banner

রবিবার, ০৫ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 750 বার পঠিত

 

বদলে যাওয়া শ্রাবণের অনুভূতি


আফরোজা হাসান


আমাদের এখানে গত কয়েকদিন ধরে ঝরঝর শ্রাবণ ঝরেই যাচ্ছে। ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি বললে অবশ্য বেশি ঠিক বলা হবে। কারণ বাংলাদেশের মতো ঝমঝম বৃষ্টি এখানে কালে ভাদ্রে হয়। এখানে যা হয় তা হচ্ছে সারাটা দিন মেঘলা আকাশ আর টিপটিপ বর্ষা পানি। আম্মুর বকুনি খেয়েও বৃষ্টিতে ভেজা, আর কিছু না হোক অন্তত হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির পানিকে স্পর্শ করার দিনগুলো মনেপরে। অথচ এখন বকুনি দেয়ার কেউ নেই কিন্তু ইচ্ছে করে না ছুঁয়ে দেখতে আকাশ থেকে নেমে আসা পানিরাশিকে। দেশে থাকতে যে বৃষ্টি আমার সবচেয়ে পছন্দের জিনিসগুলোর একটি ছিল কিন্তু স্পেন আসার পর বৃষ্টি আমার সবচেয়ে অপছন্দের জিনিসগুলোর একটাতে পরিণত হয়েছে। পরিবেশ-পরিস্থিতি যে মানুষের পছন্দ-অপছন্দের উপর বিরাট প্রভাব ফেলে, সেটা অভিজ্ঞতার দ্বারা প্রমাণিত হতে দেখলাম। গত দশ বছরে মন যে কত পুরনো পছন্দকে বিয়োগ করে নতুনকে যোগ করেছে তা হিসেব ছাড়া।

মনের যে বাগানকে সাজিয়েছিলাম রজনীগন্ধা, বেলী, শিউলি, হাসনাহেনা দিয়ে, সেখানে এখন রং ছড়াচ্ছে অর্কিড, কার্নেশান, বুগেনভিলা আর হিবিসকাস। হঠাৎ কোথাও রজনীগন্ধা, বেলী, শিউলি, হাসনাহেনা দেখলে মনে ভালোলাগা তৈরি হয় সত্যি কিন্তু আগের মতো মুগ্ধতায় ছেয়ে যায় না মন। তেমনটা মুগ্ধ অর্কিড, কার্নেশান, বুগেনভিলা আর হিবিসকাস করে এখন মনকে। ঘুম থেকে উঠেই শুনতে হতো কাকের কা কা ডাক, বারান্দায় এসে দাঁড়ালেই দেখতে পেতাম ঝুলন্ত তারে বসে থাকা কাক। স্পেনে আসার পর কাক দেখিনি একদিনও। স্বামীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এখানে কাক নেই? ইশ কতদিন কাক দেখি না, কাকের কা কা শুনি না। উনি খুব হেসেছিলেন আমার কথা শুনে। তবে অনেক কবুতর দেখতে পাই। আমার জানালায়ও এসে বসে প্রায়ই।

আব্বুর চাকরীর সুবাদে সাভারের আবাসিক এলাকাতে বসবাস করতে হয়েছে। বিশাল এলাকা নিয়ে ছিল আমাদের কলোনী। বিশাল ফুলের বাগান, নানা ধরণের গাছের বনভূমি, রাত হলেই শেয়ালের ডাক, জঙ্গলে গুইসাপের ঘোরাঘুরি….সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর ছিল আমার জানালার পাশে বিস্তৃত ধানের ক্ষেত। সকালে ঘুম থেকে উঠে আমার প্রথম কাজই ছিল জানালা খুলে ধান ক্ষেতের দিকে তাকিয়ে থাকা আম্মুর ডাক শোনার আগ পর্যন্ত। স্পেনে আমার বাসার পাশেই বিশাল বড় পার্ক। যেটি মাদ্রিদের বড় পার্কগুলোর একটি। যখন খুশি যাওয়া যায় নিজেকে প্রকৃতির নিমগ্নতার সাথে একাত্ম করার উদ্দেশ্যে….. কিন্তু ইচ্ছে করে না। অথচ দেশে থাকতে একা একা প্রকৃতির কাছে যাবার নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি থাকা স্বত্ত্বেও ইচ্ছে হতো ধান ক্ষেতের আইল ধরে হেঁটে যাই মাইলের পর মাইল। বর্ষায় ইচ্ছে হতো বৃষ্টি হয়ে ঝরতে, শরতের আকাশে মেঘ হয়ে ভাসতে, চৈত্রের আকাশে চিলের মতো ডানা মেলে উড়তে। এখন আমি স্বাধীন নিজের ইচ্ছেপূরনের ব্যাপারে কিন্তু ইচ্ছেটাই কেন জানি হয় না।

দেশের প্রকৃতি, বাতাস, রোদ, বৃষ্টি সবকিছুতেই কেমন যেন একটা মিষ্টি মিষ্টি ভাব ছিল। ধান ক্ষেতের পাশে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে বুক ভরে শ্বাস নিলে প্রকৃতির সজীবতায় মনের মধ্যে চলে আসতো। এখানে অনেকবার এমন করেছি কিন্তু মনকে সজীবতা ঘিরে ধরেনি। মনেহয় পরিবেশ-পরিস্থিতিও পারে না কিছু কিছু পছন্দকে বদলে দিতে। কিছু কিছু স্থান শূন্যই থেকে যায়, থেকে যায় অপূরণীয়…………!!!

Facebook Comments