banner

বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 789 বার পঠিত

 

কাঠ পেন্সিল অথবা সবুজ পাতা

সামিয়া কালাম


নিঃসঙ্গতার অনেক বড় সঙ্গ আছে। আর সে সঙ্গ টা হল নিজের মন। নিজেকে বই এর মতো,অথবা নতুন কেনা শাড়ির মতো আবার উল্টে পাল্টে দেখা যায়। আজ একটা সন্ধ্যা নামলো। নিজের মত করে আমি ব্যলকনিতে একলাটি বসে রইলাম। মাগরিবের আজানের পর ছেলেরা খেলা শেষে বাড়ি ফিরল। ওদের একসাথে নিয়ে নামাজ পড়লাম, সেটা আমি সব সময় চেষ্টা করি। সুখদেব সানা দা মেসেজ দিয়েছিলেন, লেখা চেয়েছেন, তার পাশা পাশি লিখেছেন “আপনার একটি ম্যাসেজ খুব ভালো লাগলো। নিয়মিত নামাজ পড়েন। বিষয়টা প্রত্যেকটা মুসলমানের অনুভব করা উচিত। আমার মতে, নামাজ আল্লাহ্ সৃষ্ট এমন এক শ্রেষ্ঠ ধর্মাচার, যা মানুষের মন-মেজাজ এবং শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখার উত্তম পন্থা।”
আমি নিজেকে ভালবাসি, সবচেয়ে বেশী। সবাই তাই বাসে, কেউ স্বীকার করে কেউ করে না।
মনকে স্থির করার জন্য দুটো পথ আছে… এক, নিজের মাঝে আয়ত্ত হওয়া।
দুই, বৃত্তের বাইরে যেয়ে, নিজের কষ্ট গুলোকে অন্যের সাথে ভাগাভাগি করে নেওয়া।
দ্বিতীয় টি খানিকটা রিস্কি। এখানে ভুল বোঝা বুঝির সম্ভাবনা অনেকটা বেশী। প্রত্যাশাও বেশী। কারণ, মানুষ বড্ড ভুল বোঝে, মানুষ বড্ড নিষ্ঠুর…।

“বলো কি তোমার ক্ষতি, জীবনের অথৈ নদী, পার হয় তোমাকে ধরে দুর্বল মানুষ যদি? ”
এই কথাগুল ভুপেন হাজারিকার গানের সিডি তেই বেশ মানায়, জীবনে পালন করতে গেলেই বিপত্তি…। ফ্রেন্ড হয়ে যাবে আন ফ্রেন্ড, বান্ধবি হয়ে যাবে ব্লক। তাই নিজের মতোই থাকা ভালো।
আজ “ভালো আছি ভালো থেকো” অনুষ্ঠানটি চৈতি ভাবির অনুরোধে দেখলাম। মানুষের যে কত রকমের কষ্ট থাকে!! নিজের দু এক দিনের অপ্রাপ্তি সেখানে নস্যি। কল্লাণ মন্ডল, গড়িয়া থেকে ফোনে বল্লেন, “ আমার ছেলে মেডিক্যালে থার্ড ইয়ারে পড়ে। পরীক্ষা চলছিল, একটাই ছেলে, হলের খাওয়া ভালো লাগে না, তাই বাইরে খেতে গেলো বাইকে করে। বাড়ি ফিরল লাশ হয়ে। আজ এক মাস ৬ দিন, আমি এখন নিজেকে সামলাই নাকি স্ত্রী কে। আমার বয়স ৫২ আর ওর ৪৮। কি করবো কিছুই বুঝে পাচ্ছি না!”

আর তাই আমি মনে মনে নিজের মনের গণ্ডি টাকে বড় করতে থাকি। ভাবতে থাকি, যে সকাল গুলোতে শ্রাবনের ধারার মতো পড়ুক ঝরে। পড়ুক ঝরে এই গান টা গাইতাম, ছেলেরা বলতো “ সক্কাল বেলা চিক্কুর দিতেসো ক্যান? ”

এতো খারাপ লাগতো নিজের কাছে, একটা গানই তো গাই। কিন্তু যে সকাল গুলোতে প্রতিদিনের নিয়মে সূর্য উঠবে, সান বার্ড টা যেয়ে বসবে কোন ডালে, কিন্তু আমার ছেলেরা আমার কাছে থাকবে না! হয়তো ওরা থাকবে কোন দূর দেশে, অথবা হোস্টেলে, সেদিনও কি আমার ইচ্ছে হবে গান গাইতে। শীত কিংবা গ্রীষ্মে? এসব ভাবতে ভাবতে সময় কেটে যায়।
আজ খুব সুন্দর একটা দিন ছিল। স্কুল ছুটির পর ওয়াফিক দাঁড়িয়ে ছিল কালো রং এর একটা কাঠ পেন্সিল হাতে।

“মা জানো, আজ ম্যাথ স্যার একটা সারপ্রাইজ টেস্ট নিলো, এত্তগুল প্রশ্ন, আমি সব গুলো এটেন্ড করতে পারিনি। কেউই পারেনি, কিন্তু আমি সব্বার মাঝে থার্ড হলাম, ম্যাথ স্যার প্রথম তিন জন কে একটা গিফট দিল… এই পেন্সিল টা কি জোসসস না দেখো মা???”

নিতান্ত সাধারণ একটা কাঠ পেন্সিল, সে তার প্রাপ্তির মহিমায় কতটা অসাধারণ হয়ে গেলো! কতটা আনন্দ অশ্রু এনে দিল, তা লিখে শেষ করা যাবে না। আর তাই আমি আবার আমার গণ্ডিতে ফিরে আসতে চাইলাম। পারলামও হয়ত। সন্ধ্যায় যখন ছেলেদের নিয়ে পড়াতে বসেছি, দেখি উসমানের ব্যাগ এ দুটো কালার করা পেইজ। দুটোতেই স্টার। ভালো কালার গুলো মিস রা বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। এক সময় দেয়াল জুড়ে লাগিয়ে রাখতাম। এখন আর রাখি না। অন্তত ছবি তুলে রাখি।
মনে থাকুক আমারও দুটি ছেলে ছিল। ওরা বড় হবে একদিন, চড়বে গাড়ি, আর তখন আমি কাটব ঘাস।

Facebook Comments