banner

বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 1070 বার পঠিত

 

সোনামণিদের দাঁতের যত্ন

ডা. ফাতিমা খান


গর্ভাবস্থায় আপনি যেসময় অনাগত সন্তানটার ছোট্ট মিষ্টি অবয়ব কল্পনায় ভেবে আপনার সব ক্লান্তি আর কষ্টগুলো ভুলে থেকেছেন, ঠিক ওই সময়েই আর সব অংগ প্রত্যঙ্গ এর সাথে আপনার শিশুর দুধ দাঁত আর স্থায়ী দাঁতের গঠন শুরু হয়েছিল। গর্ভবতী মায়ের দৈনিক খাবারের তালিকায় তাই যথেষ্ঠ পরিমাণ ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার থাকতে হয়। আপনি ঠিকমতো খেয়েছিলেন তো?

ছয় মাস বয়সে সাধারণত একটি শিশুর প্রথম দুধ দাঁত আসে। শিশুর গঠন,পুষ্টি ও স্বাস্থ্যভেদে অথবা কোন কারণ ছাড়াই সময়টা কিছু আগে বা পরেও হতে পারে। অনেক শিশু মুখে দাঁত নিয়েই জন্মগ্রহণ করে। এ ধরনের দাঁতকে বলে ”ন্যাটাল টুথ”। আবার জন্মের প্রথম মাসে কারও কারও প্রথম দাঁতটি দেখা যায়, যাকে বলা হয় ”নিওন্যাটাল টুথ”। সাধারণত প্রথম দাঁতটি উঠার কিছুদিন পরই আসে ঠিক পাশের দ্বিতীয়টি।

সন্তানের দু’দাঁতের ভুবনজয়ী হাসিটিকে স্মৃতিবন্দী বা ক্যামেরাবন্দী করেননি এরকম মা বাবা আজকাল হয়ত পাওয়া বড় কঠিন ! কিন্তু একটি ব্যাপার আমাদের অনেকেরই অজানা , বা জানা থাকলেও হয়ত চর্চা নেই; তা হল, আপনার শিশুর মুখে দুধ দাঁতগুলো আসার পর থেকেই এর নিয়মিত যত্ন নেয়া উচিৎ। ক্যারিজ মুক্ত ও পরিচ্ছন্ন দাঁত, পরিষ্কার মাড়ি, জিহ্বা ও মুখগহ্বর আপনার শিশুর সার্বিক সুস্থতা ও বৃদ্ধির জন্য অত্যাবশ্যক। অন্যথায় ওর মুখের ভেতরটিই হতে পারে ব্যাকটেরিয়া ও ফাংগাসের আবাস্থল।

আপনার শিশুর স্থায়ী দাঁতের গঠন ও বৃদ্ধির জন্য দুধদাঁত গুলোর সুস্থতা জরুরী। দুধদাঁত কিছুদিন পর পড়ে গিয়ে নতুন দাঁত আসবে এরকমটা ভেবে আমরা অনেক সময় বাচ্চার দুধদাঁতের প্রতি যত্নবান হইনা। এমনটা ভাবা উচিত নয়। শিশুর দাঁতের যথাযথ গঠনের জন্য আমরা নিম্নোক্ত বিষয়গুলো মেনে চলতে পারি।

১.শিশুর দাঁত ওঠার আগে থেকেই নরম তুলা না কাপড় দিয়ে মাড়িটি পরিষ্কার করে দিবেন। তাতে ক্যান্ডিডোসিস বা ওরাল থ্রাশ হওয়ার সম্ভবনা থাকেনা।

২. শিশুর দাঁত ওঠার পর থেকে প্রতিদিন দুবার (সকালে ও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে) ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট তুলা বা নরম কাপড়ে লাগিয়ে দাঁত পরিষ্কার করে দিন। যদি সম্ভব হয় শিশুদের উপযোগী নরম ব্রাশ ব্যবহার করতে পারেন। বাজারে বিভিন্ন রঙ বেরং এর ও কার্টুনওয়ালা কিডস টুথব্রাশ কিনতে পাওয়া যায়। আপনার বাচ্চাকে প্রথম থেকে টুথব্রাশে অভ্যস্ত করাতে পারলে ভাল হয়। তা না হলে দেড় দুবছর বয়স পর্যন্ত তুলা বা গজ ব্যবহার করতে পারেন।

৩. প্রতি ছ’মাসে একবার শিশুদের দাঁতের একবার চেক আপ করিয়ে নেয়া ভাল। তাতে যেকোন সমস্যা প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে ও সহজভাবে চিকিৎসা শেষ করা যায়। এর আরেকটা ইতিবাচক দিক হল শিশু যখন কোন আপারেটিভ পদ্ধতি ছাড়া এমনিতেই ডেন্টিস্টের অফিসে আসা যাওয়া করবে তখন তার মন থেকে ডাক্তার, ডেন্টাল চেয়ার ও যন্ত্রপাতি জনিত ভয় দূর হয়ে যাবে। বিদেশে এর একটা প্রচলন থাকলেও আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ এখনো এ ব্যাপারে তেমন সচেতন হয়নি।

৪. যেসব শিশু ফিডারে দুধ বা পানীয় গ্রহণ করে তাদেরকে রাতের বেলা ফিডার খেতে খেতে ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস করানো যাবেনা। এটা একপর্যায়ে দাঁতের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। “নার্সিং বটল ক্যারিজ” বা “বেবি বটল টুথ ডিকে” এরই কুফল। এর ফলে শিশুর সামনের দাঁতগুলো ক্যারিজ আক্রান্ত হয় এবং নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই ভেঙে যায় বা ইনফেকশন দেখা দেয়। ফর্মুলা দুধে বা ফলের রসে মেশানো চিনি মূলত এ ক্ষয় রোগের কারণ।

৫. মিষ্টি জাতীয় খাবার কার না প্রিয়? আর তা যদি হয় চকলেট, চুইংগাম, আইস্ক্রিম, মার্শম্যালো? তাই আপনার শিশুকে এগুলো থেকে পুরোপুরি বিরত না রেখে পরিমানের নির্দিষ্টতা করে দিন ও খাওয়ার পর ভাল করে দাঁত ও মুখ পরিষ্কার করে নিতে বলুন। সবচেয়ে ভাল হয়, সন্ধ্যার পর মিষ্টি জাতীয় খাবার কম খাওয়া বা না খাওয়া। কেননা রাতের বেলা মুখের ভেতর ব্যাকটেরিয়া তুলনামূলক ভাবে বেশী সক্রিয় থাকে।

৬. কোল্ড ড্রিংক্স, বাজারের প্যাকেটজাত চিপ্স, অতিরিক্ত চিনিওয়ালা ক্যান্ডি ইত্যাদি শিশুদের না দেওয়াই ভাল। এগুলো কোন উপকার না করলেও অনেকক্ষেত্রে দাঁত ও মাড়ির জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

৭.শিশুর সার্বিক সুস্থতা ও সঠিক শারিরীক গঠনে সুষম ও টাটকা খাবারের জুড়ি নেই। তাদের প্রতিদিনের খাবারের মেন্যু, পরিমাণ ও খাবারের সময় নির্বাচনে আপনাকে সচেতন হওয়ার বিকল্প আর কোন উপায় নেই।

আমাদের শিশুরা সুস্থ থাকুক, ভাল থাকুক এটাই আমাদের কাম্য। সব শিশুর মুখে থাকুক সুস্থ, নির্মল হাসি। তার জন্য আমাদের, আপনাদের একটু যত্ন একটু সদিচ্ছা আর চেষ্ট থাকলেই হবে। ছবিতে আছেন: আয়ান(৬)

Facebook Comments