banner

রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 852 বার পঠিত

 

‘বাংলা নববর্ষ পালনের’ পরবর্তী ভাবনা


কানিজ ফাতিমা


নববর্ষ নিয়ে স্ট্যাটাস গুলো পড়ছিলাম – আবার একই চিত্র। Extremism, একপক্ষ “হারাম ” হারাম ” বলছে আর আরেক পক্ষ “ফরজ ” “ফরজ” (এটা ছাড়া বাঙ্গালীয়ানা হতেই পারেনা) বলছে। ব্রিটিশদের সেই বিভক্তি নীতির কতটা শিকার একটা জাতি হতে পারে তা প্রতিটা ঘটনা এমনকি উৎসব আয়োজনেও আমরা দেখিয়ে দেই। কোনো কিছুই আমাদের একত্র করেনা, সব কিছুতেই আমরা বিভক্ত হই।

আচ্ছা নববর্ষ একটা বর্ষবরণ – এটা হারাম কিভাবে হয় ? কোন কিয়াসের ভিত্তিতে? বলবেন যেভাবে উদযাপন করা হচ্ছে তার ভিত্তিতে।

তাহলে প্রশ্ন দাড়ায় ঈদে যদি কেউ মদ খায় তবে কি ঈদ হারাম হয়ে যায়? বিয়ের অনুষ্ঠানে যদি ইসলাম অসমর্থিত কিছু করা হয় তবে কি বিয়েটা হারাম হয়ে যায়? ইসলামে হারাম হালালের প্রধান মূলনীতি হলো যাকে হারাম করা হয়েছে তা ব্যতীত সব হালাল (হালাল হারামের বিধান, ইউসুফ আল কারজাভী)। এটা সুস্পষ্ট যে নববর্ষ উদযাপন ইসলামে হারাম নয়।

এবার চিন্তা করা যাক এটা উদযাপনের উপায় নিয়ে –

কেউ হালাল কাজ করে নববর্ষ উদযাপন করলে এটা হালাল আর কেউ হারাম কিছু করলে সেটা অন্যান্য দিনে যেমন হারাম এই দিনেও তেমনি হারাম।

নববর্ষ উদযাপনের নামে হারামটা হালাল হয়ে যাবে না। যেমন, ইসলামে অশালীনতা হারাম; কাজেই কেউ অশালীন ভাবে নববর্ষ উদযাপন করলে সেই অশালীনতাটা অবশ্যই হারাম। আবার শিরক করা কবীরা গুনাহ। কাজেই কেউ পেঁচাকে লক্ষ্মীর বাহন হিসাবে কল্যাণের মাধ্যম মনে করলে – তা কবীরা গুনাহ। নববর্ষের বা সংস্কৃতির নামে তা হালাল হয়ে যাবে না।

“নববর্ষ উদযাপন হারাম” বা “নববর্ষ উদযাপনের জন্য সব হালাল”- এ দুটাই প্রান্তিকতা। কাজেই প্রান্তিকতা থেকে সরে আসুন।

এবার প্রশ্ন হলো কিভাবে উদযাপন করবেন ?

যারা ইসলামের অনুশাসন পালন করতে ভালবাসেন তাদের দায়িত্ব হলো শালীনতার ও ইসলামের আওতায় কিভাবে এটা করা যায় তার ব্যাপক প্রচার ও প্রসার করা। আমি আমাদের স্কুলে (কানাডিয়ান) বাচ্চদের জন্য বাংলাদেশ সম্পর্কে presentation করেছি , আমাদের নিজেদের কাপড় চোপড় নিয়ে, ভাত-ডাল দিয়ে। এমন হাজারো হালাল ও শিক্ষনীয় উপায়ে পালন করা যায় নববর্ষ।

১.মেকি মূর্তি নিয়ে যাত্রা হতে পারলে, বাংলাদেশী পিঠা পায়েশ নিয়ে মেলা হতে পারবে না কেন?
২.নানী-দাদীদের ঘোমটা পরা ছবির প্রদর্শনী হতে পারবে না কেন ?
৩.গরীব চাষীদের জীবনী নিয়ে শর্ট ফিল্ম প্রদর্শনী হতে পারবে না কেন ?
৪.রমজান মাসে গ্রামের সেই উৎসব মুখর চাঁদ দেখা , ইফতার , সর্গাই (সেহেরী) এগলোর প্রচার করা যাবে না কেন?
৫.ভাটিয়ালী গান, আব্দুল আলীমের গান , পুথিপাঠ নিয়ে শালীন বটতলা করা যাবে না কেন ?

হারাম – হারাম করে দুরে ঠেললে এর সুযোগে যারা অন্য সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করছে তাদের রাস্তাই শুধু নির্বিঘ্ন করা হবে। টেলিভিশন হারাম বলে যেমন টেলিভিশন বন্ধ করা যায়নি, তেমনি নববর্ষ হারাম বলে এটাও বন্ধ করা যাবে না।

টেলিভিশনকে কিভাবে হালাল উপায়ে ব্যবহার করা যায় প্রথম থেকেই মুসলমানদের সেটা ভাবা উচিত ছিল। অনেক দেরীতে হলেও আমরা সেটা ভাবতে শিখেছি। আশা করি নববর্ষ নিয়েও আমরা সেই বিচক্ষনতার পরিচয় দেব ভবিষ্যতে। সবাইকে পুনরায় নববর্ষের শুভেচ্ছা।

Facebook Comments