banner

সোমবার, ০৬ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 412 বার পঠিত

 

সিজদাহ: দ্যা বেস্ট রিলাক্সেশন থেরাপি (পর্ব-১)

সিজদাহ: দ্যা বেস্ট রিলাক্সেশন থেরাপি (পর্ব-১)


জিয়াউল হক


মানুষের শরিরের গঠন প্রকৃতির দিকে খুব গভীরভাবে লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাই যে, মানবদেহের সর্বোচ্চ পয়েন্ট হলো তার মাথা এবং সেই মাথার মধ্যে অবস্থানের দিক থেকে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে ব্রেনের ফ্রন্টাল লোব।

এই ফ্রন্টাল লোব (Frontal lobe) ব্রেনের চারটি লোব বা খন্ডের একটি। এই চারটি লোব আবার নিজেদের মধ্যে বিভাজন রয়েছে। শত শত কোটি নিউরন বা স্নায়ুকোষ নিয়ে এই লোবগুলি গঠিত। প্রতিটির সুনির্দিষ্ট কর্মপরিধি রয়েছে আর প্রত্যেকটি লোব অপর লোবের উপরে কম বেশি নির্ভরশীল, তথা, সকল লোবগুলি পরস্পর পরস্পরের সাথে সমন্বয় করেই তাদের কাজগুলো সম্পাদন করে থাকে।

আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনার প্রতি আমি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। আমরা দুপুরের খাবার গ্রহণের পর প্রায়শই ঘুম ঘুম ভাব অনুভব করি। এ সময়ে শরীর নিস্তেজ হয়ে আসতে চায়। অনেকের আবার নিয়মিত ঘুমের অভ্যাসও আছে। এ সময়ে হাল্কা বিশ্রামের মাধ্যমে সেই ঘুম ঘুম ভাবটা কাটিয়ে উঠা যায়। ইসলাম ধর্মেও তেমনটা উৎসাহ দেয়া হয়ে থাকে। প্রিয় রাসুল সা: দুপুরে খাবারের পর হাল্কা বিশ্রাম করতেন (কাইলুলা)।

খাবারের পর আমাদের মধ্যে যখন ঝিমুনি আসে তখন আমরা বার বার মুখ খুলে লম্বা নি:শ্বাস নেই (আমাদের চলতি ভাষায় ‘হাই তোলা’ বলে থাকি)। এটা একটা শারিরক প্রক্রিয়া। এর পেছনে যে বৈজ্ঞানিক ব্যাখা রয়েছে সেটাকে আমাদের বুঝতে হবে।

আমরা যখন খাবার গ্রহণকরি, তখন আমাদের পাকস্থলি, লিভার’সহ শরীরের পুরো পরিপাকতন্ত্রই সেই খাদ্যকে হজম করতে কাজে নেমে পড়ে। তারা কাজে নেমে পড়ে মানে পরিপাকতন্ত্রের সকল অঙ্গপ্রতঙ্গ পূর্বের তুলনায় এ সময় বেশি বেশি রক্ত সরবরাহ নেয়। এই যে বেশি রক্ত সরবরাহ নিল এর ফলে আমাদের মাথার ব্রেন, তথা, সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম তার রক্তে অস্কিজেনের স্বল্পতা অনুভব করে।

অস্কিজেনের এই স্বল্পতা পূরণ করতেই সে তখন আমাদের স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে যে পরিমাণ অক্সিজেন শরীরে ঢুকছে, তার চেয়ে বেশি অক্সিজেন সরবরাহের জন্য মুখ দিয়ে বারবার অক্সিজেন নেয় এবং চাহিদা পুরণ করে। আমারও সে সময় ঘুমিয়ে পড়ি বা বিশ্রাম নেই, ফলে আমাদের শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রতঙ্গগুলো (যেমন চোখ, হাত, পা ইত্যাদি) বিশ্রামে যাবার ফলে তাদের দ্বারা রক্ত ও অক্সিজেনের ব্যবহার কমে যায়, সেই বাড়তি রক্ত ও অক্সিজেনটুকু পেয়ে আমাদের ব্রেন নিজেকে শান্ত করে। আমাদের ক্লান্তি দূর হয়, আমরা সতেজ অনুভব করি।

কেবল খাবার গ্রহণের পরেই যে এরকম ক্লান্তি বোধ করি তাই নয়, আমরা দীর্ঘক্ষণ ধরে পরিশ্রমের কাজ করলে কিংবা কায়িক প্ররিশ্রম ছাড়াও বুদ্ধিবৃত্তিক পরিশ্রম করলে বা চিন্তা ভাবনা করলে বা মানসিক দু:শ্চিন্তা, ভয় আতংকের মধ্যে থাকলেও আমাদের শরিরে ক্লান্তি ভাব আসে। সেরকম ক্ষেত্রে আমাদের শরির ও মনের উপরে নানারকম সাময়িক ও ক্ষণস্থায়ী প্রভাব পড়ে। আমাদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে পড়ে, কাজে মন বসে না, আমরা ধৈর্য হারিয়ে ফেলি, কোন জটিল বিষয়ে কিংবা কোন একটি বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার মতো মানসিক যোগ্যতা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা কমে আসে ।

এই যে গভীর চিন্তা ও বিশ্লেষণ করা, যুক্তি তথ্য উপাত্তকে যাচাই করে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহনের সক্ষমতা, এটা নির্ভর করে ব্রেনের ফ্রন্টাল লাবের উপরে।

লেখক: জিয়াউল হক
রিসার্চ ডাইরেক্টর
একাডেমি টুয়েন্টি ওয়ান

Facebook Comments