banner

বুধবার, ০৮ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 937 বার পঠিত

 

করোনায় ঘরবন্দি জীবনে বয়সন্ধিকালের কিশোর-কিশোরীরা কি করবে?

করোনা-১৯ ঘরবন্দি জীবনে বয়সন্ধিকালের কিশোর-কিশোরীরা কি করবে?


তানিয়া ইসলাম ইতি


আসলেই কি আমরা ঘরবন্দি থাকতে পারছি? উত্তর জানা নেই। তবে আমরা চেষ্টা করছি। আমরা যারা ঘরে থাকছি, আমাদের মধ্যে পাঁচ শ্রেণীর মানুষ আছে। যেমনঃ

১. শিশু , ২. কিশোর, ৩. যুবক , ৪. মধ্যবয়স্ক এবং ৫. বয়স্ক ।

এদের মধ্যে আবার দুই ভাগ আছে। ১। ছেলে এবং ২। মেয়ে।

জাতিগত ভাবে আমাদের দেশের মেয়েরা ঘরের বাহিরে কম যায়। ঘরের কাজকর্ম করে দিন অতিবাহিত করে। তাদের তেমন কোন সমস্যা হবার কথা না ঘরে থাকাটা। কিন্তু বর্তমানে অনেক মেয়ে চাকরি করছে অথবা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত আছে। বাহিরের সব কাজ এখন বন্ধ , অফিস বন্ধ , অনেকেই অফিসের কাজ বাসায় বসে করতে হচ্ছে। যারা অফিস এর কাজ বাসায় করছেন, তাদের ছেলে মেয়ে স্বামী সংসার যাবতীয় ঘরের কাজ করে অফিসের কাজ করে দিন রাত কিভাবে যাচ্ছে তারা তা বুঝতে পারছেনা।

এই গেল একশ্রেণীর কথা….।

আরেক শ্রেণী যাদেরকে আমরা ছেলে বা পুরুষ বলে থাকি।
জাতিগতভাবে তারা ছোটবেলা থেকেই ঘরের বাইরে থাকে বেশিরভাগ সময়। দিনে রাতে যেকোনো সময় তারা বাড়ির বাইরে যেতে পারে, আসতে পারে। তাদের তেমন কোন সমস্যা হয় না। এই দিক থেকে ছেলেদের ঘরবন্দি থাকাটা একটু কষ্টকর। তাদেরকে ও মেয়েদের মত অফিসের কাজ গুলো বাসায় করতে হচ্ছে। বেশিরভাগ অফিস ভার্চুয়ালি খোলা। তবে এখন দিন পাল্টেছে, সময়ের সাথে সাথে ছেলেরাও বাসায় অনেক ছোট ছোট কাজ করে যেমন: ঘর মোছা ,ঘর ঝাড়ু দেয়া, রান্না করা, সন্তানকে সময় দেয়া, ছোট ভাইবোনদের সময় দেয়া। এই কাজগুলো গ্রাম কিংবা শহরে সব জায়গায় ছেলেদেরকে এখন করতে দেখা যায়। ছেলেদের ঘরবন্দি থাকাটা একটু কষ্ট হলেও খারাপ যাচ্ছে না দিন পার হয়ে যাচ্ছে।

আমরা তো সবাই যে যার মতো করে ঘরেবন্দি জীবন পার করছি ।এসবের মধ্যে একটা শ্রেণি আছে তাদের কথা কি আমরা ভেবে দেখেছি !!

তারা কিভাবে দিন পার করছে। আমরা কি তাদের মানসিক অবস্থার কথা চিন্তা করেছি। শারীরিক বিভিন্ন হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে যে শ্রেণীটি নিজেদেরকে শিশুও বলতে পারছেনা যুবকও বলতে পারছেনা।

কোনো ড্রেস পড়লে বারংবার আয়নার দিকে তাকায় তাকে মোটা লাগছে, বেশি বেশি শুকনো লাগছে কেমন লাগছে ? বেশি খাবার খেতে চায় না মোটা হয়ে যাবে ভেবে বা অতিমাত্রায় খাবার খায়। যারা বাবা মা পরিবারের সাথে থেকেও নিজেকে একা মনে করে। নিজের ভেতরের মানুষটাকে খোঁজার চেষ্টা করে, সে কে ?

তার কি জানে? কেন হচ্ছে তাদের শরীর ও মনে এরকম পরিবর্তন হচ্ছে? যারা নিজেদেরকে খুব অসহায় অনুভব করে। যারা মানুষের সাথে কথা বলতে লজ্জাবোধ করে তাদের এই শারীরিক পরিবর্তনের কারণে। এ সময় যাদের সবচেয়ে ভালো বন্ধু তার সমবয়সীরা। যাদের সারাদিন কাটতো বিভিন্ন কাজ কর্মের মধ্যে, সুন্দর একটা রুটিন লাইফ এর মধ্যে দিয়ে ।

হুম আমি তাদের কথাই বলছি যাদের বয়স ১৩ থেকে ১৬ এর মধ্যে আমি সেই কিশোর-কিশোরীদের কথাই বলছি। আমি বয়ঃসন্ধিকালের তরুন-তরুনীদের কথাই বলছি।

আমার জানতে খুব ইচ্ছে করছে তারা কিভাবে ঘরবন্দি জীবন পার করছে? তারা কি তাদের হাতের মোবাইল বা বাবা-মামার মোবাইল টাকে সবচেয়ে আপন বন্ধু হিসেবে বেছে নিয়েছে!! তখন কি তাদের সারাটা দিন কাটছে মোবাইলের মধ্যে। তারা কি মানসিকভাবে ভালো আছে ? আমরা তো আমাদের ভালোলাগা-মন্দলাগা প্রকাশ করতে পারছি। আবার শিশুরা যেমন বাবা মায়ের সাথে বলতে পারছে। হাসবেন্ড ওয়াইফ কে বলতে পারছে। ভালো না লাগার কথা গুলো। এই বয়সে ছেলে মেয়েগুলো তারা কি তাদের বাবা-মাকে বলতে পারছে তাদের ঘরে থাকতে খারাপ লাগছে। হয়তো বা হ্যাঁ হয়তোবা না । আমরা যারা তাদের আশেপাশে আছি। যারা বাবা- মা , ভাই- বোন আছি আমরা তাদেরকে এই কিশোর-কিশোরীদেরকে। এ অবস্থায় আমরা মানসিকভাবে সাহায্য করতে পারি।

মানসিক শক্তি দিয়ে তাদেরকে মোবাইলের মধ্যে ঠেলে না দিয়ে বাস্তবের সাথে সম্পর্ক গড়তে সাহায্য করতে পারি

কিছু ভাবনা শেয়ার করলামঃ

১. তারা যখন পড়তে বসে তাদের সাথে বসে একই রুমে অফিসের কাজগুলো করতে পারি।

২. মোবাইলের মাধ্যমেও অনেক ক্রিয়েটিভ কাজ করা যায়। সেই কাজগুলো করতে উৎসাহ দেয়া। যেমনঃ ভিডিও এডিটিং। অথবা সচেতন মুলক ভিডিও তৈরি করতে।

৩. একই সাথে বসে ভালো ভালো মুভি দেখতে পারি।

৪. বাসার ছোট ছোট কাজে তাদেরকে ইনভলভ করা। সেটা হতে পারে রান্নার কাজ, সবজি কাটা হতে পারে, কাজ করার পরে অবশ্যই তাদেরকে খুব বেশি প্রশংসা করা।

৫. ধর্মীয় কাজে বাসার সবার সাথে তাদেরকেও করতে উৎসাহ দেয়া ।

৬. ছোট ছোট শারীরিক ব্যায়াম প্রতিদিন সবাই মিলে একসাথে তাদেরকে নিয়ে করা।

৮. ছোট ভাই বোনদের সাহায্য করতে তাদেরকে উৎসাহ দেয়া

৯. তাদেরকে হুকুম না দিয়ে একটু অন্য ভাবে দরদ দিয়ে বলে কাজে ইনভলভ করা ।

সর্বোপরি বলব ঘরে থাকি, নিজে বাঁচি, পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাঁচি। সবাই সবার প্রতি যত্নশীল হই। পরিবারকে নিয়ে একসাথে থাকার এরকম সময় হয়ত আর পাবেন না।

Facebook Comments