banner

বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 944 বার পঠিত

 

মনের জানালা সৌন্দর্য

আফরোজা হাসান


প্রতিটি মানুষের মধ্যেই হিলিং পাওয়ার আছে। হিলিং মানে আরোগ্য। হিলিং পাওয়ার মানে, আরোগ্য লাভের ক্ষমতা। যার প্রয়োগে একজন ব্যক্তি অন্য যে কারো তরে যেমন আশা জাগানিয়া হতে পারে, তেমনি হতে পারে নিজেই নিজের সাপোর্ট সিস্টেম। অর্থাৎ, যে কোন প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে নিজেই নিজেকে বের করে নিয়ে আসার ক্ষমতা কিংবা অন্তত পক্ষে প্রচেষ্টা। হতাশার ঘোর অন্ধকারে মনের দরজা জানালা বন্ধ করে বসে না থেকে চারপাশ হাতড়ে যদি কয়েকটা পাথর খন্ডও মিলে যায়, তার দ্বারা নিজকে আলোকিত করার প্রচেষ্টা। স্টিভ মারাবলি খুব চমৎকার একটা কথা বলেছেন, “দ্য মোস্ট পাওয়ারফুল রিলেশনশিপ ইউ উইল এভার হ্যাভ ইজ দ্য রিলেশনশীপ উইথ ইউর সেলফ।” শুধু তাই না মানুষের সবচেয়ে বড় শক্তিও কিন্তু সে নিজেই। মানুষের দুর্বল হবার প্রথম ধাপটাই হচ্ছে, নিজকে ভুলে যাওয়া, নিজকে মূল্যায়ন না করা, নিজের ভেতরের শক্তিকে না চেনা, নিজের মধ্যের আলোকে না খোঁজা। মানুষের সুখ, শক্তি, আশ্রয় সবকিছুই হয় অন্য মানুষকে ঘিরে। মানুষ তার মনের এক মূহুর্তের শান্তির অনুভূতির জন্য মোহতাজ হয়ে যায় অন্য মানুষের। আমার কথার অর্থ এটা নয় যে, আমরা কাউকে ভালোবাসবো না, কারো মাঝে শান্তি, স্বস্থি খুঁজবো না, কাউকে নিজের ভরসায় আশ্রয়স্থল হতে দেবো না। সবকিছুই করবো কিন্তু সেই সাথে নিজেকেও মনে রাখবো, মূল্যায়ন করবো, নিজের সাথে গড়ে তুলবো চমৎকার বন্ধুত্ব, আত্মার সম্পর্ক। যাতে চলার পথে যদি কখনো কারো হাত ছুটে যায়, কারো সাথ ছুটে যায় তখন নিজেকে আঁকড়ে ধরে নিজেকে সামলে নেয়াটা অন্তত সম্ভব হয়।

আলো আঁধার পৃথিবীর স্বাভাবিকত্ব। চড়াই উৎরাই মানুষের জীবনের স্বাভাবিকত্ব। সময় কখনোই একরকম যাবে না! প্রিয়জনরা সর্বদাই পাশে থাকবে না! ঋতু চক্রের মতো বদলাবে কাছের মানুষদের রঙ-রুপ। সম্পর্কের বাঁধনে জোয়ার যেমন আসবে, ভাটাও আসবে। আপনজনেরা হাসাবে আবার কাঁদাবেও। সবার চেয়ে আপন যে জন সেও কখনো শ্রাবণে সিক্ত করবে, কখনো তপ্ত রৌদ্রে দাহন করবে! নিজেকে সবকিছুর জন্য প্রস্তুত রাখাটা জীবনে স্বস্থি ধরে রাখার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি। জীবন কখনো কখনো এমন মোড়ে নিয়ে যায় যেখানে নিজের কোন দোষ না থাকার পরেও ভুক্তোভোগী হতে হয়। আবার কখনো কখনো অনেক বড় ভুলও ক্ষমা পেয়ে যায় সময়ের উদারতায়। কখনো আমরা নির্দিষ্ট কোন কারণই খুঁজে পাই না ভোগান্তির পেছনে! ঠিক এমনি করে অনেক প্রাপ্তি যোগ হয় জীবন ভান্ডারে, যার কারণ জানার প্রয়োজনই বোধ করিনা। হুম, এটাই বলতে চাচ্ছি যে আমরা মানুষেরা অপ্রাপ্তির হিসাবে এত মশগুল থাকি যে প্রাপ্তিগুলো তেমন করে নজরেই আসে না। প্রতিকূল পরিবেশ-পরিস্থিতি, মানুষ আমাদেরকে যতটা না হতাশ করে, তারচেয়ে বেশি নিরাশ করে ইতিবাচকতার প্রতি আমাদের উদাসীনতা। আমরা মুখে মুখেই শুধু দাবী করি জীবন একটি পরীক্ষাক্ষেত্র। আমরা এখানে প্রতিমূহুর্তে পরীক্ষা দিচ্ছি। দুনিয়া আখেরাতের শস্যক্ষেত্র। আমরা নিজের জন্য ফসল ফলাচ্ছি। কিন্তু সত্যি কথা হচ্ছে, আমরা পরীক্ষা দিতে প্রস্তুতই নই। তাই পরীক্ষা এলে প্রশ্নপত্রের দিকে ভালো মতো নোটিশ না করেই হাত-পা এলিয়ে বসে যাই। অন্যের কষ্টার্জিত ফসলের পানে চেয়ে আমরা হাহাকার করি নিজের ভাঁড়ার ঘর শূন্য বলে। কিন্তু নিজের ভাঁড়ার ঘর পূর্ণ করার জন্য পরিশ্রম করতে আমরা নারাজ, অপারগ, নানান অভিযোগ, বাহানার বেড়াজালে বন্দী।

এমন অবস্থা থেকে পেতে চাইলে মুক্তি, নিজেকেই হতে হবে নিজের শক্তি। জানতে হবে জীবনের মূল লক্ষ্য, সেই উদ্দেশ্যে নিজকে করতে হবে দক্ষ। জীবন মানেই আলো আঁধারির খেলা, কখনো পাশে থাকবে কেউ কখনো শুধুই একলা। তবুও পাড়ি দিতে হবে দুর্গম পথ, নিজের সাথে নিতে হবে দৃঢ় শপথ! দুঃখ আসুক কিংবা সুখ, অন্তর কখনো হবে না আখিরাত বিমুখ… ইনশাআল্লাহ।।

Facebook Comments