banner

বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 652 বার পঠিত

 

এক স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রহর গুনছি

ফাতিমা শাহীন


অনেকদিন ধরেই মেলবোর্ন বৃষ্টিবিহীন। সামার এখন শেষের পথে। গাছের পাতার সবুজ রঙের পেলবতাও উধাও সেই সঙ্গেই। বাগানের ছিটেফোঁটা শাকসবজির শেকড়ের তৃষ্ণা যেন মিটছিলো না হোস পাইপের মেপে দেয়া পানিতে। একটা বৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা তাই ছিল সবার অন্তরে।

আজকের ওয়েদার ফোরকাস্টে বৃষ্টির সম্ভাবনা ছিলো। চাতক মন তাই ছিল বৃষ্টির, আকাঙ্ক্ষায় উন্মুখ। তবুও ভোর সকালে আকাশের মেঘলা মন দেখে মনেও মেঘ এসে ভর করলো যেন। কি যে হবে! সব ঠিকঠাক থাকবে তো! কারণ আজকে MMC ( Melbourne Multicultural Centre) তে কংক্রিট ঢালাই হবে। পানিতে কোন সমস্যা না হয়ে যায়! একসময় শুরু হল মুষলধারে বৃষ্টি। আকাশে মেঘ রাজ্যের কোন শেষ দেখতে পাচ্ছি না। একসময় শেষ হল বৃষ্টি। মেঘ কেটে ঝলমল করে উঠল সূর্য। দেখতে গেলাম কাজ কেমন এগোচ্ছে। বুকের ভেতর দুরু দুরু। একশোটা ঢাক যেন একসঙ্গে বেজে চলেছে অন্তরে।

MMC চত্বরে ঢুকে তাকাতেই চোখ জুড়িয়ে এলো, মন প্রশান্ত হল। ঢালাই শেষে পরবর্তী কাজ করে চলেছেন নির্মাণ কর্মীরা। চারিদিকে কি প্রশান্ত পরিবেশ! ঘুরে ঘুরে বেড়ালাম সবদিকে, মহিলাদের নামাজের স্থানের দিকে এগুতেই কেন যেন অকারণেই বুক হু হু করে উঠল। এই নির্মাণ কাজ শেষে এখানে যখন বোনদের অবনত শির আল্লাহর দিকে সিজদাবনত হবে, তার মধ্যে একজন হিসেবে কি আল্লাহ আমায় কবুল করবেন!

চতুর্দিকে নির্মাণ সামগ্রীর নানারকম শব্দ, কিন্তু তার ভেতরেই সাদা সাদা প্রজাপতিরা যৎসামান্য হয়ে ফুটে থাকা জংলী ফুলগুলোয় উড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে পরম নিশ্চিন্তে। আমার তখন কেবলি মনে হচ্ছিল, প্রকৃতি ও বাস্তবের এমন নিবিড় মেলবন্ধন আমাদেরকে প্রতি মুহূর্তে যেন স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিল, বাস্তবতায় আমরা যতই আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকি না কেন, রবের রুবুবিয়াতের কাছে , তার সৃষ্ট প্রকৃতির কাছেই আমাদের আত্মসমর্পণ অবশ্যম্ভাবী।

সকালের বৃষ্টিতে ভেজা পথ , এখানে ওখানে অল্পস্বল্প পানি জমে আছে। ভেজা বালিতে পা ছোঁয়ালাম। আজ এখানে আমার পায়ের চিহ্ন, সেই দিন দূরে নেই , যেদিন আমাদের প্রজন্ম আমাদের জায়গায় স্থলাভিষিক্ত হবে ইনশাআল্লাহ। আমাদের কাজের দায়িত্ব বর্তাবে তাদের হাতে। তাদেরকে এখন থেকেই এই কাজের উপযুক্ত করে গড়ে তুলি। এই মসজিদের জন্য আমাদের হৃদয় গহীনে জমে থাকা একসমুদ্র ভালোবাসার উথাল পাথাল ঢেউ এর শব্দ যেন তারাও শুনতে পায়।

তাদের ভেতরে দানের অভ্যাস এখন থেকেই গড়ে তুলি। আমাদের সবরকম নেক পরিকল্পনা এবং তার বাস্তবায়ন প্রচেষ্টা , আমাদের সন্তানদের দ্বীনের প্রতি ভালোবাসা ও আমলে সালেহের প্রতি অকুণ্ঠচিত্তে এগিয়ে যাওয়া আমাদের অন্ধকার কবরে আলো ছড়াতে থাকবে কিয়ামত পর্যন্ত, ইনশাআল্লাহ।

Facebook Comments