banner

মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 1476 বার পঠিত

 

বিয়ে ও পরিবার সমকালীন জিজ্ঞাসা ৭

কানিজ ফাতিমা


গত পর্বে আমরা গর্ভকালীন নারীর মানসিক অবস্থা সম্পর্কে জেনেছি। এ পর্বে আমি আলোচনা করবো মেনোপজ (Menopause) নিয়ে। তার আগে গত পর্বের রেশ ধরে দু’একটি কথা বলে নেই। আমরা অনেক সময়ই লক্ষ্য করি আমাদের সমাজে স্ত্রীর সেবা করাকে ভালো চোখে দেখা হয় না। এটা অনেকটা পৌরুষ হানিকর কাজ মনে করা হয়। অনেকে আরও একটু আগ বাড়িয়ে একে অনৈসলামিক কাজও মনে করেন। এটি সম্পূর্ণ ভুল একটি ধারণা। ইসলামে অসুস্থ স্ত্রীর দেখাশোনাকে স্বামীর গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর দৃষ্টান্ত আমরা ইসলামের ইতিহাসে দেখতে পাই। বদর যুদ্ধের সময় মুসলমানগণ সংখ্যায় কম ছিলেন। সেসময় মদীনাতে মাত্র ৭৭ জন সমর্থ মোহাজির পুরুষ ছিলেন। তিনজন বাদে এদের সবাই যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। তালহা ও সা’দ (রাঃ) সেই মুহূর্তে সংবাদ সংগ্রহের কাজে মদীনার বাইরে ছিলেন বলে বাহিনীতে যোগ দিতে পারেননি। তার তৃতীয় ব্যক্তি যিনি মদীনাতে উপস্থিত থেকেও বাহিনীতে যোগ দেননি তিনি হলেন ইসলামের ইতিহাসে প্রথম সারির সাহাবী উসমান (রাঃ)। যদিও সে সময় মুসলিম বাহিনীতে বেশী সংখ্যক যোদ্ধার দরকার ছিল তথাপি রাসূল (সাঃ) নিজেই উসমান (রাঃ) কে মদীনায় থাকতে নির্দেশ দেন কারণ তখন তার স্ত্রী রোকাইয়া (রাসূল সাঃ এর কন্যা) অসুস্থ ছিলেন। “The Prophet told his son-in-law ‘Uthman’ to stay at home and tend his sick wife.” (Muhammad his life based on the earliest sources by Martin Lings, পৃষ্ঠা ১৩৮)। আমরা এখানে সুস্পষ্ট দেখতে পাই শুধুমাত্র অসুস্থ স্ত্রীর দেখাশোনার জন্য তিনি বদর যুদ্ধের বাহিনীতে যোগদান থেকে বিরত থাকলেন স্বয়ং রাসূল (সাঃ) এর নির্দেশে। অথচ সে সময় মদীনাতে অন্যান্য নারীগণ উপস্থিত ছিলেন যারা সহজেই রোকাইয়ার সেবা করতে পারতেন। সাওদা (রাঃ) রাসূল (সাঃ)-এর স্ত্রী; ফাতেমা (রাঃ) ও উম্মে কুলসুম (রাঃ)- রোকাইয়া দু’বোন; উম্মে আয়মান ও খাওলাসহ অনেকেই রোকাইয়ার খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তদুপরী রাসূল (সাঃ) স্ত্রীর সেবার জন্য স্বামীকেই দায়িত্ব দিলেন।
এবার আসা যাক মেনোপজ সম্পর্কে। অনেক সময় স্ত্রীদের অভিযোগ থাকে তাদের শাশুড়িদের বিরুদ্ধে যে তারা খিটখিটে, ভুলো মনা হয় এবং ছোটখাট ব্যাপার নিয়ে বকবক করতে থাকে। এই সমস্যাগুলোর পেছনে একটা বড় কারণ সাধারণত মেনোপজ। মেনোপজ হল মহিলাদের মাসিক স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া। সাধারণত গড়ে ৫০ এর পরে নারীর মেনোপজে যায়। তবে ৪০ থেকে ৫৯ বয়সের মধ্যে যেকোন সময়ে এটা ঘটতে পারে। এ সময়ে মহিলাদের ডিম্বাশয়গুলো (Overies) কম পরিমাণে এসট্রোজেন ও প্রাজেসটেরন (Estrogen and Progesterone) হরমোন তৈরি করে। মূলত: এই হরমোন দু’টিই নারীদেহে মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণ করে। সাধারণত নারীরা এই বয়সেই শাশুড়ি হয়ে থাকে। ফলে অন্যান্য কারণের পাশাপাশি এ কারণটিও তার আচরণকে প্রবলভাবে প্রভাবিত করে। একজন স্ত্রীর যদি Menopause-এর লক্ষণগুলো জানা থাকে তবে শাশুড়ির সঙ্গে সম্পর্ক তৈরী অনেকটা সহজ হয়। নীচে মেনোপজ এর লণগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলঃ
১. Hot flashes:
গরম ঝাটকা লাগা মেনোপজের একটি সাধারণ লক্ষণ। এসময় বুক-মাথা গরম হয়ে যায়, অনেক সময় চামড়া লাল হয়ে যায় এবং অনেকে ঘামতে শুরু করে। এসময় অস্বস্তি ও অসুস্থ বোধ হয়ে থাকে। অনেক সময় মাথা ঘুরায়, মানসিকভাবে বিহ্বল ও হতবুদ্ধি লাগে। অনেক সময় বুক ধড়ফড় করে।
২. মাথা ব্যথা, রাতে ঘামানো, ঘুমের ব্যাঘাত ও কান্তিবোধঃ
ঘুমের সমস্যা ও ঘুমের মধ্যে হঠাৎ ঘেমে গিয়ে উঠে পরা প্রভৃতি কারণে এ সময় মেজাজ খিটখিটে ও সবকিছুতে বিরক্তিভাব তৈরি হয়। যার থেকে অল্পতেই রেগে যাওয়া বা ঘ্যানঘ্যানে স্বভাবের হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক।
মূলত: মেনোপজের শারীরিক লক্ষণগুলো একেকজনের জন্য একেক রকম ও একেক মাত্রার হয়। যেমন পশ্চিমা দেশগুলোতে ১৪% মহিলা খুব তীব্র শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় পড়ে এ সময়ে।
মেনোপজে যে মানসিক সমস্যাগুলো হয় তাও শারীরিক সমস্যাগুলোর মতই একেক জনের একেক রকম হয়। সব থেকে প্রচলিত যে মানসিক সমস্যার কথা বেশি শোনা যায় তা হলো-
১. Sadness বা দুঃখবোধ/বিষন্নভাব
২. Anxiet বা দুশ্চিন্তা
৩. Mood Swings বা অস্থিরতা
এসব সমস্যাগুলো নারীর কর্মদক্ষতা ও অন্যদের সঙ্গে সম্পর্কতে বিরূপ প্রভাব ফেলে। আজ এ পর্যন্তই। এ সম্পর্কিত আরও আলোচনা থাকবে পরবর্তী সংখ্যায়।

পর্ব-৬

Facebook Comments