banner

সোমবার, ২০ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 722 বার পঠিত

 

রাহাতের বিয়ে

                                              জুয়াইরিয়া জাহরা


বিয়ের উপহারে যারা এখনো কাঁচের প্লেট- পিরিচ উপহার দেন, তাদের আমি চূড়ান্ত অপছন্দ করি!
ব্যাপারটা আমার কাছে কিছুটা অপমানজনকও লাগে। যাবো- খাবো; তাই দিয়ে দাও কিছু একটা, এমন মনে হয়। কিন্তু, রাহাতের বিয়েতে আমি প্লেট- গ্লাস উপহার দিবো, এটা আমি গ্র‍্যাজুয়েশনের শেষ দিনের করা গুরুত্বপূর্ণ ওয়াদা। বলেছিলাম, একটা প্লেট আর একটা গ্লাস হবে আমার পক্ষ থেকে রাহাত দম্পতির জন্য উপহার আর এ উপহার তাদের প্রতিদিন ব্যাবহার করতে হবে।
কিন্তু, এমন হুট করে ওর বিয়েটা যে ঠিক হয়ে যাবে, বুঝতে পারিনি। সবচাইতে বড় বিষয়, ছেলেটা যে মনে করে আমাকে দাওয়াত দিবে, এমনটা আশাও করিনি। দিনাজপুরে আছি, কারো সাথে তেমন যোগাযোগ নেই, খুব কষ্ট করে আসিফ না সাকিব কার থেকে যেন আমার নাম্বার যোগাড় করে ফোন দিয়েছে সকালে। খুব করে বলেছে যেন যাই ওর বিয়েতে।
এখন দুই সপ্তাহের মধ্যে রুপার প্লেট গ্লাস কোথা থেকে বানানো যায় ভাবছি। বাজেটে কুলালে গোল্ড প্লেট করে ফেলবো, দেখি। রাফসান ফিরুক, আজকেই কথা বলতে হবে। ভদ্রলোক এখন আর আমার কর্মকান্ডে তেমন অবাক হন না। তবে রুপার প্লেট গ্লাস বানাতে চাই শুনলে আকাশ থেকে পড়তে পারেন!
আসলে, আজকে কিছুই করতে ইচ্ছে হচ্ছে না। প্রায় ৪/৫ বছর আগের স্মৃতি একটার পর একটা ফ্ল্যাশব্যাক হচ্ছে। রাফসান অফিসের জন্য বের হলে আমি একবার ছাদে যেয়ে গাছগুলো দেখে আসি। ডিমের খোসা-কলার খোসা জমিয়ে ব্লিন্ড করে সার বানিয়েছিলাম গতকাল। আজকেই নতুন গাছগুলোর জন্য মাটি রেডি করতাম। অনেকদিন হয় একুরিয়ামটা পরিষ্কার করা হয় না। আজকে করবো ঠিক করেছিলাম। কিন্তু কোন কাজই হাতে উঠছে না! বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি কতক্ষণ ধরে।
রাহাত আমার ভার্সিটি জীবনের একজন কাছের বন্ধু। বন্ধুর চাইতে বড় কথা ও ছিল আমার একজন প্রিয় মানুষ। যাবতীয় কথা, লেইম থেকে সিরিয়াস, একটা সময় ওর সাথে শেয়ার করেছি। বলতাম, ‘লুঙি খুব ক্ষ্যাত’, বলতাম, ‘ নিজের কলিজাটা পিরিচে তুলে দিতে পারবো, কিন্তু পিড়ি-বেলনে ঘষে ঘষে রুটি বানাতে পারবো না’! ও বলতো, ‘লুঙি যে মেয়ে সহ্য করতে পারবে না, তার কপালে বিয়ে নেই! ‘ আর রুটি ছাড়া সকালে নাকি নাস্তাই হয় না। তর্ক করেছি। বিতর্ক করেছি।

ছেলেটা বড় আবেগী। ওর কথা শুনতাম। একটা বউ থাকবে। খুব সাধাসাধি রকমের বউ। একই গ্লাসে পানি খাবে। একই প্লেটে ভাত মাখাবে। লোকমা তুলে খাইয়ে দিবে। মাথায় একটু লজ্জা লজ্জা ঘোমটা থাকবে। মানুষ যখন একসাথে সুইজারল্যান্ড এ ঘুরতে যাওয়াকে চরম রোমান্টিক মনে করে তখন একজন মানুষ এক প্লেটে ভাত খাওয়ার ব্যাপারটায় এতো প্রেম খুঁজে পাচ্ছে, ভাবতেই অবাক লাগতো! ওর এমন সাদাসিধে – অতি সাধারণ স্বপ্নের গল্প যেন মুখস্থ হয়ে গিয়েছিলো আমার!

একবার ক্লাসের অনেকে মিলে বান্দরবান বেড়াতে গেল। অনেকের মধ্যে রাহাতও ছিলো। ফিরে এলে জিজ্ঞেস করলাম, ‘অনুভূতি কি?’ ও বললো, ‘ একই সাথে প্রবল দুঃখ আর প্রচন্ড আনন্দ। জীবনে একবার কাছের মানুষটাকে নিয়ে বান্দরবান যেতে চাই।’ শুনে খুব অন্যরকম লাগছিলো। মানুষ তার জীবনের অসাধারণ স্মৃতিগুলো ভালোবাসার মানুষের সাথে ভাগ করে নিতে চায়। এতো সাধারণ ছোটখাটো চাওয়া গুলো নিয়েও যে স্বপ্ন দেখা যায়, আমি জানতাম না!

রাহাত একটু বেশীই ভালো ছেলে। ভালোটার হাতে নিশ্চয়ই আরেকটা ভালো মেয়ের হাত পড়বে! যতই সমস্যা হোক আর রাফসান যতই না নিয়ে যাওয়ার ছলচাতুরী খেলুক, আমি রাহাত দম্পতিকে এক পলক দেখার জন্য ঢাকায় উড়ে যাবো! ওদের জন্য আসীমের কাছে প্রার্থনা করবো যাতে মহামহিম তাঁর ভালোবাসার ছায়ার নিচে ওদের জায়গা করে দেন। ওদের জীবন সহজ থেকে সহজতর করে দেন।

Facebook Comments