banner

শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 542 বার পঠিত

 

রূপান্তরের যাত্রা – পর্ব ১০


তাহনিয়া খান


Bismillahir Rahmanir Rahim

Rabbish rahli sadri wa yas-sir li amri wahloul uqdatam mil-lisaani yafqahu qawli.
O my Lord! expand me my breast; Ease my task for me; And remove the impediment from my speech, So they may understand what I say[20:25-28]

মক্কায় আসার দু’দিনের মাথায় মাগরিবের নামায পড়ার সময় চমকে গেলাম। আরে, আব্দুর রহমান আস সুদাইস তেলাওয়াত করছেন। খুব ভালো লাগছিল। নামায শেষে দুই ভাই বোন যখন এক হলাম, দু’জনেই একসাথে বললাম, আজকে কে নামায পড়ালো জানো ? দু’জনই হেসে একই উত্তর দিলাম। বেশীর ভাগ সময়ই উনি মাগরিবের নামায পড়াতেন। ছোট ছোট সূরা পড়তেন। শুধু মনে হতো আরেকটু বড় সূরা পড়লে আরো ভালো লাগতো।

আরেক ভদ্রলোকের তেলাওয়াত আমাদের দু’জনেরই খুব ভালো লাগলো। কিন্তু নাম জানি না। একদিন উনি নামায পড়ানোর পরে আমার ভাই হারাম শরীফের পাশের দোকানগুলোতে গিয়ে জিজ্ঞেশ করছিল কোন ইমাম আজকে নামায পড়ালেন। কেউ বলতে পারে না। অনেকে বুঝেও না কথা। যাই হোক, এক সিডি বিক্রির দোকানী বললেন যে ঐ ইমামের নাম মাহের আল মুকাইলি। আমার ভাই উনার কোরআন তেলাওয়াতের সিডি কিনে নিল।

হজ্জের দিনগুলো কাছে চলে আসছে। তার আগেই আমাদের মোয়াল্লেম মক্কার দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরাতে নিয়ে যাবেন। একদিন সকালের নাস্তা সেরেই আমরা সবাই তৈরি হয়ে গেলাম। হেরা গুহা, মসজিদে নামিরা, আরাফাহ’র ময়দান, জাবালে নূর, মিনা, জামারাহ, নবী (সাঃ) আবু বকর (রাঃ) কে নিয়ে যে গুহায় লুকিয়ে ছিলেন সেই গুহা, ইব্রাহীম (আঃ) যেখানে ছেলেকে কোরবানী দিয়েছিলেন, কবরস্থান সহ বিভিন্ন জায়গা ঘুরিয়ে দেখানো হলো। হেরা গুহায় আমাদের উঠতে নিষেধ করা হয়েছিল। কারণ হজ্জের আগে শরীর ঠিক রাখতে হবে। এই গুহা এত উপরে যে উঠার সময় শরীরের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। ফলে যেই উদ্দেশ্যে মক্কায় আসা, সেটাই যদি না করতে পারি তাহলে আর লাভ কি হলো।

হেরা গুহা যে পাহাড়ে , সেখানে নীচে দাঁড়িয়ে অবাক হয়েছি। কত বন্ধুর পথ ! যদিও এখন উপরে উঠার জন্য সুব্যবস্থা আছে। কিন্তু নবী (সাঃ) এর সময় তো এমন ছিল না। উনার বাসা থেকে কত দূরে ঐ পাহাড়। সেই পাহাড়ের কত উপরে সেই গুহা। সেখানে বিবি খাদিজা (রাঃ) রাসুল (সাঃ) এর জন্য খাবার নিয়ে যেতেন। খাদিজা (রাঃ) এর বয়স তখন ছিল ৫৫ বছর। ৫৫ বছরের এক মহিলা তাঁর স্বামীর জন্য কি কষ্টই না করেছেন। আমার ভাই আমাকে বলে, শিখে নাও, শিখে নাও, কীভাবে স্বামীর যত্ন করতে হয় শিখে নাও। একটু আতে ঘা লাগলো । আমি বুঝি আমার স্বামীর জন্য কষ্ট করি না ? যত্ন নেই না ? সেক্রিফাইস করি না ? তাকেও বললাম, দেখ, খাদিজা (রাঃ) এমনি এমনি এত কষ্ট করেননি। উনার স্বামীও এমন মানুষ ছিলেন যে, বিবি খাদিজা (রাঃ) উনার জন্য কষ্ট করাকে কষ্টই মনে করতেন না। স্ত্রীর ভালোবাসা, সাহায্য আর সম্মান পেতে হলে স্বামীদেরও তেমন যোগ্য থাকা লাগবে। আমার ভাই হাসে।

মসজিদে নামিরাতে গিয়ে দেখি সেটা হজ্জের জন্য পরিষ্কার করা হচ্ছে। বছরে শুধু হজ্জের সময়ই এখানটায় নামায পড়া হয়। মিনার তাবুগলো ঠিকঠাক করা হচ্ছিল। জামারাহ এর ভিতর যাইনি। বাইরে থেকে দেখলাম। মোটামুটি হজ্জের একটা রিহার্সেল সেদিন দিয়ে আসলাম। একটা জিনিস ভালো লাগেনি। মক্কার পাহাড়গুলো কেটে ফেলা হচ্ছে বড় বড় হোটেল আর সুপার মল করার জন্য।

হজ্জের দশম শিক্ষা — পুরো মক্কা শহর আর তার চারপাশে যখন ঘুরে দেখছিলাম তখন আমরা ছিলাম এসি গাড়িতে। সকাল থেকে এত কিছু দেখে যখন মক্কার ভিতরে আসলাম তখন হারাম শরীফে যোহরের আজান দিচ্ছিল। শুধু মনে হচ্ছিল, এত কম সময়ে কতগুলো জায়গা ঘুরে আসলাম। অথচ নবী (সাঃ) এর সময় এই জায়গা গুলো ছিল পাহাড় দিয়ে ঘেরা। এমন সুন্দর রাস্তা ছিল না। এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে যেতে কত কষ্ট হয়েছিল উনার। কত কষ্ট করে উনি পাহাড়ে গিয়ে ধ্যান করতেন, কত কষ্ট করে উনি পাহাড়ে গিয়ে লুকিয়ে ছিলেন, কত কষ্ট করে মানুষের নির্যাতন সহ্য করেছিলেন। তারপরেও তিনি হাল ছেড়ে দেননি, মানুষকে অভিশাপ দেননি, মানুষের মঙ্গল চেয়েছেন, মানুষকে আল্লাহ্‌র পথে ডেকেছেন। তাঁর উম্মতের জন্য দোয়া করেছেন। উনার এসব কাজ শুধু মাত্র আল্লাহ্‌র সন্তোষটির জন্য ছিল। জন্মসুত্রে আমি মুসলিম, মোহাম্মদ (সাঃ) এরই উম্মত। আমার জন্যও উনি দোয়া করেছিলেন। সেই আমি উনার মর্যাদা রক্ষার জন্য কি করছি ? আমি কি সত্যি উনাকে ভালোবেসে, উনার দেখানো পথে, আল্লাহ্‌র সন্তোষটির জন্য কাজ করছি ?

পর্ব- ৯

Facebook Comments