All posts by Oporajita

 

বাংলাদেশে জরায়ু ক্যান্সার নিয়ে যে সংকোচ


নারী স্বাস্থ্যকথা


বাংলাদেশে নারীরা লজ্জায় তাদের সমস্যার কথা বলতে চান না। আন্তর্জাতিক ক্যান্সার গবেষণা এজেন্সি সাম্প্রতিক এক জরীপে বলছে, বাংলাদেশে বছরে সাড়ে ছয় হাজারের বেশি নারী জরায়ু মুখের ক্যান্সারে মারা যাচ্ছে।

প্রতি বছর নতুন করে ১২ হাজারের মতো নারীর শরীরে এই ক্যান্সার সনাক্ত হচ্ছে। অথচ অন্য ধরনের ক্যান্সারের তুলনায় জরায়ু মুখের ক্যান্সার খুব সহজে নির্ণয় করা যায়।

এমনকি হওয়ার আগেই ধরা যায়। তাছাড়া দেশের সকল সরকারি হাসপাতাল, এমনকি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও এটি নির্ণয়ের প্রাথমিক ধাপটি বিনামূল্যে পাওয়া যায়।

ঢাকার জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউটের হাসপাতালে সারা দেশ থেকে আসা রোগী ও তাদের আত্মীয়দের উপস্থিতিতে দিনভর সরব হয়ে থাকে।

সেখানে গাইনি অংকলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ আফরোজা খানম বিবিসি বাংলাকে বলছেন, জরায়ু মুখের ক্যান্সার নিয়ে হাসপাতালে যেসব নারীরা আসেন তাদের বেশিরভাগেরই বড্ড দেরি হয়ে গেছে।

বাংলাদেশেও কেন মেয়েদের মধ্যে ক্যান্সার বাড়ছে?

ক্যান্সারের ঝুঁকি: ‘অতিরিক্ত ওজন নারীদের জন্য বেশি মারাত্মক’

বাংলাদেশে ক্যান্সার চিকিৎসার ব্যয় নিয়ে দিশেহারা রোগীরা তিনি বলেছেন, জরায়ু মুখের ক্যান্সারের মুল সমস্যা হল এটি শেষ পর্যায়ে গেলেই শুধুমাত্র ব্যথা দেখা দেয়।
এর লক্ষণগুলোকে অনেকেই মাসিকের মেয়েলি সমস্যা বলে ভুল করে থাকেন।

যখন চিকিৎসকের আসে আসেন তখন প্রায়শই অনেক দেরি হয়ে যায়।
তিনি বলছেন, “ব্যাথা একদমই থাকে না। এর ব্যথা থাকে কখন যখন শেষ পর্যায়ে চলে যায়, যখন রোগটা অনেক দূর ছড়িয়ে যায়। হাড়ের মধ্যে চলে যায়। এই পর্যায়ে গিয়ে ব্যথা হয়। প্রাথমিক ভাবে কোন ব্যাথা থাকে না দেখেই কিন্তু আমাদের দেশের মহিলারা আসে না।”

“প্রিভেনশন তো বোঝেই না, যখন হয়, হওয়ার পরেও তারা অপেক্ষা করে। দেখা যায় দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব যাচ্ছে কিন্তু লজ্জায় সে কাউকে বলছে না। স্বামীর সাথে মেলামেশায় রক্ত যাচ্ছে সেটিও সে বলছে না। যখন আসে তখন অনেকে দেরি হয়ে যায়।”

অথচ এতদূর পর্যন্ত এটি গড়ানোরই কথা নয়। কারণ অন্য ধরনের ক্যান্সারের তুলনায় জরায়ু মুখের ক্যান্সার সবচাইতে সহজে নির্ণয় করা যায়। এমনকি হওয়ার আগেই খুব সহজ পরীক্ষায় ধরা যায় ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা। জীবাণু প্রবেশের পর জরায়ু-মুখের ক্যান্সার হতে ১৫ থেকে ২০ বছরও সময় লাগে। বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির হাসপাতালের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডাঃ জেবুন্নেসা বেগম জরায়ু মুখের ক্যান্সার স্ক্রিনিং সম্পর্কে প্রচারে সহায়তা করেন।
তিনি বলছিলেন, জরায়ু মুখের ক্যান্সার হওয়ার আগেই নির্ণয়ে অনেক সময় পাওয়া যায়।

অল্প বয়সে বিয়ে আর অনেক বাচ্চা হওয়া অন্যতম প্রধান কারণ।
তিনি সেটি সম্পর্কে বিস্তারিত যা বললেন তা হল, “যে দুই প্রকার প্যাপিলোমা ভাইরাস দিয়ে এই ক্যান্সার হয়, সহবাসের মাধ্যমেই সেটি স্প্রেড হয়। ভাইরাসটি ঢোকার সাথে সাথেই ক্যান্সার হয় না। অন্য ক্যান্সারে জীবাণুটি ঢোকার পরে আমরা সময় খুব একটা পাইনা।”

“কিন্তু জরায়ু-মুখের ক্যান্সারে ১৫ থেকে ২০ বছরও সময় লাগে জীবাণু প্রবেশের পর ক্যান্সারটি হতে। তার মানে হল এটি নির্ণয়ে এতটা সময় পাওয়া যায়। নিয়মিত স্ক্রিনিং করালে ইনিশিয়ালি আমরা জার্মটা কমাই দিতে পারি।”

ক্যান্সার শব্দটি শুনলে বেশিরভাগ মানুষের মাথায় সম্ভবত ভীতিকর কিছুর অনুভূতি হয়। কিন্তু এর সাথে যখনি জরায়ু মুখ শব্দটি যুক্ত হয় তখন অনেকেই এ নিয়ে কথা বলায় যেন সংকোচ বোধ করেন।
আর এর সাথে যৌন সম্পর্কের বিষয়টি যুক্ত থাকায় সেনিয়ে কথা বলায় রয়েছে আরও আড়ষ্টতা।
এমনকি চিকিৎসকেরাও তার বাইরে নন।

জরায়ু মুখের ক্যান্সার নির্ণয় পদ্ধতি

অথচ জরায়ু মুখের ক্যান্সার নির্ণয়ের পরীক্ষার প্রাথমিক ধাপটি অত্যন্ত সহজ। সময়ও লাগে মাত্র এক মিনিট বলছিলেন ডাঃ জেবুন্নেসা বেগম। তিনি বলছেন, “এর স্ক্রিনিংটা খুবই সহজ। কোন যন্ত্রপাতি লাগে না। আমরা সবাই ভিনেগার বা সিরকার সম্পর্কে শুনেছি। সেটি ডাইলুট করে তুলায় লাগিয়ে জরায়ুর মুখে লাগিয়ে এক মিনিট রেখে দিলে যায়গাটা যদি সাদা হয়ে যায় তখন মনে করতে হবে এটি ক্যান্সারের পূর্বাভাস।”

“তখন আমরা সেটি কোন পর্যায়ে আছে তা জানতে মাইক্রোস্কোপ দিয়ে বাকি পরীক্ষা করতে পাঠাই। এমনও হয় খুব প্রাথমিক হলে সেখানেই রোগীর জরায়ুতে ইলেকট্রিক সেক দিয়ে দেয়া হয়। সেটাতেও কয়েক মিনিট লাগে,” যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশের সকল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সরকারি জেলা সদর হাসপাতাল, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, এমনকি নির্বাচিত কিছু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে জরায়ু মুখের ক্যান্সার নির্ণয়ের প্রাথমিক ধাপটি বিনামূল্যে পাওয়া যায়।

অর্থাৎ বিবাহিত ও যৌন সংসর্গ আছে এমন নারীরা সিরকা দিয়ে পরীক্ষার সহজ এই ধাপটি করিয়ে নিলেই জেনে যাবেন তার এই ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা। অধ্যাপক ডাঃ এম এ হাই বলছেন নারীদের নিজেদের সম্পর্কে কথা বলতে হবে।
বয়স তিরিশ হওয়ার পর থেকে প্রতি তিন থেকে পাঁচ বছর পর পর একবার এই পরীক্ষাটি করিয়ে নিতে বলেন চিকিৎসকেরা।

যে কারণে বাড়ছে জরায়ু ক্যান্সারের প্রকোপ

এত সহজ ও বিনামূল্যে সেবা থাকা সত্ত্বেও জরায়ু মুখের ক্যান্সার বাংলাদেশে নারীদের মধ্যে দ্বিতীয় প্রধান ক্যান্সার।

এতে বছরে মারা যাচ্ছে সাড়ে ছয় হাজারের বেশি। নতুন করে ১২ হাজারের মতো নারীর শরীরে এই ক্যান্সার সনাক্ত হচ্ছে।

ডাঃ আফরোজা খানম বলছেন, “এর সনাক্তকরণের বিনামূল্যের সেবাটি সম্পর্কে তথ্য নারীরা অনেকেই জানেন না। জানলেও সংসার ফেলে সময় ও আর্থিক সমস্যার কারণে আসতে পারেন না। আবার অনেকেই বলেন আমার ক্যান্সার হয়নাই আমি কেন যাবো। স্ক্রিনিং এর উপকারটি সম্পর্কে তাদের জানাটা খুব জরুরী।”

বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডাঃ এম এ হাই বলছেন এর পেছনে প্রাচীন কাল থেকে চলে আসা একটি সাংস্কৃতিক কারণ রয়েছে।

বাংলাদেশে মেয়েদের খুব অল্প বয়সে বিয়ে আর ঘন ঘন সন্তান জন্মদানকেই বলা হচ্ছে এর প্রধান কারণ।

তিনি বলছেন, “আমাদের কালচারাল বিষয় হল এখানে অল্প বয়সে বিয়ে হয় আর অনেক বাচ্চা হয়। এত অল্প বয়সে সবকিছু ঠিকমতো গঠনই হয়নি। তারমধ্যেই যৌন সঙ্গম আর খুব অল্প বয়সে বাচ্চা নেয়া। এতে জরায়ু মুখের উপর অনেক চাপ পড়ে। “

“যেহেতু তারা অপুষ্টিতে ভোগে তাই তাদের সেরে উঠতে সময় লাগে। তাতে দেখা যাচ্ছে জরায়ু মুখের রিপেয়ারটা ভালোমতো হয়না। এভাবে বারবার বাচ্চা হতে গিয়ে যদি বারবার ড্যামেজ হয় তাহলে ঐখানে একটা অ্যাবনরমাল সেল তৈরি হতে পারে।”

জরায়ু মুখের ক্যান্সারই একমাত্র ক্যান্সার যার টিকা রয়েছে।
তিনি বলছেন, “এর অর্থনৈতিক কারণও আছে। যেমন মেয়েরা যারা খাটাখাটি করে ফ্যামিলিতে হয়ত তাদের ঠিকমত দেখাশোনা করে না। তাদেরকে সময়মত ডাক্তারের কাছে নেয়া হয়না।”

“সে নিজে অর্থের অভাবে যেতে পারে না। আর বাংলাদেশে নারীদের স্বভাবই হল সবাই খাওয়ার পরে কিছু থাকলে খায় না থাকলে খায়না।”

ডাঃ হাই বলছেন সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক কারণের সাথে শিক্ষারও একটি বিষয় রয়েছে। তিনি বলছেন, তারই করা এক গবেষণায় তিনি দেখেছেন বাংলাদেশে যৌনাঙ্গের পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে শিক্ষার মারাত্মক অভাব।

তিনি বলছেন, “আমি আমার এক স্টাডিতে দেখেছি যে বাংলাদেশে গ্রামে ৭৫ শতাংশ নারীর জরায়ু-মুখে ইনফেকশন আছে। এর কারণ হচ্ছে সেক্সুয়াল অর্গানের পরিচ্ছন্নতার অভাব।”

তিনি বলছেন, এই পরিচ্ছন্নতা তাকে নিজেকে যেমন বজায় রাখতে হবে তেমনি তার পুরুষ সঙ্গীকেও সমানভাবে রাখতে হবে।

তিনি বলছেন, নারীরা লজ্জায় কিছু মুখ ফুটে বলে না সেই সংস্কৃতিকে পরিবর্তন করতে হবে। বাড়ির পুরুষ সদস্যদের এ ব্যাপারে তাদের সাথে কথা বলতে পারতে হবে।

তবে ডাঃ আফরোজা খানম হতাশা প্রকাশ করে বলছেন, “দেশে মেয়েরা রূপচর্চার জন্য যে সময় ও অর্থ ব্যয় করে সেটি যদি তারা নিজেদের স্বাস্থ্যের জন্য করতো। চেহারা দেখা যায় তাই আমরা তার পেছনে সময় দিচ্ছি। কিন্তু আমার জরায়ু আমাকে মা হতে সাহায্য করে। এটির গুরুত্ব তাদের বোঝা উচিৎ।”

এর বাইরে যেসব নারীর বহু পুরুষের সাথে যৌন সম্পর্ক, তারা রয়েছেন বেশি ঝুঁকিতে।

অথবা যেসব পুরুষের অনেক যৌন সঙ্গী রয়েছে তারাও নারী সঙ্গীদের বেশি ঝুঁকিতে ফেলছেন।

কিন্তু এই ক্যান্সার সম্পর্কে আরেকটি ভালো বিষয় হল এটিই একমাত্র ক্যান্সার যার টিকা রয়েছে। যা দেয়ার উপযুক্ত সময় হল মেয়েদের যৌন জীবন শুরুর আগে।

 

কি ভাবে মা ডাক্তার হয়ে উঠেন?

কি ভাবে মা ডাক্তার হয়ে উঠেন?


ডা. মারুফ রায়হান খান


একবার গাইনির এক ম্যাডামের সাথে অপারেশান করছিলাম। অপারেশানের মাঝে তার ছোট্ট মেয়েটার ফোন৷ তখন ৩টা কী সাড়ে ৩টা বাজে। ফোন করে বাচ্চাটার কী কান্নাকাটি৷ আম্মু তুমি এখনই চলে এসো, প্লিইইইইজ চলে এসো…ম্যাডামের হঠাত করে চেহারায় কালো মেঘ। ৫টার আগে কোনোভাবেই তার বেরুনো সম্ভব না। খুব কষ্টে বলছিলেন, আসার সময় মেয়েটা টেনে ধরে রাখে; যেতে দেবে না তো দেবেই না। অনেক কষ্টে কাজের লোকের কাছে রেখে আসেন৷ সারাক্ষণ মন উচাটন করে। কিন্তু এতো পপুলার গাইনোকোলজিস্ট, দম ফেলার ফুরসত কোথায়? ফোনেও তো খোঁজ বেশি নেবার সময় পান না।

আমার এক আপুর বাচ্চা খুবই ছোট। তাকে প্রতিদিন সাড়ে ৬টায় বাসা থেকে বের হতে হয়৷ আপু যখন বের হন তখন তার বাবা নাতিকে বারান্দায় নিয়ে যান। আর এই ফাঁকে আপু তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে যান৷ ছেলে দেখলে যে তুমুল কান্নাকাটি শুরু করবে আর যেতে দেবে না৷ মাঝেমাঝে দেখতাম সবসময় হাসিখুশি সেই আপুর মুখ থমথমে। ঐ তো বাচ্চার জ্বর…রেখে এসেছেন।

সামনে পরীক্ষা। পোস্টগ্র‍্যাড এন্ট্রি পরীক্ষা এক অবিশ্বাস্য কঠিন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা। রাত-দিন পড়তে হয়। পড়লেও যে চান্স হবে তার নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না। উনার ছেলেটা তখন সদ্যই হাঁটে, কথা বলে। উনি দরজা বন্ধ করে পড়েন। ছেলে ডাকে–মা মা আর দরজায় নরম হাতের আলতো শব্দ করে। চোখে পানি নিয়েও তিনি দরজা খোলেন না। একবার কোলে উঠলে আর তো নামবে না। পড়াও হবে না। সারাজীবন ভালো ছাত্রীর তকমা পাওয়া মানুষটাকে এই নিষ্ঠুরতাটুকু দেখাতেই হচ্ছে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হতে।

“মেয়েকে কার কাছে রেখে এসেছো এখন?” স্যারের সহানুভূতিমাখা এই প্রশ্ন শোনার সাথে সাথে আপু হাউমাউ করে কেঁদে দিলেন। বললেন কাজের মেয়ের কাছে। হাজব্যান্ড দেশের বাইরে থাকেন। পোস্ট গ্র‍্যাজুয়েশান কোর্সের মধ্যবর্তী একটা বড় পরীক্ষায় মাত্রাতিরিক্ত স্ট্রেসের জন্যে মেয়ের যত্ন না নেয়ার দরুণ তার মেয়েটির ওজন কয়েক কেজি কমে গিয়েছিল। আবার এদিকে সারাক্ষণ মেয়ের যত্ন নিতে গেলে, সময় দিতে গেলে পড়াশোনায় পিছিয়ে যেতে হয় অনেকটা। এ কোন অকূল পাথার! এ কোন নির্মম পরীক্ষা! “তুমি ভীষণভাবে পড়তে চাইছো কিন্তু পড়তে পারছো না এটা অনেক কষ্টের এক অনুভূতি!” কখনও কখনও এই ছোট্ট বাচ্চাটাই দুর্ব্যবহারের শিকার হয় এই মাত্রাতিরিক্ত স্ট্রেসের জন্যে। অথচ এই মা তো তার সন্তানকে কম ভালোবাসেন না। তার সারাটা দিনের চিন্তার কেন্দ্রবিন্দু ঐ ছোট্ট আদুরে নিষ্পাপ সত্ত্বাটিই তো।

এটা তো মাত্র কয়েকটা গল্প। এমন গল্প শত শত। নাহ। তারও অনেক বেশি। এই গল্পগুলো প্রায় সবারই। ঘোর অমাবস্যার দীর্ঘশ্বাসের গল্প। অকল্পনীয় স্যাক্রিফাইসের গল্প।

আপনাকে যে নারী চিকিৎসকটি চিকিৎসা করেন, সে আর ৮/১০ জন মানুষের মতো না। জগতে যদি বিস্ময়কর সত্ত্বা থেকে থাকেন তবে তারা হচ্ছেন এই নারী চিকিৎসকরা। মাথায় হাজারও দায়িত্বের বোঝা আর হৃদয়ে অজস্র কষ্টের আঁকিবুঁকি নিয়েই তারা আপনাকে যতোটা সম্ভব মা/বাবা সম্বোধন করে হাসিমুখে চিকিৎসা দিয়ে যান৷ মনে রেখেন, যে মমতার হাত আপনার কপাল ছোঁয়, সেই মুহূর্তে তার সন্তানের কপাল হাহাকার করে। পরিবারের অন্যরা বঞ্চিত হয়৷ আপনি যদি এই তাকে শ্রদ্ধা না করতে পারেন, আপনি জগতনীতির কাঠগড়ায় অসভ্য প্রাণী বলেই বিবেচিত হবেন সম্ভবত।

 

পিরিয়ড নিয়ে কোন ট্যাবু নেই আমার

পিরিয়ড নিয়ে কোন ট্যাবু নেই আমার


মিম্’মি রহমান


আজ হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে আমি রীতিমত সারপ্রাইজড হয়ে গেছি। সরস্বতী পূজার জন্য স্কুল বন্ধ ছিল আহ্ নাফের। তাই সে বাসায় ছিল। ডিউটির ফাঁকে দু’বার কথা বলেছি তার সাথে। একবার নাস্তা খাচ্ছিল জানালো। আরেকবার নীচে ব্যাডমিন্টন খেলতে যাচ্ছে বলে গেল।

গত রাত থেকে শরীর একটু খারাপ ছিল আমার। প্রতি মাসে শরীরের এই যন্ত্রণা সব মেয়েকেই ভোগ করতে হয়। ডিউটি শেষে ক্লান্ত শরীরে মনে বাসায় ঢুকেই হা হয়ে গেলাম আমি। আমার ছোট্ট রাজপুত্র পুরো বাসার ক্লিনিং করে রেখেছে !!! সে ময়লা বেলচাতে তুলতে পারে না বলে এক জায়গায় জমিয়ে রেখেছে। আর আমি যখন বাসায় ঢুকি তখন সে ডিস ক্লিনিং করছিল কিচেনে। আমি বললাম বাকিটুকু আমি করছি বাবা।তোমাকে আর করতে হবে না। শাওয়ার নিয়ে আস। আমি লান্চ দিচ্ছি টেবিলে।

সে বলল না মা আমি ডিস আর কিচেন ক্লিন করে শাওয়ার নিব। তারপর নামাজ পড়ে খাব। তুমি ফ্রেস হয়ে নাও। আর আজ কিন্তু বিকেলে আমাকে যখন দুধ দিবে তুমিও আমার সাথে এক কাপ খাবে। পিরিয়ডের সময় তো অনেক দুর্বল হয় শরীর। আয়রন লস হয়। কলাও খাবে। তুমি রেষ্ট কর মা।

আমার চোখে লিটারারি পানি চলে আসছিল ঐ মুহুর্তে। চুলে হাত বুলিয়ে বললাম তুই এতকিছু কিভাবে জানলি ?

—বায়োলজিতে হিউম্যান বডি চ্যাপ্টার পড়ে। তারপর গুগল করে বোঝার চেষ্টা করেছি। অনেক পেইনফুল এই পিরিয়ড। মা হবার জন্য কত কষ্ট করতে হয় তাই না মা ? তারপর টুক করে একটা “থ্যাঙ্কু মা” বলে ডিস ক্লিন করতে থাকলো আমার পোটলা গম্ভীর শান্ত বাচ্চাটা।

লুকিয়ে ছবি তুলেছি তার।

পিরিয়ড নিয়ে কোন ট্যাবু নেই আমার। এটা একটা স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন। আমার ছেলে যখন ক্লাশ থ্রিতে পড়ত তখন টিভিতে বিজ্ঞাপন দেখে জানতে চেয়েছিল প্যাড কি ? তখন ওকে ওর বয়সের উপযুক্ত শব্দ দিয়ে গল্প আকারে জানিয়েছিলাম প্যাড এবং পিরিয়ড সম্পর্কে।

আপনার মেয়ে সন্তানকে তো বটেই ছেলে সন্তানের কৈশোরে তাকেও জানিয়ে দিন ছেলে মেয়ের শারীরিক মানসিক স্বাভাবিক পরিবর্তনগুলো সম্পর্কে। দেখবেন ছেলে সন্তানটা ইভ টিজার না বরং মেয়েদেরকে সম্মানের, ভালোবাসার চোখে দেখতে শিখবে। মায়ের থেকে বড় শিক্ষক একজন মানব শিশুর জীবনে আর কেউ হতে পারে না।

একজন রেপিস্ট, একজন ইভ টিজার, একজন মার্ডারারের কেইস হিস্ট্রি স্টাডি করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জানা যায় তার শৈশব, কৈশোর, পারিবারিক পরিবেশে অপরাধ বান্ধব ছিল। তাই শুধু জন্মদান নয়, আসুন সন্তানকে একটু একটু করে একতাল মাংস পিন্ড থেকে মানুষ পুরুষ হিসেবে গড়ে তুলি।

#মিম্ মি

 

Sexual অ্যাবিউজ নিয়ে সচেতন হই

Sexual অ্যাবিউজ নিয়ে সচেতন হই


ফাতেমা শাহরিন


আমার কিছু গন্ধ মনে আসলেই বমি আসে, কিছু স্বাদ জ্বিহ্বায় লেগেছিল ভাবলেই গা গুলিয়ে যায়, আর কিছু স্পর্শ কথা কল্পনা করলে আমি ঘুমাতেই পারি না ম্যাম, কিছু মূহূর্ত আবছা অস্পষ্ট অশরীরি কিছু মানুষের মুখ। উফ, আমার মরে যেতে ইচ্ছে করে। এই স্মৃতি গুলো ঘুমাতে দেয় না৷ দুঃস্বপ্ন হানা দেয়। ঘুরে বেড়ায় ব্যস্ত মনের আনাচে কানাচে। বিশ্বাস করুন আমার এই বিষয় নিয়ে একদম কথা বলতে ইচ্ছে করে না। আমি এস এস সিতে A+ পেয়েছি, এইস এস সি A+। সব খানে গোল্ডেন প্লাস। আর এখন সবচেয়ে ভালো সাবজেক্ট নিয়ে, সবচেয়ে ভালো পাবলিক ভার্সিটিতে পড়ছি ম্যাম। আমি তো সব কিছু জয় করে এসেছি ম্যাম। এখন কেন ফ্লাসব্যাক আটকাতে পারছি না? কেন ছোট কালের সেই পিশাচ আমার চেহারায় ভেসে বেড়াচ্ছে? জানেন, আমি দুই দিন অজান্তে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকি। জ্ঞান ফিরে আমার কিছুই মনে থাকে না। আমি কি আমার সমস্ত স্মৃতি হারিয়ে ফেলছি? আমি কি আর কখনও স্বাভাবিক হবো না।

“ম্যাম আমি আর পারছি না”।

অবসরের মূহূর্তে হঠাৎ কে যেনো মনের দরজায় চিৎকার দিচ্ছে। আর আমি বেকুল হয়ে সমাধানের করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠছি। একূল পেলে অকুল পাই না, নীল দরিয়ার হাবডুবু খাই প্রায়স। কিন্তু মন তাকে কিছুতেই হারাতে চায় না, পিছু ধাওয়া করে। কাউন্সেলিং শুরু করেছি ছয় মাস হলো। কেস গুলো আমার মনে এতো খেলা করে। আমি আমার মতো জ্ঞান খুঁজি। জীবনের ব্যাস্ততা তাকে ফিরিয়ে আনে বাস্তবতায়। কখনো স্মৃতির সাথে চলে লুকোচুরি খেলা।

সত্যি হলো উপরের ঘটনাটি।

কিন্তু সৈকতে বসে মিষ্টি রোদ আমি গায়ে লাগাই ইচ্ছে করে। হয় তা বাস্তবে, নয়ত ইমাজারি রিল্যাক্সজেশন করে। একটু হাওয়ার পরশ, এক পশলা বৃষ্টি পটে আঁকা ছবির মত কারো প্রশান্তিকর হাসি, এটাই প্রাপ্তি আমার। একটা ঘন্টা পর যখন কেউ বলে আপু / ম্যাম / ম্যাডাম “খুব ভালো লাগছে”। “এখন অতো অস্বস্ত্বির লাগছে না”। “আমি এখন দৈনন্দিন কাজ একটু করতে পারছি, আগে তো একদমই পারতাম না”। ” আমার মনে হচ্ছে আমি এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে পারবো”।

গল্প গুলো টাকা দিয়ে পরিমাপ করা যায় না। ডাক্তারের কাছে মানুষ টাকা ঢালতে যায় যদিওবা মুখে বলে। বাস্তবে যায় নিজের জন্য। একান্ত নিজের কল্যাণের জন্য যায়৷ আর বাংলাদেশে সাইকোলজির আবির্ভাব তো খুবই রহস্যজনক কল্প কাহিনী দিয়ে সাজানো মোড়ক। অনেকে হুমায়ন আহমেদের গল্প পড়ে পড়ে কাউন্সেলিং সম্পর্কে জ্ঞান খুঁজে পাই ঠিক কল্প কাহিনী থেকে সঠিক জ্ঞান জানতে হলে পড়তে হবে আমাদের।

আসলে মানসিক সুস্থতার সংজ্ঞা জানতে পারলেই আমরা কাউন্সেলিং কি তা জানতে পারবো সহজে। আসো একটি তাত্ত্বিক জ্ঞান শুনি যদিও ভালো লাগে না।

মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক তেমন গুরুত্ব যেমন শারীরিক স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখা। কখনো কখনো শারীরিক সুস্থতার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মানসিক স্বাস্থ্য। কেন? কারণ মন খারাপ এতো ভয়ানক এক একটি অনুভূতি যা আমাদের আচরণে পরিবর্তন আনে৷ আগে পড়াশুনা করতে ভালো লাগতো এখন আর কোন কাজই করতে ভালো লাগে না। কখন কান্না পায়। কখন কখন দুনিয়া থেকে সারা জীবনের জন্য চলে যেতে ইচ্ছে করে। সামাজিক পরিপক্কতা অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধবী কিছুই ভালো লাগে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর মতে মানসিক স্বাস্থ্য হ’ল:..সুস্থতার এমন একটি রাষ্ট্র। যেখানে ব্যক্তি নিজেই তার জীবনের রাষ্ট্র প্রধান। তার নিজস্ব দক্ষতা, উপলব্ধি করতে পারে। জীবনের স্বাভাবিক চাপ বা পরীক্ষার সাথে লড়াই করে সমাধান করতে পারে। দৈনন্দিন পড়াশুনা, ঘরের, অফিসের এবং ফলপ্রসূভাবে কাজ শেষ করতে পারে এবং তার সম্প্রদায়ের জন্য অবদানও রাখতে সক্ষম হয়।” মানসিক স্বাস্থ্য কেবলমাত্র মানসিক ব্যাধি না থাকা তা কিন্তু নয় আমাদের হাসিখুশি স্বাভাবিক জীবন দীর্ঘ দিন ধরে চলতে না পারলেই আমরা মানসিকভাবে অসুস্থ হতেই পারি। জ্বর হলে যেমন লজ্জার কিছু নেই৷ মন খারাপ হয়ে তা একা একা সামলাতে না পারলে তা প্রকাশ করতে লজ্জার কিছু নাই বরং জহির স্যার বলেন, ‘যারা প্রচুর কথা বলে, মনে কষ্ট ধরে রাখে না তাদের মানসিক কষ্ট কমে যায় দ্রুত।’

আর সকল ধরনের অ্যাবিউজ বন্ধ করার একমাত্র মহা ঔষধ হলো, ” বলে দেওয়া ” লুকিয়ে না রেখে প্রকাশ করা। এমনই এক স্মৃতির পিছু ধাওয়া করছিলো গত বিশ বছর আগের একটা সন্ধ্যার কথা। আমার স্মৃতির শেলফগুলোতে থরে থরে সাজানো অজস্র ভালো স্মৃতি আছে। তবে অ্যাবিউজ হবার ঘটনা আছে। এটা ভেবে কষ্ট পেয়ে আটকে যাবার কোন কারণ নেই আমি দাড়াতে পারবো না৷ ইনশা আল্লাহ কাউন্সেলিং আপনাকে সাহায্য করবে বের হয়ে আসতে।

নিজের নেইঃ

অনেক সময় নিজের কাছে কোন উপায় থাকে না কিভাবে এই কষ্ট থেকে বের হয়ে আসবো তখন অন্যের জ্ঞানের উপর বিশ্বাস রাখতে হয়। অন্যের আলো নিয়ে নিজেকে উদ্ভাসিত করতে লজ্জার কিছু নেই। কাউন্সেলিং এর সেশনগুলো একেকটার একেক স্বাদ, একেক গন্ধ, একেক মর্ম – ভালো লাগায় ভরপুর অনুভূতির সৃষ্টি করতে পারে আপনি হয়ত আপনাকে চেনেন বলে জানেন? আসলে নিজেকে নতুন করে চিনতে এবং নিজের ভিতর থাকা, অদম্য ক্ষমতা দেখে আপনি আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবেন। তখন নিজের নেই মনে করে মন খারাপ হবে না।

 

বর্তমান সময়ের একটি বড় চ্যালেঞ্জ

বর্তমান সময়ের একটি বড় চ্যালেঞ্জ


কানিজ ফাতিমা


গবেষকরা মনে করছেন আমাদের শিশু-কিশোররা মানসিক দিক থেকে ধীরে ধীরে এক চ্যালেন্জিং পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে। গত ১৫ বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী শিশু- কিশোরদের মানসিক সমস্যা (childhood mental illness) এর সংখ্যা এতটাই উর্ধমুখী যে তা প্রায় মহামারী এর রূপ নেবার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।

পরিসংখ্যান বলছে –
• প্রতি পাঁচ জনে এক জন শিশু-কিশোর মানসিক সমস্যায় ভুগছে ;

• ADHD ( Attention Deficit Hyperactivity Disorder) অতিরিক্ত অস্থিরতা চঞ্চলতার সমস্যা বেড়েছে শতকরা ৪৩ ভাগ

• কিশোর বিষন্নতা (adolescent depression ) এর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় শতকরা ৩৭ ভাগ

• ১০ থেকে ১৪ বছরের শিশু- কিশোরদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে ২০০%

এসব সমস্যার কারণ হিসাবে যেকয়টি বিষয়টি গবেষকরা দায়ী করছেন তা হলো-

শিশু কিশোররা ছোট বয়েসেই অতিরিক্ত উম্মাদনা সৃষ্টিকারী (over-stimulated and over-gifted with material objects) জিনিস পত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ছে- যা তাদের স্বাভাবিক শৈশব থেকে বঞ্চিত করছে এবং সঠিক মানসিক বিকাশকে নষ্ট করছে।

বাবা- মায়ের সঙ্গে ( অন্যান্য আত্মীয়দের সঙ্গে) আবেগ ঘন সম্পর্ক এর অভাব (Emotionally available parents)

অতিরিক্ত চর্বি ও চিনিযুক্ত অস্বাস্থকর খাবার

স্থবির জীবন, শারিরীক কসরতের ওখেলাধুলার অভাব

প্রয়োজনীয় ঘুমের অভাব, বেশী রাত জেগে থাকা

বয়স অনুযায়ী দায়িত্ব ভার না নেয়া

সৃজনশীল খেলাধুলার বদলে মেধা ও শরীরের জন্য নিষ্ক্রিয় খেলনা নিয়ে খেলা

শিশু- কিশোরদের অধিকার সম্পর্কে অধিক সচেতনতা, কিন্তু এর বিপরীতে নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে বোধের অভাব। নিজের সব চাওয়াকে অধিকার মনে করা , পাওয়া নিয়ে কৃতজ্ঞ না হওয়া।

এই সমস্যাগুলোর প্রথম ও প্রধান সমাধান হলো-

বাবা-মায়েদের সন্তানদের সঙ্গে একটিভ সময় কাটানো। নিজেদের ব্যস্ততা কমিয়ে, টেকনোলজির অতিরিক্ত ব্যবহার থেকে সরিয়ে এনে শিশুদের সঙ্গে খেলাধুলা করা , আনন্দ করা , আলোচনা করা ও আবেগঘন সময় কাটানো।
এই একটি সমাধান উপরের অনেকগুলো সমস্যা অবসানের মূল চাবিকাঠি।

 

আত্মীয়ের চুমু খেয়ে মৃতপ্রায় নবজাতক

আত্মীয়ের চুমু খেয়ে মৃতপ্রায় নবজাতক


স্বাস্থ্যকথা


নবজাতকের সঙ্গে প্রথম দেখায় অনেকেই চুমু খান। আদরের বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই এই চুমু দেন নবজাতকের স্বজনরা। তবে এমন চুমুতেই প্রায় মৃতপ্রায় অবস্থায় চলে গিয়েছিলেন যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক শহরে জন্ম নেয়া শিশু রোমান ড্রান্সফিল্ড । খবর যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ডেইলি স্টারের।

জানা গেছে, ডানিয়েল্লা-ম্যাথু দম্পতির সন্তান রোমান ড্রান্সফিল্ড গত বছর ফেব্রুয়ারিতে জন্ডিস নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন । জন্মের পাঁচ দিনের মধ্যেই তার শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দেয়। এই উপসর্গে প্রায় মৃতপ্রায় অবস্থায় চলে যায় শিশুটি। প্রায় তিন সপ্তাহ এন্টি-ভাইরাস ওষুধ দেয়ার পর সুস্থ হন রোমান ড্রান্সফিল্ড। পরে ডাক্তাররা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সন্দেহ প্রকাশ করেন, চুমু খাওয়ার কারণেই এই সমস্যা হয়েছিল রোমানের।

এ নিয়ে রোমান ড্রান্সফিল্ডের মা ডানিয়েল্লা বলেন, যখন সে জন্মায় তখন পরিবারের সদস্যরা আসতেন এবং তাকে দেখে চুমু দিতেন। একদিন আমরা রোমানের মুখে ফুসকুড়ি দেখতে পারি। পরে ডাক্তার জানায় এই ভাইরাসে মারা যেতে পারেন রোমান। ডানিয়েল্লা জানান, ওই ঘটনার পর থেকে তিনি এখনো তার সন্তানকে চুমু দেননি।

এদিকে ওই ঘটনার পর এখনো নিজেদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সেই দুঃসহ স্মৃতি মনে করিয়ে সবাইকে নবজাতকদের চুমু খাওয়া থেকে বিরত থাকার উৎসাহ দেন ডানিয়েল্লা-ম্যাথু দম্পতি।

সুত্রঃ ইত্তেফাক/এআর

 

ধর্ষণের ক্ষেত্রে খেয়াল করে দায়ী করুন

ধর্ষণের ক্ষেত্রে খেয়াল করে দায়ী করুন


জান্নাতুন নুর দিশা


ফেসবুকে একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। চারজন মেয়ে হিজাব পরে নেচেগেয়ে একটা গান করছেন, “আমরা হিজাবি লেডি, আমরা হিজাব করি” এরকম শিরোনামে। সাথে দুজন ছেলেও তালে তালে গাইছেন। গানের স্টাইল অনেকটাই পশ্চিমা।
এভাবে নেচে-গেয়ে কুশ্রী ভঙ্গিতে হিজাব পরায় দাওয়াত দেয়ার এরকম বাজে একটা ভিডিও হাজার হাজার শেয়ার হচ্ছে। হিজাব পোশাকটাকে প্রকারান্তরে হাসির খোরাক বানানোতে এদের সহযোগিতাই করছেন এটা ভাইরাল করে।

আরো একটা নিউজ কয়েকদিনে বেশ অনেকের টাইমলাইনে দেখলাম। আমেরিকায় এক বাঙালি নারী এক আমেরিকান নারীকে বিয়ে করেছেন। বিয়ে করেছেন গত জুন মাসে। সমকামী বিয়ে আমেরিকায় কোনো গুরত্বপূর্ণ বিষয় না৷ বাঙালি মেয়েটি আমেরিকাতেই বড় হয়েছেন। বাংলাদেশী মিডিয়া এসব নিউজ পেলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে নিউজ করে, মানুষজনও দলে দলে গালাগালি করে শেয়ার দিয়ে এসব অপ্রয়োজনীয় খবর ভাইরাল করে।

আরো একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এক মহিলা ময়মনসিংহের শশী লজের সামনের ভাস্কর্যের সামনে দাঁড়িয়ে জোর দাবি জানাচ্ছেন ভাস্কর্যটি সরিয়ে ফেলার। মহিলা সেখানে বলছেন এই রকম বস্ত্রহীন নারী ভাস্কর্য দেশে এভাবে উন্মুক্ত থাকলে তো নারীরা ধর্ষণ হবেই! এই কথায় আবার দলে দলে লোক একমত পোষণ করে ভিডিওটি শেয়ার দিয়ে ভাইরাল করেছেন।

নারী সংক্রান্ত এরকম কিছু অপ্রয়োজনীয় বিষয় ভাইরাল করে আপনারা কী পান তা তো জানি না। কিন্তু যে ভয়ংকর নিউজটি আমি একটু আগে নিজ টাইমলাইনে শেয়ার করলাম সেটা হলো গাজীপুরে এক নারীকে তার বান্ধবীর সহায়তায় ঘুমের ঔষধ খাইয়ে চার বখাটে ছেলে ধর্ষণ করে হাসতে হাসতে তার পাশবিক বর্ণনা দিয়ে ভিডিও আপলোড দিয়েছে। সেখানে তারা এও জানিয়েছে হেসে হেসেই যে তারা জানে তাদের পরদিন জেলে থাকতে হতে পারে কিংবা এলাকাছাড়া হতে পারে। এতে তারা মোটেও উদ্বিগ্ন নয় বরং আনন্দিতই মনে হচ্ছিলো। ধর্ষকদের এত উৎফুল্ল এত আনন্দে এত নির্ভয়ে থাকার রহস্য কী? রহস্য হলো এই ধর্ষণে তো তাদের আপনারা দায়ী করবেন না, দায়ী করবেন হিজাব পরা না পরাকে, দায়ী করবেন আমেরিকার কোনো সমকামী বিয়েকে, দায়ী করবেন একটি বস্ত্রহীন মাটির ভাস্কর্যকে। যাদের আপনারা নিয়ম করে ভাইরাল করেন। কিন্তু ভাইরাল করেন না ধর্ষককে। ধর্ষকের নারকীয় চেহারা আপনারা খুব দ্রুত ভুলে যেতে ভালোবাসেন!

 

‘প্যারেন্টিং’ কোন শর্টকাট পদ্ধতি নেই

‘প্যারেন্টিং’ কোন শর্টকাট পদ্ধতি নেই


ফাতিমা কানিজ


পারেন্টিং এর কোনো শর্টকাট রাস্তা নেই। বাচ্চাকে প্রচুর সময় দেয়া এবং তাকে নিয়ে বিরামহীন পরিকল্পনা করাই নিশ্চিত করবে আপনি কতটা ভালোভাবে বাচ্চাকে মানুষ করছেন। মনে রাখবেন, আপনার সঙ্গে আপনার বাচ্চার সম্পর্ক অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে তার সঠিক বেড়ে ওঠার জন্য বেশী জরুরী ৷ আজ ব্যস্ততার অজুহাতে যা অবহেলা করবেন কাল হয়ত তা আপনার হাতের নাগাল থেকে বেরিয়ে যাবে। কথায় আছে – সময়ের এক ফোঁড় আর অসময়ের দশ ফোঁড়। সময়ে এক ফোঁড়ে আজ যা সম্ভব হবে অসময়ে দশ ফোঁড় দিয়েও পরে হয়তো তা আর সম্ভব হবে না।

বাচ্চাদের সঙ্গে সময়দানের ক্ষেত্রে আর একটি ভুল ধারণা হলো আমাদের সমাজে অনেকে মনে করেন মায়েরাই বাচ্চাদের সময় দেবে, বাবাদের ততটা সময় দেবার দরকার নেই; মা পর্যাপ্ত সময় দিলে বাবাদের না দিলেও চলে। প্রকৃত ব্যাপারটা তা নয়। প্রাকৃতিকভাবে বাচ্চা যেহেতু মায়েদের সঙ্গে বেশী সম্পর্কযুক্ত (যেমন গর্ভধারণ, স্তন্যদান) সেহেতু স্বাভাবিক ভাবেই সন্তানরা মায়েদের সঙ্গে বেশী সময় পার করে থাকে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, বাবাদের সময় দেয়া শুধু সন্তানদের শাসন আর আদেশ উপদেশে সীমাবদ্ধ থাকবে। বাবা ও মা দু’জনকেই বাচ্চাকে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। বাবা আর্থিক রোজগারের কারণে বাইরে হয়তো বেশী সময় দিতে বাধ্য হন কিন্তু তারপরও রুটিন করে বাবাকে বাচ্চার জন্য নিয়মিত সময় বের করে নিতে হবে। বাচ্চাদের জীবনে প্রথম পুরুষ রোল মডেল হিসেবে বাবার ভূমিকা অনেক। বিশেষ করে ছেলে বাচ্চাদের জন্য তাদের বাবারা তাদের পরবর্তী জীবনের এক বড় আদর্শ।

সন্তানদের সময় দেয়ার ক্ষেত্রে অনেকসময় আবার বিপরীত একটা ভুলধারণাও তৈরী হয়। অনেকে মানে করেন সন্তানকে সময় দেবার মানে হলো আর কাউকে কোনো সময় দেয়া যাবেই না, কেবলমাত্র সন্তানদের নিয়েই পরে থাকতে হবে। আপনার বাবা বা মায়ের অসুখ করেছে – আপনার সন্তানদের লেখাপড়ার চাপ রয়েছে বলে আপনি বাবা-মাকে সময় দেবেন না, দেখতে যাবেননা, তাদের সেবা করবেন না – এটাকে সন্তানকে সময় দেয়া বলে না। বরং এটা সন্তানের সামনে ভুল একটা উদাহরণ পেশ করা। সন্তানকে সময় দিতে গিয়ে আপনার পরিবার-পরিজন; আত্মীয়-স্বজনদের প্রয়োজনীয় সময় না দিলে সন্তানরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে বড় হয়। এক্ষেত্রে মনে রাখবেন ব্যালান্স খুবই জুরুরী।

আবার কখনো কখনো দেখা যায় সন্তাদের সময় দেবার অজুহাতে নিজের স্পাউজকে তার দিকের আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। আত্মীয়দের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় সন্তানদের প্রয়োজনকে কৌশলে সমানে এনে স্পাউজকে এই যোগাযোগে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। এধরণের কাজ আপনার সন্তানদের জন্য কখনোই মঙ্গল বয়ে আনবে না। বরং সন্তানদের সঙ্গে আপনার নিজের সময় দেবার সাথে সাথে তাদেরকে আপনার দিকের আত্মীয় ও আপনার স্পাউজের দিকের আত্মীয়দের সঙ্গে ভালো যোগাযোগের ও সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ করে দিন।

 

চুলের যত্নে কিছু জানি

চুলের যত্নে কিছু টিপস


ঘরকন্যা


(১) গোসলের আগে চুল আঁচড়িয়ে নিবেন। চুল সবসময় নিচ থেকে আচড়াবেন। তাহলে খুব সহজে চুলে জট থাকলে খুলে যাবে। চুল নষ্ট হবে কম।
আর চুলের জট খোলার জন্য সবসময় মোটা দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করবেন।

(২) সপ্তাহে ৩ দিন চুলে Shampoo করবেন।
চুলে বেশি Shampoo করলে চুলের Natural Oil নষ্ট হয়ে গিয়ে চুল Dry হয়ে যায়। চুলে Shampoo করার সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

ক) চুল আগে ভিজিয়ে নিতে হবে।

খ) যতটুকু Shampoo চুলে দিবেন তা একটা বাটিতে নিবেন। তার মধ্যে একটু পানি মিক্স করে পাতলা করে নিবেন। তাহলে লাগাতে সুবিধা হবে। আর চুল যখন ধুবেন তাড়াতাড়ি পরিষ্কার হবে।

গ) চুলে Shampoo লাগানোর সময় মাথার তালুতে ভালোভাবে লাগাবেন। তারপর চুলের নিচের দিকে লাগাবেন। খুব যত্ন করে আলতো হাতে লাগাবেন।

ঘ) চুল ধোয়ার পর Conditionar লাগাবেন। শুধু চুলের নিচের দিকে লাগাবেন। উপরে লাগানো জরুরি নয়। ৫/১০ মিনিট থেকে চুল ভালো করে ধুয়ে নিবেন।

(৩) গোসল শেষে চুল টাওয়েল বা গামছা দিয়ে শক্ত করে বেধে রাখবেন না। চুলে গামছা বা টাওয়েল দিয়ে বাড়ি দিয়ে পানি ঝরানোর চেষ্টা করবেন না। এতে চুলের আগা ফেটে যায়।

(৪) ভেজা চুল আঁচড়াবেন না।

(৫) চুলে অতিরিক্ত তেল দিবেন না। চুলের গোড়ায় তেল লাগিয়ে অবশ্যই চুলে Massage করবেন।

(৬) রাতে ঘুমানোর আগে চুল আঁচড়িয়ে হালকা কারে বেনি করে ঘুমাবেন।

(৭) খুশকি থাকলে সপ্তাহে ২ বার খুশকির Pack টা লাগাবেন।

(৮) সপ্তাহে ৩/৪ বার পছন্দের Hair প্যাক লাগাতে পারেন।

(৯) Shampoo করার পর Last মগ এর পানি লেবু/চায়ের লিকার দিয়ে চুল ধুতে পারেন চুল সিল্কি হবে।

(১০) গোসলের পর চুলে Last মগ এর পানি ৬/৭ টা পেয়ারা পাতা Shiddo পানি দিয়ে চুল ধুতে পারেন। এতে চুল পড়া অনেক কমে যাবে।

(১১) বেশি করে পানি খাবেন। আর সপ্তাহে ২ বার চিরনি ধুবেন।
কমেন্ট না করলে পরবর্তী টিপস পাবেন না এই বলে দিলাম।

সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন

 

মায়ের সাথে অভিমান করে স্কুল ছাত্রের আত্মহত্যা

মায়ের সাথে অভিমান করে স্কুল ছাত্রের আত্মহত্যা


অন্যান্য


কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে এক স্কুল ছাত্রের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাত আটটার দিকে ফুলবাড়ী থানার পুলিশ ওই ছাত্রের ঘর থেকে তার লাশ উদ্ধার করে। নিহতের নাম সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য (১৩)। সে উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের পুর্ব ফুলমতি গ্রামের সমরেন্দ্রনাথ কেষ্ট ভট্টাচার্যের ছেলে এবং বালারহাট আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র।

এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, পড়াশুনার ব্যাপারে শাসন করায় মায়ের সাথে অভিমান করে নিজের ঘরে শাড়ি পেঁচিয়ে ফাঁস দেয় সিদ্ধার্থ। পরে তাকে উদ্ধার করে নিকটস্থ বালারহাট বাজারের এক পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ফুলবাড়ী থানার ওসি রাজীব কুমার রায় জানান,পরিবারের সদস্যদের দেয়া সংবাদের ভিত্তিতে আমরা ঘটনাস্থলে যায়। ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকা অবস্থায় ওই ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে এসেছি। ধারণা করা হচ্ছে পড়াশুনার ব্যাপারে শাসন করায় অভিমানে ছেলেটি আত্মহত্যা করেছে।

বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য শনিবার সকালে লাশ ময়না তদন্তের জন্য কুড়িগ্রাম মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।

সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

ছয় মাসে ৪০০ শিশু ধর্ষণের শিকার, ১৬ জনের মৃত্যু, এক তৃতীয়াংশ কওমী মাদ্রাসার শিক্ষক দ্বারা

ছয় মাসে ৪০০ শিশু ধর্ষণের শিকার, ১৬ জনের মৃত্যু, এক তৃতীয়াংশ কওমী মাদ্রাসার শিক্ষক দ্বারা


নারী সংবাদ


এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত  এই ৬ মাসে সারাদেশে ৩ শ ৯৯ জন শিশু ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছে । এর মধ্যে ৮ জন ছেলে শিশু । ধর্ষণের পরে ১ জন ছেলে শিশুসহ মারা গেছে ১৬ টি শিশু।

রোববার (৭ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য তুলে ধরে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে বেসরকারি সংগঠন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)।

সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম সম্প্রতি দেশে শিশু ধর্ষণের ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় শিশুদের প্রতি চলমান সহিংসতা ও নির্যাতন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

 শাহীন আনাম পাড়ায় পাড়ায় কমিটি গঠন করে এই ধর্ষণ প্রতিরোধ করার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে অভিভাবক, শিশু সংগঠন, মানবাধিকার সংস্থা, স্কুল-কলেজ এবং পাড়ার তরুণদের সম্মিলিতভাবে এই অপরাধ ঠেকাতে এগিয়ে আসতে হবে বলেও মনে করেন তিনি ।

ছয়টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ৪০৮ টি সংবাদ বিশ্লেষণ করে  এই পরিসংখ্যান তুলে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন জানায়, ৬ মাসে সারাদেশে ৩ শ ৯৯ জন শিশু ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছে । এর মধ্যে ৮ জন ছেলে শিশু । ধর্ষণের পরে ১ জন ছেলে শিশুসহ মারা গেছে ১৬ টি শিশু। এদের মধ্যে ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছিল ৪৪ জনের উপর ।

এমজেএফ এর তথ্য অনুযায়ী, ছয় মাসে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে ৪৯ টি শিশু । যৌন হয়রানির ঘটনায় আহত হয়েছে ৪৭ জন মেয়ে শিশু ও ২ জন ছেলে শিশু।

এমজেএফ মনে করে বিচারহীনতার কারণে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা অসহনীয় অবস্থায়  পোঁছেছে। শিশু ধর্ষণের ঘটনায় শিশুর শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক জীবনে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলেও মনে করেন সংগঠনির নির্বাহী পরিচালক।

যদিও (এমজেএফ) সামগ্রিকভাবে সার্ভে করে দেখেছে, কিন্তু আমাদের করা নিউজ আর অনলাইনে প্রকাশিত শিশু ধর্ষণ ও হত্যার রিপোর্ট অনুসারে প্রায় এক তৃতীয়াংশ ধর্ষণ ও খুন হয়েছে কওমী মাদ্রাসার শিক্ষক দ্বারা।

সুত্রঃ স্বদেশ_বাংলা

 

মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মনোবিজ্ঞানী নিয়োগ

মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মনোবিজ্ঞানী নিয়োগ


শামসুদ্দীন ইলিয়াস


গত ২৪.১১.২০১৯ তারিখে সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়ার রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত মহামান্য হাইকোর্ট বেঞ্চ কর্তৃক বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাইকলজিসট নিয়োগ সংক্রান্ত রুল জারী করেছেন। বাংলাদেশে মনোবিজ্ঞান শিক্ষা, মনোবিজ্ঞান গবেষণা এবং মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান বাস্তবে প্রয়োগের বিষয়ে বাংলাদেশ মনোবিজ্ঞান সমিতির একজন সদস্য এবং মনোবিজ্ঞান বিষয়ের একজন শিক্ষক হিসাবে নিম্নরূপ বক্তব্য প্রদান করছিঃ
বাংলাদেশের কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেশ কিছু সরকারি-বেসরকারি কলেজে স্নাতক (সম্মান) এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে মনোবিজ্ঞান বিষয়টি দীর্ঘদিন যাবত পঠিত হচ্ছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ থেকে প্রতি বছর হাজার খানেক শিক্ষার্থী স্নাতক (সম্মান) এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে মনোবিজ্ঞানিক সেবা দেয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। তবে, যুগোপযোগী সরকারি নীতিমালার অপর্যাপ্ততার কারণে মনোবিজ্ঞানে ডিগ্রিধারী এসব যুবক-যুবতীরা জাতিকে কাঙ্খিত সেবা দিতে পারছে না। স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা যেমন-শিক্ষা মনোবিজ্ঞান, কাউন্সেলিং মনোবিজ্ঞান, স্কুল মনোবিজ্ঞান, বিকাশ মনোবিজ্ঞান, সমাজ মনোবিজ্ঞান, শিল্প ও সাংগঠনিক মনোবিজ্ঞান, পরিবেশ মনোবিজ্ঞান, স্বাস্থ্য মনোবিজ্ঞান, অপরাধ মনোবিজ্ঞান, চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান, ভোক্তা মনোবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয় অধ্যায়ন করে থাকে। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে আবার একটি, দুটি, বা তিনটি বিষয়ের ওপর বিস্তারিতভাবে অধ্যায়ন করে। মনোবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে যে কোন শিক্ষার্থীই মনোবিজ্ঞানী হিসাবে যে কোন প্রতিষ্ঠানে সেবা প্রদানের সক্ষমতা অর্জন করে থাকে। তাই, শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের ধরন, সক্ষমতা, মানসিক স্বাস্থ্য, শিক্ষার পরিবেশ, পাঠদান পদ্ধতি, শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রমের মূল্যায়ন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক, অভিভাবকদের উপদেশনা ও নির্দেশনা প্রদানসহ শিক্ষার্থী ও শিক্ষালয়ের সাথে সম্পর্কিত সকল বিষয়ে মনোবিজ্ঞান সম্মত সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনকারী যে কোন ব্যক্তিই যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। তবে, শিক্ষা মনোবিজ্ঞান, কাউন্সেলিং মনোবিজ্ঞান, স্কুল মনোবিজ্ঞান, বিকাশ মনোবিজ্ঞান ও শিক্ষার্থী মূল্যায়ন মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনকারী ব্যক্তিবর্গ এক্ষেত্রে অধিকতর যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়সমূহ (বাক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী এবং অটিস্টিক) ব্যতীত সাধারণ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক বুদ্ধিসম্পন্ন এবং স্বাভাবিক আচরণ সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা অধ্যায়ন করে থাকে। স্বাভাবিক শিক্ষার্থীরা কোন মানসিক রোগী নয়। শিক্ষার্থীদের পাঠে অমনোযোগ, স্কুল ভীতি, পরীক্ষা ভীতি, মানসিক চাপ, উদ্বেগ, ব্যক্তিগত এবং পরিবারকেন্দ্রিক সমস্যাসমূহ দূরীকরণের ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনকারী যে কোন ব্যক্তিই প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানে সক্ষম। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বা চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞানের অনেকগুলি শাখার মধ্যে একটি শাখা মাত্র। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বা চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী ব্যক্তিবর্গ মূলত মানসিক রোগগ্রস্থ ব্যক্তিদের রোগ নিরাময় বা চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে থাকে; তবে চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীরাও সাধারণ মানসিক স্বাস্থ্য সেবা ও কাউন্সেলিং সেবা প্রদানে সক্ষম। অতএব, সারা দেশের লক্ষ লক্ষ সাধারণ ও স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদেরকে মানসিক রোগী মনে করলে তা শুধু তাদেরকে অবমূল্যায়নই করা হবে না, এটা তাদেরকে অসম্মান ও হেয় করারও শামিল বিধায় এটা যেমন সমর্থনযোগ্য নয়; ঠিক তেমনই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে শুধুমাত্র ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্‌ট নিয়োগ দেয়ার প্রস্তাবনাও বাস্তবতার নিরিখে গ্রহণযোগ্য নয় এবং সেটা দেশীয় প্রয়োজন এবং শিক্ষার্থীদের মন-সামাজিক অবস্থার সাথেও মোটেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়; তা যথাযথও হবে না। বরং সময়ের প্রত্যাশিত দাবী অনুযায়ী শিক্ষার্থী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং দেশের সার্বিক মঙ্গলের স্বার্থেই অনতিবিলম্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) এবং যে কোন শাখায় (প্রধানত শিক্ষা মনোবিজ্ঞান, কাউন্সেলিং মনোবিজ্ঞান, স্কুল মনোবিজ্ঞান, বিকাশ মনোবিজ্ঞান ও শিক্ষার্থী মূল্যায়ন মনোবিজ্ঞানে) স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনকারী সাইকোলজিস্টদেরকে নিয়োগ দেয়া জরুরী।

 

জেদ, প্রতিশোধ পরায়ণতা ও প্যারেন্টিং

জেদ, প্রতিশোধ পরায়ণতা ও প্যারেন্টিং


কানিজ ফাতিমা


জেদি ও প্রতিশোধ পরায়ণ ব্যক্তিরা ভালো বাবা-মায়ের ভূমিকা পালন করতে পারে না। সাধারণত দেখা যায় জেদি ও প্রতিশোধ পরায়ণ ব্যক্তিরা নিজেদের সন্তানদেরকে অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখতে অনেকটা সময় ও শ্রম ব্যবহার করেন। ফলে জীবনের প্রথমভাগে এই সন্তানরা লেখাপড়ায় সাধারণত এগিয়ে থাকে। ধীরে ধীরে তারা নিজেদের মধ্যেও এই জেদ ও প্রতিদ্বন্ধীতা আয়ত্ব করে নেয়। এই জেদ তাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার একধরণের (নেগেটিভ) মোটিভেশন হিসাবে কাজ করে। নিজেদের কাজিন এবং সহপাঠিদের সঙ্গে মনে মনে তারা তীব্র প্রতিদ্বন্ধীতা অনুভব করে ও লেখাপড়ায় এগিয়ে থাকতে চায় – ফলে অনেক ক্ষেত্রে তারা অন্যদের থেকে এগিয়েও থাকে। আর এই সুফলকে জেদি বাবা-মায়েরা নিজেদের সফলতা হিসাবে নেন ও আত্মতৃপ্তি পান।
কিন্তু তারা জানেননা যে তারা তাদের সন্তানদের কত বড় ক্ষতি করে ফেলছেন। এটা অনেকটা এমন পেসক্রিপশন করার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে যেখানে ঔষধে রোগীর আপাত একটা উপকার হবে কিন্তু ভবিষ্যতে জীবন হুমকির মুখে ফেলবে। এধরণের বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের দু’টো বড় ক্ষতি করেন। অনেকটা বলতে গেলে তারা ছোট একটা পাওনার জন্য অনেক বড় আর মূল্যবান দু’টো জিনিসকে বিসর্জন দেন। এটা সত্যি যে তাদের ভালোবাসা আর ত্যাগে কোনো কমতি থাকে না – কিন্তু নিজেদের জেদ আর ইগো তাদের অজান্তেই সন্তানদের থেকেও তাদের জন্য বড় হয়ে দাঁড়ায়। নিজের সন্তানদের ক্ষতি করেও তারা নিজেদের ভেতরের এই মানসিক রোগকে বিসর্জন দিতে পারেন না। সন্তানদের সারা জীবনের জন্য ক্ষতি করে ফেলেন –
এক্ষত্রে যে দু’ইটা বিশাল ক্ষতি সন্তানদের হয় তাহলো –
১. সন্তানরাও এই একই মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে পরে এবং কঠিন মানসিক কষ্টের শৃঙ্খলে আজীবনের জন্য বন্দী হয়ে যায়। আপনাকে যদি বলা হয় – আপনি কি চান আপনার সন্তানের দেহে ক্যান্সার হোক? আল্লাহ মাফ করুন, কোনো বাবা -মা স্বপ্নেও একথা ভাবতে পারেনা। অথচ অবলীলায় জেদী-অহংকারী বাবা-মায়েরা নিজের মনের ক্যান্সার নিজের মন থেকে সন্তানদের মনে পুঁতে দেন, তাতে পানি- আলো-বাতাস দিয়ে অতিযত্নে বড় করে তোলেন শুধু মাত্র সন্তানদের ক্যারিয়ার গড়ে দেবার নাম করে। জেদ, হিংসা আর প্রতিশোধ পরায়ণতা হলো মনের ক্যান্সার। এটি একটা যন্ত্রণাদায়ক ব্যাধি – যা মানুষকে সারাক্ষন যন্ত্রনা দেয়। নিজে ক্যারিয়ারে সফলতা পেলেও শান্তি মেলে না, ভেতরে থাকা জেদ, হিংসা আর প্রতিশোধ পরায়ণতা আগুনের মতো ভেতর পোড়াতেই থাকে। কাজেই সচেতন হোন – আপনার জেদ ও হিংসা যেন আপনার প্যারেন্টিং এর অন্তরায় না হয়। তাতে আপনি যত ভালো প্যারেন্টিংই করুননা কেন আপনি আপনার সন্তানকে সারা জীবনের জন্য অশান্তির এক আগুনে ফেলে দিলেন। মনের এক ভয়ংকর রোগে আক্রান্ত করে দিলেন।
বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় শুশুড়বাড়ীর মানুষের সঙ্গে হওয়া জেদ আর কাজিনদের মধ্যে তৈরী হওয়া প্রতিদ্বন্ধীতা এই রোগের উৎস – আর এর বলি আপনার নিজের সন্তান। হয়তো কারো কোনো কাজে আপনি কষ্ট পেয়েছেন, বা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে অমনি আপনার জেদ সেটাকে বড় করে ফেলবে, সেখান থেকে প্রতিদ্বন্ধিতা – অন্যকে একহাত দেখিয়ে দেবার মানসিকতা, তারপর শত্রুতা, আর অবশেষে প্রতিশোধপরায়ণতা আর মানসিক অশান্তি। এই শৃঙ্খলে মন একবারবন্দী হয়ে পড়লে, তা থেকে মুক্তি কঠিন। কারণ প্রতিদ্বন্ধী বদলাবে, শত্রু বদলাতে থাকবে, কিন্তু মানসিক চক্র চলতেই থাকবে মৃত্যু অবধি।
২. দ্বিতীয় যে ক্ষতিটা আপনি আপনার সন্তানের করেন তাহলো আপনি নিশ্চিত করে দেন যে আপনার সন্তান তার পারিবারিক জীবনে কোনোভাবেই সুখী হবে না। আপনি যে জেদ, হিংসা আর প্রতিশোধের বীজ আপনার সন্তানের মনে ঢুকিয়ে দিয়েছেন তা ডাল -পালা মেলবই। ইসলামের মানবতার অংশটা যারা গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারে একমাত্র তারাই এই বিষকে নিষ্ক্রিয় করতে পারে, যা সুলভ না। এমনকি ইসলামের অনুশাসন পালনকারী মানুষদের মধ্যেও ইসলামের এই অংশটি আসতে অনেক সময় লাগে, অনেক ক্ষেত্রে আবার কখনোই আসেনা। কাজেই মূলত আপনি আপনার সন্তানের এমন এক রোগের কারণ যার ঔষধ অতিশয় দুর্লভ।
এই রোগটি আপনার সন্তানের ভেতর ধীরে ধীরে তার নিজের স্পাউজের প্রতি প্রতিদ্বন্দ্বীতা মূলক মানসিকতা তৈরী করবে, সবসময় সে তার স্পাউজকে সন্দেহ করবে এবং সেটা গিয়ে পড়বে তার শশুড়বাড়ির মানুষদের ওপরে। সবকিছুকেই সে প্রতিযোগীতা হিসাবে নেবে – সবশেষে সে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে পড়বে। সে সচেতনভাবে তাদের ক্ষতি হয় এমন আচরণে জড়িয়ে পড়বে যা তার সঙ্গে তার স্পাউজের সম্পর্ককে কোনোভাবেই মধুর আর শান্তিপূর্ণ করবে না। একসময় সে তার নিজের সন্তানকেও এই দ্বন্ধে ব্যবহার করবে তার নিজের জেদ আর প্রতিশোধের নেশায় – আর এভাবে শুরু হবে পরবর্তী চক্রের।
কাজেই প্যারেন্টিংএ সচেতন হন – আপনার ভেতরের জেদ, হিংসা, প্রতিশোধপরায়ণতা থাকলে তা কমিয়ে আনুন। এগুলো অনেক পুরানো রোগ তাই কমিয়ে আনা সহজ কথা না। কিন্তু এগুলো আপনার সন্তানের থেকে বড় নয়, তাই নিজের সন্তানের জীবনের সুখের কথা চিন্তা করে নিজেকে পরিবর্তন করুন।
অনেককে দেখেছি স্বামীর উপর জেদ করে সেই প্রতিশোধ নেবার জন্য সন্তানকে ব্যবহার করে, আবার অনেককে দেখেছি স্কুলের শিক্ষকদের ওপর জেদ করে তার প্রতিশোধের জন্য নিজের সন্তানকে ব্যবহার করে – এভাবে দ্বন্ধে সন্তানকে ব্যবহার করে ছোট কোনো সফলতা পেলেও পাওয়া যেতে পারে, প্রতিশোধ নিতে পেরে কিছুটা মানসিক সুখ হয়তো তাৎক্ষণিক পাওয়া যায় কিন্তু এই বোকামীর ফলে নিজের ও নিজের সন্তানের জন্য যে বিশাল ক্ষতি হয়ে যায় তা কি আর পূরণ হয় ?

 

‘জরায়ুমুখের ক্যান্সার’ তুমিও কি আক্রান্ত হতে পরো!

‘জরায়ুমুখের ক্যান্সার’ তুমিও কি আক্রান্ত হতে পরো!


ডাঃ মারুফ রায়হান চৌধুরী


একবার ভাবুন তো, প্রতি ২ মিনিটে বিশ্বের একজন করে নারী মারা যাচ্ছেন যে রোগে তা কতোটা ভয়ঙ্কর! প্রতিবছর সে রোগে মারা যাচ্ছে ১ লক্ষ নারী! সারা পৃথিবীতে প্রতিবছরই নতুন করে ৫ লাখ নারী আক্রান্ত হচ্ছেন।

জরায়ুমুখের ক্যান্সারের কথাই বলছিলাম। সারাবিশ্ব জুড়ে নারীদের সবচেয়ে বেশি হওয়া ৩টি ক্যান্সারের মধ্যে একটি এই জরায়ুমুখের ক্যান্সার।

তবে এ ভয়ঙ্কর ক্যান্সারটি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে এর বেশ ভালো চিকিৎসা আছে। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব; আরও এক-তৃতীয়াংশ চিকিৎসায় ভালো হয়।

এখন আসা যাক জরায়ুমুখের ক্যান্সার কাদের বেশি হয় 

– যাদের একধিক যৌনসঙ্গী থাকে।
– কম বয়সে যাদের যৌনমিলন ঘটে।
– কম বয়সে যাদের প্রথম গর্ভধারণ হয়।
– যাদের ঘনঘন বাচ্চা হয়।
– অপরিচ্ছন্ন যৌনাঙ্গ।
– দরিদ্রশ্রেণী।
– কিছু ইনফেকশান, যেমন : Human Papilloma virus – 16, 18, 31, 33, HIV, Chlamydia ইত্যাদি।
– জন্মনিরোধকারী পিল যারা খান।
– যাদের ধূমপান করার অভ্যেস আছে।
– যার স্বামীর আগের স্ত্রী জরায়ুমুখের ক্যান্সারে মারা গিয়েছে।

জরায়ুমুখে ক্যান্সারের কিছু লক্ষণ 

– নিয়মিত মাসিকের মাঝে অনিয়মিত রক্ত ভাঙা।
– স্থায়ীভাবে মাসিক বন্ধ হয়ে যাবার পরেও রক্ত যাওয়া।
– দুর্গন্ধযুক্ত যোনিস্রাব।
– যৌনমিলনের পর রক্তপাত হওয়া।
– যদি ক্যান্সার ইতোমধ্যে সামনে বা পেছনে অর্থাৎ মূত্রথলি বা মলাশয়ে ছড়িয়ে পড়ে তবে প্রস্রাব বা পায়খানার সাথে রক্ত যেতে পারে।

এসব লক্ষণ দেখা দিলে যতো দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন।

জরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে চাইলে 

– যেসব নারীর বয়স ২০-৪০ বছর এবং ২০ বছরের নিচে যারা যৌনমিলনে অভ্যস্ত তাদেরকে প্রতি ৩ বছরে একবার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে পেলভিস বা শ্রোণিদেশ পরীক্ষা করানো এবং VIA আর Pap test করাতে হয়।

– বর্তমানে আমাদের দেশেও জরায়মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে ভ্যাক্সিন বা টিকা ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ভ্যাকসিন নিয়ম মোতাবেক নেয়া প্রয়োজন।

– সর্বশেষে জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে সমাজের সর্বস্তরে গণসচেতনতা সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই।

(বি. দ্র. ইউনাইটেড স্টেটস কংগ্রেস জানুয়ারি মাসকে জরায়ুমুখ স্বাস্থ্য সচেতনতা মাস হিসেবে মনোনীত করে। চলছে সে মাস। নিজে সচেতন হই, অন্যদের সচেতন করি।)

 

প্রথম শ্রেণির ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র গ্রেফতার

প্রথম শ্রেণির ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র গ্রেফতার


নারী সংবাদ


বুধবার ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও বৃহস্পতিবার পুলিশকে জানায় স্বজনরা। সেদিনই ভুক্তভোগী শিশুকে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি)।

বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন ফকির জানান, ধর্ষণের শিকার শিশুটি স্থানীয় একটি স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। ধর্ষণে অভিযুক্ত শিশুটি পড়ে চতুর্থ শ্রেণিতে। এ ঘটনায় শিশুটির মা মামলা করেছেন। ওসিসিতে শিশুটির চিকিৎসা ও ধর্ষণ প্রমাণে প্রয়োজনীয় ডাক্তারি পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

শিশুটির মায়ের অভিযোগ, বুধবার বিকেলে তিনি ও তার স্বামী দু’জনই কাজের জন্য বাসার বাইরে ছিলেন। তাদের মেয়ে বাসায় একা ছিল। এ সুযোগে তাদের ভাড়াবাসার মালিকের নাতি শিশুটিকে ধর্ষণ করে। রাতে বাসায় ফিরে তিনি ঘটনা জানতে পারেন। এ ব্যাপারে অভিযোগ জানাতে বাসার মালিকের কাছে গেলে তিনি হুমকি-ধমকি দিয়ে পুলিশের কাছে যাওয়া থেকে তাদের বিরত রাখেন। শিশুটিকে হাসপাতালেও নিতে দেননি। তবে বৃহস্পতিবার সে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়ায় হাসপাতালে নিতে বাধ্য হন তারা। ঘটনা প্রকাশ না করার জন্য তাদের শাসিয়ে দেয়া হয় বলেও দাবি করেন তিনি।

সুত্রঃ সময়টিভি নিউজ।

 

মেয়েদের ওড়না ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা, ক্ষোভে ফুঁসছেন অভিভাবকরা

মেয়েদের ওড়না ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা, ক্ষোভে ফুঁসছেন অভিভাবকরা


নারী সংবাদ


রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের ড্রেসকোড পরিবর্তন করায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকরা। আগে মেয়েদের ড্রেসকোডে মাথায় স্কার্ফ বা ওড়না ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও নতুন প্রণীত ড্রেসকোডে সেখানে স্কার্ফ বা ওড়না ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অন্যদিকে ছেলেদের মাথায় টুপি ব্যবহারকেও অঘোষিতভাবে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। শুধু শিক্ষার্থীই নয়, শিক্ষকদের মধ্যেও আগে যারা পাঞ্জাবী পড়ে স্কুলে আসতেন তাদেরকে এখন পাঞ্জাবী পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। তবে কেউ পাঞ্জাবী পড়লেও পাঞ্জাবীর উপরে আলাদাভাবে কটি পড়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যদিও স্কুল কর্তৃপক্ষ দাবি করছেন তারা ড্রেসকোডে কোনো পরিবর্তন আনেননি। মেয়েদের ওড়না বা স্কার্ফ ব্যবহার এবং ছেলেদের টুপি ব্যবহারকে পুরোপুরি নিষেধও করা হয়নি। তবে এই ড্রেসগুলোকে শুধু ঐচ্ছিক করা হয়েছে মাত্র।

মঙ্গলবার দুপুরে মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান ফটকে গিয়ে দেখা গেলো স্কুলের বালক শাখার ছুটি হয়েছে। দলে দলে বের হয়ে আসছে ছেলেরা। তবে অনেক শিক্ষার্থীর মাথায় টুপি নেই। আগে যেখানে প্রায় প্রতিটি বালকের মাথায় টুপি ব্যবহার বাধ্যতামূলক থাকতো মঙ্গলবারের চিত্র ছিল সম্পুর্ণ বিপরীত। নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি সিদ্ধান্তে ড্রেসকোডে পরিবর্তন এনে ছেলেদের টুপি ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করার অভিযোগ করেছেন অনেক অভিভাবক। প্রথম সারির দাবিদার এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির মতিঝিলে প্রধান শাখা ছাড়াও মুগদা ও বনশ্রীতেও আরো দু’টি শাখা রয়েছে।

দুপুর দুইটার একটু আগে মূল স্কুল ভবনের ভেতরের মাঠে গিয়ে দেখা গেল বেশ কিছু মেয়ে স্কুলের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে মাঠে খেলাধুলা করছে। অনেকে আবার স্কাউটিং এর অনুশীলন করছে। অনেক মেয়েরা মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে সেই খেলা দেখছে। কিন্তু কোনো একজন শিক্ষার্থীর শরীরে বড় ওড়না বা স্কার্ফ পরিহিত নেই। দু’একজনের সাথে সাংবাদিক পরিচয়ে কথা বলতে চাইলে তারা স্কুলের ড্রেসের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হলো না।

স্কুলের বাইরে রাস্তার পাশের একটি বইয়ের দোকানের বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে জানালেন, আগে বালক বা বালিকা শাখার যে কোনো শিফটের ছুটি হলে স্কুলের বাইরে অন্যরকম একটি দৃশ্যের অবতারণা হতো। যে কেউ স্কুলের ড্রেস দেখলেই সহজে বুঝতে পারতো আইডিয়াল স্কুল ছুটি হয়েছে। কিন্তু এখন দেখুন, অনেক ছেলেদের মাথাতেই টুপি দেখা যায় না। একই ভাবে তিনি জানালেন, নতুন ড্রেসকোড দেয়ার পর মেয়েদের মাথায়ও এখন আর আগের সেই স্কার্ফও দেখা যায় না।

পেশায় আইনজীবী এম এস রহমান নামের এক অভিভাবক নয়া দিগন্তের প্রতিবেদকের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের বাচ্চাদের কথা চিন্তা করে স্কুলে গিয়ে আমরা শিক্ষকদের কাছে সরাসরি কোনো অভিযোগ করতে পারি না। এই স্কুলের মূল শাখায় (মতিঝিলে) আমার ছেলে ও মেয়ে পড়ালেখা করছে। আগের ড্রেসকোড পরিবর্তন করায় আমি ব্যক্তিগতভাবে মর্মাহত হয়েছি। ইসলামী ভাবধারায় ভবিষ্যতে সন্তানদের গড়ে তোলার আশা নিয়ে এখানে সন্তানদের ভর্তি করেছিলাম। এখন মনে হচ্ছে, স্কুল কর্তৃপক্ষের এমন স্বেচ্ছাচারিতার কারণে সেই আশাও পূরণ হবে না।

রেশনা নামের এক মা অভিযোগ করেন আমার মেয়ে আগে যেখানে নিয়মিত গায়ে ওড়না জড়িয়ে আর মাথায় স্কার্ফ বেঁধে স্কুলে আসতো এখন সে শুধু একটি সাধারণ ওড়না ক্রস আকারে শরীরে দিয়ে স্কুলে আসছে। কোনো কোনো শিক্ষক নাকি আমার মেয়েকে আগের ড্রেস পড়ে স্কুলে আসতে নিষেধ করেছেন।

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের দিবা শাখার এক শিক্ষক জানান, সম্প্রতি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির এক সভায় ড্রেস কোড পরিবর্তনের এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। কমিটিতে সরকারের পক্ষ থেকে একজন প্রতিনিধি ছিলেন। তার নাম আবু হেনা মোর্শেদ জামান। সরকারের কোনো কর্মকর্তা যখন স্কুল কমিটিতে কোনো সিদ্ধান্ত দেন তখন অন্যান্য সদস্যদের ওই সিদ্ধান্তই মেনে নিতে হয়। নতুন ড্রেসকোডের ক্ষেত্রেও সরকারি ওই কর্মকর্তার মতামতকেই প্রাধান্য দিয়ে গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, শিক্ষকদের ড্রেসের বিষয়ে নতুন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কোনো শিক্ষক এখন থেকে আর পাঞ্জাবী পড়ে স্কুলে আসতে পারবেন না। পাঞ্জাবী পড়লেও এর উপরে বাধ্যতামূলকভাবে আলাদা কটি পড়তে হবে। শিক্ষকদের জুতা ব্যবহারের ক্ষেত্রেও আলাদা কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের ড্রেসকোডের বিষয়ে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম মঙ্গলবার দুপুর দুইটায় তার অফিসে নয়া দিগন্তের এই প্রতিবেদককে বলেন, স্কুলের ড্রেসকোড নিয়ে বাইরে যেভাবে প্রচার হচ্ছে বিষয়টি আসলে সেই রকম না। ড্রেস আগে যা ছিল তাই আছে। তবে মেয়েরা আগে মাথায় আলগা মতো একটি ওড়না ব্যবহার করতো । এখন সেটিকে ভালভাবে পড়তে বলা হয়েছে। তবে একথা ঠিক যে, এই ওড়না বা হিজাব পড়াটাকে আমরা ঐচ্ছিক করেছি। চাইলে কেউ এই হিজাব ভালমতো পড়বে আর কেউ না চাইলে না পড়বে।

আগে তো’ মেয়েদের বড় ওড়না ব্যবহার আবশ্যিক ছিল, তাহলে এখন কেন এটাকে ঐচ্ছিক করলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না; বিষয়টি এরকম নয়। একথা ঠিক যে, আগে মেয়েরা একটি বড় ওড়না ব্যবহার করতো কিন্তু সব মেয়েই কিন্তু ভেতরে ক্রস আকারে ডেসের সাথে মিল রেখে বেল্ট দিয়ে একটি ওড়না ব্যবহার করতো। এখন উপরের বড় ওড়নাটাকেই ঐচ্ছিক করা হয়েছে। ওই বড় ওড়নাটা অনেকে সুন্দর করে পড়ে স্কুলে আসতো না। তাই আমরা বলেছি সুন্দর করে ওড়না পড়তে হবে। যেনতেন বা অগোছালোভাবে ওই ওড়না পড়া যাবে না। কাজেই ওড়নাতো একটি আছেই। আর যে কথাটি বলা হচ্ছে ওড়না নেই এটা আসলে সঠিক না।

ছেলেদের টুপির বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে অন্য ধর্মের বাচ্চারা পড়াশোনা করে। মুসলিম ছাড়া অন্য কাউকেতো টুপি পড়তে বাধ্য করা যায় না। তাই আমরা টুপি ব্যবহারকে ড্রেসে কোডে ঐচ্ছিক করেছি।

শিক্ষকদের পায়জামা আর পাঞ্জাবী পড়ার বিষয়ে অধ্যক্ষ বলেন, শিক্ষকদের আমরা স্মাট হিসেবে দেখতে চাই। কেউ পাঞ্জাবী পড়ে স্কুলে আসতে চাইলে আমরা বলেছি শুধু পাঞ্জাবী পড়ে স্কুলে আসা যাবে না। পাঞ্জাবীর উপরে অবশ্যই আলাদা একটি কপি পড়তে হবে। এছাড়া শিক্ষকদের জুতা ব্যবহারের বিষয়ে আমরা নির্দেশনা দিয়েছি।

সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

নারীদের বাইরে কাজ করা নিয়ে কিছু কথা

নারীদের বাইরে কাজ করা নিয়ে কিছু কথা


ফাতেমা জাহান লুবনা


নারীদের বাইরে একেবারেই কাজ না করার পক্ষপাতী যারা তারাই আবার মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করানোর সময় গার্লস স্কুল – কলেজ খুঁজি, নারী শিক্ষক খুঁজি, স্ত্রীলোকের জন্য মহিলা ডাক্তার খুঁজি …কীভাবে সম্ভব? বিয়ের পর সংসার ও সন্তান সামলে সম্ভব হলে একজন শিক্ষিতা নারী ডাক্তারি, শিক্ষকতা বা অন্য যে কোন ধরণের হালাল পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পারেন পর্দা করে। এটা নিষেধ হতে পারে এমন ক্ষেত্রে যখন সন্তানদের দেখাশোনার মত বিশ্বস্ত কেউ না থাকেন বা যদি কাজের বুয়ার কাছেই শিশুকে ফেলে চলে যেতে হয় যখন সেই কাজের বুয়া সম্পর্কেও সন্দেহ থেকে থাকে অথবা জরুরী কিছু সমস্যা থাকলে। অনেক শিক্ষিত নারী আছেন যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী অথচ বাইরে কাজের অবসর ও সুযোগ থাকা সত্তেও ঘরে বসে সময় অতিবাহিত করছেন । এক এলাকায় সব নারীই সমানভাবে শিক্ষিত নয়। ভালো নারী শিক্ষিকা না পাওয়ার ফলে নারীদের চল্লিশ পার্সেন্ট কোটা অনেক সময় খালি থেকে যায় অথবা অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতাসম্পন্ন নারীদের/ কখনও কখনও পুরুষদের দিয়ে সেই কোটা পূরণ করা হয়।

ডিজিটাল এই যুগে ঘরে বসে থাকলেই কি নারীরা নিরাপদ যখন সবার হাতে হাতেই আছে মোবাইল ফোন যাতে সারাবিশ্বের যে কারো সাথে যখন খুশি কথা বলা যেতে পারে অথবা বিচরণ করা যেতে পারে নিষিদ্ধ জগতে? আসলে এটা অভিরুচির ব্যাপার আর প্রয়োজনে নারীদের বাইরে বের হবার পারমিশন কিন্তু স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাই দিয়েছেন আর সেটা কীভাবে তাও জানিয়ে দিয়েছেন। তাই বাড়াবাড়ি করা অনুত্তম।

চাকরির ক্ষেত্রে নারী পুরুষ সবার জন্যই বয়সের বিধিনিষেধ দূর করে দিলে একজন নারী বিয়ের পর সংসার ও সন্তান সামলে সম্ভব হলে পরবর্তীতে চাকরিতে যোগদান করতে পারেন। এতে রাষ্ট্রীয়, পারিবারিক এবং সামাজিক সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। যুক্তরাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা ও চাকরির ক্ষেত্রে লক্ষ্য করলেও এর সুফলগুলো অনুধাবন করা যায়।এখানে অবসরের আগের বছরেও কেউ যোগ্যতা থাকলে সরকারি চাকরির সুযোগ পেয়ে থাকেন। অনেকে ভাবতে পারেন এতে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাবে। আসলে এই ধারণা ঠিক নয় কারণ এতে এত তাড়াহুড়ো করে চাকরির ট্রেন ধরার ঊর্ধ্বগতি কমে আসবে , নারীরা সংসার ও পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালনে যথাযথ সময় ও সুযোগ পাবে আর পরবর্তীতে ইচ্ছা থাকলে চাকরিও করতে পারবে আর পুরুষরাও চাকরি করার সময় আছে জেনে স্বাধীনভাবে ব্যবসা করতে মনোযোগী হবে কারণ ব্যবসা মানেই নতুন এক জগৎ আর কিছু রিস্ক তো বটেই তবে উদ্যোক্তা যদি সঠিকভাবে এগুতে পারেন তবে সাফল্য একদিন আসে।

অনেকে নারীদের চাকরিক্ষেত্রে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে এটিকে শুধুই টাকার সাথে সম্পৃক্ত করে ফেলেন। মানে যাদের টাকা নেই তারা চাকরি করেন বা আরেকটু বাড়িয়ে বললে টাকার প্রতি যাদের অনেক লোভ তারাই (শুধুমাত্র নারীদের ক্ষেত্রে বলা হয়) চাকরি করেন। টাকার প্রয়োজন থাকতে পারে আর গ্রহণযোগ্য প্রয়োজন থাকলে সেটাকে সম্মান করতে হবে। কিন্তু নারীদের জবটাকে শুধুমাত্র টাকার সাথে সম্পৃক্ত করে না রাখাই উত্তম। কারণ অনেক সময় নারীদের অংশগ্রহণে সমাজে কল্যাণের জোয়ার আসতে পারে। ধরুন এক এলাকায় এক নারী ডাক্তার হবার পর তার পরিবার তাকে চাকরিতে বাধা প্রদান করল বা তিনি নিজেও চিন্তা করলেন যে চাকরি করবেন না অথচ তার মাঝে যে জ্ঞান রয়েছে তা তো গ্রামের অন্য কারো মাঝে নাই অপরদিকে ঐ গ্রামের অনেকে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে বা প্রচণ্ড অসুস্থতায় কাতরাচ্ছ। এক্ষেত্রে জ্ঞানের অবচয়ের দরুণ ঐ পরিবারকে বা নারীকে যদি আল্লাহ্ বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেন তবে? ভাবতে হবে বিষয়গুলো নিয়ে।

নিজের জ্ঞান ও শ্রম দিয়ে যদি কারো উপকার করা যায় তবে দুনিয়ার জীবন যেমন সবার জন্য সুন্দর হয়ে ওঠে তেমনই পারলৌকিক জীবনেও কল্যাণী ব্যক্তিগুলো সাধারণ মানুষের চেয়ে অগ্রবর্তী হবেন তিনি নারী পুরুষ যেই হোন না কেন। তাই নিজেকে নিয়োজিত করুন কল্যাণকর কাজে টাকা কম বেশি যাই আসুক বা একেবারে নাই আসুক এতে কিছু যায় আসে না। অনেকের ব্যাংক ভর্তি টাকা থাকে কিন্তু মনে শান্তি থাকে না তাই অর্থই সবকিছু নয়। নিজেকে যোগ্য করুন কল্যাণকর কাজের জন্য আর সেটা সমাজের কল্যাণে বিতরণ করাকে নিজের উপর দায়িত্ব মনে করুন। যেমন এই মুহূর্তে আমার এই লেখাটি বাহ্যত আনপেইড জব যেটা করতে আমি ভালোবাসি। আপনিও লিখতে পারেন কোন কল্যাণকর গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ যাতে নির্দেশনা আছে; আছে উদ্দীপনা মানুষের জন্য উত্তম কাজের। নিজের জ্ঞানকে শুধুই নিজের মাঝে আবদ্ধ রাখবেন না; ছড়িয়ে দিন সর্বত্র কারণ জ্ঞানই আলো আর শ্রম হলো আর বহিঃপ্রকাশ। আর একটা কথা অবশ্যই মনে রাখবেন নিয়্যাতকে উত্তম কাজের জন্য উত্তম করে নেবেন তাহলে কেউ আপনার পারিশ্রমিক দেক না দেক আপনার প্রতিপালক বহুগুণ পুরস্কার প্রদান করবেন ……………….এবং তাতে অবশ্যই আপনি খুশি হয়ে যাবেন।

 

উত্তরটা জানাবেন কেউ ?

উত্তরটা জানাবেন কেউ ?


জিয়াউল হক


বই আমাদের অনেকেরই প্রিয়। জ্ঞান বিজ্ঞান আর সভ্যতার বিকাশ নির্ভর করে এর উপরেই! মানবসভ্যতা বিকাশে বইয়ের অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। বইয়ের প্রচলন কবে, কিভাবে হয়েছে তা বলা সম্ভব নয়, তবে ইতিহাস ঘেঁটে মোটামুটি একটা চিত্র পাই।

কাদামাটির ট্যাবলেট বানিয়ে ( মাত্র কিছুদিন আগেও আমাদের দেশে ‘শ্লেট’ বানিয়ে লেখা হতো ) তাতে লেখা হতো, এভাবেই বইয়ের প্রচলন ঘটেছে সর্বপ্রথম মেসোপটোমিয়া তথা আজকের ইরাকে খৃষ্টপূর্ব তিন হাজার বৎসর আগে। প্রাচীন বাগাদাদে আসিরীয় সম্রাটের রাজকীয় লাইব্রেরিতে এরকম বাইশ হাজার বই পাওয়া গেছে যেগুলো খৃষ্টপূর্ব ৭ম শতাব্দীতে লিখিত হয়েছিল।

মিশরে খৃষ্টপূর্ব আড়াই হাজার বৎসর আগে মন্ড থেকে প্যাপিরাসে (Papyrus) লেখার প্রচলন শুরু হয়। মিশরের তৃতীয় ‘রামেসিস’ এর (খৃস্টপূর্ব দুই হাজার বৎসর সময়কাল ) শাসনকালের বর্ণনা নিয়ে ৪০ মিটার লম্বা একটা ‘বই’ পাওয়া গেছে মিশরীয় পিারামিডে। এই প্যাপিরাস (Papyrus) থেকেই আধুনিক ‘পেপার’ শব্দটির উদ্ভব।

একই সময় পাখির পালক এবং জীব জন্তুর হাড়েও লেখা হতো। প্রাচীন চীনে এরকম প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রাচীন গ্রিক ও রোমান সাম্রাজ্যে কাঠের খন্ডের উপরে মোম লাগিয়ে তার উপরে লেখার প্রচলন ছিল, এটা অবশ্য অনেকটা প্রাচীন শ্লেট-এর অনুরুপ।

খৃষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে রোমে জীব জানোয়ারের চামড়াকে ব্যবহার করে পার্চমেন্ট উদ্ভাবন করা হলে বই তৈরিতে তা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে এবং অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠে। চীনে খৃষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে সর্বপ্রথম মন্ড থেকে কাগজ উৎপাদন করে। আর সে থেকে কাগজই বই প্রস্তুতের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠে।

সপ্তম শতাব্দীর প্রথমভাগে ইসলাম ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের আনাচে কানাচে। ইসলামের প্রথম নির্দেশই হলো; ‘পড়’ অর্থাৎ জ্ঞানচর্চা ও বিস্তার করা। ফলে অচিরেই জ্ঞানচর্চায় এক অসাধারণ মাত্রা যুক্ত হয় আর এর অনিবার্যতায় বই রচনা, প্রকাশ ও প্রচারে বিপ্লব সূচিত হয়।
ইউরোপে খৃষ্টধর্ম প্রচারে বাইবেল রচনা ও প্রকাশের ধারাবাহিকতায় বই প্রকাশ ও প্রচার গতীময়তা পায়। পঞ্চদশ শতাব্দীতে জার্মানিতে প্রিন্টিং মেশিন উদ্ভাবন হলে বই প্রকাশের ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক ধারা সূচিত হয়।

পিউ রিসার্চ সেন্টার ‘ডেটা অন আমেরিকান রিডিং হ্যবিটস’ শিরোনামে একটা গবেষণাপত্র ও জরিপ প্রকাশ করেছে ২০১৫ সালে। সে বৎসর শতকরা ৭২ জন আমরিকান বৎসরে একটা বই পড়েছে। এই ধারা গত পাঁচ বসরই পড়তির দিকে। পুরো বৎসরে অন্তত একটা বই পড়েছেন এমন আমেরিকান নাগরিকের হার ২০১১ সালে ছিল ৭৯ জন। ২০১৫ সালে; ৭২ জন।

জরিপে অংশ নেয়া বেশির ভাগ মানুষই বৎসরে ৪ টা বই পড়েছেন। পুরুষের তুলনায় নারীদের মধ্যে বই পড়ার হার বেশি। শতকরা ৭৭ জন নারী বৎসরে অন্তত একটা বই পড়েছেন। পুরুষদের মধ্যে এই হার শতকরা ৬৭ জন।

একজন নারী গড়ে বৎসরে ১৪টা বই পড়েছেন আর পুরুষ; ৯টি। বুড়ো আমেরিকানরা বই পড়ে কম। ১৮ বৎসর থেকে ২৯ বৎসরের নারী পুরুষরাই বই পড়ে বেশি। আমেরিকায় বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানী ও প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারগণ সাধারণ আমেরিকান জনগণের তুলনায় অনেক বেশি পড়েন। বড় বড় অফিস ও প্রতিষ্ঠানের (সিইও) কর্ণধারগণ মাসে চার পাঁচটি বই পড়েন।

কোনো দেশের জনসংখ্যার মাথাপিছু বই প্রকাশে সবচেয়ে এগিয়ে যুক্তরাজ্য; ২০১৪ সালে মাথাপিছু ২০ টি বই প্রকাশ করেছে (সুত্র- International Publishers Association )। দ্বিতীয় স্থানে তাইওয়ান (১৮টি), তৃতীয় স্থানে রয়েছে স্লোভেনিয়া। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৯ টি!

চল্লিশ হাজার বর্গমাইল আয়তনের ছোট্ট রাষ্ট্র আইসল্যান্ড; জনসংখ্যা মাত্র তিনলক্ষের কিছু বেশি, এখানে প্রতি দশ জন নাগরিকের মধ্যে একজনই লেখক! লেখকরাই সবচেয়ে বেশি স্বচ্ছল ও সম্মানিত।

২০১৩ সালের পরিসংখ্যান; বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বই প্রকাশিত হয়েছে চীনে; চার লক্ষ চল্লিশ হাজার (৪৪০০০০টি), এরপরে যুক্তরাষ্ট্র ৩০৪৯১২টি, তৃতীয় যুক্তরাজ্য ১৮৪০০০ টি। ভারত পঞ্চম স্থানে; ৯০০০০ টি।

উক্ত তালিকায় ১২৩টি দেশের মধ্যে প্রথম মুসলিম দেশ হিসেবে অষ্টম স্থানে ইরান (৭২৮৭১), দশম তুরস্ক (৫০৭৫২) আঠারোতম ইন্দোনেশিয়া (২৪০০০), তেইশতম মালয়েশিয়া (১৭৯২৩), আটত্রিশতম মিশর (৯০২২), উনপঞ্চাশতম সউদি আরব (৩৯০০), পঞ্চাশতম পাকিস্থান (৩৮১১), একান্নতম লেবানন (৩৬৮৬) রয়েছে। (উইকিপিডিয়া/ ইউনেস্কো)

বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চাচ্ছেন? দু:খিত, ১২৩টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম নেই। কেন নেই? উত্তরটা জানাবেন কেউ ?

 

স্মৃতির ক্যানভাসে সুখ

স্মৃতির ক্যানভাসে সুখ


আফরোজা হাসান


জীবন প্রতিনিয়ত করে চলছে ছোট গল্পের রচনা
স্মৃতির ক্যানভাসে আঁকছে সুখ-স্বপ্নের আল্পনা

আনন্দের ভিড়ে কিছু গল্প জুড়ে বেদনা
হতাশার আঁধারে ঢাকা কিছু গল্পের সম্ভাবনা

কিছু গল্প হাসায়, কিছু দিয়ে যায় কান্না
কষ্টের গুঞ্জনে কিছু গল্পে মিলে সুখের বাহানা

মাঝ দরিয়ায় কিছু গল্প খায় হাবুডুবু
উদ্ভাসিত হয় স্বমহিমায় যে গল্পটা ছিল নিভু নিভু

কিছু গল্প করে নিশ্চুপে প্রস্থান
কিছু শুনিয়ে যায় অক্লান্ত আশার গান

কোন কোন গল্প নিঃশব্দে দেয় প্রেরণা
কিছু গল্প জাগিয়ে যায় ঘুমন্ত চেতনা

কিছু গল্প সুখের তরে নিরন্তর সাধনার
কিছু গল্প শুধুই আন্তরিক ভক্তি ও আরাধনার

কিছু গল্প জুড়ে ক্ষত
কিছু গল্পে যুক্তিতর্ক, ভিন্ন মত

কোন কোন গল্প বয়ান করে নিরাশা
কিছু গল্প দিয়ে যায় গন্তব্যের দিশা

কিছু গল্প অসম্পূর্ণ, আধা
কিছু গল্প শুধুই গোলকধাঁধা

কিছু গল্প সুন্দর, সুবাসিত
কিছু গল্প কদার্যতায় প্রভাবিত

কিছু গল্প জুড়ে মিথ্যা-ছলনা, আত্নঅহংকার
কিছু গল্প উন্মুক্ত করে রুদ্ধ মনের দ্বার

জীবনের আঁকেবাঁকে শত সহস্র গল্পের বীজ
কিছু ফুলে, কিছু ফলে, কিছু আগাছায় রচিত হয় কাহিনী নিজ নিজ…

রচয়িতা- আফরোজা হাসান

 

ঢামেক ওসিসিতে থাকা ১৩ জনই ধর্ষণের শিকার

ঢামেক ওসিসিতে থাকা ১৩ জনই ধর্ষণের শিকার


নারী সংবাদ


ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস (ওসিসি) সেন্টারে বেড রয়েছে আটটি। সোমবার ( ১৩ জানুয়ারি) সেখানে ভিকটিম ভর্তি আছেন ১৩ জন। তারা সবাই ধর্ষণের শিকার। এর মধ্যে যেমন ২৫ বছরের নারী রয়েছেন, তেমনি আছেন ১০ বছর বয়সের শিশুও। বেড কম থাকায় ওসিসির ভেতরে একেক বেডে দুই থেকে তিনজন করেও রাখা হচ্ছে।

ওসিসিতে দায়িত্ব পালনকারী সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওসিসিতে আগে শারীরিক নির্যাতন, যৌন হয়রানির শিকার নারীরা এলেও গত কয়েক বছরে ধর্ষণ বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। যে পরিমাণ ধর্ষণের শিকার নারী এখানে আসে তাতে করে পুরো দেশের চিত্রটা তাদের কাছে পরিষ্কার। আর ওসিসিতে আসা নারীর মধ্যে ১০ থেকে ২০ বছর বয়সী নারীর সংখ্যাই শতকরা ৫০ শতাংশ।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের সমন্বয়কারী ডা. বিলকিস বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ২০১৭ সালের আগস্ট মাস থেকেই ধর্ষণের হার আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। শুধুমাত্র ঢামেক হাসপাতালে যে চিত্র পাওয়া যায় তাতে সারাদেশের অবস্থা যে কতটা ভয়াবহ তা আঁচ করা যাচ্ছে।

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র জানিয়েছে, ২০১৯ সালে এক হাজার ৪১৩ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। যা কিনা ২০১৮ সালে ছিল ৭৩২ জন, ২০১৭ সালে ছিল ৮১৮ জন। অন্যদিকে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন জানায়, ২০১৯ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৯০২ শিশু, ২০১৮ সালে যে সংখ্যা ছিল ৩৫৬। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের চাইল্ড প্রোটেকশন কো-অর্ডিনেটর রাফিজা শাহীন জানান, গত বছরে ৯০২ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে সাত থেকে ১২ বছরের শিশু ছিল ৩৯ শতাংশ আর ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী ছিল ৪৮ শতাংশ।

২০১৮ সালের তুলনায় গত বছর বাংলাদেশে শিশু ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনা ৭৬.০১ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম (বিএসএএফ)।

শিশুদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনটি তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গতবছর এক হাজার পাঁচটি শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, যা আগের বছরের চেয়ে ৭৬ দশমিক ০১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯ সালে প্রতিমাসে গড়ে ৮৪ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার

সংগঠনটি জানায়, ২০১৮ সালের তুলনায় গত বছর ধর্ষণের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। আক্রান্তদের মধ্যে ১৩৩ জনের বয়স ছিল এক থেকে ছয় বছরের মধ্যে। ঢাকা জেলায় ধর্ষণের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে।

২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ১৫টি জাতীয় দৈনিক থেকে তথ্যগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। বিএসএএফের তথ্যানুযায়ী, ভুক্তভোগী শিশুদের মধ্যে ৭৫ জন তাদের শিক্ষক এবং ১৪১ জন প্রতিবেশীর দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছে।

সোমবার ঢামেকের ওসিসিতে সরেজমিনে দেখা যায়, রবিবার (১২ জানুয়ারি) রাতে নরসিংদীতে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার হয়। সোমবার সকালে শিশুটিকে তার স্বজনরা ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে আসেন। তারা জানান, রবিবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বাসার পাশের এক দোকানে কলা কিনতে গেলে দোকানি মেয়েটির হাত পা বেঁধে ধর্ষণ করে। মেয়েটিকে উদ্ধার করে প্রথমে নরসিংদী সদর হাসপাতালে এবং পরে ওসিসিতে নিয়ে আসেন।

এদিকে, সোমবারই সাভার থেকে এসেছে ধর্ষণের শিকার পাঁচ বছরের এক শিশু। সকাল ১১টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। গত ৯ জানুয়ারি কামরাঙ্গীরচর এলাকাতে ধর্ষণের শিকার হয় ১৩ বছরের কিশোরী, পরদিন তাকে ওসিসিতে ভর্তি করা হয়। একইদিন রাতে ভাটারা এলাকাতে ধর্ষণের শিকার হয় ১২ বছরের এক শিশু।

এদিকে, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানে এই মুহূর্তে ভর্তি আছেন ১৩ জন, যার মধ্যে ধর্ষণের শিকার ৪ থেকে ৬ বছরের শিশুও রয়েছে। বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি রয়েছেন ধর্ষণের শিকার দুই কিশোরী, তাদের বয়স ১৪ এবং ১৭। সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি আছেন দুইজন যাদের বয়স ১৬ এবং ২০। তারাও ধর্ষণের শিকার।

ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, এই মুহূর্তে ওসিসিতে কেউ ভর্তি নেই। তবে চলতি বছরের শুরু থেকেই ধর্ষণের শিকার বেশ কিছু শিশু ভর্তি ছিল। যাদের মধ্যে এক শিশুর বয়স ছিল ৪। ওই কর্মকর্তা বলেন, এই ওসিসিতে ধর্ষণের শিকার হয়ে আসা নারীর মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি থাকে। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি থেকে জানা যায়, সেখানে ধর্ষণের শিকার ১০ বছরের এক কিশোরী ভর্তি আছে।

ঢামেকের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের সমন্বয়কারী ডা.বিলকিস বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,২০১৭ সালের আগস্ট মাস থেকেই ধর্ষণের হার আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। দেশের মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ নারী এবং শিশু। সেখানে নারী এবং শিশুরাই যদি এভাবে নির্যাতিত হয় তাহলে দেশের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে।

তিনি বলেন, দেশে আইন আছে। কিন্তু নানা কারণেই ধর্ষণ বন্ধ করা যাচ্ছে না। আর ধর্ষণের শিকার নারীদের মধ্যে চার মাসের শিশুও এসেছে এখানে। শিশু-কিশোরীই বেশি। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সাধারণত আত্মীয়-স্বজন, পাশের দোকানদার, ঘরের পাশে থাকা রিকশাচালকদের দ্বারা এই ধর্ষণগুলো বেশি হচ্ছে। আর শিশুদের যেহেতু প্রতিরোধক্ষমতা নেই,তাদেরকে সহজেই অনেক কিছু বোঝানো যায়, ভয় দেখানো যায় তাই এই সংখ্যাটা বেশি। আর ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি ইন্টারনেটের অবাধ ব্যবহার,পরিবারের বন্ধন কমে যাওয়াও ধর্মীয় অনুশাসন না থাকা এবং সমাজের অবক্ষয়ের কথা উল্লেখ করেন।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম বলেন,সাম্প্রতিক সময়ে নারী শিশুর প্রতি সহিংসতা এবং ধর্ষণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। সামাজিক অস্থিরতা এবং মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে এটা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন,বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বে রোল মডেল হলেও ধর্ষণের এই ঘটনা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।

শিশুরা হচ্ছে সবচাইতে দুর্বল গোষ্ঠী,আর তারা যেহেতু দুর্বল, তাই তারা সহজ টার্গেট এবং সহজ শিকার,তাদেরকে সহজেই প্রলোভনে ফেলা যায়— মন্তব্য করে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মা-বাবার ব্যস্ততা ও পরিবারের বড়দের অন্য কাজে বেশি ডাইভারসিটি বেড়ে যাওয়ায় শিশুদের প্রতি নিরাপত্তাবোধের জায়গা এবং তাদেরকে নিরাপদ রাখার জায়গাগুলো অনেক শিথিল হয়ে যাচ্ছে।

তবে সমাজের পিছিয়ে পড়া এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর শিশুরা এতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে কেন জানালে তিনি বলেন, কারণ এই শিশুদের সহজে প্রলোভিত করা যায়। তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাটাও নাজুক থাকে।

সুত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন।

 

আমি কখনো ভালো মা হতে পারিনি 

আমি কখনো ভালো মা হতে পারিনি


নুর এ নাজনিন শামলিন


আমি কখনো ভালো মা হতে পারিনি, অন্য সব আদর্শ মায়েদের মতো জোর করে খুব সকালে বাচ্চাদের ঘুম থেকে টেনে তুলে স্কুলে পাঠায় নি। বরং উল্টো মনে হতো ঘুমিয়ে থাক, কিসের এত পড়ালেখা। অফিস যাওয়ার সময় খুব সংগোপনে রেডি হতাম যাতে ওদের ঘুম না ভাঙ্গে। আহারে ঘুমিয়ে থাক আমার সোনা বাচ্চা দুইটা, সারা জীবন ই তো পড়ে আছে কি হবে এত পড়ালেখা করে?ওরা যাতে আরাম করে ঘুমাতে পারে তাই আমি খুঁজে খুঁজে ডে শিফটের স্কুলগুলিতে ওদেরকে ভর্তি করেছি।

আমি ভালো মা হতে পারিনি কারণ আমি কোনদিন ওদের নিজ হাতেই স্কুলের ড্রেস পড়িয়ে আদর করে সঙ্গে করে স্কুলে নিতে পারেনি, সে সময় আমি থাকতাম অফিসে । প্রথম দু একদিন হয়তো স্কুলে বসিয়ে দিয়ে আমি চলে আসতাম।নূহা আমার মেয়ে, ছোটবেলা থেকেই সবকিছু যেন একটু বেশীই বুঝতো।ও যখন আমার হাতটা ছেড়ে দিত কেমন পিছন ফিরে তাকাতে তাকাতে স্কুলে ঢুকতো, কারণ ও জানতো অন্য সব মায়ের মতন ওর মা ওর জন্য স্কুলে বসে থাকবে না। অর্ণব আমার ছেলে, দুচোখ জলে টলটল করত আর কি আকুতি নিয়েই না বলত, আম্মু তুমি অফিস যেও না, আমার সাথে থাকো, ওর আকুতি আমার মন ছুঁয়ে যেত। মাঝে মাঝে চোখ মুছতে মুছতে অফিসে যেতাম।

আমি ভালো মা হতে পারিনি, অন্য সব মায়েদের মতো হোম ওয়ার্ক না করার জন্য কোন দিন বকা দেই নি। পড়া করতে না চাইলে বই খাতা বন্ধ করে দিয়ে বলেছি আর পড়তে হবে না অনেক হয়েছে। কোনদিন বাসার টিচারদের পিছনে লাগেনি,কত দিন কত ঘন্টা পড়িয়েছে তার হিসাব করিনি, বরং রিকোয়েস্ট করছি স্যার আমার বাচ্চাটা পড়তে না চাইলে জোর করবেন না, ও যাতে আনন্দ নিয়ে পড়ে, আপনি আপনার মত করে পড়াবেন। হ্যাঁ, আমি আমার মতো করে ওদের পরিয়েছি। আমার ছেলেটা খুবই ফাঁকিবাজ টাইপের। হুজুর আসলে প্রায়ই আমি দেখতাম হুজুরকে নিয়ে মোবাইলে গেম খেলছে মহানন্দে। হুজুর কে কখনো কিছু বলতে পারতাম না, মনে হতো থাকনা আমার বাচ্চাটা কি আনন্দ নিয়ে না খেলছে!!

আমি ভালো মা হতে পারিনি, পারিনি আমার বাচ্চাদের কোন একটি আনন্দের মুহূর্তে ওদের পাশে থেকে বুকে জড়িয়ে ধরতে। আমার মেয়েটার যখন ফাইভে, এইটে বৃত্তির রেজাল্ট হয়, আমি হয়ত অফিসে অনলাইনে ওর রোল নাম্বার খুঁজছি, আমার মেয়েটা তখন বৃত্তি পাওয়ার আনন্দে একা একাই স্কুলের মাঠে ঘুরছে, কোন এক মায়ের কাছ থেকে মোবাইল চেয়ে ও আমাকে ফোন দিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে আর বলছে জানো মা আমি না ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছি , মোবাইলের অপর প্রান্ত থেকে আমিও কাঁদচ্ছি গভীর আনন্দে কিন্তু ভালোবেসে ওকে বুকে জড়িয়ে ধরতে পারিনি, পারিনি ওর ফুলা ফুলা গালে চুমু খেতে।

নূহার অভিমান ভরা কথা “আমি কোনোদিন কোনো ভালো রেজাল্টের পর তোমাকে জড়িয়ে ধরতে পারি নাই আম্মু, অপেক্ষা করতে হয়েছে কখন তুমি বাড়ি ফিরবে।” ভাবলাম এবার ক্ষ্যান্ত দেই।বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ, ওদের একটু সময় দেই। এই ভেবে চাকরি ছাড়া। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, ঠিক সেই সময় ধরা পড়ে আম্মার ক্যান্সার। আমি ছুটলাম আম্মার কাছে। আম্মার কাছ থেকে শুধু নিয়েছি কখনো কিছু দিতে পারি নাই। ভাবলাম এইতো সময় আমার সর্বোচ্চ দিয়ে আম্মার সেবা করব। নূহার ইন্টারমিডিয়েট, অর্নবের ক্লাস এইট খুব ইম্পর্টেন্ট সময়। আমি ভালো মা হতে পারি নাই কিন্তু আমার সন্তানরা, ওরা যেন আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত। ওরা আমাকে অভয় দিলো, “আম্মু নান ভাই কে সময় দাও।” এমনও সময় গেছে ওদের এক গ্লাস হরলিক্স পর্যন্ত বানায় দিতে পারি নাই, ওদের পরীক্ষার সেন্টারে পর্যন্ত যেতে পারি নাই। আম্মার কেমো, অসুস্থ আম্মাকে নিয়ে দিনরাত আমি হসপিটালে, ওরা আমাকে নিরাশ করে নাই। নূহা ৯৩ পারসেন্ট মার্কস পেয়ে এইচএসসিতে গোল্ডেন আর অর্ণব ক্লাস এইটে বৃত্তি পেয়ে চমকে দিল আমাকে। আমি ভয়ে ছিলাম নূহা মেডিকেলে চান্স পাবে তো? নূহা বলল, ” আল্লাহ ভরসা’ ।ওর নান ভাইয়ের খুব ইচ্ছা ছিল নূহা ডাক্তার হবে। আম্মা মারা যাওয়ার কিছুদিন আগেই নূহার রেজাল্ট হল। নূহা ওর নান ভাই এর ইচ্ছা পূরণ করতে পেরেছিল, ও চান্স পেলো ঢাকায়।

আমি ভালো মা হতে পারি নাই আর এই জন্যই হয়তো ওরা ইন্ডিপেন্ডেন্ট। ওরা নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে। ওরা প্রতিনিয়তই দেখেছে ওদের মা আর দশটা মায়ের মত না কি প্রচণ্ড পরিশ্রম ই না করতে পারে। অসম্ভব প্রাণশক্তিতে ভরা ওদের মা একজন স্বাবলম্বী নারী। আমার মেয়েটাও চায় ওর মায়ের মত প্রচন্ড আত্ম বিশ্বাসী, স্বাবলম্বী হতে। আমি ভালো মা হতে পারিনি কিন্তু ওদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের জন্ম দিতে পেরেছি, কিভাবে আকাশ ছুঁতে হয় সে স্বপ্ন দেখাতে শিখিয়েছে আর সবশেষে ভালো বন্ধু হতে পেরেছি।

 

১১ বছরের শিশুকে ধর্ষণ

১১ বছরের শিশুকে ধর্ষণ


নারী সংবাদ


গত বৃহস্পতিবার ৯ তারিখ রাতঘর ধর্ষণ করে চারজন নরপশু ১১ বছরের এক শিশুকে। ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানীর ভাটারায়। ধর্ষণের পর বিবস্ত্র ও রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে গেছে দুর্বৃত্তরা। গুরুতর অবস্থায় শিশুটিকে গতকাল ১০-ই জানুয়ারি, শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করেছেন পরিবার। এর একদিন আগে থেকে শিশুটি নিখোঁজ ছিল।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, ভাটারা এলাকাতে পরিবারের সঙ্গেই থাক তো শিশুটি। কিন্তু ৯ জানুয়ারি মানে বৃহস্পতিবার তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। কে বা কারা বাচ্চাটি বাসা থেকে বের হলে তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে হাত-পা বেঁধে রাতভর ধর্ষণ করেন। জানা যাচ্ছে, চারজন দুর্বৃত্ত ছিলো। যাদের পরিচয় এখনও জানা যায়নি।

ছোলমাইদ এলাকার একটি সড়ক থেকে বিবস্ত্র অবস্থায় তাকে পরিবারের সদস্যরা উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে যায়। এরপর লোক লজ্জার ভয়ে শিশুটিকে হাসপাতালে নিতে চায়নি। কিন্তু শারিরীক অবস্থা আরো খারাপ হওয়ায় পরে শুক্রবারে রাতেই ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে ভর্তি করা হয় শিশুটিকে।

শিশুটির বড় বোন জানান, ‘প্রথমে লোক লজ্জায় ও ভয়ের কারণে বিষয়টি কাউকে জানাতে চাইনি। পরে পরিবারের সম্মতিক্রমে শুক্রবার রাতে তাকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যাই। এখন সেখানেই ভর্তি রয়েছে।’

ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোক্তারুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাতে শিশুটি বাসা থেকে বের হলে নিখোঁজ হয়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর শুক্রবার ভোরে বিবস্ত্র ও রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।

 

ময়মনসিংহে মাদরাসাছাত্রীকে দলবেঁধে ধর্ষণ

ময়মনসিংহে মাদরাসাছাত্রীকে দলবেঁধে ধর্ষণ


নারী সংবাদ


ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলায় এক মাদরাসা ছাত্রীকে (১৪) দলবেঁধে ধর্ষণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। বুধবার (০৮ জানুয়ারি) রাতে তাদের আটক করা হয়।

বৃহস্পতিবার (০৯ জানুয়ারি) বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুক্তাগাছা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ।

তিনি বলেন, মুক্তাগাছার এক কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

ধর্ষণের শিকার মাদরাসা ছাত্রী জানায়, মঙ্গলবার (০৭ জানুয়ারি) বিকেলে বোরকা কিনতে মুক্তাগাছায় যাই। বোরকা কেনার পর বাড়িতে ফেরার জন্য সিএনজি খোঁজার সময় পূর্বপরিচিত ওবাইদুলের সঙ্গে দেখা হয়। সে আমাকে বলে আমিও যাব, তাই তার সঙ্গে সিএনজিতে উঠি। ওই সময় সিএনজিতে কালো বোরকা পরা আরও একজন ছিল। সিএনজি ভিন্নপথে চলতে শুরু করলে আমি চিৎকার করি। এ সময় বোরকা খুলে এক যুবক আমার মাথায় পিস্তল ধরে বলে চিৎকার করলে মেরে ফেলব। এরপ আমাকে বোররচর ইউনিয়নে নির্জন এক বাড়িতে নিয়ে যায় তারা।

সেখানে শাকিল, ওবাইদুল, নাঈম আমাকে দলবেঁধে ধর্ষণ করলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পরদিন বুধবার সকালে ওই তিনজন আমাকে একটি গাড়িতে তুলে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। বিষয়টি মা-বাবাকে জানালে আমাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ বলেন, বোরকা কিনতে মুক্তাগাছায় গেলে শাকিল, ওবাইদুল ও নাঈম নামে তিন যুবক ওই কিশোরীকে তুলে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়েছে। দুজনকে আটকের বিষয়টি সদর থানা থেকে আমাকে জানানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে গ্রেফতার করা হবে।

সুত্রঃ যুগান্তর।

 

নিজের প্রতি যত্ন নিন

নিজের প্রতি যত্ন নিন


মিথিলা ফেরদৌস


একবার এক ভাইয়া বলেছিলো,”যেদিন তোমার জামাই তোমার নামে সমস্ত সম্পত্তি লিখে দিবে, সেদিন বুঝবা,তোমার চেহারা খারাপ হয়ে গেছে। সে তোমাকে নিয়ে এখন নিশ্চিন্ত।”

সেদিন, আমার জামাই হঠাৎ ঘোষণা দিলো, সে কিছুদিন পরে তার সমস্ত সম্পত্তি আমার নামে লিখে দিবে। হঠাৎ হকচকায় উঠি। তারমানে চেহারার কি এতই দুরাবস্থা এখন আমার? আরেক বিপদ, আলতাফের সম্পত্তি বলতে কিছু পুরান সার্ট, প্যান্ট, জুতা, শেভিং কিটস, শাওয়ার জেল এইসব আলতু ফালতু জিনিস ছাড়া আর তেমন কিছু তো নাই।এইসব দিয়া আমি করবো কি? তারমানে কি? আমি কি আম ছালা দুইটাই হারাচ্ছি?!! ব্যাপার ক্লিয়ার হওয়ার জন্যে, জিগাইলাম-

♥তোমার সম্পত্তি মানে?

♦তিন বছর পর,ফ্লাটের জন্যে লোন পাবো,সেইটা তোমার নামে লিখে দিবো।

♥ মানে কি?লোনের গ্রান্টার কে?

♦ তুমি, আবার কে?

♥আজব,আমার সম্পত্তির দরকার নাই,আমার লোনের বাড়ির দরকার নাই।মাফ চাই।ভাড়া বাড়ি আমার ভীষন পছন্দ।

প্রতি মধ্য বয়সি মহিলারা, এই এক সমস্যায় ভোগে।

সংসার, চাকরী, বাচ্চা, ক্যারিয়ার, বাড়ি,
গাড়ি, ব্যাংক ব্যালান্স করতে গিয়ে নিজের প্রতি যত্ন নিতেই ভুলে যায়। অথচ এই সময় একটা মেয়ে সৌন্দর্য পরিপুর্নতা পায়। এর ফলে সে কিছু ক্রাইসিসে ভোগে। সে দিনে দিনে ইন্সিকিউরড হয়ে পরে, তাছাড়া জীবনটাকে পুর্নভাবে ইনজয় করতে পারেনা।
এখন অবশ্য ফেসবুক হয়ে, একটা সুবিধা হয়েছে, অনেকেই সাইজা গুইজা কিছু ছবি আপলোডায়, তাতে কিছু কমেন্ট থাকে এমন, excellent, very nice, beautiful, অসাধারণ, খুব সুন্দর ইত্যাদি। সত্য হোক, মিথ্যা হোক শুনতে কিন্তু ভালোই লাগে। আমি অবশ্য এই গ্রুপে পরি। ফেসবুকে ছবি আপলোড ছাড়া, চুলটাও আচড়াতেও ইচ্ছা করেনা।রুপচর্চাতো দুরে কথা। খুব কম সংখ্যক আছে, যারা রুপচর্চা, পরচর্চা, পার্টি-ফাংশন নিয়া বিজি, এদের জামাইরা ভীষণ কর্মঠ । এরা হইলো রাজকপালী গ্রুপের।

একইভাবে প্রতি মধ্যবয়সি পুরুষদের বেশিরভাগ ছোটে বাচ্চার ভবিষৎ ভেবে।কিছু বিপথে যায়, তারা আবার নিজের চেহারার ব্যাপারে অতি যত্নশীল (এদের বউরা সাধারণত অতিশয় কর্মঠ হয়, ফলে এদের সংসারের প্রতি তেমন কোন দায়িত্ব থাকেনা), কিছু পথ বিপথ কোন পথেই থাকেনা। আকাম্মা গ্রুপের মানুষ এরা।

মানুষের জীবনের মুল্যবান সময়টুকু টাকার পিছনে ঘুরে নষ্ট করার কোন মানে নাই। বুড়া বয়সে ঔষধপত্রের খরচ ছাড়া এই টাকা কোন কাজেই দিবে না। আর ছেলে মেয়েকে তার নিজের ভবিষ্যৎ ভাবতে দিন। যাকে যত কম ভাবতে দিবেন, সে ততই অপদার্থ হবে। তবে তার শৈশব কৈশোরের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতাও নিশ্চিত করা জরুরী। তার সাথে নিজের জীবনকেও ইনজয় করার ও দরকার। তাই ঠিক যতটুকু দরকার ততটুকুই ছুটুন, তার বাইরে না।

© মিথিলা ফেরদৌস

 

“মেয়ে” তুমি মন জিতে নিলে

“মেয়ে” তুমি মন জিতে নিলে


নাজমুল হুদা নাজ


দুপুর আনুমানিক ২.৩০ হবে। রাস্তার পাশের চেনা দোকানে চা খাচ্ছি। একটি মেয়ে, বয়স ২৩ কি ২৪ হবে, ইতস্তত করতে করতে দোকানে ঢুকলো। হাতে একটা স্বচ্ছ ফাইল। ভিতরে কিছু মার্কশিট, সার্টিফিকেট এসব দেখা যাচ্ছে! সারা শরীরে প্রসাধনের বিন্দুমাত্র চিহ্ন না থাকলেও ঘাম আর রোদমাখা মুখটা বেশ মায়াময়। দোকানদারের সাথে মেয়েটার কিছু কথোপকথনের ছিটেফোঁটা….

মেয়ে- ভাই, এখানে ভাত বা রুটি কিছু পাওয়া যাবে?

দোকানী- হ্যাঁ, ভাত পাবেন, বলুন কি কি খাবেন? ডাল, ডিম, সব্জি, রুই মাছ, পাবদা মাছ, বয়লার মুরগীর মাংস।

মেয়ে- এমনি শুধু ডাল আর ভাত কত ভাই?

দোকানী – ভাত, ডাল, সবজি ৩৫ টাকা।

মেয়ে – আমার সবজি চাই না, আমায় শুধু ভাত আর ডাল দিন!

৩০ টাকায় হয়ে যাবে তো?

দোকানী – আচ্ছা বসুন দিচ্ছি!

এরপর একটা ফোন আসে মেয়েটার মোবাইলে।

মেয়ে – ” হ্যাঁ মা বলো!

হ্যাঁ ! হ্যাঁ ব্যাংকে ইন্টারভিউ ভালো দিয়েছি! হ্যাঁ খেয়েছি। ভাত মাছ। তুমি ওষুধগুলো খেয়েছ?….. হ্যাঁ আমি ৫ টার ট্রেনটা ধরবো… আচ্ছা ভাইকে টিউশান থেকে ফেরার সময় স্টেশনে দাঁড়াতে বলবে……আচ্ছা রাখো।”

ফোনটা রেখে কয়েকটা সেকেন্ড বাইরের দিকে আনমনে তাকিয়ে থাকলো….. হয়তো অসুস্থ মা.. স্কুল পড়ুয়া ছোট ভাইয়ের সুদিন এনে দেওয়ার সাজানো দিনের ছবিগুলো চোখে ভিড় করছিলো…

দেখে কি রকম যেন একটা শ্রদ্ধা শ্রদ্ধা ভাব চলে এলো… একটা অজানা অচেনা মেয়ের জন্য.. কি যেন বলে এই বয়সটাকে… বালিকার চেয়ে বড়.. যুবতীর চেয়ে ছোট।

নারী স্বাধীনতা কি- ওর কাছ থেকে একবার শুনতে খুব ইচ্ছে করছিলো, মনে মনে শুভকামনা জানালাম..

এই চাকরির আকালের যুগে হে বালিকা তুমি যে বাইরে এসে আগুন রোদের তলায়.. শক্ত মাটিতে নেমে এসেছ যুদ্ধের জন্য, এখানেই তুমি যুদ্ধটা অর্ধেক জিতেছো.. আর বাকী অর্ধেক নিজের চাকরির টাকায় সত্যি সত্যি মাছ ভাত খাওয়ার পর জিতবে…. এ পর্যন্ত ঘটনাটা হয়তো সাধারণ ছিলো.. যদিও “মেয়ে” তুমি মন জিতে নিলে..

কিন্তু ঘটনাটা আরও বাকী….

দোকানী ভাতের থালাটা সাজিয়ে মেয়েটির সামনে রেখে বললো,
আপা আমি ভুল করে সব্জিটা দিয়ে ফেলেছি, আপনি খেয়ে নিন প্লিজ!!

ওই তিরিশ টাকাই দিয়েন।

মেয়ে -কিন্তু আমি তো শুধু ডালভাতই….

দোকানী – আমি একদম ভুলে সব্জিটা দিয়ে ফেলেছি.. আপনি প্লিজ খেয়ে নিন.. তিরিশ টাকায় নেবো আমি…আমার ভুল.. আপনি না খেলে এতোটা খাবার নষ্ট হবে আমার..

ওদের মতো আমিও ভেবেছিলাম নিছকই ভুল…

বিল দেয়ার সময় দোকানদোর কে জিজ্ঞাসা করলাম, ভাই সত্যিই কি ভুল করে সবজিটা দিয়েছেন?
দোকানদার কানের কাছে এসে বললো, “শুধু ব্যবসায় লাভ খুঁজলে হবে ভাই! এরকম ভুলগুলো করার সুযোগও খুঁজতে হবে:) ওর খুব খিদে পেয়েছে। দেশের বাড়িতে আমারও বোনটার বয়স এরকমই” বলে আবার নির্লিপ্ত মুখে চা, সিগারেট, ভাত, তরকারির রাজ্যে হারিয়ে যায়।

আমি খুঁজে পেলাম না, কার জন্য বেশী ভালো লাগা উচিৎ! মেয়েটা নাকি দোকানদার!!

হয়তো একটা কথা বলা যেতে পারে,
যে যুদ্ধ জিনিসটা বোঝে, সেই যোদ্ধার ঘাম, ক্ষুধার মূল্য দিতে জানে।

 

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি’ বললে ধর্ষক আমাকে মেরে ফেলবে

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি’ বললে ধর্ষক আমাকে মেরে ফেলবে


তামান্না সেতু


একটা সাক্ষাৎকারে মেয়েটা বলেছে, “সে আমাকে জিজ্ঞেস করছিল আমি কি করি, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি এটা বলিনি, আমার মনে হয়েছে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি’ বললে সে আমাকে মেরে ফেলবে”!

ক্রিমিনাল সাইকোলজিস্টরা এই লাইনটি নিয়ে ভাবুন। ঠিক কী কারনে নারীর উপর হিংস্রতা বাড়ছে গবেষণা করুন। একটি মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে এটি তাকে হত্যার, ধর্ষণের কারণ হতে পারে এই ভাবনা আসছে কোথা থেকে ভাবুন।

এসব এক দিনে হয়নি। এই একজন ধর্ষককে ধরে শাস্তি দিয়েও এই ঘটনা থেকে কিন্তু মুক্তি নেই। এই হিংস্রতার খোরাক রোজ যোগান দেয়া হয়! বারবার বলা হয়, ‘মাইয়া মানুষ ক্যান বাড়ির থিকা বাইর হবে? তারা কেন কলেজ ভার্সিটিতে পড়বে? কেন চাকরী করবে? একা একা চলাফেরা করবে? এইসব তো পাপ! এরা পাপী’!

ধর্ষকের বিচার চান, বিচার করুন। কিন্তু তারপর তৃপ্তিতে ঘুমিয়ে যেয়েন না। তাদের সাইকোলজিটা বুঝুন। ওটার খোরাক আসে কোত্থেকে খুঁজুন। সেই জায়গাটা বন্ধ না করে কিচ্ছু হবে না।

সেই সাহসী মেয়েটাকে আমার শত কোটি সালাম যে মার খেয়ে, রেইপড হয়ে, জ্ঞান হারিয়ে আবার উঠে দাঁড়িয়েছে। তখনো সেখানে ওই লোক উপস্থিত থাকার পরও সমস্ত শক্তি নিয়ে পালিয়ে এসেছে, গাড়ি করে ক্যাম্পাসে এসেছে এবং পুরো ঘটনা চেপে না যেয়ে পুলিশই জানিয়েছে।

ওর যা যা করার ছিল সব করেছে। আমি দোয়া করি আমাদের রাষ্ট্র যেন মেয়েটির সমান সাহসী হয়ে ওঠে। যতো দ্রুত সম্ভব লোকটি ধরা পরুক। সর্বোচ্চ শাস্তি হোক। কিন্তু……. প্লিজ ক্রিমিনালের ক্রাইম করার সাইকোলজিটা পড়ুন। ভাবুন। ভেবে বের করুন….

আরো একবার মেয়েটার দেয়া স্টেটমেন্টের এই অংশটুকু পড়ুন, “সে আমাকে জিজ্ঞেস করছিল আমি কি করি, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি এটা বলিনি, আমার মনে হয়েছে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি’ বললে সে আমাকে মেরে ফেলবে”!!!!!

—তামান্না সেতু

 

মনের আড্ডায় ‘শিশু’


স্বাস্থ্যকথা


বড়দের মতো মনের যন্ত তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ শিশুদের। শিশুদের বেড়ে ওঠা সুস্থ স্বাভাবিক হবার জন্য মনের যত্নের কোন বিকল্প নেই।

তারই ধারাবাহিকতায় Mind-Blowing Psychological Team এর আয়োজনে এবং Save The Future Foundation, Mirpur Branch এর সহায়তায় “মনের আড্ডা উইথ কিডস” অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা কিভাবে নিজেদেরকে যৌন হয়রানি মত বিষয়গুলো থেকে রক্ষা করবে, কিভাবে নিজেদের শারিরিক যত্নের পাশাপাশি মনের যত্ন নিতে পারে, সেই সম্পর্কে ধারণা দেওয়া, এবং আরো অনেক অনেক সাইকোলজিকাল গেমের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদেরকে খেলার চলে আনন্দ দেওয়ার মাধ্যমে শিশুদেরকে শেখানোর চেষ্টা করিছি কিভাবে সমাজের বোঝা নয়, কিভাবে নিজের মনকে ভালো রেখে সমাজের সম্পদে পরিণত হতে হয়, এবং সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা কিভাবে সীমিত সুযোগ ভোগ করেও শান্তিতে বসবাস করতে পারে।

এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখে কাজ করে পুরো টিম।

Mind-Blowing Psychological Team এর পক্ষ থেকে বলা হয়, “সবাইকে ধন্যবাদ যারা এই প্রোগ্রাম আর্থিকভাবে সাহায্য করেছেন। আশা করি আপনাদের সকলের ভালবাসায় আমরা আগামী দিনগুলোতে মানসিক স্বাস্থ সেবা সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারবো।”

Mind-Blowing একটি অলাভজনক মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান কারি সেচ্ছাসেবী সংগঠন। আপনি চাইলে আমাদের সাথে এড হতে পারেন। সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আমাদের সাথে থাকার জন্য।

 

একটি বিপ্লব হতে পারে

একটি বিপ্লব হতে পারে


আফরোজা হাসান


একটি বিপ্লব হতে পারে নিজেদের গড়ার জন্য
সুসংবদ্ধ আন্দোলন জীবনকে করতে পারে পূর্ণ

ব্যক্তি সমাজ পরিবার জাতি দল নির্বিশেষে
তুলে ধরবে হাল আরেকবার গভীর বিশ্বাসে

হবে সবাই কল্ল্যাণকামী পরস্পরের তরে
ঝড়ের মোকাবিলায় দেবে না হাত ছেড়ে

মনের আশা জাগানিয়া স্বত্বার আহ্বানে দিয়ে সাড়া
আরেকটিবার সংঘবদ্ধ হই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছি যারা

হিংসা বিদ্বেষ রূপী ঘুণপোকার বন্ধ করে রসদ
পুষ্পিত ভালোবাসা রুপে বিলিয়ে দেই দরদ

সত্য ও সুন্দরের স্বপ্নে একে অপরের হাত ধরে
দুর্গম পথ পেরিয়ে চলো পৌঁছে যাই প্রশান্তির নীড়ে

যত মতপার্থক্য বিভেদ ভুলি আখিরাতের কল্যাণে
জ্বালাই মশাল প্রতিটি প্রাণে আলোক নগরী নির্মাণে……

আফরোজা হাসান

 

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-১৩

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-১৩


আফরোজা হাসান


মাতৃত্বের গুণাবলী মেয়েরা মনেহয় জন্মের সময়ই সাথে করে নিয়ে আসে। তাই তো ছোট্ট একটা বাচ্চা মেয়েকেও দেখা যায় পরম মমতায় আদর-যত্ন করছে তার খেলনা পুতুলটাকে। শাবাবের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ভাবনাটা মনে এলো আরিফীর। শাবাবের মত অস্থির সদাচঞ্চল একটা মেয়ে হঠাৎ কেমন বদলে গিয়েছে গত কয়েকদিনে। গত দুই সপ্তাহের প্রতিটা দিন মাহাম ও শাবাব চাইল্ড হোমে এসেছে। সারাদিন বাচ্চাদের সাথে সময় কাটিয়ে রাতে বাসায় গিয়েছে। স্বাভাবিক বাচ্চাদের সাথে সময় কাটানো আর এই স্পেশ্যাল বাচ্চাগুলোর সাথে সময় কাটানোর মধ্যে অনেক পার্থক্য। কিন্তু নিজেদের আদর-ভালোবাসা-মমতার চাদরে জড়িয়ে মাহাম ও শাবাব ঠিকই বাচ্চাদের মনে স্থান করে নিয়েছে।

শাবাব তো আরিফীকে নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে দেশে ফিরে পরীক্ষা শেষ হলেই আবার চলে আসবে এখানে। এই বাচ্চাগুলোর সেবায় আত্মনিয়োগ করতে চায় সে। আরিফী শাবাবকে এত সিরিয়াস হতে কোনদিন দেখেনি। অবশ্য শাবাব সিরিয়াস হতে পারে এই ধারণাই ছিল না তার। একটা বাচ্চাকে হেঁটে হেঁটে ঘুম পারাচ্ছে শাবাব। চেহারা দেখে মনেহচ্ছে গভীর কোন চিন্তায় মগ্ন। এগিয়ে গেলো আরিফী। শাবাবের কাঁধে হাত রেখে বলল, ঘুমিয়ে গিয়েছে শুইয়ে দাও। বাচ্চাটাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বাইরে বেড়িয়ে এলো দু’জন। এত চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন তোমাকে? জানতে চাইলো আরিফী।

শাবাব জবাব দিলো, নিজের সন্তান হলে মেয়েরা খুব স্বার্থপর টাইপ হয়ে যায় সেটা কি তুমি জানো?

হুম…শুনেছি। কিছু অবশ্য দেখেছিও।

আমিও এমনটা হতে দেখেছি। আমাদের এক ক্লাস ফ্রেন্ডের বোন বাচ্চা হবার সময় মারা গিয়েছিলো। এরপর বোনের স্বামীর সাথে ওর বিয়ে হয়েছে। অনেক আদর করতো বোনের বাচ্চাটিকে। কিন্তু নিজে কনসিভ করার পর বাচ্চাটিকে ওর নানীর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। কারণ বাচ্চার খেয়াল রাখতে গেলে নিজের শরীরের যত্ন নিতে পারবে না ঠিকমত। যদি ঐ বাচ্চাটি ওর নিজের হতো তাহলে কি এই কাজ করতো? কখনোই না। আমি তাই ঠিক করেছি আমরা কখনই বাবু নেবো না।

হাসি চাপলো আরিফী। এর সাথে আমাদের বাবু নেবার কি সম্পর্ক? জানতে চাইলো।

শাবাব বলল, নিজের বাবু হলে আমিও যদি স্বার্থপর হয়ে যাই তাহলে? তখন যদি আর আমার এই বাবুগুলোর কাছে আসতে ইচ্ছে না করে?

তুমি এভাবে চিন্তা করছো কেন শাবাব?

কারণ এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক। মাতৃত্ব মেয়েদের সবচেয়ে স্পর্শকাতর জায়গা। মেয়েদের কাছে তাই নিজের সন্তান সবচেয়ে বেশি স্পেশ্যাল। নিজের সন্তানকে দুনিয়ার সব দুঃখ-কষ্ট থেকে আগলে রাখতে চায় সবসময়।

এই ব্যাপারে আমি তোমার সাথে একমত না হয়ে পারছি না। শুধু দুঃখ-কষ্ট কেন কিছু কিছু মা আছেন যারা তাদের কন্যাদের তাদের স্বামীদের কাছ থেকেও আগলে রাখেন।
শাবাব চোখ বড় বড় করে বলল, খবরদার আমার মামণিকে মিন করে কিছু বলবে না।

আরিফী হেসে বলল, না বলে কোন উপায় আছে? চাচী যেভাবে তোমাদের দুবোনকে পাহাড়া দেন, অবিবাহিত মেয়েদেরকেও এভাবে পাহাড়া দেয় কিনা কোন মা সন্দেহ। সুতরাং চাইলেও আমরা কখনো বাবু নিতে পারবো কিনা সেটা একমাত্র আল্লাহ জানেন। কেননা শ্বাশুড়ি আম্মা তো সীসা ঢালা প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আমাদের মাঝে। আমি লেখক হলে ‘শ্বাশুড়ি যখন ভিলেন’ শিরোনামে একটা গল্প লিখে ফেলতাম।

আরিফীকে মেরে শাবাব বলল, অনেক খারাপ কথা বলা শিখেছো তুমি। আমার মামণি যা করে ঠিকই করে। এমন খারাপ ছেলের কাছে আসতে দেবে কেন আমাকে? যাও বসবোই না তোমার কাছে। শাবাব উঠে হাঁটতে শুরু করলে। আরিফীও হাসতে হাসতে পিছু নিলো।

চলবে…
পর্ব-১২

 

বান্ধবীর কনভোকেশন আমার অনুভূতি


বান্ধবীর কনভোকেশন আমার অনুভূতি


মিথিলা ফেরদৌস


শিরিন আমার গেন্দা কালের বান্ধবী।ছোটবেলা থেকেই কি যে মিষ্টি ছিল!পড়াশুনায়ও খুব ভাল ছিল।আর সারাক্ষন হাসতেই থাকতো,পুরা ক্লাস জুড়ে ওর বান্ধবী।কিন্তু কবে যে ও প্রেমে পড়লো,কবে যে বিয়ে হয়েছিল!কিছুই জানতে পারিনি।এস এস সি এর পর ওর সাথে আর যোগাযোগ হয় নাই।

ফেসবুকের কল্যানে ওর সাথে যোগাযোগ হয় আবার।মজার ব্যাপার তখন জানতে পারি শিরিনের মেয়ে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে পড়ছে।যেখানে আমার ছেলে এখনও প্রাইমারির গন্ডি পেড়োয় নাই।

হাসিখুশি শিরিন আগের মতই হাসে।আগের মতই সুন্দরী বরং আগের চেয়েও বেশি সুন্দর। তিন ছেলে মেয়ের কচি মুখের মা।

কিছুদিন আগে শিরিনের মেয়ে ডাক্তার হয়েছে,ইন্টার্নী করছে,মেয়ের বিয়ের দাওয়াতও পেলাম।

কয়দিন আগে শিরিনের ফেসবুকে একটা ছবি দেখে মন ভরে উঠে।ওর মেয়ের কনভোকেশন,মেয়ে ছুটি নিয়ে মায়ের জন্যে কনভোকেশনের গাউন নিয়ে গেছে।কারণ তার মায়ের একটা ইচ্ছে ছিল,কনভোকেশনের গাউন পরে ছবি উঠানো।

আগেই বলেছি,শিরিন ভাল ছাত্রী ছিল,অনার্স মাস্টার্স কমপ্লিট করে বিসিএস ভাইভা পর্যন্ত গিয়ে ফিরে এসেছে।এরপর বাচ্চাদের নিয়ে, সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরেছিল।ওর বাকি দুইজন ছেলে মেয়েও খুব ভাল স্টুডেন্টস।মানে একজন সার্থক মা শিরিন।

শিরিনকে নিয়ে এই লেখার একটা বিশেষ উদ্দেশ্য আছে।আমদের জীবনের একটা সময় আসে,যখন আমরা বুঝি বাচ্চাদের গড়ে তোলাই সবচেয়ে বেশি জরুরী।অনেক উচ্চশিক্ষিত মা’ই তাদের ক্যারিয়ার স্যাক্রিফাইস করেন বাচ্চাদের জন্যে।শিরিনের মত এমন অসংখ্য মায়েদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা।

আমার বন্ধু লিস্টে এমন আরেকজন জুনিয়র বন্ধু আছে।নাফিসা একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার।সেও বাচ্চাদের নিয়ে,সংসারে সময় দিয়ে খুব সুখি।শিক্ষা মানেই সবসময় চাকরি করা না।

একজন সুশিক্ষিত মা’ই পারে একজন সন্তানদের জীবন সুন্দর ভাবে গড়ে দিতে।অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা অবশ্যই দরকার।কিন্তু একটা নির্দিষ্ট পরিমানের বেশি অর্থের খুব একটা দরকার হয় না,যদি সন্তানদের সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলা যায়।তাদের জন্যে সঞ্চয়ের দরকার হয় না।যাদের সন্তান মানুষের মত মানুষ হয় না,তাদের জন্যেই প্রচুর অর্থের প্রয়োজন,সেইসব বাবা মায়েরাই চুরি করে।

যাইহোক এখানে প্রশ্ন আসবে,মেয়েদের কেন ক্যারিয়ার স্যাক্রিফাইস করতে হবে?!উত্তর যারা বোঝার তারা ঠিকই বুঝবে।তবে,এই যে আমি এত বড় বড় কথা বলছি,আমি নিজেও এমনটাই ভাবতাম,এত কষ্ট করে পড়েছি কি সংসার করার জন্যে?তবে ক্যারিয়ারিস্ট মেয়েদেরও অনেককেই দেখেছি,সুন্দর করে সংসার করতে,বাচ্চা মানুষ করতে দেখেছি।যাইহোক,যে মেয়েরা ক্যারিয়ার স্যাক্রিফাইস করে বা ক্যারিয়ারের সাথে থেকেও সুন্দর করে বাচ্চাকে গড়ে তুলছেন সবার জন্যে আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালবাসা সবসময়।

©মিথিলা ফেরদৌস

 

কুড়িগ্রামে চটের বস্তা গায়ে দিয়ে এক বৃদ্ধার শীত নিবারণের ছবি ভাইরাল,

কুড়িগ্রামে চটের বস্তা গায়ে দিয়ে এক বৃদ্ধার শীত নিবারণের ছবি ভাইরাল,


নারী সংবাদ


মো. আখতারুজ্জামান : আমরা শীতকে উপভোগ করার জন্য নানা পরিকল্পনা করে থাকি। আবার অনেকেই এই শীতেই নিদারুণ কষ্টও করে। সেই কষ্টের দৃশ্য মোবাইল ফোনে তুলে সোশাল মিডিয়া দিলে তা ভাইরাল হয়ে যায়। এমনই এক ঘটনা ঘটেছে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নে।
নাজমুল কুড়িগ্রাম নামের একজন তার ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দেন। পরে রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেখানকার ইউপি চেয়ারম্যানকে ওই বৃদ্ধার বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে বলেন।
নাজমুল তার স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘ছবিটা ১৯৭৪ সালের মহাদুর্ভিক্ষের সময়ের নয়; ২০১৯ সালের আজকের। যখন আমাদের মাথাপিছু আয় ১৯০৯ ডলার বা প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। কুড়িগ্রামের ১০০ জনে ৭১ জন মানুষ যে দরিদ্র তা বোঝাতে এই ছবিটাই যথেষ্ট বলে মনে করি। আমাদের রাজারহাটের ছিনাই ইউনিয়নের মহিধর এলাকায় শীতবস্ত্র দিতে গিয়ে চটের বস্তা গায়ে দিয়ে শীত নিবারনের এই চিত্রটা ধারণ করেছে এক ছোট ভাই। খোঁজ নিলে দেখা যাবে টাকার অভাবে হয়তো তার বয়ষ্ক ভাতা হয় নাই, স্বামী মারা গেলেও বিধবা ভাতা হয়তো এই “মা” পাননা কারণ ঘুষের ওই টাকা তার নাই। খড় বা সিন্ডার বেড়া দিয়ে বানানো ঘরটার গঠন দেখলেই বুঝা যায় কতোটা অসহ্য যন্ত্রণায় এতোদিন ছিলেন তিনি। সামান্য একটা কম্বলও জোগাড় হয়নি।
ধন্যবাদ কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়ন মানব কল্যাণ সংগঠনকে এ বৃদ্ধ মায়ের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। আমরা গরিবরাই নিজেদের কষ্টের টাকায় এসব অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে থাকবো, ইনশাআল্লাহ।’ পোস্ট দেয়ার কয়েক ঘন্টা পরে রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার যোবায়ের হোসেন ছিনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে অসহায় সেই বিধবার বয়ষ্ক ভাতা আছে কিনা সে ব্যাপারে খোঁজ নিতে বলেন। না থাকলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়াসহ পরিবারের সার্বিক ব্যাপারে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন।

সুত্রঃ আমাদের সময়।

 

মুখে ভর দিয়ে লিখেই পিইসিতে জিপিএ ৫ পেল লিতুন জিরা

মুখে ভর দিয়ে লিখেই পিইসিতে জিপিএ ৫ পেল লিতুন জিরা


নারী সংবাদ


দুই হাত-পা ছাড়াই জন্ম নেয়া লিতুন জিরা মুখে ভর দিয়ে লিখেই এবার পিইসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে।

লিতুন জিরা যশোরের মনিরামপুর উপজেলার শেকপাড়া খানপুর গ্রামের হাবিবুর রহমানের মেয়ে। সে এবার উপজেলার খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিইসি পরীক্ষায় অংশ নেয়।

লিতুন জিরা পরনির্ভর হয়ে সমাজের বোঝা হতে চায় না। লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হয়ে আরও ১০ জন মানুষের মতো আত্মনির্ভরশীল হতে চায় জন্ম থেকে দুই হাত-পা ছাড়া জন্ম নেয়া লিতুন জিরা। মুখ দিয়ে লিখেই মেধার সাক্ষর রেখেছে এই শিক্ষার্থী।

স্থানীয়রা জানান, লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহী লিতুন জিরা প্রখর মেধাবী। হুইল চেয়ারেই বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করে প্রখর মেধাবী এ-প্লাস পেয়ে লিতুন জিরা মেধার সাক্ষর রাখল। বর্তমানে হুইল চেয়ারটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তা চলাচলের প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

মেধাবী এ শিক্ষার্থীর বাবা উপজেলার এ আর মহিলা কলেজের প্রভাষক। তিনি গত ১৭ বছর ধরে ওই কলেজে চাকরি করলেও আজও কলেজটি এমপিওভুক্ত হয়নি। তার বাবাই সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। কিন্তু বেতন না পাওয়ায় খুব কষ্টে তাদের সংসার চলে।

লিতুন জিরার বাবা হাবিবুর রহমান ও মা জাহানারা বেগম বলেন, জন্মের পর মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা চিন্তা ছিল তাদের। এখন মেয়ের মেধা তাদের আশার সঞ্চার করেছে। লিতুন জিরা আর ১০ জন শিশুর মতো স্বাভাবিকভাবেই খাওয়া-দাওয়া, গোছল সবকিছুই করতে পারে। মুখ দিয়েই লিখে সে। তার চমৎকার হাতের লেখা যে কারো দৃষ্টি কাড়বে।

এ সময় কথা হয় লিতুনের সঙ্গে। তার একটাই ইচ্ছা, পরনির্ভর না হয়ে লেখাপড়া শিখে নিজেই কিছু করতে চাই।

তবে, কিছুদিন আগে মারা যাওয়া দাদুর জন্য খুব মন খারাপ লিতুন জিরা। দাদু বেঁচে থাকলে তিনি খুব খুশি হতেন বলে জানাল লিতুন জিরা।

লিতুন জিরার প্রধান শিক্ষক সাজেদা খাতুন বলেন, তার ২৯ বছর শিক্ষকতা জীবনে লিতুন জিরার মতো মেধাবী শিক্ষার্থীর দেখা পাননি। এককথায় সে অসম্ভব মেধাবী। শুধু লেখাপড়ায় না, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও অন্যদের থেকে অনেক ভালো লিতুন।

সুত্রঃ যুগান্তর।

 

সালতামামি ২০১৯ (নারী সংবাদ)

সালতামামি ২০১৯ (নারী সংবাদ)


নারী সংবাদ


সালটি শেষ হবে কিছুক্ষণের মধ্যেই ২০১৯ সাল। সারা বিশ্বের নারীদের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটি বছর। দেশের রাজনীতি, খেলাধুলা, শিক্ষা, মানবাধিকার, ক্ষমতায়ন, সমাজসেবা প্রভৃতি ক্ষেত্রে নারীরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এখনও রাখছেন।এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অবদান রেখেছেন নারীরা। আবার- ভালো খবরের পাশাপাশি দুশ্চিন্তা জাগানিয়া খারাপ খবরেরও কমতি ছিলো না বছরজুড়ে। খুন-ধর্ষণসহ বহু অপ্রত্যাশিত, বহু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটে গেল বছরটিতে। তাই প্রাপ্তির হিসাবের চেয়ে অপ্রাপ্তির হিসাবও কম নয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম নারী উপাচার্য গত ৩ নভেম্বর যোগ দিয়েছেন অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার।

ভারতের পন্ডিচেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ বিষয়ে মার্স্টার্সে সর্বোচ্চ নম্বরের অধিকারী রাবিহা আব্দুরেহিমকে হিজাবের কারণে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। সমাবর্তনে যোগ দিতে হলে হিজাব খুলে আসতে হবে, এমন শর্ত দেওয়ায় তিনি স্বর্ণপদক প্রত্যাখ্যান করে শুধু সার্টিফিকেট নিয়েই বাসায় চলে যান।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেশের সব স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে নারীদের ফ্রি ন্যাপকিন পাবার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন নারীদের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে। জহিরন বেওয়া যার বয়স ৯২ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু মনের উদ্যমতা, সাহসিকতা, কর্মের দক্ষতা-সখ্যতা সাথে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছেন লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ী ইউপির সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে।

বোরকা পরেই সাংবাদিক হিসেবে বিখ্যাত হচ্ছেন পাকিস্তানী দুজন সাহসী নারী সাবিহা ও লতিফা। তাদের ভাষায়, ‘আমাদের বোরকা জার্নালিস্ট নামের যে প্রকল্পটি মুসলিম মেয়ের জন্য চালু করেছি, তা প্রসারিত করতে আরো বেশি মেয়েরা এগিয়ে আসার প্রয়োজন।’ ফাতিমা কানাডার সংসদের বিরুদ্ধে প্রায় একাই লড়ে বিজয়ী হওয়া ঈমানোদ্দীপ্ত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক কিশোরীর নাম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যখন একে একে হিজাব ও নিকাব নিষিদ্ধ হচ্ছিল, তারই ধারাবাহিকতায় কানাডাতেও কয়েকমাস আগে প্রকাশ্যে নিকাব নিষিদ্ধ করে একটা আইন পাস হয়। যার নাম বিল-৬২। এর বিপক্ষে আইনী লড়াই করে জয়ী হন ফাতিমা।

ব্রিটিশ নির্বাচনে চার বাঙালি নারীর জয়
ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে এবার জয় পেয়েছেন চার বাঙালি নারী। তারা হলেন- টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক, রুশনারা আলী, রূপা হক ও আফসানা বেগম।

বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটের ইতিহাসে দারুণ সফল বছর ছিল ২০১৮। তবে সেই সাফল্যের রেশ ধরে ২০১৯-এর ডিসেম্বরে নেপালে অনুষ্ঠিত এসএ গেমসের আর্চারি ডিসিপ্লিনে এবারই প্রথম ১০ টি ইভেন্টের সবগুলোতেই স্বর্ণ জিতেছে বাংলাদেশ! মেয়েদের কম্পাউন্ড এককে স্বর্ণ পদক জিতেছে বাংলাদেশের সোমা বিশ্বাস। দলগততেও স্বর্ণ জিতেন তিনি। এছাড়া ব্যক্তিগত নারী রিকার্ভে স্বর্ণ জেতেন ইতি খাতুন। কারাতেতে স্বর্ণ আসে হোমায়রা আক্তার প্রিয়া এবং অন্তরার হাত ধরে । আর ফ্যান্সিংয়ে স্বর্ণ জিতেন ফাতেমা মুজিব।

 

স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে গণধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগ, আটক ২

স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে গণধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগ, আটক ২


নারী সংবাদ


ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে তাকে গণধর্ষণের সহযোগিতা করেছেন বলে স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন স্ত্রী। শনিবার দিবাগত রাতে উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের চরপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

রোববার রাতে ওই গৃহবধূ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় স্বামীসহ দুই অভিযুক্তকে আটকের পর আজ সোমবার দুপুরে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, শনিবার বিকেলে স্বামী রতন মিয়ার সাথে ঈশ্বরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসের পেছনে বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ খুঁজতে যান ওই গৃহবধূ। কোনো বাসায় কাজ না পেয়ে স্বামীর সাথে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে জাটিয়া ইউনিয়নের শিমুলতলী গিয়ে বাড়ি না ফিরে শিবপুর গ্রামের দরগায় গৃহবধূকে নিয়ে গান শুনতে যান রতন। গান শুনে রাত ১১টার দিকে হেঁটে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য তারা রওয়ানা হন। দ্রত বাড়িতে যাওয়া যাবে- এ কথা বলে রাস্তা দিয়ে না গিয়ে ক্ষেতের মাঝখান দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

এর পর জাটিয়া ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের বাবু মিয়ার একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে যান রতন। সেখানে গিয়ে স্ত্রীকে মারধর করে অপেক্ষমাণ লম্পটদের হাতে তুলে দেন তিনি। সেখানে রাতভর পালাক্রমে ধর্ষিত হন ওই গৃহবধূ।

রোববার ভোরে সেখান থেকে পালিয়ে এসে গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূ থানায় হাজির হন। পরে পুলিশ ওই এলাকায় অভিযান শুরু করে। আটক করা হয় প্রধান অভিযুক্ত স্বামী রতনসহ সরিষা ইউনিয়নের লংগাইল গ্রামের আবদুস সোবহানের ছেলে নজরুল ইসলামকেও।

ঈশ্বরগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জয়নাল আবেদীন বলেন, স্ত্রীকে ধর্ষকদের হাতে তুলে দেন স্বামী। গণধর্ষণের ঘটনার এমন খবর পেয়ে তার স্বামীসহ দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য অভিযুক্তদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলছে।
সুত্রঃ নয়াদিগন্ত

 

মনের খোরাক

মনের খোরাক


কানিজ ফাতিমা


প্রকৃতিতে আমার কোনো ক্লান্তি নাই, ঘন্টা কেন, দিনের পর দিন একই দৃশ্যে তাকিয়ে থেকেও চোখ ফেরেনা আমার। কেউ হয়ত ভাববে, কি দেখে এত চেয়ে চেয়ে ? নিরত দু’চোখ মেলে পথের ধারের বনফুল দেখি,ছোট্ট ডোবায় হাসের নিস্তব্দ ভেসে যাওয়া দেখি, আকাশের মেঘ দেখি- সাদা মেঘ, ধুসর মেঘ, ঘন মেঘ, তুলির ছোপ মেঘ আর চপলা মেঘ – ক্লান্তিরা কখন ক্লান্ত হয়ে ফিরে যায় আমার অক্লান্ত চেয়ে থাকা দেখে। সাদা কয়েকটা মেঘের টুকরায় এত দেখার কি আছে ? আমার আছে। একটা কালো পাখির লেজ দোলানো, গাছের ডালে মৃদু-মন্দ বাতাসে পলকা বরফের ঝুর ঝুর ঝরে পরা, শীতের বাতাসে শুকনো পাতার ফুরুত ফুরুত ওড়া, পথিকের হেটে যাওয়া, হাত নাড়ানো, স্কুলের সামনের গাছটার সোজা উপরের দিকে উঠতে উঠতে হতাঠ বেঁকে যাওয়া, গাড়ীর দরজা খুলে একজন মহিলার বের হয়ে আসা – এসব সাধারণ দৃশ্যেও আমার বিস্তর আগ্রহ। সিনেমা দেখে, গল্প করে, আড্ডা দিয়ে আমার বিনোদনের দরকার হয় না, চারপাশই আমার বিনোদনের উত্স। প্রকৃতির পানে নীরব চাহনীতেই মিশে থাকে আমার মনের খোরাক।
স্টাফ রুমের পুরো দেয়াল জুড়ে কাচের জানালাটা আমার খুব প্রিয়। অতি ব্যস্ত সিডিউলেও সুযোগ করে জানলার ধরে বসে একটু জিরিয়ে নেই। কলিগরা সবাই যখন গল্পে বা পেশাগত আলাপচারিতায় ব্যস্ত, আমি তখন হারিয়ে যাই আমার গোপন দৃষ্টির ভুবনে, পেছনের কিছুই টানেনা আর – জেগে থাকে শুধু সামনের দিগন্তে দু’চোখের তাপসী ধ্যান। দু’টো বাচ্চা নিয়ে এক মা বেরিয়ে এলো গাড়ী থেকে, মাঝারী ঠান্ডা, তাই ওদের কারো পায়েই ভারী বুট নেই, হালকা জুতো। ওরা হেটে আসছে আমার দিকে। মানুষের হাটাও যে কত বিচিত্র! – উলম্ব হাটা, ঝুলন্ত হাটা , ক্লান্ত হাটা, আত্মবিশ্বাসী হাটা, বিষন্ন হাটা, কৃত্রিম হাটা- আরো কত কী ! মহিলাটি আত্মবিশ্বাসী হাটা হাটছে, বাচ্চা দু’টোকে একটু আগলে নিয়ে। তার মুখ আমি দেখতে পাচ্ছিনা , কিন্তু এত দূর থেকেও তার বাচ্চা আগলে দৃঢ় হাটার ভঙ্গীতে তাকে অপূর্ব লাগছে। ওই যে পেছনের পার্কিং লট থেকে বেরিয়ে এলেন আরেক মহিলা। বয়স পূর্বের মহিলার মতই হবে বোধ করি, কিন্তু হাটছেন কিশোরী ছন্দে, জ্যাকেটের জীপার এর মধ্যখান থেকে বেরিয়ে এসে একটা সরু সাদা রেখা দুভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়ে দু’ কানে মিশেছে – আশংকা করি সে গাড়ী চালানোর সময়ও এ দু’টোকে কান থেকে নামায়নি। অদ্ভুত ভাবে হাটছে মহিলা। বরফ কিছুটা গলে গেলেও এখানে সেখানে স্তুপ স্নো এখনো রয়ে গেছে, আর তার নীচে লুকিয়ে থাকা ছোপ ছোপ বরফ জমে আছে কোথাও কোথাও। এর মাঝ দিয়ে মহিলাটা একে বেকে হাটছে, নতুন হাটতে শেখা বাচ্চদের মত – পার্থক্য শধু এইযে তার পুরোটাই কৃত্তিম, বাচ্চদের অকৃত্তিম টলমলে হাটা নয়। দোতলার জানালায় বসে দেখলাম পার্কিং লটের মাঝা মাঝি থেকে স্কুলের গেটে ঢোকা পর্যন্ত এতগুলো পদক্ষেপের একটিতেও মহিলার দৃঢ়তা ছিলনা একফোটা। ভাবছিলাম এই বয়সের এক মহিলা কেন বরফের পিচ্ছিল পথে হাটার জন্য বেছে নিয়েছেন সরু হিলের বুট, কেন তিনি নিজেই নিজের চলাকে করেছেন বিপজ্জনক, কেন তিনি তার নিজের কোমরে, মেরুদন্ডে সৃষ্টি করছেন অতিরিক্ত ক্ষতিকর চাপ? এবং সর্বপরি যে “সৌন্দর্য” বা “স্মার্ট নেস” এর জন্য তিনি এই কষ্ট ও বিপদকে মেনে নিয়েছেন সেটার লেশ মাত্রও তো দেখতে পাচ্ছিনা আমি তার ভীরু, আত্ববিশ্বাসহীন, অনেকটা ভাড়ীয় হাটায়। তারপরও কেনো তিনি এটাকেই মনে করছেন “ফ্যাশন”?
ফেসবুকে ঢাকার উঠতি বয়সের কিছু তরুনীদের ছবি দেখি টাইট জিন্সের প্যান্টে। এসব প্যান্ট তৈরী করা হয় শীতের দেশের জন্য। বাংলাদেশের গরম আবহাওয়ায় যে তাদের অনেক কষ্টে এই “ফ্যাশন” কে ধারণ করতে হচ্ছে তা বুঝতে কারো কষ্ট হবার কথা নয়। কষ্ট হোক তবু “স্মার্ট” তো হতে হবে।
আচ্ছা, স্মার্টনেসের সংগাটা কি? বরফের ওপর বিপজ্জনক ও ক্ষতিকর উচু হিল? গরমে মোটা টাইট প্যান্ট? নাকি আবহাওয়া অনুযায়ী সঠিক পোশাক নির্ধারণের মত মগজের ক্ষমতা? কে বেশী স্মার্ট, যে টিভির বিজ্ঞাপন দেখে বরফের মধ্যেও হিল পরে ভাড়ীয় হাটা হাটে নাকি যে আবহাওয়া সম্পর্কে অবগত থাকে এবং নিজের মাথার ব্যাবহার করে সঠিক জুতা নির্ধারণ করার ক্ষমতা রাখে? যে হকার্সে গিয়ে টাইট জিন্স কিনে টেনে-টুনে শরীরে ঢুকায়, নাকি যে জানে যে গরম আবহাওয়ায় ঢিলা- ঢালা পোষাক আর হালকা মেকআপ বেশী উপযোগী? কে বেশী স্মার্ট, যে নিজের মাথার ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত নেয়, নাকি যে নিজের চোখের মাথা খেয়ে মিডিয়ায় দেখানো অখ্যাদ্য কুখাদ্যকে বিশেষ “সুখাদ্য” হিসাবে চোখ বুজে গেলে?
সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমান প্রাণী হয়েও আমরা কিভাবে নিজের মস্তিস্কের হালটা নিশ্চিন্তে ছেড়ে দিতে পারি মিডিয়ার ওপরে? আমরা যখন নিজের ভাবনা নিজে নাভেবে মিডিয়াকে ভাবিয়ে নিতে দেই তখনই মিডিয়ার প্রচারে মিথ্যা আর অসুন্দর গুলো আমাদের মস্তিস্ককোষে বাসা বাধে সুন্দর আর সত্য রূপে। ক্রমে ক্রমে আমরা মানুষেরা হারিয়ে ফেলি আমাদের দৃষ্টিশক্তি, ক্ষয়ে যায় আমাদের চিন্তাশক্তি- চরম অসুন্দর দৃশ্যগুলো রুপান্তরিত হর সুন্দরতমে; দৃষ্টিকটু হয়ে ওঠে আকর্ষনীয়, মিথ্যা রুপান্তরিত হয় একমাত্র সত্যে, চক্রান্ত মূর্ত হয় চেতনায়। অবশেষে সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমান মানুষ হয়ে যায় বুদ্ধিহীন মিডিয়াধীন এক পরজীবীতে, এভাবেই হারিয়ে যায় তার স্বাধীনতা আর শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয়।

 

ধর্মীয় বিতর্কে আটকে গেল ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ স্থাপন

ধর্মীয় বিতর্কে আটকে গেল ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ স্থাপন


স্বাস্থ্যকথা


এতিম-বিপন্ন শিশুদের জন্য দেশে প্রথমবারের মতো যাত্রা শুরু মায়ের বুকের দুধ সংরক্ষণের ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ চালুর উদ্যোগ নেওয়া হলেও ধর্মীয় প্রশ্নে বিরোধিতার মুখে আটকে গেছে। এতে আইনগত ও ধর্মীয় সমস্যা আছে মর্মে ‘মিল্ক ব্যাংক’ স্থাপনের বিরোধিতা করে এবং এ ব্যাপারে যথাযথ শর্তারোপ চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

রোববার (২৯ ডিসেম্বর) জনস্বার্থে নোটিশটি পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান।

নোটিশে ধর্ম মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, শিশু-মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (আইসিএমএইচ), নবজাতক পরিচর্যা কেন্দ্র (স্ক্যানো), নবজাতক আইসিইউ (এনআইসিইউ) এবং ঢাকা জেলা প্রশাসককে বিবাদী করা হয়েছে।

আইনজীবীর পাঠানো নোটিশে বলা হয়েছে, ‘‘ইসলাম ধর্মমতে, কোনো শিশু কোনো মহিলার দুধ পান করলে ওই মহিলা ওই শিশুর দুধমাতা হয়ে যায় এবং উক্ত মহিলার সন্তানরা উক্ত শিশুর ভাইবোন হিসেবে গণ্য হয়। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশে উক্ত ‘মিল্ক ব্যাংক’ স্থাপনের ফলে একই মায়ের দুধ পানের কারণে ভবিষ্যতে ভাইবোনের মধ্যে বিয়ে হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যা চরমভাবে সামাজিক অরাজকতা সৃষ্টি করবে। পাশাপাশি ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী, ভাই ও বোনের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ এবং তা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় আইন ‘মুসলিম ব্যক্তিগত আইন (শরীয়ত) প্রয়োগ আইন, ১৯৩৭’ এর সরাসরি লঙ্ঘন।”

এ ব্যাপারে হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকের সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. মজিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, এই কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। এটা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার পর সবার সম্মতি পেলে সম্ভব হলে এটা চালাব।

প্রসঙ্গত, হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকের উদ্যোগটি ঢাকা জেলার মাতুয়াইলের শিশু-মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের (আইসিএমএইচ) নবজাতক পরিচর্যা কেন্দ্র (স্ক্যানো) এবং নবজাতক আইসিইউ (এনআইসিইউ)-এর নিজস্ব উদ্যোগ। বেসরকারি আর্থিক সহায়তায় ব্যাংকটি স্থাপন করা হয়েছে। এটি গত ১ ডিসেম্বর চালু হলেও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে।

আইসিএমএইচ ক্যাঙারু মাদার কেয়ারে মা ছাড়া খালা, নানি বা অন্যদের সঙ্গে যে নবজাতকদের রাখা হচ্ছে, তারাও এই দুধ খেতে পারবে। স্ক্যানো ও এনআইসিইউতে থাকা অপরিণত বয়সে জন্ম নেওয়া ও অসুস্থ নবজাতকদের সংরক্ষণ করে রাখা দুধ খাওয়ানো হবে। ৩৭ সপ্তাহের আগে জন্ম নেওয়া ২ হাজার গ্রামের কম ওজনের নবজাতকদের মা বা অন্য অভিভাবকদের ত্বকের সংস্পর্শে রেখে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করাকে ক্যাঙারু মাদার কেয়ার বলে।

এ ছাড়া দত্তক নেওয়া সন্তানের অভিভাবকেরা এখান থেকে দুধ নিয়ে খাওয়াতে পারবেন। বিভিন্ন সময় স্বজনেরা নবজাতককে ফেলে দেন, এই স্বজন-পরিত্যক্ত নবজাতকদের বাঁচাতেও মিল্ক ব্যাংক কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। মায়েদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ ও বিতরণে কোনো ধরনের আর্থিক সুবিধা নেওয়া হবে না।

আইসিএমএইচ স্বায়ত্তশাসিত একটি প্রতিষ্ঠান। এর যাত্রা শুরু ১৯৯৮ সালে। সরকার, বিভিন্ন দেশি–বিদেশি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা বা ব্যক্তির অনুদান এবং ইনস্টিটিউটের নিজস্ব অর্থ মিলিয়ে এটি পরিচালিত হচ্ছে। ইনস্টিটিউটটির দেওয়া তথ্য বলছে, গত বছর স্ক্যানো এবং এনআইসিইউতে ১ হাজার ৮৬৫ জন নবজাতক ভর্তি হয়। এর মধ্যে ৪৮৮ জনই ছিল গুরুতর অসুস্থ।

গত বছরের জানুয়ারি মাস থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত মোট ২৫ জন মাতৃহীন নবজাতক ভর্তি ছিল। ৩৭ জনই ছিল দত্তক নেওয়া। এদের অধিকাংশই মারা যায়। বুকের দুধ খাওয়ানো সম্ভব হলে এদের অনেককেই বাঁচানো সম্ভব হতো।

সম্প্রতি আইসিএমএইচে গিয়ে দেখা যায়, ইনস্টিটিউটের দোতলায় হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকের জন্য পাস্তুরাইজিং মেশিন, অত্যাধুনিক ফ্রিজসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বসানো হয়েছে। ব্যাংকের জনবলকে প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ অন্যান্য কার্যক্রম চলছে। হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকে সংরক্ষিত মায়ের বুকের দুধ তিন মাস থেকে সর্বোচ্চ ১৮ মাস পর্যন্ত সম্পূর্ণ গুণগত মান বজায় রেখে ভালো থাকবে। এই ব্যাংকের মাধ্যমে দুধের বিভিন্ন অংশ যেমন শর্করা, প্রোটিন ও চর্বি উপাদান আলাদা আলাদা করে প্রয়োজনমতো নবজাতককে খাওয়ানো সম্ভব হবে। আর ব্যাংক থেকে নেওয়া দুধ বাড়িতে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত ভালো থাকবে।

সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা বলছেন, মিল্ক ব্যাংক স্থাপনের ফলে বাজারজাত করা মায়ের দুধের বিকল্প শিশুখাদ্যের ব্যবহার কমবে। নবজাতকদের বুকের দুধ খাওয়ানোর ফলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। নবজাতকের মৃত্যুঝুঁকি ও অপুষ্টির হার কমানো সম্ভব হবে।

আইসিএমএইচের সহযোগী অধ্যাপক মজিবুর রহমান হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ব্যাংক চালু করার আগে তিনি নিজে স্পেন ও ভারতের দুটি হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক পরিদর্শন করে এসেছেন। তিনি বললেন, যে মায়েদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করা হবে, সেই মায়েদের মারাত্মক রোগ (হেপাটাইটিস বি এবং এইচআইভি) আছে কি না তা পরীক্ষা করে করে দুধ সংগ্রহ করা হবে, যাতে নবজাতক রোগের ঝুঁকিতে না পড়ে।

ইনস্টিটিউটের এনআইসিইউ এবং স্ক্যানোর ইনচার্জ এবং মিল্ক ব্যাংকের সমন্বয়ক মজিবুর রহমান জানান, সবচেয়ে বেশি (২১৬ টি) হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক রয়েছে ব্রাজিলে, যার মাধ্যমে ২৮ শতাংশ নবজাতকের মৃত্যু রোধ এবং ৭৩ শতাংশ শিশুর অপুষ্টি রোধ করা সম্ভব হয়েছে। এমনকি ভারতেও ব্যাংক স্থাপনের পর নবজাতকের মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হয়েছে।

আইসিএমএইচের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক এম এ মান্নান বললেন, বাংলাদেশে যেহেতু প্রথমবারের মতো এ ধরনের একটি ব্যাংকের যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে, তাই বিভিন্ন দিক বিবেচনায় নিয়ে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। মায়ের বুকের দুধ সংগ্রহ এবং অন্য নবজাতকদের খাওয়ানোর ক্ষেত্রে যাতে ইসলামি শরিয়াহর কোনো লঙ্ঘন না হয়, সে ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। মুসলিম দেশের মধ্যে কুয়েতে প্রথম হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক স্থাপন করা হয়। এ ছাড়া ইরান, ইরাক, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া ও পাকিস্তানসহ অনেক মুসলিম দেশ হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছে। ওই দেশগুলো কীভাবে ব্যাংক পরিচালনা করছে, তার বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা করা হয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্তাব্যক্তিদের মতামত নেওয়া হচ্ছে।

ব্যক্তি উদ্যোগ এবং বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠীর সহায়তায় মিল্ক ব্যাংকটি স্থাপনে এখন পর্যন্ত এক কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে। তবে অধ্যাপক মান্নান বললেন, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য এ ধরনের ব্যাংক পরিচালনা ব্যয়বহুল হলেও সরকারের জন্য এ খরচ তেমন বেশি নয়। আর নবজাতকদের বাঁচাতে এ ব্যাংক যে ভূমিকা রাখবে, সে তুলনায় এ খরচ কিছুই না।

সুত্রঃ মেডিভয়েস রিপোর্ট

 

স্বাস্থ্যসেবার নৈতিকতা

স্বাস্থ্যসেবার নৈতিকতা


ফারাহ দিবা


স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত যে কোন কর্মীদের জন্য নৈতিকতার বিষয়গুলো অনেক ছোটখাট কাজের ভেতর দিয়ে অনেকে আমরা না জেনে বা না বুঝে ভংগ করে ফেলি। এটা অনেকটা স্বামী-স্ত্রী-র সর্ম্পকের মত নিয়ে থাকি। যেমন, আমরা বিয়ে করি, জানি যে বেশ কিছু র্শত মেনে চলার প্রতিজ্ঞা করে ঐ সর্ম্পকটি আমরা স্থাপন করতে যাচ্ছি। কিন্তু আমরা ভাল করে সেগুলো জানার চেষ্টা করি না। সই করি র্শতগুলোতে কি আছে না জেনে। তবে অবশ্য্ই কেউ কেউ আছেন যারা পড়েন এবং সেগুলো মেনে চলেন। আমি শ্রদ্ধার সাথে তাদের কথা মনে করি। কিন্তু আমরা বেশীরভাগ্ই পড়ি না বা বিয়ের মুহূর্তের আনন্দানুভূতিতে, সময়ের অভাবে, “পরে সময় করে পড়বো”, “আরে এগুলোতো গতবাঁধা কথা, এ আবার পড়ার কি আছে?” ইত্যাদি ভাবনায় পড়া হয় না। কিন্তু তারপর আর ফিরে দেখা হয় না বা পড়াও হয় না, কি শর্ত আমি মেনে নিয়েছিলাম বা কি পালন করবো বলে আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। মনেও থাকে না যে এই ভুলে যাওয়া আর না মেনে চলা “প্রতিজ্ঞাভঙ্গের” সামিল। ঠিক তেমনি স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত যে কোন কর্মীর সাথে সেবাগ্রহীতার “সর্ম্পকের” মধ্যকার র্শতগুলো না মেনে চলা হচ্ছে “স্বাস্থ্যপেশাজীবির নৈতিকতার প্রতিজ্ঞাভঙ্গের” সামিল। যেমন, অনেক সময় আমরা খুব সহজভাবে ধরে নিই যে কোন রোগীর সাথে কাজে যে সফলতা হয়েছে তা রোগীর নাম, ধাম অপ্রকাশিত রেখে প্রকাশ করলে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু অসুবিধা আছে, যদি না আমরা কিছু নৈতিকতার কিছু বিষয় পালন বা মেনে না নিয়ে এহেন কাজগুলো করি। নৈতিকতার র্শত হিসেবে রোগীর কাছ থেকে বেশ কিছু বিষয়ে অনুমতি নেবার কথা, যেমন, প্রথমত: যে তার নাম-পরিচয় গোপন করে তার সমস্যা ও সমাধানের বিষয়গুলো কি তা তুলে ধরতে পারি কিনা? দ্বিতীয়ত: আমি কোথায় তার কথা তুলে ধরতে চা্ই , আমার পেশার সহকর্মীদের কাছে, অন্যান্য সহসম্পর্কিত পেশার সহকর্মীদের সাথে, বৈজ্ঞানিক বা দৈনিক পত্র-পত্রিকায় বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে্ । তৃতীয়ত: আমার এ তথ্য সহভাগের উদ্দেশ্য কি? যেমন, এক্ই পেশার সহকর্মীদের সাথে সমস্যাটি বিশেষ ধরনের তাই তাদের সাথে নিজের অভিজ্ঞতা সহভাগ করলে অন্যান্য সম্ভাব্য সমধরনের সেবাগ্রহীতার উপকারে আসতে পারে; বা অন্যান্য সহসম্পর্কিত পেশার সহকর্মীদের সাথে সহভাগ করা কারণ, কিভাবে একটি বিশেষ সমস্যা বিবিধ ধরনের স্বাস্থ্যসেবার সমন্বয়ে সমাধান সম্ভব অথবা সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধিতে বা নিজের প্রচার বা প্রসারের মাধ্যমে আরও সেবাগ্রহীতার দৃষ্টি আর্কষণ। এগুলোর যে কোনটির প্রতি সেবাগ্রহীতার অনুমতি ব্যতিরেকে আমরা কোন সেবাগ্রহীতার নাম-ধাম প্রকাশ না করলেও আসলে কোন কথা প্রকাশ করতে পারি না। আর ছবি (স্থির চিত্র/চলচিত্র) ব্যবহার করে তো কোন ভাবেই নয়। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, স্বাস্থ্যপেশাজীবির জীবনে নৈতিকতার বিষয়টি খুব নাজুক। তাই আমাদের উচিৎ নিজের পেশার নৈতিকতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা নেয়া এবং তা মেনে চলা। কার্যক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত ভেবে দেখা কোন “অসংগতিপূর্ণ অবস্থান” (conflict of interest) তৈরী হচ্ছে কিনা। হলে তা কি করলে প্রতিহত করা যাবে। অর্থাৎ পেশাদার হিসেবে করা প্রতিজ্ঞা ও প্রতিশ্রুতিগুলো মাঝে মাঝে পর্যালোচনা করে দেখা যাতে বুঝতে পারি পেশার সীমার ভিতর আছি কিনা এবং যা করার নয় তা করে ফেলছি কিনা। কারন স্বাস্থ্যসেবার প্রথম ও প্রধান শর্ত্ হলো সেবাগ্রহীতার প্রতি করা অঙ্গীকার মেনে চলা।

 

ভাপা পিঠা বানানো সহজ উপায়

ভাপা পিঠা বানানো সহজ উপায়


আরণ্যক শবনম


ডিসেম্ববের মাঝামাঝি শীত বাড়তে শুরু করেছে একটু একটু করে, সাথে সকালের মিষ্টি কুয়াশার রেশ। ঘুম ভাঙতেই যদি আপনার সামনে আম্মা ভাপা পিঠে নিয়ে হাজির হন, কেমন খুশি লাগবে বলুন তো?বাসার সবাইকে চমকে দিতে।

পিঠা তৈরি করতে যা লাগছে,

১/আতপ চালের গুড়া
২/পাঠালী গুড়
৩/নারকেল
৪/লবন

আর পিঠা তৈরিতে যে উপকরণ লাগছে,

১/মাঝারী সাইজের ভাতের হাড়ি কিংবা যেকোন পাতিল; সাথে ঐ মাপের ঢাকনা
২/কিছু নেটের ব্যাগ বা নেটের টুকরো।
৩/লবনের বাটি কিংবা স্টিলের গোল বাটি
এ পিঠার রেসিপি এজন্যই আরো সহজ যে আপনাকে আলাদা করে পিঠার সাজ, কিংবা আলাদা কিছু কিনতে হবে না।

চালের গুড়া: বাসায় আতপ চাল ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিয়ে মেশিনে চাল গুড়া করিয়ে নিবেন, ভিজা চালের গুড়া সপ্তাহখানেক ভালো থাকে, রোদে শুকিয়ে রাখলে আরো কিছুদিন। পিঠার তৈরি জন্য একটা বড়ো বোল এ চালের গুঁড়া নিয়ে, সামান্য লবন নিতে হবে, এরপর অল্প অল্প করে পানি নিয়ে চালের গুড়াকে একটু ভিজিয়ে নিতে হবে, পানি খুবই সামান্য, তারপর, চালনি দিয়ে চেলে ঝরঝরে করে নিতে হবে। ভিজা চালের গুড়ায় খুব অল্প পানিই যথেষ্ট। ভাপা পিঠা যেহেতু ভাপে তৈরি হয়, সেহেতু চালের গুড়াকে হালকা ভিজিয়ে নিতে হয়।

নারিকেল ও গুড় : নারিকেল কুড়িয়ে নিতে হবে, হাত কোড়ানি ব্যবহার করতে পারেন। বাজারে আসা নতুন গুড় বেশ নরম থাকে, সেগুলো পাতলা করে ঝুড়া করে নিতে হবে। ব্যস, পিঠার উপকরণ প্রায় প্রস্তুত।

এবার, আসল প্রস্তুতি যেটার জন্যই আসলে, অনেকে পিঠা বানাতে চান না, ঝামেলার মনে করেন, সেটা খুব সহজে
তৈরি করে নিতে পারেন। ভাতের হাড়ি কিংবা যেকোন ঢাকনাসহ হাড়ি (যেটাতে পর্যাপ্ত পানি নেওয়া যাবে বাষ্প পাওয়ার জন্য) হাড়ির মুখ নেটের টুকরো ডাবল ভাজ দিয়ে সুন্দর করে বেঁধে ফেলুন।
আমি হিটারে পানি গরম করে ঢেলে নিয়ে, চুলায় বসিয়ে নিয়েছি যাতে তাড়াতাড়ি ভাপটা পাওয়া যায়, গ্যাসও অপচয় কম হবে।

যথেষ্ট ভাপ উঠতে শুরু করলে, পিঠার পুড় ও চাল দিয়ে সাজিয়ে নিয়ে হবে। আমি টিফিন বক্সের ছোট বাটি ব্যবহার করেছি, প্রথমে কিছু চালের গুড়া নিয়ে নারকেল কিমা আর গুড় দিয়ে নিন, তারপর উপর অংশে আস্তে আস্তে চালের গুড়া দিয়ে ঢেকে দিন, গুড়া অল্প অল্প করে নিয়ে আলতো করে করতে হবে। একসাথে বেশী করে নিয়ে বেশী চেপে দিলে পিঠা তোলার সময় ভেঙ্গে যেতে পারে। পিঠা সাজানো হয়ে গেলে বাকী নেট দিয়ে,আমি দু’টা ঝালি ভালো করে ধুয়ে নিয়েছি, সেটা দিয়ে পিঠা জড়িয়ে হাড়ির উপর আস্তে করে বসাতে হবে।এসময় চুলোর আঁচ কমিয়ে নিলে ভালো। এরপর বাতিতে আলতো টোকা দিলে বাতিটা তুলে নিয়ে অবশিষ্ট নেট ভালোভাবে জড়িয়ে ঢাকনা দিয়ে দিতে হবে। এরপর মিনিট খানেক পর অপেক্ষার পালা, পিঠার তুলবার সময় চুলোর আঁচ কমিয়ে নিয়ে হবে। পিঠার তোলার পর আস্তে আস্তে নেট ছাড়িয়ে নিন। এভাবে চালের গুড়া একটু ভিজিয়ে নিয়ে, প্রয়োজনমত পিঠা বানিয়ে নিন ঘরে বসেই।

 

হিজাব খুলতে বলায় স্বর্ণপদক প্রত্যাখ্যান সেরা ছাত্রীর

হিজাব খুলতে বলায় স্বর্ণপদক প্রত্যাখ্যান সেরা ছাত্রীর


নারী সংবাদ


ভারতের পন্ডিচেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ বিষয়ে মার্স্টার্সে সর্বোচ্চ নম্বরের অধিকারী রাবিহা আব্দুরেহিমকে হিজাবের কারণে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। সমাবর্তনে যোগ দিতে হলে হিজাব খুলে আসতে হবে, এমন শর্ত দেওয়ায় তিনি স্বর্ণপদক প্রত্যাখ্যান করে শুধু সার্টিফিকেট নিয়েই বাসায় চলে যান। খবর পার্সটুডের

গতকাল (সোমবার) এ ঘটনা ঘটেছে বলে আজ ভারতীয় গণমাধ্যম খবর দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির জওহরলাল নেহরু অডিটরিয়ামে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দ।

তার হাত থেকেই সাফল্যের পুরস্কার নিতে গিয়েছিলেন রাবিহা। কিন্তু সেই সময় অনুষ্ঠানে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি তাকে। কারণ সেই হিজাব।

রাবিহা গণমাধ্যমকে বলেছেন, রাষ্ট্রপতি আসার কিছুক্ষণ আগেই তিনি অডিটরিয়ামে ঢুকতে যান। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে বাধা দেয়। বলা হয় হিজাব খুলতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমার সঙ্গে যে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে- তার প্রতিবাদেই আমি পদক নিতে অস্বীকার করি।

প্রেসিডেন্ট অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করার পর তাকে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয় বলে জানান এই সেরা ছাত্রী।

সুত্রঃ ডেইলি ক্যাম্পাস।

 

শিশুর বেড়ে ওঠায় মা-বাবার সু-সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

শিশুর বেড়ে ওঠায় মা-বাবার সু-সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ


স্বাস্থ্য কথা


দশ বছর বয়সী রাইয়ান মাঠের এক কোনে বসে আছে। তার সমবয়সী বাচ্চারা মাঠে খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকলেও খেলায় কোন মন নেই তার। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। কী যেন দেখছে। এরমধ্যে তার কয়েকজন বন্ধু তাকে খেলার জন্য ডাকতে আসলেও যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেল রাইয়ানের বাবা আর মায়ের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। প্রায় প্রতিদিনই ঝগড়া হয় তাদের মধ্যে। এমনকি মাঝে মাঝে মারধরও চলে। সবই হয় রাইয়ানের সামনে। এসব দেখে সে অনেকটা ভীত হয়ে পড়েছে। সে এখন কারো সাথে কথা বলতে ভয় পায়। আর তাই এই অল্প বয়সেই এত উদাসীন থাকে রাইয়ান।
মাইশার বর্তমান অবস্থা ঠিক রাইয়ানের মত। পনের বছর বয়সী মাইশা এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। কিন্তু কোনভাবেই সে পড়ায় মন বসাতে পারছে না। স্কুলের মডেল টেস্ট’র রেজাল্টও খুব ভালো করেনি। কিন্তু ক্লাস নাইন পর্যন্ত তার রোল নাম্বার এক থেকে তিনের মধ্যে ছিল সব সময়। সবার কাছেই খুব আদরের ছিল মাইশা। টেষ্টের রেজাল্টের পর স্কুলের ক্লাস টিচার তাকে একলা ডেকে নিয়ে তার কাছ থেকে জানতে চান- কেন এমন হচ্ছে? অনেকক্ষণ তার সাথে কথা বলার পর ক্লাস শিক্ষক জানতে পারেন, মাইশার বাবা-মায়ের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না গত কয়েক মাস ধরে। বাসায় প্রতিনিয়তই ঝগড়া লেগে থাকে। তাই সে মনযোগ দিতে পারছে না পড়াশোনায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধুলা অত্যন্ত জরুরী। শিশুর বিকাশ নিয়ে অধিকাংশ বাবা-মা’ই এখন বেশ সচেতন। তাদের সার্বক্ষনিক চেষ্টা থাকে তাদের বাচ্চাদের সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাবা-মাদের নিজেদের মধ্যকার সমস্যা এত বেড়ে যায় যে, তারা আর বাচ্চাদের দিকে মনোযোগ দিতে পারেন না। আর এই অমনোযোগীতার কারনেই অনেক বাচ্চা অবসাদে ভোগে, খারাপ পথে চলে যায়।
তাদের মতে বাচ্চাদের সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রম এবং ধৈর্য্য। বাচ্চাদের বুঝাতে হবে যে, তারাই বাবা-মায়ের অমূল্য সম্পদ। অত্যন্ত যতœ দিয়ে তাদের বড় করে তুলতে হবে। জীবনের প্রতিটি নিয়ম-কানুন তাদের শেখাতে হবে।
শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মুরাদ হোসেন মোল্লা বলেন, প্রায় সব বাচ্চাই দুষ্টুমি করে। কিন্তু অতিরিক্ত দুষ্টুমির জন্য বাচ্চাদের ভয় দেখালে বা তাদের মারধর করলে সমস্যার সমাধান হয় না। বরং এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। শিশুরা সব সময় একটা আতঙ্কের মধ্যে থাকে। এবং এসব শিশুদের অত্মবিশ্বাষ কমে যায়। তাদেরকে বারবার করে বুঝাতে হবেÑ কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ। শিশুর কথাও খুব মনোযোগ সহকারে শুনতে হবে।
তিনি বলেন, শিশুদের মধ্যে আত্মসম্মানবোধ বাড়িয়ে তুলতে হবে। তাদের সাথে সব সময় আলোচনা করতে হবে। তার চাহিদার কথা, তার ইচ্ছার কথা শুনতে হবে। পাশাপাশি শিশুর ভালো কাজের প্রশংসাও করতে হবে। তাদের পছন্দের বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে।
ডা. মুরাদ বলেন, অনেক বাবা-মা’ই সন্তানদের বাইরে খেলাধুলা করতে দিতে চান না। এটা সন্তানের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে অত্যন্ত বড় বাধা। শিশুরা খেলাধুলা করলে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকে। অন্য বাচ্চাদের সাথে বন্ধুত্ব তৈরী হয়। এতে তার যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ে। শিশু মানসিকভাবেও সুস্থ থাকে।
এছাড়াও সন্তানদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়েও মনোযোগী হতে হবে। তাদেরকে এ বিষয়ে জ্ঞান দিতে হবে। নিজের বিছানা সব সময় পরিষ্কার রাখার শিক্ষা, বইপত্র গুছিয়ে রাখার শিক্ষা তাকে ছোটকাল থেকে দিতে হবে। এছাড়াও বাচ্চাদের সামনে বড়দের কথা বলার সময় অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সব ধরনের আলোচনা শিশুদের সামনে না করাই ভালো। কারণ এতে করে বাচ্চাদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে শিশুদের সামনে বড়দের ঝগড়া-বিবাদ করা যাবে না। বিশেষ করে বাবা-মা’র মধ্যকার ঝগড়া বাচ্চাদের মনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরী করে। অনেক সময় বাচ্চারা অবসাদে ভুগতে থাকে।
সুত্রঃ বাসস।

 

এই মুহূর্তে কেউ নেই

এই মুহূর্তে কেউ নেই


ইশরাত জাহান রুবাইয়া


সাড়ে ৪ বছরের দীপ্তর শখ হয়েছে সুপারম্যান হবে। সুপারম্যান তার হিরো। কী সুন্দর করে সে উড়ে চলতে পারে, কার্টুনে দেখেছে দীপ্ত। সেও ওরকম করে উড়বে। ড্রয়ার থেকে মায়ের একটা বড় ওড়না বের করলো। ওড়নাটা দুইভাঁজ করে একপ্রান্ত পিঠের উপর দিয়ে গলার কাছে এনে বাঁধলো। পা টিপে টিপে মায়ের রুমে এসে দেখলো মা ঘুমাচ্ছে। এইতো সুযোগ একা একা ছাদে যাওয়ার। ছাদে গিয়েই সুপারম্যানের মত উড়াল দেবে সে।
শম্পার চোখদুটো তখন লেগে এসেছে কেবল। এমন সময় দরজা খোলার অাওয়াজে ঘুম ভেঙে গেল। লাফ দিয়ে উঠে বসলো সে। বাসায়তো মা ছেলে ছাড়া এই মুহূর্তে কেউ নেই। দরজাটা খুললো কে তবে! দীপ্ত বাইরে যাচ্ছেনাতো একা একা! দৌড়ে এসে দেখে দীপ্ত সিড়ি দিয়ে উপরে উঠছে। সেও ছেলের পিছু নিল। শম্পা পৌঁছতে পৌঁছতে দীপ্ত ছাদের রেলিং এ উঠে দাঁড়িয়েছে। দুইহাত দুইপাশে ছড়িয়ে যেইনা একপা বাঁড়িয়েছে ওমনি দৌড়ে এসে ছেলেকে শক্ত করে ধরে ফেললো শম্পা। দীপ্তর সে কী কান্না! অনেক অনুরোধ করলো অন্তত একটা বার ওকে উড়তে দিতে। শম্পা কোনোভাবেই রাজী না। পাঁজাকোলা করে তাকে তুলে নিয়ে ঘরে ছুটলো সে। হাত পা ছুঁড়ে কান্না করতে করতে দীপ্ত বললো তুমি অামার পছন্দের কিচ্ছু করতে দাওনা! সুপারম্যান হতে দাওনা! তুমি অনেক অনেক পঁচা মা, তুমি ভালোনা!
.
.
দীপ্তকে ছাদ থেকে লাফ দিতে দেয়নি বলে শম্পা কি অাসলেই পঁচা মা হয়ে গেছে? একবাক্যে সবাই বলবে, কখনোই না! দীপ্ত জানেনা ১১তলা থেকে লাফ দিলে কী ঘটবে! কিন্তু শম্পা জানে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে তার কলিজার টুকরা বাচ্চাটা। দীপ্ত মনে করে সে লাফ দিলে সুপারম্যানের মত উড়ে যাবে। কিন্তু শম্পা জানে বাস্তবে কী ঘটবে। বাচ্চা যতই অনুনয় বিনয় করুক, যতই জেদ করুক, যতই তাকে পঁচা মা বলুক; সে দীপ্তকে এই শখ পূর্ণ করতে দেবেনা। কেন ই বা জেনে শুনে সন্তানকে অাগুনে ঝাঁপ দিতে দেবে সে?
.
অাসুন, এবার অন্য কিছু ভাবি।
অনেকসময় অামরা অাল্লাহর কাছে অনেক কিছু চাই। কোনটা তিনি দেন, কোনটা দেননা। হ্যাঁ কখনো এমন কিছু তিনি দেননা যেটা অামরা অনেক বেশি পছন্দ করি। তখন হতাশ হয়ে অামাদের অনেকই অাল্লাহর উপর অভিমান করে বসেন। এত চাইলাম, দিলেননা অাল্লাহ! কেন, কী হত দিলে? তাঁর ভান্ডারে তো কিছুর অভাব নেই! তাঁর পক্ষেতো অসম্ভব বলে কিছু নেই! তবুও কেন দিলেননা! কেন???
শত অভিযোগ অার অাক্ষেপে অভিমানে অনেকে মুখ ফিরিয়ে নেই।
.
দৃষ্টি সীমাবদ্ধ অামাদের। ভবিষ্যত অামাদের অজানা। অামরা জানিনা জীবনপথে অামাদের সামনে কী অাছে। তিনি জানেন। সঅঅব জানেন। জেনেশুনে তিনি অামাদের সেসব অাব্দারগুলো পূর্ণ করেননা, যেগুলো পূর্ণ হলে অামরাই ক্ষতিগ্রস্ত হব। দীপ্তর মত অামাদের অভিমান হয়। অাক্ষেপ করি, অভিযোগ করি।
মা জন্ম দিয়েছেন বলে এত ভালোবাসেন, এত মমতাময়ী, সন্তানের কল্যাণলামী। অার যিনি সৃষ্টি করেছেন এত যত্নে তিনি কতটা কল্যাণকামী হতে পারেন? তিনি কতটা ভালোবাসেন বান্দাহকে? বান্দাহর ভালো-মন্দ, কল্যান-অকল্যান তাঁর মত ভালো অার কে বোঝে! কী করে তিনি সেই অাব্দারগুলো পূর্ণ করবেন যেগুলো বান্দাহর জন্য অকল্যানকর! যেগুলো পূর্ণ করলে বান্দা ভবিষ্যতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে! তাই তিনি সেই অাবদারগুলো পূর্ণ করেননা, কিন্তু খালি হাতেও ফিরিয়ে দেননা। কখনো সেসব বদলে দেন উত্তম কল্যানকর অন্যকিছুর দ্বারা। কখনো সেইসবের বদলে জমা করে রাখেন কিছু অভাবনীয় পুরষ্কার! এক অবশ্যম্ভাবী দিনে বান্দাহ তা প্রত্যক্ষ করে অাপ্লুত হবে। সিজদায় পড়ে যাবে। নতমস্তকে অান্তরিক স্বীকারোক্তি দেবে, অামার রব! নিঃসন্দেহে অাপনি মহীয়ান!
.
“তোমাদের কাছে হয়তো কোন একটা বিষয় পছন্দ সই নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে তা অকল্যাণকর। বস্তুতঃ আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না। [সুরা বাকারা: ২১৬

 

শীতকাব্য

শীতকাব্য


ফাতিমা মারিয়াম


আসছে বুঝি শীতের কাঁপন?
হিম হিম হিম হাওয়া!
জমবে বুঝি এখন আবার
পিঠা পুলি খাওয়া?
.
টইটুম্বুর ভরবে আবার
খেজুর রসে হাড়ি,
ফিরনি হবে, পিঠা হবে
সবার বাড়ি বাড়ি।
.
ধোঁয়া ওঠা গরম গরম
নানান স্বাদের পিঠা,
হাপুস হুপুস খাবে সবাই
আহা! দারুণ মিঠা!
.
গরম জামা গায়ে দিয়ে
শীত কাঁপুনি যায়!
লেপের নিচে ভীষণ আরাম
সব শীত পালায়।
.
তোমার কাছে আছে দেখ
আরাম থরে থরে,
আছে কি তা ন্যুনতম
দুখী জনের ঘরে?
.
দাওনা তাদের একটুখানি
ফোটাও হাসি মুখে,
দুই জাহানে প্রভুর দয়ায়
থাকবে তুমি সুখে।

 

৩৯ স্ত্রী, ৯৪ সন্তান ও ৩৩ নাতি-নাতনী নিয়ে একত্রে থাকেন তিনি

৩৯ স্ত্রী, ৯৪ সন্তান ও ৩৩ নাতি-নাতনী নিয়ে একত্রে থাকেন তিনি


অন্যান্য সংবাদ


ভারতের মিজোরামের এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন জিওনা। ১৯৪৫ সালে যখন তার মাত্র ১৭ বছর বয়স, তখন প্রথমবার বিয়ে হয় তার। তবে একটা বিয়ে করেই তিনি সন্তুষ্ট থাকতে পারেননি। এরপর বহুবার বিয়ে হয়েছে তার। এইভাবে মোট ৩৯ জন নারীকে বিয়ে করেন তিনি।

বিশ্বে এত জন স্ত্রী কারোর নেই। এক বছরে তিনি ১০টি বিয়ে করে রেকর্ড গড়েছেন। প্রত্যেক স্ত্রী এখনো তার সঙ্গেই থাকেন।

গত ১৩ মার্চ লন্ডন ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়, তাতে জানা যায়, পৃথিবীর সবথেকে বড় পরিবারের প্রধান হলেন জিওনা চানা । তার ৩৯ জন স্ত্রী, ৯৪ জন সন্তান, ১৪ জন পুত্রবধূ এবং ৩৩ জন নাতি-নাতনি রয়েছে।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, জিওনার বাড়িটি তার সংসারের মতোই বিশাল বড়। তার বাড়িতে ১০০টি ঘর আছে সেখানে তিনি সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে থাকেন। তার ঘরের পাশাপাশি তার স্ত্রীদের ঘর। বিয়ের দিন অনুযায়ী তারা দূরে বা কাছে থাকে। অর্থাৎ যাকে শেষে বিয়ে করেছেন তিনি থাকেন সবথেকে কাছে আবার যাকে প্রথমে বিয়ে করেছেন, তিনি থাকেন সব থেকে দূরে । তবে সবার জিওনার ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি আছে।

জিওনার বাড়িতে তার সব ছেলেরাই নিজেদের স্ত্রী নিয়ে থাকেন। তার পরিবারে সবার আলাদা ঘর থাকলেও রান্নাঘর কিন্তু একটাই। অর্থাৎ ওই পরিবারের রান্না একসঙ্গেই হয়। খাবার জন্য তাদের প্রতিদিন ১০০ কেজি চাল আর ৭০ কেজির বেশি আলু রান্না হয়। আর মাংস রান্না হলে তো কথাই নেই। মোটামুটি ৬০ কেজি আলু এবং ৪০টি মুরগি লাগে গোটা পরিবারের। জিওনার ছেলেরা সবাই চাষের কাজ আর পশু পালন করে থাকেন ৷

পৃথিবীর সব থেকে বড় পরিবারের প্রধান হয়েও জিওনা এখানে থামতে চান না। বিশ্বের সবথেকে বড় পরিবারের কর্তা হয়ে তিনি গর্বিত। তিনি আরও বাড়াতে চান তার পরিবার। এদিকে পরিবারের ছোট ছোট সদস্যদের জন্যও তিনি স্কুল বানিয়েছেন সেখানে তার ছেলেমেয়ে এবং নাতি-নাতনিরা পড়াশোনা করেছে এবং করছে স্কুলটি সরকারের কিছু অনুদান পায়। আগেকার দিনের রাজা বাদশাদের মত জিওনাও তার এতগুলি স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি নিয়ে সুখে-শান্তিতে একসঙ্গে বাস করছেন।

সুত্রঃ নিউজ১৮

 

দেশে গর্ভবতী মায়েদের এক-চতুর্থাংশ ডায়াবেটিক রোগী

দেশে গর্ভবতী মায়েদের এক-চতুর্থাংশ ডায়াবেটিক রোগী


স্বাস্থ্যকথা


পঁয়ত্রিশ বছর বয়সী সুমাইয়া দ্বিতীয়বারের মত সন্তান-সম্ভবা। সন্তান ধারণের সাতাশ সপ্তাহের সময় জানা গেল তার ডায়াবেটিক। এ কথা শুনেই স্বামী আনসার আর সুমাইয়ার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। সেই থেকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী একেবারে নিয়ম মাফিক চলার পর নির্দিষ্ট সময়ে এক কন্যা সন্তান হয় তার। প্রসবের সময়ও বেশকিছু শারীরিক জটিলতা দেখা দেয় সুমাইয়ার। ডায়াবেটিক বেড়ে যায়। তার শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটে। পরে ডাক্তারদের জোর চেষ্টায় মা-মেয়ে দু’জনই সুস্থভাবে বাড়ি যায়।
কিন্তু সুমাইয়ার মত অন্য সবার শারীরিক অবস্থা একই না। এই যেমন রাবেয়া বেগম। তেত্রিশ বছর বয়সী রাবেয়া প্রথমবারের মত মা হতে চলেছেন। কনসিভের ছয় সপ্তাহের মধ্যে জানা যায় যে রাবেয়ার ডায়াবেটিক। তারপরও দুই সপ্তাহ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই শারীরিক অবস্থার অবনতির কারনে দ্রুত তাকে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পরপরই এবরশন করাতে হয়।
সূত্র মতে দেশে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা প্রায় এক কোটি। অধিক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে আরও এক কোটি। গর্ভবতী মায়েদের প্রতি চার জনের একজনই ডায়াবেটিক রোগী।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হসপাতালের এন্ড্রোক্রিনিউলোজী বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. ইমতিয়াজ মাহবুব বলেন, বিশৃঙ্খল এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপন ডায়াবেটিস রোগের প্রধান কারন। এ বিষয়ে সরকারী এবং বেসরকারীভাবে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরী করতে হতে হবে যাতে করে এই নিরব ঘাতক মরণ ব্যাধি শরীরে বাসা বাঁধতে না পারে।
তিনি বলেন, প্রতিটি মানুষকেই বিশেষ করে শিশুকাল থেকে স্বাস্থ্যসম্মত এবং পর্যাপ্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। আর এজন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বাবা-মা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে যাতে নতুন প্রজন্ম এ বিষয়ে জানতে পারে। দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষই এ রোগ সম্পর্কে সচেতন নয়। তাই জন সচেতনতা তৈরী করতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সোহেলুর রহমান বলেন, ডায়াবেটিসের যথাযথ নিয়ন্ত্রণ করতে ও রোগীদের দীর্ঘস্থায়ী ঝুঁকি কমাতে ডায়াবেটিস শিক্ষার কার্যক্রমের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। এই শিক্ষা কার্যক্রম চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমকে আরও বেগবান করবে। ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী ও সর্বঘাতী রোগকে মোকাবেলা করতে রোগীদেরকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা অবশ্যই দিতে হবে। যাদের এখনও ডায়াবেটিস হয়নি তাদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রয়োজনীয় শিক্ষাদান, সঠিক, আর্দশিক জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস থেকে ৮০ শতাংশ মানুষকেই রক্ষা করা সম্ভব। এটাই হতে পারে রোগ প্রতিরোধের সর্বোত্তম পদ্বতি।
এত বিশাল সংখ্যক রোগীর যথাযথ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা শুধুমাত্র সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য জনগণকে আরো সচেতন হতে হবে।
গত ১২ অক্টোবর ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ‘ডায়াবেটিক প্যাশেন্ট এডুকেশন’ শিক্ষা কার্যক্রম উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের বহির্বিভাগের ১ নম্বর ভবনের ৫ম তলায় ৫০৯নং কক্ষে এ ডায়াবেটিক রোগী ও রোগীদের পরিবারের সদস্যদের জন্য এ শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।
সপ্তাহের প্রতি শনিবার ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত এই শিক্ষা কার্যক্রম চলবে। আগামীতে সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে ১ পর্যন্ত এই সেবা দেয়া হবে। ডায়াবেটিস ও হরমোন বিভাগের (এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ) উদ্যোগে কার্যক্রম পরিচালিত হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

সুত্রঃ বাসস।

 

‘শতরঞ্জিতে রঙিন কুড়িগ্রামের নারীরা’

‘শতরঞ্জিতে রঙিন কুড়িগ্রামের নারীরা’


ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা


কেউ ব্যস্ত শতরঞ্জি তৈরিতে, কেউবা আবার হাত পাখা। অনেকেই সেলাই করছেন কুশন। এমন দৃশ্য উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। যেখানে গৃহকর্ম শেষে অবসর সময় এসব হাতের কাজ করে পরিবারের খরচে অবদান রাখছেন নারীরা। আবার অনেকেই হয়েছেন স্বাবলম্বী। পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ কাজেও সিদ্ধান্ত গ্রহণে মতামত দিচ্ছেন তারা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রামের যেসব নারী হস্তশিল্পের এসব কাজ করছেন তাদের বেশির ভাগই বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা কিংবা তালাকপ্রাপ্তা। হতদরিদ্র কর্মহীন নারীদের দিয়ে পাটের আঁশ দিয়ে দৃষ্টিনন্দন এসব ব্যবহার্য পণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে। যা দেশের বিভিন্ন বড় শহরে পাঠানোর পাশাপাশি বিদেশেও রফতানি করা হচ্ছে।
এতে দেশের যেমন রাজস্ব আয় বাড়ছে তেমনই স্বাবলম্বী হয়ে ওঠেছেন এসব কর্মহীন নারীরাও। এসব কাজে গ্রামীণ নারীদের সহযোগিতা দিচ্ছে ‘নারী’ নামে একটি বেসরকারি সংস্থা।

সরেজমিনে দেখা যায়, নিজের বাড়ির আঙ্গিনায় কিংবা বারান্দায় সৃজনশীল হাতের ছোঁয়ায় পাটের আঁশ থেকে দৃষ্টিনন্দন শতরঞ্জি, কিচেন ম্যাট, ঝুড়ি, ব্যাগ, হাতপাখা, পাপোস, কুশন, টেবিল ম্যাট, কার্পেট, সিকা, শো-পিস, গহনাসহ ঘর সাজানোর বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করতে।

সোনালী আঁশ পাট আগের মতো উৎপাদন হয় না। এরপরও পাট দিয়ে কুড়িগ্রামের উলিপুরের প্রত্যন্ত গ্রামে তৈরি হচ্ছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী নানা পণ্য। উলিপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ৭শ’ নারীর কারুকাজ খচিত পণ্য তৈরি করছেন। তাদের তৈরি এসব পণ্য রফতানি হচ্ছে বিদেশেও।

জানা যায়, এসব কর্মহীন নারীদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করতে ২০১৪ সালে গড়ে তোলা হয় নারী অ্যাসোসিয়েট ফর রিভাইভার ইনিসিয়েটিভ নামে একটি সংগঠন। যা সংক্ষেপে ‘নারী’ নামেই পরিচিত।

উলিপুর-চিলমারী সড়কের রামদাস ধণিরাম পাড়ায় নারীদের নিয়ে কাজ শুরু প্রথমে ‘নারী-ই’। পরবর্তীতে নিজ উদ্যোগেও অনেকেই তৈরি করছেন সৌখিন এসব পণ্য।

নারী’র সংগঠক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, নারীরা দৃষ্টিনন্দন পাটজাত পণ্য উৎপাদন করছেন। যা রুচিশীল মানুষের দৃষ্টি কেড়েছে অল্পদিনেই। আমাদের এ উদ্যোগ পরিবারে স্বচ্ছলতার আনার পাশাপাশি হতদরিদ্র নারীদের স্বাবলম্বী করেছে।
এ উদ্যোগের শুরুর কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, শুরুতে সংগঠনের পক্ষ থেকে ৩শ’ তাঁত কেনা হয়। ছোট কারখানাতেই কাজ শুরু হয়। আর এ উদ্যোগে আগ্রহ লক্ষ্য করা যায় নারীদের মধ্যেও। প্রথমে স্বামী পরিত্যক্তা, তালাকপ্রাপ্তারা কাজ করলেও পরবর্তীতে গৃহবধূরাও যোগ দেন।

ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, প্রথমে আশপাশের বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত, স্বামী পরিত্যক্তা ও হতদরিদ্র নারীদের সংগঠিত করে কাজের সুযোগ সৃষ্টি করি। উদ্দেশ্য তাদের পরিবারে স্বচ্ছলতা ফেরানো।
‘এক পর্যায়ে নারীদের তৈরি পণ্য ডিসপ্লের জন্য একটি শো-রুম খোলা হয়। একই সঙ্গে প্রচারের জন্য জেলাশহরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে মেলায়ও অংশ নিই। যা ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে’ বলছিলেন এই সংগঠক।
তবে এ উদ্যোগের পেছনে কিছু কষ্টের কথাও জানালেন তিনি। তিনি বলেন, আমরা নিজ উদ্যোগে চেষ্টা করছি। পুঁজির জন্য বিভিন্ন ব্যাংকে গেলেও নারী হওয়ার কারণে ঋণ দিতে অনীহা প্রকাশ করছে। ব্যাংকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ঋণ না পেয়ে অবশেষে শেষ সম্বল জমিটুকু বিক্রি করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।

পাটজাত পণ্য তৈরিতে ব্যস্ত ছিলেন শেফালী আক্তার (২০)। তার স্বামী এক সন্তান রেখে চলে যায় সেই ছেলে হওয়ার পরপরই। এখন ছেলের বয়স ৬ বছর।
‘নারী’র কারখানায় পাটজাত পণ্য তৈরি করেন তিনি। প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা আয় হয়। এ দিয়েই চলে সংসার। ছেলেকেও স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন।
তার ভাষ্য, গরিব মা-বাবার ঘরে জন্ম নেওয়ার পর অভাব অনটনে বড় হয়েছি। এর মাঝে ১৪ বছরেই বিয়ে হয়ে যায়। এর মাঝে কোলে আসে ছেলে। কিন্তু স্বামী আমাদের রেখে পালিয়ে যায়। এখনও তার খবর নেই।

‘গতবছর খোঁজ পাই ‘নারী’র। এখানে এেেস কাজ নিই। এখন নিজে চলি। কিছু টাকাও জমাই।এখন কেউ অবহেলা করে না,’ বলেন শেফালী।
তাদের মধ্যে সেলিনা বলেন, আগে খুব কষ্টে দিন কাটালেও কাজ পেয়ে সংসারে শান্তি এসেছে। স্বামী রিকশা চালায়। দুজনের আয়ের টাকায় ছেলে-মেয়েকে পড়াতে পারছি। নিজস্ব থাকার ঘর তৈরি করতে পারছি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কুড়িগ্রাম জেলার সভাপতি রওশন আরা চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে দেশে নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন হয়েছে। সরকার তৃণমূল পর্যায়ে নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি করছে এবং নতুন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করছে। এরই সুফল ভোগ করছেন উলিপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের নারীরা।

‘নারী’র এ উদ্যোগে বেশ উৎফুল্ল কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন। তিনি বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে সরকার অনেক দূর এগিয়েছে। নারীরাও বিভিন্ন কর্মকা-ে সম্পৃক্ত হয়ে পরিবারে সহযোগিতা করছে। ‘নারী’ যে উদ্যোগ নিয়েছে এতে আমাদেও সহযোগিতা থাকবে সব সময়।

সুত্রঃ বাসস।

 

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা – ১২

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা – ১২


আফরোজা হাসান


গাড়ি থেকেই শাবাব ও আরিফীকে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো মাহাম। দূর থেকেই বোঝা যাচ্ছে শাবাব ননস্টপ বকবক করছে আর আরিফী মুগ্ধ মনে শুনছে। হাসি পেলো মাহামের শাবাবের দিকে তাকিয়ে। শুধু মুখ না সারা শরীর কথা বলে এই মেয়ের। কিন্তু বোনের এই সদা চঞ্চল ভাবভঙ্গী খুব উপভোগ করে মাহাম। ঐ যে ছুট লাগিয়েছে শাবাব এদিকে। মনেহয় দেখতে পেয়েছে তাদেরকে।

গাড়ি নামতে না নামতেই খপ করে মাহামের হাত চেপে ধরে শাবাব বলল, এতক্ষণে আসার সময় হল আপনাদের? আধঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি আমরা। তোর পছন্দের বোরিং স্ট্রোবরী ফ্লেবারের আইসক্রিম নিয়ে এসেছিলাম। গলে যাচ্ছিলো তাই আরিফী খেয়ে ফেলেছে। আমি তোর জন্য কিনেছি আর সে খেয়ে নিলো পেটুকের মতো। এখন গলা চাপা দিয়ে বের করতে ইচ্ছে করছে আইসক্রিম পেট থেকে।
হেসে ফেললো মাহাম। বলল, উফ…কি যে সব বলো না তুমি! আসলে আয়ানকে একটু বাইরে যেতে হয়েছিল তাই দেরি হয়ে গিয়েছে আমাদের আসতে।

শাবাব বলল, কিন্তু এখানে এসেছি কেন আমরা?

তা তো জানি না। আয়ান শুধু বলেছে সারপ্রাইজ আছে আমার জন্য।

ইশশ…ভাইয়া কত্ত রোমান্টিক। আর আরিফী?

মাহাম হেসে বলল, আরে আরিফী ভাইয়া নিজেই তো আপাদমস্তক সারপ্রাইজ তোমার জন্য। স্পেশাল আর কোন সারপ্রাইজ দেবার অবকাশ কোথায়?

বোনের কাঁধে আদরের ঘুষি লাগিয়ে শাবাব বলল, তোর সবচেয়ে বড় গুণ কি জানিস? ভুজুংভাজুং বলে মানুষকে পটিয়ে ফেলা।

আমি আমার গুড এন্ড ব্যাড উভয় কোয়ালিটি সম্পর্কেই জানি। এবং মনেকরি প্রত্যেকেরই তার গুড এন্ড ব্যাড উভয় কোয়ালিটি সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিত। আচ্ছা তুমি জানো তোমার গুড কোয়ালিটি কি?

শাবাব চিন্তিত কণ্ঠে বলল, নাতো। তুই জানিস?

বোনকে কথার ঝাঁপি খোলার সুযোগ না দিয়ে হেসে হাঁটতে শুরু করলো মাহাম। পাশে হাঁটতে হাঁটতে শাবাবের কথা চলতে থাকলো। আজকে আরিফী মিয়াকে লাট্টুর মতো ঘুরানোর প্ল্যান ছিল আমার বুঝেছিস। ইচ্ছে ছিল শপিং করতে করতে ফতুর করে দেবো। কিন্তু ভাইয়া ফোন করে এখানে আসতে বলে আমার সব প্ল্যান বানচাল করে দিয়েছে।
মাহাম হেসে বলল, কেন তুমি এত যন্ত্রণা করো বেচারা ভাইয়াকে বুঝি না!

আমিও বুঝি না তুই এত পতিপ্রাণা হয়ে থাকিস কেন? বিয়ের পর থেকে কত বদলে গিয়েছিস তুই সেটা কি জানিস ?

মাহাম হেসে বলল, হুম…জানি। শোনো জীবনকে স্বপ্নিল বানানোর জন্য মেয়েদেরকে তাদের অনেক পছন্দ, শখ, ভালোলাগা, মন্দলাগা স্বামীর ইচ্ছানুযায়ী বদলাতে হয়। আর এতে কল্যাণ উভয়েরই হয়।

তোর সব ওয়াজ শুধু মেয়েদের জন্য কেন বুঝি না! বিশেষ করে আমার জন্য।

কারণ আমি নিজে একটা মেয়ে। মেয়েদের মন মানসিকতা আমি বেশি বুঝি এবং মেয়েদের ক্ষমতাও আমি উপলব্ধি করতে পারি নিজেকে বিচার করে। আর তোমাকে বেশি বলি কারণ বোন আমি তোমার। জীবনের প্রতি মুহুর্তে প্রতি কদমে তোমাকে বোঝানো, শুধরে দেয়া আমার জন্য ফরজ।

শাবাব হেসে বলল, এজন্যই তো তোকে আমি এই পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি। আমার কাছে পুরো পৃথিবী একদিকে আর তুই একা একদিকে।

সাথে সাথে মুখটা ভার করে ফেললো মাহাম। বলল, শাবাব প্রিয় বোন আমার আমি তোমার কথার বদলে একই কথা তোমাকে বলতে পারলাম না বলে খুবই দুঃখিত। কি করবো বলো আমার দুনিয়া যে আমি অন্য একজনকে বানিয়ে ফেলেছি।

দুই বোনই হেসে ফেললো একসাথে। অতঃপর একে অন্যের সাথে ভাবের আদান প্রদান করতে করতে সবার পেছন পেছন হাটতে লাগলো।

ভেতরে প্রবেশ করে যা দেখলো তাতে আয়ান আর আরিফী ছাড়া পরিবারের সবাই বেশ অবাক হলো। চোখ প্রশ্ন নিয়ে আয়ানের দিকে তাকালো মাহাম! সারপ্রাইজের কথা বলে সবাইকে চাইল্ড হোমে নিয়ে এসেছে কেন আয়ান? তাও আবার মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশু সবাই। প্রথমে তো সবাইকে ঘুরিয়ে দেখলো সবকিছু আয়ান আর আরিফী মিলে। এরপর সবাইকে নিয়ে বাগানে এসে বসলো।

আয়ান সবাইকে জানালো তাদের এক শিক্ষক ও তাঁর স্ত্রী মিলে মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য এই স্কুলটি শুরু করেছিলো আরো ছয় বছর আগে। তাদের নিজেদের কোন সন্তান ছিল না তাই অসহায় এই শিশুগুলোর জন্য একটু আশ্রয় হতে চেয়েছিলেন। এটাকেই জীবনের মিশন হিসেবে নিয়েছিলেন দুজন। প্রথম থেকেই আয়ান ও আরিফী সাথে ছিল উনাদের। আয়ানের সাথে তাদের পরিচয় হয়েছিলো নিউজিল্যান্ডে আরো একযুগ আগে। ইউরোপিয়ান এই দম্পতি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন পাঁচ বছর আগে। গত বছর এক এক্সিডেন্টে স্বামী-স্ত্রী দুজনই মারা গিয়েছে। এবং মৃত্যুর আগে স্কুলটার দায়িত্ব আয়ানকে দিয়ে গিয়েছেন উনারা দুজন।

গাড়িতে উঠার পর থেকেই সীটে হেলান দিয়ে বাইরের চুপ দিকে তাকিয়ে আছে মাহাম। অনেকক্ষণ পর আয়ান বলল, কি ভাবছো? সারপ্রাইজটা তোমাকে সত্যি সত্যিই খুব সারপ্রাইজড করে দিয়েছে তাই না?

আয়ানের দিকে ঘুরে তাকালো মাহাম। বলল, বাচ্চাগুলোর কথা ভাবছি। তোমাকে নিয়েও ভাবছি।

আমাকে নিয়ে? হাসলো আয়ান। আমাকে নিয়ে কি ভাবছো?

ভাবছি অনেক দায়িত্ব তোমার উপর। আমি পারবো তো তোমার যোগ্য সাথী হতে? তোমার সাথে কদমে কদম মিলিয়ে চলতে?

আয়ান হেসে বলল, আমি আরো কি ভাবছিলাম জানো? তুমি হয়তো ঘাবড়ে যাবে এসব দেখে। অথচ দেখো তুমি আমার সাথে কদমে কদম মিলিয়ে চলতে চাইছো! এটাই তো প্রমাণ করে আমাদের সফরটা খারাপ হবে না, ইনশাআল্লাহ। তাছাড়া…

তাছাড়া কি?

গাড়ি থেকে নামো।

অবাক দৃষ্টিতে মাহাম তাকালো আয়ানের দিকে। আয়ান সেই দৃষ্টির দিকে দৃষ্টিপাত না করে গাড়ি থেকে নেমে গেলো। ঘুরে এসে মাহামকেও ধরে বের করলো। পেছনে ঈশারা করে আয়ান বলল, ঐ দেখো বাস আসছে।

হ্যা দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু তাতে কি?

আয়ান হেসে বলল, চলো নাইট বাসে করে ঘুরবো দুজন। দৌড়ে কখনো বাস ধরেছো? আমিও পাগল তোমার কাছে এই প্রশ্ন করছি? জাদুঘরে রাখার মত বোরিং লাইফ লিভ করো তুমি। চলো তোমাকে লাইফ লিভ করতে শেখাবো। বাসে উঠে যত ইচ্ছে তাকিয়ে থেকো আমার দিকে। বাস এসে যাচ্ছে চলো তাড়াতাড়ি। কামঅন।

হেসে ফেললো মাহাম। আয়ানের বাড়িয়ে ধরা হাত ধরে ছুটতে শুরু করলো সম্মুখ পানে……।

চলবে

পর্ব-১১

 

সোনারগাঁওয়ে নারী জামদানী কারিগরকে ধর্ষণের অভিযোগে একজন গ্রেফতার


নারী সংবাদ


নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে এক নারী জামদানী শাড়ী কারিগরকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশ অভিযুক্ত শাহিনকে গ্রেফতার করেছে।

আজ বুধবার সকালে ধর্ষিতা মামলা দায়ের করলে পুলিশ দুপুরে শাহিনকে সাদিপুর ইউনিয়নে ভারগাঁও চৌধুরীপাড়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। বিকেলে গ্রেফতারকৃত শাহিনকে নারায়ণগঞ্জ আদালতে পাঠিয়েছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নে ভারগাঁও চৌধুরীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা দুই সন্তানের জননী (৩৫) বসবাস করেন। তার স্বামী রূপগঞ্জের রূপসী এলাকায় একটি জামদানী কারখানায় কাজ করেন। তিনিও জামদানী কারিগর। তিনি জামদানী তৈরীর সুতার কাজ করেন। প্রতি সপ্তাহে দু’একদিন বাড়িতে আসেন তার স্বামী। এ সুযোগে গত ১২ ডিসেম্বর রাতে ওই নারী প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘরের বাইরে যান। আগে থেকে উৎ পেতে থাকা সাদিপুর ইউনিয়নের ভারগাঁও চৌধুরীপাড়া এলাকার মৃত ওয়াজ উদ্দিনের ছেলে শাহীন ওই নারীর মুখ চেপে ধরে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। এসময় ওই নারীর ডাক চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে শাহীন পালিয়ে যায়।

ঘটনার পর ছয় দিন গ্রামবাসীর কাছে বিচার দাবি করে না পেয়ে বুধবার সকালে ধর্ষিতা বাদি হয়ে সোনারগাঁও থানায় মামালা দায়ের করেন। পরে পুলিশ ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে শাহিনকে গ্রেফতার করে বিকেলে নারায়ণগঞ্জ আদালতে পাঠায়।

সোনারগাঁও থানার ওসি মনিরুজ্জামান মনির জানান, ধর্ষণের অভিযোগে শাহিন নামের ধর্ষককে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

মামলা করে বিপাকে ধর্ষিতার বাবা!


নারী সংবাদ


ধর্ষকের নামে মামলা করে বিপাকে পড়েছেন ধর্ষিতার বাবা। ধর্ষক আলেক মোল্লা তাকে মামলা তুরে নিতে হুমকি দিচ্ছে। কয়েকবার তার বাড়িতে হামলা করেছে। ধর্ষক আলেক মোল্লার বাড়ি যশোর সদর উপজেলার মথুরামপুর গ্রামে।

আজ বুধবার প্রেসক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী রবিউল ইসলাম এ অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, গত ৫ অক্টোবর প্রতিবেশি আলেক মোল্লা তার শিশু মেয়েকে পান খাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে নিজের কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করে। শিশুর চিৎকার শুনে প্রতিবেশিরা তাকে উদ্ধার করে গ্রাম্য ডাক্তার দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। এ প্রতিবাদে বিচার চেয়ে তিনি ৮ অক্টোবর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে কোতোয়ালি থানায় ধর্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার পর ধর্ষক গা ঢাকা দিয়েছে।

মামলা তুলে নিতে তাদের পক্ষে শিল্পীর জামাই বিজিবি সদস্য আরিফ হোসেন, এলাকার রানা, মিলন ইসলাম, আলম হোসেন ও নাহার বেগম তাকে ও তার পরিবারকে পক্ষের প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে। গত ৯ ডিসেম্বর আলেক ও তার লোকজন রবিউলের বাড়িতে হামলা চালিয়ে গালিগালাজ ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়। তিনি বিচার ও নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইউপি সদস্য বদর সিদ্দিকী, সাবেক ইউপি সদস্য আবু জাফর, গ্রামের আবু দাউদ সোনা, আবদুস সালাম, মমতাজুল করীম প্রমখ।

সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

বাবুদের শীতের পোশাক


ঘরকন্যা


শীত মানেই ছুটি। দিনের বেলাতেও অনেক ঠাণ্ডা টের পাবেন। রাতে কিন্তু তাপমাত্রা আরও নিম্নমুখী হচ্ছে দিন দিন। আর কদিন পরেই শীত আরও জেঁকে ধরবে। তাই শীতকে ভয় পেয়ে শিশুদের ঘরে আটকে রাখা না। শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে বেছে নিতে হবে শীতের পোশাক। অনেকেরই আফসোস থাকে শীত এলে ফ্যাশনের বারোটা বেজে যায়। বাজবে না বারটা, আসুন দেখি শিশুদের পোশাক পাবো।

শিশুদের পোশাক পছন্দ করা  খুব কঠিন । যখন বাজারে নানান নামের কাপড় ছড়িয়ে আছে, মিকিমাউস ড্রেস, চিকেন উইন্টার ড্রেস, বেবি কটন উইন্টার ড্রেস, উলেন ড্রেস,  স্লেবি রেড রেবিট,  কটন বয় কোর্ট, বেবিদের ড্রেস গুলর দাম মার্কেট ভেদে ভিন্ন ভিন্ন। মোচাক ,নিউ মার্কেট, বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স , যমুনা শপিং কমপ্লেক্স সহ ঢাকার আনাচে কানাচে শীতের কাপড় এখন বাজারে ছড়িয়ে গেছে।

সোয়েটার কালেকশনে পাশ্চাত্যের ঢঙে দেখা যায়। সোয়েটারগুলোর দাম পড়বে অনলাইনে দেখা গেল ৮০০ টাকা থেকে ১৪০০ টাকা ভিতরে। আর স্টাইলিশ হুডিগুলো  ১৩০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যেই।’ কিন্তু নিউমার্কেট দাম অনেক কম দেখা যায়, ২৫০ থেকে ১০০০ অনেক সুন্দর সুন্দর শীতের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে।

অর্থাৎ শীতের পোশাকে ঢাকা পড়ে যায় ফ্যাশনেবল পোশাকটি। তাইতো এখন ফ্যাশন ডিজাইনাররা শীতের পোশাকটিই তৈরি করছেন ফ্যাশনেবল করে।

কোথায় পাবেন: নিত্য উপহার, বিশ্বরঙ, কে ক্রাফট, লা-রিভ, জেড অ্যান্ড জেড কালেকশন, আম্বার লাইফস্টাইল, সেইলর, এসটাসি, ক্যাটস আই, ওটু, টুয়েলভ, ওকোড, ইস্টওয়ে, ফ্রিল্যান্ডসহ প্রায় সব নামি ব্র্যান্ডেই মিলবে হালকা শীতের পোশাক। বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, গুলশান পিংক সিটি, নিউ মার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, বঙ্গবাজার, মিরপুরের মার্কেটগুলোতে মিলবে শীতের পোশাক।

 

ফরিদপুরে প্রতিবন্ধী কিশোরী ধর্ষণ ও হত্যা মামলার আসামি বন্দুকযুদ্ধে নিহত

ফরিদপুরে প্রতিবন্ধী কিশোরী ধর্ষণ ও হত্যা মামলার আসামি বন্দুকযুদ্ধে নিহত


নারী সংবাদ


ফরিদপুরের চাঞ্চল্যকর বুদ্ধি প্রতিবন্ধী কিশোরী ফাতেমাকে ধর্ষণ শেষে হত্যার ঘটনায় জড়িত আসামি ইয়াসিন শেখ পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছে তিন পুলিশ সদস্য।

রবিবার দিবাগত রাত দুইটার সময় শহরের পূর্বখাবাসপুরস্থ লঞ্চঘাট জোড়া ব্রিজের সামনে এ বন্ধুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। নিহত ইয়াসিন শেখ শহরের ওয়ারলেস পাড়ার মনি শেখের পুত্র।

তার বিরুদ্ধে ৩টি মামলা বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, রাজেন্দ্র কলেজের মেলার মাঠের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে আসামির ছবি সংগ্রহ করে ইয়াছিনকে চিহিৃত করা হয়। এরপর জনগণের সহয়তায় তাকে আটক করা হয়।

রাতে অস্ত্র উদ্ধার করতে গেলে আসামির অন্যান্য সহযোগী ও পুলিশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি গুলি বিনিময় হয়। আর এসময় গুলিবিদ্ধ হয় আসামি ইয়াছিন। আর এ ঘটনায় আহত হয় তিন পুলিশ সদস্য।

পরে ইয়াসিনকে উদ্ধার ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসাপাতলে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ লাশের ময়নাতদন্তের জন্য তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছে।

উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার ১৪ বছরের প্রতিবন্ধী কিশোরী ফাতেমাকে বিকেল বেলা রাজেন্দ্র কলেজের মেলার মাঠ থেকে তুলে নিয়ে যায় ইয়াছিন নামে ওই ধর্ষক। পরের দিন পাশের টেলিগ্রাম অফিসের পাশ থেকে ফাতেমার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশের পক্ষ থেকে সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ করা কিশোরী ফাতেমা নিখোঁজ হওয়ার ফুটেজ প্রকাশ করা হয়। জেলা পুলিশের অফিসিয়াল পেইজে ১১ সেকেন্ড ও ১৯ সেকেন্ডের দু’টি ফুটেজ প্রকাশ করা হয়। একইসাথে প্রকাশিত ওই ফুটেজে চিহ্নিত সন্দেহভাজন খুনির পরিচয় সনাক্ত করে দিতে পারলে ব্যক্তিগতভাবে তাকে পুরস্কৃত করার ঘোষণা দেয় মামলার তদন্তদকারী কর্মকর্তা।

ডিস্ট্রিস্ট পুলিশ, ফরিদপুর নামের ফেসবুক পেইজে প্রকাশিত ওই সিসি ক্যামেরা ফুটেজে দেখা গেছে, শহরের রাজেন্দ্র কলেজের মাঠে অনুষ্ঠিতব্য ব্রান্ডিং মেলার মাঠ থেকে বাম হাত ধরে ফাতেমাকে মাঠের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে সন্দেহভাজন ওই খুনি।

প্রথম ফুটেজটি গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটের। ১৯ সেকেন্ডের ওই ফুটেজে দেখা যায় সন্দেহভাজন ওই খুনি মেলার শিশু কর্ণারের দিকে একটি স্টলের পেছন দিক দিয়ে বের হয়ে বাঁশের খুঁটির নিকট এসে উকিঝুঁকি দিচ্ছে। সেখানে তার গতিবিধিই ছিল সন্দেহজনক।

এরপরের ১১ সেকেন্ডের আরেকটি ফুটেজে দেখা যায়, ফাতেমার হাত ধরে মেলার বাইরে নিয়ে যাচ্ছে সন্দেহভাজন ওই খুনি। ফুটেজে সনাক্ত ওই সন্দেহভাজন খুনির বয়স আনুমানিক ২৫ থেকে ৩০ বছর। তার পরনে অফ হোয়াইট রঙের কালো স্টেপের ফুলহাতা জামা ও একটি ফেড করা জিন্স প্যান্ট। আর ফাতেমার পরনে ছিল কামিজ ও কমলা রঙের একটি পায়জামা। এই পায়জামাটি পুলিশ ফাতেমার লাশের সাথে জব্দ করে।

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে নিখোঁজ হন বাক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী কিশোরী ফাতেমা বেগম (১৪)। এর পরেরদিন শুক্রবার সন্ধার একটু পর সাড়ে ৬টার দিকে রাজেন্দ্র কলেজের পাশে টেলিগ্রাম কার্যালয়ের চত্ত্বর থেকে ফাতেমার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় ফাতেমার মুখ থেতলানো ছিলো। রক্ত জমাট বাঁধা। বিবস্ত্র ফাতেমার গলায় ফাঁস দেওয়া ছিলো। ফাতেমাকে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। এখনো ফাতেমার লাশের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ফাতেমার বাবার নাম এলাহি শরিফ। তিনি রিক্সা চালানোর পাশাপাশি সোনালী ব্যাংকের এটিএম বুথের গার্ড হিসেবে কাজ করেন। তিন মেয়ের মধ্যে ফাতেমা বড়। ফাতেমা জন্ম থেকেই বুদ্ধি প্রতিবন্ধী (অটিস্টিক)। ওই কিশোরী বাবার সাথে শহরের রাজেন্দ্র কলেজ সংলগ্ন এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতো।

বুদ্ধি ও বাক প্রতিবন্ধী ফাতেমার এই নৃশংস হত্যাকান্ডের খবরে ফরিদপুরের জনমনে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকেই খুনিদের যেকোন মূল্যে খুঁজে বের করার জোর দাবি উঠে।

এ ঘটনায় ফরিদপুর সুইড ফিরোজার রহমান বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুলের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ছাত্রী শিশু ফাতেমা হত্যার দৃষ্টান্তমুলক বিচারের বিক্ষোভ মিছিল ও স্মারকলিপি প্রদান করে। গতকাল রবিবার দুপুরে নিহত ফাতেমার সহপাঠী, শিক্ষক ও অভিভাবকবৃন্দ স্কুল প্রাঙ্গণ থেকে মিছিল বের করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসে স্মারকলিপি দেয়।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার স্মারকলিপি গ্রহণ করে ফাতেমা হত্যার সাথে জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের আশ্বাস দেন। বিকেলে একই দাবিতে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে প্রগতিশীল সংগঠন সমূহের ব্যানারে।

সুত্রঃ বিডি-প্রতিদিন/ সিফাত আব্দুল্লাহ।

 

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা – ১১

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা – ১১


আফরোজা হাসান


চোখ মুখ শক্ত করে রাগের ভান করলেন সাবিহা। আমি যা জানতে চাচ্ছি সেটার জবাব দে। কোথায় ছিলি এতক্ষণ?
মাহাম হেসে বলল, আমি তো ভাইয়া-ভাবীর সাথে ছিলাম। ভাইয়া যে সারাক্ষণ শুধু বাইরে বাইরে থাকে সেই বিচার করছিলাম আমি আর ভাবী মিলে। আমি তোমাকেই নিয়ে যেতে এসেছি বিচার সভায়।

কেন?

মাহাম হাসতে হাসতে বলল, ভাইয়াকে মারতে হবে। আমি তো বড় ভাইকে মারতে পারিনা আর ভাবী বলেছে মশা মেরে হাত নোংরা করতে চায় না। তাই তুমি চলো ভাইয়াকে মারবে।
হাসলেন সাবিহা। তোরা পারিসও সারাক্ষণ দুষ্টুমি করতে। কিন্তু আয়ান কোথায়?

সেও আছে বিচার সভায়। মুখের সামনে ফাইল ধরে হুমম… হুমম… করছে। এই ছেলের কথা বলতে কিসের এত কষ্ট আল্লাহ’ই জানেন। দশটা প্রশ্ন করলে নয়টার জবাব দেন হুম নয়তো উহু ধ্বনির প্রয়োগে।

আয়ানকে দরজায় এসে দাঁড়াতে দেখে দুষ্টুমি করতে ইচ্ছে করলো সাবিহার। বললেন, তোর জামাইয়ের মুখ দিয়ে বিষ ঝরে সারাক্ষণ। কথা বলে না তাই রক্ষা আমাদের। তুই যে কি দেখে পাগল হয়েছিল এই ভিলেন স্বভাবের ছেলের জন্য এখনো আমার বুঝে আসে না। ঐ যে বলতে না বলতে হাজির তোর ভিলেন।

মাহাম হেসে বলল, আচ্ছা তো শুনিয়ে শুনিয়ে বদনাম করা হচ্ছিলো!

তো? চোখ পাকালেন সাবিহা। আমি কি তোদেরকে ভয় পাই নাকি যে পেছনে কথা বলবো!

আয়ান রুমে ঢুকে হেসে বলল, পেছনে কথা বলা ঠিকও না মাদার ইন ল। এতে একদিকে যেমন গীবত করা হয় অন্যদিকে ব্যক্তির ভুল ধারণাকে শুধরানো সম্ভব হয়না।
সাবিহা বললেন, আচ্ছা তা কি ভুল বলেছি আমি শুনি?

ঐ যে বললেন আপনার মেয়ে আমার জন্য পাগল হয়েছিলো! জবাব দিল আয়ান।

এটা ভুল কথা?

হান্ড্রেড পার্সেন্ট ভুল কথা।

সঠিক কথাটা কি শুনি?

আয়ান হেসে বলল, সঠিক কথাটা হচ্ছে আমি পাগল হয়েছিলাম আপনার মেয়ের জন্য। এবং যতই দিন যাচ্ছে সেই পাগলামির পরিমাণ বেড়েই চলছে। কিন্তু আপনার মেয়ে আমাকে পাত্তাই দেয়না। সে তার মত থাকে।
হয়েছে তোদের এসব কথার ফাঁদে আমি পড়ছি না। বকবক কর তোরা আমি যাই। জামাই আর মেয়েকে একা থাকার সুযোগ দিয়ে চলে গেলেন সাবিহা।

আয়ান মাহামকে কাছে টেনে নিয়ে বলল, একটা ব্যাপার বলো তো এই যে তুমি এত নিরস, মুডি, একরোখা স্বভাবের একটি মেয়ে। তারপরও তোমাকে এত ভালোবাসি কেন আমি?

কারণ আমাকে ভালোবাসা ছাড়া তোমার জন্য আর কোন পথই খোলা রাখিনি আমি। হেসে জবাব দিলো মাহাম।
হাসলো কিন্তু মুখে কিছু বললো না আয়ান। মাহামকে আলতো করে বুকে টেনে নিলো। কখনো কখনো মাহামের বিষণ্ণতা আপাদমস্তক ডুবিয়ে দেয় তাকে! কিন্তু যখন মেঘের আড়াল থেকে সূর্যের মত বেড়িয়ে আসে মাহাম, স্বমহিমায় তার জীবনকে ভরিয়ে দেয় ভালোবাসাময় প্রশান্তিকর আলোতে। এই কিছুটা পাগলা, ভীষণ রকম খেয়ালী আর প্রচণ্ড কল্পনাবিলাসী মেয়েটা সত্যিই তাকে ভালোবাসা ছাড়া অন্য কোন পথ খোলা রাখেনি তার সামনে। মাহামকে দেখলে ওর কথা শুনলে মনেহয় দুনিয়ার কোন কিছুতেই ওর কোন আগ্রহ নেই। কিন্তু আয়ান জানে ঘাষের ডগায় শিশির বিন্দু থেকে নিয়ে শুরু করে মিটমিট করে জ্বলতে থাকা আকাশের তারা, রান্নাঘরের তেল-মশলা থেকে নিয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা সবকিছুতেই মাহামের ব্যাপক আগ্রহ। জীবনসাথী হিসেবে মাহামকে পেতে চাইবার এটাও একটা জোড়াল কারণ ছিল।

কিছুটা ক্ষণ এভাবেই কেটে গেলো। নীরবতার ভেঙ্গে মাহাম বলল, আচ্ছা তুমি না বলেছিলে আমার জন্য বিশাল একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে? কোথায় আমার সারপ্রাইজ?

বলেছিলাম নাকি?

হুম…বলেছিলে তো!

আয়ান হেসে বলল, তাহলে তো দিতেই হয় সারপ্রাইজ। তবে সেজন্য তোমাকে আমার সাথে বাইরে যেতে হবে।

সারপ্রাইজকে ঘরে আনা সম্ভব না?

উহু…সাইজে সামান্য বড়। তোমাকেই যেতে হবে।

মামণি-বাবা আর মিহিরকে কি নিয়ে যাওয়া যাবে আমাদের সাথে?

মামণি-বাবা আর মিহিরকে নিয়ে গেলে কি তুমি খুশি হবে?
হ্যা।

আয়ান হেসে বলল, ঠিকআছে আমরা তাহলে মামণি-বাবা আর মিহিরকে নিয়েই যাবো। যাও সবাইকে রেডি হতে বলো তুমি। আমরা আধঘন্টা পর বেড়বো ইনশাআল্লাহ।

দরজার কাছে গিয়ে ঘুরে দাঁড়ালো মাহাম। কিন্তু শাবাব আর আরিফী ভাইয়া যাবে না আমাদের সাথে? আয়ান হেসে বলল, ঠিকআছে আমি ফোন করে বলে দিচ্ছি বলে আরিফীকে নিয়ে আসবে শাবাবকেও। আয়ানকে বিশাল একটা হাসি উপহার দিয়ে বেড়িয়ে গেলো মাহাম।

চলবে…
পর্ব-১০

 

শীতকালে শিশুর যত্ন


শিশুর যন্ত


শীতে বেশি অসুস্থ্ হয় শিশুরা। বিরুপ এই সময়ে শিশুরা কী  ধরনের রোগে আক্রান্ত হয় এবং কীভাবে প্রতিকার পাওয়া যায় এসব প্রশ্ন নিয়ে কথা বলেছেন এ্যাপোলো হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ কামরুল হাসান।

শীতে শিশুদের কী কী রোগ দেখা যায়?

ডাক্তার: মূলত এ সময় শিশুরা নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, ঠাণ্ডা, কাশি, সর্দি এবং এ্যাজমায় বেশি আক্রান্ত হয়। আর সঙ্গে সিজোনাল জ্বর তো রয়েছেই।

এসব রোগের লক্ষণ:

ডাক্তার: ঠাণ্ডা অনেক দিন স্থায়ী হওয়া, শ্বাস নিতে কষ্ট অনুভব, বুকের খাঁচা দেবে যাওয়া, দ্রুত শ্বাস নেয়া।

কারা বেশি আক্রান্ত হয়:

ডাক্তার: সাধারণত আমাদের দেশের অপুষ্ট, কম ওজনের শিশুরাই এধরনের রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। আর দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা সুষম খাদ্য এবং যত্নের অভাবে পুষ্টিহীনতায় ভোগে। তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কম থাকে।

কীভাবে সতর্ক হতে হবে?

ডাক্তার: শিশু অসুস্থ হলে মায়ের বুকের দুধ দিতে হবে এবং নিয়মিত খাবার খাওয়াতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন তার ঠাণ্ডা না লাগে। তাদের ধুলা বালি থেকেও দূরে রাখতে হবে। শিশু একটানা তিনদিনের বেশি অসুস্থ থাকলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবেরাজিতাৎসা: নিউমোনিয়া প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত করা গেলে ১৫ দিনের চিকিৎসায়ই শিশু ভালো হয়ে যায়। আর ভাইরাস জনিত জ্বরও ৩ থেকে ৫ দিনেই সেরে যায়। শিশুকে জন্মের পর থেকে সবগুলো টিকা সময় মতো দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। টিকার পাশাপাশি ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর বিষয়েও তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, সবগুলো টিকা নিয়মিত দিলে শিশু বিভিন্ন মারাত্বক রোগ থেকে রক্ষা পায় এবং তার মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।

সাধারণ সর্দি, কাশিকে অবহেলা না করারও পরামর্শ দেন তিনি। শীতের মধ্যে আগুন জ্বেলে তাপ নেওয়ার সময় প্রতিবছর বহু দুর্ঘটনা ঘটে এবং এতে অনেক শিশু মারাত্বক আহত হয়, সবাইকে এ বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্ক করেন কামরুল হাসান।

প্রতিবেদক,অপরাজিতাবিডি ডটকম

 

শীতের সকালে দুধ-চিতই

শীতের সকালে দুধ-চিতই


ঘরকন্যা


শহুরে যান্ত্রিকতায় হয়তো ভুলেই বসে আছেন, কিংবা শীতের ছুটিতে গ্রামে যাওয়ার অপেক্ষায়। যারা আমার মতো দেশী পিঠা পছন্দ করেন,খুব সহজেই অল্প উপকরণে তৈরি করে ফেলতে পারেন সদ্য ঘরে বানানো দুধ-চিতই পিঠা তৈরি করে ফেলুন,

উপকরণঃ
আমাদের লাগবে টাটকা চালের গুঁড়া ২, ১/২ কাপ
চিনি আধা কাপ
লবণ স্বাদ মতো
এলাচ ৩ টি
তেজপাতা ২টি
নারিকেল অথবা বাদামকুচি ২ টেবিল-চামচ
পানি ১ কাপ
১ লিটার দুধ।

পদ্ধতিঃ
চালের গুঁড়ার সঙ্গে লবণ মিশিয়ে পানি দিয়ে গোলা তৈরি করে নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে গোলা যেন ঘন বা পাতলা না হয়। গোলা ঠিক মতো না হলে পিঠায় ছিদ্র হবে না। সুবিধা মতো পাত্রে গোল আকারে চিতই বানাতে হবে। এবার ১ লিটার দুধে এলাচ, তেজপাতা আর চিনি দিয়ে জ্বাল দিতে থাকুন। দুধ আধা লিটার হলে পিঠাগুলো এর মধ্যে ছেড়ে দিন। তারপর জ্বাল কমিয়ে দিন। আস্তে আস্তে পিঠায় দুধ ঢুকে নরম হয়ে ফুলে ফুলে উঠবে। এখন জ্বাল বন্ধ করে দিন।

পরিবেশনঃ
কয়েক ঘণ্টা রেখে দিন। পরিবেশনের আগে উপরে নারিকেল বা বাদাম ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।

 

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা – ১০

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা – ১০


আফরোজা হাসান


ঘুম থেকে উঠে চোখ খুলে সামনে যা দেখলো তাতে সাথে সাথে আবার চোখ বন্ধ করে ফেললো শাবাব। যা দেখেছে তা কি সত্যি? ভাবনায় পড়ে গেলো সে। একবার মনেহলো স্বপ্ন দেখছে কিন্তু জানামতে নিশ্ছিদ্র ঘুম তার। স্বপ্ন ঘুমের মধ্যে ঢোকার চেষ্টা করলেও বেশির ভাগ সময়ই ব্যর্থ মনে ফিরে যায়। আর দ্বিতীয় কারণ তার স্বপ্নরা একটু অন্যরকম হয়। স্বপ্নে কখনো সে পরী হয়ে ফুলবাগানে ঘোরে, কখনো পাখী হয়ে আকাশে উড়ে, কখনো বরফে স্কি করে বেড়ায়, কখনো ঘুরে বেড়ায় গভীর সমুদ্রের নীচে।

তারমানে এখন যা দেখছে তা স্বপ্ন হবার কোনই অবকাশ নেই। আরিফী সত্যিই তার সামনে বসে আছে। কিন্তু এইভাবে রুমে আসবে কেন সে? আজ কিছু না করলে এমন কাজ বারবার করার সাহস পেয়ে যাবে আরিফী। ন্যাড়া নাকি বেল তলায় একবারই যায়। কিন্তু সেজন্য ন্যাড়ার মাথায় বেল তো ফেলতে হবে। মগজের সার্চ মেশিনকে অন করে দিলো সে আরিফীর মাথায় ফেলার মত বেলের সন্ধানে।

চোখ খুলেই যে শাবাব আবার ঝট করে বন্ধ করে ফেলেছে সেটা মোটেই আরিফীর চোখ এড়িয়ে যায়নি। খুব ভালো মত চেনে শাবাবকে তাই নিশ্চিত যে দুষ্টুমি করার কোন প্ল্যান করছে এখন। বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করে বাড়ি মাথায় তোলাও অসম্ভব কিছু না শাবাবের জন্য। সুতরাং কিছু করার আগেই পথ বন্ধ করে দিতে হবে। শাবাব তোমার ঘুম কি ভেঙ্গেছে? জানতে চাইলো আরিফী। নাস্তা সেরে তোমাকে নিয়ে শপিংয়ে যাবো ভাবছিলাম।

ধীরে ধীরে চোখ খুললো শাবাব। আরিফীকে হাসিমুখে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে উঠে বসতে বসতে বলল, দাঁত দেখাচ্ছো কেন নতুন লাগিয়েছো নাকি?

স্বশব্দে হেসে ফেললো আরিফী। কি যে অদ্ভুত একটা মেয়ে তুমি সেটা কি জানো?

জানতে চাচ্ছি না। আমি যা জানতে চাচ্ছি তা হচ্ছে বিনা অনুমতিতে কেন তুমি আমার রুমে ঢুকেছো? এত বড় সাহস কোথায় পেলে?

আরিফী হেসে বলল, তুমি কি জানো কিছু কিছু মানুষের কাছে মনের অনুভূতিগুলো সবসময় এভেলেভেল থাকে।

সেটা আবার কেমন?

সেটা এমন যে কিছু কিছু মানুষ আমাদের মনের ঝিমিয়ে পড়া অনুভূতিতে প্রাণের পরশ জাগিয়ে যেতে পারে। যেমন ধরো ভালোবাসা, মায়া, মমতা, রাগ, শোক, বেদনা, ব্যর্থতা, সাহস ইত্যাদি সবই তো আসলে মনের ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতির নাম তাই না? তো কিছু কিছু মানুষ তাদের কথা, কাজ ও আচরণের দ্বারা এই অনুভূতিগুলোকে সতেজ করে তুলতে পারে। আমি আজ সকাল থেকে এমন দুইজন মানুষের দেখা পেয়েছি।

হাসি ফুটে উঠলো শাবাবের চেহারাতে। মাহাম কোথায়?

মাহাম অসুস্থ্য শরীর নিয়ে চাচীকে সাহায্য করছে নাস্তা বানাতে আর তুমি ঘুমচ্ছো! এটা কেমন কথা হলো?

আমাকে তো কেউ ডাকেনি। আচ্ছা আমি এখনই যাচ্ছি।

মুহুর্তেই শাবাবের চেহারা থেকে দুষ্টুমি উবে যেতে দেখলো আরিফী। সেখানে জায়গা করে নিলো বোনের জন্য মায়া-মমতা-ভালোবাসা ও কল্যাণকামীতা। শাবাবের হাসি-মজা-দুষ্টুমিকে তার কাছে যতটা পরিচিত, নীরবতা ঠিক ততটাই অপরিচিত। তবে শাবাবের যে জিনিসটা তার সবচেয়ে ভালো লাগে তা হচ্ছে ওর আবেগের মধ্যে কোন উপরি উপরি ভাব নেই। ওর অনুভুতিতে অগভীর বলে কিছু নেই। দুষ্টুমির ছলে প্রচুর জ্বালা যন্ত্রণা দেয় কিন্তু সম্পর্কের প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধাবোধে কোন ঘাটতি নেই ওর মনে। বরঞ্চ শাবাবের চমৎকার কৌতুকবোধ তার মনে ভালোবাসা আর উষ্ণতাই জাগিয়ে যায় সবসময়। জানে না কেন কিন্তু শাবাবকে দেখলেই তার চার্লি চ্যাপলিনের কথা মনে পড়ে যায়। শাবাবের দুষ্টুমির পারফেক্ট বর্ণনা চার্লি চ্যাপলিনের সেই উন্মত্ত মজার হাসির সিনেমা গুলোই।

পরিবারের সবাই মিলে একসাথে নাস্তা করার মজাটাই আসলে অন্যরকম। এই মজা থেকে নিজেকে বঞ্চিত করতে নারাজ জাহিদ সাহেব। যেখানেই থাকেন না তিনি পরিবারের একজন সদস্যও যদি সেখানে উপস্থিত থাকে খাবার টেবিলে একসাথে হতেই হবে। দুই মেয়ে আর মেয়ে জামাইরা, পুত্র-পুত্র বধূ-নাতি সবাইকে নিয়ে একসাথে বসে নাস্তা করতে গিয়ে বারবার আজ চোখ ভিজে যাচ্ছিলো ফাইয়াজ সাহেবের। সবার আড়ালে বারবার চশমা খুলে অশ্রু মুছে নেয়া কি কম মুশকিলের ব্যাপার! এই মুশকিল কাজটি করতে করতে নাস্তা সারতে হল আজ ফাইয়াজ সাহেবকে।

নাস্তার পর অনেক ক্ষণ মাহামকে শপিংয়ে যাবার জন্য রাজী করাতে চেষ্টা করলো শাবাব। একসময় বিরক্ত হয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে এলো। মামণিকে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে শাবাব সুরে সুরে বলল, এখন বিদায় দাও মা ঘুরে আসি।

সাবিহা বললেন, কোথায় যাচ্ছিস?

হাসি হাসি পড়াতে ফাঁসি! একই সুরে শাবাব জবাব দিলো।
সাবিহা হেসে বললেন, আজ কার কপাল পুড়লো আবার?
শাবাব হেসে বলল, যার কপাল তিনমাস আগেই পুড়েছে তাকেই আজ নতুন করে পোড়াবো ঠিক করেছি। মামণি দোয়া করে দাও।

কিসের দোয়া?

কপাল পুড়িয়ে যাতে হনুমান বানিয়ে দিতে পারি সেই দোয়া।

কি যে সব তুই বলিস না শাবাব। সাবধানে যাস। আর এত জ্বালাস না ছেলেটাকে। মেয়েকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন সাবিহা।

মাকে আদর করে দিয়ে হাসতে হাসতে বেড়িয়ে গেলো শাবাব। মাহাম নিশ্চয়ই একা ভেবে মেয়েদের ঘরে রওনা করলেন সাবিহা। ঘরে ঢুকে মাহামকে না দেখে বুকের মধ্যে কেঁপে উঠলো। কোথায় গেলো মাহাম? বাগানে তো দেখেননি ওকে! তাহলে? বীচে যায়নি তো আবার? কত বার করে বলেছেন একা একা ঘুরঘুর না করতে। একটা মেয়ে যদি তার কথা শুনতো। অস্থির চিত্তে মেয়ের খোঁজে বের হলেন সাবিহা।

মেয়ের খোঁজে তড়িঘড়ি করে রুম থেকে বেড়োতে গিয়ে প্রচন্ড জোরে ধাক্কা খেলেন সাবিহা। মাহাম রুমে ঢুকছিল আর তিনি ঝড়ের গতিতে বেড়োচ্ছিলেন যার ফলে এই সংঘর্ষ। মা-মেয়ে দুজনই কমবেশি ব্যথা পেলো। মাহাম বলল, মামণি তুমি ঠিক আছো তো? ব্যথা লাগেনি তো বেশি?

মাহামকে ধরে মাথায় পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে সাবিহা বললেন, তোর কোথাও লাগেনি তো মা? একটু দেখে কেন চলিস না বল তো! মেয়ের সামনে সাধারণত কখনোই দুর্বল হতে চায় না সাবিহা কিন্তু আজ কেন জানি ধরে রাখতে পারলো না নিজেকে। মাহামকে বুকে টেনে নিলো। চোখ বেয়ে ঝরঝর অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।

কিছু না বলে চুপ করে রইলো মাহাম। বুঝতে পারছে কোন কারণে আপসেট মামণি। নিজেকে কিছুটা সামলে নেবার সুযোগ দিলো মাকে। কিছুটা স্থির হয়ে মাহামকে নিয়ে বিছানাতে বসলেন সাবিহা। কোথায় ছিলি তুই? তোকে না বলেছি একা একা কোথাও না যেতে? তোকে রুমে না দেখে জানিস আমার কি অবস্থা হয়েছে? জবাব না দিয়ে আবার হাসছিস কেন ফাজিল মেয়ে?

মা’র মুখ থেকে একের পর এক প্রশ্ন বেড়োতে দেখে মাহাম হাসতে হাসতে বলল, আমার খুব শখ আল্লাহ যদি আমাকে বাবু দেন তাহলে যেন মেয়েই দেন। তোমার কান্ড কারখানা দেখে আমার খুব মেয়ের মা হতে ইচ্ছে করে। জানতে ইচ্ছে করে কি সেই অনুভূতি যা এতটা দুর্বল করে দেয় একজন মাকে!

চলবে

পর্ব-৯

 

কাফিরদের প্রতি(ছন্দে ছন্দে আল কুরআন)

কাফিরদের প্রতি(ছন্দে ছন্দে আল কুরআন)


ফাতিমা মারিয়াম


হে নবী! বলে দাও,
‘হে কাফেরগণ শোন,
তোমরা যাদের ইবাদাত করো,
আমি করি না তাদের ইবাদাত জেনো।
.
তোমরা তো করোনা তাঁর ইবাদাত
যাঁর ইবাদাত করি আমি।
আমিও করিনা তাদের ইবাদাত
যাদের উপাসনা কর তোমরা দিবা যামী।
.
তোমরা তো করোনা ইবাদাত তাঁর
ইবাদাত আমি করি যাঁর।
তোমাদের দ্বীন তোমাদের জন্য
আমার দ্বীন আছে আমার।’
সূরার অর্থ –
১) বলে দাও, হে কাফেররা!
২) আমি তাদের ইবাদাত করি না যাদের ইবাদাত তোমরা করো।
৩) আর না তোমরা তাঁর ইবাদাত করো যাঁর ইবাদাত আমি করি।
৪) আর না আমি তাদের ইবাদাত করবো যাদের ইবাদাত তোমরা করে আসছ।
৫) আর না তোমরা তাঁর ইবাদাত করবে যাঁর ইবাদাত আমি করি।
৬) তোমাদের দ্বীন তোমাদের জন্য এবং আমার দ্বীন আমার জন্য।
[আল কাফিরূন]

 

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা- ৯



আফরোজা হাসান


ফজরের নামাজের পর না কান পেতে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলো মাহাম কিন্তু বাতাস আজ কোন শব্দই নিয়ে এলো না তার কাছে। কিন্তু এমন তো হবার কথা ছিলো না! আজ তো এই বাড়ির আকাশে সূর্যোদয় হবার কথা ছিলো পবিত্র বাণীর সুরলিত স্বাগত ধ্বনিতে। আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর বাইরে বেড়িয়ে দেখবে কিনা ভাবছিল তখন রুমে ঢুকল মিসেস জাহিদ। মাহামকে বসে থাকতে দেখে হেসে বললেন, ওহ তুই জেগেই আছিস! আমার সাথে একটু চল তো মা নাস্তা বানাতে সাহায্য করবি। শাবাবকে ডাক।

মাহাম হেসে বলল, শাবাব ঘুমোচ্ছে ঘুমোক মামণি। চল আমি যাচ্ছি তোমার সাথে।

মা-মেয়ে গল্প করতে করতে নাস্তা বানানোতে মন দিলো। যদিও কখনো মুখে বলে না কিন্তু মেয়েরা যখন কাজে সাহায্য করতে আসে ভীষণ ভালো লাগে সাবিহার। কাজের ফাঁকে ফাঁকে নানা ধরণের গল্প করেন তখন মা-মেয়েরা মিলে। নিজের জীবনের জটিল কঠিন অভিজ্ঞতাগুলো ইতিবাচক হিসেবে শেয়ার করেন মেয়েদের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করার জন্য। এক মনে ছিটারুটি বানাচ্ছে মাহাম। মেয়ের চেহারার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করলেন সাবিহা। শুকিয়ে কালো হয়ে কেমন হয়ে গিয়েছে মাহামের চেহারা। নানা ধরণের শারীরিক অসুস্থতার কারণে দিন দিন কেমন হয়ে যাচ্ছে তার চাঁদের মত মেয়েটি।

মাহামের মাথায় হাত বুলিয়ে সাবিহা বললেন, তোকে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে। তুই বরং গিয়ে বিশ্রাম কর। শাবাবকে পাঠিয়ে দে আমাকে সাহায্য করবে।

মাহাম হেসে বলল, আমি ঠিক আছি মামণি।

কিন্তু তোকে অসুস্থ্য দেখাচ্ছে। আমি নিশ্চিত তোর মাথা ব্যথা করছে।

হুম করছে। তবে যতটুকু ব্যথা করছে তা নিয়ে রান্না করতে পারবো। তাছাড়া বসে থাকলে ব্যথা বেশি করে। কাজে থাকলে মনেই থাকে না ব্যথার কথা। তারচেয়েও গুরুত্বপুর্ণ কথা হচ্ছে, ব্যথা-কষ্ট-দুঃখ-হতাশা-দুরাশা-নিরাশা তাদের জীবনের গতিকে থামিয়ে দেয় যারা অকর্মণ্য। কিন্তু আপনার মেয়ে দুনিয়াতে কাজ করতে এসেছে।

সাবিহা হেসে বললেন, আমার তো ধারণা শুধু পটপট আর ঝামেলা পাকাতে এসেছে।

আপনার ধারণার সংস্কার প্রয়োজন মাতাজ্বী।

মেয়ের কান ধরে ঝাঁকিয়ে সাবিহা বললেন, বেশি বেশি দুষ্টু হয়েছিস তোরা দুইটাই। দেখ তো তোর বাবা, আয়ান ওরা ফিরছে কিনা মসজিদ থেকে। তাহলে চা দিয়ে আয়।
মাহাম বলল, ও সবাই তাহলে নামাজ আদায় করতে মসজিদে গিয়েছিল! সেজন্যই তো বলি!

সেজন্যই তো কি? জানতে চাইলেন সাবিহা।
না কিছু না।

হাসলেন সাবিহা। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, এমনিতে তোকে দেখলে বোঝাই যায় না যে তুই এত দুষ্টুমি করতে পারিস। কি মনেহয় জানিস?

কি?

সুপার রসকষহীন মেয়ে। যার দুনিয়া বইয়ের মধ্যে শুরু হয়ে বইয়ের মধ্যেই শেষ। কিন্তু যখন আয়ান আশেপাশে থাকে একদম বদলে যাস তুই। তখন তোকে শাবাবের চেয়েও ফাজিল মনেহয়। এর রহস্য কি?

মাহাম হেসে বলল, রহস্য হচ্ছে আমার দুষ্টুমি, চঞ্চলতা, অস্থিরতা শুধু আয়ানের জন্য। আমার এইসব রূপ পৃথিবীর আর কাউকে দেখাতে চাই না আমি। মাহামের মধ্যে গুটিসুটি মেরে যে ছোট্ট মাহাম বসে আছে, সে নিজকে ছাড়া শুধু আয়ানের কাছেই বাঁধনহারা। এই রহস্য তোমাকে অন্য কোন দিন বলবো। যাই সবাইকে চা দিয়ে আসি।

বাবা ও ভাইয়াদের সবাইকে চা দিয়ে আয়ানের সন্ধানে বের হলো মাহাম। বারান্দায় এসে ফাইলপত্র নিয়ে আয়ানকে বসে থাকতে দেখে সামনে চা রাখলো। তারপর কিছুই না বলে মুখ ভার করে গিয়ে আয়ানের পাশে বসলো মাহাম। আয়ান হেসে বলল, আমার জানা মতে সুবেহ সাদিক তো অন্ধকারের সমাপ্তি ঘোষণা করে, আলোর পথে যাত্রা শুরুর র্বাতা বহন করে। তাহলে সুবাহ সাদিকের আগমনের পরেও আমার পৃথিবীর চেহারা আঁধারে ঢাকা কেন?

আমি কখন থেকে অপেক্ষা করছি তোমার তিলাওয়াত শোনার জন্য। অভিমানী কণ্ঠে বলল মাহাম।

আমিও তো সেই কখন থেকে অপেক্ষায় ছিলাম ঊষার লগ্নের। রাত্রির সুচীভেদ্য অন্ধকারকে ভেদ করতে যে হাজির হবে প্রথম আলোক রশ্মী হয়ে আমার ভুবনকে আলোকিত করতে।

হেসে ফেললো মাহাম! বলল, আমি তোমার তিলাওয়াত শুনবো।

অবশ্যই শুনবে। তার আগে বলো শরীর কেমন আজ? ঘুম কেমন হয়েছে?

আলহামদুলিল্লাহ্‌ অনেক ভালো ফিল করছি আজ। ঘুমও অনেক ভালো হয়েছে। এক ঘুমে রাত সাবাড়। তোমার কি অবস্থা?

হেসে, তোমার মত সাবাড় করতে পারিনি রাতকে। তবে টেনেটুনে কাভার করেছি।

মাহাম হেসে বলল, ঠিকআছে আমি এখন যাই। মামণিকে সাহায্য করছি নাস্তা বানাতে।

রান্নাঘরে যাবার আগে শাবাবকে ডাকার জন্য রুমে রওনা করলো মাহাম। দরজার কাছে আরিফীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মাহাম হেসে বলল, সাহস পাচ্ছো না ভেতরে ঢোকার?
সাহস দেখানোটা দুঃসাহস হয়ে যাবে কিনা সেটা ভাবছি। হেসে জবাব দিলো আরিফী।

কামঅন ভাইয়া এতটাও ভয়ংকর না আমার বোন। উপর দিয়েই একটু হৈচৈ করে।

তোর বোনকে দেখে আমি বিয়ের একটা সংজ্ঞা লিখেছি।
তাই? শোনাও দেখি তোমার সংজ্ঞা।

বিবাহ একটি যুদ্ধক্ষেত্র। স্বামী-স্ত্রী হচ্ছে যোদ্ধা। আর জিহ্বা হচ্ছে বহুরূপী গিরগিটি। যা কখনো হাতুড়ি হয়ে একে অন্যকে আঘাত করে, কখনো তরবারি হয়ে রক্তাক্ত করে, কখন বরষার জল হয়ে ভাসায় আনন্দধারায়, কখন কালবৈশাখী হয়ে মটমট করে ভাঙ্গে মনের কচি ডালপালা, কখন শ্রুতিমধুর শব্দ হয়ে দোলা দিয়ে যায় প্রাণে। যার মোহনীয় সুরে পাগল হয়ে মন গেয়ে ওঠে, প্রানো সখী রে ঐ শোন কদম্ব তলে বংশী বাজায় কে? ঠিক পরক্ষনেই ভেসে আসে সাবধানী বানী, বাঁশী শুনে আর কাজ নাই সে যে ডাকাতিয়া বাঁশী।

মুখে হাত চাপা দিয়ে হাসি আটকালো মাহাম। আরিফীকে রুমে ঢুকতে বলে হাসতে হাসতে চলে গেলো রান্নাঘরে।

পর্ব- ৮

 

উটে চড়ে হজ্জে

উটে চড়ে হজ্জে


কানিজ ফাতিমা


গফুর সাহেব বাসায় ডায়নিং টেবিল কেনেননি কারণ “ডায়নিং টেবিলে খাওয়া ‘বিদা ‘ত’। ”
-এনিয়ে তার কিশোর ছেলের সঙ্গে প্রায়ই উচ্চবাচ্চ হয়। কিন্তু সন্তানের কথায় তো আর ‘বিদা ‘ত’ করা যায় না। ওদিকে ছেলের যুক্তি, “তাহলে তো প্লেনে উঠে হজ্জে যাওয়াও ‘বিদা ‘ত’, কারণ রাসুল স: উটে চরে হজ্জে গিয়েছেন।”
মুন্শীপুর গ্রামে করিম মুন্সীর ছেলে বিদেশ থেকে টাকা পাঠিয়েছে গ্রামের মসজিদ পাকা করার জন্য। মসজিদ পাকা হয়েছে এখন মাইক লাগানোর পালা। ওমনি গ্রামের মানুষ দুই ভাগে বিভক্ত ” মাইকে আজান দেয়া বি’দাত, “রাসুলএর যুগে কি মাইকে আজান দেয়া হত? এটা ধর্মে নতুন, এটা বিদা ‘ত”- একপক্ষের যুক্তি। অন্য পক্ষ বলে, “আরে রাসুলের মসজিদে তো ফ্যান ছিল না, এটা ‘বিদা ‘ত’ না ?”
“রাসুল খালি চোখে চাদ দেখেছেন – দুরবীন দিয়ে দেখলে চলবে না, এটা ‘বিদা ‘ত”
“আচ্ছা ভাই চোখে চশমা থাকতে পারবে?”
“আমি নিজে চাদ দেখি নাই, টেলিভিশনে শুনেছি চাদ উঠেছে , রাসুল স: তো টিভিতে শুনে ঈদ করতেন না, এটাও কি বিদা ‘ত হবে ?”
” আরে ভাই কি করেন, কি করেন ?”
” ক্যান, নামাজের শেষে মুনাজাত করি। ”
” হায় ! হায় ! বিদা’ত করলেন তো; নামাজের পরে মোনাজাত তো বিদা’ত ! ”
এগুলো হলো আমাদের মত (আমিও included ) অতিভক্ত কমজ্ঞাতদের ‘বিদা’ত’ ভার্সন। এবার দেখা যাক এসময়ের বিশ্বসেরা ইসলামী স্কলার ইউসুফ আল কারজাভী ‘বিদা’ত” সম্পর্কে কি বলেন –
” কোনো নতুন জিনিস বা আবিস্কারের বিরুদ্ধে ইসলাম ‘বিদা’ত’ নামে অবস্থান গ্রহণ করে এরূপ ধারণা করা ভুল। কোনো নির্ভেজাল দ্বীনী বিশ্বাসে কিছু উদ্ভাবনই কেবল ‘বিদা’ত’ হতে পারে , যেমন ঈমান ও ইবাদতের শাখা প্রশাখা।”
[অর্থাত একমাত্র ঈমান/ বিশ্বাস ও ইবাদতের মধ্যে সংযোজন বি’দাত, অন্য সংযোজন বিদা’ত নয় ।]
ইউসুফ আল কারজাভী, ইসলামী আন্দোলন,আধুনিক যুগ, কৌশল ও কর্মসুচী , পৃষ্ঠা -১২৫
“It is wrong to think that Islam stands against anything new or invented classifying it under the name of ‘bid’ah’.In fact, a bid’ah is what is invented in matters of a purely religious nature, such as creed and worship and their branches; while the changing matters of life such as norms, traditions, customs and administrative, social, cultural and political practices are not be regarded at all as bid’ah. They fall under what the ulama call ‘al maslahah al mursalah’ (public interest) as explained by Imam Al Shatibi in his book ‘Al I’tisam’.” – Priorities of the Islamic Movement in the Coming Phase by Shaykh Yusuf Al-Qaradawi, Awakening Publication, April 2000; page: 158, 159.
কি বুঝলেন ?

 

প্রোষিতভর্তৃকা-২

প্রোষিতভর্তৃকা-২


ফাতিমা মারিয়াম


ঘটনা-৩
প্রায় একমাস আগের কথা। আমার এক চাচাত দেবরের মেয়েকে মালয়েশিয়া প্রবাসী এক দোজবরে পাত্রের কাছে বিয়ে দেয়া হয়েছে। মেয়ের বয়স মাত্র ১৫ বছর। অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। ছেলের বাড়ীর যা অবস্থা শুনেছি, কোনভাবেই এই মেয়ের পরিবারে তাদের আত্মীয়তা করার কথা নয়। গতবছর তার প্রথম বউ একজনের সাথে পালিয়ে যায়। সে এবার দেশে এসে দরিদ্র পরিবারের মেয়ে বিয়ে করেছে। তাদের যুক্তি হল যেহেতু গরীব ঘরের মেয়ে তাই এই মেয়ে তাদের কথামত চলবে। শুনেছি এ মাসের শেষের দিকে সে চলে যাবে। আবার ২/৩ বছর পর আসবে।

ঘটনা-৪
গতকাল সকালবেলা আমার ফুফাত ভাই ফোন করে উনার মেয়ের বিয়ের দাওয়াত দিলেন। মেয়েটি এবার এইচ.এস.সি. পরীক্ষা দিবে। আমি জানতে চাইলাম- ‘পাত্র কি করে, পড়াশোনা কতটুকু করেছে?’
ভাই জবাব দিলেন,’ বিদেশ থাকে, অবস্থা বেশ ভালো। আর পড়ালেখা তেমন একটা নাই।’ ছেলে এস.এস.সি পাশ কি না এটাও উনি স্পষ্টভাবে বলতে পারলেননা।
এক পর্যায়ে আমি জানতে চাইলাম- ‘বিয়ের পর কি মেয়েকে বিদেশে নিয়ে যাবে?’
উনি অবাক হয়ে বললেন,’ওকে নিবে কেন?’
এই হচ্ছে আমাদের অভিভাবকদের অবস্থা।

ঘটনা-৫
এবার আমার শোনা একটি ঘটনা। ভদ্রমহিলার বয়স খুব বেশী নয়। এক বা দুই সন্তানের জননী। ইনি চেষ্টা করেন ইসলামী জীবন বিধান মেনে চলতে। কিন্তু দীর্ঘদিন স্বামীর অনুপস্থিতির কারনেই হোক বা অন্য কোন কারনেই হোক তিনি একজনের সাথে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেছেন।
অনেকেই মনে করেন ধার্মিক মেয়ে বিয়ে করলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এই ধার্মিক মেয়েটিকে একটি ইতিবাচক পরিবেশ দেয়াও যে স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের দায়িত্ব তা আমরা জানিনা। অথবা জানলেও মানিনা। শুধুমাত্র তাকওয়াসম্পন্ন স্ত্রী সন্ধান করলেই কি এসব সমস্যার সমাধান হবে? স্বামীকেও তাকওয়াসম্পন্ন হতে হবে এবং বউ যাতে তার প্রাপ্য সব অধিকার পায় তা-ও স্বামীকেই নিশ্চিত করতে হবে।
এই নারীও যে ‘রক্ত মাংসের তৈরি’ এই বোধটুকু যদি তার স্বামীর থাকত তবে সে নিশ্চয়ই তার বউকে ছোট বাচ্চা সহ ঢাকায় একা একা ফ্ল্যাট ভাড়া করে রাখতনা। এই চরম ঘৃণিত কাজটি করার পর সেই মহিলাই বা কতটুকু ভালো আছে তা জানিনা। তবে এই ধরণের ঘটনা আমাদের সমাজে এখন খুব বেশী মাত্রায়ই ঘটছে।

 

প্রোষিতভর্তৃকা-১

প্রোষিতভর্তৃকা-১


ফাতিমা মারিয়াম


ঘটনা-১
আমার আপন খালাতো বোনের কথা। প্রবাসী পাত্রের হাতে মেয়েকে তুলে দিয়ে পিতামাতা ভীষণ তৃপ্ত। বিয়ের কয়েকমাস পরে দুলাভাই তার কর্মস্থলে চলে গেলেন। এবার আপার কিছু সমস্যা শুরু হল। কিছুটা শারীরিক, কিছুটা মানসিক। চিকিৎসার জন্য ঢাকা আসলেন। ভাশুরের বাসায় উঠলেন। উনার বড় জা উনাকে ডাক্তার দেখালেন। ডাক্তার বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে দিলেন। কোন রোগ ধরা পড়লোনা।
ডাক্তার বললেন, ‘উনার স্বামী যদি দেশে চলে আসেন তা হলে হয়তো উনি সুস্থ হয়ে যাবেন।’ কিন্তু এটা তো আর সম্ভব না। ফলে আপাও সুস্থ হলেননা। নিকটতম দূরতম সকল আত্মীয় স্বজন নিয়মিত তার খোঁজখবর নেয়া শুরু করলেন। সে দুঃশ্চিন্তা করে কি না এই বিষয়ে কেউ কোন প্রশ্ন করলে আপা সাফ জানিয়ে দিতেন – ‘আমি কোন দুঃশ্চিন্তা করিনা।’ এভাবে ২/৩ বছর কেটে গেল। দুলাভাই দেশে আসলেন। আপা পুরো সুস্থ। উনার কোন সমস্যা নেই।
এভাবে দুলাভাই দুই /তিন বছর পরপর দেশে আসতেন। বেশ কয়েক বছর কেটে গেছে। আপা তিন কন্যাসন্তানের জননী হয়েছেন। রোগটা রয়েই গেছে তবে তীব্রতা আগের চাইতে কম। আরও কয়েকবছর পর দুলাভাই স্থায়ীভাবে দেশে চলে আসলেন। আপা সম্পূর্ণ সুস্থ।

ঘটনা-২
আমার গ্রামের এক বধুর কথা বলছি। উনি, উনার স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি এই চারজন নিয়ে সংসার। উনার শ্বশুরের আরও ৩/৪টি ছেলে আছে। তারা প্রত্যেকে পৃথক সংসারে থাকে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। তারা সবাই তাদের শ্বশুরবাড়িতে আছে। জীবিকার প্রয়োজনে তার স্বামী একসময়ে প্রবাসী হতে বাধ্য হয়।
সন্তানাদি হয়নি, কমবয়সী মেয়ে। এই মেয়ের উপর যদি বাইরের শকুনের দৃষ্টি পড়ত সবাই আর দশটা ঘটনার মতই হয়ত মনে করত। কিন্তু এই বধূটি তার স্বামী বিদেশ যাওয়ার পর (ঠিক কতদিন পরে তা আমি জানিনা) নিজ শ্বশুর দ্বারা ধর্ষিতা হয়েছে।
এই ঘটনাটি নিয়ে পুরো এলাকায় ঢিঢি পড়ে যায়। একপর্যায়ে ছেলের কানেও এই কথা যায় এবং ছেলে তার মাকে বলে বউকে যেন বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়। এরপর সে তার স্ত্রীকে তালাক দেয়। সেই বউটি এখন কোথায় আছে, কেমন আছে, আদৌ বেঁচে আছে কিনা আমি জানিনা। গ্রামে খুব একটা যাওয়া হয়না। আমার বড়ফুফুর মুখে ঘটনাটা শুনেছিলাম।
চলবে…

 

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা- ৮

 

দেশের সব স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে মেয়েরা ফ্রি ন্যাপকিন পাবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

দেশের সব স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে মেয়েরা ফ্রি ন্যাপকিন পাবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী


নারী সংবাদ


দেশের সব সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে নারীদের ফ্রি স্যানিটারি ন্যাপকিন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, টাকার অভাবে অনেক নারী-কিশোরী স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে পারে না। এই সরকারি সেবাটি গ্রামে থাকা মা-বোনদের অনেক উপকার করবে।

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) ‘পরিবার কল্যাণ সেবা ও প্রচার সপ্তাহ উদযাপন’ উপলক্ষে রাজধানীর পরিবার কল্যাণ অধিদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের গ্রামাঞ্চলের মা ও মেয়ে শিশুদের জন্য অধিক মূল্য হবার কারণে ন্যাপকিন ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। এতে করে তাদের শরীরে ক্যানসারসহ নানাবিধ জটিল রোগ সৃষ্টি হয়। এ কারণে দেশের সর্বত্র এ বছর থেকেই সরকারি স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র থেকে আমাদের মা- বোনদের জন্য বিনামূল্যে এই স্যানিটারি ন্যাপকিন প্রদান করা হবে।

নিরাপদ মাতৃত্ব ও শিশু মৃত্যু হার প্রসঙ্গে জাহিদ মালেক আরো বলেন, এসডিজি অর্জনে ৩.৭.২ সূচকে কৈশোরকালিন মাতৃত্ব কমানোর ব্যাপারে জোর দেয়া হয়েছে। কারণ ১৪ বছর বা তার কম বয়সী কিশোরী মায়েদের মধ্যে গর্ভজনিত জটিলতার কারণে মৃত্যু ঝুঁকি ৫ গুণ বেশি। ২০ বছরের বেশি বয়সী মায়েদের তুলনায় ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী মায়েদের মৃত্যুহার দ্বিগুণের বেশি।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে চার হাজার ৬২৮টি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে। জনবলের অভাবে সবগুলো স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা যাচ্ছে না। এ কারণে সরকার নতুন জনবল নিয়োগের কথা ভাবছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের জনবলের অভাব রয়েছে। এই সঙ্কট কেটে যাবে বলে আশা করছি। এটা হলে আমরা সবগুলো স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার ব্যবস্থা করব।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণে সক্ষম দম্পতিদের উদ্বুদ্ধ করার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে বিবাহিত কিশোরীদের সঠিকভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব সেবার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করার বিষয়েও জোর তিনি।

এই অনুষ্ঠান থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সারাদেশের ১৫০টি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ২৪ ঘণ্টা স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী আ খ ম মহিউল ইসলাম।

উল্লেখ্য, ‘পরিবার পরিকল্পনা সেবা গ্রহণ করি, কৈশোরকালীন মাতৃত্ব রোধ করি’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে এবার ৭ থেকে ১২ ডিসেম্বর সারাদেশে পরিবার কল্যাণ সেবা ও প্রচার সপ্তাহ পালন করা হবে। এ উপলক্ষে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের আওতাধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, বিভাগ ও জাতীয় পর্যায়ে সপ্তাহব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে অত্যন্ত আনুষ্ঠানিকতার সঙ্গে সপ্তাহটি উদযাপন করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে অ্যাডভোকেসি সভা, প্রেস ব্রিফিং, সেবা কেন্দ্র হতে বিশেষ সেবা প্রদান, অডিও ভিডিও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, টিভি চ্যানেলে স্ক্রলিং-এর মাধ্যমে বার্তা প্রচার, ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ডকুমেন্টরি প্রচার ইত্যাদি। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতারে জিংগেলও প্রচারিত হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

এছাড়া বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে স্থানীয়ভাবে সুবিধাজনক ভেন্যুতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।

সুত্রঃ মেডিভয়েস রিপোর্ট।

 

বাংলাদেশের স্বর্ণালি এক দিন

বাংলাদেশের স্বর্ণালি এক দিন


নারী সংবাদ


মুহূর্তেই সাদতোবাদো ক্রীড়া কমপ্লেক্সের কারাতে ভেনু হয়ে উঠল এক টুকরো বাংলাদেশ। সতীর্থ কারাতে খেলোয়াড়, কর্মকর্তা, কোচ সবাই যেন ঈদের আনন্দে মেতে উঠলেন। কোলাকুলি পর্ব যেন শেষ হতেই চায় না। এই মিলনমেলায় সবার চোখেই ছিল আনন্দ অশ্রু। একই দিনে পোডিয়ামে তিন তিনবার জাতীয় সঙ্গীত বাজলে কোনো বাংলাদেশী চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। শিহরণে মন প্রাণ উজাড় করে গাইতে ইচ্ছা করে ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।’ আর যাদের কারণে এমন একটি পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে তারা হলেন আল আমিন, মারজান আক্তার প্রিয়া ও হুমায়রা আক্তার অন্তরা। ১৩তম সাউথ এশিয়ান গেমসে কারাতে ডিসিপ্লিনে ভিন্ন ভিন্ন তিনটি ইভেন্টে স্বর্ণপদক জয় করে সোনালি এক অধ্যায় রচনা করেছেন। এর আগের দিন তায়কোয়ানডোতে স্বর্ণ জিতেছিলেন দীপু চাকমা।
দশরথ থেকে সাতদোবাদো এক ঘণ্টার রাস্তা। সকালে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উপেক্ষা করে যারা ভেনুতে গেছেন তাদেরকে ভাগ্যবানই বলা যায়। উশু, শুটিং, তায়কোয়ানডো, কারাতেসহ অনেক ডিসিপ্লিনের ভেনুই সেখানে। খবর পাওয়ামাত্রই হা পিত্তেশ করতে করতে ছুটে চলা। ফটোসাংবাদিকদের অনবরত ফ্লাশ। বুকে পতাকা জড়িয়ে হাসি মুখে তিন স্বর্ণজয়ী কারাতেকা আল আমিন, অন্তরা ও পিয়া। কাঠমান্ডুর ক্রীড়া কমপ্লেক্সে উপস্থিত বাংলাদেশীদের চোখে মুখে বিশেষ রকমের তৃপ্তি। একই দিনে তিনটি স্বর্ণ জয়ের ঘটনা বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে খুবই বিরল। বিদেশের মাটিতে তিন স্বর্ণ জয় দেশের ক্রীড়াঙ্গনে বিশেষ গৌরবের। তিনজন স্বর্ণজয়ী ক্রীড়াবিদকে একসাথে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য অন্য ডিসিপ্লিনের কর্মকর্তা, সাবেক ক্রীড়াবিদরা ছুটে এসেছিলেন হন্যে হয়ে।
গেমসের তৃতীয় দিনেও সাফল্য এলো সাদতোবাদো কমপ্লেক্স থেকে। দ্বিতীয় দিনে এসেছিল তায়কোয়ানডো আর গতকাল কারাতে থেকে। কাঠমান্ডুর সকাল গড়িয়ে দুপুরের আগেই বাংলাদেশের আরো তিনটি স্বর্ণ যোগ করেছে কারাতে। কারাতে সেন্টারে বাংলাদেশের খুশির বন্যা। কোচ-কর্মকর্তা-কাভার করতে আসা সাংবাদিক সবাই আনন্দে মাতোয়ারা। মাত্র ঘণ্টা দু’য়ের ব্যবধানে তিন স্বর্ণ। এর চেয়ে আর আনন্দের উপলক্ষ কী হতে পারে। উপস্থিত ভিনদেশীদের আফসোসের মাত্রাটাও ছিল চোখে পড়ার মতো। হয়তো ভাবছিল ইস আমরা যদি জিততে পারতাম।
কাঠমান্ডুর ঠাণ্ডা সকালে বাংলাদেশের আড়মোড়া ভেঙেছে কুমিতে অনূর্ধ্ব ৬১ তে আল আমিনের স্বর্ণজয়ের মধ্য দিয়ে। পাকিস্তানের জাফরকে ৭-৩ পয়েন্টে হারান। এর আগে সেমিফাইনালে হারান নেপালি রাজীব পোদাসানিকে। আল আমিনের স্বর্ণপদকের পরেই উল্লাসের উপলক্ষ তৈরি করেন মারজান আক্তার প্রিয়া। কুমি অনূর্ধ্ব ৫৫ কেজিতে পাকিস্তানের কাউসার সানাকে ৪-৩ পয়েন্টে হারান। কিছুক্ষণ পর কুমিতে অনূর্ধ্ব ৬১ কেজিতে হুমায়রা আক্তার অন্তরা নেপালের আনু গুরংকে ৫-২ পয়েন্টে হারিয়ে তৃতীয় স্বর্ণ জয় করেন।

সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

শীতকালে নবজাতক শিশুর যত্ন


শিশুর জন্য স্বাস্থ্যসেবা


ঋতু পরিবর্তনের ফলে শীতকালে শিশুরা খুব অল্পতেই অসুস্থ্য হয়ে পরতে পরে। এমনিতেই শিশুর যত্নে সব সময় সজাগ দৃষ্টি রাখতে হয় আর শীতকালে শিশুর চাই বাড়তি যত্ন।

শিতে শিশুকে উপযুক্ত আরামদায়ক ও কিছু বাড়তি গরম কাপড় গায়ে দিতে দিবেন। তার মাথা, ঘাড়, হাত এবং পা ভালো ভাবে গরম কাপড়ে ঢেকে রাখার ব্যবস্থা করুন। সাধারনত প্রাপ্ত বয়স্ক লোকের চেয়ে শিশুদের এক লেয়ার বেশি কাপড় নিশ্চিত করুন। আর অবশ্যই শিশুদের জন্য কয়েক জোড়া শীতের কাপড় ব্যবহার করবেন এবং দুই থেকে তিন দিন অন্তর অন্তর তা পরিস্কার করে ধুয়ে ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিবেন।

শীতে শুধু ঠাণ্ডা লাগার কারণেই যে বাচ্চা অসুস্থ হবে তা নয় বরং শীতকালীন অসুখের মূল কারণ বায়ুবাহিত বিভিন্ন রোগজীবাণু যা সহজেই ছড়িয়ে পড়ে এবং বিশেষ করে শিশুদের সহজেই আক্রমণ করে। আর সেইসাথে থাকে প্রচুর ধুলোবালি যা শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে নাক দিয়ে ফুসফুসে প্রবেশ করলে গলায় কিংবা নাকে প্রদাহ, সর্দি, কাশি সহ বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। আর মাত্রাতিরিক্ত দূষিত ধোঁয়া এবং ধুলো শিশুদের নিউমোনিয়া কিংবা ব্রঙ্কাইটিসের মতো সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে। ভালো ভাবে হাত না ধুলে এর মাধ্যমে অনেক রোগ ব্যাধি ছড়ায়। বিশেষ করে শিশুদের ভালো ভাবে হাত ধোয়ার অভ্যাস করাতে হবে। শীতে গরম পানিতে শিশুকে হাত ধুতে দিন, কারণ ঠান্ডা লাগার ভয়ে শিশু ভালো ভাবে হাত না ধুলে সর্দি, কাশি ও নিওমোনিয়ার জীবানুতে আক্রান্ত হবার ভয় থাকে।

শুষ্ক শীতের মৌসুমে শ্বাস প্রশ্বাস এর সাথে অন্য সময়ের তুলনায় বেশি পানি বেড়িয়ে যায়। এটি একটি বিশেষ লক্ষণীয় বিষয় আর এজন্য সর্বদা শিশুদের জলযোজিত রাখতে হবে। এই ঋতুতে বাচ্চাদের বেশি বেশি গরম পানিয় পান করতে দিন তাতে পানি শুন্যতা পূরণ হবে আর গরম পানি তাকে ঠান্ডা লাগা থেকে দূরে রাখবে। শীতে সবার ত্বকই শুস্ক ও রুক্ষ হয়ে যায় আর বিভিন্ন চর্ম রোগ আক্রমন করে। শীতে চাই ত্বকের পর্যাপ্ত ময়েশ্চারাইজার। শীতকালে আপনার বাচ্চা স্কুলে অন্যদের মাধ্যমে কিছু ছোঁয়াচে চর্মরোগে আক্রান্ত হতে পারে। শীতে শিশুর ত্বকের যত্ন নিতে বিশেষ খেয়াল রাখুন। নিয়মিত লোশন লাগান যেন ত্বক শুষ্ক হয়ে না যায়।

শীতকালের ঠান্ডা আবহাওয়া থেকে শিশুকে সুরক্ষা দিতে খোলামেলা পরিবেশে খুব বেশি খেলাধুলা করতে না দেয়ায় ভালো বিশেষ করে শৈত প্রবাহের সময়। খুব বেশি ঠান্ডা আবহাওয়া শিশুদের অনেক ক্ষতি করে আর কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ করে দেয়। আরও লক্ষ্য রাখবেন শিশু যেন মেঝেতে খালি পায়ে না হাঁটে। শিশুর জন্য বাসায় ব্যবহার উপযোগী জুতা কিনতে পারেন পাশাপাশি ঘরের মেঝেতেও মাদুর বা মোটা কাপড় বিছিয়ে দিতে পারেন। তাহলে মেঝেতে বসে খেলা করলেও ঠাণ্ডা লাগবে না।

শীতে আপনার নবজাতক শিশুর (১ থেকে ২৮দিন বয়সী শিশু) জন্যে আরও বেশি যত্নবান হতে হবে। নবজাতক শিশুর যত্ন সম্পর্কে জানতে পড়ুন শীতে নবজাতকের যত্ন – করণীয় ও পরিচর্যা।

আপনার শিশুকে শীতকালে বেশি বেশি ফলমূল, শাকসবজি ও সুষম খাদ্য খাইয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি নিশ্চিত করুন তাতে করে আপনার বাচ্চার শুধু শীতের রোগ না বরং অন্য সকল রোগের ঝুঁকিও কমে যাবে। এই মৌসুমে নানান রকমের রোগ বালাই থেকে দূরে থাকতে ছোট্ট সোনামণিদের খাওয়ান মৌসুমি ফল ও সবজি। মূল কথা বাচ্চার ভিটামিন প্রাকৃতিক ভাবেই পূরণ করুন। এছাড়া দৈনিক এক চামচ মধু খাওয়ান তাতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে ও সর্দি-কাশি কিংবা ঠাণ্ডা লাগার ঝামেলা একদম কমে যাবে।

বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে শীত মৌসুম এলেও অভ্যাসবসত ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি পান, আইসক্রিম খাওয়া বা রাতের বেলায় ফ্যান ছেড়ে ঘুমিয়ে যাওয়ার কারণে টনসিল বা গলায় ব্যথা হয়। তাই তাদের এইসকল কাজ থেকে বিরত রাখতে হবে।

শীত বলে পরিচ্ছন্নতায় অবহেলা না করে শিশুকে নিয়মিত গোসল করান। তবে দুপুর ১২ টার আগেই গোসলের পর্ব সেরে ফেলুন। গোসলের পর বাচ্চার মাথা ও শরীর ভালো করে মুছে তারপর জামা কাপড় পরাবেন। ত্বক ভালো রাখতে অবশ্যই বেবি লোশন বা অলিভ অয়েল ব্যবহার করবেন নইলে শীতের রুক্ষ বাতাস ত্বকের ক্ষতি করবে।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য শিশুর শরীর হালকা গরম পানি দিয়ে ধোয়ালেও মাথা ধোয়ানোর সময় অবশ্যই স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি ব্যবহার করতে হবে। বেবি-শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে সপ্তাহে দুই-এক দিন। তবে শিশুর চুলে খুশকি হলে তা ভালো হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ওর চুলে তেল দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। শ্যাম্পু করার সময় শিশুর মাথা আলতোভাবে মাসাজ করতে হবে। জোরে মাসাজ করলে শিশুর ফলিকল ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।

সুত্রঃ ভোরের কাগজ।

 

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা- ৭


আফরোজা হাসান


বিয়ে হয়ে গিয়েছে এখন একটু স্বভাব বদলাতে চেষ্টা কর! কয়েকদিন আগেও একবার তুমি এই কথাটা বলেছো শাবাবকে। সেদিন ছোট ফুপ্পি এসেও একগাদা লেকচার শুনিয়ে গেলো আমাদেরকে। এখন থেকে এভাবে চলবি, ঐভাবে বলবি, এটা করবি না, সেটা ভাববি না! ইত্যাদি ইতাদি! বিয়ে জিনিসটা তাহলে কি মামণি? জেলখানা? কয়েদি হয়ে ছোট্ট একটু পরিসরে বন্দি থাকা কি বিয়ের শর্ত?

মাহাম কি হয়েছে তোর? এভাবে কথা বলছিস কেন? বেশ অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন সাবিহা।

একটা মেয়ে যার চোখে হাজারো স্বপ্ন, মনে ফুল-পাখী-প্রজাপতি- রংয়ের ছড়াছড়ি। যার বাঁধনহারা মনটা মুক্ত বিহঙ্গের ডানা মত মেলে উড়তে চায়, খেলা করতে চায় মেঘেদের কোল ঘেঁসে, গাঁথথে চায় তারার মালা, ভিজতে চায় জোছনার শিশিরে! বিয়ে নামক শব্দটার মাঝে কি এতই জোর যে সব কেড়ে নেবে তার মন থেকে? এই একটা বন্ধনের কাছে বাঁধা পরে যাবে জীবনের সব স্বপ্ন? সব শখ? সব আনন্দ? কেন মামণি?

কি বলবেন বুঝতে না পেরে নির্বাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন সাবিহা। শাবাবও বোনের মুখে এমন কথা এরআগে কখনো শোনেনি তাই বিস্ময় ভরা চোখে তাকিয়ে রইলো। মা আর বোনের চেহারা দেখে হাসি ফুটে উঠলো মাহামের চেহারাতে। বলল, আমি ইনজেনারেল কথাগুলো বললাম মামণি। আমাদের দুজনের একজনের খালার বাড়িতে, অন্যজনের চাচার বাড়িতে বিয়ে হয়েছে। আমাদের পারিবারিক বন্ধন যেমন দৃঢ়, শরীয়তের বিধান ছাড়া অন্যসব ক্ষেত্রে প্রচণ্ড রকম মুক্তমনা আমরা সবাই। আমরা সবাই স্বাধীনতা প্রিয়, তাই কেউ কারো স্বাধীনতাতে হস্তক্ষেপ করি না। কিন্তু বেশির ভাগ মেয়েদের ক্ষেত্রেই তো এমন হয়না। নতুন এক ভুবনের পথ উন্মুক্ত হবার কথা যে বন্ধনের দ্বারা, সেই বন্ধনই তাকে আস্টেপৃষ্টে বেঁধে ফেলে। চোখের সামনে নোটিশ বোর্ড ঝুলিয়ে দেয় এটা করতে পারবে না, ওটা তোমাকে মানায় না, বিয়ে হয়ে গেছে তারমানে অনেক বড় হয়ে গিয়েছো তুমি। হাসি-আনন্দ-উল্লাস এখন অশোভন তোমার জন্য!

ব্যাপারটা আসলে ঠিক তা না! বললেন সাবিহা।

মাহাম বলল, ব্যাপারটা আসলে কি সেটাই আমি জানতে আগ্রহী মামণি। বিয়ে কেন একটা মেয়েকে তার বয়স অনুযায়ী চলতে বাঁধা দেবে? বিয়ে হয়েছে বলে কেন আমরা পারবো না সতেরো বছর বয়সি মেয়েদের মত ছুটে বেড়াতে? শরীয়তের কোথাও তো এমন কোন বিধান নেই যে বিয়ে মানেই দাদী আম্মা হয়ে যাওয়া।

এইসময় তো ফুমা ফুমা বলে চিৎকার করতে করতে মিহির ঢুকলো। মাহাম হেসে বলল, কি হয়েছে আমার সোনা বাবা? মাহামের হাত ধরে টানতে টানতে মিহির বলল, আয়ান বাডি এসেছে। চলো চলো তোমাকে ডাকছে। যেতে যেতে মাহাম বলল, আমাদের কথা কিন্তু শেষ হয়নি মামণি। এই ব্যাপারে আমি অবশ্যই তোমার সাথে কথা বলবো।

মাকে কনুই দিয়ে হালকা খোঁচা দিয়ে শাবাব বলল, আজকে তোমার খবর আছে মামণি! হিহিহি… তোমার মায়াবতী কন্যার কচ্ছপি কামড় থেকে আজ আর মুক্তি নাই তোমার! তবে যাই বলো মাহামের কথাগুলোতে যুক্তি আছে মামণি। আমার মাথায় কখনো এমন চিন্তা আসেনি কখনো সেটা ভাবছি!
আয়ানের না রাতে আসার কথা শুনলাম। শাবাবের কথা কানে তুললেন না সাবিহা।

ঠিকই শুনেছিলে। আসলে ভাইয়া ফোন করেছিলো কিছুক্ষণ আগে। আমি ফুলিয়ে ফাপিয়ে ভাব দিয়ে মাহামের অসুস্থতার কথা বলেছি। সেজন্য হয়তো চলে এসেছে মিটিং টিটিং ছেড়ে।

হেসে ফেললেন সাবিহা। শাবাবের কান ধরে ঝাঁকিয়ে বলল, তুই পারিসও দুষ্টুমি করতে। দেখ কিছু লাগবে কিনা আয়ানের। মাকে আদর করে দিয়ে হাসতে হাসতে বেড়িয়ে গেলো শাবাব।

চলবে…

 

এই কবিতার কোনো নাম নেই

এই কবিতার কোনো নাম নেই


সুমাইয়া তাসনিম


১.
বহুক্ষণ আগে নিস্তেজ হয়ে যাওয়া মৃতদেহটার
ফিনকি দিয়ে গড়িয়ে পড়া রক্তে প্রতিফলিত সূর্যটা
কেমন আশ্চর্য উজ্জ্বলতায় ঝিকমিকিয়ে উঠল!
সে রক্তে হাত ছুইয়ে আমি অবাক হয়ে গেলাম,
কৈশোরের মতই দারুণ উষ্ণ সে লাল!

এখানে একটা শুভ্র ফুলের বাগান ছিল।
সাদা বিনয় আর শুদ্ধতার প্রতীক।
এখানকার বাতাস ছিল সুবেহ সাদিকের
প্রথম পরিশুদ্ধ বাতাসের মতই শীতল।
এখন অবশ্য সে সফেদ স্নিগ্ধতা
ক্রমাগত ঢেকে গেছে লাল রক্তে।
লাল মানে ঔদ্ধত্য,
লালে যেন আহ্বান আছে বিপ্লবের!
বাতাস হয়ে উঠছে লু হাওয়ার মত অসহনীয় উষ্ণ।
বহুদূর-দূরান্ত থেকে রক্তের গন্ধ নিয়ে আসা এ বাতাস এসেছে,
মিসর, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, পূর্ব তুর্কিস্তান,
আরাকান, কাশ্মীর থেকে মিন্দানাও হয়ে।
সত্যের সুগন্ধি এত তীব্র কে জানতো!

সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া ছেলেটা তার
গোলাপের মত রক্তাভ ঠোঁটে প্রথম চুমু খেয়েছিল
একটা দু’নলা বন্দুকের হাতলে।
রক্তকমলের মত রাঙ্গা চোখজোড়া থেকে
ঠিকরে বেরিয়ে আসা আগুনের ফুলকিগুলো
শেষবারের মত তার গাল বেয়ে নেমে এসেছিল
কসম আর কিসাসের জন্যে।
কসম! পূর্বসূরীদের রক্ত সিঞ্চিত উর্বরতম মাটিতেই
এবার চাষ হবে যুগান্তরের শ্রেষ্ঠ বিপ্লব।

২.
তন্দ্রাতুর চোখে ঝিমোতে ঝিমোতে
সতচকিত হয়ে সামনে চাইলাম হঠাৎ,
আমি যেন কোথাও নাকারা বেজে উঠতে শুনলাম!
কোথাও কি নতুন করে শপথ হচ্ছে
বায়াত আর-রিজওয়ানের?

 

গার্ডিয়ান উইমেন আওয়ার

গার্ডিয়ান উইমেন আওয়ার


কি পড়বেন


আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬.০০টা থেকে ৭.০০টা গার্ডিয়ানের নারী পাঠকদের সম্মানে ‘উইমেন্স আওয়ার’ ঘোষণা করেছে।

এই ১ ঘন্টায় ৫০% ডিসকাউন্টে নারী পাঠকদের অর্ডার গ্রহণ করবে। আর হ্যাঁ, প্রত্যেক অর্ডারকারী গার্ডিয়ান ও খাস ফুডের সৌজন্যে বিশেষ উপহার পাচ্ছেন ইনশাআল্লাহ। গার্ডিয়ানের সকল বই এই অফারের আওতায় থাকবে।

শুধুমাত্র সন্ধ্যা ৬.০০টা থেকে ৭.০০টা এই ঘন্টা সময়ে একটা অনলাইন অর্ডার ফরম, কয়েকটি মুঠোফোন নম্বর এবং গার্ডিয়ানের ফেসবুক পেইজের ইনবক্সে অর্ডার গ্রহণ করা হবে। ঠিক ৬.০০টায় অনলাইন অর্ডার ফরম উন্মুক্ত করা হবে। অর্ডারে বইয়ের নাম, সংখ্যা, গ্রাহকের ঠিকানা বলতে হবে। আমরা পরবর্তীতে কল দিয়ে পেমেন্ট কনফার্ম করব। নির্দিষ্ট ঠিকানায় কুরিয়ারে এবং হোম ডেলিভারিতে বই পৌঁছে দেওয়া হবে। ঢাকার পাঠকবৃন্দ বইমেলা অথবা গার্ডিয়ান সেলস সেন্টারে এসেও বই নিতে পারবেন।

হোম ডেলিভারির জন্য অতিরিক্ত ৫০ টাকা এবং কুরিয়ারের জন্য ৪০ টাকা দিতে হবে।

বই লিস্টঃ

অর্ডার করার জন্য মুঠোফোনঃ
01710-197558,
01998-584958,
01863-961753,
01737-144915,
01726-859484,
01830-733323,
01867-346377,
01924-374962,
01724-538590,

গার্ডিয়ানের ফেসবুক পেইজঃ
গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স

আগামীর পৃথিবী বইয়ের হোক, জ্ঞানের হোক।

 

৯২ বছর বয়সেও সাইকেল চালিয়ে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন বৃদ্ধা

৯২ বছর বয়সেও সাইকেল চালিয়ে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন বৃদ্ধা


নারী সংবাদ


বাংলাদেশের নারীরা পিছিয়ে নেই। শ্রম, মেধা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়ে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে তারা। এরই মধ্যে দুঃসাহসী ও চ্যালেঞ্জি কর্মকাণ্ডে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে তারা। এই ধারাবাহিকতা এখন শুধু শহরে নয় উপজেলা ও প্রত্যন্ত গ্রামেও যুক্ত আছেন বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও মানব সেবায়। নানা রকম যুদ্ধ পাড়ি দিয়ে একমাত্র নিজের সাহসিকতায় অনেক নারীর সফলতার গল্প আমরা শুনেছি। তবে আজ জানাবো অন্যরকম এক গল্প।

গ্রামের সবাই যাকে চিনেন নানী নামে। তিনি হলেন জহিরন বেওয়া। বয়স ৯২ বছর পেরিয়ে গেছে কিন্তু মনের উদ্যমতা, সাহসিকতা, কর্মের দক্ষতা-সখ্যতা কমেনি তার। স্থায়ীয় এমপিও কারো কাছে অপরিচিত হলেও গ্রামের সবার কাছে নানী জহিরন বেওয়া এক পরিচিত নাম।

৯২ বছর(তার দাবি) বয়সী জহিরন বেওয়া লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ী ইউপির সীমান্তবর্তী গ্রাম তালুক দুলালীর মৃত সায়েদ আলীর স্ত্রী। মুক্তিযুদ্ধের চার বছর আগে স্বামীর মৃত্যুতে ভেঙ্গে পড়া এ সংগ্রামী নারী তিন ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে সংসার সংগ্রাম শুরু করেন। আট বছর আগে বড় ছেলে দানেশ আলী ৬৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করায় ভেঙ্গে পড়েন জহিরন বেওয়া। ছোট ছেলে তোরাব আলীর (৫৯) সংসারে এই সংগ্রামী নারী এখনো সচল, সজাগ আর কর্ম উদ্যামী হয়ে বেঁচে আছেন।

দেশ স্বাধীন হয়েছে কিন্তু সংসারে অভাব-অনাটন ছিল প্রতিক্ষণের চিন্তা। সমাজের কথা উপেক্ষা করে ১৯৬৮ সালে জহিরন পরিবার পরিবল্পনার অধিন স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার পরিকল্পনা বিষযে ছয়মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে, চুক্তিভিত্তিক মাসিক মজুরিতে কালিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মে যোগ দেন। নিজ গ্রামসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে বাইসাইকেল চালিয়ে গ্রামবাসীদের স্বাস্থ্যসেবা দিতেন। ২শ’ থেকে ৩শ’ অবশেষে ৫শ’ টাকা মাসিক মজুরিতে ১০ বছর চাকরি করে অবসরে যান জহিরন। কিন্তু বাড়িতে বসে থাকতে পারেননি।

জহিরন বেওয়া ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমি শুধু সাধারণ রোগ যেমন জ্বর, মাথাব্যথা, বমি শারীরিক দুর্বলতাসহ অন্যান্য রোগের চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকি। চিকিৎসার জন্য আমাকে কোনো অর্থ দিতে হয় না, তবে আমি বাজারমূল্যে তাদের কাছে ওষুধ বিক্রি করি। এতে প্রতিদিন গড়ে ১৫০ টাকা আয় হয়।

তিনি আরো বলেন, আদিতমারী উপজেলার ৩০টি গ্রামে প্রায় দুই হাজারের বেশি পরিবারের সঙ্গে রয়েছে আমার যোগাযোগ। আমি প্রতিদিন বাইসাইকেল চালিয়ে কমপক্ষে সাতটি গ্রামের ৭০টি বাড়িতে যাই এবং তাদের খোঁজখবর নিই। এমনটি দাবি করে জহিরন বেওয়া জানান, গত ৫০ বছরে তিনি কোনো রোগে আক্রান্ত হননি।

আদিতমারীর গ্রামবাসীরা জানান, গত ৪৫ থেকে ৫০ বছর ধরে জহিরন বেওয়াকে দেখছি তিনি সাইকেল চালিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে দরিদ্র রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। সাধারণ কোনো অসুখ-বিসুখ হলে আমরা তার কাছেই চিকিৎসা নিই। আর তিনি কখনোই আমাদের কাছে টাকা নেননি। মাঝে মধ্যে ওষুধও বিনামূল্যে দেন।

তারা জানান, উনি এখন গ্রামের সবার জাতীয় নানী। সবাই তাকে নানী বলেই ডাকে, হয়তো ছেলে দেখলে তাকে নানী বলে ডাক দেয়, ছেলের বাবাও দেখলে নানী বলে ডাকে। অনেকে আবার আদর করে উনাকে নানী বুড়ি বলে ডাকেন। আমাদের এই অঞ্চলে সবাই নানী বুড়ি বললে জহিরন বেওয়াকে এক নামে চিনে, এমনকি আমাদের এমপিরে কেউ চিনুক না চিনুক কিন্তু এই নানী বুড়িকে আশেপাশের সব লোক এক নামে চিনে।

তারা আরো জানান, নানীকে ভালোবেসে অনেকে পরামর্শ দেয়- নানী তোমার বয়স হইছে, এখন সাইকেল চালানো বাদ দাও, বাড়ি বাড়ি যাওয়া বাদ দাও, রাস্তা ঘাটে কখন কি ঘটে যায় কে জানে। তবে শুনেছি, নানী এসব বাদ দিতে পারেন না, উনার একটা অভ্যাস হয়ে গেছে। সকাল হলেই উনি ক’টা ভাত মুখে তুলে সাইকেল নিয়ে বের হয়ে যান। তারপর, আশেপাশের গ্রামের সবার খোঁজ খবর নিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেন। নানী যদি কখনো নিজে অসুস্থ থাকেন, উনার খোঁজ খবর নিতে উনার নিজের বাড়িতে লোকজনের ঢল নামে।

ভেলাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী ডেইলি বাংলাদেশকে জানান, জহিরন বেওয়া নিজেকে সবসময় হাসি-খুশি রাখেন আর গ্রামবাসীকেও আনন্দ দিয়ে হাসি-খুশি রাখেন। তাই জহিরন বেওয়া গ্রামের সবার কাছে জনপ্রিয়, হয়ে উঠেছেন সবার নানী, লালমনিরহাট তথা বাংলার নানী। আমরা তাকে বাংলা নানী বলে সম্বোধন করি আর এতে তিনি বেশ খুশি থাকেন।

জহিরন বেওয়ার নাতি আব্দুর রাজ্জাক ডেইলি বাংলাদেশকে জানান, তিনি বার বার চেষ্টা করে যাচ্ছেন দাদিকে সাইকেল চালিয়ে বাইরে যেতে না দিতে কিন্তু পারছেন না। দাদি কষ্ট করে তার ছেলে-মেয়েদের মানুষ করেছেন তেমনি আমাদের মানুষ করার ক্ষেত্রেও তার অবদান রয়েছে।

আমরা হয়তো বইয়ে পড়েছি বেগম রোকেয়া, মাদার তেরেসা, ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের কথা- কিন্তু এমন অন্তরালে লুকিয়ে থাকা নানীদের অবদান তাদের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। কেউ তার কাজের ব্যপ্তি নিয়ে দীপ্তি ছড়িয়েছেন, কেউবা নানীর মত ছোট্ট পরিসরের আলোকিত সেবক।

সুত্রঃ( রাসিব মোস্তফা ও জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না) ডেইলি বাংলাদেশ।

 

সোনার হরিণ (পাঁচ)

সোনার হরিণ (পাঁচ)


ফাতিমা মারিয়াম


আলাদা সংসার পেয়ে মালা মহা খুশি। সে নিজের মত করে সংসার গুছিয়ে নিচ্ছে।

চার/ পাঁচ বছর চলে গেল। এরই  মধ্যে সে আরেকটি সন্তানের মা হল। এবারের সন্তান মেয়ে। এই সন্তান হওয়ার সময়ও রীতা মালাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে। কিন্তু মালা যেন একটু কৃতঘ্ন ধরনের মেয়ে।  সে শফিকের কানে রীতা সম্পর্কে বিভিন্ন কথা তুলে দেয়।  একবার দুইবারের পর শফিক রীতার কাছে এটা ওটা কৈফিয়ত চায়। রীতা তার মতামত ব্যক্ত করে। আপাতত ঝামেলা মিটে যায়! কিন্তু আবার শুরু হয়…………।

কয়েকবারের পর রীতা যখন বুঝতে পারলো এসবের পিছনে মালার হাত আছে, তখন সেও এসব নিয়ে তুমুল ঝামেলা করতে থাকল। শ্বশুরবাড়িতে নালিশ করেও কোন ফলাফল নেই।

এদিকে শফিক দুই বউকেই হুমকি ধমকি দেয়। শাসনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। কিন্তু কেউই কথা শুনতে বা মানতে নারাজ। শফিক এক পর্যায়ে রীতাকে চাকুরী ছেড়ে দেয়ার জন্য জোর নির্দেশ দিলো।

কিন্তু এই ব্যাপারে রীতা কোনভাবেই রাজি হল না। তার সহকর্মী, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী সবাই-ই তাকে এব্যাপারে শক্ত থাকার পরামর্শ দিল। এদিকে শফিক চূড়ান্ত নোটিশ দিলো চাকুরী না ছাড়লে সে রীতাকে তালাক দেবে।

তখন শুভাকাঙ্ক্ষীরা পরামর্শ দিলো আপাতত কিছুদিন হাসপাতাল থেকে ছুটি নিতে। রীতা হাসপাতাল থেকে ছুটি নিয়ে স্বামীর কাছে মিথ্যা বলল যে সে চাকুরী ছেড়ে দিয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে রীতা শফিককে সব খুলে বলল। শফিকও বেশি উচ্চবাচ্য করলো না। কারণ তার ব্যবসা খারাপ যাচ্ছে। এদিকে খরচও অনেক বেড়ে গেছে। আগে রীতাকে সামান্য খরচ দিলেই চলত, এখন তাকে সম্পূর্ণ সংসার খরচ দিতে হয়।

আবার মালার জন্য বাসা ভাড়া করায় ওখানেও বেশ ভালো পরিমাণ টাকা খরচ হয়ে যায়। আগে সবার সাথে থাকায় ওখানেও খরচ অনেক কম হত। বাসা ভাড়া লাগত না। এখন দুই সংসার চালাতে গিয়ে সে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে। তার উপর ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে। ফলে রীতা আবারও হাসপাতালে যাওয়া শুরু করলো।

এদিকে শফিকের ব্যবসা দিনদিন খারাপ হতে হতে এক পর্যায়ে সে রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দিতে বাধ্য হল। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পারিবারিক সিদ্ধান্তে সে বিদেশ যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। প্রবাসে যাওয়ার জন্য যা খরচ হচ্ছে তা কয়েক দিক  থেকে ম্যানেজ করা হয়েছে। রেস্টুরেন্ট বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া গিয়েছিলো তার কিছু অংশ এখনও আছে, খালু  কিছু দিয়েছে, রীতা ঋণ করে কিছু দিয়েছে, শফিক নিজেও ঋণ করে কিছু টাকার ব্যবস্থা করেছে।

শফিক চলে গেল।

পরিস্থিতি এখন কিছুটা স্বাভাবিক। ঋণ শোধ হয়ে গেছে।  দুই বউকেই আলাদাভাবে খরচের টাকা পাঠায়। খালাকেও  কিছুকিছু দেয়। দিন মাস কেটে যায়……।

দুই বছর পর শফিক দেশে আসলো। ৩/৪ মাস থেকে আবার চলে গেল। আবারও দুইবছর পর দেশে আসলো। এভাবে সে প্রবাস জীবন কাটাতে লাগলো।

এদিকে রীতা আর মালার ঝামেলা কিন্তু বন্ধ হয়নি! শফিকের অনুপস্থিতি এবং উপস্থিতি উভয় অবস্থাতেই দুজনের মনোমালিন্য লেগেই আছে। সামান্য বিষয়েই দুজনের ঝগড়া হয়! আবার মিটমাট করে। দুজনে দুজনের বাসায় যায়। কিছুদিন পরে আবারও ঝামেলা…………………।

একদিন কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মালা রীতাকে হুমকি দিলো- তুমি দেখে নিও আমি একদিন তোমাকে শফিকের ঘর থেকে বের করে দেবই।  ওর এই হুমকি যে একদিন তারই দিকে ফিরে আসবে তখন তা কেউই বুঝতে পারেনি!!!

শফিকের ভয়েই হোক বা অন্য যে কোন কারণেই হোক একটি বিষয়ে সবসময় দুজনের মিল ছিল তা হল উভয়েই একে  অন্যজনের সন্তানকে  বেশ আদর যত্ন করত। অবশ্য এ ব্যাপারে রীতাই অগ্রগামী ছিল।

শফিক এবার চিন্তা করে দেখল  প্রবাসে তার জীবন অনেক  বছর কেটে গেছে। বয়সও বেড়ে যাচ্ছে।   তাই এখন    ছেলেদের নিয়ে আসার ব্যবস্থা করাই  তার জন্য ভালো।  তার দুই ছেলেই  ইতিমধ্যে এইচএসসি পাশ করেছে। সে তার দুই ছেলেকেই ওখানে নিয়ে গেল। তাদেরকে সেখানে রেখে বছর খানেক পর শফিক একেবারেই দেশে চলে আসলো।

 চলবে..

 

বোরকা পরেই সাংবাদিক হিসেবে বিখ্যাত হচ্ছেন সাবিহা ও লতিফা

বোরকা পরেই সাংবাদিক হিসেবে বিখ্যাত হচ্ছেন সাবিহা ও লতিফা


ইন্টারন্যাশনাল উইমেন্স


ছোটো বেলা থেকে ইচ্ছে ছিল সাংবাদিক হবেন। পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বাসিন্দা সাবিহা শেখ সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে। সব বাধা অতিক্রম করে সফল সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে যখন পাকিস্তানের ডেরা ইসমাইল খানের গোমাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হন তিনি। কিন্তু ক্লাস করতে গিয়ে আচমকাই কতগুলো প্রশ্ন তার সামনে উদয় হয়ে ছিল।

অধ্যাপকরা বলে ছিলেন, ‘বোরকা পরা মেয়েরা ভালো সাংবাদিক হতে পারে না, তুমি রোরকা পরে কিভাবে সাংবাদিকতা করবে? পশ্চিমারা রোরকাকে ঠিকভাবে মেনে নিতে পারে না। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করতে তোমাকে মানুষের কথা শুনতে হবে।’

এমন প্রশ্নের মুখে সাবিহা কোনো দিন পড়েননি। অবাক হলেও সেই সময় সাহসিকতার সঙ্গে উত্তর দিয়ে ছিলেন তিনি। বলেছিলেন, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, শুধু একজন ভালো সাংবাদিকই হবো না, বোরকা পরা মেয়েদের রোল মডেল হবো। বোরকা পরা মেয়ে পেশাদার সাংবাদিক হওয়ার জন্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি করব।

যেমন কথা তেমন কাজ। আজ সত্যি সাবিহা বোরকা পরা মেয়েদের দিশারি হয়ে উঠেছেন। তিনি বন্ধু সামিরা লতিফাকে নিয়ে গড়ে তুলেছেন বোরকা জার্নালিস্ট সংগঠন। ২০১৮ সালে তারা এই সংগঠন তৈরি করেন।

পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশটি আফগানিস্তান সীমান্ত ঘেঁষা। সেখানে বেশিরভাগ মুসলিম নারীদের মধ্যে বোরকা নিকাব পরার চল রয়েছে।
এখানে মেয়ে শিক্ষা নিয়ে কাজ করে চলেছেন সাবিহা ও লতিফা। তারা সেখান মেয়েদের কথা তুলে ধরছেন। জানা গেছে, ওই এলাকায় মেয়েদের তেমন কোনো স্কুল কলেজ নেই। পরিবার থেকে দূরে গিয়ে পড়াশোনা চালানো অনেক সময় মেয়ের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে তাকে আশা-আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরাই সাবিহা ও লতিফার একমাত্র লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। এই কাজে করতে গিয়ে এখন যথেষ্ট পরিচিত হয়ে উঠেছেন সাবিহা।

সাবিহা জানিয়েছেন, আমরা বোরকা পরিধান করে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। আমাদের মতো মেয়েদের জন্য সাংবাদিকতায় জায়গা তৈরি করতে চাই। যেখানে মুসলিম মহিলারা কোনো সমস্যা ছাড়া কাজ করতে পারবেন।বোরকা বা নিকাব কোনো দিন কোনো পেশায় আসার জন্য বাধা হতে পারে না।

গোমাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান ওয়াসিম আকবর শেখ বিশ্বাস করেন, সরকারের সহযোগিতা না পেলে তারা এই জাতীয় কাজ করে বেশি দূর এগোন যায় না। তাই সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে।

লতিফা বলেন, আমাদের বোরকা জার্নালিস্ট নামের যে প্রকল্পটি মুসলিম মেয়ের জন্য চালু করেছি, তা প্রসারিত করতে আরো বেশি মহিলারা এগিয়ে আসার প্রয়োজন। পাশাপাশি সংগঠন চালাতে অর্থের প্রয়োজন রয়েছে। সরকার সাহায্য করলে আমরা লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব।

সাবিহা বলেন, এ কাজে নামি আমার মা আমাকে সমর্থন করেন। কিন্তু আমাকে এখন মানুষ সম্মান করেন। আমি চাই জার্নালিজমেও ইসলামের আদর্শ মেনে চলুক মুসলিম নারীরা। মুল : পূবের কলম সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

“দই বড়া” বানায় সহজে

“দই বড়া” বানায় সহজে


ঘরকন্যা


উপকরণ লাগবে
# মাষকলাইয়ের ডাল ১/২ কাপ,
# আদাবাটা ১/২ চা-চামচ,
# লবণ ১/২ চা-চামচ,
# বিট লবন ১/২ চা-চামচ,
# তেতুলের কাঁথ আধা কাপ,
# চিনি বা গুঁড় ১,১/২ টেবিল-চামচ,
# দই ২,৩ কাপ (ফেটানো),
# চাট মসলা ১/২ চা-চামচ।
#শুকনা লালমরিচ ৪,৫টি (টেলে নিন),
#জিরা ৩ চা-চামচ (টেলে নিন)।
আরো লাগবে, পুদিনা পাতা, কাঁচামরিচের কুচি, পেঁয়াজ কুচি, ভাজা নিমকি ভেঙে নিন।

প্রণালি
প্রথম ধাপে,
মাষকলাইয়ের ডাল আগের রাতে ভিজিয়ে রাখুন। অথবা পাঁচছয় ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে।এখন আধা কাপের চেয়েও কম পরিমাণ পানি দিয়ে মিহি করে বেটে কিংবা ব্লেন্ড করে নিন। যেন থকথকে খামির হয়।

দ্বিতীয় ধাপে,
একটি বাটিতে পানি নিয়ে, ছোট একটি ডালের বড়ি ফেলে দেখে নিন, খামির ঠিক হয়েছে কিনা। ভেসে উঠলে মনে করবেন, খামির একদম ঠিক হয়েছে।

তৃতীয় ধাপে,
এবার ডালের সঙ্গে আদাবাটা ও অল্প লবণ দিয়ে মিশিয়ে রাখুন ১০ মিনিট।

চতুর্থ ধাপে,
চুলায় তেল গরম করতে দিন। এই ফাঁকে বড় বাটিতে তিনকাপ খাওয়ার পানিতে অল্প লবণ ও তেতুলের কাঁথ গুলে রাখুন।

পন্ঞম ধাপে
তেল গরম হলে মাঝারি রাখুন চুলার আঁচ। এখন ডালের খামির থেকে ছোট এক চামচ নিয়ে বড়ার মতো করে তেলে দিন। বাদামি করে ভেজে তুলে সঙ্গে সঙ্গে তৈরি করে রাখা তেঁতুলের পানিতে ছেড়ে দিন। এতে বড়া নরম নরম হবে।

ষষ্ঠ ধাপে
এভাবে সবগুলো বড়া তৈরি করে নিন। বড়াগুলো পানি থেকে উঠিয়ে চেপে পানি বের করে পরিবেশন পাত্রে সাজিয়ে রাখুন।

সপ্তম ধাপে
অন্য একটি বাটিতে দই নিয়ে সেটাতে টালা মসলা থেকে এক চামচ করে মরিচগুঁড়া, জিরাগুঁড়া, তেঁতুলের কাঁথ, বিট লবণ, চিনি, অল্প চাটমসলা দিয়ে দই ফেটে নিন।

পরিবেশন

ডালের বড়ার উপর ফেটানো দই ঢেলে দিন। তারপর অল্প টালা গুঁড়ামসলা আর চাটমসলা ছড়িয়ে দিন। পুদিনাপাতার কুচি, কাঁচামরিচের কুচি, পেঁয়াজকুচি এবং নিমকির উপর দিয়ে ভেঙে দই বড়া পরিবেশন করুন।

সুত্রঃ বাংলাদেশি রেসিপি।

 

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা – ৬

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-৬


আফরোজা হাসান


রান্নার সব আয়োজন ঠিক আছে কিনা শেষ বারের মত দেখে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেললেন সাবিহা। মনের মাধুরী মিশিয়ে আজ সবকিছু রান্না করেছেন তিনি। যা রান্না করেছেন তার বেশির ভাগ জিনিসই হয়তো খাবে না কিন্তু পছন্দের প্রতিটা মেন্যু মেয়ে জামাইদের সামনে রাখতে চান তিনি। হোক না ঘরের ছেলে তাতে কি? মেয়ের জামাই মানেই ভীষণ স্পেশাল কিছু! হঠাৎ বুকের ভেতরটা কেমন যেন শূন্যতায় ছেয়ে গেলো! সাথে ছলছল করে উঠলো সাবিহার চোখ! মনেহয় এই তো সেদিন মেয়েরা এলো তাদের জীবনে অথচ দেখতে দেখতে আঠারোটা বছর পেড়িয়ে গেছে। মেয়েদের বিয়ে হয়েছে তারও প্রায় তিন মাস হয়ে গিয়েছে। এইচ.এস.সি’র ফাইনাল এগজামের শেষ হবার পর শ্বশুরবাড়ি যাবার সময়ও এসে যাবে।

দুই মেয়েকে বিয়ে না দিয়ে হজ্ব করতে যেতে নারাজ ছিলেন ফাইয়াজ সাহেব। বিয়ে যেহেতু ঠিক করাই ছিলো তাই বেশ তড়িঘড়ি করেই আকদ অনুষ্ঠানটি সেরে ফেলেছিলেন সবাই মিলে। এরফলে সংসার শুরুর আগে কিছুটা বোঝাপড়া করে নেয়ার পথটাও সহজ হয়ে গিয়েছে ছেলেমেয়েদের জন্য। মেয়ে দুটা এখনো ছোট্ট বাচ্চাদের মতোই পুরো বাড়ি মাথায় তুলে রাখে হাসি-মজা আর দুষ্টুমি দিয়ে। কেমন করে থাকবেন মেয়ে দুটিকে ছাড়া তিনি? না চাইতেও ঝরঝর অশ্রু নেমে এলো সাবিহার চোখ বেয়ে। রান্নাঘরের দরজায় নক হলে চোখ মুছে ঘুরে তাকিয়ে ফাইয়াজ সাহেবকে দেখে সাবিহা বললেন, তোমাকে চা দেয়নি শাবাব?

হ্যা দিয়েছে। আমি তোমার খবর নিতে এলাম। সেই সকালে ঢুকেছো রান্নাঘরে। শরীর খারাপ করবে তো শেষে।

মাহাম, শাবাব ওরা কোথায়?

শাবাব আরিফীর সাথে বাগানে বসে গল্প করছে দেখে এসেছি। মাহামের মাথাব্যথা কমেনি এখনো শুয়ে আছে। তোমার মন খারাপ মনেহচ্ছে কেন? চুপ দেখে স্ত্রীর কাছে এসে কাঁধে হাত রেখে বললেন, কি হয়েছে সাবিহা? মেয়েদের কথা ভেবে মন খারাপ?

কাঁধ থেকে স্বামীর হাত সরিয়ে দিতে সাবিহা বললেন, আমরা এখানে আসছি এই খবর দিতে কেন গিয়েছো তুমি তোমার আদরের মেয়ে জামাইদেরকে? শান্তিতে একটু সময় কাটাবো মেয়েদের সাথে তা না দুইজনই এসে হাজির।

ফাইয়াজ সাহেব হেসে বললেন, আমাদের তো আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা উচিত এজন্য। এমন জামাই’ই তো চেয়েছিলাম আমরা আমাদের দুই রাজকন্যার জন্য তাই না? যারা ওদেরকে আমাদের মত করে ভালোবাসবে, ওদের খেয়াল রাখবে। দেখো শত ব্যস্ততার মধ্যেও আয়ান আর আরিফী সপ্তাহ খানেক সময় বের করে নিউজিল্যান্ড থেকে এখানে চলে এসেছে।

হয়েছে তোমাকে আর জামাইদের সাফাই গাইতে হবে না। আয়ান ফোন করেছিল? কখন এসে পৌঁছাবে কিছু জানিয়েছে?

হ্যা, ফোন করেছিল কিছুক্ষণ আগে আয়ান। বলেছে রাতের আগে আসতে পারবে না।

সাথে সাথে মুখটা আঁধারে ঢেকে গেলো সাবিহার। খাসীর গোশতের কোর্মা, আনারস ইলিশ, তেলাপিয়া মাছ ভাজা, চিংড়ির মালাইকারি, ইলিশ মাছের ডিম দিয়ে আলু ভাঁজি, পোনা মাছের চচ্চড়ি এত কিছু তাহলে কার জন্য রান্না করলেন তিনি? আরিফী সবকিছুই অনেক মজা করে খায়, তাই যত চিন্তা আয়ানকে নিয়েই ছিল। দৈ পছন্দ করে সেজন্য সেটাও বসিয়েছেন তিনি আয়ানের জন্য।

স্ত্রীর চেহারার দিকে তাকিয়ে ঝড়ের আভাস পেয়ে আর কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি সরে পড়লেন ফাইয়াজ সাহেব। এত মজার মজার খাবার তৈরি হয়েছে সেসব ফেলে ঝাড়ি খাওয়ার কোন মানেই হয় না। তারচেয়ে নাতিকে নিয়ে বাগানে কিছুক্ষণ পায়চারী করে ক্ষুধাটা আরেকটু বাড়িয়ে নেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে বলে সেই উদ্দেশ্য রওনা করলেন তিনি।

শাবাবকে রান্নাঘরের দিকে যেতে দেখে ফাইয়াজ সাহেব একবার ভাবলেন ডেকে সাবধান করে দেবেন। পর মুহুর্তেই মনে পড়লো যে কোন একজনের সাথে কিছুক্ষণ হৈচৈ করলেই সাবিহার রাগ পড়ে যাবে। দুষ্টুমি করে মেয়ে মার হাতে বকা খাবে এরমধ্যে বাবার ইন্টারফেয়ার না করাই সমীচিন। ভেতর থেকে কে যেন বলল, জেনে শুনে মেয়েকে বিপদের মুখে পাঠাচ্ছো শুধুমাত্র নিজে নিরাপদ থাকার জন্য? ধিক্কার তোমাকে! সবসময় ভেতরের আওয়াজকে পাত্তা দেয়া ঠিক না! জাহিদ সাহেবও দিলেন না! নাতিকে নিয়ে বাগানে রওনা করলেন।

রান্নাঘরে ঢুকেই উমমম…ইয়াম্মি…সারা বাড়ি তো মৌ মৌ করছে ঘ্রাণে! বলতে বলতে খাবারের প্লেট টেনে নিলো শাবাব। সাবিহা বললেন, কি করছিস তুই?

সবকিছু ঠিকআছে কিনা একটু একটু করে চেখে দেখি মামণি।

সামনে থেকে যা তো শাবাব। তোকে দেখলে আমার ভালো মেজাজটাই খারাপ হয়ে যায় আর এখন মেজাজ এমনিতেই খুব খারাপ।

মামণি চল আজ একটা এক্সপেরিমেন্ট হয়ে যাক!

কিসের এক্সপেরিমেন্ট?

আমার কারণে তোমার ভালো মেজাজ খারাপ হয় এটা তো প্রাচীন কথা। দেখা যাক খারাপ মেজাজ ভালো হয় কিনা!
সবসময় এত ফান করিস নাতো শাবাব। যথেষ্ট বড় হয়েছিস তুই, বিয়ে হয়েছে এখন আর এসব মানায় না, বুঝেছিস!
কেন মানায় না মামণি? প্রশ্ন শুনে সাবিহা তাকিয়ে দেখলো মাহাম এসে দাঁড়িয়েছে দরজায়। মা আর বোনের কাছে এসে দাঁড়িয়ে মাহাম বলল, বিয়ে হয়ে যাওয়া মানে কি জীবনের সব আনন্দ-উচ্ছ্বাস- হাসি-দুষ্টুমির অবসান মামণি?

ধীর গলায় সাবিহা বললেন, এই কথা আমি কখন বললাম?

চলবে…

 

মনের কথা

মনের কথা


ইসরাত জাহান রুবাইয়া


সাড়ে ৪ বছরের দীপ্তর শখ হয়েছে সুপারম্যান হবে। সুপারম্যান তার হিরো। কী সুন্দর করে সে উড়ে চলতে পারে, কার্টুনে দেখেছে দীপ্ত। সেও ওরকম করে উড়বে। ড্রয়ার থেকে মায়ের একটা বড় ওড়না বের করলো। ওড়নাটা দুইভাঁজ করে একপ্রান্ত পিঠের উপর দিয়ে গলার কাছে এনে বাঁধলো। পা টিপে টিপে মায়ের রুমে এসে দেখলো মা ঘুমাচ্ছে। এইতো সুযোগ একা একা ছাদে যাওয়ার। ছাদে গিয়েই সুপারম্যানের মত উড়াল দেবে সে।
শম্পার চোখদুটো তখন লেগে এসেছে কেবল। এমন সময় দরজা খোলার অাওয়াজে ঘুম ভেঙে গেল। লাফ দিয়ে উঠে বসলো সে। বাসায়তো মা ছেলে ছাড়া এমুহূর্তে কেউ নেই। দরজাটা খুললো কে তবে! দীপ্ত বাইরে যাচ্ছেনাতো একা একা! দৌড়ে এসে দেখে দীপ্ত সিড়ি দিয়ে উপরে উঠছে। সেও ছেলের পিছু নিল। শম্পা পৌঁছতে পৌঁছতে দীপ্ত ছাদের রেলিং এ উঠে দাঁড়িয়েছে। দুইহাত দুইপাশে ছড়িয়ে যেইনা একপা বাঁড়িয়েছে ওমনি দৌড়ে এসে ছেলেকে শক্ত করে ধরে ফেললো শম্পা। দীপ্তর সে কী কান্না! অনেক অনুরোধ করলো অন্তত একটা বার ওকে উড়তে দিতে। শম্পা কোনোভাবেই রাজী না। পাঁজাকোলা করে তাকে তুলে নিয়ে ঘরে ছুটলো সে। হাত পা ছুঁড়ে কান্না করতে করতে দীপ্ত বললো তুমি অামার পছন্দের কিচ্ছু করতে দাওনা! সুপারম্যান হতে দাওনা! তুমি অনেক অনেক পঁচা মা, তুমি ভালোনা!
.
.
দীপ্তকে ছাদ থেকে লাফ দিতে দেয়নি বলে শম্পা কি অাসলেই পঁচা মা হয়ে গেছে? একবাক্যে সবাই বলবে, কখনোই না! দীপ্ত জানেনা ১১তলা থেকে লাফ দিলে কী ঘটবে! কিন্তু শম্পা জানে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে তার কলিজার টুকরা বাচ্চাটা। দীপ্ত মনে করে সে লাফ দিলে সুপারম্যানের মত উড়ে যাবে। কিন্তু শম্পা জানে বাস্তবে কী ঘটবে। বাচ্চা যতই অনুনয় বিনয় করুক, যতই জেদ করুক, যতই তাকে পঁচা মা বলুক; সে দীপ্তকে এই শখ পূর্ণ করতে দেবেনা। কেন ই বা জেনে শুনে সন্তানকে অাগুনে ঝাঁপ দিতে দেবে সে?
.
অাসুন, এবার অন্য কিছু ভাবি।
অনেক সময় অামরা অাল্লাহর কাছে অনেক কিছু চাই। কোনটা তিনি দেন, কোনটা দেননা। হ্যাঁ কখনো এমন কিছু তিনি দেননা যেটা অামরা অনেক বেশি পছন্দ করি। তখন হতাশ হয়ে অামাদের অনেকই অাল্লাহর উপর অভিমান করে বসেন। এত চাইলাম, দিলেননা অাল্লাহ! কেন, কী হত দিলে? তাঁর ভান্ডারে তো কিছুর অভাব নেই! তাঁর পক্ষেতো অসম্ভব বলে কিছু নেই! তবুও কেন দিলেননা! কেন???
শত অভিযোগ অার অাক্ষেপে অভিমানে অনেকে মুখ ফিরিয়ে নেই।
.
দৃষ্টি সীমাবদ্ধ অামাদের। ভবিষ্যত অামাদের অজানা। অামরা জানিনা জীবনপথে অামাদের সামনে কী অাছে। তিনি জানেন। সঅঅব জানেন। জেনেশুনে তিনি অামাদের সেসব অাব্দারগুলো পূর্ণ করেননা, যেগুলো পূর্ণ হলে অামরাই ক্ষতিগ্রস্ত হব। দীপ্তর মত অামাদের অভিমান হয়। অাক্ষেপ করি, অভিযোগ করি।
মা জন্ম দিয়েছেন বলে এত ভালোবাসেন, এত মমতাময়ী, সন্তানের কল্যাণলামী। অার যিনি সৃষ্টি করেছেন এত যত্নে তিনি কতটা কল্যাণকামী হতে পারেন? তিনি কতটা ভালোবাসেন বান্দাহকে? বান্দাহর ভালো-মন্দ, কল্যান-অকল্যান তাঁর মত ভালো অার কে বোঝে! কী করে তিনি সেই অাব্দারগুলো পূর্ণ করবেন যেগুলো বান্দাহর জন্য অকল্যানকর! যেগুলো পূর্ণ করলে বান্দা ভবিষ্যতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে! তাই তিনি সেই অাবদারগুলো পূর্ণ করেননা, কিন্তু খালি হাতেও ফিরিয়ে দেননা। কখনো সেসব বদলে দেন উত্তম কল্যানকর অন্যকিছুর দ্বারা। কখনো সেইসবের বদলে জমা করে রাখেন কিছু অভাবনীয় পুরষ্কার! এক অবশ্যম্ভাবী দিনে বান্দাহ তা প্রত্যক্ষ করে অাপ্লুত হবে। সিজদায় পড়ে যাবে। নতমস্তকে অান্তরিক স্বীকারোক্তি দেবে, অামার রব! নিঃসন্দেহে অাপনি মহীয়ান!
.
“তোমাদের কাছে হয়তো কোন একটা বিষয় পছন্দসই নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে তা অকল্যাণকর। বস্তুতঃ আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না। [সুরা বাকারা: ২১৬]

 

শীতের বিকেলে নাস্তায় ‘চিকেন পাফ’

শীতের বিকেলে নাস্তায় ‘চিকেন পাফ’


ঘরকন্যা


উপকরণ
১. ৩০০ মুরগির মাংসের কিমা ৩০০ গ্রাম,
২. ২৫০ গ্রাম ময়দা ২৫০ গ্রাম,
৩. ১ চা চামচ চিনি ১ চা চামচ,
৪. ১ চা চামচ বেকিং পাউডার ১ চা চামচ,
৫. ২ টেবিল চামচ পিয়াজ কুঁচি ২ টেবিল চামচ,
৬. ১ টেবিল চামচ কাচা মরিচ কুঁচি ১ টেবিল চামচ,
৭. ১ টেবিল চামচ আদা রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ,
৮. ১ টেবিল চামচ ধনে পাতা কুঁচি ১ টেবিল চামচ,
৯. লবণ স্বাদমতো,
১০. তেল প্রয়োজন মতো।

প্রণালি
১. প্রথমে একটি বোলে ময়দা, বেকিং পাউডার, লবণ এবং আধাকাপ তেল নিয়ে ভাল করে মেখে নিন । এরপর এতে পানি দিয়ে আবার মেখে ডো করে আলাদা করে রেখে দিন ১ ঘণ্টা।

২. এবার একটি প্যানে পরিমাণ মতো তেল দিয়ে আদা ও রসুন বাটা দিয়ে দিন। এরপর পেঁয়াজ, মরিচ কুঁচি দিয়ে খানিকক্ষণ নেড়ে কিমা দিয়ে দিন। লক্ষ্য রাখবেন যেন কিমাতে ঝোল না থাকে। রান্না হলে ধনিয়া পাতা ছিটিয়ে দিয়ে ঢেকে নামিয়ে রাখুন।

৩. এরপর ময়দার ডো থেকে লুচির মত করে ছোট ছোট রুটি বানিয়ে নিন। এরপর একটি লুচির অর্ধেকের উপরে কিমার পুর দিয়ে বাকি অংশ দিয়ে ঢেকে গোল অংশ ভাল করে মুড়ে দিন যেন ভাজার সময় খুলে না যায়। অনেকটা পুলি পিঠার মতো করে বানিয়ে নিন।

৪. এরপর প্যানে ডুবো তেলে ভাজার মতো তেল ঢেলে গরম করুন। হালকা আচে বাদামি রঙ করে ভেজে নিন ‘চিকেন পাফ’।

পরিবেশন
গরম গরম ‘চিকেন পাফ’ রান্না হয়ে গেলে সস আর আলুর ভাজার সাথে পরিবেশন করুন।

রেসিপি : বাংলাদেশি রেসিপি

 

সোনার হরিণ (চার)

সোনার হরিণ (চার)


ফাতিমা মারিয়াম


মালা অতি দরিদ্র ঘরের মেয়ে। অসম্ভব রূপবতী। ভাইবোনদের মধ্যে সবার বড়। তার দরিদ্র পিতা সব জেনেশুনেই মেয়েকে এখানে বিয়ে দিলেন। ঢাকায় জামাইয়ের পরিবারের নিজস্ব বাড়ি আছে। শফিক যদিও খালার পরিবারেই মানুষ তবুও পরিবারের সবাই তাকে এই পরিবারের একজন হিসেবেই গণ্য করে। তাই বেকার হওয়া সত্ত্বেও মালার বাবা বিনা বাক্যব্যয়ে মেয়েকে শফিকের কাছে বিয়ে দেন। পরিবারের অবস্থা ভালো। এখানে মেয়ে খেয়ে পরে সুখে থাকতে পারবে।

আগের বউকে এরা কখনোই মেনে নেবে না। তাই মালাই হবে পরিবারে শফিকের স্বীকৃত বউ। আর তাছাড়াও আগের বউ যেহেতু নিজেই চাকুরী করে শফিক পরবর্তীতে যা-ই রোজগার করুক না কেন ওদিকে বেশি কিছু দিতে হবেনা। এসব কিছু ভেবেই তিনি এই ঘরে মালাকে বিয়ে দিলেন। মালাও পরিবারের সিদ্ধান্ত চুপচাপ মেনে নিলো। আর মেনে না নিয়েই বা করবে কী? সীমাহীন দারিদ্র্য তাদের সবাইকে এই পথে আসতে বাধ্য করেছে।

বিয়ের প্রায় এক/দেড় মাস পরে মালা শ্বশুরবাড়িতে আসলো। এদিকে শর্ত অনুযায়ী পরিবারের পক্ষ থেকে শফিককে ব্যবসা করার জন্য টাকা দেয়া হল। ঐ টাকা দিয়ে সে ছোট একটি রেস্টুরেন্ট দিলো। ব্যবসা মোটামুটি চলছে।

শফিকের দ্বিতীয় বিয়ের ঘটনাটা রীতা প্রথমে টের পায়নি। মালা ঢাকা আসার আগেই তার কানে কিছু কিছু কথা এসেছিল। কিন্তু সে বিশ্বাস করেনি। শফিকের কাছে জানতে চাইলে সে সবকিছু অস্বীকার করলো। রীতাও তাই বিশ্বাস করে।

কিন্তু মালা ঢাকায় আসার পর এক কান দুই কান হতে হতে রীতার কানে আবার কথাটা আসে। এবার অনেক প্রত্যক্ষদর্শীও সাক্ষী দিলো। প্রতিবেশীদের অনেকেই মালাকে দেখে এসে রীতার কাছে বলে দেয়। রীতা নিজেও কিছু প্রমাণ সংগ্রহ করে।

অবশেষে সে নিশ্চিত হয়ে শফিককে জিজ্ঞাসা করলো। এবার সে সব কিছু স্বীকার করলো। রীতা একেবারেই ভেঙ্গে পড়ে। খুব কান্নাকাটি করতে থাকে। মা, ভাবী এবং প্রতিবেশীরা তাকে এসময় বুঝায়, ধৈর্য ধারণ করতে বলে। তার শারীরিক অবস্থা ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে সে চুপ করে যায়।

কিছুদিন পরে রীতা শফিককে সাথে নিয়ে ঐ বাসায় গিয়েছে মালার সাথে দেখা করতে। মালার সাথে কথাবার্তা বলেছে। সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছে। কারণ তার ধারণা ছিল সে যদি মালাকে সহজভাবে গ্রহণ করে নেয়, তবে শফিকসহ অন্যদের মন জয় করা তার জন্য সহজ হবে। তার বোকামি ও ভুলের কারণে আজ ছেলেটি পিতৃ-পরিচয়-হীন! তাই পরবর্তী সন্তান যেন এ সমস্যায় না পড়ে এজন্য সে আজ মনে অনেক কষ্ট চেপে রেখে এই ধরণের সামাজিকতা করে যাচ্ছে!

শফিক প্রায়ই আসে। তার খোঁজ খবর নেয়। এটা ওটা কিনে দেয়।

দিন যায়……।

কিছুদিন পরে রীতার একটি ছেলে হল। ছেলে হওয়ায় শফিক বেশ খুশী। রীতাও খুশী… রীতার শ্বশুর শাশুড়ি সহ সবাই নিয়মিত রীতা ও তার পুত্রকে দেখতে আসে। এমনকি স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সবার মন রক্ষা করতে মালাও কয়েকবার এসেছে।

দেখতে দেখতে ছেলের বয়স কয়েকমাস হয়ে গেছে। এবার রীতা আলাদা বাসা নিলো। সংসার এখন বড় হয়েছে। বাবার বাসায় আর কত থাকা যায়! যদিও বাসার কেউ তাকে কখনই এ ব্যাপারে কিছুই বলেনি, তবুও সে নিজ সিদ্ধান্তেই বাসা নিলো।

বাবার বাসার কাছাকাছি বাসা ভাড়া করেছে। যেহেতু সে সারাদিন বাইরে থাকে তাই সংসার ও ছেলের দেখাশোনা করার জন্য দুঃসম্পর্কের এক ফুফু শাশুড়িকে রীতা নিয়ে এলো। রান্নাবান্না, ছেলেদের দেখাশোনা, সংসারের আর সব কাজ ফুফু করে।

সংসারে খরচ এখন অনেক বেড়েছে। শফিক সহযোগিতা করে, রীতার বেতনও এখন আগের চাইতে বেশি। সংসার বেশ ভালোই চলছে।

প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনরা বিপদে আপদে তাকে ডাকে। রাতবিরেতে কারো কোন সমস্যা হলে সবার আগে রীতাকে খবর দেয়। সে ছুটে যায়! গর্ভবতী মায়েদেরকে গর্ভকালীন পুরো সময় সে দেখাশোনা করে। কখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে, কোন ডাক্তার ভালো, কোথায় কি সুবিধা আছে এসব ব্যাপারে সে পরামর্শ দেয়। এর বিনিময়ে সবাই তাকে পারিশ্রমিক দেয়।
দিন যাচ্ছে……।
শ্বশুর বাড়ীর যে কোন কারও অসুখবিসুখেই সে ছুটে যায়। ফলে দিনদিন ওখানেও তার কদর বাড়ছে। রীতার ছেলের বয়স যখন এক/দেড় বছর তখন সে জানতে পারল মালার বাচ্চা হবে। পুরো সময়টা সে মালাকে দেখেশুনে রাখল। যখনই সময় পায় ঐ বাসায় গিয়ে মালাকে দেখে আসে। বাচ্চা হওয়ার সময় মালাকে সে তার হাসপাতালে নিয়ে গেল। মালার একটি ছেলে হল।

মালার ছেলের বয়স যখন কয়েকমাস তখন অশান্তি শুরু করলো মালা।

সে দেখছে রীতা তার সংসার বেশ গুছিয়ে নিয়েছে। কিন্তু সে এখনও খালা শাশুড়ির পরিবারের অধীনে। উনাদের সাথে মাঝে মধ্যে একটু আধটু মন কষাকষি হয়। দুই চারটি কটু কথাও হয়। কেউ কাউকে ছাড় দেয়না। মাঝে মাঝে খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে ঘরের সবার সাথে এমন কি স্বামীর সাথেও তুলকালাম কাণ্ড করে।

দিনদিন ঝগড়া ঝাটি বেড়েই চলেছে। এখন তার একটাই দাবী-তাকে আলাদা বাসা ভাড়া করে আলাদা সংসারে রাখতে হবে। পরিস্থিতি যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিলো তখন শফিক বাধ্য হল মালাকে আলাদা সংসার করে দিতে।

চলবে..

 

মা হওয়ার ছয় মাস পর নিয়মিত ব্যায়াম করে ফিটনেস ধরে রাখা সম্ভব

মা হওয়ার ছয় মাস পর নিয়মিত ব্যায়াম করে ফিটনেস ধরে রাখা সম্ভব


স্বাস্থ্যকথা


চার মাস আগেই প্রথম মা হয়েছেন মন্টি দে। একটি বেসরকারি কোম্পানীতে চাকরি করেন মন্টি। আর মাত্র এক মাস পরেই মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে যোগ দিতে হবে চাকরিতে। কিন্তু এই কদিনেই বেশ মুটিয়ে গেছে মন্টি। আয়নাতে নিজের চেহারা যেন নিজেই চিনতে পারছেনা। মূলত মা হওয়ার পর থেকে বেশ শারীরিক পরিবর্তন হয়েছে তার। বেশ চিন্তায় পড়ে গেলেন মন্টি। কারন চাকরীতে তাকে বেশ দৌঁড়াতে হয়। আর শরীর ফিট না থাকলে কি করে হয়। অনেক ভেবেও কী করা যায় বুঝতে পারছেন না মন্টি। শেষ পর্যন্ত শরণাপন্ন হলেন তারই স্কুল বান্ধবী ডা. শর্মিলার। সব শুনে ডাক্তার পরামর্শ দিলেন আবার ব্যায়াম শুরু করার।
গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. নুরানী নিরু বলেন, মা হওয়ার পর আমরা ধরেই নিই যে আমাদের শারীরিক ফিটনেস শেষ। আমরা আর আগের মত সুন্দর হতে পারব না। পাব না চেহারার সেই সৌন্দর্য্য। কিন্তু আগের সেই শারীরিক সৌন্দর্য্য ফিরে পাওয়া খুব কষ্টের কিছু না। এজন্য দরকার দৃঢ় মনোবল আর আত্মবিশ্বাস।
তিনি বলেন, মানসিকভাবে সুস্থ থাকলে যেকোন মা’ই শারীরিকভাব্ওে সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। মা হওয়ার পরবর্তী শারীরিক নাজুক অবস্থা থেকে পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে ছয় মাস থেকে এক বছর সময় লেগে যেতে পারে। মূলত বড় হওয়া জরায়ু ও দুর্বল হয়ে পড়া পেলভিক মাংসপেশিগুলো আগের অবস্থানে ফিরে আসে ছয় সপ্তাহের মধ্যেই। শুরু থেকেই পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ করলে প্রস্রাব ধরে রাখার সমস্যা বা তলপেটের পেশির দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা যায়। তবে পুরোদমে ব্যায়াম শুরু করা উচিত ছয় মাস পর থেকে। আর বুকের দুধ খাওয়ানোর কারণে প্রথম ছয় মাস খুব বেশি ডায়েট না করাই ভালো।
প্রায় একই ধরনের কথা বলেন পিটিআরসি রিহ্যাব অ্যান্ড ফিজিওথেরাপি সেন্টারের পরামর্শক শায়লা। তাঁর সেন্টারে আজকাল অনেক মা হারিয়ে ফেলা ফিটনেস ও ফিগার ফিরে পেতে নানান সেশনে আসছেন। এ ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গি অনেক পাল্টেছে। তবে মা হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে স্বাভাবিক হাঁটাচলা শুরু করলেও ছয় মাস পর্যন্ত কোনো ভারী ব্যায়াম না করাই উচিত, বিশেষ করে যদি সিজারিয়ান হয়ে থাকে। ছয় মাস পর থেকে বিশেষজ্ঞের অধীন নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়ামের মাধ্যমে আগের ওজন ও ফিগার পাওয়া সম্ভব। কেবল ওজন কমানোটাই মুখ্য নয়, মা হওয়ার পর পেট ও পেলভিসের পেশিগুলো শিথিল বা লুজ হয়ে পড়ে, এর স্থিতিস্থাপকতা বাড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট ব্যায়াম লাগে। ফিট থাকার জন্য মা হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর থেকে প্রতিদিন ৪০ মিনিট করে হাঁটা ভালো।
ফিট থাকতে খাবারের ভূমিকা আছে। ফিটনেস বা স্ট্রেংথ কেবল শরীরের ব্যাপার নয়, এটা মনেরও। অনেক মেয়েই মা হওয়ার পর মানসিক শক্তি ও আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। অনেকে মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে কাজে ফিরে যান বটে, কিন্তু সেই এনার্জি যেন হারিয়ে ফেলেন।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সিফাত ই সাঈদ বলেন, বেশির ভাগ নতুন মায়েরই পোস্টপারটাম ডিপ্রেশন হয়। মনে হয় যেন সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। এ বিষয়ে তাঁর পরামর্শ হলো, শরীর ও মন পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে আসতে ৬ থেকে ৯ মাস লাগবে, রাতারাতি আগের মতো হওয়া যাবে না। এটা আগেই মেনে নিতে হবে। ধৈর্য ধরতে হবে। নিজের জন্য সামান্য হলেও আলাদা একটু সময় বের করতে হবে। যে সময় আপনি নিজের যতœ নেবেন, ব্যায়াম করবেন বা হাঁটবেন, চাইলে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা দেবেন, একটা ভালো ছবি দেখবেন বা গান শুনবেন। পরিবারের অন্যরা নবজাতকের দায়িত্ব দিনে দু–একবার না নিলে এটা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে স্বামী সবচেয়ে ভালো ভূমিকা রাখতে পারেন। সুত্রঃ (বাসস)।

 

সোনার হরিণ (তিন)

সোনার হরিণ (তিন)


ফাতিমা মারিয়াম


এবার রীতার জীবনের আরেকটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হল।

শায়লা রীতার  এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। একই পাড়ায় বাসা। ছোটবেলা থেকেই দুজনার গলায় গলায় ভাব। দুজনে সব সময়ই পরস্পরের বাসায় যাতায়াত করত। শায়লার পরিবারের সবাই রীতা ও তার মেয়ের প্রতি খুব সহানুভূতিশীল ছিল। সবসময়ই তারা রীতা ও তার ছেলের খোঁজখবর নিত।

শায়লারা দুই বোন ও পাঁচ ভাই। বাবা মা সহ বেশ বড় পরিবার।   শায়লার খালাতো ভাই  শফিক ছোটবেলা থেকেই শায়লাদের পরিবারেই বড় হয়েছে। তার মা বাবা নেই। মাতৃ-পিতৃহীন শফিক খালার পরিবারে বেশ আদর যত্নেই অন্য ভাই বোনদের মত দিন যাপন করছে।    এইচএসসি পাশ করে আর পড়াশুনা করেনি। আপাতত বেকার জীবন যাপন করছে।

শফিক সবসময়ই রীতার কাছে আনিসের কথা জানতে চাইত। তার ছেলের কথা জিজ্ঞেস করত। রীতার জীবনে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনা নিয়ে শফিক খুব আফসোস করত। সহানুভূতিও দেখাত। রীতাও শফিককে বড়ভাই মনে করেই সব কিছুই বলত। একে তো বান্ধবীর ভাই তার উপর প্রতিবেশী!!!

এভাবে কুশল বিনিময় করার ফাঁকে ধীরে ধীরে তারা কখন যে একে অপরের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছে তা তারা নিজেরাও জানেনা। যখন বুঝতে পারল তখন তাদের আর কিছুই করার থাকল না। রীতার বয়স কম। আনিসের জন্য অপেক্ষা করতে করতে সে হতাশ হয়ে পড়েছে। বেশ কয়েক বছর কেটে গেল…… আনিস তার সাথে কোনরূপ যোগাযোগও করছেনা। ফলে যা হওয়ার তাই হল!

এরপর বেশ কয়েকমাস কেটে গেছে।

শফিকের বা রীতার বাসার কেউ বিষয়টি প্রথমে টের পায়নি। ধীরেধীরে ওদের সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে প্রথমে পরিবারে ও পরে এলাকায় গুঞ্জন, কানাঘুষা শুরু হয়ে গেল। এবার ওরা দুজনেই সবার কাছে ওদের সম্পর্কের বিষয়টি পরিষ্কার করে দিল।

তারা সবাইকে জানাল যে, যখন তাদের মাঝে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তখন তারা উভয়েই সিদ্ধান্ত নেয় যে- বিয়ে করবে। যেহেতু পরিবার বা সমাজ তাদের এই সম্পর্ক মেনে নেবে না তাই তারা গোপনে বিয়ে করেছে। অবশ্য তার আগে রীতা সব নিয়ম মেনেই আইনের মাধ্যমে আনিসকে তালাক দিয়েছে।

রীতার পরিবার এই বিয়ে মেনে নিলেও শফিকের পরিবার কিছুতেই এই বিয়ে মেনে নিলো না। তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে রীতাকে অপমান অপদস্থ করলো, ভীষণভাবে নাজেহাল করলো। তারা সুযোগ পেলেই রীতার বাবার বাসায় এসে রীতাকে কটু কথা শোনাতে লাগলো। রীতা তার অবস্থানগত কারণে সব কিছুই চুপচাপ হজম করে যায়। শফিকও তাকে ধৈর্য ধরতে বলে।

শফিকের পরিবার রীতাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য শফিককে চাপ দিতে থাকলো। এমনকি তাকে পরিবার  থেকে বের করে দেয়ার  করার হুমকিও দিল। কিন্তু সকল চাপের মুখে শফিক অনড় থাকলো। এক পর্যায়ে তারা হাল ছেড়ে দিলো। কিন্তু মনেমনে নতুন করে পরিকল্পনা করতে থাকে। এভাবে টানাহ্যাঁচড়ায় প্রায় দুই বছর কেটে গেল।

পরিস্থিতি এখন আগের চাইতে কিছুটা স্বাভাবিক। যদিও শফিকদের বাসার কেউ রীতাকে মেনে নেয়নি, তবুও এখন আর ঐরকম দুর্ব্যবহার কেউ করেনা। কারণ রীতা মা হতে চলেছে। সারাদিন হাসপাতালে থাকে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে এসে ছেলেকে নিয়ে সময় কাটায়। দিন মোটামুটি কাটছে।

শফিক এখনও বেকার। ওর হাতখরচ রীতাই দেয়। পরিবার থেকে শফিক কোন সহযোগিতাই পায়না। বরঞ্চ পায় গঞ্জনা আর তিরস্কার। ওর বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে বাসার সবাই  নতুন এক ফন্দি করলো।

তারা শফিককে জানাল- ‘তুমি যদি আমাদের কথা মেনে নাও। তাহলে তোমাকে আমরা ব্যবসা করার টাকা দিব। এখন যেহেতু রীতার বাচ্চা হবে তাকে ছেড়ে দেয়ার কথা এখন আর আমরা বলছিনা…..ওর জায়গায় ও থাকুক। ওকে আমরা এই পরিবারে কখনই স্থান দেব না। তোমাকে আমরা আবার বিয়ে করাবো…… মেয়ে আমাদের দেখাই আছে। শুধু তোমার মতের অপেক্ষা করছি। তুমি ভেবেচিন্তে আমাদের জানাও।‘

শফিক বেশ চিন্তায় পড়ে গেল। একদিকে রীতা মা হবে। অন্যদিকে সে বেকার। সামনে খরচ অনেক বাড়বে। অতি দ্রুত তার কিছু একটা কাজ করা উচিত। চাকুরী করার চেষ্টা করেও সে ব্যর্থ হয়েছে। সে দিশাহারা হয়ে গেল। এমন একটা বিষয় যে সে কারো সাথে বুদ্ধি পরামর্শও করতে পারছেনা। বেকারত্বের যন্ত্রণা আর কত সহ্য করা যায়!!! অবশেষে সে পরিবারের সিদ্ধান্তের কাছেই নতি স্বীকার করলো।

রীতাকে মিথ্যা কিছু একটা বলে সে খালুর  সাথে  গ্রামের বাড়ি  চলে গেল। সেখানে গিয়ে সে পরিবারের পছন্দ করা পাত্রী মালাকে বিয়ে করলো। বিয়ের পর সেখানে কয়েকদিন থেকে শফিক ঢাকা চলে আসলো। যেহেতু শফিক ও রীতার বাসা একই পাড়ায়, তাই মালাকে এত তাড়াতাড়ি ঢাকা আনল না।

চলবে…

 

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-৫

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-৫


আফরোজা হাসান


বাইরে বেড়োতেই ঠাণ্ডা বাতাসের ঝাপটা এসে লাগলো গায়ে। কাঁপন ধরে গেলো কিন্তু ভীষণ ভালো লাগলো শাবাবের। ঠাণ্ডা পছন্দ করে সে ভীষণ। কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমানো তার অনেকগুলো শখের মধ্যে একটা। এবং বেশ উপরের দিকেই এটার অবস্থান। মাত্র আলো ফুটতে শুরু করেছে। চারিদিকে হালকা কুয়াশার চাদর। চারিদিকে চোখ বুলিয়ে মনেমনে বলল শাবাব, চমৎকার সাজিয়েছে ভাইয়া-ভাবী তাদের ছোট্ট সংসার। ছবির মত সুন্দর বাংলোটা। একপাশে নানান ধরণের ফুল, পাতাবাহারের গাছ, আরেক পাশে দেশি শাক-সব্জীর বাগান। তবে সবচেয়ে সুন্দর হচ্ছে বারান্দায় দাঁড়িয়েই সমুদ্রের অনেকটা দেখা যায়। নাহ! মাহামকে নিয়ে বাইরে আসা উচিত ছিলো। প্রকৃতির একটু কাব্যিক বর্ণনা শোনা যেত।

সুপ্রভাত! শব্দটি কানে আসতেই মনে কাঁপন ধরে গেলো শাবাবের। এই কণ্ঠের অধিকারীর তো এখন এখানে থাকার কথা না। ভুল শুনছে নাতো? ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ালো সে। হাসিমুখে তার দিকে তাকিয়ে আছে আরিফী। মুহুর্তে নিজেকে সামলে নিলো শাবাব। আবেগের উর্মিমেলাকে যতটুকু সম্ভব হজম করে গম্ভীর কণ্ঠে সালাম দিলো।

হাসতে হাসতে সালামের জবাব দিলো আরিফী। অবাক হয়েছো খুব আমাকে দেখে? জানতে চাইলো।

অবাক হবার মত কিছু ঘটলে মানুষ অবাক হবে সেটাই কি স্বাভাবিক না?

আরিফী হেসে বলল, তুমি কি এখনো রেগে আছো আমার উপর?

আমি বুঝি না রাগ করার মত কাজ করার পর মানুষ আবার প্রশ্ন কেন করে রেগে আছে কিনা? এর সাইকোলজিক্যাল ব্যাখ্যাটা কি?

চিন্তিত কণ্ঠে আরিফী বলল, সত্যিই আমার জানা নেই। এই ধরণের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে জানলে আমি সত্যিই সাইকোলজি নিয়ে পড়তাম।

ভেরি ফানি।

হেসে ফেললো আরিফী। আরো কিছুটা কাছে সরে এলো শাবাবের। অজুহাতের স্বরে বলল, আমার সত্যি ইচ্ছে ছিলো ঈদে দেশে যাবার। কিন্তু কাজের এত প্রেশার ছিল সময় বের করতে পারিনি। তাছাড়া আমি দেশে গেলে ভাইয়ার যাওয়া হতো না। মাহাম অসুস্থ্য ছিল তাই আমার কাছে ভাইয়ার যাওয়াটাকেই বেশি জরুরি মনে হয়েছিলো। এখনো রাগ করে থাকবে?

না রাগের পর্ব শেষ। এখন শাস্তির পর্ব শুরু।

শাস্তি? আবার শাস্তি কেন?

তোমার মাথার ঢিলা স্ক্রু টাইট করার জন্য।

আচ্ছা দাও শাস্তি। তোমার সব শাস্তি মাথা পেতে নেবো।
মাথা পেতে না নিয়ে উপায় আছে নাকি তোমার? বাড়ি দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেবো না একদম।

এই সময় তো শাবাবকে ডাকতে ডাকতে বাইরে বেরিয়ে এলো মাহাম। আরিফী আর শাবাবকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বলল, সরি। আমি আসলে শাবাবকে রুমে না দেখে খুঁজতে এসেছিলাম। বাবা বলছেন আজ আমরা সবাই বীচে নাস্তা করবো। শুনেই তো স্বভাব সুলভ লাফিয়ে উঠলো শাবাব।

আধ ঘণ্টা পরেই তো পুরো পরিবার নাস্তার জিনিসপত্র নিয়ে বীচে রওনা করলো। পরিবারের সবাই মিলে হাসি-আনন্দ-গল্পের মধ্যে দিয়ে স্বাগত জানালো নতুন আরেকটি দিনকে।
ভাতিজা মিহিরকে বীচে ছুটাছুটি করতে শুরু করলে তার বডিগার্ডের দায়িত্ব দেয়া হলো আরিফীকে। শাবাবের দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি আকর্ষন করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো সে। ভাবী আর মায়ের সাথে গল্পগুজবে মশগুল শাবাব। ফিরেও তাকালো না আরিফীর দিকে। ফাইয়াজ সাহেব ছেলের সাথে ব্যবসা বিষয়ক আলোচনাতে ব্যস্ত। সবার উপর একবার চোখ ঘুরিয়ে মাহামের উপর আটকে গেলো আরিফীর দৃষ্টি। কফির মগ আর বই নিয়ে একপাশে নিজের জগতে মগ্ন মাহাম। এগিয়ে গিয়ে বসলো মাহামের পাশে।

কি এখনো পটাতে পারোনি তোমার বৌকে? হাসিমুখে জানতে চাইলো মাহাম। আমি তোমার অপেক্ষাই করছিলাম ভাইয়া। এই নাও লটকন।

লটকন দিয়ে কি করবো?

মাহাম হেসে বলল, তোমার বৌ আমার কাছে তোমাকে জব্দ করার জন্য আইডিয়া চেয়েছিলো। আমি বলেছি এমন কোন খাবার এনে দিতে বলো যেটা ইউরোপে পাওয়া অসম্ভব। যেমন ধরো লটকন। তবে আমি যে সাথে করে ভাবীর জন্য লটকন নিয়ে এসেছি এটা তোমার বৌ জানা নেই।

হাসতে হাসতে মাহামের হাত থেকে লটকন নিয়ে আরিফী বলল, তুই আসলেই আমাদের সবার জীবনে নূর হয়ে এসেছিস বুঝেছিস?

হুম, বুঝলাম। ঐ যে তোমার হুর আসছে। লটকন খাইয়ে বশ করো হুরকে। আমি যাই।

শাবাব কাছে আসতেই চোখ মুখ করুণ করে ফেললো আরিফী। ব্যথিত কণ্ঠে বলল, এভাবে আর কতক্ষণ চলবে শাবাব? সবকিছুকে টেনে ইলাস্টিকের মতো লম্বা করতে চাওয়া কিন্তু অনুচিত।

খবরদার আমাকে লেকচার শোনানোর চেষ্টা করবে না।

আচ্ছা কি করতে হবে আমাকে সেটা বলে দাও তুমি।

আমার লটকন খেতে ইচ্ছে করছে এনে দাও।

এই না হলে মনের মিল। জানো আমিও এমনটাই চাচ্ছিলাম।
মানে?

মানে প্রেমিক-প্রেমিকারা বাদাম ছুলে খেতে খেতে গল্প করে, আমার ইচ্ছে করছিলো আমরা দুজন লটকন ছুলে খেতে খেতে গল্প করবো। ইম্যাজিন করো তুমি আমি সমুদ্রের তীর ঘেঁষে হাঁটছি আর একে অন্যেকে লটকন ছুলে খাওয়াচ্ছি।
শাবাবকে বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরিফী বলল, আচ্ছা বাদ দাও ইম্যাজিন করতে হবে না। এত নাও লটকন চলো প্র্যাক্টিকাল করি।

একবার লটকন আরেকবার আরিফীর দিকে তাকিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে শাবাব বলল, মাহাম ইউ বিশ্বাসঘাতিনী! মির জাফরের খালাম্মা! খুন করবো তোকে আমি।

শাবাবকে তেড়ে আসতে দেখে বাবা বাঁচাও বলে চিৎকার করতে করতে ছুট লাগালো মাহাম।

চলবে…

 

সোনার হরিণ (দুই)

সোনার হরিণ (দুই)


ফাতিমা মারিয়াম


কয়েকদিনের মধ্যেই বিয়ের বিষয়টি বাসায় জানাজানি হয়ে গেল। মা, ভাবী এবং অন্যরা আনিসের কাছে তার পরবর্তী পদক্ষেপ কি তা জানতে চাইলো। সে বলল, ‘ আর কিছুদিন পরে আমি আমার পরিবারে এই বিষয়টি জানাব। ততদিন আমাকে সময় দিন।’ সবাই আনিসের কথাই মেনে নিলো।

আনিস এখন প্রায়ই রীতাদের বাসায় আসে। পরিবারের অন্যরাও যেহেতু বিয়েটা মেনে নিয়েছে তাই ওদের আর কোন সমস্যাই রইলো না। নিশ্চিন্তভাবে দুজনে ঘুরে ফিরে বেড়াতে লাগলো।

কয়েক মাস হল বিয়ে হয়েছে। কিন্তু আনিস তার পরিবারকে এখনও কিছু জানায়নি। রীতাও চাইছে বিষয়টি পারিবারিক ভাবে সমাধান হোক। এদিকে সে এখন নিজের ভিতরে আরেকজনের অস্তিত্ব টের পাচ্ছে। এই অবস্থায় রীতাদের পরিবার থেকেও আনিসকে বলা হচ্ছে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলতে। আনিস ওদের কাছে আরও সময় চায়। এভাবে সে বারবার একই কথা বলে সময় পার করতে থাকে। কিন্তু তার পরিবারকে জানানোর কোন উদ্যোগই নেয় না। ফলে রীতার পরিবারের সবাই ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়ে যায়।

এই পর্যায়ে রীতার বড়ভাই এবং কয়েকজন আত্মীয় মিলে সিদ্ধান্ত নেয় এবার আনিস এই বাসায় আসলে তারা ওকে কড়াকড়ি ভাবে বলবে যেন সামাজিকভাবে রীতাকে পরিবারের বউ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার ব্যবস্থা করে। আনিস আসলো এবং যথারীতি সময় চাইলো। এক পর্যায়ে বড়ভাই এবং আরও দু একজনের সাথে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হল। রীতা এসে সবাইকে থামিয়ে দিয়ে আনিসকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে গেল।

সেই রাতে পরিবারের সদস্যরা সিদ্ধান্ত নিলো আনিসকে ভোরবেলা কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। তারা আনিসকে হাত পা বেঁধে পিটানোর পরিকল্পনা করেছিল। তখন রীতা ঘুমে থাকবে সে বাধা দিতে পারবেনা। শাস্তি দেয়ার পর আনিসও ভয় পেয়ে রীতার ব্যাপারে ইতিবাচক কিছু চিন্তা করবে। তারা এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রীতা এবং তার অনাগত সন্তানের ভালোর জন্যই।

রীতা কিভাবে যেন  এই পরিকল্পনার কথা জেনে যায়। সে ভোর হওয়ার অনেক আগেই স্বামীকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দিলো এবং যত দ্রুত সম্ভব এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বলল। আনিসকে বিদায় দিয়ে সে আবার শুয়ে রইলো যাতে কেউ টের না পায় যে আনিস চলে গেছে এবং আনিস যাতে আরও দূরে যাওয়ার কিছুটা সুযোগ পায়!!!

পরিকল্পনা মাফিক সবাই ভোরবেলা রীতার রুমের সামনে আসলো। দরজায় শব্দ শুনে রীতা উঠে দরজা খুলে দিলো। বড়ভাই ওর কাছে জানতে চাইলেন, ‘আনিস কোথায়?’ সে মিথ্যা জবাব দিল, ‘ আমি জানিনা। আমি ঘুম ভাঙার পর থেকেই ওকে দেখতে পাচ্ছিনা।‘

সবাই চারপাশে বহু খোঁজাখুঁজি করলো। রীতা কাউকে সত্যি কথাটা তখনও জানায়নি। সে চুপচাপ রইলো। মনেমনে তার দৃঢ় বিশ্বাস আনিস তার কাছে আবার ফিরে আসবে। সন্তান জন্মাবার আগেই তাকে সসম্মানে ঘরে তুলে নেবে!

কিন্তু ওটাই ছিল আনিসের রীতাদের বাসায় সর্বশেষ আসা।

দিন যায়……মাস যায়……রীতা অপেক্ষা করে…… আনিস আসবে।

কিন্তু সে আর আসেনা। তার ভাই ও অন্য আত্মীয়রা চেষ্টা করেছে আনিসকে খুঁজে বের করতে। কিন্তু সেই যুগে তো আর এত উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিলনা। ফলে আনিস খুব সহজেই নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পেরেছিল।

যথাসময়ে রীতা এক পুত্র সন্তানের জন্ম দিলো। ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে রীতা তার সব দুঃখ অপমান ভুলে থাকার চেষ্টা করে। তার মনে আশা…… আনিস একদিন এসে তাদের মা ছেলেকে ওর বাড়ি নিয়ে যাবে।

দিনদিন ছেলে  বড় হচ্ছে। তার খরচ বাড়ছে। বাচ্চার জন্য এটা ওটা কিনতে হয়। নিজেরও কিছু ব্যক্তিগত খরচ আছে। বাবা আর বড়ভাইয়ের কাছে কত আর হাত পাতা যায়!!! সে ভালোভাবেই বুঝতে পারছে তার ও তার ছেলের এইসব খরচের ব্যবস্থা তাকেই করতে হবে। আনিস আজ পর্যন্ত কোনরূপ যোগাযোগ করেনি। নিরুপায় হয়ে ছেলের জন্মের কয়েকমাস পরে রীতা চাকুরীর সন্ধান করতে লাগলো।

কিন্তু তার এই শিক্ষাগত যোগ্যতায় কোন কাজ পাওয়া তার জন্য কঠিন হয়ে গেল। অনেক চেষ্টার পর অবশেষে পরিচিত একজনের মাধ্যমে একটি হাসপাতালে আয়া  হিসেবে সে তার কর্মজীবন শুরু করলো। সেই যুগে একটি মেয়ের জন্য আয়ার চাকুরী করা যে কত কঠিন ছিল তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন।

চাকুরীর শুরুতে পরিবার থেকে তাকে বাধা দেয়া হয়। তার অভিভাবকরা তাকে জানায় যে তার ও তার ছেলের সব ভরণপোষণ পরিবার থেকেই করা হবে। সে যেন এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র চিন্তা না করে। ঐ চাকুরীতে সে যেন আর না যায়! কিন্তু সে এ ব্যাপারে অনড় থাকল। কোন বাধাই সে মানল না। তাই ঘরের মানুষরা এই ব্যাপারে হাল ছেড়ে দেয়।

কিন্তু সমস্যা শুরু হয় অন্য জায়গায়। প্রতিবেশীরা তার এই চাকুরী করাটা কোনভাবেই মানতে পারছিলনা। ফলে তাকে অনেকেই অনেকভাবে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে। পাড়ার কয়েকজন সিনিয়র ভাই তার হাসপাতালে যাওয়া আসার সময়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে তাকে উত্যক্ত করত। নানা রকম কটু ও অশ্লীল কথা বলতো। সে কোন কিছুর পরোয়া না করে হাসপাতালে যেতে থাকে। একসময়ে তারাও হাল ছেড়ে দেয়।

পরিবার ও সমাজের সকল বাধাকে উপেক্ষা করে রীতা দৃঢ় মনোবল নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে থাকলো। ওর ছেলের দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে বড় ভাবীর উপর দিয়ে দিলো। এছাড়া তার পক্ষে কোনভাবেই চাকুরীটা করা সম্ভব হতনা। বড় ভাবিও নিজ সন্তানের মত করেই ছেলেটিকে লালনপালন করতে থাকে।

রীতার দিন কেটে যাচ্ছে। সে প্রতিদিন ভোরবেলা হাসপাতালে যায়……আর সন্ধ্যাবেলা বাসায় ফেরে। বাবার বাসায় থাকে। ফলে থাকা খাওয়ার জন্য তার কোন খরচ নেই। যা বেতন পায় তা দিয়ে মা ও ছেলের অন্যান্য খরচ চলে যায়। ছোট ভাইবোন ও পরিবারের অন্য বাচ্চাদের শখের জিনিসগুলো কিনে দেয়। বাহ্যিক ভাবে দিন ভালোই কেটে যাচ্ছে………।

ছেলে  দিনদিন বড় হচ্ছে। রীতা আবারও আনিসের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। কিন্তু সে এবারও ব্যর্থ হয়। মানুষটা যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, শুভাকাঙ্ক্ষী সকলের শত প্রশ্নের সামনে সে বোবা হয়ে থাকে। মাঝে মাঝে অনেকের কটু কথাও হজম করতে হয়। চোখের পানি আর দীর্ঘশ্বাস সম্বল করে দেখতে দেখতে ৫/৬ বছর কেটে গেল।

চলবে…

 

কিন্তু, এত কিছুর সময় কোথায়?

কিন্তু, এত কিছুর সময় কোথায়?


কানিজ ফাতিমা


Parenting নিয়ে কথা বলতে গিয়ে যে প্রশ্নটি সবথেকে বেশী শুনি তা হলো- “বুঝলাম তো এসব করা খুবই জরুরী….কিন্তু এত কিছু করার সময় কোথায়?”
বাবা- মা হওয়া একটি প্রাকৃতিক নিয়ম ৷ প্রাকৃতিক নিয়মে প্রতিটি প্রানীই সন্তান লাভ করে৷ তাই বাবা – মা হওয়ার মধ্যে আলাদা কোনো কৃতিত্ব নেই৷ বাবা-মা হওয়ার মধ্যে তৃপ্তি বা মানসিক সুখ আছে; কিন্তু কোনো কৃতিত্ব নেই৷ কৃতিত্ব আছে “ভালো বাবা-মা” হওয়ার মধ্যে৷ আর ভালো বাবা-মা হতে হলে তিনটি জিনস অবশ্যই লাগবে-
১. parenting এর জ্ঞান
২. যথেষ্ট সময় ও
৩. ধৈর্য

এই তিনটি প্রয়োজনের দ্বিতীয় প্রয়োজনটা নিয়েই প্রশ্ন সবথেকে বেশী- এত কিছুর সময় কোথায়?

আসুন, আমরা প্রত্যেকে আমাদের নিজ নিজ জীবনের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কাজ গুলোর তালিকা করি-
যেমন ধরুন, আমাদের তালিকাটা হয়ত এমন হবে-
১. সন্তান মানুষ করা
২. সুন্দর পারিবারিক পরিবেশ বজায় রাখা
৩. চাকরি বা ব্যবসায় সফলতা অর্জন
অনেকে হয়ত লিখবেন –
দৈনন্দিন জীবনে ইসলামের অনুশাসন মেনে চলা …ইত্যাদি
যাদের ছেলেমেয়ে আছে তাদের প্রায় প্রত্যেকেই সন্তান মানুষ করাকে ১ বা ২ নাম্বারে রাখবেন এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস৷ এবার প্রশ্ন হলো যে কাজটি আপনার জীবনের ১ বা ২ নাম্বার গুরুত্বপূর্ণ কাজ তার জন্য আপনার সময় হবে না? একটু চিন্তা করে দেখুনতো, আপনি কি আপনার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি পাশে ফেলে রেখে কম গুরুত্বপূর্ণ কাজে বেশী সময় দিচ্ছেন? আরো নির্দিষ্ট করে বললে বলা যায়- গত তিন দিনে আপনি কি কি কাজ করেছেন যা না করলেও হত বা কম করলেও হত; যেমন-

১. মার্কেটে ৪০/৫০ টাকা বাচানোর জন্য দোকান দোকান ঘোরা
২. পোশাকটি ঠিক আপনার পসন্দ মত হওয়ার জন্য কাপড়ের দোকান, টেইলার্স , লেইসের দোকান……সহ আরো অনেক স্থানে প্রচুর সময় খরচ
৩. টেলিফোনে আত্বীয় বা বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে লম্বা সময় নিয়ে কথা বলা
৪. মহিলাদের ক্ষেত্রে ভাবীদের সঙ্গে কোন কাপড়ের কত দাম, কোথায় পাওয়া যায় ….জাতীয় বিষয় নিয়ে লম্বা গল্প
৫. পুরুষদের ক্ষেত্রে অপ্র্য়্যজনীয় রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে অহেতুক বিতর্ক
৬. অনুপস্থিত কারো নামে সমালোচনা করে সময় পার করা
৭. কাজের লোকের কাজ নিখুত করানোর জন্য তার পেছন পেছন লেগে থাকা
৮. টিভিতে অপ্রয়োজনীয় সিরিয়াল বা অনুষ্ঠান দেখা
৯. প্রয়োজনের অতিরিক্ত রান্না বান্না করা
১০. নিজে ও নিজের ঘর ফিট রাখতে অতিরিক্ত সময় খরচ
১১. সামাজিক কাজের নামে বাইরে অতিরিক্ত সময় দেয়া
১২. বেশী বেশী ফোন করা ও বেশী বেশী ফোন রিসিভ করা
১৩. বেশী বেশী দাওয়াত দেয়া ও বেশী বেশী দাওয়াত নেয়া
১৪. ইন্টারনেটে মাত্রাতিরিক্ত সময় দেয়া

খেয়াল করুন, অনেক কাজই আছে জরুরী কিন্তু তা সন্তান লালনপালনের থেকে বেশী জরুরী না৷ যেমন ঘর পরিচ্ছন্ন রাখা ও গুছিয়ে রাখা একটি জরুরী কাজ, কিন্ত অনেকে এটা নিয়ে এতটাই করেন যে সন্তানের জন্য প্রয়োজনীয় সময় থাকে না৷ অথচ এ মাত্রাতিরিক্ত কাজগুলো কমিয়ে খুব সহজেই আপনার সন্তানের সঙ্গে activity বা গল্প করার সময় বের করতে পারেন ৷

না বলতে শেখা –

আমরা অনেকেই জায়গামত ‘না’ বলতে পারিনা৷ লজ্জা পাই বা মনে করি অন্য পক্ষ কি ভাববে৷ এমনটা ভাবার দরকার নেই৷ চিন্তা করুন কোন কাজটি তুলনা মূলক বেশী গুরুত্বপূর্ণ; আর কম গুরুত্বপূর্ণ কাজটিকে না বলে দিন৷ যেমন ধরুন বাচ্চাকে কথা দিয়েছেন কাল তাকে নিয়ে বেড়াতে যাবেন, এমন সময় শ্বশুর বাড়ী থেকে ফোন এলো কাল সেখানে যেতে হবে এক্ষেত্রে অতীব গুরুত্ব পূর্ণ না হলে শুধু লজ্জার খাতিরে ‘হ্যা’ না বলে “না” করে দিন ৷
এটা শুধু বাইরের লোকের সাথেই না, অনেক সময় একেবারে পরিবারের মধ্যেও ঘটে৷ যেমন কাল বাচ্চার পরীক্ষা এমন সময় যদি স্বামী বন্ধুদের দাওয়াত দিতে চায় তবে কারণ বুঝিয়ে তাকে না করে দিন৷
পরিবারের লোকজন যদি প্রতিদিন ৪/৫ রকম রান্না দাবী করে আর এটা যদি আপনার বাচ্চাকে প্রয়োজনীয় সময় দিতে অসুবিধা সৃষ্টি করে তবে রান্নার রকম কমিয়ে দিন৷

সঠিকভাবে না বলতে পারা একটি বড় গুন৷ ঝগড়া, বিতর্ক না করে বা রূর (Rude) না হয়ে শক্তভাবে “না” বলতে জানা একটি দক্ষতা৷ এটি অর্জন করলে সন্তানের জন্য সময় বের করা সহজ হয়৷ আমাদের চারপাশে অনেক ‘অভিমানী’ মানুষ রয়েছে যারা ‘না’ তে মাইন্ড করেন৷ সেক্ষত্রে ‘না’ মুখে না বলে কৌশলে বুঝিয়ে দেয়া যেতে পারে৷ যেমন কেউ দাওয়াত দিলে সরাসরি ‘না’ না বলে এমনটা বলা যায় “শুক্রবার হলে কেমন হয়?”

মোটকথা ,অপ্রয়োজনীয় কাজ বাদ দেয়া, মাত্রাতিরিক্ত কাজ কমিয়ে দেয়া ও প্রয়োজনে ‘না’ বলার মাধ্যমে আমরা আমাদের সন্তানের জন্য প্রয়োজনীয় সময় বের করে নিতে পারি৷

 

নিজের তৈরি করে নিন নাইট ক্রিম

নিজের তৈরি করে নিন নাইট ক্রিম


ববিতা পারভীন


ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষার্থে ময়েশ্চারাইজার অদ্বিতীয়। বাজারে নানা ব্র্যান্ডের ও বাজেটের ময়েশ্চারাইজার রয়েছে। শুষ্ক ত্বকে তো বটেই তৈলাক্ত ত্বকেও ময়েশ্চারাইজার প্রয়োজন। দিনে ও রাতে আলাদা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা ভালো। কেননা রাতের জন্য তৈরি ক্রীম গুলোতে আলাদা কিছু উপদান থাকে, যা সারা রাতে ত্বককে পুষ্টি যোগায় এবং ক্রীম ভেদে কার্যক্রমও আলাদা হয়। আর সাধারণত ডে ক্রিম গুলোর চেয়ে নাইট ক্রীমের দামও পড়ে বেশি, তাই অনেকেই হয়ত আলাদা নাইট ক্রীম ব্যবহার করেন না বা অনেকের ত্বক স্পর্শকাতর হওয়াতে বাজারে প্রচলিত কেমিকেল নির্ভর প্রসাধনীকে ভয়ও পেয়ে থাকেন।

আসুন জেনে নিই ঘরেই নাইট ক্রিম তৈরির পদ্ধতি।

উপকরণঃ

-কাঠবাদাম ১০ টি

পেস্তা বাদাম ১০ টি

– গোলাপ জল

-১ টেবিল চামচ মধু(যাদের ত্বকে মধু স্যুট করেনা তারা মধু দিবেন

-১ টা ভিটামিন ই ক্যাপসুল

-ক্রিম রাখার বক্স

পদ্ধতিঃ

১। কাঠবাদাম গুলোকে সারা রাত দুধ বা গোলাপ জলে ভিজিয়ে রাখুন।

২। পরের দিন সকালে বাদামগুলোকে ছাল হতে আলাদা করে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড বা শিল পাটায় বেটে নিন, খুব মিহি পেস্ট হতে হবে।

৩!কাচা হলুদ ও বেটে নিতে বা ব্লেন্ড করতে হবে।হবে-মেয়ের

৪। এবার পরিষ্কার একটি বাটিতে বাকি সব উপকরণ যেমন মধু, ভিটামিন ই ক্যাপসুল, দিয়ে ভালো করে পেস্ট গুলো মিশিয়ে নিন।

৫। এবার সবগুলো উপকরণ ভালো ভাবে মিশিয়ে যে পাত্রে সংগ্রহ করতে চান সেটাতে রেখে দিন।

৭। পাত্রটিকে প্রথম ২৪ ঘণ্টা ডিপ ফ্রিজে এবং তারপর নরমাল ফ্রিজে রাখুন।এটি ফ্রিজে রেখে ৮/১০ দিন ব্যবহার করা যাবে।

৮। এবার প্রতিদিন রাতে ফেস ওয়াশ দিয়ে মুখ ভালো ভাবে পরিষ্কার করে ব্যবহার করুন নিজের তৈরি করা নাইট ক্রীম।

নিয়ম মেনে টানা ২ সপ্তাহ ব্যবহারেই ফলাফল দেখতে পাবেন জাদু।
সবার ত্বক এক নয় অনেকের স্যুট নাও করতে পারে।

 

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-৪

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-৪


আফরোজা হাসান


ঘরের এক মাথা থেকে অন্য মাথা পায়চারি করতে করতে গজগজ করছিল শাবাব। বইয়ের সেলফ গোছানোর ফাঁকে ফাঁকে বোনের দিকে তাকাচ্ছিলো আর মিটিমিটি হাসছিল মাহাম। শাবাব তার হাসি দেখলে খবর আছে তাই হাসি চেপে মাহাম বলল, ভাইয়া কাজটা মোটেই ঠিক করেননি। তাহমিনার হলুদের অনুষ্ঠানে যেতে দেয়া উচিত ছিলো তোমাকে। এত কাছের বান্ধবী তোমার।

তুই তো কথাই বলিস না ভাইয়ার চামচি। তুই যদি যেতে রাজী হতি তাহলে ঠিকই ভাইয়া অনুমতি দিয়ে দিতেন। ঝাঁঝের সাথে বললো শাবাব।

আচ্ছা বাদ দাও এসব। যা হবার তা তো হয়েই গিয়েছে। তাছাড়া এসব অনুষ্ঠানে না যাওয়াই ভালো।

তাহমিনার অনুষ্ঠানটি একদম ঘরোয়া পরিবেশে হচ্ছে।

পরিবেশ কেমন সেটা কিন্তু ম্যাটার না শাবাব।

তাহলে ম্যাটারটা কি?

আচ্ছা ধরো পচা, শুকিয়ে যাওয়া ফুল পাতা দিয়ে যদি খুব সুন্দর করে একটা তোড়া বানিয়ে দেই তুমি কি খুশি মনে সেটা নেবে?

ফেনাচ্ছিস কেন? যা বলার সোজাসুজি বল।

মনেআছে বাবা একদিন আমাদেরকে বলেছিলেন, পচা খাবার খুব সুন্দর করে প্যাকেট করে এনে দিলে যেমন আমরা অমৃত ভেবে সেটা খেয়ে ফেলবো না। ঠিক তেমনি শরীয়তে যার অনুমোদন নেই তার উপস্থাপন যেমনই হোক না কেন সেটা সর্বদা বর্জনীয়।

বোনের কথাতে পুরোপুরি সন্তুষ্ট না হলেও আর কথা বাড়াল না শাবাব। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, মানুষের শরীরে আঘাত করলে যেমন শাস্তি দেয়া হয়, মনে আঘাত দেবার ব্যাপারেও একই বিধান থাকা উচিত ছিল।

কেন?

একজনকে হাতে মারা আর মানসিকভাবে আহত করার মাঝে কিন্তু খুব বেশি পার্থক্য নেই। উভয় ক্ষেত্রেই মানুষকে কষ্ট দেয়া হয়। দেহের আঘাত দেখা যায় আর মনের আঘাত দেখা যায় না, এই তো শুধু পার্থক্য। প্রচণ্ড অভিমানী কণ্ঠে বললো শাবাব।

তুমি ভাইয়ার কথাতে অনেক কষ্ট পেয়েছো তাই না? ভাইয়া তো খারাপ কিছু বলেননি। হ্যা একটু কড়া করে বলেছেন। কিন্তু ভেবে দেখো কড়া করে না বললে কি তুমি মানতে? বরং ভাইয়াকে কনভিন্স করার চেষ্টা করতে।

হুমম…এটাও তো ঠিক। আমি তো ভাইয়াকে পটানোর ডায়লগও রেডি করে রেখেছিলাম। ভাইয়া মনেহয় টের পেয়ে গিয়েছিলো সেটা। দুষ্টু হাসি খেলে গেলো শাবাবের চেহারাতে।
হেসে ফেললো মাহাম। বোনের এই মেঘ এই রৌদ্দুর স্বভাবটা খুব ভালো লাগে মাহামের। তার নিজের মধ্যে এই জিনিসটা একদমই নেই। সে সাধারণত রাগ বা জেদ করে না কিন্তু একবার করলে সেসব মনের মধ্যে পুষে রাখতে রাখতে নিজেই একসময় বিরক্ত হয়ে যায়।

দরজা নক হলে শাবাব বলল, বাবা ভেতরে আসো। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলেন ফাইয়াজ সাহেব। দুই মেয়ের মাঝে বসে দুজনকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে বললেন, শুনলাম আমার মায়েদের নাকি মন খারাপ?

শাবাব হেসে বলল, কিঞ্চিৎ মনখারাপ ছিলো বাবা। কিন্তু এখন মন ভালো।

ফাইয়াজ সাহেব হেসে বললেন, আলহামদুলিল্লাহ আমি তো আরো তোদের মন ভালো করতে এলাম।

এই কথা আগে বলবে তো! সাথে সাথে মুখ গোমড়া করে শাবাব বলল, তুমি আসার আগেই মন ভালো হয়ে গেলো কেন? ফাজিল মন আরেকটু অপেক্ষা করলো না কেন? এই দুঃখে আবার মন খারাপ হয়েছে বাবা। নাও এখন মন ভালো করে দাও।

সশব্দে হেসে ফেললেন ফাইয়াজ সাহেব। বাবার সাথে শাবাব আর মাহামও যোগ দিলো হাসিতে। হাসাহাসির শব্দে হাজির হলেন মিসেস ফাইয়াজও। ভ্রু কুঁচকে বললেন, আপনাদের সম্মিলিত হাসির রহস্য কি?

ফাইয়াজ সাহেব হাসতে হাসতে বললেন, সাবিহা তুমিই মনেহয় পৃথিবীর একমাত্র নারী যে কিনা স্বামী-সন্তানদের হাসির মধ্যেও রহস্য সন্ধান করো।

কি আর করার বলো ঘর পোড়া গরু সিঁদুরের মেঘ দেখলেও ভয় পাবে এটাই হচ্ছে নিয়ম।

আরেক ঝাপটা হাসির বৃষ্টি ঝরে পড়লো রিমঝিম শব্দে। ভিজবে না ভিজবে না করেও তাতে ভিজতে হলো সাবিহাকে। হাসিমুখে এসে বসলেন স্বামী ও কন্যাদের কাছে। বাবা-মাকে মাঝখানে বসিয়ে দুপাশ থেকে দুজনকে জড়িয়ে ধরে বসলো শাবাব আর মাহাম।

ফাইয়াজ সাহেব বললেন, ব্যবসার কাজে আমাকে দু’সপ্তাহের জন্য ইউরোপ যেতে হবে আগামী মাসে।

রোদ ঝলমলে তিনটা চেহারাকে মুহুর্তে মেঘে ঢেকে যেতে দেখলেন ফাইয়াজ সাহেব। হেসে বললেন, তোমাদের মেয়েদের নিয়ে এই হচ্ছে সমস্যা। পুরো কথা শোনার আগেই রিঅ্যাক্ট করো।

শাবাব হেসে বলল, ওহ তারমানে তুমি যাচ্ছো না? হুররে..
.
হ্যা বাবা তুমি যেও না। তোমাকে ছাড়া একটুও ভালো লাগে না আমাদের। আদুরে গলায় বললো মাহাম।

স্ত্রীর চোখেও এই শব্দগুলোকেই ঝিলিক দিয়ে উঠতে দেখলেন ফাইয়াজ সাহেব। হেসে বললেন, উহু তারমানে হচ্ছে তোমরা তিনজনও আমার সাথে যাচ্ছো। কারণ তোমাদেরকে ছাড়া আমারো কোথাও ভালো লাগে না।

ইয়াহু বলে চিৎকার করে লাফিয়ে উঠলো শাবাব। মাহামকে টেনে ধরে উঠিয়ে তার সাথে লাফাতে বাধ্য করলো। দুই কন্যার আনন্দ দেখে হেসে ফেললেন সাবিহাও। আর আনন্দ চিকচিক করে উঠলো ফাইয়াজ সাহেবের চোখে।

চলবে

 

সোনার হরিণ (এক)

সোনার হরিণ (এক)


ফাতিমা মারিয়াম


আজ থেকে প্রায়  চল্লিশ  বছর আগের কথা। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে রীতা। এই কাহিনী তার জীবন থেকে নেয়া। রীতার কথা শুরু করার আগে তার পরিবার সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নেয়া যাক!

রীতার মায়ের সাথে তার বাবার ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর ওরা দুই  বোন বাবার সাথেই থেকে যায়। কারণ ওদের ভরণপোষণ করার কোন সামর্থ্যই তার মায়ের ছিলনা। উনার বাবার বাড়ির অবস্থা তেমন একটা ভালো ছিল না।  যেখানে তিনি নিজেই আজ এর দুয়ারে কাল ওর দুয়ারে ঘুরে ফিরে থাকতে লাগলেন, সেখানে তিনি কিভাবে  দুইটি  মেয়েকে নিজের কাছে রাখবেন!
ছাড়াছাড়ি হবার কারণ হল রীতার মা কয়েক বছর ধরে মাঝে মধ্যে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন। একজন পাগলের সাথে স্বাভাবিক সংসার জীবন যাপন সম্ভব নয়। ফলাফল………তালাক।
রীতার মা ছিলেন তার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে মারা গেলে তিনি রীতার মাকে বিয়ে করলেন। দুই ঘরের চারটি বাচ্চার দেখাশোনা এবং সংসার পরিচালনার জন্য তিনি তৃতীয়বার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেন।    যিনি এই সংসারে আসলেন তিনি অত্যন্ত রূপবতী একজন মহিলা। দুই সন্তান রেখে তার আগের স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি বাবার বাড়ীতে থাকতেন। এক সময়ে রীতার বাবার সাথে বিয়ের প্রস্তাব আসায় তার অভিভাবক তাকে এইখানে বিয়ে দিয়ে দেয়। বাচ্চা দুটি নানার বাড়িতেই থেকে যায়। এই সংসারে এসে তিনি শক্ত হাতে হাল ধরেন। চারটি  ছেলেমেয়ে নিয়ে এখানে তার সংসার জীবন শুরু হল। মাঝে মধ্যে তার নিজের সন্তানরাও এসে মায়ের কাছে দুই চার দিন বেড়িয়ে যায়। এই স্বামীর সংসারে তিনি একে একে চার সন্তানের মা হলেন। দুইটি ছেলে ও দুইটি মেয়ে। অর্থাৎ রীতার বাবার  ঘরে তার সর্বমোট সন্তানের সংখ্যা হল আট। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে রীতার বড়মায়ের ঘরে এক বোন ও এক ভাই। বোনটির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সে স্বামীর সংসারে বেশ ভালই আছে। এবার তার বাবা ভাইটিকেও বিয়ে করিয়ে দিলেন। নতুন বউ প্রথম প্রথম বেশ ভয়েই ছিল। সৎ শাশুড়ির সংসার না জানি কত সমস্যা হয়! কিন্তু ধীরেধীরে সে দেখল তার শাশুড়ি বেশ ভালো একজন মানুষ। ননদ দেবররাও সবাই বেশ মিশুক। খুবই ভালো। ফলে খুব সহজেই বউটি সবাইকে আপন করে ফেলল। শাশুড়ি যেমন আটটি সন্তানকে নিয়ে নির্ভেজাল জীবন যাপন করছে, নতুন বৌও একইভাবে সবাইকে আপন করে নিলো। এত বড় সংসার নিয়ে শাশুড়ি-বউয়ের বেশ ভালই দিন কাটছিল। রীতার মায়ের ঘরে ওরা দুই বোন……রীতা ছোট।  আটজনের মধ্যে রীতা চতুর্থ। রীতা ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় তার ঠিক আগের বোনটিকে ওর বাবা বিয়ে দিয়ে দেয়। এরই মধ্যে রীতার ভাবীর একে একে দুইটি বাচ্চা হয়ে গেছে।
রীতা  পড়ালেখায় খুব একটা ভালো না। এটা নিয়ে ওর নিজের বা অন্য কারোও খুব একটা মাথাব্যথা নেই। সামাজিক আর দশটা নিয়মের মতই স্কুলে যায় আসে। ফলে ক্লাস এইটের বার্ষিক পরীক্ষার পর নিজ থেকেই স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। সংসার এখন আগের চাইতেও অনেক বড়। রীতা এখন মা ও ভাবীর পাশাপাশি ছোট ভাইবোনদের ও বড় ভাবীর বাচ্চাদেরকে দেখাশোনা এবং সংসারের কাজে মা ও ভাবীকে সাহায্য করে। এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছে।
এক নিকটাত্মীয়ের সাথে তার এক বন্ধু আনিস প্রায়ই রীতাদের বাসায় আসে। আনিসের পরিবার ঢাকাতেই থাকে। রীতাদের চাইতে অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক বেশি ভাল। রীতাদের অবস্থাও ভালো। তবে আনিসের পরিবারের মত নয়। রীতাদের পরিবারের সবার সাথে আনিসের সম্পর্ক বেশ ভাল। এত বড়লোকের ছেলে হয়েও মনে কোন অহংকার নেই। ওদের ভাইবোন সবার সাথেই বেশ ভালো সম্পর্ক। আনিস যখন আসে রীতা এবং অন্য ভাইবোনেরা তার সাথেই বেশিরভাগ সময় কাটায়।
আনিসের কথাবার্তা, আচার- আচরণ সব কিছু দেখে রীতা খুব মুগ্ধ হয়। রীতাকেও আনিসের কাছে বেশ ভালো লাগে। ধীরে ধীরে দুজনের এই ভালোলাগা ভালোবাসায় রূপ নেয়। মা ও ভাবী যখন বিষয়টি টের পেল তখন পানি বহুদূর গড়িয়ে গেছে। শাসন তিরস্কার কোনকিছুই রীতাকে পিছু ফেরাতে পারেনা। একদিন সবার অগোচরে তারা লুকিয়ে বিয়ে করে ফেলল।

চলবে…

 

বেশি সন্তান জন্ম দেয়া জরায়ুমুখ ক্যান্সারের অন্যতম কারণ

বেশি সন্তান জন্ম দেয়া জরায়ুমুখ
ক্যান্সারের অন্যতম কারণ


নারীর স্বাস্থ্যকথা


চার সন্তানের জননী রাফিজা খানমের বয়স এখন ছত্রিশ বছর । বাবা-মা আর্থিকভাবে অসচ্ছল হওয়ায় দশম শ্রেণীতে পড়াবস্থায় বিয়ে হয় প্রবাসী আব্দুস সাত্তারের সাথে। বিয়ের মাত্র দুই মাসের মাথায় অন্তঃসত্তা হয়ে পড়ে রাফিজা। আর তাই পরের মেট্রিক পরীক্ষা দেয়া হয়নি রাফিজার। কিন্তু স্বামী আশ্বস্ত করে বাচ্চা হওয়ার পরে সে আবার পড়ালেখা করতে পারবে। এভাবেই এক সময় মাস্টার্স শেষ করে নীলফামারীর স্থানীয় এক উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরীও পেয়ে যান রাফিজা। স্বামী প্রবাসে থাকলেও চার সন্তান নিয়ে সুখেই দিন কাটছিল রাফিজার। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে শরীরটা খুব খারাপ যাচ্ছে তার। প্রায়ই সময় তলপেটে যন্ত্রণা আর প্রশ্রাবের জ্বালা-পোড়া। শেষ পর্যন্ত এক গাইনী ডাক্তারের সাথে কথা বলে রাফিজা। অনেক পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর জানা যায় রাফিজা জরায়ুমূখ ক্যান্সারে আক্রান্ত। যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে তার।
ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসারের (আইএআরসি) সূত্র মতে বাংলাদেশের নারীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় স্তন ক্যানসারে। এর পরেই জরায়ুমুখ ক্যানসার । প্রতিবছর জরায়ুমুখ ক্যানসারে বাংলাদেশে ৮হাজার ৬৮ জন জন আক্রান্ত হয়। আর মৃত্যু বরণ করে প্রায় ৫ হাজার। এছাড়াও বিশ্বে প্রতিবছর এই রোগে আক্রান্ত হয় প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ নারী। আর মৃত্যু হয় প্রায় ৩ লাখ।
গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. রোকেয়া বেগম বলেন, মূলত জরায়ুমুখ ক্যান্সারের অন্যতম কারণ হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) নামের এক ভাইরাস। আর এই এইচপিভি বিভিন্ন ধরনের আছে, যার মধ্যে এইচপিভি ১৬ ও ১৮ জরায়ুমুখ ক্যান্সারের জন্য সবচেয়ে বেশী মারাত্মক। তিনি বলেন, মূলত যেসব মেয়েদের বাল্যবিবাহ হয় এবং যেসব নারী অধিক সন্তান জন্ম দেন তারাই এই জরায়ুমুখ ক্যান্সারের ঝুঁকিতে থাকে। এছাড়াও নারীর ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছনতার বিষয়টিও রয়েছে। যেসব অল্পবয়সী নারী মাসিকরে সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে না পারে তাদের বিভিন্ন ধরনের জীবানু আক্রমন করতে পারে। আর তাই মাসিকের সময় অবশ্যই পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার এবং নিজেকে পরিষ্কার রাখতে হবে। ডা. রোকেয়া বলেন, অল্প বয়সী মেয়ে বিশেষ করে নয় থেকে ১৫ বছর বয়সী মেয়েদের জন্য রয়েছে এইচপিভি টিকা। একটু দামী হলেও এই টিকা দিয়ে দেওয়াই উত্তম। এছাড়াও বেশী বয়সী নারীদের জন্য রয়েছে ক্যান্সার স্ক্রিনিং। ক্যান্সার স্ক্রিনিং এর মাধ্যমে সহজে এই রোগ নির্ণয় করা যায় এবং পরবর্তী চিকিৎসা দ্রুত শুরু করা যায়।
আরেক গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. শাহানা আক্তার বলেন, আমাদের দেশে বিশেষ করে এখনো গ্রামাঞ্চলে মেয়েদের বয়:সন্ধির সময় নোংরা কাপড় ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। এসময় তাদের স্কুল পর্যন্ত বন্ধ করে দেয় কিছু কিছু অভিভাবক। অথচ তার কোন দরকারই হয়না। এখন বাজারে অল্প দামে দেশীয় তৈরী বিভিন্ন ধরনের প্যাড পাওয়া যায় এবং তারা এসব সহজেই ব্যবহার করতে পারে।
তিনি বলেন, এসব বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম আরো বেশী পরিমানে বাড়াতে হবে। যদিও বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার স্বাস্থ্য সেবা ঘরের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক অন্যতম। কিন্তু তারপরও কিছু কিছু মানুষ এখনো এসব সেবা নিতে আগ্রহী নয়। তাদেরকে এসব সেবার আওতায় আনার জন্য আরো বেশী পদক্ষেপ নিতে হবে।
ডা. শাহানা বলেন, প্রাথমিকভাবে এই ক্যান্সার ধরা পড়লে খুব সহজেই এ থেকে নিরাময় সম্ভব। নিয়মিত ঔষুধ সেবন করলে এ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে যদি দেরীতে ধরা পড়ে তবে তা অনেক সময় জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারে। অনেক সময় ডাক্তারদেরও আর কিছু করার থাকে না। আর তাই এ বিষয়ে পরিবারের সবার মধ্যে সচেতনতা তৈরী করতে হবে।
তিনি বলেন, এখনো পর্যন্ত আমাদের দেশের নারীরা এসব মেয়েলী শারীরিক সমস্যা নিয়ে কারো সাথে আলোচনা করতে লজ্জা পায়। একেবারে চরম পর্যায়ে না গেলে তারা তা কাউকে জানায় না । এমনকি অনেক বিবাহিত নারীরাও তাদের স্বামীর সাথে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন না। এর ফলে অনেক নারীই এক প্রকার বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। যা কখনোই কাম্য নয়। তিনি সরকার এবং বিভিন্ন এনজিও যেসব সংস্থা এসব বিষয়ে কাজ করেন তাদেরকে এ বিষয়ে আরো বেশী জোরালো ভূমিকা রাখার জন্য আহ্বান জানান।

সুত্রঃ বাসস।

 

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-৩

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-৩


আফরোজা হাসান


খুব আনন্দ নিয়ে সাবিহা যে কাজগুলো করেন তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে, দুই কন্যার জন্য শপিং। আজও দুই কন্যার জন্য একগাদা শপিং করে বাসায় ফিরলেন তিনি। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে রওনা হলেন কন্যাদের কাছে। ঘরে ঢুকে দেখেন বড় কন্যা শাবাব দুই হাত মুঠো করে নিজেই নিজের শরীরে মারছে। পাশে বসতে বসতে সাবিহা বললেন, মাইর খেতে ইচ্ছে করলে আমাকে বল। তোদেরকে মারার জন্য আমার হাত সবসময় নিশপিশ করে।

শাবাব হেসে বলল, নিশপিশ করলে মারবে। মার মাইর তো হেলদি ফুড।

হাসলেন সাবিহাও, কি করছিস? জানতে চাইলেন মেয়ের কাছে।

এটা যোগ ব্যায়ামের একটা প্র্যাকটিস মামণি। এর নাম কি ফো ব্যায়াম। দু’হাত হালকা করে মুঠো করে সারা শরীরে চাপড়াতে হয় দু’তিন মিনিট। একদম মাথা থেকে আরম্ভ করে সারা শরীরে করতে হবে এটা। এরফলে রক্ত চলাচল বেড়ে গিয়ে দেহে শক্তি উৎপন্ন হতে সাহায্য করবে। জবাব দিল শাবাব।

মাথার দুষ্টুমি বুদ্ধি কমানোর কোন যোগ ব্যায়াম নাই? থাকলে সেটার প্র্যাকটিস কর তোরা দু’জন।

দু’জন বলছো কেন মামণি? আমি কি কখনো দুষ্টুমি করি? অভিযোগের স্বরে বললো মাহাম।

শাবাব বলল, দুষ্টুমি একটা আর্ট। চাইলেই সবাই এটা করতে পারে না বুঝলি গাধী। তুই বই পড়ছিলি তাই পড়। পড়তে পড়তে মহিলা বিদ্যাসাগর হয়ে যা। প্যাকেটে কি মামণি? শিপিং করেছো আমাদের জন্য? ইয়া হু…বলে চিৎকার দিয়ে যোগ ব্যায়ামের প্র্যাকটিস ছেড়ে প্যাকেট খোলাতে মন দিলো শাবাব।

মাহামের দিকে তাকালেন সাবিহা। বইয়ের মধ্যে মুখ গুঁজে বসে আছে। ফিরেও তাকাচ্ছে না শপিংয়ের দিকে। মনটা খারাপ হয়ে গেলো তার। এত শখ করে শপিং করে কিন্তু মাহাম কখনোই কোন একটা জিনিস আনন্দ নিয়ে দেখে না। অথচ ছোট্ট একটা ক্লীপ দেখেও মহা আনন্দিত হয় শাবাব। একেবারে উত্তরমেরু আর দক্ষিণমেরু তার দুই মেয়ে। মাঝে মাঝে মনেহয় শাবাবের কিছু চঞ্চলতা যদি ঢুকে যেতো মাহামের মধ্যে, বদলে মাহামের প্রশান্ত চিত্তের একটু ছোঁয়া যদি লাগতো শাবাবের গায়ে। একটা ড্রেস নিয়ে মাহামের সামনে ধরে বললেন, দেখ তো মা কেমন হয়েছে এটা?

একবার চোখ বুলিয়ে মাহাম বলল, হুম…সুন্দর। শাবাবকে অনেক মানাবে।

এটা আমি তোর জন্য এনেছি।

ও আচ্ছা! জাযাকিল্লাহ মামণি।

দেখ শাবাব চলেও গেছে ড্রেস চেঞ্জ করতে। তুইও এটা একটু পড়ে আয় না মা! দেখি তোকে কেমন লাগে। আবদারের স্বরে বললেন সাবিহা।

উহু…এখন পারবো না মামণি। ইচ্ছে করছে না। তাছাড়া আল্লাহ তোমার কন্যাদের ব্যাপক রূপবতী করে সৃষ্টি করেছেন। খারাপ লাগার তো কোন কারণ দেখছি না।

মাঝে মাঝে যখন সিরিয়াস মুখ করে দুষ্টুমি মাখা কথা বলে মাহাম ভীষণ ভালো লাগে সাবিহার। কিন্তু সবকিছুর প্রতি মেয়েটার আকর্ষণ হীনতা খুব বিরক্ত করে। রাগ করে উঠে দাঁড়ালেন তিনি। মাকে রাগ করে উঠে যেতে দেখে হার চেপে ধরলো মাহাম। টেনে ধরে আবারো পাশে বসিয়ে বলল, মামণি তোমার উচিত যোগ ব্যায়াম করা। তোমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ যোগ ব্যায়ামের প্র্যাকটিস হলো হওয়াইন বা হুপোনোপোনো।

কি অদ্ভুত নাম। এটা আবার কেমন ব্যায়াম?

মাহাম হেসে বলল, এই প্র্যাকটিসের মূল কথা হচ্ছে চারটি। এক. আমি তোমাকে ভালোবাসি, দুই. আমি দুঃখিত, তিন. তোমাকে ধন্যবাদ, চার. আমাকে ক্ষমা করো। এটা হচ্ছে মন পরিস্কার এবং মনকে শান্ত ও স্বচ্ছ রাখার ব্যায়াম।

সেটা কিভাবে?

ধরো তোমার সাথে কারো খারাপ সম্পর্ক আছে কিংবা কাউকে তুমি সহ্য করতে পারো না। দেখলেই ইচ্ছে করে গলা চাপা দিতে। তখন তোমাকে যা করতে হবে তা হচ্ছে, তোমার মনের মধ্যে ব্যক্তিটির ছবি কল্পনা করে, তোমার উচ্চ সত্ত্বা থেকে ভালোবাসার ক্ষমতা নামিয়ে এনে ঐ চারটি কথা বারবার বলতে হবে।

বললে কি হবে? আর গলা চাপা দিতে ইচ্ছে করবে না?

হুম…ইচ্ছে করবে না। এই প্র্যাকটিসের ফলে সেই ব্যক্তির প্রতি যদি তোমার ভালোবাসা নাও জন্মে, অন্তত বারবার এমনটি করার ফলে তাকে তুমি ক্ষমা ঠিকই করে দেবে।
কোথায় শিখেছিস এসব ফালতু যোগ ব্যায়াম?

এটা মোটেই ফালতু না মামণি। আমার তো শাবাবের উপর রাগ হলেই এটা করি। নয়তো কবেই আমি গলা চেপে ওকে মেরে ফেলতাম।

হেসে মাহামকে জড়িয়ে ধরে আদর করে সাবিহা বললেন, তুই কি জানিস যে তুই একটা সোনার টুকরা মেয়ে?

মাহাম হেসে বলল, উহু…আমি এমন একটা মেয়ে যার জন্ম হয়েছে অসাধারণ দুজন মানুষের সংমিশ্রণে। আমি প্রাণপণ চেষ্টা করি সেই মানুষ দুজনকে ধারণ করতে আমার মধ্যে। সমুদ্রের টানে নদী যেমন ছুটে চলে ঠিক তেমনি ঐ মানুষ দুজনের পানে ছুটে চলতে চাই আমি। হয়েছে এমন ছলছল চোখে তাকাতে হবে না এখন। দাও তোমার ড্রেস পড়ে আসি।
হেসে মেয়ের হাতে ড্রেস তুলে দিলেন সাবিহা। মাকে আদর করে দিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করতে রওনা করলো মাহাম।

চলবে….

 

“প্রিয় আহবাব”

“প্রিয় আহবাব”


কামরুন নাহার কণা


মায়ের সালাম আর হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা নিস বাবা! জানি ভালো আছিস,খুব ভালো! কেউ কি তার রবের কাছে ভালো না থেকে পারে বল? আমিও আছি আলহামদুলিল্লাহ! আমার রবের কোন সিদ্ধান্তের উপর অভিযোগ কিংবা অসন্তুষ্ট হওয়ার দুঃসাহস আমার নেই। আলহামদুলিল্লাহ আ’লা কুল্লি হা’ল!!!!

বাবা জানিস, তোর সাথে আমার অনেক কথা জমা আছে! কবে শুনবি বলতো? কতো কথা, কতো ভালোবাসা, কতো মমতা জমিয়ে রেখেছি বুকের খাঁচায়! কিন্তু তুই মা কে এমন করে ফাঁকি দিয়ে উড়াল দিলি! এতো অভিমান বাবা তোর! কিসের এতো অভিমান সোনা? আমার দিকে একবার তাকালিও না! আমি তোর খুব হতভাগী মা, তাইনা রে!!!

কিকরে ভুলবো সোনা বল! গত বছরের এই দিনগুলোতে তোর প্রতিটা হৃদস্পন্দন অনুভব করেছি! সে যে কি এক পরম সুখ সুবহানআল্লাহ!! দুচোখ দিয়ে যদি তোর নড়াচড়া দেখতে পেতাম না জানি কতোই সুখ পেতাম! জানিস, তুই যখন পেটের মধ্যে খুব বেশি নড়াচড়া করতি, আমি অবাক হয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতাম, আর মনে মনে ভাবতাম, দুনিয়াতে আসলে নিশ্চয়ই খুব চঞ্চল হবি! তোর জন্যে নিজের হাতে কাঁথা সেলাই করে রেখেছিলাম! অনেকেই নিষেধ করার পরও শুনিনি! অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও কাঁথাটা সেলাই করে শেষ করেছিলাম। মনেহয়ছিলো তুই যখন প্রথম আমার কোলে আসবি, তোকে এমন একটা উপহার দেয়া দরকার যেটা সারা জীবন স্মৃতি হয়ে থাকবে! অনেক বড় হয়ে গেলেও তুই জানতে পারবি, এটা তোর মায়ের দেয়া জীবনের প্রথম উপহার! তাই এ পাগলামি! অনেক ভালোবাসা আর মমতা লুকানো ছিলো তাতে বাবা! আজ তোর স্পর্শ মাখা, স্মৃতি মাখা একমাত্র বস্তু হিসেবে সেটিই আমার সম্বল হয়ে আছে! পৃথিবীর আর কোন জিনিসে তোর স্পর্শ নেই, সেই কাঁথাটা ছাড়া! যখন তোকে খুব মনেপড়ে, সেই কাঁথাটা বুকের সাথে জড়িয়ে রাখি। যখন ভিতর টা খুব ভারী হয়ে ওঠে, জায়নামাজে বসে সিজদায় অথবা মুনাজাতে তোর সেই কাঁথাটার মাঝে নিরব অশ্রু গুলো ফেলি, মনেহয় এতে হয়তো আমার রবের আমার প্রতি একটু বেশি করুণা হবে! কেন এমন মনেহয় জানিনা।

বাবা জানিস, তোর জন্মের কয়েক মাস আগেই তোর নাম রেখেছিলাম “আহবাব”। যার অর্থ “সবচেয়ে প্রিয়”! বিশ্বাস কর, সেদিন একবারের জন্যে ভুলেও মনে পড়েনি, সবচাইতে প্রিয় জিনিসই রবকে উপহার দিতে হয়! যাক, তবে আমি মোটেও অসন্তুষ্ট নই। আমি জানি আমার রব আমাকে ঠকাবেন না! সবচাইতে কঠিন এই পরীক্ষায় আমি যেন উত্তীর্ণ হতে পারি, তুই শুধু এই দোয়াটা করিস বাবা! হাশরের দিন, তোর আর আমার মাঝে, কোন ব্যবধান যেন না থাকে!

বাবা এ পরীক্ষা টা বড়ো কঠিন! জানিস, আমি ধৈর্য ধরেছি, সব কথা, ব্যথা, অনুভূতি গুলোকেও কবর দিয়ে দিয়েছি তোর সাথে! তবুও এক অসীম শূন্যতা আমাকে যেনো গ্রাস করে নিয়েছে! যেন সমস্ত পৃথিবীটা আমার বুকের মধ্যে দিয়ে দিলেও এশূন্যতা, এ শুষ্কতা, এ রুক্ষতা দূর হবেনা! কি যে পেলাম, আর কি যে হারালাম, সেটাই শুধু খুঁজে পাইনা!
এ শূন্যতা পৃথিবীর কাউকে বুঝাতে পারিনা! দেখাতে পারিনা! এমনকি আমার রবের কাছেও সবটা বলতে পারিনা, যদিও অনেক কিছুই বলতে চাই! তবে জানি, তিনি তো অন্তর্যামী! তিনি সব জানেন! তিনি সব বুঝেন! তিনি যদি আমাকে ধৈর্য্য না দিতেন, আমি কি পারতাম এতো সহজ ভাবে বেঁচে থাকতে? সবটা মেনে নিতে? এতো সহজ ভাবে তোকে বিদায় দিতে কি পারতাম সোনা?

কলিজা আমার! অনেক ভিক্ষা চেয়েছিলাম তোর প্রাণটা! প্রতিটা নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে! কিন্তু আমার রবের সিদ্ধান্তই যে চূড়ান্ত! জন্মের পর পরই দশ দিন, দশ রাত তুই NICU তে থাকার পর আর পারছিলাম না! শারীরিক, মানসিক, আর্থিক সবদিক দিয়ে যখন শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছিলাম, সেদিন সব অসহায়ত্ব স্বীকার করে মেনে নিয়েছিলাম, আমার রবের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত! হৃদয়ের সবটুকু মিনতি দিয়ে NICU এর রুমে তোর লাইফ সাপোর্ডের পাশে বসে শেষ বারের মতো দুহাত তুলে প্রভুকে বলেছিলাম- “হে আমার রব! হে জীবন মৃত্যুর চূড়ান্ত ফয়সালাকারী! তোমার নাম রাহমানুর রাহীম! জীবন এবং মৃত্যু তোমার হাতে! আমার এ নাড়ীছেঁড়া ধন, কলিজার টুকরার প্রাণটা তোমার কাছে অনেক ভিক্ষা চেয়েছিলাম! কিন্তু আমি জানিনা, ওর ব্যাপারে তোমার কী ইচ্ছা! যদি তুমি ওর হায়াত লিখে থাকো, তাহলে সম্পূর্ণ সুস্থ করে আমার মানিক কে আমার বুকে ফিরিয়ে দাও! আর যদি তুমি ওর হায়াত নাই লিখে থাকো……তবে নিয়ে যাও রব! আমার আর কোন আফসোস নেই! আমি বিশ্বাস করি, সাধ্যাতীত কোন বোঝা তুমি আমার ওপর চাপিয়ে দিবেনা!”
আহা! বাবারে….সেদিনই ছিলো তোর জীবনের শেষ দিন!

সেই যে তিনি আমাকে ধৈর্য দিলেন, আমি আজও আর মন ভরে কাঁদতে পারিনা! আমি যেন কান্না ভুলে গেছি। তোকে জীবনের প্রথম এবং শেষবারের মতো কোলে পেলাম! একবার ভাবতে পারিস সেই অনুভুতি টার কথা? আমার নাড়ীছেঁড়া ধনকে ১০দিন ১০ রাত পর প্রথম বারের মতো বুকে পেয়েছি, কোলে নিয়েছি! কিন্তু এটাই জীবনের শেষ নেওয়া! আর কোনদিন তুই আমার বুকে আসবিনা! আর কোনদিন তোকে কোলে নিতে পারবোনা! বুঝতে পারছিলাম না আমার তখন কাঁদা উচিত নাকি হাসা উচিত! সবাই খুব কান্না করছিলো! তোর দাদী, দাদা, নানুভাই, খালামনিরা সবাই খুব কাঁদছিলো! শুধু আমিই একটুও কাঁদতে পারিনি বাবা জানিস! অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে তোকে দেখছিলাম! একটা পলকের জন্যে চোখটা বন্ধ করে তোকে দেখার স্বাদ থেকে বঞ্চিত হতে চাইনি! তোর পা দুটোকে মনেহচ্ছিলো আমার জান্নাত! তাই চুমো না দিয়ে থাকতে পারিনি!

পরের দিন…. সাদা কাফনে তোকে জড়িয়ে শেষবারের মতো আমার সামনে আনা হলো! বিশ্বাস কর সোনা! আমি তখনো কাঁদতে পারিনি! এতো সুন্দর লাগছিলো তোকে! কি বলে তোকে চির বিদায় দিবো বুঝতে পারছিলাম না! তোর কপালে আর পা দুটোতে চুমু দিয়ে বলেছিলাম…..বাবা, আমি ইচ্ছে করে তোমাকে কোন কষ্ট দিতে চাইনি! তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও! তোমার রবের কাছে আমার আর তোমার বাবার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করো! জান্নাতে যেন আমাকে আর তোমার বাবাকে তোমার সাথে মিলিত হওয়ার অনুমতি তিনি দেন! আল্লাহ হাফেজ”।

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-২

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-২


আফরোজা হাসান


ছোটবেলা থেকেই নিজ হাতে মাটির তৈজসপত্র বানানোর শখ সাবিহার। বিয়ের পর তার স্বামী এই শখের কথা জানতে পেরে কোর্স টোর্স করিয়ে একদম মহিলা কুমোর বানিয়ে ফেলেছেন তাকে। সংসার শত কাজের ভিড়ে সামান্য যতটুকু সময় পান নিজ হাতে মাটি দিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র বানান সাবিহা। গতকাল একটা ফুলদানী বানিয়েছিলেন। যত্ন করে তাতে রং করতে বসেছেন এখন। ফাইয়াজ সাহেব পাশে এসে বসলে একবার তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে নিজের কাজে মন দিলেন আবার সাবিহা।

কিছুক্ষণ স্ত্রীর কাজ দেখে ফাইয়াজ সাহেব হেসে বললেন, তোমার দুই কন্যা আজ চাকরীর খোঁজে আমার অফিস গিয়েছিলো।

উফফ, আর বলো নাতো তোমার মেয়েদের উদ্ভট কর্মকান্ড।
কি নিয়ে আবার লেগেছে আজ তোমাদের? হাসতে হাসতে জানতে চাইলেন ফাইয়াজ সাহেব।

মানুষের ঘরে দেখি কত সোনার টুকরা একেকটা মেয়ে। আর আল্লাহ আমাকে এই দুইটা কি দিয়েছেন বলো তো! কোন একটা কথা যদি কানে তুলতো এই দুই মেয়ে। যখন যা মন চায় তাই করে। অভিমানী কণ্ঠে বললেন সাবিহা।

স্ত্রীকে কাছে টেনে কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে যাচ্ছিলেন ফাইয়াজ সাহেব কিন্তু মেয়েদের চিৎকার শুনে ঘুরে তাকিয়ে দেখলেন বড় মেয়ে শাবাব ছুটতে ছুটতে এদিকেই আসছে আর তাকে পেছন থেকে ধাওয়া করছে ছোট মেয়ে মাহাম।
শাবাব আস্তে এখানে রং, ফুলদানী সব ছড়ানো পড়ে ব্যথা পাবি! কিন্তু মায়ের সতর্কবাণী কানে পৌছার আগেই হুড়মুড় করে সবকিছু নিয়ে পড়লো শাবাব। মেয়েকে ধরে ফাইয়াজ সাহেব বললেন, ব্যথা পাসনি তো মা?

না বাবা আমি ঠিক আছি। কিন্তু মামণির ফুলদানী তো ভেঙে গেছে। মায়ের দিকে তাকিয়ে নাক মুখ কুঁচকে সরি বললো শাবাব।

সাবিহা বললেন, হয়েছে আর সরি বলতে হবে না। এটা মোটেই নতুন কিছু না। পরশু দিনও দুইটা টব ভেঙেছিস তুই। আর গত সপ্তাহে এত কষ্ট করে একটা ঝাড়বাতি বানালাম আমি সেটাও তুই নষ্ট করেছিস।

শাবাব বলল, ওহো মামণি! ফুলদানী ভাঙা ক্রাইমের কথা হচ্ছে সেটার কথা বলো শুধু। পুরনো ফাইল খুলো নাতো এখন।

দেখেছো? দেখেছো তোমার মেয়ের কথার স্টাইল? ফাজিলের চূড়ান্ত হয়েছে এই মেয়ে।

মেয়েকে কাছে টেনে ফাইয়াজ সাহেব হাসতে হাসতে বললেন, শাবাব খুব বেশি দুষ্টু কথা বলিস তুই মা। কেন ছুটছিলি এভাবে?

মাহাম বলল, দেখো না বাবা শাবাব আমার ডায়েরী নিয়ে এসেছে।

ফাইয়াজ সাহেব তাকালে শাবাব মাহামের হাতে ডায়েরী ফেরত দিয়ে বলল, নে ফেসকুন্নি তোর ডায়েরী। বোনকে ভেংচি কেটে মায়ের দিকে চোখ পড়তেই চিৎকার করে উঠলো মাহাম, মামণি তোমার পায়ে কি হয়েছে?

সাবিহা বললেন, কিচ্ছু হয়নি। রঙ লেগেছে। আর হলেই বা কি? তোদের কি কিছু এসে যায় নাকি তাতে?

মায়ের কাছে বসে হাত দিয়ে রঙ পরিস্কার করতে করতে মাহাম বলল, কি যে বলো না তুমি মামণি! তোমার পা আমাদের কাছে কত স্পেশাল সে কথা যদি জানতে কখনোই এমন কথা বলতে না।

আমার পা স্পেশাল? মামণির প্রশ্ন শুনে পুতুলের মতো মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালো মাহাম। সাবিহা বললেন, সেটা কেন শুনি?

শাবাব বলল, কারণ তোমার পদতলে মোদের জান্নাত হে মাতা। মেয়ের জবাব শুনে স্বশব্দে হেসে ফেললেন ফাইয়াজ সাহেব।

মাহাম বলল, বাবা হাসি বন্ধ। এসে তোমার ডিউটি পালন করো।

ফাইয়াজ সাহেব বললেন, আমার আবার কিসের ডিউটি?

কামঅন বাবা এটাও আমাদেরকে বলে দিতে হবে? যে পায়ের নিচে তোমার কন্যাদের জান্নাত সেই পায়ের সেবাযত্ন করা তো তোমার ডিউটি নাকি? তুমি তোমার ডিউটি পালন করো আমরা দুজন যাই। চলো শাবাব।

মেয়েরা চলে যাবার পর ফাইয়াজ সাহেব স্ত্রীর কাছে বসতে গেলে সাবিহা বললেন, খবরদার বলছি! দূরে থাকো তুমিও তোমার মেয়েদের মত আমার কাছে থেকে। বলে তো উঠে ভেতরে রওনা করলেন। ফাইয়াজ সাহেবও হাসতে হাসতে স্ত্রীর পিছু নিলেন।

সিঁড়ির গোঁড়ায় এসে পাশে লাগানো আয়নার সামনে থমকে দাঁড়ালো শাবাব, হাত দিয়ে টেনে ধরলো বোনকেও। মাহাম বলল, আবারো? আচ্ছা রোজ রোজ একই কাজ করতে বিরক্ত লাগে না তোমার?

বাতাসে হাত নেড়ে বোনের কথাকে উড়িয়ে দিয়ে শাবাব আয়নার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলল, হে আয়না বলো তো এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মেয়ে কে? গলা সামান্য ভারী করে নিজেই জবাব দিলো, শাবাব শাবাব শাবাব।

হেসে ফেললো মাহাম। বোনকে টেনে ধরে উপড়ে উঠতে উঠতে বলল, পাগল তুমি বুঝলে। কি যে হবে তোমার আল্লাহ জানেন। শাবাবও হেসে গলা জড়িয়ে ধরলো বোনের।

চলবে

 

‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে নারী সমাজ

‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে নারী সমাজ


ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা


গ্রাম-শহর সমানভাবে উন্নত হলেই একটা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব। কেবলমাত্র শহরের উন্নয়ন দিয়ে কখনই একটা দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধশালী করা সম্ভব নয়। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে সেখানকার গ্রামীণ অর্থনীতি বেশ শক্তিশালী। আর গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে অনেক ক্ষেত্রেই পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি ভূমিকা পালন করে থাকেন। বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের ‘গ্রাম-শহর সমান উন্নতি’ নীতির কারণে এবং অনেকেই শহর ছেড়ে গ্রামে গিয়ে দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন, অবদান রাখছেন দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে। যেমন তাদেরই একজন বান্দরবানের বিলাইছড়ির আয়শা খাতুন।
আয়শা খাতুন কয়েক বছর আগে ঢাকা শহরে এসেছিলেন এক বান্ধবী শাহেদার হাত ধরে। ইচ্ছে ছিল গ্রামের গরীব বাবা-মাকে সাহায্য করা। শুরুতে এক গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি নেন। বেতন ছিল সাত হাজার। শুরুতে কারখানায় হেলপারের কাজ করলেও পরে আস্তে আস্তে নিজেই শিখে যান সেলাইয়ের কাজ। এভাবে প্রায় দু’বছর কাজ করার পর বেতন দাঁড়ায় সাড়ে আট হাজার টাকায়। চার হাজার টাকা বাড়িতে পাঠিয়ে বাকি সাড়ে চার হাজার টাকায় ঢাকায় থাকা-খাওয়া খুব কষ্ট হয়ে যেত আয়শার। সিদ্ধান্ত নেন বাড়ি ফিরে যাবেন।
বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার বিলাইছড়িতে তার গ্রাম। সেখানে ফিরে প্রথমে এক এনজিও’র সহযোগিতায় প্রশিক্ষণ নেন কাপড় কাটার। তিন মাস প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই মেশিন কিনে ঘরের মধ্যে নিজেই শুরু করেন সেলাইয়ের কাজ। প্রথমে খরিদ্দার পেতে কিছুটা কষ্ট হলেও আস্তে আস্তে সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। তারপর থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি আয়শাকে।
নিজের বিয়ের সব খরচ নিজেই বহন করেছে আয়শা। এক সময় বিয়ে করেন। বিয়ের আগে নিজের জমানো টাকা দিয়ে ছোট ভাইকে কিনে দিয়েছে দু’টি ব্যাটারী-চালিত রিকশা।
আয়শার মতো অনেক নারীই এখন শহর ছেড়ে চলে ফিরে যাচ্ছে নিজের গ্রামে। সেখানে গিয়ে তারা চেষ্টা করছেন কিছু না কিছু অর্থ উপার্জন করে সাবলম্বী হতে। ফলে গ্রামে বাড়ছে নারীদের শ্রমশক্তি। এরফলে চাঙ্গা হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতিও।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যে বলা হয়েছে, এখন দেশের মোট শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের হার শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি। ১৯৯৫-৯৬ সালে শ্রমে নারীর অবস্থান ছিল শহরে ২০ দশমিক ৫ শতাংশ, গ্রামে ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০০৩ সাল পর্যন্ত এ হার শহরেই বেশি ছিল। সর্বশেষ ২০১৬-১৭ সালে গ্রামে এ হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ দশমিক ৬ শতাংশে। অন্যদিকে, শহরে কমে হয়েছে ৩১ শতাংশ। গ্রামের শ্রমশক্তিতে যুক্ত নারীদের ৬০ শতাংশই আছেন কৃষি খাতে।
বিবিএসের ২০১৫-১৬ সালের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, মোট শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ ৩৫ দশমিক ৬ শতাংশ। বিভাগীয় পর্যায়ে রাজশাহী, খুলনা ও রংপুরে শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বেশি। রাজশাহী বিভাগে সবচেয়ে বেশি ৪৯ দশমিক ৮ শতাংশ। খুলনায় ৪২ দশমিক ২ শতাংশ। রংপুরে ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ। চট্টগ্রামে ৩৪ শতাংশ, ঢাকায় ২৯ দশমিক ৯ শতাংশ, বরিশালে ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ এবং সিলেটে সবচেয়ে কম ২৩ দশমিক ৩ শতাংশ।
আয়শা বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে নারীদের উন্নয়নের জন্য অনেক কিছুই করেছেন। কিন্তু অধিকাংশ নারীই সে সব সম্পর্কে তেমন কিছুই জানেন না। যদি তারা একটু সচেতন হন, তবে অনেক সুযোগ-সুবিধাই রয়েছে যাতে করে নারীরা ঘরে বসেই উপার্জন করতে পারে এবং সাবলম্বী হতে পারেন।
নারী অধিকার বিষয়ক আন্দোলন কর্মী মারিয়া সরকার বলেন, আগে নারীরা তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটানোর জন্য গ্রাম থেকে শহরে চলে আসত। এর মূল কারন ছিল গার্মেন্টস শিল্প। মূলত নারীরা শহরেই আসত এসব পোশাক কারখানায় চাকরি করে নিজের খরচ চালানোর জন্য। আর এসব কারখানায় কাজ করা নারীদের অধিকাংশের বাড়ি উত্তর বঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে। কারণ এসব এলাকায় দারিদ্র্যের হার অন্যান্য এলাকার চেয়ে কিছুটা বেশি ছিল।
তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এসব এলাকার চিত্র অনেকটা পাল্টে গেছে। কারণ এই সরকার নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী। পাশাপাশি দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য গ্রামীণ অর্থনীতিকেও চাঙ্গা করতে চায় এই সরকার। এজন্য নেয়া হয়েছে বেশ কিছু উদ্যোগ। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে একটি বাড়ী, একটি খামার প্রকল্পটি।
অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. সেকান্দার ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকারের একটি বাড়ী, একটি খামার প্রকল্পে আগ্রহী হয়ে এখন অধিকাংশ বাড়ীতেই গড়ে উঠেছে খামার। আর এসব খামারে হাঁস, মুরগী, ছাগল, ভেড়া এবং গরু পালনের পাশাপাশি অনেক শাক-স্বব্জির চাষ অথবা পুকুরে মাছ চাষ করছেন। আর এসব করছেন বাড়ীর মেয়েরাই বেশি। আর এরফলে নারীরা যেমন অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হচ্ছেন আবার গ্রামীণ অর্থনীতিও চাঙ্গা হচ্ছে।

সুত্রঃ বাসস।

 

বই রিভিউঃ মনোসন্ধিঃ মানসিক চাপ মোকাবিলার সহজ উপায়

বইঃ মনোসন্ধিঃ মানসিক চাপ মোকাবিলার সহজ উপায়


 রিভিউ লেখকঃ রায়হান উদ্দিন মিলন


আচ্ছা বলুন তো, এখন আমার মন কি বলছে? মনোবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে সাধারন মানুষের কাছ থেকে এই প্রশ্নটি সবচেয়ে বেশি শুনতে হয়েছে। আমি তখন মনোবিজ্ঞান সম্পর্কে তাদের কিছু ধারণা দিতাম। যদি বন্ধুরা প্রশ্নটি করতো তাদের মজা করে উত্তর দিতাম।

আমি পাঠশালার একজন নিরব পাঠক। পাঠশালায় মাঝে মাঝে অনেকে মনোবিজ্ঞান বিষয়ক বই সম্পর্কে জানতে চায়। তাই আজ একটু জানানোর চেষ্টা করেই দেখি।

জীবন চলার পথে আমাদের অনেক কাজ বা পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। কিছু কাজ সহজ আর কিছু কাজ কঠিন। এই কঠিন কাজ মোকাবিলা করতে গিয়ে কেউ কেউ দিশেহারা হয়ে পড়ে, কি করবে বুঝতে পারে না আর তখন ই শুরু হয় মানসিক চাপ। এই মানসিক চাপ অনেকাংশে নির্ভর করে, আমাদের চাওয়া ও পাওয়ার অসামঞ্জস্যতা এবং তা সঠিক ভাবে মূল্যায়ন করতে না পারার কারনে। আর এই না পাওয়ার বেদনা মননে তৈরি করে মানসিক চাপ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের শিক্ষক মনোবিজ্ঞানী আজহারুল ইসলাম স্যার তার “মনোসন্ধিঃ মানসিক চাপ মোকাবিলার সহজ উপায় “ বইতে মূলত মানসিক চাপ, তার উৎপত্তি ,শারীরিক ও মানসিক প্রভাব এবং তার মোকাবিলার কৌশলগুলো সহজভাবে তুলে ধরেছেন। মানসিক স্বাস্থ্যের অনেকগুলো দিক রয়েছে তার মধ্যে মানসিক চাপ অন্যতম। যা একজন ব্যক্তির জীবনে অহরহ ঘটে থাকে। তা হতে পারে- পরীক্ষা নিয়ে চিন্তা,চাকুরির চিন্তা, অন্তরঙ্গ সম্পর্কের বিচ্ছেদ ইত্যাদি। মানসিক চাপের প্রভাবে অনেকে শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে যায় এবং তা আচরনে প্রভাব ফেলে।

চিন্তার ভ্রান্তি বা বিভ্রাট, অযোক্তিক বা অবাস্তব বিশ্বাস, দক্ষতার ঘাটতি,সক্ষমতার অভাব, শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা, আকস্মিক দুর্ঘটনা,অতিরিক্ত কাজের বোঝা,চাকরির ধরন ইত্যাদি মানসিক চাপের উৎপত্তির কারন হিসেবে বিবেচিত । লেখক এই বইতে বলেছেন যে, মানসিক চাপের প্রভাব নির্ভর করছে পরিস্থিতির বা ঘটনার মূল্যায়নের উপর। গবেষণায় দেখা গেছে , যারা চাপের প্রভাব কে অনেক ক্ষতিকর হিসেবে ধরে নিয়েছে,তাদের আসলেই অনেক ক্ষতি হয়েছে। আর যারা চাপকে ক্ষতিকর না ভেবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার অংশ হিসেবে নিয়েছে, তাদের উপর চাপের প্রভাব কমই পড়েছে। তবে এই মানসিক চাপ যে সব সময় খারাপ তা কিন্তু না।কারন মানসিক চাপ না থাকলে আপনি পরীক্ষার আগে পড়ার আগ্রহ বোধ ই করতেন না। মনের বিজ্ঞান বলে, অতীত ও ভবিষ্যৎ থেকে আপনি যদি বর্তমানকে বেশি প্রাধান্য দেন ,তাহলে আপনি বেশি সুখি ও কর্মদীপ্ত ।

মানসিক চাপ মোকাবিলার জন্য শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক এই তিনটি ব্যবস্থাপনার বিজ্ঞানসম্মত কৌশলগুলো বিস্তারিত বলা আছে। শারীরিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মেনে চলা ও শারীরিক ব্যায়ামের কথ বলা হয়েছে, যা শরীরের পেশিগুলোকে শিথিল করে আপনার মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে। মানসিক ও সামাজিক ব্যবস্থাপনার কৌশলগুলো পড়ে মনে হতে পারে, আপনি নিজের সম্পর্কে পড়ছেন বা সমাজের মানুষের সাথে ভাবের আদান -প্রদান করছেন।

বর্তমান ইন্টারনেট যুগে মানুষের ইন্টারনেট কেন্দ্রিক আলাদা একটা জগৎ বিদ্যমান। এর প্রভাব ও ব্যবস্থাপনার নিয়ে আলাদা একটা অধ্যায় আছে এই বইটিতে। যা কারো মধ্যে বিদ্যমান রিয়েল সেলফ(আপনি যা)/বাস্তবের আপনি ও আইডিয়েল সেলফ(আপনি যা হতে চান)/ ইন্টারনেটের আপনি সম্পর্কে ধারনা দিবে। সবশেষে মানসিক স্বাস্থ্য সেবার জন্য আমরা কাদের সাহায্য নিবো তার বর্ণনা দিয়ে বইটির ইতি টানা হয়েছে।

সর্বোপরি বইটি পড়ে আপনার মনের গলিপথে হেটে আসতে পারবেন । যা নিজেকে নিজের সাথে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিবে হয়তো।

…………………………………………………………

বইঃ মনোসন্ধিঃ মানসিক চাপ মোকাবিলার সহজ উপায়

লেখকঃ আজহারুল ইসলাম

রিভিউ লেখকঃ রায়হান উদ্দিন মিলন

প্রকাশকঃ আদর্শ

পৃষ্ঠাঃ ৯৬

মূল্যঃ ২০০ টাকা

 

অটিজম শিশুর খাদ্য নিয়ে

অটিজম শিশুর খাদ্য নিয়ে


নিউট্রিশনিস্ট সুমাইয়া সিরাজী


সব বিশেষ শিশু দের মধ্যে অটিজম সমস্যা সবচেয়ে বেশী দেখা যায়। অটিজম এর বৈশিষ্ট্য গুলো কারো প্রকট থাকে কারো প্রচ্ছন্ন থাকে! আবার একি রকম বৈশিষ্ট্য গুলো সবার মধ্যে থাকে না সবাই একক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হয় তবে কিছু কিছু বৈশিষ্ট্যে আবার মিলও থাকে।
মনে রাখবেন পৃথিবীতে যদি এক লক্ষ মানুষ থাকে তবে এই লক্ষ মানুষের চাহিদা, ধরন, সমস্যাও এক লক্ষ রকমের হবে । একেক মানুষ একেক সত্তা! এই অটিস্টিক শিশুর বেলা তেও এর ব্যতিক্রম নয়। সবার খাবারের ধরণ ও চাহিদা ভিন্ন ভিন্ন হবে । খাবার এর পছন্দের তালিকাও ভিন্ন হবে ।
যখন প্রথম অটিজম আক্রান্ত শিশুর খাবার নিয়ে আলোচনা আসলো গবেষণা হলো তখন দেখা গেলো যে , যে সকল খাবারে অক্সালিক এসিড , গ্লুটেন , ক্যাসিন আছে ঐ ধরনের খাবার খেলে এসব শিশুর অস্থিরতা জনিত সমস্যা বাড়ছে। এছাড়াও ফাস্টফুড জাঙ্ক ফুড এগুলা প্রতিদিন খেলে তাদের মধ্যে আচরণগত সমস্যা বাড়ছে।
বাংলাদেশে এটা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে বেশি দিন হয়নি কিন্তু এটা নিয়ে গবেষণা এখনো চলমান!
গুগলের কল্যাণে আমরা যেমন অনেক ভালো কিছু শিখি আবার অনেক ভুল ধারণা নিয়ে থাকি। গ্লুটেন , ক্যাসিন, অক্সালিক এসিড খাবারে থাকলে খারাপ তাই সব বন্ধ বলে দেয়া হয়! কিন্তু সব অটিস্টক শিশুর এই সব উপাদান থাকা খাবারে সমস্যা নাও হতে পারে! কারো দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারে সমস্যা কারো শুধু বাদামে কারো আবার রুটি তে, কোন শিশুর আবার দুধ ও ডিমে!

আমার দীর্ঘ চার বছরের অভিজ্ঞতা বলছি আমি এমনো অটিস্টিক শিশু পেয়েছি যার শুধু ভাত এ সমস্যা অর্থাৎ রাইস ও রাইস দিয়ে তৈরি খাবারে! অন্য কোন খাবারে সমস্যা নাই!!! শিশু টির ভাতে ফুড সেনসিটিভিটি ছিলো ৫+ অর্থাৎ সর্বোচ্চ!!! আর বাদামে ছিলো ৪+!!! এখন আপনি কিভাবে নির্ধারন করবে আপনি আপনার শিশু কে গুগল থেকে জেনে সঠিক খাবার দিচ্ছেন???
এই শিশু টির বাবা মা সিঙ্গাপুর থেকে এই টেস্ট গুলো করে এনেছেন । ওনার সামর্থ্য ছিলো কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এই সামর্থ আমাদের সবার নাই!
তাহলে উপায় কি???
হা অবশ্যই উপায় আছে!

১.আপনি আপনার অটিস্টিক শিশু টির খাবারের ব্যাপারে আরেকটু সচেতন হতে পারেন! ফাস্টফুড এড়িয়ে নরমাল খাবার দিয়ে দেখুন তার সমস্যা গুলো কমে কিনা!
২!. আপনার শিশু কে সপ্তাহে ২ দিন দুধ খেতে দিন আর ঐ ২ দিন তাকে পর্যবেক্ষণ করুন কোন সমস্যা হচ্ছে নাকি সব ঠিক আছে!
৩. একটা ডায়েরি মেইনটেইন করুন যেদিন খুব বেশি অস্থির হয়ে যায় ঐ দিন নতুন কোন খাবারে সে খেয়েছে কিনা বা বেশি কোন খাবার খেলো কিনা দেখুন আর লিখে রাখুন! এভাবে প্রতি মাসে তাকে ফলো আপ এ রাখুন।

৪. একটা গোটা ডিম তাকে ১ দিন পর পর দিয়ে দেখুন তার আচরণ ঠিক আছে কিনা থাকলে প্রতিদিন খেতে দিন।

৫. চকলেট ,চিপস, ডীপ ফ্রাই খাবার এড়িয়ে চলুন। সয়াসস দেয়া খাবার , টেস্টিং সল্ট দেয়া খাবার, ইস্ট আছে এমন খাবার এসব শিশুর অস্থিরতা বাড়ানোর অন্যতম কারণ!

৬. শিশুর শরীরে সীসা , ক্রোমিয়াম, ল্যাকটেট এসিড, ম্যাগনেসিয়াম এর মাত্রা কতটুকু এগুলো একবার টেস্ট করাতে পারেন। এগুলোর সাথেও শিশুর অস্থিরতা ও আচরণের সম্পর্ক আছে। আইসিডিডিআরবি ( Icddrb) তে অথবা ঢাকা সিএমএইচে এও এই টেস্ট করাতে পারেন!!
৭. আটা দিয়ে তৈরি খাবার অল্প দিয়ে চালের তৈরি খাবার দিতে পারেন ‌। যেমন চালের রুটি, পিঠা , চালের পায়েস । আবার আরেক দিন রুটি দিয়ে দেখুন দুই দিনের পার্থক্য!!
৮. একজন বিশেষজ্ঞ ডায়াটেশিয়ান এর কাছে পরামর্শ নিতে পারেন। শিশুটির জন্য তার উপযোগী খাদ্য তালিকা করে
দিবে ।
৯ . আশে পাশের মানুষের কথায় না জেনে কোন খাবার দেয়া বন্ধ করবেন না! আপনার শিশুর খাবার সম্পর্কিত সমস্যা গুলো একজন অভিজ্ঞ ডায়েটিশিয়ান কে জানান। আপনি নিশ্চয়ই হার্টের সমস্যা হলে দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাবেন না!!

মনে রাখবেন আপনার শিশু টি হয়তো বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন যা তাকে অন্য সবার থেকে ভিন্নতা দিয়েছে! কিন্তু সেও আপনার আর আমার মতো একজন মানুষ ‌। তাই তাকেও অন্য শিশুর মতো করেই দেখুন যেভাবে আপনি আপনার অন্য সন্তান কে দেখেন !!!

 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পেল প্রথম নারী ভিসি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পেল প্রথম নারী ভিসি


নারী সংবাদ


চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নারী ভিসি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত ভিসির দায়িত্ব পালন করে আসা বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও প্রোভিসি ড. শিরীন আখতার ভিসি পদে নিয়োগ পেয়েছেন।

রোববার রাষ্ট্রপতির এক আদেশে তাকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

সিনিয়র সচিব নীলিমা আফরোজ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানা গেছে।

এতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৭৩ এর ১২ (২) ধারা অনুযায়ী ড. শিরীন আখতারকে প্রোভিসি পদ থেকে অব্যাহতি প্রদানপূর্বক ভিসি পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

এর আগে চলতি বছরের ১৫ জুন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর মেয়াদ শেষ হলে এক আদেশে ড. শিরীন আখতার অস্থায়ীভাবে ভিসির দায়িত্ব পান। ২০১৬ সালের ২৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি হিসেবে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

অধ্যাপক ড. শিরীন আখতার ১৯৭৩ সালে কক্সবাজার সরকারি গার্লস স্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৭৫ সালে চট্টগ্রাম গার্লস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮১ সালে স্নাতকোত্তর পাস করেন। ১৯৯১ সালে ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৯৬ সালের ১ জানুয়ারি তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ২০০৬ সালে শিরীন আখতার অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন।
সূত্র : ইউএনবি

 

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-১

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-১


আফরোজা হাসান


অফিসের কাজ শেষ করে কেবিন থেকে বেড়িয়ে দুই কন্যাকে ওয়েটিংরুমে বসে থাকতে দেখে দাঁড়িয়ে গেলেন ফাইয়াজ সাহেব। কন্যাদ্বয়ের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলেন একসাথে দুইজনের আগমনের হেতু। স্বভাব স্বরূপ একজনের হাতে বই, অন্যজনের হাতে মোবাইল। একজনের মুখ প্রশান্ত আরেকজনের চেহারা জুড়ে খেলা করছে দুষ্টুমি। দেখে অবশ্য মনেহচ্ছে না আজ নতুন কোন ঝগড়া নিয়ে হাজির হয়েছে দুজন।

হাসি ফুটে উঠলো ফাইয়াজ সাহেবের মুখে। সপ্তাহে কম করে হলেও একদিন তাঁর দুই কন্যা অফিসে হানা দেয়। এবং বেশির ভাগ সময়ই দুজন ঝগড়া করতে করতে ঢোকে। পুরো অফিস জুড়ে সেদিন বইতে থাকে আনন্দধারা। স্টাফদের সবার ঠোঁটের কোণেও খেলা করে হাসি। ছোটবেলাতেও নিয়মিত অফিসে আসতো তাঁর দুই কন্যা। নিজ নিজ মহিমায় স্টাফদের সবার মনেও একটু করে জায়গা দখল করে নিয়েছিল দুই কন্যা সেই ছোটবেলাতেই।

এরপর থেকে রাজশাহীর আম, বগুড়ার দই, নাটোরের কাঁচাগোল্লা আর কোনদিন কিনে খেতে হয় না ফাইয়াজ সাহেবকে। স্টাফদের যার দেশের বাড়ি যেখানে সে সেই স্থানের বিখ্যাত জিনিস নিয়ে হাজির হয় মামণিদের জন্য। অবশ্য ফাইয়াজ সাহেবের দুই কন্যাও কম যায় না এই ব্যাপারে। প্রায়ই বাসা থেকে স্টাফদের সবার জন্য খাবার নিয়ে আসে স্টাফদের সবার জন্য। পর্দার দিকে পরিপূর্ণ খেয়াল রেখে স্টাফদের সবার পরিবারের খোঁজ-খবর রাখা, পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করা ইত্যাদি কাজগুলো খুব আনন্দ নিয়ে করে দুই বোন।

ভীষণ ভালো লাগে তখন ফাইয়াজ সাহেবের। তিনি নিজেও সবসময় স্টাফদের খোঁজ-খবর রাখতে চেষ্টা করেন। মেয়েরা যখন থেকে অফিসে আসা শুরু করেছে একটা দায়িত্ব নেমে গিয়েছে কাঁধ থেকে এমনটা অনুভব করেন। অদ্ভুত এক প্রশান্তি খেলা করে মন জুড়ে। সন্তানরা বড় হয়ে যখন তাদের কাজের দ্বারা পিতার মনে এই ভরসা তৈরি করে ‘আমরা আছি পাশে’ তখন মনেহয় এমনতর প্রশান্তির আবহ সৃষ্টি হয় মনে।
সমস্যা শুধু একটাই দিনের মধ্যে একাধিক বার দুজন চিৎকার চেঁচামেচি করে বাড়ি মাথায় তোলে। দুজনের পছন্দ-অপছন্দ, ভালোলাগা-মন্দলাগা একদম আলাদা বলেই হয়তো এমনটা হয়। তবে ফাইয়াজ সাহেব খুব উপভোগ করেন দুই কন্যার ঝগড়াঝাটি। একজনের কথা জ্ঞান মিশ্রিত, অন্যজনের শব্দরাও মনেহয় যেন খুনসুটি করছে। এই মেয়ে দুটাকে জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি মনেহয় ফাইয়াজ সাহেবের।
হাসিমুখে মেয়েদের কাছে এগিয়ে গেলেন। বাবাকে দেখে শাবাব এবং মাহাম উঠে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে সালাম দিলো।
সালামের জবাব দিয়ে ফাইয়াজ সাহেব বললেন, কিরে মা তোরা কখন এসেছিস?

এই নাও আমাদের সিভি! বলে বাবার হাতে সিভি ধরিয়ে দিলো শাবাব।

অবাক কণ্ঠে ফাইয়াজ সাহেব বললেন, সিভি দিয়ে কি করবো?

আমরা দুজন ঠিক করেছি জব করবো তোমার অফিসে। সিরিয়াস কণ্ঠে বললো মাহাম।

হাসতে হাসতে দুহাতে দুই মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে ফাইয়াজ সাহেব বললেন, কি আজ আবার ঝগড়া হয়েছে মামণির সাথে? আবার কি করেছিস তোরা দুজন?

শাবাব বলল, কিছুই করিনি আমরা বাবা। তোমার বৌ খালি খালি চিৎকার করে। আহ্লাদ দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলে ফেলেছো বৌকে। স্বৈরাচারী মহিলা।

মাহামও মাথা ঝাঁকিয়ে বড় বোনের সাথে সহমত পোষণ করে বলল, তো কাল থেকে জয়েন করছি আমরা।

শাবাব বলল, প্রতিদিন বিকেলে তিনঘণ্টা কাজ করবো আমরা। বেশি না মাত্র ত্রিশ হাজার বেতনেই এই কাজ করে দেবো আমরা।

দুই মেয়ের সিরিয়াস ভাব দেখে ফাইয়াজ সাহেবও হাসি গোপন করে বললেন, আরে এটা কেমন কথা হলো? অফিসের তো কিছু রুল আছে চাকরি করতে হলে সেসব মানতে হবে। সবার আগে ইন্টারভিউ দিতে হবে।

অবাক কণ্ঠে শাবাব বলল, ছিঃ বাবা! তুমি আমাদের ইন্টারভিউ নেবে? বাবা হয়ে মেয়েদের ইন্টারভিউ?

মেয়েরা যদি বাবার অফিসে কাজ করার বদলে বেতন চাইতে পারে, বাবা মেয়েদের ইন্টারভিউ নিতে পারবে না কেন? তাছাড়া আমি প্রফেশন আর রিলেশন মিক্সআপ করার পক্ষপাতী নই। কেননা এতে সম্পর্ক তার নিজস্ব গতিপথে চলতে বাঁধাগ্রস্ত হয়।

ঠিকআছে দিলাম নাহয় ইন্টারভিউ। আপনার অফিসে ইতিহাস হয়ে থাকবে এই ইন্টারভিউ মনে রাখবেন। এই মাহাম চল। বোনের হাত ধরে হাঁটা ধরলো শাবাব।

ফাইয়াজ সাহেব হেসে বলল, চলেন পৌছে দেই আপনাদেরকে।

জ্বীনা। আমরা বসদের কাছ থেকে লিফট নেই না। বলার জন্য শুকরিয়া।

অফিস থেকে বেড়িয়ে যেতে থাকা দুই কন্যার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আনন্দাশ্রুতে চোখ ভরে গেলো ফাইয়াজ সাহেবের। সত্যিই জীবনের ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করতে যাচ্ছে তাঁর দুই কন্যা। ছোট্ট ছোট্ট হাতের ছোঁয়ায় জীবনের একটি অধ্যায় রচনার স্বপ্ন দুচোখ নিয়ে তিনিও রওনা হলেন মেয়েদের পেছনে।

চলবে

 

নারীর কাজের পরিধি বেড়েছে

নারীর কাজের পরিধি বেড়েছে


নারী সংবাদ


রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী থানার গোগ্রাম গ্রামের এক ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠি সাঁওতাল পরিবারের সদস্য মিনুরা। তাঁর স্বামীর নাম শ্রী মানিক ও পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫ জন। কৃষিনির্ভর এ পরিবারটির আয়ের উৎস তিন বিঘা বর্গা জমি। এছাড়া বাড়ির পাশে তাদের নিজস্ব একটি ডোবা আছে। ডোবাটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকত। দীর্ঘদিন থেকেই নিজের পরিবারের জন্য মিনুরার কিছু করার ইচ্ছা ছিল। মিনুরার আগ্রহ ও ইচ্ছায় একটি এনজিও এর সহযোগিতা ও পরামর্শে ডোবায় কার্পজাতীয় মাছের ২ কেজি ধানী পোনা ছেড়ে দেয়। মিনুরার প্রত্যক্ষ ব্যবস্থাপনায় দেড় মাস পোনা পালন করে আঙ্গুলী পোনা তৈরি করে। দেড় মাস পর এ পোনা বিক্রি করে সে ৫ হাজার টাকা লাভ করে। ২ কেজি ধানী পোনার বাজারমূল্য ছিল ৮শ’ টাকা। খাবার বাবদ খরচ হয়েছে ২শ’ টাকা। এনজিওর সহযোগিতায় বিনামূল্যে ধানী পোনা ও মাছের খাবার না পেলেও তার লাভ হত ৪ হাজার টাকা।
শুধু মিনুরা নয়, এখন শহরের মতো গ্রামীণ নারীরাও নানা ধরণের উর্পাজনের প্রতি ঝুঁকেছে।
নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার কারণে তাদের সামাজিক ওপারিবারিক গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে ও অর্থনৈতিকভাবে পরিবারের উপর তাদের নির্ভরশীলতা কমেছে। গ্রামের নারীরা বাড়ির নিকটবর্তী পুকুর , ধানক্ষেত ও বড় পুকুরে খাঁচায় অনায়াসেই মাছ চাষ করছে।
কয়েক বছর যাবত নারী শুধু গার্মেন্টস সেক্টর নয়, কৃষিখাত, সূচিশিল্প, মৎস্যচাষ ও চিংড়ি রপ্তানীর কাজেও তাদের সমপৃক্ততা বাড়িয়েছে। বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলে, শহরের চেয়ে গ্রামে নারী কর্মজীবির সংখ্যা বেশি। নিজ পরিবারেও ফসল উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে নারীর শ্রম পুরুষের তুলনায় বেশি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বুরে‌্যর (বিবিএস) ২০১৫-১৬ সালের পরিসংখ্যানে জানা যায়, বিভাগীয় পর্যায়ে রাজশাহী, খুলনা ও রংপুরের শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বেশি। রংপুরে এ হার ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ।
গ্রামে জনশক্তিতে যুক্ত নারীদের শতকরা ৬০ ভাগ ই শ্রম দিচ্ছে কৃষিতে। আর শহরে গার্মেন্টেসে। ব্যুরো আরো জানায়, সবশেষে ২০১৫ -২০১৭ সালে গ্রামে নারীর কাজের হার বেড়েছে। গ্রামে শতকরা ৩৮ দশমিক ৬ শতাংশ শ্রমজীবি হিসেবে রয়েছে। শহরে কমে হয়েছে ৩১ শতাংশ।
এদিকে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) জানায়, পোশাক শিল্পে নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ ছিল শতকরা ৬৪ ভাগ এখন তা কমে ৬০ দশমিক ৮ শতাংশ। ১৯৯৫-৯৬ সালে শ্রমে নারীর অবস্থান ছিল শহরে ২০দশমিক ৫ শতাংশ, গ্রামে ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০০৩ সাল পর্যন্ত শহরে এ হার বেশি ছিল।
গাজীপুরের গাছা গ্রামের মেয়ে সামিনা। তার বিয়ে হয়েছে ১৫ বছর বয়সে। এখন বয়স ছাব্বিশ বছর। বিয়ের পর থেকেই সে দিনে সতেরো ঘন্টা কাজ করে। তার পরিবারে সদস্য সংখ্যা সাতজন। এ সাতজনের খাওয়া দাওয়াসহ সেবা,সবকিছুর দায়িত্ব তার ওপরে। সামিনা আরো জানায় ভোর পাঁচটায় ফজরের আজানের পর থেকেই তার দিন শুরু হয়। শেষ হয় রাত দশটায়।রান্নাবান্না, পশু পালন, পরিবারের সদস্যদের খাওয়ানো, দুই শিশু সন্তানকে মাদ্রাসায় দিয়ে আসা ও বিকেলে আনা সব রকমের কাজ তার করতে হয়। সামিনা ঊঠানে শাক সবজিও লাগায়। তার লাগানো মরিচ দিয়েই সংসারের প্রয়োজন মেটে। এছাড়া বেগুন শাক তো রয়েছেই।
অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ বলেন, গ্রামে কাজে নারীর অংশগ্রহন বাড়া অবশ্যই ইতিবাচক। তা নারীর ক্ষমতায়নে প্রভাব ফেলবে।
সাভারের ষোলমাসী গ্রামের হাফিজা বেগমের তিনটি গরু। ৪০ বয়সী হাফিজা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে গরুগুলো কিনেছে। এদিকে মহিলা অধিদপ্তর ও বিভিন্ন আয়বর্ধক কর্মসূচি যেমন সেলাই মেশিন ক্রয়, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী পালন, ক্ষুদ্র ব্যবসা, মৎস্য চাষ, নার্সারী ইত্যাদি বিষয়ে ঋণ দেয়। মহিলা অধিদপ্তরের ৬৪টি জেলার ৪৭৩টি উপজেলায় ক্ষুদ্র কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন সংস্থা জানানয়, ৯০ শতাংশের বেশি ক্ষুদ্র ঋন গ্রহনকারী হচ্ছেন নারী। ঋণের ক্ষেত্রে ফসল উৎপাদনে, পশুর খামার ও হাঁস-মুরগি পলনে টাকা ব্যয় করেন। খামারে যুক্ত আছেন ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। ফসল উৎপাদনে ৪২ দশমিক ৩ শতাংশ। খুলনায় রপ্তানীমুখী চিংড়ি খাতেও নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ বাড়ছে।
রংপুরের গাইবান্ধার বাসিন্দা সুরাইয়া (৩০) জানান, একসময়ে খুব অভাবে ছিলেন, এখন সূচিকর্ম করে মাসে ৭/৮ হাজার টাকা আয় করেন। বিশেষ করে ,তারা টুপি সেলাই করেন। তাদের তৈরি টুপি মধ্যপ্রাচ্যেও যায়।

সুত্রঃ বাসস।

 

স্তন বা ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতা

স্তন বা ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতা


ডা. মারুফ রায়হান খান


সারা বিশ্বজুড়ে এই অক্টোবর মাসে পালিত হচ্ছে স্তন বা ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতা মাস।

পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও আশঙ্কাজনক হারে প্রকোপ বাড়ছে ব্রেস্ট বা স্তন ক্যান্সারের। বলা হয়ে থাকে প্রতি ৮ জন নারীর মধ্যে ১ জনের জীবদ্দশায় ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়ে থাকে।

কাদের বেশি হয় ব্রেস্ট ক্যান্সার?

– ৯৯.৫% ক্ষেত্রে মহিলাদের, ০.৫% ক্ষেত্রে পুরুষদের।

– বয়স : সাধারণত ৩০-৬০ বছর।

– ইউরোপের দেশগুলোর অধিবাসীদের।

– পরিবারে যদি অন্য কারও হয়ে থাকে (মা,খালা ইত্যাদি)।

– যারা হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি নেন। জন্মনিরোধক ওষুধ খান।

– যাদের মাসিক আগে শুরু হয় এবং দেরিতে মাসিক বন্ধ হয়।

– যারা প্রথম বাচ্চা বেশি বয়সে নেন।

– চর্বিযুক্ত খাবার বেশি খান।

– সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ান না।

– যাদের সন্তান নেই।

কী কী উপসর্গ নিয়ে আসেন রোগীরা?

– এক ব্রেস্ট বা দুই ব্রেস্টের আকারে বা গঠনে কোনো পরিবর্তন। চাকা চাকা দেখা যাওয়া।

– নিপল বা স্তনবৃন্ত থেকে রস নিঃসৃত হওয়া। কখনও রক্ত নিঃসৃত হওয়া।

– নিপল ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া, নিপলে চির ধরা।

– বগলে চাকা চাকা কিছু দেখা যাওয়া।

– অনেক সময় ব্রেস্টের চামড়া গর্ত গর্ত হয়ে যায় (অনেকটা কমলার খোসার মতো)।

– এছাড়া ব্রেস্ট ক্যান্সার যদি শরীরের অন্যান্য জায়াগায় ছড়িয়ে যায় তাহলে কাশি, জণ্ডিস, হাড়ে ব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ নিয়ে রোগী আসতে পারে।

কীভাবে ব্রেস্ট ক্যান্সার নির্ণয় করা যায়?

১. রোগের যথাযথ ইতিহাস নিয়ে এবং পরীক্ষা করে

২. ইমেজিং :
– আল্ট্রাসনোগ্রাফি
-ম্যামোগ্রাফি

৩. হিস্টোলজি :
– FNAC
– বায়োপসি

৪. টিউমার মার্কার্স : যেমন- BRCA- 1, BRCA-2

তবে ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে নিরূপণের জন্যে প্রতি মাসে একবার নিজে নিজে ব্রেস্ট পরীক্ষা (Self Breast Examination) করে দেখতে বলা হয়ে থাকে।

যেভাবে করা যেতে পারে সেল্ফ ব্রেস্ট এক্সামিনেশান :

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পরীক্ষা :

ক. দুই বাহু মাথার ওপরে বা পেছনে উঁচু করে ধরতে হবে।

খ. লক্ষ্য করতে হবে স্তনের আকার-আকৃতি, উপরের চামড়া বা রঙের কোনো পরিবর্তন আছে কি না। যেমন : চামড়া পুরু হয়ে যাওয়া, লালচে বা কালচে হয়ে যাওয়া, তাপ অনুভব করা।

বিছানায় শুয়ে পরীক্ষা :

ক. ডান কাঁধের ওপর বালিশ রাখতে হবে।

খ. ডান হাত মাথার পেছনে দিতে হবে।

গ. বাম হাতের ৩ আঙুল দিয়ে ডান স্তন চক্রাকারে পরীক্ষা করতে হবে এবং দেখতে হবে কোনো তরল বা রক্ত নিঃসৃত হয় কি না।

ঘ. একইভাবে বাম পাশের স্তন পরীক্ষা করতে হবে।

স্নান করার সময় পরীক্ষা :

ক. একটি হাত মাথায় রাখতে হবে।

খ. অন্য হাতের আঙুল দিয়ে কলার বোনের কয়েক ইঞ্চি নিচ থেকে একদম বগল পর্যন্ত চেপে দেখতে হবে কোনো চাকা বা ব্যথা অনুভূত হয় কি না।

আর যাদের ব্রেস্ট ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা বেশি (উপরে উল্লেখ করা হয়েছে) তাদের প্রতি ৬ মাসে একবার আল্ট্রাসনোগ্রাফি বা ম্যামোগ্রাফি করাতে বলা হয়। যাদের বয়স ৩০ বছরের কম তাদের জন্যে আল্ট্রাসনোগ্রাফি এবং যাদের ৩০ বছরের বেশি তাদের জন্যে ম্যামোগ্রাফি অধিক প্রযোজ্য।

কীভাবে চিকিৎসা করা হয় ব্রেস্ট ক্যান্সারের?

কয়েক প্রকারের চিকিৎসা রয়েছে ব্রেস্ট ক্যান্সারের।
যেমন :

১. অপারেশন
২. রেডিওথেরাপি
৩. কেমোথেরাপি
৪. হরমোন থেরাপি
৫. ইমিউন থেরাপি

 

জীবনের নানান রঙে আঁকা বই ‘ইয়াসমীন’

জীবনের নানান রঙে আঁকা বই ‘ইয়াসমীন’


রংধনু


আজ একটা বই পড়া শুরু করেছি। গল্পের বই। বেশ কয়েকটি ছোট গল্পের সমন্বয়ে রচিত বইটি। নাম ইয়াসমীন, প্রথম গল্পের নামে বইটির নামকরণ করা হয়েছে। সেখান থেকে দুটো গল্প পড়লাম।

যেকোনো বই পড়ে সেখান থেকে কী বুঝলাম, কী শিখলাম এই নিয়ে আলোচনা করা হয়নি কারো সাথে। হবেই বা কিভাবে! তেমন বই পড়ুয়া পাইনি যে। গল্পগুলো পড়ে কেমন কেমন মন খারাপের মেঘ ভর করেছে। আটপৌরে জীবনের গল্প।

প্রথম গল্পটা দুই বান্ধবীর। অনেকটা স্মৃতিচারণমূলক। আজকের দিনে থেকে মারজান চরিত্রটি অতীতের ডানায় ভর করে বান্ধবী ইয়াসমীনের সাথে কাটানো নানান ঘটনা মনে করছে। অতীত ভ্রমণে যাওয়ার মূল কারণ ইয়াসমীনের চিঠি। চিঠির খাম না খুলে মাদ্রাসায় তাদের দেখা হওয়ার প্রথম দিন থেকে শুরু করে ইয়াসমীনের বাসায় বেড়াতে যাওয়া, সেখানে প্রকৃতির খুব কাছে ঝর্ণা, পাহাড় এসব দেখা, অনেক বছর পর ট্রেনে দেখা হওয়া নানা বিষয় নিয়ে বলেছে। অনেক অপেক্ষার পর শেষ পর্যন্ত চিটি পড়েছে। ইয়াসমীনের কঠিন অসুখ হয়েছে, বাঁচবে না বেশিদিন হয়ত। পাহাড়ি ঝর্ণার কাছে তাকে কবর দিতে বলেছিল।

অনেকদিন পর বই পড়তে পড়তে প্রকৃতির সংস্পর্শে গেলাম। নদী, চাদের আলো, গাছপালা, পাহাড়, ঝর্ণা অবলোকন করেছি। কিন্তু গল্পের বর্ণনা বেশি লম্বা করে ফেলেছে আমার মনে হয়েছে। এক জায়গা থেকে হুট করেই আরেক জায়গায় চলে গিয়েছে লেখিকা। আবার কিছু কিছু জিনিস বোঝা যায়নি, বিশেষ করে কয়েকটা চরিত্র। যেমন ইয়াসমীনের বাবার সাথে মারজানের বাবার কি কিছু নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে কিনা।

দ্বিতীয় গল্পটার নাম সময়। এটা সংগ্রাম করা এক ছেলের গল্প। অভাবের সংসারে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে ওষুধের দোকানে কাজ করে। অসুস্থ বাবা, মন মরা মা, জীর্ণশীর্ণ ছোট ভাই। এই নিয়ে পরিবার। শহরের প্রাণকেন্দ্রে ভিটে আছে কিন্তু ঘর দুটো ভাঙা, বৃষ্টির পানি পড়ে। ফুফুরাও থাকে সেই ভিটায় ঘর তুলে। একটা আহত কুকুরকে সে পকেটের টাকা খরচ করে চিকিৎসা করিয়েছিল। সেই থেকে কুকুর ছেলেটার ভক্ত। প্রতি রাতে কাজ থেকে ফেরার সময় কুকুর তার সাথে দেখা করে। ছেলেটি চায়ের দোকান থেকে রুটি খাওয়ায় প্রতি রাতে। এর মাঝে ফুফুরা তাদের ভাগের জায়গা বিক্রি করে দেয়। ফুফাতো বোনটি ছেলেটিকে জানায় দাদি কিছুটা জমি ছেলেটিকেও লিখে দিয়ে গেছে। যেন ওই জমিটুকু বিক্রি করে বাড়ি ঠিক করে আর ব্যবসা করে। ফুফাতো বোন বিক্রির সব ব্যবস্থা করে দেয়। এরমধ্যে ফুফুরা সবাই গ্রামে চলে যায়। আর ছেলেটিও ধীরে ধীরে ব্যাবসার প্রসার ঘটায়। বাড়ি গাড়ির মালিক হয়। শেষে এক রাতে ড্রাইভে বের হয়। সেই কুকুরটি ছেলেটিকে এক নজর দেখার জন্য রাস্তায় এসেছিল। কিন্তু সে গাড়ি দিয়ে তাকে ধাক্কা দেয় কুকুরটাকে। কুকুর মারা যায়। ছেলেটি কুকুরকে গালি দেয়, কারণ রক্ত লেগে গাড়ি নোংরা হয়েছে। আর সেই ফুফাতো বোন বা ফুফুদেরও খবর নেয় না ছেলেটি।

সময়ের বদলে বদলেছে ব্যবহার। একসময়ের দরদী লোক হয়ে উঠেছে দাম্ভিক। বাস্তব জীবনেও অনেকের ক্ষেত্রে এমনটা দেখা যায়। অতীত ভুলে যায়। কষ্টের সময়ে পাশে থাকা মানুষদের ভুলে যায়। নিজেই সর্বেসর্বা হয়ে ওঠে। এটা মোটেও ঠিক না। বরং এর উল্টোটাই হবার কথা। কৃতজ্ঞতা থাকা উচিৎ সবার প্রতি।

আমার কেন যেন একটা গল্পের শেষও ভালো লাগেনি। তাতে কী! নিজের মত করে শেষ ভেবেছি। ইয়াসমীন আর মারজান জীবনের শেষ প্রান্তে এসে পাহাড়ী ঝর্নাঘেরা সবুজ কোনো অরণ্যে কাটাচ্ছে দিনগুলো সেই আগের মত দূরন্তপনায়। আর দ্বিতীয় গল্পের ছেলেটি আত্মীয়ের হক তো আদায় করেই সাথে সেই কুকুরটির জন্যেও বাড়ির আঙিনায় একটি ঘর বানিয়ে দিয়েছে। সাথে অন্যদেরও সাহায্য করছে জীবনে বড় হওয়ার জন্য।

গল্প পড়ে আলোচনা করতে ইচ্ছে করল তাই লেখার চেষ্টা। আমি অবশ্য জানি না কিভাবে আলোচনা করতে হবে। রিভিউও লিখিনি। নিজের মতামত লিখলাম। আরো কয়েকটা গল্প আছে, পড়ে সেগুলো নিয়েও লিখব ইন শা আল্লাহ্‌।

 

সব প্রতিষ্ঠানে ‘মাতৃদুগ্ধ দান কক্ষ ও বেবি কেয়ার কর্নার’ করতে হাইকোর্টের রুল

সব প্রতিষ্ঠানে ‘মাতৃদুগ্ধ দান কক্ষ ও বেবি কেয়ার কর্নার’ করতে হাইকোর্টের রুল


নারীর জন্য আইন


দেশের সকল কর্মক্ষেত্র, বিমানবন্দর, বাস, রেলওয়ে স্টেশন ও শপিংমলে মাতৃদুগ্ধ দান কক্ষ ও বেবি কেয়ার কর্নার স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে রুল জারি করেছেন আদালত।

রোববার (২৭ অক্টোবর) একটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানিতে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।

মন্ত্রী পরিষদ সচিব, নারী ও শিশুকল্যাণ সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, সমাজকল্যাণ সচিব, বিমান ও পর্যটন সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের চার সপ্তাহের মধ্যে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ব্যারিস্টার মো. আব্দুল হালিম সাংবাদিকদের বলেন, শপিংমলে ব্রেস্ট ফিডিং ও বেবি কেয়ার কর্নার স্থাপনে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করতে রুল জারি করেছেন আদালত।

রিট আবেদনটি দায়ের করেন নয় মাসের শিশু উমাইর বিন সাদী ও তার মা আইনজীবী ইসরাত হাসান।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মায়েরা উল্লেখিত জনসমাগম স্থানে প্রায় দুধ পান করা শিশুদের নিয়ে অস্বস্তিতে ভোগেন। কারণ সেসব স্থানে শিশুকে নির্বিঘ্নে ও আচ্ছাদিত পরিবেশে শিশূকে স্তন্যদান করাতে পারেন না। সেই সুবিধাই করে দেয়া থাকেনা সেসব স্থানে। তাই এসব স্থানে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপন করতে হবে যেন সেখানে কোনো মা সন্তানকে বুকের দুধ পান করাতে কোনো বিড়ম্বনায় না পড়েন। এ কারণেই রিট করেছি।

রিটে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপন সংক্রান্ত পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করেছেন আইনজীবী ইসরাত হাসান।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুন্দর, সুস্থ ও সবলভাবে শিশুকে বেড়ে তুলতে এবং নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতে সরকারি বেসকারি প্রতিটি কর্মস্থলে ডে কেয়ার সেন্টার ও মাতৃদুগ্ধ দান কক্ষ স্থাপন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে নির্দেশনা দিয়েছিলেন।

এরপর ৯ বছর অতিবাহিত হলেও এক্ষেত্রে দৃশ্যমান কোনো উন্নতি লক্ষ্য করা যায়নি। বেশিরভাগ কর্মক্ষেত্রে কর্মজীবী মায়েদের জন্য ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার নেই।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় উল্লেখ রয়েছে, কর্মক্ষেত্রে শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়াতে যেন একজন কর্মজীবী মা সমর্থ হন সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিমা-ব্যাংক, শপিংমল, কল-কারখানা, পেশাজীবী সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন ও মানবাধিকার সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

কিন্তু নির্দেশনা অনুযায়ী, সরকারি হাসপাতালসহ অফিস, ব্যাংক-বিমা প্রতিষ্ঠান এবং শপিংমলে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপন করা হয়নি।

সুত্রঃ যুগান্তর।

 

গর্ভকালীন কিছু কমন সমস্যা এবং তার প্রতিকার

গর্ভকালীন কিছু কমন সমস্যা এবং তার প্রতিকার


ডা. মারুফ রায়হান খান


আজ লিখতে চাই গর্ভকালীন কিছু কমন সমস্যা এবং তার প্রতিকার নিয়ে। এটা আসলে সবার জানা প্রয়োজন।
‘প্রেগনেন্সি’ বিষয়টা আমার কাছে মিরাকিউলাস লাগে। একটা দেহে দুটো প্রাণ। একসাথে নির্ভর করছে দুটো সত্ত্বার ভালো থাকা-মন্দ থাকা, সুস্থতা-অসুস্থতা–মায়ের স্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করে সন্তানের বাঁচা-মরা। প্রেগনেন্সিতে স্বাভাবিক অবস্থা থেকে হরমোনের বেশ তারতম্য ঘটে, শারীরিক গঠনের কিছু পরিবর্তন হয়–তাই মায়ের কিছু কিছু শারীরিক সমস্যা নতুন করে দেখা দেয় বা বেড়ে যায়। দেখা যায় যে, ডেলিভারি হয়ে যাবার পরপর সে সমস্যাগুলোও চলে যায়। এগুলোর বেশিরভাগই ফিজিওলজিক্যাল বা স্বাভাবিক। প্রেগনেন্সি ইস্যুটা যেহেতু সবার কাছে খুব সেন্সিটিভ তাই অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এসব সমস্যায়। আসলে খুব বেশি আতঙ্কগ্রস্ত হবার কিছু নেই। জীবনধারায় কিছু পরিবর্তন নিয়ে এলে, কিছু পরামর্শ মেনে চললে যার অধিকাংশই প্রতিকার বা প্রতিরোধ করা যায়। একেবারেই কমন কিছু সমস্যার সমাধান নিয়ে লেখার চেষ্টা করছি। আমার মনে হয় বিষয়গুলো সবারই জানা থাকা প্রয়োজন।

১. বমিবমি ভাব এবং বমি
দেখা যায় যে প্রতি ১০০ জন গর্ভবতীর প্রায় ৭৫ জনেরই এ সমস্যাটা দেখা দেয়। সাধারণত সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরপরই এ সমস্যা হয়।
-সকালে ঘুম থেকে উঠেই, বলা হয়ে থাকে বিছানাতেই শুকনো খাবার যেমন : টোস্ট, বিস্কিট, মুড়ি ইত্যাদি খেতে।
-প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার বেশি খেতে বলা হয়।
-অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করতে হয়।
-একবারে বেশি খাবার না খেয়ে অল্প অল্প করে বারবার খান।

২. কোমর ব্যথা 
প্রতি ১০০ জনের প্রায় ৫০ জনেরই এ সমস্যা দেখা দেয়।
-অনেক বেশি ওজন বাড়িয়ে ফেলা পরিহার করতে হবে।
-পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে, মোট দশ ঘণ্টা।
-পা কিছুটা উঁচুতে রেখে যেমন : পায়ের নিচে একটা বা দুটো বালিশ রেখে বিশ্রাম নিন।
-শক্ত বিছানায় শোয়া ভালো।
-উঁচু হিলযুক্ত জুতো পরা যাবে না।
– কুঁজো হয়ে বসা বা কোনো জিনিস নিচ থেকে তোলা পরিহার করা শ্রেয়।
– দাঁড়ানোর সময় সোজা হয়ে দাঁড়াবেন।
– ভারী এবং পরিশ্রমের কাজ করবেন না।
– কোমরে ম্যাসাজ করতে পারেন।
– গরম বা ঠাণ্ডা কিছু দিয়ে সেঁক দিতে পারেন।

৩. কোষ্ঠকাঠিন্য
-প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে।
– আঁশজাতীয় খাবার যেমন : শাকসবজি এবং তাজা ফলমূল বেশি করে খেতে হবে।
-ইসপগুলের ভূষি খাওয়া যেতে পারে।
– চাপ এলে টয়লেটে যেতে বিলম্ব করা যাবে না।
– কিছুটা হাঁটাচলার অভ্যেস করা ভালো, দিনে ২০-৩০ মিনিট করে সপ্তাহে ৩ দিন হাঁটা যেতে পারে।

৪. পায়ে খিল ধরা
-পায়ে ম্যাসাজ করতে হবে।
– গরম সেঁক দিলে উপকার পাওয়া যায়।
-চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন বি-ওয়ান সেবন করা যেতে পারে।

৫. পায়ে পানি আসা/ পা ফোলা 
-বিশ্রাম নিন এবং পা দুটো একটা বা দুটো বালিশের ওপর রাখুন।
– একটানা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে বা বসে থাকবেন না।
-আরামদায়ক জুতো পরুন।
– বেশি করে পানি পান করুন।

৬. বুক জ্বালাপোড়া, এসিডিটি 
-একসাথে অনেক বেশি খাবার খেয়ে ফেলা পরিহার করতে হবে।
– খাবার পরপরই বিছানায় শুতে চলে যাওয়া যাবে না।
– বিছানায় যাবার অনেকক্ষণ আগেই খাবার খেয়ে ফেলুন।
– উঁচু বালিশে শুলে আরাম পাওয়া যায়।
– এন্টাসিড জাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।

৭. পায়ে আঁকাবাঁকা শিরা, পাইলস 
-পায়ে আঁকাবাঁকা শিরার জন্যে ক্রেপ ব্যান্ডেজ ব্যবহার এবং বিশ্রামের সময় পা উঁচু করে রাখতে বলা হয়।
-পাইলসের জন্যে নিয়মিত টয়লেট সারা জরুরি; কোষ্ঠকাঠিন্য যেন না হয়ে যায় সেদিকে নজর রাখতে হবে। টয়লেট সারার সময় বেশি চাপ দেওয়া যাবে না। বাম কাত হয়ে শোয়া ভালো। গরম পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।

৮. সাদা স্রাব যাওয়া 
-ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এর প্রধান চিকিৎসা।
-নরম সূতি আন্ডারগার্মেন্টস ব্যবহার করা ভালো।
তবে সবকথার শেষকথা হচ্ছে প্রতিজন গর্ভবতী নারীরই নিয়মিতভাবে চিকিৎসকের কাছে ভিজিটে যেতে হবে, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে এবং তার প্রেস্ক্রাইব করা ওষুধপত্র নিয়মিত খেতে হবে।

 

স্মৃতিটুকু নিস্তরঙ্গ

স্মৃতিটুকু নিস্তরঙ্গ


সুমাইয়া তাসনিম


আমার কাছে শেষ বলে আসলে কিছু নেই। যতদিন মানুষ বেঁচে থাকে ততদিন তার জীবনের কোনো গল্পের কোনো অধ্যায়ই একেবারে শেষ হয়না। তবু দিন শেষে কিছু কিছু চেনাপথ শত অভ্যস্ততা মুছে রোজকার রুটিন থেকে বাদ পড়ে যায়। কেবল স্মৃতিটুকু নিস্তরঙ্গ পুকুরে অবসন্ন দুপুরে টুপ করে ঝরে পড়া পাতার মত হাল্কা ঢেউ তোলে মাঝেমাঝে। এক বছর বেশি সময় লাগার পরও শেষ ক্লাস পাঁচ বছরের সময়টাকে যেন একটা মালায় গেঁথে ফেললো। যেন একটা পুতির মালা গাঁথা অবশেষে শেষ হলো। আর একটি দিনও বাকি নেই ক্লাসের। আর একটি পুতিও হাতে নেই গাঁথবার।

কাল শেষ ক্লাস শেষে অনেকক্ষণ বসে বসে মেয়েদের র‍্যাগডে প্রিপারেশন দেখলাম। তারপর ফুটপাতের হলুদ টাইলসগুলো ধরে হাঁটতে হাঁটতে পলাশি পেরিয়ে রাহির ডিপার্টমেন্টে গেলাম। ওর কাজ শেষে একসাথে বাসায় ফিরলাম। ক্লাস শেষে একসাথে ফেরা আর কবে হবে কে জানে!

আমরা যখন ইডেনে ভর্তি হই তখন ইডেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। ন্যাশনালে প্রায় সবাই ভর্তি হয় একটা চাপা কষ্ট নিয়ে। আরেকটু ভালো প্রিপারেশন নিলে আরেকটু ভালো কোথাও থাকতাম এই উপলব্ধি আসে সহসাই। আমি তেমনটা ভেবেছিলাম কিনা মনে নেই। তবে পছন্দের বিষয়ে পড়তে পারায় আর কোনো কষ্ট ছিলো না।

আমার শুরুটা ছিলো সরকারি কলোনির স্কুলে। তারপর মাদরাসার দোতলা ভবন আর ছোট্ট মাঠের গন্ডি, যেখানকার টিচাররা এখনো দেখলে খুশি হয়ে যান। তারপর জেলখানার মত ঢাকা সিটি কলেজ, অনেক দিন পর্যন্ত ঘুরানো প্যাচানো সিড়ি ডিঙ্গিয়ে নিজের ক্লাস কোনটা তাই খুঁজে পেতে কষ্ট হয়ে যেতো। তারপর আসলাম ইডেনে। সিটি কলেজের মাঠ ছাড়া এসি রুমের বদ্ধ পরিবেশ আমার মত মানুষের জন্য না সেটা বেশি টের পেয়েছিলাম ইডেনের মুক্ত হাওয়ায়। ক্যাম্পাসে পা দিতেই ভেতরটা ঠান্ডা হয়ে আসবে প্রকৃতির আবহে। এত্ত রকমের গাছ, এত্তরকমের পাখির ডাক, এত্ত রঙের ফুল.. আহ…! বাইরের কোনো মানুষ ছাড়া নিজেদের একটা রাজ্য মনে হয়। এত্ত মেয়ে একসাথে আমি এর আগে দেখিনি। সবাই নিজের মত পড়ছে, খাচ্ছে, কাজ করছে, আনন্দ করছে, নিজের মত সময় কাটাচ্ছে। ভিন্ন একটা জগৎ যেন! কতদিন পুকুরপাড়ের বেঞ্চে শুয়ে শুয়ে জীবনের কত প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছি ভাবনায়। বিশাল মাঠের কোণের ছোট ক্লাবটায় তাইকোয়ান্ডো প্র‍্যাকটিস করতে করতে হারানো আত্মবিশ্বাস আবার খুঁজে পেয়েছি নিজের ভেতরে। ধবধবে সাদা ড্রেসটা গায়ে চাপালেই শরীরে একটা অদ্ভুত জোর পেতাম। সব শক্তি দিয়ে একেকটা কিক আর পাঞ্চ মেরে দুইঘন্টার প্র‍্যাকটিস শেষে ক্লান্ত হয়ে হাভাতের মত নাশতা করতাম হলের ক্যান্টিনে। পড়াশোনার মান নিয়ে আমার বরাবরই আপত্তি ছিল কিন্তু একসময় সেটা মেনে নিয়েছিলাম। বুঝে নিয়েছিলাম এখানে প্রেশার করার কেউ নাই। লক্ষ্য ঠিক করে নিজেকেই চেষ্টা করতে হবে৷ একদিকে ভালোই ছিলো, প্রচুর এক্সট্রা কারিকুলার এ্যাক্টিভিটিজ তেমন কোনো জটিলতা ছাড়াই করতে পেরেছিলাম।
ইডেনের বিশাল ক্যাম্পাস পুকুরঘাট আর পুকুরের মাছগুলোকে পর্যন্ত এই যাবার কালে আপন মনে হচ্ছে। কলেজ বাসের দিনগুলোতে গল্প করতে করতে কখন পথ ফুরিয়ে যেতো টের পাওয়া যেতোনা। সেই লাল কলেজ বাস “চন্দ্রমল্লিকা” তোরে মিস করবো। সাইকোলজি ডিপার্টমেন্টের করিডর, মিস করবো। ডিপার্টমেন্ট থেকে নামলেই ফুচকা, ভেলপুরি, আঁচার, চাটনি, ফলের জুস, কিমা পরোটা, খিচুড়ি, ফ্রাইড রাইস, শীতের ভাপা পিঠা আর নানাপদের ঝাল ঝাল ভর্তা দিয়ে চিতই পিঠা খেয়ে পেট ভরানোর দিনগুলো মিস করবো। ইডেনের প্রত্যেকটা ফুল গাছ, লাইব্রেরির টেবিল-চেয়ার, ক্লাসরুম আর পুরানো বেঞ্চগুলো, ছাদ আর ল্যাবরুম, সেমিনারের বইগুলো, মিস করবো খুব। টিচারদের আর হাসি, কান্নায় ভরপুর মেয়েগুলোকে মিস করবো।।

*এই ছবিগুলো ইডেনে বিভিন্ন সময়ে তোলা। ছবিগুলোর আসল কপি গুলো হারিয়ে ফেলেছি ত মনে হলো এই পোস্টের সাথে থাকুক।

 

সময়মতো চিকিৎসায় শিশুর অন্ধত্ব প্রতিরোধ সম্ভব

সময়মতো চিকিৎসায় শিশুর অন্ধত্ব প্রতিরোধ সম্ভব


স্বাস্থ্যকথা


লাবনীর বয়স মাত্র নয় বছর। এই অল্প বয়সেই মেয়েটি খুব গোছালো। বাবা-মা যাই বলে তাতেই তার সম্মতি। অন্য বাচ্চাদের মত তার তেমন কোন বায়নাও নেই। প্রতিদিন সকালে স্কুলে যায়। আর স্কুল থেকে ফিরে কিছুক্ষণ টিভিতে কার্টুন দেখে। তারপর গোসল সেরে খেয়ে নেয়। এরপর ঘুম। বিকেলে ঘুম, থেকে উঠে বই নিয়ে পড়তে বসা। এ যেন তার নিয়মিত কাজ।
কিন্তু ক’দিন হলো মেয়েটি মা’কে এসে বলছে শ্রেণী কক্ষে পিছনে বসলে সে ব্ল্যাক বোর্ডে শিক্ষকের লেখা ভালভাবে দেখতে পায় না। মা শুরুতে পাত্তা না দিলেও একদিন লাবনীর শ্রেণী শিক্ষক ফোন করে জানায় বিষয়টি। তারপর দিন লাবনীর মা তাকে নিয়ে যায় নগরীরর ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে। সেখানে চোখের পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে জানা যায়, লাবনীর চোখে ছানি।
মাত্র ছয় মাস সতের দিনে জন্ম হয় মিথিলার। জন্মের পরপরই রাখা হয় ইনকিউবেটরে। জন্মের সময় ওজন ছিল মাত্র ১১২০ গ্রাম। জন্মের একদিন পরই ধরা পড়ে জন্ডিস। এভাবে প্রায় দেড় মাস নগরীরর দুটি হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাসায় নিয়ে আসা হয় মিথিলাকে। বাসার আনার সময় একজন সেবিকা বলেছিলেন চোখের এবং কানের ডাক্তার দেখানোর কথা। কোথায় দেখাব জানতে চাইলে সেই নার্স মিথিলার বাবা-মা’র হাতে এক ডাক্তারের ঠিকানা ধরিয়ে দেন। বাসায় আনার পর মিথিলার বাবার আর্থিক অবস্থা এতই খারাপ ছিল যে সেই মাসে আর ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে পারেননি।
পরের মাসে মিথিলার বাবা বেতন পাওয়ার পরদিনই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। সেদিন অনেক্ষন দেখেন।  এক সপ্তাহ পর সেখানে গেলে বেশ কয়েকজন ডাক্তার মিথিলার চোখ পরীক্ষা করেন। ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। ডাক্তার সামান্য দেখেই বুঝে যান । তখন কর্তব্যরত ওই ডাক্তার যত দ্রুত সম্ভব তাকে ভারতে নিয়ে গিয়ে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেন। কারন মিথিলার রেটিওনাপ্যাথী অব প্রি-ম্যাচিউরিটি সংক্ষেপে ‘আরওপি’ বলা হয়। তা সমস্যা হয়েছিল।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ছয় কোটি শিশু। আর মোট জনসংখ্যার মধ্যে অন্ধত্বের সংখ্যা প্রায় সাড়ে আট লাখ। আর এরমধ্যে শিশুর সংখ্যা অর্থাৎ অন্ধ শিশুর সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশ হাজারের কাছাকাছি।
চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আরিফুর রহমান বলেন, শিশুদের বিভিন্ন ধরনের চোখের সমস্যা দেখা দিতে পারে। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, অনেক শিশু চোখের কাছে নিয়ে বই পড়ে, কাছে গিয়ে টিভি দেখে, পেছনে বসলে ক্লাসের বোর্ড দেখতে পায় না। এসব সমস্যা হলে চশমা ব্যবহার করেই স্বাভাবিক দৃষ্টি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এছাড়াও অনেক শিশুর চোখে ছানি হতে পারে। ছানি রোগ হলেও ভয়ের তেমন কিছু নেই। কারণ ছানি সহজেই অপারেশন করা যায়।
তিনি বলেন, অনেক বাচ্চার চোখ টেরা হয়। এতে করে চোখের দৃষ্টি শক্তি কমে যেতে থাকে। এসব টেরা চোখের অপারেশন করে যত দ্রুত সম্ভব সোজা করা উচিত। এছাড়াও আঘাতজনিত কারণেও অনেক সময় চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
রেটিনা বিশেষজ্ঞ ডা. নাজমুন নাহার বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে শিশু অন্ধত্বের প্রধান কারণ হচ্ছে ভিটামিন-‘এ’ এর অভাব। অনেক বাবা-মা’ই শিশুদের খাবারে ভিটামিন‘এ’ যুক্ত খাবার রাখেন না। এটা তারা করেন অজ্ঞাত এবং অসচেতনতাবসত। মূলত শিশুদের খাবারের মধ্যে সব ধরনের ভিটামিনের খাবার যুক্ত করতে হয়।
তিনি বলেন প্রতিবছর হাজারো শিশু অন্ধ হয়। সময়মতো চিকিৎসা করে এ অন্ধত্বের প্রতিরোধ করা সম্ভব।

সুত্রঃ বাসস।

 

মহাকাশে হাঁটলেন দুই নারী

মহাকাশে হাঁটলেন দুই নারী


ইন্টারন্যাশনাল উইমেন্স


এতদিন ঠিকঠাক পোশাকের অভাব ছিল। সেই আকাঙ্খিত স্পেসসুট তৈরির পরই প্রথমবারের মতো মহাকাশে একসঙ্গে হাঁটলেন দুই নারী। এর আগে বেশ কয়েকবার নারীরা মহাকাশে গেলেও একসঙ্গে হাঁটার সৌভাগ্য হয়নি।

মহাকাশচারী ক্রিস্টিনা কোচ ও জেসিকা মেইর শুক্রবার এই সৌভাগ্য অর্জন করেন বলে জানিয়েছে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা। কোচ এই নিয়ে চারবার আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে গেলেন। অপরদিকে ১৫তম নারী হিসেবে স্টেশনে গেছেন মেইর।

নাসা জানায়, ১৮ অক্টোবর তারা মহাকাশের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন জানিয়েছে, নিউইয়র্ক সময় শুক্রবার সকালে তারা স্টেশনের বাইরে হাঁটেন। প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টাব্যাপী এই প্রোগ্রাম সরাসরি সম্প্রচার করে নাসা। প্রায় ৬১ জন ক্রু তাদের এই মহাকাশে পাড়ি দেয়ার বিষয়টি দেখভাল করছেন।

নাসা বলছে, এটি তাদের ২০২৪ সাল নাগাদ চাঁদে মানুষ পাঠানো এবং নারীদের এ ক্ষেত্রে আরও উৎসাহিত করার পদক্ষেপ।
সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

মাসিক চলাকালে কিশোরীদের পরিমাণমত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে

মাসিক চলাকালে কিশোরীদের পরিমাণমত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে


স্বাস্থ্যকথা


যে কোন মানুষের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য প্রয়োজন। সু-স্বাস্থ্য নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য মানুষের পুষ্টিকর খাদ্যের বিকল্প নেই। তবে তারপরও প্রতিটি মানুষের জন্য বিশেষ সময়ে পুষ্টিকর খাদ্য পরিমাণমত না পেলে দেখা দিতে পারে বিভিন্ন ধরনের অসুখ-বিসুখ। বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিকালে পুষ্টিকর খাদ্য অবশ্যই দরকার। যেমন চৌদ্দ বছর বয়সী মারিয়া গত কয়েক মাস ধরে প্রায় সময় অসুস্থ থাকছে। আজ জ্বর তো কাল পেট ব্যাথা এমন অসুখ যেন তার নিত্যদিনের সঙ্গী। অসুখের কারণে প্রতি মাসে প্রায় দিনই স্কুল কামাই যায় তার। একেবারে কিছুই খেতে চায় না মেয়ে। না খেয়ে শরীর হয়ে গেছে শুকনো কাঠ। মুখেও ব্রণ হয়েছে বেশ।
এ রকম কয়েকদিন পরপর অসুস্থ থাকায় মা একদিন নিয়ে গেলেন এক গাইনী ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার রোগের ধরন আর মারিয়ার সাথে কথা বলে বুঝতে পারলেন, সে আসলে অপুষ্টিতে ভুগছে।
ডাক্তার জানান, মূলত মাসিক শুরু হওয়ার পর থেকে তার এ ধরনের সমস্যা। এই বয়:সন্ধিকালে তার যে ধরনের খাবার দরকার তা সে খায়নি। সে কারণেই শরীর বারবার খারাপ হয়ে যায়।
গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. মনোয়ারা বেগম বলেন, বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েদের মধ্য বেশ পরিবর্তন হয়। এ সময় তাদের মনের অবস্থার যেমন পরিবর্তন হয় তেমনি শারীরিক পরিবর্তনও হয়। মূলত ১১ বছর থেকে ১৮ বছর সময়কালকে বয়:সন্ধিকাল বলে। এসময় তাদের হরমোন নি:সরণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
তিনি বলেন, কিশোরীদের মাসিক শুরু হওয়ার সময় স্তনগ্রন্থি বৃদ্ধি পায়। আর মাসিকের সময় প্রায় কিশোরীদের ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণ এবং বেশী সময় ধরে রক্তক্ষরণ হয়। আর এজন্যই এ সময় কিশোরীদের পরিমাণমত পুষ্টিকর খাবার খেতে হয়। অন্যথায় কিশোরী অপুষ্টিসহ বিভিন্ন ধরনের রোগে ভুগতে থাকে।
এ সময় কিশোরীদের মুখে বেশ ব্রণও দেখা যায়। আর তাই ব্রণ যাতে না হয় সেজন্য প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হবে। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণ শাকসব্জি এবং আঁশযুক্ত খাবার খেতে দিতে হবে কিশোরীদের।
ডা. মনোয়ারা বলেন, এই বয়ঃসন্ধিকালে বিশেষ করে অনেক কিশোরীই অতিরিক্ত ডায়েট করতে চায়। কিন্তু এই অতিরিক্ত ডায়েটিং এর ফলে মেয়েরা অপুষ্টিতে ভুগতে থাকে। অনেক মায়েরাও তাদের সন্তানদের এই অতিরিক্ত ডায়েটিং’ এ সমর্থন দিয়ে থাকে। যার ফলে ওই কিশোরী বিভিন্ন ধরনের সমস্যা যেমন ভিটামিনের অভাব, রক্তশূন্যতায় ভুগতে থাকে। এজন্য প্রত্যেকের উচিত নির্দিষ্ট পরিমাণ পুষ্টিসম্মত খাবার খাওয়া।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালের গাইনী এন্ড অবস্ বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ডা. রোকেয়া বেগম বলেন, বয়:সন্ধিকালে সবার শরীর এবং মনের ব্যাপক পরিবর্তন হয়। আর এ কারণেই অভিভাবকদের এ সময় খুব সচেতন থাকতে হয়। এ সময় কিশোরীদের কী কী খাবার দিতে হয় তা অনেক বাবা-মা’ই জানেন না। মূলত অসচেতনতার কারণেই এমন হয়। এই সময়কালে কিশোরীদের খাবারের তালিকায় কী কী রাখতে হবে তা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে সে অনুযায়ী চলাই উত্তম।
তিনি বলেন, একটা বয়সে বিশেষ করে ১৮ বছর থেকে ২১ বছর বয়সের মধ্যে মানব দেহের হাড় বৃদ্ধি পায়। পরে এই হাড় সাধারণত আর বাড়ে না। তাই এই সময় প্রচুর ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার থেতে হবে। শাক-সব্জি, ছোট মাছ, ডিম, দুধ, দই, বাটারজাতীয় খাবার খেলে হাড় বৃদ্ধি পায়। আর কিশোরীদের খাবারের তালিকায় এসব খাবারই রাখতে হবে।
ডা. রোকেয়া বলেন এই বয়ঃসন্ধিকালে সঠিক পুষ্টির ভারসাম্য রক্ষা খুবই দরকার। কিন্তু দেখা যায়, কৈশোরেই খাদ্যে অনিয়ম, অপুষ্টি বা অতিপুষ্টি, ওজনের ভারসাম্য নষ্ট হয় বেশি। এর প্রতিক্রিয়া পড়ে পরবর্তী সময়ে, দেখা দেয় নানা ধরনের সমস্যা। এ ছাড়া বয়ঃসন্ধিতে কিশোরীদের কিছু পরিচিত সমস্যার সঙ্গে খাবারের সম্পর্ক রয়েছে।
তিনি বলেন, যখন কিশোরীদের নিয়মিত মাসিক শুরু হয় তখন প্রচুর পরিমাণে ও বেশি সময় ধরে রক্তক্ষরণ হয়। প্রয়োজনীয় খাবার না খেলে দেখা দেয় এনিমিয়ি বা রক্তশূন্যতা। কিশোরীদের প্রতি মাসে লৌহ বা আয়রনের চাহিদা ছেলেদের তুলনায় অনেক বেশি। তাই মাংস, কলিজা, শাক, মাছ, ডিম বেশি করে খেতে হবে। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণ ফল যেমন কলা, আনার, পেঁয়ারা, খেজুর থেতে হবে।