banner

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 1155 বার পঠিত

 

শিশুদেরকে ধর্ষকদের হাত থেকে বাঁচাতে সচেতনতা


সিরাজুম মুনিরা


মানবতা মুখ লুকিয়ে কাঁদছে নাকি প্রহসন করছে বোঝা দায়। নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের মত ঘটনা এতোটা সরল ভাবে সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে অথচ সবকিছু কতো স্বাভাবিক।

আইন এতো টাই বিবশ যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এমন ঘৃণিত অপরাধ ঠেকাতে পারছে না। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে সেই অন্যায়। যুবতী, কিশোরী তো ছিলোই এখন এই অন্যায় কর্মের তালিকায় প্রধান আসামি কোমলমতি শিশুরা।

নারীরা এখন বেশ সচেতন তাই হয়তো শিশু ও বালিকাকে টার্গেট করা হচ্ছে। বেশ কিছু সংখ্যক পুরুষ এতোটাই নির্মম আর হৃদয়হীন, যার ফল ভোগ করছে উচ্চ, মধ্য এবং নিম্নবিত্ত সমাজের নারী ও শিশুরা। ধর্ষিতার চেহারা বার বার পর্দার সম্মুখে আসছে পত্রিকায়, টেলিভিশনে এবং আধুনিক মুঠোফোনের মাধ্যমে। অপর পক্ষে ধর্ষককে দেখা যা কদাচিৎ।

প্রভাবশালীরা ক্ষমতার হাত বাড়িয়ে অপরাধীকে সাহস যোগাচ্ছে। অপর দিকে নিরব, দায়হীন মানবতা গুড়িয়ে চলেছে ধর্ষণের প্রতিবাদের আওয়াজ।

হবে নাই বা কেন? এক জন অপরাধী পার পেলে অপর জনের জন্য তো এটা সুখের অপরাধ হিসেবে বিবেচ্য হবে।

চিৎকার করে ভুক্তভোগি পরিবারকে বলতে ইচ্ছে করে, হে নির্যাতিত কন্যার পিতা-মাতা-ভাই-বোন নির্যাতিতার সম্মান যদি না বাঁচলো তবে আপোষ কিসের? আপনাদের আপোষী মনোভাব অন্যের সাহসী আগুনে পানি ঢেলে দিচ্ছে। কত কিছুর জন্য মিটিং, মিছিল, আন্দোলন হচ্ছে। ধর্ষণ অপরাধের বিরুদ্ধে কোন জোরালো প্রতিবাদ নাই।

কিছু ব্যতিক্রমধর্মী অভিভাবকদের দায় ও এড়ানো যায় না। নীতি নৈতিকতার কতটুকু শিক্ষা তারা বহন করছেন ? যে সংসারের স্বামী বা পুত্র সন্তান স্বয়ং ধর্ষণের সাথে জড়িত, তারাই পরিবারের কু-সন্মান বাঁচাতে নিন্দিত প্রতিবাদের আশ্রয় নিচ্ছে।

বাহ্… মহান সেই পরিবার যারা ছেলে,বাবা,ভাইদের অন্যায়কে উসকে দিতে ভুক্তভোগী পরিবারকে জান নেবার হুমকি দিচ্ছেন। নারী সন্মান কত সস্তা হয়ে গেছে যে ভুক্তভোগি পরিবার হাত পেতে টাকা নিয়ে আপোষে চলে আসছে।

খুব কষ্ট লাগে যখন প্রকাশ্যে কোন মেয়েকে অশ্লীল ভাষায় নোংরা ইংগিত দিতে দেখা যায় আর চারপাশের মানুষ তা উপভোগ করে। হয়তো ভাবে এমন বিষয়ের প্রতিবাদ করে কি লাভ?

কিছুই কি করার নেই। কিছু করার না থাকলেও থাকুক সাবধানতার প্রস্তুতি। আসুন সতর্ক হই। তাতে যদি সামান্য লাভ হয়।

১। পরিবারের কন্যাদের প্রতি সর্বদা নজর রাখুন। কোথায় যাচ্ছে, কি করছে, তার সঙ্গ কেমন, তার কোন পরিবর্তন হচ্ছে কি না, হঠাৎ করে কোন কারণে ভয় পাচ্ছে কি না এসব খেয়াল করুন।

২। বাচ্চারা সচরাচর মিথ্যা বলে না। তাই স্কুল, কোচিং থেকে ফিরেই নানা বিষয় সম্পর্কে মা-বাবা কে বলতে চায়। ধৈর্য ধরে তাদের কথা শুনুন ও বোঝার চেষ্টা করুন তার চারপাশের পরিবেশ সম্পর্কে।

৩। খেয়াল করুন, আপনার কন্যাটি নিকট বা দূরের কোন পুরুষ আত্নীয় সম্পর্কে অনিহা বা বিরক্তি প্রকাশ করছে কি না। যদি করে তবে তার কারন জানার চেষ্টা করুন।

৪। যে দেশে এক- দেড় বছর বয়সী শিশু রেহায় পায় না,সেখানে আপনার কন্যা সন্তানকে অত্যন্ত ভরসাবান ব্যক্তির দায়িত্বে রেখে কাজে বের হন।

৫। বুঝতে শিখলেই সন্তান কে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে সতর্ক করুন এবং উপস্থিত বুদ্ধির প্রয়োগ শেখান।

৭। যদিও কামুক দৃষ্টি পোশাকের ধরণ মানেনা তবুও বলবো শালিনতা বজায় থাকে এমন পোশাক পরিধানে অভ্যাস করান। বোরখা ই পরতে হবে এমন কোন কথা নাই। আমরা ওয়েস্টার্ন কান্ট্রিতে বাস করি না যেখানে সবাই নারীদের খোলামেলা রূপ দেখে অভ্যস্ত। আমরা বাস করি সমালোচনায় মুখর এক সমাজে। যেখানে পোশাকের জন্য হয়রানির শিকার হতে হয়।

৮। মেয়ে সন্তানকে প্রয়োজনীয় প্রতিবাদের শিক্ষা দিন। কুংফু-কেরাত শিক্ষা দেওয়া যেতে পারে যাতে প্রয়োজনে নিজের সুরক্ষার ভার সামান্য হলেও নিতে পারে। কেননা সর্বদা মেয়েকে সঙ্গ দেওয়া অভিভাবকের পক্ষে সম্ভব হয় না।

৯। ছেলে সন্তানদের নৈতিক শিক্ষা দিন। তার সঙ্গ সম্পর্কে সজাগ থাকুন। আচরণবিধি খেয়াল রাখুন এবং সন্দেহজনক আচরণের প্রতি কঠোর হোন।

১০। আমাদের গৃহে যে মেয়েটি কাজ করে, আসুন তার সম্মানের নিরাপত্তা রক্ষা করি। নেহায়েত পেটের দায়ে সে আমাদের গৃহে কর্মরত।

আসিফার নির্মম মৃত্যু উচ্চ আদালতের কড়া নেড়ে গেছে। হয়তো নির্যাতনকারীদের সাথে সহজে পেরে ওঠা যাবেনা তবে সঠিক বিচার হবে বিশ্বাস রাখি। এমন নর-পিশাচদের শান্তি এতোটা নির্মম হওয়া উচিত যা দেখে ভবিষ্যত ধর্ষণ পরিকল্পনাকারীর কলিজা কেঁপে ওঠে। শুধু মৃত্যুদণ্ডই পর্যাপ্ত নয়। আসুন সবাই মিলে সতর্ক হই। নারীর সন্মান রক্ষার ভার গোটা জাতির উপর বর্তায়।

Facebook Comments