banner

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 468 বার পঠিত

 

আমি না হয় নদীই হলাম

ডা. ফাতিমা খান


আঁকতে বসলে আমার নীল আর আকাশী রঙ টা কম পড়ে যায় সবসময়ই। আকাশের পরিধি মাপতে মাপতেই আমার রঙ শেষ, হাত ক্লান্ত! আজকাল লিখতে বসলেও শ্রান্ত মনে শব্দের ঘাটতি পড়ে , হাতিয়ে পাতিয়ে কোন রকমে অল্প কিছু শব্দই খুঁজে পাই।
“নাতি-খাতি বেলা গেল শুতি পারলাম না” জাতীয় দিনকাল যায় রোজ। “শুতি পারলাম না” অংশটুকু ঠিক থাকলেও “নাতি- খাতি” র ব্যাখ্যা দিতে গেলে এক বিশাল হ্যাভ টু-ডু আর ইউসড টু-ডু লিস্টের মেলা খুলে বসতে হবে। কর্তব্যের খাতিরে চব্বিশ ঘন্টায় অন্তত বারো বার নিজের স্বরূপ বদলাই। মা, রাধুনী, শিক্ষক,কাজের বুয়া, বন্ধু, খেলার সাথী, শাসক, চিকিৎসক… আরো কত কি! কাজের ফাঁকেফাঁকে ইউ টিউবে গল্প শুনি। রিল্যাক্সড হই।

আজ আমার প্রিয় গল্পগুলোর মধ্যে একটা গল্প আপনাদের শোনাব।

এক শতবর্ষী নদী গেল পাহাড়ের কাছে, তার অভিযোগের ঝুড়ি নিয়ে।

বলল, ”কি গম্ভীর, কি বলিষ্ঠ তুমি! বয়সে তুমি হাজারবর্ষী। আচ্ছা তুমিই আমায় একটা কথা বলে দাও দেখি! এই যে দেখছ শত বছর ধরে আমি অবিরাম বয়েই চলেছি, কখনো শান্ত, কখনো বা চঞ্চল পায়ে, সবাই আমার উপর নেয়ে পিয়ে চলে যায়, নৌকা আর জাহাজ গুলো দেখ কেমন নির্দয় ভাবে আমার উপর ছুটে চলে, ক্লান্ত পথিক আমার তীরে বসে জিরায় আর পাথর ছুড়ে আমার গায়ে, বাড়ির বউ ঝিরা ধোঁয়া কাঁচা সেরে আবার কলসি কাঁধে খানিকটা পানি তুলে নিয়ে যায়…কেউ একবারও তো ডেকে বলে না, ভাল আছ নদী?

..এইটা কি ঠিক হল? আমি বড় ক্লান্ত, ভাবছি অনেক হয়েছে, এবার আমি ক্ষান্ত হব!”

পাহাড় সব শুনে হো হো করে হেসে উঠে। তার হাসিতে যে কম্পন, যে অনুরণন তা ভূতল কাঁপিয়ে দেয়! আর যা হোক, পাহাড়ের হাসি তো!

”থামো থামো বন্ধু, দোহাই লাগে আর হেসো না ! তোমার হাসি প্রলয় ডেকে আনবে!” – ভীত নদী বলে ওঠে।

”তুমি শুধু নিজের কথাই ভাবলে, এটা কি ঠিক হল নদী?” – পাহাড়ের গম্ভীর জবাব।

”আচ্ছা একবার ভেবে দেখ, এই যে আমি হাজার বছর ধরে এক জায়গায় ঠায় দাড়িয়ে আছি, একটু নড়ে চড়ে বসার তো কোন উপায় নাই! আর এই তুমি, দেখলে, তুমিও তো আমাকে হাসতে বারণ করলে। আমি হাসলেও বিপদ! অথচ তোমার মত অসংখ্য নদীর জন্ম হয়েছে আমার বুক চিরে! ঝড় ঝঞ্ঝা, বৃষ্টি বাদলা, ভূকম্পন কেউ আমাকে ছাড় দেয়নি, সব কিছুই নিরবে সয়ে আসছি। প্রকৃতি ক্ষেপলে অকারণেই আমার খানিকটা খেয়ে ফেলে। শৌখিন মানুষগুলো আমায় কেটে কুটে ঘর বাড়ি বানায়… এই বলিষ্ঠ আমি চুপ করেই থাকি! ‘তোমার গতি আছে, ছন্দ আছে। তুমি নাচতে,গাইতে পার, যখন যেখানে খুশী বইতে পার, তোমার পানি পান করে তোমার তীরে বসে পথিক তোমায় দোয়া দেয়…. তারপরও??? তারপরও তোমার এত অভিযোগ?”

নদী বুঝতে পারে। নদী বুঝতে পারে তার অভিযোগ গুলো অন্য কারো আকুল আরজি! এরপর সে আর অভিযোগ করেনি, সেই যে চলছে আর কোনদিন থামেনি…। ছবি: সাঙ্গু নদী,বাংলাদেশ।

লেখক কর্মরত: আল হিবা মেডিক্যাল গ্রুপ, জেদ্দা, সৌদি আরব।

Facebook Comments