All posts by Oporajita

আমি ছিলাম আইএস নেতার বাঙালি বধূ

তানিয়া জয়া

আমরা জন্ম উত্তর লন্ডনে, ১৯৮৩ সালে। বেড়ে উঠেছিলাম এক বাংলাদেশী-বাঙালি পরিবারে। আমি মনেপ্রাণে ইংরেজ হতে চাইতাম; কিন্তু পরিবার থেকে চাপ ছিল একজন ‘গুড মুসলিম গার্ল’ হয়ে ওঠার, পশ্চিমা সমাজের সঙ্গে মিশে না যাওয়ার। এই টানাপোড়েনে আমার পারিবারিক বন্ধন শিথিল হয়ে যাচ্ছিল। যখন নিজের বাবা-মায়ের ওপর আস্থা রাখা যায় না, তখন আর কারো কর্তৃত্বই মেনে নেওয়া কঠিন।
আমার বয়স যখন ১৭, আমরা পূর্ব লন্ডনে গিয়ে থিতু হই। সেখানে আমার নতুন নতুন বন্ধুত্ব তৈরি হয়; কিন্তু তারা সবাই ছিল রক্ষণশীল, ধার্মিক তরুণী। আমার ‘অতি পশ্চিমা’ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তারা তিরস্কার করতো। আমার এক কাজিন, আমার ওপর যে তরুণীর প্রভাব ছিল সবচেয়ে বেশি, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই উগ্রপন্থায় জড়িয়ে যায়। সে আমাকে খেলাফত সম্পর্কে শিক্ষা দিত। তখন আমি অনলাইনে সৌদিআরব থেকে প্রচারিত ইসলামী ফতোয়া সম্পর্কে ব্যাপক পড়াশোনা করতাম। আমার ধারণা ছিল যে, আমি ‘সত্যের সন্ধান’ করছি।

২০০৩ সালে লন্ডনে আমি ইরাক যুদ্ধবিরোধী মিছিলে যোগ দেই। তখন কিছু তরুণ আমার হাতে এক ফালি কাগজ গুঁজে দেয়। সেখানে একটি ‘মুসলিম ডেটিং’ ওয়েবসাইটের ঠিকানা লেখা ছিল। ওই সাইটে গিয়েই জন জর্জেলাসের সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাৎ হয়। সে ছিল ইসলাম ধর্মান্তরিত আমেরিকান নাগরিক। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে। একাধিক ভাষা জানে এবং দেখতে বেশ স্মার্ট। আমি তার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠি। জন আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে প্রথম যেবার লন্ডন এলো, সেবারই আমরা বিয়ে করে ফেলি। আমি জানতাম, রক্ষণশীল পরিবার ছাড়তে হলে এটাই একমাত্র সুযোগ। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আমি জনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাই এবং আরও কিছুদিনের মধ্যে পুত্র সন্তানের মা হই। ততদিনে জন আরও বেশি উগ্রপন্থার দিকে ঝুঁকছে। আর আমি নেকাব পরা ছেড়ে দিয়েছি এবং আরও বেশি স্বাধীন হওয়ার চেষ্টা করছি।

২০০৬ সালে একটি ইসরাইলপন্থী লবিয়িং গ্রুপের ওয়েবসাইট হ্যাকিংয়ের দায়ে অভিযুক্ত হয় জন। বিচারে জন জর্জেলাস তিন বছরের কারাদণ্ড হয়। কিন্তু আমি তখনও অর্থনৈতিকভাবে তার প্রতি নির্ভরশীল ছিলাম এবং তখনো বুঝতে পারিনি যে এক নিবর্তনমূলক বিয়ের জালে আটকা পড়েছি।

কারাগারে ভালো ব্যবহারের জন্য জন খানিকটা আগেই মুক্তি পায়। আমরা তিন সন্তানসহ যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রথমে মিশর এবং তারপর ইস্তাম্বুল চলে যাই। জন একবার বলেছিল বটে, সে সিরিয়া যেতে চায়। কিন্তু আমি গোঁ ধরেছিলাম যে, আমার সন্তানদের যুদ্ধ কবলিত কোনো এলাকায় নিয়ে যাব না। ইস্তাম্বুলে থাকার ব্যয় যখন আমরা বহন করতে পারছিলাম না, তখন জন ও তার যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত পরিবার আমাকে অন্য প্রস্তাব দেয়। বলে যে, তুরস্কের মধ্যেই আন্তাকিয়া চলে যাওয়া ভালো হবে, সেখানে জীবনযাত্রার ব্যয় কম। যদিও বাস্তবে আমাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল সিরিয়া সীমান্তে।

দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে সর্বশেষ মধ্যরাতে যখন আমরা একটি বাসে উঠি, আমার ধারণা ছিল না আসলেই কী ঘটতে যাচ্ছে। আমি তখন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্তা। বাস দেখে বরং স্বস্তি হয়েছিল যে তিন সন্তানসহ বসতে পারবো এবং ঘুমিয়ে নেওয়া যাবে। সূর্য ওঠার পর যখন ঘুম ভাঙলো, আমাদের বাস একটি সিরিয় চেকপোস্টে দাঁড়ানো। জন আমাকে সতর্ক করে দিল, যাতে কোনো নাটকীয়তা তৈরির চেষ্টা না করি।

সিরিয়ায় গিয়ে যত দ্রুত সম্ভব একটি টেলিফোন খুঁজে নিয়েছিলাম এবং জনের মাকে ফোন করে বলেছিলাম যে তার পুত্র আমাদের মিথ্যা বলেছে। ফোনের এই পাশে আমি চিৎকার করে কাঁদছিলাম এবং আমার শাশুড়িকে বলছিলাম তিনি যেন শিগগিরই এফবিআই এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ওই এজেন্ট কয়েক বছর ধরে জনের গতিবিধি নজরদারির দায়িত্বে ছিলেন। তিনি আমাকে পরবর্তীতে ফোনে বলেন- আমি যদি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসতে পারি, তাহলে আমাকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনে যোগ দেওয়ার দায়ে অভিযুক্ত করা হবে না।

সিরিয়ায় আমরা পাইপ-ওয়াটার পেতাম না। বাড়ির ওপরের ওয়াটার-ট্যাঙ্ক গোলা লেগে ফুটো হয়ে গিয়েছিল। অপুষ্টিতে ভুগছিলাম; যেমন আমি, তেমনই শিশুরা। তাদের হারিয়ে ফেলার শঙ্কা ঘিরে ধরেছিল আমাকে। এফবিআই এজেন্টকে বলে দেওয়ার জন্য জন আমাকে দোষ দিত, আমিও তাকে পাল্টা রাগ দেখাতাম ধোঁকা দিয়ে সিরিয়ায় আনার জন্য। ক্ষোভ থেকে এক পর্যায়ে আমি মুখ ঢেকে রাখা ছেড়ে দিয়েছিলাম, সেটা ছিল জনের জন্য বিব্রতকর। সহযোদ্ধারা তাকে চাপ দিত- হয় আমাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, না হয় পরিত্যাগ করতে হবে।

শেষ পর্যন্ত জন ‘দয়া’ দেখায়। আমাদের জন্য সিরিয়া থেকে বের হয়ে আসার ব্যবস্থা করে। যদিও সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও তিন সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়েছে। কারণ বের হয়ে আসার রাস্তায় হয় অবরোধ না হয় লড়াই চলছিল। জন একজন মানব পাচারকারীর হাতে আমাদের তুলে দেয়। অর্থের বিনিময়ে সে আমাদের সিরিয়া সীমান্ত পার করে দেবে।
প্রথমে আমাদের কয়েক মাইল হাঁটতে হয়েছে। তারপর কাঁটাতারের ফোকর গলিয়ে বের হতে হয়েছে। সীমান্ত পার হয়ে কোনো রকমে যখন একটি ট্রাকে উঠে শুয়ে পড়ি, তখন মাথার ওপর দিয়ে ছুটে যাচ্ছিল স্নাইপারের গুলি। কথা ছিল পাচারকারী সীমান্ত পার করে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত পৌঁছে দেবে। কিন্তু সে আমাদের একটি প্রান্তরের মধ্যে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়। আমি হতাশ ও উদ্বিগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। এ সময় একজন দয়ালু তুর্কি আমাদের পথ খুঁজে পেতে সাহায্য করে।

জীবন ফিরে পেয়ে আমি ছিলাম খুবই কৃতজ্ঞ। আমি কেবল চেয়েছিলাম আমার সন্তানরাও জীবন ফিরে পাবে। একটি পরিপূর্ণ জীবন কাটাবে এবং বিপুলা বিশ্বের কাছে ফিরে যাবে।
সিরিয়ায় আইএসের কথিত খেলাফত প্রতিষ্ঠায় জন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল এবং পশ্চিমা তরুণ-তরুণীদের আকৃষ্ট করতে শীর্ষস্থানীয় প্রচারক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছিল। তার সঙ্গে আমার আর কখনোই দেখা হয়নি। পরিবর্তীতে জেনেছিলাম যে, সিরিয়ায় সে আবার বিয়ে করেছে। গত বছর আমি জানতে পারি যে, সে মারা গেছে। খুব সম্ভবত ২০১৭ সালে, মার্কিন বোমা হামলায়।

এখন আমি টেক্সাসে থাকি। জনের পিতা-মাতার বাড়ি থেকে কয়েকটি সড়ক দূরে। আমি জানি, নাতি-নাতনীরা দাদা-দাদীর কাছাকাছি থাকা উভয় পক্ষের জন্য ভালো। আমার বর্তমান স্বামী আমার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও মনোযোগী। নিজের অর্জিত স্বাধীনতা আমি উপভোগ করছি। দৈনিক সমকাল

দ্য গার্ডিয়ান থেকে ভাষান্তরিত

৬০তম জন্মদিনে স্থাপন হচ্ছে ডায়ানার ভাস্কর্য

যুক্তরাজ্যের জনপ্রিয় রাজবধূ প্রিন্সেস ডায়ানার ৬০তম জন্মদিনে তার একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হচ্ছে লন্ডনে কেনসিংটন রাজপ্রাসাদের বাগানে। তার দুই ছেলে ডিউক অব কেমব্রিজ প্রিন্স উইলিয়াম ও প্রিন্স হ্যারি ওই ভাস্কর্য অনুমোদন করেছেন। খবর বিবিসির।

প্রিন্সেস ডায়ানা ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট প্যারিসে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। তখন তার দুই ছেলে উইলিয়াম ও হ্যারির বয়স ছিল যথাক্রমে ১৫ ও ১২ বছর। ডায়ানার মৃত্যুর ২০ বছর পর ২০১৭ সালে তার একটি ভাস্কর্য তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। ডায়ানার ‘ইতিবাচক প্রভাবকে’ স্বীকৃতি দিতেই তার ওই স্থায়ী মূর্তি তৈরিতে সায় দেন দুই ছেলে উইলিয়াম ও হ্যারি। আগামী সোমবার হবে ওই দুর্ঘটনার ২৩ বছর।

কেনসিংটন রাজপ্রাসাদ সূত্র জানিয়েছে, ডায়ানার সাবেক বাসভবন কেনসিংটন প্যালেসের বাগানে ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হবে। আগামী বছরের ১ জুলাই ওই বাগানের ডায়ানা স্মৃতিঝরনার কাছে মূর্তিটি স্থাপন করা হবে। ডায়ানার স্মরণে এটি হবে লন্ডন এলাকায় নির্মিত চতুর্থ স্মারক।

প্রিন্স উইলিয়াম ও হ্যারি এক বিবৃতিতে বলেন, আমাদের মা অনেকের জীবনকে স্পর্শ করেছিলেন। আশা করি, ভাস্কর্যটি তার জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জানতে কেনসিংটন প্যালেসে আসা দর্শনার্থীদের জন্য সহায়ক হবে।

পথশিশু জিনিয়া নারায়ণগঞ্জ থেকে উদ্ধার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা থেকে নিখোঁজ হওয়া ফুলবিক্রেতা শিশু জিনিয়াকে নারায়ণগঞ্জ থেকে উদ্ধার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। নিখোঁজ হওয়ার সাত দিন পর সোমবার রাতে তাকে উদ্ধার করো হয়।

ডিবি রমনা জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মিশু বিশ্বাস ফেসবুকে এক পোস্টের মাধ্যমে জিনিয়াকে উদ্ধারের খবর নিশ্চিত করেন। তিনি ফেসবুক পোস্টে লেখেন, টিএসসির প্রিয়মুখ জিনিয়াকে নারায়ণগঞ্জ থেকে একটু আগে আমরা উদ্ধার করেছি। সে সুস্থ এবং স্বাভাবিক আছে। আবারও সে তার হাসিমুখ দিয়ে ক্যাম্পাস আলোকিত করবে, টিএসসির এই মাথা থেকে ওই মাথা ছুটে বেড়াবে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার এইচ এম আজিমুল হক গণমাধ্যমকে জানান, সোমবার রাতে নারায়ণগঞ্জের পঞ্চবটী থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করেন তারা। এ ঘটনায় লোপা তালুকদার নামে এক তরুণীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কারা, কী উদ্দেশ্যে জিনিয়াকে সেখানে নিয়ে গিয়েছিল তা আমরা জানার চেষ্টা করছি।

এর আগে ১ লা সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফুল বিক্রেতা পথশিশু জিনিয়া আক্তার টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান গেট থেকে হারিয়ে যায়।

২ সেপ্টেম্বর তার মা সেনুরা বেগম রাজধানীর শাহবাগ থানায় হারিয়ে গেছে মর্মে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

হুমাযাহ্‌

নীলজোসনা

স্বর্ণার মন খারাপ! শুধু মন? মেজাজ গরম! কারণ সকালে উঠেই দেখেছে কপালের ওপর প্রমাণ সাইজের একটা ব্রণ। রাগী লাল চেহারা করে আছে। তার ওপর সারা রাতের টুকরো চিন্তাগুলো, উফ!

এম্নিতে স্বর্ণা বেশ সময় সচেতন। মানে, সুযোগের অভাবে সৎ যাকে বলে। বাচ্চাদের আর প্রফেসর স্বামীকে একই সাথে বিদেয় দিতে হয় সকাল সাড়ে সাতে। তার আগে পর্যন্ত এলোখোঁপা আর রাতের কাপড়েই দৌড় চলতে থাকে। এর মধ্যে শাশুড়ির চা, বিস্কিট আর পেপারটা দিয়ে এসে বুড়ি ছোঁর মত করে নিজের কালো কফিটা করে ফেলতে পারলে ব্যাস! নয়টা পর্যন্ত নিজের কয়েকটা কাজ নিশ্চিন্তে সেরে ফেলা যাবে।

সকালে বাথরুমের সময়টা আর সাইক্লিং মেশিনে কয়েকশো প্যাডলের সময়টায় মেয়েদের গ্রুপগুলোয় কাল রাতের আড্ডাগুলো দেখে ফেলা যায়। একেকজন শশুরবাড়ির কাহিনী নিয়ে মস্ত গল্প লেখে, কেউ ধারাবাহিকও লেখে। একেকজনের আবার নিজের গ্রুপও আছে, তাতে সেসব গল্পের দানা ছাড়ানো হয়। কিছুদূর দেখতেই ‘স্বর্ণার মা’ ছোট্ট একটা বেল দেয়। ‘এতোবার বলি তোমাকে, বাব্বাহ একটু বাজিয়ে বেল দাও’। সহজ সরল মহিলা, স্বর্ণা নামটা বদলে ‘রোজীর মা’ করে দিলেও মিষ্টি একটা হাসি দিয়েছে। রোজ আঙুল একটু ছুঁইয়েই বেল দিয়ে দাঁড়িয়ে আকাশ পাতাল ভাবে, দুইবারে হয়ত স্বর্ণা টের পায়। কি যন্ত্রণা!

আজকের ব্রণ ওঠার রাগটা রোজির মা’টাকেও ছুঁয়ে গেছে। দরজা খুলেই মস্ত ধমক খেয়েও সেই বোকা হাসি। চোখ ফিরিয়ে নিলো স্বর্ণা, ‘কি সব পড়লাম কালকে? কি হবে এখন?’

পরের কয়েক ঘন্টা যেন ধুনুচির তুলো। উড়তে উড়তে শেষ। শাশুড়ির নাশতা দিয়ে, রান্নার আয়োজন সেরে বারোটায় গিয়ে শাড়ির পেইজের মেসেজ দেখে ও। মহিলারা আসলেই আশ্চর্য এক সৃষ্টি! এই সকালটাই সবাইর মহা ব্যস্ত সময়, আর এই সময়টাতেই সবচেয়ে বেশি মেসেজ আসে। আর আসে গভীর রাতে। স্বর্ণার রাত করে ফোন ধরতে ভালো লাগে না, বমি পায়। ওর এই দুপুর ছাড়া উপায় নেই।

এই সময়টায় মা আসেন গুটি গুটি পায়ে। কখনও বসার ঘরের বারান্দায়, কখনও স্বর্ণার মস্ত বেতের চেয়ারের কাছেকাছে হাঁটেন। কোন কমেন্ট পড়ে স্বর্ণা হেসে উঠলে উৎসুক তাকান। হয়ত কোনোদিন মাত্র পড়ে শেষ করা কোন শাশুড়ি-বউ-ননদের ট্রিলজি শোনায় স্বর্ণা। আশ্চর্য এক গুণ আছে তাঁর, নিষ্পলক মনযোগী চোখে গল্প শুনতে ভালোবাসেন। মাঝেমাঝে উস্কেও দেন, ‘ওই যে ওইদিনের মেয়েটা, তার গল্পটা আর দিয়েছে নাকি দেখ না’! স্বর্ণা খুঁজেপেতে বের করে পড়ে শোনায়। এম্নিতে শাশুড়ি বউর আশ্চর্য সুন্দর শ্রদ্ধার একটা সম্পর্ক। তবু এইসব গল্পে স্বর্ণার চোখে পানি আসে। নিজে পায় নি বলেই হয়ত, না দেখা কোন মেয়ের কষ্ট ওকে ছুঁয়ে যায়। সাদাচুলের মহিলাটা তখন কালো চুলভর্তি মাথাটায় হাত বুলান, ‘আহা থাক। অত ভাবে না। ওরা একদিন ঠিইক বুঝবে, দেইখো’।

এই এমন করেই কালও বউয়ের পড়ে শোনানো গল্প শুনছিলেন। মাঝেমাঝে থামে স্বর্ণা, মেসেঞ্জারের গ্রুপে টুং আসে। গ্রুপের কোন চেনা ভাবির গল্পের অন্য দিক আলোচনা হয় আবার এই গ্রুপে। ‘জানেন মা, ওই যে বউটা, সে নিজেই আস্ত এক…’ বেরিয়ে আসা গালিটা গিলে রাগ ফোটায় গলায় ‘আস্ত পাজী’। শাশুড়িকে আচ্ছামত চাপের ওপর রাখে, আবার মেয়েদের গ্রুপে কাঁদুনি গায়। নীলা ভাবীর বোনের জা, সত্যি’।

এই বলতে বলতে হঠাত ভয়ের চোরা স্রোত মনে, ‘আচ্ছা মহিলার বদনাম গাইছি তো, ঠিক হচ্ছে?’ ভাবনাটা উড়িয়ে দিলেও খুট খুট মনে বেজেই যাচ্ছিলো। আসরের আজানের পর টিভিতে একটা সূরার বাংলা অনুবাদটা দেখে সে অস্বস্তিটা বাড়লো। সন্ধ্যার পর বাচ্চাদের পড়াতে পড়াতে ফোনের স্ক্রীণে হারিয়ে যেতে যেতে ফিরলো স্বর্ণা। এ তো ভারি বিপদ। কারুর পেছনে তো বদনাম করাই যাবে না, সামনেও না? আরে বাবা, ভুল শুধরে দিবো কি করে তাহলে? এই যে এত গ্রুপ, এতো গল্প আড্ডা, সবকিছুতে তাহলে দুর্গন্ধ মিশে আছে?

সেই চিন্তা রাতভর, আর তার ফলাফল বিচ্ছিরি একটা ফুসকুঁড়ি। সকাল থেকে পেটটাও যেন ফুলে আছে, কারণ আজকে আর গ্রুপ বা মেসেজে প্রাণ পাচ্ছে না স্বর্ণা।

ফোনে বড় বেশি বিরক্ত করে মেসেজের টুং, তাই ছেলের কম্পিউটারে বসলো রাতের খাবারের পর। নতমস্তকে উঠে আসতে হল ঘন্টাখানিক পর। ইস, কত বড় অন্যায় হয়ে গেছে এদ্দিন। কাউকে শুধরানোর কাজটা এতো জটিল, কে জানতো! না করা যাবে হুমাযাহ বা সামনে তিরষ্কার, না বলা যাবে লুমাযাহ বা পেছনে। চারদিকে উঁচু থামে ঘেরা, আগুন ভর্তি জায়গাটায় ফেলে দেয়া হবে এইসব মানুষকে, তাও আবার স্বর্না যাদের দেখতে পারে না, এমন সুদখোরদের সাথে। উফ, মা গো!

তাহলে? ‘এই গল্পগাছা না হয় না শুনলাম, কাউকে তো টুকটাক উপদেশও দিতাম, তার কি হবে?’ খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে গেল আরেক আয়াত, ঘুণাক্ষরেও কুধারণা করা যাবে না, কারুর ব্যপারে জানতে চেয়ে তার অগোচরে ঘাঁটাঘাঁটি করা যাবে না। উপদেশ দিলেও দিতে হবে সামনে, সরাসরি তাকেই, খুব নরম ভাষায়, তিরষ্কার না করেই।

আর যায় কোথায়, সমস্ত গল্প, কমেন্ট, মেসেজের গ্রুপের স্পেশাল তথ্য সব যে কেমন তেতো লাগছে এখন। তাই তো, ওই ভাবিগুলোকে সবাই সামনে সে কী আহা উঁহু করে, আর পেছনে শুধু বিষ ঢালে। না মানুষগুলো শুধরাতে পায়, না সত্যিকারের বন্ধু পায়। আহারে!

আজকের মধ্য দুপুরের হালকা অবসর সময়টা পেয়েই একে একে টিপে টিপে সবগুলো গ্রুপ ছাড়লো স্বর্ণা। শাশুড়ি রুম থেকে বেরিয়েছেন, ‘স্বর্ণা, মশারি ধুতে দিবে মনে আছে? আমাকে বলেছিলা মনে করাতে।’ গলা তুলে রোজির মা’কে কথাটা শুনিয়ে এবার আবদার করলো, ‘মা আপনার বিয়ের গল্প বলেন’। শাশুড়ি ততোক্ষণে নিজের কুশনওয়ালা মোড়ায় বসে গেছেন। আজকের গল্পগুলো সাদা, স্বচ্ছ, পরিষ্কার হবে। অনেকক্ষণের আটকে রাখা বদ্ধ নিঃশ্বাসটা বেরিয়ে এসেছে নিজেই। উফফ!

‘রোজির মা’, বেল তুমি দুইবার দাও বা তিনবার, সাথেসাথেই দিও। নইলে তো বুঝতে পারি না গো! আচ্ছা দাঁড়াও, একবার দিয়ে দেখাও তো? হ্যাঁ, এমন করে তিনবার দিও। এখন যাও। এইইই, ভাতের হাঁড়িটা নাও, ইস কি ভুলো মন রে বাবা!’ রোজির মায়ের সরলতায় এখন সহানুভূতির প্রলেপ দিতে শিখে গেছে স্বর্ণা! আজকে কি দারুণ লাগছে মাঝবয়েসি সরল মহিলাটার হাসিটাও। বন্ধ দরজার এপাশেও এখন আলো, দুটো মানুষের মনেও।

পাকিস্তানে নারী সাংবাদিককে গুলি করে হত্যা, ‘অনার কিলিং’-এর অভিযোগ

পাকিস্তানে স্বামীর হাতে খুন হলেন দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের নারী সাংবাদিক। শাহিনা শাহিন নামের ওই সাংবাদিকের মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ ধারণা করছে, এটি একটি ‘অনার কিলিং’ বা কথিত সম্মান রক্ষার্থে হত্যা। নিহতের পরিবারও পুলিশের কাছে করা অভিযোগে একে অনার কিলিং দাবি করেছে। শাহিনার স্বামীকে ধরতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তান পুলিশ। এ খবর দিয়েছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা।

পাকিস্তান সাংবাদিকদের জন্য সবথেকে ভয়ংকর রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একটি। ১৯৯২ সালের পর থেকে দেশটিতে অন্তত ৬১ জন সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন। গণমাধ্যমের স্বাধীনতায়ও দেশটি শেষের দিকে।
সাংবাদিক শাহিনা হত্যাকাণ্ডটির তদন্ত করছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা সিরাজ আহমাদ। তিনি জানান, আমরা অপরাধীদের ধরতে সব ধরণের চেষ্টা চালাচ্ছি।

শাহিন পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে একটি টকশো এর সঞ্চালক ছিলেন। এছাড়া একটি ম্যাগাজিনের সম্পাদকও ছিলেন তিনি। তাকে তার নিজ বাড়িতে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার পর তার স্বামী তাকে হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যান। গত বছরের নভেম্বর মাসেও পাকিস্তানের লাহোরে এক ব্যাক্তি তার সাংবাদিক স্ত্রীকে হত্যা করে। নারীদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা সূচকে বিশ্বের সবথেকে ভয়াবহ দেশগুলোর একটি পাকিস্তান। আল-জাজিরা জানিয়েছে, নারীদের জন্য সবথেকে ঝুঁকিপূর্ন দেশের তালিকায় ৪ নম্বরেই রয়েছে দেশটি। পাকিস্তানের পূর্বে রয়েছে সিরিয়া, আফগানিস্তান ও ইয়েমেন।

চুলের যত্নে কফির ব্যবহার

 

কফি কীসে ব্যবহার করেন? প্রশ্ন শুনে অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়ই। ভাবছেন, কফি তো সবাই পান করে, আবার কীসে ব্যবহার করবো! শুধু পানীয় হিসেবেই নয়, কফি ব্যবহার করা যায় ত্বক আর চুলের যত্নেও। কফি দিয়ে তৈরি হেয়ার প্যাক নিয়মিত ব্যবহার করলে চুল দ্রুত বাড়ে। বিভিন্ন কারণে চুল ক্ষতিগ্রস্ত হলে কফি কাজে লাগাতে পারেন। চলুন জেনে নেয়া যাক, কফি দিয়ে কীভাবে চুলের যত্ন নেবেন-

কফি দিয়ে চুল ধোয়া
কফি দিয়ে চুল ধুলে তা চুলের দ্রুত বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। প্রথমে ২ টেবিল চামচ গ্রাউন্ড কফি ও ১ কাপ পানি নিন। এবার ১ কাপ কফি তৈরি করে তা ঠান্ডা হতে দিন। মাথায় ভালো করে শ্যাম্পু করে মাথা মুছে ফেলুন এবং চুল থেকে অতিরিক্ত পানি ঝরিয়ে ফেলুন। এরপর মাথার ত্বকে এবং চুলে ঠান্ডা কফি ঢালুন। পাঁচ মিনিট ম্যাসাজ করুন।৩০ মিনিট চুল ঢেকে রাখুন। তারপর হালকা গরম পানির সাহায্যে ভালো করে চুল ধুয়ে ফেলুন এবং শুকিয়ে নিন। দ্রুত ফলাফলের জন্য সপ্তাহে ২-৩ বার এটি করতে পারেন।

কফি, নারিকেল তেল ও দই
চুলে পুষ্টি জোগায় নারিকেল তেল। এটি চুলকে শক্তিশালী করতে চুলের ফলিকলগুলোকে পুষ্ট করে। আর দইয়ে আছে ল্যাকটিক অ্যাসিড, যা মাথার ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। প্রথমে ২ টেবিল চামচ কফি পাউডার, ২ টেবিল চামচ নারিকেল তেল ও ৩ টেবিল চামচ দই নিন। এবার একটি পাত্রে কফি পাউডার, নারিকেল তেল ও দই নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন। এরপর হাতে পরিমাণমতো এই মিশ্রণটি নিয়ে তা মাথার ত্বকে এবং চুলে ভালোভাবে লাগান। এরপর এক ঘণ্টা চুল ঢেকে রাখুন। এক ঘণ্টা পর হালকা শ্যাম্পু দিয়ে চুল ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে ২-৩ বার করতে পারেন।

কফি স্ক্রাব
মাথার ত্বকেও প্রয়োজন পড়ে স্ক্রাবের। এটি স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্য এবং আপনার চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে। প্রথমে ৮ টেবিল চামচ কফি ও ১ কাপ পানি নিন। এককাপ কফি তৈরি করে তা ঠান্ডা হতে দিন। এরপর পরিমাণমতো হাতে নিয়ে পাঁচ মিনিট ধরে মাথার ত্বকে ভালোভাবে স্ক্রাব করুন। মাথা ধুয়ে চুল শুকিয়ে নিন। এটি সপ্তাহে দু’বার করুন।

 

বিফ ফিঙ্গার তৈরির সহজ রেসিপি

বিকেলের নাস্তায় ঝটপট সুস্বাদু কিছু খেতে চাইলে বেছে নিন বিফ ফিঙ্গার। ফিশ ফিঙ্গার তো খাওয়া হয়-ই, একটু ব্যতিক্রমী এই খাবার নাহয় চেখে দেখলেন! চলুন জেনে নেয়া যাক সুস্বাদু বিফ ফিঙ্গার তৈরির রেসিপি-

উপকরণ:
এককাপ মাংসের কিমা
দেড় চা চামচ আদা ও রসুনের পেস্ট
এক টেবিল চামচ গরম মসলার গুঁড়া
এক চা চামচ শুকনো মরিচের গুঁড়া
এক চা চামচ জিরা বাটা
এক টেবিল চামচ লেবুর রস
এক টেবিল চামচ পেঁয়াজ কুঁচি
স্বাদমতো লবণ
একটি ডিম
প্রয়োজনমতো ব্রেডক্রাম্ব
ভাজার জন্য তেল।

প্রণালি:
পেঁয়াজ বাদে অন্যান্য সব মসলা, লবণ ও লেবুর রসের সাথে কিমা খুব ভালোভাবে মাখিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। ১৫ মিনিট পরে পেঁয়াজ কুঁচি ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে জেনে রাখা উচিত যে, কোনো মসলা মেশাতে হাত ব্যবহার করলে মেশানোটা সবচেয়ে ভালো হয়। এবার এই মিশ্রণটা আঙুলের মতো আকৃতিতে ডো তৈরি করতে হবে।

ভাজার জন্য অন্য একটি বাটিতে ফাটানো ডিম ও আরেকটি বাটিতে ব্রেডক্রাম্ব মিশিয়ে পরপর ডোগুলো এই দুই উপাদানে মাখিয়ে ডুবো তেলে ভাজতে হবে। লালচে হয়ে গেলেই প্রস্তুত হয়ে গেল মজাদার বিফ ফিঙ্গার। সস দিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।

 

মা-মেয়েকে নির্যাতন, তদন্তে গাফিলতি হলে ব্যবস্থা: হাইকোর্ট

কক্সবাজারে গরু চুরির অভিযোগে মা-মেয়েসহ একই পরিবারের পাঁচজনকে রশি দিয়ে বেঁধে নির্যাতন করার বিষয়ে নজর রাখছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, নির্যাতনের বিষয়ে তদন্তে গাফিলতি হলে হস্তক্ষেপ করবেন হাইকোর্ট। গতকাল বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন। মা-মেয়েসহ নির্যাতিতদের বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট জেসমিন সুলতানা। তাকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী এএম জামিউল হক ফয়সাল।

এর আগে গত শুক্রবার দুপুরে কক্সবাজারের চকরিয়ার হারবাং ইউনিয়নের পহরচাঁদা এলাকায় ‘গরু চোর’ আখ্যা দিয়ে মা-মেয়েকে নির্দয়ভাবে পেটায় দুর্বৃত্তরা। পরে কোমরে রশি বেঁধে মা-মেয়েসহ তিনজনকে প্রকাশ্য সড়কে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে। একপর্যায়ে তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পুলিশকে খবর দিয়ে বিপদাপন্ন মা-মেয়ে ও ছেলেকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়।

গত শুক্রবার রাতেই হারবাং বিন্দাবনখীল লাল ব্রিজ মাহবুবুল হক নামের একজন বাদী হয়ে চকরিয়া থানায় একটি গরু চুরির মামলা করেন। এ মামলায় চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে গত শনিবার বিকালেই তাদের কক্সবাজার জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। -মানবজমিন

বিয়ের ৩ বছর পর গায়েহলুদ, কনের মোটরসাইকেল র‌্যালির ছবি ভাইরাল

বিয়ের তিন বছর পর গায়েহলুদের দিনে বাইক চালিয়ে শহরে শোডাউন করে নেট জগতে হইচই ফেলে দিয়েছেন যশোরের মেয়ে ফারহানা আফরোজ ড্রিমি। শহর জুড়ে বন্ধুবান্ধব ও সাথিদের নিয়ে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করার ১১ দিন পর ব্যতিক্রমী এ আয়োজনটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়।

তার এমন উদ্যোগে প্রশংসার পাশাপাশি কেউ কেউ বিরূপ মন্তব্য করেছেন ফেসবুকে। তবে অসম্মানজনক বক্তব্যের প্রতিবাদে ফারহানার মা মাহমুদা হাসান আইসিটি আইনে কোতোয়ালি থানায় মামলা করছেন বলে জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার রাতে মাহমুদা হাসান জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাককে জানান, ২০১৭ সালে নিজের পছন্দে তার মেয়ে পাবনার কাশিনাথপুরের হাসনাইন রাফিকে বিয়ে করে। এ বছরের ৩০ জুন এই দম্পতির ঘর আলো করে একটি পুত্রসন্তান জন্ম নেয়। কিন্তু পারিবারিকভাবে বিয়ের অনুষ্ঠান হয়নি। তবে এতদিন এমনকি সন্তান হবার পরে কেন গায়েহলুদের অনুষ্ঠান—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ছেলের বাবা মাসখানেক আগে তাকে ফোন করে তার বৌমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে নেওয়ার কথা বলেন। ১৪ আগস্ট অনুষ্ঠানের তারিখ ঠিক হয়। আর তার মেয়ে গায়েহলুদের অনুষ্ঠান ছাড়া কোনো আনুষ্ঠানিকতা করবে না বলে জানায়। ফারহানা এটাও তার মাকে জানায় গায়েহলুদের অনুষ্ঠান তার ভীষণ শখের। এটা করতেই হবে। আর তাই বিয়ের তিন বছর পর মা হবারও পর মেয়ের শখ পূরণ করতে এমন অভিনব আয়োজন।

নারী ক্রিকেট : বেতন, ম্যাচ ফি বাড়ছে রুমানাদের

মুমিনুল হকরা আগামী মাসেই শ্রীলঙ্কা সফরে যাবেন। খেলবেন তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। করোনাকালে তামিম-মুশফিকদের মতোই বিসিবির ব্যবস্থাপনায় দেশের বিভিন্ন ভেন্যুতে অনুশীলন করছেন নারী ক্রিকেটাররা। যদিও তাদের সামনে কোনো লক্ষ্য নেই। ঘরোয়া, আন্তর্জাতিক কোনো টুর্নামেন্টের সূচি নেই রুমানা আহমেদ, জাহানারা আলমদের জন্য। এমনকি কোনো ক্যাম্প আয়োজনেরও খবর নেই।

তবে করোনাকালে নারী ক্রিকেটারদের স্বস্তির খবর আছে। নিকট ভবিষ্যতেই সালমা-রুমানাদের বেতন, ম্যাচ ফি বাড়াবে বিসিবি। উইমেন্স উইং থেকে এ সম্পর্কিত প্রস্তাবনা পাঠানো হবে বোর্ড সভায়। বিসিবির অনুমোদন পেলেই তা কার্যকর হবে।

জানা গেছে, নারী ক্রিকেটারদের বেতন ১০-২০ ভাগ বাড়ানোর প্রস্তাব করবে উইমেন্স উইং। ওয়ানডে, টি-২০’র ম্যাচ ফিও কয়েক গুণ বাড়ানো হবে।

জানতে চাইলে উইমেন্স উইংয়ের চেয়ারম্যান শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল গতকাল বলেছেন, ‘আমরা ওদের বেতন বাড়াবো, ম্যাচ ফিও বাড়ানো হবে। একেবারে অনেক হবে না। অল্প অল্প করে বাড়ানো হবে। বেতন ১০-২০ ভাগ বাড়ানো হবে। ম্যাচ ফি কয়েক গুণ বাড়বে।’ পরবর্তী বোর্ড সভায় এটি অনুমোদন হতে পারে।

তামিম-মুমিনুলদের তুলনায় নারী ক্রিকেটারদের বেতন, ম্যাচ ফির ফারাক অনেক। বর্তমান আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার তুলনায় সেটি অনেকটাই অপ্রতুল। তাই বাড়ানোর চিন্তা করছে উইমেন্স উইং। বর্তমানে চার ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে জাতীয় দলের নারী ক্রিকেটারদের। ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ৫০ হাজার, ‘বি’ ক্যাটাগরিতে ৪০ হাজার, ‘সি’ ক্যাটাগরিতে ৩০ হাজার ও ‘ডি’ ক্যাটাগরিতে ২০ হাজার করে প্রতি মাসে বেতন পান নারী ক্রিকেটাররা। কেন্দ্রীয় চুক্তিতে আছেন ২০ ক্রিকেটার।

আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে ১০০ ডলার ও টি-২০ ৭৫ ডলার ম্যাচ ফি পেয়ে থাকেন জাহানারা আলমরা। বাড়ানোর পর ওয়ানডেতে ৪০০ ডলার হতে পারে ম্যাচ ফি। আর টি-২০ তে ৩০০ ডলার।

পারিশ্রমিকের এই পরিবর্তন নারী ক্রিকেটারদের অনুপ্রাণিত করবে বলেই মনে করেন ওয়ানডে দলের অধিনায়ক রুমানা আহমেদ। গতকাল তিনি বলেছেন, ‘এটা অবশ্যই আমাদের অনুপ্রাণিত করবে। এমনিতে আমাদের সুযোগ-সুবিধা খারাপ না। যা দিচ্ছে বিসিবি। আরো ভালো করতে, আরো বেশি সুযোগ-সুবিধা দরকার। বেতন, ম্যাচ ফি বাড়ানো হয় যদি, তাহলে এটা ভালো পদক্ষেপ। পারিশ্রমিক বাড়ালে সবাই আত্মবিশ্বাস পাবে। এটা আমাদের ভালো খেলতে উৎসাহ দিবে।’

যারা একাধিক বিয়ের ব্যাপারে আগ্রহী তাদেরকে বলছি…

এ এফ আখি

ইদানিং একাধিক বিয়ে নিয়ে অনেক নসিহত হচ্ছে। যারা একাধিক বিয়ের ব্যাপারে আগ্রহী তাদেরকে বলছি-

1) আপনি আরেকটা বিয়ে করতে গেলে কুমারী খুজবেন না তো?

2)আপনার মেয়েকে আরেকটা বউ আছে এমন পাত্রের সাথে বিয়ে দিবেন তো?

3)আপনার বাবাকে আরেকটা বিয়ে করবেন তো?

4) বিধবা,তালাক প্রাপ্ত, দুই বাচ্চার মা,আপনাদের চেয়ে বয়সে বড় এমন নারীদের বিয়ে করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন তারপর নারীদের দোষ ধরবেন স্বামীকে বিয়ে করতে দিতে চায় না ।আজব!

5) মনে রাখবেন একাধিক বিয়ে ইসলামে বিভিন্ন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অনুমোদিত একটা বিষয়।ফরজ নয়।তাই ফরজ গুলো নিয়ে জনমত তৈরী করুন।

বিয়ে নিয়ে ফেসবুকে এত নসিহতের দরকার নাই। কারণ চার বিয়ের ব্যাপারে আমার জানামতে কোন পুরুষের দ্বিমত নাই তো নসিহত কাদের জন্য?

যখন আপনারা নজির স্থাপন করতে পারবেন অধিক বয়স ,বিধবা আর তালাক প্রাপ্ত নারীদের হুর হুর বিয়ে করবেন তখন দেখবেন অনেক মেয়েই তা মেনে নিবে।

আরেকটা বিষয় যদি কিছু করতে চান তো –

সমাজে কোটিপতিদের তালিকা করুন, অসহায় নারীদের খুজে বের করুন তারপর তাদেরকে একাধিক বিয়ে করতে বাধ্য করুন। যারা পতিতাদের কাছে যায় তাদের খুজে বের করুন এবং একেকটা পতিতার সাথে তাদের বিয়ে দিয়ে দিন।

যে ছেলেরা আথির্ক সামর্থ না থাকার জন্য বিয়ে করতে পারছে না তাদের সাহায্য করুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করুন অন্তত কিছু মেয়ের তো গতি হবে।

যদি বলেন এ গুলো তো রাষ্ট্র করবে , তাহলে বলবো এবার তাহলে সমাজে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্ঠা করুন এটা ফরজ। আর দ্বিতীয় বিয়ে সুন্নত।

সামাজিক মাধ্যমে নারী ও শিশুদের ছবিতে কারা খারাপ মন্তব্য করে? কেন করে?

বাংলাদেশের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের কন্যার ছবিতে খারাপ মন্তব্যকারীদের পুলিশ খুঁজতে শুরু করেছে। অরুচিকর মন্তব্যকারীদের খোঁজা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এদিকে সাকিব সাকিব আল হাসানের স্ত্রী, উম্মে আহমেদ শিশির নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পাতায় এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, পাবলিক ফিগার হিসাবে এসব বাজে মন্তব্য তারা পাত্তা দিচ্ছেন না, বরং এই ব্যাপারটিকে বড় করে আলোচনায় নিয়ে আসাটা পছন্দ হয়নি তাদের।

কিন্তু তারপরেও এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা চলছে। তবে ফেসবুকে নারী ও শিশুদের ছবিতে খারাপ মন্তব্যের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। তারকা বা জনপ্রিয় ব্যক্তিদের বাইরেও ফেসবুকে এরকম আপত্তিকর মন্তব্যের শিকার হয়েছেন সাধারণ মানুষও।

সম্প্রতি কক্সবাজারে পুলিশের গুলিতে মেজর (অব) সিনহার সঙ্গী শিপ্রা দেবনাথের ছবি বা অভিনেত্রী রাফিয়াথ রশীদ মিথিলার ছবিতেও অনেককে অরুচিকর বা খারাপ মন্তব্য করতে দেখা গেছে।

কিন্তু কারো ছবিতে কেন অরুচিকর মন্তব্য করেন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা? এর পেছনে কি মনোভাব কাজ করে?
সাইবার হামলার শিকার বেশি নারীরা

যারা কারো ছবি বা স্ট্যাটাসে অরুচিকর মন্তব্য করেন, তাদের ভেতর কয়েকটি বিষয় কাজ করে বলে বলছেন সাইবার ক্রাইম বিশেষজ্ঞরা।

মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. মেখলা সরকার বলছেন, যারা এই ধরণের মন্তব্য করে, তাদের মধ্যে একটা মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা থাকে। মহিলাদের নিয়ে কথা বলতে তাদের ভালোই লাগে।

”তাদের মধ্যে আত্মসম্মানের সমস্যা থাকে। যেভাবে তারা বড় হয়েছেন, সেখানে সমস্যা থাকে, এটা যে একটা নেগেটিভ জিনিস, সেটা সে বুঝতে পারে না।”

তিনি মনে করেন, এ ধরণের মানুষজন সাধারণত অন্যদের কাছে মনোযোগ পায় না। ফলে এভাবে সামাজিক মাধ্যমে তারা অন্যদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করে। সেটা নেতিবাচক হলেও সে মানুষের মনোযোগ পাওয়ার চেষ্টা করে।

তবে যারা এরকম মন্তব্য করেন, তারাও আবার অনেক সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীর কাছ থেকে লাইক কমেন্টসও পান, সেটাও তাদের আবার একাজে উৎসাহিত করে।

মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. মেখলা সরকার বলছেন, যারা এরকম মন্তব্য করছেন, তারাও কিন্তু অনেকের কাছ থেকে লাইক, কমেন্ট পান। পজিটিভ-নেগেটিভ, যেকোনো ধরণের কমেন্টই তাকে উৎসাহিত করে।

”এটার সাথে তার শিক্ষা বা চাকরি বা অর্থনৈতিক অবস্থানের সম্পর্ক নেই। দেখা যাবে, সমাজের ভালো অবস্থানের একজন হয়তো এ ধরণের আচরণ করছে, কিন্তু কম শিক্ষিত একজন হয়তো সেটা করছে না। আসলে প্রকৃত শিক্ষা তো এখানে হচ্ছে না।” তিনি বলছেন।

শিশুদের জন্য মোবাইলের ব্যবহার নিরাপদ করতে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল সিস্টেম চালু করার ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

সমাজবিজ্ঞানী সাদেকা হালিম বলেছেন, এক্ষেত্রে অসচেতনতা, মানসিক বিকৃতি এবং কট্টর পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ কাজ করে।

তার মতে, একজন নারী তিনি যে বয়সেই হন না কেন তাকে সমাজে এখনও যৌনবস্তু হিসেবে বিচার করা হয়।

এছাড়া তারকাদের জীবনের প্রতি ঈর্ষাবোধ ও হীনমন্যতা এই অরুচিকর মন্তব্যগুলোয় প্রতিফলিত হয় বলে তিনি মনে করেন।

“সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সহজেই যা ইচ্ছা লেখা যায়। যেটা অন্য কোথাও সম্ভব না। যারা এ ধরণের মন্তব্য করে তারা নারীকে মানুষ হিসেবে দেখে না, নারী যে বয়সের হোক সে ভোগের বস্তু। মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের প্রতি তাদের কোন সম্মানবোধ নেই,” বলেন সাদেকা হালিম।

কোন শ্রেণীর মানুষ এ ধরণের কটু মন্তব্য বেশি করে?

বাংলাদেশের একজন সাইবার বিশেষজ্ঞ জেনিফার আলম বলছেন, আসলে সব ধরণের শ্রেণীর মানুষই এ ধরণের মন্তব্য করে। তবে সবচেয়ে বেশি করে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষজন।

”এজন্য তাদের মধ্যে হতাশা ও বিনোদনের অভাব একটা প্রধান কারণ। এছাড়া আমাদের এখানে সাধারণ সৌজন্য বোধের অনেক অভাব রয়েছে। আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে মানুষের সাথে ব্যবহারের কিছু নিয়ম রয়েছে, তেমনি ইন্টারনেটেও বিচরণের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম আছে। কিন্তু এই ব্যাপারে আমাদের দেশের মানুষের সেই সচেতনতা তৈরি হওয়ার আগেই অনেকের হাতে ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তি চলে গেছে।

”ফলে অনেকের মধ্যে যে হতাশার ব্যাপার থাকে, দিন শেষে সে সেটা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিচ্ছে। সেই হতাশার বহিঃপ্রকাশ এসব কটু মন্তব্য। যাকে নিয়ে মন্তব্য করা হচ্ছে, সে যে কষ্ট পাচ্ছে, এটা যে একধরণের সাইবার বুলিং, সেই সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। তারা মনে করেন, ফোন-ইন্টারনেট থাকলেই তারা যে কাউকে যেকোনো কিছু লিখে দিতে পারেন, ম্যাসেজ করতে পারেন। ” বলছেন জেনিফার আলম।
সাইবার অপরাধ ঠেকানোর মূল ওষুধ সচেতনতা বাড়ানো।

খারাপ মন্তব্য করার পেছনে কি যুক্তি দেখান মন্তব্যকারীরা
ফেসবুক বা সামাজিক মাধ্যমে খারাপ মন্তব্য করার কারণে বিভিন্ন সময় অনেককে আটক করেছে বাংলাদেশের কাউন্টার টেরোরিজমের সাইবার ক্রাইম ইউনিট।

গ্রেপ্তারকৃতরা এরকম কর্মকাণ্ডের পেছনে কি যুক্তি দেন, জিজ্ঞেস করেছিলাম ইউনিটের প্রধান আ ফ ম আল কিবরিয়ার কাছে।

তিনি বলছেন, ”নিজেদের প্রচারণা বাড়ানোর জন্য কেউ কেউ এটা করে, পেজের ভিউ বাড়ানোর জন্য। আরেক ধরণের মানুষ মনে করে, এটা একটা আলোচনার টপিক হলো। আমি একটা কমেন্ট করলাম, তাতে আমাকে গালিগালাজ করলেও অনেক মানুষ আমার প্রোফাইলে ঢুকবে। হয়তো আমার ফলোয়ার বাড়লো, ফ্রেন্ড বাড়ল। এসব উদ্দেশ্যে অনেকে করে।”

”আরেক গ্রুপ আছে এমন এমনি করে। তাদের মধ্যে কিছু স্যাডিস্ট থাকে, মেন্টালি ডিস্টার্বড থাকে, তাদের মধ্যে নৈতিক অবক্ষয়, কিছুটা বিকৃতি থাকে।”

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, অনেকে ভাবেন, ফেসবুক বা সামাজিক মাধ্যমে এরকম কিছু মন্তব্য করলে তার কিছু হবে না। অনেক সময় তারা ফেক আইডি ব্যবহার করে এসব মন্তব্য করেন। তারা ভাবেন, তাদের কেউ ধরতে পারবে না বা পরিচয় জানতে পারবে না।

যদিও পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর তাদের সেই ভুল ভেঙ্গে যায়।
সাইবার বিশেষজ্ঞ এবং পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এরকম বুলিংয়ের শিকার হওয়ার পরেও অনেকে আইনি সহায়তা নিতে চান না।

সাইবার বিশেষজ্ঞ এবং পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এরকম বুলিংয়ের শিকার হওয়ার পরেও অনেকে আইনি সহায়তা নিতে চান না।

সাইবার বুলিংয়ের আইনি প্রতিকার

সাইবার বিশেষজ্ঞ এবং পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এরকম বুলিংয়ের শিকার হওয়ার পরেও অনেকে আইনি সহায়তা নিতে চান না।

ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এরকম ব্যক্তিরা শাস্তির মুখোমুখিও হন না। তবে আইনি পদক্ষেপ নেয়ায় অনেককে গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটেছে।

সাইবার বিশেষজ্ঞ জেনিফার আলম বলছেন, সাইবার ক্রাইমের শিকার হয়েও আমাদের মানুষ যে কাজটি সহজে করতে চান না, সেটি হলো আইনি প্রতিকার চাওয়া বা আইনি পদক্ষেপ নেয়া।

”আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পূর্ণ সক্ষমতা আছে যেকোনো ধরণের সাইবার বুলিং বা সাইবার হ্যারাজমেন্ট ট্র্যাক করার এবং তাদের আইনের আওতায় আনা। কিন্তু যিনি ভিকটিম, তিনি যদি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেন, তাহলে তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিছু করতে পারবে না। তাই হয়রানির শিকার হলে অভিযোগ করার ব্যাপারটা নিশ্চিত করা জরুরি।” তিনি বলছেন।

সাইবার ক্রাইম বিভাগের প্রধান আ ফ ম আল কিবরিয়া বলছেন, ‘ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী কিছু কিছু ধারা আছে কগনিজেবল অর্থাৎ পুলিশ চাইলে মামলা নিতে পারবে এবং গ্রেপ্তার করতে পারবে। আর কিছু ধারা আছে নন-কগনিজেবল, অর্থাৎ এখানে সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল মামলা করতে হবে। আদালতের নির্দেশে পুলিশ তদন্ত করবে এবং ব্যবস্থা নেবে। ”

”ফেসবুকে গালি দেয়া বা কটু মন্তব্য করার বিষয়গুলো আইন অনুযায়ী নন-কগনিজেবল অপরাধের মধ্যে পড়েছে। ফলে ভিকটিমকে ট্রাইব্যুনাল বা আদালতে মামলা করতে হয়। অথবা থানায় জিডি করতে পারেন। কিন্তু আপনাকে অবশ্যই প্রতিকার চাইতে হবে।” তিনি বলছেন।

তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, যে কেউ সাইবার অপরাধ, হয়রানি বা বুলিং শিকার হলে অবশ্যই আইনি পদক্ষেপ নেবেন।

”আপনি থানায় জিডি করুন, সেটার তদন্ত করবে পুলিশ। অথবা চাইলে আপনি কোর্টেও মামলা করতে পারেন।” তিনি বলছেন- বিবিসি

ফ্রিজ কি করোনাভাইরাসের নিরাপদ আশ্রয়স্থল

গত বছরের শেষভাগে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত সারাবিশ্বে চার লাখের বেশি মানুষ মারা গেলেও এই ভাইরাসের উৎস, চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য, গতিপ্রকৃতি বা বিবর্তনের ধরণ সম্পর্কে এখনো পর্যন্ত নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেনি বিজ্ঞানীরা।

এই ভাইরাস কোন ধরণের সমতলে কতক্ষণ বেঁচে থাকে, হাঁচি-কাশির মাধ্যমে কত দ্রুত ছড়ায়, কোন ধরণের আবহাওয়া বা তাপমাত্রায় এর প্রকোপের কতটা তারতম্য হয়, এই বিষয়গুলো সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা একেকবার একেক মত দিয়েছেন, আবার নতুন গবেষণা প্রকাশিত হওয়ার প্রেক্ষিতে দফায় দফায় বিশেষজ্ঞদের মত পরিবর্তন করার ঘটনাও ঘটেছে।

শুরুতে একসময় মানুষের ধারণা ছিল যে উচ্চ তাপমাত্রায় এই ভাইরাস বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারে না, তবে এই দাবির কোনো প্রমাণ বৈজ্ঞানিক ভিত্তি পাওয়া যায়নি শেষ পর্যন্ত। সেরকম আরেকটি ধারণা হলো, ফ্রিজের ভেতরে অন্যান্য স্থানের তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশি সময় ভাইরাসটি বেঁচে থাকতে পারে। তবে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত অন্যান্য মতবাদের মত এই বিষয়টি নিয়েও শতভাগ নিশ্চিত হতে পারেনি বিজ্ঞানীরা।

ফ্রিজে কি করোনাভাইরাস বেশি সময় ধরে টিকে থাকে?

এর আগে যেসব করোনাভাইরাস পরিবেশে ছিল, সেগুলোর কয়েকটি প্রজাতি হিমাঙ্কের নীচে তাপমাত্রায় পুরোপুরি কার্যকরভাবে বেঁচে না থাকলেও স্থিতিশীল অবস্থায় টিকে থাকে বলে প্রমাণ পেয়েছিল বিজ্ঞানীরা।

২০১০ সালে আমেরিকান সোসাইটি অব মাইক্রোবায়োলোজি’র এক গবেষণায় উঠে আসে যে সার্স করোনাভাইরাস (যেটি অনেকটা কোভিড-১৯ ভাইরাসের মত) ৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় (প্রায় ৪.৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) যেরকম আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা থাকে, ওই পরিবেশে টিকে থাকতে পারে।

সাধারণত গৃহস্থালিতে যেসব রেফ্রিজারেটর ব্যবহার করা হয়, সেগুলোতে এই তাপমাত্রা থাকে।

গবেষণায় উঠে আসে, তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আর্দ্রতা ২০ শতাংশের নীচে হলে সার্স করোনাভাইরাস প্রায় ২৮ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকে, যেখানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর আর্দ্রতা ৮০ শতাংশ হলে ভাইরাসটির স্থায়িত্বকাল থাকে ৬ ঘণ্টার মত।

অনেক বিশেষজ্ঞ এই প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে আর পরবর্তী গবেষষণার জন্য অপেক্ষা না করে ফ্রিজ ব্যবহারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন।

তারা বলছেন, কাছাকাছি প্রজাতির একটি করোনাভাইরাস যেহেতু ফ্রিজে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে পারে, কাজেই নভেল করোনাভাইরাসেরও একই বৈশিষ্ট্য থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

স্যান ফ্র্যান্সিসকোর গ্ল্যাডস্টোন ইনস্টিটিউটের রিসার্চ সাইন্টিস্ট ও ভাইরোলজিস্ট ড. ওয়ার্নার গ্রিন গত এপ্রিলে মার্কিন সংবাদ সংস্থা এনবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন করোনাভাইরাস চরিত্রগতভাবে একটি ‘আঠালো’ ভাইরাস।

ওই সাক্ষাৎকারে ড. গ্রিন বলেছিলেন, ‘এই ভাইরাস (সার্স) বিভিন্ন সমতলে আশ্চর্জজনকভাবে লম্বা সময় টিকে থাকে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও ভাইরোলজিস্ট নজরুল ইসলাম বলেন, নভেল করোনাভাইরাস ফ্রিজে কতদিন বেঁচে থাকতে পারে সেসম্পর্ক না জানা গেলেও ফ্রিজের আবহাওয়ায় অন্য জায়গার তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশি সময় বাঁচতে পারে বলে ধারণা করা যায়।

তিনি বলেন, ‘এটি যেই ধরণের ভাইরাস, তা সাধারণত ফ্রিজের পরিবেশে বেশি সময় বাঁচতে পারার কথা। কিন্তু সেখানে ঠিক কতদিন বাঁচতে পারবে, এ ধরণের কোনো গবেষণা এখনো নেই।’

তবে সার্স করোনাভাইরাস নিয়ে করা গবেষণার ভিত্তিতে নভেল করোনাভাইরাসের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা তৈরি করতে চান না বিশেষজ্ঞদের অনেকেই।

এপ্রিলে অস্ট্রেলিয়ার এবিসি রেডিওকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি চিফ মেডিক্যাল অফিসার মাইকেল কিড বলেন নভেল করোনাভাইরাস ফ্রিজে টিকে থাকতে পারে কিনা আর থাকলেও কতক্ষণ টিকে থাকতে পারে, তা গবেষণার আগে বলা সম্ভব না।

তিনি বলেন, ‘সার্স করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষণা হলেও নভেল করোনাভাইরাস সম্পর্কে তেমন কোনো গবেষণা হয়নি। কাজেই আমরা নিশ্চিতভাবে জানি না যে এই ভাইরাসটির বৈশিষ্ট্য সার্স করোনাভাইরাসের মত কি না।’ তাই তিনি ফ্রিজ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সাধারণ সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেন।

ফ্রিজ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কী ধরণের সতর্কতা নেবেন?

এবিসি রেডিওকে দেয়া সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক মাইকেল কিড মন্তব্য করেছিলেন যে ফ্রিজে রাখার পরে তো বটেই, ফ্রিজে রাখার আগেও সব খাদ্যপণ্য অথবা পণ্যের প্যাকেট অন্তত একবার জীবাণুমুক্ত করে নেয়া জরুরি।

‘বাইরে থেকে বাজার ঘরে এনে ফ্রিজে রাখার আগে জীবাণুমুক্ত করার পাশাপাশি বারবার হাত ধোয়ার বিষয়টিও মনে রাখতে হবে সবাইকে,’ বলেন মাইকেল কিড।

সার্স করোনাভাইরাসের মত, ফ্রিজে রাখা খাদ্যপণ্যের গায়ে বা প্যাকেটে নভেল করোনাভাইরাস লেগে থাকলে তা সপ্তাহ চারেক বেঁচে থাকতে পারে বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। তাই বাজার করার পর পণ্য ফ্রিজে রাখার আগে ও ফ্রিজ থেকে বের করার পর তা জীবাণমুক্ত করার ব্যাপারে জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

ভাইরোলজিস্ট নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ফ্রিজে রাখা খাবারের প্যাকেট বের করার পর প্যাকেটটি জীবাণুনাশক মেশানো কাপড় দিয়ে ভালো করে মুছে নেয়া প্রয়োজন।’

ফ্রিজে রাখা শাকসবজি রান্না করার আগে কিছুক্ষণ সাবান মিশ্রিত পানিতে রেখে ধুয়ে নেয়ার উপদেশ দেন তিনি। তবে মাছ বা মাংসের ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয় বলে মাছ-মাংস যেই প্যাকেটে বা পাত্রে রাখা হবে, সেটিকে জীবাণুমুক্ত করে নেয়া জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

‘এছাড়া যারা ফ্রিজ থেকে বের করা মাছ-মাংস কাটাকাটির দায়িত্বে থাকবেন, তাদের আক্রান্ত হওয়ার বেশি ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।’

নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফ্রিজ থেকে খাবার বের করা এবং রান্নার কাজ করার সময় বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস তৈরি করার উপদেশ দেন তিনি।

‘ফ্রিজ থেকে বের করা মাছ-মাংস নিয়ে কাজ করবেন যারা, তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং নিয়মিত ভিত্তিতে হাত ধোয়ার মত বিষয়গুলো মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ। যেই কাজে ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে, সেরকম প্রত্যেকটি ছোট ছোট কাজ শেষে মনে করে হাত ধোয়া জরুরি।’

সূত্র : বিবিসি

সাকিবকন্যাকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যকারীরা আসছে আইনের আওতায়

বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের শিশুকন্যাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন।

শুক্রবার (২১ আগস্ট) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সাইবার ক্রাইমের এ সংক্রান্ত একটি ঘোষণা দেয়।

সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন জানায়, বাংলাদেশের গর্ব সাকিব আল হাসানের কন্যার ছবি নিয়ে কিছু বিকৃত মানসিকতার লোক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্প্রতি কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে এবং অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

এসময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিষ্টাচার বজায় রাখার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

সূর্যমুখী ফুলের বাগানে কানে লাল ফুল গুঁজে পোস্ট করা ফুলের মতো সুন্দর একটি ছবির নিচে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন কয়েকজন বিকৃত মানসিকতার মানুষ। বিষয়টি সাধারণ মানুষকে ব্যাপকভাবে নাড়া দেয়। চারদিক থেকে আসতে থাকে প্রতিবাদ। ইতোমধ্যে কয়েকজনের পরিচয়ও শনাক্ত হয়েছে।

পাইনাপেল ফ্রাইড রাইস তৈরির সহজ রেসিপি

ফ্রাইড রাইস অনেকের কাছে পছন্দের একটি খাবার। বিশেষ করে শিশুরা এটি খেতে দারুণ পছন্দ করেন। ফ্রাইড রাইস রান্নায় বৈচিত্র আনতে চাইলে রাঁধতে পারেন পাইনাপেল ফ্রাইড রাইস। চলুন জেনে নেয়া যাক রেসিপি-

উপকরণ:
পোলাও বা বাসমতির চাল দিয়ে রান্না ভাত ২ কাপ
পাকা-আনারস কিউব করে কাটা আধা কাপ
রসুনকুচি ১ টেবিল চামচ
পেঁয়াজকুচি ২ টেবিল চামচ
কাঁচামরিচ কুচি স্বাদমতো
তেল ৩/৪ টেবিল চামচ
ফিশ সস ১/২ টেবিল চামচ
সয়া সস ১/২ টেবিল চামচ
চিংড়ি মাছ ৮/১০টি
গাজর কিউব করে কাটা ২ টেবিল চামচ (সিদ্ধ করা)
মটরশুটি ২ টেবিল চামচ (সিদ্ধ করা)
গোলমরিচ গুঁড়া আধা চা চামচ
কিশমিশ ১ টেবিল চামচ
কাজুবাদাম ৭/৮টি (ভাজা)
কারি পাউডার ১ চা চামচ (ইচ্ছা)
পেঁয়াজপাতা কুচি ১ টেবিল চামচ
ধনেপাতা কুচি ১ টেবিল চামচ
ডিম ১টি
চিনি ১ চা চামচ

আম যেভাবে রেখে বছরজুড়ে খাওয়া যাবে

আমের চেয়ে মজার ফল হয়ত আর নেই। আর আমাদের দেশের আমের স্বাদ বিশ্বের সব ফলকেই হার মানাবে।
সবার প্রিয় আম বছরের মাত্র কিছু দিনই পাওয়া যায়। এইতো এবারের মতো শেষ হয়ে এসেছে আমের মৌসুম।

তবে কি পুরো বছর আম না খেয়েই কেটে যাবে? একদমই না। যদি সঠিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন, তবে প্রায় বছরজুড়ে আম খেতে পারবেন। আর রাখতে চাইলে এখনই সময়, ক’দিন পরে ইচ্ছা থাকলেও আম কিন্তু থাকবে না।

সংরক্ষণ করবেন যেভাবে
• পাকা আমের খোসা ছাড়িয়ে ছোট ছোট টুকরো করে জিপলক ব্যাগে রাখুন
• একটার ওপর আরেকটা রাখবেন না
• ভেতরের বাতাস বের করে আমের প্যাকেটগুলো ডিপ ফ্রিজে রেখে দিন
• স্বাদ ও পুষ্টিগুণ অটুট থাকবে বহু দিন
• আম ব্লেন্ড করে আইস ট্রে-তে বরফ জমিয়ে জিপলক ব্যাগে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন
• বছরজুড়ে খেতে পারবেন এই মজার আম।

সংরক্ষণ করা আম দিয়ে বছরের যেকোনো সময় আমের মিল্কশেক কিংবা দুধ-আম খেতে পারেন। ফ্রিজারে আম এক বছর পর্যন্ত ভালো থাকে।

 

ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে ঐতিহাসিক মনোনয়ন পেলেন কমলা হ্যারিস

যুক্তরাষ্ট্রের আসছে নির্বাচনে ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে দেশটির প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি থেকে ঐতিহাসিক এক মনোনয়ন পেয়েছেন কমলা হ্যারিস। তিনি বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নির্বাচিত কৃষ্ণাঙ্গ ও ভারতীয় মিশ্রণের সিনেটর।

বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) বিবিসি জানিয়েছে, কমলা হ্যারিস জো বাইডেনের সঙ্গে ডেমোক্র্যাটের ভাইরাস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনিত হয়েছেন। এর আগের দিন দলটির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনিত হন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

কমলা হ্যারিস ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন আরও ইতিহাস সৃষ্টি হবে। প্রথম কোনো নারী দেশটির দ্বিতীয় শীর্ষ পদে যাবেন। আবার কমলা হ্যারিস নির্বাচিত হলে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে কোনো অশ্বেতাঙ্গ নারীর অভিষেক ঘটবে।

গত ১৭ আগস্ট মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে দলীয় কনভেনশন ডেকেছিল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। চার দিনব্যাপী এই কনভেনশনের তৃতীয় দিন রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে কমলা হ্যারিসকে ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ঘোষণা করেন ডেমোক্র্যাটরা। তবে এবার করোনা ভাইরাসের কারণে অনলাইনে ভোট দিয়ে তার প্রার্থিতা চূড়ান্ত করেন দলের প্রতিনিধিরা।

চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়ে কমলা হ্যারিস কনভেনশনে বলেন, রিপাবলিকান নেতা ‘আমাদের ট্র্যাজেডিকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে পরিণত করেছেন’। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ইঙ্গিত করে উইলমিংটনের হলরুমে তিনি বলেছেন, আমরা একটি প্রতিচ্ছবিতে এসে গেছি।

এছাড়া ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর এবং বড় একটি দল থেকে প্রথমবারের মতো মনোনয়ন পাওয়া কৃষ্ণঙ্গ রানিং মেট কমলা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘নেতৃত্বের ব্যর্থতা’ ধরিয়ে দিয়েছেন প্রথম দিনই।

এর আগের দিন রাতে জো বাইডেনকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ঘোষণা করে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। জো বাইডেন এর আগেও দুই বার ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। ১৯৯৮ ও ২০০৮ সালের সেই দুই লড়াইয়ে তিনি না পারলেও এবার তৃতীয়বারে এসে সফল হয়েছেন।

আসছে ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে জো বাইডেন এবং কমলা হ্যারিস জুটি ডেমোক্র্যাটিক পার্টি থেকে লড়াই করবেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের সঙ্গে।

চুল ও ত্বকের যত্নে আমলকী

সুস্বাস্থ্যেও জন্য ভেষজ গুণসম্পন্ন আমলকীর জুড়ি নেই। এ কথা সবাই কমবেশি জানেন। তবে রূপচর্চায় এই সস্তাদরের দেশি ফলটির ব্যবহার সম্পর্কে অনেকেরই অজানা। ত্বক ও চুলে আমলকী ব্যবহার বিভিন্ন সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করে। রূপচর্চায় আমলকী ব্যবহারের কিছু টিপস-

ব্রণের দাগ দূর করতে
প্রাকৃতিক উপায়ে ব্রণের দাগ দূর করতে সহায়তা করে আমলকী। আমলকীর রস মুখে মেখে ৩০ মিনিট পর ধুয়ে নিতে হবে ঊষ্ণ পানিতে। অনুভূতিপ্রবণ ত্বক হলে আমলকীর রসের সঙ্গে মিশিয়ে নিন সামান্য পানি। ভালো ফলের জন্য ব্যবহার করতে হবে নিয়মিত।

মরা ত্বক দূর করতে
স্ক্রাবার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পাওে আমলকীর রস। এতে থাকা ভিটামিন সি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বক সজীব ও টানটান করতে সহায়তা করে। এক চামচ আমলা পাউডার গরম পানিতে মিশিয়ে তৈরি করা পেস্টে মুখ স্ক্রাব করতে হবে। স্ক্রাব করার পাঁচ মিনিট পর মুখ ধুয়ে নিলেই হলো। এই পেস্টের সঙ্গে সামান্য হলুদ মিশিয়ে নেয়া যেতে পারে।

চুল পড়া রোধে
চুল পড়া বন্ধ করতে আমলকী বেশ কার্যকর। প্রয়োজনীয় পরিমাণ শুকনো আমলকী পানিতে নিয়ে গরম করম করতে হবে। আমলকী ভালোভাবে সেদ্ধ হলে তা চটকে পেস্ট করে নিতে হবে। এই পেস্ট চুলের গোড়া ও পুরো চুলে লাগিয়ে কিছু সময় রেখে মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। ভালো ফল পেতে সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করতে হবে এই প্যাক। ঔজ্জ্বল্য বাড়ানোর জন্য শুধু আমলকীর রসও ব্যবহার করা যায়। এক্ষেত্রে আমলকীর রস চুলে লাগিয়ে আধা ঘণ্টা রেখে ধুয়ে নিলেই হলো।

আমলকীর তেল তৈরির ঘরোয়া পদ্ধতি
তেল তৈরির জন্য প্রয়োজন টাটকা আমলকী ও নারকেল তেল। প্রথমে এক কাপ আমলকী ভালোভাবে ধুয়ে বিচি ছাড়িয়ে নিয়ে মিক্সারে গুঁড়া করে নিতে হবে। এতে পানি ব্যবহার করা যাবে না। এরপর একটি পাত্রে এক কাপ নারকেল তেল চুলায় গরম করতে দিতে হবে। তেল গরম হলে এতে দিয়ে দিতে হবে আমলকীর গুড়াঁ।

আমলকীর গুঁড়া মিশ্রিত নারকেল তেল ফুটে ওঠার ১০-১৫ মিনিট পর তেল চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করে কাঁচের জারে রাখতে হবে। এই তেল চুলের গোড়া ও চুলে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এরপর চুল ধুয়ে নিতে হবে ভালো ব্র্যান্ডের মাইল্ড শ্যাম্পুর সাহায্যে।

গর্ভনিরোধক বড়ির ক্ষমতা ‘কমিয়ে দিতে পারে’ অ্যান্টিবায়োটিক

হরমোনাল গর্ভনিরোধক ওষুধ ব্যবহার করা নারীরা সাধারণ সমস্যায় অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করলে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের পরিস্থিতিতে পড়তে পারেন বলে সতর্ক করেছেন ব্রিটেনের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা।

বিশেষজ্ঞরা ৭৪ হাজার ৬২৩ নারীর ওষুধ সেবনের ডেটা বিশ্লেষণ করে জানিয়েছেন, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ওষুধ গর্ভনিরোধক বড়ির কার্যক্ষমতা পুরোপুরি কমিয়ে দিতে পারে।

গবেষণায় অংশ নেয়া ৪৬ জন নারী গর্ভনিরোধক বড়ি সেবনের পরেও গর্ভধারণ করেন, তারা সবাই অ্যান্টিবায়োটিক নিচ্ছিলেন।

ফলাফলে গবেষকেরা লিখেছেন, ‘হরমোনাল গর্ভনিরোধকের সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের যে একটা যোগসূত্র আছে, সেটি এই গবেষণায় দেখা গেল।’

‘হরমোনাল গর্ভনিরোধক ওষুধ সেবনকারী নারীদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত।’

লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের অধ্যাপক স্টিফেন ইভান্স বলছেন, ‘আমার মনে হচ্ছে রোগীরা ওষুধের নির্দেশিকা ঠিকমতো পড়ে দেখেন না অথবা চিকিৎসক ঠিকমতো সতর্ক করছেন না।’

গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে সাধারণ ওষুধ সেবনকারী নারীদের তুলনায় অ্যান্টিবায়োটিক সেবনকারী নারীদের (যারা গর্ভনিরোধক ওষুধ নিচ্ছেন) গর্ভধারণের শঙ্কা ৭ গুণ বেশি।

পার্ট-টাইম চাকরির সুযোগ পাবেন যেখানে

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতির প্রসারে বদলে গেছে চাকরির বাজারও। ফলে স্থায়ী (ফুল-টাইম) চাকরির বাইরে বেড়েছে অস্থায়ীভাবে (পার্ট-টাইম) কাজ করার সুযোগও।

মূলত শিক্ষার্থীরাই এসব পার্ট-টাইম চাকরি করে থাকে। পড়াশোনার পাশাপাশি আয়ের সুযোগ হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোও ছোটোখাটো চাকরির জন্য ফুল-টাইম কর্মী নিয়োগ না দিয়ে শিক্ষার্থীদের বাছাই করে থাকে। চাকরি খোঁজার ওয়েবসাইটগুলোতেই পাবেন পার্ট-টাইম চাকরির বিজ্ঞপ্তি বা খবরাখবর।

আসুন জেনে নিই, কোন কোন কাজে পার্ট-টাইম চাকরির সুযোগ মেলে।

সেলস অ্যাসিস্ট্যান্ট
সুপারশপ থেকে শুরু করে ব্র্যান্ডের শোরুমগুলোতে সেলস অ্যাসিস্ট্যান্ট বা বিক্রয়কর্মীর চাকরির সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন মৌসুমে এ পদের কর্মীর চাহিদা বাড়ে। তখন প্রতিষ্ঠানগুলো বাড়তি লোক নিয়োগ দিয়ে থাকে। তাদের কাজ হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবা বিক্রি বাড়ানো। ভালো যোগাযোগ দক্ষতা ও সুন্দর বাচিক ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তিকে বাছাই

কপিরাইটার
বিভিন্ন অ্যাড ফার্ম, মার্কেটিং ও পিআর এজেন্সি, গবেষণা প্রতিষ্ঠানে জুনিয়র কপিরাইটার হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এর জন্য আগ্রহীকে ভাষাগত দক্ষতা ও কম্পিউটারের কারিগরী জ্ঞান থাকতে হবে।

কল সেন্টার অ্যাসিস্ট্যান্ট
এখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কাস্টমারদের অনলাইন সেবা দিয়ে থাকে। তাদের এ কাজ করে দেয় মূলত কল সেন্টারগুলো। সেখানে অনেক জনবলের দরকার হয়। যোগাযোগ দক্ষতা, পরিশ্রম করার মানসিকতা ও ধৈর্যশক্তি থাকলে কল সেন্টারগুলোতে অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে পার্ট-টাইম চাকরি করতে পারবেন।

ল্যাঙ্গুয়েজ ট্রেইনার
আপনি হয়তো একাধিক ভাষায় দক্ষ, সেটিকেই কাজে লাগিয়ে ভালো আয় করতে পারেন। দেশে অবস্থান করা অনেক বিদেশি নাগরিক বাংলা ভাষা শিখতে চায়; বাংলার ওপর ভাষাগত দক্ষতা থাকলে সে সুযোগ আপনি নিতে পারেন। এ ছাড়া ইংরেজি, ফরাসি, স্প্যানিশ, জার্মান, জাপানিজ কিংবা চীনা- এসব বিদেশি ভাষার শেখার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে দেশে এখন। ভাষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে শুরু করে বিদেশি কোম্পানিগুলোতে ল্যাঙ্গুয়েজ ট্রেইনার বা গাইড হিসেবে কাজ করতে পারেন।

টিউটর
বিশ্ববিদ্যালয় কোচিং থেকে শুরু করে চাকরির জন্য পড়াশোনা বা কোচিং- এসব জায়গায় ক্লাস নিতে পারেন। বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে যোগাযোগ করতে পারেন। এতে আপনার একাডেমিক রেজাল্ট এবং অন্যান্য সাফল্য সহায়তা করবে।

ওয়েটার
রেস্টুরেন্ট ও কফি শপগুলোতে ওয়েটার হিসেবে পার্ট-টাইম চাকরি করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে কাস্টমারদের খাবার পরিবেশনায় মনোযোগ ও মানসিক চাপ সামলানোর ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন।

ট্যুর গাইড
দেশের মানুষের মধ্যে এখন ঘোরাঘুরির প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আপনি যদি ঘুরতে পছন্দ করেন তাহলে অন্যদের ট্যুর গাইড হিসেবে কাজ করতে পারেন। দেশি বিদেশি ট্র্যাভেল এজেন্সিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন এর জন্য।

ডেলিভারি ম্যান
এখন প্রায়ই প্রতিষ্ঠান অনলাইন কেনাকাটার সার্ভিস দিয়ে থাকে। কাস্টমারদের কাছে পণ্য পৌঁছে দিতে লাগে ডেলিভারি বয়ের। এ ক্ষেত্রে আপনার সাইকেল বা মোটরবাইক চালানোর দক্ষতা থাকতে হবে।

আইইডিসিআর’র নতুন পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর নতুন পরিচালক হিসেবে অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি বর্তমানে একই প্রতিষ্ঠানে মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (ভাইরোলজি ) হিসেবে কর্মরত আছেন। ডা. তাহমিনা শিরীন অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরার স্থলাভিষিক্ত হবেন।

বুধবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের পার-১ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব সারমিন সুলতানা স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়, অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীনের বদলি/পদায়নকৃত আদেশ ২০শে আগস্ট থেকে কার্যকর করা হবে। বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডার/স্বাস্থ্য সার্ভিসের এই কর্মকর্তাকে পুনরায় আদেশ না দেয়া পর্যন্ত তার বদলি/পদায়নকৃত কর্মস্থলে থাকবেন।

তরুণ উদ্যোক্তাদের ঋণ পাওয়া সহজ করতে হবে: সায়মা হক

বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) গবেষণা পরিচালক ড. সায়মা হক বিদিশা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করার পর যুক্তরাজ্যের বাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএসএস এবং নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শ্রম অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। দেশের শ্রমবাজার, দারিদ্র্য, খাদ্য নিরাপত্তা, জেন্ডার ও নারীর ক্ষমতায়ন, ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড, তরুণ জনগোষ্ঠী ও অভিবাসন নিয়ে গবেষণা করে আসছেন। ড. বিদিশা সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা ও নীতি কৌশল—যেমন পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ইত্যাদি প্রণয়নের ক্ষেত্রে সহায়তা করেছেন।

মহামারির এই সময়ে বিশ্বব্যাপী অনেক নেতিবাচক দিক থাকলেও নতুন নতুন কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়াতে বিকল্প পণ্যের সন্ধান করছেন। এ সময় ব্যক্তি সুরক্ষা পণ্য ও অনলাইন ব্যবসার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। এতে সম্পৃক্ত হয়েছে দেশের তরুণ জনগোষ্ঠী। সম্প্রতি বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠ’র সঙ্গে এসব কথা বলেছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) গবেষণা পরিচালক ড. সায়মা হক বিদিশা।

তিনি বলেন, করোনাকালে টিকে থাকতে বিকল্প ব্যবসার সন্ধান করতে গিয়ে দেখা গেছে অনেক ব্যবসায়ী যিনি চামড়ার ব্যগ তৈরি করতেন; তিনি এখন মাস্ক তৈরি করছেন। কেউ কেউ ব্যক্তি সুরক্ষার পণ্য পিপিই, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ অন্যান্য সুরক্ষা পণ্য তৈরিতে বিনিয়োগ করছেন। এখানে বড় উদ্যোক্তারা যেমন এগিয়ে এসেছেন; একই সঙ্গে ছোট ছোট তরুণ উদ্যোক্তাও জড়িত হয়ে পড়েছেন।

মহামারির এই সময়ে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি কিভাবে পুনরুদ্ধার হবে জানতে চাইলে সায়মা হক বিদিশা বলেন, ১৬ কোটি মানুষের দেশে বিশাল বাজার। মানুষের আয়ও ভালো। আর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুনরা প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে এগিয়ে আসছেন। তাঁদের ধরে রাখতে সরকার নীতি সহায়তাসহ স্বল্প সুদে ঋণ দিয়ে পাশে দাঁড়াতে পারে।

সম্প্রতি মাস্ক, পিপিইসহ অন্যান্য সুরক্ষা পণ্যের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, এ ক্ষেত্রে তরুণদের এই বিনিয়োগ কতটা টেকসই হবে এ সম্পর্কে তিনি বলেন, এখানে গুণগত মানের অনেক সমস্যা হচ্ছে। ফলে অনেক সময় ভোক্তাদের প্রতারিত হতে হচ্ছে। এ ধরনের ব্যবসায় ভোক্তার অধিকার নিশ্চিত করতে দরকার নীতিমালা।

এর পরও করোনাকালীন চূড়ান্ত সময়ের (এপ্রিল-জুলাই) চেয়ে বর্তমানে ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় আগের চেয়ে আস্থা ফিরতে শুরু করেছে উল্লেখ করে সায়মা বলেন, বিশেষ করে ওষুধ ব্যবসায় চাহিদা বেড়েছে। এ সময় ভিটামিন ও মাল্টিভিটামিন অনেক বেশি বিক্রি হয়েছে।

নতুন করে গড়ে ওঠা ব্যবসাকে টেকসই করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন, মান সনদ, মানদণ্ড নিশ্চিত করতে পারে এমন একটি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। এ জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে জরুরি একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করা যেতে পারে।

নতুন উদ্যোক্তাদের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বাজারে টিকে থাকতে হলে পণ্যের মান নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে কিছুটা দাম কম নিয়ে হলেও সঠিক সময়ে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায় ঠিকে থাকতে হলে বাজারে সুনামের বিকল্প নেই বলেও তিনি মনে করেন।

করোনা-পরবর্তী সময়ে বিকল্প পণ্যের চাহিদা সম্পর্কে তিনি বলেন, পণ্যের চাহিদা কিছুটা কমলেও এর ব্যবহার অনেকাংশেই থেকে যাবে। একসময় হ্যান্ড স্যানিটাইজার কেউ ব্যবহার না করলেও এখন অবস্থা পাল্টেছে। মানুষ অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। অর্থাৎ বাজার তৈরি হয়েছে।

করোনাকালে তরুণরা নতুন নতুন পণ্য নিয়ে অনলাইনের দিকে ঝুঁকেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনাকালীন সময়ে অনলাইনের প্রসার ঘটেছে। শিক্ষাব্যবস্থা থেকে শুরু করে ভোক্তা নিত্যদিনের বাজার করছে অনলাইনে। এ ক্ষেত্রে বড় একটি অংশজুড়ে জায়গা করে নিয়েছে দেশের তরুণ জনগোষ্ঠী। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোর বিকল্প পরিষেবার মধ্যে ‘ডেবিট ও ক্রেডিট’ কার্ডের বিল পরিশোধ, খাওয়াদাওয়ার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ—সবই হচ্ছে অনলাইনে। বিশেষ করে দেশের কুরিয়ার সার্ভিসগুলো মহামারির এই সময়ে বড় ধরনের সেবা দিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।

অর্থনীতির চাকাকে বেগবান করতে বড় শিল্পের পাশাপাশি ক্ষুদ্র, মাঝারি ও অতিক্ষুদ্র খাতগুলোকে প্রণোদনার আওতায় আনতে হবে। প্রয়োজনে নীতিমালা সহজ করতে হবে। এ ছাড়া তরুণ উদ্যোক্তা ও শ্রমিকদের স্বার্থও নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য ব্যবসার উন্নয়নে ব্যাকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। ব্যাংকের সুশাসন নিশ্চিত করতে না পারলে স্বল্প সুদে ক্ষুদ্র-মাঝারিদের ঋণ পাওয়া কঠিন হবে বলেও তিনি মনে করেন। কালের কণ্ঠ

মেয়ে হয়ে চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তার হওয়া সহজ ছিল না: শিমুর

বিরূপ পরিস্থিতিতেও থেমে থাকেননি দেশের নারী উদ্যোক্তার। যাঁরা নানা প্রতিকূলতাকে জয় করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার ভূমিকায় নিজেদের দাঁড় করিয়েছেন। এমন একজন নবীন উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনের গল্প আজ তুলে ধরা হচ্ছে।

মাদারীপুরে জন্ম শাহানা আক্তার শিমুর। ছোটবেলায় মাকে হারিয়ে বড় হয় নানির স্নেহে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ্য ন্যাশনাল কলেজ অফ হোম ইকোনমিকস থেকে শিশু বন্ধন ও পারিবারিক সম্পর্ক বিষয়ে অর্নাস ও মাষ্টার্স শেষ করে শাহানা। বর্তমানে স্বামী সন্তান নিয়ে বাস করেন রাজধানীর মিরপুরে।

ক্যারিয়ার সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে ২০০৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত চাকরি করেন বেসরকারি এনজিও তে। নিজের স্বতন্ত্র পরিচয় গড়ার লক্ষ্যে দীর্ঘ ১১ বছরের চাকরি ছেড়ে নতুন সিদ্ধান্তে পৌছেন শাহানা। মাত্র ৪ হাজার টাকার পুঁজি নিয়ে শুরু করেন উদ্যোক্তা জার্নী। ব্লক ও বাটিকের প্রতি ছিলো তার প্রচুর আগ্রহ, তাই নিজের উদ্যোগ শিমু’স কালেকশনে যুক্ত করেন ব্লক ও বাটিক। কাপড়রে মান নিয়ে নিজের মধ্যে সংশয় থাকায় ২০১৫ সালে নিজস্ব সোর্সের কাপড় ডিজাইন শুরু করেন শাহানা।

ই-কমার্স উদ্যোক্তা হওয়ার কারণ জানতে চাইলে শাহানা বলেন, ছোটবেলা বাবা-মাকে হারিয়ে বুঝতে পারি মায়ের অভাব, তাই নিজের একমাত্র পুত্র সন্তানকে সময় দেওয়া এবং স্বল্প পুঁজিতে ব্যবসা শুরু করা ছিল ই-কমার্স ক্যারিয়ারের অন্যতম কারণ। এখন ঘরে বসে পরিবারের দেখাশোনা, সন্তানকে দেখা শোনা এবং যেকোন জায়গায় বসে ব্যবসায় সময় দিতে পারছি রাতদিন।

ব্লক ও বাটিকের প্রতি ভালোবাসা এবং ব্লক শিল্পে নিজের অবদান রাখতে শাহানা শুরু করে শিমু’স কালেকশন। নিজস্ব টেইলারিং সার্ভিস ও ডিজাইনের মাধ্যমে প্রস্তুত করেন প্রতিটি প্রোডাক্ট। গত ছয় বছর যাবৎ সুনামের সাথে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, পাঞ্জাবী এবং বেবি প্রোডাক্ট বিক্রি করছেন শাহানা। দেশের পাশাপাশি ২০১৬ সাল থেকে বিদেশে যাচ্ছে শিমু’স কালেকশনের পণ্য। ব্লক ইন্ড্রাস্টিতে শিমু’স কালেকশনকে সুপরিচিত ও বিশ্বস্ত ব্যান্ডে প্রতিষ্ঠিত করা শাহানার স্বপ্ন।

উদ্যোক্তা জীবনের চ্যালেঞ্জ গুলো জানতে চাইলে তিনি জানান, মেয়ে হয়ে চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তার হওয়া মসৃণ ছিল না। প্রতিটি পদে পদে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করত হয়েছে। পারিবারিক বাধা, পর্যাপ্ত অর্থ সংকট, ই-কমার্স নলেজ, মানসম্পন্ন প্রোডাক্ট সোর্সিং, বিদেশি পণ্যের সাথে দেশি পণ্যের প্রতিযোগীতায় টিকে থাকা ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সামনে আগাতে হয়েছে।

উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) এর অবদান স্বীকার করে শাহানা বলেন, দেশি পণ্যের উদ্যোক্তাদের জন্য ঢাল স্বরূপ উই। আমার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। উইয়ের সাথে আমার পথচলা প্রায় একবছর। বাংলা ভাষায় ই-কমার্স জ্ঞান অর্জনের সেরা মাধ্যম হয়ে উঠেছে। আমাদের চ্যালেঞ্জ গুলো মোকাবেলা করতেও দারুণ ভাবে ভূমিকা রাখছে। উইয়ের মাধ্যমে ই-কমার্স ট্রেনিং, নেটওয়ার্কিং ডেভেলেপ ও বিক্রি করতে পারছি, শুধু মাত্র সময় ইনভেস্ট করে। আমি কৃতজ্ঞ উই এর প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা আপু এবং ই-ক্যাব প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও উইয়ের এডভাইজর রাজিব আহমেদ স্যার এর কাছে, যারা আমাদের প্রয়োজনীয় সকল সুযোগ ও সুবিধা নিয়ে জন্য নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

 

বিশ্বের শীর্ষ নারী উদ্যোক্তার তালিকায় মালিহা কাদির

সম্প্রতি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ নারী স্টার্ট আপ ফাউন্ডার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন ‘সহজ’-এর ফাউন্ডার ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর মালিহা এম কাদির। বিজনেস-ফাইন্যান্স বিষয়ে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ওয়েবসাইট বিজনেস ফাইন্যান্সিং ইউকে বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নারী ফাউন্ডারদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে।

সেই তালিকায় অ্যান্ট ফিন্যান্সিয়াল, গ্র্যাব, উইল্যাব-এর মতো বিখ্যাত এশিয়ান কম্পানির ফাউন্ডাররাও রয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে শীর্ষ নারী ফাউন্ডার হিসেবে এককভাবে এই স্বীকৃতি পেয়েছেন সহজ-এর ফাউন্ডার ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর মালিহা কাদির।

২০১৪ সালে দেশের ট্রাভেল ও টিকেটিং ইন্ডাস্ট্রিকে আরো গোছালো করতে মাত্র ৩০ জন কর্মী নিয়ে বাংলাদেশে প্রথম ডিজিটালাইজড টিকেটিং সেবা প্রদান প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করা ‘সহজ’ এখন ৩৫০ জনের অধিক কর্মীর এক বিশাল শক্তিশালী পরিবার। দেশীয় অনলাইন প্লাটফর্ম হিসেবে নানামুখী সেবা নিয়ে সহজ ব্যবহারকারীদের জীবনকে করছে আরো সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময়। সব থেকে বেশি সেবা নিয়ে সহজ এখন বাংলাদেশের সব থেকে দ্রুত বর্ধমান স্টার্ট আপ। টিকেটিং প্রসেসকে ডিজিটালাইজড করার পর সহজ অনলাইন ফুড সার্ভিস, রাইড শেয়ারিং ও লজিস্টিক সেবা যুক্ত করেছে তাদের প্লাটফর্মে। ধীরে ধীরে সহজ হয়ে উঠছে দেশের শীর্ষস্থানীয় সুপার অ্যাপ; এক অ্যাপেই যেখানে পাওয়া যাচ্ছে অনেক সেবা।

কভিড-১৯ মহামারির সময়েও দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে সহজ যুক্ত করেছে গ্রোসারি, মেডিসিন ডেলিভারি ও ই হেলথ (ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ) সেবা। এমনকি মহামারির এই সময়ে সরকারের সঙ্গে একাত্ম হয়ে সহজ কাজ করেছে ‘করোনা ট্রেসার অ্যাপ’ এর মতো চ্যালেঞ্জিং টেকনোলজিক্যাল অ্যাপ তৈরিতে। শুরু থেকেই সহজের লক্ষ্য একটিই- টেকনোলজি ব্যবহার করে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জীবন আরেকটু সহজ ও আরামদায়ক করা; যে চেষ্টা সামনেও অব্যাহত থাকবে।

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের স্টার্ট আপ ইকো সিস্টেমে সব থেকে বেশি পরিমাণের ফান্ডিং পেয়েছে সহজ। বিভিন্ন ইউরোপিয়ান ও এশিয়ান বিনিয়োগকারিদের কাছ থেকে বিনিয়োগ পেয়েছে সহজ।

হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল থেকে এমবিএ করা মালিহা কাদিরের আগে যুক্তরাষ্ট্রের স্মিথ কলেজ থেকে কম্পিউটার সায়েন্স ও অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। বাংলাদেশে ফিরে আসার আগে মালিহা কাদির প্রায় এক যুগ আমেরিকা ও সিংগাপুরে মরগান স্ট্যানলি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, নোকিয়া এবং ভিস্টাপ্রিন্টের মতো আন্তর্জাতিক বিভিন্ন স্বনামধন্য ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিং ও টেকনোলজি বিষয়ক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন

তালেবানের সঙ্গে দর কষাকষি করা নারী কর্মকর্তার ওপর জঙ্গি হামলা

তালেবানের সঙ্গে দর কষাকষি করা সরকারের এক নারী কর্মকর্তার ওপর জঙ্গি হামলা হয়েছে। বন্দুকধারী জঙ্গিরা শুক্রবার রাতে তাকে লক্ষ্য করে গুলি করে। এতে আহত হলেও বেঁচে গেছেন তিনি। এ খবর দিয়েছে সাউথ এশিয়ান মনিটর।

আফগান কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই নারীর নাম ফাউজিয়া কুফি। ৪৫ বছর বয়স্ক এই নারী একজন সাবেক এমপি ও বিখ্যাত মানবাধিকার কর্মী। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় পার্শ্ববর্তী পারওয়ান প্রদেশ থেকে যখন কাবুলে ফিরছিলেন তখন রাজধানীর কাছে একটি বাজার এলাকায় ঘাপটি মেরে থাকা জঙ্গিরা তার গাড়ির উপর হামলা করে। তবে তারা তালেবান সদস্য কিনা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

তালেবানের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সংঘাতের রাজনৈতিক নিস্পত্তির জন্য গঠিত ২১ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় টিমের প্রধান মোহাম্মদ মাসুম স্তানেকজাই।

তিনি এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে টুইট করেছেন। এতে তিনি বলেন, কুফি সামান্য আহত হয়েছেন তবে তিনি ভালই আছেন। কেউ এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি এই ঘটনাকে কাপুরুষের কাজ বলে অভিহিত করেছেন।

নতুন রূপে মিশেল ওবামা

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে নতুন রূপে ফিরে এলেন সাবেক ফার্স্টলেডি মিশেল ওবামা। সোমবার তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আক্রমণ করলেন কড়া ভাষায়। মার্কিনিদের প্রতি আহ্বান জানালেন, গত ৪ বছর ক্ষমতার মেয়াদে যে বিশৃংখলা সৃষ্টি করেছেন ট্রাম্প তার ইতি ঘটাতে ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেনকে ভোট দিতে। ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কনভেনশনের প্রথম রাতে আবেগঘন বক্তব্য রাখেন তিনি। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও এএফপি। সেখানে মিশেল ওবামা বলেন, ট্রাম্পের হাতে প্রচুর সময় ছিল। এ সময়ে তিনি প্রমাণ করতে পারতেন যে, তিনি প্রেসিডেন্সির দায়িত্ব পালন করতে পারেন। কিন্তু করোনা ভাইরাস মহামারি, অর্থনৈতিক টালমাটাল অবস্থা এবং বর্ণবাদী অবিচারের এই মুহূর্তে দেশ যখন কাঁপছে- তখন তিনি ব্যর্থ।

এ সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ভুল প্রেসিডেন্ট বা ‘রং প্রেসিডেন্ট’ বলে আখ্যায়িত করেন। এদিন ডেমোক্রেটদের কনভেনশনে সবার দৃষ্টি ছিল মিশেল ওবামার দিকে। তিনি তার স্বামী, সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মতোই বাগ্মী। তিনি বলেন, যখনই আমরা হোয়াইট হাউজের নেতৃত্বের দিকে তাকাই, শান্তনার জন্য তাকাই, অবিচল প্রস্তুতির জন্য তাকাই, তার পরিবর্তে আমরা দেখতে পাই বিশৃংখলা, বিভাজন, সহমর্মিতার পুরো অভাব। আমাদের জন্য যার প্রয়োজন, তিনি সেই ব্যক্তি হতে পারেন নি। তিনি দর্শকদের উদ্দেশে বলেন, যদি আপনারা মনে করেন পরিস্থিতি এর চেয়ে খারাপ হবে না, তবে আমাকে বিশ্বাস করুন। আমি বলছি, পরিস্থিতি খারাপ হবে, যদি আপনারা এই নির্বাচনে পরিবর্তন না আনেন। যদি আমরা এই বিশৃংখল অবস্থার অবসান আশা করি, তাহলে জো বাইডেনকে ভোট দিতে হবে। এর ওপর নির্ভর করে আমাদের জীবন।

সোমবার অনাকাঙ্খিতভাবে অনলাইনে ডেমোক্রেটদের এই কনভেনশন শুরু হয়। এতে জো বাইডেনের প্রতি ডেমোক্রেটরা ঐক্য প্রকাশ করেন। ৭৭ বছর বয়সী সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে যখন মনোনয়ন দেয়া নিয়ে এই কনভেনশন চলছিল, তখন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প করোনা ভাইরাসের ভয়কে উপেক্ষা করে উইসকনসিন এবং প্রতিবেশি মিনেসোটায় প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। উইসকনসিনে ট্রাম্প কনভেনশনের মডারেটর অভিনেত্রী ইভা লঙ্গোরিয়া তার উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, গত চারটি বছর আমরা গণতন্ত্রের জন্য ঐক্যবদ্ধ ছিলাম। এ বছরও আমরা তা অক্ষুন্ন রাখবো।

ওদিকে ডেমোক্রেটদের কনভেনশনে পরে বক্তব্য রাখেন ভারমন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সের। এসব বক্তব্য সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। আগে থেকে প্রস্তুত করে রাখা বক্তব্যে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন এটি। আমাদের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত হুমকিতে। ট্রাম্পকে বাদ দিয়ে জো বাইডেনকে নির্বাচিত করা এখন চরমভাবে অত্যাবশ্যক।

শখের দ্বিতীয় বিয়ে

 

চলতি বছরের শুরুতেই মিডিয়া পাড়ায় গুঞ্জন ওঠে গোপনে বিয়ে করেছেন জনপ্রিয় মডেল-অভিনেত্রী আনিকা কবির শখ। কিন্তু বরাবরই বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন এই অভিনেত্রী।

তবে এবার জানা গেল ঘটনার সত্যতা। চলতি বছর ১২ মে ঘরোয়া আয়োজনে বিয়ে করেছেন শখ। বর রহমান জন। বাড়ি গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানার বলিয়াদি গ্রামে। এক সময় টুকটাক মডেলিং করেছেন, এখন পেশায় ব্যবসায়ী। দু’জনে সংসার পেতেছেন উত্তরার একটি বাসায়।

কোরবানির ঈদ উপলক্ষে স্বামী জনের সঙ্গে শ্বশুরবাড়ি বলিয়াদি গ্রামে বেড়াতে গিয়েছেন শখ। জানা যায়, শখ বর্তমানে শ্বশুরবাড়ি বলিয়াদি গ্রামে আছেন। করোনার প্রকোপ কমলে খুব শিগগিরই ঢাকায় ঘটা করে তাদের বিবাহোত্তর সংবর্ধনার আয়োজন করা হবে। তবে বিয়ের প্রসঙ্গে জানতে শখের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি অভিনেতা নিলয় আলমগীরকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন শখ। দুই বছরের মাথায় সেই বিয়ে ভেঙে যায়।

বিলে পড়ে ছিল নারীর বিচ্ছিন্ন মাথা ও শরীর

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার রাঙামাটিয়া বিলে পড়ে ছিল এক নারীর বিচ্ছিন্ন মাথা ও শরীর। মঙ্গলবার সকাল আটটার দিকে বিচ্ছিন্ন লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

লাশ উদ্ধার হওয়া ওই নারীর নাম মোসা. শ্যামলী ওরফে কাদনি (৪৫)। তিনি একই উপজেলার ঘাইবাড়ি গ্রামের মৃত এন্তাজ আলীর মেয়ে। প্রায় ২০ বছর আগে স্বামীর সঙ্গে আলাদা হয়ে যাওয়ার পর থেকে শ্যামলী বাবার বাড়িতেই থাকতেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, রাঙামাটিয়া বিলে ঘাস কাটার উদ্দেশ্যে গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে বাড়ি থেকে বের হন শ্যামলী। এরপর আর বাড়িতে ফেরেননি। স্বজনেরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও তাঁকে পাননি। আজ সকালে বিলে তাঁর মাথা বিচ্ছিন্ন লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন পরিবারকে খবর দেন।

ভোলাহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, শ্যামলীকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর দেহ ও মাথা আলাদা জায়গায় পড়ে ছিল। এ ঘটনায় কারা জড়িত, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।

পর্বতারোহী রত্নাকে গাড়িচাপা দেয়া ঘাতক গ্রেফতার

পর্বতারোহী রেশমা নাহার রত্নাকে চাপা দেয়া মাইক্রোবাসটি জব্দ করেছে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ। এ সময় ঘাতক চালককেও গ্রেফতার করা হয়। মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) রাজধানীর ইব্রাহীমপুর থেকে গাড়িটি জব্দ করা হয়। তবে গ্রেফতারের স্থান এখনো জানায়নি পুলিশ।

শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানে আলম মুন্সী জাগো নিউজকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, এ বিষয়ে বিস্তারিত পরে জানানো হবে। তবে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, দুর্ঘটনার সময় সেই গাড়ি চালাচ্ছিল।

শেরেবাংলা নগর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোবারক হোসেন ও রেশমার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সংবাদ মাধ্যমকে জানান, দুপুরে আটকের পর ওই যুবককে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পরে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৭ আগস্ট রাজধানীর সংসদ ভবন এলাকার চন্দ্রিমা উদ্যান সংলগ্ন লেক রোডে সাইক্লিং করার সময় গাড়ির ধাক্কায় মারা যান তরুণ অভিযাত্রী রেশমা নাহার রত্না।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের উচ্চাভিলাষী মঙ্গল অভিযানের নেতৃত্বে যে নারী

যদি সবকিছু ঠিকঠাক চলে এ সপ্তাহে সংযুক্ত আরব আমিরাতের নাম যুক্ত হবে বিশ্বের হাতে গোনা ক’টি দেশের তালিকায়। এই তালিকায় আছে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইউরোপ আর ভারতের মতো কিছু দেশ, যারা মঙ্গলগ্রহে সফল মহাকাশ অভিযান পাঠাতে পেরেছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতও এ সপ্তাহে মঙ্গলগ্রহে অভিযান চালাতে তাদের স্যাটেলাইট পাঠাবে। এই অভিযানের নাম দেয়া হয়েছে ‘হোপ মিশন।’

মঙ্গল গ্রহ, যেখানে একসময় পানি ছিল বলে ধারণা করা হয়, তা কীভাবে আজকের ধূলিধুসর নিস্প্রাণ লাল গ্রহে পরিণত হলো, সেটি জানার জন্য বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান চালানো হবে এই মিশনের লক্ষ্য।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো একটি ক্ষুদ্র উপসাগরীয় দেশের জন্য এ হবে এক অভাবনীয় সাফল্য। আর এই সাফল্যের পেছনের রূপকার এক নারী। তার নাম সারাহ আল-আমিরি।

মঙ্গল অভিযানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের নাম শুনে যেমন সবাই অবাক, তার চেয়েও অবাক করা ঘটনা একটি আরব দেশে একজন নারীর এরকম একটি মহাকাশ অভিযানে নেতৃত্ব দেয়ার ঘটনা।

সারাহ আল-আমিরি ‘হোপ মিশনের’ বৈজ্ঞানিক দলের প্রধান। একই সঙ্গে তিনি দেশটির এডভান্সড সায়েন্স বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী।

এই নবীন বিজ্ঞানী এরই মধ্যে আরব বিশ্বের নারীদের জন্য এক বড় অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন। ‌‘হোপ মিশন’ পৃথিবী ছেড়ে যখন রওনা হতে চলেছে মঙ্গল অভিমুখে, তখন একই সঙ্গে সবার নজর তার দিকেও।

কে এই সারাহ আল-আমিরি?
১৯৮৭ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে তার জন্ম। বয়স মাত্র ৩২। কিন্তু মহাকাশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন একেবারে ছোটবেলা থেকে।

বিবিসির আরবী বিভাগকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বর্ণনা করেছেন তার শৈশবের সেই স্বপ্নের কথা। তখন তার বয়স ছিল মাত্র নয় বছর।

সারাহ আল আমিরি মঙ্গল অভিযান সম্পর্কে ব্রিফিং দিচ্ছেন ২০১৫ সালে দুবাইয়ের প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে
“আমার স্বপ্ন ছিল মহাকাশ থেকে আমি পৃথিবীকে দেখবো। কিন্তু আপনাকে সব সময় শুনতে হতো এটা অসম্ভব। বিশেষ করে আপনি যদি এমন একটা দেশে থাকেন, যে দেশটা একেবারেই নতুন‍।”

“আমি যখন বলতাম আমি মহাকাশ নিয়ে কাজ করতে চাই, তখন লোকে ভাবতো আমি বুঝি কোন কল্পজগতে বাস করি,” বলছিলেন তিনি।

সারাহ আল-আমিরি পড়াশোনা করেছেন কম্পিউটার সায়েন্সে, আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব শারজাহতে। তার বরাবরই আগ্রহ ছিল এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার। কিন্তু তখন সংযুক্ত আরব আমিরাতের কোন মহাকাশ কর্মসূচীই ছিল না।

পড়াশোনা শেষে তিনি যোগ দেন এমিরেটস ইনস্টিটিউশন ফর এডভান্সড সায়েন্স এন্ড টেকনোলজিতে। সেখানে তিনি কাজ করেছেন দুবাইস্যাট-১ এবং দুবাইস্যাট-২ প্রকল্পে। ইউএই‌’র পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন এরপর। ২০১৬ সালে তাকে এমিরেটস সায়েন্স কাউন্সিলের প্রধান করা হয়।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের মঙ্গল অভিযানের শুরু থেকে এর সঙ্গে জড়িত তিনি। এখন এই মিশনের বৈজ্ঞানিক দলের প্রধান। ২০১৭ সালে তাকে একই সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের এডভান্সড সায়েন্স বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী করা হয়।

সংযুক্ত আরব আমিরাত কেন মঙ্গল অভিযান চালাচ্ছে

সংযুক্ত আরব আমিরাতের মহাকাশ অভিযানের কোন অভিজ্ঞতাই নেই। এক্ষেত্রে তারা একেবারেই নতুন।

তারা এমন এক উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা নিয়েছে, যেটা এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ভারত বা চীনের মতো বড় বড় দেশ নিতে পেরেছে।

তবে সংযুক্ত আরব আমিরাত দেখাতে চাইছে, তাদের দেশের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এমন বড় চ্যালেঞ্জ নেয়ার ক্ষমতা তাদের আছে।

এই মহাকাশযান তৈরিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সময় লেগেছে সাড়ে ছয় বছর। আরও অনেক উপসাগরীয় দেশের মতোই সংযুক্ত আরব আমিরাতও এখন তেলের ওপর নির্ভরতা কমাতে চাইছে। তাদের লক্ষ্য একটি ভবিষ্যতমুখী জ্ঞান-নির্ভর অর্থনীতি গড়ে তোলা। এই মহাকাশ প্রকল্প সেই লক্ষ্যে্ই নেয়া।

তবে দেশটির যেহেতু মহাকাশ অভিযানের কোন পূর্ব-অভিজ্ঞতা নেই, তাই এই কাজে তাদের প্রকৌশলীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞরা। এভাবে মা্ত্র ছয় বছরের মধ্যে তারা অত্যাধুনিক একটি স্যাটেলাইট তৈরি করতে পেরেছে।

কীভাবে এটা সম্ভব হলো
এই প্রকল্প যখন গ্রহণ করা হয় তখন সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকার প্রকল্পের টিমকে বলেছিল যে তারা কোন একটা বিদেশী কোম্পানি থেকে এই স্পেসক্রাফট বা মহাকাশযান কিনতে পারবে না। তাদের নিজেদেরকেই এটি তৈরি করতে হবে।

একারণে প্রজেক্ট টিমকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে পার্টনারশিপে যেতে হয়েছিল প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য।

যুক্তরাষ্ট্র এবং আমিরাতের প্রকৌশলীরা এজন্য একসঙ্গে কাজ করেছেন। স্যাটেলাইটটি তৈরির বেশিরভাগ কাজ করা হয়েছে ইউনিভার্সিটি অফ কলোরাডোর ‘ল্যাবরেটরি ফর এটমোসফিয়ারিক এন্ড স্পেস ফিজিক্সে‌।’ তবে দুবাইর ‘মোহাম্মদ বিন-রশিদ স্পেস সেন্টারেও’ উল্লেখযোগ্য কিছু কাজ হয়েছে।

ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডোর সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার ব্রেট ল্যান্ডিন মনে করেন, আমিরাতের বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলীরা এই কাজের মধ্য দিয়ে যে অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞান অর্জন করেছে, তার ফলে এরকম আরেকটি অভিযান চালানোর জন্য তারা এখন বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে আছে।

‍“কিভাবে সাইকেল চালাতে হয় কাউকে তা বুঝিয়ে বলা আর সত্যি সত্যি সাইকেল চালিয়ে দেখার মধ্যে কিন্তু অনেক তফাৎ। যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি সাইকেল না চালাচ্ছেন, আপনি আসলে জানেন না কাজটা কেমন। মহাকাশযান তৈরির কাজটাও সেরকমই। একটা মহাকাশযানে কিভাবে জ্বালানি ভরতে হয়, সেই প্রক্রিয়া আমি আপনাকে বলে দিতে পারি। কিন্তু আপনি যতক্ষণ পর্যন্ত না একটি এসকেপ স্যুট পরে খুবই বিপদজনক ৮০০ কেজি রকেট জ্বালানি ট্যাংক থেকে মহাকাশযানে ভরছেন, ততক্ষণ আপনি বুঝতেই পারবেন না, কাজটা কেমন?”

জাপান থেকে উৎক্ষেপণ
সংযুক্ত আরব আমিরাত মঙ্গলগ্রহে যে স্যাটেলাইটটি পাঠাচ্ছে, সেটির ওজন ১ দশমিক ৩ টন। জাপানের দুর্গম তানেগাশিমা মহাকাশ বন্দর থেকে রকেটের মাধ্যমে এটি উৎক্ষেপণ করা হবে।

প্রায় ৫০০ মিলিয়ন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এই রোবটিক মহাকাশযানটি ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার গন্তব্যে পৌঁছাবে। ঐ একই সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত তার ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করবে বলে কথা রয়েছে।

এটি বুধবার উৎক্ষেপণ করার কথা ছিল। কিন্তু আবহাওয়া খারাপ থাকায় এখন উৎক্ষেপণের সময় শুক্রবার পর্যন্ত পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।

এই স্যাটেলাইটটি যখন মঙ্গলগ্রহে গিয়ে পৌঁছাবে তখন এটির মাধ্যমে এই গ্রহটি সম্পর্কে নতুন অনেক কিছু জানা যাবে বলে আশা করছেন আমিরাতের বিজ্ঞানীরা।

হোপ মিশন মূলত মঙ্গলগ্রহের জলবায়ু এবং আবহাওয়া নিয়ে কাজ করবে। তার বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের একটা প্রধান লক্ষ্য হবে, মঙ্গলগ্রহ কিভাবে একটি রুক্ষ ধূলিধুসর গ্রহে পরিণত হলো, সেটি জানা।

কিভাবে মঙ্গলগ্রহ পানিশূন্য হয়ে গেল, সেটি নিয়ে অনুসন্ধান চালাবে হোপ মিশন
হোপ মিশনের প্রকল্প পরিচালক ওমরান শরিফ বলেন, “আমরা এমন কোন বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালাতে চাইনি, যেটি এর আগে হয়ে গেছে। আগের কাজের পুনরাবৃত্তি করে আমরা বলতে চাইনি, আমরাও এটা করেছি।”

আমিরাতের বিজ্ঞানীরা তাই যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসার একটি এডভাইজারি কমিটির কাছে জানতে গিয়েছিলেন নতুন কোন ধরণের গবেষণা চালানো যায়, যেটি মঙ্গলগ্রহ সম্পর্কে জ্ঞান প্রসারিত করবে।

নাসার এই কমিটির পরামর্শ অনুসারে হোপ মঙ্গল অভিযানের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। এই অভিযানের মাধ্যমে দেখা হবে, মঙ্গলগ্রহের আবহাওয়া এবং জলবায়ু কেন এতটা বদলে গেল।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, মঙ্গলগ্রহ একসময় পৃথিবীর মতোই সাগর আর নদীতে আবৃত ছিল। যদি মঙ্গলের পরিমন্ডল পর্যবেক্ষণ করা যায়, তাহলে কিভাবে এটি এখন এক শুস্ক এবং রুক্ষ গ্রহে পরিণত হলো, সেটার ক্লু হয়তো পাওয়া যাবে।

মঙ্গল গ্রহে কোন অভিযান চালানো বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এ পর্যন্ত মঙ্গল গ্রহে যত অভিযান পাঠানো হয়েছে, তার অর্ধেকই আসলে ব্যর্থ হয়েছে।

হোপ মিশনের প্রকল্প পরিচালক ওমরান শরিফ স্বীকার করেন যে, এরকম ঝুঁকি আছে।

বিবিসি নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “এটি হচ্ছে একটি গবেষণা মিশন এবং এখানে ব্যর্থতা একটা বিকল্প কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু একটি জাতি হিসেবে অগ্রগতি করতে ব্যর্থ হওয়া কোনো বিকল্প হতে পারে না।”

তিনি বলেন, “এখানে যে জিনিসটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো, এই মিশনের মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত যে সক্ষমতা অর্জন করছে এবং যে জ্ঞান ও প্রযুক্তি দেশে নিয়ে আসতে পেরেছে।”

সংযুক্ত আরব আমিরাতের এই অভিযানের রূপকার সারাহ আল-আমিরি এখন তার স্বপ্ন পূরণের অপেক্ষায় ক্ষণ গুনছেন।

“আমি খুবই নার্ভাস বোধ করছি। এই অভিযানের জন্য আমরা সাড়ে ছয় বছর ধরে কাজ করেছি। মহাকাশের যে বিশালত্ব, এটিকে জানা এবং বোঝা যেরকম জটিল, সেটা আমাকে মোহিত করেছিল। এই মহাকাশযান নিয়ে আমরা পরীক্ষার পর পরীক্ষা চালিয়েছি, যাতে সব ধরণের পরিস্থিতিতে এটা টিকে থাকে। এখন আমাদের এসব কাজের ফসল এখন একটি লঞ্চপ্যাডে একটি রকেটের ওপর বসে আছে। এটি যাবে এমন এক গ্রহে, যে গ্রহটি আমাদের কাছ থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে।”

অপরাজিতাবিডি/রবি

হরিয়ানায় মেয়েরা গ্র্যাজুয়েশন করলেই মিলবে পাসপোর্ট

একটা পাসপোর্ট হাতে পেতে কত না কাঠখড় পোহাতে হয়। জমা দিতে হয় ভুরি ভুরি কাগজপত্র। করতে হয় অফিসে অফিসে ধরনা। তারপরও এভাবে কয়েক মাস চলে গেলেও পেলে না পাসপোর্ট। তবে ভারতের একটি রাজ্যে পাসপোর্ট পেতে হলে শুধু একটা শর্ত পূরণ করতে হবে-আর তা হলো গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করা। তবে এখানে একটা কথা আছে-ছেলেরা কিন্তু পাবে না এই পাসপোর্ট। শুধু মেয়েদের জন্য এই সুযোগ করে দিয়েছে ওই রাজ্য।

ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, হরিয়ানায় মেয়েরা গ্র্যাজুয়েশন করলেই তারা পেয়ে যাবেন পাসপোর্ট। শনিবার এই ঘোষণা দেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টর। নারীর ক্ষমতায়ন বাড়াতে শনিবার এই অভিনব ঘোষণা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

শনিবার রাজ্যের মঙ্গলসিং অডিটোরিয়ামে ‘হর সর হেলমেট’ অর্থাৎ ‘প্রত্যেকের জন্য হেলমেট’ নামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে একটি হেলমেট প্রস্তুতকারক সংস্থা। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই পাসপোর্ট-সংক্রান্ত ঘোষণায় সকলকে চমকে দেন খট্টর। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, ‘গ্র্যাজুয়েট হলেই ছাত্রীদের হাতে তাদের পাসপোর্ট তুলে দেয়া হবে।’ তিনি আরও বলেছেন, পাসপোর্ট তৈরির পুরো প্রক্রিয়াটাই কলেজ চত্বরের মধ্যে করা হবে। এজন্য কোথাও দৌড়াতে হবে না।

অনুষ্ঠানে আসা স্কুল, কলেজ ও আইটিআইয়ের পাঁচজন শিক্ষার্থীর হাতে হেলমেট ও লাইসেন্স তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। খট্টর বলেন, ‘যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে ট্র্যাফিক আইন সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে তার সরকার নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। এজন্য রাজ্যের সব কলেজ শিক্ষার্থীদের ট্র্যাফিক আইন সম্পর্কে সচেতন করার প্রক্রিয়া চালু হয়েছে। আগামী দিনে শুধুমাত্র কলেজগুলো থেকেই শিক্ষার্থীরা যাতে ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি করাতে পারেন তার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।’

ভারতে যে কয়টি রাজ্য লিঙ্গ বৈষম্যে পিছিয়ে তারমধ্যে অন্যতম হরিয়ানা। উত্তর ভারতের এই রাজ্যে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা অনেক কম। নারী স্বাধীনতা নিয়েও বারবার প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে হরিয়ানাকে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, শিক্ষিত মেয়েদের হাতে পাসপোর্ট তুলে দিয়ে নারী ক্ষমতায়নে জোর দিতে চাইছে খট্টর প্রশাসন।

 

অপরাজিতাবিডি/রবি

করোনাকালে ঢাকায় নারী ও শিশু নির্যাতনের দুই শতাধিক মামলা

করোনাভাইরাসের মহামারিতে থমকে গেছে বিশ্ব। থমকে গেছে দেশ। এই মহামারি রোধে ৬৬ দিন ছিল সাধারণ ছুটি। এ সময়ে অনেককে থাকতে হয়েছে নিজ পরিবার-পরিজনের সাথে। এ পরিস্থিতিতেও থেমে নেই নারী ও শিশু নির্যাতন।

করোনাকালে ঢাকা শহরে নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগে মামলা হয়েছে ২০০টি। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ধর্ষণ, তারপর যৌতুক ও অপহরণের।

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার হিসাব মতে, গত ২৬ মার্চ থেকে ৭ জুন পর্যন্ত ঢাকা মহানগরের ৫০টি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগের ২০০টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।

এগুলোর মধ্যে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে ৫৮টি, গণধর্ষণের আটটি, ধর্ষণচেষ্টার ১৬টি, যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনে অভিযোগে হয়েছে ৫৩টি, অপহরণের অভিযোগে ৩৭টি, শ্লীলতাহানির অভিযোগে ১৯টি, শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে ৯টি মামলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৪ জুন মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির তথ্যমতে, মার্চ, এপ্রিল ও মে- এই তিন মাসে সারাদেশে ৪৮০ জন নারী ও শিশু বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৬৭ জন নারী ও ২১৩ জন শিশু। এর মধ্যে ২০৬ ঘটনায় ৯০ নারী ও ১১৬ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

 

অপরাজিতাবিডি/রবি

প্রথমবারের মতো মহাকাশে লোক পাঠানোর নেতৃত্বে নারী


প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার মনুষ্যবাহী মহাকাশযান (হিউম্যান স্পেসফ্লাইট) পরিচালনার নেতৃত্ব দেবেন এক নারী। নাসার হিউম্যান এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড অপারেশনস মিশনের (এইচইও) প্রধান হিসেবে ক্যাথি লুয়েডার্সকে নিয়োগ দেওয়ার পর এই ইতিহাস তৈরি হলো। গত শুক্রবার নাসার প্রধান জিম ব্রাইডেনস্টাইন টুইটারে এই নিয়োগের ঘোষণা দেন। খবর এএফপির।

গত মাসে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মহাকাশযানে করে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে নভোচারী পাঠানোর মিশনের নেতৃত্ব দেন লুয়েডার্স। সেই সফলতার সূত্র ধরেই তাঁকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। নাসার প্রধান জিম ব্রাইডেনস্টাইন বলেন, ‘বাণিজ্যিকভাবে মহাকাশচারী ও কার্গো পাঠানো—উভয় প্রকল্প সফলভাবে পরিচালনা করেছেন ক্যাথি। তাই ২০২৪ সালে চাঁদে মহাকাশচারী পাঠানোর প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এইচইওকে পরিচালনার জন্য তাঁকেই আমরা উপযুক্ত ব্যক্তি হিসেবে মনে করেছি।’

১৯৯২ সালে নাসায় যোগদান করেন লুয়েডার্স। গত ৩০ মে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের একটি মহাকাশযানে দুজন মহাকাশচারীকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পাঠানো হয়, যার নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিক ফ্লাইটে মহাকাশে যান নভোচারীরা।

কৃষ্ণাঙ্গ নারীর নামে হেডকোয়ার্টারের নাম পাল্টাচ্ছে নাসা

শ্বেতাঙ্গ পুলিশের বর্বর নির্যাতনে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড হত্যার ঘটনায় বর্ণবাদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ। জনগণের ক্ষোভের মুখে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র পুলিশে সংস্কার আনতে বাধ্য হয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৈশ্বিক জাতিগত অসমতা নিয়ে বিতর্কের কারণে ত্বক ফর্সা করার ক্রিম বিক্রি না করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক হেলথকেয়ার কোম্পানি জনসন অ্যান্ড জনসন।

তবে দেশটির বর্ণবাদের বিরুদ্ধে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করল মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (নাসা)। সংস্থাটি তাদের হেডকোয়ার্টার বিল্ডিংয়ের নাম পরিবর্তন করে একজন কৃষ্ণাঙ্গ নারীর নামে নামকরণের ঘোষণা দিয়েছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, নাসার হেডকোয়ার্টার বিল্ডিংয়ের নাম পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বিল্ডিংটির নাম রাখা হবে ‘মেরি উইলিয়াম জ্যাকসন’।

মেরি মার্কিন এই মহাকাশ সংস্থার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান-আমেরিকান নারী প্রকৌশলী। বুধবার সংস্থাটির প্রশাসক জিম ব্রিডেনস্টাইন এ ঘোষণা দেন।

’৫০-এর দশকে ভার্জিনিয়ার হ্যাম্পটনে অবস্থিত নাসার ল্যাংলে রিসার্চ সেন্টারে কর্মজীবন শুরু করেন মেরি জ্যাকসন।

এর আগে গতবছর নাসার এই প্রতিষ্ঠানটির আগের নাম পাল্টিয়ে নাম রাখা হয় ‘হিডেন ফিগারস ওয়ে’। মূলত নাসায় আগে যেসব আফ্রিকান-আমেরিকান নারী কর্মরত ছিলেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই নাম রাখে নাসা।

তবে মহাকাশ সংস্থা নাসা এমন এক সময়ে তাদের হেডকোয়ার্টারের নাম পরিবর্তনের কথা জানাল, যখন মিসিসিপিতে অবস্থিত তাদের ‘স্টেনিস স্পেস সেন্টারের’ নাম পরিবর্তনের জন্য চাপ দিচ্ছিল বিভিন্ন মহাকাশ সংস্থা। একই সময় জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে দেশটিতে বৈষম্যমূলক বিভিন্ন স্মৃতিস্মম্ভ নামিয়ে ফেলার হিড়িক চলছে।

নাসার এই প্রতিষ্ঠানটির নাম রাখা হয়েছে মিসিসিপির দীর্ঘসময় ধরে সিনেটর থাকা জন সি.স্টেনিসের নামানুসারে। কঠোর জাতিবিদ্বেষী বলে পরিচিত এই সিনেটর।

অপরাজিতাবিডি/রবি

বাংলাদেশে প্রথম অনুষ্ঠিত হলো ‘নারী প্রকৌশলী সম্মেলন’

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘নারী প্রকৌশলী সম্মেলন-২০২০’। মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিট-১৯) কারণে অনলাইনে এই সম্মেলন হয়। ২৩ জুন রাত ৮টায় দ্য ইঞ্জিনিয়ার্স ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এই সম্মেলন শুরু হয়ে রাত ১১টায় শেষ হয়।

এটি দেশে প্রথম নারী প্রকৌশলী সম্মেলন। প্রধান অতিথি হিসেবে এ সম্মেলন উদ্বোধন করেন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশের (আইইবি) প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর। সম্মেলনের সমাপনী করেন আইইবি’র সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী খন্দকার মনজুর মোর্শেদ।

১৯১৯ সাল থেকে যুক্তরাজ্যের উইমেন্স ইঞ্জিনিয়ারিং সোসাইটি ২৩ জুনকে নারী প্রকৌশলী দিবস হিসেবে পালন করত। পরে ২০১৭ সালে ইউনেস্কো দিনটিকে আর্ন্তজাতিক নারী প্রকৌশলী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এ দিবসের উদ্দেশ্য হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা। তবে আইইবি’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ৭ মে ’ইঞ্জিনিয়ার্স ডে’ হিসেবে পালন করা হয়।

এবারের নারী প্রকৌশলী দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘শেপ দ্য ওয়ার্ল্ড’।

অনুষ্ঠানের বক্তব্য দেন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী বুলবুল আখতার, বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ড. প্রকৌশলী রওশন মমতাজ, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী নীরা মজুমদার, এলজিইডি প্রজেক্ট ডিরেক্টর প্রকৌশলী সালমা শহীদ, রাজউকের ডিরেক্টর সরকারের উপসচিব, আইবির সেন্ট্রাল কাইন্সিল মেম্বার প্রকৌশলী তানজিলা খানম।

সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী নারী প্রকৌশলীদের মধ্য আরও বক্তব্য দেন প্রকৌশলী মৌসুমী সালমীন, প্রকৌশলী সোনিয়া নওরীন এবং অধ্যাপক প্রকৌশলী সালমা আখতার। অনুষ্ঠানের মডারেটর হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দ্যা ইঞ্জিনিয়ারস ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক এবং আইইবির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশনের সেক্রেটারি প্রকৌশলী শেখ তাজুল ইসলাম তুহিন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর বলেন, ’চাকরি জীবনে নারী প্রকৌশলীরা কর্তব্যনিষ্ঠ ও সৎ হিসেবে পরিচিত। আমাদের প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতা নেবার পর থেকেই বিভিন্ন পদে নারীদের পদায়ন করেছেন। প্রথম মহিলা বিচারপতি, প্রথম মহিলা সচিব, প্রথম মহিলা স্পিকার এবং এসবের ধারাবাহিকতায় প্রথম প্রধান প্রকৌশলীও বঙ্গবন্ধু কন্যার শাসন আমলের অবদান। এই সম্মেলনেও একজন প্রধান প্রকৌশলী উপস্থিত আছেন। শেখ হাসিনা মনে করেন, ‘নারীদের উন্নয়নের বাইরে রেখে কখনও প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়’।

তিনি আরও বলেন, নারী প্রকৌশলীরা তাদের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে পরিকল্পনা করবেন কীভাবে আমাদের এ পৃথিবীটা আরও বাসযোগ্য, নিরাপদ, আরও সৃজনশীল ও আনন্দদায়ক করা যায়। আইইবি সবসময় নারী প্রকৌশলীদের সাথে থাকবে- আইইবির প্রেসিডেন্ট হিসেবে এই প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছি। সেই সাথে আইইবি থেকে নারী প্রকৌশলীদের কর্মক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসহ সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরসহ সরকারের কাছে তুলে ধরা হবে।

এর আগে নারী প্রকৌশলীরা নারীদের প্রকৌশলী পেশার যেসব প্রতিকূল পরিবেশ বিরাজমান সেই অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। এ ছাড়া নারী প্রকৌশলীদের কর্মক্ষেত্র বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন নারী প্রকৌশলীরা। নারী প্রকৌশলীরা মনে করেন, নারীদের কর্মক্ষেত্রে আরও বেশি সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে পারলে নারীরা প্রকৌশল পেশায় আগ্রহ হবেন। এ ক্ষেত্রে প্রকৌশল পেশায় বাংলাদেশের নারীদের আরও এগিয়ে নিতে আইইবি’র সহযোগিতা কামনা করেন নারী প্রকৌশলীরা।

 

অপরাজিতাবিডি/রবি

এক করোনা যোদ্ধার গল্প

মনোয়ারা আক্তার। করোনা উপসর্গ রোগীদের কাছে এক ভরসার নাম। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্যাথলজি বিভাগের ল্যাব টেকনোলজিস্ট। তিনি ১৮ শ’ করোনার নমুনা সংগ্রহ করে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। করোনা মহামারিতে নিরলসভাবে কাজে করে পুরো সোনারগাঁও উপজেলাবাসীর কাছে প্রশংসায় সিক্ত হয়েছেন এই করোনা যোদ্ধা।

তিনি বলেন, যারা করোনায় অসুস্থ হচ্ছে তারাও তো আমার মতো কোনো না কোনো মায়ের সন্তান। কারো বোন, ভাই, মেয়ে। এ করোনাকালে অনেকে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করছে। আমিও আমার অবস্থান থেকে পরম করুণাময়ের ওপর আত্মবিশ্বাস রেখে মানুষের একটু সেবা করে যাচ্ছি।

সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার কাজ শুরু হয় গত ৫ এপ্রিল। কাঁচপুর ইউনিয়নে এক বৃদ্ধ সর্দি কাশি নিয়ে মৃত্যুবরণ করার পর তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সেই থেকে শুরু এখন পর্যন্ত ১৮০০ বার রোগীদের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন তিনি। করোনাভাইরাস সংক্রমণ সন্দেহে আসা রোগীদের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, সোনারগাঁও উপজেলায় হাসপাতালে যখন করোনা ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত হয়, তখন দায়িত্ব দেয়া হয় এমটি ইপিআই, এমটি ল্যাবসহ আরো দু’জনকে। লোকবলের অভাবে অবশেষে নমুনা সংগ্রহের দায়িত্ব পড়ে এমটি মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্ট মনোয়ারার উপর। সাথে তাকে সহযোগিতার জন্য দেয়া হয় সহকারী রায়হান ও হাসানকে। প্রথমে কিছুটা শঙ্কিত হলেও মনের ভেতর সাহস সঞ্চার করে মুহূর্তের মধ্যেই নমুনা সংগ্রহের কাজে রাজি হয়ে যান তিনি। এরপর ৫ এপ্রিল প্রথম একজন মৃত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ দিয়ে শুরু হয় তার এগিয়ে চলা। গত আড়াই মাসে বিভিন্ন রোগীর কাছ থেকে ১৮শ’ বার নমুনা সংগ্রহ করেছেন তিনি। সবশেষ ২০ জুন ২২ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এসব নমুনা পরীক্ষা করে ৩৬২ কয়েকজন রোগীর শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। শুধু সাধারণ মানুষই নন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তার সাথে কর্মরত হাসপাতালের কয়েকজন স্টাফও। তারপরও দমে যাননি মনোয়ারা।

মনোয়ারা আক্তার বলেন, আমাদের হাসপাতালে প্রথম থেকেই লোকবল সঙ্কট ছিল। সেজন্য আমি নিজেই একা মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্টের কাজটি করে আসছি। যখন দেশে করোনাভাইরাস শুরু হলো তখন টিএইচও স্যার আমাকে ডেকে বললেন সোনারগাঁওয়ের করোনা আক্রান্তদের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরএ পাঠানোর জন্য। আমি রাজি হওয়ার পর স্যাম্পল কালেকশন কিট-পিপিইসহ সব সরঞ্জাম আমাকে বুঝিয়ে দেয়া হলো। তখন একাই হাসপাতালে সহকারী মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে কর্মরত আমার স্বামী মোঃ হাবিলউদ্দিনের সাথে কথা বলে মা-বাবা ও শুভাকাঙ্খিদের দোয়ায় কাজ শুরু করি।

মনোয়ারা বলেন, প্রথম কয়েকদিন নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেক ভয় পেয়েছি। কারণ টিভিতে দেখেছি পৃথিবীর অনেক দেশে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে অনেক চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, অনেকে মারা গেছেন। সেগুলো দেখে আমার মনেও ভয় তৈরি হয়েছিল। এছাড়া আমার ঘরে পাঁচ বছরের একটি কন্যা সন্তান আছে। তাকে রেখে কীভাবে নমুনা সংগ্রহ করবো। আবার আমি যদি করোনায় আক্রান্ত হই, তাহলে তাকে কে দেখবে? এসব চিন্তা করে রাতে ঘুমাতে পারিনি। কিন্তু যখন চিন্তা করলাম যুদ্ধের ময়দানে নেমে মৃত্যুকে ভয় পেলে চলবে না, ভয়কে জয় করে যুদ্ধের ময়দানে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা যদি ভয় পাই তাহলে মানুষের চিকিৎসা করবে কে? আমার উপর যে দায়িত্ব দিয়েছে সে দায়িত্ব যেন সঠিকভাবে পালন করতে পারি সেজন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি। এছাড়া এ কাজে টিএইচও স্যার এবং আমার স্বামী সাহস জুগিয়েছেন। আল্লাহর উপর ভরসা ও তাদের দেয়া সাহস নিয়েই নমুনা সংগ্রহের কাজে নেমে পড়ি। নমুনা সংগ্রহের কাজে সহায়তার জন্য কর্তৃপক্ষ আমাকে সহায়তার জন্য সহকারী মোঃ রায়হান ও মোঃ হাসানকে সাথে দেন। যারা আমার কাজে প্রতিদিনই সহায়তা করে আসছেন। তাদের দু’জন পালা করে আমাকে সহায়তা করতেন। কাজটি যাতে বন্ধ না হয়ে যায় সেজন্য নিজের দিকে খেয়াল রেখেছি। সব সময় করোনা মুক্ত থাকতে যা যা করণীয় তা পালন করেছি।

তিনি আরো বলেন, প্রথমে হাসপাতালের বাইরে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করতাম। কিন্তু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এখন হাসপাতালেই নমুনা সংগ্রহ করা হয়। হাসপাতালে প্রতিদিনই নমুনা সংগ্রহ অব্যাহত রয়েছে। একদিনে সর্বোচ্চ ৭০ জনেরও নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া কেউ যদি উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন শুনেই কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাৎক্ষণিক নমুনা সংগ্রহ করেছি। আর ইচ্ছে আছে যতদিন সুস্থ থাকবো, ততদিন নমুনা সংগ্রহের এ কাজ চালিয়ে যাবো। নিজের করোনাভাইরাস পরীক্ষা করিনি, কারণ এখন পর্যন্ত কোনো লক্ষণ দেখছি না। যদি অসুস্থ হয়েই যাই, তাহলে সুস্থ হয়ে আবার এসে কাজটি চালিয়ে যাবো। আমি সবার দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করছি।

সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. পলাশ কুমার সাহা বলেন, আমি হাসপাতালে দায়িত্ব পালনকালে মনোয়ারাকে দেখেছি নিষ্ঠা ও মনোযোগের সাথে কাজ করতে। তাকে ধন্যবাদ জানাই সাহসিকতা এবং তার কাজের জন্য।

অপরাজিতাবিডি/রবি

পড়াশোনা না ছাড়ায় ঢাবি ছাত্রীকে হত্যার অভিযোগ, শাশুড়ি ও ননদ গ্রেপ্তার

সুমাইয়া বেগমকে সমাবর্তনের হ্যাট পরিয়ে দেন এক সহপাঠী। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে। ছবি: সংগৃহীতসুমাইয়া বেগমকে সমাবর্তনের হ্যাট পরিয়ে দেন এক সহপাঠী। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে। ছবি: সংগৃহীতমেয়ে অসুস্থ, শ্বশুরের কাছ থেকে ফোনে এমন সংবাদ পেয়ে যশোর থেকে নাটোরে ছুটে আসেন মা নুজহাত বেগম। এসে দেখলেন, হাসপাতালের মর্গে মেয়ের লাশ পড়ে আছে। শ্বশুর, স্বামী বা তাঁদের পরিবারের কেউই সেখানে নেই। নুজহাতের অভিযোগ, নির্যাতন করে তাঁর মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাস সুমাইয়া বেগমকে হত্যা করেছেন স্বামীর বাড়ির লোকজন। সুমাইয়া বেগম যশোরের সিদ্দিকুর রহমান যশোরীর মেয়ে। বিয়ে হয়েছিল নাটোর শহরের হরিশপুর বাগানবাড়ি এলাকার প্রকৌশলী মোস্তাক হোসাইনের সঙ্গে।

মা নুজহাত বেগম বলেন, ‘গতকাল সোমবার সকালে সুমাইয়ার শ্বশুর জাকির হোসেন আমাকে ফোন দেন। তিনি মেয়ের অসুস্থতার কথা বলেন। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। খবর পেয়ে আমি দ্রুত নাটোরে চলে আসি। সদর হাসপাতালে এসে দেখি, আমার মেয়ের মৃতদেহ মর্গে পড়ে আছে। শ্বশুরবাড়ির কেউ হাসপাতালে নেই।’ তিনি আরও বলেন, বিয়ের পর থেকেই শ্বশুরবাড়ির লোকজন সুমাইয়ার পড়ালেখা ও পরে চাকরি করার ইচ্ছা মেনে নিতে পারছিল না। এ কারণেই তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। প্রায় ছয় মাস আগেও তাঁকে ঘরে আটকে রেখে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে মোস্তাকের সঙ্গে বিয়ে হয় সুমাইয়ার। বাবা সিদ্দিকুর ছিলেন একজন নামকরা ইসলামি বক্তা। তাঁর অনুপ্রেরণাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন সুমাইয়া। ভর্তির তিন বছরের মাথায় বাবার পছন্দেই মোস্তাককে বিয়ে করেন। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকজন পড়ালেখায় বাদ সাধে। পড়াশোনার বদলে গৃহস্থালির কাজে মনোযোগ দেওয়ার তাগিদ আসে। পড়ালেখার খরচ বাবা সিদ্দিকুরই দিতেন। তাই পড়ালেখা বন্ধ করতে হয়নি সুমাইয়াকে। প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হন তিনি। ঢাকায় থেকে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হঠাৎ গত সেপ্টেম্বরে বাবা সিদ্দিকুর মারা যান। এতে আর্থিক সংকটে পড়েন সুমাইয়া। শ্বশুরবাড়ি থেকে সহযোগিতার পরিবর্তে চাকরির চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে পুরোপুরি সংসারী হওয়ার নির্দেশ আসে। কিন্তু সবকিছু ভুলে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েই ডুবে ছিলেন সুমাইয়া। তবে শেষ পর্যন্ত জীবনের কাছে তাঁকে হার মানতে হয়েছে তাঁর।

পরিবারের অভিযোগ, গত রোববার রাতে সুমাইয়াকে তাঁর স্বামীর ঘরে মারপিট করে হত্যা করা হয়। এরপর ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলেছে। গতকাল দুপুরে মা নুজহাত বেগম যখন নাটোর সদর হাসপাতালে পৌঁছান, তখন সুমাইয়ার স্বামী মোস্তাক, শ্বশুর জাকির বা ওই পরিবারের কাউকে পাননি। সবাই গা-ঢাকা দিয়েছেন। ময়নাতদন্ত শেষে রাতে নাটোরের একটি কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়েছে।

নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম মঙ্গলবার সকালে বলেন, গতকাল রাতে নিহত নারীর মা নুজহাত বেগম থানায় মামলা করেছেন। এতে সুমাইয়ার স্বামীসহ চারজনের বিরুদ্ধে হত্যা অভিযোগ করা হয়েছে। মামলা গ্রহণের পর আসামিদের ধরতে সারা রাত অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। সুমাইয়ার ননদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে দুপুরে আদালতে পাঠানো হবে।

নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, ‘ঘটনাটি আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানার জন্য লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়া গেলে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।’ তিনি আরও বলেন, যেহেতু স্বামীর বাড়িতে ঘটনাটা ঘটেছে, তাই সব দায় দায়িত্ব স্বামী ও তাঁর স্বজনদেরই বহন করতে হবে।

করোনায় নারীরা কম আক্রান্ত হচ্ছেন কেন?

নারী নয়, পুরুষদের মধ্যেই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি। তবে এর কারণ নিয়ে চিকিৎসকরা একমত নন। ভারতে নারীদের তুলনায় পুরুষরা অনেক বেশি করোনায়আক্রান্ত হচ্ছেন। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ(আইসিএমআর)-এর রিপোর্ট থেকে এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। আইসিএমআর-এর গবেষক দল গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯ মার্চ দেশজুড়ে ২০টি রাজ্যের ৫২টি জেলায় প্রবল শ্বাসকষ্টে যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের পরীক্ষা করে দেখেছিলেন। মোট পাঁচ হাজার ৯১১ জনকে পরীক্ষা করা হয়। দেখা যায়, ১০৪ জন করোনায় আক্রান্ত। তাঁদের মধ্যে ৮৫ জন অর্থাৎ ৮৩ শতাংশেরও বেশি হলেন পুরুষ।

ভারতে নারীদের থেকে পুরুষরা এত বেশি করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন কেন? চিকিৎসকদের মধ্যেও কারণ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। ফুসফুস বিশেষজ্ঞ পার্থ প্রতিম বোস ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ”যাঁরা ধূমপান করেন, তাঁদের ফুসফুস এমনিতেই দুর্বল। ভারতে জেলা বা ছোট শহরগুলিতে মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা অনেক বেশি ধূমপান করেন। গ্রামের দিকে লোকে এখনও হুঁকো খান, বিড়ি, সিগারেটও খান। তাই মেয়েদের তুলনায় পুরুষদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ইটালিতেও এত বেশি সংখ্যক লোকের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কারণ, সেখানে লোকের মধ্যে ধূমপানের অভ্যাস অনেক বেশি।”

আবার চিকিৎসক সুব্রত কুন্ডু মনে করেন, এর প্রধান কারণ, পুরুষরা অনেক বেশি বাইরের কাজ করেন। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন,” আসলে ভারতে পুরুষরা মেয়েদের থেকে অনেক বেশি বাইরে বের হন। তাই তাঁরা বেশি করে আক্রান্ত হয়েছেন। যেহেতু তাঁরা বাইরে বের হচ্ছেন, তাই তাঁরা করোনায় আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসছেন। সেখান থেকে আক্রান্ত হচ্ছেন। নিজামুদ্দিনের ঘটনাই তার উদাহরণ।”

ডয়চে ভেলের কাছে চিকিৎসক সাত্যকি হালদারের ব্যাখ্যা, ”বিশ্বের অন্য জায়গাতেও একই ধরনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। করোনা হচ্ছে সামাজিক অসুখ। ভাইরাসটি সংক্রমক, অর্থাৎ, ছোঁয়াচে। তাই যিনি বাইরে যাচ্ছেন ও আক্রান্ত হচ্ছেন, তিনি ঘরে ফিরলে গোটা পরিবারে সংক্রমণ ঘটার কথা। ফলে নারীরা কম আক্রান্ত হচ্ছেন আর পুরুষরা বেশি, এই প্রবণতা বাইরে বেরনোর নিরিখে বিচার করলে ভুল হবে। আসলে যে কোনও ভাইরসের একটা জেনেটিক কাঠামো থাকে। করোনার ক্ষেত্রে সেই গঠন এখনও বোঝা যায়নি। পুরুষ ও নারীদের রোগ প্রতিরোধ করার সিস্টেমও আলাদা। বহু ক্ষেত্রে কারও প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি, কারও কম। করোনা কী করে এই প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাঙছে, তা এখনও জানা যায়নি। জানা গেলে বোঝা যাবে কেন পুরুষরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন!”

আইসিএমআরের সমীক্ষায় বলা হয়েছে, করোনায় আক্রান্ত অধিকাংশ লোকের বয়স ৪০ বছরের বেশি। সমীক্ষা অনুসারে ৫০ বছরের বেশি বয়স্করা তুলনায় অনেক বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে ৫০ থেকে ৫৯ বছর বয়সীদের মধ্যে করোনা বেশি হচ্ছে। আইসিএমআরের মতে, মধ্যরেখা হলো ৫৪ বছর। এর কারণ নিয়ে অবশ্য চিকিৎসকরা একমত। তাঁদের মতে, ৫০ এর পর থেকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে। তাই তাঁদের মধ্যে সংক্রমণ সব চেয়ে বেশি। সাত্যকি হালদার মনে করেন, ”৫০ এর পর লোকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমলেও, ৬০-৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত বাইরে বেরনোর প্রবণতা আগের মতোই থাকে। তাই তাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি।” পার্থ প্রতিম বোসের মতে, ”একে তো ওই বয়সে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তার ওপর যাঁরা ধূমপায়ী, তাঁরাও অনেক দিন ধরে ধূমপান করে ফুসফুসের অনেকটা ক্ষতি করে ফেলেছেন। তাই তাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি।”

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রিপোর্ট থেকে উঠে এসেছে। প্রায় ৪০ শতাংশ আক্রান্ত কখনও বিদেশে যাননি। তাঁরা জ্ঞানত কোনও করোনা আক্রান্তের সঙ্গেও মেশেননি।

আইসিএমআর এখন নতুন করে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নীতিনির্দেশিকা জারি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে,

যাঁদের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, তাঁদের সকলের করোনা পরীক্ষা করাতে হবে। যাঁরা করোনা আক্রান্ত ও সম্ভাব্য করোনা আক্রান্তের সংস্পর্শে আসছেন, তাঁদের পাঁচদিন ও ১৪ দিন পরে দুই বার পরীক্ষা করতে হবে। যে করোনা আক্রান্তরা কোনও জমায়েতে ছিলেন, সেখানে উপস্থিত সকলের করোনা পরীক্ষা করতে হবে। যে সব ল্যাবে করোনা পরীক্ষা হচ্ছে সেখানে সব কর্মীর করোনা পরীক্ষা হবে। গত ১৪ দিনে যাঁরা বিদেশ থেকে এসেছেন, তাঁদেরও বাধ্যতামূলকভাবে পরীক্ষা করা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের চিহ্নিত করা হটস্পটে কারও সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা, জ্বর হলেই করোনা পরীক্ষা করা হবে। সূত্র ডিডব্লিউ

অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি নতুন চাকরি প্রত্যাশীরা

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ২০১৮ স্নাতকোত্তর করছেন তানজিলা আক্তার। এরপর থেকেই তিনি একাধিক সরকারি চাকরিতে আবেদন করেছেন, বেসরকারি চাকরির চেষ্টাও করেছেন। আশা করছিলেন, এই বছর একটা ভালো চাকরি হয়ে যাবে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে তার সেই স্বপ্ন থমকে গেছে।

‘এখন তো মহামারির কারণে সবকিছুই আটকে আছে। কোন সার্কুলার নাই, কোনো চাকরির পরীক্ষা নেই। এই মহামারি কবে শেষ হবে, কবে আবার চাকরির প্রক্রিয়া শুরু হবে জানি না।’

‘আমরা যারা বেকার আছি, চাকরির খুব প্রয়োজন, তাদের জীবনটা এই মহামারির কারণে একটা অনিশ্চয়তার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। কোনো কাজ নেই, যতদিন যাচ্ছে পরিবারের জন্য বোঝা হয়ে যাচ্ছি। পরিবারের সদস্যদের মলিন চেহারা সেই হতাশা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।’

তিনি জানান, তার বাবা মায়ের বয়স হয়েছে, এখন তার পরিবারের দায়িত্ব নেয়ার কথা। কিন্তু এই মহামারির কারণে তিনি সেটা করতে পারছেন না।

আরেকজন চাকরি প্রত্যাশী ফারিয়া আজাদ সমাজকর্মে পড়াশোনা শেষ করেছেন ২০১৭ সালে। গত কয়েকবছর ধরেই তিনি সরকারি চাকরির চেষ্টা করছেন।

‘আমি শুধু সরকারি চাকরির জন্যই অনেক বছর ধরে চেষ্টা করছি। এ বছর ৪১তম বিসিএসের পরীক্ষা হবে ভাবছিলাম। করোনার কারণে সব আটকে গেল। এদিকে চাকরির বয়সও শেষ হতে চলেছে। মেয়ে হিসাবে পারিবারিকভাবে বিয়ে-শাদির চাপও আছে। সব কিছু মিলিয়ে একটা মানসিক চাপের মধ্যে, হতাশার থাকতে হচ্ছে’, তিনি বলছেন।

প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ তরুণ-তরুণী বাংলাদেশের চাকরির বাজারে যোগদান করে। এদের বড় একটি সংখ্যক স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পড়াশোনা শেষ করে সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে প্রবেশের চেষ্টা করেন।

এমনিতেই দেশে বেকারত্বের হার অনেক। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সেই সংকট আরো বেড়েছে।

বাংলাদেশে বেকার
পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ ২০১৭ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী ৬ কোটি ৩৫ লাখ। এর মধ্যে কাজ করেন ৬ কোটি ৮ লাখ নারী-পুরুষ আর ২৭ লাখ বেকার।

আর সম্ভাবনাময় কিন্তু সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কাজের সুযোগ পান না এরকম ব্যক্তি (লেবার আন্ডার ইউটিলাইজেশন), যাদের ছদ্ম-বেকার বর্ণনা করা হয়, এরকম মানুষ রয়েছেন প্রায় ৬৬ লাখ। এরা চাহিদা মাফিক কাজ না পেয়ে টিউশনি, রাইড শেয়ারিং, বিক্রয় কর্মী ইত্যাদি খণ্ডকালীন কাজ করেন।

বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ৪.২% হলেও যুব বেকারত্বের হার ১১.৬ শতাংশ। করোনাভাইরাসের কারণে জুন ২০২০ সাল নাগাদ সেটি কয়েকগুণে বেড়ে গেছে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাস সংকটে বিশ্বে প্রতি ছয়জনের একজন বেকার হয়েছে আর বাংলাদেশের প্রতি চারজন যুবকের মধ্যে একজন কর্মহীন বা বেকার রয়েছে (২৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ)। ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই এই বেকারত্ব বাড়ছে।

আইএলও বলছে, মহামারিতে তারা তিনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একদিকে বেকার, সেই সাথে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণও ব্যাহত হচ্ছে তাদের। এতে তাদের চাকরিতে প্রবেশ ও দক্ষতা বৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটছে।

আইএলও’র সংজ্ঞা অনুযায়ী, সপ্তাহে একদিন বা এক ঘণ্টা কাজের সুযোগ না পেলে ওই ব্যক্তিকে বেকার হিসাবে ধরা হয়। সেই হিসাবে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৭ লাখ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই সংখ্যা বাস্তবে অনেক বেশি।

নতুন চাকরির বিজ্ঞাপন কমে গেছে
করোনাভাইরাসের কারণে তৈরি হওয়া মন্দায় ব্যাংকিং, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান কর্মীদের বেতন কাটছাঁটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান খরচ কমাতে কর্মী ছাঁটাই করছে। আর বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই নতুন কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে।

বাংলাদেশের চাকরি সংক্রান্ত একটি জনপ্রিয় ওয়েবসাইট বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী একেএম ফাহিম মাশরুর বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ফেব্রুয়ারির পর থেকে চাকরির বিজ্ঞাপন অনেক কমে গেছে। যেসব চাকরির বিজ্ঞাপন আসছে, সেখানেও অভিজ্ঞ কর্মী চাওয়া হচ্ছে।

তিনি বলছেন, ‘আগে যেরকম বিজ্ঞাপন আসতো, করোনার কারণে সেটা ৬০%, ৭০% কমে গেছে। মে মাসে একটু বাড়লেও এখনো ৫০% কম আছে। যেসব বিজ্ঞাপন আসছে, সেখানে অভিজ্ঞ লোক চাওয়া হচ্ছে, ফ্রেশ গ্রাজুয়েটদের চাহিদা আরও অনেক কমে গেছে।’

‘আগামী ছয়মাস এরকমই থাকবে বলে মনে হচ্ছে’, তিনি বলছেন।

দুই বছর ধরে সরকারি চাকরির পাশাপাশি সম্প্রতি বেসরকারি চাকরি খুঁজতে শুরু করেছিলেন নাহিদুজ্জামান লিটু।

তিনি বলছেন, ‘শুরুতে তো সরকারি চাকরির চেষ্টাই করতাম। কিন্তু সম্প্রতি বেসরকারি চাকরির আবেদন করতে শুরু করেছিলাম। এক-দুইটা ইন্টারভিউ দিয়েছি। এর মধ্যেই তো সব আটকে গেল।’

তিনি বলছেন, এসব কারণে তিনি মানসিকভাবে চাপের মধ্যে পড়েছেন। একদিকে বন্ধুদের সাথে বাসা ভাড়া করে থাকতে হয়, পড়াশোনা শেষ করার পরেও বাড়ি থেকে সাপোর্ট নিতে হচ্ছে। দুই-তিনমাসের মধ্যে একটা চাকরি পাওয়ার আশা করেছিলেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে তার সব পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে।

নতুন কর্মী নেয়ার কথা ভাবছে না প্রতিষ্ঠানগুলো
বাংলাদেশের ব্যাংক, বহুজাতিক বা বড় কোম্পানিগুলো গত কয়েকমাস ধরে ব্যবসা না হওয়ায় কর্মী ছাঁটাই বা বর্তমান কর্মীদের বেতন কমিয়ে দিচ্ছে।

ব্যাংকগুলো বলছে, আগে থেকেই খেলাপি ঋণের চাপ, তারল্য সংকট, তার ওপর ব্যবসা বাণিজ্যের অবনতির কারণে করোনাভাইরাসের এই প্রাদুর্ভাবে তাদের ব্যবসা খাদের কিনারে। ব্যয় কমানো ছাড়া তাদের সামনে কোনো বিকল্প নেই। বেতন না কমালে ছাঁটাই করতে হবে।

বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাশরুর বলছেন, ‘বড় প্রতিষ্ঠানগুলো হয়তো লোক ছাঁটাই করছে না, কিন্তু ছোট বা মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলো কিন্তু অনেক কর্মী ছাঁটাই করছে। এখন ডেভেলপমেন্ট সেক্টর, এনজিও বা ই-কমার্স কোম্পানি ছাড়া আর কেউ এখন কর্মী নিয়োগ করছে না।’

বাংলাদেশের একটি বৃহৎ বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রিজেন্ট গ্রুপের মানবসম্পদ বিভাগের ব্যবস্থাপক অমিত বণিক বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘করোনাভাইরাসের ক্ষতি তো সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওপরেই পড়েছে, আমাদের ওপরেও পড়েছে। আগের তুলনায় ব্যবসা অনেক কমে গেছে।’

‘যেহেতু আমাদের ব্যবসাটা আগের তুলনায় অনেক কমে আসছে, তাই নতুন করে কর্মী নিয়োগ আপাতত আগের মতো আর হচ্ছে না। বরং কাউকে কাউকে অব্যাহতি দেয়া হচ্ছে। কর্মী নিতে হলে, বেতনভাতা দিতে হলে সেজন্য তো ব্যবসা করতে হবে, আয় করতে হবে। অর্থনৈতিক অবস্থা যদি ঠিক না হয়, ব্যবসা যদি ভালো না হয়, তাহলে তো আর কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষেই নতুন করে কর্মী নেয়া সম্ভব হয় না।’

তিনি মনে করেন, করোনাভাইরাসের মন্দার কারণে আপাতত বেশ কিছুদিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো আর আগের মতো নতুন কর্মী নিয়োগ করতে পারবে না। কবে থেকে তারা আবার সেটা চালু করতে পারবে, সেটাও বলা যাবে না।

একাধিক প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, অত্যন্ত জরুরি না হলে তাদের প্রতিষ্ঠানে আপাতত কয়েকমাস কোনো রকম নিয়োগ কার্যক্রম না করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে শীর্ষ পর্যায় থেকে।

একটি ইন্সুরেন্স কোম্পানির কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অত্যন্ত জরুরি নয়, এমন কর্মীদের তালিকা চাওয়া হয়েছে মানবসম্পদ বিভাগ থেকে। তিনি জানাচ্ছেন, আপাতত তাদের বেতন কিছুটা কমিয়ে দিয়ে কর্মী ছাঁটাই না করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু মন্দা অব্যাহত থাকলে নতুন নিয়োগ তো বন্ধই, তিনি একপর্যায়ে কর্মী ছাঁটাই শুরু হওয়ার আশঙ্কা করছেন।

মানবসম্পদ কর্মকর্তাদের একটি অ্যাসোসিয়েশন, গ্রিন এইচআর প্রফেশনাল বাংলাদেশের সভাপতি রওশন আলী বুলবুল বলছেন, ‘নতুন যারা পড়াশোনা শেষ করে বের হলো, তারা একটা বিপদে পড়বেই। কারণ বাংলাদেশের সব ধরণের কোম্পানিই এখন সংকটে আছে। যারা বর্তমানে চাকরিতে আছে, তাদের অনেকে চাকরিহীন হয়ে যাচ্ছে। তাদের সাথে এসে চাকরির লড়াই করতে হবে নতুন আসা ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েটদের।’

‘সরকারের প্রতিবছর অনেকগুলো সার্কুলার থাকে। এই বছর ছয়মাস হয়ে গেল, সরকারি কিন্তু কোন নিয়োগ নেই। আবার বেসরকারি খাতে পুরোটাই বন্ধ আছে। যারা চালু আছে, তারাও সীমিত লোক নিয়ে কাজ করছে। ফলে নতুন করে লোকবল নিয়োগ হওয়ার সম্ভাবনা তেমন নেই।’

দীর্ঘায়িত হতে পারে বেকারত্বের সংকট
করোনাভাইরাস মহামারি কবে শেষ হবে, তা এখনো সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব হচ্ছে না।

বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, মহামারির কারণে আর্থিক মন্দা বহাল থাকবে আরো কিছুদিন। যার প্রভাব ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি পড়বে চাকরির বাজারেও।

আইএলও’র একটি প্রতিবেদনে বলছে যে, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে এই বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এসে আগামী তিন মাসের মধ্যে সাড়ে ১৯ কোটি মানুষ তাদের পূর্ণকালীন চাকরি হারাতে যাচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বের পূর্ণ বা খণ্ডকালীন মোট কর্মশক্তির প্রতি পাঁচজনের মধ্যে চারজনের পেশা কোনো না কোনভাবে কোভিড-১৯ এর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই ক্ষতির শিকার বড় একটি অংশ তরুণ-তরুণীরা।

আইএলওর মহাপরিচালক গাই রাইডার বলেছেন, জরুরিভিত্তিতে তরুণদের জন্য উল্লেখযোগ্য কিছু করা না গেলে এই ক্ষতির জের টানতে হতে পারে পরবর্তী কয়েক দশক ধরে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের প্রধান নির্বাহী ড. ফাহমিদা খাতুন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, নতুন চাকরি তো নেই, যারা ছিল, তাদের ছাঁটাই করা হচ্ছে। তার সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ছে তরুণদের ওপর। যতদিন পর্যন্ত অর্থনীতি ঠিক না হবে, ততদিন তাদের সবার শ্রমবাজারে প্রবেশ করাটা কঠিন হবে।

‘এমনকি করোনা পরবর্তী সময়েও যেসব কাজের সৃষ্টি হবে, সেগুলোর ধরণ কিন্তু অন্যরকম হবে। এখন যেমন বেশিরভাগ কাজকর্ম ঘরে বসে হচ্ছে। ফলে ডিজিটাল বা আইটিবেজড কাজ বেশি হবে।’

‘ফলে আগের গতানুগতিক শিক্ষা দিয়ে চাকরি পাওয়া যাবে না। বাজার উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা ও প্রশিক্ষণ, সেই সাথে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার দরকার হবে।’

সেই সাথে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, যুবকদের এই সমস্যা ও সংকটের ব্যাপারে এখনি গুরুত্ব দেয়া শুরু করা উচিত।

‘দীর্ঘদিন শ্রমবাজারের বাইরে অনেকদিন থাকলে তাদের মধ্যে হতাশার জন্ম নেবে, সামাজিক একটা প্রভাব তৈরি করবে। এর ফলে যে শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে, তাই নয়, এর ফলে সমাজের ওপরেও সামগ্রিকভাবে একটা প্রভাব পড়বে।’

বিকল্প কী
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যারা গত কয়েক বছরের মধ্যে পড়াশোনা শেষ করেছেন, নতুন চাকরির চেষ্টা করছেন, তাদের উচিত হবে শুধুমাত্র কাঙ্ক্ষিত চাকরির জন্য বসে না থেকে যা পাওয়া যায়, সেটা দিয়েই কর্মজীবন শুরু করা।

বিডিজবসের ফাহিম মাশরুর বলছেন, ‘ট্রাডিশনাল চাকরি অনেক কমে যাবে। সবাই যদি সরকারি, বড় প্রতিষ্ঠানে বা অফিসিয়াল চাকরির খোঁজেন, তাহলে হবে না। যেকোনো ধরণের চাকরি পেলেই সেটা শুরু করে দিতে হবে।’

গ্রীন এইচআর প্রফেশনালের রওশন আলী বুলবুল বলছেন, নতুন গ্র্যাজুয়েটদের প্রচলিত শিক্ষার ওপর নির্ভর করে না থেকে তাদের কোয়ালিটি বৃদ্ধি করতে হবে।

‘বেকার থাকার চেয়ে বেগার খাটা ভালো। এই দুঃসময়ে বসে না থাকে, যা পান, তাই নিয়ে শুরু করে দিন, অভিজ্ঞতা হোক। পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি অন্য চাকরির জন্য চেষ্টা করতে পারেন।’

সূত্র : বিবিসি

মৃত্যুর পরের কথা ভেবে মিডিয়া ছেড়ে ইবাদতে অ্যানি খান

‘দু’মিনিট পরে আমি বাঁচবো কিনা জানি না। মৃত্যুর পরে অনন্তকালের জন্য আমি কি সঞ্চয় করলাম? এ সব চিন্তা-ভাবনা মিলিয়ে আমি আর মিডিয়ায় ফিরতে চাইছি না। এজন্য কেউ আমাকে ভণ্ড বলতে পারেন, খারাপ বলতে পারেন। তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমার রিয়ালাইজেশনগুলো কেমন, সেটা একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন।’

ফেসবুক লাইভে এসে এই কথাগুলো বলছিলেন মিডিয়াতে কাজ করা মডেল ও অভিনেত্রী অ্যানি খান। সম্প্রতি তিনি মিডিয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

শিশুশিল্পী হিসেবে মিডিয়ায় কাজ শুরু করেছিলেন অ্যানি খান। এ অঙ্গনে প্রায় তার ২৩ বছরের পথ চলা।

শোবিজ জগত ছেড়ে দেওয়া অ্যানি খান বলেন, ‘আল্লাহ যেন আমাকে আর কাজে না ফেরান। ঘরে থাকবো, ইবাদত করবো। আল্লাহ চাইলে সব কিছুই সম্ভব।’

তিনি বলেন, ‘গত বছর থেকেই মনে হচ্ছিল মিডিয়া থেকে দূরে সরে যাবো। জানুয়ারির ২৬ তারিখ থেকে নিজের মধ্যে সিদ্ধান্তটা বেশি করে নাড়া দিতে থাকে। মার্চের ১৯ তারিখ শেষবার শুটিং করেছি। তারপর তো করোনায় সবকিছু বন্ধ হলো। কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মিডিয়া ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেইনি। এ সিদ্ধান্ত আমার ব্যক্তিগত। কারণ মৃত্যুর পর আমার হিসেব আমাকেই দিতে হবে। সেই আত্ম উপলব্ধি থেকেই আমি মিডিয়ার কাজ থেকে সরে যাচ্ছি।’

মানুষের অনেক ভালোবাসা পেয়েছেন উল্লেখ করে অ্যানি খান বলেন, ‘শৈশব থেকেই টিভিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করতাম। ২০১৫ সাল পর্যন্ত অভিনয়ে অনিয়মিত ছিলাম। তারপর থেকে এ পর্যন্ত টানা নাটকে কাজ করে মানুষের অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। এবার একেবারেই মিডিয়ার কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিনিয়ত মৃত্যুর খবরগুলো যেভাবে শুনছি, আগে সেভাবে শোনা যেতো না। বাবাকে হারালাম। চোখের সামনে কাছের মানুষগুলো ছেড়ে চলে যাচ্ছে। এসব কারণে ধর্মীয়বোধ জাগ্রত হয়েছে।’

বর্তমানে অনেক কিছুতে বিধিনিষেধ চলে আসছে উল্লেখ করে অভিনেত্রী বলেন, ‘আমি একজন মুসলিম। এ পরিচয়ে ধর্মীয় বিষয়গুলো যতোই জানার চেষ্টা করছি, ততই ধর্ম বিষয়ক জ্ঞান বাড়ছে।’

তিনি বলেন, ‘চলমান করোনাকালে দেখছি, অনেকেরই সময় কাটছে না। কিন্তু আমি নিজে কোনো সময়ই পাচ্ছি না। জীবনে সময় এতো স্বল্প অনুভব করছি যে, মনে হচ্ছে দিনরাত ৪৮ ঘণ্টা হলে ভালো হতো। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করছি, নফল নামাজ পড়ছি, কোরআন হাদিস পড়ছি। এতদিন অনেক কিছু থেকে পিছিয়ে ছিলাম। সবকিছু আমাকে শিখতে হচ্ছে।’

বিয়ে প্রসঙ্গে অ্যানি খান বলেন, ‘ঢাকায় আমাদের থাকার একটা জায়গা আছে। বেঁচে থাকলে আগামী বছর বিয়ে করে ফেলবো।’

 

মায়ের বুকের দুধের মাধ্যমে কি শিশুতে করোনাভাইরাস ছড়ায়?

মায়ের বুকের দুধের মাধ্যমে কি শিশুতে করোনাভাইরাস ছড়ায়?


ডা. মারুফ রায়হান খান


১. মায়ের বুকের দুধের মাধ্যমে কি শিশুতে করোনাভাইরাস ছড়ায়?

উত্তর : এখন পর্যন্ত পৃথিবীর কোথাও কোনো মায়ের বুকের দুধে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি। বুকের দুধের মাধ্যমে এটি ছড়ানোর সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

২. এই করোনা মহামারীর সময়েও কি মায়েদের শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত?

উত্তর : অবশ্যই উচিত৷ শিশুর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখবার জন্যেই এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মায়ের দুধে শিশুর প্রয়োজনীয় সব ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকে একদম সঠিক মাত্রায়। তার সারাজীবনের সুস্থতা নির্ভর করে বুকের দুধের ওপর। তার বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করে এটি। বুকের দুধে থাকা এন্টিবডি নানা ধরনের ইনফেকশানের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়। বুকের দুধের মাধ্যমে পাওয়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তেও শিশুকে সাহায্য করবে।

৩. চারিদিকে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং-এর কথা বলা হচ্ছে, এখনও কি নবজাতককে জন্মের পরপর মায়ের বুকে ‘স্কিন টু স্কিন’ কেয়ারের জন্য দিতে হবে?

উত্তর : হ্যাঁ। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে এটি তাদের শরীরে নানামুখী উপকার করে নবজাতক মৃত্যুর হার অনেক কমিয়ে দেয়৷ তাছাড়া মায়ের বুকে দ্রুত দুধ আসাকেও এটি ত্বরান্বিত করে।

৪. যদি মা নিজে কোভিডে আক্রান্ত হন বা কোভিডের লক্ষণ থাকে, তাহলে কি তিনি বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন?

উত্তর : হ্যাঁ, পারবেন। তবে সেক্ষেত্রে বিশেষ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।

৫. কী কী সতর্কতা?

– শিশুকে দুধ খাওয়াবার আগে এবং পরে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে।

– মা একটি মাস্ক পরে নিয়ে দুধ খাওয়াবেন। মাস্কটি ভিজে গেলে সেটি নির্ধারিত স্থানে ফেলে দিয়ে অন্য একটি মাস্ক পরতে হবে। একটি ব্যবহৃত মাস্ক পুনরায় ব্যবহার করা যাবে না। মাস্কের সামনের দিকে হাত দিয়ে স্পর্শ করা যাবে না

– দুধ খাওয়াবার সময় হাঁচি-কাশি না দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। হাঁচি-কাশি এলে রুমাল বা টিস্যু ব্যবহার করে নির্ধারিত স্থানে ফেলতে হবে।

– মায়ের পরিধেয় কাপড়চোপড় পরিষ্কার থাকতে হবে।

– মা তার আশেপাশে যা কিছু স্পর্শ করবে তা নিয়মিত পরিষ্কার করে জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।

৬. কোভিডে আক্রান্ত বা লক্ষণযুক্ত মায়ের কি প্রতিবার দুধ পান করাবার আগে স্তন ধুয়ে নিতে হবে?

উত্তর : যদি তিনি উন্মুক্ত বুকে বা স্তনে হাঁচি-কাশি দিয়ে থাকেন, তাহলে বুকের দুধ পান করাবার আগে অন্তত ২০ সেকেন্ড সময় নিয়ে সাবান-পানি দিয়ে স্তন ধুয়ে নিতে হবে৷

এমনিতে প্রতিবার বুকের দুধ পান করাবার আগে স্তন ধুয়ে নেয়া জরুরি না।

৭. যদি এমন হয় কোভিডে আক্রান্ত বা লক্ষণযুক্ত মায়ের কাছে কোনো মাস্ক নেই তবুও কি তিনি বুকের দুধ পান করাবেন?

উত্তর : আসলে বুকের দুধ এতো বেশি জরুরি যে, এ অবস্থাতেও মা শিশুকে বুকের দুধ পান করাবেন। তবে অন্যান্য সতর্কতাগুলো অবশ্যই মেনে চলার চেষ্টা করবেন।

৮. শিশুদের কোভিডে আক্রান্ত হবার হার কেমন?

উত্তর : এখন পর্যন্ত কোভিডে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম।

৯. তবুও যদি আক্রান্ত হয়ে যায় তখন?

উত্তর : আশার কথাটি হচ্ছে এখন পর্যন্ত যেসব শিশুরা আক্রান্ত হয়েছে তাদের বেশিরভাগেরই কোনো লক্ষণ ছিল না অথবা সাধারণ কিছু লক্ষণ ছিল। সুস্থ হয়ে ওঠার হার অনেক বেশি৷

১০. যদি মা এতোটা অসুস্থ হয়ে পড়েন যে তিনি বুকের দুধ পান করাতে পারছেন না, তখন করণীয় কী?

উত্তর : সেক্ষেত্রে ‘এক্সপ্রেসড ব্রেস্টমিল্ক’ খাওয়ানো যেতে পারে শিশুকে। মা হাত দিয়ে চেপে বা পাম্পের মাধ্যমে একটি কাপে/বাটিতে দুধ সংগ্রহ করে দেবেন। অন্য একজন সুস্থ ব্যক্তি শিশুকে সে দুধটুকু খাইয়ে দেবে। তবে হাত, পাম্প, কাপ, চামচ যা যা ব্যবহার করা হবে সবই খুব ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।

ডা. মারুফ রায়হান খান
এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য)
বসুন্ধরা কোভিড ডেডিকেটেড হসপিটাল

#প্রশ্নে_প্রশ্নে_সহজ_করে -৭

ইসলামকে গভীরভাবে উপলব্ধি, অভিনয় ছাড়লেন সুজানা

অভিনয় থেকে সরে দাঁড়ালেন মডেল ও অভিনেত্রী সুজানা জাফর। গত কয়েক বছর অভিনয়ে অনিয়মিত ছিলেন তিনি। কিন্তু এবার ঘোষণা দিয়েই অভিনয় ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সুজানা।

গত শবিবার রাতে দুবাই থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি তার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। সুজানা বলেছেন, ‘করোনা না এলে জীবনের উদ্দেশ্য কী? তা হয়তো সঠিকভাবে জানাই হতো না। গত চার মাসে ইসলামকে গভীরভাবে উপলব্ধি করেছি। জেনেছি, এটাই আসল জীবন। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, মিডিয়ায় আর কাজ করব না। আমার পরিবারও চায় না এখানে কাজ করি। এখন থেকে বুটিক ব্যবসা আর ধর্মকর্ম নিয়েই থাকতে চাই। সমাজের কিছু অবহেলিত মানুষের দায়িত্ব নিয়েছি। সমাজসেবামূলক কয়েকটি সংগঠনের সঙ্গেও আছি। সেগুলোতেও সময় দিতে চাই। সব সময় সাধারণ মানুষ হয়ে থাকতে চেয়েছি। ভক্তরা যে ভালোবাসা দিয়েছেন সেটা মাথায় নিয়েই বাকি জীবন পার করব। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন।’

সুজানা এখন দুবাইয়ে স্বজনদের সঙ্গে রয়েছেন। সাময়িক সময়ের জন্য গেলেও সেখানে লকডাউনে আটকা পড়েন তিনি। দুবাই থেকে দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন সুজানা। সহযোগিতা করেছেন আরব আমিরাতের প্রবাসী বাংলাদেশিদের। ১৬ বছরের ক্যারিয়ারে অসংখ্য বিজ্ঞাপন, মিউজিক ভিডিও, নাটকে কাজ করছেন সুজানা। তিন বছর আগে তিনি বুটিকের ব্যবসা শুরু করেন। ওই সময় জানিয়েছিলেন বছরে দু-একটির বেশি কাজ করবেন না। তাই গত দুই বছরে মাত্র একটি নাটক ও মিউজিক ভিডিও করেছেন। এবার পুরোপুরিই মিডিয়া ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন সুজানা।

করোনা এড়াতে ঘরে-বাইরে সতর্ক থাকতে কর্মজীবীরা কী করবেন

বেশিরভাগ জায়গা থেকে লকডাউন উঠে গেছে। গণপরিবহনও চালু হয়েছে। এবার ফিরতে হবে কাজে। যদিও কমেনি করোনার সংক্রমণ। তাই রাস্তায় বের হবার আগে আগে করোনা এড়াতে কিছু সতর্কতা মেনে চলা জরুরি। যেমন-

১. রাস্তায় বের হবার আগে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন। কর্মক্ষেত্রে যাবার আগে এটি পরা খুবই জরুরি। অনেকেরই অভ্যেস থাকে বারবার মুখে হাত দেওয়া, মোবাইলের মাউথপিস ঠোঁটের কাছে ধরে কথা বলা। মাস্ক পরা থাকলে সচেতন না থাকলেও এ সব থেকে বিরত হবেন। নোংরা হাত মুখে না গেলে অনেকটাই নিরাপদ থাকা যাবে। পাশাপাশি কেউ করোনায় আক্রান্ত হলেও তার হাঁচি, কাশি থেকে সংক্রমণের ভয় থাকবে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু মাস্ক পরলেই হবে না, এর ব্যবহারবিধিটা জানাটাও জরুরি। তারা বলছেন, সুতির কাপড়ের মাস্ক পরলে মোটা কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। এটি ব্যবহারের পর প্রতিদিন ধুতে হবে। তা না হলে তিন -চারদিন পর একই মাস্ক ব্যবহার করা যাবে। মাস্ক পরার পরে তাতে আর হাত দেওয়া যাবে না।

বিশেষজ্ঞদের বলছেন, গন্তব্যে পৌঁছে মাস্ক খুলে রাখতে চাইলে ছোট ব্যাগ সঙ্গে রাখুন। মাস্ক খুলে টেবিলের উপরে ফেলে না রেখে ব্যাগে ভরে রাখুন। ফেরার সময়ে আবার পরে নিন। মাস্ক খোলা ও পরার আগে অবশ্যই হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।

২. অনেকেরই কথায় কথায় চুলে হাত দেওয়ার প্রবণতা থাকে। অনেকে আবার চোখ কচলান। গ্লাভস পরে থাকলে চট করে চোখে বা মুখে হাত যাবে না। এ কারণে বাইরে বের হলে গ্লাভস ব্যবহার করতে পারেন। তবে গ্লাভস পরে বাইরের সব কাজ শেষ করে বাড়িতে ফিরে এটা পরিষ্কার করতে হবে। ধোয়া গেলে সাবান পানিতে ধুয়ে নিয়ে আবার ব্যবহার করতে পারেন।

৩. রাস্তাঘাটে, বাজারে, কর্মক্ষেত্র সব জায়গাতেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলুন। অফিসে বসার ব্যবস্থা পাশাপাশি হলে চেয়ারের মাঝের ব্যবধান বাড়িয়ে নিন।

৪. বেশির ভাগ জিনিস হাত দিয়ে না ধরাই ভালো। যেমন- হাত দিয়ে কোনও দরজা না খুলে, পা দিয়ে ঠেলে খুলতে পারেন। একান্তই স্পর্শ করতে হলে আঙুলের মাথা দিয়ে করুন। পরে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করুন। কনুই বা হাতের উল্টো দিক দিয়ে রাস্তার জিনিস ধরবেন না। পাবলিক টয়লেটে ব্যবহারে সাবধান থাকুন। বেসিনের কল সাবান দিয়ে ধুয়ে ব্যবহার করুন।

৫. কর্মক্ষেত্রে অনেকেই সহকর্মীর সঙ্গে খাবার ভাগ করে খান। আপাতত তা বন্ধ করুন। জন্মদিন উপলক্ষে একই কেক কেটে সেই টুকরো সকলে খাওয়ার অভ্যাসও বদলান।

৬. কর্মক্ষেত্রে বা গন্তব্যে পৌঁছনোর পরে সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে। ব্যাগে রাখতে হবে ৬০-৭০ শতাংশ অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার। যদি কাজের জায়গায় হাত ধোয়ার ব্যবস্থা না থাকে তাহলে নিজের কাছে রাখা হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করুন। তবে খাওয়ার আগে অবশ্যই সাবান পানি দিয়ে হাত পরিষ্কার করবেন।

প্রত্যেকের কাজের জায়গা আলাদা, কাজের ধরন আলাদা।তাই কর্মক্ষেত্রের সব জিনিস স্যানিটাইজ় করা হচ্ছে কি না সে দিকেও নজর রাখুন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা সংক্রমণে এড়াতে নিজেকেও কিছু দায়িত্ব নিতে হবে । এজন্য পাশের মানুষটির করোনা হয়েছে কি না যেমন খেয়াল রাখবেন, তেমনই নিজের শরীরের দিকেও চোখ রাখুন। নিজের বা পরিবারের কারো জ্বর, কাশি দেখা দিলে হোম কোয়ারেইন্টাইনের উদ্যোগ নিতে হবে।

করোনা এড়াতে কর্মক্ষেত্রে সতর্কতা গ্রহণের পাশাপাশি বাড়ি ফিরেও কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি। যেমন-

১. বাইরের ব্যাগ নিয়মিত পরিষ্কার রাখা জরুরি। কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করলে ধুয়ে নিতে পারবেন। চামড়ার ব্যাগ হলে বাড়িতে ফিরে ব্যাগটা এমন জায়গায় রাখুন, যেখানে কারও হাত পড়বে না।

২. জুতা মোজা খুলে সোজা বাথরুমে চলে যান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সময় বাড়ির দরজায়, সুইচে -কোথাও দেবেন না। বাড়ির লোককেই বাড়ির ও বাথরুমের দরজা খুলে দিতে বলুন। হাত ধুয়ে মাস্ক ও চশমা খুলে পরিষ্কার করুন। এরপর পোশাক খুলে বালতিতে সাবান পানিতে ভিজিয়ে দিন। জামাকাপড় কেচে গরম পানিতে ধুয়ে নিন। রোদে জামাকাপড়গুলো শুকিয়ে নিন।

৩. সাবান মেখে, শ্যাম্পু দিয়ে গোসল সেরে নিন। বড় চুল হলে স্কার্ফ বেঁধে বেরোতে পারেন। পায়ের তলাও সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন।

৪. মোবাইলটাও ভালো করে স্যানিটাইজ় করে নিতে হবে।

গণপরিবহন ব্যবহারে এবং বাইরে আরো কিছু সতর্কতা মেনে চলবেন। যেমন-

১. ভিড় যানবাহন এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। এজন্য কিছুটা সময় নিয়ে বের হোন। একই রুটে হলে অফিসের কয়েক জন একটা গাড়ির ব্যবস্থাও করতে পারেন। তবে পিছনের সিটে দু’জনের বেশি বসবেন না।

২. অফিসের ল্যান্ডফোন কম ব্যবহার করাই ভালো। রিসিভার বেশি মুখের কাছে নিয়ে কথা বলবেন না। ফোনের কাজ শেষ হলে মাউথপিস স্যানিটাইজ় করে ব্যবহার করুন।

৩. রাস্তাঘাটে বাসে-গণপরিবহনে উঠলে অনেক জায়গায় হাত পড়ে। তাই মোবাইল ব্যাগে রাখুন। গন্তব্যে পৌঁছে হাত ধুয়ে মোবাইল বার করে চেক করে নিন।

৪. এটিএম থেকে টাকা তোলার পরে, সেই টাকা ও কার্ড মানিব্যাগের একটি আলাদা পকেটে রাখুন। হাতে স্যানিটাউজার ব্যবহার করুন।

করোনার সংক্রমণ কমাতে খুলে রাখুন ঘরের জানালা

গোটা বিশ্বে এখনও চলছে করোনাভাইরাসের দাপট। নানা ভাবে মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে এই ভাইরাসে। এর গতিবিধি নিয়ে গবেষকরা নিয়মিতই জানাচ্ছেন নতুন নতুন তথ্য। তাদের মতে, যেখানে বাতাস থাকে সেখানে করোনা সংক্রমণের সম্ভবনা কম। এ কারণে গাড়িতে এসি না চালিয়ে ভ্রমণ করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

একই কথা তারা জানিয়েছেন ঘরের ব্যপারেও । গবেষকরা বলছেন,বাড়িতে যদি যথেষ্ট পরিমাণ আলো- বাতাস থাকে তাহলেই করোনা সংক্রমণের পরিমাণ কমতে পারে। আর হাওয়া বাতাস না চলাচল করলে বায়ুবাহিত করোনা সংক্রমণের পরিমাণ বাড়তে পারে। এ কারণে করোনা এড়াতে জানালা খুলে রাখার কথা বলেছেন তারা।

একটি গবেষণায় জানা গেছে, করোনাভাইরাসের আকৃতি ১০০ মাইক্রোনের থেকে কম কম। এটি হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এর মধ্যে পানি, লবণ ইত্যাদি নানারকম উপাদান থাকে। কিন্তু এটি থেকে পানি বাস্প হয়ে গেলে অন্য উপাদান গুলি হাল্কা হয়ে যায় এবং সেটি বাতাসে উড়ে বেড়ানোর যোগ্য হয়ে ওঠে। এ কারণে যদি একটি ঘরে দরজা-জানালা বন্ধ করা থাকে, তাহলে ঘরের মধ্যে সহজে বাতাসে ঘুরে বেড়াতে পারে ভাইরাস। কিন্তু হাওয়া চলাচল করলে সেটি বাতাসের সঙ্গে ভেসে যেতে পারে।

গবেষকরা বলছেন, অনেক সময়েই যান্ত্রিক ভেন্টিলেশনের ফলে ভাইরাস ঘরের মধ্যেই থেকে যেতে পারে। সেই কারণেই প্রাকৃতিক ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন। জানালা-দরজা খুলে দিলেই সেই প্রাকৃতিক ভেন্টিলেশন সহজে পাওয়া যাবে।

স্বর্ণের কালিতে হাতে পুরো কুরআন লিখলেন ইরানি নারী মরিয়ম

স্বর্ণের কালি দিয়ে পুরো কুরআন হাতে লিখলেন ইরানি নারী ক্যালিগ্রাফার মরিয়ম কাজেমি সাভাদকুহি। ক্যালিগ্রাফের নখশি লিপীতে তিনি পবিত্র কুরআনের একটি পাণ্ডুলিপি লিপিবদ্ধের কাজ সম্পন্ন করেছেন। বিশ্বাস করা হয়, মরিয়ম মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় নারী ক্যালিগ্রাফার, যিনি পুরো কুরআন হাতে লিখেছেন।

ফারসি সংবাদ মাধ্যম হোনারঅনলাইনকে তিনি বলেন, ‘আমি পবিত্র কুরআনের পাণ্ডুলিপিটি সম্পন্ন করতে প্রায় একছর যাবত দিনের বেশিরভাগ সময় কাজ করেছি। পুরো কাজ আমি নিজেই করেছি। তবে বাঁধাইয়ের কাজ করেছেন আলি বেহদানি।’

শনিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫০ সেন্টিমিটার প্রস্থ ও ৭০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যর পাণ্ডলিপিটির প্রতিটি পৃষ্ঠা জাফরান দিয়ে রাঙানো হয়েছে। বইটি বাঁধাইয়ে অত্যন্ত মূল্যবান কাভার ব্যবহার করা হয়েছে, যেটি তৈরি করা হয়েছে ইরানের ঐতিহ্যবাহী ‘গোল-ও-মোরঘ’ চিত্রকলার ব্যবহারে। এটি ফারসি চিত্রকলার একটি অনন্য শৈলী যেখানে বিভিন্ন রঙে পাখি ও পুষ্পশোভিত নকশা চিত্রায়িত করা হয়।

কাজেমি জানান, ক্যালিগ্রাফের নখশি লিপী খুবই প্রাচুর্যপূর্ণ একটি লিপী। সে কারণে তিনি এই লিপীটিকে বেছে নেন। কুরআন লিপিবদ্ধে তিনি ১৮শতকের ক্যালিগ্রাফি মাস্টার আহমাদ নেইরিজির ক্যালিগ্রাফি শৈলী ব্যবহার করেছেন। স্বর্ণের প্রলেপের ব্যবহারে প্রতিটি পৃষ্ঠা খোদাই-করা আলোকসজ্জা দিয়ে সুশোভিত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমি আমার শৈল্পিক পেশায় একটি মূল্যবান ও চিরস্থায়ী শিল্পকর্মের অভাববোধ করছিলাম। আমি ভাবছিলাম আমাকে অবশ্যই এমন কিছু লিপিপদ্ধ করতে হবে যা আমাকে শান্তি ও প্রশান্তি দেবে। তাই কুরআন লিপিবদ্ধ করা আমার জন্য ছিল বিশাল তাৎপর্যের। আমি বিশ্বাস করি, আমার জীবনে এর আধ্যাত্মিক প্রভাব দেখতে পাবো।

কাজেমি ১৯৯০ সালে উত্তর ইরানে অবস্থিত ইরান ক্যালিগ্রাফার অ্যাসোসিয়েশনের চালাস শাখায় ক্যালিগ্রাফি শেখার কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি তেহরানে ক্যালিগ্রাফি অঙ্কনের কাজ অব্যাহত রাখেন।

ইরানি এই নারী ক্যালিগ্রাফার বলেন, আমি প্রায় ৩০ বছর ধরে ক্যালিগ্রাফার হিসেবে কাজ করে আসছি। এপর্যন্ত আমি ক্যালিগ্রাফি এবং ক্যালিগ্রাফিক পেইন্টিংয়ের ওপর বেশ কয়েকটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছি।

ইরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর কেরমানশাহের বাসিন্দা ফারিবা মাকসুদি প্রথম নারী ক্যালিগ্রাফার হিসেবে বিবেচিত হন যিনি ক্যালিগ্রাফির নাস্তালিক লিপীতে পুরো কুরআন লিখেছিলেন। ১৯৯৭ সালে তিনি মুসলিম বিশ্বের প্রথম নারী ক্যালিগ্রাফার হিসেবে সম্মাননা লাভ করেন।

সূত্র: তেহরান টাইমস।

রাজনৈতিক দলের কমিটিতে ৩৩% নারী রাখার শর্ত বদলের ইঙ্গিত

চলতি বছরের মধ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সব পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব থাকার আইনি বাধ্যবাধকতাকে ‘অবাস্তব’ ও ‘অকার্যকর’ বলে মনে করছেন নির্বাচন কমিশনের কোনো কোনো সদস্য। এ কারণে ২০০৮ সালে বিগত শামসুল হুদা কমিশনের করা এই আইনি বাধ্যবাধকতাটি বাতিল বা পরিবর্তন করার চিন্তা করছে বর্তমান নূরুল হুদা কমিশন।

কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) আইনে থাকা রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের অংশটিকে নিয়ে আলাদা আইন করার কথা ভাবছে। সে ক্ষেত্রে কমিশনকে আরপিওতেও পরিবর্তন আনতে হবে। কমিশন সূত্র জানিয়েছে, পুরো প্রক্রিয়া এখনো খুবই প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। গত সোমবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিষয়টি তোলা হলেও এ নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয়নি।

গতকাল মঙ্গলবার টেলিফোনে ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর বলেন, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কমিশনের সভায় নারী প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। সভায় একজন বলেছেন, এ বিধানের সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। তা ছাড়া যেসব বিষয় যেমন রাজনৈতিক দলের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বিষয়টিও কোনো দলই মানছে না, এ বিষয়ে আলোচনা হবে। মো. আলমগীর বলেন, নারী প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে কমিশন রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবীসহ বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের মতামত নিতে ডাকতে পারে। আগামী ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সময় আছে। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে বেশ কিছু সংশোধন আনা হয়। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে এই অধ্যাদেশ সংসদে পাস করে।

২০০৮ সালে ভোটে অংশ নিতে দলগুলোর নিবন্ধন প্রথা চালু হয়। ওই সময় নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলগুলো প্রতিশ্রুতি করে, ২০২০ সালের মধ্যে দলের সব পর্যায়ের কমিটিতে অন্তত ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব রাখবে তারা। অবশ্য দলগুলো এই শর্ত বাতিলের দাবি না জানালেও কমিশনই মনে করছে, শর্ত অবাস্তব ও অকার্যকর।

২০১৮ সালে দলে এক-তৃতীয়াংশ নারীর প্রতিনিধিত্ব রাখার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান জানতে চেয়ে ইসির পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়। সেখানে ৪০টি দলের মধ্যে ১০টি দল কমিটিতে নারী নেতৃত্বের বিষয়ে অগ্রগতি সম্পর্কে কমিশনকে জানায়। এর মধ্যে একটিমাত্র দল গণফ্রন্ট তাদের নেতৃত্বে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধি আনতে পেরেছিল। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের কমিটিতে ৮১ জনের ১৯ জন নারী। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে ১৫ শতাংশ এবং জাতীয় পার্টির কমিটিতে ২০ শতাংশ নারী রয়েছেন।

এ বিষয়ে সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘শর্ত শিথিল করার আলোচনা হচ্ছে বলে আমিও শুনেছি। যদি এ শর্ত শিথিল করা হয় তবে তা হবে অবিশ্বাস্য। রাজনৈতিক দলগুলোকে এ বিধান মানতে বাধ্য করার দায়িত্ব ছিল নির্বাচন কমিশনের। সে ক্ষমতাও আছে কমিশনের। কিন্তু রাজনৈতিক দল মানছে না, মানতে চাচ্ছে না এ ধরনের অজুহাতে কমিশন এ শর্ত থেকে সরে আসতে পারে না।’

এই সংবাদটি ০৩ জুন ২০২০ দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত

জেনে নিন ঘরে মাস্ক বানানোর সহজ পদ্ধতি, দেখুন ভিডিওসহ

সারা বিশ্ব জুড়েই ছড়িয়েছে করোনা আতঙ্ক। এর মধ্যে মাস্কের সংকট দেখা যাচ্ছে ওষুধের দোকানে। এই অবস্থায় চাইলে বাড়িতেই বানিয়ে নেয়া যায় মাস্ক।

শুধু করোনার জীবাণু আটকাবে তাই-ই নয়, বাইরের দূষণ, ধুলাবালি আর নানা রোগের জীবাণু থেকে বাঁচতেও ছোট-বড় সবার প্রতিদিনই মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।

জেনে নিন ঘরে মাস্ক বানানোর সহজ পদ্ধতি:

– চার ইঞ্চি করে দুই টুকরো সুতির কাপড় নিনি

– একটির সাথে আরেকটি সেলাই করুন

– সেলাই করার সময় ওপরের ছবিরমতো আধা ইঞ্চি পর পর ভাঁজ করে নিন

– এবার দুই পাশে রাবার লাগিয়ে নিন কান পর্যন্ত

এভাবেই তৈরি হয়ে গেল আপনার মাস্ক।

বাড়ির সবার জন্য একবারে বেশি করে তৈরি করে রাখুন, এগুলো ব্যবহার করলে সব সময়ই জীবাণু থেকে নিরাপদে থাকতে পারবেন। সূত্র: ইউএনবি।

 

মায়ের দুধে করোনা সংক্রমণ হয় না

যথাযথভাবে মায়েরা শিশুকে দুধ খাওয়ালে করোনাভাইরাস সংক্রমণ হয় না। বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাভাইরাস বিষয়ে নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘যে মায়েরা সন্তানকে দুগ্ধদান করে থাকেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে যে, দুগ্ধদানের মাধ্যমে কোন ভাইরাস ট্রান্সমিট বা ভাইরাসের সংক্রমণ হয় না। কাজেই আপনারা যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে মায়েরা মুখে মাস্ক পরে বুকের দুধ দিতে পারেন। দেয়ার আগে স্তন ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নেবেন। হাত ভালোভাবে ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নেবেন। হাত ও স্তন পরিষ্কারের পরই বাচ্চাকে দুগ্ধ দান করতে পারেন।’

নাসিমা সুলতানা আরও বলেন, ‘আপনারা সবাই স্বাস্থ্য নিয়মগুলো মেনে চলুন। যারা বয়োজ্যেষ্ঠ আছেন, যাদের অন্যান্য অসুখ আছে যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হার্টের, ফুসফুসের, কিডনির অসুখ বা অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি অসুখে যারা ভুগছেন, তারা অত্যন্ত সাবধানে থাকবেন। পরিবারের সদস্যরাও যাদের এই সমস্যাগুলো আছে, তাদের দিকে খেয়াল রাখবেন।’

সবাইকে মানসিকভাবে উজ্জীবিত থাকার পরামর্শ দিয়ে নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘শিশুরাও যেন এ নিয়মগুলো মেনে চলতে অভ্যস্ত হয়, সে ব্যাপারে খেয়াল রাখবেন। সবক্ষেত্রেই মানসিকভাবে উজ্জীবিত থাকলে, আক্রান্ত ব্যক্তি নিজের মনোবল দৃঢ় রাখলে, যিনি আক্রান্ত হননি, তিনিও মানসিকভাবে উজ্জীবিত থাকবেন। মানসিক মনোবল দৃঢ় রাখা ও মানসিকভাবে উজ্জীবিত থাকা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়ার একটি মাপকাঠি।’

৬ মাস লকডাউনে ৭০ লাখ অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের শঙ্কা

 

 

করোনাভাইরাসের থাবায় বিপর্যস্ত গোটা দুনিয়া। এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে দেশে দেশে চলছে লকডাউন-কারফিউ। মুখ থুবড়ে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। ঘরবন্দী হওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে মানুষ। উদ্ভূত এ পরিস্থিতিতে নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়বে। ঝুঁকিতে পড়বে নারী ও মেয়েশিশুর প্রজননস্বাস্থ্য। এছাড়াও এ লকডাউন ছয় মাস অব্যাহত থাকলে ৭০ লাখ অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) এক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে এ আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে ‘ইমপ্যাক্ট অব দ্য কোভিড ১৯ পেনডেমিক অন ফ্যামিলি প্ল্যানিং অ্যান্ড এনডিং জেন্ডার বেজড ভায়োলেন্স ফিমেল জেনিটাল মিউটিলেশন অ্যান্ড চাইল্ড ম্যারেজ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কোভিড-১৯ এর কারণে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ১১৪টি দেশে প্রায় ৪ কোটি ৭০ লাখ নারী আধুনিক পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারবেন না বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এবং অনিরাপদ গর্ভপাতের হার বাড়বে। ধারণা করা হচ্ছে, করোনাভাইরাস বিস্তার ঠেকাতে বিভিন্ন দেশের বিদ্যমান লকডাউন ছয় মাস অব্যাহত থাকলে বিশ্বে অতিরিক্ত ৭০ লাখ অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এবং অতিরিক্ত ৩ কোটি ১০ লাখ সহিংসতার ঘটনা ঘটবে।

ইউএনএফপিএ বলছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশে পরিবার পরিকল্পনার চাহিদা পূরণে বাধা, স্বাস্থ্যকর্মীদের সংকট বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে যথাযথ সেবাদানে বিঘ্ন ঘটতে পারে। অন্যদিকে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে সেবা নিতে যাওয়া নারীর সংখ্যাও কমে যাচ্ছে।

ইউএনএফপিএর হেলথ সিস্টেম স্পেশালিস্ট দেওয়ান মো. ইমদাদুল হক বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে মোট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশ প্রজননক্ষম (১৫-৪৯ বছর) জনসংখ্যা। এই জনসংখ্যার মধ্যে গর্ভধারণ করে ১৫ শতাংশ। এদের মধ্যে গর্ভকালীন জটিলতায় অস্ত্রোপচারে সন্তান জন্ম দিতে হয় ৫ থেকে ১৫ শতাংশকে। তবে দেশের এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে গর্ভকালীন, প্রসবকালীন এবং প্রসব পরবর্তী সেবা নেয়ার হার কমবে। মায়েরা সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে চাইছেন না। আবার যে নারী কোভিড-১৯ আক্রান্ত, তাকে সেবা দেয়া নিয়েও জটিলতা দেখা দিচ্ছে।

করোনাভাইরাসের বিস্তারের ফলে বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়েছে কি না, তা নিয়ে এখনো তেমন কোনো গবেষণা হয়নি। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা মহানগর এলাকায় গত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ১০ দিনে ধর্ষণ, যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন, যৌন নিপীড়ন ও অপহরণের ২৮টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে নয়টি ধর্ষণের, আটটি যৌতুকের জন্য নির্যাতন, পাঁচটি অপহরণ ও ছয়টি যৌন নিপীড়নের মামলা।

ব্র্যাকের নারী নির্যাতন প্রতিরোধ উদ্যোগের পরিচালক নবনীতা চৌধুরী বলেন, ‘এই সময়ে বিশেষভাবে নারীর অবস্থা বুঝতে যে জরিপ চালিয়েছি সেখানে দেখেছি, মাস্ক এমনকি সাবানের ব্যবহারেও নারী সমান অধিকার পাচ্ছেন না। ৭০ শতাংশ পুরুষ যেখানে মাস্ক ব্যবহার করছেন, নারীর ক্ষেত্রে তা ৩৫ শতাংশ। অর্থনৈতিক চাপ বেড়েছে, তাই মেয়ের ওপর বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনার চাপ বেড়েছে।’ ব্র্যাকের জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৩২ শতাংশ বলেছেন, এই সময়ে পরিবারে এবং পাড়ায় নারীর প্রতি সহিংসতা আরও বেড়েছে।

ইউএনএফপিএর প্রতিবেদনে বলা হয়, বাল্যবিবাহ বন্ধের পরিকল্পিত চেষ্টা বিঘ্নিত হবে। ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের উপপরিচালক সাবিরা নূপুর জানান, করোনাভাইরাসের বিস্তার থামলে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দেখা যাবে মেয়ে শিশুদের স্কুলে উপস্থিতি ছেলে শিশুদের চেয়ে কমে গেছে। এরপর যেকোনো উপায়েই হোক মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। ওয়ার্ল্ড ভিশনের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে ২১টি বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটেছে।

 

কিসের ব্যর্থতায় খুন হচ্ছে নিষ্পাপ শিশুরা

কিসের ব্যর্থতায় খুন হচ্ছে নিষ্পাপ শিশুরা


ফাতিমা খান


এস এস সি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে আত্নহত্যা করেছে আটজন শিক্ষার্থী। আমি মনে করি আজকের দিনের সবচেয়ে খারাপ খবর এইটি।

এই শিক্ষার্থীদের মানসিক ভাবে অসুস্থ দাবী করবেন অনেকেই, হয়ত আমিও তাই বলব। কিন্তু ওরা কি আজন্ম অসুস্থ ছিল? তা কিন্তু না। ওদের ফুলের মত মনকে দিনে দিনে অসুস্থ করেছে আমাদের সমাজ যেখানে ভাল রেজাল্ট, কেবলমাত্র ভাল রেজাল্টই গুণাগুণ ও যোগ্যতা যাচাই এর একমাত্র মানদন্ড। এর জন্য তারা প্রতিনিয়ত তিরষ্কৃত হয়, ‘তুলনা’র অসুস্থ প্রতিযোগিতার শিকার হয়। দূর্ভাগ্যবশত, আমরা এখনো সেই আদিম সমাজে বসবাস করি যেখানে মেয়েদের গুণাগুণ বিচার করা হয় এই দেখে যে মাটির চুলায় রান্না করার পর সিলভারের পাতিল ঘষে কে কত ঝা চকচকে করে ফেলতে পারে। ওরা ট্যালেন্ট / মেধার সংগা বুঝবে কেমন করে?
আফসোস যে কোমলপ্রাণ বাচ্চাগুলো এই সমাজেরই বলি।
আমার প্রোফাইলে কাল থেকে আজ পর্যন্ত কাউকেই পেলাম না যাদের পরিবারের কেউ জিপিএ ফাইভের কম স্কোর করেছে। এর তিনটি কারণ হতে পারে –

১. পরীক্ষার্থীদের বেশিরভাগই মানে প্রায় সবাই জিপিএ ফাইভ পেয়েছে।
২. আমার পরিচিত জনদের সবাই সেই লেভেলের ট্যালেন্ট ( Lucky me! 😎)
৩. জিপিএ ফাইভের এই যুগে এর চেয়ে কম স্কোরকারীদের বাবা মা বা অভিভাবকেরা লজ্জিত। সংকোচের কারণে তারা সন্তানদের বা পরিজনদের রেজাল্ট জানাচ্ছেন না।

আমার কাছে তৃতীয়টিই সম্ভাব্য কারণ মনে হচ্ছে।

কিন্তু এর কারণ কি?
পরীক্ষার রেজাল্টই কি মেধা যাচাই এর মানদন্ড?
তাহলে যে পরীক্ষার্থী দুই বছর ছয়জন প্রাইভেট টিউটার এর কোচিং করে ভাল রেজাল্ট করল আর যে কিনা অভাবে, আধপেট খেয়ে, টিউটার ছাড়াই ঘরের গুরুদায়িত্ব গুলো পালন করে কোনরকমে পরীক্ষার খাতায় কলম চালালো – দুজনকে কি এক পাল্লায় বিচার করা যাবে?
অথবা, কারো হয়ত ছবি আঁকার বা গান করার অথবা লেখালেখির যোগ্যতা অসাধারণ, অংক হয়ত তার মাথায় কুলোয় না, সে কি মেধাবী নয়?
আমি মনে করি যা নিজস্ব গূণ তা-ই মেধা, হোক তা স্পোর্টস, আর্ট বা অন্য কোন যোগ্যতা। একে লালন করতে পারলেই একদিন তা সাফল্য হয়ে ধরা দেয়। ঠেলে, ধাক্কায়,চাপ দিয়ে যে ভাল রেজাল্ট করানো হয়, তা নিতান্তই লোকদেখানোর জন্য।

কাল আমার বড় ছেলেকে পড়াতে বসেছি। আমি অবশ্য এই যুগের সবচেয়ে খারাপ মা। পড়াশোনা নিয়ে কখনই পীড়াপীড়ি, চাপাচাপি করিনা, এজন্য অনেক কথা, উপদেশ বাণী প্রতিনিয়ত শুনি। তো যাহোক, ছেলে পড়তে বসে বলছে –
– আম্মু আমি গ্রেইড এইটে, এখনই কেন সবাই ‘ও লেভেল’ এর রেজাল্টের চিন্তা করে?
– এজন্য করে যে তোমার রেজাল্টের উপর গ্রাজুয়েশন লেভেলে ভাল কোন সাবজেক্ট এ চান্স পাওয়া নির্ভর করে।
– ভাল সাবজেক্ট মানে কি?
– মানে ডিম্যান্ডিং সাবজেক্ট, যেটায় পড়লে তুমি লাইফে শাইন করবে, বেটার লাইফ পাবে।
– এই পৃথিবীতে কোনটা ডিম্যান্ডিং না আম্মু? লিটারেচার, হিস্ট্রি, আর্ট এগুলার কি কোন ভ্যালু নাই?
– আছে, তবে কম।
– তাহলে কেউ যদি এসব সাবজেক্টে হাইয়েস্ট ডিগ্রি নেয়, ব্রিলিয়ান্ট রেজাল্ট করে, ইউনিভার্সিটির টিচার হয়, তার ভ্যালু কি কম?
– না তা না, সেটাও অবশ্যই ভাল। তবে তুমি যদি মোস্ট ডিম্যান্ডিং সাবজেক্ট গুলোতে পড়, কম ইফোর্টে বেটার জব পাবে, ভাল স্যালারি পাবে।
– ব্যাস,এইটুকুই? তাহলে আমি জবই খুঁজব না। আমি আন্টাপ্রিনিওর হব, অন্যকে জব দিব।
– আচ্ছা বাবা। এখন পড়াটা শেষ কর। কাজ আছে আমার।
– এই যে আম্মু, আপনি ডেন্টিস্ট হলেন, লাইফের সব এক্সামেই ভাল স্কোর করলেন, ডিম্যান্ডিং জবই তো করছেন, কিন্তু আমি তো আপনার মত এরকম লাইফস্টাইল কখনো, কখনোই চাইব না। আমি এমন কিছু করব যাতে লাইফ আর প্রফেশান দুইটাই এঞ্জয় করতে পারি।

আমি জানি আমার ছেলের কথা অনেকাংশেই ঠিক। কিন্তু সেও তো এ সমাজেরই অংশ। শেষ পর্যন্ত আমি বা আমরা হয়ত তাকে সেই আখেরি ঠ্যালা মারবই।

বি: দ্র : আমার প্রোফাইলে বা বন্ধু মহলের পরিবারের কেউ যদি জিপিএ ৫ এর কম স্কোর করে থাকে, তাদের জন্য অভিনন্দন ও অনেক দোয়া। পরীক্ষার রেজাল্টই সব কিছু না। সবচেয়ে বড় ফেইলিউর হল নিজেকে হারিয়ে ফেলা, আত্নবিশ্বাস ও আত্নমর্যাদা হারিয়ে ফেলা।

 

জীবনে কেন শান্তি নেই

জীবনে কেন শান্তি নেই


ডা. মারুফ রায়হান খান


২০০৬ সাল, আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। ফুটবল বিশ্বকাপ চলছিল তখন। সেই ফুটবল বিশ্বকাপটা আমার জন্য খুব আনন্দের স্মৃতি হতে পারতো, কারণ আমার ফেভারিট টিম ইটালি সেবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। কিন্তু তা ঘিরে আমার আনন্দ নেই, বরং রয়েছে একরাশ বেদনা আর কান্না। কারণ সেই বিশ্বকাপটি চলার সময় আমার একজন বন্ধু আত্নহত্যা করে। হ্যাঁ, এই ১৪/১৫ বছরের মানুষটিই ফ্যানে দড়ি ঝুলিয়ে আত্নহত্যা করে। ও নাকি পড়াশোনা না করে খেলা দেখতো, বাবা-মা সে রাতে নাকি বেশ বকাঝকা করেছিলেন, বন্ধু আমার আর সে জীবন রাখার কোনো মানে খুঁজে পায়নি।

আমাদের এই প্রজন্মের অজস্র দিক আছে যেগুলো বেশ পজিটিভ কিন্তু একটা ভয়ঙ্কর রকমের অন্ধকার দিক আছে। আমরা বোধহয় খুব অল্পতেই ধৈর্য হারাই, এই অতি মূল্যবান জীবনটিকে আমরা মূল্যায়ন করতে পারি না, তার গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারি না, জীবনটিকে হয়তো ঠুনকো ভাবি কিছু থেকে কিছু হলেই–কী হবে আর এ জীবন রেখে। তার প্রমাণ পাই যখন আমরা জানতে পারি, কাউকে ‘পাখি ড্রেস’ কিনে দেওয়া হয়নি বলে আত্নহত্যা করে, প্রিয় দল আর্জেন্টিনা কিংবা ব্রাজিল খেলায় হেরেছে বলে ঐ দেশের হাজার হাজার মাইল দূরে বসবাসরত বাঙালি যুবক যখন তার জীবন বিনষ্ট করে ফেলে, প্রিয় মানুষকে না পেলে আত্নহত্যা করে ফেলে, বাবা-মা একটুখানি বকাঝকা করলে গলায় দড়ি দেয়, পরীক্ষায় একবার কাঙ্খিত সাফল্য না পেলে সে জীবন রাখার আর কোনো অর্থ খুঁজে পায় না। এসবের কারণ কি এটা হতে পারে যে, আমাদের জীবনের আসলে ব্রড কোনো ভিশন নেই, আমাদের স্পেক্ট্রাম অফ থিঙ্কিংটা ন্যারো?

আমার সাথে এটা প্রায় সবাই হয়তো নির্দ্বিধায় স্বীকার করে নেবেন যে, আমাদের প্রজন্মের একটা বিশাল অংশ মারাত্নক রকমের ডিপ্রেশানে ভোগে। জীবনটাতে যেন কোনো শান্তি নেই, স্বস্তি নেই, ছন্দ নেই। আমাদের ‘নেই’-এর পাল্লাটাই যেন খুব ভারী, ‘আছে’-এর পাল্লাতে যেন কিছুই নেই। বাস্তবতাটা কি আসলেই তাই?

আচ্ছা, এ লেখাটি যারা পড়ছেন তাদের মধ্যে এমন একজন মানুষও কি আছেন, যিনি সকালে খেতে পান না, দুপুরে খেতে পান না, রাতে খেতে পাবেন কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা নেই? ডায়েট কন্ট্রোলের জন্যে না, খাওয়ার সামর্থ্য নেই সেজন্যে? মনে হয় না এমন কোনো পাঠক এখানে আছেন। আমি আপনাদের একটা জরিপ শোনাই। ২০১১ সালে ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক একটা জরিপ করে, সেখানে দেখা গেছে পৃথিবীতে প্রায় ১ বিলিয়ন মানুষ এরকম ‘Chronically hungry’ থাকে। পৃথিবীতে ৬ বিলিয়ন মানুষ আছে তার মধ্যে ১ বিলিয়নই এভাবে ক্রমাগত ক্ষুধার্ত অবস্থায় দিনাতিপাত করে–প্রতি ৬ জনে ১ জন! এটা আমাদের প্রতি আল্লাহর কতো বড় রহমাত যে তিনি আমাদের অন্তত ৩ বেলা ভালোভাবে খাবার মতো তাওফিক দিয়েছেন।

ক্ষুধার কষ্ট যে কত বড় একটা কষ্ট, সেটা আমরা বুঝব না। বুঝেছিল ঐ পরিবারটা, বাংলাদেশেরই একটা পরিবার, দীপালিদের পরিবার। যে পরিবারে দুটো সন্তান; বড় মেয়ে আর ছোট ছেলে। সে পরিবারের নিয়ম ছিল দুপুরবেলা খাবে ছেলেটা আর রাতেরবেলা খাবে মেয়েটা। দুবেলা দুজন খেতে পারবে না, কারণ দুজনকে দুবেলা খাওয়ানোর মতো আর্থিক সঙ্গতি পরিবারটির ছিল না। একদিন দুপুরবেলা ছেলেটি খেলো, রাত হলে তার আবার ক্ষুধা লেগে গেলো, অসহনীয় ক্ষুধা–ছেলেটি তার বোনের জন্য বরাদ্দকৃত রাতের খাবারটা খেয়ে ফেলে। সারাদিন ক্ষুধায় কষ্ট করেছে বোন, রাতের বেলায় যখন সে দেখলো তার খাবারটুকু নেই, রাগে-ক্ষোভে-দুঃখে সে রাতে আত্নহত্যা করে বোন।

ক্ষুধার কষ্টটা আমরা বুঝব না। বোঝে ঐ মানুষটা, সোমালিয়ার ঐ মানুষটা, যিনি রমাদানে একজন স্কলারকে প্রশ্ন করেছিলেন–আমাদের সাহরিতে খাবার মতো কিছু নেই, ইফতারেও খাবার মতো কিছু নেই; আমাদের রোজাটা কি হবে?!

আমার স্মৃতিপটে প্রায়শই গাজার ১১ বছরের এক শিশুর একটা গায়ে শিহরণ জাগিয়ে দেয়া প্রশ্ন ভেসে ওঠে। ২০১৪ সালে লাস্ট এটাকের সময় ছেলেটি একজন স্কলারকে প্রশ্ন করে, এই যে এতো বোমা হামলা হচ্ছে এর মধ্যকার ডাস্ট পার্টিকলগুলো যে আমাদের নাক দিয়ে মুখ দিয়ে যাচ্ছে –আমাদের রোজাটা কি হবে!?

আচ্ছা এবার এ লেখার পাঠকদের জন্যে আরেকটি প্রশ্ন। আপনাদের মধ্যে এমন একজনও কি আছেন যিনি জন্মগ্রহণের পর তার মা ছিলেন না, বাবা ছিলেন না, এমনকি অন্য কোনো নিকটাত্মীয় ছিলেন না আপনাদের দেখাশোনা করার জন্য? একজনও বোধহয় নেই। আপনি শুনে অবাক হবেন, ইউনিসেফের এক জরিপে উঠে এসেছে পৃথিবীতে ২২০ মিলিয়ন, দুইশত বিশ মিলিয়ন শিশু আছে যারা জন্মের পরে তাদের মা পায়নি, বাবা পায়নি, এমনকি কোনো নিকটাত্নীয় ছিল না তাদের দেখাশোনা করার জন্যে।

তবুও নাকি আমাদের জীবনটাতে কোনো শান্তি নেই, সুখ নেই, স্বস্তি নেই, ছন্দ নেই…

আমি বছর কয়েক আগে একটা পত্রিকায় সম্পাদনার কাজের সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজে বার্ণ ইউনিটের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ডা. সামন্ত লাল সেন স্যারের একটা সাক্ষাতকার পড়ছিলাম। সেখানে তিনি বলেছেন, তার মেয়ের ছোটবেলায় একবার মিজেলস (হাম) রোগ হয়েছিল, তারপর রোগ সারলেও চেহারায় দাগ পড়ে যায়। তার মেয়ের মনে খুব দুঃখ ছিল মুখে এই দাগের জন্য। তো একবার প্রফেসর সামন্ত লাল স্যার তার কাছে আসা আগুনে দগ্ধ হয়ে যাওয়া একটি মেয়ের ছবি তুলে এনে তার মেয়েকে দেখালেন। মেয়ে এবার অনুধাবন করলেন অন্য অনেকের চাইতে তিনি অনেক ভালো আছেন। তার বাবাকে বললেন, আমার চেহারার দাগ দূর করতে হবে না, তুমি বরং এই মেয়েটিকেই চিকিৎসা করো।

আসলে আমরা যখন আমাদের অবস্থানের চাইতে নিচের কারও দিকে তাকাব, তখন এই জীবনটাই আমাদের কাছে অনেক বেশি সুখের মনে হবে, অনেক মূল্যবান মনে হবে। সত্যি বলতে কী পৃথিবীতে অজস্র মানুষ আছে যারা আমাদের মতো একটা জীবন পেলে বর্তে যেতো, ধন্য হয়ে যেতো।

আরেকজন বিখ্যাত ব্যক্তির সাক্ষাতকারের জন্য কাজ করেছিলাম, তিনি হচ্ছেন প্রফেসর ডা. শুভাগত চৌধুরী, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বিষয়ক যারা লেখালেখি করেন, তিনিই বোধহয় সবচেয়ে এগিয়ে আছেন, ৪০ টি বই উনার। তিনি তার সাফল্যের কথা বলছিলেন, তিনি জীবনে যতটুকু পেয়েছেন, তাই নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন। তার অন্য বন্ধুরা কে কতো দ্রুত কতোটা এগিয়ে গেলো এসব নিয়ে তিনি কখনও চিন্তিত ছিলেন না। নিজের যতোটুকু আছে, তাই নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন। একজন বিখ্যাত স্কলার ইমাম ইবনে তাইমিয়া (র.)-এর একটি চমৎকার  বাণী আছে, “Contentment is the paradise of this world.” অর্থাৎ, এই পৃথিবীর জান্নাত হচ্ছে সন্তুষ্টি। আমাদের যতোটুকু যা আছে তাই নিয়ে যদি আমরা পরিতুষ্ট থাকতে পারি, আমাদের জীবন সুখে ভরে উঠবে।

আমাদের মধ্যে একটা ব্যাপার খুব অহরহই দেখা যায়। আমাদের চলার পথে, সামনে এগোবার পথে কোথাও যদি বাধা চলে আসে, তবে আমরা সেখানেই হাল ছেড়ে দিই, নিরাশ হয়ে পড়ি। কিন্তু একটা অদ্ভুত ব্যাপার খেয়াল করে দেখুন, পৃথিবীতে যারাই বড় হয়েছেন, তাদের প্রত্যেকের জীবনেই কিন্তু অনেক স্ট্রাগল ছিল। পৃথিবীর বুকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ যিনি, সেই মুহাম্মাদ (স.) এর কথাই ধরা যাক। আমরা সবাই জানি তার মিশনের প্রাথমিক পর্যায়ে তাকে কতোটা বাধা-বিপত্তি-অত্যাচার-নিগ্রহ সইতে হয়েছিল। তিনি হাল ছেড়ে নিরাশ হয়ে যাননি, তার মিশন থামিয়ে দেননি–আজ পৃথিবীতে কোটি কোটি অনুসারী তাঁর। এন্ড্রু কার্নেগীর কথা বলতে পারি আমরা, যাকে নোংরা পোষাকের জন্য পার্কে ঢুকতে দেওয়া হয়নি,  ৩০ বছর পর সেই এন্ড্রু কার্নেগীই পুরো পার্কটি কিনে ফেলেন এবং সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেন “সবার জন্য উন্মুক্ত “। বহুল জনপ্রিয় স্টিভ জবসের কথা বলা যেতে পারে, ৭ মাইল দূরের এক গির্জাতে প্রতি রবিবার ভালো খাবার-দাবারের ব্যবস্থা ছিল। সারা সপ্তাহ তার ভালো খাওয়া-দাওয়া করার মতো আর্থিক সঙ্গতি ছিল না। তাই প্রতি রবিবার তিনি পায়ে হেঁটে ৭ মাইল দূরের গির্জাতে যেতেন এক বেলা ভালো খাবার জন্য।

আমি বেশ কিছুদিন আগে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ডিপ্রেশানের উপর একটা সেমিনারে গিয়েছিলাম। সেখানে যিনি স্পিকার ছিলেন তিনি খুব সুন্দর করে ডিপ্রেশান কাটানোর একটা সহজ বুদ্ধি শিখিয়ে দিয়েছিলেন। আর তা হচ্ছে অন্য মানুষের জন্য কিছু করা, তাদের উপকারে নিজেকে নিয়োজিত রাখা। এখন তো আমাদের দেশে বিভিন্ন রকমের স্বেচ্ছাসেবামূলক কর্মকাণ্ড হয়ে থাকে –শীতবস্ত্র বিতরণ, বন্যা দুর্গতদের সহায়তা, স্বেচ্ছায় রক্তদান, দুস্থদের খাদ্য বণ্টন, হেলথ ক্যাম্পেইন আরও কত কী। এসবের সাথে যদি আমরা নিজেদেরকে জড়িত করে নিতে পারি তবে জীবন নিয়ে খুব বেশি হতাশামূলক চিন্তাভাবনা করার সময়টা আমরা পাব না।

ওখানে আরেকটা জিনিস শিখেছিলাম যারা নিজের জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট, কৃতজ্ঞ, তাদের কর্টিসল হরমোন (স্ট্রেস হরমোন নামে পরিচিত)  লেভেলটা কম থাকে তুলনামূলকভাবে। তারা বেশি সুখী থাকেন। আসুন না আমরা আমাদের চারপাশের সবার প্রতি কৃতজ্ঞ হই, কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি আমাদের স্রষ্টার প্রতি, মা-বাবার প্রতি, আত্নীয়-পরিজনের প্রতি, বন্ধু-বান্ধবের প্রতি। আপনার জীবন সুখী হোক।

ডা. মারুফ রায়হান খান

এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য)

বসুন্ধরা কোভিড হসপিটাল

 

 

 

সব পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রাখার কৌশল কী?

সব পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রাখার কৌশল কী?


ইসরাত


প্রথম কৌশল হলো, মাথা যে গরম হতে পারে এটা মাথায় না রাখা। সব পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রাখা আসলে উচিত না। যখন আপনার কাউকে বোঝানো দরকার যে আপনি তার উপর রেগে আছেন কারন সে এমন কিছু করেছে যাতে আপনার রাগ হওয়া উচিত তখন কিন্তু খানিকটা রাগ আপনাকে দেখাতেই হবে। আপনার রাগ দেখানোটা যুক্তিযুক্ত কিনা তা নিরপেক্ষ হয়ে আগে বিবেচনা করুন।

ধুম করে রাগ হওয়াটা খুব খারাপ অভ্যাস। কাছের মানুষগুলোও আস্তে আস্তে দুরে চলে যায়। তারা কিন্তু দুরে যেতে চায়না তারপরেও বাধ্য হয়। হয়তো একই বাড়িতেই বাস করে একই ছাদের নিচে তবুও তাদের অন্তরে থাকে এক জীবনের ব্যবধান।

এবার কাজের কথা বলি, ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করতে পারা এবং সব রকম পরিস্থিতি সামলে নেয়াটা একটা বিশেষ গুন। এটা এমন একটি গুন যা চেষ্টা করে অর্জন করা যায়। আমরা কি কারো কাছে ছোট হতে চাই কখনো? চাইনা। যেকোনো অবস্থায় আপনি প্রথমেই চিন্তা করবেন, এখন আমার কি করা উচিত। ধরে নিন আপনি ঠিক এমন অবস্থায় পরলেন…

আপনি লকডাউনের মধ্যে ঘরে আটকে আছেন। অনেক কাজ জমে আছে, সেগুলো কবে শেষ করবেন, কতোদিন এভাবে চলবে, বাসার মানুষগুলো এমন কেন করছে, ছোট ভাইবোন দুটো এতো কেন বিরক্ত করছে। সব মিলিয়ে আপনি এমনিতেই যথেষ্ট বিরক্ত তার উপর আপনার ছোট বোনটা আপনার সাথে খুব বাজে ভাবে বেয়াদবি করে বসলো। আপনার ইচ্ছে করলো একটা চড় মেরে সবগুলো দাঁত ফেলে দিতে। কিন্তু আপনাকে কয়েকটি দিক ভাবতে হবে…

১. আপনি কোষে তাকে একটা চড় মারতে পারেন।

২. আপনি হেসে ফেলতে পারেন, তাহলে হয়তো উদারতা দেখানো হবে।

৩. আপনি আপনার মাকে গিয়ে বিচার দিতে পারেন। শাসন যা করার মা-ই করুন।

৪. আপনি তাকে বলতে পারেন ” আমরা পরে কথা বলি, এখন সঠিক সময় না।”

এখন আপনি ভেবে দেখবেন এই ৪টির মধ্যে কোন পদ্ধতিটা ভালো। আর আমি সাহায্য করছি এটা জানিয়ে যে কোনটি কেমন হবে।

১. আপনি যদি এখন চড় মারেন তাহলে আপনার বোন আরো বাজে আচরণ দিয়ে আপনাকে অসম্মান করতে পারে, কারন মেয়েটার আজকে কেন যেন মন বা মেজাজটা ভালো নেই। তাই এটা বাদ দেয়া খুবই জরুরী।

২. হেসে ফেলবেন তো সর্বনাশ। আপনার বোন আহ্লাদী স্বভাবের না হলেও আপনার হাসিতে প্রশ্রয় পেয়ে এই মেজাজ প্রতিদিন দেখাবে এবং তখন মহা সর্বনাশ।

৩. মা কে বিচার দিলেতো আপনিও ছোটবোনের বয়সে নেমে গেলেন। বড় ভাই হিসেবে নিজের জায়গাটা তো ঠিক রাখতে হবে।

৪.এটা উত্তম। আপনি যখন বলবেন ” আমরা পরে কথা বলি” তখন আপনার বোন আর কিছু বলার সাহস পাবেনা এবং সে কিছুটা লজ্জা এবং সংকোচবোধ করবে। তাছাড়া আপনারা দু’জনই মাথা ঠান্ডা রেখে চিন্তা করার সময় পাবেন। এতে আপনার বোন অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাইতে আসবে আর আপনিও “আর যেন এমন না হয়” বলে ক্ষমা করে দেবেন।

আসলে কে কিভাবে পরিস্থিতি সামলাবে তা নির্ভর করে তার ব্যাক্তিত্বের ধরন কেমন তার উপর। সারাজীবন ধরে প্রতি মুহূর্তে এতোশত পরিস্থিতির মুখোমুখি হবেন তা কিন্তু আপনাকেই সামলাতে হবে। একটি উদাহরণ দিলাম কিছুটা হয়তো বোঝাতে পারবো সেই আশায়।

ইসরাত, প্রাক্তন জে.এস. কলেজ।
সুত্রঃ কোরা।

করোনাভাইরাস: লকডাউনের মধ্যে একাকী তিন নারীর ঘরবন্দী জীবন

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে আরোপ করা লকডাউন অনেকের জীবনকেই আকস্মিকভাবে যেন স্তব্ধ করে দিয়েছে।

বিশেষ করে যারা একা থাকেন, তাদের জন্য সেল্ফ-আইসোলেশনের জীবন হতে পারে ভীষণই দুর্বিষহ এক অভিজ্ঞতা।

কিভাবে লকডাউনের মধ্যে নিজের মনকে চাঙ্গা রাখবেন? নিজেকে ব্যস্ত রেখে একাকীত্বকে দূরে সরিয়ে রাখবেন?

পৃথিবীর তিন প্রান্তের তিন নারীর সাথে কথা বলেছেন বিবিসির কেলি লেই-কুপার। এই তিন নারীর একজন ভারতের দিল্লিতে, একজন ইতালির মিলানে, আর শেষজন যুক্তরাষ্ট্রের মেইনে।

তারা তিনজনই একা, তিন জনই লকডাউনে আটকা পড়েছেন নিজ নিজ এ্যাপার্টমেন্টে।

গত কিছু দিনে তার বাড়ির নিরাপত্তা রক্ষীরা ছাড়া আর কোন মানুষের চেহারা দেখেননি অপর্ণা।

ভারতের রাজধানী দিল্লির কাছে গুরগাঁওয়ে তার মায়ের পুরোনো এ্যাপার্টমেন্টে একা থাকেন তিনি।

পুরো এ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সটির গেট এখন তালা দেয়া, সাথে আছে নিরাপত্তা রক্ষীর সার্বক্ষণিক পাহারা।

অপর্ণার বয়স ২৬। লকডাউন শুরু হবার পর তিনি সেই গেট পার হয়েছেন মাত্র এক বার।

দিনে দু‌ই বার তিনি ঘর থেকে বের হন – তার দুটি কুকুর জুলস আর ইয়োগীকে হাঁটানোর জন্য।

বেশ কিছুকাল নিউইয়র্কে ফটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করার পর মিলানে ফিরে আসতে পেরে বেশ খুশি ছিলেন লুসিয়া।

সারা দিন ক্যামেরা নিয়ে ঘুরে ঘুরে কাজ করা , আর দিনের শেষে বন্ধুদের নিয়ে খেতে যাওয়া – ভালোই কাটছিল মিলানে লুসিয়ার দিনগুলো।

কিন্তু কয় ‌‌‍মাস পার না হতেই ইতালিতে ছড়িয়ে পড়লো করোনাভাইরাস, আর মিলান শহর পরিণত হলো ইতালিতে করোনাভাইরাসের এপিসেন্টারে।

লুসিয়া সহ লক্ষ লক্ষ ইতালিয়ান আটকা পড়লেন লকডাউনে, শুরু হলো দিনের পর দিনের জন্য তার ঘরবন্দী জীবন।

স্বাভাবিকভাবেই সারা দিন এ্যাপার্টমেন্টে বসে থাকাটা ছিল খুবই কষ্টকর। অন্তত: প্রথম দু‌এক সপ্তাহ।

তবে এখন – বাধ্য হয়েই – লুসিয়াকে মানিয়ে নিতে হচ্ছে এই একাকী ঘরবন্দী জীবনের সাথে।

তিনি এখনো মিস করেন তার স্বাধীনতা আর অন্যদের সাহচর্য।

কিন্তু সারা দেশে যখন এত মানুষ মারা যাচ্ছে তখন তার প্রিয়জনেরা যে সবাই সুস্থ আছে – এই বা কম কী? এমনটাই ভাবেন তিনি।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে যখন করোনাভাইরাস স‍ংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লো – তখন তার এই একাকী জীবনের সমস্যাগুলো যেন আচমকাই এসে তাকে আঘাত করলো।

সপ্তাহ দুয়েক আগে এ্যাঞ্জির চাকরিটা চলে যায়। ‍স্বাভাবিক সময়ে এমন পরিস্থিতিতে পরিবারের কাছ থেকে একটা সান্ত্বনা মেলে, বা একজন বন্ধু হয়তো দাওয়াত করে আমাকে উৎফুল্ল করে তুলতে চেষ্টা করে। কিন্তু এখন এসব কিছুই নেই। এ্যাঞ্জি এখন একেবারেই একা।

সামাজিক সম্পর্ক এবং শারীরিক-মানসিক স্বাস্থ্য

অনেক গবেষণাতেই দেখা গেছে যে মানুষের সামাজিক সম্পর্কগুলো আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের মতো শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ।

বিভিন্ন গবেষণায় তীব্র একাকীত্বের সাথে উচ্চ মৃত্যুহার এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার সম্পর্ক দেখা গেছে।

সামাজিক বিচ্ছিন্নতা এবং যোগাযোগহীনতা কীভাবে মস্তিষ্কের আচরণকে প্রভাবিত করে – তার গবেষণার জন্য সুপরিচিত মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক নাওমি আইজেনবার্গার।

তিনি বলছেন, বর্তমানে এই যে শত শত কোটি লোক তাদের স্বাভাবিক জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে – তা নজিরবিহীন এবং একাকী বসবাসকারী লোকদের জন্য প্রিয়জনদের সাথে যুক্ত থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

পোষা প্রাণী অনেকটা ভুলিয়ে দিতে পারে একাকীত্ব

এ সময় মানুষ যেভাবে অনলাইনে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে – তা কি আসলে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা মানুষদের মানসিক প্রয়োজন মেটাতে পারছে? অধ্যাপক আইজেনবার্গারের গবেষণা দল এখন সেটারই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছে ।

তিনি বলছেন, আপনার যদি কোন পোষা প্রাণী থাকে যাকে আপনি স্পর্শ করতে পারেন, জড়িয়ে ধরতে পারেন – তাহলে তা মানসিক চাপ অনেকটা কমাতে পারে।

শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টেফানি কাচিওপ্পো ‌বলছেন, নিজের ভাবনা-চিন্তা ও প্রত্যাশাগুলোকে পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেয়া একাকীত্ব দূর করার জন্য খুবই জরুরি। তিনি বলছেন, এ সময়টাকে নানাভাবে কাজে লাগানো সম্ভব।

অনেকে ছবি আঁকছেন, ছবি তুলছেন, লিখছেন জার্নাল

এ্যাঞ্জি যেমন আবার ছবি আঁকা শুরু করেছেন। তার আঁকা ইলাস্ট্রেশন অনলাইনে পোস্ট করছেন, তাতে প্রকাশ করছেন তার আবেগ-অনুভূতি, মহামারির মধ্যে একাকী বাস করার অভিজ্ঞতা। তিনি বলছেন, এটা তাকে মানসিকভাবে স্থির রাখতে সহায়ক হচ্ছে।

ড. কাচিওপ্পো বলছেন, বিচ্ছিন্নতার এই সময় অনেকে জার্নাল লিখতে পারেন। এক একটি দিনে কী কী করবেন তার ছোট ছোট লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করতে পারেন। এতে আপনার মনে একটা শান্তির বোধ আসবে যে আগামীকালের জন্য আপনার করার কিছু আছে।

তিনি একটা কাজ করেছিলেন – গত ৩০শে মার্চ তিনি তারই একটা ছবি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছিলেন। শিরোনাম ছিল, ‍‌”কোয়ারেন্টিনে থাকা একজন নারীর আত্মপ্রতিকৃতি।“

তার পর কয়েকদিনের মধ্যে আরো শত শত নারী পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে তাদের ছবি পোস্ট করেছেন।

গ্যাটউড এখন এসব ছবি দিয়ে একটা ইনস্টাগ্রাম একাউন্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

দিল্লি থেকে অপর্ণাও তার একটা আত্মপ্রতিকৃতি পাঠিয়েছেন। শুধু তাই নয়, তিনি এই লকডাউনের মধ্যে এক বছরেরও বেশি সময় পর এই প্রথমবার হাতে তুলে নিয়েছেন তার ক্যামেরাটি, এবং তার ঘরবন্দী জীবনের ছবি তুলতে শুরু করেছেন।

তিনি বলছেন, সবাইকে তিনি এটাই বলতে চান যে কোন অপরাধবোধে না ভুগে যা খুশি করার জন্য এ সময়টাকে কাজে লাগানো যায়।

ড. কাচিওপ্পো বলছেন, এরকম এক ট্রাজেডির একটা ইতিবাচক পরিণাম হলো – এর মধ্যে দিয়ে অনেক জাতির লোকেরা পরস্পরের সাথে যুক্ত অনুভব করতে পারে।

দিল্লির অপর্ণা বলছেন, এ অবস্থায় বোঝা যাচ্ছে যে আমরা সবাই কতটা ঝুঁকির মুখে আছি। পৃথিবীর অন্য যে কোন প্রান্তের মানুষদের বুঝতে পারাটা এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে। আমার মনে হয় এমন একটা কঠিন সময়েও এ উপলব্ধি একটা প্রয়োজনীয় এবং সুন্দর একটা ব্যাপার। বিবিসি

দিনে ছয়বার হাত ধুলে করোনা সংক্রমণ কমানো সম্ভব: গবেষণা

দিনে অন্তত ছয় থেকে ১০ বার হাত ধুলে করোনা ভাইরাসের মত জীবাণুর সংক্রমণ কমানো সম্ভব বলে এক গবেষণায় বলা হয়েছে।

ব্রিটেনের এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়।

বর্তমানের করোনা ভাইরাসের মতো একই রকম প্রাণঘাতী মহামারির জীবাণুর ওপর ২০০৬ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত গবেষণা চালানো হয়। সেখান থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা হচ্ছে এমন গোষ্ঠীর ভাইরাস, যেগুলো থেকে সাধারণত সর্দি-জ্বরের মত উপসর্গ নিয়ে হালকা অসুস্থ দেখা দেয়। করোনা মহামারির মতো এ ধরণের সব রকম ভাইরাস সাবান পানি দিয়ে হাত ধুলে মরে যায়।

ওয়েলকাম ওপেন রিসার্চ সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণার ফলাফল এবং পিয়ার রিভিউয়ের অপেক্ষায় থাকা সমীক্ষায় দেখা গেছে, দিনে অন্তত ছয়বার করে হাত ধুলে ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে আসে। এই গবেষণায় অংশ নিয়েছিলেন ১৬৬৩ জন।

তবে দিনে ১০ বারের বেশি হাত ধোওয়ার ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি আরো কমে যাবে এমন কোনো তথ্যপ্রমাণ প্রকাশিত হয়নি।

২০ সেকেন্ডের ধরে কীভাবে হাত ধোবেন তা দেখিয়েছেন ওয়েস্টমিনিস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. অ্যাডেল ম্যাককর্মিক।

গবেষণা প্রতিবেদনের লেখক লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজের ড. সারাহ বিল বলেছেন, ‘আপনার কোন উপসর্গ থাক বা না থাক, সবসময় ভালো ও স্বাস্থ্যসম্মতভাবে হাত পরিষ্কার রাখার অভ্যাস করা উচিত।’

‘এটি নিজেকে রক্ষা এবং আপনার অজান্তে চারপাশের অন্যদের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি কমাবে।’

ইংল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘করোনা ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি কমানোর জন্য অন্যতম উপায় হলো কমপক্ষে নিয়মিত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া। বিশেষ করে হাঁচি-কাশি বা ফুঁ দেওয়ার পর ও খাওয়া বা রান্না করার আগে।’

‘এছাড়া বাইরে বেরনোর পর বা গণপরিবহন ব্যবহারের পর হাত ভাল করে ধোয়ার অভ্যাস ভালো।’

লেবু খেলে কী হয়?

লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি। যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী এবং দরকারি। ভিটামিন-সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো ছাড়াও শরীরে আরো অনেক ধরনের উপকার করে থাকে। এর মধ্যে থাকা পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম শরীরে খনিজের অভাব মেটায়।

অনেকেই তাই তাঁদের দিন শুরু করেন এক গ্লাস লেবু পানি দিয়ে। যা নিয়মিত খেলে প্রচুর উপকার মেলে-

১. হজমশক্তি বাড়ায়
লেবু হজমশক্তি বাড়ায়। এতে ফাইবার রয়েছে। যা পেট পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। তাই অনেকেই সকালে খালিপেটে লেবুজল খান। কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতেও এটি সাহায্য করে।

২. আর্দ্রতা ধরে রাখে
লেবুর পানি শরীরে পানির শূন্যতা মেটায়। পানিতে তাই নির্দিষ্ট পরিমাণ লেবু মিশিয়ে নিয়মিত খেলে ভিটামিন সি-র অভাব দূর হয়। শরীর থাকে আর্দ্র।

৩. ওজন কমায়
ওজন ঝরাতে লেবু খুবই দরকারি। রোজ সকালে খালিপেটে ইষদুষ্ণ পানিতে লেবু এবং মধু মিশিয়ে পান করুন। বাড়তি মেদ ঝরবে। হজমশক্তি বাড়বে।

৪. কিডনি স্টোন কমায়
লেবুর রস কিডনিতে জমে থাকা স্টোন বা পাথর গলিয়ে দিতে সাহায্য করে। যাঁরা এই সমস্যায় ভুগছেন তাঁরাও সকালে লেবুর পানি নিয়মিত খেতে পারেন এতে প্রস্রাবের আকারে স্টোন গলে বেরিয়ে যাবে। আপনি ব্যথামুক্ত সুস্থ জীবন যাপন করবেন।

৫. অ্যানিমিয়া কমায়
খাবার থেকে রক্তে আয়রন শোষণে সাহায্য করে ভিটামিন সি। তাই শরীরে যত ভিটামিন সি থাকবে ততই আয়রন শোষিত হবে। কমবে অ্যানিমিয়া।

 

করোনা পরিস্থিতিতে রাগ বেড়ে যাচ্ছে মানুষের পর্ব-১

করোনা পরিস্থিতিতে রাগ বেড়ে যাচ্ছে মানুষের পর্ব-১


ফাতেমা শাহরিন


আমাদের মনের বা মতের বিরুদ্ধে কিছু হলেই আমরা রেগে যাই। আমরা যখন আমাদের Need বা প্রয়োজন পূরণ করতে পারিনা তখনও রেগে যাই।

Need আবার অনেক ধরনের হতো পারে।
১. মানসিক চাহিদা
২. শারিরীক চাহিদা
৩. আর্থিক চাহিদা

রাগ হচ্ছে Natural Emotion আমাদের। আর পরিস্থিতিই কিন্তু রাগের সৃষ্টি করে তাই আমরা যতই বলি রাগ ভালো না, রাগা যাবে না কিন্তু কেউ অন্যায় করলে, পরিস্থিতি স্ট্রেসফুল হলে আমাদের রাগ হবেই।
রাগ ছিল, রাগ আছে এবং ভবিষ্যতেও রাগ থাকবে। আমরা আমাদের রাগ আবেগ মুর্হুত্বেই ভ্যানিশ করব না। আমরা আমাদের রাগকে কন্ট্রোল করব। আর অনেক ক্ষেত্রে রাগটাই জরুরী, রাগ খারাপ কোন আবেগ না।

আসুন জানি রাগ তাহলে কি?

‘রাগ’ হচ্ছে মানুষের একটি স্বাভাবিক আবেগ। মানুষ সাধারণভাবেই মনে করে ‘রাগ’ খুবই খারাপ।

এটা শুধু মানুষকে ক্ষতিই করে। কিন্তু কথাটা পুরোপুরি সত্যি নয়, আংশিক সত্যি। কারণ রাগ কারো ক্ষতি করে না বরং অনিয়ন্ত্রিত রাগ যা নিজের ক্ষতি করে আবার অন্যের ক্ষতি করে তা খারাপ।

আমরা যদি ‘রাগ’ নামক আবেগের ভাল দিকটি লক্ষ্য করি তবে অনেক কিছুই বুঝতে পারব। তাহলে positive কয়েকটা উদাহরণ:

যেমন- একটি ছোট শিশু প্লাস্টিক জারের মুখ খুলতে প্রথমবার ব্যর্থ হয়ে দ্বিতীয়বার চেষ্টা করে। কিন্তু তখনও ব্যর্থ হলে তার মধ্যে ‘রাগ’ নামক আবেগের সৃষ্টি হতে থাকে এবং সে বেশি বেশি চেষ্টা করতে থাকে এবং এক পর্যায়ে গিয়ে সফলও হয়। আবার ছাত্ররা বন্ধুর ওপর রাগ করে ভাল রেজাল্ট করে। আমরা কোন না জানা কঠিন বিষয় আত্মস্থ করতে চাই তাহলে ভেতরে এক ধরনের রাগ যা জিদ আকারে প্রকাশ পায়।

আবার কোন একটি মেয়ে বাসে উঠে বসল। পাশে একটি ভদ্রলোক মেয়েটিকে ইচ্ছেকৃত টার্চ করল। মেয়েটি রেগে গেলো। মেয়ে দৃঢ় কন্ঠে প্রতিবাদ করল। খারাপ আচরণটি থেমে গেলো।

চলবে…

 

‘জেগে উঠুন,সর্তক হোন!’

‘জেগে উঠুন,সর্তক হোন!’


আকলিমা ফেরদেৌসী


‘’আমাদের হয়ত দোষ ছিলো, এত রাতে একটা পার্টিতে কেন গেলাম! আমি বলছিনা যে ছেলেদের সাথে মিশা যাবে না। আমরা যেখানে পড়ছি ছেলেদের সাথে পড়ছি।ছেলেদের সাথে হয়ত মেশার প্রয়োজন হবে! তবে আমি বলব কেউ যেন আমাদের মতো বোকা না হয়! সবাইকে বিশ্বাস না করে। বিশেষ করে উচ্চবিত্ত শ্রেণীটা মনে হয় একটু বেশী অন্যরকম! এটা যাতে খেয়াল করে।‘’- এই কথাগুলো বলছিলেন বনানীর রেইনট্রিতে ধর্ষনের শিকার এক তরুণী একাত্তর চ্যানেলে একটি টক শোতে টেলি কনফারেন্সে।

তার প্রতি সমবেদনা রেখে বলছি, তিনি যে উপলব্ধি করেছেন এই উপলব্ধিটা আমাদের প্রত্যেক নারীর মধ্যেই আসা উচিত।

‘’কেউ যেন আমাদের মতো বোকা না হয়!’’ হ্যা সত্যিই তাই!

এখন সময় এসেছে নারীদের সচেতন হবার। বিশেষ করে একজন শিক্ষিত নারীকে তো অবশ্যই সচেতন হতে হবে। যে কথা বহু বছর আগে বেগম রোকেয়া বলে গেছেন- ভগিনীরা ! চক্ষু রগড়াইয়া জাগিয়া উঠুন, অগ্রসর হোন!”

আমরা নারীরা কি জাগ্রত?

আমরা কি আমাদের ক্ষমতা আর অধিকার সর্ম্পকে সচেতন? উত্তর গুলো অবশ্যই নেতিবাচক হবে । চোখ বন্ধ করে বলা যায় না আমরা সচেতন নই। যারা সচেতন তাদের সংখ্যা গুটিকতক।আমাদের নারীরা লেখাপড়ায় ভালো করছে, তথ্য-প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে, আত্ননির্ভশীল হিসেবে গড়ে উঠছে, বড় বড় পদে কর্মরত আছে, সব ঠিক। কিন্তু গোড়ায় গলদ!

দুঃখজনক হলে সত্য যে, উনিশ শতকে বেগম রোকেয়া যে বিষয়টি বুঝতে পেরেছিলেন আজকের শিক্ষিত নারী সমাজের মাঝে এখন পযর্ন্ত সেই বোঝ তৈরী হয়নি!
তিনি বলেছিলেন-‘’আমরা সমাজের অর্ধাঙ্গ, আমরা পড়িয়া থাকিলে সমাজ উঠিবে কিরূপে? কোনো ব্যক্তি এক পা বাঁধিয়া রাখিলে সে খোড়াইয়া খোড়াইয়া কতদূর চলিবে? পুরুষের স্বার্থ এবং আমাদের স্বার্থ ভিন্ন নহে। তাহাদের জীবনের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য যাহা আমাদের লক্ষ্য তাহাই।’
আমাদের নারীরা জানে না, তার ভিতরের ক্ষমতা কত! সে কি করতে পারে। সমাজ বিনির্মানে তাকে যে ভূমিকা রাখতে হবে সে খেয়াল কয়জনের আছে!

মাতৃত্বের মতো বিশাল দায়িত্বের গুরুভার সর্ম্পকে আমাদের নারীরা কতটুকু সচেতন?

‘বন্ধু ছাড়া লাইফটা ইম্পসিবল’, ফ্রি মিক্সিং, মডেলিং এর লোভনীয় অফার –এ সেন্সগুলো যে একধরনের লোভী পুরুয়ের ব্যবসায়ীক দৃষ্টিভংগিতে তৈরী তা কি জানে আমাদের নারীরা?

প্রয়োজনে বন্ধু নিবার্চনের ক্ষেত্রে হ্যান্ডসাম, বিত্ত-বৈভব ইত্যাদির চেয়ে ছেলেটি কতটা চরিত্রবান সেটা কয়জন ভেবে দেখেন?

আমাদের নারীরা কেন এটা ভাবে না যে, বাংলাদেশে বেহেশতি বাতাস বইছেনা। এখানে অনেক চোর বদমাইশ আছে যাদের মেয়ে দেখলেই ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করে।

সুতরাং আমি নিরাপদ তো! নিজের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কেন সে সচেতন থাকবে না?

এমনিতর হাজারো প্রশ্ন রয়েছে, যার উত্তর খুজে দেখলে আমাদেরকে হতাশই হতে হয়। তাই নারীদেরকে বলবো-

‘জেগে উঠুন, সতর্ক হোন!
পরিবারে, আত্নীয়-স্বজনের সামনে, প্রতিবেশীদের মাঝে, যে প্রতিষ্ঠানে আপনি রয়েছেন সেখানে নিজের অবস্থান এমন ভাবে গড়ে তুলুন যাতে আপনাকে টোকা দিয়ে দেখা তো দুরের কথা আপনার দিকে চোখ তুলে তাকাতে দ্বিধা বোধ করে।
মনে রাখতে হবে আপনার অধিকার কেউ আপনাকে দিয়ে যাবে না, অধিকার আদায় করে নেয়ার মত যোগ্যতা আপনার মধ্যে থাকতে হবে।
নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে লোলুপ দৃষ্টির সামনে নিজেকে উপস্থাপনের চেয়ে মনোযোগী হোন আপনি আগামী প্রজন্মের কারিগর হিসাবে কতটা যোগ্য হয়ে গড়ে উঠছেন।সাবধান হয়ে যান আপনি যেন এমন মা না হন যার অবহেলা আর সঠিক পরিচর্যার অভাবে ছেলে ধর্ষক হয়ে গড়ে উঠে।

অবাধ মেলামেশা নয়, প্রয়োজনে ছেলেদের সাথে মিশতে হলে দুরত্ব বজায় রাখুন। কারন আপনি যে ছেলেটির সাথে মিশছেন সে যতই আপনাকে ‘তুই তুকারি‘ করুক না কেন, ছোট বা বড় বোন মনে করুক না কেন, আপনার ফিগার, হিপের মাপ, ঠোট, চোখ, হাসলে আপনাকে কেমন দেখায় ইত্যাদি সব কিছুই তার দৃষ্টি সীমানায় ভেসে বেড়াবেই! ছেলেদের দৃষ্টি বিপদজনক বলেই আল্লাহ এক্ষেত্রে সংযত থাকতে বলেছেন। একমাত্র কঠোর পরহেযগার পুরুষ ছাড়া আর যে কোন পুরুষেরই এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রন নেই তা হলফ করে বলা যায়।

নিজের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখুন। কারো সাথে একা কোথা দেখা করতে যায়া থেকে বিরত থাকুন।কারন সেখানে তৃতীয়জন থাকে শয়তান! হোক সে বয়ফ্রেন্ড, চাকুরির ইন্টারভিউ, কোন সুপারিশ, বড় ভাইয়ের বন্ধু, ডাকুনে চাচা, মামা, খালু যে কেউ!

নারী শিল্পীদের বলছি, যারা নাটক সিনেমা আর মডেলিং করছেন, তারা আসুন একসাথে হোন আর যে সমস্ত স্ক্রীপ্টে নারীর অশ্লীল উপস্থাপন আছে তা বজর্ন করুন। নারীর মর্যাদাপূর্ণ উপস্থাপনকে হ্যা বলুন, অশ্লীল উপস্থাপনকে না বলুন।
নিজের আব্রু রক্ষার ব্যাপারে সচেতন হোন।
কেন আপনি নিজেকে জোড়া চোখের তীক্ষ্ম দৃষ্টি দ্বারা ক্ষত বিক্ষত করবেন?

কাদের জন্য আপনি চিত্তহরণী হবেন? যাদের জিভ সব সময় ঝুলে থাকে তাদের জন্য? অবশ্যই না।
থানা ,ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার, বিভিন্ন মহিলা সংস্থা, সাংবাদিক ইত্যাদির ফোন নাম্বার সংগ্রহে রাখুন।আক্রান্ত হবার পূর্বাভাস দেখলেই তাদের অবগত করুন।
শিক্ষিত হয়েছেন, তো নিজের ব্যাপারে নিজে সচেতন হোন। যোগ্য হয়ে গড়ে উঠুন, এসব ধর্ষকদের লার্থি মারার জন্য।

 

বটবৃক্ষের গল্প

বটবৃক্ষের গল্প


জিনাত তাসনিম


প্রত্যেকটি মানুষের শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য কিংবা জীবনের যেকোনো স্তরে কাছের কিংবা দূরের কোনো মানুয হয়ে ওঠে তার পরম নির্ভরতার ঠিকানা।তার প্রেরণার বাতিঘর। নিজের শৈশবের ঝাপসা স্মৃতি গুলোতে একটু নির্জনে ডুব দিলে ভেসে ওঠে, কিছু প্রিয় মুখ।সেই শীতের সকাল,চারিধারে কুয়াশার চাদর,প্রিয় মানুষের হাত ধরে তিড়িং বিড়িং লাফিয়ে চলা সেই গাঁয়ের মেঠোপথে। তিনি মাঝেমাঝেই থেমে যাচ্ছেন, কুয়াশার ওপার থেকে ডাক আসে…মিয়াভাই,ওও নানা সাথে সালাম,তিনি দাড়াচ্ছেন, হাসিমুখে কথা বলছেন, তাদের সমস্যা শুনছেন। এদের মধ্যে কেউবা কখনো তাকে ঠকায়, কেউ তার ক্ষতি করে, কেউ তার সমালোচনা করেন।তিনি সবার সাথে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক রাখতেন, কখনো কারো সমালোচনা করতে দেখিনি। জমির ফসল ঘরে এলে যে সাহায্যে চাইতেন তাকেই সাহায্য করতেন।বাসে বা রিকশায় তার সাথে ভ্রমণ ছিলো শিক্ষণীয়। বিভিন্ন রাস্তা চেনা,বিভিন্ন স্হানের ইতিহাস জানা।শৈশবের হাতেখড়ি হয়েছিল তার কাছে। আমার পুরো জীবনে আমি এত নিষ্ঠাবান শিক্ষক পাইনি।আমি খুব ফাঁকি বাজ ছাত্র, তিনি পড়ে যাচ্ছিন,আমি কখনো তার টাক মাথায় বসা মশার পিছনে ছুটছি, কখনো খেলার সাথী দের কথা ভাবছি। যখন ক্লাস ফাইভে পড়ি,তিনি ঠিক করলেন আমি বৃত্তি পরীক্ষা দিবো।এ বিষয়ে আমার কোনো মাথা ব্যাথা নাই,উনি বইগুলো পড়ে শোনাচ্ছেন, আমি মাদুরে গড়াগড়ি দিচ্ছি। পরীক্ষার দিন আমরা পরীক্ষা দিতে গেলাম,প্রশ্নও কমন, কিন্তু আমার চিন্তা উনি আছেন না আমাকে ছেড়ে চলে গেলেন?আমি প্রতি পনেরো মিনিট পর পর বের হচ্ছি,তার সাথে কথা বলছি। তিনি আমাকে আশস্ত করছেন তিনি আছেন। রোগ কাতুরে আমি ক্লাস ফোরের আগে স্কুলে যায়নি। আমার বৃটিশ আমলে মেট্রিকুলেশন পাশ করা,তুখোড় অংক শিক্ষক আমাকে আমার বেসিক তৈরী করে দিয়েন।তিনি কখনো রাগ করতেন না,খুব ধৈর্য সহকারে পড়াতেন।পাড়ার অন্যান্য বাচ্চারা যারা খেলার সাথী ছিলো। ওরা খারাপ কথা বলতো,কখনো অন্যের জিনিস না বলে নিয়ে যেতো।তিনি বুঝাইতে খারাপ কথা কেন বলা যাবেনা,কাউকে না বলে তার জিনিস আনা যাবেনা।প্রত্যন্ত গাঁয়ে আমাদের বাড়ি। তবু সেখানে দৈনিক সংবাদ পত্র পড়া হতো,সকাল সন্ধে ট্রানজিস্টার রেডিও তে বিবিসি সংবাদ শোনা হতো,প্রতিটি ঘর ছিলো বইপত্রে ঠাসা। সবাই পড়তে ভালোবাসি। গাঁয়ের অন্য ঘরগুলোতে যখন বৈষয়িক বিষয় নিয়ে তুমুল ঝগড়াঝাটি, আমাদের বাড়িতে বিতর্ক হতো ইতিহাস, ইসলাম, রাজনীতি নিয়ে।এমন একটা পরিবেশ তৈরি করে ছিলো আমার শিক্ষক। জীবনের যেকোনো সংকটে আভয় আর আশ্রয় স্হল ছিলেন তিনি।সবসময় উত্সাহো দিতেন।তার প্রিয় সূরা ছিলো সূরা রহমান। তিনি জীবনের শেষ দিন গুলিতে যখন খুব কষ্ট পাচ্ছিলেন, বারবার বলতেন বাংলা তরজমা সহ সূরা রহমান পড়ে শুনাতে।দাদা দাদী মা যখন বিছানায় একদিন দাদী খুব অসুস্থ। দাদা বারান্দায় বসে বারবার তার খবর নিচ্ছেন। আমি সূরা রহমান পড়ছি।একটু পর দাদীকে নিতে এ্যাম্বুলেন্স এলো,দাদা আমাকে বললেন,তোমার দাদীকে আমার সালাম দাও।আমি অবচেতন দাদীকে সালাম পৌঁছে দিলাম।তার মতো বিনয়ী শিক্ষক আমি আর পাইনি। তার মৃত্যু র সময় আমি দূরে ছিলাম। যখন তার কাছে আসলাম,আমি তার নিথর দেহটার কাছে যেতে পারছিলাম না।বরাবরের মতো আমার অভিমান,আপনি আমাকে না বলে চলে গেলেন কেন?সবার অনুরোধে আমি তার সামনে দাড়ালাম। স্মিত হাস্যমুখ, মাথার কাছে একটা সবুজ প্রজাপতি বসে আছে।কি শান্ত আর সুখী দেখাচ্ছে তাকে।আমি নির্বাক হয়ে চেয়ে আছি, আমাদের শেষ বিদায়ের ক্ষণে। আমি অভিমান ভুলে মনে মনে বললাম, হে প্রশান্ত আত্মা যাও তোমার প্রিয় রবের কাছে, যিনিই উত্তম ফয়সালা কারি।

আপেল সাইডার ভিনেগার খেলে যে কাজগুলো করা যাবে না

 

আপেল সাইডার ভিনেগারের উপকারিতার কথা কম-বেশি সবারই জানা। সেইসব উপকারিতা পেতে নিয়মিতভাবে অনেকেই এটি খেয়ে থাকেন। কিন্তু সঠিক নিয়ম মেনে না খেলে আপেল সাইডার ভিনেগার হতে পারে আপনার ক্ষতির কারণ। কিছু কাজ আছে যা আপেল সাইডার ভিনেগার খেলে করা যাবে না। চলুন জেনে নেয়া যাক-

ভরপেট খাবার খাওয়ার ঠিক পরেই কি আপেল সাইডার ভিনেগার খাওয়ার অভ্যাস আপনার? তাহলে এই অভ্যাস এখনই ত্যাগ করুন। ভরাপেটে আপেল সাইডার ভিনেগার খেলে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। খালি পেটে খেলে হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

অনেকেই কিছু খাওয়ার আগে তার গন্ধ শুঁকে দেখেন। আপেল সাইডার ভিনেগারের ক্ষেত্রে এটা করবেন না। কারণ আপেল সাইডার ভিনেগার শুঁকলে চোখ ও নাকের সমস্যা হতে পারে। তাই আপেল সাইডার ভিনেগার পানিতে মিশিয়ে হালকা করেও খেতে পারেন। তাতে এর কড়া গন্ধ আপনার নাকে যাবে না।

আপেল সাইডার ভিনেগার খেয়েই দাঁত ব্রাশ করবেন না। এতে আপনার দাঁতের এনামেল ক্ষয়ে যেতে পারে। এর ফলে আপনার দাঁতে ক্যাভিটি দেখা দিতে পারে। তাই আপেল সাইডার ভিনেগার খাওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট পরে দাঁত ব্রাশ করুন।

প্রথমেই অনেকটা আপেল সাইডার ভিনেগার খেয়ে নেবেন না। শরীরকে এর সঙ্গে অভ্যস্ত হতে সময় দিন। প্রথমে অল্প অল্প করে খাওয়া শুরু করুন। না হলে পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

রাতের বেলা শুতে যাওয়ার ঠিক আগে আপেল সাইডার ভিনেগার খাবেন না। এটি খাওয়ার পর অন্তত ৩০ মিনিট সোজা হয়ে বসে থাকবেন। নয়তো গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে।

আইসোলেশনের জন্য নিজেকে তৈরি করবেন যেভাবে

এ এক কঠিন সময়। শতাব্দীর সবচেয়ে বড় দুঃসময় বললেও বাড়িয়ে বলা হবে না। কোনো নির্দিষ্ট দেশ কিংবা জাতি নয়, পুরো বিশ্বই এখন আক্রান্ত, আতঙ্কিত। তাই নিজেকে একা ভাবার দরকার নেই। এখন প্রত্যেকেই আপনার মতো উদ্বিগ্ন। যেহেতু ভাইরাসটি নতুন, এখনও আবিষ্কার হয়নি এর ওষুধ কিংবা প্রতিষেধক, তাই ভয়টা বেশি। তবে ভয় দূর করতে চাইলে ইতিবাচকভাবে চিন্তা করতে হবে। এই রোগে আক্রান্ত হওয়া মানেই কিন্তু মৃত্যু নয়। অনেকেই আক্রান্ত হওয়ার পরে সুস্থ হয়ে ফিরেছেন। খুব কম সংখ্যক রোগীর ক্ষেত্রেই এটি মারাত্মক আকার ধারণ করে। তাই ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখুন। এটিও কিন্তু আপনাকে অসুখের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের রসদ জোগাবে।

করোনাভাইরাস আসার পরে আমরা কিছু নতুন শব্দের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। যেমন কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন, পিপিই ইত্যাদি। এই শব্দগুলোর ব্যবহার আগে এতটা হতো না যতটা এখন হচ্ছে। এর মধ্যে কোয়ারেন্টাইন আর আইসোলেশনকে গুলিয়ে ফেলছেন অনেকে। কোয়ারেন্টাইন হলো আপনার ভেতর অসুখটা আছে কি না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য অন্তত দুই সপ্তাহ পর্যন্ত সবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা। যদি এমন কোনো আশঙ্কা তৈরি হয় যে, আপনি এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন, তখনই কেবল আপনাকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হবে। দুই সপ্তাহ পর যদি পরীক্ষায় করোনাভাইরাস নেগেটিভ আসে, তবে আপনি সুস্থ। কোয়ারেন্টাইন থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন। আর যদি পজেটিভ হন, তবে যেতে হবে আইসোলেশনে।

কারো শরীরে যখন করোনাভাইরাস ধরা পড়ে তখন তাকে আইসোলেশনে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। আইসোলেশনের সময় চিকিৎসক ও নার্সদের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে থাকতে হবে রোগীকে। অন্য রোগীর কথা ভেবে হাসপাতালে আলাদা জায়গা তৈরি করা হয় তাদের জন্য। অন্তত দুই সপ্তাহের মেয়াদে আইসোলেশন চলে। অসুখের গতিপ্রকৃতি দেখে তা বাড়ানোও হয়। আইসোলেশনে থাকা রোগীর সঙ্গে বাইরের কারো যোগাযোগ করতে দেয়া হয় না। তাদের স্বজনদের সঙ্গেও এই সময় দেখা করতে দেয়া হয় না। একান্ত তা করতে দেয়া হলেও অনেক বিধিনিষেধ মানতে হয়।

যেহেতু এখনও এই অসুখের কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি তাই আক্রান্ত ব্যক্তিকে এ সময় কিছু অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ দিয়ে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যায় এমন কিছু ওষুধ ও পথ্য দিয়ে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করা হয়। যাদের শরীরে এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি ও করোনার প্রকোপ অল্প, তারা এই পদ্ধতিতে সুস্থও হন। যাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম ও রোগের হানা বড়সড় রকমের, তাদের পক্ষে সেরে ওঠা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

খুব বেশি উদ্বেগজনক অবস্থা না হলে রোগীর বাড়িতেও আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। এটি অনেকটা কোয়ারেন্টাইনের মতোই। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পথ্য চলতে পারে এই সময়। ভাইরাসটি এমনই সংক্রামক যে, সেবার জন্য কাউকে কাছে পাওয়ার আশা না করাই ভালো। তবে আইসোলেশন সেন্টারে থাকলে চিকিৎসক ও নার্সের দেখা পাবেন, বাড়িতে থাকলে আপনজনদের মধ্য থেকে কেউ দেখাশোনা করতে চাইলে তাই অবশ্যই সবরকম স্বাস্থ্যবিধি মেনে তবেই তা করতে হবে।

যদি আপনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন, তবে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হওয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ট। যেহেতু প্রতিষেধক নেই তাই মৃত্যুভয় আপনাকে আঁকড়ে ধরতেই পারে। এই অবস্থায় আপনাকে সাহায্য করতে পারে আপনার মনোবল। কিছুতেই মনোবল হারানো চলবে না। আইসোলেশন সেন্টার কিংবা বাড়িতে, যেখানেই আইসোলেশনে থাকুন না কেন আশা ধরে রাখতেই হবে।

ফিরতেই হবে- এমন মনোভাব ধরে রাখলে সহজে হারাবেন না। মনে রাখবেন, আমাদের শরীর কিন্তু অনেকক্ষেত্রেই আমাদের মনের কথা শুনে চলে। তাই শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করতে মনের দিকটাও গুরুত্ব দিতে হবে। তাই জীবনের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্তেও আশা বাঁচিয়ে রাখুন।

যা কিছু দরকারি জিনিস, তা হাতের কাছে রাখুন। কখন কোন ওষুধ খাওয়ার, তা জেনে নিন। যেন কেউ সাহায্য না করলেও নিজেই ওষুধ খেতে পারেন।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন মানেই সব শেষ ধরে নেবেন না। হতে পারে এটাই নতুন করে শুরু। অনেকেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এবং তাদের আত্মবিশ্বাস আগের থেকে আরও বেড়েছে নিঃসন্দেহে। তাই যতটা সম্ভব খেয়াল রাখুন নিজের দিকে। যদি সুস্থ হয়ে ফেরেন তবে নতুন এক ইতিহাসের সাক্ষী হবেন আপনি। মৃত্যুকে জয় করে আসা কম কথা নয়! সৌজন্যে: জাগোনিউজ

হাসপাতালে যোগ দিয়েই করোনায় আক্রান্ত ৫ নার্স

সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঁচ নার্সের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. ইউনুছুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, করোনা শনাক্ত হওয়া নার্সরা সম্প্রতি ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে ওসমানী হাসপাতালে যোগ দেয়ার জন্য সিলেটে আসেন। বাইরে থেকে আসায় তাদের নমুনা পরীক্ষা করা হয় এবং রিপোর্ট পজেটিভ আসে।

করোনা পরিস্থিতিতে সারা দেশের ন্যায় ওসমানী হাসপাতালেও নতুন ১৩৯ নার্স নিয়োগ দেয়া হয়েছে। গত ১৩ মে কর্মস্থলে যোগদানের সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের নমুনা পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়।

এদিকে, শুক্রবার পর্যন্ত সিলেট বিভাগে করোনা শনাক্ত হয়েছেন ৩৫৮ জন। পুরো বিভাগে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ছয়জন আর সুস্থ হয়েছেন ৬৯ জন।

গত ৫ এপ্রিল সিলেটে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হন ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন। ১৫ এপ্রিল তিনি মারা যান।

সূত্র : ইউএনবি

হাঁপানির সমস্যা থাকলে যা খাবেন, যা খাবেন না

হাঁপানির রোগীদের খাবারের বিষয়ে সব সময় সতর্ক থাকতে হয়। কিছু খাবার শ্বাসকষ্টের সমস্যা কমাতে পারে, আবার কিছু খাবার তা বাড়িয়ে তোলে। তাই হাঁপানিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং হাঁপানির লক্ষণগুলো হ্রাস করতে খাদ্যতালিকায় কিছু নির্দিষ্ট খাবার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। গবেষণায় দেখা গেছে যে, তাজা খাবারের পরিবর্তে প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার ফলে গত কয়েক দশক ধরে হাঁপানির ঘটনা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।

হাঁপানি বা অ্যাজমা রোগীদের তাজা ফল এবং শাকসবজি জাতীয় সুষম খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। তবে আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, কিছু নির্দিষ্ট খাবারের কারণে অ্যালার্জি হয় যা হাঁপানির লক্ষণগুলোর দিকে নিয়ে যেতে পারে। ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, বিটা ক্যারোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অন্যান্য ভিটামিন এবং খনিজ জাতীয় খাদ্যগুলি হাঁপানির ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।

যা খাবেন:
আপেল: আপেলে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকে, যা অ্যাজমা উপশম করে। নিউট্রিশন জার্নালের একটি গবেষণা অনুসারে, আপেল হাঁপানির ঝুঁকি হ্রাস করে এবং ফুসফুসের ক্রিয়াকে উন্নত করে।

ফলমূল ও শাকসবজি: বিভিন্ন ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়ার ফলে হাঁপানির লক্ষণগুলি হ্রাস পেতে পারে কারণ এগুলিতে ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং বিটা ক্যারোটিনের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। কমলা, লাল, বাদামি, হলুদ ও সবুজ বর্ণের ফল এবং শাকসবজি খাওয়া কেবল আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেই শক্তিশালী করবে না, পাশাপাশি হাঁপানির আক্রমণকেও হ্রাস করবে।

ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড: ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার, যেমন- সালমন, সার্ডিন, টুনা এবং কিছু উদ্ভিদ জাতীয় যেমন – ফ্ল্যাক্সিড এবং বাদাম আপনার ডায়েটের একটি অংশ হওয়া উচিত। আমেরিকান জার্নাল অফ রেসপিরেটরি অ্যান্ড ক্রিটিকাল কেয়ার মেডিসিনের মতে, ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া হাঁপানির তীব্রতা হ্রাস করে।

কলা: কলা খাওয়া হাঁপানিতে আক্রান্ত শিশুদের ফুসফুসের কার্যকারিতা উন্নত করতে সহায়তা করে।

ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার: ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাদ্য যেমন – দুধ, কমলালেবুর জুস, সালমন এবং ডিম, যা ৬-১৫ বছর বয়সী শিশুদের হাঁপানির সমস্যাকে কমাতে পারে। ভিটামিন ডি ফুসফুসের কার্যকারিতা উন্নত করতে এবং রেসপিরেটরি ইনফেকশন হ্রাস করতে পরিচিত।

ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার: আমেরিকান জার্নাল অফ এপিডেমিওলজিতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ১১-১৯ বছর বয়সী শিশুদের যাদের শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা কম তাদের ফুসফুসের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। তাই ডার্ক চকোলেট, কুমড়োর বীজ, সালমন এবং শাক জাতীয় খাবার খেয়ে ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণ বাড়ান।

ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার: জার্নাল মেডিসিনে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, হাঁপানিতে আক্রান্ত শিশুদের শরীরে সুস্থ বাচ্চাদের তুলনায় ভিটামিন এ কম। তাই ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার যেমন- গাজর, ব্রোকলি, মিষ্টি আলু এবং শাক-সবজি খান। হাঁপানি হলে এই সমস্ত খাবার এড়ানো উচিত।

যা খাবেন না:
স্যালিসাইলেট: স্যালিসাইলেট জাতীয় খাবারগুলি হাঁপানির ক্ষেত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। স্যালিসাইলেট ঔষুধ এবং অন্যান্য পণ্যগুলিতেও পাওয়া যায়। এছাড়া, কফি, চা এবং অন্যান্য মশলায়ও পাওয়া যায়।

সালফাইটস: সালফাইট শুকনো ফল, ওয়াইন, চিংড়ি, আচারযুক্ত খাবার, লেবুর জুসে পাওয়া যায়। এটি হাঁপানির লক্ষণগুলো আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

কৃত্রিম উপাদান: কৃত্রিম উপাদান, যেমন- ফুড ফ্লেবার, ফুড কালার, ইত্যাদি প্রক্রিয়াজাত এবং ফাস্ট ফুডগুলোতে পাওয়া যায়। হাঁপানিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের এই খাবারগুলো এড়ানো উচিত।

যেসব খাবার খেলে গ্যাস হয়: বাঁধাকপি, মটরশুটি, কার্বনেটেড পানীয়, রসুন, পেঁয়াজ এবং ভাজা খাবারের মতো খাবারগুলো গ্যাসের কারণ হয় যা ডায়াফ্রামের উপর চাপ সৃষ্টি করে। এটি হাঁপানির লক্ষণগুলো বাড়িয়ে তোলে।

চাঁদপুরে জামাতার ছুরিকাঘাতে স্ত্রীর পর শাশুড়ির মৃত্যু

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে জামাতার উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে স্ত্রী তানজিনা আক্তার রিতু (২০) নিহত হওয়ার দুদিন পর শাশুড়ি পারভীন আক্তারের (৪৫) মৃত্যু হয়েছে। আজ শুক্রবার ভোরে চাঁদপুর সদর জেনারেল হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

আটক জামাতা আল মামুন মোহনকে (৩২) গতকাল বিকালে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার জন্য হাজির করলে আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করেন।

এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রকিব বলেন, ‘আড়াই বছর আগে পার্শ্ববর্তী লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার শায়েস্তানগর গ্রামের মনতাজ মাস্টারের ছেলে আল মামুন মোহনের সঙ্গে ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের গৃদকালিন্দিয়া গ্রামের সেলিম খানের মেয়ে তানজিনা আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর সৌদি আরবে গিয়ে দেড় বছর থাকার পর আল মামুন মোহন ফিরে আসেন। এরপর থেকে বেকার সময় কাটান। এরইমধ্যে পরকীয়া ও টাকা-পয়সার হিসাব নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এই দুটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।’

এ ঘটনায় আল মামুন মোহনকে প্রধান ও তার ভাই এবং বোনকে আসামি করে নিহত তানজিনার চাচা লিয়াকত খান বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

জানা গেছে, গত বুধবার ইফতারির সময় উপজেলার গৃদকালিন্দিয়া এলাকায় পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রী তানজিনা আক্তারকে তার স্বামী ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেন। এ সময় তানজিনাকে বাঁচাতে আসলে তানজিনার মা পরভীন আক্তারও ছুরিকাঘাতে আহত হন। তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় চাঁদপুর সদর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার রাতে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে বলা হয়। আজ ভোরে ঢাকায় নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।

নারীর কর্মক্ষেত্রে আইনি সুরক্ষায় বাংলাদেশ ১৭১তম

কর্মক্ষেত্রে নারীর আইনি সুরক্ষায় দুই ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে ১৯০ দেশের মধ্যে এবার বাংলাদেশের অবস্থান ১৭১তম, যা গতবছর ছিল ১৬৯তম। এবার বাংলাদেশের সার্বিক স্কোর ৪৯ দশমিক ৪।

বিশ্বব্যাংকের ‘নারী, ব্যবসা ও আইন-২০২০’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি মঙ্গলবার রাতে ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে ২০১৭ সালের জুন থেকে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করা হয়।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, নারীর চলাচলের স্বাধীনতায় বাংলাদেশের স্কোর ১০০, কর্মক্ষেত্রে ৫০, কাজ করার জন্য বেতন পাওয়ার ক্ষেত্রে ২৫, ব্যবসা পরিচালনা করার ক্ষেত্রে ৭৫, সম্পত্তির অধিকারে ৪০, বিয়ে করা ৬০, সন্তান নেয়া ২০ এবং পেনশন পাওয়ার ক্ষেত্রে স্কোর ২৫।
মোট আটটি নির্দেশকের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংক প্রত্যেক দেশের স্কোর নির্ণয় করেছে। এতে শূন্য থেকে ১০০-এর মধ্যে স্কোরিং দেয়া হয়েছে। নির্দেশকগুলো হলো- নারীর চলাচলের স্বাধীনতা, চাকরি শুরু করা, কাজের প্রাপ্তি, বিয়ে হওয়া, বাচ্চা থাকা, ব্যবসা পরিচালনা, সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও পেনশন প্রাপ্তি। এসব নির্দেশকের ক্ষেত্রে একটি দেশের আইন নারীকে কতটুকু সুরক্ষা দেয়, তা বিশ্বব্যাংকের গবেষণায় উঠে এসেছে

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে ভারত (১১৭তম), দেশটির স্কোর ৭৪ দশমিক ৪। এরপর মালদ্বীপের অবস্থান ১১৮ (স্কোর ৭৩.৮), নেপাল ১১৯ (স্কোর ৭৩.৮), ভুটান ১২৫ (স্কোর ৭১.৯), শ্রীলঙ্কা ১৩৭ (স্কোর ৬৮.১), পাকিস্তান ১৭২ (স্কোর ৪৯.৪) এবং আফগানিস্তান ১৮৩ (স্কোর ৩৮.১)।
সর্বোচ্চ ১০০ স্কোর নিয়ে যৌথভাবে শীর্ষে আছে ৮টি দেশ। দেশগুলো হচ্ছে- কানাডা, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, বেলজিয়াম, আইসল্যান্ড, লাটভিয়া, লুক্সেমবার্গ, সুইডেন, ফিনল্যান্ড এবং এস্তোনিয়া।

১৩৮ বছরে প্রথম নারী নির্বাহী পেল জাপান কেন্দ্রীয় ব্যাংক

জাপান কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এই প্রথম একজন নারী নির্বাহী পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হল। সোমবার (১১ মে) জাপানের অর্থমন্ত্রী তারো আসো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্বাহী পরিচালক হিসেবে টোকিকো শিমিজুর নাম ঘোষণা করেন। ৫৫ বছর বয়েসি এ ব্যাংকার বর্তমানে ব্যাংকটির নাগোয়া ব্রাঞ্চে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।

১৮৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংক অব জাপান সম্প্রতি নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছু রদবদলের উদ্যোগ নেয়। এর অংশ হিসেবে ছয় সদস্যের নির্বাহী কমিটিতে শিমিজু নিয়োগ পেলেন। ব্যাংকের ১৩৮ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী ফোরাম- পরিচালনা পর্ষদে নারী নিয়োগের ঘটনা এটিই প্রথম।

উল্লেখ্য, জাপান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৪৭ শতাংশ কর্মী নারী হলেও তাদের মাত্র ১৩ শতাংশ উচ্চপদস্থ ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে আছেন। এছাড়াও আইনগত ব্যাপার, পারিশ্রমিক প্রক্রিয়া ও ব্যাংক নোট সংক্রান্ত বিভাগের বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে ২০ শতাংশ নারী কর্মরত রয়েছেন।

জাপানের টোকিও ইউনিভার্সিটি থেকে প্রকৌশল বিদ্যায় ডিগ্রি নিয়ে ১৯৮৭ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যোগ দেন শিমিজু। ব্যাংকটির আর্থিক বাজার বিভাগ ও বৈদেশিক মুদ্রা কার্যক্রম বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এছাড়াও ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি ব্যাংকের ইউরোপীয় বিভাগের সাধারণ ব্যবস্থাপক হিসেবে লন্ডনে দায়িত্ব পালন করেন শিমিজু।

গত কয়েক দশক ধরে উচ্চ শিক্ষিত নারীর সংখ্যা বাড়ায় জাপানের পুরুষ প্রভাবিত পরিচালনা ব্যবস্থায় পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগে। তবে ৭০ বছরের পুরনো ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকে যেমন গত বছর একজন নারী গভর্নর নিয়োগ দেওয়া হয়, জাপানের এ ব্যাংকটিতে এখনও এরকম সর্বোচ্চ পদে কোন নারী নিয়োগ পাননি।

জাপানে মোট জনসংখ্যার ৫১ শতাংশ নারী হলেও দেশটি লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে। ২০১৮ সালে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের এক হিসাব অনুযায়ী, লৈঙ্গিক বৈষম্য হ্রাসের সূচকে ১৫৩টি দেশের মধ্যে জাপানের অবস্থান ১২১। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির মতে, লৈঙ্গিক বৈষম্য নিরসনে জি-৭ এর মত প্রভাবশালী কমিটিতেও জাপানের অবস্থান তলানিতে।

তবে দেশে নারীর ক্ষমতায়ণ বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ‘উওমেনোমিক্স’ নামের এক নীতি গ্রহণ করেন। এর মাধ্যমে শ্রমজীবী নারীদের ক্ষমতায়ণ করার কাজে নজর দেয় জাপান কর্তৃপক্ষ। বিশেষজ্ঞদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে একজন নারীর নিয়োগ, সেই নীতিরই অংশ।

 

‘যে রাত হাজার মাসের চেয়েও সেরা!’

‘যে রাত হাজার মাসের চেয়েও সেরা!’


সাজেদা হোমায়রা


রমজান মাসের প্রতিটি রাত ও দিনের সবগুলো মুহূর্ত আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একটি নিয়ামত! এসময় আল্লাহর বিশেষ দৃষ্টি থাকে তাঁর বান্দাদের প্রতি।

পুরো রমজান মাসই সওয়ার অর্জনের মাস। আর এ মাসের শেষ দশকেই রয়েছে হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ এক রাত! এ রাতেই নাজিল হয়েছে মহাগ্রন্থ আল কুরআন। এ রাতের মর্যাদা ‘সূরা কদর’ এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন।

“তুমি কি জানো? কদরের রাত কি? কদরের রাত হাজার মাসের চেয়ে উওম।” – সূরা কদরঃ২-৩

এ রাতে অসংখ্য ফেরেশতা কূল জিবরাঈল আ. এর নেতৃত্বে পৃথিবীতে নেমে আসে। আর ইবাদতকারীর উপর রহমত, বরকত, মাগফিরাত বর্ষণ করতে থাকে। এটি এমন একটি রাত যে রাতে তাকদীরের ফায়সালা করা হয়। এ রাতে ভাগ্যের ভাঙ্গা গড়া চলে। এ রাতে সফলতা, ব্যর্থতা, রিযিক সহ সবকিছুর ভাগ্যে নির্ধারিত হয়। শুধুমাত্র দুয়াই পারে এই ভাগ্য নির্ধারণে পরিবর্তন আনতে।

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সা. বলেছেনঃ “যদি কেউ ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদরে কিয়ামুল লাইল/তাহাজ্জুদে অতিবাহিত করে তবে আল্লাহ তার পূর্বের সব গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।
সুবহানাল্লাহ!

রমজানের শেষ দশকের কোন রাতটি লাইলাতুল কদরের রাত, সে সম্পর্কে রাসূল সা. নির্দিষ্ট করে বলেননি। আয়েশা রা. বলেন, রাসূল সা. বলেছেনঃ “তোমরা শবে কদর অনুসন্ধান করো রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতসমূহে।” তাই রাসূল সা. এর কথা অনুযায়ী শবে কদর রমজানের ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তারিখেই খুঁজতে হবে।
আমরা বেশিরভাগই শুধুমাত্র ২৭ রমজানের রাতকে শবে কদর ভেবে বাকী অন্য রাতগুলোয় ইবাদতের ব্যাপারে উদাসীন থাকি। আমাদের উচিত রমজানের শেষ দশদিনের প্রতিটি বেজোড় রাতই সমান গুরুত্ব দিয়ে ইবাদত করা। তাহলে আর শবে কদর মিস হবার সম্ভাবনা থাকে না।

কদরের রাতে নির্ধারিত কোনো বিশেষ পদ্বতির নামাজ অথবা কোনো নির্দিষ্ট আমল করা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়।

এ রাতগুলোতে বেশি বেশি ভালো কাজ করতে হবে।
এ রাতে আমরা যা যা করতে পারি….
১. বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া
২. কুরআন তেলাওয়াত, কুরআনের অনুবাদ ও তাফসীর পড়া।
৩. আল্লাহর জিকির করা।
৪. তাওবা ও ইসতিগফার করা
৫. অনেক অনেক দুয়া করা
৬. দান সাদকাহ করা

এছাড়াও যে কোনো সৎ কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করতে পারি। এ রাতের সৎ কাজ হাজার মাসের সৎকাজের চেয়ে বেশি ভালো! এ রাতে আমরা আল্লাহর কাছে দুয়া ও আমলের মাধ্যমে আমাদের তাকদীর পরিবর্তন করে নিতে পারি….সুযোগ করে নিতে পারি জান্নাতে যাওয়ার!

এ রাতের জন্য রাসূল সা. হযরত আয়েশা রা. কে বিশেষ একটি দুয়া শিক্ষা দিয়েছেন। সেই দুয়াটি আমরা বেশি বেশি করে পড়বো।

“আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আ’ফুউউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফুআন্নি।”
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল! ক্ষমা করাকে আপনি পছন্দ করেন। তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন।”

আয়েশা রা. বলেন, “রমজানের শেষ দশদিন যখন শুরু হতো, রাসূল সা. কোমর বেঁধে নিতেন। একেবারেই বিছানায় যেতেন না। নিজে জাগতেন এবং পরিবারকেও জাগাতেন।”

হাজার মাসের চেয়েও উত্তম এ রাতে আমরাও ইবাদতে মশগুল হই….সিজদায় নুঁয়ে থাকি প্রভুর প্রতি! সঙ্গোপনে নিজেকে সঁপে দেই পরম দয়াময়ের কাছে!

শুধু ২৭ এর রাত নয়, ইবাদাতে কাটাই শেষ দশকের প্রতিটি রাত…
নিশ্চয়ই আমরা খুঁজে পাবো শবে কদর!

সাজেদা হোমায়রা

 

সিজদাহ: দ্যা বেস্ট রিলাক্সেশন থেরাপি (পর্ব-৩)

সিজদাহ: দ্যা বেস্ট রিলাক্সেশন থেরাপি (পর্ব-৩)


জিয়াউল হক


নামাজে সিজদাহর সময় আমরা আমাদের দেহের সর্বোচ্চ পয়েন্ট ফ্রন্টাল লোবটা মাটিতে ঠেকিয়ে দেই। আমাদের উচ্চ শীরটাকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে যতোটা সর্বনিম্ন পর্যায়ে সম্ভব নামিয়ে আনি। সেই সাথে এই সিজদাহ’র মাধ্যমে (ফ্রন্টাল লোবকে মাটিতে ঠেকিয়ে) আমরা আমাদের বুদ্ধি ও বিচারক্ষমতা, চৌকষ ব্যক্তিত্বের সকল অহংবোধকে এক আল্লাহর শক্তি ও সামর্থ, তাঁর বড়ত্বের কাছে বিসর্জন দিয়ে প্রকারান্তরে এটা স্বীকার করে নেই যে; হে আমার রব আপনার শক্তি ও সামর্থের কাছে আমি কিছুই নই, আমি তো আপনার সাহায্যেরই মুখাপেক্ষি!

এটা সিম্বলিক। প্রতিকি একটা আত্মসমর্পণ এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর কাছে। মনের বোঝা লাঘবের জন্য অপরিহার্য মনস্তাত্বিক প্রস্তুতি, মনকে হাল্কা করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোটিভেশন। এরপরে রইলো শারিরিক ও বৈজ্ঞানিক দিক। আমরা যখন সিজদাহতে যাই তখন মাথাসহ ব্রেনে রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়। এভাবে যতোক্ষণ আমরা সিজদাহতে থাকবো, ততোক্ষণই মাথার কোষগুলি স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি মাত্রায় রক্ত সরবরাহ পাবে।

আরও লক্ষণীয় বিষয় হলো যে, এরকম অবস্থায় সর্বনি¤œ পর্যায়ে থাকে ব্রেনের ফ্রন্টাল লোব; এই অংশটি মাটির সাথে লেগে থাকে। এর উপরে থাকে ব্রেনের বাঁকি অংশ। অর্থাৎ রক্ত সরবরাহ সবচেয়ে বেশি পায় এবং সবচেয়ে বেশিসময় ধরে পায় আমাদের ব্রেনের ফ্রন্টাল লোব, তথা সেই অংশ, যে অংশ বুদ্ধিবৃত্তিক ও আবেগনির্ভর কাজগুলো করে থাকে। বেশি পরিমান রক্ত পাওয়া মানে হলো বেশি পরিমান অক্সিজেন পাওয়া। আর বেশি পরিমান অক্সিজেন পেলে সেইসব কোষ বেশিপরিমাণ পুষ্ঠি পায় এবং সেখান থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড বের হয়ে আসে।

ঠিক একই সময় আরও একটা কাজ হয়। আমরা যখন সিজদাহতে থাকি, তখন আমাদের ফুসফুসের উপরে পেটের ডায়াফ্রাম’সহ (বুক ও পেটের মধ্যে বিভাজন পর্দা বা বেরিয়ার) পুরো পেটের চাপ পড়ে। এর ফলে আমাদের নি:শ্বাস প্রশ্বাসের গভীরতা বাড়ে, দ্রুততর হয়। বিষয়টা সিজদাহতে থাকা প্রত্যেক ব্যক্তিই নিজের ভেতরে অনুভব করেন। সিজদাহ থেকে উঠার সময় আমাদের নি:শ্বাসটা স্বাভাবিকের চেয়ে একটু জোরের সাথেই বের হয়, এর ফলে শরির থেকে অতিরিক্ত মাত্রায় কার্বন ডাই অক্সাইড বের হয়ে যায়। ঠিক এই কাজটাই সাইকোলোজিস্টগণ তাদের ক্লায়েন্টদের করতে বলেন মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে লম্বা নিশ্বাস ছাড়তে বলার মাধ্যমে।

এই কার্বন ডাই অক্সাইড’ই হলো সেই বর্জ, রক্তে যার উপস্থিতি আমাদের শরিরকে ক্লান্ত ও শ্রান্ত করে তোলে। সিজদহা’র মাধ্যমে শরিরের কোষগুলিতে অতিরিক্ত পরিমান নতুন রক্ত পেয়ে এবং বর্জরুপী এই কার্বনডাইঅক্সাইড’ই বের হয়ে যাবার কারণে শরীর চাঙ্গা হয়ে উঠে, মনও ফুরফুরে সতেজ হয়। আমরা মনোযোগ নিব্ধ করতে পারি। আমাদের ব্রেনের ফ্রন্টাল লোব সঠিকভাবে বিচার বিশ্লেষণ করতে ও সঠিক স্বিদ্ধান্ত নিতে পারে।

এ জন্যই সিজদাহ এতোটা গুরুত্বপূর্ণ এবং একমাত্র আল্লাহরই প্রাপ্য এবং আল্লাহর প্রতি যাবতীয় ইবাদতের শ্রেষ্ঠাংশ।

লেখক: জিয়াউল হক
রিসার্চ ডাইরেক্টর
একাডেমি টুয়েন্টি ওয়ান

 

সিজদাহ: দ্যা বেস্ট রিলাক্সেশন থেরাপি (পর্ব-২)

সিজদাহ: দ্যা বেস্ট রিলাক্সেশন থেরাপি (পর্ব-২)


জিয়াউল হক


আমাদের ব্রেনের এই ফ্রন্টাল লোব অন্যান্য যে সব কাজ করে তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো;

(১) মনের ভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর বাক্য বা যুক্তি, ভাষার জোগান দেয়া,
(২) অপরের মনের ভাব উপলব্ধি করা, মানুষকে বুঝা, তাকে যাচাই করা,
(৩) দুটো জিনিসের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা তথা উত্তম ও অধম যাচাই করা,
(৪) পুরো ব্রেনের অন্য তিনটি লোবসহ ফ্রন্টাল লোবও স্মৃতি সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণের কাজটা করে থাকে, কিন্তু ফ্রন্টাল লোব এই স্মৃতিকে দীর্ঘমেয়াদে (রিমোট মেমোরি) সংরক্ষণ করার কাজে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে,
(৫) ন্যায় অন্যায়, বৈধ অবৈধ বা ভালো মন্দ যাচাই করা তার কাজ,
(৬) ব্যক্তিত্ব তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে,
(৭) শরিরের কোন কোন অঙ্গসঞ্চালন ও তাদের মধ্যে সমন্বয়,
(৮) আমাদের শরিরে, যেমন; হাত, পা সঞ্চালন ও তাদের মাংশপেশির কার্যসমন্বয় ইত্যাদি) সাধন করে থাকে।
(৯) আরও একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে ফ্রন্টাল লোব।

সেটা হলো; আমাদের শরিরে ডোপামিন নামক এক ধরনের হরমোন নি:স্বরণ হয়, এটা একই সাথে আবার নিউরোট্রান্সমিটারও ব,ে তাই ডোপামিনকে বলা হয় কেমিক্যাল মেসেঞ্জার বা যৌগিক বার্তাবাহক (Chemical Messenger)। ডোপামিন আমাদের চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি, মনযোগ কোন এক বিশেষ দিকে নিবদ্ধ করা ও তা ধরে রাখা, আবেগ অনুভুতি, সূখ ও আনন্দানুভূতির মাত্রা জাগিয়ে তোলা বা নির্ধারণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

ডোপামিন শরিরে রক্তসঞ্চালন প্রক্রিয়া ও হৃদযন্ত্রের কাজকে প্রভাবিত করে, কিডনির কার্যক্রমের উপরেও সে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে। মানসিক স্থিতিশীলতা, প্রশান্তি, মনযোগ সৃষ্টি করার ক্ষমতা, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি বা অক্ষুন্ন রাখা, মানসিকভাবে উদ্দীপ্ত, উজ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত হওয়া এসব কিছুই অনেকাংশে নির্ভর রে এই ডেপামিন নামক হরমোনের উপরে। হরমোনটি নি:স্বরণের মাত্রা হ্রাস বৃদ্ধির উপরে আমাদের মনোদৈহিক সুস্থতা বা অসুস্থতা নির্ভরশীল। শরিরে ডোপামিনের মাত্রা কমে গেলে আমাদের ভেতরে অবষাদ, বিষণœতা বা ডিপ্রেশন দেখা দেয়।

মেডিটেশন, সুষম খাদ্য, কায়িক পরিশ্রম বা ব্যায়াম ও যথাসময়ে যথাযথ পর্যাপ্ত ঘুম এসবের মাধ্যমে শরিরে ডোপামিনের মাত্রা সঠিক মাত্রায় রাখা সম্ভবপর।

শারিরিক, মানসিক ও পারিপার্শ্বিক নানা কারণে মানুষের মনে ¯œায়ুচাপ, অবসাদ বেড়ে গেলে তার চিন্তা চেতনা, তার সুস্থতা ব্যহত হয়, নানা ধরনের মনোদৈহিক উপসর্গ দেখা দেয়। শুরুতেই এ অবস্থাকেি নয়ন্ত্রণ করা না গেলে ক্রমেই তা জটিল হতে জটিলতর হতে থাকে। এরকম অবস্থায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে। রোগের মাত্রানুযায়ী ঔষধ ও কাউন্সেলিং, সাইকোথেরাপির প্রয়োজন হতে পারে।

এরকম পরিস্থিতিতে চিকিৎসার অন্যতম একটা অনুষঙ্গ হিসেবে মনোবিজ্ঞানীরা রিলাক্সেশন থেরাপির আশ্রয় নেন। তারা তাদের ক্লায়েন্টদের বিভিন্নরকম রিলা´েশন থেরাপির প্রয়োগ করিয়ে থাকেন। এইসব রিলাক্সেশন থেরাপির লক্ষ্য একটাই হয়ে থাকে, তা হলো, সকল কিছু থেকে মনেযাগ সরিয়ে নিজের দিকে মনযোগকে নিবদ্ধকরণ এবং সেই সাথে তারা যে সব টেকনিক প্রয়োগ করেন, তার মধ্যে অন্যতম হলো ধীর গতিতে লম্বা নিশ্বাস নিয়ে তা প্রায় তিন অথবা পাঁচ থেকে সাত সেকেন্ড পর্যন্ত ধরে রেখে মুখ দিয়ে তা ধীরে ধীরে ছেড়ে দেয়া।

এভাবে লম্বা নিশ্বাস নেয়া এবং তা কিছুক্ষণের জন্য ধরে রাখার মাধ্যমে তারা আসলে বাড়তি অক্সিজেন নেন শরিরে এবং তা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশিক্ষণ ধরে রেখে আমাদের রক্তকে সুযোগ করে দেন গৃহিত সেই বাতাস থেকে যেন বেশি অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে আামদের শরির, ফলে আমাদের ব্রেনও স্বাভাবিকভাবেই বেশি অক্সিজেন পাচ্ছে এবং সতেজ হয়ে উঠছে।
ব্রেন নতুন অক্সিজেন পেয়ে সতেজ হয়ে উঠলে শরিরের অবসাদ ভাব কেটে যায়। পুরো শরিরের মাংশপেশিতে তার প্রভাব পড়ে, ইতিবাচক প্রভাব পড়ে আমাদের চিন্তা চেতনা, মনযোগ’সহ সকল কাজ কর্মে এবং কথা বার্তায়ও।

প্রচলিত মানসিক চিকিৎসা ও পূনর্বাসন কার্যক্রমে এই রিলাক্সেশন থেরাপি বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।
ইসলামি জীবন ব্যবস্থায় ঠিক এই কাজটিই করে সিজদাহ। আমরা সাধারণত এই নামাজের মধ্যে সিজদাহ দেই। কিন্তু নামাজ ছাড়াও ইসলামে আল্লাহর উদ্দেশ্যে সিজদাহ করার বিধান ও রেওয়াজ রয়েছে।

বরং মনোবিজ্ঞানীরা রিলাক্সেশন থেরাপি ব্যবহার করে যে ফল পান, নামাজ ও সিজদাহতে তার চেয়ে বেশি কার্যকর ও দীর্ঘস্থায়ী ফল পাওয়া সম্ভব।

রিলাস্কেশন থেরাপিতে যেমন নিরিবলি জায়গার আয়োজন করে বসতে হয়, ঠিক তেমনি নামজের জন্য ব্যক্তি ঘর বা মসজিদের শান্ত জয়গা ঠিক করে নেন। তিনি নামাজের জন্য অজু গোছল করে মানসিক স্থিতির সাথে নিজেকে তৈরি করেন।
নামজে এবং নামজের বাইরে সিজদাহর মাধ্যমে মানব শরিরের ব্রেনে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে কিভাবে ক্লান্তি অবসাদ দূর হয়ে মানসিক শান্তি অর্জিত হয় সে বিষয়টির যুক্তিগ্রাহ্য বৈজ্ঞানিক ব্যখাটা আমরা অতি সংক্ষেপে আলোচনা করে দেখবো।

এই নবন্ধের শুরুতেই আমরা অতি ষংক্ষেপে, যতোটা সহজ প্রাঞ্জল এবং নন একাডেমিকভাবে আমাদের ব্রেনের একটা অংশ ফ্রন্টাল লোব, তার অবস্থান ও কাযক্রম নিয়ে যৎসামান্য আলোচনা করেছি। সেখানে আমরা দেখিয়েছি যে এই ফ্রন্টাল লোব-ই আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা, যুক্তি, বিচার ও চিন্তাশক্তি’সহ আবেগ অনুভুতির বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে। অবশ্য ব্রেনের অন্যান্য অংশও তাকে এই কাজে সহযোগীতা করে এবং নিজ নিজ কাজের অংশ সম্পদন করে, তবে, এই ফ্রন্টাল লোবই আসল কাজটা করে থাকে।

আমাদের শরির জন্মপূর্ব থেকে, তথা, মায়ের পেটে থাকাবস্থায়ই ক্রমশ বেড়ে উঠে, জন্মের পর তা সময় নিয়ে পূর্ণতা পায়। একই বাস্তবতা হলো ব্রেনের বেলাতেও। ব্রেন মায়ের পেটে থাকাবস্থায় তৈরি হতে থাকে, তবে তা পচিশ বছরে বয়সে এসে পূর্ণতা পায়। ব্রেনের যে অংশটুকু সর্বশেষে পূর্ণতা পায়, সেটা হলো এই ফ্রন্টাল লোব, তথা, আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক ও আবেগ নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্র।

…….  চলবে

 

সিজদাহ: দ্যা বেস্ট রিলাক্সেশন থেরাপি (পর্ব-১)

সিজদাহ: দ্যা বেস্ট রিলাক্সেশন থেরাপি (পর্ব-১)


জিয়াউল হক


মানুষের শরিরের গঠন প্রকৃতির দিকে খুব গভীরভাবে লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাই যে, মানবদেহের সর্বোচ্চ পয়েন্ট হলো তার মাথা এবং সেই মাথার মধ্যে অবস্থানের দিক থেকে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে ব্রেনের ফ্রন্টাল লোব।

এই ফ্রন্টাল লোব (Frontal lobe) ব্রেনের চারটি লোব বা খন্ডের একটি। এই চারটি লোব আবার নিজেদের মধ্যে বিভাজন রয়েছে। শত শত কোটি নিউরন বা স্নায়ুকোষ নিয়ে এই লোবগুলি গঠিত। প্রতিটির সুনির্দিষ্ট কর্মপরিধি রয়েছে আর প্রত্যেকটি লোব অপর লোবের উপরে কম বেশি নির্ভরশীল, তথা, সকল লোবগুলি পরস্পর পরস্পরের সাথে সমন্বয় করেই তাদের কাজগুলো সম্পাদন করে থাকে।

আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনার প্রতি আমি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। আমরা দুপুরের খাবার গ্রহণের পর প্রায়শই ঘুম ঘুম ভাব অনুভব করি। এ সময়ে শরীর নিস্তেজ হয়ে আসতে চায়। অনেকের আবার নিয়মিত ঘুমের অভ্যাসও আছে। এ সময়ে হাল্কা বিশ্রামের মাধ্যমে সেই ঘুম ঘুম ভাবটা কাটিয়ে উঠা যায়। ইসলাম ধর্মেও তেমনটা উৎসাহ দেয়া হয়ে থাকে। প্রিয় রাসুল সা: দুপুরে খাবারের পর হাল্কা বিশ্রাম করতেন (কাইলুলা)।

খাবারের পর আমাদের মধ্যে যখন ঝিমুনি আসে তখন আমরা বার বার মুখ খুলে লম্বা নি:শ্বাস নেই (আমাদের চলতি ভাষায় ‘হাই তোলা’ বলে থাকি)। এটা একটা শারিরক প্রক্রিয়া। এর পেছনে যে বৈজ্ঞানিক ব্যাখা রয়েছে সেটাকে আমাদের বুঝতে হবে।

আমরা যখন খাবার গ্রহণকরি, তখন আমাদের পাকস্থলি, লিভার’সহ শরীরের পুরো পরিপাকতন্ত্রই সেই খাদ্যকে হজম করতে কাজে নেমে পড়ে। তারা কাজে নেমে পড়ে মানে পরিপাকতন্ত্রের সকল অঙ্গপ্রতঙ্গ পূর্বের তুলনায় এ সময় বেশি বেশি রক্ত সরবরাহ নেয়। এই যে বেশি রক্ত সরবরাহ নিল এর ফলে আমাদের মাথার ব্রেন, তথা, সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম তার রক্তে অস্কিজেনের স্বল্পতা অনুভব করে।

অস্কিজেনের এই স্বল্পতা পূরণ করতেই সে তখন আমাদের স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে যে পরিমাণ অক্সিজেন শরীরে ঢুকছে, তার চেয়ে বেশি অক্সিজেন সরবরাহের জন্য মুখ দিয়ে বারবার অক্সিজেন নেয় এবং চাহিদা পুরণ করে। আমারও সে সময় ঘুমিয়ে পড়ি বা বিশ্রাম নেই, ফলে আমাদের শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রতঙ্গগুলো (যেমন চোখ, হাত, পা ইত্যাদি) বিশ্রামে যাবার ফলে তাদের দ্বারা রক্ত ও অক্সিজেনের ব্যবহার কমে যায়, সেই বাড়তি রক্ত ও অক্সিজেনটুকু পেয়ে আমাদের ব্রেন নিজেকে শান্ত করে। আমাদের ক্লান্তি দূর হয়, আমরা সতেজ অনুভব করি।

কেবল খাবার গ্রহণের পরেই যে এরকম ক্লান্তি বোধ করি তাই নয়, আমরা দীর্ঘক্ষণ ধরে পরিশ্রমের কাজ করলে কিংবা কায়িক প্ররিশ্রম ছাড়াও বুদ্ধিবৃত্তিক পরিশ্রম করলে বা চিন্তা ভাবনা করলে বা মানসিক দু:শ্চিন্তা, ভয় আতংকের মধ্যে থাকলেও আমাদের শরিরে ক্লান্তি ভাব আসে। সেরকম ক্ষেত্রে আমাদের শরির ও মনের উপরে নানারকম সাময়িক ও ক্ষণস্থায়ী প্রভাব পড়ে। আমাদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে পড়ে, কাজে মন বসে না, আমরা ধৈর্য হারিয়ে ফেলি, কোন জটিল বিষয়ে কিংবা কোন একটি বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার মতো মানসিক যোগ্যতা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা কমে আসে ।

এই যে গভীর চিন্তা ও বিশ্লেষণ করা, যুক্তি তথ্য উপাত্তকে যাচাই করে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহনের সক্ষমতা, এটা নির্ভর করে ব্রেনের ফ্রন্টাল লাবের উপরে।

লেখক: জিয়াউল হক
রিসার্চ ডাইরেক্টর
একাডেমি টুয়েন্টি ওয়ান

 

‘মা’ ভুমিকার সঠিক কদর আমরা করতে পারব না

‘মা’ ভুমিকার সঠিক কদর আমরা করতে পারব না


মুদাব্বির হোসেন


আজ বিশ্ব মা দিবস। সারা পৃথিবীর কোটি কোটি সন্তানেরা তাদের মা কে খুশী করতে আজ আনন্দ-উচ্ছাস নিয়ে, উত্তেজনা নিয়ে কত কিছুই না করবে। কেউ কার্ড বানাবে, কেউ খাবার রান্না করবে, কেউ উপহার কিনবে, কেউ আবার মা কে জড়িয়ে ধরে বলবে ভালবাসি, কেউ হয়তো সামাজিক চাপে পরে মা দিবস পালন করবে। আবার যাদের মা নেই তারা গোপনে কেঁদে মা কে স্মরণ করবে। আমার মতে এই একটি দিবস উদযাপন নিয়ে পৃথিবীতে কারও আপত্তি থাকার কথা না। হয়তো আপনাদের কেউ কেউ বলবেন সবদিনই তো ভাই মা দিবস, এই একটা দিন নিয়ে এত বাড়াবাড়ি কেন? সবাই তো ভাই আপনার মতো বুঝদার না, এই পৃথিবীতে এখনো অনেক মানুষ আছে যাদের মুখে তুলে খাইয়ে দিতে হয়, তেমনি কিছু মানুষকে আঙ্গুল দিয়ে দেখাতে হয় যে গত এক বছরে কিন্তু একবারও মা এর খবর নেয়া হয়নি। এই দিবস নিয়ে কোন ওয়াজে কাউকে ফতোয়া দিতে দেখবেন না, কোন ডক্টর ইন সোশ্যাল নেটওয়ার্ককে নাক সিটকাতে দেখবেন না অথবা হাল আমলের কোন উঠতি সেলেব্রিটিকে আগের দিনের ফ্যাশন বলে অবহেলা করতে দেখবেন না। এই যে আমরা সবাই মা কে আজ খুশী করতে এত কিছু করবো, আমাদের কারও পক্ষেই আন্দাজ করা সম্ভব না যে ঠিক কতটুকু নিষ্ঠা নিয়ে তারা আমাদের বড় করেছেন অথবা আমাদের মানুষ করতে কত বিসর্জন আমাদের ‘মা’ রা দিয়েছেন।
আমার নিজের মায়ের কথা বলি।আমার বুঝ হবার পরে প্রথম হাসি, প্রথম কান্না, প্রথম রাগ, প্রথম অভিমান, সব আম্মার সাথে। প্রথম ফেল করে মাইর খাওয়াও আম্মার হাতে। কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করতো তুমি কাকে বেশী ভালোবাসো, মা কে নাকি বাবা কে? আমি বলতাম সমান সমান, খুবই ডিপলোম্যাটিক উত্তর, কিন্তু চোখ আর চাহনি ঠিকই বলে দিত কাকে বেশী ভালবাসি। আমার ছোটবেলাতে মা দিবস থাকলে হয়ত আমিও অনেকভাবে উদযাপন করতাম কিন্তু আম্মার আত্মত্যাগের সিকিভাগও হয়তো অ্যাপ্রেসিয়েট করা হতো না। আমার আম্মা ছিলেন সরকারি স্কুলের শিক্ষিকা। ছোট বেলায় আমি আম্মাকে যমের মতো ভয় পেতাম,যেমন ভালবাসতেন তেমনি কড়া শাসনে মানুষ করেছেন। সবসময় বলতেন তোদের জন্য আমি কোনদিন প্রমোশন নেই নাই , নিলে তোরা কেউ মানুষ হবি না। আমরাও ভাবতাম আসলেই তো কেন প্রমোশন নিয়ে ঢাকার বাইরে যাবে, আমাদের জন্য স্যাক্রিফাইস তো মা ই করবে, আর কে করবে? আমি জানি না বাংলাদেশে কিভাবে রত্নগর্ভা উপাধি নির্ধারিত হয়, কিন্তু আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারি যে আমার আম্মা একজন রত্নগর্ভা। দুজন এম বি বি এস (একজন এম আর সি পি, ইউকে এবং আরেকজন এম পি এইচ, অস্ট্রেলিয়া), একজন এম বি এ (ঢাকা), একজন পি এইচ ডি (আমেরিকা) সন্তান মানুষ করেছেন, তার মধ্যে দুই বার ব্রেইন টিউমার অপারেশন হয়েছে, কিন্তু পরিবারের জন্য বার বার জীবনযুদ্ধে আরও শক্তি নিয়ে ফিরে এসেছেন।
আমার মেয়েকেও যদি আপনি জিজ্ঞেস করেন যে কাকে বেশী ভালোবাসো, সে একটা হাসি দিয়ে বলবে Both, কিন্তু প্রশ্নকর্তা তার চোখ ও চাহনি দেখে ঠিকই বুঝে যাবে কাকে সে বেশী ভালবাসে। আমার মেয়েও কালকে কার্ড বানাবে মা এর জন্য, হয়তো কোন সারপ্রাইজও দিবে, কিন্তু সেও তার মায়ের সব কষ্ট ও বিসর্জন পুরোপুরি কোনদিনই উপলব্ধি করতে পারবে না।আমাদের পরিবারের জন্য আমার বাচ্চাদের মা এর এই আত্মত্যাগ দেখে আমি আজ কিছুটা হলেও আমার মা এর আত্মত্যাগ উপলব্ধি করতে পারি। আমার কাছে মনে হয় বিশ্ব মা দিবস শুধু সকল সন্তানদের উদযাপনের জন্য নয়। এটা আসলে বাবাদেরও উপলব্ধির দিবস এবং তাদের বাচ্চার মা কে কদর করার দিবস। এখন জিজ্ঞেস করতে পারেন আমার নিজের এই উপলব্ধি লকডাউনের কারনে কিনা? একটা কথা বলতে পারি যে করোনা পরবর্তী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেলে কোনদিন এই কথাটা বলব না যে “আমিও কিন্তু অনেক কাজ করি”। আমার বাচ্চাদের মা প্রতিদিন যেই কাজ করে আমি তার শতকরা আড়াই ভাগও করি কিনা সন্দেহ। তাই বলে ভাববেন না আমি বাসার কোন কাজই করি না, এই যে আপনি যে নাক সিটকাচ্ছেন আমি হলফ করে বলতে পারি আপনিও আপনার বাচ্চার মায়ের কাজের শতকরা ১২/১৩ ভাগের বেশী কাজ করেন না। আমি আজ পৃথিবীর সব বাবাকে বলব, লজ্জা লাগলেও, ইচ্ছে না করলেও, আদিখ্যেতা মনে হলেও, আনস্মার্ট-আনকুথ মনে হলেও একটি বারের জন্য আপনার বাচ্চার মা কে এই মা দিবসে ধন্যবাদ বলুন। ধন্যবাদ বলুন শুধু আজকের দিনের জন্য নয়, বিগত দিনের জন্য এবং অনাগত একটি বছরের জন্য। আমরা যদি সারা পৃথিবীর সকল এসেনশিয়াল ওয়ার্কারদের কে ফেসবুকে গলা ফাটিয়ে প্রশংসা করতে পারি তবে কেন আমাদের পরিবারের মোস্ট এসেনশিয়াল ওয়ার্কারকে একটু ধন্যবাদ জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারব না।
আমার মা কে, আমার বাচ্চাদের মা কে এবং পৃথিবীর সকল মা কে “মা দিবস” এর শুভেচ্ছা। পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিনতম কাজটি আপনারা বছরের পর বছর ধরে হাসিমুখে আনন্দের সাথে করে যাচ্ছেন। ৩৬৫ দিন একটানা ধন্যবাদ দিয়ে অথবা উপহার দিয়েও আপনাদের এই মা ভুমিকার সঠিক কদর আমরা করতে পারব না। আপনারা সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং ক্লান্তিহীন ভাবে কঠিনতম কাজটি করে জান হাসিমুখে।

 

করোনাভাইরাস থেকে শিশুদের ঝুঁকি কমাতে কি করতে হবে?

করোনাভাইরাস থেকে শিশুদের ঝুঁকি কমাতে কি করতে হবে?


স্বাস্থ্যকথা


করোনাভাইরাস শিশুরাও সাধারণ সবার মতন ঝুঁকির মধ্যে আছে। করোনাভাইরাস থেকে তাই শিশুদের ঝুঁকি কমাতে আমাদের সবাইকে অনেক কিছু করতে হবে।

করোনাভাইরাসের লক্ষণগুলো কী?

করোনভাইরাসের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে জ্বর, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট। আরও মারাত্মক ক্ষেত্রে, এই সংক্রমণের ফলে নিউমোনিয়া বা শ্বাস-প্রশ্বাসের অসুবিধা হতে পারে। তবে, খুব কম ক্ষেত্রেই এই রোগ প্রাণঘাতী হয়।

এসব লক্ষণগুলো ফ্লু (ইনফ্লুয়েঞ্জা) বা সাধারণ ঠান্ডা-জ্বর, যা কোভিড-১৯ এর চেয়ে অনেক বেশি সাধারণ। এ কারণেই কোনও ব্যক্তি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখে নেয়া দরকার।

শিশুদের জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলো

শিশুদের জন্যও মূল প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলো একই রকম।
এর মধ্যে রয়েছে,
১. বার বার হাত ধোয়া এবং
২. শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। যেমন, কাশি বা হাঁচি দেওয়ার সময় কনুই দিয়ে ঢেকে নেয়া বা টিস্যু ব্যবহার করা, তারপর টিস্যুটি নিকটবর্তী বন্ধ ময়লার বাক্সে ফেলে দেয়া। এছাড়াও,

৩. জ্বরের জন্য একটি টিকা রয়েছে। তাই, নিজেকে এবং নিজের সন্তানকে সময়মতো ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা মনে রাখবেন।

সংক্রমণের ঝুঁকি আমি কীভাবে এড়াতে পারি?

সংক্রমণ এড়াতে আপনি এবং আপনার পরিবার নিচের চার ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করতে পারেন:

১. সব সময় বাচ্চাদেরকে বিভিন্ন ধরনের ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটি করাতে উৎসাহিত করা।
২. সারাক্ষণ ঘরের মধ্যে বন্দি থাকার কারণে বাচ্চাদের মধ্যে নানান ধরনের টেনশন হচ্ছে কিনা তা খেয়াল করা এবং বাচ্চাদের মধ্যেও মন খারাপ ভাব দেখা যায়। তা নিয়ে কাজ করা।

৩. বারবার নেগেটিভ খবর গুলো দেখা থেকে বড়দেরকেও দূরে থাকতে হবে যাতে তাদের দুশ্চিন্তা কম হয়।

৪. বাচ্চাদেরকে এটা বুঝাতে হবে যে বর্তমানে ঘর থেকে বের না হয় তাদের জন্য সবচাইতে বেশি নিরাপদ ঘরে থাকা।

বাচ্চাদেরকে বিভিন্ন ছোটখাটো সমস্যা দেখা যায় যদি কোন বাচ্চা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে অন্য ধরনের কোনো অসুস্থতা সে ক্ষেত্রে পরিচিত জায়গায় যে ডাক্তারের কাছে ফোনে যোগাযোগ করা যায় সেখান থেকে সাহায্য নেওয়া।

 

মন খারাপের দিনে

মন খারাপের দিনে


আলিজা বিনতে কাদের


জীবনের চড়াই-উৎরাই পার হয়ে শত শত মন খারাপের দিনের সম্মুখীন হয়েছি। কেঁদেছি-থেমেছি-আবার হেসেছি। এভাবেই দিনগুলো হাওয়ায় মিলিয়ে যায়, আর ফিরে আসে না। সেই মানুষগুলোও আর ফেরে না।
.
যাদের পেছনে সময়ের সিংহভাগ ব্যয় করি, তারাও না বুঝে সরে যায়। তাদের পিছু ফিরে দেখার সময় কোথায়। কতটুকু অপ্রাপ্তি তার হিসেব নিতে নিতে, প্রাপ্তির খাতার দিকে দৃষ্টি গিয়ে আটকায় না। ব্যয়ের হিসেব দেখে দেখে দৃষ্টি নেতিবাচক হয়ে যায়। আয়টুকুর হিসেব আর করা হয়ে ওঠে না।
.
এভাবে ব্যয় আর অপ্রাপ্তির রেশ নিয়ে কেটে যায় বহু মন খারাপের দিন। হাসি মুখে অভিনয় করতে করতে পারিপার্শ্বিক মানুষের মাঝে হৃদয়ভাঙা মানুষগুলো মিশে যায়। মন খারাপের বুঝি কোন রং নেই, যা দেখে তাদের চেনা যায়। হৃদয় ভাঙার শব্দ তো কেউ শোনে না, ক্ষত বিক্ষত হৃদয়ে কেউ আশার প্রলেপ লাগায় না।
.
থমকে যায় সময়, একে একে বিয়োজন করতে করতে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। সেই নিঃস্ব সময়ের গতিপথ বদলে দিতে একজন কাছে আসেন, যিনি আমার কাছে কিছুই প্রত্যাশা করেন না। কিন্তু আমি তার মুখাপেক্ষী হয়ে যাই। যাকে ছাড়া জীবন চলে না। জীবন যেখানে থেমে যায়, সেখানেই প্রেরণার বানী শুনিয়ে আশার আলো প্রজ্বলিত করে দেন।
.
বাক-হীন হয়ে ভেঙে যাওয়া হৃদয়ের টুকরো গুলো হাতে তুলে নিয়ে অপলক দৃষ্টে চেয়ে থাকি। মুক্তোদানার মতো টপ টপ করে অশ্রু ঝরে পড়ে ভগ্নহৃদয় এর উপর। ক্ষতগুলো মিলিয়ে যেতে থাকে আস্তে আস্তে একটা সময় ব্যথাগুলো আর অনুভূত হয় না।
.
এক অকল্পনীয় শীতলতায় হৃদয় পূর্ণ হয়, অশ্রুসজল চোখে প্রশান্তির পরশে যতদূর দৃষ্টি যায় ততখানিই ভরসায় ছেয়ে যায়। কৃতজ্ঞতায় মুখ ফুটে বের হয় আলহামদুলিল্লাহ।
.
যে হৃদয় মানুষ ভেঙে দিয়ে চলে যায়, সেই হৃদয় রবের করুনার স্পর্শে খাঁটি সোনায় পরিনত হয়।
তা আর মানুষের ভেঙে দেওয়ার অপেক্ষার প্রহর গুনে না। মানুষের চলে যাওয়ার শূন্যতা নিয়ে আত্মগ্লানিতে ভোগে না। রবের মুখাপেক্ষী হৃদয়, ভেঙে দেওয়ার ক্ষমতা তখন আর মানুষের হাতে থাকে না। মুখে লেপ্টে থাকা হাসি মুছে দেওয়ার জন্য তখন আর মানুষের দেওয়া কষ্ট যথেষ্ট হয় না।
.
ভালো থাকা তখন আর ক্ষনিকের জন্যে হয় না। বিপদের চূড়ান্ত সীমানায় থেকেও ভালো থাকা শিখিয়ে দেন পরম করুনাময়। হৃদয়ে মন খারাপের দিনগুলো কেবল স্মৃতি হয়েই থেকে যায়। তা আর মন খারাপের কারণ হতে পারে না।
.
যেই মনের দ্বায়িত্ব স্বয়ং রবকে দিয়ে দেওয়া হয় সেই মন কিভাবে মানুষের দেওয়া কষ্ট বয়ে নিয়ে খারাপ থাকতে পারে!
.
—কেউ কি নেই?
যে তার আহত হৃদয়ে স্বস্তির প্রলেপ লাগিয়ে নিবে। অশ্রুগুলোকে তিক্ততার বিনিময়ে কৃতজ্ঞতা দিয়ে বদলে নিতে কেউ কি আসবে না?
— অবহেলার সময়গুলোকে সুখের বিনিময়ে কেউ কি বিক্রয় করতে আসবে না?
.
এটা একটি উন্মুক্ত আহবান,
কেউ কি মন খারাপের দিনগুলোর বিনিময়ে সন্তুষ্টি ও কৃতজ্ঞতায় পরিপূর্ণ দিনগুলোকে আপন করে নিতে চাইবে না?
.
— আলিজা বিনতে কাদের

 

অসাধারণ সব গুনে ভরপুর কালোজিরা ভর্তা করেছি

অসাধারণ সব গুনে ভরপুর কালোজিরা ভর্তা করেছি


ঘরকন্যা


কালোজিরার গুরুত্ব সম্পর্কে কম বেশী আমরা সবাই জানি। কালোজিরাতে আছে ফসফেট, লৌহ ও ফসফরাস। এছাড়াও রয়েছে ক্যানসার প্রতিরোধক কেরটিন, বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান এবং অম্ল রোগের প্রতিষেধক। ইসলাম ধর্মমতে কালিজিরা সকল রোগের জন্য উপকারী। এর কারণ, একটি বিশুদ্ধ হাদীসে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) উল্লেখ করেছেন যে, কালিজিরা মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের উপশমক। যার অর্থ, একমাত্র মৃত্যু ছাড়া অন্য সকল রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কালিজিরায় বিদ্যমান। তো এই কালোজিরা দিয়েই তৈরী করে দেখাচ্ছি একটা সুন্দর ভর্তা।

তৈরী করতে যা যা লাগছে…
▶ ০.৫ কাপ কালোজিরা
▶ কাঁচা মরিচ ৩/৪ টি
▶ শুকনো মরিচ ৩/৪ টি
▶ পেঁয়াজ কুচি ০.৫ কাপ
▶ ১ টা বড় রসুনের কোয়া
▶ সরিষার তেল ১ টেবিল চামুচ
▶ লবণ ০.৫ চা চামুচ

ভর্তাটি করে ফ্রিজে সপ্তাহ খানেক রেখে দিতে পারবেন, যেহেতু সব কিছু ভেজে ব্যবহার করা হয়েছে, তাই ভর্তাটা সহজে নষ্ট হবে না।

সুত্রঃ রুমানার রান্নাঘর

 

সাহাবীদের জীবন কথা…”আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.”

সাহাবীদের জীবন কথা…”আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.”


সাজেদা হোমায়রা


একদিন এক ছোট্ট সাহাবী রাসূল সা. কে অজুর পানি এগিয়ে দিলে রাসূল সা. খুব খুশী হন আর সেই সাহাবীর জন্য দুয়া করেন এই বলে…
“হে আল্লাহ! তুমি তাকে দ্বীনের উপর বিশেষজ্ঞ বানিয়ে দাও এবং তাকে কুরআনের রহস্য বোঝার যোগ্যতা দান করো।”
মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবীর এ দুয়া কবুল করেন এবং সেই সাহাবীকে অনেক অনেক জ্ঞান দান করেন।

অসাধারণ মেধাবী এবং আলোকিত জ্ঞানী এ সাহাবীর নাম আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.। অগাধ জ্ঞান ও পান্ডিত্যের জন্য তিনি ‘বাহরুল ইলম’ (পূণ্যবান জ্ঞানী) উপাধি লাভ করেন। কুরআনের ব্যখ্যায় তিনি ছিলেন ভীষণ পারদর্শী।। কুরআনের রহস্য উপলব্ধির ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন অনন্য। অসম্ভব প্রখর স্মৃতিশক্তি ছিলো তাঁর।

আব্দুল্লাহর রা. জন্ম রাসূল সা. এর মদীনায় হিজরতের তিন বছর পূর্বে। আবদুল্লাহ ছিলেন রাসূল সা. এর চাচাতো ভাই। আর আব্দুল্লাহর মা উম্মুল ফাদল ছিলেন মহিলাদের মধ্যে ২য় ইসলাম গ্রহণকারী। তাঁর জন্মের পর তাঁর মা তাঁকে রাসূল সা. এর কাছে নিয়ে আসেন এবং রাসূল সা. খেজুর চিবিয়ে তার মুখে দিয়ে দেন। জন্মের পর থেকেই তিনি ইসলামিক এনভায়রনমেন্টে বড় হতে থাকেন। তাঁর বাবা মক্কা বিজয়ের কিছুদিন পূর্বে ৮ম হিজরিতে ইসলাম গ্রহণ করেন। আর তখনই তারা সপরিবারে মদীনায় হিজরত করেন। আবদুল্লাহর বয়স তখন এগারো।

আব্দুল্লাহ রাসূল সা. কে ছায়ার মতো অনুসরণ করতেন। রাসূল সা. এর মৃত্যুর সময় আব্দুল্লাহর বয়স ছিলো মাত্র ১৩ বছর। খুব অল্প সময় তিনি রাসূলকে কাছে পেয়েছিলেন। এটুকু সময়ের ভেতরও তিনি জ্ঞানের গভীরতায় পৌঁছতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই বয়সেই তিনি রাসূলুল্লাহর ১,৬৬০ টি হাদীস স্মৃতিতে সংরক্ষণ করেছেন। যা মুসলিম জাতির কল্যাণ সাধনে রাখছে বিরাট ভূমিকা। কী অসম্ভব ট্যালেন্টেড ছিলেন তিনি!

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. রাসূলুল্লাহ সা. এর সাথে সময় কাটাতে খুব পছন্দ করতেন। সুযোগ পেলেই রাসূলের সেবা করতেন। রাসূল সা. এর একটু সঙ্গ পাওয়ায় জন্য সবসময় অস্থির হয়ে থাকতেন। রাসুলুল্লাহ সা. এর স্ত্রী উম্মুল মু’মিনীন মাইমুনা রা. ছিলেন আবদুল্লাহর খালা। প্রায়ই তিনি তাঁর খালার বাসায় থাকতেন। এ কারণে খুব কাছ থেকে তিনি রাসূলের সাহচর্য লাভ করেছেন। কখনো তাঁর সাথে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেছেন… কখনো বা অজুর পানি এগিয়ে দিয়েছেন।

রাসূল সা. এর ইন্তেকালের পর আবদুল্লাহ সাহাবাদের থেকে জ্ঞান লাভের জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকতেন। তিনি বলেছেন, “কখনো আমি একটি বিষয় সম্পর্কে জানতে ৩০ জন সাহাবাকে প্রশ্ন করেছি।” কী প্রচণ্ড আকাঙ্ক্ষা ছিলো তাঁর জ্ঞান লাভ করার!

জ্ঞান আহরণের ক্ষেত্রে ইবনে আব্বাস ছিলেন খুব বিনয়ী। জ্ঞানীদের তিনি অসম্ভব সম্মান করতেন। জ্ঞান আহরণের ক্ষেত্রে তিনি যে কতো বিনয়ী ও কষ্ট সহিষ্ঞু ছিলেন তা তাঁর একটি বর্ণনা থেকেই অনুমান করা যায়।
ইবনে আব্বাস বলেন, “আমি যখনই জানতে পেরেছি রাসূল সা. এর কোনো সাহাবীর কাছে তাঁর একটি হাদীস সংরক্ষিত আছে, আমি তাঁর ঘরের দরজার কাছে গিয়েছি। যখন দেখেছি এখন দুপুরের রেস্ট করার সময় তখন দরজার বাইরে অপেক্ষা করেছি। বাতাসে ধূলাবালি উড়ে আমার জামা আর শরীর একাকার হয়ে গেছে। তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে আমার এ দূরবস্হা দেখে বলেছেন, ‘আবদুল্লাহ! রাসূলুল্লাহর চাচাতো ভাই! আপনি কি উদ্দেশ্যে এসেছেন? আমাকে খবর দেননি কেন, আমি নিজেই গিয়ে দেখা করে আসতাম।’ আমি বলেছি, আপনার কাছে আমারই আসা উচিত। কারণ জ্ঞান এসে গ্রহণ করার জিনিস, গিয়ে দেয়ার জিনিস নয়। তারপর আমি তাঁকে হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছি।”

জ্ঞান অন্বেষণে ইবনে আব্বাসের আগ্রহ, একাগ্রতা ও কর্মপদ্বতি দেখে সে যুগের বড় বড় জ্ঞানী ও মনীষীরাও চরম বিষ্ময় বোধ করেছেন।

আবদুল্লাহ রা. এর কথা শুনে মানুষ বিমোহিত হতো। কেউ তাঁর কাছে কোনো কথা বলতে আসলে তিনি তা আগ্রহ ভরে শুনতেন। তাঁর বাসাটি ছিলো একটি ইউনিভার্সিটি। সেখানে তিনিই ছিলেন একমাত্র টিচার। সপ্তাহে এক এক দিন এক এক বিষয়ে লেকচার দিতেন। ফিকহ, হালাল-হারাম, ফারায়েজ, কবিতা, সাহিত্য, প্রাচীন আরবের ইতিহাস এসব বিষয় থাকতো তাঁর আলোচনায়। তাঁর আলোচনা শুনে সবাই পরিতৃপ্ত হয়ে ফিরতেন।

আবদুল্লাহ রা. এর অপরিসীম জ্ঞান ও চিন্তা শক্তির কারণে অল্প বয়সী হওয়া সত্ত্বেও উমর রা. ও উসমান রা. এর শাসনামলে মজলিশে শূরার (পরামর্শ সভা) সদস্য ছিলেন তিনি।

দ্বীনি জ্ঞানে গভীর পাণ্ডিত্যর জন্য উমর রা. জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে পরামর্শ করতেন। উমর রা. আবদুল্লাহ রা. কে দেখলেই বলতেন, “ঐ যে বিচক্ষণ ও বিবেকবান যুবক আসছে!”

তাঁর চরিত্রে ছিলো তাকওয়ার প্রতিচ্ছবি। তিনি ছিলেন দিনে রোজাদার এবং রাতে ইবাদতকারী। রাতের একটি অংশ তিনি নামাজে দাঁড়িয়ে কাটাতেন এবং তাওবা ইসতিগফার করতেন। আল্লাহর ভয়ে তিনি এতো বেশি কাঁদতেন যে চোখের পানি তাঁর দু’গালে দুটি রেখার সৃষ্টি করেছিলো।

প্রিয় নবীর দুয়া ও জ্ঞান অর্জনের জন্য আবদুল্লাহ রা.এর অক্লান্ত চেষ্টা তাঁকে জ্ঞানের গভীরতায় পৌঁছতে সাহায্য করেছে। তাঁর জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয়েছে চারদিক… তাঁর বর্ণনা করা হাদীসগুলো আজো মানুষের হেদায়েতের আলোকবর্তিকা!

৭১ বছর বয়সে তায়েফ নগরে ইন্তেকাল করেন তিনি। তায়েফে ‘মসজিদ ইবনে আব্বাস’ নামক মসজিদটি আজো তাঁর স্মৃতি বহন করে চলেছে। এ মসজিদেরই পেছনের দিকে রয়েছে এ মহান সাহাবীর কবর।

 

হালিম

হালিম


ঘরকন্যা


যা লাগবে-

মুগ ,মাসকলাই ডাল,মসুর ডাল আর পোলাও চাল মিলে আধা কেজির মত নিন। এক কাপ পরিমান গম নিন। এসব কিছু গুঁড়ো করে নিন ব্লেন্ডারে বা পাটায়। সময় অনেক কম লাগবে।

বাকি যা লাগবে-

মুরগি একটা ১ থেকে দেড় কেজি ছোট পিস করে কাটা
পেঁয়াজ ৪ টি কুচি করে বেরেস্তা করা
পেঁয়াজ বাটা ২ টেবিল চামচ
আদা বাটা ২ টেবিল চামচ
রসুন বাটা ২ টেবিল চামচ
হলুদ মরিচ গুঁড়ো মিলে ২ চা চামচ
গরম মশলা পাউডার ১ টেবিল চামচ
জিরা গুঁড়ো ২ চা চামুচ
ধনিয়া গুঁড়ো ২ চা চামচ
ধনিয়া পাতা কুচি
আদা কুচি
তেল হাফ কাপ
লবণ স্বাদমত

প্রণালী

হাঁড়িতে তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি ভাজুন। হালকা বাদামি হয়ে আসলে গুঁড়া মসলা দিয়ে নাড়ুন। লবণ দিয়ে দিন। মাংস ছোট টুকরা করে দিয়ে দিন। হালিমের মসলা দিয়ে ভালো করে নেড়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন হাঁড়ি। ১০ মিনিট পর মাংস থেকে পানি বের হয়ে গেলে আবারও নেড়ে দিন। ২ কাপ পানি দিয়ে মাঝারি আঁচে সেদ্ধ করুন মাংস। এরমধ্যে চাল, গম ও ডাল ধুয়ে সামান্য পানি দিয়ে পেস্ট করে নিন একসঙ্গে। একদম মিহি করার প্রয়োজন নেই। মাংস খানিকটা সেদ্ধ হলে চাল-ডালের মিশ্রণ দিয়ে নেড়েচেড়ে ৫ কাপ পানি দিয়ে দিন। ঘনঘন নাড়তে হবে। একটু পাতলা থাকা অবস্থায় নামিয়ে ফেলতে হবে। নামানোর আগে পানির সঙ্গে গুলিয়ে তেঁতুলের মাড় দিয়ে দিন। সাজানোর উপকরণ কুচি করে উপরে ছিটিয়ে পরিবেশন করুন গরম গরম।

 

অসহ্য রকম সুন্দর একটি জীবন

অসহ্য রকম সুন্দর একটি জীবন


ফারহানা আমাতুল্লাহ শৌখিন


و خلقنكم ازوخا
And we created you in pairs.
জান্নাত; যেখানে নেই কোনো কষ্ট, নেই পীড়াদায়ক কোনো অনুভূতি। ইচ্ছের লাগামের বাঁধ থাকতে পারে কিন্তু দেওয়ার ভান্ডারের কোনো শেষ নেই। কোনো কিছুর শূন্যতা যেখানে নেই। তারপরেও কেন আদম(আঃ) সেখানে থেকেও শূন্যতা অনুভব করলেন? কেন একজন সঙ্গীর অভাব অনুভব করলেন?

//অসহ্য রকম সুন্দর একটি জীবন
চারদিকে ছড়ানো চিত্তানন্দের অজস্র উপকরণ
তবুও কেন জীবন ছেড়ে পালাতে চায় মন
কেন আঁতিপাঁতি করে খোঁজে অন্য কোনো ভুবন?//

আর আল্লাহতা’আলা কেনই বা বাবা-মা, ভাইবোন, পরিবারের অন্য কোনো সদস্য রেখে, একজন স্ত্রী হাওয়া(আঃ) কেই জুড়ে দিলেন তার সাথে?
বললেন, হে আদম! তুমি এবং তোমার স্ত্রী জান্নাতে অবস্থান করো এবং সেখান থেকে যা চাও খুশিমনে খাও। (বাক্বারহঃ৩৫)
আল্লাহতা’আলার প্রজ্ঞা সবকিছুর উর্ধ্বে।
প্রথম পরিবার গড়ে উঠেছিল প্রথম মানব মানবীর মাধ্যমে। একটা পরিবার বহু হৃদয়ের সমষ্টি। যেখানে আছে জীবনের প্রবাহ, আছে মায়া-মমতা, স্নেহ-ভালোবাসা, মিলেমিশে থাকার প্রবল বাসনা, আছে নিরাপত্তা, সহনশীলতা এবং পরস্পরকে গ্রহণ করার মানসিকতা।
সম্পর্কের বন্ধনগুলোর ক্ষেত্রে আমরা খুব বেশি আটপৌরে। কারও সাথে কথা বলার সময়, ভাব বিনিময়ের সময় মনোযোগ দেই না ঠিকমতো। সতর্কতা থাকেনা আমাদের। কাছের মানুষ বলেই বুঝি যথাযথ মূল্যায়ন না করলেও চলে? অথচ এই কাছের মানুষগুলোর জন্যই তো জীবন আমাদের কাছে রঙধনু হয়ে ধরা দেয়। সুহাসিনী ভোর হয়ে হাজির হয়। ঘোর অমানিশার দিনে একমুঠো রোদ নিয়ে হাজির হয়। কুয়াশার ঘনকালো মেঘের বুকে উন্মুক্ত করে আলোকিত বাতায়ন। রাহবার হয়ে দেখিয়ে দেয় সুখের কিনারা। আর তাদের ক্ষেত্রে আমরা কতটা সতর্ক থাকি প্রশ্ন করে দেখেছি কি নিজেকে?

পারিবারিক উপাখ্যান নিয়ে লেখিকা আফরোজা হাসানের ছয় কলামের একটি পেসক্রিপশন হাতে পেলাম। অবশ্য লেখিকা হিসেবে অপরিচিত কেউ নন। যদি জিজ্ঞেস করেন, আপনার পছন্দের লেখিকা কে? চোখ বন্ধ করে বলব, আফরোজা আপু। শব্দশৈলীর গঠন। কথার প্রজাপতি কিভাবে এক ডাল থেকে অপর ডালে অবগাহন করে নিয়ে চলে, তার পূর্ণ প্রশান্ত আবেশ লেখিকার লিখাতে খুঁজে পাই। শুধুমাত্র একটা বই পড়েই তার প্রতি বুঁদ হয়ে গেলাম ব্যাপারটা এমন নয়। সতেরো সাল থেকেই অপেক্ষার প্রহর গুনতাম কখন আনন্দবাড়ির আনন্দকথনের পরের পর্ব এসে হাজির হবে। গল্পে গল্পে খুঁজি জীবনের প্রতিচ্ছবিতে কতবার যে উঁকি দেওয়া হতো। এভাবে তার সব পান্ডুলিপিতে সাঁতরে বেড়িয়েছি। যদিও জীবনের পাণ্ডুলিপিগুলো গল্পের মতো সহজ নয়। এ পান্ডুলিপিতে থাকে কয়েক মনের বসবাস। যাদের চিন্তাচেতনা অনেক সময়ই অন্যের সাথে মিলেনা। থাকে বৈরিতা আবার কখনো থাকে আনন্দের মিশেল।

#গল্পের_ঝুড়ি_থেকে
//একটা মেয়ে যখন বউ হয়ে পরিবারে প্রবেশ করে। তখন পরিবারের সদস্যরা ভাবে বড় হয়েছে বলেই বিয়ে হয়েছে। আর বিয়ে হয়েছে মানেই তুমি এখন বিশাল সব দায়িত্বে বোঝা মাথায় নিতে প্রস্তুত। অথচ, একটা মেয়ে হিসেবে সে বড় হয়েছে; কিন্তু একজন বধূ হিসেবে মাত্রই তার জন্ম হয়েছে।// সুখের নাটাই
মানুষের সমস্যা হচ্ছে বাইরের মানুষকে বুঝিয়ে বললেও কাছের মানুষকে বুঝিয়ে বলতে চায় না। বুঝিয়ে বলার চাইতে হুকুম করতে বেশি পছন্দ করে। এভাবে বলার চাইতে করতে হবে বলে অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। অথচ কাছের মানুষকে একটু সময় দিলে। আন্তরিকতার সাথে বুঝালে তারা নিজেদের অভিভাবকহীন মনে করে না।
//অভিমানী মনের আত্মদহন গল্পে, নাফিসা সদ্য বিবাহিত নতুন বধূ মুনিরাকে জীবনের উপাখ্যান বুঝিয়ে দিচ্ছে সাবলীলভাবে, জানো মুনিরা এমন কতবার হয়েছে, বাবা কোথায়ও বেড়াতে নিয়ে যাবার কথা বলে নিয়ে যাননি। ভাইয়ারা পছন্দের মূল্য না দিয়ে জোর করে অপছন্দনীয় কিছু চাপিয়ে দিয়েছে। বোনেরা নষ্ট করে ফেলেছে খুব প্রিয় কিছু। মা অকারণে বকাঝকা করেছেন। সেসব কি মেনে নিইনি আমি? ভুলে যাইনি কি? অন্যায় আচরণের জন্য ছেড়ে চলে গিয়েছি কি? না। এর কারণ কি বাবা-মা-ভাই-বোনকে ডিভোর্স দেওয়া যায় না, এটা? নাকি অকৃত্রিম ভালোবাসা? তাহলে স্বামী/স্ত্রীর ভুল কথা বা ভুল কাজ মেনে নিতে সমস্যা কোথায়? যেখানে সেই মানুষটাকে জড়িয়েই আমার জীবনের সবকিছু। //
সম্পর্কগুলো অনেক স্পর্শকাতর। আর তারমধ্য সবচেয়ে বেশি স্পর্শকাতর স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। একবার বিচ্ছেদ হলে আর দেখা নেই। দেখার জন্য, কাছে পাবার জন্য হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়ে যাবে অথচ বৈধতার দেয়াল আটকে যাবে। এই সম্পর্কের ক্ষেত্রে সম্যক সচেতন থাকা তাই খুব বেশি জরুরী। সংসারে সুখী হতে চাইলে নিজ নিজ প্রাপ্তির হিসেব করা ছাড়তে হবে৷ ভালোবাসা মানে আমি তোমাকে কী দিলাম এবং বদলে কী পেলাম তার যাচাই করা নয়৷ বরং একে অন্যের ঘাটতিগুলো পূরণ করতে করতে দুজন মিলে একই গন্তব্য পানে ছুটে চলা।

//”অন্তরালের ছায়া” গল্পে ইলমা আর নুরির কথায় কথায় উঠে এসেছে জীবনের কিছু সহজ চিন্তাধারা।
“এত ভালোবাসাবাসি, এত টান, এত আকর্ষণ থাকার পরও সম্পর্কগুলো ভেঙে যায় কেন? জীবন দিয়ে দেবার দাবিদারেরা একে অন্যের জন্য নিজেদের ছোট্ট ছোট ইচ্ছা-অনিচ্ছা, পছন্দ-অপছন্দের ত্যাগ স্বীকার করতে পারে না কেন? কোনো ব্যক্তিই যেখানে ভুলের উর্ধ্বে নয়, সেখানে ক্ষমা করে দিতে পারে না কেন একে অন্যের ভুলগুলো? কেন সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেয়ে ভেঙে ফেলাকেই পছন্দ করতে শুরু করেছে মানুষ? কেন ঘৃণার আঁধারে ঢেকে যায় ভালোবাসার সূর্য?
সম্পর্ক যত মধুরই হোক না কেন কিংবা একজন মানুষ যতই ভালো হোক না কেন, তার ভেতরে নেতিবাচক কিছু থাকতেই পারে! এই ভাবনাটা এবং এটা মেনে নেওয়ার উদারতাই ‘ভালোবাসার’ ক্ষেত্রে সবচেয়ে শক্তিশালী ভিত৷”
“কিছু কিছু মূহুর্ত ভীষণ রকম অসহায়ত্ব নিয়ে হাজির হয় আমাদের কাছে! পছন্দের মানুষরা খুব কাছে থাকার পরও অদ্ভূত এক একাকিত্ব ঘিরে ধরে মনকে৷ অকারণেই বারবার ভিজে ওঠে চোখ৷ চোখ বুজলেই দেখা যায় বুকের ভেতরে ভেসে বেড়াচ্ছে শূন্যতা৷ আকাশের বুকে ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ উড়ে বেড়ানোর মতো৷ এই অনুভূতিগুলোর কাছে নিজেকে খুব অসহায় লাগে৷ তখন মন প্রশান্তি খুঁজে পায় একমাত্র রবের স্মরণে৷”
“ভালো লাগার জন্য মানুষ অন্যকে কষ্ট দিতে পারে, কিন্তু ভালোবাসার জন্য নিজে কষ্ট সহ্য করে৷”//
আমাদের দাম্পত্যজীবন যদি সুখের নাটাইয়ে বাঁধতে পারি। তবে অনাগত সব ঝড় ঝাপটা সামলে আমরাও তাতে রচনা করতে পারি সুখময় এক রঙিন অধ্যায়।
প্রতিটা গল্পতেই রয়েছে এভাবে আবেগমিশ্রিত বাণী। জীবনের পরতে পরতে যেমন আছে সমস্যা সেভাবেই রয়েছে তার সমাধান। আর কিছু লিখতে গেলে রিভিউ পাঠক বিরক্ত হয়ে পড়াই বন্ধ করে দিবেন। আর সব লিখলে হার্ডকপি পড়ার মজাই লুফে যাবে।
#সমালোচনা:
আফরোজা আপুর লিখাতে ভুল ধরার মতো শক্তিবান হয়ে উঠিনি। কিন্তু মাত্র ১০২ পৃষ্ঠার ছোট্ট এই চিরকুটে যারপরনাই ব্যথিত হয়েছি। ভেবেছিলাম জাওয়াদকে পাবো নূহাকে পাবো। থাকবে আনন্দবাড়ির সুখ এবং দুঃখের কথন। প্রচ্ছদ ভালো হয়েছে। যাইহোক, পরবর্তী নতুন বই এবং নতুন গল্পের অপেক্ষায় এই প্রহরের ক্ষান্ত দিলাম। পরের প্রহর যেন পাই ভারী মলাটে, যা পাঠকের চিত্তে আনন্দের প্রলেপ দিয়ে যাবে। বইয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রত্যেককে আল্লাহতা’আলা ফিদ্দুনইয়া ওয়াল আখিরহ এ জাযায়ে খইর দান করুন, আমীন ইয়া রব্ব!

বইঃ ”সুখের নাটাই”
লেখিকাঃ আফরোজা হাসান
প্রকাশনঃ সমকালীন প্রকাশন
প্রচ্ছদ মূল্য: ১৬০৳

 

ডিম চপ

ডিম চপ


ঘরকন্যা


ইফতারিতে আমাদের অনেকেরই প্রিয় ডিম চপ। বিশেষ করে শিশুরা তো দারুন পছন্দ করে এই খাবারটি। অনেকে বাইরে থেকে কিনে খেয়ে থাকেন ডিম চপ, আবার অনেকে বাড়িতেও তৈরি করে থাকেন। যারা ডিম চপের সবথেকে সহজ রেসিপি জানেন না তাদের জন্য আজ রইলো ডিম চপ তৈরির সবচাইতে সহজ রেসিপি।

উপকরণঃ

– ডিম সিদ্ধ – ৪ টি
– আলু সিদ্ধ – আধা কেজি
– পেঁয়াজ কুচি – ২ টি
– কাঁচা মরিচ কুচি – স্বাদ মতো
– গোল মরিচ গুঁড়া – ১ চা চামচ
– ধনিয়া পাতা – ৩ টেবিল চামচ
– লবন – স্বাদ মতো
– ব্রেড ক্রাম \ বিস্কিটের গুঁড়া – ১ কাপ
– ফেটানো ডিম – ২ টি
– সয়াবিন তেল – ভাজার জন্য

প্রনালীঃ

-ডিম সিদ্ধ করে খোসা ছাড়িয়ে রাখুন। আলু ধুয়ে সিদ্ধ করে খোসা ছাড়িয়ে নিন।
-সিদ্ধ আলুর সাথে পেঁয়াজ কুচি, কাঁচা মরিচ কুচি , ধনে পাতা কুচি , গোল মরিচের গুঁড়া ও লবণ দিয়ে খুব ভাল করে মেখে নিন। এবার আলুর মিশ্রণের ভিতর আস্ত সিদ্ধ ডিম ভরে চপের আকৃতিতে গড়ে নিন।
-২ টি ডিম একটু লবন দিয়ে ফেটিয়ে নিন। চপগুলো ডিমের গোলায় চুবিয়ে ব্রেড ক্রামে জড়িয়ে কিছু সময়ের জন্য ফ্রিজে রেখে দিন। চাইলে ব্রেড ক্রামের সাথে চিজ কুচিও মিশিয়ে দিতে পারেন। এতে স্বাদ আরও বেড়ে যাবে।

এবার ফ্রিজ থেকে চপগুলো বের করে ডুবো তেলে সোনালী করে ভেজে তুলুন । ইফতারির টেবিলে গরম গরম পরিবেশন করুন দারুন মজাদার ডিম চপ।

 

শিশু কিশোরদের কোরআন এর অনুবাদ

শিশু কিশোরদের কোরআন এর অনুবাদ


কানিজ ফাতিমা


শিশু কিশোরদের জন্য প্রথবারের মতো সহজ বাংলায় কোরআনের অনুবাদ হতে যাচ্ছে – সবার দোয়া চাই –

এটুকু করতে লাগলো তিন দিন – ১ টা বাক্য লিখতে তিন ঘন্টার রেফারেন্স খুঁজতে হলো .

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে।

ভূমিকা:

মুহাম্মদ (সা.) জিবরীল (আ:) কে দেখে প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলেন। চল্লিশ বছর বয়সে তিনি যখন হেরা গুহায় একাকী নির্জনে ধ্যানে মগ্ন ছিলেন, গভীরভাবে ভাবছিলেন সমাজের সব অসঙ্গতি আর অন্যায় জুলুম নিয়ে, ভাবছিলেন অসহায় মানুষের মুক্তির উপায় নিয়ে; ঠিক তখনই তার সামনে ভেসে উঠলো অতিপ্রাকৃত (supernatural) এক অবয়ব- যিনি বলে উঠলেন “পড়!” ( সূরা আলাক )

প্রথমে মুহাম্মদ (সা.) বুঝতে পারলেন না কি ঘটছে- ছুটে গেলেন বাড়ীতে। স্ত্রী খাদিজা (রাঃ ) তার বয়োবৃদ্ধ অন্ধ ভাই (cousin) ওরাকা (ওরাকা ইবনে নওফেল ইবনে আসাদ) এর কাছে নিয়ে গেলেন তাঁকে। ওরাকা সে যুগের বিজ্ঞ ও ধর্ম বিষয়ক জ্ঞানী ব্যক্তি হিসাবে সমাজে পরিচিত ছিলেন। ওরাকা বিস্তারিত ঘটনা শুনে নিশ্চিত করলেন যে যাকে মুহাম্মদ (সা.) আকাশের দিগন্তে দেখতে পেয়েছেন তিনি হলেন জিবরীল (আঃ); যিনি আল্লাহর নির্দেশে নবী-রাসূলদের কাছে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দেন।

এর পরে মুহাম্মদ (সা.) নির্জনে আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকার জন্য প্রায়ই পর্বতের গুহায় যেতে লাগলেন। একদিন মোহাম্মদ (সা.) যখন মক্কা নগরী ও পর্বতের রাস্তার মাঝামাঝি হাঁটছিলেন তখন আকাশ থেকে সেই কণ্ঠ তাঁর নাম ধরে ডেকে উঠলো- “হে মুহাম্মদ!” মুহাম্মদ (সা.) ভয়ে প্রকম্পিত হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলেন সেই অবয়ব যাঁকে তিনি এর আগে হেরা গুহায় দেখেছিলেন। তিনি ভয় পেয়ে দ্রুত বাড়ী ফিরে গেলেন ও কাঁপতে কাঁপতে খাদিজা (রাঃ) কে বললেন, “জাম্মিলুনি, জাম্মিলুনি” অর্থাৎ “আমায় কম্বল দিয়ে আবৃত করে দাও।” (তখন নাজিল হয় সূরা মুদ্দাসসির এর প্রথম সাতটি আয়াত)

এই ঘটনা মুহাম্মদ (সা.) যখন আবারো ওরাকাকে জানালেন যখন ওরাকা তাকে বললেন যে এরূপ ঘটলে মুহাম্মদ (সা.) যেন স্থির থাকে এবং কি বলা হচ্ছে সেটা শোনে। আর মুহাম্মদ (সা.) যেন ওরাকাকে প্রতিটি ঘটনা জানায়।

এর কিছুদিন পরে মুহাম্মদ (সা.) যখন লোকালয় থেকে দূরে একাকী হাটছিলেন তখন আবারো সেই কণ্ঠের ডাক শুনতে পেলেন। এবার তিনি স্থির হয়ে দাঁড়ালেন। কণ্ঠ ডেকে বললো, “মুহাম্মদ!” তিনি জবাব দিলেন, “ আমি এখানে।” কণ্ঠ বলে উঠলো, “আপনি আল্লাহর প্রেরিত রাসূল আর আমি হচ্ছি ফেরেশতা জিবরীল।” জিবরীল (আঃ) বললেন – “ আমার সাথে সাথে উচ্চারণ করুন-” এর পরে সূরা ফাতিহার নিম্নলিখিত আয়াত সমূহ নাযিল হয়। সূরা ফাতিহাই সর্বপ্রথম নাজিল হওয়া পূর্ণ একটি সূরা।

 

গণধর্ষণের শিকার কিশোরী


নারী সংবাদ


পরিবারের সাথে অভিমান করে ঘর থেকে বের হওয়াই যেন কাল হলো এক কিশোরীর। একদল লম্পটের হাতে ধর্ষণের শিকার হলো।  চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার দুপুরে ওই কিশোরীর বাবা তিনজনকে আসামি করে থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছেন। বাঁশখালী থানার পুলিশ পরিদর্শক রেজাউল করিম মজুমদার এ ঘটনা নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার গন্ডামারা ইউনিয়নের ওই কিশোরি গত সোমবার পরিবারের সাথে অভিমান করে ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়ে এবং পাশের বৈলছড়ি ইউনিয়নের এক নারীর বাড়িতে আশ্রয় নেয়। পরে রাতে তাকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার কথা বলে একটি পুকুর পারে নিয়ে ওই তিন লম্পট পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এসময় ওই কিশোরীর চিৎকারে এলাকাবাসী ছুটে এসে পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

পুলিশ পরিদর্শক রেজাউল করিম মজুমদার জানান, মামলা দায়ের করার পরেই পুলিশ আসামিদের গ্রেফতারের অভিযান শুরু করেছেন। বুধবার চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওই কিশোরীকে শারীরিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে বলেও তিনি নিশ্চিত করেন।

সুত্রঃ নয়াদিগন্ত

 

রোজা রেখে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ পাঠ করি

লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” পাঠ করি


নাজমুন নাহের নাজু


আবূ মুসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, “তোমাকে জান্নাতের অন্যতম ধনভাণ্ডারের কথা বলে দেব না কি?” আমি বললাম, ‘অবশ্যই বলে দিন, হে আল্লাহর রাসূল!’ তিনি বললেন, لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ (লা হাওলা অলা ক্বুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ) (বুখারী ও মুসলিম) [1]

আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ আমি কি তোমাকে জান্নাতের গুপ্তধনসমূহের একটির সন্ধান দিবো না? আমি বললাম, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ। তিনি বলেনঃ ‘‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’’।[2] হাযিম ইবনে হারমালা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি আমাকে বলেনঃ হে হাযিম! তুমি অধিক সংখ্যায় ‘‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’’ বাক্যটি পড়ো। কেননা তা হলো জান্নাতের গুপ্তধন [3] মূসা ইব্ন ইসমাঈল (রহঃ) ………

আবু উছমান আল্-নাহ্দী (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবু মূসা আল্-আশ্আরী (রাঃ) বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের সাথে এক সফরে ছিলাম। অতঃপর তাঁরা মদীনার নিকটবর্তী হলে লোকেরা উচ্চস্বরে আক্বীর ধ্বনি (আল্লাহু আকবার) দেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা তো কোন বধীর এবং অনুপস্থিত ব্যক্তিকে আহবান করছ না, বরং তোমরা (ঐ মহান আল্লাহকে) স্মরণ করছ, যিনি তোমাদের শাহ্ রগেরও নিকটবর্তী। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হে আবূ মূসা! আমি কি তোমাকে এমন একটি জিনিসের কথা অবহিত করব, যা জান্নাতের ভান্ডার (খাজানাহ) স্বরূপ? তখন আমি বলিঃ সেটা কি? তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।[4] কাইস ইবনু সা’দ ইবনু উবাদাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তার বাবা তাকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সেবার জন্য তার কাছে অর্পণ করেন। তিনি বলেন, আমি নামাযরত থাকা অবস্থায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছ দিয়ে গমন করলেন। তিনি নিজের পা দিয়ে আমাকে আঘাত (ইশারা) করে বললেনঃ আমি তোমাকে কি জান্নাতের দরজাগুলোর একটি দরজা সম্পর্কে জানাব না? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ “লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” (আল্লাহ ব্যতীত অনিষ্ট দূর করার এবং কল্যাণ লাভের কোন শক্তি কারো নেই)।[5] সাফওয়ান ইবনু সুলাইম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন ফেরেশতাই “লা- হাওলা ওয়ালা কু-ওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” পাঠ না করে উর্ধ্বাকাশের দিকে গমন করেন না।[6]

আবূ মূসা মুহাম্মাদ ইবন মুছান্না (রহঃ) …… কায়স ইবন সা’দ ইবন উবাদা (রাঃ) থেকে বর্ণীত যে তাঁর পিতা (সা’দ ইবন উবাদা) তাঁকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে তাঁর খিদমতের জন্য সমর্পণ করেছিলেন।

কায়স (রাঃ) বলেনঃ নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমি তখন মাত্র সালাত শেষ করেছি। তিনি আমাকে তাঁর কদম মুবারক দ্বারা আঘাত করলেন। বললেনঃ জান্নাতের দ্বারসমূহের একটি দ্বারের আমি তোমাকে বলব কি? আমি বললামঃ অবশ্যই। তিনি বললেনঃ লা হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। [7]

মুহাম্মাদ ইবন সুলায়মান (রহঃ) ………. আবু যুবায়ের (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ . আবদুল্লাহ ইবন যুবায়ের (রাঃ) নামায শেষে তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ …) পাঠ করতেন। অতঃপর উপরোক্ত দুআর অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে এবং তার সাথে “ লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ, লা না’বুদু ইল্লা ইয়্যাহু লাহুন-নি’মাহ … অতিরিক্ত বর্ণনা করে পরে উপরোক্ত হাদীছের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।[8]

ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) ….. উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুওয়াযযিন যখন “আল্লাহু আকবার, আল্লা-হু আকবার” বলে তখন তোমাদের কোন ব্যক্তি আন্তরিকতার সাথে তার জবাবে বলেঃ “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার”। যখন মুওয়াযযিন বলে “আশহাদু আল লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ” এর জবাবে সেও বলেঃ “আশহাদু আল লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ”। অতঃপর মুওয়াযযিন বলেঃ “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান রসূলুল্ল-হ” এর জবাবে সে বলেঃ “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান রসূলুল্ল-হ”। অতঃপর মুওয়াযযিন বলেঃ “হাইয়্যা আলাস সলা-হ” এর জবাবে সে বলেঃ “লা-হাওলা ওয়ালা- কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ”। অতঃপর মুওয়াযযিন বলেঃ “হাইয়্যা ‘আলাল লাফা-হ” এর জবাবে সে বলেঃ “লা- হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ”। অতঃপর মুওয়াৰ্যযিন বলেঃ “আল্লা-হু আকবার, আল্লাহু আকবার” এর জবাবে সে বলেঃ “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার”। অতঃপর মুওয়াযযিন বলেঃ “লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ” এর জবাবে সে বলেঃ “লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ”। আযানের এ জবাব দেয়ার কারণে সে বেহেশতে যাবে।[9] [1] সহীহুল বুখারী ২৯৯২, ৪২০৫, ৬৩৮৪, ৬৪০৯,
হাদিসের মানঃ সহিহ [2]আহমাদ ২০৮২৯, ২০৮৪ [3]বুখারী ৪২০৪, ৬৩৮৪, ৬৪০৯, ৭৩৮৬, হাদিসের মানঃ সহিহ [4]বুখারি ইফা ১৫২৬ হাদিসের মানঃ সহিহ [5]সূনান আত তিরমিজী ৩৫৮১ সহীহঃ সহীহাহ (১৭৪৬)। হাদিসের মানঃ সহিহ [6]সূনান আত তিরমিজী৩৫৮২ হাদিসের মানঃ সহিহ [7] সহিহাহ ১৭৪৬ সূনান তিরমিজী (ইফাঃ),৩৫৮১,৩৪৬১ হাদিসের মানঃ সহিহ [8]সূনান আবু দাউদ, ১৫০৭ হাদিসের মানঃ সহিহ [9]সহীহ মুসলিমঃ৭৩৬,,

 

ডাল আলুর চচ্চড়ি

ডাল আলুর চচ্চড়ি


ঘরকন্যা


উপকরণঃ ডাল হাফ কাপ, আলু কুচি এক কাপ, পিয়াজ হাফ কাপ, কাঁচামরিচ ২-৩ টা, গরম মসলার গুড়ো এক চা চামচ, একটা তেজপাতা, হাফ চা চামচ পাঁচফোড়ন, এক চিমটি হিং( অপশনাল), লবণ স্বাদমতো, ধনেপাতা কুচি, ঘি এক টেবিল চামচ।

প্রস্তুত প্রণালীঃ প্যানে দুই টেবিল চামচ তেল দিয়ে পাঁচফোড়ন ও হিং ফোড়ন দিয়ে পিয়াজ, কাঁচামরিচ কুচি দিতে হবে। পিয়াজ লালচে হয়ে এলে আলু কুচি আর ডাল দিয়ে কিছুক্ষণ ভেজে ডাল দুই কাপ পানি দিতে হবে। স্বাদমতো লবণ দিয়ে মিডিয়াম আঁচে ঢেকে ডাল, আলু সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত রান্না করতে হবে। এরপর ঢাকনা তুলে গরম মসলার গুড়ো ছড়িয়ে দিয়ে আঁচ বাড়িয়ে পানি টানিয়ে নিতে হবে।

পরিবেশনঃ নামানোর আগে ধনেপাতা কুচি আর এক টেবিল চামচ ঘি ছড়িয়ে নামিয়ে নিতে হবে।

 

রমজানে ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়েট

রমজানে ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়েট


নাজমিন নাহার


১.প্রথমেই আপনার শারিরীক অবস্থা অনুযায়ী ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ, ইনসুলিনের পরিমাণ ঠিক করে নিতে হবে।
২. খাদ্যাভাস এমনভাবে নির্ধারন করতে হবে যেন কোনো অবস্থাতে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা হাইপারগ্লাইসেমিয়া না হয়।
৩.এমন খাবার নির্বাচন করতে হবে যেন বডি ডিহাইড্রেটেড না হয়।
যেমনঃ
*সেহরিতে (আটা বা চালের রুটি/দুই তিন প্রকারের ডাল ও ওটসের মিক্সড খিচুরি/দুই তিন টেবিল চামচ ওটস দুধ দিয়ে রান্না / সামান্য ভাত + ডিম/ মাছ+ শাকসবজি + শসা/টমেটো/তরমুজ/খরমুজ+ প্রচুর পরিমাণে পানি।
*ইফতারি- সারাদিন রোযা রাখার ফলে শরীরের মেটাবলিক প্রসেসের অনেক পরিবর্তন হয়,এজন্য মেটাবলিক প্রসেস নরমাল রাখতে প্রচুর পানি,ডাবের পানি, বিভিন্ন ধরনের ফলের জুস( তরমুজ,কাচা আম,কমলা,মালটা),লেবুর শরবত খেতে হবে।শরবত অথবা জুসের সাথে তুকমা বা ইসুবগুলের ভুসি খাওয়া যাবে, কিন্তু কোন অবস্থাতেই চিনি,গুড়,মিস্টি খাওয়া যাবেনা।এছাড়াও ইফতারিতে এক কাপ হালিম/এক কাপ ছোলা/ ছোট একটা স্যানডুইচ + খেজুর দুই-তিনটি/ মিক্সড ফল এক কাপ/ একটা আপেল/ একটা নাশপাতি + সালাদ।
মনে রাখতে ইফতারের খাবারের পরিমাণ হবে অন্যান্য সময়ের রাতের খাবারের সমান।
*রাতের খাবারঃ এবং রাতের খাবার শরীরের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ক্যালরির চেয়ে বেশি না হয়।
এসময়ে ভাত/রুটি/খিচুড়ি/ওটস+মাছ/মাংস/ ডিম+শাকসব্জি+সালাদ খেতে হবে।

মনে রাখতে হবে-
১.কোন অবস্থাতেই সেহেরি না খেয়ে রোযা রাখা যাবেনা।
২.রাতের খাবার বাদ দেওয়া যাবেনা।
৩.খাবারের পাশাপাশি ইন্সুলিন এবং অষুধের ডোজ ঠিক রাখতে হবে।
৪. ডায়াবেটিস রোগিদের রোযার সময় আলাদা করে ব্যায়াম করার দরকার নেই,তবে কেও চাইলে রাতের খাবারের পরে ১০/১৫ মিনিট হাটতে পারে।
৫. রোযা রাখা অবস্থায় হাইপোগ্লাইসেমিয়া/হাইপারগ্লাইসেমিয়ার লক্ষন দেখা দিলে রোজা ভাঙতে হবে।
৬. তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে মাছ/মাংসের পরিবর্তে ২/৩ প্রকার ডাল মিক্স করে খাওয়া যাবে।
৭. আলাদা করে করোনা প্রতিরোধ অতিরিক্ত ভিটামিন-সি, কমলা, মাল্টা খাওয়ার প্রয়োজন নেই।
কারণ সব ধরনের শাকসবজিতে ভিটামিন সি আছে এবং সবধরনের ভিটামিন ইমিউনিটি বুস্ট করে।

৮. ভাজা- পোড়া না খাওয়াই ভাল, তবে খুব বেশি খেতে ইচ্ছে করলে ১/২ পিস খেতে পারেন।

-নাজমিন নাহার
#ঘরে_থাকুন_সুস্হ_থাকুন
সুত্রঃ বাঁচাও হেলথ।

 

আসুন রমজানের হক আদায় করি-

আসুন রমজানের হক আদায় করি


আকলিমা ফেরদৌস আখি


এ মাসের প্রস্তুতির জন্য যা করা যেতে পারে তা হলো-

১) ঈমান ও এহতেসাবের সাথে রোজার নিয়ত করা।

২) ইচ্ছা শক্তি দৃঢ় করে নেওয়া যে,‘ ইনশাল্লাহ রমজান মাসে আল্লাহর ক্ষমা ও নাজাত হাসিল করে নিবোই।’

৩) রমজানের প্রয়োজনীয় মাসলা মাসায়েল জানা ও দোয়া গুলো মুখস্ত করে নেওয়া।

৪) রমজান মাসে কি কি নেক আমল করা যায় তার একটা তালিকা তৈরি করে রাখা। যেমন-

-কোরআন অধ্যায়ন করা (অধ্যায়ন বলতে কোরআনের তাফসীর সহ পড়াকে বুঝায়) তিন/চারটি সূরা ঠিক করে নেওয়া এবং পুরো মাসে এই তিনটি/চারটি সূরা সর্ম্পকে একটি পরিপূর্ণ ধারনা নেবার চেষ্টা করা।

-কোরআন তেলওয়াত করা। প্রতি ওয়াক্ত নামাজের পরে চার পৃষ্ঠা কোরআন তেলওয়াত করলে মাসে একবার কোরআন খতম দেওয়া যায়।

-কয়েক টি ইসলামী ও হাদিস বই ঠিক করে রাখা এবং সারা মাস ধরে পড়া।

-ওয়াক্তের শুরুতেই নামাজ আদায়ের চেষ্টা করা এবং সুন্নত ও নফল নামাজ আদায়ে মনোযোগী হওয়া।

-নিয়মিত সালাতুল দুহা, তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা।

-তাহাজ্জুদ নামাজের আগে আকাশের দিকে তাকিয়ে সূরা আলে ইমরানের শেষ রুকু তেলাওয়াত করা।

-দৈনন্দিন জীবনে প্রতিটি কাজে রাসুল(সা:) এর শিখিয়ে দেওয়া দোয়াগুলো পড়া।

-সহীহ করে কোরআন তেলওয়াত শেখার চেষ্টা করা।

-প্রতিদিন অন্তত: একজন ব্যক্তিকে ইফতার করানো।

-প্রতিদিন অন্ত:ত একজন ব্যক্তিকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়া।

৫) নিজের কমপক্ষে দশটি দোষ চিহ্নিত করে তার তালিকা তৈরী করা এবং এই সিদ্ধান্ত নেওয়া যে রমজানে এ দোষগুলো থেকে নিজেকে বাচিঁয়ে রাখার চেষ্টা করা এবং পরির্পূণভাবে দোষগুলি থেকে নিজেকে মুক্ত করা।

৬) পরিবারের সদস্যদের রমজানের হক আদায়ের জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত করা।

৭) রমজানের প্রতিটি দিন ঠিক ভাবে কাজে লাগানো জন্য একটি রুটিন করে রাখা।

৮) শেষের দশদিন পরিপূর্ণভাবে হক আদায়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে প্রতি রাতে ইবাদতের একটি পরিকল্পনা ঠিক করে নেওয়া।

৯) যাকাতের হিসাব করে রাখা।

১০) অভাবীদের মধ্যে ঈদের উপহার বিতরণের জন্য প্রয়োজনীয় কর্ম পরিকল্পনা ঠিক করা।

এবারে আসুন একজন রোজাদার হিসাবে নিজের কাজগুলি গুছিয়ে নিয়ে কিভাবে প্রতিটি সময়কে ইবাদতে পরিণত করে নেওয়া যায় তার একটা নমুনা দেখে নেয়া যাক-

রাতের শেষাংশে

সালাতুল তাহাজ্জুদ-২:৩০-৩:১৫

(তাহাজ্জুদ নামাজের আগে আকাশের দিকে তাকিয়ে রাসূল সা: সূরা আলে ইমরানের শেষ রুকু তেলওয়াত করতেন। এই আমলটির অভ্যাস করা যেতে পারে।)

সেহেরী গ্রহন-৩:১৫-৩:৫০মি:

(সালাতুল ফজর ও সকালবেলার আযকার পাঠ)

৩:৫০মি:-৪:৩০মি:

(হিসনূল মুসলিম অথবা কতিপয় প্রয়োজনীয় দোয়া বই গুলোর সাহায্য নেয়া যেতে পারে) বাংলা অনুবাদসহ কোরআন তেলওয়াত

(চার পৃষ্ঠা)-৪:৩০-৬:০০টা

সালাতুল দুহা বা ইশরাক-৬:০০টা থেকে-৬:১৫মি:

বিশ্রাম ও ঘুম-৬:২০-৮:৩০মি:

সকাল বেলা

ঘুম থেকে উঠা-৮:৩০ থেকে ৯:৩০টা

দৈনিন্দন কাজ শেষ করা-৯:৩০টা থেকে-১১:৩০

(এ ক্ষেত্রে বাচ্চাদের জন্য সারাদিনের খাবার রেডি করা, ইফতার কি হবে, রাতের খাবার ও সেহেরী কি হবে তা রেডি করে রাখা। মাছ, সবজি কেটে ধুয়ে রাখা যেতে পারে)

১১:৩০ থেকে ১২:৩০ কোরআন অধ্যায়ন, তেলওয়াত, ইসলামী বই পড়া, হাদিস পড়া ইত্যাদি।

দুপুর বেলা

১২:৩০-১:৩০
বিশ্রাম ও সালাতুল জহুরের প্রস্তুতি, জহুরের সারাত আদায় এবং সালাত পরবর্তী মুস্তাহাব তাসবীহ ও যিকির পাঠ।

কোরআন তেলওয়াত

(চার পৃষ্ঠা)-১:৩০-২:৩০মি:

২:৩০-৪:০০ সন্তানদের নিয়ে রমজান স্কুল

(প্রতিবেশীর সন্তানদেরও সাথে নেওয়া যেতে পারে) কোরআন পড়ানো, হাদিসের গল্প বলা, ইসলামী বই পড়িয়ে শুনানো, সাথে নিয়ে ইউটিউবে মটিভেশন মূলক ভিড়িও গুলো দেখা, স্কুলের পড়া ইত্যাদি।

বিশ্রাম-৪:০০-৪:৩০

বিকেল বেলা ব্যস্ত সময়

৪:৩০-৬:০০
যে কাজ গুলো করবেন বা আপনারা সাধারণত করেই থাকেন তা একটু গুছিয়ে নিলেই হবে। যেমন-
সালাতুল আসর, সালাত পরবর্তী মুস্তাহাব তাসবীহ ও যিকির, রাতের খাবার, ইফতার ও সেহেরীর জন্য প্রস্তুতি এবং রান্না শেষ করে ফেলা ইত্যাদি।

এ সময় মায়েরা যেহেতু রান্না বা ইফতারের প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত থাকেন তাই বাবারা সন্তানদেরকে কিছুটা সময় দিতে পারেন।গল্পের বই পড়ে শুনানো, হাতের লেখা প্রেকটিস করানো, টিভিতি ভালো কোন অনুষ্ঠান দেখানো, আল্লাহর নিরানব্বইটা নাম থেকে প্রতিদিন পাচঁটি করে শিখানো, সৃজনশীল লিখা ইত্যাদি।

ইফতার ও সন্ধ্যা বেলা

অন্তত: ৬;১০মি: এর মধ্যে ইফতারের প্রস্তুতি ও রান্না শেষ করে টেবিলে বা ইফতার সাজিয়ে বসে যাওয়া।

এ সময় পরিবারের সদস্যদের মধ্য থেকে কেউ কোরআনের কয়েকটি আয়াত পড়ে শুনাতে পারে। একটি/দুইটি হাদিস পড়ে শোনানো এবং সবশেষে সবাই মিলে বা ব্যক্তিগত ভাবে দোয়ার পরিবেশ তৈরী করা যেতে পারে এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করা যেতে পারে।

ইফতার গ্রহন-
৬:২৫(ইফতারের সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে সময়টা মিলেয়ে নিতে হবে।)

সালাতুল মাগরীব ও সন্ধ্যাকালীন আযকার পাঠ
৭:০০-৭:৩০{মাগ

 

বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন!

বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন!


ফারহানা মিতু


বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন! রক্তের সম্পর্ক নেই, অথচ একটা নারী আরেক ভিন্ন পরিবারেরয পুরুষের জন্য মা বাবাকে ছেড়ে আসছে।নিজের সবকিছু বিলিয়ে দিচ্ছে।সন্তানের মা হচ্ছে।নেক কাজের সহযোগী হচ্ছে।অপরদিকে যে যুগে কেউ কাউকে বিনা কারণে একটা পয়সা দিতেও রাজি নয় সেই যুগে একটা লোক বাবার দায়িত্ব টাকে কাঁধে নিয়ে নিচ্ছে।নারীর সার্বিক ভরনপোষণ দিচ্ছে।তার সন্তানদের মুখে হালাল রিযিক তুলে দিতে দিন রাত একাকার করে দিচ্ছে।কখনো ভেবে দেখেছেন,এটা কি করে সম্ভব???
এটা আসলে আল্লাহর নিয়ামত।বিয়ে এমনই এক বন্ধন যার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা একটা অন্তরের সাথে আরেক অন্তর কে জুড়ে দেন।
আমরা যারা এই নিয়ামত লাভ করেছি তাদের উচিৎ বেশি বেশি শুকরগুজার হওয়া।আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।কেননা কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে নিয়ামত আরো বাড়িয়ে দেয়া হয়।আর যারা এখনো অবিবাহিত তাদের উচিৎ আল্লাহর শেখানো পদ্ধতিতে ই দুয়া করা।
তারা প্রার্থনা করে থাকে, “হে আমাদের রব! আমাদের নিজেদের স্ত্রীদের ও নিজেদের সন্তানদেরকে নয়ন শীতলকারী বানাও এবং আমাদের করে দাও মুত্তাকীদের ইমাম।”
(.২৫-ফুরকান:৭৪.)

লকডাউনের এই সময়ে দাম্পত্য কলহ যে অনেক ক্ষেত্রে বেড়ে যাচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।প্রায়ই আশেপাশের বিল্ডিং এর ঝগড়া কলহের আওয়াজ জানালা ভেদ করে ঘরে ঢুকে পড়ে।কিছু ক্ষেত্রে পুরুষরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে।কিছু ক্ষেত্রে নারীরা অসহনশীল হয়ে পড়ছে।অর্থাৎ অন্তরের প্রশান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে।এর মূল কারণ নারী বা পুরুষ নয়ন শীতল করতে পারছেনা।

এবারে আসি নয়ন শীতলকারী স্ত্রী হওয়া বা জীবনসঙ্গী পাওয়ার কিছু শর্তেঃ
#আমি যাকে পাচ্ছি সে আমার জীবনসঙ্গী। কুরআন তার নাম দিয়েছে পোষাক। এবং পরস্পরের সহযোগী।কাজেই তাকে উত্তরাধিকার সুত্রে পাওয়া সম্পত্তির মত মনে করা উচিৎ না। তার কিছু নিজস্বতা থাকবে,আমারও কিছু নিজস্বতা থাকবে।তাকে পুরো আমার মত হয়ে যেতে হবে,বা আমাকে পুরো তার মতন হতে হবে এই জটিল চিন্তায় যাওয়াই যাবেনা।প্রত্যেকের স্বকীয়তা ঠিক রেখেই পাশাপাশি চলা যায়।
#দাম্পত্য সংসার টা একটা গাড়ির মত।গাড়ির ড্রাইভার হতে হবে স্বামীকে। স্ত্রীকে হতে হবে অনুগত। এটা সমাজের ভারসাম্য ঠিক রাখবে।স্ত্রী পরামর্শ দিতেই পারে। সেই অনুপাতে ডান বাম হতেই পারে।কিন্তু চালকের আসনে শক্ত হয়ে বসতে হবে স্বামীকেই।নতুবা এই গাড়ি দূর্ঘটনার কবলে পড়তেই পারে।
পুরুষ নারীর কর্তা। এ জন্য যে, আল্লাহ‌ তাদের একজনকে অন্য জনের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং এ জন্য যে, পুরুষ নিজের ধন-সম্পদ ব্যয় করে। কাজেই সতী-সাধ্বী স্ত্রীরা আনুগত্যপরায়ণ হয় এবং পুরুষদের অনুপস্থিতিতে আল্লাহর হেফাজত ও তত্বাবধানে তাদের অধিকার সংরক্ষণ করে থাকে।
(নিসা:৩৪.)

#সম্পর্কে সহনশীলতা র কোন বিকল্প নেই।দুজনকেই দুজনের দূর্বলতা,অক্ষমতা,ফিতরাতের ব্যপারে সহনশীল আচরণ করতে হবে।
#বাস্তব জীবনে শুধু শিশুরা নয় আমরা বড়রাও অনুকরণ প্রিয়।প্রত্যেকে তার মা বাবার মত হতে চায়।কথা বার্তা,চালচলন এমনকি দায়িত্ব বা কর্তব্য পালনের পদ্ধতিও একইভাবে অনুসরনীয় হয়।তাই মা বাবা হয়ে সেই আদর্শ ই স্থাপন করা উচিৎ যা আমার ছেলে মেয়ে আমার সাথে করলে কোন ক্ষতি হবেনা,বা তখন তাকে সংশোধন করা দরকার হবেনা।
# অধিকার সচেতন হওয়ার চেয়ে স্বামী স্ত্রী দুজনের ই কর্তব্য সচেতন হওয়া ভাল।
# অধিকাংশ দাম্পত্য কলহের মূল কারণ অন্যের সাথে নিজের স্ত্রী বা স্বামীকে তুলনা করা,পরশ্রীকাতর হওয়া অতঃপর মনের মধ্যে অতৃপ্তি রাখা যে আমি অনেক কষ্টে আছি।সব ছেলে একরকম হয়না,সব মেয়েও একরকম না।কিন্তু যেহেতু এই জুটি টা আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুমোদিত তাই আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে আমাদের শান্তির মূল চাবিকাঠি টা আমাদের জীবনসঙ্গীর কাছেই আছে।অন্য চাবি স্বর্ণে তৈরি হলেও আমার ঘরের শান্তির দরজা খুলবেনা।আমার নিজেকে আত্মবিশ্বাসী করতে হবে যে আমি সঠিক জীবনসঙ্গী পেয়েছি।নিজের সর্বোচ্চ মেধা আর শ্রম দিয়ে তাকেও প্রমাণ করে দিতে হবে যে আমিই তার জন্যে সবচেয়ে প্রশান্তি দায়ক ব্যক্তি।
# সবশেষ মূলনীতি, দুনিয়া আমার লক্ষ্যবস্তু নয়,দুনিয়ার সাফল্য ব্যার্থতা আমার জীবনের সাফল্যের মাপকাঠি নয়।তাই তাকাসুর বা বেশি বেশি পাওয়ার লোভ যেন আমাকে বা তাকে গ্রাস করতে না পারে তাই নিজেদের চাহিদা কে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। সন্তান কেও সেইভাবে গড়ে তুলতে হবে যেন পাওয়া যাবে বলেই চাইতে হবে এই প্রবনতা তৈরি না হয়।
আল্লাহ স্বামী স্ত্রী কে জুটি বেধে দিয়েছেন একসাথে জান্নাতের পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য।সারাজীবন সুখে থেকে বিলাসিতায় কাটিয়ে কোন লাভ নেই যদি জান্নাতে আপনি এক ঘরে,আপনার জীবনসঙ্গী অন্য জান্নাতের অন্য ঘরে থাকেন।অনন্ত জীবনে যেন একসাথে এক ঘরে থাকা যায় তাই আমাদের উচিৎ নেক কাজে সহযোগী হওয়া,দুনিয়া বিমুখ হয়ে পরকাল মুখী কাজ বেশি বেশি করা,দুইজন দুইজনকে হাক্কুল ইবাদ বা বান্দার হক আদায়ে সহযোগিতা করা। আল্লাহ আমাদের প্রত্যেকটি পরিবারকে কবুল করুন।আমীন।

 

কোভিড-১৯ প্রতিরোধে Psycho-Immunity কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে

কোভিড-১৯ প্রতিরোধে Psycho-Immunity কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে।


অধ্যাপক ডঃ এম. এস. কবীর জুয়েল


আজ পবিএ শব-ই-মেরাজের রাত্রি, যারা কালে ভদ্রে ধর্মকর্ম করে থাকেন, তারাও নিশ্চয়ই পবিত্র কোরানের শেষাংশের ১১৩-তম সুরা ‘ফালাক’ টি জানেন, সুরা ফালাকের ২য় আয়াতটি ব্যক্তিগতভাবে আমি অত্যন্ত গুরুত্ববহ মনে করছি, বর্তমান প্রেক্ষিতঃ বিবেচনায় আমার কাছে এ আয়াত ও সমগ্র সুরাটিকে অত্যন্ত তৎপর্য্যপূর্ণ মনে হয়েছে, এ অনুজীব (Covid-19)-টি সরাসরি আল্লাহর সৃষ্টি হলেও মহান আল্লাহ-ই রক্ষা করবেন, কিংবা চীন-মার্কিন রেষারেষি উদ্ভুত কোন ‘Biological Weapon’ হলেও নিঃসন্দেহে আল্লাহ-ই বাঁচাবেন, প্রথম আয়াত থেকেই আশ্রয় চাওয়া শুরু হচ্ছে—
‘আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি প্রভাতের পালনকর্তার’,

২য় আয়াতেই বলা হচ্ছে
“(হে আল্লাহ)তোমার যে কোন প্রকার

সৃষ্ট জীবের অনিষ্ট হতে”
2nd verse –যা আরবীতে–“Min Sharri Ma Khalaq” ইংরেজিতে –“From Anything Harmful in Creation”
তারপর ৩য় আয়াতে সুস্পষ্টভাবে কোন এক অজ্ঞাত অন্ধকারের প্রভাব নিয়ে বলা হচ্ছে, এখানে আমরা অন্ধকার অর্থে যা এখনো মানুষের বোধগম্য নয়, অথচ তা ছড়িয়ে পড়ছে তা বলতে পারি —
3rd Verse– “From the Evil of Darkness as it Spreads ‘অন্ধকার-এর অনিষ্ট থেকে, যখন তা সমাগত হয় বা পরিব্যাপ্তি লাভ করে।
একটু খেয়াল করুন, Covid-19 আজ হতে প্রায় চার মাস আগে পৃথিবীতে এসছে, কিন্তু সারা দুনিয়ার তাবৎ
রাঘব বোয়ালদের অনুগত সকল অনুজীব বিজ্ঞানী,ভাইরোলজীস্ট, সংক্রামক ব্যাধী বিশেষজ্ঞগণ(Epidemiologists)এখনো পুরোপুরি অন্ধকারে নিমজ্জিত, কোন কিছুই তাদের নিকট পরিস্কার নয়, কারণ ইতিমধ্যেই প্রায় চারশত বার পরিস্রাবিত হয়ে ইহা নতুনরুপে আরো অধিক বিধংসী আক্রমণের উপযোগী হয়ে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে,যা ইতিপূর্বেকার বৈশ্বিক সংক্রমণ (Pandemic)১৯২০ এর Spanish ফ্লু-এর ক্ষেত্রে ঘটে নাই।
তাই অক্ষমতার লজ্জা ভেংগে নির্দিধায় বিজ্ঞানীরা আত্মসমর্পণ করেছেন,মার্কিণ চিকিৎসকগণ তাদের রোগীর Psych-immunity বাড়াতে স্রষ্টাকে ডাকতে
বলছেন, যা আমেরিকান টিভিতে প্রচারিত হয়েছে, এবং কিভাবে একজন ষাটোর্ধ কৃষাংগ বেঁচে উঠলো তা দেখানো হয়েছে; স্পেন ও ইতালীর প্রধানমন্ত্রী সরাসরি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্রষ্টাকে ডাকতে বলছেন।
প্রশ্ন উঠতে পারে, চারিদিকে তো বিভিন্ন জন বিভিন্ন ভাবে ইহার ঔষধও আবিস্কার করে ফেলেছে, তাহলে কেন তারা এতো ভয় পাচ্ছে,কেন এভাবে সারেন্ডার করছে, এ পর্যন্ত দু রকমের বিন্যাসিত ঔষধ দিয়ে করোনার এ প্রজাতির ভাইরাসের চিকিৎসার কথা বলা হচ্ছে — ১) ম্যলেরিয়া নাশক ঔষধ Hydroxy Chloroquine phosphate (400mg) সাথে পরিচিত এন্টিবায়োটিক Azithromycin(500mg),এমন কি ইহার কয়েকটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ও দেয়া হয়েছে, কিন্তু সার্বজনীন ভাবে মোটেও গ্রহণযোগ্য হয়নি, অপরটি ২) Favilavir, যা আগে Fapiliavir নামক Anti-viral হিসেবে পরিচিত ছিলো, দুটির আবিস্কারক দেশ থেকে ইতালী ও স্পেন অনেক আগেই তা জেনেছে, ক্ষেত্র বিশেষে প্রয়োগ ও করেছে কিন্তু ফলাফল Hypothetical হওয়ায় সবাই হতাশ, FDA মোটেও এ ঔষধ গুলোকে বৈশ্বিকভাবে ছড়িয়ে দেবার মতো যোগ্য মনে করেনি।
এখন আসা যাক, যদি ইহা জীবানু অস্ত্র-ই হয়ে থাকে এবং চীন ইচ্ছে বা অনিচ্ছেয় তার হুবেই প্রদেশের জৈব গবেষণাগার থেকে ইহা বের করে দিয়ে থাকে অথবা মার্কিণ মহাকাশ স্যটেলাইট কতৃক দূর-নিয়ন্ত্রিত অদৃশ্য ড্রোন নিক্ষেপে ইহা ইরানমুখী করতে যেয়ে অন্যান্য দেশসহ নিজ দেশেও আমেরিকা সংক্রমিত করে থাকে, এ ক্ষেত্রে করোনাকে আমরা ওঁদের সৃষ্ট এক ভয়ানক যাদুকরী ক্ষমতারুপি অনুজীব মনে করবো কিনা?
দেখা যাক, সুরা ফালাক এ বিষয়ে কিভাবে কার্যকর–
মনোযোগ সহকারে নিম্নের আয়াত দুটি অনুধাবন করুন — ৪র্থ আয়াত–“গ্রন্থিতে ফুঁৎকার(Air Borne) দিয়ে জাদুকারিণী(Covid-19 as a Biological Weapon)দের অনিষ্ট থেকে” এবং ৫ম আয়াতে সরাসরি সেইসব ইসলাম বিদ্দেষী মানুষ ও জাতির বিষয়ে বলা হচ্ছে—
“হিংসুক(China-US etc)-এর অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে(তাদের অপবিজ্ঞান প্রমোট করে)।
আজ হোক কাল হোক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদগণ মহান আল্লাহর কৃপায় এ ভয়াবহ রোগের টিকাসহ যুগোপযোগী চিকিৎসা অবশ্যই আবিস্কার করে ফেলবে, কিন্তু ততোদিনে সমগ্র পৃথিবীর ইতিহাসের কল্পবিজ্ঞানে একটি কালো অধ্যায় সূচিত হবে।
স্রষ্টার এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র(Apparently Invisible) সৃষ্টির কাছে মহান দাপুটে মানবজাতি কতোটা অসহায় তা চির স্মরনীয় হয়ে থাকবে।
কেবল ধর্মপ্রাণ মুসলিমের নিকট এ শক্তিশালী মরনাস্ত্র(Covid-19)নিগ্রহের বস্তু, কারণ সে নিজেকে সচেতনভাবে ইহা থেকে দূরে রাখতে চেষ্টা করেছে,
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পূর্বে সাবান দিয়ে হাত পরিস্কার করে নিচ্ছে, মেসওয়াক করছে, ঘরে নামাজ আদায় করছে,অন্যদের সাহায্যে এগিয়ে আসছে; একই সাথে মনে প্রাণে ইহাকে নিছক আল্লাহর এক অভিনব সৃষ্টি মনে করেছে,যা আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কারো ভেতরে সংক্রমিত হতে পারে না।

 

তরমুজের সাদা অংশের মোরব্বা

তরমুজের সাদা অংশের মোরব্বা


ঘরকন্যা


তরমুজটার একটা অংশ খাবেন বাকী সাদা অংশটা ফেলে দিবেন কেনো। আসুন চটপট ছোট ছোট করে কেটে বানিয়ে ফেলি মোরব্বা।

উপকরণ

১. তরমুজের ফেলে দেওয়া সাদা অংশ
২. দারচিনি
৩. এলাচি
৪. তেজপাতা
৫. চিনি
৬. সামান্য লবণ

প্রস্তুত প্রণালী

তরমুজ খাচ্ছিলাম। তো, খেতে খেতে সাদা অংশটি ফেলে দিব। ঠিক তখন মাথায় আসলো যে, সাদা অংশটি যদি ছোট ছোট করে বর্গাকারভাবে কাটা যায়। তাহলে কেমন হয়। যেই চিন্তা সেই কাজ শুরু করে দিলাম। সাদা অংশটি ছোট ছোট কাটলাম। কাটার পর গরম পানিতে কিছুটা লবণ আর চিনি আর দারচিনি দিয়ে তরমুজ সাদা অংশটা ফেলে দিলাম। এরপর যখন তরমুজের সাদা অংশটি হালকা সিদ্ধ হল তখন সেটাকে নামিয়ে পানিটা শুকিয়ে নিলাম।

চিনির সিরা

চিনির সিরা করার জন্য এক কাপ চিনি সাথে হাফ কাপ পানি নিলাম। পানিতে কিছুটা দারচিনি, এলাচি & তেজপাতা কিছুটা অংশ দিলাম এরপর যখন চিনির শিরা হয়ে গেল,
এবার শিরার মধ্যে তরমুজের সিদ্ধ করা সাদা অংশটি দিয়ে দিলাম। খুব হালকা আগুনের আঁচে যতক্ষণ পর্যন্ত না চিনিতে সাথে ছোট ছোট তরমুজ লেপটে যাচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত চুলায় রাখলাম। হালকা বাদামী বর্ণধারণ করবে। হয়ে গেল মজাদার তরমুজের সাদা অংশের মোরব্বা।

খেতেও বেশ মজা। বাসায় সহজে আপনিও বানিয়ে ফেলতে পারেন।

 

রাগ সামলাতে কচ্ছপ কৌশল!

রাগ সামলাতে কচ্ছপ কৌশল!


রাউফুন নাহার


ঘরে বন্দী থাকতে থাকতে কি আমাদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে? অল্পতেই রেগে যাচ্ছি? ভয় পাচ্ছি? কষ্ট পাচ্ছি? দেখি তো কষ্টকর আবেগগুলো সামলে নেওয়ার জন্য কচ্ছপ কৌশলটি কোনো কাজে আসে কি-না!

বিপদের আভাস পেলে কচ্ছপ নিজের খোলসের ভেতরে আশ্রয় নেয়। তেমনি যেকোনো ঘটনা থেকে আমরা রাগ বা অন্যান্য যেসব কষ্টকর অনুভূতি অনুভব করি, তা সামলে নেওয়ার জন্য বাহিরের জগৎ থেকে কিছুটা বিরতি নিয়ে নিজের ভেতরেই আশ্রয় নিতে পারি৷ তারপর শরীর-মন শান্ত হলে আবার বাইরে বেরিয়ে সমস্যা সমাধানে মনোযোগ দিতে পারি।

কচ্ছপ কৌশলের ধাপগুলো হলো-
প্রথম ধাপঃ বুঝতে পারছি, অপ্রীতিকর একটি ঘটনা ঘটার ফলে আমার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে বা কষ্ট হচ্ছে বা ভয় লাগছে।

দ্বিতীয় ধাপঃ আমি নিজেকে বলছি, “থামো”। এই মুহুর্তে কোনোকিছু করা থেকে আমি নিজেকে থামাচ্ছি। শুধু কেমন অনুভব করছি তা মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করছি।

তৃতীয় ধাপঃ আমি নিজের ভেতরে ঢুকছি। অর্থাৎ নিজের জন্য সময় নিচ্ছি। কমপক্ষে ৩ বার গভীরভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছি। নিজেকে বলছি, “আমি নিজেকে শান্ত করতে পারি”, “আমি সমস্যা সমাধান করতে পারি”। শান্ত না হওয়া পর্যন্ত আমি নিজের ভেতরে, নিজের সাথেই থাকবো। নিজের যত্ন নেবো।

চতুর্থ ধাপঃ এখন আমি অনেকটাই আরাম বোধ করছি। তাই নিজের ভেতর থেকে আমি বাইরে বেরিয়ে আসছি। শান্তভাবে সমস্যা সমাধানের জন্য আমি এখন প্রস্তুত।

আবেগ-অনুভূতি আমাদের শত্রু নয়। বরং গবেষণায় দেখা গেছে যারা বিভিন্ন ধরনের আবেগ অনুভব করে এবং সময়মত তা সামলে নিতে পারে, তাদের সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে৷
আমরা একটি কঠিন সময় পার করছি। এসময় বিভিন্ন ধরনের কষ্টকর অনুভূতির মধ্য দিয়ে যাওটাই স্বাভাবিক। আবেগকে অস্বীকার না করে বা শত্রু না ভেবে যথাযথ উপায়ে নিজেকে শান্ত করা ও যৌক্তিক আচরণ করাই এসময় আমাদের জন্য সহায়ক হবে।

রাউফুন নাহার
শিক্ষক
এডুকেশনাল এন্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

জঙ্গলে ফেলে যাওয়া সেই মা করোনায় আক্রান্ত নন

জঙ্গলে ফেলে যাওয়া সেই মা করোনায় আক্রান্ত নন


নারী সংবাদ


টাঙ্গাইলের সখীপুরের জঙ্গলে ফেলে যাওয়া নারীর শরীরে করোনাভাইরাসের জীবাণু পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ তিনি প্রাণঘাতি করোনায় আক্রান্ত নন। ঢাকায় নমুনা পরীক্ষার পর বুধবার সন্ধ্যায় জানা গেল তার রিপোর্ট নেগেটিভ। অসহায় এই নারীর নাম সাজেদা (৫০)। বাড়ি শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলায়।

করোনা সন্দেহে তারই সন্তানেরা সোমবার সখীপুর উপজেলার ইছামতি গ্রামের একটি জঙ্গলে তাকে ফেলে রেখে পালিয়ে যান। সোমবার রাতে তাকে উদ্ধার করে ঢাকায় পাঠানো হয়।

সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুস সোবহান নয়া দিগন্তকে বলেন, বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে তাকে ফোন করে জানানো হয় ওই নারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। নমুনা পরীক্ষায় তার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। তবে তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

ডা. মো. আব্দুস সোবহান বলেন, একটি মেডিক্যাল টিম নিয়ে সোমবার রাত ২টা নাগাদ জঙ্গল থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করি এবং রাতেই ব্যক্তিগত খরচে একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করি। তিনি বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। উদ্ধারের সময় তাকে কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন মনে হয়েছে। এছাড়া জ্বর, সর্দি ও গলা ব্যাথাও ছিল।

উল্লেখ্য, ওই নারীর বাড়ি শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলায়। এক ছেলে, দুই মেয়ে ও জামাতাকে নিয়ে গাজীপুরের সালনায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। সন্তানেরা একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। আর সবার জন্য রান্না করার দায়িত্ব ছিল তার ওপর। কয়েকদিন ধরে তার জ্বর, সর্দি, কাশি শুরু হলে আশেপাশের বাসার লোকজন তাদের তাড়িয়ে দেন। ওই অবস্থায় সোমবার মাকে সাথে নিয়ে একটি পিকআপভ্যান ভাড়া করে শেরপুরের নালিতাবাড়ীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন সন্তানেরা। পথিমধ্যে সখীপুর জঙ্গলে মাকে ফেলে রেখে তারা পালিয়ে যান। এ ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

সুত্রঃ নয়া দিগন্ত।

 

ফ্রি মানসিক স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছে মাইন্ড-ব্লোয়িং সাইকোলজিক্যাল টিম

ফ্রি মানসিক স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছে মাইন্ড-ব্লোয়িং সাইকোলজিক্যাল টিম


স্বাস্থ্যকথা


“করোনা ভাইরাস” আতঙ্কে পুরো বিশ্ব স্তব্ধ। বাংলাদেশেও ইতিমধ্যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩৯ জন। আর আক্রান্ত প্রায় ৮০৩ বেশি মানুষ। দিনে দিনে এই ভাইরাস মহামারী রূপে ছড়িয়ে পড়ছে দেশের শহর, গ্রাম, পাড়া এবং মহল্লায়। এই অবস্থায় দেশের প্রায় অধিকাংশ মানুষই মানসিকভাবে আতঙ্কিত। আতঙ্কিত হওয়াটাই স্বাভাবিক, তবে অতিরিক্ত আতঙ্ক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
“মাইন্ড-ব্লোয়িং সাইকোলজিক্যাল টিম” এর সদস্যরা, এই অবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে ২৪ ঘন্টা মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করছে। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছে এই সেচ্ছাসেবী সংগঠনটি বহুদিন ধরে।

চারদিকে অদৃশ্য করোনা আতঙ্ক, অনেক দুঃসংবাদ, মৃত্যুর মিছিল, গুজব, বন্দী জীবন, এসবের মাঝেও কিভাবে নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিয়ে ভালো থাকা যায়, এই বিষয়ে ফোনে এবং ই-মেইলে পরামর্শ দিচ্ছেন আমাদের মাইন্ড-ব্লোয়িং সাইকোলজিক্যাল টিমের মনোবিজ্ঞানীগণ।

Mohiuddin Mahi.
Counselor, ICDDR,B.
Phone:01681454852

Raihan Uddin Melon
Psycho-Social Counselor, TAI.
Phone:01997646802

Md. Ashraful Islam
Assistant counselling psychologist
Phone: 01828196981

Rakib Hasan
Counselor, ICDDRB
Phone: 01538-270288

Salma M S
Psycho-social Counselor, RTMI
Phone: 01860444904

Fatema Shahrin
Trainee Counselling Psychologist ( DMCH)
E-mail: zummi093824@gmail.com

Wahidul Arif.
Trainee Counselling Psychologist,
Intern Salimullah Medical College Hospital
Phone: 01737902520

Md.Khairul Akanda Nijhum
Part-time Counselor at TSC
University of Dhaka
Phone:01688701606 ,01704966020

Ashiq Al Nahian
Trainee Counselling Psychologist at TSC, Dhaka University.
Phone:01614682424

Shariful Islam
Trainee Counselling Psychologist ( DMCH)
01768955971

Rukiya akter
Trainee School Psychologist
phone : 01307303393

Sharmin Parsa
Trainee Counselling Psychologist(Audiology Bangladesh)
E-mail: sharminparsaparsa@gmail.com
Phone: 01773222144
Md. Shahidul Islam
M.Sc industrial Psychology
Phone: 01751514536

Md. Meraz Hossain
Intern Counselor at Monosheba BD
M.Sc in Clinical & Counselling Psychology
Phone: 01521318125

mindb470@gmail.com

 

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় হৃদরোগীরা মেনে চলুন কিছু পরামর্শ

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় হৃদরোগীরা মেনে চলুন কিছু পরামর্শ


ডা. মারুফ রায়হান খান


করোনা’ শব্দটির চেয়ে বড় আতঙ্কের নাম পৃথিবীতে এখন আর কিছু নেই। বিশ্ব এমন মারাত্মক মহামারী খুব কমই দেখেছে৷ ইতিমধ্যে লাখ ছাড়িয়েছে মৃতের সংখ্যা। আমাদের দেশে হু হু করে বেড়ে চলেছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। কোভিড-১৯ রোগটি যে কারোরই হতে পারে। তবে কিছু কিছু রোগীদের আক্রান্তের ঝুঁকি বেশি রয়েই যায় এবং আক্রান্ত হলে জটিলতার আশংকা বেশি থাকে। যেমন :

১. হৃদরোগ

২. বয়স ৭০ বছরের বেশি

৩. উচ্চ রক্তচাপ

৪. গর্ভকালীন সময়

৫. ডায়াবেটিস

৬. ফুসফুসের রোগ

৭. দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ

৮. স্ট্রোক

৯. ধূমপায়ী

চীনের গবেষণায় প্রমাণিত কোভিড-১৯-এর সঙ্গে যাদের আগে থেকে হার্টের রোগ ছিল তাদের মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি। তবে আশার কথা হচ্ছে বেশিরভাগ মানুষই করোনা রোগ থেকে সুস্থ হয়েই বাড়ি ফেরেন। আতঙ্কিত না হয়ে এ সময়ে হৃদরোগীরা কিছু পরামর্শ মেনে চললে সুফল পাবেন।

১. অবশ্যই ঘরে থাকুন। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কোনোভাবেই বাসার বাইরে যাবেন না। ওষুধপত্র বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের প্রয়োজনে অন্যদের সহায়তা নিন। যদি একান্তই বাইরে বের হতে হয় তবে অবশ্যই ভালোমানের মাস্ক পরে নিন।

২. চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। তাই নতুন করে হৃদরোগের উপসর্গ যেমন : তীব্র বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড় জাতীয় সমস্যা না হলে চিকিৎসকের কাছে এসময়ে না যাওয়াই শ্রেয়। প্রয়োজনে চিকিৎসকের কাছে ফোনে/অনলাইনে পরামর্শ নিন। বেশিরভাগ চিকিৎসকই এখন তাদের ফোন নাম্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছেন।

৩. অন্তত ২০-৩০ সেকেণ্ড সময় নিয়ে হাত ধৌত করুন। এমনভাবে ধৌত করুন যেন সাবানের ফেনা দেখা যায়। প্রথমেই পানি দিয়ে হাত ভিজিয়ে নিন এবং হাতে সাবান মেখে নিন। দুহাতের তালু ভালোভাবে ঘষুন। প্রতিটি আঙুল ও দুআঙুলের মধ্যবর্তী স্থান ভালোভাবে ঘষুন। নখ ও হাতের তালু ভালোভাবে ঘষুন। হাতের পৃষ্ঠদেশ ও দুআঙুলের মধ্যবর্তী স্থান ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। পরিষ্কার পানি দিয়ে হাত ধোয়ার পর টিস্যু বা পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে হাত মুছে ফেলুন।

৪. যেকোনো গণজমায়েত অবশ্যই পরিহার করুন। করমর্দন বা কোলাকুলি পরিহার করুন।

৫. চোখে, মুখে, নাকে যতো কম সম্ভব স্পর্শ করুন।

৬. হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলুন। হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় টিস্যু বা রুমাল চেপে ধরুন। নইলে কনুই দিয়ে চেপে ধরুন।

৭. হৃদরোগের চিকিৎসা সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি হয়। ওষুধ নিয়মিত না খেলে বা বন্ধ করে দিলে সমূহ বিপদের আশঙ্কা থাকে। তাই পূর্বের ওষুধগুলো চালিয়ে যান। চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া ওষুধ বন্ধ করা যাবে না। তবে যদি কোনো রক্তপাত দেখা দেয় তখন এসপিরিন/ওয়ারফেরিন জাতীয় ওষুধ বন্ধ রেখে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

৮. অতিরিক্ত লবণ খাওয়া যাবে না। সেটা কাঁচা লবণ হোক বা ভাজা লবণ। চিনিযুক্ত খাবার, ডিমের কুসুম, কলিজা, মাছের ডিম, গরু-খাসির চর্বিযুক্ত মাংস, হাঁস-মুরগির চামড়া, হাড়ের মজ্জা, ঘি, ডালডা, মাখন, নারকেল জাতীয় খাবার কম খেতে হবে। যেসব শক্ত খাবার খেতে বেশি কষ্ট হয় সেসব খাবার না খাওয়াই ভালো।

৯. বেশি বেশি ফলমূল, শাকসবজি, সামুদ্রিক মাছ, ছোট মাছ, মাছের তেল, সানফ্লাওয়ার অয়েল ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।

১০. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার বেশি খান। যেমন : লেবু, কমলা, জাম্বুরা, আমলকি, পেয়ারা ইত্যাদি।

১১. প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটাচলা/ব্যায়াম করতে হবে। প্রয়োজনে ছাদে হাঁটুন৷ বাসায় ব্যায়ামের জন্য একটা জায়গা আলাদা করে নেয়া যেতে পারে। তবে যতোটা হাঁটলে/ব্যায়াম করলে বুকে ব্যথা শুরু হয়ে যায় অতোটা হাঁটা/ব্যায়াম করা যাবে না। এ বিষয়টি সতর্কতার সাথে খেয়াল রাখতে হবে।

১২. ধূমপান বন্ধ করতে হবে। এটি হৃদপিণ্ডের অত্যধিক ক্ষতি যেমন করে সেই সাথে করোনার ঝুঁকিও অনেক বাড়িয়ে দেয়।

১৩. মদ্যপান করা যাবে না।

১৪. বাসায় নিয়মিত রক্তচাপ মাপুন। ডায়াবেটিস থাকলে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়মিত চেক করুন এবং নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

১৫. শেষে যে পরামর্শটি না দিলেই নয়, যতো কম সম্ভব টেলিভিশনে/পত্রিকায়/সোশ্যাল মিডিয়ায় করোনার নিউজ আপডেট দেখুন। বেশি বেশি এসব সংবাদ শুনলে অতিরিক্ত উত্তেজনা এবং আতঙ্ক তৈরি হতে পারে। যা হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই সারাক্ষণ সংবাদ না দেখে সৃষ্টিশীল কাজে বা পরিবারের সাথে সময় ব্যয় করুন। গড়ে তুলতে পারেন নতুন কোনো ভালো অভ্যেস। প্রার্থনা বা মেডিটেশানে সময় দেওয়া যেতে পারে।

এই প্রতিকূল সময়ে ভালো থাকুক প্রতিটি হৃদরোগী। ভালো থাকুক প্রতিটি মানুষ।

লেখক: ডা. মারুফ রায়হান খান

হৃদরোগ বিষয়ে উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ

মুল সুত্রঃ যুগান্তর।

 

করোনায় ঘরবন্দি জীবনে বয়সন্ধিকালের কিশোর-কিশোরীরা কি করবে?

করোনা-১৯ ঘরবন্দি জীবনে বয়সন্ধিকালের কিশোর-কিশোরীরা কি করবে?


তানিয়া ইসলাম ইতি


আসলেই কি আমরা ঘরবন্দি থাকতে পারছি? উত্তর জানা নেই। তবে আমরা চেষ্টা করছি। আমরা যারা ঘরে থাকছি, আমাদের মধ্যে পাঁচ শ্রেণীর মানুষ আছে। যেমনঃ

১. শিশু , ২. কিশোর, ৩. যুবক , ৪. মধ্যবয়স্ক এবং ৫. বয়স্ক ।

এদের মধ্যে আবার দুই ভাগ আছে। ১। ছেলে এবং ২। মেয়ে।

জাতিগত ভাবে আমাদের দেশের মেয়েরা ঘরের বাহিরে কম যায়। ঘরের কাজকর্ম করে দিন অতিবাহিত করে। তাদের তেমন কোন সমস্যা হবার কথা না ঘরে থাকাটা। কিন্তু বর্তমানে অনেক মেয়ে চাকরি করছে অথবা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত আছে। বাহিরের সব কাজ এখন বন্ধ , অফিস বন্ধ , অনেকেই অফিসের কাজ বাসায় বসে করতে হচ্ছে। যারা অফিস এর কাজ বাসায় করছেন, তাদের ছেলে মেয়ে স্বামী সংসার যাবতীয় ঘরের কাজ করে অফিসের কাজ করে দিন রাত কিভাবে যাচ্ছে তারা তা বুঝতে পারছেনা।

এই গেল একশ্রেণীর কথা….।

আরেক শ্রেণী যাদেরকে আমরা ছেলে বা পুরুষ বলে থাকি।
জাতিগতভাবে তারা ছোটবেলা থেকেই ঘরের বাইরে থাকে বেশিরভাগ সময়। দিনে রাতে যেকোনো সময় তারা বাড়ির বাইরে যেতে পারে, আসতে পারে। তাদের তেমন কোন সমস্যা হয় না। এই দিক থেকে ছেলেদের ঘরবন্দি থাকাটা একটু কষ্টকর। তাদেরকে ও মেয়েদের মত অফিসের কাজ গুলো বাসায় করতে হচ্ছে। বেশিরভাগ অফিস ভার্চুয়ালি খোলা। তবে এখন দিন পাল্টেছে, সময়ের সাথে সাথে ছেলেরাও বাসায় অনেক ছোট ছোট কাজ করে যেমন: ঘর মোছা ,ঘর ঝাড়ু দেয়া, রান্না করা, সন্তানকে সময় দেয়া, ছোট ভাইবোনদের সময় দেয়া। এই কাজগুলো গ্রাম কিংবা শহরে সব জায়গায় ছেলেদেরকে এখন করতে দেখা যায়। ছেলেদের ঘরবন্দি থাকাটা একটু কষ্ট হলেও খারাপ যাচ্ছে না দিন পার হয়ে যাচ্ছে।

আমরা তো সবাই যে যার মতো করে ঘরেবন্দি জীবন পার করছি ।এসবের মধ্যে একটা শ্রেণি আছে তাদের কথা কি আমরা ভেবে দেখেছি !!

তারা কিভাবে দিন পার করছে। আমরা কি তাদের মানসিক অবস্থার কথা চিন্তা করেছি। শারীরিক বিভিন্ন হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে যে শ্রেণীটি নিজেদেরকে শিশুও বলতে পারছেনা যুবকও বলতে পারছেনা।

কোনো ড্রেস পড়লে বারংবার আয়নার দিকে তাকায় তাকে মোটা লাগছে, বেশি বেশি শুকনো লাগছে কেমন লাগছে ? বেশি খাবার খেতে চায় না মোটা হয়ে যাবে ভেবে বা অতিমাত্রায় খাবার খায়। যারা বাবা মা পরিবারের সাথে থেকেও নিজেকে একা মনে করে। নিজের ভেতরের মানুষটাকে খোঁজার চেষ্টা করে, সে কে ?

তার কি জানে? কেন হচ্ছে তাদের শরীর ও মনে এরকম পরিবর্তন হচ্ছে? যারা নিজেদেরকে খুব অসহায় অনুভব করে। যারা মানুষের সাথে কথা বলতে লজ্জাবোধ করে তাদের এই শারীরিক পরিবর্তনের কারণে। এ সময় যাদের সবচেয়ে ভালো বন্ধু তার সমবয়সীরা। যাদের সারাদিন কাটতো বিভিন্ন কাজ কর্মের মধ্যে, সুন্দর একটা রুটিন লাইফ এর মধ্যে দিয়ে ।

হুম আমি তাদের কথাই বলছি যাদের বয়স ১৩ থেকে ১৬ এর মধ্যে আমি সেই কিশোর-কিশোরীদের কথাই বলছি। আমি বয়ঃসন্ধিকালের তরুন-তরুনীদের কথাই বলছি।

আমার জানতে খুব ইচ্ছে করছে তারা কিভাবে ঘরবন্দি জীবন পার করছে? তারা কি তাদের হাতের মোবাইল বা বাবা-মামার মোবাইল টাকে সবচেয়ে আপন বন্ধু হিসেবে বেছে নিয়েছে!! তখন কি তাদের সারাটা দিন কাটছে মোবাইলের মধ্যে। তারা কি মানসিকভাবে ভালো আছে ? আমরা তো আমাদের ভালোলাগা-মন্দলাগা প্রকাশ করতে পারছি। আবার শিশুরা যেমন বাবা মায়ের সাথে বলতে পারছে। হাসবেন্ড ওয়াইফ কে বলতে পারছে। ভালো না লাগার কথা গুলো। এই বয়সে ছেলে মেয়েগুলো তারা কি তাদের বাবা-মাকে বলতে পারছে তাদের ঘরে থাকতে খারাপ লাগছে। হয়তো বা হ্যাঁ হয়তোবা না । আমরা যারা তাদের আশেপাশে আছি। যারা বাবা- মা , ভাই- বোন আছি আমরা তাদেরকে এই কিশোর-কিশোরীদেরকে। এ অবস্থায় আমরা মানসিকভাবে সাহায্য করতে পারি।

মানসিক শক্তি দিয়ে তাদেরকে মোবাইলের মধ্যে ঠেলে না দিয়ে বাস্তবের সাথে সম্পর্ক গড়তে সাহায্য করতে পারি

কিছু ভাবনা শেয়ার করলামঃ

১. তারা যখন পড়তে বসে তাদের সাথে বসে একই রুমে অফিসের কাজগুলো করতে পারি।

২. মোবাইলের মাধ্যমেও অনেক ক্রিয়েটিভ কাজ করা যায়। সেই কাজগুলো করতে উৎসাহ দেয়া। যেমনঃ ভিডিও এডিটিং। অথবা সচেতন মুলক ভিডিও তৈরি করতে।

৩. একই সাথে বসে ভালো ভালো মুভি দেখতে পারি।

৪. বাসার ছোট ছোট কাজে তাদেরকে ইনভলভ করা। সেটা হতে পারে রান্নার কাজ, সবজি কাটা হতে পারে, কাজ করার পরে অবশ্যই তাদেরকে খুব বেশি প্রশংসা করা।

৫. ধর্মীয় কাজে বাসার সবার সাথে তাদেরকেও করতে উৎসাহ দেয়া ।

৬. ছোট ছোট শারীরিক ব্যায়াম প্রতিদিন সবাই মিলে একসাথে তাদেরকে নিয়ে করা।

৮. ছোট ভাই বোনদের সাহায্য করতে তাদেরকে উৎসাহ দেয়া

৯. তাদেরকে হুকুম না দিয়ে একটু অন্য ভাবে দরদ দিয়ে বলে কাজে ইনভলভ করা ।

সর্বোপরি বলব ঘরে থাকি, নিজে বাঁচি, পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাঁচি। সবাই সবার প্রতি যত্নশীল হই। পরিবারকে নিয়ে একসাথে থাকার এরকম সময় হয়ত আর পাবেন না।

 

শিশুর আত্মহত্যা ‘খাবারের অভাবে’

শিশুর আত্মহত্যা ‘খাবারের অভাবে’


নারী সংবাদ


সিরাজগঞ্জের বেলকুচি পৌর এলাকায় আফরোজা খাতুন (১০) নামে এক শিশু আত্মহত্যা করেছে। শুক্রবার বিকেলে গলায় ফাঁস নিয়ে নিজ বাড়িতে সে আত্মহত্যা করে। স্বজনরা দাবি করেছেন, কয়েকদিন ধরে অনাহারে পরিবারটি। খাবারের জন্য কান্নাকাটি করায় পিতা থমক দেন আফরোজাকে। তারপরই ঘটে আত্মহত্যার ঘটনা। খাবারের অভাবে শিশু মৃত্যুর ঘটনা এলাকায় প্রতিক্রিয়া তৈরী করেছে।

সূত্র জানায়, আফরোজার পিতা আলম শেখ পেশায় তাঁত শ্রমিক। থাকেন কামারপাড়া ওয়াপদা বাঁধে। দুস্থ এ পরিবারটির সন্তান আফরোজা আত্মহত্যা করেছে মূলত ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে। শুক্রবার বিকেলে সে কয়েক দফা খাবার চেয়েছে বাবার কাছে। কিন্তু খাবারের বদলে ধমক শুনতে হয়েছে শিশুকে।

স্বজনরা দাবি করেছেন, তাঁত শ্রমিক আলম শেখের কারখানা বন্ধ দশদিন। জমা টাকায় ৪/৫দিন সংসার চললেও গত কয়েকদিন কার্যত অনাহারে ছিলেন শিশুসহ পরিবারের সদস্যরা। এ সময়ে আলম পাননি সরকারি অথবা বেসরকারি সহায়তা। কেউই খোঁজ নেননি। আফরোজার মৃত্যুর পর অনেকে এসেছেন বাড়িতে। পৌর মেয়র শনিবার খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন। ওয়াপদা বাঁধে প্রায় ৫ ‘শ পরিবারের বাস।  জন প্রতিনিধিরা তাদের অনেকের আইডি কার্ড নিয়ে গেলেও ত্রাণ সহায়তা মেলেনি।

বাবা আলম শেখ বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে প্রশাসন কড়াকড়ি করছে। তাই দশদিন ধরে কাজ করতে পারছিনা। ঘরেই শুয়ে বসে দিন কাটাচ্ছি। হাতে নগদ টাকা নাই,তাই চালডাল কিনতে পারিনি। ঘরে খাবার নেই বলে মেয়ে কান্নাকাটি করছিল। আমি তাকে ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম। এরপর মেয়েটা আত্মহত্যা করেছে।’

বেলকুচি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নূর-এ-আলম বলেন,’শিশুর পরিবারের কোন অভিযোগ না থাকায় লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।’

বেলকুচি পৌরসভার মেয়র আশানূর বিশ্বাস বলেন, ‘কর্মহীন দুস্থ মানুষের জন্য সরকারি সাহায্য অপর্যাপ্ত। সে কারণে সকল মানুষকে একসাথে ত্রাণ দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। খাদ্য সহায়তা আরো বাড়ানো দরকার।’

বেলকুচির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত-ই-জাহান বলেন, ‘প্রথম দফায় পরিবারটিকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছিল। তারপরও কেন এ ধরণের ঘটনা ঘটেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শনিবার আবারও পরিবারটিকে ১০ কেজি চাল, ডাল, তেল,পেঁয়াজ, লবণ ও আলু দেওয়া হয়েছে।’

সুত্রঃ কালের কন্ঠ।

 

মানুষ কেন মানুষকে ছেড়ে যায়? যায়ই? কেন?

মানুষ কেন মানুষকে ছেড়ে যায়? যায়ই? কেন?


সানজিদা সিদ্দিকী কথা


আমি হয়তোবা তখন সতেরো বছরের হবো। স্বপ্ন নিয়ে অস্থির হয়ে যাবো এমন বয়স আমার না।কিন্তু একটা অদ্ভুত স্বপ্ন আমি দেখেছিলাম,ভেতরটা ওলটপালট করে দেবার মত স্বপ্ন। আমি একটা মসজিদে বসে, হঠাত কোথা থেকে একটা ছোট মেয়ে হন্তদন্ত হয়ে আমার কাছে ছুটে আসলো। এইটা কোন অদ্ভুত ব্যাপার না তবে যে প্রশ্নটা করেছিলো সেটাতে আমি হকচকিয়ে গেলাম।
“মানুষ কেন মানুষকে ছেড়ে যায়? ছেড়ে যায়ই? কেন? কেন?

প্রশ্নটা অবশ্যই খুব ব্যক্তিগত ছিল কিন্তু সাথে সাথেই আমি বুঝে গেলাম, এই প্রশ্নের জন্য আমিই কেন আসলে।
সত্যি বলতে কি, আমি মানুষটা এমন যে সবকিছুতেই বড় বেশি মাত্রায় জড়িয়ে যায়।

সেই ছোটবেলা থেকেই আমি কেমন জানি। প্রিস্কুলে আমার সাথের বাচ্চাদের বাবা মা যখন ওদের স্কুলে দিয়ে যেতো কিভাবে জানি ওরা সহজভাবেই নিতো। নিতে পারতাম না আমি। আমি কান্নাকাটি করে হুলুস্থুল বাধিয়ে ফেলতাম, কি বেইজ্জতি ব্যাপার।কিন্তু আমার কান্না থামায় সাধ্য কার?
বড় হতে হতেই আরেক আলামত শুরু করলাম। আমার আশেপাশের যা কিছু আছে সবকিছুর প্রতিই প্রবল মায়া আমার। সেই ক্লাস ওয়ান থেকে, আমি ভালো বন্ধু খুঁজে বেড়াতাম আর মনে মনে তার কাছেই সুখের চাবিটা দিয়ে রাখতাম। বড় হতে হতে বন্ধুদের সাথে কিছু হলেই দুঃখের পশরা সাজিয়ে বসে যেতাম, ভাবভঙ্গী এমন আমার থেকে দুঃখি মানুষ জগতসংসারে নাই। সুন্দর জায়গা, সুন্দর ঘটনা, পুরাতন ছবি, প্রিয় সময়গুলো আর বন্ধুরা — সব কিছুর সাথে মনটাকে একেবারে সুপারগ্লুর মত জুড়ে রেখে দিতাম। এইসব কিছুর বাইরে নিজেকে কল্পনা করতেও আমার বুক কাঁপতে থাকতো। নিজেকে নিঃস্ব মনে হতো।
একটু ওদিক হলে যেই অনুভূতিটা আমার হতো সেটাকে সাধারণ দুঃখ কিংবা হতাশা ঠিক বলা চলে না, ব্যাপারটা আমাকে একেবারে ভেতরে ভেতরে গ্রাস করে ফেলতো খেয়ে ফেলতো। আর একেকটা দুঃখ থেকে আমি কখনো পুরোপুরি উঠে দাঁড়াতে পেরেছিলাম এরকম আমার মনে পড়ে না। অনেকটা যে ফুলদানীটা আমি টেবলের কোনায় রেখেছিলাম, একটু টোকা লাগলো আর ভেঙে খানখান, ভাঙা ফুলদানিটা যেমন কখনোই ঠিক করে জোড়া লাগে নি, তেমন।

দোষটা কাচের ফুলদানির ও না, আবার পড়ে ভেঙে গিয়েছিলো সেটাতেও না বরং আমি কাচের মত একটা জিনিসকে টেবলের একেবারের কোনায় রেখে দিয়েছিলাম।

আমি আমার মনের মত একটা স্পর্শকাতর জিনিসের সাথেই সবচেয়ে বড় অন্যায়টা করেছিলাম। আমি আমার জীবনে আসা প্রত্যেকটা মানুষকে, প্রত্যেকটা সম্পর্ককে এমন এক দানবীয় ক্ষমতা দিয়ে রেখেছিলাম যে এরা চাইলে আমাকে হাসাতে পারে, চাইলে কাঁদাতে পারে আর চাইলে একেবারে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে পারে। আমি সবকিছুর উপর নিজেকে নির্ভরশীল করে নিজেকে এতটাই অপমান করতাম যে, হতাশা, নিরাশা, একের পর এক নিজেকে চূর্ণবিচূর্ণ করবার জন্য সব কিছুকে কার্ড হাতে দাওয়াত দিয়ে আসতাম।

আমার এইসব কষ্টের কারন হিসেবে অন্য মানুষকে দোষারোপ করা অনেকটা ফুলদানি ভেঙে ফেলবার জন্য মাধ্যাকর্ষণকেই শাপশাপান্ত করবার মত হাস্যকর। আমরা কখনই শুকনা পাটখড়ি কে অভিযুক্ত করতে পারি না, এতে ভর করে পাহাড় বাইতে গিয়ে কেন ভেঙে পড়েছে, এই বলে!

আমাদের ওজন তো একজন ই নেয়ার যোগ্য। আমার রব।

…………নিঃসন্দেহে হেদায়াত গোমরাহী থেকে পৃথক হয়ে গেছে। এখন যারা গোমরাহকারী ‘তাগুত’দেরকে মানবে না এবং আল্লাহতে বিশ্বাস স্থাপন করবে, সে ধারণ করে নিয়েছে সুদৃঢ় হাতল যা ভাংবার নয়। আর আল্লাহ সবই শুনেন এবং জানেন।

(-Sura Al-Baqarah, Ayah 256)

এই নিরীহ আয়াতটাতে একটা কঠিন শিক্ষা আছে। পৃথিবীতে একটি মাত্র হাতই আছে যা কখনো ছেড়ে যাবে না। একটি মাত্র জায়গাই আছে ভরসা করবার মত। নিজের আত্মসম্মান, আনন্দ, নিরাপত্তা শুধু এই একটা সম্পর্কেই পাওয়া যাবে। আর কোথাও না, একেবারে কোথাওই না।

যদিও পৃথিবী এমন এক জায়গা যেখানে মানুষ এইসবগুলো নিজের রব বাদে আর সবখানে খুঁজে বেড়াচ্ছে। ক্যারিয়ার, টাকা, ক্ষমতাতে কেউ খুঁজছে।আবার আমার মত কিছু উচ্চপর্যায়ের গাধা আরো ভয়ংকর জিনিসে সুখটাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। কিসে?
সম্পর্কে।একে অপরের সাথে সম্পর্কে।
এলিজাবেথ গিলবার্ট তার বইতে খাবার,প্রার্থনা, ভালোবাসাতে আনন্দ খুঁজবার কথা বলেছেন, বিশ্ব চষে বেড়ানোর কথা বলেছেন পূর্নতা পেতে। উনি বলেছেন ভালোবাসা, সম্পর্ক, ধ্যান কিংবা খাবারে তার পূর্নতা খুঁজতে খুঁজতে সফলভাবে অসফল হবার গল্প।

আর ঠিক এই কাজটাই আমি করেছি জীবনভর। ভুলভাল জিনিসে মধ্যে নিজের ভেতরকার শুন্যতা পূরন করতে গিয়ে আরো বেশি শূন্যতায় হারিয়ে গেছি বারবার।
এতে কোন সন্দেহই নাই, ছোট্ট মেয়েটা যে প্রশ্নটা আমাকে স্বপ্নে করেছিল সেটার উৎপত্তি ক্ষতি থেকে, হতাশা থেকে, হারানোর বেদনা থেকে, কোন কিছু প্রবল আকাঙ্ক্ষা নিয়ে খুঁজতে গিয়ে শুন্য হাতে ফেরত আসার গল্প থেকে।
ব্যাপারটা ঠিক তখনই ঘটে যখন মানুষ খালি হাতে ক্রংকিটের দেয়াল খুঁড়ে কিছু বের করতে যায়।

সে তখন শুধু খালি হাতেই ফেরত আসে না বরং রক্তাক্ত, ভাঙা হাতে ফেরত আসে। এগুলো আমি শুধু পড়ে আর শুনে শিখে ফেলেছি এমন ভাববার কোন কারন নেই। খুব কষ্ট পেয়ে,খুব চেষ্টা করে, বারেবারে, এরপরেই বুঝতে পেরেছি।

আর তাই ছোট মেয়েটার প্রশ্নটা আমার নিজের প্রতি ছুড়ে দেয়া নিজেরই প্রশ্ন ছিল।

প্রশ্নটা ছিলো আসলে দুনিয়ার ধরন নিয়েই। দৌড়াতে থাকা সময়ের সাথে অযথা নৈকট্য নিয়ে। যেই দুনিয়ার মানুষগুলো ছেড়ে যেতে পারে, মরে যেতে পারে তাদেরই সাথে কেন নিজেকে এই শক্তভাবে জুড়ে দেয়া? এটা নিজের গর্ত নিজে খোঁড়ারই নামান্তর।

অথচ এটা খুবই প্রকৃতি বিরুদ্ধাচরণ। মানুষের গড়নই এমন, আমরা ভালোবাসা খুঁজতে থাকি, একেবারে নিখুঁত কিছুর সন্ধানে থাকি যেটা কিনা চিরস্থায়ী ই না। হাস্যকর। আমরা স্থায়ী কিছু চাই। কেন চাই?

কারন আমাদের এই দুনিয়ার জন্যই প্রস্তুত করা হয় নি। আমাদের বাড়িগুলো তো জান্নাতে রয়ে গেছে, যে বাড়ি চিরস্থায়ী আর নিখুঁত। তাই স্থায়ী কিছুর আকাঙ্ক্ষা আমাদের ভেতর মজ্জাগত ভাবে রয়ে গেছে।

বিপত্তিটা বাধে যখন সেই জিনিসটা আমরা এইখানে খুঁজতে যাই। আমরা তৈরি করে ফেলি যৌবন ধরে রাখবার প্রসাধনী, প্লাস্টিক সার্জারি করি। কিন্তু ফলাফল?

শুধুমাত্র শুন্য।আর কিছুই না।

তাই আমরা যদি এই দুনিয়াকে খুব ভালোবেসে ফেলি এটা আমাদের কষ্ট ছাড়া আর কিছুই দিবে না। কিচ্ছু না।

কারন দুনিয়ার সংগা….. নশ্বরতা। মরীচিকা।

কেউ যদি আগুন থেকে পানি বের করবার চেষ্টা করে পুড়ে ছাড়খাড় হওয়া ছাড়া কি থাকবে তার জীবনে? কিচ্ছু না।

যখনই দুনিয়া থেকে স্থায়ী আর নিখুঁত কিছু খোঁজা বন্ধ করতে পারবো তখনই দুনিয়াও আমাদের কষ্ট দেয়া বন্ধ করে দিবে।

আরো একটা জিনিস এসবের বাইরেও মনে রাখা খুব জরুরী, কারন ছাড়া কিচ্ছু ঘটে না এখানে। ভাঙাচোরা হৃদয়ও কারনেই ভাঙে। ক্লেশে জর্জরিতা মন আর তার ভেতরে ফুটতে থাকা ব্যথাগুলো শিক্ষা আর সাথে আরেকটা জিনিস। আরেকটা জিনিসের চিহ্ন। এটা ইংগিত করে কিছু তো গড়বড় আছে! কিছু তো বদলানো দরকার। অনেকটা আগুনে জ্বলতে থাকা হাত জানান দেয়, হাত সরাও বাছা, পুড়ে যাচ্ছে।

এই কষ্টগুলো আমরা যে দুনিয়ার সাথে সেঁটে আছি সেটা বোঝায়, এই কষ্ট টা সেঁটে থাকা আমাদের জোর করে উপড়ে ফেলার চিহ্ন। ভালোবাসার মানুষটা যখন বারেবারে কষ্ট দিয়ে রক্তাক্ত করে, তখন একপর্যায়ে আমরা সরে যাই। দুনিয়াও রবের প্রিয় মানুষগুলোকে কষ্ট দিয়ে দিয়ে নিজের থাকে সজোরে ছুড়ে ফেলে দেয়।

#ভাবানুবাদ

#Sanjida_Kotha

#Reclaim_Your_Heart_by_YasminMogahed

#repost

 

করোনার এই মহামারীর সময় শিশুদের জন্য কি করবেন পর্ব-২

করোনার এই মহামারীর সময় শিশুদের জন্য কি করবেন পর্ব-২


স্বাস্থ্যকথা


শিশুদেরকে বিভিন্ন সুন্দর সুন্দর গল্প বলুন যেমন এখন কোন বিজ্ঞানী করোনার ঔষধ আবিষ্কার করতো তাহলে পরিস্থিতি কি রকম হতো? আমরা কিভাবে বিজ্ঞানী হতে পারি। চারপাশে ডাক্তাররা কিভাবে মানুষের সেবা করছে?

আসুন আরো কিছু বিষয় খেয়াল করিঃ

সতর্ক থাকুন
সর্তক থাকুন। করোনার বর্তমান পরিস্থিতিতে আপনি ঘরে অবস্থান করুন এবং শিশুদের প্রতিও সর্তকা অবলম্বন করুন। অতিরিক্ত দায়িত্বশীল হতে গিয়ে বাড়াবাড়ি করা থেকে বিরত থাকুন। অতিরিক্ত মিডিয়া আসক্তি বন্ধ করুন। শিশুদের ইউটিউব এবং অতিরিক্ত ফেসবুক ব্যবহার করাও কমিয়ে আনুন। এছাড়া তাদেরকে টিভি ও কম্পিউটারে গেম খেলা থেকে সময় কমিয়ে দিন। পাশাপাশি কেন সময় কমিয়ে নিয়ে আসছেন তা বুঝিয়ে বলুন। এই সময়টি বাচ্চাদের বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত রাখুন। আপনিও বাচ্চাদের সাথে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা অংশ নিন। তাদেরকে প্রতিদিন কয়েকবার ২০ সেকেন্ড করে হাত ধোয়ানো। নিয়মিত ভাবে নখ এবং তাদের চুলগুলোকে পরিচ্ছন্ন রাখুন। আপনি বাসায় থাকাকালীন এই মূল্যবান সময়গুলোকে কাজে লাগিয়ে আপনার সন্তানকে আর্দশ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলুন।

সঠিক তথ্য দিয়ে বুঝিয়ে বলুন
শিশুদের কোন কাজ হুট করে চাপিয়ে না দিয়ে বরং কেন কাজটি করবে তা সঠিক তথ্য এবং সুত্র ধরে ধরে বুঝিয়ে বলুন। উদাহরণসরূপঃ সত্য কথা বলা। কেন সত্য কথা বলতে হবে? সত্য কথা না বললে কি কি ক্ষতি হয়? আবার আমরা এখন কেন বাসা থেকে হুটহাট ঘুরতে বের হতে পারব না। করোনা কি? কেন মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়?

অভ্যাস গড়ে তুলুন
অভ্যাস গড়ে তোলার সবচেয়ে সুন্দর সুযোগ। বর্তমানে আপনি বাসায় আছেন আপনার ছোট্ট শিশুকে, বই পড়া, সালাম দেওয়া, বড়দের সাথে কথা বলা, ছোটদের স্নেহ করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। করোনা পরিস্থিতির কারণে, শিশুদেরকে বারবার হাত ধোয়া। হাঁচি ও কাশির সময় রুমাল বা কনুই দিয়ে মুখ ঢাকা শিখানো। তাদেরকে বুঝিয়ে বলুন, পরিচ্ছন্ন কর্মীরা কিভাবে দিনের পর দিন কষ্ট করছেন। তারা সকালে উঠে কিভাবে আমাদের চারপাশে পরিচ্ছন্ন রাখছেন। তাদের সাথে আমাদের আচরণ শিখান। সুন্দরভাবে সবার সাথে কথা বলা বিষয়গুলো ধীরে ধীরে অভ্যাসে পরিনত করুন।

রুটিন মেনে চলুন
একটা সুন্দর রুটিন তৈরি করে ফেলুন। শিশুদের জন্য প্রতিটি সময়ই যেহেতু শিক্ষণীয়। তাই এই সময়টায় শিশুদের রুটিনের আওতায় নিয়ে আসুন। কখন ঘুম থেকে উঠবে। কখন নাস্তা করবে। পড়তে বসা, ছোট ছোট কিছু শারীরিক ব্যায়াম করানো যেতে পারে। শিশুরা খেলতে খেলতে অনেক কিছু শিখতে পারে তাই আপনিও খেলাধুলায় অংশ নিতে পারেন।

সুত্রঃ বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফর চাইল্ড এন্ড এডোলেসেন্ট মেন্টাল হেলথ (BACAM)

 

ডাক্তারদের এসব কি কাহিনী !!!

ডাক্তারদের এসব কি কাহিনী !!!


ডা. মারুফ রায়হান খান


১. “আমার প্রতিবন্ধী বড় ছেলেটা রাতে আমার সাথে ঘুমাতো। এখন ঘুমায় না তিন সপ্তাহ হলো। আমি বাইরে কাজ করি, ভয়ে ওকে রাতে কাছে রাখি না। ওর ছবিটা আমার কাভার ছবি, সেটা দেখি সারাদিন।

মেয়েটা ঘরে ঢুকলে দৌড়িয়ে চুমু খেতো। আসতে দিই না।
আমি শক্ত মানুষ তারপরও কালকে কাঁদলাম অনেকক্ষণ।”

– জনৈক চিকিৎসক বাবা।

২. “বাবা মারা যান গত বছর। এখন আমার দোয়া চাওয়ার ভান্ডার আমার মমতাময়ী মা। মা-এর কাছে যাব বলে ঠিক করে রেখেছিলাম। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সবার ছুটি আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। মা-কে নিজের কাছেও নিয়ে আসতে পারছিনা। সারাদিন হাসপাতালে নানা রকমের রোগী দেখা লাগে। মা বয়স্ক মানুষ বাসায় আবার আমার থেকে যদি মায়ের কোন ক্ষতি হয়, তাই। জানি না মায়ের সাথে আবার কবে দেখা হবে।

– জনৈক চিকিৎসক সন্তান।

৩. “দরজা খুলে যোয়ানা যখন দৌড়ে আমার উপর ঝাপিয়ে পড়তে নিলো তখন চারপাশ থেকে এক সাথে সবাই বলে উঠলো, “এটা করা যাবে না,যোয়ানা।”
এমনকি তার দৌড় দেখে আমি নিজেও ভয়ে কয়েক পা পিছিয়ে গেলাম।
যোয়ানা তখন আমাকে বলে উঠলো,

– কোথা থেকে আসছো, আব্বু?
– হসপিটাল থেকে আসছি, বাবা।
– হসপিটালে কি করছো, ইনজিকশন দিছো?
– হুম ইনজিকশন দিছি।
– তুমি আমার সাথে ঘুমতে আসছো আব্বু?
– না বাবা।আমি থাকবো না।

মেয়েটা বার বার তখন মন খারাপ করে আমাকে বলছিলো, “আমাকে আদর করো, এখানে থাকে যাও।” এমনকি যখন চলে আসার জন্য বের হয়ে যাচ্ছিলাম তখন এই একই কথা বলতে বলতে ও গেইট পর্যন্ত চলে আসলো।

এমনকি যখন লিফটেও উঠছিলাম তখনও ও দরজা ধরে দাঁড়িয়ে রইলো। আর যেনো ভাবছিল কীভাবে তার পাষণ্ড বাবা ছোট্ট মনটা ভেঙে লিফটের দরজার ওপাশে হারিয়ে যায়।

শুধু একটা কথাই মনে হলো, ডাক্তার না হলে হয়তো এই খারাপ সময়ে ছোট্ট যোয়ানার ছোট্ট মনটা আমার ভাঙা লাগতো না।
অন্য সবার মত বাসায় বসে বসে ডাক্তারকে গাল মন্দ করে ফেসবুক গরম করে ফেলা যেতো।”

– জনৈক চিকিৎসক বাবা।

৪. “আমার মায়ের মুখে প্রথমবারের মতো শুনলাম যে তোকে ডাক্তারি পড়ানো ঠিক হয়নি। তাহলে তুইও আমাদের সাথে আজ ঘরে থাকতে পারতি।”

– জনৈক চিকিৎসক সন্তান।

একজন করোনা আক্রান্ত চিকিৎসক আইসিইউতে।

 

করোনার পরিস্থিতিতে শিশুদের জন্য কি করবেন পর্ব-১

করোনার পরিস্থিতিতে শিশুদের জন্য কি করবেন পর্ব-১


স্বাস্থ্যকথা


শিশুদের পরিচর্চার প্রয়োজন, যে কোন দূর্যোগ বা মহামারীর মতো খারাপ সময়। বর্তমান করোনা পরিস্থিতি, এর ব্যতিক্রম নয়। এ সময় বয়স্কদের পাশাপাশি ছোটদেরও প্রয়োজন বাড়তি খেয়াল। শিশুদের সঠিক তথ্য বুঝিয়ে বলার পাশাপাশি তাদের অবসর এই সময়কে ভালো কাজে অতিবাহিত করা শিখানো। শিশুদের আদব-কায়দা শেখানো।

যে বিষয়গুলোর উপর আমরা গুরুত্ব দিব-

১. অভয় দেওয়া
করোনা মহামারীর পরিস্থিতিতে বড়দের পাশাপাশি শিশুরাও আতঙ্কিত হয়ে যাচ্ছে। তাদের অভয় দিন। সঠিক তথ্য বাচ্চাদেরকে, বাচ্চাদের বয়স অনুযায়ী বুঝিয়ে বলুন। তাদেরকে বুঝিয়ে আরো বলতে পারেন যে, বাচ্চাদের জন্য করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তুলনামুলক কম। তবে বয়স্ক আত্মীয়রা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

২. শিশুর দায়িত্ব
শিশুদেরকে তাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিন। কাজ করার সুযোগ দিন। যাতে করে তারা বুঝতে পারে অন্যদের সেবা করার গুরুত্ব। বয়স্ক আত্মীয়-স্বজনদের ফোন করে খোঁজ-খবর নেওয়ার ব্যাপারে শিশুদেরকে আগ্রহী করে তুলুন। ঘরের ছোটখাট কাজে শিশুদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করুন। তাদের কাছে পরামর্শ চান এবং তাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা দিন। এটায় মুলত শিশুর ক্ষমতায়ন।

৩. শিশুদেরকে ব্যস্ত রাখুন
স্কুলে যাওয়া বাচ্চাও যেহেতু এই সময় বাসায় অবস্থান করছে তাই বাচ্চাদের বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রাখুন। তাদেরকে ছোট ছোট কাজ করতে উৎসাহ দিন। বিভিন্ন জিনিস বানানো শিখান। আপনিও তাদের সাথে কাজ করুন। খেলুন, রান্নাতে তাদের সাথে নিন। ঘর গুছানো, ঘর পরিষ্কার রাখার বিষয়টিও তাদের সাথে করতে পারেন। বাচ্চাদেরকে ছোট ছোট কাজ দিন। তাদের সহযোগিতা নিন। গাছের যত্ন নিতে তাদের সহযোগিতা নিন। এবং তাদের সাথে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ছোট করে গল্প করুন।

. নিজে শান্ত থাকুন
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই পরিস্থিতিতে নিজেকে শান্ত রাখুন। নিজের যত্ন নিন। মনে রাখবেন, শিশু কিন্তু আপনান আচরণ অনুকরণ করছে।

৫. শিশুদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ
শিশুদের এই সময় ঘরে বসে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা শিখান। শিশুদেরকে তাদের আবেগ সম্পর্কে ধারণা দিন। তাদরে বলুন কোন আবেগটি রাগ, কোনটি অভিমান, কোনটি জেদ & কোনটি ভয় এ সম্পর্কে তাদেরকে আলাদা ভাবে বুঝিয়ে বলুন। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরিস্থিতি আবেগের পরির্বতন হয় তা বুঝিয়ে বলুন।
এই বিূষয়গুলো নিয়ে বাচ্চাদের সাথে অল্প অল্প করে বাচ্চাদের বুঝার ভাষা ব্যবহার করে বুঝিয়ে বলুন। এবং শিশুদেরকে রাগ হলে তাদের কি কি ক্ষতি হতে পারে? অতিরিক্ত জেদের কারণে তাদের কি সমস্যা হয় তাও বুঝিয়ে বলুন। শিশুদেরকে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য, নিঃশ্বাসের ব্যায়াম, ঠান্ডা পানি খাওয়া এবং যে জায়গাতে রাগ হয়েছে ওখান থেকে সরে গিয়ে, অন্য জায়গায় সরে আসার বিষয়টি বুঝিয়ে বলুন। তাদের পাশে বসে তাদেরকে বিষয়টা ধীর স্থিরভাবে বুঝান।

সুত্রঃ বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফর চাইল্ড এন্ড এডোলেসেন্ট মেন্টাল হেলথ (BACAM)

চলবে….

 

করোনায় আক্রান্ত মা কি সন্তানকে দুধ খাওয়াতে পারবেন?

করোনায় আক্রান্ত মা কি সন্তানকে দুধ খাওয়াতে পারবেন?


স্বাস্থ্যকথা


প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে রীতিমতো যুদ্ধে নামতে হয়েছে চীনকে। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক নিয়েও গবেষণা করেছে দেশটি। সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে গর্ভবতী নারীদের ওপর কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করেছে চীন। এসব গবেষণার পর চীন সিদ্ধান্ত নিয়েছে গর্ভবতী কোনো নারী করোনায় আক্রান্ত হলেও তার গর্ভ সুরক্ষিত। চীনে এ বিষয়ে ঠিক কী ধরনের পরীক্ষা হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন।

দেশটির উহান প্রদেশে সর্বপ্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছিল। এই আক্রমণের প্রভাব থেকে বাঁচতে কী উপায় বের করা যায় তা নিয়েও চীনই প্রথম থেকে লাগাতার গবেষণা করে। সেই গবেষণার ফল তারা প্রকাশও করেছে একাধিক জার্নালে। সম্প্রতি আমরাও যেহেতু এই ভাইরাসের কবলে পড়েছি, সে জন্য মরণব্যাধি এই ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে আমাদের সেসব জার্নালই প্রধান ভরসা।

মোটামুটি তিন থেকে চাররকমের পরীক্ষা চীনে করা হয়। গর্ভবতী নারীদের থেকে তার ভ্রূণে অনবরত যে খাদ্যরস বাহিত হচ্ছে সেই রসের পরীক্ষা করে, শিশুর জন্মের পর তার শরীর থেকে রক্ত নিয়ে, শিশু ও তার মায়ের মধ্যে সংযোগকারী নাড়ির থেকে রক্ত নিয়ে এবং গর্ভে ভ্রূণ যেখানে থাকে তার চারপাশে একরকম জলীয় পদার্থ থাকে। এই সব কিছু পরীক্ষা করে দেখা গেছে করোনা আক্রান্ত কোনো মায়ের শরীর থেকে গর্ভস্থ ভ্রূণ বা শিশুর শরীরে করোনা ভাইরাস প্রবেশ করতে পারেনি।

এরপর খুব স্বাভাবিকভাবেই এরপর প্রশ্ন ওঠে জন্মের পর ওই শিশু কি তার মায়ের কাছে থাকবে? তার মায়ের দুধ খেতে পারবে? জবাব দিতে গিয়ে ডাক্তারদের কিছু অংশ মায়ের দ্রুত আরোগ্য এবং শিশুর সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে বলেছেন, শিশু এবং তার মাকে অন্তত ১৪ দিন আইসোলেশনে রাখতেই হবে। কিন্তু অধিকাংশ চিকিৎসকই এর বিরুদ্ধে। তারা জানিয়েছেন, শিশু তার মায়ের কাছ থেকে জন্মের পর ১৪ থেকে ১৫ দিন আলাদা হয়ে থাকলে তাদের সারা জীবনের সম্পর্কের ভিত্তি তৈরি হবে না। তাতে দু-জনেরই ক্ষতি।

অধিকাংশ চিকিৎসকই জোর দিয়ে বলছেন, শিশুকে মা তার বুকের দুধ খাওয়াবেন। তবে শিশুকে কোলে নেওয়ার আগে ভালোভাবে নিজের হাত স্যানিটাইজার দিয়ে ধুয়ে নিবেন। আর দুধ খাওয়ানোর আগে স্তন অবশ্যই ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।

এরপর মুখে মাস্ক পরে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে বুকের দুধ বের করে তা সন্তানকে দিবেন। তাতে কোনও ক্ষতি নেই। তবে সন্তানসম্ভবা নারীরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবেন। প্রত্যেকেই এমন সময় চিন্তায় থাকেন। তাতে এমন একটা পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তা হওয়ারই কথা। যদি নিজের সন্দেহ হয়, সামান্য কাশি জ্বর হয় তবে নিজেই নিজেকে পরিবারের আর পাঁচজনের থেকে আলাদা করে রাখুন। ১৫ পর দেখুন কেমন আছেন।

বর্তমানে আমাদের দেশে এখন ঋতু পরিবর্তনের সময়। এই সময় স্বাভাবিক নিয়মেই জ্বর হয়ে থাকে। তবু ভয় না পেয়ে সতর্কতা অবলম্বন করুন যা কিনা বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকরা বারবার বলে আসছেন। তবে নির্দিষ্ট সময়ের পরও জ্বর না কমলে লালা পরীক্ষা করান। রিপোর্ট নেগেটিভ এলে আর দুশ্চিন্তার কিছু থাকবে না। আর যদি পজিটিভ হয় তবে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করুন।

সুত্রঃ অধিকার।

 

শিশুর বেড়ে ওঠায় মা-বাবার সু-সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

শিশুর বেড়ে ওঠায় মা-বাবার সু-সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ


স্বাস্থ্যকথা


দশ বছর বয়সী রাইয়ান মাঠের এক কোনে বসে আছে। তার সমবয়সী বাচ্চারা মাঠে খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকলেও খেলায় কোন মন নেই তার। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। কী যেন দেখছে। এরমধ্যে তার কয়েকজন বন্ধু তাকে খেলার জন্য ডাকতে আসলেও যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেল রাইয়ানের বাবা আর মায়ের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। প্রায় প্রতিদিনই ঝগড়া হয় তাদের মধ্যে। এমনকি মাঝে মাঝে মারধরও চলে। সবই হয় রাইয়ানের সামনে। এসব দেখে সে অনেকটা ভীত হয়ে পড়েছে। সে এখন কারো সাথে কথা বলতে ভয় পায়। আর তাই এই অল্প বয়সেই এত উদাসীন থাকে রাইয়ান।
মাইশার বর্তমান অবস্থা ঠিক রাইয়ানের মত। পনের বছর বয়সী মাইশা এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। কিন্তু কোনভাবেই সে পড়ায় মন বসাতে পারছে না। স্কুলের মডেল টেস্ট’র রেজাল্টও খুব ভালো করেনি। কিন্তু ক্লাস নাইন পর্যন্ত তার রোল নাম্বার এক থেকে তিনের মধ্যে ছিল সব সময়। সবার কাছেই খুব আদরের ছিল মাইশা। টেষ্টের রেজাল্টের পর স্কুলের ক্লাস টিচার তাকে একলা ডেকে নিয়ে তার কাছ থেকে জানতে চান- কেন এমন হচ্ছে? অনেকক্ষণ তার সাথে কথা বলার পর ক্লাস শিক্ষক জানতে পারেন, মাইশার বাবা-মায়ের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না গত কয়েক মাস ধরে। বাসায় প্রতিনিয়তই ঝগড়া লেগে থাকে। তাই সে মনযোগ দিতে পারছে না পড়াশোনায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধুলা অত্যন্ত জরুরী। শিশুর বিকাশ নিয়ে অধিকাংশ বাবা-মা’ই এখন বেশ সচেতন। তাদের সার্বক্ষনিক চেষ্টা থাকে তাদের বাচ্চাদের সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাবা-মাদের নিজেদের মধ্যকার সমস্যা এত বেড়ে যায় যে, তারা আর বাচ্চাদের দিকে মনোযোগ দিতে পারেন না। আর এই অমনোযোগীতার কারনেই অনেক বাচ্চা অবসাদে ভোগে, খারাপ পথে চলে যায়।
তাদের মতে বাচ্চাদের সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রম এবং ধৈর্য্য। বাচ্চাদের বুঝাতে হবে যে, তারাই বাবা-মায়ের অমূল্য সম্পদ। অত্যন্ত যতœ দিয়ে তাদের বড় করে তুলতে হবে। জীবনের প্রতিটি নিয়ম-কানুন তাদের শেখাতে হবে।
শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মুরাদ হোসেন মোল্লা বলেন, প্রায় সব বাচ্চাই দুষ্টুমি করে। কিন্তু অতিরিক্ত দুষ্টুমির জন্য বাচ্চাদের ভয় দেখালে বা তাদের মারধর করলে সমস্যার সমাধান হয় না। বরং এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। শিশুরা সব সময় একটা আতঙ্কের মধ্যে থাকে। এবং এসব শিশুদের অত্মবিশ্বাষ কমে যায়। তাদেরকে বারবার করে বুঝাতে হবেÑ কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ। শিশুর কথাও খুব মনোযোগ সহকারে শুনতে হবে।
তিনি বলেন, শিশুদের মধ্যে আত্মসম্মানবোধ বাড়িয়ে তুলতে হবে। তাদের সাথে সব সময় আলোচনা করতে হবে। তার চাহিদার কথা, তার ইচ্ছার কথা শুনতে হবে। পাশাপাশি শিশুর ভালো কাজের প্রশংসাও করতে হবে। তাদের পছন্দের বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে।
ডা. মুরাদ বলেন, অনেক বাবা-মা’ই সন্তানদের বাইরে খেলাধুলা করতে দিতে চান না। এটা সন্তানের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে অত্যন্ত বড় বাধা। শিশুরা খেলাধুলা করলে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকে। অন্য বাচ্চাদের সাথে বন্ধুত্ব তৈরী হয়। এতে তার যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ে। শিশু মানসিকভাবেও সুস্থ থাকে।
এছাড়াও সন্তানদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়েও মনোযোগী হতে হবে। তাদেরকে এ বিষয়ে জ্ঞান দিতে হবে। নিজের বিছানা সব সময় পরিষ্কার রাখার শিক্ষা, বইপত্র গুছিয়ে রাখার শিক্ষা তাকে ছোটকাল থেকে দিতে হবে। এছাড়াও বাচ্চাদের সামনে বড়দের কথা বলার সময় অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সব ধরনের আলোচনা শিশুদের সামনে না করাই ভালো। কারণ এতে করে বাচ্চাদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে শিশুদের সামনে বড়দের ঝগড়া-বিবাদ করা যাবে না। বিশেষ করে বাবা-মা’র মধ্যকার ঝগড়া বাচ্চাদের মনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরী করে। অনেক সময় বাচ্চারা অবসাদে ভুগতে থাকে।

সুত্রঃ বাসস।

 

সবজি পেয়াজু

সবজি পেয়াজু


রেসিপি


সাধারণত বাচ্চারা কিছুতেই সবজি খেতে চায় না। সবজির জায়গায় যায়গা করে নিয়েছে বর্তমানে অলিতে গলিতে গড়ে উঠা ফাস্টফুডের দোকানগুলো।

উপকরণ
১. মসুর ডাল এক কাপ,
২. মুগডাল এক কাপ,
৩. মটর ডাল এক কাপ,
৪. পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ,
৫. গাজর কুচি এক কাপ,
৬. বাঁধাকপি কুচি এক কাপ,
৭. মটরশুঁটি কুচি সিকি কাপ,
৮. আলু কুচি এক কাপ,
৯. ধনিয়াপাতা কুচি সিকি কাপ,
১০. কাঁচা মরিচ কুচি ২ টেবিল-চামচ,
১১. লবণ পরিমাণমতো,
১. বেসন ২ টেবিল-চামচ,
১৩. পুঁইপাতা কুচি এক কাপ।

প্রণালি
> সব ডাল ধুয়ে ৩-৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে বেটে নিতে হবে। সব উপকরণ একসঙ্গে মাখিয়ে ডুবো তেলে ভাজতে হবে। গরম গরম পেঁয়াজু পরিবেশন করুন।

রেসিপি: নিউজপেজ ২৪

 

লকডাউনে দিনলিপি

লকডাউনে দিনলিপি-৩০শে মার্চ


হাসনিন চৌধুরী


লকডাউনে অলরেডি দম বন্ধ লাগা শুরু হয়েছে। ইচ্ছে হচ্ছে একটা রিকশা নিয়ে ছোট ভাই এর সাথে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াই, সেই আগের দিনগুলোর মতো।

যদিও লকডাউন তো সবে শুরু হলো… গুনে দেখলাম, মাত্র পাঁচ দিন গেছে। আদৌ কতদিনে শেষ হবে এই বন্দী বন্দী খেলা? সপ্তাহ, মাসে, বছরে?

মাঝে মাঝে ভাবি, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, কাশ্মিরের মানুষেরা দিনের পর দিন, মাসের পর মাস যখন গৃহবন্দী হয়ে থাকে, তাদের কেমন লাগে? বুক ফেটে গেলেও আপন জনদের দেখতে পায় না৷ খাবার ও ওষুধের দোকান বন্ধ থাকে। সাধারণ জ্বর, কাশির জন্যও ওষুধ পায় না?

কেমন লাগে, যখন বছরের পর বছর সে দেশে কোন উৎসব, আনন্দ উদযাপিত হয় না, তারাবী হয় না, হজ্জে যেতে পারে না বা অল্প কিছু লোক একত্র হয়ে ঈদের সালাত পরে?

দম বন্ধ লাগে না?

নাকি অভ্যেস হয়ে গেছে দম আটকে রাখার? বহু বছর তারা বুক ভয়ে শ্বাস নেয় না, হৃদয় থেকে শুধু দীর্ঘশ্বাস দেয়ায় অভ্যস্ত এরা।

এই নিরস্ত্র, অসহায় মানবসন্তানেরা কয়েক যুগ ধরে কেবল দীর্ঘশ্বাসই ফেলেছে, তাদের ভারী নিঃশ্বাসগুলো জমতে জমতে আজ আকাশ ছুঁয়েছে।

মনে আছে, সমুদ্রে ভেসে আসা দেড়/ দু বছরের আয়লান কুর্দির কথা?

সেই যুবকের কথা, যে বোমার আঘাতে প্রাণ হারানো অন্তসত্ত্বা স্ত্রীকে কবরে শুইয়ে দিয়েছিলো, স্ত্রীর সাথে সেদিন মাটি চাপা দিয়েছিলো জীবনের সকল আনন্দ আর স্বপ্নও।

সেই বাবাটার কথা ভুলে গেছেন, মৃত শিশুদের কোলে নিয়ে যিনি পাথরের মতোন বসে ছিলেন?

নিশ্চয় ভুলেন নি ঐ শিশুটির কথা? যে কিনা ছোট্ট জীবনে পৃথিবীবাসীর নিদারুণ নিষ্ঠুরতায় আশ্চর্য ও ব্যাথাতুর হয়ে, মৃত্যুর আগে বলে গিয়েছিলো, “আমি সব বলে দেবো আল্লাহর কাছে!”

হায়, আফসোস….শিশুটি নিশ্চয় সব বলে দিয়েছে। তার সাথে সুর মিলিয়েছে জুলুমে জুলুমে কেঁপে ওঠা রুহের আর্তনাদ।

আমরাই শুধু ভুলে গিয়েছ, মজলুমের বদদুয়া আর আল্লাহর মাঝে কোন পর্দা নেই!

ভুলে গিয়েছি, কাবা ধ্বংস করতে আসা আবরাহার হস্তীবাহিনীকে কিভাবে সর্বশক্তিমান মালিক, তাঁর অতি ক্ষুদ্র সৃষ্টি, এক ঝাঁক পক্ষীবাহিনী দিয়ে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলেন।

কিভাবে তিনি অহংকারী নমরুদকে হারিয়ে দিয়েছিলেন মশার কাছে।

এ যুগের পরাশক্তিরা যখন অন্যায় ভাবে হামলা করেছিলো একের পর এক দেশ, বাধা দেয় নি কেউ। তাবত পৃথিবী জুলুমকারীদের সাথী হয়েছিল।

হয় সরাসরি পক্ষ নিয়েছিলো, নতুবা মজলুমের চিতকার না শোনার জন্য কানে তুলো দিয়ে ডুবে গিয়েছিলো বিলাসে, ভোগে, অসাড় আনন্দ ও স্বার্থপরতায়।

আল্লাহ রশি ছেড়ে দিয়েছিলেন, এবার তার প্রায় অদৃশ্য এক সৃষ্টিকে পাঠালেন৷ চোখে দেখা যায়না এমন অস্তিত্বের ভয়ে কেঁপে উঠলো পুরো দুনিয়া।

এতদিন ধরে চলে আসা অন্যায়,ব্যভিচারিতা, সমকামীতা, মজলুমকে নিপীড়ন ইত্যাদি ছাপিয়ে, মৃত্যু ভয় আচ্ছন্ন করে ফেললো, ভোগবাদী জগতকে।

যে অভাব, মৃত্যু আতংক, লকডাউন দিয়ে শায়েস্তা করা হয়েছিলো অসহায়দের, আজ সেই একই ভয়াবহতা গ্রাস করেছে সমগ্র পৃথিবীকে।

চোখে দেখা যায় না এমন জীবানুর আঘাতে ধরাশায়ী হয়ে গেলো সকল পরাশক্তি ও বিশ্ব অর্থনীতি।

সিরিয়া আফগানিস্তানের মতো লাশের মিছিল লেগে গেলো দেশে দেশে।

দিল্লীর দাংগার সময়েও কি ভাবতে পেরেছিলাম, বিশ্ব রাজনীতির পট পরিবর্তন হতে বেশি দিন বাকি নেই? অচিরেই আমরা বুঝতে পারবো মহাপরাক্রমশালী স্বত্ত্বা কেবল একজনই!

তিনিই সেই রব, যিনি ‘হও’ বললেই, সব হয়ে যায়। পৃথিবীর প্রতি, এর মানুষের প্রতি এতোদিন যে অন্যায় হয়ে এসেছে, তার বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক প্রতিশোধ শুরু হয়ে গেছে।

দিল্লীতে মুসলিমদের যখন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছিলো, একটি কবিতার জজবায়, তখন তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল অনলাইন দুনিয়া।

চলমান অন্যায়ের প্রতিবাদে আবৃত্তিকার দৃপ্ত কণ্ঠে গজরে উঠেছিলেন,

তিনি বলেছিলেন, ” আসমান পে ইনকিলাব লিখ্যা যায়েগা।”

সেই কবিকে খুঁজে পেলে, বলতাম, আসমান পে ইনকিলাব লিখ্যা হো গ্যায়া…সাব বাদ দুয়া জামিন কি লোগো পে লাগ গ্যায়া..

দুনিয়াতে যা হচ্ছে… তা কি আমাদেরই হাতের উপার্জন নয়?