banner

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 715 বার পঠিত

 

‘লিন্ডা একটি শাড়ী কিনেছিল’ পর্ব-১

জাজাফী


বুধবার বিকেলে লিন্ডার ফোন পেলাম।আমি তখন বাইরে বের হবো বলে প্রস্তুতি নিচ্ছি এমন সময় ফোন এলো। অপরিচিত নাম্বার। কান্ট্রিকোড দেখে বুঝলাম ফোন কোথা থেকে এসেছে। তবে বুঝতে পারিনি কে ফোন করতে পারে। রিসিভার তুলে কানে লাগাতেই ওপাশ থেকে লিন্ডার কন্ঠ ভেসে এলো। কন্ঠ শুনে বুঝিনি যে ওটা লিন্ডা কারণ ওর সাথে আমার দেখা হয়নি বিশ বছর।

আর কথা হয়েছে কালেভদ্রে মাসে দু মাসে। ম্যানহাটন জুনিয়র হাইস্কুলে আমি আর লিন্ডা একসাথে পড়তাম। গ্রেড ফোরে পড়াকালীন যখন আমি আর মম এদেশে চলে এলাম তখন থেকে একটু একটু করে লিন্ডার সাথে আমার যোগাযোগ কমতে থাকলো।

ইমেইলে কথা হতো মাঝে মাঝে তবে ফেসবুক যুগে প্রবেশের পর বেশ যোগাযোগ হয়।আমি যখন মমের সাথে ম্যানহাটনে থাকতাম তখন লিন্ডা ওর সিঙ্গেল মাদারের সাথে ম্যানহাটনেই থাকতো। ও বলেছিল ওর সিঙ্গেল মাদার তবে আমার তখনই মনে হতো আসলে কথাটি ঠিক নয়। কোন এক অজ্ঞাত কারণে ওরা বাবার কথা চেপে যেতে চায়। আমিও তাই কখনো তোড়জোড় করিনি।

লিন্ডার পুরো নাম লিন্ডা ওয়াটসন। ওর গ্রান্ডফাদার জেমস ওয়াটসন আমেরিকার প্রখ্যাত ব্যবসায়ী ছিলেন। বাংলাদেশে চলে আসার পর লিন্ডার সাথে যোগাযোগ কমে গেলেও কখনো বিচ্ছিন্ন হইনি আমরা। স্কুল কলেজ পেরিয়ে দুজন দুই দেশের দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে নিজেদের মত করে দিন কাটাচ্ছি ঠিকই তবে ফেসবুকে দুজন দুজনের অম্ল মধুর স্মৃতিগুলি ফ্রেমে ধরে রেখে শেয়ার করছি একে অন্যের সাথে। এর ফলে কখনো মনেই হয়নি আমরা আর আগের মত একসাথে নেই।কোন এক বিচিত্র কারণে লিন্ডার কোন বয়ফ্রেন্ড জোটেনি অথচ ও এতো সুন্দর যে একবার তাকালে সহজে চোখ ফেরানো যায় না। আমি একবার জানতে চেয়েছিলাম তোমার কোন বয়ফ্রেন্ড নেই?ও বলেছিল না নেই তবে আছে একজন কিন্তু সে আসলেই আমার বয়ফ্রেন্ড কিনা তা আমি নিজেও জানি না কারণ তাকে কখনো কথাটি বলা হয়নি। আমি ওকে নিজ থেকে উৎসাহ দিয়ে বলেছিলাম তুমি তাহলে অপেক্ষা করছো কেন? বলে দাও তার পর দেখো সে তোমাকে নিশ্চই এড়িয়ে যেতে পারবে না। তুমি হলে সেই লাল শিখা যার আকর্ষণ এড়ানোর ক্ষমতা নেই কোন পোকার। পোকারা যেমন জ্বলন্ত শিখার দিকে মোহগ্রস্থের মত ছুটে যায় তেমনি সেও তোমার দিকে ছুটে আসবে।লিন্ডা অন্যমনস্ক হয়ে যায়।

তবে কথা না ঘুরিয়েই বলে সে তো আর পোকা নয় আর আমিও জ্বলন্ত শিখা নই।তাছাড়া সে হলো আকাশের চাঁদের মত যাকে চাইলেই ধরা যায় না ছোঁয়া যায়না। তাকে দেখতে হয় দূর থেকে ছুতে হয় কল্পনায় আর আঁকতে হয় নিজের মনের সাতরঙে।

লিন্ডার কথাগুলো আমার খুব ভালো লাগে। কি মিষ্টি করে কথা বলে। তার চেয়েও অদ্ভুত লাগে সেই মানুষটির কথা চিন্তা করে যাকে লিন্ডা পছন্দ করে কিন্তু বলতে পারেনা ছুতে পারে না। লিন্ডাকে উপেক্ষা করার মত মানুষও যে থাকতে পারে তা আমার জানা ছিল না। বিকেলে লিন্ডার ফোন পেয়ে আমি বেশ পুলকিত হলাম। বেশ অনেক দিন পর ফোন করেছে এটা আনন্দের একটি কারণ তার চেয়ে বড় কারণ হলো লিন্ডা এই সামার ভ্যাকেশানে বাংলাদেশে ঘুরতে আসতে চায়। আমার বেশ আনন্দ হলো।

আমি লিন্ডাকে ফোনে রেখেই মমকে বললাম যে জানো মম লিন্ডা বাংলাদেশে আসছে! আমার মুখ থেকে কথাটি শোনার সাথে সাথে মমের মুখটা যেন একশো ওয়াট বাল্বের মত আলোকিত হয়ে উঠলো। মমের দিকে তাকিয়ে আমি খুবই অবাক হলাম। যেন মনে হলো লিন্ডা মমের খুব আপন কেউ অথচ মমের সাথে তার তেমন কোন সম্পর্কই ছিলনা। সেই ছোট্ট লিন্ডাকে মম খুব কমই দেখেছে। তাছাড়া আমাদের ম্যানহাটনের বাসাতেও সে একবারের বেশি দুবার আসেনি। মম আমার হাত থেকে রিসিভারটা নিয়ে কানে লাগিয়ে এমন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলো যে লিন্ডা নিজে পারলে তখনি উড়ে চলে আসে। ও কেন বাংলাদেশে আসতে চায় তা জানি না তবে তখন মনে হচ্ছিল মমের ভালোবাসাটুকু পাওয়ার জন্য হলেও সে বাংলাদেশে আসবেই।

মম খুটিয়ে খুটিয়ে অনেক কথা জানতে চাইলেন তার পর আমার হাতে দিলেন ফোনটা। আমি আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দিলাম। ও অলরেডি ভিসা পেয়ে গেছে আগামী সাটারডেতে ওর ফ্লাইট। হাতের কর গুনে দেখলাম সময় বেশি দেরি নেই।

চলবে….

Facebook Comments