All posts by Oporajita

 

‘একটি আদর্শ প্রি-স্কুল, নারীই মূল চালিকাশক্তি’

তাহেরা সুলতানা


কোন স্কুল যদি বাচ্চার মানসিক এবং শারীরিক দুই সেক্টর বিকাশে সহায়ক হয়, আর শিক্ষক যদি হন মায়ের মতো, তাহলে কি কোন বাবা-মায়ের চিন্তা থাকে? নিশ্চয় নয়। মালয়েশিয়াতে বাচ্চাদের স্কুলগুলোতে পুরুষ শিক্ষক নেই বললেই চলে। আমি মূলত প্রি-স্কুলের কথা বলছি। আমার ছেলে এখানকার খুব নরমাল একটা স্কুলে পড়ে। অনেকটা সরকারি স্কুলের মতই, কিন্তু ইসলামিক স্কুল। তবে এ রকম অমুসলিম স্কুলগুলোতেও ব্যাসিক নিয়ম এক। আমি উল্লেখযোগ্য কিছু উদাহরণ তুলে ধরছি, যা আমাদের দেশের নামি-দামি স্কুলগুলোতেও অনুপস্থিত।

১। এখানে বাচ্চাদের স্কুলে ঢুকানোর পরপরই ১৫-২০ মিনিটের জন্য খেলতে দেয়া হয়, এরপর এসেম্বলি হয়, নাস্তা দেয়া হয়। বাসা থেকে স্কুলে খাবার আনা একদম নিষেধ। আর যদি কেউ আনতে চায়, পুরো ক্লাসের জন্য আনতে হবে। স্কুলের খাবার অত্যন্ত ভালো আর এক সপ্তাহের মধ্যে একই খাবার রিপিট করা হয় না। যারা সারাদিন থাকে, তাদের লাঞ্চও দেয়া হয়। এর জন্য এডমিশন এর সময় খুব সামান্য পরিমাণ টাকা নিয়ে নেয়। নাস্তার পর ক্লাস শুরু হয়। আর ক্লাস বলতে অইভাবে পড়াশুনা না, ছবি আঁকা, কিছু বানানো, এর মাঝে টুকটাক পড়াশুনা। হাতে কলমে শিক্ষার দিকেই এরা বেশি জোড় দেয়। ৪-৭ বছর বয়সী সব বাচ্চার জন্য একই নিয়ম। আর এখানে বাসায় বই আনা অথবা বাসা থেকে বই বা অন্য কিছু নেয়াও নিষেধ।
২। মেডিকেল ইন্সুরেন্স কার্ড স্কুল থেকেই বিনা খরচে করে দেয়।
৩। প্রতিদিন নাস্তার করানোর পর ৫ বছর থেকে সব বাচ্চাদের নিয়ে শিক্ষিকারা ‘সালাতুল দুহা’ পড়েন।
৪। বাচ্চাদের সব কাজ শিক্ষিকারা নিজ হাতে করেন। কোন আয়া এখানে নিয়োগপ্রাপ্ত নেই। তবে প্রায় সব বাচ্চাই নিজের কাজ নিজে করতে শিখে যায়। কারন এভাবেই তাদের গাইড করা হয়।
৫। মালয়েশিয়ান স্কুল হলেও ৭০% কনভারসেশন এবং পড়াশুনা ইংরেজিতে হয়, আর ৩০% বাহাসা মালয় ভাষায় হয়। আর ফরেন বাচ্চাদের ক্লাসেই ভালোভাবে মালয় ভাষা শেখানো হয়।
৬। টিচার-স্টুডেন্ট র‍্যাশিও ১:২০ এর বেশি নয়। আমি এখানে যে ক্যাটাগরির স্কুলের উদাহরণ দিলাম, এটা সবচেয়ে কম খরচের স্কুল। কিন্তু এদের সার্ভিস আমাদের দেশের খুব নামকরা স্কুলের চেয়ে বেশি। দেশে অনেকদিন শিক্ষকতা পেশায় থাকার কারনে বাস্তবচিত্র নিজের চোখেই দেখার সৌভাগ্য এবং দুর্ভাগ্য দুটোই হয়েছে।
৭। এখানকার সরকারি, বেসরকারি এবং প্রাইভেট সব স্কুলগুলোতেই কোন বাচ্চার বাবা-মা কত ধনী, সেইটা কখনওই বিচার করা হয় না। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ স্কুলে বাচ্চাদের জন্মদিন উৎযাপনের পদ্ধতি। একটি মাসে যতগুলো বাচ্চার জন্মদিন পড়ে, সবার একসাথে একটি দিনে উৎযাপন করা হয়। অভিভাবকদের আগের থেকেই জানিয়ে দেয়া হয়, তারা চাইলে কেকসহ অন্যান্য খাবার বাচ্চার জন্য সরবরাহ করতে পারেন এবং বাচ্চার সাথে থেকে আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। এই প্রোগ্রামের আর একটি উদেশ্য হলো, সবার সাথে আলাদা করে পরিচিতি, যাতে সব বাচ্চাই নিজেদের চিনে এবং জানে। এক বছরে ১২ টি মাসে যদি এভাবে জন্মদিন পালন করা হয়, তাহলে কেউ আর কারো কাছেই অচেনা থাকবে না, বন্ধুত্ব আর ভালোবাসায় স্কুল প্রাজ্ঞন ভরে উঠবে, সবার মধ্যে খুব ভালোভাবে ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরী হবে। আর বাচ্চাদের যদি জড়তা থাকে, সেটাও আস্তে আস্তে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়।
৮। কোন দেশের কোন সাধারণ প্রি-স্কুলের পক্ষ থেকে যদি বাচ্চার সাথে সাথে বাবা-মাকেও গাইড করা হয়, সে দেশের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোন জায়গাই কিন্তু থাকেনা। কিভাবে বাচ্চাকে ভাষা চর্চা করাতে হবে, কিভাবে পড়ার দক্ষতা বাড়াতে হবে, নতুন ভাষার সাথে বাচ্চাকে কি করে অতি সহজে পরিচিত করানো যাবে, কিভাবে একটি বাচ্চা একই সাথে ২/৩ টি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করতে পারবে, এই সবকিছু এই ট্রেইনিং গুলোর বৈশিষ্ঠ্য। বাচ্চা যাতে শিক্ষক আর বাবা-মায়ের শিখানোর মধ্যে সমতা খুঁজে পায়, এটাই এই ট্রেইনিং এর প্রধান উদ্দেশ্য।
৯। প্রতি মাসেই প্রতিটা বাচ্চাকে ক্লাসে ইংরেজিতে কোন না কোন বিষয়ের উপর উপস্থিত বক্তৃতা দিতে হয়। এটি হতে পারে কোন একটা খেলনা গাড়ী নিয়ে, কিংবা কোন ছবি নিয়ে অথবা কোন প্রিয় খাবার নিয়ে। এতে করে একটা বাচ্চা কেবল একজন ভালো স্পিকারই হয়ে উঠে না, তেমনি কথা বলার জড়তাও কাটিয়ে উঠতে পারে।
১০। স্কুলে বাচ্চাদের আলাদা করে কোন পরীক্ষা নেয়ার কোন সিস্টেম নেই। সারাবছর ধরেই এ্যাসেসমেন্ট চলতে থাকে। প্রতি সেমিস্টারে রেজাল্ট কার্ডে তার প্রতিফলন দেখা যায় এবং বাচ্চার সর্বনিম্ন এ্যাসেসমেন্ট হচ্ছে ‘সন্তোষজনক’।
১১। যেকোন ধরনের প্রতিযোগিতা বা খেলাধুলায় শিক্ষকরা সব বাচ্চাদের ১০০% অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেন এবং সবার জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকে। এখানে হার জিতের থেকে অংশ গ্রহণটাকেই বেশী গুরুত্ব দেয়া হয়, যাতে একটা বাচ্চার মনের উপর কোন নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে।

আমরা চাইলেই কিন্তু আমাদের দেশের স্কুলগুলোতেও বাচ্চাদের জন্য এরকম ভারসাম্যপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে পারি। আর যারা নিজেরাই স্কুল প্রতিষ্ঠার কথা ভাবছেন, তারাও কিন্তু এরকম একটা স্কুলের খসড়া এঁকে ফেলতে পারেন। আমাদের সবার ইচ্ছা, উদ্যোগ আর সাহসই কিন্তু আমাদের দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট! এর জন্য সত্যিই অনেক টাকার প্রয়োজন নেই!

 

গাছা ও গাছি

কানিজ ফাতিমা


নদীর ধারে একটু নির্জন বাঁকে আপনা থেকেই জন্ম নিয়েছে দু’টি গাছ। পাশাপাশি, কাছাকাছি। তাদের পাতার সতেজ নবীন আভাই বলে দেয় খুব বেশী দিন হয়নি ওরা জন্মেছে। কতইবা বয়স হতে পারে? গাছার হয়তো পনের আর গাছির দশ-বারো। শাখায়-পাতায় জড়াজড়ি করেই বেড়ে উঠেছে ওরা।

একই বাতাসে দোল খায় তারা। একই সঙ্গে বৃষ্টিতে ভেজে, রোদে পুড়ে। দূর-দূরান্ত থেকে পখিরা এসে বসে ওদের ডালে। একটু জিরোয়, ফুরুৎ করে এ ডাল থেকে ও ডালে উড়ে, নাচানাচি করে, আপন মনে ডাকে আর তারপর পাখনা মেলে পাড়ি জমায় নিজ ঠিকানায়। কখনও কখনও একঝাঁক পাখি এসে কিচির মিচির মেলা বসায়। এ সবই উপভোগ করতে করতে দিনে দিনে ওরা বেড়ে উঠেছে।

জন্মের পর প্রথম ক’টি বছর গাছা খুবই নিঃসঙ্গ ছিল। নির্জন বাঁকে মাঝে মাঝে পাখিদের গান অথবা দূর নদীতে দু’ একটি নৌকার ছলাৎ শব্দ এই ছিল তার সারা দিনের বৈচিত্র। তাই গাছি যখন মাটির উপরে মাথা তুলে প্রথম পৃথিবীর আলোতে পাতা মেলেছিল, বাতাসে থির থির কেঁপেছিল তখন গাছার মনেও আনন্দের বন্যা বয়েছিল। সে পরম যত্নে গাছির মাথার উপরে নিজের পাতা মেলে দিয়েছিল। গাছিও গাছার পাতার কোমল ছায়ায় ধীরে ধীরে বাড়ালো। সেদিন থেকেই ওদের এ শখ্যতা।

কয়েক বছরের মধ্যেই গাছা তার ডাল পালা মেলে মাটির নীচে শেকড়ের জাল বুনে মোটামুটি এক বিশাল দেহে আবির্ভূত হল, যেন শক্ত সমর্থ এক বীর মূর্তি।

গাছি বললো,
– আমিও ডাল মেলি?
– কি দরকার? আমি তো আছি। আমার ডালপালাই তোমাকে ঝড় থেকে বাচাঁবে।

গাছি বললো,
– শেকড় মেলে একটু শক্ত হই
– কি দরকার? আমার শেকড়ের জালই মাটি শক্ত করে ধরে রেখেছে। আমাদের দু’জনের জন্য এই যথেষ্ট। বুক পেতে আমি তোমায় ঝড় থেকে বাঁচাবো।

গাছা তার ডাল সরিয়ে গাছিকে ডালপালা মেলার জাগয়া করে দিল না। গাছার শেকড়ের ফাঁকে গাছি তার শেকড় ছড়ানোর সুযোগ পেলনা। ফলে গাছি দুর্বল আর গাছা-নির্ভর হয়ে রইলো।

একদিন হঠাৎ দশদিক দাপিয়ে ঝড় শুরু হল। ঝড়ের সেকি তান্ডব – বাতাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নদী পানিও যেন দুকূল ছাপাতে চাইছে। উপরে বাতাস আর নীচে নদীর জোয়ারের তোড়-গাছা একা আর সামলে উঠতে পারলোনা। বাতাস গাছার শক্ত ডাল এক এক করে ভেঙ্গে ফেলল। নদীর জোয়াড়ে গাছার শেকড়ের বুণনকে আলগা আলাদা করে দিল।

গাছি তার দুর্বল শরীর দিয়ে গাছাকে সাহায্য করতে চাইলো। চাইলেই কি আর সব হয়? সামর্থ থাকা তো চাই।

ঝড়ের সাথে ঝুলতে ঝুলতে দুর্বল গাছা বললো – “গাছি, যদি তোমার শাখাকে বাড়তে দিতাম তবে আজ ‘আমরা একসাথে’ পাগলা হাওয়া রুখতে পারতাম, তোমার শেকড় যদি মজবুত হতে দিতাম তবে আজ দু’জনে মিলে মাটি আঁকড়ে রাখতে পারতাম। হায়! তোমার বশ্যতা পাবার লোভের আজ এ পরিনতি। শ্রেষ্ঠত্বের অহংকার আর বশ্যতার নিস্ক্রিয়তায় ভালবাসা নেই; পারস্পারিক সম্মানের ভারসাম্যেই ভালবাসা।”

বাতাসের শোঁ শোঁ গোঙ্গানী ছাপিয়ে মড়-মড়াৎ শব্দ হল। পরের দিন পাখির ঝাঁক এসে তাদের চিরপরিচিত বসার জায়গা আর খুঁজে পেলনা। তারা দেখল নদীর চরে শিকড় উপড়ে পাশা পাশি পড়ে আছে দু’টি গাছ।

কানিজ ফাতিমা
লেখিকা, ট্রেইনার, শিক্ষিকা এবং গণসচেতন কর্মী

 

নিয়মিত ফাস্টফুডে নারীদের গর্ভধারণে সমস্যা হতে পারে

নারী সংবাদ


যে নারীরা নিয়মিত ফাস্টফুড খান কিন্তু ফলমূল কম খান, তারা গর্ভধারণ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে পারেন বলে নতুন একটি গবেষণায় বলা হয়েছে।

৫৫৯৮ জন নারীর ওপর একটি গবেষণার পর দেখা গেছে, যারা ফাস্টফুড খান না, তাদের তুলনায় যারা সপ্তাহে চার বা আরো বেশিবার ফাস্টফুড খান, তাদের গর্ভধারণে অন্তত একমাস সময় বেশি লাগে।
তাদের সন্তান ধারণ করতেও বেশি সময় লাগে বলে ওই গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘এটা প্রমাণ করছে যে, ভালো খাবার খেলে গর্ভধারণের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়’।

অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য আর আয়ারল্যান্ডের নারীদের কাছে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, প্রথম সন্তান ধারণের কয়েক মাস আগে তারা কোন ধরণের খাবার খেয়েছিলেন। গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন, ‘যে নারীরা মাসে তিনটার কম ফল খেয়েছেন, তাদের গর্ভধারণে নিয়মিত ফলাহারীদের তুলনায় দেড় মাস সময় বেশি লাগে’।

তারা দেখেছেন, ‘যারা ফল কম খায় বা ফাস্টফুড বেশি খাচ্ছেন, তাদের অনেকে পুরো বছর জুড়ে চেষ্টা করেও গর্ভধারণ করতে পারেননি’।

তবে কোন যুগলের পুরুষ সঙ্গী যদি ফাটিলিটি চিকিৎসা নিয়ে থাকেন, তাদের এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

গবেষণা দলের প্রধান, ইউনিভার্সিটি অব এডিলেডের অধ্যাপক ক্লারি রবার্টস বলছেন, ‘এই পর্যবেক্ষণ বলছে যে, ভালো মানের খাবার খাওয়া আর ফাস্টফুড এড়িয়ে চলতে পারলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায় এবং তাড়াতাড়ি গর্ভধারণ করা যায়’।

তবে অনেকে এর সমালোচনা করে বলছেন, এই গবেষণায় অল্প কিছু খাবারকে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। কিন্তু গর্ভধারণে হয়তো আরো অনেক বিষয়ের প্রভাব থাকতে পারে। এমনকি বাবাদের খাবারের বিষয়ে এখানে তথ্য সংগ্রহ করা হয়নি।

তারপরেও এই গবেষণাটির অনেক গুরুত্ব রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এই গবেষণার সঙ্গে জড়িত নন, ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ডের অধ্যাপক জিনো পেকোরারো বলছেন, ‘সারা বিশ্বের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যা মনে করেন, এই গবেষণা সেটিকেই সমর্থন করেছে যে, যে যুগলরা সন্তান নিতে চান, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার তাদের জন্য সহায়ক হতে পারে।’
সূত্র: বিবিসি

 

একজন ডাক্তার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার গল্প

ফাতেমা শাহরিন


তানজিলা জলিল অমি। হলি ফ্যামিলি মেডিক্যাল কলেজ এবং হসপিটাল থেকে এমবিবিএস শেষ করেছেন। একাধারে ‘কণ্ঠী’ এর ওয়নার,  ডিজাইনার দুটোই।

এক বছর আগের কথা,  নিজের ভেতরই পরিবর্তনের ডাক পেলেন অমি এভাবেই শুরু হল তার ‘কণ্ঠী’ র যাত্রা। ‘কন্ঠী’ মূলত হাতে বানানো গয়না এর অনলাইন দোকান। কন্ঠীর শুরুর গল্পটা বলতে গিয়ে অমি বলেন,  আমার প্রথম অনলাইন শপ আবোলতাবোল ক্রাফটস থেকে। মূলত ক্রাফটিং ম্যাটেরিয়াল সেল করতাম। ম্যাটেরিয়াল নিয়ে কাজ করতে করতেই এক সময় অল্পকিছু গয়না বানানো হয়। সবার ভালোলাগা আর উৎসাহতেই কন্ঠী চালু।

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা অমি বলছিলেন, ‘কণ্ঠী’ তে মূলত আমি একাই কাজ করি। এছাড়া আমার একজন ওয়ার্কার আছেন যিনি হাতের কাজ করেন। আমি কাজ কারো কাছে শিখিনি। নিজে নিজেই শেখা। ছোটবেলা থেকেই ক্রাফটিং এ উৎসাহ ছিলো আমার।
ম্যাটেরিয়াল সেল এর কারনে কাজ করা আরো সুবিধাজনক হয়েছে বলেও তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, সবচাইতে বেশি সহযোগিতা ও উৎসাহ পেয়েছেন মা এবং কাছের দুই একজন বন্ধুর কাছ থেকে।

নারী হিসেবে কাজটি তার কাছে কতটা চ্যালেঞ্জের ছিল?
এ প্রসংগে অমি বলেন, নারী হিসাবে সবচাইতে সমস্যা হল, গয়না বানানোর কাঁচামাল জোগাড় করা। কারণ আমাদের দেশে এখনো হাতের কাজ জনপ্রিয় না। এবং এসবের পরিসর অনেক কম। সেগুলো খুঁজে বের করা এবং কাজ করা কিছুটা কঠিন। এছাড়া বড় চ্যালেঞ্জ মুলধন। নিজ উদ্যোগ কাজ শুরু করা আবার নারী হিসাবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে যে কোনো কাজেই সাফলতা পাওয়া কিছুটা কষ্টকর। বড় সমস্যা হল, মূল ধারার ব্যবসার জন্য নারীরা সহযোগীতা কম পায়। বাধা প্রধানত, পরিবার থেকে আসে। দ্বিতীয়ত, মূলধনের অভাব তো আছেই।

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা  অমি বলেন,’মেয়েদের সাবলম্বী হওয়ার জন্য এটা যথেষ্ট ভালো সুযোগ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করা। কারন ঘরে থেকেই এই কাজ করা যায়। সীমিত মুলধন হাতে থাকলেও শুরু করা যায়।
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা অমির মতে, ‘নতুন নারী উদ্যোক্তাদের জন্য একটা কথাই হল, ‘কোনোভাবেই হার মানা যাবেনা।’ অনেক বাঁধা আসবে। অনেক কষ্ট করতে হবে। কিন্তু তবুও সামনে এগোনোর চেষ্টা করতে হবে। কণ্ঠী নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানান অমি। তিনি অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনেও কন্ঠীকে নিয়ে যাবেন। নিজের স্বপ্ন পূরণ করার ক্ষমতাই আসলে অমির কাছে বড় সফলতা।’

পরিশেষে একটাই কথা বলা যায়, যে কোন পেশার হতে পারেন সেটায় জীবনের মুল লক্ষ্য নয়, লক্ষ্য হওয়া চাই ‘সফলতা’। আর সফলতার জন্য কেবল মাত্র চাকুরিই মাধ্যম নয় বরং পরিশ্রমী, আত্মবিশ্বাসী, বুদ্ধিদীপ্ত উদ্যোক্তা হতে পারাটাই বড় সফলতা নিশ্চিত করে।

 

রোযায় খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্য (পর্ব- ১)

ডা. ফাতিমা খান


রহমত, বরকত ও মাগফিরাত এর পয়গাম নিয়ে আসে মাহে রমজান। আমাদের দেহযন্ত্রটি সার্ভিসিং করার জন্যই এ মাসের আগমন ; শুধু দেহই নয়, আত্নার পরিশুদ্ধিরও এক বিশাল সুযোগ দেয়া হয়েছে এ মাসে। ইসলাম ধর্ম ছাড়া আরও কিছু ধর্মে উপবাসের প্রথা চালু আছে। কিন্তু ইসলাম ধর্মের মত এত সহজ ও স্বাস্থসম্মত নিয়ম-নীতি অন্য কোন ধর্মে নেই। তাই রোযা অনেকগুলো রোগ-ব্যাধির চিকিৎসাও বটে। এসময় সাহরী ও ইফতারের খাদ্যতালিকার ব্যাপারে আমাদের একটু মনোযোগি হওয়া উচিৎ। অনেক সময় রোযার মাসে খাবার নির্বাচনে ভুল করায় আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি। অনেকেই অসুস্থ হয়ে যাওয়ার ভয়ে রোযা রাখা থেকে বিরত থাকেন। আসলে একটু খেয়াল করে স্বাস্থ্যসম্মত মেনু নির্বাচন করা হলেই আর স্বাস্থ্যগত সমস্যা হয়না।

সাহরীতে যা খাওয়া উচিত :

সাহরীর খাবার এমন হওয়া উচিত যা দীর্ঘক্ষন পেটে থাকে অর্থাৎ হজম হতে বেশি সময় লাগে। কেউ কেউ মনে করেন, সাহরীতে প্রচুর পরিমান আমিষ ( Protien) জাতীয় খাবার খেলে সারাদিন একটু সবল থাকা যাবে। কেউ কেউ আবার ভাত (Carbohydrate) বেশী খাওয়ার পক্ষপাতি। আসলে এর কোনটিই ঠিক নয়। সাহরীতে খাবারের প্রত্যেকটি উপাদান যেন প্রয়োজনীয় পরিমাণে থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বছরের অন্যান্য সময়ে হয়ত আমরা এভাবে সুষম খাবার খাওয়ার কথা ভাবি না, কিন্তু অন্যান্য সময় ত বটেই, রোযার মাসে এ দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। আমিষ, শর্করা ও চর্বি জাতীয় খাবারের কোনটিই যেমন খাদ্যতালিকায় বাদ পড়া উচিত নয়, তেমনি কোনটি পরিমানে বেশী খাওয়া ঠিক নয়। শর্করা জাতীয় খাবার বেশী খাওয়ার ফলে pancreas থেকে ইনসুলিন এর নিঃসরণ বেড়ে যায়। এই অতিরিক্ত ইনসুলিন গ্লুকোজ কে রক্ত থেকে দ্রুত দেহকোষে প্রবেশ করিয়ে দেয়। অর্থাৎ অতিরিক্ত ইনসুলিন এর কারনে রক্তে গ্লুকোজ বেশীক্ষণ থাকতে পারে না। অতিরিক্ত ইনসুলিন নিঃসরণের কারণে দেহের স্থুলতা বেড়ে যায়। আবার,আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসের কারণে দৈনিক যে নির্দিষ্ট পরিমাণ আমিষ-হজমকারী এঞ্জাইম আমাদের পাকস্থলি থেকে নিসৃত হয় , তা দিয়ে অতিরিক্ত আমিষ হজম করা সম্ভব নয়। তাছাড়া অতিরিক্ত আমিষ গ্রহনের ফলে শরীরে ঝিমুনি আসে ও রক্তে ইউরিয়ার পরিমান বেড়ে যায়, যা দেহের জন্য একটি ক্ষতিকারক বর্জ্য পদাথ। অনুরূপভাবে অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার দেহকোষ ও রক্তে অনাকাংখিত মেদ তৈরী ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না। যাদের পিত্তথলি বা লিভারের সমস্যা আছে তাদের জন্য অতিরিক্ত চর্বি অত্যন্ত ক্ষতিকর !তাই রোযার মাসে সাহরীতে অন্য মাস গুলোর মত স্বভাবিক খাবার খাওয়াই শ্রেয়ঃ। তবে জটিল শর্করা জাতীয় খাবার খুব ধীরে হজম হয় বলে এ ধরনের খাবার সাহরীতে খাওয়া ভালো। যেমন- ঢেঁকিছাটা চালের ভাত, লালরুটি, পাউরুটি, বার্লি, সব রকমের আলু, oatmeal, pasta, macaroni, spaggetti ইত্যাদি। এই খাবারগুলো পাকস্থলীতে দীর্ঘক্ষণ স্থিত থাকে ,হজম হয় ধীরে ধীরে। তাই রোযাদারের ক্ষুধাভাব কম অনুভব হয়। এর সাথে পছন্দ অনুযায়ী পরিমিত মাছ/ মাংস ও প্রচুর শাক-সবজি খাওয়া যেতে পারে। একজন রোযাদারের জন্য সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন যথেষ্ঠ পানি ( দৈনিক অন্তত ২ লিটার ) ও তাজা ফলের রস পান করা । অনেকেই এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন না। পানি দেহকে সতেজ রাখে। শরীর নামের কারখানার বিভিন্ন রাসায়নিক কার্যকলাপের মূল উপাদান এই পানি। পানি কম খেলে দেহের বর্জ্য পদাথগুলো বের হয় না, দেখা দেয় নানাবিধ সমস্যা। স্বাস্থবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে সাহরীতে খাওয়ার বেলায় আল্লাহ রাসূলের (সাঃ) নিয়ম অনুযায়ী খাওয়াই উত্তম – অর্থাৎ পাকস্থলীর তিন ভাগের একভাগ খাবার ও তিন ভাগের একভাগ পানি দিয়ে পূরণ হবে এবং বাকী এক ভাগ খালি রাখতে হবে শ্বাস নেয়ার জন্য। অনেকেই হয়ত ভাববেন, আমরা তো পাকস্থলী দিয়ে শ্বাস নেই না, তাহলে পাকসথলীর এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস নিতে সাহায্য করে কেমন করে ? উত্তরটা খুবই সহজ। পাকস্থলীর উপরে আছে ‘ডায়াফ্রাম’ নামের একটি বড় মাংসল পর্দা। আমরা যখন শ্বাস গ্রহণ করি, তখন ডায়াফ্রাম সংকুচিত হয়ে নিচের দিকে নেমে আসে এবং ফুসফুস স্ফীত হয়। খাদ্য দিয়ে পাকস্থলী পুর্ণ থাকলে শ্বাস গ্রহণের সময় নিশ্বাস-প্রশ্বাসের এই মূল পেশী – ডায়াফ্রাম সংকুচিত হয়ে নিচের দিকে নামতে পারেনা, ফুসফুস পর্যাপ্ত স্ফীত হয় না ও পরিমাণমত অক্সিজেন দেহে প্রবেশ করতে পারে না। তাই খাবার গ্রহণের ব্যাপারে রাসূল (সাঃ) এর Golden theory of one third মেনে চলা আবশ্যক।

ইফতারে যা খাওয়া উচিত :

সারাদিন রোযা থাকার পর পাকস্থলীতে এমন কিছু খাবার দেয়া উচিৎ যা দ্রুত শরীরে শক্তি যোগায় ও বিভিন্ন ঘাটতি পূরণ করে। ইফতার হিসেবে সরল শর্করা উত্তম। কেননা এটি দ্রুত হজম হয় ও শক্তি যোগায়। দেহের শরীরবৃত্তীয় চাহিদা পূরনের জন্য কিছু Essential elements গ্রহণ করা জরুরী। যেমন- মস্তিষ্কের খাদ্য হল গ্লুকোজ । গ্লুকোজের অভাবে মস্তিষ্কের কাজ ব্যাহত হয়। সৃষ্টিকর্তা মস্তিষ্ককে এভাবে তৈরী করেছেন যে, ইন্সুলিনের সাহায্য ছাড়াই গ্লুকোজ মস্তিষ্ক কোষে ঢুকে যায়।

শরীরের আরেকটি গুরুত্বপূরণ অঙ্গ হল কিডনি, যা পানির অভাবে মারাত্নভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। ১২ ঘন্টায় ৩০০ মিলি র কম প্রস্রাব উৎপন্ন হলে kidney failure এর সম্ভবনা থাকে।
দেহের স্বাভাবিক কার্যকারিতার জন্য বিভিন্ন খনিজ উপাদান যেমন- সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদি অত্যাবশ্যক। ইফতারে এমন সব খাবার খাওয়া উচিত যে খাবারে প্রয়োজনীয় পরিমান পানি, গ্লুকোজ ও খনিজ উপাদান থাকে। তাতে মস্তিষ্ক, কিডনি ও ত্বকের কার্যক্রম ঠিক থাকে।

আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ” যদি তোমাদের কেউ রোযা রাখে তাহলে সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে। যদি সে তা না পায় তাহলে পানি দিয়ে। নিশ্চয়ই পানি হল পরিশোধক ( Purifiyer)।” [সূত্র-বুখারী ও বায়হাকী]

এদিক থেকে চিন্তা করলে পানি, শরবত ও ফলের রস ইফতার হিসেবে অতি উত্তম। খেজুরে আছে গ্লুকোজ ও নানা ধরনের খনিজ উপাদান। এতে রয়েছে সরল শর্করা যা দ্রুত শোষন হয় এবং মস্তিষ্ক ও দেহে শক্তি জোগায়। উচ্চ রক্তচাপ, রক্তশূন্যতা, কোষ্ঠকাঠিন্য ও বিভিন্ন হৃদরোগ প্রতিরোধে খেজুরের অবদান অপরিসীম। হাড়ের সুস্থতা ও রক্তে কোলেস্টেরল কমানোর ক্ষেত্রেও।

 

সৌন্দর্য্য সচেতনতা নাকি স্বাস্থ্য

মিথিলা ফেরদৌস


জীবনে প্রথম বিউটি পার্লার গিয়েছিলাম, ডাক্তার হবার পর, আমার দুই কাজিনের সঙ্গে , যারা আমার হাঁটুর বয়সি, তাদের কাজে, আমার কাজে না।

সেই বয়সেই তারা সৌন্দর্য সচেতন। বাসার কাছেই পার্লার। গিয়ে অপেক্ষা করছি, সোফায় দুই বোন আমার দুই পাশে বসে, কিছুক্ষন পর আরও দুইটা মেয়ে ঢুকলো, আমাদের সামনের সোফায় বসলো। আমার দুইবোন সঙ্গে সঙ্গেই , আমার দুই পাশে দুই হাত ধরে টেনে পার্লার থেকে বের করে আনলো, বুঝলাম না কি হইছে। একজন বললো, পরে আসা ওই দুই মেয়ের মধ্যে একজন তাদের কাজের বুয়ার মেয়ে।

আমি একটু অবাক, তাতে কি? তাদের কথায় বুঝলাম শ্রেণী সচেতনতা। তারা ডিক্লেয়ার করলো, এই পার্লারে তারা জীবনেও আসবে না।

রংপুর শহরে এক রাস্তার দুই কিমি. এর মধ্যে ১৩ টা পার্লার আছে। মানুষ দিন দিন সৌন্দর্য সচেতন হচ্ছে। খারাপ না। চাকুরী সুবাদে অনেক রিমোট অঞ্চলে আমার পোস্টিং ছিলো, সেইসব জায়গায়ও বিউটি সেলুন দেখেছি অনেক।

আমার বাসার কাছে একটি পার্লারের নতুন একটি ব্রাঞ্চ খুলবে ব্যাপক প্রচার। মসজিদে পর্যন্ত লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে, জুম্মার নামাজের দিন আমার ছেলে হাতে করে লিফলেট আনলো, এছাড়া নেটে মোবাইলে প্রতিদিন ম্যাসেজ আসে।

একটু উৎসুক হইলাম। হইতেই পারি।মেয়ে তো। উদ্বোধনের দুইদিন পর গেলাম।১০% ছাড় চলতেছে। তিন তলায় পার্লার,শুধু পার্লারের জন্যে আলাদা লিফট। ভিতরে ঢুকেই আমার মাথা নষ্ট। এত্তো সুন্দর ইন্টিরিয়র ডিজাইন। সুন্দর সুন্দর মেয়েরা ঘুরছে চারিদিকে, সবাই দেখে সুন্দর হাসি দিচ্ছে, গুডমর্নিং ম্যাম,ওয়েলকাম, জটিল অবস্থা, কারে কি উত্তর দিবো।

যেখানে চাকরী করি সেখানে তো এইসবের কারবার নাই, তাই অভ্যস্ত ও নই। যাইহোক ঢুকার পর আমাকে একগাদা ফর্ম ফিল আপ করতে দেয়া হলো। এই একটা কাজ আমার বিষের মত লাগে, ফর্ম ফিল আপ। মনে হচ্ছে বিসিএস এর ফর্ম ফিল আপ করতেছি।ভাগ্য ভালো গোল্লা পুরন নাই। এককপি ছবিও দিতে হইলো। আটাস্টেড লাগে নাই।যথারীতি কাটাকুটি করে ফর্ম ফিল আপ করে দিলাম। একটা পয়েন্ট কার্ড দিলো।

এরপর বিশাল লাইনের পিছনে কাউন্টারে দাড়ালাম, আমার সামনে যারা, তারা বেশির ভাগ মধ্যবয়সি, অথবা কম বয়সি মেয়ে। বেশির ভাগ দেখলাম, ৫০০০ টাকা থেকে ২০০০০ টাকার কাজ, মনে মনে ভাবলাম, এরা কি সারাদিন এখানেই থাকবে?!

আমার পালা আসলো,
–কি করবেন ম্যাম??
কি করবো বুঝতে পারছিনা,বললাম
–চুল কাটাবো
মেনু বের করে দিলো, মেনু দেখে চুল কাটার নাম না পড়ে দাম দেখা শুরু করলাম ১২০০ টাকা থেকে শুরু, আমার মুখ দেখে ওরা বুঝেছে, বললো
–ম্যাম আপনি কি রেগুলার হ্যান্ডে(আনএক্সপার্ট হ্যান্ড)
কাটতে চান তাহলে খরচ একটু কম পড়বে।
— হুম।
সেই মেনুর ও দাম শুরু ৬৫০ টাকা দিয়ে।মনে মনে ভাবলাম, আমার চার টা চুল, আমার রেগুলার হ্যান্ড, জামাই কেটে দিতে পারবে।
বললাম
–চুল কাটবো না। ফেসিয়াল করবো।
ফেসিয়ালের লিস্ট বের করলো, কি কি সব নাম, আবার দাম দেখা শুরু করলাম, সবচেয়ে কম দাম ৩০০০টাকা। বললাম
–আর কিছু নাই?
–ম্যাম এইটা স্পা,রেগুলারে কম খরচ পড়বে।
ওরা আমারে বুঝে গেছে। বললাম দেখি।আবার মেনুতে নাম না দেখে দাম দেখা শুরু করলাম, সবচেয়ে কম দাম ৯৫০ টাকা, নাম টাও চেনা। অরেঞ্জ ফেসিয়াল।কি আর করা। কাউন্টারে বিল দিয়ে স্লিপ নিয়ে অপেক্ষার পালা। তখন পুরাটা খুটে খুটে দেখা শুরু করলাম।

চারিদেকে সুরুচির চিহ্ন। একটা দেয়ালে দুই প্বার্শে গ্লাসের মধ্যে ফোয়ারা, সুন্দর লাইটিং তার মধ্যে, চারিদিকে দেয়ালে সুন্দর সুন্দর ছবি ঝুলানো, প্রতিটা কর্নারে দামী দামী ক্রিস্টালের শো পিস। এমন কি ওয়েটিং কর্নার গুলো এতো সুন্দর সুন্দর চেয়ার। কোথাও ইংলিশ গান, কোথাও হিন্দি গান, কোথাও শুধু মিউজিক। ক্লিনার রা পরিষ্কার করে যাচ্ছে, কিছুক্ষন পর পর পারসোনা লোগো এর কাপে চা দিয়ে যাচ্ছে। একগাদা পত্রিকা। এর মধ্যে মাইকে আমার নাম শুনে চমকে উঠলাম, যাইহোক আমার পালা।গেলাম,সেখানে আমাকে একেবারে নতুন একটা ড্রেস দেয়া হলো।

আমি তীব্র ভাবে বললাম,আমি অন্য ড্রেস পরতে পারবোনা,আমার শুধু মুখ পরিষ্কার করে দেয়া হোক।যাই হোক ফেসিয়াল শুরু।আমার মত একটা রেস্টলেস মেয়ের জন্যে যা বিভিষিকা।চোখ বন্ধ করে থাকা। আমি বার বার বলছিলাম,
–কখন শেষ হবে?
বাসায় আসার পর আমার জামাই অফিস থেকে এসে বলে
—তোমাকে এত কালো লাগতেছে কেনো? কি হইছে?তোমার না আজ পার্লার যাবার কথা!!
—গেছিলামতো।
—-তাহলে এই অবস্থা কেন?
—–তোমার কি ধারণা,পার্লার গেলে একদিনে বাজিগরের কাজল,কাভি খুশি কাভি গমের কাজল হয়ে যায়?অসহ্য।

আমার ছেলে যে সেলুনে চুল কাটে,ঢাকা শহরে,সব বড় মার্কেটে তার ব্রাঞ্চ আছে।কয়দিন পর পর দাম বাড়ায়,আর আমার জামাই বলে আর জীবনেও আসবোনা।কিন্তু ছেলে জিদের কাছে পরাজিত বাবা বার বার যেতে হয়।কারণ সেখানে গাড়ীতে বসে চুল, কাটতে কাটতে কার্টুন দেখে, চুল কাটার পর খেলনা পাওয়া যায়।

আমার আজকে লেখা মুল উদ্দেশ্য,মানুষ দিনে দিনে যতটা সৌন্দর্য সচেতন হচ্ছে, ততটা স্বাস্থ্য সচেতন হতো যদি। একজন ডাক্তারকে ৫০০ টাকা ভিজিট দিতে তাদের যে কষ্ট, অবলীলায় পার্লারে হাজার হাজার টাকা দিতে তাদের তেমন কোনো কষ্টই হয়না। অথচ এইসব পার্লার থেকে কত কত স্কিন ডিজিস এনে ডাক্তারদের ৫০০ টাকা দিতে তাদের এত পরান কান্দে কেনো?

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ
______________________________
মিথিলা ফেরদৌস

 

যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে (শেষ পর্ব)

আফরোজা হাসান


বেশ কয়েকমাস আগে একজন ব্যক্তির কিছু কথা ও কাজের কারণে তার প্রতি শ্রদ্ধাবোধে চিড় ধরে গিয়েছিল। প্রফ বোঝাতে চেষ্টা করছিলেন কারো একটা বা দুটা ভুল আচরণের জন্য তার উপর নেতিবাচকতার সাইনবোর্ডই লাগিয়ে দেয়াটা অন্যায়। কেউ ভুল ত্রুটির উর্দ্ধে নয় এটা সবসময় মনে রাখা উচিত। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমরা যাদেরকে পছন্দ করি তাদেরকে মনের সর্বোচ্চ স্থানে জায়গা দিয়ে ফেলি। তাই তাদের সামান্য চ্যুতিও আমাদেরকে মুষড়ে দেয়। আর চ্যুতি যখন ক্রমাগত হতে থাকে তখন শ্রদ্ধাবোধ নষ্ট হওয়াটাই স্বাভাবিক। অবশ্য শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিরও সচেতন থাকা অবশ্যক। কেননা একটা আচরণের দ্বারা যদি আমি কারো মনে শ্রদ্ধার বীজ বপন করি। তখন সেই বীজটা যাতে অক্ষত থাকতে পারে, বীজ থেকে চারা বের হতে পারে, চারা গাছে রূপান্তরিত হতে পারে সেই দায়িত্বটাও আমারই পালন উচিত। সবসময় শুনেছি শ্রদ্ধা অর্জন করার চেয়ে টিকিয়ে রাখাটাই বেশি কঠিন। প্রফের কাছ থেকে জেনেছিলাম নিজ আচরণ দ্বারা কারো মনে যদি শ্রদ্ধার জন্ম দেই তাহলে সেটাকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্বও আমারই।

এমন ছোট-বড় আরো কতই কিছুই না শিখিয়ে গিয়েছেন উনি আমাদেরকে। যা যা মনে পড়েছে এক এক করে সব লিখে মেইল পাঠিয়ে দিয়েছি প্রফকে। জানি সেই মেইল উনি হয়তো দেখবেন না কোনদিন। তবুও আমি এমনটা করেছি নিজের মনের স্বস্থির জন্য। কেননা মনে স্বস্থি না থাকলে জীবনে সব থাকতেও কোথাও শান্তি মিলে না এটা আমার খুব ভালো মতই জানা আছে। তাই সদা সতর্ক থাকতে চেষ্টা করি যাতে কিছুতেই মনের স্বস্থি বিঘ্নিত না হয়। কিন্তু সবসময় পারিনা। প্রফ যেহেতু আমার কলিগও ছিলেন এমন বেশ কয়েকবার হয়েছে উনার উপর রেগে গিয়েছি, যা বলেছেন তার উল্টো বলেছি, আমার যুক্তির সাথে মেলেনি তাই কেয়ার করিনি উনার কথা। সব বার হয়তো তেমন করে সরি বলাও হয়নি। গত তিন-চার মাস থেকে খুব কথা বলতে চাইতেন আমার সাথে। আমারো নানান ঝামেলা যাচ্ছে তাই নিজে তো ফোন দিতামই না উনি করলেও তেমন করে কথা বলা হয়ে ওঠেনি যেমনটা করে উনি বলতে চাইতেন।

আজ এসব স্মৃতি মনেকরে অপরাধবোধে ভোগা, দুঃখিত হওয়া আসলে অর্থহীন। কেননা আমার কোন অনুভূতিই উনার কাছে পৌছোবে না। কথায় বলে জীবনে সুযোগ, সম্ভাবনা একবারই আসে। হেলায় হারিয়ে ফেললে তাকে আর পাওয়া যায় না জীবনে। কিন্তু আপনজন, প্রিয়জন, পছন্দের মানুষদের ঘিরে স্মৃতিগুলোকে সুন্দর করার সুযোগ বার বার আসে, আর আসতেই থাকে আমাদের জীবনে। কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই আমরা সেই সুযোগকে কাজে লাগানো তো দূরে থাক, সেটা যে একটা সুযোগ এটাই অনুভব করতে পারি না।

সমস্ত অনুভব, উপলব্ধি একসাথে মনে এসে ভিড় করে যখন সেই মানুষগুলো আমাদেরকে ছেড়ে চলে যায় অনেক দূরে। অথচ এই মানুষগুলোই জীবন যখন তপ্ত দাহ নিয়ে হাজির হয়, এরা হয় প্রশান্তিকর ঘন ছায়া! পিপাসাক্ত পথিকের মত মন এদের মাঝে খুঁজে পায় মিঠা পানির সরোবর! হতাশার ঘোর অমানিশায় এরাই জ্বালিয়ে যায় আশার প্রদ্বীপ! অসহায়ত্বের প্রহরগুলোতে জাগায় নির্ভরতার আশ্বাস। পথহারা মুহুর্তেকে আঙুল উঁচিয়ে দেখিয়ে দেয় গন্তব্যের দিশা!

ভালোবাসার রেণু ঝরিয়ে যায় এরা শব্দে শব্দে! ধূসর গোধূলি বেলা এদের ছোঁয়ায় পরিণত হয় মাহেন্দ্র ক্ষণে! ধূ ধূ মুরুভূমিকে মনেহয় চন্দ্রালো ছড়ানো শালবন! মেঘলা আকাশকে করে দেয় রোদেলা দুপুর। এরা সবসময়ই অবস্থান করে মনের অনুভূতির বিপরীতে।

যাতে জীবন বীণা যখন বেদনার ঝঙ্কার তোলে ছড়িয়ে দিতে পারে আনন্দের বাণী। এরা আসলে ঠিক কেমন সেটা প্রকাশ যোগ্য না। তবে যারাই জীবনে এমন কারো সন্ধান পায়, আল্লাহর রহমা স্বরূপই পায়। সবসময় যে পরিবারের সদস্যই হয় এমন মানুষগুলো এমনটা ঠিক না।

রক্তের বন্ধনের বাইরেও কেউ হয়ে উঠতে পারে আপনার আপন। বন্ধন রক্তের হোক কিংবা মনের এটা আসলে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বন্ধনের হক আদায় করা, তাদের মূল্যায়ন ও স্বীকৃতি দেয়া। যাতে তারা জীবন থেকে অতীত হয়ে গেলে মনের কোণে ভিড় জমাতে না পারে তাদের প্রতি আমাদের দ্বারা সংঘটিত অভিমান, অবহেলা, অনুযোগ, অভিযোগ…।

এমন মানুষ গুলো আসলে আমাদেরকে জীবনকে চিনতে, জানতে ও বুঝতে শেখায়! যাদের কথা এই উপলব্ধি জাগায় যে জীবন যদি নিস্তব্ধতার আঁধারে ঢেকে যায়, তবুও সেটা আমাদের জন্য আল্লাহর দেয়া আমানত। দুঃখের অমানিশায় তাই জীবন থেকে মুখ ফিরিয়ে না নিয়ে হাত বাড়িয়ে তাকে কাছে টেনে নিতে হবে।

আগাছায় ছেয়ে গিয়েছে বলে ত্যাগ না করে মমতার চোখে তাকাতে হবে জীবনের দিকে। তাহলেই চোখে পড়বে আগাছার ফাঁকে ফাঁকে নিজের অস্তিত্ব জানান দেয়া ঘাসফুলদের। এই প্রিয় মানুষগুলো যদি কখনো হারিয়ে যায়, তবুও সবসময় বেঁচে থাকে মন মাঝারে। কেননা উৎসাহ-প্রেরণা-স্নেহ-মায়া-মমতা-আদর-শাসন ও ভালোবাসার আদলে এরাই গড়ে দিয়ে যায় জীবনের ভিত্তি। হারিয়ে গিয়েও তাই এরা বেঁচে থাকে যাপিত জীবনের প্রতিটি কথা, কাজ ও দর্শনে।

 

চট্টগ্রামে নবম শ্রেণীর ছাত্রী ধর্ষণ ও হত্যা

নারী সংবাদ


নবম শ্রেণীর স্কুল ছাত্রী তাসফিয়া আমিন বয়স ১৬ বছর। চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত ইংলিশ মিডিয়াম ছাত্রী। বন্ধুর আদনান মির্জার সাথে সৈকতে বেড়াতে গিয়ে লাশ হলেন। পুলিশের ধারণা, ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ সৈকতে ফেলে দেয়া হয়।

গতকাল (বুধবার) নগরীর পতেঙ্গা থানার নেভাল বিচ এলাকায় কর্ণফুলী নদীর তীর থেকে চোখ, নাক-মুখ থেঁতলে যাওয়া ওই স্কুল ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বেলা ১১টায় স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে নেভাল একাডেমির ১৮ নম্বর ঘাট এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।

তাসফিয়া আমিন নগরীর নাসিরাবাদ ইংলিশ মিডিয়াম সানশাইন গ্রামার স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। তার পিতার নাম মোঃ আমিন। তাদের বাসা নগরীর ও আর নিজাম রোড আবাসিক এলাকায়। তাদের বাড়ি কক্সবাজার শহরের ডেইলপাড়া এলাকায়। লাশটি অজ্ঞাত হিসেবে উদ্ধারের পর দুপুরে তার বাবা আমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন।

পরিবারের বরাত দিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পতেঙ্গা থানার এসআই আনোয়ার হোসেন বলেন, মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে আদনান মির্জা নামে এক বন্ধুর সঙ্গে তাসফিয়া বেড়াতে বের হন। দুজন কিশোর কিশোরী। তারা দুইজনেই ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত সানশাইন এ পরেছে। সেখানেই তাদের পরিচয়। আর সম্পর্ক ১ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ঘুরতে বের হয়। এরপর রাতে আর বাসায় ফেরেনি। আদনান মির্জার সন্ধানে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। পুলিশ জানায়, ফেইসবুকের মাধ্যমে ওই যুবকের সাথে তার পরিচয় হয়। পরিচয় থেকে প্রেমে জড়িয়ে পড়ে দুইজন।

পতেঙ্গা থানার পরিদর্শক ফৌজুল বলেন, পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, ফেইসবুকে পরিচয়ের পর আদনান মির্জা নামে এক যুবকের সঙ্গে এক বছর আগে থেকে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তাসফিয়া। আদনানের সঙ্গেই তাসফিয়া পতেঙ্গা সৈকতে এসেছিল বলে পরিবারের ধারণা। আদনানকে আমরা আটকের চেষ্টা করছি। তার ধারণা, তাসফিয়াকে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ নদীর তীরে ফেলা হয়েছে।

ফৌজুল আজিম চৌধুরী জানান, তার দুই চোখ, নাক ও মুখ থ্যাঁতলানো ও রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। মুখে ফেনা ও রক্ত আছে। তার পরনে ছিল সালোয়ার কামিজ। স্থানীয়রা দেখে তাকে প্রথমে বিদেশি বলে ধারণা করে। নদীর তীরের উঁচু স্থান থেকে আনুমানিক ৮-১০ ফুট নিচে পাথরের ওপর লাশটি পড়ে ছিল। তার ধারণা আগের রাতের যেকোন সময় তাকে খুন করে লাশ সেখানে ফেলে যাওয়া হয়েছে।

ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আসলে এসব বিষয় নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানান তিনি। সুত্র: ইন্টারনেট এবং ফেসবুক।

 

যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে……১ম পর্ব

আফরোজা হাসান


“আমাদের জীবনের সবচেয়ে অবধারিত ঘটনা হচ্ছে মৃত্যু। তাই একটি মুহুর্তকেও এলোমেলো, অগোছালো, উদ্দেশ্যহীন ভাবে কাটানোর কোন সুযোগ নেই। তাই কোন ভাবনা যদি স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে বিঘ্নিত করে তবে সেটা থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। কেননা কোন কিছুর বিনিময় জীবনের স্বাভাবিকত্বের সাথে হতে পারে না।” কথাটি আমাদের নিউরো সাইকোলজির প্রফ বলেছিলেন আমাদের এক ক্লাসমেটকে। ক্লাসমেটটি তার পারিবারিক কিছু জটিলতার ভাবনাতে এতোই এলোমেলো হয়ে পড়েছিল যে তার প্রভাব পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলো। প্রফের কথাটি শোনার পর শুধু সেই ক্লাসমেটই নয় আমরা সবাই’ই সতর্ক হয়েছিলাম আমাদের সেইসব ভাবনার ব্যাপারে যা অকারণ জটিলতার বীজ বুনে চলছিল আমাদের জীবনে।

আমার সবচেয়ে প্রিয় টিচারদের একজন ছিলেন উনি। শুধু তাই নয় যাদেরকে দেখে শিখেছিলাম জীবনকে জীবনের মত করে যাপন করতে, যাদের কাছে জেনেছিলাম জীবনে সুখী হবার সবচেয়ে শর্টকার্ট ও ফলপ্রসূ টিপস হচ্ছে,সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা করা উনি তাদেরও একজন ছিলেন। কিছু মানুষ বুঝিয়েছিলেন জীবনে মাঝে মাঝে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যার উপর আমাদের কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না। সেসব ঘটনার জন্য কাউকে দায়ী না করে নিয়তি লিখন হিসেবে তার সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়াতেই কল্যাণ নিহিত থাকে।কেননা তাহলেই কেবল মানুষ সবকিছুকে স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে পারে। সহজ ভাবে গ্রহণ করতে পারে জীবনের প্রতিটা চড়াই-উৎরাইকে। উনাদেরকে দেখেই উপলব্ধি করেছিলাম নিজের সমস্যা ও কষ্টকে কখনোই বড় করে দেখা ঠিক নয়। আর সেজন্য সবসময় মনে রাখতে হবে যা ঘটার কথা ছিল তাইঘটেছে, আর যা ঘটেছে তার মধ্যেই নিহিত আছে কল্যাণ।

বাবা সেই ছোটবেলা থেকেই বার বার বলতেন, ´´কখন যে জীবন বৃক্ষ থেকে হঠাৎ কে ঝরে যাবে সেটা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে না। তাই আপনজন, প্রিয়জন, পছন্দের মানুষদেরকে কখনোই যথাযথ মূল্যায়ন করতে অবহেলা করবে না। ´´ কিন্তু তারপরও অবহেলা যে হয়েই যায় সেটা আবারো অনুভব করলাম আমাদের নিউরো সাইকোলজির প্রফের মৃত্যুর সংবাদ শোনার পর। মনের পর্দায় ভেসে এসেছিল ‘খুব ইচ্ছে করছে তোমার হাতের মাটন বিরিয়ানি, চিকেন তান্দুরী আর গাজরের লাড্ডু খেতে’। শেষ যেদিন কথা হয়েছিল আমার হাতের খাবার খেতে ইচ্ছে করছে এই আবদার করেছিলেন প্রফ। একবার কোলকাতায় গিয়ে “যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন…” এই রবীন্দ্র সঙ্গীতটি শুনেছিলেন প্রফ। ফিরে এসে ক্লাসে জানতে চাইলে অর্থ বুঝিয়ে বলার পর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলেছিলেন, আচ্ছা ‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে’ তোমরা কি আমাকে মনে রাখবে? তোমরা আমাকে মনে রাখতে পারো এমন কিছু তোমাদেরকে শেখাতে পেরেছি? এরপর থেকে প্রতি ক্লাসের পরই উনি আমাদের সবার কাছ থেকে বিদায় নেবার সময় জানতে চাইতেই, আমাকে তোমরা মনে রাখবে এমন কিছু আজ শেখাতে পেরেছি?!

আমরা কখনোই খুব একটা সিরিয়াসলি নেইনি প্রফের প্রশ্নটিকে। বেশির ভাগ সময়ই হেসে উড়িয়ে দিয়েছি। উনার মৃত্যু সংবাদ শোনার পর প্রথমেই কানে বেজে উঠেছিল ‘খুব ইচ্ছে করছে তোমার হাতের মাটন বিরিয়ানি, চিকেন তান্দুরী আর গাজরের লাড্ডু খেতে’। চোখ থেকে ঝরঝর অশ্রু নেমে এসেছিল। এমনটা আমার দ্বারা কখনোই হয় না সাধারণত। কেউ কিছু খেতে চাইলে শত ব্যস্ততার মধ্যেও আমি তাকে সেটা রান্না করে খাওয়াতে চেষ্টা করি। জানি না কেন প্রফের ক্ষেত্রে ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে আজ করবো কাল করবো করে করে শেষপর্যন্ত আর উনার জন্য রান্না করাই হলো না। ‘আমাকে তোমরা মনে রাখবে এমন কিছু আজ শেখাতে পেরেছি’? এই প্রশ্নটার কথা মনে পড়ার পর বেদনার আরেকটি তীব্র স্রোত বয়ে গিয়েছিল অন্তর জুড়ে। কেন এই ছোট ও সহজ প্রশ্নটির জবাব নিয়ে এত হেয়ালি করেছিলাম? বেদনার সাথে যুক্ত হয়েছিল অপরাধবোধও।

অবুঝের মতো ছুটে গিয়েছিলাম রান্নাঘরে। মাটন বিরিয়ানি, চিকেন তান্দুরী, গাজরের লাড্ডুর সাথে চমচম আর বোরহানিও তৈরি করলাম। প্রফ আমার হাতের চমচম আর বোরহানিও অনেক পছন্দ করতেন। রান্না শেষ করে মেইল লিখতে বসলাম। কত কিছু শিখেছি গত বারো বছরে প্রফের কাছে। এক এক করে সব লিখলাম। প্রফকে দেখে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে জিনিসটা শিখেছিলাম সেটা হচ্ছে মানুষের সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা রাখা। দীর্ঘ এত বছরে এমন একবারও হয়নি উনি কারো ব্যাপারে সামান্য নেতিবাচক কিছু বলেছেন। কিংবা উনার কাছে কেউ কারো সম্পর্কে নেতিবাচক কিছু বলতে চাইলে সেটাকে প্রশয় দিয়েছেন। আমাদের এক ক্লাসমেট যখন বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ির সবার সম্পর্কে ওর নেতিবাচক ধারণার কথা বলছিল প্রফ বলেছিলেন, সারাজীবন যাদের সাথে কাটাতে হবে তাদের ব্যাপারে এত দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক নয়।

 

মে দিবসে শ্রমজীবি নারী

অপরাজিতা ডেক্স


মে দিবস, ‘শ্রমিক-মালিক ভাই ভাই সোনার বাংলা গড়তে চাই।’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ২০১৮ সালের মে দিবস পালিত হচ্ছে। শোষণ, বঞ্চনা আর অক্লান্ত পরিশ্রম থেকে মুক্তির দাবীতে ১৮৮৬ সালের এই দিনে রক্ত ঝরিয়ে ছিলেন শ্রমিকরা।

প্রতিবছরের ন্যায় এবারও রাষ্ট্রীয়ভাবে মে দিবস উদযাপন উপলক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে।

শ্রমজীবী নারী

বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই নারী শিক্ষা আনুপাতিক হারে কম আমাদের দেশে। ফলে নারীর স্বীকৃতি মিলছে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই শ্রমজীবী হিসেবে। বর্তমান সময়ে চায়ের দোকান, দিনমজুর থেকে সব ধরনের অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নারী শ্রমিকদের ব্যাপক অংশগ্রহণ দেখা যায়।

কি কি কাজে নিয়োজিত

নারী শ্রমিকরা মুলত নানানমুখী কাজ করছে।
১.গৃহকর্মী হিসেবে।
২.গার্মেন্টস শিল্পে নারী শ্রমিকদের বিশাল ভূমিকা। গার্মেন্টসে কাজ করা শ্রমিকদের শতকরা ৮০/৯০% ভাগই নারী। ৩.কৃষিকাজেও অংশগ্রহণ।
৪. ইটভাটায়ও কাজ ।
সর্বস্তরেই কোন কাজেই নারীরা পিছিয়ে নেই। নারী শ্রমিকদের প্রতি সম আচরণ ও সমান সুযোগের ঘোষণা গৃহীত হলেও নারী শ্রমিকরা কার্যত সেই সুবিধা ভোগ করতে পারেন না।

শ্রমজীবী নারীদের বেতন বৈষম্য

ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ ও স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্টের যৌথ এক গবেষণাপত্রে বলা হয়, “নারীর জন্য অর্থনৈতিক ন্যায্যতা’ থেকে জানা যায়, শতকরা ৬১ জন নারী শ্রমিক দৈনিক ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পেয়ে থাকেন এবং শতকরা ৩২ জন দৈনিক ১০০ টাকার কম মজুরি পান”। অন্যদিকে, শতকরা ৫৬ জন পুরুষ শ্রমিক ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পান।

শ্রমজীবি নারীদের আইনগত সচেতনতা

মূলত চারটি আইন সম্পর্কে শ্রমজীবী নারীদের প্রাথমিক ধারণা থাকা দরকার। এগুলো হলো :
১. মুসলিম পারিবারিক আইন
২. নাগরিক অধিকার রক্ষা আইন।
এর দু’টো ধারা রয়েছে :
ক. সাংবিধানিক ও খ. ফৌজদারি আইন
৩. মুসলিম উত্তরাধিকার আইন এবং
৪. ভূমি আইন।
একজনকে শ্রমজীবিকে লিখিত সহায়িকা, ছবি সম্বলিত চার্ট, ক্লাস নোট প্রভৃতির মাধ্যমে সহজভাবে ক্লাসে করে করে বিভিন্ন আইনের ধারাগুলো বুঝিয়ে দেওয়া উচিত।

শ্রমজীবি নারী বা সাধারণ সকলের প্রতি সংবেদনশীল আইনও নারীদেরকে আশ্রয় দিতে হবে, ছায়া দিতে হবে, রক্ষা করতে হবে কিন্তু আদৌ কি পারছে এই সমাজ? মুলত সমাজে পুরুষ এবং নারীর অবস্থা ও অবস্থান যে সম পর্যায়ের নয় এবং তার নাম ঠিকানা পত্রিকায় প্রকাশ যে তার জন্য আজীবন অভিশাপ বয়ে আনে এ বোধ সাংবাদিকদেরকেও ভাবতে হবে। জাতির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে এসব নারী শ্রমিকদের অবদান অনেক।

 

নবজাতকের যত্ন

ডা. মারুফ রায়হান খান


সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশু! এই সারা ধরায় এর চেয়ে সৌন্দর্যময় আর আকর্ষণীয় বুঝি আর কিছু নেই। নবজাতকের প্রতি আমরা সবাই খুব বেশি যত্নবান হতে চাই, কিন্তু আমরা ঠিকঠাক জানি তো কী কী বিষয় এক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য রাখা উচিত? কোনো বাড়াবাড়ি বা ছাড়াছাড়ি হয়ে যাচ্ছে না তো? কয়েকটা কথা আমাদের একেবারে সবারই মনে রাখা উচিত। আর সদ্য/ হবু মা-বাবা হলে তো কথাই নেই!

সুস্থ নবজাতক বলতে আমরা কী বুঝি আসলে?

  • মায়ের গর্ভ থেকে যদি ৩৭-৪২ সপ্তাহের মধ্যে ভূমিষ্ঠ হয়, এর আগে বা পরে না।
  • জন্মের সময় ওজন যদি ২.৫-৪ কেজি হয়।
  • জন্মের পরপরই যদি স্বাভাবিক কান্নাকাটি করে এবং শ্বাসপ্রশ্বাস নেয়। স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাসের হার প্রতি মিনিটে ৩০-৬০ বার।
  • কান্না করার সাথে সাথে বাচ্চার রঙ গোলাপী বর্ণ ধারণ করবে।
  • বাচ্চার শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকবে।
  • কোনো জন্মগত ত্রুটি থাকবে না।

বাচ্চার খাওয়া-দাওয়া 

জন্ম হবার আধাঘণ্টার মধ্যেই বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করতে হবে। বাচ্চাকে প্রথম ৬ মাস শুধুমাত্রই বুকের দুধ খাওয়ান। এটা আল্লাহ প্রদত্ত এক আশ্চর্য রকমের বিশেষ নিয়ামত। বাচ্চাকে এই নিয়ামত থেকে বঞ্চিত করবেন না। আপনার বাচ্চাকে নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ালে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া আর কান পাকা রোগ থেকে রক্ষা পাবেন। বাচ্চা হবে অনেক অনেক বেশি বুদ্ধিমান।

বুকের দুধ কতো বার খাওয়াতে হবে 

বাচ্চাকে আসলে ডিমাণ্ড ফিডিং করাতে হয়। অর্থাৎ বাচ্চা কাঁদলেই খাওয়াতে হবে। রাতের বেলাতেও খাওয়াতে হবে। নিদেনপক্ষে বাচ্চাকে ৮ বার বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।

নবজাতকের প্রস্রাব -পায়খানা

মায়েদের এবং সেই সাথে বাচ্চার নানী-দাদীদের খুব কমন অভিযোগ বাচ্চা দুধ পায় না। যদি দেখা যায় যে বাচ্চা ২৪ ঘণ্টায় ৬ বার প্রস্রাব করে, তাহলে ধরে নিতে হবে সে পর্যাপ্ত খাচ্ছে। আর যেসব বাচ্চারা বুকের দুধ খাচ্ছে, তারা দিনে ১০-১৫ বার পায়খানা করতে পারে, এতে ভয়ের কিছু নেই।

বাচ্চার ডায়াপার 

একবার প্রস্রাব/পায়খানা করা মাত্রই ডায়াপার বদলে ফেলতে হবে। আমাদের দেশের মায়েরা দেখা যায় ওজন করতে থাকেন যে কখন ডায়াপারটা ভারী হয়। দেখা যাচ্ছে বাচ্চা দীর্ঘ সময় পায়খানা/প্রস্রাবের মধ্যেই আছে, যা খুব অস্বস্তিকর বাচ্চার জন্যে।

নবজাতকের গোসল 

গোসলটা ২-৩ দিন পর দিলে সবচেয়ে ভালো হয়। জন্মের সাথে সাথে গোসল করালে নিউমোনিয়া হবার সম্ভাবনা থাকে। ২-৩ দিন পর থেকে প্রতিদিনই গোসল করাবে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে হালকা গরম পানিতে বাচ্চাকে গোসল করিয়ে ফেলতে হবে। প্রথমে মাথাটা ধোবে, তারপর মাথা মুছে ফেলবে। তারপর শরীরে পানি দিয়ে গোসল সম্পন্ন করবে। পানিতে কোনো জীবাণুনাশক মেশানোর দরকার নেই।

ঋতুভেদে বিশেষ খেয়াল 

শীতকালে একটু বেশি কাপড় চোপড় দিয়ে বাচ্চাকে ঢেকে রাখতে হবে। মাথায় ক্যাপ, হাতে-পায়ে মোজা পরাতে হবে। বাচ্চা যেন ঠাণ্ডা না হয়, এটা খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি বাচ্চা যেন ঘেমে না যায় সেটাও লক্ষ্য রাখতে হবে।

দুটো অনুরোধ 

দাদী-নানীদের উদ্দেশ্যে একটা কথা! বাচ্চা একটু কান্নাকাটি করলেই মা-কে ফিডার/কৌটার দুধ দেওয়ার জন্যে জোর করবেন না।

সিনিয়রদের প্রতি অনুরোধ! বাচ্চা বুকের দুধ খেলে বারবার পায়খানা করতেই পারে। এ কারণে বুকের দুধ বন্ধ করে আপনারা কৌটোর দুধ লিখবেন না কাইন্ডলি।

ডা. মারুফ রায়হান খান
প্রভাষক
ফার্মাকোলজি বিভাগ
এনাম মেডিকেল কলেজ

 

অবশেষে অভিনেত্রী বাঁধন তার মেয়ের অভিভাবকত্ব পেলেন

নারী সংবাদ


লাক্স তারকা ও অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন অবশেষে আদালতের নির্দেশে মেয়ে সায়রার অভিভাবকত্ব পেলেন । ৩০ এপ্রিল রোজ সোমবার ঢাকার ১২তম সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক ইসরাত জাহান মেয়েকে বাঁধনের অভিভাবকত্বে দেওয়ার আদেশ দেন।

বাঁধনের ভাষ্যমতে, ‘আজ ৩০ এপ্রিল ২০১৮ ইং তারিখ, দ্বাদশ সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালত, (ঢাকা) যে আদেশ আমার মামলায় দিলেন, তা একটি যুগান্তকারী রায় এবং আদালত পাড়ায় মাইলফলক। আইনজীবীরা বললেন, শুধু বাংলাদেশে নয়, এই উপমহাদেশ এটি বিরল উদাহরণ হয়ে থাকবে।’

বিচারক তার আদেশে বলেন, কন্যা শিশুর অভিভাবক হচ্ছেন মা। কন্যার সর্বোত্তম মঙ্গলের জন্য মায়ের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। বাবা মাসে কেবল দুই দিন মায়ের বাড়িতে গিয়ে মায়ের উপস্থিতিতে মেয়েকে দেখে আসবেন। কন্যা শিশুকে নিয়ে মা দেশের ভেতরে এবং বাইরে যেতে পারবেন, যেহেতু মা-ই কন্যাশিশুর অভিভাবক।

রায়ের পর বাঁধন বলেন, মেয়ের অভিভাবকত্ব পাওয়ার জন্য গত নয় মাস আমি অনেক সংগ্রাম করেছি। মেয়েকে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেছি। কিন্তু আজ আমি নিশ্চিন্ত। আদালত মেয়ের সম্পূর্ণ গার্ডিয়ানশিপ আমাকে দিয়েছেন।

মুলত ২০১০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর মাশরুর সিদ্দিকীর সঙ্গে বাঁধনের বিয়ে হয়। কিন্তু ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর তাদের বিয়ে বিচ্ছেদ হয়। তাদের একটি কন্যা সন্তান আছে।

২০১৭ সালের আগস্ট মাসে বাঁধন আদালতে অভিযোগ করেন, ‘মেয়ে সায়রাকে তার প্রাক্তন স্বামী জোর করে নিয়ে যান। এরপর একরকম জোর করে তাকে কানাডা নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন।
মা হিসেবে মেয়ের অভিভাবকত্ব চেয়ে গত বছর ৩ আগস্ট মামলা করেছিলেন বাঁধন। আদালত সেই মামলার রায় দেন সোমবার (৩০ এপ্রিল)।

অভিনেত্রী বাঁধন তার অভিব্যপ্তি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন ‘সততাই যে সর্বোত্তম পন্থা সেটা আবারও প্রমাণ হলো। নিশ্চিত ছিলাম, সঠিকভাবে আইনকে উপস্থাপন করতে পারলে আইনের সুশাসন যে দেশে এখন আছে, সেটা প্রমাণ পাওয়া যায়’

বাঁধন আরও লিখেছেন, আমার জীবনের এই অংশটায় যারা যারা সমর্থন দিয়েছেন, তাদের প্রত্যেককে আমার গভীর কৃতজ্ঞতা। আপনাদের নাম নিতে চাই না, শুধু অনুরোধ করবো মেয়েকে যেন এভাবেই, আমার নিজের সামর্থ্যে, মানুষ হিসেবে বড় করতে পারি, সেই দোয়া করবেন।

 

হাজারীবাগে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যা স্বামী গ্রেফতার

নারী সংবাদ


রাজধানীর হাজারীবাগে যৌতুকের দাবিতে মারুফা বেগম (২৫) নামে এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন তার স্বামী। গত রাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ঘাতক স্বামী মোহাম্মদ সুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

নিহত মারুফার বড় ভাই মোহাম্মদ রুবেল জানান, প্রায় ১১ বছর আগে সুজন-মারুফা প্রেম করে বিয়ে করেন। এই পর্যন্ত সুজনকে যৌতুক বাবদ দেড় লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। তবে সুজন একটি প্রাইভেটকার কেনার জন্য তাদের কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করেন। এর জের ধরেই গত শুক্রবার সকালে মারুফাকে লোহার পাইপ দিয়ে পেটান সুজন। এতে মারুফা অসুস্থ হয়ে পড়লে রাত
আড়াইটায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শনিবার দুপুরে চিকিৎসকেরা তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে তাকে নিউরো সার্জারি বিভাগের ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডে রেফার্ড করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় চিকিৎসক মারুফাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় গতকাল সকালে মারুফার বড় ভাই বাদি হয়ে হাজারীবাগ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন ও যৌতুক আইনে একটি মামলা করেন। পুলিশ ওই সময় স্বামী সুজনকে আটক করে।

নিহত মারুফা স্মৃতি আক্তার নামে ৯ বছর বয়সী এবং রাইসা মনি নামে তিন বছর বয়সী দুই মেয়ের মা। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। মারুফা হাজারীবাগের টালি অফিসের চরঘাটার মসজিদ গলির (চুন্নু মিয়ার ১৬/১ নম্বর বাড়িতে) ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকতেন। তার স্বামী সুজন পেশায় একজন প্রাইভেটকার চালক।

হাজারীবাগ থানার ডিউটি অফিসার এসআই হাবিবুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সুত্রঃ নয়াদিগন্ত

 

জন্মই যখন মানুষ না নারী হয়ে

তানজিনা সুলতানা


“শুনেছি মা-বাবার চতুর্থ কন্যা সন্তান হিসেবে জন্ম নেওয়ার পর আমার মা এক সপ্তাহ আমার মুখের দিকে তাকাননি”। আমার এক বান্ধবী বলেছিলো।

হসপিটালে দেখেছিলাম, এক ভদ্রলোকের নাতনী হয়েছে শুনার সাথে সাথেই তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন।
নিজের ছায়ার দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার ছিলো না আমার!!

এক আপুর কন্যাসন্তান হওয়ার পর দ্বিতীয়বার যখন পুত্র সন্তান হয় তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, “কেমন আছেন আপু??”

জবাবে বলেছিলেন, “ভালো আছি রে, এইবার যদি আবারও মেয়ে হতো তাহলে আমার জামাই আমাকে ঘর থেকে বের করে দিত”

এক মা তার ছেলে সন্তান হওয়ার পর পাশের এক মহিলাকে বলছিলেন, “ভাবী আমার যদি এইবারও মেয়ে হতো আমি স্ট্রোক করে মরে যেতাম!!”

খুব কাছের একজন মানুষ তার ভাইয়ের ছেলে হওয়ার খবর শুনে কান্না করছিলো। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেছিলন, “খুশির কান্না.. আজ যদি আমার ভাইয়ের মেয়ে হতো আমার রুহ থাকতো না”। তাকে বলেছিলাম, “তাহলে তো আমার জন্মের খবর শুনার পর তোমার রুহ ছিলো না”।

“ছিলো না”
এইতো জীবন!!!

আমার পাশের ছেলেটি যখন স্কুলে যায় তখন পরিবার, সমাজ তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে, ছেলেটি অনেক বড় হবে। আমি যখন স্কুলে যাই তখন সবাই বলাবলি করে, কোনমতে মেট্রিকটা পাশ করাতে পারলেই হয়।

আমার পাশের ছেলেটি যখন উচ্চতর ডিগ্রী নিতে যায় তখন সমাজ বলে, মেধাবী ছেলে। আমি যখন উচ্চতর ডিগ্রী নিতে যাই সমাজ বলে, “উপযুক্ত ছেলে পাবে তো??”

আমার পাশের ছেলেটি রোজগার করে এনে যখন মা-বাবাকে দেয় তখন সমাজ বলে, “ছেলেটি তোমার বড় ভালো”। আমি যখন রোজগার করে এনে মা-বাবাকে দিই সমাজ বলে, “মেয়ের কামায় খাওয়ার জন্য তো মেয়েকে বিয়ে দিচ্ছো না”

“আহারে জীবন…
আহা জীবন…
জলে ভাসা পদ্ম জীবন!!!”

দিনশেষে আমার বস্তাবন্দি লাশটা পাওয়া যায় রেলস্টেশনের পাশে…ক্ষত-বিক্ষত অবস্থায় আমার লাশ পড়ে থাকে ঝোঁপে-ঝাঁড়ে…। আমার ঘাড় মটকানো লাশটা খুঁজে পাওয়া যায় বাসের ভিতরে!!

মাঝে মাঝে মনে হয়, ছেলে হয়ে জন্ম নেওয়াটা সৌভাগ্যের!!!

তানজিনা সুলতানা
অ্যাপ্রেন্টিস অ্যাডভোকেট
জজ কোর্ট, চট্টগ্রাম।

 

নারী রাইডার নিয়ে এলো ‘ও বোন’

২৮ এপ্রিল শনিবার থেকে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ‘ও ভাই’ এর উদ্দ্যোগে নারী যাত্রীদের জন্য অ্যাপটিতে এবার চালু করা হয়েছে ‘ও বোন’ সেবা। মুলত এমজিএইচ গ্রুপের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ‘ও ভাই’।

নারীদের জন্য থাকছে আলাদা নারী বাইক রাইডার। ‘ও ভাই’ অ্যাপের অন্তুর্ভুক্ত ‘ও বোন’ অপশনে গিয়ে শুধুমাত্র নারীরাই এ রাইড শেয়ারিং সেবা গ্রহণ করতে পারবে।

ইতিমধ্যে নিবন্ধিত বেশ কিছু নারী রাইডারসহ আরও ৫০ জন নারী রাইডারকে এ সেবাদানের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।

এছাড়াও, অপেশাদার নারীদের জন্য ‘ও ভাই’ তাদের নিজস্ব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করছে।

ঢাকার নারীদের সড়কপথে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও সাচ্ছন্দ্য চলাচলের জন্য ‘ও ভাই’ এ সেবা নিয়ে এসেছে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রচারণা চালাচ্ছে।

‘ও ভাই’ প্রাথমিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নারী রাইডারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। এই অ্যাপে একটি ‘ইন-অ্যাপ’ এসওএস ফিচার রয়েছে যার মাধ্যমে নারীরা যেকোন সময় ‘ও ভাই’ মূল সাপোর্ট সেন্টারে যোগাযোগ করতে পারবেন।

সুতরাং নারীদের যাতায়াত আরও স্বাচ্ছন্দ্যময় হবার লক্ষ্যে বিশেষ সেবার প্ল্যাটফর্মটির `ও ভাই` প্রতিষ্ঠানের ৫০ জন্য নারী রাইডার বিশেষ সহযোগিতাপূর্ণ হবে বলে সাধারণরা মনে করেন।

 

জীবনের বাকচক্র (শেষ পর্ব)

তাহেরা সুলতানা


শেষ পর্যন্ত সামান্য জমানো টাকা আর কিছু ধার-দেনা করে চাঁদনীকে নিয়ে রাফিয়া আর বাশার ঢাকার পথে রওয়ানা হলো। ততদিনে চাঁদনীর ছোট্ট শরীরটা শুকিয়ে একটা পুটলির মতো হয়ে গেছে। কোন প্রাণ নেই যেন! সারাক্ষণ অক্সিজেন মাস্ক পরিয়ে রাখতে হচ্ছে।

ঢাকায় এসে ওরা প্রথমেই ঢাকা মেডিকেলের শিশু বিভাগে গেল। সেখানে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ পেসেন্ট এর এই অবস্থা দেখে দ্রুত ভর্তি করিয়ে নিলো।

ডাঃ এর সব রিপোর্ট আর প্রেসক্রিপশন দেখে উনার মুখটা থমথমে হয়ে গেলো। আরও কিছু টেস্ট এর কথা বলে ভিতরে চলে গেলো। বাশার ডাঃ এর মুখ দেখে বেশ খারাপ কিছুই আঁচ করলো, কিন্তু রাফিয়াকে কিছু বুঝতে দিলো না। কিন্ত বুকের ভিতরটা যেন ধক করে উঠলো।

অনেকক্ষণ ডাঃ, নার্স কাউকে দেখতে না পেয়ে রাফিয়া কাঁদতে কাঁদতে বাশারকে
জিজ্ঞেস করলো, -আচ্ছা, রুমের মদ্যি এতোক্ষণ ধইরে কি করছে? মেয়ে ডারে দেখতিও তো দেচ্চে না। আমার কিন্তু কিছুই ভালো ঠ্যাকছে না! তুমি এট্টু দেকনা গো!

বাশার এক ধমক দিয়ে বসিয়ে দিয়ে বললো, তুমি চুপ কইরে বসি থাকো। ডাঃ তো দেখতিসে। তুমি কি ডাঃ এতো কতা কচ্চ? মাইয়ে ভালো হইয়ে যাবিনে। তুমি বসি বসি খালি দুয়া পড়।

লাস্টের কথাগুলো বলার সময় বাশারের গলাটা যে ধরে আসছিল, সেটা কিন্তু রাফিয়ার চোখ এড়ালো না।

এভাবে ৭ দিন কেটে গেল। হাতে যা টাকা ছিল, তাও শেষ। কিন্তু চাঁদনীর অবস্থার কোন উন্নতি না হয়ে আরও অবনতি হলো। এখানকার ডাঃ ও ফিরিয়ে দিলো। বললো,

-দ্রুত ইন্ডিয়া নিয়ে যান। এখানে আর সম্ভব না। আপনারা আগে যে ডাঃ দেখিয়ে ছিলেন, উনারা ভুল চিকিৎসা করেছে। বাচ্চার ফুসফুসে ইনফেকশন হয়েছে। অনেকটা জায়গায় ইফেক্ট করেছে।

বাশার ধপাশ করে চেয়ারে বসে পড়লো। ভাগ্য ভালো, রাফিয়া তখন রুমের বাইরে ছিল, বাশার মনে মনে ভাবলো।

বাড়ি পৌছানো পর্যন্ত বাশার রাফিয়াকে কিচ্ছু বললো না। কি বা বলবে! ইন্ডিয়া গিয়ে চিকিৎসা করানোর মতো ক্ষমতা তো তার নাই।

সারাটা রাস্তায় বাশার থমথমে মুখ করে থাকলো। কয়েকবার জিজ্ঞেসও করেছে, ডাঃ কি বললো। অন্য কথা বলে এড়িয়ে গেছে। সঠিক কোন উত্তর পায়নি। উত্তরটা জানতে পারলো পরদিন সকালে, ফুফুর চিৎকার চেঁচামেচিতে।

-আমাগেইরে এতো তালুক নেই যে, ভারতে লিয়ে গিয়ে চিকিৎসে করাতি হবি! বাপের বাড়ি থেইকে আনতি ক! নয়তে যা হবার তাই হবি! আমরা আর পারছিনে! বিয়ের সময় আমার ভাই খালি মেয়েডারেই গছিয়ে দেল! কিছু দিয়েছে নাকি? কি কুলক্ষণেই যে এই অপয়া মাইয়েডারে ঘরের বউ কইরে আনতি গিলাম!

ওর মা একডা….
বাকি কথা আর রাফিয়ার কান পর্যন্ত পৌছালো না। জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেলো।

রাফিয়া চোখ খুলে দেখলো, বাশার মাথার পাশে বসা। হঠাৎ মেয়ের কথা মনে পড়ায় লাফিয়ে উঠে বসলো। বাশার বুঝতে পেরে বললো,

-চাঁদনীক খুজতিছো? মার ঘরে রেকে আইছি। তুমি মাথা ঘুইরে পইড়ে গেলা। আমি তখন তুমারে লিয়া বেস্ত। অক্সিজেন মাস্ক এট্টু পর পর খুলতি হচ্ছে, তাই ভাইবলেম, মার কাছি ভালো থাকপেনে। আমি ভালো কইরে শিখিয়ে দিয়ে এইসেছি। একন সবারি মাতা গরম। তুমি মার কতায়….
বাকি কথা রাফিয়ার কানে আর গেলল না। সে এক লাফে বিছানা থেকে নেমে পড়লো, এরপর ফুফুর ঘরের দিকে ছুটলো। আজকাল তার কাউকে বিশ্বাস হয় না।
ঘরে ফুফুকে পেলো না। ডাঃ ১০ মিনিট পর পর বিরতি দিয়ে মাস্ক পরাতে বলেছে। শ্বাস-প্রশ্বাস অবজার্ভ করতে বলছে, কিছুই তো হয়নি। ওইভাবে ছুটতে দেখে বাশারও পিছন পিছন চলে আসছে। রাগে গজগজ করে বললো,

-তুমি আমার মারে সন্দেহ করতিচো? আমার মায়ে মাইয়েরে মাইরে ফেলবি, এই ভাবতিছ? ছি! ছি! ছি!

রাফিয়া কাঁদতে কাঁদতে বাশারের পায়ে ধরে বললো,

-আস্তে কতা কও। মা শুইনে ফেললি লংকাকান্ড বেধে যাবিনে। আমি সেকতা কচ্চিনা গো। মেয়েডারে না দেকতি পেয়ে ছুটি চলি আইচি। তোমার পায়ে ধরি কচ্চি, তুমি চুপ করো। চুপ করো।

বাবার সাথে ফুফুর সম্পর্কে চরম টানাপোড়ন চলছে। তাও রাফিয়ার আর নাতনীর কথা ভেবে বাবা-মা ২জনই চলে আসলো। রাফিয়ার মুখে সব কথা শুনে বাবা যেটুকু জমি ছিল, তা বেচে দিয়ে টাকাটা বাশারকে দিয়ে দিলো। আর বললো,

– বাবা, আমার নাতনীর চিকিৎসে বাবদ যা লাগবি, আমিই দেব, তুমি যাওয়ার ব্যবস্থা করো। লাগলি, ভিটেবাড়িও বেইচে দেব। তাও আমার নাতনী যেন সুস্থ্য হইয়ে আসে।

রাফিয়া বাবার পায়ের কাছে বসে অনবরত কাঁদতে লাগলো।
বাশার ইন্টারনেট ঘেটে ভারতের ভেলরে একজন নামকরা শিশু বিশেষজ্ঞ এর খোজ পেল। কিন্তু সিরিয়াল পেল এক মাস পর। এরপর ঢাকার ডাঃ এর মাধ্যমে সেটা এক সপ্তাহ কমিয়ে আনতে পারলো।
এর ওর মাধ্যমে টাকা খাইয়ে যথাসময়ে ভিসা আর ট্রেইনের টিকেটও করে ফেললো। বেনাপোল কাছে হওয়ায় ট্রেইনেই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।

ভেলর হাসপাতালের প্রধান শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ দীনেশ পান্ডে (ছদ্মনাম) পুরো একদিন ধরে সমস্ত রিপোর্ট আর

প্রেসক্রিপশনগুলো নিয়ে গবেষণা করলো। বাশার আর রাফিয়া কাজিন শুনে ওদের ব্লাডগ্রুপের রিপোর্ট চাইল। বাশার শুধু রাফিয়ার টা বলতে পারলো। কারন ওর নিজের ব্লাডগ্রুপ কি, সে নিজেও জানে না। বাশারের ব্লাডটেস্ট রিপোর্ট এ আসলো, ওর ব্লাডগ্রুপ O(+) আর রাফিয়ার O(-)।

রাফিয়ার ডেলিভারির সময় Anti D ইঞ্জেকশন দেয়া হয়েছে কিনা, সেটা সম্পর্কে জানতে চাইলো। বাশার মাথা নেড়ে জানালো, দেয়া হয়েছে। কতক্ষণ পর দেয়া হয়েছে, জানতে চাওয়া হলে, বাশার সঠিক উত্তর দিতে পারলো না। তবে ডাঃ কনফার্ম হয়ে গেলো, নির্দিষ্ট সময়ের থেকে কিছুটা পার হয়ে গিয়েছিল।

চাঁদনীকে ২৪ ঘন্টা অবজারভেশনে রেখে এবং টোটাল কেস হিস্টরী গবেষণা করে ডাঃ বাশার আর রাফিয়াকে ইচ্ছেমত কতক্ষণ বকলো। এরপর যে রেজাল্ট দিলো, তা হলো,
১। Anti D ইঞ্জেকশন ৭২ ঘন্টার মধ্যে দেয়া হয়নি বলে
পেসেন্ট এর Antibody তৈরি বাধাগ্রস্থ হয়েছে। কারণ তার ব্লাডগ্রুপ O(+)। মায়ের উল্টো।

২। নিয়মোনিয়াতে আক্রান্ত হওয়ার পর এতোটুকু বাচ্চাকে যে এন্টিবায়োটিক আর যে ওষুধ পুশ করা হয়েছে, তাতে পেসেন্ট এর ফুসফুস ৭০% ড্যামেজ হয়ে গেছে।
৩। একদিকে পেসেন্টের Antibody তৈরি বাধাগ্রস্থ হওয়া এবং অনেক বেশি হাই পাওয়ার ইঞ্জেকশন পুশ করার কারনে পেসেন্ট পুরোই এবনরমালিটির দিকে যাচ্ছে। ডাঃ দের হাতে আর কিচ্ছু করার নেই।

বাশার ইচ্ছে করেই রাফিয়াকে ডাঃ এর চেম্বারে আনেনি। সব শুনে সে ডাঃ এর পায়ে ধরতে গেল। ডাঃ “কি করছেন? কি করছেন?” বলে পা ছাড়িয়ে নিলেন।এরপর বাশার হাত জোড় করে কাঁদতে কাঁদতে বললো,

-প্লিজ ডাঃ, আমার মেয়েটাকে ভালো করে দিন। আমার মেয়েটাকে বাচান। যতটাকা লাগে দিবো।

ডাঃ আস্তে করে ঘাড়ে হাত দিয়ে বললেন,
-আমার কাছে আসতে অনেক দেরী করে ফেলেছেন। উপরওয়ালাকে ডাকুন, তিনি যদি কিছু করতে পারেন।

একদম শুন্য হাতে ওরা মেয়েটাকে নিয়ে দেশে ফিরে আসলো। ভেলর থেকে আসার পর থেকেই রাফিয়া কেমন যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেলো। খায় না, ঘুমায় না, পাথর হয়ে মেয়ের শিয়রে বসে থাকে। বাশার আবার অফিস শুরু করেছে। অনেক কাজের চাপ! এ অবস্থা দেখে রাফিয়ার বাবা মা তাদের কাছে নিয়ে গেলো। প্রথম প্রথম বাশার প্রতি বৃহঃস্পতি আসতো। আবার রবিবার গিয়ে অফিস করতো। আজকাল আসা কমিয়ে দিয়েছে। রাফিয়ার মধ্যে আজকাল কোন অনুভুতিই কাজ করে না। প্রয়োজন না হলে মেয়ের কাছ থেকে উঠেই না। যদি একবার চোখ মেলে দেখে! যদি একবার মা বলে ডাকে!

দিন যায়। মাস যায়। বছরও চলে যায়। কবিরাজি, হোমিওপ্যাথিও বাদ দেয় না। তাতেও যদি মেয়েটা ভালো হয়! যে যা বলে, তাই করে। আজকাল বাশার তেমন একটা আসেও না। মাঝে মাঝে ফোন করে দায়শারা গোসে খোঁজ নেয়।

চাঁদনীর বয়স যেদিন ২ বছর হয়ে ৩ মাসে পড়ে, সেদিন সবাইকে কাঁদিয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যায়। চাঁদনীকে শেষ দেখা দেখতে বাশার আর ওর মা এসেছিল। কিন্তু সেদিন রাফিয়া মেয়েকে কারও কাছে দেয়নি। পাথরের মতো কোলে নিয়ে বসেছিল। এক ফোঁটা চোখের পানিও ফেলেনি। মেয়েকে কবরই দিতে দিচ্ছিল না। পরে সবাই জোড় করে নিয়ে যায়। সবাই মিলে ওকে কাঁদানোর অনেক চেষ্টা করে, কিন্তু কোন লাভ হয় না। কিভাবে কাঁদবে? চোখে আর পানি থাকলে তো বের হবে?

এর এক মাস পর কেউ এসে খবর দিলো, বাশারের মা মাশারের আবার বিয়ে ঠিক করেছে। রাফিয়া এক দৃষ্টিতে বার্তা বাহকের দিকে তাকিয়ে থাকলো। হাত দুটো খাটের ডাসার সাথে বাধা। সুযোগ পেলেই নাকি কবর খুড়তে যাচ্ছে। মেয়েকে তুলে আনবে। তাই এই ব্যবস্থা। হঠাৎ হো হো করে হেসে উঠলো। হাসি যেন আর থামছেই না। কতকাল হাসেনি, না! আজ তাই অনেক হাসি পাচ্ছে। প্রাণখুলে হেসেই যাচ্ছে। হা হা হা! হি হি হি! হো হো হো!

পুনঃশ্চ: বন্ধুরা, ইহাকে নিতান্তই একটা গল্প মনে করিয়া ভুল করিবেন না। ইহা একটি অতীব সত্য ঘটনা। যাহা আমার চোখের সামনে ঘটিয়াছে।

 

লিন্ডা একটি শাড়ী কিনেছিল (শেষ পর্ব)

জাজাফী


আগে কখনো বাংলাদেশে আসেনি ও। হঠাৎই বাংলাদেশ নিয়ে এতো আগ্রহ কেন সেটা প্রশ্ন উঠতে পারে তবে গ্রেড ফোরে থাকতে আমি যখন ওকে বাংলাদেশের কথা বলেছিলাম এবং বলেছিলাম আমার মম বাংলাদেশে জন্ম নিয়েছে তখন ও খুবই উৎসাহী ছিল জানার জন্য। বিশেষ করে ভাষা আন্দোলন আর স্বাধীনতা যুদ্ধের সেই উত্তাল দিনের কথা ও কখনো ভুলতে পারেনি। বাচ্চারা যেমন দাদু দিদার কাছে রোজ রুপকথার গল্প শোনার জন্য বায়না করে ও ঠিক তেমন করতো। রোজই স্কুলে আমাকে চেপে ধরতো গল্প বলার জন্য যেন আমি নিজে ভাষা আন্দোলন করেছি আর মুক্তিযুদ্ধের একজন সৈনিক! বলতে বলতে এমন হয়ে গেল যে ওর সব মুখস্থ।কিন্তু তারপরও ও শুনতে চাইতো। তখন বুঝিনি তবে এখন মনে হয় ও আসলে মুক্তিযুদ্ধ,ভাষা আন্দোলনের গল্প শোনার নাম করে আমার কন্ঠ শুনতে ভালোবাসতো।যেহেতু আমি মুক্তিযুদ্ধ,ভাষাআন্দোলনের স্মৃতি খুব ভালোবাসি তাই ও চাইতো আমার প্রিয় বিষয় নিয়েই যেন আমি বলতে পারি। সন্ধ্যায় মম আমাকে রেডি হতে বললেন মার্কেটে যেতে হবে। আমি ভীষণ অবাক হয়ে জানতে চাইলাম মম একটু আগেই না তুমি মার্কেট থেকে আসলে এখন আবার কেন মার্কেটে যেতে হবে? মুখে একরাশ হাসি টেনে বললেন লিন্ডা আসছে ওর জন্য ঘর গোছাতে হবে না? তাই কিছু কেনা কাটা করতে হবে। আমি দুষ্টুমীর সুরে বললাম মম তুমি এমন করছো যেন লিন্ডা নামে যে আসছে সে আসলে তোমার এখানে চিরদিন থেকে যাবার জন্য আসছে। মনে হচ্ছে সে তোমার খুব কাছের কেউ। আমার কথাটি খপ করে টেনে নিয়ে মম আমার কাধে হাত রেখে বললো তুইতো বেশ দারুণ একটি কথা বলেছিস। এটা আমার মাথায় আসেনি কেন?লিন্ডাকেতো আজীবনের জন্যই রেখে দেওয়া যায়!
আমি আরো খানিকটা অবাক হয়ে জানতে চাইলাম কিভাবে রেখে দিবে? আর সেইবা কেন থাকবে? মম আমাকে বললেন কেন তুইকি আজীবন একাই থাকবি নাকি?তোর সাথে লিন্ডাকে বেশ মানাবে। মমের কথা শুনে আমি হাসিতে ফেটে পড়লাম। যদিও কথাটি খুব একটা খারাপ বলেনি। মমের সাথে মার্কেট থেকে অনেক কিছু কেনা কাটা করলাম।
রাতে লিন্ডাকে ফেসবুকে মেসেজ দিলাম সে বাংলাদেশে কি এমনিতেই ঘুরতে আসবে নাকি অন্য কোন কারণ? সাথে সাথে ওর উত্তর পাইনি। ঘুমোতে যাবার আগে আরেকবার চক করতেই দেখলাম ওর রিপ্লাই এসেছে।সেখানে সে লিখেছে আমি বাংলাদেশে আসবো একটি বিশেষ কারণে। শুনেছি বাংলাদেশ আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে,ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে গেছে,নেতা নেত্রীরা এখন নিয়মিত শপিং করতে আমেরিকা কানাডাতে আসছে। কারো কারো পুরো পরিবার দেশের বাইরে রাজার মত বাস করছে কিন্তু টাকা পয়সার কোন অভাব হচ্ছে না। এর বাইরে আরো কয়েকটা কারণ আছে এই যেমন বাংলাদেশে ঘুরতে গিয়ে অনেক পযর্টক সুন্দর সুন্দর মন্তব্য করেছে সেগুলি আমাকে আগ্রহী করে তুলেছে। তাছাড়া তুই চলে যাবার পরতো তোর সাথে কখনো দেখা করার সুযোগ হয়নি এটাও একটা কারণ বলতে পারিস। তবে প্রধান কারণ যেটি তা আমি এখনি বলতে চাইনা।এসে তার পর বলবো। প্রধান কারণ আর জানা হলো না এবং সেটা জানার জন্য মনটা বেশ উদগ্রীব হয়ে থাকলো।সেদিন চোখে আর ঘুম এলো না।দুটো কথা বেশ বার বার ঘুরে ফিরে আসছিল মাথার মধ্যে। প্রথমটি লিন্ডা নিজে বলেছে আর দ্বিতীয়টি মম বলেছে। লিন্ডা বলেছিল ও যাকে পছন্দ করে সে হলো চাঁদের মত যাকে দূর থেকে দেখতে হয়,কল্পনায় ছুতে হয়। চাঁদকে যেমন ছোয়া যায় না ঠিক তেমন। তার মানে সে এমন কারো কথা বলেছে যে তার থেকে অনেক দূরে থাকে তাই ইচ্ছে হলেও তাকে কাছে পাওয়া যায়না,ছোয়া যায়না বরং দূর থেকে দেখতে হয়। আমিওতো অনেক দূরে থাকে যাকে দুর থেকেই দেখতে হয় এবং কল্পনাতেই ছুতে হয়। তবে কি লিন্ডা আমার কথাই বলেছে!নিজেই নিজের মাথায় একটা টোকা দিয়ে বললাম যাহ এসব কেন ভাবছি। আবার মমের কথাটাও মাথায় ঘুরছে। লিন্ডাকেতো সারা জীবনের জন্যও রেখে দেওয়া যায়! তুইকি সারা জীবন একা থাকবি নাকি? তার মানে মম বলতে চাইছে লিন্ডা আর আমার মধ্যে একটি বন্ধন তৈরি হলে সে আমার হয়ে থাকবে।
নিজেকে বেশ পাগল বলে মনে হচ্ছে। আমি যে লিন্ডাকে নিয়ে এসব কথা ভাবছি ও জানতে পারলে কি মনে করবে! তবে চাইলেইতো আর মনের মধ্যে গড়ে ওঠা কল্পনার জাল ছিড়ে ফেলা যায় না। আমিও সেটা ছেড়ার চেষ্টা করিনি। যথারীতি সাটারডে ইভিনিংএ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটের বিজনেস ক্লাসের যাত্রী হয়ে বাংলাদেশের আলোবাতাসে বেরিয়ে এলো লিন্ডা ওয়াটসন।আমি আর মম আগে থেকেও প্লাকার্ড হাতে রিসিভিং জোনে হাজির ছিলাম। বোর্ডিং পাস হয়ে গেলে লিন্ডা বেরিয়ে এলো। আমাদের কেউ কাউকে চিনতে কোন বেগ পেতে হয়নি কারণ প্রতিনিয়তই আমরা একে অন্যকে ছবিতে দেখি। লিন্ডা আমাকে হাগ করে মমকে জড়িয়ে ধরলো। মমও ওকে এমন ভাবে আগলে নিলো যেন জনম জনমের পরিচয় দুজনের মধ্যে। যেন ওরা দুজন একসাথে বেড়ে উঠেছে,খেলেছে,স্কুলে গিয়েছে। ওর লাগেজ গুলো ভাগাভাগি করে টেনে নিয়ে গাড়িতে চেপে বসলাম। আমি সামনে বসলাম আর মম ওকে নিয়ে পিছনে বসলো। বাসায় যেতে যেতে কত যে কথা হলো। লিন্ডা বাংলাদেশে এসেছে মাত্র কয়েক সপ্তাহ থাকবে বলে। তবে ভালো না লাগলে একসপ্তাহ থেকেও চলে যেতে পারে।কথাটা বলতেই মম বললো আর যদি ভালো লেগে যায় তবেকি তুমি সারা জীবনের জন্য থেকে যাবে? মমের কথাটা ওর মনে ভাবাবেগ তৈরি করলো।লিন্ডা বললো তেমন কিছু হলেতো বেশ মজাই হবে।
সামনের লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে একবার ওকে দেখে নিলাম। আগের সব দেখার সাথে এই দেখার কেন যেন কোন মিল নেই!! আশ্চর্য আমি বোধহয় ওকে বেশি করে ফিল করতে শুরু করেছি। বাসায় ঢুকে ফ্রেশ হয়ে লিন্ডা ওর লাগেজ নিয়ে বসলো। আমেরিকা থেকে আসার সময় কত কিছু যে নিয়ে এসেছে তার কোন হিসেব নেই। আমাদের জন্য এবং আমাদের পরিচিতদের মধ্যে লিন্ডা যাদেরকে চেনে সবার জন্য কিছু না কিছুতো এনেছেই। বাদ পড়েনি জাহিন জামিল ফীহা নোভা মুনা মিফরা কেউ। কারো জন্য চকলেট এনেছে কারো জন্য পুতুল আবার কারো জন্য স্মার্টওয়াচ। যার যেমনটি পছন্দ তাকে তেমন উপহার।মমের জন্য এনেছে দামী কসমেটিক্স আর আমার জন্য কিছু টিশার্ট আর পারফিউম। সবার জন্য আনা উপহার বের করার পরও ওর লাগেজে একটা প্যাকেট ছিল। কাগজ দিয়ে মোড়ানো।আমি বললাম ওটা কি? ও বললো ওটা একটা শাড়ী!

আমেরিকানরাতো শাড়ী পরেই না বলা চলে!! তাহলে শাড়ী কার জন্য? মম বললেন তবেকি তুমি বাংলাদেশের কালচারের সাথে মিশতে চাও বলেই শাড়ী কিনেছ ওটা নিজে পরবে বলে?
মমের কথা শুনে লিন্ডা মাথা নেড়ে জানালো নিজে পরার জন্য সে শাড়ীটা কেনেনি!! মমের চেয়েও বেশি অবাক হলাম আমি। তার পর জানতে চাইলাম তাহলে তুমি শাড়ী কেন কিনেছ? কাকে দিবে বলে কিনেছ? এবার ওর মূখটা বেশ মলিন হয়ে গেল।চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো যেনবা তখনি সে কেঁদে ফেলবে। একটা মেয়ে একাকী আমেরিকা থেকে বাংলাদেশ দেখবে বলে ছুটে এসেছে আর দীর্ঘ ক্লান্তিকর জার্নির পর তাকে বিশ্রান নেওয়ার সুযোগ না দিয়ে আমরা তার সাথে আড্ডা শুরু করে দিয়েছি এটা বেশ অমানবিক। তবে লিন্ডা নিজে বললো সে ক্লান্ত নয় এবং এখনি তার বিশ্রামের দরকার হচ্ছেনা। তার পর একটু শান্ত হয়ে সে বললো শাড়ীটা সে একজনকে দিবে বলে কিনেছে এবং এই শাড়ীটা দেওয়াটাই বাংলাদেশে আসার প্রধান উদ্দেশ্য!
কেউ একজনকে একটা শাড়ী দেওয়ার জন্য আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে আসতে পারে তা আমার কল্পনারও বাইরে ছিল।
তাও যদি এমন হতো যে লিন্ডা নিজে একটি ছেলে এবং সে শাড়ীটা এমন একজন মেয়েকে দিতে চায় যাকে সে ভালোবাসে তাহলেও একটা কথা ছিল কিন্তু লিন্ডা নিজে মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়েকে একটা শাড়ী দেওয়ার জন্য হাজার হাজার ডলার হাতে নিয়ে বাংলাদেশে এসেছে এটা সত্যিই বিস্ময়কর। মম জানতে চাইলো কাকে দেবে শাড়ীটা? লিন্ডা জানালো সে যাকে শাড়ীটা দেবে তাকে সে চেনে না বরং তাকে খুজে নিতে হবে আর এ জন্যই সে বেশ কিছুদিন সময় নিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। ওর কথা শুনে আমি হতবাক হয়ে গেলাম। যাকে সে একটা শাড়ী দিবে বলে সুদুর আমেরিকা থেকে এসেছে তাকে সে চেনেই না এমনকি তার কোন ঠিকানাও সে জানে না!তাহলে কি করে দেবে সে? কোথায় পাবে তাকে?লিন্ডার সরল জবাব সে তাকে দেশের অলিতে গলিতে খুঁজবে তার পরও সে তাকে খুঁজে বের করবেই।
তখনকার মত আড্ডা শেষ করে লিন্ডাকে ওর রুম দেখিয়ে দেওয়া হলো। মম ওকে সব বুঝিয়ে দিলো।রুমের সাজ সজ্জা দেখে লিন্ডা খুবই অবাক হলো। মম ওটাকে এতো সুন্দর করে সাজিয়েছে যেন মনে হয় স্বপ্নলোক! ডিনার শেষে লিন্ডা সবাইকে ওর রুমে ডাকলো। তার পর ব্যাগ থেকে একটি অ্যালবাম বের করলো এবং সেটা থেকে একটি ছবি বের করলো। সেটি দেখিয়ে বললো এই মানুষটিকে আমি শাড়ী দেব বলে এসেছি। ছবিটার অনেক গুলো কপি করেছে লিন্ডা। একটি ছবি আমার হাতে দিয়ে একটি মমকেও দিলো।মিফরা,ফীহা,ফারহানা ওরাও একটা করে ছবি নিলো। সেই ছবিটার দিকে তাকিয়ে মনের অজান্তেই চোখে পানি চলে আসলো। আমি যখন নিজের চোখের পানি আড়াল করতে চেষ্টা করছি তখন লক্ষ্য করলাম অন্য সবার চোখেও পানি এবং সেটা কিছুক্ষণের মধ্যে প্রায় কান্নায় রূপ নিলো। ছবিটি একজন বয়স্ক মহিলার। একটি খোলা মাঠে বাশের বেড়ায় যিনি ভেজা শাড়ী শুকাতে দিয়ে ঠায় দাড়িয়ে আছেন। শাড়ীটা শুকাতে দিয়ে তার যে চলে যাবার কোন উপায় নেই কারণ শাড়ীর অন্য প্রান্ত তখন তার পরণে! তার যে একটি মাত্র শাড়ী যেটি গোসলের পর ভেজা থাকায় রোদে দাড়িয়ে শুকাতে হচ্ছে। একপাশ শুকিয়ে গেলে সে পাশ শরীরে জড়িয়ে নিয়ে অন্য পাশটাও শুকাতে হবে।
এই ছবির মানুষটির কথা ভেবে লিন্ডা সুদুর আমেরিকা থেকে ছুটে এসেছে শাড়ী নিয়ে। আফসোস আমি কেন গেলাম না? আমি কেন অতটা মায়া দেখালাম না? রাতে ঘুমানোর সময় চিন্তা করলাম যে দেশের রাস্তায় কয়েক কোটি টাকা দামের ব্যক্তিগত গাড়ী চলে সে দেশে এমনও মানুষ আছে যাদের ভেজা শাড়ী শুকাতে রোদে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থাকতে হয়। একটা শাড়ীর কতইবা দাম?পাঁচশো? এক হাজার? দুই হাজার? বিশেষ করে সাধারণ মানুষ যে শাড়ী পরে তার দামতো পাঁচশোটাকাও না। পরদিন সকালে আমি লিন্ডাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম সেই মহিলাকে খুঁজতে। ঢাকার অলিতে গলিতে,বস্তিতে বস্তিতে খুজলাম,মানুষকে ছবি দেখালাম কিন্তু কেউ বলতে পারলো না। এক সপ্তাহ ঘুরে পুরো ঢাকা দেখা শেষ হলে গেলাম ঢাকার বাইরে। সাভারে গিয়ে ছবিটা দেখাতেই অনেকেই চিনলো। তারা আমাদেরকে এলাকার নাম বলতেই আমরা ছুটে চললাম সেদিকে। পথে একটি দোকান থেকে আরো বেশ কয়েকটি শাড়ী কিনলো লিন্ডা।একসাথে অনেক গুলো শাড়ী হলে সেই মানুষটি আগামী কয়েক বছর নিশ্চিন্তে পরতে পারবে এটাই ছিল লিন্ডার চিন্তা। ওর মুখে হাসি ফুটে উঠলো। অবশেষে পাওয়া যাচ্ছে সেই মহিলাকে যাকে সে শাড়ী দিতে ছুটে এসেছে সুদুর আমেরিকা থেকে।
পথে একটি মাঠ পেরোতে হয়। যে মাঠের ছবি ছিল সেই ছবিটাতে যেখানে মহিলা শাড়ী শুকাচ্ছিল। দূর থেকে সেই বাশের বেড়াটিও দেখা গেল। তবে অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম সেই বেড়ার উপর কি যেন লাগানো। আমাদের গাড়ীটা যতই কাছে আসছিল ততো স্পষ্ট হচ্ছিল। এবং একসময় দেখলাম ওটা একটি শাড়ী! লিন্ডার চোখটা ছলছল করে উঠলো।
ব্যাগ থেকে ছবিটা বের করে মেলে ধরতেই চোখটা প্রায় ঝাপসা হয়ে এলো পানিতে। এই শাড়ীটাতো সেই শাড়ী যেটা মহিলাম পরে ছিলেন এবং একটা পাশ রোদে শুকাতে দিয়েছিলেন। হঠাৎই লিন্ডার মনটা খারা হয়ে গেল। সে যাকে শাড়ী দিতে এসেছে তার বোধহয় এখন আর শাড়ীর প্রয়োজন নেই। নিশ্চই তাকে কেউ নতুন কাপড় কিনে দিয়েছে তা না হলে এই শাড়ীটা এখানে থাকতো না। আমি বললাম সেটা হলেতো ভালো হয়। তুমি যার দুঃখ দূর করতে ছুটে এসেছো তাকে সুখী দেখলে তোমারতো আনন্দিত হওয়া উচিত।
আমার কথাটা লিন্ডার কাছে বেশ যুক্তিযু্ক্ত মনে হওয়ায় চোখের পানি মুছে ফেললো। তবে ড্রাইভারকে বলে গাড়ী থামিয়ে সে নেমে পড়লো। তার পর বাশের বেড়ার উপর রাখা শাড়ীটাতে সে হাত বুলাতে লাগলো। এভাবে কিছুক্ষণ পার হওয়ার পর আমরা আবার রওনা হলাম।লিন্ডার চেহারায় আগের মত দুশ্চিন্তার ছাপ নেই। সে বোধহয় মহিলার সুখী হওয়াতে খুবই আনন্দিত হয়েছে।সেই আবাসিক এলাকাতে প্রবেশ করতেই একজনের সাথে দেখা। গাড়ী থামিয়ে তাকে ছবিটা দেখাতেই তিনি যা বললেন তাতে লিন্ডার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। লাস্ট সাটারডেতে যখন লিন্ডা আমেরিকা থেকে রওনা দিয়েছে তারও এক সপ্তাহ আগে মহিলা মারা গেছেন!লিন্ডার হাতে ধরে রাখা শাড়ীটা ছুটে পড়ে গেল। আমি সেটা উঠিয়ে ওর হাতে দিয়ে ওকে শক্ত করে ধরলাম।বুঝলাম কেন আসার সময় মহিলার সেই শাড়ীটাকে বেড়াতে লাগানো দেখেছিলাম।
সত্যিইতো তার আর ওই শাড়ীর কোন দরকার নেই।তাকে সবাই মিলে নতুন কাপড় কিনে দিয়েছে। সে এখন অনেক সুখে আছে। তারতো আর ওই পুরোনো শাড়ীর কোন দরকার নেই। লিন্ডা একটি শাড়ী কিনেছিল সেই শাড়ীটা যার জন্য কিনেছিল তাকে দেওয়া হলো না।ফেরার পথে সে শাড়ীটাকে আগে নেড়ে দেওয়া শাড়ীটার উপর ঝুলিয়ে দিলো।ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হলো।আকাশে তখন ভরা পুর্ণিমার চাঁদ। চাঁদের দিকে তাকিয়ে মনে পড়লো লিন্ডার সেই কথাটি। চাঁদের মতও কোন কোন মানুষ হয় যাদেরকে ধরা যায়না,ছোয়া যায়না বরং সরে যেতে থাকে। দুদিন পর ফিরতি ফ্লাইটে লিন্ডা ফিরে গেল আমেরিকাতে। জীবনে আর কোন দিন লিন্ডা শাড়ী কেনেনি। এমনকি আমাদের বিয়ের দিনেও সে শাড়ী পরেনি।

 

স্পর্শ: শিশুর সাথে যেন আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে

ফাতেমা শাহরিন


‘তুমি’ আছো, তেমনই তুমি “সুন্দর ” সবসময়। তোমার ছোট ছোট  চুল, হাত, পা সব কিছু অসাধারণ। তোমার মাঝে আটকে যায় যেন সব অনুভূতিরা। লুকিয়ে থাকা ভালোবাসা টুকু আঙ্গুল ছুঁইয়ে খুঁজে নেয় যেন প্রশান্তির অঙ্গন।

মনে রাখবেন, শিশুর জন্ম হয় প্রচুর সম্ভাবনা নিয়ে, প্রতিভাগুলো ঢাকা থাকে ভালবাসার চাদর দিয়ে। ভালবাসার সুন্দর বর্হিঃপ্রকাশ তাদেরকে উড়তে সাহায্য করে।

শিশুকে শারীরিক স্নেহ, আবেগ, ভালোলাগা এবং ভালবাসাময় অঙ্গন  তৈরির লক্ষ্যে আমাদের শিশুদের প্রতি ভালবাসা বা অনুভূতি প্রকাশ করা অত্যন্ত প্রয়োজন। ‘স্পর্শ ‘ একটি সহজ ভাষা, ভালাবাসার। অধিকাংশ শিশু এই ভাষা আগ্রহের সাথে গ্রহন করে, এবং কিছু কিছু বাচ্চার ক্ষেত্রে, এটি প্রবল আকর্ষণীয় ভালবাসার শক্তি রূপে কাজ করে।

সহজ আবার অজানাও নয়। আসুন এমন কয়েকটি উপায় শিশুদের ভালোবাসা প্রকাশের জন্য।

হাত ধরা
আলতো করে শিশুর হাত ধরুণ যখন আপনি পাশাপাশি হাটছেন বা গল্পগুলি বলছেন একান্ত শিশুকে বুঝতে দিন, পাশেই রয়েছেন আপনি।

শিশুকে জড়িয়ে ধরা
প্রতিটি বাবা মা সন্তানকে প্রচন্ড ভালবাসে ভালবাসা প্রকাশের ক্ষেত্রে ছোট্ট শিশুকে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে রাখুন। তার কাছে প্রকাশ করুণ আপনার অনুভূতি।

সন্তানকে চুমু দিন
সন্তানকে আদর করার ক্ষেত্রে মতপার্থক্য হয়ত কারই নেই কিন্তু ছোট্ট শিশুকে আপনার প্রকাশ ভঙ্গিমার মাধ্যমে কাছাকাছি আগলে রাখা উচিত। সুতরাং বুঝুন, বুঝতে দিন আপনিও তাকে প্রচুর ভালবাসেন। রোজ কপালে চুমু দিন। সন্তান বড় হলেও মা উচিত কন্যাকে বুঝানো তার পাশেই আছেন এবং বাবাদের ছেলেদের কাছে থেকে ভালবাসা প্রকাশ করা খুব খুব জরুরী।

এক সাথে পাশাপাশি বসুন
আপনার কম্বলের মধ্যে শিশুকে পাশে নিয়ে গল্প করুন। বৃষ্টি, শীতের সকাল বা হঠাৎ বিকেলের আবেশে পাশাপাশি বসুন, চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে শিশুর মত হয়ে যান।

সন্তানকে বিরক্ত করুন
ছোট্ট শিশুমনিরা বিরক্ত করা খুব পছন্দ করে। মাঝে মাঝে ছোট্ট হাত পাগুলো
ম্যাসেজ করুন। মাঝে মধ্যেই বিরক্ত করুন কারণ বিষয়টি তারা খুবই মজা পায়।

আন্তরিকভাবে কাঁধে হাত রাখুন
কথা বলার সময় বা সুন্দর কোন প্রকৃতির দেখার সময় অথবা অনুরোধ করার সময় শিশুদের কাঁধ স্পর্শ করুন। প্রায়ই যদি শিশুদের আলিঙ্গন অথবা আদর প্রকাশ করা হয় শিশুরা খুশি হয়।

সংশোধনের ক্ষেত্রে কৌশলী
শিশু শুধু নয় বড়রাও ভুল করে। ভুল বিষয়টিকে সংশোধন করার সময় সম্পর্ক গুলো নড়বড়ে হয়ে যায়। সুতরাং শিশুর ভুল পাওয়া গেলে, কৌশলপূর্ণ সংশোধন করা। পরবর্তীতে মৌখিক প্রশংসা পাশাপাশি আলিঙ্গন করুন, শিশুকে পুরষ্কার দিবেন বলে অফার করুন ভাল কাজের জন্য।

আপনিও খেলুন
একইসঙ্গে মজার নানান রকম খেলা খেলুন, ছোঁয়াছুয়ি, দৌড়াদৌড়ি হইহুল্লা একেবারে সে রকম খেলাধূলা করুন।

আপনাদের দুজনের মধ্যে একটি  “বিশেষ বন্ধন” জাগ্রত  থাকে কিনা খেয়াল করলে দেখবেন, ওর  প্রতিদিনের বন্ধনটি  গড়ে উঠুক সুন্দর আর সাবলিল  ভাষাাা বুঝুন এবং শিশুকে সর্বদায় বুঝতে সহযোগিতা করুন। আপনার শিশুর শারীরিক এবং মানসিক সুন্দর বিকাশ হলে আপনিও ভাল থাকবেন।

 

এটা প্রাতিষ্ঠানিক নারী নির্যাতন

সৈয়দ আবুল


সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কবি সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রী নির্যাতনকে অত্যন্ত বেদনায়ক উল্লেখ করে সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, এটা প্রাতিষ্ঠানিক নারী নির্যাতনের ঘটনা।

রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে অনুষ্ঠিত মানবন্ধনে তিনি এ কথা বলেন। ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষার দাবিতে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সচেতন শিক্ষকবৃন্দ’র ব্যানারে এই মানবন্ধনঅনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক, গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, বাংলাদেশে এই প্রথম প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নারী নির্যাতিত হলো। সেটা হলো বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এটা আমাদের সকলের জন্যলজ্জার।

তিনি বলেন, আমি শুধু বলবো প্রাতিষ্ঠানিক নারী নির্যাতনের ঘটনা এটাই যেন সর্বশেষ হয়।
অতীতে শিক্ষার্থীদের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সহমর্মিতা স্মরণ করে তিনি বলেন, আজকে কয়েক দিন কয়েকজন শিক্ষকের নাম অব্যাহতভাবে মনে আসছে। স্যার পি জে হার্টগ, অধ্যাপক আহমেদ ফয়জুর রহমান, অধ্যাপক রমেশ চন্দ্র মজুমদার যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে তারা কী করতেন। হয়তো তাদের আত্মা দেখছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা ও ছিলেন। এই অধ্যাপকরা কোনো শিক্ষার্থীর সামান্য ইনফুয়েঞ্জা হলেও ছাত্রদের কাছে ছুটে যেতেন। এমনও হয়েছে রাত ২/৩টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সাথে

তিনি আরো বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যিনি ভিসি তিনি শিক্ষার্থীদের যেমন শিক্ষক তেমন অভিভাবকও। ভিসি বলেছেন, ছাত্রীদের তাদের অভিভাবকদের কাছে হস্তান্তর করেছেন। এটা আমার কাছে অত্যন্ত বেদনাদায়ক মনে হয়েছে।

অধ্যাপক ড. এম এম আকাশের সভাপতিত্বে এবং অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌসের সঞ্চালনায় মানবন্ধনে মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নাসরীন ওয়াদুদ, আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন ব্যাপরী, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক সংগীতা আহমেদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক তাসনীম সিদ্দিকী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তানজীম উদ্দিন খানসহ অর্ধ্বশত শিক্ষক।

সুত্র: নয়া দিগন্ত।

 

জীবনের বাকচক্র (পর্ব-১)

তাহেরা সুলতানা


রাফিয়া ছোটবেলা থেকেই পড়াশুনায় যথেষ্ট ভালো। পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি সবগুলোতেই ভালো সিজিপিও নিয়ে পাস করেছে। সবে সে কলেজে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যেই বাড়িতে বিয়ের কথা শুরু হয়েছে। ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছে, বড়ফুফু নাকি তাকে ছেলের বউ করতে চায়। বাবাও রাজী। রাফিয়ার যেদিন জন্ম হয়, সে দিন নাকি বাবা ফুফুকে কথা দিয়ে ফেলেছে।

ফুফু নাকি বাবাকে বলেছিল,

-তোর কি মানানের মেয়ে হয়েছে! এ মেয়ে আমি কাওরে দেব না। আমার ছেলের বউ কইরে নিয়ে যাব। মেয়ের মতোই রাকপো। কোন কষ্ট বুছতি দেব না।

মা একটু অমত করলেও বাবা মায়ের কথাকে অগ্রায্যই করছে না। বাবা মাকে এ কথাও বলেছে,

– মেয়ে মানুষ। এতো পড়াশুনা দিয়া কি করবি? বুবু আদর করি লিয়ে যাতি চাচ্ছে। ছেলেডা কত ভালো চাকরী করে! ব্যাংকে! তুমি মোটেও এর মদ্দ্যি কতা কতি আসপা না, এই বইলে দিলাম। আমরা ২ ভাই বইন মিলা যা বোঝব, তাই করবো।

রাফিয়ার আজকাল কলেজ থেকে বাড়িতে আসতেই ইচ্ছা করে না। কত সাধ ছিল! ডাক্তারি পড়বে! সব শেষ হতে বসেছে।

রাফিয়া আর তার মায়ের শত আপত্তি সত্ত্বেও ফুফাতো ভাই বাশারের সাথে রাফিয়ার বিয়ে হয়ে গেলো। বিয়ের কিছু দিনের মধ্যে একটা বাচ্চাও হলো। ফুটফুটে একটা মেয়ে। বিয়ের পরদিনি ফুফু বলে দিল।

– বউমা, আমার বয়স হয়েছে, কখন চলি যাই, ঠিক নাই। তাই তাড়াতাড়ি আমারি নাতির মুখ দেকাবা।

রাফিয়া ছোটবেলা থেকেই ফুফুরে খুব ভয় পেতো। বিয়ের পর ভয়টা আরও বেড়েছে। কলেজে যাওয়ার কথা বললেই কোন না কোন কাজ ধরিয়ে দেয়। মা কয়েকবার এসে হাতে পায়ে ধরে বলেও গেছে, যেন পরীক্ষাটা দিতে দেয়।

রাফিয়ার আর পরীক্ষাটা দেয়া হলো না। কোল আলো করে আসলো একটা ফুটফুটে মেয়ে। মেয়েকে নিয়েই এখন তার দিন কাটে। ফুফু প্রথমদিকে নাতি হয়নি বলে মুখ কালো করে থাকতো। কোলেও নিতো না। কিন্তু নাতনীর মায়াবী মুখটা দেখে এখন আর তার নাতির সাধ নেই। নামটা ফুফুই রাখলো, চাঁদনী।

এভাবে দিন গেল, মাস গেল। বছরও গেলো। চাঁদনী এখন উঠে দাঁড়ায়। একটু একটু হাটতে পারে। যেদিন প্রথম মা বলে ডাকলো, সেদিন রাফিয়া আনন্দে কেঁদে ফেলেছিল। রাফিয়া এখন তার ডাক্তার হওয়ার সাধটা মেয়েকে দিয়ে মেটাতে চায়।

একবার চাঁদনী খুব অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। ঠান্ডা লেগে নিউমোনিয়ার মত হয়ে যায়। বাড়ির সবাই অস্থির হয়ে পড়ে। শহরের সবচেয়ে বড় শিশু বিশেষজ্ঞকে দেখানো হয়। ডাঃ বাচ্চাকে দেখার পর সরাসরি ভর্তি করিয়ে নেয়। এরপর চলতে থাকে একের পর এক ওষুধ আর হাইয়ার এন্টিবায়োটিক। এতো ওষুধ দেখে রাফিয়ার আতংক লাগে। একটা অজানা ভয় ওকে আস্টে পিস্টে বাঁধতে থাকে। বাশারকে বারবার ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে, কিন্তু মায়ের বিরুদ্ধে বাশারের একটা কথাও বলার সাহস নাই।

(চলবে)

পুনঃশ্চ: বন্ধুরা, ইহাকে নিতান্তই একটা গল্প মনে করিয়া ভুল করিবেন না। ইহা একটি অতীব সত্য ঘটনা। যাহা আমার চোখের সামনে ঘটিয়াছে।

 

নিষিদ্ধ হল “টু ফিঙ্গার টেস্ট”

তানজিনা সুলতানা


বাংলাদেশে ধর্ষণের শিকার হওয়া নারী ও শিশুর শারীরিক পরীক্ষার জন্য ব্যবহ্ত টু ফিঙ্গার টেস্ট নিষিদ্ধ করেছে মহামান্য হাইকোর্ট। ধর্ষিত নারী ও শিশুর শারীরিক পরীক্ষা এবং বিচারের ক্ষেত্রে তাকে যাতে আবারও লাঞ্চিত হতে না হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করে বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি এ কে এম সহিদুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রিট আবেদনের শুনানি শেষে প্রশংসনীয় এই রায় দেয়।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ধর্ষণ প্রমাণে শারীরিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে এই টেস্টের কোনও বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি নেই। হাতে গ্লাভস পড়ে নারীর একান্ত প্রত্যঙ্গে আঙ্গুল প্রবেশ করিয়ে তার “টেণ্ডারনেস” পরীক্ষার নামই টু ফিঙ্গার টেস্ট।

২০১০ সালে দুই আঙ্গুলের মাধ্যমে এই ধর্ষণ পরীক্ষা পদ্ধতির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যাণ্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), আইন ও সালিশ কেন্দ্র, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, ব্র্যাকসহ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা একটি রিট আবেদন করে। নারী অধিকারকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছিলেন, ধর্ষণ প্রমাণে টু ফিঙ্গার টেস্ট একটি অযৌক্তিক এবং অমানবিক পরীক্ষা। এর মাধ্যমে ভিকটিমকে আরেকবার ধর্ষণের শিকার হবার মত পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।

রিট দায়েরের পাঁচ বছর পর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং সংশ্লিস্ট জনের মতামত গ্রহণের পর গত ১৩/৪/২০১৮-ইং তারিখে টু ফিঙ্গার টেস্ট নিষিদ্ধ করে আদালত এই রায় দেয়।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়েছে, মামলা চলাকালে ধর্ষণের শিকার নারীকে জিজ্ঞাসাবাদে সাবধান হতে হবে আইনজীবীদের। নারীর প্রতি অমর্যাদাকর কোনও প্রশ্ন করা যাবে না বলেও আদেশ দিয়েছে আদালত। সেক্ষেত্রে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে নিশ্চত করতে হবে যে, কোন পক্ষের আইনজীবী যেন ভিকটিমকে মর্যাদাহানির কোনও প্রশ্ন না করে।

ধর্ষণের পরীক্ষার ক্ষেত্রে এখন থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার গত বছর যে হেলথ কেয়ার প্রটোকল করেছে সেটি দেশের সকল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল এবং হাসপাতালে পাঠিয়ে তা অনুসরণ করার নির্দেশনা দিয়েছে মহামান্য হাইকোর্ট।

ধর্ষিতা নারীর শারীরিক পরীক্ষার নামে যুগ

যুগ ধরে যে টু ফিঙ্গার টেস্ট চালু ছিল তা প্রকারান্তরে ধর্ষণের শিকার নারীর সম্মানহানির কারণ ঘটাত। বিচার প্রক্রিয়ার সময় অবাঞ্চিত প্রশ্ন তুলে অসম্মানের অপচেষ্টাও চলত। আদালতের যুগান্তকারী এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে যুগ যুগ ধরে চলে আসা অন্যায়ের কবল থেকে রক্ষা পাবে ধর্ষণের শিকার নারী ও শিশুরা।

তানজিনা সুলতানা
অ্যাপ্রেন্টিস অ্যাডভোকেট
জজ কোর্ট, চট্টগ্রাম।

 

‘লিন্ডা একটি শাড়ী কিনেছিল’ পর্ব-১

জাজাফী


বুধবার বিকেলে লিন্ডার ফোন পেলাম।আমি তখন বাইরে বের হবো বলে প্রস্তুতি নিচ্ছি এমন সময় ফোন এলো। অপরিচিত নাম্বার। কান্ট্রিকোড দেখে বুঝলাম ফোন কোথা থেকে এসেছে। তবে বুঝতে পারিনি কে ফোন করতে পারে। রিসিভার তুলে কানে লাগাতেই ওপাশ থেকে লিন্ডার কন্ঠ ভেসে এলো। কন্ঠ শুনে বুঝিনি যে ওটা লিন্ডা কারণ ওর সাথে আমার দেখা হয়নি বিশ বছর।

আর কথা হয়েছে কালেভদ্রে মাসে দু মাসে। ম্যানহাটন জুনিয়র হাইস্কুলে আমি আর লিন্ডা একসাথে পড়তাম। গ্রেড ফোরে পড়াকালীন যখন আমি আর মম এদেশে চলে এলাম তখন থেকে একটু একটু করে লিন্ডার সাথে আমার যোগাযোগ কমতে থাকলো।

ইমেইলে কথা হতো মাঝে মাঝে তবে ফেসবুক যুগে প্রবেশের পর বেশ যোগাযোগ হয়।আমি যখন মমের সাথে ম্যানহাটনে থাকতাম তখন লিন্ডা ওর সিঙ্গেল মাদারের সাথে ম্যানহাটনেই থাকতো। ও বলেছিল ওর সিঙ্গেল মাদার তবে আমার তখনই মনে হতো আসলে কথাটি ঠিক নয়। কোন এক অজ্ঞাত কারণে ওরা বাবার কথা চেপে যেতে চায়। আমিও তাই কখনো তোড়জোড় করিনি।

লিন্ডার পুরো নাম লিন্ডা ওয়াটসন। ওর গ্রান্ডফাদার জেমস ওয়াটসন আমেরিকার প্রখ্যাত ব্যবসায়ী ছিলেন। বাংলাদেশে চলে আসার পর লিন্ডার সাথে যোগাযোগ কমে গেলেও কখনো বিচ্ছিন্ন হইনি আমরা। স্কুল কলেজ পেরিয়ে দুজন দুই দেশের দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে নিজেদের মত করে দিন কাটাচ্ছি ঠিকই তবে ফেসবুকে দুজন দুজনের অম্ল মধুর স্মৃতিগুলি ফ্রেমে ধরে রেখে শেয়ার করছি একে অন্যের সাথে। এর ফলে কখনো মনেই হয়নি আমরা আর আগের মত একসাথে নেই।কোন এক বিচিত্র কারণে লিন্ডার কোন বয়ফ্রেন্ড জোটেনি অথচ ও এতো সুন্দর যে একবার তাকালে সহজে চোখ ফেরানো যায় না। আমি একবার জানতে চেয়েছিলাম তোমার কোন বয়ফ্রেন্ড নেই?ও বলেছিল না নেই তবে আছে একজন কিন্তু সে আসলেই আমার বয়ফ্রেন্ড কিনা তা আমি নিজেও জানি না কারণ তাকে কখনো কথাটি বলা হয়নি। আমি ওকে নিজ থেকে উৎসাহ দিয়ে বলেছিলাম তুমি তাহলে অপেক্ষা করছো কেন? বলে দাও তার পর দেখো সে তোমাকে নিশ্চই এড়িয়ে যেতে পারবে না। তুমি হলে সেই লাল শিখা যার আকর্ষণ এড়ানোর ক্ষমতা নেই কোন পোকার। পোকারা যেমন জ্বলন্ত শিখার দিকে মোহগ্রস্থের মত ছুটে যায় তেমনি সেও তোমার দিকে ছুটে আসবে।লিন্ডা অন্যমনস্ক হয়ে যায়।

তবে কথা না ঘুরিয়েই বলে সে তো আর পোকা নয় আর আমিও জ্বলন্ত শিখা নই।তাছাড়া সে হলো আকাশের চাঁদের মত যাকে চাইলেই ধরা যায় না ছোঁয়া যায়না। তাকে দেখতে হয় দূর থেকে ছুতে হয় কল্পনায় আর আঁকতে হয় নিজের মনের সাতরঙে।

লিন্ডার কথাগুলো আমার খুব ভালো লাগে। কি মিষ্টি করে কথা বলে। তার চেয়েও অদ্ভুত লাগে সেই মানুষটির কথা চিন্তা করে যাকে লিন্ডা পছন্দ করে কিন্তু বলতে পারেনা ছুতে পারে না। লিন্ডাকে উপেক্ষা করার মত মানুষও যে থাকতে পারে তা আমার জানা ছিল না। বিকেলে লিন্ডার ফোন পেয়ে আমি বেশ পুলকিত হলাম। বেশ অনেক দিন পর ফোন করেছে এটা আনন্দের একটি কারণ তার চেয়ে বড় কারণ হলো লিন্ডা এই সামার ভ্যাকেশানে বাংলাদেশে ঘুরতে আসতে চায়। আমার বেশ আনন্দ হলো।

আমি লিন্ডাকে ফোনে রেখেই মমকে বললাম যে জানো মম লিন্ডা বাংলাদেশে আসছে! আমার মুখ থেকে কথাটি শোনার সাথে সাথে মমের মুখটা যেন একশো ওয়াট বাল্বের মত আলোকিত হয়ে উঠলো। মমের দিকে তাকিয়ে আমি খুবই অবাক হলাম। যেন মনে হলো লিন্ডা মমের খুব আপন কেউ অথচ মমের সাথে তার তেমন কোন সম্পর্কই ছিলনা। সেই ছোট্ট লিন্ডাকে মম খুব কমই দেখেছে। তাছাড়া আমাদের ম্যানহাটনের বাসাতেও সে একবারের বেশি দুবার আসেনি। মম আমার হাত থেকে রিসিভারটা নিয়ে কানে লাগিয়ে এমন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলো যে লিন্ডা নিজে পারলে তখনি উড়ে চলে আসে। ও কেন বাংলাদেশে আসতে চায় তা জানি না তবে তখন মনে হচ্ছিল মমের ভালোবাসাটুকু পাওয়ার জন্য হলেও সে বাংলাদেশে আসবেই।

মম খুটিয়ে খুটিয়ে অনেক কথা জানতে চাইলেন তার পর আমার হাতে দিলেন ফোনটা। আমি আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দিলাম। ও অলরেডি ভিসা পেয়ে গেছে আগামী সাটারডেতে ওর ফ্লাইট। হাতের কর গুনে দেখলাম সময় বেশি দেরি নেই।

চলবে….

 

বাবা ও বই

তাহেরা সুলতানা


বিশ্ব বই দিবস। তাই বইয়ের সাথে সখ্যতা আর আমার বাবার সাথে কাটানো শৈশবের কিছু স্মৃতি আজকে তুলে ধরবো।
আমার আব্বা একজন কলেজ শিক্ষক ছিলেন। একটা গ্রামের কলেজে রসায়ন পড়াতেন। আমিও সে কলেজেরই ছাত্রী ছিলাম। রসায়ন অনেকের কাছেই হয়তো বেশ খটমটে সাবজেক্ট! আব্বা ছাত্র-ছাত্রীদের রসায়নের বিভিন্ন বিষয়ের সাথে সাহিত্যের বিভিন্ন অংশ সংযুক্তি করে খুব মজা করে পড়াতেন।

এরপরও কোন বিষয় কারো বুঝতে অসুবিধা হলে বলতেন, “গল্প-উপন্যাস যেমন করে পড়, সেভাবেই বুঝে বুঝে পড়। রসায়নের রস এমনিতেই টুপ টুপ করে পড়বে।”

আব্বার কাছে বই ছিল অনেকটা সন্তানের মতোই। ১৯৮৮ সালের বন্যায় আমাদের বাসায় ২ আলমারী ভর্তি বই নস্ট হয়ে যায়। আমি তখন ক্লাস থ্রিতে পড়ি। আমার স্পষ্ট মনে আছে, আব্বা হাউ মাউ করে কেঁদেছিলেন।

এরপর আব্বা একটু একটু করে আবার গোছাতে শুরু করলেন। আমি আর আমার ইমিডিয়েট ছোট বোন তখন আব্বাকে সহযোগিতা করতাম। ১৯৯৮ সালের বন্যাতেও অনেক বই নস্ট হয়ে যায়।
তখনো আব্বাকে কাঁদতে দেখেছি।
আমাদের ৬ ভাইবোনেরই বই পড়ার নেশা ছিল চরম। আব্বার উৎসাহ-ই কারণে নেশাটা তৈরী হয়েছিল।

পাঠ্যপুস্তকের বাইরে বই পড়ার জন্য আব্বা নিজেই টাইম বেধে দিতেন, যাতে রেজাল্ট খারাপ না হয়ে যায়। তারপরও পড়ার বইয়ের মধ্যে লুকিয়ে গল্প উপন্যাস পড়া ছিল একটা নেশার মতো!

ঈদের ছুটি অথবা স্কুল থেকে বড় কোন ছুটি পেলে আমরা আনন্দে লাফাতাম। কারণ তখন বই পড়া নিয়ে কোন টাইমটেবিল থাকতো না। বিশেষ করে ঈদের সময় আমরা নতুন জামার সাথে নতুন কিছু বই পেতাম, যেগুলো ঈদের দিন পড়তাম। আমাদের বাইরে ঘুরে বেড়ানোর থেকে বই পড়ে সময় কাটানোই বেশি পছন্দনীয় ছিল।

স্কুল পাঠাগারের প্রতিটা বই যে কতবার রিভিশন দিয়েছি, তার হিসাব নেই! গ্রামের বাজারে একটা পাঠাগার ছিল, সেখানকার প্রতিটা বইও প্রায় ২/৩ বার করে পড়া হয়ে যেতো। আমার এক বান্ধবী ছিল, জাকিয়া জেসমিন, ওর সাথে আমার সবচেয়ে বেশী বই আদান-প্রদান হতো। ও অবশ্য অনেক বিধিনিষেধ আরোপ করতো। বইয়ে কোন দাগ দেয়া যাবে না! বইয়ের কোনা ভাঁজ করা যাবে না! আরো কতো কি!

সব শর্ত মেনেই বই ধার নিতাম।
রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বিভূতিভূষণসহ ওপার বাংলার বহু লেখকের বই তখন সংগ্রহ করে পড়তাম। তবে পরবর্তীতে সবচেয়ে বেশি সংগ্রহে থাকতো হুমায়ন আহমেদের বই। আব্বার পছন্দের লেখকদের মধ্যে শরৎচন্দ্রের নাম না নিলেই নয়। এছাড়া তিন গোয়ান্দা সিরিজ, শার্লক হোমস, মাসুদ রানা সিরিজ, সাইমুম সিরিজ আর নবী রাসূলদের জীবনকাহিনীর উপর লেখা বইগুলো তালিকার প্রথমদিকে থাকতো।

বই বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আব্বার বিধিনিষেধ খুব একটা ছিল না। বয়সানুযায়ী আমাদের সব ধরনের বই পড়তে উৎসাহ দিতেন, যাতে ভালো-মন্দের পার্থক্য করতে পারি। তবে কুরআন হাদিস আর ইসলামিক বইপুস্তক পড়ার প্রতি বেশী উৎসাহ দেখাতেন।

বলতেন, “ওগুলো হচ্ছে বেস। তাহলে যাই পড় না কেন, ভুলটা শিখবে না।”

নিজেও আমাদের সাথে পড়তেন আর বিভিন্ন বই নিয়ে আলোচনা করতেন। পারিবারিক বৈঠক করতেন। সেখানেও আদবকায়দা শেখানোর পাশাপাশি বিভিন্ন বইয়ের আলোচনা গুরুত্ব পেতো।
জন্মদিন পালন করার কোন রেওয়াজ আমাদের বাসায় ছিল না। কিন্তু কোনভাবে যদি একটা বই উপহার পেতাম, সেদিন আর আনন্দের সীমা থাকতো না! স্কুলের বিভিন্ন প্রোগ্রামে কবিতা আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতা বা যেকোনো প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনের জন্য আব্বাই উৎসাহ দিতেন। আবৃত্তির প্রথম হাতেখড়ি আব্বার কাছ থেকেই পাওয়া। লেখালেখির ব্যাপারেও উনার উৎসাহের অভাব ছিল না। আমার সবগুলো বোন এখনো টুকটাক লেখালেখির সাথে জড়িত। কেউ ‘পাঠশালা’য় লিখে। কেউ ‘জানালা’য় লিখে। বাস্তবতার বেড়াজালে কারোরি বড় লেখক হয়ে উঠা হয়নি। তবে সবারই হাতেখড়ি সেই ছোটবেলায় আব্বার হাতে।

আব্বাই প্রুফ দেখে দিতেন, লেখা ঠিক করে দিতেন। আমার ৪ নং বোনের নাম সুমি। ও ক্লাস সিক্স এ থাকতে একবার ‘পেসমেকার’ নিয়ে দৈনিক ইনকিলাবে একটা লেখা লিখেছিল। ওকে শুভেচ্ছা জানিয়ে কত চিঠি যে এসেছিলো! প্রতিটা চিঠি আব্বাকে পড়ে শুনাতে হতো।
বইপড়া যে কি নেশা ছিল, তার একটা ছোট্ট উদাহরণ হলো, ইউনিভারসিটি ভর্তি কোচিং করতে এসেও বান্ধবীরা মিলে মোটা মোটা কয়েকটা উপন্যাস শেষ করেছিলাম। এরমধ্যে বিশেষভাবে ২টার কথা মনে পড়ে। ‘পার্থিব’ আর
‘সাতকাহন’।

আব্বা যখন রিটায়ার্ড করলেন, তখন আমরা উনাকে জিজ্ঞেস করলাম,
“আব্বা, এখন কি কিছু করতে চান? না শুধুই রেস্ট নেবেন?” কোনকিছুতে ইনভল্ভ না থাকলে যদি অসুস্থ হয়ে যান, এই ভয়টা তখন কাজ করতো!
আব্বা হেসে উত্তর দিয়েছিলেন,
“তোমরা আমাকে নিয়ে কেনো এতো ভাবছো? আমার তিন বন্ধু তো আছেই। কলেজের ব্যস্ততার কারনে তাদেরকে সময় অনেক কম দেয়া হয়েছে। এখন ইনশাআল্লাহ সময় দিবো।”

আমরা খুব আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
“কারা তারা? আমরা কি চিনি আব্বা?”
তিনি বললেন, “অবশ্যই চিনো। কুরআন, হাদীস আর বই।”

আব্বার উত্তরটা শুনে যেমন খুব অবাক হয়েছিলাম, তেমনি খুব ভালোও লেগেছিল। আর এমন একজন মানুষের সন্তান হতে পেরে খুব গর্ববোধ হচ্ছিল। এখনো সবাই যখন কনফারেন্স কলে থাকি, আব্বার কথা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনি। আমার কাছে সাদা মনের মানুষের উজ্জল দৃষ্টান্ত হচ্ছে আমার আব্বা।
আল্লাহ্‌পাক আমাদের সবার বাবামাকে ভালো রাখুন। সুস্থ্য রাখুন। আমিন।

রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সগীরা।

 

আজ বিশ্ব বই-দিবস

অপরাজিতা


বই পড়া, বই ছাপানো, বইয়ের কপিরাইট সংরক্ষণ করা ইত্যাদি বিষয়গুলোতে জনসচেতনতা বাড়ানোর মৌলিক উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ইউনেস্কোর উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতিবছর
২৩ এপ্রিল বিশ্ব বই দিবস পালিত হয়ে আসছে।

বই দিবস উপলক্ষ্যে প্রিয় লেখিকা আফরোজা হাসানের ‘বই বৃক্ষের চারা’ নামে একটি প্রবন্ধ আর্টিকেল পুনরায় দেওয়া হল।

জ্ঞানার্জনের পথে চলতে গিয়েই আমার সাক্ষাৎ ঘটে বইয়ের সাথে। তারপর ধীরে ধীরে অনুভব করলাম বই পড়ার আনন্দ। একটা সময় সেই আনন্দকে উপভোগ করতে শুরু করলাম। মনেহল বই পড়ার আনন্দ যারা উপভোগ করতে জানে না, তারা এক অর্থে সব আনন্দ থেকেই বঞ্চিত। মানুষের মধ্যে সচেতনতা জাগিয়ে তোলার জন্য বইয়ের মতো উৎকৃষ্ট জিনিস আর কিছুই নেই। কারণ বই সেই মানুষ তৈরি করে যারা ক্ষমতাসীনদের দ্বারা নিগৃহীত হতে পছন্দ করে না। তাই আমরা যদি স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করতে চাই, তাহলে বই পড়ার কোন বিকল্প নেই। মনের নরম মাটিতে ছোট্ট একটা বইবৃক্ষের চারা রোপণ করেছিলাম, আজ চেয়ে দেখি মহীরুহতে রূপান্তরিত হয়েছে আমার মনের সেই বইবৃক্ষ।

‘বৃক্ষে ধরেছে লাল, নীল, হলুদ, সবুজ, বেগুনী নানা ধরণের বই
মাতাল হাওয়ায় পরশে মাঝে মাঝেই ঝরে পড়ে যার কিছু পাতা
তারপরও তাদের স্পর্শে চিরসবুজ-চিরসজীব থাকে মনের বনভূমি
জেগেছে যে নেশা প্রাণে মৃত্যু অবধি ছেড়ে যেন না যায় কভু মোরে।’

বই সম্পর্কিত আমার প্রিয় কিছু বাণী

গ্যেটে বলেছেন,
কতকগুলো বই সৃষ্টি হয় আমাদের শিক্ষা দেবার জন্য নয়, বরং তাদের উদ্দেশ্য হলো আমাদের এই কথা জানানো যে, বইগুলোর স্রষ্টারা কিছু জানতেন।

ভিক্টর হুগো বলেছেন,
বই বিশ্বাসের অঙ্গ, বই মানব সমাজকে টিকিয়ে রাখার জন্য জ্ঞান দান করে। অতএব, বই হচ্ছে সভ্যতার রক্ষা কবজ।

সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছেন,
পৃথিবী আর সভ্যজাত যতই চোখের সংখ্যা বাড়াতে ব্যস্ত, আমরা ততই আরব্য উপন্যাসের একচোখা দৈত্যের মতো ঘোঁত ঘোঁত করি, আর চোখ বাড়াবার কথা তুলতেই চোখ রাঙাই। চোখ বাড়াবার পন্থাটা কি? প্রথমত, বই পড়া এবং তারজন্য দরকার বই পড়ার প্রবৃত্তি।

ভিনসেন্ট স্টারেট বলেছেন,
আমরা যখন বই সংগ্রহ করি, তখন আমরা আনন্দকেই সংগ্রহ করি।

প্রতিভা বসু বলেছেন,
বই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ আত্মীয়, যার সঙ্গে কোনদিন ঝগড়া হয় না, কোনদিন মনোমালিন্য হয় না।

ওমর খৈয়াম বলেছেন,
সুর্যের আলোতে যেরূপ পৃথিবীর সবকিছু ভাস্কর হয়ে ওঠে তেমনি জ্ঞানের আলোতে জীবনের সকল অন্ধকার দিক আলোতে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে।

কবি জসিমুদ্দিন বলেছেন,
বই জ্ঞানের প্রতীক, বই আনন্দের প্রতীক। সৃষ্টির আদিকাল হইতে মানুষ আসিয়াছেন আর চলিয়া গিয়াছেন। খ্যাতি-মান-অর্থ-শক্তি কিছুই কেহ রাখিয়া যাইতে পারে নাই। কিন্তু বইয়ের পাতা ভরিয়া তাহারা তাহাদের তপস্যা, আশা-আকাঙ্ক্ষা, তাহাদের নৈরাজ্য, কি হইতে চাহিয়া কি তাহারা হইতে পারেন নাই সবকিছু তাহারা লিখিয়া গিয়াছেন। বই আপনাকে অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ সকল কালে নিয়া যাইতে পারে। যে দেশে আপনার কোনদিন যাওয়ার সম্ভাবনা নাই, বইয়ের রথে চেপে আপনি অনায়াসে সেই দেশে যাইতে পারিবেন।”

আমারো ম্যাক্সিম গোর্কী’র মত বলতে ইচ্ছে করে,
আমার মধ্যে উত্তম বলে যদি কিছু থেকে থাকে তার জন্য আমি বইয়ের কাছে ঋণী। আলহামদুলিল্লাহ!

মনে রাখতে হবে, ২৩ এপ্রিল শুধুমাত্র বিশ্ব বই দিবসই নয়, কবি নজরুল, কবি জসিমুদ্দিন, কবি ফররুখ আহমদ, ওমর খৈয়াম, সৈয়দ মুজতবা আলী, শেক্সপিয়র, সত্যজিৎ রায়, প্রতিভা বসু, ইনকা গার্সিলাসো, ডে লা ভেগাসহ প্রমুখ বিশ্ব খ্যাতিমান সাহিত্যিকদের জন্মকেও স্বরণের দিন।

 

চলুন ঘুরে আসি মাল্টনোমাহ জলপ্রপাত(ছবি) 


মাল্টনোমাহ ফলস

১৮ ঘন্টাব্যপী রোজা আমার জীবনে কখনও রাখিনি,তাও আবার প্রচন্ড গরমের মধ্যে। এবার নরওয়েতে ২২ ঘন্টা রোজা, সে তুলনায় সুখে আছি। তবে যেরকম কষ্ট হবে মনে করেছিলাম সেরকম হচ্ছেনা। রোজার পূর্বে মারাত্মক চিন্তায় ছিলাম যে, এবার রোজায় না জানি কি হয় ! দোয়া করছিলাম যাতে কষ্ট না হয়। অবাক কান্ড হল কর্মব্যস্ত দিনেও বাসায় ফেরার পথে পার্কে স্টিল বার ধরে ৫০ বার শরীর উপরে ওঠা-নামা করিয়েছি এবং আরও কসরত করেছি। একটু কষ্ট হলেও মনে হয়েছে শক্তি তেমন একটা ক্ষয় হয়নি। কার ক্ষেত্রে কি ঘটেছে জানি না,তবে রোজা আমার শারিরীক সুস্থ্যতার ক্ষেত্রে ব্যপক অবদান রেখেছে। রোজার বাইরে আমি ননস্টপ খাই,তাই একটা বিরতী দিয়ে শরীরকে নব উদ্যোমী করার জন্যে রোজার গুরুত্ব অধিক বলে আমার মনে হয়েছে। আর অবশ্যই ফরজ হিসেবে রোজা পালন করতে আমরা বাধ্য। সত্যিই এটাতে দুনিয়া ও আখিরারে ব্যপক কল্যান রয়েছে।

আজ ছুটির দিন, ভাবছিলাম বাসায় শুয়ে বসে কাটাই,কিন্তু ঘোরাঘুরি যার স্বভাব তাকে আটকে রাখে এমন বিছানা পয়দা হয়নি। পরিকল্পনা ঝালাই করলাম। গুগল জানালো ‘মাল্টনোমাহ ফলস’ আজ শুভ। বাসা থেকে ১৬০ কি:মি: দূরে এটি অবস্থিত। হাইওয়ে ৫ এবং ৮৪ ধরে ধাবিত হলাম। আজ ব্যপক গরম। শরীর থেকে পানি বাষ্প হয়ে উড়ে যাচ্ছে,তবে পিপাসা তেমন অনুভূত হচ্ছেনা। দেড় ঘন্টা পর কলাম্বিয়া নদীর পাশ ধরে অগ্রসর হতে লাগলাম। কলম্বিয়া নদীর পাশ ধরে যে রাস্তা রয়েছে তা ধরে কেউ যদি গাড়ি চালায় অথবা হাটে,আর যদি সে আস্তিক হয় তবে সে ¯স্রষ্টার প্রশংসা না করে পারবে না।

এই নদীর পানি অত্যন্ত স্বচ্ছ আর এদিকের এক পাশে উঁচু পাহাড়শ্রেণী,যা আগ্নেয় শীলায় তৈরী। এটির পাশ ধরে এবং ভেতর দিয়ে কলম্বিয়া নদী প্রবাহিত। অত্যন্ত শান্ত শিষ্ট একটি নদী এটি। পাহাড়ের যে অংশটি খাড়াভাবে উপরে উঠেছে,তার পাদদেশে নদীর অস্তিত্ব সত্যিই পুলকিত করে। এখানে সেটিই ঘটেছে। বামে কলাম্বিয়া নদীকে রেখে অগ্রসর হলাম। ডানেও সুন্দর পর্বতশ্রেণী। সবুজ আর সবুজ। খাড়া পাহাড়ের শরীর জড়িয়ে বিশাল বিশাল গাছগাছালির বসবাস। ভাল না লেগে কতক্ষণ !

ডানে মাল্টনোমাহ ফলস। দূর থেকে দেখে অত্যন্ত খুশী হলাম এবং অবাকও হলাম এ কারনে যে, অনেক আগে নেটে পৃথিবীর বিভিন্ন চমৎকার জলপ্রপাতের খোঁজ খবর করছিলাম। তখন যে কটা জলপ্রপাত আমাকে আকৃষ্ট করেছিল,তার ভেতর এটিও ছিল। অবাক হয়ে খাড়া ঢাল বিশিষ্ট পাহাড়টির দিকে তাকিয়ে থাকলাম। বহু উপর থেকে পানির ধারা পাহাড়ের কঠিন শীলার উপর আছড়ে পড়ে খানিকটা বাষ্প সৃষ্টি করে নীচে পতিত হচ্ছে। দৃশ্যটি বার বার দেখতে ভাল লাগবে। এগিয়ে গেলাম। বেশ গরম, শরীর পুড়ে যাওয়ার মত হচ্ছে।

জলপ্রপাত থেকে সৃষ্ট ক্ষুদ্র নদীর পাশ ধরে সুন্দর রাস্তা হয়ে জলপ্রপাতের দিকে এগিয়ে চললাম। বিশ্বাস করেন, পাহাড়ের সীমার মধ্যে যেতেই এক চমৎকার শীতল আবহাওয়া শরীরে ধাক্কা দিল,আর সঙ্গে সঙ্গে গরমের স্থলে অতি মাত্রায় চমৎকার অনুভূতি কাজ করল। বেশ আরাম অনুভব করলাম। রহমত ব্যাপারটা এরকমই। মনে হচ্ছিল কিছুক্ষণ পূর্বে যেন আমার গরমই অনুভূত হচ্ছিল না।
এ এলাকাটি সুন্দর করে সংরক্ষণ করা হয়েছে। শুরুতেই একটি পর্যটন সংক্রান্ত তথ্যকেন্দ্র,তারপর রেস্টুরেন্ট এবং একটি সুন্দর প্রাঙ্গন। আজ প্রচুর লোক সমাগম হয়েছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভারতীয়দের দেখা পেলাম। সাধারণত আমার এলাকায় ভারতীয় তেমন দেখা যায় না। নীচে দাড়িয়ে জলপ্রপাত দেখতে থাকলাম। পাহাড়টি এখানে একটি সুবিশাল প্রাচীরের মত মনে হয়। কঠিন পাথরে শ্যাওলা কিছুটা জমেছে এবং সময়ের আবর্তে তা ক্ষয়ে গেছে,সে দৃশ্য দেখে মনে হয় এটি মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিকস সম্বলিত কোনো দেওয়াল। জলপ্রপাতটি যদি নাও থাকত তবুও এই কঠিন পাথরের আঁিকবুকি দেখতে ভাল লাগত। খাড়া পাহাড়ের মাথায় বড় বড় গাছ শোভা পাচ্ছে আর তার ভেতর থেকে বিরামহীনভাবে জল প্রবাহিত হচ্ছে। পতিত জলরাশি সোজা নীচে পতিত না হয়ে মাঝামাঝি একটি স্থানে পাথরে ধাক্কা খেয়ে তবে নীচে পতিত হচ্ছে। সে দৃশ্যটি অতি মনোরম। গৃষ্মে জলধারা ক্ষিন,তবে ততটা ক্ষিণ নয়। জলধারা যেখানে পতিত হচ্ছে সেখান থেকে আরও নীচে আরেক স্তর রয়েছে এবং এটার উপরে একটি শক্ত পোক্ত সেতু নির্মান করা হয়েছে,যাতে দর্শনার্থীরা দেখতে পারে। সেতুটির নীচ দিয়ে জলধারা আরেক দফায় লাফিয়ে অবশেষে সমতলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। জলপ্রপাতটির ধাপে ধাপে শিল্পের চিহ্ন। ডান দিকের রাস্তা ধরে উপরে উঠতে থাকলাম।

প্যাচানো রাস্তা ধরে সেতুর উপর উঠে আসলাম। এখান থেকে দেখতে খুব ভাল লাগে। শীতে যখন তুষারপাত হয়েছিল তখন এই জলপ্রপাতে তুষার মিশ্রিত জলধারা পতিত হওয়ার দৃশ্য ছিল অসাধারণ। এখান থেকে পাহাড়ের খাড়া অংশের কঠিন পাথরের কাঁরুকাজ দেখতে খুব ভাল লাগছিল। বায়ের রাস্তা ধরে উপরের দিকে হাটলাম।

বায়ে খাড়া পাহাড়ের পাদদেশ আর ডানেও খাড়া,কিন্তু সেখানে বিশালাকৃতির গাছপালা রয়েছে। কঠিন পাথরের কোথাও কোথাও গর্ত তৈরী হয়েছে প্রাকৃতিকভাবে। সরু,স্বর্পিল এবং উর্ধ্বমুখী রাস্তা ধরে এগিয়ে চললাম,উদ্দেশ্য জলপ্রপাতের উৎস্যমূলে পৌঁছানো। ঝিরিঝিরি বাতাশ প্রবাহিত হচ্ছে,ভাল লাগছে,তবে একটু কষ্টও হচ্ছে কিন্তু এসব এখন তুচ্ছ।

হাতের বায়ে দেখলাম পাহাড়ের খাড়া ঢাল ধরে ঘন বন। সেখানে ছোট বড় সব রকমের গাছগাছালি। পাথুরে মাটির উপর বিশালাকৃতির গাছগুলি স্বমহিমায় দাড়িয়ে আছে। কোনো কোনোটা বয়সের ভারে মাটিতে শুয়ে পড়েছে। কোনো কোনোটা মরেও সৌন্দর্য প্রদান করছে।

উপরে ওঠার পথে কয়েকটা লুকআউট আছে,যেখান থেকে খাড়া পর্বতশ্রেণীর পাশদিয়ে প্রবাহিত কলাম্বিয়া নদীর সৌন্দর্য অবলোকন করা যায়। ক্রমেই উপরে উঠে আসছি। কোথাও না থেমে একেবারে উপরে উঠে আসলাম,অনেক সময় লাগল এখানে পৌছাতে। এবার কিছুটা নীচের দিকে রাস্তা চলে গেছে। এতক্ষন রাস্তা ছিল নুড়ি পাথরে পূর্ণ এবং পাকা রাস্তাও ছিল,আর এখন মাটির রাস্তা শুরু হল। এর একদিকে কাঠের ছোট ছোট গুড়ি দিয়ে আটকানো। সরু রাস্তা ধরে এগিয়ে চললাম। খানিকটা নীচে নেমেই দেখলাম চোখ শীতলকারী দারুন সেই জলধারার উপস্থিতি। খানিক দাড়িয়ে থেকে বোঝার চেষ্টা করলাম। এ যেন ছবিতে দেখা কোনো পাহাড়ী ছোট নদী।

নীচে নামলাম। মধ্যম মানের গতিতে চলমান জলধারার দুপাশে বিশাল বিশাল গাছপালা। সেসব গাছে শ্যাওলা জমে আছে,যা সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দেয়। ছোট বড় পাথরের চাক এখানে সেখানে গেথে আছে। এর উপর বিশাল বিশাল গাছ উপড়ে পড়ে আছে। কোনো কোনোটায় শ্যাওলা ধরা আর কোনো কোনোটা ক্ষয়ে গেছে। কিছু গাছের ভেতরে ক্ষয়ে পাইপের মত হয়ে আছে,সেসব মরা গাছ দেখতে বেশী ভাল লাগে। পানির ধারার উপর অবস্থিত বড় কিছু পাথরের চাকের উপর দিয়ে পানির কাছে গেলাম এবং হাত দিয়ে শীতলতা অনুভব করলাম। খুব ঠান্ডা এবং স্বচ্ছ পানি,মনে হল খেয়ে ফেলি কিন্তু রোজার কারনে হল না। পতিত বিশাল এক গাছের কান্ডের উপর দিয়ে হেটে আরেক ধারে গেলাম। এখানে আরও সুন্দর। স্বশব্দে জলধারা প্রবাহিত হচ্ছে নীচের দিকে। এবার জলধারাকে অনুসরণ করে এর খাড়া পতিত হওয়ার স্থানের দিকে হাটলাম।

খানিক পর দেখলাম এটি অন্তত দশফুট নীচে পতিত হচ্ছে এবং সামনে বিশ/পচিশ ফুট অগ্রসর হয়ে একেবারে খাড়া পতিত হচ্ছে। ধঃর ১৯১ সরঃবৎ যরমযএখানে একটি মঞ্চ তৈরী করা হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্যে। আমি সেখানে পৌছলাম। এখান থেকে জলপ্রপাতের খাড়া রূপটি দেখা যায়। সত্যিই ভয়ংকর সুন্দর ! ছড়ানো ঝিটানো পানির ধারা এখানে একত্রে মিলিত হয়ে নীচে পতিত হচ্ছে। এ দৃশ্য দেখা সবার ভাগ্যে জোটে না। আজ বেশ লোক সমাগম হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ এসেছে এটা দেখতে।

চারিদিকে গাছগাছালিতে পরিপূর্ণ। মৃদুমন্দ বাতাশ প্রবাহিত হচ্ছে। বিশুদ্ধ বাতাশ বুক ভরে টেনে নিলাম,ভাল লাগল। এখানে দাড়িয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা পার করা যায়। ডানে দেখলাম বহু নীচে রাস্তা দেখা যাচ্ছে এবং গাড়ি গুলোকে বেশ ছোট লাগছে। খাড়া পাহাড়ের উপরে দাড়িয়ে এভাবে চারিদিকটা দেখতে সত্যিই ভাল লাগে।

এবার উঠে আসলাম। সোজা পথে না এসে পাহাড়ের খাড়া ঢাল বেয়ে উপরে উঠে আসলাম,তাতে কষ্ট হলেও সময় বাচল,সময়ের দাম অনেক,যদিও আজ আমি পুরো অবসরে ! এবার পাহাড়ের ভেতরের দিকে যাবার পালা। এই জলপ্রপাতের আরও গোড়ার দিক দেখার জন্যে বিপরীত দিকে রওনা হলাম। এপাশে শুনশান নিরবতা এবং গাছগাছালির ঘনত্বের কারনে আলোর পরিমান কম কিন্তু এক অপরূপ রূপের সুষ্টি করেছে এই আধারী মাখা জলধারা সমৃদ্ধ বনভূমী। চারিদিকে বড় বড় পাথরের চাক,তার উপর শতবর্ষী গাছপালার উপড়ে পড়া,এখানে সেখানে মরা গাছের কান্ড,ধারালো আগ্নেয় শীলায় তৈরী প্রাকৃতিক রাস্তা, ওহ সত্যিই অসাধারণ। আমি চলতে থাকলাম। আজ বিশেষ কেড্স পরেছি যাতে পা পিছলে না যায়। চলতেই থাকলাম। ডানের খাড়া পাহাড়ের শরীরের কোথাও কোথাও ছোট ছোট পানির প্রবাহ দেখলাম। এ অংশের রাস্তা সুবিধার নয়। সতর্কতার সাথে অগ্রসর হলাম। সরু রাস্তায় ধারালো খাড়া পাথর একটার পাশে একটা। বামে জলধারা প্রবাহিত হচ্ছে। যতই সামনে অগ্রসর হচ্ছি ততই ভাল লাগছে। উপরের দিকে উঠে যাচ্ছি ধীরে ধীরে। বিভিন্ন স্থানে জলধারা বিভিন্ন রূপের সৃষ্টি করেছে। অসাধারণ দৃশ্যগুলো ক্যামেরা বন্দী করতে করতে অগ্রসর হলাম। একসময় থামলাম এবং পিছু হটলাম। একা একা চলতে ভাল লাগছিল। মনে হচ্ছিল আরও গেলে ভাল হত। কিন্তু ফিরতি পথ ধরলাম।

ফেরার পথে বুঝলাম অনেক দূর হেটেছি। আবেগে প্রথমটায় বুঝিনি। রাস্তা যেন শেষই হচ্ছে না। ঢালুতে নামছি তারপরও মনে হচ্ছে বিরাট পথ পাড়ি দিয়েছিলাম। সত্যিই অনেকদূর গিয়েছি। নীচের দিকে নেমে আবারও জলপ্রপাতটির দিকে তাকিয়ে থাকলাম। অনেকক্ষন ধরে দেখলাম। এলাকাটি মনের মধ্যে গেথে গেছে। মাল্টনোমাহ ফলস আমার হৃদয় হরণ করেছে।

ফেরার পথে পোর্টল্যান্ড হালাল স্টোর থেকে বিপূল পরিমানে গরুর মাংস এবং মশলাপাতি কিনলাম। রোজা রেখে বাজার করা ঠিক নয়, আর্থিক ক্ষতিটাই আসল। কিন্তু এত চমৎকার গরুর মাংস আমি আর কোথাও পাইনি। আজ সন্ধ্যায় সাদা ভাত আর গরুর মাংসের ঝোল যদি না ঝেড়েছি,তবে আমার নামে কুকুর পুষবেন !
পুনশ্চ: রান্নাটা হয়েছে দারুন। কথা রেখেছি।

 

ঘর সাজিয়ে তুলুন মাটির জিনিসে

অপরাজিতা


শহরে থাকলেও আমরা পারি বাসার কোনো এক জায়গায় একটু গ্রাম্য ছোঁয়ায় সাজাতে। অনায়াশে শহুরে মানুষের জীবনের মধ্যে আজও জীবন্ত হয়ে উঠে গ্রামের মাটি। দামি কার্পেট, ফুলদানি, শো পিসের সাথে মানিয়ে নিয়েছে এখন মাটির জিনিসপত্র স্ব মহিমায়। মাটির তৈরি জিনিস তুলনামূলক সস্তা। আসুন অল্প খরচে নিজের ঘরের সাজকে করে তুলি ছিমছাম ও সুন্দর। সুন্দরভাবে ঘর সাজাতে সব চেয়ে বেশি প্রয়োজন রুচিবোধ।

মাটির জিনিস দিয়ে কীভাবে ঘর সাজাবেন আসুন দেখি কিছু কৌশল-

মাটির তৈরি শো পিস

ঘর সাজিয়ে ফেলুন মাটির তৈরি শো পিস দিয়ে। ঘরে রাখতে পারেন সুন্দর কোনো ওয়াল হ্যাঙ্গিং। এটি ঘরের চেহারাই পালটে দেবে।

মাটির কলসি

মাটির কলসি দিয়ে ঘর সাজাতে পারেন সুন্দর করে। বড় বড় চারটি কলসি চারদিকে রেখে তার উপর কাচ বসিয়ে দিন। তা সেন্টার টেবিল হিসেবে দিব্য ব্যবহার করতে পারবেন।

টেরাকোটা

ঘরের সাজে ভিন্নতা আনতে চাইলে সামর্থ্য অনুযায়ী বসার ঘর, শোবার ঘর অথবা খাবার ঘরে দেয়ালের একপাশে মাটির ফলক অর্থাৎ টেরাকোটা ব্যবহার করতে পারেন। আভিজাত্য ফুটিয়ে তুলতে মূল দরজার সামনের ফ্রেমে মাটির টেরাকোটা ব্যবহার করতে পারেন।

মাটির ফ্রেম

খুব সাধারণ ও সুন্দরভাবে ঘর সাজাতে চান তাহলে ফুলদানি, পুতুল, শো-পিস ইত্যাদি ব্যবহারের পাশাপাশি ঘরের ভিতরে যে স্থানটি খুব সহজেই সকলের নজরে পরে সেখানে মাটির ফ্রেম ব্যবহার করে তাতে যে কোনো ছবি বাঁধাতে পারেন।

ছোটো জার

মাটির তৈরি ছোটো জার কিনে তার উপর নিজের মতো করে ডিজ়াইন করতে পারেন।

মাটির ফুলদানি

দামি ফুলদানির বদলে মাটির তৈরি ফুলদানি বাড়িতে রাখতে পারেন। সেখানে কিছু সতেজ ফুল রাখার চেষ্টা করুন। তাতে আপনার ঘরের সাজগোজ যেমন ছিমছাম দেখাবে, তেমনই দেখাবে আকর্ষণীয়।

মাটির টব

শহুরে জীবনে এখন মাটির টবের জায়গায় এসেছে আধুনিক ফুলের প্লাস্টিক ও চিনা পাথরের টব। কিন্তু ফুলগাছ মাটির টবে রাখলে তা ভালো থাকে আবার মাটির টবও আপনার ঘর সাজাবে।

কলমদানি-মোমবাতি

মাটির তৈরি কলমদানি, মোমবাতি স্ট্যান্ডের মতো জিনিস আপনার ঘরের সৌন্দর্য বাড়াবে।

প্লেট-গ্লাস-ফুল-ফল-বাটি

ঘর সাজানোর জন্য কাজে লাগাতে পারবেন মাটির তৈরি প্লেট, গ্লাস,ফুল-ফল, বাটি। আপনি চাইলে এসব জিনিসের উপর কারুকার্য করতে পারেন। তাতে সামান্য জিনিসও অসাধারণ হয়ে উঠবে।

 

আলো আঁধারের ছায় -১

আফরোজা হাসান


আমার পড়াশোনার বিষয়টিই এমন যে ভালো কথার চেয়ে মন্দ কথাই বেশি শুনতে হয় আমাকে। সুখের চেয়ে জীবনে বিরাজমান দুঃখের কথাই বেশি জানতে হয়। আনন্দময়তার চেয়ে বেদনাক্ত গল্পগুলোই আগে কড়া নাড়ে আমার দ্বারে এসে।

মানুষের ভেতরের আলোকময়তার চেয়ে অন্ধকারাচ্ছন্নতাই বেশি উন্মোচিত হয় আমার সামনে।

বলা হয়, “কোন জিনিস যখন সচারচর সংঘটিত হয় মানুষ সেটার সাথে অভ্যস্ত হয়ে যায়। একসময় সেই জিনিসটা মানুষের মনের আর তেমন করে প্রভাব ফেলতে পারে না।” কিন্তু এই ক্ষেত্রে কেন জানি না আমার সাথে এমন হয়নি। এখনো কারো কষ্টের কথা শুনলে, দুঃখের কথা জানলে, বেদনাক্ত চেহারা দেখতে, অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে আছে অনুভব করলে খুব বেশি কষ্ট হয়।

এমন মানুষগুলোর পাশে গিয়ে দাঁড়াতে ইচ্ছে করে! তাদের পানে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করে! যে গোলক-ধাঁধায় তারা ঘুরপাক খাচ্ছে সেখান থেকে বের করে নিয়ে আসতে ইচ্ছে করে।

অন্ধকারে নিমজ্জিত মনগুলোকে অভয় দিয়ে বলতে ইচ্ছে করে, এই তো আরেকটু এগোলেই পেয়ে যাবে আলোর সন্ধান। ধৈর্য্য ধরে রেখে কদম সামনে বাড়াও। উঁচু নীচু পথ দেখে ভয় পেয়ো না। দূর থেকে দেখছো তো তাই এমন মনে হচ্ছে। যখন চলতে শুরু করবে নিজের অজান্তেই দেখবে পথের সাথে তাল মিলিয়ে, সব বাঁক পেড়িয়ে ঠিকই এগিয়ে যাচ্ছো গন্তব্য পানে ইনশাআল্লাহ।

‘নানান প্রতিকূলতায় জীবনের পথ যখনই লাগবে খুব দুর্বোধ্য, রাখবে মনে আলো আঁধারের মাঝে আলো সর্বদা অপ্রতিরোধ্য’।

এই কথাটা চলার আমি সবসময় মনে রাখতে চেষ্টা করি। তাই যখনই কোন কারণে চোখের সামনে হঠাৎ আঁধারের পর্দা নেমে আসে। নিজেই নিজেকে বোঝাতে চেষ্টা করি এই আঁধার ক্ষণস্থায়ী রূপে এসেছে। কেননা আলোকে বেশীক্ষণ আড়াল করে রাখার ক্ষমতা আঁধারের নেই।

আমার কাছে যখনই কেউ কোন সমস্যা নিয়ে আসে একথাটাই বোঝাতে চেষ্টা করি। কিন্তু অনেক সময় কেউ কেউ এত বেশি বেদনাহত থাকেন তাদেরকে বোঝাতে গেলে বোঝেন তো নাই, উল্টো ভয়াবহ রকম উত্তেজিত হয়ে যান। কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে মনের সব রাগ ঝেড়ে গটগট করে উঠে চলে যান। ও হ্যা যাবার সময় স্বশব্দে দরজা বন্ধ করতে ভুলেন না।

আমার সাথে এমন যে ক’বারই হয়েছে দরজা বন্ধের শব্দে চমকে উঠেছি ভীষণ ভাবে। মনে হয়েছে ঠিক এতটাই প্রচন্ডতার সাথেই সেই ব্যক্তি তার মনের দরজাটাও বন্ধ করে দিলেন। এর ফলে না তার ভেতর থেকে বদ্ধ বাতাস বেড়িয়ে আসতে পারবে, না বাইরে থেকে বিশুদ্ধ বাতাস ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে। যার ফলে গুমোট পরিবেশে দমবন্ধ করা এক অস্বস্থিতে কাটবে তার সময়। যা তাকে আরো নাজুক ও দুবর্ল করে তুলবে সমস্যার মোকাবিলায়।

এমন মানুষগুলোর পাশে গিয়ে দাঁড়াতে ইচ্ছে করলেও, তাদের কষ্টগুলোকে মমতার পরশ বোলাতে চেষ্টা করলেও তারা কাউকে সেই সুযোগ দিতেই নারাজ থাকেন। বিদ্বেষে তাদের মনের পেয়ালা এতটাই টইটুম্বুর থাকে সেখানে মমতা মাখা শব্দরা পড়া মাত্র গড়িয়ে বাইরে বেড়িয়ে যায়। জায়গা করে নিতে পারে না কোমল ভালোবাসা।

ঘৃণার আগুনের তাপে গলে যায়। ঘৃণার এমন দহন ক্ষমতা দেখে বুক কেঁপে ওঠে। কাছে যেতে চাইলে আমাকেই না জ্বলসে দেয় ঐ আগুন সেই আতঙ্ক ঘিরে ধরে মনকে। বাবা বলেছিলেন, ক্ষেতে কৃষক যে বীজ বোনে সেই ফসলই ঘরে তোলে। ঠিক তেমনি মানুষের মনেও তুমি যা বুনবে তাই ফিরে পাবে। আমার নিজ অভিজ্ঞতায় মনের ব্যাপারে বাবার কথাটা অবশ্য সবসময় সত্য বলে প্রমানিত হয়নি।

ভালো কিছু বোনার পরেও অনেক সময় একদম বিপরীত কিছু ফিরে পেতে হয়েছে অনেক মনের কাছ থেকেই। এক সময় ব্যথিত হতাম খুব এটা নিয়ে। মনে হতো আমি এত ভালো ব্যবহার করছি তাহলে মানুষ কেন আমাকে কষ্ট দেয়? কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝতে পেরেছি যে, অনাবাদী জমির মত কিছু কিছু অনাবাদী মনও আছে। সেইসব মনে যত ভালো কিছুই বোনা হোক না কেন অনুর্বরতার কারণে অবিকশিতই থেকে যায়। যার ফলে উত্তম কিছু ফিরে আসার কোন সুযোগই থাকে না।

আবার কত সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি কারণে উর্বর জমিরও তো ব্যর্থ হয় ফসল ফলাতে। তেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের স্বীকার তো মানুষের মনকেও হতে হয় অনেক সময়। তাই দোষ-গুণ যাচাই বাছাই ইত্যাদি ঝামেলাতে এখন আর যেতে চাই না। ভালোটা দিয়েই সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করি। কারণ উত্তম প্রতিদান দেবার একমাত্র মালিক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা। প্রতিদান একমাত্র তাঁর কাছেই আশা করা উচিত।

কিন্তু মনখারাপের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারি না। এমন মানুষগুলোর জন্য কিছু করতে না পারার ব্যর্থতা মনকে খুব ব্যথিত করে। এমন মানুষদের প্রতি আমার কখনোই ঘৃণা বা রাগ হয় না। দয়া বা করুনাও হয় না। আমার মায়া হয়। খুব খুব বেশি মায়া।

কারণ নিজের স্বল্প জ্ঞান থেকে এইটুকু অন্তত জানি ও বুঝি যে, ব্যক্তি জীবনের তিক্ততা এই মানুষগুলোকে এমন তিক্ত বানিয়ে দিয়েছে। তাদের মনের তিক্তরার বিষ এমন ভাবে ছড়িয়ে গিয়েছে যে তারা না চাইলেও তাদের ভেতর থেকে বেড়িয়ে আসে বিষবাষ্প।

 

সন্তান: স্বপ্নের পরিচর্যা (‘বই রিভিউ’ পর্ব-২)

অনবরত বৃক্ষের গান


সাহসের ভিত্তি হচ্ছে বিশ্বাস, আপনার সন্তানকে কি আপনি সাহস যুগিয়ে থাকেন? সন্তান প্রতিপালনের জন্য বাবা-মায়েদের অবশ্যই সন্তানের কিছু মৌলিক বিষয় অবগত করার মাধ্যমে বিশ্বাস স্থাপন করাতে হবে, সন্তানকে ঝুঁকি নিতে উদ্ভূত করুন, সম্ভাবনাকে তুলে ধরুন। সন্তানকে ভুল করতে দিন, ভুল থেকে মৌলিক বিষয়টি শিখতে সহযোগিতা করুন। সন্তান সাহায্য করুন তার উৎসাহের বিষয়কে খুঁজে পেতে। কেন না, প্রতিটি আগ্রহই উৎকর্ষের শীর্ষে পৌছে দেয় সন্তানের সম্ভাবনা সমুহকে। সন্তানকে এমনভাবে তৈরি করুন, সে নিজেকে কোথায় পৌছাতে চায়,
খুঁজে পায়,
জিজ্ঞেস করুন জানার চেষ্টা করুন, জানুন।

উল্লেখ্য, বিপুল উপকরণের ভীড়ে,তাঁকে দরকারী বিষয়গুলো দিয়ে সজ্জিত করুন, তার মননশীল চারপাশ।

স্রষ্টার সাথে সম্পর্ক

পিতামাতাকে তাঁর সন্তানকে জীবনের উদ্দেশ্য কি,তা বোঝাতে হবে,কেন তাঁকে সৃষ্টি করা হয়েছে,স্রষ্টা তাকে কেনই বা সৃষ্টি করলেন।জীবনের প্রতিটি কাজ যেন তাঁর সন্তুষ্টিরর জন্য হয়,তেমনি চেতনা গ্রোথিত করে দিতে হবে।

ছোট্ট সোনামনিকে কোলে নিয়ে চাঁদের আলো দেখাতে পারেন, ফুল পাখি,নদী, এমনকি প্রতিটি ক্ষুদ্র জিনিস দেখিয়েও তাঁকে রবের মহিমা শেখাতে পারেন, আল্লাহ চিনতে সাহায্য করতে পারেন।

সুন্দর করে মনীষি, নবী-রাসূলদের জীবনী শুনাতেন পারেন, যা সন্তান তাদের জায়গায় নিজেকে কল্পনা করতে পারে।

বাচ্চাদের সাথে নিয়ে সালাত আদায় করতে পারেন, বারবার সুন্দর বিষয়গুলো শেয়ার করতে পারেন, যাতে তারা আস্তে আস্তে বুঝতে শিখে।

তাদের সাথে রাজনৈতিক কিংবা ঐতিহাসিক যেকোন বিষয়ই আলোচনা করে শুনাতে পারেন, এমনকি কবিতাও।

যেটা তাদের চিন্তায় দাগ কেটে যায়। তাতে শৈশব থেকেই চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়বে,গভীরতা আসবে।

সন্তানের সার্বিক উন্নয়নে ইনভেস্টমেন্টের প্রশ্নপত্র

আপনি কি সন্তানের সার্বিক উন্নয়ন বলতে, প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশুনা ও খেলাধুলাকেই বুঝে থাকেন? আপনার সন্তানের আত্মিক উন্নয়ন হচ্ছে কি? সন্তান চাওয়া মাত্রই তা পূরণ করেন, নাকি ধৈর্যশীলতার প্রশিক্ষণ দেন?

অনুপ্রেরণা
আপনার সন্তানকে দীর্ঘমেয়াদী সাফল্যে লাভে অনুপ্রেরণা দিন, যার প্রতিশ্রুতি পৃথিবীর কোনো বিনিয়োগেই দেওয়া হয়নি।

ত্যাগের মানসিকতা অর্জন
বাচ্চাদের নিজেদের মধ্যে খেলনা ভাগাভাগি করে খেলতে শিখান, এতে সে ত্যাগের মানসিকতা অর্জন করবে।

মিলেমিশে খাওয়ার অভ্যাস
খাবার খাওয়ানোর বেলায়ও মিলেমিশে খেতে অভ্যস্ত করুন।

ভালো আচরণ
পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে ভালো আচরণ করতে অভ্যস্ত করুন। সন্তানের আত্মিক উন্নয়নের দিকে নজর দিন।

শৈশব হচ্ছে চমৎকার সুযোগ,সন্তানকে সুন্দর করে গড়ার। এ সময় আপনি তাঁকে যেভাবে চান, সেভাবেই তৈরি করতে পারেন।

আপনি যদি নিজে স্রষ্টার সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দেন, গভীর রজনীতে নিভৃতে তাঁকে খুঁজেন, সন্তানও তাঁর সান্নিধ্য চাইবে।বার্ধক্যের সময় রাত জেগে, আপনার সেবা করবে,উদার ও সহনশীল মানসিকতা নিয়ে গড়ে উঠবে। আপনি যখন কবরে শায়িত থাকবেন, আপনার জন্য দু’হাত তুলে দোয়া করবে।

লেখিকা: ইসলামিক স্টাডিজ, অনার্স ৩য় বর্ষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

আমি না হয় নদীই হলাম

ডা. ফাতিমা খান


আঁকতে বসলে আমার নীল আর আকাশী রঙ টা কম পড়ে যায় সবসময়ই। আকাশের পরিধি মাপতে মাপতেই আমার রঙ শেষ, হাত ক্লান্ত! আজকাল লিখতে বসলেও শ্রান্ত মনে শব্দের ঘাটতি পড়ে , হাতিয়ে পাতিয়ে কোন রকমে অল্প কিছু শব্দই খুঁজে পাই।
“নাতি-খাতি বেলা গেল শুতি পারলাম না” জাতীয় দিনকাল যায় রোজ। “শুতি পারলাম না” অংশটুকু ঠিক থাকলেও “নাতি- খাতি” র ব্যাখ্যা দিতে গেলে এক বিশাল হ্যাভ টু-ডু আর ইউসড টু-ডু লিস্টের মেলা খুলে বসতে হবে। কর্তব্যের খাতিরে চব্বিশ ঘন্টায় অন্তত বারো বার নিজের স্বরূপ বদলাই। মা, রাধুনী, শিক্ষক,কাজের বুয়া, বন্ধু, খেলার সাথী, শাসক, চিকিৎসক… আরো কত কি! কাজের ফাঁকেফাঁকে ইউ টিউবে গল্প শুনি। রিল্যাক্সড হই।

আজ আমার প্রিয় গল্পগুলোর মধ্যে একটা গল্প আপনাদের শোনাব।

এক শতবর্ষী নদী গেল পাহাড়ের কাছে, তার অভিযোগের ঝুড়ি নিয়ে।

বলল, ”কি গম্ভীর, কি বলিষ্ঠ তুমি! বয়সে তুমি হাজারবর্ষী। আচ্ছা তুমিই আমায় একটা কথা বলে দাও দেখি! এই যে দেখছ শত বছর ধরে আমি অবিরাম বয়েই চলেছি, কখনো শান্ত, কখনো বা চঞ্চল পায়ে, সবাই আমার উপর নেয়ে পিয়ে চলে যায়, নৌকা আর জাহাজ গুলো দেখ কেমন নির্দয় ভাবে আমার উপর ছুটে চলে, ক্লান্ত পথিক আমার তীরে বসে জিরায় আর পাথর ছুড়ে আমার গায়ে, বাড়ির বউ ঝিরা ধোঁয়া কাঁচা সেরে আবার কলসি কাঁধে খানিকটা পানি তুলে নিয়ে যায়…কেউ একবারও তো ডেকে বলে না, ভাল আছ নদী?

..এইটা কি ঠিক হল? আমি বড় ক্লান্ত, ভাবছি অনেক হয়েছে, এবার আমি ক্ষান্ত হব!”

পাহাড় সব শুনে হো হো করে হেসে উঠে। তার হাসিতে যে কম্পন, যে অনুরণন তা ভূতল কাঁপিয়ে দেয়! আর যা হোক, পাহাড়ের হাসি তো!

”থামো থামো বন্ধু, দোহাই লাগে আর হেসো না ! তোমার হাসি প্রলয় ডেকে আনবে!” – ভীত নদী বলে ওঠে।

”তুমি শুধু নিজের কথাই ভাবলে, এটা কি ঠিক হল নদী?” – পাহাড়ের গম্ভীর জবাব।

”আচ্ছা একবার ভেবে দেখ, এই যে আমি হাজার বছর ধরে এক জায়গায় ঠায় দাড়িয়ে আছি, একটু নড়ে চড়ে বসার তো কোন উপায় নাই! আর এই তুমি, দেখলে, তুমিও তো আমাকে হাসতে বারণ করলে। আমি হাসলেও বিপদ! অথচ তোমার মত অসংখ্য নদীর জন্ম হয়েছে আমার বুক চিরে! ঝড় ঝঞ্ঝা, বৃষ্টি বাদলা, ভূকম্পন কেউ আমাকে ছাড় দেয়নি, সব কিছুই নিরবে সয়ে আসছি। প্রকৃতি ক্ষেপলে অকারণেই আমার খানিকটা খেয়ে ফেলে। শৌখিন মানুষগুলো আমায় কেটে কুটে ঘর বাড়ি বানায়… এই বলিষ্ঠ আমি চুপ করেই থাকি! ‘তোমার গতি আছে, ছন্দ আছে। তুমি নাচতে,গাইতে পার, যখন যেখানে খুশী বইতে পার, তোমার পানি পান করে তোমার তীরে বসে পথিক তোমায় দোয়া দেয়…. তারপরও??? তারপরও তোমার এত অভিযোগ?”

নদী বুঝতে পারে। নদী বুঝতে পারে তার অভিযোগ গুলো অন্য কারো আকুল আরজি! এরপর সে আর অভিযোগ করেনি, সেই যে চলছে আর কোনদিন থামেনি…। ছবি: সাঙ্গু নদী,বাংলাদেশ।

লেখক কর্মরত: আল হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ, জেদ্দা, সৌদি আরব।

 

‘নারী মুক্তি’ সময়ের অপরিহার্য দাবি!

সাজেদা হুমায়রা হিমু


নারী কেবলমাত্র একটি সত্তার নাম নয় বরং একটি চালিকা শক্তি যাকে ছাড়া পুরো পৃথিবী স্তব্ধ, স্থবির। তবুও নারীর কাঙ্ক্ষিত মূল্যায়ন হচ্ছে না কোনো ভাবেই।

তাই একবিংশ শতাব্দীর আলো ঝলমলে পৃথিবীতে দাঁড়িয়েও নারী আজ বড় অসহায়! বড়ই পরাধীন!

প্রতিনিয়তই নারী নির্যাতিত শারীরিকভাবে….মানসিক ভাবে।
নারীকে কখনো একজন মা, কখনো একজন স্ত্রী, কখনো ছেলের বউ, কখনো বোন বা কন্যা, কখনোবা একজন সাধারণ মেয়ে হিসেবে নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। এ নির্যাতন শুধু পুরুষ কর্তৃক হচ্ছে তা নয়, নারী কর্তৃকও হচ্ছে।

সত্যি নারীরা আজ ভালো নেই। নারী কেন্দ্রীক বিভিন্ন সমস্যার বিষবাষ্পে জর্জরিত আমাদের প্রিয় এ জন্মভূমি।

বেশিরভাগ পরিবারেই নেই নারীর মত প্রকাশের স্বাধীনতা…নেই তার অবদান আর কষ্টের স্বীকৃতি…
যৌতুক, তালাক নারী নির্যতনের রেকর্ডে যোগ করেছে এক চরম নির্মমতা!
বিগত কয়েক বছরে জ্যামিতিক হারে বেড়েছে ধর্ষনের ঘটনা!
নারীকে বঞ্চিত করা হচ্ছে সম্পত্তি থেকে…..বঞ্চিত করা হচ্ছে উপার্জনের ক্ষেত্রে।
পথে পথে চলছে নারীর শ্লীলতাহানি!
কন্যা শিশু থেকে বৃদ্ধা নারীরা পর্যন্ত প্রতিনিয়তই শিকার হচ্ছে যৌন নির্যাতনের….
বাস, অফিস, গৃহ কোন স্থানই আজ নিরাপদ নয়।
বিভিন্ন বয়সের পুরুষের দ্বারা ইভটিজিং এর শিকার নারীরা প্রচণ্ড মানসিক পীড়নে থাকছে।
আর ইতি ঘটাতে বাধ্য হচ্ছে শিক্ষা জীবন, কর্ম জীবন এমনকি নিজেদের জীবনেরও!

কেন আজ নারীর এই অসহায়ত্ব? কেন হচ্ছে এই নির্যাতন? তা নির্ণয়ের চেষ্টা করছেনা কেউ।

নারীর অবস্থার উন্নয়নে সময়ের সাথে সাথে প্রণিত হচ্ছে বিভিন্ন নীতিমালা, বিভিন্ন পদক্ষেপ… তবুও পরিবর্তিত হচ্ছে না নারীর অবস্থার।

তাই আল্লাহ প্রদত্ত নারীর মর্যাদা ও অধিকারের ব্যাপারে সচেতনতা আজ বড় প্রয়োজন…..প্রয়োজন সমাজের সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন….প্রয়োজন নারী নির্যাতনকারীদের প্রতিরোধে শক্তিশালী আইনের প্রয়োগ।

অযৌক্তিক সমানিধিকারের দাবীর মাধ্যমে নারীর কাঁধে কয়েক গুন বোঝা চাপিয়ে দিয়ে নারীমুক্তি কখনোই সম্ভব নয়।

তাই..
সম অধিকার নয়,
প্রাপ্য অধিকার চাই।
প্রাপ্য স্বাধীনতা চাই।

নারী দিবসের শুভেচ্ছা।

 

সবজি বিক্রি করে গরীবের জন্যে হাসপাতাল বানিয়েছেন যিনি!

মুহাম্মদ সাইদুজ্জামান আহা


স্ত্রী মমতাজ বেগমের প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন স্বরূপ মুঘল সম্রাট শাহজাহান নির্মাণ করেছিলেন তাজমহল, লোকে সেটাকে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবেই জানে। সুভাষিণী মিস্ত্রি বিশাল কোন সাম্রাজ্যের অধিপতি নন, অনেক টাকাপয়সাও নেই তার। কিন্ত যে কাজটা তিনি করেছেন, সেটা হয়তো ছাড়িয়ে গেছে শাহজাহানের ভালোবাসা কিংবা তাজমহলের কীর্তিকেও। বিনা চিকিৎসায় স্বামীকে হারানো এই ভদ্রমহিলা মানুষের বাড়িতে কাজ করে আর সবজি বিক্রি করেই গড়ে তুলেছেন হাসপাতাল, যাতে গরীব মানুষকে বিনা চিকিৎসায় মারা যেতে না হয়!

বারো বছর বয়সে একটা মেয়ের স্কুলে যাওয়ার কথা, বান্ধবীদের সঙ্গে পুতুল খেলার কথা। সেই বয়সে সুভাষিণীকে দাঁড়াতে হয়েছিল ছাদনাতলায়। পুতুলের বিয়ে দেয়ার বয়সে তার নিজেরই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল, সংসার নামের কঠিণ একটা জগতে প্রবেশ করতে হয়েছিল সেই অল্প বয়সে। স্বামীর ভালোবাসায় সেই সংসারজীবনে অভ্যস্তও হয়ে গিয়েছিলেন সুভাষিণী। কিন্ত যখন তার বয়স মাত্র তেইশ, তখনই জীবনের সবচেয়ে বড় আঘাতটা পেলেন তিনি। ১৯৭১ সালে অসুস্থ হয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা যান সুভাষিণীর স্বামী। হাসপাতালের বারান্দায় বড় অবহেলা পড়েছিল তার দেহটা, টাকার অভাবে ঔষধ কিনতে পারেননি, ডাক্তারদের দেয়া টেস্টগুলোও করানো সম্ভব হয়নি। তাকিয়ে তাকিয়ে শুধু মৃত্যুপথযাত্রী স্বামীর কষ্টটা দেখেছেন সুভাষিণী।

স্বামীর মৃত্যুর পরে চার সন্তানকে নিয়ে পথে নেমে আসতে হয়েছিল তাকে। সংসারে একটা পয়সা আয় নেই, সঞ্চয় বলতে কিছুই রেখে যেতে পারেননি তার দিনমজুর স্বামী। দুমুঠো অন্নের জন্য পরের বাড়িতে ঝি-গিরি থেকে শুরু করে চায়ের দোকানে কাজ, রাজমিস্ত্রির ঢালাইয়ের কাজ, ছাদ পেটানোর কাজ, ধাপায় কয়লা কুড়ানোর কাজ, মাছের ভেড়িতে পানা পরিষ্কার করার কাজ, জমিতে চারা বসানোর কাজ, ধান চাষ—আরও কত কী করেছেন তিনি! তবুও পাঁচজনের সংসার চলছিল না। সারাদিন কাজ করে চালডাল কিনে এনে হাড়িতে চড়াতেন সুভাষিণী, তাতেও পেট ভরতো না সবার। বাধ্য হয়ে এক ছেলেকে অনাথ আশ্রমে দিয়ে দিলেন, তাতে যদি কিছুটা সাশ্রয় হয় সবার!

এতকিছু করেও যখন পোষাচ্ছিল না, তখন একজনের পরামর্শে কিছু টাকা ধার করে নেমে পড়লেন সবজির ব্যবসায়। কলকাতার বাইরের হাঁসপুকুর থেকে অল্প দামে সবজী কিনতেন সুভাষিণী, তারপর সেগুলো মাথায় করে মাইলের পর মাইল পথ হেঁটে ঢুকতেন শহরে, পার্ক সার্কাসের চার নম্বর ব্রীজ লাগোয়া অস্থায়ী বাজারে বিক্রি করতেন সেসব। প্রতিদিন সেই একই কাজ, বিশাল একটা তরকারীর ঝাঁকা মাথায় করে নিয়ে আসছেন এক মহিলা, নিত্যদিনের দৃশ্য হয়ে উঠেছিল সেটা।

সবজি বিক্রি করে খানিকটা স্বচ্ছ্বলতা এলো, মানে অন্তত খেয়েপরে বাঁচাটা নিশ্চিত হলো। কিন্ত সুভাষিণী তো এতেই থেমে যাওয়ার মানুষ নন। মনের ভেতরে অদম্য একটা স্বপ্নকে লালন করে এসেছেন স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে, গরীব অসহায় লোকজন, যারা টাকার অভাবে দামী ডাক্তার বা হাসপাতালে যেতে পারেনা, সরকারী হাসপাতালের বারান্দায় পড়ে যাদের মৃত্যু হয়, সেই মানুষগুলোকে বিনা চিকিৎসায় মরতে দেয়া যাবে না কোনভাবেই। সেজন্যেই তো নিজে না খেয়ে টাকা জমিয়েছেন এতগুলো বছর ধরে, ছেলেদের ডাক্তারী পড়িয়েছেন, মেয়েদের নার্সিং ইনস্টিটিউটে ভর্তি করেছেন।

জমানো টাকা ভেঙে চব্বিশ পরগণার হাঁসপুকুরে এক টুকরো জমি কিনলেন সুভাষিণী। লোকে জমি কেনে বাড়ি করবে বলে, সুভাষিণী কিনলেন হাসপাতাল বানাবেন বলে, তাও গরীব মানুষের জন্যে! বড় ছেলে অজয় ততদিনে ডাক্তার হয়েছে, তাকে ডেকে নিজের ইচ্ছের কথা জানালেন সুভাষিণী। শুরু হয়ে গেল এতদিনের স্বপ্নপূরণের মিশন।

১৯৯৩ সালে ছোট্ট একটা টিনের ছাউনি দেয়া ঘরে শুরু হয়ে গেল হাসপাতালের কার্যক্রম, গ্রামের মানুষজনের সহায়তায় গঠিত হলো ট্রাস্টি বোর্ড। প্রথম দিনেই আড়াইশোর বেশী গরীব রোগীকে বিনেপয়সায় চিকিৎসা দেয়া হলো, নিজেদের উদ্যোগেই মেডিকেল ক্যাম্প করলেন অজয় আর তার ডাক্তার বন্ধুরা। রোগীদের ভীড় দেখে অজান্তেই সেদিন নিজের চোখে জল এসেছিল সুভাষিণী মিস্ত্রির।

টিনশেড সেই ঘরটা এখন আর নেই। এক কাঠার ছোট্ট জায়গাটা এখন ছড়িয়ে কত বড় হয়ে গেছে! তিন একরের বিশাল এলাকা জুড়ে হাসপাতাল প্রাঙ্গণ, তার মাঝখানে বিশাল বিল্ডিংটা, নাম রাখা হয়েছে ‘হিউম্যানিটি হসপিটাল’। সুভাষিণীর ছেলে অজয়ই সবকিছু দেখাশোনা করে, আছে অভিজ্ঞ ডাক্তার-নার্স; আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার যেটা, এখানে রোগীদের বিনাপয়সায় চিকিৎসা দেয়া হয়। ঔষধপত্রও সরবরাহ করা হয় হাসপাতালের তরফ থেকেই।

অর্থোপেডিক, গাইনো, ইউরোলজি সহ অন্যান্য বিভাগ ও ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থাও চালু হয়েছে এখানে। হিউম্যানিটি হসপিটাল এখন পশ্চিমবঙ্গের গরীব অসহায় রোগীদের সবচেয়ে বড় ভরসাস্থল, দূর-দূরান্ত থেকে রোগীরা আসেন এখানে, এখানকার ডাক্তার-নার্সেরাও চেষ্টা করেন নিজেদের পক্ষে সর্বোচ্চটা করার।

সুভাষিণী মিস্ত্রির বয়স এখন আশি’র ওপরে। তেইশ বছর বয়সে স্বামীকে হারানোর পরে যে সংগ্রামটায় লিপ্ত হয়েছিলেন তিনি, সেটার ফল এখন পাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের গরীব মানুষেরা। পুরো চব্বিশ পরগণা কিংবা গোটা রাজ্যেই সবাই তাকে একনামে চেনে, হিউম্যানিটি হসপিটালের কথা জানে সবাই।

শুধু হিউম্যানিটি হসপিটালই নয়, ঘুর্ণিঝড় সিডরের পরে সুন্দরবনের উপকূলীয় এলাকায় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্যে পঁচিশ শয্যার আরো একটি হাসপাতাল স্থাপন করেছেন সুভাষিণী, এখানেও গরীব রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়া হয়। সুভাষিণীর এই মহৎ কীর্তিকে সম্মান জানিয়েছে তার রাষ্ট্রও, এবছর তাকে প্রদান করা হয়েছে ‘পদ্মশ্রী’ সম্মাননা।

বাস্তবতা কখনও কখনও কল্পনাকেও হার মানায়। মানুষের বাড়িতে কাজ করে, দিনমজুরি করে, সবজি বিক্রি করে এক-দুই-পাঁচ টাকা করে জমিয়েছিলেন সুভাষিণী। অভাবের তাড়নায় না খেয়ে থেকেছেন, তবু সেই সঞ্চয়ে হাত দেননি কখনও; সেটাকে ‘গরীব মানুষের অধিকার’ হিসেবে আগলে রেখেছেন বছরের পর বছর।

অবশেষে হাসপাতাল নির্মাণের মাধ্যমে নিজের স্বপ্নটা পূরণ করেছেন তিনি। অমানবিকতার অন্ধকারে মানবতার ডাকে অসাধ্য সাধন করা সুভাষিণী মিস্ত্রি তো অনন্য একজন, যাকে নিয়ে পুরো মানবসভ্যতাই গর্ব করতে পারে। সুত্র: ইনসাইড বাংলাদেশ।

 

প্রসব পরবর্তীকালীন বিষণ্ণতা

ডা.সংগীতা হালদার রায়


কিছুদিন আগে এক দাওয়াতে গিয়ে ‘বেবি ব্লুজ’ বা ‘প্রসব পরবর্তীকালীন বিষণ্নতা’ নিয়ে কথা উঠেছিলো।

টেবিলে বসা পুরুষদের একাংশের ধারণা এটা মর্ডাণ মেয়ে / মায়েদের হয় যেহেতু তারা ক্যারিয়ার / শপিং / স্টাইলিং ইত্যাদিকে জীবনে অত্যাধিক প্রাধান্য দিয়ে থাকেনন যা আগের যুগের মায়েদের বেলায় হত না।

সেই রাত থেকেই মনে হচ্ছে একজন ডাক্তার ও মা হিসেবে আমার উচিত আমার বন্ধুদের কিছু জানানো যা আমি জানি;

বেবি ব্লুজ : বই অনুযায়ী ৭০% – ৮০% মায়েদেরই হয়। আমার ধারণা আরো বেশি সংখ্যায় হয়ে থাকে কিন্তু ডাক্তারের কাছে ‘কেস’ খুব কম আসে বলেই বই এ ডকুমেন্টারি কম আছে।

হওয়ার কারণ : প্রেগন্যান্সির সময় প্রয়োজনয়ীয় হরমোন ১০০ – ১০০০ গুন (100- 10000 fold decrease) কমে যাওয়া এবং MAO – A হরমোনের হঠাৎ বেড়ে যাওয়া যা ব্রেইন সেলে বিষণ্নতা উৎপন্নকারী হরমোন বাড়িয়ে দেয় ।

সময় : প্রসবের পর থেকে শুরু হয় এবং ২-৩ সপ্তাহ স্থায়ী হয় সাধারণত । দিনে কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘন্টা হতে পারে এর স্থায়ীত্বকাল ।

স্টেজ: মোটা দাগে তিন ভাগে ভাগ করা যায় ।

(লক্ষণ সমূহ হিসেব করলে ডাক্তারী হিসেব মতে মোট ৬ টা স্টেজ , কিন্তু যারা ডাক্তার নন আবার সচেতন থাকতে চান তারা তিনটা জানলেই চলবে )

ক) বেবি ব্লুজ
মন খারাপ হয় কারণ ছাড়া, শুধু শুধুই কান্না পায় ( weeping ), খুব বেশি গুরুতর কারণ ছাড়াই বিরক্তি লাগে , মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে , বাচ্চা ও বাচ্চার যত্ন নিয়ে অতিরিক্ত টেনশন হয় (বাচ্চার বাবার কোলে বাচ্চা দিতেও টেনশন হয় )

প্রতিকার
শুধু মিষ্টি ব্যবহার , সহানুভূতিসম্পন্ন কথা ও ব্যবহার (তুমি ঠিক পারবে , সবারই এরকম অসুবিধা হয় আর এটাই স্বাভাবিক) বাচ্চা সামলাতে সহানুভূতিশীল সাহায্যই যথেষ্ট’
‘আমরা তো অমুক করেছি’ বা ‘আমরা যেন আর বাচ্চা সামলাই নাই ‘ টাইপ কথা বলা মানুষজনকে ১০০ x ২ = ২০০ হাত দূরে রাখা খুব দরকার।

খ) পোস্টপারটাম ডিপ্রেশন
বাচ্চা হবার তিন মাস পরেও যখন লক্ষণসমূহ থেকেই যায় বরং আগের সমস্ত লক্ষণ আরো প্রকট হয় , নিজের ছোট্ট বাচ্চাকে সহ্য করতে না পারা , নিজের উপরে নিজের অসন্তোষ , নিজের ক্যারিয়ার + নিজের রূপ সবকিছু নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগা, নিজের জীবনের প্রতি মায়া চলে যাওয়া।

প্রতিকার
কোন এমন মানুষের সাথে মনের কথা বলা যার উপরে মা পূর্ণ বিশ্বাস রাখেন , বাচ্চা সামলানোর জন্যে সাহায্যকারী যাতে মা অন্য কিছু করেও নিজেকে ভুলিয়ে রাখতে পারেন, একটু কোথাও ঘুড়ে আসা তা পাশের পার্কেও হতে পারে

গ) পোস্টপারটাম সাইকোসিস
মা মনে করতে থাকেন শুধু তিনি মরে গেলেই মানুষ বুঝবে যে তিনি তার শিশুকে কত্ত ভালোবাসতেন , আত্মহত্যার প্রচেষ্টা এবং শিশুকে মেরে ফেলার ঘটনাও লিপিবদ্ধ আছে ।

পরিশেষে বলবো , এরকম আগেও হত ( ঘরে ছোট ভাইবোন আসার পরে মায়ের পিট্টি খাওয়া বা অতিরিক্ত কাজের চাপ নিয়ে মায়ের খিটখিটে হয়ে যাওয়া বা মা- বাবার / মা- দাদীর ঝগড়া বেড়ে যাওয়ার স্মৃতি মনে করে দেখুন ) আর এর সাথে ‘MODERNISM’ কোন সম্পর্ক নেই ।

‘উত্তম ব্যবহারেই উন্নত বংশের পরিচয়’ আর ‘সৃষ্টিকর্তাও একজন প্রসবিনীর প্রসব-পূর্ব সমস্ত পাপ মাফ করে দেন’ এগুলো তো অনেক প্রচলিত জানা কথা ।
কাজেই একটু ধৈর্য ধরে সহানুভূতিশীল ব্যবহার করুন। কারণ প্রতিটি মা-ই তার সন্তানকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসেন । তাকে মন ও শরীরে সম্পূর্ণ সুস্থ একজন মা হয়ে ওঠার সময়টুকু দিন প্লিজ।

ফরমাল লেকচারার
শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ, ঢাকা

 

‘প্রি- টিনেজার ও টিনেজার প্যারেন্টিং’ পর্ব-৩

ফাতিমা খান


বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা মানেই আমার ঘরে অন্যরকম একটা আমেজ । বাচ্চারা স্কুল থেকে ফিরলে ওদের ক্লান্ত চেহারাতেও একটা “তাইরে নাইরে না” টাইপ ভাব দেখি। আমার শত ক্লান্তির মাঝেও ওদের আনন্দ আমাকে পেয়ে বসে, বৃহস্পতিবারের সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ওদের “যা খুশী তাই কর” দিন, রুটিন-ছাড়া, বাধনহারা সময়। আমার বয়সটা ঠুস করে কমে একদম ওদের সমান সমান হয়ে দাঁড়ায়।

বাচ্চাদের মাঝে মাঝে এই ছাড় দেওয়া ওদের অনেক রিল্যাক্স আর রিফ্রেশ করে। আজকাল স্কুল কলেজের পড়াশোনার চাপ এত বেশী থাকে যে ওরা নিজস্ব সৃজনশীলতা প্রায় হারাতে বসেছে। প্রত্যেক মানুষ কোন না কোন বিশেষ গুণ নিয়েই পৃথিবীতে আসে।

এই বিশেষ গুনগুলো লালন করার জন্য একটু অবকাশ খুব দরকার যেন পরের ব্যস্ত ওয়ার্কিং ডে গুলোর জন্য ওদের দেহ ও মন-মস্তিষ্ক সতেজ হয়।

সংসার, চাকুরী, ঘর সামলে ক্লান্ত শুধু আমরাই হই না, ওরাও হয়, কিন্তু ধরন আর কারণটা ভিন্ন। একটু শিকল ছাড়া সময় আর বাবা মায়ের সান্নিধ্য পাওয়ার অপেক্ষাতেই মানসিক ভাবে ওরা ক্লান্ত থাকে, যা ওরাও প্রকাশ করে না আর আমরাও বুঝতে পারি না।

প্রায় বছর দুয়েক আগে আমেরিকায় করা একটা জরিপে দেখেছিলাম পনের বছর বয়স পর্যন্ত দৈনিক অন্তত আধা ঘন্টা মায়ের নিবিড় সান্নিধ্যে থাকা বাচ্চাগুলো মেধাবী হয়।

জীবন কতটা জটিল হলে মায়ের কাছে সন্তানের জন্য আধা ঘন্টা সময়ের দাবী করে জরিপ করা হয়েছিল তাই ভেবে কিছুটা হতাশও হয়েছিলাম।

আজ রাত নয়টায় বাসায় ফিরে দেখি আমার বড় ছেলে পপস্টিকাল স্টিক দিয়ে বাড়ি বানায়, ডুপ্লেক্স বাড়ি। আমার ছোটজন তার বাধ্য এসিস্ট্যান্ট। কোলের উপর বিশাল ওজন ওয়ালা ‘Big book of home plans’ বই নিয়ে ভাইকে গাইড করছে। আমার সারা ঘরের মেঝেতে সদ্য কিনে আনা ক্রাইলিক পেইন্টের ছড়াছড়ি। পপস্টিকাল স্টিকের বাড়ির ওয়াল পেইন্ট হচ্ছে।

আমাকে দেখেই বড়জন বলল, ” আম্মু আমাদের ফিউচার বাড়ির মডেল বানাই। ডুপ্লেক্স বাড়ি হবে আমাদের। নিচতলায় একপাশে নানাভাই নানুমণি থাকবে, আরেকপাশে দাদু। আমরা থাকব উপরে। নাইন সিটারের একটা গাড়ী থাকবে আমাদের। যেখানে যাব সবাই একসাথে যাব। ড্রাইভিং সিটে বসব আমি, পাশে নানাভাই। বাকী সবাই পেছনে।” আমার ছেলের চোখ স্বপ্নময়, মুখ হাসি হাসি।

ছোটজন আবার একটু ভাবুক। সে প্ল্যানের বাকীটা বলে ফেলল ” আর বাড়িটা হবে লেকের পাশে। একটা ওয়ালের পুরাটাই গ্লাসের উইন্ডো হবে। আর থাকবে অনেক বড় এয়ার এলার্ম। বাতাস আসবে আর এলার্ম বাজবে…আআআহহহহ ”(তার চোখ অলরেডি বন্ধ হয়ে গেছে)।

আমিও বোধ হয় হারিয়ে গিয়েছিলাম…!

আজ ওদের কান্ড দেখে নতুন কিছু প্যারেন্টিং এর আইডিয়া পেলাম।

♦ আমাদের প্রি-টিনেজার বা টিনেজার কে তাদের স্বপ্নগুলো লালন করার জন্য একটা মুক্ত ক্যাম্পাস দেয়া উচিৎ যেখানে তারা মনের সব কল্পনা আর রঙ মিশিয়ে স্বপ্ন গড়বে। এই চর্চাই একদিন তার যোগ্যতা ও ব্যক্তিত্ব গঠনের সোপান হবে।

♦ ওরা নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত দিতে পারে অকপটে, যেগুল আমরা বড়রা সাত পাঁচ ভেবে বা ইগো সমস্যার জন্য হয়ত বলতে পারি না। পরিবারের যেকোন সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় ওদের পরামর্শও নেওয়া উচিত। ওদের চিন্তার প্রসারতা ও ভালমন্দ জ্ঞান বাড়ানোর জন্যও এটা খুব ভাল উপায় হবে।(চলবে)

লেখিকা কর্মরত:আল হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ,জেদ্দা,সৌদি আরব।

 

মনের মাঝে স্মৃতি প্রিয়জনের

আফরোজা হাসান


ছেলে স্কুলে আর ছেলের বাবা কাজে চলে যাবার পর দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টার একান্ত বাস আমার। অবশ্য বই পড়ার তীব্র নেশা থাকার কারণে সময় কাটানো নিয়ে কখনোই তেমন সমস্যায় পরতে হয় না আমাকে। উল্টো বরং সময়কে ধরার জন্য ছুটতে হয়। কিন্তু মাঝে মাঝে দু’একটা দিন এমন আসে যে বই পড়তে ইচ্ছে করে না। সংসারের কাজগুলো পড়ে আছে দেখেও হাত লাগানোর তাগিদা অনুভব করে না মন। বিছানার চাদরে সামান্য ভাঁজ দেখলে বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে ফেলা এই আমিই, পুরো এলোমেলো বিছানার দেখেও নির্বিকার বসে থাকি। সময়টা তখন কেমন যেন থমকে দাঁড়ায়। ঘড়ির দিকে তাকালে মনেহয় সেই কখন দেখেছি দশটা বাজে, এতক্ষণে মাত্র দশ মিনিট পেরিয়েছে……? আমার জীবনে এমন যতগুলো দিন এসেছে, কিছুক্ষণের জন্য হলেও এলোমেলো করে দিয়ে গিয়েছে আমার ছোট্ট ভুবনটাকে। খুব খেয়ালি আমাকে করে দিয়েছে ভীষণ রকম বেখেয়ালি। তাই হিসেব কষতে বসলাম কেন হয় এমন? কেন মন হঠাৎ শরতের আকাশ হয়ে যায়? এই মেঘ তো এই রোদ্দুর……? বাঁধ ভাঙ্গা জোছনা ভরা আকাশে কেন আঘাত হানে কালবৈশাখীর ঝড়……? মন বলল তোমার প্রিয়জনরা যে তোমার থেকে দূরে…..বহুদূরে……….

সবার জীবনেই প্রিয় মানুষেরা সবসময় আলাদা স্থান দখল করে থাকে। জীবনে চলার পথে আমরা যত এগোতে থাকি, বাড়তে থাকে প্রিয় মানুষদের সংখ্যা। মনের পাতায় ছাপ ফেলতে থাকে কারো কথা, কারো লেখা, কারো হাসি, কারো সঙ্গ……! ধীরে ধীরে আপন অস্তিত্বের সাথে একাকার হয়ে যেতে থাকে প্রিয় মানুষগুলো। সময়ের স্রোতে ভেসে কিছু প্রিয় মানুষ দূরে চলে যায়, মনে নোঙ্গর গাড়ে নতুন প্রিয়রা। তাদেরকে সাথে নিয়ে এগিয়ে চলে জীবনের পথ। কিন্তু যারা দূরে চলে যায় নানা কারণে তারা কি সত্যিই হারিয়ে যায় কালের গহ্বরে…? আমার উপলব্ধি বলে নিষ্ঠুর নিয়তি মন থেকে কাউকেই একেবারে মুছে যেতে দেয় না। আর ভুলে যে যাবো তারও উপায় নেই, কারণ তারা যে আমাদের প্রিয়জন। প্রি-য়-জ-ন…..! চাইলেই কি তাদেরকে ভুলে যাওয়া যায়…..? লাইব্রেরীতে গেলে আব্বুর সাথে বইমেলাতে ঘুরে ঘুরে বই কেনার স্মৃতি মনেপরে, ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুম পাড়ানোর সময় মনেপরে আম্মুর কথা, আইসক্রিম মনে করিয়ে দেয় ছোটভাইটার কথা, বেগুনী অর্কিডে বোনের মিষ্টি চেহারাটা দেখতে পাই, শিশুদেরকে যখন দেখি মনের পর্দায় ভেসে ওঠে খেলার সাথীরা। নানু-দাদু-মামা-খালামনি-চাচ্চু-ফুপ্পি…কত প্রিয়জনকে ঘিরে কত শত রঙ-বেরঙের স্মৃতি……

প্রিয়জনরা আনন্দের বারিধারা হয়ে যেমন ঝরে, প্রচণ্ড খরা হয়ে চৌচিরও করে দেয় মনের বনভূমিকে। কিন্তু কেন এমন হয়? কেন প্রিয়জনরা কষ্ট দেয়? যাদের কারণে সুখ-শান্তিকে উপলব্ধি করতে শেখে মন, তারাই আবার দুঃখ-ব্যথাকে বোঝানোর দায়িত্ব পালন করে পারদর্শিতার সাথে। তারপরও তারা যে কতোটা প্রিয় সেটা দূরে না এলে অনুভব করা যায় না সঠিকভাবে। কাছে থাকতে নির্বোধ মন মানতেই চায় না ভালোবাসা দেবার সাথে সাথে কষ্ট দেবার অধিকারও যে প্রিয়জনদের আছে। প্রিয়জনদের কারণেই যেহেতু আমাদের মনে সুখ-শান্তির অনুভূতি আসে, সেহেতু দুঃখ-বেদনা তো তারা দিতেই পারেন কারণে-অকারণে। কিন্তু আমাদের স্বার্থপর মন শুধু ভালোটাই পেতে চায় সবার কাছ থেকে। একবারও ভেবে দেখে না যে আমি কি সর্বক্ষেত্রে সবার সাথে ভালো? আমার দ্বারা কখনোই প্রিয়জনরা কষ্ট-ব্যথা পাননি বা পান না তা কি আমি জোরের সাথে বলতে পারবো………?

মতের অমিল, ঝগড়া-বিবাদ, কথা কাটাকাটি সন্তর্পনে প্রিয়জনদের সাথে সম্পর্কের ভিতকে নড়বড়ে করে দিতে থাকে। ঘুণপোকার মতো ধীরে ধীরে ক্ষয় করতে থাকে ভালোবাসার বন্ধনের খুঁটিকে। আর এই ক্ষয় হতে থাকা খুঁটির উপর ভরসা করেই চলতে থাকে জীবনের পথচলা। অথচ মন একবার যাদেরকে আপন করে নেয় তাদেরকে কখনোই ভুলে থাকা যায় না। ভুলে থাকতে চাইলেও সম্ভব হয় না। তবে জীবনের প্রয়োজনে কখনো কখনো ভুলে থাকতে হয়। স্মৃতিরা ঝাঁকে ঝাঁকে হানা দিয়ে মাঝে মাঝে মনকে ঘিরে ফেললেও, বেশির ভাগ সময়ই আমরা স্মৃতিদের এড়িয়ে চলা রপ্ত করে ফেলি। কারণ স্মৃতির ভাণ্ডারে অসংখ্য মণি-মুক্তা-জহরতের সাথে ধারালো-সূচালো কাঁচের টুকরোও যে আছে। যার সামান্য আঘাত মনকে করে ক্ষত-বিক্ষত…রক্তাক্ত…! আর কেই বা চায় হৃদয় চিড়ে বেদনা কুড়াতে…? তারচেয়ে দূরে সরে থাকা কিংবা ভুলে থাকাটাই উত্তম মনেহয়। কি জানি এটাই হয়তো জীবনের নিয়ম………..।

আমরা সবাই সবসময় আলোকোজ্বল এক জীবন পেতে চাই। কিন্তু এমন জীবন গড়ে তুলতে সম্পর্কের মাঝে প্রয়োজন ভালোবাসা-ত্যাগ আর শ্রদ্ধাবোধের সংমিশ্রণ। কিন্তু সুখের মাঝে যেমন অসুখ থাকে, তেমন ভালোবাসা-ত্যাগ আর শ্রদ্ধাবোধের সংমিশ্রণ থাকার পরও সম্পর্কের মাঝে ঘটে ছন্দপতন। এই ছন্দপতনের দ্বন্দ্বে পড়ে যাতে আমরা বিভ্রান্ত হয়ে না যাই। প্রিয়জনদের প্রতি আমাদের আচরণ যেন অসাবধানী হয়ে না যায়। একে-অন্যেকে যাতে দোষারোপ না করি, ঝাঁপিয়ে যেন না পড়ি কারো উপর জিভের তরবারি নিয়ে। ভুলে যাতে না যাই তারা যে আমাদের প্রি.য়…জন.ন…………।

বিষয়: মনের জানালা

 

শরীয়ত ভিত্তিক দাম্পত্য কাউন্সিলিং (কেস স্টাডি)- ১ম পর্ব

আফরোজা হাসান


ছোট্ট সুখের নীড় বলতে যা বোঝায় ঠিক তেমনটিই ছিল আমার জীবন। আদর, সোহাগ ও ভালোবাসায় আগলে রাখা একজন প্রেমময় অসাধারণ স্বামী। এক ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে ভীষণ আনন্দময় একটা জীবন কাটাচ্ছিলাম। প্রচন্ড ভালোবাসতো আমাকে আমার স্বামী। পিতা হিসেবেও খুবই দায়িত্ব সচেতন ছিলেন সবসময়ই। সুখের সাগরে ভেসে কাটছিল আমাদের দিন।

এরই মধ্যে একদিন জানতে পারলাম আমার স্বামীর অন্য একটি মেয়ের সাথে গোপন সম্পর্কের কথা।

প্রথমে কিছুতেই বিশ্বাস করতে চায়নি মন। কিন্তু খোঁজ খবর নেবার পর বুঝলাম যা শুনেছি সবই সত্যি। অন্য একটি মেয়ের সাথে প্রায় দেড় বছর যাবত চলছে তার এই গোপন অনৈতিক সম্পর্ক। পুরো দুনিয়া থমকে গিয়েছিল আমার সামনে। কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। কারণ কোনদিন স্বামীর ব্যবহার থেকে এমন কিছুই আঁচ করতে পারিনি আমি। আমাদের সম্পর্কের মাঝেও কখনোই এমন কোন সমস্যা আসেনি যে সে এমন কিছু করতে পারে। কি করবো কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না। কার কাছে বলবো এই ভয়াবহ লজ্জার কথা?!

কয়েকটা দিন গোপনে শুধু কান্না করেছি আর আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়েছি। আমার মানসিক অবস্থা দেখে স্বামী খুবই অস্থির হয়ে পড়েছিল। বারবার জানতে চাইছিল কি হয়েছে আমার। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবার জন্য জোড়াজুড়ি শুরু করে দিয়েছিল। তখনো আমার ভাবতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো এত ভালোবাসা যার চোখে মুখে সে কেমন করে এমন করতে পারলো আমার সাথে? কেমন করে অন্য মেয়ের সাথে জড়ালো?!

শেষপর্যন্ত খুব কাছের এক বান্ধবীর কাছে খুলে বললাম মনের সব কথা। বান্ধবীটি খুবই প্রাক্টিসিং একজন মুসলিমাহ ছিলো। সে আমাকে সাহস দিলো। আল্লাহর উপর ভরসা রেখে ধৈর্য্য ধারণের পরামর্শ দিলো। বললো পরিবারকে না জানিয়ে আগে নিজেই স্বামীর সাথে কথা বলতে। যেহেতু আমার আর আমার স্বামীর মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল বিয়ের প্রথম থেকেই। আমি বান্ধবীর পরামর্শ মেনে নিয়েছিলাম। সরাসরি আমার সন্দেহের কথা স্বামীকে বললাম। প্রথমে সে অস্বীকার করলেও একসময় মেনে নিলো তার অনৈতিক কাজের কথা। খুবই অনুতপ্ত হয়েছিল সেদিন সে। বারবার আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলো। ভুলের পথ থেকে ফিরে আসবে এই ওয়াদা করলো।

আমি চাইনি আমার সংসারটা ভেঙ্গে যাক।

প্রথমত, আমার সংসার সুখেরই ছিল এই ঘটনা জানার আগে।

দ্বিতীয়ত, আমাদের তের বছর ও নয় বছর বয়সী দুটি ছেলে-মেয়ে ছিল। সংসার ভাঙ্গা মানে তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মাঝে ঠেলে দেয়া।

তৃতীয়ত, আমি স্বাবলম্বী কোন নারী না। বাবার বাড়িতেও আমার বোঝা তুলে নেবেন হাসিমুখে এমন কেউ নেই। আর সবচেয়ে বড় কারণ দীর্ঘ পনেরো বছরের সংসারের মায়া এত সহজে ছেড়ে দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না।

এরচেয়েও বড় কারণ স্বামীর প্রতি আমার ভালোবাসা নিখাদ ও পবিত্র ছিল। তাই সংসারটাকে টিকিয়ে রাখার জন্য যতটুকু ত্যাগ স্বীকার আমার পক্ষ থেকে করা সম্ভব ছিল আমি করেছি। এরপরের তিন-চার মাস ভালোই কেটেছে আমাদের। তারপর আবারো জানতে পারলাম যে আমার স্বামী ঐ পথ থেকে ফিরে আসেনি। সে এখনো মেয়েটির সাথে যোগাযোগ করেই চলছে। চলছে তাদের অনৈতিক সমস্ত কাজকর্মও। খুব ভেঙে পড়লাম তখন মানসিক ভাবে। মেয়েটির বয়স তেরো বছর। অনেককিছুই বুঝতে শিখেছিল ততদিনে। আঁচ করে ফেলেছিল কিছু একটা সমস্যা চলছে আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মাঝে। আবারো ছুটলাম সেই বান্ধবীর কাছে। ওর পরামর্শ মতো আপনার কাছে এলাম।

একদম চুপ করে কোন রকমের বাঁধা না দিয়ে ভদ্রমহিলার সব কথা শুনছিল নুসরাহ।

আরো কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, আপনার স্বামীর এমন অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ার পেছনে আপনার নিজের দায় কতটুকু সেটা কি কখনো ভেবে দেখেছেন?

চলবে…

পর্ব-৩

 

শিশুদেরকে ধর্ষকদের হাত থেকে বাঁচাতে সচেতনতা


সিরাজুম মুনিরা


মানবতা মুখ লুকিয়ে কাঁদছে নাকি প্রহসন করছে বোঝা দায়। নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের মত ঘটনা এতোটা সরল ভাবে সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে অথচ সবকিছু কতো স্বাভাবিক।

আইন এতো টাই বিবশ যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এমন ঘৃণিত অপরাধ ঠেকাতে পারছে না। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে সেই অন্যায়। যুবতী, কিশোরী তো ছিলোই এখন এই অন্যায় কর্মের তালিকায় প্রধান আসামি কোমলমতি শিশুরা।

নারীরা এখন বেশ সচেতন তাই হয়তো শিশু ও বালিকাকে টার্গেট করা হচ্ছে। বেশ কিছু সংখ্যক পুরুষ এতোটাই নির্মম আর হৃদয়হীন, যার ফল ভোগ করছে উচ্চ, মধ্য এবং নিম্নবিত্ত সমাজের নারী ও শিশুরা। ধর্ষিতার চেহারা বার বার পর্দার সম্মুখে আসছে পত্রিকায়, টেলিভিশনে এবং আধুনিক মুঠোফোনের মাধ্যমে। অপর পক্ষে ধর্ষককে দেখা যা কদাচিৎ।

প্রভাবশালীরা ক্ষমতার হাত বাড়িয়ে অপরাধীকে সাহস যোগাচ্ছে। অপর দিকে নিরব, দায়হীন মানবতা গুড়িয়ে চলেছে ধর্ষণের প্রতিবাদের আওয়াজ।

হবে নাই বা কেন? এক জন অপরাধী পার পেলে অপর জনের জন্য তো এটা সুখের অপরাধ হিসেবে বিবেচ্য হবে।

চিৎকার করে ভুক্তভোগি পরিবারকে বলতে ইচ্ছে করে, হে নির্যাতিত কন্যার পিতা-মাতা-ভাই-বোন নির্যাতিতার সম্মান যদি না বাঁচলো তবে আপোষ কিসের? আপনাদের আপোষী মনোভাব অন্যের সাহসী আগুনে পানি ঢেলে দিচ্ছে। কত কিছুর জন্য মিটিং, মিছিল, আন্দোলন হচ্ছে। ধর্ষণ অপরাধের বিরুদ্ধে কোন জোরালো প্রতিবাদ নাই।

কিছু ব্যতিক্রমধর্মী অভিভাবকদের দায় ও এড়ানো যায় না। নীতি নৈতিকতার কতটুকু শিক্ষা তারা বহন করছেন ? যে সংসারের স্বামী বা পুত্র সন্তান স্বয়ং ধর্ষণের সাথে জড়িত, তারাই পরিবারের কু-সন্মান বাঁচাতে নিন্দিত প্রতিবাদের আশ্রয় নিচ্ছে।

বাহ্… মহান সেই পরিবার যারা ছেলে,বাবা,ভাইদের অন্যায়কে উসকে দিতে ভুক্তভোগী পরিবারকে জান নেবার হুমকি দিচ্ছেন। নারী সন্মান কত সস্তা হয়ে গেছে যে ভুক্তভোগি পরিবার হাত পেতে টাকা নিয়ে আপোষে চলে আসছে।

খুব কষ্ট লাগে যখন প্রকাশ্যে কোন মেয়েকে অশ্লীল ভাষায় নোংরা ইংগিত দিতে দেখা যায় আর চারপাশের মানুষ তা উপভোগ করে। হয়তো ভাবে এমন বিষয়ের প্রতিবাদ করে কি লাভ?

কিছুই কি করার নেই। কিছু করার না থাকলেও থাকুক সাবধানতার প্রস্তুতি। আসুন সতর্ক হই। তাতে যদি সামান্য লাভ হয়।

১। পরিবারের কন্যাদের প্রতি সর্বদা নজর রাখুন। কোথায় যাচ্ছে, কি করছে, তার সঙ্গ কেমন, তার কোন পরিবর্তন হচ্ছে কি না, হঠাৎ করে কোন কারণে ভয় পাচ্ছে কি না এসব খেয়াল করুন।

২। বাচ্চারা সচরাচর মিথ্যা বলে না। তাই স্কুল, কোচিং থেকে ফিরেই নানা বিষয় সম্পর্কে মা-বাবা কে বলতে চায়। ধৈর্য ধরে তাদের কথা শুনুন ও বোঝার চেষ্টা করুন তার চারপাশের পরিবেশ সম্পর্কে।

৩। খেয়াল করুন, আপনার কন্যাটি নিকট বা দূরের কোন পুরুষ আত্নীয় সম্পর্কে অনিহা বা বিরক্তি প্রকাশ করছে কি না। যদি করে তবে তার কারন জানার চেষ্টা করুন।

৪। যে দেশে এক- দেড় বছর বয়সী শিশু রেহায় পায় না,সেখানে আপনার কন্যা সন্তানকে অত্যন্ত ভরসাবান ব্যক্তির দায়িত্বে রেখে কাজে বের হন।

৫। বুঝতে শিখলেই সন্তান কে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে সতর্ক করুন এবং উপস্থিত বুদ্ধির প্রয়োগ শেখান।

৭। যদিও কামুক দৃষ্টি পোশাকের ধরণ মানেনা তবুও বলবো শালিনতা বজায় থাকে এমন পোশাক পরিধানে অভ্যাস করান। বোরখা ই পরতে হবে এমন কোন কথা নাই। আমরা ওয়েস্টার্ন কান্ট্রিতে বাস করি না যেখানে সবাই নারীদের খোলামেলা রূপ দেখে অভ্যস্ত। আমরা বাস করি সমালোচনায় মুখর এক সমাজে। যেখানে পোশাকের জন্য হয়রানির শিকার হতে হয়।

৮। মেয়ে সন্তানকে প্রয়োজনীয় প্রতিবাদের শিক্ষা দিন। কুংফু-কেরাত শিক্ষা দেওয়া যেতে পারে যাতে প্রয়োজনে নিজের সুরক্ষার ভার সামান্য হলেও নিতে পারে। কেননা সর্বদা মেয়েকে সঙ্গ দেওয়া অভিভাবকের পক্ষে সম্ভব হয় না।

৯। ছেলে সন্তানদের নৈতিক শিক্ষা দিন। তার সঙ্গ সম্পর্কে সজাগ থাকুন। আচরণবিধি খেয়াল রাখুন এবং সন্দেহজনক আচরণের প্রতি কঠোর হোন।

১০। আমাদের গৃহে যে মেয়েটি কাজ করে, আসুন তার সম্মানের নিরাপত্তা রক্ষা করি। নেহায়েত পেটের দায়ে সে আমাদের গৃহে কর্মরত।

আসিফার নির্মম মৃত্যু উচ্চ আদালতের কড়া নেড়ে গেছে। হয়তো নির্যাতনকারীদের সাথে সহজে পেরে ওঠা যাবেনা তবে সঠিক বিচার হবে বিশ্বাস রাখি। এমন নর-পিশাচদের শান্তি এতোটা নির্মম হওয়া উচিত যা দেখে ভবিষ্যত ধর্ষণ পরিকল্পনাকারীর কলিজা কেঁপে ওঠে। শুধু মৃত্যুদণ্ডই পর্যাপ্ত নয়। আসুন সবাই মিলে সতর্ক হই। নারীর সন্মান রক্ষার ভার গোটা জাতির উপর বর্তায়।

 

যে কথা বাবাকে বলা হয়ে উঠেনি মেয়ের!


রিজিয়া


হাসপাতালে ইমার্জেন্সীতে নিয়ে ভর্তি করার পর ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত তীব্র শ্বাসকষ্টে ভোগা মানুষটি তার মেয়েকে দেখে রাখার জন্য অনুরোধ করছেন মেয়ের অধঃস্তন সহকর্মীদের কাছে।

” আমার একটা মাত্র মেয়ে! আপনারা তাকে দেখবেন!”

মেয়ে কেবল সামনে তাকিয়ে থাকে ! দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসার কারণে বেশিদূর তাকানোও যায়না। বাবার মাথাটাই গেছে!মাথার দোষ দিয়েও লাভ কি! চোখের সামনে আত্মীয় পরিজন কাউকেতো পাননা মেয়েকে দেখে রাখার কথা বলার জন্য।সামনে আছে কেবলতো তারাই।এমন কষ্টেও হাসি আসে! দেখার মালিকতো একমাত্র আল্লাহ! সহকর্মীরা বিব্রত বুঝতে পেরে কথা বলে উঠে সে।
– বাবা, তুমি শান্ত হও। আল্লাহ আছেন।

অতঃপর মেয়েটার ভাবনার জগতে যে বিষয়গুলো খেলে যায় তার কোন উত্তর নেই এই পৃথিবীর কাছে।

হায় আল্লাহ! জীবনে পড়াশোনা শেষ করার সময় এত স্ট্রাগল করার সময়ে কাউকে কাছে না পেয়েও যখন আল্লাহ টিকিয়ে রেখেছেন,সেখানে অন্তত জীবন চালানোর মতো অবস্থায় এনে আল্লাহ কি ফেলে রাখবেন!তার ভরসা যে কেবল সেই মহান সৃষ্টিকর্তার উপর।চোখ বন্ধ করে তাঁর ভরসায় থাকতে পারে মেয়েটি এই বলে “তোমার কাছেই আমার জীবনের সবকিছু সমর্পিত।ধৈর্য্য দাও, কেবলই ধৈর্য্য দাও! ”

সেই ছোটবেলায় মায়ের কাছ হতে এই বিষয় বুঝে নেয়া মেয়েটি ” পৃথিবীতে মানুষ হয়ে বাঁচতে হলে আত্মনির্ভরশীল হয়ে বাঁচতে হবে”, তাকে আবার দেখে রাখার জন্য মানুষের কাছে অনুনয় করছেন তার পিতা!কেন!! মাথার উপর একটা পুরুষ নেই বলে!

অতঃপর যে কথা মুখ দিয়ে ফোটেনা, কেবল মনে মনেই বলে যায় তার বাবাকে।
পায়ের নিচে নিজের ভীততো আছে, বাবা! সেই ভীত যদি ভেঙ্গেও পড়ে আল্লাহ যে জ্ঞান দিয়েছেন তাতো রইলোই। এরপর তাও যদি না থাকে সেটাতো নিয়তি।নিয়তির কাছে মাথা নত করে পড়ে থাকবো। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগতো নেই!

বাবা!কেমন করে বলি, মাথার উপর পুরুষের ছায়া নয়;একটা ভালবাসার ছায়াই লাগে।যার কাছে গিয়ে মাথায় মমতার পরশ পাওয়া যায়।পৃথিবীর সবকষ্ট, জরাভোগশেষে তার কাছে ফিরে আবার সাহসী হওয়া যায় আগামী দিনের পথ চলতে। আর সেই আশ্রয়টা দেয়ার জন্য কেবল পুরুষ হলেই হয়না, মানুষের হৃদয়ও যে থাকতে হয়!

জীবনে কত অসহায় সময় পার করেছি!
তোমার কি মনে আছে বাবা? সেবছর তোমার মেয়ের ইন্টার পরীক্ষা চলাকালীন তোমার বউ – বাচ্চার চেয়ে অধিক প্রিয় তোমার ভাইয়েরা তোমাকে যৌথ পরিবার হতে আলাদা করে দিয়েছিল একটা পয়সা, একমুটো চালও না দিয়ে। অথচ তুমি মানুষটি কত বোকা ছিলে! তোমার ভাইয়েরা তোমাকে নাকি কোনদিন পর করবেনা।সবসময় ভাই, ভাইপোদের বেশি মায়া করেছিলে, এমনকি নিজের স্ত্রী সন্তানদেরও বেশি। সেদিন তোমার চেহারায় যে অসহায়ত্ব দেখেছি তখন না বুঝলেও পরে আমি ঠিকই বুঝেছি তোমার মানসিক অবস্থা। তুমি একদম চুপ হয়ে গিয়েছিলে।এক পয়সাও ছিলনা তোমার হাতে।আর তোমার পাশে মা – ই এসেছিল, সন্তানদের আগলে জীবনটা পার করতে। কিন্তু বাবা, সেই ছোটবেলা থেকে মিস করেছি তোমার স্নেহ, তোমার ভালবাসা। তুমি আমাদের কাছে ছিলে, কিন্তু আমরা যেন থাকতাম অনেক দূরে। সময়তো চলেই যায়, আল্লাহ চালিয়ে নেন। নিজেকে তবুও কত অসহায় লাগতো তখন!মনে হতো আমাদের মা ছাড়া আর কেউ নেই পৃথিবীতে !তখনও জীবন চলে গেছে!
এরপর যখন আত্মীয় পরিজন বিহীন উচ্চশিক্ষার জন্য শহরে গেলাম তখনোত কোন আশ্রয় ছিলনা নির্বিঘ্নে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার। আটবছরে কেউতো এসে বলেনি, কেমন করে আমি পড়ালেখা করছি!আমার কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা!আল্লাহতো জীবন থামিয়ে রাখেননি। আমি কেবল যুদ্ধ করেছি একটা সুন্দর কিছু পাওয়ার আশায়!আমার বিশ্বাস সবসময় ছিল, আল্লাহ মানুষের সুন্দর ইচ্ছেকে অপূর্ণতায় রাখেননা। শত বাধা,বিপত্তিতেও আল্লাহ আমায় পথ দেখিয়েছেন, এটা কি কম পাওয়া!সবচেয়ে বড় কথা আমি আল্লাহর উপর আস্থা নিয়ে চলি। আমার ভাগ্যে তিনি যতটা রেখেছেন তাতো আমাকে পেতেই হবে। আমি কেবল চেষ্টা করতে পারি সুন্দর কিছু অর্জন করার!বাকীটা তাঁর হাতে।

আল্লাহ আমাকে কম কিছুতো দেননি! পৃথিবীতে কত মানুষ কত কষ্টেই জীবন পার করে!আমিতো আমার অবস্থানে ভাল আছি।একজন মিথ্যাবাদী,প্রতারক জীবনের কিছু সময় কেড়ে নিয়েছে বলেই আমাকে এত অসহায় ভাবতে হবে বাবা?! তোমারতো খুশি হওয়া উচিত তোমার মেয়ে প্রতারকের অনিরাপদ ছায়াতে নেই। তুমি বুঝি আমার মাথার উপর ভন্ডের ছায়া দেখলেই খুশি হতে? অন্তত মাথার উপর একটা পুরুষের ছায়াতো থাকলো,তেমন?!

না বাবা! এমন পুরুষের ছায়া আমি চাইনা।মা আমাদের সারাজীন মিথ্যার চর্চা থেকে দূরে থাকা শিক্ষা দিয়েছেন।সেটা আমার জীবনের প্রতিটা পর্যায়ে প্রয়োগ করতে চেয়েছি। অন্তত যেটাকে আত্মার সম্পর্ক ধরে এগিয়েছি তাতেতো এতটুকু মিথ্যার ছোঁয়াও রাখিনি।অতঃপর তোমার মেয়ে যেটা জানলো, সেই আস্ত মিথ্যার ছায়ায় থাকার কোন অর্থ যে নেই তা আমার চেয়ে আর কে ভাল অনুভব করতে পারে! যদিও মাঝেমাঝে আমি শংকিত থাকি তোমার শেষ সময়ে আমাকে এমন কোন শর্ত দিয়ে না বসো তোমার মনের শেষ ইচ্ছে বলে! কিন্তু আমার প্রাণ গেলেও তোমার সেই ইচ্ছে আমি পূরণ করতে পারবোনা, বাবা! তুমি তোমার ইচ্ছে প্রকাশ করবে শত বছর ধরে লালন করা সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির কথা ভেবে। কিন্তু আমিতো তা ভাবিনা বাবা! সেই স্ট্রাগল করার সময়গুলোতে সমাজ চেয়েছে আমাকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে। আমি নিজের মনোবলে সামনে এগিয়েছি। যখন কিছুটা সফল হলাম তখন এই সমাজই আবার আমার প্রশংসাই পঞ্চমুখ হয়েছে। আত্মীয় পরিজন, যারা কোনদিন খোঁজ নেয়নি পড়ালেখার বিষয়ে প্রমাণের চেষ্টায় থেকেছে ;তারাই যেন আমার জীবনে ত্রাতার ভূমিকায় অধিষ্ঠিত ছিল । আমি কেবল তাদের কাণ্ড শুনি আর হাসি। এদের জন্য করুণার হাসি ছাড়া আর কিইবা করার আছে! তো আমি করবো এমন সমাজকে কেয়ার? আমি আমার মনকেই শুনবো।আমার অন্তত নিজেকে ভাল রাখতে হবে। অসুস্থ সম্পর্কে ফিরে ধুকে ধুকে মরার কোন মানে হয়না।
অযথা ভয় পেয়োনা বাবা! জীবনটা এমনই।এখানে যুদ্ধ করতে হয়, টিকে থাকতে হয় আল্লাহর উপর ভরসা করেই।একশ দিন অশান্তিতে বেঁচে থাকার চেয়ে একঘণ্টা শান্তিতে বাঁচতে চাই আমি।আমার মাথার উপর তোমাদের দোওয়াতো থাকবে, এটাই আমার ছায়া! অন্য কোন ছায়া নাইবা থাকলো মাথার উপর!

লেখক: বান্দরবান থেকে

 

আসিফা ধর্ষণ ও হত্যার বিচার শুরু

জম্মু ও কাশ্মিরের কাঠুয়ায় আট বছরের শিশু আসিফা বানুকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় অভিযুক্ত আট জনের বিচার শুরু হয়েছে।

সোমবার মামলার প্রথম শুনানিতে শ্রীনগরের একটি আদালতে তাদেরকে হাজির করা হয়।

তবে আদালতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছে অভিযুক্তরা। বিচারক আগামী ২৮ এপ্রিল মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন।

গত ১০ জানুয়ারি ভারত শাসিত কাশ্মিরের কাঠুয়া শহরের কাছে মুসলিম যাযাবর সম্প্রদায়ের আট বছরের মেয়ে আসিফা বানু নিখোঁজ হওয়ার ৭ দিন পর কাছের একটি জঙ্গলে তার মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায়। মুলত কাঠুরায়া রেপ কেস এর চার্জশিট থেকে জানা যায় যে,

১) মূল অভিযুক্ত তার ছেলে এবং ভাগ্নে একসাথে বাচ্চাটিকে রেপ করে, অর্থাৎ বাপ ছেলে ভাগ্নে একসাথে! ২) মূল অভিযুক্তের ভাগ্নে তার বন্ধুকে UP থেকে ফোন করে ডেকে বলে সে যদি “কামের জ্বালা মেটাতে চায়” তবে যেন যলদি চলে আসে! ৩) FIR করা হয় পুলিশের কাছে এবং জঙ্গলে searchparty বেরোয় মেয়েটিকে খুঁজতে, এই searchparty র নেতৃত্ত্ব দেন সেই পুলিশ অফিসার যিনি নিজে বাচ্চাটিকে রেপ করছেন already!!
৪) প্রতিদিন মন্দির খোলা হত, পূজা আচ্ছা করার পর বাচ্চাটিকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে পালা করে রেপ করা হত।
৫) রেপ রেপ খেলা হয়ে যাবার পর মূল অভিযুক্ত তার ছেলে ও ভাগ্নেকে বলে বডিটা জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে পাথর দিয়ে থেঁতলে মেরে দিতে। ৬) সেইমতো ছেলে জঙ্গলে বাচ্চাটিকে নিয়ে গেলে এক অভিযূক্ত পুলিশ অফিসার গিয়ে আবদার করেন মেরে ফেলার আগে তাকে শেষ বারের মতো রেপ করতে দিতে হবে!
৭) অভিযূক্তের ছেলে অনেক উদারতা দেখিয়ে , মোটে আর একবার রেপ করতে দিয়েই বাচ্চাটিকে গলায় ওড়না পেচিয়ে মারে, মৃত্যু নিশ্চিত করতে পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে দেয়।

প্রথম দিকে আসিফা ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ প্রথমে ১৯ বছরের এক তরুণকে গ্রেপ্তার করে।

পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে ওই তরুণ আসিফাকে এক সপ্তাহ ধরে একটি মন্দিরে আটকে রেখে দলবেঁধে ধর্ষণের পর হত্যা করার কথা জানায়।

তার জবানবন্দির ভিত্তিতে পুলিশ ওই মন্দিরের পরিচালক সাবেক এক সরকারি কর্মকর্তা ও দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে।

ঘটনা তদন্তের পর পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার দিন একদল আইনজীবী তাদের বাধা দিয়েছিলেন বলে জানায় পুলিশ।

অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আসিফা ধর্ষণ ও হত্যার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলেও ওই অভিযোগপত্রে জানানো হয়।

এছাড়া ধর্ষণের আলামত নষ্টে দুই পুলিশ শিশুটির জামা ধুয়ে ফেলে এবং রফা করতে পুলিশকে বড় অংকের ঘুষে প্রস্তাব দেওয়া হয় বলেও ওই অভিযোগপত্রে জানানো হয়।

অভিযুক্তরা হিন্দু হওয়ার তাদের মুক্তির দাবিতে হিন্দু অধিকার রক্ষাকারী কয়েকটি সংগঠন সপ্তাহখানেক আগে বিক্ষোভ শুরু করলে ঘটনাটি আবারো সংবাদের শিরোনাম হয়। এ বিক্ষোভ মিছিলে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি’র দুই মন্ত্রী অংশ নেওয়ায় দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠে।
জাতিসংঘসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা এ ঘটনার নিন্দা জানায়। দেশজুড়ে বিক্ষোভের মুখে বিজেপির ওই দুই মন্ত্রী পদত্যাগ করেন।

জানুয়ারিতে আসিফার মৃতদেহ খুঁজে পাওয়ার পর থেকে আদালতে ঘটনার সঠিক তদন্তের আবেদন জানিয়ে আসছেন এই আইনজীবী।

সোমবার তিনি বলেন, “গতকাল আমাকে হুমকি দিয়ে বলা হয়েছে ‘আমরা তোমাকে ‍কখনো ক্ষমা করব না’। এ হুমকি পাওয়ার পর আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি এবং নিজের জীবনের নিরাপত্তা চাইতে আমি সুপ্রিম কোর্টে যাব।

ওদিকে, আসিফার পরিবারের পক্ষে এই মামলায় আইনজীবী দীপিকা সিং রাওয়াত তাকে জীবননাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে দাবি করে উচ্চ আদালতে মামলার বিচারকাজ অন্য কোথাও স্থানান্তর করার আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন।

“এ মামলার বিচারকাজ চলার মত পরিস্থিতি কাঠুয়ায় আছে বলে আমার মনে হয় না।”

আসিফা ধর্ষণ ও হত্যার বিচারের দাবিতে রাজধানী দিল্লিতে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে, যেখানে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস পার্টির সভাপতি রাহুল গান্ধী, তার মা সোনিয়া গান্ধী এবং বোন প্রিয়াংকা ভদ্র গান্ধী অংশ নেন।

গণরোষ ও নিরাপত্তা আশঙ্কায় সোমবার সকালে আসিফার বাবা সুপ্রিম কোর্টের কাছে এই মামলার বিচারকাজ চন্ডিগড় আদালতে স্থানান্তর করার আবেদন করেছেন বলে জানায় এনডিটিভি। (source INDIANEXPRESS)

 

গরমে শিশুর যত্ন

ফাতেমা শাহরিন


বৈশাখ নিয়ে আসে ঝড়, রোদ, গরম, এবং ধূলার আয়োজন। তীব্র গরমে অতিষ্ট থাকে শিশুসহ সবাই। কখনোও কখনোও হালকা বৃষ্টি নামে। তবে অধিকাংশ সময় দেখা যায় কোন বাতাসের নাম গন্ধও নেই। সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায় পরিবারের ছোট্ট সোনা মনি শিশুরা। শিশুদের ঠাণ্ডা লেগে যায় গরমের ঘামে। শরীরে অনেক সময় র্যা শ বের হয়, ঘামাচি হয়। এই গরমে সব শিশুদের সুস্থ রাখতে প্রয়োজন বাড়তি যত্নের। প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য:

পরিষ্কার-পরিচ্ছনতা
অতিরিক্ত ধূলার ঝড় আর গরমে শিশুরা অতিষ্ট থাকে এ সময় শিশুকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত সাবান দিয়ে গোসল করানো দরকার। ফলে সোনামণিদের হঠাৎ ঠান্ডা লাগবে না।

পাউডার ব্যবহার
গোসলের পর শিশুর শরীর ভালো করে মুছে পাউডার দিন। এতে করে শিশু ঘামাচির উপদ্রব থেকে মুক্তি পাবে। খেয়াল রাখতে হবে পাউডার বাংলাদেশি আবহাওয়া সাথে এবং শিশুর ত্বকের সাথে খাপ খায়।

খাবার নির্বাচন
গরমে আপনার শিশুর খাবার নির্বাচনে সচেতন হতে হবে। শিশুকে পুষ্টিকর এবং শরীরকে ঠাণ্ডা রাখে এমন খাবার দিতে হবে। অন্যান্য খাবারের সঙ্গে এই গরমে শিশুকে প্রচুর পরিমাণে পানি ও ফলের জুস খাওয়ান।

স্যালাইন রাখুন
দুঃসহ গরমে শিশুর দুর্বলতা কাটাতে মাঝে মাঝে খাওয়ার স্যালাইন খেতে দিন।

পোশাক নির্বাচন
সুঁতি পাতলা কাপড়ের নরম পোশাক পরিধান করতে দিন। যাতে করে গরমের আদ্রতা থেকে অনেকটা উপশম হয়।

ধূলাবালি থেকে সাবধান
বাইরের গরমে শিশুকে যতোটা সম্ভব কম বের করুন। আপনার শিশুকে যতটা সম্ভব ধূলাবালি থেকে দূরে রাখুন।

ঘামে যত্ন
আপনার শিশু ঘেমে গেলে তার ঘাম মুছে দিতে হবে। শরীরে ঘাম শুকিয়ে গেলে শিশুর ঠাণ্ডা লেগে জ্বর হতে পারে। অনেক সময় এই জ্বর অল্পদিনে এমনিতেই সেরে যায় কিন্তু বেশি দিন গড়ালে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো ব্যবস্থা নিন। তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।

বিষয়: শিশুর যত্ন।

 

ইলিশের মজাদার দুটি রেসিপি

ভাপানো ইলিশ

নববর্ষ চলে গেলেও ইলিশ এখন রয়েছে আমাদের মাঝে। ইলিশের নামটা শুনলেই যেন জিভে জল আসে। আজ সুস্বাদু ‘ভাপানো ইলিশ’ রেসিপিটা আসুন দেখি। রেসিপিটা-

উপকরণ
১.ইলিশ মাছ আস্ত বা ৮ টুকরা করা। ২.ফেটানো টক দই ১ কাপ।
৩.পেঁয়াজ বেরেস্তা আধা কাপ।
৪.লবণ স্বাদ মতো।
৫.হলুদগুঁড়া ১ চা-চামচ।
৬.সরিষা (হলুদ ও লাল) বাটা আধা কাপ ( দুটি কাঁচামরিচ মিশিয়ে বেটে নিন)। ৭.কাঁচামরিচ ৫টি।
৮.সরিষা ও সয়াবিন তেল ১/৪ কাপ করে।
৯.পোস্তদানা ১ টেবিল-চামচ।

পদ্ধতি

মাছ ধুয়ে নিন। পছন্দ মতো ওভেন প্রুফ পাত্র নিন। তারপর মাছের টুকরো বা আস্ত তেল ব্রাশ করে বিছিয়ে দিন।
এরপরর টক দই, বেরেস্তা, কাঁচামরিচ, পোস্তদানা ব্লেন্ড করে এর সঙ্গে তেল, সরিষা-বাটা, হলুদ-গুঁড়া, লবণ ও ১ কাপ পানি মিশিয়ে মাছের উপর ঢেলে দিন (মাছ যেহেতু উল্টানো যাবে না তাই সাবধানে দিবেন)।

মসলা মাছে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে খেয়াল করে। ঢাকনা দিয়ে ঢেকে ২০ মিনিট তাপমাত্রায় রান্না করুন। ২০ মিনিট পর ঢাকনা খুলে আরও ২০ মিনিট রান্না করুন। মোট ৪০মিনিট মত সময় লাগতে পারে।

পরিবেশন, সুন্দর ডিসে ভাপানো ইলিশ পরিবেশন করুন।

ইলিশ পোলাও

আজকের আয়োজন যেহেতু জাতীয় মাছ ইলিশ নিয়ে সুতরাং এবার রেসিপিতে রয়েছে ‘ইলিশ পোলাও’।

উপকরণ
১.পোলাও এর চাল ৫০০ গ্রাম,
২.ইলিশ মাছ ৬ টুকরো,
আদা বাটা ১ চা চামচ,
৩.রসুন বাটা ১/২ চা চামচ,
৪.টকদই ১ কাপ,
৫.লবণ স্বাদমত,
৬.দারচিনি ২ টুকরা, এলাচ ৪টি, পেঁয়াজ বাটা ৩/৪ কাপ,
৭.পেঁয়াজ স্লাইস আধা কাপ, পানি ৪ কাপ, কাঁচামরিচ আন্দাজ মত, চিনি ১ চা চামচ, তেল আধা কাপ।

পদ্ধতি

বড় ইলিশ মাছের আঁশ ছাড়িয়ে ধুয়ে নিন। মাছ টুকরো করে নেই। টুকরোগুলোতে আদা, রসুন, লবণ ও দই মেখে ১৫ মিনিট মেরিনেট করে রাখুন। পাত্রে তেল গরম করে দারচিনি, এলাচ দিয়ে নেড়ে বাটা পেঁয়াজ দিয়ে মসলা কষান। মসলা ভালো করে কষানো হলে মাছ দিয়ে কম আঁচে ২০ মিনিট ঢেকে রান্না করুন। মাঝে চিনি ও ৪টি কাঁচামরিচ দিয়ে একবার মাছ উল্টে দিন। পানি শুকিয়ে তেল ওপর উঠলে নামিয়ে নিন। মাছ মশলা থেকে তুলে নিন। পেঁয়াজ সোনালি করে ভেজে বেরেস্তা করে নিন। বেরেস্তা তুলে নিয়ে চাল দিয়ে নাড়ুন। মাছের মশলা দিয়ে চাল ভেজে পানি ও স্বাদমতো লবণ দিয়ে ঢাকুন। পানি শুকিয়ে এলে মৃদু আঁচে ১৫ মিনিট রাখুন। চুলা থেকে নামান। একটি বড় পাত্রে পোলাও এর ওপর মাছ বিছিয়ে বাকি পোলাও দিয়ে মাছ ১০ মিনিট ঢেকে রাখুন।

পরিবেশন, ইলিশ পোলাও নিয়ে পেঁয়াজ বেরেস্তা দিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।

 

‘স্কুল অফ হিউমিনিটির’ পক্ষ থেকে পহেলা বৈশাখ উদযাপন

অপরাজিতা ডেক্স


গত শনিবার, পয়লা বৈশাখ বা পহেলা বৈশাখ (বাংলা প্রথম মাস বৈশাখ- ১) বাংলা সনের প্রথম দিন, তথা ১৪২৫ বাংলা নববর্ষ। বাংলাদেশীদের জন্য এক অমলিন আনন্দের একটি দিন।

এই উপলক্ষ্যে ঢাকাসহ সারাদেশ নানান আয়োজনে ব্যস্ত ছিল। পহেলা বৈশাখকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য এ উপলক্ষ্যে কিছু সাহসী, প্রাণবন্ত শিক্ষার্থীর দল, ভিন্ন এক আয়োজনের ব্যবস্থা করেন। এ সময় তারা অনেকগুলো সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে ভিন্নধর্মী আয়োজনের পদক্ষেপ নেন।

সেই আয়োজনে অসহায়, সুবিধাবঞ্চিত, পথশিশুদের গান, নাচ এবং কবিতা আবৃতি পুরো পরিবেশটিকে সুন্দর, মনোরম এবং প্রাণবন্ত করে তুলেছিল। পরবর্তীতে অসহায়, সুবিধাবঞ্চিত, পথশিশুদের সাথে সকলের খাবার খাওয়ানো একটি আয়োজনও ছিল। শিশুদেরকে আনন্দ দিতে তাদের সাথে সেলফি তোলেন অনেক শিক্ষার্থীবৃন্দ।

সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা এই আয়োজনে অনেক মজা করেন এবং দিনটি তাদের জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে তারা জানায়।

এ অনুষ্ঠানে স্কুল অফ হিউম্যানিটির সদস্যরা শিশুদেরকে বিভিন্ন সচেতনমুলক উপদেশ দেন। এর মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত এবং সুবিধাপ্রাপ্ত শিশুদের মধ্যে একটি ‘সচেতনমুলক’, সেতুবন্ধন তৈরি হয়েছিল বলে, উপস্থিত সকলেই তা মনে করেন। এমন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সকল শিক্ষার্থী সমাজে উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে বলেই ,সকল সদস্য শিক্ষার্থীবৃন্দের বিশ্বাস।

সকল প্রকার উৎসব উপভোগ করার অধিকার রয়েছে সকলের।

সুতরাং এই অনুষ্ঠানগুলো কখনো কখনো সম্পূর্ণ নিজেদের খরচে করতে হয় তাদের।সুতরাং সহৃদয়বান ব্যক্তিরা এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে পারেন বলে স্কুল অফ হিউমিনিটির সদস্যরা আশা করেন।পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে উপস্থিত ছিলেন, স্কুল অফ হিউমিনিটির অধিকাংশ সদস্যবৃন্দ।

অপরাজিতার পক্ষ থেকে স্কুল অফ হিউমিনিটির সকল সদস্যবৃন্দ এবং সকল অসহায়, সুবিধাবঞ্চিত, পথশিশুদের নববর্ষের শুভেচ্ছা ‘শুভ নববর্ষ ১৪২৫’।

 

‘বাংলা নববর্ষ পালনের’ পরবর্তী ভাবনা


কানিজ ফাতিমা


নববর্ষ নিয়ে স্ট্যাটাস গুলো পড়ছিলাম – আবার একই চিত্র। Extremism, একপক্ষ “হারাম ” হারাম ” বলছে আর আরেক পক্ষ “ফরজ ” “ফরজ” (এটা ছাড়া বাঙ্গালীয়ানা হতেই পারেনা) বলছে। ব্রিটিশদের সেই বিভক্তি নীতির কতটা শিকার একটা জাতি হতে পারে তা প্রতিটা ঘটনা এমনকি উৎসব আয়োজনেও আমরা দেখিয়ে দেই। কোনো কিছুই আমাদের একত্র করেনা, সব কিছুতেই আমরা বিভক্ত হই।

আচ্ছা নববর্ষ একটা বর্ষবরণ – এটা হারাম কিভাবে হয় ? কোন কিয়াসের ভিত্তিতে? বলবেন যেভাবে উদযাপন করা হচ্ছে তার ভিত্তিতে।

তাহলে প্রশ্ন দাড়ায় ঈদে যদি কেউ মদ খায় তবে কি ঈদ হারাম হয়ে যায়? বিয়ের অনুষ্ঠানে যদি ইসলাম অসমর্থিত কিছু করা হয় তবে কি বিয়েটা হারাম হয়ে যায়? ইসলামে হারাম হালালের প্রধান মূলনীতি হলো যাকে হারাম করা হয়েছে তা ব্যতীত সব হালাল (হালাল হারামের বিধান, ইউসুফ আল কারজাভী)। এটা সুস্পষ্ট যে নববর্ষ উদযাপন ইসলামে হারাম নয়।

এবার চিন্তা করা যাক এটা উদযাপনের উপায় নিয়ে –

কেউ হালাল কাজ করে নববর্ষ উদযাপন করলে এটা হালাল আর কেউ হারাম কিছু করলে সেটা অন্যান্য দিনে যেমন হারাম এই দিনেও তেমনি হারাম।

নববর্ষ উদযাপনের নামে হারামটা হালাল হয়ে যাবে না। যেমন, ইসলামে অশালীনতা হারাম; কাজেই কেউ অশালীন ভাবে নববর্ষ উদযাপন করলে সেই অশালীনতাটা অবশ্যই হারাম। আবার শিরক করা কবীরা গুনাহ। কাজেই কেউ পেঁচাকে লক্ষ্মীর বাহন হিসাবে কল্যাণের মাধ্যম মনে করলে – তা কবীরা গুনাহ। নববর্ষের বা সংস্কৃতির নামে তা হালাল হয়ে যাবে না।

“নববর্ষ উদযাপন হারাম” বা “নববর্ষ উদযাপনের জন্য সব হালাল”- এ দুটাই প্রান্তিকতা। কাজেই প্রান্তিকতা থেকে সরে আসুন।

এবার প্রশ্ন হলো কিভাবে উদযাপন করবেন ?

যারা ইসলামের অনুশাসন পালন করতে ভালবাসেন তাদের দায়িত্ব হলো শালীনতার ও ইসলামের আওতায় কিভাবে এটা করা যায় তার ব্যাপক প্রচার ও প্রসার করা। আমি আমাদের স্কুলে (কানাডিয়ান) বাচ্চদের জন্য বাংলাদেশ সম্পর্কে presentation করেছি , আমাদের নিজেদের কাপড় চোপড় নিয়ে, ভাত-ডাল দিয়ে। এমন হাজারো হালাল ও শিক্ষনীয় উপায়ে পালন করা যায় নববর্ষ।

১.মেকি মূর্তি নিয়ে যাত্রা হতে পারলে, বাংলাদেশী পিঠা পায়েশ নিয়ে মেলা হতে পারবে না কেন?
২.নানী-দাদীদের ঘোমটা পরা ছবির প্রদর্শনী হতে পারবে না কেন ?
৩.গরীব চাষীদের জীবনী নিয়ে শর্ট ফিল্ম প্রদর্শনী হতে পারবে না কেন ?
৪.রমজান মাসে গ্রামের সেই উৎসব মুখর চাঁদ দেখা , ইফতার , সর্গাই (সেহেরী) এগলোর প্রচার করা যাবে না কেন?
৫.ভাটিয়ালী গান, আব্দুল আলীমের গান , পুথিপাঠ নিয়ে শালীন বটতলা করা যাবে না কেন ?

হারাম – হারাম করে দুরে ঠেললে এর সুযোগে যারা অন্য সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করছে তাদের রাস্তাই শুধু নির্বিঘ্ন করা হবে। টেলিভিশন হারাম বলে যেমন টেলিভিশন বন্ধ করা যায়নি, তেমনি নববর্ষ হারাম বলে এটাও বন্ধ করা যাবে না।

টেলিভিশনকে কিভাবে হালাল উপায়ে ব্যবহার করা যায় প্রথম থেকেই মুসলমানদের সেটা ভাবা উচিত ছিল। অনেক দেরীতে হলেও আমরা সেটা ভাবতে শিখেছি। আশা করি নববর্ষ নিয়েও আমরা সেই বিচক্ষনতার পরিচয় দেব ভবিষ্যতে। সবাইকে পুনরায় নববর্ষের শুভেচ্ছা।

 

আমার অনুধাবন

ডা. মারুফ রায়হান খান


কথাটা রূঢ় সত্যি। তোমার মেনে নিতে কষ্ট হবে। তবে যতো আগে তুমি বুঝবে এবং মেনে নিতে পারবে ততোই তোমার জন্যে ভালো। দেখো, তুমি যে নেইম-ফেইমের জন্যে ছুটছো, খ্যাতির মোহে কখনও নিজের ব্যক্তিত্ব কখনও সততার সাথে আপোষ করছো সেটা ঠিক কাজ না। কোনো মানুষ অপরিহার্য না।

এই যে আজ তোমাকে ছাড়া যেন কিছুই চলছে না, সব জায়গায় তোমাকে খোঁজাখুঁজি, তোমার স্তুতি করার লোকের অভাব নেই–সেই তারা কিন্তু তোমার প্রস্থানে তোমাকে আর মনেও করবে না। সর্বোচ্চ দুএকবার আফসোস করতে পারে কিন্তু তাদের কাজ কিন্তু চলেই যাবে। তোমার যদি কিছু অবদান থেকেও থাকে সময় নামক নিষ্ঠুর পাহাড়ের নিচে কিন্তু চাপা পড়ে যাবে।

তোমার মতো প্রতিভাধর কিংবা পরিশ্রমী কিংবা ডেডিকেটেড লোকের কিন্তু অভাব নেই পৃথিবীতে। তোমার সাম্রাজ্য ভেঙে পড়া কেবল সময়ের ব্যাপার। প্রকৃতি তো শূন্যস্থান পছন্দ করে না। আমার পরামর্শ হলো তুমি খ্যাতির পেছনে ছুটো না অযথা, তুমি নাম-ডাক পেতে হন্যে হয়ো না, তুমি তোমার প্রভাব-প্রতিপত্তি দেখানোর জন্যে ব্যস্ত হয়ো না তো, সবাই তোমাকে সম্মান করবে সমীহ করবে এমন ভাবনাটা সুস্থ চিন্তার বহিঃপ্রকাশ না।

সেলেব্রিটিকে কি মানুষ আসলেই ভালোবাসে? বরঞ্চ তাদের প্রতি জেলাস হবার লোকের অভাব নেই, তাদের পতনে বিকটানন্দ পাবার জন্যে বহু লোক অপেক্ষায় থাকে। তুমি ভালোবাসা পেতে চাইলে সাধারণ কেউ একজন হও, মাটির মানুষ হও, নিরহঙ্কার হও, বোকা বোকা মানুষ হও। তোমার মনের মধ্যে যদি আমাকে দেখে দাঁড়ালো না কেন, আসন ছেড়ে দিলো না কেন, আগে সালাম দিলো না কেন জাতীয় ভাবনা থাকে তবে তুমি সংশোধিত হও। তোমার মাঝে অহঙ্কার আছে, নিজেকে বড় ভাবার প্রবণতা আছে।

হুমায়ূন আহমেদকে ছাড়াও কী অবলীলায় বইমেলা হচ্ছে, এম আর খান স্যারকে ছাড়াও কী অনায়াসে শিশু-চিকিৎসা চলছে…এক এক করে সব বিখ্যাত ও জনপ্রিয় মানুষের কথা চিন্তা করে দেখো…পৃথিবী আপন গতিতে চলছে, কেউ কারও জন্যে থেমে নেই…তাদের তুলনায় তুমি আর কী?

বিষয়: মনের জানালা

 

আত্মোপলব্ধিঃ ‘প্রসঙ্গ পহেলা বৈশাখ’

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ


বিগত কয়েক বছর ধরে আমাদের অনেক আলেমদের মধ্যে বোধদয় হয়েছে যে পহেলা বৈশাখের নিম্নোক্ত বিষয়গুলো ইসলামের মৌলিক বিষয়াবলীর স্পষ্ট সাংঘর্ষিক, যা ইসলামে কোনভাবে অনুমোদিত নয়।

ক. মঙ্গল শোভাযাত্রা
খ. রমনা বটমূলে বৈশাখীবরণ যেখানে সূর্য ওঠার জন্য অপেক্ষা করা হয়
গ. শরীরে উল্কি আঁকা
ঘ. অবাধ মেলামেশা করা
ঙ. লাল-সাদা পোষাক পরিধান
চ. অতিরিক্ত মাত্রায় অপচয়
ছ. গরীবের সাথে উপহাস করা।

উপরোক্ত বিষয়গুলোর ইসলামের ব্যাখ্যা সামাজিক মাধ্যমে আমরা জেনে গেছি। আজকের আলোচনার বিষয় সেটা নয় বরং এ সংক্রান্ত বিষয়ে আলেমদের ভূমিকা নিয়ে।

আলেম সমাজের অবস্থা হল চোর-মালিকের গল্পের মত। মালিক ভাবে দেখি চোর-বেটা কী করে, ভাবতে ভাবতে চোর সব নিয়ে যায়। তেমনি আলেমরা যখন চৈতন্য ফিরে পান, তখন সব হালাল হয়ে যায়। নিজেদের সমগোত্রীয়দেরকে কাফের, ইহুদীদের দালাল, ফাসেক ইত্যাদি ফতোয়া নিয়ে ব্যস্ত। একজন আর একজনের চোর, মূর্খ, গোবর-গণেশ, ইসলামের দুশমন ইত্যাদি অবিধায় উপস্থাপন করতে থাকে। এর মাঝে যে নিজেদের প্রকৃত শত্রুরা ধাঁই ধাঁই করে নিজেদের এজেন্ডা নিয়ে সম্মুখপানে এগিয়ে যায়, সেই হুঁশ নেই।

ভারতীয় উপমহাদেশ যেমন বীর পুরুষদের জন্মস্থল তেমনি গাদ্দারও কম জন্ম দেয়নি এই ভূমি।

আবুল ফজলের মত দরবারী চাটুকার আলেম যেমন ছিল এ মাটিতে, তেমনি মুজাদ্দিদে আলফেসানীর মত ক্ষণজন্মা পুরুষও এই মাটি জন্ম দিয়েছে। রাজন্যবর্গের অনুকম্পা লাভের জন্য পদলেহী আলেম যেমন ছিল ভরি ভরি, আবার রাজন্যবর্গের রক্ত-চক্ষু উপেক্ষা করে জেলের জিনজিরও স্বহাস্য বদনে অনেকে গলায় পরে নিয়েছেন, কিন্তু ইসলামের কোন বিষয়ে আপোষ করেননি।

এ উপমহাদেশের আলেমরা ফতোয়াবাজীতে যথেষ্ট এগিয়ে আছেন। মুখে আসলে যেমন যে কাউকে কাফের বলতে কার্পণ্য করেননা আবার হালুয়া-রুটি পাওয়ার জন্য শাসকের শরীয়া পরিপন্থী কাজকে জায়েজ করতে বিন্দুমাত্র সময়ও নেন না।

আচ্ছা, সমাজে প্রচলিত একটা বিষয়কে আপনি হারাম ঘোষণা করলেন। খুব ভাল কথা। কিন্তু সেই হারামে নিবিষ্ট মানুষকে হারাম থেকে ফিরিয়ে আনার আপনার বিকল্প কোন প্রচেষ্টা আছে কী?

মানুষের মুখ থেকে খাবার কেড়ে নিবেন ভাল কথা, কিন্তু তার বিকল্প তাকে কিছু না দিলে তো সে আপনার ইহকালীন জীবন সাঙ্গ করে দিবে। সে ভাবনা কি আছে আপনাদের? আপনি লাই দিয়ে তাকে যে নিয়ন্ত্রণহীন করেছেন সে উপলব্ধি কি আপনার হয়? সাগরের পানি অনেক গড়িয়ে গেছে। অনেক কিছু আপনাদের নিয়ন্ত্রণে আর নেই।

আলেম তথা সমাজসংস্কারকদের হতে হবে প্রবাহমান নদীর মত যেখানে যেকোন অপবিত্র ও দুর্গন্ধযুক্ত কিছু পড়লে ধুয়ে-মুছে পরিস্কার করে দিবে। বেলায় বেলায় দিন গড়িয়েছে অনেক। আর নয় ভেদাভেদ, অযাচিত ফতোয়াবাজী।

আসুন নিজেদের মধ্যে বিদ্যমান ছোট-খাট ভুল-ত্রুটি বিনাশ করে অস্তিত্বের স্বার্থে ইসলামের সঠিক শিক্ষা প্রচার করি।

নিজেদের হারানো শিরদাঁড়া আবার খাড়া করে দাঁড়াই। শত্রু-মিত্র ভেদাভেদ ভুলে দরদী মন নিয়ে এগিয়ে আসি সবাই।

যেকোন বিষয়কে শুধু হারাম ঘোষণা করে খতম নয় বরং বৃহৎ জনগোষ্টীকে সঠিক পথে আনার জন্য বিকল্প চিন্তা করি।

একসময় বাঙালী যে সংস্কৃতিকে ইসলাম বিরোধী বলে দুরে ঠেলে দিয়েছিলেন সেটাকে কিভাবে ইসলামীকরণ করা যায় সেই চিন্তা করি। কিভাবে দলাদলি ভুলে একই সাথে কাজ করা যায়, সেই পথ খুঁজি।

আরো দেরি করেছেন তো ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। কি, আপনারা প্রস্তুত তো?

 

মাতৃকথন-৬

ফারিনা মাহমুদ


ঘুম স্বল্পতা :
সদ্যজাত বাচ্চার পিছনে দিন রাত এক হয়ে যায়। বাচ্চা খাওয়ানো, ঘুম পড়ানো, কাঁথা পাল্টানো, কান্না সামলানো এই লুপের মধ্যে পড়ে যায় মা। আমি নিজেই মাথায় চিরুনি দিয়েছিলাম ১৯ দিন পরে, এমনও দিন গেছে যখন ২৪ ঘন্টায় একবার খাবার সময় পেয়েছিলাম! ভোজবাজীর মতো পাল্টে যাওয়া এই নিদ্রাহীন কান্ত জীবন ভীষণ প্রভাব ফেলে বাবা মায়ের উপরে, প্রভাব ফেলে সম্পর্কের উপরেও। মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে থাকে। বাবাদের জন্য অফিসে কাজে মন বসানো খুব কষ্টকর হয়ে যেতে পারে।

কি করবেন: ঘুমাবেন। সোজা হিসাব হচ্ছে যখনই একটু সুযোগ পাবেন, ঘুমিয়ে নেবেন। প্রথম ৬ সপ্তাহ বাচ্চার রুটিনের সাথে নিজে মানিয়ে নেয়া ছাড়া গতি নেই। বাচ্চা ঘুমালে এই করবো সেই করবো না করে নিজেও শুয়ে পড়বেন। হালকা তন্দ্রা বা বিশ্রামও আপনাকে অনেক ঝরঝরে করে তুলতে পারে। ২৪ ঘন্টায় কয়েকটা ছোট ন্যাপ নিলেও দেখবেন বাকি সময়টা অনেক ভালো কাটবে।

ক্ল্যাশিং প্যারেন্টিং স্টাইল:
ওই যে শুরুতে বললাম,বাবার বাড়ি থেকে বলেছে তেল ডলতে শ্বশুর বাড়ি বলছে না … এই ধরনের ক্ল্যাশ খুব কমন। এক একজনের বাচ্চা পালার তরিকা ও অভিজ্ঞতা এক এক রকম হয়। সবাই ভাবে সে ঠিক। এতে করে তৈরী হয় একটা সংঘাতময় অবস্থা। এর স্বীকার অধিকাংশ ক্ষেত্রে মা। যেন মা ছাড়া দুনিয়ার সবাই সব জানে!

কি করনীয়: নিজেকে জানতে হবে কি করবো, কেন করবো। কনফিডেন্স রাখতে হবে নিজের উপরে। মানুষের বাচ্চা কোনো নতুন মডেলের গাড়ি না যে ম্যানুয়াল সাথে নিয়ে পৃথিবীতে আসবে। তবে হ্যা, সব গাড়ির কমন মেকানিজম থাকে। সেইটা জেনে রাখলে অন্যের কথা খুব বেশি আমল দেয়ার প্রয়োজন নেই যদি না যুক্তি যুক্ত মনে হয়। সবকিছুতে উদ্বিগ্ন হবেন না। তবে উদ্বিগ্ন কখন হতে হয় সেই বেসিক পয়েন্ট গুলো জানতে হবে।

একান্ত সময় থেকে বঞ্চিত:
বাচ্চা হবার আগে প্রতি সপ্তাহে দুজনে রিক্সার হুড ফেলে ঘুরতে যেতেন? রাত জেগে মুভি দেখতেন? আড্ডা দিতেন বন্ধুদের সাথে? আর এখন? নিজেদের বসে দুটো কথা বলার সময়ও নেই! আর কি কোনদিন জীবন স্বাভাবিক হবে?

কি করনীয়: জীবন স্বাভাবিক হবে আবার, তবে তার জন্য চেষ্টা করতে হবে দুজনকেই। বাচ্চার কাজগুলো দুজন মিলেই করুন। বাবা যখন বাচ্চার কাজ করতে চাচ্ছেন, মা তখন তাকে খবরদারি করা থেকে বিরত থাকুন, তাকে বুঝিয়ে দেখিয়ে দিন কি করলে ভালো হয়। তিনি একবারে না পারলেই গলা চড়াবেন না। আর একেবারে আপনার মতো করেই তাকে পারতে হবে এমন কথা নেই। একটু উনিশ বিশ হলে দুনিয়া উল্টে যায় না। ধৈর্য রাখুন, বাচ্চাকে একটা রুটিনে আনতে পারলে সব ই সম্ভব হবে। নিজেরা নিজেদের জন্য সময় বের করুন। সমঝোতা শক্ত করুন। একে অপরের পাশে থাকুন। একটু একটু করে প্রিয় জিনিসগুলো ফিরিয়ে আনুন।

এই চাল্যেঞ্জ গুলো প্রথম ৬ সপ্তাহ যদি ভালো মতো হ্যান্ডেল করতে পারেন, বিশ্বাস রাখেন,৬ সপ্তাহের পর থেকে পরিস্থিতি অনেক অনেক ভালো হবে!
ফিরে আসবো পরের পর্বে, নবজাতকের যত্ন নিয়ে!

চলবে..

পর্ব ৫

 

বর্ষবরণ ও প্রাসঙ্গিক কথা

মাহফুজুর রহমান আখন্দ


বর্ষবরণ নিয়ে মিডিয়াতে ঝড় চলছে। ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। কেউ এটাকে বাঙালীয়ানার অপরিহার্য অংশ ধরে নিয়ে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন। যেভাবেই হোক পান্তা-ইলিশে শেকড় রক্ষা করতেই হবে। অন্যদিকে কেউ কেউ এটাকে হারাম ঘোষণা দিয়ে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে যোগদানকারী সবাইকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। তাই বিষয়টির ব্যাপারে আমাদের স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার বৈকি। বাংলা বর্ষ কবে থেকে? মোগল সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে বিশিষ্ট জোতির্বিজ্ঞানী ও ইতিহাসচিন্তক ফতেহ উল্লাহ সিরাজী ফসলি সাল হিসেবে বাংলা বছরের সূচনা করেন। শতাব্দ থেকে প্রচলিত মাসগুলো ধার নিয়ে হিজরি সালের সাথে মিল রেখে বছর গণণা শুরু করেন। তখন হিজরি সাল ছিল ৯৬৩। সে মতে যাত্রা শুরু হলেও সৌরমাসের চেয়ে চান্দ্র মাস ১১ দিন কম হওয়ায় বর্তমানে হিজরি সাল ১৪৪০ এবং বাংলা সাল ১৪২৫। যে বিষয়টি খেয়াল করার মতো—

১.বাংলা বছরের সূচনাকারী একজন মুসলিম শাসক। ২. সালের উদ্ভাবনকারী একজন মুসলিম বিজ্ঞানী।
৩. বাংলা সালের সূচনা বছর হিসেবে হিজরি সালকে গ্রহণ।
৪. বাংলা সালকে শুরু করা হয়েছে ফসলি সন হিসেবে মানবতার কল্যাণের জন্য।
৫. বাংলা সনের সর্বশেষ সংস্কার কমিটি করা হয় ১৯৬৬ সালে বাংলা একাডমি কতৃক এবং সে কমিটির আহবায়ক ছিলেন ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। সে কমিটির সুপারিশ মোতাবেক ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ পালিত হয়। তাহলে বর্ষবরণ উৎসবের শেকড় কোন বিশ্বাসের সাথে পোতা আছে?

এখন প্রশ্ন হলো— আমরা যারা বর্ষবরণের নাম পরিবর্তন করে মোঙ্গল শোভাযাত্রা করি সেখানে পেঁচাসহ নানা ধরনের মুখোশ কেন? এ কথা সবার জানা যে, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিষ্ণু দেবতার পত্নী হচ্ছে লক্ষ্মীদেবী। যার পাঁচ কন্যা; পদ্মা, পদ্মালয়া, ইন্দিরা, শোভা, কমলা। লক্ষ্মী দেবীর বাহন হলো পেচা। পেঁচা কেন বর্ষবরণে? সে কি বাংলায় কথা বলে? না পান্তা ইলিশ খায়? পেচার সাথে বাঙালীর কী সম্পর্ক? আসলে সুকৌশলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানকে শিরকের সাথে যুক্ত করা হচ্ছে।

এছাড়াও বর্ষবরণের নামে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা;.চন্দন টিপ এবং উল্কি আঁকাসহ নানাবিধ অনৈসলামিক কাজ যুক্ত করা হচ্ছে। পান্তা-ইলিশ খাওয়ার নামে গরিব জনগোষ্ঠীর সাথে উপহাস করা হয়। বাংলার কোন মানুষ অতীতে পান্তা-ভাতের সাথে ইলিশ খেয়েছে তার কোন নজীর নেই। এ বিষয়গুলোর মাধ্যমে মজার অনুষ্ঠানটি ভিন্নধারায় প্রবাহিত করতে একগ্রুপ মরিয়া হয়ে উঠেছে। একদিকে বিশ্বাসের সংরক্ষণের নামে বর্ষবরণকে হারাম বলা হচ্ছে, অন্যদিকে একশ্রেণি এটাকে শির্কবাদী অনুষ্ঠানে পরিণত করছে। আমরা দুপক্ষকেই সংযত হতে বলবো।

আসুন আরোপিত কোন ধর্মীয় বিষয় নয়; ইরানসহ পৃথিবীর অন্যান্য মুসলিম দেশের মতো সংযত, শালীন এবং ঐতিহ্যের ধারায় জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মিলে শির্কমুক্তভাবে বর্ষবরণ করি।

 

মনের মাঝে স্মৃতি প্রিয়জনের


আফরোজা হাসান


.

.

ছেলে স্কুলে আর ছেলের বাবা কাজে চলে যাবার পর দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টার একান্ত বাস আমার। অবশ্য বই পড়ার তীব্র নেশা থাকার কারণে সময় কাটানো নিয়ে কখনোই তেমন সমস্যায় পরতে হয় না আমাকে। উল্টো বরং সময়কে ধরার জন্য ছুটতে হয়। কিন্তু মাঝে মাঝে দু’একটা দিন এমন আসে যে বই পড়তে ইচ্ছে করে না। সংসারের কাজগুলো পড়ে আছে দেখেও হাত লাগানোর তাগিদা অনুভব করে না মন। বিছানার চাদরে সামান্য ভাঁজ দেখলে বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে ফেলা এই আমিই, পুরো এলোমেলো বিছানার দেখেও নির্বিকার বসে থাকি। সময়টা তখন কেমন যেন থমকে দাঁড়ায়। ঘড়ির দিকে তাকালে মনেহয় সেই কখন দেখেছি দশটা বাজে, এতক্ষণে মাত্র দশ মিনিট পেরিয়েছে……? আমার জীবনে এমন যতগুলো দিন এসেছে, কিছুক্ষণের জন্য হলেও এলোমেলো করে দিয়ে গিয়েছে আমার ছোট্ট ভুবনটাকে। খুব খেয়ালি আমাকে করে দিয়েছে ভীষণ রকম বেখেয়ালি। তাই হিসেব কষতে বসলাম কেন হয় এমন? কেন মন হঠাৎ শরতের আকাশ হয়ে যায়? এই মেঘ তো এই রোদ্দুর……? বাঁধ ভাঙ্গা জোছনা ভরা আকাশে কেন আঘাত হানে কালবৈশাখীর ঝড়……? মন বলল তোমার প্রিয়জনরা যে তোমার থেকে দূরে…..বহুদূরে……….

সবার জীবনেই প্রিয় মানুষেরা সবসময় আলাদা স্থান দখল করে থাকে। জীবনে চলার পথে আমরা যত এগোতে থাকি, বাড়তে থাকে প্রিয় মানুষদের সংখ্যা। মনের পাতায় ছাপ ফেলতে থাকে কারো কথা, কারো লেখা, কারো হাসি, কারো সঙ্গ……! ধীরে ধীরে আপন অস্তিত্বের সাথে একাকার হয়ে যেতে থাকে প্রিয় মানুষগুলো। সময়ের স্রোতে ভেসে কিছু প্রিয় মানুষ দূরে চলে যায়, মনে নোঙ্গর গাড়ে নতুন প্রিয়রা। তাদেরকে সাথে নিয়ে এগিয়ে চলে জীবনের পথ। কিন্তু যারা দূরে চলে যায় নানা কারণে তারা কি সত্যিই হারিয়ে যায় কালের গহ্বরে…? আমার উপলব্ধি বলে নিষ্ঠুর নিয়তি মন থেকে কাউকেই একেবারে মুছে যেতে দেয় না। আর ভুলে যে যাবো তারও উপায় নেই, কারণ তারা যে আমাদের প্রিয়জন। প্রি-য়-জ-ন…..! চাইলেই কি তাদেরকে ভুলে যাওয়া যায়…..? লাইব্রেরীতে গেলে আব্বুর সাথে বইমেলাতে ঘুরে ঘুরে বই কেনার স্মৃতি মনেপরে, ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুম পাড়ানোর সময় মনেপরে আম্মুর কথা, আইসক্রিম মনে করিয়ে দেয় ছোটভাইটার কথা, বেগুনী অর্কিডে বোনের মিষ্টি চেহারাটা দেখতে পাই, শিশুদেরকে যখন দেখি মনের পর্দায় ভেসে ওঠে খেলার সাথীরা। নানু-দাদু-মামা-খালামনি-চাচ্চু-ফুপ্পি…কত প্রিয়জনকে ঘিরে কত শত রঙ-বেরঙের স্মৃতি……

প্রিয়জনরা আনন্দের বারিধারা হয়ে যেমন ঝরে, প্রচণ্ড খরা হয়ে চৌচিরও করে দেয় মনের বনভূমিকে। কিন্তু কেন এমন হয়? কেন প্রিয়জনরা কষ্ট দেয়? যাদের কারণে সুখ-শান্তিকে উপলব্ধি করতে শেখে মন, তারাই আবার দুঃখ-ব্যথাকে বোঝানোর দায়িত্ব পালন করে পারদর্শিতার সাথে। তারপরও তারা যে কতোটা প্রিয় সেটা দূরে না এলে অনুভব করা যায় না সঠিকভাবে। কাছে থাকতে নির্বোধ মন মানতেই চায় না ভালোবাসা দেবার সাথে সাথে কষ্ট দেবার অধিকারও যে প্রিয়জনদের আছে। প্রিয়জনদের কারণেই যেহেতু আমাদের মনে সুখ-শান্তির অনুভূতি আসে, সেহেতু দুঃখ-বেদনা তো তারা দিতেই পারেন কারণে-অকারণে। কিন্তু আমাদের স্বার্থপর মন শুধু ভালোটাই পেতে চায় সবার কাছ থেকে। একবারও ভেবে দেখে না যে আমি কি সর্বক্ষেত্রে সবার সাথে ভালো? আমার দ্বারা কখনোই প্রিয়জনরা কষ্ট-ব্যথা পাননি বা পান না তা কি আমি জোরের সাথে বলতে পারবো………?

মতের অমিল, ঝগড়া-বিবাদ, কথা কাটাকাটি সন্তর্পনে প্রিয়জনদের সাথে সম্পর্কের ভিতকে নড়বড়ে করে দিতে থাকে। ঘুণপোকার মতো ধীরে ধীরে ক্ষয় করতে থাকে ভালোবাসার বন্ধনের খুঁটিকে। আর এই ক্ষয় হতে থাকা খুঁটির উপর ভরসা করেই চলতে থাকে জীবনের পথচলা। অথচ মন একবার যাদেরকে আপন করে নেয় তাদেরকে কখনোই ভুলে থাকা যায় না। ভুলে থাকতে চাইলেও সম্ভব হয় না। তবে জীবনের প্রয়োজনে কখনো কখনো ভুলে থাকতে হয়। স্মৃতিরা ঝাঁকে ঝাঁকে হানা দিয়ে মাঝে মাঝে মনকে ঘিরে ফেললেও, বেশির ভাগ সময়ই আমরা স্মৃতিদের এড়িয়ে চলা রপ্ত করে ফেলি। কারণ স্মৃতির ভাণ্ডারে অসংখ্য মণি-মুক্তা-জহরতের সাথে ধারালো-সূচালো কাঁচের টুকরোও যে আছে। যার সামান্য আঘাত মনকে করে ক্ষত-বিক্ষত…রক্তাক্ত…! আর কেই বা চায় হৃদয় চিড়ে বেদনা কুড়াতে…? তারচেয়ে দূরে সরে থাকা কিংবা ভুলে থাকাটাই উত্তম মনেহয়। কি জানি এটাই হয়তো জীবনের নিয়ম………..।

আমরা সবাই সবসময় আলোকোজ্বল এক জীবন পেতে চাই। কিন্তু এমন জীবন গড়ে তুলতে সম্পর্কের মাঝে প্রয়োজন ভালোবাসা-ত্যাগ আর শ্রদ্ধাবোধের সংমিশ্রণ। কিন্তু সুখের মাঝে যেমন অসুখ থাকে, তেমন ভালোবাসা-ত্যাগ আর শ্রদ্ধাবোধের সংমিশ্রণ থাকার পরও সম্পর্কের মাঝে ঘটে ছন্দপতন। এই ছন্দপতনের দ্বন্দ্বে পড়ে যাতে আমরা বিভ্রান্ত হয়ে না যাই। প্রিয়জনদের প্রতি আমাদের আচরণ যেন অসাবধানী হয়ে না যায়। একে-অন্যেকে যাতে দোষারোপ না করি, ঝাঁপিয়ে যেন না পড়ি কারো উপর জিভের তরবারি নিয়ে। ভুলে যাতে না যাই তারা যে আমাদের প্রি.য়…জন.ন…………।

বিষয়: মনের জানালা

 

জননী

সার্জিল খান


হাশরের ময়দান দেখতে কেমন? এটা কি হাশরের ময়দান? চারপাশটা এমন অদ্ভুত দেখাচ্ছে কেন? কেমন যেন লালচে মাটির দেয়াল, মনে হচ্ছে যেন আগুনের ফুলকি। মাথার উপরে কালো অন্ধকার আকাশ। সেইসাথে বৃষ্টিও হচ্ছে। আশেপাশে অনেক মানুষ আছে মনে হচ্ছে কিন্তু কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। হাশরের ময়দানের সাথে পুল সিরাতের সম্পর্ক আছে। ঐ তো সুতার মতো কি যেন একটা। দূর থেকে কেউ পার হয়ে এদিকটায় আসছে। তারমানে কি শামিয়া পুল সিরাত পার হয়ে এসে পড়েছে কোনমতে, এটাই তাহলে হাশরের ময়দান? চারদিকে কেমন যেন ভয়ংকর অট্টহাসির শব্দ। কে হাসছে হাসিটা? সোহান না? সোহান এভাবে হাসবে কেন? এটাই কি সেই জায়গা, যেখানে বাবা তার সন্তানকে চিনবে না, মা তার সন্তানকে, সন্তান তার বাবা, মা, ভাই, বোন কাউকেই চিনবে না। সবাই সবাইকে নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। তাহলে শামিয়া সোহানকে নিয়ে ভাবছে কেন? আরে ঐ তো একটা বাচ্চা, হামাগুড়ি দিয়ে কাছে এগিয়ে আসছে। যতই এগিয়ে আসছে ততই যেন মনে হচ্ছে বাচ্চাটা বড় হচ্ছে। এই বাচ্চাটার জন্যও তার মায়া হচ্ছে কেন? কে এই বাচ্চা? তাহলে কি এটা হাশরের ময়দান না? নাকি হাশরের ময়দান?

ঘুম ভেঙ্গে গেল। শামিয়া দপদপ করে ঘামছে। প্রেশার বেড়ে গেছে মনে হচ্ছে। সবুজ রঙয়ের ডিম লাইটের আলোয় চারপাশটা দেখে নিলো সে। সোহান এখনো ঘুমোচ্ছে। শামিয়াকেই উঠে পানি খেতে যেতে হবে। বিছানার পাশের টেবিলে পানি রাখা যায় না, ঘুমের ঘোরে হাত লেগে গ্লাস পড়ে ভেঙ্গে যায়।

আলতো করে শামিয়া তার পেটে হাত রাখলো। নিদির এখন সাত মাস চলছে। আর অল্প কদিন। লোকে বলে দশমাস দশদিন নাকি বাচ্চাদের পেটে ধরতে হয়। বড় আপার তো নয়মাসের মাথাতেই হয়ে গেল। শামিয়ার কবে হবে কে জানে?

তেষ্টা খুব পেয়েছে। মনে হচ্ছে যেন পানি না খেতে পারলে কিছুক্ষণের মধ্যেই সে জ্ঞান হারাবে। বিছানা থেকে নামতে গিয়ে হঠাৎই চমকে উঠলো শামিয়া। শক্ত একটা হাত শামিয়ার বাম হাতটা চেপে ধরেছে। ওহ! সোহানেরই হাত। ও কি তাহলে ঘুমোয়নি?

-পানি খাবে?
-হু।
-দাঁড়াও এনে দিচ্ছি।
-না থাক, আমি আনতে পারব।
-যা বলছি তা করতে দাও। তুমি ফুল রেস্টে থাকো।

শামিয়া ডিম লাইটের আবছা আলোয় সোহানের মুখটা দেখে নিলো। কি মায়া মায়া ভাব। মনে হয় যেন ধরে গাল দুটো ছুয়ে দেই। মায়াকাড়া চেহারার লোকেদের দেখলে দ্বিধা কাজ করে। তাদের কথার বিপক্ষে কিছু বলার ক্ষমতা কেন যেন ভেতর থেকে আসে না। মনে হয় মানুষটা কি অভিমান করবে না রাগ করবে?

শামিয়া চুপ করে বিছানায় বসে আছে। সোহান পানি আনতে গেলো। অন্ধকারে লোকটা কি এই বাড়ির সবকিছু চিনে উঠতে পারবে? সোহান মাঝে মাঝে শ্বশুড় বাড়িতে আসে।

ঘন ঘন কোন বাড়িতে ঘুমের ঘোরে চলাফেরা করলে রুম, সুইচ বোর্ড, বাথরুম সম্পর্কে ভালো ধারণা পাওয়া যায় না। শামিয়ার ছোট ভাই সাইফ একবার ভুল করে গ্রামে মামা বাড়িতে বাথরুমের বদলে রান্নাঘরে টয়লেট সেরে ফেলেছিল। নানী সে কি রাগ?

-হ্যাহ, এত্তবড় বুইড়া ছ্যামড়া, এহনো ঘরে মুতে। ছ্যা ছ্যা ছ্যা! যেই পাতে খাইলি, সেই পাতেই হাগলি?
-বড়টা কোথায় করলাম, ছোটটাই তো করলাম, তাও তো ঘুমের ঘোরে।
-নিশা পানি ধরছস হারামজাদা? টাল হস ক্যা রে?

নানী কথা বলতেন সুর করে। শুনলেই কেমন যেন হাসি পেত শামিয়ার। নানীর ঘরে চার মেয়ে সাত ছেলে ছিল। প্রত্যেকেই এখন প্রতিষ্ঠিত, কিন্তু হায়, নানী কারোরই কিছু দেখে যেতে পারেননি। সেই আমলের লোকেরা একসাথে এত সন্তান নিতো কিভাবে শামিয়া ভাবে। নিদিকে পেটে ধরার পর থেকেই শামিয়ার যে দুশ্চিন্তা বেড়েছে, সেই সময়ে নানী-দাদীরা কিভাবে এতজনকে বছরের পর বছর পেটে ধরে রাখার মানসিক শক্তি পেত আল্লাহ জানেন।

‘ধরো’ বলে সোহান গ্লাস এগিয়ে দেয়। শামিয়া বাধ্য মেয়ের মতো গ্লাস বাড়িয়ে পানি খেতে লাগলো। সোহান ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আহা! কি দরকার ছিলো? শামিয়া ভাবে। সোহান সপ্তাহে একদিনই কেবল আসে। গত সপ্তাহে শামিয়া শ্বশুড় বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে এসেছে। বাড়ির প্রথম মেয়ের প্রথম সন্তান নাকি বাবার বাড়িতে থেকেই হওয়া নিয়ম। এসব অদ্ভুত নিয়ম কে বানায় কে জানে? তবে শামিয়ারও শ্বশুড় বাড়িতে থাকতে ভালো লাগে না। কিন্তু কি আর করা, মেয়েদের বিয়ের পর শ্বশুড় বাড়িই তো আসল বাড়ি। গত শুক্রবার বাবার বাড়িতে আসার সময়েও শ্বাশুড়ী মা বলছিলেন,

-যাচ্ছো কেন? এখানে কি আদর যত্ন কম হচ্ছে?
-ছি! আম্মা কি বলেন? হিয়াও তো আসলো, ওরও তো বাচ্চা হবে। বাবার বাড়িতেই মেয়েদের প্রথম বাচ্চা হওয়ার নিয়ম কি না?

শ্বাশুড়ী মা আর কথা বলেননি। মুখ কালো হয়ে গিয়েছিলো। কোন এক অজানা কারণে তার শ্বাশুড়ী মা তাকে সহ্য করতে পারে না। না সোহান, শামিয়া প্রেম করে বিয়ে করেছিলো, না শামিয়া তার সঙ্গে বেয়াদবি করে। কেন এই অপছন্দ শামিয়া জানে না।

শামিয়ার মনে হয় এসব কথা সারাদিনই সে সোহানের সাথে বলে। ইচ্ছা করে সারারাত জেগে কথা বলতে। কিন্তু কেন যেন সোহানের সামনে গেলেই শামিয়া চুপসে যায়। মুখ দিয়ে কোন কথা বের হয় না। তাদের সন্তান এখন তার পেটে, এতবছর সংসার করলো, তারপরেও শামিয়ার তাকে দেখলে কেন যেন সব কথা হারিয়ে যায়।

কেন এমন হয়? প্রচণ্ড ভালোবাসার মাঝে কি কোন দুর্বলতা আছে? যা মানুষকে বোবা করে দেয়?

গল্পঃ জননী
গ্রন্থঃ পাণ্ডুলিপি
প্রকাশকালঃ একুশে বইমেলা ২০১৬
প্রকাশনীঃ বর্ষাদুপুর
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১১২
গল্প সংখ্যাঃ ২৫
লেখকের পরিচয়:লেখক/প্রকাশক/সম্পাদক/সংগঠক।

 

নারীদের উপর নারী নেত্রীর হামলা

নারী সংবাদ


কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রীদের মারধর ও এক ছাত্রীর পায়ের রগ কেটে দেয়ার অ‌ভি‌যোগ উঠে‌ছে কবি সুফিয়া কামাল হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইফফাত জাহান ইশার বিরু‌দ্ধে। এ ঘটনার পরপরই ‌গোটা ক্যাম্পাস উত্তেজনা ছ‌ড়ি‌য়ে প‌ড়ে। মঙ্গলবার দিবাগত রা‌তে ঢাকা বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য়ের (ঢা‌বি) ক‌বি সু‌ফিয়া কামাল হ‌লে এ ঘটনা ঘ‌টে।

আহত মোর‌শেদা আক্তার ‌বিশ্ববিদ্যাল‌য়ের উ‌দ্ভিদ‌ বিজ্ঞান বিভা‌গের ৪র্থ ব‌র্ষের শিক্ষার্থী। এ সময় আরো পাঁচ শিক্ষার্থী‌কে মারধর করা হ‌য়ে‌ছে ব‌লে হল সূ‌ত্রে জানা যায়। মারধ‌রের শিকার হওয়া অন্য ছাত্রীরা হ‌লেন ইসলা‌মিক স্টা‌ডিজ বিভা‌গের শার‌মিন সুলতানা তমা, তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভা‌গের আ‌ফিফা আক্তার রিভু, ভূতত্ত্ব বিভাগের ঋতু ও স্বর্ণা।

হ‌লের আবা‌সিক ছাত্রীরা জানান, সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রলীগ সভাপতি ইফফাত জাহান এশা মোরশেদার পায়ের রগ কেটে দিয়েছেন। তাকে জরুরি চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
এছাড়া ছাত্রীদের পাঠানো ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, হলের সিঁড়ি ও রুমের মেঝেতে রক্তের ফোঁটা জমে আছে।

এ ঘটনায় হলের ছাত্রীরা ক্ষিপ্ত হলে ওই ছাত্রলীগ নেত্রীর রুমের দরজা বন্ধ করে আটক থাকলে তাকে বের করে আনার চেষ্টা করা হয়। ঘটনার সময় হলের আবাসিক শিক্ষক উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলেও প‌রি‌স্থি‌তি ক্রমেই অস্বাভা‌বিক অবস্থা ধারণ ক‌রে।

এদিকে, কোটা সংস্কার আন্দোল‌নকারীদের ওপর ছাত্রলীগ নেত্রীদের হামলা খবর ছ‌ড়িয়ে পড়‌লে বিশ্ববিদ্যাল‌য়ের বি‌ভিন্ন হ‌লের শিক্ষার্থীরাও বি‌ক্ষোভে ফে‌টে প‌ড়ে। প‌রে তারা হল নেতা‌দের প্রতি‌রোধ উপেক্ষা ক‌রে সু‌ফিয়া কামাল হ‌লের সাম‌নে এসে জ‌ড়ো হয়। এ সময় তারা ছাত্রলীগ নেত্রী ইশার কর্মকাণ্ড‌কে ক্রি‌মিনাল অ্যাক্ট আখ্যা দি‌য়ে তা‌কে বিশ্ববিদ্যালয়ে থে‌কে ব‌হিষ্কা‌র এবং ভুক্ত‌ভোগী ছাত্রীর রগকাটার অপরা‌ধে তার শা‌স্তি নি‌শ্চি‌তের দা‌বি জানান।

এরই প্রে‌ক্ষাপটে ইশাকে বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রলীগ বহিষ্কার থে‌কে ব‌হিষ্কান করা হয়।
ইশা‌কে ব‌হিষ্কা‌রের বিষ‌য়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আর তার সাথে যারা জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পরে ছাত্রলীগ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাকে বহিষ্কার করা হয়।
সুত্র: নয়াদিগন্ত, ছবি:ফেসবুুক

 

মাতৃকথন ‘৫’


ফারিনা মাহমুদ


নিছক নিজের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে নিতে লেখা শুরু করেছিলাম মাতৃকথন। খুব অবাক হয়ে খেয়াল করলাম ধীরে ধীরে বেশ অনেকেই আমাকে ইনবক্সে কমেন্টে প্রশ্ন করা শুরু করেছেন বাচ্চার ব্যাপারে। তাঁরা সবাই জানেন আমি ডাক্তার নই, শিশু বিশেষজ্ঞও নই।

তাহলে আমার কাছে কেন? আমার মনে হয়েছে আমার কথাগুলো হয়ত খুব সাধারণ, আটপৌরে বলেই অনেকের সাথে মিলে গেছে। কাছের মানুষ ভেবেই তাঁরা আমার কাছে জানতে চেয়েছেন, চাইছেন। এ এক পরম পাওয়া আমার জন্য। শুরু থেকে ব্যাপারগুলো এলোমেলো ছিলো। এখন ভাবছি একটু গুছিয়ে শুরু করবো। যদি একজনেরও একটু উপকার হয়, আমি ধন্য।

###পৃথিবী বদলে গেছে যা দেখি নতুন লাগে!

দীর্ঘ অপেক্ষার পর কোলে যখন শিশুটা আসে,সে একা আসে না। নতুন মা বাবার জন্য নিয়ে আসে একরাশ আনন্দের বিপরীতে কিছু দুশ্চিন্তা, পোস্ট ন্যাটাল ডিপ্রেশন, নির্ঘুম রাত আর কি করবো কি করবো না এই দ্বিধার দোলাচল। এই নতুন পরিস্থিতিতে কিভাবে খাপ খাওয়াবেন বাবা মা? কিভাবে কি করবেন দিশা পাওয়ার আগেই আরো কিছু সমস্যা হাজির হয়।

মা আর বোনেরা এই করতে বলছেন তো শ্বাশুড়ি ননদ ঠোঁট উল্টে বললেন – যত্ত সব ঢং! এইভাবে বাচ্চা পালে নাকি? স্বামী বেচারা অটো হয়ে যান দু পক্ষের কথা শুনতে শুনতে। ফলাফল – সম্পর্কের অবনতি, রাগারাগি ঝগড়াঝাটি!
ব্যাপারগুলো কেন ঘটে?

ঘটে মূলত আমাদের অজ্ঞতা ও মানসিক প্রস্তুতির অভাবে । বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাবা মায়েরা নতুন বাচ্চা এবং প্রসূতি মায়ের ব্যাপারে খুব বেশি কিছু জানেন না। ভাবেন নানী দাদী তো আছেই! কিন্তু মনে রাখতে হবে, দিন শেষে বাচ্চাটা যেহেতু আমার, তাই আমারই দায়িত্ব বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে নেয়া। আমার মতে বাচ্চার জিনিসপত্র, নাম আর ঘর সাজানো নিয়ে মাথা ঘামানোর পাশাপাশি কিছু দরকারী বিষয় জেনে নেয়া জরুরি। এতে করে সন্তান জন্ম পরবর্তী চ্যালেঞ্জ গুলো মোকাবেলা করা সহজ হয়।

১) মায়ের পোস্ট ন্যাটাল ডিপ্রেশন :
প্রসব পরবর্তী ম্যাসিভ হরমোনাল চেঞ্জের কারণে নিজের ইমোশনের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না।

প্রচন্ড রাগ, জিদ, অকারণে কান্না এই ধরনের কিছু অদ্ভূত উপসর্গ দেখা দেয়। মা নিজেও মোটামুটি তব্দা খেয়ে যায় তার নিজের আচরণে। অসম্ভব অসহায় লাগে নিজেকে। মনে হয় কেউ আমাকে বুঝতে পারছে না।

অদ্ভূত ব্যাপার হচ্ছে, একটা সমময় নিজেকে খুব উপেক্ষিত আর বঞ্চিত মনে হয়। মনে হয় সবাই শুধু বাচ্চা বাচ্চা করে যাচ্ছে কেন, আমি কি একটা মানুষ, না মানুষের ছায়া! বিশেষত গর্ভাবস্থায় সবার আদর যত্ন পেয়ে এসে এই নতুন পরিস্থিতিতে হঠাৎ খুব খটকা লাগে! ক্লান্ত, অবসন্ন আপনার মাথায় আবার সারাক্ষণ সেই বাচ্চাকে নিয়েই টেনশন, বাচ্চাটাকে কারো হাতে দিয়ে শান্তি পাওয়া যায় না। মনে হয় চারপাশের সবাই ভুল, আমি ই শুধু ঠিক।

কি করবেন : এই করনীয় এর তালিকাটা মূলত অন্যদের জন্য,

আরো আলাদা করে বললে বাবা দের জন্য।

সাপোর্টিং পার্সন হিসাবে তাদেরকে যথেষ্ট সংগ্রাম করতে হবে এই পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে, এইটা স্বীকার করে নিয়েই বলছি, আপনাদের দায়িত্ব মা কে সময় দেয়া।

কাজ ভাগ করে নিয়ে বিশ্রামে সহায়তা করা ।

তাকে আঘাত করে বা দোষ দিয়ে কথা না বলা এবং কেউ যাতে বলতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি দেয়া ।

তার রাগ জিদ ধরে আপনিও তার সাথে বাক বিতন্ডায় জড়াবেন না যেনো । তর্ক বাড়ছে বুঝলে ব্রেক নিন ।

কিছুক্ষণ বাইরে থেকে হেঁটে ফিরে আসুন । তাকেও কুল ডাউন টাইম দিন, নিজেও নিন । অবস্থা বেশি খারাপ হলে অবশ্যই চিকিত্সা সেবা নেবেন ।

তবে অবশ্যই আত্মীয়ও স্বজন, শ্বশুর বাড়ি বাপের বাড়ি এক করে বিচার সালিশ বসিয়ে আরো বড় বিপদ ডাকবেন না।

চলবে….

পর্ব-৪

পর্ব-৩

পর্ব-২

পর্ব-১

 

সেলফ হিপনোটিজম


নিভৃত স্বপ্নচারিণী


মুখ আর মুখোশের যে পার্থক্যের কথাটা বলা হয় সেটা মূলত বলা হয় অন্যদের সাথে আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে। কিন্তু মুখ ও মুখোশের এই যে আবডাল এটা কিন্তু ব্যক্তির নিজের সাথেও বিদ্যমান থাকে অনেক ক্ষেত্রেই। যেমন নিজের কোন দোষ কিংবা বদভ্যাস জানা থাকার পরেও জোর করে অজ্ঞাত সেজে থাকা। কিছুতেই নিজের কোন ঘাটতিকে স্বীকার করতে না চাওয়া। নিজের সাথে এই যে আড়াল, এই যে লুকোচুরি এর ফলেও মনের ঘরে বাসা বাঁধে নানান ধরণের মানসিক অস্থিরতা, দোটানা, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, দোদুল্যমনতার।

মুখ আর মুখোশের ব্যবধান ঘুচিয়ে কিভাবে একজন ব্যক্তি সত্যের মুখোমুখি দাঁড়াতে পারে সেই সম্পর্কে জানতে গিয়েই জেনেছিলাম সেলফ হিপনোটিজম পদ্ধতি সম্বন্ধে। বিষণ্ণতার মেঘকে উড়িয়ে মনের বিষাদ কাটিয়ে বিশ্বাসের সূর্য থেকে নিঃসৃত আশার কিরণে কিভাবে নতুন করে সম্মুখে এগিয়ে চলার উৎসাহ পাওয়া যায় সেই ফমূর্লাই হচ্ছে সেলফ হিপনোটিজম।

মূলত আমাদের হতাশা, নিরাশা, দুরাশা, হাল ছেড়ে দেয়া, নিস্তেজ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি নেতিবাচক আচরণ সমূহের আসল কারণ আমরা নিজেদের নিয়ে একদমই ভাবি না।

অথচ নিজেকে নিয়ে চিন্তা করাটা খুব বেশি জরুরী। আত্মবিশ্লেষণ, আত্নপর্যালোচনা, আত্নসমালোচনা ব্যক্তিকে শুধু যে উন্নতির দিকে ধাবিত হতেই সহায়তা করে তাই নয়। ব্যক্তির সামনে উন্মোচন করে তার নিজেকে, তার আপনার আমিকে। আমরা প্রায় সময়ই নিজের কোন কথা-কাজ বা আচরণের পেছনে কোন রিজন বা লজিক খুঁজে পাই নাং। অন্যদের সাথে সাথে নিজেরাও হয়রান, পেরেশান হই নিজের কর্মকান্ডে। এর কারণ নিজের সম্পর্কে অজ্ঞতা।

নিজের চিন্তা ও কর্মের উপর নিয়ন্ত্রণের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন নিজের সম্পর্কে জানা। আবার জানতে হলে নিজেকে বুঝতে হবে এবং বুঝতে হলে নিজেকে নিয়ে ভাবতে হবে। কেননা নিজেকে নিয়ে ভাবলেই নিজের মুখোমুখি হওয়া যায়।
আসলে প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই কিছু ভালো এবং কিছু মন্দ দিক আছে। নিজের উত্তম গুণাবলী সম্পর্কে ভাবনা মানুষকে আনন্দিত করে, উৎসাহিত করে।

অপরদিকে নিজের মধ্যে বিদ্যমান দোষ-ত্রুটি-ব্যর্থতা ইত্যাদি নিয়ে ভাবলে নিজেকে সংশোধন করার ইচ্ছে জাগ্রত হয়। প্রতিটা মানুষের মধ্যেই নিজেকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবার শক্তি আছে।

এক টুকরো আলো আছে মনের কোনে ঘোর আঁধারে পথ প্রদর্শনের জন্য। তেমনি আছে হাল ছেড়ে দিয়ে বসে যাবার মতো দুর্বলতা, আছে আশার টিমটিমে বাতিটাকে পুরোপুরি নিভিয়ে দেবার মতো অন্ধকারাচ্ছন্ন বাতাস।

তাই অবশ্যই জানা থাকা উচিত কোথায় নিজের শক্তি আর কোথায় নিজের দুর্বলতা। নিজের সম্পর্কে যথাযথ ধারণা থাকলে মানুষ থেকে উত্তম মানুষ হবার সফর খুব সহজেই পাড়ি দেয়া সম্ভব হয়। এজন্য দরকার নিজের কাছে নিজের মুখোশ উন্মোচন করে, নিজেই নিজের আয়না হবার।

তবে বিষয়টা খানিকটা কঠিন বৈকি! কেননা আমাদের মনের ভেতরটাকে বলা যায় হাজারো চিন্তা-ভাবনার এক বিশাল কারখানা। যেখানে চেতন, অবচেতন, অচেতন সর্বাবস্থাতেই সর্বক্ষণই উৎপন্ন হতে থাকে নানামুখী চিন্তার স্রোত এবং প্রবাহিত হয় নানান দিকে।

আবেগের মহাবিশৃংখলা, প্রতিকূল অবস্থা-অবস্থান, পরিবেশ-পরিস্থিতি, আত্মনিয়ন্ত্রণের অভাবে চারিত্রিক নানান দূর্বলতা অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় সুন্দর জীবন গড়ার পথে। ইগোর গোলকধাঁধা, স্বার্থপরতার চোরাবালি, প্রতিহিংসার দহন, পরশ্রীকাতরতার গুপ্তঘাতক ইত্যাদি ঘুণপোকার মতে কুড়ে কুড়ে খায় মনের কোমলতা, সরলতা, উচ্ছ্বাস, বিশ্বাস, আশা, ভালোবাসাকে।

মানুষ হয়ে যেতে থাকে সুন্দর আবেগ বিবর্জিত যন্ত্র এবং অসুন্দর আবেগ চালিত অনুভূতিহীন প্রাণী। নিজেই নিজের ধরা ছোঁয়ার বাইরের কেউ। নিজেকে খুঁজে পেতে, ছুঁয়ে দিতে হিপনোটিক সাজেশন পালন করতে পারে সহায়ক ভূমিকা।

 

আমেরিকান ইউনিভার্সিটিতে আল কুরআন পাঠ বাধ্যতামূলক!

জিয়াউল হক


জ্বি পাঠক, আমেরিকার একটা ইউনিভার্সিটিতে কুরআন পড়া ও তার সুক্ষ্ম বিশ্লেষণধর্মী পাঠ বাধ্যতামুলক করা হয়েছে। এবং সেটি হয়েছে মেইনস্ট্রিম মিডিয়া সহ খৃষ্টবাদী সংগঠনের প্রবল বিরোধিতাকে সফলভাবে মোকাবেলা করেই।

আমেরিকার University of North Carolina (UNC) -এ অধ্যয়নরত প্রথম বর্ষের ছাত্রদের জন্য একটি বই বাধ্যতামুলক ভাবে পাঠ্যসুচীতে (গ্রীষ্মকালীন পাঠ্যবিষয় হিসেবে) অন্তর্ভুক্ত করে ২০০২ সালে।

এর প্রতিবাদে কিছু উগ্রপন্থী খৃষ্টবাদী সংগঠন বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রের ভিত্তিক, দু‘জন মার্কিন নাগরিক, যথাক্রমে; James Yocuvelli ও Terry Moffitt এবং সেই সাথে ঐ একই ইউনিভার্সিটির কয়েকজন ছাত্র মিলে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ করে। এদের সাথে অচিরেই স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বও জুটে যায়। তারা স্থানী রাজ্য সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দেন-দরবার চালিয়ে যেতে থাকে। ফলে স্থানীয় এমপিরা ইউনিভার্সিটি কর্তৃক কুরআন শিক্ষা বাধ্যতামূলক এই কোর্সে অর্থায়ন বন্ধ করে দেবার পক্ষে ভোট প্রদান করে এ সিদ্ধান্তটি ইউনিভার্সিটি পরিচালনা পরিষদকে জানিয়ে দেয়।

এর ফলে ইউনিভার্সিটি কর্তৃকপক্ষ তাদের কারিকুলাম ঠিক রেখেই কোর্সে কিছুটা পরিবর্তন আনে। পরিবর্তনটা হলো এই যে, কোনো ছাত্র যদি কুরআন পড়তে না চায় বা ছাত্রের অভিভাবকরা যদি তাদের সন্তানদের তা পড়তে না দিতে চায়, তবে তারা তা করতে পারবে। তবে সে ক্ষেত্রে উক্ত ছাত্রকে তার গ্রীষ্মকালীন কোর্স হিসেবে সে কেন কুরআন পড়তে চায় না, সে বিষয়ের উপরে একটা পেপার জমা দিতে হবে তার ইউনিভার্সিটি বরাবর।

কিন্তু এ সংশোধনিতে কোর্সের বিরোধিতাকারীরা সম্মত হতে পারে নি। তাদের দাবী ছিলো, ইউনিভার্সিটির এ দাবী মেনে নিলেও ছাত্রদের কোনো লাভ হবে না। কারণ, কোনো ছাত্র যদি কোরানের কোর্সটি করতে না চায়, তার পরেও তাকে এই না চাওয়ার পক্ষে সাফাই গেয়ে ইউনিভার্সিটিতে পেপার জমা দিতে গেলে কোরানের বিরোধিতা করে বুদ্ধিবৃত্তিক প্রবন্ধ লিখতে হবে আর সে প্রবন্ধ লিখতে গেলে তাকে কুরআন পড়তেই হচ্ছে!

অতএব তারা ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের এ স্বিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট হতে না পেরে আদালতের শরণাপন্ন হয়। তারা ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কুরআন ও তার ব্যাখা সম্বলিত বইটি পড়ানো সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একটা নিষেধাজ্ঞা জারি করার জন্য আদালতে আবেদন জানান। তবে আদালতের বিচারকরা তাদের এ আবেদনকে নাকচ করে দেন।

যে বইটি নিয়ে এত লংকা কান্ড ঘটে গেলো, সেই বইটির ব্যপারেই এখনও কিছু বলা হয় নি আপনাদের। মার্কিন Michael A Sells গবেষকই নন, তিনি তুলনামুলক ধর্মত্বত্ত বিষয়ে একজন বিদগ্ধ পন্ডিতও বটে। তিনি Haverford University তে Comparative Religion এর একজন Professor, শিক্ষক। ইসলাম, কুরআন ও মুসলমানদের জীবন রাজনীতি ও ইতিহাস নিয়ে ইতোমধ্যেই তিনি বেশ কিছু গ্রন্থ ও প্রবন্ধ লিখেছেন।

অতি সম্প্রতি তিনি আল কুরআনের ৩০তম পারা তথা আমপারার ৩৫টি সুরা বাছাই করে সে সব সুরার শানে নুযুল, আলোচনার বিষয়বস্তু, নাযিল কালীন সময়ের ইতিহাস ঘটনাপ্রবাহ ও প্রাসাঙ্গিকতা ও সুরাসমুহে ব্যবহৃত ভাষা, ছন্দ, কাব্যিক আবেদনসহ এসব সুরার মূল শিক্ষার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে,

‘Approaching The Quran; The Early Years’ শীর্ষক একটা বই লেখেন। বইটি সমাজের বিভিন্ন মহলে অ্যত্যন্ত ব্যপক জনপ্রিয়তার পাশাপাশি বিতর্কেরও জন্ম দেয়। তবে মুসলিম অমুসলিম নির্বিশেষে সচেতন মহলে বইটি ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতাও পায়।

কুরআনের তাফসির সম্বলিত এই বইটিকেই University of North Carolina (UNC) তাদের ছাত্রদের জন্য গ্রীষ্মকালীন কোর্সের মূল পাঠ্যসুচী হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করে। আর এতেই ইসলাম বিদ্বেষী মহলে গাত্রদাহ শুরু হয়। তারা তাদের সর্বশক্তি নিয়ে এর বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করতে এবং ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষকে তাদের স্বিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে বাধ্য করতে উঠে পড়ে লাগে। লেখালের্খি বক্তৃতা-বিবৃতি, নিন্দাবাদ প্রচার-প্রচারণা’সহ মামলা, সব কিছুই ঘটে একের পর এক। ঐ চিহ্নিত ইসলাম বিরোধি মহলের সাহায্যে এগিয়ে আসে বাঘা বাঘা ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াগুলোও।

বিখ্যাত এপি নিউজ মিডিয়া ২০০২ সালের ২রা আগষ্ট বিষয়টি নিয়ে নিউজ কভার করে। এর মাত্র ক‘দিন পরে এসে ৭ই আগষ্ট বিবিসি‘ও সংবাদ প্রচার করে। তারা ইউনিভার্সিটির ভিসি James Moeser এর স্বাক্ষাৎকার প্রচার করে।

এক প্রশ্নের জবাবে ভার্সিটির ভিসি বলেন ‘আমরা কোনো ধর্মকে প্রচার করছি না, বরং আমরা এমন একটা বিষয় পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভুক্ত করেছি যে, এই বিষয়টির চেয়ে ‘সমকালীন’ বলে কোন বিষয় আর নেই।’

আর এর মাত্র একদিন পরে স্থানীয় রেডিও ষ্টেশনে এক উগ্রপন্থী খৃষ্টান পাদ্রী বিষয়টি নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে সরাসরি আল কুরআনকেই আক্রমণ করে অশালীন ও অগ্রহণযোগ্য বক্তব্য দিয়ে বসে। তারই রেশ ধরে ‘ Franklin Graham ’ নামক অন্য এক খৃষ্টান পাদ্রী একইভাবে ইসলাম ও আল কুরআনকে সন্ত্রাসবাদের সমার্থক হিসেবে অভিহিত করে আপত্তিকর বক্তব্য দিতে থাকে। এর ফলে আমেরিকায় মুসলমানদের সবচেয়ে সব সংগঠন ‘Council on American Islamic Relations (CAIR) ’ তাদের এই সব বক্তব্যের বিরোধিতায় এগিয়ে আসে।

সুখের কথা হলো, ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ কোন রকম চাপের কাছেই নতী স্বীকার না করে তাদের স্বিদ্ধান্তে অটল থাকেন। ফলে আশাতীত সংখ্যায় ছাত্র-ছাত্রী তাদের গ্রীষ্মকালীন পাঠ্যবিষয় হিসেব আল কুরআনের ক্রিটিকাল স্টাডিতে অংশ নেয়। এভাবেই খোদ আমেরিকায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আল কুরআন পাঠ্যসূচীতে ঠাঁই করে নেয়।

 

বিশ্ব অটিজম দিবস( ২রা এপ্রিল) নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনা

অপরাজিতা ডেক্স


গত ৫ই এপ্রিল রোজ বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকার উত্তরায় অবস্থিত Crossroads – Restaurant & Lounge -এ এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশে সফলভাবে সমাপ্ত হল বিশ্ব অটিজম দিবস( ২রা এপ্রিল) উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষজ্ঞ মতামত ও উন্মুক্ত আলোচনা।

এতে মুখ্য বিশেষজ্ঞ আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন  ভিজিটিং কনসালটেন্ট, মনোরোগ বিভাগ, আল জউফ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি, সৌদি আরব; সহযোগী অধ্যাপক ও টেলি-সাইকিয়াট্রি কনসালটেন্ট, এশিয়ান ইন্সিটিউট অফ মেডিসিন সায়েন্স টেকনোলজি (AIMST), কেদাহ, মালয়েশিয়া এবং শেখ কামাল সাইকিয়াট্রি হসপিটাল, বাহরাইন এবং ইউনিট প্রধান, সাইকথেরাপী এন্ড কাউন্সিলিং উইং, মনোরোগ বিভাগ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হসপিটাল, ঢাকা এর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডঃ এম এস কবীর জুয়েল।

ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগদান করেছিলেন Consultant Psychiatrist (Geriatric Psychiatry) and Post Graduate College Tutor. The Briary Wing Harrogate District Hospital, Lancaster Park Road, Harrogate, North Yorkshire, United Kingdom. এর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডঃ সুমন আহমেদ। এবং অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত করার জন্য সাথে ছিলেন সমাজের আগ্রহী সচেতন নাগরিকবৃন্দ।

আগ্রহী সচেতন নাগরিকদের নিয়ে শিশু ও কিশোর কিশোরীদের আবেগজাত সমস্যা ও এর প্রতিকার নিয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত ও উম্মুক্ত আলোচনা, যার  আয়োজক ছিল সানোফি এভেন্টিস।

ডা. কবীর জুয়েল তার আলোচনায় এক পর্যায়ে বলেছেন, “অনিয়ন্ত্রিত ভার্চুয়াল জগত কেন্দ্রীক চিন্তা আমাদের তরুন তরুণীদের মাঝে আবেগজাত সমস্যা বাড়াচ্ছে।”

অনুষ্ঠানটি মূলত  অটিজম, শিশু মনোরোগ এবং কিশোর কিশোরী-দের আবেগজাত সমস্যা ও প্রতিকার নিয়ে আয়োজিত হয়েছিল এখানে উপস্থিত নাগরিকবৃন্দ বিভিন্ন মানসিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন করেন, এবং বিশেষজ্ঞগণ তাদের জবাব প্রদান ও আলোচনার মাধ্যমে প্রাণবন্ত পরিবেশে উপস্থিত অতিথিদের কৌতুহল এবং শঙ্কা দূর করেন।

মুলত এই রূপ প্রোগ্রাম সরাসরি কোন মানুষের উপকারে আসবে কিনা বলা কঠিন, কিন্তু যদি একজন মানুষের মাঝেও সচেতনতা তৈরি হয়, তাহলেই সার্থক এই প্রচেষ্টা।

 

“বিউটি খুন” খুনির হাতে তুলে দিয়েছিল স্বয়ং বাবা ছায়েদ!

বহুল আলোচিত হবিগঞ্জের বিউটি আক্তার হত্যা মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে এসে পড়েছে। এ লোমহর্ষক ঘটনার সাথে জড়িত বিউটির বাবা ছায়েদ আলী শনিবার পাঁচ ঘন্টা ধরে অবকাশকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের কাছে বিউটি হত্যার পুরো কাহিনী বর্ণনা করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। এ নিয়ে বিউটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিউটির বাবা ছায়েদ মিয়া, ছায়েদ মিয়ার বন্ধু ও কাজিন ময়না মিয়া আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন।

হত্যাকাণ্ডের পর যার ফাঁসির জন্য দেশ উত্তাল ছিল সেই প্রেমিক বাবুল মিয়া শুধু বিউটি আক্তারের সাথে প্রেমের কথা স্বীকার করেন এবং একসাথে বসবাস ও একসাথে চাকরি করার কথা স্বীকার করে জবানবন্দী দিয়েছেন। যার বসতঘর থেকে বিউটি আক্তারকে নিয়ে আসা হয়েছিল বিউটি আক্তারের সেই নানি ফাতেমা আক্তার ১৬৪(১) ধারায় স্বাক্ষী হিসাবে জবানবন্দী দিয়েছেন আদালতে। একইভাবে স্বাক্ষী হিসাবে জবানবন্দী দিয়েছেন ঘাতক ময়না মিয়ার স্ত্রী আসমা আক্তার। বাড়িতে নেই বিউটি আক্তারের মা হুসনে আরা ও ভাই সাদেক মিয়া। একটি সূত্র জানিয়েছে, তারা বেশ কয়েক দিন যাবত আইন শৃংখলা বাহিনীর হেফাজতে আছেন। তবে এ কথা স্বীকার করেননি মামলার আইও শায়েস্তাগঞ্জ থানার ওসি মানিকুল ইসলাম।

প্রেম থেকে পলায়ন : বাবুল মিয়া ও বিউটি আক্তারের বাড়ি একই গ্রামে শায়েস্তাগঞ্জ থানার ব্রাহ্মনডুরায়। বাবুল মিয়া বিবাহিত হলেও তাদের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। আর্থিকভাবে অনেকটা স্বচ্ছল বাবুল মিয়ার সাথে গত ২১ জানুয়ারি পালিয়ে যান বিউটি আক্তার। বিউটি আক্তার পালিয়ে যাওয়ার পর তাকে ফিরিয়ে আনার তেমন কোনো উদ্যোগও নেননি ছায়েদ মিয়া। সবকিছু ভালোভাবেই চলছিল। বাবুল মিয়ার সাথে পালিয়ে যাওয়ার পর বিউটি আক্তার চাকরি নেন তাদের গ্রামের পাশেই গড়ে উঠা একটি কোম্পানিতে। প্রতিদিন পরিবারের লোকজনের চোখের সামনেই বিউটি আক্তার বাবুল মিয়ার আলাদা বসতঘর থেকে কোম্পানিতে যাওয়া আসা করে। হঠাৎ করেই কোম্পানি থেকে বিউটি আক্তারকে নিয়ে আসেন তার বাবা মা। বিউটি আক্তারের ভাষায় “আমি আসামি বাবুল মিয়ার সাথে পালিয়ে যাওয়ার পর একটি কোম্পানীতে চাকুরী শুরু করি। ঐ কোম্পানী হতে আমার আব্বা আম্মা আমাকে নিয়ে আসে। আমি ঘটনার তারিখ হতে নিজের ইচ্ছায় আসামী বাবুল মিয়ার সাথে ১৮ দিন ছিলাম”। পরে মামলা দায়ের করা হয়।

ইউপি নির্বাচনে বন্ধুর স্ত্রীর পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে নিজ মেয়েকে হত্যা : বিউটি আক্তারের পিতা ছায়েদ মিয়া এবং একই গ্রামের ময়না মিয়া ঘনিষ্ঠ বন্ধু। গত ডিসেম্বর মাসে হবিগঞ্জের ৭৮তম ইউনিয়ন হিসেবে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ব্রাহ্মনডুরা ইউনিয়নে। সেই নির্বাচনে মহিলা মেম্বার প্রার্থী ছিলেন ছায়েদ মিয়ার বন্ধু ময়না মিয়ার স্ত্রী আসমা খাতুন। তিনি নির্বাচনে পরাজিত হন। নির্বাচনে বিজয়ী হন বিউটি আক্তার ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি বাবুল মিয়ার মা কলম চান বিবি। সেই থেকে বিরোধ শুরু।

বিউটি আক্তার বাবুল মিয়ার সাথে পালিয়ে যাওয়ার পর কলম চান বিবির পরিবারকে একটি বড় শিক্ষা দেয়ার জন্য বিভিন্ন ফন্দি আটতে থাকেন ময়না ও ছায়েদ মিয়া। এরই অংশ হিসাবে প্রথমে বাবুল মিয়ার বিরুদ্ধে অপহরণ ও ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন ছায়েদ মিয়া। পরিকল্পিতভাবে সেই মামলার অন্যতম স্বাক্ষী হিসাবে রাখা হয় ময়না মিয়াকে। ১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে দায়েরকৃত অপহরণ ও ধর্ষণ মামলাটি তখনো আদালত থেকে থানায় পৌছেনি। এরই মধ্যে বাবুল মিয়ার বিরুদ্ধে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে ফৌজদারী কার্যবিধির ১০৭ ধারায় জানমালের নিরাপত্তা চেয়ে আরো একটি মামলা দায়ের করেন ছায়েদ মিয়া। এসব মামলা পরিকল্পিত একটি হত্যাকাণ্ড ঘটানোর জন্য ক্ষেত্র তৈরী করাই উদ্দেশ্যে ছিল বলে মনে করছেন অনেকেই। ওই ২টি মামলার গুরুত্ব কমিয়ে দেন বিউটি আক্তার নিজেই। তিনি গত ১২ মার্চ তারিখে ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারায় দেয়া জবানবন্দীতে বাবার আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নিজ ইচ্ছায় তিনি বাবুল মিয়ার সাথে পালিয়ে যান এবং তারা একসাথে বসবাস করেন। বিউটি আক্তারের জবানবন্দী ফলে বাবা ছায়েদ মিয়া ও বাবার বন্ধু ময়না মিয়ার পরিকল্পনা অনেকটা ভণ্ডুল হয়ে যায়। শুরু হয় নতুন কৌশল। এবার বিউটি আক্তারকে খুন করে বাবুল মিয়া ও কলম চান বিবিকে ফাঁসানোর ষঢ়যন্ত্র করেন তারা।

ঘাতকদের হাতে নিজ মেয়েকে তুলে দেয় ছায়েদ মিয়া : বাবুল মিয়া, তার মা কলম চান এবং প্রতিবেশী সাথী আক্তারকে আসামি করে বাবার মামলা দায়ের করার বিষয়টি পছন্দ ছিল না বিউটি আক্তারের। বাবুল মিয়ার সাথে বিউটি আক্তারের গভীর প্রেমের কারণে বাবা-মার সাথে বিউটি আক্তারের প্রায়ই বচসা হতো বলে জানা গেছে। আবারো বাবুল মিয়ার সাথে বিউটি আক্তার চলে যেতে পারে এমন আশঙ্কা থেকেই লাখাই উপজেলার গুণই গ্রামে বিউটি আক্তারের নানার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

অবশেষে সেখান থেকে বিউটি আক্তারকে নিজ বাড়িতে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়ে আসেন ছায়েদ মিয়া।

বিউটির নানী ফাতেমা আক্তারও স্বীকার করেছেন, তার বাড়ি থেকে ছায়েদ আলীই বিউটিকে নিয়ে আসেন। পথিমধ্যেই অপেক্ষা করছিল ঘাতকরা। ঘাতক ছায়েদ আলীরই বন্ধু ময়না মিয়া। ময়না মিয়াদের হাতে মেয়েকে তুলে দিয়ে চলে আসেন ছায়েদ মিয়া। পরের ঘটনা সবুজ শ্যামল ঘাসের উপর বিউটি আক্তারের ক্ষতবিক্ষত লাশ। স্বাধীনতা মাসের ১৭ মার্চ তারিখের সেই লাশের ছবি দেখে হতবাক দেশ। লাল রংয়ের জামা কাপড় পরা বিউটির লাশটি ছিল সবুজের মধ্যে লাল বৃত্তের মতো। বিষয়টি প্রথমে একটি সাধারণ হত্যাকাণ্ড হিসাবেই দেখা হয়েছিল। মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হয় দেশে বিদেশে।

ঢাকায় সাংস্কৃতিক কর্মীরাও মানববন্ধন করেন বিউটি আক্তার হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি বাবুল মিয়ার ফাঁসির দাবিতে। প্রতিদিন টিভি মিডিয়ায় স্বাক্ষাতকার দিতে থাকেন ছায়েদ মিয়া, তার স্ত্রী হুসনে আরা এবং ছায়েদ মিয়ার বন্ধু ময়না মিয়া। তুমুল প্রতিবাদের মুখে সিলেটের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে গ্রেফতার করা হয় বাবুল মিয়াকে। সে বিউটির সাথে প্রেমের কথা স্বীকার করলেও হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারেনি। তবে কিছু আলামত দেন আইন শৃংখলা বাহিনীকে, যাতে খুব সহজে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে পারে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের ২০ দিনের মাথায় প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে বিউটি আক্তার হত্যাকাণ্ডের সাথে জন্মদাতা পিতা মাতা ও তাদের বন্ধুরা জড়িত।

কার কাছে কে নিরাপদ :

২০০৩ সালের ঘটনা। হবিগঞ্জের রেললাইনে পাওয়া যায় অষ্টাদশী এক কিশোরীর ক্ষতবিক্ষত লাশ। সেই লাশ ছিল সদর উপজেলার গোপায়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ইছাক মিয়ার কন্যার। তখনো ঝড় উঠেছিল সর্বত্র। কয়েক দিনের মাথায় প্রমাণিত হয় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজের মেয়েকে খুন করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান ইছাক মিয়া নিজেই। সেই মেয়ে খুনের মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় ইছাক চেয়ারম্যানের। জামিনে মুক্তি পাওয়ার কিছু দিনের মাথায় ইছাক মিয়া খুন হন বাড়ির সীম সীমানা-সংক্রান্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের আঘাতে।

রংপুরের এডভোকেট রথীশ চন্দ্র ভৌমিক। নিখোঁজ হওয়ার পর সেই ধরপাকড়। অবশেষে প্রমাণিত হয়েছে স্ত্রীর কাছেই প্রাণ দিতে হয়েছে স্বামী রথীশ ভৌমিককে।

হবিগঞ্জের আলোচিত বিউটি হত্যা। হত্যাকাণ্ডের ২০ দিনের মধ্যে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে বিউটি হত্যাকাণ্ডের সাথে বাবা নিজেই জড়িত। এসব ঘটনার পর সর্বত্র একই প্রশ্ন আসলে কার কাছে কে নিরাপদ? সুত্র:নয়াদিগন্ত

 

নাইওর

মুক্তারা বেগম নদী


অদ্ভুত বিষণ্ন এক বিকেল, যেন এক একটা কালো চাদরে নিজেকে জড়িয়ে আছে পুরো পৃথিবীটা। বেশ মেঘ করেছে আকাশে, গুমোট বৃষ্টি হবে, যেন এক অভিমানী কিশোরী গাল ফুলিয়ে আছে।

ইশা জানালার দিকে তাকিয়ে অনেক দূরে কোথাও কিছু দেখার চেষ্টা করে কিন্তু কি দেখছে কিংবা দেখতে চায় নিজেও জানে না। জীবনের এই প্রান্তে এসে হালখাতার দিকে তাকিয়ে খরচের তালিকাটা অনেক লম্বা, অনেক। জমার খাতা শূন্য। স্বপ্নগুলো বন্দি নিয়তির কাছে আর ইচ্ছেগুলো পাখা ভেংগে পড়ে আছে বিরান ভূমিতে।

আজকাল ওর খুব ইচ্ছে করে দূরে বহুদূরে, কেউ নিয়ে যাক তাকে কোন সবুজ পাহাড়ে, ছোট সুন্দর সবুজ ঘেরা-নদী ঘেঁষা কোন গাঁয়ে। নিজেকে কেবলই খাঁচায় পোষা বন্দি পাখির মতো মনে হয়। জন্মাবধি একটা শিকড় উপড়ানো গাছের মত জীবন চালিয়ে আসছে। কিন্তু সত্যিকারের বেড়ানো বলতে সে তেমন কোথাও যায়নি। কি অদ্ভুত একটা কষ্ট হয় ইশার, কষ্ট হয় সে আজও সমুদ্র দেখেনি, পাহাড় দেখেনি, ঘন সবুজ বন দেখেনি। আজ কতদিন হল কোথাও যায় না, কেউ আসেও না তেমন। নাক উঁচু স্বভাবী ইশার সব কিছুতেই খুঁতখুঁতে, বন্ধুত্বেও । হাসি খুশি প্রাণবন্ত ইশার খুব বেশি কাছের বন্ধু বেশি ছিলো না কখনোই। আর যারা ছিল বা আছে তারা খুব বিশেষ কেউ না।

জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে আজকাল হিসেবে খালি গোলমেলে মনে হয়। ইশা ভেবেই পায় না ভুলটা কোথায় ছিল!
পাশের বাসার ভাবি নাইওর গেল, খুশি যেন তার ধরে না। কবে থেকেই গল্প করছে ইশা আমি বাপের বাড়ি যাচ্ছি, মা আমার জন্য অনেক রকম আচার বানিয়ে রেখেছে আর পিঠাপুলি! জানই তো পিঠে পুলি আমার ভীষন পছন্দ। মা আমার অনেক রকম পিঠে পুলি করতে জানেন। আসার সময় তোমার জন্য নিয়ে আসব।
ইশা প্রতি উত্তরে শুধু মিষ্টি হাসে।

ভাবি অনেক সুখী মানুষ, বর ভাল চাকরী করে, নিজের ফ্ল্যাট-গাড়ি সব আছে, পরীর মত দুটো মেয়ে, ইশা আন্টি বলতে পাগল তারা। ভাবির একটাই গোপন দু:খ, ছেলে নেই। তার বাপের বাড়ি, স্বামীর বাড়ির এত সহায় সম্পত্তি কার জন্য, এই নিয়ে দুশ্চিন্তা। তবু এর মধ্যেই নিয়ম করে পার্লারে যান। বলেন ইশা, চেহারা ঠিক না রাখলে কি উপায় আছে! আজকালকার পুরুষ মানুষ গুলো হারামী, কোন দিকে আবার মজে যায় কে জানে। ভাইয়ের অফিস থেকে ফিরতে একটু দেরী হলেই অস্থির পাগল হয়ে যান। প্রথম প্রথম ইশা ভাবত এটা প্রেম, এখন জানে এটা নিরাপত্তাহীনতা, একজন সাধারনত বাঙালি রমণীর।

ইশাও অপেক্ষা করেছিল অনন্তকাল, অপেক্ষা করেছে, নৈবদ্য সাজিয়েছে, বিরহে কাতর হয়েছে, কালিদাসের বিরহের কাব্যের মত তার অপেক্ষা, বিরহ আর ভালবাসার কথা কেউ জানে না। কেউ জানে না কত খানি অনলে পুড়েছে, কত রক্তক্ষরণ ঝরেছে তার। সেও এমন করে কোন এক সুখী রমণীর মত প্রতিটা সন্ধ্যায় কারো জন্যে অপেক্ষা করতে চেয়েছিল। সেও চেয়েছিল মাঝ দুপুরে কাউকে ফোন করে জিজ্ঞেস করতে, এই তুমি খেয়েছ? আজও কিন্তু মিষ্টি খেতে ভুলো না যেন !

ফেরার পথে সে প্রায়ই নিয়ে আসত ইশার প্রিয় বেলী বা কদম। সূর্য তার সমস্ত আলো নিভিয়ে দিয়ে যখন শ্রান্ত, প্রিয় মানুষটির জন্য তার পছন্দের রান্না শেষ করে, টেবিল সাজিয়ে ইশা তখন স্নান সেরে শাড়ী পড়ে, পিঠ জুড়ে একরাশ ভেজা চুল নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াত। নিজেকে সাজাতো তার পছন্দের রং এর কাঁচের চুড়ি, টিপ আর নাকফুলে, মাঝে মাঝে হয়ত কাজলও আঁকতো চোখে। ছুটির দিন বিকেলটা কাটত প্রিয় ব্যলকনিতে, ছোট বাগানটায় পাশাপাশি মুখোমুখি চায়ের কাপ হাতে। সেই সাথে শুনত চৌরাশিয়ার বাঁশি, প্রিয় গজল বা কোন প্রিয় কবিতা। কিংবা হঠাৎ কোন দিন কোন ছোট নদীর তীরে, সবুজ বনের ধারে কোন এক পুরোনো পোড়াবাড়ি দেখতে যেত । নাহ ইশার জীবনে কোন প্রেম বা সুখের স্মৃতি নেই। তার প্রেম, অপেক্ষা আর বিরহ অদেখা আর মলিন, রবী ঠাকুরের ছোট গল্পের মতই, শেষ হয়েও হয়নি শেষ।

ইশারও খুব ইচ্ছে করে নাইওর যেতে। ওর কাছে নাইওর শব্দটা অনেক মিষ্টি লাগে। আহ, নাইওর! সে তো বিয়ের পর বাপের বাড়ি যাওয়া। ইশার বাপের বাড়ি বা শ্বশুরবাড়ি বলে কিছু নেই। কিন্তু নিজের বাড়ি আছে। ক’টা মেয়ের নিজের বাড়ি হয়? ইশার হয়েছে কিন্তু ইশা নিজের বাড়ি চায়নি। সে চেয়েছিল বাপের বাড়ি আর শ্বশুরবাড়ি। সেও চেয়েছিল বছরে ২/৪ বার বাপের বাড়ি নাইওর যাবে আর যাবার সময় তার প্রিয় মানুষটি ভীষন রকম মন খারাপ করে থাকবে। যেতে দিতে চাইবে না আবার বলবে আচ্ছা যাও, ২ দিন পরেই কিন্তু আমি তোমায় নিতে আসব। ওইদিকে মা বাবা, ছোট ভাই বোন অস্থির হয়ে থাকবে ইশার জন্য। বাবা লঞ্চ ঘাটে সেই সকাল থেকে দাঁড়িয়ে থাকতেন, ইশার মাও ভাবির মায়ের মত আচাড়, পিঠে পুলি, ছোট মাছ, বাগানের নানান রকম সবজি রান্না করতেন। রান্না করতেন ইশার প্রিয় হালুয়া, ওর রুমটা সাজানো থাকত ঠিক বিয়ের আগের মতই।
ইশার কোনদিন নাইওর যাওয়া হয়নি, হবেও না। বাড়িই যায় না কত বছর, শুনেছে এখন ব্রিজ হয়েছে, এখন আর ফেরী পার হতে হয় না। অথচ এই ফেরী পার হবার সময় কত রকমের মানুষ দেখত ও। কেউ আসছে, কেউ যাচ্ছে।

যাত্রীদের মধ্যে দম্পতি থাকলে ও আড়চোখে দেখত, দেখতো বররা তাদের বউকে কত আদর করে এটা সেটা কিনে খাওয়ায়। গ্রামের মিষ্টি লাজুক ঘোমটা পড়া বউগুলোকে লোভীর মত দেখত ইশা। ভাবত একদিন সেও এমন করে নাইওর যাবে, বাপের বাড়ি।

বাপের বাড়ি। বাপই নেই যার তার আবার বাপের বাড়ি। বাবা হারা মেয়েগুলো কি ভীষণ একা হয়। সমস্ত পৃথিবীর দুঃখগুলো যেন পাহাড় ভেংগে পড়ে তাদের জীবনে, যেন এক অসীম প্রতিযোগিতা, কে কত কষ্ট দিতে পারে পিতৃহীনাদের! আজকাল প্রায়ই শরীর খারাপ থাকে ইশার, মাঝরাতে বা ভোরে ঘুম ভেঙ্গে যায় প্রচন্ড বুকের ব্যাথায়। নিজের প্রতি উদাসীন বলে খাওয়া দাওয়া তেমন করে না, এ্যাসিডিটি হবার সম্ভাবনা আছে কিন্তু এই ব্যাথা অন্য রকম। মনে হয় কেউ যেন কোন ধারালো ছুরি দিয়ে তার বুকটাকে ঝাঁজরা করে ফেলছে। ভীষণ কষ্ট হয়। প্রতিবারই মনে হয় আজই শেষ কিন্তু তারপরও বেঁচে থাকে, আরও বেশি পুড়বার জন্য। এক জীবনে কত যে কষ্টের রূপ দেখল ইশা!
ক’দিন পরেই পাশের বাসার ভাবি ফিরে এলেন, হাতে নানান রকম পিঠা আর আচার। সেই কখন থেকে ইশার দরজায় নক করে যাচ্ছেন। আজ ছুটির দিন, ইশা তো এত বেলা করে ঘুমায় না, সে ফজরের নামাজ পড়ে একটু ঘুমায়। কিন্তু যেহেতু কাজের দিনগুলিতে সাতটায় ঘুম থেকে উঠতে হয় তাই, ছুটির দিনেও তার একই সময়ে ঘুম ভাংগে। ভাবি ফিরে গিয়ে খাবার গুলো রেখে, নীচে ইন্টারকমে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন আজ ইশার বুয়া খালা এসেছিল কি না, দারোয়ান চাচা বলল এসেছিলো, ফিরে গেছে কারণ ইশা আজ দরজা খুলেনি। ভাবির বুকটা হঠাৎ করেই কেমন করে উঠল। পাশের রুমে গিয়ে স্বামীকে সব বললে উনিও অবাক হলেন। ইশার সাথে উনার কোন দিন কথা হয়নি কিন্তু খুবই সম্মান করেন আত্মবিশ্বাসী, স্বাবলম্বী, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মেয়েটিকে।

সকাল প্রায় দশটার দিকে সবাই মিলে সিদ্ধান্তে আসলেন ইশার বাসার দরজা ভাঙ্গার। দরজা ভেঙ্গে বাইরে থেকে সবাই ইশার নাম ধরে কিছুক্ষণ ডাকলেন, সাড়া না পেয়ে সবাই ভাবির দিকে তাকালেন। ভাবির পা যেন নড়ছিল না, হঠাৎ করেই ভাবির মেয়ে দুইটা হাউমাউ করে কান্না শুরু করল। ভাইয়া একটু মৃদু ধাক্কা দিলেন ভাবির পিঠে, ভাবি অনেক কষ্টে এক পা এক পা করে ইশার বাসার ভিতরে ঢুকলেন।

ইস কি মিষ্টি গন্ধ বেলী ফুলের, অনেক সুন্দর সাজানো গোছানো সংসার ইশার। আস্তে আস্তে করে শোবার ঘরের দিকে পা বাড়ালেন। ইশার প্রিয় নীল রংয়ের পর্দাগুলো যেন অসহায় ভাবে ঝুলছে। মাথার উপর সিলিং ফ্যানের একঘেয়ে শব্দ ছাড়া ঘরে আর কোন আওয়াজ নেই। বাইরে দরজার কাছে সবাই এক অশুভ আতঙ্ক নিয়ে অপেক্ষা করছেন। ইশা, অভিমানী, একাকী, নিঃসঙ্গ মেয়েটি নিথর হয়ে পড়ে আছে বিছানার এক পাশে। একটা হাত বিছানার বাইরে। যেন কোন কিছু হাত বাড়িয়ে ছোঁয়ার অপেক্ষায়, যেন কাউকে ডাকছে ব্যাকুল হয়ে। সাইড টেবিলের পানির গ্লাসটি নীচে পড়ে ভেংগে আছে। আশেপাশে পানি নেই এক ফোঁটাও। চলে যাবার আগে বুঝি খুব তৃষ্ণা পেয়েছিল মেয়েটির। আহা শেষ বেলায় এক ফোঁটা পানিও পেল না! ঘাড়টা হেলে আছে বাঁকা হয়ে। ঠোঁটগুলো শুকিয়ে কেমন খটখটে হয়ে আছে। ভাবির খুব ইচ্ছে করে ইশাকে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি খাওয়াতে কিন্তু বড্ড দেরী হয়ে গেল যে।

আজ ইশা নাইওর যাচ্ছে, বাপের বাড়ি, বাপ সোহাগী মেয়েটির খুব ইচ্ছে ছিল বাপের পাশে যেন ওকে শুইয়ে দেয়া হয়। ফেরী পার হবার সময় কেবলই বারবার মনে হচ্ছিল পাশের বাসার ভাবির, কথাটি। নাইওর শব্দটা অনেক প্রিয় ছিল মেয়েটার, মেয়েটা শেষ পর্যন্ত নাইওর যাচ্ছে কিন্তু এভাবে কেন? ”

জীবনের অনেক প্রশ্নেরই উত্তর মেলে না, জানা হয় না, কোন কোন মানুষ এত কষ্ট পায় কেন, কেন এত অপূর্ণতা তাদের জীবনে? কেন কোন কোন তারা তাদের সমস্ত উজ্জ্বলতা দিয়ে অন্যের জীবনে আলো ছড়িয়ে নি:শব্দে ঝরে যায়?
খুব বেশি কিছু চেয়ে ছিল কি, মেয়েটি?

 

-নারী-

মাসুদ খাঁন


নারী তুমি গরিব বাবার
জান্নাতের ঐ মণি,
নারী তুমি দুখী মায়ের
কাঁন্নার আবাস ধ্বনি।

নারী তোমার কোলে দেখি
শিশু হেসে খেলে,
নারী তোমার ছেলে দেখো
স্বপ্নের ডানা মেলে।

নারী তুমি মা জননী
বিশাল বটের ছায়া,
নারী তোমার আঁচল মাঝে
খোঁজি আমি মায়া।

নারী তোমার ভালোবাসায়
স্বামী স্বর্গ খোঁজে,
নারী তোমার অধিকার আজ
সেই স্বামীটাই বোঝে।

নারী তোমার ন্যায্য দাবি
ইসলাম ধর্মে বলে,
নারী তোমার সম্মান-ইজ্জত
দেবে কেন জলে।

নারী তোমার স্বর্গ পাওয়া
সহজ তুমি জানো,
ধর্মে তোমায় যা বলেছে
যদি তুমি মানো।

(সকল চেতনাবাদী নারীদের জন্য উপহার)

 

দাম্পত্য জীবন হলো অন্যতম মৌলিক মানবিক অধিকার

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক


চাই, বন্ধ হোক জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রথম এক দশক এক ধরনের ব্যক্তিগত যৌনজীবন যাপনের এই বিরাজমান সামাজিক অপসংস্কৃতি।

হ্যাঁ, যার যৌবন আছে তার কোন না কোন ফরম্যাটে যৌন জীবনও আছে। অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক সবারই আছে নিজস্ব প‍্যাটার্নের যৌনজীবন। এটি অনিবার্য ও অবশ্যম্ভাবী। যত বড় সুফি-দরবেশ-মোহন্ত-সাধু হোন না কেন, কোন মানুষই বেসিক ইন্সটিংক্ট এর ঊর্ধ্বে নয়।

বিপরীত জেন্ডারের কারো সাথে সম্পর্কের ব্যাপারে আমার নীতি হলো,

Everything or nothing, not so so।

যে পথে শেষ পর্যন্ত যাওয়ার সুযোগ কিংবা অধিকার আমার নাই সে পথে খানিকটা হাঁটহাঁটি করাকে আমি ছ‍্যাঁচড়ামি মনে করি। এমনকি আমি এক নম্বর পছন্দ হলেও এ ধরনের কোনো কিছু পাওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়ানোকে আমি খুব অপছন্দ করি। মেয়েদের সাথে সম্পর্কের ব্যাপারে এ ধরনের মনোভাবের কারণে বিয়ের আগে আমার প্রেম করা হয়ে উঠেনি।

(১) প্রেম কিংবা
(২) পরিণয় অথবা
(৩) বিশেষ কোন সামাজিক সম্পর্ক বা
(৪) শুধু পরিচয় –

এই চার ধরণের সম্পর্কের বাইরে নারী ও পুরুষের মধ্যে কোনো সম্পর্কে আমি বিশ্বাসী নই। প্রাপ্তবয়স্ক দু’জন নারী ও পুরুষের মধ্যে নিছক বন্ধুত্বের সম্পর্ক অসম্ভব।

তাই এখনকার just friend system হলো আসলে এক ধরণের soft polygamy চর্চা। কথাটা পরিস্কার। polygamy ভালো কি খারাপ, সেটা ভিন্ন আলোচনা। এখানে polygamy বলতে আমি multiple heterosexual relationship-এর টেনডেন্সি বা প্র‍্যাকটিসকে বুঝাচ্ছি।

মানলাম, পাশ্চাত্য প্রভাবিত ক‍্যারিয়ারমুখী আমাদের এ সমাজ, ছেলে-মেয়েদেরকে গড়পড়তা এক দশক এক ধরনের “ব‍্যক্তিগত যৌনজীবন” যাপনে বাধ‍্য করছে, তাই বলে “প্রয়োজন”টা যে নির্দোষ ও বাস্তবসম্মত, তা অকপটে স্বীকার করতে এত দ্বিধা কেন?

স্বাভাবিক দাম্পত্য যৌন জীবনের ব‍্যবস্থা কায়েম করা হলো বিদ‍্যমান অবাধ ফ্রেন্ডশিপ ব‍্যবস্থার টেকসই প্রতিবিধান বা রিমেডি। এ ধরনের কাঙ্ক্ষিত ব‍্যবস্থায় পৌঁছার জন্য কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে তা নিয়ে সমাজকর্মীদের ভাবতে হবে। খোলামেলা আলোচনা করতে হবে।

“তরুণ সমাজ অধঃপতনে গেল। আমরা কত ভাল ছিলাম…।”
– এমন বুদ্ধিজীবীসুলভ পাকনা পাকনা কথা দিয়ে কাজের কাজ কিছু হবে না। কথায় বলে, পেটে দিলে পিঠে সয়। আগাগোড়া একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে কারো কোন বিশেষ ধরনের অস্বাভাবিক আচরণকে মাঝখান থেকে জাজমেন্ট করতে যাওয়া ঠিক না।

তরুণদের এই just friend system এর জন্য তরুণরা যতটা দায়ী তার চেয়ে অনেক বেশি দায়ী হল তাদের অভিভাবকরা। জীবন ও জগতের সঠিক উপলব্ধি ও মূল্যবোধ নিয়ে বড় হওয়ার চেয়ে তরুণদের মধ্যে যে career hype তৈরি করা হয়েছে তার জন্য তারা নিজেরা ততটা দায়ী নয়। এর জন্য দায়ী হল এই ভারসাম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা। এধরনের বিরূপ পরিস্থিতির দায় বড়দের। যারা এই সমাজ ও রাষ্ট্রের কর্ণধার। careerism-এর কারণে বিলম্বে বিয়ে। বিলম্ব বিয়ের কারণে দীর্ঘস্থায়ী এই ব্যক্তিগত যৌনজীবন। কথাটা খোলাসা করে বললাম। যাতে বুঝতে পারেন, এই just friend system কোত্থেকে ও কিভাবে গড়ে উঠলো।

আফসোস, যারা সমাজ পরিবর্তনের কথা বলে তারা আমাদের সামাজিক গঠনের এই বিরাট ফাটল সম্পর্কে তেমন কিছু বলে না। প্রসঙ্গক্রমে এ বিষয়ে যাওবা তারা কিছু বলে তখন একতরফাভাবে তারা তরুণদেরকে অসংযমী হওয়ার জন্য দোষারোপ করে। এরপরে তারা সওয়াবের নিয়তে তরুণদেরকে নৈতিকতা বজায় রাখার জন্য, একতরফাভাবে নৈতিক হওয়ার জন‍্য self-contradictory হেদায়েত বিতরণ করে।

অপরদিকে তরুণদের একটা বিরাট অংশ, যারা বিশেষ করে আদর্শের কথা বলে, তারাও দেখি আমাদের সমাজে বিদ্যমান এ ধরনের অস্বাভাবিক ও অমানবিক অপব্যবস্থার অস্তিত্ব স্বীকার করতে নারাজ। যেন সবকিছু ঠিকঠাক মতোই চলছে। আমি এসব কথা বলছি, এতে আশঙ্কা করছি, এদের কেউ কেউ আমাকে উল্টো দোষারোপ করবে। হয়তো বলবে, অথবা অন্ততপক্ষে ভাবতে পারে, বুড়োর যেন ভিমরতি হয়েছে …!

না, আমার অন্ততপক্ষে ভিমরতি হয় নাই। আমাদের সময় প্রায় শেষ। তবে আমরা যে অস্বাভাবিক সময়কে পার করে এসেছি, একই ধরনের যে অস্বাভাবিকতার মধ্য দিয়ে তোমরাও জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছো, তা যে প্রকৃতিবিরুদ্ধ ও অস্বাভাবিক, এ অবস্থার যে আশু পরিবর্তন প্রয়োজন, তা অন্ততপক্ষে স্বীকার করার কথা বলছি। যত বড় সমস্যাই হোক না কেন, যে কোন সমস্যা সমাধান করার প্রথম শর্ত হলো সমস্যাটা যে আছে তা অকপটে স্বীকার করা।

just friend system এর পরবর্তী ধাপ হলো লিভিং টুগেদার system। লিভিং টুগেদার সিস্টেম এবং family সিস্টেমের তুলনামূলক আলোচনা নিয়ে আমার একটা লেখা আছে। সেটি প্রচারণামূলক লেখা নয়, যুক্তিসঙ্গত লেখা। কিছুটা বিস্তারিত। কমেন্টে সেটার লিংক দেয়া আছে।

এ বিষয়ে এখনকার মত শেষ কথা হল, যেভাবেই হোক না কেন, on an average 15 থেকে 25, এই দীর্ঘ এক দশক এক ধরনের ব্যক্তিগত যৌনজীবন যাপনের এই সামাজিক অপসংস্কৃতিকে রুখতে হবে। জ্বর কেন হচ্ছে তার কারণ হিসেবে শরীরের ভেতরে কোন অংশটা infected হয়েছে তা identify করতে হবে। এরপর সেটার proper treatment করতে হবে। ভিতরের ইনফেকশন সারিয়ে তোলার ব্যবস্থা না করে উপরে উপরে জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল সেবন করে কোন লাভ হবে না।

সম্ভাব্য সকল উপায়ে বিয়েকে সহজ করা হলে বাদবাকি যা কিছু তা অটোমেটিকেলি কমে যাবে। অনিরুদ্ধ কোন স্রোতকে স্বাভাবিক গতিপথে প্রবাহিত হওয়ার সুযোগ করে না দিলে তা বাঁধ ভেঙে প্লাবন ঘটাবে, এটাই তো স্বাভাবিক।

ছোটবেলায় মার্শাল আর্টের কলাকৌশল নিয়ে একটা প্রবন্ধ পড়েছিলাম। তাতে আত্মরক্ষার প্রথম যে টিপসটা দেওয়া হয়েছিল, তা খুব ইন্টারেস্টিং। সেখানে লেখক বলেছিলেন, যখনই আপনি আক্রান্ত হবেন সম্ভব হলে দ্রুততম সময়ে 180 ডিগ্রি উল্টা ঘুরে দাঁড়িয়ে সম্ভব সর্বোচ্চ গতিতে দৌঁড়ানো লাগাবেন। তার মানে, যে কোন অস্বাভাবিক ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি হতে escape করার চেষ্টা করা হল better option।

নৈতিকতার যতসব নেতিবাচক আইন, কানুন, নিয়ম ও প্রস্তাবনা, তার সবই হলো বিশেষ বা জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য। কোথাও যদি অনির্দিষ্টকালের জন্য কোনো জরুরি পরিস্থিতি বিরাজমান থাকে, সেখানে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রয়োগযোগ্য নেতিবাচক আইনকানুন ও প্রস্তাবনাগুলোকে আপাতত অগ্রাহ্য করে উক্ত অস্বাভাবিক পরিস্থিতিকে যতটা সম্ভব স্বাভাবিকতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করা জরুরী। তাই, মানুষের ফিতরাতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটা ন্যূনতম আদর্শমানের সামাজিক ব্যবস্থা কায়েম করার জন্য যা যা করা দরকার, তা বাস্তবায়ন করার কাজ, আসুন, এখনই শুরু করি।

মনে রাখবেন, awareness is doing half of the solution।

 

বাসায় “কাজের মানুষ” নেওয়ার ব্যাপারে সর্তকতা

দ্য স্লেভ


আমরা প্রায়ই কাজের লোকের বা গৃহকর্মীদের উপর অত্যাচারের কাহিনী শুনি। তাদের বিষাদময় জীবনের কাহিনী শুনি আবার কাজের লোক কর্তৃক নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনাও রয়েছে প্রচুর। কিন্তু ঘটনাগুলোকে অনেককাংশেই কমিয়ে আনা যায় যদি আমাদের সদিচ্ছা থাকে।

বহু কাজের লোক আছে, যারা গ্রাম থেকে ঢাকা অথবা চিটাগাং শহরে আসে কিন্তু কিছুদিন পর তারা চলে যায় বা পালিয়ে যায়। অথবা বাড়ি ফিরে যাবার জন্যে উদগ্রীব হয়। কখনও পালিয়েও যায়। এর পেছনে কিছু কারন খুঁজে দেখা যাক।

সম্ভবত গ্রামের উম্মুক্ত পরিবেশে বেড়ে উঠে, শহরের মুরগীর খাঁচার মত বাসার ভেতরে তাদের ভালো লাগে না। কিন্তু এটা মিনি-মাইস করা যায়। কারন সম্ভবত মানুষ সবসময় সহনশীল প্রানী।

আসুক দেখা যাক কি কি সর্তকতা অবলম্বন করা যায়,

১.ভাল আচরণ

অত্যন্ত ভাল আচরণের সাথে তাকে গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে তাকে আপনি কিনে নেননি বরং সে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ নিয়েছে। আপনার জবটি আপনার জন্য সন্মানের। ঠিক তাকেও তার কাজটি যে সন্মানের বুঝতে দিন।

২. গৃহকর্মীদের মানসিক অবস্থা বোঝা

কেউ শহরে আসার পর, প্রথম দিনেই কাজের প্রতি আকৃষ্ট করা ঠিক নয়। বরং প্রথম দিন তাদেরকে নিয়ে শপিংয়ে যেতে হবে। কারন এসব গরিব মানুষেরা ভালো কাপড় পায় না। প্রথম দিন বাজারে নিয়ে গিয়ে বেশ মানসম্মত কাপড় কিনে দিতে হবে, যা সে পছন্দ করে। আর যদি আমরা মুত্তাকী হই, তবে নিজের জন্যে যে মানের কাপড় কিনি এবং যেমন কাপড় নিজের স্ত্রী, বোন, মা ওনাদের জন্যেও পছন্দ করি, ঠিক তেমনই কাপড় সেই মেয়ে বা ছেলেটির জন্যে পছন্দ করব। এটা করলে প্রথম দিনেই সেই মেয়ে বা ছেলেটি (সাধারনত মেয়েরাই কাজ করে বাসায়) উক্ত বাসার কর্তা, কতৃ সম্পর্কে বিশাল একটি ধারণা লাভ করবে এবং তার মন সাই দেবে এই বাসায় কাজ করতে।

৩. আপনার বাসার পরিবেশ গৃহকর্মীকে বুঝিয়ে বলুন

প্রথম দিন শপিং শেষে বাসায় ফিরে তাকে পুরো ঘরবাড়ির সবস্থান দেখাতে হবে। ধীরে ধীরে ওনার বোঝার ক্ষমতা অনুযায়ী বুঝাতে হবে। এরপর তার থাকার স্থানটি দেখাতে হবে এবং তার বাথরুমে নতুন ব্রাশ, পেস্ট, সাবান এসব রাখতে হবে। ব্যবহারের গুরুত্ব বুঝিয়ে দিবেন। এটা পাওয়া তার হক। তার থাকার স্থানটি যেমনই হোক অবশ্যই পরিচ্ছন্ন হতে হবে। এটা তার মানুসিকতাকে সুন্দর করবে এবং পরিবারের সবার স্বাস্থ্যকর পরিবেশ কথা ভাবতে হবে।

৪. খাবার নিয়ে কখনও শাস্তি দিবেন না

আপনারা যা যা খান, ভালো ও মানসম্মত খাবার তাকেও তাই খাওয়াতে চেষ্টা করুন। যদি নিজেরা বাইরে কোনো রেস্টুরেন্টে খেতল যান(নিজেদের সঙ্গতি অনুসারে কোনো রেস্টুরেন্ট) তাহলে সেই মেয়েটিকে পাশাপাশি একই চেয়ারে বসিয়ে পরিবারের সদস্যের মত করে একই রকম খাবার খাওয়াতে হবে। এটাই সুন্নাহ। এটা করলে সেই মেয়েটি নিজেকে পরিবারের দায়িত্বশীল একজন ভাববে এবং পরিবারের নিরাপত্তা নিজের উপর কর্তব্য মনে করবে।

৫. গৃহকর্মী সম্পর্কে জানুন

তারসাথে বেশ কিছুক্ষন গল্প করতে হবে। তার পরিবার,পরিবেশ সকল বিষয়ে জানতে হবে। তার ভালোলাগা মন্দলাগা এসব বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে হবে। এতে তার সম্পর্কে যেমন বালো একটি ধারনা তৈরী হবে, তেমনি সেও বাড়িওয়ালা থেকে একটা ধারনা পাবে। আর মনেযোগ নিয়ে তার কথা শোনার কারনে সে নিজেকে ভাগ্যবান ভাববে। আর এভাবে সে খুশী মনে সার্ভিস দেওয়ার জন্যে প্রস্তুত হবে। নিজেই জানতে চাইবে তাকে কি কি করতে হবে।

৬. অবশ্যই করণীয় কিছু বিষয়

ছবি তুলে রাখুন। ফোন নাম্বার মুখস্থ করানোর চেষ্টা করতে পারেন।
এবং তাকে সুন্দর করে বলতে হবে, যে দেশের আইন হল যারা ডমেস্টিক হেলপার বা গৃহকাজে সহায়তাকারী (কাজের মেয়ে শব্দটি একটি খারাপ অর্থ প্রকাশ করে,সুন্দর শ্বদচয়ন করতে হবে) তাদের এক কপি ছবি স্থানীয় থানায় জমা রাখতে হয়,তাই আমরা আইন অনুসরন করছি। এটা তোমার নিরাপত্তার জন্যেই। এতে তার মনের গহীনে কোনো কু-চিন্তা থাকলে সেটা সে নিজেই দমন করবে, এমনটা ধরে নেওয়া যায়। কারন মানুষ সুযোগ পেলে অনেক সময় তার খারাপ স্বভাব চরিতার্থ করে। আগে কেউ পালিয়ে যাবার অভিজ্ঞতা থাকলে জিডি করে রাখতে পারেন।

৭.পর্যাপ্ত বিশ্রাম

গৃহকর্মীদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে দিতে হবে। সে ভালো করে বিশ্রাম করলেই বরং কাজে ভুল কম করবে। তাকে তার কাজ ও দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবে। এক বার না বুঝলে বিরক্ত না হয়ে বার বার বুঝিয়ে দিতে হবে। প্রত্যেকটি কাজ আমি যেভাবে চাই বা যেভাবে করা উচিৎ সেটা বুঝাতে হবে সুন্দর করে। তাহলে সে কাজটি শিখবে এবং ভুল কম করবে। তাকে খুশী রাখতে হবে।

৮. প্রশংসা করা
প্রতিটি মানুষই প্রশংসা করার বিষয়টি খুবই পছন্দ করে। আমার মন প্রশংসা পছন্দ করলে সেই স্বল্প বেতনের কাজের মানুষটিও আমার চেয়ে বেশিই প্রশংসা পছন্দ করে মনে রাখতে হবে। তাই এই পয়েন্টটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সে যখন কোনো কাজ করবে, সেটা মোটামুটি ভালো হলেই তাকে অনেক প্রশংসা করতে হবে। তার কাজের মূল্যায়ন করতে হবে। আবার তার উপর অতিরিক্ত বোঝা না চাপিয়ে না দেবার ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।

৯. গৃহকর্মীদের পরিবারকে অবহিত করা

গৃহকর্মীদের পরিবারের প্রতি ইনসাফ বা যথাযথ তথ্য সবসময় দেওয়া উচিত। তার সুস্থ অসুস্থতা ছাড়াও মাঝে মাঝে ফোনে কথা বলা এবং দেখতে নিয়ে যাওয়া খুবই দরকার পরিবারের লোকেদের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে। ঈদের সময় গুলোকে তাদের বখশিশ দিতে হবে এবং বাড়িতে যেতে দিতে হবে। সে সময় তার পিতা-মাতা,ভাইবোনদের জন্যে কিছু উপহার দিলে, সেই মেয়ে খুব কৃতজ্ঞ থাকবে। যদিও আইন অনুযায়ী এটা তার ব্যক্তিগত খরচ, কিন্তু গৃহকর্তা এটাকে সহযোগীতা করলে তার ফলাফল হবে অনেক ভালো।

১০. ঘুরতে নিয়ে যান

পরিবারের সন্তানদের নিয়ে বাইরে ঘুরতে গেলে তাকেও নিতে হবে। এবং মাঝে মাঝে তাকে বাইরে কোনো পার্কে নিয়ে যেতে হবে। এতে তার একঘেয়েমী ধুর হবে।

মনে রাখতে হবে যে তিনিও, একজন আল্লাহর বান্দা/বান্দী।

রাসূল(সাঃ) বলেছেন,সাবধান..তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল, পিতা তার পরিবারে দায়িত্বশীল। তোমাদের প্রত্যেককেই আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে অধিনস্তদের(গৃহকর্মীদের) ব্যাপারে।

আরেক হাদীসে বলা হয়েছে আখিরাতে দায়িত্বশীলদেরকে শেকল পরিহিত অবস্থায় উঠতে হবে, অনিস্তরা তার ব্যাপারে অভিযোগ প্রত্যাহার করলে বা ভালো রিপোর্ট দিলেই কেবল ছাড়া হবে।

অন্যের দায়িত্ব গ্রহন করা মানে ফাঁসির দড়ি গলায় পরা। ফলে সেই অধিনস্তদের সাথে অবশ্যই ন্যায় বিচার করতে হবে।

“রসূল(সাঃ) বলেন, তোমাদের কেউ ততক্ষন পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষন পর্যন্ত না সে নিজের জন্যে যা পছন্দ করে ,অন্যের জন্যেও তাই পছন্দ করে” —সম্ভবত বুখারী বর্ণিত

এর ফলাফল দুনিয়াতে এবং আখিরাতে কল্যানকর। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন।

 

ধর্ষণ এবং প্যাভলভ তত্ত্ব

ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস


৬ বছরের শিশু, আপাদমস্তক বোরখাবৃতা কিংবা ৬০ বছরের বৃদ্ধারা ধর্ষিত হওয়ার ১৩৮ বছরের পুরানো মেডিকেলীয় ব্যাখ্যা

অবিশ্বাস্য ব্যাপার হলেও সত্য ১৩৮ বছর আগে রাশিয়ান বিজ্ঞানী পাভলভ এই ব্যাখ্যাটা দিয়ে গেছেন। বিজ্ঞানী পাভলভের এই কনসেপ্ট প্রত্যেক ডাক্তারকে তাঁর মেডিকেল লাইফের সেকেন্ড ইয়ারে পড়তে হয়।

সহজভাবে বলার চেষ্টা করি – নন মেডিকেলদের জন্য দেখি বলতে পারি কিনা।

বিজ্ঞানী পাভলভ একদল কুকুরকে ল্যাবে বেঁধে রেখে দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষা নিরিক্ষা করেছিলেন। তিনি প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে তাদের খাবার দিতেন। কুকুরের সামনে থাকত খাবারের বাটি এবং আয়না। সেখানে পাভলভ কুকুরের আচরণ পর্যবেক্ষণ করতেন। প্রতিদিন ঠিক একই সময়গুলিতে কুকুর গুলিকে খাবার দেওয়া হত। পাভলভের সাথে থাকতেন তাঁর ল্যাব সহকারী। খাবার গ্রহণের সময় কুকুরের কী পরিমাণ লালা ঝরত সেটি একটি কন্টেইনারে মাপা হত।
ব্রেইনের স্বাভাবিক রিফ্লেক্স হল খাবার গ্রহণের সময় লালা ঝরা।
কিন্তু পাভলভ দেখলেন যে – খাবার গ্রহণ নয়, খাবার দেখেও এবার কুকুরের লালা ঝরতে শুরু করেছে। পাভলভ খাবার দেখে কুকুরের কী পরিমাণ লালা ঝরত সেটি ও কন্টেইনারে মাপার ব্যবস্থা করলেন।

বেশ কিছু দিন যাওয়ার পর পাভলভ দেখলেন তিনি ল্যাবে ঢুকলেই কুকুরের লালা বের হচ্ছে।
সাথে খাবার থাক আর না থাক।

পাভলভ এবার নিজে ল্যাবে না গিয়ে খাবার বিহীন অবস্থায় তাঁর ল্যাব সহকারীকে ল্যাবে পাঠালেন। ল্যাব সহকারী অবাক হয়ে দেখলেন তাকে দেখে ও (ল্যাব সহকারী) দেখেও কুকুরের লালা ঝরছে।
পাভলভ এবার ভিন্ন কিছু করলেন।

তিনি কুকুরকে খাবার দেওয়ার সাথে সাথে একই সময়ে একটি ঘণ্টি বাজাতে থাকলেন।
খাবার দেওয়া হচ্ছে এবং ঘন্টি বাজানো হচ্ছে।

এরপর পাভলভ এবং সহকারী একদিন খাবার ছাড়াই ল্যাবে আসলেন এবং ঘন্টি বাজাতে শুরু করলেন।

দেখলেন খাবার না দেওয়া সত্ত্বেও কুকুরগুলোর একই পরিমাণ লালা ক্ষরণ হচ্ছে।

পাভলভ সিদ্ধান্তে আসলেন – খাবারের প্যাকেট, ল্যাব এসিস্টেন্ট, ঘন্টির শব্দ – এগুলি সব নিউট্রাল স্টিমুলেশন। এগুলির সাথে লালা ক্ষরণের সম্পর্ক নেই। কিন্তু কুকুর তার লার্নিং বিহেভিয়ারে খাবারের সাথে খাবারের প্যাকেট, পাভলভ, ল্যাব সহকারী বা ঘণ্টার শব্দকে কো রিলেট করে ফেলেছে। এবং খাবারের সাথে যা যা ঘটে সব কিছুকেই লালা ক্ষরণের উপাদান হিসেবে তার ব্রেইন ডিটেক্ট করছে।

ব্রেইনের এই লার্নিং মেথডকে তিনি “কন্ডিশনিং” এবং ‘কন্ডিশান্ড রিফ্লেক্স’ বলেছেন।

অর্থাৎ ব্রেইন এমন একটি স্টিমুলেশনের প্রতি সাড়া দিচ্ছে, যেটিতে ব্রেইনের আদৌ রেস্পন্স করা উচিত না, কিন্তু করার কারন হচ্ছে ব্রেইন এই স্টিমুলেশনকে আরেকটি স্টিমুলেশানের সাথে সম্পৃক্ত করে ফেলেছে।

মানুষ কুকুর নয় যে, মেয়ে দেখলেই তাকে ধর্ষণ করবে।

তবে মানুষের মধ্যে পশুত্ব আছে।

বিখ্যাত নিউরোলোজিস্ট এবং পরবর্তীতে সাইকিয়াট্রিস্ট ফ্রয়েড বলেছিলেন, যাকে আমরা মন বলি সেটি মূলত তিনটি সত্ত্বার সম্নবয়ে গঠিত – ইড, ইগো এবং সুপার ইগো।
অর্থাৎ মানব মন এই তিনটি গাঠনিক উপাদানে তৈরি –

“ইড” মূলত মানুষের জৈবিক সত্ত্বা।

মানব মনের স্বভাবজাত চাহিদা পুরণ করে ইড।

এটিকে “মন যা চায় তাই” এর সাথে তুলনা করা যায়।

“ইড” মানুষ এবং পশু সবার মাঝেই সমানভাবে বিরাজমান। এর কোন মানবিক দিক বা বিকাশ নেই। “ইড” এর পুরোটাই লোভ লালসা ও কাম চিন্তায় ভরপুর। “ইড” এমন ভাবে মানুষ কে প্ররোচিত করে যে, প্ররোচনায় মানুষ যে কোন অসামাজিক অপরাধ থেকে শুরু করে, খুন-ধর্ষণ পর্যন্ত করতে দ্বিধাবোধ করে না। এক কথায়, “ইড” হচ্ছে আমাদের ভিতরের সুপ্ত পশু।

সুপার ইগো হচ্ছে মানুষের বিবেক।

ইড যখন জৈবিক কামনা বাসনা পুরণ করতে উদ্দীপ্ত করে, তখন সুপার ইগো একে বাধা দেয়।

সুপার ইগো মানুষকে সব সময় মানবিক দুর্বলতার উর্ধে উঠে ভাল কাজ করার জন্য মানুষকে উদ্দপ্ত করে।

এই বাধা দেওয়ার ক্ষমতা নির্ভর করে ব্যক্তির নৈতিক, পারিবারিক, প্রাতিষ্ঠানিক এবং সামাজিক শিক্ষা এবং মুল্যবোধের উপর।

অন্যদিকে ইগো হচ্ছে এই দুই অবস্থার মধ্যে ভারসাম্য সৃষ্টিকারী একটি অবস্থা।

ইগো এবং সুপার ইগো র মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে চলা ই এর কাজ।

ইড বলবে – I need to get it.

সুপার ইগো বলবে – You have no right to get it

ইগো বলবে – I need some plan to get it. অর্থাৎ ইগো ইডের ইচ্ছাটা বাস্তবায়ন করবে একটু ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে।

পশু রা ইড চালিত।

তাই তারা কেবল জৈবিক চাহিদা (খাবার এবং যৌনতা) পুরণেই ব্যস্ত।
আবার মানুষের মধ্যে যখন “ইড” ডমিনেন্ট হয়ে যায়, তখন সে উন্মাদ ও অমানুষ হয়ে যায়।
আর যখন কেবল সুপার ইগো কাজ করে – তখন সে সাধু সন্যাসী পবিত্র হয়ে যায়।
ইগো এই দুই অবস্থার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে।

যেমন মানুষের মধ্যে যখন সুপার ইগো ডমিনেন্ট হয়, তখন অনেক সময় তাদের মধ্যে ডিপ্রেশন চলে আসে। ইগো তখন ব্যালেন্স করে। জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা সুপার ইগোকে মানতে গিয়ে আমরা আমাদের বিভিন্ন চাহিদা পুরণ করতে পারি না। আমাদের এই অপূরণীয় চাহিদায় মন তখন বিক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। তখন বিক্ষিপ্ত মনকে শান্ত করতে ইগো কাজ করে।
জীব হিসেবে মানুষের সাথে অন্য প্রাণীর তেমন বেশি ডিফারেন্স নেই।
উভয়েরই ইড আছে।
কিন্তু মানুষের এর সাথে দুইটা জিনিস আছে ইগো এবং সুপার ইগো।

কয়েকটি উদাহরণ দিচ্ছি

পর্ণ মুভি দেখতে চমৎকার, অতএব পর্ণ দেখ (ইড)

পর্ণ মুভি দেখা নৈতিকতা বিরোধী, মানুষ এটাকে খারাপ বলবে, অতএব দেখা যাবে না (সুপার ইগো)

লুকিয়ে পর্ণ মুভি দেখ, অসুবিধা কী? মানুষ তো জানবে না, আর মনের চাহিদা ও মিটল (ইগো, ব্যালেন্স করতেছে দুই দিক)

মেয়েটি সুন্দরী, অতএব ওকে ইভটিজিং বা রেইপ করো (ইড)

রেইপ, ইভটিজিং অপরাধ, অতএব করা যাবে না (সুপার ইগো)

মেয়েটির সাথে বন্ধুত্ব করার চেষ্টা করো, সম্ভব হলে প্রেমের প্রস্তাব দাও, মন পাওয়ার চেষ্টা করো, মন পেলে শরীর কোন এক সময় পাবে (ইগো)

ইড, ইগো এবং সুপার ইগো র আপেক্ষিক তীব্রতা স্থিতিশীল নয়, বরং পারিপার্শিকতার সাথে পরিবর্তনশীল।

যেমন সুপার ইগো তথা বিবেক অসুস্থ হয়ে গেলে তখন সে তার কাজ অর্থাৎ অন্যায় কাজে বাধা দিতে পারে না।

দেহের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে – খাবার না খেলে/পেটে খাবার না থাকলে ক্ষিদের অনুভূতি সৃষ্টি করে সেটি জানিয়ে দেওয়া। কিন্তু ক্রমাগত না খেয়ে থাকলে, দেহের দাবী অস্বীকার করলে দেহ অসুস্থ হয়ে যায় তখন সে স্বাভাবিক ক্ষিদের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে না।

তেমনি সুপার ইগো তথা বিবেকের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে – সে খারাপ কাজে আপনাকে বাধা দিবে, কিন্তু যখন আপনি কন্টিনিউয়াসলি সুপার ইগোকে অস্বীকার করবেন, অমান্য করবেন – তখন এটি দুর্বল হয়ে যাবে এবং অন্যায় কাজে কার্যকর বাধা দিতে পারে না।

একজন মাদকাসক্ত প্রথম যে দিন মাদক সেবন করে, তখন “সুপার ইগো”র জন্য তার মধ্যে কিন্তু প্রচন্ড অনুশোচনাবোধ হয়। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে মাদক সেবন তার এই অনুশোচনা র তীব্রতা কমিয়ে দেয়।

প্রথম যে ব্যক্তি পর্ণ দেখে, “সুপার ইগো”র জন্য তার মধ্যে কিন্তু প্রচন্ড অনুশোচনাবোধ হয়। কিন্তু সে যখন আসক্ত হয়ে যায়, তখন ধারাবাহিকভাবে অনুশোচনাবোধ কমে আসে।

সুতরাং মানুষ যদিও ইগো এবং সুপার ইগো দিয়ে অন্য প্রাণী থেকে আলাদা, কিন্তু সুপার ইগো দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে পশুত্ব জেগে উঠে।

চলবে…

 

শরীয়ত ভিত্তিক দাম্পত্য কাউন্সিলিং (কেস স্টাডি) – শেষ পর্ব

আফরোজা হাসান


স্বামীর অনৈতিক কর্মকান্ডের পেছনে আমারো দায় থাকতে পারে এমন চিন্তা নিজ থেকে হয়তো কখনোই মনে আসতো না।

কিন্তু চিন্তাটা মনে ঢোকার পর অনেক ভেবেছি এটা নিয়ে। নিজেকে দেখতে চেষ্টা করেছি বিবেকের আয়নায়। তখন খুঁজে পেয়েছি নিজের মাঝে বিদ্যমান অসংখ্য ভুল ও ত্রুটি সমূহকে।

ভেবে দেখলাম আমাদের জীবনে বাচ্চারা আসার পর থেকে দূরত্ব বাড়তে শুরু করেছিল ধীরে ধীরে। বাচ্চারা স্কুলে যাওয়া শুরু করার পর সেই দূরত্ব আরো বৃদ্ধি পেয়েছিল। স্বামী সাথে তেমন করে সময় কাটানো, গল্প করা হয়ে উঠতো না খুব একটা। বাইরে ঘুরতে যাওয়ার কথা বললেও বেশির ভাগ সময়ই আপত্তি করেছি। কেননা দুই বাচ্চাকে রেডি করে নিজে রেডি হওয়া। ফিরে এসে আবারো বাচ্চাদের এবং সংসারের সবকিছু গোছানো। অনেক ঝামেলা মনে হতো।

আসলে সংসার আর বাচ্চাদের পিছনেই আমার পুরো মনোযোগ ছিল। স্বামীর দিকে যে খেয়ালই দিচ্ছি না সেই উপলব্ধিটিই কাজ করেনি মনে। এখন বুঝতে পারছি কি ভুল করেছি আমি। আমার এইসব আচরণের কারণেই হয়তো দেরি করে বাসায় ফেরা শুরু করেছিল। এবং একসময় জড়িয়ে পড়েছে অনৈতিক কাজের সাথে। এখন অনুধাবন করতে পারছি যে আসলেই যতটা ভালোবাসা ও কেয়ার সে দাবী করতো ততটা হয়তো আমি প্রকাশ করে দেখাতে পারিনি কথা, কাজ ও আচরণের দ্বারা। আর সেজন্যই হয়তো আজ ভুক্তভোগী আমি।

নুসরাহ বলল, আলহামদুলিল্লাহ! আপনি নিজের ভুলগুলো ধরতে পেরেছেন তাই ভীষণ ভালো লাগছে। এখন আপনাকে সেই ঘাটতিগুলো দূর করার চেষ্টা করতে হবে যার কারণে আপনাদের সম্পর্ক আজ এমন একটা অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে।

নিজের ভুল স্বামীর কাছে সুন্দর করে স্বীকার করুন। একে অন্যকে সাহায্য করুন নিজ নিজ ভুল থেকে বের হয়ে আসতে।

দুজন মিলে কাজ করুন সম্পর্কটিতে আবার আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে। উদারতা, ক্ষমা, ধৈর্য্য, অপরকে অগ্রাধিকার দেয়া, ভালোবাসা, ত্যাগ ইত্যাদির মাধ্যমে সম্পর্কের মাঝে মধুরতা ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করুন।

জানি বেশ কঠিন কাজ এটা। তবে সব জটিলতা, কাঠিন্যতা দূরীভূত হয়ে যাবে যদি আপনারা শরীয়তের দেখানো পথে নিজেদের জীবনকে পরিচালিত করার চেষ্টা করেন। দুনিয়ার নানান প্রলোভন, মায়াজাল ইত্যাদি সবকিছুর হাত থেকে নিজেকে এবং পরিবারকে বাঁচানোর একমাত্র রক্ষা কবচ হচ্ছে শরীয়ত। তাই দুজন মিলে সর্ব শক্তি দিয়ে শরীয়তকে আঁকড়ে ধরুন।

রামিছা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, এটাই আসলে ভুল হয়ে গিয়েছে আমাদের। আমরা শরীয়তের আলোকে নিজেদের জীবনকে সাজাতে চেষ্টা করিনি। তা না হলে আমি কখনই স্বামীর হক আদায়ে গড়িমসি বা অবহেলা করতে পারতাম না। আর উনিও একাকীত্ব বা মনের শান্তি লাভের আশায় যিনার মত গোনাহতে নিমজ্জিত হতেন না।

হুম.. আমরা বেশির ভাগ সময়ই জীবনে এমনি আসা বা পাওয়া নিয়ামত সমূহের কদর করতে পারিনা। একজন প্রেমময় স্বামী বা স্ত্রী এবং তাদের ভালোবাসা যে কত বড় একটা নিয়ামত সেটা জীবনে কোন দুর্ঘটনা সংঘটিত হবার আগে আমরা বেখবর থাকি।

অথচ রাসূল (সঃ) বলে গিয়েছেন, “তোমরা কাউকে ভালোবাসলে সেটা মুখে প্রকাশ করো এতে তোমাদের ভালোবাসা আরো বৃদ্ধি পাবে।”

তিনি আরো বলে গিয়েছেন, “ যে ব্যক্তি মানুষের শুকরিয়া জানায় না সে আল্লহর শুকরিয়া জানায় না।”

স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমাদের মনেই থাকে না এই রাসুল (সঃ) এর বলে যাওয়া এইসব বানীর কথা। তাই তো আমরা একে অন্যেকে শুকরিয়া জানাই না, ভালোবাসা প্রকাশ করি না। মনে করি কি দরকার আছে এসবের?!

ভালোবাসি সেটা তো জানেই। স্বামীকে আবার শুকরিয়া বলার কি আছে? স্বামী সাহায্য করবে এটাই তো স্বাভাবিক। অথচ এই স্বাভাবিক কাজগুলোতে ছোট্ট ছোট্ট স্বীকৃতি আমাদের জীবনে প্রবাহিত করতে পারে জান্নাতি সুবাতাস।

আমি এখন বুঝতে পারছি সবকিছুই। আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

ইনশাআল্লাহ! আরেকটা খুব বড় ভুল স্বামী-স্ত্রী করেন জীবনে সন্তান আসার পর। সন্তানের অযুহাত দেখিয়ে তারা একে অন্যের কাছ থেকে দূরে সরে যান ধীরে ধীরে।

অথচ হওয়াতো উচিত ছিল উল্টো তাই না? সন্তান আসার পর আরো মজবুত হবার কথা বন্ধন। স্বামী বাড়িতে থাকেন না সবসময়। সন্তানদের নিত্যনতুন দুষ্টুমি, মজার মজার কান্ড ইত্যাদি উপভোগও করতে পারেন না তেমন করে। এসবই হতে পারে স্বামী-স্ত্রীর আন্তরিকতা ও ভালোবাসা বৃদ্ধির অসাধারণ একেকটি উপকরণ। সন্তানদের দুষ্টুমিতে আনন্দ পান না এমন বাবা-মা খুব কম আছেন।

কখনো সন্তানদের দুষ্টুমির ফিরিস্তি দিতে গিয়ে কপট রাগ বা অভিমানের স্বরে একে অন্যকে বলা, একদম তোমার মত দুষ্টু বা এখন থেকেই বাচ্চাকে শাসন করতে হবে নয়তো তোমার মতো অবাধ্য হয়ে যাবে, ইত্যাদি। এসব খুনসুটি দাম্পত্যকে আরো মাধুর্যময় করে তুলতে পারে। কিন্তু শুধু আমরা সচেতন নই বলেই এসব আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবার সাথে সাথে, জীবনেও ডেকে আনি নানান বিপর্যয়।

আসলে আমরা জানিই না জীবনকে কিভাবে উপভোগ করতে হয়।

অথচ দেখুন শরীয়তে কিন্তু সবই বলে দেয়া আছে।

হাদীসে এসেছে, “স্ত্রীদের সাথে রাসুল (সঃ) খুবই উদার, প্রেমময় ও হাসিখুশি ছিলেন। তিনি মুচকি হাসি ছাড়া কথা বলতেন না।”

হাদীসে আরো বলা আছে, “যে ব্যক্তি পরনারীর দিকে নজর পড়লে দৃষ্টি সংবরণ করে নেয় তার জন্য আল্লাহ হৃদয় শীতলকারী ইবাদত সৃষ্টি করেন”।

আমরা কুরআন ও হাদীসের চর্চা করি না বলেই একটা ভুল পরিস্থিতিতে কি আচরণ করতে হবে সেটা জানি না। তাই নিজেকে বিরতও করতে পারি না। আর শয়তান এই সুযোগগুলোকেই কাজে লাগায়।

হুমম…!

যাইহোক, যে ভুল সংঘটিত হয়ে গিয়েছে আপনাদের দ্বারা সেটা আর ঠিক করার কোন উপায় নেই।

সেজন্য একে অন্যেকে দোষারোপ বা পাপী তাপী না ভেবে মন থেকে ক্ষমা করে দিন। এরপর নতুন ভাবে আবারো শুরু করুন জীবন। যখনই কোন সমস্যা আসবে জীবনে সমাধানের জন্য শরীয়তের কাছে যাবেন।

ইনশাআল্লাহ দেখবেন সবকিছু সহজ হয়ে যাচ্ছে। বাসার কুরআন ও হাদীসের চর্চা শুরু করুন। নিজেরা তো করবেনই সাথে সন্তানদেরকেও রাখবেন। আর শরীয়ত স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানদের প্রতি যে হক নির্ধারণ করেছেন তা আদায়ের ব্যাপারে সচেষ্ট থাকবেন।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে রামিছা বলল, জাস্ট জানার জন্য বলতে জিজ্ঞেস করছি। ধরুন এই সবকিছু করার পরও যদি আমার স্বামী ফিরে না আসে বা নিজেকে ফেরাতে না পারে বিপথ থেকে তাহলে আমার কি করণীয়?

আপনার স্বামীর ক্ষেত্রে যদি এমনটা ঘটে তাহলে সর্বশেষ যে সমাধানটি রয়েছে সেটি হচ্ছে উনাকে ঐ মেয়েটিকে বিয়ে করার অনুমতি দিয়ে দেয়া।

জানি খুব অবাক হচ্ছেন আমার কথা শুনে। কিন্তু আপনি নিজেই ভেবে দেখুন এত কিছুর পরও যদি আপনার স্বামী নিজেকে ঐ মেয়েটির কাছ থেকে নিজেকে ফেরাতে না পারেন। এর অর্থ উনি মেয়েটার সাথে এমন ভাবে জড়িয়ে গিয়েছেন যে ফিরে আসাটা উনার পক্ষে সম্ভব নয়। আবার আপনার পক্ষেও সম্ভব নয় এই বন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত করে নেয়া। সেক্ষেত্রে একমাত্র সমাধান আসলে দ্বিতীয় বিয়েই। এতে করে অন্য একটি মেয়ের সাথে আপনার স্বামী নাজায়েজ সম্পর্কে জড়িত এই দহন পীড়া থেকে মুক্তি মিলবে আপনার।

শরীয়ত ও সমাজের চোখেও নিন্দিত হতে হবে না আপনাদের কাউকে। আপনাদের সন্তানদের উপরও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির সুযোগ কমে যাবে। বাবার নাজায়েজ সম্পর্কের চেয়ে বাবার দ্বিতীয় বিয়ে মেনে নেয়াটা অনেক বেশি সহজ সন্তানদের জন্য।

আর যেহেতু সন্তানদেরকেও আপনি শরীয়ত দিয়েই বিষয়টা বোঝাতে চেষ্টা করবেন। প্রথমে রাগ, ক্ষোভ থাকলেও একটা সময় বুঝবে ও মেনে নেবে ইনশাআল্লাহ। আশা করি বোঝাতে পেরেছি আপনাকে।

যাইহোক, কি হবে, কি হবে না এসব ভেবে নিজের কাজকে জটিল করতে যাবেন না। বর্তমানে যা করণীয় সেটি আগে ভালোমতো করার চেষ্টা করুন। যদি ব্যর্থ হন তখন পরের চিন্তা করবেন। ব্যর্থ হবার পর কি করবেন সেই চিন্তা আগে থেকেই করার অর্থ হচ্ছে নিজের সফলতার ব্যাপারে আপনি নিশ্চিত নন।

আল্লাহর উপর ভরসা রেখে আপনাকে শতভাগ ইতিবাচক মন নিয়ে নিজের জীবনকে সাজানোর লক্ষ্যে কাজ শুরু করতে হবে। চলার পথে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মৌলিক বিষয় সমূহের প্রতি লক্ষ্য রাখবেন শুধু।

দ্বিতীয় বিয়ের কথাটা শুনে চেহারায় আঁধারে ছেয়ে গিয়েছিল রামিছার। সেখানে সামান্য উজ্জলতা দেখা দিল। হেসে বলল, ঠিক বলেছেন আগে থেকেই কি হবে, না হবে ভাবার কোন মানে নেই। এতে শুধু মন দুর্বল হবে। আর শয়তান সেই দুর্বলতার সুযোগ নিতে চাইবে।

আল্লাহর উপর ভরসা রেখে আমি আজ থেকেই আমার সংসারের সুখ-শান্তি ও পবিত্রতা ফিরিয়ে আনার সংগ্রাম শুরু করলাম। ইনশাআল্লাহ নিজের শক্তি ও সামর্থ্যের শত ভাগ দিয়ে আমি চেষ্টা ততদিন পর্যন্ত জারি রাখবো যতদিন পর্যন্ত আমার স্বামীকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে না পারি।

  1. নুসরাহও হেসে বলল, ইনশাআল্লাহ।

পর্ব-১

পর্ব-২

 

শরীয়ত ভিত্তিক দাম্পত্য কাউন্সিলিং (কেস স্টাডি)- ২য় পর্ব

আফরোজা হাসান


বেশ অবাক হয়েই নুসরাহর দিকে তাকালো রামিছা। অস্ফুট স্বরে বলল, আমার দায়? আমি তো এমনকিছুই করিনি কখনোই। স্বামী ও সংসারের প্রতি আমি সবসময় বিশ্বস্ত ছিলাম, আছি।

নুসরাহ বলল, আপনি আসলে আমার প্রশ্নটি বোঝেননি রামিছা। খুবই চমৎকার ছোট্ট সুখের সংসার ছিল আপনাদের। কোন কিছুর অভাব যেমন ছিল না। তেমনি বন্ধনগুলোও ছিল সুন্দর। স্বামী আপনাকে যথেষ্ট পরিমাণ ভালোবাসেন সেটা কথা শুনেই বোঝা গিয়েছে। পনেরো বছর কিন্তু অনেক লম্বা সময়। এতটা বছর একসাথে।

মিলেমিশে কাটানোর পর হঠাৎ করে এমন কি ঘটলো যে আপনাদের জীবনে তৃতীয় একজন জায়গা করে নিলো?

এই প্রশ্নটি কি একবারও মনে আসেনি আপনার?

না এভাবে তো ভেবে দেখিনি আমি!

অথচ এ কথাটাই কিন্তু সবার আগে ভেবে দেখা উচিত ছিল। আমার অভিজ্ঞতা বলে যে, একটা সংসার গড়তে যেমন দুজন ব্যক্তির প্রয়োজন পড়ে। ঠিক তেমনি ভাঙতেও দুজনকেই অংশগ্রহণ করতে হয়। দোষ কম-বেশি হতে পারে এটা ঠিক। কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই দোষ দুজনেরই থাকে এই ধরণের কেসে। এমন প্রেমময় একজন স্বামী কেন বদলে গেলো এই প্রশ্নটা আসা উচিত ছিল আপনার মনে।

ভাবা উচিত ছিল এমন কি ঘাটতি সংঘটিত হয়েছে আপনার দ্বারা যার ফলে আপনার স্বামীকে অন্য নারীর দিকে হাত বাড়াতে হয়েছে। দেখুন আমি আপনাকে কষ্ট কিংবা অপ্রস্তুত করতে চাইছি না মোটেও। আপনি যদি বলতেন যে আপনার স্বামী খুবই খারাপ লোক, গায়ে হাত তোলেন ইত্যাদি ইত্যাদি। তাহলে এসব প্রশ্ন আমি কখনোই জানতে চাইতাম না। কিন্তু একজন ভালো মানুষ কেন খারাপ পথে চলতে শুরু করলো সেটা অবশ্যই জানা উচিত।

আমি কি উনাকে জিজ্ঞেস করবো?

না আগে আপনি নিজেকে জিজ্ঞেস করুন। শান্ত মনে নিজেকে বিবেকের আয়নায় দেখুন। নিজের কোন দোষ বা ভুলকে ঢাকার চেষ্টা করবেন না। যখন আপনি সমস্যার মূলে পৌছাতে পারবেন তখনই সমাধানের পথে এগিয়ে যাওয়াটা অনেক সহজ হবে।

নিজের দোষ অনুসন্ধানের সাথে সাথে আরেকটি কাজ আপনি করবেন। সেটি হচ্ছে একসাথে কাটানো সুন্দর মুহুর্তগুলো স্মরণ করবেন স্বামীর সাথে বসে। তাকে মনে করিয়ে দেবেন কত সুন্দর একটি জীবন আপনারা একসাথে উপভোগ করেছিলেন। বাচ্চাদের বিষয়ে কথা বলবেন বেশি বেশি। ওদের ভবিষ্যৎ, পড়াশোনা, বিয়ে, এমনকি গল্প করতে করতে নিজেদেরকে নানা-নানু পর্যন্ত বানিয়ে ফেলবেন।

যে কাজটি করবেন না সেটি হচ্ছে ঝগড়া, খোঁচা দিয়ে কথা বলা, মুখ গোমড়া করে থাকা, এবং আলাদা বিছানায় ঘুমানো।

এ সব করলে কি ঠিক হয়ে যাবে আমার স্বামী?

আপনি আপনার স্বামীর যে পরিচয় দিয়েছেন তাতে এসব করলে তার মনে প্রভাব পড়বে আশা করি ইনশাআল্লাহ। সে ভুল পথে চলছে এই উপলব্ধিও জাগ্রত হয়ে উঠতে পারে তার মনে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শরীয়তের বিধি-বিধান, নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করতে চেষ্টা করবেন স্বামীর সাথে, পরিবারের সবাই মিলে একসাথে বসে। আপনার পক্ষে যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করে দেখুন। তারপরও যদি আপনার স্বামী সঠিক পথে ফিরে না আসে তখন অন্য কিছু চিন্তা করা যাবে।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে রামিছা বলল, নিজের দোষ বলতে ঠিক কি খুঁজে দেখবো আমি? আপনি একটু যদি বুঝিয়ে বলে দিতেন?

মানুষের সবচেয়ে বড় একটি সমস্যা হচ্ছে ভালোবাসাকে যথাযথ মূল্যায়ন করতে না পারা। কেউ আমাদেরকে ভালোবাসলে আমরা সেই ভালোবাসাকে স্বীকৃতি ও বদলে তাকে ভালোবাসা দেবার চাইতে বরং সেটাকে দুর্বলতা হিসেবেই ব্যবহার করি বেশির ভাগ সময়। কারো ভালোবাসা পাবার জন্য আমরা যে চেষ্টা ও সাধনা করি। কারো ভালোবাসা অর্জন করে ফেলার পর সেভাবে আর কদর করি না।

আর যে ভালোবাসা না চাইতেই পেয়ে যাই সেটাকে তো নিজের হক বলে ভেবে নেই। এই যেমন ধরুন কেউ আপনাকে এসে বললো যে, তার হাজবেন্ড একটুতেই গায়ে হাত তোলে কারণে অকারণে। আপনি তাকে সান্ত্বনা দেবেন, তার হাজবেন্ডকে বকাঝকা করবেন। কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই আপনি যে কত ভালো একজন হাজবেন্ড পেয়েছেন সেটা মনে করতেই ভুলে যাবেন। আমরা মানুষেরা আসলে এমনই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। কেউ হাজার ভালো করলেও তেমন করে তাকে মূল্যায়ন করি না। কিন্তু যদি একটি খারাপ কাজ, কিন্তু এমন কোন কাজ করে যা আমাদের পছন্দ নয়। আমরা কঠোরতা প্রদর্শন করতে এক মুহুর্ত দেরি করি না।

হ্যা, এটা তো আসলেই সত্যি!

নুসরাহ বলল, আবার যে সংসারের স্বামীরা রাগী সেই সংসারের স্ত্রীদের দেখা যায় স্বামী ঘরে ফেরার আগেই চেষ্টা করে সবকিছু সাজিয়ে গুছিয়ে ফিটফাট করে রাখতে। কিন্তু যে সংসারের স্বামীরা নরম মনের মানুষ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের আসা যাওয়ার ব্যাপারে স্ত্রীরা বাড়তি কোন সতর্কতা অবলম্বন করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন না। এমনও হয় স্বামী বাসায় ফিরেছেন আর স্ত্রী হয়তো টিভি নিয়েই বসে আছে। উঠে কোন কিছু লাগবে কিনা সেটা জিজ্ঞেস করারও প্রয়োজনীয়তা বোধ করছেন না।

জ্বি আমি বুঝতে পেরেছি আপনার কথা। আমি সবকিছু ভেবে আপনাকে জানাবো।

নুসরাহ হেসে বলল, আপনি এক দিক দিয়ে অনেক ভাগ্যবতী কারণ কোন ধরণের শারীরিক অত্যাচার আপনাকে হতে হয়নি। এবং এখনো আপনার স্বামী আপনার কেয়ার করে। নয়তো বেশির ভাগ সময়ই এমন ভয়ংকর সব সমস্যা নিয়ে মানুষ হাজির হোন! তখন তাদেরকে জীবনের সুখের সময়ের কথা চিন্তা করে দেখতে বলার কোন সুযোগ থাকে না।

আপনার স্বামীর অন্যায়টি মোটেও কম কিছু নয়। কিন্তু যেহেতু আপনি চাইছেন সংসারটা টিকিয়ে রাখতে।

সুতরাং, চেষ্টার পেছনে আপনার হান্ডেড পার্সেন্ট দিতে চেষ্টা করুন। নিজের জন্য, সন্তানদের জন্য এবং আপনার স্বামীর জন্যও।

চলবে….

পর্ব-১

 

আপনার শিশুকে চিনুন ৮ টি উপায়ে’ (শেষ পর্ব)

এ কে এম ওমর ফারুক


দৃষ্টি ও অবস্থানমূলক বুদ্ধিমত্তা :
এই শ্রেণীভুক্ত শিশুরা ছবির বিষয়বস্তু সম্বন্ধে চিন্তা করে। ছবির সাহায্যে মনে রাখে। ছবি আঁকতে ও রং করতে ভালোবাসে। প্রতিকৃতি বানাতে পছন্দ করে। মানচিত্র চার্ট ও নং সহজে বুঝতে পারে। কোন কিছুর চিত্র সহজে কল্পনা করতে পারে। রূপক শব্দ ও বাক্য বেশি ব্যবহার করে।

অনুভূতি ও শরীরবৃত্তীয় বুদ্ধিমত্তা :
যে শিশুরা খেলাধুলা পছন্দ করে তার অনুভূতি ও শরীরবৃত্তীর বুদ্ধিমত্তার শ্রেণীভুক্ত। এ ধরনের শিশুরা কোন কিছু সহজে ধরতে চায়। হাতেনাতে কাজ করতে পছন্দ করে। হস্ত শিল্পে দক্ষ হয়। শরীর ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ওপর যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ থাকে। অংশগ্রহণ করে সহজে শেখে। বস্তু সহজে নিয়ন্ত্রণ করে। শুনে বা দেখে শেখার চেয়ে নিজে করে শেখে এবং মনে রাখে।

ছন্দ ও সঙ্গীতমূলক বুদ্ধিমত্তা :
কিছু শিশুর তাল ও লয়ের প্রতি আকর্ষণ বেশি থাকে। সুর ও ছন্দ সহজে এদের মনে প্রভাব বিস্তর করে। এরা গান পছন্দ করে। কবিতা ও ছড়ার তালে তালে আবৃত্তি করতে পছন্দ করে। বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পছন্দ করে। প্রকৃতির বিভিন্ন শব্দের প্রতি সহজে আকৃষ্ট হয়। এরা ছন্দ ও সঙ্গীতমূলক বুদ্ধিমত্তার আওতাভুক্ত।

আন্তঃব্যক্তিক বুদ্ধিমত্তা :
এরা সহজেই অন্যের মনের কথা বুঝতে পারে। অন্যের সঙ্গে সহজেই সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে। এদের অনেক বন্ধু-বান্ধব থাকে। অন্যের সমস্যা সমাধানে ঝগড়া-বিবাদ মেটাতে এরা পছন্দ করে। এরা দলভুক্ত হয়ে কাজ করতে ভালবাসে। অন্যের কাজে সহযোগিতা করে এবং সামাজিক পরিস্থিতি সহজেই বুঝতে পারে।

প্রাকৃতিক বুদ্ধিমত্তা :
প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রতি যারা বিশেষভাবে দুর্বল তারা প্রাকৃতিক বুদ্ধিমত্তার অধিকারী। সাধারণত এরা প্রাকৃতিক পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করতে পছন্দ করে। তাছাড়া জীব ও জড়োর বৈশিষ্ট্য নিয়ে চিন্তা করতে পছন্দ করে। গাছপালা-পশুপাখি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে পছন্দ করে। গাছপালার যত্ন করতে ভালবাসে। প্রকৃতির বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করতে আনন্দ পায়। সর্বপরি প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদান নিয়ে গবেষণা করতে পছন্দ করে।

পৃথিবীর সকল শিশুই শুধু নয় সকল মানুষই এই আটটি বুদ্ধিমত্তার অন্তর্ভুক্ত। প্রত্যেকটি মানুষের ভেতর এই আটটি বুদ্ধিমত্তার যে কোন একটি প্রবলভাবে পরিলক্ষিত হয় এবং পাশাপাশি অন্য বুদ্ধিমত্তার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে। এই বিষয়গুলো যে কারও আচরণে লক্ষ করলেই স্পষ্ট পরিলক্ষিত হবে।

একটি শিশুর সফলভাবে বেড়ে ওঠার জন্য তার বুদ্ধিমত্তাকে বিবেচনা করা প্রয়োজন। তার লেখাপড়া ও কাজে-কর্মে উৎসাহ প্রদান করা প্রয়োজন। তাহলে প্রত্যেকটি শিশুই সফল মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। তথ্য সূত্রঃ ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত ও সম্পাদিত।

পর্ব-১

 

শরীয়ত ভিত্তিক দাম্পত্য কাউন্সিলিং (কেস স্টাডি)- ১ম পর্ব

আফরোজা হাসান


ছোট্ট সুখের নীড় বলতে যা বোঝায় ঠিক তেমনটিই ছিল আমার জীবন। আদর, সোহাগ ও ভালোবাসায় আগলে রাখা একজন প্রেমময় অসাধারণ স্বামী। এক ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে ভীষণ আনন্দময় একটা জীবন কাটাচ্ছিলাম। প্রচন্ড ভালোবাসতো আমাকে আমার স্বামী। পিতা হিসেবেও খুবই দায়িত্ব সচেতন ছিলেন সবসময়ই। সুখের সাগরে ভেসে কাটছিল আমাদের দিন।

এরই মধ্যে একদিন জানতে পারলাম আমার স্বামীর অন্য একটি মেয়ের সাথে গোপন সম্পর্কের কথা।

প্রথমে কিছুতেই বিশ্বাস করতে চায়নি মন। কিন্তু খোঁজ খবর নেবার পর বুঝলাম যা শুনেছি সবই সত্যি। অন্য একটি মেয়ের সাথে প্রায় দেড় বছর যাবত চলছে তার এই গোপন অনৈতিক সম্পর্ক। পুরো দুনিয়া থমকে গিয়েছিল আমার সামনে। কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। কারণ কোনদিন স্বামীর ব্যবহার থেকে এমন কিছুই আঁচ করতে পারিনি আমি। আমাদের সম্পর্কের মাঝেও কখনোই এমন কোন সমস্যা আসেনি যে সে এমন কিছু করতে পারে। কি করবো কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না। কার কাছে বলবো এই ভয়াবহ লজ্জার কথা?!

কয়েকটা দিন গোপনে শুধু কান্না করেছি আর আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়েছি। আমার মানসিক অবস্থা দেখে স্বামী খুবই অস্থির হয়ে পড়েছিল। বারবার জানতে চাইছিল কি হয়েছে আমার। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবার জন্য জোড়াজুড়ি শুরু করে দিয়েছিল। তখনো আমার ভাবতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো এত ভালোবাসা যার চোখে মুখে সে কেমন করে এমন করতে পারলো আমার সাথে? কেমন করে অন্য মেয়ের সাথে জড়ালো?!

শেষপর্যন্ত খুব কাছের এক বান্ধবীর কাছে খুলে বললাম মনের সব কথা। বান্ধবীটি খুবই প্রাক্টিসিং একজন মুসলিমাহ ছিলো। সে আমাকে সাহস দিলো। আল্লাহর উপর ভরসা রেখে ধৈর্য্য ধারণের পরামর্শ দিলো। বললো পরিবারকে না জানিয়ে আগে নিজেই স্বামীর সাথে কথা বলতে। যেহেতু আমার আর আমার স্বামীর মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল বিয়ের প্রথম থেকেই। আমি বান্ধবীর পরামর্শ মেনে নিয়েছিলাম। সরাসরি আমার সন্দেহের কথা স্বামীকে বললাম। প্রথমে সে অস্বীকার করলেও একসময় মেনে নিলো তার অনৈতিক কাজের কথা। খুবই অনুতপ্ত হয়েছিল সেদিন সে। বারবার আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলো। ভুলের পথ থেকে ফিরে আসবে এই ওয়াদা করলো।

আমি চাইনি আমার সংসারটা ভেঙ্গে যাক।

প্রথমত, আমার সংসার সুখেরই ছিল এই ঘটনা জানার আগে।

দ্বিতীয়ত, আমাদের তের বছর ও নয় বছর বয়সী দুটি ছেলে-মেয়ে ছিল। সংসার ভাঙ্গা মানে তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মাঝে ঠেলে দেয়া।

তৃতীয়ত, আমি স্বাবলম্বী কোন নারী না। বাবার বাড়িতেও আমার বোঝা তুলে নেবেন হাসিমুখে এমন কেউ নেই। আর সবচেয়ে বড় কারণ দীর্ঘ পনেরো বছরের সংসারের মায়া এত সহজে ছেড়ে দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না।

এরচেয়েও বড় কারণ স্বামীর প্রতি আমার ভালোবাসা নিখাদ ও পবিত্র ছিল। তাই সংসারটাকে টিকিয়ে রাখার জন্য যতটুকু ত্যাগ স্বীকার আমার পক্ষ থেকে করা সম্ভব ছিল আমি করেছি। এরপরের তিন-চার মাস ভালোই কেটেছে আমাদের। তারপর আবারো জানতে পারলাম যে আমার স্বামী ঐ পথ থেকে ফিরে আসেনি। সে এখনো মেয়েটির সাথে যোগাযোগ করেই চলছে। চলছে তাদের অনৈতিক সমস্ত কাজকর্মও। খুব ভেঙে পড়লাম তখন মানসিক ভাবে। মেয়েটির বয়স তেরো বছর। অনেককিছুই বুঝতে শিখেছিল ততদিনে। আঁচ করে ফেলেছিল কিছু একটা সমস্যা চলছে আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মাঝে। আবারো ছুটলাম সেই বান্ধবীর কাছে। ওর পরামর্শ মতো আপনার কাছে এলাম।

একদম চুপ করে কোন রকমের বাঁধা না দিয়ে ভদ্রমহিলার সব কথা শুনছিল নুসরাহ।

আরো কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, আপনার স্বামীর এমন অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ার পেছনে আপনার নিজের দায় কতটুকু সেটা কি কখনো ভেবে দেখেছেন?

চলবে…

 

শিশু ধর্ষণের আসামি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত

কক্সবাজারের চকরিয়ায় শিশুকে ধর্ষণ মামলার এক আসামি র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে।

শনিবার রাত ১টার দিকে চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের উলুবনিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে র্যাব জানায়।

নিহতের নাম আব্দুর রহিম (২০)। তিনি উলুবনিয়া এলাকারই বাসিন্দা। পাঁচ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে চার দিন আগে তার বিরূদ্ধে চকরিয়া থানায় মামলা হয়েছিল।

র্যাব জানায়, রহিমের অবস্থান জানতে পেরে র্যাব অভিযানে যায়। সেখানে অবস্থান নিয়ে থাকা সন্ত্রাসীরা র্যাব সদস্যদের দিকে গুলি ছুড়ে। আত্মরক্ষার জন্য র্যাব সদস্যরাও তখন পাল্টা গুলি চালান। কিছুক্ষণ গোলাগুলি চলার পর সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলে ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় একজনের লাশ পাওয়া যায়।

ঘটনাস্থল থেকে একটি দেশি বন্দুক ও তিন রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে বলেও র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

গত ২৬ মার্চ উলুবনিয়া এলাকার এক বাড়িতে পাঁচ বছরের একটি মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়। ওই সময় তার বাবা-মা বাড়ি ছিলেন না।

ওই ঘটনায় শিশুটির বাবা গত ২৮ মার্চ তাদের প্রতিবেশী যুবক আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় মামলা করেন।

রহিমের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। সুত্র: নয়াদিগন্ত।শু ধর্ষণের আসামি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত

কক্সবাজারের চকরিয়ায় শিশুকে ধর্ষণ মামলার এক আসামি র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে।

শনিবার রাত ১টার দিকে চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের উলুবনিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে র্যাব জানায়।

নিহতের নাম আব্দুর রহিম (২০)। তিনি উলুবনিয়া এলাকারই বাসিন্দা। পাঁচ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে চার দিন আগে তার বিরূদ্ধে চকরিয়া থানায় মামলা হয়েছিল।

র্যাব জানায়, রহিমের অবস্থান জানতে পেরে র্যাব অভিযানে যায়। সেখানে অবস্থান নিয়ে থাকা সন্ত্রাসীরা র্যাব সদস্যদের দিকে গুলি ছুড়ে। আত্মরক্ষার জন্য র্যাব সদস্যরাও তখন পাল্টা গুলি চালান। কিছুক্ষণ গোলাগুলি চলার পর সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলে ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় একজনের লাশ পাওয়া যায়।

ঘটনাস্থল থেকে একটি দেশি বন্দুক ও তিন রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে বলেও র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

গত ২৬ মার্চ উলুবনিয়া এলাকার এক বাড়িতে পাঁচ বছরের একটি মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়। ওই সময় তার বাবা-মা বাড়ি ছিলেন না।

ওই ঘটনায় শিশুটির বাবা গত ২৮ মার্চ তাদের প্রতিবেশী যুবক আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় মামলা করেন।

রহিমের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। সুত্র:নয়াদিগন্ত।

 

ঘরের নিত্যকার টুকিটাকি তথ্য

অপরাজিতা ডেক্স


ঘরের নিত্যকার প্রয়োজনীয় তথ্য এখন আর মেঝে বা দেয়ালেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, সৌন্দর্য ছড়াবে সর্বত্র। রান্নার সময় বা কোন কিছু সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে সচেতনায় যথেষ্ট।

পোড়া দুধে পানপাতা

দুধ পড়ে গেলে বা দুধ থেকে পোড়া গন্ধ দূর করতে হলে তাতে পান পাতা ফেলে কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নিন। পোড়া গন্ধ কেটে যাবে।

দুূধের সরে গন্ধ

বাড়িতে ঘি তৈরি করার জন্য দুধের সরটা বাটিতে ১/২ চামচ টক দই দিয়ে তার উপর রাখতে হবে। সরটা এমনভাবে রাখতে হবে যাতে পুরো দইটা ঢেকে যায়। এই ভাবে দই এর সাথে সর জমলে সর জমা যে গন্ধ হয় সেটা হবে না।

টাটকা ঘি

এক টুকরো সন্ধক লবণ ঘি এর শিশির মধ্যে রেখে দিন। এতে ঘি বেশি দিন টাটকা থাকবে, স্বাদেরও পরিবর্তন হবে না। ঘিয়ের গন্ধ বজায় রাখতে হলে ঘি রাখার শিশিতে এক টুকরো আখের গুড় রেখে দিন।

গোলমরিচের ব্যবহার

ভোজ্য তৈলে ৮/১০ টা আস্ত গোলমরিচ ফেলে দিন। তেল দীর্ঘদিন অব্যবহৃত হলেও ভাল থাকবে।

ঘন দই

দই পাতবার সময় দুধের সঙ্গে ১ চামচ কর্ণফ্লাওয়ার গুলে দেবেন। দই অনেক বেশি ঘন হবে।

সরিসার তৈল ও সোভা-বাই-কার্ব

গরু বা মোষের দুধ ঠিক সময় মতো গরম না করলে দুধ কেটে যাবার ভয় থাকে। দুধের মধ্যে দু-ফোঁটা সরষের তেল দিয়ে রাখলে দুধ যখনই ফোটান হোক না কেন দুধ কাটবে না। দীর্ঘ সময় বাইরে পড়ে আছে দুধ। ভয় হচ্ছে আঁচে বসালেই কেটে যাবে। আঁচে বসানোর আগে দুধে ১ চিমটি সোভা-বাই-কার্ব মিশিয়ে নিন। দুধ কাটবে না।তুলসীপাতা শুকনো গুঁড়া

তুলসীপাতা শুকিয়ে গুঁড়ো করে রাখুন। চা’ তৈরীর সময় দু-চিমটি লিকারে দিয়ে দেবেন। আরো ভাল স্বাদ আসবে। নানা রোগও আটকাবে।

খই সাথে চালের গুঁড়ো

চালের গুঁড়োর পিঠে করলে সাধারণত শক্ত হয়। পিঠে করার আগে যদি চালের গুঁড়োতে কিছুটা খই মাখিয়ে নেওয়া হয় তবে পিঠে নরম হয় এবং খেতেও ভাল লাগে।

 

আপনার শিশুকে চিনুন ৮ টি উপায়ে (পর্ব-১)

এ কে এম ওমর ফারুক


পাঁচ বছরের বর্ণকে নিয়ে বাবা-মার চিন্তার শেষ নেই যেন। বাবা চান মেয়ে হবে পাইলট বা ফ্যাশন ডিজাইনার আর মা চান ডাক্তার। আবার বাবা চান মেয়ে লেখাপড়া করবে ইংরেজী মাধ্যমে কিন্তু মা চান বাংলায় মেয়েকে পড়াতে। শুধু বাবা মা-ই নন, মামা-চাচারাও নেমেছেন এই যুদ্ধে। খালামণি চান বর্ণকে নাচ শেখাবেন, চাচুর ইচ্ছা বর্ণ হবে ক্রিকেটার। এ নিয়ে প্রত্যেকেই যাঁর যাঁর যুক্তি উপস্থাপন করছেন। কখনও বা রীতিমতো ঝগড়া লেগে যায়।

কিন্তু কেউই একবারও চিন্তা করছেন না যে, বর্ণর জন্য কোনটা উপযোগী? বর্ণ কি চায়? কোন বিষয়ের প্রতি বর্ণর আগ্রহ।
এটা শুধু একজন বর্ণর গল্পই নয়, আমাদের দেশে প্রায় প্রতিটি শিশুর ক্ষেত্রেই ঘটে এমন বিড়ম্বনা।

পরিবারের চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তে হাজারো শিশুর শৈশব ও কৈশোর হয়ে ওঠে দুর্বিসহ। বইয়ের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে চুরি করা হয় শিশুর শৈশব। পর্যাপ্ত মেধাশক্তি থাকা সত্ত্বেও শুধু ভুল সিদ্ধান্তের কারণে শিশু বেড়ে ওঠে অন্তঃসার শূন্যভাবে। তৃতীয় বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই দেখা যায় এই একই চিত্র।

পরিবারই শিশুর প্রথম পাঠশালা। এরপরই শিশু যায় স্কুলে। পরিবার যেমন চাপিয়ে দিতে চায় তেমনি নির্দিষ্ট কারিকুলামে অভ্যস্ত হওয়ার জন্য স্কুল বাধ্য করে ছোট শিশুদের। ফলে গতানুগতিক ধারায় অনেক শিশুই বাধ্য হয়ে এগিয়ে চলে। কিন্তু ভবিষ্যত হয়ে পড়ে দুর্বল। বাধাগ্রস্ত হয় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা-ছন্দময়তা।

শিশুর স্বাভাবিক ও সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য প্রথমে বুঝতে হবে শিশুটি কোন মনোবৃত্তির। সে কিভাবে শিখতে চায়। কি জানতে চায় বা কি বলতে চায়।

মানুষের ওপর গবেষণা করে অজানা পৃথিবীকে জানার বিভিন্ন উপায় সম্পর্কিত এক তত্ত্ব সর্বপ্রথম প্রদান করেন হাওয়ার্ড গার্ডনার। বহু বুদ্ধিমত্তা তত্ত্বের উদ্ভাবক হাওয়ার্ড গার্ডনার হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক।
তিনি অসংখ্য মানুষের জীবন পরিক্রমা ও মানসিক অবস্থার ওপর গবেষণা করে এ তত্ত্ব প্রদান করেন।

গার্ডনারের বহুবুদ্ধিমত্তা তত্ত্বের সকল মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে আটটি স্তরে ভাগ করা হয়। তাঁর মতে, পৃথিবীর সকল মানুষই বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় এই আটটি শিক্ষাগ্রহণ করে থাকেন। গার্ডনারের তত্ত্বগুলো নিম্নরূপ।

মৌখিক ও ভাষাবৃত্তীয় বুদ্ধিমত্তা :
শিশুদের ক্ষেত্রে লক্ষ করলে দেখা যাবে এই শ্রেণীর শিশুরা সাধারণত শুনতে পছন্দ করে, বলতে পছন্দ করে, পড়তে, লিখতে পছন্দ করে। সহজে বানান করে পড়ে। গল্প বলে, গল্প লেখে। স্বাবলিল ভাষায় বিষয়বস্তু উপস্থাপন করে। শব্দভান্ডার বেশি এবং সেগুলো যথাযথ ব্যবহার করে থাকে, গুছিয়ে কথা বলে। প্রখর স্মরণ শক্তির অধিকারী হয় এবং ভাল বক্তৃতা দিতে পারে।

যৌক্তিক ও গাণিতিক :
এই শ্রেণীর শিশুরা গুনতে আনন্দ পায়। বস্তুর সাহায্য ছাড়াই যে কোন বিষয়ে সহজে ধারণা পায়। সংক্ষিপ্ততা পছন্দ করে। যুক্তি দিয়ে বিচার করে। ধাঁধা ও অঙ্কের খেলা পছন্দ করে। সাজিয়ে ও গুছিয়ে বলতে পছন্দ করে। সমস্যা সমাধান করতে আনন্দ পায়। যুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে।

তথ্য সূত্রঃ ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত ও সম্পাদিত।

চলবে…

 

সন্তানকে আদরের নাম ধরে ডাকুন

আকলিমা ফেরদৌস আখি


আমি সাধারণত প্যারেন্টিং বিষয়ে পড়াশুনা করতে ভয় পাই। কারণ কোন আর্টিকেল বা বই পড়লেই অনুশোচনা আর আত্মগ্লানিতে ভুগতে থাকি-যা কিছু লেখা আছে তার কিছুই তো করছি না, আমি বোধহয় আদর্শ মা হতে পারব না, আমার সন্তানরা মানুষের মত মানুষ হবে তো! অথবা এখানে যে ভাবে লেখা আছে সে রকম তো করে দেখলাম কোন কাজ হচ্ছে না ইত্যাদি ইত্যাদি।

আবার মনে মনে এ বলেও সান্তনা দিই যে,একেক সন্তান একেক রকম সবার ক্ষেত্রে একই সূত্র হয়ত কাজ করবে না।

ঠিক সময়ে না খাওয়া,গোসল না করতে চাওয়া,পড়তে না বসা,মোবাইল নিয়ে বসে থাকা এধরনের কমন সমস্যা গুলো আমার জানা মতে সব মায়েরই আছে।আমারও আছে।

রাগ করা ,শাসন করা ,হালকা পিটুনি ,আদর করে বলা কোন কিছুতেই যখন কাজ হচ্ছিলো না ,তখন একদিন প্যারেন্টিং এর থিউরি অনুযায়ী (সন্তানদেরকে আদরের নাম ধরে ডাকুন) আমার মেয়েকে ডাকলাম ‌-”কইরে আমার মা কথা শোনা পাখি’!

দেখি এক ডাকেই মেয়ে হাজির, যেখানে অনেকবার ডাকলেও তার নিজের কাজ রেখে আসতে চায় না।
মেয়ে এসে বলল’- ‘আচ্ছা মা ,মা কথা শোনা পাখি কি?

আমি ওকে বললাম -মা কথা শোনা পাখি হলো সেই ছোট্টর মেয়ে যে সব সময় মায়ের কথা শোনে।’
ও খুশি হয়ে মাথা নাড়লো।
এরপরে যা হলো তা হলো, আমার মেয়ে আমার গলা জড়িয়ে ধরে বলল: ‘মা ওই ম্যাজিক ওর্য়াডটা আবার বলতো’!

আমি আবার বললাম -‘কইরে আমার মা কথা শোনা পাখি!’

এবং সত্যিই এই ডাকটি জাদুকরী শব্দেই পরিণত হয়ে গেল আমার আর আমার মেয়ের ক্ষেত্রে।

এখন এই একটি ডাক দিয়ে সব করানো যাচ্ছে। যখনই আমি বলি : কইরে আমার মা কথা শোনা পাখি ” তখনই সাথে সাথে মোবাইল বন্ধ হয়ে যায়,সময় মত খাওয়া, ঘুম, পড়া , মক্তবে যাওয়া সবই হয়ে যায়।

আলহামদুলিল্লাহ।

 

ধর্ষণ প্রতিরোধ

ডা. তাজুল ইসলাম


‘ধর্ষণ’ সুনামি বন্ধ করবে কে?
বিউটি, তনুদের আত্মা। আমাদের ক্ষমা করবে? ক্ষমার অযোগ্য এ কোন সমাজ, জাতি আমরা তৈরি করেছি?

কালের, ইতিহাসের প্রতিশোধ বড় নির্মম
হে রাষ্ট্র, হে সমাজ, তোমাকে এর দায় অবশ্যই নিতে হবে।

ধর্ষণ প্রতিরোধে প্রয়োজন ধর্ষণ সাংস্কৃতিকে উচকে দেয়, প্রশ্রয় দেয় তেমন সমাজকে ধর্ষণ বিরোধী, ধর্ষণ প্রতিরোধী সমাজে রূপান্তর করা।

এর জন্য গল্প, উপন্যাস, নাটক, সিনেমা,বিজ্ঞাপনে নারীকে “যৌন পণ্য” হিসেবে আকর্ষণীয় ভাবে উপস্থাপন বন্ধ করতে হবে। নারীকে “সেক্সুয়ালাইজড” করার কালচার বদলে ফেলে,তাকে “মানুষ” হিসেবে ভাবার সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে হবে। অন্য দিকে সমাজে যে সব মিথ্যা, বিশ্বাস ধর্ষণকে প্রশ্রয় দেয়, তেমন মিথ্যাগুলোকে ভেঙ্গে দিতে হবে।

তেমন কিছু প্রচলিত মিথ্যা হচ্ছে:

১। নারীর উগ্র পোশাক, চাল-চলন ধর্ষণকে উৎসাহিত করে
২। নারী ধর্ষিতা হতে চায়
৩। নারীর বুক ফাটে তো মুখ ফুটে না,তাই তাকে বার বার “আহ্বান” জানাতে হবে
৪।পুরুষরা অধিক যৌন-কাতর, তাই তারা নিজকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না
৫। ভূমি দস্যুদের মতন এই যৌন দস্যুদের মানসিকতা এই যে নারীর দেহের উপর সে “অধিকার প্রাপ্ত”( এনটাইটেলমেন্ট)
৬। একবার শারীরিক সম্পর্ক হওয়া মানে পরবর্তীতে ও সে অধিকার থাকবে
৭। রাত- বিরাতে নারীর একাকী চলাফেরা ধর্ষণের অন্যতম কারণ
৮। ধর্ষিতার শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই, তাই তার নীরব সমর্থন ছিল- ইত্যাদি ভ্রান্ত বিশ্বাস সমাজ থেকে দূর করতে হবে।

এছাড়া ও ধর্ষণ সংস্কৃতি পরিবর্তনে আরো যা যা করতে হবে:
৯। ধর্ষণ প্রতিরোধে শুধু নারীকে সতর্ক থাকতে বললে হবে না,পুরুষকেও “ধর্ষণ করবে না” এই বার্তা বার বার দিতে হবে
১০। পরিবার, সমাজে অন্যের “অনুমতি/ সম্মতি” নেওয়ার (কনসেন্ট)কালচার তৈরী করতে হবে
১১। প্রচার মাধ্যম, ভিডিওতে যৌন সুরসুরি দেওয়া প্রোগ্রাম বন্ধ করতে হবে
১২।পৌরুষত্বের সনাতনী ধারণায় পরিবর্তন আনতে হবে
১৩। ধর্ষণ “প্রাকৃতিক” ব্যাপার এ ভুল ধারনা ভেঙ্গে একে “অপরাধ” ও নারীর প্রতি “সহিংসতা” হিসেবে দেখতে হবে
১৪। ধর্ষণ মানে ধর্ষণ, প্রেম-বন্ধুত্বের নামে একে “বৈধতা” দেওয়ার চেষ্টা করা যাবে না
১৫। চোখের সামনে ধর্ষণ হচ্ছে অথচ নির্বিকার, নিষ্ক্রিয় থাকার কাপুরুষতা পরিহার করতে হবে
১৬। সামাজিক/আইনগত হয়রানি, অসম্মানের ভয়ে ধর্ষণের ঘটনা লুকিয়ে রাখা যাবে না।

ডা. তাজুল ইসলাম
অধ্যাপক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা।

 

বিষ

ফাতিমা মারিয়াম


-বাবারে, মানুষ যেসব কথা বলে সেগুলো আর শুনতে ভালো লাগে না! তুই এবার বউমার বিষয়টা ভালো করে মিটিয়ে ফেল।

-কি বলছ তুমি মা?

-ঐ যে তোর বন্ধুর ছোট ভাইটা আসে না? ওর সাথে বৌমার মেলামেশা কেউ ভালো নজরে দেখে না! আর বিষয়টা কেমন লাগে? একটা পর পুরুষ প্রতিদিন তোর বাসায় আসে!

-মা তোমরা যা ভাবছ আসলে বিষয়টা তা নয়। পরিচিত মানুষ তাই বাসায় আসে।

-তুই যখন বাসায় থাকিস না তখন আসার দরকার কি? আগেতো এই বিষয়টা শুধু তোর বাসাতেই সীমাবদ্ধ ছিল। এখন গ্রামের আত্মীয় স্বজনরাও জেনে গেছে আমরা গ্রামে মুখ দেখাতে পারিনা! মানুষের মুখতো আর বন্ধ রাখতে পারিনা!

-বাদ দাও তো মা এসব কথা। তোমার বৌমা সংসারের জন্য কত কষ্ট করে দেখ না? বাচ্চাদের স্কুল, কোচিং এ আনা নেয়া, ওদের দিকে খেয়াল রাখা সবতো ও-ই করে, না?

-এসব তো সব মা-ই তার বাচ্চার জন্য করে, তাই বলে তুই বউকে এইভাবে চলার ব্যাপারে কিছুই বলবি না?

-মা আমি সেই সকালে অফিসে যাই, সন্ধ্যার পরে ফিরি সারাদিন ওকে একা একা কত কাজ করতে হয়, কত জায়গায় যেতে হয়, সাথে একজন কেউ থাকলে ওর জন্যই তো সুবিধা, তাই না? এসব কথায় কান দিও না।।

এইভাবে কিছু মানুষ জেনেও না জানার ভাণ করে, দেখেও না দেখে পরকীয়া নামক বিষবৃক্ষ রোপণ করে যায়।

 

‘ভুল চিকিৎসায় এবার চিকিৎসকের মৃত্যু’ চলুন বিদেশ যাই

ডা. সাকলাইন রাসেল


প্রিয় ডাঃ মুজিবুর রহমান ভুইয়া স্যারও কি তবে চিকিৎসকের অসতর্কতায়(পড়লেন ভুল চিকিৎসায়) অকালেই চলে গেলেন!

কিডনিতে ক্যানসার ধরা পড়েছিল। প্রাথমিক পর্যায়। অপারেশন করাবেন, সুস্থ হবেন। চলে আসবেন। ২৪ মার্চ এ্যাপোলো হাসপাতালে নিজের সব রোগী দেখেছেন, জরুরী চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন!

একবার ভেবে দেখুন শারিরীকভাবে কতটা ফিট ছিলেন তিনি! ২৫ মার্চ সিঙ্গাপুরের মাউন্ড এ্যালিজাবেথে গেলেন। ২৬ মার্চ অপারেশন টেবিলে ঢুকলেন। ল্যাপারোস্কপিক কিডনি অপসারণ। অপারেশন চলাকালীন সময় শিরায় (Inferior Vena Cava) ইঞ্জুরি হল। ব্লিডিং কেউই আর সে ব্লিডিং থামাতে পারলেন না। তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। মুহুর্তেই এ খবর ছড়িয়ে পড়ল সারাদেশে।

শোকে কাতর আমরা। কিছুতেই মানতে পারছিনা এ চলে যাওয়া! মৃত্যু আসবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সব মৃত্যুরই একটা ব্যাখ্যা থাকে। সে ব্যাখ্যায় যদি গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া যায় তবে আমরা কিছু বলতে চাই। ঠিক কিছু না, অনেক কিছু।

কারণ, এসব অপারেশন এদেশের ইউরোলজিস্টরা অত্যন্ত সফলভাবে করছেন। আগে থেকে ব্লিডিং এর জটিলতার কথা মাথায় রেখে তারা অনেকসময় আমাদের মত ভাসকুলার সার্জনদের টীমে রাখেন। কারণ, ভাসকুলার সার্জন পাশে থাকলে শিরা ইঞ্জুরিজনিত জটিলতা সহজে ম্যানেজ করা যায়। পুরো এশিয়ার ভাসকুলার সার্জারীর প্রেসিডেন্ট পিটারের চেম্বারও এই মাউন্ড এলিজাবেথই। তবুও কেন এ জটিলতা ম্যানেজ করা গেল না। বলছি না, আমরা করলে জটিলতা হত না কিংবা একেবারেই হয় না। শুধু এতোটুকু বলতে চাই, প্রেশার মাপতেও যেদেশের মানুষ সিঙ্গাপুরে দৌড়ায় সেখানে কেন এমন দূর্ঘটনা ঘটবে? ছেঁড়া কাঁথার নিচে শুয়ে ঠাণ্ডা বাতাসকে আলিঙ্গন করতে আমার সংকোচ নেই। কিন্তু অট্টালিকায় বসে কেন ঠান্ডায় কাঁপব?

শ্রদ্ধেয় হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যু নিয়েও আমরা কিছু বলিনি। কোন সাংবাদিককে সেটা নিয়ে হৈচৈ করতেও দেখেনি। কিন্তু আমরা এখনো মনে করি। তাঁর মৃত্যু হয়েছিল অপারেশন পরবর্তী জটিলতায়।এ জটিলতার জন্য সেখানকার সার্জনদের অতি কনফিডেন্স দায়ী ছিল। কারণ, Large Gut Anastomosis (অন্ত্র কেটে জোড়া লাগা) হয়েছিল সরাসরি। কোন Coverage Colostomy করা হয়নি। ফলাফল, Anasotomosis বা জোড়া লাগানোর জায়গা দিয়ে লিক হয়ে যায় এবং তিনি আমাদের কাঁদিয়ে চির বিদায় নেন।

সেসময়ের পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য ও উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এদেশের চিকিৎসকরা তাই হুমায়ন আহমেদ এর জন্য অনেক বেশি কেঁদেছেন। আফসোস করেছেন!
কারণ, সেই অপারেশন বাংলাদেশে অত্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন হয়। এমন অপারেশন প্রতিদিনই এদেশে হয়।!
ভাবুন তো একবার। হুমায়ুন স্যারের মৃত্যু যদি বাংলাদেশে হত। বাংলাদেশী কোন সার্জনের অপারেশন পরবর্তী জটিলতায় যদি তিনি মারা যেতেন? সেই চিকিৎসক বা হাসপাতালের অবস্থা কি হত একবার, ভাবেন তো?
কিন্তু কিছুই হয়নি। কেন হয়নি?

কারণ, দেশটি আমেরিকা। সার্জনরাও আমেরিকান। এককথায় বিদেশ ও বিদেশী সার্জন, আমরা তাই নিশ্চুপ ছিলাম! তাঁর পরিবারও হয়ত এটাকে নিয়তির লেখা মনে করেই মেনে নিয়েছিলেন! অথচ এখনো আমরা তাঁকে খুঁজি। তাঁর লেখাকে খুঁজি! এ খোঁজা শেষ হবে না কোনদিন!

আজ যেমন খুঁজছি অত্যন্ত বিনয়ী, মেধাবী, মানুষ তৈরীর কারিগর অধ্যাপক ডাঃ মুজিবর রহমান ভুঁইয়া স্যারকে! দেশের একজন সফল খাদ্য ও পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞ। ঢাকা মেডিকেলের ক-৩৭ ব্যাচের প্রাক্তন ছাত্র। শুধু তাই নয়, ঢাকা মেডিকেলের ছাত্রদের নিয়ে যেতেন বঙ্গভবনে। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বি চৌধুরী দরবার হলেই স্টুডেন্টদের ক্লাশ নিতেন। অভিনব এ উদ্যোগের ছাত্র হিসেবে বঙ্গভবনে ক্লাশ করার সৌভাগ্য হয়েছিল আমিসহ অনেকের।

কথা হল, বারডেম হাসপাতালের ইউরোলজির অধ্যাপক ডাঃ এটিএম মাওলাদাদ চৌধুরীর সাথে, তিনি অনেকটা বিলাপের সুরে বললেন,‘সাকলায়েন, একটাবার যদি জানাতেন উনি সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন অপারেশন করাতে তবে আমি ওনাকে বেঁধে রাখতাম…। আহারে, কনফাইন্ড একটা টিউমার। অপারেশন করে ফেলে দিবে। ঝামেলা শেষ। প্রতিদিন কত করছি। ১০ বছর পরও অনেকে আসছেন ফলোআপে। কত ভাল আছেন। আর উনি চলে গেলেন একেবারে বাজে ম্যানেজমেন্টের শিকার হয়ে’।

ফোন দিয়েছিলাম (২৮ মার্চ, দুপুর ১২ টায়) বিদেশে অবস্থানরত সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের কান্ট্রি ম্যানেজারকে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে জানালেন, এখনো সিঙ্গাপুর সরকার মৃত্যুর কারণ ঘোষনা করেননি। ময়নাতদন্ত শেষে রিপোর্ট তাঁর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

রিপোর্ট যাই থাক…আমরা উপযুক্ত ব্যখ্যা চাই…পরিবারের জন্য উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ চাই।
না থাক, কিচ্ছু করার দরকার নাই।
বিদেশতো!

সহকারী অধ্যাপক, ভাসকুলার সার্জারী
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক, বারডেম।

 

রোগগল্প

ডা.সাকলায়েন রাসেল


“ডাক্তার মানুষকে বাঁচাতে পারে না
মানুষের বেঁচে থাকাটাকে সুন্দর করতে পারে।”

ভাগ্য কিভাবে মানুষকে নিয়ে খেলে আসেন আজ দেখে নেই। সেদিন একটি ছেলে পড়েছিল ছিনতাইকারীর কবলে। যা ছিল সব তুলে দিয়েছিল তাদের হাতে। প্রতিবাদ করেনি। কারো সাহায্যের জন্য চিৎকারও করেনি। তবুও, ছিনতাইকারী চলে যাওয়ার সময় খুর দিয়ে তার ডান বাহুতে হালকা একটা টান দেয়। মুহূর্তেই কেটে গিয়ে রক্ত বের হতে থাকে।

নিকটস্থ একটি ফার্মেসিতে দৌড়ে গিয়ে সে রক্ত বন্ধের চেষ্টা করে। দোকানদার ‘কাম ডাক্তার’ তাঁর হাতে ব্যান্ডেজ দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দেয়। তবুও রক্ত বন্ধ হয় না।গড়িয়ে গড়িয়ে ব্যান্ডেজ ভিজে যেতে থাকে। অতপর একটা স্যালাইনের তার দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দেয় ব্যাস, রক্ত পড়া বন্ধ। এরপর রোগীকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়।

ঢাকার বাইরের সে হাসপাতাল থেকে তাকে ঢাকায় রেফার করা হয়। সেদিন ভাসকুলার সার্জারী বিভাগে আমার ডিউটি ছিল। প্রথমে আমি সামান্য কাঁটা ভেবেছিলাম ব্যান্ডেজটাকেও খুব একটা খারাপ মনে হয়নি। কিন্তু যখন খুলতে গেলাম। অবাক হয়ে দেখলাম।ব্যান্ডেজের ঠিক নিচেই স্যালাইনের তার দিয়ে শক্ত করে বাঁধা। স্যালাইনের তার নিচ থেকে হাতটা কালচে হয়ে গেছে। আপনারাও শরীরকে হাতের সাথে মেলালে কালো হয়ে যাওয়া বিষয়টি স্পষ্ট বুঝতে পারবেন।

ফলাফল রোগীর হাতটিই কেটে ফেলতে হয়েছিল! কেন হাতটি কেটে ফেলতে হয়েছিল?

খুর দিয়ে হালকা গর্ত হয়ে কেটে গিয়েছিল। তাতে শিরা (দেহের উপরিভাগের রক্তনালী) কেটে গিয়ে রক্ত পড়ছিল। হালকা টাইট করে ব্যান্ডেজের চাপ দিয়ে। কিংবা শিরাটি চিহ্নিত করে বেঁধে দিলে এমনিতেই রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যেত।

কিন্তু স্থানীয় “কোয়াক চিকিৎসক” স্যালাইনের তার দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দেয়ায় তাঁর মূল ধমনীও (দেহের গভীরের রক্তনালী) বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় রক্ত সরবরাহ। এভাবে একটানা প্রায় ৬ ঘন্টা রক্ত সরবরাহ বন্ধ থাকায় হাতটি মারা যায়। সে কারণে বাহু থেকে পুরো হাত কেটে ফেলা ছাড়া আর উপায় ছিল না!

ক’টি অনুরোধঃ
১। কেটে বা ছিঁড়ে গেলে অতিরিক্ত টাইট ব্যান্ডেজ দেয়া থেকে বিরত থাকুন
২। চিকন ব্যান্ডেজ না দিয়ে চওড়া করে ব্যান্ডেজ দিন। প্রয়োজনে ব্যান্ডেজের নিচে তুলা ব্যবহার করুন।
৩। সাপে কাঁটলে একই কারণে দড়ি জাতিয় জিনিস দিয়ে না বেঁধে হালকা চাপে মোটা কাপড় যেমন মাফলার/ওড়না/গামছা দিয়ে বাধুন এতে প্রত্যাশিত শিরাপথ বন্ধ হয়ে বিষ ছড়ানো বন্ধ হবে।কিন্তু ধমনী বন্ধ হবেনা। ফলে পা হারানোর ঝুঁকিও থাকবে না।

সহকারী অধ্যাপক, ভাসকুলার সার্জারী
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক, বারডেম।

 

প্রিয় স্বদেশ


ডা. ফাতিমা খান


তোমার ৪৭ বছরের প্রৌঢ়ত্বের অবয়বে আমরা এক থুড়থুড়ে, অসহায় বৃদ্ধাকে দেখি।
কিন্তু এমনটা কি হওয়ার কথা ছিল?
তোমার ষোল কোটি সন্তানের অনেক আশা অনেক ভালবাসার আধার তুমি।
লাল সবুজ পতাকাটা তোমার জন্য ছিনিয়ে আনতে তোমার সবুজ আচল বুকের টকটকে লাল রক্তে রাঙিয়ে দিয়েছিল তোমার সন্তানরা, দু’বার ভাবেনি!
শুধু এক বুক আশা আর দুচোখ ভরা স্বপ্ন ছিল,
তুমি স্বাধীন হবে!
আর একটি ফুলও ঝরবে না!
রোদ ঝলমলে আকাশের নিচে সবুজ মাঠে ছুটে বেড়াবে প্রফুল্ল শিশু কিশোরের দল,
হাড্ডিসার অনাথ শিশুটা থালা হাতে দ্বারেদ্বারে ফিরবে না।
আর একটি মা ও হারাবে না তার নাড়িছেঁড়া ধন!
দুস্বপ্নে ভরা নিকষ কালো রাতগুলোর কথা ভুলে যাবে ভয়ে জবুথবু হয়ে থাকা নিষ্প্রাণ কুমারীরা!
স্বপ্নিল চোখগুলো বিষন্নতায় আর মুদবে না ।
আসবে আলো, ঘুচে যাবে অন্ধকার!
কিন্তু দেখ!
এতগুলো বছর পরও এই আমরা, তোমার সন্তানেরা স্বাধীনতা খুঁজি।
অনেক পরে হলেও বুঝি,
তোমার এই ছোট্ট অবয়ব আজন্ম পরাধীন ছিল, আজো আছে।
ভাল থেকো প্রিয় দেশ!

 

সারপ্রাইজ

আফরোজা হাসান


টিভিতে নতুন একটা কমিকসের অ্যাড দেখার পর থেকে সেটা কেনার জন্য ঘ্যানঘ্যান শুরু করেছে আমার পুত্র। কমিকসের সাথে আবার একটা খেলনা ফ্রি। নাকীবের মূল আগ্রহ কমিকসের সাথে দেয়া সেই খেলনার উপরই ছিল। সেজন্যই কিনে দিতে চাইছিলাম না। কিন্তু রোজই নানান যুক্তি পেশ করতে লাগলো কেন কমিকসটা সে কিনতে চায়। পরীক্ষাতে ভালো করার পুরস্কার হিসেবে কমিকসটা চাইলে শেষ পর্যন্ত হার মেনে নিলাম। নিয়ে গেলাম ওর বহু আকাঙ্ক্ষার সেই কমিকস কিনে দেবার জন্য।

কিন্তু দোকানে ঢুকতেই নাকিবের চোখ চলে গেলো অন্য একটি প্যাকেটের দিকে। সেটা ছিল একটা সারপ্রাইজ প্যাকেট। মানে খুব সুন্দর করে প্যাকেট করা কিন্তু ভেতরে কি আছে সেটা দেখার কোন উপায় নেই। বহু আকাঙ্ক্ষার কমিকস রেখে তো তখন সেই সারপ্রাইজ প্যাকেট নেবার ইচ্ছে পোষণ করলো পুত্ররত্ন। আমি ওকে ভালো মত চিন্তা করে দেখতে বললাম। কিন্তু পুত্রের মাথায় তখন সারপ্রাইজ ঢুকে গিয়েছে। শেষমেশ সেই সারপ্রাইজ প্যাকেটই কিনে দিলাম ওকে। ভেতরে মহা মুল্যবান কিছু অপেক্ষা করছে এমনই ধারনা মনে নিয়ে খুশিতে টগবগ করতে করতে দোকান থেকে বের হলো।

“চকচক করিলেই সোনা হয় না” এই প্রবাদ পুত্রের জানা না থাকলেও আমার জানা ছিল। কিন্তু সেভাবে করে মনে আসেনি তখন। প্যাকেটের ভেতর কি আছে সেটা নিয়ে আমি নিজেও কিছুটা কৌতুহলি ছিলাম। আর পুত্রের চোখ তো ঝলঝল করছিল না জানি ভিতরে কত সুন্দর সারপ্রাইজ প্রতিক্ষারত। বাসা পর্যন্ত আসার অপেক্ষাও করতে চাইছিল না সেটা চেহারা দেখে বুঝতে পারছিলাম। অনুমতি দেবার সাথে সাথেই বিরাট একটা হাসি দিয়ে খুলতে শুরু করলো প্যাকেট।

প্যাকেটের ভেতর থেকে যা বের হলো তা দেখে বিরাট একটা ঢাক্কা খেলো বাচ্চা আমার। সারপ্রাইজ ছিল একটি প্যাকেটের মধ্যে পেন্সিল, ইরেজার, শার্প্নার, ছোট্ট একটি ডায়েরী আর একটি কমিকস। তাও সেই ব্র্যান্ডের কার্টুনের যেটা একদম ছোট বাচ্চাদের। আর নিজেকে বড় ভাবা আমার আদরের পুত্র যেই কার্টুনটি দেখতে নারাজ। জিনিসগুলো স্পাইডারম্যান, গোরমিটি, স্পঞ্জ বব ইত্যাদি ব্র্যান্ডের হলে হয়তো মনখারাপ একটু কম করতো। সত্যি ওর চেহারার দিকে তাকিয়ে ভীষণ মায়া লাগছিল।

আমার একটা কিছু ভুল হলেই সেটা নিয়ে আমাকে ঘুরে ঘুরে লেকচার দেয় এই দুষ্টু ছেলে। তাই ওর সাথে একটু দুষ্টুমি করার লোভ সামলাতে পারলাম না। হাসি দিয়ে বললাম, ওয়াও কি সুন্দর সবকিছু। তোমার পছন্দ হয়েছে তো বাবুতা? পারলে চিৎকার করে কান্না করে এমন অবস্থায় আমার কথা শুনে জোড় করে মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলতে দেখে অনুভব করলাম ‘জীবন নামক নাট্যশালায়’ পদার্পন করতে শুরু করেছে আমার পুত্র। অর্থাৎ,পুত্র আমার সত্যিই বড় হচ্ছে। তাই তো হাসির আড়ালে নিজের মনের প্রকৃত অবস্থা গোপন করার চেষ্টা করছে।

কাছে টেনে নিয়ে বললাম, মনখারাপ করো না বাবা আম্মুতা তোমাকে তোমার পছন্দের সেই কমিকসটা কিনে দেব ইনশাআল্লাহ। চেহারাটা তখন উজ্জ্বল হয়ে উঠলো বলল, আম্মুতা এটা ফেরত দেয়া যাবে না? বললাম, তুমি তো প্যাকেট খুলে ফেলেছো তাই এখন আর ফেরত দেয়া যাবে না। এজন্যই তো তোমাকে বলেছিলাম ভালো ভাবে চিন্তা করে নিতে। ভুল বুঝতে পেরেছে এমন স্বরে বলল, হু ভুল হয়ে গিয়েছে। আমার ঐ কমিকটাই কেনা উচিত ছিল। কবে থেকে কিনবো ভাবছি। কেন যে এটা কিনতে গেলাম! হাসি মুখে বললাম, থাক যা হবার তা তো হয়েই গিয়েছে। এটা নিয়ে এখন আর মন খারাপ করতে হবে না। এরপর থেকে চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।

বিকেল বেলা সুপার মার্কেটে গিয়ে পুত্র কোকো পাউডার কেনার বায়না ধরলো। চকলেট খুব একটা পছন্দ করে না সে। আর চকলেট দুধ তো ওর জানের দুশমন তাই চকলেট দুধ কেনার কথা বলতে দেখে বেশ অবাক হলাম। প্যাকেট হাতে নেবার পর বুঝলাম কিনতে চাইবার রহস্য। প্যাকেটের গায়ে লেখা ভেতরে খেলনা আছে। ওকে তখন দুপুরের সেই সারপ্রাইজের কথা মনে করিয়ে দিলাম। বিনা
তর্কে তাড়াতাড়ি প্যাকেট জায়গায় রেখে দিল। ফেরার পথে ওকে বোঝাতে বোঝাতে এলাম যে “চকচক করলেই সোনা হয় না”। এখন প্রতীক্ষা ভবিষ্যতে আবারো যদি কখনো এমন কোন পরিস্থিতিতে পড়ে তখন কিভাবে সিদ্ধান্ত নেয়।

আলহামদুলিল্লাহ আমি সবসময় চেষ্টা করি আমার সন্তান যাতে মনের এবং দেহের উভয় দৃষ্টি সবসময় খোলা রেখে জীবনের পথে চলে। যাতে একই গর্তে কখনোই দু’বার হোঁচট খেতে না হয় ওকে, একই ভুল যাতে বার বার না করে। তাই ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র বিষয় নিয়েও ওর সাথে কথা বলি, আলোচনা করি। ঐ বিষয়টাকে নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে উৎসাহিত করার চেষ্টা করি।

কারণ আমি চাই আমার সন্তান চিন্তাশীল হয়ে বেড়ে উঠুক। জীবনকে শুধু যাপন করে না যাক, সাথে সাথে উপলব্ধিও করুক। ভুলকে ভুল ভেবে ভুলে না যাক, বরং ভুল থেকে শিক্ষা খুঁজে নিয়ে চলার পথের পাথেয় সংগ্রহ করুক।

 

স্বাধীনতায় ফোটে ফুল জীবনে

আখতারুজ্জামান সেলিম


স্বাধীনতা নয় শুধু বচনে
ফাকা বুলি আর শুধু ভাষণে,
স্বাধীনতা হলো আম জনতার
নিজেদের শাসনের চয়নে।
স্বাধীনতা নয় শুধু শোষণের
গাড়ী বাড়ী আর ভুঁড়ি ভোজনের।
স্বাধীনতা মানে হলো সাম্য
নির্ভয়ে বেচে থাকা কাম্য।
স্বাধীনতা পাখিদের আকাশে
বারুদের ধোঁয়াহীন বাতাসে।
স্বাধীনতা নয় শুধু স্বাধীনে
স্বাধীনতায় ফোটে ফুল জীবনে,
স্বাধীনতা আমাদের মননে
আমি থাকি আমরই অধীনে।
স্বাধীনতা নয় শুধু ইথারে
টিভি আর দৈনিক খবরে,
স্বাধীনতা আলো দিক আঁধারে
কৃষকের শ্রমিকের কুঠিরে।
স্বাধীনতা নয় কারো অধীনে
স্বাধীনতা নয় শুধু স্বাধীনে,
স্বাধীনতা আমাদের মননে
আমি থাকি আমারই অধীনে।

 

ববিতার আহ্বান “সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে আসুন দাঁড়াই”

গত ২৩ মার্চ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অধিকার আদায় ও শিশুশ্রম রোধে সচেতনতামূলক কনসার্ট ‘কনসার্ট ফর চিলড্রেন’র আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ডিসট্রেস চিলড্রেন অ্যা- ইনফ্যান্টস ইন্টারন্যাশনাল-ডিসিআইআই।

সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে দাঁড়াতে আহ্বান জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নায়িকা ববিতা। এই অনুষ্ঠানে ডিসিআইআই’র গুলউইল অ্যাম্বাসেডর হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চিত্রনায়িকা ববিতা। অনুষ্ঠানের শুরুতেই আমন্ত্রিত অতিথিদের উদ্দেশ্যে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে দাঁড়াতে সবাইকে উৎসাহিত করেন।

ববিতা বলেন, ‘প্রায় দশ বছর যাবত ডিসিআইআই’র গুডউইল অ্যাম্বাসেডর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরেও ডিসি আই আই’র হয়ে আমি আমার দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করে আসছি শুরু থেকেই।

যারা আমাকে এমন একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত রেখেছেন তাদের প্রতি আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। গত শুক্রবার ডিসিআইআই আয়োজিত অনুষ্ঠানে সবার আন্তরিক অংশগ্রহণ আমাকে মুগ্ধ করেছে।

আমি বিশ্বাস করতে ভালোবাসি যে আমরা চাইলেই যার যার অবস্থানে থেকে আমরা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে দাঁড়াতে পারি। সবাই পাশে দাঁড়ালেই সুবিধাবঞ্চিত শিশুরাও মানুষের মতো মানুষ হয়ে উঠবে। আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হবে তারাও।’

ডিসিআইআই’র প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক ড.এহসান হক বলেন, ‘ববিতা আপা শুরু থেকেই ডিসিআইআই’র সাথে আছেন। তিনি সবসময়ই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য স্বপ্রণোদিত হয়েই কাজ করছেন।’ ডিসিআইআই এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অধিকার আদায়ে বিশ্বব্যাপী জনসচেতনতা সৃষ্টির করার মধ্য দিয়ে দারিদ্র বিমোচন করা।

ড. এহসান জানান ডিসিআইআই’র নিজস্ব অর্থায়নে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ৫০জনেরও বেশি এতিম শিশুদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষার সুযোগ দেবার পাশাপাশি দেশের সরকারী, বেসরকারী এই ধরনের প্রতিষ্ঠানে আর্থিক সহযোগিতা করে থাকে। এটা শুধু ঢাকায়ই নয় ঢাকার বাইরেও এই ধরনের সহযোগিতা করে থাকে ডিসিআইআই।

শুক্রবারের সচেতনতামূলক কনসার্টে সঙ্গীত পরিবেশন করেন সাবিনা ইয়াসমিন’সহ আরো অনেকে।
ছবি: দীপু খান

 

এক স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রহর গুনছি

ফাতিমা শাহীন


অনেকদিন ধরেই মেলবোর্ন বৃষ্টিবিহীন। সামার এখন শেষের পথে। গাছের পাতার সবুজ রঙের পেলবতাও উধাও সেই সঙ্গেই। বাগানের ছিটেফোঁটা শাকসবজির শেকড়ের তৃষ্ণা যেন মিটছিলো না হোস পাইপের মেপে দেয়া পানিতে। একটা বৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা তাই ছিল সবার অন্তরে।

আজকের ওয়েদার ফোরকাস্টে বৃষ্টির সম্ভাবনা ছিলো। চাতক মন তাই ছিল বৃষ্টির, আকাঙ্ক্ষায় উন্মুখ। তবুও ভোর সকালে আকাশের মেঘলা মন দেখে মনেও মেঘ এসে ভর করলো যেন। কি যে হবে! সব ঠিকঠাক থাকবে তো! কারণ আজকে MMC ( Melbourne Multicultural Centre) তে কংক্রিট ঢালাই হবে। পানিতে কোন সমস্যা না হয়ে যায়! একসময় শুরু হল মুষলধারে বৃষ্টি। আকাশে মেঘ রাজ্যের কোন শেষ দেখতে পাচ্ছি না। একসময় শেষ হল বৃষ্টি। মেঘ কেটে ঝলমল করে উঠল সূর্য। দেখতে গেলাম কাজ কেমন এগোচ্ছে। বুকের ভেতর দুরু দুরু। একশোটা ঢাক যেন একসঙ্গে বেজে চলেছে অন্তরে।

MMC চত্বরে ঢুকে তাকাতেই চোখ জুড়িয়ে এলো, মন প্রশান্ত হল। ঢালাই শেষে পরবর্তী কাজ করে চলেছেন নির্মাণ কর্মীরা। চারিদিকে কি প্রশান্ত পরিবেশ! ঘুরে ঘুরে বেড়ালাম সবদিকে, মহিলাদের নামাজের স্থানের দিকে এগুতেই কেন যেন অকারণেই বুক হু হু করে উঠল। এই নির্মাণ কাজ শেষে এখানে যখন বোনদের অবনত শির আল্লাহর দিকে সিজদাবনত হবে, তার মধ্যে একজন হিসেবে কি আল্লাহ আমায় কবুল করবেন!

চতুর্দিকে নির্মাণ সামগ্রীর নানারকম শব্দ, কিন্তু তার ভেতরেই সাদা সাদা প্রজাপতিরা যৎসামান্য হয়ে ফুটে থাকা জংলী ফুলগুলোয় উড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে পরম নিশ্চিন্তে। আমার তখন কেবলি মনে হচ্ছিল, প্রকৃতি ও বাস্তবের এমন নিবিড় মেলবন্ধন আমাদেরকে প্রতি মুহূর্তে যেন স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিল, বাস্তবতায় আমরা যতই আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকি না কেন, রবের রুবুবিয়াতের কাছে , তার সৃষ্ট প্রকৃতির কাছেই আমাদের আত্মসমর্পণ অবশ্যম্ভাবী।

সকালের বৃষ্টিতে ভেজা পথ , এখানে ওখানে অল্পস্বল্প পানি জমে আছে। ভেজা বালিতে পা ছোঁয়ালাম। আজ এখানে আমার পায়ের চিহ্ন, সেই দিন দূরে নেই , যেদিন আমাদের প্রজন্ম আমাদের জায়গায় স্থলাভিষিক্ত হবে ইনশাআল্লাহ। আমাদের কাজের দায়িত্ব বর্তাবে তাদের হাতে। তাদেরকে এখন থেকেই এই কাজের উপযুক্ত করে গড়ে তুলি। এই মসজিদের জন্য আমাদের হৃদয় গহীনে জমে থাকা একসমুদ্র ভালোবাসার উথাল পাথাল ঢেউ এর শব্দ যেন তারাও শুনতে পায়।

তাদের ভেতরে দানের অভ্যাস এখন থেকেই গড়ে তুলি। আমাদের সবরকম নেক পরিকল্পনা এবং তার বাস্তবায়ন প্রচেষ্টা , আমাদের সন্তানদের দ্বীনের প্রতি ভালোবাসা ও আমলে সালেহের প্রতি অকুণ্ঠচিত্তে এগিয়ে যাওয়া আমাদের অন্ধকার কবরে আলো ছড়াতে থাকবে কিয়ামত পর্যন্ত, ইনশাআল্লাহ।

 

সলিমুল্লাহ মেডিকেলে ‘গর্ভাবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা’ বিষয়ক এক বৈজ্ঞানিক আলোচনা

অপরাজিতা ডেক্স


মানসিক সমস্যাগ্রস্থ মায়ের গর্ভকোষে শিশুর সুরক্ষায় ব্যবহৃত নিরাপদ ঔষধসমূহ ও বয়ঃসন্ধিকাল, গর্ভাবস্থা ও রজঃনিবৃত্তি জনিত মানসিক রোগের উপসর্গ সমূহ নিয়ে সম্প্রতি এক বৈজ্ঞানিক আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়ে গেল গত ২১শে মার্চ (বুধবার) রাজধানীর ২য় বৃহত্তম সরকারী মেডিকেল কলেজ স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে,উক্ত কলেজের মানসিক বিভাগের সাইকোথেরাপী ইউনিট এর উদ্দ্যোগে নিম্নোক্ত বিষয়াদির বিষদ বর্ননা করা হয়,
1)Peri-partum disorders & its causes with Management
2)Ethnic Variations in prescription of Lurasidon
3) Interpersonal Psychotherapy VS Couple Therapy,
Which one preferable?

সেই আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর পর্বে ডা.তৌহিদ মূল প্রবন্ধ পেপার উপস্থাপন করেন এবং সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ভূতপূর্ব কনসাল্ট্যন্ট সাইকিয়াট্রিস্ট ও মালয়েশিয়ার AIMST -এর সহযোগী অধ্যাপক ডা. কবীর জুয়েল সকলের নানাবিধ প্রশ্নের উত্তর দেন। এছাড়া আলোচনার উপসংহারে আরও বক্তব্য রাখেন মনোরোগ বিভাগের চেয়ারম্যান ডা.শোয়েবুর রেজা চৌধুরী।

সাহিত্যিক দৃষ্টিকোণে নারীর তিন রূপ
১.কন্যা, ২.জায়া ও ৩.জননী। তবে মানসিক বিশেষজ্ঞ গণের মতে নারীকূলকে আরো কয়েকধাপ বেশী স্তর পার হতে হয়। নারীর শরীরবৃত্তীয়
পরিবর্তনে বেশ কিছু হরমোন বিশেষ ভূমিকা পালন করে, তার-মধ্যে ইস্ট্রোজেন, প্রজেস্ট্রন ও কর্টিসল অন্যতম, তাই নারীর বয়ঃসন্ধি হওয়া থেকে শুরু করে রজঃনিবৃত্তি পর্যন্ত তাদের Reproductive Life – এ বিভিন্ন চড়াই উতরাই লক্ষ্য করা যায়, সে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কতোটুকু ভাবি,গর্ভকালীন সময়ে মা-কে সব ধরনের ঔষধ দেয়া যায় না,ভুলক্রমে দিয়ে দিলে নবজাতকের নানাবিধ সমস্যার মাধ্যমে সেই মাশুল গুনতে হয়।

গর্ভবতী মহিলারা সাধারণত অন্যান্য বয়সের তুলনায় বেশি মানসিক সমস্যা এবং গর্ভধারণ সংক্রান্ত নানান অসুবিধার সম্মুখীন হন। দুটি তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ:

১.গর্ভাবস্থায় মানসিক সমস্যার খুঁটিনাটি তথ্য।
২.কি ধরনের ওষুধ খাচ্ছেন তারা তা জানাও অবশ্যই জরুরি।

গর্ভাবস্থায় আনন্দের ও সুন্দর সময় তবে, কাঙ্ক্ষিত বা অনাকাঙ্ক্ষিত যেভাবেই হোক, গর্ভধারণ সময় শারীরিক ও মানসিক স্বাভাবিকভাবেই নানান পরিবর্তনের সাথে সাথে নতুন বাবা ও মা এর বিশেষ করে ‘মায়ের’ মানসিক চাপ ও উদ্বেগ বেড়ে যায়। নারীর গর্ভকালীন সময়ের মানসিক চাপ ও উদ্বেগের পরিমান যদি স্বাভাবিকের থেকে বেশী হয়, তবে তা গর্ভাবস্থায় বিষণ্ণতা ও অন্যান্য মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার জন্ম দিতে পারে।

গর্ভাবস্থায় বিষণ্ণতা বলতে বোঝায়?

বিষণ্ণতা একধরনের আচরণগত সমস্যা যার ফলে মানুষের মন সার্বক্ষণিক খারাপ থাকে এবং কোন কাজেই আনন্দ খুঁজে পায় না। টানা এক সপ্তাহ বা এর বেশি সময় জুড়ে থাকে।

বিষণ্ণতার লক্ষনগুলো কি কি ?

১.কোন কিছুতে আগ্রহ ও আনন্দ না পাওয়া।
২.খুব পছন্দের কোন কাজ বা ঘটনাতেও আনন্দ অনুভূতি না পাওয়া।
৩.গভীর দুঃখবোধ এবং হতাশা
সবসময় কান্না আসা।
৪.খাবার আগ্রহ কমে যাওয়া বা অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া।
৫.অকারণে বেশি অস্থির লাগা। খুব বিরক্ত বোধ ও ক্লান্ত, অল্পতেই রাগ উঠে যাওয়া
৬.কোন কিছুতে মনোযোগ দিতে না পারা।
৭.খুব বেশী ঘুম অথবা সম্পূর্ণ ঘুমহীন অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাওয়া।
৮.অপরাধ বোধে ভোগা,গ্লানি বোধ হওয়া, নিজেকে খুব খারাপ মনে হওয়া।
৯.বেঁচে থাকার আগ্রহ কমে যাওয়া বা বার বার মৃত্যুর কথা চিন্তা করা।

উপরোক্ত যেকোনো ৫ টি বা তার বেশি বৈশিষ্ট্য আপনার মধ্যে ২ সপ্তাহের বেশি অপরিবর্তনীয় অবস্থায় থাকে তাহলে বুঝতে হবে আপনি বিষণ্ণতায় ভুগছেন এবং আপনার সাহায্য দরকার।

গর্ভধারণের আগে এবং গর্ভাবস্থায় যে বিষণ্ণতা দেখা দেয় তা কিন্তু প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতা (postpartum depression ) থেকে ভিন্ন। postpartum depression সাধারণত বাচ্চা প্রসবের পর দেখা যায়।

গর্ভাবস্থায়য় মানসিক রোগের প্রাদুর্ভাব বিগত ১০ বছরের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে বর্তমানে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিষণ্নতা, উদ্বেগজনিত মানসিক রোগ, মনোদৈহিক মানসিক সমস্যা ইত্যাদি।

উক্ত গবেষণায় আরো দেখা যায় মানসিক রোগের প্রাদুর্ভাগ শহরে ও গ্রামে প্রায় একই রকম এবং মহিলাদের মধ্যে বিভিন্ন কারণে পুরুষদের তুলনায় মানসিক রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। এছাড়াও মানসিক রোগে আক্রান্তদের মধ্যে শারীরিক লক্ষণ যেমন- মাথা ব্যথা, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা, জ্বালাপোড়া, ঘুমের সমস্যা, অস্থিরতা, দুর্বলতা, খাবারের অরুচি নিয়ে চিকিৎসকদের কাছে আসেন যা বেশিরভাগ সময়ই গুরুত্ত্ব পায় না।”

অনুষ্ঠানটিতে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, বিভিন্ন মেডিকেল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও পরিচালক, শিক্ষক ও চিকিৎসকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

PMRH (Psychiatric Management for Reproductive Health) – এর মাধ্যমে বেসরকারীভাবে টিমের সদস্যরা তৃনমূল পর্যায়ে ‘মায়ের গর্ভকোষে শিশুর সুরক্ষায় ব্যবহৃত নিরাপদ ঔষধ ও বয়ঃসন্ধিকাল, গর্ভাবস্থা ও রজঃনিবৃত্তি জনিত মানসিক রোগের উপসর্গ’ সমূহ নিয়ে এ সেবা গুলো দিয়ে যাচ্ছেন নিয়মিত।

পরিবারের আসন্ন নতুন সদস্যটির জন্য সুস্থ ও সুন্দর ভবিষ্যৎ উপহার দিতে গর্ভাবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা উপর গুরুত্ব দিতে এরূপ আয়োজন করে আয়োজকবৃন্দ।

 

মানুষকে বিচার করার ক্ষমতা মানুষের কতটুকু

ডা. ফাতিমা খান


একজন মানুষের কথাবার্তা, আচার-আচরণ ও অভ্যাসগুলো তার শিশুকালের শিক্ষা, অভ্যাস, পারিপার্শ্বিকতা, তার পারিবারিক কালচার এবং নিজস্ব এলাকার সংস্কৃতি দিয়েই অনেকাংশে নিয়ন্ত্রিত হয়। অনেক বড় ডিগ্রীধারী কিংবা অনেক উচ্চস্তরের চাকুরীরত মানুষ গুলোও নিত্য দিনশেষে ঘরে ফিরে তার আদিম অভ্যাস গুলোর চর্চায় মেতে উঠে। তার নিজস্ব আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলা, খাওয়া, পরা, উঠা বসা, রসম রেওয়াজ সবকিছুতেই একটু “হাফ ছেড়ে বাচার” চেষ্টা করে। অনেকে চেষ্টা করেও, ভালটা জেনেও নিজের আদি অকৃত্রিম অভ্যাস বদলাতে পারে না।

এ ক্ষেত্রে আমরা কি সে মানুষটাকে আন- কালচার্ড বা ইনসেইন বলতে পারব? কিংবা বলা কি উচিৎ? বললে কাদের কে বলা যাবে?

লিখতে বসে ময়না খালার গল্প মনে পড়ল। ডেন্টাল কলেজে পড়ার সময় আমাদের হোস্টেলের মেয়েদের দেখাশোনা, ফুট ফরমায়েশ এর কাজ করত ময়না খালা। আমি তখন বিদেশ থেকে বাংলাদেশে গিয়ে একদম নতুন মানুষ। আমার অবস্থা প্রথমবার গ্রাম থেকে গাট্টি বোচকা নিয়ে আসা বেকুব মানুষটার মত যে ঢাকার রাস্তায় ডাবল-ডেকার বাসগুলো দেখে হা করে তাকিয়ে থাকে। সব কিছুতেই তখন আমার বিস্ময়, পুরা নতুন দুনিয়ায় আমি এক এলিয়েন। তো হোস্টেলে এই ময়না খালাকে দেখতাম গড়ে পড়তা সবাইকে ‘তুই’ করে সম্বোধন করে কথা বলে। ওই সময়ে আমার কাছে সবচেয়ে বড় বিস্ময় ছিল এই ময়না খালা। ব্যাপক কৌতুহল নিয়ে তাকে পর্যবেক্ষণ করতে থাকলাম।

একদিন শুনি ময়না খালা হাসপাতালের এক ডাক্তারকে স্নেহের স্বরে বলছে, ‘তোর জ্বর কমছে? ওষুধ খাইছিস?’ আর সেই ডাক্তারও অনেক সমীহ করে উত্তর দিল ‘ জ্বী খালা, দোয়া কইর’। আমি তব্দা খেয়ে গেলাম! কিন্তু দিনে দিনে আমার পর্যবেক্ষণের যে ফলাফল পেলাম, তা হল ময়না খালার দেশের বাড়ি পঞ্চগড়, যেখানে সম্বোধনের জন্য তারা ‘তুই’ টাকেই সবচেয়ে আপনজনদের জন্য ব্যবহার করে। ডেন্টাল কলেজের আমার চার বছরের অভিজ্ঞতায় সবচেয়ে স্নেহপ্রবণ আর মায়াবতী মহিলা ছিল এই ময়না খালা।

এবার হোস্টেলেরই এক সিনিয়র আপুর কথা বলি। তিনি হাসতে হাসতেই বন্ধুদের আদর করে ” বা***ত” বলে ডাকত। আমার কাছে এই ব্যাপারটা এতই অদ্ভুত আর অস্বস্তিকর মনে হত যে আমি তার থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলতাম, পাছে কবে আমি তার এই আদরের ডাকের শিকার হই! অন্যদের কাছ থেকে জানলাম তার বাবা নাকি তাদের গ্রামের চেয়ারম্যান, অনেক নামডাক আর দাপট তার ওই গ্রামে। সে যার মেয়েই হোক- চেয়ারম্যান, ব্যাটম্যান বা সুপারম্যান, আমার তাতে কিছুই আসে যায় না। আমার শুধু মনে হত, নিশ্চয়ই একদিন রোগীদেরকেও সে বলবে, “মুখ খোল বা***ত”।

এছাড়া আরো কিছু এপিক অভ্যাস দেখি তথাকথিত ভদ্র শিক্ষিত লোকদের মধ্যেও। যেমন ফাইভ স্টার হোটেলে গিয়েও হাতের কবজি ডুবিয়ে উইন্ডমিল এর মত বিশাল শব্দ করে খাওয়া, গন্ধওয়ালা মোজা খুলে ঝাড়া দিয়ে খাবার টেবিলের একপাশে লম্বা করে রেখে দেওয়া, খাওয়া শেষে প্লেটেই হাত মুখ ধুয়ে সেই পানিটা চুমুক দিয়ে খেয়ে ফেলা ( খাবার নষ্ট হলে আল্লাহ গুনাহ দিবে বলে শেষ অনু পরমানুটাও শেষ করা লাগবে), জনসমক্ষে নাকের ভেতর আঙুল ঢুকায়ে ঘুটানি মেরে বের করে আবার তাকিয়ে দেখা, যেখানে সেখানে দুনিয়া কাঁপানো হাসি, হাঁচি, কাশীসহ আরো অনেক কিছু ছেড়ে দেওয়া…. এগুলোর ব্যাপারে কি যে বলব! সত্যিই আমি মূক, অভিভূত!

এইবার আসি আমাদের নিত্যদিনের বন্ধু, নোমোফোবিয়া আক্রান্ত এই আমাদের প্রতি মুহুর্তের অক্সিজেন, সোসাল মিডিয়া ফেইসবুকে। এখানে এত ভ্যারাইটিস মানুষ আর তাদের কৃষ্টি কালচার কথাবার্তা উপভোগ করি যা ফেইসবুক ছাড়া একাকি এই জীবনে দেখা কোনদিন সম্ভব হত না। এখানে মোঘল আমলের বাদশাহ বাবর থেকে বাদশাহ আওরঙ্গজেব পর্যন্ত সবার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাবেন, তাদের অন্দরমহলের বেগম আর তাদের পরিচারিকা, পাইক পেয়াদা বরকন্দাজ কেউ বাদ যাবে না। তাদের একেক জনের কথাবার্তার ধরণও সেইরকম(?)। আমি তো তাদের রাজকীয় কথাবার্তার রকমফের দেখে ক্ষণে ক্ষণে অফিসে বসেও একাই হো হো করে হাসি আর আমার রোবটের মত নার্সটা ইতস্ততভাবে বলে ফেলে “আর ইউ অল রাইট ডক?”

শেষ গল্পটা বলি।
সেদিন একজন মিশরীয় রোগী এসেছে আমার কাছে। সে সাধারণ কথাই এতো বেশী উচুস্বরে বলছিল যে এডমিন থেকে আমাকে ফোন করে জিজ্ঞাস করল ” ইজ এভরিথিং অলরাইট ডক্টর? দা সিকিউরিটি ইজ জাস্ট আউটসাইড ইয়র ডোর “। আমি না হেসে পারলাম না। তাকিয়ে দেখি দরজায় আমাদের সুমো পালোয়ান এর মত হাট্টা গাট্টা সিকিউরিটি গার্ড উঁকি মেরে দেখছে। তাকে চলে যেতে বললাম।

রোগীর কথা শেষ হলে তাকে বললাম “আচ্ছা, তুমি এত উচ্চস্বরে কথা বল কেন?” সে কিছুটা লজ্জিত হয়েই বলল, ” আমি দুখিত ডক্টর, ছোটবেলার অভ্যাস। আমার বাবা সমুদ্রে জেলে ছিল। আমি তার কাজে সাহায্য করতাম। অনেক দূর থেকে জোরে জোরে কথা বলা লাগত। তাই অভ্যাস হয়ে গেছে।”

আমার মনে হয় মানুষকে বিচার করার কাজটা একটু সময় নিয়ে করা উচিত। একদম অমার্জনীয় অপরাধ বা অভ্যাসওয়ালা মানুষ ইন্সট্যান্টলি পরিত্যাজ্য। কিন্তু বাকীদের ব্যাপারে মানে যে দোষগুলো খুব সাংঘাতিক না সেগুলো ইগ্নোর করে সময় সুযোগ নিয়ে বুঝিয়ে বলাই ভাল। ক্ষতি তো নেই! এমনো হতে পারে তাকে কেউ কখনো ভালভাবে বুঝিয়ে বলেই নাই।

আল্লাহতায়ালা মানুষের বিচার করবেন তাদের শিক্ষা, সামর্থ্য আর জ্ঞানের গভীরতা অনুযায়ী। আমরা মানুষ হয়ে কেমন করে হুট করেই ফয়সালা শুনিয়ে দেই, বলেন!

লেখক কর্মরত: আল হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ, জেদ্দা, সৌদি আরব।

 

রেসিপি ঘর: সবজি খিচুড়ি ও কয়েক পদের ডাল

টমেটো ডাল

উপকরণ : মসুরের ডাল ২৫০ গ্রাম, টমেটো ২০০ গ্রাম, পেঁয়াজ টুকরো করা আধা কাপ, কাঁচামরিচ ফালি করা ৩-৪টি, ধনেপাতাকুচি ২ টেবিল চামচ, রসুন টুকরো ১ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদ অনুযায়ী এবং সরিষার তেল পরিমাণ মতো, হলুদ গুঁড়ো ১ চা চামচ, পানি পরিমাণ মতো।

প্রস্তুূত প্রণালি: মসুরের ডাল পানি দিয়ে ধুয়ে রাখুন। একটি কড়াইতে সরিষার তেল গরম করে তাতে পেঁয়াজের টুকরো ভেজে, মসুরের ডাল, রসুন টুকরো, হলুদগুঁড়া এবং স্বাদ অনুযায়ী লবণ দিয়ে অর্ধেক রান্না করে তাতে টুকরো টমেটো, কাঁচামরিচ ফালি, ধনেপাতাকুচি এবং সামান্য পানি দিয়ে কিছুক্ষণ রান্না করে ডাল ঘন হয়ে এলে তা নামিয়ে পরিবেশন করুন।

লাউ ডাল

উপকরণ: একটি মাঝারি লাউয়ের অর্ধেক টুকরো করা, মসুর ডাল ২৫০ গ্রাম, হলুদ গুঁড়া অর্ধেক চা চামচ, মরিচ গুঁড়া অর্ধেক চা চামচ, জিরা গুঁড়া ১ চা চামচ, লবণ স্বাদ অনুযায়ী, কাঁচামরিচ আস্ত ৪-৫টি, ধনেপাতাকুচি ১ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১ চা চামচ এবং তেল পরিমাণ মতো।

প্রস্তুত প্রণালি: প্রথমে লাউ ও মসুর ডাল আলাদা করে ধুয়ে রাখুন। একটি পাতিলে তেল গরম করে তাতে পেঁয়াজের টুকরো দিয়ে হালকা ভেজে একে একে তাতে উপকরণ দিয়ে ভালোভাবে কষিয়ে (মসুর ডাল ও লাউ ছাড়া) নিন। মসলা কষানো হয়ে গেলে তাতে মসুর ডাল দিয়ে আবার কষিয়ে সামান্য পানি দিয়ে ঢেকে সেদ্ধ করে তাতে টুকরো করা লাউ দিয়ে আবার ঢেকে রান্না করুন। প্রায় ২০ মিনিট লাউডাল বেশ মাখা মাখা হয়ে এলে তাতে জিরা গুঁড়া, কাঁচামরিচ ও ধনেপাতাকুচি দিয়ে নামিয়ে পরিবেশন করুন।

ঝাল মশলায় বুটের ডাল

উপকরণ: বুটের ডাল ২ কাপ -পেয়াজ কুচি এক কাপ -পেয়াজ বাটা ১ চা চামচ -আদা বাটা ১ চা চামচ -রসুন বাটা ১ চ চামচ -জিরা গুড়া ১ চা চামচ -ধনে গুড়া ১ চ চামচ -লাল মরিচ গুড়া ১ চা চামচ -হলুদ গুড়া আধা চা চামচ -টমেটো সস ২ টেবিল চামচ – গরম মশলা আধা চা চামচ -ভাজা জিরা গুড়া ১ চা চামচ -কাঁচা মরিচ ৪/৫ টা -লবন স্বাদ অনুযায়ী -তেল ১/৪ কাপ
-পানি পরিমানমতো

প্রস্তত প্রণালী: ডাল ধুয়ে একটা পাত্রে ভিজিয়ে রাখুন। একটি পাত্রে বা প্রেসার কুকারে তেল দিয়ে পেঁয়াজ কুচি বেরেস্তা করে অর্ধেক টা তুলে রাখুন রাখুন। এবার বাকি বেরেস্তায় সব বাটা মশলা দিয়ে কিছুক্ষণ কষানোর পর মরিচ গুড়া, হলুদ গুড়া, ধনে গুড়া ও জিরা গুড়া দিয়ে ভাল করে কষিয়ে নিন। এবার ডাল দিয়ে দিন। মাঝারি আঁচে কিছুক্ষণ কষিয়ে টমেটো সস, গরম মশলা ও লবন দিয়ে ভালোভাবে নেড়ে দেড়/দুই কাপ পানি দিয়ে ঢাকনা দিন। ১৫/২০ মিনিট পর দেখুন ডাল নরম হয়ে গেছে না কি। ভাজা জিরার গুড়া ও কাঁচা মরিচ দিয়ে কিছুক্ষণ ঢেকে রাখুন। তেল উপরে উঠে আসলে বেরেস্তা ছিটিয়ে দিন।

সবজি খিচুড়ি

সময়টা এখন হরেক রকম তাজা সবজির। এসব সবজির মিশেলে সুস্বাদু খিচুড়ি হলে সকালের নাস্তাটা মন্দ হয় না। ছোট বড় সবার কাছে প্রিয় হতে পারে বিশেষ রেসিপিতে রান্না সবজি খিচুড়ি। স্বাদ আর গন্ধে মোহময় এমন খিচুড়ি রান্না হবে সহজে।

উপকরণ: বাসমতি চাল ২ কাপ, সবজি (গাজর, বরবটি, মটরশুঁটি, ফুলকপি) ছোট টুকরো সব মিলিয়ে ২ কাপ, আলু আধা কাপ, ভাজা মুগডাল ১ কাপ, আদা বাটা দেড় চা চামচ, রসুন বাটা ১ চা চামচ, হলুদ গুঁড়া দেড় চা চামচ, টক দই দুই টেবিল চামচ, জিরা গুঁড়া ১ চা চামচ, লবণ ১ চা চামচ, চিনি ১ চা চামচ, গরম মসলা গুঁড়া ১ চা চামচ, পেঁয়াজ কুচি আধা কাপ, এলাচ ২টি, দারুচিনি ২টি, তেজপাতা ২টি, গরম পানি ৬ কাপ, ঘি ২ টেবিল চামচ, তেল আধা কাপ।

প্রস্তত প্রণালী: মুগডাল ২ ঘণ্টা ও চাল আধা ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে পানি ঝরিয়ে নিন। মটরশুঁটি ছাড়া সব সবজি একসঙ্গে সেদ্ধ করে নিন। কড়াইয়ে অর্ধেক তেল দিয়ে গরম হতে দিন। এবার তাতে গরম মসলা ও পেঁয়াজ দিয়ে ভেজে টক দই, চিনি ও আধা চা চামচ লবণ দিন। একটু পর মসলা কষিয়ে সবজি দিন। সবজি কষানো হলে আলাদা পাত্রে তুলে রাখুন। এবার ওই কড়াইয়ে চাল দিয়ে ভাজতে থাকুন। ভাজা হয়ে গেলে গরম পানি ও আধা চা চামচ লবণ দিয়ে ঢেকে দিন। চাল পানি সমান সমান হলে রান্না করা সবজি দিয়ে নেড়ে ঢেকে আঁচ কমিয়ে ১০ মিনিট রান্না করুন। এবার কাঁচামরিচ ও ঘি দিয়ে আরও ১৫ মিনিট চুলার আঁচে রেখে নামিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।

 

নক্ষত্রের নিজস্ব আলো থাকে, নিজস্ব আলো আছে ফাতিহা

জ্যাকসন হাইটস হঠাৎ আলোকিত হয়ে উঠলো। যেন মনে হচ্ছিল একসাথে অনেক গুলো নক্ষত্র তাদের সমস্ত আলো নিয়ে জ্বলে উঠেছে। সেই সব নক্ষত্রের নিজস্ব আলো আছে যে আলো দিয়ে তারা প্রতিনিয়তই আলোকিত করছে চারপাশ। সব গুলো নক্ষত্রের ভীড়ে একটি ছোট্ট নক্ষত্রও ছিল কিন্তু কে জানতো ছোট্ট নক্ষত্রের আলোর রোশনাই অন্য সব নক্ষত্রকে ছাপিয়ে যাবে। এই নক্ষত্রটির নাম ফাতিহা আয়াত। আমরা যাকে রাজকন্যা বলে ডাকি। ওর হাসিমুখের দিকে তাকিয়ে যে কোন দুঃখ ব্যথা ভুলে থাকা যায় আর ও যখন ওর পুর্ন আলো ছড়িয়ে দেয় তখন চারদিকে যত অন্ধকার যত হতাশা থাকে সব দুর হয়ে যায়।

বাংলার আকাশের সব থেকে বড় সুর্য ডুবে গিয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট। যে সুর্যের আলোয় পথ দেখে একটি বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল যিনি এই ছোট্ট সুন্দর দেশটির নাম রেখেছিলেন বাংলাদেশ তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলার আকাশের সব থেকে উজ্জল এই নক্ষত্রটির জন্ম হয়েছিল ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ। আলোর কারিগরের জন্মদিন উপলক্ষ্যে জ্যাকসন হাইটসে আয়োজন করা হয়েছিল “শিশু কিশোর মেলা-২০১৮”। জাতীয় শিশু দিবসের সেই আয়োজনে বাংলাপ্রেমীদের ভীড় ছিল আর ছিলো অগণিত শিশু কিশোর। যাদের নিয়ে আয়োজন করা হয়েছিল বাংলা লিখন ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতা সহ আরো অনেক কিছু। সেই প্রতিযোগিতায় দুটো বিভাগেই সেরাদের সেরা হয়েছে ছোট্ট ফাতিহা।

যারা অলরেডি জানেন এবং যারা জানেন না তাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে ফাতিহা হলো আমাদের ক্ষুদে বন্ধু সেই রাজকন্যাটি যে স্কুলে নিয়মিত ক্লাস করে আর মন দিয়ে সব শিখে নেয় তার পর বাসায় বাবাকে সাথে নিয়ে নিজেই শিক্ষক হয়ে গোটা পৃথিবীতে তার জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেয়। বার বার মুগ্ধ হয়ে শুনি “ওয়েলকাম টু ম্যাথ ম্যাজিক উইথ ফাতিহা” ছোট্ট ফাতিহা নিয়মিত গণিত এবং বিজ্ঞানের নানা বিষয় নিয়ে ভিডিও তৈরি করে এবং গণিত ও বিজ্ঞানের বিষয়গুলিকে খুব সহজে সবাইকে শিখিয়ে দেয়। সে মনে করে “সন্তানকে মুখস্থ করাবেন নাকি আবিস্কারের নেশা ধরিয়ে দেবেন সেই সিদ্ধান্ত আপনার”।জ্যাকসন হাইটসের আকাশ সেদিন ছায়া দিয়েছিল ছোট্ট ফাতিহাকে। বিদেশ বিভুইয়ে থেকেও ব্যরিষ্টার আফতাব আহমেদের কলিজার টুকরা আমাদের ছোট্ট রাজকন্যা ফাতিহা আয়াত বাংলাকে বুকে ধরেছে এবং সেটির প্রমাণ স্বরুপ শ্রেষ্ট আবৃত্তিশিল্পী এবং শ্রেষ্ঠতম লিখন শৈলী দেখিয়ে আমাদের মুগ্ধ করেছে।আমরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করি ফাতিহা একটি নক্ষত্র যার নিজস্ব আলো আছে এবং সেই আলো ক্রমাগত ভাবে বেড়েই চলেছে। ফাতিহার এই সাফল্যে আমরা আনন্দিত এবং ওকে অভিনন্দন জানাই।

প্রতিটি অভিভাবককে বলতে চাই আসুন আমরা আমাদের সন্তানদের ছোটবেলা থেকেই নানা কিছুতে যুক্ত করি এবং উৎসাহ দেই। তাহলেই আমাদের ছোট্ট রাজকন্যা রাজপুত্ররা স্বপ্নের মত বেড়ে উঠবে এবং তাদের সাফল্যের খাতার প্রতিটি পাতা কানায় কানায় পুর্ণ হয়ে থাকবে।

সুত্র: ছোটদের বন্ধু

 

শৈশব কথন

সার্জিন খান


ছোটবেলায় আমার এক ধরণের অদ্ভুত খেলা ছিল। ছাদ থেকে লাফ দেওয়া। প্রথম প্র‍্যাক্টিস করতাম বাসার একতলা ছাদ থেকে লাফ দিয়ে। দেখতাম ব্যাথা পাই কি না! প্রথম প্রথম ভুল পজিশনে লাফ দেওয়ায় পা মচকে যেত। এরপর ব্যাথা পেতে পেতে ঠিকমতো লাফ দেওয়াটা শিখে ফেলেছিলাম।
তারপর দোতলা থেকে লাফ দেওয়ারও চেষ্টা করেছিলাম, এবং যথারীতি সেখানেও প্র‍্যাক্টিসের বদৌলতে সফল হয়েছিলাম।

আমাদের বাসাটা ছিল একতলা। তাই এলাকার বিভিন্ন দোতলা, তিনতলা বাসার ছাদে ভর দুপুরে যখন এলাকা নিশ্চুপ তখন চুপিচুপি উঠে লাফ দিতাম। তিনতলা থেকে মাত্র দুইবারই লাফ দিয়েছিলাম, প্রথম বার লাফ দিয়ে পায়ে সামান্য ব্যাথা পেয়েছিলাম, আর দ্বিতীয়বার ঠিকমতোই লাফ দিয়েছিলাম। তবে সেসময় বাবা দেখে ফেলেছিলেন।
আমি কাজটা করতাম বিকেলে। আমার কিছু বন্ধুরা যেদিন আমার সঙ্গে খেলতো না ঐসময় আমি একা একা এই কাজটা করতাম। বাসায় কেউ জিজ্ঞেস করলে বলতাম, খেলতে গিয়েছি।

সেদিন বাবা অফিস শেষ করেই বাসায় চলে এসেছিলেন, আমাদের ব্যবসার শো-রুমে যাননি। অফিসের পর শো-রুম বন্ধ করে আসতে আসতে বাবার রাত হয়ে যেত। ঐদিন বাবা অসুস্থ ছিলেন। শরীরে জ্বর নিয়ে রিক্সা দিয়ে যখন এলাকায় ঢুকছেন, তখন দেখেন আমি তিনতলা একটা বাসার ছাদ থেকে লাফ দিচ্ছি। এরপর পরই দেখলেন আমি দৌড়ে জোড়পুকুরের দিকে(আমাদের জয়দেবপুরে শৈশবের বাড়ির ঠিকানা) ছুটে যাচ্ছি। তিনি এমনিতেই প্রেশারের রোগী। আমার এই অবস্থা দেখে তাঁর হার্টবিট বেড়ে গিয়েছিল। তিনি যে পুরো ব্যাপারটা দেখেছিলেন এবং আমি যে তাকে দেখিইনি এই ব্যাপারটা আমি জানতাম না। আমাকে কিচ্ছু না বলে তিনি সোজা বাসা চলে আসলেন।

বাসায় এসে সবুজ চিকন কাঁচা বাশের কঞ্চি পেছনে রেখে বসে ছিলেন। আমি অন্যান্য খেলা শেষ করে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে সন্ধ্যা নেমে গেল। তিনি চেয়ারে বসে ছিলেন। কোন কথা না বলেই সমানে শক্ত মার দেওয়া শুরু করলেন। তখন ক্লাস থ্রিতে পড়ি। বলা যায় একেবারে বাচ্চা মানুষই। ছাদ থেকে লাফ দিলে যে মানুষ মারা যায় এই সামান্য বোধটাও ছিল না। কেন যেন আমার ভয় লাগতো না। তাই বাবা কেন মারছিলেন সেটা ঠিক বুঝতেই পারিনি। বরং তখন বাবাকে ভিলেনের মতোই লাগছিলো। ছাদ থেকে লাফ দিলে কাউকে মারতে হয় নাকি? আশ্চর্য্য!

তখন দাদী ছুটে এলেন আমাকে বাঁচাতে। আমাকে জড়িয়ে ধরে বাবাকে বকতে শুরু করলেন। বাবা তখনও রাগে ফুঁসছেন। এরপর কিছু না বলে চুপচাপ সরে গেলেন নিজের ঘরে। সে রাতেই তাঁর জ্বর আরো ঝেঁকে এলো। আমারও জ্বর এলো। তাঁর এসেছিল আগে থেকেই, আমার এসেছিলো মার খেয়ে। মা বাবাকে আর আমাকে পাশাপাশি শুইয়ে দুইজনের সেবা করতে থাকলেন।

কিছুক্ষণ থাকতে থাকতে আমি ঘুমিয়ে গেলাম। অনেকক্ষণ পরে যখন ঘুম ভাঙলো তখন দেখি বাবা পাশে নেই। আমি অন্য বিছানায়। একটু নড়তেই খেয়াল করলাম পলিথিনের প্যাকেটের কিছু মচমচ শব্দ। অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে বুঝতে পারছিলাম চকলেটের কোন প্যাকেট হবে।

বারান্দা দিয়ে লাইটের আলো আসছিলো। আধো আলো আদো আঁধারের মাঝে দেখে নিশ্চিতই হলাম যে এগুলো চকলেটেরই প্যাকেট। কোকোলা চকলেট জেমস আর মিমি চকলেট।
অনেকক্ষণ কারোর আসার শব্দ না পেয়ে আমি চকলেটগুলো খুলে কাঁথার তলে বসে একটার পর একটা খেতে থাকলাম। কিভাবে এগুলো আসলো, কে দিলো এসব কিছুই তখন মাথায় আসেনি।
কিছুক্ষণ পর বাবা-মায়ের গলা আবিষ্কার করলাম। খেতে বসেছিলেন। আমাদের বাসাটা ছিল একদম ছোট, এক রুমের মাঝে আরেক রুমের কথা শুনতে পেতাম।
– ছেলের সাহস দেখছো? কত বড় বিল্ডিং থেকে লাফ দেয়! কত্ত বড় কলিজা!
মা কোন কথা বলছিলেন না। চুপ করে ছিলেন।

এরপর কেটে গেল কতগুলো বছর। দাদী মারা গেলেন, বাবা-মা বৃদ্ধ হলেন। বাসা ভর্তি তাদের নাতি-নাত্নি এলো। আমার ছেলে পৃথিবীতে এলো। যেই আমি আগে এক থেকে দুইতলা, দুই থেকে তিনতলা; ঐদিন ধরা না খেলে হয়তো বা আরো উঁচু বাসার ছাদ থেকে লাফ দিতে পারতাম। সেই আমি জীবনের ট্র‍্যাজেডিতে পরে শরীরের সব অঙ্গকে কোনমতে ওষুধের বদৌলতে টিকিয়ে রেখে স্বপ্ন দেখে যাচ্ছি আমার ছেলের ভবিষ্যৎকে গুছিয়ে রাখার।
তবুও মাঝে মাঝে মনে হয় আহা রে! কি দিনই না ছিল। আজকাল যখন দুরন্ত কোন শিশুদের দেখি মনের মাঝে উঁকি দেয় অতীতগুলো।

যখন দেখি কোন শিশুকে শাসণ করতে তখন যেন মনে হয় আহা রে! বাচ্চাটার মনে কি ঝড়টাই না যাচ্ছে, বাবা-মাদের বুকটা কতই না ফেটে যাচ্ছে।
অতীত স্মৃতির মাঝেও অনেকেই নিজেকে খুঁজে পায়। কিন্তু সেই অতীতগুলোকে ঘিরে থাকা সেই স্থানগুলোকে বদলে যেতে দেখলে কেন যেন মন চায় না। স্বার্থপরের মতো তখন মনে হয় দুনিয়া বদলে যাক, আমার শৈশবের ঘরবাড়িগুলো আগের মতোই থাকুক।
আজকে হঠাৎ করে আমাদের জোড়পুকুর পাড়ের সেই বাড়িটাকে অসম্ভব মিস করছি। আমার দুরন্ত শৈশবের পুরোটাই কেটেছে সেখানে। আজকে নিজেদের বাড়ি হয়েছে, কিন্তু এরপরেও প্রায়ই স্বপ্নে সেই বাড়িটাকে স্বপ্নে দেখি, আমার শৈশবকে স্বপ্নে দেখি।

লেখক পরিচিতি:
লেখক/প্রকাশক/সম্পাদক/সংগঠক।

 

মাতৃকথন_৪

ফারিনা মাহমুদ


বাবু তোমার কি নাম ?
– আমার পাতা আর পুত্তি (পশ্চাতদেশ, নরমাল ও সেলিম ওসমান ভার্সন )
এ মা, এইটা রেখে দাও … ভেঙ্গে যাবে তো …
– তুই কুতা বাতা (ট্রান্সলেশন নিষ্প্রয়োজন)
সবশেষে গাড়ির জানালা দিয়ে মুখ বের করে – ওই তালা তর (শালা সর ) ..
অথবা বাড়িতে বেড়াতে আসা অতিথির সামনে – গেসি, খাইসি, খেলতাসি, ভাষায় কথা বলে ওঠা ছোট্ট পুতুলের মতো বাচ্চাটা আমার উচ্চশিক্ষিত নিকটাত্মীয় দম্পতির ।

বাবা মা চাকুরিজীবি হওয়ার কারণে বাচ্চা দিনের বড় সময় থাকে দাদী, ফুফু, কাজের বুয়া, ড্রাইভার, দারোয়ান সবার মাঝখানে । বাচ্চার ভাষা শিক্ষায় কোনো এক অজানা কারণে গৃহকর্মী শ্রেনীর অবদান অত্যাধিক । সেই অবদান বাবা মাকে পাবলিক প্লেসে কি পরিমান বিব্রত করে তা আমি প্রথম বুঝতে পারি যখন আমার সেই আত্মীয়া তাঁর বাচ্চাকে নিয়ে বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দেন । আমি ততোধিক বিস্মিত হয়ে লক্ষ্য করি, বাচ্চা প্রতিবার একটা করে গালি দেয় আর বাচ্চার বাবা তার মায়ের দিকে এমনভাবে তাকায় যেন মা রোজ সকালে কবিতার মতো করে গালি মুখস্ত করায় বাচ্চাকে !

শুধু ভাষাই না, বাচ্চা আরো অনেক কিছুই পারিপার্শিকতা থেকে আত্মস্থ করে যা আমাদের পছন্দ না । মা চাকরি করলেও করে, না করলেও করে । কিন্তু দুর্ভাগ্য এমনই আমাদের, অধিকাংশ ক্ষেত্রে দোষের বোঝাটা মায়ের দিকেই যায়, যাচ্ছে , যাবে ই !

উচ্চশিক্ষিতা, ক্যারিয়ারিস্ট মেয়েটা মাতৃত্বকালীন ছুটিতেই দ্বিধা দ্বন্দে পড়ে যায় – চাকরি করবো না ছেড়ে দিবো ? বাচ্চার যত্ন ঠিক মতো হবে তো ? কার কাছে রেখে যাবো ? নানী দাদীর কাছে কি সারা বছর বাচ্চা রাখা যায় ? বাচ্চাটার যত্ন হবে তো? বাচ্চাটা কি শিখবে ? তার উপরে আছে বুক ভাঙ্গা কষ্ট, অন্যের কাছে বাচ্চা রেখে কাজে মন দেয়া !
এইসব নানান ট্রমা পার হয়ে যদিও বা কাজে ফিরলেন, ঘরে ফিরে যখন শুনবেন বাচ্চার মুখে অশুদ্ধ কথা বার্তা, অপরাধবোধ গিলে খাবে আপনাকে ! আর সেই আগুনে ঘি ঢালতে, সেই দায়ের হিমবাহের নিচে আপনাকে পিষ্ট করতে আশেপাশের মানুষজন তো আছেই ! ক্ষেত্রবিশেষে দেখা যাবে মূল সমস্যা আপনার বাচ্চা না, আপনার শ্বাশুড়ির বাচ্চাটা, কবুল বলে একদা যাকে জীবনসঙ্গী করেছিলেন ! আপনার তখন মনে হবে – এই লোক কে? একে তো আমি চিনি না !!

এই মারাত্মক দ্বিধা-দ্বন্দের টানা পোড়নে পড়ে সংসারের সুখের জন্য অনেকেই চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে আসেন। কেউ কেউ হয়তো পরিস্থিতির কারণে বা সামগ্রিক বিবেচনায় কাজটা চালিয়ে যান, বা যেতে বাধ্য হন, কিন্তু ভিতরে ভিতরে একটা অপরাধবোধ ঠিক ই থাকে – ভুল করছি না তো?

এই চরম দুঃসময়ে আসলে কি করনীয় ?
আমার মন চায় ফিরিয়ে প্রশ্ন করতে – কার কি করনীয় ? করনীয় কি খালি মায়ের ? মা যদি বাইরে কাজ করেন, তিনি কি শুধু নিজের জন্য করেন ? সংসারের জন্য, সন্তানের জন্য কি করেন না ? খুব নগ্ন ভাবেই বলি, মায়ের আয়ের সুফল তো মা একা ভোগ করেন না, তাহলে সব দোষের দায় মায়ের একার ক্যানো ? করনীয় এর তালিকা যদি থাকে তা শুধু মায়ের না, সুবিধাভোগী সবার জন্যই তালিকা থাকতে হবে । মায়ের উপার্জিত অর্থের ভোগী উপভোগী সবই পাবেন, তবে ভুক্তভুগী শুধুই মা !!

এই কঠিন দুসময়ে মনে রাখবেন,
যেই সিদ্ধান্তেই যান না কেনো –
১. কিছু পাবেন, কিছু হারাবেন
২. সবাইকে খুশি করতে পারবেন না, কাজেই নিজের খুশিকেই ফোকাস করুন
এবং আপনার সিদ্ধান্ত আপনি নেবেন,

১. আপনার পরিস্থিতি অনুযায়ী, কারো কথায় না, কাউকে অনুসরণ করে না । তবে অন্যের অভিজ্ঞতা জেনে নেয়ায় দোষ নেই।
২. রিস্ক বাই বেনিফিটের রেশিওতে পাল্লা কোনদিকে ভারী তা চিন্তা করে ।
নিজের সিদ্ধান্তে কনফিডেন্ট থাকবেন, সিদ্ধান্ত পাল্টানোর প্রয়োজন পড়লে সেটাও কনফিডেন্টলি পাল্টাবেন । হীনমন্যতার দিন শেষ !

উপরের সবকিছু চিন্তা করে যদি আপনার মনে হয় চাকরি করবো না, বাচ্চাটাকে সময় দেবো, সু-স্বাগতম । অবশ্যই এটা অনেক বড় সিদ্ধান্ত, সাহসী সিদ্ধান্ত। এই সাথে আত্মত্যাগ তো যুক্ত আছেই। “এই সময়টা উপভোগ করুন।” আবার একসময় কাজে ফিরবেন এমন ইচ্ছা থাকলে নিজেকে সেভাবে প্রস্তূত করুন। বাসায় থাকেন বলেই আবার সন্তানের ব্যাপারে ওভার প্রটেক্টিভ হতে যাবেন না।

কারণ দু দিন পরে কিন্তু বাচ্চাকে স্কুলে দিতেই হবে । মানসিক ভাবে তৈরী থেকে বাচ্চাকে একটু স্বনির্ভরশীল করুন, কাজ সহজ হবে।

কিন্তু উপরের সবকিছু বিবেচনায় যদি মনে করেন কাজ চালিয়ে যাবেন, তাহলে এটা জেনে রাখুন যে পৃথিবীতে মিলিয়ন চাকুরিজীবি মায়ের সুসন্তান আছে, কুসন্তানও আছে। একইভাবে পৃথিবীর মিলিয়ন স্টে হোম মামের ক্ষেত্রেও এই কথা খাটে। কাজেই দোষ মায়ের আর মায়ের একার চাকরির না।

নিজে পালেন আর নানী দাদী কাজের মানুষ যার কাছেই বাচ্চা রেখে যান না কেন বাচ্চা কিছু উল্টো পাল্টা কথা আচরণ শিখলেই মুষড়ে পড়ার কিছু নেই । বরং “কিভাবে ওকে এই আচরণ থেকে সরিয়ে আনা যায়, সেটার যুক্তিযুক্ত সমাধান খোঁজাই জরুরি”। বাচ্চার কাছে “ভাত খাবো ” যেমন শব্দ, “কু*র বা*” ঠিক তেমনি একটি শব্দ। সে এর মানে বোঝে না। শুধু বোঝে কোন এক্সপ্রেশন দিতে কোন শব্দ কোন টোনে ব্যবহার করতে হয়। সে এটা জীবনে কোনো একদিন শিখবেই। অল্প বয়সে শিখে ফেলেছে দেখে লজ্জায় গ্লানিতে কুঁকড়ে গিয়ে তাকে বকাঝকা করার চেয়ে তাকে তার উপযোগী করে বুঝিয়ে ওখান থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করুন। শব্দটি যেন বারবার তার সামনে ব্যবহার না হয়, সম্ভব হলে তা নিশ্চিত করুন। কিছুই সম্ভব না হলে – ভালো মন্দ যাহাই আসুক, সত্যেরে লও সহজে !! ভালো খারাপ সব পরিবেশে মিশে মিশে যে ভালো মানুষ হয়, সে ই প্রকৃত ভালো মানুষ । মনে রাখতে হবে দিনশেষে মায়ের সাথে কোয়ালিটি টাইম অনেক বেশি জরুরি কোয়ান্টিটি অফ টাইমের চেয়ে । বাচ্চার সাথে একান্তে কিছু সময় কাটান, তাকে গল্পের বই পড়ে শোনানো, গল্প বলা, গান কবিতা বা খেলার মধ্য দিয়ে তার সাথে আত্তিক যোগাযোগ ঠিক রাখুন । ওকে একটু একটু করে বুঝতে সেখান যে আপনি আর বাবা যে কাজে যাচ্ছেন এতে করে সংসারে কি যোগ হচ্ছে । কাজে যাবার আগে বয়স অনুযায়ী বাচ্চার জন্য সেট অফ একটিভিটি রেখে যান, ছবি আঁকা বা খেলার জিনিস সহ সে যেন ব্যস্ত থাকে সেই আয়োজন করে রাখুন । দিনশেষে তার কাছে জানতে চান, সে সারাদিন কি করেছে । রিওয়ার্ড দিন। তার পরেও কথাও খটকা লাগলে, কোনকিছু ভালো দিকে যাচ্ছে না এমন মনে হলে শিশু বিশেষজ্ঞর সাথে কথা বলতে পারেন ।
সবচেয়ে আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি কিন্তু বাবাদের জন্য বরাদ্ধ থাকলো । অযথা মা-কে সবকিছুতে দোষ দেয়া বন্ধ করেন । বিশেষ করে বাচ্চার সামনে । স্টে হোম অথবা ওয়ার্কিং মাম কারো জীবনই খুব সহজ না । সংসারের প্রতি একজন বাবা হিসাবে দায় দায়িত্ব বাড়ানো অনেক জরুরি । জরুরি সংসারে আপনার ইনভলভমেন্ট । এতে করে বাচ্চা দায়িত্ববোধ শেখে । আর উল্টোটা যদি করেন তো বাচ্চা বেয়াদপি আর অসম্মান ছাড়া কিছুই শিখবে না, তাও শিক্ষক হবেন আপনি নিজেই । এরপর সেই অসম্মান যে সে আপনাকেই ফিরিয়ে দেবে না তার কিন্তু কোনো গ্যারান্টি নেই !
সংযুক্তি : আমি একজন চাকুরিজীবী মা । আমি যেখানে আমার বাচ্চা রেখে কাজে যাই, সেই জায়গা নিরাপদ, সেখানে প্রশিক্ষিত কেয়ারাররা আমার বাচ্চার দেখাশোনা করেন । এই সবকিছু জানার এবং চোখে দেখার পরেও ঠিক এক বছর আগে (১/৬/২০১৫) মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে যেদিন কাজে ফিরেছিলাম, বেশ বড় একটা তোয়ালে-তে মুখ ঢেকে কান্না করতে করতে ট্রেনে এসেছিলাম । আজ এক বছর পার করে দিয়ে আমি একটা কথা আবারও জোর দিয়ে বলি সব মা কে, আপনার সিচুয়েশন আপনি ই বুঝবেন । আপনার সিদ্ধান্ত আপনি ই নেবেন । শুনবেন সবার টাই, কিন্তু করবেন তা-ই যা আপনার ঠিক মনে হয় ।আপনি স্টে হোম মাম হন আর ওয়ার্কিং মাম, আপনার কনফিডেন্সই আপনার বাচ্চাকে কনফিডেন্ট হতে সাহায্য করবে !
স্টে হোম মাম অর ওয়ার্কিং মাম
দে ডোন্ট হ্যাভ টাইম টু রেস্ট
এন্ড বিফোর ইউ ডেয়ার টু ব্লেইম হার
রিমেম্বার, মাদার নো’স দি বেস্ট !!

 

অভিমান ও অহং

আফরোজা হাসান


মাঝে মাঝে মনে হয় প্রত্যেকটি মনই এক একটি সাম্রাজ্য। আর মনটিকে ধারণকারী ব্যক্তি সেই সাম্রাজ্যের সম্রাট। আর মনের অনুভূতিগুলো সেই সম্রাটের মন্ত্রী-উজির-নাজির-প্রজা-সৈন্য। সাম্রাজ্যের সকল কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবার জন্য যেমন সম্রাটের মন্ত্রী-উজির-নাজির-প্রজা-সৈন্যদের সাহায্য সহযোগিতা প্রয়োজন, মনোজগতের ক্ষেত্রেও কিন্তু ঠিক তাই। অনুভূতিগুলোকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে বিঘ্নিত হয় মন সাম্রাজ্যের কার্যাবলী।

মানবিক অনুভূতিগুলোকে কখনোই ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। ফুলের সৌরভের মত এগুলো শুধুই অনুভবের। কবি সাহিত্যিকরা যদিও উপমা বা রূপকের মাধ্যমে অনুভূতিগুলোকে প্রকাশ করতে চেষ্টা করেছেন। যেমন, ফুলের মত কোমল(কোমলতা), পাহাড়ের মত অনঢ়(অনঢ়তা), চাঁদের মত স্বিগ্ধ(স্বিগ্ধতা), হায়নার মত হিংস্র(হিংস্রতা), শেয়ালের মত ধূর্ত(ধূর্ততা)ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে এই উপমা বা রূপকের দ্বারাও আসলে অনুভূতিগুলো ব্যক্ত হয় না বরং অনুভবই করা হয়।

যাইহোক, মন সাম্রাজ্যের সম্রাটের মন্ত্রী-উজির-নাজির-প্রজা-সৈন্যরা হচ্ছে অনুভূতিরা। কিন্তু কোন অনুভূতি কোন পদে আসন সেটা কি জানি? মন্ত্রীর আসনটা চিন্তা করার সাথে সাথেই মনেহলো সম্রাটের পাশে মাথা উঁচু করে বসে আছে ‘অহং’। আর সামনে হাঁটু গেঁড়ে মাথা নিচু করে বসে আছে অভিমান। অহং এর নাক ভীষণ উঁচু তাই মাঝে মাঝেই তর্জনী ঘষে তা দিয়ে যাচ্ছে নাকের ডগায়। আর অভিমান নাক টেনে টেনে রাশ টেনে ধরতে চেষ্টা করছে লাগামহীন অশ্রুর।

অহং আর অভিমানের মধ্যে পার্থক্য কি? যখন ভাবছিলাম মনের অভিধানে উল্লেখিত কথাগুলোর সন্ধান পেলাম। অহং আর অভিমান কখনোই এক না। কারণ এই দুটিই ভিন্ন দুটি মানসিক অনুভূতি। অভিমান হচ্ছে মনের কোনে লুকিয়ে থাকা ছোট্ট শিশুটি। যে কথায় কথায় গাল ফুলিয়ে বসে যায়। কনিষ্ঠা আঙ্গুল উঁচিয়ে বলে আড়ি আড়ি আড়ি। আর অহং হচ্ছে সেই স্বৈরাচারী সত্তা যে নিজেকে অন্যের থেকে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম মনে করে পায়ের উপর পা তুলে বসে থাকে। যে যাই বলুক পা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে প্রদর্শন করে বৃদ্ধাংগুলি।

অভিমানকে আমার মনেহয় ঋতু পরিবর্তনের সময়কার উষ্ণতা ও শীতলতার সংমিশ্রণের আদুরে জ্বর। নাকে সর্দির বন্যা, গলায় খুকখুক ধ্বনি। রেশমি শালে জড়িয়ে, পশমি মাফলার গলায় ঝুলিয়ে, হাতে ধরিয়ে দিতে হয় একমগ মসলা চা। এতোই আহ্লাদী অভিমান। আর অহং মারাত্মক কোন মরণব্যাধি। এইডস, ক্যান্সার নাকি ডায়াবেটিস? হ্যা ডায়াবেটিস। একবার মনে বাসা বেঁধে ফেললে আর মুক্তি নেই। সবসময় তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। বেড়ে গেলেও বিপদ আবার কমে গেলেও বিপদ। এ যেন জলে কুমীর আর ডাঙ্গায় বাঘ অবস্থা।

অভিমানের পেছনে লুকায়িত থাকে ভালোবাসা+ অনুযোগ+ অভিযোগ+ প্রত্যাশা-আশা-আকাঙ্ক্ষা, অর্থাৎ প্রাপ্তির আশা+ বিশ্বাস ও ভরসার অবমূল্যায়ন প্রসূত রাগ+ পছন্দ-অপছন্দের বিভেদ জনিত রাগের অভিনয় ইত্যাদি। আর অহং এর পেছনে থাকে নিজের কোন কিছুকে উপরে তুলে ধরে অন্যদের কাছে নিজেকে উপস্থাপন বা পেশ করা। যার উদ্দেশ্য থাকে অন্যকে অবমূল্যায়ন করা বা হেয় করা। এবং নিজেকে অন্যদের থেকে শ্রেষ্ঠ মনে করে আনন্দিত হওয়া।

সুতরাং, অহং ও অভিমান কখনোই একই অনুভূতি নয়। এই দুই অনুভূতিতে যোজন যোজন পার্থক্য বিরাজমান। তবে হ্যা অভিমানের পথ বেয়ে মনে অহং ঢুকে যাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না। অভিমানের উপর যখন অবিরাম তুষার ঝরতে থাকে এবং পরশ পায় না সে রোদের। ধীরে ধীরে একসময় তা বরফের পাহাড়ে রুপান্তরিত হয়ে যায়। তখন সূর্যিমামার প্রখর কিরণও খুব সহজে সেই পাহাড়ের বুকে বইয়ে দিতে পারে না ঝর্ণাধারা।

আসলে মনের অনুভূতিগুলোর সাথে আমাদের স্বার্থ জড়িত। জড়িত আমাদের আত্মতৃপ্তি, বাসনা, সন্তুষ্টি। অহংকার ও আসক্তিমুক্ত, বিবেকবোধ সম্পন্ন, পরমার্থজ্ঞাননিষ্ঠ, জীবনের সুখ-দুঃখের অবস্থানকে ঘিরে নিয়তি প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসী মানুষের পক্ষেই কেবল সম্ভব স্বার্থ নির্ভর না হওয়া। আর একজন মানুষকে নিজকে স্বার্থহীন হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যে পথে হাঁটতে হবে তার নাম শরীয়ত। যখন মনে আল্লাহর অবস্থান নির্দিষ্ট হয়ে যায় ব্যক্তি পারিপার্শ্বিক শত প্রতিকূলতার মাঝেও করে যেতে পারে অনুভূতির সঠিক প্রয়োগ।

আমি বিশ্বাস করি যে, শুধু যদি অহং বিসর্জন দেয়া যায় তাহলেই পৌছানো যায় মন সাম্রাজ্যের সেই কুটিরটিতে যার নাম প্রশান্তি। আর অভিমান? উহু সে থাকুক সঙ্গোপনে, মনে মনে, নীরবে-নির্জনে, একান্ত আপনে। অভিমান তো সেই অলংকার যা বন্ধনকে করে আরো রঙিন। কিছুটা বিষণ্ণ, সামান্য অবসন্ন, একবিন্দু বিরক্তি, অজানা আসক্তি, করে নিজের সাথে চুক্তি, এসব থেকে নেয়া যায় যদি মুক্তি। মনে বিরাজ করবে প্রশান্তি, অভিমানের এতটাই এই শক্তি………।

 

মুনতাহা: ‘বাধা আসবেই কিন্তু সাহস হারানো যাবে না’

ফাতেমা শাহরিন


একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা মুনতাহা। তার প্রতিষ্ঠানের নাম ‘মনিহারী’। মনিহরীতে রয়েছে, হাতের তৈরী চুড়ি, বালা, নেকলেস, ব্রেসলেট, কানের দুলসহ নানা রকম আইটেম। যার পুরোটাই মুনতাহা নিজ হাতে করে থাকেন। চুমকি, পুথি ইত্যাদি দিয়ে মুনতাহা তার স্বপ্নীল মনের বর্ণিল ছবি আঁকেন তার প্রতিটি সৃষ্টিতে।
তিনি একজন স্টুডেন্ট, পড়াশুনা এইস এস সি শেষ করেছেন। সামনে ভার্সিটিতে ভর্তি হবেন। পড়াশুনার ব্যস্ততার পাশাপাশি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন এই সাহসী নারী।

অপরাজিতার পক্ষ থেকে কথা হয়েছিল তার সঙ্গে:

অপরাজিতা: আপনি ঠিক কখন ভাবলেন হাতের কাজটিকে কন্টিনিউ করবেন?
মুনতাহা: যখন কাজ করে তা অনলাইনে আপলোড করলাম সাথে সাথে বেশ সারা পেতে শুরু করি। তখন থেকে কন্টিনিউ করার কথা ভেবেছি। যদিওবা ছোটবেলা থেকে টুকটাক কাজের প্রতি খুব আগ্রহ ছিল আমার। যখন ক্লাস ফোরে পড়ি তখন ওড়নায় কাজ করেছিলাম, সবাই খুব অবাক হয়ে যায়, এতটুকু মেয়ে কত সুন্দর করে কাজ করেছে। আর যখন আরেকটু বড় হহলাম তখন থেকেই আমার প্রচন্ড আগ্রহ, নেশা, আজ পেশার পরিণত হয়েছিল। পড়াশুনার পাশাপাশি আমি হাতের কাজ শিখেছি সম্পূর্ণ আমার নিজের চেষ্টায়। তবে আমার আম্মু আর নানু আমাকে সবসময় সাপোর্ট দিয়ে এসেছেন।

অপরাজিতা: মনিহারীর শুরুর গল্পটা আমাদেরকে বলুন?
মুনতাহা: মজার ব্যাপার ‘মনিহারী’ কাজ যখন শুরু করি তখন আমার কাছে কোন টাকা ছিল না। আমি এই কাজ একা একায় শিখি। তখন মুলত ফেসবুকে নানান পেজ ঘুরে ঘুরে দেখাটি খুবই আনন্দকর ছিল। একদিন এই গয়নাগুল দেখি। তখন বাবার কাছ থেকে পাওয়া হাত খরচের টাকা জমিয়ে সব মেটারিয়াল কিনি। এককভাবে টুকটাক বানিয়ে বিভিন্ন হাতের নকশা করে নিজেই পড়তাম। এরপর ফেসবুকে, এত সারা পেলাম আলহামদুলিল্লাহ।

অপরাজিতা: আমরা বলতে পারি উদ্দ্যোগটা ছিলো আপনার! নিজের! তারপর?
মুনতাহা: মুলত আমি একাই কাজ শুরু করেছি। এখনও একা করছি। তবুও কাজ থেমে থাকে না। থেমে যায়নি ‘মনিহারী’।সেই সময় অনলাইনে পেজ খোলার চিন্তা করি,অনলাইন পেজ ‘মনিহারী’ সফলভাবে যাত্রা শুরু করে। এর পর আলহামদুলিল্লাহ অনেক অর্ডার পাই। আসলে পুরো ব্যাপারটা ছিল অবশ্যই সংগ্রামের। আমি একা একা সিদ্ধান্ত নেই, কাজও শুরু করি এবং তারপর আমি বেশ ভাল সারাও পাই। সবকিছু নিয়ে আমি খুবই আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠি। কোন কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত এবং সেই বিষয়ে অবিচল থাকাটি আমার কাছে বড় সংগ্রাম মনে হয়েছে।

অপরাজিতা: নিজ উদ্যোগেই স্বল্প পরিসরে এই ব্যবসা জানতে চাই আরও অনেক কিছু?
মুনতাহা: মুছকি হাসির সুর শুনা যায় সম্ভবত, আমি আসলে বাসায় একা একা অব্যবহারিত জিনিসপত্র দিয়েই বানানোর কাজটি শুরু করি। অতঃপর আরও মেটারিয়াল এবং প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে বড় পরিসরি কাজ করার চেষ্টা করি। বিভিন্নজন তাদের মতামত শেয়ার করে। আগে ঘরে বসে নিজেই ব্যবহার শুরু করি। তারপর অনলাইনে বিভিন্ন কিছু বিক্রি করি। আত্নতৃপ্তির।

অপরাজিতা: আবার ‘মনিহারী’ ফিরে আসি, একজন নারী হিসেবে এ পথ চলা, কেমন ছিল, সহজ কিংবা কঠিন?
মুনতাহা: কোন কাজই খুব সহজ নয়। একজন নারী উদ্দ্যোক্তা হিসেবে বলব, যেকোন কাজে প্রথমে প্রচুর বাধা আসে এবং আসবে কিন্তু কখনও সাহস হারানো যাবে না। যদি সাহসের সাথে বাধা পেরিয়ে উঠা যায় ইনশাআল্লাহ আর কোন ভয় থাকে না।

অপরাজিতা: এ সেক্টরে অসহায় মেয়েদের কর্মস্থানের কতটুকু সুযোগ আছে?
মুনতাহা: হা অবশ্যই আছে, কেউ যদি হাতের কাজ পারেন তাদের জন্য প্রচুর সুযোগ আছে। অসহায় মেয়ে শুধু কেন আমার মত যারা ঘর থেকে বাইরে কাজ করতে যেতে পারে না তারা ঘরে বসেই তাদের কাজগুল অনলাইনে বিক্রি করতে পারে অনায়াসে। চাইলে এই কাজ করে সংসার চালাইতে পারেন। যে কোন কাজে লেগে থাকা দরকার।

অপরাজিতা: মূল ধারার ব্যবসার জন্য নারীরা সহযোগিতা কি আদৌ পাচ্ছে, কেন পাচ্ছে না বলে আপনি মনে করেন?
মুনতাহা: পাচ্ছে না। এমন বলার কারণ আসলে আমার এই কাজের জন্য আমি কয়েক জায়গায় সাহায্যের জন্য গিয়েছি কিন্তু বিফল হয়েছি। তাই আসলে এই ব্যাপারে কিছু বলতে পারছি না।

অপরাজিতা: আপনার দৃষ্টিতে সফল নারী কে?
মুনতাহা: সফলতা হচ্ছে কোন একটা কাজ শুরু করে সফলভাবে তা করতে পারা। নারীদের জন্য সফলতাটি ভীষণ কঠিন ও সংগ্রামের। ছেলেরা যত সহজে বেরিয়ে পড়তে পারে বাধা কম, নারীদের প্রচুর বাধা অতিক্রম করতে হয়।

অপরাজিতা: নারী দিবস চলে গেল’ নারীদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন?
মুনতাহা: নারীদের উদ্দেশ্যে নারী দিবসে বলতে চাই এতটুকুই, ‘যারা বসে আছেন কিন্তু কিছু করতে চান তাদের বলল, হাতের বিভিন্ন কাজ শিখুন এবং আত্ম-সবলম্বী হয়ে উঠুন। বাধা পেরিয়ে হাটতে পারলে আমরা সফল।

অপরাজিতা: নতুন উদ্দ্যোক্তাদের কিভাবে উৎসাহ দিবেন?
মুনতাহা: যারা নতুন উদ্যোক্তা হতে চান তাদের উদ্দেশ্যে বলব, ‘আপনারা এগিয়ে যান’। সফলতা আসবে ইনশাআল্লাহ। প্রথমে হয়ত আপনাকে কেউ সাপোর্ট করবে না, সবাই বাধাও দিতে পারে। কিন্তু যখন দেখবে আপনি আপনার যোগ্যতা দিয়ে সফলতার পথে হাটবেন তখন সবাই আপনাকে সাপোর্ট করবে।

অপরাজিতা: মনিহারী নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
মুনতাহা: ‘মনিহারী’ নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন। গ্রুপিং করে কাজ করার আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। অনেক বড় বড় উদ্দ্যোক্তাদের সাথে কাজ করার ইচ্ছে। আমি হাতের তৈরি জিনিস নিয়েই কাজ করতে চাই। সবাই দোয়া করবেন।

 

সুইসাইড: ‘আমরা অল্পতেই ধৈর্য হারাই’

ডা. মারুফ রায়হান খান


শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শ্রেয়া আত্নহত্যা করেছেন। আমি ৪র্থ বর্ষের স্টুডেন্টদের পড়াই। আমি জানি কী বিশাল পরিমাণ স্ট্রেস, এংজাইটি, ডিপ্রেশানে থাকা সম্ভব তাদের। তবে কোনোভাবেই আত্নহত্যা কোনো সমাধান হতে পারে না। এর মধ্যেই আমাদের ভালো থাকা শেখা প্রয়োজন। আমি যেকোনো ব্যাচে ক্লাস নিতে গেলে ক্লাসটা শুরু করি একটা কমন গল্প দিয়ে। জীবন ভালো না বুঝলে অতো পড়াশোনা দিয়ে আল্টিমেটলি কী হবে? আমি জানি শ্রেয়ার পথের পথিকের অভাব নেই।

২০০৬ সাল, আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। ফুটবল বিশ্বকাপ চলছিল তখন। সেই ফুটবল বিশ্বকাপটা আমার জন্য খুব আনন্দের স্মৃতি হতে পারতো, কারণ আমার ফেভারিট টিম ইটালি সেবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। কিন্তু তা ঘিরে আমার আনন্দ নেই, বরং রয়েছে একরাশ বেদনা আর কান্না। কারণ সেই বিশ্বকাপটি চলার সময় আমার একজন বন্ধু আত্নহত্যা করে। হ্যাঁ, এই ১৪/১৫ বছরের মানুষটিই ফ্যানে দড়ি ঝুলিয়ে আত্নহত্যা করে। ও নাকি পড়াশোনা না করে খেলা দেখতো, বাবা-মা সে রাতে নাকি বেশ বকাঝকা করেছিলেন, বন্ধু আমার আর সে জীবন রাখার কোনো মানে খুঁজে পায়নি।

আমাদের এই প্রজন্মের অজস্র দিক আছে যেগুলো বেশ পজিটিভ কিন্তু একটা ভয়ঙ্কর রকমের অন্ধকার দিক আছে। আমরা বোধহয় খুব অল্পতেই ধৈর্য হারাই, এই অতি মূল্যবান জীবনটিকে আমরা মূল্যায়ন করতে পারি না, তার গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারি না, জীবনটিকে হয়তো ঠুনকো ভাবি কিছু থেকে কিছু হলেই–কী হবে আর এ জীবন রেখে। তার প্রমাণ পাই যখন আমরা জানতে পারি, কাউকে ‘পাখি ড্রেস’ কিনে দেওয়া হয়নি বলে আত্নহত্যা করে, প্রিয় দল আর্জেন্টিনা কিংবা ব্রাজিল খেলায় হেরেছে বলে ঐ দেশের হাজার হাজার মাইল দূরে বসবাসরত বাঙালি যুবক যখন তার জীবন বিনষ্ট করে ফেলে, প্রিয় মানুষকে না পেলে আত্নহত্যা করে ফেলে, বাবা-মা একটুখানি বকাঝকা করলে গলায় দড়ি দেয়, পরীক্ষায় একবার কাঙ্খিত সাফল্য না পেলে সে জীবন রাখার আর কোনো অর্থ খুঁজে পায় না। এসবের কারণ কি এটা হতে পারে যে, আমাদের জীবনের আসলে ব্রড কোনো ভিশন নেই, আমাদের স্পেক্ট্রাম অফ থিঙ্কিংটা ন্যারো?

আমার সাথে এটা প্রায় সবাই হয়তো নির্দ্বিধায় স্বীকার করে নেবেন যে, আমাদের প্রজন্মের একটা বিশাল অংশ মারাত্নক রকমের ডিপ্রেশানে ভোগে। জীবনটাতে যেন কোনো শান্তি নেই, স্বস্তি নেই, ছন্দ নেই। আমাদের ‘নেই’-এর পাল্লাটাই যেন খুব ভারী, ‘আছে’-এর পাল্লাতে যেন কিছুই নেই। বাস্তবতাটা কি আসলেই তাই?

আচ্ছা, এ লেখাটি যারা পড়ছেন তাদের মধ্যে এমন একজন মানুষও কি আছেন, যিনি সকালে খেতে পান না, দুপুরে খেতে পান না, রাতে খেতে পাবেন কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা নেই? ডায়েট কন্ট্রোলের জন্যে না, খাওয়ার সামর্থ্য নেই সেজন্যে? মনে হয় না এমন কোনো পাঠক এখানে আছেন। আমি আপনাদের একটা জরিপ শোনাই। ২০১১ সালে ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক একটা জরিপ করে, সেখানে দেখা গেছে পৃথিবীতে প্রায় ১ বিলিয়ন মানুষ এরকম ‘Chronically hungry’ থাকে। পৃথিবীতে ৬ বিলিয়ন মানুষ আছে তার মধ্যে ১ বিলিয়নই এভাবে ক্রমাগত ক্ষুধার্ত অবস্থায় দিনাতিপাত করে–প্রতি ৬ জনে ১ জন! এটা আমাদের প্রতি আল্লাহর কতো বড় রহমাত যে তিনি আমাদের অন্তত ৩ বেলা ভালোভাবে খাবার মতো তাওফিক দিয়েছেন।

ক্ষুধার কষ্ট যে কত বড় একটা কষ্ট, সেটা আমরা বুঝব না। বুঝেছিল ঐ পরিবারটা, বাংলাদেশেরই একটা পরিবার, দীপালিদের পরিবার। যে পরিবারে দুটো সন্তান; বড় মেয়ে আর ছোট ছেলে। সে পরিবারের নিয়ম ছিল দুপুরবেলা খাবে ছেলেটা আর রাতেরবেলা খাবে মেয়েটা। দুবেলা দুজন খেতে পারবে না, কারণ দুজনকে দুবেলা খাওয়ানোর মতো আর্থিক সঙ্গতি পরিবারটির ছিল না। একদিন দুপুরবেলা ছেলেটি খেলো, রাত হলে তার আবার ক্ষুধা লেগে গেলো, অসহনীয় ক্ষুধা–ছেলেটি তার বোনের জন্য বরাদ্দকৃত রাতের খাবারটা খেয়ে ফেলে। সারাদিন ক্ষুধায় কষ্ট করেছে বোন, রাতের বেলায় যখন সে দেখলো তার খাবারটুকু নেই, রাগে-ক্ষোভে-দুঃখে সে রাতে আত্নহত্যা করে বোন।

ক্ষুধার কষ্টটা আমরা বুঝব না। বোঝে ঐ মানুষটা, সোমালিয়ার ঐ মানুষটা, যিনি রমাদানে একজন স্কলারকে প্রশ্ন করেছিলেন, আমাদের সাহরিতে খাবার মতো কিছু নেই, ইফতারেও খাবার মতো কিছু নেই; আমাদের রোজাটা কি হবে?!

আমার স্মৃতিপটে প্রায়শই গাজার ১১ বছরের এক শিশুর একটা গায়ে শিহরণ জাগিয়ে দেয়া প্রশ্ন ভেসে ওঠে। ২০১৪ সালে লাস্ট এ্যাটাকের সময় ছেলেটি একজন স্কলারকে প্রশ্ন করে, এই যে এতো বোমা হামলা হচ্ছে এর মধ্যকার ডাস্ট পার্টিকলগুলো যে আমাদের নাক দিয়ে মুখ দিয়ে যাচ্ছে –আমাদের রোজাটা কি হবে!?

আচ্ছা এবার এ লেখার পাঠকদের জন্যে আরেকটি প্রশ্ন। আপনাদের মধ্যে এমন একজনও কি আছেন যিনি জন্মগ্রহণের পর তার মা ছিলেন না, বাবা ছিলেন না, এমনকি অন্য কোনো নিকটাত্মীয় ছিলেন না আপনাদের দেখাশোনা করার জন্য? একজনও বোধহয় নেই। আপনি শুনে অবাক হবেন, ইউনিসেফের এক জরিপে উঠে এসেছে পৃথিবীতে ২২০ মিলিয়ন, দুইশত বিশ মিলিয়ন শিশু আছে যারা জন্মের পরে তাদের মা পায়নি, বাবা পায়নি, এমনকি কোনো নিকটাত্নীয় ছিল না তাদের দেখাশোনা করার জন্যে।

তবুও নাকি আমাদের জীবনটাতে কোনো শান্তি নেই, সুখ নেই, স্বস্তি নেই, ছন্দ নেই…।

আমি বছর কয়েক আগে একটা পত্রিকায় সম্পাদনার কাজের সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজে বার্ণ ইউনিটের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ডা. সামন্ত লাল সেন স্যারের একটা সাক্ষাৎকার পড়েছিলাম। সেখানে তিনি বলেছেন, তার মেয়ের ছোটবেলায় একবার মিজেলস (হাম) রোগ হয়েছিল, তারপর রোগ সারলেও চেহারায় দাগ পড়ে যায়। তার মেয়ের মনে খুব দুঃখ ছিল মুখে এই দাগের জন্য। তো একবার প্রফেসর সামন্ত লাল স্যার তার কাছে আসা আগুনে দগ্ধ হয়ে যাওয়া একটি মেয়ের ছবি তুলে এনে তার মেয়েকে দেখালেন। মেয়ে এবার অনুধাবন করলেন অন্য অনেকের চাইতে তিনি অনেক ভালো আছেন। তার বাবাকে বললেন, আমার চেহারার দাগ দূর করতে হবে না, তুমি বরং এই মেয়েটিকেই চিকিৎসা করো।

আসলে আমরা যখন আমাদের অবস্থানের চাইতে নিচের কারও দিকে তাকাব, তখন এই জীবনটাই আমাদের কাছে অনেক বেশি সুখের মনে হবে, অনেক মূল্যবান মনে হবে। সত্যি বলতে কী পৃথিবীতে অজস্র মানুষ আছে যারা আমাদের মতো একটা জীবন পেলে বর্তে যেতো, ধন্য হয়ে যেতো।

আরেকজন বিখ্যাত ব্যক্তির সাক্ষাতকারের জন্য কাজ করেছিলাম, তিনি হচ্ছেন প্রফেসর ডা. শুভাগত চৌধুরী, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বিষয়ক যারা লেখালেখি করেন, তিনিই বোধহয় সবচেয়ে এগিয়ে আছেন, ৪০ টি বই উনার। তিনি তার সাফল্যের কথা বলছিলেন, তিনি জীবনে যতটুকু পেয়েছেন, তাই নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন। তার অন্য বন্ধুরা কে কতো দ্রুত কতোটা এগিয়ে গেলো এসব নিয়ে তিনি কখনও চিন্তিত ছিলেন না। নিজের যতোটুকু আছে, তাই নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন। একজন বিখ্যাত স্কলার ইমাম ইবনে তাইমিয়া (র.)-এর একটি চমৎকার বাণী আছে, “Contentment is the paradise of this world.” অর্থাৎ, এই পৃথিবীর জান্নাত হচ্ছে সন্তুষ্টি। আমাদের যতোটুকু যা আছে তাই নিয়ে যদি আমরা পরিতুষ্ট থাকতে পারি, আমাদের জীবন সুখে ভরে উঠবে।

আমাদের মধ্যে একটা ব্যাপার খুব অহরহই দেখা যায়। আমাদের চলার পথে, সামনে এগোবার পথে কোথাও যদি বাধা চলে আসে, তবে আমরা সেখানেই হাল ছেড়ে দিই, নিরাশ হয়ে পড়ি। কিন্তু একটা অদ্ভুত ব্যাপার খেয়াল করে দেখুন, পৃথিবীতে যারাই বড় হয়েছেন, তাদের প্রত্যেকের জীবনেই কিন্তু অনেক স্ট্রাগল ছিল। পৃথিবীর বুকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ যিনি, সেই মুহাম্মাদ (স.) এর কথাই ধরা যাক। আমরা সবাই জানি তার মিশনের প্রাথমিক পর্যায়ে তাকে কতোটা বাধা-বিপত্তি-অত্যাচার-নিগ্রহ সইতে হয়েছিল। তিনি হাল ছেড়ে নিরাশ হয়ে যাননি, তার মিশন থামিয়ে দেননি–আজ পৃথিবীতে কোটি কোটি অনুসারী তাঁর। এন্ড্রু কার্নেগীর কথা বলতে পারি আমরা, যাকে নোংরা পোষাকের জন্য পার্কে ঢুকতে দেওয়া হয়নি, ৩০ বছর পর সেই এন্ড্রু কার্নেগীই পুরো পার্কটি কিনে ফেলেন এবং সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেন “সবার জন্য উন্মুক্ত “। বহুল জনপ্রিয় স্টিভ জবসের কথা বলা যেতে পারে, ৭ মাইল দূরের এক গির্জাতে প্রতি রবিবার ভালো খাবার-দাবারের ব্যবস্থা ছিল। সারা সপ্তাহ তার ভালো খাওয়া-দাওয়া করার মতো আর্থিক সঙ্গতি ছিল না। তাই প্রতি রবিবার তিনি পায়ে হেঁটে ৭ মাইল দূরের গির্জাতে যেতেন এক বেলা ভালো খাবার জন্য।

আমি বেশ কিছুদিন আগে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ডিপ্রেশানের উপর একটা সেমিনারে গিয়েছিলাম। সেখানে যিনি স্পিকার ছিলেন তিনি খুব সুন্দর করে ডিপ্রেশান কাটানোর একটা সহজ বুদ্ধি শিখিয়ে দিয়েছিলেন। আর তা হচ্ছে অন্য মানুষের জন্য কিছু করা, তাদের উপকারে নিজেকে নিয়োজিত রাখা। এখন তো আমাদের দেশে বিভিন্ন রকমের স্বেচ্ছাসেবামূলক কর্মকাণ্ড হয়ে থাকে –শীতবস্ত্র বিতরণ, বন্যা দুর্গতদের সহায়তা, স্বেচ্ছায় রক্তদান, দুস্থদের খাদ্য বণ্টন, ফ্রি হেলথ ক্যাম্পেইন আরও কত কী। এসবের সাথে যদি আমরা নিজেদেরকে জড়িত করে নিতে পারি তবে জীবন নিয়ে খুব বেশি হতাশামূলক চিন্তাভাবনা করার সময়টা আমরা পাব না।

ওখানে আরেকটা জিনিস শিখেছিলাম যারা নিজের জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট, কৃতজ্ঞ, তাদের কর্টিসল হরমোন (স্ট্রেস হরমোন নামে পরিচিত) লেভেলটা কম থাকে তুলনামূলকভাবে। তারা বেশি সুখী থাকেন। আসুন না আমরা আমাদের চারপাশের সবার প্রতি কৃতজ্ঞ হই, কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি আমাদের স্রষ্টার প্রতি, মা-বাবার প্রতি, আত্নীয়-পরিজনের প্রতি, বন্ধু-বান্ধবের প্রতি। আপনার জীবন সুখী হোক।

প্রভাষক
ফার্মাকোলজি বিভাগ
এনাম মেডিকেল কলেজ

 

নেকলেস

জাহেদ উদ্দীন মোহাম্মদ


আমার নানার দুই মেয়ে। আমার মা আর এক খালা। মা থাকে চট্টগ্রামে আর খালা টেকনাফে।
মা বলে, আমরা জমজ দু’ভাই নাকি খালার কলিজার টুকরা। আমাদের কারো জ্বর হলে খালার পরান যায়-যায় অবস্থা। তিনি পড়ি-মরি করে আমাদের বাড়ী ছুটে আসতো। তাছাড়া, আমাদের কাছে খালা মানে অবাধ একখানি স্বাধীনতা আর অসীম আনন্দ।

এখন আমরা শৈশব হারিয়ে কৈশোরের শেষ পথে । খালারও বিয়ে হয়ে গেছে। বিয়ের পর খালা আমাদের বাড়ীতে এলেই বাবা “বার্মাইয়ার বৌ” বলে খালাকে খেপাত আর বাসায় রীতিমত আগুন জ্বেলে বাবা হাসতে হাসতে অফিসে চলে যেত।
তারপর খালার চোখের পানি আর নাকের সিন্নিতে বাসায় জলোচ্ছাস বয়ে যেত । খালা ভাত খায় না। কথা বলে না। বাবার কোন শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত এক রুমে গিয়ে রুদ্রমুর্তি ধরে বসে থাকত।
বাবার একটা কঠিন শাস্তি হোক, এটা আমরাও চাইতাম। কিন্তু বড়দের বিচার কে করে, জানতাম না। আমরা ছিলাম খালা-অন্ত:প্রান। কথিত আছে, খালার বিয়ের দিন আমরা দু’ভাই খালার বিয়ের শাড়ীর-কোনা ধরে, মা-মা বলে এতো এতো কেঁদেছি যে,খালু পর্যন্ত দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিল; শেষ পর্যন্ত দুই সন্তানের মা বৌ হিসাবে তাঁর কপালে জুটলো কিনা।
আমরা খালার রাগ ভাঙানোর জন্য, খাওয়ানোর জন্য এতো টানাটানি করি; খালার রাগ কোনভাবেই কমে না। আমরা ছোটবেলার মতো খালার গালের দুইদিকে দু’ভাই গাল লাগিয়ে ভাব দিই; বিনিময়ে খালা আমাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, কিন্তু রাগ ছাড়ে না।
মা একদম চুপচাপ। খালাকে কিছু বলছে না।
আমরা দুপুর পর্যন্ত না খেয়ে আছি।
তারপর, বাবা অফিস ছেড়ে দুপুরে বাসায় খেতে এলো আর দুইবোন মিলে বাবাকে সে কি তুলাধুনা!
-তুমি কি পেয়েছ? আমার বোনকে মুখে যাই আসে, তাই বলবে! তোমাকে অনেক সহ্য করেছি। আর করবো না।
-দেখ বুবু, দুলাভাই তোর বাসায় এলে যখন তখন অপমান করে। সরাসরি আসতে না করে দিলেই তো পারে। তোদের বাড়ী আর আসবো না।
বাবার সামনে দুই বোনের অগ্নিমুর্তি আর বজ্রবর্ষন দেখে আমরা দুইভাই ইঁদুর ছানার মতো কাপঁতে থাকি। একটু আনন্দ যে পাই না, তা কিন্তু নয়। অথচ কি আশ্চায্য! বাবা দাঁত দেখিয়ে হাসতে থাকে।
-দ্যাখ, দোষ সব তোদের। এবার দ্যাখ, কি রকম এক অমানুষের সাথে তোরা আমাকে বিয়ে দিয়েছিস! – খালাকে উদ্দেশ্য করে মা কাঁদো কাদোঁ গলায় বলে।
মনে হলো,মা নাক টেনে একটু সিন্নি ফেলল।
-চল বুবু। তোকে বাড়ী নিয়ে যাবো। এই বদলোকের সাথে আর সংসার করতে হবে না। চল বাড়ী যাই।
-চল, আগে আমরা ভাত খেয়ে নিই। তারপর দুবোন মিলে শলা-পরামর্শ করে ঠিক করবো কিভাবে তোর দুলাভাইকে শায়েস্তা করা যায়?
তারপর ছহি-ছালামতে সকলে মিলে আমাদের দুপুরের খাওয়া-দাওয়া শেষ হয়।
আমরা রাতে কি হয়, দেখার অপেক্ষায় থাকি।
ওমা! একি! রাতের বেলা দেখি মা-খালা-বাবা ঠাট্টা-মশকরায় মেতে আছে। দুপুরে ঝড়-তুফানের কোন রেশ কোথাও নাই!
এই হলো আমার খালা; বয়স বাড়লেও এখনো শিশুর মতো সহজ-সরল। আমাদের জন্য সর্বদা অন্তরে লালন করা যানকবুল এক ভালোবাসা।
বিগত আট-দশ বছরে আমরা আরো দ্রুত বড় হয়ে গেছি। আমার ছোট জন থিতু হলো আমেরিকা আর আমি দেশে । একটা চাকুরী করি। বিয়েও করেছি।
কিছুদিন পর পর নতুন বৌকে নিয়ে টেকনাফে বেড়াতে যাবার জন্য খালা জোরাজুরি করে। ফোনে কান্নাকাটি করে। আমি সময় পাই না।খালার অনুযোগের শেষ নাই।
-তোরা বড়লোক হয়ে গেছিস। আমি গরীব বলে দেখতে পারিস না। তোর আপন মা নই বলে অবহেলা করছিস!
আরো কত কত কথা!
আমার খালু বড়লোক। দিলদরিয়া মানুষ। বাবার সাথে খুব ভাব। খালুর ১০টি ইলিশের বড় বোট আছে। বাৎসরিক হিসাবে আমাদের বাড়ীতে যত মাছ লাগত, সব মাছ খালু লোক দিয়ে চট্টগ্রাম পাঠিয়ে দিতো।
বাবার জন্য রুপচান্দা শুটকি, মা’র জন্য বড় ইলিশ আর আমাদের জন্য রকমারী সামুদ্রিক মাছ।
আর এইসব মাছ খেয়ে-দেয়ে, বাবা সুযোগ পেলেই খালাকে “জাইল্যার বৌ” বলে খোচাঁত। শুনে খালাও হাসে, বাবাও হাসে। আমরাও হাসি।
গত কয়েক সিজন হতে খালার এক ধরনের মন্দা চলছিল। বছর-দুই আগে অপয়া এক ঘুর্নিঝড়ের কবলে পড়ে আমার খালুর ১০টি ইলিশ বোটই সাগরে তলিয়ে গেছে। এখন সকালের রাজা বিকালের ফকির।
এইবার বিয়ের তৃতীয় বার্ষিকীতে খালাকে চমকে দেয়ার প্লান করি। সেই মোতাবেক শুক্রবারের এক সকালে খালার বাসার দরজায় আমরা স্বামী-স্ত্রী হাজির।
খালা-খালু যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলো। আমাদেরকে খালা অনেকক্ষন বুকের সাথে লেপ্টে রাখে। খুশিতে ঝরঝর করে কেদেঁ দিলো।
আমরা হাতমুখ ধুয়ে নাস্তা করে শাহপরীর দ্বীপ সী-বীচে রওয়ানা দিলাম।
বিয়ের পর খালার বাড়ী এইবার আমার প্রথম যাওয়া। সেই হিসাবে নতুন বৌয়ের জমজমাট খাওয়ার বিরাট আয়োজন। দুপুরে আর রাতের খাওয়ার আয়োজনে কি ছিলো না; সেটাই ভাবছি। মাছের মধ্যে সাগরের এক কেজি ওজনের লবস্টার হতে শুরু করে বিরল প্রজাতির দশাসই লাক্ষা মাছের রোস্ট; বন মোরগের মাংস হতে শুরু করে টেকনাফের পাহাড়ী ছাগহরিনের মাংস বাদ যায়নি।
তারপরও খালার আফসোসের শেষ নেই।
রাতে ভাগিনা-বৌ আংটি আর দামী শাড়ী উপহার পেলো।
আমি পেলাম ১সেট কোর্ট-পেন্টের রেমন্ড কাপড়। খালা তাঁর বোন-দুলাভাইয়ের জন্যও নতুন কাপড় চোপড় দিলো। উপহার দিতে পারার খুশিতে খালা-খালুর চোখ-মুখ চিকচিক করছিল।
আমরা খালার বাড়ীতে স্বপ্নের মতো একটি রাত কাটলাম। দুপুরের চট্টগ্রাম ফিরব; তাই একটু সকাল সকাল টেকনাফ পৌরসভা মার্কেটে গেলাম, উদ্দেশ্য মুলত উইন্ডো শপিং। পছন্দ হলে টিকিটীকি কিছু শপিং করবো।
খালার বাড়ী হতে এক কিলোমিটারের মতো দুরত্ব। শপিং শেষে ফেরার পথে এক স্বর্নের দোকানে ঢুকি। দোকানের তালাঝুলা আলমিরার এক কোনে একটা নেকলেসে আমাদের চোখ আটকে গেলো।
যেমন ডিজাইন তেমন মনকাড়া। নেকলস েমুক্তার পুতি আর ছোট ছোট স্বর্নরেনুর ঝুলন্ত মায়াময় দুলুনি।
-ভাবী, এটা খুবই আনকমন নেকলেস; স্বনার্কার বলল।
-দেখে তো পুরানো বলে মনে হয়, আমি বললাম।
-ঠিকই ধরেছেন। আমাদের দোকানের বিরল জিনিস সংগ্রহে গুরুত্ব দেয়। এটা খুব খানদানী ও আনকমন ডিজাইন। আমরা গতকাল সংগ্রহ করেছি। আপনি বললে,একটু ওয়াশ করে দেবো। তখন মনে হবে একদম নতুন- স্বনার্কার বলল।
ডিজাইনটা খুবই বিরলও বটে। মনে হলো আগেকার জমিদার বা সৌখিন লোকজন ব্যবহার করতো। আমাদের খুব পছন্দ হলো। ওজন সোয়া এক ভরি। দরদাম করে নেকলেসটা কিনে ফেললাম।
চট্টগ্রাম ফিরতে বেশ রাত হলো।
পরদিন খালার দেয়া বিভিন্ন উপহার মা’কে দেখাই। আমার স্ত্রী খালার অবিশ্বাস্য আদর-আপ্যায়নের কথা বারবার বলছিল।
-ও ঐরকম, ভাগিনাদের জন্য প্রান দিয়ে ফেলে।
-এমন আদর কোন খালা করতে পারে? আমার তো এখনো বিশ্বাসই হচ্ছে না।
তারপর মায়ের জন্য কেনা সারপ্রাইজ গিফট নেকলেসটা মা’র হাতে দিলাম। মা নেকলেচটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষন আবেগরুদ্ধ হয়ে বসে রইলেন। ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলেন।
-এটা কোত্থেকেকিনেছিস,বাবা?
-কেন মা? তোমার পছন্দ হয়নি?
-না বাবা। ঠিক তা নয়।
আমার স্ত্রী কাপড় পাল্টাতে ওর রুমে চলে গেল।
-বাবা, তোর খালা কি নেকলেসটা দেখেছে?
-না মা, আমরা কেবলমাত্র গাড়ীতে উঠার একটু আগে কিনেছি। দেখানোর সময় পাইনি।
-ও, আচ্ছা।
-কেন মা? কোন সমস্যা ?
মা কেমন জানি আনমনা হয়ে গেলেন। মনে হলো মা কিছু একটা বলতে ইতস্তত করছেন। একবার ডানে-বায়ে তাকালেন।
ফিসফিস করে বললেন, এটা তোর খালার নেকলেস,বাবা।
-কি!!!
এ যেন, প্রচন্ড হাসিখুশির কোন শিশুর মুখে হঠাৎ কালি মেখে দেয়া বিহবলতা…
আমার পুরো পৃথিবীটা দুলছে।
থমকে আছে চারপাশের বাতাস । অদৃশ্য শাসনে যেন স্থির হয়ে আছে, খানিক আগের উড়াউড়ি করা জানালায় পর্দা।
নিষ্ঠুর এক নীরবতা আমাদের গিলতে থাকে।

 

হিন্দি সিরিয়াল ও আমার ভাবনা.. শেষ পর্ব

শুরু করে দিন আজ থেকেই। চলেন এক্ষুনি একটা মেক্সিকান ডিশ রান্না করা শিখিয়ে দিচ্ছি আপনাকে। আপনার ভুলে রাগ করে বেড়িয়েছে আপনার স্বামী। তাই তাকে প্রশান্ত করার দায়িত্বও আপনার। সুন্দর করে রান্না করেন। তাড়াতাড়ি খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিন মেয়েকে। তারপর সুন্দর করে নিজেকেও সাজিয়ে অপেক্ষা করেন উনার জন্য। পরিবেশকে আরো রোম্যান্টিক করতে পারেন চাইলেই। নিভিয়ে দিন ঘরের সব বাতি। জ্বালিয়ে দিন কয়েকটি ক্যান্ডেল। হয়ে যাক আজ রোম্যান্টিক ক্যান্ডেল লাইট ডিনার। পাবেন খুঁজে এমন আনন্দময় একটা দৃশ্য আপনার সিরিয়ালে?

হাসলো আমার কথা শুনে বোনটি কিন্তু হাসিতে প্রফুল্লতার ছোঁয়া ছিলো না। বুঝলাম এত কড়া কথা যে শুনিয়ে গিয়েছে তার জন্য আয়োজন করা সত্যি কিছুটা কষ্টেরই বটে।
হেসে বললাম, আপনাকে মেক্সিকান ডিশ কেন রান্না করতে বললাম জানেন? মেক্সিকান খাবারে বেশ ঝাল থাকে। আপনি ইচ্ছানুযায়ী সেই ঝালের মাত্রা আরেকটু বাড়িয়ে দিতে পারেন। উনি আপনার মন জ্বালিয়েছে বদলে আপনি উনার জিভ জ্বালিয়ে দিন। হয়ে যাক শোধ বোধ। বুঝিয়ে না বলে হৈচৈ করার জন্য কিছু তো একটা শাস্তি হওয়া উচিত উনারও। মন খুলে হেসেছিলেন তখন বোনটি। যতদূর জানি উনি এখন সিরিয়াল দেখার বদভ্যাস ত্যাগ করেছেন। আসলে আমরা চাইলেই ইচ্ছা ও চেষ্টার দ্বারা আমাদের জীবনটাকেই করে তুলতে পারি আমাদের জন্য বিনোদনের একটা মাধ্যম।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সেই পন্থা জানা নেই আমাদের। যারফলে বিনোদনের জন্য আমাদেরকে চোখ রাখতে হয় টিভির পর্দায়। জীবনের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে কত শত চমক। সেগুলোকে খুঁজে বের করে উপভোগ করতে করতেই কেটে যেতে পারে আমাদের সমস্ত অবসর। অথচ জানা না থাকার কারণে অবসর কাটানোর জন্য আমাদেরকে এমন জিনিসের কাছে যেতে হয় যা মনকে প্রশান্ত করার বদলে করে আরো অশান্ত। তাই হিন্দি সিরিয়ালের বিরুদ্ধে বিশেধাগার গড়ে তোলার সাথে সাথে এর ক্ষতিকারক দিক গুলো সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করতে হবে সবার সামনে। পরিচিতজন যারা সিরিয়াল দেখেন তাদেরকে নিরুৎসাহিত করতে হবে সঠিক পদ্ধতিতে। এবং তাদেরকে জানাতে, বোঝাতে ও শেখাতে হবে কিভাবে নিজের জীবনটাকেই করে তোলা যায় বিনোদন ও অবসর কাটানোর মাধ্যম হিসেবে।

দুনিয়াটা একটা পরীক্ষাক্ষেত্র। মানুষকে তাই জীবন যাপন করতে হয় হাজারো পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে। ধন-সম্পদ, পরিজন সবই ফিতনার বস্তু। স্ত্রীরাও স্বামীদের জন্য বিরাট পরীক্ষার বস্তু। সিরিয়াল যেহেতু বোনেরা বেশি দেখেন তাই তাদেরকে বোঝানোর ক্ষেত্রে ভাইদেরকে মনে রাখতে হবে রাসূল (সঃ) কথা। আবু হুরায়রা রা থেকে বর্ণিত, রাসূল (সঃ) বলেছেন-“ উত্তম পন্থায় মহিলাদের সংশোধন করার চেষ্টা করো। কারণ মহিলাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে একটি বাঁকা হাড় থেকে। সে হাড়ের উপরের অংশ বাঁকা। যদি তাদেরকে বেশী সোজা করতে চাও তারা ভেঙ্গে যাবে। আর যদি মোটেই সোজা করতে না চাও তাহলে বাঁকাই থেকে যাবে।” এই হাদিসটিতে মহিলাদের স্বভাবের বৈশিষ্ট্যর কথা উল্লেখ করে পুরুষদেরকে সাবধানতা অবলম্বন করার উপদেশ দান করা হয়েছে। সবর ও হিকমাহ অবলম্বন করার নসীহা দেয়া হয়েছে। যদিও নেককার মহিলারা এই উপদেশের কথা স্মরণে রেখে নিজেদেরকে সাধারণ মহিলাদের দোষত্রুটি থেকে উর্দ্ধে রাখার চেষ্টা করে। নিজেদেরকে স্বভাবগত বক্রতা থেকে বের হতে চেষ্টা করে। কিন্তু এরজন্য শরীয়তের যে জ্ঞানের দরকার হয় তা যেহেতু সবার থাকে না। ধীরে ধীরে অর্জিত হয় এই জ্ঞান। তাই ততদিন পর্যন্ত অবশ্যই সবর ও হিকমাহ অবলম্বন করতে হবে।

সংসার জীবনটা আসলে উভয়েরই। তাই একে অন্যকে দোষারোপ না করে, নিন্দা ও সমালোচনা না করে উচিৎ একে অন্যের সহযোগী হওয়া। একে অপরকে সাহায্য করা নিজ নিজ বদভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসার। পরিবারের প্রতিটি সদস্য যদি এমন একে অপরের সাহায্য সহযোগী হয়ে উঠে তাহলে জীবনকে সঠিক ও সুন্দরের পথে পরিচালনা করা আসলে মোটেই কঠিন কিছু নয়, ইনশাআল্লাহ।

 

হিন্দী সিরিয়াল ও আমার ভাবনা…১

আফরোজা হাসান


বর্তমান সময়ে খুব শুনি টিভি সিরিয়ালের ক্ষতিকর ও অশান্তিকর দিক নিয়ে অনেককে কথা বলতে। কিন্তু সবাই শুধু নিন্দা ও সমালোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেন তাদের কথাবার্তা। সুন্দর ও সুষ্ঠু সমাধানের কথা এই পর্যন্ত কাউকেই বলতে শুনিনি আমি। মহিলারা সারাদিন ঘরে বসে সিরিয়াল দেখেন আর কুটনামী শেখেন। সুতরাং, এইসব বন্ধ করতে হবে। অবশ্যই বন্ধ করতে হবে কিন্তু কিভাবে? নিন্দা জ্ঞাপন করে কি মানুষকে সেই পথ থেকে ফেরানো সম্ভব যা সে মনের খোঁড়াক হিসেবে গ্রহণ করছে? তাহলে তো ড্রাগ নেয়া বন্ধ হয়ে যেত সেই কবেই। সিরিয়ালটাকে ড্রাগের সাথে তুলনা করলে মনেহয় খুব ভুল হবে না? কারণ ড্রাগের অভাবে যেমন শরীরে তৈরি হয় অস্থিরতা, ঠিক তেমনি গতকালের পর কি হলো জানার জন্য সিরিয়ালের সময় হলেই মন ছটফট করতে থাকে। একজন ড্রাগ অ্যাডিক্টকে অনেক বোঝানোর পরও নেশার সময় হলে সে ছুটে যায় ড্রাগের কাছে। ঠিক তেমনি একজন সিরিয়াল অ্যাডিক্টও শত নিন্দা শুনে ছুটে যান টিভির কাছে। আসলে নিন্দা ও সমালোচনা কখনোই কোন কিছুর সমাধান হতে পারে না। একজন ড্রাগ অ্যাডিক্টকে যেমন সে নিজে না চাইলে নেশার জগত থেকে বের করে নেয়া সম্ভব হয় না। ঠিক তেমনি সিরিয়াল অ্যাডিক্টকেও সে নিজে অকল্যাণ বুঝে দেখা বন্ধ না করলে ফেরানো সম্ভব নয়। মানুষের স্বভাব হচ্ছে সে যখন কোন কিছুতে আনন্দ খুঁজে পায়, অন্যরা যাই বলুক না কেন সেটা ছাড়তে পারে না বা চায় না। বরং নিন্দা ও সমালোচনা অনেক সময় ক্ষেপিয়ে তোলে মানুষকে। যারফলে জেদ করে সেই কাজ আরো বেশি করে মানুষ।

বেশ কিছুদিন আগে পরিচিত এক বোন ফোন করে রাগে গজগজ করতে করতে বললেন, ভাবী কি কি কারণে ঘরে রহমতের ফেরেশতা আসে না বলেন তো একটু আমাকে। কি হয়েছে জানতে চাইলে উনি জানালেন উনার স্বামী বলেছেন হিন্দী সিরিয়াল দেখলে ঘরে রহমতের ফেরেশতা ঢোকা ছেড়ে দেয়। জানালেন এই নিয়ে উনার স্বামী খুব খারাপ ব্যবহার করেছেন। স্বামী কাজ থেকে ফিরে দেখেন উনি হিন্দী সিরিয়াল দেখছে। আর তাতেই প্রচণ্ড ক্ষেপে যান। উনাকে বকাঝকা করতে করতে বলেছেন, এইসব দেখো বলেই আমার ঘরে রহমতের ফেরেশতা ঢুকতে পারে না। অভাব অনটন দূর হয় না আমাদের জীবন থেকে। তুমি আমার সংসারের সকল অশান্তির কারণ। ইত্যাদি ইত্যাদি। বললাম, এর আগেও শুনেছি সিরিয়াল দেখা নিয়ে ভাইয়ের সাথে আপনার ঝগড়ার কথা। সংসারের শান্তি নষ্ট হয় এমন জিনিস দেখতে যান কেন শুধু শুধু? বোনটি জবাবে বললেন, এখন থেকে আরো বেশি করে দেখবো। দেখি কি করে সে। আমি হেসে ফেললে কিছুক্ষণ পর সেই বোনটিও হাসলো এবং বলল, সিরিয়াল না দেখলে সময় কি করে কাটাবো আমি বলেন তো? স্বামী কাজে ও বাচ্চা স্কুলে চলে যাবার পর তো তেমন কোন কাজই থাকে না করার মত। তিনজন মানুষের ছোট্ট সংসার তাই রান্না ও কাজও তেমন থাকে না।

বললাম সময় কাটানোর জন্য টিভিই দেখতে হবে এমন তো কোন নিয়ম নেই। আপনি কোরআন পড়ুন অর্থ সহ, তাফসীর পড়ুন। হাদীস, সাহাবীদের জীবনী, ইসলামী ইতিহাস, ইসলামী সাহিত্য কত কিছু আছে সময় কাটানোর উপকরণ হিসেবে। এছাড়া বাংলা সাহিত্যের গল্প-উপন্যাস-কবিতা তো আছেই। স্বামী ও বাচ্চা বাইরে খেতে পছন্দ করে এমন নিত্যনতুন রান্না শিখুন। রান্না করে তাদেরকে সারপ্রাইজ দিন। বাইরে থেকে শোপিস না কিনে নিজের ভেতরের সৃজনশীলতাকে বের করে নিয়ে আসুন। বেতের ঝুড়ি কিনে এনে প্ল্যাস্টিকের লতা-পাতা-ফুল দিয়ে মনের মতো ডেকোরেশন করেন। তারপর ঝুলিয়ে দিন ঘরের এক কোণে। এভাবে নিজের হাতে বানানো বিভিন্ন ধরণের শোপিস দিয়ে সাজান আপনার ঘর। চাইলে করার মত এমন অনেক কিছু পাবেন। যা করতে গেলে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ছুটতে হবে আপনাকে। তখন সিরিয়াল দেখা তো দূরে থাক টিভির দিকে তাকানোরই ফুরসত মিলবে না। উনি বললেন, এভাবে তো কেউ কখনো বুঝিয়ে বলেনি। হেসে বললাম, এই তো আমি বুঝিয়ে বললাম।

চলবে…′

 

পরীদের জন্য ভালবাসা

ডা.সাকলায়েন রাসেল


পরীটা আজ সারাদিন মনের কোণে ঘুরঘুর করছে।
ক্লাশ ফোরে পড়ে।
মাথায় ক্লিপ দিয়ে চুলগুলো পরিপাটি সাজানো…হাতে মেহেদী! এই মেহেদী নকশাটি তার নিজের করা..।পড়তে ভালোবাসে সে…। ভাল লাগে গান গাইতে! একটুস খানি অনুরোধ করতেই গান গেয়ে শোনাল।

‘অনেক সাধনার পরে আমি পেলাম তোমার মন’

বাংলা সিনেমার গান…ভালোবাসা পেতে সাধনা লাগে..। অথচ এই পরীটার চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলা..একেবারর অজপাড়া গাঁয়ে বাড়ী হলেও কথায় শুদ্ধ বাংলার উপস্থিতি.. অল্পতেই আমার সবটুকু মন জয় করে নিল।
চোখ বন্ধ করেই গান শুনছিলাম ..কিন্তু হঠাৎ থেমে গেল পরী..গানের মাঝে শ্বাসকষ্ট! দম আটকে যাচ্ছে তার! পরী থেমে গেল। কিছুক্ষণ বসে বসে বিশ্রাম নিল! তারপর দম ফিরে এলো তার!
খুব খেলতে ভাল লাগে পরীর। সবাই যখন খেলে সে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে।
আফসোস হয়…
চোখ জলে ভিজে যায়!
খেলতে পারে না সে…খেলতে গেলেই তীব্র শ্বাসকষ্ট! হাত পা নীল হয়ে যায়…দম আটকে চোখ উল্টে যায়!

হার্টের ডাক্তাররা ইকো করে বলে দিয়েছে…তিনটি ছিদ্র আছে তার হার্টে..TOF! অপারেশনই একমাত্র সমাধান..অনেক ঝুঁকি!

হোক ঝুঁকি তবুও বাঁচতে চায় পরী।
বাবা সবজী বিক্রেতা।

ইতোমধ্যে গরু বিক্রি করেছেন..বাড়ীভিটে বন্দক রেখেছেন! তবুও যোগাড় হয়নি অপারেশনের টাকা!
পরীকে যখন জিজ্ঞেস করলাম…তুমি কি চাও?
পরীর হৃদয় চিরে বের হওয়া উত্তর…আমি সুস্থ হতে চাই!
-সুস্থ হতে অনেক টাকা লাগে…তোমার বাবার কি এত্তো টাকা আছে?
থেমে গেল পরী..মাথা নীচু করে অশ্রু মাখা মুখটা লুকালো!

একটু খানি আশ্বাস দিতেই ফিক করে হেসে উঠল..দাঁতের পিছনে দেখা গেল নীল জিহ্বাটা। হাসতেও যে পরী অক্সিজেনের অভাবে ভোগে!!
কপাল দোষে না হয় অর্থের অভাব হোক। কিন্তু বাতাসে এত্তো অক্সিজেন… তবুও কেন সেই অক্সিজেনের অভাবে ভোগে পরীরা?

শত কোলাহলের মাঝে হয়ত সেকারণেই নীরবতা আঁকড়ে ধরে। পরীদের পিতাদের.. আরিজের পিতাদের!

সহকারী অধ্যাপক, ভাসকুলার সার্জারী
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক, বারডেম।

ঘরের টুকিটাকি টিপস

অপরাজিতা ডেক্স


ফ্রিজের পঁচাগন্ধ দূর

একটা প্লেটে কিছুটা সর্ষেগুঁড়ো ঢেলে তাতে একটু জল দিয়ে রাতভর ফ্রিজে রাখুন এবং ফ্রিজ খোলাই রাখুন। ফ্রিজের বদগন্ধ দূর করতে সর্ষেগুঁড়ো ব্যবহার করতে পারেন। পরের দিন সকালে দেখবেন সব গন্ধ উধাও।

তেল টেট্রাপ্যাক
ব্যবহারের পর তেলের টেট্রাপ্যাক ফেলে দেবেন না। কেটে ডিপ ফ্রিজে আইস ট্রেতে পেতে দিন। মাছ মাংসের প্যাকেট আটকে যাবে না।

প্রেসার কুকার
প্রেসার কুকারের গ্যাসকেট মাঝে মাঝে ফ্রিজে পুরে রাখবেন। দীর্ঘদিন টিকবে।

ব্যাটারি
টর্চের ফেলে দেওয়া ব্যাটারি কিন্তু কোয়ার্টিজ ঘড়িতে এবং রেডিওতে আরও মাস খানেক চলবে।

নেলপালিশ ব্যবহার
বাড়িতে আঠা ফুরিয়ে গেছে। খামে স্ট্যাম্প লাগাবেন। ন্যাচারাল কালার নেলপালিশ ব্যবহার করুন।

সেলোটেপের রিল
সেলোটেপের মুখ খুঁজে পাচ্ছেন না? মিনিট দশেক ফ্রিজে ঢুকিয়ে রেখে দিন। সেলোটেপের রিলটা খুলে আসবে।

চিঠি ঠিকানা
খামের ওপর ঠিকানা লিখে একটু মোমবাতি ঘষে দেবেন। জল পড়ে কালি থেবড়ে ঠিকানা অস্পষ্ট হয়ে যাবে না।

মোম
টেবিল ড্রয়ার অনেক সময় আটকে যায়। স্বচ্ছন্দে খোলা বা বন্ধ করা যায় না। ড্রয়ারের ধারে মোম ঘষে রাখুন। সহজে আটকাবে না।

বাইসাইকেল
ব্যবহারের পর বাইসাইকেলের টায়ার ভিজে কাপড় দিয়ে মুছে রাখুন। সহজে কাটবে না।

দেশলাই কাঠি
নখের কোন ভেঙে গেছে। কিন্তু এমারি বোর্ড নেই। একটা দেশলাই কাঠি নিয়ে বারুদের দিকটা ভাঙা জায়গায় ঘষুন। নিমেষে নখ সমান হয়ে যাবে।

 

তাচ্ছিল্য

ফাতেমা শাহরিন


মনের অবস্থা ভয়ানক তিক্ত আবিরের। প্রায় কয়েক ঘন্টা হেটেছে, সন্ধ্যা বিকালকে গিলে ফেলেছে। এখন ঝর ঝর করে ঘাম ঝরছে। হবে কি আবার, নিরবতাকে আবার কেন আপমান করল ওরা। আবির ভাবছে, বোনটা ত আমার ভাল ছিল! এই নিয়ে ওদের এত সমস্যা কিসের? বুঝে না আবির।

নিরবতা। আমাদের ভালবাসা ও সন্মানের আরেক টুকর নাম। চুপচাপ শান্ত মেয়েটি।

গত বছর ওর বিয়েটা ভেঙ্গে যায় হবার দু ঘন্টা পর। হঠাৎ। কাবিল নামা হয়ে যাবার পরে, ছেলের বাবা ফোনে কথা শেষ করে, বলে উঠেন, যে পরিবারে এত লোক ড্রাগ এ্যাডিক্টেট। সেই ঘরের মেয়ের চরিত্র স্বভাব কখনও ভাল হতে পারেই না। কেন ওরা সব গোপন রেখেছে। ওরা জঘন্য খারাপ কাজ করেছে। শুরুতে এএ অবস্থা, এই মেয়েকে ঘরে তুললে আমার ছেলেটাও খারাপ হয়ে যাবে।

ছেলেটি, নিরবতার পক্ষে কোন কথা বলেনি।

কত অনুনয়বিনয় করেছে সবাই। কিন্তু নিরবতার পাশে বাবা ছিল। নিরবতা ধীরে বের হয়ে আসে, খুব লজ্জিত কন্ঠে বলে উঠে।

‘আমি খুব লজ্জিত। সত্যি বলতে বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র একজন এডাল্ট ছেলের আসক্তির ভয় আছে তা নয়। বরং এ পরিবারে আপনাদের পরবর্তী প্রজন্মের আনাগোনা হতে পারে, তা আরও ক্ষতিকর। আপনার পুরো পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমি ভেবেছিলাম, পরিবার বিষয়টিকে আপনাদের কাছে পরিষ্কার করেছে। আমি ক্ষমা চাচ্ছি। আর এমন পরিবারে আমিও যেতে চায় না। যেখানে অসন্মান, ঘৃণা, আর সন্দেহের বীজ বুনে গিয়েছে জীবনের সূচনালগ্নে।’

শেষপর্যন্ত ছেলেটির একদম নিরব ছিল। নিরবতার বিয়ে ভেঙ্গে যায় সেদিনই।

আবির, নিরবতার মনের কথা ভেবে অজান্তে কেঁদেছে। আর অভিশাপ দিয়েছে সব নেশাখোরদের। সেই শান্ত, বলিষ্ঠ কন্ঠের নিরবতার আজ চোখে পানি। ঝর ঝর করে পানি নয় কেবল যেন উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ ছুটছে। কেন দরকার হল কেন?

মাঝে মাঝে দূরে জলন্ত আগুনের শিখা দেখলে এত ইচ্ছে যাকে কয়েক টান দেই, দূর হোক বিষণ্ণতা। ঠিক তখনি নিরবতায় হাসি মুখ ভাসে। কি দোষ ছিল ওর? কতগুল নেশাখোরের জন্য কেন ওলটপালট হল ও গোটা জীবন। কেউ বলতে পারে ওর স্বপ্নরা এখন কোথায়?

নিরবতা-ভাইয়া, প্লিজ আমি দেখা করব না। আমার পছন্দ হয়নি। প্লিজ, এ ব্যাপারে আমাকে আর কিছু বলবেন না আপনারা।

ভাবি- কিসের আবার পছন্দ-অপছন্দ এত বয়স হল, আরও বাপের বাড়ি পড়ে থাকমেন।

পাশ থেকে ভাইয়ের ছোট্ট ছেলেটিও বলছে: আধ আধ কন্ঠে, তুমি আমাদের সব খাবার খেয়ে খেলবা।

ভাবি-শোন, এখানে একটা বিশাল কাহিনী আছে। তুমি ছেলে পক্ষের সাথে দেখা করতে বল তোমার বোনকে।

বড় ভাই: দেখা করলে কি বিয়ে হয়ে যায়? দেখা কর।

ছলছল করে উঠে চোখ দুটি নিরবতার। আরও নিরব হয়ে যায়। প্রবল তাচ্ছিল্যতা হুড়মুড় করে ডুকছে। যেন প্রচন্ড শক্তিশালী ঝড় উঠেছে আত্মমর্যাদাবোধকে এবার ভেঙ্গে মুচড়ে তছনছ করে ফেলল বলে।

বাবা হঠাৎ দাড়িয়ে সামনে…..দূরে দরজায় ছোট ভাই আবির। ওই ত ভালবাসার বৃষ্টি নামল। প্রশান্তকণ্ঠে অফুরন্ত দোয়া আসছে। কে আছে এবার বাধা হয়ে দাড়াবে?

 

সৈয়দা রাজিয়া বিল্লাহ : ‘নারীকে জীবন্ত বৃক্ষ হতে হবে’

ফাতেমা শাহরিন


সৈয়দা রাজিয়া বিল্লাহ একজন ব্যবসায়ী। তার প্রতিষ্ঠানের নাম ‘শুধুই কুরুশ’। তিনি বগুড়ায় একটি সরকারি প্রাইমারি স্কুলের ‘প্রধান শিক্ষিকা’। পেশাগত ব্যস্ততার পাশাপাশি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন। অপরাজিতার পক্ষ থেকে কথা হয়েছিল তার সঙ্গে। সেই সব কথোপকথন নিয়ে আজকের সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হলো:

অপরাজিতা: ‘সেলাই কাজ’ কার কাছে হাতে খড়ি হয়েছিল?
রাজিয়া বিল্লাহ: আমার মায়ের কাছে শিখেছি। কুরুশের সেলাই কাজ শেখার পিছনে আমার মায়ের ভুমিকাই বলব পুরোটুকু। আমি আগ্রহ প্রকাশ করেছি, উনি স্কুল সামলে যেহেতু মা ছিলেন হাই স্কুলের ইংরেজি শিক্ষিকা। সংসার সামলে, আমাকে হাতে ধরে শিখিয়েছেন।

অপরাজিতা: এই স্বপ্নের শুরুটা কিভাবে?
রাজিয়া বিল্লাহ: আমি সেলাই শিখি ১৯৯৭ সালে। তখন মুলত ব্লক, বাটিক, হাজারবুটি, সুচের কাজ, দর্জির কাজ সবই করেছি। সে সময় বিভিন্ন হাতের কাজ করে টুকটাক উপার্জনও করতাম । কখনো বাবা মার কাছে হাত খরচ বা অন্যান্য খরচের জন্য টাকা চাওয়ার দরকার হয়নি আলহামদুলিল্লাহ। সে সময় অন্যদের কাছ থেকে অর্ডার নিয়ে কাজ করতাম। এর মধ্যে নানা কারণে নানান সময় বাধ্য হয়েই সেলাই ছাড়তে হয়েছিল। কিন্তু সেলাই আমাকে এমনভাবে গ্রাস করেছে কোনভাবেই সেলাই ছেড়ে থাকতে পারতাম না। এককভাবে আবার কুরুশে ফিরে এসেছি ২০০৭ সালে। সরকারী প্রাইমাারী স্কুলে শিক্ষক হিসেবে ঢুকি ২০১০ সালে, কিন্তু জাতীয়করণের  ফলে ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল অর্থাৎ আজ পর্যন্ত   বেতন পাই না। এ দিকে আমার বেতনের টাকা পুরোটাই  তখন মেয়ের দুধের খরচের পিছনে যেত। আমার স্বামী যদিও চাকুরীজীবী কিন্তু তার নির্ধারিত আয়ের মাঝে মেয়ের দুধের খরচ প্রায় বন্ধ হয়ে গেল, দিশেহারা না হয়ে সেই খরচ চালানোর জন্যই, ‘শুধুই কুরুশ’ এর যাত্রা শুরু করি। স্কুল করে এসে বাসায় সংসার সামলেছি, বাচ্চা সামলেছি অতঃপর সেলাই করেছি। অর্থাৎ আজও ‘শুধুই কুরুশ’ ব্যবসাটি আমাকে হাটতে সহযোগিতা করছে।

অপরাজিতা: শুরুর গল্পটির শুনলাম, এবার ‘শুধুই কুরুশ’ এর পরবর্তী যাত্রা সম্পর্কে জানতে চাই? কতজন কাজ করতেন, বর্তমানে কতজন করছেন? কিরূপ সংগ্রাম করতে হয়েছিল?
রাজিয়া বিল্লাহ: আমাকে ভীষণ পরিশ্রম করেই আগাতে হয়েছিল। ‘শুধুই কুরুশ’ থেমে যায়নি বরং তারপর কিছুদিন একা কাজ করি। এখন একটা মেয়ে আছে আমার সাথে। এক সময় অনলাইনে পেজ খোলার চিন্তা করি, অনলাইন পেজ ‘শুধুই কুরুশ’ এর যাত্রা শুরু ২০১৫ সালের ২৪ জুন। সেই সময় ছিল ১০ জন মেয়ে, মোটামুটি সবাই অবিবাহিত ছিল কিন্তু পরবর্তীতে তাদের বিয়ে হয়ে যায় এবং একে একে চলে যায়। তবুও কাজ থেমে থাকেনি। বরং আমার পেজ ‘শুধুই কুরুশ’ বর্তমানে ত্রিশ হাজারের উপর সদস্য। এর পর আলহামদুলিল্লাহ অনেক অর্ডার পাই। অনেক মেয়েদের সন্ধান পেয়েছি, যারা প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকে এবং হাতের কাজ করতে যানে। এর ফলে অনেক মেয়েদের কর্মস্থানেরও ব্যবস্থা হয়। তখন মেয়ে আমার কয়েক মাস বয়সী মাত্র। তাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনের কাছে রেখে গিয়েছি মেয়েদের কাজ বুঝিয়ে, নতুন কাজ দিয়ে সামনে আনার জন্য চেষ্টা করেছি। যানবাহনের সমস্যা ছিল সবচেয়ে বেশি। যেহেতু ভারী সুতা ভর্তি ব্যাগ একা টেনে নিয়ে যাওয়া আবার কাজ ভর্তি ব্যাগ একা নিয়ে আসা। এমনও হয়েছে বসার জায়গা তো দুরে থাক, বাসে দাঁড়াতেও পারি নাই ঠিক মতো। সময় ম্যানেজ করার জন্য অনেক সময় স্কুলে থেকেই চলে গেছি দুপুরে না খেয়ে। রাতে বাসায় ফিরে একে বারে খেয়েছি। কখনো বাচ্চাকে রাখার মতো কাউকে না পেয়ে ঘুমন্ত বাচ্চাকে কোলে করে গলার সাথে ব্যাগ ঝুলিয়েও হাঁটতে হয়েছে অনেকটা পথ।

অপরাজিতা: নিজ উদ্যোগেই স্বল্প পরিসরে ‘নারী গ্রুপ’ আবার ব্যবসা জানতে চাই?
রাজিয়া বিল্লাহ: মুলত নারী গ্রুপ করার উদ্দেশ্য, সমাজের বিভিন্ন স্তরের বিভিন্ন বোন যারা অনেক সময় নানান রকম সমস্যা পড়েন, ভোগেন যেগুলো নিজের পরিবার বা কারো সাথে শেয়ার করা সম্ভব হয় না। ফলে গ্রুপে সবাই নির্দ্বিধায় শেয়ার করেন। বিভিন্নজন তাদের মতামত শেয়ার করে। এতে অনেকে তাদের সমস্যার সমাধান ও খুঁজে পায়। কিছু বোন আছে যারা ঘরে বসে অনলাইনে বিভিন্ন কিছু বিক্রি করে তাদের জন্য সপ্তাহে তিনদিন সেল পোস্ট দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। আমি জানি পরিবারের খারাপ সময়ে হাল ধরতে পারা কতটা আত্নতৃপ্তির। আমার গ্রুপের বোনদের মধ্যে আমি বাঙ্গালি জাতিসত্ত্বাকে কে জাগ্রত রাখার জন্য, কোন ধরনের বাংলিশ লেখা বা ইংরেজি অক্ষরে বাংলা লেখা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ আমার এই জোরের জন্য অনেক বোনেরাই শুদ্ধভাবে বাংলা লিখতে পারে।

অপরাজিতা: আবার ‘শুধুই কুরুশ’ ফিরে আসি, একজন নারী হিসেবে এ পথ চলা, কেমন ছিল, সহজ কিংবা কঠিন?
রাজিয়া বিল্লাহ: খুব সহজ ছিল না,  অবশ্যই বলব। এই জন্য যে আমাকে একা একা বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেতে হয়েছে, সত্যি অনেক কষ্টকর ছিল দিনগুলো, সেই ছোট্ট বাচ্চাটিকে রেখে। কাস্টমারের বিভিন্ন ধরনের কথা তো আছেই। তবে আমার জন্য একটা প্লাস পয়েন্ট হল, যা আমাকে সাহস যুগিয়েছে, আমার পরিবারের ১০০% সাপোর্ট। যেটা অন্য অনেকের কাছে শুনেছি পায় না। আমি পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ।

অপরাজিতা: এ সেক্টরে অসহায় মেয়েদের কর্মস্থানের কতটুকু সুযোগ আছে?
রাজিয়া বিল্লাহ: প্রচুর সুযোগ আছে। অসহায় মেয়েরা চাইলে এই কাজ করে সংসার চালাইতে পারেন। আমি নিজে চালিয়েছি কয়েকমাস। আমার বেতন বন্ধ হবার কিছুদিন পর আমার স্বামী তার চাকুরী ছেড়ে দেয়। তখন কয়েকমাস আমিই সংসার চালিয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু লেগে থাকতে হবে এই কাজে, হাল ছাড়লে চলবে না।

অপরাজিতা: মূল ধারার ব্যবসার জন্য নারীরা সহযোগিতা কি আদৌ পাচ্ছে, যদি না পান, কেন পাচ্ছে না বলে আপনি মনে করেন?
রাজিয়া বিল্লাহ: আমার মতে, পাচ্ছে না। এমন বলার কারণ আসলে আমার এই কাজের জন্য আমি কয়েক জায়গায় সাহায্যের জন্য গিয়েছি কিন্তু বিফল হয়েছি। তাই আসলে এই ব্যাপারে কিছু বলতে পারছি না।

অপরাজিতা: মূলধন সংকটের ফলে কোন সমস্যা হতে পারে কি?
রাজিয়া বিল্লাহ: মূলধন সংকটের জন্য অবশ্যই সমস্যা হয়। তবে আমি যেহেতু আমার কাজের অর্ডার ভিত্তিতে করেছি এবং ৫০% অগ্রিম ক্রেতার কাছ থেকেই নিয়েছি। তাই মূলধনের সমস্যা বুঝতে হয়নি। আলহামদুলিল্লাহ।

অপরাজিতা: সফল নারী আসলে কি আপনার মতে?
রাজিয়া বিল্লাহ: সফল নারী আমার একান্ত মতে, সেই যে তার নিজ ধর্মের বিধি-নিষেধ সঠিকভাবে মেনে পরিবারকে খুশী রেখে সমাজের অসহায় গরীব নারীদের, যারা বিভিন্ন ভাবে পিছিয়ে আছে, তাদের জন্য কিছু করতে চায়।

অপরাজিতা: নারী দিবসে নারীদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন?
রাজিয়া বিল্লাহ: নারীদের উদ্দেশ্যে আমি বলব, ‘নারীকে জীবন্ত বৃক্ষ হতে হবে’ এই অর্থে নয় যে, সবাই এসে তার ছায়া নিয়ে ডাল ভেঙে নিয়ে যাবে বরং এই অর্থে যে, বড় বৃৃৃক্ষ সহজে কাটা যায় না, নোয়ানো যায় না। নরম গাছ যেমন এক টানেই উপরে ফেলা যায়। তেমন হওয়া যাবে না। মা হলে, এমন মা হতে হবে যার সন্তানের দিকে অন্য কেউ চোখ তুলে তাকাতে পারবে না। স্ত্রী হলে এমন স্ত্রী হতে হবে যাকে কখনও স্বামী নিজের বোঝা না ভেবে, জীবনের অপরিহার্য অংশ ভাবতে বাধ্য হবে। কন্যা হলে এমনই কন্যা হতে হবে, যাতে বাবা মা এর ভরসা যায়গায় হতে পারে।

অপরাজিতা: নতুন উদ্দ্যোক্তাদের কিভাবে উৎসাহ দিবেন?
রাজিয়া বিল্লাহ: আমাকে যখনই কেউ ইনবক্স করে বলেন, আপু জব খুঁজছি। তখন আমি বলি, চাকুরী করতেই হবে এমন কি মানে আছে বলুন? বরং ব্যবসা করার প্লান করুন। নিজের মধ্যে যে ক্রিয়েটিভিটি আছে, সেইটা দিয়েই শুরু করতে উৎসাহ দেই। এটাও বলি যে ব্যবসা করতে চায় না বলেই আজ বাঙ্গালি জাতি, অনেক পিছিয়ে আছে।

অপরাজিতা: শুধুই কুরুশ নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
রাজিয়া বিল্লাহ: আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অনেক বড় বলতে পারেন। যেটা আমি জেগে এবং ঘুমিয়ে দুই-ভাবেই দেখি। তা হল কিছু গরীব অসহায় মেয়েকে নিয়ে আমি আগের মত কাজ করছি। বড় করে শোরুম দেয়ার ইচ্ছে আছে। ইনশাআল্লাহ। এর আগে যে মেয়েরা কাজ করত ওরা ছিল এইস এস সি পরীক্ষার্থী। আমার কাছে পাওয়া সেলাইয়ের টাকা দিয়েই ওরা ফরম ফিলাপ করেছে ও প্রাইভেট পড়েছে। নিজের পড়াশুনার খরচ নিজেই চালিয়েছে। কিছু অভাবী মেয়েকে নিয়ে কাজ করব। তাদের ভবিষ্যত আর বর্তমানের জন্য। একটা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র দেয়ারও ইচ্ছে আছে ভীষণ। বাকীটা আল্লাহর ইচ্ছা।

‘শুধুই কুরুশ’ এর এই গুনি উদ্যোক্তা সৈয়দা রাজিয়া বিল্লাহ (ইরা), আপনাকে অপরাজিতার পক্ষ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 

নারী

রুবি


বড় আশা নিয়ে এসেছিলাম মাগো,
আজ আমায় অপয়া বলে তোমরা ডাকো।
বাবার সংসারে বোঝা আমি,
পুত্র সন্তান হলে বেশি দামি।
যতই থাকুক আমার গুন
পান থেকে একটু খসলেই চুন,
হয়ে যায় আমি কলঙ্কিনী,
বড় আশা নিয়ে এসেছিলাম মাগো,
আজ আমায় অবলা বলে তোমরা ডাকো।
লেখাপড়ায় বিদ্বান হলেও বলে না কেউ বিদুষী
ঘরের কাজ কেমন জানি, রান্নায় কত পটু আমি,
সেই প্রশ্নে হেরে গেলে হয়ে যাই দোষী,
গৃহ ছেড়ে কর্মে গেলে হয়ে যায় নির্লজ্জ,
পুরুষের পাশে একজন নারী বেমান-নিকৃষ্ট।
স্নেহ -মমতা কে দিয়েছে নারীর চেয়ে বেশি?
যুগে যুগে নারীর ত্যাগ হয়েছো তোমরা ঋষি।
আজ বস্ত্র হরণ করে বস্তুর মত দুমড়ে মুচড়ে ফেলো আমায়,
তবুও নও তোমরা দোষী,
চরিত্রহীনা আমি হারিয়ে সম্ভ্রম
সকলের উপরে আমিই বড় পাপী।
আমায় তোমরা মা বলে ডাকো,
তবুও আমার বুকের রক্ত দিয়ে রঙ তোমরা মাখো।
বড় আশা নিয়ে এসেছিলাম মাগো,
বেশি কিছু না একটু সন্মান ভাবি পাবো।
আর কিছু নাই বা পেলাম,
বাঁচতে শুধু দিও।
নারী আমি,বস্তু নয় এতটুকু জেনে নিও।

 

আমার জীবনের আদর্শ মানুষ ‘আদর্শ নারী’

মুক্তারা বেগম নদী


আমার জীবনের উজ্জ্বল নক্ষত্র, আমার ধ্রবতারা। নেপলিয়নের সেই বানী “আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটা শিক্ষিত জাতি উপহার দেব।” যার জন্য এই বাক্যটি স্বার্থক তিনি আজ আর নেই আমাদের মাঝে আমার পথপ্রদর্শক , আমার প্রিয় মানুষ, প্রিয় ব্যক্তিদের একজন, আমার প্রথম শিক্ষক , যিনি ছিলেন মনে প্রানে আধুনিক, একজন প্রগতিশীল মানুষ, একজন মমতাময়ী মা, সমাজ সেবিকা, দানশীল , অতিথী পরায়ন, হাসী-খুশী ও প্রাণবন্ত, যাকে কোন দিন মলিন মুখে দেখিনি, দেখিনি কখনো রাগ করতে। শুধু নারী নয় ,যিনি আমাকে একজন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টায় সচেষ্ট ছিলেন । আমার দাদী যিনি গত ৪ঠা জানুয়ারী , ২০১০ সোমবার ১২টায় আমাদের ছেড়ে চিরতরে চলে গেছেন।

তার প্রচেষ্টা কতখানি স্বার্থক হয়েছে, কতটা মানুষ হতে পেরেছি, কতটা নারী জানি না । কিন্তু আজম্ম তার সেই প্রচেষ্টা স্বার্থক করবার চেষ্টা করেছি এবং করব।
আমার জম্ম আর দশটা মফস্বল শহরের মতই একটি শহরে । আর আমিও হয়ত বেড়ে উঠতাম আর দশটা মেয়ের মতই। কিন্তু তিনি তা কখোনোই চাননি এবং হতেও দেননি।

সেই ছোটবেলা থেকেই তার অনেকগুলো মন্ত্রের একটা ছিল – “তুমি শুধু নারী নও , মানুষও”।

আমার দাদী , যাকে দাদু বলে সম্বোধন করতাম । যিনি ছিলেন বাহ্যিক ও মানসিক দিক দিয়ে অসম্ভব সুন্দর মানুষ। বুঝতে শেখার আগে থেকেই তিনি আমাকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট ছিলেন। সব সময় বলতেন, “সব সময় মনে রেখ তুমি আগে মানুষ, তারপর নারী।”
তোমার নারীত্ব তোমার দুর্বলতা নয় , এটা তোমার শক্তি। তিনি চাইতেন প্রত্যেক নারীর কমনীয়তা , রমনীয়তার পাশাপাশি তার মাঝে থাকবে সাহস , শক্তি, বুদ্ধি, ব্যক্তিত্ব , আত্মসম্মান। ঘরকন্নার পাশাপাশি তিনি উৎসাহ দিতেন দেশ-বিদেশের খোজ -খবর রাখতে যেমন-রাজনীতি, সমাজনীতি বিভিন্ন বিষয়ে।

তার কাছ থেকে সেই ছোটবেলা থেকেই জেনেছিলাম আমার প্রিয় ব্যক্তিদের সাহস , আত্মত্যাগ, উদারতার কথা যেমন- মাদার তেরেসা, নেলসল ম্যান্ডেলা, প্রীতিলতা। আরও জেনেছিলাম মহাত্তা গান্ধী , ইন্দিরা গান্ধী, মারগারেট থেচার , চন্দিকা কুমারাতাঙ্গার কথা। তারই ধারাবাহিকতায় আস্তে আস্তে জেনেছি জাহানারা ইমাম , পান্না কায়সার , সুফিয়া কামাল, ভেলরি টেলর এবং আরও অনেক সাহসী নারীদের জীবন গাথা।

যাদের কাছ থেকে পেয়েছি বেচে থাকার অনুপ্রেরনা, জীবন যুদ্ধে লড়াই করার সাহস, মানবতা, মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ , কর্তব্যবোধ।

তিনি নিজেকে কখনই দুর্বল মনে করতেন না। তার ছিল অপরিসীম প্রানশক্তি। নিজে সুন্দর করে বেচে থাকার পাশাপাশি অন্যের বেচে থাকাকেও তিনি আনন্দময় করে তুলতেন। তার প্রিয় কবি ছিলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম । কারন তার আধ্যিত্বকতা ও প্রতিবাদী মনোভাব দুটোই দাদুর পছন্দের ছিল। বিদ্রোহী কবির সেই বিখ্যাত দুটি লাইন “এই পৃথিবীতে যা কিছু সুন্দর অর্ধেক তার নারী অর্ধেক করিয়াছে নর।” বলতেন এই কথাগুলোর জন্যই সারাজীবন তার কাছে কৃতজ্ঞ হয়ে থাকব।

আমার দাদা ছিলেন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ করেছেন। দাদু একাই তার আট ছেলেমেয়েকে মানুষ করেছেন। সহায় সম্পত্তি শুধু রক্ষাই করেননি সেটাকে সমৃদ্ধও করেছেন দাদুর যদিও নিজের কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না কিন্তু তিনি খুব গোড়া ধার্মিক ছিলেন না। তার মাঝে আমি কখনই কোন কুসংস্কার দেখিনি। যার প্রতিফলন আমাদের মাঝেও ছড়িয়েছেন। তিনি তার নিজ সন্তান, পরবর্তীতে আমাদের ভাই-বোনদেরকে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষায়ও অনুপ্রানিত করেছেন। তার উৎসাহে আমি ক্লাস ফাইভে পড়ার সময়েই কোরআন তেলওয়াত করতে শিখি।

তিনি তার সময়ের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন মানসিকতায় ও চলাফেরা ও পোশাক আশাকে। আমাদের জুবুথুবু হয়ে চলাফেরা পছন্দ করতেন না। বলতেন যাই পড় না কেন সেটা যেন ফিটফাট, রুচিসম্পন্ন , আধুনিক ও একইসাথে মার্জিত ও শালীন হয়। দাদু খুব ম্যাচিং করে পড়তেন। ছোটবেলা থেকেই আমার জন্য নিজে ম্যাচিং করে কাপড় জুতো, গয়না কিনে আনতেন। যার জন্য আমি নিজে এখন খুব ম্যাচিং করে সব কিছু পড়ার অভ্যেস।
বাল্যবিবাহ তার একদম পছন্দ ছিল না, বলতেন আগে লেখাপড়া, তারপর ক্যারিয়ার, তারপর বিয়ে। যার ফলশ্র“তিতে আমার ঢাকায় এসে পড়াশুনা, চাকরী ইত্যাদি। মনে আছে ঢাকায় এসে যখন ভর্তি হলাম দু’মাস একটানা ক্লাস করার পরই ক্লাস বন্ধ হয়ে গেল ছাত্র রাজনীতি সংক্রান্ত ঝামেলায়। বাসায় ফোন করলাম আমাকে এসে নিয়ে যাবার জন্য । ফোনটা দাদুই রিসিভ করেছিলেন। আমি বললাম আব্বাকে পাঠাও আমাকে নেওয়ার জন্য । বললেন তুমি তো মানুষ হবার জন্য উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে গেছ তাই না , তাহলে মেয়ে মানুষের মত আচরন করছ কেন? তুমি যদি সারাজীবন দুর্বল অবলা নারী হয়ে থাকতে যাও তাহলে তোমার বাবাকে পাঠাব। আর যদি একজন আত্মসম্মান জ্ঞান সম্পন্ন একজন মানুষ হতে চাও তাহলে একা আস। দাদুর কথা শুনে সেই একা ঢাকা থেকে বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দেই। তারপর আর কোন দিন কেউ আমাকে নিতে আসেনি। আমি একা একাই সব জায়গায় চলাফেরা করি নির্ভয়ে।
আমার ছোটবেলা থেকেই দেখেছি, বাড়ী ভর্তি মেহমান, সব সময় লোকজন লেগেই থাকত , কত দূর দূরান্ত থেকে পরিচিত-অপরিচিতরা আসতেন, কেউ বেড়াতে , কেউ সাহায্য চাইতে , কখনোই তিনি কাউকেই ফিরিয়ে দিতেন না।

আমি অবাক হয়ে দেখলাম যে আমি লিখতে গেলে এক লাইন লিখে চুপ মেরে বসে থাকি সে আমি অকাতরে কেবল লিখেই যাচ্ছি। আমার কথা অফুরন্ত কিন্তু আমার আবেগ অতৃপ্ত, অনেক লিখেও মনে হচ্ছে আমি আরো অনেক কিছুই বুঝাতে চেয়েছি কিন্তু কিছু ভাষা প্রকাশ করতে পারিনি। ঝড়ের ছবি যেমন অনেক রঙ থেকে মানুষ ঝড় বুঝে নেয় কিন্তু কেবল শিল্পি বুঝেন সে ঝড়ের উদ্দ্যোম তার বুকে বাজে। দাদুকে নিয়ে লিখতে গিয়ে আমার সেই রকম কোন ছবি আকার মতই উপলব্ধি হচ্ছে।

দাদু মানুষ হও বলতে তুমি কি বোঝাতে আমি কতটা তা ছুঁতে পেরেছি জানিনা কিন্তু মানুষ বলে কাউকে দেখার সৌভাগ্য আমাকে অন্য দশ জন থেকে আলাদা করে কারন আমি তোমাকে দেখেছি।

[ কেন জানি আমার প্রিয় মানুষগুলো আমার কাছে থেকে বিদায় না নিয়েই চলে যান, দাদা, দাদু, বাবা কাউকেই আমি বিদায় জানাতে পারিনি] আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই কেউ না কেউ থাকেন, আলোর দিশারী হয়ে, তারা তাদের সমস্ত জীবনের অভিজ্ঞাত আর শিক্ষা দিয়ে আমাদের পথ দেখান, ছায়া দেন, মানুষ হতে শেখান, হতে পারেন সে আপনার বা আমার, মা, বাবা, পরিবারের কেউ, শিক্ষক কিংবা সমাজের কেউ, তারা হন আমাদের আদর্শ, প্রিয় ব্যক্তিত্ব।
তো পাঠশালায় আমাদের প্রিয় ব্যক্তিত্বকে নিয়ে লিখলে কেমন হয়? আমিই শুরু করলাম।

আমাদের জীবনে যারা আমায় আলোর পথ দেখিয়েছেন, তাদের একজন আমার দাদু, আমার বাবার মা।

 

‘নারী মুক্তি’ সময়ের অপরিহার্য দাবি!

সাজেদা হুমায়রা হিমু


নারী কেবলমাত্র একটি সত্তার নাম নয় বরং একটি চালিকা শক্তি যাকে ছাড়া পুরো পৃথিবী স্তব্ধ, স্থবির। তবুও নারীর কাঙ্ক্ষিত মূল্যায়ন হচ্ছে না কোনো ভাবেই।

তাই একবিংশ শতাব্দীর আলো ঝলমলে পৃথিবীতে দাঁড়িয়েও নারী আজ বড় অসহায়! বড়ই পরাধীন!

প্রতিনিয়তই নারী নির্যাতিত শারীরিকভাবে….মানসিক ভাবে।
নারীকে কখনো একজন মা, কখনো একজন স্ত্রী, কখনো ছেলের বউ, কখনো বোন বা কন্যা, কখনোবা একজন সাধারণ মেয়ে হিসেবে নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। এ নির্যাতন শুধু পুরুষ কর্তৃক হচ্ছে তা নয়, নারী কর্তৃকও হচ্ছে।

সত্যি নারীরা আজ ভালো নেই। নারী কেন্দ্রীক বিভিন্ন সমস্যার বিষবাষ্পে জর্জরিত আমাদের প্রিয় এ জন্মভূমি।

বেশিরভাগ পরিবারেই নেই নারীর মত প্রকাশের স্বাধীনতা…নেই তার অবদান আর কষ্টের স্বীকৃতি…
যৌতুক, তালাক নারী নির্যতনের রেকর্ডে যোগ করেছে এক চরম নির্মমতা!
বিগত কয়েক বছরে জ্যামিতিক হারে বেড়েছে ধর্ষনের ঘটনা!
নারীকে বঞ্চিত করা হচ্ছে সম্পত্তি থেকে…..বঞ্চিত করা হচ্ছে উপার্জনের ক্ষেত্রে।
পথে পথে চলছে নারীর শ্লীলতাহানি!
কন্যা শিশু থেকে বৃদ্ধা নারীরা পর্যন্ত প্রতিনিয়তই শিকার হচ্ছে যৌন নির্যাতনের….
বাস, অফিস, গৃহ কোন স্থানই আজ নিরাপদ নয়।
বিভিন্ন বয়সের পুরুষের দ্বারা ইভটিজিং এর শিকার নারীরা প্রচণ্ড মানসিক পীড়নে থাকছে।
আর ইতি ঘটাতে বাধ্য হচ্ছে শিক্ষা জীবন, কর্ম জীবন এমনকি নিজেদের জীবনেরও!

কেন আজ নারীর এই অসহায়ত্ব? কেন হচ্ছে এই নির্যাতন? তা নির্ণয়ের চেষ্টা করছেনা কেউ।

নারীর অবস্থার উন্নয়নে সময়ের সাথে সাথে প্রণিত হচ্ছে বিভিন্ন নীতিমালা, বিভিন্ন পদক্ষেপ… তবুও পরিবর্তিত হচ্ছে না নারীর অবস্থার।

তাই আল্লাহ প্রদত্ত নারীর মর্যাদা ও অধিকারের ব্যাপারে সচেতনতা আজ বড় প্রয়োজন…..প্রয়োজন সমাজের সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন….প্রয়োজন নারী নির্যাতনকারীদের প্রতিরোধে শক্তিশালী আইনের প্রয়োগ।

অযৌক্তিক সমানিধিকারের দাবীর মাধ্যমে নারীর কাঁধে কয়েক গুন বোঝা চাপিয়ে দিয়ে নারীমুক্তি কখনোই সম্ভব নয়।

তাই..
সম অধিকার নয়,
প্রাপ্য অধিকার চাই।
প্রাপ্য স্বাধীনতা চাই।

নারী দিবসের শুভেচ্ছা।

 

মনের প্রকৃতি

আফরোজা হাসান


বুঝতে শেখার পর থেকে যখনই অকারণ জেদ করেছি ভাইয়া বলতেন, “মনের যে ইচ্ছা শক্তির দ্বারা মানুষ আত্নসমালোচনা করে আত্নসংশোধনের পথে চলে আত্মোন্নয়ন করার কথা, মনের সেই ইচ্ছা শক্তিরই ভুল প্রয়োগে মানুষ অধঃপতনের দিকে ধাবিত হয়।” তখন ভাইয়ার কথা বুঝতে না পারলেও এখন জানি কারো জন্য তার নিজের মনটাই হতে পারে পরম বন্ধু কিংবা চরম শত্রু।

মনের অনেক সংজ্ঞা পড়েছি। কিন্তু মনের যেই সংজ্ঞাটি মনকে ছুঁয়ে দিয়েছিল সেটি হচ্ছে, ” মন মানুষের ভেতরে এক টুকরো প্রকৃতি।” সত্যিই মনের মাঝে দেখা মেলে প্রকৃতির সব রুপ-রঙ-বৈচিত্র্যর। মনের আছে ঋতু চক্র, বদলায় মৌসুম। মন বাগিচায় ফুল ফোটে, পাখি গায়, ভ্রমর তোলে গুঞ্জন, ঝরে পরে পাতা, শুকিয়ে যায় ফুল। মনের আঙিনা কখনো বরষায় হয় স্নাত, কখনো হয় বন্যায় প্লাবিত।

মনের আছে অতলান্ত সাগর, বহতা নদী, বদ্ধ পুকুর, টলটলে দীঘি। আছে বিশাল নীলাকাশ, মেঘমালা, নক্ষত্র, পূর্ণিমা, বিজলীর চমক। গহীন বন, চোরাবালি, নগর-বন্দর, মরুভূমি, আছে মরিচীকাও। আছে হিংস্র বাঘ, চতুর শেয়াল, মায়াবী হরিণ, দুষ্টু বানর, বিষাক্ত সাপ। ফসলের ক্ষেত, মেঠো পথ, সূর্যাস্ত, সূর্যোদয় সব সবকিছু। তাই মনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়ায় জন্যও দরকার যথাযথ পূর্ব প্রস্তুতির……।

প্রায় এক যুগ আগে প্রচন্ড রকম কালবৈশাখীর ঝড় দেখে ভীষণ ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। ভাইয়া পাশে দাঁড়িয়ে অভয় দেয়ার সুরে বলেছিলেন, মানুষের মনে মাঝে মাঝে এমন ঝড় বয় তা যদি প্রকৃতি দেখতো স্তম্ভিত হয়ে যেত তার সর্বগ্রাসী ক্ষমতা দেখে। এমন সর্বগ্রাসী সর্বনাশী ঝড়ের কবলে পতিত কিছু মনকে খুব কাছ থেকে দেখার, জানার, বোঝার ও চেনার সুযোগ হয়েছে পরবর্তীতে।

ঠিক তেমনি দেখেছি ঝড়ে তছনছ হয়ে যাওয়া মনকে আবারো নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে নিতে। বিরান হয়ে যাওয়া ফসলের ক্ষেত আবারো সবুজে সবুজে ছেঁয়ে যেতে। তাই হয়তো প্রচন্ড খরায় ফেটে চৌচির হয়ে যাওয়া ভূমির বুকে আবারো প্রাণের পরশ বুলিয়ে যায় আকাশ থেকে নেমে আসা অঝোর পানিরাশি।

নদীর এক কূল ভাংগলে যেমন অপর কূল গড়ে। মনের অবস্থাও অনেকটা তাই। তাই আধাঁর দেখে থমকে গিয়ে পা পিছনে টেনে নেবার অবকাশ নেই। আড়াঁলে যে সূর্য প্রতীক্ষমান…….।

 

‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’একটি সম্ভাবনাময় দিন

অপরাজিতা ডেক্স


বিশ্বব্যাপী নারীদের স্বীকৃতি সরূপ তাঁদের অবিশ্বাস্য প্রতিভা, কর্মদক্ষতা, ভূমিকা এবং সৃষ্টিশীল মানবসম্পদে পরিণত হতে যে সংগ্রাম তা তুলে ধরতে এবং পাশাপাশি অন্যদের জন্য পথ তৈরি করার মন-মানসিকতায় সহযোগিতা জন্য ‘নারী দিবস’ একটি সম্ভাবনাময় দিন।

মূলত ১৯৭৫ সালের ৮ই-মার্চ এর দিনটিকে, আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ‘নারী দিবস’ পালনকারী বিশ্বব্যাপী পুরুষ ও নারী উভয়ই।

জাতিসংঘে এই বছরের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য হল, ‘Press for Progress’. স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘সময় এখন নারীর : উন্নয়নে তারা, বদলে যাচ্ছে গ্রাম-শহরের কর্ম-জীবনধারা।’ গোটা বিশ্বের নারীদের সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য এ বছর এরূপ প্রতিপাদ্য রাখা হয়েছে।

ইতিহাসের পাতায় নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে গুরুত্ববহন করলেও বর্তমানে নারীদের সার্বিক দিক উঠে এসেছে। আন্তর্জাতিক নারী দিবসটি মানচিত্রে ক্যালেন্ডারে রাখাটি যদিও একটি কৃত্রিম পদ্ধতি, তবুও নারীদের সফলতার গল্প, বিফলতার কারণ এবং নারীদের মতামত, উদ্যোক্তা হিসাবে ভূমিকা, যুগের যুদ্ধে নারী সংগ্রামীদের সামনে আনার চেষ্টা। অধিকার শুধু নয় সচেতনা বাড়ানো মুল উদ্দেশ্য ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবসের।

কারণ, আন্তর্জাতিক ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশনের ২০০৯-এর এক রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমান বিশ্বে পুরুষের চেয়ে নারী ১৬ শতাংশ পারিশ্রমিক কম পায়। অন্য এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, পৃথিবীতে নারীরা কাজ করছে প্রায় শতকরা ৬৫ ভাগ।

নারীর জন্য সচেতনতা:
নারী দিবসকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক ভাবে চারটি সেক্টরের উপর নারীদের সচেতনতাকে জোরদার করা হচ্ছে,

১.শিক্ষা অর্জন
২.সহযোগিতা
৩.প্রচারণা
৪.নিজের কর্মে প্রস্ফুটিত হওয়া(সুত্র:VOGUL)।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে নারী: নারী-পুরুষের মর্যাদা নির্ণয়ে সাধারণ মানুষ মুলত দৃষ্টিপট খুঁজেন ইসলামে অর্থাৎ আল কোরআনে। ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের সফলতা ও ব্যর্থতা সুস্থ চিন্তা ও সঠিক কর্মের সাথে সম্পৃক্ত। আদর্শ ও মতবাদ নারীকে শুধু নারী হওয়ার কারণে নিচু ও লাঞ্ছনার যোগ্য মনে করে। ইসলামে মর্যাদা লাঞ্ছনা এবং মহত্ত্ব ও হীনতার মাপকাঠি হলো চরিত্র ও নৈতিকতা। সুতরাং চরিত্র ও নৈতিকতা আলোকে নারী ও পুরুষ যার যত বেশি থাকবে সেই ব্যক্তিই সফলকাম।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে কথা হল ক-জন মনোবিজ্ঞানীর সাথে। একজন বলছিলেন, ‘নারী হিসেব একজন মানুষের মৌলিক দিক বললে আমি বলব, ‘আত্মমর্যাদাবোধ’। আত্মনির্ভরশীলতা, পাশাপাশি বিনয়, নিজের উপর আত্মবিশ্বাস, অধিকারের ব্যাপারে সচেতনতা যা আমার কাছে নারী হিসেবে খুব দরকারি কিছু বৈশিষ্ট্য। আমার কাছে আমার আদর্শ নারী যেমন ‘মা’। আমার সকল সমস্যার আশ্চর্য জনক সমাধান থাকে যেখানে। তিনি একজন নারী, এক-টুকর আমার রাষ্ট্রের নাম। সাইকোলজিস্ট হিসেবে পেশা জীবনটি শুরু হয়েছে। সেই যায়গায় পৌছতে সময়ের সাথে এগিয়ে গিয়েছি, পথে বাধাগুলতে পরিবার আর বন্ধুদের শক্ত হাত আমার নারী শক্তিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। ফাহমিদা আফরোজ (এডুকেশনাল সাইকোলজিস্ট)

বিশ্বের অনেক দেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারী ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়। তন্মধ্যে – আফগানিস্তান, আর্মেনিয়া, আজারবাইজানসহ, আরও অনেক দেশ। এছাড়া, চীন, মেসিডোনিয়া, মাদাগাস্কার,নেপালে শুধুমাত্র নারীরাই সরকারী ছুটির দিন উপভোগ করেন।

 

মাতৃকথন_৩

ফারিনা মাহমুদ


  • এতবার বললাম বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় লাউ আর কালিজিরা বাদে সব খাওয়া মানা । তারপরেও তুমি মাংস খাও কোন আক্কেলে? মা হওয়া এত্ত সোজা নাকি? এইজন্যই আজকে বাচ্চাটার মাসিপিসি উঠলো!
  • দেখতো, তুমি সরিষার তেল ডলে বাচ্চা রোদে রাখলে আজকে ওর ঠান্ডা লাগতো না !
  • কি গো, রাতে কান্দে ক্যানো ? নিশ্চই পেটে ব্যথা ! কতবার বললাম যে পেটে গরম স্যাক দাও !

বাচ্চা জন্মের পর আশেপাশের মানুষের দেখে মনে হয়, পৃথিবীতে এক মা ছাড়া বাকি সবাই সব জানে ! গোটা প্রেগন্যান্সি তো বটেই, বাচ্চা জন্মের পর সে কাঁদলে, নাভি দেরিতে পড়লে, গায়ে মাসিপিসি উঠলে, হালকা ঠান্ডা লাগলে, একটু বমি করলে, ২ বারের জায়গায় ৩ বার হাগু করলে বা স্বাস্থ্য একটু খারাপ হলে আর রক্ষা নাই । আশপাশ থেকে সমানে শুরু হয় মা-কে দোষারোপ!

এই গ্যাড়াকলে পড়ে পোস্ট ন্যাটাল ডিপ্রেশনে ভোগা (অল্প বিস্তর সবারই হয় এটা, হরমোনাল চেঞ্জের কারণে) মা টার নিশ্চই ইচ্ছে করে গঙ্গায় ডুবে মরতে ! এক একবার নিজেকে অপরাধী লাগে,মনে হয় আমার ভুলেই বাচ্চাটা কষ্ট পাচ্ছে !

পরো ক্ষণে যখন স্বামীও পাশে না দাঁড়িয়ে দোষারোপ করতে থাকে, তখন মনে হয়, মুগুর দিয়ে মাথায় বাড়ি দেই! কখনো রাগ গিয়ে পড়ে বাচ্চাটার উপর। নিজেকে খুব একা লাগে! অসহায় লাগে! মনে হয়, আমি কি আর কোনদিন ফিরতে পারবো স্বাভাবিক জীবনে ?

বাস্তবতা হচ্ছে আশেপাশের এসব মানুষ অধিকাংশ ক্ষেত্রে যেই মাতব্বরি গুলি করেন, সেইগুলি অনেক অভিজ্ঞতার আলোকে হলেও এর যুক্তিযুক্ত ভিত্তি সমসময় থাকে না । উপরন্তু, নতুন মাকে এই নাজুক সময়ে এ ধরনের অযথা দোষারোপ পরিস্থিতি জটিল ও দুর্বোধ্য করে তোলা ছাড়া আর কিছুই করে না !
তার অর্থ এই না যে সাহায্য বা উপদেশ দেয়া যাবে না।

যেটা করা উচিত না তা হচ্ছে আলগা মাতব্বরি, টিটকারী বা এমন কোনভাবে কিছু বলা, যাতে মা টা কষ্ট পায় । যে কোনো সদ্যজাত বাচ্চার মাকে “আলগা” উপদেশ দেবার আগে মাথায় রাখতে হবে

(১)শী ইস দি গড ড্যাম ওয়ান হু ক্যারিড দি চাইল্ড ফর নাইন মান্থস, প্রকৃতি বাচ্চা বহন করার ক্ষমতা যাকে দেয়, বাচ্চা পালার ক্ষমতাও তাকে দিয়ে দেয়। বাচ্চা পেটে থাকতে সে কি আপনার কাছে এসেছিলো আম্লিক্যাল কর্ড ধার করতে? আসে নাই! সে তার শরীরের নির্যাস দিয়ে পরিপূর্ণ একজন মানুষ যেহেতু পৃথিবীতে আনতে পেরেছে, আপনি ছাড়াও তার বাচ্চা বড় হবে, টেনশন নিয়েন না।

(২)একটা নতুন বাচ্চার সাথে মায়ের বন্ডিং টা গড়ে উঠা জরুরি। এই বন্ডিং গড়তে ২ টা জিনিস লাগে “সময়” ও “সহযোগিতা”।

উপদেশ দিয়ে এই বন্ডিং গড়া যায় না । কাজেই আশে পাশের মানুষের উচিত সময় এবং অনুপ্রেরণা দিয়ে সাহায্য করা।

বিজ্ঞান বলে নো টু হিউম্যান আর সেইম। জগতের আর সব মানুষের মতোই বাচ্চার ক্ষেত্রেও কিছু প্যাটার্ন থাকে। রিসার্চের পর রিসার্চ করে এই প্যাটার্ন গুলো তৈরী করেছেন গবেষকরা।
সময়ের প্রবাহে, যা টিকে গেছে, যাচ্ছে, তা নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। মনে রাখতে হবে, সব বাচ্চার বেলায় সব দাওয়াই খাটে না, পুরো ব্যাপারটি ট্রায়াল এন্ড এরর কেইস। জন্মের পর পর একটা বাচ্চার আনসেটেল্ড থাকা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার।

যেই বাচ্চা পানির ভিতর ভাসতো, টুপ করে তাকে বাতাসের মধ্যে ছেড়ে দিলে তার চুপ করে থাকার কোনো কারণ নাই। আপনারে যদি আমি আতিক্যা ধাক্কা মেরে ডাঙ্গা থেকে পানিতে ফালায়ে দিয়ে বলি, এইটাই এখন থেকে তোর বাসা, আপনি কি করবেন?

মাত্র জন্মানো বাচ্চার কমিউনিকেশনের একটাই উপায়, চিল্লানো। তার এক্সপ্রেশন বলতে ওই চিল্লানো ছাড়া কিছু থাকে না। সুখ দুঃখ আলাদা এক্সপ্রেস করার ক্ষমতা তার নাই। কাজেই সে ট্যা ট্যা করে উঠলেই মনে করার কোনো কারণ নাই তার সর্বাঙ্গে ব্যাথা অথবা সে ক্ষুধায় কাতর। তারে কোলে উঠায়ে ও ও ও…করে ঝাঁকাঝাঁকি করার ও কোনো মানে নাই । অকারনে ঝাঁকাঝাঁকিতে বাচ্চা শুধু বিরক্তই হয় না, তার ক্ষতিও হতে পারে। কারণ ওদের ব্রেন খুব নরম থাকে এবং এই ঝাঁকি ব্রেনে হিট করে।

নতুন পরিস্থিতি, আলো, বাতাসের সাথে খাপ খাওয়াতে বাচ্চার সময় লাগে। এছাড়া বাচ্চার ডাইজেস্টিভ সিস্টেম অপরিপক্ক থাকে বলে ওদের হিকাপ, গ্যাস ইত্যাদি বেশি হয় । ধীরে ধীরে ওদের বড় হবার সাথে সাথে অর্গ্যানগুলোর ফাংশন স্ট্রং হয়।

এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে বাচ্চা বমি করে, কাঁদে, অস্বস্তিতে ভোগে । আদতে খুব বেশি কিছু করার নাই কারণ এই প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে জগতের সব মানুষই গেছে। একটু আধটু টামি টাইম দেয়া, খাওয়ার পরে বার্প তোলা ছাড়া তেমন কোনো বিজ্ঞান সম্মত সমাধান নাই এর । তাছাড়া নিউবর্ণ বাচ্চার হাগুর সংখ্যা ২৪ ঘন্টায় শূন্য(০) থেকে (১২) পর্যন্ত যে কোনো নম্বর ই হতে পারে ।

বরং ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নেয়া দরকার পানিশূন্যতার সিমটম কি, কারণ এইটা একটা ভয়ংকর জিনিস।

হরমোন রাশ বা বাংলায় মাসিপিসি:

হরমোন রাশ বা বাংলায় মাসিপিসি একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মাতৃগর্ভ থেকে নিয়ে আসা অতিরিক্ত হরমোন বাচ্চা বের করে দেয়। এটাও সময়ের সাথে চলে যায় ।

হরমোন রাশ বা বাংলায় মাসিপিসি হলে কি করণীয়:

শিশুশাস্ত্র মতে, এই সময় তেল জাতীয় কিছু চামড়ায় দেয়া মানা কারণ তেল চামড়ার লোম কূপ বন্ধ করে দেয় এবং বিষয়টা আরো খারাপ হয় । এই সময় বাচ্চাকে পরিচ্ছন্ন রাখা, আরামের কাপড় পরানো, শরীর স্পঞ্জ করে দেয়া আর পারতপক্ষে কোনো লোশন পাউডার না দেয়াই ভালো । খুব প্রয়োজন পড়লে ওয়াটার বেইজ ময়েশ্চারাইজার দেয়া যায় সামান্য, তবে নন ফ্র্যগ্রান্ট হলে ভালো ।

উপরের একটা ব্যাপারের সাথেও মায়ের খাবার দাবারের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই । আমি সিনিয়র পিডিট্রিশিয়নের কাছ থেকে এবং একাধিক সিনিয়র ল্যাকটেশন কনসাল্টেন্ট এর ক্লাসে তাদেরকে প্রশ্ন করেছিলাম এই ব্যাপারে । উত্তরে তারা বলেছিলেন – নেচার ইস ভেরি ফরগিভিং মাই ডিয়ার। ফ্রম দি রিচেস্ট ওম্যান ইন দি প্যালেস আপটু দি পুওরেস্ট ওম্যান বিসাইড দি স্ট্রিট উইল প্রডিউস মিল্ক অফ সিমিলার নিউট্রিশন! ইউর ডায়েট হ্যাস অলমোস্ট নো কন্ট্রিবিউশন টু ইওর বেবি’স ডিস্কমফোর্ট !

তাহলে ব্যাপারগুলি কি শুধুই মিথ ? না, ব্যাপারগুলি অন্যভাবে কিছুটা সত্য । বলি কিভাবে । বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানো মায়ের প্রচুর পানি খাওয়া দরকার । ওই যে লাউ এর ঝোল, বা অন্য ঝোল ওয়ালা তরকারী খাওয়ার ব্যাপারটা ওখান থেকেই আসা । আর আফটার বার্থ কনস্টিপেশন থেকে মুক্তি পেতে ফাইবার সম্বৃদ্ধ খাবার খুব জরুরি । শুধু মাংশ খেয়ে বসে থাকলে সেই অর্থে বিপদ আছে।

কাজেই মা অবশ্যই বুঝে খাবেন, কিন্তু সেটা নিজের রিকভারির জন্য । বাচ্চাকে খাওয়াচ্ছেন বলে বাড়তি পানি খাওয়া ছাড়া খুব কিছু করার নেই!

আর নতুন বাবা-রা, দয়া করে সব কিছুতে মাকে দোষ দেয়া বন্ধ করুন । যে কোনো বিষয় অথেন্টিক সোর্স থেকে জেনে নিন, পরিবার যখন অকারণে দোষ দিচ্ছে মা কে, আপনিই তখন এগিয়ে এসে তার হাত ধরে দাঁড়িয়ে যান । মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে বলে ফেলুন – হুদাই মন খারাপ করো না তো ! বাবু তো দিব্যি ভালো আছে । এখন বলো কি খাবা? চটপটি না ফুচকা? মরিচ কি বাড়ায়ে দিতে বলবো মামা রে?

সংযুক্তি: লেখাটির উদ্দেশ্য বাচ্চা পালনে ঠিক ভুলের সবক দেয়া না, বরং সাপোর্টিং পার্সন দের রোল কি হওয়া উচিত তা বোঝানো। আমি ডাক্তার নই। একা বাচ্চা বড় করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে আমি প্যারেন্টিং ক্লাস, আর্লি চাইল্ডহুড সেন্টার, ল্যাক্টেশন কনসালটেন্ট, পিডিয়েট্রিশিয়ানের কাছ থেকে এসব জেনেছি। আমার জানা বা বোঝায় ভুল থাকতেই পারে। যে কোনো সমস্যায় উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মানুষের কাছ থেকে জেনে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
‘হ্যাপি প্যারেন্ট হুড অল’!

 

চলে গেলেন না ফেরার দেশে একজন নিখাঁদ প্রচারবিমুখ বিজ্ঞানমনস্ক মানবতাবাদী দেশপ্রেমিক বুদ্ধিগুণ সম্পন্ন চিকিৎসক

ডা. এম এস কবীর জুয়েল


আড়ালে আবডালে থেকে দেশের জন্য, দশের জন্য যিনি নিরবে নিভৃতে দেশের শিশুদের জন্য এমন এক আবিষ্কার করে তা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছেন, তার অসুস্থতা বিষয়ে জাতির কি সামান্যতম সচেতনতা ছিল? আমরা কজন জানতাম এই গুনি মানুষটি যে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে পড়ে রয়েছিলেন। এমন একজন চিকিৎসা বিজ্ঞানীকে রাষ্ট্র-ই বা কতোটুকু মূল্যায়ন করেছে? জাতীয় সম্পদ এই মানুষটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে কি কেউ একবারের জন্যও দেখতে গেছেন, যে জাতি তার গুনী মানুষগুলোকে অবজ্ঞা করবে সে জাতিকোষে গুণীর বীজ রোপিত হবে না। পক্ষান্তরে, চাটুকার, দলান্ধ ভূয়া চটকদার লেখনীর বুদ্ধিজীবিতে ভরে যাবে সমাজ, বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করার মতো আবিষ্কর্তা আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।

চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডা.রফিকুল ইসলাম ছিলেন একজন প্রকৃত বুদ্ধিজীবী (নির্দলীয়, সার্বজনীন, প্রচারবিমুখী,নির-অহংকারী) আবিষ্কারক যার আবিষ্কারে মুক্তি যুদ্ধের সময় শরনার্থী ক্যম্পে কলেরা জনিত মহামারী থেকে লাখ লাখ বাংলাদেশী পরিত্রাণ পায়। আমরা ক-জন ইনাদের কথা জানি, মিডিয়া কেন আমাদের সন্তানদের এগুলো জানায় না।

যে স্যালাইন খেয়ে এ দেশের কোটি কোটি শিশুর জীবন বেঁচে আছে। সেই শিশুরাই এই মানবতাবাদী নিবেদিত প্রাণ মানুষ-টিকে চিনে না কারণ আমাদের Yelow Electronic Media- গুলো ইনাদের জাতির বিবেক মনে করে না। আমাদের পত্রিকাদি এই সকল বিজ্ঞানীর কাহিনী ও জীবনী প্রকাশ করে না,তারা কল্প লেখক চক্রের কাহিনীকার।

কিন্তু ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল দ্য ল্যান্সেট (The Lancet) ডা.রফিকুল ইসলামের আবিষ্কৃত ‘খাবার স্যালাইন’কে চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার বলে আখ্যা দিয়েছিল।

চারিদিকে অলীক বুদ্ধিজীবীদের জয়জয়াকার, আমাদের শিশুদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

ডা. এম এস কবীর জুয়েল

এমবিবিএস, বিসিএস, এম.ফিল(নিউরো-সাইকিয়াট্রি), ডক্টর অফ মেডিসিন(এম.ডি) মনোরোগ
সৌদি বিশেষায়ীত স্বাস্থ্য কমিশন সার্টিফাইড ইন সাইকিয়াট্রি এন্ড সাইকোথেরাপী
ভূতপূর্ব মনোরোগ ও মাদকাসক্তি বিশেষজ্ঞ, সাইকিয়াট্রিক হাসপাতাল, আল জউফ, সৌদি আরব
ভূতপূর্ব সহযোগী অধ্যাপক
এশিয়ান ইনষ্টিটিউট অফ মেডিসিন, সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি কেদাহ্, মালয়েশিয়া
ইউনিট প্রধান, সাইকোথেরাপি ও কাউন্সিলিং ইউনিট, মনোরোগ বিভাগ
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল