banner

বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 635 বার পঠিত

 

রূপান্তরের যাত্রা – পর্ব ৭


তাহনিয়া খান


বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

Rabbish rahli sadri wa yas-sir li amri wahloul uqdatam mil-lisaani yafqahu qawli.
O my Lord! expand me my breast; Ease my task for me; And remove the impediment from my speech, So they may understand what I say[20:25-28]

উমরাহ্‌ করার জন্য তাওয়াফ করা শুরু করলাম। সাতবার কাবা ঘরকে ঘড়ির উল্টা দিকের মত করে ঘুরলে একবার তাওয়াফ করা হয়। এত মানুষের ভিড়ে আমরাও আস্তে আস্তে মিশে গেলাম। ঘোরার সময় যা দোয়া মনে আসছিল তাই পড়ছিলাম। সাথে বই ছিল, সেটা দেখেও দোয়া পড়ছিলাম।

আমি যতবার তাওয়াফ করেছি ততবার আমার ভাইয়ের কষ্ট হয়েছে। মানুষের ধাক্কা যেন না লাগে, সেজন্য সে আমাকে আমার পিছন থেকে তার দু’হাত দিয়ে আগলে রেখে চলতো। আল্লাহ্‌র কি রহমত, এত মানুষের ভিতরে আমার এক ফোঁটাও ধাক্কা লাগেনি। যখনি মানুষের ভিড় দেখেছি তখনই আমি ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ পড়া শুরু করে দিতাম। কখনো জোরে , কখনো বা মনে মনে। আর আল্লাহ্‌ যে কীভাবে এত ভিড়ের মাঝে আমাকে রাস্তা তৈরি করে দিতেন, তা আল্লাহ্‌ই জানেন।

নীচে তাওয়াফের সময় একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটতো। যতবার নীচে তাওয়াফ করতাম, ততবার ভিড়ের মাঝে হঠাত করে সামনে ফাঁকা হয়ে যেত আর কোথা থেকে যেন ঠাণ্ডা বাতাস আসতো।

যাইহোক, তাওয়াফের পর মাকামে ইবরাহীমের পিছনে দুই রাকাআত নামাজ পড়ে জমজমের পানি খেয়ে শুরু করলাম সায়ী করা। সায়ী করার সময় আমার হাঁটার স্পীড বেড়ে গেলো। আমি কোন দিকে না তাকিয়ে হেঁটে যাচ্ছি আর দোয়া পড়ছি। ভাবছিলাম আমরা এখন সায়ী করি টাইলস দেওয়া ঠান্ডা রাস্তায়। আর বিবি হাজেরা (র: ) যখন সাতবার দৌড়িয়েছিলেন সাফা পাহাড় থেকে মারওয়া পাহাড় পর্যন্ত ঠিক এই রাস্তাতেই, তখন তো এমন টাইলস দেওয়া রাস্তা ছিল না, ফ্যান আর এসিও ছিল না। প্রখর রোদ্রে পানির খোঁজে বাচ্চাকে রেখে দুই পাহাড়ের মাঝে দৌড়াদৌড়ি করছিলেন। এসব চিন্তা করতে করতে কেমন এক ঘোর লাগা অবস্থায় ছিলাম আমি। আমার মাঝে সেই হাঁটার জোশ চলে আসছিল। একটা সময় দেখলাম আমাকে পিছন থেকে ডাকা হচ্ছে। আমি ফিরে তাকিয়ে দেখি দলের অনেক আগে চলে এসেছি। আমার ভাইও আমার সাথে নেই। আবার দলের ভিতর এসে একসাথে সায়ী করা শেষ করলাম।

উমরাহ্‌ শেষ, এখন হোটেলে গিয়ে চুল কেটে এহরাম মুক্ত হবার পালা। হোটেলের পথে যেতেই অনেক নাপিতের দোকান। আমার ভাই এক দোকানে ঢুকলো চুল কাটতে। আমি বাইরে অপেক্ষা করছিলাম। এত পানির পিপাসা পেয়েছিল যে সামনে কিছু দোকানে গিয়ে জুসের খোজ করছিলাম। ফ্রেশ দুই গ্লাস জুস কিনে আবার আসলাম ভাই যেখানে চুল কাটছিল সেখানে। চুল কাঁটা শেষ নাকি দূর থেকে উকি দিলাম। দোকান খালি। শুধু একজন কাস্টমার। আত্মা ধক করে উঠলো । আমার ভাই গেল কই ? আমি কি ঠিক দোকানের সামনেই আসলাম ? ভাইয়ের নতুন ফোন নাম্বারটাও তো নেওয়া হয়নি। এখন কি করবো ? ভাইকে খুজব নাকি হোটেলে ফিরে যাব ? কয়েক সেকেন্ডের মাঝে এত কিছু ভেবে ফেললাম। ভাবতে ভাবতেই দেখি সেই কাস্টমার নাপিতের সাথে কথা বলতে বলতে বের হচ্ছে। গলা তো ভাইয়ের মতই লাগছে দেখি। দোকান থেকে বের হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বড় এক হাসি দিল। ইয়া আল্লাহ্‌ ! এইটা দেখি আমার ভাই। পুরো বেল মাথা। আমি কি বোকা, তাকে চিনতেই পারিনি। সে যে এমন নেড়া হবে ভাবতেই পারিনি। ভেবেছিলাম চুল ছোট করবে। সে বলেছিল নেড়া হবে না। কিন্তু চুল কাটার সময় সে মত পরিবর্তন করে। আমার জানে পানি ফিরে আসলো। আমার অবস্থা শুনে সে হাসছিল।

হোটেলে গিয়ে সে আমার চুল কেটে দিল। গোসল করেই আবার মসজিদের দিকে রওনা দিলাম জুম্মার নামাজের জন্য। অসম্ভব ভালো লাগা কাজ করছিল মনে। এত সহজে উমরাহ্‌ করে ফেলেছি, ভাবতেই অবাক লাগছিল।

হজ্জের সপ্তম শিক্ষা- মানুষ যখন কোন ভাল কাজ করার চেষ্টা করে, আল্লাহতায়ালা সেই চেষ্টার জন্য কাজটাকে সহজ করে দেন। উমরাহ্‌ শেষে মনে হচ্ছিল, এত সহজ উমরাহ্‌ করা ? আসলে আল্লাহ্‌ই সহজ করে দিয়েছিলেন।

পর্ব-৬

Facebook Comments