banner

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 610 বার পঠিত

 

সিজদাহ: দ্যা বেস্ট রিলাক্সেশন থেরাপি (পর্ব-৩)

সিজদাহ: দ্যা বেস্ট রিলাক্সেশন থেরাপি (পর্ব-৩)


জিয়াউল হক


নামাজে সিজদাহর সময় আমরা আমাদের দেহের সর্বোচ্চ পয়েন্ট ফ্রন্টাল লোবটা মাটিতে ঠেকিয়ে দেই। আমাদের উচ্চ শীরটাকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে যতোটা সর্বনিম্ন পর্যায়ে সম্ভব নামিয়ে আনি। সেই সাথে এই সিজদাহ’র মাধ্যমে (ফ্রন্টাল লোবকে মাটিতে ঠেকিয়ে) আমরা আমাদের বুদ্ধি ও বিচারক্ষমতা, চৌকষ ব্যক্তিত্বের সকল অহংবোধকে এক আল্লাহর শক্তি ও সামর্থ, তাঁর বড়ত্বের কাছে বিসর্জন দিয়ে প্রকারান্তরে এটা স্বীকার করে নেই যে; হে আমার রব আপনার শক্তি ও সামর্থের কাছে আমি কিছুই নই, আমি তো আপনার সাহায্যেরই মুখাপেক্ষি!

এটা সিম্বলিক। প্রতিকি একটা আত্মসমর্পণ এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর কাছে। মনের বোঝা লাঘবের জন্য অপরিহার্য মনস্তাত্বিক প্রস্তুতি, মনকে হাল্কা করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোটিভেশন। এরপরে রইলো শারিরিক ও বৈজ্ঞানিক দিক। আমরা যখন সিজদাহতে যাই তখন মাথাসহ ব্রেনে রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়। এভাবে যতোক্ষণ আমরা সিজদাহতে থাকবো, ততোক্ষণই মাথার কোষগুলি স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি মাত্রায় রক্ত সরবরাহ পাবে।

আরও লক্ষণীয় বিষয় হলো যে, এরকম অবস্থায় সর্বনি¤œ পর্যায়ে থাকে ব্রেনের ফ্রন্টাল লোব; এই অংশটি মাটির সাথে লেগে থাকে। এর উপরে থাকে ব্রেনের বাঁকি অংশ। অর্থাৎ রক্ত সরবরাহ সবচেয়ে বেশি পায় এবং সবচেয়ে বেশিসময় ধরে পায় আমাদের ব্রেনের ফ্রন্টাল লোব, তথা সেই অংশ, যে অংশ বুদ্ধিবৃত্তিক ও আবেগনির্ভর কাজগুলো করে থাকে। বেশি পরিমান রক্ত পাওয়া মানে হলো বেশি পরিমান অক্সিজেন পাওয়া। আর বেশি পরিমান অক্সিজেন পেলে সেইসব কোষ বেশিপরিমাণ পুষ্ঠি পায় এবং সেখান থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড বের হয়ে আসে।

ঠিক একই সময় আরও একটা কাজ হয়। আমরা যখন সিজদাহতে থাকি, তখন আমাদের ফুসফুসের উপরে পেটের ডায়াফ্রাম’সহ (বুক ও পেটের মধ্যে বিভাজন পর্দা বা বেরিয়ার) পুরো পেটের চাপ পড়ে। এর ফলে আমাদের নি:শ্বাস প্রশ্বাসের গভীরতা বাড়ে, দ্রুততর হয়। বিষয়টা সিজদাহতে থাকা প্রত্যেক ব্যক্তিই নিজের ভেতরে অনুভব করেন। সিজদাহ থেকে উঠার সময় আমাদের নি:শ্বাসটা স্বাভাবিকের চেয়ে একটু জোরের সাথেই বের হয়, এর ফলে শরির থেকে অতিরিক্ত মাত্রায় কার্বন ডাই অক্সাইড বের হয়ে যায়। ঠিক এই কাজটাই সাইকোলোজিস্টগণ তাদের ক্লায়েন্টদের করতে বলেন মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে লম্বা নিশ্বাস ছাড়তে বলার মাধ্যমে।

এই কার্বন ডাই অক্সাইড’ই হলো সেই বর্জ, রক্তে যার উপস্থিতি আমাদের শরিরকে ক্লান্ত ও শ্রান্ত করে তোলে। সিজদহা’র মাধ্যমে শরিরের কোষগুলিতে অতিরিক্ত পরিমান নতুন রক্ত পেয়ে এবং বর্জরুপী এই কার্বনডাইঅক্সাইড’ই বের হয়ে যাবার কারণে শরীর চাঙ্গা হয়ে উঠে, মনও ফুরফুরে সতেজ হয়। আমরা মনোযোগ নিব্ধ করতে পারি। আমাদের ব্রেনের ফ্রন্টাল লোব সঠিকভাবে বিচার বিশ্লেষণ করতে ও সঠিক স্বিদ্ধান্ত নিতে পারে।

এ জন্যই সিজদাহ এতোটা গুরুত্বপূর্ণ এবং একমাত্র আল্লাহরই প্রাপ্য এবং আল্লাহর প্রতি যাবতীয় ইবাদতের শ্রেষ্ঠাংশ।

লেখক: জিয়াউল হক
রিসার্চ ডাইরেক্টর
একাডেমি টুয়েন্টি ওয়ান

Facebook Comments