banner

রবিবার, ০৫ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 568 বার পঠিত

 

বাজান


—–মনির মোহাম্মদ


সেই ছোট্টবেলা থেকেই দেখে আসছি আব্বা দাদাজানকে বাজান আর দাদীজানকে মায়া ডাকতে। আমার বড় চাচা ,বড় ফুফুরা সবাই একই নামে সম্মোধণ করেন উনাদের। আমার ছোট চাচা কিভাবে জানি বাজান ডাকা বন্ধ করে দিয়ে আব্বা ডাকা শুরু করে দিল। দাদাজান কিছু বলেন না । দাদী দাঁতে কাপড় চেপে ধরে বলে, “কি রে বাজি কি কস এগুলান? তোর বাপ কিন্তু রাগ করে আব্বা ডাকলে” মজার ব্যাপার দাদাদজান কোনদিন এই নিয়ে রাগ করেননি। আমি আব্বাকে অনুকরণ করে আমিও আব্বাকে মাঝে মাঝে বাজান ডাকতাম। আম্মা হাসি দিয়ে বলত আব্বু ডাক বাবা আব্বু! এই আব্বু ডাকের ভিতর কেমন জানি একটা ন্যাকামী লাগে আমার কাছে। কিন্তু বাজান ডাকটা আমার কাছে মধুর মত শুনায়! আর আম্মাকে মায়া ডাকার ভিতরে কী যে একটা মায়া! আব্বা যখন দাদীজানকে মায়া ডাকে তখন মুগ্ধ হয়ে শুনি। আহারে কী মধুর ডাক! দাদাজানের বয়স ৯০ পেরিয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। অনেকদিন আগে একটা লেখা লিখেছিলাম ” একান্নবর্তী” নামে। লেখাটি সবাই ভালবেসেছিল। কয়েকটি পত্রিকাতে লেখাটি ছাপা হয়। অনেকেই পড়েছেন। সবার প্রতিক্রিয়া আর ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ!

একটা কথা আমি মানি সেই ছেলেবেলা থেকে, একজন মুরুব্বী একটি বাড়ির বটবৃক্ষ । সেই বটবৃক্ষ সবাইকে আগলে রাখে তার শাখা প্রশাখা দিয়ে। আমি আমার বিভিন্ন গল্পে বিভিন্নভাবে আমদের হারানো শেখড়টাকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

একান্নবর্তী পরিবারটা আজ কেন নেই? পারিবারিক বন্ধনটা কি আজ হারিয়ে গেছে আধুনিক সভ্যতার অতল গহ্বরে? দাদা-দাদীর মুখ থেক আজকের শিশুরা কি গল্প শুনে? সেই গল্প কি তার স্কুলের সহপাঠির কাছে শেয়ার করে? হয়ত শুনে, হয়ত শুনেনা। আমাদের আজকের প্রজন্মের অনেক কিছু জানার আছে। আমি জানি এই স্মার্টফোন আর রোবটিক্স এর যুগে এটাকে অনেকেই হেসে উড়িয়ে দিবেন। ইংলিশ মিডিয়াম আর বাংলা মিডিয়াম এর কথা বলছি না। মিডিয়াম আমার সন্তানকে শিক্ষিত করবে। কিন্তু আমাদের ঐতিহ্যের গল্প কে শুনাবে। সেই গল্প শুনতে চান ? সেই গল্প শুনাবে আমাদের দাদা-দাদীরা। যারা নিজ চোখে সব দেখেছেন। একবার জিজ্ঞাসা করে দেখুন কী সুন্দরভাবে আপনার সামনে ইতিহাসটা তুলে ধরে!

আমি আমার কথা বলছি, দাদাজানের পানের ভাটা হাতে নিয়ে হাঁটছি আর দাদাজান কুটকুট করে পান খায় আর গল্প করে। আমাদের অদেখা জীবনের বাস্তব গল্প। মাঝে মাঝে আক্ষেপ নিয়ে বলে,” আগের দিন আর নাইরে নাতী খাব্লাইয়ে খাব্লাইয়ে চিনি খাইতি।” সত্যিকারের চিনি আমারা খেয়েছি, ম্যাগনেসিয়াম সালফেট না । একেবারে ক্ষেত থেকে আখ কেটে এনে রস বের করে আগুনে জাল দিয়ে এক প্রকারের লাল ধুলো চিনি যা আর কোনদিন চোখে দেখবোনা। শুধু একটা আক্ষেপ আজকের দিনে, আমাদের প্রজন্ম কি দেখতে পারবে সেই আখ চাষ ? উত্তর না। যাই হোক সবই নব্বই দশকের গল্প বললাম। একটা সোনালী অধ্যায় আমাদের জীবন থেক গত হয়ে গেল। সেই অধ্যায়টাকে মলাটবন্দি করেছি ছয় বছরে। আশা করি আমাদের আগামী প্রজন্ম সেই অধ্যায়টা পড়ে সামান্য হলেও ধারণা পাবে কেমন ছিল আমাদের পূর্বপুরুষদের জীবন? কেমন ছিল উনাদের চিন্তা ধারণা? সব সব তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। অপেক্ষার আক্ষেপ মিটাবো কথা দিয়েছিলাম, কথা আমি রেখেছি। কিন্তু সেই বাজান ডাকটা আমি খুব মিস করি আহারে কী মধুর ডাক বাজান! মনে হয় আমার জানটাই কেড়ে নিচ্ছে।

Facebook Comments