banner

সোমবার, ০৬ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 406 বার পঠিত

 

সিজদাহ: দ্যা বেস্ট রিলাক্সেশন থেরাপি (পর্ব-২)

সিজদাহ: দ্যা বেস্ট রিলাক্সেশন থেরাপি (পর্ব-২)


জিয়াউল হক


আমাদের ব্রেনের এই ফ্রন্টাল লোব অন্যান্য যে সব কাজ করে তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো;

(১) মনের ভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর বাক্য বা যুক্তি, ভাষার জোগান দেয়া,
(২) অপরের মনের ভাব উপলব্ধি করা, মানুষকে বুঝা, তাকে যাচাই করা,
(৩) দুটো জিনিসের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা তথা উত্তম ও অধম যাচাই করা,
(৪) পুরো ব্রেনের অন্য তিনটি লোবসহ ফ্রন্টাল লোবও স্মৃতি সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণের কাজটা করে থাকে, কিন্তু ফ্রন্টাল লোব এই স্মৃতিকে দীর্ঘমেয়াদে (রিমোট মেমোরি) সংরক্ষণ করার কাজে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে,
(৫) ন্যায় অন্যায়, বৈধ অবৈধ বা ভালো মন্দ যাচাই করা তার কাজ,
(৬) ব্যক্তিত্ব তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে,
(৭) শরিরের কোন কোন অঙ্গসঞ্চালন ও তাদের মধ্যে সমন্বয়,
(৮) আমাদের শরিরে, যেমন; হাত, পা সঞ্চালন ও তাদের মাংশপেশির কার্যসমন্বয় ইত্যাদি) সাধন করে থাকে।
(৯) আরও একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে ফ্রন্টাল লোব।

সেটা হলো; আমাদের শরিরে ডোপামিন নামক এক ধরনের হরমোন নি:স্বরণ হয়, এটা একই সাথে আবার নিউরোট্রান্সমিটারও ব,ে তাই ডোপামিনকে বলা হয় কেমিক্যাল মেসেঞ্জার বা যৌগিক বার্তাবাহক (Chemical Messenger)। ডোপামিন আমাদের চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি, মনযোগ কোন এক বিশেষ দিকে নিবদ্ধ করা ও তা ধরে রাখা, আবেগ অনুভুতি, সূখ ও আনন্দানুভূতির মাত্রা জাগিয়ে তোলা বা নির্ধারণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

ডোপামিন শরিরে রক্তসঞ্চালন প্রক্রিয়া ও হৃদযন্ত্রের কাজকে প্রভাবিত করে, কিডনির কার্যক্রমের উপরেও সে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে। মানসিক স্থিতিশীলতা, প্রশান্তি, মনযোগ সৃষ্টি করার ক্ষমতা, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি বা অক্ষুন্ন রাখা, মানসিকভাবে উদ্দীপ্ত, উজ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত হওয়া এসব কিছুই অনেকাংশে নির্ভর রে এই ডেপামিন নামক হরমোনের উপরে। হরমোনটি নি:স্বরণের মাত্রা হ্রাস বৃদ্ধির উপরে আমাদের মনোদৈহিক সুস্থতা বা অসুস্থতা নির্ভরশীল। শরিরে ডোপামিনের মাত্রা কমে গেলে আমাদের ভেতরে অবষাদ, বিষণœতা বা ডিপ্রেশন দেখা দেয়।

মেডিটেশন, সুষম খাদ্য, কায়িক পরিশ্রম বা ব্যায়াম ও যথাসময়ে যথাযথ পর্যাপ্ত ঘুম এসবের মাধ্যমে শরিরে ডোপামিনের মাত্রা সঠিক মাত্রায় রাখা সম্ভবপর।

শারিরিক, মানসিক ও পারিপার্শ্বিক নানা কারণে মানুষের মনে ¯œায়ুচাপ, অবসাদ বেড়ে গেলে তার চিন্তা চেতনা, তার সুস্থতা ব্যহত হয়, নানা ধরনের মনোদৈহিক উপসর্গ দেখা দেয়। শুরুতেই এ অবস্থাকেি নয়ন্ত্রণ করা না গেলে ক্রমেই তা জটিল হতে জটিলতর হতে থাকে। এরকম অবস্থায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে। রোগের মাত্রানুযায়ী ঔষধ ও কাউন্সেলিং, সাইকোথেরাপির প্রয়োজন হতে পারে।

এরকম পরিস্থিতিতে চিকিৎসার অন্যতম একটা অনুষঙ্গ হিসেবে মনোবিজ্ঞানীরা রিলাক্সেশন থেরাপির আশ্রয় নেন। তারা তাদের ক্লায়েন্টদের বিভিন্নরকম রিলা´েশন থেরাপির প্রয়োগ করিয়ে থাকেন। এইসব রিলাক্সেশন থেরাপির লক্ষ্য একটাই হয়ে থাকে, তা হলো, সকল কিছু থেকে মনেযাগ সরিয়ে নিজের দিকে মনযোগকে নিবদ্ধকরণ এবং সেই সাথে তারা যে সব টেকনিক প্রয়োগ করেন, তার মধ্যে অন্যতম হলো ধীর গতিতে লম্বা নিশ্বাস নিয়ে তা প্রায় তিন অথবা পাঁচ থেকে সাত সেকেন্ড পর্যন্ত ধরে রেখে মুখ দিয়ে তা ধীরে ধীরে ছেড়ে দেয়া।

এভাবে লম্বা নিশ্বাস নেয়া এবং তা কিছুক্ষণের জন্য ধরে রাখার মাধ্যমে তারা আসলে বাড়তি অক্সিজেন নেন শরিরে এবং তা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশিক্ষণ ধরে রেখে আমাদের রক্তকে সুযোগ করে দেন গৃহিত সেই বাতাস থেকে যেন বেশি অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে আামদের শরির, ফলে আমাদের ব্রেনও স্বাভাবিকভাবেই বেশি অক্সিজেন পাচ্ছে এবং সতেজ হয়ে উঠছে।
ব্রেন নতুন অক্সিজেন পেয়ে সতেজ হয়ে উঠলে শরিরের অবসাদ ভাব কেটে যায়। পুরো শরিরের মাংশপেশিতে তার প্রভাব পড়ে, ইতিবাচক প্রভাব পড়ে আমাদের চিন্তা চেতনা, মনযোগ’সহ সকল কাজ কর্মে এবং কথা বার্তায়ও।

প্রচলিত মানসিক চিকিৎসা ও পূনর্বাসন কার্যক্রমে এই রিলাক্সেশন থেরাপি বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।
ইসলামি জীবন ব্যবস্থায় ঠিক এই কাজটিই করে সিজদাহ। আমরা সাধারণত এই নামাজের মধ্যে সিজদাহ দেই। কিন্তু নামাজ ছাড়াও ইসলামে আল্লাহর উদ্দেশ্যে সিজদাহ করার বিধান ও রেওয়াজ রয়েছে।

বরং মনোবিজ্ঞানীরা রিলাক্সেশন থেরাপি ব্যবহার করে যে ফল পান, নামাজ ও সিজদাহতে তার চেয়ে বেশি কার্যকর ও দীর্ঘস্থায়ী ফল পাওয়া সম্ভব।

রিলাস্কেশন থেরাপিতে যেমন নিরিবলি জায়গার আয়োজন করে বসতে হয়, ঠিক তেমনি নামজের জন্য ব্যক্তি ঘর বা মসজিদের শান্ত জয়গা ঠিক করে নেন। তিনি নামাজের জন্য অজু গোছল করে মানসিক স্থিতির সাথে নিজেকে তৈরি করেন।
নামজে এবং নামজের বাইরে সিজদাহর মাধ্যমে মানব শরিরের ব্রেনে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে কিভাবে ক্লান্তি অবসাদ দূর হয়ে মানসিক শান্তি অর্জিত হয় সে বিষয়টির যুক্তিগ্রাহ্য বৈজ্ঞানিক ব্যখাটা আমরা অতি সংক্ষেপে আলোচনা করে দেখবো।

এই নবন্ধের শুরুতেই আমরা অতি ষংক্ষেপে, যতোটা সহজ প্রাঞ্জল এবং নন একাডেমিকভাবে আমাদের ব্রেনের একটা অংশ ফ্রন্টাল লোব, তার অবস্থান ও কাযক্রম নিয়ে যৎসামান্য আলোচনা করেছি। সেখানে আমরা দেখিয়েছি যে এই ফ্রন্টাল লোব-ই আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা, যুক্তি, বিচার ও চিন্তাশক্তি’সহ আবেগ অনুভুতির বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে। অবশ্য ব্রেনের অন্যান্য অংশও তাকে এই কাজে সহযোগীতা করে এবং নিজ নিজ কাজের অংশ সম্পদন করে, তবে, এই ফ্রন্টাল লোবই আসল কাজটা করে থাকে।

আমাদের শরির জন্মপূর্ব থেকে, তথা, মায়ের পেটে থাকাবস্থায়ই ক্রমশ বেড়ে উঠে, জন্মের পর তা সময় নিয়ে পূর্ণতা পায়। একই বাস্তবতা হলো ব্রেনের বেলাতেও। ব্রেন মায়ের পেটে থাকাবস্থায় তৈরি হতে থাকে, তবে তা পচিশ বছরে বয়সে এসে পূর্ণতা পায়। ব্রেনের যে অংশটুকু সর্বশেষে পূর্ণতা পায়, সেটা হলো এই ফ্রন্টাল লোব, তথা, আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক ও আবেগ নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্র।

…….  চলবে

Facebook Comments