All posts by Oporajita

 

যৌতুক না পেয়ে নববধূকে শ্বাসরোধে হত্যা


নারী সংবাদ


মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের পয়সা গ্রামে যৌতুকের টাকা না পেয়ে নববধূ মিনারা আক্তার রুমাকে শ্বাসরোধে হত্যা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘাতক স্বামী ইলিয়াছ খান তার বসতঘরে রুমাকে গলাটিপে শ্বাসরোধে হত্যা করে বলে অভিযোগ গৃহবধূর পরিবারের। এদিকে ঘটনার পরপরই গৃহবধূর লাশ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ফেলে রেখেই স্বামী-শ্বশুর-শাশুড়িসহ বাড়ির লোকজন আত্মগোপনে চলে গেছে। খবর পেয়ে মঙ্গলবার রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নেয়। এ ঘটনায় গৃহবধূর ভাই মিজানুর রহমান তালুকদার লৌহজং থানায় অভিযোগ দাখিল করে। গতকাল বুধবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।

অভিযোগে জানা যায, এক বছর আগে উপজেলার খিদিরপাড়া গ্রামের মৃত সুরুজ তালুকদারের মেয়ে মিনারা আক্তার রুমাকে বিয়ে করে পয়সা গ্রামের আলাউদ্দিন খানের ছেলে ইলিয়াছ খান। বিয়ের সময় ভাই মিজানুর রহমান সাধ্যমতো দাবি পূরণ করলেও যৌতুকের টাকার দাবিতে রুমাকে নির্যাতন শুরু করে। মঙ্গলবার দুপুরে মোবাইলে রুমা টাকার জন্য ইলিয়াছ তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার কথা জানালে কষ্ট হলেও টাকার ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দেন মিজানুর। এর মধ্যে সন্ধ্যার আগে রুমা অসুস্থ হওয়ায় হাসপাতালে নেওয়ার খবর পেয়ে লৌহজং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে তার নিথর দেহ পড়ে থাকাতে দেখেন মিজানুর। এ সময় হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে আনার আগেই রুমার মৃত্যু হয়েছে।

রুমার পরিবারের অভিযোগ, গত এক বছরে রুমাকে তার স্বামী ইলিয়াছসহ সবাই মিলে একাধিকবার নির্যাতন করেছে। এ নিয়ে সর্বশেষ পারিবারিক সালিশ বৈঠকে রুমার ছোট ভাই বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর পর দাবি করা টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও যৌতুকলোভী ইলিয়াছ রুমাকে মঙ্গলবার সন্ধ্যার আগে গলাটিপে শ্বাসরোধে হত্যা করে। বিষয়টি বুঝতে পেরে অসুস্থ হওয়ার কথা বলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর রুমার মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে স্বামী ইলিয়াছ খান, শ্বশুর আলাউদ্দিন ও শাশুড়ি আনোয়ারা বেগমসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন গা-ঢাকা দেয়।

লৌহজং থানার ওসি মো. মনির হোসেন জানান, খবর পেয়ে লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্ত করতে বুধবার সকালে মুন্সীগঞ্জ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় গৃহবধূর ভাই মিজানুর রহমান তালুকদারের দাখিল করা অভিযোগ মামলায় নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।
সুত্রঃ সমকাল।

 

সন্তানকে ইতিবাচক মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে চান? জেনে নিন ৫ টি কৌশল


প্যারেন্টিং


১.নানান পরিবেশ দেখে

বিচিত্র সব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করার জন্য বাচ্চাকে হসপিটাল, বস্তি, এতিমখানাসহ নানান জায়গায় নিয়ে যান। এবং শিশুদের প্রতিটি পরিবেশকে ইতিবাচক দিক তুলে ধরুন। অভিনব সব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করতে হবে। আর জীবনের বিচিত্র সব অভিজ্ঞতাকে বাচ্চার দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে হবে।

২. বাচ্চাকে প্রশ্ন করুন এবং বই দিন

শিক্ষার মূল বিষয়টা হল জানার আগ্রহ।
বাচ্চাকে জিজ্ঞাস করুন তার কাছে ইতিবাচক আর নেতিবাচক দিক কোনগুল। সেখানে ভুল থাকলে তা বুঝে কৌশলে তা ইতিবাচক দিক তুলে ধরুন।
ধৈর্য না হারিয়ে বুদ্ধি বিকাশের জন্য ‘বই’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাচ্চার শিক্ষা গ্রহণের প্রক্রিয়াকে বেশী প্রশংসা করতে হবে।

৩. গুরু জনের সাহচর্য

বাচ্চাদেরকে শিক্ষক, দাদা-দাদী, বাবা-মা সহ গুরুজনদের সাথে যোগাযোগ গতি বিকশির করুন। ওকে শিখতে সাহায্য করুন একা একা। চলতি শিক্ষা ব্যবস্থায় ইতিবাচক জ্ঞান নয় বরং গ্রেড বাড়াতে সহযোগিতা করে তাই এর মাঝে ইতিবাচক ভাবে গড়ে তুলতে, তাদের সেই বিশেষ চাহিদা পূরণে বাবা-মাকে শিক্ষকদের সাথে নিয়মিত পরামর্শ করতে হবে।

৪. বাইরে খেলতে দিন নিয়মিত

মাঠে বাচ্চাদের খেলতে নিয়ে যান। নানান বয়সের নানান পরিবারের বাচ্চাদের সাথে খেলতে ও মিশতে উৎসাহ দিন। বাসায় এসে বাচ্চার সাথে কথা বলুন ইতিবাচক মনোভাব জাগ্রত করে।

৫. কথা বলুন বাচ্চার সাথে

বাচ্চার সঠিক মানসিক বিকাশের জন্য বাচ্চার সাথে খোলামেলা কথা বলার বিকল্প নেই। তার ইতিবাচক, নেতিবাচক, আনন্দ, দুঃখ, কষ্ট, ভাল, মন্দ সব ধরনের বিষয় কথা বলার জন্য মা- বাবা বা কাছের কাউকে সঙ্গী হতে হবে। এর ফলে বাচ্চার চিন্তা ধারা সম্পর্কে ক্লিয়ার একটি ধারণা পাওয়া যাবে। এতে বাচ্চাকে সহযোগিতা করা সহজ হবে।

 

সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজকুমারী কোথায়?


নারী সংবাদ


নিখোঁজ হয়েছেন বা হারিয়ে গেছেন বলে ভাবা হয় এমন একজন আরব রাজকুমারীর ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। সোমবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শেখ লতিফার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দূতকে জানানো হয়েছে।

এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় বলেছে, রাজকুমারীর নিখোঁজ হওয়া সংক্রান্ত ‘মিথ্যা’ প্রচারণার জবাব দেওয়া হয়েছে তাতে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, রাজকুমারী শেখ লতিফা জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সাবেক হাই কমিশনার ও আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট ম্যারি রবিনসনের সঙ্গে বসে আছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “সন্ধ্যায় তারা দু’জন একসঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন এমন একটি মুহূর্তের ছবি সেটি, আর তাদের দু’জনের সম্মতির ভিত্তিতে সেটি প্রকাশ করা হয়েছে। রাজকুমারী শেখ লতিফা নিজ দেশে প্রয়োজনীয় সেবা ও সমর্থন পাচ্ছেন বলে ম্যারি রবিনসনের দুবাই সফরের সময় তাকে আশ্বস্ত করা হয়েছে।” তবে, এই বিবৃতির ব্যাপারে জাতিসংঘ এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

দুবাই’র শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাখতুমের কন্যা শেখ লতিফা বিনতে মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাখতুম গত মার্চ থেকে নিখোঁজ রয়েছেন এমন খবর প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। ৩৩ বছর বয়সী রাজকুমারী মার্চে দুবাই থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। ফরাসী গোয়েন্দা হার্ভি হুবার্টের সহায়তায় তিনি পালানোর চেষ্টা করেছিলেন বলে শোনা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাজকুমারীকে ভারতের কাছে এক ইয়ট থেকে ধরে জোর করে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

মিঃ হুবার্ট ওই ইয়টের মালিক, তিনি অভিযোগ করেছেন, রাজকুমারী অন্য দেশে অ্যাসাইলাম বা আশ্রয় চাইবার পরেও তাকে জোর করে দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। তবে নিখোঁজ হবার পর শেখ লতিফা ইউটিউবে এক ভিডিও পোস্টে জানিয়েছিলেন, তিনি দুবাই থেকে পালাচ্ছেন, কারণ সেখানে তিনি পরিবারের হাতে নানা দুর্ব্যবহারের শিকার এবং তার ওপর নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ঐ ভিডিও পোস্টে শেখ লতিফা জানিয়েছিলেন, তার বাবা হচ্ছেন দুবাইর শাসক মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাখতুম এবং মা আলজিরিয়ান হুরিয়া আহমেদ।
সুত্রঃ বিবিসি।

 

ড্রাইভার


জাহেদ উদ্দীন মোহাম্মদ


আজ দিনটা খারাপ যাবে, নিশ্চিত। অফিস হতে বের হবার সময়, বড় স্যারের সাথে একদফা গরম-গরম হয়ে গেছে।
ভীষণ বিরক্তিতে রমিজ গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল। কিছুদূর গিয়ে আবার ফিরলো। গাড়ির কাগজপত্র নেয়া হয়নি। স্যারের রুমে ঢুকতে আর ইচ্ছে করছে না। পিয়ন কামাল ভাইকে কাগজ আনতে পাঠালো।
-কি ব্যাপার, কামাল?
-গাড়ির কাগজ নিতে এলাম,স্যার।
-রমিজ কোথায়?
-অফিসের ফোর্চের নীচে গাড়িতে।
-আচ্ছা, যাও।
স্কুল ডিউটিতে গিয়ে মনটা ভালো হয়ে গেল। স্যারের মেয়ে মিমি ক্লাস থ্রিতে পড়ে। মেয়েটা এমন মোলায়েম স্বরে চাচ্চু ডাকে, মনটা এমনিতে ভালো হয়ে যায়। কোন কোন সময় মনে হয়, এ যেন সাক্ষাৎ ফেরেশতা!
-চাচ্চু, এসেছ? আমি ঐ সিঁড়িতে উঠে, কতক্ষণ ধরে ডাকছি! সেই খেয়াল আছে?
-সরি মা, ভুল হয়ে গেছে । আর হবে না।
-সরি বললেই হলো! তুমি সবসময় এইরকম করো। দাও, এবার চকলেটগুলো দাও।
-আচ্ছা মা, দিচ্ছি দিচ্ছি। তুমি চোখ বড় বড় করে এভাবে তাকিয়ো না। আমি ভয় পাই, মা।
মেয়েটি ফিক করে হেসে ফেলেল। সামনের দুটি দাঁত নেই, হাসলে আরো মায়াবতী লাগে।
রমিজ শার্টের বুক পকেট হাতড়িয়ে চকলেট বের করে হাতে দিলো।
-কি চাচ্চু, চকলেট দু’টো কেন? আমি এখন ক্লাস থ্রিতে পড়ি। তোমার মনে থাকে না, কেন?
-সরি মা, সরি।
রমিজ পকেট উল্টিয়ে আরো একটা চকলেট মিমির হাতে দিল। রমিজে সাথে মিমির শর্ত হলো, ক্লাস যত চকলেট তত।
প্রতিদিন স্কুল শেষে এই চকলেট তার চাই। তারপর ১৫কিমি পথ পাড়ি দিতে দিতে দু’জন মিলে রাজ্যের কথার ঝাঁপি খুলে বসে।
-জানো চাচ্চু, আমাদের ক্লাসে দুটো ভুত আছে। যারা বেশি কিউট তাদেরকে ওরা চিমটি কাটে।
-কি বলো! সত্যি? তুমি দেখেছ?
– আমি দেখিনি। আজ শ্রাবন্তীকে চিমটি কাটলো। ও চিৎকার দেয়ার পর পর পালিয়ে গেলো। ও অনেক কিউট তো, তাই। সবাই ওকে “কিউটের ডিব্বা” বলে ডাকে।
-ও হ্যা, আমাদের অঙ্ক স্যারের বিয়ে হবে। আমাকে বলেছে, তোমাকেও নিয়ে যেতে। দাওয়াত করেছে। তুমি যাবে?
-তোমার চ্যার আমাকে দাওয়াত করেছে। চত্যি বলছো?
মিমি ছোটকালে স’কে উচ্চারণ করতো ‘চ’। তখন আধো আধো আদুরে কথাগুলো শুনতে খুব ভালো লাগত। রমিজ প্রশ্নটা করে মুখ ফিরিয়ে চুপচাপ হাসতে লাগলো।
-চাচ্চু, ভালো হবে না বলছি। একদম ভালো হবে না।
মিমি চোখ বড় বড় করে রমিজের দিকে কটমট করে তাকালো।
কিছুই হয়নি এমন ভাব নিয়ে রমিজ বলল,
-কেন মা? কি হয়েছে?
– কি হয়েছে বুঝনি? আর একবার বললে, একদম আড়ি দিয়ে দেব। তুমি আমাকে টিজ করছো কেন?
-আমি? কি করলাম আবার? বলেই এবার হো হো করে হাসতে লাগলো।
-সরি মা, সরি। ভুল হয়ে গেছে, মা। আর হবে না। এবার মাফ করে দাও। কেমন?
– তুমি প্রত্যেকদিন ভুল করবে। আর বলবে- সরি! এই সরিকে কাছে পেলে আমি…..।
মিমির চোখমুখের এই ভাবটা রমিজের খুব ভালো লাগে। নিজের মেয়েটার কথা মনে পড়ে। মেয়েটা এখন বড় হয়ে গেছে। ছোটকালে সে ছিল এমন আদুরে আর বাবা-পাগলী।
রমিজ ড্রাইভারের দুই ছেলে এক মেয়ে। বড় ছেলে ঢাকায় চাকরি করে। বিয়ে দিয়েছেন। পরিবার নিয়ে ঢাকা থাকে। ছেলে অফিসে গেলে, ছেলের বৌ বাসায় একা একা থাকে। ছেলের বাসায় ফিরতে কখনো কখনো রাত হয়ে যায়। বৌমা একা থাকতে খুব ভয় পায়, তাই বড়টা ছোটভাইকে ঢাকা নিয়ে গেছে। ওখানে কলেজে পড়ে।
মেয়েটা চিটাগাং ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। ইকোনমিক্স সেকেন্ড ইয়ার। মেয়েটার জন্য বুকে তার বড় মায়া। এক একটা বছর যায় আর মেয়েটার জন্য বুক ধকধক করে উঠে।
মনে হয়, মেয়েটা বড় হচ্ছে মানে শ্বশুর বাড়ির দিকে এক’পা এক’পা করে এগোচ্ছে। এইসব ভাবতে ভাবতে রমিজ কখন যে অফিস ক্যাম্পাসে পৌছে গেছে, খেয়াল করেনি।
মিমির “চাচ্চু- চাচ্চু” ডাকে সম্বিত ফিরে এলো। অনেকক্ষণ চুপচাপ দেখে মিমি বলল,
– বকা দিয়েছি, তাই রাগ করেছ, চাচ্চু? আমি আড়ি দিইনি তো!
-না, মা। রাগ করিনি। মা’র সাথে কি ছেলে রাগ কর‍তে পারে? এসো মা, তোমাকে নামিয়ে দিই।
মিমিকে পাজাকোলা করে বাসায় নামিয়ে দিয়ে, মাথায় হাত বুলিয়ে চলে এলো।
মেয়েটা আজকাল রমিজকে বেশি কেয়ার করছে। মিমির কান্ডকীর্তি দেখে, কয়েকদিন যাবত মনে একটা প্রশ্ন কেবল ঘুরপাক খাচ্ছে,
-আচ্ছা, প্রতিটি মেয়ে কি অন্য মেয়ের বাবার না বলা বেদন বুঝতে পারে?
-কি জানি। হবে হয়তো।
ছেলেমেয়েদের ছাড়া রমিজের বাসা এখন নিসঙ্গতায় ভুগছে। ছোট ছেলের পোষা গিরিবাজ কবুতরের বাকবাকুম ডাক কিংবা লাভ বার্ডগুলোর কিচিরমিচির শব্দে বেঁচে আছে রমিজের বৌ।
কিন্তু আজকাল রমিজ বড় একলা লাগে। মেয়ের শূন্য খাটপালং এর দিকে তাকালে বুকে কেমন করে উঠে।
বাপ-পাগলী মেয়েটা জন্য রমিজের মন হুহু করে। যতক্ষণ মিমির সাথে থাকে, ততক্ষণ মনে হয় নিজের মেয়েটার কাছে আছে।
এখন তার সকল আদর-মায়া-মমতা যেন মিমিকে ঘিরে।
এখন তার দৃঢ় বিশ্বাস, দুনিয়াতে মেয়েরা অন্য মেয়ের বাবার মনটাও বুঝতে পারে। হয়তো মিমিও পেরেছে।
রমিজের চাকরি পঁয়ত্রিশ বছর চলছে। কত স্যার এলো গেলো। কত জনের ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজে আনা-নেয়া করলো। কিন্তু মিমির মতো কেউ তার মনে দাগ কাটেনি। মনে নানা রকম কত কত ভাবনাচিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। রমিজ মনে মনে যুক্তি খাড়া করে,
-তখন তাঁর ছেলেমেয়েরা কাছে ছিল। অফিস শেষে সবাই তার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়তো। সারাদিনের ক্লান্তি নাশ হয়ে যেত। তাই হবে হয়তো।
কয়েক মাস আগে মিমির এক ঘটনা রমিজকে একদম কাঁদিয়ে ছাড়লো। তখন মিমির অর্ধবাষিকী পরীক্ষা শুরু হলো। ম্যাডাম অসুস্থ। তাই রমিজকে বলল,
-রমিজ, আমি তো যেতে পারছি না। ভাই, তুমি আমার মেয়েকে একটু দেখো।
মিমিকে রমিজ স্কুলের গেটে ঢুকিয়ে দিয়ে যেই ফিরে আসছে। ওমনি পিছন হতে ডাক। পিছন ফিরতেই দেখে চাচ্চু, চাচ্চু, বলতে বলতে মিমি দৌড়ে আসছে।
বিপদের আচঁ পেয়ে রমিজ দৌড়ে গেল।
মিমি কাছে এসে টুপ করে তাঁকে কদমবুচি করলো। কপালে একটা চুমু দিতে দিতে বলল,
-চাচ্চু, আমি পরীক্ষা দিতে গেলে সবসময় মাকে সালাম করি আর কপালে চুমু দিই। আজ মা আসেনি, তাই তোমাকে দিলাম। দোয়া করিও। কেমন।
মিমি এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে পরীক্ষা হলের দিকে দৌড় দিল।
রমিজের মুখে হঠাৎ কোন কথা সরে না। চোখ ছলছল করে উঠে। এত ছোট্ট একটা মেয়ে,এটা কি করলো!!!
অদৃশ্য এক আহবানে তাঁর দু’হাত যেন আকাশের দিকে উঠে গেলো।
-খোদা, এই পঁয়ত্রিশ বছরের ড্রাইভারের চাকরিতে কত তুচ্ছতাচ্ছিল্য পেয়েছি! তুমি আজ যে সম্মান আমায় দিলে, তুমি তাঁর হেফাজত করো, তুমি তাঁর হেফাজত করো। আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন।
রমিজের এই আকুল মুনাজাতে চারপাশে জড়ো হওয়া ফেরেশতারা কেবল আমিন-আমিন বলছিল।
কেউ শুনেনি, শুধু রমিজ শুনেছে।
অদৃশ্য ফেরেশতাদের কেউ দেখেনি, শুধু রমিজ দেখেছে।

ছবি সূত্র: ইন্টারনেট।

 

নির্যাতিত নারী, শিশুদের সেবায় ওসিসি


নারী সংবাদ


দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই নারী। সমাজে নারী-পুরুষ সমানাধিকার ভোগ করার কথা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই নারীরা সেটা ভোগ করতে পারছেনা। হচ্ছে নানাভাবে নির্যাতিত। নারীদের পাশাপাশি শিশুরাও বিভিন্নভাবে হচ্ছে নির্যাতিত। শিশুরাও হচ্ছে মানুষরূপী পিশাচদের লালসার শিকার। সরকোরের স্বদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় আর্থিক সংকট কিংবা নানাবিধ কারণে সমাজে নারী ও শিশু নির্যাতন থামানো যাচ্ছেনা। তবে নির্যাতিত এ সব নারী ও শিশুদের সাহায্যার্থে সরকার গঠন করেছে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি)। যেখানে সমাজের নির্যাতিত নারী ও শিশুরা সেবা পেয়ে থাকে।
দেশে অনেক জায়গায়ই নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। যেমন সিলেটের ঝুমকা (ছদ্ম নাম)। বয়স মাত্র আট বছর। এই আট বছর বয়সী এই শিশু ঝুমকাকে ধর্ষণ করেছে তারই গৃহ শিক্ষক নামের নরপশু তেইশ বছর বয়সী কাউসার। সকাল বেলা নাস্তা দিতে গিয়ে কাউসারের ধর্ষণের শিকার হয় ঝুমকা। পরে ঝুমকা তার মাকে সব ঘটনা জানালে তার মা জকিগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করে। পুলিশ স্থানীয় এক মসজিদের ইমাম কাউসারকে গ্রেফতার করে।
বর্তমানে ঝুমকা সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন। ঝুমকার মায়ের একটাই দাবী-দোষী কাউসারের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড।
২০১১ সালের ৫ আগস্ট রাহেলার সাথে ৪৫,০০০ টাকা দেনমোহরে বিয়ে হয় আকমলের সাথে। বিয়ের সময় মেয়ে জামাইকে নগদ ৩০,০০০ টাকাসহ ঘরের অন্যান্য আসবাবপত্র যৌতুক দেয় রাহেলার বাবা। দু’জনই ঢাকায় গার্মেন্টস কর্মী। প্রথম সন্তানের জন্মের পর রাহেলা চাকরী ছেড়ে দেয় এবং পরে আকমল তাকে সন্তানসহ বাড়ী পাঠিয়ে দেয়।
কিন্তু কয়েক মাস পরই আকমল ব্যবসা করার জন্য রাহলোর বাবার কাছ থেকে এক লাখ টাকা দাবী করে। কিন্তু রাহেলার গরীব বাবা টাকা দিতে না পারায় আকমল আর তার মা মিলে শুরু করে রাহেলার উপর অমানুষিক শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন। এক পর্যায়ে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে রাহেলা মামলা করে স্বামীর বিরুদ্ধে। এরপর তার দুই মেয়ে নিয়ে বাবার বাড়ী চলে আসে রাহেলা। এরই মধ্যে রাহেলার অনুপস্থিতিতে আরেকটি বিয়ে করে আকমল।
এ ঘটনা জানতে পেরে আকমল আবার তার স্বামীর গিয়ে দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়ে জানতে চায়। এ সময় আকমল তাকে এক লাখ টাকা নিয়ে আসলে দ্বিতীয় স্ত্রীকে তালাক দিবে বলে জানায়। কিন্তু রাহেলা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আকমল আর শাশুড়ি তার উপর আবার শুরু করে নির্যাতন। এসময় তার আর্তচিৎকারে আশপাশের মানুষ ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে এবং তার ভাইকে খবর দেয়। ভাই এসে রাহেলাকে উদ্ধার করে এবং খুলনা মেডিকেল কলেজের ওসিসি বিভাগে ভর্তি করে।
পরে রাহেলা স্থানীয় এক থানায় স্বামী আকমলের বিরুদ্ধে আরো একটি নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করে। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন হলেও অভিযুক্ত আসামী পলাতক রয়েছে।
এ পর্যন্ত সাতটি বিভাগীয় শহরের হাসপাতালে এবং ফরিদপুরে ওসিসি স্থাপন করা হয়েছে। ‘মাল্টি সেক্টোরাল প্রোগ্রাম অন ভায়োল্যান্স এগেইনস্ট ওমেন’ এই প্রকল্পের আওতায় প্রতিষ্ঠিত এইসব সেন্টারে মূলত মহিলা ও শিশুদের বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানসহ আইনি ও পুলিশি সহায়তা, ডিএনএ পরীক্ষা, মানসিক কাউন্সেলিং, আশ্রয় এবং সমাজে পুনর্বাসনের সহায়তা প্রদান করা হয়।
প্রকল্পটি বাংলাদেশ এবং ডেনমার্কের সরকারের সহযোগিতায় মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে জাতীয় ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টার চালু করেছে যার মাধ্যমে নিপীড়িত নারীদের কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করা হয়।
যেসব নারীরা হতাশার মধ্যে ভুগছে অথবা আত্মহত্যা করতে চাইছে, উদ্বিগ্ন অথবা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত সেসব নারীরা এখান হতে কাউন্সেলিং সেবা নিতে পারেন।
এছাড়াও যেসব মহিলা ও শিশু যারা নির্যাতনের শিকার তাদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতার লক্ষ্যে সরকার চালু করেছেন জাতীয় হেল্প সেন্টার। নির্যাতনের শিকার এসব নারী ও শিশুরা সরাসরি টোল ফ্রি ১০৯২১ এই নাম্বারে কল করে যেকোন ধরনের সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন।
ওসিসি ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সমন্বয়ক ড. বিলকিস বেগম বলেন ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠার পর হতে অনেক নারী এবং শিশু এই সেন্টার হতে সেবা গ্রহণ করেছেন। তাদের অধিকাংশই এসেছেন তাদের কোন না কোন অত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে। এদের অনেকেই পুলিশের কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করতে চাইত না ভয়ে।
তিনি বলেন, মহিলা ও শিশুদের সেবা দিতে সরকার সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে এ পর্যন্ত ৬০টি ওসিসি স্থাপন করেছে। যার মধ্যে ৪০ টি জেলা সদর হাসপাতালে এবং বাকী ২০ টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
তিনি বলেন, ওসিসি সেলের কার্যক্রম চালু হয় ২০১২ সালের ডিসেম্বরে। আর ওএসসি সেল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের মধ্যে সমন্বয় করে নির্যাতনের শিকার হওয়া নারী ও শিশুদের দ্রুত বিচার পেতে সহযোগিতা করে। এছাড়াও যেসব নারী ও শিশু শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার, যৌন নির্যাতনের শিকার, অগ্নিদগ্ধ এবং এসিড নিক্ষেপের শিকার হওয়াদের নিয়ে কাজ করে ওসিসি সেল।
ওসিস’র প্রকল্প পরিচালক আবুল হোসেন বলেন, অধিকাংশ নারী শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন মূলত পরিবারে অশান্তি, পূর্ব শত্রুতা, জমি-জমা বিরোধ এবং যৌতুকের কারণে।
বাসস/ইউনিসেফ ফিচার/ফই/স্বব/০৯২০/আহো/-ওজি

 

ছাত্রী অপহরণের ঘটনায় যুবক গ্রেফতার


নারী সংবাদ


রাজারহাটে মাদ্রাসা শিক্ষক কর্তৃক এক দাখিল পরীক্ষার্থী অপহরণের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

গত ৩০ নভেম্বর নিজ বাড়ি থেকে ওই ছাত্রী অপহরণের শিকার হয়। ওই ছাত্রী জেডিসি পরীক্ষা দেওয়ার সময় পরীক্ষা কেন্দ্রে ডিউটিরত উপজেলার পূর্ব বালাকান্দি দাখিল মাদ্রাসার ইবতেদায়ি শিক্ষক নুরন্নবী সরকারের সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপর থেকে এক সন্তানের জনক নুরন্নবী ওই ছাত্রীকে প্রেমের প্রস্তাব ও বিয়ের প্রলোভন দিয়ে আসছিল। এক পর্যায়ে ওই ছাত্রীকে নুরন্নবী তার সহযোগীসহ অপহরণ করে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়।

এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ গত শনিবার রাতে অপহরণকারী নুরন্নবীর ছোট ভাই নুর আলমকে গ্রেফতার করে। তবে ঘটনার ২৩ দিন অতিবাহিত হলেও অপহৃত ছাত্রী ও অপহরণকারীর সন্ধান পায়নি পুলিশ।

রাজারহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃষ্ণ চন্দ্র সরকার জানিয়েছেন, অপহৃতাকে উদ্ধারে চেষ্টা চলছে। সুত্র: সমকাল।

 

খেলনার বদলে শিশুর মোবাইল চাই!


নজরুল ইসলাম টিপু


শিশুর সারাদিনের কর্মব্যস্ততার প্রতি নজর রাখুন। দেখবেন সে পুরোদিন কাজ করে চলেছে। এটা হাত থেকে খসিয়ে নিলেন তো অন্যতা হাতে নিচ্ছে! আশ্চর্য হলেও সত্যি যে, একজন সুস্থ-সামর্থ্য মানুষ একটি প্রাণ চঞ্চল শিশুর মত অনবরত কাজ করতে পারবে না…………
মানব শিশু দুনিয়াতে আসার কিছুদিন পরেই সে বুঝতে শিখে যে, তাকে সর্বত্র অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। তখন সে খুশিতে আপ্লুত হয়। একপর্যায়ে দেখে, খাদ্য ও খেলনা সামগ্রীর ক্ষেত্রে সে অগ্রাধিকার পেলেও, কিছু ব্যাপারে তাকে সে অধিকার দেওয়া হয় না। বড়দের টস-লাইট, মোবাইল, ছুরি, দা, বটি ধরতে গেলে তাকে বারণ করা হয়। অথচ এটা ধরে দেখা ও কাজে লাগাতে তারও মন চায়। এটা আদায় করতে পরিস্থিতি অনুসারে সে দুটি পদ্ধতি গ্রহণ করতে চায়। একটি হল জেদ করা অন্যটি হল আবদার করা। জেদের বিষয়টিতে পরে আসা হবে। তবে বেশীর ভাগ শিশুই কিন্তু আবদার করে।
শিশুর দুটি পদ্ধতির মধ্যে, আবদার করার পদ্ধতিটি হল মানবিয় পদ্ধতি। এটা শিশু জীবনের বড় ইতিবাচক দিক। সে ভালবাসা অর্জন করেই জিনিষটি হস্তগত করতে চায়। তখন সে বলতে থাকবে, “আমি তোমাদের ছোট না! তুমি আমার আপু না”! ইত্যাদি। এখানে সে স্বার্থ অর্জনের জন্য ভালবাসাকেই পূঁজি বানাতে চায়। দেখা যায় বড় জনেরা এই ধরনের আদরণীয় আবদারে ছাড় দিয়ে জিনিষটা কিছুক্ষণের জন্য হলেও তাকে দেয়। এখান থেকেই শুরু হয় শিশুর প্রথম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ। সে বুদ্ধি খাটিয়ে জিনিষ হস্তগত করার মানবিয় একটি বৈশিষ্ট্য অর্জন করল।
কিছুদিনের মধ্যেই শিশু একটি পরিবর্তন বুঝতে পারে। সে দেখতে পায়, সর্বত্র ছোট বলে বাহানা দিলেও, কিছু জিনিষ হস্তগত হয়না! সে সব জিনিস শুধুমাত্র বড়দের জন্যই নির্ধারিত। সেই পরিস্থিতিতে শিশু ভিন্নভাবে ভাবতে শিখে। তখন সে বড় হবার ভাব নেয় এবং বড়দের আচরণ গুলো অবিকল অনুসরণ, অনুকরণ করে। বড়দের জুতো, স্যান্ডেল, চশমা, বস্ত্র পরিধানের কসরত করে। এটার মাধ্যমে সে বুঝাতে চেষ্টা করে যে, সে এখন বড় হচ্ছে। অতঃপর সে তার কাঙ্ক্ষিত জিনিষে হাত দিতে চাইবে। যখন বলা হবে তুমি এখনও ছোট, বড় হলেই এসব ধরা যাবে। শিশু তৎক্ষণাৎ বলে দিবে আমিতো বড় হয়েছি। ঐ যে স্যান্ডেল পড়া হল, চশমা লাগানো হল এসব তো বড় হবারই আলামত। শিশুর এই চরিত্রও মানবীয় গুণাবলীর অন্তর্ভুক্ত।
আমি-আপনি হয়ত এসব কে তামাশা মনে করছি। সে কিন্তু প্রতিটা ধাপকে খুব সিরিয়াসলি নিয়েই অগ্রসর হচ্ছে। তার মনের আয়নায় ধাপে ধাপে বহু স্বপ্ন গেঁথে পথ পরিক্রমায় ব্যস্ত। কোন একদিন দিয়াশলাই দিয়ে, মোমবাতি ধরানো হয়েছিল। এই স্মৃতিই তাকে পেরেশান করে ছাড়ছে। সে দিয়াশলাই আর মোমবাতির সন্ধানেই ব্যস্ত। সে তার মনের কথা বড়দের বুঝাতে পারছে না। এজন্য অগণিত চিন্তা ও কাজ তাকে সারাদিন কর্মব্যস্ত করে রাখছে। পাখির প্রয়োজনীয় লাফালাফি দেখে মানুষ নাচ বিবেচনা করে আনন্দ পায়। সেভাবে শিশুর এই সমস্ত অপ্রয়োজনীয় কাজকে খেলনা মনে করে; মা-বাবা, দাদা-দাদী আনন্দ পায়। কিন্তু চিন্তাশীল মানুষ দেখতে পায়, শিশু সারাদিন ভেবে চলেছে, কিভাবে নিজেকে বড় হিসেবে জাহির করা যায়, কিভাবে বড় হওয়া যায়।
শিশুর সারাদিনের কর্মব্যস্ততার প্রতি নজর রাখুন। দেখবেন সে পুরোদিন কাজ করে চলেছে। এটা হাত থেকে খসিয়ে নিলেন তো অন্যতা হাতে নিচ্ছে! আশ্চর্য হলেও সত্যি যে, একজন সুস্থ-সামর্থ্য মানুষ একটি প্রাণ চঞ্চল শিশুর মত অনবরত কাজ করতে পারবে না! তার অবিরাম কাজের প্রেরণা, নতুন নতুন ইচ্ছা তাকে বড়দের হয়ে কাজ করতে আরো উদ্যমী করে তুলে। তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে, যখনই তার কাঙ্ক্ষিত জিনিষ পেতে বাধা প্রাপ্ত হবে তখনই সে উত্তেজিত ও ক্ষিপ্ত হবে। একটি শিশুর উত্তেজনা ও ক্ষিপ্রতা দুটোই উপরোক্ত জিনিষের আবর্তে ঘুরপাক খেতে থাকে। বাচ্চা দিনে দিনে উত্তেজিত হতে থাকলে এক পর্যায়ে এটা তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। তখন সে জানতে শিখে, আবদার করলে যা পাওয়া যায় না; রুক্ষ ও বাজে আচরণ করলে তা সহজে পাওয়া যায়। শিশুর এই চরিত্র পিতা-মাতা কিংবা তার পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে।
শিশুদের সঙ্গ দিলে রুক্ষ খাসিয়ত কম হয় কিংবা হয়ই না। অনেক শিশু এমনিতেই শান্ত থাকে, কর্মে দক্ষ হয়; যাদের ঘরে বেকার দাদা-দাদী থাকে! তারা শিশুদের অদৃশ্যমান অভাব পূরণে অনেক কাজে আসে। যদিও অধুনা অনেক পিতা-মাতা বুঝতে পারে না দাদা-দাদীর উপকারিতা কি? ওদিকে শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য অকাতরে টাকা খরচ করে নিজেরা সুখে থাকার জন্য। শিশুদের এই চিন্তার খোরাক জোগাতে কোম্পানিগুলো, শিশুদের চেনা-জানা জিনিষের বাহারি পণ্য নিয়ে বাজার সয়লাব করে দিচ্ছে। সে সব বস্তুর অনুকরণে প্লাস্টিক সামগ্রীর বিশাল খেলনা বাজার আজ দুনিয়া জোড়া বিস্তৃত হচ্ছে।
অনেক পিতা-মাতা হয়ত আশা করে এসব খেলার সামগ্রী সন্তানের মনোবৃত্তি গঠনে সহায়ক হবে। শিশুর চাহিদা সৃষ্টি কিংবা আবদার হবার আগেই তাদের খেলনা সামগ্রী কিনে দিচ্ছে। শিশুর আগ্রহ আছে কিনা সে বিবেচনাও তারা করছে না। কিন্তু দেখা গেছে প্রচুর খেলার সামগ্রীর বিপরীতে শিশু একটি মোবাইলের জন্য অনেক বেশী আগ্রহী হচ্ছে। এটা জন্য জেদ করা হচ্ছে, সাময়িক সমস্যা দূর করার নিমিত্তে মা-বাবা তার ইচ্ছা পূরণ করছে। এটাতেই শিশুর অভ্যাস বদলাচ্ছে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে জেদি শিশু পিতা-মাতার ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই হয়। শিশুরা বড়দের অনুসরণ করে দেখতে পায়, সবাই মোবাইল নিয়েই বেশী আগ্রহী, তাই তারাও সেটা হাতে নিয়ে দেখতে ও খেলতে চায়! তাকে মূল্যায়ন না করলেই বিপত্তির শুরু হয়।
শিশুকে যদি যথাযথ সঙ্গ দেওয়া হয় এবং সে দেখে, তার পিতা-মাতা, ভাই-বোন, দাদা-দাদী, দা, বটি, থালা-বাসন, মাস্তুল, পেরেক, করাত, পানের বাটি, হামান-দিস্তা দিয়ে একটা সময় পার করছে, তাহলে সেও সে সব সামগ্রীর প্রতি আকৃষ্ট হবে। দাদা-দাদীর সঙ্গ পেলে, শিশুরা কিছুটা হলেও ভিন্ন মাত্রার সঙ্গী পেত। যদিও বর্তমানের গৃহীনীরা দাদা-দাদীকে উপদ্রব কিংবা ঘরের চাকরানীর বিকল্প মনে করে। তাই দিনের একটি বিরাট সময় শিশুরা সঙ্গ বিহীন থাকে। আমরা যেভাবে লুডুর মত তুচ্ছ খেলা খেলতেও দু’জনের সান্নিধ্য চাই, সেভাবে শিশুরাও বড়দের সঙ্গ এবং জীবনোপকরণ দুটোকে একসাথে পেতে আশা করে। এর একটির অভাবেই শিশু একমুখো, জেদি ও বদমেজাজি হয়ে বেড়ে উঠবে। এটা প্রতিকারে তাকে যত টাকার খেলনাই সরবরাহ হউক না কেন, কোন কাজেই আসবেনা।

 

শিশুর পুষ্টিতে বুকের দুধের বিকল্প নেই


নারী সংবাদ


আজকের শিশুই আগামীর ভবিষ্যত। সুতরাং সুন্দর আগামীর জন্য প্রতিটি শিশুকে হড়ে তুলতে হবে স্বযতেœ। জন্মের পর থেকে বেড়ে ওঠার জন্য প্রতিটি শিশুকে দিতে হবে সুষম খাদ্য। তবে বিশেষ করে জন্মের পর পরই প্রতিটি শিশুর জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মায়ের বুকের দুধ। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় আজ অনেকেই সমাজের নারীরাও ব্যস্ত। তাদেরকেও অনেককেই অফিস কিংবা কর্ম ক্ষেত্রে যেতে হয়। যে কারণে অনেক মা-ই সন্তানকে ঠিক মত বুকের দুধ দিতে পারেন না, নির্ভর করতে হয় বাজারে পাওয়া বিভিন্ন কৌটা কিংবা প্যাকেট দধের ওপড়। তাদেরই একজন নাইমা খাতুন। একটি বেসরকারী অফিসের কর্মকর্তা। দিনের বেশিরভাগ সময় অফিসে থাকেন তাই ‘পুষ্টি নিশ্চিত’ করতে পাঁচ মাসের ছেলেকে গুঁড়োদুধ খাওয়ান নাজমা। বাচ্চাকে যে ব্র্যান্ডের দুধ তিনি খাওয়ান, সেটির নাম নেসলে ল্যাক্টোজেন-১। এর প্যাকেটের গায়ে লেখা আছে ‘জন্ম থেকে দেয়া যায়’! প্লাস্টিকের যে ফিডারে করে নাইমার বাচ্চা দুধ খায়- সেটির গায়ে বড় করে লেখা ‘ফর এ্যাঞ্জেল’ (দেবশিশুর জন্য)! এমন চটকদার বিজ্ঞাপন এবং ভুল তথ্যে বিভ্রান্ত হয়ে নাজমার মতো অনেক অভিভাবকই তাদের আদরের সন্তানদের মুখে তুলে দিচ্ছেন বিকল্প শিশুখাদ্য। বাড়ছে গুঁড়োদুধ খাওয়া শিশুর সংখ্যা। অথচ এই শিশুরা ভুগছে অপুষ্টিতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমছে তাদের। আর অভিভাবকদের অসচেতনতার সুযোগ নিয়ে এ সংক্রান্ত আইনকেও ‘বুড়ো আঙ্গুল’ দেখাচ্ছে সংশ্লিষ্টরা।
মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে শিশুদের জন্য কৌটা বা প্যাকেটজাত গুঁড়োদুধ, অন্যান্য খাদ্য ও সরঞ্জামাদির প্রলুব্ধকর বিজ্ঞাপন বা প্রচারের ক্ষেত্রে আইনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে । ২০১৩ সালের এ সংক্রান্ত আইনে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, প্যাকেট ও কৌটাজাত পণ্যের গায়ে লেখা থাকতে হবে ‘শিশুর জন্য মায়ের দুধের সমতুল্য বা শ্রেষ্ঠতর কোন খাদ্য নেই।’ আরও লেখা থাকতে হবে ‘এই (কৌটা/প্যাকেট) খাদ্য সম্পূূর্ণ রোগজীবাণুমুক্ত নয়। এটা খেলে শিশুর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি আছে।’ বিকল্প শিশুখাদ্য বিপণন ও ক্রয়ের ক্ষেত্রেও রয়েছে নির্দেশনা। তবে রাজধানীর বিভিন্ন সাধারণ দোকান ও সুপার শপে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বিকল্প শিশু খাদ্য ও সরঞ্জামের বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান ও বিক্রেতারা এসব নির্দেশনা মানছেন না। এ বিষয়ক আইন সম্পর্কেও ক্রেতা-বিক্রেতাদের কেউ তেমন কিছু জানেন না। শিশু স্বাস্থ্যের জন্য কল্যাণকর আইনটির প্রচার বিষয়েও নেই কোন সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগ। তাই ‘মাতৃদুগ্ধ বিকল্প শিশুখাদ্য বিক্রয় ও বিপণন’ নামের এ আইন যেন অনেকটা কাগজেই সীমাবদ্ধ হয়ে রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েক বছর হয়ে গেলেও বিকল্প শিশুখাদ্য আইনের তেমন প্রচার নেই। তাই না জেনেই দোকানে এসব গুঁড়োদুধ ও অন্যান্য খাদ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করছেন সাধারণ দোকানীরা। একই সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন সুপার শপে। শিশুর মা-বাবাসহ অভিভাবকরাও মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে এসব খাদ্যের বিষয়ে সচেতন নন। চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা বলছেন, জন্মের পর থেকে দুই বছর পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধই শিশুর জন্য শ্রেষ্ঠ পুষ্টিকর খাদ্য। বিকল্প হিসেবে গুঁড়ে াদুধ শিশুর জন্য খুবই ক্ষতিকর। এ দুধ নবজাতকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। শিশু ঘন ঘন অসুস্থ হয়, শারীরিক বিকাশ ঠিকমতো হয় না। বাজারে সাধারণত দুই ধরনের বিকল্প শিশুখাদ্য পাওয়া যায়। একটি শিশুর জন্মের পর থেকে ছয় মাস, এক বছর বা দুই বছর বয়সী শিশুদের জন্য ‘বিশেষ ফর্মুলায়’ তৈরি গুঁড়োদুধ। অন্যটি ছয় মাসের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য মায়ের দুধের পাশাপাশি সম্পূরক খাবার হিসেবে দেয়া ‘ফর্মুলা ফুড’।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, এমনিতে যে কোন খাদ্যে পুষ্টিগুণ থাকলে তা মানসিক বিকাশে সাহায্য করবে। কিন্তু দুই বছর পর্যন্ত বাচ্চার বিকাশের জন্য বিকল্প শিশুখাদ্যের কোন গুরুত্ব নেই। এজন্য মায়ের বুকের দুধই যথেষ্ট। মায়ের বুকের দুধে যে পুষ্টি আছে, এর কাছাকাছি পুষ্টি অন্য কোন খাবারে নেই। তবে মায়ের অসুস্থতা বা মা এমন কোন ওষুধ খাচ্ছেন, যাতে শিশুকে বুকের দুধ দেয়া যাবে না- এমন ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
জন্মের পর শিশুদের মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো নিশ্চিত করার উদ্যোগ রয়েছে সারাবিশ্বে। ১৯৮১ সালে জেনেভায় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা মায়ের দুধের বিকল্প খাদ্য বিপণন নিয়ন্ত্রণে একটি নীতিমালা তৈরি করে, যা ‘ইন্টারন্যাশনাল কোড অব মার্কেটিং অব ব্রেস্ট মিল্ক সাবস্টিটিউটস’ নামে পরিচিত। সেই নীতিমালার আলোকে ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশে ‘মাতৃদুগ্ধ বিকল্প খাদ্য (বিপণনের নীতিমালা) আইন’ প্রণয়ন করা হয়। ২০১৩ সালের ২২ অক্টোবর আইনটি সংশোধন করা হয়। পাঁচ বছর পর্যন্ত শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিকল্প খাদ্যের বিপণন নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে আইনে।
বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশন (বিবিএফ) নিজস্ব উদ্যোগ এবং সরকারের সহযোগিতা নিয়ে বিকল্প শিশুখাদ্যের বিপণন কার্যক্রম তদারক করে থাকে। বিবিএফের চেয়ারপার্সন ডাঃ এস কে রায় বলেন, দেশে প্রতিবছর প্রায় ৩০ লাখ শিশু জন্মায়। তাই বছর ঘুরতেই দুই বছর বয়সী বাচ্চার সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৬০ লাখ। এই বিপুল সংখ্যক শিশুর প্রত্যেককে দুই বছর পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো নিশ্চিত করাটা একটা চ্যালেঞ্জ। অভিভাবকদেরই এ বিষয়ে অসচেতনতা রয়েছে। তাছাড়া আইনের প্রচার ও সচেতনতা কার্যক্রম লোকবল ও অর্থ বরাদ্দের ওপর নির্ভর করে। সরকার বরাদ্দ বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এ সংক্রান্ত প্রচার বাড়ানোর জন্য বিবিএফ এবং জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান পাঁচ বছর মেয়াদী একটি কর্মকৌশল তৈরি করছে বলে জানান তিনি। সুত্রঃ বাসস।

 

প্রতিবেশিনী….৬


আফরোজা হাসান


“একরাশ অভিযোগ ভরা কন্ঠে কাঠকে উদ্দেশ্যে করে পেরেক বলল, তুমি আমাকে অনেক ব্যথা দিচ্ছো, আমাকে আহত করছো। জবাবে পেরেক বলল, তুমি যদি আমার মাথায় হাতুড়ির আঘাত দেখতে তবে আমাকে ক্ষমা করতে।” রুপক হলেও এই উক্তিটিতে পেরেক আর কাঠের কথোপকথনটুকু ভীষণ তাৎপর্যপূর্ণ। অনেক সময়ই প্রিয়জন, কাছের বা দূরের কারো কথা, কাজ ও আচরণ আমাদেরকে কষ্ট দেয়, ব্যথিত করে। তাদের উপর অভিযোগ, অভিমান করার আগে একবার অন্তত তাদের পরিস্থিতি দেখা ও বোঝার চেষ্টা করা উচিত। আমার অভিজ্ঞতা বলে সম্পর্ক কাছের হোক কিংবা দূরের কাউকে কোন ব্যাপারে দোষারোপ কিংবা কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করার আগে একবার অন্তত তার অবস্থাটা বোঝার চেষ্টা করা উচিত। এই চেষ্টা বেশিরভাগ সময়ই সম্পর্কের মাঝে অকারণ কিংবা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কারণে দুরুত্ব ও তিক্ততা তৈরির পথকে রুদ্ধ করে। তোমার কি মনেহয়?

আমার মনেহয় আপনি সারাক্ষণ আমাকে অনুসরণ করেন, চোখে চোখে রাখেন।

মাহামের জবাব শুনে হেসে ফেললো আয়ান। হাসতে হাসতে বলল, মেয়েদের এই আরেক সমস্যা। হাজবেন্ড চোখ না রাখলে অভিযোগের শেষ থাকে না। আবার চোখে চোখে রাখলেও সীমাহীন বিরক্তির উদ্রেক হয়।

ভারসাম্য বলেও তো জগতে একটা জিনিস আছে। মধ্যমাবস্থা যাকে বলে। ছেলেদেরও আরেক সমস্যা হলো তাদের মাঝে এই মধ্যমাবস্থা নেই। কেউ কেউ আছে বৌয়ের দিকে চোখ ই রাখেনা। আর কেউ কেউ চোখ মোটে সরায় ই না।

তাহলে এখন করণীয় কি?

করণীয় হচ্ছে চোখ রাখতে হবে, পলক ফেলতে হবে এবং ভাবুক চোখ আকাশ-বাতাস, চাঁদ-তারা, ফুল-পাখী ইত্যাদিও দেখতে হবে।

কিন্তু কেউ কেউ যদি আকাশ-বাতাস, চাঁদ-তারা, ফুল-পাখী সবকিছুই তার স্ত্রীর ভেতর দেখতে পায়। তাহলে?

হেসে ফেললো মাহাম। জবাব না দিয়ে হাসতে হাসতে রান্নাঘরে রওনা দিলো।রান্নাঘরে ঢুকে বাটিতে অনেকগুলো পেঁয়াজ মাঝখান থেকে কেটে ভিজিয়ে রাখা দেখে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তার পেছন পেছন এসে রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়ানো আয়ানের দিকে তাকালো।

রান্নাঘরের ভেততে ঢুকতে ঢুকতে আয়ান বলল, অনেক করেছি কিন্তু আর সম্ভব না পেঁয়াজের সাথে তোমাকে শেয়ার করা।

মানে?

মানে আমার জীবনের সবচেয়ে বিমুগ্ধকর মূহুর্তগুলোর একটি যখন আমার ভালোবাসাকে তোমার চোখে প্রাপ্তির অশ্রু রুপে ঝরতে দেখি। তোমাকে কাঁদাতে চাই না কখনোই। কিন্তু যখন আমার কোন কথা বা কাজের ফলশ্রুতিতে তোমার চোখে আনন্দাশ্রু দেখি তখন নিজের প্রাপ্তির ভান্ডারকে আরো সমৃদ্ধ মনেহয়। তোমার চোখের আনন্দাশ্রু শুধু আমার একার। এতে আর কারো কোন অধিকার নেই।

মাহাম হেসে বলল, কিন্তু এরসাথে পেঁয়াজের কি সম্পর্ক?

সম্পর্ক হচ্ছে প্রায় দিনই আমরা দুজন গল্প করতে করতে রান্না করি। তুমি তখন মোটেই ব্যথিত থাকো না। বরং অনেক আনন্দে থাকো। সেইসব আনন্দের মূহুর্তে তোমার চোখ থেকে অশ্রু আমার কারণে ঝরে না। ঝরে পেঁয়াজ কাটতে গিয়ে। এটা আমার পক্ষে কিছুতেই মেনে নেয়া সম্ভব না। আমার অধিকারহরণের শাস্তি স্বরুপ তাই মাথা কেটে দুই ফালি করে পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়েছে পেঁয়াজকে।

মাঝেমাঝে কিছু কর্মকাণ্ড দেখলে তোমাকে ছোট্ট বাবু মনেহয়। হাসতে হাসতে বললো মাহাম।

মাহামকে কাছে টেনে নিতে নিতে আয়ান বলল, যেসব কর্মকাণ্ড দেখতে আমার বৌ মন খারাপ ভাব ছেড়ে এমন মনের আনন্দে হাসবে। সেসব কর্মকাণ্ড করার জন্য ছোট্ট বাবু হতে আমার কোন আপত্তি নেই।

শাবাবের বাসা থেকে আসার পর থেকেই দেখছি নানান কথা বলে তুমি মন ভালো করার চেষ্টা করছো। আমার মন খারাপ কে বললো?

সে কি তুমি জানো না কে বলেছে? মাহামের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বিস্ময় মাখা কন্ঠে উল্টো প্রশ্ন করলো আয়ান।

শাবাব বলেছে? কিন্তু বাবা মামণির কথা ভেবে হঠাৎ আমার খুব মনখারাপ লাগছে সেকথা তো শাবাবকে বলিনি আমি। বললে শাবাবেরও মন খারাপ হতো।

আমাকেও শাবাব বলেনি।

তাহলে?

তুমি আর আমি ছাড়াও এই ফ্ল্যাটে যার অস্তিত্ব বিদ্যমান সে বলেছে।

তুমি আর আমি ছাড়া এই ফ্ল্যাটে তো আর কেউই থাকে না।

থাকে থাকে। তুমি হয়তো খেয়াল করোনি।

থাকে? কে থাকে? আমি খেয়াল করিনি মানে? আমার অজ্ঞাতে আমার বাসায় কেউ কিভাবে থাকবে? বিস্মিত কন্ঠে প্রশ্ন করলো মাহাম।

তোমার অজ্ঞাতে তোমার বাসায় কারো থাকাটা অসম্ভব হলেও, সে সম্ভব করে নিয়েছে।

কিন্তু সে কে?

তোমার আচরণ।

এতক্ষণের বিস্ময়, উত্তেজনা মূহুর্তেই মিলিয়ে গেলো মাহামের। হেসে ফেললো। আয়ানও হেসে বলল, কি তুমি আর আমি ছাড়া তার আলাদা অস্তিত্ব নিয়ে এখন নিশ্চয়ই আর দ্বিমত নেই?

দ্বিমতের তো প্রশ্নই আসে না। একইসাথে তোমার রসবোধের অস্তিত্বেও দ্বিমত নেই।

দাম্পত্য জীবনে রসবোধের প্রয়োজনীয়তা কিন্তু অপরিসীম। অনেক কঠিন বিষয়কেও রসে কোট করে সহজ করে তোলা যায়। এটাও একটা আর্ট। লাল মোহন মিষ্টির কথাই ধরো। তেলে ভাজার পর কেমন কালচে আর শক্ত থাকে। অথচ রসে দেয়া মাত্রই কি চমৎকার নরম ও সুস্বাদু হয়ে যায়। দেখতেও কত লোভনীয় লাগে। শুকনো, বিমর্ষ সম্পর্ককেও এমন ভালোবাসা, সমঝদারির রসে ভিজিয়ে আকর্ষণীয় করে তোলা সম্ভব।

আমার বাবা এই শিল্পে খুবই দক্ষ একজন শিল্পী। এই শিল্পে আমার গুরু কিংবা আইডলও বলতে পারো।

সেজন্যই মনেহয় বাবার ছেলেও মাশাআল্লাহ বিরাট দক্ষ এই শিল্পে। হাসতে হাসতে বললো মাহাম।

আয়ানও হেসে বলল, মার রাগ, বিরক্তি, ক্লান্তিকর মূহুর্তগুলোকে বাবা এত চমৎকার করে রাঙিয়ে দিতেন। সেসব দেখে তখন থেকেই আমার শখ ছিল আমিও ওমন সঙ্গী হবো আমার স্ত্রীর তরে।

সন্তানদের উপর বাবা-মার দাম্পত্যজীবনের প্রভাব অনেক বেশি তাই না? সুখী, সমঝদার দম্পতিদের সন্তানরা স্বভাবগত ভাবেই অনেক সমঝদার, হাসিখুশি হয়। অন্যকে সম্মান দিতে জানে, আন্তরিকতা, সহমর্মিতা নিয়ে পাশে এসে দাঁড়াতে জানে অসহায় মূহুর্তে। ভালোবাসতে জানে ভালোবাসার মতো করে। অপরদিকে বাবা-মার নিত্য কলহ দেখতে দেখতে যেসব ছেলেমেয়েরা বড় হয়, তারা নিজেদের অজান্তেই ঐ সমস্ত নেতিবাচক গুণ নিজ চরিত্রে ধারণ করে ফেলে। নাজমুল ভাইয়ের সাথে মনেহয় এমনটাই ঘটেছে। ইলমা একদিন বলেছিল ওর শ্বশুর নাকি এখনো সামান্য কারণেই ওর শ্বাশুড়ির গায়ে হাত তোলেন। নাজমুল ভাই বাবা-মায়ের এসব দ্বন্দ্ব-সংঘাত দেখতে দেখতেই বড় হয়েছে। স্ত্রীর গায়ে হাত তোলা, অসম্মানজনক কথা বলা, মানুষের সামনে স্ত্রীকে হেয় করা ইত্যাদি তাই স্বাভাবিক অবস্থায় উনার কাছে খারাপ কিছু মনেহলেও, রাগের সময় খুব স্বাভাবিক ভাবে নিজেই এই কাজগুলো করতে পারে।

তুমি এখনো ইলমা আর নাজমুলকে নিয়েই ভাবছো? কারো সমস্যা শুনে নিজেই যদি মন খারাপের চাদর জড়িয়ে বসে যাও, তাহলে সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখবে কি করে? আগামীকাল তো ইনশাআল্লাহ দেখা হচ্ছেই আমাদের সবার। তখন আলোচনা করা যাবে এই বিষয়ে। এখন তাই ইলমা আর নাজমুলের ভাবনা ছেড়ে এমন কিছু ভাবো যাতে তোমার মনে ভালো লাগা গুঞ্জন তুলবে। অনেকদিন তোমার গল্প লেখার বিষয়ে কিছুই বলছো না। নাকি অবসর অন্য কোন ভালো লাগা খুঁজে নিয়েছে লেখালেখির বদলে?

মাহাম হেসে বলল, না অন্য কোন ভালো লাগা খুঁজে নেয়নি অবসর। তাছাড়া নিজের ভাবনাদের শব্দের ফ্রেমে বেঁধে রাখাটা আমার কোন শখ কিংবা শুধুই ভালো লাগা না। লিখতে আমি ভালোবাসি। ঠিক যেমন করে বৃষ্টি ভালোবাসি, জোছনা ভালোবাসি, প্রকৃতির সান্নিধ্য ভালোবাসি। তবে আমিও অনেকদিন থেকেই ভাবছিলাম নতুন কোন গল্প লেখার কথা। জীবনের গল্প। পরিবারের গল্প। পরিবারের সাথে জড়িয়ে থাকা মায়াময় বন্ধনের গল্প। সেইসব মায়াবী বন্ধনের ভাঁজে ভাঁজে ছড়িয়ে থাকা ছোট ছোট ঢেউ, চড়াই-উৎরাই, আশা-নিরাশা, তিক্ততা-মিষ্টতার গল্প। যে গল্পে থাকবে জীবনের সমস্ত রঙ, রুপ, আলো-ছায়ায় সংমিশ্রণ। যে গল্প চিন্তার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে, সরলতা, কোমলতা, স্বিগ্ধতায় ফুল ফোটাবে মন বাগিচায়। যে গল্প অজানতেই ঠোঁটের কোণে ফুটিয়ে তুলবে এক চিলতে হাসি, কখনো ঝরে পড়বে দু’ফোঁটা অশ্রু রূপে। অমাবস্যার ঘোর আঁধার পেরিয়ে, সুবহে সাদিকের সন্ধানে অক্লান্ত পথ চলে সুহাসিনী ভোরের স্বপ্ন দেখাবে যে গল্প। যে গল্প আশা জাগানিয়া গান শুনিয়ে উন্মুক্ত করবে রুদ্ধ মনের আলোকিত বাতায়ন।

তাহলে আর দেরি কেন যতদ্রুত সম্ভব শুরু করে দাও তোমার গল্প লেখা।

ইনশাআল্লাহ শুরু করবো। কিন্তু তারআগে আগামীকাল মেহমান আপ্যায়নের আয়োজন শুরু করি। শাবাবের বাসা থেকে ফোন দিয়েছিলাম ইলমাকে। বলেছে রাত পোহালেই নাকি হাজির হয়ে যাবে। সকালের নাস্তা করবে আমাদের সাথে, দুপুরে খাবে, বিকেলে আবারো নাস্তা করবে, এরপর রাতের খাবার খেয়ে তবেই যাবে। অবশ্য বিকেলের নাস্তা আর রাতের খাবারের আয়োজন শাবাব আর আরিফী ভাইয়া করবে বলেছে। আমাদেরকে শুধু সকাল আর দুপুরের আয়োজন করতে হবে।

ঠিকআছে। চলো তোমাকে সাহায্য করি।

এরপর দুজন মিলে গল্প করতে করতে মেহমান আপ্যায়নের আয়োজনে মনোযোগ দিলো।

পর্ব-৫

 

ফেসবুকে ভিডিও দেখে নির্যাতিত শিশু উদ্ধার গৃহকর্ত্রী গ্রেফতার


নারী সংবাদ


ফেসবুকে আছমা নামে ১২ বছরের নির্যাতিত এক শিশুর ভিডিও পোস্ট করেন এক ব্যক্তি। ভিডিওতে শিশুটি কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার ওপর গৃহকর্ত্রীর নির্যাতনের বর্ণনা দিচ্ছিল। অল্প সময়ের মধ্যেই ভিডিওটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ কর্মকর্তাদেরও নজরে আসে। এরপর দ্রুত অভিযান চালিয়ে রাজধানীর মধ্য বাসাবো থেকে শিশু আছমাকে উদ্ধার করা হয়। একইসঙ্গে গ্রেফতার করা হয় গৃহকর্ত্রী সেলিনা আক্তার শিলাকে।

সংশ্নিষ্টরা জানান, মধ্য বাসাবোর ১৬৯/১ নম্বর বাসার তৃতীয় তলায় সেলিনা আক্তার শিলার বাসায় দেড় বছর ধরে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে আসছিল আছমা। বাসার সব কাজ করলেও প্রায় প্রতিদিনই তাকে মারধর করা হতো। বেধড়ক পেটানো হতো সামান্য ভুল-ভ্রান্তির কারণে। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, বারান্দার গ্রিলের পাশে দাঁড়িয়ে আছে আছমা। সে বলছে, গৃহকর্ত্রী তার গলা টিপে ধরে গলা কেটে হত্যা করে বস্তায় ভরে ফেলে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। শিলার স্বামী চাঁদপুর আদালতের ক্রিমিনাল ল’ইয়ার। আছমার বাড়ি ময়মনসিংহে বলে জানা গেছে।

সবুজবাগ থানার ওসি আবদুল কুদ্দুস ফকির সমকালকে বলেন, নির্যাতিত শিশুটিকে বৃহস্পতিবার রাতে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পাঠানো হয়েছে। সেখানে শিশুটিকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হবে। এ ঘটনায় শিশুটির ভাই রুহুল আমিন বাদী হয়ে মামলা করেছেন। শুক্রবার সেই মামলায় গৃহকর্ত্রী শিলাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
সুত্র : সমকাল।

 

অজ্ঞাত মহিলার গলাকাটা লাশ উদ্ধার


নারী সংবাদ


নওগাঁর আত্রাইয়ে একটি ডোবা থেকে আনুমানিক ২৫ বছর বয়সী এক অজ্ঞাত মহিলার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার সকালে উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নে বড়কালিকাপুর তিন নাম্বার সুইটগেটের নিচে ডোবা থেকে মহিলার লাশটি উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ জানায়, সকালে এলাকার লোকজন মহিলার লাশটি ডোবার পানিতে ভাসতে দেখে পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে লাশটি উদ্ধার করে।

আত্রাই থানার ওসি মোবারক হোসেন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মহিলার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নওগাঁ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

শিশুর মত প্রকাশের স্বাধীনতার গুরুত্ব


নারী সংবাদ


ছোট্ট সুমনের আজ অনেক মন খারাপ। স্কুলে অনুষ্ঠান চলছে, কিন্তু তার যাওয়া হয়নি। প্রধান শিক্ষক স্বয়ং তাকে উপস্থিত থাকতে বলেছিলেন। খুব সুন্দর গান গাইতে পারে বলে অনুষ্ঠানের তার বেশ কয়েকটি গান গাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার মা-বাবা চান না সে গান করুক। তাদের এক কথা- ছেলে পড়ালেখা করে বড় হয়ে ভালো চাকরি করবে। ছোট থেকেই গান বাজনা করে বখে যাবে, তা তারা কোনো ভাবেই হতে দেবেন না।
বাবা-মায়ের এমন ভাবনা থেকেই, ছোট্ট সুমনের মতামত গুরুত্ব পায় না! কিন্তু বাবা-মাকে সুমন কোনোভাবেই বোঝাতে পারে না যে তারও ইচ্ছা-অনিচ্ছা বলতে একটা বিষয় আছে। কিন্তু বাবা- মাকে অনেক বলার পরও কোন লাভ হয়নি। উল্টো মার খেতে হয়েছে। এসবের কারণে পড়াশোনাতেও মন বসাতে পারে না সুমন। তার কিচ্ছু ভালো লাগে না!
আমাদের সমাজের অনেক শিশুর মধ্যেই রয়েছে সুমনের মত এমন মনে কষ্ট। পড়াশোনার বাইরেও যে বিশেষ গুণাবলীর দ্বারা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়া যায় তা অনেক মা-বাবাই মেনে নিতে চান না। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে সমাজ বিজ্ঞানী ও নীতি-নির্ধারকেরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, সামাজিক বিকাশে ও সমাজের অমূল পরিবর্তন এবং উন্নতিতে নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ সকলের মতামতসহ পূর্ণ অংশগ্রহণ অত্যন্ত প্রয়োজন। সমাজের সকলের মতো শিশুদেরও সমাজে অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, রয়েছে অধিকার।
শিশুদের অংশগ্রহণের বিশেষ কয়েকটি অধিকারের মধ্যে রয়েছে অন্যের সঙ্গে অবাধে মেলামেশার অধিকার, তথ্য ও ধারণা চাইবার, গ্রহণ করার ও প্রকাশের অধিকার এবং মতামতের মূল্য পাবার অধিকার।
জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ ধারা- ১২’তে শিশুদের অংশগ্রহণ সম্পর্কিত সব বিষয়ের মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে অবাধে মত প্রকাশের অধিকার দেয়া হয়েছে। সমগ্র বিশ্বের সাথে সাথে আমাদের দেশও এই অধিকার বাস্তবে রূপদানে উদ্যোগ নিয়েছে। যদিও তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে বাস্তব পরিস্থিতি কিছুদিন আগেও তেমন অনুকূলে ছিল না।
এব্যাপারে সাবেক তত্ত্বাবধায় সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, “অধিকাংশ স্বল্প শিক্ষিত কিংবা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত পরিবারগুলোয় প্রায় ক্ষেত্রেই শিশুদের অপরিণত হিসাবে মনে করে, তাদের মতামতকে খুবই কম গুরুত্ব দেয়া হয় অথবা আদৌ দেওয়া হয় না। শিশুরা তাদের মা-বাবা বা অভিভাবকের হেফাজতে থাকে এবং তারাই তার পক্ষে অধিকাংশ সিদ্ধান্তু গ্রহণ করেন। যা একেবারেই ঠিক নয়। ”
তিনি আরও বলেন, “শিক্ষার ধরন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাসস্থান বা কি ধরনের জীবন ব্যবস্থা অনুসরণ করা হবে সচরাচর তা নির্ধারণ করেন মা-বাবা বা অভিভাবক। অবশ্য শিক্ষিত শহুরে মধ্যবিত্ত্ব শ্রেণী বা উচ্চ শ্রেণীর পরিবারে এর কিছুটা ব্যাতিক্রম লক্ষ্য করা যায়।”
সরকারের বিশেষ উদ্যোগের ফলে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটাই অনুকূলে এসেছে।
শিশুদের মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রধান যে দিক, তা হলো সমাজের সকলের মাঝে এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা। পরিবারের ভেতর অভিভাবকেরা যদি তার শিশু সন্তানটির মতামত বিবেচনায় নেয় এবং শিশুটি যদি বুঝতে পারে সংসারে তারও মতামতের একটি স্থান আছে, গুরুত্ব আছে তবে সেই শিশুটি পরবর্তিতে হয় বিচক্ষণ। তার চারিত্রিক গঠন ও মেধা বিকাশের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটি একটি বড় ভূমিকা পালন করে।
দেখা যায়, পরবর্তীতে সে একজন দায়িত্ববান মানুষ হিসাবে সমাজে আত্মপ্রকাশ করে। শিশুর মত প্রকাশের স্বাধীনতা শুধুমাত্র শিশুর মেধার বিকাশ বা তার অধিকারের স্বার্থেই সীমাবদ্ধ নয়। সমাজ সংসার সর্বোপরি দেশও এর ফলে ভবিষ্যতে লাভ করে মেধাবী, দায়িত্বশীল এবং উদার মনোভাবাপন্ন একটি উন্নত জাতি।
কিন্তু শিশুটির মত প্রকাশের অধিকার ক্ষুন্ন হলে এক সময় দেখা যায় যে সে তার অনাগ্রহের ফলে একজন স্বল্প শিক্ষিত, অদক্ষ ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে সমাজে আত্মপ্রকাশ করে বা আদৌ সে এগুলোর কোনোটাই হয় না।
কাজেই শিশুদের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার খর্ব না করে বরং তাদের মতামত প্রকাশে উৎসাহ দান এবং মতামতের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে অভিভাবকসহ সমাজের সকলের আন্তরিক হওয়া একান্ত দরকার।

সুত্র: বাসস (খালিদ বিন আনিস)।

 

বাল্য বিয়ে রোধে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক পর্যায়ে ব্যাপক সচেতনতা প্রয়োগ


নারীকুল

সংবাদ


বাল্য বিয়ের কারণ, প্রতিকার ও করণীয় বিষয়ের আলোচনায় বক্তারা বলেছেন, বাল্য বিয়ে রোধে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক পর্যায়ে ব্যাপক গণসচেতনতা প্রয়োজন। আজ বুধবার জেলা ব্র্যাক অফিসে ফোকাসড গ্রুপ ডিসকাশন (এফজিডি) আয়োজন করা হয়।
জেলা ব্র্যাক প্রতিনিধি মো: আকতারুল ইসলাম বাল্য বিয়ের কারণ, প্রতিকার ও করণীয় বিষয়ক আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন। বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে বিভিন্ন মতামত তুলে ধরে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সহকারি কমিশনার (ভূমি) তাহমিনা রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে আলোচনা করেন জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সাবিনা সুলতানা, সাংবাদিক শাহাদুল ইসলাম সাজু, এ্যাড: আরাফাত রহমান, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা উমা রানী দাস, একতা মা ও শিশু কল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক নিলুফা জহুর লিলি, তেঘর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মোত্তালেব, সদর থানা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: আবুল বাশার মন্ডল, মোহাম্মাদাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান, পারুলিয়া মসজিদের ঈমাম লুৎফর রহমান, তেঘর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী তাসনুভা, নিকাহ রেজিষ্টার একরামুল হক ও সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।
বাল্য বিয়ের কারণ, প্রতিকার ও করণীয় বিষয়ের আলোচনায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবক পর্যায়ে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টির প্রতি গুরুত্বারোপ করে বক্তারা ইউনিয়ন পর্যায়ে মেম্বার ও চেয়ারম্যানদের সজাগ থাকার আহবান জানান।
জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সাবিনা সুলতানা বলেন, বাল্য বিয়ে রোধে সরকার নানা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে। বর্তমান সরকারের নির্দেশনায় বর্তমানে ইউনিয়ন পর্যায়ে কিশোরী ক্লাব গঠন কার্যক্রম চলছে এ ক্লাব বাল্য বিয়ে রোধে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। সুত্র: বাসস

 

শীতে মজাদার নাস্তার রেসিপি


ঘরকন্যা


চিকেন নাগেটস

উপকরণ
১. আধা কেজি মুরগির হাড় ছাড়া মাংস (কিমা নিতে পারলে ভালো হয়),
২. ৬ পিস পাউরুটি,
৩. ১ টি পেঁয়াজ,
৪. ২ টি ডিম,
৫. ১ কাপ ব্রেড ক্রাম্ব ( না থাকলে বিস্কিটের গুঁড়া বা কর্নফ্লেক্সের গুঁড়া),
৬. ১ কাপ ময়দা,
৭. স্বাদমতো লবণ,
৮. ১ চা চামচ আদা বাটা,
৯. ১/৪ কাপ পানি,
১০. ১/৪ চা চামচ গোলমরিচ গুঁড়া।

প্রণালী

  • প্রথমে গ্রাইন্ডারে পাউরুটি ও মুরগির মাংস একসাথে দিয়ে কিমার মতো তৈরি করে ফেলুন বা গ্রাইন্ড করে নিন।
  • এরপর মাংসের মিশ্রনে ১ টি ডিম, আদা, গোলমরিচ গুঁড়া, পেঁয়াজ বাটা ও লবণ দিয়ে ভালো করে মেখে নিন। মিশ্রন যদি অনেক নরম হয় তাহলে সামান্য ময়দা দিয়ে ভালো করে মেখে ছোটো ছোটো অংশে ভাগ করে নাগেটসের আকার দিন।
  • একটি ডিমে পানি দিয়ে ভালো করে ফেটিয়ে নিন। এরপর প্রতিটি নাগেটস ডিমে ডুবিয়ে ব্রেড ক্রাম্বের উপরে গড়িয়ে আলাদা করে রাখুন।
  • একটি প্যানে ডুবো তেলে ভাজার জন্য তেল গরম করে নিন এবং নাগেটস তেলে ছেড়ে লালচে করে ভেজে তুলে নিন। যদি স্বাস্থ্যকর ভাবে খেতে চান তাহলে নাগেটসগুলো একটি বেকিং ট্রে তে সাজিয়ে উপরে সামান্য তেল ব্রাশ করে ২৮০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে লালচে হয়ে উঠা পর্যন্ত বেক করে নিন।

পরিবেশন
প্লেটে পরিবেশন করুন খুব সহজে তৈরি করা দারুণ সুস্বাদু এই ‘চিকেন নাগেটস’।

মাছের চপ

উপকরণ
১. যেকোনো মাছ (ভেটকি, রুই বা ইলিশ) পাঁচছয়টি বড় টুকরা,
২. আলু মাঝারি ৩টি,
৩. একটি বড় পাউরুটির টুকরা,
৪. পেঁয়াজ মিহিকুচি আধা কাপ,
৫. আদাবাটা ১ চা-চামচ,
৬. রসুনবাটা ১ চা-চামচ,
৭. কাঁচামরিচ-কুচি ১ টেবিল-চামচ,
৮. মরিচগুঁড়া ১ চা-চামচ,
৯. হলুদগুঁড়া ১ চা-চামচ,
১০. ধনিয়াগুঁড়া ১ চা-চামচ,
১১. ভাজা জিরাগুঁড়া আধা চা-চামচ,
১২. লবণ স্বাদমতো,
১৩. তেল ভাজার জন্য।

প্রণালি

  • মাছের টুকরাগুলো ভাপে সেদ্ধ করে কাঁটা বেছে নিতে হবে।
  • সেদ্ধআলু ভালোভাবে চটকে নিন।
  • এবার পাউরুটি পানিতে ভিজিয়ে সঙ্গে সঙ্গে তুলে নিতে হবে।
  • তারপর মাছ, আলু, রুটি খুব ভালো করে মেখে নিতে হবে। একে একে তেল বাদে সব উপকরণ খুব ভালো করে মিশিয়ে হাতে পছন্দ মতো আকার দিন।
  • এবার গরম তেলে চপগুলো ছেড়ে দিয়ে মাঝারি আঁচে ভাজতে হবে। হালকা বাদামী রঙ আসলে নামিয়ে নিলেই হল।

পরিবেশন
বাদামী রঙ আসলে নামিয়ে পরিবেশন করুন সস, কাচা মরিচ আর পিয়াজের সঙ্গে। মনে রাখবেন, খেতে মাছের চপের জুড়ি নেই।

সুত্রঃ বাংলাদেশি রেসিপি

 

নারী ও শিশু নির্যাতন আইন


নারীর জন্য আইন


নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল. বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও বেড়েছে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা।
বাংলাদেশে ৪৬ জেলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা এখন ৫৪টি৷ প্রতিটি জেলায় একটি করে ট্রাইব্যুনাল থাকার কথা থাকলেও তা এখনো হয়নি৷ আর এই ৫৪টি ট্রাইব্যুনাল এখন মামলা জটের কবলে৷ যেহেতু নারী ও শিশু নির্যাতনমূলক অপরাধসমূহ কঠোরভাবে দমনের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় বিধান প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়। সংবিধানের ২৬ নং ধারার ১, ২, ৩ ও ৪ নিম্নে আলোচনা করা হল:

সেহেতু এতদ্‌দ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইল :-
২৬৷ (১) এই আইনের অধীন অপরাধ বিচারের জন্য প্রত্যেক জেলা সদরে একটি করিয়া ট্রাইব্যুনাল থাকিবে এবং প্রয়োজনে সরকার উক্ত জেলায় একাধিক ট্রাইব্যুনালও গঠন করিতে পারিবে; এইরূপ ট্রাইব্যুনাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল নামে অভিহিত হইবে৷

(২) একজন বিচারক সমন্বয়ে ট্রাইব্যুনাল গঠিত হইবে এবং সরকার জেলা ও দায়রা জজগণের মধ্য হইতে উক্ত ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিযুক্ত করিবে৷

(৩) সরকার, প্রয়োজনবোধে, কোন জেলা ও দায়রা জজকে তাহার দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসাবে ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিযুক্ত করিতে পারিবে৷

(৪) এই ধারায় জেলা জজ ও দায়রা জজ বলিতে যথাক্রমে অতিরিক্ত জেলা জজ ও অতিরিক্ত দায়রা জজও অন্তর্ভুক্ত৷

সুত্র:
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন,
bdlaws.minlaw.gov.bd

 

মানিকগঞ্জে গৃহবধূকে মারধর, খুন্তির ছ্যাঁকা


নারী সংবাদ


নারীঘটিত অপকর্মের প্রতিবাদ করায় ও যৌতুকের দাবিকৃত ২০ লাখ টাকা না দেওয়ায় মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ষষ্টি গ্রামের তিন সন্তানের জননী শিউলী আক্তার নেহাকে মারধর ও খুন্তি দিয়ে ছ্যাঁকা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার স্বামীর বিরুদ্ধে। শিউলী এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

জানা গেছে, ২০০৯ সালে ষষ্টি গ্রামের খেরু শিকদারের ছেলে আবদুল কুদ্দুসের সঙ্গে শিউলি আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শিউলীকে নির্যাতন করে আসছিল স্বামী ও তার পরিবার। গত ১৪ ডিসেম্বর রাতে স্বামী ও স্বামীর পরিবারের অন্যরা মিলে শিউলীকে বেধড়ক মারধর করে। মারধরের এক পর্যায়ে শিউলীর দু’হাতে গরম খুন্তি দিয়ে ছ্যাঁকা দেয় তারা।

এ ছাড়া স্বামীর নারীঘটিত নানা বিষয়ের প্রতিবাদ করার কারণে তাকে মারধর করে আসছিল কুদ্দুস। তিন সন্তানের ভরণ-পোষণও ঠিকমতো দিচ্ছে না বলে মামলায় উল্লেখ করেছেন শিউলী।

শিউলী জানান, ঘটনার দিন তার স্বামী ও তার দুই ভাই, শাশুড়ি, ভাইয়ের স্ত্রীসহ ৭ জন তার ওপর হামলা চালায়। স্বামীর ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ২০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। যৌতুক হিসেবে টাকাগুলো তার বাবার বাড়ি থেকে আনতে চাপ প্রয়োগ করে। যৌতুকের টাকা দিতে পারবে না বলার সঙ্গে সঙ্গে তাকে বেদম প্রহারের পাশাপাশি গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দেওয়া হয়। এতে তার হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। পরে তার বাবার বাড়ির লোকজন খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।

শিউলীর বোন নাসরিন আক্তার জানান, নির্যাতনের পর শিউলীকে উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি ঘটলে ডাক্তারের পরামর্শে মানিকগঞ্জ থেকে সোমবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এখন বোনের স্বামী ও তার পরিবার তাদের হুমকি দিচ্ছে। তারা এখন নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছেন বলে জানান তিনি।

মানিকগঞ্জ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার লুৎফর রহমান বলেন, ওই রোগীর শরীরের বিভিন্ন অংশে খুন্তি আগুনে পুড়িয়ে ছ্যাঁকা দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া তলপেট ও শরীরে প্রচণ্ড আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। তার অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়।

হরিরামপুর থানার ওসি আমিনুর রহমান জানান, শনিবার এ বিষয়ে মামলা করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।

যৌতুক ও স্বামীর অপকর্মের প্রতিবাদ
মানিকগঞ্জে গৃহবধূকে মারধর, খুন্তির ছ্যাঁকা সুত্রঃ সমকাল

 

ভাল প্যারেন্টিং এর জন্য ৫টি টিপস


প্যারেন্টিং


প্যারেন্টিং হচ্ছে শিশুর শারীরিক, জ্ঞানীয়, বুদ্ধি ও আবেগকের যথাযথ বিকাশের মাধ্যম, যে যে বয়স সেই বয়স অনুযায়ী সঠিকভাবে প্রকাশ করছে কিনা, সঠিক আবেগ নিয়ে বড় হচ্ছে কিনা, তাদের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ তৈরি হচ্ছে কিনা সে বিষয়গুলো প্রতি খেয়াল রাখা এবং পরিচর্যা করা। মুলত কঠিন ধৈর্য ও পরিশ্রমের অপর নাম হল গুড প্যারেন্টিং।

১. মডেলিং (Modeling)
শিশুর আচরণ নির্ভর করে সে যে পরিবেশে বড় হয়, বাস করে, যাদের সাথে থাকে এবং মেলামেশা করে। সুতরাং মডেলিং হল এগুলোর ওপর এবং শিশুর চারপাশের মানুষেরা হল মডেল।

২. অফুরন্ত ভালবাসা (Loving)
শিশুকে অপরিসীম ভালোবাসার মতো এত চমৎকার আর দ্বিতীয় কোন বিষয় আর নেই শিশু শিক্ষায় সব কিছুই ভালবাসা আর যত্নে হলেই শিশু সুন্দরভাবে গড়ে উঠবে।

৩. ইতিবাচক প্যারেন্টিং (Positive parenting)
শিশুর প্রতি সবসময় ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি মনোভাব নিয়ে আগলে রাখা দরকার। কারণ শিশুর আত্মসম্মানবোধের জন্ম হয় ইতিবাচক ধারণা থেকেই। ইতিবাচকতা শিশুর মননের পরিচর্যা ভুমিকা রাখে।

৪.যোগাযোগ কার্যকর হওয়া (Communicating)
শিশুর ভাল-মন্দে কোন একটা আলোচনায় যোগ দিতে গেলে আগে শোন দরকার। হুট করে কোন মন্তব্য করা বোকামির কাজ। মূল বিষয়টি নিয়ে কিছুক্ষণ চিন্তা করা। তারপর শিশুর মনোভাব বুঝে কথা বলার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা।

৫. দৃষ্টিভঙ্গীর প্রতি খেয়াল রাখা (Keeping Perspective)
সন্তানের ভাল-মন্দে পাশে থাকা এবং খেয়াল রাখা। বকা-ঝকা নয় বরং শিশুদেরকে আনন্দের মাঝে রাখা দরকার। কোনো কাজে বাধা না দিয়ে বা কোন কাজ খুবই জোর করে শিশুকে করতে বাধ্য না করে ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রতি খেয়াল রাখা

ভাল প্যারেন্টিং বলতে আসলে বুঝায়, বাচ্চার প্রতিটি পদক্ষেপ সজাগভাবে পর্যবেক্ষন এবং তার সব রকম উন্নতির জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা।
সুত্রঃ Parenting For Brain.

 

রৌমারীতে গৃহবধূকে পুড়িয়ে মারল স্বামী ও সতিন


নারী সংবাদ


রৌমারীতে স্বামী ও সতিনের বিরুদ্ধে সখিতন ওরফে জোসনা নামে এক গৃহবধূর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় স্বামী ও সতিন দু’জনই পলাতক। শনিবার রাতে উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের কাশিয়াবাড়ী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের কাশিয়াবাড়ী গ্রামে শনিবার রাতে সখিতন ওরফে জোসনার চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে তার শরীরে আগুন জ্বলতে দেখতে পান। পরে আগুন নিভিয়ে তাকে উদ্ধার করে রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় এলাকাবাসী। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার তার মৃত্যু হয়।

রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. অনুপ কুমার বিশ্বাস জানান, নিহত জোসনা বেগমের শরীরের ৮৫ ভাগ পুড়ে যাওয়ায় তারা শনিবার রাতেই তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করেছিলেন; কিন্তু রোগীর আত্মীয়-স্বজন তাকে নিয়ে যাননি।

জোসনার বোন তারাবানু বলেন, সতিনের ঘরে থাকতে না পেরে তার বোন জোসনা ঢাকায় একটি গার্মেন্টে চাকরি করছিলেন। স্বামী সাইফুল ইসলাম মোবাইল ফোনে তাকে ফুসলিয়ে গত বৃহস্পতিবার বাড়িতে নিয়ে আসে। জোসনা বাড়িতে এলে তার কাছে টাকা চায় সাইফুল ও তার ছোট স্ত্রী মুনিকা। তার বোন টাকা দিতে না চাওয়ায় শনিবার রাতে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে শনিবার রাত ৯টার দিকে সাইফুল ইসলাম ও সতিন মুনিকা মিলে তার বোনের হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।

এ ব্যাপারে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (রৌমারী সার্কেল) শহীদ সরোওয়ার্দী জানান, ওই গৃহবধূর গায়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে কি-না তা তদন্ত করে দেখা হবে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। লাশের ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সুত্র: ইত্তেফাক।

 

অধ্যাপিকা চেমন আরা


অপরাজিতা


অধ্যাপিকা চেমন আরা সুসাহিত্যিক, ভাষা সৈনিক, শিক্ষাবিদ সমাজসেবক, সুগৃহিণী, আদর্শ মা,নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় আপোষহীণ পাঞ্জেরী। এ সমস্ত বিশেষণই তাকে বিশেষায়িত করা যায়। তিনি ৪৭ এর ভারত বিভাগ দেখেছেন, ৫২ ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। ‘৭০ এর নির্বাচন আর ৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধ এ সমস্ত ঘটনার দীপ্যমান স্বাক্ষী হয়ে রয়েছেন।

জন্ম পরিচয়: অধ্যাপিকা চেমন আরা ১৯৩৫ সালে চট্টগ্রামের এক সম্ভ্রান্ত শিক্ষিত এবং ধর্মপ্রাণ পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। চট্টগ্রামে শিক্ষা প্রসারে তাদের পরিবারটি উনিশ শতকে বিরাট ভূমিকা পালন করেছে। তার পূর্ব পুরুষ সুফি, পদস্থ সরকারী কর্মকর্তা ও বহু গ্রন্থের প্রণেতা মওলানা আবুল হাসান। এবং তার পুত্র, পৌত্র, প্রপৌত্র-প্রপৌত্রী বংশ পরস্পরায় ধর্মীয় সামাজিক ও শিক্ষা জগতে অনন্য গৌরবের অধিকারী। তার পিতা এ.এস. এম. মোফাখখার ছিলেন অবিভক্ত ভারতবর্ষের কলকাতা হাইকোর্টের কতিপয় মুসলিম আইনজীবিদের অন্যতম। তিনি রাজনৈতিক ও সমাজকর্মী ছিলেন। পিতামাতার পাঁচ পুত্র ও চার কন্যার মাঝে অধ্যাপিকা চেমন আরা তৃতীয়। মা দোরদানা খাতুন ও দাদী আছফা খাতুনের স্নেহ আর তত্ত্বাবধানেই ধর্মীয় পরিবেশ ও শিক্ষিত পারিবারিক ঐতিহ্যে তার শৈশব অতিবাহিত হয়েছে।

অপরাজিতা: আপনার শৈশবের দিনগুলো কি এখনও আপনাকে নাড়া দিয়ে যায়? কেমন কেটেছে আপনার শৈশব?
চেমন আরা: অবশ্যই! এক কথায় বলা যায় আমি তো রাজকীয়ভাবে আমার শৈশবকে উপভোগ করেছি। আমাদের ছেলেবেলা ধর্মীয় পরিবেশে লেখাপড়ার পরিবেশে, সাংস্কৃতিক পরিম-লে কেটেছে। ধর্মীয় গোড়ামী বা কুসংস্কার ছিলো না। আমরা প্রতিদিন ভোরে উঠে নামাজ পড়ে আমপড়া পড়তে বসতাম। এরপর গোসল করতে পুকুরে যেতাম। সেখানে ছেলে মেয়েদের আলাদা ঘাট ছিলো। দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষে আমরা একটু ঘুমিয়ে নিতাম। তারপর বিকালের অবসরে বাড়ির আঙ্গিনায় মা, দাদীর সাথে সবজি বাগানের পরিচর্যা করতাম। তখন একটা বিষয় এমন ছিলো যে, আমরা ছোটরা সবসময় বড়দের সম্মান করতাম। তাদের অবধি হব এটাই ভাবাই যেতো না।

অপরাজিতা: তখনকার সামাজিক প্রেক্ষাপট আর আজকের প্রেক্ষাপটকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ণ করবেন?
চেমন আরা : সেকালের আর একালের সামাজিক প্রেক্ষাপটের মধ্যে অনেক বেশি পার্থক্য আছে বলে আমি মনে করি। আমার সময়টায় ভাতৃত্ববোধ, পারস্পরিক সহমর্মিতা, সহযোগিতা, পাড়া-পড়শীর অভিভাবক সূলভ ব্যবহার ইত্যাদি সব ছিলো। আর এখন আমরা পাশের ফ্ল্যাটে কে আছে তাই জানি না। সামান্য স্বার্থের কারণে হত্যা, খুন, অনৈতিকতা ইত্যাদির যেন সঅয়লাব শুরু হয়ে গেছে। আমাদের সময় ছোটদের প্রতি স্নেহ, আদর, শাসন যেমন ছিলো তেমন আমরা যারা ছোট ছিলাম তারা বড়দেরকে তাদের সমান আর মর্যাদার আসনে বসিয়ে রাখতাম। এক কথায় বলা যায় এখন যেমন ঐশী তৈরি হচ্ছে তশ ঐশী তৈরির হওয়ার মতো কোন পরিবেশেই ছিলো না। শান্তি,স্থিতি আর নিরাপত্তা ছিলো। ভিন্ন মতাবলম্বীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা ছিলো।

অপরাজিতা: ‘চল্লিশের দশকে নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে হিন্দু মেয়েরা ছিলো এগিয়ে আর মুসলিম মেয়েরা পিছিয়ে’ এ বিষয়টি আপনি কেমন দেখছেন?
চমেন আরা : আমি ম্রেট্রিক পাশ কোন দেখি নাই। হ্যা বিষয়টি এমনই ছিলো। হিন্দু মেয়েরা দল বেঁধে স্কুলে যেত। মুসলিম মেয়েরা শুধু চিঠি পড়ে আর আরবী কোরআন শরীফ পড়া এতটুকুই শিখতো। ওরা বাহে নামা নামক একটি বই পড়তো কিন্তু আমাদের পরিবারে মেয়েদের শিক্ষিত হওয়া উচিত এই দৃষ্টিভঙ্গিই ছিলো। আমায় বাবা সবসময় বলতেন তোমরা কি করছো। পড়ালেখা শিখছো না কেন?
হিন্দু মেয়েরা বড় এগিয়ে যাচ্ছে। তোমাদেরকেও এগিয়ে যেতে হবে। তবে তখন মুসলিম মেয়েদেরকেও যে লেখাপড়া শিখে এগিয়ে যেতে হবে এ উপলব্ধিটা সবার মধ্যে সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিলো।
চেমন আরার শিক্ষাজীবন : অধ্যাপিকা চেমন আরার প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি মা দোরদানা খাতুন ও দাদি আছফা খাতুনের কাছে। তিনি ১৯৪১ সালে চট্টগ্রাম শহরের গুল-এজার বেগম স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫১ সালে ঐতিহ্যবাহী কামরুন্নেসা উচ্চ ইংরেজি বালিকা বিদ্যালয় থেকে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯৫৩ সালে ইডেন কলেজ থেকে আই.এ পাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে অনার্স ভর্তি হন। ১৯৫৬ সালে বি.এ অনার্স এবং পরের বছর এম. এ পাশ করেন।
অধ্যাপিকা চেমন আরা যখন ইডেনে আই.এ পড়ছিলেন তখনই সক্রিয়ভাবে ভাষা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন।

অপরাজিতা: ভাষা আন্দোলনে আপনার অংশগ্রহণটা কিভাবে হয়েছিলো।
চেমন আরা : আমি তখন সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। প্রিন্সিপাল আবুল কাশেমসহ তমুদ্দন মজলিশের অন্যান্য কর্মীর সাথে পরিচিত হই এবং এ সংগঠনের কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ি। মূলতঃ আমার বাবার সুবাদেই । কারণ ১৯৪৭ সালের পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর তৎকালিন সরকার সংখ্যারিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা বাংলাকে অগ্রাহ্য করে উর্দূকে রাষ্ট্র ভাষা করার প্রচেষ্টা চালালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুন অধ্যাপক আবুল কাশেম সমমনা তরুন যুবকদের সংগঠিত তরে ১৯৪৭ সালের ১লা সেপ্টেম্বর প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠন তমদ্দুন মজলিশ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৫ সেপ্টেম্বর তমদ্দুন মজলিশের পক্ষ থেকে ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দূ না বাংলা’ শীর্ষক ১৮ পৃষ্ঠার একটি পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়। ১৯৪৮ সালের ১৪ নভেম্বর প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম প্রকাশ করেন ভাষা আন্দোলনের মুখপাত্র ‘সাপ্তাহিক সৈনিক’। তিনি চট্টগ্রামের অধিবাসী হওয়ায় বিভিন্ন পরামর্শের জন্য আমার আব্বার কাছে যেতেন। সে থেকেই তার আন্দোলনের সম্পৃক্ত হওয়া। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করায় দাবীতে তমদ্দুন মজলিশের বিভিন্ন সভা-সমাবেশ সেমিনার, সাহিত্য সভায় যোগদান করা, বাংলা ভাষার জন্য পোস্টার লেখা সেগুলো স্কুল কলেজের দেওয়ালে লাগানো, প্রচার পত্র বিলি করা ইত্যাদি আমরা স্কুলে থাকা অবস্থায় করেছি। তারপর যখন ইডেনে ভর্তি হলাম অর্থাৎ ৫১-৫২ সালের সেই উত্তাল দিনগুলোতে সক্রিয় কর্মী হিসাবে কাজ বাকি। বিশেষ করে একুশ ফেব্রুয়ারী পুলিশের গুলিতে শহীদ আবুল বরকতের রক্তমাখা শার্ট নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা যে মিছিল বের করেন অন্যান্য ছাত্রীদের সাথে আমিও যে মিছিলে ছিলাম। একুশে ফেব্রুয়ারী আমতলায় ছাত্রসভা শেষে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে যে মিছিল হয় সেই মিছিলেও আমি অন্যান্যদের সাথে ছিলাম।

অপরাজিতা: ভাষা আন্দোলনের প্রাপ্তি কতটা হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
চেমন আরা : ভাষা আন্দোলনেরে পথ ধরেই তো স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং আজকের বাংলাদেশ। তবে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা যে তমদ্দুন সংস্কৃতির প্রসার চেয়েছিলাম তা অর্জিত হয়নি। মাঝে মাঝে দেশের সংস্কৃতি, মানুষের ভাব বোধের অবস্থা দেখে অপসংস্কৃতির সয়লাব হিন্দি সিরিয়ালের প্রভাব আমাদের নতুন প্রজন্মের মধ্যে হিন্দি প্রীতি দেখে সত্যিই খুব কষ্ট হয়। তখন মনে হয়, আমরাতো আমাদের ঐতিহ্য সংস্কতিকে হারাতে চাইনি বলেইতো ভাষা আন্দোলন করেছিলাম। আমরা কি আমাদের নতুন প্রজন্মকে এ কথা বুঝাতে ব্যার্থ হলাম।

কর্মজীবন : অধ্যাপিকা চেমন আরা শুধু একজন ভাষা সৈনিকই ছিলেন না। দীর্ঘ ৩৬ বছরের কর্মজীবনে তিনি হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে শিক্ষার আলো বিস্তার করে গেছেন। তিনি ১৯৫৯ সালে নারায়নগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ গার্লস হাই স্কুলে প্রধান শিক্ষিকা হিসাবে যোগ দেন। সে বছরই বাদশা মিয়া চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রামে প্রথম মহিলা কলেজে বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেন। ১৯৫৯-৬১ সালে চেমন আরা আন্দরকিল্লাস্থ  মুসলিম এডুকেশন সোসাইটির স্কুলে প্রাতঃকালীন শিফ্টে সহকারী প্রধান শিক্ষিকা হিসাবে কাজ করেন। ১৯৬২ সালের মাঝামাঝি সময়ে ইডেন কলেজে আসেন। পরে সহকারী অধ্যাপক পদে ১৯৬৭-৬৮ আবার চট্টগ্রামে সরকারী কলেজে বাংলা বিভাগে যোগদান করেন। ১৯৭০ সালে আবার ইডেন এ আসেন এবং অধ্যাপনার পাশাপাশি নতুন হোস্টেলের তত্ত্বাবধায়ক হিসাবেও কাজ করেন। এ দায়িত্ব পালন করেন দীর্ঘ ১২ বছর অর্থাৎ ৮২ সাল পর্যন্ত। তিনি ৮২-৮৬ পর্যন্ত চট্টগ্রাম সরকারী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন এবং ১৯৯৩ সালে তীতুমীর কলেজ ঢাকা থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

অপরাজিতা: ইডেন কলেজে আপনার যে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়েছে সে বিশেষ করে হোস্টেল সুপারেন্টন হিসাবে আপনার দায়িত্ব পালন সম্পর্কে জানতে চাই।
চেমন আরা : আমি ইডেনে নতুন হোস্টেলের সুপার ছিলাম। চেষ্টা করেছি ছাত্রীদের ভালো রাখতে। ওদেরকে নানা রকম সামাজিক কর্মকা-ে অংশগ্রহণ করাতে। হোস্টেলে মেয়েদেরকে নিয়ে সাপ্তাহিক ইসলামী আলোচনা হতো। এছাড়াও আমি যখন চট্টগ্রামে ছিলাম সেখানেও মহিলা কলেজে ‘ইসলামী পাঠচক্র’ চালু করেছিলাম। সেই পাঠচক্রে মুসলিম মহিয়সীদের কর্মজীবনের উপর ধারাবাহিক আলোচনা হতো।
ইডেনে হোস্টেল যে ইসলামী আলোচনা অনুষ্ঠান হতো ‘মহিলা মজলিস’ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করতো। আমি চেষ্টা করেছি তাদেরকে সার্বিক সাহায্য সহযোগিতা করার।

অপরাজিতা: আপনার সাহিত্য হাতেখড়ি কবে থেকে? এক্ষেত্রে আপনার পথ চলাÑ
চেমন আরা : মূলতঃ আমার পিতা-পিতামহ ও স্বামী উভয়দিক থেকেই আমি সাহিত্যে উত্তরাধিকার লাভ করেছিলাম বলা যায়। যখন আমি অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী তখন ‘সাপ্তাহিক সৈনিকে’ আমার প্রথম গল্প ছাপা হয়। এরপর থেকে সাপ্তাহিক সৈনিকে নিয়মিত লেখা শুরু করি। চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল খালেক সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘কহিনূর’ পত্রিকায় ‘নাসরিন’ ছদ্মনামে লিখতাম। এছাড়াও কলিকাতা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক কাফেলা পত্রিকায় এবং বিভিন্ন দৈনিকে নিয়মিত লেখতে থাকি। সে থেকেই এ অঙ্গনে পথ চলা। এ পর্যন্ত আমার প্রকাশিত বইগুলো হলো।

১. হৃদয় নামের সরোবর
২. ঘরে ফেরা
৩. হজ্জ ও ওমরার স্মৃতি
৪. কান্না হাসির এই মেলায়
৫. স্বাগত ভাবনা
৬. নিরুদ্দেশের অভিযাত্রী
৭. সত্তরের সিড়িতে দাড়িয়ে।

এছাড়াও সম্পাদন করেছি এ ‘অনন্য জীবন সঠিক  (এ.এস.এম মোফাখখার) ইয়াদগারে বখতিয়ার। সহজ মিলাদ পাঠ শাহেদ আলী ৫টি স্মারক গ্রন্থ।

এখনও অপ্রকাশিত গল্প ও কবিতার বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৪টি। মূলত গল্প, কবিতা, ভ্রমণ কাহিনী, স্মৃতি কথাই আমার লেখার মূল বিষয়বস্তু।

অপরাজিতা: পারিবারিক জীবনের চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে সন্তান, সাহিত্য আর কর্মজীবন সব কিছুর সমন্বয় কিভাবে করছেন?
চেমন আরা : ১৯৫০ সালে তখন আমি দশম শ্রেণির ছাত্রী, সেই সময় সাপ্তাহিক সৈনিকে প্রকাশিত আমার লেখা পছন্দ করে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন শাহেদ আলী এবং বিয়েও হয়ে যায়। ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক বিশিষ্ট সাহিত্যিক শাহেদ আলী সাহেবের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সাহিত্যাঙ্গনে আমার পথ চলা আরো সংহত হয়েছে এবং ভাষা আন্দোলনের সাথে আমার সম্পৃক্ততা বহুগুণে বৃদ্ধি পায় এবং এ আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী হিসাবে আমি নিজেকে তৈরি করে নেই। তার সাথে ৪১ বছরের আমায় বিবাহিত জীবনের নানান সমস্যা ঘাত-প্রতিঘাত দুজনে মিলেই সামলিয়েছি। আমার তিন ছেলে তিন মেয়ে। আলহামদুলিল্লাহ ছেলে মেয়েরা সবাই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত এবং স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।

স্বীকৃত ও সম্মননা : অধ্যাপিকা চেমন আরা ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ ও অবদান, শিক্ষকতা, সাহিত্য, সেবা, সামাজিক সাংস্কৃতিক চর্চা এবং অবহেলিত নারী ও শিশুদের জীবন মান উন্নয়নে অবদানের জন্য

১. ২০০৪ সালে মহিলা সাংবাদিক ফোরাম
২. ২০০৪ সালে ফুলের মেলা জাতীয় শিশু সংগঠন পুরস্কার
৩. ২০০৬ সালে কিশোর কণ্ঠ সাহিত্য পুরস্কার
৪. ২০০৭ সালে চিল্ড্রেন অ্যান্ড উইমেন ভিশন ফাউন্ডেশন স্বর্ণপদক।
৫. ২০০৮ সালে নবীন কর্ণ সাহিত্য সাংস্কৃতিক পুরস্কার
৬. ২০০৮ সালে জালালাবাদ ফাউন্ডেশন কর্তৃক হাসান রাজা পুরস্কার সম্মাননা।
৭. ২০০৯ সালে মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী স্বর্ণপদক
৮. ২০১১ সালে ভাষা আন্দোলনে অসামান্য অবদানের জন্য চট্রগ্রামের কৃতি সন্তান হিসাবে চট্টগ্রামে সমিতি থেকে সম্মাননা।
৯. ২০০৯ সালে রুরাল জার্নালিস্ট ফোরাম পুরস্কার
১০. ২০১২ সাপ্তাহিক সমধারা থেকে ভাষা সৈনিক সম্মাননা।
১১. ২০১২ সালে ফুলকুঁড়ি ও ঝিঁঙ্গেফুল শাখা শ্রেষ্ঠ মা সম্মাননা।
১২. চিলড্রেন অ্যান্ড ওমেন ভিশন থেকে বিজয় দিবস সম্মাননা।

অপরাজিতা : আজকের বাংলাদেশ মুসলিম ঐতিহ্য ও ইসলামী সংস্কৃতি ইত্যাদি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি?
চেমন আরা : আজকের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মুসলিম ঐতিহ্য সংস্কৃতি অবহেলায়, অযতেœ রয়েছে। আমরা যে ঐতিহ্যে বড় হয়েছি, নতুন প্রজন্মের কাছে তা একেবারেই অচেনা। রাষ্ট্রীয়ভাবে এর কোন পৃষ্টপোষকতা করা হচ্ছে না বরং নতুন নতুন উৎসব যেগুলোর সাথে আমাদের সংস্কৃতি ভাববোধের কোন সম্পর্ক নেই তার প্রসার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ইদানিং শোনা যাচ্ছে ‘ধর্ম যার উৎসব সবার’ এটা তো ইসলামী সংস্কৃতি  এবং তাওহীদের বিশ্বাসের পরিপন্থী। থার্টি ফাস্ট নাইট, ভালোবাসা দিবস, পহেলা বৈশাখের নামে যে সমস্ত আচার-অনুষ্ঠান উদযাপিত হচ্ছে এতে করে ইসলামের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমি বলব পরিকল্পিতভাবে ইসলামকে নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। হিন্দী সিরিয়াল, মুভি, এপার বাংলা ওপার বাংলার সংস্কৃতির আদান প্রাদন ইত্যাদি সমস্ত কিছুই তাওহীদের পরিপন্থী। অথচ আমাদের মুসলমানদের মূলভিত্তিই তাওহীদের উপর প্রতিষ্ঠিত। ইদানিং বিজ্ঞাপনগুলো মিউজিক শোগুলো যেভাবে আমাদের তরুনদেরকে ভুল ম্যাসেজ দিচ্ছে তাতে করে আমি সন্দিহান। এরা বড় হয়ে ইসলামকে কেমনভাবে জানাবে। এ অবস্থা থেকে তো এদেরকে বের করে আনতে হবে।

সমাজকর্ম : অধ্যাপিকা চেমন আরা সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে যে সমস্ত কাজ করেছেন যেগুলো হলো।

১. ১৯৫৪ সালে ডানপন্থী ছাত্রীদের সমন্বয়ে ফরমান উল্লাহ খানের তত্বাবধানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ছাত্রী পরিষদ’ গঠন করেন। এখানে তিনি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
২. ১৯৬৩ সালে শিশু কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক উৎকর্ষ সাধন এবং এদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে ‘সবুজ সেনা’ গঠন করেন এবং ১৯৭০ সাল পর্যন্ত এ সংগঠনের দায়িত্ব পালন করেন।
৩. চট্টগ্রাম মহিলা কলেজে ‘ইসলামী পাঠচক্র‘ নামে মহিলাদের জন্য একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠ করেন। এখানে ইসলামী দর্শণ, মানবতাবোধ, হযরত খাদিজা (রাঃ), হযরত ফাতেমা (রাঃ)সহ মুসলিম মহিলাদের কর্মজীবন ধারাবাহিভাবে আলোচনা হতো।
৪. তিনি অবসরে যাবার পর ইসলাম প্রিয় মহিলাদের নিয়ে ‘নারী’ অধিকার আন্দোলন সনামে একটি সংগঠন গঠিত হলে তিনি যেখানে সভানেত্রী নির্বাচিত হন। সূচনালগ্ন থেকে তিনি এ সংগঠনের চেয়ারপার্সন।
৫. ১৯৮৭ সালে কথাশিল্পী শাহেদ আলী, ড. কাজী দীন মুহাম্মদ. ড. শমশের আলী, জাতীয় অধ্যাপক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ এবং অনেক প্রাজ্ঞজনের আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় একটি স্কুল ‘তামরিন’ প্রতিষ্ঠিত হলে চেমন আরা এই স্কুলের পরিচালনার ভার নেন।

অপরাজিতা: জীবনের এই শেষ বেলায় এসেও আপনি জাতিগঠনের কাছে নিয়োজিত রয়েছেন কোন উপলব্ধি থেকে?
চেমন আরা : আমি মনে করি সমাজের প্রতি আমার একটা দায়বদ্ধতা আছে। আমি যতটুকু জানি, উপলব্ধি করি তা যেন সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারি। আমার দ্বারা যদি একজনও উপকৃত হন তাহলেই আমি স্বার্থক । আলহামদুলিল্লাহ  কলেজে অধ্যাপনা কালীন সময়ে আল্লাহ আমাকে এ সূযোগ করে দিয়েছেন আমি হাজার হাজার ছাত্রীদের মাঝে আমার আদর্শ, মূল্যবোধ ছড়িয়ে দেবার চেষ্টা করছি। যখনই যে ধরনের কাজের সূযোগ পেয়েছি আমি আন্তরিকতার সাথে তা করার চেষ্টা করেছি। আমি সবসময়ই চাই ইসলামী সংস্কৃতি ও মুসলিম ঐতিহ্য রক্ষায় আজীবন কাজ করে যাব। আপনারা দোয়া করবেন আল্লাহ যেন আমাকে সেই তৌফিক দেন। আমীন॥

 

সুন্দর কথা হল ‘শিল্প’


মেইক ইউরসেলফ


পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছে যারা শুধু সুন্দর কথার মাধ্যমেই অনেক সমস্যার সমাধান নিমিষেই করে ফেলেন। কথা বলার ধরনের সাথে কথা বলার কিছু কৌশলও রয়েছে।

১. পরিস্থিতি বুঝে কথা
বাহ্যিক সৌন্দর্যের মধ্যে ভাব প্রকাশের সৌন্দর্য হচ্ছে পরিস্থিতি বুঝে কথা বলা।
ফলে মানুষ অপর মানুষের অনুভূতির সাথে একাত্মতা অনুভব করে।

২. শান্তভাবে কথা বলুন
শান্তভাবে কথা বলতে দেখলে তাকে ফলো করতে পারেন। কেউ যদি অনেক সুন্দর করে উপস্থাপন করে তবে তাকে অনুসরণ করা যেতে পারে।

৩. অধিক কথা না বলা
আলোচনায় যোগ দিতে গেলে মনে রাখবেন অধিক কথা বলার দরকার নেই। মূল বিষয়টি নিয়ে কিছুক্ষণ চিন্তা করে কথা বলুন।

৪. ক্ষমা প্রার্থনা করুন
হুট করে কোন মন্তব্য করে বসলে সুন্দর ভাবে ক্ষমা চেয়ে নিন।

৫. অর্থহীন কথা পরিহার করুন
খুব ভালো মনের মানুষ, আবার দেখতেও সুন্দর কিন্তু অর্থহীন কথা পরিহার না করতে পারলে, তিনি ভাল কথা বললেও কেউই শুনতে আগ্রহী হবে না।

৬. মার্জিতস্বরে কথা বলা
মনে রাখুন, নিজের চেষ্টা এবং সামান্য কিছু নিয়ম মেনে চলায় যথেষ্ট। উপস্থাপন আরও চমকপ্রদ করতে মার্জিতস্বরে কথা বলা খুবই দরকার।

৭. শুধু নিজে কথা না বলা
শুধু নিজে কথা বলতে গিয়ে মূল বিষয় থেকে অনেকে সরে পড়ে। তা শ্রোতার কাছে অস্বস্তিকর। কারণ তারা তাদের মূল্যবান সময় গল্পে নষ্ট করতে চান না।

৮. কথা বলতে সুযোগ দিন
অন্যের কথার মাঝে কথা বলাটা অনেকেই পছন্দ করে না। সুতরাং কেউ কথা বললে তাকে বলার সুযোগ দিন।

৯. শ্রোতা বুঝার মত স্পষ্ট কথা বলুন
মূল বিষয় থেকে সরে পড়ে। তখন শ্রোতারা খুব বিরক্তবোধ করে। কারণ তারা তাদের মূল্যবান সময় গল্পে নষ্ট করতে চান না।

মুখের বুলি যদি হয় তিক্ত তাহলে জয়ের পরিবর্তে বিপর্যয়ই নেমে আসবে। যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ‘কথা’, এবং বর্তমানে সফলতা অর্জনের একটি বড় হাতিয়ার। আর সুন্দর করে কথা বলা এক ধরনের আর্ট।

 

বাংলাদেশি নারী হত্যায় মার্কিন যুবকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড


নারী সংবাদ


দুই বছরের বেশি সময় আগে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশি নাজমা খানমকে হত্যার দায়ে এক যুবককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে সেখানকার একটি আদালত। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত মার্কিন যুবকের নাম ইয়োনাতান গেলভেজ-ম্যারিন (২৫)। এই রায়ের ফলে তার ২৫ বছর কারাভোগ করতে হবে। গত ১১ ডিসেম্বর নিউ ইয়র্কের কুইন্স সুপ্রিম কোর্টের জজ মাইকেল বি এলোইস এ রায় দেন বলে জানিয়েছেন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি রিচার্ড এ ব্রাউন।

২০১৬ সালের ৩১ অগাস্ট রাত ৯টার দিকে নিউ ইয়কেআ কুইন্সে নরম্যাল রোডের বাড়ির সামনেই দুর্বৃত্তের হামলার শিকার হন ৬০ বছর বয়সী নাজমা। সঙ্গে সঙ্গে নাজমাকে জ্যামাইকা হাসপাতালে নেওয়া হলেও তাকে বাঁচানো যায়নি। ঘটনার তিনদিন পর ঘাতক ইয়োনাতান গেলভেজ-ম্যারিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি রিচার্ড এ ব্রাউন জানান, অন্ধকারে হত্যাকারী ইয়োনাতান নাজমার কাছে যা আছে সব দিয়ে দিতে বলে। নাজমা খানম তা দিতে অস্বীকার করলেই তাকে বুকে ছুরিকাঘাত করে। তিনি বলেন, অসহায় একজন নারীকে এভাবে হত্যার মতো বর্বরোচিত ঘটনা দ্বিতীয়টি হতে পারে না। এজন্য ঘাতককে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হয়েছে। একই আদালতে গত ২৬ অক্টোবর এই ঘাতককে সেকেন্ড ডিগ্রির মার্ডার, ছিনতাইয়ের চেষ্টা এবং বেআইনি অস্ত্র বহনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায়ের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয় সপ্তাহব্যাপী জুরি ট্রায়ালের পর।

তিন সন্তানের জননী নাজমার এক সন্তান নিউ ইয়র্কে থাকেন। অন্য দুই ছেলে-মেয়ে থাকেন বাংলাদেশে। শরীয়তপুর জেলার বাসিন্দা নাজমা বাংলাদেশে স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। প্রায় ১০ বছর আগে ডিভি লটারিতে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন শরীয়তপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক নাজমা। তার স্বামীও শরীয়তপুর সরকারি কলেজের শিক্ষক ছিলেন। সুত্র: ইত্তেফাক

 

“কৃষ্ণচূড়ার কিশোরী জীবন”


আবু হেনা মোস্তফা কামাল পিন্টু


কৃষ্ণচূড়া গাছ কতদিন বাঁচে? যতটা দিন তাতে কুঠারাঘাত না পড়ে? যে কিশোরী জীবন দেখেছে কৃষ্ণচূড়ার লালে, ফাগুন চিনেছে কৃষ্ণচূড়ার জাগরনে এবং সেই দেখা আর চেনা বয়ে চলেছে গোটা জীবনভর, কৃষ্ণচূড়ারা কি ঐ কিশোরীর জীবনেও বাঁচে না! জীবনকালব্যাপী বাঁচে না! কষ্টে উঁকি দেয়, সুখে দোলা দেয়, স্বস্তিতে দেয় উদাস! প্রথম যেদিন কৃষ্ণচূড়ার লালে অবাক হয় কিশোরী সেই মুহূর্তটি, সেই স্থানটিও কি বাঁচতে থাকে না কিশোরীর জীবনভর? হোক সে মাঠের ধার বদলে পাকা রাস্তা, হোক সে খালের উপরের সাঁকোটি আজ কালভার্টের চেহারায়, থাকলোই বা সে কিশোরী আজ শত ক্রোশ দূরের কংক্রিটের রাস্তার পাশে ন্যাড়া কৃষ্ণচূড়ার দিকে তাকিয়ে.. তবুও আমি নিশ্চিত, সে কিশোরী সেখানে থাকে না; যেখানে সে থাকছে।
এ তো এক অনাদিকালীন অদৃশ্য মনোদূর্ঘটনা। বারবার জিদ আর আবেগের সংঘর্ষ। কৃষ্ণচূড়া ভূপাতিত সেই কবে! জানতেও পারেনি কিশোরী। যখন কিশোরী সংসারে ঢোকার ক’বছর পর নিঃশ্বাস নিতে কৈশোরে ফিরেছিল..। বাস থেকে নেমে ভ্যানে করে পা ঝুলিয়ে মন দুলিয়ে বাড়িতে পৌঁছেই সোজা গিয়ে মাঠের ধারে, খালের পাড়ে। ঘাড় উঁচিয়ে, বাঁকিয়ে বিভিন্ন উপায়ে নোনতা স্বাদের হাহাকার আর ঘন নিঃশ্বাসের পতন নিয়েও খুঁজে কৃষ্ণচূড়াকে পায়নি। খুব মন খারাপ করে বাড়ি ফিরেছিল এই ভেবে যে, কিশোরীবেলাটা কি তবে তার সত্যিই হারিয়ে গেছে? প্রশ্নটা কাকে যে করতে পারা যাবে সে উত্তরও পায় না। বিষন্ন মনে ভাবে কালই শহরে ফিরে যাবে সে। সংসারে ঢুকে যাবে। তাহলে আর কোনো প্রশ্নই জন্মাবে না মাথায় মনে।
গ্রীষ্মের দুপুরে উঁচুতলার জানালার শার্সির ভেতর দিয়ে চোখ ছড়িয়ে দেবে দূরের কোনো শহুরে কৃষ্ণচূড়ায়; ধুলোয় যেখানে লাল কিছুটা বয়সী, ফিকে আর ক্লান্ত। উদাস হবে, আনমন হবে, বুকের ভেতর ঢেউ জাগলে কিছুটা কেঁদেও নেবে। কেউ তো আর দেখছে নাহ্! কিন্তু কোনদিন আর গ্রামে ফিরে গিয়ে কৈশোরের কৃষ্ণচূড়াটিকে খুঁজবে না। স্থিরসংকল্প করে। শুধু কোথায় কোন্ স্থানটিতে সে দাঁড়িয়ে ছিল সেই স্থানটিকে স্মরণের আবরণে যত্নে ঢেকে রাখবে। কোন্ টানে আর গ্রামে ফিরবে সে! কৈশোরের কৃষ্ণচূড়া, যে তাকে অপার মায়ায় রঙ চিনিয়েছিল, যে লালের সাথে মিলেমিশে নিজের রক্তলাল বয়ঃসন্ধি বুঝতে শিখিয়েছিল, সে কৃষ্ণচূড়া আজ আর নেই, সাথে তার কৈশোরবেলাটাও নেই। সব হারিয়ে গেছে!
তবুও কিশোরী কোনো এক অদৃশ্য সামর্থ্যে কল্পলোকে ভাসতে থাকে। ডোবে গহীন ঘোরের অতলে। মানষচোখে স্পষ্টতই দৃশ্যমান কৃষ্ণচূড়া। মূল থেকে শরীর বেয়ে প্রতিটি ডালপালা, পাতার শেষ প্রান্ত অবধি চাহনির ভ্রমন..। টের পেতে থাকে কিশোরী… বুকের ভেতর কালভার্টটি নিমিষেই বিলীন; দিব্যি সাঁকো পার হয়ে পৌঁছে গেছে কৈশোরে.. কৃষ্ণচূড়াটি জীবন্ত দাঁড়িয়ে আছে, আকাশে ছোপ ছোপ রক্ত বিছিয়ে, অসংখ্য আগুন ছেয়ে আছে আকাশ জুড়ে..। প্রতিটি কৃষ্ণচূড়া কিশোরীর দিকে হাত বাঁড়িয়ে কাছে ডাকছে আর বলে চলেছে, “ও মেয়ে, আলতা নেবে গো আলতা…”
ঝরঝর করে গড়িয়ে নামা নোনতা চোখের জল মুছতে আঁচল তোলে কিশোরী। ওদিকে উনুনে চাপানো প্রেশার কুকারের সিটি ক্রমাগত বেজেই চলেছে।

 

স্ত্রীর অপমানের প্রতিশোধে লাঞ্চিত স্বামী, অতঃপর গলায় ফাঁস


নারী সংবাদ


ঢাকার শহরতলী আশুলিয়ায় টর্ক ফ্যাশন লিমিটেড নামের একটি পোশাক তৈরীর কারখানায় নারী পোশাক শ্রমিক সাবিনা খাতুন মীম (২০) তার স্বামীকে ফোন করায় কর্মকর্তারা তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। বিষয়টি ওই নারী পোশাক শ্রমিকের স্বামী অনিক মিয়া জানতে পেরে কারখানায় গিয়ে এর প্রতিবাদ করে। পরে কারখানার ৫ কর্মকর্তা তাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করলে বাসায় গিয়ে সে লজ্জায় গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। পরে তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে হাসপাতাল নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে। ঘটনায় আশুলিয়া থানায় ওই কারখানার ৫ কর্মকতার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা (নং ৩২) দায়ের করা হয়েছে।

বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টায় আশুলিয়ার সাধুপাড়া টর্ক ফ্যাশন লিমিটেড কারখানার গেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
মামলায় আসামীরা হলো- টর্ক ফ্যাশন লিঃ এর এ্যাডমিন অফিসার পিন্টু (৫০), সহকারি এ্যাডমিন অফিসার রুবেল, ফ্লোর ইনচার্জ হারুন (৪৫), সুপারভাইজার পারভেজ এবং অপারেটর রাকিব (২৫)।

নিহত অনিক মিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলাধীন আড়াইসিদা গ্রামের আনিস মিয়ার ছেলে এবং সে স্ত্রীকে নিয়ে আশুলিয়ার সাধুপাড়া এলাকার মনিরের ভাড়া বাড়িতে থেকে রং মিস্ত্রীর কাজ করতো। তার স্ত্রী সাবিনা খাতুন মীম আশুলিয়ার সাধুপাড়া এলাকার টর্ক ফ্যাশন লিঃ কারখানার অপারেটর পদে চাকুরী করে।

নিহত অনিকের স্ত্রী সাবিনা খাতুন মীম জানান, বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় তার স্বামীর সাথে মোবাইলে কথা বলেন। বিষয়টি কারখনার এ্যাডমিন অফিসার পিন্টুসহ পারভেজ, রুবেল, রাকিব ও হারুন দেখতে পেয়ে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। এসময় মোবাইলে তার স্বামী গালিগালজ শুনতে পান। পরে অনিক কারখানার গেইটে স্ত্রীকে আনতে যায়। এসময় কারখানার ওই কর্মকর্তারা অনিককে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে এবং হুমকি দেয়।

এতে অনিক অপমানিত হয়ে বাসায় ফিরে যায়। এরপর আবার দুপুর ১টায় পূণরায় তাকে আনতে যায় অনিক। বিষয়টি ওই কর্মকর্তারা জানতে পেরে আবারও তাকে পিটিয়ে আহত করে এবং গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। এ অপমান সহ্য করতে না পেরে অনিক বাসায় গিয়ে ঘরের আড়ার সাথে রশি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগায়। এসময় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে এবং সেখান থেকে তুরাগ থানা এলাকার ইষ্ট ওয়েষ্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

খবর পেয়ে আশুলিয়া থানা পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

ঘটনায় বুধবার রাতেই আশুলিয়া থানায় ওই কারখানার ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলা হয়েছে।
আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রকিবুল ইসলাম জানান, মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ঘটনায় থানায় হত্যার প্ররোচনায় মামলা হয়েছে। তবে এখনো কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।

সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

বিয়ে বৈধ হবার শর্তাবলী


কানিজ ফাতিমা


একটি বিয়ে বৈধ হওয়ার জন্য যেসব শর্তাবলী পূরণ হওয়া বাধ্যতামূলক- তা নিয়েই সামনের আলোচনা। ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ে কেবল একজন নারী ও একজন পুরুষের একত্রে বসবাসের জন্য অর্থনৈতিক ও দৈহিক সুব্যবস্থাযুক্ত নয় (Financila and physical arrangement) বরং এটি আল্লাহর দেয়া একটি নেয়ামত, যার মাধ্যমে মানুষ সুখ ও স্বস্তি লাভ করে, জীবনকে উপভোগ করে এবং নিজের বংশধারা অব্যাহত রাখে। বিয়ের শর্তের ব্যাপারে আমাদের সমাজে নানা ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে। যা দূরীভূত হলে জীবন সহজ ও সুন্দর হতো। অনেকে বিয়েতে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান বা মহাভোজের (Grand feast) আয়োজনকে বিয়ের জন্য অপরিহার্য মনে করে। আবার ভারী স্বর্ণের অলংকার আদান প্রদান না করলে বিয়েটা যেন ঠিক সামাজিক বৈধতা পায় না। এগুলো একেবারেই ভুল ধারণা। এর ফলে পাত্র, পাত্রের পরিবার এবং পাত্রীর অভিভাবকের উপরে একটি বড় খরচের বোঝা এসে পড়ে- যা বিবাহকে কঠিন করে তোলে। এ খরচের কথা চিন্তা করে অনেক মুসলিম যুবাই বিয়ের ব্যাপারে পিছপা হন এবং পাত্রীর পরিবারও কঠিন আর্থিক সমস্যায় নিপতিত হয়। অথচ ইসলামে বিবাহকে যতটা সম্ভব সহজ করতে বলা হয়েছে।মহাভোজ, জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান বা ভারী স্বর্ণালংকার কোনটিই বিবাহ বৈধ করার শর্ত নয়। বিশেষতঃ স্বর্ণালংকারের দাম যেভাবে বেড়েই চলছে তাতে অধিক পরিমাণ স্বর্ণ দেয়া বর, বরপ, পাত্রী, এমনকি দেশের অর্থনীতি কোনটির জন্যই কল্যাণকর নয়। ভারী অলংকার কিনতে বর বা বরপরে একবারে মোটা অংকের টাকা খরচ করতে হয় (কিস্তিতে অলংকার কেনার রেওয়াজ যেহেতু নেই)। পাত্রীর জন্যও এটা ততটা লাভজনক নয়। কারণ স্বর্ণালংকার কেনার টাকাটা তার মোহরানার উসুল হিসেবে ধরা হয়। এটি স্বর্ণ হিসেবে আলমারীতে থাকার চেয়ে ক্যাশ হিসেবে ব্যাংকে থাকার সুবিধাটা বেশী। প্রয়োজনে এটাকে কাজে লাগানো সহজ হয়। অনেকে বলতে পারেন স্বর্ণ বিক্রি করে ক্যাশ পাওয়া সম্ভব। বাস্তবে এটা সত্যিই সহজ নয়। স্বর্ণ বিক্রিতে বর বা বরপরে আপত্তি থাকতে পারে। এটা বিক্রি করা ঝামেলাপূর্ণ। তাছাড়া বিক্রির সময় স্বর্ণের খাদ বাবদ মূল স্বর্ণ থেকে অনেকটা বাদ দেয়া হয়। ফলে মূল্য অনেক কম পাওয়া যায়। উপরন্তু ছিনতাই বা চুরি হওয়ার ভয়তো রয়েছেই। বর্তমানে কিছুদিন পরপরই গহনার ফ্যাশন বা ডিজাইনে পরিবর্তন আসে। সেেেত্র বাজারে অনেক ধরনের অলংকার পাওয়া যায় যেমন ইমিটিশন, সিটি গোল্ড ইত্যাদি। এর ডিজাইন বাহারী, রঙ টেকসই, খরচও কম। অনায়াসে এক দেড় বছর চালানো যায়, তাই ফ্যাশন সচেতনদের জন্য এটাই উত্তম পন্থা। আমরা জানি স্বর্ণের যাকাত দিতে হয়। যেসব নারীদের নিজেদের উপার্জন নেই তারা এ ব্যাপারটিতে এক ধরনের দোটানায় ভোগেন। যেমন- স্বর্ণেল মালিক তার স্বামী নন। তাই যাকাত দিতে তিনি বাধ্য নন। স্বর্ণের মালিক হিসেবে যাকাত ঐ মহিলার উপর ফরজ (অনেক আলেমদের মতে)। অথচ যাকাত দেয়ার মতো ক্যাশ তার নেই। সেক্ষেত্রে হয় ঐ স্বর্ণ বি ক্রি করে ঐ স্বর্ণের যাকাত দিতে হবে নতুবা স্বামীর নিকট থেকে অর্থ নিয়ে যাকাত দিতে হবে। এ সমস্যার সব থেকে সহজ সমাধান স্বর্ণ কমিয়ে সাড়ে সাত ভরির নীচে নামিয়ে আনা। এটা আপনার সমস্যাকে যেমন হাল্ক করে তেমনি দেশের অর্থনীতিতেও পজিটিভ ভূমিকা রাখে। কারণ স্বর্ণটা স্থবির অবস্থায় আপনার আলমারিতে পরে থাকা অর্থনীতির জন্য ভালো নয়। এটা লিকুইড করলে তা কোন না কোন উপায়ে দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের কাজে আসে। আর মুসলমান হিসেবে আমাদের সেটাই করা উচিত যেটা আমাদের জন্য সহজ কিন্তু অধিক কল্যাণকর। এবার দেখা যাক একটি বিবাহ বৈধ হবার শর্তগুলো কী কী- বিয়ে মূলত একটি সামাজিক চুক্তি। ইসলামী বিধান অনুযায়ী নিুলিখিত শর্তসমূহ বিয়ের বৈধতার জন্য অপরিহার্য – ১. পাত্র ও পাত্রীর পূর্ণ সম্মতি : বিয়েতে পাত্র ও পাত্রীর পূর্ণ ও স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি প্রয়োজন যা ইজাব (প্রস্তাব) ও কবুল (গ্রহণ) এর মাধ্যমে গৃহীত হয়। এক্ষেত্রে সাধারণত পাত্র প্রস্তাব করে ও পাত্রী কবুল করে। তবে পাত্রীর প্রস্তাব করা ও পাত্রের গ্রহণ বা বর্জন করার নীতিও ইসলামে স্বীকৃত। দ্রষ্টব্য বুখারী, কিতাবুন নিকাহ। অনেক আলেম মনে করেন পাত্রী পরে অভিবাবকের সম্মতিও বিবাহ বৈধতার শর্ত। তবে অনেক আলেম ভিন্নমত পোষণ করেন। যেমন আবু হানিফার মতে সাবালক নারীর ক্ষেত্রে তার মতই যথেষ্ট, অভিভাবকের সম্মতি বাধ্যতামূলক নয়। অর্থাৎ সাবালক নারীর অভিভাবকের সম্মতি ব্যতীত তার নিজের সম্মতিতে বিবাহ বৈধ হবে। ২. স্বামী : বিবাহ দু’জন নির্ভরযোগ্য স্বামী থাকতে হবে। ৩. . প্রচার : স্কলাররা এ ব্যাপারে একমত যে বিয়ের ব্যাপারটি গোপন রাখা ঠিক নয় বরং সেটিকে সমাজে প্রচার (Publicize) করা জরুরী। এজন্য বর (বা বর প) তার সামর্থ্য অনুযায়ী ভোজের ব্যবস্থা করবে। আগেই বলা হয়েছে যে, বড় ভোজের আয়োজন করা বাধ্যতামূলক নয়। বড় বা ছোট ভোজ এ ব্যাপারে ইসলাম কোন বাধ্য-বাধকতা দেয় নি। বরং সামর্থ্য অনুযায়ী ভোজকেই (কৃপণতা বা বিলাসিতা দু’ই ইসলাম অপছন্দ করে) ইসলাম উৎসাহিত করে। এখানে উল্লেখ্য আমাদের সমাজে বেশীর ভাগ সেক্ষেত্রে পাত্রী পরে ওপর বড় ভোজ আয়োজনের দায়িত্ব বেশী থাকে। অথচ ইসলাম ভোজ আয়োজনের দায়িত্ব দিয়েছে বরপকে। তবে পাত্রী প যদি স্বেচ্ছায় সামর্থ্য অনুযায়ী ভোজের আয়োজন করে তাতে দোষের কিছু নেই। পাত্র পরে উচিত হবে না পাত্রী পরে উপরে এ ভোজ আয়োজনের জন্য প্রত্য বা পরো চাপ প্রয়োগ করা। আমাদের দেশে অনেকেই বরযাত্রীর নাম করে একটি বড় সংখ্যা পাত্রীপরে উপর চাপিয়ে দেন। ৪. দেনমোহর : আর একট গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো দেনমোহর (Bridal gift)। এটি আদায় করা প্রতিটি স্বামীর জন্য ফরজ, তা মিলনের পূর্বে হোক বা পরেই হোক। এক্ষেত্রে স্বামীর উচিত তার সামর্থ্য অনুযায়ী যতটা সম্ভব দ্রুত দেনমোহর আদায় করায় সচেষ্ট হওয়া। অনেকে মনে করেন কেবল তালাক হলেই মোহর দিতে হয়। এটি একেবারেই ভুল ধারণা। দেনমোহর বিয়ে বৈধতার একটি শর্ত। কাজেই বিয়ের সময়ই দেনমোহর ফরজ হয়ে যায়। এবার জানা যাক বিয়ের সময় একজন ইমাম বা কাজীর উপস্থিতি বাধ্যতামূলক কি না। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কাজী বা ইমামের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক নয়। উপরোক্ত চারটি শর্ত পূরণ হলেই ধর্মীয়ভাবে বিয়ে হয়ে যাবে। তবে বিয়ে পড়ানোর জন্য (Solemnize) বিয়ে পড়ানোর অনুমতি প্রাপ্ত (Authorized) কেউ উপস্থিত থাকা উচিত। যেমন আমাদের দেশে রেজিষ্টার্ড কাজী। এবার আলোচনা করবো আইনগত ব্যাপারটি নিয়ে। উল্লিখিত চারটি শর্ত পূরণের মাধ্যমে বিয়ে ধর্মীয় বৈধতা পেয়েও আইনগত বৈধতা পাবার জন্য দেশীয় আইন মতে কিছু কাগজপত্র (Legal paper) তৈরী করা বাধ্যতামূলক। এটা না করা হলে বিবাহের েেত্র কোন সমস্যা দেখা দিলে (Event to dispute) তার আইনী সমাধান পাবার কোন সম্ভাবনা থাকবে না। এক্ষেত্রে আমাদের দেশের চাহিদা কাবিন করা ও বিবাহ রেজিস্ট্রি করা আইনগত বাধ্যতামূলক যাতে মোহরানা ও অন্যান্য শর্তাবলী উল্লেখ থাকে। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এ আইনী কাগজপত্র বাধ্যতামূলক না হলেও বর্তমানে আলেম সমাজ এ ব্যাপারে একমত যে এটা প্রতিটা মুসলমানের করা কর্তব্য।

 

এসিড দগ্ধ নারীদের অনন্য উদ্যোগ ‘প্রেসার গার্মেন্টস’


মোঃ মাহদী-আল-মুহতাসিম নিবিড়


বাংলাদেশে এসিড-হামলার শিকার নারীর সংখ্যা কম নয়। শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হওয়ার পর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা তাদের জন্য খুব কষ্টের। কিন্তু এসিড-সন্ত্রাসের শিকার হবার পরও জীবনযুদ্ধে বিজয়ী ক’জন নারী নিজেরা যেমন স্বাবলম্বী হয়েছেন, তেমনি দেশের স্বাস্থ্যখাতে অবদান রাখছেন। বিভিন্ন হাসপাতালে এসিড-আক্রান্তদের জন্য প্রেসার গার্মেন্টস তৈরি করছেন পাঁচ এসিডদগ্ধ নারী।
প্রেসার গার্মেন্টস হল লায়েক্রা নামক বিশেষ ধরনের কাপড়ের তৈরি পোশাক, যা রোগীর শরীরের মাপ অনুযায়ী বানানো হয়। এটি আক্রান্ত স্থানে সার্বক্ষণিকভাবে একই পরিমাণে চাপ দিতে পারে, যে ক্ষত তৈরি হয় তার বৃদ্ধি কমিয়ে দেয়। কোলাজেন ফাইবার, যা শরীরের এক প্রকার তন্তু-জাতীয় প্রোটিন, দগ্ধ স্থানের স্কার ফুলিয়ে তোলে। প্রেসার গার্মেন্টসের চাপের কারণে কোলাজেন সমান থাকে। অর্ডার অনুযায়ী প্রত্যেক অঙ্গের জন্য আলাদাভাবে এগুলো বানানো হয়।
বর্তমানে এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে চলছে এই পোশাক তৈরির কাজ।
মিরপুর চৌদ্দতে অবস্থিত এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ২০০২ সালে অস্ট্রেলিয়ান প্রশিক্ষকদের কাছ থেকে প্রেসার গার্মেন্টস তৈরির প্রশিক্ষণ নেন দুই এসিডদগ্ধ- আয়েশা বেগম ও রহিমা আকতার ডলি। পরে প্রশিক্ষণ নেন শামীমা আকতার, তসলিমা আকতার, নার্গিস আকতার রানু ও রোকসানা পারভীন। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ফাউন্ডেশন থেকে তারা মাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেতন পান। এদের মধ্যে রহিমা ডলি এখন বিদেশে আছেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহিদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনে আকারভেদে এসব গার্মেন্টস ৮০০ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৮০ হাজার টাকার প্রেসার গার্মেন্টস বিক্রি হয় এই তিন ইউনিট থেকে।
এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন হাসপাতালের ব্যবস্থাপক ডা. ফেরদৌস ওয়াহিদ জানালেন, “২০০২ সালের আগে যখন প্রেসার গার্মেন্টস ছিল না, অপারেশনের পর শুধু মলম ও মেডিসিন ব্যবহারেই সীমাবদ্ধ থাকতে হত। যার ফলে রোগীদের শরীর চুলকাত, ফোসকা পড়ে যেত, ফুলে যেত চামড়া। সার্জারির পর যে চামড়া লাগানো হয় সেটি যেন ফুলে না যায় সেজন্য প্রেসার গার্মেন্টস ব্যবহার করা হয়। আর যদি ফুলেও যায়, পরে যেন চামড়া আবার মসৃণ হয়ে ওঠে।”
২০ শয্যার এ হাসপাতালে ৭ জন ডাক্তার রয়েছেন। বিনা খরচে নারীসহ সহিংসতার শিকার দগ্ধ রোগীরা চিকিৎসা পাচ্ছেন এখান থেকে। বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠীর কাছ থেকে অর্থের সঙ্কুলান হয় বলে জানান ওয়াহিদ।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে নারীদের প্রেসার গার্মেন্টস বিক্রির জন্য রুম তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। যেখানে রোকসানা ও তাসলিমা নিজেদের তৈরি সামগ্রী বিক্রি করছেন। রোকসানা বলেন, “একসময় আমিও এমন রোগী ছিলাম। এখন আমি কাজটা শিখে নিজে করছি। অন্যরা আমার তৈরি জিনিস পরছে।”
এ কাজে গত বছর থেকে যুক্ত হন শামীমা। নওগাঁর পতœীতলা থানার চকদুরগা গ্রামের শামীমা ২০১১ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পর স্বপ্ন দেখছিলেন সেনাবাহিনীতে চাকরি করার। বিয়ের পর পড়াশুনা করতে দেবে এমন শর্তে ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলামের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। পড়ার সুযোগ না-দেওয়া নিয়ে একদিন ঝগড়ার পর ঘুমন্ত শামীমাকে এসিডে ঝলসে দেয় স্বামী।
শামীমা বলেন, “২০১২ সালে বিয়ের ছ’মাস পর এ দুর্ঘটনার শিকার হলে এখানে চিকিৎসা নিই। তখন আয়েশা আপার বানানো প্রেসার গার্মেন্টস পরেছিলাম। গত বছর থেকে আমিও এটি তৈরি করছি। মাসে ১০ হাজার টাকা আয় করি।”
স্বাবলম্বী শামীমা এখন ¯œাতক পর্যায়ে পড়াশুনা করছেন।
২০০২ সাল থেকে এ পেশায় যুক্ত চট্টগ্রামের আয়েশা জানান, বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ২০০০ সালে যখন তিনি এসিডে ঝলসে যান তখন প্রেসার গার্মেন্টস ছিল না। বছরের পর বছর ভুগতে হয়েছিল তাকে।
“আমার চামড়ার অনেক জায়গায় কুঁচকে আছে, সেটা থাকত না। চৌদ্দটা অপারেশন করতে হয়েছে, সেটারও দরকার হত না। সমাজে সবসময় মেয়েদের দায়ী করা হয়। তাই যখন ওদের কথা শুনি, তখন নিজের কথা মনে পড়ে। আমিও তো ওদের মতো ছিলাম।”
২০০৬ সালে বিয়ের পর এক মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে তিনি এখন স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। মেয়েটি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। আর তিন বছরের ছেলে মায়ের সঙ্গে তার কর্মক্ষেত্রে আসে।
এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, ১৯৯৯ সাল থেকে দেশে ৩৩৮৬টি এসিড-হামলার ঘটনা ঘটেছে। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তারা ১৫টি এসিড-হামলার বিষয়ে জেনেছেন।
ফাউন্ডেশনের এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি সুমাইয়া নূরের মতে, এসিডে ওদের শরীরের নানা অঙ্গ ঝলসে গেলেও এরা পরাজয় মেনে না নিয়ে বাঁচতে শিখছেন।
ফাউন্ডেশনের সার্বিক সহযোগিতায় চিকিৎসা পেয়ে সুস্থ হওয়া এই পাঁচ নারী ছাড়াও আরও ১৭ জন নানা কাজ শিখে স্বাবলম্বী হয়ে উঠে এ প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন।

সুত্র: বাসস।

 

মানসিক উদ্বিগ্নতা সারিয়ে তুলতে পারে দাদা দাদী


নারী সংবাদ


মানসিক বিকাশে সাহায্য করে পিতা-মাতামহ। শিশু-কিশোর বা তরুণ তরুণীর মধ্যে মানসিক অসুস্থতা বা উদ্বিগ্নতা দেখা দিলে, সেটা কাটিয়ে উঠতে বড় ধরণের ভূমিকা রাখতে পারে দাদা-দাদী বা নানা-নানী।
এ কারণে শিশু বা অল্পবয়সীদের মধ্যে এমন সমস্যা দেখা দিলে তাদের দাদা-দাদীর সংস্পর্শে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
টেলিফোন হেল্প-লাইন পরিষেবা চাইল্ড-লাইনের প্রতিষ্ঠাতা ডেইম এস্থার রান্টজেন বলেছেন, “যৌথ পরিবারের ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে এবং নিকটবর্তী আত্মীয় স্বজনের সাহচর্যের অভাবে কারণে শিশুদের বেড়ে ওঠা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”
তার মতে, শিশুদের, তাদের পিতামহ ও মাতামহদের সঙ্গে দেখা করার আইনগত অধিকার দেয়া উচিত। যেটা কি-না ফ্রান্সে আছে।
তিনি বলেন, অনেক বাবা-মা এতোটাই ব্যস্ত থাকেন যে তারা শিশুদের মানসিক চাহিদা পূরণ করতে পারেন না।
আত্মহত্যার প্রবণতা ঠেকানো যায়
চাইল্ড-লাইন পরিচালনাকারী দাতব্য সংস্থা এনএসপিসিসির হিসাব অনুযায়ী, গত দুই বছরে শিশুদের উদ্বেগ কাটাতে সহযোগিতার চাহিদা দ্বিগুণ বেড়ে গেছে।
এই প্রতিষ্ঠানটি মানসিক উদ্বিগ্নতায় ভূগছে এমন তরুণদের জন্য গত দুই বছরে ২১ হাজারেরও বেশি সেবা দিয়েছে।
তারা মূলত টেলিফোনের মাধ্যমে আক্রান্তের সঙ্গে খোলামেলা আলাপ-আলোচনা করে যা প্রাথমিক অবস্থায় অনেককেই আত্মহত্যা থেকেও ফিরিয়ে আনতে পেরেছে।
এ থেকে আন্দাজ করা যায় যে, একজন অপরিচিত মানুষের সঙ্গেও মন খুলে কথা বলতে পারার সুযোগ কতোটা সহায়ক হতে পারে। আর সেই মানুষটা যদি পরিবারের কাছের মানুষ হয়, তাহলে তো কথাই নেই।

মানসিক উদ্বিগ্নতা কাটাতে, বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে পিতা-মাতামহ।
আরও পড়তে পারেন:
ছাত্রীদের কাউন্সেলিং-এর ব্যবস্থা হবে ভিকারুননিসা স্কুলে
বাংলাদেশে বাড়ছে নারী প্রধান পরিবার
‘জন্মের পরপরই মেয়ে বদলে ছেলে নিয়ে আসতে বলছিল সবাই’
পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা
প্রতিনিয়ত মানসিক উদ্বিগ্নতায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা যে হারে বাড়ছে সেক্ষেত্রে এ ধরণের হেল্প-লাইন পরিসেবা যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন ডেম এস্থার। এক্ষেত্রে তিনি পরিবারের ভূমিকাকে সবচেয়ে বড় করে দেখছেন।
ডেম এস্থার বলেছেন, “যখন আমি ছোট ছিলাম, তখন আমি যৌথ পরিবারে বেড়ে উঠেছিলাম। আমি যে বিষয়গুলো নিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলতে পারতাম না, সেটা নিয়ে হয়তো পরিবারের অন্যদের সঙ্গে কথা বলতাম। সেই সুযোগটা আমার ছিল।”
তাই পরিবারগুলোর আসলে বোঝা উচিত যে পরিবারের শিশু বা তরুণ সদস্যদের যথেষ্ট মানসিক সহায়তা দেয়ার মতো অবস্থা তাদের রয়েছে কিনা।
যদি না থাকে তাহলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

অল্পবয়সীদের মানসিক সুস্থতার জন্য দাদা- দাদীর সঙ্গে দেখা করাটাকে অধিকার হিসেবে দেখতে চাইছেন বিশেষজ্ঞরা।
সহায়ক ভূমিকা পালন
“মানুষ সারা দিন ব্যস্ত থাকে – অনেকেই দুই থেকে তিনটা চাকরি করে থাকেন, অথবা তারা যেখানে কাজ করছেন সেখানে হয়তো তার পরিবার থাকে না। আবার অনেককেই চাকরির কারণে পরিবারের থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে। এমন নানা কারণে দিন দিন পরিবারগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে।
আবার ছোট পরিবারগুলোর সদস্যরাও সময় দিতে না পারার কারণে এক ধরণের বিচ্ছিন্নতায় ভুগছে।
ডেইম এস্থারের মতে, আজকাল বড় পরিবারগুলো ভেঙ্গে যাচ্ছে এবং পরিবার একীভূত রাখাটাকে এখন আর কেউ গুরুত্ব দিয়ে দেখছেনা।
অথচ এটা সত্যি যে, শিশুদের মানসিক বিকাশে বা উদ্বিগ্নতা কাটাতে এই বড় পরিবারের কোন বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, “যে পরিবারের শিশুরা দাদা- দাদী বা নানা-নানীর সংস্পর্শে বেড়ে ওঠে তারা বুঝতে শেখে যে জীবনকে তারা যতোটা জটিল ভাবে, জীবন এতোটা খারাপ না।” মাতামহ ও পিতামহের সংস্পর্শে শিশু বুঝতে শেখে যে জীবন এতোটা খারাপ না।

আবারও যোগাযোগ স্থাপন
বর্তমান পরিস্থিতিতে নবীনদের মানসিক সুস্থতার জন্য দাদা- দাদী বা নানা-নানীর সঙ্গে দেখা করাটাকে অধিকার হিসেবে দেখতে চাইছেন ডেম এস্থার।
তিনি বলেন, “আমাদের এখন প্রত্যেক শিশুকে তাদের পিতামহ বা মাতামহের সাথে যোগাযোগ রাখার অধিকার দিতে হবে, যেটা কিনা ফ্রান্সে আছে।”
ডেম এস্থার এক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যে দিন দিন বাড়তে থাকা পারিবারিক বিচ্ছিন্নতার বিষয়টি উল্লেখ করেন।
পরিবারগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কারণে ওই শিশুদের সঙ্গে দেখা করার জন্য তাদের পিতা-মাতামহের অনেক সময় আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়।
তবে ফ্রান্সের মতো দেশে, সবারই তাদের মাতামহ- পিতামহের সঙ্গে দেখা করার অধিকার রয়েছে।

ফ্রান্সে সবার তাদের মাতামহ- পিতামহদের সঙ্গে দেখা করার অধিকার রয়েছে। এবং এই নিয়ম যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশের গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করেন ডেম এস্থার।
তিনি বলেন, “ডিউক অব ক্যামব্রিজ এবং ডিউক অফ সাসেক্সসহ উচ্চ মার্গীয় ব্যক্তিরাও এই সমস্যাগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করছেন। পরিবারের বিচ্ছিন্নতা রোধ, সেইসঙ্গে নবীনদের মানসিক উদ্বিগ্নতা কাটিয়ে উঠতে খোলামেলা কথাবার্তার ওপরও জোর দিচ্ছেন তারা।”
ডেইম এস্থারের মতে পরিবারের কেউ যদি মানসিক উদ্বিগ্নতায় ভোগে, এবং দ্রুত যদি এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেয়া না হয় তাহলে যে কারও মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বা দীর্ঘস্থায়ী মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার দেখা দিতে পারে।

সুত্র: বিবিসি

 

মাজার ব্যথায় অত্যাধুনিক ম্যানুয়াল চিকিৎসা


প্রফেসর আলতাফ হোসেন সরকার


যেকোন অসুস্থ্যতাই আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় সুস্থ থাকাটা কত জরুরী শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতঙ্গের সুস্থতার উপর নির্ভর করে আমাদের ভাল থাকা।এদের কোনটিতে একটু সমস্যা দিলেই ঘটে নানা বিপত্তি। জীবনটাই হয়ে উঠে দুর্বিসহ। আর যদি হয় ব্যথা জনিত অসুস্থতা তবে তা আমাদেরকে ফেলে দেয় রীতিমত দুর্ভাবনায়। তবে সমস্যা যাই আসুক চেষ্টা আর সঠিক পথ জানা থাকলে তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় খুব সহজেই। সুপ্রিয় পাঠক, আজকের আমার এই লেখা আশা করি কিছুটা হলেও আপনাদের উপকারে আসবে।
মতি লাল সাহা। বয়স ৩৭ বৎসর। এসেছিলেন আমার কাছে তাঁর- মাজাব্যথার চিকিৎসার জন্য। তিনি গত আগষ্ট ২০১৪ সাল থেকে মাজার ব্যথায় ভুগছেন। ব্যথা হলে মাঝে মাঝে বিভিন্ন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করে থাকেন। কখনও একটু ভাল থাকেন আবার কখনও ব্যথা বেড়ে যায়। এ ভাবে পার হয়েছে জীবনের বেশ কিছূ মুল্যবান সময়। এখন আর বেশিক্ষন টেবিলে বসে বা সামনে ঝুঁকে কাজ করতে পারছেন না। আর সে জন্য তিনি গত জীবনের মেধাবী-পদবী যেন হারাতে বসেছে। আমি যখন তাঁর সংগে রোগের ইতিহাসের কথা জিজ্ঞাসা করছিলাম, এক পর্যায় তিনি বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেলেন। কারন বসে থাকার জন্য তাঁর ব্যথা তীব্রতর হচ্ছে। এমআরআই এবং এক্স-রে রিপোর্টে বলা হয়েছে কোন হাঁড় এবং ডিক্স এ কোন অসুস্থতা নেই। কিন্তু মতি লাল সাহার ফিজিক্যাল পরীক্ষা করে দেখা গেল তাঁর কোমরের লংগীসিমাস ও স্পাইনালিস মাসেল-লাম্বার রিজিওনে প্রচন্ড ব্যথা ও টেনডার এবং পেটের নিচের মাসেল ও দূর্বল। এই মাংসগুলো আমাদের শরীরের পেছনের দিকে মাজায় বা কোমরে এবং পেঁট, লোয়ার লাম্বার ও ফিমারের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। মি. মতি লাল-এর ঐ মাংসগুলোর শক্তি কমে গেছে। সে কারনে বসে কাজ করার সময়, সামনের দিকে তিনি যখন ঝুঁকেন, তখন তাঁর ঐ মাংস গুলো তাঁর শরীরের(মাথা, ঘাড়, বুক এবং মাজা) ওজন ধরে রাখতে পারে না। চিকিৎসা শুরু করার পূর্বেই সঠিক ফিজিক্যাল ইক্সামিনেশন করে অসুস্থ স্ট্রাকচার বের করতে হবে অর্থাৎ ফাইন্ড দ্যা সিক স্ট্রাকচার এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। মি. মতি লাল-এর চিকিৎসার জন্য তাঁর অসুস্থ সফ্ট টিসু বা মাংসগুলোর মোবালাইজেশন, স্পাইনের রেন্জ বাড়ানোর জন্য বায়োমেকানিকস অনুযায়ী সঠিক ব্যায়াম, আলট্রা সাউন্ডথেরাপি এবং অবশ্যই কাইনিসিওলজী বেজ্ড এক্সারসাইজ দরকার। এই চিকিৎসার সাথে অবশ্যই অত্যাধুনিক লো-লেভেল লেজার থেরাপি দ্বারা চিকিৎসা করতে হবে। তাঁর পর আর যেন ব্যাথা না হয় সে জন্য প্রতিরোধ মুলক ব্যায়াম(স্ট্রেনথেসিং, স্ট্রেচিং ও স্ট্রাবিলাইজেশন) অবশ্যই করতে হবে।
আমি মনে করি সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে তাঁর ব্যথা ভাল হবেই ইন-শাহ-আল্লাহ। আর যেন ব্যাথা না হয় সে জন্য প্রতিরোধ মুলক ফিজিওথেরাপি নিতেই হবে। প্রতিদিন ৮-৯ ঘন্টা ঘুমাবেন। প্রচুর পানি খাবেন। বসা, দাঁড়ানো, ঁহাটা ও জিনিস উত্তলনের সময় মেরুদন্ডের সঠিক ভঙ্গি মেনে চলুন।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের দ্রুত প্রসারের সাথে সাথে ব্যাকপেইন চিকিৎসার জন্য আমার অত্যাধুনিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা সঠিক যায়গায় স্থান করে নিয়েছে এভাবেই তার নিজেস্ব প্রযুক্তি ও সঠিক ম্যানুয়াল থেরাপির মাধ্যমে। কোমর ব্যথার চিকিৎসার জন্য আর বিদেশ নয় দেশেই এখন বিশ্বমানের অত্যাধুনিক চিকিৎসা আমরা দিয়ে আসছি। সুতরাং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করুন। মাজা ব্যথার কষ্ট মুক্ত থাকার জন্য আমার অপারেশন বিহীন সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করুন। মনে রাখবেন পৃথীবির উন্নত দেশগুলোর বিভিন্ন গবেষনায় বলা হয়েছে শিড়দাঁড়ার চিকিৎসার জন্য নন-অপারেটিভ ম্যানুয়াল ও মোবালাজেশন চিকিৎসা অত্যাধিক কার্যকর। আমি আমার এই লেখার মাধ্যেমে অসুস্থ জনগণের জন্য সামান্য হলেও ধারণা দিতে চেষ্টা করেছি যে, আপনি আপনার মাজার কষ্টে জন্য কি করবেন। মেরুদন্ডের সঠিক চিকিৎসা নিন, সুস্থ জীবন-যাপন করুন।
——————–
ব্যাকপেইন বিশেষজ্ঞ
লেজার ফিজিওথেরাপি সেন্টার
পান্থপথ, ঢাকা।
সুত্র: ইবনে সিনা হেলথ ম্যাগাজিন।

 

গজারিয়ায় যৌতুকের বলি হলেন গৃহবধূ


নারী সংবাদ


মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার টেংগাচর গ্রামে যৌতুক না পেয়ে মারধর করায় বিষপানে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, এক বছর আগে টেংগারচর ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা গ্রাম পুলিশের সদস্য নাসিমা বেগমের মেয়ে স্বর্ণার সঙ্গে পাশের বাড়ির সুমনের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে ৩০ হাজার টাকা দাবি করে সুমনের পরিবার।

নাসিমা অভিযোগ করেন, এক সপ্তাহ আগে যৌতুকের ২৫ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়। পাঁচ হাজার টাকা কম দেওয়ায় শ্বশুর বাড়ির লোকজন ও স্বামী সুমন গত বোববার স্বর্ণাকে মারধর করে।

এই অপমান সইতে না পেরে স্বর্ণা গতকাল দুপুরে হোসেন্দী বাজারে গিয়ে বিষপানে অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্থানীয় কয়েকজন শিক্ষার্থী তাকে অচেতন অবস্থায় গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিনই স্বর্ণার মৃত্যু হয়।
সুত্র: সমকাল

 

প্যারেন্টিং প্ল্যান


কানিজ ফাতিমা


একটি শিশুর ভালোভাবে গড়ে উঠার প্রয়োজন শুধুমাত্র বাবা-মায়ের মানসিক শান্তি আর পরিবারের সুখের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি সমাজ এবং সভ্যতারও মূল ভিত্তি। পূর্বের অধ্যায়গুলোতে আমরা শিশু লালন-পালনের ক্ষেত্রে লক্ষ্য নির্ধারনের গুরুত্ব এবং পিতামাতাদের যেসব চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে পূর্ব থেকেই সতর্ক থাকতে হবে সে বিষয়ে আলোচনা করেছি। এই অধ্যায়ে আমরা কিছু বহুল প্রচলিত ভুলধারনা তুলে ধরবো, সেই সাথে এমন কিছু “ফাঁদ” নিয়েও আলোচনা করব যেগুলোতে পিতামাতারা সহজেই পরতে পারেন। এখানে আরো থাকবে কিভাবে এ ফাঁদগুলো এড়িয়ে চলা যায় সে বিষয়ে আলোচনা । সবশেষে থাকবে প্রচলিত কিছু জনশ্রুতি (Myth) এবং তার খন্ডন । এসব ভুল ধারনাগুলো তুলে ধরার কারন হচ্ছে, প্যারেন্টিংএ কি কি বাধা আসতে পারে তা সম্পর্কে পিতা-মাতাদের সচেতনত করা । কারণ প্যারেন্টিং এর চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে আগে থেকেই ভালো ধারণা ছাড়া একটি ভালো প্যারেন্টিং প্ল্যান কখনোই সম্ভব হয়না।

প্রচলিত ভ্রান্তি দূর করা ও গুপ্ত ফাঁদগুলো সম্পর্কে সচেতন করা

উত্তারিধকারসূত্রে প্রাপ্ত প্যারেন্টিং পদ্ধতিগুলোর অন্ধ অনুসরন

অনেকসময়ই আমরা আমাদের আচরণগত অভ্যাসগুলো আমাদের বাবা-মায়ের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সুত্রে অর্জন করি। এইগুলো যে সবসময় কার্যকর বা সর্বোত্তম তা কিন্তু নয়। বরং অনেক সময়ই দেখা যায় এদের অনেকগুলোই ঠিক যুগোপযোগী নয়, এমনকি কোনো কোনটি অনেকক্ষেত্রে ক্ষতিকরও বটে। একজন মা বলেছিলেন, “যে মুহূর্তে আমি গর্ভবতী হলাম, সে মুহূর্ত থেকে আমি আমার মা এর মত হয়ে গেলাম ”। কিছু মা-বাবা, বিনয় আর কৃতজ্ঞতা থেকে ঘোষণা করে দেন যে তাদের বাবা-মা তাদেরকে সর্বশ্রেষ্ঠ উপায়ে বড় করেছেন। একথা সত্যি যে, আমাদের সবারই আমাদের বাবা-মায়ের কাছ থেকে অনেক বেশি আদর-ভালোবাসা পাওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে, কিন্তু তাদের সবারই যে ইতিবাচক প্যারেন্টিং সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান বা দক্ষতা ছিল- তা কিন্তু বলা যাবে না।

অপরের অন্ধ অনুকরন

অন্য কোনো পিতা-মাতার পুরোপুরি অন্ধ অনুকরন প্যারেন্টিং এর সঠিক পদ্ধতি হতে পারেনা। মনে রাখতে হবে প্রতিটি শিশুরই নিজস্ব কিছু বিশেষত্ব থাকে যা অন্য বাচ্চার থেকে ভিন্ন । তাই এক বাচ্চার জন্য যা ভালো তা অন্য বাচ্চার জন্য ভালো নাও হতে পারে। মা-বাবার উচিত তাদের সন্তানকে ভালো ভাবে জানা ও সেই সন্তানের জন্য কোনটা ভালো তা খুঁজে বের করা। অন্য পিতা-মাতাদের পরামর্শ নেয়া অবশ্যই জরুরী তবে এ সময় মনে রাখতে হবে যে প্যারেন্টিং এর বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে , ক্ষেত্র বিশেষে এসব পদ্ধতির কার্যকারীতা পরিবির্তিত হয়, অর্থাত একেক ক্ষেত্রে একেক পদ্ধতি বেশী কার্যকর। যেমন, অনেক পিতামাতা সন্তানদের সাথে বেশ নমনীয় আর উদার থাকেন, আবার কেউ হয়তো সন্তানদের বেলায় কঠোরতা অবলম্বন করতে পছন্দ করেন।

প্রতি পদক্ষেপেই নতুন চমক

“ নতুন বাবারা দ্রুতই বুঝে যান যে সন্তান মানুষ করা কোনো পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই ক্রমাগত উদ্ভাবনের এক মরীয়া প্রয়াস। ” (Bill Cosby,, অভিনেতা)
“প্যারেন্টিং এমন বিষয় যে আমরা শিখে নিয়ে তারপর শুরু করি, বরং এটা শুরু হওয়ার করতে করতে শিখি” (ELKIND,১৯৯৫)

সন্তানের মাধ্যমে নিজের অপূর্ণ ইচ্ছার পূর্ণতা

সন্তানের মাধ্যমে নিজের অপূর্ণ ইচ্ছা পূরণ আমাদের সমাজে খুবই প্রচলিত একটি ভুল প্যারেন্টিং আচরন। এমন অনেক বাবা-মাই আছেন যারা নিজেদের সন্তানদের মাধ্যমে নিজেদের অপূর্ণ ইচ্ছা পূরন করার চেষ্টা করেন। এমনকি অনেক সময় সন্তানের ইচ্ছা অনিচ্ছার প্রতি তোয়াক্কা না করেই তাদের উপর নিজেদের পছন্দ চাপিয়ে দেন। যেমন, আমরা অনেককে দেখি নিজেরা ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে চেয়েছিলেন কিন্তু পারেননি; ফলে সেই অপূর্ণতা থেকে সন্তানদের বাধ্য করেন তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য। আমাদের মনে রাখা উচিত, সন্তান কখনোই বাবা-মার সংযোজন নয়।

সন্তানদের নিজেদের স্বাধীন ইচ্ছা অনিচ্ছা রয়েছে।

বাবা-মায়েরা অনেক সময় সন্তানদের নিজেদের একটি বর্ধিত অংশ ভাবতে পছন্দ করেন। তাই তারা নিজেদের অপূর্ণতা গুলো সন্তানের মাধ্যমে পূরণ করতে চান, নিজেদের ভুলগুলো সন্তানদের মাধ্যমে শুধরে নিতে চান, এমনকি তাদের নিজেদের বাবা-মায়ের প্রতি করা অতীতের ভুলগুলোও নিজের সন্তানের মাধ্যমে শুধরাতে চান। যদি কোনো বাবা-মা খেলাধুলায় নিজের আকাঙ্খানুযায়ী ভাল না করতে পারেন, তারা চান তাদের সন্তানরা চ্যাম্পিয়ন হোক। যদি তারা অংক বা বিজ্ঞানে খারাপ করে থাকেন, তারা চান তাদের সন্তান আইন্সটাইন হোক। কেউ যদি রাজনীতিতে সফলতা না পান, তবে তারা চান তাদের সন্তান বড় রাজনীতিবিদ হোক । কিন্তু বাবা-মায়ের মনে রাখতে হবে, মাতৃত্ব বা পিতৃত্ব কখনোই দ্বিতীয় শৈশব নয়, আর সন্তানও মা-বাবার ক্ষুদ্র সংস্করণ নয়। জীবনের শুরু থেকেই সন্তানদের স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব রয়েছে এবং তাদের সেই ব্যক্তি স্বাতন্ত্রকে শ্রদ্ধা করতে হবে।

পিতৃত্ব-মাতৃত্বের দ্বায়িত্বভার অন্যের কাঁধে অর্পন করা

অনেকে মনে করেন যে প্যারেন্টিং এর দায়িত্ব মা কিংবা বাবা একজনের পক্ষে পালন করা সম্ভব। সত্যিকার অর্থে, বাম হাত যেমন ডান হাতের বিকল্প হতে পারেনা আর ডান হাত যেমন বাম হাতের দায়িত্ব নিতে পারেনা, তেমনি মা বা বাবা কেউই একজন আরেকজনের স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন না। একটি সন্তানের বেড়ে ওঠার পেছনে বাবা-মা দু’জনেরই নির্দিষ্ট এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। দাদা-দাদী, নানা-নানী, অন্য কোনো আত্বীয়, বেবি সিটার বা কাজের বুয়া কেউই কখনোই বাবা-মায়ের স্থলাভিসিক্ত হতে পারেননা। তারা বাবা -মায়ের সাহায্যকারী হতে পারেন ঠিকই কিন্তু কখনোই মা-বাবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার বিকল্প হতে পারেননা।

শিশুকে শুধুমাত্র যুক্তি দিয়ে বুঝানোকেই যথেষ্ট মনে করা

সন্তান ও পিতামাতার সম্পর্ক শুধুমাত্র যুক্তি নির্ভর সরল সমীকরণ নয়। মা-বাবা আর সন্তানের মধ্যে সম্পর্ক একমাত্র যুক্তির উপর ভিত্তি করে হয়না, এই সমীকরণে অভ্যাস, আবেগ-অনুভুতিরও স্থান রয়েছে। যেমন ধরুন, কোনো মা-বাবা যদি সন্তানকে ফলমূল বা শাক-সবজি খেতে উদ্বুব্ধ করতে চান তাহলে, “খাও, এসব খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, তোমার শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন আর মিনারেল এই খাবারে রয়েছে” – এরকম যুক্তি দিলেই কাজ হয়ে যাবে এমনটা না, এক্ষেত্রে ভালবাসা-আবেগ ইত্যাদিরও প্রয়োগ করে তাকে বোঝাতে হবে । মনে রাখতে হবে যে যুক্তির প্রয়োজন রয়েছে ঠিকই, কিন্তু শধুমাত্র যুক্তিই যথেষ্ট নয়।

 

মগবাজারে বাসা থেকে গৃহকর্মীর লাশ উদ্ধার


নারী সংবাদ


রাজধানীর মগবাজারে একজন সরকারি কর্মকর্তার বাসায় নিপা (১৪) নামে এক গৃহকর্মীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় পুলিশ গ্রিনওয়ে এলাকার একটি বাসার বাথরুম থেকে ওই গৃহকর্মীর লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায়।
হাতিরঝিল থানার ওসি আবু মো: ফজলুল করিম জানান, মগবাজারে একজন সরকারি কর্মকর্তার বাসার বাথরুম থেকে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় ওই কিশোরীর লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, গৃহকর্মী নিপা গলায় কাপড় পেঁচিয়ে বাথরুমের ঝরনার পাইপের সাথে ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে থাকে। তবে সে আত্মহত্যা করেছে, নাকি হত্যাকাণ্ড তা পোস্টমর্টেম রিপোর্টে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
তবে গৃহকর্তার বিস্তারিত পরিচয় জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করেছে পুলিশ। একটি সূত্র জানিয়েছে, গৃহকর্মী নিপার গৃহকর্তা কৃষি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলে জানা গেছে। সুত্র:নয়াদিগন্ত।

 

প্রতিবেশিনী…৫


আফরোজা হাসান


বইয়ের মধ্যে ডুবে থাকা মাহামের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেললো আয়ান। ইচ্ছে করেই খানিকটা লম্বা ও শব্দ করে দীর্ঘশ্বাসটা ফেললো যাতে মাহামের ধ্যানভঙ্গ হয়। কিন্তু তাতেও ধ্যানমগ্নতায় বিন্দুমাত্র বিঘ্ন না ঘটলো না। বাইরের জগত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বইয়ের সাথে এমন বন্ধনে জুড়েছে যে বইয়ের ঘটনাপ্রবাহের রেশ ফুটে উঠছে চেহারা জুড়ে। কাজ করতে করতে অনেকক্ষণ থেকেই মাহামের চেহারার বৈচিত্র্যময় অভিব্যক্তি খেয়াল করছিল আয়ান। সাথে সাথে আরেকটা জিনিসও খেয়াল করলো আজ আবারো। কোন কিছুতেই মাহামের কোন অভিযোগ নেই। বাসায় ফিরতে দেরি হবে বলে যাবার পর যেমন হাসিমুখে অভ্যার্থনা জানায়, না বলে দেরি করে ফিরলেও একইরকম হাসিমাখা চেহারা নিয়ে সামনে এসে দাঁড়ায়। এই যেমন আজ বাসায় ফিরেই ঘোষণা দিয়েছিল অনেক কাজ সাথে করে নিয়ে এসেছে। এখন সেসব করতে হবে। তাদের বাইরে যাবার প্ল্যান ছিল। আয়ান ভেবেছিল সামান্য হলেও মনখারাপ করবে মাহাম। কিন্তু হাসি মুখে চা-নাস্তা দিয়ে চুপচাপ বই নিয়ে পাশে বসে গিয়েছে। কোন অভিযোগ নেই, অভিমান নেই। ভালো লাগে, খুব বেশি ভালো লাগে যে কোন পরিস্থিতিতেই মাহামের সাপোর্টিভ আচরণ। কিন্তু মাঝে মধ্যে কেমন যেন পানসা পানসাও মনেহয়। দাম্পত্যজীবনে অল্পস্বল্প অভিযোগ, অনুযোগ, অভিমান থাকাটা মন্দ না। স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরকে বোঝার চেষ্টা করা, স্পেস দেয়ার অর্থ এমনটা আবার নয় যাইকিছু করা হবে চুপচাপ মেনে নিতে হবে সর্বদাই। মেনে নেবার সাথে সাথে পরস্পরের তরে মানিয়ে চলার অপশনও রাখা উচিত। গিট তখনই মজবুত হয় যখন দুইপাশ থেকে টানা হয়। সম্পর্কের বন্ধনের মজবুতির জন্যও উভয় পক্ষেরই সরব অংশগ্রহণ জরুরি। একজনের নিশ্চুপ স্যাক্রিফাইস, কম্প্রোমাইজ বন্ধনের প্রাণচাঞ্চল্য, উচ্ছ্বলতা হ্রাস করে দিতে পারে। এই ব্যাপারটা নিয়ে অতি দ্রুত কথা বলতে হবে মাহামের সাথে। আরো কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, তারপর..

গভীর মনযোগ সহকারে আয়ানের আনা নতুন বইটা পড়ছিল মাহাম। ‘তারপর’ শব্দটা কানে আসতেই বই থেকে চোখ তুলে আয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল, তারপর কি?

আয়ান হেসে বলল, তোমাদের দুই বোনের প্রতিবেশিনী প্রতিবেশিনী খেলা শেষ তাহলে? আমি কিন্তু বেশ উপভোগ করছিলাম তোমাদের দুজনের প্রতিবেশিনী মূলক কর্মকান্ড।

মাহাম হেসে বলল, এই কথা যদি শাবাবের কানে যায় নির্ঘাৎ আবারো বোন থেকে প্রতিবেশিনীতে রুপান্তরিত হয়ে যাবে। তবে আমিও কিন্তু বেশ এনজয় করেছি। শাবাবের সাথে হাসি-আনন্দের ছলে প্রতিবেশীর হক আদায় সহ ইত্যাদি সবকিছু খেয়াল রাখতে যেয়ে একটা পরিকল্পনাও নিয়েছি গত কয়েকদিনে। তোমার সাথে শেয়ার করবো করবো করেও করা হয়ে ওঠেনি।

এখন করে ফেলো শেয়ার তোমার পরিকল্পনা।

মাহাম হেসে বলল, শাবাবের স্বভাব তো তোমার জানাই আছে। মানুষ সামাজিক জীব। একা একা বাস করতে পারে না। এর জীবন্ত উদাহরণ হচ্ছে শাবাব। আমাদের এপার্টমেন্টের প্রায় সব ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের সাথেই কম বেশি পরিচয়, যোগাযোগ, যাতায়াত আছে শাবাবের। ওর সাথে সাথে আমারও সৌজন্যমূলক পরিচয়, দেখা-সাক্ষাৎ, কথাবার্তা হয়েছে, হয় অনেকের সাথেই। মানুষের দোষ অনুসন্ধানের অভ্যাস আমার নেই। সবার মধ্যে থেকে ভালো কিছু খুঁজে নেবার চেষ্টাই করি সবসময়। কিন্তু না চাইতেও অনেকের মাঝেই কিছু না কিছু সমস্যা চোখে পড়েছে। আমি কি দু’একটা উদাহরণ দেবো তোমার বোঝার সুবিধার্থে?

আয়ান হেসে বলল, হ্যা দাও।

যেমন, এক বোন আছেন সারাক্ষণ ই বাচ্চাদেরকে অকারণ শাসন-শোষণের মধ্যে রাখেন। উনার বাচ্চাদেরকে দেখলেই বোঝা যায় মাকে প্রচন্ড ভয় পায়। বাবা-মা সন্তানের তরে প্রশান্তির অপর নাম। বাবা-মাকে দেখে যদি সন্তানরা আতঙ্কিত বোধ করে তাহলে কোথায় যাবে প্রশান্তির সন্ধানে? তাছাড়া বাবা-মার সাথে সন্তানদের সুন্দর সম্পর্কের উপর নির্ভর করে সন্তানদের সুন্দর আগামী। কিন্তু ঐ বোনটি হয়তো না বুঝেই কিংবা সন্তানদের কল্ল্যাণের নিয়্যাতে নিজের অজান্তেই উনার সন্তানদের মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ব্যহত করছেন চরমভাবে। আরেকজন মাকে দেখেছি একেবারেই উদাসীন বাচ্চার ব্যাপারে। প্রায়ই দেখি উনার বারো বছর বয়সী মেয়েটাকে বাসায় একা রেখেই এদিক ওদিক চলে যান। উনার বাসায় আত্মীয়-স্বজনের আনাগোনা খুব। এমন না যে সবাইকেই অবিশ্বাস করতে হবে। কিন্তু সচেতন থাকাটাও জরুরি বাচ্চার ব্যাপারে। আমার মনে হয়েছে এই দুই বোনকে হেলদি প্যারেন্টিং সম্পর্কে বুঝিয়ে বলাটাও প্রতিবেশীর হকের মধ্যে পরে। ছোট্ট একটা ছেলে আছে আরেক বোনের। দেখা হলেই বাচ্চাকে বলে আন্টিকে হ্যালো বলো। শুনলেই মনটা খারাপ হয়ে যায়। ছোটবেলা থেকেই বাচ্চাদেরকে সালামের অভ্যাস করতে হয়। যে শিক্ষাটা পরিবার থেকে পাচ্ছে না বাচ্চাটা। তারপর আমাদের মতোই নিউলি ম্যারেড এক ক্যাপল আছে। মাঝে মাঝেই মেয়েটাকে দেখি বারান্দায় বসে উদাস চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। ওকে সুখী দাম্পত্য জীবনের টুকটাক টিপস দেয়াটাও নিজের দায়িত্ব বলে মনেহয়।

আচ্ছা।

আচ্ছা মানে কি?

আচ্ছা মানে হচ্ছে, আমরা তাহলে নিউলি ম্যারেড ক্যাপল?

মাহাম হেসে বলল, কেন মনে নেই বুঝি?

কিভাবে থাকবে বলো? মনে থাকার মতো কিছু তো আমার নিউলি ম্যারেড ওয়াইফ করে না।

যেমন?

যেমন, কোন ব্যাপারে কোন আবদার নেই, কোন বিষয়ে কোন অভিমান নেই, অভিযোগ নেই। হাজবেন্ডের ব্যস্ততাকে বিশেষ করে বাসায় এসে কাজ করাকে মেয়েরা নাকি সতীনের মতো ভাবে। কিন্তু আমার নিউলি ম্যারেড ওয়াইফ তো তার হাজবেন্ডের কাজকে নিজের সখী ভেবে নিশ্চিন্তে তার পাশে বসে লাভস্টোরি পড়ছে।

মাহাম হাসতে হাসতে বলল, আসলেই যে যা পায় তা চায় না। যা পায় না সেটা নিয়েই আপসোস, আহাজারি করে। অবশ্য এটাই স্বাভাবিক। কারণ মানুষ বড়ই অতৃপ্ত প্রাণী। কোন অবস্থাতেই মানুষ তৃপ্ত হতে পারে না সম্পূর্ণ রূপে। একটা যাওয়া পূরণ হতে না হতেই আর না পাওয়ার হিসাব কষতে শুরু করে আবারো অপ্রাপ্তিতে গা ভাসায়।

হুম, সেটা ঠিকআছে। কিন্তু তোমার আমার মধ্যে হঠাৎ করে পুরো মনুষ্যজাতি চলে এলো কেন?

উপযুক্ত কারণেই এসেছে।

যেমন?

যেমন, আজ সকালেও ইলমা ফোন করে কান্নাকাটি করেছে কিছুক্ষণ। ওর হাজবেন্ড গতরাতে আবারো ওর গায়ে হাত তুলেছে। কারণ সেই একটাই। দেরি করে বাসায় ফিরেছে কেন এই প্রশ্ন করা মাত্রই ইলমার হাজবেন্ড রেগে গিয়েছে। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে গায়ে হাত তুলেছে। ইলমা খুব ভালো করেই জানে ওর হাজবেন্ড দেরি করে ফিরেছো কেন? ফোন দিয়েছিলাম রিসিব করোনি কেন? ম্যাসেজের জবাব দাওনি কেন? আমাকে সময় দাও না। ইত্যাদি ধরণের অভিযোগ পছন্দ করে না। বিয়ের পর থেকেই এই একটা ব্যাপারে ওদের ঝগড়াঝাঁটি লেগেই আছে। এখন তো ঝগড়া গায়ে হাত তোলার পর্যায়েও চলে গিয়েছে। দুজন তো চাইলেই পারে নিজ নিজ অবস্থান থেকে একটু সরে এই সমস্যাটার সমাধান করতে। কিন্তু তারচেয়ে ঝগড়াঝাঁটি, মারামারি ওদের কাছে সহজ। অথচ দেখো মানুষ হিসেবে কিন্তু ইলমা, নাজমুল ভাই দুজনই ভালো। একজন অভিযোগ করা ছাড়তে পারছে না, অন্যজন অভিযোগ শোনা মাত্র মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। শুধুমাত্র এই একটা কারণে নিত্য দ্বন্দ্ব লেগেই আছে দুজনের মধ্যে। মানুষ কেন এমন অবুঝের মতো আচরণ করে সত্যিই আমার বুঝে আসে না। যাকে ভালোবাসার দাবী করে তাকে আঘাত কিভাবে করে? যার সাথে জীবনের সুখ-দুঃখ বাঁধা তার অপছন্দীয় একটা কাজ বর্জন করতে এত কিসের আপত্তি? কতবার বলেছি ইলমাকে যেহেতু পছন্দ করে না প্রশ্ন করো না। কখনো যদি প্রশ্ন নাও করে তখন গাল ফুলিয়ে বসে থাকে। এতে আরো বেশি রেগে যায় ওর হাজবেন্ড।

আয়ান হেসে বলল, সারাদিন পর বাইরে থেকে ফিরে বৌয়ের ভোঁতা মুখ দেখলে রাগ করাটা স্বাভাবিক। অবশ্য ঘরে ফিরে যাতে বৌয়ের হাসিমুখের দেখা মেলে সেজন্যও ভূমিকা থাকা জরুরি। যাইহোক, এখন মানুষের কথা থাক।

মোটেই না। এই ব্যাপারেও আমি কথা বলতে চাচ্ছিলাম। আমাদের দুই ব্লিডিং পরেই থাকে ইলমারা। তারমানে ওরাও আমাদের প্রতিবেশি। শুধু আমি একা একা প্রতিবেশির হক আদায় করবো তাতো হবে না। তোমাকেও আদায় করতে হবে প্রতিবেশির হক।

ছিঃ মাহাম এসব তুমি কি বলছো? তুমি আর আমি বুঝি আলাদা? আমি করি আর তুমি করো একই কথা।

মাহাম হেসে ফেলে বলল, জ্বিনা মোটেই এক কথা না। আগামীকাল ছুটি। আমি ইলমা আর নাজমুল ভাইকে দাওয়াত দিয়েছি। ইলমাকে বুঝিয়ে বলে আমি আমার হক আদায় করবো। নাজমুল ভাইয়ের সাথে কথা বলে প্রতিবেশির হক আদায়ের দায়িত্ব তোমার।

আচ্ছা বুঝলাম। কিন্তু দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে তুমি কোথায় যাচ্ছো?

দুপুরে যা রান্না করেছিলাম আমার প্রতিবেশিনী ভগ্নী তার দুই বান্ধবী নিয়ে এসে খেয়ে দেয়ে হাঁড়িপাতিল ধুয়ে রেখে গিয়েছে। রাতের রান্না করতে হবে এখন।

তারচেয়ে চলো এক কাজ করি। তোমার প্রতিবেশিনী ভগ্নীকেও সুযোগ দেই প্রতিবেশির হক আদায়ের। ওদের দরজা নক করে বলবো, আমাদের ঘরে রান্না করা কোন খাবার নেই। অভুক্ত প্রতিবেশিদের রেখে আপনারা মজাদার খাবার খেয়ে গোনাহগার হবেন সেটা আমরা চাই না। তাই আপনাদের বাসায় দাওয়াত খাওয়ার মাধ্যমে আপনাদেরকে নেকী অর্জনের সুযোগ করে দিতে চলে এসেছি আমরা দুজন।

হেসে ফেললো মাহাম। হাসিতে যোগ দিলো আয়ানও। হাসতে হাসতে দুজন রওনা দিলো শাবাব আর আরিফীর বাসায়।

পর্ব-৪

 

কিশোর-কিশোরীদের জন্য ‘কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্য সেবা’ কর্নার


নারী সংবাদ


ভোলা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের রায়পুরা গ্রামের দশ বছর বয়সী রুবায়েত হোসেন প্রায়ই অসুস্থ থাকে। মূলত কিছুদিন পরপরই সে ডায়রিয়া আর জ্বরেও ভোগে। যার ফলে প্রতি মাসেই স্কুলে অনুপস্থিত থাকতে হয় তাকে।
একই এলাকার নবম শ্রেণীর ছাত্রী সালমা বেগম। মেয়েটি সব সময় ক্লাসের সবাইকে মাতিয়ে রাখত। খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কখনোই স্কুলে সে অনুপস্থিত থাকতো না। কিন্তু গত কয়েক দিন যাবত সে স্কুলে আসছে না। কারণ প্রথমবারের মত পিরিয়ড হয়েছে তার। খবর পেয়ে স্থানীয় এক নারী এনজিও কর্মী দেখা করতে যায় তার সাথে। ওই এনজিও কর্মী সালমাকে নিয়ে আসেন ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে। সেখান হতে সালমাকে দেওয়া হয় পিরিয়ডকালীন পরিচর্যার পরামর্শ এবং কিছু আয়রন ট্যাবলেট।
বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে অন্যান্য সব খাতের মতই স্বাস্থ্য সেবাও জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প। আর সরকারের এ সকল উদ্যোগকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও)।
স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ভোলা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে চালু করা হয়েছে কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্যসেবা।
ফলে এ অঞ্চলের সকল স্তরের কিশোর-কিশোরীরা এসব কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে এসে বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা, বাল্য বিয়ের কুফল, পুষ্টি, আয়রন ট্যাবলেট খাবার নিয়ম, পিরিয়ডকালীন পরিচর্যা, ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ বিভিন্ন বিষয় সেবা পেয়ে থাকে। ইতোমধ্যে এর সুফল পেতে শুরু করেছে ভোলা সদর, লালমোহন ও চরফ্যাশন উপজেলার একেবারে গ্রাম পর্যায়ের কিশোর-কিশোরীরা। আর এ কেন্দ্র পরিচালনায় সার্বিক সহযোগিতা করছে ইউনিসেফ বাংলাদেশ।
সালমা বলে, পিরিয়ড হওয়ার পর আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আমি ভেবেছিলাম আমার খুব বড় কোন অসুখ হয়েছে। ভয়ে মাকেও কিছু বলতে পারিনি। নোংরা কাপড় ব্যবহার করতাম। এরফলে আমি আরো অসুস্থ হয়ে যাই। পরে এই সেবা কেন্দ্রর কিশোরী কর্নারে গিয়ে পিরিয়ডকালীন সময়ের পরিচর্যা এবং করণীয় সম্পর্কে জেনে অনেকটা হাল্কা হলাম।
সালমার বান্ধবী ফিরোজা আক্তারও জানায়, তার অভিব্যক্তি। ফিরোজা বলে, প্রথমবার যখন পিরিয়ড হয় তখন আমি ভেবেছিলাম আমার অনেক বড় কোন অসুখ হয়েছে। আমি হয়ত আর বেশি দিন বাঁচব না। স্কুলে যাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছিলাম। পরে বাড়ীর পাশের এক বড় আপাকে সব জানালে তিনি আমাকে এই স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের কিশোরী কর্ণারে নিয়ে আসেন। এখন আমি নিয়মিতই এখানে আসি। আবার কেউ সমস্যায় পড়লে তাকেও এখানে নিয়ে আসি পরামর্শের জন্য।
অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র রফিক উদ্দিন বলে, আমি প্রায় সময় ডায়রিয়াতে ভুগতাম। মাসে একবার দু’বার আমার ডায়রিয়া হত। পরে এক বন্ধু আমাকে এই সেবা কেন্দ্রে নিয়ে আসে। এখান থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ অন্যান্য পরামর্শ পাওয়ার পর থেকে আমি অনেকটা সুস্থ। এখন আমি খাওয়ার আগে এবং পরে ভালো করে হাত ধুঁেয় নিই। এছাড়াও অন্যান্য কাজ করার পরেও আমি হাত ধুঁেয় নিই।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শিকা রাহেলা বেগম জানান, আগে সেবা নেয়ার ক্ষেত্রে কিশোরীদের সংখ্যা কম থাকলেও বর্তমানে তা বেড়ে গেছে কয়েক গুন। মূলত এই কেন্দ্রে কিশোরী কর্নার হওয়ায় তাদের সেবা নেয়ার সংখ্যা বাড়ছে।
এখানে কিশোর-কিশোরীদের আমরা বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরিচর্যার বিষয়ে যেমন স্বাস্থ্য, কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য, পুষ্টি, বয়:সন্ধিকালে করনীয়, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি পরামর্শ দিয়ে থাকি। এছাড়াও কিশোরীদের স্যানিটারি প্যাডের ব্যাবহার, বয়ঃসন্ধি সময়ের খাবার-দাবার, বয়ঃসন্ধিকালসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকি।
এই সেবা কেন্দ্রের সাথে জড়িত স্থানীয় এক ক্লিনিকের ডা. সাইদুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কিশোরী কর্নার হওয়ায় কিশোরীরা এখানে নিয়মিত সেবা নিচ্ছে। ফলে এলাকায় অসুস্থ কিশোর-কিশোরীর হার কমে যাচ্ছে।

সুত্রঃ বাসস

 

মুরগির গোস্তের রেসিপি


রেসিপি


মুরগির মাংসের সাদা ভুনা

যা যা লাগবে:
মুরগির মাংস ১/২ কেজি
টকদই ১/২ কাপ
পেঁয়াজ কুচি ৩টি
পেঁয়াজ বেরেস্তা ৩ টেবিল চামচ
আদ বাটা ১ টেবিল চামচ
রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ
জিরা গুড়া ১ চা চামচ
গোলমরিচ গুড়া ১ চা চামচ
লবণ স্বাদমত, চিনি স্বাদমত
টেস্টিং সল্ট ১/২ চা চামচ
তেজপাতা ১টি
কাঁচামরিচ ১২টি
সয়াবিন তেল ২ টেবিল চামচ

রান্নার প্রক্রিয়া:

প্রথমে মুরগির মাংস, টকদই, অর্ধেকটা পেঁয়াজ কুচি, আদ বাটা, রসুন বাটা, জিরা গুড়া, গোলমরিচ গুড়া, লবণ ভালভাবে মেখে আধাঘন্টা মেরিনেট করে রাখতে হবে। এবার তেল গরম করে বাকি পেঁয়াজ কুচি ভেজে নিতে হবে। এবার মেরিনেট করা মাংস কড়াতে ঢেলে একটু ভেজে ঢেকে দিতে হবে পানি বের হবার জন্য।

মুরগির মাংসের টিক্কা

যা যা লাগবে:
মুরগির মাংসের কিমা ২ কাপ,
পেঁয়াজ বাটা আধা কাপ,
কাঁচা মরিচ ৩টি,
রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ,
আদা বাটা ২ টেবিল চামচ,
সয়াবিন তেল ১ কাপের চার ভাগের এক ভাগ,
ঘি ৩ টেবিল চামচ, টকদই আধা কাপ,
পেঁয়াজ বেরেস্তা আধা কাপ,
গরম মসলা গুঁড়া ১ চা চামচ,
কাজু ও পোস্ত বাটা একসঙ্গে মিলিয়ে ৩ টেবিল চামচ,
লবণ পরিমাণমতো।

রান্নার প্রক্রিয়া:

১. মুরগির কিমা, লবণ, আদা বাটা দিয়ে একসঙ্গে মেখে ছোট ছোট মার্বেলের মতো বল করে ২০ মিনিট রেখে দিন।
২. এবার কড়াইয়ে তেল দিয়ে পেঁয়াজ বাটা, রসুন বাটা, আদা বাটা, কাজু ও পোস্ত বাটা দিয়ে মসলা ভুনে বলগুলো দিন। সঙ্গে দই দিয়ে কষান। পানি দেওয়া যাবে না।
৩. ঘন হয়ে এলে কাঁচা মরিচ, ঘি, গরম মসলা গুঁড়া ও পেঁয়াজ বেরেস্তা দিয়ে নামিয়ে পরিবেশন করুন।

মাংস কষে যখন পানি কমে আসবে তখন ৬-৭টি মরিচ ফালি দিয়ে আর একটু কষাতে হবে। পুরোপুরি কষান হয়ে গেলে পরিমাণমত পানি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। মাংস হয়ে আসলে তাতে বেরেস্তা, বাকি মরিচ ফালি, টেস্টিং সল্ট ও চিনি দিয়ে নেড়ে আর দুই মিনিট রান্না করে চুলা নিবিয়ে দিতে হবে। এ অবস্থায় ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে আরো ১৫ মিনিট। এরপর পরিবেশনের জন্য তৈরি মজাদার মুরগির মাংসের সাদা ভুনা।

 

নৈশপ্রহরীর বিরুদ্ধে ছাত্রীর শ্লীলতাহানীর অভিযোগ ‘ভাঙ্গুড়া’


নারী সংবাদ


পাবনার ভাঙ্গুড়ায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরীর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় শ্রেণির একছাত্রীর শ্নীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার পার-ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের পাটুলীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী এক সন্তানের জনক মো. শরিফুল ইসলাম ওরফে তানজুর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে মীমাংসার জন্য ওই ছাত্রীর পরিবার ও নৈশপ্রহরীর পরিবারের মধ্যে কয়েক দফা দেনদরবারও হয়েছে বলে জানা গেছে।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কানিজ ফাতেমা মায়া জানান, গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রী সবার আগে বিদ্যালয়ে আসে। তখন নৈশপ্রহরী শরিফুল ইসলাম ওই ছাত্রীকে বেশ কয়েকটি শ্রেণিকক্ষের টেবিল পরিস্কার করতে বলে। এ সময় ছাত্রী তার কথামতো কয়েকটি টেবিল পরিস্কার করে। শেষে শ্রেণিকক্ষের পাশে একা পেয়ে শরিফুল তার শ্নীলতাহানির চেষ্টা করে। ছাত্রী ছাড়া পেয়ে শ্রেণিকক্ষ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় শরিফুল তার হাতে পাঁচ টাকা দিয়ে বিষয়টি কাউকে বলতে নিষেধ করে। কিন্তু সে বাড়িতে গিয়ে তার মাকে ঘটনার বিষয়ে খুলে বলে। তার মা বিদ্যালয়ে এসে শিক্ষকদের কাছে ঘটনা জানিয়ে এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।

এ নিয়ে বুধ ও বৃহস্পতিবার গোপনে দফায় দফায় চলে দেনদরবার। ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবদুল হাই বলেন, বিষয়টি শুনেছি এবং ওই ছাত্রীর পরিবারকে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে ওই বিদ্যালয়ের ক্লাস্টার এটিও সোলিম হোসেন জানান, বিষয়টি সম্পর্কে প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে তিনি মৌখিকভাবে শুনেছেন। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খ ম জাহাঙ্গীর জানান, লিখিত অভিযোগ পেলে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে ইউএনও মো. মাছুদুর রহমান জানান, বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সুত্রঃ সমকাল।

 

ওরা কেন এতো অভিমানী হয়ে উঠছে


ডা. কবীর জুয়েল


অরিত্রী আর ফিরে আসবে না, ওর জন্য আমাদের অফুরান ভালোবাসা রইলো,আমরা আর দ্বিতীয় কোন অরিত্রী-র এমন অকাল প্রস্থান চাইনে, তবে ——-
এ দায় কি শুধু শিক্ষকদের??????
আমাদের চিন্তার খোরাক আরো বিস্তৃত হওয়া উচিৎ—
১)অরিত্রী-রা কেন এতো অভিমানী হয়ে যাচ্ছে?
২)কেন এমন হঠকারিতা ওদের মনে বাসা বাঁধবে?
৩)কেন আড়ালে আবডালে থেকে ওরা নিজের মতো করে জীবন-কে পরিচালনা করছে?
৪)একটি টিন এজ মেয়ে কেন স্মার্ট ফোনাসক্ত হবে?
৫)একটি নামি দামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে-র ছাত্রী হয়ে কেন সে পরীক্ষায় অসদোপায় অবলম্বন করলো,তার পাঠদানে ও তা গ্রহণে কি কোন ঘাটতি ছিলো?
এ জন্য শিক্ষক,সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় ও সর্বোপরি
অভিভাবকদের কি ভূমিকা রয়েছে?
৬)বিদ্যালয়-কলেজ গুলোর পরিচালনা কমিটি গুলো কি যথার্থ যোগ্য সৎ লোক দিয়ে গঠিত হচ্ছে?
৭)আমাদের শিশু-কিশোর-কিশোরীদের বেড়ে ওঠা-র প্রকৃয়া-টি কতোটুকু বিজ্ঞানসম্মত? এ নিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রের করনীয় কি?
আরো বিস্তর সুদূর প্রসারী ভাবনা প্রয়োজন।
ঘটনা একটা ঘটে গেলে সবাই অনেক সমীকরন দাঁড় করাতে চেষ্টা করেন,নানা বক্তৃতা,বিবৃতি আসতে থাকে,
কিন্তু দুদিন পর পূর্বাপর অবস্থা বিরাজ করে,এজন্য-ই
অরিত্র বিষয়ক ঘটনাগুলো-র পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।
গত সপ্তাহে(১লা ডিসেম্বর’১৮) ফরাসী পার্লামেন্ট আইন করেছে, শিশু কিশোরী-দের ওপর পিতামাতা বা শিক্ষকরা মৃদূ নির্যাতন( Smacking)-ও করতে পারবেনা,এ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশে-ই বেশ কিছু কঠোর আইন রয়েছে যা শিশু-কিশোরদের বাসা ও বিদ্যালয়ে সম সামাজিক মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থাকে বটে,অতি উৎসাহীরা আমাদের দেশেও এমন আইনের প্রয়োগ চাইবে,মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার কোন দেশে আবার এমন আইন নেই,কারণ
এর উল্টো চিত্র-ও রয়েছে।
আমাদের এখনো আইন প্রনয়নের কথা ভাবার দরকার নেই,দু-একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা ব্যতীত আমাদের সমাজে অন্তত নিজ বাবা মা-কে নিরাপদ ভাবা-ই যায়।
আমাদের শিক্ষকরাও সহানুভূতিশীল,কিন্তু এহেন পরিস্থিতিতে কি করনীয়,এর ফলশ্রুতিতে (After Effect) কি হতে পারে তা কেবল মানসিক সাস্থ্য বিষয়ে
জ্ঞাত-রাই অগ্রিম অনুধাবন করতে পারে,এ ক্ষেত্রে হাই কোর্টের আদেশ-টি প্রনিধান যোগ্য, ছাত্র শিক্ষক সকলকে মানসিক সাস্থ্য সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে,প্রয়োজনে এমন পরিস্থিতিতে কাউন্সিলিং এর ব্যবস্থা ও চাপ নিবারণকারী ঔষধ দিতে হতে পারে।
সে বিষয়ে সকল শিক্ষক অবগত নাও থাকতে পারে,তাই শিক্ষকদের দিকে সমসরে অংগুলি নির্দেশ
আমাদের শিশুদের প্রতি স্কুল টিচার-দের নির্মোহ করে তুলবে,তারা ন্যুনতম শাসন করতেও কুন্ঠা বোধ করবে। আকাশ সংস্কৃতির বহুল প্রসার ও দ্রুত নগরায়নে অভিভাবকদের জীবন যাত্রায় ব্যস্ততা বেড়েছে এবং কিশোর কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালীন সমস্যা ( Adolescent Crisis)ও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাবা মায়ের সাথে সখ্যতা কমে যাওয়ায়,নিজ কক্ষে স্মার্টফোন কেন্দ্রীক জীবনাচারে ওরা অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে যা এই বয়সের সাভাবিক মনোবিকাশে বিরুপ প্রভাব ফেলছে,ওরা ক্রমশ আত্মকেন্দ্রিক ও আবেগপ্রবণ হয়ে উঠছে,সেই সাথে Observational learning -এর মাধ্যমে বহির্বিশ্বের অসামঞ্জস্য পূর্ণ
আচারে অভ্যস্ত হচ্ছে।
জীবনে পরাজয়ের গ্লানী সইবার ক্ষমতা অর্জন করতে শিখতে হবে,সময় সুযোগ এলে আবার বিজয়ী হয়ে সেই পরাজয়ের গ্লানি ঘুচাতে হবে।
ফ্রান্স কি আইন পাশ করলো, আমেরিকা কি বললো,
বৃটেন কি শিশুদের বিষয়ে কি উপদেশ দিলো, তা আমি পুরোপুরি মানতে নারাজ,ওদের সমাজ ব্যবস্থা ও আর্থ সামাজিক সংস্কৃতি পরিবেশ ওদের এগুলো করতে বাধ্য করছে, আমাদের বাবা মা আমদের Smacking করেছে,আমরা কি উচ্ছন্নে গেছি, মনে হয় এখনো যাইনি, যা হোক তবে Smacking(চাপড়ানো/প্রহার)-এর একটা মাত্রা থাকতে হবে, অহেতুক কারনে অকারণে বকা ঝকা, ছিদ্রান্নেসী হয়ে বাচ্চাকে বা ছাত্র-ছাত্রীকে প্রতিপক্ষ ভাবা কক্ষনো ভালো ফল দেবেনা, নিজের রুটিন একটু বদলে নিন ‘বাচর্চা’ করুন, শব্দটি নতুন মনে হচ্ছে তাই-না আসলে আমি বোঝাতে চাচ্ছি নিজের ঔরসজাত বাচ্চাকে নিয়ে একটু চর্চা করুন, ওকে নিয়ে বাদাম চিবোতে চিবোতে পার্কে বৈকালীক ভ্রমন কাম ব্যায়ামটা সেরে ফেলুন, ওকে নিয়ে তানপুরায় নতুন সুর তুলুন,ওকে নিয়ে শখের সপিংটা সেরে আসতে পারেন। লক্ষ্য রাখুন-কোন ভাবেই সে যেন ঘরকুনো হয়ে ‘Device Centric’ না হয়ে ওঠে।
আর শিক্ষকদের জন্য পরামর্শ একই – আমাদের সন্তান , আপনাদের হাতে সঁপে দিয়ে আমরা নিশ্চিন্তে থাকতে চাই, আমদের সন্তানকে আপনার অনুগত
শিষ্য করে বন্ধু করে নিন,ওর কষ্ট, দুঃখ গুলো বোঝার চেষ্টা করুন, আমাদের জানান। একজন দরদি শিক্ষক অনেক আপন হতে পারেন, আমি নিজে দেশে বিদেশে শিক্ষকতা করে এতোটুকু অন্তত বুঝতে পেরেছি,ওরা বাবা মা-এর সাথে যা আলোচনা করতে দিধা করে তা আমাদের সাথে নি:সংকোচে করে থাকে,হয়তো একজন মনোবিদ হওয়াতে আমার এ ব্যাপারে অভিজ্ঞতা একটু বেশী,তবে একজন সহানুভূতিশীল শিক্ষক ( Empathic Teacher) হলে আপনিও অরিত্রীদের আরো আপন করে নিয়ে হদয়ের ক্ষতগুলো
মুছে দিতে পারবেন,তাহলে কোন অরিত্রী-ই আর আমদের ফাঁকি দিয়ে এভাবে চলে যেতে চাইবে না।

 

একদিন তো চলে যাব, পরের ঘরনী হব – ২


রেহনুমা বিনত আনিস


এমন কেন হয়? এর কয়েকটি কারণ চোখে পড়ে। আবারও বলছি, আমি কেবল শিক্ষিত শ্রেণীর কথাই বলছি এবং খুব মোটা দাগে আলোচনা করছি।

১/ স্ত্রীর ত্রুটি – বাবামায়ের আদরে আহ্লাদে বেড়ে ওঠা একটি মেয়ে প্রায়ই বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে অবস্থান করে। ফলে সে একটি নতুন পরিবেশে এসে নতুন নিয়মনীতি বুঝে উঠতে অনেক সময় নিতে পারে। এর মাঝে ঘটতে পারে নানান ত্রুটিবিচ্যূতি। দক্ষতার অভাব থাকতে পারে, থাকতে পারে অভিজ্ঞতার অভাব। পরিপক্কতার অভাবে কথাবার্তায় বেহিসাবী হতে পারে, হতে পারে আহ্লাদী কিংবা অভিযোগপ্রবণ। যত্নের মাঝে বড় হওয়া মেয়েটি অতিরিক্ত কাজের চাপে হিমসিম খেতে পারে, সব দিক সামলে ওঠা কঠিন হতে পারে। সন্তান নিয়ে রাত জাগা, খাওয়া ঘুমের অভাবে, কিংবা শারীরিক অসুস্থতার অভাবে হতে পারে খিটখিটে। কিন্তু যত কিছুই হোক, না থাকুক তার প্রতি ভালোবাসা, অন্তত মানবিকতার খাতিরে কি তার সাথে উপরোক্ত আচরণ করা যায়? অপরদিকে টেলিভিশনের কল্যাণে আমাদের নারীজাতির মাঝে জ্ঞানতৃষ্ণা এমনভাবে হ্রাস পাচ্ছে যে তারা নিজেদের মূল্যায়ন করার কোন উপায়ই রাখছেনা। ভালো পোষাক, ভালো সজ্জা সবই বাইরের জন্য বরাদ্দ। অথচ ঘরের পুরুষটি তাকে অরিজিনাল রূপেই দেখে। তবে এই সজ্জা কার জন্য? বরং একটি মেয়ের নিজেকে এমনভাবে গড়ে তোলাই বাঞ্ছনীয় যাতে তার স্বামী তাকে সম্মান করতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়।

২/ স্বামীর ত্রুটি – অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছেলেরা বিয়ে করার জন্য উদগ্রীব থাকে কিন্তু প্রস্তুত থাকেনা। ‘বিয়ে’ শব্দটি শোনার সাথে সাথে তারা টেকনিকালারে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে মেয়েটি দেখতে কতখানি সুন্দরী হবে, সে কতখানি বাধ্য অনুগত হবে, সে কি কি রান্না করে খাওয়াবে, সে ত্যাগের মহিমায় কতখানি উদ্বুদ্ধ হবে। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দু’টি জিনিস তাদের মাথায়ই আসেনা। রক্তমাংসে গড়া মেয়েটি যখন তার জীবনে পদার্পণ করবে সে ঠিক স্বপ্নের মেয়েটির মত হবেনা – সে সারাক্ষণ সেজেগুজে বসে থাকলে ঘরের কাজকর্ম করবে কে? সে সারাক্ষণ স্বামীর সাথে বসে গল্প করলে বাকীদের প্রতি দায়িত্ব পালন হবে কিভাবে? এসব কাজ করতে গিয়ে তার ঘাম হবে, চেহারা চুলে ক্লান্তির ছাপ পড়বে, মেজাজ খিটখিটে হবে, মাঝে মাঝে সে অসুস্থ হবে। কিন্তু এই বাস্তবতার জন্য স্বামীটি প্রস্তুত থাকেনা মোটেই। ফলে এক সময় সেই কাঙ্খিত স্ত্রীটিকে স্বামীটির আর ভালো লাগেনা। অথচ এই সমস্ত কিছু মেয়েটি করে তার স্বামীর জন্যই! অপরদিকে পুরুষরা ভুলে যায় তারা সমাজ সংসার এবং বিশ্বাসী হলে তাদের প্রভুকে সাক্ষী রেখে মেয়েটির দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। সুতরাং, ভালোমন্দ সর্বাবস্থায় মেয়েটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তাদের। এই দায়িত্বটিকে নেহাৎ ছেলেখেলা হিসেবে দেখার কোন উপায় নেই। বিয়ে মানে শুধু নিজের চাহিদা এবং প্রাপ্তির হিসেব করা নয়, অপরের চাহিদা এবং প্রাপ্তির হিসেব কষাও বিয়ের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত।

৩/ জবাবদিহিতার অনুভূতির অভাব – আল্লাহ স্বামীস্ত্রীর সম্পর্কটিকে পোশাকের সাথে তুলনা করেছেন। পোশাক যেমন আমাদের বাইরের আবহাওয়ার বৈরীতা থেকে সংরক্ষণ করে, এই দুইজন সঙ্গী পরস্পরকে সকলপ্রকার অন্যায়, অনাচার, অবিচার, বিপদাপদ, স্খলন কিংবা সমালোচনা থেকে দূরে রাখবে; পরস্পরকে সুন্দর এবং সত্যের পথে অগ্রসর হতে সহযোগিতা করবে; দু’জনে মিলে একটি সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করবে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য। আল্লাহ পুরুষদের তাদের গৃহস্থিত নারীদের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিযুক্ত করেছেন। কিন্তু স্বামী যদি নিজেই আক্রমনকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হোন তখন কেবল স্ত্রীর জন্যই নয়, সন্তানদের জন্যও একটি আতঙ্কজনক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বর্তমানে এই ধরনের পুরুষদের সংখ্যাধিক্য কয়েকটি ইঙ্গিত বহন করে। প্রথমত, এটি আমাদের প্রভুর সামনে আমাদের জবাবদিহিতার সম্পর্কে ধারণার অভাব অথবা অসচেতনতা প্রকাশ করে। নারীরা যা করে তার জন্য নারীরা জবাবদিহি করবে, কিন্তু পুরুষরা যা করবে অথবা করতে ব্যার্থ হবে তার জন্য জবাবদিহি করতে হবে তাদেরই। দ্বিতীয়ত, আমরা ভুলে যাচ্ছি, আমাদের সবচেয়ে কাছের মানুষরাই জানেন আমরা প্রকৃতপক্ষে কতখানি ভালো বা মন্দ, আল্লাহ আখিরাতে এদের কাছেই সাক্ষ্য নেবেন আমাদের ব্যাপারে; সুতরাং ফেসবুকে কিংবা অনুষ্ঠানে কিংবা দাওয়াতে কেউ আমাদের কথা শুনে আমাদের ব্যাপারে কি ভাবল তাতে কিছু যায় আসেনা, আমি যখন বাসায় ফিরি তখন আমাকে দেখে আমার স্ত্রী পুত্র কন্যা খুশি হয় না আতঙ্কিত হয় সেটাই আমার পরিচয়। তৃতীয়ত, আমাদের জ্ঞানের অভাব আমাদের মাঝে এমন এক শ্রেনীর সৃষ্টি করছে যারা পোশাকী আচরণ সম্পর্কে যতখানি সচেতন, ভেতরকার পবিত্রতা সম্পর্কে ততখানি সচেতন নন। একসময় পারিবারিক এবং সামাজিক বন্ধনগুলো এমন ছিলো যে স্বামীস্ত্রীর মাঝে সমস্যা দেখলে আত্মীয়পরিজন বন্ধুবান্ধবরা হস্তক্ষেপ করে এর সমাধান করে দিতেন। বর্তমান যুগে ‘প্রাইভেসী’ এবং ‘পার্সোনাল’ জাতীয় কতগুলো শব্দ, যেগুলোর অর্থ সম্পর্কে প্রকৃতপক্ষে ব্যাক্তির নিজের ধারণাও খুব একটা স্পষ্ট নয়, ব্যাক্তির স্বেচ্ছাচারীতাকে দিয়ে দিচ্ছে সীমাহীন স্বাধীনতা। ঐশী জবাবদিহিতার পাশাপাশি সামাজিক জবাবদিহিতার ধারণাটিও হয়ে যাচ্ছে বিলুপ্ত।

তবে সব কথারই একটা শেষ কথা থাকে। একটু ধৈর্য্য ধরে শেষ কথাটি শুনুন। আমার মা এক অসাধারন সুন্দরী মহিলা যার মনে আজীবন দুঃখ তার মেয়েটি কিভাবে দেখতে এত খারাপ হোল। মাদ্রাজে আমাদের প্রতিবেশীনি এক প্রফেসর ছিলেন, অসাধারন এক ভালোমানুষ, কিন্তু দেখতে আমার মায়ের ভাষায় ‘গোরিলার মত’। এই কথা শুনে বাবা ভীষণ রাগ করল, ‘আমার মেয়ে দেখতে যেমনই হোক, আমার চোখে সে রাজকন্যা। তিনিও তাঁর বাবামায়ের চোখে রাজকন্যা। তাঁর অসাধারন সুপুরুষ ডাক্তার স্বামী যেমন তাঁকে নিয়ে সুখে সংসার করছেন, আমি চাই কোন একদিন আমার মেয়েটিরও এমন এক স্বামী হবে যে তাকে মূল্যায়ন করবে, মর্যাদা দেবে’।

ভেবে দেখুন, আপনার কাছেও আপনার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ আপনার মেয়েটি যে একটু আদর পাবার জন্য কাতর হয়, একটু ভালোবাসা পাবার জন্য আপনার ঘরটিকে জান্নাত বানিয়ে রাখে এবং যে আদতেই হবে আপনার জান্নাতে যাবার উসিলা। ভাবুন তো আপনার এই মেয়েটিকে কেউ কথায় কষ্ট দিচ্ছে কিংবা অত্যাচার করছে! আমার তো লিখতে গিয়েই আমার মেয়ের কথা ভেবে দু’চোখে নদী প্রবাহিত হচ্ছে! আপনি আজ আপনার স্ত্রীর সাথে যে আচরণ করছেন সেটি সযত্নে সংরক্ষিত হচ্ছে এমন এক খাতায়, পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেলেও যে খাতার অস্তিত্ব বিলীন হবেনা। সে কথা পরে হবে। কিন্তু আপনার স্ত্রীর সাথে আপনার আজকের আচরন যদি আপনার প্রভু আপনার প্রানাধিক প্রিয় কন্যার জীবনে প্রতিফলিত করেন, আপনি সহ্য করতে পারবেন তো? পারবেন না, কিছুতেই পারবেন না। সেদিনের কথা ভেবে, আগামীবার যখন স্ত্রীর কোন কথায় কিংবা আচরনে ধৈর্য্যহারা হয়ে যাবেন, তখন আপনার প্রভুর বিচারকে ভয় করুন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহন করুন। মানুষের সামনে ভালো হবার পরিবর্তে আপনার প্রভুর সামনে উত্তম চরিত্রের পরিচয় উপস্থাপন করুন। আপনার সংসারটিকে পরিণত করা অথবা তাতে আগুন জ্বালানোর সিদ্ধান্ত আপনারই হাতে।

পর্ব-১

 

সচেতনতায় কমছে কর্মক্ষেত্রে নারীর যৌন হয়রানি


নারী সংবাদ


সাভারের এক জুতার কারখানায় কাজ নেয় একুশ বছর বয়সী রুমা আক্তার। মূলত সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা মারা যাওয়ার পর পাঁচ সদস্যের পরিবারে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। তাই পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে পড়ালেখার ইতি টেনে হাল ধরতে হয় সংসারের। কাজ শুরুর দুই মাসের মাথায় তার সেকশনের ম্যানেজার বারবার কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার নাম করে রুমাকে রুমে ডেকে নিয়ে যেত। প্রথম প্রথম ভালো আচরণ করলেও পরে নানা ধরনের প্রস্তাব দিতে থাকে ম্যানেজার। প্রথম কয়েকদিন মুখ বুঁজে সহ্য করলেও এক সময় প্রতিবাদ করে বসেন রুমা। সরাসরি ফ্লোর লিডারকে জানায় ঘটনা। ফ্লোর লিডার জানায় কারখানার জেনারেল ম্যানেজারকে। দু’দিনের আল্টিমেটাম দেন তিনি। দু’দিনের মধ্যে যদি ব্যবস্থা না নেয় তবে কাজ বন্ধ করে রাস্তায় অবরোধের পাশাপাশি আদালতে মামলা করারও হুমকি দেন ফ্লোর লিডার তাহমিনা হক।
অবস্থা বেগতিক দেখে পরদিনই কারখানার পক্ষ থেকে গঠন করা হয় তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে চাকরি হারায় ওই ম্যানেজার।
তবে দেশের সব কারখানার সকল নারী কর্মীরা রুমার মত অত সাহসী নয়। মুখ বুঁজে সহ্য করেন পুরুষ সহকর্মীদের নির্যাতন। অনেকে আবার সহ্য করতে না পেরে চাকরিও ছেড়ে দেন।
সুমাইয়া তাদের মতই একজন নারী। কাজ করেন নারায়ণগঞ্জ শিল্প এলাকার একটি পোশাক কারখানায়। কাজ শুরু করার এক বছর পর তার সেকশনের ম্যানেজার হিসেবে নতুন চাকরিতে যোগ দেন এক পুরুষ। নাম মো. জুবায়ের। একমাসের মাথায় নজর পড়ে সুমাইয়ার উপর। এরপর থেকেই স্বামী পরিত্যাক্তা সুমাইয়াকে নানা ইঙ্গিত দিতে থাকে জুবায়ের। কাজে-অকাজে রুমে ডেকে নিয়ে যাওয়া ছিল তার নিত্যদিনের কাজ। প্রথম প্রথম বুঝতে না পারলেও পরে কৌশলে এড়িয়ে যেতে থাকেন সুমাইয়া। কিন্তু তারপরও পিছু ছাড়েনি জুবায়ের।
সুমাইয়া বলেন, অনেকবার ভেবেছি চাকরি ছেড়ে দিব। আর তখনই আমার দুই সন্তানের মুখ ভেসে উঠে চোখে। এই কারখানায় বেতন একটু বেশি আর নিয়মিত তা পাওয়া যায়। ফলে চাকরিও ছাড়তে পারছি না। তাই মুখ বুজে এখানে পড়ে আছি।
শ্রমিক নেতা সোহেলুর রহমান বলেন, প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি করার নির্দেশনা রয়েছে আদালতের। কিন্তু অনেক কারখানা তা মানছে না। আবার মালিক পক্ষ এসব দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। তাই অধিকাংশ কারখানায় নারী নির্যাতন নিয়মিত ঘটনা ছিল একসময়। তবে এখন পরিস্থিতি অনেকটা পাল্টে গেছে।
এখন অনেক নারী শ্রমিক নিজেরাই প্রতিবাদ করেন। তাদের প্রতিবাদের কারণে অনেক পুরুষ কর্মীর চাকরি চলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে বর্তমান সময়ে। যা আজ থেকে ১০-১৫ বছর আগে ভাবাই যেত না।
কর্মজীবী নারী’র করা ‘এস্টেট অব রাইটস ইমপ্লিমেন্টেশন অব উইম্যান রেডিমেড গার্মেন্টস ওয়াকার্স’ শীর্ষক এক গবেষণা থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের পোশাক তৈরি কারখানাগুলোতে শতকরা ১৩ শতাংশ নারী যৌন হয়রানির শিকার।
মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট মনোয়ারা বলেন, কারখানাগুলো যদি আদালতের দেওয়া গাইডলাইন মেনে চলত তবে যৌন হয়রানী অনেকাংশে কমে যেত। কিন্তু এখনও পর্যন্ত অনেক কারখানা এই গাইডলাইন মেনে চলে না। আবার অনেকে এ বিষয়ে কিছু জানেও না। তিনি আদালতের এই গাইডলাইন মেনে চলার জন্য এবং এ বিষয়ে কারখানার মালিকদের জানানোর জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটির করার দাবী জানান। এই কমিটি সম্পূর্ণ বিষয়টি মনিটর করবে। যদি কোন কারখানা এই গাইডলাইন না মানে তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবী জানান এডভোকেট মনোয়ারা। সুত্র: বাসস

 

একদিন তো চলে যাব, পরের ঘরনী হব -১


রেহনুমা বিনত আনিস


ছোটবেলায় টিভিতে একটা গান প্রায়ই শুনতে পেতামঃ
একদিন তো চলে যাব, পরের ঘরনী হব,
আঁচলে বাঁধতে পারবিনা।
ও মা তোর পায়ে পড়ি, দুষ্টুমী যদি করি,
কখনো মা তুই রাগ করিসনা, মা তুই রাগ করিসনা!
তখন গানটার মর্ম বুঝতাম না। মনে হত একটি মেয়ে মায়ের আঁচলের ছায়াতলে থেকেও মায়ের রাগের ভয়ে এত কাতর হবে কেন? মেয়েরা কেন এতটা আবেগপ্রবণ? ওরা কেন বোঝেনা এই আবেগ তাদের কতখানি দুর্বল করে ফেলে, ভীত করে রাখে?
এখন বয়স বেড়েছে, আজকাল প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ অভিজ্ঞতার ঝুলিটার ভারও কিছুটা অনুভব করি। ইদানিং একটি সমস্যা প্রায়ই আমার কাছে আসছে যেটি নিয়ে কেউ প্রকাশ্যে কথা বলতে চায়না, লোকলজ্জার ভয়ে। অথচ লজ্জা যাদের পাওয়া উচিত তারা সমাজে ভদ্রলোক হিসাবে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ান। এই সমস্যা দেশী বিদেশী, মুসলিম অমুসলিম, নামাজী বেনামাজী অনিয়মিত, বিবাহিত প্রাক্তন-বিবাহিত অবিবাহিত সকল শ্রেনীর মাঝেই দেখা যায়। সমস্যাটা মূলত মানবিকতার বিপর্যয়ের ফল। কিন্তু সমস্যাটা জাবাবদিহিতার অভাবের ফসলও বটে।
সময়ের পরিক্রমায় বাবামায়ের আদরে আহ্লাদে লালিত পালিত কন্যাটি এক সময় তাদের ছেড়ে ‘পরের’ ঘরনী হয়। হৃত স্বজনদের স্থলে ‘পর’কে আপন করে নেয়ার সংকল্প নিয়ে অগ্রসর হয়। অনেক সময়ই এই ‘পর’রা আপন হতে নারাজ থাকেন। কিন্তু যে মানুষটাকে কেন্দ্র করে এই প্রচেষ্টা, সে যখন মেয়েটিকে মূল্যায়ন করেনা, তাকে বোঝার চেষ্টা করেনা, এমনকি তাকে কষ্ট দিতেও কুণ্ঠিত হয়না তখন মেয়েটির আসলেই মনে হয়, ‘হে ধরণী, তুমি দ্বিধা হও, আমি তোমাতে প্রবেশ করি’।
যে সমস্যাগুলো কানে আসছে বা চোখে দেখেছি সেগুলো খুব মোটা দাগে নিম্নরূপ, অবিশ্বাস্য হলেও সত্য আমি এখানে মূলত শিক্ষিত শ্রেণীর কথা বলছিঃ

১/ গালি

যে মেয়েটি স্ত্রী হয়ে আসে সে তো আর ফেরেস্তা নয়! মানুষ হিসেবে তার দোষত্রুটি রয়েছে, স্বামীর মেজাজ খারাপ হতেই পারে, সে অবস্থায় ধৈর্য্য হারিয়ে বকা দেয়াটাও অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু গালি দেয়া, যে গালি শুরুই হয় ‘বেশ্যা’ অর্থসূচক শব্দাবলী দিয়ে! যে মেয়েটি বাবামায়ের কাছে রাজকন্যার মর্যাদা পেয়ে বড় হয়েছে, পেয়েছে সর্বোচ্চ শিক্ষা এবং আদবকায়দার প্রশিক্ষণ, তার কাছে এই শব্দগুলো শোনা মৃত্যুর চাইতেও কঠিন যন্ত্রণাদায়ক। কিন্তু তার চেয়েও বড় প্রশ্ন এই ধরণের শব্দ প্রয়োগের মাধ্যমে স্বামীরা কি ধরণের রুচিবোধের পরিচয় দিচ্ছেন? তারা মর্যাদা চান, কিন্তু মর্যাদা দিতে নারাজ। স্ত্রীকে হেয় প্রতিপন্ন করতে গিয়ে তারা নিজেরা যে স্ত্রীর দৃষ্টিতে নিজেদের কোথায় নামিয়ে নিচ্ছেন তা কি তারা ভেবে দেখেন না?

২/ অশালীন মন্তব্য

স্ত্রীর ওপর অসন্তুষ্টির বহিঃপ্রকাশ ঘটে তাকে এবং তার পরিবারকে নিয়ে নানারকম অশালীন মন্তব্যের মাধ্যমে। এর মধ্যে স্ত্রীর চেহারা সুরত, স্বভাব, আচরণ, চরিত্র, কর্মপদ্ধতি কোনকিছুরই সমালোচনা বাদ পড়েনা। সময় সময় এই সমালোচনা তার পরিবার পর্যন্ত গড়ায়। অধিকাংশ মেয়েরা এর প্রতিবাদ পর্যন্ত করার সাহস পায়না। কারণ তখন এর সাথে যোগ হবে প্রথম কিংবা তৃতীয় সমস্যাটি। একজন স্বামী যদি স্ত্রীর দোষত্রুটি উদ্ঘাটন করতে শুরু করেন, মানুষ হিসেবে তার পরিপূর্ণতার অভাবকে মেনে নিতে নারাজ হোন, এই কারণে মেয়েটির পরিবারকে দায়ী করেন তখন স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে – তিনি নিজে কি ত্রুটিমুক্ত, নিখুঁত? যে স্ত্রীকে তিনি ‘লিবাস’ হয়ে রক্ষা করার ওয়াদা দিয়ে বিয়ে করে এনেছেন, যে মেয়েটি তাকে বিশ্বাস করে নিজের ঘর ছেড়ে এসেছে, তাকে যখন স্বামী খোলা বাজারের পণ্যের মত সমালোচনা করেন তখন প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক, তার ত্রুটিবিচ্যূতি বিশ্লেষণ করতে বসলে তার অবস্থান কোথায় পাওয়া যাবে?

৩/ গায় হাত উঠানো

যাকে মেয়েটির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিশ্বস্ত মনে করে বাবামা তাদের মমতার ছায়ায় বেড়ে ওঠা কন্যাকে অর্পন করেন, তাকে যখন রক্ষক নিজেই আক্রমন করে বসে তখন মেয়েটি কোথায় যাবে, কি করবে বলতে পারেন? বিশেষ করে শিক্ষিত পরিবারের মেয়েরা এতটা মায়াময় পরিবেশে বড় হয় যেখানে বাবামা তাদের গায় ফুলের টোকাটিও লাগতে দেন না। সেখান থেকে এসে, যার জন্য আসা, তার কাছে এমন আচরণ পেয়ে মেয়েটির কাছে জীবন যে কি পরিমাণ বিষাক্ত মনে হয় বলাই বাহুল্য।

৪/  স্ত্রীর সুবিধা অসুবিধা না বোঝা

উপরোক্ত স্বামীরা সমাজে আশ্চর্যরকম শিক্ষিত, ভদ্র, শালীন, সামাজিক, সংবেদশীল, সাহায্যপরায়ন এবং অসংখ্য গুনের আধার হিসেবে পরিচিত। এদের মাঝে নারীজাতির প্রতি সম্মানবোধ এবং সহানুভূতি প্রবল। এমনকি সিনেমার নায়িকার কল্পিত দুঃখ দেখে তাদের দু’চোখ বেয়ে জলের ধারা নেমে আসে। কিন্তু নিজের ঘরের রানী করে আনা মেয়েটির প্রতি তাদের সহানুভূতির অদ্ভুতরকম অভাব। যে মেয়েটি তার পরিবার পরিজন ফেলে এসে স্বামীর পরিবার পরিজনের পরিচর্যা করে, তার সংসার সাজায়, তার সন্তান ধারণ করে, তার সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ করে, তার সন্তানদের প্রতিপালন করে, তার ক্লান্তি, অসুস্থতা, দুঃখ বেদনা কিছুই স্বামীটিকে স্পর্শ করেনা! তিনি যা পান তা নিজের অধিকার মনে করেন, তাতে কোন একদিন কিছু একটা ঘাটতি হলে অভিযোগ করেন, মেজাজ খারাপ হলে প্রথম তিনটির যেকোন একটি বা কয়েকটির অবতারণা ঘটে – অথচ তিনি কখনোই ভেবে দেখেন না তার কি পরিমাণ ত্রুটি বিচ্যুতি অভাব অভিযোগকে সঙ্গী করে মেয়েটি তার সাথে সংসার করে যাচ্ছে। প্রায়ই স্বামীরা অন্যের স্ত্রীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে থাকেন, সাথে নিজের স্ত্রীর সমালোচনা। অথচ সেই ভদ্রমহিলার স্বামীর কি অবস্থা তা তিনিই জানেন!

চলবে….

 

রাজধানীতে বাসের ধাক্কায় নারী চিকিৎসক নিহত


নারী সংবাদ


রাজধানীর বিজয় সরণি মোড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় আক্তার জাহান রুমা (২৮) নামে এক নারী চিকিৎসক নিহত হয়েছেন। গতকাল ভোর ৫টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে। ভোর সোয়া ৫টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, নিহত আক্তার জাহান চট্টগ্রামের হালিশর এলাকার বাসিন্দা। তার বাবার নাম আক্তারুজ্জামান। তিনি চট্টগ্রাম ওসমানীনগরে একটি চু হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন।

জানা গেছে, রাজধানীর একটি চু হাসপাতালে পরীক্ষা দেয়ার জন্য চট্টগ্রাম থেকে এসেছিলেন আক্তার জাহান রুমা।

গতকাল সকালে মহাখালী থেকে সিএনজি অটোরিকশায় চড়ে ফার্মগেটের দিকে যাচ্ছিলেন তিনি। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বাস সিএনজিকে ধাক্কা দিলে সেটি রাস্তায় উল্টে পড়ে। এ ঘটনায় নারী চিকিৎসক আক্তার জাহান গুরুতর আহত হন। আশপাশের লোকজন এ সময় ওই নারী চিকিৎসককে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পরে তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় সিএনজি চালকও আহত হয়েছেন। তাকে স্থানীয় একটি হসপিটালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। সুত্র: নয়াদিগন্ত

 

নারীর অধিকারে যত আইন


নারীর জন্য আইন


রাষ্ট্রে নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে কোনো রূপ বৈষম্য নেই। আইনের দৃষ্টিতে সব নাগরিক সমান অধিকারী। প্রতিটি রাষ্ট্রে তাদের নিজস্ব আইন রয়েছে।
তবুও অনেক আইন থাকা সত্ত্বেও এখনো অনেক নারী বঞ্চিত ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। অধিকার আদায়ে প্রতিনিয়ত লড়াই করছেন নারীরা।

আশির দশকের নারী আইন:
নারী নির্যাতন বন্ধে আইন প্রণয়নের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আশির দশকের শুরুর দিকে বিশেষ আইন প্রণয়ন করা হয়। নারী ও শিশু নির্যাতন আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় তা দমনে ১৯৮৩ সালে এ আইন প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু নারী নির্যাতন বন্ধে এ আইন খুব বেশি কার্যকর হচ্ছিল না।

নম্বই দশকের নারী আইন:
আশির দশকের আইনে কাজ না হওয়ায় আরো কঠোর আইন তৈরির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। পরে ১৯৯৫ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন আইন পাস করা হয়। এ আইন পাসের পর নারী নির্যাতন কিছুটা বন্ধ হয়।

বিংশ শতকের নারীর আইন:
তবে পরে আইনটি বাতিলক্রমে ২০০০ সালে নতুন করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন প্রণয়ন করা হয়। আইনটিকে আরো শক্তিশালী করতে ২০০৩ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন প্রণয়ন করা হয়। এছাড়া এসিড-সন্ত্রাস দমন আইন ২০০২ ও যৌতুক নিষিদ্ধকরণ আইন ১৯৮০, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন ২০১০ প্রভৃতি আইন রয়েছে।
এ ছাড়া নারীনীতিসহ কিছু নীতি ও আইন আছে, যেখানে পরোক্ষভাবে নারীর অধিকার ও স্বার্থকে রক্ষা করা হয়েছে।

দেশে প্রথমবার নারীনীতি আইন প্রণয়ন করা হয় ১৯৯৭ সালে, এরপর ২০০৪ ও ২০০৮ সালে তা সংশোধন করা হয়। সর্বশেষ ২০১১ সালে পুনরায় নারীনীতি প্রণয়ন করা হয়।

নারীর তালাকের বিধান:
এ ছাড়া পুরুষকে তালাক দেওয়ার ক্ষেত্রে আইন না থাকলেও মুসলিম পারিবারিক আইন ১৯৬১ মোতাবেক নারীদের বিবাহবিচ্ছেদেরও অধিকার দেওয়া হয়। পারিবারিক আইনে নারীর অধিকার স্বীকৃত হয়েছে। কিন্তু সামাজিকভাবে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি না থাকায় নারী তার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সংবিধান এবং আইনে থাকলেও নারীর প্রতি বৈষম্য বিরাজ করছে সমাজের সর্বক্ষেত্রেই।

নারীর অধিকার বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় বাধা হলো পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মানুষের মানসিকতা। পুরুষদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে পারলে সমাজে নারীদের অধিকার সহজেই প্রতিষ্ঠা পাবে।

 

ভিকারুন নেসা নূন স্কুলের ছাত্রীর আত্মহত্যা


নারী সংবাদ


ভিকারুন নিসা নূন অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণীর ছাত্রী অরিত্রি অধিকারী (১৫) আত্মহত্যা করেছেন। গতকাল দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
নিহতের পরিবারের অভিযোগ, মেয়ের সামনে তার বাবা ও মাকে স্কুলশিক্ষক বকাঝকা করার কারণেই অরিত্রি আত্মহত্যা করেছে।
অরিত্রির বাবা দিলীপ অধিকারী জানান, তিনি পরিবার নিয়ে শান্তিনগর এলাকার একটি বাসার সাত তলায় ভাড়া থাকেন। তাদের গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদরে। তিনি বলেন, গতকাল সকালে পরীক্ষা দেয়ার জন্য স্কুলে যায় অরিত্রি। কিন্তু তাকে পরীক্ষায় অংশ নিতে দেননি স্কুল কর্তৃপক্ষ। এই অবস্থায় স্কুলকর্তৃপক্ষ অরিত্রির বাবা মাকে স্কুলে যেতে বলেন। খবর পেয়ে বাবা মা দুজনই স্কুলে যায়। তখন স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের জানিয়ে দেয়, অরিত্রি পরীক্ষায় মোবাইল দিয়ে নকল করছিল। তাকে স্কুল থেকে টিসি দেয়া হয়েছে। তখন অরিত্রির বাবা মা স্কুলের শিক্ষকদের কাছে অনেক অনুরোধ করেন তাকে টিসি না দেযার জন্য। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাদের কথা না শুনে অরিত্রিকে স্কুলে রাখা যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়।
অরিত্রির বাবার আরো জানান, স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে আমি বাসায় চলে আসি। তাদেরকে বাসায় রেখে বিভিন্ন জায়গায় ফোন করে তদবির শুরু করি। হঠাৎ বাসা থেকে ফোন আসে, অরিত্রি ঘরের দরজা খুলছে না। পরে দরজা ভেঙে তাকে ফ্যানের সাথে ওড়না দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নেয়া হলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত অরিত্রির বাবার অভিযোগ অরিত্রিকে যদি টিসি না দিয়ে আরেকবার সুযোগ দেয়া হতো তাহলে হয়তো তার মেয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতো না। মেয়ের সামনে তাকে ও তার স্ত্রীকে অকথ্য ভাষায় বকাবকি করেন শিক্ষক। তা হয়তো মেয়ে সহ্য করতে পারেনি। এসব তথ্য জানান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সাব ইন্সপেক্টর বাচ্চু মিয়া।
সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

“আর নয় হতাশা”


নিশাত জাহান নিশা


কেন যেন দিন দিন হতাশা বেরেই যাচ্ছে, জীবনের সব প্রাপ্তি কেন জানি বিস্বাদ লাগে। আপনি হতাশায় আছেন এর কারণ এই না যে আপনার অনেক দুঃখ আছে। এর কারণ হল আপনি নিজেকে একজন দুঃখী মানুষ ভাবছেন। আপনি আসলে আপনার ব্রেইনে বিষয় বা ঘটনা গুলো এভাবেই প্রোগ্রামিং করে রেখেছেন।
মনোবিজ্ঞানীরা বলছে, আমাদের আবেগ ও আচরণের ধরন নির্ধারিত হয়, জীবন সম্পর্কে কী ধরণের চিন্তা আমরা মনের ভেতরে গড়ে তুলেছি সেটার উপর। (এটা কে schema বলে)

যে ঘটনা আপনার সাথে ঘটে গেছে একই ঘটনা ঘটে যাওয়া আরেকজন মানুষকে দেখবেন তার reaction or response দুটো’ই ভিন্ন কেননা সেই মানুষটি অন্যভাবে সব কিছু তার ব্রেইনে প্রোগ্রামিং করেছেন, তার schema ভিন্ন।

আপনি যতবেশি বিষণ্ণতায় ডুবে যাচ্ছেন ততবেশি নেতিবাচক চিন্তা স্বয়ংক্রিয় ভাবে আপনার মস্তিস্কের ভেতরে ঘুরপাক খেতে থাকবে। একটি সময় বিষয় গুলো আপনি বিশ্বাস করতে শুরু করবেন এবং আরও বেশি বিষণ্ণতায় ডুবে যাবেন।
আর তখন আপনি চাইলেই সব কিছু ইতিবাচক ভাবে ভাবতে পারছেন না কেননা ততক্ষনে আপনার চারপাশ সম্পর্কে, নিজের অথবা নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আপনার Negative Core Belief তৈরি হয়ে গিয়েছে। তখন আপনার ব্রেইনে কতগুলো Irrational Belief যা কিনা chain আকারে আপনাকে সব কিছুতে ই নেতিবাচক অনুভূতি দিবে, সুখের স্বাদ ভুলিয়ে দিবে, সব কিছুই দুঃখকর/ হতাশা আর বিষণ্ণ লাগবে।

তাই প্রথমেই নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর চেষ্টা করুন। বেশিরভাগ মানুষ আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে অন্যদের বিশ্বাসের কথা চিন্তা করে। অন্যদের চিন্তা বাদ দিয়ে নিজের positive দিক গুলো র প্রতি আলোকপাত করুন, confidence বাড়বে; নিজের achievement গুলো কে count করুন Self Esteem boost up হবে।

মনে রাখবেন, আপনি জীবনে সুখি হবেন না দুঃখি হবেন এই responsibility আপনার নিজের’ই নিতে হবে।

আমাদের জীবনের স্বপ্ন কী , জানতে চাইলে অনায়শে কত কথা বলি কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য আমরা কী কী করেছি , জানতে চাইলে আমরা চুপ করে থাকছি। ব্যাপারটি কী পরস্পর বিরোধী হয়ে গেল না ?

আপনি নিজেকে যেভাবে সময় দিবেন সময়ও আপনাকে ঠিক সেরকম একটি জীবন দেবে।

আপনি যদি পৃথিবীর সব চেয়ে সুখি মানুষটিকে দেখতে চান সেটি আপনি, যদি পৃথিবীর সব চাইতে বিপর্যস্ত মানুষটিকে দেখতে চান তাহলে সেটি ও আপনি। আপনি নিজেকে যে দৃষ্টিকোণ থেকে দেখবেন আপনি আসলে তাই।
ধন্যবাদ।

Nishat Jahan Nisha
Assistant Clinical Psychologist.
Dept. Of Clinical Psychology
MPhil Part -1.

 

দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের স্কুল সংখ্যা বাড়ানো দরকার


নারী সংবাদ


বার বছর বয়সী রাইয়ান দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। খুব আবেগ নিয়ে দু’হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে আছে বই। চোখে কোন আলো নেই। আর দশটি বাচ্চার মত সাধারণ নয় সে। প্রতিটি দিন তার শুরু হয় নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আর নতুন নতুন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে।
পরিসংখ্যান মতে বাংলাদেশে প্রায় পঞ্চাশ হাজার শিশু রয়েছে যাদের চোখে কোন ধরনের আলো নেই। আবার তাদের অধিকাংশই খুবই গরীব ঘরের সন্তান। আর এ ধরনের বাচ্চাদের জন্য খুব অল্প সংখ্যক বিশেষ স্কুল রয়েছে যেখান হতে তারা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। আর অধিকাংশ পরিবারের কাছে সরকার পরিচালিত এসব বিশেষ স্কুলই একমাত্র জায়গা যেখান হতে তাদের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বাচ্চারা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
কিন্তু এসব বিশেষ স্কুলের অধিকাংশই অপর্যাপ্ত প্রয়োজনীয় বই এবং প্রশিক্ষিত শিক্ষকের অভাবে প্রাইমারী স্তরের পরে আর শিক্ষা প্রদান করতে পারে না।
এসব দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বাচ্চাদের জন্য বিশেষ করে মেয়ে শিশুদের জন্য ব্যাপ্টিষ্ট মিশন ইন্টিগ্রেটেড স্কুল বাংলাদেশ সরকারের অধীনস্ত সমাজ সেবা অধিদপ্তর এবং ক্রিস্টোফেল ব্লাইন্ডেন মিশন (সিবিএম)-জার্মানীর সহযোগীতায় কাজ করে যাচ্ছে যাতে করে তারা শিক্ষা ব্যবস্থার সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা পায়।
১৯৭৭ সালে মিরপুরে পাঁচ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মেয়ে শিশু নিয়ে যাত্রা শুরু হয় ব্যাপটিষ্ট সংঘ স্কুলের। পরে ১৯৮৩ সালের ২৩ জানুয়ারী ১০০-আসনের ছাত্রী হোস্টেল সহ স্কুলটি তার নিজস্ব জায়গায় যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে স্কুলটিতে ২৭০ জন পড়ালেখা করছে যার মধ্যে ৩৫ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মেয়ে শিশু।
স্কুলের অধ্যক্ষ মমতাজ বৈরাগী বলেন আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মেয়ে শিশুদের উন্নত শিক্ষা প্রদান করা এবং তারা যেন তাদের আশপাশের সকল পরিস্থিতি বুঝতে পারে। যাতে করে তারা তাদের জীবনকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে পারে এবং নিজের পরিবার ও সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে।
তিনি বলেন, সঠিক যতœ এবং উৎসাহ পেলেই এ ধরনের শিশুরা ভালভাবে বেড়ে উঠতে পারে এবং পরিবার ও সমাজে ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ব্যাপ্টিষ্ট মিশন ইন্টিগ্রেটেড স্কুলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এবং স্বাভাবিক বাচ্চাদের শিক্ষা প্রদান করছে। স্বাভাবিক বাচ্চারা এই স্কুলে প্রথম শেণী হতে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার সুযোগ পায়। আর দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বাচ্চারা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার সুযোগ রয়েছে।’
মমতাজ বৈরাগী বলেন জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের ৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মেয়েরা সবাই এই স্কুলে পড়ার সুযোগ পাবে।
স্কুলের উপাধক্ষ্য রুথ মিত্র বলেন, ‘দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মেয়েদের জন্য এটিই একমাত্র আবাসিক স্কুল। এই স্কুলের আবাসিক হোস্টেলে ১০০-জন ছাত্রীর জন্য আসন রয়েছে। যারা মূলত অত্যন্ত দরিদ্র এবং অনগ্রসর পরিবারের সন্তান… তাদের এই হোস্টেলে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। হোস্টেলে অবস্থান করা ছাত্রীদের জন্য ফ্রি থাকা, খাওয়া, কাপড়, চিকিৎসা এবং তাদের সকল নিত্য প্রয়োজনের ব্যবস্থা স্কুল কর্তৃপক্ষ করে থাকে।’
তিনি জানান, ২০০৭ সালের জানুয়ারী হতে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এবং স্বাভাবিক দৃষ্টি সম্পন্ন বাচ্চাদের জন্য যৌথ পড়াশোনার ব্যবস্থা চালূ করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এসময় স্কুলের নাম বদলিয়ে রাখা হয় ব্যাপ্টিষ্ট মিশন ইন্টিগ্রেটেড স্কুল (বিএমআইএস)। আর স্কুল ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাপ্টিষ্ট চার্চ সংঘের স্যোশাল হেলথ এডুকেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট (শেড) বোর্ড।
বিএমআইএস’র রয়েছে নিজস্ব ব্রেইলিং প্রেস যেখান হতে প্রাইমারী এবং সেকেন্ডারী লেভেলের সকল ব্রেইলিং পদ্ধতির বই ছাপানো হয়। এখান হতে বই সংগ্রহ করে বাইরের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বাচ্চারাও। এসব বই মূলত বিনা খরচে দেশের সকল দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বাচ্চারা সংগ্রহ করে।
বাংলাদেশ ভিজুয়্যালি ইমপায়ার্ড পিপলস সোসাইটি’র সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন ভূইঁয়া বলেন বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় পঞ্চাশ হাজার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুর জন্য মাত্র সাতটি বিশেষ প্রাইমারী স্কুল রয়েছে।
তিনি বলেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা উপকরণ অত্যন্ত ব্যয় বহুল। যার ফলে অনেক বাচ্চাই শিক্ষা হতে বঞ্চিত হয়। এছাড়াও অভিভাবকদের রয়েছে সচেতনতার অভাব।
ব্লাইন্ড এডুকেশন এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইযেশন, সাইটসেভার্স ইন্টারন্যাশনাল, বিভিআইপিএস, চাইল্ড সাইট ফাউন্ডেশসহ আরো বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের সর্বোত্তম শিক্ষা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে।
সুতরাং দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হলে দেশে স্কুল সংখ্যা আরো বাড়াতে হবে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থা (এনজিও) ও সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিদের এগিয়ে এসে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের পাশে দাঁড়াত হবে। তাদেরকে যথাযথ শিক্ষার সুযোগ দিয়ে সমাজের মূল সামিল করতে হবে। তাদেরকে গড়ে তুলতে হবে সমাজেরই অংশ হিসেবে। উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে পারলে তারাও সমাজে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। কেননা আজকাল প্রতিবন্ধীরা ব্যবসা, চাকুরির পাশাপাশি বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনেরর অংশ। শেষ কথা হলো দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য স্কুল সংখ্যা আরো বাড়াতে হবে।
সুত্র: বাসস।

 

লামায় স্কুলছাত্রীকে ইভটিজিং, যুবকের ৪ মাসের জেল


নারী সংবাদ


লামায় স্কুলছাত্রীকে ইভটিজিং করার অপরাধে এক যুবককে ৪ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। শুক্রবার রাতে লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নূর-এ-জান্নাত রুমি এ দণ্ডাদেশ দেন।

দণ্ডিত যুবকের নাম আজিজুল হাকিম সুমন। তিনি লামা পৌরসভার চেয়ারম্যানপাড়া এলাকার আব্দুল লতিফের ছেলে। শনিবার সকালে তাঁকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই স্কুলছাত্রীকে ওই যুবক দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে রাস্তাঘাটে নানাভাবে বিরক্ত করা এবং মোবাইল ফোনে বিরক্ত করে আসছিল। স্কুলছাত্রী ও তার বাবা বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার সকালে লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে প্রতিকার চেয়ে অভিযোগ করেন।

অভিযোগের ভিত্তিতে লামা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. গিয়াস উদ্দিন ও মো. খালেদ মোশারফ অভিযুক্ত যুবককে পৌরসভার চেয়ারম্যান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করেন। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় শুক্রবার রাত ৭টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নূর-এ-জান্নাত রুমি বখাটে যুবক আজিজুল হাকিম সুমনকে ৪ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন। এ সময় দণ্ডিত যুবকের কাছ থেকে একটি মোবাইল ফোন জব্দ করে ধ্বংস করা হয়।

লামা থানা উপ-পরিদর্শক মো. গিয়াস উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, দণ্ডিত যুবককে শনিবার সকালেই বান্দরবান জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
সুত্র:কালের কন্ঠ।

 

কিভাবে স্মার্ট হবেন?


মেইক ইউরসেলফ


চিরস্থায়ী স্মার্টনেসের জন্য নিয়মিত কিছু কাজ করা দরকার। আপনার শার্ট-প্যান্ট নিয়ে ভাববেন না। কেবল খেয়াল রাখুন এগুলো পরিস্কার কিনা, ইস্ত্রি করা কিনা, ব্যাস। চুল নিয়ে কখনোই বেশি দুশ্চিন্তা করবেন না যেমন আছে থাকতে দিন।

১. জ্ঞান অর্জন করা
প্রচুর পড়াশোনা করেন, দেখেন, শোনেন। দরকারি বিষয়গুলো পড়ার সাথে সাথেই একটু করে লিখে রাখেন। স্মার্ট হওয়ার প্রথম শর্ত হলো আপনাকে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। পোশাক আশাক সুন্দর করেই যে আপনি স্মার্ট হবেন তা হবে না।

২.কথা বলা
গুছিয়ে কথা বলা; উপস্থিত বুদ্ধি; পরিষ্কার পরিছন্ন উপস্থাপনা। বেশি বকবক করবেন না, বেশি করে লোকজনের কথাবার্তা শোনেন। এর মধ্যে থেকে ভালো জিনিসগুলো নেয়ার চেস্টা করেন।

৩. খারাপ আচরণ করবেন না
মাথাটাকে সবসময় ঠান্ডা রাখুন, ফ্রেশ রাখুন। বাসার কাজের লোক হোক অথবা অফিসের বস কখনোই কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করবেন না।

৪. কাজের লিস্ট করুন
দিনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলোকে সুন্দর করে লিখে রাখেন।স্টুডেন্ট, চাকরিজীবী, বেকার আপনি যেই হন, আপনার কাজের একটা লিস্ট তৈরি করেন।

৫. বুদ্ধির খেলা খেলুন
বুদ্ধির খেলা খেলেন, পাজল গেম হতে পারে, দাবা, শব্দজট অথবা আপনার পছন্দসই কিছু একটা।

৬. বন্ধু নির্বাচন
স্মার্ট হওয়ার খুবই গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে ভালো বন্ধু নির্বাচন। হাজার হাজার বন্ধু থাকার চেয়ে পাঁচ জন বিবেকবান, বুদ্ধিমান, শিক্ষিত বন্ধু থাকা লক্ষগুণ ভালো, এদেরকে আপনার একদিনেই জোগার করতে হবে তা না, জীবনে চলারপথে এরকম পাঁচজন মানুষ আপনি চিন্তাভাবনা করে বেঁছে নেন।

৭. পর্যাপ্ত ঘুমান
যথেষ্ট পরিমাণে ঘুমান। প্রতিদিন ভালো ঘুম হওয়াটা জরুরি।

যে কোনো পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেয়া এবং নিজের আশে পাশের সম্পর্কে ভালো জানা শোনা থাকা স্মার্ট হওয়ার কিছু অন্যতম দিক। এই সব দিক গুলো নিয়মিত চর্চার মাধ্যমেই অর্জন করা সম্ভব।

 

সিংড়ায় বৃদ্ধা মাকে বাড়িছাড়া করল ছেলে


নারী সংবাদ


‘বৃদ্ধা হওয়াটাই যেন সবচেয়ে বড় অপরাধ! আমার ঘর-সংসার, ছেলে-মেয়ে সব থাকার পরও আজ আমি বড় অসহায়। জায়গা-জমি সব লিখে দিয়েছি। ঘর-বাড়ি সব কিছু নিয়ে মুখে লাথি মেরে ফেলে দিল। পেটের ছেলে এই ভাবে মারবে মেনে নেয়া যায় না। আমার বাপ, মা, ভাই, আত্মীয়-স্বজন কেউই নেই। তাই বিচারের আশায় এই থানার সামনে সকাল থেকে বসে আছি।’ বলছিলেন নাটোরের সিংড়া উপজেলার কুষাবাড়ী গ্রামের ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা রহিমা বেওয়া।

নিতান্ত অসহায়ভাবে শুক্রবার সকাল থেকে নাটোরের সিংড়া থানার সামনে বসেছিলেন তিনি। শুক্রবার দুপুর ১২টায় থানার সামনে বসে থাকার সময় এই প্রতিবেদককে কাতর কন্ঠে কথাগুলো বলছিলেন রহিমা বেওয়া।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলা কুষাবাড়ী গ্রামের মৃত হুসেন প্রামাণিকের স্ত্রী রহিমা বেওয়া প্রায় ১০ বছর পূর্বে তার স্বামীকে হারিয়ে বিধবা হন। এরপর তিনি তার ৭ ছেলেমেয়ের পরিবারের সাথে জীবনযাপন করতে থাকেন।

সম্প্রতি মেজ ছেলে বেল্লাল হোসেনকে জমি-জমা ও ঘর-বাড়ি লিখে দেন। শুক্রবার সকাল ৭টায় ছেলের কাছে টাকা চাইলে মায়ের মুখে লাথি মেরে ফেলে দেয় ছেলে বেল্লাল হোসেন। গ্রাম্য প্রধানদের সামনেই বৃদ্ধা মাকে করা হয় উপর্যপরি মারপিট।

এদিকে থানার সামনে মাটিতে বসে একজন ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা মহিলাকে কাঁদতে দেখে এগিয়ে আসেন বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন সিংড়া উপজেলার সাংগঠনিক সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক। পরে স্থানীয় সাংবাদিকদের সহযোগিতায় বিষয়টি সিংড়া থানার ওসি মনিরুল ইসলামকে অবগত করা হয়।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন সিংড়া উপজেলার সভাপতি অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, বৃদ্ধা মায়ের মুখে লাথি মেরে ফেলে দেয়া দুঃখজনক বিষয়। ওই বৃদ্ধা মহিলাকে সহযোগিতা করার জন্য মানবাধিকার কমিশনের সদস্যরা পাশে রয়েছেন।

সিংড়া থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, কোনো ছেলে তার মায়ের মুখে লাথি মেরে ফেলে দেয়ার ঘটনাটি একটি অমানবিক বিষয়। ছেলে বেল্লাল হোসেনকে আটক করতে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

আসুন, তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেই আপনাদের সাথে


জিয়াউল হক


তাঁর বয়স বিরাশি বৎসর। তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে আজ প্রায় চারটি বৎসর ধরে শয্যাশায়ী। নিজের শোবার ঘর, নিজের খাটটাই হলো তাঁর পৃথিবী। শরীরের একটা পাশ পুরোপুরি অচল। দেখতে পারেন, কথাও বলতে আর বুঝতে, বুঝাতেও পারেন, তবে একটু আধটু আড়ষ্ঠতা আছে, যথেষ্ঠ স্লোও বটে।
বিছানায় পড়ে থাকলেও তিনি সবার খোঁজ নিতে চান, জানতে চান কে কোথায় এবং কেমন আছে? বুড়ো বুড়িরা আবার এতসব জানতে চাইবেন কেন? এটাই তো আমাদের অধিকাংশদের ধারনা। তারা বসে বসে আল্লাহ আল্লাহ করবেন, সংসারের এত খোঁজ রেখে তাদের কি লাভ?
আমরা কি ভাবি যে, এই সংসার আর পরিবার নামের যে জিনিসটা নিয়ে আমরা এত বেশি তৎপর, তা কিন্তু এই বুড়ো-বুড়িরাই গড়েছেন। নিজের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান নিয়ে কার না আগ্রহ থাকে! সংসারে বাস্তব-অবাস্তব নানা ব্যস্ততার কারণে অনেকেই তাঁর কথা ততটা মনোযোগ দিয়ে শুনতে না চাইলেও আমি শুনি তাঁর কথা। মন দিয়ে শুনি।
তিনি এক নাগাড়ে বলে যান, আমি বসে বসে শুনি। মাঝে মাঝে হাঁপিয়ে গেলে তিনি চোখ মুদে বসে একটু জিরিয়ে নেন। তখন তার মুখ পানে চেয়ে থাকি। একদিন তাঁর ঐ মুখটা সজিব ছিল, ভরাট ও প্রাণবন্ত ছিল। নিজের চোখেই তো সেটা দেখেছি। আজ সে জৌলুস নেই, সেই লাবন্য নেই, চামড়া ঝুলে গেছে মুখের। কিন্তু আমি যেন সেখানেই এক অবর্ণনীয় লাবণ্য দেখি, চুপ করে চেয়ে চেয়ে দেখি আর শিহরিত হই।
অনেক সময় তাঁর কথাগুলো অসংলগ্ন হয়ে যায়। তিনি একই কথা বার বার বলেন। সম্মুখে বসে থাকাদের কেউ কেউ বিরক্ত হন। ইশারায় বারণ করি, তা প্রকাশ করতে। আমি বরং সে সময় তাঁর দিকে অতিমাত্রায় মনোযোগ দেই। অন্তত তাকে তেমনটাই বুঝতে দেই যে, তার কথাগুলো মন দিয়ে শুনছি। তিনি খুশি হন। একজন মনোযোগী শ্রোতা পেয়ে তিনি বলে চলেন। বসে বসে শুনি, তন্ময় হয়ে শুনি আর চেষ্টা করি, তিনি যা বলছেন তা বুঝে উঠতে। সে সাথে সেটাও বা সেটুকুও বুঝার চেস্টা করি, যেটা তিনি বলছেন না বা বলতে পারছেন না।
সেদিনও তার সামনে বসে বসে সময় কাটাচ্ছিলাম। তাঁর কথা শুনছিলাম। তিনি আতংকিত, কারণ, সুরা ইয়াসিনটা তাঁর পুরোটাই মুখস্থ ছিল, ইদানিং কেন যেন সেটা তিনি পুরোটা মনে করতে পারছেন না। ভুল হয়ে যাচ্ছে। তিনি চাইছেন, স্মৃতি থেকে মুখস্থ বলে যাবেন আর আমি শুনে দেখবো, ঠিক আছে কিনা, সেটা। বললাম, জি। আপনি বলতে থাকেন, আমি শুনছি।
তিনি আড়ষ্ঠ কন্ঠে তেলওয়াত করে চলেছেন সুরা ইয়াসিন। কখনও কখনও একটু থেমে আবার শুরু করেন। ঘাড় দুলিয়ে, মাথা হেলিয়ে বিরাশি বৎসরের এক বুড়ি সুরা ইয়াসিন শোনাচ্ছেন। প্রথম মুবিন পর্যন্ত এসে চোখ খুলে জানতে চাইলেন ঠিক আছে তো? বললাম; জি। ঠিক আছে, কোথাও ভুল হয়নি। তিনি খুশি হলেন। তার চোখ মুখ উজ্জল হয়ে উঠলো।
আবার শুরু করলেন; ওয়াদ্বরিব লাহুম মাসালান আসহাবাল ক্বারিয়া—। তিনি তেলওয়াত করে চলেছেন, আমি বসে বসে শুনছি। দ্বিতীয় মুবিনও শেষ করলেন। জানতে চাইলেন একইভাবে, ঠিক আছে তো? বললাম; জি। ঠিক আছে। তিনি আবারও শুরু করলেন; ——।
ঘরে আর কেউ নেই। তিনি খাটের উপরে বসে আছেন, আমি পাশেই এক কোণে বসে বসে তাঁর তেলাওয়াত শুনছি। মাঝখানে একবার আটকে গেলেও নিজে থেকেই আবার শুধরে নিয়ে তিনি তৃতীয় মুবিন পর্যন্ত শেষ করে চোখ খুললেন। আমার দিকে চেয়ে জানতে চাইলেন, ঠিক আছে তো । বললাম; জি। ঠিক আছে।
তিনি বললেন, দেখলে তো? ঐ যে একবার ঠেকে গিয়েছিলাম, এরকম মাঝে মাঝে ভুল হয়ে যায়। বললাম, ও রকম সবারই হয়। আপনি এ বয়সে অসুস্থ শরীর নিয়ে মনে রাখতে পেরেছেন! আলহামদুলিল্লাহ। তিনি নিজেও কন্ঠ মেলালেন, আলহামদুলিল্লাহ। তার চেহারার উজ্জলতা যেন আরও বেড়ে গেল নিমেষেই।
তিনি আবার ডায়াবেটিকসের রুগীও বটে। গলা শুকিয়ে যায় ঘন ঘন, পানি খেতে হয়। একটু পানি চাইলেন, মুখে তুলে দিতে চাইলাম কিন্তু তিনি হাত বাড়িয়ে দিয়ে নিজের হাতে গ্লাসটা নিলেন, এর পরে ধীরে ধীরে দু’ঢোক গিলে তা আবার আমার দিকেই ফেরত দিলেন। গ্লাসটা নিয়ে পাশের লকারের উপরে রেখে দিলাম।
তিনি একটুখানি থেমে আবারও শুরু করলেন। কোথায় যেন ছিলেন? মনে করতে পারছিলেন না। বললাম তৃতীয় মুবিন শেষ করেছেন। তৃতীয় মুবিনের পরে কোথা হতে শুরু হবে, সেটা তার মনে নেই। ধরিয়ে দিলাম; ওয়াইয়াকুলুনা মাতা হাজাল ওয়াদু ইন কুনতুম সদিক্বিন-।
তিনি ধরলেন এবং আবার শুরু করলেন। কিন্তু সামান্য কিছুদুর এগিয়ে থেমে গেলেন। ওয়ানুফিখা ফিসসুরি পর্যন্ত গিয়ে আর মনেই করতে পারলেন না। বার বার তাকে মনে করিয়ে দেবার চেষ্টা করলাম, সেখান থেকে ধরে এগিয়ে যাবার চেষ্টা করলেন কিন্তু আটকে গেলেন আবারও।
তিনি বিব্রত হলেন, কষ্ট পেলেন। তার চোখের কোণে জমে উঠলো অশ্রু। কষ্ট পেলাম। শান্তনা দেবার চেষ্টা করলাম, বললাম; বয়স হলে এরকম হয়। কিন্তু তাতেও তার মনটা শান্ত হচ্ছে না। আক্ষেপ করতে করতে সচল থাকা হাতটা তুললেন, দুআ করার জন্য। দুআর শুরু করে দিলেন।
তিনি দুআ করে চলছেন; হে আল্লাহ, আমার অক্ষমতা মাফ করে দিও। মনে মনে বললাম; আমিন।

তিনি বলে চলেছেন; হে আল্লাহ যতদিন বাঁচি, যতক্ষণ বাঁচি, তোমার স্বরণটা যেন না ভুলে যাই, তোমার অবাধ্য যেন না হই। বললাম; আমিন।

তিনি যখন দুআ করতে ব্যস্ত, তখন তাঁর অচল হাতটি বালিশের উপর থেকে গড়িয়ে বিছানায় ঢলে পড়লো, সেটাকে আবার যথাস্থানে বালিশের উপরে তুলে দিলাম। সেদিকে তার খেয়াল নেই, তিনি দুআতে ব্যস্ত।
“হে আল্লাহ আমার সন্তানেরা যে যেখানে আছে, সবাইকে সুস্থ রাখো, ভালো রাখো। বললাম; আমিন।”

তিনি বলে চলেছেন; “হে আল্লাহ, যত বিপদ আপদ দিতে চাও আমার উপরেই দাও। আমার পাঁচ সন্তানের উপরে কোন বিপদ আপদ দিও না!”

আমার চোখ ভিজে এলো। চলৎশক্তি হারিয়েছেন তিনি। ব্লাডপ্রেশার, আর্থাইটিস, চোখের সমস্যা, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস এরকম কত অসুখ তার! আজ চারটি বৎসর শয্যাশায়ী, নিজের কাজটুকুও কারো সহযোগীতা ছাড়া করতে পারেন না, অথচ তিনি আরও অসুখ, আর বিপদ চাইছেন আল্লাহর কাছে তাঁর পাঁচ সন্তানের সুস্থতার বিনিময়ে!
আমার চোখ দিয়ে তপ্ত অশ্রু গড়িয়ে পড়লো তাঁর অলক্ষ্যেই। এবারে আমিন না বলতে পেরে নিজের হাতটাই তুললাম এই মহীয়সী নারীর সাথে তাঁর দুআতে অংশ নিতে।
বলে উঠলাম; “রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি ছগিরা।”

আর হ্যাঁ, আপনাদের তো বলাই হয়নি, ইনিই আমার মমতাময়ী মা। আমার জান্নাত।

 

ধর্ষণে বাধা, ছাত্রীর বাবার দুই হাতের রগ কাটল বখাটে


নারী সংবাদ


বরগুনার পাথরঘাটায় অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার সময় ছাত্রীর বাবা বাধা দিতে গেলে তাকে ধারালো ছোরা দিয়ে কুপিয়ে হাতের রগ কেটে দিয়েছে প্রতিবেশী বখাটে ইয়াছিন। পুলিশ গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ইয়াছিনকে রক্তমাখা ছোরাসহ আটক করেছে। আহত ছাত্রী ও তার বাবাকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বুধবার রাত ৩টার দিকে পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নে এক বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে।

ছাত্রীর বাবা জানান, স্কুলে যাওয়ার পথে ইয়াছিন তার মেয়েকে প্রেম নিবেদন করে নিয়মিত উত্ত্যক্ত করত। বিষয়টি তার মেয়ের কাছে শুনেও লোক লজ্জার ভয়ে তিনি কাউকে বলেননি। এক পর্যায়ে ইয়াসিন বেপরোয়াভাবে মানসিক নির্যাতন শুরু করলে বিষয়টি স্থানীয় কিছু গণ্যমান্য লোকদের জানানো হয়। এতে ইয়াসিন ক্ষিপ্ত হয়। পরে বুধবার রাতে ঘরের জানালা ভেঙে ইয়াছিন ঘরে প্রবেশ করে তার মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। মেয়ের চিৎকারে সজাগ হয়ে ইয়াছিনকে জাপটে ধরেন বাবা। এ সময় ইয়াছিন সঙ্গে থাকা ছোরা দিয়ে কুপিয়ে বাবা-মেয়েকে রক্তাক্ত যখম করে। ছোরার আঘাতে বাবার দু’হাতের রগ কেটে যায়। এলাকাবাসী তাৎক্ষণিক বাবা ও মেয়েকে পাথরঘাটা হাসপাতালে

ভর্তি করালে সকালে তাদের শেবাচিমে রেফার করা হয়।

পাথরঘাটা থানার ওসি মো. হানিফ সিকদার জানান, ইয়াসিন ঘটনার সময় তার মোবাইল ও জামাকাপড় ফেলে দু’জনকে কুপিয়ে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে কয়েক জায়গায় অভিযান চালিয়ে ইয়াছিনকে আটক করা হয়। ইয়াছিনের স্বীকারোক্তিতে রক্তমাখা ছোরাটি উদ্ধার করা হয়। এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
সুত্র: সমকাল

 

বইয়ের নামঃ জ্ঞানতাপস ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্


রায়হান আতাহার


বইয়ের নামঃ জ্ঞানতাপস ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্
লেখিকাঃ শান্তা মারিয়া
প্রকাশনীঃ হাতেখড়ি
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ৮০
মুদ্রিত মূল্যঃ ৭০ টাকা

ছোট পরিসরে জীবনীগ্রন্থ পড়তে খুব ভালো লাগে। এরকমই একটি বই ‘জ্ঞানতাপস ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্’। সবচেয়ে চমকপ্রদ ব্যাপার বইটির লেখিকা সম্পর্কে ডঃ শহীদুল্লাহর পৌত্রী। কাজেই ডঃ শহীদুল্লাহ সম্পর্কে জানতে এরচেয়ে নির্ভরযোগ্য বই পাওয়া যাবে না। বইটিতে এই জ্ঞানতাপসের জন্ম, শৈশব, লেখাপড়া, কর্মজীবন, সাহিত্যকর্ম ও মৃত্যুকে গুছিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর জন্ম ১৮৮৫ সালের ১০ জুলাই চব্বিশ পরগণা জেলার বসিরহাট মহকুমার পেয়ারা গ্রামে। প্রথমে তাঁর নাম রাখা হয়েছিল মুহম্মদ ইবরাহীম। এ নামে আকিকাও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু মায়ের আপত্তিতে পরবর্তীতে তাঁর নাম রাখা হয় মুহম্মদ শহীদুল্লাহ।

স্কুল জীবন থেকেই ভাষা শেখার নেশা পেয়ে বসে তাঁকে। সে সময় ছাত্রদের বাংলা-ইংরেজির পাশাপাশি ফারসি বা সংস্কৃত পড়তে হতো। সাধারণত মুসলমান ছাত্ররা ফারসি, আর হিন্দু ছাত্ররা সংস্কৃত পড়তো। কিন্তু শহীদুল্লাহ্ সংস্কৃত নিয়ে পড়া শুরু করেন এবং নিয়মিত এ বিষয়ে প্রথম হতেন। তার হিন্দু বন্ধুরা কৌতুক করে পন্ডিত মশাইকে বলতো, “স্যার, আমরা বামুন কায়েতের ছেলে থাকতে, আপনি ঐ মুসলমান ছেলেটাকে সবসময় ফাস্ট করে দেন, এতো ভারি অন্যায়।” উত্তরে পণ্ডিত মশাই বলতেন, “আমি কী করবো, সিরাজুদ্দৌলা (তিনি শহীদুল্লাহর না কিছুতেই মনে রাখতে পারতেন না, বলতেন সিরাজুদ্দৌলা) লেখে ভালো। তোরা তো ওর মতো লিখতে পারিস না।”

সংস্কৃত ছিলো ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর প্রিয় বিষয়। এ বিষয়ে তিনি বি.এ পাশ করেন। কিন্তু একই বিষয়ে এম.এ পড়ার সময় এক গোঁড়া হিন্দু পণ্ডিতের কারণে তিনি পড়া শেষ করতে পারেননি। পরবর্তীতে ‘তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বে’ এম.এ পাশ করেন তিনি।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ কর্মজীবন শুরু করেন সীতাকুণ্ড উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাধান শিক্ষক হিসেবে। বছরখানেক পর সেখান থেকে জন্মস্থান বশিরহাটে ফিরে এসে আইনজীবী হিসেবে ওকালতি শুরু করেন। কিন্তু ওকালতিতে কখনোই তাঁর মন বসেনি। ১৯১৯ সালে তিনি স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের মাধ্যমে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পান। এখানে চাকরি করার সময়ে তিনি ‘আঙুর’ নামক একটি শিশুতোষ পত্রিকা বের করেন। বিখ্যাত এই পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ-নজরুলসহ নামিদামি সাহিত্যিকেরা লিখতেন।

১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি এখানে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি তাঁর ভালোবাসার কারণে তিনি শান্তি নিকেতনের বিশ্বভারতীর শিক্ষক হবার প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। জ্ঞানার্জন করাই ছিলো তাঁর জীবনের মূল লক্ষ্য। এজন্য তাঁকে ‘জ্ঞানতাপস’ বলা হয়। অবশ্য ছাত্র ও সহকর্মীরা তাঁকে ‘চলিষ্ণু শব্দ কম্প ধ্রুম’ বা চলন্ত অভিধান নামে ডাকতেন। যে কোনো শব্দের অর্থ বা উৎপত্তি সম্পর্কে তাৎক্ষণিক উত্তর দেয়ার ক্ষমতার কারণে তাঁকে এ নামে ডাকা হত।

এছাড়াও বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা কলেজে তিনি অধ্যাপনা করেছেন। উচ্চতর শিক্ষার জন্য প্যারিসের সোরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন শহীদুল্লাহ্। চর্যাপদ নিয়ে গবেষণা করেন তিনি। এ গবেষণার ফলে তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের মধ্যে প্রথম ডিলিট ডিগ্রী পান। এছাড়া বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব নিয়ে গবেষণার জন্য তিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম ডিপ্লোমা অর্জন করেন।

বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার পেছনে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর অবদান অনস্বীকার্য। সেই ১৯২০ সালে তিনি ভারতের সাধারণ ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষাকে উত্থাপন করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানিদের উপর উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেয়া শুরু করে পশ্চিম পাকিস্তানি সরকার। শহীদুল্লাহ এর প্রতিবাদ করলেন। একাধিক জায়গায় তিনি বাংলা ভাষার সপক্ষে যুক্তি দিলেন। ১৯৪৮ সালে এ বিষয়ে তিনি ‘আমাদের ভাষা সমস্যা’ শীর্ষক একটি বই লিখে ছাত্র-শিক্ষকসহ দেশের সচেতন জনগোষ্ঠীর কাছে বিনামূল্যে বিতরণ করলেন৷ সশরীরে মিটিং মিছিলেও অংশগ্রহণ করেন৷ এসব কারণে তিনি সরকারের চক্ষুশূল হলেন। তারপরেও তিনি আপোষ করেননি।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ পীরের বংশধর ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ ছিলেন। কিন্তু ধর্মান্ধতা তাঁকে কখনো ছুঁতে পারেনি৷ এজন্যই তিনি বলেছেন, “আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য, তার চেয়ে বেশি সত্য আমরা বাঙালি। এটা কোন আদর্শের কথা নয়, এটা একটি বাস্তব কথা। মা প্রকৃতি নিজের হাতে আমাদের চেহারায় ও ভাষায় বাঙালিত্বের এমন ছাপা মেরে দিয়েছেন যে মালা তিলক টিকিতে কিংবা টুপি লুঙ্গি দাঁড়িতে ঢাকবার জো-টি নেই।” ধর্ম নিরপেক্ষ স্বাধীন বাঙালি রাষ্ট্রই ছিল তাঁর ঐকান্তিক কামনা।

১৯৬৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর সেরিব্রাল থ্রম্বোসিসে আক্রান্ত হয়ে পক্ষাগাতগ্রস্থ হলেন ড. শহীদুল্লাহ্। এর প্রায় দেড় বছর পর ১৯৬৯ সালের ১৩ জুলাই না ফেরার দেশে চলে যান এই জ্ঞানতাপস। সহজ-সরল জীবন আর জ্ঞানের সাধনা ছিলো তাঁর সারা জীবনের দর্শন। মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে তাঁর রুহের মাগফেরাত কামনা করছি।

 

পথের কাঁটা দূর করতে শিশুসন্তানকে হত্যা


নারী সংবাদ


পারিবারিকভাবে পটুয়াখালী জেলার বিলকিস বেগম ও একই এলাকার নাসিরের বিয়ে হয়। বছর ঘুরতেই তাদের কোলজুড়ে আসে কন্যাসন্তান। কিন্তু এরই মধ্যে বিলকিস বেগমের সঙ্গে জামালপুরের সোলেমানের পরকীয়ার সম্পর্ক হয়। প্রেমের টানে প্রথম স্বামীকে ছেড়ে ছয় মাসের কন্যা মরিয়মকে নিয়ে সোলেমানের সঙ্গে জামালপুর পালিয়ে যায় বিলকিস। এরপর দু’জনে কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করে। সেখান থেকে দু’জনে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পাগলা এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নেয়। কিন্তু আগের পক্ষের মেয়েকে নিয়ে বিলকিস ও সোলেমানের মধ্যে ঝগড়া হতে থাকে। এক সময় দু’জনই সিদ্ধান্ত নেয়, তাদের দু’জনের পথের কাঁটা ছয় মাসের মরিয়মকে তারা মেরে ফেলবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি শ্বাসরোধে ছয় মাসের মরিয়মকে হত্যা করে বিলকিস ও সোলেমান। হত্যার পর শিশুকন্যার লাশ লুঙ্গিতে মুড়িয়ে রাস্তার ধারে ফেলে রাখে তারা।

গতকাল বুধবার বিকেলে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাওসার আলম ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ন কবিরের পৃথক আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে ঘাতক সোলেমান ও বিলকিস।

১৭ ফেব্রুয়ারি ফতুল্লার পাগলা এলাকার রাস্তার ধারে লুঙ্গিতে মোড়ানো একটি শিশুর লাশ অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে উদ্ধার করে পুলিশ। এর পর ফতুল্লা থানা পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করে। পরে পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে তদন্তের জন্য হস্তান্তর করে। পিবিআইর নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান মুন্সির নেতৃত্বে এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান পিবিআইর উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলমের ওপর। পিবিআই তদন্ত করে ঘটনার সঙ্গে বিলকিস বেগম ও সোলেমানের সম্পৃক্ততা খুঁজে পায়।

এরপর তদন্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে সঙ্গীয় ফোর্স সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. শুকরিয়া ও কনস্টেবল মিষ্টি আক্তার জামালপুর ও পটুয়াখালীতে পৃথক অভিযান চালিয়ে ২৫

নভেম্বর সোলেমান ও বিলকিসকে গ্রেফতার করে। সুত্র: সমকাল।

 

শৈত্যের শুভ উদ্বোধন


নিশাত তাম্মিম


শীতের শুরুটা পুরোদমে না হলেও শেষরাতের ঝিরঝিরে বাতাসে যখন কাথাটি অবচেতনভাবেই গায়ের উপরে স্থান করে নেয় কিংবা সূর্য ঊদয়োত্তর মিষ্টি রোদের আলতো স্পর্শে কর্মচাঞ্চল্য শুরু হয়, তখনই মনে পড়ে যায় শীত বুঝি এসেই পড়লো। তবে কাব্যিকভাবে শীতের আগমণ যতটা সুন্দর, বাস্তবতার সাথে লড়াই করে টিকে থাকা মানুষগুলির জন্য সেটি হয়তো ততটা সুখকর নয়। শীতের হিম কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশ যতটা সফেদ, কিছু ভাগ্যাহত মানুষের জীবনে ওর অধ্যায়টা ঠিক ততটাই কালো।

IPS না থাকার সুবাদে বরাবরের মতই এবারো অনিচ্ছাস্বত্তেও হাতপাখার সাথে সম্পর্কটা বেশ গাঢ়ই হয়ে উঠেছিল। কোন এক রাতে বৃষ্টির আগমণে এই পাখার সাথে সম্পর্কটা ছিন্ন করার আনন্দে যখন অতিশয় পুলকিত হচ্ছিলাম ঠিক তখনি মনের দরজায় বিবেক সত্ত্বার কড়া নাড়ার শব্দ শুনতে পেলাম। ভেবে দেখেছো, সেই মানুষগুলোর কথা? শীত নামক কাব্যিক শব্দটার উচ্চারণও যাদের চোখে জল এনে দেয় অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশংকায় আকাশপানে চেয়ে যাদের চোখ ঝাপসা হয়ে আসে? নিজের মন আজকাল খুব বেশি ভালো নেই বলে বিবেকের কড়া নাড়ার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করার তেমন ইচ্ছে ছিলোনা। তবুও পারিনি, আমার হয়তো একটি দীর্ঘশ্বাস, আর অজস্র ভাগ্যাহত মানুষের জীবনের প্রশ্ন। তাই হয়তো মনের সাথে অনেকটা জোর করেই কিছু লিখতে চাওয়ার প্রয়াস….

শীতের সকালে রাস্তার পাশে সামান্য একটি আধোছেঁড়া কাপড়ের আশ্রয়ে মা ও সন্তানের শীত নিবারণের প্রচেষ্টা, কিংবা সারারাত হাড় জিরজিরে বাতাসের সাথে যুদ্ধের পর এক বিন্দু সূর্যালোকের প্রতীক্ষায় ফুটপাথে বসে থাকা মানুষগুলোর আকুতি- এ দৃশ্য নিশ্চয়ই কারো অপরিচিত নয়। প্রতিবছর শীত আসে…. এবারো আসবে….. আবারো শুরু হবে অভাগা এই প্রাণীগুলোর বেঁচে থাকার সংগ্রাম….. ওপরের দিগন্ত বিস্তৃত আকাশ নিচের চিরচেনা জমিন দুটোই নিমজ্জিত হবে ক্ষমতার স্বেচ্ছাচারিতা প্রদর্শনের সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতায়….

অট্টালিকাবাসীদের না পেয়ে সমস্ত আক্রোশে জাপটে ধরবে ওদের….. যারা পারবে শেষ পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যেতে, তারা হয়তো কৈ মাছের প্রাণ নিয়ে বেঁচে থাকবে কোন রকমে আর যারা পরাজিত হবে তারা ধরা দেবে নিশ্চিত মৃত্যুর ছোবলে। জীবন মৃত্যুর এ খেলা চলেছে আজীবন, চলবেও হয়তো। কোথা এর শেষ সে হিসেব কষতে গেলে ইনফিনিটিতে গিয়ে ঠেকবে কিনা জানা নেই। আমাদের কারো একার পক্ষে হয়তো সম্ভব ও নয় গোটা পৃথিবীর প্রেক্ষাপট দুইদিনে চেঞ্জ করে ফেলা। তারপরও হয়তো এতখানি সম্ভব নিজের আয়ত্ত্বের মধ্যে যতটুকু আছে ততটুকু চেষ্টা করা। আমিরুল মুমেনিন খলিফা উমর (রাঃ) এর সেই ইতিহাস জানা নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ছদ্মবেশে রাস্তায় জনগণের দুর্দশার খোঁজ নিতে গিয়ে ক্ষুধার্ত শিশুদের কান্নার শব্দ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গেলেন…..রাজকোষ থেকে নিজ কাঁধে বয়ে নিয়ে এলে আটার বোঝা- “আমার রাষ্ট্রের একটি কুকুরও যদি না খেয়ে মারা যায় সে দায়ভার আমার”। আমরা সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে পারবোনা জানি তবু হয়ত শীতের সকালে রাস্তায় বেরিয়ে দেখতে পারি সেই মানুষগুলোর ভোগান্তির করুণ দৃশ্য। মিলিয়ে দেখতে পারি আমাদের সাথে ওদের জীবনধারার পার্থক্য। কোন এক বিখ্যাত ব্যক্তির একটি উক্তি পড়েছিলাম-

“When the Rain comes, go outside without umbrella, when the winter comes, go without clothes…..that u can feel what life is!”

হয়ত হতে পারবোনা তৃতীয় উমর….তবুও কি পারিনা নিজের অব্যবহৃত বিলাসিতার আস্তরণে রেখে দেওয়া শীতের কাপড়টি রাস্তার পাশে বরফ জমে যাওয়া শরীরটিকে এগিয়ে দিতে? আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে আমাকেও যে জবাবদিহি করতে হবে ঐ স্রষ্টার দরবারে।লেপের তলায় আরাম নিদ্রাযাপনের সময় ভাবতে পারি এই মুহুর্তে হয়তো আমারই মত আর একটি প্রাণ জাপটে ধরা শীতের আক্রমণে বেঁচে থাকার লড়াই করে যাচ্ছে।

মনে হতে পারে আমার এই ক্ষুদ্র সাহায্যে কি আর হবে? এই অসীম দারিদ্র্য সাগরে আমার এ দান একবিন্দু নীহারিকার মতই মিশে যাবে। ব্যাপারটি অন্য ভাবেও ভাবা যেতে পারে। আমার society তে দশজন মানুষ যদি দশজন দরিদ্রের পাশে দাড়াঁয়, দশটি পরিবার যদি দশটি পরিবারের পাশে দাড়াঁয়, দশটি গ্রুপ যদি আর দশটি বঞ্চিত গোষ্ঠির পাশে দাড়াঁয়, দেশের প্রেক্ষাপট চেঞ্জ করে ফেলা কি খুব বেশি কঠিন হবে??

হয়তো সেদিন আসবেনা তবুও আমাকে এগিয়ে যেতে হবে সে দিনের স্বপ্নকে সামনে রেখেই। Robert Frost এর এ উক্তিটি হতে পারে চলার পথের প্রেরণা
“…..but i have promises to keep
And miles to go before i sleep
And miles to go before i sleep.”

আসুন আমরা এই শীতার্ত মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াই। ব্যক্তিগতভাবে কিংবা সমষ্টিগতভাবে যেভাবেই হোক…… আর একটি জীবন প্রদীপও যেন কেবলি শীতবস্ত্রের অভাবে নিভে না যায়….. এই মন্ত্রেই সূচিত হোক এবারে শীতের উদ্বোধন, শৈত্যের শুভ বরণ…….!

 

সোহেলের বটির কোপে স্কুল ছাত্রী নিহত


নারী সংবাদ


১৫ বছরের স্কুলছাত্রী শারমিন রাজধানীর ওয়ারীর গোপীবাগে বখাটের বটির কোপে নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে গোপীবাগ রেললাইনের পাশে এ ঘটনা ঘটে। এক বরাতে পুলিশ জানায়, দীর্ঘদিন ধরে বখাটে সোহেল শারমিনকে উত্ত্যক্ত করে আসছে। শারমিনের ঘাড়ে কোপ দেবার পর সোহেল পালানোর চেষ্টা করে। স্থানীয়রা সোহেলকে (২৫) ধরে
গনধোলাই দেয়।

ওয়ারীর থানার (এসআই) হারুন অর রশিদ জানান, ‘নিহত শারমিন পরিবারে সঙ্গে সূত্রাপুর কে এম দাস লেনে থাকত এবং সায়েদাবাদ কাজী আরিফ হাই স্কুলের দশম শ্রেনীর ছাত্রী ছিল। তার বাবার নাম মৃত আবদুর সাত্তার। গতকাল তার শেষ ক্লাস উপলক্ষে স্কুলে ক্লাস পার্টি করে কয়েক বান্ধবীসহ বাসায় ফিরছিল। পথিমধ্যে গোপীবাগ রেললাইন এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় ওই বখাটে শারমিনের ঘাড়ে বটি দিয়ে কোপ দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। তিনি আরো জানান, ঘাতক সোহেল ৬-৭ মাস ধরে শারমিনকে উত্ত্যক্ত করত। ঘটনাস্থল থেকে বটিটি জব্দ করা হয়েছে। হত্যাকান্ডের বিস্তারিত খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন। ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি স্যার সলিমুল্লা মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) মর্গে পাঠানো হয়েছে।’

সোহেলের বাসা সায়দাবাদ এলাকায়। শারমিনের স্কুলের পাশে একটি কাগজের খামের দোকানে কাজ করে। সোহেল বলে, ‘শারমিনের সাথে তার এক বছর ধরে সম্পর্ক ছিল। দুই পরিবার বিষয়টি জানতো। শারমিনের জন্য অনেক টাকা-পয়সাও খরচ হয়েছে। কিছুদিন ধরে শারমিন তার সাথে খারাপ আচরণ করতে থাকে। সেই জন্য তাকে দাও দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।’

 

বৈবাহিক সমস্যা ও কোরআনের সমাধান -৫


কানিজ ফাতিমা


সূরা নিসার ৩৪-৩৫ নং আয়াতকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিবাদ ও সমস্যার সমাধান ও তাদের পুনঃসম্পর্ক স্থাপনের জন্য দু’টি পন্থার কথা এখানে উল্লেখ করা হয়েছে-

প্রথম পন্থা হল: যখন স্বামীর এই তিনটি প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হবে তখন স্বামী ও স্ত্রী উভয়ই নিজ নিজ পরিবার থেকে একজন করে মধ্যস্থতাকারী বা তৃতীয় পক্ষের সাহায্য ছাড়াই নিজেরা মিটিয়ে ফেলবে। এই পদক্ষেপটি স্বামী গ্রহণ করবেন এবং তিনি তিনটি পর্যায়ে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাবেন–

০১। স্ত্রীকে মৌখিকভাবে বোঝানো
০২। তার থেকে বিছানা পৃথক করা
০৩। সবশেষে দারাবা করা

দ্বিতীয় পন্থা হল: যখন স্বামীর এই তিনটি প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হবে তখন স্বামী ও স্ত্রী উভয়ই নিজ নিজ পরিবার থেকে একজন করে মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ করবেন, যারা তাদের সম্পর্কের তাদের সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করবে, তাদেরকে উপদেশ দেবে।

“যদি তাদের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হওয়ার মত পরিস্থিতিরই আংশকা কর, তবে স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিশ নিযুক্ত করবে। তারা উভয়ের মীমাংসা চাইলে আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সব কিছু অবহিত।” (সূরা নিসা- আয়াত ৩৫)

আল কোরআনের এই সব কটি উপদেশেরই মূল উদ্দেশ্য হল: কার্যকরীভাবে গঠনমূলক পন্থায় স্বামী- স্ত্রীর মধ্যে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। কাজেই যখন স্ত্রী (স্বামী বা সংসারের প্রতি) প্রকাশ্য অবজ্ঞা, উপেক্ষা বা অবহেলা প্রদর্শন করে(নুশূজ) তখন আল কোরআন স্বামীকে আদেশ করেছে স্ত্রীকে উপদেশ দিতে, অনুরোধ ও অনুনয় করতে এবং প্রয়োজনে ভৎর্সনা করতে। এর মাধ্যমে সে তার কথা ও চিন্তাগুলো স্ত্রীকে বলতে ও বোঝাতে পারবে। এ যোগাযোগের মাধ্যমে দু’জনের ভেতরকার পার্থক্যগুলো সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে, সম্ভাব্য সমাধানগুলো বের হয়ে আসবে। এভাবে ন্যায়সঙ্গতভাবে বৈবাহিক সমস্যায় বা বিবাদে সমাধানের জন্য প্রাথমিক পন্থা হিসেবে আলোচনা করা, মতামতের আদান প্রদান করা ও উপদেশ দেয়াকে উৎসাহিত করা হয়েছে। এবং এর মাধ্যমে স্ত্রীর মধ্যে বিবেক ও যুক্তিবোধ বা কান্ডজ্ঞান জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে।
যদি স্ত্রীর তার নিজের অজ্ঞতা বা ঔদ্ধত্যপূর্ণ মানসিকতার কারণে এ ধরনের উপদেশে কোন কর্ণপাত না করে, তখন স্বামীটিকে আর এক ধাপ সামনে আগাতে হবে। এমতাবস্থায় তার উচিত হবে স্ত্রীর সঙ্গে একই বিছানায় না থেকে বরং পৃথক বিছানায় শোয়া। অর্থাৎ বিছানা পৃথক করা। এটা এজন্য করা দরকার যাতে স্ত্রী পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবনে সক্ষম হয়। স্ত্রী যাতে এমনটা ভাবতে না পারে যে, স্ত্রীর প্রতি দুর্বলতা বা তাকে কাছে পাবার আকর্ষণের স্বামীটি তার এরূপ অবহেলা, অবজ্ঞা ও ঔদ্ধত্যর্পর্ণ আচরণকে মেনে নেবে। বরং স্ত্রীর প্রতি এ অবহেলা বা আগ্রহের অভাব দেখালে স্ত্রীর সেই ভুল ধারণা ভাঙ্গবে এবং সে সমস্যার গভীরতা ও এর পরিণামের ভয়াবহতা উপলদ্ধি করতে পারবে। এর ফলে স্ত্রীও একটি সুযোগ পাবে তার এরূপ অবহেলা ও বিরোধী প্রতিকূল আচরণ পরিত্যাগ করার ও পুরো ব্যাপারটি নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা করার। সে বুঝতে পারবে যে, সে একটি সন্ধিক্ষণে এসে পৌঁছেছে; তাকে এ বিবাদ মীমাংসা করে পুনরায় ভালবাসা ও সহানুভূতির সম্পর্ক তৈরির একটা পথ খুঁজে বের করতে হবে। কিন্তু স্ত্রী যদি এটা উপলদ্ধি না করতে পারে এবং একগুয়েমিভাবে তার আগের আচরণে বহাল থাকে, তবে এতে কোন সন্দেহ থাকে না যে, তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হয়ে গেছে। বিচ্ছিন্নতার চিহ্ন পরিবারটির ভাগ্যের দিগন্তে উঁকি দিয়েছে।
এমনই এক কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে একটি অপরিহার্য প্রশ্ন হল: দুই পরিবারের মধ্যস্থতাকারীদের সাহায্য চাওয়ার পূর্বে এমন কি করা যেতে পারে, যাতে স্বামী ও স্ত্রী তাদের বৈবাহিক সম্পর্কে যে কঠিন হুমকির সম্মুখীন হয়েছে তা সঠিকভাবে উপলদ্ধি করতে পারে এবং বিবাহ ভেঙ্গে যাবার পূর্বেই তারা এ ভয়াবহতা পরিমাপ করতে পারে? আল কোরআন সূরা নিসায় এ প্রশ্নের যে জবাব দিয়েছে, তাহল দারাবা।
এখন প্রশ্ন দাঁড়ায়, দারাবার সঠিক ব্যাখ্যা কি? এজন্য প্রেক্ষাপটটি মনে রাখতে হবে। এখানে প্রেক্ষাপটটি এমন যে, দু’জন বিবাদমান বা সমস্যা আক্রান্ত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পুনঃসম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করা হচ্ছে, স্বামীটি শান্তি স্থাপনের ও বনিবনার জন্য মৌখিকভাবে প্রচেষ্টা করেছেন, বিছানা আলাদা করার মাধ্যমে নিজের অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এমন প্রেক্ষাপটে ‘দারাবার’ ব্যাখ্যা কি হতে পারে সেটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
এখানে দারাবার অর্থ কি ‘আঘাত করা’, ‘শারীরিক শাস্তি প্রদান’ হবে যা কষ্ট, ব্যথা ও অপমানের জন্ম দেয়? যদি তাই হয় তবে এরুপ চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে বশ্যতা স্বীকার বা দমনের উদ্দেশ্য কি? শারীরিক আঘাত বা অপমানের মাধ্যমে দমন কি ভালবাসা বা আনুগত্য তৈরীতে সহায়ক হয়? বা এর মাধ্যমে কি একটি পারিবারিক সম্পর্ক ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করা যায়? ইসলাম যেখানে স্বামীর নির্যাতনমূলক আচরণের ক্ষেত্রে স্ত্রীকে বৈবাহিক সম্পর্ক অবসানের সিন্ধান্ত নেবার অধিকার দিয়েছে সেখানে এরুপ দমন কি স্ত্রীকে আরও বেশি সেদিকে (তালাক বা খুলা ) ঠেলে দিবে না? আর যদি তাই হয়, তবে কি এক্ষেত্রে চাপ প্রয়োগ, দমন বা আঘাতের কোন সুযোগ রয়েছে, যা পরিবারকে পুনঃগঠনের পরিবর্তে বরং ভাঙ্গার দিকে আরও ঠেলে দেবে?
কাজেই দারাবা ক্রিয়াটির অর্থ যদি শারীরিক বা মানসিক আঘাত না হয় (স্বামীরা স্ত্রীদের প্রতি তাদের নির্দয় ব্যবহারের পক্ষের যুক্তি হিসেবে কোরআনের এই শব্দটির অর্থকে এভাবে ভুলভাবে ব্যবহার করেন) তবে এর অর্থ কি হতে পারে? দ্রুত মন্তব্য বা উপসংহারে না গিয়ে এই ব্যাপারটিকে বিস্তারিতভাবে এবং বিভিন্ন আঙ্গিকে এর অর্থ সম্পর্কে গভীর জ্ঞান নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হবে। কোরআন দারাবাকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালবাসা, দয়া ও অন্তরঙ্গতা তৈরি হয়। অর্থাৎ দারাবা একটি মাধ্যম, যাতে তাদের মধ্যে ভালবাসা, দয়া ও অন্তরঙ্গতা ও ঘনিষ্ঠতা পুনঃ স্থাপিত হয় এবং বিয়ের উদ্দেশ্য পূরণ হয়। কোরআন দারাবাকে এ উদ্ধেশ্য পূরনের সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবে সুপারিশ করেনি। এরপরও আর একটি ধাপ রয়েছে। তাহল- স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের পক্ষ থেকে উপদেষ্টা নিয়োগ করা। এথেকেও বোঝা যাচ্ছে দারাবার উদ্ধেশ্য ভালবাসা, দয়া ও ঘনিষ্ঠতা স্থাপন। সন্ত্রাস, আঘাত বা ব্যথার পক্ষে কোন অজুহাতকেই সমর্থন না করে, তবে এই ক্রিয়াটির সঠিক ব্যাখ্যা কি হতে পারে?
দারাবা ক্রিয়াটি আল কোরআনে সকর্মক ক্রিয়া হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন “আল্লাহ একটি দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন।” (১৬:৭৫)
আবার এটি অকর্মক ক্রিয়া হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছে- “তোমরা যখন যমীনে সফরে বের হও” (৪:১০১)
এক্ষেত্রে একটি সহযোগী অব্যয় ক্রিয়াটির সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।
দারাবা সম্পর্কে ধারণা করা বা সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে ভুল অর্থ নেবার সুযোগ রাখা ঠিক নয় এবং এই ধরনের অপব্যবহার বা এর দ্বারা অসদাচরণের কোন সুযোগ রাখাও ঠিক নয়। এরুপ সতর্কতা শরীয়াহর প্রকৃত উদ্দেশ্য ভালবাসা, দয়া ও সম্মান হবে পরিবারের ভিত্তি এর সঙ্গে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যশীল। কাজেই আমি পুরো ব্যাপারটিকে এর ভিতরেও পুনর্বার নতুনভাবে চিন্তা করেছি। এক্ষেত্রে আল্লাহর বাণীর শাশ্বত চরিত্রকে সামনে রেখেছি, ধর্মীয় আদর্শকে বোঝার প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব এবং নিয়মতান্ত্রিক বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তাকে বিবেচনায় রেখেছি। যার ফলে আমি কোরআনে দারাবা শব্দের ভিন্ন অর্থ এবং এর উৎপত্তিকে পরীক্ষা করার চেষ্টা করেছি। কেননা কোরআনকে কোরআন দিয়েই ব্যাখ্যা করা সর্বাপেক্ষা উত্তম উপায়। কোরআনের সর্বোত্তম ব্যাখ্যা এই আল্লাহর বাণী কোরআন দিয়ে এবং শরীয়াহ্র সাধারণ মাকাসিদ বা উদ্দেশ্য দ্বারা এর সামঞ্জস্য বিধান সম্ভব।

চলবে…

পর্ব-৪

 

‘ধর্ষণের শিকার’ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নারী খেলোয়াড়!


নারী সংবাদ


নারী ভারোত্তোলককে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ফেডারেশনের অফিস সহকারী সোহাগ আলীর বিরুদ্ধে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পুরোনো ভবনে ১৩ সেপ্টেম্বরের দিকে ঘটনাটি ঘটে তবে গতকাল সোমবার ফেডারেশনে এসে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করেছেন ওই নারী খেলোয়াড়ের পরিবার।

জাতীয় ক্লাব ভারোত্তলনে সোনাজয়ী এই নারী ভারোত্তোলক ঘটনার পর থেকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। তিনি এখন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

ঘটনাটি মুলত গত ১৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পুরোনো ভবনের চতুর্থ তলায় ধর্ষণের শিকার হন। ১৫ সেপ্টেম্বর খেলা ছিল। যার জন্য ১৩ সেপ্টেম্বর অনুশীলনের জন্য ডেকে আনা হয়। দেখানো হয়েছিল চাকরির লোভও। ফলে পুরোনো জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চারতলায় ডেকে এনে রুম লাগিয়ে দেওয়া হয়। পরে রুমে নিয়ে আসতে সহায়তা করেছে কর্মচারী মালেক ও আরেকজন নারী ভারোত্তোলক।

খেলা থাকলে ঢাকার বাইরে থেকে আসা খেলোয়াড়েরা সাধারণত জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে অবস্থান করে থাকেন। সেই নারী ভারোত্তোলক গত ১৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ভবনে অবস্থান করছিলেন।

এত বড় ঘটনার পরও নারী ভারোত্তোলকের পরিবার কেন মামলা করেনি? এর কারণ সম্পর্কে মেয়ের মা বলেন, ‘মামলা হলে বাড়িতে থানা-পুলিশ যাবে। গ্রামে মুখ দেখানো যাবে না। এ ছাড়া টাকা-পয়সার ব্যাপার তো আছেই।’

ফেডারেশনে এসে অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা। ফেডারেশনের সহসভাপতি উইং কমান্ডার মহিউদ্দিন আহমেদ বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠনের কথাও জানিয়েছেন

 

শিক্ষিকাকে উত্যক্তের প্রতিবাদ করায় প্রাণ গেল যুবকের


নারী সংবাদ


সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় বখাটের ছুরিকাঘাতে আলাউর রহমান রনি (৩০) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন।

রোববার দুপুরে উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের রগারপাড় গ্রামের লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট স্কুলের সামনে এই ঘটনা ঘটে। এ সময় ঘাতককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে স্থানীয়রা।

নিহত রনি ওই গ্রামের মো. রইছ আলীর ছেলে ও নরসিংপুর বাজারের জিয়া টেলিকমের সত্ত্বাধিকারী।

স্থানীয়রা জানান, গ্রামের নুরুল হকের ছেলে বখাটে সালেহ আহমেদ বিভিন্ন সময় এক শিক্ষিকাকে রাস্তাঘাটে উত্যক্ত করতেন। আলাউর রহমান রনি এর প্রতিবাদ করেন। দুপুরে স্কুলের সামনের রাস্তায় রনিকে একা পেয়ে সালেহ আহমদ ছুরি দিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করেন। পরে আশপাশের লোকজন রনিকে উদ্ধার করে ছাতক উপজেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়ও স্থানীয়রা ধাওয়া করে ঘাতক সালেহ আহমদকে আটক করে থানায় খবর দেন।

দোয়ারবাজার থানার ওসি সুশিল রঞ্জন দাস ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, রাস্তাঘাটে এক শিক্ষিকা ইভটিজিং করার জের ধরে ঘটনাটি ঘটেছে বলে জানা গেছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি। সুত্র: সমকাল।

 

দাম্পত্য সম্পর্কের কিছু বিষয়


দাম্পত্য


পারস্পরিক মিলগুলো থেকে আনন্দ খুঁজে পাওয়া দাম্পত্য জীবনে সুখী হবার একটা কৌশল। সবার চেয়ে সুন্দর, আর তাদের মধ্যে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি, যে নিজের স্ত্রীর জন্য সর্বোত্তম। বাস্তবতার খাতিরে মাঝে মাঝে নীরবতা পালন করা একটি অসাধারন উপায়।

ভালোবাসুন সঙ্গীকে
আপনার সঙ্গী বা সঙ্গিনীর কাছে আপনার সর্বোত্তম প্রশ্নগুলোর একটি হতে পারে, “আমি কীভাবে তোমাকে আরও বেশি ভালোবাসতে পারি?” নতুন সম্পর্কের ঔজ্জ্বল্য সবসময়ই ক্ষণস্থায়ী হয়ে থাকে।

অনুমান করা থেকে বিরত থাকুন
চাইলেই দাম্পত্য জীবনকে চিরসবুজ করে রাখা যায়। যৌক্তিক অনুমানের ভিত্তিতে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। তবে পদক্ষেপ নেওয়ার পূর্বে অনুমানকে যাচাই করে নেওয়াই আবশ্যক।

সম্পর্ক নির্মাণে সহায়তা
সার্থক যৌন সম্পর্ক সার্থক দাম্পত্য সম্পর্কের নিশ্চয়তা দেয় না। তবে তা সার্থক দাম্পত্য সম্পর্ক নির্মাণে সহায়তা করে। মনের ইচ্ছা বা উদ্দেশ্যই সবকিছু নয়, কিন্তু তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর একটি।

গোপনীয়তা রক্ষা
ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করলে তা দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষতি করবে না। তবে সন্দেহজনক বিষয় নিয়ে লুকোচুরি করলে তা দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষতি করবে।

ভয় দূর করুন
সঙ্গী/সঙ্গিনীকে আঁকড়ে ধরে রাখার প্রবণতা এবং ঈর্ষাপরায়ণতার জন্ম হয় ভয় থেকে, ভালোবাসা থেকে নয়। দাম্পত্য সম্পর্কে প্রেমাবেগের প্রয়োজন কখনোই ফুরিয়ে যায় না।

বিশ্বাসযোগ্যতা
বিশ্বাসযোগ্যতা বিশ্বাসযোগ্যতার জন্ম দেয় এবং বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রাখার অভ্যাস গড়ে তোলে। আপনার স্বামী বা স্ত্রী যদি কোনোকিছুকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে, তাহলে তা আপানর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

মনোযোগ দিন
নীরবতাও আক্রমণাত্মক হতে পারে যখন তা অস্ত্র হিসাবে ব্যবহৃত হয়। অধিক উত্তম হলো নিজে কীভাবে সঠিক কাজটি করতে পারেন সেদিনে মনোযোগ দেওয়া। তারপর আপনার সঙ্গী বা সঙ্গিনী কী ভুল করেছে সেদিকে মনোযোগ দেওয়া।

দাম্পত্য সম্পর্ককে মানিয়ে নেওয়া একেবারেই অসম্ভব মনে হলে, কেবল তখনই বিচ্ছেদের দিকে পা বাড়াতে পারেন।

Source: Excerpted from Al Maghrib Institute’s “Fiqh of Love” seminar with Shaykh Waleed Basyouni.

 

চিরিরবন্দরে বাঁশঝাড় থেকে নবজাতক উদ্ধার


নারী সংবাদ


চিরিরবন্দর উপজেলায় এক দিন বয়সের এক মেয়ে নবজাতককে উদ্ধার করেছেন এলাকাবাসী। উদ্ধার নবজাতককে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। গত শুক্রবার দুপুরে উপজেলার পুনট্টি ইউনিয়নের খামার কৃষ্ণপুর গ্রামের আমতলী সিঅ্যান্ডবি রোডের দক্ষিণ পাশে ভেলামতি নদীর ধারে বাঁশঝাড় থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীপাড়ার কয়েকজন মাটিতে অর্ধেক পোঁতা, রক্তাক্ত ও ধুলাবালু মাখা অবস্থায় সদ্য প্রসূত ওই শিশুটির কান্না শুনতে পায় এবং সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে। ওই এলাকার নিঃসন্তান দম্পতি লিপিন মুরমু ও আদরী বাসক শিশুটিকে গ্রহণ করেন। নিঃসন্তান আদুরী বাসক জানান, তাদের বিয়ের দীর্ঘ ১০ বছর হয়েছে। তাদের পরিবারে কোনো সন্তান না থাকায় তারা এ শিশুটি লালন-পালন করতে চান।
সংবাদ পেয়ে উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা গোলাম রব্বানী ওই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ওই দম্পতির বাড়ি থেকে নবজাতকটিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা: মতুজা আল মামুন জানান, শিশুটি হয়তো দীর্ঘক্ষণ মাটিতে পড়েছিল। তাই শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয়েছে। শিশুটির যত্ন সহকারে চিকিৎসা চলছে। দ্রুত সুস্থ হওয়ার আশা করছেন তিনি।
উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা গোলাম রব্বানী জানান, উদ্ধারকৃত শিশুটির অভিভাবককে পাওয়া গেলে তাকে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

 

বদলে যাওয়া শ্রাবণের অনুভূতি


আফরোজা হাসান


আমাদের এখানে গত কয়েকদিন ধরে ঝরঝর শ্রাবণ ঝরেই যাচ্ছে। ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি বললে অবশ্য বেশি ঠিক বলা হবে। কারণ বাংলাদেশের মতো ঝমঝম বৃষ্টি এখানে কালে ভাদ্রে হয়। এখানে যা হয় তা হচ্ছে সারাটা দিন মেঘলা আকাশ আর টিপটিপ বর্ষা পানি। আম্মুর বকুনি খেয়েও বৃষ্টিতে ভেজা, আর কিছু না হোক অন্তত হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির পানিকে স্পর্শ করার দিনগুলো মনেপরে। অথচ এখন বকুনি দেয়ার কেউ নেই কিন্তু ইচ্ছে করে না ছুঁয়ে দেখতে আকাশ থেকে নেমে আসা পানিরাশিকে। দেশে থাকতে যে বৃষ্টি আমার সবচেয়ে পছন্দের জিনিসগুলোর একটি ছিল কিন্তু স্পেন আসার পর বৃষ্টি আমার সবচেয়ে অপছন্দের জিনিসগুলোর একটাতে পরিণত হয়েছে। পরিবেশ-পরিস্থিতি যে মানুষের পছন্দ-অপছন্দের উপর বিরাট প্রভাব ফেলে, সেটা অভিজ্ঞতার দ্বারা প্রমাণিত হতে দেখলাম। গত দশ বছরে মন যে কত পুরনো পছন্দকে বিয়োগ করে নতুনকে যোগ করেছে তা হিসেব ছাড়া।

মনের যে বাগানকে সাজিয়েছিলাম রজনীগন্ধা, বেলী, শিউলি, হাসনাহেনা দিয়ে, সেখানে এখন রং ছড়াচ্ছে অর্কিড, কার্নেশান, বুগেনভিলা আর হিবিসকাস। হঠাৎ কোথাও রজনীগন্ধা, বেলী, শিউলি, হাসনাহেনা দেখলে মনে ভালোলাগা তৈরি হয় সত্যি কিন্তু আগের মতো মুগ্ধতায় ছেয়ে যায় না মন। তেমনটা মুগ্ধ অর্কিড, কার্নেশান, বুগেনভিলা আর হিবিসকাস করে এখন মনকে। ঘুম থেকে উঠেই শুনতে হতো কাকের কা কা ডাক, বারান্দায় এসে দাঁড়ালেই দেখতে পেতাম ঝুলন্ত তারে বসে থাকা কাক। স্পেনে আসার পর কাক দেখিনি একদিনও। স্বামীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এখানে কাক নেই? ইশ কতদিন কাক দেখি না, কাকের কা কা শুনি না। উনি খুব হেসেছিলেন আমার কথা শুনে। তবে অনেক কবুতর দেখতে পাই। আমার জানালায়ও এসে বসে প্রায়ই।

আব্বুর চাকরীর সুবাদে সাভারের আবাসিক এলাকাতে বসবাস করতে হয়েছে। বিশাল এলাকা নিয়ে ছিল আমাদের কলোনী। বিশাল ফুলের বাগান, নানা ধরণের গাছের বনভূমি, রাত হলেই শেয়ালের ডাক, জঙ্গলে গুইসাপের ঘোরাঘুরি….সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর ছিল আমার জানালার পাশে বিস্তৃত ধানের ক্ষেত। সকালে ঘুম থেকে উঠে আমার প্রথম কাজই ছিল জানালা খুলে ধান ক্ষেতের দিকে তাকিয়ে থাকা আম্মুর ডাক শোনার আগ পর্যন্ত। স্পেনে আমার বাসার পাশেই বিশাল বড় পার্ক। যেটি মাদ্রিদের বড় পার্কগুলোর একটি। যখন খুশি যাওয়া যায় নিজেকে প্রকৃতির নিমগ্নতার সাথে একাত্ম করার উদ্দেশ্যে….. কিন্তু ইচ্ছে করে না। অথচ দেশে থাকতে একা একা প্রকৃতির কাছে যাবার নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি থাকা স্বত্ত্বেও ইচ্ছে হতো ধান ক্ষেতের আইল ধরে হেঁটে যাই মাইলের পর মাইল। বর্ষায় ইচ্ছে হতো বৃষ্টি হয়ে ঝরতে, শরতের আকাশে মেঘ হয়ে ভাসতে, চৈত্রের আকাশে চিলের মতো ডানা মেলে উড়তে। এখন আমি স্বাধীন নিজের ইচ্ছেপূরনের ব্যাপারে কিন্তু ইচ্ছেটাই কেন জানি হয় না।

দেশের প্রকৃতি, বাতাস, রোদ, বৃষ্টি সবকিছুতেই কেমন যেন একটা মিষ্টি মিষ্টি ভাব ছিল। ধান ক্ষেতের পাশে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে বুক ভরে শ্বাস নিলে প্রকৃতির সজীবতায় মনের মধ্যে চলে আসতো। এখানে অনেকবার এমন করেছি কিন্তু মনকে সজীবতা ঘিরে ধরেনি। মনেহয় পরিবেশ-পরিস্থিতিও পারে না কিছু কিছু পছন্দকে বদলে দিতে। কিছু কিছু স্থান শূন্যই থেকে যায়, থেকে যায় অপূরণীয়…………!!!

 

পার্লার ব্যবসার মাধ্যমে ডেইজির এগিয়ে যাওয়ার গল্প


আবিদা হক লোরা


উন্নয়নশীল বাংলাদেশে এখন নারী পুরুষ সবাই সমান। সকলেই অবদান রাখছেন দেশের উন্নয়নে। অর্থাৎ সকলে এখন রোজগার করছে। সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগেও মানুষ স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই নারী সমাজও। এক সময় দেশের নারী সমাজ নানা বৈষম্যের শিকার হলেও সমাজে দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন হওয়ায় দেশের অর্থনীতিতে মহিলারা যুগান্তরকারী পরিবর্তন আনতে ভূমিকা রাখছে। একটা সময় ছিল কোনো কাজ করতে গেলে তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো। তবে আশার আলো এই যে, বর্তমানে নারীরা বিভিন্ন বাধাবিপত্তি পেরিয়ে নিজেদেরকে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করছেন। বিভিন্ন উদ্যোগের মধ্যে পার্লার প্রতিষ্ঠা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে। বেশ ভাল সারাও পাচ্ছেন অনেকে। তবে এই ব্যবসায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একক মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত বিধায় নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে নারীদের। এখনো তারা বিভিন্ন সামাজিক, আর্থিক, মূল্যবোধ এবং সব থেকে বড় যে সমস্যাটি তারা মুখোমুখি হচ্ছেন তা হলো ব্যবসায় প্রসার করতে যথাযথ প্রশিক্ষণ, অভিজ্ঞ কর্মচারী এবং উপযুক্ত প্রযুক্তির অভাবঘটিত সমস্যা। কিন্তু তারপরও থেমে নেই নারীরা। তাদেরই একজন ডেইজি। পুরো নাম শিরিন আক্তার ডেইজি।
বরিশালের মেয়ে ডেইজি (৩৮) পড়াশোনায় বেশি দূর এগোতে পারেননি। অল্প বয়সেই বাবা-মা তাকে বিয়ের পিড়িতে বসান। ছোটবেলা থেকেই তার প্রবল আগ্রহ ছিল নিজে কিছু একটা করবেন। যেহেতু পড়াশোনা তেমন একটা করা হয়ে উঠেনি তাই চাকরি করার চিন্তা বাদ দিয়ে নিজেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করার কথা ভাবলেন। স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে ২০০৬ সালে তিনি একটি পার্লার দেয়ার পরিকল্পনা করেন। প্রথমে মালিবাগের একটি পার্লারে কাজ শেখা শুরু করলেও সংসার এবং বাচ্চা দেখাশোনা করার জন্য বেশিদিন সেখানে যাওয়া সম্ভব হয়ে উঠেনি। কয়েক মাস পর ইস্কাটনের শাহিন’স পার্লারে ত্রিশ হাজার (৩০,০০০) টাকা দিয়ে তিন মাসের একটি প্রশিক্ষণ নেন তিনি। পরে সেখানে বেশ কিছুদিন কাজও করেন তিনি। এ ভাবে ছয় মাস কাজ করার পর নিজেই বাসার ভিতর একটা রুমে দুইটা চেয়ার আর একটা বেড দিয়ে শুরু করলেন বিউটি পার্লার ব্যবসা। মাত্র বিশ হাজার টাকা দিয়ে তার প্রথম ব্যবসার পথচলা। ধীরে ধীরে যখন কাস্টমার আসা শুরু করল তখন চিন্তা করলেন কিভাবে পার্লারটাকে আরও বড় পরিসরে সাজানো যায়। ২০০৯ সালে কাঁঠাল বাগানে এসে তিনি নিজস্ব সাইনবোর্ড দিয়ে এবং পার্লারের নাম সরকারি খাতায় নিবন্ধন করে বড় করে খুললেন নতুন পারলার। পার্লারের নাম রাখেন ‘স্টাইল বিউটি পার্লার এন্ড বিউটি শপ’। পার্লারের পাশাপাশি তিনি মহিলাদের বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রীও দোকানে রাখা শুরু করলেন। তিনি বিভিন্ন ট্রেইনারদের কাছ থেকে ট্রেনিং নেন। এর মধ্য চায়না এবং ইন্ডিয়া থেকে আগত মেকাপ আর্টিস্টদের শিক্ষানবিশ ছিলেন তিনি। তাছাড়া কাকলি ব্যানার্জি নামে একজন থেকে ফেসিয়ালের উপরও প্রশিক্ষণ নেন তিনি। এসব প্রশিক্ষন নিতে তাকে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে এবং এর জন্য বেশ কিছু সনদও পেয়েছেন তিনি।
তবে এতকিছু কিন্তু ডেইজির জন্য খুব একটা সহজ ছিল না। পরিবার থেকে নানা ধরনের বাধার সম্মুখীন হতে হয় তাকে। ডেইজি বলেন, “আমি যখন নিজের একটা পার্লার করার উদ্যোগ গ্রহণ করি তখন আমার পরিবার এমনকি আমার স্বামীর কাছ থেকেও আমি বাধা পাই। তার মতে পার্লারে কাজ করলে মহিলারা খারাপ হয়ে যায়। আমাকে এই কাজের জন্য টাকা দিতেও আপত্তি জানান তিনি। আমি আমার ভাইর কাছ থেকে বিশ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে প্রথম কাজ শুরু করি। কিন্তু বর্তমানে আমার স্বামী আমাকে সব ধরনের সহায়তা করেন এবং আমার কাজে আমাকে উৎসাহ দেন। সংসারের সব কাজেও আমার পাশে থাকেন তিনি। পুরো পরিবারই এখন আমার এই কাজ নিয়ে গর্ব করে।”
ডেইজি এখন পার্লারের পাশাপাশি বুটিক্স দিয়েছেন। বুটিক্সের জিনিসপত্র তিনি ইসলামপুর থেকে সংগ্রহ করেন এবং কসমেটিকস আমদানি করেন ভারত থেকে। পার্লার এবং বুটিক্স থেকে তিনি ভালই লাভ পাচ্ছেন। কিন্তু একটি সমস্যার কথা তিনি বলেছেন তা হলো দক্ষ বিউটিশিয়ানের অভাব।
নিজের ব্যবসাকে আরও বড় এবং আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সাজানোর একটি ইচ্ছা ব্যক্ত করেন তিনি। তার মতে, “নতুন উদ্যোগ শুরু করতে পরিকল্পনাই হল বড় বিষয়। পরিকল্পনা সঠিক হলে অর্থের সমস্যাটাকে বড় করে দেখার কিছু নেই”।
সব শেষে তিনি বলেন, ‘সমাজে বাঁধা-বিপত্তি থাকবেই। তারপরও এগিয়ে যেতে হবে। সঠিক পরিকল্পনা, প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং একাগ্রতা থাকলে কোন কিছুই কঠিন নয়। কেবলমাত্র স্বামী কিংবা পুরুষের ওপর নির্ভর না করে পরিকল্পনা মাফিক কাজ করলে দেশের নারী সমাজও হতে পারে আত্মনির্ভরশীল, অবদান রাখতে পারে দেশের
অগ্রজাত্রায়।’
সুত্র: বাসস।

 

তুরাগে কিশোরীকে পাশবিক নির্যাতন


নারী সংবাদ


রাজধানীর তুরাগের নিমতলীতে এক কিশোরীকে পাশবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে সৎ বাবার বিরুদ্ধে। পাশবিক নির্যাতনের শিকার কিশোরীকে গতকাল উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পাঠিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সৎ বাবা আবদুল সামাদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দুই মাস ধরে সামাদ এ অনৈতিক কাজ করে আসছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ভুক্তভোগী কিশোরীর মা জানান, প্রথম স্বামীর সাথে আট বছর আগে তালাক হয়ে যাওয়ার পর সামাদের সাথে দ্বিতীয় বিয়ে হয় তার। দ্বিতীয় স্বামী ও আগের পক্ষের দুই সন্তান নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে তুরাগের নিমতলীতে ভাড়া বাসায় থাকেন তিনি। গার্মেন্টশ্রমিক হিসেবে কাজ করায় বাসা অনেকটা ফাঁকাই থাকে। এ সুযোগে স্বামী সামাদের পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয় তার বড় মেয়ে। বিষয়টি জানাজানি হলে গতকাল সামাদকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে দেন স্থানীয়রা।

তুরাগ থানার ওসি নুরুল মুত্তাকিন জানান, এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। অভিযুক্ত আবদুল সামাদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা জানতে পেরেছি, ভুক্তভোগী কিশোরী অভিযুক্তের সৎ মেয়ে। দুই মাস ধরে সে এ অনৈতিক কাজ করে আসছিল। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

অনাবিল এক প্রশান্তি


ফাতিমা শাহীন


আজ বেশ অনেকদিন পর অঝোর ধারায় বৃষ্টির দেখা মিললো , আলহামদুলিল্লাহ !

ক’দিন গরমের পর কত যে আকাঙ্খিত এই মুহূর্ত ! বেশ কিছু কাপড় পড়ে ছিল ধোয়ার অপেক্ষায়। আলসেমি করে করে ধোয়াই হয়ে উঠছিলনা। বৃষ্টির পূর্বাভাষ যেন আলসে মনের গোড়ায় ইঞ্জিন জুড়ে দিল। একদিনের ভেতরে সব কাপড় ধুয়ে শুকিয়ে গুছিয়ে রাখাও শেষ। আজ সকালে সবজি বাগানে পানি দিতে গিয়েও বারবার তৃষ্ণার্তের মত আকাশের দিকে তাকিয়েছি, আর ভেবেছি , দূরে আবছা হয়ে আকাশের গায়ে লেপ্টে থাকা মেঘগুলোর রহমতের বারি হয়ে ঝরে পড়তে আর কত বাকি ! অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ হয়ে যেন ফুরাচ্ছিলনা কিছুতেই !

স্কুল শেষে বাচ্চাদের নিয়ে ফিরে সবে গাড়িবারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছি , প্রকৃতি জুড়ে যেন তখনি বেজে উঠল বৃষ্টিকে বরণ করে নেবার আগমনী সঙ্গীত। ঘরের সামনে লাগানো গোলাপ গাছগুলোর ফুটে থাকা গোলাপের পাপড়িগুলো বাতাসে উড়তে শুরু করল, যেন প্রিয় কোন সঙ্গীকে স্বাগত জানাতেই গোলাপের এই স্বেচ্ছা পুষ্পবৃষ্টি ! আহা ! কি বিমূর্ত সে সময় ! তাড়াতাড়ি ঘরে ঢুকে বাসার পেছনে জোছনা আর বৃষ্টি দেখার জন্য শখ করে বানানো আমার কাঁচঘরে গিয়ে পৌঁছতে না পৌঁছতেই ফোঁটায় ফোঁটায় শুরু হল বর্ষণ। এ এমনই এক ক্ষণ যখন অকারণেই অভিমানী মন দু:খবিলাসী হয়ে ওঠে অজান্তেই , হৃদয় কারো চির ঋণে জড়াতে চায় …

প্রকৃতি যখন বৃষ্টির ছন্দে তাল মিলিয়ে নেচে চলেছে ,আমি তখন বৃষ্টিবিলাসী চাতকের মত সিক্ত করে নিচ্ছিলাম আমার বর্ষণপিয়াসী হৃদয় ! পুরো কাঁচঘর জুড়ে যখন বৃষ্টিরাগের উন্মাতাল মূর্ছনা খেলে বেড়াচ্ছে, তখন বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা আমার অনুভবে ছড়িয়ে যাচ্ছিল অনাবিল এক প্রশান্তির ছোঁয়া। আমি আকুল হয়ে আমার নিঃশ্বাসের সাথে মিশিয়ে নিচ্ছিলাম ভেজা মাটির সতেজ ঘ্রাণ… যা এক অনির্বচনীয় আনন্দ হয়ে মিশে যাচ্ছিল আমার মনে … মানসে … প্রতিটি উপলব্ধিতে ….।

ক্যাটাগরি: মনের জানালা।

 

ধর্ষণের শিকার চার বছরের শিশু


নারী সংবাদ


মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় চার বছরের এক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে বরাইদ ইউনিয়নের উত্তর ছনকা গ্রামে। গত বুধবার রাতে এ ঘটনায় সাটুরিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তবে ঘটনাটি গত শনিবার ঘটলেও

ধর্ষকের পরিবারের হুমকি এবং স্থানীয় প্রভাবশালীরা মীমাংসার কথা বলায় ভুক্তভোগী পরিবার থানায় অভিযোগ দেয়নি।

জানা গেছে, সাটুরিয়ার বরাইদ ইউনিয়নের উত্তর ছনকা গ্রামের সিরাজুল ইসলামের বখাটে ছেলে শিপন হোসেন গত শনিবার দুপুরে একই এলাকার এক কৃষকের চার বছরের শিশুকে ফুসলিয়ে তার বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণ করে। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় এলাকাবাসী স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে তাকে চিকিৎসা করান।

সাটুরিয়া থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, ধর্ষিতার পক্ষ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সুত্র: সমকাল।

 

ব্যক্তিত্ব প্রকাশে হাসির ভূমিকা


 ফাতেমা শাহরিন


“হাসি” অপূর্ব সুন্দর একটি প্রশান্তকর চারিত্রিক গুন। মানুষের মন ভালো করার জন্য একটু মুছকি হাসি যথেষ্ট। আমরা রোজ সকালে ঘুম থেকে হাসি মুখে উঠি এবং রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত এই সঙ্গীকে আপন করে নিয়েই ঘুমাই। বিশেষজ্ঞরা সম্প্রতি খুঁজে পেয়েছেন, তাঁদের গবেষণানুসারে, ‘হাসি’ ক্যাটকোলেমাইন এবং সহানুভূতিশীল সক্রিয়করণ হরমোন নিঃসৃত করে। যা স্ট্রেস কমাতেও সহযোগিতা করে। সুখী থাকার বা খুশি হওয়ার একমাত্র ও প্রধান উপকরণ হল “সহাস্যমুখ”।

হাসি মন এবং শরীরের মধ্যে সেতু বন্ধন করতে সহযোগিতা করে। যদিও হাসি মানুষদের একটি সাধারণ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে অন্যতম।
হাসি সামাজিক বন্ধন তৈরি করতে সহযোগিতা করে, বিবাদ -দ্বন্দ্ব মিটালে সহযোগিতা করে। হাসি পারস্পারিক যোগাযোগের মাঝে আনন্দ এবং স্বস্তিকর সামাজিক পরিবেশ তৈরি করতে ট্রিগার হিসেবে কাজ করে।

মনোবিজ্ঞানীদের মতে তাই হাসি -খুশিকে নিজের করে নেওয়ার গুরুত্ব বার বার উল্লেখ করা হয়।

 শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা

আপনি যখন হাসতে পারবেন তখন তা আপনার শরীর ও মনকে ভাল রাখবে। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, যিনি প্রাণ খুলে হাসে তাদের, ‘তা’ রক্তচাপ হ্রাস করে, চাপ হরমোন হ্রাস করে এবং পেশী বক্রতা বাড়ায়। তাই হাসি এবং আনন্দ জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নিজের ওপর হাসির নিয়ন্ত্রণ থাকার কারণে জীবনের ছোট-বড় সবটা সুখ পুরোপুরি উপভোগ করতে পারবেন আপনি।

দুশ্চিন্তা কমাতে

হাসি হৃদপিণ্ড ভালো রাখতে সহায়তা করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের হৃদরোগ বা ব্যথা যন্ত্রণা আছে তারা অন্যদের চাইতে হাসির চর্চা কম করেন। এছাড়া সাধারণ জীবনে তাদের হিউমার বা রসবোধটাও কম থাকে।ফলে তারা দুশ্চিন্তায় আক্রান্ত থাকে। হাসি হৃদপিণ্ড সুস্থ্য এবং দুশ্চিন্তা কমাতে সাহায্য করে।

সুন্দর যোগাযোগ রক্ষার্থে

হাসি মানুষের সম্পর্ক ঘনিষ্ট করতে সাহায্য করে। ইতিবাচক অনুভূতি ফিরিয়ে আনতে এবং একে অপরের মাঝে প্রীতিপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে সাহায্য করে।

দৃষ্টিভঙ্গিমায় সুন্দর ইতিবাচকতা 

হাসি হচ্ছে ইতিবাচক সংকেত। আপনি অপরের প্রতি কতটুকু পজেটিভ এবং কত সহজেই অন্যকে বুঝতে পারবে, যে কারা তোমার প্রতি খুশি এর একটি সহজ উপায় হল হাসিমুখ। পৃথিবীতে নানারকম সম্পর্কে আবদ্ধ থাকে মানুষ। আর এই সম্পর্কের ভেতরে কিছু সম্পর্ক খুশির পথে সহায়ক হয়ে কাজ করছে।

সন্মান এবং স্মার্টনেস

মানুষের স্মার্ট ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্যে দরকার পড়ে পোশাক, শিক্ষা, অলংকার, টাকা ইত্যাদি। এসবের জন্যে জীবনে প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হয় মানুষকে। একজন মানুষ তার খুশি তখনই খুঁজে পায় যখন বেঁচে থাকার জন্যে নয়, বরং নিজের ভেতরে থাকা ইচ্ছে-আকাঙ্ক্ষাকে পরিপূর্ণতা দেওয়ার জন্যে প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হয় সে।
আর হাসিমুখ একজন মানুষকে বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ স্মার্টনেস এবং নিজের প্রতি নিজের সম্মানবোধকে বাড়িয়ে তুলে।

সুতরাং আমরা বলতে পারি, হাসি যেহেতু স্বেচ্ছাকৃত নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তাই স্বাস্থ্যের অনেকগুলি সুবিধার কথা চিন্তা করেও আমাদের সবসময় হাসিমুখে থাকা প্রয়োজন।

 

শিগগিরই চালু হচ্ছে নারীর মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক একটি সেবামূলক ওয়েবসাইট


নারী সংবাদ


দু’সন্তানের জননী জিনিয়া সরকারের মেজাজ সবসময় খিটখিটে থাকে। দুই মেয়ে আর স্বামী নিয়ে চল্লিশের কাছাকাছি বয়সের জিনিয়ার সংসার। বড় মেয়েটি জন্মান্ধ। আর এই বড় মেয়েকে নিয়েই তাকে ব্যস্ত থাকতে হয় দিনের প্রায় পুরোটা সময়।
প্রথম দিকে স্বামী ভেবেছিলেন সারাক্ষণ মেয়েদের পেছনে খাটতে হয় বলেই হয়তো জিনিয়ার মেজাজ সবসময় এমন খিটখিটে থাকে। কিন্তু বেশ কিছুদিন পর তার ভুল ভাঙলো। কারণ, সমস্যাটি বেড়েই চলছিল। স্বামী বুঝতে পারলেন এই সমস্যার সমাধান না করলে আরো বেশি খারাপের দিকে যাবে। তাই, একদিন স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে হাজির হলেন একজন মনোবিজ্ঞানীর কাছে।
সুন্দরী তরুনী রাহেলা গত বছরের মার্চে এসিড সন্ত্রাসের শিকার হন। পাড়ার এক বখাটে দীর্ঘদিন ধরে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। কিন্তু রাহেলা সাড়া না দেওয়ায় একদিন দিন-দুপুরেই তার দিকে এসিড ছুঁড়ে মারে। দীর্ঘদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসা নেয়ার পর রাহেলা বাড়ি ফিরে যান। এখন তিনি কিছুটা সুস্থ হলেও সারাক্ষণ বিষন্ন থাকেন। কারো সাথেই তেমন একটা কথা বলেন না।
জিনিয়া এবং রাহেলার মত এমন লাখো নারী রয়েছেন যারা ভুগছেন বিষন্নতায়। ভুগছেন মানসিক সমস্যায়। কিন্তু এসব নারীর শতকরা ৯৯ শতাংশই কখনো মনোবিজ্ঞানীর দ্বারস্থ হননি। মূলত অসচেতনতা এবং অজ্ঞতাই এর মূল কারণ। অধিকাংশ নারী বুঝেনই না যে, তারা বিষন্নতায় ভুগছেন।
আর এসব নারীর কথা ভেবেই এক্্েরস টু ইনফরমেশন (এটুআই) এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় উইমেন ইনোভেশন ক্যাম্পের মাধ্যমে চালু করছে ‘নারীর মানসিক স্বাস্থ্য’ বিষয়ক একটি সেবামূলক ওয়েবসাইট।
জানা গেছে, এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নারীরা তাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সকল তথ্য বিশেষ করে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে জানতে পারবেন। নারীরা বিশেষ করে সন্তান প্রসবের পর এক ধরনের প্রসবজনিত বিষন্নতায় ভোগেন। এই বিষন্নতা থেকে উত্তোরণের উপায় পাবেন এই ওয়েব সাইটের মাধ্যমে। এছাড়াও বাচ্চা কিভাবে লালন-পালন করতে হবে এমন তথ্যও থাকবে এখানে। এই ওয়েব সাইটের মূল পরিকল্পনাকারী হলেন মনিরা হোসেন। যিনি নিজে একজন এসিড সন্ত্রাসের শিকার।
মনিরা বলেন, আমি নিজে একজন ভুক্তভোগী। আমি বুঝি একজন এসিড দগ্ধ নারী কেমন মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে যান। মূলত সেখান থেকেই নারীদের জন্য কিছু করার চিন্তা-ভাবনা শুরু করি। আর গত বছর উইমেন ইনোভেশন ক্যাম্পে আমার এ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরি এবং ২০১৭ সালের ৪ মার্চ বিশ্ব নারী দিবসে আমার এ পরিকল্পনাটিকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এমনকি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমাকে দেয়া হয়েছে ১৯ লাখ টাকা।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ওয়েবসাইটের নমুনা ডিজাইন প্রস্তুত করা হয়েছে। আরো কাজ চলছে। আশা করছি আগামী বছর নারী দিবসে এই ওয়েবসাইট সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া যাবে।
মনিরা বলেন, নারীরা পরিবার এবং সমাজে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এর ফলে তারা দিন দিন মানসিক রোগে ভুগছেন, যা পরবর্তীতে ভয়াবহ আকার ধারন করতে পারে। আমরা এ ধরনের নারীদের জন্য কী কী করনীয় এবং কোথায় এর সমাধান পাওয়া যাবে এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সেসব বিষয় জানাবো । এছাড়াও এখানে একটি হটলাইন থাকবে যার মাধ্যমে নারীরা চাইলে বিভিন্ন মানসিক সমস্যার জন্য কাউন্সিলিং নিতে পারবেন বলে জানান মনিরা। তিনি বলেন, এই ওয়েব সাইটের মাধ্যমে সেবা গ্রহনকারীরা সরকারের আরো যেসব স্বাস্থ্য সেবা রয়েছে সেসব সম্পর্কেও জানতে পারবেন। সরকারের স্বাস্থ্য সেবা তথ্য এই ওয়েবসাইটে যুক্ত থাকবে।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, মানসিক সমস্যাকে আমরা অনেকেই পাগলামী বলে থাকি। বিশেষ করে আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশে মানসিক বিষন্নতার জন্য ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়াকে অনেকেই পাগলামি ভাবেন। আবার অনেকে মনে করেন এটা বিলাসিতা। অধিকাংশই আবার এ বিষয়ে সচেতন নন। কিন্তু দীর্ঘদিন যদি একজন ব্যক্তি মানসিক বিষন্নতায় ভোগেন তবে তা আরো খারাপের দিকেই যায়।
তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলোর দিকে নজর দিলে আমরা দেখি সেখানে শিশু হতে একেবারে বৃদ্ধ সবাই মাসে একবার অথবা ছয় মাসে অন্তত একবার ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। আবার কেউ কেউ শুধু মাসে একবার যান মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে। এই মানসিক রোগ যেকোন কারণে হতে পারে। পারিবারিক অশান্তি, অফিসে ঝামেলা, বাচ্চা সামলাতে না পারা আরো বিভিন্ন ভাবে একজন নারী বিষন্নতায় ভুগতে পারেন। কিন্তু এর প্রতিরোধের জন্য দরকার সঠিক সময়ে, সঠিক পরামর্শ এবং চিকিৎসা।
নারীদের জন্য সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, এই সেবা যাতে’ প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে যায় সেজন্য সঠিক ব্যবস্থা নিতে হবে।
সুত্র: বাসস।

 

বিশিষ্ট সাহিত্যিক ফরিদা হোসেনের সাক্ষাৎকার

 


অপরাজিতা


সুসাহিত্যিক ফরিদা হোসেন একজন গল্পকার, ঔপন্যাসিক, শিশু সাহিত্যিক, নাট্যকার, নাট্যপরিচালক ,গীতিকার সুরকার,আবৃত্তিকার,অনুবাদক , এবং সম্পাদিকা।  ৬০-এর দশকে ছাত্রী অবস্থায় তার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘অজন্তা’ প্রকাশ হয়। তার গল্প সংকলন, উপন্যাস, নাটক, শিশু সাহিত্য, অনুবাদগ্রন্থসহ প্রায় ৫০টির মতো গ্রন্থ রয়েছে। ফরিদা হোসেনের যে সাহিত্যকর্ম তা এই সময়কার একজন আধুনিক লেখিকার প্রতিনিধিত্ব করে। তিনি আন্তর্জাতিক সাহিত্য সংগঠন পি.ই.এন এর বাংলাদেশ সেন্টারের সভাপতি হিসাবে দীর্ঘ তের বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। ফরিদা হোসেন ১৯৪৫ সালের ১৯ জানুয়ারী,ভারতে কোলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। ফরিদা হোসেন ২০০৪ সালে সাহিত্যে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার একুশে পদক পান। এছাড়াও মওলানা ভাসনী ও অতিশ দিপংকর স্বর্ণপদকসহ মোট ৬ টি ও বিভিন্ন সংগঠন থেকে পক্ষ থেকে মোট ২৫ টি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন। হোসেন চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার শাহেরখালী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে সদস্যা। তার বাবা ফয়েজ আহমেদ ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শ্রমিক নেতা ও আই. এল. ও এর গর্ভনিং বডির প্রাক্তন পরিচালক এবং মা বেগম ফয়েজুন্নেছা একজন গৃহিণী। ফরিদা তাদের প্রথম কন্যা।

বর্তমানে তিনি ‘অবিনশ্বর’ সাহিত্য পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক দায়িত্ব পালন করছেন। প্রচারবিমুখ এই মহিয়সী নারী মুখোমুখি হয়েছিলেন  অপরাজিতা সাথে। তার সেই কথপোকথনের কিছু অংশ নিম্নে তুলে ধরা হলো-

অপরাজিতা: লেখিকা হয়ে উঠার শুরুর গল্পটা জানতে চাই।  তৎকালীন সামাজিক প্রেক্ষাপট টাই বা কেমন ছিলো?

ফরিদা হোসেন:আমার লেখালেখির শুরুটা হয়েছে খুব ছোটবেলায়। তখন আমি স্কুলে পড়তাম। আর প্রেক্ষাপটটা ছিলো ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনকে ঘিরে। আমরা তখন নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় থাকতাম। ঐ জায়গাটা ছিলো ভাষা আন্দোলনের তীর্থ ভূমির মত। যা আমার কঁচিমনকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। বলা যায় তখন থেকেই লেখালেখিটা শুরু। আমার মনে আছে ঐ পরিস্থিতিতে আমি লিখেছিলাম-

রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই।

                 দেশের কথা বলতে চাই।

এরপর থেকেই লিখতে থাকা। নিজ ইচ্ছাতেই কবিতা এবং ছোট গল্প লিখতাম যা মাথায় আসত। তবে খুব গোপনে লিখতাম। একদিন আমার লেখা বাবার হাতে চলে যায়। যেহেতু আমি গল্প কবিতা লিখতাম তাই পড়াশুনায় খুব একটা মনোযোগী ছিলাম না। তাই আমার বড় ভাই একদিন বাবার কাছে ঘর ভর্তি মানুষের সামনে নালিশ করলেন যে আমি পড়াশুনা না করে শুধু কবিতা লিখি। তখন বাবা সবার সামনে কবিতা গুলো আনতে বললেন এবং পড়তে বললেন। আমি পড়ে শুনালাম। সবাই খুব প্রশংসা করলেন। লেখা ভালো হয়েছে সে জন্যে নয়। এতটুকু মেয়ের লেখায় যে দেশাত্নবোধ ফুটে উঠেছে সে জন্যে।

আর তৎকালীন সামাজিক প্রেক্ষাপট বলতে গেলে বলা যায় সাহিত্য চর্চাটা তখন খুব সীমিত আকারে ছিলো। নারীদের মধ্যে তো আরো কম ছিলো। তবে সেই প্রজন্মের সাহিত্যিক ও শিল্পীরা মুলত ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যে অত্যন্ত উদার, প্রগতিশীল, সেক্যুলার ও গণতান্ত্রিক মনমানসিকতা প্রকাশ করত। এখন যেমন অসুস্থতার প্রতিযোগিতা ঢুকে গেছে তেমনটা ছিলো না।

অপরাজিতা: আপনি শিশু ও নারীদের নিয়ে লিখেছেন। কেন  নারী ও শিশুকে লেখার মুল বিষয় হিসাবে গ্রহন করলেন?

ফরিদা হোসেন: মুলত আমার ভাবনায় ‘শিশুদের নিয়ে নিজস্ব জগতে হারিয়ে যাওয়া,’ শিশুদের মন ভোলানো  রাজ্য, জেগে ওঠা ভোরের মতো শিশুদের জাগিয়ে তোলার গল্প কেন জানি বেশি নাড়া দেয়। ওদের পৃথিবীটাকে নিষ্পাপ আর পবিত্র মনে হয়। তাই ওদের সঠিক দিক নিদের্শনার দেবার জন্য, ওদের পৃথিবীটাকে আনন্দে ভরিয়ে দিতেই আমার এ চেষ্টা। সত্যি বলতে কি, ওদের জন্য কাজ আমি করতে ভীষণ আনন্দ পাই।
আর  নারীদের নিয়েও আমার বেশ কয়েকটা বই রয়েছে। সব সময় আমি মনে করি, প্রতিটি নারীর উচিত স্বাধীনভাবে ব্যক্তিত্বের আলোকে নিজের প্রতিভাকে জাগ্রত করার চেষ্টা করা। নিজস্ব কর্মের গুণে প্রতিটি নারীই যেন হয়ে ওঠে বহুমুখী প্রতিভায় উদ্ভাসিত। তাই নারীকে নিয়ে কলম ধরা ।

অপরাজিতা: শিশুদের নিয়ে আপনার যে কাজ গুলো রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে জানতে চাই?

ফরিদা হোসেন: আমার প্রথম লেখাটি প্রকাশ পাওয়ার পর ১৯৬৫ সালে বিটিভিতে প্রথম রূপকথার দেশে নামক ২৫ পর্বের শিশুতোষ ধারাবাহিক  নাটক পরিচালনা করি। এই ধারাবাহিকটি বিটিভির ইতিহাসে প্রথম এত বড় কাজ যা এখন পর্যন্ত কোন চ্যানেল করেনি। তারপর থেকেই শিশুদের নিয়ে লেখালেখি,নাটক পরিচালনা,গান লেখা ,সুর দেওয়া  ধারাবাহিক ভাবে করতে থাকি। আমার লেখা শিশুতোষ অনেক গল্পের মধ্যে, তেলাদার তেলান্তক, তূষার কন্যা, মায়াদ্বীপে অভিযান, খুকুর স্বপ্ন, চাঁদ কন্যার কথা, সপ্তবর্ণ,শান্তির পায়রা, লুকোচুরি, মিতালী, আনন্দ ফুলঝুরি, অচিনপুরের রূপকথা, রোজ রোজ,তারার খোঁজে, এক ব্যাগ রূপকথা, রূপকথা সমগ্র ইত্যাদি অন্যতম।এছাড়াও শিশুদের জন্যে যে কাজ করেছি তার মধ্যে আরেকটি উল্লেযোগ্য কাজ হলো- আমার একটা শিশুদের সংগঠন আছে ’আঞ্জুমান’এই সংগঠনের মাধ্যমে আমি সব কাজ পরিচালনা করেছি।

বিটিভিতে ফরিদা হোসেনের পরিচালনায় ছোটদের নাটকের লিংক…..

“শিশুতোষ নাটক”

অপরাজিতা: পরিচালক হিসাবে কখন থেকে কিভাবে কাজ শুরু করলেন? সেই সাথে মিডিয়াতে আপনার বহুমুখি প্রতিভার সাথেও পরিচিত হতে চাই?

ফরিদা হোসেন: পরিচালক হয়ে উঠার গল্পটা অনেক লম্বা। সংক্ষেপে বলা যায়-আমি তখন সদ্য কৈশোর পেরিয়েছি মাত্র। আমাদের এলাকায় শিশুকিশোর সংগঠন ছিলো নিহারিকা কচি কাচার মেলা।কোন একটা বিষয় নিয়ে সেন্ট্রাল কচিকাচার মেলার সাথে আমাদের একটা মতবিরোধ হয়।তখন আমি মনে মনে জিদ করেছিলাম যে প্রোগ্রাম কাকে আমি দেখিয়ে দিব। ঐ চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম তখন কোন অভিজ্ঞতা ছিল না তখন পাড়ার ছেলেমেয়েদের নিয়ে হ্যাড ক্রিস্টমার এর স্নো হোয়াট উপর নাটক তৈরি করলাম। ভাবটা রেখে পুরোটা আমার মতো করে সাজালাম। এবং চিত্রনাট্য টা করলাম। নাটকের খাতিলেই আমাকে গান লিখতে হল। গান ছাড়া নাটকটা ঠিক যেন প্রাণ পায় না। পাড়ার পাঁচ থেকে পনের বছরের   বাচ্চাদের নিয়ে তারপর নাটকটি পরিচালনা করি। ‘তুষার কন্যা’ নাটকটি ইন্জিনিয়ার ইনস্টিটিউট পুরো পাকিস্তানে মধ্যে প্রথম হয়েছে। এরপর পাকিস্তান টিভিতে সম্বোধনা দেওয়া হয় আমাদের পুরো টিমকে।
এরপর থেকে মুলত মিডিয়া কাজ করা শুরু। এরপর পাকিস্তান রেডিতেও ডাক আসে। সাপ্তাহিক শিশুতোষ নাটকসহ বিভিন্ন প্রোগ্রামের দায়িত্ব দেওয়া হয় আমাকে। এছাড়া মহিলা আসর পরিচালনার দায়িত্ব পাই। এছাড়া পাকিস্তানি টেলিভিশনের জিল্লুর রহমান উনি সম্ভবত ডিজি ছিলেন, তিনি চাচ্ছিলেন আমার ভয়েজটাকে কাজে লাগানো যেন হয়। নিউজ পড়তাম। নিউজ পড়াটি ছিল আমার শখ। এরপর শিশুদেরএকাধারে সিরিয়াল তৈরি ২৪টি পর্ব ‘রূপকথার দেশে’ রচনা পরিচালনা এমনকি সেট ডিজাইন পর্যন্ত আমি করতাম। নাটকটার পাশাপাশি বই বের করি। এছাড়া ধারাবাহিক, সাপ্তাহিক, সিরিজ, শর্টফিল্ম তৈরি করি। ১৯৬৪ বা ১৯৬৫ সালে দিকে গানের প্রচলন নাটকে কম ছিল আমার গান আসত তখন নাটকের প্রয়োজনে। তাই গান রচনা করতে হত। বড় দের নাটক গুল মুলত আমি লিখেছি। কিন্তু পরিচালনা করেছে অন্যরা। মেয়ে গান গাইতো তার প্রয়োজনে গান লিখেছি এবং সুরও করি।

অপরাজিতা: সাহিত্যিক ও পরিচালক ফরিদা হোসেনের পাশাপাশি আপনার আরো কিছু অঙ্গনে দৃপ্ত পদচারণা রয়েছে সে সম্পর্কে আমাদেরকে কিছু বলুন?

ফরিদা হোসেন: আমি সাহিত্যচর্চা আর বিটিভির পরিচালক হিসাবে কাজ করার পাশাপাশি সংবাদ পাঠিকা হিসাবে কাজ করেছি। আবৃত্তি করেছি আর গানও গেয়েছি। আমার আবৃত্তির সিডি আছে।এছাড়াও নাট্য রচনা, গীতিকার, সুরকার হিসাবেও কাজ করেছি। মূলত আমার পরিচালনার  কাজ করতে গিয়ে এই কাজ গুলো আমার দ্বারা হয়ে গিয়েছে।

ফরিদা হোসেনের আবৃত্তি শুনতে ক্লিক করুন এই লিংকে–

“ফরিদা হোসেনের আবৃত্তি”

অপরাজিতা: বিটিভিতে ছোটদের কাজ ছাড়াও বড়দের জন্য আপনার পরিচালনায় কি কি হয়েছে?

ফরিদা হোসেন: ছোটদের ছাড়াও বড়দের জন্য নাটক আছে অনেক এই যেমন, ‘অন্যরকম ভালোবাসা’ কিছু ধারাবাহিক এবং অধিকাংশ সাপ্তাহিক। কিন্তু আমি কেবল রচনা করতাম অন্যদের পরিচালনায় তা বিটিভিতে প্রচার করা হত।

অপরাজিতা: আপনার সংসারজীবনে সম্পর্কে কিছু বলুন।

ফরিদা হোসেন: সাংসারিক জীবন ছিল আমার খুবই স্বাচ্ছন্দ্যময়। সবসময় মানসিক সাপোর্ট পেয়ে এসেছি। আমি যখন বাইরে কাজ করতে যেতাম বিটিভিতে প্রোগ্রাম থাকত। মাঝেমধ্যে ফিরতে রাত হত। তখন আমার জন্য আমার হাজবেন্ড অপেক্ষা করতেন।কখনও আমাকে ছাড়া খেয়ে নিতো না। আমরা সবসময় একসাথে রাতে খাওয়ার পর সারাদিনের গল্প করতাম। আমি আমার দাম্পত্য জীবন নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট। এমন কোন কথা নেই যা আমি বাসায় এসে আমার হাজবেন্ডকে শেয়ার করিনি। এখন আর তিনি নেই সবসময় শূন্যতা অনুভব করি। তিন মেয়ে আছে। মেয়েদের মানুষ করার চেষ্টা করেছি নিজের আদর্শে।  কখনও গাড়ি দেয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর সব ছাত্রীদের মতই বাসে আসা যাওয়া করত। ওদের রুমে এসি লাগায়নি দীর্ঘদিন। এসব নিয়ে ওদের কোন অভিযোগ ছিল না। বর্তমানে তারা সবাই খুব ভাল আছে। জামাইরা সবাই খুবই পজেটিভ মাইন্ডের এবং তারা সবাই সুখে আছে। বড় মেয়ে বর্তমানে আমাদের প্রতিষ্ঠান বে-ইষ্টার্ন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারাহ আঞ্জুম। আমি ওর কাছকাছি থাকি তাই খুব বেশি সমস্যা হয় না আলহামদুলিল্লাহ্‌।

অপরাজিতা: আসছে আপনার ৭৪ তম জন্মদিন। দীর্ঘ জীবনে অনেক কিছু দেখেছেন, অভিজ্ঞতার সঞ্চয়ও ঢের। এত দিন পেরিয়ে এসে আপনার উপলব্ধি কী?

ফরিদা হোসেন: আমার যতটুকু প্রাপ্তি তা নিয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি। আমি মনে করি-

‘জীবন একে কর না হেলা
জীবন মানে দুহাতে আধার ঠেলে সামনে এগিয়ে যাওয়া’

আমরা কেউই হেরে যাবার পাত্র নই যে কোন পরিস্থিতিতেই নিজেকে উঠে দাড়াতে হবে। যে কোন পরিস্থিতিতেই তাতে যত কষ্ট লুকিয়ে থাকুক না কেন আমরা মেয়েরা নতি শিকার করার জন্য জন্ম নেয়নি। আমি যাদের নিয়ে লিখেছি শিশু, নারী বা অন্যান্য চরিত্র তা নিজ দায়িত্ব নিয়েই লিখেছি। আমি চাই প্রতিটি নারী আপন যোগ্যতায় বেড়ে উঠবে। তাদেরকে যাতে কেউ পেছনে ফেলতে না পারে।

অপরাজিতা: আপনি বলছিলেন নারীদের কথা, মুলত নারীদের আসলে কেমন হওয়া উচিত বলে মনে করেন?

ফরিদা হোসেন: সৎ ও চরিত্রবান হওয়া উচিত।

অপরাজিতা: আজকের সমাজের নারীদের সন্মান ও মর্যাদা কতটুকু?

ফরিদা হোসেন: নারীদের সন্মান ও মর্যাদার ব্যাপারে নারী-পুরুষ উভয়েরই জ্ঞান থাকতে হবে। নিজ নিজ যোগ্যতা অর্জনের ক্ষেত্রে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে।

অপরাজিতা: সমাজে মূল্যায়নের জন্য নারীদের কি করা উচিত?

ফরিদা হোসেন: তাদের শিক্ষিত হওয়া এবং যোগ্যতা অর্জন করা উচিত।

অপরাজিতা: আমাদের সমাজের বর্তমান নারীদের সম্পর্কে বলুন?

ফরিদা হোসেন: আগের তুলনায় আমাদের সমাজের বর্তমান নারীরা পারিপার্শ্বিকতার ব্যাপারে অনেক সচেতন। তাদের মাঝে আগের দিনের মতো দ্বিধা সংকোচ এখন তেমন আর নেই। এখন নারী সমাজের অনেকের বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে আসছে এবং সাফল্যও লাভ করছে।

অপরাজিতা: আপনার সাহিত্য পত্রিকা ‘অবিনশ্বর’ সম্পর্কে বলুন?

ফরিদা হোসেন: ‘অবিনশ্বর’ সাহিত্য পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক আমি। এই পত্রিকাটি পূর্বে প্রতি মাসেই প্রকাশিত হত বর্তমানে তিন মাস অন্তর অন্তর প্রকাশিত হয়। নারী অধিকার, অলোকিত সমাজ প্রতিষ্ঠায়, শিশুদের নিয়ে ভাবনা সবকিছু সম্মিলিত ভাবে উপস্থাপন করার লক্ষ্যে এই ‘অবিনশ্বর’ সাহিত্য পত্রিকাটিকে নতুন প্রজন্মের হাতে তুলে দেবার চেষ্টা করছি। আলোকিত মানুষ গড়ার প্রত্যয়ে আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। তাই নিজস্ব কর্ম ও চিন্তাধারণার আলোকে বহুমুখী প্রতিভাবান লেখকদের লেখাকে একত্রিত করে পত্রিকাটি তিন মাস পর পর প্রকাশিত হচ্ছে।

অপরাজিতা: দীর্ঘ একটা জীবন কাটালেন। জীবন নিয়ে কোনো অপ্রাপ্তি বা হতাশা কি আছে নিজের ভেতরে? নিজেকে ভবিষ্যতে কোথায় দেখতে চান?

ফরিদা হোসেন: আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে আমি যতটুকু পেরেছি, চেষ্টা করেছি, আমার কাজের প্রচারটা একটু কম কিন্তু আমি অপ্রাপ্তিতে বা হতাশায় ভুগি না। আমি পেন এর সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দীর্ঘ দশ বছর ছিলাম। আবার ২০০৪ সালে সাহিত্যে বাংলা একাডেমী পুরস্কার পেয়েছি। এছাড়াও অজস্র পুরস্কার পাই এসব গুলকেই মূল্যায়ন হিসেবে দেখি। এত দূর নাও আসতে পারতাম আল্লাহর রহমতে আসছি। আমার জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট। লেখালেখি চলছে, সামনে শিশুতোষ মুভি ও শর্টফিল্ম করার ইচ্ছে আছে।। গল্প, কবিতা ও উপন্যাস লিখছি এখনও। আসলে সাহিত্যচর্চাকে আরও সামনে অগ্রসর করে আমি আমাকে অচিরেই সাহিত্য জগতে একটি বিশেষ স্থানে নেওয়ার স্বপ্ন বুনি। অর্থাৎ সাহিত্যের যে একটি স্ট্যান্ডার্ড মান আছে সেই মানে পৌছাতে চাই। আমার লেখা গল্পগুলোকে সার্থকতায় মাপকাঠিতে পৌছাতে চাই।

বাংলা একাডেমী পুরস্কার

অজস্র পুরস্কার

 

চট্টগ্রামে গৃহশিক্ষকের হাতে ছাত্রীর মা খুন

 


নারী সংবাদ


চট্টগ্রামের আকবরশাহ থানার বিশ্বকলোনি এলাকায় মেয়ের সাবেক গৃহশিক্ষকের হাতে খুন হয়েছেন শাহেনা বেগম নামে এক মহিলা। গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপরই অভিযুক্ত গৃহশিক্ষক মোহাম্মদ শাহ জাহানকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে স্থানীয়রা।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, মিরসরাইয়ের বাসিন্দা শাহ জাহান চার মাস আগে বিশ্বকলোনি এলাকার জসিমের মেয়ে তানজিলাকে পড়ানোর দায়িত্ব পায়। পড়ানোর একপর্যায়ে নবম শ্রেণীর ছাত্রী তানজিলার প্রতি কুনজর পড়ে গৃহশিক্ষক শাহ জাহানের। এ ঘটনা বুঝতে পেরে দুমাস আগে গৃহশিক্ষককে বাসায় পড়াতে আসতে বারণ করে দেন তানজিলার মা শাহানা বেগম। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই শিক্ষক ছাত্রী ও ছাত্রীর বাবা-মাকে ফোনে হুমকি ও নানা ছুঁতোনাতায় বিরক্ত করতে থাকে।
গতকাল দুপুরে এক মাসের বেতন বকেয়া আছে সেই অজুহাতে গৃহশিক্ষক শাহ জাহান বিশ্বকলোনিতে গিয়ে ছাত্রীর বাবা জসিমের সাথে বাগবিতণ্ডায় জড়ায় এবং একপর্যায়ে জসিম ও তার ভাইকে কুপিয়ে আহত করে। তাদের রক্ষায় শাহেনা বেগম এগিয়ে এলে তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।

 

পরকীয়ার সন্দেহে স্ত্রীকে হত্যা : স্বামী গ্রেফতার


নারী সংবাদ


স্ত্রী নূপুরের পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে এমন সন্দেহ করেছিল দুলাল। এর জের ধরেই গত রোববার দিনভর ঝগড়া হয় তাদের। রাতে আবারো ঝগড়া বাধলে নূপুরকে শ্বাসরোধে হত্যা করে পালিয়ে যায় স্বামী দুলাল। এ ঘটনায় গতকাল দুলালকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
রোববার রাত ১০টার দিকে রাজধানীর পূর্ব হাজীপাড়া বইবাজার এলাকার ৭৮/১২ নম্বর বাসা থেকে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় গৃহবধূ নূপুর বেগমের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। নিহত নূপুরের বাড়ি খুলনার ফকিরহাটে। তার স্বামী দুলালের বাড়ি শেরপুর শ্রীবর্দি এলাকায়। তবে বেশ কিছু দিন ধরেই স্ত্রী নূপুরের পরকীয়া প্রেম আছে বলে সন্দেহ করে আসছিল দুলাল। রোববার রাতেও ঝগড়ার একপর্যায়ে নূপুরের গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে দুলাল।
সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

রূপান্তরের যাত্রা – পর্ব ১০


তাহনিয়া খান


Bismillahir Rahmanir Rahim

Rabbish rahli sadri wa yas-sir li amri wahloul uqdatam mil-lisaani yafqahu qawli.
O my Lord! expand me my breast; Ease my task for me; And remove the impediment from my speech, So they may understand what I say[20:25-28]

মক্কায় আসার দু’দিনের মাথায় মাগরিবের নামায পড়ার সময় চমকে গেলাম। আরে, আব্দুর রহমান আস সুদাইস তেলাওয়াত করছেন। খুব ভালো লাগছিল। নামায শেষে দুই ভাই বোন যখন এক হলাম, দু’জনেই একসাথে বললাম, আজকে কে নামায পড়ালো জানো ? দু’জনই হেসে একই উত্তর দিলাম। বেশীর ভাগ সময়ই উনি মাগরিবের নামায পড়াতেন। ছোট ছোট সূরা পড়তেন। শুধু মনে হতো আরেকটু বড় সূরা পড়লে আরো ভালো লাগতো।

আরেক ভদ্রলোকের তেলাওয়াত আমাদের দু’জনেরই খুব ভালো লাগলো। কিন্তু নাম জানি না। একদিন উনি নামায পড়ানোর পরে আমার ভাই হারাম শরীফের পাশের দোকানগুলোতে গিয়ে জিজ্ঞেশ করছিল কোন ইমাম আজকে নামায পড়ালেন। কেউ বলতে পারে না। অনেকে বুঝেও না কথা। যাই হোক, এক সিডি বিক্রির দোকানী বললেন যে ঐ ইমামের নাম মাহের আল মুকাইলি। আমার ভাই উনার কোরআন তেলাওয়াতের সিডি কিনে নিল।

হজ্জের দিনগুলো কাছে চলে আসছে। তার আগেই আমাদের মোয়াল্লেম মক্কার দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরাতে নিয়ে যাবেন। একদিন সকালের নাস্তা সেরেই আমরা সবাই তৈরি হয়ে গেলাম। হেরা গুহা, মসজিদে নামিরা, আরাফাহ’র ময়দান, জাবালে নূর, মিনা, জামারাহ, নবী (সাঃ) আবু বকর (রাঃ) কে নিয়ে যে গুহায় লুকিয়ে ছিলেন সেই গুহা, ইব্রাহীম (আঃ) যেখানে ছেলেকে কোরবানী দিয়েছিলেন, কবরস্থান সহ বিভিন্ন জায়গা ঘুরিয়ে দেখানো হলো। হেরা গুহায় আমাদের উঠতে নিষেধ করা হয়েছিল। কারণ হজ্জের আগে শরীর ঠিক রাখতে হবে। এই গুহা এত উপরে যে উঠার সময় শরীরের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। ফলে যেই উদ্দেশ্যে মক্কায় আসা, সেটাই যদি না করতে পারি তাহলে আর লাভ কি হলো।

হেরা গুহা যে পাহাড়ে , সেখানে নীচে দাঁড়িয়ে অবাক হয়েছি। কত বন্ধুর পথ ! যদিও এখন উপরে উঠার জন্য সুব্যবস্থা আছে। কিন্তু নবী (সাঃ) এর সময় তো এমন ছিল না। উনার বাসা থেকে কত দূরে ঐ পাহাড়। সেই পাহাড়ের কত উপরে সেই গুহা। সেখানে বিবি খাদিজা (রাঃ) রাসুল (সাঃ) এর জন্য খাবার নিয়ে যেতেন। খাদিজা (রাঃ) এর বয়স তখন ছিল ৫৫ বছর। ৫৫ বছরের এক মহিলা তাঁর স্বামীর জন্য কি কষ্টই না করেছেন। আমার ভাই আমাকে বলে, শিখে নাও, শিখে নাও, কীভাবে স্বামীর যত্ন করতে হয় শিখে নাও। একটু আতে ঘা লাগলো । আমি বুঝি আমার স্বামীর জন্য কষ্ট করি না ? যত্ন নেই না ? সেক্রিফাইস করি না ? তাকেও বললাম, দেখ, খাদিজা (রাঃ) এমনি এমনি এত কষ্ট করেননি। উনার স্বামীও এমন মানুষ ছিলেন যে, বিবি খাদিজা (রাঃ) উনার জন্য কষ্ট করাকে কষ্টই মনে করতেন না। স্ত্রীর ভালোবাসা, সাহায্য আর সম্মান পেতে হলে স্বামীদেরও তেমন যোগ্য থাকা লাগবে। আমার ভাই হাসে।

মসজিদে নামিরাতে গিয়ে দেখি সেটা হজ্জের জন্য পরিষ্কার করা হচ্ছে। বছরে শুধু হজ্জের সময়ই এখানটায় নামায পড়া হয়। মিনার তাবুগলো ঠিকঠাক করা হচ্ছিল। জামারাহ এর ভিতর যাইনি। বাইরে থেকে দেখলাম। মোটামুটি হজ্জের একটা রিহার্সেল সেদিন দিয়ে আসলাম। একটা জিনিস ভালো লাগেনি। মক্কার পাহাড়গুলো কেটে ফেলা হচ্ছে বড় বড় হোটেল আর সুপার মল করার জন্য।

হজ্জের দশম শিক্ষা — পুরো মক্কা শহর আর তার চারপাশে যখন ঘুরে দেখছিলাম তখন আমরা ছিলাম এসি গাড়িতে। সকাল থেকে এত কিছু দেখে যখন মক্কার ভিতরে আসলাম তখন হারাম শরীফে যোহরের আজান দিচ্ছিল। শুধু মনে হচ্ছিল, এত কম সময়ে কতগুলো জায়গা ঘুরে আসলাম। অথচ নবী (সাঃ) এর সময় এই জায়গা গুলো ছিল পাহাড় দিয়ে ঘেরা। এমন সুন্দর রাস্তা ছিল না। এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে যেতে কত কষ্ট হয়েছিল উনার। কত কষ্ট করে উনি পাহাড়ে গিয়ে ধ্যান করতেন, কত কষ্ট করে উনি পাহাড়ে গিয়ে লুকিয়ে ছিলেন, কত কষ্ট করে মানুষের নির্যাতন সহ্য করেছিলেন। তারপরেও তিনি হাল ছেড়ে দেননি, মানুষকে অভিশাপ দেননি, মানুষের মঙ্গল চেয়েছেন, মানুষকে আল্লাহ্‌র পথে ডেকেছেন। তাঁর উম্মতের জন্য দোয়া করেছেন। উনার এসব কাজ শুধু মাত্র আল্লাহ্‌র সন্তোষটির জন্য ছিল। জন্মসুত্রে আমি মুসলিম, মোহাম্মদ (সাঃ) এরই উম্মত। আমার জন্যও উনি দোয়া করেছিলেন। সেই আমি উনার মর্যাদা রক্ষার জন্য কি করছি ? আমি কি সত্যি উনাকে ভালোবেসে, উনার দেখানো পথে, আল্লাহ্‌র সন্তোষটির জন্য কাজ করছি ?

পর্ব- ৯

 

টমেটো আর ডিমের রেসিপি


ঘরকন্যা


ডিম টমেটো সুপ

উপকরণঃ
– টমেটো,বড় ৩ টি
– সিরকা ২ চা. চা.
– পেঁয়াজ,কুচি ১ টি
– সাদা গোলমরিচ,গুঁড়া ১/৪ চা. চা.
– তেল ১ টে. চা.]
– ৩ টি ডিমের সাদা অংশ
– চিকেন স্টক ৫ কাপ
– চিনি, লবণসয়াসস,লাইট ১ টে. চা.
– ধনেপাতা কুচি সামান্য

প্রণালীঃ
১। ফুটানো পানিতে টমেটো দিন। পাতলা খোসা ফেটে গেলে টমেটো তুলে খোসা ছাড়ান। টমেটো টুকরা করুন।
২। তেলে পেঁয়াজ ভাজুন। নরম ও চকচকে হলে চিকেন স্টক,সয়াসস,সিরকা,গোলমরিচ এবং পরিমানমতো লবণ ও চিনি দিন। ফুটে উঠার পরে মৃদু আঁচে ১০ মিনিট রাখুন।
৩। ডিমের সাদা অল্প ফেটান। উপর থেকে ধীরে ধীরে সুপে ডিমের সাদা ঢেলে দিন। নাড়বেন না। ডিম জমার জন্য ১ মিনিট অপেক্ষা করুন। টমেটো দিয়ে ৩ মিনিট মৃদু আঁচে ফুটান। ১ মিনিট পরে সুপের লবণ ও চিনি ঠিক হলো কিনা দেখে নামান।

ডিম-টমেটো পাকোড়া

উপকরণঃ
» বড় টমেটো ২টি।
» চালের গুঁড়া ১ কাপ।
» কাঁচামরিচ ৩টি।
» ডিম ২টি।
» পেঁয়াজ বড় ১টি।
» ধনেপাতা-কুচি আধা আটি।
» অল্প হলুদ।
» বেকিং পাউডার আধা চা-চামচ।
» তেল ও লবণ পরিমাণমতো।

পদ্ধতিঃ
টমেটো ও পেঁয়াজ কুচি করে এতে ২টি ডিম ফেটিয়ে মেশান। চালের গুঁড়া ও ধনেপাতাও এই মিশ্রণে মেশান। হলুদ, লবণ ও বেকিং পাউডার দিন। কড়াইতে তেল গরম করে হাতায় করে গোলা তুলে লাল করে ভেজে নিন। এরপর সসের সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করুন।

 

সোনারগাঁয়ে যৌতুকের জন্য গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ


নারী সংবাদ


সোনারগাঁয়ের বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের হামছাদী ধনপুর গ্রামে কুলসুম আক্তার নামের এক গৃহবধূকে যৌতুকের জন্য স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। রোববার পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। ঘটনার পর থেকে কুলসুমের শ্বশুবাড়ির লোকজন পলাতক রয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। কুলসুম চাঁদপুর জেলার মুন্সিরহাট গ্রামের জাহাঙ্গীর মিয়ার মেয়ে।

উপজেলার বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের হামছাদী ধনপুর গ্রামের মোতালেব মিয়ার ছেলে মানিক মিয়ার সঙ্গে এক বছর আগে চাঁদপুর জেলার মুন্সিরহাট গ্রামের জাহাঙ্গীর মিয়ার মেয়ে কুলসুমের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে যৌতুকের জন্য তাদের পরিবারে কলহ সৃষ্টি হয়। মানিক মিয়া কুলসুমকে বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় মারধর করত। নির্যাতন সইতে না পেরে কুলসুম কয়েকদিন আগে বাবার বাড়িতে চলে যান।

এদিকে মানিক মিয়া গত শুক্রবার কুলসুমকে বুঝিয়ে তার বাড়িতে নিয়ে আসে। রোববার দুপুরে এলাকাবাসী কুলসুমের লাশ ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলতে দেখে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে পৌছে কুলসুমের লাশ উদ্ধার করে।

সোনারগাঁ থানার ওসি (তদন্ত) সেলিম মিয়া জানান, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে না আসা পর্যন্ত এ ব্যাপারে কিছু বলা যাবে না। তবে এ বিষয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলার প্রস্তুতি চলছে।

 

দাগনভূঞায় স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা মাদকাসক্ত স্বামীর


নারী সংবাদ


ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার পূর্বচন্দ্রপুর ইউনিয়নের পূর্বচন্দ্রপুর গ্রামে এক মাদকাসক্ত স্বামী তার স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছেন। এসময় বাড়ির লোকজন তাকে ধরে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। গুরুতর আহত গৃহবধূ ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, পূর্বচন্দ্রপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম তার স্ত্রীকে প্রায়ই মারধর করতেন। গতকাল শনিবার রাতে মারধরের একপর্যায়ে শিশুকন্যার সামনে স্ত্রী মোমেনা খাতুন সুইটিকে (২৬) জবাই করে হত্যার চেষ্টা করেন। এসময় তার শোর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এলে ছোরা দিয়ে মাথায় কয়েকটি আঘাত করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। বাড়ির লোকজন তাকে আটক করে পুলিশে খবর দেন। এবং আহত সুইটিকে দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। অবস্থা আশংকাজনক দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ফেনী আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠান।

দাগনভূঞা থানার ওসি ছালেহ আহম্মদ পাঠান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় স্বামী সাইফুলকে আটক করা হয়েছে।

 

কাবিলের বোন

 


ফারহানা বিনতে আমিন


বুক রিভিউ
উপন্যাসঃ কাবিলের বোন
কবি ও কথাসাহিত্যিকঃ আল মাহমুদ

প্রিয় কবি -কথাসাহিত্যিক আল মাহমুদের উপন্যাস পর্যালোচনা করার দুঃসাহস করছি না,পাঠক হৃদয়ের অভিব্যক্তি তুলে ধরতেই এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।উপমহাদেশ, অর্ধেক মানবী,ডাহুকী,নিশিন্দা নারী,আগুনের মেয়েসহ অসাধারণ উপন্যাস লিখে বাংলাদেশের কথাসাহিত্যে অনবদ্য ভূমিকা পালন করেছেন কবি আল মাহমুদ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে রচিত হয়েছে তার অনন্য উপন্যাস উপমহাদেশ ও কাবিলের বোন।কবির পরিচয় তো সর্বজনবিদিত, ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার মোড়াইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।১৯৬৩ সালে প্রথম কাব্যগ্রন্থ “লোক-লোকান্তর” প্রকাশিত হয়, আজ অবধি বাংলা ভাষা সাহিত্যে নিরন্তর সাধনা অব্যাহত রয়েছে।সর্বশেষ ২০১৮ সালের বইমেলায় ” জীবন যখন বাঁক ঘোরে” উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।গত মাসে কবির তিরাশিতম জন্মবার্ষিকী ছিলো,দীর্ঘ এ জীবনে প্রিয় মানুষ সুস্হতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি,বাংলা সাহিত্যকে আরো সমৃদ্ধ করে বিশ্ব দরবারে বাংলা ভাষাকে সুউচ্চস্হানে নিয়ে যান।

কাবিলের বোন উপন্যাসটি কবির সবচে’ দীর্ঘ কলেবরের উপন্যাস,পাঁচটি পর্বে বিন্যস্ত।এ উপন্যাসটিকে মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস বলা যায়,রাজনৈতিক উপন্যাস ও বলা যেতে পারে,যেখানে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্হান,নাগরিক পরিচয়ের সংকট, গণঅভ্যুথান,মুক্তিযুদ্ধ, শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা,ছাত্র সমাজের নেতৃত্বের ভূমিকার বিমূর্ত প্রকাশ ঘটেছে। পাঠক এ লেখাটি পড়ে আবিষ্ট হবেন,নিজেকে মুক্তিযুদ্ধের সময় আবিষ্কার করবেন, ১০ নং বনগ্রাম লেনের সেই আবাসটি স্বচোখে হৃদয়ে আঁকতে বাধ্য হবেন।কবি নিজেও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন,কবির আত্মজৈবনিক লেখা-“বিচূর্ণ আয়নায় কবির মূখ” ও “যেভাবে বেড়ে উঠি” বইয়ের অনেক কথার প্রতিচ্ছবি তার উপন্যাসে খুঁজে পাওয়া যায়।কবির লেখায় নিজ জীবনের অভিজ্ঞতা আয়নার মতোই প্রতিফলিত হয়েছে।কবি আল মাহমুদের এ লেখা আমরা বাংলাদেশের রূপই নতুন করে খুঁজে পাই।
উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র সৈয়দ আহমদ কাবিল ও রোকসানা,কাবিলের চাচী রওনক জাহান,আন্দালিব -মোমেনা,রাজনৈতিক অঙ্গনে দাপুটে আঞ্জুমান-মেধাবী নিশার সকলকে ঘিরেই আখ্যানটির আবর্তন। পাঁচটি পর্বে আলোচনা করবো।

উনিশ শো ষাট সালের জানুয়ারীর এক শীতের সকালে সৈয়দ আহমদ কাবিল ফুলবাড়িয়া স্টেশনে নামল,যার হাতে ঘড়ি ও পায়ে নতুন পাম্প স্যু,যে একটা আশ্রয় খুঁজছিলো-এ দৃশ্য কল্পের সাথে কবির গ্রাম থেকে নতুন শহরে আসার সময়টা চোখে ভাসে।মা জাকিয়া বেগম সর্বস্ব দিয়ে ছেলেকে মেট্রিক পর্যন্ত পড়িয়েছেন,এবার ভাল কলেজে পড়তে ছোট দেবরের কাছে একটা চিঠি দিয়ে পাঠিয়েছেন।এমনি এক সকালে কাবিল গিয়ে চাচা-চাচী আহমদ আলম- রওনক জাহান ও তাদের একমাত্র রোকসানাদের পরিবারে উপস্হিত হয়।
কাবিলের চাচা পরিবারের অসম্মতিতে এক মুজাহির মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন, এই নিয়ে ভুলবোঝাবুঝিতে দীর্ঘদিন পারিবারিক সম্পর্ক রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।কাবিলের আসার মধ্য দিয়ে নতুন করে, আত্মীয়তার বাঁধন নতুন মোড় নেয়।চাচার ব্যবসা দেখাশোনার কাজে সাহায্য করে, আন্দালিব সেও মুহাজির,রোকসানার ফুফাত ভাই।স্বামী আহমদ কামালের মৃত্যুর পর জাকিয়া বানু পুরনো প্রতিজ্ঞা ভুলে, বাড়ির ছোট বউ হিসেবে রওনক জাহানের উপস্থিতি কামনা করেন।কাবিল ও রোকসানা তাদের পূর্বপুরুষের ভূমি আবাদে আবার মনতলা গ্রামে ছুটে যায়।
জাকিয়া বেগম রোকী আর কাবিলের পরস্পরের প্রতি দূর্বলতা আঁচ করেও নিশ্চুপ থাকেন।এমনি সম্পর্কের দোলাচালে এগোতে থাকে সামনের দিনগুলো।এর মধ্যে উপন্যাসের পটপরিবর্তনে বাঙালী, বিহারী -পাঞ্জাবীদের জাতিগত সংকট প্রকট হয়ে ওঠে।

মেধাবী শিক্ষার্থী কাবিল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়,ছাত্র রাজনীত-বাঙালী জাতির জীবনের আশা-আকাক্ষা বুকে ধারন করে,পথ চলে।ডাকসুর লিডার সে,শেখ মুজিবের নেতৃত্বে মুখর রাজপথ।ছাত্ররা ছয়দফা নিয়ে ক্যাম্পাসে উত্তাল।এমনি উত্তাল পরিবেশে কাবিলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী হয়।ছাত্রসংগঠনগুলোর মাঝে অনৈক্য,বামপন্থীদের আওয়ামী লীগের আন্দোলনে সর্বতোভাবে ঐক্যমত্যে আসতে চায় না।এমনি প্রেক্ষাপটে রওনক জাহান মেয়ের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন,কাবিল যে বড় দায়িত্ব মাথায় তুলে নিয়েছে তাতে,একটা ছোট্ট পরিবারের হাল ধরবার অবসর কই তার?ব্যবসায়ী রওনক জাহান শখ করে হীরার রিং কিনেছিলেন মেয়ের এনজেগমেন্টের জন্য,কিন্তু কাবিলের কই অবসর!এদিকে জাকিয়া বানু অসুস্হ হয়ে হঠাত মারা যান,তার দেখাশোনা করতো মোমেনা,যার সাথে শৈশব কাবিলের বিয়ে দেওয়ার কথা দিয়েছিলেন জাকিয়া বানু।মায়ের মৃত্যু দেহ দাফনে আসতে পুলিশী নজর এড়িয়ে কাবিল গ্রামে আসে।মায়ের মৃত্যুর পর আশ্রিত বোনের দায়িত্বভার তার কাঁধে চলে আসে।আন্দালিব মোমেনার নারীসুলভ সৌন্দর্য মুগ্ধ,হৃদয়ে টান অনুভব করে।রওনক জাহান এবার দু’জোড়া কন্যা পুত্রকে বিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চান।কিন্তু,কাবিলের রাজনীতি -নেতৃত্বের ব্যস্ততায়, রোকসানা দ্বিধা-দ্বন্ধে বিয়েতে অমত করে বসে।আবার, দু’জনের চাওয়া -পাওয়ার বাধও দীর্ঘ ধৈর্য্যের বাধনে চ্যুত হতে চায়,কাছে পেয়েও দূরে, আলিঙ্গনে বেধেও না বাধার ছল।পাঠক আরো তীব্র ভাবে দুজনার পরিনয় ঘটবার অপেক্ষায়,আসলেই কি কাবিল-রোকী’র পরিনয় সম্ভব হয়েছিল কি,এখানেই উপন্যাসের এক বিষাদময় পরিনতি, যা উপন্যাসের শেষ পর্বে আসার আগে পাঠক আঁচ করতে পারবে কি?

হঠাত কাবিলের চাচা মারা যান,দাফন শেষ ফেরার পথে কাবিল গ্রেফতার হয়।
দেয়াল জুড়ে ছাত্রনেতা কাবিলের মুক্তির জন্য পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে যায়,আন্দোলনে মুখর হয় রাজপথ।পিতার মৃত্যু রোকসানাকে আরো বদলে দিয়েছে ভার্সিটি যাওয়া বন্ধ করে ব্যবসার হাল ধরেছে,একদম পেশাদার বলা চলে।নিজের সামনে একটা আড়ালও তৈরি করে নিয়েছে সে।ছাত্রনেতা কাবিলের মাঝে প্রনয়িনী রোকীর পাচিল,রাজনীতি -দেশ, সমাজের জন্য ব্যক্তিস্বার্থত্যাগী কাবিল, চাচার পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে পারেনি।সেখানে রোকী তার মায়ের মতোই যোগ্যতা-দক্ষতা দিয়ে পারিবারিক ব্যবসা-বানিজ্য সামলে নিয়েছিলো,আন্দালিব যে কিনা নিঃস্বার্থভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলো।আন্দালিব কি একসময়ের ফুফা-ফুফির ওয়াদার কথা,রোকীকে পাওয়ার বাসনা কিংবা দূর্বলতা এখনো পোষণ করে।
হঠাত কাবিলের চাচা মারা যান,দাফন শেষ ফেরার পথে কাবিল গ্রেফতার হয়।
দেয়াল জুড়ে ছাত্রনেতা কাবিলের মুক্তির জন্য পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে যায়,আন্দোলনে মুখর হয় রাজপথ।পিতার মৃত্যু রোকসানাকে আরো বদলে দিয়েছে ভার্সিটি যাওয়া বন্ধ করে ব্যবসার হাল ধরেছে,একদম পেশাদার বলা চলে।নিজের সামনে একটা আড়ালও তৈরি করে নিয়েছে সে।ছাত্রনেতা কাবিলের মাঝে প্রনয়িনী রোকীর পাচিল,রাজনীতি -দেশ, সমাজের জন্য ব্যক্তিস্বার্থত্যাগী কাবিল, চাচার পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে পারেনি।সেখানে রোকী তার মায়ের মতোই যোগ্যতা-দক্ষতা দিয়ে পারিবারিক ব্যবসা-বানিজ্য সামলে নিয়েছিলো,আন্দালিব যে কিনা নিঃস্বার্থভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলো।আন্দালিব কি একসময়ের ফুফা-ফুফির ওয়াদার কথা,রোকীকে পাওয়ার বাসনা কিংবা দূর্বলতা এখনো পোষণ করে!কিন্তু,রোকসানা তো চাচাত ভাই কাবিলের মধ্যে প্রাণের প্রাচুর্য খুঁজে নিয়েছিলো।হয়তো আন্দালিব নিজের নিয়তিকে মেনে নিয়েছে,নাকি সুন্দরী,যৌবনা তরুনী মোমেনাকে পাওয়ার মাঝে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছে।আর,মোমেনা কি শেশবে লালিত স্বপ্নকে কবর দিয়েছে,আশ্রয়হীন, অসহায়ত্বের কথা ভেবে,কিন্তু,সৃষ্টিকর্তা যে তাকে রহস্য,মায়াময়তা দান করেছেন,তা যেকোন পৌরষ হৃদয়ে আঘাত হানার ক্ষমতা রাখে।কিন্তু,হৃদয়ের সেই সুক্ষ্ম দূর্বলতায় কি আজো কাবিলকে পাওয়ার আশা রাখে সে,কাবিলও কি অবচেতন মনে তার সৌন্দর্য অনুধাবন করেনি,মোমেনাও হয়তো জানে, তার অসাধারণ কোন ক্ষমতা আছে,যা দিয়ে বিশ্ব জয় করতে পারবে।তবে,অভিভাবক হিসেবে কাবিল জেল থেকে মুক্তি না পাওয়া পর্য়ন্ত সে আন্দালিবকে বিয়ে করতে রাজী হয় না,নারীত্বের পূর্নতার এ আশু সুযোগকে পায়ে ঠেলার অমিত সংযম কি তীব্র ভালোবাসা থেকেই জন্ম নিয়েছে।উপন্যাস পাঠক পারস্পারিক সম্পর্কের দ্বিধা-দ্বন্ধে জড়িয়ে পড়েছে, শ্বাশত নারী-পুরুষের মনস্তাত্ত্বিক সম্পর্কে নতুন রূপে অনুভব করবেন।এদিকে রওনক জাহান চান,কাবিল জেল থেকে ছাড়া পাবার পর এবার আর আংটি পড়াতে দেরী করবেন না,কিন্তু…

জেল ছাড়া পেয়ে, লিডারের সাথে ইলেকশনের সফরে প্রতিনিধি হিসেবে বেরিয়ে পড়তে হয়।এছাড়াও, নারী হৃদয়ের দ্বন্দ্ব -মোমেনা ও রোকীর মাঝে, যা পাঠককে উদ্বেল করে দেয়।পূর্ব পাকিস্তানের পরিবেশ দিন দিন উত্তপ্ত হতে থাকে অবাঙালীদের পরিচয় সংকট তৈরি হয়।

 

বৈবাহিক সমস্যা ও কোরআনের সমাধান -৪


কানিজ ফাতিমা


‘দরাবা’র বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যাখ্যা এসেছে। ইবনে আব্বাস দরাবার ব্যাখ্যা করেছেন “মিসওয়াক বা মিসওয়াকের ন্যায় কোন কিছুর (যেমন টুথব্রাশ বা পেন্সিলের) হালকা আঘাত”।
অন্যদিকে কিছু ইসলামী আইনবিদ যারা ফতোয়া দিয়েছেন যে “বিশটি বা চল্লিশটির বেশী আঘাত করা (পিটানো) যাবে না”।
অনেকে বলেছেন শুধু মাত্র মেরে ফেলা বা আহত করা ছাড়া সবই সিদ্ধ (wounds and murder)।

যদি আমারা দরাবার ব্যাখ্যা মিসওয়াক বা মিসওয়াকের ন্যায় কোন কিছুর (যেমন টুথব্রাশ বা পেন্সিল) হালকা আঘাত হিসাবে নেই যেমনটি ইবনে আব্বাস নিয়েছেন তবে এই ব্যাখ্যাটি দ্বারা ‘শাস্তি প্রদান’ কে বোঝায় না । বরঞ্চ এরূপ হালকা আঘাত [ যা কোন ব্যাথা বা আতঙ্কের সৃষ্টি করে না ] স্ত্রীর প্রতি স্বামীর অসন্তোষ ও হতাশা বোঝানোর একটি বাহ্যিক প্রকাশ মাত্র। স্পর্শ বা জড়িয়ে ধরা দ্বারা যেমন সম্পর্কের উষ্ণতার বহিঃপ্রকাশ হয় তেমনি এরূপ হালকা আঘাত দ্বারা অবহেলা ও বিরক্তির বহিঃপ্রাকশ ঘটে। যেহেতু পিটানো বা শাস্তিপ্রদানের সঙ্গে নির্যাতন ও কষ্ট জড়িত আর হালকা মিসওয়াক জাতীয় জিনিসের আঘাতে এসবকিছু অনুপস্থিত তাই এই ব্যাখ্যাটি ইসলামের মূল ¯ দৃষ্টিকোন থেকে অন্য ব্যাখ্য দুটি অপেক্ষা বেশী যুক্তিসঙ্গত ও বেশী গ্রহণযোগ্য।

অন্যদিকে কিছু ইসলামী আইনবিদ যারা ফতোয়া দিয়েছেন যে “বিশটি বা চল্লিশটির বেশী আঘাত করা যাবে না” তারা ইবনে আব্বাসের মত এ বিষয়টিতে গভীর চিন্তার স্বাক্ষর রাখেননি। [দরাবা শাস্তি প্রাদনের মাধ্যম নাকি অসন্তোষ প্রাকাশের মাধ্যম সেটি তারা বিবেচনায় অনেননি, এ আয়াতটি দ্বারা আল্লাহ স্বামীকে স্ত্রী নির্যাতন বা স্ত্রীকে কষ্টদানের অনুমোদন দিয়েছেন নাকি স্বামীর অসন্তোষের সুষ্ঠ বহিঃপ্রকাশের মাধ্যমে স্ত্রীকে সাবধান করার যুক্তিসঙ্গত পন্থা বাতলে দিয়েছেন সেটি তারা খুঁজে দেখেননি]। তারা এমনকি এই আঘাতের সীমা কতটুকু হবে তাও নির্ধারন করেননি। শরীরের কোন কোন অঙ্গে আঘাত করা যাবে বা যাবে না, হাড় ভাঙ্গা যাবে কি যাবে না, এমনকি এ আঘাত সহ্য করার জীবনী শক্তি তার আছে কি না, সে সম্পর্কে তারা কোনই নির্দেশনা দেননি। কাজেই বোঝা যাচ্ছে ইবনে আব্বাসের ব্যাখ্যা অনেক বেশী যুক্তিসঙ্গত ও চিন্তাশীল । কিন্তু তারপরও দেখা গেছে ইবনে আব্বাসের ব্যাখ্যাতেও একটি ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ রয়ে গেছে যার কারনে অতীতে এবং বর্তমানে ও এই ব্যাখ্যার সুযোগ গ্রহন করে অনেক নির্যাতনকারী স্বামী তাদের অন্যায় আচরনের পক্ষে যুক্তি পেশ করে। [ তারা টুথব্রাশ বা এর মত ছোট কিছুর শর্তটিকে গায়েব করে দিয়ে আঘাত করা যাবে এটুকুকেই মাথায় ও মগজে গেথে নেয়।] কাজেই দরাবার ব্যাখ্যায় এমন কোন সুযোগ রাখা ঠিক নয় যাতে দরাবার ভুল অর্থ গ্রহন সম্ভব হয় , এর অপব্যাবহারের সুযোগ থাকে এবং নিজেদের অন্যায় আচরনকে যায়েজ করার পক্ষে এটি ব্যবহৃত হতে পারে। আর এ কারনেই আমি পুরো ব্যাপারটা নিয়ে নতুন করে চিন্তা করার বিশেষ প্রয়োজন বোধ করেছি।

বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে আমি স্পষ্টতঃই দেখতে পেলাম কোরআনে ব্যবহৃত আরবী মূল ক্রিয়া দরাবা কে পূর্ণবয়স্কদের পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নেরর মাধ্যম হিসাবে বা স্ত্রীকে স্বামীর আনুগত্যে ফিরিয়ে আনার মাধ্যম হিসাবে নেয়ার ক্ষেত্রে যদি এর অর্থ বা ব্যখ্যা ‘কষ্ট, অপমান, বা দৈহিক ব্যথা’ হিসাবে নেয়া হয়Ñ তবে তাতে সমস্যার সৃষ্টি হবে। এক্ষেত্রে সে ব্যথা বা কষ্টের পরিমাণ বেশি বা কম যাই হোক না কেন। যদি ব্যাপরটি এমন হত যে, যেকোন পরিস্থিতিতেই একজন মুসলিম নারী বিবাহ বন্ধন টিকিয়ে রাখতে বাধ্য থাকত, কোন অবস্থাতেই সে স্বামীকে তালাক দিতে পারত না বা স্বামীর কাছ থেকে তালাক চাইতে পারত না, তবে সেক্ষেত্রে স্বামীর সব আচরণই সে সহ্য করতে বাধ্য থাকতো।

ফলে তাকে স্বামীর সব আদেশই মাথা পেতে নিতে হত। ব্যাপারটা এমন হলেই কেবল ‘কষ্ট, অপমান, বা দৈহিক আঘাত’ হিসাবে দরাবা বৈবাহিক সমস্যা সমাধানে অথবা অন্ততঃ বৈবাহিক সমস্যা কমানোর ক্ষেত্রে একটি কার্যকরী পন্থা হত। কিন্তু আমারা জানি যে শরীয়তে ব্যাপারটি এমন নয়। শরীয়ত চাপ প্রয়োগ বা বাধ্য করাকে নয় বরং ভালবাসা ও সহানুভূতিকে পরিবার ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার মাধ্যম করেছে। এভাবে ইসলাম পরিবারের সদস্য (স্বামী বা স্ত্রী) হিসাবে থাকা বা না থাকা তাদের উপর ছেড়ে দিয়েছে; এক্ষেত্রে চাপ প্রয়োগ, অবদমন বা নির্যাতনকে ইসলাম সমর্থন করেনি। স্বামীÑস্ত্রী হিসাবে থাকা যদি দুজন নরÑনারীর জন্য কল্যানকর না হয় তবে ইসলাম দুজনকেই অধিকার দিয়েছে তারা ইচ্ছা করলে এ সম্পর্কের অবসান ঘটাতে পারে। কেননা ঘৃণা, ঝগড়াঝাটি ও তিক্ততার সম্পর্কের থেকে পৃথক বসবাস (separation) অনেক ক্ষেত্রে তাদের জন্য কম ক্ষতিকর। আর এজন্যই শরীয়ত স্বামী ও স্ত্রীকে তালাক ও খোলার অধিকার দান করেছে।

“আর যখন তোমারা স্ত্রীদেরকে তালাক দিয়ে দাও, অতঃপর তারা নির্ধারিত ইদ্দত সমাপ্ত করে দেয় তখন তোমরা নিয়ম অনুযায়ী তাদেরকে রেখে দাও, অথবা সহানুভূতির সাথে তাদেরকে মুক্ত করে দাও।

আর তোমরা তাদেরকে জ্বালাতন ও বাড়াবাড়ি করার উদ্দেশ্য আটকে রেখো না। আর যারা এমন করবে, নিশ্চয়ই তারা নিজেদেরই ক্ষতি করবে।” (সূরা বাকারা আয়াত-২৩১)

চাপ প্রয়োগ করা বা শারীরিক আঘাত কখনই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালবাসার সম্পর্ক তৈরি করতে ও বাজায় রাখতে সহায়ক হয় না। এটি তাদের সম্পর্কের গভীরতা বৃদ্ধিতে বা পারস্পরিক আস্থা তৈরিতে কোনভাবেই সহায়ক ভূমিকা রাখেনা।

চলবে…

পর্ব-৩

 

নারীরা গর্ভকালীন সময়ে এক বিশেষ ধরনের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন


নারী সংবাদ


ঢাকা, ১৬ নভেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : বর্তমান বিশ্বে একটি অতি পরিচিত রোগের নাম ডায়াবেটিস। পৃথিবীর এমন কোন দেশ নেই যেখানে ক্রমবর্ধমান এই রোগে আক্রান্ত হওয়া লোক নেই। পৃথিবীতে দূরারোগ্য অনেক রোগের ওষুধ আবিস্কার হয়েছে। আবিস্কার হয়েছে ডায়াবেটিসের ওষুধও। অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও এ রোগে আক্রান্ত হওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশে প্রতি ১১ জন প্রাপ্ত বয়স্ক লোকের মধ্যে একজন এ রোগে আক্রান্ত। আক্রান্তদের অনেকেই জানে না তারা এ রোগে আক্রান্ত। পুরুষ মহিলা সবাই আজকাল এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে নারীরা গর্ভকালীন সময়ে এক ধরনের বিশেষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। জোবেদা আক্তার পেশায় একজন চাকরিজীবি। তেত্রিশ বছয় বয়সী এই নারীর প্রথম মেয়ে সন্তানের বয়স এখন পাঁচ। গত সাড়ে চার মাস হল জোবেদা আবার সন্তান সম্ভবা। তাই এখন নিয়মিতই আসছেন ডাক্তারের কাছে। কিন্তু কিছুদিন আগে ডাক্তারের পরামর্শে কিছু পরীক্ষা করান তিনি। আর সেখানেই ধরা পড়ে জোবেদার ডায়াবেটিস। এখন তিনি চলছেন সম্পূর্ণ ডাক্তারের নির্দেশনায়। যেকোন মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে যেকোন ধরনের দুর্ঘটনা।
নগরীর মালিবাগ এলাকায় থাকে নীরু ও হারুন দম্পতি। এক মেয়ে আর এক ছেলে নিয়ে সুখের সংসার। কিন্তু হঠাৎ করেই তারা দু’জন মিলে সিদ্ধান্ত নিলেন তারা আরো একটি সন্তান নিবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সন্তান সম্ভাবা হলেন নীরু। কিন্তু বিধিবাম। ছয় মাসের মাথায় ধরা পড়ল নীরুর ডায়াবেটিস। পরে তার মিসক্যারিজ হয়ে যায়।
ডায়বেটিস রোগ বিশেষজ্ঞদের মতে সাধারণ ডায়াবেটিসের পাশাপাশি নারীরা গর্ভকালীন সময়ে এক বিশেষ ধরনের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। আর এই ডায়াবেটিসের চিকিৎসা পদ্ধতিও বেশ জটিল। মূলত অনেক নারীরই এ সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। যখন রোগ নির্ণয় হয়, তখন ডাক্তারদের আর কিছুই করার থাকে না। যার ফলে মৃত্যু হয় অনেক নারীর।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের পরিচালিত এক বৈশ্বিক গবেষণায় দেখা যায়, ডায়াবেটিস হল বাংলাদেশে মৃত্যুর সপ্তম প্রধান কারণ। ২০৪০ সালে মৃত্যু বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হতে পারে। আর বাংলাদেশ সরকারের পরিচালিত এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেট’র প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বৈশ্বিক ওই গবেষণার বরাত দিয়ে জানায়, ২০১৬ সালে বাংলাদেশে ডায়াবেটিসে ৩১ হাজার ৪৬০ জনের মৃত্যু ঘটেছে। এই অসংক্রামক রোগে ২০৪০ সালে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৬৯ হাজার জনে।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির এক প্রকাশনায় দেখা যায়, প্রাপ্ত বয়স্কদের ৬.০৪ শতাংশ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। এছাড়াও কয়েক লাখ শিশু এই ডায়াবেটিস (টাইপ-১) এ আক্রান্ত।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. সাইদুর রহমান বলেন, মূলত ডায়াবেটিসের কারণে মানুষের রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়। আর এই ডায়াবেটিসের কারণে মানুষ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগ যেমন- কিডনি, স্ট্রোক, হৃদরোগে ভুগতে পারেন।
তিনি বলেন, দেশে অনেক পরিবার রয়েছে যেখানে এক বা একাধিক ডায়াবেটিসের রোগী আছে। এই রোগ একবার হলে আর ভালো হয় না। তবে রোগ নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ মানুষের মতো জীবনযাপন করা সম্ভব।
ডা. মনোয়ারা বেগম বলেন, অনেক নারীই এখন গর্ভকালীন সমেয়ে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন। মূলত পরিবারের অন্য কারো ডায়াবেটিসের ইতিহাস, বেশি বয়সে সন্তান ধারন এবং অধিক ওজন এই রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। আর ডায়াবেটিস থাকাকালীন সময়ে গর্ভপাতের ঝুঁকি থাকে অনেক বেশি। এসময় রোগী মারাও যেতে পারেন।
তিনি বলেন, কারো যদি একবার ডায়াবেটিস হয় তবে তাকে তা আজীবন বহন করতে হবে। যে কেউ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। একমাত্র নিয়মানুবর্তিতাই পারে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে। এজন্য ডাক্তারের পরামর্শে চলতে হবে। খাদ্যাভ্যাস পাল্টাতে হবে এবং নিয়মিত শরীর চর্চা করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরিচালক ডা. নূর মোহাম্মদ বলেন, দেশব্যাপী ডায়াবেটিস রোগীদের চিহ্নিত বা শনাক্ত করার কাজ করছে বর্তমান সরকার। অল্প কিছুদিনের মধ্যে উপজেলা হাসপাতাল থেকে মানুষ বিনা মূল্যে ডায়াবেটিসের ওষুধ পাবে।
মূলত সরকারের একার পক্ষে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। এ জন্য সব স্তরের মানুষের ভুমিকা পালন করতে হবে।

সুত্র: বাসস।

 

শিশুর ডায়াবেটিকস ঝুঁকি


স্বাস্থ্যকথা


ডায়াবেটিস কি?

আমরা সারা দিনে যা খাই তার সারাংশ আমাদের শরীরে জমা হয়। এই সারাংশকে চিকিৎসাদের ভাষায় বলা হয় ক্যালোরী,সুগার, গ্লুকোজ বা শর্করা। শরিরের এই জমা ক্যালোরী,সুগার বা গ্লুকোজ হজম করার জন্য ইনসুলিনের প্রযোজন হয়। যদি শরীরের ইনসুলিন জমা ক্যালোরী,সুগার বা গ্লুকোজ বা শর্করা সব হজম করতে না পারে তবে যে বাড়তিটুকু থাকে সেটাই ডায়াবেটিস। এই অতিরিক্ত সুগার রক্ত ও পেশাবের সাথে মিশে যায় এবং রক্ত ও পেশাবকে মিষ্টি করে। এটাকেই ডায়াবেটিস বলে। ডায়াবেটিস ছোঁয়াচে বা সংক্রামক কোন রোগ নয়।

ডায়াবেটিক টাইপ:

১. টাইপ.১- এই ধরনের রোগীদের শরীরে ইনসুলিন একেবারেই তৈরী হয় না।

২.টাইপ.২-এই শ্রেণীর রোগীর বয়স অধিকাংশ ক্ষেত্রে ত্রিশ বৎসরের উপরে হয়ে থাকে। তবে ত্রিশ বৎসরের নিচে এই ধরনের রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এই ধরনের রোগীদের শরীরে ইনসুলিন তৈরী হয় তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ঠ নয় অথবা শরীরে ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা কমে যায়।

৩.গর্ভকালীন ডায়াবেটিস-অনেক সময় গর্ভবতী অবস্থায় প্রসূতিদের ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। আবার প্রসবের পর ডায়াবেটিস থাকে না। এই প্রকারের জটিলতাকে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বলা হয়।

শিশুরা কিভাবে ঝুঁকিতে

দেশে দ্রুত বাড়ছে শিশুদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি। ডায়াবেটিসের প্রকোপতা স্বাস্থ্য সমস্যাটি বাংলাদেশসহ শিল্পোন্নতদেশ গুলতে প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছে। এবং সরকার একে মোকাবেলা করার চেষ্টা করছেন। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, যেসব শিশুর শরীরের ওজন বেশি, তাদের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি খুব বেশি। অথচ এ ধরনের ডায়াবেটিস বয়স্কদের মধ্যেই দেখা দেওয়ার কথা। অথচ যুক্তরাষ্ট্রে, বিশেষ করে শিশুদের স্থূলতার একটি মহামারি হওয়ায় এমন ধরনের ডায়াবেটিস প্রবলভাবে দেখা দিচ্ছে তাদের মধ্যে। আবার টাইপ-১ ডায়াবেটিস বলতে বুঝায়, অগ্নাশয় যদি ইনসুলিন খুব সামান্য পরিমাণ উৎপাদন করে অথবা অনেক ক্ষেত্রে একেবারেই করতে না পারে তখন তা হল টাইপ-১ ডায়াবেটিস।বাডাসের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি লাখে শূন্য থেকে ১৪ বছর বয়সের চার দশমিক তিনজন শিশু টাইপ-১ ডায়াবেটিসের শিকার হচ্ছে।

প্রাথমিক কারণ

১. শিশু ও তরুণদের স্থূলতা:
– ফাস্টফুড,
-টিভির সামনে একটানা অনেক সময় বসে থাকা,
-চিপস,
-পান করছে কোমল পানীয়,
-ভিডিও গেম,
-হাঁটাপথও নেই,
-তেলেভাজা খাবার-ভুঁড়ি
২. শিশুদের মধ্যে শরীরচর্চা কমে যাওয়া।
৩.খাদ্য গ্রহণে ত্রুটিপূর্ণ অভ্যাস
৪.বংশগত কারণ।

ডায়াবেটিক দেখা দিলে যেসব লক্ষণ দেখা যায়?

আচার-আচরণে পরিবর্তন, হঠাৎ করে নিয়মিত ঘুমে সমস্যা হলে কিংবা অনেকদিন ধরে ক্ষুধা কমে গেলে শিশুকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত।

-শরীরের কোন তিল বা আঁচিলের আকার বা আকৃতিতে দ্রুত পরিবর্তন
-ওজন ক্রমেই কমবে
-অল্পতেই হাপিয়ে উঠবে
-শ্রবন ক্ষমতা কমে যাওয়া
-️প্রস্রাবে শর্করার পরিমাণ খুব বেশী বেড়ে যাওয়া
-️খুব বেশী পিপাসা লাগা
-ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
-অত্যন্ত বেশী ক্ষুধা লাগা
-️বমি ভাব হওয়া
-️দুর্বলতা বোধ হওয়া
-️ঝিমানো
-️শ্বাস কষ্ট হওয়া
-️দ্রুত শ্বাস নেওয়া
-️মাথা ধরা
-চোখে ঝাপসা দেখা
-️নিস্তেজ বোধ হওয়া
-শ্বাসে গন্ধ পায়

ডায়াবেটিক ফলে শিশুর ক্ষতি

মুলত ডায়াবেটিস থেকে শিশুদের হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ডায়াবেটিক মুখোমুখি হয় জীবনব্যাপী জটিলতার।

-কিডনি নিষ্ক্রিয়তা,
-হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ এসব জটিলতা।

শিশুদের জন্য সচেতনতা

১.হাঁটতে, চলতে, দৌড়াতে উৎসাহ দিন বাচ্চাদের।
২.টিভি বন্ধ করে দিন। টিভি দেখার সময় কমিয়ে নিতে পারলে, এর একটি সীমারেখা টানতে পারলে স্থূলতা প্রতিরোধ করা যাবে অনেকটা।
৩.খাদ্য গ্রহণে ত্রুটিপূর্ণ অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে। প্লেটে যা কিছু আছে সবকিছু খেয়ে প্লেট সাফ করতে বাচ্চাদের বাধ্য করবেন না।
৪.শিশুদের ওপর বেশি নিয়ন্ত্রণ নয়। শিশুদের স্বাস্থ্যকর খাবার পছন্দ করারও সুযোগ দিতে হবে।

শূন্য থেকে ছয় মাস বয়সী নবজাতকদের মধ্যে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। তবে আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগের বয়স আট থেকে ১৬ বছর এবং শতকরা নব্বই ভাগই শহরের বাসিন্দা।

 

বিষপানে শেরপুরে সন্তানসহ মায়ের আত্মহত্যা


নারী সংবাদ


১৫ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেলে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে মা শান্তা বেগম (১৯) ও শিশু সন্তান মো. বাবু (৬) মারা যান। জানা যায়, বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় স্বামীর ওপর অভিমান করে বিষপানে ছয় মাসের শিশু সন্তানসহ শান্তা আত্মহত্যা করেছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালের দিকে উপজেলার কুসুম্বী ইউনিয়নের বাগড়া কলোনী এলাকার স্বামী মামুনুর রশীদের ওপর অভিমান করে শান্তা বেগম নিজে ও তার ছয় মাসের শিশু সন্তান বাবুসহ বিষপান করেন। পরে ঘটনাটি জানাজানি হলে দুপুরের দিকে স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।

পুলিশের উপ-পরিদর্শক (টিএসআই) আব্দুল আজিজ মৃত্যু বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, শজিমেক হাসপাতালে আসার পর জরুরি বিভাগে কমর্ররত চিকিৎসক মা শান্তা বেগম ও শিশু সন্তান বাবুকে মৃত ঘোষণা করেন।

 

বাজান


—–মনির মোহাম্মদ


সেই ছোট্টবেলা থেকেই দেখে আসছি আব্বা দাদাজানকে বাজান আর দাদীজানকে মায়া ডাকতে। আমার বড় চাচা ,বড় ফুফুরা সবাই একই নামে সম্মোধণ করেন উনাদের। আমার ছোট চাচা কিভাবে জানি বাজান ডাকা বন্ধ করে দিয়ে আব্বা ডাকা শুরু করে দিল। দাদাজান কিছু বলেন না । দাদী দাঁতে কাপড় চেপে ধরে বলে, “কি রে বাজি কি কস এগুলান? তোর বাপ কিন্তু রাগ করে আব্বা ডাকলে” মজার ব্যাপার দাদাদজান কোনদিন এই নিয়ে রাগ করেননি। আমি আব্বাকে অনুকরণ করে আমিও আব্বাকে মাঝে মাঝে বাজান ডাকতাম। আম্মা হাসি দিয়ে বলত আব্বু ডাক বাবা আব্বু! এই আব্বু ডাকের ভিতর কেমন জানি একটা ন্যাকামী লাগে আমার কাছে। কিন্তু বাজান ডাকটা আমার কাছে মধুর মত শুনায়! আর আম্মাকে মায়া ডাকার ভিতরে কী যে একটা মায়া! আব্বা যখন দাদীজানকে মায়া ডাকে তখন মুগ্ধ হয়ে শুনি। আহারে কী মধুর ডাক! দাদাজানের বয়স ৯০ পেরিয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। অনেকদিন আগে একটা লেখা লিখেছিলাম ” একান্নবর্তী” নামে। লেখাটি সবাই ভালবেসেছিল। কয়েকটি পত্রিকাতে লেখাটি ছাপা হয়। অনেকেই পড়েছেন। সবার প্রতিক্রিয়া আর ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ!

একটা কথা আমি মানি সেই ছেলেবেলা থেকে, একজন মুরুব্বী একটি বাড়ির বটবৃক্ষ । সেই বটবৃক্ষ সবাইকে আগলে রাখে তার শাখা প্রশাখা দিয়ে। আমি আমার বিভিন্ন গল্পে বিভিন্নভাবে আমদের হারানো শেখড়টাকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

একান্নবর্তী পরিবারটা আজ কেন নেই? পারিবারিক বন্ধনটা কি আজ হারিয়ে গেছে আধুনিক সভ্যতার অতল গহ্বরে? দাদা-দাদীর মুখ থেক আজকের শিশুরা কি গল্প শুনে? সেই গল্প কি তার স্কুলের সহপাঠির কাছে শেয়ার করে? হয়ত শুনে, হয়ত শুনেনা। আমাদের আজকের প্রজন্মের অনেক কিছু জানার আছে। আমি জানি এই স্মার্টফোন আর রোবটিক্স এর যুগে এটাকে অনেকেই হেসে উড়িয়ে দিবেন। ইংলিশ মিডিয়াম আর বাংলা মিডিয়াম এর কথা বলছি না। মিডিয়াম আমার সন্তানকে শিক্ষিত করবে। কিন্তু আমাদের ঐতিহ্যের গল্প কে শুনাবে। সেই গল্প শুনতে চান ? সেই গল্প শুনাবে আমাদের দাদা-দাদীরা। যারা নিজ চোখে সব দেখেছেন। একবার জিজ্ঞাসা করে দেখুন কী সুন্দরভাবে আপনার সামনে ইতিহাসটা তুলে ধরে!

আমি আমার কথা বলছি, দাদাজানের পানের ভাটা হাতে নিয়ে হাঁটছি আর দাদাজান কুটকুট করে পান খায় আর গল্প করে। আমাদের অদেখা জীবনের বাস্তব গল্প। মাঝে মাঝে আক্ষেপ নিয়ে বলে,” আগের দিন আর নাইরে নাতী খাব্লাইয়ে খাব্লাইয়ে চিনি খাইতি।” সত্যিকারের চিনি আমারা খেয়েছি, ম্যাগনেসিয়াম সালফেট না । একেবারে ক্ষেত থেকে আখ কেটে এনে রস বের করে আগুনে জাল দিয়ে এক প্রকারের লাল ধুলো চিনি যা আর কোনদিন চোখে দেখবোনা। শুধু একটা আক্ষেপ আজকের দিনে, আমাদের প্রজন্ম কি দেখতে পারবে সেই আখ চাষ ? উত্তর না। যাই হোক সবই নব্বই দশকের গল্প বললাম। একটা সোনালী অধ্যায় আমাদের জীবন থেক গত হয়ে গেল। সেই অধ্যায়টাকে মলাটবন্দি করেছি ছয় বছরে। আশা করি আমাদের আগামী প্রজন্ম সেই অধ্যায়টা পড়ে সামান্য হলেও ধারণা পাবে কেমন ছিল আমাদের পূর্বপুরুষদের জীবন? কেমন ছিল উনাদের চিন্তা ধারণা? সব সব তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। অপেক্ষার আক্ষেপ মিটাবো কথা দিয়েছিলাম, কথা আমি রেখেছি। কিন্তু সেই বাজান ডাকটা আমি খুব মিস করি আহারে কী মধুর ডাক বাজান! মনে হয় আমার জানটাই কেড়ে নিচ্ছে।

 

এনজিওর ঋণের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে গৃহবধূর আত্মহত্যা


নারী সংবাদ


চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে এনজিওর ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন এক গৃহবধূ। মঙ্গলবার রাতে উপজেলার কাশিপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

এলাকাবাসী জানায়, কাশিপুর গ্রামের বাজারপাড়ার আব্দুল হালিম বুধোর স্ত্রী শরিফা খাতুন (৫২) এলাকার বিভিন্ন এনজিও থেকে মোটা অংকের ঋণ গ্রহণ করেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বেশ কিছু এনজিও কর্মী ওই গৃহবধূর বাড়িতে গিয়ে ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। ঋণের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে শরিফা খাতুন বিষপানে আত্মহত্যা করেন।

জীবননগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ গনি মিয়া বলেন, এনজিওর ঋণের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে বিষপানে তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।

ইত্তেফাক/জেডএইচ

 

প্রতিবেশিনী….৪


আফরোজা  হাসান


বোনকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে নাক-চোখ-মুখ সব ফুলিয়ে ফেলেছে মাহাম। মাহামের ফোলা ফোলা চেহারা থেকে যে লালচে আভা বেড়োচ্ছিলো দেখতে ভীষণ ভালো লাগছিলো আয়ানের। এমনিতে মাহামের চোখে অশ্রু সে সহ্য করতে পারে না। কিন্তু নিজের দোষে যখন মানুষ কান্না করে তখন তাকে সহানুভূতি না দেখিয়ে কাঁদতে দেবার পক্ষপাতী সে। গতকালও আয়ান মাহামকে বলেছে অনেক হয়েছে তোমাদের প্রতিবেশী প্রতিবেশী খেলা। এখন দুষ্টুমি বন্ধ করে নিজেরা একটু শান্ত হও এবং আমাদের দুই ভাইকেও শান্তি দাও। কিন্তু কে শোনে কার কথা! আর কেউ যদি কারো কথা শোনেও শাবাব ও মাহাম সেই কেউয়ের সারিতে দাঁড়ানোর পাত্রী না। ওরা হচ্ছে, তোরা যে যা বলিশ ভাই মোদের দুষ্টুমি করা চাই।

ভাইয়া দুইজনের কান্না বন্ধ করার ব্যবস্থা করো। নয়তো ফ্ল্যাট ভেসে যাবে চোখের জলে।

আরিফীর চাপা স্বরের কথাগুলো কানে আসতে বৌয়ের দিক থেকে চোখ সরিয়ে ভাইয়ের দিকে তাকালো আয়ান। তুই ফিসফিস করছিস কেন? প্রশ্ন করলো।

আরিফী গলার স্বর আরো এক ধাপ নামিয়ে বলল, কথার চাপে গুম হয়ে যাওয়ার ভয়ে ভাইয়া। তুমিও আস্তে কথা বলো নয়তো বাক্য বাণে জীবন পাখী সাঙ্গ হয়ে যেতে পারে।

আয়ান হাসি চেপে বলল, শাবাবের হাতে গরম তেল পড়লো কিভাবে?

ভাইয়া তুমি যদি কখনো শাবাবকে রান্না করতে দেখো তাহলে তোমার মনেহবে বাস্কেট বল খেলা দেখতে এসেছো।

এমন মনে হবে কেন? বেশ অবাক কণ্ঠে প্রশ্ন করলো আয়ান।

শাবাব যেভাবে দূর থেকে পেঁয়াজ-রসুন-মসলা কড়াইয়ের দিকে ছুঁড়ে দেয়। তাতে আমার কাছে মনেহয়েছে কড়াই হচ্ছে বাস্কেট আর পেঁয়াজ-রসুন-মসলা হচ্ছে বল।

আরিফীর কথাগুলো কানে যেতেই ফোঁস করে উঠলো মাহাম। আমার বোনের খেয়াল রাখতে পারো না। এখন আবার মজা করছো?

আরিফী বলল, তোর কথা শুনে তো মনেহচ্ছে আমি ডালের চামচ দিয়ে কড়াই থেকে তেল উঠিতে তোর বোনের হাতে ঢেলে দিয়েছি।

মাহাম বলল, আয়ান দেখেছো কিভাবে কথা বলে তোমার ভাই? থাপ্পড় দাও ধরে একটা।

সাথে সাথে আয়ান বলল, আরিফী তোর দুই গালে টাস টাস করে দুই থাপ্পড় মারলাম কল্পনা করে নে।

কল্পনা করবে কেন? চোখ বড় বড় করে প্রশ্ন করলো মাহাম।

আয়ানস্টাইন কি বলেছেন ভুলে গিয়েছ? কল্পনা বাস্তবতার চেয়ে শক্তশালী।

আইনস্টাইন কবে এই কথা বললেন? উনি বলেছেন জ্ঞানের চেয়ে কল্পনা গুরুত্বপুর্ণ।

আরিফী বলল, ভাবীজান আপনি শুনতে ভুল করেছেন। ‘কল্পনা বাস্তবতার চেয়ে শক্তশালী’ কথাটা আইনস্টাইন না আয়ানস্টাইন বলেছেন।
খিলখিল করে হেসে উঠলো শাবাব। সাথে যোগ হলো আরিফীর হাহাহা। হেসে ফেললো আয়ানও। ধীরে ধীরে মাহামের মুখেও ফুটে উঠলো হাসি।
সবার সম্মিলিত হাসি মরুভূমির বুকে যেন ঝরিয়ে দিয়ে গেলো এক পশলা ঝমঝম বৃষ্টি। ধীরে ধীরে মনখারাপের মেঘ কেটে গিয়ে উঁকি দিলো ভালোবাসার আভা ছড়ানো সূর্যি কিরণ। আরিফীকে শাবাবের সেবাযত্ন করার দায়িত্ব দিয়ে মাহাম আর আয়ান রান্নাঘরে গেলো। দুজন মিলে রান্না করলো এবং চারজন মিলে খেলো। আরিফীকে বৌয়ের প্রতি খেয়াল রাখার ব্যাপারে বিশাল লেকচার দিয়ে মাহান ও আয়ান নিজের ফ্ল্যাটে গেলো।

রাতে ঘুম ভেঙ্গে যাবার পর পাশে তাকিয়ে বিছানায় মাহামকে না দেখে বেশ অবাক হলো আয়ান। আলো জ্বালিয়ে দেখলো পনে তিনটা বাজে। ড্রইংরুমে আলো দেখে উঠে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো সেদিকে। সোফার উপর পা তুলে বসে খুব মনোযোগ দিয়ে মাহামকে লিখতে দেখে বিস্ময়ের মাত্রা আরো বেড়ে গেলো।
আয়ানকে দেখে মাহাম বলল, তুমি উঠে এসেছো যে? আমি তো কোন শব্দ করিনি।

এত রাতে তুমি কি লিখছো?

হাসলো মাহাম। আমার ঘুম আসছিলো একদম। তাই ভাবলাম তোমাকে নিয়ে উপন্যাস লেখাটা শুরু করে দেই। মনের ভেতর কিছু শব্দও ঘোরাফেরা করছিলো।

দেখি কি লিখেছো। হাত বাড়িয়ে দিলো আয়ান মাহামের দিকে। মাহামকে ডায়েরী তার হাতে রাখতে দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছিলো না আয়ানের। তার একশো ভাগ ধারণা ছিলো মাহাম কিছুতেই তাকে এখন পড়তে দেবে না।

তুমি পড়তে থাকো আমি কফি নিয়ে আসি দুজনের জন্য। একদম ফজর পড়ে ঘুমোতে যাবো।

পাশে কফির মগ রাখার শব্দে আয়ান ডায়েরী থেকে চোখ তুলে তাকালো। মাহাম হেসে বলল, কেমন হয়েছে আমার গল্পের শুরু?

সত্যি করে বলবো?

অবশ্যই সত্যি করে বলবে।

আয়ান হেসে বলল, ভীষণ রকম এলোমেলো তোমার শব্দরা। কিন্তু ভালোবাসা আর মুগ্ধতায় মাখামাখি সব অনুভূতি।

প্রথম লিখছি তো সেজন্য। ইনশাআল্লাহ একদিন দেখবে আমি আমার শব্দদেরও গুছিয়ে ফেলবো। আমি কি ঠিক করেছি জানো? তোমার আমার জীবনের প্রতিটি সুন্দর মুহুর্তকে আমি বন্দি করে ফেলবো শব্দে শব্দে। তারপর ছড়িয়ে দেবো।

ছড়িয়ে দেবে মানে?

ছড়িয়ে দেবো মানে হচ্ছে ছড়িয়ে দেবো। আমাদের মুহুর্তরা কারো মনে দোলা দিয়ে যাবে সুখানুভূতির প্রহর হয়ে, কাউকে ভেজাবে জোছনার শিশিরে, কারো জীবন বীণায় তুলে যাবে সুর, কারো পাশে থাকবে আকাশ হয়ে, কাউকে বোঝাবে প্রতীক্ষিত অনুভূতির ভাঁজে ভাঁজে লুকায়িত আকুলতা, কারো মনে ঝরবে আনন্দানুভূতির শ্রাবণ হয়ে।

কি জানি ছিলো মাহামের কণ্ঠে আয়ানের চোখ ভিজে গেলো।
আয়ানের চোখে অশ্রু দেখে থমকে গেলো মাহাম। পর মুহুর্তেই হেসে ফেললো। হাত বাড়িয়ে আঙ্গুলে জড়িয়ে নিলো আয়ানের চোখ থেকে ঝরে পড়া ভালোবাসার শিশির বিন্দুটিকে। আয়ানের চোখে চোখ রেখে বলল, এই এক বিন্দু অশ্রুকণা ঝরাবার অপরাধে আমি সারাজীবন তোমার জন্য সিক্ত রাখবো আমার আঁখিদ্বয়। কিছুটা থেকে বললো ইনশাআল্লাহ।

মাহামের কান ধরে ঝাঁকিয়ে দিলো আয়ান। তারপর কাছে টেনে নিয়ে বলল, তুমি কথা খুব বেশি বলো বুঝেছো? জাস্ট হোল্ড ইউর টাংক এন্ড লেট মি লাভ……

চলবে……

পর্ব-৩

 

পুত্র-পুত্রবধূদের আর ‘বোঝা’ হলেন না জবেদা


নারী সংবাদ


পুত্র আর পুত্রবধূদের আর বোঝা হয়ে রইলেন না জবেদা খাতুন। হাসপাতালের বেড থেকেই বিদায় নিলেন চিরতরে। এ বৃদ্ধার ‘বোঝা’ যেন আর বইতে না পারছিলেন না তার পাষ- ছেলেরা ও তাদের স্ত্রীরা। তাই রাতের আঁধারে তাকে ফেলে গিয়েছিলেন রাস্তায়।

রাতের আঁধারে নিজ সন্তানরা তাকে রাস্তায় ফেলে গেলেও দুই শিক্ষার্থীর মানবিক দৃষ্টিতে পড়েন তিনি। তাকে উদ্ধার করে ঠাঁই দেয়া হয় হাসপাতালের বিছানায়। সেখানে জীবন-যন্ত্রণায় কাঁতরিয়ে অবশেষে ১৪ দিন পর সোমবার রাত সোয়া ৮টার দিকে না ফেরার দেশে চলে গেলেন জাবেদা খাতুন।

জানা গেছে, গত ৩১ অক্টোবর রাতে তার সন্তানরা মাদারীপুর শহরের শকুনী লেকের উত্তরপাড়ে রাস্তায় ফেলে রেখে যান। পরদিন সকালে সরকারি নাজিমউদ্দিন কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী বিলাস হালদার ও মেহেদী ইসলাম হাঁটার সময় বৃদ্ধাকে পড়ে থাকতে দেখে এগিয়ে যান। গিয়ে দেখেন হাতে-মাথায় রক্তাক্ত অবস্থায় তিনি পড়ে আছেন। তাৎক্ষণিকভাবে তারা বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যান।

ওই বৃদ্ধা প্রথম দিন নিজের নাম আর সন্তান-বউ মিলে ফেলে রেখে যাওয়ার কথাটুকুই শুধু বলতে পেরেছিলেন। স্বামীর নাম অজয় মল্লিক, ছেলেদের নাম আলমগীর ও সোবাহান বলেছিলেন। তারপর থেকে তিনি আর কথা বলতে পারছিলেন না। কিছুটা স্মৃতিশক্তি হারানো জবেদা এরপর অপেক্ষা করতে থাকেন মৃত্যুর।

মাদারীপুর সিভিল সার্জন ডা: ফরিদ উদ্দিন মিঞা বলেন, হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে আমাদের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে কিছুটা ভালো হলেও শুক্রবার সকাল থেকে অবনতি হয়। সোমবার রাত সোয়া ৮টার দিকে তার মৃত্যু হয়। সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

রূপচর্চা ও স্বাস্থ্যে শশা


ঘরকন্যা

শশা সবসময় পাওয়া শীতকালীন সবজি। শশার রস চোখের নিচে কালি, ত্বক, চুল ও স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ দরকারি।

আজকে শশা কাটা আর রস এর কিছু ব্যবহার সম্পর্কে জানি।

কিছু দরকারী ব্যবহার:

১.শসায় প্রচুর পানি থাকে তাই, শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে মনকে প্রশান্ত করে তোলে। শসা ভিটামিন বি–এর খুব ভালো একটি উৎস, যা আমাদের মেজাজ ভালো করে ও মস্তিষ্কের সক্রিয়তা বাড়ায়।

২. শশার রসের বিস্ময়কর হল, রোদে-পোড়া দাগ ও ত্বকের চুলকানি সারাতে সাহায্য করে। চোখের ফোলাভাব কমাতে এক ফালি শসা চোখে দিয়ে রাখতে পারেন।।

৩. শসায় থাকা সিলিকন ও সালফার চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

৪.শশার উপকারিতা ভীষণ। শসা নিয়ে মুখের ভেতরের তালুতে রেখে জিহ্বা দিয়ে ৩০ সেকেন্ড চেপে রাখলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়ে যাবে।

৫.কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয় শশায় থাকা ফাইবার এবং ভিটামিন এ, বি-জটিল এবং সি মত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি সরবারহ করে। এই পুষ্টি শরীরের কোলেস্টেরল মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

৬.নিয়মিত শসা খাওয়ার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।

৭.সার পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। শশাতে ম্যাগনেসিয়াম রক্ত চলাচল সচল করে।।

৮.ত্বকের উজ্জ্বলতা ও মসৃণ হবার জন্য যুগ যুগ ধরে ঘরে ঘরে শশা ব্যবহার করা হয়।

৯.চোখের নিচের কাল দাগ কমাতেও শশার কোন জুরি নেই।

 

ক্যান্সার ঝুঁকিতে বাংলাদেশে প্রায় ৬ কোটি নারী


নারী সংবাদ


বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। বিভিন্ন বাঁধা বিপত্তি পেড়িয়ে এক সময়ের ‘তলা বিহীন ঝুড়ি’ রাস্ট্রটি আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিত। সবক্ষেত্রেই উন্নতি আজ দৃশ্যমান। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেশের আরো বেশি অগ্রগতি দরকার। বিশেষ করে চিকিৎসা বিজ্ঞানে। রোগ ব্যাধির ক্ষেত্রে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে। কিন্তু ক্যান্সার এমন একটি রোগ যা থেকে শতভাগ সাফল্য এখনো আসেনি। ক্যান্সার নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই একটি মারাত্মক ব্যধি। তবে নারীর বেলায় বিভিন্ন প্রকারের ক্যান্সারের ঝুঁকিটা যেন একটু বেশিই। যেমন, তিন সন্তানের জননী রাবেয়া ফেরদৌসী। বয়স ৩৭। স্বামী বেসরকারী এক প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। রাবেয়া নিজেও ছিলেন একজন চাকরিজীবি। কিন্তু আজ প্রায় চার বছর হল চাকরী ছেড়ে এখন পুরোপুরি গৃহিনী। কারন সন্তানদের দেখাশোনার কেউ নেই। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে তিনি খুব অসুস্থ। কিছুদিন পর পর আক্রান্ত হচ্ছেন জ্বরে। অনেক ডাক্তার দেখানো আর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা গেল রাবেয়া ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত। একেবারে শেষ ধাপে।
আরেক নারী শাহেদা আক্তার চাকরী করেন এক মোবাইল কোম্পানীতে। স্বামী, এক ছেলে এবং এক মেয়ে নিয়ে ভালই চলছিল তার সংসার। কিন্তু হঠাৎ করেই তার পরিবারে নেমে আসে দুঃখ। পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর জানা যায় শাহেদার ব্রেস্ট ক্যান্সার।
মিথিলার বিয়ে হয়েছে মাত্র এক মাস আগে। এখনো হাতে লেগে রয়েছে বিয়ের মেহেদি। বিয়ের আগে থেকেই তার প্রায় সময় অল্প অল্প জ্বর লেগেই থাকত। জ্বর আসলেই সে প্যারাসিটামল অথবা নাপা খেয়ে নিত। এই জ্বর নিয়ে কখনো ডাক্তারের কাছেও যায়নি মিথিলা।
বিয়ের পর স্বামী বিষয়টি জানতে পেরে নিয়ে যায় তাদের পারিবারিক চিকিৎসকের কাছে। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা গেল মিথিলার ফুসফুস ক্যান্সার। স্বামী-স্ত্রী দু’জনেরই যেন পাঁয়ের নিচের মাটি সরে যায়।
সম্প্রতি পরিচালিত এক জরীপে দেখা যায়, বাংলাদেশর প্রায় ছয় কোটি নারী কোনো না কোনোভাবে ক্যান্সার ঝুকিতে রয়েছেন। শুধুমাত্র সারভাইক্যাল ক্যান্সারে প্রতি বছর ১২ হাজার নারী আক্রান্ত হন এবং এদের মধ্যে ৬ হাজার নারীর মৃত্যু হয়।
অনকোলজিষ্ট অধ্যাপক ড. মো. ইহতেশামুল হক বলেন, বাংলাদেশে মৃত্যুর ষষ্ঠ প্রধান কারণ ক্যানসার।
বাংলাদেশে নারীদের ১৬.৯০ শতাংশ স্তন ক্যান্সারে, ১৫.৬০ শতাংশ জরায়ু ও জরায়ুমুখ এবং ১১.৯০ শতাংশ খাদ্যনালী ও পাকস্থলীর ক্যান্সারে আক্রান্ত। এছাড়াও পুরুষদের ২৩.৯০ শতাংশ খাদ্যনালী ও পাকস্থলীর, ২২.৯০ শতাংশ মুখ গহ্বর এবং ১৫.৯০ শতাংশ ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত।
তিনি বলেন বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ২০ লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত এবং প্রতি বছর নতুন করে এ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন আরও দুই লাখ মানুষ। প্রতি বছর এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেন আরও দেড় লাখ মানুষ- পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি।
গাইনি বিশেষজ্ঞ ড. মনোয়ারা বলেন, বাংলাদেশে ক্যান্সারের প্রবণতা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এরমধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশী। দেশে প্রায় ছয় কোটি নারী কোনো না কোনোভাবে ক্যানসার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
তিনি বলেন, আক্রান্ত নারীদের অধিকাংশই ডাক্তারের কাছে আসেন একেবারে শেষ পর্যায়ে। তখন আসলে ডাক্তারদের আর তেমন কিছুই করার থাকে না। বিভিন্ন প্রকার ক্যান্সারের মধ্যে ব্রেস্ট ক্যান্সারে কোন ধরনের ব্যাথা থাকে না। যার ফলে অধিকাংশ নারীই বুঝতে পারেননা যে তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। এজন্য দরকার সচেতনতা। প্রয়োজন কয়েক মাস পর পর ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে পরামর্শ নেওয়া।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ এর সংখ্যাও অপ্রতুল। সারা দেশে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ আছেন মাত্র ১৫০ জন। এছাড়াও অধিকাংশ হাসপাতালে নেই কোন ক্যান্সার সেন্টার। আবার ক্যান্সার নির্ণয়ের যন্ত্রপাতিও যথেষ্ট নয়। এ বিষয়ে তিনি সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের আরো বেশী জোর ভূমিকা রাখার জন্য আহ্বান জানান।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালের রেজিষ্টার ড. সাইদুর রহমান সোহাগ বলেন, প্রায় সব ক্যান্সারই মরন ঘাতক। এজন্য দরকার দ্রুত সময়ে সঠিক চিকিৎসা।
তিনি বলেন, অনেক সময় রোগ নির্ণয় হতে হতেই রোগীর ক্যান্সারের অবস্থান শেষ ধাপে চলে যায়। এসময় রোগীকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দিয়েও কোন সুফল পাওয়া যায় না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিশেষ করে নারীরা সহজে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে চান না। অল্প অল্প জ্বর থাকলে তারা নিজেরা ওষুধ নিয়ে এসে খেয়ে ফেলেন। কিন্তু এই অল্প অল্প জ্বর ফুসফুস ক্যানসারের প্রধান লক্ষণ। এ থেকে রোগীর ফুসফুস ক্যান্সার হতে পারে যা পরে মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে।
এজন্য দরকার সচেতনতা। বছরে অন্তত একবার ডাক্তারের কাছে গিয়ে চেকআপের পরামর্শ দেন ডা. সোহাগ।

সুত্রঃ বাসস।

 

নবজাতকে দেখতে যাবার সময় কি করবেন


প্যারেন্টিং


পৃথিবীর প্রায় সবাই নতুন শিশুদের খুব পছন্দ এবং ভালবাসে। শিশুরা জন্ম নেয় উজ্জীবিত, সাহস এবং সম্ভাবনা পূর্ণ আলো নিয়ে। সুতরাং তাদের আগমনের পর বিভিন্ন জীবাণু বা নানান ধরনের অসুবিধা থেকে নিরাপদে রাখার দায়িত্ব বাবা মা সহ সকল আত্মীয় স্বজনেরও ।সুতরাং নবজাতককে দেখতে গেলে কিছু বিষয় অবশ্যই মেনে চলা দরকার-

১. বাইর থেকে এসেই নবজাতকে কোলে নেওয়া থেকে দূরে থাকুন।

২.যতক্ষণ না শিশুটির অভিভাবক বা ডাক্তার অনুমতি না দেয় ততক্ষণ অপেক্ষা করুন।

৩.সেখানে আত্মীয় স্বজনের উপস্থিতি কেমন তার ধারণা আগেই জেনে নিন।

৪. শিশুর ধরার আগে হাত ধুয়ে নেওয়া আবশ্যক।

৫. যদি আপনি অসুস্থ হয়ে থাকেন, তাহলে বাসায় থাকুন নবজাতকে দেখতে যাবার প্রয়োজন নেই।

৬.যদি কোন নিয়ম সার্বজনীন হয়, তাহলে ভাল হয় শিশুর সুস্থতার কথা চিন্তা করে তা মেনে চলা।

৭.ছোট বাচ্চা বা স্কুলে যাওয়া বাচ্চাদের জীবাণু থাকতে পারে তাই তাদের নিয়ে নবজাতক দেখতে যাবেন না:

৮. যখন আপনি পৌঁছান, আপনার হাত পা সঠিকভাবে ডেটল বা সেভলন দিয়ে ধুয়ে নিন ।

৯.তীব্র মাত্রার সুগন্ধি ব্যবহার করবেন না।
এমনি ধুমপান করে বাচ্চার কাছে যাবেন না।

১০. খুব দীর্ঘ সময় ধরে সেখানে থাকবেন না।

১১. কোন ক্রমে নবজাতক শিশুর কাছে ভিড় করবেন না।

১২. পরিবার বা প্যারেন্টকে জিজ্ঞাসা না করে কোন ভাবেই শিশুর ছবি সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট করবেন না।

 

চলন্ত বাস থেকে বাবাকে ফেলে মেয়েকে হত্যা


নারী সংবাদ


আশুলিয়ায় চলন্ত বাস থেকে বাবাকে ফেলে দিয়ে বাসের চালক ও তার সহযোগীরা মিলে মেয়েকে অপহরণের পর হত্যা করেছে। হত্যার পর মেয়েটির লাশ মহাসড়কের পাশে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় তারা।

শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ আব্দুল্লাপুর-বাইপাইল মহাসড়কের মরাগাং এলাকা থেকে মেয়েটির লাশ উদ্ধার করে। নিহতের নাম জরিনা খাতুন (৪৫)। সে সিরাজগঞ্জের চৌহালী এলাকার আকবর আলী মণ্ডলের মেয়ে।

নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, জরিনা খাতুন তার বাবাকে নিয়ে শুক্রবার দুপুরে আশুলিয়ার গাজীরচট এলাকায় মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। পরে সেখান থেকে সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে স্বামীর বাড়ি টাঙ্গাইলের উদ্দেশে রওনা দেন। এসময় বাসের মধ্যে চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারসহ কয়েকজনের সাথে তাদের বাকবিতণ্ডা হয়।

একপর্যায়ে বাসের চালকের লোকজন তাদের দুজনকেই মারধর করে। পরে রাত ৮টার দিকে আশুলিয়া ব্রিজের নিচে জরিনার বাবা আকবর আলী মণ্ডলকে চলন্ত বাস থেকে ফেলে দিয়ে মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যায় সুপারভাইজার, বাস চালক ও তার সহকারীরা।

এদিকে বাস থেকে ফেলে দেয়ার পরপরই আকবর আলী বিষয়টি পুলিশকে জানায়। পরে টহল পুলিশের একটি দল পাশের মরাগাং এলাকায় গিয়ে আব্দুল্লাপুর-বাইপাইল মহাসড়কের পাশে ওই নারীর লাশ পড়ে থাকতে দেখে।

পুলিশ জানায়, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে আশুলিয়ার জামগড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে টাঙ্গাইল যাওয়ার উদ্দেশে একটি ফাঁকা বাসে ওঠেন বাবা-মেয়ে। বাসের চালক সেখান থেকে কিছুদূর যাওয়ার পর যাত্রী তোলার কথা বলে সাভারের হেমায়েতপুরের উদ্দেশে রওনা দেয়। এরপর আবার সেখান থেকে ফিরে আশুলিয়ার বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়ক হয়ে আব্দুল্লাহপুরের উদ্দেশে চালাতে থাকে।

এভাবে ঘোরাঘুরি করতে থাকায় বাসচালক, হেলপার ও সুপারভাইজারের সাথে জরিনা বেগম ও তার বাবার বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে বাসটি আশুলিয়া বাসস্ট্যান্ডের কাছাকাছি গেলে বাসের সুপারভারইজার ওচালকের সহকারীরা বৃদ্ধ আকবর আলীকে পিটিয়ে সাথে থাকা ৬০০ টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরে তাকে আশুলিয়া ব্রিজের নিচে চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেয়।

এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার ওসি (তদন্ত) জাবেদ মাসুদ বলেন,‘নিহত নারীর লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। এছাড়াও এ ঘটনায় নিহতের মেয়ের জামাই নুর ইসলাম বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনার সাথে জড়িত বাসচালক, হেলপার ও বাসের নাম শনাক্তের চেষ্টা চলছে।’

ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) তাহমিদুল ইসলাম জানান, বাস থেকে ফেলে হত্যার আগে বাবার পাশাপাশি ওই নারীকেও পিটিয়েছে ঘাতক বাস শ্রমিকরা। কিন্তু টাঙ্গাইলের কোন বাসে তারা বাড়ি যাচ্ছিলেন তা ঠিক করে জানাতে পারছেন না বৃদ্ধ আকবর আলী। এ ঘটনায় একটি মামলা নেয়া হয়েছে। তদন্ত করে অপরাধীদের গ্রেফতারের আওতায় আনা হবে।

 

“প্যারেন্টিং ভাবনা”


সামিমা খাতুন


যেহেতু টপিকস টা প্যারেন্টিং এর উপর, তাই কিছু লিখতে ইচ্ছে করল। যদিও আমি গুছিয়ে লিখতে পারি না।তারপর ও ট্রাইং। পিজিতে বেশ কিছুদিন প্যারেন্টিং ট্রেনিং শেষন ক্লাস নেবার দায়িত্ব ছিল,সেই তাগিদ থেকেই লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে।
আমরা মূলত ভাবি যে প্যারেন্টিং শুধুমাত্র বাবা মা করে থাকেন। এটা ভূল। পরিবারের সিনিয়ররা যেমন বাবা মা, বড় ভাই বোন,নানা,নানী, দাদা,দাদী, মামা,চাচা ইত্যাদি এমন কি স্কুলের শিক্ষকরাও প্যারেন্টিং করে থাকেন এবং প্যারেন্টিং এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তাই প্যারেন্টিংটা সবসময় পজিটিভ হচ্ছে কিনা এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হওয়া উচিত।

প্যারেন্টিং স্টাইল মূলত ৪ ধরনের। আমি সংক্ষেপে বর্ণনা করছি।

১*অথোরেটারিয়ান: এই পদ্ধতিতে বাবা মা কড়া শাসনের মধ্যে সন্তানের মানুষ করতে চান। আদেশ করা মাত্র ই সন্তানরা তা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলবে এটাই প্রত্যাশা করেন। কোন ব্যাখ্যা ছাড়াই নিয়মকানুন মানতে বাধ্য থাকবে। “আমি বলছি তাই মানতে হবে'” এই জাতীয় মনোভাব থাকে প্যারেন্টসদের। সন্তাদের কোন স্বাধীনতা থাকেনা।এক্ষেত্রে বাচ্চারা কম আত্মমর্যাদা ও কম আত্মবিশ্বাসী হয়।

২*পারমিসিভ: এটা অথোরেটারিয়ান স্টাইলের সম্পূর্ণ বিপরীত। এখানে কোন নিয়ম কানুন থাকে না। থাকলেও খুব ই এলোমেলো। শিশুর সব চাহিদা বলা মাত্র পূরণ করা হয়। শিশু টি বিপদের দার প্রান্তে পৌছনোর সম্ভাবনা না থাকলে শিশু যাই করতে চায় তাতেই পিতামাতা অনুমিত দেন। শিশুদের প্রতি সমাজের কি চাহিদা, প্রত্যাশা সেই সম্পকের বাবা মা কোন ধারনা দেন না।সন্তান রা নিজেদের চাহিদার কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে। এই শিশু কিশোরেরা পরবরতীতে হটকারী,অসংযত, আক্রমণাত্মক, অবিবেচক হয়।

৩*আন ইনভ্লমেন্ট: এক্ষেত্রে দেখা যায় বাবা মা সন্তানের কোন খোজ খবর রাখেনা। সন্তান রা যা খুশী করার সুযোগ পায়। শিশু ভালো কাজ করলেও খোজ রাখেনা,প্রশংসা করে না আবার ক্ষতিকর কাজ করলেও তা জানার চেষ্টা করে না। আর্থিক সংগতি থাকলে টাকা পয়সা দিয়ে বাবা মা তাদের দায়িত্ব শেষ করেন।কোন ধরনের গাইড লাইন তারা দেন না। সারা রাত শিশু জরে ভুগছে,কেউ জানতে ও পারলো না সে অসুস্থতায় কষ্ট পেল। শিশু তখন অনুভব করলো কেউ তাকে ভালোবাসে না। সে একাকীত্ব বোধ করে,সম্পক গুলো নিয়ে ককনফিউজড হয়,হীন মন্যতায় ভূগে।

৪:অথোরেটেটিভ: এই পদ্ধতিতে শিশুর জন্য পরিকল্পিত ও সুনির্দিষ্ট নিয়মকানুন থাকে, একটি নির্দিষ্ট সীমারেখা থাকে। এই সীমারেখার মাঝে সে স্বাধীনতা ভোগ করে। আলোচনার মাধ্যমে নিয়ম কানুন গুলো কখনো সামান্য ঢিলা দেওয়া হয়। শিশুরা বুঝতে পারে এই নিয়ম কানুন গুলো তাদের ভালোর জন্য।বাবা মার সাথে আলোচনার পথ খোলা থাকে।তারা জানে বকোন সমস্যায় পড়লে নিরভয়ে বাবা মায়ের সাথে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান সম্ভব। সমস্যা শুনেই বাবা মা প্রথমেই বকা দেবেন না,শুধু শুধু তাদেরকে দোষারোপ করবে না এইটুকু নিশ্চায়তা তারা পায়।এই পদ্ধতিতে বাবা মা নিয়ম তৈরী করে দেন কিন্তু তার বাস্তবায়নের দায়িত্ব অনেকাংশ সন্তানের হাতে তুলে দেন।শিশু কোন ভুল করলে বাবা মা তাকে তিরস্কার না করে শিশুর সাথে বসেন,বোঝার চেষ্টা করেন এবং ঠান্ডা মাথায় আলোচনা করেন। নিজেদের প্রত্যাশা কথা শান্ত অথচ দৃঢ়ভাবে জানিয়ে দেন এবং ভবিষ্যৎ এ এই ভুল থেকে কিভাবে মুক্ত থাকা যায় সেটা নিয়ে আলোচনা করেন।এর ফলে শিশুরা আত্মবিশ্বাসী, আত্মমর্যাদাপূর্ন এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ করতে শিখে যায়।

আপুরা এবার আপনারা নিজেরাই নিজেদের প্রশ্ন করুন কোন প্যারেন্টিং স্টাইল টা আপনার ভালো মনে হয়েছে?কোন টি আপনার শিশুর জন্য ইফেক্টিভ?আপনিও এখনো কোন প্যারেন্টিং স্টাইলের মধ্যে আছেন?

শিশুর আচরনের জন্য কখনোই শিশু দায়ী নয়,প্যারেন্টিং স্টাইল পজেটিভ হলে শিশুর আচরনও পজেটিভ হবে। মনোবিজ্ঞানীদের মতে অথোরেটেটিভ স্টাইল টা এখন পর্যন্ত বেস্ট।

আসুন পজেটিভ প্যারেন্টিং করি, শিশুদের ভাল আচরণ শিখতে সহায়তা করি।

 

পেশা যখন কাপড় সেলাই


মেইক ইউরসেলফ


কাপড় সেলাইয়ের সঙ্গে মানুষ যুক্ত অনেকে আগে থেকেই। আর এই কাপড় সেলাই অর্থাৎ দর্জির কাজ ইচ্ছা করলেই পেশা হিসাবে নিতে পারেন যে কেউ। এই পেশাতে আয় উপাজর্ন অনেক। কেননা দুই ঈদ ছাড়াও অন্যান্য উৎসব পর্বনে নতুন কাপড় বানানোর হিড়িক পড়ে যায় পাড়া মহল্লাতে আবার অনেক সৌখিন মানুষ আছে যারা প্রতিমাসেই দর্জি বাড়িতে পা রাখেন। সব মিলিয়ে কেউ এই পেশাতে আসতে চাইলে খুব একটা খারাপ হবে না। আর কেউ যদি চিন্তা করেন কোথায় সেলাই শিখবেন। কিভাবে দোকান শুরু করবেন। কিংবা তার এই পেশার আচরন কেমন হবে তাতে খুব একটা টেনশন নেই। কারণ অন্য পেশার মতো এই পেশাতে খুব চাপ নেই। প্রয়োজন দক্ষতার, সেটি কাজ করতে করতেই চলে আসে। আর আপনার নানা ধরনের আচরন আপনার দোকানে কাস্টমার বাড়িয়ে দিবে। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক দর্জির পেশায় আসতে চাইলে আপনার কি কি বিষয় মাথায় রাখবে হবে, বিষয়গুলো কারণেই আপনার আয় উপার্জন প্রতিদিন বাড়তে থাকবে-

টেইলরের ঠিকানা : দর্জিবাড়ি যদি বাসা থেকে অনেক দূরে হয়, তাহলে অবশ্যই সেটা আপনার জন্য কনভেনিয়েন্ট হবে না।
ফ্যাশন আইডিয়া: ফ্যাশন রেগুলারই পরিবর্তন হচ্ছে। কাজেই দর্জি যদি চলতি ফ্যাশনের চাপা সিগারেট প্যান্টের জায়গায় একছাঁটের সালোয়ার বানিয়ে পরতে দেন, আপনার কি ভালো লাগবে?
দর্জি মাপ: দর্জি মাপ ঠিকমতো না নিলে, মাপে ভুল হলে পোশাক সুন্দর হবে না। অনেকে ফিতে হাতে মেপে নেন ঠিকই, কিন্তু কাগজে ঠিকমতো লিখে রাখেন না, মুখে বলেন মনে থাকবে এবং এই মনে থাকার চক্করেই সাধের পোশাকের বারোটা বেজে যায়।
বেঁচে যাওয়া কাপড়: যে সব থ্রিপিস বা টুপিস কিনি অথবা গজ কাপড়ের ও অনেক সময় দেখা যায় যে, বেশ অনেকখানি কাপড় বানানোর পর রয়ে গিয়েছে। ওই বেঁচে যাওয়া কাপড়টুকু দিয়ে ছোট বাচ্চাদের জামা, পুতুলের জামা, টুকটাক হ্যান্ডিক্রাফটের কাজ ছাড়াও ক্রিয়েটিভ কাজে ব্যবহার করা যায়। অনেক দর্জিই কাপড় ফেরত দেন না, নিজেরাই রেখে দেন। যিনি ফেরত দিয়ে দেন, তিনি নিঃসন্দেহে একজন ভালো দর্জি।
দর্জি টাকা-পয়সা কেমন চার্জ করেন: আমি বাকিদেরটা জানি না, কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে এটা বিশ্বাস করি, সস্তার তিন অবস্থা। দেড়শ’ টাকা মজুরির জামা অবশ্যই কখনো হাজারের কাছাকাছি মজুরির জামার মতো হবে না।
ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকসের না: কিছু টেইলর আছে মুখে মিষ্টি করে আপু ডাকেন ঠিকই, কিন্তু বুকের মাপ নিতে গিয়ে ইচ্ছে করে গায়ে ছুঁয়ে যান।
ডেলিভারি অন টাইম: যেদিন ডেলিভারির ডেট, দর্জি সেদিন সেই সময়েই পোশাক ডেলিভারি করলে অবশ্যই সে একজন ভালো দর্জি।
পোশাকের কাটিং এবং ফিটিংস: দর্জিবাড়িতে কিন্তু আমরা যাই-ই ভালো কাটিং এবং ফিটিংসের ড্রেস পেতে, কাজেই যার হাতের এ কাজ দুটো ভালো না, তার কাছে পোশাক দেয়া মানে বিপদ বাড়ানো।
সুত্র: মানব কন্ঠ।

 

আদিবাসী কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ


নারী সংবাদ


মিরসরাইয়ে এক আদিবাসী কিশোরীকে (১৩) ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার উপজেলার খইয়াছড়া ইউনিয়নের পূর্ব মসজিদিয়া ত্রিপুরা পাড়ার উত্তর পাশের নির্জন পাহাড়ের উপরে এ ঘটনা ঘটে।

শুক্রবার বিকালে এ ঘটনায় কিশোরীর বাবা বাদি হয়ে মিরসরাই থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। ওই মামলায় শিমুল ত্রিপুরা ও মো. মান্নানকে আসামী করা হয়েছে।

এই ব্যাপারে ধর্ষণের শিকার কিশোরী বলেন, বৃহস্পতিবার দৈনিক বেতনের ভিত্তিতে পাড়ার পাশের একটি পাহাড়ে আরো ৫-৭ জন শ্রমিকসহ বাগান পরিস্কারের কাজ করতে যাই। এসময় আমাদের কাজের পরিচালনা করছিলেন গুণধন ত্রিপুরার ছেলে শিমুল ত্রিপুরা। সেখানে আমার দায়িত্ব ছিলো শ্রমিকদের পানি খাওয়ানো। এক পর্যায়ে শিমুল ত্রিপুরা জ্বালানী কাঠ সংগ্রহের কথা বলে আমাকে ডেকে পাহাড়ের উপরে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকে অপেক্ষারত আবুল কাশেমের ছেলে মো. মান্নানসহ শিমুল ত্রিপুরা আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরে আমাকে ছেড়ে দেয়ার সময় তারা বলে, এ ঘটনা যেন কাউকে না বলি, যদি এ ঘটনা প্রকাশ করি তাহলে আমাকে ও আমার বাবা মাকে হত্যা করবে।

এ বিষয়ে মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির জানান, ধর্ষণের ঘটনায় মিরসরাই থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। তদন্তপূর্বক আসামীদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
সুত্র: নয়া দিগন্ত

 

নৈঃশব্দ্যের অনুরণন


লুনা লাবিব


হে পুরুষ!
তুমি পরের জন্মে নারী হয়ে জন্মিও।
তোমার শিশুর মতো কোমল মন
ক্ষতবিক্ষত হবে বৃদ্ধ শকুনীর নখে,
তোমার কৈশোর লুটবে শেয়াল কুকুর
ধান ক্ষেতে,বনে বাদাড়ে।

হেটে যাবে ভরা মজলিশে তুমি
কাফনের সাতপাকে মুড়ে,
তবুও শুকরের জিব চাটবে তোমার বাহু,
শরীরের খাঁজ, দোষ রবে
শুধু পোশাক জুড়ে।

হে পুরুষ!
তুমি কতবার ধর্ষিত হলে
বুঝবে কি জ্বালা আছে লুকিয়ে,
নিহত হওয়ার পরও তোমায় নিলামে
হবে তোলা মাংসের দামে।

বেঁচে যদি গেলে, মরবে পদে পদে
বিচার সালিশে, হলুদ বল্লমে,
ময়না তদন্ত হবে চরিত্রের অনুবীক্ষণে
ধর্ষিত হবে কাগজ কলমে।

হে পুরুষ!
একবার জন্মিও তুমি সেই নারীর শরীরে
যার দেহে কীট হয়ে চুষেছো পুঁজ
বিষাক্ত লালা ঝরিয়ে,
তবুও যদি হয় প্রায়শ্চিত্ত ঐ জনমে।

 

মতিঝিলে বাসায় ঢুকে স্কুলছাত্রীকে ছুরিকাঘাত


নারী সংবাদ


রাজধানীর মতিঝিলের এজিবি কলোনির একটি বাসায় ঢুকে জয়া মণ্ডল (১৫) নামে এক স্কুলছাত্রীকে কুপিয়ে আহত করেছে এক দুর্বৃত্ত। গতকাল বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় লোকজন হাবিব নামে ওই হামলাকারীকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। আহত স্কুলছাত্রীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

জানা যায়, আহত জয়া মণ্ডল মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণীর ছাত্রী। তার বাবা গোপাল চন্দ্র মণ্ডল দুদকের সহকারী পরিদর্শক। তার মা-ও দুদকে চাকরি করেন। মতিঝিল এজিবি কলোনির ৭৯/৩ নম্বরে তাদের বাসা।
সূত্র জানায়, গতকাল বেলা ৩টায় বাসায় একাই ছিল জয়া। এ সময় হাবীব (৩০) নামে ওই যুবক বাসায় ঢুকে তার মাথায় এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করতে থাকে। এ সময় জয়ার চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। তারা হামলাকারীকে আটক করে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে দেয়।

ওই যুবক কী কারণে এই ঘটনা ঘটিয়েছে জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। আহতের পরিবারও এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানাতে পারেনি।
সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

বৈবাহিক সমস্যা ও কোরআনের সমাধান -৩


কানিজ ফাতিমা


আমরা যখন স্ত্রীদের শাস্তি প্রদান (Chastisement) এবং এর ফলে সৃষ্ট আঘাত, কষ্ট ও অপমানের ব্যাপারটি বিবেচনা করবো তখন একটি কথা আমাদের মনে রাখা উচিত যে কষ্ট, ভয় বা উদ্বেগএর (suffering, fear and anxiety) পরিণাম হল ঘৃণা, বিচ্ছিন্নতা ও অনীহা (hate, isolation, apathy)। পক্ষান্তরে ভালবাসা, সম্মান ও বিশ্বাস (love, respect, trust) এর পরিণাম হল সহৃদয়তা, ত্যাগ ও উৎসাহ (Charity, dedication, and enthusiasm)

আমাদের ইতিহাসে দেখা যায় যে, বিগত কয়েক শত বছর ধরে মুসলিম উম্মাহকে কঠিন দমন ও অপমান সহ্য করতে হয়েছে এবং হচ্ছে। এর ফলে স্বৈরশাসন ও ক্ষমতার সুবিধা ভোগের {বা অপপ্রয়োগের} একটি সংস্কৃতি ও মানসিকতা এ উম্মাহর মধ্যে তৈরি হয়েছে। অধিকাংশ সমাজেই এ সংস্কৃতি শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় যন্ত্রগুলোর (state police or security apparatus) মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং এটি সমাজের সাধারণ সংস্কৃতিরও অংশ হয়ে দাড়িয়েছে। ফলে সমাজে দূর্বল অংশের উপর সবল অংশ ক্ষমতা ও শক্তি প্রদর্শন করে। অথচ এ সংস্কৃতিটি ইসলামের মূল স্পিরিটের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য ইসলামী সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ যেখানে সুন্নাহ হল “মসলিম উম্মাহ একটি ইমারতের মত যার এক অংশ অন্য অংশকে দাড় করিয়ে রাখে।” “মুমিনদের উদাহরণ হচ্ছে একটি দেহের মত যার একটি অঙ্গ অসুস্থ হলে অন্য সব অঙ্গ মিলে ঐ অঙ্গের সুস্থতার জন্য কাজ করে।”
হাদিসে এসেছেঃ “প্রতিটি মুসলিম একে অন্যের ভাই। কাজেই তারা একে অন্যকে নির্যাতন, অপমান বা ত্যাগ করবে না। একজন মুসলিমের অন্যায়ের জন্য এটাই যথেষ্ট যে সে তার ভাইকে ছোট(বা অপমান) করবে।”
“আল্লাহ সেই ব্যক্তির উপর রহমত করেন না যে অন্যকে দয়া দেখায় না ।”
“আল্লাহ তার দয়ালু বান্দাদের উপরই রহমত করেন।”
“একজন ঈমানদার কখনওই অপবাদ রটনাকারী, মানুষকে নিয়ে ঠাট্টাকারি বা অশ্লীল ও অশালীন হতে পারে না।”
“ঈমানদারদের মধ্যে তার ঈমানই সর্বাপেক্ষা মজবুত যার নৈতিকতা সর্বাপেক্ষা উত্তম এবং তোমাদের মধ্যে সেই সর্বাপেক্ষা উত্তম যে তার পরিবারের প্রতি উত্তম।”
একটি হাদীসে উল্লেখ্য আছে যে, হযরত মুহাম্মদ(সা) একজন ব্যক্তিকে কঠিনভাবে ভৎসনা করেছিলেন কারণ সে তার স্ত্রীকে পিটিয়েছিল। “যে তার স্ত্রীকে ভৃত্যের মত পেটায় আবার তার সঙ্গে শুতে লজ্জাবোধ করেনা। ” (বুখারী , vol-6)। মুসলিম শরীফে vol-6 উল্লেখ আছে যে, আল্লাহর পথে জিহাদ ব্যতীত, হযরত (সা) কোন নারী , ভৃত্য অথবা কোন ব্যক্তির উপর কখনও হাত তোলেননি। [এমনটি যুদ্ধকালীন অবস্থায়ও শত্র“পক্ষের নিরীহ নারীদের প্রতি অঘাত করা নিষিদ্ধ ছিল।] রাসুল (সাঃ) আরও বলেছেন “ তোমাদের মধ্যে অনেক মহিলা তাদের স্বামীদের নির্যাতনের ব্যাপারে রাসুলের পরিবারের কাছে শোক প্রকাশ করতে আসে। এই নির্যাতনকারী স্বামীরা কখনওই উত্তমদের অন্তর্ভূক্ত নয়।” (আবু দাউদ, VOL-8 No-2146, P-608)
সূরা নিসার ব্যবহৃত ‘দরাবা’ এর সঠিক ধারণা পেতে হলে আমাদের ইসলামের এই সাধারণ মূলনীতিগুলোর আলোকে বিষয়টিকে দেখতে হবে। এবং এর সাথে সাথে বর্তমান আধুনিক সময়ে মুসলিম পরিবারগুলোর কাঠামোকেও আমাদের বিবেচনায় আনতে হবে।
এখানে দুটি বিষয় বিশেষ গুরুত্বপূর্ন-
প্রথমত, সূরা নিসার ৩৪ও ৩৫ নং আয়াতকে (যাতে এই শ্বাস্তির ব্যাপারটি বিধৃত হয়েছে) বিচ্ছিন্নভাবে ব্যাখা করা যাবে না। এ আয়াতের ব্যাখার ভিত্তি হতে হবে সূরা রূমের ২১ নং আয়াত যেখানে আল্লাহ পারস্পরিক দয়া ও ভালবাসাকে বিবাহের উদ্দেশ্য হিসেবে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে।
“আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংঙ্গী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। ” (আর রূম-২১)
শুধু বিবাহের ক্ষেত্রে নয় এমনকি বিবাহ বিচ্ছেদ বা তালাকের সময়ও নারীকে অসম্মান করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
“আর যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দিয়ে দাও, অতঃপর তারা নির্ধারিত ইদ্দত সমাপ্ত করে নেয়, তখন তোমরা নিয়ম অনুযায়ী তাদেরকে রেখে দাও অথবা সহানুভূতির সাথে তাদেরকে মুক্ত করে দাও। আর তোমরা তাদেরকে জ্বালাতন ও বাড়াবাড়ি করার উদ্দেশ্য আটকে রেখো না । আর যারা এমন করবে, নিশ্চয়ই তারা নিজেদের ক্ষতি করবে।” (বাকারা-২৩১)
যেখানে বিবাহরে ভিত্তি সম্প্রীতি ও দয়া এবং এই বিবাহরে সমাপ্তিতেও নারীর প্রতি সহানুভূতি ও সম্মানের কথা বলা হয়েছে সেখানে বিবাহকালীন সময়ে সম্পর্ক ধরে রাখার মাধ্যম হিসাবে আঘাত ও মানসিক যন্ত্রণাকে ব্যবহার ঠিক সামঞ্জস্যশীল মনে হয় না।
দ্বিতীয়ত: অতীতে পরিবারে নারীদের ভূমিকা একরকম ছিল। তখন মহিলাদের সকল কার্যক্রম পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। অর্থনৈতিক কার্যক্রম থেকে তারা বিরত থাকতেন। অন্যদিকে পুরুষরা অর্থনৈতিক দায়িত্ব পালন করত। পুরুষদের এই অর্থনৈতিক শক্তি তাদেরকে বাড়তি ক্ষমতা প্রদান করত। অর্থনৈতিক ব্যাপারে পুরুষদের উপর নির্ভরশীলতা নারীদেরকে ক্ষমতাহীন করে রাখতো ফলে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও তারা পুরুষদের উপর নির্ভর করতো। কিন্তু বর্তমানে এ চিত্রের পরিবর্তন ঘটেছে। পরিবারে নারী ও পুরুষের এ ভূমিকায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। পুরুষের উপর নারীর অসহায় নির্ভরশীলতা কমেছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে; ফলে নারীদের উপর পুরষের একচ্ছত্র ক্ষমতা ব্যবহারের ক্ষেত্রও হ্রাস পেয়েছে। কাজেই বর্তমান সময়ে পরিবারের কোন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে বা স্বামী-স্ত্রীর কোন বিরোধ নিরসনে পরিবারের এই কাঠামোকে বিবেচনায় রেখেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

চলবে….

পর্ব-২

 

‘আমিই মার্কিন কংগ্রেসে প্রথম হিজাবধারী মুসলিম নারী’

নারী সংবাদ

সোমালি বংশোদ্ভূত ৩৭ বছরের ইলহান ওমর এবং ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত ৪২ বছরের রাশিদা তালেব – এরা দুজনেই ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী ছিলেন। এরা দুজনেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসী-বিরোধী এবং মুসলিম-বিরোধী বাগাড়ম্বরের প্রকাশ্য এবং ঘোরতর সমালোচক।

মঙ্গলবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনে জিতে এরা ইতিহাস তৈরি করেছেন। তারাই প্রথম দুই মুসলিম নারী যারা মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য হচ্ছেন। রাশিদা তালেব জিতেছেন মিশিগান রাজ্য থেকে। ইলহান ওমর জিতেছেন মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের একটি আসন থেকে।

যুক্তরাষ্ট্রে এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক মুসলিম প্রার্থী প্রতিযোগিতা করেছেন। একটি মুসলিম সংগঠনের দেওয়া হিসাবে, মুসলিম প্রার্থীর সংখ্যা ছিল, একশর কাছাকাছি।

‘স্বপ্নের সীমা নেই’
জেতার পর তার প্রথম ভাষণে, ইলহান ওমর বলেন,” মিনেসোটায় আমরা অভিবাসীদের শুধু সাদরে বরণই করিনা, আমারা তাদের ওয়াশিংটনে পাঠাই। আজ রাতে অনেকগুলো ‘প্রথম’ বিশেষণের অধিকারী হিসাবে আপনাদের সামনে দাঁড়িয়েছি – প্রথম অশ্বেতাঙ্গ হিসাবে আমি এই রাজ্যকে কংগ্রেসে প্রতিনিধিত্ব করতে চলেছি, হিজাব পরিহিত নারী হিসাবে কংগ্রেস যাচ্ছি, আমিই প্রথম শরণার্থী যে কংগ্রেসে নির্বাচিত হয়েছি, এবং প্রথম একজন মুসলিম নারী হিসাবে কংগ্রেসে যাচ্ছি।”

হিজাব-পরিহিত ইলহান ওমর ১৪ বছর বয়সে বয়সে পরিবারের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসনে আগে কেনিয়ার একটি শরণার্থী শিবিরে চার বছর কাটিয়েছিলেন।

স্থানীয় একটি গির্জার স্পন্সরশীপে ১৯৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তার পরিবার মিনিয়াপোলিসে আসার সুযোগ পান। বিভিন্ন সূত্রের খবরে জানা গেছে, ১৪ বছর বয়সে যখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রে, ইলহান ওমর সামান্যই ইংরেজি জানতেন এবং মাত্র তিন মাসের ভেতর ভাষা রপ্ত করে ফেলেন। তখন থেকেই তার দাদার অনুবাদক হিসাবে সাথে ডেমোক্র্যাটদের বিভিন্ন সভায় যেতে শুরু করেন।

তিনি সার্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কট্টর সমর্থক। একইসাথে, ঘণ্টায় কমপক্ষে ১৫ ডলার মজুরীর পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন।

এর আগে ২০১৬ সালে মিনেসোটা রাজ্য সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন।

সেই নির্বাচনে জেতার পর তিনি বলেছিলেন, “এ বিজয় শরণার্থী শিবিরে ৮-বছর বয়সী এক শিশুর বিজয়। এই বিজয় একজন তরুণীর যাকে জোর করে অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া হয়। এই বিজয় তাদের যাদের বলা হয় যে তাদের স্বপ্ন দেখার সীমা রয়েছে।”

‘আর দূরে দাঁড়িয়ে থাকা নয়’
ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত রাশিদা তালেব মিমিগান অঙ্গরাজ্যের একটি আসন থেকে বিজয়ী হয়েছেন। তার জন্ম ঐ রাজ্যেরই রাজধানী শহর ডেট্রয়েটের দরিদ্র, খেটে খাওয়া এক অভিবাসী ফিলিস্তিনি পরিবারে।

রাশিদা তালেব: “আমি আমার দুই ছেলের জন্য নির্বাচন করছি যাদের মধ্যে তাদের মুসলিম পরিচিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।”

৪২ বছরের তালেব ১৪ ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে বড়। ২০০৮ সালে তিনি প্রথম মুসলিম নারী হিসাবে মিশিগান রাজ্য পরিষদে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

তিনি জানান, মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে আসা নিষিদ্ধ করা সহ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কিছু রীতির বিরোধিতা করার জন্যই তিনি কংগ্রেস নির্বাচনের দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।

“ইতিহাস রচনার জন্য আমি নির্বাচন করিনি,” এবিসি টিভিকে বলেন রাশিদা তালেব। “আমি অবিচারের জন্য নির্বাচন করেছি। আমাদের ছেলেদের জন্য করেছি যাদের মনে তাদের মুসলিম পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, তারা বুঝতে পারছে না তাদের অবস্থান কোথায়। আমি কখনই দূরে দাঁড়িয়ে দেখার মানুষ নই।”

ডেট্রয়েটের কৃষ্ণাঙ্গ অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে রাশিদা নিজেকে শ্রমিক শ্রেণীর অধিকারের প্রতিভূ হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার সময় রিপাবলিকানদের একটি নির্বাচনী সভায় ঢুকে তালেব মুখের ওপর ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা শুরু করনে। তাকে তখন জোর করে সেখান থেকে বের করে দেওয়া হয়।

বৈষম্য
পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক গবেষণায় দেখা গেছে – যুক্তরাষ্ট্রের ৪৮ শতাংশ মুসলিম অভিযোগ করেছে গত ১২ মাসে তারা কোনো না কোনোভাবে বৈষম্যের শিকার হয়েছে।

৭৫ শতাংশ মুসলিম মনে করে, তাদের বিরুদ্ধে “মারাত্মক” বৈষম্য করা হচ্ছে। প্রায় একই সংখ্যক মুসলিম মনে করে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মুসলিম বিদ্বেষী।

২০১৭ সালের এক হিসাব মতে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমের সংখ্যা সাড়ে ৩৩ লাখ। এই সংখ্যা এক দশক আগের তুলনায় ১০ লাখ বেড়েছে।
সুত্র: বিবিসি।

 

অন্তঃসত্ত্বা নারী হত্যায় একজনের যাবজ্জীবন


নারী সংবাদ


অনৈতিক সম্পর্কের জেরে শ্যালকের স্ত্রীকে হত্যার দায়ে বরিশালে একজনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড, ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। বরিশালের বিশেষ আদালতের (জননিরাপত্তা অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল) বিচারক মো. মোহসিনুল হক মঙ্গলবার এ রায় দেন। দণ্ডিত আসামির নাম নবকুমার সাহা (৩৮)। সে খুলনার রূপসা উপজেলার আইচগতি সাহাপাড়া গ্রামের চিত্ত সাহার ছেলে। নবকুমার বরিশালের উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নের জামবাড়ী গ্রামে থেকে হারতা বাজারে স্বর্ণকারের কাজ করত। জামবাড়ী গ্রামের বাড়িতে সে তার শ্যালকের স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা কল্পনা রানীকে হত্যা করে। ২০১০ সালের ৬ জুলাই রাতে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। নবকুমারের উপস্থিতিতে রায় ঘোষণার পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

মামলার বিবরণীতে জানা গেছে, মাটিকাটা শ্রমিক মিলন কর্মকার স্ত্রী কল্পনা রানীকে নিয়ে নবকুমারের জামবাড়ী গ্রামের বাড়িতে থাকত। এ সুযোগে নবকুমারের সঙ্গে শ্যালকের স্ত্রী কল্পনা রানীর অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

ঘটনার দিন নবকুমারের স্ত্রী দিপা সাহা খুলনায় বাবার বাড়িতে ও ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা কল্পনা রারী উজিরপুরের কাউয়ারেখা গ্রামে বাবা সুভাষ হালদারের বাড়িতে ছিল। নবকুমার ওইদিন কল্পনা রানীকে বাবার বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসে। এ নিয়ে রাতে নবকুমারের সঙ্গে শ্যালক মিলন কর্মকারের ঝগড়া হয়। মিলন ঘুমিয়ে গেলে নবকুমার মিলনের স্ত্রী কল্পনাকে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে অনৈতিক কাজের প্রস্তাব দেয়। এতে রাজি না হওয়ায় নবকুমারের নির্যাতনে কল্পনার মৃত্যু হয়।

পরদিন সকালে মিলনকে ভুল বুঝিয়ে কর্মস্থলে পাঠিয়ে কল্পনার মুখে বিষ ঢেলে নবকুমার আত্মহত্যার নাটক সাজায়। পরবর্তীকালে কল্পনার বাবা সুভাষ হালদার হত্যা মামলা করলে পুলিশি তদন্তে কল্পনার মৃত্যু রহস্য বেরিয়ে আসে।

সুত্র: যুগান্তর।

 

প্রতিবেশিনী……৩


আফরোজা হাসান


রাতের মেঘলা আকাশ খুব ভালো লাগে আয়ানের। আর যদি সেই মেঘলা আকাশটা হয় জোছনা ধোয়া তাহলে তো ভালো লাগার মাত্রা বেড়ে যায় কয়েক গুণ বেশি। মেঘের সমুদ্রে চাঁদের ভাসমান ভেলা, সারাটা ক্ষণ জুড়ে চলে উভয়ের লুকোচুরি লেখা। অবশ্য এই লুকোচুরি খেলা আয়ানকে একাই দেখতে হয় সবসময়। মাহাম শুধু সেদিনই তার সাথে আকাশে চোখ রাখে যেদিন জোছনা বান ডেকে যায় হাজার তারার সমারোহে। এখনো পাশে বসে থাকলেও মাহামের চোখ বইয়ের দিকে।

এত রোম্যান্টিক বই পড়াচ্ছি তোমাকে কিন্তু রোমান্টিক দু’একটা বাক্য শোনার সৌভাগ্যও তো হচ্ছে না আমার কানের। মাহামের পাশে বসতে বসতে বলল আয়ান।

বই বন্ধ করে মাহাম বলল, ছোট ছোট বালুকণা বিন্দু বিন্দু জল, গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল। ভাব-সম্প্রসারণ পড়োনি?

ভাব-সম্প্রসারণ তো পড়েছি কিন্তু মাহাম ভাবের কি সম্প্রসারণ করতে চাইছে সেটা বুঝতে পারছি না।

আমি শব্দে শব্দে ছড়িয়ে দিতে চাই না তোমাকে ঘিরে আমার ভালোবাসা। তাই শব্দদের সংরক্ষণ করছি মনের ভাঁড়ারে। যখন পর্যাপ্ত শব্দ একত্রিত হবে তোমাকে একটা প্রেমের উপন্যাস উপহার দেবো। আমি তো কয়েকটা উপন্যাসের নামও ঠিক করে ফেলেছি। “আমরা দুজন ভাসিয়া আসিয়াছি যুগল প্রেমের স্রোতে” কিংবা “একি সোনার আলোয় জীবন ভরিয়ে দিলে”।

উপন্যাসের শুরুই করবে অন্যের থেকে ধার করা শব্দে?

তাই তো! এভাবে তো ভেবে দেখিনি। আচ্ছা নামও আমিই দেবো আমার শব্দ ভাণ্ডার থেকে। কিন্তু তুমি ঠোঁট টিপে হাসছো কেন? আমি উপন্যাস লিখতে পারবো না ভাবছো?

হাত বাড়িয়ে মাহামকে কাছে টেনে নিয়ে হাসতে হাসতে আয়ান বলল, উহু…এমন ভাবার কোন অবকাশই নেই। আমার তো বরং ধারণা অতি উন্নত মানের উপন্যাস লিখতে পারবে তুমি।

এমন ধারণার পেছনে কারণটা কি জানতে পারি?

অবশ্যই জানতে পারো। একজন ঔপন্যাসিক হবার সব গুণ তোমার মধ্যে আছে। ছোট একটা কথাকে তুমি ইলাস্টিকের মত টেনে লম্বা করতে পারো, রহস্য করতে পারো, বিভ্রান্ত করতে পারো, কথার মার প্যাঁচেও তোমার তুলনা মেলা ভার। আর সব চাইতে বড় কারণ শব্দের সাথে শব্দ বুনে চমৎকার মুগ্ধতার আবেশ সৃষ্টি করতে পারো তুমি।

ঠেলে আয়ানকে কাছ থেকে সরিয়ে দিয়ে চোখ বড় বড় করে মাহাম বলল, তুমি কি বলতে চাইছো সোজাসুজি বলো।

হাসি চাপার প্রাণপণ চেষ্টা করতে করতে আয়ান বলল, আরে আমি তো তোমার প্রশংসা করছি। তুমি রেগে যাচ্ছো কেন?

তোমার সাথে তো আমি আর কথাই বলবো না। বলে তো মাহাম উঠে গজগজ করতে করতে ভেতরে চলে গেলো। মাহামের অভিমান ভাঙাতে আয়ানকেও বাধ্য হয়ে পিছু নিতে হলো।

পরদিন সকালে নাস্তার টেবিলে খাবার মুখে দিয়েই মাহামের দিকে তাকালো আয়ান। স্বাদ-ঘ্রাণ দুটোই অন্যরকম লাগছে খাবারের। আয়ানকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মাহাম হেসে বলল, আজ নাস্তা আমি বানাইনি। হাদিয়া এসেছে।

হাদিয়া এসেছে! কোত্থেকে?

আমাদের প্রতিবেশিনী পাঠিয়েছেন। হাদিয়ার সাথে একটা চিরকুটও ছিল। তাতে লেখা ছিল-“ রাসূল(সঃ)বলেছেন, ‘তোমরা হাদিয়া আদান-প্রদান করো। এর মাধ্যমে তোমাদের মাঝে হৃদ্যতা সৃষ্টি হবে।” অন্য হাদিসে এসেছে, হজরত রাসূল(সঃ)বলেছেন, ‘হে আবুজর! যখন তুমি তরকারি পাকাও তাতে একটু বেশি পানি দিয়ে ঝোল বাড়াও এবং তোমার প্রতিবেশীকে পৌঁছাও।” আর রাসূল (সঃ) স্পেশালি নারীদেরকে এই বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করে বলেছেন, ‘হে মুসলিম নারীগণ! তোমাদের কেউ যেন প্রতিবেশিকে হাদিয়া দিতে সংকোচবোধ না করে। যদিও তা বকরির খুড়ের মতো একটি নগণ্য বস্তুও হয়।”

আয়ান হেসে বলল, যাক তোমার প্রতিবেশিনীর তাহলে অন্যের হকের জ্ঞানও আছে।

হাসলো মাহামও। হ্যা আর শুধু হাদিয়াই না আজ ডিনারের দাওয়াতও দিয়েছে আমাদেরকে। কারণ আজ নাকি হঠাৎ উনার মনে পড়েছে রাসূল(সঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাসী তার উচিত মেহমানের মেহমানদারী করা।” কি নিয়ে যাবো দাওয়াতে সেটা ভাবছি। তুমি কি কোন পরামর্শ দিতে পারো এই ব্যাপারে?

দুম করে বিয়ে করা কাকে বলে তা কি জানো তুমি?

নাতো। কাকে বলে?

যেই বিয়ের পর দুমাদুম শব্দে বৃষ্টির ন্যায় দুশ্চিন্তাটা মনে বর্ষিত হয় তাকে বলে।

আয়ানের কথা শুনে খিলখিল করে হেসে উঠলো মাহাম।

আয়ানও হেসে বলল, আমরা তখন সবে মাত্র মেডিকেলে ভর্তি হয়েছি। আমাদের দুই ক্লাসমেট দুম করে বিয়ে করে ফেললো। বিয়ে মেনে নিলেও উভয় পরিবারই বয়কট করলো দুজনকে। তখন আমরা সব ফ্রেন্ডরা মিলে নিজেদের পকেটমানির টাকা একসাথ করে ওদেরকে ঘর ভাড়া করে দিয়েছিলাম। এবং প্রায় ছয় মাস ধরে একটু একটু করে সবাই মিলে সাজিয়ে দিয়েছিলাম ওদের সংসারকে। সেই সময়ের অনুভূতি, সেই আনন্দ প্রকাশ করার মত না। তখন আমরা একটা জিনিস উপলব্ধি করেছিলাম কাউকে ফুল-কার্ড-চকলেট উপহার দেবার চেয়ে তার প্রয়োজনীয় ও দরকারি কোন জিনিস কিনে দেবার মাঝে উভয় পক্ষের জন্যই কি আনন্দ ও প্রাপ্তি লুকিয়ে থাকে।

শুনেই তো আমার মনে অদ্ভুত আনন্দধারা বইতে শুরু করেছে। হাসিমুখে বলল মাহাম।

এরপর থেকে আমি যখনই আমার কোন ফ্রেন্ডকে উপহার দিতে চাই আগে খোঁজ নিয়ে দেখি তার কোন জিনিসটার প্রয়োজন রয়েছে। আমার কাছে সবসময় মনেহয় উপহার এমন কিছু দেয়া উচিত যেটা ব্যক্তির কাজে লাগবে। ফ্রেন্ডের সন্তানদেরকে উপহার দেবার সময়ও আমি এটা খেয়াল রাখতে চেষ্টা করি। আমাদের সবারই আসলে খেয়াল রাখা উচিত উপহার যেন অপচয়ের মধ্যে শামিল না হয়। আমাদের প্রতিবেশীদের নতুন সংসার। তাই অনেক কিছুর প্রয়োজন থাকতে পারে। তুমি খোঁজ নিয়ে দেখো। দরকারী যেই জিনিসটা দিলে উনারা লজ্জিত বোধ করবেন না কিন্তু উনাদের একটা প্রয়োজন পূরণ হবে এমন কিছু দেবার চেষ্টা করো।

আরেকবার নতুন করে মাহামের মনকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে গেলো আয়ান। মুগ্ধ কণ্ঠে কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে যাচ্ছিলো কিন্তু এই সময় কানে ভেসে এলো চিৎকার ও কোন কিছু পড়ার হুড়মুড় শব্দ! আয়ান ও মাহাম দুজনই উঠে পাশের ফ্ল্যাটের উদ্দেশ্যে ছুট লাগালো…………

চলবে..

পর্ব-২

 

যে কারনে সকালে পানি পান করবেন

 


স্বাস্থ্যকথা


মনে করুন, আগামী আট ঘণ্টায় আপনাকে কোনো তরল কিছু পান করতে দেওয়া হবে না—কোনো জুস, পানি, চা কিচ্ছু না। এটা মনে করেই আপ গলা হয়ত খানিকটা শুকিয়ে গেছে। কিন্তু, আপনি যখন রাতে ঘুমান, তখন ঠিক এই জিনিসটিই ঘটে।

আপনার শরীর ঘুমের মধ্যে পানিশুষ্ক হয়ে যায়, কারণ আপনার শরীর প্রয়োজনীয় তরল পায় না।

শরীরের কার্যকারিতার জন্য বা ভালোভাবে ফাংশন করার জন্য পানির খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই সারাদিনে প্রচুর পানি পান করলে তা আপনার উপকারে লাগে।

তবে, দিনের শুরুতেই, সকালে ঘুম থেকে উঠেই খালি পেটে বড় এক গ্লাস পানি পান করার বিশেষ উপকার আছে। এই অভ্যাসের গুরুত্ব আসলেই আলাদা।

১. আপনার শরীরের পানির অভাব পূরণ করবে
সাত বা আট ঘণ্টা ঘুমের পরে, আপনার শরীর পানিশুষ্ক হয়ে যায়। ঘুম থেকে উঠেই পানি পান করলে শরীরে ভালোভাবে অক্সিজেন প্রবাহিত হয়, এবং এটা মাসল গঠন ও রক্ত কণিকা গঠনে সাহায্য করে।

২. এই অভ্যাস আপনার মেটাবলিজম বাড়ায়
সকালে উঠেই বড় গ্লাসের কমপক্ষে এক গ্লাস পানি পান করলে আপনার মেটাবলিজম বেড়ে যায় ২৪ শতাংশ। এটা আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

৩. পানি আপনার শরীরের বিষাক্ত জিনিস বের করে দেয়
আপনি যখন সকালে কোনো কিছু খাওয়ার আগেই খালি পেটে পানি পান করেন, এটা আপনার কোলন পরিষ্কারে কাজে লাগে। খাদ্যের পুষ্টি উপাদানগুলি শরীরে ভালোভাবে শোষিত হয়। এই অভ্যাসের কারণে আপনার কিডনিও ভালোভাবে কাজ করে।

৪. আপনার ব্রেইনের টিস্যুর ৭৫ শতাংশ-ই পানি
আপনি যখন ডিহাইড্রেটেড বা পানিশুষ্ক থাকেন তখন আপনার ব্রেইন খুব সামান্য পরিমাণ তরল পদার্থ নিয়ে ফাংশন করতে থাকে। এর কারণে আপনি ক্লান্তি বোধ করেন। এর ফলে মাথাব্যথাও হয়। এর কারণে মুড খারাপ হয়ে যায় বা বিষণ্ণতার শুরু হয়।

৫. আপনি দীর্ঘক্ষণ ধরে পরিপূর্ণ থাকেন
পানি আপনার পাকস্থলী পূর্ণ রাখে। সকালে ঘুম থেকে উঠে বড় গ্লাসের এক গ্লাস পানি পান করলে তা সকালের নাস্তার সময় কম খেতে বা কম ক্যালরি গ্রহণে সাহায্য করে। এই অভ্যাসের ফলে আপনি সকালের নাস্তা থেকে দুপুরের খাবার সময় পর্যন্ত ক্ষুধা অনুভব করবেন না, এবং এই মধ্যবর্তী সময়ে এক্সট্রা ক্যালরি গ্রহণ করতে হবে না। সকালে ঘুম থেকে উঠে যেভাবে পানি খেলে সবচেয়ে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে ঘুম থেকে উঠেই দেড় লিটার পানি, ৫ থেকে ৬ গ্লাস পানি পান করুন। পানি পান করার পর এক ঘণ্টা কোনোকিছু খাওয়া বা পান করা থেকে বিরত থাকুন।

মানুষের শরীরের ৭২ শতাংশ পানি। আপনার শরীরের কোন অংশে কী পরিমাণ পানি থাকে তা এখানে থাকছে—
আপনার মাসল বা পেশীর ৭৫ শতাংশ পানি আপনার রক্তের ৮২ শতাংশ পানি আপনার ফুসফুসের ৯০ শতাংশ পানি আপনার মস্তিষ্ক বা ব্রেইনের ৭৬ শতাংশ পানি আপনার হাড়ের ২৫ শতাংশ পানি এ থেকেই বোঝা যায় আপনার শরীরের সুসাস্থ্যের জন্য, শক্তির জন্য এবং ভালোভাবে সচল থাকার জন্য পানি কত প্রয়োজন। ডিহাইড্রেট বা পানিশুষ্কতা থেকে মারাত্মক কিছু হতে পারে। আপনার শরীরের প্রতিটা কোষই টিকে থাকার জন্য পানির উপর নির্ভরশীল। প্রতিটা অং-প্রত্যঙ্গ, টিস্যু পানির ওপর নির্ভর করে।

সুতরাং সকালে উঠেই পানি পান করার অভ্যাস তৈরি করুন, একান্তই যদি বিস্বাদ লাগে সেক্ষেত্রে কিছুটা লেবুর রস মিশিয়ে নিন।

 

বিয়ে বিচ্ছেদে অনিশ্চিত সন্তানের ভবিষ্যৎ


রহিমা আক্তার মৌ


বিয়ে বিচ্ছেদ একজন নারীর জীবনে নিয়ে আসে নানা সমস্যা। কিন্তু তার চেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ে এসব পরিবারের সন্তানেরা। তারপরও আমাদের দেশে বিয়ে বিচ্ছেদ বাড়ছে। যা আমাদের শঙ্কিত করে।
এসব নিয়ে লিখেছেন রহিমা আক্তার মৌ

প্রিতুলার বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়েছে বেশ আগেই। প্রিতুলার বাবা সন্তানদের কোনো খোঁজ নেন না, যোগাযোগ বা কোনো খরচও দেন না। প্রিতুলারা দুই বোন মায়ের কাছেই থাকে। মায়ের সামনে কখনোই বাবা শব্দটাও উচ্চারণ করে না প্রিতুলা। ওয়াশরুমে গান গায় প্রিতুলা- ‘আমি যাচ্ছি বাবা… আমি যাচ্ছি।’
বের হওয়ার পর ওর মা জিজ্ঞেস করে-
কি গান করছিলে মা।

‘আমি যাচ্ছি মা… আমি যাচ্ছি।’
মা আবার জিজ্ঞেস করলেই প্রিতুলা সত্যিটা বলে, আর বলে- ‘মা গানটা তো বাবা দিয়েই, তাই ওভাবে গাইলাম।’

ঠিক একই ঘটনা এলিজারও। এলিজার বাবা-মায়ের বিয়ে বিচ্ছেদ হয়। এলিজা মায়ের সাথে থাকে। বাবা মাসে এক হাজার টাকা করে দেয় ওর খরচ। ১৪-১৫ বছর বয়সী একটা সন্তানের মাসের খরচ এক হাজার, সত্যিই মনে হচ্ছে- আট টাকায় এখন এক মণ চাল পাওয়া যায়।

এ সন্তানদের অবস্থা অনেক ভালো বলা চলে। প্রিতুলা বা এলিজার মা আর বিয়ে করেননি। সন্তানকে বুক দিয়ে আগলে রেখে কাটিয়ে দিচ্ছেন নিজের বাকি জীবন। দিন তো ঠিক যাচ্ছে, অবচেতনে প্রিতুলা বাবার গান গাইছে, এলিজা মন দিয়ে বন্ধুদের কাছে বাবার গল্প শুনছে, ওদের দিন কাটছে। এর চেয়ে অনেক কঠিন কিছু ঘটনার সম্মুখীন আমরা। সন্তান নিয়ে মা আবার বিয়ে করলে মায়ের সে স্বামী কিন্তু কখনোই সন্তানের বাবা হয় না, হতে পারে না। সে সন্তান যদি মেয়ে সন্তান হয়, তাহলে মায়ের পরের স্বামী কিন্তু সেই মেয়ের জন্য পর পুরুষ। (ব্যতিক্রম কিছু আছে) এই পরপুরুষ দ্বারা মেয়ে সন্তানের জীবন অতিষ্ঠ হওয়ার কিছু ঘটনাও সকলের জানা। তাই আমাদের ভাবতে হবে সন্তানদের কথা, সন্তানদের ভালো আর ভবিষ্যতের কথা ভেবে একটু ত্যাগের বিনিময়ে হলেও সমঝোতায় আসা উচিত বাবা-মায়ের। বিয়ে বিচ্ছেদে নিজের সুখ আসতে পারে, কিন্তু সন্তানের নয়। বিষয়টা দাঁড়াল বাবা-মা নতুন করে জীবন সাজাতে গিয়ে অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন নিজের সন্তানকে। এ ঘটনার জন্য একা মা বা বাবা দায়ী নন, দায়ী দুজনেই।

ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, প্রতিটা দম্পতির উচিত বিয়ের পর অন্তত দুই-চার বছর অপেক্ষা করে সন্তান নেয়া, নিজেদের মধ্যে বিশ্বাস-বন্ধন অটুট হলে বা দুজন দুজনকে বুঝলে তারপর সংসারে নতুন অতিথির কথা ভাবা। বিষয় হলো এখন অনেক মেয়ের বিয়ে হয় লেখাপড়া শেষ করে, তখন তাদের বয়স পঁচিশের ঊর্ধ্বে হয়ে যায়। ডাক্তারদের মতে অনেক ক্ষেত্রে ত্রিশের ঊর্ধ্বে মেয়েদের সন্তান হওয়ায় সমস্যা দেখা দেয়, তাই বিয়ের পর সন্তান নেয়া জরুরি হয়ে পড়ে। ‘ঢাকা শহরে দিনে ৫০-৬০টি দম্পতির বিচ্ছেদের আবেদন করে।’ এমন একটি তথ্য প্রকাশ পাওয়ার পরে আতঙ্ক দেখা দেয় সচেতন মহলে। বিয়ে বিচ্ছেদ এখন আমাদের সমাজের একটা বিষফোঁড়া, আর বিষফোঁড়ার বিষাক্ত জীবাণু আক্রমণ করছে আমাদের পরের প্রজন্মকে, অর্থাৎ বিয়ে বিচ্ছেদের পরিবারের সন্তানদের।

নারী শিক্ষা, নারী জাগরণ ও নারী নেতৃত্ব বেড়েছে। সাথে বাড়ছে চাকরিজীবী নারীর সংখ্যা। সে হারে পরিবর্তন হয়নি পিতৃতান্ত্রিক বা পুরুষতান্ত্রিক পরিবেশের অবস্থা। বাইরের কাজ করে ঘরের সব দায়িত্ব পালন করেও নারীকে শুনতে হচ্ছে অনেক কথা। দু’দিকে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে একপর্যায়ে নারীরা হাঁপিয়ে উঠছেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, গত সাত বছরে বিয়ে বিচ্ছেদের প্রবণতা বেড়েছে ৩৪ শতাংশ। অল্প শিক্ষিত দম্পতিদের চেয়ে শিক্ষিত দম্পতিদের মধ্যে বিয়ে বিচ্ছেদ হচ্ছে বেশি। এ জন্য অনেকে শিক্ষিত নারীর জীবিকাকে দোষারোপ করছেন, কিন্তু এর পেছনের গল্প অনেকেই খুঁজতে চান না।

একজন চাকরিজীবী পুরুষ বাইরে বেশী সময় দিলে কোন সমস্যা হয় না। কিন্তু একজন চাকরিজীবী নারী চাকরির প্রয়োজনেই বাইরে বেশী সময় দিলে, এই নিয়ে শুরু হয় অশান্তি এবং এর পরিণাম বিয়ে বিচ্ছেদ। এ বিচ্ছেদের ফলে তারা নতুন জীবন বেছে নিলেই তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। মতের অমিল, সমঝোতার অভাব, শ্রদ্ধাবোধের ঘাটতি, পুরুষের আধিপত্য ও পরকীয়ার কারণেই বেশি বিয়ে বিচ্ছেদ হচ্ছে। তবে শারীরিক দুর্বলতা, প্রত্যাশা পূরণের অভাব, পরিবারের সদস্যদের অনধিকার চর্চা, ধৈর্যের অভাব এবং ক্যারিয়ার নিয়ে সমস্যা হওয়ার ফলেও বিয়ে বিচ্ছেদ হচ্ছে অনেক।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিয়ে বিচ্ছেদের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে সন্তানের ওপর। অনেকের মতে, বিয়ে বিচ্ছেদ বাড়ার ফলে স্ত্রীর মৃত্যুর হার কমেছে বললেও পক্ষান্তরে নারী নির্যাতন আর মানসিক সমস্যাগ্রস্তদের সংখ্যা বেড়েছে। সমস্যার বোঝাপড়া না করতে পেরে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে এক সময় কঠিন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয় তারা। কারণ একটা শিশুকে সুন্দর ভবিষ্যৎ দিতে একা মা কিংবা বাবার দ্বারা সম্ভব নয়, সন্তানের বেড়ে ওঠায় বাবা-মা দুজনের প্রয়োজন।

ঢাকা সিটি করপোরেশনের তথ্যানুযায়ী, ২০১০-২০১৬ সাল পর্যন্ত রাজধানীতে বিয়ে বিচ্ছেদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় বায়ান্ন হাজার। হিসাবে মাসে গড়ে ৭৩৬টি, দিনে ২৪টির বেশি এবং ঘণ্টায় একটি তালাকের আবেদন করা হচ্ছে। বিচ্ছেদের যেসব আবেদন নিষ্পত্তি হয়েছে তার মধ্যে ৮৭ শতাংশ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে পরকীয়ার জেরে। কোনো ক্ষেত্রে স্বামীর পরকীয়া, কোনো ক্ষেত্রে স্ত্রীর পরকীয়া হলেও তথ্য বলছে বিয়ে বিচ্ছেদে নারীরা এগিয়ে আছে। জরিপে দেখা গেছে, ৭০.৮৫ শতাংশ বিয়ে বিচ্ছেদের আবেদন করছেন নারী, আর ২৯.১৫ শতাংশ বিয়ে বিচ্ছেদের আবেদন করছেন পুরুষ।

নারীদের হার বেশি হওয়ার পেছনে মনোবিজ্ঞানীরা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। তাদের অনেকেই মনে করেন, সাধারণত নারীরা বেশি নির্যাতিত হওয়ায় তারাই বিচ্ছেদের পদক্ষেপ বেশি নিচ্ছে; তবে এর সাথে ভিন্ন মতামত ও রয়েছে। অনেকে বলেন, মেয়েরা এখন অধিকার সচেতন। সামাজিক ও অর্থনৈতিক দুই দিক থেকেই বেশি অধিকার পেয়ে বিয়ে বিচ্ছেদে আগের চেয়ে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন। মূলত বিয়ে বিচ্ছেদের সবচেয়ে বড় কারণ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ‘বনিবনা না হওয়া’। স্ত্রীর করা আবেদনে কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে স্বামীর সন্দেহবাতিক মনোভাব, পরনারীর সাথে সম্পর্ক, যৌতুক, দেশের বাইরে গিয়ে আর ফিরে না আসা, মাদকাসক্তি, ফেসবুকে আসক্তি, ব্যক্তিত্বের সঙ্ঘাত, নৈতিকতাসহ বিভিন্ন কারণ। আর স্বামীদের আবেদনের কারণ- অবাধ্য হওয়া, ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী না চলা, বদমেজাজ, সংসারের প্রতি উদাসীনতা এবং সন্তান না হওয়াসহ এমন অনেক কারণ।

আমরা যতই নারী উন্নয়নের কথা বলি না কেন, এখনো বেশির ভাগ নারীরা গৃহকাজে রয়েছেন। এখনো অধিক হারে নারী নির্যাতন হচ্ছে। একজন পুরুষ ঘরে থাকেন কতক্ষণ, তিনি সংসারের অনেক ঝামেলাকে আড়াল করতে পারেন বাইরে গিয়ে কাজের মধ্যে, আর নারী অবহেলা নির্যাতন সব সয়ে সংসারেই প্রতিটি সময় কাটিয়ে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস হারাতে বসেন। নিজেকে দুর্বল ভাবতে থাকেন, একপর্যায়ে কাউন্সিলিংয়ের অভাবে তিনি বিয়ে বিচ্ছেদের মতো কাজ করতে বারবার ভাবেন না। আরো একটা বিশেষ কারণ হলো- দুর্বলতার সুযোগ।

একজন নারী যখন পরিবারেই অবহেলিত হন তখন বাইরের একটু ভালো কথা, ভালো লাগা-ভালোবাসা পেলে সে নিজের বোধবুদ্ধি ত্যাগ করে বাইরের ক্ষণিকের ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে ঘর সংসার ভুলে পরকীয়ায় মেতে ওঠে। বাধ্য হয়ে শুরু হয় অশান্তি, যার ফল দাঁড়ায় বিয়ে বিচ্ছেদে। বিবিএসের দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকসের তথ্যে- গত বছর ১৫ বছরের বেশি বয়সী প্রতি এক হাজার নারী-পুরুষের মধ্যে গড়ে ১ দশমিক ৪টি বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে। ২০১৬ সালে যা ছিল ১.৫ (এক দশমিক পাঁচ)। তথ্যে আরো বলা হয়- তুলনামূলকভাবে বর্তমানে বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে বেশি বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে, যা ২.৭ (দুই দশমিক সাত)। আর সবচেয়ে কম চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে .৬ (দশমিক ছয়)। এটিও ঠিক, নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার ফলে নিজের জন্য সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হচ্ছে, তাই বলে বিচ্ছেদে গিয়ে সন্তানদের টানাপড়েনে ফেলে নয়। বিয়ে বিচ্ছেদ সন্তানদের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে উল্লেখ করে রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, বাবা-মায়ের মধ্যে বিয়ে বিচ্ছেদ হলে সন্তানেরা অস্থিরতার মধ্যে বড় হয়, যার প্রভাব বইতে হয় সারাজীবন।

তিনি আরো বলেন, বিশ্বব্যাপী প্রবণতা হলো নারীরা সহজে তালাকের সিদ্ধান্ত নেন না। বাংলাদেশে নারীদের পক্ষ থেকে তালাকের আবেদন কেন বাড়ছে, তা নিয়ে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। অনেক ক্ষেত্রেই মেয়েদের মতামত ছাড়া কম বয়সেই বিয়ে দেয়া হচ্ছে। আবার দেখা যাচ্ছে- বেশি বয়সী লোকের সাথেও অভিভাবকেরা মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন। একটাপর্যায়ে গিয়ে এ ধরনের বিয়েগুলো টিকছে না। সন্তানরা চায়, মা-বাবার সাথে একসাথে একটি স্বাভাবিক ও সুখী পরিবার হয়ে থাকতে। বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা নতুন কিছু নয়, আবার কোনো ক্ষেত্রে অযৌক্তিকও হয়তো নয়। কিন্তু সন্তান থাকলে তার বা তাদের ওপর এর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, তাও অস্বীকার করার মতো না। আবার সন্তানের দৃষ্টিকোণ থেকেও তো বিচ্ছেদর বিষয়টি দেখা দরকার। সন্তানদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়ার অধিকার মা-বাবা কারোই নেই। তাই আবারো বলছি, সন্তান জন্মের আগেই ভাবতে হবে কয়েকবার, একটি সন্তানকে পৃথিবীতে এনে আলোর মুখ দেখাতে যেমন বাবা-মা দুজনের প্রয়োজন, তেমনি ওই সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়তে এই দুজনকেই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

বৈবাহিক সমস্যা ও কোরআনের সমাধান -২


মূল
আব্দুল হামিদ আবুসুলাইমান
অনুবাদ
কানিজ ফাতিমা


একজন কর্তৃক অন্য একজনের প্রতি শক্তি প্রদর্শনের প্রশ্ন তখনই আসে যখন একজনকে অন্যের উপর ক্ষমতাবান মনে করা হয়। অর্থাৎ একজন ক্ষমতাবান ব্যক্তিই (Powerful) তার থেকে কম ক্ষমতাসম্পন্ন কোন ব্যক্তির উপর তার শক্তি বা ক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারে। কিন্তু‘ একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি তার দায়িত্বে থাকা অন্যান্য ব্যক্তিদের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকে, তাদের প্রতি ক্ষমতা প্রদর্শন করে না। কাজেই দায়িত্বশীল (Responsible) ও ক্ষমতাশীল (Powerful) শব্দ দুটির মধ্যে সুস্পষ্ট ও গভীর পার্থক্য রয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন দাঁড়ায় স্বামী-স্ত্রীর অবস্থান ইসলামের দৃষ্টিতে ক্ষমতাবান ও অধঃ¯তনের সম্পর্ক নাকি দায়িত্বশীল ও দায়িত্বের আওতাধীন ব্যাক্তির সম্পর্ক? ক্ষমতার সঙ্গে শ্রেণী বিন্যাসের কথাটিও চলে আসে। সমাজে ক্ষমতাশীল কর্তৃত্বশীল ব্যক্তিরা উঁচুশ্রেণীর বা উঁচু¯স্তরের Status পায় আর ক্ষমতাহীনরা নিম্নশ্রেণীভুক্ত হয়। সে হিসেবে পুরুষরা বা স্বামীরা যদি ক্ষমতাশীল বা কর্তৃত্বশীল হন তবে স্বাভাবিকই এই চিত্র ফুটে উঠে যে, মানবজাতি দু’টি ¯তরে বিভক্ত- ক্ষমতাসম্পন্ন পুরুষ ও ক্ষমতাধীন নারী। কিন্তু‘ প্রশ্ন দাঁড়ায়-ইসলাম কি এরূপ ¯তর বিন্যাস সমর্থন করে? শুধুমাত্র পুরুষ হবার কারণে কেউ উত্তম এবং নারী হবার কারণে কেউ উত্তম শ্রেণীভুক্ত নয় বা দ্বিতীয় শ্রেণীর স্তরভুক্ত-ইসলাম এরূপ কোন কিছুকে সমর্থন করে কি?
ইসলামী চিšতাবিদগণ এ ব্যাপারে একমত যে, নারী ও পুরুষ মানুষ হিসেবে সমান। কেউ উত্তম বা কেউ অধম নয় (৪:১; ৭:১৮৯; ৩৩:৩৫; ৯:৭১) । শুধুমাত্র নারী বা পুরুষ হবার কারণে কেউ শ্রেষ্ঠত্ব দাবী করতে পারেনা। বরং যে যত বেশি আল্লাহর আদেশ নিষেধ পালনের ক্ষেত্রে সচেতন সেই তত উত্তম। আল্লাহ বলেন: “তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম যে তাকওয়ার দিক দিয়ে উত্তম ” (কোরআন)। তাছাড়া ক্ষমতাশীল শব্দটির সঙ্গে নির্যাতন শব্দটির একটি সংযোগ রয়েছে, অপরপক্ষে, দায়িত্বশীল শব্দটির সঙ্গে রয়েছে সহানুভূতি শব্দটির সংযোগ। দায়িত্বশীল শব্দটির মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের ¯তর বিন্যাসও নেই। যেমন একজন প্রেসিডেন্টের দেহরক্ষী তার নিরাপত্তার ব্যাপারে দায়িত্বশীল। এক্ষেত্রে দেহরক্ষীর দায়িত্ব ও কর্তব্য প্রকাশ পেয়েছে, প্রেসিডেন্টের তুলনায় তার শ্রেষ্ঠত্ব নয়। ইসলাম প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার স্বস্থানের দায়িত্ব দান করেছে। ইসলাম (তাকওয়া ব্যতীত অন্য কোন কারণে) কাউকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেনি। দায়িত্ব ও ক্ষমতার আলোচনা এই জন্য করলাম যে, পেটানো বা নির্যাতনের সাথে এ শব্দ দু’টির গভীর সম্পর্ক রয়েছে। স্বামী নিজেকে ক্ষমতাবান মনে করলে তার মধ্যে পেটানো বা নির্যাতনের স্পৃহা তৈরি হওয়া খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু‘ স্বামী নিজেকে দায়িত্বশীল মনে করলে তার মধ্যে এ ধরণের মনোভাব তৈরি তো হবেই না বরং স্ত্রীর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তার মধ্যে তাগিদ তৈরি হবে। ইসলাম মূলত: স্বামীকে তার স্ত্রী ও সন্তান সন্ততির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব প্রদান করেছে। স্বামীকে স্ত্রীর উপরে ক্ষমতা প্রদর্শন বা স্ত্রীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান কোরআনের অন্যান্য আয়াত ও মেজাজের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন দাঁড়ায় সূরা নিসার ৩৪ নং আয়াতের ‘কাওয়াম’ শব্দটির সঠিক ব্যাখ্যা কি হবে? আমাদের মনে রাখতে হবে সূরা নিসার ৩৪ নং আয়াতের শেষাংশেই দরাবার কথা এসেছে। যে ‘কাওয়াম’ শব্দটি এখানে এসেছে তার ব্যাখ্যার সঙ্গে দরাবার সঠিক ব্যাখ্যা অনেকাংশে নির্ভরশীল। আব্দুল হামিদ আবু সুলেমান এ আয়তটির অর্থ করেছেন এভাবে:
“Men are the protectors and maintainers of women, because God has given the one more than the other, and because of the sustenance they provide from their own means” (4:34)
এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, “স্বামীটি রক্ষক” (Protector) অর্থ হল স্ত্রীকে সাহায্য করা ও তার ভরণপোষণ প্রদান করা তার দায়িত্ব (তাহসীব লিসান আল আরব, ইবনে মানযুর) । পরিবারে রক্ষণাবেক্ষণকারী “Maintainer” বলতে সেই ব্যক্তিকে বুঝায় যে দায়িত্বে রয়েছে (আল মুযাম আল ওয়াসিত)। কাওয়াম হচ্ছে সেই ব্যক্তি যে কার্যনির্বাহি করে (execute)(আল মুনযিদ ফী আল-লুঘাহ ওয়া আল আলাম)।
মুহাম্মদ আসাদ এ আয়তটির অর্থ করেছেন এভাবে:
“Men shall take full care of women with the bounties which God has bestowed more abundantly on the former than on the later” (4:34)
এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, ‘কাওয়াম’ শব্দটি ‘কিয়াম’ থেকে, এর অর্থ “যে দায়িত্বে থাকেন বা যিনি যতœ নেন” (“one who is responsible for or takes care of”)| (The Message of The Qur’an, p.109) যেহেতু কাওয়ামাহ অর্থ পরিবারের ভরণপোষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করা সেহেতু মনে রাখা জরুরী যে, একজন স্বামী যখন এই দায়িত্ব পালন করছেন তখন তিনি একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। এবং এটি একজন নারীকে তার নিজের প্রতি ও সন্তানদের সঠিক পরিচর্যার প্রতি মনোযোগী হতে সুযোগ করে দেয়। মূলত: সন্তান ধারণ ও লালন পালনের কাজটি যেহেতু প্রাকৃতিক ভাবেই নারীর কাঁধে সেহেতু রক্ষণাবেক্ষণ ও ভরণপোষনের দায়িত্বটি আল্লাহ পুরুষের কাঁধে দিয়ে পারিবারিক দায়িত্বে একটি ভারসাম্য এনেছেন। এভাবেই আল্লাহ স্বামীকে স্ত্রীর রক্ষণাবেক্ষণ ও ভরণপোষণের দায়িত্ব দিয়েছেন, স্ত্রীকে শারীরিক বা মানসিক আঘাত করার ক্ষমতা প্রদান করেন নি।
আব্দুল হামিদ আবু সুলেমান তার Marital Discord: Recapturing the Full Islamic Spirit of Human Dignity বইতে এই গুরুত্বপূর্ন বিষয়টি তুলে এনেছেন। তার ব্যাখ্যাটি শিক্ষিতা সচেতন ও সম্মানবোধ সম্পন্না মুসলিম নারীদের মন ও মানসিকতার সঙ্গে সঙ্গতীপূর্ণ। এটি একদিকে যেমন সুযোগ সন্ধানী কিছু পুরুষের নির্যাতনের সব পথ বন্ধ করে দেয় তেমনি ইসলামের ছিদ্রান্বেষীদের ‘ইসলাম নারী নির্যাতন সমর্থন করে’ এই চিরায়ত অপবাদের পথও রুদ্ধ করে। কাজেই এটা সময়ের দাবী যে মুসলিমরা ‘দরাবার’ এই ব্যাখ্যাটি জানবেন ও বিবেচনায় আনবেন। সেই বিবেচনায় এই বইটির বাংলা অনুবাদ করার প্রয়াস পেয়েছি। সবাই হয়তো এ ব্যাখ্যার সাথে একমত হবেন না। কিন্তু‘ এ ব্যাখ্যাটি অবশ্যই অন্যান্য ব্যাখ্যা গুলোর পাশাপাশি তার শক্ত অবস্থান করে নেবে। এ ব্যাখ্যাটি নারীদের প্রতি ইসলামের সম্মান সূচক দৃষ্টিভঙ্গীর আরেকটি স্বাক্ষর বহন করবে।
এটা সর্বজনবিদিত যে একটি ভাষার শব্দের হুবহু অর্থ অনেক সময়ই অন্য ভাষার খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই আমি পরিস্কার ভাবে পাঠকদের বোঝার সুবিধার্থে কিছু শব্দের বাংলা অর্থের সাথে সাথে ইংরেজী শব্দটিও উল্লেখ করের্ছি। সর্বোপরি আমি পাঠকদের সুবিধার্থে প্রবন্ধটির হুবহু নয় বরং সরল অনুবাদ করেছি। সবাই উন্মুক্ত মন ও যুক্তিশীল দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে এই প্রবন্ধটি পাঠ করবেন- এমন আশা করি।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবুল করুন। আমীন।

চলবে…..

পর্ব-১

 

জীবননগরে নির্যাতনে গৃহপরিচারিকা নিহত


নারী সংবাদ


চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলা শহরের জীবননগর আদর্শ সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষিকার নির্যাতনের শিকার গৃহপরিচারিকা লিলি খাতুন(৫০) মারা গেছেন। নির্যাতনের ঘটনার একদিনের মাথায় মারা গতকাল রোববার সকালে মারা যান তিনি।

নিহত গৃহপরিচারিকা লিলি খাতুন উপজেলার আন্দুলবাড়ীয়া রাজধানীপাড়ার আনসার আলীর স্ত্রী। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

নিহত গৃহপরিচারিকার ছেলে শাহেদ হোসেন(২৩) বলেন, আমার মা লিলি খাতুন জীবননগর মহিলা কলেজের প্রফেসর পাপিয়া শারমিন ইতির জীবননগরের বাসায় গত দু’সপ্তাহ আগে দুই হাজার টাকা মাসিক বেতনে কাজ শুরু করেন।

এরপর আমার মা গত শুক্রবার সকালে বাড়িতে আসেন এবং বুধবারে ইতির বাসায় ফিরতে আগ্রহ প্রকাশ করলে প্রফেসর ইতি বলেন শনিবার সকালের মধ্যে তার বাসায় যেতে হবে। আমার মা তাতে রাজি না হওয়ায় ইতি শনিবার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে আমাদের বাড়িতে আসেন।

তিনি আরো বলেন, আমার মা ইতিকে আসতে দেখে দৌড়ে প্রতিবেশীদের ঘরে আশ্রয় নেন। কিন্তু তারপরও ইতি আমার মাকে জোর করে টেনে হেঁচড়ে একটি আলমসাধু গাড়িতে তুলে জীবননগরে নিয়ে যাওয়ার সময় দেহাটি-সন্তোষপুর সড়কের কনটেক মিলের সামনে রাস্তার ওপর ফেলে দেয়। এতে আমার মা মারাত্মকভাবে আহত হন। এ সময় আমার মাকে অন্য একটি আলমসাধুতে তুলে দিয়ে ইতি জীবননগরে চলে যায়। পরে তাকে জীবননগর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রোববার বিকালে মায়ের অবস্থা খারাপ হলে ডাক্তার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে রেফার করেন। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার আমার মাকে মৃত ঘোষনা করেন।

শাহেদ হোসেন আরো বলেন, আমার মা গাড়ি থেকে লাফ দিয়েছে বলে ঘটনার পর জানান প্রফেসর পাপিয়া শারমিন ইতি। কিন্তু আমার মা গাড়ি থেকে লাফ দিতে পারে তা বিশ্বাস হয় না।

নিহত গৃহপরিচারিকার পুত্রবধূ বৃষ্টি খাতুন অভিযোগ করেন যে, লিলি খাতুনকে ইতি জোরপুর্বক বাড়ি থেকে উঠিয়ে গাড়িতে করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে আন্দুলবাড়ীয়া মিস্ত্রিপাড়া আমার বাপের বাড়ীর সামনে শ্বাশুড়ীকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। এ সময় শ্বাশুড়ীর গায়ের ব্লাউজ, শাড়ী ছেঁড়া ছিল এবং কাপড়-চোপড়ে রক্ত মাখা ছিল। সেই সাথে বমিও করছিল।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত পাপিয়া শারমিন ইতি বলেন, আমার সাথে আলমসাধু যোগে আসার কথা ঠিক। তবে তাকে আমি গাড়ি থেকে ফেলে দিয়েছি তা সঠিক নয়। আমি আসলে ষড়যন্ত্রের শিকার। আমি এমপি আলী আজগার টগরের শ্যালিকা হওয়ায় একটি পক্ষ আমাদের সাথে ষড়যন্ত্র করছে।

জীবননগর থানার ওসি শেখ গনি মিয়া বলেন, গৃহপরিচারিকা নিহতের ঘটনায় এখনও কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

বৈবাহিক সমস্যা ও কোরআনের সমাধান – ১


মূল
আব্দুল হামিদ আবুসুলাইমান
অনুবাদ
কানিজ ফাতিমা


 

অনুবাদকের কথা
স্ত্রী পিটানো কি ইসলাম সমর্থন করে?- এ প্রশ্নটি দীর্ঘকাল ধরে ধর্মপরায়ন শিক্ষিতা মুসলিম নারীদের মনে কাটা হয়ে বিঁধে ছিল। বিভিন্ন সময়ে সুরা নিসার এই ‘দরাবা’ সংক্রান্ত ৩৪ নং আয়াতটির বিভিন্ন ব্যাখ্যা এসেছে। কোন কোন ইসলামী চিন্তাবিদ একে ‘চল্লিশ ঘা’ আবার কেউ কেউ ‘মৃদু আঘাত’ বলেছেন। কিন্তু সবকটি ব্যাখ্যার সঙ্গেই শারীরীক আঘাত ব্যাপারটি জড়িত রয়ে গেছে। ফলে এর একটি সুস্পষ্ট প্রভাব আমাদের সমাজে দেখা যায়। কারণে অকারণে স্ত্রীকে আঘাত করা তাই অনেক মুসলিম পুরুষই তাদের অধিকার মনে করেন। অনেকে আবার একটু আগ বাড়িয়ে স্ত্রীকে পিটিয়ে শাসন করাকে নিজ পবিত্র দায়িত্ব মনে করেন।
শরীরের আঘাত শুধু শরীরের সঙ্গেই সম্পর্কিত থাকেনা, তা মনের সঙ্গেও গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। শারিরীক আঘাত কম হোক বা বেশি হোক তা আতœসম্মানবোধ সম্পন্ন যেকোন নারীর মনেই কঠিন অপমানবোধ সৃষ্টি করে। এমনকি তা ঐ নারীর পুরুষ আত্মীয়দের মনেও কষ্ট দেয়। এ আঘাতে শরীরে দাগ পড়ুক কি নাই পড়ুক, নারীর মনে দাগ পড়বেই। শরীরের দাগ বা কষ্ট যত দ্রুত মিলিয়ে যায় মনের এ দাগ বা কষ্ট তত দ্রুত মিলিয়ে যায় না। কাজেই বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ আব্দুল হামিদ আবু সুলেমান বলেছেন সুরা নিসায় ব্যবহৃত ‘দরাবা’ শব্দটির অর্থ ‘পিটানো’, ‘প্রহার’, এমনকি ‘মৃদু আঘাত’ হিসাবেও নেয়ার অবকাশ নেই। এর কারণ হিসাবে তিনি পেশ করেছেন কঠিন যুক্তি। তিনি তার Marital Discord: Recapturing the Full Islamic Spirit of Human Dignity বইতে বোঝাতে চেয়েছেন- আরবী অভিধানে ‘দরাবা’ শব্দটির অনেক অর্থ রয়েছে; সেক্ষেত্রে অন্য সব অর্থ বাদ দিয়ে স্ত্রীর ক্ষেত্রে ‘পিটানো’ বা ‘আঘাত করা’ অর্থটি গ্রহণ করা কতটা যুক্তিযুক্ত, বিশেষ করে বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে, তা ভেবে দেখতে হবে। তাছাড়া কোরআনের ব্যাখ্যা আমাদের গ্রহণ করতে হবে রাসূল (সা.) এর জীবনী থেকে। রাসূল (সা.) এর জীবনে দেখা যায় স্ত্রীদের সঙ্গে বিরোধ বা সমস্যার ক্ষেত্রে তিনি স্ত্রীদের কখনই আঘাত করেননি। বরং দু-দুবার এমন ঘটনায় তিনি একই পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন, আর তাহলো স্ত্রীদের থেকে দুরে সরে যাওয়া । কাজেই সুন্নাহ অনুযায়ী ‘দরাবা’ শব্দটির অর্থ ‘আঘাত করার’ তুলনায় ‘দূরে সরে যাওয়া’ বা ‘সাময়িক দূরত্ব বজায় রাখা’ বেশি সামঞ্জস্যশীল ।
প্রবন্ধে আব্দুল হামিদ আবু সুলেমান দুটি বিষয়কে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছেনÑ
প্রথমত, সূরা নিসার ৩৪ও ৩৫ নং আয়াতকে (যাতে এই শ্বাস্তির ব্যাপারটি বিধৃত হয়েছে) বিচ্ছিন্নভাবে ব্যাখা করা যাবে না। তিনি বলেছেন এ আয়াতের ব্যাখার সময় কোরআনের অন্যান্য আয়াত বিশেষ করে সূরা রূমের ২১ নং আয়াত যেখানে আল্লাহ পারস্পরিক দয়া ও ভালবাসাকে বিবাহের উদ্দেশ্য হিসেবে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন তা বিবেচনায় আনতে হবে।
দ্বিতীয়ত: অতীতে পরিবারে নারীদের ভূমিকা একরকম ছিল। অর্থনৈতিক কার্যক্রম থেকে তারা বিরত থাকত। অন্যদিকে পুরুষরা অর্থনৈতিক দায়িত্ব পালন করত। অর্থনৈতিক ব্যাপারে পুরুষদের উপর নির্ভরশীলতা নারীদেরকে ক্ষমতাহীন করে রাখতো । কিন্তু বর্তমান সময়ে পরিবারে নারী ও পুরুষের এ ভূমিকার অনেক পরিবর্তন এসেছে। পুরুষের উপর নারীর অসহায় নির্ভরশীলতা কমেছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে ফলে নারীদের উপর পুরষের একচ্ছত্র ক্ষমতা ব্যবহারের ক্ষেত্রও হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে পরিবারের কোন সমস্যা সমাধানে বা স্বামী-স্ত্রীর কোন বিরোধ নিরসনে পরিবারের এই কাঠামোকে বিবেচনায় রেখেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
আব্দুল হামিদ আবু সুলেমান এর এ ধারণাটি ইবনে আব্বাসের ব্যাখ্যার সঙ্গেও অসামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। কারণ ইবনে আব্বাস স্বামীদেরকে সাবধান করেছেন যে, তাদের রাগের বহিঃপ্রকাশ যেন কয়েকটি মেসওয়াকের আঘাত বা অনুরূপ কোন কিছূর আঘাতের বেশি কিছু না হয়। অর্থাৎ তিনিও দরাবাকে পিটানো অর্থে নেননি [মেসওয়াক দিয়ে পিটানো সম্ভব নয়]। আব্দুল হামিদ আবু সুলেমান মিসওয়াকের মৃদু আঘাতকেও সমর্থন দেননি বরং তিনি বলেছেন একটি কঠিন বৈবাহিক সম্পর্কের উন্নয়ন ও পুনরায় মিলন ঘটানোর এ প্রেক্ষাপটে দরাবা শব্দটির যে অর্থ গ্রহণ করা উচিত তা হল-বাড়ি থেকে চলে যাওয়া (to “leave” the marital home),অথবা স্ত্রী থেকে আলাদা হওয়া (“separate” from her)।
এমন একটি বিতর্কও ইসলামী চিন্তাবিদদের মধ্যে রয়েছে যে স্বামী – স্ত্রীর মধ্যে বিবাদ বা অবাধ্যতার (নুশুজ) পরিপ্রেক্ষিতে ‘মৃদু শারীরিক আঘাত’ এর বিধান দেয়া হয়নি বরং এটা এসেছে স্ত্রী কর্তৃক অন্য কোন পুরুষের সঙ্গে অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে। অর্থাৎ স্ত্রী অবৈধ শারীরিক সর্ম্পকের দোষে দুষ্ট হলে সীমিত শারীরিক আঘাতের কথা বলা হয়েছে। নুশুজ এর ক্ষেত্রে শারীরিক আঘাত প্রযোজ্য নয়।

চলবে……

 

লালমনিরহাটে স্ত্রী হত্যার অভিযোগে স্বামীসহ আটক ৩


নারী সংবাদ


লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার বালাপাড়া গ্রামে জোসনা বেগম (২১) নামে এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামীসহ তার পরিবারের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে স্বামী হাবিবুর রহমান হাবিবসহ তার বাবা-মাকে আটক করেছে পুলিশ।

স্থানীয়রা জানান, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জোসনাকে মারধর করে স্বামী হাবিবুর রহমানসহ তার পরিবারের লোকজন। একপর্যায়ে ওই গৃহবধূর মৃত্যু হলে তার মুখে বিষ ঢেলে দেওয়া হয়। পরে এলাকাবাসী বিষয়টি বুঝতে পেরে স্বামীসহ তার বাবা-মাকে আটক করে পুলিশে খবর দেয়।

কালীগঞ্জ থানার ওসি মকবুল হোসেন জানান, পুরো বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সুত্র: সমকাল

 

শেরপুরে গৃহবধূকে শ্বাসরোধে হত্যা


নারী সংবাদ


বগুড়ার শেরপুরের শেরুয়া বটতলা পূর্বপাড়া গ্রামে যৌতুকের টাকা না পেয়ে গত বুধবার রাতে গৃহবধূ আজমিরা খাতুনকে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় স্বামী বুলবুল আহম্মেদ পলাতক রয়েছে। পুলিশ নিহতের শ্বশুর তোজাম হোসেন ও শাশুড়ি বুলবুলিকে আটক করেছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, নাটোরের সিংড়া উপজেলার শুকাস ইউনিয়নের বনকুড়াইল গ্রামের আজমল হোসেনের মেয়ে আজমিরা খাতুনের সাথে দেড় বছর আগে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের শেরুয়া বটতলা পূর্বপাড়া গ্রামের তোজাম হোসেনের ছেলে বুলবুল আহম্মেদের সাথে বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের পর থেকে মাদকাসক্ত ভবঘুরে বুলবুল আহম্মেদ যৌতুকের টাকার জন্য মাঝে মধ্যেই তার স্ত্রীকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করত। গত কোরবানি ঈদের আগে আজমল হোসেন তার মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে গরু বিক্রি করে ৭০ হাজার টাকা জামাইকে দেন। সেই টাকা দিয়ে নেশা করতে করতে একপর্যায়ে ওই টাকা শেষ করে ফেলে আবারো টাকার দাবি করে। কিন্তু স্ত্রী আজমিরা আরো টাকা দিতে অস্বীকার করায় গত বুধবার রাতে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।

খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এ ব্যাপারে নিহতের বাবা আজমল হোসেন বাদি হয়ে শেরপুর থানায় অভিযোগ করেছেন।
এ বিষয়ে শেরপুর থানার ওসি হুমায়ুন কবীর বলেন, শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে তবে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে আসল ঘটনা জানা যাবে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
সুত্র: নয়াদিগন্ত