banner

বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 863 বার পঠিত

 

আপনার বাসার সাহায্যকারী আপনার জন্য পরীক্ষা স্বরূপ।….শেষ পর্ব

তাহনিয়া খান


অত্যাচার করা যেমন অমানবিক, তেমনি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও তা গুরু দণ্ডনীয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাললাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম তাঁর মৃত্যুর আগেও অধিনস্ত সাহায্যকারীদের ব্যাপারে সাবধান করে দিয়েছিলেন। সাহায্যকারীদের হক আদায় কতটা গুরুত্বপুর্ন যে মৃত্যুর আগে তিনি সব কথা বাদ দিয়ে এই ব্যাপারেই সাবধান হতে বললেন! এটা আমরা কয়জন চিন্তা করি ?

ঘটনা ১,৩,৪,৫ এর ঘটনাগুলি পর্যালোচনা করি। যখন অধিনস্ত সাহায্যকারীরা ভুল করে, বেয়াদবি করে বা বড় ধরনের অঘটন ঘটায়, তখন নিজেকে স্থির রাখা অনেক সময়ই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে নিজেকে স্থির রেখে ঠাণ্ডা মাথায় কাজ করার প্রবণতা বজায় রাখতে হবে। রাগ করাও যাবে না। ব্যাপারটা যত সহজে লিখলাম, তত সহজ না। এটা প্রতি নিয়ত প্র্যাকটিসের ব্যাপার। একবার এক সাহাবী এসে নবীজীকে জিজ্ঞেস করলেন,আল্লাহর রাসূল! আমি খাদেমকে (কাজের লোক বা গোলামকে) কতবার ক্ষমা করব? নবীজী চুপ থাকলেন। সাহাবী আবার জিজ্ঞাসা করলেন। এবার নবীজী বললেন, প্রতিদিন সত্তরবার। তিরমিযী,হাদীস ১৯৪৯ রাসুলুল্লাহ সাল্লাললাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের হাদিসটি মাথায় গেঁথে ফেললে নিজেকে কন্ট্রোল করা অনেক সহজ হয়ে যায়।
যখন কোনো সাহায্যকারী কথা না শুনে, তাকে না রাখাই উত্তম। কারণ মনমালিন্য করে সংসারে অশান্তি রাখার কোনো মানে হয় না। সংসারে অশান্তির চেয়ে নিজের ঘরে দুটো কাজ বেশী করলে বরং মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকা যায়।

সাহায্যকারীদের ভালো কথা, আদর, ধর্মীয় কথা দিয়ে মোটিভেট করার চেষ্টা করাই শ্রেয়। সাহায্যকারী আপনার কাজে সাহায্য করবে। সারাক্ষণ যদি বকা ঝকা আর ধমকের মাধ্যমে তাকে অর্ডার করা হয় তাহলে সাহায্যের বদলে সে আপনাকে অসহযোগিতাই করবে। আপনি নিশ্চয়ই তার অসহযোগিতা পাওয়ার জন্য তাকে নিয়োগ দেননি। এক্ষেত্রে কৌশলী হতে হবে। অনেক পরিবারে দেখেছি তারা তাদের সাহায্যকারীদের এমন ভাবে রাখেন , দেখলে মনে হয় পরিবারেরই একজন সদস্য। ঘটনা ৯ ও ১০ এর কথা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। যদিও ঘটনা ২ এর মত ঘটনা ঘটে যেতে পারে। সেটাকে দূর্ঘটনা ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে।

কিছু মানুষ কখনোই তার স্বভাব পরিবর্তন করতে পারে না। এমন কিছু সাহায্যকারীদের দেখেছি যারা অন্যের বাসায় কাজ করে নিজের সন্তানদের শিক্ষিত করে স্বাবলম্বী করে ফেলেছে। আবার কাউকে দেখেছি স্বভাবের কারণে ভ্যান, রিক্সা, গরু,ছাগল কিনে দিয়েও কোনো লাভ করতে পারেনি। ঘটনা ৬,৭,৮ এর মত ঘটনাও আমাদের কাছে অপরিচিত নয়। অনেকেই তাদের সাহায্যকারীদের নীচু চোখে দেখে। ঠিকমত খাবার দেন না, দিলেও বাসী পচা খাবার দেন। আপনি নিজে যে খাবার পছন্দ করেন না, সেটা কেনো অন্যকে দিবেন? মুমিন তো সেই, যে নিজের জন্য যা পছন্দ করে, অন্যের জন্যও তাই পছন্দ করবে। অথচ এমন মানুষ দেখেছি, যিনি বোন প্লেট থেকে খাবার তুলে তার সাহায্যকারীকে খাবার দিয়েছেন। একটা হাদিস পড়েছিলাম, যেখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাললাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “ আল্লাাহ তাদেরকে তোমাদের অধীন করেছেন। তোমাদের কারো অধীনে যদি কেউ থাকে তাহলে সে যেন নিজে যা খায় তাকেও তা থেকে খাওয়ায়। নিজে যা পরিধান করে তাকেও তা থেকে পরিধান করায়। এবং তোমরা তাদের উপর সাধ্যের বেশি কাজ চাপিয়ে দিও না। যদি দাও তাহলে নিজেও সে কাজে তাকে সাহযোগিতা কর”। সহীহ বুখারী, হাদীস ২৫৪৫

রাসুলুল্লাহ সাল্লাললাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, “যখন খাদেম খাবার প্রস্তুত করে তোমার সামনে পেশ করে,তখন (পারলে তাকে তোমার সাথে বসিয়ে খাওয়াও) তাকে যদি তোমার সাথে বসিয়ে খাওয়াতে না পার অন্তত তার হাতে এক দুই লোকমা তুলে দাও। কারণ এ খাবার প্রস্তুত করতে গিয়ে (আগুনের তাপ ও) সকল কষ্ট তো সেই সহ্য করেছে”। সহীহ বুখারী,হাদীস ২৫৫৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৬৬৩

আমরা অনেকেই ভালো ভালো আমল করে থাকি। কিন্তু নিজের অজান্তেই সেই সব আমল নষ্ট করে ফেলি। বিশেষ করে মেয়েদের কথাই বলছি। এতক্ষণ এত কিছু লেখার মূল কারণ হচ্ছে নিজের আমলকে আগলে রাখার জন্য যত্নবান হওয়া এবং সেদিকে সজাগ দৃষ্টি স্থাপন করা। বেশীর ভাগ মহিলাই তার আমল নষ্ট করে ফেলে সাহায্যকারীদের সাথে দূর্ব্যাবহার করে এবং তাদের প্রাপ্য বা হক থেকে বঞ্চিত করে।

মনে রাখবেন, আপনার বাসার সাহায্যকারী কিন্তু আপনার জন্য পরীক্ষা স্বরূপ। তার সাথে খারাপ ব্যাবহারের কারণে আপনার আমল নষ্ট হয়ে যেতে পারে, আবার ভালো ব্যবহারের কারণে আমল বৃদ্ধি পেতে পারে।

১ম পর্ব

Facebook Comments