banner

রবিবার, ০৫ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 1167 বার পঠিত

 

“প্যারেন্টিং ভাবনা”


সামিমা খাতুন


যেহেতু টপিকস টা প্যারেন্টিং এর উপর, তাই কিছু লিখতে ইচ্ছে করল। যদিও আমি গুছিয়ে লিখতে পারি না।তারপর ও ট্রাইং। পিজিতে বেশ কিছুদিন প্যারেন্টিং ট্রেনিং শেষন ক্লাস নেবার দায়িত্ব ছিল,সেই তাগিদ থেকেই লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে।
আমরা মূলত ভাবি যে প্যারেন্টিং শুধুমাত্র বাবা মা করে থাকেন। এটা ভূল। পরিবারের সিনিয়ররা যেমন বাবা মা, বড় ভাই বোন,নানা,নানী, দাদা,দাদী, মামা,চাচা ইত্যাদি এমন কি স্কুলের শিক্ষকরাও প্যারেন্টিং করে থাকেন এবং প্যারেন্টিং এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তাই প্যারেন্টিংটা সবসময় পজিটিভ হচ্ছে কিনা এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হওয়া উচিত।

প্যারেন্টিং স্টাইল মূলত ৪ ধরনের। আমি সংক্ষেপে বর্ণনা করছি।

১*অথোরেটারিয়ান: এই পদ্ধতিতে বাবা মা কড়া শাসনের মধ্যে সন্তানের মানুষ করতে চান। আদেশ করা মাত্র ই সন্তানরা তা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলবে এটাই প্রত্যাশা করেন। কোন ব্যাখ্যা ছাড়াই নিয়মকানুন মানতে বাধ্য থাকবে। “আমি বলছি তাই মানতে হবে'” এই জাতীয় মনোভাব থাকে প্যারেন্টসদের। সন্তাদের কোন স্বাধীনতা থাকেনা।এক্ষেত্রে বাচ্চারা কম আত্মমর্যাদা ও কম আত্মবিশ্বাসী হয়।

২*পারমিসিভ: এটা অথোরেটারিয়ান স্টাইলের সম্পূর্ণ বিপরীত। এখানে কোন নিয়ম কানুন থাকে না। থাকলেও খুব ই এলোমেলো। শিশুর সব চাহিদা বলা মাত্র পূরণ করা হয়। শিশু টি বিপদের দার প্রান্তে পৌছনোর সম্ভাবনা না থাকলে শিশু যাই করতে চায় তাতেই পিতামাতা অনুমিত দেন। শিশুদের প্রতি সমাজের কি চাহিদা, প্রত্যাশা সেই সম্পকের বাবা মা কোন ধারনা দেন না।সন্তান রা নিজেদের চাহিদার কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে। এই শিশু কিশোরেরা পরবরতীতে হটকারী,অসংযত, আক্রমণাত্মক, অবিবেচক হয়।

৩*আন ইনভ্লমেন্ট: এক্ষেত্রে দেখা যায় বাবা মা সন্তানের কোন খোজ খবর রাখেনা। সন্তান রা যা খুশী করার সুযোগ পায়। শিশু ভালো কাজ করলেও খোজ রাখেনা,প্রশংসা করে না আবার ক্ষতিকর কাজ করলেও তা জানার চেষ্টা করে না। আর্থিক সংগতি থাকলে টাকা পয়সা দিয়ে বাবা মা তাদের দায়িত্ব শেষ করেন।কোন ধরনের গাইড লাইন তারা দেন না। সারা রাত শিশু জরে ভুগছে,কেউ জানতে ও পারলো না সে অসুস্থতায় কষ্ট পেল। শিশু তখন অনুভব করলো কেউ তাকে ভালোবাসে না। সে একাকীত্ব বোধ করে,সম্পক গুলো নিয়ে ককনফিউজড হয়,হীন মন্যতায় ভূগে।

৪:অথোরেটেটিভ: এই পদ্ধতিতে শিশুর জন্য পরিকল্পিত ও সুনির্দিষ্ট নিয়মকানুন থাকে, একটি নির্দিষ্ট সীমারেখা থাকে। এই সীমারেখার মাঝে সে স্বাধীনতা ভোগ করে। আলোচনার মাধ্যমে নিয়ম কানুন গুলো কখনো সামান্য ঢিলা দেওয়া হয়। শিশুরা বুঝতে পারে এই নিয়ম কানুন গুলো তাদের ভালোর জন্য।বাবা মার সাথে আলোচনার পথ খোলা থাকে।তারা জানে বকোন সমস্যায় পড়লে নিরভয়ে বাবা মায়ের সাথে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান সম্ভব। সমস্যা শুনেই বাবা মা প্রথমেই বকা দেবেন না,শুধু শুধু তাদেরকে দোষারোপ করবে না এইটুকু নিশ্চায়তা তারা পায়।এই পদ্ধতিতে বাবা মা নিয়ম তৈরী করে দেন কিন্তু তার বাস্তবায়নের দায়িত্ব অনেকাংশ সন্তানের হাতে তুলে দেন।শিশু কোন ভুল করলে বাবা মা তাকে তিরস্কার না করে শিশুর সাথে বসেন,বোঝার চেষ্টা করেন এবং ঠান্ডা মাথায় আলোচনা করেন। নিজেদের প্রত্যাশা কথা শান্ত অথচ দৃঢ়ভাবে জানিয়ে দেন এবং ভবিষ্যৎ এ এই ভুল থেকে কিভাবে মুক্ত থাকা যায় সেটা নিয়ে আলোচনা করেন।এর ফলে শিশুরা আত্মবিশ্বাসী, আত্মমর্যাদাপূর্ন এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ করতে শিখে যায়।

আপুরা এবার আপনারা নিজেরাই নিজেদের প্রশ্ন করুন কোন প্যারেন্টিং স্টাইল টা আপনার ভালো মনে হয়েছে?কোন টি আপনার শিশুর জন্য ইফেক্টিভ?আপনিও এখনো কোন প্যারেন্টিং স্টাইলের মধ্যে আছেন?

শিশুর আচরনের জন্য কখনোই শিশু দায়ী নয়,প্যারেন্টিং স্টাইল পজেটিভ হলে শিশুর আচরনও পজেটিভ হবে। মনোবিজ্ঞানীদের মতে অথোরেটেটিভ স্টাইল টা এখন পর্যন্ত বেস্ট।

আসুন পজেটিভ প্যারেন্টিং করি, শিশুদের ভাল আচরণ শিখতে সহায়তা করি।

Facebook Comments