banner

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 1510 বার পঠিত

 

মুনতাহা: ‘বাধা আসবেই কিন্তু সাহস হারানো যাবে না’

ফাতেমা শাহরিন


একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা মুনতাহা। তার প্রতিষ্ঠানের নাম ‘মনিহারী’। মনিহরীতে রয়েছে, হাতের তৈরী চুড়ি, বালা, নেকলেস, ব্রেসলেট, কানের দুলসহ নানা রকম আইটেম। যার পুরোটাই মুনতাহা নিজ হাতে করে থাকেন। চুমকি, পুথি ইত্যাদি দিয়ে মুনতাহা তার স্বপ্নীল মনের বর্ণিল ছবি আঁকেন তার প্রতিটি সৃষ্টিতে।
তিনি একজন স্টুডেন্ট, পড়াশুনা এইস এস সি শেষ করেছেন। সামনে ভার্সিটিতে ভর্তি হবেন। পড়াশুনার ব্যস্ততার পাশাপাশি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন এই সাহসী নারী।

অপরাজিতার পক্ষ থেকে কথা হয়েছিল তার সঙ্গে:

অপরাজিতা: আপনি ঠিক কখন ভাবলেন হাতের কাজটিকে কন্টিনিউ করবেন?
মুনতাহা: যখন কাজ করে তা অনলাইনে আপলোড করলাম সাথে সাথে বেশ সারা পেতে শুরু করি। তখন থেকে কন্টিনিউ করার কথা ভেবেছি। যদিওবা ছোটবেলা থেকে টুকটাক কাজের প্রতি খুব আগ্রহ ছিল আমার। যখন ক্লাস ফোরে পড়ি তখন ওড়নায় কাজ করেছিলাম, সবাই খুব অবাক হয়ে যায়, এতটুকু মেয়ে কত সুন্দর করে কাজ করেছে। আর যখন আরেকটু বড় হহলাম তখন থেকেই আমার প্রচন্ড আগ্রহ, নেশা, আজ পেশার পরিণত হয়েছিল। পড়াশুনার পাশাপাশি আমি হাতের কাজ শিখেছি সম্পূর্ণ আমার নিজের চেষ্টায়। তবে আমার আম্মু আর নানু আমাকে সবসময় সাপোর্ট দিয়ে এসেছেন।

অপরাজিতা: মনিহারীর শুরুর গল্পটা আমাদেরকে বলুন?
মুনতাহা: মজার ব্যাপার ‘মনিহারী’ কাজ যখন শুরু করি তখন আমার কাছে কোন টাকা ছিল না। আমি এই কাজ একা একায় শিখি। তখন মুলত ফেসবুকে নানান পেজ ঘুরে ঘুরে দেখাটি খুবই আনন্দকর ছিল। একদিন এই গয়নাগুল দেখি। তখন বাবার কাছ থেকে পাওয়া হাত খরচের টাকা জমিয়ে সব মেটারিয়াল কিনি। এককভাবে টুকটাক বানিয়ে বিভিন্ন হাতের নকশা করে নিজেই পড়তাম। এরপর ফেসবুকে, এত সারা পেলাম আলহামদুলিল্লাহ।

অপরাজিতা: আমরা বলতে পারি উদ্দ্যোগটা ছিলো আপনার! নিজের! তারপর?
মুনতাহা: মুলত আমি একাই কাজ শুরু করেছি। এখনও একা করছি। তবুও কাজ থেমে থাকে না। থেমে যায়নি ‘মনিহারী’।সেই সময় অনলাইনে পেজ খোলার চিন্তা করি,অনলাইন পেজ ‘মনিহারী’ সফলভাবে যাত্রা শুরু করে। এর পর আলহামদুলিল্লাহ অনেক অর্ডার পাই। আসলে পুরো ব্যাপারটা ছিল অবশ্যই সংগ্রামের। আমি একা একা সিদ্ধান্ত নেই, কাজও শুরু করি এবং তারপর আমি বেশ ভাল সারাও পাই। সবকিছু নিয়ে আমি খুবই আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠি। কোন কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত এবং সেই বিষয়ে অবিচল থাকাটি আমার কাছে বড় সংগ্রাম মনে হয়েছে।

অপরাজিতা: নিজ উদ্যোগেই স্বল্প পরিসরে এই ব্যবসা জানতে চাই আরও অনেক কিছু?
মুনতাহা: মুছকি হাসির সুর শুনা যায় সম্ভবত, আমি আসলে বাসায় একা একা অব্যবহারিত জিনিসপত্র দিয়েই বানানোর কাজটি শুরু করি। অতঃপর আরও মেটারিয়াল এবং প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে বড় পরিসরি কাজ করার চেষ্টা করি। বিভিন্নজন তাদের মতামত শেয়ার করে। আগে ঘরে বসে নিজেই ব্যবহার শুরু করি। তারপর অনলাইনে বিভিন্ন কিছু বিক্রি করি। আত্নতৃপ্তির।

অপরাজিতা: আবার ‘মনিহারী’ ফিরে আসি, একজন নারী হিসেবে এ পথ চলা, কেমন ছিল, সহজ কিংবা কঠিন?
মুনতাহা: কোন কাজই খুব সহজ নয়। একজন নারী উদ্দ্যোক্তা হিসেবে বলব, যেকোন কাজে প্রথমে প্রচুর বাধা আসে এবং আসবে কিন্তু কখনও সাহস হারানো যাবে না। যদি সাহসের সাথে বাধা পেরিয়ে উঠা যায় ইনশাআল্লাহ আর কোন ভয় থাকে না।

অপরাজিতা: এ সেক্টরে অসহায় মেয়েদের কর্মস্থানের কতটুকু সুযোগ আছে?
মুনতাহা: হা অবশ্যই আছে, কেউ যদি হাতের কাজ পারেন তাদের জন্য প্রচুর সুযোগ আছে। অসহায় মেয়ে শুধু কেন আমার মত যারা ঘর থেকে বাইরে কাজ করতে যেতে পারে না তারা ঘরে বসেই তাদের কাজগুল অনলাইনে বিক্রি করতে পারে অনায়াসে। চাইলে এই কাজ করে সংসার চালাইতে পারেন। যে কোন কাজে লেগে থাকা দরকার।

অপরাজিতা: মূল ধারার ব্যবসার জন্য নারীরা সহযোগিতা কি আদৌ পাচ্ছে, কেন পাচ্ছে না বলে আপনি মনে করেন?
মুনতাহা: পাচ্ছে না। এমন বলার কারণ আসলে আমার এই কাজের জন্য আমি কয়েক জায়গায় সাহায্যের জন্য গিয়েছি কিন্তু বিফল হয়েছি। তাই আসলে এই ব্যাপারে কিছু বলতে পারছি না।

অপরাজিতা: আপনার দৃষ্টিতে সফল নারী কে?
মুনতাহা: সফলতা হচ্ছে কোন একটা কাজ শুরু করে সফলভাবে তা করতে পারা। নারীদের জন্য সফলতাটি ভীষণ কঠিন ও সংগ্রামের। ছেলেরা যত সহজে বেরিয়ে পড়তে পারে বাধা কম, নারীদের প্রচুর বাধা অতিক্রম করতে হয়।

অপরাজিতা: নারী দিবস চলে গেল’ নারীদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন?
মুনতাহা: নারীদের উদ্দেশ্যে নারী দিবসে বলতে চাই এতটুকুই, ‘যারা বসে আছেন কিন্তু কিছু করতে চান তাদের বলল, হাতের বিভিন্ন কাজ শিখুন এবং আত্ম-সবলম্বী হয়ে উঠুন। বাধা পেরিয়ে হাটতে পারলে আমরা সফল।

অপরাজিতা: নতুন উদ্দ্যোক্তাদের কিভাবে উৎসাহ দিবেন?
মুনতাহা: যারা নতুন উদ্যোক্তা হতে চান তাদের উদ্দেশ্যে বলব, ‘আপনারা এগিয়ে যান’। সফলতা আসবে ইনশাআল্লাহ। প্রথমে হয়ত আপনাকে কেউ সাপোর্ট করবে না, সবাই বাধাও দিতে পারে। কিন্তু যখন দেখবে আপনি আপনার যোগ্যতা দিয়ে সফলতার পথে হাটবেন তখন সবাই আপনাকে সাপোর্ট করবে।

অপরাজিতা: মনিহারী নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
মুনতাহা: ‘মনিহারী’ নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন। গ্রুপিং করে কাজ করার আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। অনেক বড় বড় উদ্দ্যোক্তাদের সাথে কাজ করার ইচ্ছে। আমি হাতের তৈরি জিনিস নিয়েই কাজ করতে চাই। সবাই দোয়া করবেন।

Facebook Comments