banner

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 2515 বার পঠিত

 

নিষিদ্ধ হল “টু ফিঙ্গার টেস্ট”

তানজিনা সুলতানা


বাংলাদেশে ধর্ষণের শিকার হওয়া নারী ও শিশুর শারীরিক পরীক্ষার জন্য ব্যবহ্ত টু ফিঙ্গার টেস্ট নিষিদ্ধ করেছে মহামান্য হাইকোর্ট। ধর্ষিত নারী ও শিশুর শারীরিক পরীক্ষা এবং বিচারের ক্ষেত্রে তাকে যাতে আবারও লাঞ্চিত হতে না হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করে বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি এ কে এম সহিদুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রিট আবেদনের শুনানি শেষে প্রশংসনীয় এই রায় দেয়।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ধর্ষণ প্রমাণে শারীরিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে এই টেস্টের কোনও বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি নেই। হাতে গ্লাভস পড়ে নারীর একান্ত প্রত্যঙ্গে আঙ্গুল প্রবেশ করিয়ে তার “টেণ্ডারনেস” পরীক্ষার নামই টু ফিঙ্গার টেস্ট।

২০১০ সালে দুই আঙ্গুলের মাধ্যমে এই ধর্ষণ পরীক্ষা পদ্ধতির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যাণ্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), আইন ও সালিশ কেন্দ্র, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, ব্র্যাকসহ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা একটি রিট আবেদন করে। নারী অধিকারকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছিলেন, ধর্ষণ প্রমাণে টু ফিঙ্গার টেস্ট একটি অযৌক্তিক এবং অমানবিক পরীক্ষা। এর মাধ্যমে ভিকটিমকে আরেকবার ধর্ষণের শিকার হবার মত পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।

রিট দায়েরের পাঁচ বছর পর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং সংশ্লিস্ট জনের মতামত গ্রহণের পর গত ১৩/৪/২০১৮-ইং তারিখে টু ফিঙ্গার টেস্ট নিষিদ্ধ করে আদালত এই রায় দেয়।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়েছে, মামলা চলাকালে ধর্ষণের শিকার নারীকে জিজ্ঞাসাবাদে সাবধান হতে হবে আইনজীবীদের। নারীর প্রতি অমর্যাদাকর কোনও প্রশ্ন করা যাবে না বলেও আদেশ দিয়েছে আদালত। সেক্ষেত্রে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে নিশ্চত করতে হবে যে, কোন পক্ষের আইনজীবী যেন ভিকটিমকে মর্যাদাহানির কোনও প্রশ্ন না করে।

ধর্ষণের পরীক্ষার ক্ষেত্রে এখন থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার গত বছর যে হেলথ কেয়ার প্রটোকল করেছে সেটি দেশের সকল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল এবং হাসপাতালে পাঠিয়ে তা অনুসরণ করার নির্দেশনা দিয়েছে মহামান্য হাইকোর্ট।

ধর্ষিতা নারীর শারীরিক পরীক্ষার নামে যুগ

যুগ ধরে যে টু ফিঙ্গার টেস্ট চালু ছিল তা প্রকারান্তরে ধর্ষণের শিকার নারীর সম্মানহানির কারণ ঘটাত। বিচার প্রক্রিয়ার সময় অবাঞ্চিত প্রশ্ন তুলে অসম্মানের অপচেষ্টাও চলত। আদালতের যুগান্তকারী এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে যুগ যুগ ধরে চলে আসা অন্যায়ের কবল থেকে রক্ষা পাবে ধর্ষণের শিকার নারী ও শিশুরা।

তানজিনা সুলতানা
অ্যাপ্রেন্টিস অ্যাডভোকেট
জজ কোর্ট, চট্টগ্রাম।

Facebook Comments