banner

রবিবার, ০৫ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 538 বার পঠিত

 

প্রতিবেশিনী….৪


আফরোজা  হাসান


বোনকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে নাক-চোখ-মুখ সব ফুলিয়ে ফেলেছে মাহাম। মাহামের ফোলা ফোলা চেহারা থেকে যে লালচে আভা বেড়োচ্ছিলো দেখতে ভীষণ ভালো লাগছিলো আয়ানের। এমনিতে মাহামের চোখে অশ্রু সে সহ্য করতে পারে না। কিন্তু নিজের দোষে যখন মানুষ কান্না করে তখন তাকে সহানুভূতি না দেখিয়ে কাঁদতে দেবার পক্ষপাতী সে। গতকালও আয়ান মাহামকে বলেছে অনেক হয়েছে তোমাদের প্রতিবেশী প্রতিবেশী খেলা। এখন দুষ্টুমি বন্ধ করে নিজেরা একটু শান্ত হও এবং আমাদের দুই ভাইকেও শান্তি দাও। কিন্তু কে শোনে কার কথা! আর কেউ যদি কারো কথা শোনেও শাবাব ও মাহাম সেই কেউয়ের সারিতে দাঁড়ানোর পাত্রী না। ওরা হচ্ছে, তোরা যে যা বলিশ ভাই মোদের দুষ্টুমি করা চাই।

ভাইয়া দুইজনের কান্না বন্ধ করার ব্যবস্থা করো। নয়তো ফ্ল্যাট ভেসে যাবে চোখের জলে।

আরিফীর চাপা স্বরের কথাগুলো কানে আসতে বৌয়ের দিক থেকে চোখ সরিয়ে ভাইয়ের দিকে তাকালো আয়ান। তুই ফিসফিস করছিস কেন? প্রশ্ন করলো।

আরিফী গলার স্বর আরো এক ধাপ নামিয়ে বলল, কথার চাপে গুম হয়ে যাওয়ার ভয়ে ভাইয়া। তুমিও আস্তে কথা বলো নয়তো বাক্য বাণে জীবন পাখী সাঙ্গ হয়ে যেতে পারে।

আয়ান হাসি চেপে বলল, শাবাবের হাতে গরম তেল পড়লো কিভাবে?

ভাইয়া তুমি যদি কখনো শাবাবকে রান্না করতে দেখো তাহলে তোমার মনেহবে বাস্কেট বল খেলা দেখতে এসেছো।

এমন মনে হবে কেন? বেশ অবাক কণ্ঠে প্রশ্ন করলো আয়ান।

শাবাব যেভাবে দূর থেকে পেঁয়াজ-রসুন-মসলা কড়াইয়ের দিকে ছুঁড়ে দেয়। তাতে আমার কাছে মনেহয়েছে কড়াই হচ্ছে বাস্কেট আর পেঁয়াজ-রসুন-মসলা হচ্ছে বল।

আরিফীর কথাগুলো কানে যেতেই ফোঁস করে উঠলো মাহাম। আমার বোনের খেয়াল রাখতে পারো না। এখন আবার মজা করছো?

আরিফী বলল, তোর কথা শুনে তো মনেহচ্ছে আমি ডালের চামচ দিয়ে কড়াই থেকে তেল উঠিতে তোর বোনের হাতে ঢেলে দিয়েছি।

মাহাম বলল, আয়ান দেখেছো কিভাবে কথা বলে তোমার ভাই? থাপ্পড় দাও ধরে একটা।

সাথে সাথে আয়ান বলল, আরিফী তোর দুই গালে টাস টাস করে দুই থাপ্পড় মারলাম কল্পনা করে নে।

কল্পনা করবে কেন? চোখ বড় বড় করে প্রশ্ন করলো মাহাম।

আয়ানস্টাইন কি বলেছেন ভুলে গিয়েছ? কল্পনা বাস্তবতার চেয়ে শক্তশালী।

আইনস্টাইন কবে এই কথা বললেন? উনি বলেছেন জ্ঞানের চেয়ে কল্পনা গুরুত্বপুর্ণ।

আরিফী বলল, ভাবীজান আপনি শুনতে ভুল করেছেন। ‘কল্পনা বাস্তবতার চেয়ে শক্তশালী’ কথাটা আইনস্টাইন না আয়ানস্টাইন বলেছেন।
খিলখিল করে হেসে উঠলো শাবাব। সাথে যোগ হলো আরিফীর হাহাহা। হেসে ফেললো আয়ানও। ধীরে ধীরে মাহামের মুখেও ফুটে উঠলো হাসি।
সবার সম্মিলিত হাসি মরুভূমির বুকে যেন ঝরিয়ে দিয়ে গেলো এক পশলা ঝমঝম বৃষ্টি। ধীরে ধীরে মনখারাপের মেঘ কেটে গিয়ে উঁকি দিলো ভালোবাসার আভা ছড়ানো সূর্যি কিরণ। আরিফীকে শাবাবের সেবাযত্ন করার দায়িত্ব দিয়ে মাহাম আর আয়ান রান্নাঘরে গেলো। দুজন মিলে রান্না করলো এবং চারজন মিলে খেলো। আরিফীকে বৌয়ের প্রতি খেয়াল রাখার ব্যাপারে বিশাল লেকচার দিয়ে মাহান ও আয়ান নিজের ফ্ল্যাটে গেলো।

রাতে ঘুম ভেঙ্গে যাবার পর পাশে তাকিয়ে বিছানায় মাহামকে না দেখে বেশ অবাক হলো আয়ান। আলো জ্বালিয়ে দেখলো পনে তিনটা বাজে। ড্রইংরুমে আলো দেখে উঠে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো সেদিকে। সোফার উপর পা তুলে বসে খুব মনোযোগ দিয়ে মাহামকে লিখতে দেখে বিস্ময়ের মাত্রা আরো বেড়ে গেলো।
আয়ানকে দেখে মাহাম বলল, তুমি উঠে এসেছো যে? আমি তো কোন শব্দ করিনি।

এত রাতে তুমি কি লিখছো?

হাসলো মাহাম। আমার ঘুম আসছিলো একদম। তাই ভাবলাম তোমাকে নিয়ে উপন্যাস লেখাটা শুরু করে দেই। মনের ভেতর কিছু শব্দও ঘোরাফেরা করছিলো।

দেখি কি লিখেছো। হাত বাড়িয়ে দিলো আয়ান মাহামের দিকে। মাহামকে ডায়েরী তার হাতে রাখতে দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছিলো না আয়ানের। তার একশো ভাগ ধারণা ছিলো মাহাম কিছুতেই তাকে এখন পড়তে দেবে না।

তুমি পড়তে থাকো আমি কফি নিয়ে আসি দুজনের জন্য। একদম ফজর পড়ে ঘুমোতে যাবো।

পাশে কফির মগ রাখার শব্দে আয়ান ডায়েরী থেকে চোখ তুলে তাকালো। মাহাম হেসে বলল, কেমন হয়েছে আমার গল্পের শুরু?

সত্যি করে বলবো?

অবশ্যই সত্যি করে বলবে।

আয়ান হেসে বলল, ভীষণ রকম এলোমেলো তোমার শব্দরা। কিন্তু ভালোবাসা আর মুগ্ধতায় মাখামাখি সব অনুভূতি।

প্রথম লিখছি তো সেজন্য। ইনশাআল্লাহ একদিন দেখবে আমি আমার শব্দদেরও গুছিয়ে ফেলবো। আমি কি ঠিক করেছি জানো? তোমার আমার জীবনের প্রতিটি সুন্দর মুহুর্তকে আমি বন্দি করে ফেলবো শব্দে শব্দে। তারপর ছড়িয়ে দেবো।

ছড়িয়ে দেবে মানে?

ছড়িয়ে দেবো মানে হচ্ছে ছড়িয়ে দেবো। আমাদের মুহুর্তরা কারো মনে দোলা দিয়ে যাবে সুখানুভূতির প্রহর হয়ে, কাউকে ভেজাবে জোছনার শিশিরে, কারো জীবন বীণায় তুলে যাবে সুর, কারো পাশে থাকবে আকাশ হয়ে, কাউকে বোঝাবে প্রতীক্ষিত অনুভূতির ভাঁজে ভাঁজে লুকায়িত আকুলতা, কারো মনে ঝরবে আনন্দানুভূতির শ্রাবণ হয়ে।

কি জানি ছিলো মাহামের কণ্ঠে আয়ানের চোখ ভিজে গেলো।
আয়ানের চোখে অশ্রু দেখে থমকে গেলো মাহাম। পর মুহুর্তেই হেসে ফেললো। হাত বাড়িয়ে আঙ্গুলে জড়িয়ে নিলো আয়ানের চোখ থেকে ঝরে পড়া ভালোবাসার শিশির বিন্দুটিকে। আয়ানের চোখে চোখ রেখে বলল, এই এক বিন্দু অশ্রুকণা ঝরাবার অপরাধে আমি সারাজীবন তোমার জন্য সিক্ত রাখবো আমার আঁখিদ্বয়। কিছুটা থেকে বললো ইনশাআল্লাহ।

মাহামের কান ধরে ঝাঁকিয়ে দিলো আয়ান। তারপর কাছে টেনে নিয়ে বলল, তুমি কথা খুব বেশি বলো বুঝেছো? জাস্ট হোল্ড ইউর টাংক এন্ড লেট মি লাভ……

চলবে……

পর্ব-৩

Facebook Comments