছি। এই নে কার্ড। আগামী শুক্রবার বিয়ে। আসবি রুমা ভাবীকে নিয়ে। আসি রে।”

***
“কী ব্যাপার রশীদ? ফিরতে এত দেরী হলো?”

“অফিসে আকাশ এসেছিলো। আমার বন্ধু। ওর বিয়ের দাওয়াত দিতে।”

“ওহ। এরকম মাথায় হাত দিয়ে শুয়ে আছো কেন?”

“মাথা ধরেছে রুমা।”

“আচ্ছা দাঁড়াও আমি চা আনছি। আর শোনো, পাশের বাসার ওরা একটা ফ্রিজ কিনেছে জানো? চৌত্রিশ হাজার টাকা দাম পড়েছে। ফ্রিজটা আমার পছন্দ হয়েছে। কাল কিনতে যাবো। যদিও ফ্রিজ একটা আছে। বাট মডেল পুরনো।”

“রুমা, আমার মাথা ধরেছে।”

“হ্যাঁ, আমি চা আনছি। ফ্ল্যাটের বুকিং দিয়েছো রশীদ? প্রথম কিস্তি কত দিলে? ভাড়া ঘরে আর কতদিন? স্ট্যাটাস তো যায় যায়।”

“রুমা, আমার মাথা ধরেছে।”

“হ্যাঁ যাচ্ছি চা আনতে। আচ্ছা তোমার বন্ধু আকাশ তো বিলেত ফেরত তাই না? ওনার বিয়েতে পড়ার জন্য আমাকে একটা দামী শাড়ি কিনে দিও তো। মোটামুটি সাত-আট হাজার টাকার। স্ট্যাটাস মেইনটেইনের তো ব্যাপার আছে। আচ্ছা ওনার হবু ওয়াইফের কথা কিছু বলেছে? কী করে উনি?

“নীরু! নীরু!”

“নীরু? নীরু মানে? তুমি এখনো তোমার আগের বউকে ভুলতে পারো নি তাই না? তার নাম জপ করছো?”

“আকাশের হবু স্ত্রীর নাম নীরু! রুমা, আমার মাথা ধরেছে। যাও এখান থেকে।”

“আচ্ছা যাই টিভিতে আমার প্রিয় নাটক শুরু হয়ে গেছে। তোমাকে আধা ঘন্টা পর চা দিচ্ছি।”

রশীদ এখনো অস্ফুট স্বরে ডেকে যাচ্ছে, “নীরু! নীরু! নীরু!”

 

জীবনে কয়েকজন হিরো

 কানিজ ফাতিমা


আমার জীবনে কয়েকজন হিরো আছে, সবারই থাকে। বেশীর ভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই মিডিয়ার কেউ বা জীবনে সফল কোনো ব্যক্তিত্ব হন তার হিরো। আমার ক্ষেত্রে তা হয়নি। আমার হিরোরা ব্যতিক্রম। যেমন আমার হিরোদের একজন হলেন এক ভিক্ষুক – ১৮/ ১৯ বছর বয়সী এক ভিক্ষুক – এলিফেন্ট রোডের ফুটপাতে বসে ভিক্ষা করত সে। আমি তখন একটা প্রইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতাম আর প্রতিদিন তার সামনে দিয়ে ভার্সিটি যেতাম।

সে কি দাড়িয়ে ভিক্ষা করত নাকি বসে করত তা আমি নিশ্চিত জানিনা – কারণ তার শরীর কোমর পর্যন্ত এসে থেমে গেছে। তার কোনো পা ছিলনা, এমনকি তার কোনো হাতও ছিলনা- শধু ধর আর মাথা। নিকের ভিডিও আমি দেখেছি তাকে দেখার অনেক পরে। নিকের অন্তত “ড্রাম স্টিক” আছে (নিক তার পা কে মজা করে ড্রাম স্টিক বলে); ওর তাও ছিলনা , নিক পুরুষ আর সে ছিল নারী , নিক অস্ট্রেলিয়ায় জন্মেছে আর সে জন্মেছে বাংলাদেশের বস্তিতে।

আমি অনেকবার ভেবেছি এর থেকে আর হতভাগা হয়ে জন্মানো সম্ভব কিনা- জবাব খুঁজে পাইনি। একদিনের কথা স্পষ্ট মনে আছে আমার – সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিল। আমি ছাতা মাথায় হেটে যাচ্ছিলাম আর মেয়েটি ভিজছিল – মাত্র এক হাত পেছনে সরলেই ছাউনী। তার সমর্থ ছিলোনা মাত্র এক হাত পেছনে সরার। সকালে তাকে কেউ এখানে রেখে গেছে , দিন শেষে তাকে তুলে নিয়ে যাবে- এর মধ্যে এক চুলও সরতে পারবে না সে ।

আজ মনে হয় তাকে আমার সেদিন সরিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। ভেবেছিও সেদিন সে কথা। কিন্তু নারী সুলভ সংকোচে হয়ে ওঠেনি। সেদিন আমার আর একটু সাহসী হবার দরকার ছিল, কারণ মেয়েটির কাছে আমি ঋণী। আমি ঋণী কারণ আমার হতাশার সময় তার বৃষ্টি ভেজা হাসি মুখটি আমার মনে হয় আর মহুর্তেই আমার কষ্টগুলো হালকা হয়ে আসে, নাপাওয়া গুলোর গুরুত্ব কমে যায়; আমি আবার হাসতে পারি।
আমি তাকে ওই পথে দেখেছি এক বছরের কিছু বেশী সময় এবং প্রতিদিনই সে আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসতো।

আমি আজও ভেবে ভেবে অবাক হই – এমন জীবন নিয়ে কি করে একটা মানুষ হাসতে পারে – প্রতিদিন? নিজের কষ্ট যখন বুকের ভেতর জমতে জমতে নিশ্বাস আটকে দিতে চায় তখন তার কথা মনে হয় আর তখনই নিজেকে মনে হয় দুর্বল। দুর্বল নিজেকে ধমক দিয়ে বলি “তোমার জীবনের পাওয়া গুলোর দশ ভাগের একভাগ পেলেও ওই মেয়েটি ধন্য হয়ে যেত। রাখো তোমার অকারণ দুঃক্ষ বিলাস, হাসো সন্তুষ্টির হাসি। ও যদি হাসতে পারে তবে তোমার কাদার কোনো অধিকারই নেই।”

 

মানুষ হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ

জান্নাতুন নুর দিশা


একসময় এদেশের মায়েদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সার্টিফিকেট ছিলো না, কিন্তু মনুষ্যত্ব ছিলো। এখন যা অবস্থা হয়েছে এদেশের মায়েরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে, তবে অনেকেই হারাচ্ছেন মনুষ্যত্ব।
দুয়েকটা উদাহরণ দেই।
শিক্ষকতা পেশায় আছি সাড়ে তিন বছর। প্রথম যোগদান করেছিলাম এক কিন্ডারগার্টেন স্কুলে।
সেখানে যে কিছুদিন পড়িয়েছি, বাচ্চাদের মায়েদের অদ্ভুত কিছু মনোভাব দেখিছি।
একবার স্কুলের মিডটার্ম পরীক্ষায় ক্লাস টু’তে পড়ুয়া এক বাচ্চার ব্রাইটার গ্রামার পরীক্ষার খাতা নিয়ে এলেন বাচ্চার মা। খাতা মূল্যায়ন করেছিলাম আমি।
ভদ্রমহিলার দাবী ছেলে একশোতে একশোই পাবে, আমি দিয়েছি সাতানব্বই! প্রিন্সিপাল আমাকে ডাকলেন।
এমন ভুল হবার তো কথাই না আমার। খাতা দেখলাম উল্টেপাল্টে। বাচ্চা যে দুটো ওয়ার্ড মিনিং ভুল করেছিলো, পেন্সিলে লেখা হওয়ায় বাচ্চার মা ভুল বানান দুটো মুছে নিজে শুদ্ধ বানানটা লিখে নিয়ে এসেছে! উদ্দেশ্য নিজের বাচ্চাককে ফার্স্ট বানানো, এই তিন নাম্বার কম পাওয়ায় ওনার বাচ্চা ফার্স্ট না হয়ে সেকেন্ড হয়েছে।
যথাসম্ভব চেষ্টা করেছে ছেলের লেখার মত করে লিখতে, তবু অন্যান্য লেখার সাথে মিলিয়ে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিলো এই লেখাটা বাচ্চাটার ছিলো না। প্রিন্সিপাল আর আমি দুজনেই বাচ্চার মা’কে বুঝিয়ে বললাম ওনার এই জালিয়াতি আমরা ধরতে পেরেছি।
এই ভদ্রমহিলা গ্রেজুয়েট। উনি যখন ভুল উত্তর মুছে শুদ্ধ উত্তর লিখে দিচ্ছেন খাতা হাতে পাবার পর, নিশ্চয়ই বাচ্চা পাশে বসে ছিলো। এই বাচ্চাটা তার জীবনের প্রথম শিক্ষক তার মায়ের কাছ থেকে এত ছোট বয়সেই প্রতারণা শিখে নিয়েছে। বড় হয়ে এসব বাচ্চা যদি প্রতারণা, দুর্নীতি করে দায়ভার কার?
আরেকটা ঘটনা বলি, ক্লাস থ্রিতে একটা ফুটফুটে বুদ্ধিদীপ্ত মেয়ে পড়তো নাম মিতা। আমি খুব স্নেহ করতাম মেয়েটাকে। মেধাবী ছিলো। মিতা মেয়েটা একবার ইংরেজি বই হারিয়ে ফেললো। বাসায় মায়ের বকার ভয়ে মিতা মা’কে বলেছিলো বই মিসকে দিয়েছিলাম, মিস হারিয়ে ফেলেছে।
বাচ্চার মা মেয়েকে দিয়ে আমার কাছে একটা কাগজ পাঠালো। কাগজে লেখা, “আপনি আমার মেয়ের বই হারিয়েছেন, ওকে বই কিনে দেবেন!”
এই কাগজ আমার হাতে দিয়ে মেয়েটা লজ্জায় অঝোর ধারায় কাঁদছিলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো, “মিস, বইটা আমিই হারিয়েছি। মা মারবে বলে আপনি হারিয়েছেন বলেছি। এখন মা আমাকে বলেছে আপনার কাছে বই চাইতে। আমি পারবো না বলায় এই কাগজ আপনাকে দিতে বলেছে।”
ভদ্রমহিলার এই আচরণ আমাকে অবাক করেছিলো প্রচণ্ড। মিতাকে পরের দিন ঐ হারিয়ে যাওয়া টেক্সট বই সাথে দুটো গল্পের বই রেপিং পেপারে মুড়ে উপহার দিলাম।
এরপর মিতার মা যতবার স্কুলে এসেছে, লজ্জায় আমার দিকে আর তাকাতে পারে নি।
আজকালকার অভিভাবকদের এমন অসংখ্য নীতিহীন আচরণ আমি শিক্ষকতা পেশায় থেকে দেখেছি, দেখছি।
ছোট ছোট প্লে, নার্সারির বাচ্চাদের পরীক্ষার হলে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থেকে মায়েদের উত্তর বলে দেয়া, চিরকুটে উত্তর লিখে দেয়া, বাচ্চা ফার্স্ট, সেকেন্ড না হলে মারধোর করা অদ্ভুত অসুস্থ সব আচরণ। যতটা প্রতিযোগিতা না বাচ্চাদের থাকতো, তারচেয়ে বেশি প্রতিযোগিতা অভিভাবকদের।
কচি মনগুলোকে খুব ছোট বয়স থেকেই এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা আর হতাশার দিকে ঠেলে দিচ্ছে মায়েরাই। এসব বাচ্চারাই বড় হয়ে আত্মহত্যা করে হতাশায়।
প্রচন্ড রকম মানসিক শক্তিহীন একটা প্রজন্ম গড়ে দিচ্ছে এ যুগের মায়েরা, এদেরই বড় হয়ে মোটিভেশন প্রয়োজন হয়। এদের সেল্ফ কনফিডেন্স, সেল্ফ মোটিভেশন পাওয়ার শৈশবেই নষ্ট করে দেয়া হয়।
এখনকার মায়েরা চাঁদ মামার ছড়া শোনানোর বদলে বাচ্চাদের হাতে তুলে দিচ্ছে দশ-বারোটা শক্ত শক্ত বই। মাথায় ঢুকিয়ে দিচ্ছে পৃথিবীর যত কঠিন হিসাব, “তোমাকে ফার্স্ট হতে হবে”।
অথচ ফার্স্ট হওয়ার চেয়ে মানুষ হওয়াটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

 

নারীর দায়িত্ববোধ (শেষ পর্ব)

রেহনুমা বিনত আনিস


যে নারী জ্ঞানবিমুখ, যে নিজের মূল্য, অবস্থান, দায়িত্ব বোঝেনা সে কি করে নিজের সন্তানকে অপর নারীদের মূল্যায়ন করতে শেখাবে? রাসূল (সা) বলেছেন, ‘সে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলোনা, যে মানুষের শুকরিয়া আদায় করলোনা’ (সুনান আবু দাউদ ৪৮১১)। যে নারী সন্তানের মাঝে নিজের প্রতি কৃতজ্ঞতার সঞ্চার করতে পারলোনা, সে তো সন্তানের দাসীতে রূপান্তরিত হোল। অথচ পৃথিবী ধ্বংসের একটি আলামত এই যে দাসীরা তাদের মুনিবদের জন্ম দেবে!
একজন জ্ঞানী ব্যাক্তির জীবনের লক্ষ্য থাকে সন্তানদের মাঝে জ্ঞানের ধারা অব্যাহত রাখা যেন তারা উত্তম মানুষে রূপান্তরিত হতে পারে, মানবসমাজের জন্য কল্যাণকর ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু যে নারী নিজেই জ্ঞান আহরণ সম্পর্কে উদাসীন সে কিভাবে সন্তানকে জ্ঞানের পথে পরিচালিত করবে?

এই নারীরাই অপর নারীদের হাত ধরে এগিয়ে আনার পরিবর্তে অন্ধকারের আবর্তে ঠেলে দেয়, আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্ট করে, সংসারে অশান্তির সৃষ্টি করে, অন্যের হক নষ্ট করে। তাঁরা নিজেদের গন্ডি এত সংকীর্ণ করে নিয়েছেন যে তাঁরা নিজেদের, সন্তানদের, পরিবারের, বন্ধুবর্গের উপকারেও নিয়োজিত করতে অক্ষম বা প্রেরণার অভাবে ভোগেন।
সমাজের উপকার তাঁদের দ্বারা কি করে হবে?

অপরদিকে রয়েছেন তাঁরা যারা নীরবে নিভৃতে সমাজ, সংসার, সন্তানদের জন্য করে যাচ্ছেন। একদিকে তাদের প্রচারবিমুখতা, অপরদিকে তাদের পরিবারের পুরুষ সদস্যদের ‘এ আর এমন কি’ ধরণের মনোভাব তাদের কৃতিত্ব জানার সুযোগ রাখেনা। ফলে তাঁরা যে অন্যান্য নারীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারতেন সে সুযোগটুকুও হারিয়ে যায়।

নারীর অবস্থান পরিবর্তনের প্রথম নিয়ামক নারীর নিজেকে পরিবর্তন। নিজের মর্যাদা, অধিকার এবং দায়িত্ব সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করা। নিজের চরিত্র, যোগ্যতা, আচরণ সুসজ্জিত করা। এই কাজ শুধু সাহস দিয়ে হয়না। এর জন্য প্রয়োজন প্রেরণা। এই প্রেরণা আসে দায়িত্ববোধ থেকে।

একজন মানুষ তখনই নিজেকে কঠোর অধ্যাবসায়, সাধনা এবং প্রচেষ্টায় নিয়োজিত করতে পারে যখন নিজের এবং অপরের প্রতি দায়িত্বানুভূতি সে সম্যকভাবে উপলব্ধি করতে পারে।
এই উপলব্ধি নিজের মাঝে গড়ে তোলাই হোক আমাদের আগামীর লক্ষ্য। এই লক্ষ্যের হাত ধরেই একদিন ফিরে আসবে নারীদের সেই সোনালী যুগ যখন নারীসমাজ এবং পুরুষসমাজ সত্যিকার অর্থেই ছিলেন পরস্পরের বন্ধু এবং সহযোগী। সেই সোনালী সুদিনের প্রত্যাশায় …।

১ম পর্ব

 

সোনামণিদের দাঁতের যত্ন

ডা. ফাতিমা খান


গর্ভাবস্থায় আপনি যেসময় অনাগত সন্তানটার ছোট্ট মিষ্টি অবয়ব কল্পনায় ভেবে আপনার সব ক্লান্তি আর কষ্টগুলো ভুলে থেকেছেন, ঠিক ওই সময়েই আর সব অংগ প্রত্যঙ্গ এর সাথে আপনার শিশুর দুধ দাঁত আর স্থায়ী দাঁতের গঠন শুরু হয়েছিল। গর্ভবতী মায়ের দৈনিক খাবারের তালিকায় তাই যথেষ্ঠ পরিমাণ ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার থাকতে হয়। আপনি ঠিকমতো খেয়েছিলেন তো?

ছয় মাস বয়সে সাধারণত একটি শিশুর প্রথম দুধ দাঁত আসে। শিশুর গঠন,পুষ্টি ও স্বাস্থ্যভেদে অথবা কোন কারণ ছাড়াই সময়টা কিছু আগে বা পরেও হতে পারে। অনেক শিশু মুখে দাঁত নিয়েই জন্মগ্রহণ করে। এ ধরনের দাঁতকে বলে ”ন্যাটাল টুথ”। আবার জন্মের প্রথম মাসে কারও কারও প্রথম দাঁতটি দেখা যায়, যাকে বলা হয় ”নিওন্যাটাল টুথ”। সাধারণত প্রথম দাঁতটি উঠার কিছুদিন পরই আসে ঠিক পাশের দ্বিতীয়টি।

সন্তানের দু’দাঁতের ভুবনজয়ী হাসিটিকে স্মৃতিবন্দী বা ক্যামেরাবন্দী করেননি এরকম মা বাবা আজকাল হয়ত পাওয়া বড় কঠিন ! কিন্তু একটি ব্যাপার আমাদের অনেকেরই অজানা , বা জানা থাকলেও হয়ত চর্চা নেই; তা হল, আপনার শিশুর মুখে দুধ দাঁতগুলো আসার পর থেকেই এর নিয়মিত যত্ন নেয়া উচিৎ। ক্যারিজ মুক্ত ও পরিচ্ছন্ন দাঁত, পরিষ্কার মাড়ি, জিহ্বা ও মুখগহ্বর আপনার শিশুর সার্বিক সুস্থতা ও বৃদ্ধির জন্য অত্যাবশ্যক। অন্যথায় ওর মুখের ভেতরটিই হতে পারে ব্যাকটেরিয়া ও ফাংগাসের আবাস্থল।

আপনার শিশুর স্থায়ী দাঁতের গঠন ও বৃদ্ধির জন্য দুধদাঁত গুলোর সুস্থতা জরুরী। দুধদাঁত কিছুদিন পর পড়ে গিয়ে নতুন দাঁত আসবে এরকমটা ভেবে আমরা অনেক সময় বাচ্চার দুধদাঁতের প্রতি যত্নবান হইনা। এমনটা ভাবা উচিত নয়। শিশুর দাঁতের যথাযথ গঠনের জন্য আমরা নিম্নোক্ত বিষয়গুলো মেনে চলতে পারি।

১.শিশুর দাঁত ওঠার আগে থেকেই নরম তুলা না কাপড় দিয়ে মাড়িটি পরিষ্কার করে দিবেন। তাতে ক্যান্ডিডোসিস বা ওরাল থ্রাশ হওয়ার সম্ভবনা থাকেনা।

২. শিশুর দাঁত ওঠার পর থেকে প্রতিদিন দুবার (সকালে ও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে) ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট তুলা বা নরম কাপড়ে লাগিয়ে দাঁত পরিষ্কার করে দিন। যদি সম্ভব হয় শিশুদের উপযোগী নরম ব্রাশ ব্যবহার করতে পারেন। বাজারে বিভিন্ন রঙ বেরং এর ও কার্টুনওয়ালা কিডস টুথব্রাশ কিনতে পাওয়া যায়। আপনার বাচ্চাকে প্রথম থেকে টুথব্রাশে অভ্যস্ত করাতে পারলে ভাল হয়। তা না হলে দেড় দুবছর বয়স পর্যন্ত তুলা বা গজ ব্যবহার করতে পারেন।

৩. প্রতি ছ’মাসে একবার শিশুদের দাঁতের একবার চেক আপ করিয়ে নেয়া ভাল। তাতে যেকোন সমস্যা প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে ও সহজভাবে চিকিৎসা শেষ করা যায়। এর আরেকটা ইতিবাচক দিক হল শিশু যখন কোন আপারেটিভ পদ্ধতি ছাড়া এমনিতেই ডেন্টিস্টের অফিসে আসা যাওয়া করবে তখন তার মন থেকে ডাক্তার, ডেন্টাল চেয়ার ও যন্ত্রপাতি জনিত ভয় দূর হয়ে যাবে। বিদেশে এর একটা প্রচলন থাকলেও আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ এখনো এ ব্যাপারে তেমন সচেতন হয়নি।

৪. যেসব শিশু ফিডারে দুধ বা পানীয় গ্রহণ করে তাদেরকে রাতের বেলা ফিডার খেতে খেতে ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস করানো যাবেনা। এটা একপর্যায়ে দাঁতের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। “নার্সিং বটল ক্যারিজ” বা “বেবি বটল টুথ ডিকে” এরই কুফল। এর ফলে শিশুর সামনের দাঁতগুলো ক্যারিজ আক্রান্ত হয় এবং নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই ভেঙে যায় বা ইনফেকশন দেখা দেয়। ফর্মুলা দুধে বা ফলের রসে মেশানো চিনি মূলত এ ক্ষয় রোগের কারণ।

৫. মিষ্টি জাতীয় খাবার কার না প্রিয়? আর তা যদি হয় চকলেট, চুইংগাম, আইস্ক্রিম, মার্শম্যালো? তাই আপনার শিশুকে এগুলো থেকে পুরোপুরি বিরত না রেখে পরিমানের নির্দিষ্টতা করে দিন ও খাওয়ার পর ভাল করে দাঁত ও মুখ পরিষ্কার করে নিতে বলুন। সবচেয়ে ভাল হয়, সন্ধ্যার পর মিষ্টি জাতীয় খাবার কম খাওয়া বা না খাওয়া। কেননা রাতের বেলা মুখের ভেতর ব্যাকটেরিয়া তুলনামূলক ভাবে বেশী সক্রিয় থাকে।

৬. কোল্ড ড্রিংক্স, বাজারের প্যাকেটজাত চিপ্স, অতিরিক্ত চিনিওয়ালা ক্যান্ডি ইত্যাদি শিশুদের না দেওয়াই ভাল। এগুলো কোন উপকার না করলেও অনেকক্ষেত্রে দাঁত ও মাড়ির জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

৭.শিশুর সার্বিক সুস্থতা ও সঠিক শারিরীক গঠনে সুষম ও টাটকা খাবারের জুড়ি নেই। তাদের প্রতিদিনের খাবারের মেন্যু, পরিমাণ ও খাবারের সময় নির্বাচনে আপনাকে সচেতন হওয়ার বিকল্প আর কোন উপায় নেই।

আমাদের শিশুরা সুস্থ থাকুক, ভাল থাকুক এটাই আমাদের কাম্য। সব শিশুর মুখে থাকুক সুস্থ, নির্মল হাসি। তার জন্য আমাদের, আপনাদের একটু যত্ন একটু সদিচ্ছা আর চেষ্ট থাকলেই হবে। ছবিতে আছেন: আয়ান(৬)

 

রাহাতের বিয়ে

                                              জুয়াইরিয়া জাহরা


বিয়ের উপহারে যারা এখনো কাঁচের প্লেট- পিরিচ উপহার দেন, তাদের আমি চূড়ান্ত অপছন্দ করি!
ব্যাপারটা আমার কাছে কিছুটা অপমানজনকও লাগে। যাবো- খাবো; তাই দিয়ে দাও কিছু একটা, এমন মনে হয়। কিন্তু, রাহাতের বিয়েতে আমি প্লেট- গ্লাস উপহার দিবো, এটা আমি গ্র‍্যাজুয়েশনের শেষ দিনের করা গুরুত্বপূর্ণ ওয়াদা। বলেছিলাম, একটা প্লেট আর একটা গ্লাস হবে আমার পক্ষ থেকে রাহাত দম্পতির জন্য উপহার আর এ উপহার তাদের প্রতিদিন ব্যাবহার করতে হবে।
কিন্তু, এমন হুট করে ওর বিয়েটা যে ঠিক হয়ে যাবে, বুঝতে পারিনি। সবচাইতে বড় বিষয়, ছেলেটা যে মনে করে আমাকে দাওয়াত দিবে, এমনটা আশাও করিনি। দিনাজপুরে আছি, কারো সাথে তেমন যোগাযোগ নেই, খুব কষ্ট করে আসিফ না সাকিব কার থেকে যেন আমার নাম্বার যোগাড় করে ফোন দিয়েছে সকালে। খুব করে বলেছে যেন যাই ওর বিয়েতে।
এখন দুই সপ্তাহের মধ্যে রুপার প্লেট গ্লাস কোথা থেকে বানানো যায় ভাবছি। বাজেটে কুলালে গোল্ড প্লেট করে ফেলবো, দেখি। রাফসান ফিরুক, আজকেই কথা বলতে হবে। ভদ্রলোক এখন আর আমার কর্মকান্ডে তেমন অবাক হন না। তবে রুপার প্লেট গ্লাস বানাতে চাই শুনলে আকাশ থেকে পড়তে পারেন!
আসলে, আজকে কিছুই করতে ইচ্ছে হচ্ছে না। প্রায় ৪/৫ বছর আগের স্মৃতি একটার পর একটা ফ্ল্যাশব্যাক হচ্ছে। রাফসান অফিসের জন্য বের হলে আমি একবার ছাদে যেয়ে গাছগুলো দেখে আসি। ডিমের খোসা-কলার খোসা জমিয়ে ব্লিন্ড করে সার বানিয়েছিলাম গতকাল। আজকেই নতুন গাছগুলোর জন্য মাটি রেডি করতাম। অনেকদিন হয় একুরিয়ামটা পরিষ্কার করা হয় না। আজকে করবো ঠিক করেছিলাম। কিন্তু কোন কাজই হাতে উঠছে না! বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি কতক্ষণ ধরে।
রাহাত আমার ভার্সিটি জীবনের একজন কাছের বন্ধু। বন্ধুর চাইতে বড় কথা ও ছিল আমার একজন প্রিয় মানুষ। যাবতীয় কথা, লেইম থেকে সিরিয়াস, একটা সময় ওর সাথে শেয়ার করেছি। বলতাম, ‘লুঙি খুব ক্ষ্যাত’, বলতাম, ‘ নিজের কলিজাটা পিরিচে তুলে দিতে পারবো, কিন্তু পিড়ি-বেলনে ঘষে ঘষে রুটি বানাতে পারবো না’! ও বলতো, ‘লুঙি যে মেয়ে সহ্য করতে পারবে না, তার কপালে বিয়ে নেই! ‘ আর রুটি ছাড়া সকালে নাকি নাস্তাই হয় না। তর্ক করেছি। বিতর্ক করেছি।

ছেলেটা বড় আবেগী। ওর কথা শুনতাম। একটা বউ থাকবে। খুব সাধাসাধি রকমের বউ। একই গ্লাসে পানি খাবে। একই প্লেটে ভাত মাখাবে। লোকমা তুলে খাইয়ে দিবে। মাথায় একটু লজ্জা লজ্জা ঘোমটা থাকবে। মানুষ যখন একসাথে সুইজারল্যান্ড এ ঘুরতে যাওয়াকে চরম রোমান্টিক মনে করে তখন একজন মানুষ এক প্লেটে ভাত খাওয়ার ব্যাপারটায় এতো প্রেম খুঁজে পাচ্ছে, ভাবতেই অবাক লাগতো! ওর এমন সাদাসিধে – অতি সাধারণ স্বপ্নের গল্প যেন মুখস্থ হয়ে গিয়েছিলো আমার!

একবার ক্লাসের অনেকে মিলে বান্দরবান বেড়াতে গেল। অনেকের মধ্যে রাহাতও ছিলো। ফিরে এলে জিজ্ঞেস করলাম, ‘অনুভূতি কি?’ ও বললো, ‘ একই সাথে প্রবল দুঃখ আর প্রচন্ড আনন্দ। জীবনে একবার কাছের মানুষটাকে নিয়ে বান্দরবান যেতে চাই।’ শুনে খুব অন্যরকম লাগছিলো। মানুষ তার জীবনের অসাধারণ স্মৃতিগুলো ভালোবাসার মানুষের সাথে ভাগ করে নিতে চায়। এতো সাধারণ ছোটখাটো চাওয়া গুলো নিয়েও যে স্বপ্ন দেখা যায়, আমি জানতাম না!

রাহাত একটু বেশীই ভালো ছেলে। ভালোটার হাতে নিশ্চয়ই আরেকটা ভালো মেয়ের হাত পড়বে! যতই সমস্যা হোক আর রাফসান যতই না নিয়ে যাওয়ার ছলচাতুরী খেলুক, আমি রাহাত দম্পতিকে এক পলক দেখার জন্য ঢাকায় উড়ে যাবো! ওদের জন্য আসীমের কাছে প্রার্থনা করবো যাতে মহামহিম তাঁর ভালোবাসার ছায়ার নিচে ওদের জায়গা করে দেন। ওদের জীবন সহজ থেকে সহজতর করে দেন।

 

দীর্ঘশ্বাসই থা‌কে

হাবীবাহ্ নাসরীন


ভল্টে থা‌কেনা স্বর্ণ এবং
চুমুরা থা‌কে না ঠো‌টে,

চুলায় মে‌লে না গ্যা‌সের দেখা দীর্ঘশ্বাসই থা‌কে

‌ভোটার থা‌কে না ভো‌টে!

খ‌নি‌তে থা‌কে না কয়লা, য‌দিও
ময়লা র‌য়ে‌ছে ম‌নে,
মা‌ছেরা থা‌কে না নদী‌তে এবং
গা‌ছেরা থা‌কে না ব‌নে!

ডাক্তার থা‌কে না হাসপাতালে
রাস্তা থা‌কে না খা‌লি,
রডগু‌লো সব বাঁশ হ‌য়ে যায়
‌সিমেন্ট‌ও হয় বা‌লি!

‌খোকন থা‌কে না মা‌য়ের কো‌লে‌তে
আসামী থা‌কে না জে‌লে,
ছা‌ত্রের হা‌তে কলম থা‌কে না-
হাতু‌ড়ির দেখা মে‌লে!

গ‌রি‌বের মধু জমা হয় গি‌য়ে
‌লোভী‌দের মৌচাকে
না থাকার ভি‌ড়ে শুধু বুক চি‌ড়ে
দীর্ঘশ্বাসই থা‌কে!

হাবীবাহ্ নাসরীন
সাংবাদিক :জাগো ২৪।

 

শাহজালাল বিমানবন্দরে বেবি কেয়ার সেবা

নারী সংবাদ


বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে বেবি কেয়ার উদ্বোধন করেছে। এই বেবি কেয়ারে ভ্রমণরত মায়েরা স্বাচ্ছন্দের সাথে তাদের সন্তানের যত্ন নিতে পারবে, ডায়াপার বদলাতে এবং ব্রেষ্টফিডিং করাতে পারবে।

২২শে জুলাই ২০১৮ তারিখে এই সেবাটি উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের মাননীয় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী এ কে এম এম শাজাহান কামাল এমপি। এছাড়াও আরো উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: মোহিবুল হক, বেসামরিক বিমান চলাচল কতৃপক্ষ এর চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম নাইম হাসান এবংএমজিআই (মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্টিজ )এর মাননীয় চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব মোস্তফা কামাল।

 

নুর ই আলিফ হাসানের সাফল্য

বিশেষ সংবাদ


নুর ই আলিফ হাসান, বাংলাদেশের নক্ষত্র জ্বলজ্বল করছে মস্কোর আকাশে। ২০১৮ সালে ‘ALOHA Mental Arithmetic International Competition’ মস্কো তে লেবেল- ৩ তে (সিনিয়র) থেকে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন। বাবা-মা সন্তানকে উদ্বুদ্ধ করেছেন এমন চমৎকার কার‍্যক্রমে অংশগ্রহণ করার জন্য।

মুলত, রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে
‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্র (কংগ্রেস হোল)’ এ ‘ALOHA Mental Arithmetic International Competition ২০১৮’ অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন দেশের ছাত্ররা এই প্রতিযোগিতায় তাদের গতি ও নির্ভুলতা পরীক্ষা করতে অংশগ্রহণ করবে। ALOHA পক্ষ থেকে বাংলাদেশ থেকে ২৫০ জন শিক্ষার্থী এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন এই বছর। এবং ‘নুর ই আলিফ হাসান’ লেবেল- ৩ তে (সিনিয়র) থেকে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন।

নুর ই আলিফ হাসান এর সফলতা আমাদের এ প্রজন্মের শিশু কিশোরদেরকে উৎসাহিত করবে। ALOHA আয়োজক বৃন্দ কে আন্তরিক ধন্যবাদ। পুরো বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নুর ই আলিফ হাসানকে অভিনন্দন এবং প্রাণঢালা শুভেচ্ছা।

অপরাজিতাবিডির পক্ষ থেকেও আন্তরিক অভিনন্দন এবং শুভেচ্ছা।

আন্তর্জাতিক এই প্রতিযোগিতাটি প্রতি বছর সংগঠিত। পূর্ববর্তী বছরে এই প্রতিযোগিতাটি অস্ট্রেলিয়া, চীন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপিনসে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

 

নারীর দায়িত্ববোধ (১ম পর্ব)

রেহনুমা বিনত আনিস


ইংরেজিতে একটি প্রবাদ ও রয়েছে, ‘Courage is not the absence of fear, but rather the assessment that something is more important than fear’.
ভয় বা সাহসের অভাব মানুষের জন্মগত দুর্বলতা। কারণ মানুষ দূরদর্শী নয়। অথচ দূরের বস্তুর প্রতি তার আকাঙ্খা অনিবার। না পাওয়ার আশঙ্কা তাকে বিচলিত করে। হারাবার সম্ভাবনা তাকে আতঙ্কগ্রস্ত করে। পেয়েও হারাবার ভীতি তাকে তাকে ত্রস্ত করে তোলে।
কিন্তু কোন বস্তুকে মানুষ যখন নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, বন্ধুবান্ধব কিংবা সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করে; এই লক্ষ্যবস্তু অর্জনকে নিজের দায়িত্ব মনে করে; এই দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেয় – তখন নারী পুরুষ নির্বিশেষে মানুষ এই দুর্বলতাকে অতিক্রম করতে পারে।
জীবনের একমাত্র সত্য পরিবর্তন। পরিবর্তন থেমে গেলেই বাসা বাঁধে জড়া ব্যাধি অসত্য। তাই আমাদের সদাসর্বদা সতর্ক দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন আমাদের চারপাশের পরিবেশ, পরিস্থিতি, অবস্থা কাঙ্খিত মানে আছে কি’না। যদি তা না থাকে তবে তাকে কাঙ্খিত মানে পৌঁছনোর দায়িত্ব আমাদের, সে হোক নারী বা পুরুষ।

আমাদের আদি পিতা-মাতা জান্নাতের নিরাপদ আবাস থেকে বহিষ্কৃত হয়ে আকুলভাবে তাঁদের প্রভূর কাছে আবেদন করেন, ‘হে আমাদের পালনকর্তা আমরা নিজেদের প্রতি জুলম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করেন, তবে আমরা অবশ্যই অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যাব’ (সুরা আরাফঃ আয়াত ২৩)। এর মাধ্যমে তাঁরা নিজেদের কৃতকর্মের দায়ভার গ্রহণ করে নেন – অস্বীকার করেননি তাঁরা ভুল করেছেন, অভিযোগ করেননি এই ভার অন্য কারো, অনুরোধ করেননি তাঁদের পরীক্ষা থেকে নিষ্কৃতি দেয়া হোক। বরং এই পৃথিবীতে নির্দিষ্ট সময় অবস্থানকালে নিজেদের কৃতকর্মের সংশোধনে আন্তরিকতা ও পরিশ্রমের স্বাক্ষর রেখে তাঁরা স্বীয় হৃত মর্যাদা পুণরুদ্ধারের কঠোর সঙ্কল্প গ্রহণ করেন।
তাঁদের না ছিলো শাপদসঙ্কুল নির্জন বিরান প্রান্তরে অবস্থান করার অভিজ্ঞতা, না ছিলো এই প্রতিকুল পরিবেশের সাথে যুদ্ধ করার পরিপক্কতা, আর না ছিলো চিরশত্রু ইবলিসের কাছ থেকে আত্মরক্ষা করার বিজ্ঞতা। সহজেই তাঁরা ভুল করলেন। হারালেন দুই সন্তানকে – একজনকে মৃত্যুর কাছে, আরেকজনকে ইবলিসের কাছে। কিন্তু পরবর্তী প্রজন্মকে সঠিক পথ প্রদর্শনের দায়িত্ববোধ থেকে তাঁরা গড়ে তুললেন বাকী সন্তানদের, তাদের পথপ্রদর্শক হিসেবে রেখে গেলেন নাবী শিশ (আ)কে।

এই একই দায়িত্ববোধ থেকে ফির’আউনের সকল অত্যাচারের সামনে অবিচল ছিলেন আসিয়া (আ)। সৃষ্টিগতভাবে একজন অবলা নারী হওয়া, বানী ইসরাঈল বংশোদ্ভুত হিসেবে তাঁর সামাজিক অবস্থানগত দুর্বলতা, ফির’আউনের পরিবারে বিবাহক্রমে শত্রুপরিবেষ্টিত পরিমন্ডল – বুদ্ধি এবং ধৈর্য্যের সাথে এই সকল প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে তিনি মূসা (আ)কে গড়ে তোলেন সন্তানতূল্য স্নেহমায়ামমতায় যেন এই যুবক একদিন তাঁর সম্প্রদায়কে পথ দেখাতে পারে, যে অজ্ঞতার আবর্তে তারা নিক্ষিপ্ত হয়েছিলো তা থেকে তাদের মুক্তি দিতে পারে। কোন বাঁধাই তাঁকে তাঁর সঙ্কল্প থেকে টলাতে পারেনি। কারণ তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে ভালোবাসতেন, তাদের দুরবস্থার জন্য করুণা বোধ করতেন, তাদের অবস্থানের উন্নয়ন নিয়ে ভাবতেন। সাহস দিয়ে যে বিঘ্ন অতিক্রম করা যায়না, দায়িত্ববোধ দিয়ে তা থেকে উত্তরণ করা যায়। তিনি এই পথে শাহীদ হয়ে যান কিন্তু তাঁর গড়ে তোলা নাবী মূসা (আ) তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেন।

মারইয়াম (আ)কে যখন বলা হোল, ‘হে মারইয়াম!, আল্লাহ তোমাকে পছন্দ করেছেন এবং তোমাকে পবিত্র পরিচ্ছন্ন করে দিয়েছেন। আর তোমাকে বিশ্ব নারী সমাজের উর্ধ্বে মনোনীত করেছেন। হে মারইয়াম! তোমার পালনকর্তার উপাসনা কর এবং রুকুকারীদের সাথে সেজদা ও রুকু কর (সুরা আলে ইমরানঃ আয়াত ৪২-৪৩) – বুদ্ধিমতি এবং নিষ্ঠাবতী মারইয়াম (আ) বুঝতে পারেন এই মর্যাদার বিনিময়ে তাঁকে কোন এক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়া হবে। পরবর্তীতে যখন তাঁকে নির্দেশ দেয়া হোল এই দায়িত্ব এমন এক নাবীকে সন্তান হিসেবে ধারণ এবং প্রতিপালন করার যার জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবটুকুই আলৌকিক – তিনি ভড়কে যান। একদিকে মূর্খতার আবর্তে নিমজ্জিত সমাজে একক মাতৃত্ব নিয়ে সামাজিক কলঙ্কের ভয়, তার ওপর কিভাবে একাকী সন্তান ধারণ এবং প্রতিপালন করবেন সেই শঙ্কা। কিন্তু নির্দেশ প্রাপ্তির পর তিনি সব চিন্তা ঝেড়ে ফেলে কেবল দায়িত্বের কথাটিই মাথায় রাখেন, সকল সম্ভাব্য সমস্যা তিনি ধৈর্য্যের সাথে মোকাবেলা করেন এবং আমাদের উপহার দেন ঈসা (আ) এর মত একজন অসাধারন নাবী যার মত কেউ আগেও আসেনি, আসবেও না আর কোনদিন।
রাসূল (সা)কে নবুয়তের দায়িত্বপালনে সহযোগিতা করার জন্য আল্লাহ খাদিজা (রা)র মত একজন সহধর্মীনি মিলিয়ে দেন যিনি রাসূল (সা)কে নবুয়তপ্রাপ্তির আগে থেকেই তাঁর প্রভূর কাছাকাছি আসার সুযোগ করে দেয়ার জন্য পরিবারের অভিভাবকত্বের স্বাভাবিক দায়িত্বগুলো থেকে অব্যাহতি দেন, এবং নবুয়তের পরে যখন তিনি নিকটাত্মীয়দের কাছ থেকেই বিরোধিতার সম্মুখীন হতে থাকেন তখন সাহস দিয়ে সাহচর্য দিয়ে তাঁর কন্টকাকীর্ণ পথকে যথাসম্ভব ছায়াময় করে তোলার প্রয়াস নেন। তাঁর জীবদ্দশায় একসময় মক্কাবাসীদের প্রিয়পাত্র রাসূল (সা) পথেঘাটে লাঞ্ছিত হোন, খাদিজা (রা)র পূর্বতন বিবাহপ্রসূত সন্তান হারিস রাসূল (সা)কে রক্ষা করতে গিয়ে শাহীদ হয়ে যান, মুসলিমরা দীর্ঘ তিন বছর শিয়াবে আবুতালিবে বন্দী অবস্থায় কাটান। সে সময়ও খাদিজা (রা) বিনাবাক্যব্যায়ে পাশে থেকেছেন। শেষ মূহূর্ত পর্যন্ত তাঁর সামর্থ্যের মাঝে সর্বপ্রকার যোগান দিয়ে গিয়েছেন ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। তিনি জানতেন একটি পথকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কিছু ত্যাগের প্রয়োজন হয়। একটি দালান গড়ে তুলতে গেলে কিছু ইট মাটির নীচে চিরকালের মত কবর দিয়ে দিতে হয়। কিন্তু এই দায়িত্ব যারা নিয়ে নেন তাঁরা ভয় পেয়ে পিছিয়ে আসার সুযোগ থাকেনা। সেজন্যই রাসূল (সা) খাদিজা (রা)র মৃত্যুর দশ বছর পরেও দিনে একশ বার তাঁকে স্মরণ করতেন, ‘আল্লাহ তাঁর চেয়ে উত্তম নারী আমাকে দান করেননি। মানুষ যখন আমাকে মানতে অস্বীকার করেছে, তখন সে আমার প্রতি ঈমান এনেছে। মানুষ যখন আমাকে বঞ্চিত করেছে, তখন সে তার সম্পদে আমাকে অংশীদার করেছে। আল্লাহ তার সন্তান আমাকে দান করেছেন এবং অন্যদের সন্তান থেকে বঞ্চিত করেছেন’।
এই আদর্শের ধারা অব্যাহত রেখেছিলেন মহিলা সাহাবীরা। তাঁরা জ্ঞানার্জন ও বিতরণ, সাহিত্য, রাজনীতি, চিকিৎসা, ব্যাবসাবাণিজ্য, চাষাবাদ, যুদ্ধ কোন ক্ষেত্রেই পিছিয়ে ছিলেন না। কিন্তু তাঁদের সবচেয়ে বড় গুণ ছিলো জ্ঞানের আহরণ, চর্চা এবং প্রচারে নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতনতা।
কিন্তু এই সচেতনতা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। বর্তমান যুগের নারীসমাজ অবচেতনেও এমন এক সমাজের হাতে বন্দী যা তাকে এক শরীরসর্বস্ব প্রানী হিসেবে প্রতিভাত করতে চায়। অধিকাংশ নারীর এই আবর্ত থেকে সরে আসার ক্ষমতা লোপ পেয়েছে কারণ আমরা সেই জ্ঞানের চর্চা থেকে সরে এসেছি যা আমাদের নিজেদের মর্যাদা এবং অবস্থানের ভিত তৈরী করে দেয়। আর যে অল্পসংখ্যক নারী আন্তরিকভাবে জ্ঞানার্জনের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন তাঁদের মাঝেও জ্ঞানার্জনের সঠিক উদ্দেশ্য সম্পর্কে ধারণার ঘাটতি দেখা যায়। জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্য কেবল এক টুকরো কাগজ অর্জন করা নয়, শুধুমাত্র জীবনোপকরণ উপার্জনের জন্য জ্ঞানার্জনে জ্ঞানের আসল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হয়। এই পদ্ধতি জ্ঞানার্জনকে বড় সংকীর্ণ, অপরিপূর্ণ করে ফেলে। জ্ঞান তো সেই উপাদান যা মানুষের জীবনকে আলোকিত করে, অন্ধকারকে বিদূরিত করে, মানুষের চিন্তার সীমারেখাকে প্রসারিত করে এবং মানুষকে কুসংস্কার ও সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দেয়। শুধুমাত্র এজন্যই জ্ঞানের পথে চলা উচিত! বাকী সবটুকুই উপজাত (byproduct)।

আমাদের নারীসমাজ প্রায়ই নিজেদের অবহেলিত অবস্থা এবং নারীদের অবমাননার জন্য শত শত বছর যাবত ইসলামবিচ্যূত পুরুষসমাজের দ্বারা শাসিত এবং শোষিত হওয়াকে দায়ী করে থাকেন। আমার প্রশ্ন, এই পুরুষরা তো নারীদের হাতেই গড়ে উঠেছে। সুতরাং এই প্রজাতির পুরুষদের জন্ম তাদের মায়েদের ব্যার্থতার সাক্ষ্য বহন করে।

চলবে….

 

তাহেরা!

ফাতেমা শাহরিন


তাহেরা রাহমান। ২৭ বছরের একজন মুসলিম আমেরিকান নারী। যিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন টিভি রিপোর্টার হওয়ার।পথে অনেক বাধাও ছিল। অজস্র বাধার কথা ভেবেই তিনি পথে নামেন। কিন্তু আজ তাহেরা রাহমান তার স্বপ্নের পথে চলমান। বর্তমানে তিনি “রক আইল্যান্ডের WHFP” টিভি অন এয়ারের রিপোর্টার।

ক্যামেরার সামনে কাজ করা সহজ নয়। তাহেরার ক্যামেরার সামনে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে বড় বাধ হয়ে দাঁড়িয়েছিল এক টুকরো কাপড় ‘হিজাব’।

ছোট বেলা থেকেই অজস্র প্রতিকূল পরিস্থিতির স্বীকার হন তাহেরা,তার মুল কারণ তিনি হিজাব পড়তেন।

সে বলেন, ‘আমার প্রযোজক আমাকে বলছিলেন, যদি তুমি তোমার স্বপ্নকে সত্যে পরিনত করতে চাও, তারা অর্থাৎ সকলে তোমাকে রিপোর্টার হিসাবে নিতে চাইবে হয়ত কিন্তু তারা তোমার হিজাব খুলে ফেলতে বলবে!
-আমি বলেছিলাম, ‘না’।
আমার এ কথা তিনি পছন্দ করেছিলেন’।

তাহেরা কলেজের গ্রাজুয়েশনের পর রেডিও স্টেশনে যোগ দেন। তারপর রেডিও থেকে টেলিভিশনে। সেখানে তিনি প্রথমে ক্যামেরা পিছনে কাজ করেন।(দৃশ্যের পিছনে) কিন্তু ক্যামেরার সামনে কাজ করার ব্যাপারে (on air position) তিনি প্রত্যয়ী ছিলেন।

তিনি বলেন, ‘আমি ভাবতাম: আমি যদি কোন কিছু করতে চাই, তাহলে তা করব। আমি সাংবাদিক হতে চাই এবং আমি হিজাব পরেই সাংবাদিকতা করতে চাই। যা আগে কখন কোন আমেরিকান রা দেখেননি। আমেরিকান রা হিজাব পরা কোন নারী সাংবাদিক দেখেনি কিন্তু ভবিষ্যতে আমাকে দেখবে’।

তাহেরার স্বপ্ন প্রায়শ ভেঙ্গে যাচ্ছিল, এক সময় সে তার এই স্বপ্ন ত্যাগ করতে চেয়েছিল কিন্তু সেইসময় তার মা তাকে তার স্বপ্ন পুরনের ব্যাপারে উৎসাহ দেন। পাশে থাকেন। তার মা তাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেন এবং আহ্বান করেন, ‘তুমিও পারবে’। অবশেষে তাহেরা তার প্রথম টিভি রিপোর্টিং কাজ পায় ‘Illions’ নামক প্রতিষ্ঠানে। ‘USA’ তে প্রথম হিজাব পরিহিতা নারী রিপোর্টার হিসাবে তাকে স্বীকৃতি দেন।

তাহেরা বলেন, ‘আমার টিভি স্টেশনের সবাই খুবই সাপোর্টিভ এবং ওনারা আমাকে নিয়ে একটা story করতে চেয়েছিল। আমি খুব খুশি হই ‘wbhf’ এর মত ‘corporate TV’ আমাকে নিয়ে তার সম্প্রচার করতে চায়’।

তাহেরা আরও বলেন, ‘সত্যি, আমি আমার faith নিয়েই বেড়ে উঠেছি, এটা শুধুই faith যা আমার মোরালিটি র মত, যা আমি মেনে চলি। আমেরিকার প্রতিটি লোক কঠিন পরিশ্রমী। আর যারা দৃঢ়চেতা তাদের আমেরিকায় স্বপ্ন পূরণে রাস্তায় কেউ বাধা হয়ে দাড়াতে পারেনা। আমার ভাবনা ছিল কেন মুসলিমরা দ্বন্দের মধ্যে জড়িয়ে আছে, এটা তাদের থাকা উচিত নয়। আমি লম্বা সময় কাজে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছি , এটা আমাকে পরিশোধিত করেছে। কিন্তু দিন শেষে আমার পোষাকই, ‘আমার মুল্যবোধ ও বিশ্বাসের প্রতীক হয়ে দাড়িয়েছে’।’

তাহেরাকে প্রশ্ন করা হয়েছে, তোমাকে যখন ব্যঙ্গ (trolled) করা হয় তখন তোমার কেমন অনুভূতি হয়/হত?
উত্তরে তাহেরা বলেন, ‘আসলে আমি পজিটিভ ফিডব্যাক পাই, আমি কখনো এ ব্যাপারে খুব বেশি কিছু বলি না। বিদ্রুপ গুলো আমি ডাস্টিবিন ছুড়ে ফেলি। আমি ভাবি আমরা যে, আমেরিকাতে বাস করি সেখানে নানা মতের নানা দৃষ্টিকোণের আমেরিকানসহ নানান দেশের মানুষের বাস। সুতরাং এ ধরনের বাক্যবাণ আসতেই পারে এবং এখানে ভিন্নতা থাকবেই, থাকবে বৈচিত্র্যতা’।

তাহেরার মাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যখন তাহেরা ‘আশাহত’ হয়ে পড়েন তখন আপনি কিভাবে তাকে সাহস যোগাতেন?
মা বলেন, ‘আমি জানি সে অনেক কঠিন পরিশ্রম করে। সে জানে তার লক্ষ্য কি এবং তার লক্ষ্যে তাকেই পৌছাতে হবে। প্রত্যেক পিতামাতার জন্য অবশ্যকরণীয় যে, সন্তানকে সাপোর্ট করা এবং একটা পজিটিভ পরিবেশ তৈরি করা এবং তাদেরকে তুলে ধরতে সহযোগিতা করা। আমি তার প্রয়োজনগুলো জানতাম এবং সে অনুযায়ী তাকে সহায়তা দেবার চেষ্টা করতাম’। সুত্র: ইন্টারনেট।

 

আলো ও আলেয়ার গল্প


এম এস আবু নাছের


শাহবাগ সিগন্যাল পার হতেই কিছু বালক পড়িমরি করে উঠল বাসে। কারো পড়নে পাতলা জরাজীর্ণ জামা, কারও বা স্যান্ড্রো গেঞ্জি; কেউ লুঙ্গি পড়া আর কেউবা সস্তায় পাওয়া কোন প্যান্ট। চেহারার মলিনতা আর গালের ভগ্ন দশা আপনাকে জানিয়ে দিবে এরা এই ঢাকা শহরের পথশিশু। কার্টুনিস্ট রফিকুন্নবী যাদের নাম দিয়েছিলেন টোকাই। সারাদিন রাস্তায় পাওয়া বোতল, প্যাকেট কিংবা খাবার কুড়িয়ে জীবিকার সন্ধানে ব্যস্ত থাকার কারনেই হয়ত তাদের নাম হয়েছে টোকাই। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এদের ডাকতেন পথকলি বলে। হ্যাঁ, সত্যিই এরা পথকলি। পথের ধারে অজানা কোন পরিচয়ে হয়ত তাদের জন্ম; কিংবা দারিদ্রের নির্মম কষাঘাত আর ভাগ্যের পরিহাসে নাম পরিচয় হারিয়ে তাদের আজ পরিচয় পথকলি। হয় পথে ফোটে, নয় পথে ঝরে পরে।

বেশ কয়েকজন উঠার পর থেকেই বাসে নিজেদের মধ্যে নানারকম কথা বলছে, হাসাহাসি করছে আর আগামিকাল আবার কখন আসবে সেই কথাও জানান দিচ্ছে। আশেপাশের কিছু লোক এরই মাঝে তাদের নিয়ে ব্যঙ্গ করে চলেছে। যেন দিনান্তে বাড়ি ফেরার সময় একটু বিনোদিত হচ্ছে। এদের মধ্যে একজন চুপচাপ এক পাশে সিটে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তের-চৌদ্দ বছর বয়স হবে। বেশ গোলগাল চেহারা, ঘোর কৃষ্ণবর্ণ। টানা চোখ দুটোতে যেন অদৃশ্য কোন মায়া লুকিয়ে আছে। সবাইকথা বলছে, কন্ট্রাক্টরের সাথে ভাড়া নিয়ে চিল্লাপাল্লা করছে আর সে একরকম নির্বাক। কন্ট্রাক্টর ভাড়া চাইতেই পকেট হাতড়িয়ে দুই টাকা বের করে দিল।

– কিরে, কনে যাবি?
– কমলাপুর।
– দুই টাকা দিছস ক্যান। ভাড়া দে। নাইলে নাইম্যা যা। উঠার সময় কইছি না, পুরা ভাড়া দেওন লাগবো।
কন্ট্রাক্টরের তর্জন গর্জনেও তার তেমন ভাবান্তর নেই। আস্তে করে বলল-

– আর টাকা নাই।
– টাকা নাই? না, শালা, ঘাড় ধরে নামায়া দিমু এখনি। বের কর টাকা।
– নাই, সত্যি কইতাছি টাকা নাই।

সিটে বসে চুপচাপ দেখছিল শফিক। সে তাকিয়ে আছে ছেলেটির দিকে। এত কড়া ভাবে বলার পরেও ছেলেটির মাঝে কোন ভাবান্তর নেই। কেমন উদাস ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, চোখদুটো যেন কিছু কথা বলতে চাইছে কিন্তু কে শুনবে তার কথা? আর একটু হলে কেঁদে দিবে হয়ত। হাতে ছোট্ট এক পুটলি ধরে আছে। যা মনে হচ্ছে সত্যিই ওর কাছে কোন টাকা নেই। মানুষ তার মস্তিষ্ক নামক যন্ত্রের সাহায্য নিয়ে কখনও মুখে আসা সত্যটি লুকিয়ে মিথ্যা বলতে পারে, কিন্তু একই সাথে শরীরের অন্যান্য অংগগুলো থেকে প্রকাশিত অভিব্যক্তি লুকোতে পারেনা। তার চোখ, তার কন্ঠের দৃঢতা, তার স্থিরতা সবকিছু মিলিয়ে সে যে মিথ্যা বলছেনা এ ব্যাপারে নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। আশেপাশের কয়েকজনের ভাড়া উঠিয়ে ফেরার সময় আবারও কন্ট্রাক্টর তার কাছে ভাড়া চাইল-

– কী রে, কী হইল? দে আরও তিন টাকা, বের কর।

এবারে সে সত্যিই নিরূপায়। কিছুই বলতে পারছেনা। রাতেরবেলা রাস্তায় নামিয়ে দিলে ছোট মানুষ যেতেও পারবেনা হয়ত। চোখেমুখে এক ভয় আর শঙ্কা দেখে শফিক ভাড়া মিটিয়ে ছেলেটিকে কাছে ডেকে নিল।

– তোমার নাম কি?
– আলো।
– কোথায় থাক?
– কমলাপুর বস্তিতে।
– কই গিয়েছিলে?
– শাহবাগ।
– কাজ কর?
– হুম
– কি কাজ?
– ফুল বেচি।
– কখন যাও, কোথায় পাও ফুল?
– সকালে যাই। আমাগো মহাজন আছে। প্রতিদিন অনেক ফুল আসে। পিছনে ঘুরে একে একে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে দিতে বলল- আমি, ভুট্টু, কামাল, আরিফ, জুঁই, হগগলেই ফুল বেচি। একেক দিন একেক জায়গায়। মহাজন ভাগ করে দেয়। যে বেশি ফুল বেচবার পারে হে বেশি ট্যাহা পায়। একশ গোলাপে দশ ট্যাহা, রজনীগন্ধার একশ ডাঁন্টা দশ ট্যাহা অন্য ফুলের থোকা বেচলে দুই ট্যাহা দেয়।
– আজ কত টাকা পেয়েছ?
– ষাট ট্যাহা।
– তাহলে যে বললে ভাড়া নাই।
– হ, সত্যিই ভাড়া নাই স্যার। ষাট ট্যাহার মধ্যে এক সের চাল লইছি, আর ছোট বোনের লাইগ্যা একটা জিলাপি, আর ঔষুধ।
– বোন আছে তোমার?
– হুম।
– কত বড়?
– এই এত বড়-

হাত তুলে ওর কোমরের কাছে পর্যন্ত দেখিয়ে দিল। যা বুঝলাম চার-পাঁচ বছর হবে বড়জোর।

– কে কে আছে তোমার বাড়িতে? কি হয়েছে তোমার বোনের।
– বাড়িত কেউ নাই। আমি আর আমার বোন থাকি।
– তোমার মা-বাবা?
– মা মইরা গেছে ছোট থাকতেই, বোনডা হওনের সময়। কপালপুড়ীডারে আমার কাছে থুইয়া মা চইল্যা গ্যাছে। আর বাপজান, সেই যে মর্জিনা চাচীর কাছে আমাগো থুইয়া গেছে আর ফিরেও আসেনি।

কথা বলতে বলতে কন্ঠ ভারী হয়ে এসেছে আলোর, মাথা হেলে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।

– তোমার বোনের নাম কী? কার কাছে রেখে এসেছো?
– বোনের নাম আলেয়া। সকালে আসার সময় মর্জিনা চাচীর কাছে থুইয়া আসি। রাত্তিরে যায়ে আমার সাথে থাকে। সাতদিন থ্যাইকা জ্বর হইছে। টাকা নেই, চাউল কিনমু না ঔষুধ? দোকান থাইক্যা কয়ডা বড়ি আইনা দিছিলাম কিন্তু খাইবার পারেনা। ভাল ঔষুধ কিনবারও পারিনাই। গরীবের আবার জ্বর কীসের? এমনিই ভাল হইয়া যাইব। মর্জিনা চাচী ভালমত তেল ডইল্যা দিলে জ্বর পালায় যাইব। ছোটবেলায় জ্বর হলে মা তেল ডইল্যা, মাথায় একটু ঘইষা দিত। আর কইত, বাজান তাড়াতাড়ি ঘুমায় যা। সকালে উঠে আর জ্বর থাকতনা। কিন্তু আলোর জ্বর ভাল হইতাছেনা। কয়দিন কিছুই খায়না। আজ তাই ভাল ঔষুধ লইছি।

– কাল রাইতে এক থাল ভাত আর ডাল ধার নিছিলাম মর্জিনা চাচীর কাছে।তাও খায় নাই। একবার জিলাপি খাইতে চাইছে। কন স্যার,কোত্থেকে দিমু জিলাপি? ভাতই হয়না আর মুখপুড়ী জিলাপি খাইবার চায়। কথাগুলো বলতে বলতে হঠাত আলোর মুখ শুকিয়ে গেল যেন আড়ষ্ঠ হয়ে এল। চোখের সামনে গতরাতের ঘটনা ভেসে উঠলো-

– আলেয়াকে বড়ি খাওয়ানোর জন্য আলো জোর করছে। আর আলেয়া বারবার বলছে-“ও ভাই, বড়ি খুব তিতা রে, বমি হইবো খাইলে। আমি খাইবার পারুম না, খুব তিতা লাগে ভাই। আমারে মিষ্টি আইনা দিবি? গুঁড় হলেও থেঁতলা করে পানি মিশায়ে খাইয়া লইমু। দে, না ভাই একটু মিষ্টি আইনা।

– মিষ্টি কই পামু? বড়ি ডা খাইয়া ল। জিদ করিস
– ও ভাই, আমার না জিলাপি খাইবার মন চাইতাছে। আজকা বিকালবেলা করিম চাচা মেলাগুলা জিলাপি আনছিল। সাথে সাথে ও বাড়ি পর্যন্ত যাইয়া ঘুইরা আইছি।

এমনিতে হাঁড়িতে চাউল নাই। রাতের ভাতটুকু চেয়ে এনেছে মর্জিনা চাচীর কাছে থেকে। নিজে অভূক্ত থেকে বোনের মুখে একটু খাবার তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এর মধ্যে আবার মিষ্টি খাবার আবদার! সারাদিনের সকল ক্লান্তি, নিজের অক্ষমতা আর আক্ষেপ সব গিয়ে পড়ল আলেয়ার উপরে। সজোরে এক চড় বসিয়ে দিল গালে।

– মুখপুড়ী তুই মরিস না ক্যান। হওনের সময় মা’রে মাইরা ফেলাইছিস। তুই ও মায়ের সাথে চইলা যাইবার পারস নাই? এখন আমার কইলজা পোড়াইতে তোর শান্তি? কাল সকালেই তোরে ট্রেনে করে অনেক দূরে থুইয়া আইমু। আর বেশি বায়না ধরলে জ্যান্ত মাইরা ফ্যালামু।

মা মরা মেয়ে আলেয়া। জন্মের পর থেকে এই ভাইটিই তার বাপ,মা, ভাই সব। হঠাত ভাইয়ের এমন আচরণে সে এক্কেবারে চুপসে গেল। ভয়ে ভয়ে পানি আর বড়ি খেয়ে শুয়ে পড়ল। রাতের মধ্যে প্রচন্ড জ্বরে আলেয়া মাঝে মাঝে কেঁপে কেঁপে উঠছে। মধ্যরাতে আলো একবার ঘুম থেকে জেগে আলেয়ার গায়ে ছেঁড়া কাঁথা তুলে দিল। কিন্তু জ্বরের প্রচন্ডতায় যে কাঁপুনি তা এই পাতলা কাঁথায় কিছুই হচ্ছেনা।

সকালে আলেয়াকে ঘুমিয়ে রেখেই আলো আজ বেড়িয়ে এসেছে কাজে। বিগত ছয় সাত বছরে আলেয়াকে অনেকবারই বকাঝকা করেছে, কখনও দুই চার টা চড় থাপ্পরও দিয়েছে। কিন্তু গতকাল আলেয়াকে মারার পর থেকে আলোর মনে তা খুব পীড়া দিচ্ছে। বড় ভাই হিসেবে শাষন সে করতেই পারে। কিন্তু গতকাল কি শাষন ছিল? আলেয়ার ত কোন ভুল ছিলনা।ছোট মানুষ কিছু খেতে চাইতেই পারে। কার কাছেই বা চাইবে? ভাই ছাড়া। না শাষন নয় বরং আলো তার নিজের অযোগ্যতা, অক্ষমতা আর ছোট বোনের আবদার পূরনের ভারসাম্য রক্ষায় ব্যর্থ হয়েই সকল আক্রোশ গিয়ে পড়েছে আলেয়ার উপরে।

গুলিস্তান মোড়ে বাস থেমে আছে অনেকক্ষন ধরে। ট্রাফিক সিগন্যালে সবুজ বাতি জ্বলা মাত্রই গাড়ি সামনের দিকে টান দিল। অন্যমনষ্ক থাকার কারনে স্থিতি জড়তার প্রভাবে আলো প্রায় পড়েই যাচ্ছিল। শফিক তার হাত ধরে, আটকালো।

– আলো, কী ব্যাপার একবারে চুপ হয়ে গেলে?

শফিকের ডাকে মাথাটা একটু উপরে তুলল। বাসের হালকা আলোতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ঐ মায়াবী কালো চোখের নীচ দিয়ে শীর্ণ কোন নদীর ধারা বয়ে চলেছে সবার অলক্ষ্যে।

– তোমার বোনের জন্য কী ঔষুধ নিলে?
– আলেয়া বড়ি খেতে পারেনাত, তিতা লাগে তাই দোকানে বইলা একটা মিষ্টি সিরাপ লইছি। আইজকা বোন ঔষুধ খাইতে আর কষ্ট পাইবনা। কাল জিলাপি খাইতে চাইছিল, তাই দশ টাকা দিয়া একটা জিলাপিও লইছি।

কথায় কথায় বাস চলে এল কমলাপুর। হেল্পারের ডাকে উঠে দাঁড়ালো শফিক, পিছে পিছে আলো ও তার বন্ধুরা। বাস থেকে নেমে শফিক সবাইকে ডেকে নিয়ে গেল সামনের মিষ্টির দোকানে। দোকানীকে বলে দিল সবাইকে একটা সন্দেশ আর কালোজাম দিতে। আর কিছু সন্দেশ ও কালোজাম প্যাকেট করে দিতে। দোকান থেকে বের হবার সময় শফিক মিষ্টির প্যাকেট আলোর হাতে দিয়ে দিল।

-আলো, এইগুলো তোমার। তুমি আর আলেয়া মজা করে খেও।
– স্যার, এইগুলা সব আমার?
– হ্যাঁ, সব তোমার আর আলেয়ার জন্য।

মলিন মুখখানি মূহুর্তেই টিউব লাইটের মত জ্বলে উঠলো, ঠোঁট দুটো প্রসারিত হল দুপাশে। কৃষ্ণকায় চেহারার মাঝে সাদা দাঁতগুলো যেন শাপলা শালুকের ন্যয় সুন্দর দেখাচ্ছে। যেন এই চেহারা, এই হাসি আচ্ছন্ন করতে পারে দুনিয়ার সবাইকে, মোহাবিষ্ট করতে পারে অন্তরকে, গলাতে পারে পাষান। পকেট থেকে ওয়ালেট বের করে আলোর হাতে ২০ টাকার একটা নোট ধরিয়ে দিল।

-আলো, যাও। সবাই সাবধানে চলে যেও। বলে সবাইকে বিদায় জানালো শফিক।

দ্রুতলয়ে বাড়ির দিকে এগোচ্ছে আলো। অজানা কোন এক উচ্ছাস কাজ করছে তার মধ্যে। সারাদিন মনের মধ্যে যত খেদ ছিল, শফিকের সাথে কিছুক্ষণের আলাপে তা উবে গিয়েছে। আজ তার কাছে রাতের খাবার চাউল আছে, অসুস্থ বোনের জন্য ঔষুধ, জিলাপি, মিষ্টি; আর কী চাই! সে জগতের সবচেয়ে সুখী মানুষ, সুখী ভাই। অদূরে মিলিয়ে যাচ্ছে আলো আর তার সঙ্গীরা। শফিক দূর থেকে দেখছে। কী সেলুকাস! সারাজীবন এই পথশিশু আর তাদের জীবনগাঁথা থাকে সোডিয়াম বাল্বের আবছা আলোর মতই আঁধারে। উদ্ভাসিত আলোয় ঝলমলে দুনিয়ার চেহারা তাদের দেখা হয়না কখনই।

দূর থেকে ছোট্ট এক কামরার বাড়ি আলো ও আলেয়ার। আলোর পা আরো দ্রুত চলছে। আলেয়াকে গিয়ে মিষ্টি সিরাপ দিবে, কাছে ডেকে আদর করে বলবে- “তোকে আর বড়ি খাইতে হইবেনা বোন”

মিষ্টি আর জিলাপি লুকিয়ে রেখে আলেয়াকে চোখ বন্ধ করতে বলে হাতে দিবে। এসব ভাবতে ভাবতে বাড়ির একদম কাছে চলে আসল আলো। ভিতর থেকে কিছু মানুষের হালকা আওয়াজ ভেসে আসছে। আলো দ্রুত ঘরে প্রবেশ করতেই মর্জিনা চাচী বলে উঠলো-

-এতক্ষনে তোর সময় হল আসার? সকাল থাইকা মাইয়াডা ভাই ভাইকইরা মুখে ফ্যনা তুইলা ফ্যালাইলো। জ্বর একবার আসে তো আবার যায়। আয় আয়, তাড়াতাড়িকাছে আইয়া বস।

হাতের পুটলি, মিষ্টির প্যাকেট বিছানার পাশে রেখে হাঁটু গেঁড়ে বসলো আলো।

-আলে, এই আলে। বোন! কী হইছে রে? জ্বর কমেনি? আমি মিষ্টি সিরাপ লইয়া আইছি বোন। ভাল হইয়া যাইব।

ভাইয়ের গলা শুনতে পেয়ে আলেয়া চোখ মেলে তাকালো। একটু হেসে হাত বাড়িয়ে দিল ভাইয়ের দিকে। আলো বোনকে কোলে তুলে নিল। গালে, মুখে, কপালে চুমো দিয়ে যেন সারাদিনের মনের অশান্তি কিছুটা হলেও মিটিয়ে নিল। কোলের মাঝে আলেয়াকে রেখেই আলো মর্জিনা চাচীকে চাউলের পুটলি এগিয়ে দিয়ে রাতের জন্য আলু সেদ্ধ ভাত একটু রান্না করে দিতে বলল। আর মিষ্টি, জিলাপি বের করে আলোকে দেখিয়ে বল, দ্যাখ বোন তোর জন্য কত্ত মিষ্টি লইয়া আইছি, জিলাপিও আছে, দ্যাখ।

আলেয়া একটু হেসে জিলাপি খেতে চাইলে আলো জিলাপি নিয়ে তার মুখের কাছে ধরল। আলেয়া তার হাত থেকে জিলাপি নিয়ে ভাইয়ের মুখের দিকে নিয়ে গেল। কয়দিন তেমন কিছু খায়নি। তার উপরে জ্বরের প্রকোপ। হাত উঠাতেও বেশ কষ্ট হচ্ছে আলেয়ার। আলো বোনের হাত ধরে জিলাপি মুখের কাছে এনে এক কামড় খেয়ে আলোর হাত নামিয়ে আনলো। আলেয়ার হাত ছেড়ে দিতেই তা নীচে পড়ে গেল। আলেয়ার চোখ দুটো শান্ত, স্থির যেন ভাইকে দেখছে কত প্রশান্তিতে।

আলো কিছু না বুঝে বার বার বলে চলেছে, কী রে, জিলাপি খা। বোন, জিলাপী খা। একটা এনেছি বলে রাগ করেছিস?

-পাগলি, এইতো আমি এক কামড় খাইছি। বাকিটা তুই খা। বেশি ক্যামনে কিনমু বোন, বল? যে কয়ডা ট্যাহা কামাই করি তা দিয়ে ত পেটের ভাতই জোটেনা রে। তুই খা, বোন। মন খারাপ করিসনা। এইবার আরো বেশি আইনা দিমুনি। আরে, দ্যাখ কত্তগুলা মিষ্টি, সন্দেশ লইয়া আইছি তোর জন্য। নে, নে তাড়াতাড়ি খাইয়া ল।

আলেয়ার হাত ধরে ওর মুখের কাছে নিয়ে যেতেই আলো ভয় পেল। হাতে কোন শক্তিই নেই। একটু উপরে তুলতে জিলাপিও পড়ে গেল হাত থেকে। আচমকা আলেয়া বার কয়েক হেঁচকি তুলল। আবার চোখ খুলে তাকালো। বিরবির করে আওড়াচ্ছে-

-দে না ভাই, আমায় একটু মিষ্টি আইনা। ঔষুধ খুব তিতা রে ভাই। খু—উ—ব– তি—তা। আমি ট্রেনে যামুনা ভাই। আমায় ফ্যালায়ে যাসনা ভাই। তোকে ছাড়া আমি রাইতে কার কাছে থাকমু ভাই? আমায় ছাইড়া যাসনা ভাই। আর কক্ষনও জিলাপি খাইবার চাইমুনা ভাই।

পাগলের মত আলো আলেয়াকে কোলের সাথে জাপটে ধরে আছে, হাতে মুখে চুমো দিচ্ছে।

-তোকে কোথাও যাইতে দিমুনা বোন, কোথাও ফ্যালায়া যামুনা। আর তিতা ঔষুধ খাওয়ামুনা।

কোলের মাঝে আলেয়া ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে হাসি হাসি মুখে আওড়িয়ে শেষবারের মত বলে চলেছে-

-ভাই, দ্যাখ, মা কত্ত জিলাপি লইয়া আইছে। মা মিষ্টি ঔষুধওআনছে ভাই। আমি মা’র কাছে গেলাম। তুই মন খারাপ করিসনা। আমি মা’র কাছে যা—ই—ই—ই—ই ভা—–।

আলো শক্ত করে বুকের সাথে আলেয়াকে ধরে আছে।

-তোকে কোত্থাও যাইতে দিমুনা আমি, কোত্থাও না। আর বকাও দিমুনা বোন।

মর্জিনা চাচী এসে আলেয়াকে আলোর কাছে থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল। পাশের ছেঁড়া কাঁথাটা তুলে দিল মুখ ঢেকে সারা শরীরের উপরে। বিচ্ছিন্ন হল আলো হতে আলেয়া। বিচ্ছিন্ন হল ভাই-বোন, দুটি প্রাণ।

 

একটি ভয়ঙ্কর সামাজিক ব্যাধি

মো: আশরাফুল মজিদ 

দেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে নারী-শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা। গত ১০ বছরে প্র্রতিদিন গড়ে ১১ জন নারী সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বাংলাদেশে। নারী ও শিশুর প্র্রতি নির্মমতা ও নির্যাতনে হতবাক ও ক্ষুব্ধ হচ্ছেন বিবেকবান মানুষ।

পুলিশের ধারণা, শিশুরা এক শ্রেণীর বিকৃতমনা মানুষের টার্গেটে পরিণত হয়েছে। নিপীড়ন চালানোর একটা বড় কারণ নৈতিকতাহীন মানসিকতা।

বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালে ৮৬ জন, ২০১৩ সালে ১৭৯ জন, ২০১৪ সালে ১৯৯ জন ও ২০১৫ সালে ৫২১ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ চিত্র থেকে স্পষ্ট, প্র্রতি বছরই শিশু ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে। সংস্থাটির বার্ষিক প্র্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ৬৮৬টি শিশু ধর্ষণ, গণধর্ষণ, ইভটিজিং, যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন ধরনের নিপীড়নের শিকার। ২০১৫ সালে সারা দেশে ৭২৭টি শিশু যৌন নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়েছে। জরিপ অনুসারে, ২০১৫ সাল থেকে শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতন ও পাশবিক নিপীড়ন আশঙ্কাজনক বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৪ সালে সর্বমোট ২২৪টি শিশু যৌন নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়েছে। পথেঘাটেও দেদার ঘটছে শিশু ধর্ষণের বর্বরোচিত ঘটনা।

সমাজতাত্ত্বিকেরা বলতে পারবেন, একটা সমাজ কতখানি অসুস্থ হলে এ রকম নারকীয় ঘটনা রোজ ঘটতে পারে। শিশুদের ওপর নির্যাতন বৃদ্ধির কারণ হিসেবে অনেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতাকে দায়ী করেন। পুলিশের পক্ষ থেকেও স্বীকার করা হচ্ছে, শিশুদের ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে। শিশুদের নিয়ে পর্নোগ্রাফি তৈরি করছে অর্থগৃধনুরা। একশ্রেণীর মানুষ শিশুদের নিছক ভোগ্যপণ্য হিসেবে দেখছে। অনেক ক্ষেত্রে এতে পর্নোগ্রাফির প্রভাব রয়েছে। গবেষকদের মতে, ক্রমবর্ধমান হারে শিশু যৌন লালসার শিকার হওয়ার পেছনে রয়েছে কুসংস্কারও। এই যুগেও বহু মানুষ বিশ্বাস করে, শিশু বা কুমারীদের সঙ্গে যৌন সংসর্গ করলে যৌনরোগ নিরাময় হয়।

সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের এক রায়ে বলা হয়েছে, যৌন হয়রানি প্রতিরোধে দেশের প্রতিটি থানায় আলাদা সেল গঠন করতে হবে এবং এক মাস পরপর মামলার বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করবে থানা সেল; কিন্তু গত ১০ মাসেও আদালতের এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করা হয়নি।

নারীর প্রতি সহিংসতাও বেড়ে চলেছে। ধর্ষণের পর হত্যা ও লাশ গুম করার ঘটনাও ঘটছে। পরিচয় নিশ্চিহ্ন করতে নারীকে পুড়িয়ে মারার ঘটনা ঘটছে। তবু সুষ্ঠু বিচার পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। ফরেনসিক পরীক্ষার ঝামেলা এবং আলামত সংগ্রহ করতেও অভিযুক্তকে পুলিশের কাছে উপস্থিত হতে বাধ্য করায় অনেকেই লোকলজ্জায় এসব ঘটনা এড়িয়ে যেতে চান।

থানায় মামলা হলেও গ্রেফতার হয় না অপরাধী। গ্রেফতার হলেও মামলা বেশি দূর এগোয় না। প্রভাবশালী বা ক্ষমতাসীনদের হুমকিতে আছেই; তাদের মধ্যস্থতায় কথিত মীমাংসা করতে বাধ্য হন অভিযুক্তরা। মামলা চলাকালে বিভিন্ন বিব্রতকর পরিস্থিতি এবং বিচারে দীর্ঘসূত্রতা জনমনে আইনের আশ্রয় নিতে অনীহা তৈরি করে। ধর্ষণের মামলার ক্ষেত্রে এসব প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে কী ভাবছে রাষ্ট্র?

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বলা আছে, ১৮০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট মামলার প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। কিন্তু এমন অনেক নজির আছে যে, বছরের পর বছর মামলা চলছে। বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে বলছেন শিশু অধিকার কর্মীরা। এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বিচারকস্বল্পতা এ ক্ষেত্রে একটি সঙ্কট বলে উল্লেখ করেছেন। মামলা ঝুলিয়ে রাখার ক্ষেত্রে আসামি পক্ষের মানসিকতারও পরিবর্তন ঘটাতে হবে।

মানবাধিকার সংগঠন অধিকার’র পরিসংখ্যান বলছে, গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে তিন হাজার ৮৩১টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে শিশু ধর্ষণের শিকার দুই হাজার ৩০৮ জন। ২০১২ সালে ধর্ষণের শিকার ৮০৫ জনের মধ্যে ৪৭৩ জনই শিশু। ২০১৩ সালে ধর্ষণের শিকার ৮১৪ জনের মধ্যে ৪৫২ জন শিশু; ২০১৪ সালে ৬৬৬ জনের ৩৯৩ জন শিশু; ২০১৫ সালে ৭৮৯ জনের মধ্যে ছিল ৪৭৯ জন শিশু। ২০১৬ সালে ধর্ষণের শিকার ৭৫৭ জনের মধ্যে ৫১১ জনই শিশু। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ৩৬ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়, ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৪ এবং মার্চে ৫৫ জন।

নির্যাতিত নারী ও শিশুদের চিকিৎসার্থে গঠিত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রায় প্রতিদিনই ধর্ষণের শিকার শিশু ওসিসিতে ভর্তি হয়েছে। বেশির ভাগ শিশুর বয়স ছয় থেকে ১৬ বছরে মধ্যে। ওসিসির সমন্বয়ক ডা: বিলকিস বেগম জানান, শিশুরাই ধর্ষণের সবচেয়ে বড় শিকার। কারণ তারা কিছুই বলতে পারে না, অসহায় থাকে ধর্ষণের সময়। ওরা নরপশু দুর্বৃত্তকে ভয়ও পায়। শিশুরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে নিজ ঘরেও, এমনকি নিকটাত্মীয়-স্বজনদের হাত থেকেও রক্ষা পাচ্ছে না তারা। এ অবস্থায় তাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে ওসিসি।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩)-এর ৯ ধারা অনুযায়ী, যে শাস্তির বিধান রয়েছে তা হলো- ধর্ষণের ফলে কোনো নারী বা শিশুর মৃত্যু হলে ধর্ষণকারীর জন্য রয়েছে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং অতিরিক্ত অন্যূন এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান। একাধিক ব্যক্তি দলবদ্ধভাবে কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করলে ধর্ষণকালে বা ধর্ষণের পর যদি তার মৃত্যু ঘটে, তবে ওই দলের সবার জন্যই এই শাস্তি প্রযোজ্য হবে।

বাংলাদেশে ধর্ষণ বাড়ছে, বাড়ছে হত্যা। এর সাথে একই ভাবে বাড়ছে নিষ্ঠুরতা অথচ এই অপরাধের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় তেমন আনা যাচ্ছে না বলা চলে। এর কারণ, অনেকেরই আছে ক্ষমতার ‘আশীর্বাদ’, তাই তারা অপ্রতিরোধ্য। কোনো নারীই যেন আজকাল আর নিরাপদ নন।
রাস্তাঘাট, হাট-মাঠ, বাস-ট্রেন, স্কুল-কলেজ, কর্মস্থল কিংবা আপন গৃহস্থল- কোথায় কার কাছে নারী নিরাপদ? বিবেকবান প্রতিটি পুরুষই এসব ঘটনায় লজ্জিত হওয়া উচিত।

লেখক : শিক্ষার্থী, ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স ডিপার্টমেন্ট, মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, টাঙ্গাইল

সূত্রঃ নয়াদিগন্ত

 

টিনএজ মনের প্রেম ভাবনা

 


আফরোজা হাসান


পরিবার ও পরিবারের একটু বাইরে মিলিয়ে বারো থেকে চৌদ্দ বছর বয়সি এগারোজন টিনএজ কন্যা আছে আমার। সপ্তাহে একদিন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করি আমরা। ওরা ওদের চিন্তা-ভাবনা শেয়ার করে। আমিও আমার চিন্তা-ভাবনা বলি। যে কোন প্রসঙ্গ উঠলেই নিজেদের মধ্যেই তুমুল তর্ক-বিতর্ক শুরু করে সবাই মিলে। আমি কখনই ওদের মাঝে কথা বলতে যাই না। আমি মূলত রেফারি হিসেবেই থাকতে পছন্দ করি। কথাবার্তা ঝগড়ার দিকে মোড় না নিলে মনোযোগ দিয়ে চুপচাপ শুনতে থাকি ওদের কথা। বুঝতে চেষ্টা করি মোটামুটি একই রকম পরিবেশে বেড়ে উঠার পরও চিন্তা-ভাবনা, বিচার-বিবেচনা, যাচাই-বাছাইতে কত পার্থক্য বিদ্যমান ওদের মাঝে। একটা ব্যাপারে সবচেয়ে অবুঝ যাকে মনেহয় তাকেই আবার অন্য আরেকটি ব্যাপারে সবচেয়ে বুদ্ধিমতি মনেহয়। সত্যি খুব উপভোগ করি এই বৈচিত্র্যতা।

গত সপ্তাহে ওদের আলোচনা কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল ‘প্রেম’। একজন বলল, কেন ইসলামে কেন প্রেমকে হারাম বলা হয়েছে? ছেলে ও মেয়েদের একে অন্যের প্রতি আকর্ষণ তো আল্লাহই সৃষ্টি। তাহলে সেই আকর্ষণের টানে একে অন্যের দিকে যাওয়া নাজায়েজ হবে কেন? আরেকজন একটু বিজ্ঞের ভঙ্গীতে বলল, ইসলাম আসলে মোটেই প্রেমকে হারাম বলেনি। কেননা বিয়ের পর একটি ছেলে ও একটি মেয়ের সম্পর্ক বিকশিতই তো হয় প্রেম ভালোবাসার দ্বারা। সাথে সাথে আরেকজন বলল, তাহলে বিয়ে না হলে ছেলে-মেয়েরা একে অন্যের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করবে না এমন নিয়ম থাকলেই সবচেয়ে বেশি ভালো হত। অন্যজন বলল, এমন হলে তো আর পরীক্ষা করা হত না কে উত্তম আর কে অধম। আরেকজন প্রতিবাদী কণ্ঠে বলল, কিন্তু কেন? বিয়ের আগে চেনা-জানা ও ভালো লাগা থাকতে সমস্যা কোথায়? এটা বরং ভালো হবার কথা। বিয়ের পর বোঝাপড়াতে অনেক সুবিধা।

সময়াভাবে গত সপ্তাহে আমার আর কথা বলা হয়নি। বিষয়টা নিয়ে আজ আলোচনা করার কথা ছিল। ক্লাসে ঢুকে সবার চেহারা দেখে বুঝতে বাকি রইলো না যে, তাহাদের মন বাগিচায় গুন গুন করিয়া গুঞ্জন করিতেছে ভ্রমর। কুসুম কুসুম ভাবনারা কাশফুলের ন্যায় একবার এইদিকে তো আরেকবার ঐদিকে হেলিয়া দুলিয়া পড়িতেছে। কাহারো কাহারো মুখমন্ডলে লাজুকতার রক্তিম আভাও পরিলক্ষিত হইলো। যাইহোক, আমি কারো মন ও চেহারায় দিকে না তাকিয়ে হাসিমুখে বললাম, অনেকদিন তোমাদেরকে উপহার দেয়া হয় না। আজ আমি সবার জন্য উপহার নিয়ে এসেছি। সবাই এক এক করে আসো আর নিজ নিজ উপহার নিয়ে যাও। তারপর দেখে বলো কেমন লাগলো। উপহারের নাম শুনেই আনন্দ ও খুশিতে ঝিকমিক করতে লাগলো কন্যারা সবাই। এবং আলো বিকিরণ করতে করতে আমার কাছ থেকে নিজ নিজ উপহার নিয়ে গেলো।

একজন বলল, খালামণি তুমি এত সুন্দর করে প্যাক করেছো যে আমার খুলতেই ইচ্ছে করছে না! অন্যজন হাসিতে বিকশিত হয়ে বলল, হুম…দেখেই বোঝা যাচ্ছে খালামণি আমাদের জন্য ভীষণ স্পেশাল কিছু এসেছেন। পন্ডিত একজন বলল, শোন তোমরা কিন্তু একটা প্রবাদ ভুলে যাচ্ছো, উপরে ফিটফাট ভিতরে সদরঘাট। এমন নানারকম মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য আর উচ্ছ্বাস ও আনন্দের মধ্যে দিয়ে সবাই নিজ নিজ উপহারের প্যাকেট খুললো। যার যার উপকার হাতে নিয়ে সবাই যখন আমার দিকে তাকালো মনেহলো বাসন্তি আলো ছড়ানো ঝলমলে পুর্ণিমার চাঁদকে হঠাৎ যেন ঢেকে ফেললো একখন্ড ঘন কালো মেঘ। আমি আগের মতই হাসিমুখে বললাম, কি পছন্দ হয়েছে তোমাদের উপহার? অনেকক্ষণ নীরবতার পর ধীরে ধীরে একজন বলল, খালামণি এই পুরনো ছিঁড়ে যাওয়া ড্রেসটা আমার উপহার? আরেকজন অভিমানী কণ্ঠে বলল, আমার চকলেটের বক্সের সবগুলো চকলেটই একটু একটু করে কে যেন খেয়েছে। এঁটো চকলেট আমার উপহার?

বললাম, ভেবে দেখো উপহারের কথা শুনে তোমরা কত্তো খুশি হয়েছিলে! খুব সুন্দর করে প্যাকেট করা উপহারের বক্স দেখে তোমাদের সেই আনন্দ আরো বেড়ে গিয়েছিল। মুহূর্তের মধ্যেই কত রকমের স্বপ্ন, আশা, ভাবনা তৈরি হয়ে গিয়েছিল তোমাদের মনে উপহারকে ঘিরে। কিন্তু সুন্দর করে মোড়ানো উপহারের বক্স খুলে যখন তোমরা পুরনো ছেঁড়া ড্রেস, আধ খাওয়া চকলেট, উপরে ছত্রাক পড়ে গেছে এমন কেক, ভাঙ্গা চুড়ি ও গহনা দেখলে সাথে সাথে তোমাদের মন খারাপ হয়ে গেলো। অবশ্য এটাই স্বাভাবিক। আমরা কেউই উপহার হিসেবে পুরনো, ছিঁড়ে যাওয়া, ভেঙ্গে যাওয়া, নষ্ট হয়ে যাওয়া, কারো ব্যবহৃত কিছু পেতে চাই না। কখন যদি এমন কিছু পেয়েও যাই উপহার হিসেবে সেটা আমাদেরকে আনন্দিত করে না। আমরা ভালোবাসা নিয়ে সেটাকে গ্রহণ করতে পারিনা।

দেহের সুন্দর আবরণের ভেতরে যে ছোট্ট মনটা আছে সেটা নারী ও পুরুষের জন্য ঠিক এমনই এক উপহার! তোমরা কেউ কি মনের সাথী হিসেবে এমন কোন মনকে উপহার হিসেবে পেতে চাইবে যেটা আগেই কারো দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছে? যেই মনের কোন অংশ ছেঁড়া বা ভাঙা কিংবা যাতে অন্যকারো চিহ্ন লেগে আছে? যাতে ছত্রাক পড়ে গিয়েছে, যা থেকে ভেসে আসছে হালকা দুর্গন্ধ? একসাথে এগারো জন চিৎকার করে উঠলো, কক্ষনো না। কোনদিনও না। ছিঃ, ইয়াক! হেসে বললাম, ইসলাম তো তোমাদের এই ইচ্ছাটাকে সফল করার পথই সুগম করেছে। দেখো আমরা কেউ ভবিষ্যৎ জানি না। তাই এর কোন নিশ্চয়তা নেই যে যার সাথে তুমি প্রেম করছো তার সাথেই তোমার বিয়ে হবে। একজনকে ভালবাসার পর একসময় হয়তো কোন কারণে ভেঙ্গে গেল সম্পর্ক, কিংবা সে এসেছিলই তোমাকে ধোঁকা দিতে, তোমার ক্ষতি করতে। তখন কি করবে তোমাদের এই ভাঙ্গাচোরা মন নিয়ে? আর যে উপহার পাবে এই মন সেকি আনন্দিত হতে পারবে?

ইসলামে প্রেম হারাম নয়। ইসলামে বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্ক নিষিদ্ধ। এবং এই নিষিদ্ধের পেছনেই আমাদের সবার কল্যাণ নিহিত। তোমাদের দেহ ও মন শুধু তোমাদের একার নয়। এটা তোমাদের যে সাথী হবে তাদের জন্য উপহার। ঠিক তেমনি তোমাদের সাথীদের দেহ ও মন তোমাদের জন্য উপহার স্বরূপ। আর পৃথিবীতে কেউ উপহার হিসেবে পুরনো, ছিঁড়ে যাওয়া, ভেঙ্গে যাওয়া, নষ্ট হয়ে যাওয়া, কারো ব্যবহৃত কিছু পেতে চায় না। তাই আমাদের কাউকে যাতে সাথী হিসেবে এমন কাউকে উপহার হিসেবে পেতে নাহয় তাই ইসলামে বিয়ের আগে প্রেমকে নিষিদ্ধ বলা হয়েছে। তোমরা সবাই যাতে তোমাদের মনটাকে নিজ নিজ জীবনসাথীর জন্য সযতনে আগলে রাখতে পারো সেই পথই তো ইসলাম উন্মুক্ত করে দিয়েছে। যাতে একে অপরকে দেবার সময় তোমাদের উপহার সদ্যফোঁটা গোলাপের ন্যায় সুন্দর ও সজীব থাকে।

নিজ নিজ উপহারের প্যাকেট পাশে সরিয়ে দিয়ে সবাই তখন বলল, ইনশাআল্লাহ আমরা কখনোই বিয়ের আগে প্রেম করবো না। আমরা সবসময় মনে রাখবো আমাদের মন কারো জন্য উপহার হবে একদিন। আর উপহার হিসেবে কেউই পুরনো, ছিঁড়ে যাওয়া, ভেঙ্গে যাওয়া, নষ্ট হয়ে যাওয়া, কারো ব্যবহৃত কিছু পেতে চায় না। আমি জানি আমার কন্যারা এমন উদাহরণের জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিল না। তাই থমকে গিয়েছিল কিছুটা। কিন্তু যেহেতু চিন্তার খোঁড়াক পেয়েছে ওদের মন ও মস্তিষ্ক বসে থাকবে না। নতুন নতুন প্রশ্ন ও যুক্তি নিয়ে আবারো হয়তো হাজির হবে আমার কাছে। আমি তখন সেই আলোকে জবাব দিতে চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ। অভিভাবকরা প্রায় সময়ই যে ভুলটা করেন তা হচ্ছে, সন্তানদের প্রশ্নের যথাযথ জবাব দেন না। অথচ অভিভাবকদের উচিত সন্তানদের প্রশ্নের জবাব দেয়া এবং এমন ভাবে দেয়া যা ওদেরকে চিন্তার খোঁড়াক যোগাবে। যারফলে আবেগ দিয়ে না বরং যুক্তি দিয়ে সবকিছুকে যাচাই করতে শিখবে সন্তানরা।

 

মায়াবী কাক

মনির মোহাম্মদ


ছোট্টবন্ধুরা তোমরা কেমন আছ? অনেক দিন পরে আজ একটা গল্প বলব তোমাদের। আমার নামটা মনে আছে? আমি টুনি, চল আমরা গল্পটা শুনে আসি। আমাদের বাড়িটা একটা বনের পাশে। প্রতিদিন পাখিদের কিচির মিচির শব্দে আমার ঘুম ভাঙে। আচ্ছা তোমার পাখিদের গান কেমন লাগে? আমার কিন্তু খুব ভালো লাগে। তাই বলে পাখিদের খাঁচায় বন্দী করে রেখোনা। একদিন এক পাখি আমায় তার দুঃখের অনেক কথা বলেছে। এই পাখিটাই আমাকে সাদা ঘোড়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।
একদিন আমি মন খারাপ করে আমাদের বাড়ির বারান্দায় বসে বসে মাটিতে কাটা কুটি খেলছি। তখন দেখলাম…দাঁড়াও দাঁড়াও, আর একটা কথা তোমায় বলা হয়নি। আমাদের এখানে অনেক রকম ফুলের গাছ আছে। তোমার, প্রিয় ফুল কি? আমার প্রিয় ফুল জবা,লাল টকটকে জবা। লাল টকটকে জবা ফুল,কী ভালোই না লাগে দেখতে! চল গল্পটা শেষ করে আসি।
একদিন রাত্রে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টির সাথে ছিল প্রছন্ড দমকা হাওয়া।
এত ঝড় ছিল যে অনেক গাছেরই ডাল পালা ভেঙে পড়েছিল সেদিন।
আমার বন্ধু বকুলদের একটা মাটির ঘর ছিল। জানো তাদের সেই ঘরের একটা দেয়াল ভেঙে পড়েছিলো সেদিন। আমার বন্ধু বকুলের অনেক মজার মজার গল্প আর ছড়ার বই ছিল। বেচারার সবগুলো বই ভিজে গিয়েছিল। তার কী যে মন খারাপ! আমি বকুলকে দেখতে বকুলদের বাড়িতে গেলাম।
বকুলের দাদু আমরা যাকে নিতাই দাদু ডাকি। আমি দেখলাম তারও অনেক মন খারাপ। নিতাই দাদু আমাকে অনেক আদর করেন। জানো গতবার মেলায় দাদু আমাকে আর বকুলকে অনেক খেলনা কিনে দিয়েছিলো। আমি চকলেট খুব পছন্দ করি। তুমি কি চকলেট খাও? জানো বেশি চকলেট খেলেনা দাঁতে পোকা হয়। আমার একবার দাঁতে পোকা হয়েছিল, দাঁতে কী যে ব্যাথা! নিতাই দাদু বলেছে চকলেট কম খেতে, তাই আমি চকলেট কম খাই। তুমিও চকলেট কম খাবে, না হলে কিন্তু দাঁতে পোকা হবে।
নিতাই দাদু মন খারাপ করে উঠুনে বসে আছে। বকুল আমাকে দেখতে পেয়ে দৌঁড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এল। আমার হাতটা ধরে বনের কাছে নিয়ে গেল। বনের গাছগুলোকে দেখে খুব খারাপ লাগলো। এত সুন্দর সবুজ গাছপালা ঝড়ে সব ভেঙে দিলো।আমার কী যে মন খারাপ হল সেদিন!
হঠাৎ দেখলাম একটা ভাঙা গাছের নিচে একটা পাখির বাসা পড়ে আছে। আমি পাখির বাসার কাছে গিয়ে বাসাটা দেখলাম। আমি দেখি তার ভিতরে একটা ছানা। ছানার অদূরে একটা গাছের ডালে একটা কাক বসে বসে কা কা কা করছে। ছানাটার এখনও চোখ ফুটেনি। আমরা নিতাই দাদুকে ডাকলাম। নিতাই দাদু বললেন এটা কাকের ছানা না। এটা কোকিলের ছানা।
আমি আর বকুল দাদুর কথা শুনে মুখ হা করে রইলাম। দাদু আমাদের একে একে সব বললেন। দাদু বললেন কোকিলরা একটু অলস পাখি, মা কোকিল কাকের চোখকে ফাঁকি দিয়ে কাকের বাসায় ডিম দিয়ে যায়। বোকা কাক এটাকে নিজের ডিম ভেবে ডিমে তা দেয় আর তা থেকে কোকিলের বাচ্ছা ফুটে বের হয়। পালকবিহীন বাচ্ছাকে নিজের বাচ্ছা ভেবে পরম আদরে বড় করে তুলে কাক। কাক কালো হলেও কিন্তু অনেক মায়াবী একটা পাখি।
আস্তে আস্তে যখন কোকিলের ছানা বড় হয় তখন সে তার দলের লোকের কাছে ফিরে যায়। আর বোকা কাক বসে বসে কাঁদে আর কা কা করে।
কথাটা শুনে আমার খুব মায়া হলো। আমি আর বকুল দুজন মিলে কাকের বাসাটা ঠিক করলাম। কিন্তু কোথায় রাখবো? নিতাই দাদু বাসাটাকে একটা বড় আম গাছের উপরে রেখে আসলেন। কাকটা আমার দিকে মায়াবী চোখে তাকিয়ে ছিল। আহারে অন্যের বাচ্ছার জন্য এত মায়া দেখে ভাবতে ভাবতে আমি আর বকুলের দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।তখন আমরা বুঝলাম আসলে কাক কালো হলেও অনেক মায়াবী একটি পাখি!

মনির মোহাম্মদ
মায়াবী কাক
শিশু ও কিশোরদের জন্যঃ একটি শিক্ষণীয় গল্প!

 

কাঠ পেন্সিল অথবা সবুজ পাতা

সামিয়া কালাম


নিঃসঙ্গতার অনেক বড় সঙ্গ আছে। আর সে সঙ্গ টা হল নিজের মন। নিজেকে বই এর মতো,অথবা নতুন কেনা শাড়ির মতো আবার উল্টে পাল্টে দেখা যায়। আজ একটা সন্ধ্যা নামলো। নিজের মত করে আমি ব্যলকনিতে একলাটি বসে রইলাম। মাগরিবের আজানের পর ছেলেরা খেলা শেষে বাড়ি ফিরল। ওদের একসাথে নিয়ে নামাজ পড়লাম, সেটা আমি সব সময় চেষ্টা করি। সুখদেব সানা দা মেসেজ দিয়েছিলেন, লেখা চেয়েছেন, তার পাশা পাশি লিখেছেন “আপনার একটি ম্যাসেজ খুব ভালো লাগলো। নিয়মিত নামাজ পড়েন। বিষয়টা প্রত্যেকটা মুসলমানের অনুভব করা উচিত। আমার মতে, নামাজ আল্লাহ্ সৃষ্ট এমন এক শ্রেষ্ঠ ধর্মাচার, যা মানুষের মন-মেজাজ এবং শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখার উত্তম পন্থা।”
আমি নিজেকে ভালবাসি, সবচেয়ে বেশী। সবাই তাই বাসে, কেউ স্বীকার করে কেউ করে না।
মনকে স্থির করার জন্য দুটো পথ আছে… এক, নিজের মাঝে আয়ত্ত হওয়া।
দুই, বৃত্তের বাইরে যেয়ে, নিজের কষ্ট গুলোকে অন্যের সাথে ভাগাভাগি করে নেওয়া।
দ্বিতীয় টি খানিকটা রিস্কি। এখানে ভুল বোঝা বুঝির সম্ভাবনা অনেকটা বেশী। প্রত্যাশাও বেশী। কারণ, মানুষ বড্ড ভুল বোঝে, মানুষ বড্ড নিষ্ঠুর…।

“বলো কি তোমার ক্ষতি, জীবনের অথৈ নদী, পার হয় তোমাকে ধরে দুর্বল মানুষ যদি? ”
এই কথাগুল ভুপেন হাজারিকার গানের সিডি তেই বেশ মানায়, জীবনে পালন করতে গেলেই বিপত্তি…। ফ্রেন্ড হয়ে যাবে আন ফ্রেন্ড, বান্ধবি হয়ে যাবে ব্লক। তাই নিজের মতোই থাকা ভালো।
আজ “ভালো আছি ভালো থেকো” অনুষ্ঠানটি চৈতি ভাবির অনুরোধে দেখলাম। মানুষের যে কত রকমের কষ্ট থাকে!! নিজের দু এক দিনের অপ্রাপ্তি সেখানে নস্যি। কল্লাণ মন্ডল, গড়িয়া থেকে ফোনে বল্লেন, “ আমার ছেলে মেডিক্যালে থার্ড ইয়ারে পড়ে। পরীক্ষা চলছিল, একটাই ছেলে, হলের খাওয়া ভালো লাগে না, তাই বাইরে খেতে গেলো বাইকে করে। বাড়ি ফিরল লাশ হয়ে। আজ এক মাস ৬ দিন, আমি এখন নিজেকে সামলাই নাকি স্ত্রী কে। আমার বয়স ৫২ আর ওর ৪৮। কি করবো কিছুই বুঝে পাচ্ছি না!”

আর তাই আমি মনে মনে নিজের মনের গণ্ডি টাকে বড় করতে থাকি। ভাবতে থাকি, যে সকাল গুলোতে শ্রাবনের ধারার মতো পড়ুক ঝরে। পড়ুক ঝরে এই গান টা গাইতাম, ছেলেরা বলতো “ সক্কাল বেলা চিক্কুর দিতেসো ক্যান? ”

এতো খারাপ লাগতো নিজের কাছে, একটা গানই তো গাই। কিন্তু যে সকাল গুলোতে প্রতিদিনের নিয়মে সূর্য উঠবে, সান বার্ড টা যেয়ে বসবে কোন ডালে, কিন্তু আমার ছেলেরা আমার কাছে থাকবে না! হয়তো ওরা থাকবে কোন দূর দেশে, অথবা হোস্টেলে, সেদিনও কি আমার ইচ্ছে হবে গান গাইতে। শীত কিংবা গ্রীষ্মে? এসব ভাবতে ভাবতে সময় কেটে যায়।
আজ খুব সুন্দর একটা দিন ছিল। স্কুল ছুটির পর ওয়াফিক দাঁড়িয়ে ছিল কালো রং এর একটা কাঠ পেন্সিল হাতে।

“মা জানো, আজ ম্যাথ স্যার একটা সারপ্রাইজ টেস্ট নিলো, এত্তগুল প্রশ্ন, আমি সব গুলো এটেন্ড করতে পারিনি। কেউই পারেনি, কিন্তু আমি সব্বার মাঝে থার্ড হলাম, ম্যাথ স্যার প্রথম তিন জন কে একটা গিফট দিল… এই পেন্সিল টা কি জোসসস না দেখো মা???”

নিতান্ত সাধারণ একটা কাঠ পেন্সিল, সে তার প্রাপ্তির মহিমায় কতটা অসাধারণ হয়ে গেলো! কতটা আনন্দ অশ্রু এনে দিল, তা লিখে শেষ করা যাবে না। আর তাই আমি আবার আমার গণ্ডিতে ফিরে আসতে চাইলাম। পারলামও হয়ত। সন্ধ্যায় যখন ছেলেদের নিয়ে পড়াতে বসেছি, দেখি উসমানের ব্যাগ এ দুটো কালার করা পেইজ। দুটোতেই স্টার। ভালো কালার গুলো মিস রা বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। এক সময় দেয়াল জুড়ে লাগিয়ে রাখতাম। এখন আর রাখি না। অন্তত ছবি তুলে রাখি।
মনে থাকুক আমারও দুটি ছেলে ছিল। ওরা বড় হবে একদিন, চড়বে গাড়ি, আর তখন আমি কাটব ঘাস।

 

আজও আমি তারা গুনি

আব্দুস সামাদ


বলেছিলে আসবে তুমি
জোসনা হাতে
পুকুর পাড়ে সবুজ ঘাসের
বারান্দাতে!

আসবে তুমি ছোট পায়ে
ঘোমটা খুলে
করবো বরণ হাজার চরণ
পদ্মফুলে।

বসবে তুমি এলোকেশে
নগ্ন পায়ে
কাটবো সাঁতার অকূল-পাথার
ভগ্ন নায়ে!

জলকেলিতে ভিজবো দু’জন
জলভোমরা
গুনবো তারা আকাশ ভরা
জোড়া জোড়া।

আজও আমি তারা গুনি
একলা রাতে
হয়নি ভেজা জলকেলিতে
জোসনা রাতে!

 

প্রশংসা

রেহনুমা বিনত আনিস


সুযোগ হলেই যে কাজগুলো আমি করতে পছন্দ করি তার একটি হল স্বামীর কাছে স্ত্রীর এবং স্ত্রীর কাছে স্বামীর প্রশংসা, বিশেষ করে যখন তারা পরস্পরের প্রতি রাগান্বিত থাকে। প্রাত্যহিক জীবনের একঘেঁয়েমি এবং টানাপোড়েনের ঘর্ষনে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক প্রায় সময়ই ক্ষয় হতে হতে এমন স্তরে পৌঁছে যায় যে তারা পরস্পরের ব্যপারে অনেকখানি নির্লিপ্ত হয়ে পড়ে। তখন দেখা যায়, এক সময় পরস্পরের যে উত্তম গুণাবলী তাদের মোহিত করত সেগুলো তখন তারা আর দেখেও দেখেনা। অথচ একই গুণাবলী অপর কোন ব্যক্তির মাঝে খুঁজে পেলে তারা আন্দোলিত হয়। অর্থাৎ, ঐ গুণাবলীর প্রতি আকর্ষণের সমাপ্তি নয়, বরং পরস্পরের ব্যাপারে অভ্যস্ততাই স্বামী/স্ত্রীর মাঝে এগুলোর উপস্থিতি লক্ষ্য করতে ব্যর্থ হবার কারণ। আবার অনেক সময় দেখা যায় একে অপরের যে ত্রুটিবিচ্যুতি একসময় তারা খেয়ালই করত না তাতে চরমভাবে বিরক্ত বোধ করছে। সেক্ষেত্রে বিরক্তির সূত্রপাত হয়ত অন্য জায়গায় – অফিসে সহকর্মীর ওপর, ঘরে কাজের লোকের ওপর, অভাবের প্রতি, নিজের ব্যর্থতার প্রতি, শারীরিক অসুস্থতার প্রতি – কিন্তু সেটা প্রতিফলিত হয় এই বিষয়ে একেবারেই অনবহিত স্বামী বা স্ত্রীর ওপর, যে বেচারা বুঝে পায় না সে কি অন্যায় করে বসল!
এসব ক্ষেত্রে কেউ যদি তাদের নতুন করে মনে করিয়ে দেয় তাদের সঙ্গীটি কতখানি উত্তম তবে তা পুরনো পাঁচিলে নতুন করে সিমেন্ট দেয়ার মত করে কাজ করতে পারে। এটি তাদের মনে করিয়ে দিতে পারে সঙ্গী/সঙ্গীনীর কোন গুনগুলো একসময় তাদের মুগ্ধ করত যা তাদের একত্রে পথ চলাকে সাবলীল করেছিল। হয়ত তাদের স্মরণ হতে পারে সেই সময়ের কথা যখন তাদের সঙ্গীটি তাদের কোন সীমাবদ্ধতাকে সহজভাবে মেনে নিয়েছিল। অথবা সঙ্গীটির দীর্ঘকালীন কোন ত্যাগ স্বীকার যা অভ্যস্ততার কারণে তাদের দৃষ্টির অন্তরালে হারিয়ে গিয়েছিল। একটি গুনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন হয়ত তাদের একটি ত্রুটি থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে পারে। সর্বোপরি তাদের পুণর্বার অনুধাবন হতে পারে তারা প্রকৃতপক্ষে একে অপরকে পেয়ে কতখানি ভাগ্যবান। যে সংসার তাদের কাছে মনে হচ্ছিল এক কন্টকাকীর্ণ অরণ্য সেটা যে আসলে এক পুষ্পোদ্যান, এই উপলব্ধি সৃষ্টি করতে পারা এক অপার আনন্দের উৎস হতে পারে সুদীর্ঘ সময়ের জন্য যা থেকে থেকে পুলকিত করে অন্তরকে। সুতরাং, এই কাজের পেছনে আমার উদ্দেশ্য একেবারে নিঃস্বার্থ নয়।
তবে দুটো পরিস্থিতিতে এই পদ্ধতি কার্যকর করা মুশকিল। এর একটি আপনার প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করে, আরেকটি ব্যর্থ।
মানুষ বড় অদ্ভুত প্রাণী। মানুষকে দেয়া হয়েছে আবেগ এবং বিবেক। আবেগ মানুষকে বিশ্বাস করতে এবং ভালবাসতে শেখায়; বিবেক মানুষকে সাবধান হতে। কিন্তু আবেগের আধিক্য এবং বিবেকের স্বল্পতা অনেক সময় মানুষের মাঝে এমন এক ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে যেখানে এই দুটি বৈশিষ্ট্য পরস্পর পরিবর্তিত হয়ে বিপরীত ভূমিকা গ্রহণ করে। যার যা কাজ তা সে ভালই করে যেতে পারে। কিন্তু একে অপরের কাজ করতে গেলেই লেগে যায় বাগড়া। তাই আবেগ যখন বিবেকের কাজ করতে যায়, তখন গণ্ডগোল লাগবে এটাই তো স্বাভাবিক! কার্যত হয়ও তাই। উল্টোপাল্টা লাগছে? ব্যাপারটা উল্টোই বটে!
চলুন, একটা উদাহরণ দেয়া যাক। তাহলে হয়ত বুঝতে সুবিধা হবে। ধরুন, আপনি আপনার আবেগী বন্ধুকে বুঝাতে গেলেন এবারের ঝগড়ায় তার স্ত্রীর কোন দোষ নেই। কিন্তু আবেগের আধিক্যে তিনি বিবেকের গলা কেটে দিলেন। আবেগ বিবেকের স্থান দখল করে নিলো বটে কিন্তু বিবেকের কার্যপ্রণালী ভালভাবে বুঝতে না পেরে বিশ্বাসের পরিবর্তে অহেতুক সন্দেহ উৎপাদন করতে শুরু করে দিল। বন্ধু আপনার সুপরামর্শ গ্রহণ করার পরিবর্তে সন্দেহ করতে শুরু করলেন, আপনি আসলে কার পক্ষে। এই আবেগ আপনার পক্ষে ছিল যতদিন আপনি তার সমস্ত দোষত্রুটি, অন্যায়, আবদার মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু আপনি যখন তার সংসার বাঁচানোর তাগিদে তাকে সংশোধিত হতে বললেন সাথে সাথে সেই আবেগ চলে গেল আপনার বিপক্ষে। আপনার এত বছরের বন্ধুত্ব, সাহচর্য, বিশ্বাস, ভালবাসা সব শূন্যে পর্যবসিত হল। আবেগ বিবেকের স্থান দখল করে নিয়ে তাকে বিশ্বাসীর পরিবর্তে সাবধানী না বানিয়ে বরং বানিয়ে দিল সন্দেহবাদী!
এই ধরণের মানুষগুলো ভাবে বেশি, বুঝে কম। এদের নিয়ে মুশকিল হল, এরা নিজেরাই নিজেদের সুখের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। একই বিষয় নিয়ে পুনঃ পুনঃ পুঙ্খানুপুঙ্খ চিন্তা গবেষণা বিশ্লেষণ করতে করতে তারা বুঝে উঠতে পারেনা, আপনি এপক্ষ বা ওপক্ষ হতে যাবেন কেন? স্বামী স্ত্রী মিলে একই তো পক্ষ! তার সুখের জন্য, তার সংসার রক্ষা করার তাগিদেই তো নিজের সময় ব্যয় করে তাকে পরামর্শ দেয়া! নিজের কিছু অহম বিসর্জন দিয়ে যদি উভয়ের সুখ নিশ্চিত করা যায়, সন্তানদের জন্য একটি নিরাপদ পারিবারিক পরিবেশ গড়ে তোলা যায় তবে উভয়ের মাঝে বাঁধার প্রাচীর গড়ে তোলার প্রয়োজনটা কি? কিন্তু সন্দেহ বড় জটিল রোগ। এই রোগ কোন ওষুধে সারে না।
এই রোগের চিকিৎসার জন্য বিশ্বাসের কোন বিকল্প নেই। কিন্তু আবেগ যখন বিবেকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে তাণ্ডব চালায় তখন আর সেই বিশ্বাস নিজের মাঝে খুঁজে পাওয়া যায়না।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এই আবেগের কাছে পরাজিত মানুষগুলোর অধিকাংশই নারী। অনেকের কাছেই এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। অনেকের কাছেই এটা হাসির খোরাক। কিন্তু বিশদভাবে চিন্তা করলে এটা একটা ভয়াবহ দুর্বলতা এবং যেকোন দুর্বলতাই অতিক্রম করার চেষ্টা করা উচিত। কারণ এর প্রভাবে যে শুধু মানুষের পার্থিব জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাই নয় বরং আখিরাত বিনষ্ট হয়।
কিভাবে? মানুষ যদি স্বয়ংসম্পূর্ন হত তাহলে সমাজবদ্ধ জীবনের প্রয়োজন হত না। সেক্ষেত্রে মানুষে মানুষে সম্পর্ক, আদানপ্রদান আমাদের পার্থিব পরীক্ষার অন্তর্ভুক্ত হত না। অতিরিক্ত আবেগ মানুষকে পথভ্রষ্ট করে। এর ফলে মানুষ বন্ধু এবং শত্রু চিনতে ভুল করে, নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে ক্ষতিটা হয় নিজেরই। কারণ সকলকে অবিশ্বাস করতে করতে সে সকলের সাথে দূরত্ব রচনা করে একসময় একা হয়ে যায়। ক্ষতিটা আখিরাতে আরও মারাত্মক। কারণ নারী পুরুষের পুরস্কার নির্ধারণের ক্ষেত্রে যেমন বিভেদ করা হবেনা, তাদের শাস্তি নির্ধারণ করার ক্ষেত্রেও তারতম্য করা হবেনা। প্রত্যেকেই তাদের নিজেদের কথা, কাজ ও সিদ্ধান্তের জন্য জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে। আমাদের কথা, কাজ ও সিদ্ধান্ত যাতে ন্যায় ও সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকে সেটা নিশ্চিত করার জন্যই মানুষকে বিবেক দেয়া হয়েছে। কিন্তু বিবেকের স্থান আবেগ দখল করে নিলে মস্তিষ্কের সঠিক কার্যপরিচালনায় ব্যাঘাত ঘটে। ফলে কথা, কাজ ও সিদ্ধান্তে ভুল হয়ে যায়। সুতরাং, এটাই স্বাভাবিক নারীপ্রকৃতি বলে নিজেদের জাহান্নামের খোরাক না বানিয়ে এর থেকে উত্তরণ করার চেষ্টার মাঝেই প্রকৃত কল্যাণ রয়েছে।
নানাবিধ ঘটনা, দুর্ঘটনা, অভিজ্ঞতা কিংবা জ্ঞানের রাজ্যে আলোড়ন সঞ্চারের ফলে একজন মানুষ এতখানি পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে যার ফলে তাঁর সাথীর মনে হতে পারে এই মানুষটিকে তিনি আর চেনেন না। দীর্ঘ সহযাত্রার মাঝপথে কোথাও তাঁর পরিচিত মানুষটি অন্য কারো দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে গিয়েছে। এক্ষেত্রে আপনি কি প্রশংসা দিয়ে তাঁর সঙ্গীটির মনের শঙ্কা দূর করবেন? বরং কিছু বলতে গেলে আপনার নিজের কাছেই নিজেকে ভণ্ড মনে হবে। এই পরিবর্তন যে সবসময় নেগেটিভ হয় তা নয়, পজিটিভ পরিবর্তনও অনেক সময় নেগেটিভ রূপ ধারণ করতে পারে। আমার পরিচিতা একজন বলেছিলেন তাদের বাবা অত্যন্ত ধার্মিক (তাঁর ভাষায়) ছিলেন। কিন্তু তিনি ধর্ম নিয়ে এতখানি মগ্ন হয়ে যান যে ধীরে ধীরে তাঁর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। তিনি যাদের নিজের পর্যায়ে ধার্মিক গণ্য করতেন না তাদের প্রতি তাঁর আচরণ এতখানি রূঢ় ছিল যে এমনকি তাঁর সন্তানদের মন কেবল তাঁর প্রতিই নয়, ইসলামের প্রতিও বিরূপ হয়ে যায়। এ সকল ক্ষেত্রে উভয়ের মাঝে সম্পর্কোন্নয় প্রচেষ্টায় ব্যর্থতা স্বীকার করে নেয়া ব্যতীত খুব একটা কোন উপায় থাকে না।
আল্লাহ জানিয়েছেন তাঁর সবচেয়ে অপছন্দনীয় কাজগুলোর একটি হল, স্বামী স্ত্রীর মাঝে বিভেদ তৈরী করা। এটা শাইত্বানের কাজ। কিন্তু এই কাজটি আমরা অনেকেই করে থাকি, হয়ত না বুঝেই। সরল মনেই হয়ত আমরা পরিচিতজনদের সম্পর্কে এমন অনেক মন্তব্য করি যাতে তাদের সঙ্গীদের হৃদয়ে চারাগাছ আকারে বিদ্যমান সন্দেহ সংশয়গুলো সার পানি পেয়ে বটবৃক্ষের আকার ধারণ করে। আমরা কেউ জানিনা অপরের মনে কি আছে। সুতরাং, আমাদের কথাবার্তা সর্বাবস্থায় নেগেটিভের পরিবর্তে পজিটিভ হওয়া সবদিক থেকে নিরাপদ। সুতরাং, অপরের উপকারার্থে না হোক, নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য হলেও আমার পদ্ধতিটি আমার কাছে শ্রেয় মনে হয়। আপনি কি বলেন?

 

চট্টগ্রামে রিজার্ভ ট্যাংকে মা-মেয়ের লাশ

নারী সংবাদ


চট্টগ্রামের এক বাড়িতে বৃদ্ধা মা-মেয়েকে হত্যা করে রিজার্ভ ট্যাংকে লাশ ফেলে রাখা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের শিকার মেহেরুন্নেসা বেগম (৬৭) রূপালী ব্যাংকের সাবেক প্রিন্সিপাল অফিসার। ৯৪ বছর বয়সী মা মনোয়ারা বেগমকে সঙ্গে নিয়ে নিজের বাড়িতেই থাকতেন তিনি।

পুলিশ জানায়, আত্মীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে রোববার দুপুরে খুশলী থানার আমবাগান এলাকায় মেহের মঞ্জিল নামের ওই ভবন থেকে লাশ দুটি উদ্ধার করা হয়। চার তলা ভবনটির নিচতলায় মেহেরুন্নেসারা থাকতেন।

অবিবাহিত মেহেরুন্নেসার চার ভাই ও চার বোনের দেশে ও দেশের বাইরে থাকেন। মা-মেয়ে ছাড়া আর কেউ ওই বাসায় থাকতেন না।

সকালে একজন আত্মীয় এসে খোলা বাসায় তাদের না পেয়ে থানায় খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে রিজার্ভ ট্যাংকে লাশ দেখতে পায়।
পুলিশ বলছে, তাদের হত্যা করে লাশ পানির ট্যাংকে ফেলে রাখা হয়েছে বলে তাদের ধারণা। সূত্র : নয়াদিগন্ত।

 

বিয়ে ও পরিবার সমকালীন জিজ্ঞাসা ৭

কানিজ ফাতিমা


গত পর্বে আমরা গর্ভকালীন নারীর মানসিক অবস্থা সম্পর্কে জেনেছি। এ পর্বে আমি আলোচনা করবো মেনোপজ (Menopause) নিয়ে। তার আগে গত পর্বের রেশ ধরে দু’একটি কথা বলে নেই। আমরা অনেক সময়ই লক্ষ্য করি আমাদের সমাজে স্ত্রীর সেবা করাকে ভালো চোখে দেখা হয় না। এটা অনেকটা পৌরুষ হানিকর কাজ মনে করা হয়। অনেকে আরও একটু আগ বাড়িয়ে একে অনৈসলামিক কাজও মনে করেন। এটি সম্পূর্ণ ভুল একটি ধারণা। ইসলামে অসুস্থ স্ত্রীর দেখাশোনাকে স্বামীর গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর দৃষ্টান্ত আমরা ইসলামের ইতিহাসে দেখতে পাই। বদর যুদ্ধের সময় মুসলমানগণ সংখ্যায় কম ছিলেন। সেসময় মদীনাতে মাত্র ৭৭ জন সমর্থ মোহাজির পুরুষ ছিলেন। তিনজন বাদে এদের সবাই যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। তালহা ও সা’দ (রাঃ) সেই মুহূর্তে সংবাদ সংগ্রহের কাজে মদীনার বাইরে ছিলেন বলে বাহিনীতে যোগ দিতে পারেননি। তার তৃতীয় ব্যক্তি যিনি মদীনাতে উপস্থিত থেকেও বাহিনীতে যোগ দেননি তিনি হলেন ইসলামের ইতিহাসে প্রথম সারির সাহাবী উসমান (রাঃ)। যদিও সে সময় মুসলিম বাহিনীতে বেশী সংখ্যক যোদ্ধার দরকার ছিল তথাপি রাসূল (সাঃ) নিজেই উসমান (রাঃ) কে মদীনায় থাকতে নির্দেশ দেন কারণ তখন তার স্ত্রী রোকাইয়া (রাসূল সাঃ এর কন্যা) অসুস্থ ছিলেন। “The Prophet told his son-in-law ‘Uthman’ to stay at home and tend his sick wife.” (Muhammad his life based on the earliest sources by Martin Lings, পৃষ্ঠা ১৩৮)। আমরা এখানে সুস্পষ্ট দেখতে পাই শুধুমাত্র অসুস্থ স্ত্রীর দেখাশোনার জন্য তিনি বদর যুদ্ধের বাহিনীতে যোগদান থেকে বিরত থাকলেন স্বয়ং রাসূল (সাঃ) এর নির্দেশে। অথচ সে সময় মদীনাতে অন্যান্য নারীগণ উপস্থিত ছিলেন যারা সহজেই রোকাইয়ার সেবা করতে পারতেন। সাওদা (রাঃ) রাসূল (সাঃ)-এর স্ত্রী; ফাতেমা (রাঃ) ও উম্মে কুলসুম (রাঃ)- রোকাইয়া দু’বোন; উম্মে আয়মান ও খাওলাসহ অনেকেই রোকাইয়ার খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তদুপরী রাসূল (সাঃ) স্ত্রীর সেবার জন্য স্বামীকেই দায়িত্ব দিলেন।
এবার আসা যাক মেনোপজ সম্পর্কে। অনেক সময় স্ত্রীদের অভিযোগ থাকে তাদের শাশুড়িদের বিরুদ্ধে যে তারা খিটখিটে, ভুলো মনা হয় এবং ছোটখাট ব্যাপার নিয়ে বকবক করতে থাকে। এই সমস্যাগুলোর পেছনে একটা বড় কারণ সাধারণত মেনোপজ। মেনোপজ হল মহিলাদের মাসিক স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া। সাধারণত গড়ে ৫০ এর পরে নারীর মেনোপজে যায়। তবে ৪০ থেকে ৫৯ বয়সের মধ্যে যেকোন সময়ে এটা ঘটতে পারে। এ সময়ে মহিলাদের ডিম্বাশয়গুলো (Overies) কম পরিমাণে এসট্রোজেন ও প্রাজেসটেরন (Estrogen and Progesterone) হরমোন তৈরি করে। মূলত: এই হরমোন দু’টিই নারীদেহে মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণ করে। সাধারণত নারীরা এই বয়সেই শাশুড়ি হয়ে থাকে। ফলে অন্যান্য কারণের পাশাপাশি এ কারণটিও তার আচরণকে প্রবলভাবে প্রভাবিত করে। একজন স্ত্রীর যদি Menopause-এর লক্ষণগুলো জানা থাকে তবে শাশুড়ির সঙ্গে সম্পর্ক তৈরী অনেকটা সহজ হয়। নীচে মেনোপজ এর লণগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলঃ
১. Hot flashes:
গরম ঝাটকা লাগা মেনোপজের একটি সাধারণ লক্ষণ। এসময় বুক-মাথা গরম হয়ে যায়, অনেক সময় চামড়া লাল হয়ে যায় এবং অনেকে ঘামতে শুরু করে। এসময় অস্বস্তি ও অসুস্থ বোধ হয়ে থাকে। অনেক সময় মাথা ঘুরায়, মানসিকভাবে বিহ্বল ও হতবুদ্ধি লাগে। অনেক সময় বুক ধড়ফড় করে।
২. মাথা ব্যথা, রাতে ঘামানো, ঘুমের ব্যাঘাত ও কান্তিবোধঃ
ঘুমের সমস্যা ও ঘুমের মধ্যে হঠাৎ ঘেমে গিয়ে উঠে পরা প্রভৃতি কারণে এ সময় মেজাজ খিটখিটে ও সবকিছুতে বিরক্তিভাব তৈরি হয়। যার থেকে অল্পতেই রেগে যাওয়া বা ঘ্যানঘ্যানে স্বভাবের হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক।
মূলত: মেনোপজের শারীরিক লক্ষণগুলো একেকজনের জন্য একেক রকম ও একেক মাত্রার হয়। যেমন পশ্চিমা দেশগুলোতে ১৪% মহিলা খুব তীব্র শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় পড়ে এ সময়ে।
মেনোপজে যে মানসিক সমস্যাগুলো হয় তাও শারীরিক সমস্যাগুলোর মতই একেক জনের একেক রকম হয়। সব থেকে প্রচলিত যে মানসিক সমস্যার কথা বেশি শোনা যায় তা হলো-
১. Sadness বা দুঃখবোধ/বিষন্নভাব
২. Anxiet বা দুশ্চিন্তা
৩. Mood Swings বা অস্থিরতা
এসব সমস্যাগুলো নারীর কর্মদক্ষতা ও অন্যদের সঙ্গে সম্পর্কতে বিরূপ প্রভাব ফেলে। আজ এ পর্যন্তই। এ সম্পর্কিত আরও আলোচনা থাকবে পরবর্তী সংখ্যায়।

পর্ব-৬

 

মেয়েদের ফেসবুকে নিরাপত্তা

লাইফ স্টাইল


নারীদের ছবি ডাউনলোড করে সেই ছবিকে বিকৃত করা বা সেই ছবি দিয়ে ফেক অ্যাকাউন্ট তৈরি করার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে।

এসব প্রতিরোধ করার মতো তেমন শক্তিশালী ফিচার এতদিন ফেসবুকের কাছে ছিল না।

ছবি ডাউনলোড করা না গেলেও সেই ছবির স্ক্রিনশট দিয়ে তৈরি হয়ে যেত ফেক অ্যাকাউন্ট।

নারীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে এবার ফেসবুক নিয়ে এল নতুন দুটি টুল।
ফটো গার্ড : নারীদের বাঁচাতে ফেসবুক নিয়ে এসেছে নতুন দুটি ফিচার। প্রথম ফিচারটি হল ‘ফটো গার্ড’। এই টুলটি ব্যবহার করলে কেউ এই ছবিটি ডাউনলোড, শেয়ার বা মেসেঞ্জারেও কাউকে পাঠাতে পারবের না।

অ্যানড্রয়েড ফোনগুলোতে ফেসবুকের অ্যাপে কেউ এই ফটোগুলোর স্ক্রিনশটও নিতে পারবেন না। যখনই আপনি প্রোফাইল পিকচারে ‘ফটো গার্ড’ ব্যবহার করবেন, তখনই ফটোগুলোর চার দিকে নীল বর্ডার চলে আসবে এবং একটি নীল রঙের শিল্ড থাকবে। ফেসবুক এই শিল্ডের নাম দিয়েছে ‘সোমান’।

এই নীল শিল্ডের মাধ্যমেই বোঝা যাবে এই ছবিটিতে ‘ফটো গার্ড’ ব্যবহার করা রয়েছে।

ফটো ফিল্টার : ফেসবুকের দ্বিতীয় ফিচারটি হল এক ধরনের ‘ফটো ফিল্টার’। এই ফিল্টারের মাধ্যমে ছবিগুলোতে বিভিন্ন জায়গার শিল্পের ডিজাইন ব্যবহার করা যাবে। ছবিতে এই ফিল্টার লাগালে, সেই ছবি ডাউনলোড করার প্রবণতা অনেকটাই কমে যায়।

এতদিন ধরে বহু নারী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেন। দুটি ফিচারই ফেসবুকের নিউজ ফিডে প্রোমোট করা হবে। ফিচার দুটি পুরোপুরি চালু হয়ে যাবে আগামী ২৭ জুনের মধ্যে।

সূত্রঃ যুগান্তর