All posts by Oporajita

আইসোলেশনের জন্য নিজেকে তৈরি করবেন যেভাবে

এ এক কঠিন সময়। শতাব্দীর সবচেয়ে বড় দুঃসময় বললেও বাড়িয়ে বলা হবে না। কোনো নির্দিষ্ট দেশ কিংবা জাতি নয়, পুরো বিশ্বই এখন আক্রান্ত, আতঙ্কিত। তাই নিজেকে একা ভাবার দরকার নেই। এখন প্রত্যেকেই আপনার মতো উদ্বিগ্ন। যেহেতু ভাইরাসটি নতুন, এখনও আবিষ্কার হয়নি এর ওষুধ কিংবা প্রতিষেধক, তাই ভয়টা বেশি। তবে ভয় দূর করতে চাইলে ইতিবাচকভাবে চিন্তা করতে হবে। এই রোগে আক্রান্ত হওয়া মানেই কিন্তু মৃত্যু নয়। অনেকেই আক্রান্ত হওয়ার পরে সুস্থ হয়ে ফিরেছেন। খুব কম সংখ্যক রোগীর ক্ষেত্রেই এটি মারাত্মক আকার ধারণ করে। তাই ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখুন। এটিও কিন্তু আপনাকে অসুখের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের রসদ জোগাবে।

করোনাভাইরাস আসার পরে আমরা কিছু নতুন শব্দের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। যেমন কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন, পিপিই ইত্যাদি। এই শব্দগুলোর ব্যবহার আগে এতটা হতো না যতটা এখন হচ্ছে। এর মধ্যে কোয়ারেন্টাইন আর আইসোলেশনকে গুলিয়ে ফেলছেন অনেকে। কোয়ারেন্টাইন হলো আপনার ভেতর অসুখটা আছে কি না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য অন্তত দুই সপ্তাহ পর্যন্ত সবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা। যদি এমন কোনো আশঙ্কা তৈরি হয় যে, আপনি এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন, তখনই কেবল আপনাকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হবে। দুই সপ্তাহ পর যদি পরীক্ষায় করোনাভাইরাস নেগেটিভ আসে, তবে আপনি সুস্থ। কোয়ারেন্টাইন থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন। আর যদি পজেটিভ হন, তবে যেতে হবে আইসোলেশনে।

কারো শরীরে যখন করোনাভাইরাস ধরা পড়ে তখন তাকে আইসোলেশনে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। আইসোলেশনের সময় চিকিৎসক ও নার্সদের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে থাকতে হবে রোগীকে। অন্য রোগীর কথা ভেবে হাসপাতালে আলাদা জায়গা তৈরি করা হয় তাদের জন্য। অন্তত দুই সপ্তাহের মেয়াদে আইসোলেশন চলে। অসুখের গতিপ্রকৃতি দেখে তা বাড়ানোও হয়। আইসোলেশনে থাকা রোগীর সঙ্গে বাইরের কারো যোগাযোগ করতে দেয়া হয় না। তাদের স্বজনদের সঙ্গেও এই সময় দেখা করতে দেয়া হয় না। একান্ত তা করতে দেয়া হলেও অনেক বিধিনিষেধ মানতে হয়।

যেহেতু এখনও এই অসুখের কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি তাই আক্রান্ত ব্যক্তিকে এ সময় কিছু অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ দিয়ে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যায় এমন কিছু ওষুধ ও পথ্য দিয়ে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করা হয়। যাদের শরীরে এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি ও করোনার প্রকোপ অল্প, তারা এই পদ্ধতিতে সুস্থও হন। যাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম ও রোগের হানা বড়সড় রকমের, তাদের পক্ষে সেরে ওঠা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

খুব বেশি উদ্বেগজনক অবস্থা না হলে রোগীর বাড়িতেও আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। এটি অনেকটা কোয়ারেন্টাইনের মতোই। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পথ্য চলতে পারে এই সময়। ভাইরাসটি এমনই সংক্রামক যে, সেবার জন্য কাউকে কাছে পাওয়ার আশা না করাই ভালো। তবে আইসোলেশন সেন্টারে থাকলে চিকিৎসক ও নার্সের দেখা পাবেন, বাড়িতে থাকলে আপনজনদের মধ্য থেকে কেউ দেখাশোনা করতে চাইলে তাই অবশ্যই সবরকম স্বাস্থ্যবিধি মেনে তবেই তা করতে হবে।

যদি আপনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন, তবে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হওয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ট। যেহেতু প্রতিষেধক নেই তাই মৃত্যুভয় আপনাকে আঁকড়ে ধরতেই পারে। এই অবস্থায় আপনাকে সাহায্য করতে পারে আপনার মনোবল। কিছুতেই মনোবল হারানো চলবে না। আইসোলেশন সেন্টার কিংবা বাড়িতে, যেখানেই আইসোলেশনে থাকুন না কেন আশা ধরে রাখতেই হবে।

ফিরতেই হবে- এমন মনোভাব ধরে রাখলে সহজে হারাবেন না। মনে রাখবেন, আমাদের শরীর কিন্তু অনেকক্ষেত্রেই আমাদের মনের কথা শুনে চলে। তাই শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করতে মনের দিকটাও গুরুত্ব দিতে হবে। তাই জীবনের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্তেও আশা বাঁচিয়ে রাখুন।

যা কিছু দরকারি জিনিস, তা হাতের কাছে রাখুন। কখন কোন ওষুধ খাওয়ার, তা জেনে নিন। যেন কেউ সাহায্য না করলেও নিজেই ওষুধ খেতে পারেন।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন মানেই সব শেষ ধরে নেবেন না। হতে পারে এটাই নতুন করে শুরু। অনেকেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এবং তাদের আত্মবিশ্বাস আগের থেকে আরও বেড়েছে নিঃসন্দেহে। তাই যতটা সম্ভব খেয়াল রাখুন নিজের দিকে। যদি সুস্থ হয়ে ফেরেন তবে নতুন এক ইতিহাসের সাক্ষী হবেন আপনি। মৃত্যুকে জয় করে আসা কম কথা নয়! সৌজন্যে: জাগোনিউজ

হাসপাতালে যোগ দিয়েই করোনায় আক্রান্ত ৫ নার্স

সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঁচ নার্সের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. ইউনুছুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, করোনা শনাক্ত হওয়া নার্সরা সম্প্রতি ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে ওসমানী হাসপাতালে যোগ দেয়ার জন্য সিলেটে আসেন। বাইরে থেকে আসায় তাদের নমুনা পরীক্ষা করা হয় এবং রিপোর্ট পজেটিভ আসে।

করোনা পরিস্থিতিতে সারা দেশের ন্যায় ওসমানী হাসপাতালেও নতুন ১৩৯ নার্স নিয়োগ দেয়া হয়েছে। গত ১৩ মে কর্মস্থলে যোগদানের সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের নমুনা পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়।

এদিকে, শুক্রবার পর্যন্ত সিলেট বিভাগে করোনা শনাক্ত হয়েছেন ৩৫৮ জন। পুরো বিভাগে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ছয়জন আর সুস্থ হয়েছেন ৬৯ জন।

গত ৫ এপ্রিল সিলেটে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হন ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন। ১৫ এপ্রিল তিনি মারা যান।

সূত্র : ইউএনবি

হাঁপানির সমস্যা থাকলে যা খাবেন, যা খাবেন না

হাঁপানির রোগীদের খাবারের বিষয়ে সব সময় সতর্ক থাকতে হয়। কিছু খাবার শ্বাসকষ্টের সমস্যা কমাতে পারে, আবার কিছু খাবার তা বাড়িয়ে তোলে। তাই হাঁপানিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং হাঁপানির লক্ষণগুলো হ্রাস করতে খাদ্যতালিকায় কিছু নির্দিষ্ট খাবার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। গবেষণায় দেখা গেছে যে, তাজা খাবারের পরিবর্তে প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার ফলে গত কয়েক দশক ধরে হাঁপানির ঘটনা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।

হাঁপানি বা অ্যাজমা রোগীদের তাজা ফল এবং শাকসবজি জাতীয় সুষম খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। তবে আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, কিছু নির্দিষ্ট খাবারের কারণে অ্যালার্জি হয় যা হাঁপানির লক্ষণগুলোর দিকে নিয়ে যেতে পারে। ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, বিটা ক্যারোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অন্যান্য ভিটামিন এবং খনিজ জাতীয় খাদ্যগুলি হাঁপানির ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।

যা খাবেন:
আপেল: আপেলে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকে, যা অ্যাজমা উপশম করে। নিউট্রিশন জার্নালের একটি গবেষণা অনুসারে, আপেল হাঁপানির ঝুঁকি হ্রাস করে এবং ফুসফুসের ক্রিয়াকে উন্নত করে।

ফলমূল ও শাকসবজি: বিভিন্ন ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়ার ফলে হাঁপানির লক্ষণগুলি হ্রাস পেতে পারে কারণ এগুলিতে ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং বিটা ক্যারোটিনের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। কমলা, লাল, বাদামি, হলুদ ও সবুজ বর্ণের ফল এবং শাকসবজি খাওয়া কেবল আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেই শক্তিশালী করবে না, পাশাপাশি হাঁপানির আক্রমণকেও হ্রাস করবে।

ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড: ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার, যেমন- সালমন, সার্ডিন, টুনা এবং কিছু উদ্ভিদ জাতীয় যেমন – ফ্ল্যাক্সিড এবং বাদাম আপনার ডায়েটের একটি অংশ হওয়া উচিত। আমেরিকান জার্নাল অফ রেসপিরেটরি অ্যান্ড ক্রিটিকাল কেয়ার মেডিসিনের মতে, ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া হাঁপানির তীব্রতা হ্রাস করে।

কলা: কলা খাওয়া হাঁপানিতে আক্রান্ত শিশুদের ফুসফুসের কার্যকারিতা উন্নত করতে সহায়তা করে।

ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার: ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাদ্য যেমন – দুধ, কমলালেবুর জুস, সালমন এবং ডিম, যা ৬-১৫ বছর বয়সী শিশুদের হাঁপানির সমস্যাকে কমাতে পারে। ভিটামিন ডি ফুসফুসের কার্যকারিতা উন্নত করতে এবং রেসপিরেটরি ইনফেকশন হ্রাস করতে পরিচিত।

ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার: আমেরিকান জার্নাল অফ এপিডেমিওলজিতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ১১-১৯ বছর বয়সী শিশুদের যাদের শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা কম তাদের ফুসফুসের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। তাই ডার্ক চকোলেট, কুমড়োর বীজ, সালমন এবং শাক জাতীয় খাবার খেয়ে ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণ বাড়ান।

ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার: জার্নাল মেডিসিনে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, হাঁপানিতে আক্রান্ত শিশুদের শরীরে সুস্থ বাচ্চাদের তুলনায় ভিটামিন এ কম। তাই ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার যেমন- গাজর, ব্রোকলি, মিষ্টি আলু এবং শাক-সবজি খান। হাঁপানি হলে এই সমস্ত খাবার এড়ানো উচিত।

যা খাবেন না:
স্যালিসাইলেট: স্যালিসাইলেট জাতীয় খাবারগুলি হাঁপানির ক্ষেত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। স্যালিসাইলেট ঔষুধ এবং অন্যান্য পণ্যগুলিতেও পাওয়া যায়। এছাড়া, কফি, চা এবং অন্যান্য মশলায়ও পাওয়া যায়।

সালফাইটস: সালফাইট শুকনো ফল, ওয়াইন, চিংড়ি, আচারযুক্ত খাবার, লেবুর জুসে পাওয়া যায়। এটি হাঁপানির লক্ষণগুলো আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

কৃত্রিম উপাদান: কৃত্রিম উপাদান, যেমন- ফুড ফ্লেবার, ফুড কালার, ইত্যাদি প্রক্রিয়াজাত এবং ফাস্ট ফুডগুলোতে পাওয়া যায়। হাঁপানিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের এই খাবারগুলো এড়ানো উচিত।

যেসব খাবার খেলে গ্যাস হয়: বাঁধাকপি, মটরশুটি, কার্বনেটেড পানীয়, রসুন, পেঁয়াজ এবং ভাজা খাবারের মতো খাবারগুলো গ্যাসের কারণ হয় যা ডায়াফ্রামের উপর চাপ সৃষ্টি করে। এটি হাঁপানির লক্ষণগুলো বাড়িয়ে তোলে।

চাঁদপুরে জামাতার ছুরিকাঘাতে স্ত্রীর পর শাশুড়ির মৃত্যু

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে জামাতার উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে স্ত্রী তানজিনা আক্তার রিতু (২০) নিহত হওয়ার দুদিন পর শাশুড়ি পারভীন আক্তারের (৪৫) মৃত্যু হয়েছে। আজ শুক্রবার ভোরে চাঁদপুর সদর জেনারেল হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

আটক জামাতা আল মামুন মোহনকে (৩২) গতকাল বিকালে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার জন্য হাজির করলে আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করেন।

এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রকিব বলেন, ‘আড়াই বছর আগে পার্শ্ববর্তী লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার শায়েস্তানগর গ্রামের মনতাজ মাস্টারের ছেলে আল মামুন মোহনের সঙ্গে ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের গৃদকালিন্দিয়া গ্রামের সেলিম খানের মেয়ে তানজিনা আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর সৌদি আরবে গিয়ে দেড় বছর থাকার পর আল মামুন মোহন ফিরে আসেন। এরপর থেকে বেকার সময় কাটান। এরইমধ্যে পরকীয়া ও টাকা-পয়সার হিসাব নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এই দুটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।’

এ ঘটনায় আল মামুন মোহনকে প্রধান ও তার ভাই এবং বোনকে আসামি করে নিহত তানজিনার চাচা লিয়াকত খান বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

জানা গেছে, গত বুধবার ইফতারির সময় উপজেলার গৃদকালিন্দিয়া এলাকায় পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রী তানজিনা আক্তারকে তার স্বামী ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেন। এ সময় তানজিনাকে বাঁচাতে আসলে তানজিনার মা পরভীন আক্তারও ছুরিকাঘাতে আহত হন। তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় চাঁদপুর সদর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার রাতে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে বলা হয়। আজ ভোরে ঢাকায় নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।

নারীর কর্মক্ষেত্রে আইনি সুরক্ষায় বাংলাদেশ ১৭১তম

কর্মক্ষেত্রে নারীর আইনি সুরক্ষায় দুই ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে ১৯০ দেশের মধ্যে এবার বাংলাদেশের অবস্থান ১৭১তম, যা গতবছর ছিল ১৬৯তম। এবার বাংলাদেশের সার্বিক স্কোর ৪৯ দশমিক ৪।

বিশ্বব্যাংকের ‘নারী, ব্যবসা ও আইন-২০২০’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি মঙ্গলবার রাতে ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে ২০১৭ সালের জুন থেকে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করা হয়।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, নারীর চলাচলের স্বাধীনতায় বাংলাদেশের স্কোর ১০০, কর্মক্ষেত্রে ৫০, কাজ করার জন্য বেতন পাওয়ার ক্ষেত্রে ২৫, ব্যবসা পরিচালনা করার ক্ষেত্রে ৭৫, সম্পত্তির অধিকারে ৪০, বিয়ে করা ৬০, সন্তান নেয়া ২০ এবং পেনশন পাওয়ার ক্ষেত্রে স্কোর ২৫।
মোট আটটি নির্দেশকের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংক প্রত্যেক দেশের স্কোর নির্ণয় করেছে। এতে শূন্য থেকে ১০০-এর মধ্যে স্কোরিং দেয়া হয়েছে। নির্দেশকগুলো হলো- নারীর চলাচলের স্বাধীনতা, চাকরি শুরু করা, কাজের প্রাপ্তি, বিয়ে হওয়া, বাচ্চা থাকা, ব্যবসা পরিচালনা, সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও পেনশন প্রাপ্তি। এসব নির্দেশকের ক্ষেত্রে একটি দেশের আইন নারীকে কতটুকু সুরক্ষা দেয়, তা বিশ্বব্যাংকের গবেষণায় উঠে এসেছে

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে ভারত (১১৭তম), দেশটির স্কোর ৭৪ দশমিক ৪। এরপর মালদ্বীপের অবস্থান ১১৮ (স্কোর ৭৩.৮), নেপাল ১১৯ (স্কোর ৭৩.৮), ভুটান ১২৫ (স্কোর ৭১.৯), শ্রীলঙ্কা ১৩৭ (স্কোর ৬৮.১), পাকিস্তান ১৭২ (স্কোর ৪৯.৪) এবং আফগানিস্তান ১৮৩ (স্কোর ৩৮.১)।
সর্বোচ্চ ১০০ স্কোর নিয়ে যৌথভাবে শীর্ষে আছে ৮টি দেশ। দেশগুলো হচ্ছে- কানাডা, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, বেলজিয়াম, আইসল্যান্ড, লাটভিয়া, লুক্সেমবার্গ, সুইডেন, ফিনল্যান্ড এবং এস্তোনিয়া।

১৩৮ বছরে প্রথম নারী নির্বাহী পেল জাপান কেন্দ্রীয় ব্যাংক

জাপান কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এই প্রথম একজন নারী নির্বাহী পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হল। সোমবার (১১ মে) জাপানের অর্থমন্ত্রী তারো আসো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্বাহী পরিচালক হিসেবে টোকিকো শিমিজুর নাম ঘোষণা করেন। ৫৫ বছর বয়েসি এ ব্যাংকার বর্তমানে ব্যাংকটির নাগোয়া ব্রাঞ্চে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।

১৮৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংক অব জাপান সম্প্রতি নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছু রদবদলের উদ্যোগ নেয়। এর অংশ হিসেবে ছয় সদস্যের নির্বাহী কমিটিতে শিমিজু নিয়োগ পেলেন। ব্যাংকের ১৩৮ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী ফোরাম- পরিচালনা পর্ষদে নারী নিয়োগের ঘটনা এটিই প্রথম।

উল্লেখ্য, জাপান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৪৭ শতাংশ কর্মী নারী হলেও তাদের মাত্র ১৩ শতাংশ উচ্চপদস্থ ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে আছেন। এছাড়াও আইনগত ব্যাপার, পারিশ্রমিক প্রক্রিয়া ও ব্যাংক নোট সংক্রান্ত বিভাগের বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে ২০ শতাংশ নারী কর্মরত রয়েছেন।

জাপানের টোকিও ইউনিভার্সিটি থেকে প্রকৌশল বিদ্যায় ডিগ্রি নিয়ে ১৯৮৭ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যোগ দেন শিমিজু। ব্যাংকটির আর্থিক বাজার বিভাগ ও বৈদেশিক মুদ্রা কার্যক্রম বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এছাড়াও ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি ব্যাংকের ইউরোপীয় বিভাগের সাধারণ ব্যবস্থাপক হিসেবে লন্ডনে দায়িত্ব পালন করেন শিমিজু।

গত কয়েক দশক ধরে উচ্চ শিক্ষিত নারীর সংখ্যা বাড়ায় জাপানের পুরুষ প্রভাবিত পরিচালনা ব্যবস্থায় পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগে। তবে ৭০ বছরের পুরনো ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকে যেমন গত বছর একজন নারী গভর্নর নিয়োগ দেওয়া হয়, জাপানের এ ব্যাংকটিতে এখনও এরকম সর্বোচ্চ পদে কোন নারী নিয়োগ পাননি।

জাপানে মোট জনসংখ্যার ৫১ শতাংশ নারী হলেও দেশটি লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে। ২০১৮ সালে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের এক হিসাব অনুযায়ী, লৈঙ্গিক বৈষম্য হ্রাসের সূচকে ১৫৩টি দেশের মধ্যে জাপানের অবস্থান ১২১। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির মতে, লৈঙ্গিক বৈষম্য নিরসনে জি-৭ এর মত প্রভাবশালী কমিটিতেও জাপানের অবস্থান তলানিতে।

তবে দেশে নারীর ক্ষমতায়ণ বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ‘উওমেনোমিক্স’ নামের এক নীতি গ্রহণ করেন। এর মাধ্যমে শ্রমজীবী নারীদের ক্ষমতায়ণ করার কাজে নজর দেয় জাপান কর্তৃপক্ষ। বিশেষজ্ঞদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে একজন নারীর নিয়োগ, সেই নীতিরই অংশ।

 

‘যে রাত হাজার মাসের চেয়েও সেরা!’

‘যে রাত হাজার মাসের চেয়েও সেরা!’


সাজেদা হোমায়রা


রমজান মাসের প্রতিটি রাত ও দিনের সবগুলো মুহূর্ত আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একটি নিয়ামত! এসময় আল্লাহর বিশেষ দৃষ্টি থাকে তাঁর বান্দাদের প্রতি।

পুরো রমজান মাসই সওয়ার অর্জনের মাস। আর এ মাসের শেষ দশকেই রয়েছে হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ এক রাত! এ রাতেই নাজিল হয়েছে মহাগ্রন্থ আল কুরআন। এ রাতের মর্যাদা ‘সূরা কদর’ এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন।

“তুমি কি জানো? কদরের রাত কি? কদরের রাত হাজার মাসের চেয়ে উওম।” – সূরা কদরঃ২-৩

এ রাতে অসংখ্য ফেরেশতা কূল জিবরাঈল আ. এর নেতৃত্বে পৃথিবীতে নেমে আসে। আর ইবাদতকারীর উপর রহমত, বরকত, মাগফিরাত বর্ষণ করতে থাকে। এটি এমন একটি রাত যে রাতে তাকদীরের ফায়সালা করা হয়। এ রাতে ভাগ্যের ভাঙ্গা গড়া চলে। এ রাতে সফলতা, ব্যর্থতা, রিযিক সহ সবকিছুর ভাগ্যে নির্ধারিত হয়। শুধুমাত্র দুয়াই পারে এই ভাগ্য নির্ধারণে পরিবর্তন আনতে।

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সা. বলেছেনঃ “যদি কেউ ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদরে কিয়ামুল লাইল/তাহাজ্জুদে অতিবাহিত করে তবে আল্লাহ তার পূর্বের সব গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।
সুবহানাল্লাহ!

রমজানের শেষ দশকের কোন রাতটি লাইলাতুল কদরের রাত, সে সম্পর্কে রাসূল সা. নির্দিষ্ট করে বলেননি। আয়েশা রা. বলেন, রাসূল সা. বলেছেনঃ “তোমরা শবে কদর অনুসন্ধান করো রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতসমূহে।” তাই রাসূল সা. এর কথা অনুযায়ী শবে কদর রমজানের ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তারিখেই খুঁজতে হবে।
আমরা বেশিরভাগই শুধুমাত্র ২৭ রমজানের রাতকে শবে কদর ভেবে বাকী অন্য রাতগুলোয় ইবাদতের ব্যাপারে উদাসীন থাকি। আমাদের উচিত রমজানের শেষ দশদিনের প্রতিটি বেজোড় রাতই সমান গুরুত্ব দিয়ে ইবাদত করা। তাহলে আর শবে কদর মিস হবার সম্ভাবনা থাকে না।

কদরের রাতে নির্ধারিত কোনো বিশেষ পদ্বতির নামাজ অথবা কোনো নির্দিষ্ট আমল করা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়।

এ রাতগুলোতে বেশি বেশি ভালো কাজ করতে হবে।
এ রাতে আমরা যা যা করতে পারি….
১. বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া
২. কুরআন তেলাওয়াত, কুরআনের অনুবাদ ও তাফসীর পড়া।
৩. আল্লাহর জিকির করা।
৪. তাওবা ও ইসতিগফার করা
৫. অনেক অনেক দুয়া করা
৬. দান সাদকাহ করা

এছাড়াও যে কোনো সৎ কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করতে পারি। এ রাতের সৎ কাজ হাজার মাসের সৎকাজের চেয়ে বেশি ভালো! এ রাতে আমরা আল্লাহর কাছে দুয়া ও আমলের মাধ্যমে আমাদের তাকদীর পরিবর্তন করে নিতে পারি….সুযোগ করে নিতে পারি জান্নাতে যাওয়ার!

এ রাতের জন্য রাসূল সা. হযরত আয়েশা রা. কে বিশেষ একটি দুয়া শিক্ষা দিয়েছেন। সেই দুয়াটি আমরা বেশি বেশি করে পড়বো।

“আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আ’ফুউউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফুআন্নি।”
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল! ক্ষমা করাকে আপনি পছন্দ করেন। তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন।”

আয়েশা রা. বলেন, “রমজানের শেষ দশদিন যখন শুরু হতো, রাসূল সা. কোমর বেঁধে নিতেন। একেবারেই বিছানায় যেতেন না। নিজে জাগতেন এবং পরিবারকেও জাগাতেন।”

হাজার মাসের চেয়েও উত্তম এ রাতে আমরাও ইবাদতে মশগুল হই….সিজদায় নুঁয়ে থাকি প্রভুর প্রতি! সঙ্গোপনে নিজেকে সঁপে দেই পরম দয়াময়ের কাছে!

শুধু ২৭ এর রাত নয়, ইবাদাতে কাটাই শেষ দশকের প্রতিটি রাত…
নিশ্চয়ই আমরা খুঁজে পাবো শবে কদর!

সাজেদা হোমায়রা

 

সিজদাহ: দ্যা বেস্ট রিলাক্সেশন থেরাপি (পর্ব-৩)

সিজদাহ: দ্যা বেস্ট রিলাক্সেশন থেরাপি (পর্ব-৩)


জিয়াউল হক


নামাজে সিজদাহর সময় আমরা আমাদের দেহের সর্বোচ্চ পয়েন্ট ফ্রন্টাল লোবটা মাটিতে ঠেকিয়ে দেই। আমাদের উচ্চ শীরটাকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে যতোটা সর্বনিম্ন পর্যায়ে সম্ভব নামিয়ে আনি। সেই সাথে এই সিজদাহ’র মাধ্যমে (ফ্রন্টাল লোবকে মাটিতে ঠেকিয়ে) আমরা আমাদের বুদ্ধি ও বিচারক্ষমতা, চৌকষ ব্যক্তিত্বের সকল অহংবোধকে এক আল্লাহর শক্তি ও সামর্থ, তাঁর বড়ত্বের কাছে বিসর্জন দিয়ে প্রকারান্তরে এটা স্বীকার করে নেই যে; হে আমার রব আপনার শক্তি ও সামর্থের কাছে আমি কিছুই নই, আমি তো আপনার সাহায্যেরই মুখাপেক্ষি!

এটা সিম্বলিক। প্রতিকি একটা আত্মসমর্পণ এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর কাছে। মনের বোঝা লাঘবের জন্য অপরিহার্য মনস্তাত্বিক প্রস্তুতি, মনকে হাল্কা করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোটিভেশন। এরপরে রইলো শারিরিক ও বৈজ্ঞানিক দিক। আমরা যখন সিজদাহতে যাই তখন মাথাসহ ব্রেনে রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়। এভাবে যতোক্ষণ আমরা সিজদাহতে থাকবো, ততোক্ষণই মাথার কোষগুলি স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি মাত্রায় রক্ত সরবরাহ পাবে।

আরও লক্ষণীয় বিষয় হলো যে, এরকম অবস্থায় সর্বনি¤œ পর্যায়ে থাকে ব্রেনের ফ্রন্টাল লোব; এই অংশটি মাটির সাথে লেগে থাকে। এর উপরে থাকে ব্রেনের বাঁকি অংশ। অর্থাৎ রক্ত সরবরাহ সবচেয়ে বেশি পায় এবং সবচেয়ে বেশিসময় ধরে পায় আমাদের ব্রেনের ফ্রন্টাল লোব, তথা সেই অংশ, যে অংশ বুদ্ধিবৃত্তিক ও আবেগনির্ভর কাজগুলো করে থাকে। বেশি পরিমান রক্ত পাওয়া মানে হলো বেশি পরিমান অক্সিজেন পাওয়া। আর বেশি পরিমান অক্সিজেন পেলে সেইসব কোষ বেশিপরিমাণ পুষ্ঠি পায় এবং সেখান থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড বের হয়ে আসে।

ঠিক একই সময় আরও একটা কাজ হয়। আমরা যখন সিজদাহতে থাকি, তখন আমাদের ফুসফুসের উপরে পেটের ডায়াফ্রাম’সহ (বুক ও পেটের মধ্যে বিভাজন পর্দা বা বেরিয়ার) পুরো পেটের চাপ পড়ে। এর ফলে আমাদের নি:শ্বাস প্রশ্বাসের গভীরতা বাড়ে, দ্রুততর হয়। বিষয়টা সিজদাহতে থাকা প্রত্যেক ব্যক্তিই নিজের ভেতরে অনুভব করেন। সিজদাহ থেকে উঠার সময় আমাদের নি:শ্বাসটা স্বাভাবিকের চেয়ে একটু জোরের সাথেই বের হয়, এর ফলে শরির থেকে অতিরিক্ত মাত্রায় কার্বন ডাই অক্সাইড বের হয়ে যায়। ঠিক এই কাজটাই সাইকোলোজিস্টগণ তাদের ক্লায়েন্টদের করতে বলেন মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে লম্বা নিশ্বাস ছাড়তে বলার মাধ্যমে।

এই কার্বন ডাই অক্সাইড’ই হলো সেই বর্জ, রক্তে যার উপস্থিতি আমাদের শরিরকে ক্লান্ত ও শ্রান্ত করে তোলে। সিজদহা’র মাধ্যমে শরিরের কোষগুলিতে অতিরিক্ত পরিমান নতুন রক্ত পেয়ে এবং বর্জরুপী এই কার্বনডাইঅক্সাইড’ই বের হয়ে যাবার কারণে শরীর চাঙ্গা হয়ে উঠে, মনও ফুরফুরে সতেজ হয়। আমরা মনোযোগ নিব্ধ করতে পারি। আমাদের ব্রেনের ফ্রন্টাল লোব সঠিকভাবে বিচার বিশ্লেষণ করতে ও সঠিক স্বিদ্ধান্ত নিতে পারে।

এ জন্যই সিজদাহ এতোটা গুরুত্বপূর্ণ এবং একমাত্র আল্লাহরই প্রাপ্য এবং আল্লাহর প্রতি যাবতীয় ইবাদতের শ্রেষ্ঠাংশ।

লেখক: জিয়াউল হক
রিসার্চ ডাইরেক্টর
একাডেমি টুয়েন্টি ওয়ান

 

সিজদাহ: দ্যা বেস্ট রিলাক্সেশন থেরাপি (পর্ব-২)

সিজদাহ: দ্যা বেস্ট রিলাক্সেশন থেরাপি (পর্ব-২)


জিয়াউল হক


আমাদের ব্রেনের এই ফ্রন্টাল লোব অন্যান্য যে সব কাজ করে তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো;

(১) মনের ভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর বাক্য বা যুক্তি, ভাষার জোগান দেয়া,
(২) অপরের মনের ভাব উপলব্ধি করা, মানুষকে বুঝা, তাকে যাচাই করা,
(৩) দুটো জিনিসের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা তথা উত্তম ও অধম যাচাই করা,
(৪) পুরো ব্রেনের অন্য তিনটি লোবসহ ফ্রন্টাল লোবও স্মৃতি সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণের কাজটা করে থাকে, কিন্তু ফ্রন্টাল লোব এই স্মৃতিকে দীর্ঘমেয়াদে (রিমোট মেমোরি) সংরক্ষণ করার কাজে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে,
(৫) ন্যায় অন্যায়, বৈধ অবৈধ বা ভালো মন্দ যাচাই করা তার কাজ,
(৬) ব্যক্তিত্ব তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে,
(৭) শরিরের কোন কোন অঙ্গসঞ্চালন ও তাদের মধ্যে সমন্বয়,
(৮) আমাদের শরিরে, যেমন; হাত, পা সঞ্চালন ও তাদের মাংশপেশির কার্যসমন্বয় ইত্যাদি) সাধন করে থাকে।
(৯) আরও একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে ফ্রন্টাল লোব।

সেটা হলো; আমাদের শরিরে ডোপামিন নামক এক ধরনের হরমোন নি:স্বরণ হয়, এটা একই সাথে আবার নিউরোট্রান্সমিটারও ব,ে তাই ডোপামিনকে বলা হয় কেমিক্যাল মেসেঞ্জার বা যৌগিক বার্তাবাহক (Chemical Messenger)। ডোপামিন আমাদের চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি, মনযোগ কোন এক বিশেষ দিকে নিবদ্ধ করা ও তা ধরে রাখা, আবেগ অনুভুতি, সূখ ও আনন্দানুভূতির মাত্রা জাগিয়ে তোলা বা নির্ধারণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

ডোপামিন শরিরে রক্তসঞ্চালন প্রক্রিয়া ও হৃদযন্ত্রের কাজকে প্রভাবিত করে, কিডনির কার্যক্রমের উপরেও সে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে। মানসিক স্থিতিশীলতা, প্রশান্তি, মনযোগ সৃষ্টি করার ক্ষমতা, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি বা অক্ষুন্ন রাখা, মানসিকভাবে উদ্দীপ্ত, উজ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত হওয়া এসব কিছুই অনেকাংশে নির্ভর রে এই ডেপামিন নামক হরমোনের উপরে। হরমোনটি নি:স্বরণের মাত্রা হ্রাস বৃদ্ধির উপরে আমাদের মনোদৈহিক সুস্থতা বা অসুস্থতা নির্ভরশীল। শরিরে ডোপামিনের মাত্রা কমে গেলে আমাদের ভেতরে অবষাদ, বিষণœতা বা ডিপ্রেশন দেখা দেয়।

মেডিটেশন, সুষম খাদ্য, কায়িক পরিশ্রম বা ব্যায়াম ও যথাসময়ে যথাযথ পর্যাপ্ত ঘুম এসবের মাধ্যমে শরিরে ডোপামিনের মাত্রা সঠিক মাত্রায় রাখা সম্ভবপর।

শারিরিক, মানসিক ও পারিপার্শ্বিক নানা কারণে মানুষের মনে ¯œায়ুচাপ, অবসাদ বেড়ে গেলে তার চিন্তা চেতনা, তার সুস্থতা ব্যহত হয়, নানা ধরনের মনোদৈহিক উপসর্গ দেখা দেয়। শুরুতেই এ অবস্থাকেি নয়ন্ত্রণ করা না গেলে ক্রমেই তা জটিল হতে জটিলতর হতে থাকে। এরকম অবস্থায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে। রোগের মাত্রানুযায়ী ঔষধ ও কাউন্সেলিং, সাইকোথেরাপির প্রয়োজন হতে পারে।

এরকম পরিস্থিতিতে চিকিৎসার অন্যতম একটা অনুষঙ্গ হিসেবে মনোবিজ্ঞানীরা রিলাক্সেশন থেরাপির আশ্রয় নেন। তারা তাদের ক্লায়েন্টদের বিভিন্নরকম রিলা´েশন থেরাপির প্রয়োগ করিয়ে থাকেন। এইসব রিলাক্সেশন থেরাপির লক্ষ্য একটাই হয়ে থাকে, তা হলো, সকল কিছু থেকে মনেযাগ সরিয়ে নিজের দিকে মনযোগকে নিবদ্ধকরণ এবং সেই সাথে তারা যে সব টেকনিক প্রয়োগ করেন, তার মধ্যে অন্যতম হলো ধীর গতিতে লম্বা নিশ্বাস নিয়ে তা প্রায় তিন অথবা পাঁচ থেকে সাত সেকেন্ড পর্যন্ত ধরে রেখে মুখ দিয়ে তা ধীরে ধীরে ছেড়ে দেয়া।

এভাবে লম্বা নিশ্বাস নেয়া এবং তা কিছুক্ষণের জন্য ধরে রাখার মাধ্যমে তারা আসলে বাড়তি অক্সিজেন নেন শরিরে এবং তা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশিক্ষণ ধরে রেখে আমাদের রক্তকে সুযোগ করে দেন গৃহিত সেই বাতাস থেকে যেন বেশি অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে আামদের শরির, ফলে আমাদের ব্রেনও স্বাভাবিকভাবেই বেশি অক্সিজেন পাচ্ছে এবং সতেজ হয়ে উঠছে।
ব্রেন নতুন অক্সিজেন পেয়ে সতেজ হয়ে উঠলে শরিরের অবসাদ ভাব কেটে যায়। পুরো শরিরের মাংশপেশিতে তার প্রভাব পড়ে, ইতিবাচক প্রভাব পড়ে আমাদের চিন্তা চেতনা, মনযোগ’সহ সকল কাজ কর্মে এবং কথা বার্তায়ও।

প্রচলিত মানসিক চিকিৎসা ও পূনর্বাসন কার্যক্রমে এই রিলাক্সেশন থেরাপি বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।
ইসলামি জীবন ব্যবস্থায় ঠিক এই কাজটিই করে সিজদাহ। আমরা সাধারণত এই নামাজের মধ্যে সিজদাহ দেই। কিন্তু নামাজ ছাড়াও ইসলামে আল্লাহর উদ্দেশ্যে সিজদাহ করার বিধান ও রেওয়াজ রয়েছে।

বরং মনোবিজ্ঞানীরা রিলাক্সেশন থেরাপি ব্যবহার করে যে ফল পান, নামাজ ও সিজদাহতে তার চেয়ে বেশি কার্যকর ও দীর্ঘস্থায়ী ফল পাওয়া সম্ভব।

রিলাস্কেশন থেরাপিতে যেমন নিরিবলি জায়গার আয়োজন করে বসতে হয়, ঠিক তেমনি নামজের জন্য ব্যক্তি ঘর বা মসজিদের শান্ত জয়গা ঠিক করে নেন। তিনি নামাজের জন্য অজু গোছল করে মানসিক স্থিতির সাথে নিজেকে তৈরি করেন।
নামজে এবং নামজের বাইরে সিজদাহর মাধ্যমে মানব শরিরের ব্রেনে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে কিভাবে ক্লান্তি অবসাদ দূর হয়ে মানসিক শান্তি অর্জিত হয় সে বিষয়টির যুক্তিগ্রাহ্য বৈজ্ঞানিক ব্যখাটা আমরা অতি সংক্ষেপে আলোচনা করে দেখবো।

এই নবন্ধের শুরুতেই আমরা অতি ষংক্ষেপে, যতোটা সহজ প্রাঞ্জল এবং নন একাডেমিকভাবে আমাদের ব্রেনের একটা অংশ ফ্রন্টাল লোব, তার অবস্থান ও কাযক্রম নিয়ে যৎসামান্য আলোচনা করেছি। সেখানে আমরা দেখিয়েছি যে এই ফ্রন্টাল লোব-ই আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা, যুক্তি, বিচার ও চিন্তাশক্তি’সহ আবেগ অনুভুতির বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে। অবশ্য ব্রেনের অন্যান্য অংশও তাকে এই কাজে সহযোগীতা করে এবং নিজ নিজ কাজের অংশ সম্পদন করে, তবে, এই ফ্রন্টাল লোবই আসল কাজটা করে থাকে।

আমাদের শরির জন্মপূর্ব থেকে, তথা, মায়ের পেটে থাকাবস্থায়ই ক্রমশ বেড়ে উঠে, জন্মের পর তা সময় নিয়ে পূর্ণতা পায়। একই বাস্তবতা হলো ব্রেনের বেলাতেও। ব্রেন মায়ের পেটে থাকাবস্থায় তৈরি হতে থাকে, তবে তা পচিশ বছরে বয়সে এসে পূর্ণতা পায়। ব্রেনের যে অংশটুকু সর্বশেষে পূর্ণতা পায়, সেটা হলো এই ফ্রন্টাল লোব, তথা, আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক ও আবেগ নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্র।

…….  চলবে

 

সিজদাহ: দ্যা বেস্ট রিলাক্সেশন থেরাপি (পর্ব-১)

সিজদাহ: দ্যা বেস্ট রিলাক্সেশন থেরাপি (পর্ব-১)


জিয়াউল হক


মানুষের শরিরের গঠন প্রকৃতির দিকে খুব গভীরভাবে লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাই যে, মানবদেহের সর্বোচ্চ পয়েন্ট হলো তার মাথা এবং সেই মাথার মধ্যে অবস্থানের দিক থেকে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে ব্রেনের ফ্রন্টাল লোব।

এই ফ্রন্টাল লোব (Frontal lobe) ব্রেনের চারটি লোব বা খন্ডের একটি। এই চারটি লোব আবার নিজেদের মধ্যে বিভাজন রয়েছে। শত শত কোটি নিউরন বা স্নায়ুকোষ নিয়ে এই লোবগুলি গঠিত। প্রতিটির সুনির্দিষ্ট কর্মপরিধি রয়েছে আর প্রত্যেকটি লোব অপর লোবের উপরে কম বেশি নির্ভরশীল, তথা, সকল লোবগুলি পরস্পর পরস্পরের সাথে সমন্বয় করেই তাদের কাজগুলো সম্পাদন করে থাকে।

আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনার প্রতি আমি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। আমরা দুপুরের খাবার গ্রহণের পর প্রায়শই ঘুম ঘুম ভাব অনুভব করি। এ সময়ে শরীর নিস্তেজ হয়ে আসতে চায়। অনেকের আবার নিয়মিত ঘুমের অভ্যাসও আছে। এ সময়ে হাল্কা বিশ্রামের মাধ্যমে সেই ঘুম ঘুম ভাবটা কাটিয়ে উঠা যায়। ইসলাম ধর্মেও তেমনটা উৎসাহ দেয়া হয়ে থাকে। প্রিয় রাসুল সা: দুপুরে খাবারের পর হাল্কা বিশ্রাম করতেন (কাইলুলা)।

খাবারের পর আমাদের মধ্যে যখন ঝিমুনি আসে তখন আমরা বার বার মুখ খুলে লম্বা নি:শ্বাস নেই (আমাদের চলতি ভাষায় ‘হাই তোলা’ বলে থাকি)। এটা একটা শারিরক প্রক্রিয়া। এর পেছনে যে বৈজ্ঞানিক ব্যাখা রয়েছে সেটাকে আমাদের বুঝতে হবে।

আমরা যখন খাবার গ্রহণকরি, তখন আমাদের পাকস্থলি, লিভার’সহ শরীরের পুরো পরিপাকতন্ত্রই সেই খাদ্যকে হজম করতে কাজে নেমে পড়ে। তারা কাজে নেমে পড়ে মানে পরিপাকতন্ত্রের সকল অঙ্গপ্রতঙ্গ পূর্বের তুলনায় এ সময় বেশি বেশি রক্ত সরবরাহ নেয়। এই যে বেশি রক্ত সরবরাহ নিল এর ফলে আমাদের মাথার ব্রেন, তথা, সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম তার রক্তে অস্কিজেনের স্বল্পতা অনুভব করে।

অস্কিজেনের এই স্বল্পতা পূরণ করতেই সে তখন আমাদের স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে যে পরিমাণ অক্সিজেন শরীরে ঢুকছে, তার চেয়ে বেশি অক্সিজেন সরবরাহের জন্য মুখ দিয়ে বারবার অক্সিজেন নেয় এবং চাহিদা পুরণ করে। আমারও সে সময় ঘুমিয়ে পড়ি বা বিশ্রাম নেই, ফলে আমাদের শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রতঙ্গগুলো (যেমন চোখ, হাত, পা ইত্যাদি) বিশ্রামে যাবার ফলে তাদের দ্বারা রক্ত ও অক্সিজেনের ব্যবহার কমে যায়, সেই বাড়তি রক্ত ও অক্সিজেনটুকু পেয়ে আমাদের ব্রেন নিজেকে শান্ত করে। আমাদের ক্লান্তি দূর হয়, আমরা সতেজ অনুভব করি।

কেবল খাবার গ্রহণের পরেই যে এরকম ক্লান্তি বোধ করি তাই নয়, আমরা দীর্ঘক্ষণ ধরে পরিশ্রমের কাজ করলে কিংবা কায়িক প্ররিশ্রম ছাড়াও বুদ্ধিবৃত্তিক পরিশ্রম করলে বা চিন্তা ভাবনা করলে বা মানসিক দু:শ্চিন্তা, ভয় আতংকের মধ্যে থাকলেও আমাদের শরিরে ক্লান্তি ভাব আসে। সেরকম ক্ষেত্রে আমাদের শরির ও মনের উপরে নানারকম সাময়িক ও ক্ষণস্থায়ী প্রভাব পড়ে। আমাদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে পড়ে, কাজে মন বসে না, আমরা ধৈর্য হারিয়ে ফেলি, কোন জটিল বিষয়ে কিংবা কোন একটি বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার মতো মানসিক যোগ্যতা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা কমে আসে ।

এই যে গভীর চিন্তা ও বিশ্লেষণ করা, যুক্তি তথ্য উপাত্তকে যাচাই করে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহনের সক্ষমতা, এটা নির্ভর করে ব্রেনের ফ্রন্টাল লাবের উপরে।

লেখক: জিয়াউল হক
রিসার্চ ডাইরেক্টর
একাডেমি টুয়েন্টি ওয়ান

 

‘মা’ ভুমিকার সঠিক কদর আমরা করতে পারব না

‘মা’ ভুমিকার সঠিক কদর আমরা করতে পারব না


মুদাব্বির হোসেন


আজ বিশ্ব মা দিবস। সারা পৃথিবীর কোটি কোটি সন্তানেরা তাদের মা কে খুশী করতে আজ আনন্দ-উচ্ছাস নিয়ে, উত্তেজনা নিয়ে কত কিছুই না করবে। কেউ কার্ড বানাবে, কেউ খাবার রান্না করবে, কেউ উপহার কিনবে, কেউ আবার মা কে জড়িয়ে ধরে বলবে ভালবাসি, কেউ হয়তো সামাজিক চাপে পরে মা দিবস পালন করবে। আবার যাদের মা নেই তারা গোপনে কেঁদে মা কে স্মরণ করবে। আমার মতে এই একটি দিবস উদযাপন নিয়ে পৃথিবীতে কারও আপত্তি থাকার কথা না। হয়তো আপনাদের কেউ কেউ বলবেন সবদিনই তো ভাই মা দিবস, এই একটা দিন নিয়ে এত বাড়াবাড়ি কেন? সবাই তো ভাই আপনার মতো বুঝদার না, এই পৃথিবীতে এখনো অনেক মানুষ আছে যাদের মুখে তুলে খাইয়ে দিতে হয়, তেমনি কিছু মানুষকে আঙ্গুল দিয়ে দেখাতে হয় যে গত এক বছরে কিন্তু একবারও মা এর খবর নেয়া হয়নি। এই দিবস নিয়ে কোন ওয়াজে কাউকে ফতোয়া দিতে দেখবেন না, কোন ডক্টর ইন সোশ্যাল নেটওয়ার্ককে নাক সিটকাতে দেখবেন না অথবা হাল আমলের কোন উঠতি সেলেব্রিটিকে আগের দিনের ফ্যাশন বলে অবহেলা করতে দেখবেন না। এই যে আমরা সবাই মা কে আজ খুশী করতে এত কিছু করবো, আমাদের কারও পক্ষেই আন্দাজ করা সম্ভব না যে ঠিক কতটুকু নিষ্ঠা নিয়ে তারা আমাদের বড় করেছেন অথবা আমাদের মানুষ করতে কত বিসর্জন আমাদের ‘মা’ রা দিয়েছেন।
আমার নিজের মায়ের কথা বলি।আমার বুঝ হবার পরে প্রথম হাসি, প্রথম কান্না, প্রথম রাগ, প্রথম অভিমান, সব আম্মার সাথে। প্রথম ফেল করে মাইর খাওয়াও আম্মার হাতে। কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করতো তুমি কাকে বেশী ভালোবাসো, মা কে নাকি বাবা কে? আমি বলতাম সমান সমান, খুবই ডিপলোম্যাটিক উত্তর, কিন্তু চোখ আর চাহনি ঠিকই বলে দিত কাকে বেশী ভালবাসি। আমার ছোটবেলাতে মা দিবস থাকলে হয়ত আমিও অনেকভাবে উদযাপন করতাম কিন্তু আম্মার আত্মত্যাগের সিকিভাগও হয়তো অ্যাপ্রেসিয়েট করা হতো না। আমার আম্মা ছিলেন সরকারি স্কুলের শিক্ষিকা। ছোট বেলায় আমি আম্মাকে যমের মতো ভয় পেতাম,যেমন ভালবাসতেন তেমনি কড়া শাসনে মানুষ করেছেন। সবসময় বলতেন তোদের জন্য আমি কোনদিন প্রমোশন নেই নাই , নিলে তোরা কেউ মানুষ হবি না। আমরাও ভাবতাম আসলেই তো কেন প্রমোশন নিয়ে ঢাকার বাইরে যাবে, আমাদের জন্য স্যাক্রিফাইস তো মা ই করবে, আর কে করবে? আমি জানি না বাংলাদেশে কিভাবে রত্নগর্ভা উপাধি নির্ধারিত হয়, কিন্তু আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারি যে আমার আম্মা একজন রত্নগর্ভা। দুজন এম বি বি এস (একজন এম আর সি পি, ইউকে এবং আরেকজন এম পি এইচ, অস্ট্রেলিয়া), একজন এম বি এ (ঢাকা), একজন পি এইচ ডি (আমেরিকা) সন্তান মানুষ করেছেন, তার মধ্যে দুই বার ব্রেইন টিউমার অপারেশন হয়েছে, কিন্তু পরিবারের জন্য বার বার জীবনযুদ্ধে আরও শক্তি নিয়ে ফিরে এসেছেন।
আমার মেয়েকেও যদি আপনি জিজ্ঞেস করেন যে কাকে বেশী ভালোবাসো, সে একটা হাসি দিয়ে বলবে Both, কিন্তু প্রশ্নকর্তা তার চোখ ও চাহনি দেখে ঠিকই বুঝে যাবে কাকে সে বেশী ভালবাসে। আমার মেয়েও কালকে কার্ড বানাবে মা এর জন্য, হয়তো কোন সারপ্রাইজও দিবে, কিন্তু সেও তার মায়ের সব কষ্ট ও বিসর্জন পুরোপুরি কোনদিনই উপলব্ধি করতে পারবে না।আমাদের পরিবারের জন্য আমার বাচ্চাদের মা এর এই আত্মত্যাগ দেখে আমি আজ কিছুটা হলেও আমার মা এর আত্মত্যাগ উপলব্ধি করতে পারি। আমার কাছে মনে হয় বিশ্ব মা দিবস শুধু সকল সন্তানদের উদযাপনের জন্য নয়। এটা আসলে বাবাদেরও উপলব্ধির দিবস এবং তাদের বাচ্চার মা কে কদর করার দিবস। এখন জিজ্ঞেস করতে পারেন আমার নিজের এই উপলব্ধি লকডাউনের কারনে কিনা? একটা কথা বলতে পারি যে করোনা পরবর্তী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেলে কোনদিন এই কথাটা বলব না যে “আমিও কিন্তু অনেক কাজ করি”। আমার বাচ্চাদের মা প্রতিদিন যেই কাজ করে আমি তার শতকরা আড়াই ভাগও করি কিনা সন্দেহ। তাই বলে ভাববেন না আমি বাসার কোন কাজই করি না, এই যে আপনি যে নাক সিটকাচ্ছেন আমি হলফ করে বলতে পারি আপনিও আপনার বাচ্চার মায়ের কাজের শতকরা ১২/১৩ ভাগের বেশী কাজ করেন না। আমি আজ পৃথিবীর সব বাবাকে বলব, লজ্জা লাগলেও, ইচ্ছে না করলেও, আদিখ্যেতা মনে হলেও, আনস্মার্ট-আনকুথ মনে হলেও একটি বারের জন্য আপনার বাচ্চার মা কে এই মা দিবসে ধন্যবাদ বলুন। ধন্যবাদ বলুন শুধু আজকের দিনের জন্য নয়, বিগত দিনের জন্য এবং অনাগত একটি বছরের জন্য। আমরা যদি সারা পৃথিবীর সকল এসেনশিয়াল ওয়ার্কারদের কে ফেসবুকে গলা ফাটিয়ে প্রশংসা করতে পারি তবে কেন আমাদের পরিবারের মোস্ট এসেনশিয়াল ওয়ার্কারকে একটু ধন্যবাদ জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারব না।
আমার মা কে, আমার বাচ্চাদের মা কে এবং পৃথিবীর সকল মা কে “মা দিবস” এর শুভেচ্ছা। পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিনতম কাজটি আপনারা বছরের পর বছর ধরে হাসিমুখে আনন্দের সাথে করে যাচ্ছেন। ৩৬৫ দিন একটানা ধন্যবাদ দিয়ে অথবা উপহার দিয়েও আপনাদের এই মা ভুমিকার সঠিক কদর আমরা করতে পারব না। আপনারা সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং ক্লান্তিহীন ভাবে কঠিনতম কাজটি করে জান হাসিমুখে।

 

করোনাভাইরাস থেকে শিশুদের ঝুঁকি কমাতে কি করতে হবে?

করোনাভাইরাস থেকে শিশুদের ঝুঁকি কমাতে কি করতে হবে?


স্বাস্থ্যকথা


করোনাভাইরাস শিশুরাও সাধারণ সবার মতন ঝুঁকির মধ্যে আছে। করোনাভাইরাস থেকে তাই শিশুদের ঝুঁকি কমাতে আমাদের সবাইকে অনেক কিছু করতে হবে।

করোনাভাইরাসের লক্ষণগুলো কী?

করোনভাইরাসের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে জ্বর, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট। আরও মারাত্মক ক্ষেত্রে, এই সংক্রমণের ফলে নিউমোনিয়া বা শ্বাস-প্রশ্বাসের অসুবিধা হতে পারে। তবে, খুব কম ক্ষেত্রেই এই রোগ প্রাণঘাতী হয়।

এসব লক্ষণগুলো ফ্লু (ইনফ্লুয়েঞ্জা) বা সাধারণ ঠান্ডা-জ্বর, যা কোভিড-১৯ এর চেয়ে অনেক বেশি সাধারণ। এ কারণেই কোনও ব্যক্তি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখে নেয়া দরকার।

শিশুদের জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলো

শিশুদের জন্যও মূল প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলো একই রকম।
এর মধ্যে রয়েছে,
১. বার বার হাত ধোয়া এবং
২. শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। যেমন, কাশি বা হাঁচি দেওয়ার সময় কনুই দিয়ে ঢেকে নেয়া বা টিস্যু ব্যবহার করা, তারপর টিস্যুটি নিকটবর্তী বন্ধ ময়লার বাক্সে ফেলে দেয়া। এছাড়াও,

৩. জ্বরের জন্য একটি টিকা রয়েছে। তাই, নিজেকে এবং নিজের সন্তানকে সময়মতো ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা মনে রাখবেন।

সংক্রমণের ঝুঁকি আমি কীভাবে এড়াতে পারি?

সংক্রমণ এড়াতে আপনি এবং আপনার পরিবার নিচের চার ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করতে পারেন:

১. সব সময় বাচ্চাদেরকে বিভিন্ন ধরনের ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটি করাতে উৎসাহিত করা।
২. সারাক্ষণ ঘরের মধ্যে বন্দি থাকার কারণে বাচ্চাদের মধ্যে নানান ধরনের টেনশন হচ্ছে কিনা তা খেয়াল করা এবং বাচ্চাদের মধ্যেও মন খারাপ ভাব দেখা যায়। তা নিয়ে কাজ করা।

৩. বারবার নেগেটিভ খবর গুলো দেখা থেকে বড়দেরকেও দূরে থাকতে হবে যাতে তাদের দুশ্চিন্তা কম হয়।

৪. বাচ্চাদেরকে এটা বুঝাতে হবে যে বর্তমানে ঘর থেকে বের না হয় তাদের জন্য সবচাইতে বেশি নিরাপদ ঘরে থাকা।

বাচ্চাদেরকে বিভিন্ন ছোটখাটো সমস্যা দেখা যায় যদি কোন বাচ্চা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে অন্য ধরনের কোনো অসুস্থতা সে ক্ষেত্রে পরিচিত জায়গায় যে ডাক্তারের কাছে ফোনে যোগাযোগ করা যায় সেখান থেকে সাহায্য নেওয়া।

 

মন খারাপের দিনে

মন খারাপের দিনে


আলিজা বিনতে কাদের


জীবনের চড়াই-উৎরাই পার হয়ে শত শত মন খারাপের দিনের সম্মুখীন হয়েছি। কেঁদেছি-থেমেছি-আবার হেসেছি। এভাবেই দিনগুলো হাওয়ায় মিলিয়ে যায়, আর ফিরে আসে না। সেই মানুষগুলোও আর ফেরে না।
.
যাদের পেছনে সময়ের সিংহভাগ ব্যয় করি, তারাও না বুঝে সরে যায়। তাদের পিছু ফিরে দেখার সময় কোথায়। কতটুকু অপ্রাপ্তি তার হিসেব নিতে নিতে, প্রাপ্তির খাতার দিকে দৃষ্টি গিয়ে আটকায় না। ব্যয়ের হিসেব দেখে দেখে দৃষ্টি নেতিবাচক হয়ে যায়। আয়টুকুর হিসেব আর করা হয়ে ওঠে না।
.
এভাবে ব্যয় আর অপ্রাপ্তির রেশ নিয়ে কেটে যায় বহু মন খারাপের দিন। হাসি মুখে অভিনয় করতে করতে পারিপার্শ্বিক মানুষের মাঝে হৃদয়ভাঙা মানুষগুলো মিশে যায়। মন খারাপের বুঝি কোন রং নেই, যা দেখে তাদের চেনা যায়। হৃদয় ভাঙার শব্দ তো কেউ শোনে না, ক্ষত বিক্ষত হৃদয়ে কেউ আশার প্রলেপ লাগায় না।
.
থমকে যায় সময়, একে একে বিয়োজন করতে করতে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। সেই নিঃস্ব সময়ের গতিপথ বদলে দিতে একজন কাছে আসেন, যিনি আমার কাছে কিছুই প্রত্যাশা করেন না। কিন্তু আমি তার মুখাপেক্ষী হয়ে যাই। যাকে ছাড়া জীবন চলে না। জীবন যেখানে থেমে যায়, সেখানেই প্রেরণার বানী শুনিয়ে আশার আলো প্রজ্বলিত করে দেন।
.
বাক-হীন হয়ে ভেঙে যাওয়া হৃদয়ের টুকরো গুলো হাতে তুলে নিয়ে অপলক দৃষ্টে চেয়ে থাকি। মুক্তোদানার মতো টপ টপ করে অশ্রু ঝরে পড়ে ভগ্নহৃদয় এর উপর। ক্ষতগুলো মিলিয়ে যেতে থাকে আস্তে আস্তে একটা সময় ব্যথাগুলো আর অনুভূত হয় না।
.
এক অকল্পনীয় শীতলতায় হৃদয় পূর্ণ হয়, অশ্রুসজল চোখে প্রশান্তির পরশে যতদূর দৃষ্টি যায় ততখানিই ভরসায় ছেয়ে যায়। কৃতজ্ঞতায় মুখ ফুটে বের হয় আলহামদুলিল্লাহ।
.
যে হৃদয় মানুষ ভেঙে দিয়ে চলে যায়, সেই হৃদয় রবের করুনার স্পর্শে খাঁটি সোনায় পরিনত হয়।
তা আর মানুষের ভেঙে দেওয়ার অপেক্ষার প্রহর গুনে না। মানুষের চলে যাওয়ার শূন্যতা নিয়ে আত্মগ্লানিতে ভোগে না। রবের মুখাপেক্ষী হৃদয়, ভেঙে দেওয়ার ক্ষমতা তখন আর মানুষের হাতে থাকে না। মুখে লেপ্টে থাকা হাসি মুছে দেওয়ার জন্য তখন আর মানুষের দেওয়া কষ্ট যথেষ্ট হয় না।
.
ভালো থাকা তখন আর ক্ষনিকের জন্যে হয় না। বিপদের চূড়ান্ত সীমানায় থেকেও ভালো থাকা শিখিয়ে দেন পরম করুনাময়। হৃদয়ে মন খারাপের দিনগুলো কেবল স্মৃতি হয়েই থেকে যায়। তা আর মন খারাপের কারণ হতে পারে না।
.
যেই মনের দ্বায়িত্ব স্বয়ং রবকে দিয়ে দেওয়া হয় সেই মন কিভাবে মানুষের দেওয়া কষ্ট বয়ে নিয়ে খারাপ থাকতে পারে!
.
—কেউ কি নেই?
যে তার আহত হৃদয়ে স্বস্তির প্রলেপ লাগিয়ে নিবে। অশ্রুগুলোকে তিক্ততার বিনিময়ে কৃতজ্ঞতা দিয়ে বদলে নিতে কেউ কি আসবে না?
— অবহেলার সময়গুলোকে সুখের বিনিময়ে কেউ কি বিক্রয় করতে আসবে না?
.
এটা একটি উন্মুক্ত আহবান,
কেউ কি মন খারাপের দিনগুলোর বিনিময়ে সন্তুষ্টি ও কৃতজ্ঞতায় পরিপূর্ণ দিনগুলোকে আপন করে নিতে চাইবে না?
.
— আলিজা বিনতে কাদের

 

অসাধারণ সব গুনে ভরপুর কালোজিরা ভর্তা করেছি

অসাধারণ সব গুনে ভরপুর কালোজিরা ভর্তা করেছি


ঘরকন্যা


কালোজিরার গুরুত্ব সম্পর্কে কম বেশী আমরা সবাই জানি। কালোজিরাতে আছে ফসফেট, লৌহ ও ফসফরাস। এছাড়াও রয়েছে ক্যানসার প্রতিরোধক কেরটিন, বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান এবং অম্ল রোগের প্রতিষেধক। ইসলাম ধর্মমতে কালিজিরা সকল রোগের জন্য উপকারী। এর কারণ, একটি বিশুদ্ধ হাদীসে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) উল্লেখ করেছেন যে, কালিজিরা মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের উপশমক। যার অর্থ, একমাত্র মৃত্যু ছাড়া অন্য সকল রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কালিজিরায় বিদ্যমান। তো এই কালোজিরা দিয়েই তৈরী করে দেখাচ্ছি একটা সুন্দর ভর্তা।

তৈরী করতে যা যা লাগছে…
▶ ০.৫ কাপ কালোজিরা
▶ কাঁচা মরিচ ৩/৪ টি
▶ শুকনো মরিচ ৩/৪ টি
▶ পেঁয়াজ কুচি ০.৫ কাপ
▶ ১ টা বড় রসুনের কোয়া
▶ সরিষার তেল ১ টেবিল চামুচ
▶ লবণ ০.৫ চা চামুচ

ভর্তাটি করে ফ্রিজে সপ্তাহ খানেক রেখে দিতে পারবেন, যেহেতু সব কিছু ভেজে ব্যবহার করা হয়েছে, তাই ভর্তাটা সহজে নষ্ট হবে না।

সুত্রঃ রুমানার রান্নাঘর

 

সাহাবীদের জীবন কথা…”আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.”

সাহাবীদের জীবন কথা…”আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.”


সাজেদা হোমায়রা


একদিন এক ছোট্ট সাহাবী রাসূল সা. কে অজুর পানি এগিয়ে দিলে রাসূল সা. খুব খুশী হন আর সেই সাহাবীর জন্য দুয়া করেন এই বলে…
“হে আল্লাহ! তুমি তাকে দ্বীনের উপর বিশেষজ্ঞ বানিয়ে দাও এবং তাকে কুরআনের রহস্য বোঝার যোগ্যতা দান করো।”
মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবীর এ দুয়া কবুল করেন এবং সেই সাহাবীকে অনেক অনেক জ্ঞান দান করেন।

অসাধারণ মেধাবী এবং আলোকিত জ্ঞানী এ সাহাবীর নাম আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.। অগাধ জ্ঞান ও পান্ডিত্যের জন্য তিনি ‘বাহরুল ইলম’ (পূণ্যবান জ্ঞানী) উপাধি লাভ করেন। কুরআনের ব্যখ্যায় তিনি ছিলেন ভীষণ পারদর্শী।। কুরআনের রহস্য উপলব্ধির ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন অনন্য। অসম্ভব প্রখর স্মৃতিশক্তি ছিলো তাঁর।

আব্দুল্লাহর রা. জন্ম রাসূল সা. এর মদীনায় হিজরতের তিন বছর পূর্বে। আবদুল্লাহ ছিলেন রাসূল সা. এর চাচাতো ভাই। আর আব্দুল্লাহর মা উম্মুল ফাদল ছিলেন মহিলাদের মধ্যে ২য় ইসলাম গ্রহণকারী। তাঁর জন্মের পর তাঁর মা তাঁকে রাসূল সা. এর কাছে নিয়ে আসেন এবং রাসূল সা. খেজুর চিবিয়ে তার মুখে দিয়ে দেন। জন্মের পর থেকেই তিনি ইসলামিক এনভায়রনমেন্টে বড় হতে থাকেন। তাঁর বাবা মক্কা বিজয়ের কিছুদিন পূর্বে ৮ম হিজরিতে ইসলাম গ্রহণ করেন। আর তখনই তারা সপরিবারে মদীনায় হিজরত করেন। আবদুল্লাহর বয়স তখন এগারো।

আব্দুল্লাহ রাসূল সা. কে ছায়ার মতো অনুসরণ করতেন। রাসূল সা. এর মৃত্যুর সময় আব্দুল্লাহর বয়স ছিলো মাত্র ১৩ বছর। খুব অল্প সময় তিনি রাসূলকে কাছে পেয়েছিলেন। এটুকু সময়ের ভেতরও তিনি জ্ঞানের গভীরতায় পৌঁছতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই বয়সেই তিনি রাসূলুল্লাহর ১,৬৬০ টি হাদীস স্মৃতিতে সংরক্ষণ করেছেন। যা মুসলিম জাতির কল্যাণ সাধনে রাখছে বিরাট ভূমিকা। কী অসম্ভব ট্যালেন্টেড ছিলেন তিনি!

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. রাসূলুল্লাহ সা. এর সাথে সময় কাটাতে খুব পছন্দ করতেন। সুযোগ পেলেই রাসূলের সেবা করতেন। রাসূল সা. এর একটু সঙ্গ পাওয়ায় জন্য সবসময় অস্থির হয়ে থাকতেন। রাসুলুল্লাহ সা. এর স্ত্রী উম্মুল মু’মিনীন মাইমুনা রা. ছিলেন আবদুল্লাহর খালা। প্রায়ই তিনি তাঁর খালার বাসায় থাকতেন। এ কারণে খুব কাছ থেকে তিনি রাসূলের সাহচর্য লাভ করেছেন। কখনো তাঁর সাথে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেছেন… কখনো বা অজুর পানি এগিয়ে দিয়েছেন।

রাসূল সা. এর ইন্তেকালের পর আবদুল্লাহ সাহাবাদের থেকে জ্ঞান লাভের জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকতেন। তিনি বলেছেন, “কখনো আমি একটি বিষয় সম্পর্কে জানতে ৩০ জন সাহাবাকে প্রশ্ন করেছি।” কী প্রচণ্ড আকাঙ্ক্ষা ছিলো তাঁর জ্ঞান লাভ করার!

জ্ঞান আহরণের ক্ষেত্রে ইবনে আব্বাস ছিলেন খুব বিনয়ী। জ্ঞানীদের তিনি অসম্ভব সম্মান করতেন। জ্ঞান আহরণের ক্ষেত্রে তিনি যে কতো বিনয়ী ও কষ্ট সহিষ্ঞু ছিলেন তা তাঁর একটি বর্ণনা থেকেই অনুমান করা যায়।
ইবনে আব্বাস বলেন, “আমি যখনই জানতে পেরেছি রাসূল সা. এর কোনো সাহাবীর কাছে তাঁর একটি হাদীস সংরক্ষিত আছে, আমি তাঁর ঘরের দরজার কাছে গিয়েছি। যখন দেখেছি এখন দুপুরের রেস্ট করার সময় তখন দরজার বাইরে অপেক্ষা করেছি। বাতাসে ধূলাবালি উড়ে আমার জামা আর শরীর একাকার হয়ে গেছে। তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে আমার এ দূরবস্হা দেখে বলেছেন, ‘আবদুল্লাহ! রাসূলুল্লাহর চাচাতো ভাই! আপনি কি উদ্দেশ্যে এসেছেন? আমাকে খবর দেননি কেন, আমি নিজেই গিয়ে দেখা করে আসতাম।’ আমি বলেছি, আপনার কাছে আমারই আসা উচিত। কারণ জ্ঞান এসে গ্রহণ করার জিনিস, গিয়ে দেয়ার জিনিস নয়। তারপর আমি তাঁকে হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছি।”

জ্ঞান অন্বেষণে ইবনে আব্বাসের আগ্রহ, একাগ্রতা ও কর্মপদ্বতি দেখে সে যুগের বড় বড় জ্ঞানী ও মনীষীরাও চরম বিষ্ময় বোধ করেছেন।

আবদুল্লাহ রা. এর কথা শুনে মানুষ বিমোহিত হতো। কেউ তাঁর কাছে কোনো কথা বলতে আসলে তিনি তা আগ্রহ ভরে শুনতেন। তাঁর বাসাটি ছিলো একটি ইউনিভার্সিটি। সেখানে তিনিই ছিলেন একমাত্র টিচার। সপ্তাহে এক এক দিন এক এক বিষয়ে লেকচার দিতেন। ফিকহ, হালাল-হারাম, ফারায়েজ, কবিতা, সাহিত্য, প্রাচীন আরবের ইতিহাস এসব বিষয় থাকতো তাঁর আলোচনায়। তাঁর আলোচনা শুনে সবাই পরিতৃপ্ত হয়ে ফিরতেন।

আবদুল্লাহ রা. এর অপরিসীম জ্ঞান ও চিন্তা শক্তির কারণে অল্প বয়সী হওয়া সত্ত্বেও উমর রা. ও উসমান রা. এর শাসনামলে মজলিশে শূরার (পরামর্শ সভা) সদস্য ছিলেন তিনি।

দ্বীনি জ্ঞানে গভীর পাণ্ডিত্যর জন্য উমর রা. জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে পরামর্শ করতেন। উমর রা. আবদুল্লাহ রা. কে দেখলেই বলতেন, “ঐ যে বিচক্ষণ ও বিবেকবান যুবক আসছে!”

তাঁর চরিত্রে ছিলো তাকওয়ার প্রতিচ্ছবি। তিনি ছিলেন দিনে রোজাদার এবং রাতে ইবাদতকারী। রাতের একটি অংশ তিনি নামাজে দাঁড়িয়ে কাটাতেন এবং তাওবা ইসতিগফার করতেন। আল্লাহর ভয়ে তিনি এতো বেশি কাঁদতেন যে চোখের পানি তাঁর দু’গালে দুটি রেখার সৃষ্টি করেছিলো।

প্রিয় নবীর দুয়া ও জ্ঞান অর্জনের জন্য আবদুল্লাহ রা.এর অক্লান্ত চেষ্টা তাঁকে জ্ঞানের গভীরতায় পৌঁছতে সাহায্য করেছে। তাঁর জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয়েছে চারদিক… তাঁর বর্ণনা করা হাদীসগুলো আজো মানুষের হেদায়েতের আলোকবর্তিকা!

৭১ বছর বয়সে তায়েফ নগরে ইন্তেকাল করেন তিনি। তায়েফে ‘মসজিদ ইবনে আব্বাস’ নামক মসজিদটি আজো তাঁর স্মৃতি বহন করে চলেছে। এ মসজিদেরই পেছনের দিকে রয়েছে এ মহান সাহাবীর কবর।

 

হালিম

হালিম


ঘরকন্যা


যা লাগবে-

মুগ ,মাসকলাই ডাল,মসুর ডাল আর পোলাও চাল মিলে আধা কেজির মত নিন। এক কাপ পরিমান গম নিন। এসব কিছু গুঁড়ো করে নিন ব্লেন্ডারে বা পাটায়। সময় অনেক কম লাগবে।

বাকি যা লাগবে-

মুরগি একটা ১ থেকে দেড় কেজি ছোট পিস করে কাটা
পেঁয়াজ ৪ টি কুচি করে বেরেস্তা করা
পেঁয়াজ বাটা ২ টেবিল চামচ
আদা বাটা ২ টেবিল চামচ
রসুন বাটা ২ টেবিল চামচ
হলুদ মরিচ গুঁড়ো মিলে ২ চা চামচ
গরম মশলা পাউডার ১ টেবিল চামচ
জিরা গুঁড়ো ২ চা চামুচ
ধনিয়া গুঁড়ো ২ চা চামচ
ধনিয়া পাতা কুচি
আদা কুচি
তেল হাফ কাপ
লবণ স্বাদমত

প্রণালী

হাঁড়িতে তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি ভাজুন। হালকা বাদামি হয়ে আসলে গুঁড়া মসলা দিয়ে নাড়ুন। লবণ দিয়ে দিন। মাংস ছোট টুকরা করে দিয়ে দিন। হালিমের মসলা দিয়ে ভালো করে নেড়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন হাঁড়ি। ১০ মিনিট পর মাংস থেকে পানি বের হয়ে গেলে আবারও নেড়ে দিন। ২ কাপ পানি দিয়ে মাঝারি আঁচে সেদ্ধ করুন মাংস। এরমধ্যে চাল, গম ও ডাল ধুয়ে সামান্য পানি দিয়ে পেস্ট করে নিন একসঙ্গে। একদম মিহি করার প্রয়োজন নেই। মাংস খানিকটা সেদ্ধ হলে চাল-ডালের মিশ্রণ দিয়ে নেড়েচেড়ে ৫ কাপ পানি দিয়ে দিন। ঘনঘন নাড়তে হবে। একটু পাতলা থাকা অবস্থায় নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে পানির সঙ্গে গুলিয়ে তেঁতুলের মাড় দিয়ে দিন। সাজানোর উপকরণ কুচি করে উপরে ছিটিয়ে পরিবেশন করুন গরম গরম।

 

অসহ্য রকম সুন্দর একটি জীবন

অসহ্য রকম সুন্দর একটি জীবন


ফারহানা আমাতুল্লাহ শৌখিন


و خلقنكم ازوخا
And we created you in pairs.
জান্নাত; যেখানে নেই কোনো কষ্ট, নেই পীড়াদায়ক কোনো অনুভূতি। ইচ্ছের লাগামের বাঁধ থাকতে পারে কিন্তু দেওয়ার ভান্ডারের কোনো শেষ নেই। কোনো কিছুর শূন্যতা যেখানে নেই। তারপরেও কেন আদম(আঃ) সেখানে থেকেও শূন্যতা অনুভব করলেন? কেন একজন সঙ্গীর অভাব অনুভব করলেন?

//অসহ্য রকম সুন্দর একটি জীবন
চারদিকে ছড়ানো চিত্তানন্দের অজস্র উপকরণ
তবুও কেন জীবন ছেড়ে পালাতে চায় মন
কেন আঁতিপাঁতি করে খোঁজে অন্য কোনো ভুবন?//

আর আল্লাহতা’আলা কেনই বা বাবা-মা, ভাইবোন, পরিবারের অন্য কোনো সদস্য রেখে, একজন স্ত্রী হাওয়া(আঃ) কেই জুড়ে দিলেন তার সাথে?
বললেন, হে আদম! তুমি এবং তোমার স্ত্রী জান্নাতে অবস্থান করো এবং সেখান থেকে যা চাও খুশিমনে খাও। (বাক্বারহঃ৩৫)
আল্লাহতা’আলার প্রজ্ঞা সবকিছুর উর্ধ্বে।
প্রথম পরিবার গড়ে উঠেছিল প্রথম মানব মানবীর মাধ্যমে। একটা পরিবার বহু হৃদয়ের সমষ্টি। যেখানে আছে জীবনের প্রবাহ, আছে মায়া-মমতা, স্নেহ-ভালোবাসা, মিলেমিশে থাকার প্রবল বাসনা, আছে নিরাপত্তা, সহনশীলতা এবং পরস্পরকে গ্রহণ করার মানসিকতা।
সম্পর্কের বন্ধনগুলোর ক্ষেত্রে আমরা খুব বেশি আটপৌরে। কারও সাথে কথা বলার সময়, ভাব বিনিময়ের সময় মনোযোগ দেই না ঠিকমতো। সতর্কতা থাকেনা আমাদের। কাছের মানুষ বলেই বুঝি যথাযথ মূল্যায়ন না করলেও চলে? অথচ এই কাছের মানুষগুলোর জন্যই তো জীবন আমাদের কাছে রঙধনু হয়ে ধরা দেয়। সুহাসিনী ভোর হয়ে হাজির হয়। ঘোর অমানিশার দিনে একমুঠো রোদ নিয়ে হাজির হয়। কুয়াশার ঘনকালো মেঘের বুকে উন্মুক্ত করে আলোকিত বাতায়ন। রাহবার হয়ে দেখিয়ে দেয় সুখের কিনারা। আর তাদের ক্ষেত্রে আমরা কতটা সতর্ক থাকি প্রশ্ন করে দেখেছি কি নিজেকে?

পারিবারিক উপাখ্যান নিয়ে লেখিকা আফরোজা হাসানের ছয় কলামের একটি পেসক্রিপশন হাতে পেলাম। অবশ্য লেখিকা হিসেবে অপরিচিত কেউ নন। যদি জিজ্ঞেস করেন, আপনার পছন্দের লেখিকা কে? চোখ বন্ধ করে বলব, আফরোজা আপু। শব্দশৈলীর গঠন। কথার প্রজাপতি কিভাবে এক ডাল থেকে অপর ডালে অবগাহন করে নিয়ে চলে, তার পূর্ণ প্রশান্ত আবেশ লেখিকার লিখাতে খুঁজে পাই। শুধুমাত্র একটা বই পড়েই তার প্রতি বুঁদ হয়ে গেলাম ব্যাপারটা এমন নয়। সতেরো সাল থেকেই অপেক্ষার প্রহর গুনতাম কখন আনন্দবাড়ির আনন্দকথনের পরের পর্ব এসে হাজির হবে। গল্পে গল্পে খুঁজি জীবনের প্রতিচ্ছবিতে কতবার যে উঁকি দেওয়া হতো। এভাবে তার সব পান্ডুলিপিতে সাঁতরে বেড়িয়েছি। যদিও জীবনের পাণ্ডুলিপিগুলো গল্পের মতো সহজ নয়। এ পান্ডুলিপিতে থাকে কয়েক মনের বসবাস। যাদের চিন্তাচেতনা অনেক সময়ই অন্যের সাথে মিলেনা। থাকে বৈরিতা আবার কখনো থাকে আনন্দের মিশেল।

#গল্পের_ঝুড়ি_থেকে
//একটা মেয়ে যখন বউ হয়ে পরিবারে প্রবেশ করে। তখন পরিবারের সদস্যরা ভাবে বড় হয়েছে বলেই বিয়ে হয়েছে। আর বিয়ে হয়েছে মানেই তুমি এখন বিশাল সব দায়িত্বে বোঝা মাথায় নিতে প্রস্তুত। অথচ, একটা মেয়ে হিসেবে সে বড় হয়েছে; কিন্তু একজন বধূ হিসেবে মাত্রই তার জন্ম হয়েছে।// সুখের নাটাই
মানুষের সমস্যা হচ্ছে বাইরের মানুষকে বুঝিয়ে বললেও কাছের মানুষকে বুঝিয়ে বলতে চায় না। বুঝিয়ে বলার চাইতে হুকুম করতে বেশি পছন্দ করে। এভাবে বলার চাইতে করতে হবে বলে অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। অথচ কাছের মানুষকে একটু সময় দিলে। আন্তরিকতার সাথে বুঝালে তারা নিজেদের অভিভাবকহীন মনে করে না।
//অভিমানী মনের আত্মদহন গল্পে, নাফিসা সদ্য বিবাহিত নতুন বধূ মুনিরাকে জীবনের উপাখ্যান বুঝিয়ে দিচ্ছে সাবলীলভাবে, জানো মুনিরা এমন কতবার হয়েছে, বাবা কোথায়ও বেড়াতে নিয়ে যাবার কথা বলে নিয়ে যাননি। ভাইয়ারা পছন্দের মূল্য না দিয়ে জোর করে অপছন্দনীয় কিছু চাপিয়ে দিয়েছে। বোনেরা নষ্ট করে ফেলেছে খুব প্রিয় কিছু। মা অকারণে বকাঝকা করেছেন। সেসব কি মেনে নিইনি আমি? ভুলে যাইনি কি? অন্যায় আচরণের জন্য ছেড়ে চলে গিয়েছি কি? না। এর কারণ কি বাবা-মা-ভাই-বোনকে ডিভোর্স দেওয়া যায় না, এটা? নাকি অকৃত্রিম ভালোবাসা? তাহলে স্বামী/স্ত্রীর ভুল কথা বা ভুল কাজ মেনে নিতে সমস্যা কোথায়? যেখানে সেই মানুষটাকে জড়িয়েই আমার জীবনের সবকিছু। //
সম্পর্কগুলো অনেক স্পর্শকাতর। আর তারমধ্য সবচেয়ে বেশি স্পর্শকাতর স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। একবার বিচ্ছেদ হলে আর দেখা নেই। দেখার জন্য, কাছে পাবার জন্য হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়ে যাবে অথচ বৈধতার দেয়াল আটকে যাবে। এই সম্পর্কের ক্ষেত্রে সম্যক সচেতন থাকা তাই খুব বেশি জরুরী। সংসারে সুখী হতে চাইলে নিজ নিজ প্রাপ্তির হিসেব করা ছাড়তে হবে৷ ভালোবাসা মানে আমি তোমাকে কী দিলাম এবং বদলে কী পেলাম তার যাচাই করা নয়৷ বরং একে অন্যের ঘাটতিগুলো পূরণ করতে করতে দুজন মিলে একই গন্তব্য পানে ছুটে চলা।

//”অন্তরালের ছায়া” গল্পে ইলমা আর নুরির কথায় কথায় উঠে এসেছে জীবনের কিছু সহজ চিন্তাধারা।
“এত ভালোবাসাবাসি, এত টান, এত আকর্ষণ থাকার পরও সম্পর্কগুলো ভেঙে যায় কেন? জীবন দিয়ে দেবার দাবিদারেরা একে অন্যের জন্য নিজেদের ছোট্ট ছোট ইচ্ছা-অনিচ্ছা, পছন্দ-অপছন্দের ত্যাগ স্বীকার করতে পারে না কেন? কোনো ব্যক্তিই যেখানে ভুলের উর্ধ্বে নয়, সেখানে ক্ষমা করে দিতে পারে না কেন একে অন্যের ভুলগুলো? কেন সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেয়ে ভেঙে ফেলাকেই পছন্দ করতে শুরু করেছে মানুষ? কেন ঘৃণার আঁধারে ঢেকে যায় ভালোবাসার সূর্য?
সম্পর্ক যত মধুরই হোক না কেন কিংবা একজন মানুষ যতই ভালো হোক না কেন, তার ভেতরে নেতিবাচক কিছু থাকতেই পারে! এই ভাবনাটা এবং এটা মেনে নেওয়ার উদারতাই ‘ভালোবাসার’ ক্ষেত্রে সবচেয়ে শক্তিশালী ভিত৷”
“কিছু কিছু মূহুর্ত ভীষণ রকম অসহায়ত্ব নিয়ে হাজির হয় আমাদের কাছে! পছন্দের মানুষরা খুব কাছে থাকার পরও অদ্ভূত এক একাকিত্ব ঘিরে ধরে মনকে৷ অকারণেই বারবার ভিজে ওঠে চোখ৷ চোখ বুজলেই দেখা যায় বুকের ভেতরে ভেসে বেড়াচ্ছে শূন্যতা৷ আকাশের বুকে ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ উড়ে বেড়ানোর মতো৷ এই অনুভূতিগুলোর কাছে নিজেকে খুব অসহায় লাগে৷ তখন মন প্রশান্তি খুঁজে পায় একমাত্র রবের স্মরণে৷”
“ভালো লাগার জন্য মানুষ অন্যকে কষ্ট দিতে পারে, কিন্তু ভালোবাসার জন্য নিজে কষ্ট সহ্য করে৷”//
আমাদের দাম্পত্যজীবন যদি সুখের নাটাইয়ে বাঁধতে পারি। তবে অনাগত সব ঝড় ঝাপটা সামলে আমরাও তাতে রচনা করতে পারি সুখময় এক রঙিন অধ্যায়।
প্রতিটা গল্পতেই রয়েছে এভাবে আবেগমিশ্রিত বাণী। জীবনের পরতে পরতে যেমন আছে সমস্যা সেভাবেই রয়েছে তার সমাধান। আর কিছু লিখতে গেলে রিভিউ পাঠক বিরক্ত হয়ে পড়াই বন্ধ করে দিবেন। আর সব লিখলে হার্ডকপি পড়ার মজাই লুফে যাবে।
#সমালোচনা:
আফরোজা আপুর লিখাতে ভুল ধরার মতো শক্তিবান হয়ে উঠিনি। কিন্তু মাত্র ১০২ পৃষ্ঠার ছোট্ট এই চিরকুটে যারপরনাই ব্যথিত হয়েছি। ভেবেছিলাম জাওয়াদকে পাবো নূহাকে পাবো। থাকবে আনন্দবাড়ির সুখ এবং দুঃখের কথন। প্রচ্ছদ ভালো হয়েছে। যাইহোক, পরবর্তী নতুন বই এবং নতুন গল্পের অপেক্ষায় এই প্রহরের ক্ষান্ত দিলাম। পরের প্রহর যেন পাই ভারী মলাটে, যা পাঠকের চিত্তে আনন্দের প্রলেপ দিয়ে যাবে। বইয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রত্যেককে আল্লাহতা’আলা ফিদ্দুনইয়া ওয়াল আখিরহ এ জাযায়ে খইর দান করুন, আমীন ইয়া রব্ব!

বইঃ ”সুখের নাটাই”
লেখিকাঃ আফরোজা হাসান
প্রকাশনঃ সমকালীন প্রকাশন
প্রচ্ছদ মূল্য: ১৬০৳

 

ডিম চপ

ডিম চপ


ঘরকন্যা


ইফতারিতে আমাদের অনেকেরই প্রিয় ডিম চপ। বিশেষ করে শিশুরা তো দারুন পছন্দ করে এই খাবারটি। অনেকে বাইরে থেকে কিনে খেয়ে থাকেন ডিম চপ, আবার অনেকে বাড়িতেও তৈরি করে থাকেন। যারা ডিম চপের সবথেকে সহজ রেসিপি জানেন না তাদের জন্য আজ রইলো ডিম চপ তৈরির সবচাইতে সহজ রেসিপি।

উপকরণঃ

– ডিম সিদ্ধ – ৪ টি
– আলু সিদ্ধ – আধা কেজি
– পেঁয়াজ কুচি – ২ টি
– কাঁচা মরিচ কুচি – স্বাদ মতো
– গোল মরিচ গুঁড়া – ১ চা চামচ
– ধনিয়া পাতা – ৩ টেবিল চামচ
– লবন – স্বাদ মতো
– ব্রেড ক্রাম \ বিস্কিটের গুঁড়া – ১ কাপ
– ফেটানো ডিম – ২ টি
– সয়াবিন তেল – ভাজার জন্য

প্রনালীঃ

-ডিম সিদ্ধ করে খোসা ছাড়িয়ে রাখুন। আলু ধুয়ে সিদ্ধ করে খোসা ছাড়িয়ে নিন।
-সিদ্ধ আলুর সাথে পেঁয়াজ কুচি, কাঁচা মরিচ কুচি , ধনে পাতা কুচি , গোল মরিচের গুঁড়া ও লবণ দিয়ে খুব ভাল করে মেখে নিন। এবার আলুর মিশ্রণের ভিতর আস্ত সিদ্ধ ডিম ভরে চপের আকৃতিতে গড়ে নিন।
-২ টি ডিম একটু লবন দিয়ে ফেটিয়ে নিন। চপগুলো ডিমের গোলায় চুবিয়ে ব্রেড ক্রামে জড়িয়ে কিছু সময়ের জন্য ফ্রিজে রেখে দিন। চাইলে ব্রেড ক্রামের সাথে চিজ কুচিও মিশিয়ে দিতে পারেন। এতে স্বাদ আরও বেড়ে যাবে।

এবার ফ্রিজ থেকে চপগুলো বের করে ডুবো তেলে সোনালী করে ভেজে তুলুন । ইফতারির টেবিলে গরম গরম পরিবেশন করুন দারুন মজাদার ডিম চপ।

 

শিশু কিশোরদের কোরআন এর অনুবাদ

শিশু কিশোরদের কোরআন এর অনুবাদ


কানিজ ফাতিমা


শিশু কিশোরদের জন্য প্রথবারের মতো সহজ বাংলায় কোরআনের অনুবাদ হতে যাচ্ছে – সবার দোয়া চাই –

এটুকু করতে লাগলো তিন দিন – ১ টা বাক্য লিখতে তিন ঘন্টার রেফারেন্স খুঁজতে হলো .

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে।

ভূমিকা:

মুহাম্মদ (সা.) জিবরীল (আ:) কে দেখে প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলেন। চল্লিশ বছর বয়সে তিনি যখন হেরা গুহায় একাকী নির্জনে ধ্যানে মগ্ন ছিলেন, গভীরভাবে ভাবছিলেন সমাজের সব অসঙ্গতি আর অন্যায় জুলুম নিয়ে, ভাবছিলেন অসহায় মানুষের মুক্তির উপায় নিয়ে; ঠিক তখনই তার সামনে ভেসে উঠলো অতিপ্রাকৃত (supernatural) এক অবয়ব- যিনি বলে উঠলেন “পড়!” ( সূরা আলাক )

প্রথমে মুহাম্মদ (সা.) বুঝতে পারলেন না কি ঘটছে- ছুটে গেলেন বাড়ীতে। স্ত্রী খাদিজা (রাঃ ) তার বয়োবৃদ্ধ অন্ধ ভাই (cousin) ওরাকা (ওরাকা ইবনে নওফেল ইবনে আসাদ) এর কাছে নিয়ে গেলেন তাঁকে। ওরাকা সে যুগের বিজ্ঞ ও ধর্ম বিষয়ক জ্ঞানী ব্যক্তি হিসাবে সমাজে পরিচিত ছিলেন। ওরাকা বিস্তারিত ঘটনা শুনে নিশ্চিত করলেন যে যাকে মুহাম্মদ (সা.) আকাশের দিগন্তে দেখতে পেয়েছেন তিনি হলেন জিবরীল (আঃ); যিনি আল্লাহর নির্দেশে নবী-রাসূলদের কাছে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দেন।

এর পরে মুহাম্মদ (সা.) নির্জনে আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকার জন্য প্রায়ই পর্বতের গুহায় যেতে লাগলেন। একদিন মোহাম্মদ (সা.) যখন মক্কা নগরী ও পর্বতের রাস্তার মাঝামাঝি হাঁটছিলেন তখন আকাশ থেকে সেই কণ্ঠ তাঁর নাম ধরে ডেকে উঠলো- “হে মুহাম্মদ!” মুহাম্মদ (সা.) ভয়ে প্রকম্পিত হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলেন সেই অবয়ব যাঁকে তিনি এর আগে হেরা গুহায় দেখেছিলেন। তিনি ভয় পেয়ে দ্রুত বাড়ী ফিরে গেলেন ও কাঁপতে কাঁপতে খাদিজা (রাঃ) কে বললেন, “জাম্মিলুনি, জাম্মিলুনি” অর্থাৎ “আমায় কম্বল দিয়ে আবৃত করে দাও।” (তখন নাজিল হয় সূরা মুদ্দাসসির এর প্রথম সাতটি আয়াত)

এই ঘটনা মুহাম্মদ (সা.) যখন আবারো ওরাকাকে জানালেন যখন ওরাকা তাকে বললেন যে এরূপ ঘটলে মুহাম্মদ (সা.) যেন স্থির থাকে এবং কি বলা হচ্ছে সেটা শোনে। আর মুহাম্মদ (সা.) যেন ওরাকাকে প্রতিটি ঘটনা জানায়।

এর কিছুদিন পরে মুহাম্মদ (সা.) যখন লোকালয় থেকে দূরে একাকী হাটছিলেন তখন আবারো সেই কণ্ঠের ডাক শুনতে পেলেন। এবার তিনি স্থির হয়ে দাঁড়ালেন। কণ্ঠ ডেকে বললো, “মুহাম্মদ!” তিনি জবাব দিলেন, “ আমি এখানে।” কণ্ঠ বলে উঠলো, “আপনি আল্লাহর প্রেরিত রাসূল আর আমি হচ্ছি ফেরেশতা জিবরীল।” জিবরীল (আঃ) বললেন – “ আমার সাথে সাথে উচ্চারণ করুন-” এর পরে সূরা ফাতিহার নিম্নলিখিত আয়াত সমূহ নাযিল হয়। সূরা ফাতিহাই সর্বপ্রথম নাজিল হওয়া পূর্ণ একটি সূরা।

 

গণধর্ষণের শিকার কিশোরী


নারী সংবাদ


পরিবারের সাথে অভিমান করে ঘর থেকে বের হওয়াই যেন কাল হলো এক কিশোরীর। একদল লম্পটের হাতে ধর্ষণের শিকার হলো।  চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার দুপুরে ওই কিশোরীর বাবা তিনজনকে আসামি করে থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছেন। বাঁশখালী থানার পুলিশ পরিদর্শক রেজাউল করিম মজুমদার এ ঘটনা নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার গন্ডামারা ইউনিয়নের ওই কিশোরি গত সোমবার পরিবারের সাথে অভিমান করে ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়ে এবং পাশের বৈলছড়ি ইউনিয়নের এক নারীর বাড়িতে আশ্রয় নেয়। পরে রাতে তাকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার কথা বলে একটি পুকুর পারে নিয়ে ওই তিন লম্পট পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এসময় ওই কিশোরীর চিৎকারে এলাকাবাসী ছুটে এসে পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

পুলিশ পরিদর্শক রেজাউল করিম মজুমদার জানান, মামলা দায়ের করার পরেই পুলিশ আসামিদের গ্রেফতারের অভিযান শুরু করেছেন। বুধবার চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওই কিশোরীকে শারীরিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে বলেও তিনি নিশ্চিত করেন।

সুত্রঃ নয়াদিগন্ত

 

রোজা রেখে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ পাঠ করি

লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” পাঠ করি


নাজমুন নাহের নাজু


আবূ মুসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, “তোমাকে জান্নাতের অন্যতম ধনভাণ্ডারের কথা বলে দেব না কি?” আমি বললাম, ‘অবশ্যই বলে দিন, হে আল্লাহর রাসূল!’ তিনি বললেন, لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ (লা হাওলা অলা ক্বুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ) (বুখারী ও মুসলিম) [1]

আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ আমি কি তোমাকে জান্নাতের গুপ্তধনসমূহের একটির সন্ধান দিবো না? আমি বললাম, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ। তিনি বলেনঃ ‘‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’’।[2] হাযিম ইবনে হারমালা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি আমাকে বলেনঃ হে হাযিম! তুমি অধিক সংখ্যায় ‘‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’’ বাক্যটি পড়ো। কেননা তা হলো জান্নাতের গুপ্তধন [3] মূসা ইব্ন ইসমাঈল (রহঃ) ………

আবু উছমান আল্-নাহ্দী (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবু মূসা আল্-আশ্আরী (রাঃ) বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের সাথে এক সফরে ছিলাম। অতঃপর তাঁরা মদীনার নিকটবর্তী হলে লোকেরা উচ্চস্বরে আক্বীর ধ্বনি (আল্লাহু আকবার) দেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা তো কোন বধীর এবং অনুপস্থিত ব্যক্তিকে আহবান করছ না, বরং তোমরা (ঐ মহান আল্লাহকে) স্মরণ করছ, যিনি তোমাদের শাহ্ রগেরও নিকটবর্তী। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হে আবূ মূসা! আমি কি তোমাকে এমন একটি জিনিসের কথা অবহিত করব, যা জান্নাতের ভান্ডার (খাজানাহ) স্বরূপ? তখন আমি বলিঃ সেটা কি? তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।[4] কাইস ইবনু সা’দ ইবনু উবাদাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তার বাবা তাকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সেবার জন্য তার কাছে অর্পণ করেন। তিনি বলেন, আমি নামাযরত থাকা অবস্থায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছ দিয়ে গমন করলেন। তিনি নিজের পা দিয়ে আমাকে আঘাত (ইশারা) করে বললেনঃ আমি তোমাকে কি জান্নাতের দরজাগুলোর একটি দরজা সম্পর্কে জানাব না? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ “লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” (আল্লাহ ব্যতীত অনিষ্ট দূর করার এবং কল্যাণ লাভের কোন শক্তি কারো নেই)।[5] সাফওয়ান ইবনু সুলাইম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন ফেরেশতাই “লা- হাওলা ওয়ালা কু-ওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” পাঠ না করে উর্ধ্বাকাশের দিকে গমন করেন না।[6]

আবূ মূসা মুহাম্মাদ ইবন মুছান্না (রহঃ) …… কায়স ইবন সা’দ ইবন উবাদা (রাঃ) থেকে বর্ণীত যে তাঁর পিতা (সা’দ ইবন উবাদা) তাঁকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে তাঁর খিদমতের জন্য সমর্পণ করেছিলেন।

কায়স (রাঃ) বলেনঃ নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমি তখন মাত্র সালাত শেষ করেছি। তিনি আমাকে তাঁর কদম মুবারক দ্বারা আঘাত করলেন। বললেনঃ জান্নাতের দ্বারসমূহের একটি দ্বারের আমি তোমাকে বলব কি? আমি বললামঃ অবশ্যই। তিনি বললেনঃ লা হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। [7]

মুহাম্মাদ ইবন সুলায়মান (রহঃ) ………. আবু যুবায়ের (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ . আবদুল্লাহ ইবন যুবায়ের (রাঃ) নামায শেষে তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ …) পাঠ করতেন। অতঃপর উপরোক্ত দুআর অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে এবং তার সাথে “ লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ, লা না’বুদু ইল্লা ইয়্যাহু লাহুন-নি’মাহ … অতিরিক্ত বর্ণনা করে পরে উপরোক্ত হাদীছের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।[8]

ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) ….. উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুওয়াযযিন যখন “আল্লাহু আকবার, আল্লা-হু আকবার” বলে তখন তোমাদের কোন ব্যক্তি আন্তরিকতার সাথে তার জবাবে বলেঃ “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার”। যখন মুওয়াযযিন বলে “আশহাদু আল লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ” এর জবাবে সেও বলেঃ “আশহাদু আল লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ”। অতঃপর মুওয়াযযিন বলেঃ “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান রসূলুল্ল-হ” এর জবাবে সে বলেঃ “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান রসূলুল্ল-হ”। অতঃপর মুওয়াযযিন বলেঃ “হাইয়্যা আলাস সলা-হ” এর জবাবে সে বলেঃ “লা-হাওলা ওয়ালা- কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ”। অতঃপর মুওয়াযযিন বলেঃ “হাইয়্যা ‘আলাল লাফা-হ” এর জবাবে সে বলেঃ “লা- হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ”। অতঃপর মুওয়াৰ্যযিন বলেঃ “আল্লা-হু আকবার, আল্লাহু আকবার” এর জবাবে সে বলেঃ “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার”। অতঃপর মুওয়াযযিন বলেঃ “লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ” এর জবাবে সে বলেঃ “লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ”। আযানের এ জবাব দেয়ার কারণে সে বেহেশতে যাবে।[9] [1] সহীহুল বুখারী ২৯৯২, ৪২০৫, ৬৩৮৪, ৬৪০৯,
হাদিসের মানঃ সহিহ [2]আহমাদ ২০৮২৯, ২০৮৪ [3]বুখারী ৪২০৪, ৬৩৮৪, ৬৪০৯, ৭৩৮৬, হাদিসের মানঃ সহিহ [4]বুখারি ইফা ১৫২৬ হাদিসের মানঃ সহিহ [5]সূনান আত তিরমিজী ৩৫৮১ সহীহঃ সহীহাহ (১৭৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ [6]সূনান আত তিরমিজী৩৫৮২ হাদিসের মানঃ সহিহ [7] সহিহাহ ১৭৪৬ সূনান তিরমিজী (ইফাঃ),৩৫৮১,৩৪৬১ হাদিসের মানঃ সহিহ [8]সূনান আবু দাউদ, ১৫০৭ হাদিসের মানঃ সহিহ [9]সহীহ মুসলিমঃ৭৩৬,,

 

ডাল আলুর চচ্চড়ি

ডাল আলুর চচ্চড়ি


ঘরকন্যা


উপকরণঃ ডাল হাফ কাপ, আলু কুচি এক কাপ, পিয়াজ হাফ কাপ, কাঁচামরিচ ২-৩ টা, গরম মসলার গুড়ো এক চা চামচ, একটা তেজপাতা, হাফ চা চামচ পাঁচফোড়ন, এক চিমটি হিং( অপশনাল), লবণ স্বাদমতো, ধনেপাতা কুচি, ঘি এক টেবিল চামচ।

প্রস্তুত প্রণালীঃ প্যানে দুই টেবিল চামচ তেল দিয়ে পাঁচফোড়ন ও হিং ফোড়ন দিয়ে পিয়াজ, কাঁচামরিচ কুচি দিতে হবে। পিয়াজ লালচে হয়ে এলে আলু কুচি আর ডাল দিয়ে কিছুক্ষণ ভেজে ডাল দুই কাপ পানি দিতে হবে। স্বাদমতো লবণ দিয়ে মিডিয়াম আঁচে ঢেকে ডাল, আলু সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত রান্না করতে হবে। এরপর ঢাকনা তুলে গরম মসলার গুড়ো ছড়িয়ে দিয়ে আঁচ বাড়িয়ে পানি টানিয়ে নিতে হবে।

পরিবেশনঃ নামানোর আগে ধনেপাতা কুচি আর এক টেবিল চামচ ঘি ছড়িয়ে নামিয়ে নিতে হবে।

 

রমজানে ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়েট

রমজানে ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়েট


নাজমিন নাহার


১.প্রথমেই আপনার শারিরীক অবস্থা অনুযায়ী ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ, ইনসুলিনের পরিমাণ ঠিক করে নিতে হবে।
২. খাদ্যাভাস এমনভাবে নির্ধারন করতে হবে যেন কোনো অবস্থাতে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা হাইপারগ্লাইসেমিয়া না হয়।
৩.এমন খাবার নির্বাচন করতে হবে যেন বডি ডিহাইড্রেটেড না হয়।
যেমনঃ
*সেহরিতে (আটা বা চালের রুটি/দুই তিন প্রকারের ডাল ও ওটসের মিক্সড খিচুরি/দুই তিন টেবিল চামচ ওটস দুধ দিয়ে রান্না / সামান্য ভাত + ডিম/ মাছ+ শাকসবজি + শসা/টমেটো/তরমুজ/খরমুজ+ প্রচুর পরিমাণে পানি।
*ইফতারি- সারাদিন রোযা রাখার ফলে শরীরের মেটাবলিক প্রসেসের অনেক পরিবর্তন হয়,এজন্য মেটাবলিক প্রসেস নরমাল রাখতে প্রচুর পানি,ডাবের পানি, বিভিন্ন ধরনের ফলের জুস( তরমুজ,কাচা আম,কমলা,মালটা),লেবুর শরবত খেতে হবে।শরবত অথবা জুসের সাথে তুকমা বা ইসুবগুলের ভুসি খাওয়া যাবে, কিন্তু কোন অবস্থাতেই চিনি,গুড়,মিস্টি খাওয়া যাবেনা।এছাড়াও ইফতারিতে এক কাপ হালিম/এক কাপ ছোলা/ ছোট একটা স্যানডুইচ + খেজুর দুই-তিনটি/ মিক্সড ফল এক কাপ/ একটা আপেল/ একটা নাশপাতি + সালাদ।
মনে রাখতে ইফতারের খাবারের পরিমাণ হবে অন্যান্য সময়ের রাতের খাবারের সমান।
*রাতের খাবারঃ এবং রাতের খাবার শরীরের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ক্যালরির চেয়ে বেশি না হয়।
এসময়ে ভাত/রুটি/খিচুড়ি/ওটস+মাছ/মাংস/ ডিম+শাকসব্জি+সালাদ খেতে হবে।

মনে রাখতে হবে-
১.কোন অবস্থাতেই সেহেরি না খেয়ে রোযা রাখা যাবেনা।
২.রাতের খাবার বাদ দেওয়া যাবেনা।
৩.খাবারের পাশাপাশি ইন্সুলিন এবং অষুধের ডোজ ঠিক রাখতে হবে।
৪. ডায়াবেটিস রোগিদের রোযার সময় আলাদা করে ব্যায়াম করার দরকার নেই,তবে কেও চাইলে রাতের খাবারের পরে ১০/১৫ মিনিট হাটতে পারে।
৫. রোযা রাখা অবস্থায় হাইপোগ্লাইসেমিয়া/হাইপারগ্লাইসেমিয়ার লক্ষন দেখা দিলে রোজা ভাঙতে হবে।
৬. তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে মাছ/মাংসের পরিবর্তে ২/৩ প্রকার ডাল মিক্স করে খাওয়া যাবে।
৭. আলাদা করে করোনা প্রতিরোধ অতিরিক্ত ভিটামিন-সি, কমলা, মাল্টা খাওয়ার প্রয়োজন নেই।
কারণ সব ধরনের শাকসবজিতে ভিটামিন সি আছে এবং সবধরনের ভিটামিন ইমিউনিটি বুস্ট করে।

৮. ভাজা- পোড়া না খাওয়াই ভাল, তবে খুব বেশি খেতে ইচ্ছে করলে ১/২ পিস খেতে পারেন।

-নাজমিন নাহার
#ঘরে_থাকুন_সুস্হ_থাকুন
সুত্রঃ বাঁচাও হেলথ।

 

আসুন রমজানের হক আদায় করি-

আসুন রমজানের হক আদায় করি


আকলিমা ফেরদৌস আখি


এ মাসের প্রস্তুতির জন্য যা করা যেতে পারে তা হলো-

১) ঈমান ও এহতেসাবের সাথে রোজার নিয়ত করা।

২) ইচ্ছা শক্তি দৃঢ় করে নেওয়া যে,‘ ইনশাল্লাহ রমজান মাসে আল্লাহর ক্ষমা ও নাজাত হাসিল করে নিবোই।’

৩) রমজানের প্রয়োজনীয় মাসলা মাসায়েল জানা ও দোয়া গুলো মুখস্ত করে নেওয়া।

৪) রমজান মাসে কি কি নেক আমল করা যায় তার একটা তালিকা তৈরি করে রাখা। যেমন-

-কোরআন অধ্যায়ন করা (অধ্যায়ন বলতে কোরআনের তাফসীর সহ পড়াকে বুঝায়) তিন/চারটি সূরা ঠিক করে নেওয়া এবং পুরো মাসে এই তিনটি/চারটি সূরা সর্ম্পকে একটি পরিপূর্ণ ধারনা নেবার চেষ্টা করা।

-কোরআন তেলওয়াত করা। প্রতি ওয়াক্ত নামাজের পরে চার পৃষ্ঠা কোরআন তেলওয়াত করলে মাসে একবার কোরআন খতম দেওয়া যায়।

-কয়েক টি ইসলামী ও হাদিস বই ঠিক করে রাখা এবং সারা মাস ধরে পড়া।

-ওয়াক্তের শুরুতেই নামাজ আদায়ের চেষ্টা করা এবং সুন্নত ও নফল নামাজ আদায়ে মনোযোগী হওয়া।

-নিয়মিত সালাতুল দুহা, তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা।

-তাহাজ্জুদ নামাজের আগে আকাশের দিকে তাকিয়ে সূরা আলে ইমরানের শেষ রুকু তেলাওয়াত করা।

-দৈনন্দিন জীবনে প্রতিটি কাজে রাসুল(সা:) এর শিখিয়ে দেওয়া দোয়াগুলো পড়া।

-সহীহ করে কোরআন তেলওয়াত শেখার চেষ্টা করা।

-প্রতিদিন অন্তত: একজন ব্যক্তিকে ইফতার করানো।

-প্রতিদিন অন্ত:ত একজন ব্যক্তিকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়া।

৫) নিজের কমপক্ষে দশটি দোষ চিহ্নিত করে তার তালিকা তৈরী করা এবং এই সিদ্ধান্ত নেওয়া যে রমজানে এ দোষগুলো থেকে নিজেকে বাচিঁয়ে রাখার চেষ্টা করা এবং পরির্পূণভাবে দোষগুলি থেকে নিজেকে মুক্ত করা।

৬) পরিবারের সদস্যদের রমজানের হক আদায়ের জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত করা।

৭) রমজানের প্রতিটি দিন ঠিক ভাবে কাজে লাগানো জন্য একটি রুটিন করে রাখা।

৮) শেষের দশদিন পরিপূর্ণভাবে হক আদায়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে প্রতি রাতে ইবাদতের একটি পরিকল্পনা ঠিক করে নেওয়া।

৯) যাকাতের হিসাব করে রাখা।

১০) অভাবীদের মধ্যে ঈদের উপহার বিতরণের জন্য প্রয়োজনীয় কর্ম পরিকল্পনা ঠিক করা।

এবারে আসুন একজন রোজাদার হিসাবে নিজের কাজগুলি গুছিয়ে নিয়ে কিভাবে প্রতিটি সময়কে ইবাদতে পরিণত করে নেওয়া যায় তার একটা নমুনা দেখে নেয়া যাক-

রাতের শেষাংশে

সালাতুল তাহাজ্জুদ-২:৩০-৩:১৫

(তাহাজ্জুদ নামাজের আগে আকাশের দিকে তাকিয়ে রাসূল সা: সূরা আলে ইমরানের শেষ রুকু তেলওয়াত করতেন। এই আমলটির অভ্যাস করা যেতে পারে।)

সেহেরী গ্রহন-৩:১৫-৩:৫০মি:

(সালাতুল ফজর ও সকালবেলার আযকার পাঠ)

৩:৫০মি:-৪:৩০মি:

(হিসনূল মুসলিম অথবা কতিপয় প্রয়োজনীয় দোয়া বই গুলোর সাহায্য নেয়া যেতে পারে) বাংলা অনুবাদসহ কোরআন তেলওয়াত

(চার পৃষ্ঠা)-৪:৩০-৬:০০টা

সালাতুল দুহা বা ইশরাক-৬:০০টা থেকে-৬:১৫মি:

বিশ্রাম ও ঘুম-৬:২০-৮:৩০মি:

সকাল বেলা

ঘুম থেকে উঠা-৮:৩০ থেকে ৯:৩০টা

দৈনিন্দন কাজ শেষ করা-৯:৩০টা থেকে-১১:৩০

(এ ক্ষেত্রে বাচ্চাদের জন্য সারাদিনের খাবার রেডি করা, ইফতার কি হবে, রাতের খাবার ও সেহেরী কি হবে তা রেডি করে রাখা। মাছ, সবজি কেটে ধুয়ে রাখা যেতে পারে)

১১:৩০ থেকে ১২:৩০ কোরআন অধ্যায়ন, তেলওয়াত, ইসলামী বই পড়া, হাদিস পড়া ইত্যাদি।

দুপুর বেলা

১২:৩০-১:৩০
বিশ্রাম ও সালাতুল জহুরের প্রস্তুতি, জহুরের সারাত আদায় এবং সালাত পরবর্তী মুস্তাহাব তাসবীহ ও যিকির পাঠ।

কোরআন তেলওয়াত

(চার পৃষ্ঠা)-১:৩০-২:৩০মি:

২:৩০-৪:০০ সন্তানদের নিয়ে রমজান স্কুল

(প্রতিবেশীর সন্তানদেরও সাথে নেওয়া যেতে পারে) কোরআন পড়ানো, হাদিসের গল্প বলা, ইসলামী বই পড়িয়ে শুনানো, সাথে নিয়ে ইউটিউবে মটিভেশন মূলক ভিড়িও গুলো দেখা, স্কুলের পড়া ইত্যাদি।

বিশ্রাম-৪:০০-৪:৩০

বিকেল বেলা ব্যস্ত সময়

৪:৩০-৬:০০
যে কাজ গুলো করবেন বা আপনারা সাধারণত করেই থাকেন তা একটু গুছিয়ে নিলেই হবে। যেমন-
সালাতুল আসর, সালাত পরবর্তী মুস্তাহাব তাসবীহ ও যিকির, রাতের খাবার, ইফতার ও সেহেরীর জন্য প্রস্তুতি এবং রান্না শেষ করে ফেলা ইত্যাদি।

এ সময় মায়েরা যেহেতু রান্না বা ইফতারের প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত থাকেন তাই বাবারা সন্তানদেরকে কিছুটা সময় দিতে পারেন।গল্পের বই পড়ে শুনানো, হাতের লেখা প্রেকটিস করানো, টিভিতি ভালো কোন অনুষ্ঠান দেখানো, আল্লাহর নিরানব্বইটা নাম থেকে প্রতিদিন পাচঁটি করে শিখানো, সৃজনশীল লিখা ইত্যাদি।

ইফতার ও সন্ধ্যা বেলা

অন্তত: ৬;১০মি: এর মধ্যে ইফতারের প্রস্তুতি ও রান্না শেষ করে টেবিলে বা ইফতার সাজিয়ে বসে যাওয়া।

এ সময় পরিবারের সদস্যদের মধ্য থেকে কেউ কোরআনের কয়েকটি আয়াত পড়ে শুনাতে পারে। একটি/দুইটি হাদিস পড়ে শোনানো এবং সবশেষে সবাই মিলে বা ব্যক্তিগত ভাবে দোয়ার পরিবেশ তৈরী করা যেতে পারে এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করা যেতে পারে।

ইফতার গ্রহন-
৬:২৫(ইফতারের সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে সময়টা মিলেয়ে নিতে হবে।)

সালাতুল মাগরীব ও সন্ধ্যাকালীন আযকার পাঠ
৭:০০-৭:৩০{মাগ

 

বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন!

বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন!


ফারহানা মিতু


বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন! রক্তের সম্পর্ক নেই, অথচ একটা নারী আরেক ভিন্ন পরিবারেরয পুরুষের জন্য মা বাবাকে ছেড়ে আসছে।নিজের সবকিছু বিলিয়ে দিচ্ছে।সন্তানের মা হচ্ছে।নেক কাজের সহযোগী হচ্ছে।অপরদিকে যে যুগে কেউ কাউকে বিনা কারণে একটা পয়সা দিতেও রাজি নয় সেই যুগে একটা লোক বাবার দায়িত্ব টাকে কাঁধে নিয়ে নিচ্ছে।নারীর সার্বিক ভরনপোষণ দিচ্ছে।তার সন্তানদের মুখে হালাল রিযিক তুলে দিতে দিন রাত একাকার করে দিচ্ছে।কখনো ভেবে দেখেছেন,এটা কি করে সম্ভব???
এটা আসলে আল্লাহর নিয়ামত।বিয়ে এমনই এক বন্ধন যার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা একটা অন্তরের সাথে আরেক অন্তর কে জুড়ে দেন।
আমরা যারা এই নিয়ামত লাভ করেছি তাদের উচিৎ বেশি বেশি শুকরগুজার হওয়া।আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।কেননা কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে নিয়ামত আরো বাড়িয়ে দেয়া হয়।আর যারা এখনো অবিবাহিত তাদের উচিৎ আল্লাহর শেখানো পদ্ধতিতে ই দুয়া করা।
তারা প্রার্থনা করে থাকে, “হে আমাদের রব! আমাদের নিজেদের স্ত্রীদের ও নিজেদের সন্তানদেরকে নয়ন শীতলকারী বানাও এবং আমাদের করে দাও মুত্তাকীদের ইমাম।”
(.২৫-ফুরকান:৭৪.)

লকডাউনের এই সময়ে দাম্পত্য কলহ যে অনেক ক্ষেত্রে বেড়ে যাচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।প্রায়ই আশেপাশের বিল্ডিং এর ঝগড়া কলহের আওয়াজ জানালা ভেদ করে ঘরে ঢুকে পড়ে।কিছু ক্ষেত্রে পুরুষরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে।কিছু ক্ষেত্রে নারীরা অসহনশীল হয়ে পড়ছে।অর্থাৎ অন্তরের প্রশান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে।এর মূল কারণ নারী বা পুরুষ নয়ন শীতল করতে পারছেনা।

এবারে আসি নয়ন শীতলকারী স্ত্রী হওয়া বা জীবনসঙ্গী পাওয়ার কিছু শর্তেঃ
#আমি যাকে পাচ্ছি সে আমার জীবনসঙ্গী। কুরআন তার নাম দিয়েছে পোষাক। এবং পরস্পরের সহযোগী।কাজেই তাকে উত্তরাধিকার সুত্রে পাওয়া সম্পত্তির মত মনে করা উচিৎ না। তার কিছু নিজস্বতা থাকবে,আমারও কিছু নিজস্বতা থাকবে।তাকে পুরো আমার মত হয়ে যেতে হবে,বা আমাকে পুরো তার মতন হতে হবে এই জটিল চিন্তায় যাওয়াই যাবেনা।প্রত্যেকের স্বকীয়তা ঠিক রেখেই পাশাপাশি চলা যায়।
#দাম্পত্য সংসার টা একটা গাড়ির মত।গাড়ির ড্রাইভার হতে হবে স্বামীকে। স্ত্রীকে হতে হবে অনুগত। এটা সমাজের ভারসাম্য ঠিক রাখবে।স্ত্রী পরামর্শ দিতেই পারে। সেই অনুপাতে ডান বাম হতেই পারে।কিন্তু চালকের আসনে শক্ত হয়ে বসতে হবে স্বামীকেই।নতুবা এই গাড়ি দূর্ঘটনার কবলে পড়তেই পারে।
পুরুষ নারীর কর্তা। এ জন্য যে, আল্লাহ‌ তাদের একজনকে অন্য জনের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং এ জন্য যে, পুরুষ নিজের ধন-সম্পদ ব্যয় করে। কাজেই সতী-সাধ্বী স্ত্রীরা আনুগত্যপরায়ণ হয় এবং পুরুষদের অনুপস্থিতিতে আল্লাহর হেফাজত ও তত্বাবধানে তাদের অধিকার সংরক্ষণ করে থাকে।
(নিসা:৩৪.)

#সম্পর্কে সহনশীলতা র কোন বিকল্প নেই।দুজনকেই দুজনের দূর্বলতা,অক্ষমতা,ফিতরাতের ব্যপারে সহনশীল আচরণ করতে হবে।
#বাস্তব জীবনে শুধু শিশুরা নয় আমরা বড়রাও অনুকরণ প্রিয়।প্রত্যেকে তার মা বাবার মত হতে চায়।কথা বার্তা,চালচলন এমনকি দায়িত্ব বা কর্তব্য পালনের পদ্ধতিও একইভাবে অনুসরনীয় হয়।তাই মা বাবা হয়ে সেই আদর্শ ই স্থাপন করা উচিৎ যা আমার ছেলে মেয়ে আমার সাথে করলে কোন ক্ষতি হবেনা,বা তখন তাকে সংশোধন করা দরকার হবেনা।
# অধিকার সচেতন হওয়ার চেয়ে স্বামী স্ত্রী দুজনের ই কর্তব্য সচেতন হওয়া ভাল।
# অধিকাংশ দাম্পত্য কলহের মূল কারণ অন্যের সাথে নিজের স্ত্রী বা স্বামীকে তুলনা করা,পরশ্রীকাতর হওয়া অতঃপর মনের মধ্যে অতৃপ্তি রাখা যে আমি অনেক কষ্টে আছি।সব ছেলে একরকম হয়না,সব মেয়েও একরকম না।কিন্তু যেহেতু এই জুটি টা আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুমোদিত তাই আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে আমাদের শান্তির মূল চাবিকাঠি টা আমাদের জীবনসঙ্গীর কাছেই আছে।অন্য চাবি স্বর্ণে তৈরি হলেও আমার ঘরের শান্তির দরজা খুলবেনা।আমার নিজেকে আত্মবিশ্বাসী করতে হবে যে আমি সঠিক জীবনসঙ্গী পেয়েছি।নিজের সর্বোচ্চ মেধা আর শ্রম দিয়ে তাকেও প্রমাণ করে দিতে হবে যে আমিই তার জন্যে সবচেয়ে প্রশান্তি দায়ক ব্যক্তি।
# সবশেষ মূলনীতি, দুনিয়া আমার লক্ষ্যবস্তু নয়,দুনিয়ার সাফল্য ব্যার্থতা আমার জীবনের সাফল্যের মাপকাঠি নয়।তাই তাকাসুর বা বেশি বেশি পাওয়ার লোভ যেন আমাকে বা তাকে গ্রাস করতে না পারে তাই নিজেদের চাহিদা কে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। সন্তান কেও সেইভাবে গড়ে তুলতে হবে যেন পাওয়া যাবে বলেই চাইতে হবে এই প্রবনতা তৈরি না হয়।
আল্লাহ স্বামী স্ত্রী কে জুটি বেধে দিয়েছেন একসাথে জান্নাতের পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য।সারাজীবন সুখে থেকে বিলাসিতায় কাটিয়ে কোন লাভ নেই যদি জান্নাতে আপনি এক ঘরে,আপনার জীবনসঙ্গী অন্য জান্নাতের অন্য ঘরে থাকেন।অনন্ত জীবনে যেন একসাথে এক ঘরে থাকা যায় তাই আমাদের উচিৎ নেক কাজে সহযোগী হওয়া,দুনিয়া বিমুখ হয়ে পরকাল মুখী কাজ বেশি বেশি করা,দুইজন দুইজনকে হাক্কুল ইবাদ বা বান্দার হক আদায়ে সহযোগিতা করা। আল্লাহ আমাদের প্রত্যেকটি পরিবারকে কবুল করুন।আমীন।

 

কোভিড-১৯ প্রতিরোধে Psycho-Immunity কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে

কোভিড-১৯ প্রতিরোধে Psycho-Immunity কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে।


অধ্যাপক ডঃ এম. এস. কবীর জুয়েল


আজ পবিএ শব-ই-মেরাজের রাত্রি, যারা কালে ভদ্রে ধর্মকর্ম করে থাকেন, তারাও নিশ্চয়ই পবিত্র কোরানের শেষাংশের ১১৩-তম সুরা ‘ফালাক’ টি জানেন, সুরা ফালাকের ২য় আয়াতটি ব্যক্তিগতভাবে আমি অত্যন্ত গুরুত্ববহ মনে করছি, বর্তমান প্রেক্ষিতঃ বিবেচনায় আমার কাছে এ আয়াত ও সমগ্র সুরাটিকে অত্যন্ত তৎপর্য্যপূর্ণ মনে হয়েছে, এ অনুজীব (Covid-19)-টি সরাসরি আল্লাহর সৃষ্টি হলেও মহান আল্লাহ-ই রক্ষা করবেন, কিংবা চীন-মার্কিন রেষারেষি উদ্ভুত কোন ‘Biological Weapon’ হলেও নিঃসন্দেহে আল্লাহ-ই বাঁচাবেন, প্রথম আয়াত থেকেই আশ্রয় চাওয়া শুরু হচ্ছে—
‘আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি প্রভাতের পালনকর্তার’,

২য় আয়াতেই বলা হচ্ছে
“(হে আল্লাহ)তোমার যে কোন প্রকার

সৃষ্ট জীবের অনিষ্ট হতে”
2nd verse –যা আরবীতে–“Min Sharri Ma Khalaq” ইংরেজিতে –“From Anything Harmful in Creation”
তারপর ৩য় আয়াতে সুস্পষ্টভাবে কোন এক অজ্ঞাত অন্ধকারের প্রভাব নিয়ে বলা হচ্ছে, এখানে আমরা অন্ধকার অর্থে যা এখনো মানুষের বোধগম্য নয়, অথচ তা ছড়িয়ে পড়ছে তা বলতে পারি —
3rd Verse– “From the Evil of Darkness as it Spreads ‘অন্ধকার-এর অনিষ্ট থেকে, যখন তা সমাগত হয় বা পরিব্যাপ্তি লাভ করে।
একটু খেয়াল করুন, Covid-19 আজ হতে প্রায় চার মাস আগে পৃথিবীতে এসছে, কিন্তু সারা দুনিয়ার তাবৎ
রাঘব বোয়ালদের অনুগত সকল অনুজীব বিজ্ঞানী,ভাইরোলজীস্ট, সংক্রামক ব্যাধী বিশেষজ্ঞগণ(Epidemiologists)এখনো পুরোপুরি অন্ধকারে নিমজ্জিত, কোন কিছুই তাদের নিকট পরিস্কার নয়, কারণ ইতিমধ্যেই প্রায় চারশত বার পরিস্রাবিত হয়ে ইহা নতুনরুপে আরো অধিক বিধংসী আক্রমণের উপযোগী হয়ে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে,যা ইতিপূর্বেকার বৈশ্বিক সংক্রমণ (Pandemic)১৯২০ এর Spanish ফ্লু-এর ক্ষেত্রে ঘটে নাই।
তাই অক্ষমতার লজ্জা ভেংগে নির্দিধায় বিজ্ঞানীরা আত্মসমর্পণ করেছেন,মার্কিণ চিকিৎসকগণ তাদের রোগীর Psych-immunity বাড়াতে স্রষ্টাকে ডাকতে
বলছেন, যা আমেরিকান টিভিতে প্রচারিত হয়েছে, এবং কিভাবে একজন ষাটোর্ধ কৃষাংগ বেঁচে উঠলো তা দেখানো হয়েছে; স্পেন ও ইতালীর প্রধানমন্ত্রী সরাসরি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্রষ্টাকে ডাকতে বলছেন।
প্রশ্ন উঠতে পারে, চারিদিকে তো বিভিন্ন জন বিভিন্ন ভাবে ইহার ঔষধও আবিস্কার করে ফেলেছে, তাহলে কেন তারা এতো ভয় পাচ্ছে,কেন এভাবে সারেন্ডার করছে, এ পর্যন্ত দু রকমের বিন্যাসিত ঔষধ দিয়ে করোনার এ প্রজাতির ভাইরাসের চিকিৎসার কথা বলা হচ্ছে — ১) ম্যলেরিয়া নাশক ঔষধ Hydroxy Chloroquine phosphate (400mg) সাথে পরিচিত এন্টিবায়োটিক Azithromycin(500mg),এমন কি ইহার কয়েকটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ও দেয়া হয়েছে, কিন্তু সার্বজনীন ভাবে মোটেও গ্রহণযোগ্য হয়নি, অপরটি ২) Favilavir, যা আগে Fapiliavir নামক Anti-viral হিসেবে পরিচিত ছিলো, দুটির আবিস্কারক দেশ থেকে ইতালী ও স্পেন অনেক আগেই তা জেনেছে, ক্ষেত্র বিশেষে প্রয়োগ ও করেছে কিন্তু ফলাফল Hypothetical হওয়ায় সবাই হতাশ, FDA মোটেও এ ঔষধ গুলোকে বৈশ্বিকভাবে ছড়িয়ে দেবার মতো যোগ্য মনে করেনি।
এখন আসা যাক, যদি ইহা জীবানু অস্ত্র-ই হয়ে থাকে এবং চীন ইচ্ছে বা অনিচ্ছেয় তার হুবেই প্রদেশের জৈব গবেষণাগার থেকে ইহা বের করে দিয়ে থাকে অথবা মার্কিণ মহাকাশ স্যটেলাইট কতৃক দূর-নিয়ন্ত্রিত অদৃশ্য ড্রোন নিক্ষেপে ইহা ইরানমুখী করতে যেয়ে অন্যান্য দেশসহ নিজ দেশেও আমেরিকা সংক্রমিত করে থাকে, এ ক্ষেত্রে করোনাকে আমরা ওঁদের সৃষ্ট এক ভয়ানক যাদুকরী ক্ষমতারুপি অনুজীব মনে করবো কিনা?
দেখা যাক, সুরা ফালাক এ বিষয়ে কিভাবে কার্যকর–
মনোযোগ সহকারে নিম্নের আয়াত দুটি অনুধাবন করুন — ৪র্থ আয়াত–“গ্রন্থিতে ফুঁৎকার(Air Borne) দিয়ে জাদুকারিণী(Covid-19 as a Biological Weapon)দের অনিষ্ট থেকে” এবং ৫ম আয়াতে সরাসরি সেইসব ইসলাম বিদ্দেষী মানুষ ও জাতির বিষয়ে বলা হচ্ছে—
“হিংসুক(China-US etc)-এর অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে(তাদের অপবিজ্ঞান প্রমোট করে)।
আজ হোক কাল হোক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদগণ মহান আল্লাহর কৃপায় এ ভয়াবহ রোগের টিকাসহ যুগোপযোগী চিকিৎসা অবশ্যই আবিস্কার করে ফেলবে, কিন্তু ততোদিনে সমগ্র পৃথিবীর ইতিহাসের কল্পবিজ্ঞানে একটি কালো অধ্যায় সূচিত হবে।
স্রষ্টার এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র(Apparently Invisible) সৃষ্টির কাছে মহান দাপুটে মানবজাতি কতোটা অসহায় তা চির স্মরনীয় হয়ে থাকবে।
কেবল ধর্মপ্রাণ মুসলিমের নিকট এ শক্তিশালী মরনাস্ত্র(Covid-19)নিগ্রহের বস্তু, কারণ সে নিজেকে সচেতনভাবে ইহা থেকে দূরে রাখতে চেষ্টা করেছে,
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পূর্বে সাবান দিয়ে হাত পরিস্কার করে নিচ্ছে, মেসওয়াক করছে, ঘরে নামাজ আদায় করছে,অন্যদের সাহায্যে এগিয়ে আসছে; একই সাথে মনে প্রাণে ইহাকে নিছক আল্লাহর এক অভিনব সৃষ্টি মনে করেছে,যা আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কারো ভেতরে সংক্রমিত হতে পারে না।

 

তরমুজের সাদা অংশের মোরব্বা

তরমুজের সাদা অংশের মোরব্বা


ঘরকন্যা


তরমুজটার একটা অংশ খাবেন বাকী সাদা অংশটা ফেলে দিবেন কেনো। আসুন চটপট ছোট ছোট করে কেটে বানিয়ে ফেলি মোরব্বা।

উপকরণ

১. তরমুজের ফেলে দেওয়া সাদা অংশ
২. দারচিনি
৩. এলাচি
৪. তেজপাতা
৫. চিনি
৬. সামান্য লবণ

প্রস্তুত প্রণালী

তরমুজ খাচ্ছিলাম। তো, খেতে খেতে সাদা অংশটি ফেলে দিব। ঠিক তখন মাথায় আসলো যে, সাদা অংশটি যদি ছোট ছোট করে বর্গাকারভাবে কাটা যায়। তাহলে কেমন হয়। যেই চিন্তা সেই কাজ শুরু করে দিলাম। সাদা অংশটি ছোট ছোট কাটলাম। কাটার পর গরম পানিতে কিছুটা লবণ আর চিনি আর দারচিনি দিয়ে তরমুজ সাদা অংশটা ফেলে দিলাম। এরপর যখন তরমুজের সাদা অংশটি হালকা সিদ্ধ হল তখন সেটাকে নামিয়ে পানিটা শুকিয়ে নিলাম।

চিনির সিরা

চিনির সিরা করার জন্য এক কাপ চিনি সাথে হাফ কাপ পানি নিলাম। পানিতে কিছুটা দারচিনি, এলাচি & তেজপাতা কিছুটা অংশ দিলাম এরপর যখন চিনির শিরা হয়ে গেল,
এবার শিরার মধ্যে তরমুজের সিদ্ধ করা সাদা অংশটি দিয়ে দিলাম। খুব হালকা আগুনের আঁচে যতক্ষণ পর্যন্ত না চিনিতে সাথে ছোট ছোট তরমুজ লেপটে যাচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত চুলায় রাখলাম। হালকা বাদামী বর্ণধারণ করবে। হয়ে গেল মজাদার তরমুজের সাদা অংশের মোরব্বা।

খেতেও বেশ মজা। বাসায় সহজে আপনিও বানিয়ে ফেলতে পারেন।

 

রাগ সামলাতে কচ্ছপ কৌশল!

রাগ সামলাতে কচ্ছপ কৌশল!


রাউফুন নাহার


ঘরে বন্দী থাকতে থাকতে কি আমাদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে? অল্পতেই রেগে যাচ্ছি? ভয় পাচ্ছি? কষ্ট পাচ্ছি? দেখি তো কষ্টকর আবেগগুলো সামলে নেওয়ার জন্য কচ্ছপ কৌশলটি কোনো কাজে আসে কি-না!

বিপদের আভাস পেলে কচ্ছপ নিজের খোলসের ভেতরে আশ্রয় নেয়। তেমনি যেকোনো ঘটনা থেকে আমরা রাগ বা অন্যান্য যেসব কষ্টকর অনুভূতি অনুভব করি, তা সামলে নেওয়ার জন্য বাহিরের জগৎ থেকে কিছুটা বিরতি নিয়ে নিজের ভেতরেই আশ্রয় নিতে পারি৷ তারপর শরীর-মন শান্ত হলে আবার বাইরে বেরিয়ে সমস্যা সমাধানে মনোযোগ দিতে পারি।

কচ্ছপ কৌশলের ধাপগুলো হলো-
প্রথম ধাপঃ বুঝতে পারছি, অপ্রীতিকর একটি ঘটনা ঘটার ফলে আমার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে বা কষ্ট হচ্ছে বা ভয় লাগছে।

দ্বিতীয় ধাপঃ আমি নিজেকে বলছি, “থামো”। এই মুহুর্তে কোনোকিছু করা থেকে আমি নিজেকে থামাচ্ছি। শুধু কেমন অনুভব করছি তা মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করছি।

তৃতীয় ধাপঃ আমি নিজের ভেতরে ঢুকছি। অর্থাৎ নিজের জন্য সময় নিচ্ছি। কমপক্ষে ৩ বার গভীরভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছি। নিজেকে বলছি, “আমি নিজেকে শান্ত করতে পারি”, “আমি সমস্যা সমাধান করতে পারি”। শান্ত না হওয়া পর্যন্ত আমি নিজের ভেতরে, নিজের সাথেই থাকবো। নিজের যত্ন নেবো।

চতুর্থ ধাপঃ এখন আমি অনেকটাই আরাম বোধ করছি। তাই নিজের ভেতর থেকে আমি বাইরে বেরিয়ে আসছি। শান্তভাবে সমস্যা সমাধানের জন্য আমি এখন প্রস্তুত।

আবেগ-অনুভূতি আমাদের শত্রু নয়। বরং গবেষণায় দেখা গেছে যারা বিভিন্ন ধরনের আবেগ অনুভব করে এবং সময়মত তা সামলে নিতে পারে, তাদের সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে৷
আমরা একটি কঠিন সময় পার করছি। এসময় বিভিন্ন ধরনের কষ্টকর অনুভূতির মধ্য দিয়ে যাওটাই স্বাভাবিক। আবেগকে অস্বীকার না করে বা শত্রু না ভেবে যথাযথ উপায়ে নিজেকে শান্ত করা ও যৌক্তিক আচরণ করাই এসময় আমাদের জন্য সহায়ক হবে।

রাউফুন নাহার
শিক্ষক
এডুকেশনাল এন্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

জঙ্গলে ফেলে যাওয়া সেই মা করোনায় আক্রান্ত নন

জঙ্গলে ফেলে যাওয়া সেই মা করোনায় আক্রান্ত নন


নারী সংবাদ


টাঙ্গাইলের সখীপুরের জঙ্গলে ফেলে যাওয়া নারীর শরীরে করোনাভাইরাসের জীবাণু পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ তিনি প্রাণঘাতি করোনায় আক্রান্ত নন। ঢাকায় নমুনা পরীক্ষার পর বুধবার সন্ধ্যায় জানা গেল তার রিপোর্ট নেগেটিভ। অসহায় এই নারীর নাম সাজেদা (৫০)। বাড়ি শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলায়।

করোনা সন্দেহে তারই সন্তানেরা সোমবার সখীপুর উপজেলার ইছামতি গ্রামের একটি জঙ্গলে তাকে ফেলে রেখে পালিয়ে যান। সোমবার রাতে তাকে উদ্ধার করে ঢাকায় পাঠানো হয়।

সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুস সোবহান নয়া দিগন্তকে বলেন, বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে তাকে ফোন করে জানানো হয় ওই নারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। নমুনা পরীক্ষায় তার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। তবে তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

ডা. মো. আব্দুস সোবহান বলেন, একটি মেডিক্যাল টিম নিয়ে সোমবার রাত ২টা নাগাদ জঙ্গল থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করি এবং রাতেই ব্যক্তিগত খরচে একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করি। তিনি বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। উদ্ধারের সময় তাকে কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন মনে হয়েছে। এছাড়া জ্বর, সর্দি ও গলা ব্যাথাও ছিল।

উল্লেখ্য, ওই নারীর বাড়ি শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলায়। এক ছেলে, দুই মেয়ে ও জামাতাকে নিয়ে গাজীপুরের সালনায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। সন্তানেরা একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। আর সবার জন্য রান্না করার দায়িত্ব ছিল তার ওপর। কয়েকদিন ধরে তার জ্বর, সর্দি, কাশি শুরু হলে আশেপাশের বাসার লোকজন তাদের তাড়িয়ে দেন। ওই অবস্থায় সোমবার মাকে সাথে নিয়ে একটি পিকআপভ্যান ভাড়া করে শেরপুরের নালিতাবাড়ীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন সন্তানেরা। পথিমধ্যে সখীপুর জঙ্গলে মাকে ফেলে রেখে তারা পালিয়ে যান। এ ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

সুত্রঃ নয়া দিগন্ত।

 

ফ্রি মানসিক স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছে মাইন্ড-ব্লোয়িং সাইকোলজিক্যাল টিম

ফ্রি মানসিক স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছে মাইন্ড-ব্লোয়িং সাইকোলজিক্যাল টিম


স্বাস্থ্যকথা


“করোনা ভাইরাস” আতঙ্কে পুরো বিশ্ব স্তব্ধ। বাংলাদেশেও ইতিমধ্যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩৯ জন। আর আক্রান্ত প্রায় ৮০৩ বেশি মানুষ। দিনে দিনে এই ভাইরাস মহামারী রূপে ছড়িয়ে পড়ছে দেশের শহর, গ্রাম, পাড়া এবং মহল্লায়। এই অবস্থায় দেশের প্রায় অধিকাংশ মানুষই মানসিকভাবে আতঙ্কিত। আতঙ্কিত হওয়াটাই স্বাভাবিক, তবে অতিরিক্ত আতঙ্ক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
“মাইন্ড-ব্লোয়িং সাইকোলজিক্যাল টিম” এর সদস্যরা, এই অবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে ২৪ ঘন্টা মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করছে। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছে এই সেচ্ছাসেবী সংগঠনটি বহুদিন ধরে।

চারদিকে অদৃশ্য করোনা আতঙ্ক, অনেক দুঃসংবাদ, মৃত্যুর মিছিল, গুজব, বন্দী জীবন, এসবের মাঝেও কিভাবে নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিয়ে ভালো থাকা যায়, এই বিষয়ে ফোনে এবং ই-মেইলে পরামর্শ দিচ্ছেন আমাদের মাইন্ড-ব্লোয়িং সাইকোলজিক্যাল টিমের মনোবিজ্ঞানীগণ।

Mohiuddin Mahi.
Counselor, ICDDR,B.
Phone:01681454852

Raihan Uddin Melon
Psycho-Social Counselor, TAI.
Phone:01997646802

Md. Ashraful Islam
Assistant counselling psychologist
Phone: 01828196981

Rakib Hasan
Counselor, ICDDRB
Phone: 01538-270288

Salma M S
Psycho-social Counselor, RTMI
Phone: 01860444904

Fatema Shahrin
Trainee Counselling Psychologist ( DMCH)
E-mail: zummi093824@gmail.com

Wahidul Arif.
Trainee Counselling Psychologist,
Intern Salimullah Medical College Hospital
Phone: 01737902520

Md.Khairul Akanda Nijhum
Part-time Counselor at TSC
University of Dhaka
Phone:01688701606 ,01704966020

Ashiq Al Nahian
Trainee Counselling Psychologist at TSC, Dhaka University.
Phone:01614682424

Shariful Islam
Trainee Counselling Psychologist ( DMCH)
01768955971

Rukiya akter
Trainee School Psychologist
phone : 01307303393

Sharmin Parsa
Trainee Counselling Psychologist(Audiology Bangladesh)
E-mail: sharminparsaparsa@gmail.com
Phone: 01773222144
Md. Shahidul Islam
M.Sc industrial Psychology
Phone: 01751514536

Md. Meraz Hossain
Intern Counselor at Monosheba BD
M.Sc in Clinical & Counselling Psychology
Phone: 01521318125

mindb470@gmail.com

 

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় হৃদরোগীরা মেনে চলুন কিছু পরামর্শ

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় হৃদরোগীরা মেনে চলুন কিছু পরামর্শ


ডা. মারুফ রায়হান খান


করোনা’ শব্দটির চেয়ে বড় আতঙ্কের নাম পৃথিবীতে এখন আর কিছু নেই। বিশ্ব এমন মারাত্মক মহামারী খুব কমই দেখেছে৷ ইতিমধ্যে লাখ ছাড়িয়েছে মৃতের সংখ্যা। আমাদের দেশে হু হু করে বেড়ে চলেছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। কোভিড-১৯ রোগটি যে কারোরই হতে পারে। তবে কিছু কিছু রোগীদের আক্রান্তের ঝুঁকি বেশি রয়েই যায় এবং আক্রান্ত হলে জটিলতার আশংকা বেশি থাকে। যেমন :

১. হৃদরোগ

২. বয়স ৭০ বছরের বেশি

৩. উচ্চ রক্তচাপ

৪. গর্ভকালীন সময়

৫. ডায়াবেটিস

৬. ফুসফুসের রোগ

৭. দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ

৮. স্ট্রোক

৯. ধূমপায়ী

চীনের গবেষণায় প্রমাণিত কোভিড-১৯-এর সঙ্গে যাদের আগে থেকে হার্টের রোগ ছিল তাদের মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি। তবে আশার কথা হচ্ছে বেশিরভাগ মানুষই করোনা রোগ থেকে সুস্থ হয়েই বাড়ি ফেরেন। আতঙ্কিত না হয়ে এ সময়ে হৃদরোগীরা কিছু পরামর্শ মেনে চললে সুফল পাবেন।

১. অবশ্যই ঘরে থাকুন। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কোনোভাবেই বাসার বাইরে যাবেন না। ওষুধপত্র বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের প্রয়োজনে অন্যদের সহায়তা নিন। যদি একান্তই বাইরে বের হতে হয় তবে অবশ্যই ভালোমানের মাস্ক পরে নিন।

২. চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। তাই নতুন করে হৃদরোগের উপসর্গ যেমন : তীব্র বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড় জাতীয় সমস্যা না হলে চিকিৎসকের কাছে এসময়ে না যাওয়াই শ্রেয়। প্রয়োজনে চিকিৎসকের কাছে ফোনে/অনলাইনে পরামর্শ নিন। বেশিরভাগ চিকিৎসকই এখন তাদের ফোন নাম্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছেন।

৩. অন্তত ২০-৩০ সেকেণ্ড সময় নিয়ে হাত ধৌত করুন। এমনভাবে ধৌত করুন যেন সাবানের ফেনা দেখা যায়। প্রথমেই পানি দিয়ে হাত ভিজিয়ে নিন এবং হাতে সাবান মেখে নিন। দুহাতের তালু ভালোভাবে ঘষুন। প্রতিটি আঙুল ও দুআঙুলের মধ্যবর্তী স্থান ভালোভাবে ঘষুন। নখ ও হাতের তালু ভালোভাবে ঘষুন। হাতের পৃষ্ঠদেশ ও দুআঙুলের মধ্যবর্তী স্থান ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। পরিষ্কার পানি দিয়ে হাত ধোয়ার পর টিস্যু বা পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে হাত মুছে ফেলুন।

৪. যেকোনো গণজমায়েত অবশ্যই পরিহার করুন। করমর্দন বা কোলাকুলি পরিহার করুন।

৫. চোখে, মুখে, নাকে যতো কম সম্ভব স্পর্শ করুন।

৬. হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলুন। হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় টিস্যু বা রুমাল চেপে ধরুন। নইলে কনুই দিয়ে চেপে ধরুন।

৭. হৃদরোগের চিকিৎসা সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি হয়। ওষুধ নিয়মিত না খেলে বা বন্ধ করে দিলে সমূহ বিপদের আশঙ্কা থাকে। তাই পূর্বের ওষুধগুলো চালিয়ে যান। চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া ওষুধ বন্ধ করা যাবে না। তবে যদি কোনো রক্তপাত দেখা দেয় তখন এসপিরিন/ওয়ারফেরিন জাতীয় ওষুধ বন্ধ রেখে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

৮. অতিরিক্ত লবণ খাওয়া যাবে না। সেটা কাঁচা লবণ হোক বা ভাজা লবণ। চিনিযুক্ত খাবার, ডিমের কুসুম, কলিজা, মাছের ডিম, গরু-খাসির চর্বিযুক্ত মাংস, হাঁস-মুরগির চামড়া, হাড়ের মজ্জা, ঘি, ডালডা, মাখন, নারকেল জাতীয় খাবার কম খেতে হবে। যেসব শক্ত খাবার খেতে বেশি কষ্ট হয় সেসব খাবার না খাওয়াই ভালো।

৯. বেশি বেশি ফলমূল, শাকসবজি, সামুদ্রিক মাছ, ছোট মাছ, মাছের তেল, সানফ্লাওয়ার অয়েল ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।

১০. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার বেশি খান। যেমন : লেবু, কমলা, জাম্বুরা, আমলকি, পেয়ারা ইত্যাদি।

১১. প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটাচলা/ব্যায়াম করতে হবে। প্রয়োজনে ছাদে হাঁটুন৷ বাসায় ব্যায়ামের জন্য একটা জায়গা আলাদা করে নেয়া যেতে পারে। তবে যতোটা হাঁটলে/ব্যায়াম করলে বুকে ব্যথা শুরু হয়ে যায় অতোটা হাঁটা/ব্যায়াম করা যাবে না। এ বিষয়টি সতর্কতার সাথে খেয়াল রাখতে হবে।

১২. ধূমপান বন্ধ করতে হবে। এটি হৃদপিণ্ডের অত্যধিক ক্ষতি যেমন করে সেই সাথে করোনার ঝুঁকিও অনেক বাড়িয়ে দেয়।

১৩. মদ্যপান করা যাবে না।

১৪. বাসায় নিয়মিত রক্তচাপ মাপুন। ডায়াবেটিস থাকলে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়মিত চেক করুন এবং নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

১৫. শেষে যে পরামর্শটি না দিলেই নয়, যতো কম সম্ভব টেলিভিশনে/পত্রিকায়/সোশ্যাল মিডিয়ায় করোনার নিউজ আপডেট দেখুন। বেশি বেশি এসব সংবাদ শুনলে অতিরিক্ত উত্তেজনা এবং আতঙ্ক তৈরি হতে পারে। যা হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই সারাক্ষণ সংবাদ না দেখে সৃষ্টিশীল কাজে বা পরিবারের সাথে সময় ব্যয় করুন। গড়ে তুলতে পারেন নতুন কোনো ভালো অভ্যেস। প্রার্থনা বা মেডিটেশানে সময় দেওয়া যেতে পারে।

এই প্রতিকূল সময়ে ভালো থাকুক প্রতিটি হৃদরোগী। ভালো থাকুক প্রতিটি মানুষ।

লেখক: ডা. মারুফ রায়হান খান

হৃদরোগ বিষয়ে উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ

মুল সুত্রঃ যুগান্তর।

 

করোনায় ঘরবন্দি জীবনে বয়সন্ধিকালের কিশোর-কিশোরীরা কি করবে?

করোনা-১৯ ঘরবন্দি জীবনে বয়সন্ধিকালের কিশোর-কিশোরীরা কি করবে?


তানিয়া ইসলাম ইতি


আসলেই কি আমরা ঘরবন্দি থাকতে পারছি? উত্তর জানা নেই। তবে আমরা চেষ্টা করছি। আমরা যারা ঘরে থাকছি, আমাদের মধ্যে পাঁচ শ্রেণীর মানুষ আছে। যেমনঃ

১. শিশু , ২. কিশোর, ৩. যুবক , ৪. মধ্যবয়স্ক এবং ৫. বয়স্ক ।

এদের মধ্যে আবার দুই ভাগ আছে। ১। ছেলে এবং ২। মেয়ে।

জাতিগত ভাবে আমাদের দেশের মেয়েরা ঘরের বাহিরে কম যায়। ঘরের কাজকর্ম করে দিন অতিবাহিত করে। তাদের তেমন কোন সমস্যা হবার কথা না ঘরে থাকাটা। কিন্তু বর্তমানে অনেক মেয়ে চাকরি করছে অথবা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত আছে। বাহিরের সব কাজ এখন বন্ধ , অফিস বন্ধ , অনেকেই অফিসের কাজ বাসায় বসে করতে হচ্ছে। যারা অফিস এর কাজ বাসায় করছেন, তাদের ছেলে মেয়ে স্বামী সংসার যাবতীয় ঘরের কাজ করে অফিসের কাজ করে দিন রাত কিভাবে যাচ্ছে তারা তা বুঝতে পারছেনা।

এই গেল একশ্রেণীর কথা….।

আরেক শ্রেণী যাদেরকে আমরা ছেলে বা পুরুষ বলে থাকি।
জাতিগতভাবে তারা ছোটবেলা থেকেই ঘরের বাইরে থাকে বেশিরভাগ সময়। দিনে রাতে যেকোনো সময় তারা বাড়ির বাইরে যেতে পারে, আসতে পারে। তাদের তেমন কোন সমস্যা হয় না। এই দিক থেকে ছেলেদের ঘরবন্দি থাকাটা একটু কষ্টকর। তাদেরকে ও মেয়েদের মত অফিসের কাজ গুলো বাসায় করতে হচ্ছে। বেশিরভাগ অফিস ভার্চুয়ালি খোলা। তবে এখন দিন পাল্টেছে, সময়ের সাথে সাথে ছেলেরাও বাসায় অনেক ছোট ছোট কাজ করে যেমন: ঘর মোছা ,ঘর ঝাড়ু দেয়া, রান্না করা, সন্তানকে সময় দেয়া, ছোট ভাইবোনদের সময় দেয়া। এই কাজগুলো গ্রাম কিংবা শহরে সব জায়গায় ছেলেদেরকে এখন করতে দেখা যায়। ছেলেদের ঘরবন্দি থাকাটা একটু কষ্ট হলেও খারাপ যাচ্ছে না দিন পার হয়ে যাচ্ছে।

আমরা তো সবাই যে যার মতো করে ঘরেবন্দি জীবন পার করছি ।এসবের মধ্যে একটা শ্রেণি আছে তাদের কথা কি আমরা ভেবে দেখেছি !!

তারা কিভাবে দিন পার করছে। আমরা কি তাদের মানসিক অবস্থার কথা চিন্তা করেছি। শারীরিক বিভিন্ন হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে যে শ্রেণীটি নিজেদেরকে শিশুও বলতে পারছেনা যুবকও বলতে পারছেনা।

কোনো ড্রেস পড়লে বারংবার আয়নার দিকে তাকায় তাকে মোটা লাগছে, বেশি বেশি শুকনো লাগছে কেমন লাগছে ? বেশি খাবার খেতে চায় না মোটা হয়ে যাবে ভেবে বা অতিমাত্রায় খাবার খায়। যারা বাবা মা পরিবারের সাথে থেকেও নিজেকে একা মনে করে। নিজের ভেতরের মানুষটাকে খোঁজার চেষ্টা করে, সে কে ?

তার কি জানে? কেন হচ্ছে তাদের শরীর ও মনে এরকম পরিবর্তন হচ্ছে? যারা নিজেদেরকে খুব অসহায় অনুভব করে। যারা মানুষের সাথে কথা বলতে লজ্জাবোধ করে তাদের এই শারীরিক পরিবর্তনের কারণে। এ সময় যাদের সবচেয়ে ভালো বন্ধু তার সমবয়সীরা। যাদের সারাদিন কাটতো বিভিন্ন কাজ কর্মের মধ্যে, সুন্দর একটা রুটিন লাইফ এর মধ্যে দিয়ে ।

হুম আমি তাদের কথাই বলছি যাদের বয়স ১৩ থেকে ১৬ এর মধ্যে আমি সেই কিশোর-কিশোরীদের কথাই বলছি। আমি বয়ঃসন্ধিকালের তরুন-তরুনীদের কথাই বলছি।

আমার জানতে খুব ইচ্ছে করছে তারা কিভাবে ঘরবন্দি জীবন পার করছে? তারা কি তাদের হাতের মোবাইল বা বাবা-মামার মোবাইল টাকে সবচেয়ে আপন বন্ধু হিসেবে বেছে নিয়েছে!! তখন কি তাদের সারাটা দিন কাটছে মোবাইলের মধ্যে। তারা কি মানসিকভাবে ভালো আছে ? আমরা তো আমাদের ভালোলাগা-মন্দলাগা প্রকাশ করতে পারছি। আবার শিশুরা যেমন বাবা মায়ের সাথে বলতে পারছে। হাসবেন্ড ওয়াইফ কে বলতে পারছে। ভালো না লাগার কথা গুলো। এই বয়সে ছেলে মেয়েগুলো তারা কি তাদের বাবা-মাকে বলতে পারছে তাদের ঘরে থাকতে খারাপ লাগছে। হয়তো বা হ্যাঁ হয়তোবা না । আমরা যারা তাদের আশেপাশে আছি। যারা বাবা- মা , ভাই- বোন আছি আমরা তাদেরকে এই কিশোর-কিশোরীদেরকে। এ অবস্থায় আমরা মানসিকভাবে সাহায্য করতে পারি।

মানসিক শক্তি দিয়ে তাদেরকে মোবাইলের মধ্যে ঠেলে না দিয়ে বাস্তবের সাথে সম্পর্ক গড়তে সাহায্য করতে পারি

কিছু ভাবনা শেয়ার করলামঃ

১. তারা যখন পড়তে বসে তাদের সাথে বসে একই রুমে অফিসের কাজগুলো করতে পারি।

২. মোবাইলের মাধ্যমেও অনেক ক্রিয়েটিভ কাজ করা যায়। সেই কাজগুলো করতে উৎসাহ দেয়া। যেমনঃ ভিডিও এডিটিং। অথবা সচেতন মুলক ভিডিও তৈরি করতে।

৩. একই সাথে বসে ভালো ভালো মুভি দেখতে পারি।

৪. বাসার ছোট ছোট কাজে তাদেরকে ইনভলভ করা। সেটা হতে পারে রান্নার কাজ, সবজি কাটা হতে পারে, কাজ করার পরে অবশ্যই তাদেরকে খুব বেশি প্রশংসা করা।

৫. ধর্মীয় কাজে বাসার সবার সাথে তাদেরকেও করতে উৎসাহ দেয়া ।

৬. ছোট ছোট শারীরিক ব্যায়াম প্রতিদিন সবাই মিলে একসাথে তাদেরকে নিয়ে করা।

৮. ছোট ভাই বোনদের সাহায্য করতে তাদেরকে উৎসাহ দেয়া

৯. তাদেরকে হুকুম না দিয়ে একটু অন্য ভাবে দরদ দিয়ে বলে কাজে ইনভলভ করা ।

সর্বোপরি বলব ঘরে থাকি, নিজে বাঁচি, পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাঁচি। সবাই সবার প্রতি যত্নশীল হই। পরিবারকে নিয়ে একসাথে থাকার এরকম সময় হয়ত আর পাবেন না।

 

শিশুর আত্মহত্যা ‘খাবারের অভাবে’

শিশুর আত্মহত্যা ‘খাবারের অভাবে’


নারী সংবাদ


সিরাজগঞ্জের বেলকুচি পৌর এলাকায় আফরোজা খাতুন (১০) নামে এক শিশু আত্মহত্যা করেছে। শুক্রবার বিকেলে গলায় ফাঁস নিয়ে নিজ বাড়িতে সে আত্মহত্যা করে। স্বজনরা দাবি করেছেন, কয়েকদিন ধরে অনাহারে পরিবারটি। খাবারের জন্য কান্নাকাটি করায় পিতা থমক দেন আফরোজাকে। তারপরই ঘটে আত্মহত্যার ঘটনা। খাবারের অভাবে শিশু মৃত্যুর ঘটনা এলাকায় প্রতিক্রিয়া তৈরী করেছে।

সূত্র জানায়, আফরোজার পিতা আলম শেখ পেশায় তাঁত শ্রমিক। থাকেন কামারপাড়া ওয়াপদা বাঁধে। দুস্থ এ পরিবারটির সন্তান আফরোজা আত্মহত্যা করেছে মূলত ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে। শুক্রবার বিকেলে সে কয়েক দফা খাবার চেয়েছে বাবার কাছে। কিন্তু খাবারের বদলে ধমক শুনতে হয়েছে শিশুকে।

স্বজনরা দাবি করেছেন, তাঁত শ্রমিক আলম শেখের কারখানা বন্ধ দশদিন। জমা টাকায় ৪/৫দিন সংসার চললেও গত কয়েকদিন কার্যত অনাহারে ছিলেন শিশুসহ পরিবারের সদস্যরা। এ সময়ে আলম পাননি সরকারি অথবা বেসরকারি সহায়তা। কেউই খোঁজ নেননি। আফরোজার মৃত্যুর পর অনেকে এসেছেন বাড়িতে। পৌর মেয়র শনিবার খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন। ওয়াপদা বাঁধে প্রায় ৫ ‘শ পরিবারের বাস।  জন প্রতিনিধিরা তাদের অনেকের আইডি কার্ড নিয়ে গেলেও ত্রাণ সহায়তা মেলেনি।

বাবা আলম শেখ বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে প্রশাসন কড়াকড়ি করছে। তাই দশদিন ধরে কাজ করতে পারছিনা। ঘরেই শুয়ে বসে দিন কাটাচ্ছি। হাতে নগদ টাকা নাই,তাই চালডাল কিনতে পারিনি। ঘরে খাবার নেই বলে মেয়ে কান্নাকাটি করছিল। আমি তাকে ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম। এরপর মেয়েটা আত্মহত্যা করেছে।’

বেলকুচি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নূর-এ-আলম বলেন,’শিশুর পরিবারের কোন অভিযোগ না থাকায় লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।’

বেলকুচি পৌরসভার মেয়র আশানূর বিশ্বাস বলেন, ‘কর্মহীন দুস্থ মানুষের জন্য সরকারি সাহায্য অপর্যাপ্ত। সে কারণে সকল মানুষকে একসাথে ত্রাণ দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। খাদ্য সহায়তা আরো বাড়ানো দরকার।’

বেলকুচির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত-ই-জাহান বলেন, ‘প্রথম দফায় পরিবারটিকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছিল। তারপরও কেন এ ধরণের ঘটনা ঘটেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শনিবার আবারও পরিবারটিকে ১০ কেজি চাল, ডাল, তেল,পেঁয়াজ, লবণ ও আলু দেওয়া হয়েছে।’

সুত্রঃ কালের কন্ঠ।

 

মানুষ কেন মানুষকে ছেড়ে যায়? যায়ই? কেন?

মানুষ কেন মানুষকে ছেড়ে যায়? যায়ই? কেন?


সানজিদা সিদ্দিকী কথা


আমি হয়তোবা তখন সতেরো বছরের হবো। স্বপ্ন নিয়ে অস্থির হয়ে যাবো এমন বয়স আমার না।কিন্তু একটা অদ্ভুত স্বপ্ন আমি দেখেছিলাম,ভেতরটা ওলটপালট করে দেবার মত স্বপ্ন। আমি একটা মসজিদে বসে, হঠাত কোথা থেকে একটা ছোট মেয়ে হন্তদন্ত হয়ে আমার কাছে ছুটে আসলো। এইটা কোন অদ্ভুত ব্যাপার না তবে যে প্রশ্নটা করেছিলো সেটাতে আমি হকচকিয়ে গেলাম।
“মানুষ কেন মানুষকে ছেড়ে যায়? ছেড়ে যায়ই? কেন? কেন?

প্রশ্নটা অবশ্যই খুব ব্যক্তিগত ছিল কিন্তু সাথে সাথেই আমি বুঝে গেলাম, এই প্রশ্নের জন্য আমিই কেন আসলে।
সত্যি বলতে কি, আমি মানুষটা এমন যে সবকিছুতেই বড় বেশি মাত্রায় জড়িয়ে যায়।

সেই ছোটবেলা থেকেই আমি কেমন জানি। প্রিস্কুলে আমার সাথের বাচ্চাদের বাবা মা যখন ওদের স্কুলে দিয়ে যেতো কিভাবে জানি ওরা সহজভাবেই নিতো। নিতে পারতাম না আমি। আমি কান্নাকাটি করে হুলুস্থুল বাধিয়ে ফেলতাম, কি বেইজ্জতি ব্যাপার।কিন্তু আমার কান্না থামায় সাধ্য কার?
বড় হতে হতেই আরেক আলামত শুরু করলাম। আমার আশেপাশের যা কিছু আছে সবকিছুর প্রতিই প্রবল মায়া আমার। সেই ক্লাস ওয়ান থেকে, আমি ভালো বন্ধু খুঁজে বেড়াতাম আর মনে মনে তার কাছেই সুখের চাবিটা দিয়ে রাখতাম। বড় হতে হতে বন্ধুদের সাথে কিছু হলেই দুঃখের পশরা সাজিয়ে বসে যেতাম, ভাবভঙ্গী এমন আমার থেকে দুঃখি মানুষ জগতসংসারে নাই। সুন্দর জায়গা, সুন্দর ঘটনা, পুরাতন ছবি, প্রিয় সময়গুলো আর বন্ধুরা — সব কিছুর সাথে মনটাকে একেবারে সুপারগ্লুর মত জুড়ে রেখে দিতাম। এইসব কিছুর বাইরে নিজেকে কল্পনা করতেও আমার বুক কাঁপতে থাকতো। নিজেকে নিঃস্ব মনে হতো।
একটু ওদিক হলে যেই অনুভূতিটা আমার হতো সেটাকে সাধারণ দুঃখ কিংবা হতাশা ঠিক বলা চলে না, ব্যাপারটা আমাকে একেবারে ভেতরে ভেতরে গ্রাস করে ফেলতো খেয়ে ফেলতো। আর একেকটা দুঃখ থেকে আমি কখনো পুরোপুরি উঠে দাঁড়াতে পেরেছিলাম এরকম আমার মনে পড়ে না। অনেকটা যে ফুলদানীটা আমি টেবলের কোনায় রেখেছিলাম, একটু টোকা লাগলো আর ভেঙে খানখান, ভাঙা ফুলদানিটা যেমন কখনোই ঠিক করে জোড়া লাগে নি, তেমন।

দোষটা কাচের ফুলদানির ও না, আবার পড়ে ভেঙে গিয়েছিলো সেটাতেও না বরং আমি কাচের মত একটা জিনিসকে টেবলের একেবারের কোনায় রেখে দিয়েছিলাম।

আমি আমার মনের মত একটা স্পর্শকাতর জিনিসের সাথেই সবচেয়ে বড় অন্যায়টা করেছিলাম। আমি আমার জীবনে আসা প্রত্যেকটা মানুষকে, প্রত্যেকটা সম্পর্ককে এমন এক দানবীয় ক্ষমতা দিয়ে রেখেছিলাম যে এরা চাইলে আমাকে হাসাতে পারে, চাইলে কাঁদাতে পারে আর চাইলে একেবারে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে পারে। আমি সবকিছুর উপর নিজেকে নির্ভরশীল করে নিজেকে এতটাই অপমান করতাম যে, হতাশা, নিরাশা, একের পর এক নিজেকে চূর্ণবিচূর্ণ করবার জন্য সব কিছুকে কার্ড হাতে দাওয়াত দিয়ে আসতাম।

আমার এইসব কষ্টের কারন হিসেবে অন্য মানুষকে দোষারোপ করা অনেকটা ফুলদানি ভেঙে ফেলবার জন্য মাধ্যাকর্ষণকেই শাপশাপান্ত করবার মত হাস্যকর। আমরা কখনই শুকনা পাটখড়ি কে অভিযুক্ত করতে পারি না, এতে ভর করে পাহাড় বাইতে গিয়ে কেন ভেঙে পড়েছে, এই বলে!

আমাদের ওজন তো একজন ই নেয়ার যোগ্য। আমার রব।

…………নিঃসন্দেহে হেদায়াত গোমরাহী থেকে পৃথক হয়ে গেছে। এখন যারা গোমরাহকারী ‘তাগুত’দেরকে মানবে না এবং আল্লাহতে বিশ্বাস স্থাপন করবে, সে ধারণ করে নিয়েছে সুদৃঢ় হাতল যা ভাংবার নয়। আর আল্লাহ সবই শুনেন এবং জানেন।

(-Sura Al-Baqarah, Ayah 256)

এই নিরীহ আয়াতটাতে একটা কঠিন শিক্ষা আছে। পৃথিবীতে একটি মাত্র হাতই আছে যা কখনো ছেড়ে যাবে না। একটি মাত্র জায়গাই আছে ভরসা করবার মত। নিজের আত্মসম্মান, আনন্দ, নিরাপত্তা শুধু এই একটা সম্পর্কেই পাওয়া যাবে। আর কোথাও না, একেবারে কোথাওই না।

যদিও পৃথিবী এমন এক জায়গা যেখানে মানুষ এইসবগুলো নিজের রব বাদে আর সবখানে খুঁজে বেড়াচ্ছে। ক্যারিয়ার, টাকা, ক্ষমতাতে কেউ খুঁজছে।আবার আমার মত কিছু উচ্চপর্যায়ের গাধা আরো ভয়ংকর জিনিসে সুখটাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। কিসে?
সম্পর্কে।একে অপরের সাথে সম্পর্কে।
এলিজাবেথ গিলবার্ট তার বইতে খাবার,প্রার্থনা, ভালোবাসাতে আনন্দ খুঁজবার কথা বলেছেন, বিশ্ব চষে বেড়ানোর কথা বলেছেন পূর্নতা পেতে। উনি বলেছেন ভালোবাসা, সম্পর্ক, ধ্যান কিংবা খাবারে তার পূর্নতা খুঁজতে খুঁজতে সফলভাবে অসফল হবার গল্প।

আর ঠিক এই কাজটাই আমি করেছি জীবনভর। ভুলভাল জিনিসে মধ্যে নিজের ভেতরকার শুন্যতা পূরন করতে গিয়ে আরো বেশি শূন্যতায় হারিয়ে গেছি বারবার।
এতে কোন সন্দেহই নাই, ছোট্ট মেয়েটা যে প্রশ্নটা আমাকে স্বপ্নে করেছিল সেটার উৎপত্তি ক্ষতি থেকে, হতাশা থেকে, হারানোর বেদনা থেকে, কোন কিছু প্রবল আকাঙ্ক্ষা নিয়ে খুঁজতে গিয়ে শুন্য হাতে ফেরত আসার গল্প থেকে।
ব্যাপারটা ঠিক তখনই ঘটে যখন মানুষ খালি হাতে ক্রংকিটের দেয়াল খুঁড়ে কিছু বের করতে যায়।

সে তখন শুধু খালি হাতেই ফেরত আসে না বরং রক্তাক্ত, ভাঙা হাতে ফেরত আসে। এগুলো আমি শুধু পড়ে আর শুনে শিখে ফেলেছি এমন ভাববার কোন কারন নেই। খুব কষ্ট পেয়ে,খুব চেষ্টা করে, বারেবারে, এরপরেই বুঝতে পেরেছি।

আর তাই ছোট মেয়েটার প্রশ্নটা আমার নিজের প্রতি ছুড়ে দেয়া নিজেরই প্রশ্ন ছিল।

প্রশ্নটা ছিলো আসলে দুনিয়ার ধরন নিয়েই। দৌড়াতে থাকা সময়ের সাথে অযথা নৈকট্য নিয়ে। যেই দুনিয়ার মানুষগুলো ছেড়ে যেতে পারে, মরে যেতে পারে তাদেরই সাথে কেন নিজেকে এই শক্তভাবে জুড়ে দেয়া? এটা নিজের গর্ত নিজে খোঁড়ারই নামান্তর।

অথচ এটা খুবই প্রকৃতি বিরুদ্ধাচরণ। মানুষের গড়নই এমন, আমরা ভালোবাসা খুঁজতে থাকি, একেবারে নিখুঁত কিছুর সন্ধানে থাকি যেটা কিনা চিরস্থায়ী ই না। হাস্যকর। আমরা স্থায়ী কিছু চাই। কেন চাই?

কারন আমাদের এই দুনিয়ার জন্যই প্রস্তুত করা হয় নি। আমাদের বাড়িগুলো তো জান্নাতে রয়ে গেছে, যে বাড়ি চিরস্থায়ী আর নিখুঁত। তাই স্থায়ী কিছুর আকাঙ্ক্ষা আমাদের ভেতর মজ্জাগত ভাবে রয়ে গেছে।

বিপত্তিটা বাধে যখন সেই জিনিসটা আমরা এইখানে খুঁজতে যাই। আমরা তৈরি করে ফেলি যৌবন ধরে রাখবার প্রসাধনী, প্লাস্টিক সার্জারি করি। কিন্তু ফলাফল?

শুধুমাত্র শুন্য।আর কিছুই না।

তাই আমরা যদি এই দুনিয়াকে খুব ভালোবেসে ফেলি এটা আমাদের কষ্ট ছাড়া আর কিছুই দিবে না। কিচ্ছু না।

কারন দুনিয়ার সংগা….. নশ্বরতা। মরীচিকা।

কেউ যদি আগুন থেকে পানি বের করবার চেষ্টা করে পুড়ে ছাড়খাড় হওয়া ছাড়া কি থাকবে তার জীবনে? কিচ্ছু না।

যখনই দুনিয়া থেকে স্থায়ী আর নিখুঁত কিছু খোঁজা বন্ধ করতে পারবো তখনই দুনিয়াও আমাদের কষ্ট দেয়া বন্ধ করে দিবে।

আরো একটা জিনিস এসবের বাইরেও মনে রাখা খুব জরুরী, কারন ছাড়া কিচ্ছু ঘটে না এখানে। ভাঙাচোরা হৃদয়ও কারনেই ভাঙে। ক্লেশে জর্জরিতা মন আর তার ভেতরে ফুটতে থাকা ব্যথাগুলো শিক্ষা আর সাথে আরেকটা জিনিস। আরেকটা জিনিসের চিহ্ন। এটা ইংগিত করে কিছু তো গড়বড় আছে! কিছু তো বদলানো দরকার। অনেকটা আগুনে জ্বলতে থাকা হাত জানান দেয়, হাত সরাও বাছা, পুড়ে যাচ্ছে।

এই কষ্টগুলো আমরা যে দুনিয়ার সাথে সেঁটে আছি সেটা বোঝায়, এই কষ্ট টা সেঁটে থাকা আমাদের জোর করে উপড়ে ফেলার চিহ্ন। ভালোবাসার মানুষটা যখন বারেবারে কষ্ট দিয়ে রক্তাক্ত করে, তখন একপর্যায়ে আমরা সরে যাই। দুনিয়াও রবের প্রিয় মানুষগুলোকে কষ্ট দিয়ে দিয়ে নিজের থাকে সজোরে ছুড়ে ফেলে দেয়।

#ভাবানুবাদ

#Sanjida_Kotha

#Reclaim_Your_Heart_by_YasminMogahed

#repost

 

করোনার এই মহামারীর সময় শিশুদের জন্য কি করবেন পর্ব-২

করোনার এই মহামারীর সময় শিশুদের জন্য কি করবেন পর্ব-২


স্বাস্থ্যকথা


শিশুদেরকে বিভিন্ন সুন্দর সুন্দর গল্প বলুন যেমন এখন কোন বিজ্ঞানী করোনার ঔষধ আবিষ্কার করতো তাহলে পরিস্থিতি কি রকম হতো? আমরা কিভাবে বিজ্ঞানী হতে পারি। চারপাশে ডাক্তাররা কিভাবে মানুষের সেবা করছে?

আসুন আরো কিছু বিষয় খেয়াল করিঃ

সতর্ক থাকুন
সর্তক থাকুন। করোনার বর্তমান পরিস্থিতিতে আপনি ঘরে অবস্থান করুন এবং শিশুদের প্রতিও সর্তকা অবলম্বন করুন। অতিরিক্ত দায়িত্বশীল হতে গিয়ে বাড়াবাড়ি করা থেকে বিরত থাকুন। অতিরিক্ত মিডিয়া আসক্তি বন্ধ করুন। শিশুদের ইউটিউব এবং অতিরিক্ত ফেসবুক ব্যবহার করাও কমিয়ে আনুন। এছাড়া তাদেরকে টিভি ও কম্পিউটারে গেম খেলা থেকে সময় কমিয়ে দিন। পাশাপাশি কেন সময় কমিয়ে নিয়ে আসছেন তা বুঝিয়ে বলুন। এই সময়টি বাচ্চাদের বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত রাখুন। আপনিও বাচ্চাদের সাথে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা অংশ নিন। তাদেরকে প্রতিদিন কয়েকবার ২০ সেকেন্ড করে হাত ধোয়ানো। নিয়মিত ভাবে নখ এবং তাদের চুলগুলোকে পরিচ্ছন্ন রাখুন। আপনি বাসায় থাকাকালীন এই মূল্যবান সময়গুলোকে কাজে লাগিয়ে আপনার সন্তানকে আর্দশ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলুন।

সঠিক তথ্য দিয়ে বুঝিয়ে বলুন
শিশুদের কোন কাজ হুট করে চাপিয়ে না দিয়ে বরং কেন কাজটি করবে তা সঠিক তথ্য এবং সুত্র ধরে ধরে বুঝিয়ে বলুন। উদাহরণসরূপঃ সত্য কথা বলা। কেন সত্য কথা বলতে হবে? সত্য কথা না বললে কি কি ক্ষতি হয়? আবার আমরা এখন কেন বাসা থেকে হুটহাট ঘুরতে বের হতে পারব না। করোনা কি? কেন মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়?

অভ্যাস গড়ে তুলুন
অভ্যাস গড়ে তোলার সবচেয়ে সুন্দর সুযোগ। বর্তমানে আপনি বাসায় আছেন আপনার ছোট্ট শিশুকে, বই পড়া, সালাম দেওয়া, বড়দের সাথে কথা বলা, ছোটদের স্নেহ করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। করোনা পরিস্থিতির কারণে, শিশুদেরকে বারবার হাত ধোয়া। হাঁচি ও কাশির সময় রুমাল বা কনুই দিয়ে মুখ ঢাকা শিখানো। তাদেরকে বুঝিয়ে বলুন, পরিচ্ছন্ন কর্মীরা কিভাবে দিনের পর দিন কষ্ট করছেন। তারা সকালে উঠে কিভাবে আমাদের চারপাশে পরিচ্ছন্ন রাখছেন। তাদের সাথে আমাদের আচরণ শিখান। সুন্দরভাবে সবার সাথে কথা বলা বিষয়গুলো ধীরে ধীরে অভ্যাসে পরিনত করুন।

রুটিন মেনে চলুন
একটা সুন্দর রুটিন তৈরি করে ফেলুন। শিশুদের জন্য প্রতিটি সময়ই যেহেতু শিক্ষণীয়। তাই এই সময়টায় শিশুদের রুটিনের আওতায় নিয়ে আসুন। কখন ঘুম থেকে উঠবে। কখন নাস্তা করবে। পড়তে বসা, ছোট ছোট কিছু শারীরিক ব্যায়াম করানো যেতে পারে। শিশুরা খেলতে খেলতে অনেক কিছু শিখতে পারে তাই আপনিও খেলাধুলায় অংশ নিতে পারেন।

সুত্রঃ বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফর চাইল্ড এন্ড এডোলেসেন্ট মেন্টাল হেলথ (BACAM)

 

ডাক্তারদের এসব কি কাহিনী !!!

ডাক্তারদের এসব কি কাহিনী !!!


ডা. মারুফ রায়হান খান


১. “আমার প্রতিবন্ধী বড় ছেলেটা রাতে আমার সাথে ঘুমাতো। এখন ঘুমায় না তিন সপ্তাহ হলো। আমি বাইরে কাজ করি, ভয়ে ওকে রাতে কাছে রাখি না। ওর ছবিটা আমার কাভার ছবি, সেটা দেখি সারাদিন।

মেয়েটা ঘরে ঢুকলে দৌড়িয়ে চুমু খেতো। আসতে দিই না।
আমি শক্ত মানুষ তারপরও কালকে কাঁদলাম অনেকক্ষণ।”

– জনৈক চিকিৎসক বাবা।

২. “বাবা মারা যান গত বছর। এখন আমার দোয়া চাওয়ার ভান্ডার আমার মমতাময়ী মা। মা-এর কাছে যাব বলে ঠিক করে রেখেছিলাম। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সবার ছুটি আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। মা-কে নিজের কাছেও নিয়ে আসতে পারছিনা। সারাদিন হাসপাতালে নানা রকমের রোগী দেখা লাগে। মা বয়স্ক মানুষ বাসায় আবার আমার থেকে যদি মায়ের কোন ক্ষতি হয়, তাই। জানি না মায়ের সাথে আবার কবে দেখা হবে।

– জনৈক চিকিৎসক সন্তান।

৩. “দরজা খুলে যোয়ানা যখন দৌড়ে আমার উপর ঝাপিয়ে পড়তে নিলো তখন চারপাশ থেকে এক সাথে সবাই বলে উঠলো, “এটা করা যাবে না,যোয়ানা।”
এমনকি তার দৌড় দেখে আমি নিজেও ভয়ে কয়েক পা পিছিয়ে গেলাম।
যোয়ানা তখন আমাকে বলে উঠলো,

– কোথা থেকে আসছো, আব্বু?
– হসপিটাল থেকে আসছি, বাবা।
– হসপিটালে কি করছো, ইনজিকশন দিছো?
– হুম ইনজিকশন দিছি।
– তুমি আমার সাথে ঘুমতে আসছো আব্বু?
– না বাবা।আমি থাকবো না।

মেয়েটা বার বার তখন মন খারাপ করে আমাকে বলছিলো, “আমাকে আদর করো, এখানে থাকে যাও।” এমনকি যখন চলে আসার জন্য বের হয়ে যাচ্ছিলাম তখন এই একই কথা বলতে বলতে ও গেইট পর্যন্ত চলে আসলো।

এমনকি যখন লিফটেও উঠছিলাম তখনও ও দরজা ধরে দাঁড়িয়ে রইলো। আর যেনো ভাবছিল কীভাবে তার পাষণ্ড বাবা ছোট্ট মনটা ভেঙে লিফটের দরজার ওপাশে হারিয়ে যায়।

শুধু একটা কথাই মনে হলো, ডাক্তার না হলে হয়তো এই খারাপ সময়ে ছোট্ট যোয়ানার ছোট্ট মনটা আমার ভাঙা লাগতো না।
অন্য সবার মত বাসায় বসে বসে ডাক্তারকে গাল মন্দ করে ফেসবুক গরম করে ফেলা যেতো।”

– জনৈক চিকিৎসক বাবা।

৪. “আমার মায়ের মুখে প্রথমবারের মতো শুনলাম যে তোকে ডাক্তারি পড়ানো ঠিক হয়নি। তাহলে তুইও আমাদের সাথে আজ ঘরে থাকতে পারতি।”

– জনৈক চিকিৎসক সন্তান।

একজন করোনা আক্রান্ত চিকিৎসক আইসিইউতে।

 

করোনার পরিস্থিতিতে শিশুদের জন্য কি করবেন পর্ব-১

করোনার পরিস্থিতিতে শিশুদের জন্য কি করবেন পর্ব-১


স্বাস্থ্যকথা


শিশুদের পরিচর্চার প্রয়োজন, যে কোন দূর্যোগ বা মহামারীর মতো খারাপ সময়। বর্তমান করোনা পরিস্থিতি, এর ব্যতিক্রম নয়। এ সময় বয়স্কদের পাশাপাশি ছোটদেরও প্রয়োজন বাড়তি খেয়াল। শিশুদের সঠিক তথ্য বুঝিয়ে বলার পাশাপাশি তাদের অবসর এই সময়কে ভালো কাজে অতিবাহিত করা শিখানো। শিশুদের আদব-কায়দা শেখানো।

যে বিষয়গুলোর উপর আমরা গুরুত্ব দিব-

১. অভয় দেওয়া
করোনা মহামারীর পরিস্থিতিতে বড়দের পাশাপাশি শিশুরাও আতঙ্কিত হয়ে যাচ্ছে। তাদের অভয় দিন। সঠিক তথ্য বাচ্চাদেরকে, বাচ্চাদের বয়স অনুযায়ী বুঝিয়ে বলুন। তাদেরকে বুঝিয়ে আরো বলতে পারেন যে, বাচ্চাদের জন্য করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তুলনামুলক কম। তবে বয়স্ক আত্মীয়রা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

২. শিশুর দায়িত্ব
শিশুদেরকে তাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিন। কাজ করার সুযোগ দিন। যাতে করে তারা বুঝতে পারে অন্যদের সেবা করার গুরুত্ব। বয়স্ক আত্মীয়-স্বজনদের ফোন করে খোঁজ-খবর নেওয়ার ব্যাপারে শিশুদেরকে আগ্রহী করে তুলুন। ঘরের ছোটখাট কাজে শিশুদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করুন। তাদের কাছে পরামর্শ চান এবং তাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা দিন। এটায় মুলত শিশুর ক্ষমতায়ন।

৩. শিশুদেরকে ব্যস্ত রাখুন
স্কুলে যাওয়া বাচ্চাও যেহেতু এই সময় বাসায় অবস্থান করছে তাই বাচ্চাদের বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রাখুন। তাদেরকে ছোট ছোট কাজ করতে উৎসাহ দিন। বিভিন্ন জিনিস বানানো শিখান। আপনিও তাদের সাথে কাজ করুন। খেলুন, রান্নাতে তাদের সাথে নিন। ঘর গুছানো, ঘর পরিষ্কার রাখার বিষয়টিও তাদের সাথে করতে পারেন। বাচ্চাদেরকে ছোট ছোট কাজ দিন। তাদের সহযোগিতা নিন। গাছের যত্ন নিতে তাদের সহযোগিতা নিন। এবং তাদের সাথে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ছোট করে গল্প করুন।

. নিজে শান্ত থাকুন
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই পরিস্থিতিতে নিজেকে শান্ত রাখুন। নিজের যত্ন নিন। মনে রাখবেন, শিশু কিন্তু আপনান আচরণ অনুকরণ করছে।

৫. শিশুদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ
শিশুদের এই সময় ঘরে বসে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা শিখান। শিশুদেরকে তাদের আবেগ সম্পর্কে ধারণা দিন। তাদরে বলুন কোন আবেগটি রাগ, কোনটি অভিমান, কোনটি জেদ & কোনটি ভয় এ সম্পর্কে তাদেরকে আলাদা ভাবে বুঝিয়ে বলুন। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরিস্থিতি আবেগের পরির্বতন হয় তা বুঝিয়ে বলুন।
এই বিূষয়গুলো নিয়ে বাচ্চাদের সাথে অল্প অল্প করে বাচ্চাদের বুঝার ভাষা ব্যবহার করে বুঝিয়ে বলুন। এবং শিশুদেরকে রাগ হলে তাদের কি কি ক্ষতি হতে পারে? অতিরিক্ত জেদের কারণে তাদের কি সমস্যা হয় তাও বুঝিয়ে বলুন। শিশুদেরকে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য, নিঃশ্বাসের ব্যায়াম, ঠান্ডা পানি খাওয়া এবং যে জায়গাতে রাগ হয়েছে ওখান থেকে সরে গিয়ে, অন্য জায়গায় সরে আসার বিষয়টি বুঝিয়ে বলুন। তাদের পাশে বসে তাদেরকে বিষয়টা ধীর স্থিরভাবে বুঝান।

সুত্রঃ বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফর চাইল্ড এন্ড এডোলেসেন্ট মেন্টাল হেলথ (BACAM)

চলবে….

 

করোনায় আক্রান্ত মা কি সন্তানকে দুধ খাওয়াতে পারবেন?

করোনায় আক্রান্ত মা কি সন্তানকে দুধ খাওয়াতে পারবেন?


স্বাস্থ্যকথা


প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে রীতিমতো যুদ্ধে নামতে হয়েছে চীনকে। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক নিয়েও গবেষণা করেছে দেশটি। সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে গর্ভবতী নারীদের ওপর কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করেছে চীন। এসব গবেষণার পর চীন সিদ্ধান্ত নিয়েছে গর্ভবতী কোনো নারী করোনায় আক্রান্ত হলেও তার গর্ভ সুরক্ষিত। চীনে এ বিষয়ে ঠিক কী ধরনের পরীক্ষা হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন।

দেশটির উহান প্রদেশে সর্বপ্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছিল। এই আক্রমণের প্রভাব থেকে বাঁচতে কী উপায় বের করা যায় তা নিয়েও চীনই প্রথম থেকে লাগাতার গবেষণা করে। সেই গবেষণার ফল তারা প্রকাশও করেছে একাধিক জার্নালে। সম্প্রতি আমরাও যেহেতু এই ভাইরাসের কবলে পড়েছি, সে জন্য মরণব্যাধি এই ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে আমাদের সেসব জার্নালই প্রধান ভরসা।

মোটামুটি তিন থেকে চাররকমের পরীক্ষা চীনে করা হয়। গর্ভবতী নারীদের থেকে তার ভ্রূণে অনবরত যে খাদ্যরস বাহিত হচ্ছে সেই রসের পরীক্ষা করে, শিশুর জন্মের পর তার শরীর থেকে রক্ত নিয়ে, শিশু ও তার মায়ের মধ্যে সংযোগকারী নাড়ির থেকে রক্ত নিয়ে এবং গর্ভে ভ্রূণ যেখানে থাকে তার চারপাশে একরকম জলীয় পদার্থ থাকে। এই সব কিছু পরীক্ষা করে দেখা গেছে করোনা আক্রান্ত কোনো মায়ের শরীর থেকে গর্ভস্থ ভ্রূণ বা শিশুর শরীরে করোনা ভাইরাস প্রবেশ করতে পারেনি।

এরপর খুব স্বাভাবিকভাবেই এরপর প্রশ্ন ওঠে জন্মের পর ওই শিশু কি তার মায়ের কাছে থাকবে? তার মায়ের দুধ খেতে পারবে? জবাব দিতে গিয়ে ডাক্তারদের কিছু অংশ মায়ের দ্রুত আরোগ্য এবং শিশুর সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে বলেছেন, শিশু এবং তার মাকে অন্তত ১৪ দিন আইসোলেশনে রাখতেই হবে। কিন্তু অধিকাংশ চিকিৎসকই এর বিরুদ্ধে। তারা জানিয়েছেন, শিশু তার মায়ের কাছ থেকে জন্মের পর ১৪ থেকে ১৫ দিন আলাদা হয়ে থাকলে তাদের সারা জীবনের সম্পর্কের ভিত্তি তৈরি হবে না। তাতে দু-জনেরই ক্ষতি।

অধিকাংশ চিকিৎসকই জোর দিয়ে বলছেন, শিশুকে মা তার বুকের দুধ খাওয়াবেন। তবে শিশুকে কোলে নেওয়ার আগে ভালোভাবে নিজের হাত স্যানিটাইজার দিয়ে ধুয়ে নিবেন। আর দুধ খাওয়ানোর আগে স্তন অবশ্যই ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।

এরপর মুখে মাস্ক পরে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে বুকের দুধ বের করে তা সন্তানকে দিবেন। তাতে কোনও ক্ষতি নেই। তবে সন্তানসম্ভবা নারীরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবেন। প্রত্যেকেই এমন সময় চিন্তায় থাকেন। তাতে এমন একটা পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তা হওয়ারই কথা। যদি নিজের সন্দেহ হয়, সামান্য কাশি জ্বর হয় তবে নিজেই নিজেকে পরিবারের আর পাঁচজনের থেকে আলাদা করে রাখুন। ১৫ পর দেখুন কেমন আছেন।

বর্তমানে আমাদের দেশে এখন ঋতু পরিবর্তনের সময়। এই সময় স্বাভাবিক নিয়মেই জ্বর হয়ে থাকে। তবু ভয় না পেয়ে সতর্কতা অবলম্বন করুন যা কিনা বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকরা বারবার বলে আসছেন। তবে নির্দিষ্ট সময়ের পরও জ্বর না কমলে লালা পরীক্ষা করান। রিপোর্ট নেগেটিভ এলে আর দুশ্চিন্তার কিছু থাকবে না। আর যদি পজিটিভ হয় তবে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করুন।

সুত্রঃ অধিকার।

 

শিশুর বেড়ে ওঠায় মা-বাবার সু-সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

শিশুর বেড়ে ওঠায় মা-বাবার সু-সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ


স্বাস্থ্যকথা


দশ বছর বয়সী রাইয়ান মাঠের এক কোনে বসে আছে। তার সমবয়সী বাচ্চারা মাঠে খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকলেও খেলায় কোন মন নেই তার। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। কী যেন দেখছে। এরমধ্যে তার কয়েকজন বন্ধু তাকে খেলার জন্য ডাকতে আসলেও যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেল রাইয়ানের বাবা আর মায়ের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। প্রায় প্রতিদিনই ঝগড়া হয় তাদের মধ্যে। এমনকি মাঝে মাঝে মারধরও চলে। সবই হয় রাইয়ানের সামনে। এসব দেখে সে অনেকটা ভীত হয়ে পড়েছে। সে এখন কারো সাথে কথা বলতে ভয় পায়। আর তাই এই অল্প বয়সেই এত উদাসীন থাকে রাইয়ান।
মাইশার বর্তমান অবস্থা ঠিক রাইয়ানের মত। পনের বছর বয়সী মাইশা এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। কিন্তু কোনভাবেই সে পড়ায় মন বসাতে পারছে না। স্কুলের মডেল টেস্ট’র রেজাল্টও খুব ভালো করেনি। কিন্তু ক্লাস নাইন পর্যন্ত তার রোল নাম্বার এক থেকে তিনের মধ্যে ছিল সব সময়। সবার কাছেই খুব আদরের ছিল মাইশা। টেষ্টের রেজাল্টের পর স্কুলের ক্লাস টিচার তাকে একলা ডেকে নিয়ে তার কাছ থেকে জানতে চান- কেন এমন হচ্ছে? অনেকক্ষণ তার সাথে কথা বলার পর ক্লাস শিক্ষক জানতে পারেন, মাইশার বাবা-মায়ের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না গত কয়েক মাস ধরে। বাসায় প্রতিনিয়তই ঝগড়া লেগে থাকে। তাই সে মনযোগ দিতে পারছে না পড়াশোনায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধুলা অত্যন্ত জরুরী। শিশুর বিকাশ নিয়ে অধিকাংশ বাবা-মা’ই এখন বেশ সচেতন। তাদের সার্বক্ষনিক চেষ্টা থাকে তাদের বাচ্চাদের সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাবা-মাদের নিজেদের মধ্যকার সমস্যা এত বেড়ে যায় যে, তারা আর বাচ্চাদের দিকে মনোযোগ দিতে পারেন না। আর এই অমনোযোগীতার কারনেই অনেক বাচ্চা অবসাদে ভোগে, খারাপ পথে চলে যায়।
তাদের মতে বাচ্চাদের সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রম এবং ধৈর্য্য। বাচ্চাদের বুঝাতে হবে যে, তারাই বাবা-মায়ের অমূল্য সম্পদ। অত্যন্ত যতœ দিয়ে তাদের বড় করে তুলতে হবে। জীবনের প্রতিটি নিয়ম-কানুন তাদের শেখাতে হবে।
শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মুরাদ হোসেন মোল্লা বলেন, প্রায় সব বাচ্চাই দুষ্টুমি করে। কিন্তু অতিরিক্ত দুষ্টুমির জন্য বাচ্চাদের ভয় দেখালে বা তাদের মারধর করলে সমস্যার সমাধান হয় না। বরং এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। শিশুরা সব সময় একটা আতঙ্কের মধ্যে থাকে। এবং এসব শিশুদের অত্মবিশ্বাষ কমে যায়। তাদেরকে বারবার করে বুঝাতে হবেÑ কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ। শিশুর কথাও খুব মনোযোগ সহকারে শুনতে হবে।
তিনি বলেন, শিশুদের মধ্যে আত্মসম্মানবোধ বাড়িয়ে তুলতে হবে। তাদের সাথে সব সময় আলোচনা করতে হবে। তার চাহিদার কথা, তার ইচ্ছার কথা শুনতে হবে। পাশাপাশি শিশুর ভালো কাজের প্রশংসাও করতে হবে। তাদের পছন্দের বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে।
ডা. মুরাদ বলেন, অনেক বাবা-মা’ই সন্তানদের বাইরে খেলাধুলা করতে দিতে চান না। এটা সন্তানের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে অত্যন্ত বড় বাধা। শিশুরা খেলাধুলা করলে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকে। অন্য বাচ্চাদের সাথে বন্ধুত্ব তৈরী হয়। এতে তার যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ে। শিশু মানসিকভাবেও সুস্থ থাকে।
এছাড়াও সন্তানদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়েও মনোযোগী হতে হবে। তাদেরকে এ বিষয়ে জ্ঞান দিতে হবে। নিজের বিছানা সব সময় পরিষ্কার রাখার শিক্ষা, বইপত্র গুছিয়ে রাখার শিক্ষা তাকে ছোটকাল থেকে দিতে হবে। এছাড়াও বাচ্চাদের সামনে বড়দের কথা বলার সময় অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সব ধরনের আলোচনা শিশুদের সামনে না করাই ভালো। কারণ এতে করে বাচ্চাদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে শিশুদের সামনে বড়দের ঝগড়া-বিবাদ করা যাবে না। বিশেষ করে বাবা-মা’র মধ্যকার ঝগড়া বাচ্চাদের মনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরী করে। অনেক সময় বাচ্চারা অবসাদে ভুগতে থাকে।

সুত্রঃ বাসস।

 

সবজি পেয়াজু

সবজি পেয়াজু


রেসিপি


সাধারণত বাচ্চারা কিছুতেই সবজি খেতে চায় না। সবজির জায়গায় যায়গা করে নিয়েছে বর্তমানে অলিতে গলিতে গড়ে উঠা ফাস্টফুডের দোকানগুলো।

উপকরণ
১. মসুর ডাল এক কাপ,
২. মুগডাল এক কাপ,
৩. মটর ডাল এক কাপ,
৪. পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ,
৫. গাজর কুচি এক কাপ,
৬. বাঁধাকপি কুচি এক কাপ,
৭. মটরশুঁটি কুচি সিকি কাপ,
৮. আলু কুচি এক কাপ,
৯. ধনিয়াপাতা কুচি সিকি কাপ,
১০. কাঁচা মরিচ কুচি ২ টেবিল-চামচ,
১১. লবণ পরিমাণমতো,
১. বেসন ২ টেবিল-চামচ,
১৩. পুঁইপাতা কুচি এক কাপ।

প্রণালি
> সব ডাল ধুয়ে ৩-৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে বেটে নিতে হবে। সব উপকরণ একসঙ্গে মাখিয়ে ডুবো তেলে ভাজতে হবে। গরম গরম পেঁয়াজু পরিবেশন করুন।

রেসিপি: নিউজপেজ ২৪

 

লকডাউনে দিনলিপি

লকডাউনে দিনলিপি-৩০শে মার্চ


হাসনিন চৌধুরী


লকডাউনে অলরেডি দম বন্ধ লাগা শুরু হয়েছে। ইচ্ছে হচ্ছে একটা রিকশা নিয়ে ছোট ভাই এর সাথে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াই, সেই আগের দিনগুলোর মতো।

যদিও লকডাউন তো সবে শুরু হলো… গুনে দেখলাম, মাত্র পাঁচ দিন গেছে। আদৌ কতদিনে শেষ হবে এই বন্দী বন্দী খেলা? সপ্তাহ, মাসে, বছরে?

মাঝে মাঝে ভাবি, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, কাশ্মিরের মানুষেরা দিনের পর দিন, মাসের পর মাস যখন গৃহবন্দী হয়ে থাকে, তাদের কেমন লাগে? বুক ফেটে গেলেও আপন জনদের দেখতে পায় না৷ খাবার ও ওষুধের দোকান বন্ধ থাকে। সাধারণ জ্বর, কাশির জন্যও ওষুধ পায় না?

কেমন লাগে, যখন বছরের পর বছর সে দেশে কোন উৎসব, আনন্দ উদযাপিত হয় না, তারাবী হয় না, হজ্জে যেতে পারে না বা অল্প কিছু লোক একত্র হয়ে ঈদের সালাত পরে?

দম বন্ধ লাগে না?

নাকি অভ্যেস হয়ে গেছে দম আটকে রাখার? বহু বছর তারা বুক ভয়ে শ্বাস নেয় না, হৃদয় থেকে শুধু দীর্ঘশ্বাস দেয়ায় অভ্যস্ত এরা।

এই নিরস্ত্র, অসহায় মানবসন্তানেরা কয়েক যুগ ধরে কেবল দীর্ঘশ্বাসই ফেলেছে, তাদের ভারী নিঃশ্বাসগুলো জমতে জমতে আজ আকাশ ছুঁয়েছে।

মনে আছে, সমুদ্রে ভেসে আসা দেড়/ দু বছরের আয়লান কুর্দির কথা?

সেই যুবকের কথা, যে বোমার আঘাতে প্রাণ হারানো অন্তসত্ত্বা স্ত্রীকে কবরে শুইয়ে দিয়েছিলো, স্ত্রীর সাথে সেদিন মাটি চাপা দিয়েছিলো জীবনের সকল আনন্দ আর স্বপ্নও।

সেই বাবাটার কথা ভুলে গেছেন, মৃত শিশুদের কোলে নিয়ে যিনি পাথরের মতোন বসে ছিলেন?

নিশ্চয় ভুলেন নি ঐ শিশুটির কথা? যে কিনা ছোট্ট জীবনে পৃথিবীবাসীর নিদারুণ নিষ্ঠুরতায় আশ্চর্য ও ব্যাথাতুর হয়ে, মৃত্যুর আগে বলে গিয়েছিলো, “আমি সব বলে দেবো আল্লাহর কাছে!”

হায়, আফসোস….শিশুটি নিশ্চয় সব বলে দিয়েছে। তার সাথে সুর মিলিয়েছে জুলুমে জুলুমে কেঁপে ওঠা রুহের আর্তনাদ।

আমরাই শুধু ভুলে গিয়েছ, মজলুমের বদদুয়া আর আল্লাহর মাঝে কোন পর্দা নেই!

ভুলে গিয়েছি, কাবা ধ্বংস করতে আসা আবরাহার হস্তীবাহিনীকে কিভাবে সর্বশক্তিমান মালিক, তাঁর অতি ক্ষুদ্র সৃষ্টি, এক ঝাঁক পক্ষীবাহিনী দিয়ে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলেন।

কিভাবে তিনি অহংকারী নমরুদকে হারিয়ে দিয়েছিলেন মশার কাছে।

এ যুগের পরাশক্তিরা যখন অন্যায় ভাবে হামলা করেছিলো একের পর এক দেশ, বাধা দেয় নি কেউ। তাবত পৃথিবী জুলুমকারীদের সাথী হয়েছিল।

হয় সরাসরি পক্ষ নিয়েছিলো, নতুবা মজলুমের চিতকার না শোনার জন্য কানে তুলো দিয়ে ডুবে গিয়েছিলো বিলাসে, ভোগে, অসাড় আনন্দ ও স্বার্থপরতায়।

আল্লাহ রশি ছেড়ে দিয়েছিলেন, এবার তার প্রায় অদৃশ্য এক সৃষ্টিকে পাঠালেন৷ চোখে দেখা যায়না এমন অস্তিত্বের ভয়ে কেঁপে উঠলো পুরো দুনিয়া।

এতদিন ধরে চলে আসা অন্যায়,ব্যভিচারিতা, সমকামীতা, মজলুমকে নিপীড়ন ইত্যাদি ছাপিয়ে, মৃত্যু ভয় আচ্ছন্ন করে ফেললো, ভোগবাদী জগতকে।

যে অভাব, মৃত্যু আতংক, লকডাউন দিয়ে শায়েস্তা করা হয়েছিলো অসহায়দের, আজ সেই একই ভয়াবহতা গ্রাস করেছে সমগ্র পৃথিবীকে।

চোখে দেখা যায় না এমন জীবানুর আঘাতে ধরাশায়ী হয়ে গেলো সকল পরাশক্তি ও বিশ্ব অর্থনীতি।

সিরিয়া আফগানিস্তানের মতো লাশের মিছিল লেগে গেলো দেশে দেশে।

দিল্লীর দাংগার সময়েও কি ভাবতে পেরেছিলাম, বিশ্ব রাজনীতির পট পরিবর্তন হতে বেশি দিন বাকি নেই? অচিরেই আমরা বুঝতে পারবো মহাপরাক্রমশালী স্বত্ত্বা কেবল একজনই!

তিনিই সেই রব, যিনি ‘হও’ বললেই, সব হয়ে যায়। পৃথিবীর প্রতি, এর মানুষের প্রতি এতোদিন যে অন্যায় হয়ে এসেছে, তার বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক প্রতিশোধ শুরু হয়ে গেছে।

দিল্লীতে মুসলিমদের যখন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছিলো, একটি কবিতার জজবায়, তখন তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল অনলাইন দুনিয়া।

চলমান অন্যায়ের প্রতিবাদে আবৃত্তিকার দৃপ্ত কণ্ঠে গজরে উঠেছিলেন,

তিনি বলেছিলেন, ” আসমান পে ইনকিলাব লিখ্যা যায়েগা।”

সেই কবিকে খুঁজে পেলে, বলতাম, আসমান পে ইনকিলাব লিখ্যা হো গ্যায়া…সাব বাদ দুয়া জামিন কি লোগো পে লাগ গ্যায়া..

দুনিয়াতে যা হচ্ছে… তা কি আমাদেরই হাতের উপার্জন নয়?

 

মোরা জোনাকি হতে চাই……৫

মোরা জোনাকি হতে চাই……৫


আফরোজা হাসান


মাঝে মাঝে মুখে বলা হাজারো শব্দরাও যা করতে পারে না, মৃদুমন্দ স্পর্শ তারচেয়ে অনেক বেশি কাজ করে যায়। উদভ্রান্তের মত সামনে বসে থাকা ছেলেটিকে দেখে যায়েদের এই কথাটিই মনেহলো, এখন ওর কোন মৌখিক স্বান্তনার নয়, বরং আত্মিক অবলম্বন প্রয়োজন। ‘আমি আছি তোমার পাশে সর্বাবস্থায়’ অত্যাধিক শক্তিশালী একটি অ্যান্টিডোট হাল ছেড়ে দেয়া মানুষের জন্য। যার উপর ভর করে তারা বেড়িয়ে আসতে পারে গর্ত থেকে। সেই গর্ত যেটা কোন না কোন ভাবে তারা নিজেরাই খোঁড়ে নিজের জন্য। এই ছেলেটা যেমন জেনে বুঝে এমন একটি মেয়েকে বিয়ে করেছিল যার চরিত্রে ছিল জাহিলিয়াতের ছায়া। ছেলেটির বিশ্বাস ছিল ভালোবাসা দিয়ে মেয়েটিকে বদলে দেবে। ভেতরে অট্টহাসি পাক দিয়ে উঠলো যায়েদের। নাটক-সিনেমা-গল্প-উপন্যাসই বর্তমান জেনারেশনের চিন্তা-ভাবনাগুলোকে মনিটর করছে। ভালোবাসা দিয়ে বিশ্ব জয় করার বিভ্রান্তিকর স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছে এরা। যে স্বপ্নে এদেরকে টেনে নিয়ে অন্ধকারে নিমজ্জিত করে। তবে এটা ঠিক যে ভালোবাসা দিয়েই জয় করা সম্ভব জগতটাকে। তবে সেটা মানুষকে ঘিরে মানুষের ভালোবাসা নয়। স্রষ্টাকে ঘিরে আবর্তিত ভালোবাসার দ্বারা।

আমি বাঁচতে চাইনা ডক্টর। প্লিজ আমাকে মরে যেতে দিন। বেঁচে থেকে কি লাভ আমার?

মরে গিয়ে কি লাভ তোমার? প্রশ্ন করলো যায়েদ।

প্রশ্নটা শুনে স্থির দৃষ্টিতে যায়েদের দিকে তাকালো সোহান।

যায়েদ সোহানের হাতে হাত রেখে খুব স্নেহ মাখা স্বরে বলল, হাল ছেড়ে দেবার জন্য, জীবনের উপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবার জন্য, মৃত্যুকে বরণ করে নেবার জন্য অনেক কারণ হয়তো তোমার কাছে আছে। কিন্তু তুমি কি জানো ঘুরে দাঁড়াবার জন্য, জীবনকে উপভোগ করার জন্য, বেঁচে থাকাটাকে কাজে লাগানোর জন্য শুধু একটা কারণই যথেষ্ট? জানতে চাও সেই কারণটা কি?

হ্যা ডক্টর আমি জানতে চাই।

এটাই সেই কারণ। এই যে তুমি জানার ইচ্ছে পোষণ করলে। এই ইচ্ছেটাই সেই কারণ। যা কিছু তোমার জীবনে ঘটেছে এটাই শেষ নয়। আরো অনেক কিছু বাকি আছে তোমার জীবনে। সেসব কি জাস্ট সেটা জানার ইচ্ছেটা ধরে রাখতে হবে তোমাকে। ইচ্ছে কিভাবে ধরে রাখবে সেটার পেছনেও কারণ আছে।

কি কারণ?

হাত দিয়ে ঈশারায় কিছুটা দূরে দাড়িঁয়ে থাকা মাশরুফকে দেখিয়ে যায়েদ বলল, গতরাতে তোমাকে হসপিটালে নিয়ে আসার পর থেকে এক মূহুর্তের জন্যও স্থির হয়ে বসেনি মাশরুফ। ওর ডিউটি টাইম অনেক আগেই শেষ। তবুও বসে আছে শুধু তোমাকে ভালোবাসে, তোমার কেয়ার করে সেজন্য। তোমার বাবা সারারাত হসপিটালের ওয়েটিং হলে পায়চারী করে কাটিয়েছেন। তোমার মা জায়নামাজে বসে এখনো চোখের পানি ফেলছেন। তোমার ফ্যামেলির মানুষেরা একটু পর পর মাশরুফকে ফোন দিয়ে জানতে চাইছে এখন তোমার কি অবস্থা! আর যার জন্য তুমি জীবন দিতে যাচ্ছিলে সে অন্য কারো হাত ধরে সুখের সাগরে ভেসে বেড়াচ্ছে। এখন তুমি ভেবে দেখো জীবনের কাছে তোমার প্রাপ্তি বেশি নাকি অপ্রাপ্তি? তোমার ভালোবাসার ভান্ডার ভারি নাকি শূন্যতার? তুমি এমন একজনের জন্য জীবন দিতে যাচ্ছিলে যার কাছে তোমার থাকা, না থাকা কোন স্পেশাল তো দূরে থাক নূন্যতম গুরুত্বও রাখে না। তাহলে তুমি সেই মানুষগুলোর জন্য কেন বেঁচে থাকতে পারবে না, তোমার চলে যাওয়া যাদের জীবনে অপূরণীয় শূন্যতার তৈরি করে যাবে?

দু’চোখের কোন বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে শুরু করলো সোহানের। কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, আমি কখনো এভাবে ভেবে দেখিনি ডক্টর।

যায়েদ হেসে বলল, চারপাশের সবকিছু মিলিয়ে ভেবে দেখে না বলেই তো মানুষ এতটা অসহায় ফিল করে যে, নিজেই নিজেকে মৃত্যুর মুখে ছুঁড়ে দেয় নির্দ্বিধায়। সমস্যাটা কি জানো? আমার ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু বেশির ভাগ সময়ই আমরা যা চাই, যা পছন্দ করি সেটার মধ্যে নিবদ্ধ থাকে। তাই সে জিনিসটা যখন আমরা না পাই তখন খুব অসহায় ফিল করি। মনেকরি বেঁচে থাকার জন্য আমার কাছে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। অথচ কেন্দ্রবিন্দু থেকে দৃষ্টিটাকে একটু খানি সরালেই জগতের আনন্দযজ্ঞের ভরপুর আয়োজনের দেখা মিলে। চলো আমার সাথে তোমাকে দেখাচ্ছি।

হাত বাড়িয়ে সোহানকে বেড থেকে নামতে সাহায্য করলো যায়েদ। এরপর ধরে ধরে নিয়ে এলো হসপিটালের লম্বা বারান্দায়। সামনেই হসপিটাল সংলগ্ন বিশাল পার্ক। হসপিটালের ইনফান্টিল সেকশনটাও ঐদিকেই। ফলে পার্ক জুড়ে ছড়ানো ছিটানো ছিল জীবন্ত, চলন্ত, ছুটন্ত নানা বয়সী, নানান রঙের ফুলে। হাত উঁচু করে ছোট্ট একটা শিশুকে দেখিয়ে যায়েদ হাসি মুখে বলল, দেখো ঐ বেবীটাকে। মেবি মাত্র এক পা দু পা করে চলতে শিখেছে। হাঁটতে গিয়ে যাতে পড়ে না যায়, ভারসাম্য যাতে ঠিক থাকে সেজন্য দু’হাত কিভাবে দু’পাশে ছড়িয়ে দিয়েছো দেখেছো? ওকে কিন্তু এটা কেউ শেখায়নি। নিজেকে পতনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য নিজেই এটা উদ্ভাবন করে নিয়েছে। ঠিক তেমনি প্রতিটি মানুষের মধ্যেই নিজেকে সামলে নেয়ার, নিজেকে বোঝানোর, নিজেকে আনন্দ দেবার ক্ষমতা থাকে। কিন্তু যত আমরা বড় হতে থাকি নিজের ক্ষমতাগুলোকে অবমূল্যায়ন করতে থাকি। অন্যের উপর নির্ভরশীলতা বাড়তে থাকে আমাদের। একটা সময় আমাদের অবস্থা এতই নাজুক হয়ে দাঁড়ায় যে অন্যেকে অবলম্বন না করে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাটাই অসম্ভব হয়ে যায় আমাদের জন্য। জন্মের সময় প্রতিটি মানব মনে এক টুকরো স্বর্ণলতা আর একটি বটবৃক্ষের চারা থাকে। আমাদের মন বটবৃক্ষ হবে নাকি স্বর্ণলতা এটা নির্ভর করে কোনটিকে বেড়ে উঠার অনুকূল পরিবেশ দেয়া হচ্ছে সেটার উপর। আফসোস হচ্ছে, বেশির ভাগ সময়ই আমাদের মন স্বর্ণলতা রূপে বেড়ে ওঠার পরিবেশ পায়। তাই যেই বৃক্ষকে আঁকড়ে ধরে সেটা সরে গেলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে।

সোহানের মনের অন্ধকার আবেগের ঘরে সূর্য কিরণ মতোই স্পর্শ রাখলো যায়েদের কথাগুলো। বেশ অনেকক্ষণ নীরবতার পর বলল, আমি বুঝতে শুরু করেছি ডক্টর। আসলে কোনদিন কেউ এমন করে ভাবতে শেখায়নি।

যায়েদ হেসে বলল, এখন তো শিখলে ভাবতে। আর কখনোই এমন বোকামী করবে না। মনে রাখবে তোমার জীবনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পৃথিবীতে আর কিছুই নেই তোমার কাছে। জীবন নেই মানে তুমি নেই। আর তুমি নেই মানে জগত থাকা আর না থাকার মাঝে কোন পার্থক্য নেই। কিন্তু তুমি থাকলে জগতের অস্তিত্ব যেমন থাকবে। ঠিক তেমনি নিয়ম মেনে বদলেও যাবে পরিবেশ-পরিস্থিতি সবকিছু। তাই সবসময় নিজের জন্য বাঁচতে চেষ্টা করবে। কারণ তোমার বেঁচে থাকাটাকে সৌন্দর্যময় করার জন্যই আসলে নানান উপকরণের প্রয়োজন। এখন উপকরণের যেই প্যাকেজ তুমি নিজের জন্য পছন্দ করেছো। সেই প্যাকেজ না পাওয়ার অর্থ এটা নয় যে, জীবনটাই বৃথা। খুব পছন্দের বীফ কারি না পেলে চিকেন কারি দিয়েও তো খাবারের চাহিদা মেটানো যায়। তাই না?

জ্বি ডক্টর।

সো টিনা চলে গিয়েছে যাক না। তুমি ইনা না মিনা কাউকে খুঁজে নিলেই তো হয়ে যাচ্ছে।

এই প্রথম হাসি ফুটে উঠলো সোহানের মুখে। বেশ শব্দ করেই হেসে ফেললো।

যায়েদও হেসে বলল, তোমার হাসি অনেক সুন্দর মাশাআল্লাহ। এই হাসিকে কারো মোহতাজ করো না। সময় লাগলে নিজেকে উজাড় করে সময় দাও। তারপর নতুন করে জীবনটাকে সাজিয়ে নাও। তবে এবার শুধু দৈহিক সৌন্দর্য দেখে জীবনসাথী নির্ধারণ করো না। মানসিক সৌন্দর্য বিবর্জিত দৈহিক সৌন্দর্যটা অ্যাসিডের মতো ভয়ঙ্কর। যা অন্যের সাথে সাথে ব্যক্তির নিজ আত্মাকেও জ্বালিয়ে বিকৃত করে দেয়। তাই বিকৃত মন থেকে সদা সাবধান থাকবে। আর সবসময় মূল্যায়ন করতে চেষ্টা করবে তোমার প্রতি ভালোবাসা পুর্ণ মনগুলোকে। তাকিয়ে দেখো তোমার পেছনে।

ঘুরে তাকিয়ে বাবাকে আসতে দেখে এক মূহুর্তের জন্য থমকে গেলো সোহান। তারপর সমস্ত দুর্বলতা ভুলে গিয়ে ছুটে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো। একে অন্যেকে বুকে জড়িয়ে ধরে পিতা-পুত্রের সম্মিলিত অশ্রু দেখে জ্বালা করে উঠলো যায়েদের চোখও। আলতো করে চোখের ভেজা কোন মুছে নিয়ে মূহুর্তেই সামলে নিলো নিজেকে। পেশেন্টদের আনন্দ-বেদনা সবসময়ই সিক্ত করে দেয় তার মনকে।

নিজের কেবিনে ফিরে যাবার উদ্দেশ্যে ঘুরে দাঁড়াতেই থমকে গেলো যায়েদ। দেখতে পেলো করিডোরের দেয়াল ঘেঁষে দাড়িয়ে মুখে হাসি কিন্তু চোখ ভরা অশ্রু নিয়ে সোহান আর ওর বাবার দিকে তাকিয়ে আছে একটি মেয়ে। অদ্ভুত এক মায়ালোয় ছোঁয়া অভিব্যক্তি খেলা করছিল মেয়েটির চেহারা জুড়ে। কয়েকটি মূহুর্তের জন্য নিজের দৃষ্টিকে সংযত করার কথা ভুলে গেলো যায়েদ। মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে ছিল হাসি-কান্নার সংমিশ্রণে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটির দিকে। কিন্তু যায়েদের দিকে চোখ পড়তেই নিজেকে সামলে নিলো মেয়েটি। চোখের কোনে জমে থাকা অশ্রু মুছে নিতে নিতে ঝট করে পেছন ফিরে ঘুরে দাঁড়ালো যায়েদের দিকে।

একরাশ লজ্জা ঘিরে ধরলো যায়েদকে। আর এক মূহুর্তও না দাঁড়িয়ে হাঁটতে শুরু করলো কেবিনের দিকে। এই রকম একটা আচরণ কেমন করে ঘটলো তার দ্বারা? ভাবতেই তিক্ত অপরাধবোধ ঘিরে ধরলো মনকে। মেয়েটি কি ভাবছে তার সম্পর্কে? নিশ্চয়ই খুব নেতিবাচক কিছুই ভাবছে? পরমূহুর্তেই আবার নিজেকে সামলে নিলো যায়েদ। নিজেই নিজেকে বলল, মেয়েটির কথা ভেবে একই ভুল তুমি পুনঃপুনঃ করছো। শয়তানকে সুযোগ করে দিচ্ছো অসচেতনার ভুলের ক্ষনটিকে সচেতন পদস্ফলনে রূপান্তরিত করার। কোন জিনিসের কথা বার বার মনে করিয়ে দিয়ে সেটার প্রতি মনকে দুর্বল করে পাপের পথে মানুষকে পরিচালিত করা শয়তানের একটি কৌশল। পেশেন্টদেরকে প্রায়ই এই কথাটা বলে যায়েদ। আজ নিজেই সেই পথে চলতে যাচ্ছিলো। নিজেকে সামলে নিয়ে আল্লাহর ক্ষমা এবং সঠিক পথে অবিচল রাখার হেদায়াত প্রার্থনা করতে করতে দ্রুত পায়ে কেবিনের দিকে ছুটলো।

চলবে—
পর্ব-৬

 

‘করোনা’ সন্তানের প্রতি খেয়াল রাখছেন তো

 

‘করোনা’ সন্তানের প্রতি খেয়াল রাখছেন তো


স্বাস্থকথা


করোনার মাঝে আপনার সন্তানের বাড়তি যত্ন নিন।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসে ছোট শিশুরা সাধারণত আক্রান্ত হয় না বা শিশুরা ঝুঁকিমুক্ত— এমন ধারণা অনেকের আছে। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো বলছে ভিন্ন কথা। এসব গবেষণায় জানা গেছে, শিশুরাও করোনায় আক্রান্ত হতে পারে। তবে তাদের ক্ষেত্রে মৃদু উপসর্গ দেখা দেয়, যার সঙ্গে সাধারণ ফ্লুর পার্থক্য করা যায় না। শিশুদের যদি অন্য শারীরিক জটিলতা থাকে (যেমন— হৃদযন্ত্রের সমস্যা, টাইপ-১ ডায়াবেটিস, হাঁপানি ইত্যাদি), তবে করোনা–আক্রান্ত হলে তাদের অবস্থা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। তাই শিশুদের বিষয়েও সতর্ক হওয়া দরকার।

এ ক্ষেত্রে এই কাজগুলো অনুসরণ করে আপনার সন্তানকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে পারেন:

 সতর্ক

করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত শিশু নিজেরা তেমন অসুস্থ না হলেও তাদের মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়ায়। কাজেই তাদের মাধ্যমে পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্য (দাদা-দাদি, নানা-নানি) এবং ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিরা সংক্রমিত হতে পারেন। এজন্য শিশুদের মধ্যে উপসর্গ দেখা দিলে সতর্ক হতে হবে। তবে এতে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত না হয়ে তাদের বাড়িতে রেখেই শুশ্রূষা করতে হবে। কারণ, শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণত সংক্রমণের উপসর্গ থাকে মৃদু। তবে খেয়াল রাখতে হবে, তাদের মাধ্যমে যেন ভাইরাসটি না ছড়ায়।

শিষ্টাচার শেখানো

শিশুদের হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার শেখাতে হবে। তবে তা ধমক দিয়ে নয়, বুঝিয়ে বলতে হবে। এই সময় শিশুদের বাড়ির বাইরে বের হতে দেওয়া উচিত হবে না। বাইরে থেকে আসা কারও সংস্পর্শ থেকেও তাদের দূরে রাখতে হবে।

পুরোপুরি আলাদা রাখা জরুরী

বাড়ির বয়স্ক সদস্যদের পুরোপুরি আলাদা করে রাখতে হবে। শিশুরা যদি কোনো কারণে সামান্য অসুস্থও হয়, তারপরও তাদের বয়স্ক আত্মীয়ের কাছে যেতে দেওয়া যাবে না। শিশুদের নিয়ে বয়োবৃদ্ধ মা-বাবাকে দেখতে যাওয়ারও এড়িয়ে চলুন। তবে আলাদা করে ফেলার বিষয়টি শিশুদের মনের ওপর চাপ ফেলতে পারে। তারা অসহায় বোধ করতে পারে, ক্ষুব্ধ হতে পারে। তাই তাদের টেলিফোন, স্কাইপে, হোয়াটস অ্যাপ বা মেসেঞ্জারের মাধ্যমে দাদা-দাদি, নানা-নানির সঙ্গে কথা বলার ও সময় কাটানোর সুযোগ করে দিন।

সন্তানকে বুঝিয়ে বলা

কেন প্রিয়জনদের আলাদা করে রাখতে হচ্ছে, তা সন্তানকে বুঝিয়ে বলুন। এমনকি প্রয়োজনে মা-বাবাকেও যে যখন-তখন আলাদা হওয়ার প্রয়োজন হতে পারে, সে বিষয়েও আগেভাগেই জানিয়ে রাখুন।

শিশু ঝুঁকিপূর্ণ আছে কিনা জানা

যেসব শিশু ঝুঁকিপূর্ণ, যেমন যাদের ছোটবেলা থেকে হৃদযন্ত্রের সমস্যা, হাঁপানি আছে কিংবা যারা টাইপ-১ ডায়াবেটিসে ভুগছে, যারা কিডনি বা কোনো রোগের কারণে স্টেরয়েড ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমায়— এমন অন্য ওষুধ সেবন করে, তাদের জ্বর-কাশিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিন। অসুস্থ হওয়ামাত্র চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করুন।

অধ্যাপক মো. সেলিম শাকুর, কনসালট্যান্ট, শিশু ও নবজাতক বিভাগ, ইউনাইটেড হাসপাতাল

সুত্রঃ দৈনিক অধিকার।

 

চোখে মুখে প্রশান্তির হাসি

চোখে মুখে প্রশান্তির হাসি


ফাতেমা শাহরিন


ইদানীং বসে বসে, শুয়ে শুয়ে, ঘুমন্ত অবস্থায় এমনকি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখি আমি। তবে আজকের স্বপ্নটা আমার, একদমই অন্যরকম। কিছুদিন আগে একটা বই পড়লাম অন্যরকম গল্পগুলো ঐ বইতে কিছু মজার মজার আইডিয়া দেওয়া হয়েছে। একটা আইডিয়া নিয়ে তো আমার বড় বোন স্কুলের শিক্ষিকা ওকে বললাম। যে তুমি তো তোমার ক্লাসের স্টুডেন্টকে চাইলে বলতে পারো যে ডিসেম্বরে যখন ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হবে। সবাই ওদের পুরানো বই, খাতা আর কলম, পেন্সিলগুলো তোমার কাছে জমা দিবে। এর জন্য তুমি সবাইকে চকলেট গিফট করবা। এরপর সব বাসায় আনবা। আমরা খাতা থেকে যে পেজে লেখা নাই তা নিয়ে নতুন কিছু খাতা বানিয়ে আমাদের আশেপাশের পথস্কুল বা এতিমখানার বাচ্চাদের খাতা বানিয়ে দিতে পারি।

আরে আজকের স্বপ্নটা বেশি মারাত্মক। শুনুন আপনিও প্রশংসা করবেন। এই যে রাস্তাঘাটে যে সব অসহায়, ফকির বলছি বা রিকসা চালক বা ছোট ছোট ব্যবসা করা মানুষ রাস্তার ধারে ঘুমান। একটা ছোট্ট নির্দেশনা দিয়েছে, আমি টিভির খবর দেখি না শুধু নিচে লেখা আর বেকিং নিউজ পড়ি। লেখাটা দেখলাম বেকিং নিউজে। গুলশান, বারিধারা গুলিস্তান উত্তরা, আর কমলাপুর এলাকার প্রায় ২৫ টি মসজিদকে ধর্মমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন যে ১০ টি মসজিদে ১৪ দিনের জন্য পথে থাকা মেয়ে মানুষরা থাকবে। আর বাকী ১৫ টায় ছেলে মানুষরা থাকবে আর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাদের দুবেলা দু-মুটো ভাত দেবার ঘোষণা দিয়েছেন। আর ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে ওয়াদা করেছেন ধর্মমন্ত্রী যে, যে সকল মসজিদে ওনারা থাকবেন তা ভালো ভাবে গোসল করে জনগণের কাছে তুলে দিবেন।
আমি দেখছি বিশাল বিশাল মসজিদ গুলোতে ঢুকার সময় মেয়েরা পর্যন্ত গোসল করে পরিষ্কার হয়ে ঢুকছে। নিজেদের দেওয়া জায়গাটাতে আরাম করে বসেছেন। কেউ কেউ ফ্যানের বাতাসে নিজের চুল শুকাচ্ছেন। কেউবা আপন মনে আল্লাহকে ডাকছে আবার আবার কেউ কেউ ভগবানকেও ডাকছে। ওখানে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টানের ভেদাভেদ নেই। সবাই আল্লাহর কাছে দুআ করছেন, দেশের প্রধানমন্ত্রীর জন্য।
এ যাত্রায় বেঁচে গেলো মনে হয় দেশটা। আমার চোখে মুখে প্রশান্তির হাসি।

 

বিনামূল্যে জরুরি মানসিক স্বাস্থ্যসেবা

বিনামূল্যে জরুরি মানসিক স্বাস্থ্যসেবা


স্বাস্থ্যকথা


সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত আমরা আছি অনলাইন ভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে। আমাদের টিমে আছে কাউন্সেলিং সাইকোলজি, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি, এডুকেশনাল সাইকোলজি, সাইকোলজি, ও অন্যান্য মানসিক স্বাস্থ বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবীরা। স্বেচ্ছাসেবীদের অংশগ্রহণ ও সেবাগ্রহীতার চাহিদার ভিত্তিতে পরবর্তীতে সেবার সময়সীমা বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে।

সময় এখন সচেতন থাকার, দুরে থেকেও কাছে থাকার, মানসিকভাবে সুস্থ থাকার, আসন্ন মানসিক রোগকে প্রতিরোধ করার।

বিস্তারিত পেজে…
আমাদের সেবা সমুহ:
১। অডিও কলের মাধ্যমে সাপোর্ট
২। ভিডিও কলের মাধ্যমে সাপোর্ট
৩। লিখিত বার্তার মাধ্যমে সেবা (চ্যাট)
৪। সচেতনতা ও মনোসামাজিক শিক্ষামূলক কন্টেন্ট
৫। প্রশ্ন উত্তর এর মাধ্যমে সাপোর্ট।

বাংলাদেশ কিংবা বাংলাদেশের বাইরে অবস্থানরত যেকোন বাংলা ভাষাভাষী আমাদের এই ফ্রি সেবা সমুহ নিতে পারেন।

সেবার জন্য ফর্মটি ফিলাপ করতে হবে: https://forms.gle/ra2Bva4Jf5eSLfi99

অথবা কল করতে পারেন এই নাম্বারগুলো তে 01515625217, 01730443737

আমরা আপনাকে যুক্ত করে দিব একজন মানসিক সহায়তা বিশেষজ্ঞের সাথে।

#covid19 #mentalhealtmatters #crisissupport #imsteam

 

নারী নির্যাতন: ভালোবেসে বিয়ে, অতঃপর পরকীয়া-নির্যাতন সত্ত্বেও কেন মানিয়ে চলা?

নারী নির্যাতন: ভালোবেসে বিয়ে, অতঃপর পরকীয়া-নির্যাতন সত্ত্বেও কেন মানিয়ে চলা?


নারী সংবাদ


নিজ পরিবারেই নির্যাতনের শিকার হন নারীরা।আয়েশা আক্তার (ছদ্মনাম)। পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এই নারী বিশ বছর আগে ভালোবেসে যাকে বিয়ে করেছিলেন, ১৫ বছর পর সেই ভালোবাসার মানুষেরই ভিন্ন এক রূপ আবিস্কার করেন তিনি।

মিসেস আক্তারের ভাষায়, তার ‘সুখের সংসার’ হঠাৎ করেই এলোমেলো হয়ে যায়। কারণ, তার স্বামী অফিসের এক নারী কলিগের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন।

“আমি হঠাৎ করেই দেখলাম প্রায় প্রতি সপ্তাহেই সে শুক্রবার-শনিবারে বাইরে থাকতে শুরু করেছে।”

তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবারে অনেক রাত করে বাসায় ফিরছে। আগে কখনো সে এ রকম করেনি। সংসারে ঠিকমতো খরচ দিচ্ছে না। এরপরই আমি তার পরকীয়া প্রেমের বিষয়টি আবিস্কার করি।”

“একদিন তার গাড়িতে আমি নতুন একটা মোবাইল খুঁজে পাই। সেই মোবাইল দিয়ে ও লুকিয়ে লুকিয়ে মেয়েটার সঙ্গে কথা বলতো। এমনকি ওরা ভায়াগ্রা ট্যাবলেট খেয়ে কিভাবে ফিজিক্যাল রিলেশন করেছে সেগুলোও চ্যাটিংয়ে আলোচনা করতো।”

মিসেস আক্তার বলছেন, তিনি যখন এর প্রতিবাদ করেছেন তখন থেকেই মূলতঃ তার উপর স্বামীর অত্যাচার শুরু হয়।

মারধর, গালাগালি, সংসারের খরচ বন্ধ করে দেয়াসহ নানারকম অত্যাচার হয়েছে তার উপর।

“সে পুরুষ মানুষ এবং অনেক টাকা বেতন পায়। আমি কিছুই না। সে জাস্ট এটাই বোঝায় আমাকে। এবং তার ভাবভঙ্গি হচ্ছে, আমি যা ইচ্ছা করবো, পারলে তুই কিছু করে দেখা।”

“আমি এসব কথা পরিবারকে বলেছি, ওদের পরিবারকেও বলেছি। ওরা বুঝিয়েছে, কিন্তু কোন কাজ হয়নি। মামলা করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সবাই নিষেধ করেছে। দুটো বাচ্চা নিয়ে কোথায় যাবো তাই নির্যাতন সহ্য করেই এখনো সংসার করে যাচ্ছি।”

বাংলাদেশে স্বামীর ঘরে কিংবা নিজ পরিবারে নারীদের নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতা নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরেই এমন অবস্থা চললেও অনেকক্ষেত্রে নির্যাতিতরাই এর প্রতিবাদে খুব একটা আগ্রহ দেখান না।

কিন্তু বাংলাদেশে যেসব নারী এসব নির্যাতনের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চান, তারাও পরিবার কিংবা সমাজকে পাশে পাচ্ছেন না ঠিক মতো।

সুত্রঃ বিবিসি।

 

করোনায় আতংকিত হবেন না, দাফন কাফন করুন

করোনায় আতংকিত হবেন না, দাফন কাফন করুন


ডা. শাকিল আহমেদ


👉 ইদানিং নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে করোনা রোগে মৃত ব্যক্তির লাশ দাফনকাফন নিয়ে। তাই বিষয়গুলো পরিষ্কার হওয়া দরকার।
👉 জেনে রাখুন মৃতব্যক্তির দাফনে করোনা ছড়ানোর কোনই সম্ভাবনা নেই। কথাটা ১০০% সত্য। করোনা ছড়ায় মানুষের শ্বাস কাশ আর তার সিক্রেশন থেকে। কাফনে জড়ানো মৃতব্যক্তি শ্বাসও নেয় না, তার সিক্রেশনও কোথাও থাকে না। দাফন করে দিলে মৃত ব্যক্তির শরীরের সব ভাইরাসও মরে যাবে। তাই লাশ দাফন ১০০% নিরাপদ। তবে সামান্য ঝুঁকি থাকে লাশ গোসল দেওয়ার সময়। তাও জীবিত শ্বাসকষ্ট জনিত রুগীর তুলনায় ০১% ও নয়। তার কারন মৃত ব্যক্তি শ্বাস নেয় না তাই সে বাতাসে জীবানু ছড়ায় না। কেবল মৃত্যুর পর যদি তার নাক থেকে সিক্রেশন বের হতে থাকে বা গায়ে তা লেগে থাকে তাহলে তা ইনফেকটিভ। তাই গোসল করানোর সময় গ্লভস সহ ফুল পিপিই পড়ে সাবান দিয়ে ডলে গোসল করালে আর প্রয়োজনে নাকে তুলো দিয়ে দিলে আর কোন ঝুঁকি থাকে না। কেবল গোসল শেষে পুরো জায়গা ব্লিচিং সল্যুশন দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে আর যিনি গোসল করাবেন তিনি সাবান দিয়ে নিজে গোসল করে নিবেন। ব্যস হয়ে গেল ১০০% নিরাপদ কাফনে জড়ানো মৃতদেহ। এটা এখন যে কোন জায়গায় দাফন করতে কোন সমস্যা নেই। মনে রাখবেন এর চেয়ে হাজার গুন অনিরাপদ হচ্ছে রুগীর ওরো ফ্যারিঞ্জিয়াল আর নেসোফ্যাঞ্জিয়াল সোয়াব সংগ্রহ, সিভিয়ার নিউমোনিয়ার রুগীকে ইন্ট্যুবেট করা, সাকশান দেওয়া বা ব্রংকিয়াল টয়লেটিং করা যা পৃথিবীর বহু চিকিৎসক হরহামেশাই ঝুঁকি নিয়ে করে যাচ্ছেন।
অতএব আতংকিত হবেন না। নিজের আপনজনকে নিরাপদে স্রদ্ধা আর ভালোবাসা দিয়ে দাফন কাফন করুন।
👉 তবে খেয়াল রাখবেন যে জীবিত অবস্থায় যারা রুগীর সংস্পর্শে এসেছিলেন তাদের মধ্যে করোনা আগেই সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারে তাই তারা কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন এবং লাশ দাফনকাফনে কোন ভাবেই জড়াবেন না। অন্যদের লাশ দাফনে কোন সমস্যা নেই।
👉 অযথা ভীত হবেন না। নিরাপদে থাকুন সুস্থ থাকুন। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। আমিন।
.
Dr. Shakeel Ahmed Sir (Assistant Professor, microbiology, CMC)

 

করোনা ভাইরাসঃ আসুন কিছুটা আতঙ্কিত হই!

করোনা ভাইরাসঃ আসুন কিছুটা আতঙ্কিত হই!


রাউফুন নাহার


নিচের কোন বিবৃতিটি আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য?

১। আমি মোটেও ভয় পাচ্ছিনা; করোনা আমার কিছুই করতে পারবে না, তাই স্বাভাবিক চলাফেরা ও জীবনধারা অব্যাহত রেখেছি।

২। আমি মানসিক চাপ বোধ করছি, তাই আমার এবং অন্যদের সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করছি।

৩। আমার দমবন্ধ লাগছে, কিছুই ভালো লাগছে না; করোনার ভয়ে আমার ঘুম, খাওয়া-দাওয়া সবকিছু ব্যাহত হচ্ছে।

যাদের অবস্থান ২ তাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, প্লিজ চালিয়ে যান। যাদের অবস্থান ১ বা ৩ তাদের জন্য বলছি, ভালোবাসা নিন এবং লেখাটি পড়তে থাকুন।

প্রথমেই দুঃখ প্রকাশ করছি যে একজন মানসিক স্বাস্থকর্মী হয়েও আপনাকে অভয় দিয়ে বলতে পারছি না, ‘আতঙ্কিত হবেন না, আতঙ্কিত হবার মত কিছু হয়নি!’ বরং বলব আতঙ্কের ঘটনাতেও আতঙ্কিত না হওয়া মনোঃসামাজিক সমস্যার লক্ষণ। হ্যা, বর্তমানে বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি আতঙ্কিত হওয়ার মতই। আর এমন পরিস্থিতিতে নির্দিষ্ট মাত্রার ভয় ও মানসিক চাপ আমাদের সচেতন হতে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো নিতে সহযোগিতা করবে। ভয় বা মানসিক চাপের মাত্রা অতিরিক্ত কম, বা অতিরিক্ত বেশি কোনোটাই আমাদের জন্য মঙ্গলজনক নয়। যেমন, ভয় না থাকা বা ভয়ের মাত্রা একেবারেই কম থাকার কারনেই মূলত এমন দুর্যোগের সময়েও অনেকেই নাগরিক দায়িত্বগুলো পালন করছে না এবং মনের আনন্দে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের আক্রান্ত হবার এবং অন্যকে আক্রান্ত করার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আনন্দে থাকা ভুল কিছু নয়, বরং এটি আমাদেরকে সুস্থ সবল রাখে। তবে এমন পরিস্থিতিতে বাড়ির ভেতরে আনন্দ করাটাই শ্রেয়।

আবার যারা অনেক বেশিমাত্রায় আতঙ্কিত তাদের করোনা আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা কম থাকলেও হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থেকে যায়। কারণ অতিরিক্ত ভয় ও দুশ্চিন্তার ফলে ঘুম, খাওয়া, বিশ্রামের মত মৌলিক কাজগুলোও ব্যাহত হচ্ছে৷ আর অতিরিক্ত মানসিক চাপ এবং শরীর ও মনের যত্নের অভাব এই দুই কারণে যখন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে তখন শুধু করোনা কেন, যেকোন রোগই পেয়ে বসবে। করোনা নিয়ে সচেতনতামূলক আচরণগুলোর মধ্যে তাই সুষম খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম, শরীরচর্চা এসবও পড়ে। যেন যেকোনো রোগ বা ভাইরাস শরীরে ঢুকলেও তার সাথে যুদ্ধটা চালিয়ে যাওয়ার শক্তি থাকে।

এখন কথা হলো অতিরিক্ত ভয় বা দুশ্চিন্তা কমাবো কি করে? সেক্ষেত্রে কিছু টিপ্স শেয়ার করছি৷

১.
প্রথম ধাপঃ যখন ভয় বা দুশ্চিন্তা বা অন্য যেকোন ধরনের কষ্টকর অনুভূতি হবে, শান্ত হয়ে কোথাও বসে বা শুয়ে পড়ব। শরীরের কোন কোন অংশে খারাপ বা অস্বস্তি লাগছে খেয়াল করব। কারণ আমাদের অনুভূতিগুলো শরীরেই ভর করে। যেমন, মাথা ঝিমঝিম করছে কি-না, ঘাড় বা চোয়াল বা শরীরের অন্য কোন অংশ শক্ত হয়ে আছে কি-না, বুক ধরফর করছে কি-না খেয়াল করব। অর্থাৎ শরীরের যে অংশটায় কিছুটা হলেও অসুবিধা বা অস্বস্তি লাগছে যেখানেই ৩০ সেকেন্ড থেকে ২ মিনিটের মত মনোনিবেশ করব।

দ্বিতীয় ধাপঃ গভীরভাবে কয়েকটি শ্বাস-প্রশ্বাস নেবো ও ছাড়বো। যেভাবে ধীরে ধীরে ফুলের ঘ্রান নেই যেভাবে শ্বাস নেবো, তারপর মোমবাতিতে ফু দেয়ার মত করে ধীরে ধীরে ছাড়বো। এভাবে ৫-১০ জোড়া শ্বাস-প্রশ্বাস নিলেই ব্রেইনে যথেষ্ট পরিমান অক্সিজেন চলে যাবে এবং অস্থিরতা কমে আরাম লাগতে শুরু করবে।

তৃতীয় ধাপঃ পানি পান করা। ঠান্ডা বা স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি পান করলে মুখ ও কণ্ঠনালীসহ শরীরে একটা শীতল ভাব আসবে। যাদের ভয়, উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তার প্রবনতা বেশি তারা সবসময়ই পানির পাত্র বা বোতল সাথে রাখুন। গলা শুকিয়ে গেলেই এক দুই চুমুক করে পানি পান করুন।

চতুর্থ ধাপঃ এই পর্যায়ে আপনার ভয়, উদ্বেগ বা অস্থিরতার মাত্রা কিছুটা হলেও কমে আসার কথা। কেমন বোধ করছেন খেয়াল করুন। এই মুহুর্তে আপনার চাহিদা কি খেয়াল করুন। করোনা দুর্যোগের এই সময়ে আমাদের সবচেয়ে বড় চাহিদা হতে পারে ‘নিরাপত্তা’ বা ‘সুরক্ষা’। এবার ভাবুন নিজেকে ও পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে আপনি কি কি পদক্ষেপ নিতে পারেন। এখেত্রে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের গাইডলাইনগুলো মেনে চলা এবং নিজের ও পরিবারের সদস্যদের ব্যাপারে যত্নশীল হওয়াই হতে পারে উৎকৃষ্ট পদক্ষেপ।


সারাক্ষণ ফেইসবুক বা টেলিভিশণে করোনা সংক্রান্ত নিউজ দেখা থেকে বিরত থাকুন। একটি সময় নির্ধারণ করুন এবং শুধুমাত্র আপনার নির্ধারিত সময়েই করোনা সম্পর্কিত খবর নিন। বাকি সময়ে দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক কাজকর্মগুলোতে মনোনিবেশ করুন। পেশাগত কারণে যারা বাইরে যাচ্ছেন, নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করুন।

 ৩

জীবনের কঠিনতম পরিস্থিতিতেও আমাদের হাতে কিছু অপশন বা বিকল্প থাকে। তাই আপনিই সিদ্ধান্ত নিন, আপনি করোনা পরিস্থিতিকে উপেক্ষা করে চারদিকে ঘোরাফেরা করে নিজেকে ও অন্যদেরকে বিপদের মুখে ফেলবেন, করোনার ভয়ে নাওয়া খাওয়া বন্ধ করে হা হুতাশ করবেন, নাকি নিজের মানসিক চাপকে স্বীকৃতি ও গুরুত্ব দিয়ে শরীর-মনের যত্ন নেবেন ও সুরক্ষিত থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।

লেখকঃ রাউফুন নাহার

শিক্ষক

এডুকেশনাল এন্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

ধর্ষণের পর খুন করে ফজরের নামাজে ইমামতি!

ধর্ষণের পর খুন করে ফজরের নামাজে ইমামতি!


নারী সংবাদ


ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে পাড়াভরট গ্রামের কিশোরী তাকমীন হত্যার তিন দিন পর মোবাইল কল লিস্টের সূত্র ধরে এ জড়িত থাকার সন্দেহে মাহফুজ ওরফে ইছামুদ্দিন (১৮) নামে এক মাদ্রাসাছাত্রকে আটক করেছে পুলিশ।
মাহফুজ উপজেলার রাওনা গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে এবং উপজেলার পাড়াভরট গ্রামের জামিয়া আরাবিয়া কাসেমুল উলুম কওমী মাদ্রাসার কিতাব বিভাগের ছাত্র।
তাকমীনের পরিবার ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আঠারদানা জামে মসজিদের মোয়াজ্জিন ও পাড়াভরট গ্রামের জামিয়া আরাবিয়া কাসেমুল উলুম কওমী মাদ্রাসার কিতাব বিভাগের ছাত্র আশিকুল হকের সঙ্গে পাড়াভরট গ্রামের আব্দুল মতিনের কিশোরী কন্যা তাকমীনের (১৬) প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আশিকুল হক নান্দাইল উপজেলার তারাপাশা গ্রামের আইনাল হকের ছেলে। তাকমীন বিয়ের জন্য তাকে চাপ দিচ্ছিল।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে আশিকুল মোবাইল করে পালিয়ে যাওয়ার কথা বলে আঠারদানা জামে মসজিদের কাছে তাকমীনকে ডেকে নেয়। এ সময় সেখানে আগে থেকেই ছিল আশিকুলের বন্ধু পুলিশের হাতে আটককৃত মাহফুজ ও একই মাদ্রাসার ছাত্র নান্দাইল উপজেলার তারাপাশা গ্রামের সাইদুলের ছেলে আরিফ (১৮)। সেখানে যাওয়ার পর আশিকুল তাকমীনকে ধর্ষণ করে। পরে মাহফুজ ও আরিফ তাকমীনের হাত, পা ও মুখ চেপে ধরে ও আশিকুল তার মাথার পাগড়ি দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করে।
আশিকুল, মাহফুজ ও আরিফ তাকমীনের লাশ টেনে-হিঁচড়ে মসজিদের একটি জামগাছের ডালের তাকমীনের ওড়না দিয়ে বেঁধে রাখে। কিছুক্ষণ পর ফজরের আজান দেয়ার সময় হলে মসজিদের মোয়াজ্জিন আশিকুল আজান দেয়। মুসল্লিরা মসজিদে আসলে ফজরের জামাতে আশিকুল ইমামতি করে। এ সময় মুসল্লিদের সাথে মাহফুজ, আরিফও নামাজ আদায় করে।

নামাজ শেষে মুসল্লিরা মসজিদ থেকে বের হয়ে তাকমীনের লাশ জাম গাছের ডালের সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় দেখতে পায়। তাকমীনের পরিধেয় বস্ত্র বিভিন্ন জায়গায় ছেঁড়া ছিল। তার পা মাটিতে ছিল। লাশের সঙ্গে একটি মোবাইল পড়ে ছিল।
মুসল্লিরা লাশটি দেখতে পেয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম রিয়েলের মাধ্যমে থানা পুলিশকে ঘটনাটি অবহিত করে। পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে।
ময়মনসিংহ সিআইডির ক্রাইমসিন প্রধান মোহাম্মদ ইউসুফের নেতৃত্বে সিআইডির একটি বিশেষ টিম এবং গফরগাঁও থানার ওসি অনুকুল সরকারের নেতৃত্বে থানার একটি বিশেষ টিম ঘটনাস্থল মঙ্গলবার সারাদিন ঘিরে রাখে। বিকালে তাকমীনের বাবা আব্দুল মতিন বাদী অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে গফরগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
বৃহস্পতিবার সকালে গফরগাঁও সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলী হায়দার চৌধুরী, গফরগাঁও থানার ওসি অনুকুল সরকার ও মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আহসান হাবীবের নেতৃত্বে গফরগাঁও থানার একদল পুলিশ অভিযান চালিয়ে মাহফুজকে আটক করে।
আঠারদানা জামে মসজিদের মুসল্লী ও পাড়াভরট গ্রামের খাহে আলী মন্ডল (৬৪) জানায়, ঘটনার দিন মঙ্গলবার ফজরের নামাজের আজান দেয় ও ইমামতি করে মোয়াজ্জিন আশিকুল হক। বুধবার দুপুর থেকে সে পলাতক রয়েছে।
আঠারদানা জামে মসজিদের ইমাম মোজাম্মেল হক (৪৭) জানায়, ওইদিন মসজিদে যেতে দেরি হওয়ায় আশিকুল ইমামতি করে। নামাজ শেষে একটু আঁধার কাটলে মসজিদের মুসল্লিরা মসজিদের কাছে জাম গাছের ডালে বাধা একটি মেয়ের লাশ দেখতে পায় এবং লাশটি শনাক্ত করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে জানায়।
তাকমীনের ছোট বোন সুমাইয়া (১৩) জানায়, তার বোন রাতে তার সঙ্গেই ঘুমিয়েছিল। সে গোপনে মোবাইল ব্যবহার করতো। মোবাইল ফোনটি হয়তো আশিকুলের দেয়া।
গফরগাঁও সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার জানান, এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার করছি। জড়িতদের গ্রেপ্তারের স্বার্থে এখন বাড়তি কিছু বলা যাবে না।
সুত্রঃ বাংলাদেশ জার্নাল।

 

করোনা চিকিৎসায় ৪ লক্ষ ডাক্তারের পোশাক বিনামূল্যে দেয়ার ঘোষণা দিলেন এক সাহসী নারী

করোনা চিকিৎসায় ৪ লক্ষ ডাক্তারের পোশাক বিনামূল্যে দেয়ার ঘোষণা দিলেন এক সাহসী নারী


নারী সংবাদ


বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস চিকিৎসায় ডাক্তারেরকে ৪ লক্ষ পোশাক বিনামূল্যে সহায়তা কারী স্বপ্না ভৌমিক বৈশ্বিক মহামারী হয়ে আবির্ভূত করোনার বিপর্যয় বাংলাদেশে ছোবল হানার আগে অন্তত ত্রিশদিন সময় ছিল নুন্যতম প্রস্তুতি নেবার। রাষ্ট্রের গলাবাজ’রা সে অমূল্য সুযোগ নেননি।

আজ প্রয়োজনের মুহূর্তে Personal Protective Equipment (PPE) নেই। গ্লাভস নেই, মাস্ক নেই কিছু নেই। নিজের জীবনের ঝুঁকি নেয়া নার্স ও ডাক্তারসহ চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার সাথে যুক্ত মানুষগুলোকে হাত-পা বেঁধে পানিতে ফেলে কুমিরের সাথে লড়তে বলা হচ্ছে আজ! আমাদের নিজেদের নিরাপত্তা নিজেদেরকেই নিশ্চিত করতে হবে । আর সেই নিরাপত্তা নিশ্চিতের মতো মহত্তম কাজে এগিয়ে এলেন প্রথম মানুষ স্বপ্না ভৌমিক নামে এক নারী । তিনি মার্ক্স অ্যাণ্ড স্পেন্সারের বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর।

আজ থেকে মার্ক্স অ্যাণ্ড স্পেন্সারের Garments Products সরবরাহের সাথে যুক্ত কারখানাগুলো Personal Protective Equipment (PPE) বানানো শুরু করেছে। আগামী এক পক্ষকালের আগেই নুন্যতম ৪ লাখ PPE বিনামূল্যে সরবরাহ করবে প্রতিষ্ঠানটি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদন করেছে এটি। পোশাকের নকশা করে দিয়েছে BUET ALUMNI.

আজ আবারও প্রমাণ হল , দিনশেষে আপাময় মানুষের প্রয়োজনে মানুষই এগিয়ে আসে। মাত্র একুশ দিন পূর্বে এই অসামান্য মানুষটির “মা” সাধনা ভৌমিক পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন। তিনি দীর্ঘদিন কিডনির অসুখে আক্রান্ত ছিলেন। স্বপ্না ভৌমিকের নেয়া সাহসী পদক্ষেপ, করোনার বিরুদ্ধে লড়তে আমাদের কল্পনার অতীত সাহস যোগাবে সন্দেহ নেই। ৪ লাখ Personal Protective Equipment (PPE) রুখে দেবে অন্তত ২ লাখ সম্ভাব্য সংক্রমণ।

করোনা’র মতো মহামারী ইতোপূর্বে আমরা দেখিনি। এ শুধু জনস্বাস্থ্যের হুমকি নয়, জীবন ও মৃত্যুর এই সন্ধিক্ষন বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের প্রতিটি খাত’কে স্থবির করার সক্ষমতা রাখে। করোনা’র বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধ শুধুমাত্র রাষ্ট্র অথবা রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের নয়। এই যুদ্ধ বৈশ্বিক এবং প্রতিটি পৃথিবীবাসীর।
প্রতিটি প্রাণ মূল্যবান, সামান্য ভুলের কারণে অগণিত মানুষের জীবন হুমকির মুখে ফেলবার অধিকার কারও নেই। জন্মভুমি ও পৃথিবীর ক্রান্তিকালে আমরা ঐক্যে অটল থাকবো। আমাদের সম্মিলিত চেষ্টাই পরাজিত করবে এমন দুর্যোগ।

 

ঝাল মাংস পুলি বানাবেন যেভাবে

ঝাল মাংস পুলি বানাবেন যেভাবে


ঘরকন্যা


উপকরণ
১. ২ কাপ মাংস সেদ্ধ,
২. ১ কাপ আলু কুচি করে সেদ্ধ করা,
৩. ১ চা চামচ কাবাব মসলা,
৪. ২ টি পেঁয়াজ কুচি,
৫. ৫/৬ টি মরিচ কুচি,
৬. আধা চা চামচ আদা-রসুন বাটা,
৭. লবন স্বাদমতো,
৮. টেস্টিং সল্ট সামান্য,
৯. তেল ভাজার জন্য,
১০. ২ কাপ ময়দা,
১১. ২ চিমটি কালোজিরা,
১২. পানি পরিমাণমতো।

প্রণালি
> পুর তৈরির জন্য একটি প্যানে সামান্য তেল দিয়ে গরম করে এতে আদা-রসুন বাটা দিয়ে দিন। ঘ্রাণ ছড়ালে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে নেরে নরম করে নিন। এরপর মরিচ কুচি ও বাকি মসলা দিয়ে ভালো করে কষে নিন।

> মসলা কষে এলে সেদ্ধ মাংস একটি পিষে দিয়ে দিন যাতে আঁশ আলাদা হয়। ভালো করে নেড়ে নিয়ে সেদ্ধ আলু কুচি দিয়ে ভালো করে নেরে ভাজা ভাজা হয়ে এলে নামিয়ে নিন।

> ময়দা সামান্য তেল দিয়ে খাস্তা করে নিয়ে লবন ও কালি জিরা দিয়ে পরিমাণমতো পানি মিশিয়ে রুটি বেলার ডো তৈরি করে নিন। এরপর পাতলা ছোট রুটি তৈরি করে মাঝে পুর দিয়ে দুভাজ করে অর্ধচন্দ্রের মতো তৈরি করে দুপাশ আটকে দিন।

> কড়াইয়ে ডুবো তেলে ভাজার মতো তেল গরম করে লালচে করে ভেজে তুলুন। কিচেন টিস্যুর উপরে তুলে রেখে বাড়তি তেল শুষে নিন। ব্যস, এবার পরিবেশন করুন গরম গরম।

রেসিপি : প্রিয়.কম

 

করোনা সংকটে গর্ভবতী মায়েদের বলছি…

করোনা সংকটে গর্ভবতী মায়েদের বলছি……….


ডা.ফাহমিদা শিরীন নীলা


দেশের এই সংকটকালীন সময়ে সবচেয়ে বেশি সংকটে আছি আমরা ডাক্তাররা, পেশাগত কারণে। কিন্তু সাধারন জনগণের মধ্যে বাচ্চা এবং বৃ্দ্ধের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি সংকটে আছেন আপনারা গর্ভবতীরা। গর্ভকালীন সময়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় এই সময় যেকোন ভাইরাস সংক্রমনের আশঙ্কা সাধারনের চেয়ে ৫.৭ গুন বেশি। জটিল কোন প্রবলেম না থাকলে এক দু’মাস চেকআপ না করালে আপনার তেমন ক্ষতি হবে না। বরং চেকআপ করতে গিয়ে চেম্বার, ডায়াগনষ্টিক সেন্টার বা হাসপাতাল থেকে আপনি নিয়ে যেতে পারেন ভাইরাস।

চেকআপের ডেট আছে। কি করবেন?

অসুবিধা নেই। এটা আদালতের দেয়া ডেট না। না আসলে আপনাকে পুলিশ গিয়ে ধরে নিয়ে এসে জেলে পুরবে না।
তাহলে কি করবেন?
১)আগের প্রেসক্রিপশনের ওষুধগুলোই চালিয়ে যান।
২)বাসায় প্রেসার মাপা মেশিন থাকলে মাঝে মাঝে নিজেরাই প্রেসার চেক করুন ।
৩)বাচ্চার নড়াচড়া খেয়াল রাখুন।
৪)ওজন বাড়ছে কি না খেয়াল রাখুন। বাসায় ওজন মাপার মেশিন থাকলে প্রতি মাসে ওজন দেখে নিন।
৫)নতুন কেন সমস্যা দেখা দিলে বা কোন অসংগতি মনে হলে ফোনে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিন।
৬)সকল সামাজিকতাকে পাশ কাটিয়ে একা একা নিজের মত থাকুন। আপনার সঙ্গে তো একজন আছেই সবসময়। আপনার ভবিষ্যত সন্তানের সাথে কথা বলুন। তার সুরক্ষার জন্য নিজেকে আড়ালে রাখুন।
৭)প্রয়োজন ছাড়া কোনভাবেই ঘরের বাইরে যাবেন না।
৮)মাঝে মাঝে হাত-মুখ সাবান-পানি বা স্যানিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার করুন। বারবার মুখে-চোখে হাত দিবেন না।
৯)বাইরে থেকে কেউ আসলে সে পরিচ্ছন্ন না হওয়া পর্যন্ত দুরত্ব রক্ষা করে চলুন।
১০)হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার নিজে মেনে চলুন। এবং বাসার সকলকে এটি মনে চলতে বাধ্য করুন।
১১)বাড়ীতে কারো সর্দি-কাশি হলে তাকে কিছুটা আলাদা করে রাখুন। কোনভাবেই তার কাছাকাছি যাবেন না। এমনকি আপনার বাচ্চা হলেও না। তাকে পরিবারের অন্য কোন সদস্যের কাছে দেখভালের জন্য রাখুন।
১২)আপনার সর্দি-কাশি হলে সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে না গিয়ে ফোনে আপনার ডাক্তারকে উপসর্গগুলো জানান। তাঁর পরামর্শ মোতাবেক ওষুধ পথ্য খান।

কোভিড১৯ যেহেতু একটি নতুন সংক্রমন, এই সম্পর্কে জানি আমরা অল্পকিছুই। আমরা এখনও জানিনা, আপনি এই ভাইরাস আক্রান্ত হলে আপনার গর্ভস্থ সন্তানের কোন ক্ষতি হবে কি না বা সে এই সংক্রমন বহন করবে কি না! তবে অল্প কিছু গর্ভবতীর সময়ের পূর্বেই ডেলিভেরি হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে। সেটির সঠিক কারন জানা যায়নি।

ডেলিভেরির সময় কি করবেন?

আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নির্দিষ্ট হাসপাতালে ডেলিভেরি করান। তবে সংক্রমন এড়াতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
ডেলিভেরির সময় বা পরে আত্মীয়-স্বজনের ভিজিট প্রত্যাহার করুন। বাচ্চা দেখতে চাইলে ছবি তুলে অনলাইনে পাঠিয়ে দিন কিংবা সেটি সম্ভব না হলে সন্তানের সুস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে তাদের অপেক্ষা করতে বলুন। বাচ্চা একটু দেরি করে দেখলে মহাভারত শুদ্ধ বা অশুদ্ধ কোনটাই হবে না। বরং এই মুহূর্তে আপনার এবং বাচ্চার শুদ্ধ থাকাটাই গুরুত্বপূর্ণ।

বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াবেন কি না ?

ভাইরাসটি নতুনভাবে সনাক্ত হওয়ার কারণে এ সম্পর্কে আমরা জানিনা যে এটি বুকের দুধের মাধ্যমে সন্তানের শরীরে প্রবেশ করে কি না! তবে যেহেতু বুকের দুধ বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, আপনারা বুকের দুধ নিয়মমতোই খাওয়াবেন। তবে বাচ্চাকে স্পর্শ করার পূর্বে নিয়ম মেনে হাত পরিষ্কার করে নিবেন ।অযথা বাচ্চার চোখে-মুখে বা শরীরে হাত দিবেন না।

একটা বিষয় মনে রাখবেন, যেকোন নতুন রোগ বা সংক্রমন হলে সেটি সম্পর্কে বিস্তারিত গবেষণালব্ধ ফল পেতে সময় লাগে। অল্প কিছু স্যাম্পল পরীক্ষা করে এমনিয়োটিক ফ্লুইড(বাচ্চার থলিতে থাকা পানি) এবং বুকের দুধের মধ্যে করোনা ভাইরাস পাওয়া যায়নি। কিন্তু এই দুই মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ায় না এটা নিশ্চিত করে বলতে আরও গবেষণা আবশ্যক, যা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। কাজেই আমরা সবটাকেই আমলে নিয়ে সাবধানে থাকবো।

ভাল থাকুন সন্তানধারী সকল মা এবং তাদের সন্তানেরা।

ডা.ফাহমিদা শিরীন নীলা
এমবিবিএস; এফসিপিএস(অবস্ এন্ড গাইনী), ফিগো ফেলো(ইটালী)
গাইনী বিশেষজ্ঞ
বগুড়া।
২১/০৩/২০২০ ইং।

 

তিরস্কারমূলক শব্দ যেভাবে জব্দ করে নারীকে

তিরস্কারমূলক শব্দ যেভাবে জব্দ করে নারীকে


নারী সংবাদ


বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের মিথ্যা মামলা কতটা হয়?

আদালতে আড়াই মাসের শিশু, আইন বদলানোর আদেশ

‘দুটো বাচ্চা নিয়ে কোথায় যাবো তাই নির্যাতন সহ্য করেই সংসার করে যাচ্ছি’
‘নিজের পরিবারই পক্ষে ছিল না’

তামান্না নুপুর নামে আরেকজন নারীর সঙ্গে কথা হয়। বছরের পর বছর স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে তিন বছর আগে তিনি স্বামীকে ডিভোর্স দিয়েছেন।

এখন গাজীপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।

তামান্না নুপুর জানাচ্ছেন, বিয়ের পর থেকেই পাঁচ বছর ধরে তিনি স্বামীর পরিবারে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। ছোটখাট বিষয়ে কিংবা কারণে-অকারণে তাকে মারধোর করা হতো।

সিগারেট দিয়ে একাধিকবার তার শরীরে ছ্যাকা দেয়ার ঘটনাও আছে।

“ওদের আসলে আমাকে ভালো লাগতো না কোন কারণে। এজন্যই অত্যাচারের অজুহাত খুঁজতো। বাসায় জানাইছি। তারা বলে, সহ্য করো।”

মিজ নুপুর বলছেন, “কতদিন আর সহ্য করবো? যখন মাত্রা ছাড়ায় গেলো, শশুরবাড়ির সবাই নির্যাতন করতে শুরু করলো তখন আর থাকতে পারলাম না। নিজের সিদ্ধান্তেই তালাক দেই। আমার নিজের পরিবার বলছে, তারা আমার দায়িত্ব নিতে পারবে না।”
পরিবার থেকে সাহস না পেয়ে স্বামীর নির্যাতনের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেননি তামান্না নুপুর।
তামান্না নুপুর বলছেন, তিনি স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার বাবা-মা রাজি হননি।

“বাবা বললো, মামলা করে কী হবে? দরকার নাই। এখন পরিবার যদি হেল্প না করে, তাহলে আমার একার পক্ষে তো সম্ভব না। আমি তো থানা-পুলিশের ব্যাপার কিছুই বুঝি না।”

বাংলাদেশে পরিবারের মধ্যে বিশেষত: স্বামীর মাধ্যমে নারী নির্যাতনের যে চিত্র তা বেশ ভয়াবহ।

শারীরিক, মানসিক, আর্থিকসহ বিভিন্ন ধরণের নির্যাতনের মধ্যেই দিনের পর দিন অনেকেই জীবন পার করলেও এ নিয়ে অভিযোগ বা প্রতিবাদের চিত্র খুব একটা দেখা যায় না।

এ নিয়ে সচেতনতাও কম। আবার নিজ পরিবারেও নির্যাতনের মুখে পড়েন অনেকে।

২০১৫ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) নারী নির্যাতনের চিত্র নিয়ে যে জরিপ প্রকাশ করে সেখানে দেখা যায় বাংলাদেশে ৭২.৬ শতাংশ বিবাহিত নারীই কোন না কোনভাবে স্বামীর দ্বারা নির্যাতনের শিকার হন।

এর মধ্যে শারীরিক নির্যাতনের হার ৪৯.৬ শতাংশ।

জরিপে দেখা যাচ্ছে, যারা নির্যাতনের শিকার হয় তাদের ৭২.৭ শতাংশই নির্যাতনের ঘটনা বাইরের কাউকে বলেন না।

আর থানা-পুলিশ পর্যন্ত অভিযোগ পৌঁছান মাত্র ১.১ শতাংশ নির্যাতিত নারী।

অর্থাৎ বেশিরভাগই মুখ বুজে অত্যাচার সহ্য করে যাচ্ছেন। কিন্তু এরকম পরিস্থিতি কেন হলো?

সুত্রঃ বিবিসি।

 

নারী উদ্যোক্তা নাঈমার শাড়ি এখন বিদেশেও যাচ্ছে

নারী উদ্যোক্তা নাঈমার শাড়ি এখন বিদেশেও যাচ্ছে


ক্ষুদ্র উদ্দ্যোক্তা


নাঈমা সুলতানা ছিলেন একজন সাধারণ গৃহিণী। এখন তার কোটি টাকার ব্যবসা। মানুষ যে তার স্বপ্নের সমান বড় তা বাস্তবে দেখিয়েছেন নাঈমা। আগে সাধারণ পাঁচটা গৃহবধূ হয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেও এখন তিনি আয় করেন, পরিবারের বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণেও থাকে তার অবদান।
বলা যায়, নিজের বুদ্ধিমত্তা, ধৈর্য ও চিন্তার কারণে একজন সফল নারী হয়ে ওঠেছেন তিনি। তার দেখাদেখি আরও অনেকেই ছোট-ছোট উদ্যোগ নিয়ে শুরু করেছেন, অনেকে স্বাবলম্বীও হয়েছেন। এক্ষেত্রে নারীদের সফল ‘আইকন’ তিনি।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নারী উদ্যোক্তা নাঈমা সুলতানা জানালেন তার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প। আলাপ-চারিতায় উঠে এসেছে তার কাপড়ের ব্যবসা শুরু থেকে সাফল্যের দিনগুলোর কথা। বলেছেন নানা বাধা এবং তা কিভাবে মোকাবেলা করেছেন তাও।
ব্যবসা শুরুর কথা উল্লেখ করে নাঈমা বলেন, খুবই অল্প পুঁজি নিয়ে শুরু করেছিলাম ব্যবসা। এখন বছরে প্রায় এক কোটি টাকার ব্যবসা করি। প্রথমে ঘরে বসেই টাঙ্গাইলের শাড়ি নিয়ে অনলাইনে ব্যবসাটা শুরু করি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
আলাপে ব্যবসা শুরু করতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের বাধার মুখে পড়ার কথাও বলেন নাঈমা। তার মতে, আসলে যাই করেন আপনি, শুরু করা কিন্তু সোজা নয়। পরিবার থেকে অনুমতি ছিল চাকরির। কিন্তু মনে ও মাথায় সব সময় ব্যবসা ঘুরতো।
‘পরিবারের লোকজন চাইতো না আমি ব্যবস্যা করি। অনেকভাবেই তাদের বুঝিয়েছি কিন্তু আমি ব্যর্থ হই। অবশেষে কিছুটা গোপনে ফেসবুকের একটি পেজের মাধ্যমে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করি।’
নাঈমা বলেন, আমার এক বান্ধবীর বাসা ছিলো টাঙ্গাইলে। সে প্রায়-ই তাঁতের শাড়ি নিয়ে আসতো। কারণ তার বাবার ব্যবসা ছিল শাড়ির। সেখান থেকে ১০ টা শাড়ি নিয়েই শুরু করি ব্যবসা।
‘এগুলো দুইদিনে-ই বিক্রি হয়ে যায়। এরপর আমার আগ্রহ তখন আরও বেড়ে যায়। খুবই ইন্সপায়ার্ড হই। নতুন উদ্যোমে শুরু করি আবার। তখনও সাড়া পেলাম বেশ।’
তিনি বলেন, ‘আমার ব্যবসা তখন প্রাথমিকভাবে ভালোই চলছে। এর মাঝে সামনে ছিল বসন্ত উৎসব। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে অনলাইনে ১৫০ শাড়ি বিক্রি করে ফেলি। সেই টাকা তুলে বাড়িতে জানাই বিষয়টি। এত টাকা এক সঙ্গে দেখে কেউ ভাবতেই পারেনি, আমার দ্বারা এটা সম্ভব।’
‘মোটামুটি সবাই সারপ্রাইজড। এবার সিদ্ধান্ত নিই আর চুপিচুপি নয়। তখন আর কোনো বিষয়ে না করেনি কেউ। তখন বাড়িতে বসেই শুরু হলো ব্যবসা, তবে একটু বড় পরিসরে,’ বলেন সংগ্রামী এই নারী।
প্রথমে অনলাইনেই চলতে থাকে নাঈমার শাড়ির ব্যবসা। পরবর্তীতে শোরুমও খুলেছেন তিনি। এখন অনলাইনে এবং অফলাইনে সমান তালে এগিয়ে চলেছে তার ব্যবসা। এর মাঝে দেশের বাজার পেরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন বাঙালি অধ্যুষিত অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে তার শাড়ির কদর!
বিদেশের মার্কেট ধরলেন কীভাবে? উত্তরে নাঈমা বললেন, আমার এক বান্ধবী স্বামীসহ কানাডায় থাকেন। ফেসবুকে আমি শাড়িগুলো তাকেও শেয়ার করতাম। মাঝে-মাঝে তিনি লাইক কমেন্ট করতেন।
‘২০১৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে কানাডায় বাংলা কমিউনিটিতে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তখনই সিদ্ধান্ত হয় যে, মেয়েরা একই ধরনের শাড়ি পরবেন। ওই সময়ই আমার বন্ধু আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমার পেজে একটি শাড়ি শেয়ার করলে সেখানকার অনেকেই তা পছন্দ করেন। পরে তারা অনলাইনে অর্ডার করেন এবং টাকা পাঠিয়ে দেন। এরপর শাড়ি পেয়ে খুশিও হন। এরপর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অডার পাচ্ছি, শাড়িও পাঠাচ্ছি।’
বিদেশের মার্কেট ধরতে কোনো চ্যলেঞ্জ কী? এমন প্রশ্নের উত্তরে নারী উদ্যোক্তা নাঈমা বলেন, সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল পণ্যেও ডেলিভারি। কারণ দেশে খুব একটা সমস্যা হয় না। কিন্তু বিদেশে পণ্য পৌঁছাতে দিতে বড়-বড় কুরিয়ারের কাছে যেতে হয়। সেক্ষেত্রে দেখা যায়, যে দামে শাড়ি কেনা হয় কুরিয়ার চার্জ কয়েকগুণ বেশি হয়। তবে এখন কিছু কোম্পানি রয়েছে যারা কম দামে ভালো সার্ভিসটা দেয়।
অনলাইনে বিদেশে পণ্য বিক্রির প্রসারের বিষয়ে নতুনদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিদেশে পণ্য বিক্রির সুবিধা হচ্ছে দাম বেশি পাওয়া যায়। দেশে আমি সেল করি ২০০০ টাকা সেটাই বাহিরে করা যায় ২৫০০ টাকায়। আবার কুরিয়ার চার্জও ক্রেতাই দেন।
‘তাই বিদেশে বাঙালি অধ্যুষিত দেশে মার্কেটিং করলে সেল ভালো পাওয়া যাবে। দেখা যায় যেখানে বাঙালি আছে সেখানে একজন নিলে বাকিরা এমনই নিয়ে নেয়। অবশ্য সে দেশের মার্কেট থেকে কম দামেই পণ্য কিনতে পারেন অনলাইনে,’ যোগ করেন নাঈমা।
সু্ত্রঃ বাসস।

 

করোনাভাইরাসঃ আসুন কিছুটা আতঙ্কিত হই!

করোনাভাইরাসঃ আসুন কিছুটা আতঙ্কিত হই!


রাউফুন নাহার


নিচের কোন বিবৃতিটি আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য?

১। আমি মোটেও ভয় পাচ্ছিনা; করোনা আমার কিছুই করতে পারবে না, তাই স্বাভাবিক চলাফেরা ও জীবনধারা অব্যাহত রেখেছি।

২। আমি মানসিক চাপ বোধ করছি, তাই আমার এবং অন্যদের সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করছি।

৩। আমার দমবন্ধ লাগছে, কিছুই ভালো লাগছে না; করোনার ভয়ে আমার ঘুম, খাওয়া-দাওয়া সবকিছু ব্যাহত হচ্ছে।

যাদের অবস্থান ২ তাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, প্লিজ চালিয়ে যান। যাদের অবস্থান ১ বা ৩ তাদের জন্য বলছি, ভালোবাসা নিন এবং লেখাটি পড়তে থাকুন।
প্রথমেই দুঃখ প্রকাশ করছি যে একজন মানসিক স্বাস্থকর্মী হয়েও আপনাকে অভয় দিয়ে বলতে পারছি না, ‘আতঙ্কিত হবেন না, আতঙ্কিত হবার মত কিছু হয়নি!’ বরং বলব আতঙ্কের ঘটনাতেও আতঙ্কিত না হওয়া মনোঃসামাজিক সমস্যার লক্ষণ। হ্যা, বর্তমানে বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি আতঙ্কিত হওয়ার মতই। আর এমন পরিস্থিতিতে নির্দিষ্ট মাত্রার ভয় ও মানসিক চাপ আমাদের সচেতন হতে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো নিতে সহযোগিতা করবে। ভয় বা মানসিক চাপের মাত্রা অতিরিক্ত কম, বা অতিরিক্ত বেশি কোনোটাই আমাদের জন্য মঙ্গলজনক নয়। যেমন, ভয় না থাকা বা ভয়ের মাত্রা একেবারেই কম থাকার কারনেই মূলত এমন দুর্যোগের সময়েও অনেকেই নাগরিক দায়িত্বগুলো পালন করছে না এবং মনের আনন্দে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের আক্রান্ত হবার এবং অন্যকে আক্রান্ত করার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আনন্দে থাকা ভুল কিছু নয়, বরং এটি আমাদেরকে সুস্থ সবল রাখে। তবে এমন পরিস্থিতিতে বাড়ির ভেতরে আনন্দ করাটাই শ্রেয়।
আবার যারা অনেক বেশিমাত্রায় আতঙ্কিত তাদের করোনা আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা কম থাকলেও হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থেকে যায়। কারণ অতিরিক্ত ভয় ও দুশ্চিন্তার ফলে ঘুম, খাওয়া, বিশ্রামের মত মৌলিক কাজগুলোও ব্যাহত হচ্ছে৷ আর অতিরিক্ত মানসিক চাপ এবং শরীর ও মনের যত্নের অভাব এই দুই কারণে যখন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে তখন শুধু করোনা কেন, যেকোন রোগই পেয়ে বসবে। করোনা নিয়ে সচেতনতামূলক আচরণগুলোর মধ্যে তাই সুষম খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম, শরীরচর্চা এসবও পড়ে। যেন যেকোনো রোগ বা ভাইরাস শরীরে ঢুকলেও তার সাথে যুদ্ধটা চালিয়ে যাওয়ার শক্তি থাকে।

এখন কথা হলো অতিরিক্ত ভয় বা দুশ্চিন্তা কমাবো কি করে? সেক্ষেত্রে কিছু টিপ্স শেয়ার করছি৷

১.
প্রথম ধাপঃ যখন ভয় বা দুশ্চিন্তা বা অন্য যেকোন ধরনের কষ্টকর অনুভূতি হবে, শান্ত হয়ে কোথাও বসে বা শুয়ে পড়ব। শরীরের কোন কোন অংশে খারাপ বা অস্বস্তি লাগছে খেয়াল করব। কারণ আমাদের অনুভূতিগুলো শরীরেই ভর করে। যেমন, মাথা ঝিমঝিম করছে কি-না, ঘাড় বা চোয়াল বা শরীরের অন্য কোন অংশ শক্ত হয়ে আছে কি-না, বুক ধরফর করছে কি-না খেয়াল করব। অর্থাৎ শরীরের যে অংশটায় কিছুটা হলেও অসুবিধা বা অস্বস্তি লাগছে যেখানেই ৩০ সেকেন্ড থেকে ২ মিনিটের মত মনোনিবেশ করব।

দ্বিতীয় ধাপঃ গভীরভাবে কয়েকটি শ্বাস-প্রশ্বাস নেবো ও ছাড়বো। যেভাবে ধীরে ধীরে ফুলের ঘ্রান নেই যেভাবে শ্বাস নেবো, তারপর মোমবাতিতে ফু দেয়ার মত করে ধীরে ধীরে ছাড়বো। এভাবে ৫-১০ জোড়া শ্বাস-প্রশ্বাস নিলেই ব্রেইনে যথেষ্ট পরিমান অক্সিজেন চলে যাবে এবং অস্থিরতা কমে আরাম লাগতে শুরু করবে।

তৃতীয় ধাপঃ পানি পান করা। ঠান্ডা বা স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি পান করলে মুখ ও কণ্ঠনালীসহ শরীরে একটা শীতল ভাব আসবে। যাদের ভয়, উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তার প্রবনতা বেশি তারা সবসময়ই পানির পাত্র বা বোতল সাথে রাখুন। গলা শুকিয়ে গেলেই এক দুই চুমুক করে পানি পান করুন।

চতুর্থ ধাপঃ এই পর্যায়ে আপনার ভয়, উদ্বেগ বা অস্থিরতার মাত্রা কিছুটা হলেও কমে আসার কথা। কেমন বোধ করছেন খেয়াল করুন। এই মুহুর্তে আপনার চাহিদা কি খেয়াল করুন। করোনা দুর্যোগের এই সময়ে আমাদের সবচেয়ে বড় চাহিদা হতে পারে ‘নিরাপত্তা’ বা ‘সুরক্ষা’। এবার ভাবুন নিজেকে ও পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে আপনি কি কি পদক্ষেপ নিতে পারেন। এখেত্রে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের গাইডলাইনগুলো মেনে চলা এবং নিজের ও পরিবারের সদস্যদের ব্যাপারে যত্নশীল হওয়াই হতে পারে উৎকৃষ্ট পদক্ষেপ।


সারাক্ষণ ফেইসবুক বা টেলিভিশণে করোনা সংক্রান্ত নিউজ দেখা থেকে বিরত থাকুন। একটি সময় নির্ধারণ করুন এবং শুধুমাত্র আপনার নির্ধারিত সময়েই করোনা সম্পর্কিত খবর নিন। বাকি সময়ে দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক কাজকর্মগুলোতে মনোনিবেশ করুন। পেশাগত কারণে যারা বাইরে যাচ্ছেন, নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করুন


জীবনের কঠিনতম পরিস্থিতিতেও আমাদের হাতে কিছু অপশন বা বিকল্প থাকে। তাই আপনিই সিদ্ধান্ত নিন, আপনি করোনা পরিস্থিতিকে উপেক্ষা করে চারদিকে ঘোরাফেরা করে নিজেকে ও অন্যদেরকে বিপদের মুখে ফেলবেন, করোনার ভয়ে নাওয়া খাওয়া বন্ধ করে হা হুতাশ করবেন, নাকি নিজের মানসিক চাপকে স্বীকৃতি ও গুরুত্ব দিয়ে শরীর-মনের যত্ন নেবেন ও সুরক্ষিত থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।

 

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার পর্ব -৬

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার পর্ব -৬


নারীর জন্য আইন


নীচের ছকে স্বামী, মাতা ও পিতার সাথে একজন ছেলের অবস্থান ও হিস্সা দেখানো হল।

ছক নং ৩.

স্বামী, মাতা ও পিতার সাথে একজন ছেলের অবস্থানের উদাহরণ: [সকলের ঐক্যমত্য অনুসারে] :

১২         ১২                    মা.        তা.             সম্পদের পরিমান ৬,০০,০০০ টাকা      স্বামী                   মাতা                          পিতা               ছেলে ১ জন                                                             অবশিষ্ট অংশ=                  =                 =                 =  =      ৩                =  ২                  =  ২                   =  ৫=  ১,৫০,০০০ টাকা = ১,০০,০০০ টাকা =১,০০,০০০ টাকা   =২,৫০,০০০ টাকা নোট: কুরআনের বিধান অনুসারে মৃতের স্বামী এক চতুর্থাংশ অনুসারে ১,৫০,০০০ টাকা, মাতা এক ষষ্টাংশ অনুসারে ১,০০,০০০ টাকা ও পিতা এক ষষ্টাংশ অনুসারে ১,০০,০০০ টাকা পাওয়ার কথা। আর অবশিষ্ট অংশে ২,৫০,০০০ টাকা ছেলে পাবে মাওলা হিসাবে। সকল ছাহাবী ও ফুকাহাগণ এ ক্ষেত্রে একমত। এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে একথা দৃঢ়তার সাথে বলা যায় যে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. এর মতামত অনুসারে কন্যা সন্তানদেরকে মাওলা গণ্য করে অবশিষ্টাংশ প্রদান করাই সঠিক সিদ্ধান্ত। কারণ কোন মেয়ের স্থলে ছেলে থাকলে সে ছেলে যতটুকু পাবে, সে মেয়ে কখনোই এর চেয়ে বেশী পেতে পারে না।

গ.  সূরা নিসার ১৭৬ নং আয়াতই প্রকৃতপক্ষে আছাবা সংক্রান্ত থিওরীর ত্র“টি নির্দেকশ। এ আয়াতে ‘ওলাদ’ বলতে শুধুমাত্র ‘পুত্র-সন্তান’ বুঝায়- এমন দাবী একটি হাস্যকর দাবী। কারণ রাসূলুল্লাহ সা. এমন কথা বলে যাননি, এমন কি কোন ছাহাবীই এমন ধরণের ব্যাখ্যা করেন নি। অর্থাৎ এ রকম ব্যাখ্যার স্বপক্ষে কোন দলীল নেই। আরবী অভিধান, ভাষার ব্যবহার ও কুরআনে ব্যবহৃত ওলাদ শব্দের ব্যাখ্যা গুলোকে বিবেচনা করলে একথা দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ওলাদ অর্থ হল সন্তান। গাণিতিক বিশ্লেষণেও প্রমাণীত হয় যে, কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে ভাইবোন কোন হিস্সার অধিকারী নন। এ সমাধান ‘ওলাদ’ শব্দের অর্থ বুঝতেও সাহায্য করে। যেমন নিম্নোক্ত ছকে দেখুন: ছক নং – ৪.  একজন কন্যার সাথে স্বামী এবং ভাই থাকলে তার সমাধান [ফুকাহাদের মতানুসারে]:                      ৪                      মা.                   সম্পদের পরিমান ৬,০০,০০০ টাকা        স্বামী                    কন্যা ১ জন                     ভাই ১ জন কিংবা একাধিক                                                                 অবশিষ্ট অংশ =      ১                             ২                                      ১ =  ১,৫০,০০০ টাকা   =  ৩,০০,০০০ টাকা                =  ১,৫০,০০০ টাকানোট: সন্তান থাকলে স্বামী এক চতুর্থাংশ পান, তাই তাকে  অংশ দেয়া হয়েছে। কন্যার সংখ্যা একজন হলে, তাদের মতানুসারে, সে পায় অংশ। কারণ তারা কন্যাদেরকে যবীল ফুরূজ বলে বিবেচনা করেন। আর ভাই পাবে অবশিষ্ট  অংশ। কারণ তারা ভাইকে ‘আছাবা’ গণ্য করে অবশিষ্ট অংশের অধিকারী বলে দাবী করেন এবং কন্যা সন্তানের সাথে সেও আছাবা হিসাবে হিস্সাদার বলে মনে করেন। এ কারণে ভাই একজন হোক অথবা একাধিক, কন্যা সন্তানের সাথে সে বা তারা অবশিষ্ট হিস্সা পাবে বলে তারা ঘোষনা করেন। এ হিসাবে ভাই একজন অথবা একাধিক হলে তারা অবশিষ্ট  অংশ পাবে। টাকার অংকে স্বামী পাবে ১,৫০,০০০/- টাকা, কন্যা পাবে ৩,০০,০০০/- টাকা এবং ভাই পাবে অবশিষ্ট ১,৫০,০০০/- টাকা।কিন্তু তাদের এ সমাধান সঠিক ও যুক্তিভিত্তিক নয়। যদি কন্যা সন্তানকে ‘ওলাদ’ বলে স্বীকার করা হয়, তাহলে স্বামীকে এক চতুর্থাংশ দেয়া সঠিক আছে কিন্তু ভাইকে কোন হিস্সা দেয়া সঠিক নয়। কারণ আল্লাহ তা’আলা বলেছেন: وَهُـوَ يَـرِثـُهَـآ اِنْ لـَمْ يَـكـُن لـَّهَـا وَلـَدٌ ‘‘এবং সে ব্যক্তিও (ভাই) তার মৃত বোনের উত্তরাধিকারী হবে, যদি তার (মৃত বোনের) কোন ‘ওলাদ’ (সন্তান) না থাকে। (সূরা নিসা- ১৭৬)।” যেহেতু কন্যাকে ‘ওলাদ’ বা সন্তান বলে স্বীকার করা হয়েছে, সুতরাং সে ‘ওলাদ’ বা সন্তানের উপস্থিতিতে ভাই কিছুই পেতে পারে না। আর যদি কন্যা সন্তানকে ‘ওলাদ’ বলে স্বীকার করা না হয়, তাহলে স্বামীকে মোট সম্পদের অর্ধেক হিস্সা দিতে হবে। কারণ আল্লাহ বলেছেন: وَلـَكـُمْ نـِصْـفُ مـَا تـَرَكَ اَزْوَاجـُكـُمْ اِنْ لـَمْ يـَكـُن لـَّهـُنَّ وَلـَدٌ فـَاِنْ كـَانَ لـَهـُنَّ وَلـَدٌ فـَلـَكـُمُ الـرُّبـُعُ مـِمـَّا تـَرَكـْنَ “তোমাদের জন্য অর্ধাংশ বরাদ্দ থাকবে যা কিছু তোমাদের স্ত্রীগণ রেখে মারা যাবে তাতে, যদি তাদের কোন ‘ওলাদ’ (সন্তান) না থাকে। তবে যদি তাদের কোন ‘ওলাদ’ (সন্তান) থাকে, তাহলে তোমরা এক চতুর্থাংশ পাবে যা কিছু তারা ছেড়ে যাবে তাতে।” (সূরা নিসা -১২)। এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, ‘ওলাদ’ বা সন্তান না থাকলে স্বামী পাবে সম্পদের অর্ধেক। কন্যা সন্তানকে যদি ‘ওলাদ’ বলে স্বীকার করা না হয়, তাহেল স্বামীকে অর্ধেক দিতে হবে। তা কুরআনের নির্দেশ। তখন স্বামী পাবে অর্ধেক আর কন্যা সন্তান তো তাদের মতানুসারে একজন হলে অর্ধেক পায়, সুতরাং বাকী অর্ধেক কন্যা নেবে।

শেষ পর্ব

কানিজ ফাতিমা ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহিত

 

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার পর্ব -৫

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার পর্ব -৫


নারীর জন্য আইন


(৩). মেয়ে ও বোনদেরকে মাওলা উত্তরাধিকারী মেনে নিয়ে অবশিষ্ট সম্পদ দেয়ার স্বপক্ষে মতামত না দিয়ে তাদেরকে নির্ধারিত হারে -একজনের জন্য অর্ধেক ও একাধিকের জন্য দু’তৃতীয়াংশ হিসাবে- হিস্সা দিলে হিসাবে গরমিল দেখা দেয়। যাকে ইলমুল ফারাইজে ‘আওল’ বলা হয়। যে আওলের কারণে কুরআনের ফারাইজ সংক্রান্ত সকল নির্দেশনা লঙ্ঘনের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। হিসাবে গরমিল দেখা দেয়ার উদাহরণ নিম্নরূপ:

ছক নং – ১.

মেয়ে একজন হলে হিসাবে গরমিল দেখা দেয়ার উদাহরণ [ফুকাহাদের মতানুসারে] :                     ১২       ১৩                মা.              আ       সম্পদের পরিমান ৬,০০,০০০ টাকা           স্বামী             মাতা              পিতা           মেয়ে ১ জন    =                =             =              =   = মোট অংশ    =                =             =          =    = মোট অংশ [আওলের কারণে হরের পরিবর্তন]   =        ৩            =   ২            =    ২             =     ৬   =  ১,৩৮,৪৬১.৫৪ টাকা =  ৯২,৩০৭.৬৯ টাকা =  ৯২,৩০৭.৬৯ টাকা   =২,৭৬,৯২৩.০৮ টাকানোট: কুরআন অনুসারে মৃতের সন্তান থাকলে স্বামী এক চতুর্থাংশ এবং পিতামাতার প্রত্যেকে এক ষষ্টাংশ করে পাওয়ার স্পষ্ট বিধান রয়েছে। কিন্তু একজন মেয়ে থাকলে সে মোট সম্পদের অর্ধাংশ পাবে বলে তারা মনে করেন। স্বামী, মাতা, পিতা ও একজন মেয়েকে এ হিসাবে হিস্সা দিলে মোট হিস্সার পরিমাণ দাড়ায়: {( + +  + ) = ()}= , যা পাটী গণিতের হিসাবে শুদ্ধ নয়। এ হিসাবে স্বামী ১,৫০,০০০ টাকা, পিতা ১,০০,০০০ টাকা ও মাতা ১,০০,০০০ টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও ফুকাহাগণ হিসাবের গরমিল হওয়ার অযুহাতে সবাইকে একটু একটু করে কম দেয়ার কথা বলেন। কারণ তাদের সম্পদের ১ অংশের স্থলে অংশ  ভাগ হয়ে গরমিল হতে দেখা যায়। সেজন্য তারা উপরোক্ত মাসআলায় স্বামীকে ১,৩৮,৪৬১.৫৪ টাকা পিতাকে ৯২,৩০৭.৬৯ টাকা মাতাকে ৯২,৩০৭.৬৯ টাকা ও মেয়েকে ২,৭৬,৯২৩.০৮ টাকা দিয়ে সমাধান করেন। অথচ তাদের নিজেদের সূত্রমতে মেয়েকে ৩,০০,০০০ টাকা দেয়ার কথা। কিন্তু হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. এর মতবাদের আলোকে অংশ ভাগ করলে হিসাবে গরমিল হবে না। তাঁর মতবাদের আলোকে উপরোক্ত মাসআলাটির সমাধান নীচের ছকে দেখুন:

ছক নং ২.

মেয়ে একজন হলে হিসাবে গরমিল না হওয়ার উদাহরণ [আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. এর মতানুসারে]:           ১২       ২৪     ১৯  মা.       তা.     রা.       সম্পদের পরিমান ৬,০০,০০০ টাকা    স্বামী             মাতা             পিতা                মেয়ে ১ জন                                                    অবশিষ্ট অংশের =           =               =            =    এর =           =              =            =       = সর্বমোট অংশ  =         =              =         =      = মোট অংশ (রদ্দের কারণে হরের পরিবর্তন)        = ৬          =  ৪              =   ৪           =  ৫ =১,৮৯,৪৭৩.৬৮ টাকা =১,২৬,৩১৫.৭৯ টাকা  =১,২৬,৩১৫.৭৯ টাকা  = ১,৫৭,৮৯৪.৭৪ টাকা নোট: কুরআনের বিধান অনুসারে মৃতের স্বামী ১,৫০,০০০ টাকা, মাতা ১,০০,০০০ টাকা ও পিতা ১,০০,০০০ টাকা পাওয়ার কথা আর মেয়েকে অবশিষ্ট অংশের অর্ধেক ={৬,০০,০০০ – (১,৫০,০০০ + ১,০০,০০০ + ১,০০,০০০)}= ২,৫০,০০০২ = ১,২৫,০০০ টাকা দিলে অতিরিক্ত ১,২৫,০০০ টাকা অবশিষ্ট থেকে যায় যা পুনর্বার এ উত্তরাধিকারীগণই পাবেন। তাতে স্বামী মোট ১,৮৯,৪৭৩.৬৮ টাকা মাতা ১,২৬,৩১৫.৭৯ টাকা পিতা ১,২৬,৩১৫.৭৯ টাকা ও মেয়ে ১,৫৭,৮৯৪.৭৪ টাকা পেলন। এ রকম হিস্সা দিলে হিসাবের গরমিল দেখা দেয়ার কোন কারণ নেই। প্রথমে মাখরাজ হবে ১২, পরে উহাকে তাছহীহ করতে হয়েছে ২৪ দিয়ে। আর সম্পদ অতিরিক্ত থেকে যাওয়ার কারণে পুনর্বার তা এ উত্তরাধিকারীদের মধ্যে পুন:বণ্টন হয়েছে। তাতে ভগ্নাংশের হর পরিবর্তিত হয়ে ১৯ হয়েছে। যা রদ্দের সূত্র অনুসারে হয়েছে। আর সম্পদের ১ অংশের স্থলে অংশও = ১ অংশই হয়েছে। এখানে আরেকটি বিষয় খেয়াল করার মত- তা এই যে, ফুকাহাদের মতানুসারে হিস্সা দিলে একজন মেয়েকে এত পরিমাণ সম্পদ দেয়া হয়, যা মেয়ের স্থলে ছেলে হলে, সে ছেলেও পেত না। কারণ স্বামী, মাতা ও পিতার সাথে একজন ছেলে থাকলে সে সর্বোচ্চ অংশ পাবে, ৬,০০,০০০ টাকার সম্পদে তা টাকার অংকে ২,৫০,০০০ টাকা। অথচ তাদের হিসাবে একজন মেয়ে পায় ২,৭৬,৯২৩.০৮ (১ নং ছকে দেখুন) যা স্বাভাবিক বোধশক্তিতে গ্রহনযোগ্য নয়।

 

 

ঢং

ঢং


ডা.মিথিলা ফেরদৌস


ঢং বা ন্যাকামো মেয়েদের একটা অলংকার বলা যেতে পারে।এইটা মেয়েদের বাড়তি সৌন্দর্য বর্ধনে সাহায্য করে।যে মেয়ের এই অর্নামেন্ট নেই,তার সৌন্দর্যের কিছু ঘাটতি থেকেই যায়।এইটা কঞ্জেনিটাল বা একুয়ার্ড দুইভাবেই মেয়েদের আয়ত্বে আসতে পারে।যেভাবেই হোক এইটা আয়ত্বে আনা মেয়েদের জন্য অপরিহার্য।
কুত্তা,বিলাই,ইন্দুর,চিকা,তেলাপোকা, মাকড়শা এমন কি পিপড়া দেইখা কারো কান্ধে ঝাপায় পরা ঢংয়ের একটা উদাহরণ। এছাড়াও বিভিন্ন পদের ঢং আছে।তবে ঢং এমন হতে হবে যা দেখলে ছেলেদের মধ্যে মায়া মহব্বত আপনাতেই উথলায় উঠে।অবশ্য ঢং যে শুধু মেয়েদের আছে তা না।ছেলেদেরও ঢং আছে।তবে সেইটা ছেলেদের খুত হিসেবে গণ্য করা হয়।

জন্মগত ভাবেই হোক বা নিজে নিজে কোনভাবেই এই জিনিস আমি আয়ত্বে আনতে পারিনি।ফলে বাড়তি এই সৌন্দর্য থেকে ছোটকাল থেকেই বঞ্চিত।ঢংয়ের অভাবে তাই চিরকাল মানুষের মায়ামহব্বত থাইকা বঞ্চিত।

বিবাহের পর একদিন শ্বশুরবাড়ির সিঁড়িতে দুই বিড়ালের ঝগড়াঝাঁটি মারামারিতে আমার জামাই আর তার বড় ভাবীর চিল্লাফাল্লা লাফালাফি দেখে বিড়াল না দেইখা এদের দেখে প্রথম অবাক হই।জামাইকে জিগাই,”উনি মেয়ে মানুষ ভয় পাইছে স্বাভাবিক,কিন্তু তুমি বিড়াল দেইখা ভয় পাইলা কি মনে কইরা বুঝলাম না।” জামাই বিরক্ত,কয়,’ভয়ের আবার মেয়ে আবার ছেলে কি?’
তাইতো ভয়ের তো লিংগান্তর ঠিক হয় নাই,চাইপা যাই।

কিছুদিন পর আমার প্রচন্ড জ্বর হয়,জ্বরে ঠিক অজ্ঞান হবার আগেই শুনতে পাই,আমার জামাই বলতেছে,”ঢং করতেছো কেন?”আমার আর কিছুই মনে নাই।আমি নিজেকে খুঁজে পাই, ঢাকা মেডিকেলের একটা কেবিনের বদ্ধরুমে জ্ঞান ফিরে তাও ছয়দিন পর।জানতে পারি,আমাকে নিয়ে মেডিকেল বোর্ড করেছিলেন ছয়জন মেডিসিনের প্রফেসর। এরপরেও আমার জ্বর কমেনা।সন্ধ্যা করে জ্বরের তীব্রতা বাড়তে থাকতো পুরা রুম গরম হয়ে যেতো।স্যাররা অসংখ্য টেস্ট করালেন।কিছুই ধরা পরেনা।তিনমাস টানা জ্বর ছিলো।এইসময় আমার মনে আছে,আমি কারো সাথেই কথা বলতাম না,কেবিনের হলদেটে দেয়ালের দিকে ফাকা দৃষ্টি নিয়ে তাকায় থাকতাম।মাঝে মাঝে প্রচন্ড মাথা ব্যথায় মাথায় হাত দিয়ে নিজেই ব্যথা কমানোর ব্যর্থ চেষ্টা করতাম।আমার জামাই বুঝেছিল,আমি আসলে ঢং করতে জানিনা।

এত পর আমার আল্লাহ্‌ এর অশেষ রহমতে আর বড় কোন অসুখ বিসুখ কখনও হয়নাই।তবে মাঝে মাঝে জ্বর আসলে কাথা মুরি দিয়ে থাকি,সহ্যের বাইরে গেলে ঔষধ খেয়ে নিই।আবার সুস্থ হয়ে চাকরী সংসার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসি।কাউকেই আমার জন্যে বিড়ম্বনায় পরতে দেইনা।

রুগীদের মধ্যে অনেককেই দেখি,সামান্য ব্যথা বা ব্যথা ছাড়াই লতায় পরে,সংগে আসা প্রেমিক বা জামাইয়ের উদ্বিগ্ন মুখ।তখন বুঝি ঢং দৈনন্দিন জীবনে কতটা অপরিহার্য ব্যাপার। ভালোই লাগে দেখতে।

তবে আমি আমার মত করে চলতেই পছন্দ করি।লতানো পরগাছা হয়ে বেচে থাকার মধ্যে আমি কোন আনন্দ খুঁজে পাই না।এইটা যেহেতু আমার ডেফিসিয়েন্সি, সেহেতু পরিবেশের সাথে সেইভাবেই আমাকে অভিযোজিত হতে হয়।

সবার সব কিছুই থাকেনা,কেউ অন্ধ,কারো হাত নেই,কারো পা নেই,কারো শীতে কাপড় নেই তবুও তারা তা মেনে নিয়েই সুখে বেচে আছে।আমার তো মাত্র ঢং নেই তাতে কি?

 

বেসনে পুঁইপাতা ফ্রাই

বেসনে পুঁইপাতা ফ্রাই


ঘরকন্যা


উপকরণ
১. পুঁইশাকের বড় বড় পাতা কয়েকটি,
২. বেসন ১ কাপ,
৩. হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ,
৪. মরিচ গুঁড়া আধা চা-চামচ,
৫. লবণ স্বাদমতো,
৬. রসুন বাটা আধা চামচ,
৭. বেকিং পাউডার সামান্য,
৮. বিট লবণ আধা চা-চামচ,
৯. পানি পরিমাণমতো,
১০. তেল ভাজার জন্য।

প্রণালি
> পুঁইশাকের বড় বড় পাতা ভালো করে ধুয়ে পানি মুছে রাখতে হবে। বিট লবণ ও তেল বাদে বেসনে বাকি সব মসলা একসঙ্গে মিশিয়ে ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন পরিমাণ মতো পানি দিয়ে। কড়াইয়ে তেল গরম করে পুঁইশাকের পাতা এক একটি করে বেসনে মিশ্রণে ডুবিয়ে ডুবো তেলে মচমচে ভেজে টিস্যু কাপড়ে তুলে রেখে নিজের পছন্দ অনুযায়ী সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

রেসিপি :সমকাল

 

মোরা জোনাকি হতে চাই – ৪

মোরা জোনাকি হতে চাই – ৪


আফরোজা হাসান


তা হয়তো কঠিন কিন্তু যা করণীয় তা তো আমাদেরকে করতেই হবে। আর যা করতেই হবে তাকে কঠিন ভাবতে আমি নারাজ। কারণ আমরা যখন উত্তম হবার পথে চলতে শুরু করবো তখন আল্লাহ আমাদের পাশে থাকবেন এবং আর সেই সত্ত্বার সহায়তায় দূর হয়ে যাবে সকল প্রতিকূলতা। আর আমি বিশ্বাস করি যে আল্লাহ আমাদেরকে সাহায্য করার জন্যই বসে আছেন। আমরাই সাহায্য পাবার মত করে চেষ্টা করতে পারি না। সামান্য বাঁধা পেলেই থামকে যাই, প্রতিকূলতায় ঘাবড়ে গিয়ে হাল ছেড়ে দেই। এই যে তুমি পরীক্ষায় পাশের জন্য উঠে পড়ে লেগেছো। কল্যাণময়ী, মঙ্গলময়ী হবার জন্যও তো এমন চেষ্টা করতে হবে। তাই না?

তুই চেষ্টা করিস?

হুমম…চেষ্টা করি। আমার মতে প্রতিটা মেয়েরই এমন চেষ্টা করা উচিত। আমি কেমন মেয়ে হতে চাই জানো? প্রতিটা সম্পর্কের কাছে যে হবে আল্লাহর দেয়া উপহার। যে বাবা-মার জন্য হবে সাদাকায়ে জারিয়া, স্বামীর জন্য হবে পরিচ্ছদ, সন্তানের জন্য হবে জান্নাত।

আজ থেকে আমার চাওয়াও এটাই থাকবে। তুই আমাকে সাহায্য করবি তো?

ইনশাআল্লাহ! সবসময় আমরা দুজন একে অন্যেকে সাহায্য করবো। পথ চলতে গিয়ে যেই থমকে যাবো অন্যজন হাত বাড়িয়ে দেবো। এবং এখন থেকেই সাহায্যের সেই কার্যক্রম শুরু হবে। সকালে পরীক্ষা এখন তুমি পড়তে বোস। চল আমি সাহায্য করছি তোমাকে। দুজন মিলে আলোচনা করলে তাড়াতাড়ি বুঝতে সহায়তা হবে তোমার। তার আগে একটা প্রশ্নের জবাব দাও।

কি প্রশ্ন?

আগামীকাল পরীক্ষার পর আমার সাথে হসপিটালে যেতে পারবে?

হসপিটালে? হসপিটালে কেন? বেশ অবাক কন্ঠে জানতে চাইলো রুহি।

কিছুক্ষণ আগে জানতে পারলাম আমাদের ক্লাস ফ্রেন্ড সোনিয়ার আম্মুর গত তিনদিন ধরে হসপিটালে। মামণিকে বলেছিলাম আন্টিকে দেখতে যাবার কথা। কিন্তু মামণির নাকি সময় হবে না আগামীকাল। তবে বলেছেন খাবার রান্না করে আমাদেরকে কলেজ থেকে আনতে যাবার সময় ড্রাইভার চাচার কাছে দিয়ে দেবেন। আমরা যেন পরীক্ষা শেষে ফেরার পথে আন্টিকে দেখে আসার সাথে সাথে খাবারও দিয়ে আসি।

এমন একটা ব্যাপার আর তুই প্রশ্ন করছিস যাবো কিনা? অবশ্যই যাবো ইনশাআল্লাহ। কিন্তু কি হয়েছে আন্টির?

সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়েছিলেন। মাথায়, কোমরে, পায়ে খুব ব্যথা পেয়েছেন। কান্নার জন্য ঠিকমতো কথাই বলতে পারেনি সোনিয়া। আগামীকাল তো যাচ্ছিই ইনশাআল্লাহ তখন জেনে নেয়া যাবে।

হুম! ঠিকআছে। তাহলে চল এখন আমাকে পড়তে সাহায্য করবি।

হাসিমুখে দুইবোন তখন বইপত্র নিয়ে বসলো।

@

গাড়ি থেকে বের হতেই তীব্র গতিতে এক ইন্টার্নকে তার দিকে ছুটে আসতে দেখে থমকে গেলো যায়েদ। কাছে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে মাশরুফ সালাম দিয়ে বলল, স্যার আপনার জন্যই অপেক্ষা করছি আমি। অনেকবার ফোন দিয়েছি আপনাকে।

সালামের জবাব দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে যায়েদ বলল, ড্রাউভ করছিলাম তাই ফোন রিসিভ করতে পারিনি। কি সমস্যা তোমার?

স্যার আমার কাজিন। সুইসাইড করার চেষ্টা করেছিল। নাউ আউট অব ডেঞ্জার। কিন্তু সেন্স ফিরে আসার পর খুব চিৎকার করছিল কেন ওকে বাঁচানো হলো। ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে এখন। আপনি যদি একটু কথা বলতেন ওর সাথে।

কি হয়েছিল?

গতকাল ওর ডিভোর্স হয়েছে। বৌকে খুব ভালোবাসতো সেজন্য ইমোশনালি…!

আজব সব ছেলেমেয়েতে ভরে গেছে দুনিয়াটা। জীবনে আসা সুন্দর সুযোগ গুলোকে কাজে লাগানোর কোন ইচ্ছেই এদের ভেতর কাজ করে না। সারাদিন ঝগড়াঝাঁটি করে জীবন অতিষ্ট করা বৌয়ের সাথে ডিভোর্স হবার জন্য কোথায় আলহামদুলিল্লাহ বলবে। এরপর আরেকটা বিয়ে করে সেই বৌকে নতুন করে ভালোবাসতে চেষ্টা করবে। এখানে সুইসাইড করার কি হলো?

ভেতর থেকে উঠে আসা হাসিটা প্রাণপণে আঁটকে ফেললো মাশরুফ। মেডিক্যাল স্কুলে ভর্তি হবার পর থেকেই যায়েদ স্যারকে চেনে। সবচেয়ে ফেমাস নিউরো সাইকোলজিষ্টেদের একজন। প্রফেসর হিসেবেও অনন্য। মাশরুফ যদিও সরাসরি যায়েদ স্যারের সংস্পর্শে আসার সুযোগ তেমন একটা পায়নি কখনোই। তবে স্যার যেই হসপিটালে প্রাক্টিস করেন সেখানে ইন্টার্নী করার সুবাদে গত দেড় মাস উনাকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাচ্ছে। এই হসপিটালের প্রতিজন ডক্টরই অসাধারণ একেকজন মানুষ মনে হয়েছে। প্রত্যেককেই মানুষের সেবায় নিবেদিত প্রাণ ডক্টর মনে হয়েছে। কিন্তু যায়েদ স্যার মাশরুফের মনে সবার উপরের স্থানটা দখল করে নিয়েছেন। যত ভয়াবহ সমস্যার কথাই বলা হোক না কেন স্যার অতি উন্নত এবং অসাধারণ সেন্স অব হিউমারের প্রভাবে সেটাকে মূহুর্তেই হালকা করে দেন। ব্যাপারটা এমন নয় যে স্যার কোন কিছুতেই সিরিয়াস নন। বরং যে কোন ধরণের বিপদ-আপদ, সমস্যাকে খুব স্বাভাবিক ভাবে মোকাবিলা করার বিশেষ ট্রেনিং উনি নিজেকে দিয়েছেন।

কথা বলতে বলতে হসপিতালের ভেতরে ঢুকলো দুইজন। রিসিবশন পেড়িয়ে ওয়েটিং হলের কাছে পৌছে একজন বৃদ্ধকে কান্নারত দেখে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে মাশরুফের দিকে তাকালো যায়েদ।

মাশরুফ বলল, আধঘন্টা আগে ভদ্রলোকের ওয়াইফ মারা গিয়েছেন স্যার। ক্যান্সারের পেশেন্ট ছিলেন উনার ওয়াইফ। খুব কষ্ট পেয়েছেন মৃত্যুর আগে।

মুখে কিছু না বলে ধীর পায়ে বৃদ্ধের দিকে এগিয়ে গেলো যায়েদ। ভদ্রলোকের পাশে বসে খুব নরম কন্ঠে বলল, প্রিয়জন হারানোর বেদনাকে বুকের মধ্যে বরফের মতো জমে যেতে না দিয়ে বরং অশ্রু হয়ে ঝরে যেতে দেয়াই উত্তম। কান্না করতে তাই আপনাকে আমি নিষেধ করবো না। কোন সান্ত্বনাও দিতে চাই না। কারণ কিছু কিছু ক্ষেত্রে সান্ত্বনা দেয়াটা এক ধরণের হঠকারিতা। তবে এটা অবশ্যই বলবো স্ত্রীর কথা ভাবলে উনার মৃত্যুতে খুশি হওয়া উচিত।

অশ্রুসিক্ত চোখে যায়েদের দিকে তাকালো বৃদ্ধ। কিছু বলার জন্য ঠোঁট নাড়াতে গিয়েও আবারো কান্নায় ভেঙে পড়লো।

যায়েদ বলল, মনে করে দেখুন কত কষ্ট পেয়েছেন আপনার স্ত্রী অসুস্থতার কারণে। ট্রিটমেন্ট, মেডিসিন উনাকে সাময়িক একটা স্বস্থি দিলেও কষ্টের হাত থেকে মুক্তি দিতে পারেনি কখনোই। কিন্তু মৃত্যুর ফলে অসহ্যকর সেই যাতনার হাত থেকে উনি মুক্তি পেয়েছেন। প্রিয়জনকে আমরা কেউই হারাতে চাই না। কারণ তাদেরকে আমরা ভালোবাসি। আবার ভালোবাসি বলেই প্রিয়জনকে আমরা কষ্ট দিতে চাই না। কিন্তু কোন প্রিয় মানুষ যদি আমাদের কাছে থেকে কষ্টে থাকে। সেক্ষেত্রে তার দূরে চলে যাওয়াটাকে খুশি মনে মেনে নেয়া উচিত। কেননা ভালোবাসার অর্থ একসাথে বা কাছাকাছি থাকা নয়। ভালোবাসার অর্থ দূরে থেকেও একে অন্যের কল্যাণ কামনা করা। একে অন্যের শান্তির মধ্যে আনন্দ খুঁজে নেয়া। গিয়ে দেখুন কি প্রশান্তিতে ঘুমোচ্ছেন আপনার স্ত্রী। গত কয়েক মাসে কি কখনো শান্তিতে দু’চোখ বুজতে দেখেছেন উনাকে? ঘুমের ভেতরেও ককিয়ে উঠতেন ব্যথায় তাই না?

অবাক চোখে যায়েদের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলো বৃদ্ধ। তারপর নিজের স্ত্রীর কষ্টের মূহুর্তগুলোর কথা বলতে শুরু করলেন আপন মনেই। এক সময় কিছুক্ষণের জন্য থেমে গেলেন। এরপর বললেন, ইয়েস ডক্টর ইউ আর রাইট। আজ আমার স্ত্রী ভয়াবহ এক কষ্টের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছে। অনেকদিন পর আজ শান্তিতে ঘুমোচ্ছে। আমার ওর জন্য হ্যাপী হওয়া উচিত।

আরো কিছুক্ষণ বৃদ্ধের সাথে কাটিয়ে নিজের কেবিনের দিকে রওনা দিলো যায়েদ। মাশরুফ দন্ত বিকশিত করে বলল, স্যার আপনি সত্যিই অসাধারণ।

যায়েদ বলল, তোমার কি ধারণা মৃত্যুর পর প্রশান্তির জীবন শুরু হবার সম্ভাবনা কতটুকু একজন মানুষের?

মূহুর্তেই কবরের জীবন, পরকালের কথা স্মরণে হাসি মুছে গেলো মাশরুফের মুখ থেকে। আতঙ্কের ঢোঁক গিললো।

যায়েদ বলল, পেশেন্ট এবং তাদের রিলেটিভদেরকে সান্ত্বনা দেবার সময় অনেক কথাই বলতে হয়। কিন্তু সেই কথার প্রভাব যাতে নিজের উপর না পড়ে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখবে সবসময়।

জ্বি স্যার।

তোমার কাজিন উঠলে আমাকে খবর দিয়ো। নাউ লীভ।

হাসি মুখে ইয়েস স্যার বলে মাশরুফ ছুটলো নিজের কাজে।

চলবে
পর্ব-৫

 

শিশু মৃত্যুর হার ৬৩ শতাংশ কমিয়েছে বাংলাদেশ

শিশু মৃত্যুর হার ৬৩ শতাংশ কমিয়েছে বাংলাদেশ


স্বাস্থ্যকথা


ঢাকা, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ (বাসস): শিশু মৃত্যুহার হ্রাসে বাংলাদেশ প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশে বিগত বিশ বছরে শিশু মৃত্যুর হার ৬৩ শতাংশ কমিয়েছে। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশই ২০০০ সাল থেকে শিশু মৃত্যু হ্রাসে যথেষ্ট উন্নতি করেছে, যার প্রথম দিকের দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ।
শূন্য থেকে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুহার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্যকে ইতোমধ্যে জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) স্বীকৃতি দিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রাম পর্যায়ে স্বাস্থ্য পরিসেবার উন্নয়নের ফলেই এই অর্জন সম্ভব হয়েছে। এমনকি শিশু মৃত্যুহার হ্রাসে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। মা ও শিশু মৃত্যুহার হ্রাসে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের টার্গেট নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ ‘বার্ষিক গ্লোবাল চাইল্ড হুড রিপোর্ট ২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদনে দেখা যায়, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালে গত দুই দশকে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা অনেক হ্রাস পেয়েছে। চারটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি অর্জন করেছে, যেখানে ভুটানের শিশু মৃত্যুর হার কমেছে ৬০ শতাংশ, নেপালে ৫৯ শতাংশ এবং ভারতের ৫৭ শতাংশ। আর বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর হার কমিয়েছে ৬৩ শতাংশ।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, সরকার মাতৃ ও শিশু মৃত্যুরোধে সকল সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছে। আর এই কারণেই দেশে মাতৃ ও শিশুমৃত্যু উভয়ই কমেছে। ২০১৭ সালে গর্ভকালীন মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি লাখে ১৭৬ জন থাকলেও বর্তমানে তা ১৭২ জন। এছাড়া ২০১৫ সালে প্রতি হাজার নবজাতকের মধ্যে মৃত্যুহার ২০ জন থাকলেও বর্তমানে তা হ্রাস পেয়ে ১৮ দশমিক ৪ ভাগে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আমাদের ২০৩০ সালের মধ্যে প্রিম্যাচুউরড এ শিশু মৃত্যুহারের লক্ষ্যমাত্রা ১২ দেয়া আছে। স্বাস্থ্যসেবা খাতের সবাই সঠিকভাবে সঠিক কাজটি করলে এই অপরিণত শিশু মৃত্যু হারের লক্ষ্যমাত্রা আগামী ২ বছরেই অর্জন করা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে দেশের সব সরকারি হাসপাতালেই গর্ভবতী মায়েদের জন্য ২৪ ঘন্টা ডেলিভারি সুবিধাও রাখা হবে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ও নিপোর্টের রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত ২৪ বছরে দেশে শিশু মৃত্যুহার ৭৩ শতাংশ কমেছে। এসডিজি অনুযায়ী, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে শূন্য থেকে এক মাস বয়সী শিশু মৃত্যুহার প্রতি হাজারে ১২ জনে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। বর্তমানে এই সংখ্যা ২৮ জন। তবে, শূন্য থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশু মৃত্যুহার প্রতি হাজারে ৩৮ জন। এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০৩৫ সালের মধ্যে জীবিত জন্মানো শিশু মৃত্যুহার প্রতি হাজারে ২০ জনে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
সর্বশেষ জরিপেও দেখা গেছে, প্রতি হাজারে শূন্য থেকে এক মাস বয়সী ২৮ শিশু মারা যাচ্ছে। অন্যদিকে এক থেকে চার বছর বয়সী শিশু মৃত্যুহার প্রতি হাজারে মাত্র ১০ জন। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য শূন্য থেকে এক মাস বয়সী শিশু মৃত্যুহার হাজারে ১২ জন এবং এক থেকে চার বছর বয়সী শিশু মৃত্যুহার হাজারে ২৫ জনে নামিয়ে আনতে হবে। এক থেকে চার বছর বয়সী শিশু মৃত্যুহারে বাংলাদেশ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এখনই এগিয়ে রয়েছে। তবে, শূন্য থেকে এক মাস বয়সী শিশু মৃত্যুহার হাজারে ১৪ জন কমাতে হবে। সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (মা ও শিশু) ডা. মোহাম্মদ শরীফ বলেন, শূন্য থেকে এক মাস বয়সী শিশুর মৃত্যুঝুঁকি বেশি। যদিও পাঁচ বছরের নিচে পর্যন্ত ঝুঁকি থেকে যায়। কারণ, জন্ম-পরবর্তী শ্বাসকষ্ট, কম ওজনের কারণে জন্মগত জটিলতা, সেপটিসেমিয়া, নিউমোনিয়া ও এনকেফেলাইটিস পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর প্রধান কারণ। এ ছাড়া অপুষ্টির কারণেও মৃত্যু হয়। এই মৃত্যু প্রতিরোধে সার্বিক ব্যবস্থাপনার মান বাড়ানো হয়েছে।
তিনি বলেন, টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন, ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণ, ভিটামিন ‘এ’ সম্পূরক ওষুধের সফল ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে। এসব কারণে শিশু মৃত্যু হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা থাকলে আগামী ২০৩০ সালের আগেই শিশু মৃত্যুহার কমানো সম্ভব হবে।

সুত্রঃ বাসস।

 

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার পর্ব -৪

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার পর্ব -৪


নারীর জন্য আইন


(২). হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. বর্ণিত হাদীছের সঠিক অনুবাদ হবে – ‘তোমরা উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পদ বন্টন কর আল্লাহর কিতাব মোতাবেক। যে সম্পদ অবশিষ্ট থেকে যাবে, তা পাবে সর্বাধিক হকদার পুরুষ লোক।’ কারণ ‘আওলা’ শব্দের অর্থ হল সর্বাধিক হকদার, ‘ঘনিষ্ঠতর’ নয়। আর সর্বাধিক হকদার পুরুষ লোক হল পুত্র-সন্তান। দূরবর্তী পুরুষ মাওলা বা আছাবাগণ কখনোই সর্বাধিক হকদার নন। তাছাড়া এ হাদীছটি ‘খবরে ওয়াহিদ’ (একমাত্র বর্ণণাকারী কর্তৃক বর্ণিত) হওয়ার কারণে এবং স্বয়ং বর্ণণাকারী ছাহাবী ভিন্ন মতামত ব্যক্ত করার কারণে উহা আমল করার উপযোগী নয়। কারণ স্বয়ং আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. তার নিজের বর্ণিত হাদীছখানা থাকা সত্বেও কন্যাদেরকে অবশিষ্টাংশভোগী মাওলা (আছাবা) উত্তরাধিকারী বলে মনে করেন। (৩). কুরআনে মূলত অবশিষ্ট অংশের কথা বলা হয়েছে। আর হযরত জাবির রা. এবং হুযাইল বিন শুরাহবীল রাহ. বর্ণিত হাদীছগুলো সহ যেসব হাদীছে রাসূলুল্লাহ সা. মেয়েদের সাথে ভাইবোনদেরকে অংশ দিয়েছেন বলে বর্ণিত হয়েছে, তা উহুদ যুদ্ধের পরের ঘটনা। তখনও ভাইবোনদের হিস্সা বর্ণনা করে কালালার আয়াত অবতীর্ণ হয়নি। তখন তো রাসূলুল্লাহ সা. শুধু ভাইবোনকে নয় বরং মুক্তিদাতা মুনিব ও মুক্তিপ্রাপ্ত ক্রীতদাসকেও দিয়েছেন। যেমন বর্ণিত আছে: عـَنْ اِبـْنِ عـَبـاَّسٍ اَنَّ مـَوْلـًي لـِحـَمـْزَةَ تـُوُفـِّيَ فـَتـَرَكَ اِبـْنـَتـَهُ وَاِبـْنـَةََ حـَمـْزَةَ فـَاَعـْطـَي الـنـَّبـِيُّ صـَلـَّى الـلـَّهُ عـَلـَيـْهِ وَسـَلـَّمَ اِبـْنـَتـَهُ الـنـِّصـْفَ وَاِبـْنـَةَ حـَمـْزَةَ الـنـِّصـْفَ ‘হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ‘হামজা এর একজন মুক্তিপ্রাপ্ত ক্রীতদাস ছিল। সে তার একমাত্র মেয়ে ও মুনিব হামজা এর মেয়েকে রেখে মারা গেলে রাসূলুল্লাহ সা. তার পরিত্যক্ত সম্পদের অর্ধেক তার মেয়েকে দেন ও বাকী অর্ধেক দেন হামজা এর মেয়েকে।’ (সুনানু দার কুথনী)

৬। আর এ কথা সর্বজন বিদিত যে, হযরত হামজা রা. উহুদ যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন। তার কোন পুত্র সন্তান ছিল না; একজন মাত্র কন্যা ছিলেন। এজন্য তিনি একজন ক্রীতদাসকে তাবান্নী বা পালকপুত্র বানিয়েছিলেন। কিন্তু সূরা নিসার ১৭৬ নং আয়াত নাযিলের পরে আর ভাইবোনকে কিছুই দেন নি। কারণ এ আয়াত সবশেষে নাযিল হয়েছিল। যেমন বর্ণিত আছে: عـَنِ الـْبـَرَاءِ قـَالَ آخِـرُ آيـَةٍ نـُزِلـَتْ مـِنَ الـْقـُرْآنِ يَـسْـتـَفـْتـُوْنـَكَ قـُلِ الـلّهُ يـُفـْتِـيْـكـُمْ فِـيْ الـْكـَلاَلـَةِ হযরত বারা (বিন আযিব) রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: ‘কুরআনের সর্বশেষ যে আয়াত নাযিল হয় তা হল- يَـسْـتـَفـْتـُوْنـَكَ قـُلِ الـلّهُ يـُفـْتِـيْـكـُمْ فِـيْ الـْكـَلاَلـَةِ ’- অর্থাৎ সূরা নিসার এই ১৭৬ নং আয়াত। (বুখারী, মুসলিম)৭। আর সর্বশেষ বিধানের মাধ্যমে মহানবী সা. এর পূর্বে দেয়া সকল নির্দেশনা রহিত হয়ে গিয়েছে।

খ.

(১). হযরত হুযাইল বিন শুরাহবীল রাহ. বর্ণিত হাদীছে মহানবী সা. এর আমলের বিবরণ রয়েছে বটে কিন্তু মৌখিক কোন নির্দেশনা নেই। উহা সর্বশেষ নাযিলকৃত আয়াত দ্বারা রহিত হয়েছে। আর সিরাজীর উল্লেখিত اِجـْعـَلـُوْا اْلاَخـَوَاتِ مـَعَ الـْبـَنـَاتِ عـَصَـبـَةً ‘তোমরা মেয়েদের সাথে বোনদেরকে আছাবা বানাও’- বক্তব্যটি হাদীছের নামে একটি জালিয়াতি। মহানবী সা. কখনোই এরকম কোনকিছু বলেন নি। এ কারণে কথিত এ হাদীছের বর্ণণাকারী ছাহাবী ও সনদের কোন বিবরণ কেউ জানে না। (দেখুন: ‘আর রাদ্দুল মুহতার ফী শারহে দুররিল মুখতার’)৮।

(২). তৎকালিন আরব সমাজে প্রচলিত ও জনপ্রিয় ‘আছাবা’ প্রথাকে উৎখাত করে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন উত্তরাধিকারে নারীকে হিস্সা দিয়েছিলেন। সমস্তরের পুরুষ উত্তরাধিকারীর সাথে মিলিত হলে নারী ‘আছাবা বিগায়রিহী’ হবে, অন্যথায় আছাবা হতে পারবে না; আর কন্যার সাথে মিলিত হলে বোন ‘আছাবা মা’আ গায়রিহী’ হবে- এসব কথা একান্তই কিছু মনিষীর ব্যক্তিগত অনুমান- আল্লাহ প্রদত্ত নয়, রাসূল সা. বর্ণিতও নয়। বরং আছাবাগিরীর বিরোদ্ধে রাসূল সা. কঠোর মন্তব্য করেছেন। যেমন বর্ণিত আছে: عـَنْ جـُبـَيـْرِ بـْنِ مـُطـْعـِمٍ قـَالَ قـَالَ رَسُـوْلُ الـلـَّهِ صَـلـَّى الـلـَّهُ عـَلـَيـْهِ وَسَـلـَّمَ لـَيـْسَ مـِنـَّا مَـنْ دَعَـيْ اِلـَيْ عَـصَـبـِيـَّةٍ وَلـَيـْسَ مـِنـَّا مَـنْ قـَاتـَلَ عَـلـَيْ عَـصَـبـِيـَّةٍ وَلـَيـْسَ مـِنـَّا مَـنْ مَـاتَ عـَلـَيْ عَـصَـبـِيـَّةٍ হযরত যুবায়ের বিন মুত্ইম রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন: ‘যে আছবিয়্যাতের দিকে আহবান করে সে আমার উম্মাতের মধ্যে শামিল নয়। আর যে আছবিয়্যাতের কারণে যুদ্ধ করে, সে আমার উম্মাতের মধ্যে শামিল নয় এবং যে আছবিয়্যাতের জন্য নিহত হয় সেও আমার উম্মাতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (আবু দাউদ)৯। এ কারণে আমরা এ আছাবা পরিভাষা ও উহার শ্রেণীবিন্যাসের সাথে একমত নই। প্রকৃতপক্ষে কিছু ভুল ব্যাখ্যা ও নকল হাদীছের ভিত্তিতে এ শ্রেণীবিন্যাসের থিওরী গড়ে উঠেছে বলে আমরা মনে করি।

 

 

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার পর্ব -৩


নারী জন্য আইন


ব্যাখ্যা করে তারা বলেন যে, সকল পুরুষ উত্তরাধিকারীগণ হলেন ‘আছাবা বিনাফসিহী’, যারা স্বনির্ভর অবশিষ্টাংশভোগী আছাবা। পক্ষান্তরে কন্যা ও বোনের মত নারী উত্তরাধিকারীগণ, যাদের জন্য নির্ধারিত হিস্সা আল্লাহ বলে দিয়েছেন বলে তারা মনে কেরন, তারা তাদের ভাইদের সাথে যৌথভাবে উত্তরাধিকারী হলে সে ভাইদের কল্যাণে তারা বোনেরাও আছাবায় পরিণত হন। এ রকম পরনির্ভরশীল আছাবাদেরকে বলা হয় ‘আছাবা বিগায়রিহী’। আর কন্যা সন্তানদের সাথে যদি মৃতের এক বা একাধিক বোন উত্তরাধিকারী জড় হন, তবে কন্যাগণ যবীল ফুরূজ ঠিকই থাকবেন, কিন্তু বোনেরা আছাবায় পরিণত হয়ে অবশিষ্ট সম্পদ লাভ করবেন। এ ধরণের আছাবা হওয়াকে তারা ‘আছাবা মা’আ গায়রিহী’ বলে অভিহিত করে থাকেন।গ.       ফুকাহাগণ আরো বলেন: ‘সূরা নিসার ১৭৬ নং আয়াত পাঠ কালে মনে হতে পারে যে, সন্তানের উপস্থিতিতে ভাই অথবা বোনেরা উত্তরাধিকারী নন। কিন্তু এ ধারণা ঠিক নয়। কারণ আয়াতে বলা হয়েছে: اِنِ امْـرُؤٌ هَـلـَكَ لـَيْـسَ لـَهُ وَلـَدٌ وَلـَهُ اُخْـتٌ فـَـلـَهَـا نـِصـْفُ مـَا تـَرَكَ وَهُـوَ يَـرِثـُهَـآ اِنْ لـَمْ يَـكـُن لـَّهَـا وَلـَدٌ ‘‘যদি কোন নি:সন্তান লোক মারা যায় এবং তার একজন বোন থাকে, তবে সে বোন মৃত ব্যক্তি যা কিছু ছেড়ে যাবে তার অর্ধেক পাবে – এবং সে ব্যক্তিও তার বোনের (যদি মারা যায়) উত্তরাধিকারী হবে, যদি তার (মৃত বোনের) কোন সন্তান না থাকে।’’ প্রকৃতপক্ষে এ আয়াতে সকল সন্তানের কথা বলা হয়নি, বরং পুত্র-সন্তানের কথা বলা হয়েছে। কারণ এ আয়াতে ব্যবহৃত ‘ওলাদ’ শব্দের অর্থ হল পুত্র-সন্তান। কারণ এ রকম অর্থ গ্রহন না করলে উপরে বর্ণিত হাদীছ গুলোর সাথে এ আয়াতের সমম্বয় করা যায় না।’ পক্ষান্তরে হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস, আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের রা. সহ কিছু সংখ্যক ছাহাবায়ে কেরাম ও অন্য একদল ফুকাহার মতে সন্তান পুত্র হোক অথবা কন্যা- কোন ধরণের সন্তানের উপস্থিতিতে ভাইবোন কোন উত্তরাধিকারী বলে বিবেচিত হবেন না। যেমন বর্ণিত আছে: عَـنْ عَـطـَاءَ اَنَّ اِبْـنَ عَـبـاَّسٍ كـاَنَ يـَقـُوْلُ اَلـْمـِيـْرَاثُ لِـلـْوَلـَدِ فـَاِنـْتـَزَعَ الـلـََّهُ تـَعـَالـَي َمـِنـْهُ لِـلـزَّوْجِ وَالـْوَالـِدِ হযরত আতা রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ইবনে আব্বাস বলতেন: ‘মালের হকদার হলেন সন্তানগণ। সেখান থেকে আল্লাহ পিতা-মাতা ও স্বামী-স্ত্রীদের জন্য কিছু সম্পদ ছিনিয়ে নিয়েছেন।’ (আল মুছান্নাফ)

৫। তারা ‘আছাবা বিনাফসিহী’, ‘আছাবা বিগায়রিহী’ অথবা ‘আছাবা মা’আ গায়রিহী’- প্রভৃতি পরিভাষার সমর্থনে কোন বক্তব্য দেন নি। আমরা প্রথম দলের চাইতে হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. প্রমুখদের মতামতকে অধিক যুক্তিসঙ্গত ও সমর্থনযোগ্য বলে মনে করি। আমাদের নিম্নোক্ত আলোচনায় প্রমাণীত হবে যে, কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে ভাইবোন কোন প্রকার উত্তরাধিকারী নন। ক.                             কন্যা সন্তানদেরকে ‘যবীল ফুরূজ’ বিবেচনা করা সংক্রান্ত তাদের প্রথম দাবী নিুোক্ত কারণে সঠিক নয়। (১). মেয়েরা ছেলেদের মত মাওলা (আছাবা) হতে পারে বলে আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন কুরআন শরীফে স্পষ্টভাবে ঘোষনা করেছেন। আল্লাহ বলেন: وَلـِكـُلٍّ جَـعَـلـْنـَا مَـوَالِـيَ مِـمَّـا تـَرَكَ الـْوَالِـدَانِ وَاْلاَقـْرَبـُوْنَ “আর পিতামাতাও আত্মীয় স্বজনেরা যা কিছু ছেড়ে যাবেন তাতে (পুরুষ ও নারীর) প্রত্যেককে আমরা মাওলা বানিয়েছি।” (সূরা নিসা-৩৩)। এ আয়াতে বর্ণিত ‘মাওলা’ শব্দের অর্থ হল অবশিষ্টাংশভোগী উত্তরাধিকারী, যাকে অনেকেই ‘আছাবা’ নাম দিয়ে থাকেন। হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. কাতাদা রাহ. মুজাহিদ রাহ. ইবনু যায়েদ রাহ. সহ বড় বড় তাফসীরকারকদের এ ব্যাপারে ঐক্যমত্য দেখা যায়। (দেখুন তাফসীরে তাবারী, বাগাবী, ফাতহুল কাদীর, জালালাইন প্রভৃতি)। আর কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে অপর কেউ মাওলা হওয়ার অধিকারী নন। যেমন সন্তানের পরে সর্বাধিক শক্তিশালী মাওলা হলেন পিতা। এ কারণে পিতার উপস্থিতিতে ভাইবোন উত্তরাধিকারী হতে পারেন না। কিন্তু সে পিতাও কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে মাওলা হওয়ার অধিকারী নন। বরং তখন তিনি নির্ধারিত হিস্সাদার ‘যবীল ফুরূজ’ হিসাবে এক ষষ্টাংশ পাবেন। আল্লাহ বলেন: وَلاَبـَوَيـْهِ لـِكـُلِّ وَاحِـدٍ مِـنـْهُـمَـا الـسُّـدُسُ مِـمَّـا تـَرَكَ اِن كـَانَ لـَهُ وَلـَدٌ  “আর পিতামাতার প্রত্যেকে মৃত ব্যক্তি যা কিছু ছেড়ে যাবে তাতে এক ষষ্টাংশ করে পাবেন, যদি মৃতের কোন সন্তান থাকে।” (সূরা নিসা-১২)। পিতার পরে সর্বাধিক শক্তিশালী মাওলা হলেন ভাই। কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সে ভাই কোন হিস্সাই পান না। আল্লাহ তা’আলা বলেন: وَهُـوَ يَـرِثـُهَـآ اِنْ لـَمْ يَـكـُن لـَّهَـا وَلـَدٌ ‘‘এবং সে ব্যক্তিও (ভাই) তার মৃত বোনের উত্তরাধিকারী হবে, যদি তার (মৃত বোনের) কোন সন্তান না থাকে।” (সূরা নিসা- ১৭৬)। কারণ মেয়েরা নিজেরা মাওলা হওয়ার কারণে অপরাপর মাওলাদেরকে তারা দূরে সরিয়ে দেয়। তবে কথা হল এই যে, একজন কন্যা সন্তান একজন পুত্র সন্তানের সমান শক্তিশালী মাওলা নন। বরং দু’জন কন্যা সন্তান একজন পুত্র সন্তানের সমান। আর একজন কন্যা সন্তান একজন পুত্র সন্তানের অর্ধেক হিস্সার অধিকারী। এ কারণেই আল্লাহ বলেছেন: لـِلـذَّكـَرِ مِـثـْلُ حَـظِّ اْلأُنـْثـَيَـيـْنِ ‘‘প্রত্যেক পুত্র সন্তান দু’জন কন্যা সন্তানের সমান হিস্সা পাবে।” (সূরা নিসা-১১)। আল্লাহ আরোও বলেন: وَاِنْ كـَانـَتْ وَاحِـدَةً فـَلـَهَـا الـنـِّصْـفُ ‘‘ছেলেমেয়েদের মধ্যে যদি একজন মাত্র মেয়ে হয়, তাহলে সে পাবে অর্ধেক।” উহার অর্থ হবে وَاِنْ كـَانـَتْ وَاحِـدَةً فـَلـَهـَا نـِصـْفُ حَـظِّ الـذَّكـَرِ অর্থাৎ ছেলেমেয়েদের মধ্যে যদি একজন মাত্র মেয়ে হয়, তাহলে সে পাবে- একজন ছেলে থাকলে সে যতটুকু পেত- তার অর্ধেক। আর দু’য়ের অধিক কন্যা সন্তান হলে তারা পাবে দু’তৃতীয়াংশ ঠিকই, কিন্তু বাকী এক তৃতীয়াংশ পাবেন পিতামাতা, যা আয়াতেই উল্লেখ আছে। উহা দ্বারা প্রকৃতপক্ষে নির্ধারিত হিস্সা বুঝায় না। তাছাড়া কন্যাগণ যদি নির্ধারিত হিস্সা ভোগ করে, তাহলে পুত্রগণও কন্যাদের সমান নির্ধারিত হিস্সা ভোগ করতে হবে। কারণ আল্লাহ বলে দিয়েছেন যে, ‘‘প্রত্যেক পুত্র সন্তান দু’জন কন্যা সন্তানের সমান হিস্সা পাবে।” দু’জন কন্যা সন্তানের অতিরিক্ত কোন হিস্সা পুত্রকে দেয়া হয়নি। আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা জরুরী মনে করছি, তা হল: لـِلـذَّكـَرِ مِـثـْلُ حَظِّ اْلأُنـْثـَيـَيـْنِ আয়াতাংশ দ্বারা মূলনীতি বর্ণণা করা হয়েছে এবং فـَاِنْ كـُنَّ نـِسَـاءً فـَوْقَ اثـْنـَتـَيـْنِ فـَلـَهـُنَّ ثـُلـُثـَا مـَا تـَرَكَ আয়াতাংশ দ্বারা পূর্বের আয়াতাংশের ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এ কারণে ব্যাখ্যা অংশের শুরুতে فَ বর্ণটি প্রয়োগ করা হয়েছে, যাকে ব্যাখ্যাদানকারী বর্ণ বা اَلـْفـاَءُ لـِلتـَّفـْسِـيـْرِ বলা হয়। সুতরাং আয়াতের এ অংশ দিয়ে নতুন কোন মূলনীতি নির্ধারিত হবে না বরং পূর্বের আয়াতাংশের বিশ্লেষণ ও তাফসীর হবে। এ কারণেই ব্যাখ্যা অংশে দু’জন কন্যার হিস্সার কথা বলা হয়নি। কারণ ‘‘প্রত্যেক পুত্র সন্তান দু’জন কন্যা সন্তানের সমান হিস্সা পাবে”- বলার মাধ্যমে দু’জন কন্যার হিস্সার কথা বর্ণিত হয়েছে।

 

মোরা জোনাকি হতে চাই……৩

মোরা জোনাকি হতে চাই……৩


আফরোজা হাসান


ছবি আঁকার ফাঁকে ফাঁকে বোনের কর্মকান্ড দেখছিল আর মিটিমিটি হাসছিলো নূরি। সারাবছর বইয়ের ধারে কাছে না ঘেঁষে পরীক্ষার আগের দিন নাকে মুখে পড়ে পরীক্ষা দেবার অভ্যাস রুহির। আগামীকাল পরীক্ষা তাই স্বভাব মতো নাকে মুখে পড়ছে সে। কিছুক্ষণ টেবিলে বসে পড়ছে তো কিছুক্ষণ ঘর ভরে পায়চারী করছে আর পড়ছে। একসময় বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে পড়লো সে।

নূরি হাসতে হাসতে বলল, মাঝে মাঝে একটু বই নিয়ে বসলেই তো আর পরীক্ষার আগে এমন হয় না।

পরীক্ষার আগের দিন পড়ে পাশ করতে পারলে সারাবছর পড়ার দরকার কি? আমার জীবনের মিশন তোর মতো পণ্ডিত হওয়া না। আমি জীবনটাকে উপভোগ করতে চাই। জবাব দিলো রুহি।

পড়াশোনা না করার সাথে জীবনকে উপভোগের কি সম্পর্ক?

সম্পর্ক আছে মাই ডিয়ার লিটল সিসটার। পরীক্ষার হলে কম্পায়মান মনে ঢোকা, প্রশ্ন কমন পড়বে তো সেই টেনশন করা, রেজাল্টের আগের রাতে ঘুম বন্ধ, রেজাল্টের দিন সকালে গলা দিয়ে খাদ্য না নামা, হায়…. এসবের যে কি মজা তা কি তুই বুঝিস?

নূরি হাসতে হাসতে বলল, আল্লাহ না বোঝাক আমাকে। প্রিপারেশনের কি অবস্থা?

এখনো বুঝতে পারছি না।

কখন বুঝতে পারবে?

পরীক্ষার খাতায় সব সুন্দর মতো লিখার পর বুঝতে পারবো। আমার জন্য একটু চা-নাস্তার ব্যবস্থা করতে পারবি বুবু? পড়তে পড়তে ক্ষুধা লেগে গিয়েছে।

আমি রুমে আসার সময়ই তোমার জন্য নাস্তা নিয়ে এসেছি। পড়তে পড়তে তোমার ক্ষুধা লাগা তো নতুন কিছু না।

এজন্যই তো বলি তোর কোন তুলনা হয়না। হে আল্লাহ আমার বোনটিকে মনের মতো একটা স্বামী মিলিয়ে দিয়েন। আমীন।
বোনের দুষ্টুমি করা স্বভাব জানে নূরি তাই হেসে নিজের কাজে মন দিলো। উঠে এসে পেছন থেকে বোনকে জড়িয়ে ধরে আদর করে রুহি হেসে বলল, মাশাআল্লাহ! তোর পেইন্টিং তো অসাধারণ সুন্দর হচ্ছে রে বুবু। কিন্তু রাতের আকাশে রংধনু?

হুম! যদি আরেকটু পড়াশোনা করতেন তাহলে জানতেন যে, রংধনু যেমন সুর্যের আলোতে দেখা যায় তেমনি চাঁদের আলোতেও দেখা যাওয়া সম্ভব। যেদিন চাঁদের আলোয় আকাশ আলোকিত হয়ে যায় তখন আকাশে রংধনুর সৃষ্টি হয়। কম আলোয় আমরা দেখতে পাই না বলে সেই রংধনু দৃষ্টিগোচর হয়না। আমি কেমন ছবি আঁকতে চাইছি জানিস? চাঁদের বাসন্তি আলো, রংধনুর রঙয়ের ছটা, হাজার তারার মেলার এক আকাশের। যে ছবিটার দিকে তাকালে মনেহবে রাতচড়া পাখীরা চমকে চমকে ডেকে ফিরছে আবছায়া প্রান্তরে, কান পাতলেই বুঝি শোনা যাবে ঝিঁঝিঁর ডাক, মনেহবে ঐ তো শুকনো পাতা গড়িয়ে যাচ্ছে পাথরের বুকে।

হুমম…খুব কাব্যিক মুডে আছেন মনেহচ্ছে। এসব তো ভালো লক্ষণ না।

আমার লক্ষণ নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। আপনি ক্ষুধা নিবৃত্ত করে পাঠ্যায়নে মনোনিবেশ করুণ।

কিছুক্ষণ চুপ করে ছবি আঁকা দেখার পর রুহি বলল, আচ্ছা নূরি লক্ষ্মা ধাতু জিনিসটা কি?

হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন?

আজ সকালে ছোট মামা বললো যে আমার মধ্যে নাকি লক্ষ্মা ধাতুর যথেষ্ট ঘাতটি আছে।

নূরি হাসতে হাসতে, মামা সকালে লক্ষ্মীর উপরে একটা আর্টিকেল পড়েছে তারপর থেকে বাড়ির সবার মধ্যে লক্ষ্মা ধাতুর মাত্রা নির্ধারন করছে।

সেটা কি রকম?

লক্ষ্মী কথাটা এসেছে লক্ষ্মা ধাতু থেকে। যার অর্থ হল আলোচনা, চিহ্নীকরণ, অংকন, জ্ঞান, দর্শন। আর লক্ষ্মীর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে যে, অতি সাধারণ একটি মেয়ে যখন তার অন্তর্গত ভক্তি আর জ্ঞানের সমন্বয় ঘটিয়ে আচারনিষ্ঠ জীবনযাপনে উদ্দেপিত হয় তখনই কেবল তাকে লক্ষ্মী বলে সম্বোধন করা যায়।

কি সাংঘাতিক সংজ্ঞা।

এখানেই শেষ না বুবুজান। আরো বলা হয়েছে নারী তখনই মহিমান্বিত হতে পারে যখন তার মধ্যে সদাচার থাকে। সদাচার মানে বাঁচার আচার। যে আচার মানুষকে সুন্দর সমৃদ্ধশালী জীবনের পথ দেখায়। সদাচার এমন একটি গুণ যার ফলে নারী নিজের অজান্তেই পুরুষের জন্য কল্যাণময়ী, মঙ্গলময়ীতে পরিণত হয়। আর সদাচারবিহীন নারী মানেই পদে পদে ধ্বংস অনিবার্য।

হুমম… গাইড লাইন হিসেবে নেয়া যায় কথাগুলো তাই না?

বাঁচার যে আচার ইসলাম আমাদেরকে দেয় সেটা মেনে চললে সদাচারিণী হওয়া কোন ব্যাপারই না। আর এরজন্য বেশী বেশী জ্ঞানার্জন করা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। কারণ জ্ঞানই আমাদেরকে শেখায় কিভাবে মনের মালিক হয়ে অনুভূতি ও কল্পনার রস আস্বাদন করে জীবনকে উপভোগ করতে হয়। তাছাড়া একজন মানুষ যথার্থ মানুষ হয় অন্তরের ঐশ্বর্যের কারণে। আর মনের এই ঐশ্বর্যের নাম ধর্মীয় মূল্যবোধ।

বুঝলাম লক্ষ্মা ধাতুর ঘাতটি দূর করা যথেষ্ট কঠিন কাজ।

চলবে
পর্ব-৪

 

জীবনের বাতিঘরে নারী

জীবনের বাতিঘরে নারী


আসিফ মাহমুদ


এ্যাভারেজ আমেরিকান মহিলারা মাত্র সাতাশ মিনিট আর বাঙ্গালি মহিলারা গড়ে সাড়ে পাঁচ ঘন্টা সময় প্রতিদিন রান্নাঘরে ব্যয় করে। বাংগালী নারীদের জীবনের বিশাল অংশ এই রান্নাঘরেই কেটে যায়। কয়েকসপ্তাহ আগে আমার প্রতিবেশী হ্যারল্ডের বাসায় আমাদের ডীনারের দাওয়াত ছিলো। সন্ধ্যা ছটার আগেই সাধারণত এরা ডীনার শেষ করে। একেবারে ঘড়ির কাঁটায় ঠিক ছটা বাজেই ডীনার শুরু হলো। ডীনারের আয়োজন ছিলো টুনা ফীস, সালাদ, কিছু চিপস আর কোমল পানীয়। ব্যস । হ্যারল্ডের ওয়াইফ ম্যারি আর হ্যারল্ড আমাদের সাথে ক্লান্তিহীন আড্ডা দিলেন। রান্নার আয়োজন যেহেতু কম-আড্ডার আয়োজনতো সুন্দর হবেই। বুঝলাম , নিমন্ত্রন মানে শুধু ভোজন না। নিমন্ত্রণ হলো আপনার জীবনের কিছু অংশ আর আমার জীবনের কিছু অংশ একসাথে পাশাপাশি বসে উপভোগ করা।

কেউ যদি বলে বাংগালীরা আড্ডা প্রিয়। কথাটি ভুল। আমরা আসলে ভোজনপ্রিয়। আমাদের বাসায় কারো দাওয়াত মানেই বিশাল রান্নার আয়োজন। কে কত আইটেম বাড়াতে পারে ভাবীদের সাথে ভাবীদের চলে এর প্রতিযোগিতা। যেদিন অতিথিদের নিমন্ত্রণ বলতে গেলে এর এক সপ্তাহ আগে থেকেই শুরু হয় রান্নার আয়োজন। একেকটা রান্নার আয়োজন একেকটা ঘুর্ণিঝড়। এরকম ঘুর্ণিঝড়ের ভিতর সময় পার করে ঘরের বউ, ভাবী ক্লান্ত, বিধ্বস্ত। সুতরাং সুন্দর পরিবেশে বসে আড্ডাটা হবে কখন?

রান্নাঘর আর বাথরুম দেখে মানুষের পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে একটা ভালো ধারণা পাওয়া যায়। হ্যারল্ডের ঘরে পা দিয়েই বুঝা গেলো- কত সুন্দর, পরিপাটি আর কত পরিচ্ছন্ন হতে পারে একটি ঘরের পরিবেশ। সুন্দর ঘর রাখার অন্যতম প্রধান কারণ হলো- ওদের রান্নার আয়োজন খুবই কম। আপনি যখন গরম তেলের ওপর দুনিয়ার নানা রকমের মশলা ছাড়বেন- সাথে সাথেইতো ঘর গ্রীজি হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে দিবে। আর এই তৈলাক্ত গ্রীজ শুধু আপনার কিচেন নষ্টই করছেনা। আপনার উদরও নষ্ট করছে।

তবে কি আমেরিকানরা রান্না করেনা। না করলে এতো গ্রোসারি আইটেম যায় কই । জ্বি করে। বেশ আয়োজন করেই করে। তবে একদিনে চৌদ্দ পনের পদ তৈরি করে- ডাইনিং টেবিলের এই মাথা থেকে ঐ মাথা পর্যন্ত খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেনা। আমি নিজেও বুঝিনা। এতো পদ দিয়ে একসাথে খাবার খেয়ে এতো ভূরিভোজনের দরকারটাই বা কি? কালকে মারা গেলে- আজকে বেশ করে খেয়ে নেন ঠিক আছে। কিন্তু তাই যদি না হয়- তবে আজকে দুপুরে এক আইটেম দিয়ে খান। রাতের বেলা আরেকটা দিয়ে খান। এভাবে প্রতিদিন একেকটা আইটেম দিয়ে খেলেইতো নানা রকমের খাবারের স্বাদ পাওয়া যায়।

আমাদের পিকনিক মানেই ঐ খাবার দাবার। গাড়ীতে খাবার ঢুকাও, গাড়ী থেকে খাবার নামাও, খাবার সাজাও, খাবার রান্না করো, খাবার পরিবেশন করো, খাবারের পর এবার তালা, বাসন, বাটি, ঘটি গাড়িতে তোল। ব্যস খাবারের আয়োজনের ভিতরই পিকনিক শেষ। একবার সমূদ্র দর্শন করতে গিয়ে দেখলাম- এক আমেরিকান কী সুন্দর করে ফোল্ডিং চেয়ার খোলে পানিতে পা ভিজিয়ে বসেছে। ঘন্টার পর ঘন্টা যায়। সে বসা। তার মাথার ওপর ছাতা। পাশে একটা ড্রিংক। বুঝা গেলো সে আজ মন প্রাণভরে সমূদ্র দেখবে। আর আমরা- খাবার খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে সমূদ্র দেখলাম। আর সমূদ্র দেখার পাশাপাশি এই দোকানে ঢু মারলাম, আরেক দোকান থেকে বের হলাম, একটু এদিক ওদিক ঘুরলাম, রাজনীতি, কম্যুনিটি নীতি, ট্রাম্প, মোদি, গদি, হাসিনা, খালেদা, পাপিয়া, সাফিয়া,কাদেরি , তাহেরি সহ দুনিয়ার সব বিষয়ে বিপুল আলোচনা, হালকা বাক বিতণ্ডা, ঝাপসা মনোমালিন্য নিয়ে সমূদ্র জয়ের পাশাপাশি দুনিয়া জয় করে ঘরে ফিরলাম।

গত শনিবার। গ্রোসারি কিনতে যাবো। দেখি হ্যারল্ড। সেও আমার সাথে যাবে। আমাদের গ্রোসারির লিস্টি মাশাল্লাহ- এইগুলো একটার সাথে আরেকটা জোড়া লাগালে- চাঁদের দেশে যাওয়া যাবে। মাংসের জন্য এক দোকান, মাছের জন্য আরেক দোকান। সব্জির জন্য ফার্মাস মার্কেট। সেখানে আবার দেশি লাউ পাওয়া যায়না। যাও আরেক দোকান। কাঁচামরিচের জন্য আরেক জায়গায়। দুধ-ডিমগুলো আবার এইসব দোকানে ভালো পাওয়া যায়না। যাও আমেরিকান গ্রোসারিতে। বিশাল লিস্টের যুদ্ধ শেষ করে যখন ফিরছি- হ্যারল্ড বললো- একটু দাঁড়াও। এক ফাস্টফুডের দোকানে দাঁড়ালাম। হ্যারল্ড একটা স্যান্ডউইচ কিনলো। স্যান্ডউইচের অর্ধেক সে খাবে। বাকি অর্ধেই ওর বউয়ে খাবে। ঝামেলা শেষ। সেইজন্য ওরা নাসা থেকে স্পেসে যায়। আর আমরা বেডরুম থেকে কিচেন আর কিচেন থেকে বেডরুমে যাই। আর, এর ফাঁকে ফাঁকে ইয়া বড় বড় ভুড়ি বানাই। স্পেশ স্টেশানে যাওয়ার সুযোগ আসলে আমরা খোঁজ নিবো- কিমার জন্য ফ্রেশ গ্রাউন্ড বীফ, কাচ্চি বিরিয়ানির মশলা, ডালের জন্য পাঁচফোড়ন, খাওয়ার পর গোলাপজামুন, চায়ের সাথে বিস্কুট, পানের সাথে চুন, খয়ের এসব কিছু সেখানে ঠিকঠাক পাওয়া যাবেতো?

আমি একটা জিনিস পর্যবেক্ষণ করলাম। যার গ্রোসারির ট্রলি যত বড়- মেধা আর যোগ্যতায় সে তত ছোট। যারা দরিদ্র-অর্থের অভাবে খেতে পায়না-সেটা ভিন্ন কথা। মেক্সিকান আর আমাদের গ্রোসারির ট্রলিগুলো যেন একেকটা মুদির দোকান। চেকআউট লেনে চেকআউট লেনে দাঁড়ালে মনে হয় কোনো ছোট দোকান ঘরের পিছনে দাঁড়িয়ে আছি। এতো বেশি বেশি খাবার উদরে যায় বলে আমাদের মগজে আর বেশী কিছু যায়না। হিসপানিক আর ভারতীয় অধ্যুষিত এলাকায় আপনি কোনো ভালো লাইব্রেরি কিংবা কোনো ভালো বইয়ের দোকান পাবেন না। এগুলো পাবেন শুধু সাদা বিশেষ করে ইহুদি অধ্যুষিত এলাকায়। রান্না করে আর খেয়েইতো আমাদের জীবন শেষ। অধ্যাবসায়ের অতো সময় কোথায়? বিল গেটস, মার্ক জুকারবার্গ, স্টিভ জবস ওনাদের সামনে কোনোদিনও ইয়াবড় খাবারের প্লেট দেখিনি। যেমন দেখেছি-রাজা-বাদশাহ-আমীর ওমরাহদের সামনে।

প্রিয় ভাই, চাচা, বাবা, দাদারা দয়া করে বউ, ভাবি, বোন, চাচী, মাসিদের রান্নাঘরের একচেটিয়া জীবন থেকে মুক্তি দিন। আর ভাবী, আপা আপনারাও একজনের সাথে আরেকজনের রান্নার আইটেম বাড়ানোর প্রতিযোগিতা থেকে দয়া করে নিজেদের হেফাজত করুন। এক জনে পাঁচজনের জন্য প্রতিদিন পাঁচপদ রান্না না করে পাঁচজনে মিলে একপদ রান্না করুন। সম্পর্ক বাড়বে। ভালোবাসা তৈরি হবে। কষ্ট লাঘব হবে। কিচেনে আপনার সময় যত বাড়বে- ভাইয়ের ভুড়িও তত বাড়বে। আর এই ভুড়ি ভালোবাসা না। এটা সর্বনাশা। এটা জীবননাশা। জীবন ধারনের জন্য খেতেতো হবেই। কিন্তু রান্নাঘর আর ভোজন যেন আমাদের পুরো জীবনটাই খেয়ে না ফেলে- দয়া করে সেদিকে একটু লক্ষ্য রাখবেন। সারাজীবন নারীমুক্তি নারীমুক্তি করলাম। কিন্তু নারীকেতো রান্নাঘর থেকেই মুক্তি দিতে পারলাম না।

সংসার আর জীবনের বাতিঘর সব নারীদের জন্য বিশ্ব নারী দিবসে হৃদয়ের গভীর থেকে রইলো বিশুদ্ধ শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা।

Asif mahmud.

 

নারী দিবসে তুলে ধরতে চাই নারী অধিকারের কিছু ভুল ধারণা

নারী দিবসে তুলে ধরতে চাই নারী অধিকারের কিছু ভুল ধারণা


কানিজ ফাতিমা


একসময় সমাজে একটা ভুল ধারণা প্রচলিত ছিল যে ছেলের বউয়ের দায়িত্ব হলো নিজের বাবা-মা, ভাই-বোন ভুলে শশুর-শাশুড়ী , দেবর-ননদ, ননদ-জামাই এর সেবা করতে হবে। বর্তমানে শিক্ষিত মহলে এই ভুল ধারণার অবসান ঘটেছে। এ ধারণাটা অনেকটাই সুস্পষ্ট যে ইসলামে দেবর-ননদ, ননদ জামাই দূরে থাক, স্বয়ং শশুড় -শাশুড়ীর প্রতি নারীর ফরজ কোনো দায়িত্ব নেই। কিন্তু এটুকুই পরিপূর্ন চিত্র না –

ইসলাম শশুড় -শাশুড়ীর প্রতি নারী বা পুরুষের ফরজ কোনো দায়িত্ব দেয়নি -এই কথাটা যেমন সত্যি তেমনি সত্যি ইসলাম বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানকে কিছু দায়িত্ব বাধতামূলক বা ফরজ করেছে। নারী হলে আপনার জন্য আপনার শশুর -শাশুড়ীকে সেবা করা ফরজ নয়, কেবলই মুস্তাহাব; কিন্তু আপনার স্বামীর জন্য তাদের ভরণ-পোষণ ও দেখা-শোনা করা ফরজ । তাই আপনার স্বামীর যেমন হক নেই আপনার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আপনাকে বাধ্য করতে তার বাবা-মায়ের অর্থাৎ আপনার শশুড় -শাশুড়ীর সেবা করার জন্য, তাদের জন্য প্রতিদিন রান্না করার জন্য; তেমনি আপনারও হক নেই আপনার স্বামীকে নানা অজুহাতে বা হুমকি-ধমকি দিয়ে তার বাবা- মায়ের প্রতি তার দ্বায়িত পালনে বাধা দেয়ার। মনে রাখবেন ইসলামে কখনোই এক চোখা নয়।

অনেক সময় অনেক সচেতন স্ত্রী মনে করেন তার স্বামীর জন্য স্ত্রী -সন্তানের ভরণ পোষণ, বিনোদন, শখ সব পূরণ হবার পরে আসবে তার বাবা-মায়ের হকের প্রশ্ন। না, ব্যাপারটা সেরকম নয়। ব্যাপারটা হলো পুরুষ যা আয় করবে তাতে সর্বপ্রথম আনুপাতিক হরে তার স্ত্রী , সন্তান ও বাবা-মায়ের ভরণ পোষণ এর চাহিদা পূরণ হতে হবে। কারো ইনকাম যদি কেবল মাত্র ১০০ টাকাও হয় তবে এই ১০০ টাকা থেকেই এই সবক’টি চাহিদার জন্য টাকা বরাদ্দ হবে। ইনকাম কম তাই সবটাই স্ত্রী-সন্তান এর জন্য খরচ হবে আর বাবা-মা বঞ্চিত হবে – সেটা ইসলামের নিয়ম না। ইসলাম সর্বাবস্থায় ভারসাম্যকে গুরুত্ব দেয়।

আবার দেখা যায় অনেক কৌশলী স্ত্রী ইচ্ছা করে তাদের সংসারের চাহিদাকে হিসাব করে এমনভাবে বাড়িয়ে দেয় যাতে স্বামীর ইনকাম থেকে এরপরে আর কোনো অর্থ উদ্বৃত্ত থাকতে না পারে তার বাবা- মাকে দেবার জন্য। এমন কৌশল শুধু অন্যায়ই নয় – বরং বড় ধরণের জুলুম।

শাশুড়ী কর্তৃক ছেলের বৌ নির্যাতন যেমন নারী অধিকারের লঙ্ঘন তেমনি ছেলের বৌ কতৃক শাশুড়ীর মাতৃত্বের হক নষ্ট করাও নারী অধিকার লঙ্ঘন। স্ত্রীকে তার বাবার বাড়ী যেতে না দেয়া, বিভন্ন অজুহাতে বাধার সৃষ্টি করা যেমন নারী নির্যাতন তেমনি স্বামীকে তার বাবা-মা, ভাইবোনের সঙ্গে কথা বলতে না দেয়া, তারা বেড়াতে আসলে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব করা যাতে তারা বাড়ী থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য হয় – সেটাও সুস্পষ্ট নির্যাতন।

জুলুম -নির্যাতন যে পক্ষ থেকেই হোক তা নিন্দনীয়, তা সংসারের ভিত্তিকে ধ্বংস করে। জুলুমকারীকে ভয় পেয়ে তার সঙ্গে কম্প্রোমাইজের নামে জুলুম মেনে নিলে এটি বেড়ে আরও শাখা প্রশাখা ছড়ায়। তাই সাহস ও বুদ্ধি করে জুলুমের সামনে দাঁড়িয়ে সেটা একটু শক্ত হাতে বন্ধ করতে হয়। এতে সাময়িক কিছু অসুবিধা হলেও long run এ কল্যাণ হয়।

সব নারী ভালো থাকুক; সে স্ত্রী, মেয়ে, মা বা বোনই হোক । সবাইকে নারী দিবসের শুভেচ্ছা।

 

ফল, সবজি ও ছোলার সালাদ

ফল, সবজি ও ছোলার সালাদ


ঘরকন্যা


উপকরণ
১. ছোলা পৌনে ১ কাপ,
২. যেকোনো সবজি টুকরা আধা কাপ,
৩. বিটলবণ আধা চা চামচ,
৪. শসা ১ টেবিল চামচ,
৫. আনারস আধা কাপ,
৬. কাঁচা মরিচ কুচি ১ চা চামচ,
৭. খেজুর আধা কাপ,
৮. ধনিয়াপাতা কুচি ১ টেবিল চামচ,
৯. আলু সিদ্ধ ৩টি,
১০. ডালিম পরিমাণমতো,
১১. নাশপাতি ১টি,
১২. লেবুর রস ১ টেবিল চামচ,
১৩. লবণ পরিমাণমতো।

প্রণালি
> ছোলা সারা রাত ভিজিয়ে রেখে অল্প সিদ্ধ করে নিন।

> আনারস, খেজুর, আলু সিদ্ধ, নাশপাতি চারকোনা করে কাটুন।

> সবজি হালকা লবণ দিয়ে সিদ্ধ করে নিন।

> এরপর ছোলা, সবজি ও ফলের সঙ্গে বিটলবণ, কাঁচা মরিচ কুচি, ধনিয়াপাতা কুচি, লবণ, লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে পরিবেশন করুন।

রেসিপি : কালের কন্ঠ

 

মোরা জোনাকি হতে চাই – ২

মোরা জোনাকি হতে চাই – ২


আফরোজা হাসান


চোখ বড় বড় করে নূরি বলল, তোমাদের কি সেপারেশন হচ্ছে নাকি? আমরা কি কোর্টে যাবো বাবা? ইশশ…ভাবতেই কেমন রোমাঞ্চ ফিল হচ্ছে। আমি আর রুহি কাঠগড়ার দাঁড়িয়ে আছি। উকিল সাহেব কোমল কণ্ঠে আমাকে প্রশ্ন করছেন, বলো মা তোমরা কার সাথে থাকতে চাও? আমরা দুজন কাঁদো কাঁদো চোখে একবার মামণির দিকে তাকাবো, একবার তোমার দিকে তাকাবো। তারপর ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলবো, জর্জ আঙ্কেল আমরা আমাদের বাবা ও মামণি দুজনের সাথেই থাকতে চাই। কারণ আমরা বাবা-মার মিলিত রূপ। তারাও আমাদের কাছে একাকার এক সত্ত্বা। আমরা তাই মামণির মমতা যেমন চাই, বাবার আদরও তেমন চাই।

নোমান সাহেব হাসতে হাসতে বললেন, তোর মামণি ঠিকই বলে খুবই দুষ্টু হয়েছিস তোরা দুই বোন। রুহি কোথায়? সকাল থেকে দেখিনি একবারও।

আমি ঘুমে দেখে এসেছিলাম বাবা। এতক্ষণে মনেহয় উঠেছে। চলো বাবা নাস্তা করতে যাই।

নাস্তা করার সময় নেই রে মা। আমি অফিসে গিয়ে কিছু খেয়ে নেবো।

বাবাকে রুমে ঢুকে যেতে দেখে নূরি বুঝলো সিরিয়াস কোন বিষয়েই বাবা-মামণির মনোমালিন্য হয়েছে। গাছে পানি দেয়া শেষ করে বোনের খোঁজে রওনা হলো সে। দুজন মিলে বাবা-মামণির মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কোন বুদ্ধি বের করতে হবে। বড় বোনের সন্ধানে বাড়ির ভেতর ঢুকতে গিয়ে প্রচণ্ড এক ধাক্কা খেলো নূরি। রুহিও ছোট বোনের খোঁজে বাগানের দিকে আসছিল। ফলে দু’বোনের এই সংঘর্ষ। একে অন্যেকে ধরে ব্যথা পায়নি নিশ্চিত হয়ে রুহি বলল, আমি তোর কাছেই যাচ্ছিলাম। বাবা-মামণির মধ্যে মনেহয় কিছু হয়েছে।

নূরি হেসে বলল, আমিও তো এই খবর নিয়েই তোমার কাছে যাচ্ছিলাম। মামণির মেজাজ কি খুব গরম?

গরম মানে? আমাকে নবাবজাদী বলে ডেকেছে। এবার বুঝে নে যে কতটা গরম। কি করা যায় বল তো?

বাবা-মামণির তো একটাই সমস্যা। মনোমালিন্য হলে কেউ কারো সাথে কথা বলতে চায় না। দুজনই অপেক্ষা করে অন্যজন আগে কথা বলবে। কোন ভাবে দুজনকে শুধু কথা বলিয়ে দিতে হবে একবার।

হুমম! তুই বুদ্ধি বের করতে থাক আমি ততক্ষণে ফ্রেশ হয়ে আসি। নয়তো আবার মামণির বকা শুনতে হবে।

নূরি হেসে বলল, আচ্ছা তুমি যাও। আমি রান্নাঘরের দরজায় চোখ রেখে চুপিচুপি দেখে আসি মামণিকে।

@

মেয়ের সাথে কথা বলে মনে যে আনন্দ ভাব এসেছিলো রুমে ঢুকেই সেটা উবে গেলো নোমান সাহেবের। সবসময় অফিসে যাবার ড্রেস বাইরে বের করে রাখেন তার স্ত্রী কিন্তু আজ করেনি। সংসারে ঝগড়া-ঝাটি মনোমালিন্য হতেই পারে, তাই বলে কি নিজের দায়িত্ব কর্তব্য পালনে অবহেলা করবে মানুষ? মেজাজ আবারো গরম হতে শুরু করলো নোমান সাহেবের। নিজেই ড্রেস বের করে তৈরি হয়ে নিলেন। বার বার চোখ চলে যাচ্ছিলো দরজার দিকে। মনে মনে চাচ্ছিলেন স্ত্রী আসুক, কথা বলুক তার সাথে। তৈরি হয়ে যাবার পরও কিছুক্ষণ রুমে বসে রইলেন। তারপর চোখ মুখ শক্ত করে বেড়িয়ে এলেন রুম থেকে। নাস্তা না করেই বেড়িয়ে যাচ্ছিলেন কিন্তু পাখীর মতো উড়তে উড়তে হাজির হলো বড় মেয়ে রুহি। বাবাকে হাত ধরে টানতে টানতে ডাইনিং টেবিলে নিয়ে গিয়ে বলল, বাবা দেখো আজ আমাদের দুজনের ফেবরেট নাস্তা বানিয়েছে মামণি। দাঁড়িয়ে আছো কেন? তাড়াতাড়ি বোস ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে তো সব।

মেয়েদের কোন কিছুতে না বলতে পারেন না কখনোই নোমান সাহেব। তাই বসে পড়লেন বাধ্য বাবার মত।

নিজের প্লেটে নেবার সাথে সাথে বাবার প্লেটেও নাস্তা বেড়ে দিলো রুহি। বাবাকে খাওয়ার তাগাদা দিয়ে নিজে খাওয়ায় মন দিলো।

নাস্তার টেবিলে এসে বাবাকে দেখে হাসি ফুটে উঠলো নূরির চেহারাতে। কিন্তু লুচির সাথে কলিজা ভুনা দেখে সাথে সাথে নাক কুঁচকে গেলো। মামণির মেজাজ খারাপ আজ খাবার নিয়ে ঝামেলা করলে ঠিক বকা খেতে হবে। মনে মনে একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করলো নূরি। মাঝে মাঝে মনের ছোট্ট একটা পছন্দ-অপছন্দ জানানোটাও কত কঠিন হয়ে যায়। বোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো গপাগপ খাচ্ছে। মামণিকে আসতে দেখে তাড়াতাড়ি প্লেটে লুচি আর এক চামচ কলিজা ভুনা উঠিয়ে নিলো।

মিসেস রাহমা এসে বললেন, তুই না কলিজা খেতে পারিস না, তাহলে নিয়েছিস কেন? এই নে আমি তোর জন্য সবজি নিয়ে এসেছি। সাথে সাথে হাসি ফুটে উঠলো নূরির চেহারাতে। হাত বাড়িয়ে মামণিকে জড়িয়ে ধরলো। হাসলেন মিসেস রাহমাও। মেয়ের মাথার হাত বুলিয়ে বললেন, হয়েছে আর আহ্লাদ করতে হবে না। প্লেটের সব খাবার শেষ করে উঠবি। নয়তো বুঝবি মজা।

মামণির হাত ধরে টেনে পাশে বসিয়ে নূরি বলল, মা সত্যিই অনেক স্পেশ্যাল তাই না বাবা? দেখো শত ঝামেলা, মন খারাপের মাঝেও মায়েরা প্রতিটা সন্তানের পছন্দ-অপছন্দ সবকিছু খেয়াল রাখেন, মনে রাখেন। অবশ্য বাবারা সারাদিন বাইরে পরিশ্রম করেন বলেই তো মামণিরা সন্তানদের পছন্দের সবকিছুর ব্যবস্থা করতে পারেন। বাবারাও অনেক সুইট তাই না মামণি? এজন্যই তো কবি বলেছেন, বাবা-মার কারণেই ধরণী পরে এসেছি, বাবা-মাকে মোরা তাই এতো ভালোবাসি। সকল বালা মুসিবত দূর হয়ে যাক, বাবা-মা মোদের সর্বক্ষণ একসাথে থাক।

কোন কবি এই কথা বলেছে? জানতে চাইলেন মিসেস রাহমা।

নূরি মিষ্টি হেসে বলল, সেই কবি নিজেকে লোকচক্ষুর আড়ালে রাখতেই পছন্দ করেন।

চলবে…

পর্ব-৩

 

জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে স্তন ও জরায়ু ক্যান্সার নিরূপণ করা হচ্ছে

জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে স্তন ও জরায়ু ক্যান্সার নিরূপণ করা হচ্ছে


নারী সংবাদ


দেশে ও দেশের বাইরে নারীদের প্রাণঘাতি রোগের মধ্যে স্তন ক্যান্সার ও জরায়ু-মুখ ক্যান্সার অন্যতম। একটুখানি সচেতন হলে আর বাড়ির কাছের সরকারি হাসপাতালগুলো এবং মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে আসলে যে কোন নারী খুব সহজেই ক্যান্সারের প্রাথমিক নিরূপণ কাজ করাতে পারেন। গুরুত্ব বিবেচনা করে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালগুলোতে স্তন ও জরায়ু ক্যান্সার পরীক্ষা করা হচ্ছে।
সেন্টার ফর সার্ভিক্যাল এন্ড ব্রেস্ট ক্যান্সার স্ক্রিনিং এন্ড ট্রেনিং প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, বিশ্বে ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীদের একটি বড় অংশ জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সারের শিকার। আমাদের দেশে ২০১৮ সালে ৮ হাজার ৮৬ জন জরায়ু-মুখ ক্যান্সার আক্রান্ত নারীকে সনাক্ত করা হয়েছে। আর ক্যান্সারে আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন পাঁচ হাজার ২১৪ জন। অন্যদিকে ওই বছরে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীর সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ৭৬৪ জন। আর এই ক্যান্সারে আক্রান্তদের মধ্যে মারা যান ছয় হাজার ৮৪৬ জন। প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় ১২ হাজার মহিলার জরায়ু-মুখে নতুনভাবে ক্যান্সার হচ্ছে।
অপরদিকে দেশে বছরে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা পনের হাজার। এর মধ্যে মারা যান আট হাজার। ৪০ বছরের পর থেকে নারীদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে থাকে। প্রাথমিকভাবে স্তন ক্যান্সারের উপসর্গের মধ্যে আছে- স্তনের কিছুটা অস্বাভাবিক অবস্থা বা চাকা অনুভব, স্তনের চামড়ার রং পরিবর্তন বা চামড়া কিছুটা পুরু হয়ে যাওয়া, নিপল ভেতরে দেবে যাওয়া, নিপল দিয়ে রক্ত বা পুঁজ পড়া। আর স্তন ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়লে যকৃতের ক্ষেত্রে পেটে ব্যথা বা জন্ডিস, ফুসফুসে ছড়ালে কাশি হওয়া বা কাশির সাথে রক্ত যাওয়া এবং হাড়ে তীব্র ব্যথা অনুভব হয়।
জরায়ু-মুখ ক্যান্সারের লক্ষণ হচ্ছে- অতিরিক্ত সাদা ¯্রাব, দুর্গন্ধযুক্ত ¯্রাব, অতিরিক্ত অথবা অনিয়মিত রক্ত¯্রাব, সহবাসের পর রক্ত¯্রাব, মাসিক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবার পর পুনরায় রক্তপাত, কোমরে বা তলপেটে অথবা উরুতে ব্যথা।
এই ধরনের কোন সমস্যা হলে জাতীয় পরিচয়পত্রের ছায়ালিপি সহযোগে চলে আসতে হবে যে কোন জেলা সদর হাসপাতাল, মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র এবং নির্বাচিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে। ৩০ বছরের বেশী বয়স হলেই জরায়ু-মুখ অবশ্যই পরীক্ষা (ভায়া) করাতে হবে। তবে ১৮ বছরের আগে বিবাহিত নারীদের ক্ষেত্রে ২৫ বছর বয়স হলেই জরায়ু-মুখ পরীক্ষা করাতে হবে। বয়স্কদের জন্যে ভায়া পরীক্ষা আরো জরুরী। এই পরীক্ষার মধ্য দিয়ে অন্যান্য স্ত্রী-রোগের চিকিৎসারও সুযোগ তৈরী হয়।
রোগের চিকিৎসার পরিবর্তে প্রতিরোধ করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। জরায়ু-মুখ ক্যান্সার খুব সহজেই প্রতিরোধ করা যায়। রোগে আক্রান্ত হবার আগে জরায়ু-মুখে অনেকদিন ধরে ক্যান্সারপূর্ব অবস্থা বিরাজ করে। ক্যান্সারপূর্ব অবস্থা ধরা পড়লে সামান্য চিকিৎসার মাধ্যমে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে জরায়ু ফেলে দেবার প্রয়োজন হয় না এবং চিকিৎসার পরেও সন্তান ধারণ করা সম্ভব।
নাটোর সদর হাসপাতালে স্তন ও জরায়ু-মুখ ক্যান্সারের প্রাথমিক পরীক্ষণ কাজে নিয়োজিত হোসনে আরা বলেন, যে পদ্ধতিতে জরায়ু-মুখ ক্যান্সারপূর্ব অবস্থা শনাক্ত করা হয় তাকে ‘ভায়া’ এবং স্তন ক্যান্সার পরীক্ষা পদ্ধতিকে ‘সিবিই’ বলে। এই পদ্ধতিতে জরায়ু-মুখ পরীক্ষা করলে ক্যান্সারপূর্ব অবস্থা সাদা রং ধারণ করে এবং রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করে। আর স্তন ক্যান্সার বোঝার জন্যে স্তনে চাকা বা অস্বাভাবিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হয়। ‘বিএসএমএমইউ-এ সার্ভিক্যাল এন্ড ব্রেস্ট ক্যান্সার স্ক্রিনিং ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জাতীয় কেন্দ্র স্থাপন’ প্রকল্পের পক্ষ থেকে মোট তিন সপ্তাহের প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০০৭ সাল থেকে আমরা কাজ করছি এবং প্রতিমাসে এই হাসপাতালে গড়ে দুইশ’ নারীর পরীক্ষা কাজ সম্পন্ন হচ্ছে।
পরীক্ষা শেষে অনাক্রান্ত রোগীকে সবুজ রঙের কার্ড প্রদান করে কাউন্সিলিং শেষে তিনবছর পরে আবার আসতে অনুরোধ করা হয় এবং পজিটিভ রোগীকে গোলাপী কার্ড প্রদান করে গাইনী বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে উন্নত চিকিৎসার জন্যে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বা বিশেষায়িত হাসপাতালে রেফার করা হয় বলে জানালেন অপর স্টাফ নার্স আশরাফুন্নেছা।
নাটোর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের স্টাফ নার্স সুফিয়া খাতুন জানান, এই কেন্দ্রে নিয়মিত স্তন ও জরায়ু-মুখ ক্যান্সার পরীক্ষা করা হয়।
সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নাটোর সদর হাসপাতাল এবং জেলার পাঁচটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০১৮ সালে মোট এক হাজার ১৬৯ জন নারীর স্তন ও জরায়ু-মুখ ক্যান্সার পরীক্ষা করে ৫২ জনের ক্যান্সারপূর্ব অবস্থা সনাক্ত করা হয়েছে

 

ছেলের নির্যাতন থেকে বাঁচার আকুতি বৃদ্ধ মায়ের


ছেলের নির্যাতন থেকে বাঁচার আকুতি বৃদ্ধ মায়ের


নারী সংবাদ


সন্তানের নির্যাতন থেকে রেহাই পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ৭৬ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ মা। একই সাথে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
গতকাল বুধবার সকালে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পল্লবী এলাকার বাসিন্দা সাহিদা রহমান নামে ওই মা এই আহবান জানান। তিনি বলেন, ২২ বছর আগে তার ছেলে জিল্লুর রহমান মারা যান। ছোট ছেলে হাফিজুর রহমান জুয়েল দীর্ঘদিন জার্মান বসবাস করছেন। বড় ছেলে আজিজুর রহমানকে নিয়ে পল্লবী থানাধীন ১০ নম্বর সেকশন, ১ নম্বর লেন, এ ব্লকের ৬ নম্বর বাড়িতে বসবাস করতেন। ওই বাড়ির ৮২ শতাংশের মালিক তার ছোট ছেলে জুয়েল। কিন্তু তিনি বিদেশে থাকাবস্থায় জোর করে পুরো বাড়িটি দখলে নেন বড় ছেলে আজিজুর। এ ব্যাপারে বাধা দেন মা। আর এতেই মায়ের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন আজিজুর। এক পর্যায়ে আজিজুর ও তার স্ত্রী ফরিদা বেগমের কাছে নানাভাবে নাজেহাল হতে থাকেন তিনি। খাবার না দিয়ে ছয়তলার একটি কক্ষে রাখা হয় তাকে। কিছু বলতে গেলে মারতে তেড়ে আসে ছেলে ও তার স্ত্রী। একপর্যায়ে সহ্য করতে না পেরে ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি। ওই মামলায় জেলে যায় বড় ছেলে আজিজুর। সম্প্রতি জেল থেকে বেরিয়ে এসে গর্ভধারিণী মাকে ব্যাপক মারধর করে। ছোট ছেলেকে হত্যা করবে বলে নানাভাবে হুমকি দিতে শুরু করে।
এই অবস্থায় তিনি চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে সাহিদা রহমান বলেন, লোভে পড়ে তার বড় ছেলে অমানুষে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, নির্যাতন কোন পর্যায়ে পৌঁছালে একজন মা তার ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করে বিচারের জন্য সংবাদ সম্মেলন করে। এ অবস্থা থেকে রেহাই পেতে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।

 

‘আকাশের চাঁদ এসে আমার পকেটে ঢুকেছে’

‘আকাশের চাঁদ এসে আমার পকেটে ঢুকেছে’


মুনির হাসান


মাওলানা আবদুল মালেকের বাড়ি চট্টগ্রামে। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন, আর পড়েছেন দেওবন্ধে। অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খাঁ খোঁজ করছেন সে সব তরুণদের যারা তাঁর সঙ্গে টাঙ্গাইলের করটিয়ায় সাদত কলেজ গড়ে তুলবেন। চট্টগ্রামের খান এ আলম খানের সুবাদে ইব্রাহিম খাঁ জানতে পারেন মাওলানা আবদুল মালেকের কথা। আরবি, উর্দু ও ফার্সি ভাষায় সমান বুৎপত্তি। খোঁজ করে নিয়ে গেলেন মাওলানাকে। সেখানেই একটা কলেজ গড়ার সংগ্রামে রত হলেন তিনি।

বেশ কয়েক বছর পরের কথা। মাওলানা অস্থির। চতুর্থ সন্তানের জন্মের খবরের জন্য অপেক্ষা করছেন। স্ত্রী গ্রামের বাড়িতে। সময় চলে যায় কিন্তু কোন খবর পান না। মাওলানা জানেন না, চতুর্থ সন্তানটিও মেয়ে হওয়ায় তার স্ত্রী তাকে জানাতে সময় নিচ্ছেন। এমন এক অস্থির সময়ে এক রাতে মাওলানা আবদুল মালেক স্বপ্নে দেখলেন আকাশের চাঁদ তাঁর পকেটে ঢুকে পড়েছে।

সকালেই স্ত্রীকে চিঠি লিখলেন – তোমরা সবাই নিশ্চয়ই ভাল আছো। আমি জানি আমার একটি মেয়ে হয়েছে। তুমি মন খারাপ করো না। আমি স্বপ্নে দেখেছি রাব্বুল আলামিন আমাদের ঘরে আকাশের চাঁদ পাঠিয়েছেন।

মাওলানা আবুদল মালেকের স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। তাঁর চতুর্থ সন্তান ডা. সায়েবা আখ্তার কিছুক্ষণ আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে একুশে পদক গ্রহণ করেছেন।
তাঁর উদ্ভাবিত ‘সায়েবা’স মেথড’ এখন সারা বিশ্বে হাজার হাজার মায়ের জীবন বাঁচায়।
সারা বিশ্বে প্রতি দুই মিনিটে একজন করে প্রসূতি মায়ের মৃত্যু ঘটছে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে। এর ৩০ শতাংশের জন্য দায়ী প্রসবকালীন রক্তক্ষরণ। সে হিসাবে প্রতিবছর ১৩ লাখ মায়ের মৃত্যু ঘটে প্রসবকালীন রক্তক্ষরণে। আরও ২৬ লাখ নারী মাতৃত্বের সক্ষমতা হারান। এর বড় অংশই ঘটে গরিব দেশগুলোতে।
প্রসব পরবর্তী জরায়ূর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে বাংলাদেশ সহ গরীব দেশগুলোতে প্রতি বছরই অসংখ্য মায়ের মৃত্যু হয়। বাংলাদেশে প্রসবকালীন মাতৃমৃত্যুর অন্যতম একটি কারণই এই ধরণের রক্তক্ষরণ।
উন্নত বিশ্বে এটি ঠেকাতে যে ডিভাইসটি ব্যবহার করা হয় সেটির দাম বাংলাদেশী টাকায় ২৪ হাজার টাকা! পাওয়াও যায় না। প্রযুক্তিটি মূলত একটি বেলুন, যেটি জরায়ুর ভেতরে ঢুকিয়ে ফুলিয়ে দিলেই কার্যত রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজে কাজ করার সময় প্রফেসর সায়েবা আখ্তার ভাবতেন – একটি বেলুনই কত জীবন বাঁচাতে পারে।
বেলুন চিন্তায় অস্থির নির্ঘুম রাতে সায়েবা আখতার ভাবেন বাচ্চাদের খেলনা বেলুনের কথা। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি সেই সময়কার কথা স্মরণ করেছেন -“মাঝে মাঝে আমি দেখেছি গ্রামে কনডমকে ওরা বাতাস দিয়ে ফুলিয়ে খেলনা হিসেবে ব্যবহার করে। হঠাৎ আমার মনে হল এই কনডমকেই তো আমি ইউটেরাসের (জরায়ু) ভেতর দিতে পারি। কনডম একটা মেডিকেল ডিভাইস। কাজে সমস্যাতো নাই। এটাকে যদি ইউটেরাসের ভেতর ঢুকিয়ে তারপর ফুলিয়ে চাপ সৃষ্টি করি, তাহলে হয়তো রক্তপাত বন্ধ হবে”। সকালে উঠেই দেখলেন, কনডম কতটুকু পানি বা স্যালাইন ধরতে পারে। দেখা গেল ‘১ লিটার ফ্লুইড ওটার ভেতরে ঢুকিয়ে অনেক চেষ্টা করেও সেটিকে ফাটানো যায় না’।
পরদিনই হাসপাতালে তিনি প্রথম কেস পেয়ে গেলেন। ততক্ষণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণন ঠেকাতে রোগির জরায়ু কেটে ফেলার সিদ্ধান্তি নিয়ে ফেলেছে ডাক্তার।
সায়েবা আখতার বলছেন, “আমি বললাম একটু অপেক্ষা কর। সে-ই আমার প্রথম কেস, যেখানে আমরা কনডমটাকে ক্যাথেটার দিয়ে বেঁধে ওর ইউটেরাসের ভেতর ঢুকিয়ে স্যালাইন দিয়ে ফুলিয়ে দেওয়ার পর পনেরো মিনিটের মধ্যেই ব্লিডিং বন্ধ হয়ে গেল”। পুরো ব্যবস্থাটি করতে খরচ হল একশ টাকারও কম।

সেই থেকে এই মেথড বিশ্ব জুড়ে সায়েবা’স মেথড নামে পরিচিত।

আপনাকে অভিনন্দন ছোটমনি। আল্লাহ আপনাকে হায়াতে তৈয়বা দান করুন।

আপনার পদ্ধতি ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্বজুড়ে!

 

মোরা জোনাকি হতে চাই……১

মোরা জোনাকি হতে চাই……১


আফরোজা হাসান


ঘুম থেকে উঠে হেলতে দুলতে রান্নাঘরে রওনা করলো রুহি। রান্নাঘরের কাছে যেতেই লুচি ভাজার মিষ্টি ঘ্রাণ এসে নাককে ছুঁয়ে দিলো। মামণিকে বলেছিলো আজ তার জন্য আলুর লুচি ও কলিজা ভুনা করতে। নিশ্চিয়ই তাই করেছে মামণি। হাসিতে বিকশিত হতে হতে রান্নাঘরে ঢুকে মামণির চেহারার দিকে তাকাতেই সাবধান হয়ে গেলো রুহি। মামণির চেহারাতে ঝড়ের পূর্বাভাস দেখা যাচ্ছে। এটাকে দশ নাম্বার বিপদ সংকেত বললেও কম বলা হয়ে যাবে। ঝড়ের কবলে পড়ার আগেই সরে পড়তে চাইলো কিন্তু ঝড় তাকে ধরেই ফেললো।

মোটামুটি হুংকার দিয়ে মিসেস রাহমা বললেন, সকাল হলো তাহলে নবাবজাদীর। কয়টা বাজে দেখেছিস? আর তুই ঘুম থেকে উঠে হাতমুখ না ধুয়ে রান্নাঘরে কেন ঢুকেছিস? সামনে থেকে যা আমার। এক্ষুনি যা বলছি।

রাজকন্যার বদলে নবাবজাদী! তারমানে মামণির চেহারাতে যে ঝড়ের পূর্বাভাস পরিলক্ষিত হচ্ছে সেটার কারণ বাবা। হাসি চেপে মিনমিনে কণ্ঠে রুহি বলল, আজ তো কলেজ নেই মামণি।

তাই বলে দশটা পর্যন্ত ঘুমাতে হবে নাকি? আমাদের যেদিন ছুটি থাকতো সংসারের কাজে মাকে সাহায্য করতাম। একদিনের জন্য মাকে একটু আরাম করতে দিতাম। আর তোরা ছুটি পেলে নিজের আরামের চিন্তা করিস।

মুখ শুকনো করে রুহি বলল, ভুল হয়ে গিয়েছে মামণি। এরপর থেকে আর এমন হবে না। এরপর থেকে ছুটির দিনে তোমাকে সাংসারিক কাজে সাহায্য করবো। তাছাড়া এখন থেকেই সাংসারিক কাজ শিখাও তো উচিত। নয়তো শ্বশুরবাড়ির লোকজন বলবে মায়ের বাড়ি থেকে কি শিখে এসেছো শুনি? মায়ের বাড়ি তুলে কথা বললে আমার হবে মেজাজ গরম। সংসারে শুরু হবে অশান্তি। তাই ভালো এখন থেকেই কাজকর্ম শেখা শুরু করা। বাঁশ থেকে বাঁশী তৈরি হবে? হুহ! আমি বাঁশঝাড়ই জন্মাতে দেবো না।

তোকে না বলেছি আমার সাথে ফাজলামো করবি না। যা তুই আমার সামনে থেকে। যা বলছি।

যাওয়ার আগে তোমাকে একটা টাইট হাগ দিয়ে যাই মামণি?

কাঠের চামচ উঁচিয়ে মিসেস রাহমা বললেন, বাসী শরীরে আমার কাছে এলে এইটার বাড়ি খাবি।

মাই ডিয়ার সুইট মাদার গাছে থাকলে ফুল কখনো বাসী হয় না।

মানে কি এই কথার?

মানে হচ্ছে আমি যেই দুটি গাছের সমন্বয়ে আমি প্রস্ফুটিত হয়েছিলাম। এখনো সেই বৃন্তেই শোভা বর্ধন করছি। হাসতে হাসতে বললো রুহি।

মিসেস রাহমা বিরক্ত কণ্ঠে বললেন, এজন্যই আমি তোর সাথে কথা বলতে চাই না। সারাক্ষণ শুধু ফালতু কথা। দাঁড়িয়ে আছিস কেন? যা বলছি সামনে থেকে।

রান্নাঘরের দরজার সামনে গিয়েও আবার ফিরে এসে মামণিকে জড়িয়ে ধরে আদর করে হাসতে হাসতে ছুটে বেড়িয়ে গেলো রুহি।

হেসে ফেললেন তখন মিসেস রাহমাও। তার রাগ হলে সবসময় চেষ্টা করেন তার দুষ্টু মেয়েদের সাথে কথা না বলতে। এটা সেটা বলে ঠিকই তাকে হাসিয়ে ফেলে নয়তো।

@

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই স্ত্রীর সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছে। মন মেজাজ তাই খুবই খারাপ নোমান সাহেবের। বারান্দায় বসে গম্ভীর মুখে পত্রিকার পাতা উল্টাচ্ছিলেন। গুনগুণ শব্দ কানে আসতে পত্রিকা ভাঁজ করে রেখে উঠে দাঁড়ালেন। ছোট মেয়ে নূরি বাগানে গাছে পানি দিচ্ছিলো আর গুনগুণ করছিলো। মেয়েকে দেখেই হাসি ফুটে উঠলো নোমান সাহেবের চেহারাতে। সাথে সাথে মনও ভালো হতে শুরু করলো। আদর ভরা কণ্ঠে বললেন, আমার মা কি করে?

নূরি উপর দিকে তাকিয়ে হেসে বলল, গাছদের নাস্তা দিচ্ছি বাবা। খালি পানি খেতে চাচ্ছে নাতো তাই গুনগুণ করে পটানোর চেষ্টা করছি।

নোমান সাহেব হাসতে হাসতে বললেন, তোর গুনগুণকে শব্দ দিয়ে দেতো মা। অনেকদিন তোর গান শুনিনা।

মামণির সাথে ফাইট হলে তুমি একদম বোকা ছেলে হয়ে যাও বাবা। বাগানে দাঁড়িয়ে আমি বুঝি গান করবো?

তোর মামণির সাথে আমার ফাইট হয়েছে কে বললো?

জগতের সবকিছু মুখে বলার দরকার হয় না বাবা। নিশ্চুপ পরিবেশও অনেককিছু জানান দিয়ে যায়। এই যেমন ধরো, প্রতিদিন ভোর বেলা দুজন কপোত-কপোতি চায়ের কাপ হাতে আমাদের বাগানে বসে গুটুর গুটুর করে। আজ তাদেরকে দেখা যায়নি। তাছাড়া রান্নাঘর থেকে ধুরুম ধারুম শব্দ ভেসে আসছে। এসবই মামণির মেজাজ গরমের লক্ষণ।

তুই এত কিছু খেয়াল করিস তাতো জানা ছিলো না। হাসি মুখে বললেন নোমান সাহেব।

মেয়েদেরকে সংসারের সবদিকে খেয়াল রাখতে হয় বাবা। তুমি এসব বুঝবে না।

বুঝবো না কেন?

জগতের সবকিছু তো সবাই বোঝে না বাবা। কিছু কিছু উপলব্ধি একান্ত মেয়েদের আর কিছু উপলব্ধি একান্ত ছেলেদের। ছেলে ও মেয়েরা যখন একে অপরের উপর নিজ নিজ উপলব্ধি চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে তখনই বাঁধে সমস্যা।

তুই তো মা অনেক কঠিন কঠিন কথা শিখে ফেলেছিস। তোর মামণিকে একটু বোঝাতে পারিস না এসব কথা। তাহলেই তো আর অশান্তি হয় না।

তুমি বুঝলেও তো অশান্তি কমে যেত বাবা। তাহলে তুমি কেন বোঝ না বলো তো?

তুই কখনোই তোর মামণির দোষ দেখিস না এটাই হচ্ছে সমস্যা। এমনিতে মুখে মুখে শুধু বলিশ যে আমাকে বেশি ভালোবাসিস। সত্যি করে বল তো তোকে যদি অপশন দেয়া হয় আমাকে কিংবা তোর মামণি যে কোন একজন বেছে নিতে তুই কাকে নিবি?

চলবে

পর্বঃ২ মোরা জোনাকি হতে চাই…..২

 

আপনার স্পাউজের ধরন বুঝুন

আপনার স্পাউজের ধরন বুঝুন


কানিজ ফাতিমা


সাধারণত একটা ট্রেন্ড আমি নারী-পুরুষের মধ্যে দেখতে পেয়েছি – বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় মেয়েরা কিছুটা পরিণত বয়সে তার বাবার মতো স্বামী চায় আর ছেলেরা তার মা বা বোনের মতো স্ত্রী চায়। যদি আপনার ক্ষেত্রে সেটা সত্য হয় তবে বিয়ের আগে এভাবেই পাত্র-পাত্রী খুজুন। কিন্তু বিয়ের পরে আপনাকে যেটা বুঝতে হবে তাহলো আপনার চাওয়া যাই হোক, আপনি যা পেয়েছেন সেই বাস্তবতাকে দেখার ও বোঝার মন ও চোখ তৈরী করতে পারা আপনার পারিবারিক সৌহার্দের জন্য জরুরী।

সহজ একটা উদাহরণ দেই -আপনাকে যদি screw driver দেয়া হয় তবে তাকে screw driver এর মতো ব্যবহার করুন। কাঁচির মতো ব্যবহার করতে যাবেন না। আপনার বাবা বা মা কাঁচি ছিলেন, আপনি কাঁচির ধার আর সুফল দেখে বড় হয়েছেন তাই আপনার কাঁচির প্রতি দুর্বলতা থাকতেই পারে। কিন্তু যদি আপনি screw driver এর কাছে কাঁচির ব্যবহার আশা করেন তবে আপনাকে হতাশ হতেই হবে।
আর এই হতাশা screw driver এর কারণে হয়নি, হয়েছে আপনার নিজের কারণে। এরপর আপনি যদি জোর জবরদস্তি করে এই screw driver কে কাঁচির মতো ব্যবহার করতে যান তবে হয় সে বিদ্রোহ করবে, নয়তো (নিরীহ হলে সহ্য করতে করতে) আপনার চাপাচাপিতে ভেঙে যাবে – এর কোনোটাতেই আপনার মঙ্গল নেই।

মনে রাখবেন screw driver এ কাঁচির কল্যাণ যেমন নেই, তেমনি কেচিতেও screw driver এর কল্যাণ নেই। কাজেই আপনি screw driver এর কাছে কাঁচির কল্যাণ না খুঁজে screw driver এর কল্যাণ খুজুন। screw driver এর কাছে কাঁচির কল্যাণ খুঁজতে গেলে আপনি সেটা তো পাবেনই না বরং screw driver এ যে কল্যাণ আল্লাহ আপনার জন্য মৌজুদ রেখেছিলেন সেটা থেকেও বঞ্চিত হবেন।

কাজেই আপনার স্পাউজের ধরণ বুঝুন।

 

বিকালে নাস্তায় নুডলস পাকোড়া

 


ঘরকন্যা


উপকরণ :
১. ১ কাপ বেসন,
২. ২ টেবিল চামচ চালের গুঁড়া,
৩. ১ কাপ সেদ্ধ নুডলস,
৪. ১ কাপ পরিমাণে সবজি (আলু, গাজর, ক্যাপসিকাম, মাশরুম বা আপনার পছন্দের যে কোনো সবজি),
৫. ৩/৪ টি কাঁচা মরিচ কুচি,
৬. ২ টি পেঁয়াজ কুচি,
৭. ১ ইঞ্চি আদা কুচি,
৮. ২ টেবিল চামচ টমেটো সস,
৯. ২ টেবিল চামচ ধনিয়া পাতা কুচি,
১০. লবণ স্বাদমতো,
১১. পানি পরিমাণমতো,
১২. তেল ভাজার জন্য।

প্রণালি :
> প্রথমে পানি দিয়ে বেসন ও চালের গুঁড়ো ভালো করে মিশিয়ে ঘন থকথকে ব্যাটারের মতো তৈরি করে নিন। ভালো করে মিশিয়ে নেবেন যেনো বেসনে দলা না থাকে।

> এরপর একে এঁকে বাকি সব উপকরণ (তেল ছাড়া) বেসনের মিশ্রনে দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে ফেলুন। প্রয়োজনে আরও খানিকটা পানি দিয়ে বড়া ভাজার মতো মিশ্রন তৈরি করে ফেলুন।

> এরপর চুলায় কড়াইয়ে ডুবো তেলে ভাজার জন্য তেল গরম করে নিন। অল্প একটু মিশ্রন হাতে নিজে বড়ার মতো গোল চ্যাপ্টা আকার দেয়ার চেষ্টা করুন এবং তেলে দিয়ে লালচে করে মুচমুচে করে ভেজে তুলে নিন।

> একটি কিচেন টিস্যুতে রেখে তেল শুষে নিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন ইফতারে।

রেসিপি : প্রিয়.কম

 

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার পর্ব -২

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার পর্ব -২


নারীর জন্য আইন


তারা বলেন, আল্লাহর নির্ধারিত হিস্সার পরে বাকী অর্ধেক বা এক তৃতীয়াংশ মেয়েরা পেতে পারে না। সুতরাং বাকী সম্পদ লাভ করবেন এমন উত্তরাধিকারীগণ যাদের জন্য নির্ধারিত কোন হিস্সা নেই বরং তারা অবশিষ্ট সম্পদ লাভ করবেন। এ ধরণের উত্তরাধিকারীদেরকে মাওলা (আছাবা) বলা হয়। তারা বলেন, কন্যা সন্তান মাওলা হতে পারে না। তাই কন্যাদেরকে নির্ধারিত হিস্সা প্রদান করার পরে যা কিছু অবশিষ্ট থাকবে, তা লাভ করবে মৃতের অপরাপর আছাবাগণ (মাওলা)। আর ভাই-বোন হলেন সে আছাবা, যারা বাকী সম্পদ লাভ করবেন। কারণ হাদীছ শরীফে এসেছে: عـَنْ اِبـْنِ عَـبَّـاسٍ رَضِـيَ الـلـَّه عـَنـْهـُمـَا قـَالَ قـَالَ رَسـُولُ الـلـَّهِ صَـلـَّى الـلـَّهُ عَـلـَيـْهِ وَسَـلـَّمَ اِقـْسِـمُـوْا الـْمَـالَ بَـيـْنَ اَهْـلِ الـْفَـرَائِـضِ عَـلـَى كِـتـَابِ الـلـَّهِ فـَمَـا تـَرَكـَتِ الـْفـَرَائِـضُ فـَلاَوْلـَى رَجُـلٍ ذَكـَرٍ হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন: ‘তোমরা উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পদ বন্টন কর আল্লাহর কিতাব মোতাবেক। যে সম্পদ অবশিষ্ট থেকে যাবে, তা পাবে ঘনিষ্ঠতর পুরুষ লোক।’ (মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনু মাজাহ)

১। তাছাড়া অন্য হাদীছে এসেছে: عـَنْ جـَابـِرٍ قـَالَ جَاءَتْ اِمْـرَأَةُ سَـعْـدِ بْـنِ الـرَّبـِيـْـعِ بـِاِبـْنـَتـَيـْهـَا مـِنْ سَـعْـدٍ إلـَى رَسُـوْلِ الـلـَّهِ صَـلـَّى الـلـَّهُ عَـلـَيـْهِ وَسَـلـَّـمَ فـَقـَالـَتْ يـَا رَسُـوْلَ الـلـَّهِ هـَـاتـَانِ اِبْـنـَتـاَ سَـعـْدِ بْـنِ الـرَّبـِيـْعِ قـُتـِلَ أَبـُوْهـُمَا مَـعَـك يَـوْمَ اُحـُدٍ شَـهـِيـْدًا وَاَنَّ عَـمَّـهُـمَا أَخَـذَا مَالـَهُـمَا ‏ فَـلَـمْ يَـدَعْ لـَهُـمَا مـَالاً وَلاَ تـُنـْكـَحـَانِ إلاَّ وَلـَهـُمَا مـَالٌ قـَالَ يـَقـْضِيْ الـلـَّهُ فـِيْ ذَلِـكَ فـَنـَزَلـَتْ آيـَة ُ الـْمِـيْـرَاثِ فـَبَـعَـثَ رَسُـوْلُ الـلـَّهِ صَـلـَّى الـلـَّهُ عَـلـَيـْهِ وَسَـلـَّمَ اِلـَى عَـمِّـهـِمَا فـَقـَالَ اِعْـطِ اِبـْنـَتـَىْ سَـعْـدٍ الـثــُّلـُثـَيْـنِ وَاِعْـطِ أُمـَّهُـمَا الـثــُّمُـنَ وَمـَا بَـقـِيَ فـَهـُوَ لـَكَ হযরত জাবির রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূল সা. এর কাছে সা’দ বিন রাবী’য় রা. এর স্ত্রী তার দু’জন মেয়েকে নিয়ে এসে আরজ করলেন: ‘হে আল্লাহর রাসূল, সা’দ বিন রাবী’য় রা. আপনার সাথে উহুদ যুদ্ধে গিয়েছিলেন। সে যুদ্ধে তিনি শহীদ হন। এই তার দু’মেয়ে। তাদের সম্পদ তাদের চাচা নিয়ে গেছে; তাদের জন্য কিছুই বাকী রাখেনি। সম্পদ না থাকার কারণে তাদের বিয়েও দেয়া যাবে না।’ রাসূল সা. বললেন: ‘আল্লাহ এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিবেন।’ এর পরেই উত্তরাধিকার সংক্রান্ত আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়। তখন রাসূলুল্লাহ সা. তাদের চাচার কাছে খবর পাঠিয়ে বললেন: ‘সা’দের দু’মেয়েকে দু’তৃতীয়াংশ দিয়ে দাও এবং তাদের মাতাকে এক অষ্টমাংশ প্রদান কর। আর যা অবশিষ্ট থাকবে, তা তুমি পাবে।’ (সুনানু আবু দাউদ, তিরমিযী, সুনানু ইবনি মাজাহ, মুসতাদ্রাক প্রভৃতি)

২। এ হাদীছে মেয়েদেরকে নির্ধারিত হিস্সা দেয়ার পরে অবশিষ্ট অংশ রাসূলুল্লাহ সা. ভাইকে দিয়েছেন যা প্রমাণ করে যে, কন্যা সন্তানের সাথে ভ্রাতাগণও অবশিষ্ট হিস্সা পান।খ.       কন্যাদের সাথে বোনেরাও হিস্সা পায় বলে ছাহাবায়ে কেরামের একাংশ ও অধিকাংশ ফুকাহাদের যে মতামত রয়েছে, তার স্বপক্ষে কি যুক্তি ও দলীল রয়েছে তা সুনির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। তবে একটি দলীল হল নিুোক্ত হাদীছ। বর্ণিত হয়েছে: عـَنْ اَبـُوْقـَيـْسٍ قـَالَ سَـمـِعـْتُ هـُذَيـْلَ بـْنَ شـُرَحـْبـِيـْلَ يـَقـُوْلُ سـُئـِلَ اَبـُوْ مـُوْسـَى عـَنْ اِبـْنـَةٍ وَاِبـْنـَةِ اِبـْنٍ وَاُخـْتٍ فـَقـَالَ لـِلاِبـْنـَةِ الـنـِّصْـفُ وَلـِلأُخـْتِ الـنـِّصْـفُ وَائـْتِ اِبـْنَ مـَسـْعـُوْدٍ فـَسـَيـُتـَابـِعـُنـِى فـَسـُئـِلَ اِبـْنُ مـَسـْعـُوْدٍ وَاُخـْبـِرَ بـِقـَوْلِ اَبـِىْ مـُوْسـَى فـَقـَالَ لـَقـَدْ ضَـلـَلـْتُ اِذَنْ وَمـَا اَنـَا مـِنَ الـْمـُهـْتـَدِيـْنَ أَقـْضِـيْ فـِيـْهـاَ بـِمـَا قـَضـَى الـنـَّبـِيُّ صَـلـَّى الـلـَّهُ عـَلـَيـْهِ وَسـَلـَّمَ لـِلاِبـْنـَةِ الـنـِّصْـفُ وَلاِبـْنـَةِ اْلاِبـْنِ الـسـُّدُسُ تـَكـْمـِلـَةَ الـثـُّلـُثـَيـْنِ وَمـَا بـَقـِيَ فـَلـِلأُخـْتِ فـَأَتـَيـْنـاَ اَبـاَمُـوْسـَيْ فـَاَخـْبـَرْنـاَهُ بـِقـَوْلِ اِبـْنِ مـَسـْعـُوْدٍ فـَقـَالَ لاَ تـَسـْأَلـُوْنـِيْ مـَا دَامَ هـَذَا الـْحـَبـْرُ فـِيـْكـُمْ ‘হযরত আবু কায়েস রাহ. বলেন: আমি হুযাইল বিন শুরাহবীল রাহ. কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, হযরত আবু মূসা আশআরী রা. কে জিজ্ঞাসা করা হল যে, যদি একজন মেয়ে, একজন ছেলের তরফের নাতিন ও একজন বোন থাকে, তাহলে কে কত হিস্সা করে পাবে? তখন তিনি বললেন: ‘মেয়ে অর্ধাংশ পাবে আর বাকীটুকু পাবে বোন। তুমি আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ এর কাছে গিয়ে দেখতে পার, তিনিও আমার অনুসরণ করবেন।’ হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. কে জিজ্ঞাসা করলে এবং আবু মুসা রা. এর মতামতের কথা জানালে তিনি বললেন: ‘আমি সঠিক পথের দিশা না পেলে পথভ্রষ্ট হয়ে যেতাম। আমি এমন রায় দেব যে রকম রায় দিয়েছিলেন রাসূলুল্লাহ সা.। মেয়ে অর্ধাংশ পাবে, নাতিন পাবে এক ষষ্টাংশ যাতে করে দু’জনের হিস্সা মোট দু’তৃতীয়াংশ হয়। আর বাকীটুকু পাবে বোন।’ আমরা হযরত আবু মূসা আশআরী রা. এর কাছে ফেরত গিয়ে তার কাছে ইবনু মাসউদ রা. এর রায়ের কথা জানালে তিনি বললেন, ‘এ পন্ডিত যতদিন আছে, ততদিন আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা কর না।’ (ছহীহ বুখারী, তিরমিযী, মুসতাদ্রাক)

৩। তাদের আরেকটি দলীল ফারাইজের গ্রন্থাবলীর সুত্রে জানা যায়। সে দলীলটি হল, রাসূলুল্লাহ সা. এর কথিত হাদীছ। যেমন বর্ণিত হয়েছে: اِجـْعـَلـُوْا اْلاَخـَوَاتِ مـَعَ الـْبـَنـَاتِ عـَصَـبـَةً ‘তোমরা মেয়েদের সাথে বোনদেরকে আছাবা বানাও।’ (সিরাজী, আল বাহরুর রায়ীক)

৪। উপরোক্ত বিষয়গুলোকে বিশ্লেষণ করে ফুকাহা ও ফারাইজবিদগণ আছাবা (মাওলা) উত্তরাধিকারীগণকে তিনভাগে বিভক্ত করেছেন।

১. ‘আছাবা বিনাফসিহী’,

২. ‘আছাবা বিগায়রিহী’ এবং

৩. ‘আছাবা মা’আ গায়রিহী’।

চলবে..

 

বন্ধ্যাত্ব ও এর যত কারণ

বন্ধ্যাত্ব ও এর যত কারণ


ডা. নুসরাত জাহান


বন্ধ্যাত্ব ও এর যত কারণ – সংগৃহীত

দুই বছর বা এর বেশি সময় কোনো ধরনের জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ছাড়াই গর্ভধারণে ব্যর্থ হলে তাকে ডাক্তারি ভাষায় বন্ধ্যাত্ব হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। প্রতি ১০০ জন দম্পতির মধ্যে ৮৪ জন প্রথম বছরে এবং ৯২ জন দ্বিতীয় বছরের মধ্যে গর্ভধারণ করতে সমর্থ হন। তাই বলা যায় প্রতি ১০০ জন দম্পতির মধ্যে ৮ জন বন্ধ্যাত্বের শিকার হন।

কখন কনসিভ না হওয়ার কারণ নির্ণয় করা দরকার?
এক বছর বা এর চেয়ে বেশি সময় কোনো ধরনের জন্ম নিয়ন্ত্রণ পধ্বতি ছাড়া গর্ভধারণে ব্যার্থ হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

তবে কারো কারো ক্ষেত্রে কনসিভ না হওয়ার কারণ নির্ণয় করতে দেরি করা যাবে না। যেমন,

# বয়স ৩৬ বা এর বেশি হলে
# রোগীর আগে এমন কোনো হিস্ট্রি থাকলে যেগুলো তার বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে যেমন পেলভিক ইনফেকশন এর হিস্ট্রি অথবা
# এমন কোনো অপারেশন যা তার ফার্টিলিটি কমিয়ে দিতে পারে।

বন্ধ্যাত্বের যত কারণ

বন্ধ্যাত্বের কারণ অনেক। আবার স্বামী-স্ত্রী যেকোনো একজন বা উভয়ের ক্ষেত্রে সমস্যা থাকতে পারে। গর্ভধারণের জন্য দরকার একটি সুস্থ ওভাম (ডিম), সবল বীর্য, নরমাল ইউটেরাস বা জরায়ু এবং নরমাল পেলভিক এ্যানাটমি। এর যেকোনো জায়গায় সমস্যা হলে গর্ভধারণে ব্যর্থতা দেখা দিতে পারে।

প্রাথমিকভাবে বন্ধাত্ব্যের কারণগুলো তিনভাগে ভাগ করা যেতে পারে। এগুলো হচ্ছে এনুভলেশন (ডিম্বাশয় থেকেও ভামবাডিম নিসরণ না হওয়া ), জরায়ু বা ডিম্ব নালীর সমস্যা ও পুরুষ সঙ্গীর সমস্যা।
ওভুলেসন বা ডিম্বস্ফুটন না হওয়ার কিছু কারণ :

• পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম
• হরমনের অস্বাভাবিক মাত্রায় নিঃসরণ : কিছু কিছু হরমোন যেমন প্রলেক্টিন, থাইরয়েড হরমোন অথবা পিটুইটারি FSH, LH হরমোনের অস্বাভাবিক মাত্রায় নিঃসরণ ও ভুলেশন ব্যাহত করে।

• শরীরের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বা কম থাকা।
• প্রিমেচিউর ওভারিয়ান ফেইলিউর
• অতিরিক্ত মানসিক চাপ।
• অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, ক্যান্সার কিংবা কিডনি রোগেও অভুলেশন ব্যাহত হতে পারে।
• কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি সাময়িক বা পরোপুরিভাবে ওভারিকে অকার্যকর করে দিতে পারে।
• ধূমপান, অথবা অনিয়ন্ত্রিত মদ্যপান।

জরায়ু বা ডিম্বনালীর সমস্যা :
• জারায়ুর টিউমার যেমন এডিনোমায়োসিস,ফাইব্রয়েড বা পলিপ।
• পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজ (পি আই ডি) অথবা যেকোনো ইনফেকশনের কারনে ডিম্বনালী বন্ধ হয়ে ওভাম ও শুক্রাণু নিষিক্তকরনের পথ বন্ধ করে দিতে পারে।
• এন্ডোমেত্রিওসিস বন্ধ্যাত্বের একটি পরিচিত কারণ। এ রোগের লক্ষণ মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, পেটে ব্যথা ইত্যাদি।

• ইনফেকশন বা এন্ডোমেত্রিওসিস জরায়ু এবং এর আশপাশের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক এনাটমি নষ্ট করে বন্ধাত্ব্যের কারণ ঘটায়।

মেল (পুরুষ) ফ্যাক্টর
৩০% ক্ষেত্রে পুরুষ সঙ্গীর সমস্যার কারণে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।

• শুক্রাণু বা বীর্য যথেস্ট গতিশীল না হলে বা অস্বাভাবিক গঠনগত কারণে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।
• কোনো কারণে শুক্রাণু তৈরী ব্যাহত হলে, যেমন জিনগত ত্রুটি, ভেরিকোসেলি, টেস্টিসের টিউমার বা ইনফেকশন অথবা কোণো ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া জনিত কারনে নরমাল শুক্রাণু তৈরী বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে।

পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রেই গর্ভধারণের হার বয়স বাড়ার সাথে কমে যায়। ৩৫ বছরের পর থেকে মেয়েদের ওভুলেশনের হার কমতে থাকে, একইসাথে শুক্রাণুর কার্যকারিতাও বয়সের সাথে সাথে কমে। তাই এই চিকিৎসায় বিলম্ব হলে সাফল্যের হারও কমে যায়।

ডা. নুসরাত জাহান
এসোসিয়েট কনসালটেন্ট (অবস-গাইনি)
ইমপেরিয়াল হসপিটাল, চট্টগ্রাম

 

সন্তানকে যা কখনো বলবেন না পর্ব -২(শেষ)

সন্তানকে যা কখনো বলবেন না পর্ব -২


কানিজ ফাতিমা


আপনি এত কষ্ট করার পর কি সন্তানের ক্ষতি চান? যদি না চান , তাহলে আর একটু ধৈর্য্য বাড়ান৷ আপনার যত কষ্টই হোক কখনই আপনার সন্তানকে এটা বলবেন না যে-তোমাকে দিয়ে কিছু হবে না …
তোমার মত ছেলে/মেয়ে আমার দরকার নাই ..
কখনই তার সঙ্গে ওর সমবয়সী কারো তুলনা করবেন না ৷ যদি কাউকে মডেল হিসাবে সামনে রাখতে চান তাহলে মহত মানুষদের ছোট বেলার গল্প বলতে পারেন বা তার থেকে বড় কারো কথা বলতে পারেন ৷ বড়দের অনুকরণ করতে বাচ্চারা পসন্দ করে কিন্তু সমবয়সী কাউকে না ৷অন্যের কাছে তার নামে কখনও অভিযোগ করবেন না , অন্তত তখন করবেননা যখন সে তা শুনতে পায় ৷ এতে বাচ্চারা মনে করে মা (বা বাবা ) তার সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখে না ..তার বদনাম করে …৷ এতে তার মন খারাপ হয় এবং তার self esteem কমে যায় ৷ তবে এর মানে এই না যে আপনি বাচ্চার সমস্যা নিয়ে অন্যের সঙ্গে আলোচনা করবেন না ৷ বাচ্চাদের সমস্যা গোপন না রেখে অভিজ্ঞ কারো সাথে এ নিয়ে আলোচনা করলে সুফল পাওয়া যায় ৷ তবে এক্ষত্রে যা মনে রাখতে হবে তাহলো এটা বাচ্চার সামনে কখনই করা যাবে না ৷ এমনকি তাকে পাশের ঘরে রেখেও না – অনেক সময় মনে হয় তারা শুনছে না বা খেলা নিয়ে ব্যস্ত আছে …কিন্তু আসলে তারা শোনে৷ তার সম্পর্কে negative কোনো কথার একটি শব্দ ও যদি তার কানে যায় তাহলে সে আপনার প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবে , মনে করবে ” মা মনে হয় সব সময়েই আমার নামে এসব কথা বলে…” ৷ তাছাড়া বাচ্চারা তার সম্পর্কে বাবা- মার মন্তব্য শুনতে খুবই আগ্রহী ৷ আপনি তার সম্পর্কে কিছু বলতে শুরু করলেই সে কান খাড়া করে তা শুনে , কিন্তু ভান করে যে সে আপনার কথায় একেবারেই মনোযোগ দিচ্ছে না ৷ কাজেই তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলুন ” তাহমিদ অনেক চেষ্টা করে …সে আগের চেয়ে উন্নতি করছে …আর একটু চেষ্টা করলে সে অনেক ভালো করবে …” ৷ নিজের সম্পর্কে এ রকম মন্তব্য শুনলে বাচ্চারা তাদের চেষ্টা বাড়িয়ে দিবে এবং আপনার সঙ্গে তার সম্পর্ক সদৃঢ় হবে ৷মনে রাখবেন আপনার সঙ্গে আপনার বাচ্চার সম্পর্ক অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে তার সঠিক Development এর জন্য বেশী জরুরী ৷

শেষ কথা -এ কথা গুলো বলা যত সহজ করা তত সহজ না ৷ আসলেই এটা কঠিন একটি কাজ …একটু চিন্তা করুন – আপনি কি চাচ্ছেন ? সন্তান মানুষ করতে…এটা স্বাভাবিক একটি চাওয়া কিন্তু ছোট চাওয়া না ৷ পৃথিবীর সবথেকে কঠিন কাজটি আপনি করছেন- Human Resource Development ৷ পৃথিবীর সবথেকে উন্নত জীব কে গড়ছেন আপনি ৷ এটা অন্য যে কোনো কাজের চেয়ে Challenging৷ কাজেই অন্য যেকোনো কাজের চেয়ে বেশী ধৈর্য ও বুধিমত্তা প্রয়োজন ৷ এবং সেটা আপনাকেই করতে হবে -কারণ আপনার সন্তানের ভালো চান আপনি ৷

 

অটিস্টিক শিশুদের প্রয়োজন অতিরিক্ত যত্ন

অটিস্টিক শিশুদের প্রয়োজন অতিরিক্ত যত্ন


স্বাস্থ্যকথা


রাহেলা আর রিদোয়ান বিয়ে করেন ভালোবেসে। পরিবার প্রথমে মত না দিলেও পরে দুই পরিবারই মেনে নেয় তােেদর এই বিয়ে। প্রথম তিন বছর তারা কোন বাচ্চাই নেয়নি। ইচ্ছে ছিল নিজেদের একটু গুছিয়ে তারপর সন্তান নিবে। বিয়ের সাড়ে পাঁচ বছরের মাথায় তাদের পরিবারে আসে ফুটফুটে ছেলে সন্তান। শুরুতে ভালোই কাটছিল রাহেলা আর রিদোয়ানের দিন। তাদের সব স্বপ্নই তৈরী হচ্ছিল সন্তান আদিলকে নিয়ে।
কিন্তু জন্মের ছয়-সাত মাস পরেই বুঝতে পারে তাদের সন্তান অন্য আর দশটি সাধারণ শিশুর মত নয়। তাদের আদিল বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু। সে অটিস্টিক। ডাক্তারের এমন কথা শুনে মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে তাদের দু’জনের মাথায়। এ কথা জানার পর কয়েকদিন ভালো করে কোন কিছু চিন্তাও করতে পারেননি তারা। পরে আবার তারা ডাক্তারের পরামর্শ নেন- কীভাবে আদিলকে সুস্থ করে স্বাভাবিক জগতে ফিরিয়ে আনা যায়।
প্রতিটি শিশুই নিষ্পাপ। আর অটিস্টিক শিশুরা তো এমন শিশু যে তারা একেবারেই নিষ্পাপ। তারা নিজের চাহিদা, অনুভূতি, আবেগ সুন্দরভাবে কিংবা মন খুলে প্রকাশ করতে পারে না। এজন্য পিতা-মাতাকে সব সময় সচেতন ও সতর্ক থাকতে হয়।
সেন্টার ফর রিসার্চ এন্ড ইনফর্মেশন এর পরিসংখ্যান মতে, ঢাকাতে ৩ শতাংশ শিশু অটিস্টিক। তবে বাংলাদেশে এ হার ০.১৫ শতাংশ।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. মনির হোসেন বলেন, অটিজম শব্দটা সম্পর্কে আগে আমাদের খুব একটা ধারণা ছিল না। তবে এখন জনসচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষ এ রোগ সম্পর্কে জানছে।
তিনি বলেন, এ ধরনের শিশুরা নিজেদের চাহিদা নিজেরা প্রকাশ করতে পারে না। এজন্য বাবা-মা বা আশপাশের আত্মীয়-স্বজন যদি সচেতন থাকে তবে এ ধরেনর অনেক বাচ্চাই সুস্থ এবং সুন্দরভাবে বেঁচে থাকে। এমনকি অনেক বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন বাচ্চা বড় হয়ে চাকরি করে নিজে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রায় সকল অটিস্টিক শিশুরই কোন না কোন বিষয়ের প্রতি বিশষ আগ্রহ থাকে। আর সে সব শিশুরা ঐ সব বিষয়ে খুব পারদর্শী হয়।
ডা. মনির বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে অটিজম বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরীতে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন হাসপাতালে অটিজম বিভাগ খোলা হয়েছে যাতে করে এ ধরনের শিশুদের সঠিক চিকিৎসা সেবা দেয়া যায়। ২০০৮ সাল থেকে এটি বাংলাদেশে জাতীয় দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।
একই হাসপাতালের আরেক শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সাইদুর রহমান সোহাগ বলেন, কারো পরিবারে অটিস্টিক বাচ্চা জন্ম নিলে আগে বাচ্চার মাকেই দোষারোপ করা হত। যেন বাচ্চার মা’ই এ ধরনের বাচ্চা জন্মদানের জন্য দায়ী। কিন্তু আসলে এতে মায়েদের কোন দোষ বিজ্ঞানসম্মতভাবে এখনো পাওয়া যায়নি। যদিও এখন এ ধরনের মনোভাব অনেকাংশে কমেছে। মূলত সরকারের নানাবিধ পদক্ষেপের কারনেই এটি সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, এ ধরনের শিশুদের অতিরিক্ত যত্ন নিতে হয়। সব সময় এদের চাহিদার প্রতি খেয়াল রাখা প্রয়োজন। অনেক সময় যথাযথ জ্ঞান ও ধারণার অভাবের কারণে এ ধরনের শিশুদের ঘরের বাইরে খুব একটা নেয়া হয় না। তবে তাদের অন্যান্য শিশুদের সঙ্গে মেশার সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষিত বাবা মা ও সচেতন নাগরিকদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, এ ধরনের শিশুদের লেখাপড়ার সুযোগ তৈরী করে দিতে হবে। তবে আশার কথা হচ্ছে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও বড় বিভাগীয় শহর যেমন চট্টগ্রাম এবং রাজশাহীতে এ ধরনের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য আলাদা স্কুল আছে। তবে কম অটিস্টিক শিশুদের যদি অন্য সাধারন শিশুদের সাথে তাদের স্কুলে পড়ালেখা করানো যায় তবে অটিস্টিক শিশুরা অনেকটা সুস্থ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এজন্য স্কুলের শিক্ষক এবং অন্য অভিভাবকরা যদি সচেতন হন এবং এগিয়ে আসেন তবে অটিস্টিক শিশুরাও সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে পারে।

সুত্রঃ (বাসস)

 

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার পর্ব-১

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার পর্ব -১


নারীর জন্য আইন


অধিকাংশ সাহাবাগণের মতামতের ভিত্তিতে এবং কুরআনের সুরা নিসার ১৭৬ নং আয়াতের আলোকে দেখা যাচ্ছে যে, “মৃত ব্যাক্তির যদি স্বামী বা স্ত্রী না থাকে, তার যদি এক বা দুই জন কন্যা সন্তান থাকে তাহলে তারা প্রথমত দুই তৃতীয়াংশ সম্পত্তি পাবে এবং রদের ভিত্তিতে বাকী সম্পত্তিটুকু পাবে। যদি মৃত ব্যাক্তি কালালা (নিঃসন্তান) হয় তাহলে মৃত ব্যাক্তির সম্পদের অংশ থেকে তার ভাই অথবা বোন পাবে। এখানে কালালার ব্যাপারে বলা হচ্ছে। হযরত কাতাদাহ্ (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “কালালা এমন ব্যাক্তি যার অধঃস্থন ও উর্দ্ধতন কেউ নেই। অর্থাৎ, যারা পিতা বা দাদা অথবা ছেলে কিংবা মেয়ে কেউ নেই (ইব্নে জাবির)। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উমর (রা.) এর জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত উপস্থিত ছিলাম। তিনি বললেন, আমি যা বলেছি সঠিক বলেছি (আমি বললাম) আপনি কি বলেছেন? তখন তিনি বললেন, কালালা হলো এমন লোক যার কোন সন্তান নেই। হানাফী মাজ্হাবের অনুসারী কিছু আলেমগণ কুরআনের আয়াতের বিপরীতে কিছু দূর্বল হাদীসের ভিত্তিতে মৃত ব্যাক্তির কন্যাদের কে তার সম্পদের অর্ধেক প্রদান করে বাকী অর্ধেক মৃত ব্যাক্তির ভাই অথবা বোনকে প্রদান করে। সুরা নিসার ১৭৬ নং আয়াত নাজিল হয়, রাসূল (সা.) এর যুগের শেষ দিকে অর্থাৎ বিদায় হজ্জ্বের সময়। যাকে গ্রীষ্মকালীন আয়াত নাম দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ আয়াত নাজিল হবার পরে মেয়ে সন্তান থাকা অবস্থায় রাসূল (সা.) ভাই বোনকে অংশ দিয়েছেন বলে কোন প্রমাণ নেই। সুতরাং কুরআন ও হাদীসের মধ্যে কোন বিরোধও নেই। কিন্তু বড়ই দূর্ভাগ্যের বিষয় এই যে, আমাদের দেশ সহ দেশে দেশে মেয়ে সন্তান হলে তার সাথে ভাই – বোনকে ও সম্পত্তিতে অংশীদার করা হয়। যা সুরা নিসার ১৭৬ নং আয়াতের সরাসরি লংঘন বলে আমরা মনে করি। তাছাড়া উহা নারীর প্রতি সুস্পষ্ট বৈষম্য। কুরআন উহা অনুমোদন করে না। বরং এ সর্বশেষ আয়াতের মাধ্যমে পূর্বেকার বিধানগুলোকে মানসূখ করা হয়েছে। মানসূখ বিধানকে বাতিল করে এ ১৭৬ নং আয়াতের বিধানের মাধ্যমে ফারায়েজের সিদ্ধান্ত দিতে হবে।

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার: একটি ভিন্নতর দৃষ্টিভঙ্গি মাওলানা সৈয়দ জিল্লুর রহমান মানুষ মরণশীল।

একদিন সবাইকে মরতে হবে। সবাইকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতেই হবে। মৃত্যু পরবর্তী কর্মকান্ডের মধ্যে সম্পদ বন্টণ এবং উত্তরাধিকারই প্রধান কাজ। উত্তরাধিকারী আত্মীয়গণের মধ্যে কিছু আত্মীয়ের উত্তরাধিকার শর্তহীন ও প্রশ্নাতীত। যেমন ছেলে-মেয়ে, পিতা-মাতা ও স্বামী-স্ত্রী। আবার কিছু সংখ্যক আত্মীয় এমন আছেন, যাদের উত্তরাধিকার শর্তহীন নয় এবং যাদের উত্তরাধিকার নিয়ে চিন্তাশীল মনিষীদের মধ্যে ভিন্নমত ও বিতর্ক রয়েছে। কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে ভাইবোনদেরকে উত্তরাধিকারী গণ্য করে হিস্সা প্রদান করা এমন একটি বিতর্কিত বিষয়।মৃতের সন্তানদের মধ্যে যদি এক বা একাধিক কন্যা সন্তান থাকে এবং তাদের সাথে মৃতের ভাইবোনও বর্তমান থাকেন, তাহলে এ এতিম কন্যাদের পাশাপাশি শক্ত-সামর্থ ভ্রাতা-ভঙ্গিগণ উত্তরাধিকারী গণ্য হবেন কি না, তা নিয়ে মনিষীদের মধ্যে মতবিরোধ ও বিতর্ক রয়েছে। হযরত উমার রা, ইবনু মাসঊদ রা. ও আবু মুসা আশআরী রা. সহ একদল ছাহাবায়ে কেরাম ও বিরাট সংখ্যক ফুকাহাগণ কন্যাদেরকে নির্দিষ্ট হারে হিস্সা দেয়ার পরে অবশিষ্ট অংশ ভাইবোনদেরকে প্রদান করার পক্ষে মত প্রকাশ করে থাকেন। তাদের মতের সমর্থনে নিুোক্ত প্রমাণাদি তারা পেশ করেন:ক.       তাদের বিবেচনায়, মেয়েরা হল এমন উত্তরাধিকারী যাদের জন্য নির্ধারিত হিস্সা রয়েছে। যাকে ইলমুল ফারাইজে বলা হয় ‘যবীল ফুরূজ’। কারণ, তারা বলেন, মেয়ে একজন হলে সে অর্ধেক সম্পদ পায়, একাধিক হলে পায় দু’তৃতীয়াংশ। যেমন আল্লাহ তা’লা বলেন: فـَاِنْ كـُنَّ نـِسَـاءً فـَوْقَ اثـْنـَتـَيـْنِ فـَلـَهـُنَّ ثـُلـُثـَا مَـا تـَرَكَ وَاِنْ كـَانـَتْ وَاحِـدَةً فـَلـَهَـا الـنـِّصْـفُ وَلأَبـَوَيـْهِ لـِكـُلِّ وَاحِـدٍ مِـنـْهـُمـَا الـسُّـدُسُ مِـمـَّا تـَرَكَ اِنْ كـَانَ لـَهُ وَلـَدٌ ‘‘সুতরাং তারা যদি দু’য়ের অধিক কন্যা সন্তান হয়, তাহলে তারা পাবে দু’তৃতীয়াংশ যা কিছু সে রেখে যাবে তা থেকে। আর যদি সে একজন নারী হয়, তাহলে সে পাবে অর্ধেক। এবং পিতামাতার প্রত্যেকে মৃত ব্যক্তি যা কিছু ছেড়ে যাবে তাতে এক ষষ্টাংশ করে পাবেন, যদি মৃতের কোন সন্তান থাকে।” (সূরা নিসা-১১)।

চলবে…

সংগ্রহঃ কানিজ ফাতিমা আপুর ফেসবুক ওয়াল থেকে…

 

রুই মাছের চপ


রেসিপি


উপকরণ :
১. যেকোনো মাছ (রুই) পাঁচছয়টি বড় টুকরা,
২. আলু মাঝারি ৩টি,
৩. একটি বড় পাউরুটির টুকরা,
৪. পেঁয়াজ মিহিকুচি আধা কাপ,
৫. আদাবাটা ১ চা-চামচ,
৬. রসুনবাটা ১ চা-চামচ,
৭. কাঁচামরিচ-কুচি ১ টেবিল-চামচ,
৮. মরিচগুঁড়া ১ চা-চামচ,
৯. হলুদগুঁড়া ১ চা-চামচ,
১০. ধনিয়াগুঁড়া ১ চা-চামচ,
১১. ভাজা জিরাগুঁড়া আধা চা-চামচ,
১২. লবণ স্বাদমতো,
১৩. তেল ভাজার জন্য।

প্রণালি :
> মাছের টুকরাগুলো ভাপে সেদ্ধ করে কাঁটা বেছে নিতে হবে। সেদ্ধআলু ভালোভাবে চটকে নিন। এবার পাউরুটি পানিতে ভিজিয়ে সঙ্গে সঙ্গে তুলে নিতে হবে। তারপর মাছ, আলু, রুটি খুব ভালো করে মেখে নিতে হবে। একে একে তেল বাদে সব উপকরণ খুব ভালো করে মিশিয়ে হাতে পছন্দ মতো আকার দিন। এবার গরম তেলে চপগুলো ছেড়ে দিয়ে মাঝারি আঁচে ভাজতে হবে। হালকা বাদামী রঙ আসলে নামিয়ে নিলেই হল। ইফতার, সাদাভাত, পোলাও বা বিরিয়ানির সঙ্গে খেতে মাছের চপের জুড়ি নেই।

রেসিপি : বাংলা মেইল

 

সন্তানকে কখনওই যা বলবেন না পর্ব–১

সন্তানকে কখনওই যা বলবেন না পর্ব -১


কানিজ ফাতিমা


সব বাবা-মা ই চান তার সন্তানটি সেরা হোক, সব কিছুতে ভালো হোক, চৌকস হোক৷ এজন্য তারা অনেক চেষ্টা করেন, ত্যাগ করেন, সময় দেন, সামর্থ অনুযায়ী অর্থ ব্যয় করেন৷ এরপর ও যখন কাঙ্খিত ফল পান না তখন কষ্ট পান , মুষড়ে পড়েন৷ তারা তাদের কষ্টের এ অনুভুতি প্রকাশ করেন বিভিন্ন ভাবে –

কেউ রাগ করেন
কেউ চেচামেচি করেন
কেউ অভিযোগ করেন
কেউ Nagging করেন ….
যে কারণে তারা রাগ, চেচামেচি, অভিযোগ বা Nagging করেন তার যৌক্তিকতা আছে৷ বাবা-মা সন্তানের ভালো চান বলেই এগুলো করেন , কিন্তু তারা যে এই রাগ চেচামেচি করছেন, তার ফল কি হচ্ছে ? – অবশ্যই খারাপ৷ অর্থাত- কারণ যুক্তিযুক্ত হলেই আপনার কাজ ভালো ফল আনবে তা নয় ৷ কারণ যুক্তযুক্ত হতে হবে এবং Action positive হতে হবে – তবেই result positive হবে ৷

ভালো কারণ + Positive Action = Positive Result

ভালো কারণ + Negative Action = Negative Result

একটি কেস স্টাডি বলছি –

তাহমিদের বয়স ৭ বছর ৷ সে চঞ্চল প্রকৃতির ছেলে ৷ ফলে চেয়ারে অনেকক্ষণ বসে থেকে নিবিষ্ট মনে পড়তে বা লিখতে পছন্দ করে না ৷ লিখতে বসলে প্রথম দিকে হাতের লেখা ভালই হয় – কিন্তু কিছুদুর গিয়ে আকাবাঁকা হতে শুরু করে ৷ তার মা অনেক চেষ্টা করেছে , অনেক অনেক চেষ্টা -নানা রকম চেষ্টা ৷ এতে কিছুটা কাজ হয় , কিন্তু ততটা না ৷

অথচ পাশের বাসার তাদভীনের হাতের লেখা কত সুন্দর ৷ শান্ত হয়ে বসে সে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখে ফেলছে , তার মাকে তেমন কষ্ট করতে হয় না ৷ ফলে তাহমিদের মা রেগে গিয়ে বলেন-

” তোকে নিয়ে কত চেষ্টা করলাম , কোনো কাজই হয় না “

” তোকে দিয়ে কিছু হবে না “

” এটাই পারিস না , জীবনে কি করবি?”

” এরকম করলে আর কিন্তু ভালবাসবনা “

” দেখ গিয়ে তাদভীন কত ভালো “

” তুই তো কিছুই শিখতে চাস না “

তাহমিদের মা ফোনে তার বোনকে দুঃখ করে বলেন –

” ওকে নিয়ে এত চেষ্টা করি , কিছুতেই কিছু হয় না ..”

তাহমিদের মা এর এ কথা গুলো বলার কারণ কি? – তিনি মনে করছেন এভাবে বললে তাহমিদ শুধরে যাবে৷ কিন্তু আসলে ফল কি হচ্ছে ?

তাহমিদ আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে – আসলেই কি তার মধ্যে কোনো যোগ্যতায় নাই?
সে চেষ্টা করার Motivation হারিয়ে ফেলছে
সে মনে করছে তার মার কাছে সে মূল্যহীন ৷ এ বয়সে তার মা-বাবা আর স্কুলের বন্ধুরাই তার কাছে গোটা বিশ্ব ৷ তার মনে হচ্ছে তার উপর আকাশ ভেঙ্গে পরছে , তার বিশ্বের বড় অংশটাই অন্ধকার হয়ে গেছে ….
সে নিজের অজান্তেই rude ভাবে কথা বলতে শিখছে … ফলে সেও অন্যদেরকে এভাবেই আঘাত করে কথা বলবে …
এ কেস স্টাডি থেকে আমরা কি জানলাম-

আমরা দেখলাম এই কথা গুলো বলার পেছনে আপনার উদ্দেশ্য ছিল তাহমিদের উন্নতি করা , ভালো করা৷ কিন্তু ফল হচ্চ্ছে উল্টো -তার ক্ষতি হচ্ছে ৷

চলবে…

 

শীলা বিয়ের পর থেকে শ্বশুড় বাড়ীতে থাকে


সাহিত্য


শীলা বিয়ের পর থেকে  শ্বশুড়  বাড়ীতে থাকে ৷  শীলার শ্বাশুড়ী জাহানারা বেগম ৷ শীলা বা  জাহানারা বেগম কেউই খারাপ মানুষ না ৷ কিন্তু তাদের সম্পর্ক খুব একটা মধুর না ৷ জাহানারা বেগম গোছানো স্বভাবের ৷ সবকিছু, বিশেষ করে রান্না ঘরের  জিনিস পত্র তার গোছানো থাকা চাই ৷ রান্না ঘরের  প্রত্যেকটি জিনিস যত্ন করে জায়গামত রাখা, সবকিছু ঝকঝকে তকতকে করে রাখার ব্যাপারে তিনি খুবই সচেতন৷ কেউ এগুলো তার মত গুছিয়ে ব্যবহার করতে না পারলে তিনি খুবই বিরক্ত বোধ করেন এবং অভিযোগ করেন৷ অন্যদিকে শীলা স্বভাবে ঠিক উল্টো৷ সে দ্রুত কাজ করে, একেবারেই গোছালো না এবং তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে জিনিসপত্রের খুব একটা যত্ন নিতে পারে না৷ ফলে রান্নাঘর ব্যবহার করে সে প্রায়ই এটাকে এলোমেলো করে রাখে৷ তার এ স্বভাব নিয়ে জাহানারা বেগম প্রায়ই অভিযোগ তোলেন ৷ শীলা চেষ্টা করে কিছুটা গুছিয়ে কাজ করতে৷ কিন্তু সে খুব একটা সফল হয়না ৷তাছাড়া শীলা চাকুরী করে বলে তার পক্ষে রান্না ঘরে খুব বেশী সময় দেয়া সম্ভব না ৷ফলে বউ-শ্বাশুড়ী সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে৷ জাহানারা বেগমের অভিযোগ, “বউ একেবারেই কাজের না ৷ খুবই অগোছালো, এলোমেলো ৷পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না ৷” শীলার অভিযোগ, ” শাশুড়ী সকাল-বিকাল তার পিছনে লেগেই থাকে, সবকিছু নিয়ে খ্যাচ  খ্যাচ  করে, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতেই থাকে৷” এর সঙ্গে পর্যায়ক্রমে যুক্ত হয় শীলার মা ও ননদ৷ শীলার মা দুঃখ করে বলে, ” শ্বাশুড়ী টা আমার মেয়েটাকে শুধু জ্বালায়”৷ ননদ বলে, “শীলা আমার মায়ের বদনাম করে বেড়ায়৷”  এ  ঘটনায় আমরা যা দেখতে পাই তাহলো,  শীলা ও জাহানারা বেগম দু’জনের কারো চাওয়াই  (expectation) অযৌক্তিক না এবং দু’জনের অভিযোগই সত্যি৷  শ্বাশুড়ী চাচ্ছেন বউ তার মত গুছিয়ে কাজ করুক৷ অন্যদিকে, বউ চাচ্ছে শ্বাশুড়ী তার বিরুদ্ধে সকাল বিকাল অভিযোগ করা বন্ধ করুক ৷ এক্ষেত্রে দু’জনই ঠিক ৷ তাহলে সমস্যা কোথায় ? সমাধানই বা কি? সমস্যাটা হলো দু’জনের দু’জনকে বোঝায়৷ জাহানারা বেগম ও শীলা দু’জন ভিন্ন প্রকৃতির মানুষ৷ তাদের Personality type ভিন্ন ৷ তারা একজন আরেকজনের মত হতে পারবে না ৷ জাহানারা বেগম যদি মনে করেন শীলাকে তার মত হতে হবে তবে তিনি ভুল করছেন৷ মানুষ তার Personality type পুরোপুরি বদলাতে পারে না ৷ তাই জাহানারা বেগমকে শীলার অগোছালো স্বভাবকে মেনে নিতে হবে এবং এ নিয়ে অভিযোগ করা বন্ধ করতে হবে ৷ অভিযোগ বন্ধ করে শীলাকে ধীরে ধীরে কাজের পদ্ধতি দেখিয়ে দিলে long term এ শীলার এ যোগ্যতা কিছুটা বাড়বে (skill development)৷ কিন্তু অভিযোগ (বা nag) সম্পর্কের অবনতি ছাড়া আর কিছুই ঘটাবে না ৷ একই সাথে শীলাকেও স্বীকার করতে হবে তার শ্বাশুড়ীর একটি ভালো গুন বা (Skill) আছে৷ যতটা সম্ভব এ গুনটির অনুকরণ করা তার নিজের জন্যই ভালো ৷ সবথেকে  গুরুত্বপূর্ণ হলো তাদের দু’জনকেই বুঝতে হবে অন্যজন ‘খারাপ মানুষ’ না, সে তার থেকে ‘ভিন্ন প্রকৃতির’ মানুষ৷ আল্লাহ তা’আলাই মানুষকে ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির করে সৃষ্টি করেছেন৷ এর পরও যদি দু’জন দু’জনের এই ভিন্নতা মেনে নিতে না পারে তবে আলাদা থাকাই তাদের জন্য ভালো৷ একসাথে থেকে পরস্পর সম্পর্কে বিরক্ত হওয়ার থেকে ভিন্ন থেকে পারস্পরিক সম্মান বজায় রাখা কল্যানকর ৷

 

মুরগির হালিম


মুরগির হালিম


উপকরণ :
১. মুরগি ১ কেজি,
২. গম আধা কাপ,
৩. মুগ ডাল সিকি কাপ,
৪. মসুর ডাল সিকি কাপ,
৫. ছোলার ডাল সিকি কাপ,
৬. মাষকলাইয়ের ডাল সিকি কাপ,
৭. অড়হড় ডাল সিকি কাপ,
৮. পোলাওয়ের চাল আধা কাপ,
৯. লবণ স্বাদমতো,
১০. এলাচি, দারুচিনি, তেজপাতা কয়েকটা, পেঁয়াজ কুচি সিকি কাপ, আদা বাটা ২ ১১. টেবিল চামচ,
১২. রসুন কুচি ১ টেবিল চামচ,
১৩. হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ,
১৪. মরিচ গুঁড়া ১ চা-চামচ,
১৫. জিরা গুঁড়া ১ চা-চামচ,
১৬. ধনিয়া গুঁড়া আধা চা-চামচ,
১৭. গোলমরিচ গুঁড়া আধা চা-চামচ,
১৮. জায়ফল-জয়ত্রী গুঁড়া আধা চা-চামচ।

প্রণালি :
> গম, মাষকলাই ডাল ও মুগ ডাল টেলে নিন। চাল, ডাল ও গম সেদ্ধ করে বেটে নিন। তেলে পেঁয়াজ বাদামি করে ভেজে সব মসলা ও মুরগি দিয়ে কষান। সামান্য পানি দিয়ে ঢেকে দিন। সেদ্ধ হলে বাটা ডালের মিশ্রণ ও পরিমাণমতো পানি দিয়ে নাড়ুন। হয়ে গেলে নামিয়ে বাটিতে ঢেলে, আদা কুচি, ধনিয়া পাতা, মরিচ, বেরেস্তা ও লেবুর রস দিয়ে পরিবেশন করুন।

রেসিপি : জেবুন্নেসা বেগম, বাংলাদেশি রেসিপি।

 

অদ্ভুত একটা শান্তি

অদ্ভুত একটা শান্তি


আফরোজা হাসান


কথা প্রসঙ্গে এক বোনকে আনন্দ আর প্রশান্তির মধ্যের বিস্তর ফারাকের এর ব্যাপারে বলার পর বোনটি উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে বলার অনুরোধ করেছিল। একটা উদাহরণ দিয়ে বোনটিকে মোটামুটি বোঝালেও নিজে ঠিক তৃপ্তি পাচ্ছিলাম না। ঠিক মনের মতো করে বোঝাতে পারিনি আসলে। এরপর থেকেই খচখচ করছিল বিষয়টা। খচেখচে মন নিয়েই পুত্রকে স্কুল থেকে আনতে গেলাম। যদি কোনদিন খানিকটা আগে চলে যাই স্কুলের সামনের পার্কে বসে অপেক্ষা করি। কিছুটা দূরে বসে ছুটির পর স্কুলের গেট দিয়ে ছুটোছুটো করে বেরিয়ে আসা বাচ্চাদের দেখতে ভীষণ ভালো লাগে। কেউ বাবার কোলে চড়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়, কেউ মায়ের হাত ধরে। কেউ কেউ আবার দাদা বা দাদীর সাথে লাফাতে লাফাতে পথ চলে।

এককথায় বর্ণিল আনন্দের ছড়াছড়ি লেগে যায় স্কুল ছুটির সময় চারপাশের পরিবেশে। ভীষণ উপভোগ করি আনন্দ রঙের এই বিচ্ছুরণ। তবে এই আনন্দময় ক্ষণেও উন্মুখ হয়ে তাকিয়ে থাকি সেই দিকে যেদিক থেকে পুত্র বের হবে। একটা ব্যাপার সবসময়ই নোটিশ করেছি অন্যান্য বাচ্চাদের দেখে আমার মনে যে আনন্দানুভূতি খেলা করতে থাকে গেটে আমার পুত্রকে ছায়া দেখা মাত্রই সেটা বদলে যায়। অদ্ভুত একরকমের শান্তি আর স্বস্থি বোধ ঘিরে ধরে মনকে। ছুটে এসে যখন সালাম দিতে দিতে কাছে এসে দাঁড়ায়, ওকে জড়িয়ে দরার পর শরীর মনের সমস্ত ক্লান্তি কোথাও যেন উবে যায়। অদ্ভুত রকমের একটা শান্তি ভাব জাপটে ধরে মনকে। আজও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলো পুত্রকে আনতে যাবার সময়। এবং একই সাথে আরেকটা উপলব্ধি জাগলো। আনন্দ ও প্রশান্তির সংজ্ঞাটা নতুন করে উন্মোচিত হলো আমার সম্মুখে।

আনন্দ উপভোগের আর প্রশান্তি শুধুই অনুভবের। আনন্দ মনকে উদ্বেলিত করে, উৎফুল্ল করে। কিন্তু ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত, তৃষিত প্রাণ শীতল পানির ধারায় আস্বাদিত হবার উপলব্ধির নাম প্রশান্তি। প্রশান্তিকর মূহুর্তে জীবনের সবটুকুন পূর্ণতার ছোঁয়া নিহিত…..

— আফরোজা হাসান

বইমেলা সমাচার

বইমেলা সমাচার


জান্নাতুন নুর দিশা


ঘটনা ১:

গতকাল শনিবার দুপুরে বাংলার প্রকাশনের ৩৩৭-৩৩৮ নং স্টলে গিয়ে বসে আছি। দুপুরে মেলা খানিকটা ঝিমায়, বিকেলে জমে। সেই দুপুরেই একটা মেয়ে স্টলে এসে বই নাড়াচাড়া করছেন, বিক্রয়কর্মীকে জিজ্ঞেস করলেন আপনাদের নতুন বইগুলো দেখান। বিক্রয়কর্মী কয়েকটা বই এগিয়ে দিলেন। মেয়েটি বইয়ের ফ্ল্যাপ খুলে পড়লেন। অনিকেত এর ফ্ল্যাপ পড়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে কী যেন ভাবলেন! তারপর বিক্রয়কর্মীকে বললেন, “আপনারা কত ভালো বই করেছেন। এই এসব বইয়ের অত প্রচার হয় না কেন। বইটা পছন্দ হয়েছে, নিতে চাই।”
মেয়েটা অনিকেত কিনে নেয়ার পর বিক্রয়কর্মী বললেন, “লেখক উপস্থিত আছেন কিন্তু স্টলে।”
ক্রেতা সচকিত হয়ে জানতে চাইলেন, “কই তিনি? আমি পরিচিত হতে চাই।”

পরে আমার সাথে এসে কথা বললেন তিনি। মেয়েটির চোখের দিকে তাকালাম, চোখে সমীহ, উৎসাহ আর ভালোবাসার ভাষা। জানালেন আমাকে চেনেন না। ফেসবুকে অত এক্টিভ না তিনি। মেলায় ঘুরে ঘুরে বইয়ের ফ্ল্যাপ, ভূমিকা পড়ে যাচাই করে বই কেনার অভ্যাস এবং অনিকেতের ফ্ল্যাপ, ভূমিকা পড়েই তিনি আগ্রহবোধ করছেন। বই পড়ার পর এই ভালোলাগার রেশ থেকে গেলে তিনি আগামীমেলায় এসে আমার বই খুঁজে বের করবেন। একটা অটোগ্রাফ দিতে বললেন। আমি লিখে দিলাম, “আপনার কথা আমার মনে থাকবে। ভালোবাসা।”

এখনো এমন দেখেশুনে যাচাই করে বই কেনা পাঠক আছেন এবং আমার বই এমন পাঠকদের স্পর্শ করে ভাবতেই এত ভালো লাগছিল!

ঘটনা ২:

গতকাল মেলার শেষ দিকে। আমি বেশ ক্লান্ত। ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছি। বেরিয়ে যাবো এমন সময় দুজন কিশোর এলো। মাদ্রাসার ছাত্র হবে সম্ভবত, বয়স চৌদ্দ/পনেরো হবে, পরনে জুব্বা, চেহারায় ভীষণ সারল্য। হাতে একগাদা বইয়ের প্যাকেট। দুজনেত হাতে দুটো অনিকেত এবং একটা অভিমান জংশন। সম্ভবত দুজন ভাই৷ বইগুলো অটোগ্রাফের জন্য আমার দিকে এগিয়ে দিলো। আমি কিছুক্ষণ ওদের মুগ্ধ হয়ে দেখলাম৷ ওদের চোখে লেখকের জন্য সরল ভালোবাসা। অটোগ্রাফ দিলাম, জিজ্ঞেস করলাম আমায় কিভাবে চেনে। বললো ফেসবুকে আমার লেখা পড়ে ওদের খুব ভালো লাগে। বই পড়া ওদের শখ। আমি মেলায় আসব জেনে দেখা করতে এসেছে। কেন যেন আমার লেখকসত্তার প্রতি এই দুই কিশোরের ভালোবাসা মাখা চাহনি আমার হৃদয়ে দাগ কেটে গেছে।

ঘটনা ৩:

শুক্রবারে বিকেলে সরলরেখা প্রকাশনার ৬১৮ নং স্টল থেকে কল দিয়ে বললো একটা মেয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। যেন স্টলের সামনে একটু যাই কষ্ট করে। গেলাম। মিষ্টি চেহারার এক তরুণী হাতে অভিমান জংশন নিয়ে দাঁড়িয়ে। বললো আমার ফলোয়ার ফেসবুকে। আমার কবিতা পড়লেই তার কান্না পায়। মনে হয় যেন তার না বলতে পারা কান্নাগুলো, কথাগুলোই নাকি আমি বলে দেই কবিতায়। আমি মেয়েটার চোখের দিকে দিকে তাকালাম। কী ভীষণ মমতার চোখে আমায় দেখছেন! যেন আমি তার দর্পন প্রতিবিম্ব! আমি কবিতায় এভাবেই পাঠকের হৃদয়ের প্রতিবিম্ব হতে চেয়েছি সবসময়।

মেলায় আমার সাথে দেখা করতে আসা সকলের চোখের দিকে আমি তাকিয়েছি বারবার। মানুষের চোখে নিজের জন্য ভালোবাসা দেখার মতো তীব্র আনন্দ আর কিছুতে নেই। আরো অনেক অনেক ভালো লাগার ভালোবাসার অনুভূতি চোখে আর বুকে ধারণ করে ফিরে এসেছি। আরো লিখের যাবার জন্য এসব ভালোবাসা আমার রসদ। ধন্যবাদ সবাইকে।

 

রাজধানীতে মা ও দুই শিশুর লাশ উদ্ধার


নারী সংবাদ


রাজধানীর দক্ষিণখানে নিজ বাসা থেকে শুক্রবার এক মা ও তার দুই শিশু সন্তানের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। দক্ষিণখান থানা পুলিশ বিকালে প্রেমবাগান এলাকা থেকে লাশ তিনটি উদ্ধার করে।

দক্ষিণখান থানার এসআই মনসুর আলী জানান, ওই এলাকার কেসি স্কুলের পাশের একটি বাড়ি থেকে লাশগুলো উদ্ধার করা হয়। কীভাবে তাদের মৃত্যু হয়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। পুলিশ এখনও তাদের নাম প্রকাশ করেনি।
সূত্র : ইউএনবি।

 

বর্তমানে সহজে ঋণ পাচ্ছেন নারী উদ্যোক্তারা

বর্তমানে সহজে ঋণ পাচ্ছেন নারী উদ্যোক্তারা


নারী সংবাদ


বর্তমান সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে পুরুষদের পাশাপাশি সমানতালে এগিয়ে চলছে নারীরা। সব ক্ষেত্রেই এখন নারীরা পুরুষের সমান অধিকার ভোগ করছে। এমনকি ব্যবসা-বাণিজ্যেও পুরুষের সমানতালে এগিয়ে চলছে নারী।
ব্যবসা ক্ষেত্রে মূলধন বা ঋণের ক্ষেত্রে এখন অনেক বেশি সুযোগ পাচ্ছেন নারী উদ্যোক্তারা। মাত্র এক দশক আগেও নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য ছিল। তবে, কালের পরিক্রমায় এবং সময়ের প্রয়োজনে সেই বাধা অনেকটাই দূর হয়েছে।
দেশের ব্যাংকিং খাত বর্তমানে নারীদের অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। এখন ব্যাংকের প্রতিটি শাখায় নারী উদ্যোক্তাদের জন্য রয়েছে আলাদা সেবা ডেস্ক। কেবল সেবা ডেস্কই নয়। ব্যাংক ঋণ পেতেও বিশেষ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন নারী উদ্যক্তারা। অন্য যেকোন ঋণের চেয়ে নারী উদ্যোক্তাদের নথিপত্র কম লাগছে। তাদের জন্য রয়েছে ৯ শতাংশ হারে সুদে পুনঃঅর্থায়ন ঋণ পাওয়ার সুযোগ।
তবে, এর বাইরে ঋণ পেতে অনেক নারী উদ্যোক্তাকে এখনো সুদের হার বেশি গুণতে হচ্ছে, এমনকি কখনো কখনো ১৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদ গুণতে হচ্ছে বলে উদ্যোক্তা ও ব্যাংকগুলো থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে।
সরকার ঘোষিত জাতীয় শিল্পনীতি ২০১৭ তে বলা হয়েছে, এসএমই খাতে ঋণের কমপক্ষে ১৫ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা রয়েছে, পুনঃঅর্থায়ন ঋণের কমপক্ষে ১০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাদের দিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে এসএমই খাতে ঋণ বিতরণ হয়েছে ৭৯ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে নারী উদ্যোক্তারা পেয়েছেন ৩ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ ঋণের ৪ শতাংশ গেছে নারীদের কাছে। আলোচ্য সময়ে সব মিলিয়ে ৪ লাখ ২ হাজার উদ্যোক্তা ঋণ পেয়েছেন। এর মধ্যে নারী উদ্যোক্তা ছিলেন ২৯ হাজার ৫৮৭ জন।
নারী উদ্যোক্তাদের কেউ কেউ অবশ্য বলেছেন, ঋণের জন্য ব্যাংকগুলো সাদরে আমন্ত্রণ জানালেও ঋণ সেভাবে দিচ্ছে না। এর কারণ হিসেবে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার শর্ত চাইছে ব্যাংকগুলো। পাশাপাশি, প্রতিষ্ঠিত জামিনদার, স্থায়ী ব্যবসাসহ নানা নথিপত্রও চাইছে ব্যাংক। তবে, বেসরকারি একটি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, ব্যাংকগুলো এখন ঋণ দেয়ার জন্য নারী উদ্যোক্তাদের খুঁজছে। সমস্যা হলো এসএমই খাতে যেসব উদ্যোক্তা আছেন তার ২ শতাংশ নারী। ফলে, সবাই ঋণ পেলেও এসএমই খাতে ঋণের নারীদের অংশগ্রহণ খুব বেশি বাড়ছে না।
ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে , বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের আওতায় নারী উদ্যোক্তারা ঋণ নিলে তাতে সুদের হার ধরা হচ্ছে ৯ শতাংশ। এর বাইরে যারা পুরনো গ্রাহক, তারা ১০ থেকে ১৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাচ্ছেন। তবে, নতুন ও অনিরাপদ গ্রাহকদের জন্য সুদ হার ১৮ শতাংশ পর্যন্ত।
ব্যাংকগুলো এসএমই ঋণের পণ্যভেদে নানা ঋণসেবা নিয়ে এসেছে। আবার নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বৈচিত্র্যপূর্ণ ঋণ পণ্যসেবাও রয়েছে। বাংলাদেশের সব ব্যাংকই নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ ঋণ পণ্য রয়েছে। এসব ঋণে সুদ হার ১১ থেকে ১৩ শতাংশ। যেসব গ্রাহক পুরনো বা ভাল তারা কিছুটা কম সুদে ঋণ পাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারী উদ্যোক্তাদের ঋণদানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে ব্র্যাক, ইস্টার্ন ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংক। এছাড়া ব্যাংক এশিয়া, সিটি, আইএফআইসি, যমুনা, ডাচ বাংলা, মার্কেন্টাইল, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, প্রাইম এবং পূবালীসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংকের নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে বিশেষ পণ্য রয়েছে। বিদেশী ব্যাংকগুলোর মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, এইচএসবিসি এবং সিটি ব্যাংক এ খাতে ঋণ দিতে বিশেষ জোর দিয়েছে। আবার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো থেকে নারী উদ্যোক্তারা ঋণ পাচ্ছেন। যে কারণে, নারী উদ্যোক্তারা এখন কেবল এসএমই খাতে সীমাবদ্ধ নেই। তাদের ব্যবসা ছড়িয়ে পড়ছে বড় ও ভারী শিল্পেও।
মার্কেন্টাইল ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে প্রতিষ্ঠা পাওয়া হেনা আক্তার বলেন, ‘বর্তমান সরকারের বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগের কারণে নারী উদ্যক্তাদের ব্যাংক ঋণ পাওয়া এখন অনেক সহজ হয়েছে। এখন দরকার পণ্য বাজারজাত ও ব্যবসা উন্নয়নের বিষয়ে নারী উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া।’
নারী উদ্যোক্তাদের আবেদন বেশিরভাগ সময়ই পূর্ণাঙ্গ থাকে না উল্লেখ করে বিশিষ্ট ব্যাংকার সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ব্যাংক সবসময় যোগ্য ব্যক্তিদের ঋণ দিতে চেষ্টা করে। কারণ, ব্যাংক যে টাকা দেবে, তাতো জনগণের টাকা। ব্যাংক চায় এই অর্থ যথাযথভাবে কাজে লাগুক এবং তা যথাসময়ে আবার তা ফেরত আসুক। ব্যাংক এই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে চায়।
তিনি বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সরকার এখন অনেক বেশি উদ্যোগী, যেটা ভবিষ্যতে অনেক বেশি কাজে দেবে। সুত্রঃ বাসস

 

মোরগ পোলাও রান্না করি


ঘরকন্যা


যা লাগবেঃ

আতব চাল – ৩ গ্লাস
মোরগের মাংস – দেড় কেজি
মুশারীর ডাল -১ কাপ
পেয়াঁজ কুচি – ১- ১/২ কাপ
পেয়াঁজ বাটা – ২ টেবিল চামচ
আদা বাটা – ২ চা চামচ
রসুন বাটা – ১ টেবিল চামচ
গরম মসলা গুঁড়া/বাটা – ১ চা চামচ
তেজপাতা – ২ টা
টক দই – ২ টেবিল চামচ
আলু বোখারা – ২ টা
[দারুচিনিএলাচলবঙ্গজায়ফলজয়ত্রী] একত্রে বাটা – ১ চা চামচ
লবণ – পরিমাণমতো
ঘি – ২ টেবিল চামচ
সয়াবিন তেল – আধা কাপ
চিনি – ১ চা চামচ
গোলমরিচ গুঁড়া – আধা চা চামচ
কাঁচামরিচ – ২/৩ টা
পেয়াঁজ বেরেস্তা – ১ কাপ
জিরা বাটা – ১ চা চামচ
হলুদ গুঁড়া – চা চামচের ৩ ভাগের ১ ভাগ
মরিচ – আধা চা চামচ
ধনে গুঁড়া – ১ চা চামচ
পানি – ৫ কাপ

কিভাবে রান্না করবেনঃ

মোরগের চামড়া ছাড়িয়ে হাঁড় সহ কয়েক টুকরা করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। পানি ঝরে গেলে এতে পেয়াঁজ বাটাআদা বাটারসুন বাটাচিনিদারুচিনি-এলাচ-লবঙ্গ-জায়ফল-জয়ত্রী একত্রে বাটাগোলমরিচ গুঁড়ালবণজিরা বাটাহলুদ গুঁড়ামরিচ গুঁড়াধনে গুঁড়াআলু বোখারাটক দই দিয়ে ভাল করে মেখে ৩০ মিনিট ফ্রিজে রাখতে হবে।

আতব চাল এবং মশুরডাল ধুয়ে পানি ঝরিয়ে রাখতে হবে। চাল আর মশুরডাল একত্রে মিশিয়ে ফেলুন।
ঘি তেল একসঙ্গে চুলায় দিয়ে একটু গরম হলে তাতে পেয়াঁজ কুচি দিয়ে নাড়ুনবাদামী হয়ে পেয়াঁজ ভেরেস্তা হবে। পেয়াঁজের ভেরেস্তা টুকু আলাদা তুলে রাখুন। ঐ তেলে গরম মসলা ও তেজপাতার ফোড়ন দিয়ে মাখানো মাংস দিয়ে কষাতে হবে।

মাংস সিদ্ধ হয়ে পানি শুকিয়ে গেলে মাংসের টুকরা তুলে রাখতে হবে। ঐ হাড়িতেই পোলাওর চাল আর মশুরডাল দিয়ে ভালো করে কষাতে হবেতারপর তাতে ৪ কাপ পানিলবণ দিয়ে ঢেকে দিন। চুলার আঁচ কমিয়ে দিন। চাল ফুটে উঠলে মাঝে মাঝে নেড়ে দিয়ে মাঝারী আঁচে ঢেকে রাখুন। পোলাওর পানি শুকিয়ে এলে কিছুটা পোলাও উঠিয়ে রান্না করা মোরগের মাংসের টুকরাগুলো পাতিলের বাকী পোলাওর মধ্যে দিয়ে তার সাথে কাঁচামরিচ সহ বাকী পোলাও দিয়ে মৃদু আঁচে কিছুক্ষণ দমে রাখুন। ১০ মিনিট পর হালকাভাবে নেড়ে দিয়ে আবার দমে রাখুন। আরো ৫ মিনিট পর নামিয়ে ফেলুন। 

পরিবেশনঃ

পরিবেশনের সময় ভেরেস্তা পোলাওর উপরে ছড়িয়ে সালাদ এবং আচার সহ পরিবেশন করুন ।

 

বই “স্বপ্ন দেখি সুন্দর পৃথিবীর”

বই “স্বপ্ন দেখি সুন্দর পৃথিবীর”


আফরোজা হাসান


কল্পনা করুন এমন একটা পৃথিবীর, যেখানে কোন হানাহানি নাই, হিংসা বিদ্বেষ নাই, নাই কোন পারিবারিক অশান্তি। না আছে কোন মানবিক দৈন্যতা, না আছে অন্যের ক্ষতি করে নিজেকে সফলতার চূড়ায় নেয়ার নেশা। এমন পৃথিবী যেখানে কোন যুদ্ধ নাই, উদবাস্তু নাই, যেখানে সবার মাথার ওপর ছাদ আর পেট ভরে খাওয়ার মত অন্ন রয়েছে। যেখানে ক্ষমতার লড়াই নেই বরং সবার কাঁধে হাত রেখে এক সাথে এগিয়ে যাওয়াই জীবনের লক্ষ্য।

আচ্ছা এমন যদি হত, সবাই আল্লাহ্‌র ইবাদত করছে, শরীয়তের বিধান মেনে চলছে। নিজের চাইতে অন্যের কল্যাণের কথা বেশি চিন্তা করছে। যেই পৃথিবীতে মানুষ, পশুপাখি, গাছপালা সবাই স্বাধীন, সবাই সবার অধিকার পাচ্ছে। যেখানে কেউ কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে না, যেখানে সবাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেখানো পথে চলছে। আহ! অসম্ভব সুন্দর কল্পনা, যা কিনা বাস্তব হওয়াও অসম্ভব।

কিন্তু কিছু মানুষ তবুও স্বপ্ন দেখে, কিছু মানুষ স্বপ্নের জাল বোনে, কিছু মানুষ স্বপ্ন পূরণে আপ্রাণ চেষ্টা করে। সেই মানুষেরা স্বপ্ন দেখে সুন্দর পৃথিবীর। সেই মানুষেরা সব প্রতিকূলতা আর বাধাকে শরীয়তের আলোকে সমাধান করে এগিয়ে চলে সম্মুখ পানে। কিছু মানুষ স্বপ্নালু মানুষের চোখে স্বপ্নগুলোকে আরো গভীর করে দিয়ে তাদের সাথে করে নিয়ে সুন্দর পৃথিবী গড়ার জন্য অভিযাত্রা করে। কিছু মানুষ সুন্দর পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে, মহান রবের সন্তুষ্টির জন্য কাজ করে যায়। একটি সুন্দর পৃথিবী…. এক ঝাঁক চোখের স্বপ্ন… একদল অভিযাত্রী যাত্রা করে সুন্দর পৃথিবী গড়তে নিজেকে দক্ষ কারিগর হিসেবে গড়ে তুলতে।
………..

আমাদের সবার প্রিয় লেখিকা আফরোজা হাসানের দ্বিতীয় বই “স্বপ্ন দেখি সুন্দর পৃথিবীর” বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে। বইঘর পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে বইটি, আলহামদুলিল্লাহ। জীবনে আসা বিভিন্ন সমস্যা এবং শরীয়তের আলোকে এর সমাধান, বাস্তব জীবনের নানান চড়াই উতরাই পেরিয়ে কিভাবে সুন্দর পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে কিছু মানুষ এগিয়ে চলে তাই বলা হয়েছে এই গল্পে।
…….

বইটি যেখানে পাওয়া যাবে… স্টল নং : ৪০৬ বইমেলা প্রাঙ্গন
ও দেশের সকল বইয়ের দোকানে…
এ ছাড়া আপনি যদি ঘরে বসে সবচেয়ে কম সময়ে কম মূল্যে পেতে চান তবে ফোন ‎করুন…‎
Rokomari.com

Mob : 16297, 01519521971
KitabGhor.com

Mob : 01721999112‎
www.boighorbd.com

 

সুহাসিনী ভোর

সুহাসিনী ভোর


আফরোজা হাসান


ভালো লাগে ভীষণ নৈঃশব্দ্যতার ক্ষণ
যেমন খুশি তোলা যায় শব্দের গুঞ্জন

এড়িয়ে যেতে চাই না অন্ধকারাচ্ছন্ন প্রহর
দিয়া জ্বেলে তারে করতে সুহাসিনী ভোর

কন্টকাকীর্ণ পথে চলতে অবিচল
মনে আছে বিশ্বাস, দৃঢ় মনোবল

মাটির আলিঙ্গনে হাসে বর্ণিল ঘাসফুল
বেদনা নদীর ওপাড়ে হাতছানি দেয় কূল…

 

‘মৃগীরোগ’

‘মৃগীরোগ’


ডা. মারুফ রায়হান খান


আজ ইন্টারন্যাশনাল এপিলেপ্সি ডে। এপিলেপ্সি আমাদের দেশে মৃগীরোগ নামে পরিচিত।

সারা পৃথিবী জুড়েই সবেচেয়ে বেশি যে স্নায়ুরোগটি দেখা যায় তা হচ্ছে এপিলেপ্সি বা মৃগীরোগ। পৃথিবীতে প্রায় ৫০ মিলিয়ন এপিলেপ্সির রোগী আছে, যার মধ্যে ৪০ মিলিয়ন রোগীই আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে।

এপিলেপ্সি কী?

খুব সহজ ভাষায় বোঝাতে গেলে, বারবার খিঁচুনি হবার প্রবণতা যেখানে কোনো ধরনের প্ররোচনা থাকে না–তাকেই এপিলেপ্সি বলে।

এটি সাধারণত ২০ বছরের আগে কিংবা ৬০ বছর বয়সের পর শুরু হয়।

কী কী কারণকে দায়ী করা হয় এ রোগের পেছনে?

১. অনেকক্ষেত্রেই কোনো কারণ জানা যায় না।

২. শিশু মায়ের গর্ভে থাকার সময় কিছু জীবাণু দিয়ে যদি আক্রান্ত হয়ে থাকে, যেমন : TORCH, HIV।

৩. জন্মগতভাবে মস্তিষ্কের গঠনে যদি ত্রুটি থাকে।

৪. হাইপোক্সিক ইশকেমিক এনকেফালোপ্যাথি (সাধারণত নবজাতক জন্মের পর দেরি করে কাঁদলে এ সমস্যা হয়ে থাকে)।

৫. মস্তিষ্ক বা মস্তিষ্কের আবরণে কোনো ইনফেকশান, যেমন : মেনিনজাইটিস।

৬. মস্তিষ্কে কোনো আঘাত।

৭. মস্তিষ্কে কোনো টিউমার।

৮. কিছু ক্রোমোজোমাল ডিজঅর্ডার ইত্যাদি।

কী কী বিষয় মৃগীরোগের এ খিঁচুনিকে ত্বরান্বিত করতে পারে?

১. কম ঘুম হওয়া

২. যারা মৃগীরোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা যদি ওষুধ না খান

৩. মদ্যপান (বিশেষ করে মদ্যপান ছাড়ার সময়)

৪. শারীরিক এবং মানসিক অবসাদ

৫. ঝিকিমিকি আলোর সংস্পর্শে যেমন : টেলিভিশন এবং কম্পিউটার স্ক্রিন

৬. উচ্চ শব্দ, মিউজিক, পড়া, গরম পানিতে গোসল ইত্যাদিও অনেকের ক্ষেত্রে খিঁচুনির উদ্রেক করতে পারে।

কী কী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়?

১. ইলেক্ট্রোএনকেফালোগ্রাম : এটি অনেকটা ইসিজি পরীক্ষার মতো, তবে এটি মস্তিষ্কের। কখনও কখনও এটা দিয়ে এপিলেপ্সি রোগ নির্ণয় করা যায়। তবে যদি এ পরীক্ষা নরমাল আসে তার মানে এই না যে তার এপিলেপ্সি থাকার সম্ভাবনা নেই।

২. কিছু কিছু ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের এম.আর.আই করতে হতে পারে।

কীভাবে চিকিৎসা করা হয়?

মৃগী রোগের নির্দিষ্ট ও উপযুক্ত ওষুধ দেওয়া হয়, যা এন্টিএপিলেপ্টিক ড্রাগ নামে পরিচিত।

কতোদিন ওষুধ খেয়ে যেতে হবে?

যদি রোগী খিঁচুনি-বিহীন কমপক্ষে দুই বছর পার করে, মৃগীরোগের ওষুধ ধীরে ধীরে পরবর্তী ৬-১২ সপ্তাহের মধ্যে বন্ধ করা যায়।

জীবনযাত্রায় কী কী পরিবর্তন আনতে হয়?

১. উজ্জ্বল এবং ঝলকানো আলো পরিহার করতে হবে। যেমন : টিভি, ভিডিও গেইমস।

২. আগুন থেকে দূরে থাকতে হবে।

৩. পানিতে ঝাঁপ দেওয়া বা সাঁতার কাটা থেকে বিরত থাকা উচিত।

৪. গাছে চড়া থেকে বিরত থাকা উচিত।

এ রোগের ভবিষ্যত কেমন?

১. ৭০% রোগীর ক্ষেত্রেই খিঁচুনি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

২. ৫-১০% রোগীর ক্ষেত্রে খিঁচুনি বারবার হতে পারে এবং অনিয়ন্ত্রিত থাকতে পারে। ৩. ৩০% রোগীর ক্ষেত্রে রোগের শুরু থেকেই “চিকিৎসা করা/নিয়ন্ত্রণ করা” বেশ কঠিন বলে বিবেচিত হয়

 

বিবেক


ফাতিমা মারিয়াম


দশম বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে লিমা রফিকের কাছ থেকে দশ ভরি স্বর্ণালঙ্কার উপহার পেয়েছে। বেশ খুশি লিমা। আত্মীয় স্বজন যেখানে যা আছে সবাইকে ফোন করে তার এই আনন্দের কথা জানাচ্ছে। ঘনিষ্ঠ আত্মীয় বা বান্ধবীদের বাসায় গিয়ে দেখিয়ে এসেছে।

এবার বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে কোন অনুষ্ঠান করেনি। তাই এত কষ্ট করে মানুষের কাছে গিয়ে আনন্দ প্রকাশ করা লাগছে। এত আনন্দের মাঝেও মনে মনে রফিকের প্রতি এই ব্যাপারে কিছুটা রাগ রয়ে গেছে। হাঁদারামটা যদি এবার একটা অনুষ্ঠান করতে রাজি হত তবে আর জনে জনে গিয়ে আনন্দের খবরটা প্রচার করা লাগত না। এখন আর কী করা? এই মধুর কষ্টটুকু ভোগ করতেই হচ্ছে।

বউ খুশী; তাই রফিকও ভীষণ আনন্দিত! কিছু নগদ টাকা পকেট থেকে চলে গিয়েছে বটে! তবে এটা পুষিয়ে নিতে তার বেশি সময় লাগবে না। একজন অসৎ কর্মকর্তার কাছে এই কয়টা টাকা কিছুই না।

সকাল দশটার দিকে অফিসের কাজে ব্যস্ত রফিক। গ্রাম থেকে ছোটবোন শরিফা ফোন করে বলল যে তার স্বামী এক্সিডেন্ট করেছে। চিকিৎসা খরচের জন্য কিছু টাকা প্রয়োজন। রফিক সাফ বলে দিয়েছে,’এখন আমার হাতে টাকা নেই, কিছু দিতে পারব না।’

আবার অফিসের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল রফিক।

 

“শিকড়ের সন্ধানে – হামিদা মুবাশ্বিরা “

“শিকড়ের সন্ধানে – হামিদা মুবাশ্বিরা “


ফাইজা তাব্বাসুম


বুক রিভিউ –
সত্যিকার অর্থে এই বইয়ের নামের মাধ্যমেই এর উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে গেছে। যে কোনো বৃক্ষের জন্য যেমন শিকড় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ তেমনি প্রতিটি মুসলিমের জন্যও তার আত্মপরিচয় , অস্তিত্বের ধারাবাহিক ক্রম জানাটা খুব জরুরি। শিকড়ের যত্ন না নিলে যেমন বৃক্ষের সবুজ পাতারা রঙ হারিয়ে ঝরে পড়ে, ডাল-পালা রুক্ষ,শীর্ণ হয়ে যায় , একসময় চরম মূল্যবান বৃক্ষও তার উপযোগিতা হারিয়ে ফেলে তেমনি আমরা জন্মসূত্রে মুসলিমরাও যেন নিজেদের জীবনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য সম্পর্কে উদাসীন হয়ে এক ভুলের সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছি প্রতিনিয়ত। আমাদের চিন্তাভাবনার যে অসুখগুলো প্যারাসিটামলেই সেরে যাওয়ার কথা ছিল তা যেন সঠিক চিকিৎসার অভাবে ক্যান্সার পর্যন্ত পৌঁছে আমাদের অস্তিত্বকেই সংকটাপন্ন করে তুলছে।
অথচ, মহান আল্লাহ তো তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ নবীর উম্মতদের সঠিক পথে চলার জন্য গাইডলাইন হিসেবে কুরআনকে কিয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রেখেছেন। পূর্ববর্তী নবী-রাসূলদের জীবন, তাদের সম্প্রদায়ের বিভিন্ন ঘটনা বর্ণনা করে তা থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করতে বলেছেন। তাহলে আমাদের এই দিকভ্রান্ত অবস্থা? কেন আমাদের রিচুয়ালসগুলো সব করাপ্টেড? ভাবনাগুলো সব শেইপড? বিশ্বাসের নামে অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কারের সাথে কেন আমাদের নিত্য চলাফেরা?
এর অন্যতম কারণ বোধহয় এটা যে, আরবী ভাষায় নাজিলকৃত কুরআনের বক্তব্য আমাদের মতো বাংলা ভাষাভাষীদের মর্মমূলে গিয়ে পৌঁছতে পারেনি। ছোটোবেলায় মায়ের মুখে,বাবার মুখে,কখনো হুজুরদের মুখে, কখনো ইসলাম শিক্ষা বইয়ের পাতায় আমরা গল্পাকারে নবী ও রাসূলগনের যেসব ঘটনা শুনে এসেছি, সেগুলো আমাদের কাছে মিথোলজির মতো একটা কৃত্তিম ভাব সৃষ্টি করেই পালিয়েছে, হৃদয়ের গভীরে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারেনি।
হামিদা মুবাশ্বেরাও বোধহয় একই ধরনের উপলব্ধি থেকে নানামুখী ব্যস্ততার মাঝেও নিজস্ব আত্মপরিচয় অন্বেষণের তাগিদে মুসলিম হিসেবে তাঁর শিকড়ের সন্ধান করতে বেড়িয়েছিলেন। আত্মানুসন্ধানের এই পথে ঠিক যে জায়গাগুলোতে তিনি নিজে আটকে গিয়েছিলেন, সেই জায়গাগুলোতে যেন অন্য কেউ হোঁচট খেয়ে না পড়ে , বাঁধা পেয়ে পথ চলার উৎসাহটা হারিয়ে না ফেলে তাই তিনি তার অর্জিত অভিজ্ঞতাগুলোকে লিপিবদ্ধ করেছেন ‘শিকড়ের সন্ধানে’ বইতে।
জীবনের যেই বাঁকে এসে আমরা ভাবতে শুরু করি “what’s my destiny?” যেখানে দাঁড়িয়ে অন্যের দেয়া মিথ্যে প্রবোধগুলোকে অর্থহীন মনে হয়, সেই ভঙ্গুর সময়ে যেন ভুলের চোরাবালিতে ডুবে যেতে না হয়, নিজের না পাওয়াগুলো- ব্যর্থতাগুলো যেন আমাদের উপর রাজত্ব গড়ে নিতে না পারে সেজন্য মুসলিম হিসেবে নিজের শেকড়ের উপলব্ধি হতে পারে আমাদের অর্থবহভাবে বেঁচে থাকার প্রধান রসদ। আর ‘শিকড়ের সন্ধানে’ বইটি আমাদের সেই কাজকে সহজ করে দিবে ইনশাআল্লাহ। বইটি পড়তে পড়তে নিজেদের মনের মধ্যে যুদ্ধ-বিবাদে লিপ্ত অনেক প্রশ্নের জবাব পাওয়া যাবে বলে আমার বিশ্বাস।
কুরআনে বর্ণিত প্রতিটি ঘটনার ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সাজানো হয়েছে বলে এই বই মুসলমানদের উত্থান পতনের ক্রম বুঝতে সহায়ক হবে। আজকের বাস্তবতার নিরিখেও কুরআনে বর্ণিত কাহিনীগুলো কতটা প্রাসঙ্গিক তা পাঠকরা উপলব্ধি করতে পারবে। যে কোনো সময়ের, যে কোনো বয়সের মানুষের জন্য প্রাসঙ্গিক এবং সুখপাঠ্য একটি বই ‘শিকড়ের সন্ধানে।’

 

‘রাজুমার’


ইন্টারন্যাশনাল উইমেন্স


টেকনাফে এসে নিজের  স্বামীর সাথে দেখা হলেও ভাই-বোন ও মায়ের সন্ধান পাননি। নিজের সন্তানের খোঁজ মেলেনি। রাজুমার মতো এ রকম হাজারো মানুষের নিদারুণ কষ্টের বিভীষিকার কথা লিখলে সমাপ্তি টানা যাবে না। আল-জাজিরা ইংলিশ নিউজ নেটওয়ার্ক সাম্প্রতিক একজন বোনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, রোহিঙ্গা মুসলিম বোন রাজুমার জীবন থেকে নেওয়া। ২০ বছর বয়সি রাজুমা বেগম অল্প বয়সে অসংখ্য বাস্তবতার সম্মুখিন হয়েছেন। গত বছর ৩০শে আগস্ট তুলা টোলির গণহত্যা থেকে বেঁচে ফিরেছেন। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সহিংসতার সবচেয়ে নৃশংস ঘটনার স্বীকার এই বোন পালিয়ে বাঁচেন। গ্রামবাসীদের সাথে নদীর তীরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাকেও যেখানে পুরুষরা মহিলা ও শিশুদের থেকে পৃথক করা হয়। অনেককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল, তাকে কুপিয়ে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। রাজুমা তখন তার ছেলে মোহাম্মদ সাদ্দিককে নিজের হাতেই ধরে রেখেছিলেন। এরপর কিছু সৈন্য মহিলাদের দলে  দলে ভাগ করে নিয়ে গিয়েছিল জোর করে। রাজুমা কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের একটি বিদ্যালয়ে বক্তব্য রাখেন, তিনি তখন বলেছিলেন, “তারা আমাকে বাড়ির ভিতরে আরও চার মহিলার সাথে নিয়ে যায়।” “তারা আমার ছেলেকে আমার বাহু থেকে ছিটকে ফেলে দেয় [মাটিতে], আমি দেখেছি তার মধ্যে একজন বার্মিজ সৈন্য আমার শিশু পুত্রকে আগুনের দিকে ছুঁড়ে মারে, আমি শুনতে পেলাম যে সে জ্বলন্ত অবস্থায় চিৎকার করছে” “মা বাঁচাও” তিনি  আরও বলেছিলেন, আমার মাথায় সবসময় ঘুরতে থাকে সন্তানের কবর দেওয়ার আগপর্যন্ত একসূরে হাত দিয়ে ডাকা আর বিলাপের কান্না। “কেউ ‘মা’ বলে ডাক শুনলেই আমার বুকটা ফেটে যায়,” রাজুমা চিত্কার করে বলেন। “আমার একটি ছোট ভাই ছিল যার বয়স ১০ বছর। আমার তার কথা কথা ভাবলে খারাপ লাগে ,কারণ তারা তাকে ধরেছিল এবং আমি তাকে বাঁচাতে পারিনি”” রাজুমাকে তিনটি মা, এক কিশোরী মেয়ে এবং এক মহিলার সাথে যার বয়স প্রায় ৫০ বছর তাদের একটি ঘরে রাখা হয়েছিল। প্রবীণ মহিলা বাদে সৈন্যরা তাদের সবাইকে ধর্ষণ করেছিল। রাজুমাকে তার দু-তিন  ঘণ্টা ধরে দু’জন লোক অত্যাচার করেন। এরপরে, তারা মহিলাদের কাঠের লাঠি দিয়ে মারধর করতে।  তারপরে তারা মারা গেছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য তাদের উপর তিনবার মশাল জ্বালান। সৈন্যরা তাদের বাড়ির ভিতরে আটকে রেখে আগুন ধরিয়ে দেন। জলন্ত আগুনের তাপে রাজুমাকে পুনরায়  জ্ঞান ফিরে আসে করে, সে বাঁশের দেয়াল ভেঙে পালাতে সক্ষম হয়েছিলেন বলে বেঁচে যান। তিনি একদিন পাহাড়ে লুকিয়ে ছিলেন এবং ওপার থেকে বেরিয়ে আসার সময় তাঁর গ্রামের আরও তিন মহিলা ও এক অনাথের মুখোমুখি হন। রোহিঙ্গা প্রদেশ থেকে পালিয়ে পরিত্যাক্ত পোশাক পরেছিলেন। তিনি যখন সীমান্ত পেরিয়েছিলেন, তখন বাংলাদেশ সরকার তাকে কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে পৌঁছাতে সহায়তা করেন। যেখানে একটি ক্লিনিকে তাঁর চিকিত্সা দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশে মায়ানমারের সৈন্যরা গণধর্ষণ ও তার শিশু পুত্র হত্যার সাক্ষী।রাজুমা কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে পুনরায় তার স্বামীকে খুঁজে পান।

 

খুলনায় স্কুলছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে যুবক গ্রেফতার


নারী সংবাদ


খুলনার রূপসা উপজেলার শ্রীফলতলায় স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে শুক্রবার সকালে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত ইমদাদুল মল্লিক (২৪) উপজেলার শ্রীফলতলা ইউনিয়নের ইদ্রিস মল্লিকের ছেলে।

রূপসা থানার ওসি মোল্লা জাকির হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার ভুক্তভোগীর বাবা পালের হাট পুলিশ ফাঁড়িতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইমদাদুলের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।

অভিযোগে বলা হয়, বুধবার রাতে বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়ার সময় স্থানীয় বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীকে ইমদাদুল পার্শ্ববর্তী স্থানে নিয়ে ধর্ষণ করে। পুলিশ ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য মেয়েটিকে স্থানীয় হাসপাতালে প্রেরণ করেছে।

সূত্র : ইউএনবি।

 

শর্মার রেসিপি


শর্মার রেসিপি


শর্মার রুটি 

উপকরণ 
১. ময়দা সাড়ে ৩ কাপ,
২. গুঁড়াদুধ ১/৪ কাপ,
৩. বেকিং পাউডার ১ টেবিল-চামচ,
৪. ইস্ট ১ টেবিল চামচ,
৫. তেল ১/৪ কাপ,
৬. মাখন ৩ টেবিল-চামচ,
৭. লবণ আধা টেবিল-চামচ,
৮. চিনি ১/৪ কাপ,
৯. হালকা গরম পানি দেড় কাপ।

প্রণালি 
> ময়দার সঙ্গে বাকি উপকরণ (পানি বাদে) সব মিশিয়ে ফেলুন। এখন একটু একটু করে পানি দিয়ে মথে নিন৷ খামিরটা নরম হবে না আবার অনেক শক্তও হবে না৷ সাধারণ রুটির খামিরের মতো হবে এবং ১৫ থেকে ২০ মিনিট খুব ভালো করে মথতে হবে৷

> চাইলে বিটার দিয়ে ১৫ মিনিট বিট করে নিতে পারেন৷ খামির যত বেশি মন্থন করা হবে তত বেশি নরম হবে এবং রুটি ফুলবে৷ এখন পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে দুই ঘণ্টা৷

> চাইলে আরও বেশিক্ষন রাখতে পারেন৷ অথবা ৩০ মিনিট রেখেও রুটি বানাতে পারেন৷ কিন্তু একটু বেশি সময় রাখলে খেতে সুস্বাদু হয় বেশি৷

> দুই ঘণ্টা পর নিজেদের পছন্দ মতো বড় শর্মার রুটি বা ছোট ছোট প্যান কেক আকারে রুটি বানিয়ে নিন। এরপর মাঝারি আঁচে তাওয়ায় রুটিগুলো সেঁকে নিন৷

> বানানো শর্মার রুটি ফ্রিজে না রেখেও চারদিন খাওয়া যায়। তবে অব্যশই ঢাকনাসহ বক্সে রাখতে হবে৷

বিফ বা চিকেন শর্মা

উপকরণ 

শর্মার পুরের জন্য 
১. গরু বা মুরগির হাড় ছাড়া মাংস ৭৫০ গ্রাম,
২. আদাবাটা ১ টেবিল-চামচ,
৩. রসুনবাটা ১ টেবিল-চামচ,
৪. বিরিয়ানির মসলা ১ টেবিল চামচ,
৫. টক/মিষ্টি দই ৬ টেবিল-চামচ,
৬. তেঁতুলের কাথ ১ টেবিল-চামচ,
৭. ভাজা জিরাগুঁড়া ১ টেবিল-চামচ,
৮. ভাজা ধনেগুঁড়া ১ টেবিল-চামচ,
৯. টমেটো সস ২ টেবিল-চামচ,
১০. লবণ স্বাদ মতো,
১১. তেল রান্নার জন্য৷

পুর তৈরির প্রণালি 
> মাংস পাতলা টুকরা করে নিন এবং তেল বাদ রেখে বাকি সব উপকরণ মাংসের সঙ্গে মেখে মেরিনেইট করে রাখুন এক ঘণ্টা৷ অথবা শর্মা বানানোর আগের দিন মেখে নরমাল ফ্রিজ রেখে দিন সারারাত। তাহলে আরও সুস্বাদু হবে৷

> কড়াইতে অল্প তেলে মেরিনেইট করা মাংস ভেজে নিন৷ পানি দিতে হবে না৷

শর্মা সস

গালির্ক সস
উপকরণ 
১. ১/৪ কাপ মেয়োনেইজ,
২. ১/৪ কাপ ক্রিম,
৩. গোলমরিচের গুঁড়া আধা টেবিল-চামচ,
৪. রসুনকুচি আধা টেবিল-চামচ।

প্রণালি 
> সব উপকরণ একসঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে সস বানিয়ে রেখে দিন ফ্রিজে৷

ধনিয়াপাতার সস 
উপকরণ 
১. ধনিয়াপাতা ২ কাপ কুচি করা,
২. চিনা বাদাম আধা কাপ,
৩. রসুন কোয়া ২টি,
৪. কাঁচামরিচ ৪,৫টি,
৫. লেবুর রস ৫,৬ টেবিল-চামচ,
৬. লবণ স্বাদ মতো।

প্রণালি 
> সব একসঙ্গে ব্লেন্ড করে সস তৈরি করুন৷ ব্লেন্ড করার সময় একদম পানি দিতে হবে না। পানির বদলে লাগলে আরও লেবুর রস দিন৷

* আরও লাগবে হানি মাসটার্ড সস ও টমেটো সস।

শর্মার সালাদ 
উপকরণ 
১. শসা কুচি আধা কাপ,
২. টমেটো ২টি, কুচি করা,
৩. ক্যাপসিকাম ১টি, কুচি করা,
৪. অলিভ ১টি (ইচ্ছা) কুচি করে কাটা,
৫. শসার আচার (বাজারে পওয়া যায়),
৬. লেটুস পাতা,
৭. পেঁয়াজকুচি।

প্রনালি 
> সবগুলো একসঙ্গে মাখিয়ে নিন

শর্মা তৈরির প্রণালি 
> শর্মার রুটি মাঝখানে প্রথমে গার্লিক সস, ধনেপাতার সস মেখে দিন। এবার রান্না করা মাংস রুটির আকার অনুযায়ী পরিমাণ মতো মাংস দিন এবং উপরে নিজের পছন্দ মতো সালাদ দিন।

> সব শেষে উপরে হানি মাস্টার্ড সস, গার্লিক সস ও টমেটো সস দিন।

> এবার শর্মার রুটি আস্তে আস্তে হাত দিয়ে চেপে চেপে রোল করে পরিবেশন করুন। চাইলে টুথপিক দিয়ে আটকে দিতে পারেন।

রেসিপি : আনিসা হোসেন
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

 

একুশে পদক পাচ্ছেন অধ্যাপক ডা. সায়েবা আখতার


নারী সংবাদ


চিকিৎসায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ চলতি বছর (২০২০) একুশে পদক পাচ্ছেন অধ্যাপক ডা. সায়েবা আখতার। এছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য একুশে পদক পাচ্ছেন দেশের ১৯ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠান।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রাষ্ট্রীয় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদকপ্রাপ্তদের এ তালিকা প্রকাশ করে।

আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের হাতে একুশে পদক তুলে দেবেন।

এক নজরে অধ্যাপক ডা. সায়েবা আক্তার

অধ্যাপক ড. সায়েবা আক্তারের জন্ম চট্টগ্রামে। তবে পিতা টাঙ্গাইলের করটিয়া সাদত কলেজের শিক্ষক হওয়ার সুবাদে ওই ক্যাম্পাসেই বেড়ে ওঠা।

তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করার পর সেখানেই কর্মজীবনের শুরু করেন।

স্বামী ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবিরও পেশায় একজন ডাক্তার। তিনি একজন কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজ অ্যান্ড ইউরোলজির সাবেক পরিচালক।

তিন মেয়ে এক ছেলের মধ্যে বড় মেয়েটিও ডাক্তার।

স্বাস্থ্যে তাঁর অবদান

অবসর গ্রহণের পর রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে ‘মামস ইনস্টিটিউট অব ফিস্টুলা অ্যান্ড ওমেনস হেলথ’ গড়ে তোলেন তিনি। এটি মূলত বিশ শয্যার দাতব্য হাসপাতাল।

নারী শিক্ষায়ও ভূমিকা রাখছেন ড. আক্তার, এজন্য স্বল্প আয়ের পরিবারের মেয়েদের কর্মমুখী শিক্ষা দেবার জন্য ঢাকা ও গাইবান্ধায় দুটি প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন তিনি।

একুশে পদক পেলেন যারা-

ভাষা আন্দোলনে মরণোত্তর মরহুম আমিনুল ইসলাম বাদশা।

শিল্পকলায় (সংগীত) বেগম ডালিয়া নওশিন, শঙ্কর রায় ও মিতা হক।

শিল্পকলায় (নৃত্য) মো. গোলাম মোস্তফা খান।

শিল্পকলায় (অভিনয়) এম এম মহসীন।

শিল্পকলায় (চারুকলা) অধ্যাপক শিল্পী ড. ফরিদা জামান।

মুক্তিযুদ্ধে (মরণোত্তর) মরহুম হাজি আক্তার সরদার, মরহুম আব্দুল জব্বার, মরহুম ডা. আ আ ম মেসবাহুল হক (বাচ্চু ডাক্তার)।

সাংবাদিকতায় জাফর ওয়াজেদ (আলী ওয়াজেদ জাফর)।

গবেষণায় ড. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ কারী আল্লামা সৈয়দ মোহাম্মদ ছাইফুর রহমান নিজামী শাহ।

শিক্ষায় অধ্যাপক ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়ুয়া।

অর্থনীতিতে অধ্যাপক ড. শামসুল আলম।

সমাজসেবায় সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

ভাষা ও সাহিত্যে ড. নুরুন নবী, মরহুম সিকদার আমিনুল হক (মরণোত্তর) ও বেগম নাজমুন নেসা পিয়ারি।

প্রতিষ্ঠান

গবেষণায় বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট।

 

ভণ্ডামি 

ভণ্ডামি


ফাতিমা মারিয়াম


এক
রশিদ যতই চেষ্টা করছে সংসারের অভাব কাটাতে পারছে না। দিনদিন সংসারের নানান চাহিদা বেড়েই চলেছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সে। কতটুকুই বা সামাল দিতে পারে? আয় যা হয় তাতে কোনমতে খেয়ে পরে চলে। বাচ্চাদের স্কুল কোচিং এসব খরচ তার জন্য বিলাসিতা।

রশিদ গ্রামে থাকে। স্থানীয় বাজারে তার একটি মুদি দোকান আছে। দোকান ছোট…পুঁজিও কম। ফলে আয় কম। তাছাড়াও বেচা বিক্রিও সামান্য হয়। কারণ বাজারে বেশ কয়েকটা দোকান আছে। তাদের পুঁজি রশিদের চাইতে বেশি হওয়ায় তাদের দোকানেই খরিদ্দার বেশি।

দোকানের আয় বাড়ানোর জন্য রশিদের বউ মিনু পরামর্শ দেয় সমিতি থেকে ঋণ তুলে দোকানে মাল উঠাতে। সমিতি থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়ে রশিদ দোকানে মাল ওঠায়। বেচা বাড়ে……আয়ও বাড়ে।

হঠাৎ বেশি টাকা হাতে আসায় সে বেহিসাবি হয়ে যায়। তার চরিত্রের কিছুটা দোষ আগেও ছিল। এখন আরো বেড়ে গেছে। মিনুর হাতেও বেশ টাকা দেয়। আর সেও খরচ করতে থাকে। সমিতির কিস্তি নিয়মিত পরিশোধ করেনা। সমিতি তাকে নোটিশ দেয়…আগের টাকাসহ বাকী টাকা শোধ করতে।

মিনু নিরুপায় হয়ে বাবার বাড়ির এলাকার এক এনজিও থেকে টাকা নিয়ে সমিতির টাকা শোধ করে। এনজিওর প্রথম কয়েক কিস্তি নিয়মিত শোধ করে।কিছুদিন পর থেকে এনজিওর টাকা শোধেও দুজনে টাল বাহানা শুরু করে। এক কিস্তি দেয় তো দুই কিস্তি দেয় না। তারা বার বার সতর্ক করতে থাকে।

দুই…

এদিকে দোকানের পুঁজিও অনেক কমে গেছে। আরো কিছু মানুষ রশিদর কাছে টাকা পায়। এদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে টাকা ধার করেছিল। মোটকথা এখন সে ঋণের দায়ে জর্জরিত। দিনরাত মিনুর খোঁটা শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা। মিনু এখন আর অভাব সহ্য করতে পারেনা। আর কতইবা সহ্য করবে? এটা রশিদ বোঝে। আর বোঝে বলেই সে মিনুকে কিছুই বলে না। খালি দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

মিনু এবার তাকে পরামর্শ দেয় বিদেশ যাওয়ার। এলাকার কত মানুষই তো বিদেশ গিয়ে অনেক টাকা ইনকাম করেছে। এখন তাদের বেশ ভালো অবস্থা। অনেক চিন্তা ভাবনা করে আত্মীয়দের কাছে থেকে ঋণ করে, বউয়ের গয়না বিক্রি করে, গরু বিক্রি করে রশিদ প্রবাসের পথে পাড়ি জমায়।

মাথায় এত ঋণের চাপে রশিদর দিশাহারা অবস্থা। প্রবাসে গিয়েও ভালো কোন কাজ পায় নি। যা বেতন পায় তাতে নিজের এবং পরিবারের মোটামুটি চলে…… মিনু সংসার খরচের পরে খুব সামান্যই জমাতে পারে। অল্প অল্প করে ঋণ শোধ করছে।

প্রায় তিন বছর হয়ে গেছে এখনো রশিদ বাড়ি আসতে পারে নি। মিনুর কাছে ফোন করলেও শান্তি নাই। এটা সেটা কথা শোনায়। অমুক বিদেশ গেল তমুক বিদেশ গেল…তারা কত টাকা পাঠায় আর তুমি………

তিন…

রশিদ অনেকক্ষণ ধরে মিনুর নাম্বারে ফোন দিচ্ছে। কিন্তু ওকে পাচ্ছে না। লাইন বিজি দেখায়। প্রায় এক ঘণ্টা পর সে বউকে ফ্রি পেল।

-কী ব্যাপার? তুমি কার সাথে কথা কইতাছিলা? আমি অনেক সময় ধইরা তোমার লাইন বিজি দেখলাম।

-আমি? আমি তো এতক্ষণ ছোডমামার লগে কথা কইতাছিলাম!

রশিদ মিনুর সাথে কথা শেষ করে মিনুর ছোট মামাকে ফোন দিল।

-মামা মিনু কি আইজগা ফোনে আফনের লগে কতা কইসে?

-না তো বাবা আমার লগে তো মিনুর অনেকদিন দইরাই কতা অয় না।

রশিদ এবার মিনুর মাকে ফোন দিয়ে এই ঘটনা জানাল। আরো জানাল আজ অনেকদিন ধরেই সে ফোন করলে ফোন বিজি পায়। জানতে চাইলে মিনু সব সময় একেক জনের নাম বলে পার পায়। তার এতে বেশ সন্দেহ হচ্ছিল। তাই সে ছোট মামাকে ফোন করে নিশ্চিন্ত হয়েছে। মিনুর মাও বেশ অবাক হয়ে গেলেন। মেয়ে এতক্ষণ কার সাথে কথা বলে? রশিদ আরো বলে যে – মিনু প্রায়ই খুব সাজগোজ কইরা কই জানি যায়। গ্রামের দুই তিনজন আমারে এইটা জানাইছে। আপনি এর একটা বিহিত করেন।

মিনুর মা মিনুকে জিজ্ঞাসা করায় সে অস্বীকার করে বলল -সব মিছা কতা মা। পয়সা কামাইয়ের মুরোদ নাই আবার আমারে সন্দেহ করে! ও নিজে যেমন আমারেও তেমন মনে করে? তোমার মনে নাই পাঁচ বছর আগে তার চাচাতো বাইয়ের বউয়ের লগে কি কাহিনিডাই না করল! তার আরো অনেক গটনা আছে আমি অনেকগুলাই জানি। সবতো আর তোমগোরে কই না। খালি আমি দেইখ্যা হের লগে সংসার করি আর অন্য কোন মেয়ে হইলে বহুত আগেই চইল্যা যাইত। তুমি এইসব কতা বিশ্বাস করবা না মা। সে অহনো অনেক মাইয়ার লগে সম্পর্ক রাখছে। ফোনে কতা কয়।

রশিদ ভাবছে মিনুকে এই ঘটনা নিয়ে কোণঠাসা করে রাখবে।

তাসলিমার নাম্বারে ফোন দিয়ে রশিদ অপেক্ষায় আছে কখন তাসলিমা রিসিভ করবে!

রশিদ এবং মিনুর ছেলে মেয়ে দুইটা বড় হচ্ছে। তাদের এই অপরিণামদর্শী আচরণের জন্য সন্তানরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা কেউই ভাবছে না।

 

সুস্থ সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর যত্ন


ডা. মারুফ রায়হান খান


সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশু! এই সারা ধরায় এরচেয়ে সৌন্দর্যময় আর আকর্ষণীয় বুঝি আর কিছু নেই। নবজাতকের প্রতি আমরা সবাই খুব বেশি যত্নবান হতে চাই, কিন্তু আমরা ঠিকঠাক জানি তো কী কী বিষয় এক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য রাখা উচিত? কোনো বাড়াবাড়ি বা ছাড়াছাড়ি হয়ে যাচ্ছে না তো? কয়েকটা কথা আমাদের একেবারে সবারই মনে রাখা উচিত। আর সদ্য/ হবু মা-বাবা হলে তো কথাই নেই!

সুস্থ নবজাতক বলতে আমরা কী বুঝি আসলে?

– মায়ের পেট থেকে যদি ৩৭-৪২ সপ্তাহের মধ্যে ভূমিষ্ঠ হয়, এর আগে বা পরে না।
-জন্মের সময় ওজন যদি ২.৫-৪ কেজি হয়।
– জন্মের পরপরই যদি স্বাভাবিক কান্নাকাটি করে এবং শ্বাসপ্রশ্বাস নেয়। স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাসের হার প্রতি মিনিটে ৩০-৬০ বার।
– কান্না করার সাথে সাথে বাচ্চার রঙ গোলাপী বর্ণ ধারণ করবে।
– বাচ্চার শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকবে।
– কোনো জন্মগত ত্রুটি থাকবে না।

বাচ্চার খাওয়া-দাওয়া

জন্ম হবার আধাঘণ্টার মধ্যেই বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করতে হবে। বাচ্চাকে প্রথম ৬ মাস শুধুমাত্রই বুকের দুধ খাওয়ান। এটা আল্লাহ প্রদত্ত এক আশ্চর্যরকমের বিশেয় নিয়ামাত। বাচ্চাকে এই নিয়ামাত থেকে বঞ্চিত করবেন না। আপনার বাচ্চাকে নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ালে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া আর কান পাকা রোগ থেকে রক্ষা পাবে। বাচ্চা হবে অনেক অনেক বেশি বুদ্ধিমান।

বুকের দুধ কতোবার খাওয়াতে হবে 

বাচ্চাকে আসলে ডিমান্ড ফিডিং করাতে হয়। অর্থাৎ বাচ্চা কাঁদলেই খাওয়াতে হবে। রাতের বেলাতেও খাওয়াতে হবে। নিদেনপক্ষে বাচ্চাকে ৮ বার বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।

নবজাতকের প্রস্রাব -পায়খানা

মায়েদের এবং সেই সাথে বাচ্চার নানী-দাদীদের খুব কমন অভিযোগ বাচ্চা দুধ পায় না। যদি দেখা যায় যে বাচ্চা ২৪ ঘণ্টায় ৬ বার প্রস্রাব করে, তাহলে ধরে নিতে হবে সে পর্যাপ্ত খাচ্ছে। আর যেসব বাচ্চারা বুকের দুধ খাচ্ছে, তারা দিনে ১০-১৫ বার পায়খানা করতে পারে, এতে ভয়ের কিছু নেই।

বাচ্চার ডায়াপার 

একবার প্রস্রাব/পায়খানা করা মাত্রই ডায়াপার বদলে ফেলতে হবে। আমাদের দেশের মায়েরা দেখা যায় ওজন করতে থাকেন যে কখন ডায়াপারটা ভারী হয়। দেখা যাচ্ছে বাচ্চা দীর্ঘ সময় পায়খানা/প্রস্রাবের মধ্যেই আছে, যা খুব অস্বস্তিকর বাচ্চার জন্যে।

নবজাতকের গোসল 

গোসলটা ২-৩ দিন পর দিলে সবচেয়ে ভালো হয়। জন্মের সাথে সাথে গোসল করালে নিউমোনিয়া হবার সম্ভাবনা থাকে। ২-৩ দিন পর থেকে প্রতিদিনই গোসল করাতে হয়। খুব অল্প সময়ের মধ্যে হালকা গরম পানিতে বাচ্চাকে গোসল করিয়ে ফেলতে হবে। প্রথমে মাথাটা ধুতে হয়, তারপর মাথা মুছে ফেলতে হয়। তারপর শরীরে পানি দিয়ে গোসল সম্পন্ন করতে হয়। পানিতে কোনো জীবাণুনাশক মেশানোর দরকার নেই।

ঋতুভেদে বিশেষ খেয়াল 

শীতকালে একটু বেশি কাপড়চোপড় দিয়ে বাচ্চাকে ঢেকে রাখতে হবে। মাথায় ক্যাপ, হাতে-পায়ে মোজা পরাতে হবে। বাচ্চা যেন ঠাণ্ডা না হয়, এটা খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি বাচ্চা যেন ঘেমে না যায় সেটাও লক্ষ্য রাখতে হবে।

দুটো অনুরোধ 

দাদী-নানীদের উদ্দেশ্যে একটা কথা! বাচ্চা একটু কান্নাকাটি করলেই মা-কে ফিডার/কৌটার দুধ দেওয়ার জন্যে জোর করবেন না।

সিনিয়রদের প্রতি অনুরোধ! বাচ্চা বুকের দুধ খেলে বারবার পায়খানা করতেই পারে। এ কারণে বুকের দুধ বন্ধ করে আপনারা কৌটোর দুধ লিখবেন না কাইন্ডলি।

 

হাফসা

হাফসা


সুমেরা জামান


সময়টা গত বছরের ঠিক মাঝামাঝি। টি স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি জলিল ভাইয়ের জন্য। যিনি আমাকে স্কুল থেকে নিয়ে যাওয়া আসা করেন।
হঠাৎ হাফসার বাবার সাথে দেখা।
তাকে দেখে আমি কুশলাদি বিনিময়ের আগেই জানতে চাইলাম হাফসা স্কুলে আসছে না কেন ভাই?

একগাদা অভিযোগ ঝুরঝুর করে ঝরতে লাগলো তা কন্ঠনালী থেকে।

হাফসা সকালে উঠে কান্না শুরু করে
স্কুলে আসবেনা। পড়াতে বসতেই চায় না। ইত্যাদি ইত্যাদি
অনেক কথার মাঝে একটা ভাল কথা যেটা বলল,
“আমার মেয়ের স্মরণশক্তি ভাল। পড়লে মনে রাখে কিন্তু লিখতে চায় না।”

এমন সময় জলিল ভাই চলে এলো তার অটোরিকশা নিয়ে। শুধু একটু বলে বিদায় নিলাম কাল সকাল ১০ টাতে আপনি আর হাফসার আম্মু আমার সাথে দেখা করবেন স্কুলে। হাফসাকে সাথে আনার দরকার নেই।

যথারীতি সকাল ১০টা।
তারা উপস্থিত আমার অফিসরুমে।
আমি জানতে চাইলাম ,
রহিমা আপা হাফসা কেমন আছে?

আপা সবই ভাল খালি লেখাপড়া করতে চায়না। আমি সারাদিন ওর পেছনে লেগে থাকি। পড়া ছাড়া এ দুনিয়াতে কোনো দাম আছে বলেন? একবার আমি অল্প বয়সে বিয়ে করে লেখাপড়া শেষ করতে পারিনি। এখন বুঝি পড়ার কি মূল্য।
তাই খুব চেষ্টা করি। আমার মেয়ের কি পড়া হবে আপগো !

হতাশা আর আফসোস নিয়ে কথাগুলো এক দমে বলে শেষ করলেন হাফসার আম্মু।

এতো চিন্তিত হবার কিছু নেই।
সবকিছু করবে আপা।
হাফসার বয়স এখন মাত্র ৫ বছর।
বয়স অনুসারে বাচ্চাদের ব্রেনের বিকাশ হয়। ১ থেকে ৫ বছর বয়সের বাচ্চারা তার নিকট পরিবেশ থেকে সবচেয়ে বেশী শিখে। আর সেটা শিখে দেখা আর শোনার মাধ্যমে।
এরপর ওরা নিজের মত করে চিন্তা করে, বলে, এঁকে,লিখে প্রকাশ করে।
গল্প শোনান,ছড়া কিংবা ছড়াগান।

এতো তাড়াতাড়ি লেখালিখি নিয়ে মন খারাপ করবেন না। হাফসা আঁকতে খুব পছন্দ করে। আশা করি লিখতে করবে।
আপনারা যদি আমাকে একটু সহযোগীতা করেন তবে সব হবে আপা।

কি করতে হবে বলেন আপা ?
হাফসার বাবা উদ্বিগ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমার আছে জানতে চায়লো। টাকা পয়সা যত যা লাগে আমরা খরচে রাজী আপা। শুধু মেয়েটাকে যদি পড়াতে পারতাম। আপনি প্রাইভেট পড়াবেন?

আমি হেসে বললাম এসব কিছুর দরকার নেই। আপনার মেয়ে আমার ছাত্রী। শুধু আমাকে একটা কথা দিতে হবে। বাকী সব দ্বায়িত্ব আমার।
আজ থেকে হাফসাকে আর বাসাতে পড়াতে বসাবেন না।

তারা দুজনই ভীষণ অবাক হয়ে দুজন দুজনের দিয়ে তাকিচ্ছে ।

এমন সময় দপ্তরী চা নিয়ে এলো।

আমি বললাম প্লিজ চা শেষ করেন।