All posts by Oporajita

 

মোরা জোনাকি হতে চাই……৫

মোরা জোনাকি হতে চাই……৫


আফরোজা হাসান


মাঝে মাঝে মুখে বলা হাজারো শব্দরাও যা করতে পারে না, মৃদুমন্দ স্পর্শ তারচেয়ে অনেক বেশি কাজ করে যায়। উদভ্রান্তের মত সামনে বসে থাকা ছেলেটিকে দেখে যায়েদের এই কথাটিই মনেহলো, এখন ওর কোন মৌখিক স্বান্তনার নয়, বরং আত্মিক অবলম্বন প্রয়োজন। ‘আমি আছি তোমার পাশে সর্বাবস্থায়’ অত্যাধিক শক্তিশালী একটি অ্যান্টিডোট হাল ছেড়ে দেয়া মানুষের জন্য। যার উপর ভর করে তারা বেড়িয়ে আসতে পারে গর্ত থেকে। সেই গর্ত যেটা কোন না কোন ভাবে তারা নিজেরাই খোঁড়ে নিজের জন্য। এই ছেলেটা যেমন জেনে বুঝে এমন একটি মেয়েকে বিয়ে করেছিল যার চরিত্রে ছিল জাহিলিয়াতের ছায়া। ছেলেটির বিশ্বাস ছিল ভালোবাসা দিয়ে মেয়েটিকে বদলে দেবে। ভেতরে অট্টহাসি পাক দিয়ে উঠলো যায়েদের। নাটক-সিনেমা-গল্প-উপন্যাসই বর্তমান জেনারেশনের চিন্তা-ভাবনাগুলোকে মনিটর করছে। ভালোবাসা দিয়ে বিশ্ব জয় করার বিভ্রান্তিকর স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছে এরা। যে স্বপ্নে এদেরকে টেনে নিয়ে অন্ধকারে নিমজ্জিত করে। তবে এটা ঠিক যে ভালোবাসা দিয়েই জয় করা সম্ভব জগতটাকে। তবে সেটা মানুষকে ঘিরে মানুষের ভালোবাসা নয়। স্রষ্টাকে ঘিরে আবর্তিত ভালোবাসার দ্বারা।

আমি বাঁচতে চাইনা ডক্টর। প্লিজ আমাকে মরে যেতে দিন। বেঁচে থেকে কি লাভ আমার?

মরে গিয়ে কি লাভ তোমার? প্রশ্ন করলো যায়েদ।

প্রশ্নটা শুনে স্থির দৃষ্টিতে যায়েদের দিকে তাকালো সোহান।

যায়েদ সোহানের হাতে হাত রেখে খুব স্নেহ মাখা স্বরে বলল, হাল ছেড়ে দেবার জন্য, জীবনের উপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবার জন্য, মৃত্যুকে বরণ করে নেবার জন্য অনেক কারণ হয়তো তোমার কাছে আছে। কিন্তু তুমি কি জানো ঘুরে দাঁড়াবার জন্য, জীবনকে উপভোগ করার জন্য, বেঁচে থাকাটাকে কাজে লাগানোর জন্য শুধু একটা কারণই যথেষ্ট? জানতে চাও সেই কারণটা কি?

হ্যা ডক্টর আমি জানতে চাই।

এটাই সেই কারণ। এই যে তুমি জানার ইচ্ছে পোষণ করলে। এই ইচ্ছেটাই সেই কারণ। যা কিছু তোমার জীবনে ঘটেছে এটাই শেষ নয়। আরো অনেক কিছু বাকি আছে তোমার জীবনে। সেসব কি জাস্ট সেটা জানার ইচ্ছেটা ধরে রাখতে হবে তোমাকে। ইচ্ছে কিভাবে ধরে রাখবে সেটার পেছনেও কারণ আছে।

কি কারণ?

হাত দিয়ে ঈশারায় কিছুটা দূরে দাড়িঁয়ে থাকা মাশরুফকে দেখিয়ে যায়েদ বলল, গতরাতে তোমাকে হসপিটালে নিয়ে আসার পর থেকে এক মূহুর্তের জন্যও স্থির হয়ে বসেনি মাশরুফ। ওর ডিউটি টাইম অনেক আগেই শেষ। তবুও বসে আছে শুধু তোমাকে ভালোবাসে, তোমার কেয়ার করে সেজন্য। তোমার বাবা সারারাত হসপিটালের ওয়েটিং হলে পায়চারী করে কাটিয়েছেন। তোমার মা জায়নামাজে বসে এখনো চোখের পানি ফেলছেন। তোমার ফ্যামেলির মানুষেরা একটু পর পর মাশরুফকে ফোন দিয়ে জানতে চাইছে এখন তোমার কি অবস্থা! আর যার জন্য তুমি জীবন দিতে যাচ্ছিলে সে অন্য কারো হাত ধরে সুখের সাগরে ভেসে বেড়াচ্ছে। এখন তুমি ভেবে দেখো জীবনের কাছে তোমার প্রাপ্তি বেশি নাকি অপ্রাপ্তি? তোমার ভালোবাসার ভান্ডার ভারি নাকি শূন্যতার? তুমি এমন একজনের জন্য জীবন দিতে যাচ্ছিলে যার কাছে তোমার থাকা, না থাকা কোন স্পেশাল তো দূরে থাক নূন্যতম গুরুত্বও রাখে না। তাহলে তুমি সেই মানুষগুলোর জন্য কেন বেঁচে থাকতে পারবে না, তোমার চলে যাওয়া যাদের জীবনে অপূরণীয় শূন্যতার তৈরি করে যাবে?

দু’চোখের কোন বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে শুরু করলো সোহানের। কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, আমি কখনো এভাবে ভেবে দেখিনি ডক্টর।

যায়েদ হেসে বলল, চারপাশের সবকিছু মিলিয়ে ভেবে দেখে না বলেই তো মানুষ এতটা অসহায় ফিল করে যে, নিজেই নিজেকে মৃত্যুর মুখে ছুঁড়ে দেয় নির্দ্বিধায়। সমস্যাটা কি জানো? আমার ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু বেশির ভাগ সময়ই আমরা যা চাই, যা পছন্দ করি সেটার মধ্যে নিবদ্ধ থাকে। তাই সে জিনিসটা যখন আমরা না পাই তখন খুব অসহায় ফিল করি। মনেকরি বেঁচে থাকার জন্য আমার কাছে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। অথচ কেন্দ্রবিন্দু থেকে দৃষ্টিটাকে একটু খানি সরালেই জগতের আনন্দযজ্ঞের ভরপুর আয়োজনের দেখা মিলে। চলো আমার সাথে তোমাকে দেখাচ্ছি।

হাত বাড়িয়ে সোহানকে বেড থেকে নামতে সাহায্য করলো যায়েদ। এরপর ধরে ধরে নিয়ে এলো হসপিটালের লম্বা বারান্দায়। সামনেই হসপিটাল সংলগ্ন বিশাল পার্ক। হসপিটালের ইনফান্টিল সেকশনটাও ঐদিকেই। ফলে পার্ক জুড়ে ছড়ানো ছিটানো ছিল জীবন্ত, চলন্ত, ছুটন্ত নানা বয়সী, নানান রঙের ফুলে। হাত উঁচু করে ছোট্ট একটা শিশুকে দেখিয়ে যায়েদ হাসি মুখে বলল, দেখো ঐ বেবীটাকে। মেবি মাত্র এক পা দু পা করে চলতে শিখেছে। হাঁটতে গিয়ে যাতে পড়ে না যায়, ভারসাম্য যাতে ঠিক থাকে সেজন্য দু’হাত কিভাবে দু’পাশে ছড়িয়ে দিয়েছো দেখেছো? ওকে কিন্তু এটা কেউ শেখায়নি। নিজেকে পতনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য নিজেই এটা উদ্ভাবন করে নিয়েছে। ঠিক তেমনি প্রতিটি মানুষের মধ্যেই নিজেকে সামলে নেয়ার, নিজেকে বোঝানোর, নিজেকে আনন্দ দেবার ক্ষমতা থাকে। কিন্তু যত আমরা বড় হতে থাকি নিজের ক্ষমতাগুলোকে অবমূল্যায়ন করতে থাকি। অন্যের উপর নির্ভরশীলতা বাড়তে থাকে আমাদের। একটা সময় আমাদের অবস্থা এতই নাজুক হয়ে দাঁড়ায় যে অন্যেকে অবলম্বন না করে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাটাই অসম্ভব হয়ে যায় আমাদের জন্য। জন্মের সময় প্রতিটি মানব মনে এক টুকরো স্বর্ণলতা আর একটি বটবৃক্ষের চারা থাকে। আমাদের মন বটবৃক্ষ হবে নাকি স্বর্ণলতা এটা নির্ভর করে কোনটিকে বেড়ে উঠার অনুকূল পরিবেশ দেয়া হচ্ছে সেটার উপর। আফসোস হচ্ছে, বেশির ভাগ সময়ই আমাদের মন স্বর্ণলতা রূপে বেড়ে ওঠার পরিবেশ পায়। তাই যেই বৃক্ষকে আঁকড়ে ধরে সেটা সরে গেলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে।

সোহানের মনের অন্ধকার আবেগের ঘরে সূর্য কিরণ মতোই স্পর্শ রাখলো যায়েদের কথাগুলো। বেশ অনেকক্ষণ নীরবতার পর বলল, আমি বুঝতে শুরু করেছি ডক্টর। আসলে কোনদিন কেউ এমন করে ভাবতে শেখায়নি।

যায়েদ হেসে বলল, এখন তো শিখলে ভাবতে। আর কখনোই এমন বোকামী করবে না। মনে রাখবে তোমার জীবনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পৃথিবীতে আর কিছুই নেই তোমার কাছে। জীবন নেই মানে তুমি নেই। আর তুমি নেই মানে জগত থাকা আর না থাকার মাঝে কোন পার্থক্য নেই। কিন্তু তুমি থাকলে জগতের অস্তিত্ব যেমন থাকবে। ঠিক তেমনি নিয়ম মেনে বদলেও যাবে পরিবেশ-পরিস্থিতি সবকিছু। তাই সবসময় নিজের জন্য বাঁচতে চেষ্টা করবে। কারণ তোমার বেঁচে থাকাটাকে সৌন্দর্যময় করার জন্যই আসলে নানান উপকরণের প্রয়োজন। এখন উপকরণের যেই প্যাকেজ তুমি নিজের জন্য পছন্দ করেছো। সেই প্যাকেজ না পাওয়ার অর্থ এটা নয় যে, জীবনটাই বৃথা। খুব পছন্দের বীফ কারি না পেলে চিকেন কারি দিয়েও তো খাবারের চাহিদা মেটানো যায়। তাই না?

জ্বি ডক্টর।

সো টিনা চলে গিয়েছে যাক না। তুমি ইনা না মিনা কাউকে খুঁজে নিলেই তো হয়ে যাচ্ছে।

এই প্রথম হাসি ফুটে উঠলো সোহানের মুখে। বেশ শব্দ করেই হেসে ফেললো।

যায়েদও হেসে বলল, তোমার হাসি অনেক সুন্দর মাশাআল্লাহ। এই হাসিকে কারো মোহতাজ করো না। সময় লাগলে নিজেকে উজাড় করে সময় দাও। তারপর নতুন করে জীবনটাকে সাজিয়ে নাও। তবে এবার শুধু দৈহিক সৌন্দর্য দেখে জীবনসাথী নির্ধারণ করো না। মানসিক সৌন্দর্য বিবর্জিত দৈহিক সৌন্দর্যটা অ্যাসিডের মতো ভয়ঙ্কর। যা অন্যের সাথে সাথে ব্যক্তির নিজ আত্মাকেও জ্বালিয়ে বিকৃত করে দেয়। তাই বিকৃত মন থেকে সদা সাবধান থাকবে। আর সবসময় মূল্যায়ন করতে চেষ্টা করবে তোমার প্রতি ভালোবাসা পুর্ণ মনগুলোকে। তাকিয়ে দেখো তোমার পেছনে।

ঘুরে তাকিয়ে বাবাকে আসতে দেখে এক মূহুর্তের জন্য থমকে গেলো সোহান। তারপর সমস্ত দুর্বলতা ভুলে গিয়ে ছুটে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো। একে অন্যেকে বুকে জড়িয়ে ধরে পিতা-পুত্রের সম্মিলিত অশ্রু দেখে জ্বালা করে উঠলো যায়েদের চোখও। আলতো করে চোখের ভেজা কোন মুছে নিয়ে মূহুর্তেই সামলে নিলো নিজেকে। পেশেন্টদের আনন্দ-বেদনা সবসময়ই সিক্ত করে দেয় তার মনকে।

নিজের কেবিনে ফিরে যাবার উদ্দেশ্যে ঘুরে দাঁড়াতেই থমকে গেলো যায়েদ। দেখতে পেলো করিডোরের দেয়াল ঘেঁষে দাড়িয়ে মুখে হাসি কিন্তু চোখ ভরা অশ্রু নিয়ে সোহান আর ওর বাবার দিকে তাকিয়ে আছে একটি মেয়ে। অদ্ভুত এক মায়ালোয় ছোঁয়া অভিব্যক্তি খেলা করছিল মেয়েটির চেহারা জুড়ে। কয়েকটি মূহুর্তের জন্য নিজের দৃষ্টিকে সংযত করার কথা ভুলে গেলো যায়েদ। মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে ছিল হাসি-কান্নার সংমিশ্রণে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটির দিকে। কিন্তু যায়েদের দিকে চোখ পড়তেই নিজেকে সামলে নিলো মেয়েটি। চোখের কোনে জমে থাকা অশ্রু মুছে নিতে নিতে ঝট করে পেছন ফিরে ঘুরে দাঁড়ালো যায়েদের দিকে।

একরাশ লজ্জা ঘিরে ধরলো যায়েদকে। আর এক মূহুর্তও না দাঁড়িয়ে হাঁটতে শুরু করলো কেবিনের দিকে। এই রকম একটা আচরণ কেমন করে ঘটলো তার দ্বারা? ভাবতেই তিক্ত অপরাধবোধ ঘিরে ধরলো মনকে। মেয়েটি কি ভাবছে তার সম্পর্কে? নিশ্চয়ই খুব নেতিবাচক কিছুই ভাবছে? পরমূহুর্তেই আবার নিজেকে সামলে নিলো যায়েদ। নিজেই নিজেকে বলল, মেয়েটির কথা ভেবে একই ভুল তুমি পুনঃপুনঃ করছো। শয়তানকে সুযোগ করে দিচ্ছো অসচেতনার ভুলের ক্ষনটিকে সচেতন পদস্ফলনে রূপান্তরিত করার। কোন জিনিসের কথা বার বার মনে করিয়ে দিয়ে সেটার প্রতি মনকে দুর্বল করে পাপের পথে মানুষকে পরিচালিত করা শয়তানের একটি কৌশল। পেশেন্টদেরকে প্রায়ই এই কথাটা বলে যায়েদ। আজ নিজেই সেই পথে চলতে যাচ্ছিলো। নিজেকে সামলে নিয়ে আল্লাহর ক্ষমা এবং সঠিক পথে অবিচল রাখার হেদায়াত প্রার্থনা করতে করতে দ্রুত পায়ে কেবিনের দিকে ছুটলো।

চলবে—
পর্ব-৬

 

‘করোনা’ সন্তানের প্রতি খেয়াল রাখছেন তো

 

‘করোনা’ সন্তানের প্রতি খেয়াল রাখছেন তো


স্বাস্থকথা


করোনার মাঝে আপনার সন্তানের বাড়তি যত্ন নিন।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসে ছোট শিশুরা সাধারণত আক্রান্ত হয় না বা শিশুরা ঝুঁকিমুক্ত— এমন ধারণা অনেকের আছে। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো বলছে ভিন্ন কথা। এসব গবেষণায় জানা গেছে, শিশুরাও করোনায় আক্রান্ত হতে পারে। তবে তাদের ক্ষেত্রে মৃদু উপসর্গ দেখা দেয়, যার সঙ্গে সাধারণ ফ্লুর পার্থক্য করা যায় না। শিশুদের যদি অন্য শারীরিক জটিলতা থাকে (যেমন— হৃদযন্ত্রের সমস্যা, টাইপ-১ ডায়াবেটিস, হাঁপানি ইত্যাদি), তবে করোনা–আক্রান্ত হলে তাদের অবস্থা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। তাই শিশুদের বিষয়েও সতর্ক হওয়া দরকার।

এ ক্ষেত্রে এই কাজগুলো অনুসরণ করে আপনার সন্তানকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে পারেন:

 সতর্ক

করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত শিশু নিজেরা তেমন অসুস্থ না হলেও তাদের মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়ায়। কাজেই তাদের মাধ্যমে পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্য (দাদা-দাদি, নানা-নানি) এবং ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিরা সংক্রমিত হতে পারেন। এজন্য শিশুদের মধ্যে উপসর্গ দেখা দিলে সতর্ক হতে হবে। তবে এতে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত না হয়ে তাদের বাড়িতে রেখেই শুশ্রূষা করতে হবে। কারণ, শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণত সংক্রমণের উপসর্গ থাকে মৃদু। তবে খেয়াল রাখতে হবে, তাদের মাধ্যমে যেন ভাইরাসটি না ছড়ায়।

শিষ্টাচার শেখানো

শিশুদের হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার শেখাতে হবে। তবে তা ধমক দিয়ে নয়, বুঝিয়ে বলতে হবে। এই সময় শিশুদের বাড়ির বাইরে বের হতে দেওয়া উচিত হবে না। বাইরে থেকে আসা কারও সংস্পর্শ থেকেও তাদের দূরে রাখতে হবে।

পুরোপুরি আলাদা রাখা জরুরী

বাড়ির বয়স্ক সদস্যদের পুরোপুরি আলাদা করে রাখতে হবে। শিশুরা যদি কোনো কারণে সামান্য অসুস্থও হয়, তারপরও তাদের বয়স্ক আত্মীয়ের কাছে যেতে দেওয়া যাবে না। শিশুদের নিয়ে বয়োবৃদ্ধ মা-বাবাকে দেখতে যাওয়ারও এড়িয়ে চলুন। তবে আলাদা করে ফেলার বিষয়টি শিশুদের মনের ওপর চাপ ফেলতে পারে। তারা অসহায় বোধ করতে পারে, ক্ষুব্ধ হতে পারে। তাই তাদের টেলিফোন, স্কাইপে, হোয়াটস অ্যাপ বা মেসেঞ্জারের মাধ্যমে দাদা-দাদি, নানা-নানির সঙ্গে কথা বলার ও সময় কাটানোর সুযোগ করে দিন।

সন্তানকে বুঝিয়ে বলা

কেন প্রিয়জনদের আলাদা করে রাখতে হচ্ছে, তা সন্তানকে বুঝিয়ে বলুন। এমনকি প্রয়োজনে মা-বাবাকেও যে যখন-তখন আলাদা হওয়ার প্রয়োজন হতে পারে, সে বিষয়েও আগেভাগেই জানিয়ে রাখুন।

শিশু ঝুঁকিপূর্ণ আছে কিনা জানা

যেসব শিশু ঝুঁকিপূর্ণ, যেমন যাদের ছোটবেলা থেকে হৃদযন্ত্রের সমস্যা, হাঁপানি আছে কিংবা যারা টাইপ-১ ডায়াবেটিসে ভুগছে, যারা কিডনি বা কোনো রোগের কারণে স্টেরয়েড ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমায়— এমন অন্য ওষুধ সেবন করে, তাদের জ্বর-কাশিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিন। অসুস্থ হওয়ামাত্র চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করুন।

অধ্যাপক মো. সেলিম শাকুর, কনসালট্যান্ট, শিশু ও নবজাতক বিভাগ, ইউনাইটেড হাসপাতাল

সুত্রঃ দৈনিক অধিকার।

 

চোখে মুখে প্রশান্তির হাসি

চোখে মুখে প্রশান্তির হাসি


ফাতেমা শাহরিন


ইদানীং বসে বসে, শুয়ে শুয়ে, ঘুমন্ত অবস্থায় এমনকি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখি আমি। তবে আজকের স্বপ্নটা আমার, একদমই অন্যরকম। কিছুদিন আগে একটা বই পড়লাম অন্যরকম গল্পগুলো ঐ বইতে কিছু মজার মজার আইডিয়া দেওয়া হয়েছে। একটা আইডিয়া নিয়ে তো আমার বড় বোন স্কুলের শিক্ষিকা ওকে বললাম। যে তুমি তো তোমার ক্লাসের স্টুডেন্টকে চাইলে বলতে পারো যে ডিসেম্বরে যখন ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হবে। সবাই ওদের পুরানো বই, খাতা আর কলম, পেন্সিলগুলো তোমার কাছে জমা দিবে। এর জন্য তুমি সবাইকে চকলেট গিফট করবা। এরপর সব বাসায় আনবা। আমরা খাতা থেকে যে পেজে লেখা নাই তা নিয়ে নতুন কিছু খাতা বানিয়ে আমাদের আশেপাশের পথস্কুল বা এতিমখানার বাচ্চাদের খাতা বানিয়ে দিতে পারি।

আরে আজকের স্বপ্নটা বেশি মারাত্মক। শুনুন আপনিও প্রশংসা করবেন। এই যে রাস্তাঘাটে যে সব অসহায়, ফকির বলছি বা রিকসা চালক বা ছোট ছোট ব্যবসা করা মানুষ রাস্তার ধারে ঘুমান। একটা ছোট্ট নির্দেশনা দিয়েছে, আমি টিভির খবর দেখি না শুধু নিচে লেখা আর বেকিং নিউজ পড়ি। লেখাটা দেখলাম বেকিং নিউজে। গুলশান, বারিধারা গুলিস্তান উত্তরা, আর কমলাপুর এলাকার প্রায় ২৫ টি মসজিদকে ধর্মমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন যে ১০ টি মসজিদে ১৪ দিনের জন্য পথে থাকা মেয়ে মানুষরা থাকবে। আর বাকী ১৫ টায় ছেলে মানুষরা থাকবে আর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাদের দুবেলা দু-মুটো ভাত দেবার ঘোষণা দিয়েছেন। আর ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে ওয়াদা করেছেন ধর্মমন্ত্রী যে, যে সকল মসজিদে ওনারা থাকবেন তা ভালো ভাবে গোসল করে জনগণের কাছে তুলে দিবেন।
আমি দেখছি বিশাল বিশাল মসজিদ গুলোতে ঢুকার সময় মেয়েরা পর্যন্ত গোসল করে পরিষ্কার হয়ে ঢুকছে। নিজেদের দেওয়া জায়গাটাতে আরাম করে বসেছেন। কেউ কেউ ফ্যানের বাতাসে নিজের চুল শুকাচ্ছেন। কেউবা আপন মনে আল্লাহকে ডাকছে আবার আবার কেউ কেউ ভগবানকেও ডাকছে। ওখানে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টানের ভেদাভেদ নেই। সবাই আল্লাহর কাছে দুআ করছেন, দেশের প্রধানমন্ত্রীর জন্য।
এ যাত্রায় বেঁচে গেলো মনে হয় দেশটা। আমার চোখে মুখে প্রশান্তির হাসি।

 

বিনামূল্যে জরুরি মানসিক স্বাস্থ্যসেবা

বিনামূল্যে জরুরি মানসিক স্বাস্থ্যসেবা


স্বাস্থ্যকথা


সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত আমরা আছি অনলাইন ভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে। আমাদের টিমে আছে কাউন্সেলিং সাইকোলজি, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি, এডুকেশনাল সাইকোলজি, সাইকোলজি, ও অন্যান্য মানসিক স্বাস্থ বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবীরা। স্বেচ্ছাসেবীদের অংশগ্রহণ ও সেবাগ্রহীতার চাহিদার ভিত্তিতে পরবর্তীতে সেবার সময়সীমা বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে।

সময় এখন সচেতন থাকার, দুরে থেকেও কাছে থাকার, মানসিকভাবে সুস্থ থাকার, আসন্ন মানসিক রোগকে প্রতিরোধ করার।

বিস্তারিত পেজে…
আমাদের সেবা সমুহ:
১। অডিও কলের মাধ্যমে সাপোর্ট
২। ভিডিও কলের মাধ্যমে সাপোর্ট
৩। লিখিত বার্তার মাধ্যমে সেবা (চ্যাট)
৪। সচেতনতা ও মনোসামাজিক শিক্ষামূলক কন্টেন্ট
৫। প্রশ্ন উত্তর এর মাধ্যমে সাপোর্ট।

বাংলাদেশ কিংবা বাংলাদেশের বাইরে অবস্থানরত যেকোন বাংলা ভাষাভাষী আমাদের এই ফ্রি সেবা সমুহ নিতে পারেন।

সেবার জন্য ফর্মটি ফিলাপ করতে হবে: https://forms.gle/ra2Bva4Jf5eSLfi99

অথবা কল করতে পারেন এই নাম্বারগুলো তে 01515625217, 01730443737

আমরা আপনাকে যুক্ত করে দিব একজন মানসিক সহায়তা বিশেষজ্ঞের সাথে।

#covid19 #mentalhealtmatters #crisissupport #imsteam

 

নারী নির্যাতন: ভালোবেসে বিয়ে, অতঃপর পরকীয়া-নির্যাতন সত্ত্বেও কেন মানিয়ে চলা?

নারী নির্যাতন: ভালোবেসে বিয়ে, অতঃপর পরকীয়া-নির্যাতন সত্ত্বেও কেন মানিয়ে চলা?


নারী সংবাদ


নিজ পরিবারেই নির্যাতনের শিকার হন নারীরা।আয়েশা আক্তার (ছদ্মনাম)। পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এই নারী বিশ বছর আগে ভালোবেসে যাকে বিয়ে করেছিলেন, ১৫ বছর পর সেই ভালোবাসার মানুষেরই ভিন্ন এক রূপ আবিস্কার করেন তিনি।

মিসেস আক্তারের ভাষায়, তার ‘সুখের সংসার’ হঠাৎ করেই এলোমেলো হয়ে যায়। কারণ, তার স্বামী অফিসের এক নারী কলিগের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন।

“আমি হঠাৎ করেই দেখলাম প্রায় প্রতি সপ্তাহেই সে শুক্রবার-শনিবারে বাইরে থাকতে শুরু করেছে।”

তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবারে অনেক রাত করে বাসায় ফিরছে। আগে কখনো সে এ রকম করেনি। সংসারে ঠিকমতো খরচ দিচ্ছে না। এরপরই আমি তার পরকীয়া প্রেমের বিষয়টি আবিস্কার করি।”

“একদিন তার গাড়িতে আমি নতুন একটা মোবাইল খুঁজে পাই। সেই মোবাইল দিয়ে ও লুকিয়ে লুকিয়ে মেয়েটার সঙ্গে কথা বলতো। এমনকি ওরা ভায়াগ্রা ট্যাবলেট খেয়ে কিভাবে ফিজিক্যাল রিলেশন করেছে সেগুলোও চ্যাটিংয়ে আলোচনা করতো।”

মিসেস আক্তার বলছেন, তিনি যখন এর প্রতিবাদ করেছেন তখন থেকেই মূলতঃ তার উপর স্বামীর অত্যাচার শুরু হয়।

মারধর, গালাগালি, সংসারের খরচ বন্ধ করে দেয়াসহ নানারকম অত্যাচার হয়েছে তার উপর।

“সে পুরুষ মানুষ এবং অনেক টাকা বেতন পায়। আমি কিছুই না। সে জাস্ট এটাই বোঝায় আমাকে। এবং তার ভাবভঙ্গি হচ্ছে, আমি যা ইচ্ছা করবো, পারলে তুই কিছু করে দেখা।”

“আমি এসব কথা পরিবারকে বলেছি, ওদের পরিবারকেও বলেছি। ওরা বুঝিয়েছে, কিন্তু কোন কাজ হয়নি। মামলা করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সবাই নিষেধ করেছে। দুটো বাচ্চা নিয়ে কোথায় যাবো তাই নির্যাতন সহ্য করেই এখনো সংসার করে যাচ্ছি।”

বাংলাদেশে স্বামীর ঘরে কিংবা নিজ পরিবারে নারীদের নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতা নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরেই এমন অবস্থা চললেও অনেকক্ষেত্রে নির্যাতিতরাই এর প্রতিবাদে খুব একটা আগ্রহ দেখান না।

কিন্তু বাংলাদেশে যেসব নারী এসব নির্যাতনের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চান, তারাও পরিবার কিংবা সমাজকে পাশে পাচ্ছেন না ঠিক মতো।

সুত্রঃ বিবিসি।

 

করোনায় আতংকিত হবেন না, দাফন কাফন করুন

করোনায় আতংকিত হবেন না, দাফন কাফন করুন


ডা. শাকিল আহমেদ


👉 ইদানিং নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে করোনা রোগে মৃত ব্যক্তির লাশ দাফনকাফন নিয়ে। তাই বিষয়গুলো পরিষ্কার হওয়া দরকার।
👉 জেনে রাখুন মৃতব্যক্তির দাফনে করোনা ছড়ানোর কোনই সম্ভাবনা নেই। কথাটা ১০০% সত্য। করোনা ছড়ায় মানুষের শ্বাস কাশ আর তার সিক্রেশন থেকে। কাফনে জড়ানো মৃতব্যক্তি শ্বাসও নেয় না, তার সিক্রেশনও কোথাও থাকে না। দাফন করে দিলে মৃত ব্যক্তির শরীরের সব ভাইরাসও মরে যাবে। তাই লাশ দাফন ১০০% নিরাপদ। তবে সামান্য ঝুঁকি থাকে লাশ গোসল দেওয়ার সময়। তাও জীবিত শ্বাসকষ্ট জনিত রুগীর তুলনায় ০১% ও নয়। তার কারন মৃত ব্যক্তি শ্বাস নেয় না তাই সে বাতাসে জীবানু ছড়ায় না। কেবল মৃত্যুর পর যদি তার নাক থেকে সিক্রেশন বের হতে থাকে বা গায়ে তা লেগে থাকে তাহলে তা ইনফেকটিভ। তাই গোসল করানোর সময় গ্লভস সহ ফুল পিপিই পড়ে সাবান দিয়ে ডলে গোসল করালে আর প্রয়োজনে নাকে তুলো দিয়ে দিলে আর কোন ঝুঁকি থাকে না। কেবল গোসল শেষে পুরো জায়গা ব্লিচিং সল্যুশন দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে আর যিনি গোসল করাবেন তিনি সাবান দিয়ে নিজে গোসল করে নিবেন। ব্যস হয়ে গেল ১০০% নিরাপদ কাফনে জড়ানো মৃতদেহ। এটা এখন যে কোন জায়গায় দাফন করতে কোন সমস্যা নেই। মনে রাখবেন এর চেয়ে হাজার গুন অনিরাপদ হচ্ছে রুগীর ওরো ফ্যারিঞ্জিয়াল আর নেসোফ্যাঞ্জিয়াল সোয়াব সংগ্রহ, সিভিয়ার নিউমোনিয়ার রুগীকে ইন্ট্যুবেট করা, সাকশান দেওয়া বা ব্রংকিয়াল টয়লেটিং করা যা পৃথিবীর বহু চিকিৎসক হরহামেশাই ঝুঁকি নিয়ে করে যাচ্ছেন।
অতএব আতংকিত হবেন না। নিজের আপনজনকে নিরাপদে স্রদ্ধা আর ভালোবাসা দিয়ে দাফন কাফন করুন।
👉 তবে খেয়াল রাখবেন যে জীবিত অবস্থায় যারা রুগীর সংস্পর্শে এসেছিলেন তাদের মধ্যে করোনা আগেই সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারে তাই তারা কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন এবং লাশ দাফনকাফনে কোন ভাবেই জড়াবেন না। অন্যদের লাশ দাফনে কোন সমস্যা নেই।
👉 অযথা ভীত হবেন না। নিরাপদে থাকুন সুস্থ থাকুন। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। আমিন।
.
Dr. Shakeel Ahmed Sir (Assistant Professor, microbiology, CMC)

 

করোনা ভাইরাসঃ আসুন কিছুটা আতঙ্কিত হই!

করোনা ভাইরাসঃ আসুন কিছুটা আতঙ্কিত হই!


রাউফুন নাহার


নিচের কোন বিবৃতিটি আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য?

১। আমি মোটেও ভয় পাচ্ছিনা; করোনা আমার কিছুই করতে পারবে না, তাই স্বাভাবিক চলাফেরা ও জীবনধারা অব্যাহত রেখেছি।

২। আমি মানসিক চাপ বোধ করছি, তাই আমার এবং অন্যদের সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করছি।

৩। আমার দমবন্ধ লাগছে, কিছুই ভালো লাগছে না; করোনার ভয়ে আমার ঘুম, খাওয়া-দাওয়া সবকিছু ব্যাহত হচ্ছে।

যাদের অবস্থান ২ তাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, প্লিজ চালিয়ে যান। যাদের অবস্থান ১ বা ৩ তাদের জন্য বলছি, ভালোবাসা নিন এবং লেখাটি পড়তে থাকুন।

প্রথমেই দুঃখ প্রকাশ করছি যে একজন মানসিক স্বাস্থকর্মী হয়েও আপনাকে অভয় দিয়ে বলতে পারছি না, ‘আতঙ্কিত হবেন না, আতঙ্কিত হবার মত কিছু হয়নি!’ বরং বলব আতঙ্কের ঘটনাতেও আতঙ্কিত না হওয়া মনোঃসামাজিক সমস্যার লক্ষণ। হ্যা, বর্তমানে বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি আতঙ্কিত হওয়ার মতই। আর এমন পরিস্থিতিতে নির্দিষ্ট মাত্রার ভয় ও মানসিক চাপ আমাদের সচেতন হতে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো নিতে সহযোগিতা করবে। ভয় বা মানসিক চাপের মাত্রা অতিরিক্ত কম, বা অতিরিক্ত বেশি কোনোটাই আমাদের জন্য মঙ্গলজনক নয়। যেমন, ভয় না থাকা বা ভয়ের মাত্রা একেবারেই কম থাকার কারনেই মূলত এমন দুর্যোগের সময়েও অনেকেই নাগরিক দায়িত্বগুলো পালন করছে না এবং মনের আনন্দে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের আক্রান্ত হবার এবং অন্যকে আক্রান্ত করার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আনন্দে থাকা ভুল কিছু নয়, বরং এটি আমাদেরকে সুস্থ সবল রাখে। তবে এমন পরিস্থিতিতে বাড়ির ভেতরে আনন্দ করাটাই শ্রেয়।

আবার যারা অনেক বেশিমাত্রায় আতঙ্কিত তাদের করোনা আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা কম থাকলেও হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থেকে যায়। কারণ অতিরিক্ত ভয় ও দুশ্চিন্তার ফলে ঘুম, খাওয়া, বিশ্রামের মত মৌলিক কাজগুলোও ব্যাহত হচ্ছে৷ আর অতিরিক্ত মানসিক চাপ এবং শরীর ও মনের যত্নের অভাব এই দুই কারণে যখন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে তখন শুধু করোনা কেন, যেকোন রোগই পেয়ে বসবে। করোনা নিয়ে সচেতনতামূলক আচরণগুলোর মধ্যে তাই সুষম খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম, শরীরচর্চা এসবও পড়ে। যেন যেকোনো রোগ বা ভাইরাস শরীরে ঢুকলেও তার সাথে যুদ্ধটা চালিয়ে যাওয়ার শক্তি থাকে।

এখন কথা হলো অতিরিক্ত ভয় বা দুশ্চিন্তা কমাবো কি করে? সেক্ষেত্রে কিছু টিপ্স শেয়ার করছি৷

১.
প্রথম ধাপঃ যখন ভয় বা দুশ্চিন্তা বা অন্য যেকোন ধরনের কষ্টকর অনুভূতি হবে, শান্ত হয়ে কোথাও বসে বা শুয়ে পড়ব। শরীরের কোন কোন অংশে খারাপ বা অস্বস্তি লাগছে খেয়াল করব। কারণ আমাদের অনুভূতিগুলো শরীরেই ভর করে। যেমন, মাথা ঝিমঝিম করছে কি-না, ঘাড় বা চোয়াল বা শরীরের অন্য কোন অংশ শক্ত হয়ে আছে কি-না, বুক ধরফর করছে কি-না খেয়াল করব। অর্থাৎ শরীরের যে অংশটায় কিছুটা হলেও অসুবিধা বা অস্বস্তি লাগছে যেখানেই ৩০ সেকেন্ড থেকে ২ মিনিটের মত মনোনিবেশ করব।

দ্বিতীয় ধাপঃ গভীরভাবে কয়েকটি শ্বাস-প্রশ্বাস নেবো ও ছাড়বো। যেভাবে ধীরে ধীরে ফুলের ঘ্রান নেই যেভাবে শ্বাস নেবো, তারপর মোমবাতিতে ফু দেয়ার মত করে ধীরে ধীরে ছাড়বো। এভাবে ৫-১০ জোড়া শ্বাস-প্রশ্বাস নিলেই ব্রেইনে যথেষ্ট পরিমান অক্সিজেন চলে যাবে এবং অস্থিরতা কমে আরাম লাগতে শুরু করবে।

তৃতীয় ধাপঃ পানি পান করা। ঠান্ডা বা স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি পান করলে মুখ ও কণ্ঠনালীসহ শরীরে একটা শীতল ভাব আসবে। যাদের ভয়, উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তার প্রবনতা বেশি তারা সবসময়ই পানির পাত্র বা বোতল সাথে রাখুন। গলা শুকিয়ে গেলেই এক দুই চুমুক করে পানি পান করুন।

চতুর্থ ধাপঃ এই পর্যায়ে আপনার ভয়, উদ্বেগ বা অস্থিরতার মাত্রা কিছুটা হলেও কমে আসার কথা। কেমন বোধ করছেন খেয়াল করুন। এই মুহুর্তে আপনার চাহিদা কি খেয়াল করুন। করোনা দুর্যোগের এই সময়ে আমাদের সবচেয়ে বড় চাহিদা হতে পারে ‘নিরাপত্তা’ বা ‘সুরক্ষা’। এবার ভাবুন নিজেকে ও পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে আপনি কি কি পদক্ষেপ নিতে পারেন। এখেত্রে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের গাইডলাইনগুলো মেনে চলা এবং নিজের ও পরিবারের সদস্যদের ব্যাপারে যত্নশীল হওয়াই হতে পারে উৎকৃষ্ট পদক্ষেপ।


সারাক্ষণ ফেইসবুক বা টেলিভিশণে করোনা সংক্রান্ত নিউজ দেখা থেকে বিরত থাকুন। একটি সময় নির্ধারণ করুন এবং শুধুমাত্র আপনার নির্ধারিত সময়েই করোনা সম্পর্কিত খবর নিন। বাকি সময়ে দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক কাজকর্মগুলোতে মনোনিবেশ করুন। পেশাগত কারণে যারা বাইরে যাচ্ছেন, নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করুন।

 ৩

জীবনের কঠিনতম পরিস্থিতিতেও আমাদের হাতে কিছু অপশন বা বিকল্প থাকে। তাই আপনিই সিদ্ধান্ত নিন, আপনি করোনা পরিস্থিতিকে উপেক্ষা করে চারদিকে ঘোরাফেরা করে নিজেকে ও অন্যদেরকে বিপদের মুখে ফেলবেন, করোনার ভয়ে নাওয়া খাওয়া বন্ধ করে হা হুতাশ করবেন, নাকি নিজের মানসিক চাপকে স্বীকৃতি ও গুরুত্ব দিয়ে শরীর-মনের যত্ন নেবেন ও সুরক্ষিত থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।

লেখকঃ রাউফুন নাহার

শিক্ষক

এডুকেশনাল এন্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

ধর্ষণের পর খুন করে ফজরের নামাজে ইমামতি!

ধর্ষণের পর খুন করে ফজরের নামাজে ইমামতি!


নারী সংবাদ


ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে পাড়াভরট গ্রামের কিশোরী তাকমীন হত্যার তিন দিন পর মোবাইল কল লিস্টের সূত্র ধরে এ জড়িত থাকার সন্দেহে মাহফুজ ওরফে ইছামুদ্দিন (১৮) নামে এক মাদ্রাসাছাত্রকে আটক করেছে পুলিশ।
মাহফুজ উপজেলার রাওনা গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে এবং উপজেলার পাড়াভরট গ্রামের জামিয়া আরাবিয়া কাসেমুল উলুম কওমী মাদ্রাসার কিতাব বিভাগের ছাত্র।
তাকমীনের পরিবার ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আঠারদানা জামে মসজিদের মোয়াজ্জিন ও পাড়াভরট গ্রামের জামিয়া আরাবিয়া কাসেমুল উলুম কওমী মাদ্রাসার কিতাব বিভাগের ছাত্র আশিকুল হকের সঙ্গে পাড়াভরট গ্রামের আব্দুল মতিনের কিশোরী কন্যা তাকমীনের (১৬) প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আশিকুল হক নান্দাইল উপজেলার তারাপাশা গ্রামের আইনাল হকের ছেলে। তাকমীন বিয়ের জন্য তাকে চাপ দিচ্ছিল।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে আশিকুল মোবাইল করে পালিয়ে যাওয়ার কথা বলে আঠারদানা জামে মসজিদের কাছে তাকমীনকে ডেকে নেয়। এ সময় সেখানে আগে থেকেই ছিল আশিকুলের বন্ধু পুলিশের হাতে আটককৃত মাহফুজ ও একই মাদ্রাসার ছাত্র নান্দাইল উপজেলার তারাপাশা গ্রামের সাইদুলের ছেলে আরিফ (১৮)। সেখানে যাওয়ার পর আশিকুল তাকমীনকে ধর্ষণ করে। পরে মাহফুজ ও আরিফ তাকমীনের হাত, পা ও মুখ চেপে ধরে ও আশিকুল তার মাথার পাগড়ি দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করে।
আশিকুল, মাহফুজ ও আরিফ তাকমীনের লাশ টেনে-হিঁচড়ে মসজিদের একটি জামগাছের ডালের তাকমীনের ওড়না দিয়ে বেঁধে রাখে। কিছুক্ষণ পর ফজরের আজান দেয়ার সময় হলে মসজিদের মোয়াজ্জিন আশিকুল আজান দেয়। মুসল্লিরা মসজিদে আসলে ফজরের জামাতে আশিকুল ইমামতি করে। এ সময় মুসল্লিদের সাথে মাহফুজ, আরিফও নামাজ আদায় করে।

নামাজ শেষে মুসল্লিরা মসজিদ থেকে বের হয়ে তাকমীনের লাশ জাম গাছের ডালের সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় দেখতে পায়। তাকমীনের পরিধেয় বস্ত্র বিভিন্ন জায়গায় ছেঁড়া ছিল। তার পা মাটিতে ছিল। লাশের সঙ্গে একটি মোবাইল পড়ে ছিল।
মুসল্লিরা লাশটি দেখতে পেয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম রিয়েলের মাধ্যমে থানা পুলিশকে ঘটনাটি অবহিত করে। পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে।
ময়মনসিংহ সিআইডির ক্রাইমসিন প্রধান মোহাম্মদ ইউসুফের নেতৃত্বে সিআইডির একটি বিশেষ টিম এবং গফরগাঁও থানার ওসি অনুকুল সরকারের নেতৃত্বে থানার একটি বিশেষ টিম ঘটনাস্থল মঙ্গলবার সারাদিন ঘিরে রাখে। বিকালে তাকমীনের বাবা আব্দুল মতিন বাদী অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে গফরগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
বৃহস্পতিবার সকালে গফরগাঁও সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলী হায়দার চৌধুরী, গফরগাঁও থানার ওসি অনুকুল সরকার ও মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আহসান হাবীবের নেতৃত্বে গফরগাঁও থানার একদল পুলিশ অভিযান চালিয়ে মাহফুজকে আটক করে।
আঠারদানা জামে মসজিদের মুসল্লী ও পাড়াভরট গ্রামের খাহে আলী মন্ডল (৬৪) জানায়, ঘটনার দিন মঙ্গলবার ফজরের নামাজের আজান দেয় ও ইমামতি করে মোয়াজ্জিন আশিকুল হক। বুধবার দুপুর থেকে সে পলাতক রয়েছে।
আঠারদানা জামে মসজিদের ইমাম মোজাম্মেল হক (৪৭) জানায়, ওইদিন মসজিদে যেতে দেরি হওয়ায় আশিকুল ইমামতি করে। নামাজ শেষে একটু আঁধার কাটলে মসজিদের মুসল্লিরা মসজিদের কাছে জাম গাছের ডালে বাধা একটি মেয়ের লাশ দেখতে পায় এবং লাশটি শনাক্ত করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে জানায়।
তাকমীনের ছোট বোন সুমাইয়া (১৩) জানায়, তার বোন রাতে তার সঙ্গেই ঘুমিয়েছিল। সে গোপনে মোবাইল ব্যবহার করতো। মোবাইল ফোনটি হয়তো আশিকুলের দেয়া।
গফরগাঁও সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার জানান, এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার করছি। জড়িতদের গ্রেপ্তারের স্বার্থে এখন বাড়তি কিছু বলা যাবে না।
সুত্রঃ বাংলাদেশ জার্নাল।

 

করোনা চিকিৎসায় ৪ লক্ষ ডাক্তারের পোশাক বিনামূল্যে দেয়ার ঘোষণা দিলেন এক সাহসী নারী

করোনা চিকিৎসায় ৪ লক্ষ ডাক্তারের পোশাক বিনামূল্যে দেয়ার ঘোষণা দিলেন এক সাহসী নারী


নারী সংবাদ


বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস চিকিৎসায় ডাক্তারেরকে ৪ লক্ষ পোশাক বিনামূল্যে সহায়তা কারী স্বপ্না ভৌমিক বৈশ্বিক মহামারী হয়ে আবির্ভূত করোনার বিপর্যয় বাংলাদেশে ছোবল হানার আগে অন্তত ত্রিশদিন সময় ছিল নুন্যতম প্রস্তুতি নেবার। রাষ্ট্রের গলাবাজ’রা সে অমূল্য সুযোগ নেননি।

আজ প্রয়োজনের মুহূর্তে Personal Protective Equipment (PPE) নেই। গ্লাভস নেই, মাস্ক নেই কিছু নেই। নিজের জীবনের ঝুঁকি নেয়া নার্স ও ডাক্তারসহ চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার সাথে যুক্ত মানুষগুলোকে হাত-পা বেঁধে পানিতে ফেলে কুমিরের সাথে লড়তে বলা হচ্ছে আজ! আমাদের নিজেদের নিরাপত্তা নিজেদেরকেই নিশ্চিত করতে হবে । আর সেই নিরাপত্তা নিশ্চিতের মতো মহত্তম কাজে এগিয়ে এলেন প্রথম মানুষ স্বপ্না ভৌমিক নামে এক নারী । তিনি মার্ক্স অ্যাণ্ড স্পেন্সারের বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর।

আজ থেকে মার্ক্স অ্যাণ্ড স্পেন্সারের Garments Products সরবরাহের সাথে যুক্ত কারখানাগুলো Personal Protective Equipment (PPE) বানানো শুরু করেছে। আগামী এক পক্ষকালের আগেই নুন্যতম ৪ লাখ PPE বিনামূল্যে সরবরাহ করবে প্রতিষ্ঠানটি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদন করেছে এটি। পোশাকের নকশা করে দিয়েছে BUET ALUMNI.

আজ আবারও প্রমাণ হল , দিনশেষে আপাময় মানুষের প্রয়োজনে মানুষই এগিয়ে আসে। মাত্র একুশ দিন পূর্বে এই অসামান্য মানুষটির “মা” সাধনা ভৌমিক পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন। তিনি দীর্ঘদিন কিডনির অসুখে আক্রান্ত ছিলেন। স্বপ্না ভৌমিকের নেয়া সাহসী পদক্ষেপ, করোনার বিরুদ্ধে লড়তে আমাদের কল্পনার অতীত সাহস যোগাবে সন্দেহ নেই। ৪ লাখ Personal Protective Equipment (PPE) রুখে দেবে অন্তত ২ লাখ সম্ভাব্য সংক্রমণ।

করোনা’র মতো মহামারী ইতোপূর্বে আমরা দেখিনি। এ শুধু জনস্বাস্থ্যের হুমকি নয়, জীবন ও মৃত্যুর এই সন্ধিক্ষন বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের প্রতিটি খাত’কে স্থবির করার সক্ষমতা রাখে। করোনা’র বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধ শুধুমাত্র রাষ্ট্র অথবা রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের নয়। এই যুদ্ধ বৈশ্বিক এবং প্রতিটি পৃথিবীবাসীর।
প্রতিটি প্রাণ মূল্যবান, সামান্য ভুলের কারণে অগণিত মানুষের জীবন হুমকির মুখে ফেলবার অধিকার কারও নেই। জন্মভুমি ও পৃথিবীর ক্রান্তিকালে আমরা ঐক্যে অটল থাকবো। আমাদের সম্মিলিত চেষ্টাই পরাজিত করবে এমন দুর্যোগ।

 

ঝাল মাংস পুলি বানাবেন যেভাবে

ঝাল মাংস পুলি বানাবেন যেভাবে


ঘরকন্যা


উপকরণ
১. ২ কাপ মাংস সেদ্ধ,
২. ১ কাপ আলু কুচি করে সেদ্ধ করা,
৩. ১ চা চামচ কাবাব মসলা,
৪. ২ টি পেঁয়াজ কুচি,
৫. ৫/৬ টি মরিচ কুচি,
৬. আধা চা চামচ আদা-রসুন বাটা,
৭. লবন স্বাদমতো,
৮. টেস্টিং সল্ট সামান্য,
৯. তেল ভাজার জন্য,
১০. ২ কাপ ময়দা,
১১. ২ চিমটি কালোজিরা,
১২. পানি পরিমাণমতো।

প্রণালি
> পুর তৈরির জন্য একটি প্যানে সামান্য তেল দিয়ে গরম করে এতে আদা-রসুন বাটা দিয়ে দিন। ঘ্রাণ ছড়ালে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে নেরে নরম করে নিন। এরপর মরিচ কুচি ও বাকি মসলা দিয়ে ভালো করে কষে নিন।

> মসলা কষে এলে সেদ্ধ মাংস একটি পিষে দিয়ে দিন যাতে আঁশ আলাদা হয়। ভালো করে নেড়ে নিয়ে সেদ্ধ আলু কুচি দিয়ে ভালো করে নেরে ভাজা ভাজা হয়ে এলে নামিয়ে নিন।

> ময়দা সামান্য তেল দিয়ে খাস্তা করে নিয়ে লবন ও কালি জিরা দিয়ে পরিমাণমতো পানি মিশিয়ে রুটি বেলার ডো তৈরি করে নিন। এরপর পাতলা ছোট রুটি তৈরি করে মাঝে পুর দিয়ে দুভাজ করে অর্ধচন্দ্রের মতো তৈরি করে দুপাশ আটকে দিন।

> কড়াইয়ে ডুবো তেলে ভাজার মতো তেল গরম করে লালচে করে ভেজে তুলুন। কিচেন টিস্যুর উপরে তুলে রেখে বাড়তি তেল শুষে নিন। ব্যস, এবার পরিবেশন করুন গরম গরম।

রেসিপি : প্রিয়.কম

 

করোনা সংকটে গর্ভবতী মায়েদের বলছি…

করোনা সংকটে গর্ভবতী মায়েদের বলছি……….


ডা.ফাহমিদা শিরীন নীলা


দেশের এই সংকটকালীন সময়ে সবচেয়ে বেশি সংকটে আছি আমরা ডাক্তাররা, পেশাগত কারণে। কিন্তু সাধারন জনগণের মধ্যে বাচ্চা এবং বৃ্দ্ধের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি সংকটে আছেন আপনারা গর্ভবতীরা। গর্ভকালীন সময়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় এই সময় যেকোন ভাইরাস সংক্রমনের আশঙ্কা সাধারনের চেয়ে ৫.৭ গুন বেশি। জটিল কোন প্রবলেম না থাকলে এক দু’মাস চেকআপ না করালে আপনার তেমন ক্ষতি হবে না। বরং চেকআপ করতে গিয়ে চেম্বার, ডায়াগনষ্টিক সেন্টার বা হাসপাতাল থেকে আপনি নিয়ে যেতে পারেন ভাইরাস।

চেকআপের ডেট আছে। কি করবেন?

অসুবিধা নেই। এটা আদালতের দেয়া ডেট না। না আসলে আপনাকে পুলিশ গিয়ে ধরে নিয়ে এসে জেলে পুরবে না।
তাহলে কি করবেন?
১)আগের প্রেসক্রিপশনের ওষুধগুলোই চালিয়ে যান।
২)বাসায় প্রেসার মাপা মেশিন থাকলে মাঝে মাঝে নিজেরাই প্রেসার চেক করুন ।
৩)বাচ্চার নড়াচড়া খেয়াল রাখুন।
৪)ওজন বাড়ছে কি না খেয়াল রাখুন। বাসায় ওজন মাপার মেশিন থাকলে প্রতি মাসে ওজন দেখে নিন।
৫)নতুন কেন সমস্যা দেখা দিলে বা কোন অসংগতি মনে হলে ফোনে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিন।
৬)সকল সামাজিকতাকে পাশ কাটিয়ে একা একা নিজের মত থাকুন। আপনার সঙ্গে তো একজন আছেই সবসময়। আপনার ভবিষ্যত সন্তানের সাথে কথা বলুন। তার সুরক্ষার জন্য নিজেকে আড়ালে রাখুন।
৭)প্রয়োজন ছাড়া কোনভাবেই ঘরের বাইরে যাবেন না।
৮)মাঝে মাঝে হাত-মুখ সাবান-পানি বা স্যানিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার করুন। বারবার মুখে-চোখে হাত দিবেন না।
৯)বাইরে থেকে কেউ আসলে সে পরিচ্ছন্ন না হওয়া পর্যন্ত দুরত্ব রক্ষা করে চলুন।
১০)হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার নিজে মেনে চলুন। এবং বাসার সকলকে এটি মনে চলতে বাধ্য করুন।
১১)বাড়ীতে কারো সর্দি-কাশি হলে তাকে কিছুটা আলাদা করে রাখুন। কোনভাবেই তার কাছাকাছি যাবেন না। এমনকি আপনার বাচ্চা হলেও না। তাকে পরিবারের অন্য কোন সদস্যের কাছে দেখভালের জন্য রাখুন।
১২)আপনার সর্দি-কাশি হলে সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে না গিয়ে ফোনে আপনার ডাক্তারকে উপসর্গগুলো জানান। তাঁর পরামর্শ মোতাবেক ওষুধ পথ্য খান।

কোভিড১৯ যেহেতু একটি নতুন সংক্রমন, এই সম্পর্কে জানি আমরা অল্পকিছুই। আমরা এখনও জানিনা, আপনি এই ভাইরাস আক্রান্ত হলে আপনার গর্ভস্থ সন্তানের কোন ক্ষতি হবে কি না বা সে এই সংক্রমন বহন করবে কি না! তবে অল্প কিছু গর্ভবতীর সময়ের পূর্বেই ডেলিভেরি হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে। সেটির সঠিক কারন জানা যায়নি।

ডেলিভেরির সময় কি করবেন?

আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নির্দিষ্ট হাসপাতালে ডেলিভেরি করান। তবে সংক্রমন এড়াতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
ডেলিভেরির সময় বা পরে আত্মীয়-স্বজনের ভিজিট প্রত্যাহার করুন। বাচ্চা দেখতে চাইলে ছবি তুলে অনলাইনে পাঠিয়ে দিন কিংবা সেটি সম্ভব না হলে সন্তানের সুস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে তাদের অপেক্ষা করতে বলুন। বাচ্চা একটু দেরি করে দেখলে মহাভারত শুদ্ধ বা অশুদ্ধ কোনটাই হবে না। বরং এই মুহূর্তে আপনার এবং বাচ্চার শুদ্ধ থাকাটাই গুরুত্বপূর্ণ।

বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াবেন কি না ?

ভাইরাসটি নতুনভাবে সনাক্ত হওয়ার কারণে এ সম্পর্কে আমরা জানিনা যে এটি বুকের দুধের মাধ্যমে সন্তানের শরীরে প্রবেশ করে কি না! তবে যেহেতু বুকের দুধ বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, আপনারা বুকের দুধ নিয়মমতোই খাওয়াবেন। তবে বাচ্চাকে স্পর্শ করার পূর্বে নিয়ম মেনে হাত পরিষ্কার করে নিবেন ।অযথা বাচ্চার চোখে-মুখে বা শরীরে হাত দিবেন না।

একটা বিষয় মনে রাখবেন, যেকোন নতুন রোগ বা সংক্রমন হলে সেটি সম্পর্কে বিস্তারিত গবেষণালব্ধ ফল পেতে সময় লাগে। অল্প কিছু স্যাম্পল পরীক্ষা করে এমনিয়োটিক ফ্লুইড(বাচ্চার থলিতে থাকা পানি) এবং বুকের দুধের মধ্যে করোনা ভাইরাস পাওয়া যায়নি। কিন্তু এই দুই মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ায় না এটা নিশ্চিত করে বলতে আরও গবেষণা আবশ্যক, যা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। কাজেই আমরা সবটাকেই আমলে নিয়ে সাবধানে থাকবো।

ভাল থাকুন সন্তানধারী সকল মা এবং তাদের সন্তানেরা।

ডা.ফাহমিদা শিরীন নীলা
এমবিবিএস; এফসিপিএস(অবস্ এন্ড গাইনী), ফিগো ফেলো(ইটালী)
গাইনী বিশেষজ্ঞ
বগুড়া।
২১/০৩/২০২০ ইং।

 

তিরস্কারমূলক শব্দ যেভাবে জব্দ করে নারীকে

তিরস্কারমূলক শব্দ যেভাবে জব্দ করে নারীকে


নারী সংবাদ


বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের মিথ্যা মামলা কতটা হয়?

আদালতে আড়াই মাসের শিশু, আইন বদলানোর আদেশ

‘দুটো বাচ্চা নিয়ে কোথায় যাবো তাই নির্যাতন সহ্য করেই সংসার করে যাচ্ছি’
‘নিজের পরিবারই পক্ষে ছিল না’

তামান্না নুপুর নামে আরেকজন নারীর সঙ্গে কথা হয়। বছরের পর বছর স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে তিন বছর আগে তিনি স্বামীকে ডিভোর্স দিয়েছেন।

এখন গাজীপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।

তামান্না নুপুর জানাচ্ছেন, বিয়ের পর থেকেই পাঁচ বছর ধরে তিনি স্বামীর পরিবারে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। ছোটখাট বিষয়ে কিংবা কারণে-অকারণে তাকে মারধোর করা হতো।

সিগারেট দিয়ে একাধিকবার তার শরীরে ছ্যাকা দেয়ার ঘটনাও আছে।

“ওদের আসলে আমাকে ভালো লাগতো না কোন কারণে। এজন্যই অত্যাচারের অজুহাত খুঁজতো। বাসায় জানাইছি। তারা বলে, সহ্য করো।”

মিজ নুপুর বলছেন, “কতদিন আর সহ্য করবো? যখন মাত্রা ছাড়ায় গেলো, শশুরবাড়ির সবাই নির্যাতন করতে শুরু করলো তখন আর থাকতে পারলাম না। নিজের সিদ্ধান্তেই তালাক দেই। আমার নিজের পরিবার বলছে, তারা আমার দায়িত্ব নিতে পারবে না।”
পরিবার থেকে সাহস না পেয়ে স্বামীর নির্যাতনের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেননি তামান্না নুপুর।
তামান্না নুপুর বলছেন, তিনি স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার বাবা-মা রাজি হননি।

“বাবা বললো, মামলা করে কী হবে? দরকার নাই। এখন পরিবার যদি হেল্প না করে, তাহলে আমার একার পক্ষে তো সম্ভব না। আমি তো থানা-পুলিশের ব্যাপার কিছুই বুঝি না।”

বাংলাদেশে পরিবারের মধ্যে বিশেষত: স্বামীর মাধ্যমে নারী নির্যাতনের যে চিত্র তা বেশ ভয়াবহ।

শারীরিক, মানসিক, আর্থিকসহ বিভিন্ন ধরণের নির্যাতনের মধ্যেই দিনের পর দিন অনেকেই জীবন পার করলেও এ নিয়ে অভিযোগ বা প্রতিবাদের চিত্র খুব একটা দেখা যায় না।

এ নিয়ে সচেতনতাও কম। আবার নিজ পরিবারেও নির্যাতনের মুখে পড়েন অনেকে।

২০১৫ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) নারী নির্যাতনের চিত্র নিয়ে যে জরিপ প্রকাশ করে সেখানে দেখা যায় বাংলাদেশে ৭২.৬ শতাংশ বিবাহিত নারীই কোন না কোনভাবে স্বামীর দ্বারা নির্যাতনের শিকার হন।

এর মধ্যে শারীরিক নির্যাতনের হার ৪৯.৬ শতাংশ।

জরিপে দেখা যাচ্ছে, যারা নির্যাতনের শিকার হয় তাদের ৭২.৭ শতাংশই নির্যাতনের ঘটনা বাইরের কাউকে বলেন না।

আর থানা-পুলিশ পর্যন্ত অভিযোগ পৌঁছান মাত্র ১.১ শতাংশ নির্যাতিত নারী।

অর্থাৎ বেশিরভাগই মুখ বুজে অত্যাচার সহ্য করে যাচ্ছেন। কিন্তু এরকম পরিস্থিতি কেন হলো?

সুত্রঃ বিবিসি।

 

নারী উদ্যোক্তা নাঈমার শাড়ি এখন বিদেশেও যাচ্ছে

নারী উদ্যোক্তা নাঈমার শাড়ি এখন বিদেশেও যাচ্ছে


ক্ষুদ্র উদ্দ্যোক্তা


নাঈমা সুলতানা ছিলেন একজন সাধারণ গৃহিণী। এখন তার কোটি টাকার ব্যবসা। মানুষ যে তার স্বপ্নের সমান বড় তা বাস্তবে দেখিয়েছেন নাঈমা। আগে সাধারণ পাঁচটা গৃহবধূ হয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেও এখন তিনি আয় করেন, পরিবারের বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণেও থাকে তার অবদান।
বলা যায়, নিজের বুদ্ধিমত্তা, ধৈর্য ও চিন্তার কারণে একজন সফল নারী হয়ে ওঠেছেন তিনি। তার দেখাদেখি আরও অনেকেই ছোট-ছোট উদ্যোগ নিয়ে শুরু করেছেন, অনেকে স্বাবলম্বীও হয়েছেন। এক্ষেত্রে নারীদের সফল ‘আইকন’ তিনি।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নারী উদ্যোক্তা নাঈমা সুলতানা জানালেন তার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প। আলাপ-চারিতায় উঠে এসেছে তার কাপড়ের ব্যবসা শুরু থেকে সাফল্যের দিনগুলোর কথা। বলেছেন নানা বাধা এবং তা কিভাবে মোকাবেলা করেছেন তাও।
ব্যবসা শুরুর কথা উল্লেখ করে নাঈমা বলেন, খুবই অল্প পুঁজি নিয়ে শুরু করেছিলাম ব্যবসা। এখন বছরে প্রায় এক কোটি টাকার ব্যবসা করি। প্রথমে ঘরে বসেই টাঙ্গাইলের শাড়ি নিয়ে অনলাইনে ব্যবসাটা শুরু করি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
আলাপে ব্যবসা শুরু করতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের বাধার মুখে পড়ার কথাও বলেন নাঈমা। তার মতে, আসলে যাই করেন আপনি, শুরু করা কিন্তু সোজা নয়। পরিবার থেকে অনুমতি ছিল চাকরির। কিন্তু মনে ও মাথায় সব সময় ব্যবসা ঘুরতো।
‘পরিবারের লোকজন চাইতো না আমি ব্যবস্যা করি। অনেকভাবেই তাদের বুঝিয়েছি কিন্তু আমি ব্যর্থ হই। অবশেষে কিছুটা গোপনে ফেসবুকের একটি পেজের মাধ্যমে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করি।’
নাঈমা বলেন, আমার এক বান্ধবীর বাসা ছিলো টাঙ্গাইলে। সে প্রায়-ই তাঁতের শাড়ি নিয়ে আসতো। কারণ তার বাবার ব্যবসা ছিল শাড়ির। সেখান থেকে ১০ টা শাড়ি নিয়েই শুরু করি ব্যবসা।
‘এগুলো দুইদিনে-ই বিক্রি হয়ে যায়। এরপর আমার আগ্রহ তখন আরও বেড়ে যায়। খুবই ইন্সপায়ার্ড হই। নতুন উদ্যোমে শুরু করি আবার। তখনও সাড়া পেলাম বেশ।’
তিনি বলেন, ‘আমার ব্যবসা তখন প্রাথমিকভাবে ভালোই চলছে। এর মাঝে সামনে ছিল বসন্ত উৎসব। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে অনলাইনে ১৫০ শাড়ি বিক্রি করে ফেলি। সেই টাকা তুলে বাড়িতে জানাই বিষয়টি। এত টাকা এক সঙ্গে দেখে কেউ ভাবতেই পারেনি, আমার দ্বারা এটা সম্ভব।’
‘মোটামুটি সবাই সারপ্রাইজড। এবার সিদ্ধান্ত নিই আর চুপিচুপি নয়। তখন আর কোনো বিষয়ে না করেনি কেউ। তখন বাড়িতে বসেই শুরু হলো ব্যবসা, তবে একটু বড় পরিসরে,’ বলেন সংগ্রামী এই নারী।
প্রথমে অনলাইনেই চলতে থাকে নাঈমার শাড়ির ব্যবসা। পরবর্তীতে শোরুমও খুলেছেন তিনি। এখন অনলাইনে এবং অফলাইনে সমান তালে এগিয়ে চলেছে তার ব্যবসা। এর মাঝে দেশের বাজার পেরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন বাঙালি অধ্যুষিত অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে তার শাড়ির কদর!
বিদেশের মার্কেট ধরলেন কীভাবে? উত্তরে নাঈমা বললেন, আমার এক বান্ধবী স্বামীসহ কানাডায় থাকেন। ফেসবুকে আমি শাড়িগুলো তাকেও শেয়ার করতাম। মাঝে-মাঝে তিনি লাইক কমেন্ট করতেন।
‘২০১৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে কানাডায় বাংলা কমিউনিটিতে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তখনই সিদ্ধান্ত হয় যে, মেয়েরা একই ধরনের শাড়ি পরবেন। ওই সময়ই আমার বন্ধু আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমার পেজে একটি শাড়ি শেয়ার করলে সেখানকার অনেকেই তা পছন্দ করেন। পরে তারা অনলাইনে অর্ডার করেন এবং টাকা পাঠিয়ে দেন। এরপর শাড়ি পেয়ে খুশিও হন। এরপর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অডার পাচ্ছি, শাড়িও পাঠাচ্ছি।’
বিদেশের মার্কেট ধরতে কোনো চ্যলেঞ্জ কী? এমন প্রশ্নের উত্তরে নারী উদ্যোক্তা নাঈমা বলেন, সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল পণ্যেও ডেলিভারি। কারণ দেশে খুব একটা সমস্যা হয় না। কিন্তু বিদেশে পণ্য পৌঁছাতে দিতে বড়-বড় কুরিয়ারের কাছে যেতে হয়। সেক্ষেত্রে দেখা যায়, যে দামে শাড়ি কেনা হয় কুরিয়ার চার্জ কয়েকগুণ বেশি হয়। তবে এখন কিছু কোম্পানি রয়েছে যারা কম দামে ভালো সার্ভিসটা দেয়।
অনলাইনে বিদেশে পণ্য বিক্রির প্রসারের বিষয়ে নতুনদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিদেশে পণ্য বিক্রির সুবিধা হচ্ছে দাম বেশি পাওয়া যায়। দেশে আমি সেল করি ২০০০ টাকা সেটাই বাহিরে করা যায় ২৫০০ টাকায়। আবার কুরিয়ার চার্জও ক্রেতাই দেন।
‘তাই বিদেশে বাঙালি অধ্যুষিত দেশে মার্কেটিং করলে সেল ভালো পাওয়া যাবে। দেখা যায় যেখানে বাঙালি আছে সেখানে একজন নিলে বাকিরা এমনই নিয়ে নেয়। অবশ্য সে দেশের মার্কেট থেকে কম দামেই পণ্য কিনতে পারেন অনলাইনে,’ যোগ করেন নাঈমা।
সু্ত্রঃ বাসস।

 

করোনাভাইরাসঃ আসুন কিছুটা আতঙ্কিত হই!

করোনাভাইরাসঃ আসুন কিছুটা আতঙ্কিত হই!


রাউফুন নাহার


নিচের কোন বিবৃতিটি আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য?

১। আমি মোটেও ভয় পাচ্ছিনা; করোনা আমার কিছুই করতে পারবে না, তাই স্বাভাবিক চলাফেরা ও জীবনধারা অব্যাহত রেখেছি।

২। আমি মানসিক চাপ বোধ করছি, তাই আমার এবং অন্যদের সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করছি।

৩। আমার দমবন্ধ লাগছে, কিছুই ভালো লাগছে না; করোনার ভয়ে আমার ঘুম, খাওয়া-দাওয়া সবকিছু ব্যাহত হচ্ছে।

যাদের অবস্থান ২ তাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, প্লিজ চালিয়ে যান। যাদের অবস্থান ১ বা ৩ তাদের জন্য বলছি, ভালোবাসা নিন এবং লেখাটি পড়তে থাকুন।
প্রথমেই দুঃখ প্রকাশ করছি যে একজন মানসিক স্বাস্থকর্মী হয়েও আপনাকে অভয় দিয়ে বলতে পারছি না, ‘আতঙ্কিত হবেন না, আতঙ্কিত হবার মত কিছু হয়নি!’ বরং বলব আতঙ্কের ঘটনাতেও আতঙ্কিত না হওয়া মনোঃসামাজিক সমস্যার লক্ষণ। হ্যা, বর্তমানে বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি আতঙ্কিত হওয়ার মতই। আর এমন পরিস্থিতিতে নির্দিষ্ট মাত্রার ভয় ও মানসিক চাপ আমাদের সচেতন হতে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো নিতে সহযোগিতা করবে। ভয় বা মানসিক চাপের মাত্রা অতিরিক্ত কম, বা অতিরিক্ত বেশি কোনোটাই আমাদের জন্য মঙ্গলজনক নয়। যেমন, ভয় না থাকা বা ভয়ের মাত্রা একেবারেই কম থাকার কারনেই মূলত এমন দুর্যোগের সময়েও অনেকেই নাগরিক দায়িত্বগুলো পালন করছে না এবং মনের আনন্দে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের আক্রান্ত হবার এবং অন্যকে আক্রান্ত করার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আনন্দে থাকা ভুল কিছু নয়, বরং এটি আমাদেরকে সুস্থ সবল রাখে। তবে এমন পরিস্থিতিতে বাড়ির ভেতরে আনন্দ করাটাই শ্রেয়।
আবার যারা অনেক বেশিমাত্রায় আতঙ্কিত তাদের করোনা আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা কম থাকলেও হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থেকে যায়। কারণ অতিরিক্ত ভয় ও দুশ্চিন্তার ফলে ঘুম, খাওয়া, বিশ্রামের মত মৌলিক কাজগুলোও ব্যাহত হচ্ছে৷ আর অতিরিক্ত মানসিক চাপ এবং শরীর ও মনের যত্নের অভাব এই দুই কারণে যখন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে তখন শুধু করোনা কেন, যেকোন রোগই পেয়ে বসবে। করোনা নিয়ে সচেতনতামূলক আচরণগুলোর মধ্যে তাই সুষম খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম, শরীরচর্চা এসবও পড়ে। যেন যেকোনো রোগ বা ভাইরাস শরীরে ঢুকলেও তার সাথে যুদ্ধটা চালিয়ে যাওয়ার শক্তি থাকে।

এখন কথা হলো অতিরিক্ত ভয় বা দুশ্চিন্তা কমাবো কি করে? সেক্ষেত্রে কিছু টিপ্স শেয়ার করছি৷

১.
প্রথম ধাপঃ যখন ভয় বা দুশ্চিন্তা বা অন্য যেকোন ধরনের কষ্টকর অনুভূতি হবে, শান্ত হয়ে কোথাও বসে বা শুয়ে পড়ব। শরীরের কোন কোন অংশে খারাপ বা অস্বস্তি লাগছে খেয়াল করব। কারণ আমাদের অনুভূতিগুলো শরীরেই ভর করে। যেমন, মাথা ঝিমঝিম করছে কি-না, ঘাড় বা চোয়াল বা শরীরের অন্য কোন অংশ শক্ত হয়ে আছে কি-না, বুক ধরফর করছে কি-না খেয়াল করব। অর্থাৎ শরীরের যে অংশটায় কিছুটা হলেও অসুবিধা বা অস্বস্তি লাগছে যেখানেই ৩০ সেকেন্ড থেকে ২ মিনিটের মত মনোনিবেশ করব।

দ্বিতীয় ধাপঃ গভীরভাবে কয়েকটি শ্বাস-প্রশ্বাস নেবো ও ছাড়বো। যেভাবে ধীরে ধীরে ফুলের ঘ্রান নেই যেভাবে শ্বাস নেবো, তারপর মোমবাতিতে ফু দেয়ার মত করে ধীরে ধীরে ছাড়বো। এভাবে ৫-১০ জোড়া শ্বাস-প্রশ্বাস নিলেই ব্রেইনে যথেষ্ট পরিমান অক্সিজেন চলে যাবে এবং অস্থিরতা কমে আরাম লাগতে শুরু করবে।

তৃতীয় ধাপঃ পানি পান করা। ঠান্ডা বা স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি পান করলে মুখ ও কণ্ঠনালীসহ শরীরে একটা শীতল ভাব আসবে। যাদের ভয়, উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তার প্রবনতা বেশি তারা সবসময়ই পানির পাত্র বা বোতল সাথে রাখুন। গলা শুকিয়ে গেলেই এক দুই চুমুক করে পানি পান করুন।

চতুর্থ ধাপঃ এই পর্যায়ে আপনার ভয়, উদ্বেগ বা অস্থিরতার মাত্রা কিছুটা হলেও কমে আসার কথা। কেমন বোধ করছেন খেয়াল করুন। এই মুহুর্তে আপনার চাহিদা কি খেয়াল করুন। করোনা দুর্যোগের এই সময়ে আমাদের সবচেয়ে বড় চাহিদা হতে পারে ‘নিরাপত্তা’ বা ‘সুরক্ষা’। এবার ভাবুন নিজেকে ও পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে আপনি কি কি পদক্ষেপ নিতে পারেন। এখেত্রে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের গাইডলাইনগুলো মেনে চলা এবং নিজের ও পরিবারের সদস্যদের ব্যাপারে যত্নশীল হওয়াই হতে পারে উৎকৃষ্ট পদক্ষেপ।


সারাক্ষণ ফেইসবুক বা টেলিভিশণে করোনা সংক্রান্ত নিউজ দেখা থেকে বিরত থাকুন। একটি সময় নির্ধারণ করুন এবং শুধুমাত্র আপনার নির্ধারিত সময়েই করোনা সম্পর্কিত খবর নিন। বাকি সময়ে দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক কাজকর্মগুলোতে মনোনিবেশ করুন। পেশাগত কারণে যারা বাইরে যাচ্ছেন, নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করুন


জীবনের কঠিনতম পরিস্থিতিতেও আমাদের হাতে কিছু অপশন বা বিকল্প থাকে। তাই আপনিই সিদ্ধান্ত নিন, আপনি করোনা পরিস্থিতিকে উপেক্ষা করে চারদিকে ঘোরাফেরা করে নিজেকে ও অন্যদেরকে বিপদের মুখে ফেলবেন, করোনার ভয়ে নাওয়া খাওয়া বন্ধ করে হা হুতাশ করবেন, নাকি নিজের মানসিক চাপকে স্বীকৃতি ও গুরুত্ব দিয়ে শরীর-মনের যত্ন নেবেন ও সুরক্ষিত থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।

 

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার পর্ব -৬

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার পর্ব -৬


নারীর জন্য আইন


নীচের ছকে স্বামী, মাতা ও পিতার সাথে একজন ছেলের অবস্থান ও হিস্সা দেখানো হল।

ছক নং ৩.

স্বামী, মাতা ও পিতার সাথে একজন ছেলের অবস্থানের উদাহরণ: [সকলের ঐক্যমত্য অনুসারে] :

১২         ১২                    মা.        তা.             সম্পদের পরিমান ৬,০০,০০০ টাকা      স্বামী                   মাতা                          পিতা               ছেলে ১ জন                                                             অবশিষ্ট অংশ=                  =                 =                 =  =      ৩                =  ২                  =  ২                   =  ৫=  ১,৫০,০০০ টাকা = ১,০০,০০০ টাকা =১,০০,০০০ টাকা   =২,৫০,০০০ টাকা নোট: কুরআনের বিধান অনুসারে মৃতের স্বামী এক চতুর্থাংশ অনুসারে ১,৫০,০০০ টাকা, মাতা এক ষষ্টাংশ অনুসারে ১,০০,০০০ টাকা ও পিতা এক ষষ্টাংশ অনুসারে ১,০০,০০০ টাকা পাওয়ার কথা। আর অবশিষ্ট অংশে ২,৫০,০০০ টাকা ছেলে পাবে মাওলা হিসাবে। সকল ছাহাবী ও ফুকাহাগণ এ ক্ষেত্রে একমত। এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে একথা দৃঢ়তার সাথে বলা যায় যে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. এর মতামত অনুসারে কন্যা সন্তানদেরকে মাওলা গণ্য করে অবশিষ্টাংশ প্রদান করাই সঠিক সিদ্ধান্ত। কারণ কোন মেয়ের স্থলে ছেলে থাকলে সে ছেলে যতটুকু পাবে, সে মেয়ে কখনোই এর চেয়ে বেশী পেতে পারে না।

গ.  সূরা নিসার ১৭৬ নং আয়াতই প্রকৃতপক্ষে আছাবা সংক্রান্ত থিওরীর ত্র“টি নির্দেকশ। এ আয়াতে ‘ওলাদ’ বলতে শুধুমাত্র ‘পুত্র-সন্তান’ বুঝায়- এমন দাবী একটি হাস্যকর দাবী। কারণ রাসূলুল্লাহ সা. এমন কথা বলে যাননি, এমন কি কোন ছাহাবীই এমন ধরণের ব্যাখ্যা করেন নি। অর্থাৎ এ রকম ব্যাখ্যার স্বপক্ষে কোন দলীল নেই। আরবী অভিধান, ভাষার ব্যবহার ও কুরআনে ব্যবহৃত ওলাদ শব্দের ব্যাখ্যা গুলোকে বিবেচনা করলে একথা দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ওলাদ অর্থ হল সন্তান। গাণিতিক বিশ্লেষণেও প্রমাণীত হয় যে, কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে ভাইবোন কোন হিস্সার অধিকারী নন। এ সমাধান ‘ওলাদ’ শব্দের অর্থ বুঝতেও সাহায্য করে। যেমন নিম্নোক্ত ছকে দেখুন: ছক নং – ৪.  একজন কন্যার সাথে স্বামী এবং ভাই থাকলে তার সমাধান [ফুকাহাদের মতানুসারে]:                      ৪                      মা.                   সম্পদের পরিমান ৬,০০,০০০ টাকা        স্বামী                    কন্যা ১ জন                     ভাই ১ জন কিংবা একাধিক                                                                 অবশিষ্ট অংশ =      ১                             ২                                      ১ =  ১,৫০,০০০ টাকা   =  ৩,০০,০০০ টাকা                =  ১,৫০,০০০ টাকানোট: সন্তান থাকলে স্বামী এক চতুর্থাংশ পান, তাই তাকে  অংশ দেয়া হয়েছে। কন্যার সংখ্যা একজন হলে, তাদের মতানুসারে, সে পায় অংশ। কারণ তারা কন্যাদেরকে যবীল ফুরূজ বলে বিবেচনা করেন। আর ভাই পাবে অবশিষ্ট  অংশ। কারণ তারা ভাইকে ‘আছাবা’ গণ্য করে অবশিষ্ট অংশের অধিকারী বলে দাবী করেন এবং কন্যা সন্তানের সাথে সেও আছাবা হিসাবে হিস্সাদার বলে মনে করেন। এ কারণে ভাই একজন হোক অথবা একাধিক, কন্যা সন্তানের সাথে সে বা তারা অবশিষ্ট হিস্সা পাবে বলে তারা ঘোষনা করেন। এ হিসাবে ভাই একজন অথবা একাধিক হলে তারা অবশিষ্ট  অংশ পাবে। টাকার অংকে স্বামী পাবে ১,৫০,০০০/- টাকা, কন্যা পাবে ৩,০০,০০০/- টাকা এবং ভাই পাবে অবশিষ্ট ১,৫০,০০০/- টাকা।কিন্তু তাদের এ সমাধান সঠিক ও যুক্তিভিত্তিক নয়। যদি কন্যা সন্তানকে ‘ওলাদ’ বলে স্বীকার করা হয়, তাহলে স্বামীকে এক চতুর্থাংশ দেয়া সঠিক আছে কিন্তু ভাইকে কোন হিস্সা দেয়া সঠিক নয়। কারণ আল্লাহ তা’আলা বলেছেন: وَهُـوَ يَـرِثـُهَـآ اِنْ لـَمْ يَـكـُن لـَّهَـا وَلـَدٌ ‘‘এবং সে ব্যক্তিও (ভাই) তার মৃত বোনের উত্তরাধিকারী হবে, যদি তার (মৃত বোনের) কোন ‘ওলাদ’ (সন্তান) না থাকে। (সূরা নিসা- ১৭৬)।” যেহেতু কন্যাকে ‘ওলাদ’ বা সন্তান বলে স্বীকার করা হয়েছে, সুতরাং সে ‘ওলাদ’ বা সন্তানের উপস্থিতিতে ভাই কিছুই পেতে পারে না। আর যদি কন্যা সন্তানকে ‘ওলাদ’ বলে স্বীকার করা না হয়, তাহলে স্বামীকে মোট সম্পদের অর্ধেক হিস্সা দিতে হবে। কারণ আল্লাহ বলেছেন: وَلـَكـُمْ نـِصْـفُ مـَا تـَرَكَ اَزْوَاجـُكـُمْ اِنْ لـَمْ يـَكـُن لـَّهـُنَّ وَلـَدٌ فـَاِنْ كـَانَ لـَهـُنَّ وَلـَدٌ فـَلـَكـُمُ الـرُّبـُعُ مـِمـَّا تـَرَكـْنَ “তোমাদের জন্য অর্ধাংশ বরাদ্দ থাকবে যা কিছু তোমাদের স্ত্রীগণ রেখে মারা যাবে তাতে, যদি তাদের কোন ‘ওলাদ’ (সন্তান) না থাকে। তবে যদি তাদের কোন ‘ওলাদ’ (সন্তান) থাকে, তাহলে তোমরা এক চতুর্থাংশ পাবে যা কিছু তারা ছেড়ে যাবে তাতে।” (সূরা নিসা -১২)। এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, ‘ওলাদ’ বা সন্তান না থাকলে স্বামী পাবে সম্পদের অর্ধেক। কন্যা সন্তানকে যদি ‘ওলাদ’ বলে স্বীকার করা না হয়, তাহেল স্বামীকে অর্ধেক দিতে হবে। তা কুরআনের নির্দেশ। তখন স্বামী পাবে অর্ধেক আর কন্যা সন্তান তো তাদের মতানুসারে একজন হলে অর্ধেক পায়, সুতরাং বাকী অর্ধেক কন্যা নেবে।

শেষ পর্ব

কানিজ ফাতিমা ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহিত

 

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার পর্ব -৫

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার পর্ব -৫


নারীর জন্য আইন


(৩). মেয়ে ও বোনদেরকে মাওলা উত্তরাধিকারী মেনে নিয়ে অবশিষ্ট সম্পদ দেয়ার স্বপক্ষে মতামত না দিয়ে তাদেরকে নির্ধারিত হারে -একজনের জন্য অর্ধেক ও একাধিকের জন্য দু’তৃতীয়াংশ হিসাবে- হিস্সা দিলে হিসাবে গরমিল দেখা দেয়। যাকে ইলমুল ফারাইজে ‘আওল’ বলা হয়। যে আওলের কারণে কুরআনের ফারাইজ সংক্রান্ত সকল নির্দেশনা লঙ্ঘনের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। হিসাবে গরমিল দেখা দেয়ার উদাহরণ নিম্নরূপ:

ছক নং – ১.

মেয়ে একজন হলে হিসাবে গরমিল দেখা দেয়ার উদাহরণ [ফুকাহাদের মতানুসারে] :                     ১২       ১৩                মা.              আ       সম্পদের পরিমান ৬,০০,০০০ টাকা           স্বামী             মাতা              পিতা           মেয়ে ১ জন    =                =             =              =   = মোট অংশ    =                =             =          =    = মোট অংশ [আওলের কারণে হরের পরিবর্তন]   =        ৩            =   ২            =    ২             =     ৬   =  ১,৩৮,৪৬১.৫৪ টাকা =  ৯২,৩০৭.৬৯ টাকা =  ৯২,৩০৭.৬৯ টাকা   =২,৭৬,৯২৩.০৮ টাকানোট: কুরআন অনুসারে মৃতের সন্তান থাকলে স্বামী এক চতুর্থাংশ এবং পিতামাতার প্রত্যেকে এক ষষ্টাংশ করে পাওয়ার স্পষ্ট বিধান রয়েছে। কিন্তু একজন মেয়ে থাকলে সে মোট সম্পদের অর্ধাংশ পাবে বলে তারা মনে করেন। স্বামী, মাতা, পিতা ও একজন মেয়েকে এ হিসাবে হিস্সা দিলে মোট হিস্সার পরিমাণ দাড়ায়: {( + +  + ) = ()}= , যা পাটী গণিতের হিসাবে শুদ্ধ নয়। এ হিসাবে স্বামী ১,৫০,০০০ টাকা, পিতা ১,০০,০০০ টাকা ও মাতা ১,০০,০০০ টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও ফুকাহাগণ হিসাবের গরমিল হওয়ার অযুহাতে সবাইকে একটু একটু করে কম দেয়ার কথা বলেন। কারণ তাদের সম্পদের ১ অংশের স্থলে অংশ  ভাগ হয়ে গরমিল হতে দেখা যায়। সেজন্য তারা উপরোক্ত মাসআলায় স্বামীকে ১,৩৮,৪৬১.৫৪ টাকা পিতাকে ৯২,৩০৭.৬৯ টাকা মাতাকে ৯২,৩০৭.৬৯ টাকা ও মেয়েকে ২,৭৬,৯২৩.০৮ টাকা দিয়ে সমাধান করেন। অথচ তাদের নিজেদের সূত্রমতে মেয়েকে ৩,০০,০০০ টাকা দেয়ার কথা। কিন্তু হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. এর মতবাদের আলোকে অংশ ভাগ করলে হিসাবে গরমিল হবে না। তাঁর মতবাদের আলোকে উপরোক্ত মাসআলাটির সমাধান নীচের ছকে দেখুন:

ছক নং ২.

মেয়ে একজন হলে হিসাবে গরমিল না হওয়ার উদাহরণ [আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. এর মতানুসারে]:           ১২       ২৪     ১৯  মা.       তা.     রা.       সম্পদের পরিমান ৬,০০,০০০ টাকা    স্বামী             মাতা             পিতা                মেয়ে ১ জন                                                    অবশিষ্ট অংশের =           =               =            =    এর =           =              =            =       = সর্বমোট অংশ  =         =              =         =      = মোট অংশ (রদ্দের কারণে হরের পরিবর্তন)        = ৬          =  ৪              =   ৪           =  ৫ =১,৮৯,৪৭৩.৬৮ টাকা =১,২৬,৩১৫.৭৯ টাকা  =১,২৬,৩১৫.৭৯ টাকা  = ১,৫৭,৮৯৪.৭৪ টাকা নোট: কুরআনের বিধান অনুসারে মৃতের স্বামী ১,৫০,০০০ টাকা, মাতা ১,০০,০০০ টাকা ও পিতা ১,০০,০০০ টাকা পাওয়ার কথা আর মেয়েকে অবশিষ্ট অংশের অর্ধেক ={৬,০০,০০০ – (১,৫০,০০০ + ১,০০,০০০ + ১,০০,০০০)}= ২,৫০,০০০২ = ১,২৫,০০০ টাকা দিলে অতিরিক্ত ১,২৫,০০০ টাকা অবশিষ্ট থেকে যায় যা পুনর্বার এ উত্তরাধিকারীগণই পাবেন। তাতে স্বামী মোট ১,৮৯,৪৭৩.৬৮ টাকা মাতা ১,২৬,৩১৫.৭৯ টাকা পিতা ১,২৬,৩১৫.৭৯ টাকা ও মেয়ে ১,৫৭,৮৯৪.৭৪ টাকা পেলন। এ রকম হিস্সা দিলে হিসাবের গরমিল দেখা দেয়ার কোন কারণ নেই। প্রথমে মাখরাজ হবে ১২, পরে উহাকে তাছহীহ করতে হয়েছে ২৪ দিয়ে। আর সম্পদ অতিরিক্ত থেকে যাওয়ার কারণে পুনর্বার তা এ উত্তরাধিকারীদের মধ্যে পুন:বণ্টন হয়েছে। তাতে ভগ্নাংশের হর পরিবর্তিত হয়ে ১৯ হয়েছে। যা রদ্দের সূত্র অনুসারে হয়েছে। আর সম্পদের ১ অংশের স্থলে অংশও = ১ অংশই হয়েছে। এখানে আরেকটি বিষয় খেয়াল করার মত- তা এই যে, ফুকাহাদের মতানুসারে হিস্সা দিলে একজন মেয়েকে এত পরিমাণ সম্পদ দেয়া হয়, যা মেয়ের স্থলে ছেলে হলে, সে ছেলেও পেত না। কারণ স্বামী, মাতা ও পিতার সাথে একজন ছেলে থাকলে সে সর্বোচ্চ অংশ পাবে, ৬,০০,০০০ টাকার সম্পদে তা টাকার অংকে ২,৫০,০০০ টাকা। অথচ তাদের হিসাবে একজন মেয়ে পায় ২,৭৬,৯২৩.০৮ (১ নং ছকে দেখুন) যা স্বাভাবিক বোধশক্তিতে গ্রহনযোগ্য নয়।

 

 

ঢং

ঢং


ডা.মিথিলা ফেরদৌস


ঢং বা ন্যাকামো মেয়েদের একটা অলংকার বলা যেতে পারে।এইটা মেয়েদের বাড়তি সৌন্দর্য বর্ধনে সাহায্য করে।যে মেয়ের এই অর্নামেন্ট নেই,তার সৌন্দর্যের কিছু ঘাটতি থেকেই যায়।এইটা কঞ্জেনিটাল বা একুয়ার্ড দুইভাবেই মেয়েদের আয়ত্বে আসতে পারে।যেভাবেই হোক এইটা আয়ত্বে আনা মেয়েদের জন্য অপরিহার্য।
কুত্তা,বিলাই,ইন্দুর,চিকা,তেলাপোকা, মাকড়শা এমন কি পিপড়া দেইখা কারো কান্ধে ঝাপায় পরা ঢংয়ের একটা উদাহরণ। এছাড়াও বিভিন্ন পদের ঢং আছে।তবে ঢং এমন হতে হবে যা দেখলে ছেলেদের মধ্যে মায়া মহব্বত আপনাতেই উথলায় উঠে।অবশ্য ঢং যে শুধু মেয়েদের আছে তা না।ছেলেদেরও ঢং আছে।তবে সেইটা ছেলেদের খুত হিসেবে গণ্য করা হয়।

জন্মগত ভাবেই হোক বা নিজে নিজে কোনভাবেই এই জিনিস আমি আয়ত্বে আনতে পারিনি।ফলে বাড়তি এই সৌন্দর্য থেকে ছোটকাল থেকেই বঞ্চিত।ঢংয়ের অভাবে তাই চিরকাল মানুষের মায়ামহব্বত থাইকা বঞ্চিত।

বিবাহের পর একদিন শ্বশুরবাড়ির সিঁড়িতে দুই বিড়ালের ঝগড়াঝাঁটি মারামারিতে আমার জামাই আর তার বড় ভাবীর চিল্লাফাল্লা লাফালাফি দেখে বিড়াল না দেইখা এদের দেখে প্রথম অবাক হই।জামাইকে জিগাই,”উনি মেয়ে মানুষ ভয় পাইছে স্বাভাবিক,কিন্তু তুমি বিড়াল দেইখা ভয় পাইলা কি মনে কইরা বুঝলাম না।” জামাই বিরক্ত,কয়,’ভয়ের আবার মেয়ে আবার ছেলে কি?’
তাইতো ভয়ের তো লিংগান্তর ঠিক হয় নাই,চাইপা যাই।

কিছুদিন পর আমার প্রচন্ড জ্বর হয়,জ্বরে ঠিক অজ্ঞান হবার আগেই শুনতে পাই,আমার জামাই বলতেছে,”ঢং করতেছো কেন?”আমার আর কিছুই মনে নাই।আমি নিজেকে খুঁজে পাই, ঢাকা মেডিকেলের একটা কেবিনের বদ্ধরুমে জ্ঞান ফিরে তাও ছয়দিন পর।জানতে পারি,আমাকে নিয়ে মেডিকেল বোর্ড করেছিলেন ছয়জন মেডিসিনের প্রফেসর। এরপরেও আমার জ্বর কমেনা।সন্ধ্যা করে জ্বরের তীব্রতা বাড়তে থাকতো পুরা রুম গরম হয়ে যেতো।স্যাররা অসংখ্য টেস্ট করালেন।কিছুই ধরা পরেনা।তিনমাস টানা জ্বর ছিলো।এইসময় আমার মনে আছে,আমি কারো সাথেই কথা বলতাম না,কেবিনের হলদেটে দেয়ালের দিকে ফাকা দৃষ্টি নিয়ে তাকায় থাকতাম।মাঝে মাঝে প্রচন্ড মাথা ব্যথায় মাথায় হাত দিয়ে নিজেই ব্যথা কমানোর ব্যর্থ চেষ্টা করতাম।আমার জামাই বুঝেছিল,আমি আসলে ঢং করতে জানিনা।

এত পর আমার আল্লাহ্‌ এর অশেষ রহমতে আর বড় কোন অসুখ বিসুখ কখনও হয়নাই।তবে মাঝে মাঝে জ্বর আসলে কাথা মুরি দিয়ে থাকি,সহ্যের বাইরে গেলে ঔষধ খেয়ে নিই।আবার সুস্থ হয়ে চাকরী সংসার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসি।কাউকেই আমার জন্যে বিড়ম্বনায় পরতে দেইনা।

রুগীদের মধ্যে অনেককেই দেখি,সামান্য ব্যথা বা ব্যথা ছাড়াই লতায় পরে,সংগে আসা প্রেমিক বা জামাইয়ের উদ্বিগ্ন মুখ।তখন বুঝি ঢং দৈনন্দিন জীবনে কতটা অপরিহার্য ব্যাপার। ভালোই লাগে দেখতে।

তবে আমি আমার মত করে চলতেই পছন্দ করি।লতানো পরগাছা হয়ে বেচে থাকার মধ্যে আমি কোন আনন্দ খুঁজে পাই না।এইটা যেহেতু আমার ডেফিসিয়েন্সি, সেহেতু পরিবেশের সাথে সেইভাবেই আমাকে অভিযোজিত হতে হয়।

সবার সব কিছুই থাকেনা,কেউ অন্ধ,কারো হাত নেই,কারো পা নেই,কারো শীতে কাপড় নেই তবুও তারা তা মেনে নিয়েই সুখে বেচে আছে।আমার তো মাত্র ঢং নেই তাতে কি?

 

বেসনে পুঁইপাতা ফ্রাই

বেসনে পুঁইপাতা ফ্রাই


ঘরকন্যা


উপকরণ
১. পুঁইশাকের বড় বড় পাতা কয়েকটি,
২. বেসন ১ কাপ,
৩. হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ,
৪. মরিচ গুঁড়া আধা চা-চামচ,
৫. লবণ স্বাদমতো,
৬. রসুন বাটা আধা চামচ,
৭. বেকিং পাউডার সামান্য,
৮. বিট লবণ আধা চা-চামচ,
৯. পানি পরিমাণমতো,
১০. তেল ভাজার জন্য।

প্রণালি
> পুঁইশাকের বড় বড় পাতা ভালো করে ধুয়ে পানি মুছে রাখতে হবে। বিট লবণ ও তেল বাদে বেসনে বাকি সব মসলা একসঙ্গে মিশিয়ে ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন পরিমাণ মতো পানি দিয়ে। কড়াইয়ে তেল গরম করে পুঁইশাকের পাতা এক একটি করে বেসনে মিশ্রণে ডুবিয়ে ডুবো তেলে মচমচে ভেজে টিস্যু কাপড়ে তুলে রেখে নিজের পছন্দ অনুযায়ী সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

রেসিপি :সমকাল

 

মোরা জোনাকি হতে চাই – ৪

মোরা জোনাকি হতে চাই – ৪


আফরোজা হাসান


তা হয়তো কঠিন কিন্তু যা করণীয় তা তো আমাদেরকে করতেই হবে। আর যা করতেই হবে তাকে কঠিন ভাবতে আমি নারাজ। কারণ আমরা যখন উত্তম হবার পথে চলতে শুরু করবো তখন আল্লাহ আমাদের পাশে থাকবেন এবং আর সেই সত্ত্বার সহায়তায় দূর হয়ে যাবে সকল প্রতিকূলতা। আর আমি বিশ্বাস করি যে আল্লাহ আমাদেরকে সাহায্য করার জন্যই বসে আছেন। আমরাই সাহায্য পাবার মত করে চেষ্টা করতে পারি না। সামান্য বাঁধা পেলেই থামকে যাই, প্রতিকূলতায় ঘাবড়ে গিয়ে হাল ছেড়ে দেই। এই যে তুমি পরীক্ষায় পাশের জন্য উঠে পড়ে লেগেছো। কল্যাণময়ী, মঙ্গলময়ী হবার জন্যও তো এমন চেষ্টা করতে হবে। তাই না?

তুই চেষ্টা করিস?

হুমম…চেষ্টা করি। আমার মতে প্রতিটা মেয়েরই এমন চেষ্টা করা উচিত। আমি কেমন মেয়ে হতে চাই জানো? প্রতিটা সম্পর্কের কাছে যে হবে আল্লাহর দেয়া উপহার। যে বাবা-মার জন্য হবে সাদাকায়ে জারিয়া, স্বামীর জন্য হবে পরিচ্ছদ, সন্তানের জন্য হবে জান্নাত।

আজ থেকে আমার চাওয়াও এটাই থাকবে। তুই আমাকে সাহায্য করবি তো?

ইনশাআল্লাহ! সবসময় আমরা দুজন একে অন্যেকে সাহায্য করবো। পথ চলতে গিয়ে যেই থমকে যাবো অন্যজন হাত বাড়িয়ে দেবো। এবং এখন থেকেই সাহায্যের সেই কার্যক্রম শুরু হবে। সকালে পরীক্ষা এখন তুমি পড়তে বোস। চল আমি সাহায্য করছি তোমাকে। দুজন মিলে আলোচনা করলে তাড়াতাড়ি বুঝতে সহায়তা হবে তোমার। তার আগে একটা প্রশ্নের জবাব দাও।

কি প্রশ্ন?

আগামীকাল পরীক্ষার পর আমার সাথে হসপিটালে যেতে পারবে?

হসপিটালে? হসপিটালে কেন? বেশ অবাক কন্ঠে জানতে চাইলো রুহি।

কিছুক্ষণ আগে জানতে পারলাম আমাদের ক্লাস ফ্রেন্ড সোনিয়ার আম্মুর গত তিনদিন ধরে হসপিটালে। মামণিকে বলেছিলাম আন্টিকে দেখতে যাবার কথা। কিন্তু মামণির নাকি সময় হবে না আগামীকাল। তবে বলেছেন খাবার রান্না করে আমাদেরকে কলেজ থেকে আনতে যাবার সময় ড্রাইভার চাচার কাছে দিয়ে দেবেন। আমরা যেন পরীক্ষা শেষে ফেরার পথে আন্টিকে দেখে আসার সাথে সাথে খাবারও দিয়ে আসি।

এমন একটা ব্যাপার আর তুই প্রশ্ন করছিস যাবো কিনা? অবশ্যই যাবো ইনশাআল্লাহ। কিন্তু কি হয়েছে আন্টির?

সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়েছিলেন। মাথায়, কোমরে, পায়ে খুব ব্যথা পেয়েছেন। কান্নার জন্য ঠিকমতো কথাই বলতে পারেনি সোনিয়া। আগামীকাল তো যাচ্ছিই ইনশাআল্লাহ তখন জেনে নেয়া যাবে।

হুম! ঠিকআছে। তাহলে চল এখন আমাকে পড়তে সাহায্য করবি।

হাসিমুখে দুইবোন তখন বইপত্র নিয়ে বসলো।

@

গাড়ি থেকে বের হতেই তীব্র গতিতে এক ইন্টার্নকে তার দিকে ছুটে আসতে দেখে থমকে গেলো যায়েদ। কাছে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে মাশরুফ সালাম দিয়ে বলল, স্যার আপনার জন্যই অপেক্ষা করছি আমি। অনেকবার ফোন দিয়েছি আপনাকে।

সালামের জবাব দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে যায়েদ বলল, ড্রাউভ করছিলাম তাই ফোন রিসিভ করতে পারিনি। কি সমস্যা তোমার?

স্যার আমার কাজিন। সুইসাইড করার চেষ্টা করেছিল। নাউ আউট অব ডেঞ্জার। কিন্তু সেন্স ফিরে আসার পর খুব চিৎকার করছিল কেন ওকে বাঁচানো হলো। ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে এখন। আপনি যদি একটু কথা বলতেন ওর সাথে।

কি হয়েছিল?

গতকাল ওর ডিভোর্স হয়েছে। বৌকে খুব ভালোবাসতো সেজন্য ইমোশনালি…!

আজব সব ছেলেমেয়েতে ভরে গেছে দুনিয়াটা। জীবনে আসা সুন্দর সুযোগ গুলোকে কাজে লাগানোর কোন ইচ্ছেই এদের ভেতর কাজ করে না। সারাদিন ঝগড়াঝাঁটি করে জীবন অতিষ্ট করা বৌয়ের সাথে ডিভোর্স হবার জন্য কোথায় আলহামদুলিল্লাহ বলবে। এরপর আরেকটা বিয়ে করে সেই বৌকে নতুন করে ভালোবাসতে চেষ্টা করবে। এখানে সুইসাইড করার কি হলো?

ভেতর থেকে উঠে আসা হাসিটা প্রাণপণে আঁটকে ফেললো মাশরুফ। মেডিক্যাল স্কুলে ভর্তি হবার পর থেকেই যায়েদ স্যারকে চেনে। সবচেয়ে ফেমাস নিউরো সাইকোলজিষ্টেদের একজন। প্রফেসর হিসেবেও অনন্য। মাশরুফ যদিও সরাসরি যায়েদ স্যারের সংস্পর্শে আসার সুযোগ তেমন একটা পায়নি কখনোই। তবে স্যার যেই হসপিটালে প্রাক্টিস করেন সেখানে ইন্টার্নী করার সুবাদে গত দেড় মাস উনাকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাচ্ছে। এই হসপিটালের প্রতিজন ডক্টরই অসাধারণ একেকজন মানুষ মনে হয়েছে। প্রত্যেককেই মানুষের সেবায় নিবেদিত প্রাণ ডক্টর মনে হয়েছে। কিন্তু যায়েদ স্যার মাশরুফের মনে সবার উপরের স্থানটা দখল করে নিয়েছেন। যত ভয়াবহ সমস্যার কথাই বলা হোক না কেন স্যার অতি উন্নত এবং অসাধারণ সেন্স অব হিউমারের প্রভাবে সেটাকে মূহুর্তেই হালকা করে দেন। ব্যাপারটা এমন নয় যে স্যার কোন কিছুতেই সিরিয়াস নন। বরং যে কোন ধরণের বিপদ-আপদ, সমস্যাকে খুব স্বাভাবিক ভাবে মোকাবিলা করার বিশেষ ট্রেনিং উনি নিজেকে দিয়েছেন।

কথা বলতে বলতে হসপিতালের ভেতরে ঢুকলো দুইজন। রিসিবশন পেড়িয়ে ওয়েটিং হলের কাছে পৌছে একজন বৃদ্ধকে কান্নারত দেখে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে মাশরুফের দিকে তাকালো যায়েদ।

মাশরুফ বলল, আধঘন্টা আগে ভদ্রলোকের ওয়াইফ মারা গিয়েছেন স্যার। ক্যান্সারের পেশেন্ট ছিলেন উনার ওয়াইফ। খুব কষ্ট পেয়েছেন মৃত্যুর আগে।

মুখে কিছু না বলে ধীর পায়ে বৃদ্ধের দিকে এগিয়ে গেলো যায়েদ। ভদ্রলোকের পাশে বসে খুব নরম কন্ঠে বলল, প্রিয়জন হারানোর বেদনাকে বুকের মধ্যে বরফের মতো জমে যেতে না দিয়ে বরং অশ্রু হয়ে ঝরে যেতে দেয়াই উত্তম। কান্না করতে তাই আপনাকে আমি নিষেধ করবো না। কোন সান্ত্বনাও দিতে চাই না। কারণ কিছু কিছু ক্ষেত্রে সান্ত্বনা দেয়াটা এক ধরণের হঠকারিতা। তবে এটা অবশ্যই বলবো স্ত্রীর কথা ভাবলে উনার মৃত্যুতে খুশি হওয়া উচিত।

অশ্রুসিক্ত চোখে যায়েদের দিকে তাকালো বৃদ্ধ। কিছু বলার জন্য ঠোঁট নাড়াতে গিয়েও আবারো কান্নায় ভেঙে পড়লো।

যায়েদ বলল, মনে করে দেখুন কত কষ্ট পেয়েছেন আপনার স্ত্রী অসুস্থতার কারণে। ট্রিটমেন্ট, মেডিসিন উনাকে সাময়িক একটা স্বস্থি দিলেও কষ্টের হাত থেকে মুক্তি দিতে পারেনি কখনোই। কিন্তু মৃত্যুর ফলে অসহ্যকর সেই যাতনার হাত থেকে উনি মুক্তি পেয়েছেন। প্রিয়জনকে আমরা কেউই হারাতে চাই না। কারণ তাদেরকে আমরা ভালোবাসি। আবার ভালোবাসি বলেই প্রিয়জনকে আমরা কষ্ট দিতে চাই না। কিন্তু কোন প্রিয় মানুষ যদি আমাদের কাছে থেকে কষ্টে থাকে। সেক্ষেত্রে তার দূরে চলে যাওয়াটাকে খুশি মনে মেনে নেয়া উচিত। কেননা ভালোবাসার অর্থ একসাথে বা কাছাকাছি থাকা নয়। ভালোবাসার অর্থ দূরে থেকেও একে অন্যের কল্যাণ কামনা করা। একে অন্যের শান্তির মধ্যে আনন্দ খুঁজে নেয়া। গিয়ে দেখুন কি প্রশান্তিতে ঘুমোচ্ছেন আপনার স্ত্রী। গত কয়েক মাসে কি কখনো শান্তিতে দু’চোখ বুজতে দেখেছেন উনাকে? ঘুমের ভেতরেও ককিয়ে উঠতেন ব্যথায় তাই না?

অবাক চোখে যায়েদের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলো বৃদ্ধ। তারপর নিজের স্ত্রীর কষ্টের মূহুর্তগুলোর কথা বলতে শুরু করলেন আপন মনেই। এক সময় কিছুক্ষণের জন্য থেমে গেলেন। এরপর বললেন, ইয়েস ডক্টর ইউ আর রাইট। আজ আমার স্ত্রী ভয়াবহ এক কষ্টের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছে। অনেকদিন পর আজ শান্তিতে ঘুমোচ্ছে। আমার ওর জন্য হ্যাপী হওয়া উচিত।

আরো কিছুক্ষণ বৃদ্ধের সাথে কাটিয়ে নিজের কেবিনের দিকে রওনা দিলো যায়েদ। মাশরুফ দন্ত বিকশিত করে বলল, স্যার আপনি সত্যিই অসাধারণ।

যায়েদ বলল, তোমার কি ধারণা মৃত্যুর পর প্রশান্তির জীবন শুরু হবার সম্ভাবনা কতটুকু একজন মানুষের?

মূহুর্তেই কবরের জীবন, পরকালের কথা স্মরণে হাসি মুছে গেলো মাশরুফের মুখ থেকে। আতঙ্কের ঢোঁক গিললো।

যায়েদ বলল, পেশেন্ট এবং তাদের রিলেটিভদেরকে সান্ত্বনা দেবার সময় অনেক কথাই বলতে হয়। কিন্তু সেই কথার প্রভাব যাতে নিজের উপর না পড়ে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখবে সবসময়।

জ্বি স্যার।

তোমার কাজিন উঠলে আমাকে খবর দিয়ো। নাউ লীভ।

হাসি মুখে ইয়েস স্যার বলে মাশরুফ ছুটলো নিজের কাজে।

চলবে
পর্ব-৫

 

শিশু মৃত্যুর হার ৬৩ শতাংশ কমিয়েছে বাংলাদেশ

শিশু মৃত্যুর হার ৬৩ শতাংশ কমিয়েছে বাংলাদেশ


স্বাস্থ্যকথা


ঢাকা, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ (বাসস): শিশু মৃত্যুহার হ্রাসে বাংলাদেশ প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশে বিগত বিশ বছরে শিশু মৃত্যুর হার ৬৩ শতাংশ কমিয়েছে। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশই ২০০০ সাল থেকে শিশু মৃত্যু হ্রাসে যথেষ্ট উন্নতি করেছে, যার প্রথম দিকের দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ।
শূন্য থেকে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুহার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্যকে ইতোমধ্যে জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) স্বীকৃতি দিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রাম পর্যায়ে স্বাস্থ্য পরিসেবার উন্নয়নের ফলেই এই অর্জন সম্ভব হয়েছে। এমনকি শিশু মৃত্যুহার হ্রাসে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। মা ও শিশু মৃত্যুহার হ্রাসে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের টার্গেট নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ ‘বার্ষিক গ্লোবাল চাইল্ড হুড রিপোর্ট ২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদনে দেখা যায়, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালে গত দুই দশকে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা অনেক হ্রাস পেয়েছে। চারটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি অর্জন করেছে, যেখানে ভুটানের শিশু মৃত্যুর হার কমেছে ৬০ শতাংশ, নেপালে ৫৯ শতাংশ এবং ভারতের ৫৭ শতাংশ। আর বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর হার কমিয়েছে ৬৩ শতাংশ।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, সরকার মাতৃ ও শিশু মৃত্যুরোধে সকল সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছে। আর এই কারণেই দেশে মাতৃ ও শিশুমৃত্যু উভয়ই কমেছে। ২০১৭ সালে গর্ভকালীন মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি লাখে ১৭৬ জন থাকলেও বর্তমানে তা ১৭২ জন। এছাড়া ২০১৫ সালে প্রতি হাজার নবজাতকের মধ্যে মৃত্যুহার ২০ জন থাকলেও বর্তমানে তা হ্রাস পেয়ে ১৮ দশমিক ৪ ভাগে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আমাদের ২০৩০ সালের মধ্যে প্রিম্যাচুউরড এ শিশু মৃত্যুহারের লক্ষ্যমাত্রা ১২ দেয়া আছে। স্বাস্থ্যসেবা খাতের সবাই সঠিকভাবে সঠিক কাজটি করলে এই অপরিণত শিশু মৃত্যু হারের লক্ষ্যমাত্রা আগামী ২ বছরেই অর্জন করা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে দেশের সব সরকারি হাসপাতালেই গর্ভবতী মায়েদের জন্য ২৪ ঘন্টা ডেলিভারি সুবিধাও রাখা হবে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ও নিপোর্টের রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত ২৪ বছরে দেশে শিশু মৃত্যুহার ৭৩ শতাংশ কমেছে। এসডিজি অনুযায়ী, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে শূন্য থেকে এক মাস বয়সী শিশু মৃত্যুহার প্রতি হাজারে ১২ জনে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। বর্তমানে এই সংখ্যা ২৮ জন। তবে, শূন্য থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশু মৃত্যুহার প্রতি হাজারে ৩৮ জন। এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০৩৫ সালের মধ্যে জীবিত জন্মানো শিশু মৃত্যুহার প্রতি হাজারে ২০ জনে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
সর্বশেষ জরিপেও দেখা গেছে, প্রতি হাজারে শূন্য থেকে এক মাস বয়সী ২৮ শিশু মারা যাচ্ছে। অন্যদিকে এক থেকে চার বছর বয়সী শিশু মৃত্যুহার প্রতি হাজারে মাত্র ১০ জন। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য শূন্য থেকে এক মাস বয়সী শিশু মৃত্যুহার হাজারে ১২ জন এবং এক থেকে চার বছর বয়সী শিশু মৃত্যুহার হাজারে ২৫ জনে নামিয়ে আনতে হবে। এক থেকে চার বছর বয়সী শিশু মৃত্যুহারে বাংলাদেশ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এখনই এগিয়ে রয়েছে। তবে, শূন্য থেকে এক মাস বয়সী শিশু মৃত্যুহার হাজারে ১৪ জন কমাতে হবে। সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (মা ও শিশু) ডা. মোহাম্মদ শরীফ বলেন, শূন্য থেকে এক মাস বয়সী শিশুর মৃত্যুঝুঁকি বেশি। যদিও পাঁচ বছরের নিচে পর্যন্ত ঝুঁকি থেকে যায়। কারণ, জন্ম-পরবর্তী শ্বাসকষ্ট, কম ওজনের কারণে জন্মগত জটিলতা, সেপটিসেমিয়া, নিউমোনিয়া ও এনকেফেলাইটিস পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর প্রধান কারণ। এ ছাড়া অপুষ্টির কারণেও মৃত্যু হয়। এই মৃত্যু প্রতিরোধে সার্বিক ব্যবস্থাপনার মান বাড়ানো হয়েছে।
তিনি বলেন, টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন, ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণ, ভিটামিন ‘এ’ সম্পূরক ওষুধের সফল ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে। এসব কারণে শিশু মৃত্যু হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা থাকলে আগামী ২০৩০ সালের আগেই শিশু মৃত্যুহার কমানো সম্ভব হবে।

সুত্রঃ বাসস।

 

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার পর্ব -৪

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার পর্ব -৪


নারীর জন্য আইন


(২). হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. বর্ণিত হাদীছের সঠিক অনুবাদ হবে – ‘তোমরা উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পদ বন্টন কর আল্লাহর কিতাব মোতাবেক। যে সম্পদ অবশিষ্ট থেকে যাবে, তা পাবে সর্বাধিক হকদার পুরুষ লোক।’ কারণ ‘আওলা’ শব্দের অর্থ হল সর্বাধিক হকদার, ‘ঘনিষ্ঠতর’ নয়। আর সর্বাধিক হকদার পুরুষ লোক হল পুত্র-সন্তান। দূরবর্তী পুরুষ মাওলা বা আছাবাগণ কখনোই সর্বাধিক হকদার নন। তাছাড়া এ হাদীছটি ‘খবরে ওয়াহিদ’ (একমাত্র বর্ণণাকারী কর্তৃক বর্ণিত) হওয়ার কারণে এবং স্বয়ং বর্ণণাকারী ছাহাবী ভিন্ন মতামত ব্যক্ত করার কারণে উহা আমল করার উপযোগী নয়। কারণ স্বয়ং আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. তার নিজের বর্ণিত হাদীছখানা থাকা সত্বেও কন্যাদেরকে অবশিষ্টাংশভোগী মাওলা (আছাবা) উত্তরাধিকারী বলে মনে করেন। (৩). কুরআনে মূলত অবশিষ্ট অংশের কথা বলা হয়েছে। আর হযরত জাবির রা. এবং হুযাইল বিন শুরাহবীল রাহ. বর্ণিত হাদীছগুলো সহ যেসব হাদীছে রাসূলুল্লাহ সা. মেয়েদের সাথে ভাইবোনদেরকে অংশ দিয়েছেন বলে বর্ণিত হয়েছে, তা উহুদ যুদ্ধের পরের ঘটনা। তখনও ভাইবোনদের হিস্সা বর্ণনা করে কালালার আয়াত অবতীর্ণ হয়নি। তখন তো রাসূলুল্লাহ সা. শুধু ভাইবোনকে নয় বরং মুক্তিদাতা মুনিব ও মুক্তিপ্রাপ্ত ক্রীতদাসকেও দিয়েছেন। যেমন বর্ণিত আছে: عـَنْ اِبـْنِ عـَبـاَّسٍ اَنَّ مـَوْلـًي لـِحـَمـْزَةَ تـُوُفـِّيَ فـَتـَرَكَ اِبـْنـَتـَهُ وَاِبـْنـَةََ حـَمـْزَةَ فـَاَعـْطـَي الـنـَّبـِيُّ صـَلـَّى الـلـَّهُ عـَلـَيـْهِ وَسـَلـَّمَ اِبـْنـَتـَهُ الـنـِّصـْفَ وَاِبـْنـَةَ حـَمـْزَةَ الـنـِّصـْفَ ‘হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ‘হামজা এর একজন মুক্তিপ্রাপ্ত ক্রীতদাস ছিল। সে তার একমাত্র মেয়ে ও মুনিব হামজা এর মেয়েকে রেখে মারা গেলে রাসূলুল্লাহ সা. তার পরিত্যক্ত সম্পদের অর্ধেক তার মেয়েকে দেন ও বাকী অর্ধেক দেন হামজা এর মেয়েকে।’ (সুনানু দার কুথনী)

৬। আর এ কথা সর্বজন বিদিত যে, হযরত হামজা রা. উহুদ যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন। তার কোন পুত্র সন্তান ছিল না; একজন মাত্র কন্যা ছিলেন। এজন্য তিনি একজন ক্রীতদাসকে তাবান্নী বা পালকপুত্র বানিয়েছিলেন। কিন্তু সূরা নিসার ১৭৬ নং আয়াত নাযিলের পরে আর ভাইবোনকে কিছুই দেন নি। কারণ এ আয়াত সবশেষে নাযিল হয়েছিল। যেমন বর্ণিত আছে: عـَنِ الـْبـَرَاءِ قـَالَ آخِـرُ آيـَةٍ نـُزِلـَتْ مـِنَ الـْقـُرْآنِ يَـسْـتـَفـْتـُوْنـَكَ قـُلِ الـلّهُ يـُفـْتِـيْـكـُمْ فِـيْ الـْكـَلاَلـَةِ হযরত বারা (বিন আযিব) রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: ‘কুরআনের সর্বশেষ যে আয়াত নাযিল হয় তা হল- يَـسْـتـَفـْتـُوْنـَكَ قـُلِ الـلّهُ يـُفـْتِـيْـكـُمْ فِـيْ الـْكـَلاَلـَةِ ’- অর্থাৎ সূরা নিসার এই ১৭৬ নং আয়াত। (বুখারী, মুসলিম)৭। আর সর্বশেষ বিধানের মাধ্যমে মহানবী সা. এর পূর্বে দেয়া সকল নির্দেশনা রহিত হয়ে গিয়েছে।

খ.

(১). হযরত হুযাইল বিন শুরাহবীল রাহ. বর্ণিত হাদীছে মহানবী সা. এর আমলের বিবরণ রয়েছে বটে কিন্তু মৌখিক কোন নির্দেশনা নেই। উহা সর্বশেষ নাযিলকৃত আয়াত দ্বারা রহিত হয়েছে। আর সিরাজীর উল্লেখিত اِجـْعـَلـُوْا اْلاَخـَوَاتِ مـَعَ الـْبـَنـَاتِ عـَصَـبـَةً ‘তোমরা মেয়েদের সাথে বোনদেরকে আছাবা বানাও’- বক্তব্যটি হাদীছের নামে একটি জালিয়াতি। মহানবী সা. কখনোই এরকম কোনকিছু বলেন নি। এ কারণে কথিত এ হাদীছের বর্ণণাকারী ছাহাবী ও সনদের কোন বিবরণ কেউ জানে না। (দেখুন: ‘আর রাদ্দুল মুহতার ফী শারহে দুররিল মুখতার’)৮।

(২). তৎকালিন আরব সমাজে প্রচলিত ও জনপ্রিয় ‘আছাবা’ প্রথাকে উৎখাত করে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন উত্তরাধিকারে নারীকে হিস্সা দিয়েছিলেন। সমস্তরের পুরুষ উত্তরাধিকারীর সাথে মিলিত হলে নারী ‘আছাবা বিগায়রিহী’ হবে, অন্যথায় আছাবা হতে পারবে না; আর কন্যার সাথে মিলিত হলে বোন ‘আছাবা মা’আ গায়রিহী’ হবে- এসব কথা একান্তই কিছু মনিষীর ব্যক্তিগত অনুমান- আল্লাহ প্রদত্ত নয়, রাসূল সা. বর্ণিতও নয়। বরং আছাবাগিরীর বিরোদ্ধে রাসূল সা. কঠোর মন্তব্য করেছেন। যেমন বর্ণিত আছে: عـَنْ جـُبـَيـْرِ بـْنِ مـُطـْعـِمٍ قـَالَ قـَالَ رَسُـوْلُ الـلـَّهِ صَـلـَّى الـلـَّهُ عـَلـَيـْهِ وَسَـلـَّمَ لـَيـْسَ مـِنـَّا مَـنْ دَعَـيْ اِلـَيْ عَـصَـبـِيـَّةٍ وَلـَيـْسَ مـِنـَّا مَـنْ قـَاتـَلَ عَـلـَيْ عَـصَـبـِيـَّةٍ وَلـَيـْسَ مـِنـَّا مَـنْ مَـاتَ عـَلـَيْ عَـصَـبـِيـَّةٍ হযরত যুবায়ের বিন মুত্ইম রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন: ‘যে আছবিয়্যাতের দিকে আহবান করে সে আমার উম্মাতের মধ্যে শামিল নয়। আর যে আছবিয়্যাতের কারণে যুদ্ধ করে, সে আমার উম্মাতের মধ্যে শামিল নয় এবং যে আছবিয়্যাতের জন্য নিহত হয় সেও আমার উম্মাতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (আবু দাউদ)৯। এ কারণে আমরা এ আছাবা পরিভাষা ও উহার শ্রেণীবিন্যাসের সাথে একমত নই। প্রকৃতপক্ষে কিছু ভুল ব্যাখ্যা ও নকল হাদীছের ভিত্তিতে এ শ্রেণীবিন্যাসের থিওরী গড়ে উঠেছে বলে আমরা মনে করি।

 

 

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার পর্ব -৩


নারী জন্য আইন


ব্যাখ্যা করে তারা বলেন যে, সকল পুরুষ উত্তরাধিকারীগণ হলেন ‘আছাবা বিনাফসিহী’, যারা স্বনির্ভর অবশিষ্টাংশভোগী আছাবা। পক্ষান্তরে কন্যা ও বোনের মত নারী উত্তরাধিকারীগণ, যাদের জন্য নির্ধারিত হিস্সা আল্লাহ বলে দিয়েছেন বলে তারা মনে কেরন, তারা তাদের ভাইদের সাথে যৌথভাবে উত্তরাধিকারী হলে সে ভাইদের কল্যাণে তারা বোনেরাও আছাবায় পরিণত হন। এ রকম পরনির্ভরশীল আছাবাদেরকে বলা হয় ‘আছাবা বিগায়রিহী’। আর কন্যা সন্তানদের সাথে যদি মৃতের এক বা একাধিক বোন উত্তরাধিকারী জড় হন, তবে কন্যাগণ যবীল ফুরূজ ঠিকই থাকবেন, কিন্তু বোনেরা আছাবায় পরিণত হয়ে অবশিষ্ট সম্পদ লাভ করবেন। এ ধরণের আছাবা হওয়াকে তারা ‘আছাবা মা’আ গায়রিহী’ বলে অভিহিত করে থাকেন।গ.       ফুকাহাগণ আরো বলেন: ‘সূরা নিসার ১৭৬ নং আয়াত পাঠ কালে মনে হতে পারে যে, সন্তানের উপস্থিতিতে ভাই অথবা বোনেরা উত্তরাধিকারী নন। কিন্তু এ ধারণা ঠিক নয়। কারণ আয়াতে বলা হয়েছে: اِنِ امْـرُؤٌ هَـلـَكَ لـَيْـسَ لـَهُ وَلـَدٌ وَلـَهُ اُخْـتٌ فـَـلـَهَـا نـِصـْفُ مـَا تـَرَكَ وَهُـوَ يَـرِثـُهَـآ اِنْ لـَمْ يَـكـُن لـَّهَـا وَلـَدٌ ‘‘যদি কোন নি:সন্তান লোক মারা যায় এবং তার একজন বোন থাকে, তবে সে বোন মৃত ব্যক্তি যা কিছু ছেড়ে যাবে তার অর্ধেক পাবে – এবং সে ব্যক্তিও তার বোনের (যদি মারা যায়) উত্তরাধিকারী হবে, যদি তার (মৃত বোনের) কোন সন্তান না থাকে।’’ প্রকৃতপক্ষে এ আয়াতে সকল সন্তানের কথা বলা হয়নি, বরং পুত্র-সন্তানের কথা বলা হয়েছে। কারণ এ আয়াতে ব্যবহৃত ‘ওলাদ’ শব্দের অর্থ হল পুত্র-সন্তান। কারণ এ রকম অর্থ গ্রহন না করলে উপরে বর্ণিত হাদীছ গুলোর সাথে এ আয়াতের সমম্বয় করা যায় না।’ পক্ষান্তরে হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস, আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের রা. সহ কিছু সংখ্যক ছাহাবায়ে কেরাম ও অন্য একদল ফুকাহার মতে সন্তান পুত্র হোক অথবা কন্যা- কোন ধরণের সন্তানের উপস্থিতিতে ভাইবোন কোন উত্তরাধিকারী বলে বিবেচিত হবেন না। যেমন বর্ণিত আছে: عَـنْ عَـطـَاءَ اَنَّ اِبْـنَ عَـبـاَّسٍ كـاَنَ يـَقـُوْلُ اَلـْمـِيـْرَاثُ لِـلـْوَلـَدِ فـَاِنـْتـَزَعَ الـلـََّهُ تـَعـَالـَي َمـِنـْهُ لِـلـزَّوْجِ وَالـْوَالـِدِ হযরত আতা রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ইবনে আব্বাস বলতেন: ‘মালের হকদার হলেন সন্তানগণ। সেখান থেকে আল্লাহ পিতা-মাতা ও স্বামী-স্ত্রীদের জন্য কিছু সম্পদ ছিনিয়ে নিয়েছেন।’ (আল মুছান্নাফ)

৫। তারা ‘আছাবা বিনাফসিহী’, ‘আছাবা বিগায়রিহী’ অথবা ‘আছাবা মা’আ গায়রিহী’- প্রভৃতি পরিভাষার সমর্থনে কোন বক্তব্য দেন নি। আমরা প্রথম দলের চাইতে হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. প্রমুখদের মতামতকে অধিক যুক্তিসঙ্গত ও সমর্থনযোগ্য বলে মনে করি। আমাদের নিম্নোক্ত আলোচনায় প্রমাণীত হবে যে, কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে ভাইবোন কোন প্রকার উত্তরাধিকারী নন। ক.                             কন্যা সন্তানদেরকে ‘যবীল ফুরূজ’ বিবেচনা করা সংক্রান্ত তাদের প্রথম দাবী নিুোক্ত কারণে সঠিক নয়। (১). মেয়েরা ছেলেদের মত মাওলা (আছাবা) হতে পারে বলে আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন কুরআন শরীফে স্পষ্টভাবে ঘোষনা করেছেন। আল্লাহ বলেন: وَلـِكـُلٍّ جَـعَـلـْنـَا مَـوَالِـيَ مِـمَّـا تـَرَكَ الـْوَالِـدَانِ وَاْلاَقـْرَبـُوْنَ “আর পিতামাতাও আত্মীয় স্বজনেরা যা কিছু ছেড়ে যাবেন তাতে (পুরুষ ও নারীর) প্রত্যেককে আমরা মাওলা বানিয়েছি।” (সূরা নিসা-৩৩)। এ আয়াতে বর্ণিত ‘মাওলা’ শব্দের অর্থ হল অবশিষ্টাংশভোগী উত্তরাধিকারী, যাকে অনেকেই ‘আছাবা’ নাম দিয়ে থাকেন। হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. কাতাদা রাহ. মুজাহিদ রাহ. ইবনু যায়েদ রাহ. সহ বড় বড় তাফসীরকারকদের এ ব্যাপারে ঐক্যমত্য দেখা যায়। (দেখুন তাফসীরে তাবারী, বাগাবী, ফাতহুল কাদীর, জালালাইন প্রভৃতি)। আর কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে অপর কেউ মাওলা হওয়ার অধিকারী নন। যেমন সন্তানের পরে সর্বাধিক শক্তিশালী মাওলা হলেন পিতা। এ কারণে পিতার উপস্থিতিতে ভাইবোন উত্তরাধিকারী হতে পারেন না। কিন্তু সে পিতাও কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে মাওলা হওয়ার অধিকারী নন। বরং তখন তিনি নির্ধারিত হিস্সাদার ‘যবীল ফুরূজ’ হিসাবে এক ষষ্টাংশ পাবেন। আল্লাহ বলেন: وَلاَبـَوَيـْهِ لـِكـُلِّ وَاحِـدٍ مِـنـْهُـمَـا الـسُّـدُسُ مِـمَّـا تـَرَكَ اِن كـَانَ لـَهُ وَلـَدٌ  “আর পিতামাতার প্রত্যেকে মৃত ব্যক্তি যা কিছু ছেড়ে যাবে তাতে এক ষষ্টাংশ করে পাবেন, যদি মৃতের কোন সন্তান থাকে।” (সূরা নিসা-১২)। পিতার পরে সর্বাধিক শক্তিশালী মাওলা হলেন ভাই। কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সে ভাই কোন হিস্সাই পান না। আল্লাহ তা’আলা বলেন: وَهُـوَ يَـرِثـُهَـآ اِنْ لـَمْ يَـكـُن لـَّهَـا وَلـَدٌ ‘‘এবং সে ব্যক্তিও (ভাই) তার মৃত বোনের উত্তরাধিকারী হবে, যদি তার (মৃত বোনের) কোন সন্তান না থাকে।” (সূরা নিসা- ১৭৬)। কারণ মেয়েরা নিজেরা মাওলা হওয়ার কারণে অপরাপর মাওলাদেরকে তারা দূরে সরিয়ে দেয়। তবে কথা হল এই যে, একজন কন্যা সন্তান একজন পুত্র সন্তানের সমান শক্তিশালী মাওলা নন। বরং দু’জন কন্যা সন্তান একজন পুত্র সন্তানের সমান। আর একজন কন্যা সন্তান একজন পুত্র সন্তানের অর্ধেক হিস্সার অধিকারী। এ কারণেই আল্লাহ বলেছেন: لـِلـذَّكـَرِ مِـثـْلُ حَـظِّ اْلأُنـْثـَيَـيـْنِ ‘‘প্রত্যেক পুত্র সন্তান দু’জন কন্যা সন্তানের সমান হিস্সা পাবে।” (সূরা নিসা-১১)। আল্লাহ আরোও বলেন: وَاِنْ كـَانـَتْ وَاحِـدَةً فـَلـَهَـا الـنـِّصْـفُ ‘‘ছেলেমেয়েদের মধ্যে যদি একজন মাত্র মেয়ে হয়, তাহলে সে পাবে অর্ধেক।” উহার অর্থ হবে وَاِنْ كـَانـَتْ وَاحِـدَةً فـَلـَهـَا نـِصـْفُ حَـظِّ الـذَّكـَرِ অর্থাৎ ছেলেমেয়েদের মধ্যে যদি একজন মাত্র মেয়ে হয়, তাহলে সে পাবে- একজন ছেলে থাকলে সে যতটুকু পেত- তার অর্ধেক। আর দু’য়ের অধিক কন্যা সন্তান হলে তারা পাবে দু’তৃতীয়াংশ ঠিকই, কিন্তু বাকী এক তৃতীয়াংশ পাবেন পিতামাতা, যা আয়াতেই উল্লেখ আছে। উহা দ্বারা প্রকৃতপক্ষে নির্ধারিত হিস্সা বুঝায় না। তাছাড়া কন্যাগণ যদি নির্ধারিত হিস্সা ভোগ করে, তাহলে পুত্রগণও কন্যাদের সমান নির্ধারিত হিস্সা ভোগ করতে হবে। কারণ আল্লাহ বলে দিয়েছেন যে, ‘‘প্রত্যেক পুত্র সন্তান দু’জন কন্যা সন্তানের সমান হিস্সা পাবে।” দু’জন কন্যা সন্তানের অতিরিক্ত কোন হিস্সা পুত্রকে দেয়া হয়নি। আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা জরুরী মনে করছি, তা হল: لـِلـذَّكـَرِ مِـثـْلُ حَظِّ اْلأُنـْثـَيـَيـْنِ আয়াতাংশ দ্বারা মূলনীতি বর্ণণা করা হয়েছে এবং فـَاِنْ كـُنَّ نـِسَـاءً فـَوْقَ اثـْنـَتـَيـْنِ فـَلـَهـُنَّ ثـُلـُثـَا مـَا تـَرَكَ আয়াতাংশ দ্বারা পূর্বের আয়াতাংশের ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এ কারণে ব্যাখ্যা অংশের শুরুতে فَ বর্ণটি প্রয়োগ করা হয়েছে, যাকে ব্যাখ্যাদানকারী বর্ণ বা اَلـْفـاَءُ لـِلتـَّفـْسِـيـْرِ বলা হয়। সুতরাং আয়াতের এ অংশ দিয়ে নতুন কোন মূলনীতি নির্ধারিত হবে না বরং পূর্বের আয়াতাংশের বিশ্লেষণ ও তাফসীর হবে। এ কারণেই ব্যাখ্যা অংশে দু’জন কন্যার হিস্সার কথা বলা হয়নি। কারণ ‘‘প্রত্যেক পুত্র সন্তান দু’জন কন্যা সন্তানের সমান হিস্সা পাবে”- বলার মাধ্যমে দু’জন কন্যার হিস্সার কথা বর্ণিত হয়েছে।

 

মোরা জোনাকি হতে চাই……৩

মোরা জোনাকি হতে চাই……৩


আফরোজা হাসান


ছবি আঁকার ফাঁকে ফাঁকে বোনের কর্মকান্ড দেখছিল আর মিটিমিটি হাসছিলো নূরি। সারাবছর বইয়ের ধারে কাছে না ঘেঁষে পরীক্ষার আগের দিন নাকে মুখে পড়ে পরীক্ষা দেবার অভ্যাস রুহির। আগামীকাল পরীক্ষা তাই স্বভাব মতো নাকে মুখে পড়ছে সে। কিছুক্ষণ টেবিলে বসে পড়ছে তো কিছুক্ষণ ঘর ভরে পায়চারী করছে আর পড়ছে। একসময় বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে পড়লো সে।

নূরি হাসতে হাসতে বলল, মাঝে মাঝে একটু বই নিয়ে বসলেই তো আর পরীক্ষার আগে এমন হয় না।

পরীক্ষার আগের দিন পড়ে পাশ করতে পারলে সারাবছর পড়ার দরকার কি? আমার জীবনের মিশন তোর মতো পণ্ডিত হওয়া না। আমি জীবনটাকে উপভোগ করতে চাই। জবাব দিলো রুহি।

পড়াশোনা না করার সাথে জীবনকে উপভোগের কি সম্পর্ক?

সম্পর্ক আছে মাই ডিয়ার লিটল সিসটার। পরীক্ষার হলে কম্পায়মান মনে ঢোকা, প্রশ্ন কমন পড়বে তো সেই টেনশন করা, রেজাল্টের আগের রাতে ঘুম বন্ধ, রেজাল্টের দিন সকালে গলা দিয়ে খাদ্য না নামা, হায়…. এসবের যে কি মজা তা কি তুই বুঝিস?

নূরি হাসতে হাসতে বলল, আল্লাহ না বোঝাক আমাকে। প্রিপারেশনের কি অবস্থা?

এখনো বুঝতে পারছি না।

কখন বুঝতে পারবে?

পরীক্ষার খাতায় সব সুন্দর মতো লিখার পর বুঝতে পারবো। আমার জন্য একটু চা-নাস্তার ব্যবস্থা করতে পারবি বুবু? পড়তে পড়তে ক্ষুধা লেগে গিয়েছে।

আমি রুমে আসার সময়ই তোমার জন্য নাস্তা নিয়ে এসেছি। পড়তে পড়তে তোমার ক্ষুধা লাগা তো নতুন কিছু না।

এজন্যই তো বলি তোর কোন তুলনা হয়না। হে আল্লাহ আমার বোনটিকে মনের মতো একটা স্বামী মিলিয়ে দিয়েন। আমীন।
বোনের দুষ্টুমি করা স্বভাব জানে নূরি তাই হেসে নিজের কাজে মন দিলো। উঠে এসে পেছন থেকে বোনকে জড়িয়ে ধরে আদর করে রুহি হেসে বলল, মাশাআল্লাহ! তোর পেইন্টিং তো অসাধারণ সুন্দর হচ্ছে রে বুবু। কিন্তু রাতের আকাশে রংধনু?

হুম! যদি আরেকটু পড়াশোনা করতেন তাহলে জানতেন যে, রংধনু যেমন সুর্যের আলোতে দেখা যায় তেমনি চাঁদের আলোতেও দেখা যাওয়া সম্ভব। যেদিন চাঁদের আলোয় আকাশ আলোকিত হয়ে যায় তখন আকাশে রংধনুর সৃষ্টি হয়। কম আলোয় আমরা দেখতে পাই না বলে সেই রংধনু দৃষ্টিগোচর হয়না। আমি কেমন ছবি আঁকতে চাইছি জানিস? চাঁদের বাসন্তি আলো, রংধনুর রঙয়ের ছটা, হাজার তারার মেলার এক আকাশের। যে ছবিটার দিকে তাকালে মনেহবে রাতচড়া পাখীরা চমকে চমকে ডেকে ফিরছে আবছায়া প্রান্তরে, কান পাতলেই বুঝি শোনা যাবে ঝিঁঝিঁর ডাক, মনেহবে ঐ তো শুকনো পাতা গড়িয়ে যাচ্ছে পাথরের বুকে।

হুমম…খুব কাব্যিক মুডে আছেন মনেহচ্ছে। এসব তো ভালো লক্ষণ না।

আমার লক্ষণ নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। আপনি ক্ষুধা নিবৃত্ত করে পাঠ্যায়নে মনোনিবেশ করুণ।

কিছুক্ষণ চুপ করে ছবি আঁকা দেখার পর রুহি বলল, আচ্ছা নূরি লক্ষ্মা ধাতু জিনিসটা কি?

হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন?

আজ সকালে ছোট মামা বললো যে আমার মধ্যে নাকি লক্ষ্মা ধাতুর যথেষ্ট ঘাতটি আছে।

নূরি হাসতে হাসতে, মামা সকালে লক্ষ্মীর উপরে একটা আর্টিকেল পড়েছে তারপর থেকে বাড়ির সবার মধ্যে লক্ষ্মা ধাতুর মাত্রা নির্ধারন করছে।

সেটা কি রকম?

লক্ষ্মী কথাটা এসেছে লক্ষ্মা ধাতু থেকে। যার অর্থ হল আলোচনা, চিহ্নীকরণ, অংকন, জ্ঞান, দর্শন। আর লক্ষ্মীর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে যে, অতি সাধারণ একটি মেয়ে যখন তার অন্তর্গত ভক্তি আর জ্ঞানের সমন্বয় ঘটিয়ে আচারনিষ্ঠ জীবনযাপনে উদ্দেপিত হয় তখনই কেবল তাকে লক্ষ্মী বলে সম্বোধন করা যায়।

কি সাংঘাতিক সংজ্ঞা।

এখানেই শেষ না বুবুজান। আরো বলা হয়েছে নারী তখনই মহিমান্বিত হতে পারে যখন তার মধ্যে সদাচার থাকে। সদাচার মানে বাঁচার আচার। যে আচার মানুষকে সুন্দর সমৃদ্ধশালী জীবনের পথ দেখায়। সদাচার এমন একটি গুণ যার ফলে নারী নিজের অজান্তেই পুরুষের জন্য কল্যাণময়ী, মঙ্গলময়ীতে পরিণত হয়। আর সদাচারবিহীন নারী মানেই পদে পদে ধ্বংস অনিবার্য।

হুমম… গাইড লাইন হিসেবে নেয়া যায় কথাগুলো তাই না?

বাঁচার যে আচার ইসলাম আমাদেরকে দেয় সেটা মেনে চললে সদাচারিণী হওয়া কোন ব্যাপারই না। আর এরজন্য বেশী বেশী জ্ঞানার্জন করা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। কারণ জ্ঞানই আমাদেরকে শেখায় কিভাবে মনের মালিক হয়ে অনুভূতি ও কল্পনার রস আস্বাদন করে জীবনকে উপভোগ করতে হয়। তাছাড়া একজন মানুষ যথার্থ মানুষ হয় অন্তরের ঐশ্বর্যের কারণে। আর মনের এই ঐশ্বর্যের নাম ধর্মীয় মূল্যবোধ।

বুঝলাম লক্ষ্মা ধাতুর ঘাতটি দূর করা যথেষ্ট কঠিন কাজ।

চলবে
পর্ব-৪

 

জীবনের বাতিঘরে নারী

জীবনের বাতিঘরে নারী


আসিফ মাহমুদ


এ্যাভারেজ আমেরিকান মহিলারা মাত্র সাতাশ মিনিট আর বাঙ্গালি মহিলারা গড়ে সাড়ে পাঁচ ঘন্টা সময় প্রতিদিন রান্নাঘরে ব্যয় করে। বাংগালী নারীদের জীবনের বিশাল অংশ এই রান্নাঘরেই কেটে যায়। কয়েকসপ্তাহ আগে আমার প্রতিবেশী হ্যারল্ডের বাসায় আমাদের ডীনারের দাওয়াত ছিলো। সন্ধ্যা ছটার আগেই সাধারণত এরা ডীনার শেষ করে। একেবারে ঘড়ির কাঁটায় ঠিক ছটা বাজেই ডীনার শুরু হলো। ডীনারের আয়োজন ছিলো টুনা ফীস, সালাদ, কিছু চিপস আর কোমল পানীয়। ব্যস । হ্যারল্ডের ওয়াইফ ম্যারি আর হ্যারল্ড আমাদের সাথে ক্লান্তিহীন আড্ডা দিলেন। রান্নার আয়োজন যেহেতু কম-আড্ডার আয়োজনতো সুন্দর হবেই। বুঝলাম , নিমন্ত্রন মানে শুধু ভোজন না। নিমন্ত্রণ হলো আপনার জীবনের কিছু অংশ আর আমার জীবনের কিছু অংশ একসাথে পাশাপাশি বসে উপভোগ করা।

কেউ যদি বলে বাংগালীরা আড্ডা প্রিয়। কথাটি ভুল। আমরা আসলে ভোজনপ্রিয়। আমাদের বাসায় কারো দাওয়াত মানেই বিশাল রান্নার আয়োজন। কে কত আইটেম বাড়াতে পারে ভাবীদের সাথে ভাবীদের চলে এর প্রতিযোগিতা। যেদিন অতিথিদের নিমন্ত্রণ বলতে গেলে এর এক সপ্তাহ আগে থেকেই শুরু হয় রান্নার আয়োজন। একেকটা রান্নার আয়োজন একেকটা ঘুর্ণিঝড়। এরকম ঘুর্ণিঝড়ের ভিতর সময় পার করে ঘরের বউ, ভাবী ক্লান্ত, বিধ্বস্ত। সুতরাং সুন্দর পরিবেশে বসে আড্ডাটা হবে কখন?

রান্নাঘর আর বাথরুম দেখে মানুষের পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে একটা ভালো ধারণা পাওয়া যায়। হ্যারল্ডের ঘরে পা দিয়েই বুঝা গেলো- কত সুন্দর, পরিপাটি আর কত পরিচ্ছন্ন হতে পারে একটি ঘরের পরিবেশ। সুন্দর ঘর রাখার অন্যতম প্রধান কারণ হলো- ওদের রান্নার আয়োজন খুবই কম। আপনি যখন গরম তেলের ওপর দুনিয়ার নানা রকমের মশলা ছাড়বেন- সাথে সাথেইতো ঘর গ্রীজি হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে দিবে। আর এই তৈলাক্ত গ্রীজ শুধু আপনার কিচেন নষ্টই করছেনা। আপনার উদরও নষ্ট করছে।

তবে কি আমেরিকানরা রান্না করেনা। না করলে এতো গ্রোসারি আইটেম যায় কই । জ্বি করে। বেশ আয়োজন করেই করে। তবে একদিনে চৌদ্দ পনের পদ তৈরি করে- ডাইনিং টেবিলের এই মাথা থেকে ঐ মাথা পর্যন্ত খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেনা। আমি নিজেও বুঝিনা। এতো পদ দিয়ে একসাথে খাবার খেয়ে এতো ভূরিভোজনের দরকারটাই বা কি? কালকে মারা গেলে- আজকে বেশ করে খেয়ে নেন ঠিক আছে। কিন্তু তাই যদি না হয়- তবে আজকে দুপুরে এক আইটেম দিয়ে খান। রাতের বেলা আরেকটা দিয়ে খান। এভাবে প্রতিদিন একেকটা আইটেম দিয়ে খেলেইতো নানা রকমের খাবারের স্বাদ পাওয়া যায়।

আমাদের পিকনিক মানেই ঐ খাবার দাবার। গাড়ীতে খাবার ঢুকাও, গাড়ী থেকে খাবার নামাও, খাবার সাজাও, খাবার রান্না করো, খাবার পরিবেশন করো, খাবারের পর এবার তালা, বাসন, বাটি, ঘটি গাড়িতে তোল। ব্যস খাবারের আয়োজনের ভিতরই পিকনিক শেষ। একবার সমূদ্র দর্শন করতে গিয়ে দেখলাম- এক আমেরিকান কী সুন্দর করে ফোল্ডিং চেয়ার খোলে পানিতে পা ভিজিয়ে বসেছে। ঘন্টার পর ঘন্টা যায়। সে বসা। তার মাথার ওপর ছাতা। পাশে একটা ড্রিংক। বুঝা গেলো সে আজ মন প্রাণভরে সমূদ্র দেখবে। আর আমরা- খাবার খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে সমূদ্র দেখলাম। আর সমূদ্র দেখার পাশাপাশি এই দোকানে ঢু মারলাম, আরেক দোকান থেকে বের হলাম, একটু এদিক ওদিক ঘুরলাম, রাজনীতি, কম্যুনিটি নীতি, ট্রাম্প, মোদি, গদি, হাসিনা, খালেদা, পাপিয়া, সাফিয়া,কাদেরি , তাহেরি সহ দুনিয়ার সব বিষয়ে বিপুল আলোচনা, হালকা বাক বিতণ্ডা, ঝাপসা মনোমালিন্য নিয়ে সমূদ্র জয়ের পাশাপাশি দুনিয়া জয় করে ঘরে ফিরলাম।

গত শনিবার। গ্রোসারি কিনতে যাবো। দেখি হ্যারল্ড। সেও আমার সাথে যাবে। আমাদের গ্রোসারির লিস্টি মাশাল্লাহ- এইগুলো একটার সাথে আরেকটা জোড়া লাগালে- চাঁদের দেশে যাওয়া যাবে। মাংসের জন্য এক দোকান, মাছের জন্য আরেক দোকান। সব্জির জন্য ফার্মাস মার্কেট। সেখানে আবার দেশি লাউ পাওয়া যায়না। যাও আরেক দোকান। কাঁচামরিচের জন্য আরেক জায়গায়। দুধ-ডিমগুলো আবার এইসব দোকানে ভালো পাওয়া যায়না। যাও আমেরিকান গ্রোসারিতে। বিশাল লিস্টের যুদ্ধ শেষ করে যখন ফিরছি- হ্যারল্ড বললো- একটু দাঁড়াও। এক ফাস্টফুডের দোকানে দাঁড়ালাম। হ্যারল্ড একটা স্যান্ডউইচ কিনলো। স্যান্ডউইচের অর্ধেক সে খাবে। বাকি অর্ধেই ওর বউয়ে খাবে। ঝামেলা শেষ। সেইজন্য ওরা নাসা থেকে স্পেসে যায়। আর আমরা বেডরুম থেকে কিচেন আর কিচেন থেকে বেডরুমে যাই। আর, এর ফাঁকে ফাঁকে ইয়া বড় বড় ভুড়ি বানাই। স্পেশ স্টেশানে যাওয়ার সুযোগ আসলে আমরা খোঁজ নিবো- কিমার জন্য ফ্রেশ গ্রাউন্ড বীফ, কাচ্চি বিরিয়ানির মশলা, ডালের জন্য পাঁচফোড়ন, খাওয়ার পর গোলাপজামুন, চায়ের সাথে বিস্কুট, পানের সাথে চুন, খয়ের এসব কিছু সেখানে ঠিকঠাক পাওয়া যাবেতো?

আমি একটা জিনিস পর্যবেক্ষণ করলাম। যার গ্রোসারির ট্রলি যত বড়- মেধা আর যোগ্যতায় সে তত ছোট। যারা দরিদ্র-অর্থের অভাবে খেতে পায়না-সেটা ভিন্ন কথা। মেক্সিকান আর আমাদের গ্রোসারির ট্রলিগুলো যেন একেকটা মুদির দোকান। চেকআউট লেনে চেকআউট লেনে দাঁড়ালে মনে হয় কোনো ছোট দোকান ঘরের পিছনে দাঁড়িয়ে আছি। এতো বেশি বেশি খাবার উদরে যায় বলে আমাদের মগজে আর বেশী কিছু যায়না। হিসপানিক আর ভারতীয় অধ্যুষিত এলাকায় আপনি কোনো ভালো লাইব্রেরি কিংবা কোনো ভালো বইয়ের দোকান পাবেন না। এগুলো পাবেন শুধু সাদা বিশেষ করে ইহুদি অধ্যুষিত এলাকায়। রান্না করে আর খেয়েইতো আমাদের জীবন শেষ। অধ্যাবসায়ের অতো সময় কোথায়? বিল গেটস, মার্ক জুকারবার্গ, স্টিভ জবস ওনাদের সামনে কোনোদিনও ইয়াবড় খাবারের প্লেট দেখিনি। যেমন দেখেছি-রাজা-বাদশাহ-আমীর ওমরাহদের সামনে।

প্রিয় ভাই, চাচা, বাবা, দাদারা দয়া করে বউ, ভাবি, বোন, চাচী, মাসিদের রান্নাঘরের একচেটিয়া জীবন থেকে মুক্তি দিন। আর ভাবী, আপা আপনারাও একজনের সাথে আরেকজনের রান্নার আইটেম বাড়ানোর প্রতিযোগিতা থেকে দয়া করে নিজেদের হেফাজত করুন। এক জনে পাঁচজনের জন্য প্রতিদিন পাঁচপদ রান্না না করে পাঁচজনে মিলে একপদ রান্না করুন। সম্পর্ক বাড়বে। ভালোবাসা তৈরি হবে। কষ্ট লাঘব হবে। কিচেনে আপনার সময় যত বাড়বে- ভাইয়ের ভুড়িও তত বাড়বে। আর এই ভুড়ি ভালোবাসা না। এটা সর্বনাশা। এটা জীবননাশা। জীবন ধারনের জন্য খেতেতো হবেই। কিন্তু রান্নাঘর আর ভোজন যেন আমাদের পুরো জীবনটাই খেয়ে না ফেলে- দয়া করে সেদিকে একটু লক্ষ্য রাখবেন। সারাজীবন নারীমুক্তি নারীমুক্তি করলাম। কিন্তু নারীকেতো রান্নাঘর থেকেই মুক্তি দিতে পারলাম না।

সংসার আর জীবনের বাতিঘর সব নারীদের জন্য বিশ্ব নারী দিবসে হৃদয়ের গভীর থেকে রইলো বিশুদ্ধ শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা।

Asif mahmud.

 

নারী দিবসে তুলে ধরতে চাই নারী অধিকারের কিছু ভুল ধারণা

নারী দিবসে তুলে ধরতে চাই নারী অধিকারের কিছু ভুল ধারণা


কানিজ ফাতিমা


একসময় সমাজে একটা ভুল ধারণা প্রচলিত ছিল যে ছেলের বউয়ের দায়িত্ব হলো নিজের বাবা-মা, ভাই-বোন ভুলে শশুর-শাশুড়ী , দেবর-ননদ, ননদ-জামাই এর সেবা করতে হবে। বর্তমানে শিক্ষিত মহলে এই ভুল ধারণার অবসান ঘটেছে। এ ধারণাটা অনেকটাই সুস্পষ্ট যে ইসলামে দেবর-ননদ, ননদ জামাই দূরে থাক, স্বয়ং শশুড় -শাশুড়ীর প্রতি নারীর ফরজ কোনো দায়িত্ব নেই। কিন্তু এটুকুই পরিপূর্ন চিত্র না –

ইসলাম শশুড় -শাশুড়ীর প্রতি নারী বা পুরুষের ফরজ কোনো দায়িত্ব দেয়নি -এই কথাটা যেমন সত্যি তেমনি সত্যি ইসলাম বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানকে কিছু দায়িত্ব বাধতামূলক বা ফরজ করেছে। নারী হলে আপনার জন্য আপনার শশুর -শাশুড়ীকে সেবা করা ফরজ নয়, কেবলই মুস্তাহাব; কিন্তু আপনার স্বামীর জন্য তাদের ভরণ-পোষণ ও দেখা-শোনা করা ফরজ । তাই আপনার স্বামীর যেমন হক নেই আপনার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আপনাকে বাধ্য করতে তার বাবা-মায়ের অর্থাৎ আপনার শশুড় -শাশুড়ীর সেবা করার জন্য, তাদের জন্য প্রতিদিন রান্না করার জন্য; তেমনি আপনারও হক নেই আপনার স্বামীকে নানা অজুহাতে বা হুমকি-ধমকি দিয়ে তার বাবা- মায়ের প্রতি তার দ্বায়িত পালনে বাধা দেয়ার। মনে রাখবেন ইসলামে কখনোই এক চোখা নয়।

অনেক সময় অনেক সচেতন স্ত্রী মনে করেন তার স্বামীর জন্য স্ত্রী -সন্তানের ভরণ পোষণ, বিনোদন, শখ সব পূরণ হবার পরে আসবে তার বাবা-মায়ের হকের প্রশ্ন। না, ব্যাপারটা সেরকম নয়। ব্যাপারটা হলো পুরুষ যা আয় করবে তাতে সর্বপ্রথম আনুপাতিক হরে তার স্ত্রী , সন্তান ও বাবা-মায়ের ভরণ পোষণ এর চাহিদা পূরণ হতে হবে। কারো ইনকাম যদি কেবল মাত্র ১০০ টাকাও হয় তবে এই ১০০ টাকা থেকেই এই সবক’টি চাহিদার জন্য টাকা বরাদ্দ হবে। ইনকাম কম তাই সবটাই স্ত্রী-সন্তান এর জন্য খরচ হবে আর বাবা-মা বঞ্চিত হবে – সেটা ইসলামের নিয়ম না। ইসলাম সর্বাবস্থায় ভারসাম্যকে গুরুত্ব দেয়।

আবার দেখা যায় অনেক কৌশলী স্ত্রী ইচ্ছা করে তাদের সংসারের চাহিদাকে হিসাব করে এমনভাবে বাড়িয়ে দেয় যাতে স্বামীর ইনকাম থেকে এরপরে আর কোনো অর্থ উদ্বৃত্ত থাকতে না পারে তার বাবা- মাকে দেবার জন্য। এমন কৌশল শুধু অন্যায়ই নয় – বরং বড় ধরণের জুলুম।

শাশুড়ী কর্তৃক ছেলের বৌ নির্যাতন যেমন নারী অধিকারের লঙ্ঘন তেমনি ছেলের বৌ কতৃক শাশুড়ীর মাতৃত্বের হক নষ্ট করাও নারী অধিকার লঙ্ঘন। স্ত্রীকে তার বাবার বাড়ী যেতে না দেয়া, বিভন্ন অজুহাতে বাধার সৃষ্টি করা যেমন নারী নির্যাতন তেমনি স্বামীকে তার বাবা-মা, ভাইবোনের সঙ্গে কথা বলতে না দেয়া, তারা বেড়াতে আসলে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব করা যাতে তারা বাড়ী থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য হয় – সেটাও সুস্পষ্ট নির্যাতন।

জুলুম -নির্যাতন যে পক্ষ থেকেই হোক তা নিন্দনীয়, তা সংসারের ভিত্তিকে ধ্বংস করে। জুলুমকারীকে ভয় পেয়ে তার সঙ্গে কম্প্রোমাইজের নামে জুলুম মেনে নিলে এটি বেড়ে আরও শাখা প্রশাখা ছড়ায়। তাই সাহস ও বুদ্ধি করে জুলুমের সামনে দাঁড়িয়ে সেটা একটু শক্ত হাতে বন্ধ করতে হয়। এতে সাময়িক কিছু অসুবিধা হলেও long run এ কল্যাণ হয়।

সব নারী ভালো থাকুক; সে স্ত্রী, মেয়ে, মা বা বোনই হোক । সবাইকে নারী দিবসের শুভেচ্ছা।

 

ফল, সবজি ও ছোলার সালাদ

ফল, সবজি ও ছোলার সালাদ


ঘরকন্যা


উপকরণ
১. ছোলা পৌনে ১ কাপ,
২. যেকোনো সবজি টুকরা আধা কাপ,
৩. বিটলবণ আধা চা চামচ,
৪. শসা ১ টেবিল চামচ,
৫. আনারস আধা কাপ,
৬. কাঁচা মরিচ কুচি ১ চা চামচ,
৭. খেজুর আধা কাপ,
৮. ধনিয়াপাতা কুচি ১ টেবিল চামচ,
৯. আলু সিদ্ধ ৩টি,
১০. ডালিম পরিমাণমতো,
১১. নাশপাতি ১টি,
১২. লেবুর রস ১ টেবিল চামচ,
১৩. লবণ পরিমাণমতো।

প্রণালি
> ছোলা সারা রাত ভিজিয়ে রেখে অল্প সিদ্ধ করে নিন।

> আনারস, খেজুর, আলু সিদ্ধ, নাশপাতি চারকোনা করে কাটুন।

> সবজি হালকা লবণ দিয়ে সিদ্ধ করে নিন।

> এরপর ছোলা, সবজি ও ফলের সঙ্গে বিটলবণ, কাঁচা মরিচ কুচি, ধনিয়াপাতা কুচি, লবণ, লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে পরিবেশন করুন।

রেসিপি : কালের কন্ঠ

 

মোরা জোনাকি হতে চাই – ২

মোরা জোনাকি হতে চাই – ২


আফরোজা হাসান


চোখ বড় বড় করে নূরি বলল, তোমাদের কি সেপারেশন হচ্ছে নাকি? আমরা কি কোর্টে যাবো বাবা? ইশশ…ভাবতেই কেমন রোমাঞ্চ ফিল হচ্ছে। আমি আর রুহি কাঠগড়ার দাঁড়িয়ে আছি। উকিল সাহেব কোমল কণ্ঠে আমাকে প্রশ্ন করছেন, বলো মা তোমরা কার সাথে থাকতে চাও? আমরা দুজন কাঁদো কাঁদো চোখে একবার মামণির দিকে তাকাবো, একবার তোমার দিকে তাকাবো। তারপর ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলবো, জর্জ আঙ্কেল আমরা আমাদের বাবা ও মামণি দুজনের সাথেই থাকতে চাই। কারণ আমরা বাবা-মার মিলিত রূপ। তারাও আমাদের কাছে একাকার এক সত্ত্বা। আমরা তাই মামণির মমতা যেমন চাই, বাবার আদরও তেমন চাই।

নোমান সাহেব হাসতে হাসতে বললেন, তোর মামণি ঠিকই বলে খুবই দুষ্টু হয়েছিস তোরা দুই বোন। রুহি কোথায়? সকাল থেকে দেখিনি একবারও।

আমি ঘুমে দেখে এসেছিলাম বাবা। এতক্ষণে মনেহয় উঠেছে। চলো বাবা নাস্তা করতে যাই।

নাস্তা করার সময় নেই রে মা। আমি অফিসে গিয়ে কিছু খেয়ে নেবো।

বাবাকে রুমে ঢুকে যেতে দেখে নূরি বুঝলো সিরিয়াস কোন বিষয়েই বাবা-মামণির মনোমালিন্য হয়েছে। গাছে পানি দেয়া শেষ করে বোনের খোঁজে রওনা হলো সে। দুজন মিলে বাবা-মামণির মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কোন বুদ্ধি বের করতে হবে। বড় বোনের সন্ধানে বাড়ির ভেতর ঢুকতে গিয়ে প্রচণ্ড এক ধাক্কা খেলো নূরি। রুহিও ছোট বোনের খোঁজে বাগানের দিকে আসছিল। ফলে দু’বোনের এই সংঘর্ষ। একে অন্যেকে ধরে ব্যথা পায়নি নিশ্চিত হয়ে রুহি বলল, আমি তোর কাছেই যাচ্ছিলাম। বাবা-মামণির মধ্যে মনেহয় কিছু হয়েছে।

নূরি হেসে বলল, আমিও তো এই খবর নিয়েই তোমার কাছে যাচ্ছিলাম। মামণির মেজাজ কি খুব গরম?

গরম মানে? আমাকে নবাবজাদী বলে ডেকেছে। এবার বুঝে নে যে কতটা গরম। কি করা যায় বল তো?

বাবা-মামণির তো একটাই সমস্যা। মনোমালিন্য হলে কেউ কারো সাথে কথা বলতে চায় না। দুজনই অপেক্ষা করে অন্যজন আগে কথা বলবে। কোন ভাবে দুজনকে শুধু কথা বলিয়ে দিতে হবে একবার।

হুমম! তুই বুদ্ধি বের করতে থাক আমি ততক্ষণে ফ্রেশ হয়ে আসি। নয়তো আবার মামণির বকা শুনতে হবে।

নূরি হেসে বলল, আচ্ছা তুমি যাও। আমি রান্নাঘরের দরজায় চোখ রেখে চুপিচুপি দেখে আসি মামণিকে।

@

মেয়ের সাথে কথা বলে মনে যে আনন্দ ভাব এসেছিলো রুমে ঢুকেই সেটা উবে গেলো নোমান সাহেবের। সবসময় অফিসে যাবার ড্রেস বাইরে বের করে রাখেন তার স্ত্রী কিন্তু আজ করেনি। সংসারে ঝগড়া-ঝাটি মনোমালিন্য হতেই পারে, তাই বলে কি নিজের দায়িত্ব কর্তব্য পালনে অবহেলা করবে মানুষ? মেজাজ আবারো গরম হতে শুরু করলো নোমান সাহেবের। নিজেই ড্রেস বের করে তৈরি হয়ে নিলেন। বার বার চোখ চলে যাচ্ছিলো দরজার দিকে। মনে মনে চাচ্ছিলেন স্ত্রী আসুক, কথা বলুক তার সাথে। তৈরি হয়ে যাবার পরও কিছুক্ষণ রুমে বসে রইলেন। তারপর চোখ মুখ শক্ত করে বেড়িয়ে এলেন রুম থেকে। নাস্তা না করেই বেড়িয়ে যাচ্ছিলেন কিন্তু পাখীর মতো উড়তে উড়তে হাজির হলো বড় মেয়ে রুহি। বাবাকে হাত ধরে টানতে টানতে ডাইনিং টেবিলে নিয়ে গিয়ে বলল, বাবা দেখো আজ আমাদের দুজনের ফেবরেট নাস্তা বানিয়েছে মামণি। দাঁড়িয়ে আছো কেন? তাড়াতাড়ি বোস ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে তো সব।

মেয়েদের কোন কিছুতে না বলতে পারেন না কখনোই নোমান সাহেব। তাই বসে পড়লেন বাধ্য বাবার মত।

নিজের প্লেটে নেবার সাথে সাথে বাবার প্লেটেও নাস্তা বেড়ে দিলো রুহি। বাবাকে খাওয়ার তাগাদা দিয়ে নিজে খাওয়ায় মন দিলো।

নাস্তার টেবিলে এসে বাবাকে দেখে হাসি ফুটে উঠলো নূরির চেহারাতে। কিন্তু লুচির সাথে কলিজা ভুনা দেখে সাথে সাথে নাক কুঁচকে গেলো। মামণির মেজাজ খারাপ আজ খাবার নিয়ে ঝামেলা করলে ঠিক বকা খেতে হবে। মনে মনে একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করলো নূরি। মাঝে মাঝে মনের ছোট্ট একটা পছন্দ-অপছন্দ জানানোটাও কত কঠিন হয়ে যায়। বোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো গপাগপ খাচ্ছে। মামণিকে আসতে দেখে তাড়াতাড়ি প্লেটে লুচি আর এক চামচ কলিজা ভুনা উঠিয়ে নিলো।

মিসেস রাহমা এসে বললেন, তুই না কলিজা খেতে পারিস না, তাহলে নিয়েছিস কেন? এই নে আমি তোর জন্য সবজি নিয়ে এসেছি। সাথে সাথে হাসি ফুটে উঠলো নূরির চেহারাতে। হাত বাড়িয়ে মামণিকে জড়িয়ে ধরলো। হাসলেন মিসেস রাহমাও। মেয়ের মাথার হাত বুলিয়ে বললেন, হয়েছে আর আহ্লাদ করতে হবে না। প্লেটের সব খাবার শেষ করে উঠবি। নয়তো বুঝবি মজা।

মামণির হাত ধরে টেনে পাশে বসিয়ে নূরি বলল, মা সত্যিই অনেক স্পেশ্যাল তাই না বাবা? দেখো শত ঝামেলা, মন খারাপের মাঝেও মায়েরা প্রতিটা সন্তানের পছন্দ-অপছন্দ সবকিছু খেয়াল রাখেন, মনে রাখেন। অবশ্য বাবারা সারাদিন বাইরে পরিশ্রম করেন বলেই তো মামণিরা সন্তানদের পছন্দের সবকিছুর ব্যবস্থা করতে পারেন। বাবারাও অনেক সুইট তাই না মামণি? এজন্যই তো কবি বলেছেন, বাবা-মার কারণেই ধরণী পরে এসেছি, বাবা-মাকে মোরা তাই এতো ভালোবাসি। সকল বালা মুসিবত দূর হয়ে যাক, বাবা-মা মোদের সর্বক্ষণ একসাথে থাক।

কোন কবি এই কথা বলেছে? জানতে চাইলেন মিসেস রাহমা।

নূরি মিষ্টি হেসে বলল, সেই কবি নিজেকে লোকচক্ষুর আড়ালে রাখতেই পছন্দ করেন।

চলবে…

পর্ব-৩

 

জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে স্তন ও জরায়ু ক্যান্সার নিরূপণ করা হচ্ছে

জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোতে স্তন ও জরায়ু ক্যান্সার নিরূপণ করা হচ্ছে


নারী সংবাদ


দেশে ও দেশের বাইরে নারীদের প্রাণঘাতি রোগের মধ্যে স্তন ক্যান্সার ও জরায়ু-মুখ ক্যান্সার অন্যতম। একটুখানি সচেতন হলে আর বাড়ির কাছের সরকারি হাসপাতালগুলো এবং মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে আসলে যে কোন নারী খুব সহজেই ক্যান্সারের প্রাথমিক নিরূপণ কাজ করাতে পারেন। গুরুত্ব বিবেচনা করে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালগুলোতে স্তন ও জরায়ু ক্যান্সার পরীক্ষা করা হচ্ছে।
সেন্টার ফর সার্ভিক্যাল এন্ড ব্রেস্ট ক্যান্সার স্ক্রিনিং এন্ড ট্রেনিং প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, বিশ্বে ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীদের একটি বড় অংশ জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সারের শিকার। আমাদের দেশে ২০১৮ সালে ৮ হাজার ৮৬ জন জরায়ু-মুখ ক্যান্সার আক্রান্ত নারীকে সনাক্ত করা হয়েছে। আর ক্যান্সারে আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন পাঁচ হাজার ২১৪ জন। অন্যদিকে ওই বছরে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীর সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ৭৬৪ জন। আর এই ক্যান্সারে আক্রান্তদের মধ্যে মারা যান ছয় হাজার ৮৪৬ জন। প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় ১২ হাজার মহিলার জরায়ু-মুখে নতুনভাবে ক্যান্সার হচ্ছে।
অপরদিকে দেশে বছরে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা পনের হাজার। এর মধ্যে মারা যান আট হাজার। ৪০ বছরের পর থেকে নারীদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে থাকে। প্রাথমিকভাবে স্তন ক্যান্সারের উপসর্গের মধ্যে আছে- স্তনের কিছুটা অস্বাভাবিক অবস্থা বা চাকা অনুভব, স্তনের চামড়ার রং পরিবর্তন বা চামড়া কিছুটা পুরু হয়ে যাওয়া, নিপল ভেতরে দেবে যাওয়া, নিপল দিয়ে রক্ত বা পুঁজ পড়া। আর স্তন ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়লে যকৃতের ক্ষেত্রে পেটে ব্যথা বা জন্ডিস, ফুসফুসে ছড়ালে কাশি হওয়া বা কাশির সাথে রক্ত যাওয়া এবং হাড়ে তীব্র ব্যথা অনুভব হয়।
জরায়ু-মুখ ক্যান্সারের লক্ষণ হচ্ছে- অতিরিক্ত সাদা ¯্রাব, দুর্গন্ধযুক্ত ¯্রাব, অতিরিক্ত অথবা অনিয়মিত রক্ত¯্রাব, সহবাসের পর রক্ত¯্রাব, মাসিক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবার পর পুনরায় রক্তপাত, কোমরে বা তলপেটে অথবা উরুতে ব্যথা।
এই ধরনের কোন সমস্যা হলে জাতীয় পরিচয়পত্রের ছায়ালিপি সহযোগে চলে আসতে হবে যে কোন জেলা সদর হাসপাতাল, মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র এবং নির্বাচিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে। ৩০ বছরের বেশী বয়স হলেই জরায়ু-মুখ অবশ্যই পরীক্ষা (ভায়া) করাতে হবে। তবে ১৮ বছরের আগে বিবাহিত নারীদের ক্ষেত্রে ২৫ বছর বয়স হলেই জরায়ু-মুখ পরীক্ষা করাতে হবে। বয়স্কদের জন্যে ভায়া পরীক্ষা আরো জরুরী। এই পরীক্ষার মধ্য দিয়ে অন্যান্য স্ত্রী-রোগের চিকিৎসারও সুযোগ তৈরী হয়।
রোগের চিকিৎসার পরিবর্তে প্রতিরোধ করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। জরায়ু-মুখ ক্যান্সার খুব সহজেই প্রতিরোধ করা যায়। রোগে আক্রান্ত হবার আগে জরায়ু-মুখে অনেকদিন ধরে ক্যান্সারপূর্ব অবস্থা বিরাজ করে। ক্যান্সারপূর্ব অবস্থা ধরা পড়লে সামান্য চিকিৎসার মাধ্যমে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে জরায়ু ফেলে দেবার প্রয়োজন হয় না এবং চিকিৎসার পরেও সন্তান ধারণ করা সম্ভব।
নাটোর সদর হাসপাতালে স্তন ও জরায়ু-মুখ ক্যান্সারের প্রাথমিক পরীক্ষণ কাজে নিয়োজিত হোসনে আরা বলেন, যে পদ্ধতিতে জরায়ু-মুখ ক্যান্সারপূর্ব অবস্থা শনাক্ত করা হয় তাকে ‘ভায়া’ এবং স্তন ক্যান্সার পরীক্ষা পদ্ধতিকে ‘সিবিই’ বলে। এই পদ্ধতিতে জরায়ু-মুখ পরীক্ষা করলে ক্যান্সারপূর্ব অবস্থা সাদা রং ধারণ করে এবং রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করে। আর স্তন ক্যান্সার বোঝার জন্যে স্তনে চাকা বা অস্বাভাবিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হয়। ‘বিএসএমএমইউ-এ সার্ভিক্যাল এন্ড ব্রেস্ট ক্যান্সার স্ক্রিনিং ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জাতীয় কেন্দ্র স্থাপন’ প্রকল্পের পক্ষ থেকে মোট তিন সপ্তাহের প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০০৭ সাল থেকে আমরা কাজ করছি এবং প্রতিমাসে এই হাসপাতালে গড়ে দুইশ’ নারীর পরীক্ষা কাজ সম্পন্ন হচ্ছে।
পরীক্ষা শেষে অনাক্রান্ত রোগীকে সবুজ রঙের কার্ড প্রদান করে কাউন্সিলিং শেষে তিনবছর পরে আবার আসতে অনুরোধ করা হয় এবং পজিটিভ রোগীকে গোলাপী কার্ড প্রদান করে গাইনী বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে উন্নত চিকিৎসার জন্যে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বা বিশেষায়িত হাসপাতালে রেফার করা হয় বলে জানালেন অপর স্টাফ নার্স আশরাফুন্নেছা।
নাটোর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের স্টাফ নার্স সুফিয়া খাতুন জানান, এই কেন্দ্রে নিয়মিত স্তন ও জরায়ু-মুখ ক্যান্সার পরীক্ষা করা হয়।
সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নাটোর সদর হাসপাতাল এবং জেলার পাঁচটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০১৮ সালে মোট এক হাজার ১৬৯ জন নারীর স্তন ও জরায়ু-মুখ ক্যান্সার পরীক্ষা করে ৫২ জনের ক্যান্সারপূর্ব অবস্থা সনাক্ত করা হয়েছে

 

ছেলের নির্যাতন থেকে বাঁচার আকুতি বৃদ্ধ মায়ের


ছেলের নির্যাতন থেকে বাঁচার আকুতি বৃদ্ধ মায়ের


নারী সংবাদ


সন্তানের নির্যাতন থেকে রেহাই পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ৭৬ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ মা। একই সাথে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
গতকাল বুধবার সকালে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পল্লবী এলাকার বাসিন্দা সাহিদা রহমান নামে ওই মা এই আহবান জানান। তিনি বলেন, ২২ বছর আগে তার ছেলে জিল্লুর রহমান মারা যান। ছোট ছেলে হাফিজুর রহমান জুয়েল দীর্ঘদিন জার্মান বসবাস করছেন। বড় ছেলে আজিজুর রহমানকে নিয়ে পল্লবী থানাধীন ১০ নম্বর সেকশন, ১ নম্বর লেন, এ ব্লকের ৬ নম্বর বাড়িতে বসবাস করতেন। ওই বাড়ির ৮২ শতাংশের মালিক তার ছোট ছেলে জুয়েল। কিন্তু তিনি বিদেশে থাকাবস্থায় জোর করে পুরো বাড়িটি দখলে নেন বড় ছেলে আজিজুর। এ ব্যাপারে বাধা দেন মা। আর এতেই মায়ের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন আজিজুর। এক পর্যায়ে আজিজুর ও তার স্ত্রী ফরিদা বেগমের কাছে নানাভাবে নাজেহাল হতে থাকেন তিনি। খাবার না দিয়ে ছয়তলার একটি কক্ষে রাখা হয় তাকে। কিছু বলতে গেলে মারতে তেড়ে আসে ছেলে ও তার স্ত্রী। একপর্যায়ে সহ্য করতে না পেরে ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি। ওই মামলায় জেলে যায় বড় ছেলে আজিজুর। সম্প্রতি জেল থেকে বেরিয়ে এসে গর্ভধারিণী মাকে ব্যাপক মারধর করে। ছোট ছেলেকে হত্যা করবে বলে নানাভাবে হুমকি দিতে শুরু করে।
এই অবস্থায় তিনি চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে সাহিদা রহমান বলেন, লোভে পড়ে তার বড় ছেলে অমানুষে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, নির্যাতন কোন পর্যায়ে পৌঁছালে একজন মা তার ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করে বিচারের জন্য সংবাদ সম্মেলন করে। এ অবস্থা থেকে রেহাই পেতে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।

 

‘আকাশের চাঁদ এসে আমার পকেটে ঢুকেছে’

‘আকাশের চাঁদ এসে আমার পকেটে ঢুকেছে’


মুনির হাসান


মাওলানা আবদুল মালেকের বাড়ি চট্টগ্রামে। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন, আর পড়েছেন দেওবন্ধে। অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খাঁ খোঁজ করছেন সে সব তরুণদের যারা তাঁর সঙ্গে টাঙ্গাইলের করটিয়ায় সাদত কলেজ গড়ে তুলবেন। চট্টগ্রামের খান এ আলম খানের সুবাদে ইব্রাহিম খাঁ জানতে পারেন মাওলানা আবদুল মালেকের কথা। আরবি, উর্দু ও ফার্সি ভাষায় সমান বুৎপত্তি। খোঁজ করে নিয়ে গেলেন মাওলানাকে। সেখানেই একটা কলেজ গড়ার সংগ্রামে রত হলেন তিনি।

বেশ কয়েক বছর পরের কথা। মাওলানা অস্থির। চতুর্থ সন্তানের জন্মের খবরের জন্য অপেক্ষা করছেন। স্ত্রী গ্রামের বাড়িতে। সময় চলে যায় কিন্তু কোন খবর পান না। মাওলানা জানেন না, চতুর্থ সন্তানটিও মেয়ে হওয়ায় তার স্ত্রী তাকে জানাতে সময় নিচ্ছেন। এমন এক অস্থির সময়ে এক রাতে মাওলানা আবদুল মালেক স্বপ্নে দেখলেন আকাশের চাঁদ তাঁর পকেটে ঢুকে পড়েছে।

সকালেই স্ত্রীকে চিঠি লিখলেন – তোমরা সবাই নিশ্চয়ই ভাল আছো। আমি জানি আমার একটি মেয়ে হয়েছে। তুমি মন খারাপ করো না। আমি স্বপ্নে দেখেছি রাব্বুল আলামিন আমাদের ঘরে আকাশের চাঁদ পাঠিয়েছেন।

মাওলানা আবুদল মালেকের স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। তাঁর চতুর্থ সন্তান ডা. সায়েবা আখ্তার কিছুক্ষণ আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে একুশে পদক গ্রহণ করেছেন।
তাঁর উদ্ভাবিত ‘সায়েবা’স মেথড’ এখন সারা বিশ্বে হাজার হাজার মায়ের জীবন বাঁচায়।
সারা বিশ্বে প্রতি দুই মিনিটে একজন করে প্রসূতি মায়ের মৃত্যু ঘটছে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে। এর ৩০ শতাংশের জন্য দায়ী প্রসবকালীন রক্তক্ষরণ। সে হিসাবে প্রতিবছর ১৩ লাখ মায়ের মৃত্যু ঘটে প্রসবকালীন রক্তক্ষরণে। আরও ২৬ লাখ নারী মাতৃত্বের সক্ষমতা হারান। এর বড় অংশই ঘটে গরিব দেশগুলোতে।
প্রসব পরবর্তী জরায়ূর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে বাংলাদেশ সহ গরীব দেশগুলোতে প্রতি বছরই অসংখ্য মায়ের মৃত্যু হয়। বাংলাদেশে প্রসবকালীন মাতৃমৃত্যুর অন্যতম একটি কারণই এই ধরণের রক্তক্ষরণ।
উন্নত বিশ্বে এটি ঠেকাতে যে ডিভাইসটি ব্যবহার করা হয় সেটির দাম বাংলাদেশী টাকায় ২৪ হাজার টাকা! পাওয়াও যায় না। প্রযুক্তিটি মূলত একটি বেলুন, যেটি জরায়ুর ভেতরে ঢুকিয়ে ফুলিয়ে দিলেই কার্যত রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজে কাজ করার সময় প্রফেসর সায়েবা আখ্তার ভাবতেন – একটি বেলুনই কত জীবন বাঁচাতে পারে।
বেলুন চিন্তায় অস্থির নির্ঘুম রাতে সায়েবা আখতার ভাবেন বাচ্চাদের খেলনা বেলুনের কথা। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি সেই সময়কার কথা স্মরণ করেছেন -“মাঝে মাঝে আমি দেখেছি গ্রামে কনডমকে ওরা বাতাস দিয়ে ফুলিয়ে খেলনা হিসেবে ব্যবহার করে। হঠাৎ আমার মনে হল এই কনডমকেই তো আমি ইউটেরাসের (জরায়ু) ভেতর দিতে পারি। কনডম একটা মেডিকেল ডিভাইস। কাজে সমস্যাতো নাই। এটাকে যদি ইউটেরাসের ভেতর ঢুকিয়ে তারপর ফুলিয়ে চাপ সৃষ্টি করি, তাহলে হয়তো রক্তপাত বন্ধ হবে”। সকালে উঠেই দেখলেন, কনডম কতটুকু পানি বা স্যালাইন ধরতে পারে। দেখা গেল ‘১ লিটার ফ্লুইড ওটার ভেতরে ঢুকিয়ে অনেক চেষ্টা করেও সেটিকে ফাটানো যায় না’।
পরদিনই হাসপাতালে তিনি প্রথম কেস পেয়ে গেলেন। ততক্ষণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণন ঠেকাতে রোগির জরায়ু কেটে ফেলার সিদ্ধান্তি নিয়ে ফেলেছে ডাক্তার।
সায়েবা আখতার বলছেন, “আমি বললাম একটু অপেক্ষা কর। সে-ই আমার প্রথম কেস, যেখানে আমরা কনডমটাকে ক্যাথেটার দিয়ে বেঁধে ওর ইউটেরাসের ভেতর ঢুকিয়ে স্যালাইন দিয়ে ফুলিয়ে দেওয়ার পর পনেরো মিনিটের মধ্যেই ব্লিডিং বন্ধ হয়ে গেল”। পুরো ব্যবস্থাটি করতে খরচ হল একশ টাকারও কম।

সেই থেকে এই মেথড বিশ্ব জুড়ে সায়েবা’স মেথড নামে পরিচিত।

আপনাকে অভিনন্দন ছোটমনি। আল্লাহ আপনাকে হায়াতে তৈয়বা দান করুন।

আপনার পদ্ধতি ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্বজুড়ে!

 

মোরা জোনাকি হতে চাই……১

মোরা জোনাকি হতে চাই……১


আফরোজা হাসান


ঘুম থেকে উঠে হেলতে দুলতে রান্নাঘরে রওনা করলো রুহি। রান্নাঘরের কাছে যেতেই লুচি ভাজার মিষ্টি ঘ্রাণ এসে নাককে ছুঁয়ে দিলো। মামণিকে বলেছিলো আজ তার জন্য আলুর লুচি ও কলিজা ভুনা করতে। নিশ্চিয়ই তাই করেছে মামণি। হাসিতে বিকশিত হতে হতে রান্নাঘরে ঢুকে মামণির চেহারার দিকে তাকাতেই সাবধান হয়ে গেলো রুহি। মামণির চেহারাতে ঝড়ের পূর্বাভাস দেখা যাচ্ছে। এটাকে দশ নাম্বার বিপদ সংকেত বললেও কম বলা হয়ে যাবে। ঝড়ের কবলে পড়ার আগেই সরে পড়তে চাইলো কিন্তু ঝড় তাকে ধরেই ফেললো।

মোটামুটি হুংকার দিয়ে মিসেস রাহমা বললেন, সকাল হলো তাহলে নবাবজাদীর। কয়টা বাজে দেখেছিস? আর তুই ঘুম থেকে উঠে হাতমুখ না ধুয়ে রান্নাঘরে কেন ঢুকেছিস? সামনে থেকে যা আমার। এক্ষুনি যা বলছি।

রাজকন্যার বদলে নবাবজাদী! তারমানে মামণির চেহারাতে যে ঝড়ের পূর্বাভাস পরিলক্ষিত হচ্ছে সেটার কারণ বাবা। হাসি চেপে মিনমিনে কণ্ঠে রুহি বলল, আজ তো কলেজ নেই মামণি।

তাই বলে দশটা পর্যন্ত ঘুমাতে হবে নাকি? আমাদের যেদিন ছুটি থাকতো সংসারের কাজে মাকে সাহায্য করতাম। একদিনের জন্য মাকে একটু আরাম করতে দিতাম। আর তোরা ছুটি পেলে নিজের আরামের চিন্তা করিস।

মুখ শুকনো করে রুহি বলল, ভুল হয়ে গিয়েছে মামণি। এরপর থেকে আর এমন হবে না। এরপর থেকে ছুটির দিনে তোমাকে সাংসারিক কাজে সাহায্য করবো। তাছাড়া এখন থেকেই সাংসারিক কাজ শিখাও তো উচিত। নয়তো শ্বশুরবাড়ির লোকজন বলবে মায়ের বাড়ি থেকে কি শিখে এসেছো শুনি? মায়ের বাড়ি তুলে কথা বললে আমার হবে মেজাজ গরম। সংসারে শুরু হবে অশান্তি। তাই ভালো এখন থেকেই কাজকর্ম শেখা শুরু করা। বাঁশ থেকে বাঁশী তৈরি হবে? হুহ! আমি বাঁশঝাড়ই জন্মাতে দেবো না।

তোকে না বলেছি আমার সাথে ফাজলামো করবি না। যা তুই আমার সামনে থেকে। যা বলছি।

যাওয়ার আগে তোমাকে একটা টাইট হাগ দিয়ে যাই মামণি?

কাঠের চামচ উঁচিয়ে মিসেস রাহমা বললেন, বাসী শরীরে আমার কাছে এলে এইটার বাড়ি খাবি।

মাই ডিয়ার সুইট মাদার গাছে থাকলে ফুল কখনো বাসী হয় না।

মানে কি এই কথার?

মানে হচ্ছে আমি যেই দুটি গাছের সমন্বয়ে আমি প্রস্ফুটিত হয়েছিলাম। এখনো সেই বৃন্তেই শোভা বর্ধন করছি। হাসতে হাসতে বললো রুহি।

মিসেস রাহমা বিরক্ত কণ্ঠে বললেন, এজন্যই আমি তোর সাথে কথা বলতে চাই না। সারাক্ষণ শুধু ফালতু কথা। দাঁড়িয়ে আছিস কেন? যা বলছি সামনে থেকে।

রান্নাঘরের দরজার সামনে গিয়েও আবার ফিরে এসে মামণিকে জড়িয়ে ধরে আদর করে হাসতে হাসতে ছুটে বেড়িয়ে গেলো রুহি।

হেসে ফেললেন তখন মিসেস রাহমাও। তার রাগ হলে সবসময় চেষ্টা করেন তার দুষ্টু মেয়েদের সাথে কথা না বলতে। এটা সেটা বলে ঠিকই তাকে হাসিয়ে ফেলে নয়তো।

@

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই স্ত্রীর সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছে। মন মেজাজ তাই খুবই খারাপ নোমান সাহেবের। বারান্দায় বসে গম্ভীর মুখে পত্রিকার পাতা উল্টাচ্ছিলেন। গুনগুণ শব্দ কানে আসতে পত্রিকা ভাঁজ করে রেখে উঠে দাঁড়ালেন। ছোট মেয়ে নূরি বাগানে গাছে পানি দিচ্ছিলো আর গুনগুণ করছিলো। মেয়েকে দেখেই হাসি ফুটে উঠলো নোমান সাহেবের চেহারাতে। সাথে সাথে মনও ভালো হতে শুরু করলো। আদর ভরা কণ্ঠে বললেন, আমার মা কি করে?

নূরি উপর দিকে তাকিয়ে হেসে বলল, গাছদের নাস্তা দিচ্ছি বাবা। খালি পানি খেতে চাচ্ছে নাতো তাই গুনগুণ করে পটানোর চেষ্টা করছি।

নোমান সাহেব হাসতে হাসতে বললেন, তোর গুনগুণকে শব্দ দিয়ে দেতো মা। অনেকদিন তোর গান শুনিনা।

মামণির সাথে ফাইট হলে তুমি একদম বোকা ছেলে হয়ে যাও বাবা। বাগানে দাঁড়িয়ে আমি বুঝি গান করবো?

তোর মামণির সাথে আমার ফাইট হয়েছে কে বললো?

জগতের সবকিছু মুখে বলার দরকার হয় না বাবা। নিশ্চুপ পরিবেশও অনেককিছু জানান দিয়ে যায়। এই যেমন ধরো, প্রতিদিন ভোর বেলা দুজন কপোত-কপোতি চায়ের কাপ হাতে আমাদের বাগানে বসে গুটুর গুটুর করে। আজ তাদেরকে দেখা যায়নি। তাছাড়া রান্নাঘর থেকে ধুরুম ধারুম শব্দ ভেসে আসছে। এসবই মামণির মেজাজ গরমের লক্ষণ।

তুই এত কিছু খেয়াল করিস তাতো জানা ছিলো না। হাসি মুখে বললেন নোমান সাহেব।

মেয়েদেরকে সংসারের সবদিকে খেয়াল রাখতে হয় বাবা। তুমি এসব বুঝবে না।

বুঝবো না কেন?

জগতের সবকিছু তো সবাই বোঝে না বাবা। কিছু কিছু উপলব্ধি একান্ত মেয়েদের আর কিছু উপলব্ধি একান্ত ছেলেদের। ছেলে ও মেয়েরা যখন একে অপরের উপর নিজ নিজ উপলব্ধি চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে তখনই বাঁধে সমস্যা।

তুই তো মা অনেক কঠিন কঠিন কথা শিখে ফেলেছিস। তোর মামণিকে একটু বোঝাতে পারিস না এসব কথা। তাহলেই তো আর অশান্তি হয় না।

তুমি বুঝলেও তো অশান্তি কমে যেত বাবা। তাহলে তুমি কেন বোঝ না বলো তো?

তুই কখনোই তোর মামণির দোষ দেখিস না এটাই হচ্ছে সমস্যা। এমনিতে মুখে মুখে শুধু বলিশ যে আমাকে বেশি ভালোবাসিস। সত্যি করে বল তো তোকে যদি অপশন দেয়া হয় আমাকে কিংবা তোর মামণি যে কোন একজন বেছে নিতে তুই কাকে নিবি?

চলবে

পর্বঃ২ মোরা জোনাকি হতে চাই…..২

 

আপনার স্পাউজের ধরন বুঝুন

আপনার স্পাউজের ধরন বুঝুন


কানিজ ফাতিমা


সাধারণত একটা ট্রেন্ড আমি নারী-পুরুষের মধ্যে দেখতে পেয়েছি – বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় মেয়েরা কিছুটা পরিণত বয়সে তার বাবার মতো স্বামী চায় আর ছেলেরা তার মা বা বোনের মতো স্ত্রী চায়। যদি আপনার ক্ষেত্রে সেটা সত্য হয় তবে বিয়ের আগে এভাবেই পাত্র-পাত্রী খুজুন। কিন্তু বিয়ের পরে আপনাকে যেটা বুঝতে হবে তাহলো আপনার চাওয়া যাই হোক, আপনি যা পেয়েছেন সেই বাস্তবতাকে দেখার ও বোঝার মন ও চোখ তৈরী করতে পারা আপনার পারিবারিক সৌহার্দের জন্য জরুরী।

সহজ একটা উদাহরণ দেই -আপনাকে যদি screw driver দেয়া হয় তবে তাকে screw driver এর মতো ব্যবহার করুন। কাঁচির মতো ব্যবহার করতে যাবেন না। আপনার বাবা বা মা কাঁচি ছিলেন, আপনি কাঁচির ধার আর সুফল দেখে বড় হয়েছেন তাই আপনার কাঁচির প্রতি দুর্বলতা থাকতেই পারে। কিন্তু যদি আপনি screw driver এর কাছে কাঁচির ব্যবহার আশা করেন তবে আপনাকে হতাশ হতেই হবে।
আর এই হতাশা screw driver এর কারণে হয়নি, হয়েছে আপনার নিজের কারণে। এরপর আপনি যদি জোর জবরদস্তি করে এই screw driver কে কাঁচির মতো ব্যবহার করতে যান তবে হয় সে বিদ্রোহ করবে, নয়তো (নিরীহ হলে সহ্য করতে করতে) আপনার চাপাচাপিতে ভেঙে যাবে – এর কোনোটাতেই আপনার মঙ্গল নেই।

মনে রাখবেন screw driver এ কাঁচির কল্যাণ যেমন নেই, তেমনি কেচিতেও screw driver এর কল্যাণ নেই। কাজেই আপনি screw driver এর কাছে কাঁচির কল্যাণ না খুঁজে screw driver এর কল্যাণ খুজুন। screw driver এর কাছে কাঁচির কল্যাণ খুঁজতে গেলে আপনি সেটা তো পাবেনই না বরং screw driver এ যে কল্যাণ আল্লাহ আপনার জন্য মৌজুদ রেখেছিলেন সেটা থেকেও বঞ্চিত হবেন।

কাজেই আপনার স্পাউজের ধরণ বুঝুন।

 

বিকালে নাস্তায় নুডলস পাকোড়া

 


ঘরকন্যা


উপকরণ :
১. ১ কাপ বেসন,
২. ২ টেবিল চামচ চালের গুঁড়া,
৩. ১ কাপ সেদ্ধ নুডলস,
৪. ১ কাপ পরিমাণে সবজি (আলু, গাজর, ক্যাপসিকাম, মাশরুম বা আপনার পছন্দের যে কোনো সবজি),
৫. ৩/৪ টি কাঁচা মরিচ কুচি,
৬. ২ টি পেঁয়াজ কুচি,
৭. ১ ইঞ্চি আদা কুচি,
৮. ২ টেবিল চামচ টমেটো সস,
৯. ২ টেবিল চামচ ধনিয়া পাতা কুচি,
১০. লবণ স্বাদমতো,
১১. পানি পরিমাণমতো,
১২. তেল ভাজার জন্য।

প্রণালি :
> প্রথমে পানি দিয়ে বেসন ও চালের গুঁড়ো ভালো করে মিশিয়ে ঘন থকথকে ব্যাটারের মতো তৈরি করে নিন। ভালো করে মিশিয়ে নেবেন যেনো বেসনে দলা না থাকে।

> এরপর একে এঁকে বাকি সব উপকরণ (তেল ছাড়া) বেসনের মিশ্রনে দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে ফেলুন। প্রয়োজনে আরও খানিকটা পানি দিয়ে বড়া ভাজার মতো মিশ্রন তৈরি করে ফেলুন।

> এরপর চুলায় কড়াইয়ে ডুবো তেলে ভাজার জন্য তেল গরম করে নিন। অল্প একটু মিশ্রন হাতে নিজে বড়ার মতো গোল চ্যাপ্টা আকার দেয়ার চেষ্টা করুন এবং তেলে দিয়ে লালচে করে মুচমুচে করে ভেজে তুলে নিন।

> একটি কিচেন টিস্যুতে রেখে তেল শুষে নিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন ইফতারে।

রেসিপি : প্রিয়.কম

 

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার পর্ব -২

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার পর্ব -২


নারীর জন্য আইন


তারা বলেন, আল্লাহর নির্ধারিত হিস্সার পরে বাকী অর্ধেক বা এক তৃতীয়াংশ মেয়েরা পেতে পারে না। সুতরাং বাকী সম্পদ লাভ করবেন এমন উত্তরাধিকারীগণ যাদের জন্য নির্ধারিত কোন হিস্সা নেই বরং তারা অবশিষ্ট সম্পদ লাভ করবেন। এ ধরণের উত্তরাধিকারীদেরকে মাওলা (আছাবা) বলা হয়। তারা বলেন, কন্যা সন্তান মাওলা হতে পারে না। তাই কন্যাদেরকে নির্ধারিত হিস্সা প্রদান করার পরে যা কিছু অবশিষ্ট থাকবে, তা লাভ করবে মৃতের অপরাপর আছাবাগণ (মাওলা)। আর ভাই-বোন হলেন সে আছাবা, যারা বাকী সম্পদ লাভ করবেন। কারণ হাদীছ শরীফে এসেছে: عـَنْ اِبـْنِ عَـبَّـاسٍ رَضِـيَ الـلـَّه عـَنـْهـُمـَا قـَالَ قـَالَ رَسـُولُ الـلـَّهِ صَـلـَّى الـلـَّهُ عَـلـَيـْهِ وَسَـلـَّمَ اِقـْسِـمُـوْا الـْمَـالَ بَـيـْنَ اَهْـلِ الـْفَـرَائِـضِ عَـلـَى كِـتـَابِ الـلـَّهِ فـَمَـا تـَرَكـَتِ الـْفـَرَائِـضُ فـَلاَوْلـَى رَجُـلٍ ذَكـَرٍ হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন: ‘তোমরা উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পদ বন্টন কর আল্লাহর কিতাব মোতাবেক। যে সম্পদ অবশিষ্ট থেকে যাবে, তা পাবে ঘনিষ্ঠতর পুরুষ লোক।’ (মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনু মাজাহ)

১। তাছাড়া অন্য হাদীছে এসেছে: عـَنْ جـَابـِرٍ قـَالَ جَاءَتْ اِمْـرَأَةُ سَـعْـدِ بْـنِ الـرَّبـِيـْـعِ بـِاِبـْنـَتـَيـْهـَا مـِنْ سَـعْـدٍ إلـَى رَسُـوْلِ الـلـَّهِ صَـلـَّى الـلـَّهُ عَـلـَيـْهِ وَسَـلـَّـمَ فـَقـَالـَتْ يـَا رَسُـوْلَ الـلـَّهِ هـَـاتـَانِ اِبْـنـَتـاَ سَـعـْدِ بْـنِ الـرَّبـِيـْعِ قـُتـِلَ أَبـُوْهـُمَا مَـعَـك يَـوْمَ اُحـُدٍ شَـهـِيـْدًا وَاَنَّ عَـمَّـهُـمَا أَخَـذَا مَالـَهُـمَا ‏ فَـلَـمْ يَـدَعْ لـَهُـمَا مـَالاً وَلاَ تـُنـْكـَحـَانِ إلاَّ وَلـَهـُمَا مـَالٌ قـَالَ يـَقـْضِيْ الـلـَّهُ فـِيْ ذَلِـكَ فـَنـَزَلـَتْ آيـَة ُ الـْمِـيْـرَاثِ فـَبَـعَـثَ رَسُـوْلُ الـلـَّهِ صَـلـَّى الـلـَّهُ عَـلـَيـْهِ وَسَـلـَّمَ اِلـَى عَـمِّـهـِمَا فـَقـَالَ اِعْـطِ اِبـْنـَتـَىْ سَـعْـدٍ الـثــُّلـُثـَيْـنِ وَاِعْـطِ أُمـَّهُـمَا الـثــُّمُـنَ وَمـَا بَـقـِيَ فـَهـُوَ لـَكَ হযরত জাবির রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূল সা. এর কাছে সা’দ বিন রাবী’য় রা. এর স্ত্রী তার দু’জন মেয়েকে নিয়ে এসে আরজ করলেন: ‘হে আল্লাহর রাসূল, সা’দ বিন রাবী’য় রা. আপনার সাথে উহুদ যুদ্ধে গিয়েছিলেন। সে যুদ্ধে তিনি শহীদ হন। এই তার দু’মেয়ে। তাদের সম্পদ তাদের চাচা নিয়ে গেছে; তাদের জন্য কিছুই বাকী রাখেনি। সম্পদ না থাকার কারণে তাদের বিয়েও দেয়া যাবে না।’ রাসূল সা. বললেন: ‘আল্লাহ এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিবেন।’ এর পরেই উত্তরাধিকার সংক্রান্ত আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়। তখন রাসূলুল্লাহ সা. তাদের চাচার কাছে খবর পাঠিয়ে বললেন: ‘সা’দের দু’মেয়েকে দু’তৃতীয়াংশ দিয়ে দাও এবং তাদের মাতাকে এক অষ্টমাংশ প্রদান কর। আর যা অবশিষ্ট থাকবে, তা তুমি পাবে।’ (সুনানু আবু দাউদ, তিরমিযী, সুনানু ইবনি মাজাহ, মুসতাদ্রাক প্রভৃতি)

২। এ হাদীছে মেয়েদেরকে নির্ধারিত হিস্সা দেয়ার পরে অবশিষ্ট অংশ রাসূলুল্লাহ সা. ভাইকে দিয়েছেন যা প্রমাণ করে যে, কন্যা সন্তানের সাথে ভ্রাতাগণও অবশিষ্ট হিস্সা পান।খ.       কন্যাদের সাথে বোনেরাও হিস্সা পায় বলে ছাহাবায়ে কেরামের একাংশ ও অধিকাংশ ফুকাহাদের যে মতামত রয়েছে, তার স্বপক্ষে কি যুক্তি ও দলীল রয়েছে তা সুনির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। তবে একটি দলীল হল নিুোক্ত হাদীছ। বর্ণিত হয়েছে: عـَنْ اَبـُوْقـَيـْسٍ قـَالَ سَـمـِعـْتُ هـُذَيـْلَ بـْنَ شـُرَحـْبـِيـْلَ يـَقـُوْلُ سـُئـِلَ اَبـُوْ مـُوْسـَى عـَنْ اِبـْنـَةٍ وَاِبـْنـَةِ اِبـْنٍ وَاُخـْتٍ فـَقـَالَ لـِلاِبـْنـَةِ الـنـِّصْـفُ وَلـِلأُخـْتِ الـنـِّصْـفُ وَائـْتِ اِبـْنَ مـَسـْعـُوْدٍ فـَسـَيـُتـَابـِعـُنـِى فـَسـُئـِلَ اِبـْنُ مـَسـْعـُوْدٍ وَاُخـْبـِرَ بـِقـَوْلِ اَبـِىْ مـُوْسـَى فـَقـَالَ لـَقـَدْ ضَـلـَلـْتُ اِذَنْ وَمـَا اَنـَا مـِنَ الـْمـُهـْتـَدِيـْنَ أَقـْضِـيْ فـِيـْهـاَ بـِمـَا قـَضـَى الـنـَّبـِيُّ صَـلـَّى الـلـَّهُ عـَلـَيـْهِ وَسـَلـَّمَ لـِلاِبـْنـَةِ الـنـِّصْـفُ وَلاِبـْنـَةِ اْلاِبـْنِ الـسـُّدُسُ تـَكـْمـِلـَةَ الـثـُّلـُثـَيـْنِ وَمـَا بـَقـِيَ فـَلـِلأُخـْتِ فـَأَتـَيـْنـاَ اَبـاَمُـوْسـَيْ فـَاَخـْبـَرْنـاَهُ بـِقـَوْلِ اِبـْنِ مـَسـْعـُوْدٍ فـَقـَالَ لاَ تـَسـْأَلـُوْنـِيْ مـَا دَامَ هـَذَا الـْحـَبـْرُ فـِيـْكـُمْ ‘হযরত আবু কায়েস রাহ. বলেন: আমি হুযাইল বিন শুরাহবীল রাহ. কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, হযরত আবু মূসা আশআরী রা. কে জিজ্ঞাসা করা হল যে, যদি একজন মেয়ে, একজন ছেলের তরফের নাতিন ও একজন বোন থাকে, তাহলে কে কত হিস্সা করে পাবে? তখন তিনি বললেন: ‘মেয়ে অর্ধাংশ পাবে আর বাকীটুকু পাবে বোন। তুমি আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ এর কাছে গিয়ে দেখতে পার, তিনিও আমার অনুসরণ করবেন।’ হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. কে জিজ্ঞাসা করলে এবং আবু মুসা রা. এর মতামতের কথা জানালে তিনি বললেন: ‘আমি সঠিক পথের দিশা না পেলে পথভ্রষ্ট হয়ে যেতাম। আমি এমন রায় দেব যে রকম রায় দিয়েছিলেন রাসূলুল্লাহ সা.। মেয়ে অর্ধাংশ পাবে, নাতিন পাবে এক ষষ্টাংশ যাতে করে দু’জনের হিস্সা মোট দু’তৃতীয়াংশ হয়। আর বাকীটুকু পাবে বোন।’ আমরা হযরত আবু মূসা আশআরী রা. এর কাছে ফেরত গিয়ে তার কাছে ইবনু মাসউদ রা. এর রায়ের কথা জানালে তিনি বললেন, ‘এ পন্ডিত যতদিন আছে, ততদিন আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা কর না।’ (ছহীহ বুখারী, তিরমিযী, মুসতাদ্রাক)

৩। তাদের আরেকটি দলীল ফারাইজের গ্রন্থাবলীর সুত্রে জানা যায়। সে দলীলটি হল, রাসূলুল্লাহ সা. এর কথিত হাদীছ। যেমন বর্ণিত হয়েছে: اِجـْعـَلـُوْا اْلاَخـَوَاتِ مـَعَ الـْبـَنـَاتِ عـَصَـبـَةً ‘তোমরা মেয়েদের সাথে বোনদেরকে আছাবা বানাও।’ (সিরাজী, আল বাহরুর রায়ীক)

৪। উপরোক্ত বিষয়গুলোকে বিশ্লেষণ করে ফুকাহা ও ফারাইজবিদগণ আছাবা (মাওলা) উত্তরাধিকারীগণকে তিনভাগে বিভক্ত করেছেন।

১. ‘আছাবা বিনাফসিহী’,

২. ‘আছাবা বিগায়রিহী’ এবং

৩. ‘আছাবা মা’আ গায়রিহী’।

চলবে..

 

বন্ধ্যাত্ব ও এর যত কারণ

বন্ধ্যাত্ব ও এর যত কারণ


ডা. নুসরাত জাহান


বন্ধ্যাত্ব ও এর যত কারণ – সংগৃহীত

দুই বছর বা এর বেশি সময় কোনো ধরনের জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ছাড়াই গর্ভধারণে ব্যর্থ হলে তাকে ডাক্তারি ভাষায় বন্ধ্যাত্ব হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। প্রতি ১০০ জন দম্পতির মধ্যে ৮৪ জন প্রথম বছরে এবং ৯২ জন দ্বিতীয় বছরের মধ্যে গর্ভধারণ করতে সমর্থ হন। তাই বলা যায় প্রতি ১০০ জন দম্পতির মধ্যে ৮ জন বন্ধ্যাত্বের শিকার হন।

কখন কনসিভ না হওয়ার কারণ নির্ণয় করা দরকার?
এক বছর বা এর চেয়ে বেশি সময় কোনো ধরনের জন্ম নিয়ন্ত্রণ পধ্বতি ছাড়া গর্ভধারণে ব্যার্থ হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

তবে কারো কারো ক্ষেত্রে কনসিভ না হওয়ার কারণ নির্ণয় করতে দেরি করা যাবে না। যেমন,

# বয়স ৩৬ বা এর বেশি হলে
# রোগীর আগে এমন কোনো হিস্ট্রি থাকলে যেগুলো তার বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে যেমন পেলভিক ইনফেকশন এর হিস্ট্রি অথবা
# এমন কোনো অপারেশন যা তার ফার্টিলিটি কমিয়ে দিতে পারে।

বন্ধ্যাত্বের যত কারণ

বন্ধ্যাত্বের কারণ অনেক। আবার স্বামী-স্ত্রী যেকোনো একজন বা উভয়ের ক্ষেত্রে সমস্যা থাকতে পারে। গর্ভধারণের জন্য দরকার একটি সুস্থ ওভাম (ডিম), সবল বীর্য, নরমাল ইউটেরাস বা জরায়ু এবং নরমাল পেলভিক এ্যানাটমি। এর যেকোনো জায়গায় সমস্যা হলে গর্ভধারণে ব্যর্থতা দেখা দিতে পারে।

প্রাথমিকভাবে বন্ধাত্ব্যের কারণগুলো তিনভাগে ভাগ করা যেতে পারে। এগুলো হচ্ছে এনুভলেশন (ডিম্বাশয় থেকেও ভামবাডিম নিসরণ না হওয়া ), জরায়ু বা ডিম্ব নালীর সমস্যা ও পুরুষ সঙ্গীর সমস্যা।
ওভুলেসন বা ডিম্বস্ফুটন না হওয়ার কিছু কারণ :

• পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম
• হরমনের অস্বাভাবিক মাত্রায় নিঃসরণ : কিছু কিছু হরমোন যেমন প্রলেক্টিন, থাইরয়েড হরমোন অথবা পিটুইটারি FSH, LH হরমোনের অস্বাভাবিক মাত্রায় নিঃসরণ ও ভুলেশন ব্যাহত করে।

• শরীরের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বা কম থাকা।
• প্রিমেচিউর ওভারিয়ান ফেইলিউর
• অতিরিক্ত মানসিক চাপ।
• অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, ক্যান্সার কিংবা কিডনি রোগেও অভুলেশন ব্যাহত হতে পারে।
• কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি সাময়িক বা পরোপুরিভাবে ওভারিকে অকার্যকর করে দিতে পারে।
• ধূমপান, অথবা অনিয়ন্ত্রিত মদ্যপান।

জরায়ু বা ডিম্বনালীর সমস্যা :
• জারায়ুর টিউমার যেমন এডিনোমায়োসিস,ফাইব্রয়েড বা পলিপ।
• পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজ (পি আই ডি) অথবা যেকোনো ইনফেকশনের কারনে ডিম্বনালী বন্ধ হয়ে ওভাম ও শুক্রাণু নিষিক্তকরনের পথ বন্ধ করে দিতে পারে।
• এন্ডোমেত্রিওসিস বন্ধ্যাত্বের একটি পরিচিত কারণ। এ রোগের লক্ষণ মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, পেটে ব্যথা ইত্যাদি।

• ইনফেকশন বা এন্ডোমেত্রিওসিস জরায়ু এবং এর আশপাশের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক এনাটমি নষ্ট করে বন্ধাত্ব্যের কারণ ঘটায়।

মেল (পুরুষ) ফ্যাক্টর
৩০% ক্ষেত্রে পুরুষ সঙ্গীর সমস্যার কারণে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।

• শুক্রাণু বা বীর্য যথেস্ট গতিশীল না হলে বা অস্বাভাবিক গঠনগত কারণে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।
• কোনো কারণে শুক্রাণু তৈরী ব্যাহত হলে, যেমন জিনগত ত্রুটি, ভেরিকোসেলি, টেস্টিসের টিউমার বা ইনফেকশন অথবা কোণো ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া জনিত কারনে নরমাল শুক্রাণু তৈরী বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে।

পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রেই গর্ভধারণের হার বয়স বাড়ার সাথে কমে যায়। ৩৫ বছরের পর থেকে মেয়েদের ওভুলেশনের হার কমতে থাকে, একইসাথে শুক্রাণুর কার্যকারিতাও বয়সের সাথে সাথে কমে। তাই এই চিকিৎসায় বিলম্ব হলে সাফল্যের হারও কমে যায়।

ডা. নুসরাত জাহান
এসোসিয়েট কনসালটেন্ট (অবস-গাইনি)
ইমপেরিয়াল হসপিটাল, চট্টগ্রাম

 

সন্তানকে যা কখনো বলবেন না পর্ব -২(শেষ)

সন্তানকে যা কখনো বলবেন না পর্ব -২


কানিজ ফাতিমা


আপনি এত কষ্ট করার পর কি সন্তানের ক্ষতি চান? যদি না চান , তাহলে আর একটু ধৈর্য্য বাড়ান৷ আপনার যত কষ্টই হোক কখনই আপনার সন্তানকে এটা বলবেন না যে-তোমাকে দিয়ে কিছু হবে না …
তোমার মত ছেলে/মেয়ে আমার দরকার নাই ..
কখনই তার সঙ্গে ওর সমবয়সী কারো তুলনা করবেন না ৷ যদি কাউকে মডেল হিসাবে সামনে রাখতে চান তাহলে মহত মানুষদের ছোট বেলার গল্প বলতে পারেন বা তার থেকে বড় কারো কথা বলতে পারেন ৷ বড়দের অনুকরণ করতে বাচ্চারা পসন্দ করে কিন্তু সমবয়সী কাউকে না ৷অন্যের কাছে তার নামে কখনও অভিযোগ করবেন না , অন্তত তখন করবেননা যখন সে তা শুনতে পায় ৷ এতে বাচ্চারা মনে করে মা (বা বাবা ) তার সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখে না ..তার বদনাম করে …৷ এতে তার মন খারাপ হয় এবং তার self esteem কমে যায় ৷ তবে এর মানে এই না যে আপনি বাচ্চার সমস্যা নিয়ে অন্যের সঙ্গে আলোচনা করবেন না ৷ বাচ্চাদের সমস্যা গোপন না রেখে অভিজ্ঞ কারো সাথে এ নিয়ে আলোচনা করলে সুফল পাওয়া যায় ৷ তবে এক্ষত্রে যা মনে রাখতে হবে তাহলো এটা বাচ্চার সামনে কখনই করা যাবে না ৷ এমনকি তাকে পাশের ঘরে রেখেও না – অনেক সময় মনে হয় তারা শুনছে না বা খেলা নিয়ে ব্যস্ত আছে …কিন্তু আসলে তারা শোনে৷ তার সম্পর্কে negative কোনো কথার একটি শব্দ ও যদি তার কানে যায় তাহলে সে আপনার প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবে , মনে করবে ” মা মনে হয় সব সময়েই আমার নামে এসব কথা বলে…” ৷ তাছাড়া বাচ্চারা তার সম্পর্কে বাবা- মার মন্তব্য শুনতে খুবই আগ্রহী ৷ আপনি তার সম্পর্কে কিছু বলতে শুরু করলেই সে কান খাড়া করে তা শুনে , কিন্তু ভান করে যে সে আপনার কথায় একেবারেই মনোযোগ দিচ্ছে না ৷ কাজেই তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলুন ” তাহমিদ অনেক চেষ্টা করে …সে আগের চেয়ে উন্নতি করছে …আর একটু চেষ্টা করলে সে অনেক ভালো করবে …” ৷ নিজের সম্পর্কে এ রকম মন্তব্য শুনলে বাচ্চারা তাদের চেষ্টা বাড়িয়ে দিবে এবং আপনার সঙ্গে তার সম্পর্ক সদৃঢ় হবে ৷মনে রাখবেন আপনার সঙ্গে আপনার বাচ্চার সম্পর্ক অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে তার সঠিক Development এর জন্য বেশী জরুরী ৷

শেষ কথা -এ কথা গুলো বলা যত সহজ করা তত সহজ না ৷ আসলেই এটা কঠিন একটি কাজ …একটু চিন্তা করুন – আপনি কি চাচ্ছেন ? সন্তান মানুষ করতে…এটা স্বাভাবিক একটি চাওয়া কিন্তু ছোট চাওয়া না ৷ পৃথিবীর সবথেকে কঠিন কাজটি আপনি করছেন- Human Resource Development ৷ পৃথিবীর সবথেকে উন্নত জীব কে গড়ছেন আপনি ৷ এটা অন্য যে কোনো কাজের চেয়ে Challenging৷ কাজেই অন্য যেকোনো কাজের চেয়ে বেশী ধৈর্য ও বুধিমত্তা প্রয়োজন ৷ এবং সেটা আপনাকেই করতে হবে -কারণ আপনার সন্তানের ভালো চান আপনি ৷

 

অটিস্টিক শিশুদের প্রয়োজন অতিরিক্ত যত্ন

অটিস্টিক শিশুদের প্রয়োজন অতিরিক্ত যত্ন


স্বাস্থ্যকথা


রাহেলা আর রিদোয়ান বিয়ে করেন ভালোবেসে। পরিবার প্রথমে মত না দিলেও পরে দুই পরিবারই মেনে নেয় তােেদর এই বিয়ে। প্রথম তিন বছর তারা কোন বাচ্চাই নেয়নি। ইচ্ছে ছিল নিজেদের একটু গুছিয়ে তারপর সন্তান নিবে। বিয়ের সাড়ে পাঁচ বছরের মাথায় তাদের পরিবারে আসে ফুটফুটে ছেলে সন্তান। শুরুতে ভালোই কাটছিল রাহেলা আর রিদোয়ানের দিন। তাদের সব স্বপ্নই তৈরী হচ্ছিল সন্তান আদিলকে নিয়ে।
কিন্তু জন্মের ছয়-সাত মাস পরেই বুঝতে পারে তাদের সন্তান অন্য আর দশটি সাধারণ শিশুর মত নয়। তাদের আদিল বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু। সে অটিস্টিক। ডাক্তারের এমন কথা শুনে মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে তাদের দু’জনের মাথায়। এ কথা জানার পর কয়েকদিন ভালো করে কোন কিছু চিন্তাও করতে পারেননি তারা। পরে আবার তারা ডাক্তারের পরামর্শ নেন- কীভাবে আদিলকে সুস্থ করে স্বাভাবিক জগতে ফিরিয়ে আনা যায়।
প্রতিটি শিশুই নিষ্পাপ। আর অটিস্টিক শিশুরা তো এমন শিশু যে তারা একেবারেই নিষ্পাপ। তারা নিজের চাহিদা, অনুভূতি, আবেগ সুন্দরভাবে কিংবা মন খুলে প্রকাশ করতে পারে না। এজন্য পিতা-মাতাকে সব সময় সচেতন ও সতর্ক থাকতে হয়।
সেন্টার ফর রিসার্চ এন্ড ইনফর্মেশন এর পরিসংখ্যান মতে, ঢাকাতে ৩ শতাংশ শিশু অটিস্টিক। তবে বাংলাদেশে এ হার ০.১৫ শতাংশ।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. মনির হোসেন বলেন, অটিজম শব্দটা সম্পর্কে আগে আমাদের খুব একটা ধারণা ছিল না। তবে এখন জনসচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষ এ রোগ সম্পর্কে জানছে।
তিনি বলেন, এ ধরনের শিশুরা নিজেদের চাহিদা নিজেরা প্রকাশ করতে পারে না। এজন্য বাবা-মা বা আশপাশের আত্মীয়-স্বজন যদি সচেতন থাকে তবে এ ধরেনর অনেক বাচ্চাই সুস্থ এবং সুন্দরভাবে বেঁচে থাকে। এমনকি অনেক বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন বাচ্চা বড় হয়ে চাকরি করে নিজে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রায় সকল অটিস্টিক শিশুরই কোন না কোন বিষয়ের প্রতি বিশষ আগ্রহ থাকে। আর সে সব শিশুরা ঐ সব বিষয়ে খুব পারদর্শী হয়।
ডা. মনির বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে অটিজম বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরীতে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন হাসপাতালে অটিজম বিভাগ খোলা হয়েছে যাতে করে এ ধরনের শিশুদের সঠিক চিকিৎসা সেবা দেয়া যায়। ২০০৮ সাল থেকে এটি বাংলাদেশে জাতীয় দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।
একই হাসপাতালের আরেক শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সাইদুর রহমান সোহাগ বলেন, কারো পরিবারে অটিস্টিক বাচ্চা জন্ম নিলে আগে বাচ্চার মাকেই দোষারোপ করা হত। যেন বাচ্চার মা’ই এ ধরনের বাচ্চা জন্মদানের জন্য দায়ী। কিন্তু আসলে এতে মায়েদের কোন দোষ বিজ্ঞানসম্মতভাবে এখনো পাওয়া যায়নি। যদিও এখন এ ধরনের মনোভাব অনেকাংশে কমেছে। মূলত সরকারের নানাবিধ পদক্ষেপের কারনেই এটি সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, এ ধরনের শিশুদের অতিরিক্ত যত্ন নিতে হয়। সব সময় এদের চাহিদার প্রতি খেয়াল রাখা প্রয়োজন। অনেক সময় যথাযথ জ্ঞান ও ধারণার অভাবের কারণে এ ধরনের শিশুদের ঘরের বাইরে খুব একটা নেয়া হয় না। তবে তাদের অন্যান্য শিশুদের সঙ্গে মেশার সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষিত বাবা মা ও সচেতন নাগরিকদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, এ ধরনের শিশুদের লেখাপড়ার সুযোগ তৈরী করে দিতে হবে। তবে আশার কথা হচ্ছে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও বড় বিভাগীয় শহর যেমন চট্টগ্রাম এবং রাজশাহীতে এ ধরনের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য আলাদা স্কুল আছে। তবে কম অটিস্টিক শিশুদের যদি অন্য সাধারন শিশুদের সাথে তাদের স্কুলে পড়ালেখা করানো যায় তবে অটিস্টিক শিশুরা অনেকটা সুস্থ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এজন্য স্কুলের শিক্ষক এবং অন্য অভিভাবকরা যদি সচেতন হন এবং এগিয়ে আসেন তবে অটিস্টিক শিশুরাও সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে পারে।

সুত্রঃ (বাসস)

 

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার পর্ব-১

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার পর্ব -১


নারীর জন্য আইন


অধিকাংশ সাহাবাগণের মতামতের ভিত্তিতে এবং কুরআনের সুরা নিসার ১৭৬ নং আয়াতের আলোকে দেখা যাচ্ছে যে, “মৃত ব্যাক্তির যদি স্বামী বা স্ত্রী না থাকে, তার যদি এক বা দুই জন কন্যা সন্তান থাকে তাহলে তারা প্রথমত দুই তৃতীয়াংশ সম্পত্তি পাবে এবং রদের ভিত্তিতে বাকী সম্পত্তিটুকু পাবে। যদি মৃত ব্যাক্তি কালালা (নিঃসন্তান) হয় তাহলে মৃত ব্যাক্তির সম্পদের অংশ থেকে তার ভাই অথবা বোন পাবে। এখানে কালালার ব্যাপারে বলা হচ্ছে। হযরত কাতাদাহ্ (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “কালালা এমন ব্যাক্তি যার অধঃস্থন ও উর্দ্ধতন কেউ নেই। অর্থাৎ, যারা পিতা বা দাদা অথবা ছেলে কিংবা মেয়ে কেউ নেই (ইব্নে জাবির)। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উমর (রা.) এর জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত উপস্থিত ছিলাম। তিনি বললেন, আমি যা বলেছি সঠিক বলেছি (আমি বললাম) আপনি কি বলেছেন? তখন তিনি বললেন, কালালা হলো এমন লোক যার কোন সন্তান নেই। হানাফী মাজ্হাবের অনুসারী কিছু আলেমগণ কুরআনের আয়াতের বিপরীতে কিছু দূর্বল হাদীসের ভিত্তিতে মৃত ব্যাক্তির কন্যাদের কে তার সম্পদের অর্ধেক প্রদান করে বাকী অর্ধেক মৃত ব্যাক্তির ভাই অথবা বোনকে প্রদান করে। সুরা নিসার ১৭৬ নং আয়াত নাজিল হয়, রাসূল (সা.) এর যুগের শেষ দিকে অর্থাৎ বিদায় হজ্জ্বের সময়। যাকে গ্রীষ্মকালীন আয়াত নাম দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ আয়াত নাজিল হবার পরে মেয়ে সন্তান থাকা অবস্থায় রাসূল (সা.) ভাই বোনকে অংশ দিয়েছেন বলে কোন প্রমাণ নেই। সুতরাং কুরআন ও হাদীসের মধ্যে কোন বিরোধও নেই। কিন্তু বড়ই দূর্ভাগ্যের বিষয় এই যে, আমাদের দেশ সহ দেশে দেশে মেয়ে সন্তান হলে তার সাথে ভাই – বোনকে ও সম্পত্তিতে অংশীদার করা হয়। যা সুরা নিসার ১৭৬ নং আয়াতের সরাসরি লংঘন বলে আমরা মনে করি। তাছাড়া উহা নারীর প্রতি সুস্পষ্ট বৈষম্য। কুরআন উহা অনুমোদন করে না। বরং এ সর্বশেষ আয়াতের মাধ্যমে পূর্বেকার বিধানগুলোকে মানসূখ করা হয়েছে। মানসূখ বিধানকে বাতিল করে এ ১৭৬ নং আয়াতের বিধানের মাধ্যমে ফারায়েজের সিদ্ধান্ত দিতে হবে।

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার: একটি ভিন্নতর দৃষ্টিভঙ্গি মাওলানা সৈয়দ জিল্লুর রহমান মানুষ মরণশীল।

একদিন সবাইকে মরতে হবে। সবাইকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতেই হবে। মৃত্যু পরবর্তী কর্মকান্ডের মধ্যে সম্পদ বন্টণ এবং উত্তরাধিকারই প্রধান কাজ। উত্তরাধিকারী আত্মীয়গণের মধ্যে কিছু আত্মীয়ের উত্তরাধিকার শর্তহীন ও প্রশ্নাতীত। যেমন ছেলে-মেয়ে, পিতা-মাতা ও স্বামী-স্ত্রী। আবার কিছু সংখ্যক আত্মীয় এমন আছেন, যাদের উত্তরাধিকার শর্তহীন নয় এবং যাদের উত্তরাধিকার নিয়ে চিন্তাশীল মনিষীদের মধ্যে ভিন্নমত ও বিতর্ক রয়েছে। কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে ভাইবোনদেরকে উত্তরাধিকারী গণ্য করে হিস্সা প্রদান করা এমন একটি বিতর্কিত বিষয়।মৃতের সন্তানদের মধ্যে যদি এক বা একাধিক কন্যা সন্তান থাকে এবং তাদের সাথে মৃতের ভাইবোনও বর্তমান থাকেন, তাহলে এ এতিম কন্যাদের পাশাপাশি শক্ত-সামর্থ ভ্রাতা-ভঙ্গিগণ উত্তরাধিকারী গণ্য হবেন কি না, তা নিয়ে মনিষীদের মধ্যে মতবিরোধ ও বিতর্ক রয়েছে। হযরত উমার রা, ইবনু মাসঊদ রা. ও আবু মুসা আশআরী রা. সহ একদল ছাহাবায়ে কেরাম ও বিরাট সংখ্যক ফুকাহাগণ কন্যাদেরকে নির্দিষ্ট হারে হিস্সা দেয়ার পরে অবশিষ্ট অংশ ভাইবোনদেরকে প্রদান করার পক্ষে মত প্রকাশ করে থাকেন। তাদের মতের সমর্থনে নিুোক্ত প্রমাণাদি তারা পেশ করেন:ক.       তাদের বিবেচনায়, মেয়েরা হল এমন উত্তরাধিকারী যাদের জন্য নির্ধারিত হিস্সা রয়েছে। যাকে ইলমুল ফারাইজে বলা হয় ‘যবীল ফুরূজ’। কারণ, তারা বলেন, মেয়ে একজন হলে সে অর্ধেক সম্পদ পায়, একাধিক হলে পায় দু’তৃতীয়াংশ। যেমন আল্লাহ তা’লা বলেন: فـَاِنْ كـُنَّ نـِسَـاءً فـَوْقَ اثـْنـَتـَيـْنِ فـَلـَهـُنَّ ثـُلـُثـَا مَـا تـَرَكَ وَاِنْ كـَانـَتْ وَاحِـدَةً فـَلـَهَـا الـنـِّصْـفُ وَلأَبـَوَيـْهِ لـِكـُلِّ وَاحِـدٍ مِـنـْهـُمـَا الـسُّـدُسُ مِـمـَّا تـَرَكَ اِنْ كـَانَ لـَهُ وَلـَدٌ ‘‘সুতরাং তারা যদি দু’য়ের অধিক কন্যা সন্তান হয়, তাহলে তারা পাবে দু’তৃতীয়াংশ যা কিছু সে রেখে যাবে তা থেকে। আর যদি সে একজন নারী হয়, তাহলে সে পাবে অর্ধেক। এবং পিতামাতার প্রত্যেকে মৃত ব্যক্তি যা কিছু ছেড়ে যাবে তাতে এক ষষ্টাংশ করে পাবেন, যদি মৃতের কোন সন্তান থাকে।” (সূরা নিসা-১১)।

চলবে…

সংগ্রহঃ কানিজ ফাতিমা আপুর ফেসবুক ওয়াল থেকে…

 

রুই মাছের চপ


রেসিপি


উপকরণ :
১. যেকোনো মাছ (রুই) পাঁচছয়টি বড় টুকরা,
২. আলু মাঝারি ৩টি,
৩. একটি বড় পাউরুটির টুকরা,
৪. পেঁয়াজ মিহিকুচি আধা কাপ,
৫. আদাবাটা ১ চা-চামচ,
৬. রসুনবাটা ১ চা-চামচ,
৭. কাঁচামরিচ-কুচি ১ টেবিল-চামচ,
৮. মরিচগুঁড়া ১ চা-চামচ,
৯. হলুদগুঁড়া ১ চা-চামচ,
১০. ধনিয়াগুঁড়া ১ চা-চামচ,
১১. ভাজা জিরাগুঁড়া আধা চা-চামচ,
১২. লবণ স্বাদমতো,
১৩. তেল ভাজার জন্য।

প্রণালি :
> মাছের টুকরাগুলো ভাপে সেদ্ধ করে কাঁটা বেছে নিতে হবে। সেদ্ধআলু ভালোভাবে চটকে নিন। এবার পাউরুটি পানিতে ভিজিয়ে সঙ্গে সঙ্গে তুলে নিতে হবে। তারপর মাছ, আলু, রুটি খুব ভালো করে মেখে নিতে হবে। একে একে তেল বাদে সব উপকরণ খুব ভালো করে মিশিয়ে হাতে পছন্দ মতো আকার দিন। এবার গরম তেলে চপগুলো ছেড়ে দিয়ে মাঝারি আঁচে ভাজতে হবে। হালকা বাদামী রঙ আসলে নামিয়ে নিলেই হল। ইফতার, সাদাভাত, পোলাও বা বিরিয়ানির সঙ্গে খেতে মাছের চপের জুড়ি নেই।

রেসিপি : বাংলা মেইল

 

সন্তানকে কখনওই যা বলবেন না পর্ব–১

সন্তানকে কখনওই যা বলবেন না পর্ব -১


কানিজ ফাতিমা


সব বাবা-মা ই চান তার সন্তানটি সেরা হোক, সব কিছুতে ভালো হোক, চৌকস হোক৷ এজন্য তারা অনেক চেষ্টা করেন, ত্যাগ করেন, সময় দেন, সামর্থ অনুযায়ী অর্থ ব্যয় করেন৷ এরপর ও যখন কাঙ্খিত ফল পান না তখন কষ্ট পান , মুষড়ে পড়েন৷ তারা তাদের কষ্টের এ অনুভুতি প্রকাশ করেন বিভিন্ন ভাবে –

কেউ রাগ করেন
কেউ চেচামেচি করেন
কেউ অভিযোগ করেন
কেউ Nagging করেন ….
যে কারণে তারা রাগ, চেচামেচি, অভিযোগ বা Nagging করেন তার যৌক্তিকতা আছে৷ বাবা-মা সন্তানের ভালো চান বলেই এগুলো করেন , কিন্তু তারা যে এই রাগ চেচামেচি করছেন, তার ফল কি হচ্ছে ? – অবশ্যই খারাপ৷ অর্থাত- কারণ যুক্তিযুক্ত হলেই আপনার কাজ ভালো ফল আনবে তা নয় ৷ কারণ যুক্তযুক্ত হতে হবে এবং Action positive হতে হবে – তবেই result positive হবে ৷

ভালো কারণ + Positive Action = Positive Result

ভালো কারণ + Negative Action = Negative Result

একটি কেস স্টাডি বলছি –

তাহমিদের বয়স ৭ বছর ৷ সে চঞ্চল প্রকৃতির ছেলে ৷ ফলে চেয়ারে অনেকক্ষণ বসে থেকে নিবিষ্ট মনে পড়তে বা লিখতে পছন্দ করে না ৷ লিখতে বসলে প্রথম দিকে হাতের লেখা ভালই হয় – কিন্তু কিছুদুর গিয়ে আকাবাঁকা হতে শুরু করে ৷ তার মা অনেক চেষ্টা করেছে , অনেক অনেক চেষ্টা -নানা রকম চেষ্টা ৷ এতে কিছুটা কাজ হয় , কিন্তু ততটা না ৷

অথচ পাশের বাসার তাদভীনের হাতের লেখা কত সুন্দর ৷ শান্ত হয়ে বসে সে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখে ফেলছে , তার মাকে তেমন কষ্ট করতে হয় না ৷ ফলে তাহমিদের মা রেগে গিয়ে বলেন-

” তোকে নিয়ে কত চেষ্টা করলাম , কোনো কাজই হয় না “

” তোকে দিয়ে কিছু হবে না “

” এটাই পারিস না , জীবনে কি করবি?”

” এরকম করলে আর কিন্তু ভালবাসবনা “

” দেখ গিয়ে তাদভীন কত ভালো “

” তুই তো কিছুই শিখতে চাস না “

তাহমিদের মা ফোনে তার বোনকে দুঃখ করে বলেন –

” ওকে নিয়ে এত চেষ্টা করি , কিছুতেই কিছু হয় না ..”

তাহমিদের মা এর এ কথা গুলো বলার কারণ কি? – তিনি মনে করছেন এভাবে বললে তাহমিদ শুধরে যাবে৷ কিন্তু আসলে ফল কি হচ্ছে ?

তাহমিদ আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে – আসলেই কি তার মধ্যে কোনো যোগ্যতায় নাই?
সে চেষ্টা করার Motivation হারিয়ে ফেলছে
সে মনে করছে তার মার কাছে সে মূল্যহীন ৷ এ বয়সে তার মা-বাবা আর স্কুলের বন্ধুরাই তার কাছে গোটা বিশ্ব ৷ তার মনে হচ্ছে তার উপর আকাশ ভেঙ্গে পরছে , তার বিশ্বের বড় অংশটাই অন্ধকার হয়ে গেছে ….
সে নিজের অজান্তেই rude ভাবে কথা বলতে শিখছে … ফলে সেও অন্যদেরকে এভাবেই আঘাত করে কথা বলবে …
এ কেস স্টাডি থেকে আমরা কি জানলাম-

আমরা দেখলাম এই কথা গুলো বলার পেছনে আপনার উদ্দেশ্য ছিল তাহমিদের উন্নতি করা , ভালো করা৷ কিন্তু ফল হচ্চ্ছে উল্টো -তার ক্ষতি হচ্ছে ৷

চলবে…

 

শীলা বিয়ের পর থেকে শ্বশুড় বাড়ীতে থাকে


সাহিত্য


শীলা বিয়ের পর থেকে  শ্বশুড়  বাড়ীতে থাকে ৷  শীলার শ্বাশুড়ী জাহানারা বেগম ৷ শীলা বা  জাহানারা বেগম কেউই খারাপ মানুষ না ৷ কিন্তু তাদের সম্পর্ক খুব একটা মধুর না ৷ জাহানারা বেগম গোছানো স্বভাবের ৷ সবকিছু, বিশেষ করে রান্না ঘরের  জিনিস পত্র তার গোছানো থাকা চাই ৷ রান্না ঘরের  প্রত্যেকটি জিনিস যত্ন করে জায়গামত রাখা, সবকিছু ঝকঝকে তকতকে করে রাখার ব্যাপারে তিনি খুবই সচেতন৷ কেউ এগুলো তার মত গুছিয়ে ব্যবহার করতে না পারলে তিনি খুবই বিরক্ত বোধ করেন এবং অভিযোগ করেন৷ অন্যদিকে শীলা স্বভাবে ঠিক উল্টো৷ সে দ্রুত কাজ করে, একেবারেই গোছালো না এবং তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে জিনিসপত্রের খুব একটা যত্ন নিতে পারে না৷ ফলে রান্নাঘর ব্যবহার করে সে প্রায়ই এটাকে এলোমেলো করে রাখে৷ তার এ স্বভাব নিয়ে জাহানারা বেগম প্রায়ই অভিযোগ তোলেন ৷ শীলা চেষ্টা করে কিছুটা গুছিয়ে কাজ করতে৷ কিন্তু সে খুব একটা সফল হয়না ৷তাছাড়া শীলা চাকুরী করে বলে তার পক্ষে রান্না ঘরে খুব বেশী সময় দেয়া সম্ভব না ৷ফলে বউ-শ্বাশুড়ী সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে৷ জাহানারা বেগমের অভিযোগ, “বউ একেবারেই কাজের না ৷ খুবই অগোছালো, এলোমেলো ৷পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না ৷” শীলার অভিযোগ, ” শাশুড়ী সকাল-বিকাল তার পিছনে লেগেই থাকে, সবকিছু নিয়ে খ্যাচ  খ্যাচ  করে, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতেই থাকে৷” এর সঙ্গে পর্যায়ক্রমে যুক্ত হয় শীলার মা ও ননদ৷ শীলার মা দুঃখ করে বলে, ” শ্বাশুড়ী টা আমার মেয়েটাকে শুধু জ্বালায়”৷ ননদ বলে, “শীলা আমার মায়ের বদনাম করে বেড়ায়৷”  এ  ঘটনায় আমরা যা দেখতে পাই তাহলো,  শীলা ও জাহানারা বেগম দু’জনের কারো চাওয়াই  (expectation) অযৌক্তিক না এবং দু’জনের অভিযোগই সত্যি৷  শ্বাশুড়ী চাচ্ছেন বউ তার মত গুছিয়ে কাজ করুক৷ অন্যদিকে, বউ চাচ্ছে শ্বাশুড়ী তার বিরুদ্ধে সকাল বিকাল অভিযোগ করা বন্ধ করুক ৷ এক্ষেত্রে দু’জনই ঠিক ৷ তাহলে সমস্যা কোথায় ? সমাধানই বা কি? সমস্যাটা হলো দু’জনের দু’জনকে বোঝায়৷ জাহানারা বেগম ও শীলা দু’জন ভিন্ন প্রকৃতির মানুষ৷ তাদের Personality type ভিন্ন ৷ তারা একজন আরেকজনের মত হতে পারবে না ৷ জাহানারা বেগম যদি মনে করেন শীলাকে তার মত হতে হবে তবে তিনি ভুল করছেন৷ মানুষ তার Personality type পুরোপুরি বদলাতে পারে না ৷ তাই জাহানারা বেগমকে শীলার অগোছালো স্বভাবকে মেনে নিতে হবে এবং এ নিয়ে অভিযোগ করা বন্ধ করতে হবে ৷ অভিযোগ বন্ধ করে শীলাকে ধীরে ধীরে কাজের পদ্ধতি দেখিয়ে দিলে long term এ শীলার এ যোগ্যতা কিছুটা বাড়বে (skill development)৷ কিন্তু অভিযোগ (বা nag) সম্পর্কের অবনতি ছাড়া আর কিছুই ঘটাবে না ৷ একই সাথে শীলাকেও স্বীকার করতে হবে তার শ্বাশুড়ীর একটি ভালো গুন বা (Skill) আছে৷ যতটা সম্ভব এ গুনটির অনুকরণ করা তার নিজের জন্যই ভালো ৷ সবথেকে  গুরুত্বপূর্ণ হলো তাদের দু’জনকেই বুঝতে হবে অন্যজন ‘খারাপ মানুষ’ না, সে তার থেকে ‘ভিন্ন প্রকৃতির’ মানুষ৷ আল্লাহ তা’আলাই মানুষকে ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির করে সৃষ্টি করেছেন৷ এর পরও যদি দু’জন দু’জনের এই ভিন্নতা মেনে নিতে না পারে তবে আলাদা থাকাই তাদের জন্য ভালো৷ একসাথে থেকে পরস্পর সম্পর্কে বিরক্ত হওয়ার থেকে ভিন্ন থেকে পারস্পরিক সম্মান বজায় রাখা কল্যানকর ৷

 

মুরগির হালিম


মুরগির হালিম


উপকরণ :
১. মুরগি ১ কেজি,
২. গম আধা কাপ,
৩. মুগ ডাল সিকি কাপ,
৪. মসুর ডাল সিকি কাপ,
৫. ছোলার ডাল সিকি কাপ,
৬. মাষকলাইয়ের ডাল সিকি কাপ,
৭. অড়হড় ডাল সিকি কাপ,
৮. পোলাওয়ের চাল আধা কাপ,
৯. লবণ স্বাদমতো,
১০. এলাচি, দারুচিনি, তেজপাতা কয়েকটা, পেঁয়াজ কুচি সিকি কাপ, আদা বাটা ২ ১১. টেবিল চামচ,
১২. রসুন কুচি ১ টেবিল চামচ,
১৩. হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ,
১৪. মরিচ গুঁড়া ১ চা-চামচ,
১৫. জিরা গুঁড়া ১ চা-চামচ,
১৬. ধনিয়া গুঁড়া আধা চা-চামচ,
১৭. গোলমরিচ গুঁড়া আধা চা-চামচ,
১৮. জায়ফল-জয়ত্রী গুঁড়া আধা চা-চামচ।

প্রণালি :
> গম, মাষকলাই ডাল ও মুগ ডাল টেলে নিন। চাল, ডাল ও গম সেদ্ধ করে বেটে নিন। তেলে পেঁয়াজ বাদামি করে ভেজে সব মসলা ও মুরগি দিয়ে কষান। সামান্য পানি দিয়ে ঢেকে দিন। সেদ্ধ হলে বাটা ডালের মিশ্রণ ও পরিমাণমতো পানি দিয়ে নাড়ুন। হয়ে গেলে নামিয়ে বাটিতে ঢেলে, আদা কুচি, ধনিয়া পাতা, মরিচ, বেরেস্তা ও লেবুর রস দিয়ে পরিবেশন করুন।

রেসিপি : জেবুন্নেসা বেগম, বাংলাদেশি রেসিপি।

 

অদ্ভুত একটা শান্তি

অদ্ভুত একটা শান্তি


আফরোজা হাসান


কথা প্রসঙ্গে এক বোনকে আনন্দ আর প্রশান্তির মধ্যের বিস্তর ফারাকের এর ব্যাপারে বলার পর বোনটি উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে বলার অনুরোধ করেছিল। একটা উদাহরণ দিয়ে বোনটিকে মোটামুটি বোঝালেও নিজে ঠিক তৃপ্তি পাচ্ছিলাম না। ঠিক মনের মতো করে বোঝাতে পারিনি আসলে। এরপর থেকেই খচখচ করছিল বিষয়টা। খচেখচে মন নিয়েই পুত্রকে স্কুল থেকে আনতে গেলাম। যদি কোনদিন খানিকটা আগে চলে যাই স্কুলের সামনের পার্কে বসে অপেক্ষা করি। কিছুটা দূরে বসে ছুটির পর স্কুলের গেট দিয়ে ছুটোছুটো করে বেরিয়ে আসা বাচ্চাদের দেখতে ভীষণ ভালো লাগে। কেউ বাবার কোলে চড়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়, কেউ মায়ের হাত ধরে। কেউ কেউ আবার দাদা বা দাদীর সাথে লাফাতে লাফাতে পথ চলে।

এককথায় বর্ণিল আনন্দের ছড়াছড়ি লেগে যায় স্কুল ছুটির সময় চারপাশের পরিবেশে। ভীষণ উপভোগ করি আনন্দ রঙের এই বিচ্ছুরণ। তবে এই আনন্দময় ক্ষণেও উন্মুখ হয়ে তাকিয়ে থাকি সেই দিকে যেদিক থেকে পুত্র বের হবে। একটা ব্যাপার সবসময়ই নোটিশ করেছি অন্যান্য বাচ্চাদের দেখে আমার মনে যে আনন্দানুভূতি খেলা করতে থাকে গেটে আমার পুত্রকে ছায়া দেখা মাত্রই সেটা বদলে যায়। অদ্ভুত একরকমের শান্তি আর স্বস্থি বোধ ঘিরে ধরে মনকে। ছুটে এসে যখন সালাম দিতে দিতে কাছে এসে দাঁড়ায়, ওকে জড়িয়ে দরার পর শরীর মনের সমস্ত ক্লান্তি কোথাও যেন উবে যায়। অদ্ভুত রকমের একটা শান্তি ভাব জাপটে ধরে মনকে। আজও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলো পুত্রকে আনতে যাবার সময়। এবং একই সাথে আরেকটা উপলব্ধি জাগলো। আনন্দ ও প্রশান্তির সংজ্ঞাটা নতুন করে উন্মোচিত হলো আমার সম্মুখে।

আনন্দ উপভোগের আর প্রশান্তি শুধুই অনুভবের। আনন্দ মনকে উদ্বেলিত করে, উৎফুল্ল করে। কিন্তু ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত, তৃষিত প্রাণ শীতল পানির ধারায় আস্বাদিত হবার উপলব্ধির নাম প্রশান্তি। প্রশান্তিকর মূহুর্তে জীবনের সবটুকুন পূর্ণতার ছোঁয়া নিহিত…..

— আফরোজা হাসান

বইমেলা সমাচার

বইমেলা সমাচার


জান্নাতুন নুর দিশা


ঘটনা ১:

গতকাল শনিবার দুপুরে বাংলার প্রকাশনের ৩৩৭-৩৩৮ নং স্টলে গিয়ে বসে আছি। দুপুরে মেলা খানিকটা ঝিমায়, বিকেলে জমে। সেই দুপুরেই একটা মেয়ে স্টলে এসে বই নাড়াচাড়া করছেন, বিক্রয়কর্মীকে জিজ্ঞেস করলেন আপনাদের নতুন বইগুলো দেখান। বিক্রয়কর্মী কয়েকটা বই এগিয়ে দিলেন। মেয়েটি বইয়ের ফ্ল্যাপ খুলে পড়লেন। অনিকেত এর ফ্ল্যাপ পড়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে কী যেন ভাবলেন! তারপর বিক্রয়কর্মীকে বললেন, “আপনারা কত ভালো বই করেছেন। এই এসব বইয়ের অত প্রচার হয় না কেন। বইটা পছন্দ হয়েছে, নিতে চাই।”
মেয়েটা অনিকেত কিনে নেয়ার পর বিক্রয়কর্মী বললেন, “লেখক উপস্থিত আছেন কিন্তু স্টলে।”
ক্রেতা সচকিত হয়ে জানতে চাইলেন, “কই তিনি? আমি পরিচিত হতে চাই।”

পরে আমার সাথে এসে কথা বললেন তিনি। মেয়েটির চোখের দিকে তাকালাম, চোখে সমীহ, উৎসাহ আর ভালোবাসার ভাষা। জানালেন আমাকে চেনেন না। ফেসবুকে অত এক্টিভ না তিনি। মেলায় ঘুরে ঘুরে বইয়ের ফ্ল্যাপ, ভূমিকা পড়ে যাচাই করে বই কেনার অভ্যাস এবং অনিকেতের ফ্ল্যাপ, ভূমিকা পড়েই তিনি আগ্রহবোধ করছেন। বই পড়ার পর এই ভালোলাগার রেশ থেকে গেলে তিনি আগামীমেলায় এসে আমার বই খুঁজে বের করবেন। একটা অটোগ্রাফ দিতে বললেন। আমি লিখে দিলাম, “আপনার কথা আমার মনে থাকবে। ভালোবাসা।”

এখনো এমন দেখেশুনে যাচাই করে বই কেনা পাঠক আছেন এবং আমার বই এমন পাঠকদের স্পর্শ করে ভাবতেই এত ভালো লাগছিল!

ঘটনা ২:

গতকাল মেলার শেষ দিকে। আমি বেশ ক্লান্ত। ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছি। বেরিয়ে যাবো এমন সময় দুজন কিশোর এলো। মাদ্রাসার ছাত্র হবে সম্ভবত, বয়স চৌদ্দ/পনেরো হবে, পরনে জুব্বা, চেহারায় ভীষণ সারল্য। হাতে একগাদা বইয়ের প্যাকেট। দুজনেত হাতে দুটো অনিকেত এবং একটা অভিমান জংশন। সম্ভবত দুজন ভাই৷ বইগুলো অটোগ্রাফের জন্য আমার দিকে এগিয়ে দিলো। আমি কিছুক্ষণ ওদের মুগ্ধ হয়ে দেখলাম৷ ওদের চোখে লেখকের জন্য সরল ভালোবাসা। অটোগ্রাফ দিলাম, জিজ্ঞেস করলাম আমায় কিভাবে চেনে। বললো ফেসবুকে আমার লেখা পড়ে ওদের খুব ভালো লাগে। বই পড়া ওদের শখ। আমি মেলায় আসব জেনে দেখা করতে এসেছে। কেন যেন আমার লেখকসত্তার প্রতি এই দুই কিশোরের ভালোবাসা মাখা চাহনি আমার হৃদয়ে দাগ কেটে গেছে।

ঘটনা ৩:

শুক্রবারে বিকেলে সরলরেখা প্রকাশনার ৬১৮ নং স্টল থেকে কল দিয়ে বললো একটা মেয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। যেন স্টলের সামনে একটু যাই কষ্ট করে। গেলাম। মিষ্টি চেহারার এক তরুণী হাতে অভিমান জংশন নিয়ে দাঁড়িয়ে। বললো আমার ফলোয়ার ফেসবুকে। আমার কবিতা পড়লেই তার কান্না পায়। মনে হয় যেন তার না বলতে পারা কান্নাগুলো, কথাগুলোই নাকি আমি বলে দেই কবিতায়। আমি মেয়েটার চোখের দিকে দিকে তাকালাম। কী ভীষণ মমতার চোখে আমায় দেখছেন! যেন আমি তার দর্পন প্রতিবিম্ব! আমি কবিতায় এভাবেই পাঠকের হৃদয়ের প্রতিবিম্ব হতে চেয়েছি সবসময়।

মেলায় আমার সাথে দেখা করতে আসা সকলের চোখের দিকে আমি তাকিয়েছি বারবার। মানুষের চোখে নিজের জন্য ভালোবাসা দেখার মতো তীব্র আনন্দ আর কিছুতে নেই। আরো অনেক অনেক ভালো লাগার ভালোবাসার অনুভূতি চোখে আর বুকে ধারণ করে ফিরে এসেছি। আরো লিখের যাবার জন্য এসব ভালোবাসা আমার রসদ। ধন্যবাদ সবাইকে।

 

রাজধানীতে মা ও দুই শিশুর লাশ উদ্ধার


নারী সংবাদ


রাজধানীর দক্ষিণখানে নিজ বাসা থেকে শুক্রবার এক মা ও তার দুই শিশু সন্তানের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। দক্ষিণখান থানা পুলিশ বিকালে প্রেমবাগান এলাকা থেকে লাশ তিনটি উদ্ধার করে।

দক্ষিণখান থানার এসআই মনসুর আলী জানান, ওই এলাকার কেসি স্কুলের পাশের একটি বাড়ি থেকে লাশগুলো উদ্ধার করা হয়। কীভাবে তাদের মৃত্যু হয়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। পুলিশ এখনও তাদের নাম প্রকাশ করেনি।
সূত্র : ইউএনবি।

 

বর্তমানে সহজে ঋণ পাচ্ছেন নারী উদ্যোক্তারা

বর্তমানে সহজে ঋণ পাচ্ছেন নারী উদ্যোক্তারা


নারী সংবাদ


বর্তমান সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে পুরুষদের পাশাপাশি সমানতালে এগিয়ে চলছে নারীরা। সব ক্ষেত্রেই এখন নারীরা পুরুষের সমান অধিকার ভোগ করছে। এমনকি ব্যবসা-বাণিজ্যেও পুরুষের সমানতালে এগিয়ে চলছে নারী।
ব্যবসা ক্ষেত্রে মূলধন বা ঋণের ক্ষেত্রে এখন অনেক বেশি সুযোগ পাচ্ছেন নারী উদ্যোক্তারা। মাত্র এক দশক আগেও নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য ছিল। তবে, কালের পরিক্রমায় এবং সময়ের প্রয়োজনে সেই বাধা অনেকটাই দূর হয়েছে।
দেশের ব্যাংকিং খাত বর্তমানে নারীদের অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। এখন ব্যাংকের প্রতিটি শাখায় নারী উদ্যোক্তাদের জন্য রয়েছে আলাদা সেবা ডেস্ক। কেবল সেবা ডেস্কই নয়। ব্যাংক ঋণ পেতেও বিশেষ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন নারী উদ্যক্তারা। অন্য যেকোন ঋণের চেয়ে নারী উদ্যোক্তাদের নথিপত্র কম লাগছে। তাদের জন্য রয়েছে ৯ শতাংশ হারে সুদে পুনঃঅর্থায়ন ঋণ পাওয়ার সুযোগ।
তবে, এর বাইরে ঋণ পেতে অনেক নারী উদ্যোক্তাকে এখনো সুদের হার বেশি গুণতে হচ্ছে, এমনকি কখনো কখনো ১৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদ গুণতে হচ্ছে বলে উদ্যোক্তা ও ব্যাংকগুলো থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে।
সরকার ঘোষিত জাতীয় শিল্পনীতি ২০১৭ তে বলা হয়েছে, এসএমই খাতে ঋণের কমপক্ষে ১৫ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা রয়েছে, পুনঃঅর্থায়ন ঋণের কমপক্ষে ১০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাদের দিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে এসএমই খাতে ঋণ বিতরণ হয়েছে ৭৯ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে নারী উদ্যোক্তারা পেয়েছেন ৩ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ ঋণের ৪ শতাংশ গেছে নারীদের কাছে। আলোচ্য সময়ে সব মিলিয়ে ৪ লাখ ২ হাজার উদ্যোক্তা ঋণ পেয়েছেন। এর মধ্যে নারী উদ্যোক্তা ছিলেন ২৯ হাজার ৫৮৭ জন।
নারী উদ্যোক্তাদের কেউ কেউ অবশ্য বলেছেন, ঋণের জন্য ব্যাংকগুলো সাদরে আমন্ত্রণ জানালেও ঋণ সেভাবে দিচ্ছে না। এর কারণ হিসেবে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার শর্ত চাইছে ব্যাংকগুলো। পাশাপাশি, প্রতিষ্ঠিত জামিনদার, স্থায়ী ব্যবসাসহ নানা নথিপত্রও চাইছে ব্যাংক। তবে, বেসরকারি একটি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, ব্যাংকগুলো এখন ঋণ দেয়ার জন্য নারী উদ্যোক্তাদের খুঁজছে। সমস্যা হলো এসএমই খাতে যেসব উদ্যোক্তা আছেন তার ২ শতাংশ নারী। ফলে, সবাই ঋণ পেলেও এসএমই খাতে ঋণের নারীদের অংশগ্রহণ খুব বেশি বাড়ছে না।
ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে , বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের আওতায় নারী উদ্যোক্তারা ঋণ নিলে তাতে সুদের হার ধরা হচ্ছে ৯ শতাংশ। এর বাইরে যারা পুরনো গ্রাহক, তারা ১০ থেকে ১৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাচ্ছেন। তবে, নতুন ও অনিরাপদ গ্রাহকদের জন্য সুদ হার ১৮ শতাংশ পর্যন্ত।
ব্যাংকগুলো এসএমই ঋণের পণ্যভেদে নানা ঋণসেবা নিয়ে এসেছে। আবার নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বৈচিত্র্যপূর্ণ ঋণ পণ্যসেবাও রয়েছে। বাংলাদেশের সব ব্যাংকই নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ ঋণ পণ্য রয়েছে। এসব ঋণে সুদ হার ১১ থেকে ১৩ শতাংশ। যেসব গ্রাহক পুরনো বা ভাল তারা কিছুটা কম সুদে ঋণ পাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারী উদ্যোক্তাদের ঋণদানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে ব্র্যাক, ইস্টার্ন ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংক। এছাড়া ব্যাংক এশিয়া, সিটি, আইএফআইসি, যমুনা, ডাচ বাংলা, মার্কেন্টাইল, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, প্রাইম এবং পূবালীসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংকের নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে বিশেষ পণ্য রয়েছে। বিদেশী ব্যাংকগুলোর মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, এইচএসবিসি এবং সিটি ব্যাংক এ খাতে ঋণ দিতে বিশেষ জোর দিয়েছে। আবার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো থেকে নারী উদ্যোক্তারা ঋণ পাচ্ছেন। যে কারণে, নারী উদ্যোক্তারা এখন কেবল এসএমই খাতে সীমাবদ্ধ নেই। তাদের ব্যবসা ছড়িয়ে পড়ছে বড় ও ভারী শিল্পেও।
মার্কেন্টাইল ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে প্রতিষ্ঠা পাওয়া হেনা আক্তার বলেন, ‘বর্তমান সরকারের বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগের কারণে নারী উদ্যক্তাদের ব্যাংক ঋণ পাওয়া এখন অনেক সহজ হয়েছে। এখন দরকার পণ্য বাজারজাত ও ব্যবসা উন্নয়নের বিষয়ে নারী উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া।’
নারী উদ্যোক্তাদের আবেদন বেশিরভাগ সময়ই পূর্ণাঙ্গ থাকে না উল্লেখ করে বিশিষ্ট ব্যাংকার সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ব্যাংক সবসময় যোগ্য ব্যক্তিদের ঋণ দিতে চেষ্টা করে। কারণ, ব্যাংক যে টাকা দেবে, তাতো জনগণের টাকা। ব্যাংক চায় এই অর্থ যথাযথভাবে কাজে লাগুক এবং তা যথাসময়ে আবার তা ফেরত আসুক। ব্যাংক এই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে চায়।
তিনি বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সরকার এখন অনেক বেশি উদ্যোগী, যেটা ভবিষ্যতে অনেক বেশি কাজে দেবে। সুত্রঃ বাসস

 

মোরগ পোলাও রান্না করি


ঘরকন্যা


যা লাগবেঃ

আতব চাল – ৩ গ্লাস
মোরগের মাংস – দেড় কেজি
মুশারীর ডাল -১ কাপ
পেয়াঁজ কুচি – ১- ১/২ কাপ
পেয়াঁজ বাটা – ২ টেবিল চামচ
আদা বাটা – ২ চা চামচ
রসুন বাটা – ১ টেবিল চামচ
গরম মসলা গুঁড়া/বাটা – ১ চা চামচ
তেজপাতা – ২ টা
টক দই – ২ টেবিল চামচ
আলু বোখারা – ২ টা
[দারুচিনিএলাচলবঙ্গজায়ফলজয়ত্রী] একত্রে বাটা – ১ চা চামচ
লবণ – পরিমাণমতো
ঘি – ২ টেবিল চামচ
সয়াবিন তেল – আধা কাপ
চিনি – ১ চা চামচ
গোলমরিচ গুঁড়া – আধা চা চামচ
কাঁচামরিচ – ২/৩ টা
পেয়াঁজ বেরেস্তা – ১ কাপ
জিরা বাটা – ১ চা চামচ
হলুদ গুঁড়া – চা চামচের ৩ ভাগের ১ ভাগ
মরিচ – আধা চা চামচ
ধনে গুঁড়া – ১ চা চামচ
পানি – ৫ কাপ

কিভাবে রান্না করবেনঃ

মোরগের চামড়া ছাড়িয়ে হাঁড় সহ কয়েক টুকরা করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। পানি ঝরে গেলে এতে পেয়াঁজ বাটাআদা বাটারসুন বাটাচিনিদারুচিনি-এলাচ-লবঙ্গ-জায়ফল-জয়ত্রী একত্রে বাটাগোলমরিচ গুঁড়ালবণজিরা বাটাহলুদ গুঁড়ামরিচ গুঁড়াধনে গুঁড়াআলু বোখারাটক দই দিয়ে ভাল করে মেখে ৩০ মিনিট ফ্রিজে রাখতে হবে।

আতব চাল এবং মশুরডাল ধুয়ে পানি ঝরিয়ে রাখতে হবে। চাল আর মশুরডাল একত্রে মিশিয়ে ফেলুন।
ঘি তেল একসঙ্গে চুলায় দিয়ে একটু গরম হলে তাতে পেয়াঁজ কুচি দিয়ে নাড়ুনবাদামী হয়ে পেয়াঁজ ভেরেস্তা হবে। পেয়াঁজের ভেরেস্তা টুকু আলাদা তুলে রাখুন। ঐ তেলে গরম মসলা ও তেজপাতার ফোড়ন দিয়ে মাখানো মাংস দিয়ে কষাতে হবে।

মাংস সিদ্ধ হয়ে পানি শুকিয়ে গেলে মাংসের টুকরা তুলে রাখতে হবে। ঐ হাড়িতেই পোলাওর চাল আর মশুরডাল দিয়ে ভালো করে কষাতে হবেতারপর তাতে ৪ কাপ পানিলবণ দিয়ে ঢেকে দিন। চুলার আঁচ কমিয়ে দিন। চাল ফুটে উঠলে মাঝে মাঝে নেড়ে দিয়ে মাঝারী আঁচে ঢেকে রাখুন। পোলাওর পানি শুকিয়ে এলে কিছুটা পোলাও উঠিয়ে রান্না করা মোরগের মাংসের টুকরাগুলো পাতিলের বাকী পোলাওর মধ্যে দিয়ে তার সাথে কাঁচামরিচ সহ বাকী পোলাও দিয়ে মৃদু আঁচে কিছুক্ষণ দমে রাখুন। ১০ মিনিট পর হালকাভাবে নেড়ে দিয়ে আবার দমে রাখুন। আরো ৫ মিনিট পর নামিয়ে ফেলুন। 

পরিবেশনঃ

পরিবেশনের সময় ভেরেস্তা পোলাওর উপরে ছড়িয়ে সালাদ এবং আচার সহ পরিবেশন করুন ।

 

বই “স্বপ্ন দেখি সুন্দর পৃথিবীর”

বই “স্বপ্ন দেখি সুন্দর পৃথিবীর”


আফরোজা হাসান


কল্পনা করুন এমন একটা পৃথিবীর, যেখানে কোন হানাহানি নাই, হিংসা বিদ্বেষ নাই, নাই কোন পারিবারিক অশান্তি। না আছে কোন মানবিক দৈন্যতা, না আছে অন্যের ক্ষতি করে নিজেকে সফলতার চূড়ায় নেয়ার নেশা। এমন পৃথিবী যেখানে কোন যুদ্ধ নাই, উদবাস্তু নাই, যেখানে সবার মাথার ওপর ছাদ আর পেট ভরে খাওয়ার মত অন্ন রয়েছে। যেখানে ক্ষমতার লড়াই নেই বরং সবার কাঁধে হাত রেখে এক সাথে এগিয়ে যাওয়াই জীবনের লক্ষ্য।

আচ্ছা এমন যদি হত, সবাই আল্লাহ্‌র ইবাদত করছে, শরীয়তের বিধান মেনে চলছে। নিজের চাইতে অন্যের কল্যাণের কথা বেশি চিন্তা করছে। যেই পৃথিবীতে মানুষ, পশুপাখি, গাছপালা সবাই স্বাধীন, সবাই সবার অধিকার পাচ্ছে। যেখানে কেউ কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে না, যেখানে সবাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেখানো পথে চলছে। আহ! অসম্ভব সুন্দর কল্পনা, যা কিনা বাস্তব হওয়াও অসম্ভব।

কিন্তু কিছু মানুষ তবুও স্বপ্ন দেখে, কিছু মানুষ স্বপ্নের জাল বোনে, কিছু মানুষ স্বপ্ন পূরণে আপ্রাণ চেষ্টা করে। সেই মানুষেরা স্বপ্ন দেখে সুন্দর পৃথিবীর। সেই মানুষেরা সব প্রতিকূলতা আর বাধাকে শরীয়তের আলোকে সমাধান করে এগিয়ে চলে সম্মুখ পানে। কিছু মানুষ স্বপ্নালু মানুষের চোখে স্বপ্নগুলোকে আরো গভীর করে দিয়ে তাদের সাথে করে নিয়ে সুন্দর পৃথিবী গড়ার জন্য অভিযাত্রা করে। কিছু মানুষ সুন্দর পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে, মহান রবের সন্তুষ্টির জন্য কাজ করে যায়। একটি সুন্দর পৃথিবী…. এক ঝাঁক চোখের স্বপ্ন… একদল অভিযাত্রী যাত্রা করে সুন্দর পৃথিবী গড়তে নিজেকে দক্ষ কারিগর হিসেবে গড়ে তুলতে।
………..

আমাদের সবার প্রিয় লেখিকা আফরোজা হাসানের দ্বিতীয় বই “স্বপ্ন দেখি সুন্দর পৃথিবীর” বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে। বইঘর পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে বইটি, আলহামদুলিল্লাহ। জীবনে আসা বিভিন্ন সমস্যা এবং শরীয়তের আলোকে এর সমাধান, বাস্তব জীবনের নানান চড়াই উতরাই পেরিয়ে কিভাবে সুন্দর পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে কিছু মানুষ এগিয়ে চলে তাই বলা হয়েছে এই গল্পে।
…….

বইটি যেখানে পাওয়া যাবে… স্টল নং : ৪০৬ বইমেলা প্রাঙ্গন
ও দেশের সকল বইয়ের দোকানে…
এ ছাড়া আপনি যদি ঘরে বসে সবচেয়ে কম সময়ে কম মূল্যে পেতে চান তবে ফোন ‎করুন…‎
Rokomari.com

Mob : 16297, 01519521971
KitabGhor.com

Mob : 01721999112‎
www.boighorbd.com

 

সুহাসিনী ভোর

সুহাসিনী ভোর


আফরোজা হাসান


ভালো লাগে ভীষণ নৈঃশব্দ্যতার ক্ষণ
যেমন খুশি তোলা যায় শব্দের গুঞ্জন

এড়িয়ে যেতে চাই না অন্ধকারাচ্ছন্ন প্রহর
দিয়া জ্বেলে তারে করতে সুহাসিনী ভোর

কন্টকাকীর্ণ পথে চলতে অবিচল
মনে আছে বিশ্বাস, দৃঢ় মনোবল

মাটির আলিঙ্গনে হাসে বর্ণিল ঘাসফুল
বেদনা নদীর ওপাড়ে হাতছানি দেয় কূল…

 

‘মৃগীরোগ’

‘মৃগীরোগ’


ডা. মারুফ রায়হান খান


আজ ইন্টারন্যাশনাল এপিলেপ্সি ডে। এপিলেপ্সি আমাদের দেশে মৃগীরোগ নামে পরিচিত।

সারা পৃথিবী জুড়েই সবেচেয়ে বেশি যে স্নায়ুরোগটি দেখা যায় তা হচ্ছে এপিলেপ্সি বা মৃগীরোগ। পৃথিবীতে প্রায় ৫০ মিলিয়ন এপিলেপ্সির রোগী আছে, যার মধ্যে ৪০ মিলিয়ন রোগীই আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে।

এপিলেপ্সি কী?

খুব সহজ ভাষায় বোঝাতে গেলে, বারবার খিঁচুনি হবার প্রবণতা যেখানে কোনো ধরনের প্ররোচনা থাকে না–তাকেই এপিলেপ্সি বলে।

এটি সাধারণত ২০ বছরের আগে কিংবা ৬০ বছর বয়সের পর শুরু হয়।

কী কী কারণকে দায়ী করা হয় এ রোগের পেছনে?

১. অনেকক্ষেত্রেই কোনো কারণ জানা যায় না।

২. শিশু মায়ের গর্ভে থাকার সময় কিছু জীবাণু দিয়ে যদি আক্রান্ত হয়ে থাকে, যেমন : TORCH, HIV।

৩. জন্মগতভাবে মস্তিষ্কের গঠনে যদি ত্রুটি থাকে।

৪. হাইপোক্সিক ইশকেমিক এনকেফালোপ্যাথি (সাধারণত নবজাতক জন্মের পর দেরি করে কাঁদলে এ সমস্যা হয়ে থাকে)।

৫. মস্তিষ্ক বা মস্তিষ্কের আবরণে কোনো ইনফেকশান, যেমন : মেনিনজাইটিস।

৬. মস্তিষ্কে কোনো আঘাত।

৭. মস্তিষ্কে কোনো টিউমার।

৮. কিছু ক্রোমোজোমাল ডিজঅর্ডার ইত্যাদি।

কী কী বিষয় মৃগীরোগের এ খিঁচুনিকে ত্বরান্বিত করতে পারে?

১. কম ঘুম হওয়া

২. যারা মৃগীরোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা যদি ওষুধ না খান

৩. মদ্যপান (বিশেষ করে মদ্যপান ছাড়ার সময়)

৪. শারীরিক এবং মানসিক অবসাদ

৫. ঝিকিমিকি আলোর সংস্পর্শে যেমন : টেলিভিশন এবং কম্পিউটার স্ক্রিন

৬. উচ্চ শব্দ, মিউজিক, পড়া, গরম পানিতে গোসল ইত্যাদিও অনেকের ক্ষেত্রে খিঁচুনির উদ্রেক করতে পারে।

কী কী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়?

১. ইলেক্ট্রোএনকেফালোগ্রাম : এটি অনেকটা ইসিজি পরীক্ষার মতো, তবে এটি মস্তিষ্কের। কখনও কখনও এটা দিয়ে এপিলেপ্সি রোগ নির্ণয় করা যায়। তবে যদি এ পরীক্ষা নরমাল আসে তার মানে এই না যে তার এপিলেপ্সি থাকার সম্ভাবনা নেই।

২. কিছু কিছু ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের এম.আর.আই করতে হতে পারে।

কীভাবে চিকিৎসা করা হয়?

মৃগী রোগের নির্দিষ্ট ও উপযুক্ত ওষুধ দেওয়া হয়, যা এন্টিএপিলেপ্টিক ড্রাগ নামে পরিচিত।

কতোদিন ওষুধ খেয়ে যেতে হবে?

যদি রোগী খিঁচুনি-বিহীন কমপক্ষে দুই বছর পার করে, মৃগীরোগের ওষুধ ধীরে ধীরে পরবর্তী ৬-১২ সপ্তাহের মধ্যে বন্ধ করা যায়।

জীবনযাত্রায় কী কী পরিবর্তন আনতে হয়?

১. উজ্জ্বল এবং ঝলকানো আলো পরিহার করতে হবে। যেমন : টিভি, ভিডিও গেইমস।

২. আগুন থেকে দূরে থাকতে হবে।

৩. পানিতে ঝাঁপ দেওয়া বা সাঁতার কাটা থেকে বিরত থাকা উচিত।

৪. গাছে চড়া থেকে বিরত থাকা উচিত।

এ রোগের ভবিষ্যত কেমন?

১. ৭০% রোগীর ক্ষেত্রেই খিঁচুনি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

২. ৫-১০% রোগীর ক্ষেত্রে খিঁচুনি বারবার হতে পারে এবং অনিয়ন্ত্রিত থাকতে পারে। ৩. ৩০% রোগীর ক্ষেত্রে রোগের শুরু থেকেই “চিকিৎসা করা/নিয়ন্ত্রণ করা” বেশ কঠিন বলে বিবেচিত হয়

 

বিবেক


ফাতিমা মারিয়াম


দশম বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে লিমা রফিকের কাছ থেকে দশ ভরি স্বর্ণালঙ্কার উপহার পেয়েছে। বেশ খুশি লিমা। আত্মীয় স্বজন যেখানে যা আছে সবাইকে ফোন করে তার এই আনন্দের কথা জানাচ্ছে। ঘনিষ্ঠ আত্মীয় বা বান্ধবীদের বাসায় গিয়ে দেখিয়ে এসেছে।

এবার বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে কোন অনুষ্ঠান করেনি। তাই এত কষ্ট করে মানুষের কাছে গিয়ে আনন্দ প্রকাশ করা লাগছে। এত আনন্দের মাঝেও মনে মনে রফিকের প্রতি এই ব্যাপারে কিছুটা রাগ রয়ে গেছে। হাঁদারামটা যদি এবার একটা অনুষ্ঠান করতে রাজি হত তবে আর জনে জনে গিয়ে আনন্দের খবরটা প্রচার করা লাগত না। এখন আর কী করা? এই মধুর কষ্টটুকু ভোগ করতেই হচ্ছে।

বউ খুশী; তাই রফিকও ভীষণ আনন্দিত! কিছু নগদ টাকা পকেট থেকে চলে গিয়েছে বটে! তবে এটা পুষিয়ে নিতে তার বেশি সময় লাগবে না। একজন অসৎ কর্মকর্তার কাছে এই কয়টা টাকা কিছুই না।

সকাল দশটার দিকে অফিসের কাজে ব্যস্ত রফিক। গ্রাম থেকে ছোটবোন শরিফা ফোন করে বলল যে তার স্বামী এক্সিডেন্ট করেছে। চিকিৎসা খরচের জন্য কিছু টাকা প্রয়োজন। রফিক সাফ বলে দিয়েছে,’এখন আমার হাতে টাকা নেই, কিছু দিতে পারব না।’

আবার অফিসের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল রফিক।

 

“শিকড়ের সন্ধানে – হামিদা মুবাশ্বিরা “

“শিকড়ের সন্ধানে – হামিদা মুবাশ্বিরা “


ফাইজা তাব্বাসুম


বুক রিভিউ –
সত্যিকার অর্থে এই বইয়ের নামের মাধ্যমেই এর উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে গেছে। যে কোনো বৃক্ষের জন্য যেমন শিকড় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ তেমনি প্রতিটি মুসলিমের জন্যও তার আত্মপরিচয় , অস্তিত্বের ধারাবাহিক ক্রম জানাটা খুব জরুরি। শিকড়ের যত্ন না নিলে যেমন বৃক্ষের সবুজ পাতারা রঙ হারিয়ে ঝরে পড়ে, ডাল-পালা রুক্ষ,শীর্ণ হয়ে যায় , একসময় চরম মূল্যবান বৃক্ষও তার উপযোগিতা হারিয়ে ফেলে তেমনি আমরা জন্মসূত্রে মুসলিমরাও যেন নিজেদের জীবনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য সম্পর্কে উদাসীন হয়ে এক ভুলের সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছি প্রতিনিয়ত। আমাদের চিন্তাভাবনার যে অসুখগুলো প্যারাসিটামলেই সেরে যাওয়ার কথা ছিল তা যেন সঠিক চিকিৎসার অভাবে ক্যান্সার পর্যন্ত পৌঁছে আমাদের অস্তিত্বকেই সংকটাপন্ন করে তুলছে।
অথচ, মহান আল্লাহ তো তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ নবীর উম্মতদের সঠিক পথে চলার জন্য গাইডলাইন হিসেবে কুরআনকে কিয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রেখেছেন। পূর্ববর্তী নবী-রাসূলদের জীবন, তাদের সম্প্রদায়ের বিভিন্ন ঘটনা বর্ণনা করে তা থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করতে বলেছেন। তাহলে আমাদের এই দিকভ্রান্ত অবস্থা? কেন আমাদের রিচুয়ালসগুলো সব করাপ্টেড? ভাবনাগুলো সব শেইপড? বিশ্বাসের নামে অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কারের সাথে কেন আমাদের নিত্য চলাফেরা?
এর অন্যতম কারণ বোধহয় এটা যে, আরবী ভাষায় নাজিলকৃত কুরআনের বক্তব্য আমাদের মতো বাংলা ভাষাভাষীদের মর্মমূলে গিয়ে পৌঁছতে পারেনি। ছোটোবেলায় মায়ের মুখে,বাবার মুখে,কখনো হুজুরদের মুখে, কখনো ইসলাম শিক্ষা বইয়ের পাতায় আমরা গল্পাকারে নবী ও রাসূলগনের যেসব ঘটনা শুনে এসেছি, সেগুলো আমাদের কাছে মিথোলজির মতো একটা কৃত্তিম ভাব সৃষ্টি করেই পালিয়েছে, হৃদয়ের গভীরে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারেনি।
হামিদা মুবাশ্বেরাও বোধহয় একই ধরনের উপলব্ধি থেকে নানামুখী ব্যস্ততার মাঝেও নিজস্ব আত্মপরিচয় অন্বেষণের তাগিদে মুসলিম হিসেবে তাঁর শিকড়ের সন্ধান করতে বেড়িয়েছিলেন। আত্মানুসন্ধানের এই পথে ঠিক যে জায়গাগুলোতে তিনি নিজে আটকে গিয়েছিলেন, সেই জায়গাগুলোতে যেন অন্য কেউ হোঁচট খেয়ে না পড়ে , বাঁধা পেয়ে পথ চলার উৎসাহটা হারিয়ে না ফেলে তাই তিনি তার অর্জিত অভিজ্ঞতাগুলোকে লিপিবদ্ধ করেছেন ‘শিকড়ের সন্ধানে’ বইতে।
জীবনের যেই বাঁকে এসে আমরা ভাবতে শুরু করি “what’s my destiny?” যেখানে দাঁড়িয়ে অন্যের দেয়া মিথ্যে প্রবোধগুলোকে অর্থহীন মনে হয়, সেই ভঙ্গুর সময়ে যেন ভুলের চোরাবালিতে ডুবে যেতে না হয়, নিজের না পাওয়াগুলো- ব্যর্থতাগুলো যেন আমাদের উপর রাজত্ব গড়ে নিতে না পারে সেজন্য মুসলিম হিসেবে নিজের শেকড়ের উপলব্ধি হতে পারে আমাদের অর্থবহভাবে বেঁচে থাকার প্রধান রসদ। আর ‘শিকড়ের সন্ধানে’ বইটি আমাদের সেই কাজকে সহজ করে দিবে ইনশাআল্লাহ। বইটি পড়তে পড়তে নিজেদের মনের মধ্যে যুদ্ধ-বিবাদে লিপ্ত অনেক প্রশ্নের জবাব পাওয়া যাবে বলে আমার বিশ্বাস।
কুরআনে বর্ণিত প্রতিটি ঘটনার ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সাজানো হয়েছে বলে এই বই মুসলমানদের উত্থান পতনের ক্রম বুঝতে সহায়ক হবে। আজকের বাস্তবতার নিরিখেও কুরআনে বর্ণিত কাহিনীগুলো কতটা প্রাসঙ্গিক তা পাঠকরা উপলব্ধি করতে পারবে। যে কোনো সময়ের, যে কোনো বয়সের মানুষের জন্য প্রাসঙ্গিক এবং সুখপাঠ্য একটি বই ‘শিকড়ের সন্ধানে।’

 

‘রাজুমার’


ইন্টারন্যাশনাল উইমেন্স


টেকনাফে এসে নিজের  স্বামীর সাথে দেখা হলেও ভাই-বোন ও মায়ের সন্ধান পাননি। নিজের সন্তানের খোঁজ মেলেনি। রাজুমার মতো এ রকম হাজারো মানুষের নিদারুণ কষ্টের বিভীষিকার কথা লিখলে সমাপ্তি টানা যাবে না। আল-জাজিরা ইংলিশ নিউজ নেটওয়ার্ক সাম্প্রতিক একজন বোনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, রোহিঙ্গা মুসলিম বোন রাজুমার জীবন থেকে নেওয়া। ২০ বছর বয়সি রাজুমা বেগম অল্প বয়সে অসংখ্য বাস্তবতার সম্মুখিন হয়েছেন। গত বছর ৩০শে আগস্ট তুলা টোলির গণহত্যা থেকে বেঁচে ফিরেছেন। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সহিংসতার সবচেয়ে নৃশংস ঘটনার স্বীকার এই বোন পালিয়ে বাঁচেন। গ্রামবাসীদের সাথে নদীর তীরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাকেও যেখানে পুরুষরা মহিলা ও শিশুদের থেকে পৃথক করা হয়। অনেককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল, তাকে কুপিয়ে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। রাজুমা তখন তার ছেলে মোহাম্মদ সাদ্দিককে নিজের হাতেই ধরে রেখেছিলেন। এরপর কিছু সৈন্য মহিলাদের দলে  দলে ভাগ করে নিয়ে গিয়েছিল জোর করে। রাজুমা কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের একটি বিদ্যালয়ে বক্তব্য রাখেন, তিনি তখন বলেছিলেন, “তারা আমাকে বাড়ির ভিতরে আরও চার মহিলার সাথে নিয়ে যায়।” “তারা আমার ছেলেকে আমার বাহু থেকে ছিটকে ফেলে দেয় [মাটিতে], আমি দেখেছি তার মধ্যে একজন বার্মিজ সৈন্য আমার শিশু পুত্রকে আগুনের দিকে ছুঁড়ে মারে, আমি শুনতে পেলাম যে সে জ্বলন্ত অবস্থায় চিৎকার করছে” “মা বাঁচাও” তিনি  আরও বলেছিলেন, আমার মাথায় সবসময় ঘুরতে থাকে সন্তানের কবর দেওয়ার আগপর্যন্ত একসূরে হাত দিয়ে ডাকা আর বিলাপের কান্না। “কেউ ‘মা’ বলে ডাক শুনলেই আমার বুকটা ফেটে যায়,” রাজুমা চিত্কার করে বলেন। “আমার একটি ছোট ভাই ছিল যার বয়স ১০ বছর। আমার তার কথা কথা ভাবলে খারাপ লাগে ,কারণ তারা তাকে ধরেছিল এবং আমি তাকে বাঁচাতে পারিনি”” রাজুমাকে তিনটি মা, এক কিশোরী মেয়ে এবং এক মহিলার সাথে যার বয়স প্রায় ৫০ বছর তাদের একটি ঘরে রাখা হয়েছিল। প্রবীণ মহিলা বাদে সৈন্যরা তাদের সবাইকে ধর্ষণ করেছিল। রাজুমাকে তার দু-তিন  ঘণ্টা ধরে দু’জন লোক অত্যাচার করেন। এরপরে, তারা মহিলাদের কাঠের লাঠি দিয়ে মারধর করতে।  তারপরে তারা মারা গেছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য তাদের উপর তিনবার মশাল জ্বালান। সৈন্যরা তাদের বাড়ির ভিতরে আটকে রেখে আগুন ধরিয়ে দেন। জলন্ত আগুনের তাপে রাজুমাকে পুনরায়  জ্ঞান ফিরে আসে করে, সে বাঁশের দেয়াল ভেঙে পালাতে সক্ষম হয়েছিলেন বলে বেঁচে যান। তিনি একদিন পাহাড়ে লুকিয়ে ছিলেন এবং ওপার থেকে বেরিয়ে আসার সময় তাঁর গ্রামের আরও তিন মহিলা ও এক অনাথের মুখোমুখি হন। রোহিঙ্গা প্রদেশ থেকে পালিয়ে পরিত্যাক্ত পোশাক পরেছিলেন। তিনি যখন সীমান্ত পেরিয়েছিলেন, তখন বাংলাদেশ সরকার তাকে কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে পৌঁছাতে সহায়তা করেন। যেখানে একটি ক্লিনিকে তাঁর চিকিত্সা দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশে মায়ানমারের সৈন্যরা গণধর্ষণ ও তার শিশু পুত্র হত্যার সাক্ষী।রাজুমা কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে পুনরায় তার স্বামীকে খুঁজে পান।

 

খুলনায় স্কুলছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে যুবক গ্রেফতার


নারী সংবাদ


খুলনার রূপসা উপজেলার শ্রীফলতলায় স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে শুক্রবার সকালে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত ইমদাদুল মল্লিক (২৪) উপজেলার শ্রীফলতলা ইউনিয়নের ইদ্রিস মল্লিকের ছেলে।

রূপসা থানার ওসি মোল্লা জাকির হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার ভুক্তভোগীর বাবা পালের হাট পুলিশ ফাঁড়িতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইমদাদুলের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।

অভিযোগে বলা হয়, বুধবার রাতে বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়ার সময় স্থানীয় বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীকে ইমদাদুল পার্শ্ববর্তী স্থানে নিয়ে ধর্ষণ করে। পুলিশ ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য মেয়েটিকে স্থানীয় হাসপাতালে প্রেরণ করেছে।

সূত্র : ইউএনবি।

 

শর্মার রেসিপি


শর্মার রেসিপি


শর্মার রুটি 

উপকরণ 
১. ময়দা সাড়ে ৩ কাপ,
২. গুঁড়াদুধ ১/৪ কাপ,
৩. বেকিং পাউডার ১ টেবিল-চামচ,
৪. ইস্ট ১ টেবিল চামচ,
৫. তেল ১/৪ কাপ,
৬. মাখন ৩ টেবিল-চামচ,
৭. লবণ আধা টেবিল-চামচ,
৮. চিনি ১/৪ কাপ,
৯. হালকা গরম পানি দেড় কাপ।

প্রণালি 
> ময়দার সঙ্গে বাকি উপকরণ (পানি বাদে) সব মিশিয়ে ফেলুন। এখন একটু একটু করে পানি দিয়ে মথে নিন৷ খামিরটা নরম হবে না আবার অনেক শক্তও হবে না৷ সাধারণ রুটির খামিরের মতো হবে এবং ১৫ থেকে ২০ মিনিট খুব ভালো করে মথতে হবে৷

> চাইলে বিটার দিয়ে ১৫ মিনিট বিট করে নিতে পারেন৷ খামির যত বেশি মন্থন করা হবে তত বেশি নরম হবে এবং রুটি ফুলবে৷ এখন পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে দুই ঘণ্টা৷

> চাইলে আরও বেশিক্ষন রাখতে পারেন৷ অথবা ৩০ মিনিট রেখেও রুটি বানাতে পারেন৷ কিন্তু একটু বেশি সময় রাখলে খেতে সুস্বাদু হয় বেশি৷

> দুই ঘণ্টা পর নিজেদের পছন্দ মতো বড় শর্মার রুটি বা ছোট ছোট প্যান কেক আকারে রুটি বানিয়ে নিন। এরপর মাঝারি আঁচে তাওয়ায় রুটিগুলো সেঁকে নিন৷

> বানানো শর্মার রুটি ফ্রিজে না রেখেও চারদিন খাওয়া যায়। তবে অব্যশই ঢাকনাসহ বক্সে রাখতে হবে৷

বিফ বা চিকেন শর্মা

উপকরণ 

শর্মার পুরের জন্য 
১. গরু বা মুরগির হাড় ছাড়া মাংস ৭৫০ গ্রাম,
২. আদাবাটা ১ টেবিল-চামচ,
৩. রসুনবাটা ১ টেবিল-চামচ,
৪. বিরিয়ানির মসলা ১ টেবিল চামচ,
৫. টক/মিষ্টি দই ৬ টেবিল-চামচ,
৬. তেঁতুলের কাথ ১ টেবিল-চামচ,
৭. ভাজা জিরাগুঁড়া ১ টেবিল-চামচ,
৮. ভাজা ধনেগুঁড়া ১ টেবিল-চামচ,
৯. টমেটো সস ২ টেবিল-চামচ,
১০. লবণ স্বাদ মতো,
১১. তেল রান্নার জন্য৷

পুর তৈরির প্রণালি 
> মাংস পাতলা টুকরা করে নিন এবং তেল বাদ রেখে বাকি সব উপকরণ মাংসের সঙ্গে মেখে মেরিনেইট করে রাখুন এক ঘণ্টা৷ অথবা শর্মা বানানোর আগের দিন মেখে নরমাল ফ্রিজ রেখে দিন সারারাত। তাহলে আরও সুস্বাদু হবে৷

> কড়াইতে অল্প তেলে মেরিনেইট করা মাংস ভেজে নিন৷ পানি দিতে হবে না৷

শর্মা সস

গালির্ক সস
উপকরণ 
১. ১/৪ কাপ মেয়োনেইজ,
২. ১/৪ কাপ ক্রিম,
৩. গোলমরিচের গুঁড়া আধা টেবিল-চামচ,
৪. রসুনকুচি আধা টেবিল-চামচ।

প্রণালি 
> সব উপকরণ একসঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে সস বানিয়ে রেখে দিন ফ্রিজে৷

ধনিয়াপাতার সস 
উপকরণ 
১. ধনিয়াপাতা ২ কাপ কুচি করা,
২. চিনা বাদাম আধা কাপ,
৩. রসুন কোয়া ২টি,
৪. কাঁচামরিচ ৪,৫টি,
৫. লেবুর রস ৫,৬ টেবিল-চামচ,
৬. লবণ স্বাদ মতো।

প্রণালি 
> সব একসঙ্গে ব্লেন্ড করে সস তৈরি করুন৷ ব্লেন্ড করার সময় একদম পানি দিতে হবে না। পানির বদলে লাগলে আরও লেবুর রস দিন৷

* আরও লাগবে হানি মাসটার্ড সস ও টমেটো সস।

শর্মার সালাদ 
উপকরণ 
১. শসা কুচি আধা কাপ,
২. টমেটো ২টি, কুচি করা,
৩. ক্যাপসিকাম ১টি, কুচি করা,
৪. অলিভ ১টি (ইচ্ছা) কুচি করে কাটা,
৫. শসার আচার (বাজারে পওয়া যায়),
৬. লেটুস পাতা,
৭. পেঁয়াজকুচি।

প্রনালি 
> সবগুলো একসঙ্গে মাখিয়ে নিন

শর্মা তৈরির প্রণালি 
> শর্মার রুটি মাঝখানে প্রথমে গার্লিক সস, ধনেপাতার সস মেখে দিন। এবার রান্না করা মাংস রুটির আকার অনুযায়ী পরিমাণ মতো মাংস দিন এবং উপরে নিজের পছন্দ মতো সালাদ দিন।

> সব শেষে উপরে হানি মাস্টার্ড সস, গার্লিক সস ও টমেটো সস দিন।

> এবার শর্মার রুটি আস্তে আস্তে হাত দিয়ে চেপে চেপে রোল করে পরিবেশন করুন। চাইলে টুথপিক দিয়ে আটকে দিতে পারেন।

রেসিপি : আনিসা হোসেন
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

 

একুশে পদক পাচ্ছেন অধ্যাপক ডা. সায়েবা আখতার


নারী সংবাদ


চিকিৎসায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ চলতি বছর (২০২০) একুশে পদক পাচ্ছেন অধ্যাপক ডা. সায়েবা আখতার। এছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য একুশে পদক পাচ্ছেন দেশের ১৯ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠান।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রাষ্ট্রীয় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদকপ্রাপ্তদের এ তালিকা প্রকাশ করে।

আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের হাতে একুশে পদক তুলে দেবেন।

এক নজরে অধ্যাপক ডা. সায়েবা আক্তার

অধ্যাপক ড. সায়েবা আক্তারের জন্ম চট্টগ্রামে। তবে পিতা টাঙ্গাইলের করটিয়া সাদত কলেজের শিক্ষক হওয়ার সুবাদে ওই ক্যাম্পাসেই বেড়ে ওঠা।

তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করার পর সেখানেই কর্মজীবনের শুরু করেন।

স্বামী ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবিরও পেশায় একজন ডাক্তার। তিনি একজন কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজ অ্যান্ড ইউরোলজির সাবেক পরিচালক।

তিন মেয়ে এক ছেলের মধ্যে বড় মেয়েটিও ডাক্তার।

স্বাস্থ্যে তাঁর অবদান

অবসর গ্রহণের পর রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে ‘মামস ইনস্টিটিউট অব ফিস্টুলা অ্যান্ড ওমেনস হেলথ’ গড়ে তোলেন তিনি। এটি মূলত বিশ শয্যার দাতব্য হাসপাতাল।

নারী শিক্ষায়ও ভূমিকা রাখছেন ড. আক্তার, এজন্য স্বল্প আয়ের পরিবারের মেয়েদের কর্মমুখী শিক্ষা দেবার জন্য ঢাকা ও গাইবান্ধায় দুটি প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন তিনি।

একুশে পদক পেলেন যারা-

ভাষা আন্দোলনে মরণোত্তর মরহুম আমিনুল ইসলাম বাদশা।

শিল্পকলায় (সংগীত) বেগম ডালিয়া নওশিন, শঙ্কর রায় ও মিতা হক।

শিল্পকলায় (নৃত্য) মো. গোলাম মোস্তফা খান।

শিল্পকলায় (অভিনয়) এম এম মহসীন।

শিল্পকলায় (চারুকলা) অধ্যাপক শিল্পী ড. ফরিদা জামান।

মুক্তিযুদ্ধে (মরণোত্তর) মরহুম হাজি আক্তার সরদার, মরহুম আব্দুল জব্বার, মরহুম ডা. আ আ ম মেসবাহুল হক (বাচ্চু ডাক্তার)।

সাংবাদিকতায় জাফর ওয়াজেদ (আলী ওয়াজেদ জাফর)।

গবেষণায় ড. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ কারী আল্লামা সৈয়দ মোহাম্মদ ছাইফুর রহমান নিজামী শাহ।

শিক্ষায় অধ্যাপক ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়ুয়া।

অর্থনীতিতে অধ্যাপক ড. শামসুল আলম।

সমাজসেবায় সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

ভাষা ও সাহিত্যে ড. নুরুন নবী, মরহুম সিকদার আমিনুল হক (মরণোত্তর) ও বেগম নাজমুন নেসা পিয়ারি।

প্রতিষ্ঠান

গবেষণায় বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট।

 

ভণ্ডামি 

ভণ্ডামি


ফাতিমা মারিয়াম


এক
রশিদ যতই চেষ্টা করছে সংসারের অভাব কাটাতে পারছে না। দিনদিন সংসারের নানান চাহিদা বেড়েই চলেছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সে। কতটুকুই বা সামাল দিতে পারে? আয় যা হয় তাতে কোনমতে খেয়ে পরে চলে। বাচ্চাদের স্কুল কোচিং এসব খরচ তার জন্য বিলাসিতা।

রশিদ গ্রামে থাকে। স্থানীয় বাজারে তার একটি মুদি দোকান আছে। দোকান ছোট…পুঁজিও কম। ফলে আয় কম। তাছাড়াও বেচা বিক্রিও সামান্য হয়। কারণ বাজারে বেশ কয়েকটা দোকান আছে। তাদের পুঁজি রশিদের চাইতে বেশি হওয়ায় তাদের দোকানেই খরিদ্দার বেশি।

দোকানের আয় বাড়ানোর জন্য রশিদের বউ মিনু পরামর্শ দেয় সমিতি থেকে ঋণ তুলে দোকানে মাল উঠাতে। সমিতি থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়ে রশিদ দোকানে মাল ওঠায়। বেচা বাড়ে……আয়ও বাড়ে।

হঠাৎ বেশি টাকা হাতে আসায় সে বেহিসাবি হয়ে যায়। তার চরিত্রের কিছুটা দোষ আগেও ছিল। এখন আরো বেড়ে গেছে। মিনুর হাতেও বেশ টাকা দেয়। আর সেও খরচ করতে থাকে। সমিতির কিস্তি নিয়মিত পরিশোধ করেনা। সমিতি তাকে নোটিশ দেয়…আগের টাকাসহ বাকী টাকা শোধ করতে।

মিনু নিরুপায় হয়ে বাবার বাড়ির এলাকার এক এনজিও থেকে টাকা নিয়ে সমিতির টাকা শোধ করে। এনজিওর প্রথম কয়েক কিস্তি নিয়মিত শোধ করে।কিছুদিন পর থেকে এনজিওর টাকা শোধেও দুজনে টাল বাহানা শুরু করে। এক কিস্তি দেয় তো দুই কিস্তি দেয় না। তারা বার বার সতর্ক করতে থাকে।

দুই…

এদিকে দোকানের পুঁজিও অনেক কমে গেছে। আরো কিছু মানুষ রশিদর কাছে টাকা পায়। এদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে টাকা ধার করেছিল। মোটকথা এখন সে ঋণের দায়ে জর্জরিত। দিনরাত মিনুর খোঁটা শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা। মিনু এখন আর অভাব সহ্য করতে পারেনা। আর কতইবা সহ্য করবে? এটা রশিদ বোঝে। আর বোঝে বলেই সে মিনুকে কিছুই বলে না। খালি দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

মিনু এবার তাকে পরামর্শ দেয় বিদেশ যাওয়ার। এলাকার কত মানুষই তো বিদেশ গিয়ে অনেক টাকা ইনকাম করেছে। এখন তাদের বেশ ভালো অবস্থা। অনেক চিন্তা ভাবনা করে আত্মীয়দের কাছে থেকে ঋণ করে, বউয়ের গয়না বিক্রি করে, গরু বিক্রি করে রশিদ প্রবাসের পথে পাড়ি জমায়।

মাথায় এত ঋণের চাপে রশিদর দিশাহারা অবস্থা। প্রবাসে গিয়েও ভালো কোন কাজ পায় নি। যা বেতন পায় তাতে নিজের এবং পরিবারের মোটামুটি চলে…… মিনু সংসার খরচের পরে খুব সামান্যই জমাতে পারে। অল্প অল্প করে ঋণ শোধ করছে।

প্রায় তিন বছর হয়ে গেছে এখনো রশিদ বাড়ি আসতে পারে নি। মিনুর কাছে ফোন করলেও শান্তি নাই। এটা সেটা কথা শোনায়। অমুক বিদেশ গেল তমুক বিদেশ গেল…তারা কত টাকা পাঠায় আর তুমি………

তিন…

রশিদ অনেকক্ষণ ধরে মিনুর নাম্বারে ফোন দিচ্ছে। কিন্তু ওকে পাচ্ছে না। লাইন বিজি দেখায়। প্রায় এক ঘণ্টা পর সে বউকে ফ্রি পেল।

-কী ব্যাপার? তুমি কার সাথে কথা কইতাছিলা? আমি অনেক সময় ধইরা তোমার লাইন বিজি দেখলাম।

-আমি? আমি তো এতক্ষণ ছোডমামার লগে কথা কইতাছিলাম!

রশিদ মিনুর সাথে কথা শেষ করে মিনুর ছোট মামাকে ফোন দিল।

-মামা মিনু কি আইজগা ফোনে আফনের লগে কতা কইসে?

-না তো বাবা আমার লগে তো মিনুর অনেকদিন দইরাই কতা অয় না।

রশিদ এবার মিনুর মাকে ফোন দিয়ে এই ঘটনা জানাল। আরো জানাল আজ অনেকদিন ধরেই সে ফোন করলে ফোন বিজি পায়। জানতে চাইলে মিনু সব সময় একেক জনের নাম বলে পার পায়। তার এতে বেশ সন্দেহ হচ্ছিল। তাই সে ছোট মামাকে ফোন করে নিশ্চিন্ত হয়েছে। মিনুর মাও বেশ অবাক হয়ে গেলেন। মেয়ে এতক্ষণ কার সাথে কথা বলে? রশিদ আরো বলে যে – মিনু প্রায়ই খুব সাজগোজ কইরা কই জানি যায়। গ্রামের দুই তিনজন আমারে এইটা জানাইছে। আপনি এর একটা বিহিত করেন।

মিনুর মা মিনুকে জিজ্ঞাসা করায় সে অস্বীকার করে বলল -সব মিছা কতা মা। পয়সা কামাইয়ের মুরোদ নাই আবার আমারে সন্দেহ করে! ও নিজে যেমন আমারেও তেমন মনে করে? তোমার মনে নাই পাঁচ বছর আগে তার চাচাতো বাইয়ের বউয়ের লগে কি কাহিনিডাই না করল! তার আরো অনেক গটনা আছে আমি অনেকগুলাই জানি। সবতো আর তোমগোরে কই না। খালি আমি দেইখ্যা হের লগে সংসার করি আর অন্য কোন মেয়ে হইলে বহুত আগেই চইল্যা যাইত। তুমি এইসব কতা বিশ্বাস করবা না মা। সে অহনো অনেক মাইয়ার লগে সম্পর্ক রাখছে। ফোনে কতা কয়।

রশিদ ভাবছে মিনুকে এই ঘটনা নিয়ে কোণঠাসা করে রাখবে।

তাসলিমার নাম্বারে ফোন দিয়ে রশিদ অপেক্ষায় আছে কখন তাসলিমা রিসিভ করবে!

রশিদ এবং মিনুর ছেলে মেয়ে দুইটা বড় হচ্ছে। তাদের এই অপরিণামদর্শী আচরণের জন্য সন্তানরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা কেউই ভাবছে না।

 

সুস্থ সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর যত্ন


ডা. মারুফ রায়হান খান


সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশু! এই সারা ধরায় এরচেয়ে সৌন্দর্যময় আর আকর্ষণীয় বুঝি আর কিছু নেই। নবজাতকের প্রতি আমরা সবাই খুব বেশি যত্নবান হতে চাই, কিন্তু আমরা ঠিকঠাক জানি তো কী কী বিষয় এক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য রাখা উচিত? কোনো বাড়াবাড়ি বা ছাড়াছাড়ি হয়ে যাচ্ছে না তো? কয়েকটা কথা আমাদের একেবারে সবারই মনে রাখা উচিত। আর সদ্য/ হবু মা-বাবা হলে তো কথাই নেই!

সুস্থ নবজাতক বলতে আমরা কী বুঝি আসলে?

– মায়ের পেট থেকে যদি ৩৭-৪২ সপ্তাহের মধ্যে ভূমিষ্ঠ হয়, এর আগে বা পরে না।
-জন্মের সময় ওজন যদি ২.৫-৪ কেজি হয়।
– জন্মের পরপরই যদি স্বাভাবিক কান্নাকাটি করে এবং শ্বাসপ্রশ্বাস নেয়। স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাসের হার প্রতি মিনিটে ৩০-৬০ বার।
– কান্না করার সাথে সাথে বাচ্চার রঙ গোলাপী বর্ণ ধারণ করবে।
– বাচ্চার শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকবে।
– কোনো জন্মগত ত্রুটি থাকবে না।

বাচ্চার খাওয়া-দাওয়া

জন্ম হবার আধাঘণ্টার মধ্যেই বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করতে হবে। বাচ্চাকে প্রথম ৬ মাস শুধুমাত্রই বুকের দুধ খাওয়ান। এটা আল্লাহ প্রদত্ত এক আশ্চর্যরকমের বিশেয় নিয়ামাত। বাচ্চাকে এই নিয়ামাত থেকে বঞ্চিত করবেন না। আপনার বাচ্চাকে নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ালে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া আর কান পাকা রোগ থেকে রক্ষা পাবে। বাচ্চা হবে অনেক অনেক বেশি বুদ্ধিমান।

বুকের দুধ কতোবার খাওয়াতে হবে 

বাচ্চাকে আসলে ডিমান্ড ফিডিং করাতে হয়। অর্থাৎ বাচ্চা কাঁদলেই খাওয়াতে হবে। রাতের বেলাতেও খাওয়াতে হবে। নিদেনপক্ষে বাচ্চাকে ৮ বার বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।

নবজাতকের প্রস্রাব -পায়খানা

মায়েদের এবং সেই সাথে বাচ্চার নানী-দাদীদের খুব কমন অভিযোগ বাচ্চা দুধ পায় না। যদি দেখা যায় যে বাচ্চা ২৪ ঘণ্টায় ৬ বার প্রস্রাব করে, তাহলে ধরে নিতে হবে সে পর্যাপ্ত খাচ্ছে। আর যেসব বাচ্চারা বুকের দুধ খাচ্ছে, তারা দিনে ১০-১৫ বার পায়খানা করতে পারে, এতে ভয়ের কিছু নেই।

বাচ্চার ডায়াপার 

একবার প্রস্রাব/পায়খানা করা মাত্রই ডায়াপার বদলে ফেলতে হবে। আমাদের দেশের মায়েরা দেখা যায় ওজন করতে থাকেন যে কখন ডায়াপারটা ভারী হয়। দেখা যাচ্ছে বাচ্চা দীর্ঘ সময় পায়খানা/প্রস্রাবের মধ্যেই আছে, যা খুব অস্বস্তিকর বাচ্চার জন্যে।

নবজাতকের গোসল 

গোসলটা ২-৩ দিন পর দিলে সবচেয়ে ভালো হয়। জন্মের সাথে সাথে গোসল করালে নিউমোনিয়া হবার সম্ভাবনা থাকে। ২-৩ দিন পর থেকে প্রতিদিনই গোসল করাতে হয়। খুব অল্প সময়ের মধ্যে হালকা গরম পানিতে বাচ্চাকে গোসল করিয়ে ফেলতে হবে। প্রথমে মাথাটা ধুতে হয়, তারপর মাথা মুছে ফেলতে হয়। তারপর শরীরে পানি দিয়ে গোসল সম্পন্ন করতে হয়। পানিতে কোনো জীবাণুনাশক মেশানোর দরকার নেই।

ঋতুভেদে বিশেষ খেয়াল 

শীতকালে একটু বেশি কাপড়চোপড় দিয়ে বাচ্চাকে ঢেকে রাখতে হবে। মাথায় ক্যাপ, হাতে-পায়ে মোজা পরাতে হবে। বাচ্চা যেন ঠাণ্ডা না হয়, এটা খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি বাচ্চা যেন ঘেমে না যায় সেটাও লক্ষ্য রাখতে হবে।

দুটো অনুরোধ 

দাদী-নানীদের উদ্দেশ্যে একটা কথা! বাচ্চা একটু কান্নাকাটি করলেই মা-কে ফিডার/কৌটার দুধ দেওয়ার জন্যে জোর করবেন না।

সিনিয়রদের প্রতি অনুরোধ! বাচ্চা বুকের দুধ খেলে বারবার পায়খানা করতেই পারে। এ কারণে বুকের দুধ বন্ধ করে আপনারা কৌটোর দুধ লিখবেন না কাইন্ডলি।

 

হাফসা

হাফসা


সুমেরা জামান


সময়টা গত বছরের ঠিক মাঝামাঝি। টি স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি জলিল ভাইয়ের জন্য। যিনি আমাকে স্কুল থেকে নিয়ে যাওয়া আসা করেন।
হঠাৎ হাফসার বাবার সাথে দেখা।
তাকে দেখে আমি কুশলাদি বিনিময়ের আগেই জানতে চাইলাম হাফসা স্কুলে আসছে না কেন ভাই?

একগাদা অভিযোগ ঝুরঝুর করে ঝরতে লাগলো তা কন্ঠনালী থেকে।

হাফসা সকালে উঠে কান্না শুরু করে
স্কুলে আসবেনা। পড়াতে বসতেই চায় না। ইত্যাদি ইত্যাদি
অনেক কথার মাঝে একটা ভাল কথা যেটা বলল,
“আমার মেয়ের স্মরণশক্তি ভাল। পড়লে মনে রাখে কিন্তু লিখতে চায় না।”

এমন সময় জলিল ভাই চলে এলো তার অটোরিকশা নিয়ে। শুধু একটু বলে বিদায় নিলাম কাল সকাল ১০ টাতে আপনি আর হাফসার আম্মু আমার সাথে দেখা করবেন স্কুলে। হাফসাকে সাথে আনার দরকার নেই।

যথারীতি সকাল ১০টা।
তারা উপস্থিত আমার অফিসরুমে।
আমি জানতে চাইলাম ,
রহিমা আপা হাফসা কেমন আছে?

আপা সবই ভাল খালি লেখাপড়া করতে চায়না। আমি সারাদিন ওর পেছনে লেগে থাকি। পড়া ছাড়া এ দুনিয়াতে কোনো দাম আছে বলেন? একবার আমি অল্প বয়সে বিয়ে করে লেখাপড়া শেষ করতে পারিনি। এখন বুঝি পড়ার কি মূল্য।
তাই খুব চেষ্টা করি। আমার মেয়ের কি পড়া হবে আপগো !

হতাশা আর আফসোস নিয়ে কথাগুলো এক দমে বলে শেষ করলেন হাফসার আম্মু।

এতো চিন্তিত হবার কিছু নেই।
সবকিছু করবে আপা।
হাফসার বয়স এখন মাত্র ৫ বছর।
বয়স অনুসারে বাচ্চাদের ব্রেনের বিকাশ হয়। ১ থেকে ৫ বছর বয়সের বাচ্চারা তার নিকট পরিবেশ থেকে সবচেয়ে বেশী শিখে। আর সেটা শিখে দেখা আর শোনার মাধ্যমে।
এরপর ওরা নিজের মত করে চিন্তা করে, বলে, এঁকে,লিখে প্রকাশ করে।
গল্প শোনান,ছড়া কিংবা ছড়াগান।

এতো তাড়াতাড়ি লেখালিখি নিয়ে মন খারাপ করবেন না। হাফসা আঁকতে খুব পছন্দ করে। আশা করি লিখতে করবে।
আপনারা যদি আমাকে একটু সহযোগীতা করেন তবে সব হবে আপা।

কি করতে হবে বলেন আপা ?
হাফসার বাবা উদ্বিগ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমার আছে জানতে চায়লো। টাকা পয়সা যত যা লাগে আমরা খরচে রাজী আপা। শুধু মেয়েটাকে যদি পড়াতে পারতাম। আপনি প্রাইভেট পড়াবেন?

আমি হেসে বললাম এসব কিছুর দরকার নেই। আপনার মেয়ে আমার ছাত্রী। শুধু আমাকে একটা কথা দিতে হবে। বাকী সব দ্বায়িত্ব আমার।
আজ থেকে হাফসাকে আর বাসাতে পড়াতে বসাবেন না।

তারা দুজনই ভীষণ অবাক হয়ে দুজন দুজনের দিয়ে তাকিচ্ছে ।

এমন সময় দপ্তরী চা নিয়ে এলো।

আমি বললাম প্লিজ চা শেষ করেন।

 

বাংলাদেশে জরায়ু ক্যান্সার নিয়ে যে সংকোচ


নারী স্বাস্থ্যকথা


বাংলাদেশে নারীরা লজ্জায় তাদের সমস্যার কথা বলতে চান না। আন্তর্জাতিক ক্যান্সার গবেষণা এজেন্সি সাম্প্রতিক এক জরীপে বলছে, বাংলাদেশে বছরে সাড়ে ছয় হাজারের বেশি নারী জরায়ু মুখের ক্যান্সারে মারা যাচ্ছে।

প্রতি বছর নতুন করে ১২ হাজারের মতো নারীর শরীরে এই ক্যান্সার সনাক্ত হচ্ছে। অথচ অন্য ধরনের ক্যান্সারের তুলনায় জরায়ু মুখের ক্যান্সার খুব সহজে নির্ণয় করা যায়।

এমনকি হওয়ার আগেই ধরা যায়। তাছাড়া দেশের সকল সরকারি হাসপাতাল, এমনকি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও এটি নির্ণয়ের প্রাথমিক ধাপটি বিনামূল্যে পাওয়া যায়।

ঢাকার জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউটের হাসপাতালে সারা দেশ থেকে আসা রোগী ও তাদের আত্মীয়দের উপস্থিতিতে দিনভর সরব হয়ে থাকে।

সেখানে গাইনি অংকলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ আফরোজা খানম বিবিসি বাংলাকে বলছেন, জরায়ু মুখের ক্যান্সার নিয়ে হাসপাতালে যেসব নারীরা আসেন তাদের বেশিরভাগেরই বড্ড দেরি হয়ে গেছে।

বাংলাদেশেও কেন মেয়েদের মধ্যে ক্যান্সার বাড়ছে?

ক্যান্সারের ঝুঁকি: ‘অতিরিক্ত ওজন নারীদের জন্য বেশি মারাত্মক’

বাংলাদেশে ক্যান্সার চিকিৎসার ব্যয় নিয়ে দিশেহারা রোগীরা তিনি বলেছেন, জরায়ু মুখের ক্যান্সারের মুল সমস্যা হল এটি শেষ পর্যায়ে গেলেই শুধুমাত্র ব্যথা দেখা দেয়।
এর লক্ষণগুলোকে অনেকেই মাসিকের মেয়েলি সমস্যা বলে ভুল করে থাকেন।

যখন চিকিৎসকের আসে আসেন তখন প্রায়শই অনেক দেরি হয়ে যায়।
তিনি বলছেন, “ব্যাথা একদমই থাকে না। এর ব্যথা থাকে কখন যখন শেষ পর্যায়ে চলে যায়, যখন রোগটা অনেক দূর ছড়িয়ে যায়। হাড়ের মধ্যে চলে যায়। এই পর্যায়ে গিয়ে ব্যথা হয়। প্রাথমিক ভাবে কোন ব্যাথা থাকে না দেখেই কিন্তু আমাদের দেশের মহিলারা আসে না।”

“প্রিভেনশন তো বোঝেই না, যখন হয়, হওয়ার পরেও তারা অপেক্ষা করে। দেখা যায় দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব যাচ্ছে কিন্তু লজ্জায় সে কাউকে বলছে না। স্বামীর সাথে মেলামেশায় রক্ত যাচ্ছে সেটিও সে বলছে না। যখন আসে তখন অনেকে দেরি হয়ে যায়।”

অথচ এতদূর পর্যন্ত এটি গড়ানোরই কথা নয়। কারণ অন্য ধরনের ক্যান্সারের তুলনায় জরায়ু মুখের ক্যান্সার সবচাইতে সহজে নির্ণয় করা যায়। এমনকি হওয়ার আগেই খুব সহজ পরীক্ষায় ধরা যায় ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা। জীবাণু প্রবেশের পর জরায়ু-মুখের ক্যান্সার হতে ১৫ থেকে ২০ বছরও সময় লাগে। বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির হাসপাতালের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডাঃ জেবুন্নেসা বেগম জরায়ু মুখের ক্যান্সার স্ক্রিনিং সম্পর্কে প্রচারে সহায়তা করেন।
তিনি বলছিলেন, জরায়ু মুখের ক্যান্সার হওয়ার আগেই নির্ণয়ে অনেক সময় পাওয়া যায়।

অল্প বয়সে বিয়ে আর অনেক বাচ্চা হওয়া অন্যতম প্রধান কারণ।
তিনি সেটি সম্পর্কে বিস্তারিত যা বললেন তা হল, “যে দুই প্রকার প্যাপিলোমা ভাইরাস দিয়ে এই ক্যান্সার হয়, সহবাসের মাধ্যমেই সেটি স্প্রেড হয়। ভাইরাসটি ঢোকার সাথে সাথেই ক্যান্সার হয় না। অন্য ক্যান্সারে জীবাণুটি ঢোকার পরে আমরা সময় খুব একটা পাইনা।”

“কিন্তু জরায়ু-মুখের ক্যান্সারে ১৫ থেকে ২০ বছরও সময় লাগে জীবাণু প্রবেশের পর ক্যান্সারটি হতে। তার মানে হল এটি নির্ণয়ে এতটা সময় পাওয়া যায়। নিয়মিত স্ক্রিনিং করালে ইনিশিয়ালি আমরা জার্মটা কমাই দিতে পারি।”

ক্যান্সার শব্দটি শুনলে বেশিরভাগ মানুষের মাথায় সম্ভবত ভীতিকর কিছুর অনুভূতি হয়। কিন্তু এর সাথে যখনি জরায়ু মুখ শব্দটি যুক্ত হয় তখন অনেকেই এ নিয়ে কথা বলায় যেন সংকোচ বোধ করেন।
আর এর সাথে যৌন সম্পর্কের বিষয়টি যুক্ত থাকায় সেনিয়ে কথা বলায় রয়েছে আরও আড়ষ্টতা।
এমনকি চিকিৎসকেরাও তার বাইরে নন।

জরায়ু মুখের ক্যান্সার নির্ণয় পদ্ধতি

অথচ জরায়ু মুখের ক্যান্সার নির্ণয়ের পরীক্ষার প্রাথমিক ধাপটি অত্যন্ত সহজ। সময়ও লাগে মাত্র এক মিনিট বলছিলেন ডাঃ জেবুন্নেসা বেগম। তিনি বলছেন, “এর স্ক্রিনিংটা খুবই সহজ। কোন যন্ত্রপাতি লাগে না। আমরা সবাই ভিনেগার বা সিরকার সম্পর্কে শুনেছি। সেটি ডাইলুট করে তুলায় লাগিয়ে জরায়ুর মুখে লাগিয়ে এক মিনিট রেখে দিলে যায়গাটা যদি সাদা হয়ে যায় তখন মনে করতে হবে এটি ক্যান্সারের পূর্বাভাস।”

“তখন আমরা সেটি কোন পর্যায়ে আছে তা জানতে মাইক্রোস্কোপ দিয়ে বাকি পরীক্ষা করতে পাঠাই। এমনও হয় খুব প্রাথমিক হলে সেখানেই রোগীর জরায়ুতে ইলেকট্রিক সেক দিয়ে দেয়া হয়। সেটাতেও কয়েক মিনিট লাগে,” যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশের সকল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সরকারি জেলা সদর হাসপাতাল, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, এমনকি নির্বাচিত কিছু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে জরায়ু মুখের ক্যান্সার নির্ণয়ের প্রাথমিক ধাপটি বিনামূল্যে পাওয়া যায়।

অর্থাৎ বিবাহিত ও যৌন সংসর্গ আছে এমন নারীরা সিরকা দিয়ে পরীক্ষার সহজ এই ধাপটি করিয়ে নিলেই জেনে যাবেন তার এই ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা। অধ্যাপক ডাঃ এম এ হাই বলছেন নারীদের নিজেদের সম্পর্কে কথা বলতে হবে।
বয়স তিরিশ হওয়ার পর থেকে প্রতি তিন থেকে পাঁচ বছর পর পর একবার এই পরীক্ষাটি করিয়ে নিতে বলেন চিকিৎসকেরা।

যে কারণে বাড়ছে জরায়ু ক্যান্সারের প্রকোপ

এত সহজ ও বিনামূল্যে সেবা থাকা সত্ত্বেও জরায়ু মুখের ক্যান্সার বাংলাদেশে নারীদের মধ্যে দ্বিতীয় প্রধান ক্যান্সার।

এতে বছরে মারা যাচ্ছে সাড়ে ছয় হাজারের বেশি। নতুন করে ১২ হাজারের মতো নারীর শরীরে এই ক্যান্সার সনাক্ত হচ্ছে।

ডাঃ আফরোজা খানম বলছেন, “এর সনাক্তকরণের বিনামূল্যের সেবাটি সম্পর্কে তথ্য নারীরা অনেকেই জানেন না। জানলেও সংসার ফেলে সময় ও আর্থিক সমস্যার কারণে আসতে পারেন না। আবার অনেকেই বলেন আমার ক্যান্সার হয়নাই আমি কেন যাবো। স্ক্রিনিং এর উপকারটি সম্পর্কে তাদের জানাটা খুব জরুরী।”

বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডাঃ এম এ হাই বলছেন এর পেছনে প্রাচীন কাল থেকে চলে আসা একটি সাংস্কৃতিক কারণ রয়েছে।

বাংলাদেশে মেয়েদের খুব অল্প বয়সে বিয়ে আর ঘন ঘন সন্তান জন্মদানকেই বলা হচ্ছে এর প্রধান কারণ।

তিনি বলছেন, “আমাদের কালচারাল বিষয় হল এখানে অল্প বয়সে বিয়ে হয় আর অনেক বাচ্চা হয়। এত অল্প বয়সে সবকিছু ঠিকমতো গঠনই হয়নি। তারমধ্যেই যৌন সঙ্গম আর খুব অল্প বয়সে বাচ্চা নেয়া। এতে জরায়ু মুখের উপর অনেক চাপ পড়ে। “

“যেহেতু তারা অপুষ্টিতে ভোগে তাই তাদের সেরে উঠতে সময় লাগে। তাতে দেখা যাচ্ছে জরায়ু মুখের রিপেয়ারটা ভালোমতো হয়না। এভাবে বারবার বাচ্চা হতে গিয়ে যদি বারবার ড্যামেজ হয় তাহলে ঐখানে একটা অ্যাবনরমাল সেল তৈরি হতে পারে।”

জরায়ু মুখের ক্যান্সারই একমাত্র ক্যান্সার যার টিকা রয়েছে।
তিনি বলছেন, “এর অর্থনৈতিক কারণও আছে। যেমন মেয়েরা যারা খাটাখাটি করে ফ্যামিলিতে হয়ত তাদের ঠিকমত দেখাশোনা করে না। তাদেরকে সময়মত ডাক্তারের কাছে নেয়া হয়না।”

“সে নিজে অর্থের অভাবে যেতে পারে না। আর বাংলাদেশে নারীদের স্বভাবই হল সবাই খাওয়ার পরে কিছু থাকলে খায় না থাকলে খায়না।”

ডাঃ হাই বলছেন সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক কারণের সাথে শিক্ষারও একটি বিষয় রয়েছে। তিনি বলছেন, তারই করা এক গবেষণায় তিনি দেখেছেন বাংলাদেশে যৌনাঙ্গের পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে শিক্ষার মারাত্মক অভাব।

তিনি বলছেন, “আমি আমার এক স্টাডিতে দেখেছি যে বাংলাদেশে গ্রামে ৭৫ শতাংশ নারীর জরায়ু-মুখে ইনফেকশন আছে। এর কারণ হচ্ছে সেক্সুয়াল অর্গানের পরিচ্ছন্নতার অভাব।”

তিনি বলছেন, এই পরিচ্ছন্নতা তাকে নিজেকে যেমন বজায় রাখতে হবে তেমনি তার পুরুষ সঙ্গীকেও সমানভাবে রাখতে হবে।

তিনি বলছেন, নারীরা লজ্জায় কিছু মুখ ফুটে বলে না সেই সংস্কৃতিকে পরিবর্তন করতে হবে। বাড়ির পুরুষ সদস্যদের এ ব্যাপারে তাদের সাথে কথা বলতে পারতে হবে।

তবে ডাঃ আফরোজা খানম হতাশা প্রকাশ করে বলছেন, “দেশে মেয়েরা রূপচর্চার জন্য যে সময় ও অর্থ ব্যয় করে সেটি যদি তারা নিজেদের স্বাস্থ্যের জন্য করতো। চেহারা দেখা যায় তাই আমরা তার পেছনে সময় দিচ্ছি। কিন্তু আমার জরায়ু আমাকে মা হতে সাহায্য করে। এটির গুরুত্ব তাদের বোঝা উচিৎ।”

এর বাইরে যেসব নারীর বহু পুরুষের সাথে যৌন সম্পর্ক, তারা রয়েছেন বেশি ঝুঁকিতে।

অথবা যেসব পুরুষের অনেক যৌন সঙ্গী রয়েছে তারাও নারী সঙ্গীদের বেশি ঝুঁকিতে ফেলছেন।

কিন্তু এই ক্যান্সার সম্পর্কে আরেকটি ভালো বিষয় হল এটিই একমাত্র ক্যান্সার যার টিকা রয়েছে। যা দেয়ার উপযুক্ত সময় হল মেয়েদের যৌন জীবন শুরুর আগে।

 

কি ভাবে মা ডাক্তার হয়ে উঠেন?

কি ভাবে মা ডাক্তার হয়ে উঠেন?


ডা. মারুফ রায়হান খান


একবার গাইনির এক ম্যাডামের সাথে অপারেশান করছিলাম। অপারেশানের মাঝে তার ছোট্ট মেয়েটার ফোন৷ তখন ৩টা কী সাড়ে ৩টা বাজে। ফোন করে বাচ্চাটার কী কান্নাকাটি৷ আম্মু তুমি এখনই চলে এসো, প্লিইইইইজ চলে এসো…ম্যাডামের হঠাত করে চেহারায় কালো মেঘ। ৫টার আগে কোনোভাবেই তার বেরুনো সম্ভব না। খুব কষ্টে বলছিলেন, আসার সময় মেয়েটা টেনে ধরে রাখে; যেতে দেবে না তো দেবেই না। অনেক কষ্টে কাজের লোকের কাছে রেখে আসেন৷ সারাক্ষণ মন উচাটন করে। কিন্তু এতো পপুলার গাইনোকোলজিস্ট, দম ফেলার ফুরসত কোথায়? ফোনেও তো খোঁজ বেশি নেবার সময় পান না।

আমার এক আপুর বাচ্চা খুবই ছোট। তাকে প্রতিদিন সাড়ে ৬টায় বাসা থেকে বের হতে হয়৷ আপু যখন বের হন তখন তার বাবা নাতিকে বারান্দায় নিয়ে যান। আর এই ফাঁকে আপু তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে যান৷ ছেলে দেখলে যে তুমুল কান্নাকাটি শুরু করবে আর যেতে দেবে না৷ মাঝেমাঝে দেখতাম সবসময় হাসিখুশি সেই আপুর মুখ থমথমে। ঐ তো বাচ্চার জ্বর…রেখে এসেছেন।

সামনে পরীক্ষা। পোস্টগ্র‍্যাড এন্ট্রি পরীক্ষা এক অবিশ্বাস্য কঠিন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা। রাত-দিন পড়তে হয়। পড়লেও যে চান্স হবে তার নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না। উনার ছেলেটা তখন সদ্যই হাঁটে, কথা বলে। উনি দরজা বন্ধ করে পড়েন। ছেলে ডাকে–মা মা আর দরজায় নরম হাতের আলতো শব্দ করে। চোখে পানি নিয়েও তিনি দরজা খোলেন না। একবার কোলে উঠলে আর তো নামবে না। পড়াও হবে না। সারাজীবন ভালো ছাত্রীর তকমা পাওয়া মানুষটাকে এই নিষ্ঠুরতাটুকু দেখাতেই হচ্ছে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হতে।

“মেয়েকে কার কাছে রেখে এসেছো এখন?” স্যারের সহানুভূতিমাখা এই প্রশ্ন শোনার সাথে সাথে আপু হাউমাউ করে কেঁদে দিলেন। বললেন কাজের মেয়ের কাছে। হাজব্যান্ড দেশের বাইরে থাকেন। পোস্ট গ্র‍্যাজুয়েশান কোর্সের মধ্যবর্তী একটা বড় পরীক্ষায় মাত্রাতিরিক্ত স্ট্রেসের জন্যে মেয়ের যত্ন না নেয়ার দরুণ তার মেয়েটির ওজন কয়েক কেজি কমে গিয়েছিল। আবার এদিকে সারাক্ষণ মেয়ের যত্ন নিতে গেলে, সময় দিতে গেলে পড়াশোনায় পিছিয়ে যেতে হয় অনেকটা। এ কোন অকূল পাথার! এ কোন নির্মম পরীক্ষা! “তুমি ভীষণভাবে পড়তে চাইছো কিন্তু পড়তে পারছো না এটা অনেক কষ্টের এক অনুভূতি!” কখনও কখনও এই ছোট্ট বাচ্চাটাই দুর্ব্যবহারের শিকার হয় এই মাত্রাতিরিক্ত স্ট্রেসের জন্যে। অথচ এই মা তো তার সন্তানকে কম ভালোবাসেন না। তার সারাটা দিনের চিন্তার কেন্দ্রবিন্দু ঐ ছোট্ট আদুরে নিষ্পাপ সত্ত্বাটিই তো।

এটা তো মাত্র কয়েকটা গল্প। এমন গল্প শত শত। নাহ। তারও অনেক বেশি। এই গল্পগুলো প্রায় সবারই। ঘোর অমাবস্যার দীর্ঘশ্বাসের গল্প। অকল্পনীয় স্যাক্রিফাইসের গল্প।

আপনাকে যে নারী চিকিৎসকটি চিকিৎসা করেন, সে আর ৮/১০ জন মানুষের মতো না। জগতে যদি বিস্ময়কর সত্ত্বা থেকে থাকেন তবে তারা হচ্ছেন এই নারী চিকিৎসকরা। মাথায় হাজারও দায়িত্বের বোঝা আর হৃদয়ে অজস্র কষ্টের আঁকিবুঁকি নিয়েই তারা আপনাকে যতোটা সম্ভব মা/বাবা সম্বোধন করে হাসিমুখে চিকিৎসা দিয়ে যান৷ মনে রেখেন, যে মমতার হাত আপনার কপাল ছোঁয়, সেই মুহূর্তে তার সন্তানের কপাল হাহাকার করে। পরিবারের অন্যরা বঞ্চিত হয়৷ আপনি যদি এই তাকে শ্রদ্ধা না করতে পারেন, আপনি জগতনীতির কাঠগড়ায় অসভ্য প্রাণী বলেই বিবেচিত হবেন সম্ভবত।

 

পিরিয়ড নিয়ে কোন ট্যাবু নেই আমার

পিরিয়ড নিয়ে কোন ট্যাবু নেই আমার


মিম্’মি রহমান


আজ হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে আমি রীতিমত সারপ্রাইজড হয়ে গেছি। সরস্বতী পূজার জন্য স্কুল বন্ধ ছিল আহ্ নাফের। তাই সে বাসায় ছিল। ডিউটির ফাঁকে দু’বার কথা বলেছি তার সাথে। একবার নাস্তা খাচ্ছিল জানালো। আরেকবার নীচে ব্যাডমিন্টন খেলতে যাচ্ছে বলে গেল।

গত রাত থেকে শরীর একটু খারাপ ছিল আমার। প্রতি মাসে শরীরের এই যন্ত্রণা সব মেয়েকেই ভোগ করতে হয়। ডিউটি শেষে ক্লান্ত শরীরে মনে বাসায় ঢুকেই হা হয়ে গেলাম আমি। আমার ছোট্ট রাজপুত্র পুরো বাসার ক্লিনিং করে রেখেছে !!! সে ময়লা বেলচাতে তুলতে পারে না বলে এক জায়গায় জমিয়ে রেখেছে। আর আমি যখন বাসায় ঢুকি তখন সে ডিস ক্লিনিং করছিল কিচেনে। আমি বললাম বাকিটুকু আমি করছি বাবা।তোমাকে আর করতে হবে না। শাওয়ার নিয়ে আস। আমি লান্চ দিচ্ছি টেবিলে।

সে বলল না মা আমি ডিস আর কিচেন ক্লিন করে শাওয়ার নিব। তারপর নামাজ পড়ে খাব। তুমি ফ্রেস হয়ে নাও। আর আজ কিন্তু বিকেলে আমাকে যখন দুধ দিবে তুমিও আমার সাথে এক কাপ খাবে। পিরিয়ডের সময় তো অনেক দুর্বল হয় শরীর। আয়রন লস হয়। কলাও খাবে। তুমি রেষ্ট কর মা।

আমার চোখে লিটারারি পানি চলে আসছিল ঐ মুহুর্তে। চুলে হাত বুলিয়ে বললাম তুই এতকিছু কিভাবে জানলি ?

—বায়োলজিতে হিউম্যান বডি চ্যাপ্টার পড়ে। তারপর গুগল করে বোঝার চেষ্টা করেছি। অনেক পেইনফুল এই পিরিয়ড। মা হবার জন্য কত কষ্ট করতে হয় তাই না মা ? তারপর টুক করে একটা “থ্যাঙ্কু মা” বলে ডিস ক্লিন করতে থাকলো আমার পোটলা গম্ভীর শান্ত বাচ্চাটা।

লুকিয়ে ছবি তুলেছি তার।

পিরিয়ড নিয়ে কোন ট্যাবু নেই আমার। এটা একটা স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন। আমার ছেলে যখন ক্লাশ থ্রিতে পড়ত তখন টিভিতে বিজ্ঞাপন দেখে জানতে চেয়েছিল প্যাড কি ? তখন ওকে ওর বয়সের উপযুক্ত শব্দ দিয়ে গল্প আকারে জানিয়েছিলাম প্যাড এবং পিরিয়ড সম্পর্কে।

আপনার মেয়ে সন্তানকে তো বটেই ছেলে সন্তানের কৈশোরে তাকেও জানিয়ে দিন ছেলে মেয়ের শারীরিক মানসিক স্বাভাবিক পরিবর্তনগুলো সম্পর্কে। দেখবেন ছেলে সন্তানটা ইভ টিজার না বরং মেয়েদেরকে সম্মানের, ভালোবাসার চোখে দেখতে শিখবে। মায়ের থেকে বড় শিক্ষক একজন মানব শিশুর জীবনে আর কেউ হতে পারে না।

একজন রেপিস্ট, একজন ইভ টিজার, একজন মার্ডারারের কেইস হিস্ট্রি স্টাডি করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জানা যায় তার শৈশব, কৈশোর, পারিবারিক পরিবেশে অপরাধ বান্ধব ছিল। তাই শুধু জন্মদান নয়, আসুন সন্তানকে একটু একটু করে একতাল মাংস পিন্ড থেকে মানুষ পুরুষ হিসেবে গড়ে তুলি।

#মিম্ মি

 

Sexual অ্যাবিউজ নিয়ে সচেতন হই

Sexual অ্যাবিউজ নিয়ে সচেতন হই


ফাতেমা শাহরিন


আমার কিছু গন্ধ মনে আসলেই বমি আসে, কিছু স্বাদ জ্বিহ্বায় লেগেছিল ভাবলেই গা গুলিয়ে যায়, আর কিছু স্পর্শ কথা কল্পনা করলে আমি ঘুমাতেই পারি না ম্যাম, কিছু মূহূর্ত আবছা অস্পষ্ট অশরীরি কিছু মানুষের মুখ। উফ, আমার মরে যেতে ইচ্ছে করে। এই স্মৃতি গুলো ঘুমাতে দেয় না৷ দুঃস্বপ্ন হানা দেয়। ঘুরে বেড়ায় ব্যস্ত মনের আনাচে কানাচে। বিশ্বাস করুন আমার এই বিষয় নিয়ে একদম কথা বলতে ইচ্ছে করে না। আমি এস এস সিতে A+ পেয়েছি, এইস এস সি A+। সব খানে গোল্ডেন প্লাস। আর এখন সবচেয়ে ভালো সাবজেক্ট নিয়ে, সবচেয়ে ভালো পাবলিক ভার্সিটিতে পড়ছি ম্যাম। আমি তো সব কিছু জয় করে এসেছি ম্যাম। এখন কেন ফ্লাসব্যাক আটকাতে পারছি না? কেন ছোট কালের সেই পিশাচ আমার চেহারায় ভেসে বেড়াচ্ছে? জানেন, আমি দুই দিন অজান্তে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকি। জ্ঞান ফিরে আমার কিছুই মনে থাকে না। আমি কি আমার সমস্ত স্মৃতি হারিয়ে ফেলছি? আমি কি আর কখনও স্বাভাবিক হবো না।

“ম্যাম আমি আর পারছি না”।

অবসরের মূহূর্তে হঠাৎ কে যেনো মনের দরজায় চিৎকার দিচ্ছে। আর আমি বেকুল হয়ে সমাধানের করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠছি। একূল পেলে অকুল পাই না, নীল দরিয়ার হাবডুবু খাই প্রায়স। কিন্তু মন তাকে কিছুতেই হারাতে চায় না, পিছু ধাওয়া করে। কাউন্সেলিং শুরু করেছি ছয় মাস হলো। কেস গুলো আমার মনে এতো খেলা করে। আমি আমার মতো জ্ঞান খুঁজি। জীবনের ব্যাস্ততা তাকে ফিরিয়ে আনে বাস্তবতায়। কখনো স্মৃতির সাথে চলে লুকোচুরি খেলা।

সত্যি হলো উপরের ঘটনাটি।

কিন্তু সৈকতে বসে মিষ্টি রোদ আমি গায়ে লাগাই ইচ্ছে করে। হয় তা বাস্তবে, নয়ত ইমাজারি রিল্যাক্সজেশন করে। একটু হাওয়ার পরশ, এক পশলা বৃষ্টি পটে আঁকা ছবির মত কারো প্রশান্তিকর হাসি, এটাই প্রাপ্তি আমার। একটা ঘন্টা পর যখন কেউ বলে আপু / ম্যাম / ম্যাডাম “খুব ভালো লাগছে”। “এখন অতো অস্বস্ত্বির লাগছে না”। “আমি এখন দৈনন্দিন কাজ একটু করতে পারছি, আগে তো একদমই পারতাম না”। ” আমার মনে হচ্ছে আমি এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে পারবো”।

গল্প গুলো টাকা দিয়ে পরিমাপ করা যায় না। ডাক্তারের কাছে মানুষ টাকা ঢালতে যায় যদিওবা মুখে বলে। বাস্তবে যায় নিজের জন্য। একান্ত নিজের কল্যাণের জন্য যায়৷ আর বাংলাদেশে সাইকোলজির আবির্ভাব তো খুবই রহস্যজনক কল্প কাহিনী দিয়ে সাজানো মোড়ক। অনেকে হুমায়ন আহমেদের গল্প পড়ে পড়ে কাউন্সেলিং সম্পর্কে জ্ঞান খুঁজে পাই ঠিক কল্প কাহিনী থেকে সঠিক জ্ঞান জানতে হলে পড়তে হবে আমাদের।

আসলে মানসিক সুস্থতার সংজ্ঞা জানতে পারলেই আমরা কাউন্সেলিং কি তা জানতে পারবো সহজে। আসো একটি তাত্ত্বিক জ্ঞান শুনি যদিও ভালো লাগে না।

মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক তেমন গুরুত্ব যেমন শারীরিক স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখা। কখনো কখনো শারীরিক সুস্থতার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মানসিক স্বাস্থ্য। কেন? কারণ মন খারাপ এতো ভয়ানক এক একটি অনুভূতি যা আমাদের আচরণে পরিবর্তন আনে৷ আগে পড়াশুনা করতে ভালো লাগতো এখন আর কোন কাজই করতে ভালো লাগে না। কখন কান্না পায়। কখন কখন দুনিয়া থেকে সারা জীবনের জন্য চলে যেতে ইচ্ছে করে। সামাজিক পরিপক্কতা অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধবী কিছুই ভালো লাগে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর মতে মানসিক স্বাস্থ্য হ’ল:..সুস্থতার এমন একটি রাষ্ট্র। যেখানে ব্যক্তি নিজেই তার জীবনের রাষ্ট্র প্রধান। তার নিজস্ব দক্ষতা, উপলব্ধি করতে পারে। জীবনের স্বাভাবিক চাপ বা পরীক্ষার সাথে লড়াই করে সমাধান করতে পারে। দৈনন্দিন পড়াশুনা, ঘরের, অফিসের এবং ফলপ্রসূভাবে কাজ শেষ করতে পারে এবং তার সম্প্রদায়ের জন্য অবদানও রাখতে সক্ষম হয়।” মানসিক স্বাস্থ্য কেবলমাত্র মানসিক ব্যাধি না থাকা তা কিন্তু নয় আমাদের হাসিখুশি স্বাভাবিক জীবন দীর্ঘ দিন ধরে চলতে না পারলেই আমরা মানসিকভাবে অসুস্থ হতেই পারি। জ্বর হলে যেমন লজ্জার কিছু নেই৷ মন খারাপ হয়ে তা একা একা সামলাতে না পারলে তা প্রকাশ করতে লজ্জার কিছু নাই বরং জহির স্যার বলেন, ‘যারা প্রচুর কথা বলে, মনে কষ্ট ধরে রাখে না তাদের মানসিক কষ্ট কমে যায় দ্রুত।’

আর সকল ধরনের অ্যাবিউজ বন্ধ করার একমাত্র মহা ঔষধ হলো, ” বলে দেওয়া ” লুকিয়ে না রেখে প্রকাশ করা। এমনই এক স্মৃতির পিছু ধাওয়া করছিলো গত বিশ বছর আগের একটা সন্ধ্যার কথা। আমার স্মৃতির শেলফগুলোতে থরে থরে সাজানো অজস্র ভালো স্মৃতি আছে। তবে অ্যাবিউজ হবার ঘটনা আছে। এটা ভেবে কষ্ট পেয়ে আটকে যাবার কোন কারণ নেই আমি দাড়াতে পারবো না৷ ইনশা আল্লাহ কাউন্সেলিং আপনাকে সাহায্য করবে বের হয়ে আসতে।

নিজের নেইঃ

অনেক সময় নিজের কাছে কোন উপায় থাকে না কিভাবে এই কষ্ট থেকে বের হয়ে আসবো তখন অন্যের জ্ঞানের উপর বিশ্বাস রাখতে হয়। অন্যের আলো নিয়ে নিজেকে উদ্ভাসিত করতে লজ্জার কিছু নেই। কাউন্সেলিং এর সেশনগুলো একেকটার একেক স্বাদ, একেক গন্ধ, একেক মর্ম – ভালো লাগায় ভরপুর অনুভূতির সৃষ্টি করতে পারে আপনি হয়ত আপনাকে চেনেন বলে জানেন? আসলে নিজেকে নতুন করে চিনতে এবং নিজের ভিতর থাকা, অদম্য ক্ষমতা দেখে আপনি আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবেন। তখন নিজের নেই মনে করে মন খারাপ হবে না।

 

বর্তমান সময়ের একটি বড় চ্যালেঞ্জ

বর্তমান সময়ের একটি বড় চ্যালেঞ্জ


কানিজ ফাতিমা


গবেষকরা মনে করছেন আমাদের শিশু-কিশোররা মানসিক দিক থেকে ধীরে ধীরে এক চ্যালেন্জিং পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে। গত ১৫ বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী শিশু- কিশোরদের মানসিক সমস্যা (childhood mental illness) এর সংখ্যা এতটাই উর্ধমুখী যে তা প্রায় মহামারী এর রূপ নেবার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।

পরিসংখ্যান বলছে –
• প্রতি পাঁচ জনে এক জন শিশু-কিশোর মানসিক সমস্যায় ভুগছে ;

• ADHD ( Attention Deficit Hyperactivity Disorder) অতিরিক্ত অস্থিরতা চঞ্চলতার সমস্যা বেড়েছে শতকরা ৪৩ ভাগ

• কিশোর বিষন্নতা (adolescent depression ) এর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় শতকরা ৩৭ ভাগ

• ১০ থেকে ১৪ বছরের শিশু- কিশোরদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে ২০০%

এসব সমস্যার কারণ হিসাবে যেকয়টি বিষয়টি গবেষকরা দায়ী করছেন তা হলো-

শিশু কিশোররা ছোট বয়েসেই অতিরিক্ত উম্মাদনা সৃষ্টিকারী (over-stimulated and over-gifted with material objects) জিনিস পত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ছে- যা তাদের স্বাভাবিক শৈশব থেকে বঞ্চিত করছে এবং সঠিক মানসিক বিকাশকে নষ্ট করছে।

বাবা- মায়ের সঙ্গে ( অন্যান্য আত্মীয়দের সঙ্গে) আবেগ ঘন সম্পর্ক এর অভাব (Emotionally available parents)

অতিরিক্ত চর্বি ও চিনিযুক্ত অস্বাস্থকর খাবার

স্থবির জীবন, শারিরীক কসরতের ওখেলাধুলার অভাব

প্রয়োজনীয় ঘুমের অভাব, বেশী রাত জেগে থাকা

বয়স অনুযায়ী দায়িত্ব ভার না নেয়া

সৃজনশীল খেলাধুলার বদলে মেধা ও শরীরের জন্য নিষ্ক্রিয় খেলনা নিয়ে খেলা

শিশু- কিশোরদের অধিকার সম্পর্কে অধিক সচেতনতা, কিন্তু এর বিপরীতে নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে বোধের অভাব। নিজের সব চাওয়াকে অধিকার মনে করা , পাওয়া নিয়ে কৃতজ্ঞ না হওয়া।

এই সমস্যাগুলোর প্রথম ও প্রধান সমাধান হলো-

বাবা-মায়েদের সন্তানদের সঙ্গে একটিভ সময় কাটানো। নিজেদের ব্যস্ততা কমিয়ে, টেকনোলজির অতিরিক্ত ব্যবহার থেকে সরিয়ে এনে শিশুদের সঙ্গে খেলাধুলা করা , আনন্দ করা , আলোচনা করা ও আবেগঘন সময় কাটানো।
এই একটি সমাধান উপরের অনেকগুলো সমস্যা অবসানের মূল চাবিকাঠি।

 

আত্মীয়ের চুমু খেয়ে মৃতপ্রায় নবজাতক

আত্মীয়ের চুমু খেয়ে মৃতপ্রায় নবজাতক


স্বাস্থ্যকথা


নবজাতকের সঙ্গে প্রথম দেখায় অনেকেই চুমু খান। আদরের বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই এই চুমু দেন নবজাতকের স্বজনরা। তবে এমন চুমুতেই প্রায় মৃতপ্রায় অবস্থায় চলে গিয়েছিলেন যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক শহরে জন্ম নেয়া শিশু রোমান ড্রান্সফিল্ড । খবর যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ডেইলি স্টারের।

জানা গেছে, ডানিয়েল্লা-ম্যাথু দম্পতির সন্তান রোমান ড্রান্সফিল্ড গত বছর ফেব্রুয়ারিতে জন্ডিস নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন । জন্মের পাঁচ দিনের মধ্যেই তার শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দেয়। এই উপসর্গে প্রায় মৃতপ্রায় অবস্থায় চলে যায় শিশুটি। প্রায় তিন সপ্তাহ এন্টি-ভাইরাস ওষুধ দেয়ার পর সুস্থ হন রোমান ড্রান্সফিল্ড। পরে ডাক্তাররা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সন্দেহ প্রকাশ করেন, চুমু খাওয়ার কারণেই এই সমস্যা হয়েছিল রোমানের।

এ নিয়ে রোমান ড্রান্সফিল্ডের মা ডানিয়েল্লা বলেন, যখন সে জন্মায় তখন পরিবারের সদস্যরা আসতেন এবং তাকে দেখে চুমু দিতেন। একদিন আমরা রোমানের মুখে ফুসকুড়ি দেখতে পারি। পরে ডাক্তার জানায় এই ভাইরাসে মারা যেতে পারেন রোমান। ডানিয়েল্লা জানান, ওই ঘটনার পর থেকে তিনি এখনো তার সন্তানকে চুমু দেননি।

এদিকে ওই ঘটনার পর এখনো নিজেদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সেই দুঃসহ স্মৃতি মনে করিয়ে সবাইকে নবজাতকদের চুমু খাওয়া থেকে বিরত থাকার উৎসাহ দেন ডানিয়েল্লা-ম্যাথু দম্পতি।

সুত্রঃ ইত্তেফাক/এআর

 

ধর্ষণের ক্ষেত্রে খেয়াল করে দায়ী করুন

ধর্ষণের ক্ষেত্রে খেয়াল করে দায়ী করুন


জান্নাতুন নুর দিশা


ফেসবুকে একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। চারজন মেয়ে হিজাব পরে নেচেগেয়ে একটা গান করছেন, “আমরা হিজাবি লেডি, আমরা হিজাব করি” এরকম শিরোনামে। সাথে দুজন ছেলেও তালে তালে গাইছেন। গানের স্টাইল অনেকটাই পশ্চিমা।
এভাবে নেচে-গেয়ে কুশ্রী ভঙ্গিতে হিজাব পরায় দাওয়াত দেয়ার এরকম বাজে একটা ভিডিও হাজার হাজার শেয়ার হচ্ছে। হিজাব পোশাকটাকে প্রকারান্তরে হাসির খোরাক বানানোতে এদের সহযোগিতাই করছেন এটা ভাইরাল করে।

আরো একটা নিউজ কয়েকদিনে বেশ অনেকের টাইমলাইনে দেখলাম। আমেরিকায় এক বাঙালি নারী এক আমেরিকান নারীকে বিয়ে করেছেন। বিয়ে করেছেন গত জুন মাসে। সমকামী বিয়ে আমেরিকায় কোনো গুরত্বপূর্ণ বিষয় না৷ বাঙালি মেয়েটি আমেরিকাতেই বড় হয়েছেন। বাংলাদেশী মিডিয়া এসব নিউজ পেলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে নিউজ করে, মানুষজনও দলে দলে গালাগালি করে শেয়ার দিয়ে এসব অপ্রয়োজনীয় খবর ভাইরাল করে।

আরো একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এক মহিলা ময়মনসিংহের শশী লজের সামনের ভাস্কর্যের সামনে দাঁড়িয়ে জোর দাবি জানাচ্ছেন ভাস্কর্যটি সরিয়ে ফেলার। মহিলা সেখানে বলছেন এই রকম বস্ত্রহীন নারী ভাস্কর্য দেশে এভাবে উন্মুক্ত থাকলে তো নারীরা ধর্ষণ হবেই! এই কথায় আবার দলে দলে লোক একমত পোষণ করে ভিডিওটি শেয়ার দিয়ে ভাইরাল করেছেন।

নারী সংক্রান্ত এরকম কিছু অপ্রয়োজনীয় বিষয় ভাইরাল করে আপনারা কী পান তা তো জানি না। কিন্তু যে ভয়ংকর নিউজটি আমি একটু আগে নিজ টাইমলাইনে শেয়ার করলাম সেটা হলো গাজীপুরে এক নারীকে তার বান্ধবীর সহায়তায় ঘুমের ঔষধ খাইয়ে চার বখাটে ছেলে ধর্ষণ করে হাসতে হাসতে তার পাশবিক বর্ণনা দিয়ে ভিডিও আপলোড দিয়েছে। সেখানে তারা এও জানিয়েছে হেসে হেসেই যে তারা জানে তাদের পরদিন জেলে থাকতে হতে পারে কিংবা এলাকাছাড়া হতে পারে। এতে তারা মোটেও উদ্বিগ্ন নয় বরং আনন্দিতই মনে হচ্ছিলো। ধর্ষকদের এত উৎফুল্ল এত আনন্দে এত নির্ভয়ে থাকার রহস্য কী? রহস্য হলো এই ধর্ষণে তো তাদের আপনারা দায়ী করবেন না, দায়ী করবেন হিজাব পরা না পরাকে, দায়ী করবেন আমেরিকার কোনো সমকামী বিয়েকে, দায়ী করবেন একটি বস্ত্রহীন মাটির ভাস্কর্যকে। যাদের আপনারা নিয়ম করে ভাইরাল করেন। কিন্তু ভাইরাল করেন না ধর্ষককে। ধর্ষকের নারকীয় চেহারা আপনারা খুব দ্রুত ভুলে যেতে ভালোবাসেন!

 

‘প্যারেন্টিং’ কোন শর্টকাট পদ্ধতি নেই

‘প্যারেন্টিং’ কোন শর্টকাট পদ্ধতি নেই


ফাতিমা কানিজ


পারেন্টিং এর কোনো শর্টকাট রাস্তা নেই। বাচ্চাকে প্রচুর সময় দেয়া এবং তাকে নিয়ে বিরামহীন পরিকল্পনা করাই নিশ্চিত করবে আপনি কতটা ভালোভাবে বাচ্চাকে মানুষ করছেন। মনে রাখবেন, আপনার সঙ্গে আপনার বাচ্চার সম্পর্ক অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে তার সঠিক বেড়ে ওঠার জন্য বেশী জরুরী ৷ আজ ব্যস্ততার অজুহাতে যা অবহেলা করবেন কাল হয়ত তা আপনার হাতের নাগাল থেকে বেরিয়ে যাবে। কথায় আছে – সময়ের এক ফোঁড় আর অসময়ের দশ ফোঁড়। সময়ে এক ফোঁড়ে আজ যা সম্ভব হবে অসময়ে দশ ফোঁড় দিয়েও পরে হয়তো তা আর সম্ভব হবে না।

বাচ্চাদের সঙ্গে সময়দানের ক্ষেত্রে আর একটি ভুল ধারণা হলো আমাদের সমাজে অনেকে মনে করেন মায়েরাই বাচ্চাদের সময় দেবে, বাবাদের ততটা সময় দেবার দরকার নেই; মা পর্যাপ্ত সময় দিলে বাবাদের না দিলেও চলে। প্রকৃত ব্যাপারটা তা নয়। প্রাকৃতিকভাবে বাচ্চা যেহেতু মায়েদের সঙ্গে বেশী সম্পর্কযুক্ত (যেমন গর্ভধারণ, স্তন্যদান) সেহেতু স্বাভাবিক ভাবেই সন্তানরা মায়েদের সঙ্গে বেশী সময় পার করে থাকে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, বাবাদের সময় দেয়া শুধু সন্তানদের শাসন আর আদেশ উপদেশে সীমাবদ্ধ থাকবে। বাবা ও মা দু’জনকেই বাচ্চাকে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। বাবা আর্থিক রোজগারের কারণে বাইরে হয়তো বেশী সময় দিতে বাধ্য হন কিন্তু তারপরও রুটিন করে বাবাকে বাচ্চার জন্য নিয়মিত সময় বের করে নিতে হবে। বাচ্চাদের জীবনে প্রথম পুরুষ রোল মডেল হিসেবে বাবার ভূমিকা অনেক। বিশেষ করে ছেলে বাচ্চাদের জন্য তাদের বাবারা তাদের পরবর্তী জীবনের এক বড় আদর্শ।

সন্তানদের সময় দেয়ার ক্ষেত্রে অনেকসময় আবার বিপরীত একটা ভুলধারণাও তৈরী হয়। অনেকে মানে করেন সন্তানকে সময় দেবার মানে হলো আর কাউকে কোনো সময় দেয়া যাবেই না, কেবলমাত্র সন্তানদের নিয়েই পরে থাকতে হবে। আপনার বাবা বা মায়ের অসুখ করেছে – আপনার সন্তানদের লেখাপড়ার চাপ রয়েছে বলে আপনি বাবা-মাকে সময় দেবেন না, দেখতে যাবেননা, তাদের সেবা করবেন না – এটাকে সন্তানকে সময় দেয়া বলে না। বরং এটা সন্তানের সামনে ভুল একটা উদাহরণ পেশ করা। সন্তানকে সময় দিতে গিয়ে আপনার পরিবার-পরিজন; আত্মীয়-স্বজনদের প্রয়োজনীয় সময় না দিলে সন্তানরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে বড় হয়। এক্ষেত্রে মনে রাখবেন ব্যালান্স খুবই জুরুরী।

আবার কখনো কখনো দেখা যায় সন্তাদের সময় দেবার অজুহাতে নিজের স্পাউজকে তার দিকের আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। আত্মীয়দের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় সন্তানদের প্রয়োজনকে কৌশলে সমানে এনে স্পাউজকে এই যোগাযোগে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। এধরণের কাজ আপনার সন্তানদের জন্য কখনোই মঙ্গল বয়ে আনবে না। বরং সন্তানদের সঙ্গে আপনার নিজের সময় দেবার সাথে সাথে তাদেরকে আপনার দিকের আত্মীয় ও আপনার স্পাউজের দিকের আত্মীয়দের সঙ্গে ভালো যোগাযোগের ও সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ করে দিন।

 

চুলের যত্নে কিছু জানি

চুলের যত্নে কিছু টিপস


ঘরকন্যা


(১) গোসলের আগে চুল আঁচড়িয়ে নিবেন। চুল সবসময় নিচ থেকে আচড়াবেন। তাহলে খুব সহজে চুলে জট থাকলে খুলে যাবে। চুল নষ্ট হবে কম।
আর চুলের জট খোলার জন্য সবসময় মোটা দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করবেন।

(২) সপ্তাহে ৩ দিন চুলে Shampoo করবেন।
চুলে বেশি Shampoo করলে চুলের Natural Oil নষ্ট হয়ে গিয়ে চুল Dry হয়ে যায়। চুলে Shampoo করার সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

ক) চুল আগে ভিজিয়ে নিতে হবে।

খ) যতটুকু Shampoo চুলে দিবেন তা একটা বাটিতে নিবেন। তার মধ্যে একটু পানি মিক্স করে পাতলা করে নিবেন। তাহলে লাগাতে সুবিধা হবে। আর চুল যখন ধুবেন তাড়াতাড়ি পরিষ্কার হবে।

গ) চুলে Shampoo লাগানোর সময় মাথার তালুতে ভালোভাবে লাগাবেন। তারপর চুলের নিচের দিকে লাগাবেন। খুব যত্ন করে আলতো হাতে লাগাবেন।

ঘ) চুল ধোয়ার পর Conditionar লাগাবেন। শুধু চুলের নিচের দিকে লাগাবেন। উপরে লাগানো জরুরি নয়। ৫/১০ মিনিট থেকে চুল ভালো করে ধুয়ে নিবেন।

(৩) গোসল শেষে চুল টাওয়েল বা গামছা দিয়ে শক্ত করে বেধে রাখবেন না। চুলে গামছা বা টাওয়েল দিয়ে বাড়ি দিয়ে পানি ঝরানোর চেষ্টা করবেন না। এতে চুলের আগা ফেটে যায়।

(৪) ভেজা চুল আঁচড়াবেন না।

(৫) চুলে অতিরিক্ত তেল দিবেন না। চুলের গোড়ায় তেল লাগিয়ে অবশ্যই চুলে Massage করবেন।

(৬) রাতে ঘুমানোর আগে চুল আঁচড়িয়ে হালকা কারে বেনি করে ঘুমাবেন।

(৭) খুশকি থাকলে সপ্তাহে ২ বার খুশকির Pack টা লাগাবেন।

(৮) সপ্তাহে ৩/৪ বার পছন্দের Hair প্যাক লাগাতে পারেন।

(৯) Shampoo করার পর Last মগ এর পানি লেবু/চায়ের লিকার দিয়ে চুল ধুতে পারেন চুল সিল্কি হবে।

(১০) গোসলের পর চুলে Last মগ এর পানি ৬/৭ টা পেয়ারা পাতা Shiddo পানি দিয়ে চুল ধুতে পারেন। এতে চুল পড়া অনেক কমে যাবে।

(১১) বেশি করে পানি খাবেন। আর সপ্তাহে ২ বার চিরনি ধুবেন।
কমেন্ট না করলে পরবর্তী টিপস পাবেন না এই বলে দিলাম।

সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন

 

মায়ের সাথে অভিমান করে স্কুল ছাত্রের আত্মহত্যা

মায়ের সাথে অভিমান করে স্কুল ছাত্রের আত্মহত্যা


অন্যান্য


কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে এক স্কুল ছাত্রের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাত আটটার দিকে ফুলবাড়ী থানার পুলিশ ওই ছাত্রের ঘর থেকে তার লাশ উদ্ধার করে। নিহতের নাম সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য (১৩)। সে উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের পুর্ব ফুলমতি গ্রামের সমরেন্দ্রনাথ কেষ্ট ভট্টাচার্যের ছেলে এবং বালারহাট আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র।

এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, পড়াশুনার ব্যাপারে শাসন করায় মায়ের সাথে অভিমান করে নিজের ঘরে শাড়ি পেঁচিয়ে ফাঁস দেয় সিদ্ধার্থ। পরে তাকে উদ্ধার করে নিকটস্থ বালারহাট বাজারের এক পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ফুলবাড়ী থানার ওসি রাজীব কুমার রায় জানান,পরিবারের সদস্যদের দেয়া সংবাদের ভিত্তিতে আমরা ঘটনাস্থলে যায়। ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকা অবস্থায় ওই ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে এসেছি। ধারণা করা হচ্ছে পড়াশুনার ব্যাপারে শাসন করায় অভিমানে ছেলেটি আত্মহত্যা করেছে।

বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য শনিবার সকালে লাশ ময়না তদন্তের জন্য কুড়িগ্রাম মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।

সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

ছয় মাসে ৪০০ শিশু ধর্ষণের শিকার, ১৬ জনের মৃত্যু, এক তৃতীয়াংশ কওমী মাদ্রাসার শিক্ষক দ্বারা

ছয় মাসে ৪০০ শিশু ধর্ষণের শিকার, ১৬ জনের মৃত্যু, এক তৃতীয়াংশ কওমী মাদ্রাসার শিক্ষক দ্বারা


নারী সংবাদ


এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত  এই ৬ মাসে সারাদেশে ৩ শ ৯৯ জন শিশু ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছে । এর মধ্যে ৮ জন ছেলে শিশু । ধর্ষণের পরে ১ জন ছেলে শিশুসহ মারা গেছে ১৬ টি শিশু।

রোববার (৭ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য তুলে ধরে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে বেসরকারি সংগঠন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)।

সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম সম্প্রতি দেশে শিশু ধর্ষণের ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় শিশুদের প্রতি চলমান সহিংসতা ও নির্যাতন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

 শাহীন আনাম পাড়ায় পাড়ায় কমিটি গঠন করে এই ধর্ষণ প্রতিরোধ করার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে অভিভাবক, শিশু সংগঠন, মানবাধিকার সংস্থা, স্কুল-কলেজ এবং পাড়ার তরুণদের সম্মিলিতভাবে এই অপরাধ ঠেকাতে এগিয়ে আসতে হবে বলেও মনে করেন তিনি ।

ছয়টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ৪০৮ টি সংবাদ বিশ্লেষণ করে  এই পরিসংখ্যান তুলে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন জানায়, ৬ মাসে সারাদেশে ৩ শ ৯৯ জন শিশু ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছে । এর মধ্যে ৮ জন ছেলে শিশু । ধর্ষণের পরে ১ জন ছেলে শিশুসহ মারা গেছে ১৬ টি শিশু। এদের মধ্যে ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছিল ৪৪ জনের উপর ।

এমজেএফ এর তথ্য অনুযায়ী, ছয় মাসে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে ৪৯ টি শিশু । যৌন হয়রানির ঘটনায় আহত হয়েছে ৪৭ জন মেয়ে শিশু ও ২ জন ছেলে শিশু।

এমজেএফ মনে করে বিচারহীনতার কারণে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা অসহনীয় অবস্থায়  পোঁছেছে। শিশু ধর্ষণের ঘটনায় শিশুর শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক জীবনে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলেও মনে করেন সংগঠনির নির্বাহী পরিচালক।

যদিও (এমজেএফ) সামগ্রিকভাবে সার্ভে করে দেখেছে, কিন্তু আমাদের করা নিউজ আর অনলাইনে প্রকাশিত শিশু ধর্ষণ ও হত্যার রিপোর্ট অনুসারে প্রায় এক তৃতীয়াংশ ধর্ষণ ও খুন হয়েছে কওমী মাদ্রাসার শিক্ষক দ্বারা।

সুত্রঃ স্বদেশ_বাংলা

 

মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মনোবিজ্ঞানী নিয়োগ

মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মনোবিজ্ঞানী নিয়োগ


শামসুদ্দীন ইলিয়াস


গত ২৪.১১.২০১৯ তারিখে সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়ার রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত মহামান্য হাইকোর্ট বেঞ্চ কর্তৃক বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাইকলজিসট নিয়োগ সংক্রান্ত রুল জারী করেছেন। বাংলাদেশে মনোবিজ্ঞান শিক্ষা, মনোবিজ্ঞান গবেষণা এবং মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান বাস্তবে প্রয়োগের বিষয়ে বাংলাদেশ মনোবিজ্ঞান সমিতির একজন সদস্য এবং মনোবিজ্ঞান বিষয়ের একজন শিক্ষক হিসাবে নিম্নরূপ বক্তব্য প্রদান করছিঃ
বাংলাদেশের কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেশ কিছু সরকারি-বেসরকারি কলেজে স্নাতক (সম্মান) এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে মনোবিজ্ঞান বিষয়টি দীর্ঘদিন যাবত পঠিত হচ্ছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ থেকে প্রতি বছর হাজার খানেক শিক্ষার্থী স্নাতক (সম্মান) এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে মনোবিজ্ঞানিক সেবা দেয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। তবে, যুগোপযোগী সরকারি নীতিমালার অপর্যাপ্ততার কারণে মনোবিজ্ঞানে ডিগ্রিধারী এসব যুবক-যুবতীরা জাতিকে কাঙ্খিত সেবা দিতে পারছে না। স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা যেমন-শিক্ষা মনোবিজ্ঞান, কাউন্সেলিং মনোবিজ্ঞান, স্কুল মনোবিজ্ঞান, বিকাশ মনোবিজ্ঞান, সমাজ মনোবিজ্ঞান, শিল্প ও সাংগঠনিক মনোবিজ্ঞান, পরিবেশ মনোবিজ্ঞান, স্বাস্থ্য মনোবিজ্ঞান, অপরাধ মনোবিজ্ঞান, চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান, ভোক্তা মনোবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয় অধ্যায়ন করে থাকে। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে আবার একটি, দুটি, বা তিনটি বিষয়ের ওপর বিস্তারিতভাবে অধ্যায়ন করে। মনোবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে যে কোন শিক্ষার্থীই মনোবিজ্ঞানী হিসাবে যে কোন প্রতিষ্ঠানে সেবা প্রদানের সক্ষমতা অর্জন করে থাকে। তাই, শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের ধরন, সক্ষমতা, মানসিক স্বাস্থ্য, শিক্ষার পরিবেশ, পাঠদান পদ্ধতি, শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রমের মূল্যায়ন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক, অভিভাবকদের উপদেশনা ও নির্দেশনা প্রদানসহ শিক্ষার্থী ও শিক্ষালয়ের সাথে সম্পর্কিত সকল বিষয়ে মনোবিজ্ঞান সম্মত সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনকারী যে কোন ব্যক্তিই যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। তবে, শিক্ষা মনোবিজ্ঞান, কাউন্সেলিং মনোবিজ্ঞান, স্কুল মনোবিজ্ঞান, বিকাশ মনোবিজ্ঞান ও শিক্ষার্থী মূল্যায়ন মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনকারী ব্যক্তিবর্গ এক্ষেত্রে অধিকতর যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়সমূহ (বাক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী এবং অটিস্টিক) ব্যতীত সাধারণ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক বুদ্ধিসম্পন্ন এবং স্বাভাবিক আচরণ সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা অধ্যায়ন করে থাকে। স্বাভাবিক শিক্ষার্থীরা কোন মানসিক রোগী নয়। শিক্ষার্থীদের পাঠে অমনোযোগ, স্কুল ভীতি, পরীক্ষা ভীতি, মানসিক চাপ, উদ্বেগ, ব্যক্তিগত এবং পরিবারকেন্দ্রিক সমস্যাসমূহ দূরীকরণের ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনকারী যে কোন ব্যক্তিই প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানে সক্ষম। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বা চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞানের অনেকগুলি শাখার মধ্যে একটি শাখা মাত্র। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বা চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী ব্যক্তিবর্গ মূলত মানসিক রোগগ্রস্থ ব্যক্তিদের রোগ নিরাময় বা চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে থাকে; তবে চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীরাও সাধারণ মানসিক স্বাস্থ্য সেবা ও কাউন্সেলিং সেবা প্রদানে সক্ষম। অতএব, সারা দেশের লক্ষ লক্ষ সাধারণ ও স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদেরকে মানসিক রোগী মনে করলে তা শুধু তাদেরকে অবমূল্যায়নই করা হবে না, এটা তাদেরকে অসম্মান ও হেয় করারও শামিল বিধায় এটা যেমন সমর্থনযোগ্য নয়; ঠিক তেমনই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে শুধুমাত্র ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্‌ট নিয়োগ দেয়ার প্রস্তাবনাও বাস্তবতার নিরিখে গ্রহণযোগ্য নয় এবং সেটা দেশীয় প্রয়োজন এবং শিক্ষার্থীদের মন-সামাজিক অবস্থার সাথেও মোটেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়; তা যথাযথও হবে না। বরং সময়ের প্রত্যাশিত দাবী অনুযায়ী শিক্ষার্থী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং দেশের সার্বিক মঙ্গলের স্বার্থেই অনতিবিলম্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) এবং যে কোন শাখায় (প্রধানত শিক্ষা মনোবিজ্ঞান, কাউন্সেলিং মনোবিজ্ঞান, স্কুল মনোবিজ্ঞান, বিকাশ মনোবিজ্ঞান ও শিক্ষার্থী মূল্যায়ন মনোবিজ্ঞানে) স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনকারী সাইকোলজিস্টদেরকে নিয়োগ দেয়া জরুরী।

 

জেদ, প্রতিশোধ পরায়ণতা ও প্যারেন্টিং

জেদ, প্রতিশোধ পরায়ণতা ও প্যারেন্টিং


কানিজ ফাতিমা


জেদি ও প্রতিশোধ পরায়ণ ব্যক্তিরা ভালো বাবা-মায়ের ভূমিকা পালন করতে পারে না। সাধারণত দেখা যায় জেদি ও প্রতিশোধ পরায়ণ ব্যক্তিরা নিজেদের সন্তানদেরকে অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখতে অনেকটা সময় ও শ্রম ব্যবহার করেন। ফলে জীবনের প্রথমভাগে এই সন্তানরা লেখাপড়ায় সাধারণত এগিয়ে থাকে। ধীরে ধীরে তারা নিজেদের মধ্যেও এই জেদ ও প্রতিদ্বন্ধীতা আয়ত্ব করে নেয়। এই জেদ তাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার একধরণের (নেগেটিভ) মোটিভেশন হিসাবে কাজ করে। নিজেদের কাজিন এবং সহপাঠিদের সঙ্গে মনে মনে তারা তীব্র প্রতিদ্বন্ধীতা অনুভব করে ও লেখাপড়ায় এগিয়ে থাকতে চায় – ফলে অনেক ক্ষেত্রে তারা অন্যদের থেকে এগিয়েও থাকে। আর এই সুফলকে জেদি বাবা-মায়েরা নিজেদের সফলতা হিসাবে নেন ও আত্মতৃপ্তি পান।
কিন্তু তারা জানেননা যে তারা তাদের সন্তানদের কত বড় ক্ষতি করে ফেলছেন। এটা অনেকটা এমন পেসক্রিপশন করার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে যেখানে ঔষধে রোগীর আপাত একটা উপকার হবে কিন্তু ভবিষ্যতে জীবন হুমকির মুখে ফেলবে। এধরণের বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের দু’টো বড় ক্ষতি করেন। অনেকটা বলতে গেলে তারা ছোট একটা পাওনার জন্য অনেক বড় আর মূল্যবান দু’টো জিনিসকে বিসর্জন দেন। এটা সত্যি যে তাদের ভালোবাসা আর ত্যাগে কোনো কমতি থাকে না – কিন্তু নিজেদের জেদ আর ইগো তাদের অজান্তেই সন্তানদের থেকেও তাদের জন্য বড় হয়ে দাঁড়ায়। নিজের সন্তানদের ক্ষতি করেও তারা নিজেদের ভেতরের এই মানসিক রোগকে বিসর্জন দিতে পারেন না। সন্তানদের সারা জীবনের জন্য ক্ষতি করে ফেলেন –
এক্ষত্রে যে দু’ইটা বিশাল ক্ষতি সন্তানদের হয় তাহলো –
১. সন্তানরাও এই একই মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে পরে এবং কঠিন মানসিক কষ্টের শৃঙ্খলে আজীবনের জন্য বন্দী হয়ে যায়। আপনাকে যদি বলা হয় – আপনি কি চান আপনার সন্তানের দেহে ক্যান্সার হোক? আল্লাহ মাফ করুন, কোনো বাবা -মা স্বপ্নেও একথা ভাবতে পারেনা। অথচ অবলীলায় জেদী-অহংকারী বাবা-মায়েরা নিজের মনের ক্যান্সার নিজের মন থেকে সন্তানদের মনে পুঁতে দেন, তাতে পানি- আলো-বাতাস দিয়ে অতিযত্নে বড় করে তোলেন শুধু মাত্র সন্তানদের ক্যারিয়ার গড়ে দেবার নাম করে। জেদ, হিংসা আর প্রতিশোধ পরায়ণতা হলো মনের ক্যান্সার। এটি একটা যন্ত্রণাদায়ক ব্যাধি – যা মানুষকে সারাক্ষন যন্ত্রনা দেয়। নিজে ক্যারিয়ারে সফলতা পেলেও শান্তি মেলে না, ভেতরে থাকা জেদ, হিংসা আর প্রতিশোধ পরায়ণতা আগুনের মতো ভেতর পোড়াতেই থাকে। কাজেই সচেতন হোন – আপনার জেদ ও হিংসা যেন আপনার প্যারেন্টিং এর অন্তরায় না হয়। তাতে আপনি যত ভালো প্যারেন্টিংই করুননা কেন আপনি আপনার সন্তানকে সারা জীবনের জন্য অশান্তির এক আগুনে ফেলে দিলেন। মনের এক ভয়ংকর রোগে আক্রান্ত করে দিলেন।
বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় শুশুড়বাড়ীর মানুষের সঙ্গে হওয়া জেদ আর কাজিনদের মধ্যে তৈরী হওয়া প্রতিদ্বন্ধীতা এই রোগের উৎস – আর এর বলি আপনার নিজের সন্তান। হয়তো কারো কোনো কাজে আপনি কষ্ট পেয়েছেন, বা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে অমনি আপনার জেদ সেটাকে বড় করে ফেলবে, সেখান থেকে প্রতিদ্বন্ধিতা – অন্যকে একহাত দেখিয়ে দেবার মানসিকতা, তারপর শত্রুতা, আর অবশেষে প্রতিশোধপরায়ণতা আর মানসিক অশান্তি। এই শৃঙ্খলে মন একবারবন্দী হয়ে পড়লে, তা থেকে মুক্তি কঠিন। কারণ প্রতিদ্বন্ধী বদলাবে, শত্রু বদলাতে থাকবে, কিন্তু মানসিক চক্র চলতেই থাকবে মৃত্যু অবধি।
২. দ্বিতীয় যে ক্ষতিটা আপনি আপনার সন্তানের করেন তাহলো আপনি নিশ্চিত করে দেন যে আপনার সন্তান তার পারিবারিক জীবনে কোনোভাবেই সুখী হবে না। আপনি যে জেদ, হিংসা আর প্রতিশোধের বীজ আপনার সন্তানের মনে ঢুকিয়ে দিয়েছেন তা ডাল -পালা মেলবই। ইসলামের মানবতার অংশটা যারা গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারে একমাত্র তারাই এই বিষকে নিষ্ক্রিয় করতে পারে, যা সুলভ না। এমনকি ইসলামের অনুশাসন পালনকারী মানুষদের মধ্যেও ইসলামের এই অংশটি আসতে অনেক সময় লাগে, অনেক ক্ষেত্রে আবার কখনোই আসেনা। কাজেই মূলত আপনি আপনার সন্তানের এমন এক রোগের কারণ যার ঔষধ অতিশয় দুর্লভ।
এই রোগটি আপনার সন্তানের ভেতর ধীরে ধীরে তার নিজের স্পাউজের প্রতি প্রতিদ্বন্দ্বীতা মূলক মানসিকতা তৈরী করবে, সবসময় সে তার স্পাউজকে সন্দেহ করবে এবং সেটা গিয়ে পড়বে তার শশুড়বাড়ির মানুষদের ওপরে। সবকিছুকেই সে প্রতিযোগীতা হিসাবে নেবে – সবশেষে সে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে পড়বে। সে সচেতনভাবে তাদের ক্ষতি হয় এমন আচরণে জড়িয়ে পড়বে যা তার সঙ্গে তার স্পাউজের সম্পর্ককে কোনোভাবেই মধুর আর শান্তিপূর্ণ করবে না। একসময় সে তার নিজের সন্তানকেও এই দ্বন্ধে ব্যবহার করবে তার নিজের জেদ আর প্রতিশোধের নেশায় – আর এভাবে শুরু হবে পরবর্তী চক্রের।
কাজেই প্যারেন্টিংএ সচেতন হন – আপনার ভেতরের জেদ, হিংসা, প্রতিশোধপরায়ণতা থাকলে তা কমিয়ে আনুন। এগুলো অনেক পুরানো রোগ তাই কমিয়ে আনা সহজ কথা না। কিন্তু এগুলো আপনার সন্তানের থেকে বড় নয়, তাই নিজের সন্তানের জীবনের সুখের কথা চিন্তা করে নিজেকে পরিবর্তন করুন।
অনেককে দেখেছি স্বামীর উপর জেদ করে সেই প্রতিশোধ নেবার জন্য সন্তানকে ব্যবহার করে, আবার অনেককে দেখেছি স্কুলের শিক্ষকদের ওপর জেদ করে তার প্রতিশোধের জন্য নিজের সন্তানকে ব্যবহার করে – এভাবে দ্বন্ধে সন্তানকে ব্যবহার করে ছোট কোনো সফলতা পেলেও পাওয়া যেতে পারে, প্রতিশোধ নিতে পেরে কিছুটা মানসিক সুখ হয়তো তাৎক্ষণিক পাওয়া যায় কিন্তু এই বোকামীর ফলে নিজের ও নিজের সন্তানের জন্য যে বিশাল ক্ষতি হয়ে যায় তা কি আর পূরণ হয় ?

 

‘জরায়ুমুখের ক্যান্সার’ তুমিও কি আক্রান্ত হতে পরো!

‘জরায়ুমুখের ক্যান্সার’ তুমিও কি আক্রান্ত হতে পরো!


ডাঃ মারুফ রায়হান চৌধুরী


একবার ভাবুন তো, প্রতি ২ মিনিটে বিশ্বের একজন করে নারী মারা যাচ্ছেন যে রোগে তা কতোটা ভয়ঙ্কর! প্রতিবছর সে রোগে মারা যাচ্ছে ১ লক্ষ নারী! সারা পৃথিবীতে প্রতিবছরই নতুন করে ৫ লাখ নারী আক্রান্ত হচ্ছেন।

জরায়ুমুখের ক্যান্সারের কথাই বলছিলাম। সারাবিশ্ব জুড়ে নারীদের সবচেয়ে বেশি হওয়া ৩টি ক্যান্সারের মধ্যে একটি এই জরায়ুমুখের ক্যান্সার।

তবে এ ভয়ঙ্কর ক্যান্সারটি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে এর বেশ ভালো চিকিৎসা আছে। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব; আরও এক-তৃতীয়াংশ চিকিৎসায় ভালো হয়।

এখন আসা যাক জরায়ুমুখের ক্যান্সার কাদের বেশি হয় 

– যাদের একধিক যৌনসঙ্গী থাকে।
– কম বয়সে যাদের যৌনমিলন ঘটে।
– কম বয়সে যাদের প্রথম গর্ভধারণ হয়।
– যাদের ঘনঘন বাচ্চা হয়।
– অপরিচ্ছন্ন যৌনাঙ্গ।
– দরিদ্রশ্রেণী।
– কিছু ইনফেকশান, যেমন : Human Papilloma virus – 16, 18, 31, 33, HIV, Chlamydia ইত্যাদি।
– জন্মনিরোধকারী পিল যারা খান।
– যাদের ধূমপান করার অভ্যেস আছে।
– যার স্বামীর আগের স্ত্রী জরায়ুমুখের ক্যান্সারে মারা গিয়েছে।

জরায়ুমুখে ক্যান্সারের কিছু লক্ষণ 

– নিয়মিত মাসিকের মাঝে অনিয়মিত রক্ত ভাঙা।
– স্থায়ীভাবে মাসিক বন্ধ হয়ে যাবার পরেও রক্ত যাওয়া।
– দুর্গন্ধযুক্ত যোনিস্রাব।
– যৌনমিলনের পর রক্তপাত হওয়া।
– যদি ক্যান্সার ইতোমধ্যে সামনে বা পেছনে অর্থাৎ মূত্রথলি বা মলাশয়ে ছড়িয়ে পড়ে তবে প্রস্রাব বা পায়খানার সাথে রক্ত যেতে পারে।

এসব লক্ষণ দেখা দিলে যতো দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন।

জরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে চাইলে 

– যেসব নারীর বয়স ২০-৪০ বছর এবং ২০ বছরের নিচে যারা যৌনমিলনে অভ্যস্ত তাদেরকে প্রতি ৩ বছরে একবার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে পেলভিস বা শ্রোণিদেশ পরীক্ষা করানো এবং VIA আর Pap test করাতে হয়।

– বর্তমানে আমাদের দেশেও জরায়মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে ভ্যাক্সিন বা টিকা ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ভ্যাকসিন নিয়ম মোতাবেক নেয়া প্রয়োজন।

– সর্বশেষে জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে সমাজের সর্বস্তরে গণসচেতনতা সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই।

(বি. দ্র. ইউনাইটেড স্টেটস কংগ্রেস জানুয়ারি মাসকে জরায়ুমুখ স্বাস্থ্য সচেতনতা মাস হিসেবে মনোনীত করে। চলছে সে মাস। নিজে সচেতন হই, অন্যদের সচেতন করি।)

 

প্রথম শ্রেণির ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র গ্রেফতার

প্রথম শ্রেণির ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র গ্রেফতার


নারী সংবাদ


বুধবার ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও বৃহস্পতিবার পুলিশকে জানায় স্বজনরা। সেদিনই ভুক্তভোগী শিশুকে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি)।

বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন ফকির জানান, ধর্ষণের শিকার শিশুটি স্থানীয় একটি স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। ধর্ষণে অভিযুক্ত শিশুটি পড়ে চতুর্থ শ্রেণিতে। এ ঘটনায় শিশুটির মা মামলা করেছেন। ওসিসিতে শিশুটির চিকিৎসা ও ধর্ষণ প্রমাণে প্রয়োজনীয় ডাক্তারি পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

শিশুটির মায়ের অভিযোগ, বুধবার বিকেলে তিনি ও তার স্বামী দু’জনই কাজের জন্য বাসার বাইরে ছিলেন। তাদের মেয়ে বাসায় একা ছিল। এ সুযোগে তাদের ভাড়াবাসার মালিকের নাতি শিশুটিকে ধর্ষণ করে। রাতে বাসায় ফিরে তিনি ঘটনা জানতে পারেন। এ ব্যাপারে অভিযোগ জানাতে বাসার মালিকের কাছে গেলে তিনি হুমকি-ধমকি দিয়ে পুলিশের কাছে যাওয়া থেকে তাদের বিরত রাখেন। শিশুটিকে হাসপাতালেও নিতে দেননি। তবে বৃহস্পতিবার সে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়ায় হাসপাতালে নিতে বাধ্য হন তারা। ঘটনা প্রকাশ না করার জন্য তাদের শাসিয়ে দেয়া হয় বলেও দাবি করেন তিনি।

সুত্রঃ সময়টিভি নিউজ।

 

মেয়েদের ওড়না ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা, ক্ষোভে ফুঁসছেন অভিভাবকরা

মেয়েদের ওড়না ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা, ক্ষোভে ফুঁসছেন অভিভাবকরা


নারী সংবাদ


রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের ড্রেসকোড পরিবর্তন করায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকরা। আগে মেয়েদের ড্রেসকোডে মাথায় স্কার্ফ বা ওড়না ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও নতুন প্রণীত ড্রেসকোডে সেখানে স্কার্ফ বা ওড়না ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অন্যদিকে ছেলেদের মাথায় টুপি ব্যবহারকেও অঘোষিতভাবে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। শুধু শিক্ষার্থীই নয়, শিক্ষকদের মধ্যেও আগে যারা পাঞ্জাবী পড়ে স্কুলে আসতেন তাদেরকে এখন পাঞ্জাবী পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। তবে কেউ পাঞ্জাবী পড়লেও পাঞ্জাবীর উপরে আলাদাভাবে কটি পড়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যদিও স্কুল কর্তৃপক্ষ দাবি করছেন তারা ড্রেসকোডে কোনো পরিবর্তন আনেননি। মেয়েদের ওড়না বা স্কার্ফ ব্যবহার এবং ছেলেদের টুপি ব্যবহারকে পুরোপুরি নিষেধও করা হয়নি। তবে এই ড্রেসগুলোকে শুধু ঐচ্ছিক করা হয়েছে মাত্র।

মঙ্গলবার দুপুরে মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান ফটকে গিয়ে দেখা গেলো স্কুলের বালক শাখার ছুটি হয়েছে। দলে দলে বের হয়ে আসছে ছেলেরা। তবে অনেক শিক্ষার্থীর মাথায় টুপি নেই। আগে যেখানে প্রায় প্রতিটি বালকের মাথায় টুপি ব্যবহার বাধ্যতামূলক থাকতো মঙ্গলবারের চিত্র ছিল সম্পুর্ণ বিপরীত। নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি সিদ্ধান্তে ড্রেসকোডে পরিবর্তন এনে ছেলেদের টুপি ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করার অভিযোগ করেছেন অনেক অভিভাবক। প্রথম সারির দাবিদার এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির মতিঝিলে প্রধান শাখা ছাড়াও মুগদা ও বনশ্রীতেও আরো দু’টি শাখা রয়েছে।

দুপুর দুইটার একটু আগে মূল স্কুল ভবনের ভেতরের মাঠে গিয়ে দেখা গেল বেশ কিছু মেয়ে স্কুলের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে মাঠে খেলাধুলা করছে। অনেকে আবার স্কাউটিং এর অনুশীলন করছে। অনেক মেয়েরা মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে সেই খেলা দেখছে। কিন্তু কোনো একজন শিক্ষার্থীর শরীরে বড় ওড়না বা স্কার্ফ পরিহিত নেই। দু’একজনের সাথে সাংবাদিক পরিচয়ে কথা বলতে চাইলে তারা স্কুলের ড্রেসের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হলো না।

স্কুলের বাইরে রাস্তার পাশের একটি বইয়ের দোকানের বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে জানালেন, আগে বালক বা বালিকা শাখার যে কোনো শিফটের ছুটি হলে স্কুলের বাইরে অন্যরকম একটি দৃশ্যের অবতারণা হতো। যে কেউ স্কুলের ড্রেস দেখলেই সহজে বুঝতে পারতো আইডিয়াল স্কুল ছুটি হয়েছে। কিন্তু এখন দেখুন, অনেক ছেলেদের মাথাতেই টুপি দেখা যায় না। একই ভাবে তিনি জানালেন, নতুন ড্রেসকোড দেয়ার পর মেয়েদের মাথায়ও এখন আর আগের সেই স্কার্ফও দেখা যায় না।

পেশায় আইনজীবী এম এস রহমান নামের এক অভিভাবক নয়া দিগন্তের প্রতিবেদকের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের বাচ্চাদের কথা চিন্তা করে স্কুলে গিয়ে আমরা শিক্ষকদের কাছে সরাসরি কোনো অভিযোগ করতে পারি না। এই স্কুলের মূল শাখায় (মতিঝিলে) আমার ছেলে ও মেয়ে পড়ালেখা করছে। আগের ড্রেসকোড পরিবর্তন করায় আমি ব্যক্তিগতভাবে মর্মাহত হয়েছি। ইসলামী ভাবধারায় ভবিষ্যতে সন্তানদের গড়ে তোলার আশা নিয়ে এখানে সন্তানদের ভর্তি করেছিলাম। এখন মনে হচ্ছে, স্কুল কর্তৃপক্ষের এমন স্বেচ্ছাচারিতার কারণে সেই আশাও পূরণ হবে না।

রেশনা নামের এক মা অভিযোগ করেন আমার মেয়ে আগে যেখানে নিয়মিত গায়ে ওড়না জড়িয়ে আর মাথায় স্কার্ফ বেঁধে স্কুলে আসতো এখন সে শুধু একটি সাধারণ ওড়না ক্রস আকারে শরীরে দিয়ে স্কুলে আসছে। কোনো কোনো শিক্ষক নাকি আমার মেয়েকে আগের ড্রেস পড়ে স্কুলে আসতে নিষেধ করেছেন।

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের দিবা শাখার এক শিক্ষক জানান, সম্প্রতি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির এক সভায় ড্রেস কোড পরিবর্তনের এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। কমিটিতে সরকারের পক্ষ থেকে একজন প্রতিনিধি ছিলেন। তার নাম আবু হেনা মোর্শেদ জামান। সরকারের কোনো কর্মকর্তা যখন স্কুল কমিটিতে কোনো সিদ্ধান্ত দেন তখন অন্যান্য সদস্যদের ওই সিদ্ধান্তই মেনে নিতে হয়। নতুন ড্রেসকোডের ক্ষেত্রেও সরকারি ওই কর্মকর্তার মতামতকেই প্রাধান্য দিয়ে গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, শিক্ষকদের ড্রেসের বিষয়ে নতুন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কোনো শিক্ষক এখন থেকে আর পাঞ্জাবী পড়ে স্কুলে আসতে পারবেন না। পাঞ্জাবী পড়লেও এর উপরে বাধ্যতামূলকভাবে আলাদা কটি পড়তে হবে। শিক্ষকদের জুতা ব্যবহারের ক্ষেত্রেও আলাদা কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের ড্রেসকোডের বিষয়ে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম মঙ্গলবার দুপুর দুইটায় তার অফিসে নয়া দিগন্তের এই প্রতিবেদককে বলেন, স্কুলের ড্রেসকোড নিয়ে বাইরে যেভাবে প্রচার হচ্ছে বিষয়টি আসলে সেই রকম না। ড্রেস আগে যা ছিল তাই আছে। তবে মেয়েরা আগে মাথায় আলগা মতো একটি ওড়না ব্যবহার করতো । এখন সেটিকে ভালভাবে পড়তে বলা হয়েছে। তবে একথা ঠিক যে, এই ওড়না বা হিজাব পড়াটাকে আমরা ঐচ্ছিক করেছি। চাইলে কেউ এই হিজাব ভালমতো পড়বে আর কেউ না চাইলে না পড়বে।

আগে তো’ মেয়েদের বড় ওড়না ব্যবহার আবশ্যিক ছিল, তাহলে এখন কেন এটাকে ঐচ্ছিক করলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না; বিষয়টি এরকম নয়। একথা ঠিক যে, আগে মেয়েরা একটি বড় ওড়না ব্যবহার করতো কিন্তু সব মেয়েই কিন্তু ভেতরে ক্রস আকারে ডেসের সাথে মিল রেখে বেল্ট দিয়ে একটি ওড়না ব্যবহার করতো। এখন উপরের বড় ওড়নাটাকেই ঐচ্ছিক করা হয়েছে। ওই বড় ওড়নাটা অনেকে সুন্দর করে পড়ে স্কুলে আসতো না। তাই আমরা বলেছি সুন্দর করে ওড়না পড়তে হবে। যেনতেন বা অগোছালোভাবে ওই ওড়না পড়া যাবে না। কাজেই ওড়নাতো একটি আছেই। আর যে কথাটি বলা হচ্ছে ওড়না নেই এটা আসলে সঠিক না।

ছেলেদের টুপির বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে অন্য ধর্মের বাচ্চারা পড়াশোনা করে। মুসলিম ছাড়া অন্য কাউকেতো টুপি পড়তে বাধ্য করা যায় না। তাই আমরা টুপি ব্যবহারকে ড্রেসে কোডে ঐচ্ছিক করেছি।

শিক্ষকদের পায়জামা আর পাঞ্জাবী পড়ার বিষয়ে অধ্যক্ষ বলেন, শিক্ষকদের আমরা স্মাট হিসেবে দেখতে চাই। কেউ পাঞ্জাবী পড়ে স্কুলে আসতে চাইলে আমরা বলেছি শুধু পাঞ্জাবী পড়ে স্কুলে আসা যাবে না। পাঞ্জাবীর উপরে অবশ্যই আলাদা একটি কপি পড়তে হবে। এছাড়া শিক্ষকদের জুতা ব্যবহারের বিষয়ে আমরা নির্দেশনা দিয়েছি।

সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

নারীদের বাইরে কাজ করা নিয়ে কিছু কথা

নারীদের বাইরে কাজ করা নিয়ে কিছু কথা


ফাতেমা জাহান লুবনা


নারীদের বাইরে একেবারেই কাজ না করার পক্ষপাতী যারা তারাই আবার মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করানোর সময় গার্লস স্কুল – কলেজ খুঁজি, নারী শিক্ষক খুঁজি, স্ত্রীলোকের জন্য মহিলা ডাক্তার খুঁজি …কীভাবে সম্ভব? বিয়ের পর সংসার ও সন্তান সামলে সম্ভব হলে একজন শিক্ষিতা নারী ডাক্তারি, শিক্ষকতা বা অন্য যে কোন ধরণের হালাল পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পারেন পর্দা করে। এটা নিষেধ হতে পারে এমন ক্ষেত্রে যখন সন্তানদের দেখাশোনার মত বিশ্বস্ত কেউ না থাকেন বা যদি কাজের বুয়ার কাছেই শিশুকে ফেলে চলে যেতে হয় যখন সেই কাজের বুয়া সম্পর্কেও সন্দেহ থেকে থাকে অথবা জরুরী কিছু সমস্যা থাকলে। অনেক শিক্ষিত নারী আছেন যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী অথচ বাইরে কাজের অবসর ও সুযোগ থাকা সত্তেও ঘরে বসে সময় অতিবাহিত করছেন । এক এলাকায় সব নারীই সমানভাবে শিক্ষিত নয়। ভালো নারী শিক্ষিকা না পাওয়ার ফলে নারীদের চল্লিশ পার্সেন্ট কোটা অনেক সময় খালি থেকে যায় অথবা অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতাসম্পন্ন নারীদের/ কখনও কখনও পুরুষদের দিয়ে সেই কোটা পূরণ করা হয়।

ডিজিটাল এই যুগে ঘরে বসে থাকলেই কি নারীরা নিরাপদ যখন সবার হাতে হাতেই আছে মোবাইল ফোন যাতে সারাবিশ্বের যে কারো সাথে যখন খুশি কথা বলা যেতে পারে অথবা বিচরণ করা যেতে পারে নিষিদ্ধ জগতে? আসলে এটা অভিরুচির ব্যাপার আর প্রয়োজনে নারীদের বাইরে বের হবার পারমিশন কিন্তু স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাই দিয়েছেন আর সেটা কীভাবে তাও জানিয়ে দিয়েছেন। তাই বাড়াবাড়ি করা অনুত্তম।

চাকরির ক্ষেত্রে নারী পুরুষ সবার জন্যই বয়সের বিধিনিষেধ দূর করে দিলে একজন নারী বিয়ের পর সংসার ও সন্তান সামলে সম্ভব হলে পরবর্তীতে চাকরিতে যোগদান করতে পারেন। এতে রাষ্ট্রীয়, পারিবারিক এবং সামাজিক সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। যুক্তরাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা ও চাকরির ক্ষেত্রে লক্ষ্য করলেও এর সুফলগুলো অনুধাবন করা যায়।এখানে অবসরের আগের বছরেও কেউ যোগ্যতা থাকলে সরকারি চাকরির সুযোগ পেয়ে থাকেন। অনেকে ভাবতে পারেন এতে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাবে। আসলে এই ধারণা ঠিক নয় কারণ এতে এত তাড়াহুড়ো করে চাকরির ট্রেন ধরার ঊর্ধ্বগতি কমে আসবে , নারীরা সংসার ও পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালনে যথাযথ সময় ও সুযোগ পাবে আর পরবর্তীতে ইচ্ছা থাকলে চাকরিও করতে পারবে আর পুরুষরাও চাকরি করার সময় আছে জেনে স্বাধীনভাবে ব্যবসা করতে মনোযোগী হবে কারণ ব্যবসা মানেই নতুন এক জগৎ আর কিছু রিস্ক তো বটেই তবে উদ্যোক্তা যদি সঠিকভাবে এগুতে পারেন তবে সাফল্য একদিন আসে।

অনেকে নারীদের চাকরিক্ষেত্রে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে এটিকে শুধুই টাকার সাথে সম্পৃক্ত করে ফেলেন। মানে যাদের টাকা নেই তারা চাকরি করেন বা আরেকটু বাড়িয়ে বললে টাকার প্রতি যাদের অনেক লোভ তারাই (শুধুমাত্র নারীদের ক্ষেত্রে বলা হয়) চাকরি করেন। টাকার প্রয়োজন থাকতে পারে আর গ্রহণযোগ্য প্রয়োজন থাকলে সেটাকে সম্মান করতে হবে। কিন্তু নারীদের জবটাকে শুধুমাত্র টাকার সাথে সম্পৃক্ত করে না রাখাই উত্তম। কারণ অনেক সময় নারীদের অংশগ্রহণে সমাজে কল্যাণের জোয়ার আসতে পারে। ধরুন এক এলাকায় এক নারী ডাক্তার হবার পর তার পরিবার তাকে চাকরিতে বাধা প্রদান করল বা তিনি নিজেও চিন্তা করলেন যে চাকরি করবেন না অথচ তার মাঝে যে জ্ঞান রয়েছে তা তো গ্রামের অন্য কারো মাঝে নাই অপরদিকে ঐ গ্রামের অনেকে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে বা প্রচণ্ড অসুস্থতায় কাতরাচ্ছ। এক্ষেত্রে জ্ঞানের অবচয়ের দরুণ ঐ পরিবারকে বা নারীকে যদি আল্লাহ্ বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেন তবে? ভাবতে হবে বিষয়গুলো নিয়ে।

নিজের জ্ঞান ও শ্রম দিয়ে যদি কারো উপকার করা যায় তবে দুনিয়ার জীবন যেমন সবার জন্য সুন্দর হয়ে ওঠে তেমনই পারলৌকিক জীবনেও কল্যাণী ব্যক্তিগুলো সাধারণ মানুষের চেয়ে অগ্রবর্তী হবেন তিনি নারী পুরুষ যেই হোন না কেন। তাই নিজেকে নিয়োজিত করুন কল্যাণকর কাজে টাকা কম বেশি যাই আসুক বা একেবারে নাই আসুক এতে কিছু যায় আসে না। অনেকের ব্যাংক ভর্তি টাকা থাকে কিন্তু মনে শান্তি থাকে না তাই অর্থই সবকিছু নয়। নিজেকে যোগ্য করুন কল্যাণকর কাজের জন্য আর সেটা সমাজের কল্যাণে বিতরণ করাকে নিজের উপর দায়িত্ব মনে করুন। যেমন এই মুহূর্তে আমার এই লেখাটি বাহ্যত আনপেইড জব যেটা করতে আমি ভালোবাসি। আপনিও লিখতে পারেন কোন কল্যাণকর গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ যাতে নির্দেশনা আছে; আছে উদ্দীপনা মানুষের জন্য উত্তম কাজের। নিজের জ্ঞানকে শুধুই নিজের মাঝে আবদ্ধ রাখবেন না; ছড়িয়ে দিন সর্বত্র কারণ জ্ঞানই আলো আর শ্রম হলো আর বহিঃপ্রকাশ। আর একটা কথা অবশ্যই মনে রাখবেন নিয়্যাতকে উত্তম কাজের জন্য উত্তম করে নেবেন তাহলে কেউ আপনার পারিশ্রমিক দেক না দেক আপনার প্রতিপালক বহুগুণ পুরস্কার প্রদান করবেন ……………….এবং তাতে অবশ্যই আপনি খুশি হয়ে যাবেন।

 

উত্তরটা জানাবেন কেউ ?

উত্তরটা জানাবেন কেউ ?


জিয়াউল হক


বই আমাদের অনেকেরই প্রিয়। জ্ঞান বিজ্ঞান আর সভ্যতার বিকাশ নির্ভর করে এর উপরেই! মানবসভ্যতা বিকাশে বইয়ের অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। বইয়ের প্রচলন কবে, কিভাবে হয়েছে তা বলা সম্ভব নয়, তবে ইতিহাস ঘেঁটে মোটামুটি একটা চিত্র পাই।

কাদামাটির ট্যাবলেট বানিয়ে ( মাত্র কিছুদিন আগেও আমাদের দেশে ‘শ্লেট’ বানিয়ে লেখা হতো ) তাতে লেখা হতো, এভাবেই বইয়ের প্রচলন ঘটেছে সর্বপ্রথম মেসোপটোমিয়া তথা আজকের ইরাকে খৃষ্টপূর্ব তিন হাজার বৎসর আগে। প্রাচীন বাগাদাদে আসিরীয় সম্রাটের রাজকীয় লাইব্রেরিতে এরকম বাইশ হাজার বই পাওয়া গেছে যেগুলো খৃষ্টপূর্ব ৭ম শতাব্দীতে লিখিত হয়েছিল।

মিশরে খৃষ্টপূর্ব আড়াই হাজার বৎসর আগে মন্ড থেকে প্যাপিরাসে (Papyrus) লেখার প্রচলন শুরু হয়। মিশরের তৃতীয় ‘রামেসিস’ এর (খৃস্টপূর্ব দুই হাজার বৎসর সময়কাল ) শাসনকালের বর্ণনা নিয়ে ৪০ মিটার লম্বা একটা ‘বই’ পাওয়া গেছে মিশরীয় পিারামিডে। এই প্যাপিরাস (Papyrus) থেকেই আধুনিক ‘পেপার’ শব্দটির উদ্ভব।

একই সময় পাখির পালক এবং জীব জন্তুর হাড়েও লেখা হতো। প্রাচীন চীনে এরকম প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রাচীন গ্রিক ও রোমান সাম্রাজ্যে কাঠের খন্ডের উপরে মোম লাগিয়ে তার উপরে লেখার প্রচলন ছিল, এটা অবশ্য অনেকটা প্রাচীন শ্লেট-এর অনুরুপ।

খৃষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে রোমে জীব জানোয়ারের চামড়াকে ব্যবহার করে পার্চমেন্ট উদ্ভাবন করা হলে বই তৈরিতে তা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে এবং অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠে। চীনে খৃষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে সর্বপ্রথম মন্ড থেকে কাগজ উৎপাদন করে। আর সে থেকে কাগজই বই প্রস্তুতের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠে।

সপ্তম শতাব্দীর প্রথমভাগে ইসলাম ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের আনাচে কানাচে। ইসলামের প্রথম নির্দেশই হলো; ‘পড়’ অর্থাৎ জ্ঞানচর্চা ও বিস্তার করা। ফলে অচিরেই জ্ঞানচর্চায় এক অসাধারণ মাত্রা যুক্ত হয় আর এর অনিবার্যতায় বই রচনা, প্রকাশ ও প্রচারে বিপ্লব সূচিত হয়।
ইউরোপে খৃষ্টধর্ম প্রচারে বাইবেল রচনা ও প্রকাশের ধারাবাহিকতায় বই প্রকাশ ও প্রচার গতীময়তা পায়। পঞ্চদশ শতাব্দীতে জার্মানিতে প্রিন্টিং মেশিন উদ্ভাবন হলে বই প্রকাশের ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক ধারা সূচিত হয়।

পিউ রিসার্চ সেন্টার ‘ডেটা অন আমেরিকান রিডিং হ্যবিটস’ শিরোনামে একটা গবেষণাপত্র ও জরিপ প্রকাশ করেছে ২০১৫ সালে। সে বৎসর শতকরা ৭২ জন আমরিকান বৎসরে একটা বই পড়েছে। এই ধারা গত পাঁচ বসরই পড়তির দিকে। পুরো বৎসরে অন্তত একটা বই পড়েছেন এমন আমেরিকান নাগরিকের হার ২০১১ সালে ছিল ৭৯ জন। ২০১৫ সালে; ৭২ জন।

জরিপে অংশ নেয়া বেশির ভাগ মানুষই বৎসরে ৪ টা বই পড়েছেন। পুরুষের তুলনায় নারীদের মধ্যে বই পড়ার হার বেশি। শতকরা ৭৭ জন নারী বৎসরে অন্তত একটা বই পড়েছেন। পুরুষদের মধ্যে এই হার শতকরা ৬৭ জন।

একজন নারী গড়ে বৎসরে ১৪টা বই পড়েছেন আর পুরুষ; ৯টি। বুড়ো আমেরিকানরা বই পড়ে কম। ১৮ বৎসর থেকে ২৯ বৎসরের নারী পুরুষরাই বই পড়ে বেশি। আমেরিকায় বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানী ও প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারগণ সাধারণ আমেরিকান জনগণের তুলনায় অনেক বেশি পড়েন। বড় বড় অফিস ও প্রতিষ্ঠানের (সিইও) কর্ণধারগণ মাসে চার পাঁচটি বই পড়েন।

কোনো দেশের জনসংখ্যার মাথাপিছু বই প্রকাশে সবচেয়ে এগিয়ে যুক্তরাজ্য; ২০১৪ সালে মাথাপিছু ২০ টি বই প্রকাশ করেছে (সুত্র- International Publishers Association )। দ্বিতীয় স্থানে তাইওয়ান (১৮টি), তৃতীয় স্থানে রয়েছে স্লোভেনিয়া। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৯ টি!

চল্লিশ হাজার বর্গমাইল আয়তনের ছোট্ট রাষ্ট্র আইসল্যান্ড; জনসংখ্যা মাত্র তিনলক্ষের কিছু বেশি, এখানে প্রতি দশ জন নাগরিকের মধ্যে একজনই লেখক! লেখকরাই সবচেয়ে বেশি স্বচ্ছল ও সম্মানিত।

২০১৩ সালের পরিসংখ্যান; বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বই প্রকাশিত হয়েছে চীনে; চার লক্ষ চল্লিশ হাজার (৪৪০০০০টি), এরপরে যুক্তরাষ্ট্র ৩০৪৯১২টি, তৃতীয় যুক্তরাজ্য ১৮৪০০০ টি। ভারত পঞ্চম স্থানে; ৯০০০০ টি।

উক্ত তালিকায় ১২৩টি দেশের মধ্যে প্রথম মুসলিম দেশ হিসেবে অষ্টম স্থানে ইরান (৭২৮৭১), দশম তুরস্ক (৫০৭৫২) আঠারোতম ইন্দোনেশিয়া (২৪০০০), তেইশতম মালয়েশিয়া (১৭৯২৩), আটত্রিশতম মিশর (৯০২২), উনপঞ্চাশতম সউদি আরব (৩৯০০), পঞ্চাশতম পাকিস্থান (৩৮১১), একান্নতম লেবানন (৩৬৮৬) রয়েছে। (উইকিপিডিয়া/ ইউনেস্কো)

বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চাচ্ছেন? দু:খিত, ১২৩টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম নেই। কেন নেই? উত্তরটা জানাবেন কেউ ?

 

স্মৃতির ক্যানভাসে সুখ

স্মৃতির ক্যানভাসে সুখ


আফরোজা হাসান


জীবন প্রতিনিয়ত করে চলছে ছোট গল্পের রচনা
স্মৃতির ক্যানভাসে আঁকছে সুখ-স্বপ্নের আল্পনা

আনন্দের ভিড়ে কিছু গল্প জুড়ে বেদনা
হতাশার আঁধারে ঢাকা কিছু গল্পের সম্ভাবনা

কিছু গল্প হাসায়, কিছু দিয়ে যায় কান্না
কষ্টের গুঞ্জনে কিছু গল্পে মিলে সুখের বাহানা

মাঝ দরিয়ায় কিছু গল্প খায় হাবুডুবু
উদ্ভাসিত হয় স্বমহিমায় যে গল্পটা ছিল নিভু নিভু

কিছু গল্প করে নিশ্চুপে প্রস্থান
কিছু শুনিয়ে যায় অক্লান্ত আশার গান

কোন কোন গল্প নিঃশব্দে দেয় প্রেরণা
কিছু গল্প জাগিয়ে যায় ঘুমন্ত চেতনা

কিছু গল্প সুখের তরে নিরন্তর সাধনার
কিছু গল্প শুধুই আন্তরিক ভক্তি ও আরাধনার

কিছু গল্প জুড়ে ক্ষত
কিছু গল্পে যুক্তিতর্ক, ভিন্ন মত

কোন কোন গল্প বয়ান করে নিরাশা
কিছু গল্প দিয়ে যায় গন্তব্যের দিশা

কিছু গল্প অসম্পূর্ণ, আধা
কিছু গল্প শুধুই গোলকধাঁধা

কিছু গল্প সুন্দর, সুবাসিত
কিছু গল্প কদার্যতায় প্রভাবিত

কিছু গল্প জুড়ে মিথ্যা-ছলনা, আত্নঅহংকার
কিছু গল্প উন্মুক্ত করে রুদ্ধ মনের দ্বার

জীবনের আঁকেবাঁকে শত সহস্র গল্পের বীজ
কিছু ফুলে, কিছু ফলে, কিছু আগাছায় রচিত হয় কাহিনী নিজ নিজ…

রচয়িতা- আফরোজা হাসান

 

ঢামেক ওসিসিতে থাকা ১৩ জনই ধর্ষণের শিকার

ঢামেক ওসিসিতে থাকা ১৩ জনই ধর্ষণের শিকার


নারী সংবাদ


ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস (ওসিসি) সেন্টারে বেড রয়েছে আটটি। সোমবার ( ১৩ জানুয়ারি) সেখানে ভিকটিম ভর্তি আছেন ১৩ জন। তারা সবাই ধর্ষণের শিকার। এর মধ্যে যেমন ২৫ বছরের নারী রয়েছেন, তেমনি আছেন ১০ বছর বয়সের শিশুও। বেড কম থাকায় ওসিসির ভেতরে একেক বেডে দুই থেকে তিনজন করেও রাখা হচ্ছে।

ওসিসিতে দায়িত্ব পালনকারী সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওসিসিতে আগে শারীরিক নির্যাতন, যৌন হয়রানির শিকার নারীরা এলেও গত কয়েক বছরে ধর্ষণ বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। যে পরিমাণ ধর্ষণের শিকার নারী এখানে আসে তাতে করে পুরো দেশের চিত্রটা তাদের কাছে পরিষ্কার। আর ওসিসিতে আসা নারীর মধ্যে ১০ থেকে ২০ বছর বয়সী নারীর সংখ্যাই শতকরা ৫০ শতাংশ।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের সমন্বয়কারী ডা. বিলকিস বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ২০১৭ সালের আগস্ট মাস থেকেই ধর্ষণের হার আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। শুধুমাত্র ঢামেক হাসপাতালে যে চিত্র পাওয়া যায় তাতে সারাদেশের অবস্থা যে কতটা ভয়াবহ তা আঁচ করা যাচ্ছে।

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র জানিয়েছে, ২০১৯ সালে এক হাজার ৪১৩ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। যা কিনা ২০১৮ সালে ছিল ৭৩২ জন, ২০১৭ সালে ছিল ৮১৮ জন। অন্যদিকে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন জানায়, ২০১৯ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৯০২ শিশু, ২০১৮ সালে যে সংখ্যা ছিল ৩৫৬। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের চাইল্ড প্রোটেকশন কো-অর্ডিনেটর রাফিজা শাহীন জানান, গত বছরে ৯০২ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে সাত থেকে ১২ বছরের শিশু ছিল ৩৯ শতাংশ আর ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী ছিল ৪৮ শতাংশ।

২০১৮ সালের তুলনায় গত বছর বাংলাদেশে শিশু ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনা ৭৬.০১ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম (বিএসএএফ)।

শিশুদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনটি তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গতবছর এক হাজার পাঁচটি শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, যা আগের বছরের চেয়ে ৭৬ দশমিক ০১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯ সালে প্রতিমাসে গড়ে ৮৪ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার

সংগঠনটি জানায়, ২০১৮ সালের তুলনায় গত বছর ধর্ষণের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। আক্রান্তদের মধ্যে ১৩৩ জনের বয়স ছিল এক থেকে ছয় বছরের মধ্যে। ঢাকা জেলায় ধর্ষণের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে।

২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ১৫টি জাতীয় দৈনিক থেকে তথ্যগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। বিএসএএফের তথ্যানুযায়ী, ভুক্তভোগী শিশুদের মধ্যে ৭৫ জন তাদের শিক্ষক এবং ১৪১ জন প্রতিবেশীর দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছে।

সোমবার ঢামেকের ওসিসিতে সরেজমিনে দেখা যায়, রবিবার (১২ জানুয়ারি) রাতে নরসিংদীতে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার হয়। সোমবার সকালে শিশুটিকে তার স্বজনরা ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে আসেন। তারা জানান, রবিবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বাসার পাশের এক দোকানে কলা কিনতে গেলে দোকানি মেয়েটির হাত পা বেঁধে ধর্ষণ করে। মেয়েটিকে উদ্ধার করে প্রথমে নরসিংদী সদর হাসপাতালে এবং পরে ওসিসিতে নিয়ে আসেন।

এদিকে, সোমবারই সাভার থেকে এসেছে ধর্ষণের শিকার পাঁচ বছরের এক শিশু। সকাল ১১টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। গত ৯ জানুয়ারি কামরাঙ্গীরচর এলাকাতে ধর্ষণের শিকার হয় ১৩ বছরের কিশোরী, পরদিন তাকে ওসিসিতে ভর্তি করা হয়। একইদিন রাতে ভাটারা এলাকাতে ধর্ষণের শিকার হয় ১২ বছরের এক শিশু।

এদিকে, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানে এই মুহূর্তে ভর্তি আছেন ১৩ জন, যার মধ্যে ধর্ষণের শিকার ৪ থেকে ৬ বছরের শিশুও রয়েছে। বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি রয়েছেন ধর্ষণের শিকার দুই কিশোরী, তাদের বয়স ১৪ এবং ১৭। সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি আছেন দুইজন যাদের বয়স ১৬ এবং ২০। তারাও ধর্ষণের শিকার।

ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, এই মুহূর্তে ওসিসিতে কেউ ভর্তি নেই। তবে চলতি বছরের শুরু থেকেই ধর্ষণের শিকার বেশ কিছু শিশু ভর্তি ছিল। যাদের মধ্যে এক শিশুর বয়স ছিল ৪। ওই কর্মকর্তা বলেন, এই ওসিসিতে ধর্ষণের শিকার হয়ে আসা নারীর মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি থাকে। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি থেকে জানা যায়, সেখানে ধর্ষণের শিকার ১০ বছরের এক কিশোরী ভর্তি আছে।

ঢামেকের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের সমন্বয়কারী ডা.বিলকিস বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,২০১৭ সালের আগস্ট মাস থেকেই ধর্ষণের হার আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। দেশের মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ নারী এবং শিশু। সেখানে নারী এবং শিশুরাই যদি এভাবে নির্যাতিত হয় তাহলে দেশের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে।

তিনি বলেন, দেশে আইন আছে। কিন্তু নানা কারণেই ধর্ষণ বন্ধ করা যাচ্ছে না। আর ধর্ষণের শিকার নারীদের মধ্যে চার মাসের শিশুও এসেছে এখানে। শিশু-কিশোরীই বেশি। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সাধারণত আত্মীয়-স্বজন, পাশের দোকানদার, ঘরের পাশে থাকা রিকশাচালকদের দ্বারা এই ধর্ষণগুলো বেশি হচ্ছে। আর শিশুদের যেহেতু প্রতিরোধক্ষমতা নেই,তাদেরকে সহজেই অনেক কিছু বোঝানো যায়, ভয় দেখানো যায় তাই এই সংখ্যাটা বেশি। আর ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি ইন্টারনেটের অবাধ ব্যবহার,পরিবারের বন্ধন কমে যাওয়াও ধর্মীয় অনুশাসন না থাকা এবং সমাজের অবক্ষয়ের কথা উল্লেখ করেন।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম বলেন,সাম্প্রতিক সময়ে নারী শিশুর প্রতি সহিংসতা এবং ধর্ষণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। সামাজিক অস্থিরতা এবং মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে এটা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন,বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বে রোল মডেল হলেও ধর্ষণের এই ঘটনা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।

শিশুরা হচ্ছে সবচাইতে দুর্বল গোষ্ঠী,আর তারা যেহেতু দুর্বল, তাই তারা সহজ টার্গেট এবং সহজ শিকার,তাদেরকে সহজেই প্রলোভনে ফেলা যায়— মন্তব্য করে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মা-বাবার ব্যস্ততা ও পরিবারের বড়দের অন্য কাজে বেশি ডাইভারসিটি বেড়ে যাওয়ায় শিশুদের প্রতি নিরাপত্তাবোধের জায়গা এবং তাদেরকে নিরাপদ রাখার জায়গাগুলো অনেক শিথিল হয়ে যাচ্ছে।

তবে সমাজের পিছিয়ে পড়া এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর শিশুরা এতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে কেন জানালে তিনি বলেন, কারণ এই শিশুদের সহজে প্রলোভিত করা যায়। তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাটাও নাজুক থাকে।

সুত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন।

 

আমি কখনো ভালো মা হতে পারিনি 

আমি কখনো ভালো মা হতে পারিনি


নুর এ নাজনিন শামলিন


আমি কখনো ভালো মা হতে পারিনি, অন্য সব আদর্শ মায়েদের মতো জোর করে খুব সকালে বাচ্চাদের ঘুম থেকে টেনে তুলে স্কুলে পাঠায় নি। বরং উল্টো মনে হতো ঘুমিয়ে থাক, কিসের এত পড়ালেখা। অফিস যাওয়ার সময় খুব সংগোপনে রেডি হতাম যাতে ওদের ঘুম না ভাঙ্গে। আহারে ঘুমিয়ে থাক আমার সোনা বাচ্চা দুইটা, সারা জীবন ই তো পড়ে আছে কি হবে এত পড়ালেখা করে?ওরা যাতে আরাম করে ঘুমাতে পারে তাই আমি খুঁজে খুঁজে ডে শিফটের স্কুলগুলিতে ওদেরকে ভর্তি করেছি।

আমি ভালো মা হতে পারিনি কারণ আমি কোনদিন ওদের নিজ হাতেই স্কুলের ড্রেস পড়িয়ে আদর করে সঙ্গে করে স্কুলে নিতে পারেনি, সে সময় আমি থাকতাম অফিসে । প্রথম দু একদিন হয়তো স্কুলে বসিয়ে দিয়ে আমি চলে আসতাম।নূহা আমার মেয়ে, ছোটবেলা থেকেই সবকিছু যেন একটু বেশীই বুঝতো।ও যখন আমার হাতটা ছেড়ে দিত কেমন পিছন ফিরে তাকাতে তাকাতে স্কুলে ঢুকতো, কারণ ও জানতো অন্য সব মায়ের মতন ওর মা ওর জন্য স্কুলে বসে থাকবে না। অর্ণব আমার ছেলে, দুচোখ জলে টলটল করত আর কি আকুতি নিয়েই না বলত, আম্মু তুমি অফিস যেও না, আমার সাথে থাকো, ওর আকুতি আমার মন ছুঁয়ে যেত। মাঝে মাঝে চোখ মুছতে মুছতে অফিসে যেতাম।

আমি ভালো মা হতে পারিনি, অন্য সব মায়েদের মতো হোম ওয়ার্ক না করার জন্য কোন দিন বকা দেই নি। পড়া করতে না চাইলে বই খাতা বন্ধ করে দিয়ে বলেছি আর পড়তে হবে না অনেক হয়েছে। কোনদিন বাসার টিচারদের পিছনে লাগেনি,কত দিন কত ঘন্টা পড়িয়েছে তার হিসাব করিনি, বরং রিকোয়েস্ট করছি স্যার আমার বাচ্চাটা পড়তে না চাইলে জোর করবেন না, ও যাতে আনন্দ নিয়ে পড়ে, আপনি আপনার মত করে পড়াবেন। হ্যাঁ, আমি আমার মতো করে ওদের পরিয়েছি। আমার ছেলেটা খুবই ফাঁকিবাজ টাইপের। হুজুর আসলে প্রায়ই আমি দেখতাম হুজুরকে নিয়ে মোবাইলে গেম খেলছে মহানন্দে। হুজুর কে কখনো কিছু বলতে পারতাম না, মনে হতো থাকনা আমার বাচ্চাটা কি আনন্দ নিয়ে না খেলছে!!

আমি ভালো মা হতে পারিনি, পারিনি আমার বাচ্চাদের কোন একটি আনন্দের মুহূর্তে ওদের পাশে থেকে বুকে জড়িয়ে ধরতে। আমার মেয়েটার যখন ফাইভে, এইটে বৃত্তির রেজাল্ট হয়, আমি হয়ত অফিসে অনলাইনে ওর রোল নাম্বার খুঁজছি, আমার মেয়েটা তখন বৃত্তি পাওয়ার আনন্দে একা একাই স্কুলের মাঠে ঘুরছে, কোন এক মায়ের কাছ থেকে মোবাইল চেয়ে ও আমাকে ফোন দিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে আর বলছে জানো মা আমি না ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছি , মোবাইলের অপর প্রান্ত থেকে আমিও কাঁদচ্ছি গভীর আনন্দে কিন্তু ভালোবেসে ওকে বুকে জড়িয়ে ধরতে পারিনি, পারিনি ওর ফুলা ফুলা গালে চুমু খেতে।

নূহার অভিমান ভরা কথা “আমি কোনোদিন কোনো ভালো রেজাল্টের পর তোমাকে জড়িয়ে ধরতে পারি নাই আম্মু, অপেক্ষা করতে হয়েছে কখন তুমি বাড়ি ফিরবে।” ভাবলাম এবার ক্ষ্যান্ত দেই।বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ, ওদের একটু সময় দেই। এই ভেবে চাকরি ছাড়া। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, ঠিক সেই সময় ধরা পড়ে আম্মার ক্যান্সার। আমি ছুটলাম আম্মার কাছে। আম্মার কাছ থেকে শুধু নিয়েছি কখনো কিছু দিতে পারি নাই। ভাবলাম এইতো সময় আমার সর্বোচ্চ দিয়ে আম্মার সেবা করব। নূহার ইন্টারমিডিয়েট, অর্নবের ক্লাস এইট খুব ইম্পর্টেন্ট সময়। আমি ভালো মা হতে পারি নাই কিন্তু আমার সন্তানরা, ওরা যেন আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত। ওরা আমাকে অভয় দিলো, “আম্মু নান ভাই কে সময় দাও।” এমনও সময় গেছে ওদের এক গ্লাস হরলিক্স পর্যন্ত বানায় দিতে পারি নাই, ওদের পরীক্ষার সেন্টারে পর্যন্ত যেতে পারি নাই। আম্মার কেমো, অসুস্থ আম্মাকে নিয়ে দিনরাত আমি হসপিটালে, ওরা আমাকে নিরাশ করে নাই। নূহা ৯৩ পারসেন্ট মার্কস পেয়ে এইচএসসিতে গোল্ডেন আর অর্ণব ক্লাস এইটে বৃত্তি পেয়ে চমকে দিল আমাকে। আমি ভয়ে ছিলাম নূহা মেডিকেলে চান্স পাবে তো? নূহা বলল, ” আল্লাহ ভরসা’ ।ওর নান ভাইয়ের খুব ইচ্ছা ছিল নূহা ডাক্তার হবে। আম্মা মারা যাওয়ার কিছুদিন আগেই নূহার রেজাল্ট হল। নূহা ওর নান ভাই এর ইচ্ছা পূরণ করতে পেরেছিল, ও চান্স পেলো ঢাকায়।

আমি ভালো মা হতে পারি নাই আর এই জন্যই হয়তো ওরা ইন্ডিপেন্ডেন্ট। ওরা নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে। ওরা প্রতিনিয়তই দেখেছে ওদের মা আর দশটা মায়ের মত না কি প্রচণ্ড পরিশ্রম ই না করতে পারে। অসম্ভব প্রাণশক্তিতে ভরা ওদের মা একজন স্বাবলম্বী নারী। আমার মেয়েটাও চায় ওর মায়ের মত প্রচন্ড আত্ম বিশ্বাসী, স্বাবলম্বী হতে। আমি ভালো মা হতে পারিনি কিন্তু ওদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের জন্ম দিতে পেরেছি, কিভাবে আকাশ ছুঁতে হয় সে স্বপ্ন দেখাতে শিখিয়েছে আর সবশেষে ভালো বন্ধু হতে পেরেছি।

 

১১ বছরের শিশুকে ধর্ষণ

১১ বছরের শিশুকে ধর্ষণ


নারী সংবাদ


গত বৃহস্পতিবার ৯ তারিখ রাতঘর ধর্ষণ করে চারজন নরপশু ১১ বছরের এক শিশুকে। ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানীর ভাটারায়। ধর্ষণের পর বিবস্ত্র ও রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে গেছে দুর্বৃত্তরা। গুরুতর অবস্থায় শিশুটিকে গতকাল ১০-ই জানুয়ারি, শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করেছেন পরিবার। এর একদিন আগে থেকে শিশুটি নিখোঁজ ছিল।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, ভাটারা এলাকাতে পরিবারের সঙ্গেই থাক তো শিশুটি। কিন্তু ৯ জানুয়ারি মানে বৃহস্পতিবার তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। কে বা কারা বাচ্চাটি বাসা থেকে বের হলে তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে হাত-পা বেঁধে রাতভর ধর্ষণ করেন। জানা যাচ্ছে, চারজন দুর্বৃত্ত ছিলো। যাদের পরিচয় এখনও জানা যায়নি।

ছোলমাইদ এলাকার একটি সড়ক থেকে বিবস্ত্র অবস্থায় তাকে পরিবারের সদস্যরা উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে যায়। এরপর লোক লজ্জার ভয়ে শিশুটিকে হাসপাতালে নিতে চায়নি। কিন্তু শারিরীক অবস্থা আরো খারাপ হওয়ায় পরে শুক্রবারে রাতেই ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে ভর্তি করা হয় শিশুটিকে।

শিশুটির বড় বোন জানান, ‘প্রথমে লোক লজ্জায় ও ভয়ের কারণে বিষয়টি কাউকে জানাতে চাইনি। পরে পরিবারের সম্মতিক্রমে শুক্রবার রাতে তাকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যাই। এখন সেখানেই ভর্তি রয়েছে।’

ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোক্তারুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাতে শিশুটি বাসা থেকে বের হলে নিখোঁজ হয়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর শুক্রবার ভোরে বিবস্ত্র ও রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।

 

ময়মনসিংহে মাদরাসাছাত্রীকে দলবেঁধে ধর্ষণ

ময়মনসিংহে মাদরাসাছাত্রীকে দলবেঁধে ধর্ষণ


নারী সংবাদ


ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলায় এক মাদরাসা ছাত্রীকে (১৪) দলবেঁধে ধর্ষণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। বুধবার (০৮ জানুয়ারি) রাতে তাদের আটক করা হয়।

বৃহস্পতিবার (০৯ জানুয়ারি) বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুক্তাগাছা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ।

তিনি বলেন, মুক্তাগাছার এক কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

ধর্ষণের শিকার মাদরাসা ছাত্রী জানায়, মঙ্গলবার (০৭ জানুয়ারি) বিকেলে বোরকা কিনতে মুক্তাগাছায় যাই। বোরকা কেনার পর বাড়িতে ফেরার জন্য সিএনজি খোঁজার সময় পূর্বপরিচিত ওবাইদুলের সঙ্গে দেখা হয়। সে আমাকে বলে আমিও যাব, তাই তার সঙ্গে সিএনজিতে উঠি। ওই সময় সিএনজিতে কালো বোরকা পরা আরও একজন ছিল। সিএনজি ভিন্নপথে চলতে শুরু করলে আমি চিৎকার করি। এ সময় বোরকা খুলে এক যুবক আমার মাথায় পিস্তল ধরে বলে চিৎকার করলে মেরে ফেলব। এরপ আমাকে বোররচর ইউনিয়নে নির্জন এক বাড়িতে নিয়ে যায় তারা।

সেখানে শাকিল, ওবাইদুল, নাঈম আমাকে দলবেঁধে ধর্ষণ করলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পরদিন বুধবার সকালে ওই তিনজন আমাকে একটি গাড়িতে তুলে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। বিষয়টি মা-বাবাকে জানালে আমাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ বলেন, বোরকা কিনতে মুক্তাগাছায় গেলে শাকিল, ওবাইদুল ও নাঈম নামে তিন যুবক ওই কিশোরীকে তুলে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়েছে। দুজনকে আটকের বিষয়টি সদর থানা থেকে আমাকে জানানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে গ্রেফতার করা হবে।

সুত্রঃ যুগান্তর।

 

নিজের প্রতি যত্ন নিন

নিজের প্রতি যত্ন নিন


মিথিলা ফেরদৌস


একবার এক ভাইয়া বলেছিলো,”যেদিন তোমার জামাই তোমার নামে সমস্ত সম্পত্তি লিখে দিবে, সেদিন বুঝবা,তোমার চেহারা খারাপ হয়ে গেছে। সে তোমাকে নিয়ে এখন নিশ্চিন্ত।”

সেদিন, আমার জামাই হঠাৎ ঘোষণা দিলো, সে কিছুদিন পরে তার সমস্ত সম্পত্তি আমার নামে লিখে দিবে। হঠাৎ হকচকায় উঠি। তারমানে চেহারার কি এতই দুরাবস্থা এখন আমার? আরেক বিপদ, আলতাফের সম্পত্তি বলতে কিছু পুরান সার্ট, প্যান্ট, জুতা, শেভিং কিটস, শাওয়ার জেল এইসব আলতু ফালতু জিনিস ছাড়া আর তেমন কিছু তো নাই।এইসব দিয়া আমি করবো কি? তারমানে কি? আমি কি আম ছালা দুইটাই হারাচ্ছি?!! ব্যাপার ক্লিয়ার হওয়ার জন্যে, জিগাইলাম-

♥তোমার সম্পত্তি মানে?

♦তিন বছর পর,ফ্লাটের জন্যে লোন পাবো,সেইটা তোমার নামে লিখে দিবো।

♥ মানে কি?লোনের গ্রান্টার কে?

♦ তুমি, আবার কে?

♥আজব,আমার সম্পত্তির দরকার নাই,আমার লোনের বাড়ির দরকার নাই।মাফ চাই।ভাড়া বাড়ি আমার ভীষন পছন্দ।

প্রতি মধ্য বয়সি মহিলারা, এই এক সমস্যায় ভোগে।

সংসার, চাকরী, বাচ্চা, ক্যারিয়ার, বাড়ি,
গাড়ি, ব্যাংক ব্যালান্স করতে গিয়ে নিজের প্রতি যত্ন নিতেই ভুলে যায়। অথচ এই সময় একটা মেয়ে সৌন্দর্য পরিপুর্নতা পায়। এর ফলে সে কিছু ক্রাইসিসে ভোগে। সে দিনে দিনে ইন্সিকিউরড হয়ে পরে, তাছাড়া জীবনটাকে পুর্নভাবে ইনজয় করতে পারেনা।
এখন অবশ্য ফেসবুক হয়ে, একটা সুবিধা হয়েছে, অনেকেই সাইজা গুইজা কিছু ছবি আপলোডায়, তাতে কিছু কমেন্ট থাকে এমন, excellent, very nice, beautiful, অসাধারণ, খুব সুন্দর ইত্যাদি। সত্য হোক, মিথ্যা হোক শুনতে কিন্তু ভালোই লাগে। আমি অবশ্য এই গ্রুপে পরি। ফেসবুকে ছবি আপলোড ছাড়া, চুলটাও আচড়াতেও ইচ্ছা করেনা।রুপচর্চাতো দুরে কথা। খুব কম সংখ্যক আছে, যারা রুপচর্চা, পরচর্চা, পার্টি-ফাংশন নিয়া বিজি, এদের জামাইরা ভীষণ কর্মঠ । এরা হইলো রাজকপালী গ্রুপের।

একইভাবে প্রতি মধ্যবয়সি পুরুষদের বেশিরভাগ ছোটে বাচ্চার ভবিষৎ ভেবে।কিছু বিপথে যায়, তারা আবার নিজের চেহারার ব্যাপারে অতি যত্নশীল (এদের বউরা সাধারণত অতিশয় কর্মঠ হয়, ফলে এদের সংসারের প্রতি তেমন কোন দায়িত্ব থাকেনা), কিছু পথ বিপথ কোন পথেই থাকেনা। আকাম্মা গ্রুপের মানুষ এরা।

মানুষের জীবনের মুল্যবান সময়টুকু টাকার পিছনে ঘুরে নষ্ট করার কোন মানে নাই। বুড়া বয়সে ঔষধপত্রের খরচ ছাড়া এই টাকা কোন কাজেই দিবে না। আর ছেলে মেয়েকে তার নিজের ভবিষ্যৎ ভাবতে দিন। যাকে যত কম ভাবতে দিবেন, সে ততই অপদার্থ হবে। তবে তার শৈশব কৈশোরের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতাও নিশ্চিত করা জরুরী। তার সাথে নিজের জীবনকেও ইনজয় করার ও দরকার। তাই ঠিক যতটুকু দরকার ততটুকুই ছুটুন, তার বাইরে না।

© মিথিলা ফেরদৌস

 

“মেয়ে” তুমি মন জিতে নিলে

“মেয়ে” তুমি মন জিতে নিলে


নাজমুল হুদা নাজ


দুপুর আনুমানিক ২.৩০ হবে। রাস্তার পাশের চেনা দোকানে চা খাচ্ছি। একটি মেয়ে, বয়স ২৩ কি ২৪ হবে, ইতস্তত করতে করতে দোকানে ঢুকলো। হাতে একটা স্বচ্ছ ফাইল। ভিতরে কিছু মার্কশিট, সার্টিফিকেট এসব দেখা যাচ্ছে! সারা শরীরে প্রসাধনের বিন্দুমাত্র চিহ্ন না থাকলেও ঘাম আর রোদমাখা মুখটা বেশ মায়াময়। দোকানদারের সাথে মেয়েটার কিছু কথোপকথনের ছিটেফোঁটা….

মেয়ে- ভাই, এখানে ভাত বা রুটি কিছু পাওয়া যাবে?

দোকানী- হ্যাঁ, ভাত পাবেন, বলুন কি কি খাবেন? ডাল, ডিম, সব্জি, রুই মাছ, পাবদা মাছ, বয়লার মুরগীর মাংস।

মেয়ে- এমনি শুধু ডাল আর ভাত কত ভাই?

দোকানী – ভাত, ডাল, সবজি ৩৫ টাকা।

মেয়ে – আমার সবজি চাই না, আমায় শুধু ভাত আর ডাল দিন!

৩০ টাকায় হয়ে যাবে তো?

দোকানী – আচ্ছা বসুন দিচ্ছি!

এরপর একটা ফোন আসে মেয়েটার মোবাইলে।

মেয়ে – ” হ্যাঁ মা বলো!

হ্যাঁ ! হ্যাঁ ব্যাংকে ইন্টারভিউ ভালো দিয়েছি! হ্যাঁ খেয়েছি। ভাত মাছ। তুমি ওষুধগুলো খেয়েছ?….. হ্যাঁ আমি ৫ টার ট্রেনটা ধরবো… আচ্ছা ভাইকে টিউশান থেকে ফেরার সময় স্টেশনে দাঁড়াতে বলবে……আচ্ছা রাখো।”

ফোনটা রেখে কয়েকটা সেকেন্ড বাইরের দিকে আনমনে তাকিয়ে থাকলো….. হয়তো অসুস্থ মা.. স্কুল পড়ুয়া ছোট ভাইয়ের সুদিন এনে দেওয়ার সাজানো দিনের ছবিগুলো চোখে ভিড় করছিলো…

দেখে কি রকম যেন একটা শ্রদ্ধা শ্রদ্ধা ভাব চলে এলো… একটা অজানা অচেনা মেয়ের জন্য.. কি যেন বলে এই বয়সটাকে… বালিকার চেয়ে বড়.. যুবতীর চেয়ে ছোট।

নারী স্বাধীনতা কি- ওর কাছ থেকে একবার শুনতে খুব ইচ্ছে করছিলো, মনে মনে শুভকামনা জানালাম..

এই চাকরির আকালের যুগে হে বালিকা তুমি যে বাইরে এসে আগুন রোদের তলায়.. শক্ত মাটিতে নেমে এসেছ যুদ্ধের জন্য, এখানেই তুমি যুদ্ধটা অর্ধেক জিতেছো.. আর বাকী অর্ধেক নিজের চাকরির টাকায় সত্যি সত্যি মাছ ভাত খাওয়ার পর জিতবে…. এ পর্যন্ত ঘটনাটা হয়তো সাধারণ ছিলো.. যদিও “মেয়ে” তুমি মন জিতে নিলে..

কিন্তু ঘটনাটা আরও বাকী….

দোকানী ভাতের থালাটা সাজিয়ে মেয়েটির সামনে রেখে বললো,
আপা আমি ভুল করে সব্জিটা দিয়ে ফেলেছি, আপনি খেয়ে নিন প্লিজ!!

ওই তিরিশ টাকাই দিয়েন।

মেয়ে -কিন্তু আমি তো শুধু ডালভাতই….

দোকানী – আমি একদম ভুলে সব্জিটা দিয়ে ফেলেছি.. আপনি প্লিজ খেয়ে নিন.. তিরিশ টাকায় নেবো আমি…আমার ভুল.. আপনি না খেলে এতোটা খাবার নষ্ট হবে আমার..

ওদের মতো আমিও ভেবেছিলাম নিছকই ভুল…

বিল দেয়ার সময় দোকানদোর কে জিজ্ঞাসা করলাম, ভাই সত্যিই কি ভুল করে সবজিটা দিয়েছেন?
দোকানদার কানের কাছে এসে বললো, “শুধু ব্যবসায় লাভ খুঁজলে হবে ভাই! এরকম ভুলগুলো করার সুযোগও খুঁজতে হবে:) ওর খুব খিদে পেয়েছে। দেশের বাড়িতে আমারও বোনটার বয়স এরকমই” বলে আবার নির্লিপ্ত মুখে চা, সিগারেট, ভাত, তরকারির রাজ্যে হারিয়ে যায়।

আমি খুঁজে পেলাম না, কার জন্য বেশী ভালো লাগা উচিৎ! মেয়েটা নাকি দোকানদার!!

হয়তো একটা কথা বলা যেতে পারে,
যে যুদ্ধ জিনিসটা বোঝে, সেই যোদ্ধার ঘাম, ক্ষুধার মূল্য দিতে জানে।

 

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি’ বললে ধর্ষক আমাকে মেরে ফেলবে

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি’ বললে ধর্ষক আমাকে মেরে ফেলবে


তামান্না সেতু


একটা সাক্ষাৎকারে মেয়েটা বলেছে, “সে আমাকে জিজ্ঞেস করছিল আমি কি করি, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি এটা বলিনি, আমার মনে হয়েছে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি’ বললে সে আমাকে মেরে ফেলবে”!

ক্রিমিনাল সাইকোলজিস্টরা এই লাইনটি নিয়ে ভাবুন। ঠিক কী কারনে নারীর উপর হিংস্রতা বাড়ছে গবেষণা করুন। একটি মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে এটি তাকে হত্যার, ধর্ষণের কারণ হতে পারে এই ভাবনা আসছে কোথা থেকে ভাবুন।

এসব এক দিনে হয়নি। এই একজন ধর্ষককে ধরে শাস্তি দিয়েও এই ঘটনা থেকে কিন্তু মুক্তি নেই। এই হিংস্রতার খোরাক রোজ যোগান দেয়া হয়! বারবার বলা হয়, ‘মাইয়া মানুষ ক্যান বাড়ির থিকা বাইর হবে? তারা কেন কলেজ ভার্সিটিতে পড়বে? কেন চাকরী করবে? একা একা চলাফেরা করবে? এইসব তো পাপ! এরা পাপী’!

ধর্ষকের বিচার চান, বিচার করুন। কিন্তু তারপর তৃপ্তিতে ঘুমিয়ে যেয়েন না। তাদের সাইকোলজিটা বুঝুন। ওটার খোরাক আসে কোত্থেকে খুঁজুন। সেই জায়গাটা বন্ধ না করে কিচ্ছু হবে না।

সেই সাহসী মেয়েটাকে আমার শত কোটি সালাম যে মার খেয়ে, রেইপড হয়ে, জ্ঞান হারিয়ে আবার উঠে দাঁড়িয়েছে। তখনো সেখানে ওই লোক উপস্থিত থাকার পরও সমস্ত শক্তি নিয়ে পালিয়ে এসেছে, গাড়ি করে ক্যাম্পাসে এসেছে এবং পুরো ঘটনা চেপে না যেয়ে পুলিশই জানিয়েছে।

ওর যা যা করার ছিল সব করেছে। আমি দোয়া করি আমাদের রাষ্ট্র যেন মেয়েটির সমান সাহসী হয়ে ওঠে। যতো দ্রুত সম্ভব লোকটি ধরা পরুক। সর্বোচ্চ শাস্তি হোক। কিন্তু……. প্লিজ ক্রিমিনালের ক্রাইম করার সাইকোলজিটা পড়ুন। ভাবুন। ভেবে বের করুন….

আরো একবার মেয়েটার দেয়া স্টেটমেন্টের এই অংশটুকু পড়ুন, “সে আমাকে জিজ্ঞেস করছিল আমি কি করি, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি এটা বলিনি, আমার মনে হয়েছে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি’ বললে সে আমাকে মেরে ফেলবে”!!!!!

—তামান্না সেতু

 

মনের আড্ডায় ‘শিশু’


স্বাস্থ্যকথা


বড়দের মতো মনের যন্ত তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ শিশুদের। শিশুদের বেড়ে ওঠা সুস্থ স্বাভাবিক হবার জন্য মনের যত্নের কোন বিকল্প নেই।

তারই ধারাবাহিকতায় Mind-Blowing Psychological Team এর আয়োজনে এবং Save The Future Foundation, Mirpur Branch এর সহায়তায় “মনের আড্ডা উইথ কিডস” অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা কিভাবে নিজেদেরকে যৌন হয়রানি মত বিষয়গুলো থেকে রক্ষা করবে, কিভাবে নিজেদের শারিরিক যত্নের পাশাপাশি মনের যত্ন নিতে পারে, সেই সম্পর্কে ধারণা দেওয়া, এবং আরো অনেক অনেক সাইকোলজিকাল গেমের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদেরকে খেলার চলে আনন্দ দেওয়ার মাধ্যমে শিশুদেরকে শেখানোর চেষ্টা করিছি কিভাবে সমাজের বোঝা নয়, কিভাবে নিজের মনকে ভালো রেখে সমাজের সম্পদে পরিণত হতে হয়, এবং সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা কিভাবে সীমিত সুযোগ ভোগ করেও শান্তিতে বসবাস করতে পারে।

এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখে কাজ করে পুরো টিম।

Mind-Blowing Psychological Team এর পক্ষ থেকে বলা হয়, “সবাইকে ধন্যবাদ যারা এই প্রোগ্রাম আর্থিকভাবে সাহায্য করেছেন। আশা করি আপনাদের সকলের ভালবাসায় আমরা আগামী দিনগুলোতে মানসিক স্বাস্থ সেবা সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারবো।”

Mind-Blowing একটি অলাভজনক মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান কারি সেচ্ছাসেবী সংগঠন। আপনি চাইলে আমাদের সাথে এড হতে পারেন। সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আমাদের সাথে থাকার জন্য।

 

একটি বিপ্লব হতে পারে

একটি বিপ্লব হতে পারে


আফরোজা হাসান


একটি বিপ্লব হতে পারে নিজেদের গড়ার জন্য
সুসংবদ্ধ আন্দোলন জীবনকে করতে পারে পূর্ণ

ব্যক্তি সমাজ পরিবার জাতি দল নির্বিশেষে
তুলে ধরবে হাল আরেকবার গভীর বিশ্বাসে

হবে সবাই কল্ল্যাণকামী পরস্পরের তরে
ঝড়ের মোকাবিলায় দেবে না হাত ছেড়ে

মনের আশা জাগানিয়া স্বত্বার আহ্বানে দিয়ে সাড়া
আরেকটিবার সংঘবদ্ধ হই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছি যারা

হিংসা বিদ্বেষ রূপী ঘুণপোকার বন্ধ করে রসদ
পুষ্পিত ভালোবাসা রুপে বিলিয়ে দেই দরদ

সত্য ও সুন্দরের স্বপ্নে একে অপরের হাত ধরে
দুর্গম পথ পেরিয়ে চলো পৌঁছে যাই প্রশান্তির নীড়ে

যত মতপার্থক্য বিভেদ ভুলি আখিরাতের কল্যাণে
জ্বালাই মশাল প্রতিটি প্রাণে আলোক নগরী নির্মাণে……

আফরোজা হাসান

 

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-১৩

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-১৩


আফরোজা হাসান


মাতৃত্বের গুণাবলী মেয়েরা মনেহয় জন্মের সময়ই সাথে করে নিয়ে আসে। তাই তো ছোট্ট একটা বাচ্চা মেয়েকেও দেখা যায় পরম মমতায় আদর-যত্ন করছে তার খেলনা পুতুলটাকে। শাবাবের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ভাবনাটা মনে এলো আরিফীর। শাবাবের মত অস্থির সদাচঞ্চল একটা মেয়ে হঠাৎ কেমন বদলে গিয়েছে গত কয়েকদিনে। গত দুই সপ্তাহের প্রতিটা দিন মাহাম ও শাবাব চাইল্ড হোমে এসেছে। সারাদিন বাচ্চাদের সাথে সময় কাটিয়ে রাতে বাসায় গিয়েছে। স্বাভাবিক বাচ্চাদের সাথে সময় কাটানো আর এই স্পেশ্যাল বাচ্চাগুলোর সাথে সময় কাটানোর মধ্যে অনেক পার্থক্য। কিন্তু নিজেদের আদর-ভালোবাসা-মমতার চাদরে জড়িয়ে মাহাম ও শাবাব ঠিকই বাচ্চাদের মনে স্থান করে নিয়েছে।

শাবাব তো আরিফীকে নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে দেশে ফিরে পরীক্ষা শেষ হলেই আবার চলে আসবে এখানে। এই বাচ্চাগুলোর সেবায় আত্মনিয়োগ করতে চায় সে। আরিফী শাবাবকে এত সিরিয়াস হতে কোনদিন দেখেনি। অবশ্য শাবাব সিরিয়াস হতে পারে এই ধারণাই ছিল না তার। একটা বাচ্চাকে হেঁটে হেঁটে ঘুম পারাচ্ছে শাবাব। চেহারা দেখে মনেহচ্ছে গভীর কোন চিন্তায় মগ্ন। এগিয়ে গেলো আরিফী। শাবাবের কাঁধে হাত রেখে বলল, ঘুমিয়ে গিয়েছে শুইয়ে দাও। বাচ্চাটাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বাইরে বেড়িয়ে এলো দু’জন। এত চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন তোমাকে? জানতে চাইলো আরিফী।

শাবাব জবাব দিলো, নিজের সন্তান হলে মেয়েরা খুব স্বার্থপর টাইপ হয়ে যায় সেটা কি তুমি জানো?

হুম…শুনেছি। কিছু অবশ্য দেখেছিও।

আমিও এমনটা হতে দেখেছি। আমাদের এক ক্লাস ফ্রেন্ডের বোন বাচ্চা হবার সময় মারা গিয়েছিলো। এরপর বোনের স্বামীর সাথে ওর বিয়ে হয়েছে। অনেক আদর করতো বোনের বাচ্চাটিকে। কিন্তু নিজে কনসিভ করার পর বাচ্চাটিকে ওর নানীর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। কারণ বাচ্চার খেয়াল রাখতে গেলে নিজের শরীরের যত্ন নিতে পারবে না ঠিকমত। যদি ঐ বাচ্চাটি ওর নিজের হতো তাহলে কি এই কাজ করতো? কখনোই না। আমি তাই ঠিক করেছি আমরা কখনই বাবু নেবো না।

হাসি চাপলো আরিফী। এর সাথে আমাদের বাবু নেবার কি সম্পর্ক? জানতে চাইলো।

শাবাব বলল, নিজের বাবু হলে আমিও যদি স্বার্থপর হয়ে যাই তাহলে? তখন যদি আর আমার এই বাবুগুলোর কাছে আসতে ইচ্ছে না করে?

তুমি এভাবে চিন্তা করছো কেন শাবাব?

কারণ এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক। মাতৃত্ব মেয়েদের সবচেয়ে স্পর্শকাতর জায়গা। মেয়েদের কাছে তাই নিজের সন্তান সবচেয়ে বেশি স্পেশ্যাল। নিজের সন্তানকে দুনিয়ার সব দুঃখ-কষ্ট থেকে আগলে রাখতে চায় সবসময়।

এই ব্যাপারে আমি তোমার সাথে একমত না হয়ে পারছি না। শুধু দুঃখ-কষ্ট কেন কিছু কিছু মা আছেন যারা তাদের কন্যাদের তাদের স্বামীদের কাছ থেকেও আগলে রাখেন।
শাবাব চোখ বড় বড় করে বলল, খবরদার আমার মামণিকে মিন করে কিছু বলবে না।

আরিফী হেসে বলল, না বলে কোন উপায় আছে? চাচী যেভাবে তোমাদের দুবোনকে পাহাড়া দেন, অবিবাহিত মেয়েদেরকেও এভাবে পাহাড়া দেয় কিনা কোন মা সন্দেহ। সুতরাং চাইলেও আমরা কখনো বাবু নিতে পারবো কিনা সেটা একমাত্র আল্লাহ জানেন। কেননা শ্বাশুড়ি আম্মা তো সীসা ঢালা প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আমাদের মাঝে। আমি লেখক হলে ‘শ্বাশুড়ি যখন ভিলেন’ শিরোনামে একটা গল্প লিখে ফেলতাম।

আরিফীকে মেরে শাবাব বলল, অনেক খারাপ কথা বলা শিখেছো তুমি। আমার মামণি যা করে ঠিকই করে। এমন খারাপ ছেলের কাছে আসতে দেবে কেন আমাকে? যাও বসবোই না তোমার কাছে। শাবাব উঠে হাঁটতে শুরু করলে। আরিফীও হাসতে হাসতে পিছু নিলো।

চলবে…
পর্ব-১২

 

বান্ধবীর কনভোকেশন আমার অনুভূতি


বান্ধবীর কনভোকেশন আমার অনুভূতি


মিথিলা ফেরদৌস


শিরিন আমার গেন্দা কালের বান্ধবী।ছোটবেলা থেকেই কি যে মিষ্টি ছিল!পড়াশুনায়ও খুব ভাল ছিল।আর সারাক্ষন হাসতেই থাকতো,পুরা ক্লাস জুড়ে ওর বান্ধবী।কিন্তু কবে যে ও প্রেমে পড়লো,কবে যে বিয়ে হয়েছিল!কিছুই জানতে পারিনি।এস এস সি এর পর ওর সাথে আর যোগাযোগ হয় নাই।

ফেসবুকের কল্যানে ওর সাথে যোগাযোগ হয় আবার।মজার ব্যাপার তখন জানতে পারি শিরিনের মেয়ে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে পড়ছে।যেখানে আমার ছেলে এখনও প্রাইমারির গন্ডি পেড়োয় নাই।

হাসিখুশি শিরিন আগের মতই হাসে।আগের মতই সুন্দরী বরং আগের চেয়েও বেশি সুন্দর। তিন ছেলে মেয়ের কচি মুখের মা।

কিছুদিন আগে শিরিনের মেয়ে ডাক্তার হয়েছে,ইন্টার্নী করছে,মেয়ের বিয়ের দাওয়াতও পেলাম।

কয়দিন আগে শিরিনের ফেসবুকে একটা ছবি দেখে মন ভরে উঠে।ওর মেয়ের কনভোকেশন,মেয়ে ছুটি নিয়ে মায়ের জন্যে কনভোকেশনের গাউন নিয়ে গেছে।কারণ তার মায়ের একটা ইচ্ছে ছিল,কনভোকেশনের গাউন পরে ছবি উঠানো।

আগেই বলেছি,শিরিন ভাল ছাত্রী ছিল,অনার্স মাস্টার্স কমপ্লিট করে বিসিএস ভাইভা পর্যন্ত গিয়ে ফিরে এসেছে।এরপর বাচ্চাদের নিয়ে, সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরেছিল।ওর বাকি দুইজন ছেলে মেয়েও খুব ভাল স্টুডেন্টস।মানে একজন সার্থক মা শিরিন।

শিরিনকে নিয়ে এই লেখার একটা বিশেষ উদ্দেশ্য আছে।আমদের জীবনের একটা সময় আসে,যখন আমরা বুঝি বাচ্চাদের গড়ে তোলাই সবচেয়ে বেশি জরুরী।অনেক উচ্চশিক্ষিত মা’ই তাদের ক্যারিয়ার স্যাক্রিফাইস করেন বাচ্চাদের জন্যে।শিরিনের মত এমন অসংখ্য মায়েদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা।

আমার বন্ধু লিস্টে এমন আরেকজন জুনিয়র বন্ধু আছে।নাফিসা একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার।সেও বাচ্চাদের নিয়ে,সংসারে সময় দিয়ে খুব সুখি।শিক্ষা মানেই সবসময় চাকরি করা না।

একজন সুশিক্ষিত মা’ই পারে একজন সন্তানদের জীবন সুন্দর ভাবে গড়ে দিতে।অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা অবশ্যই দরকার।কিন্তু একটা নির্দিষ্ট পরিমানের বেশি অর্থের খুব একটা দরকার হয় না,যদি সন্তানদের সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলা যায়।তাদের জন্যে সঞ্চয়ের দরকার হয় না।যাদের সন্তান মানুষের মত মানুষ হয় না,তাদের জন্যেই প্রচুর অর্থের প্রয়োজন,সেইসব বাবা মায়েরাই চুরি করে।

যাইহোক এখানে প্রশ্ন আসবে,মেয়েদের কেন ক্যারিয়ার স্যাক্রিফাইস করতে হবে?!উত্তর যারা বোঝার তারা ঠিকই বুঝবে।তবে,এই যে আমি এত বড় বড় কথা বলছি,আমি নিজেও এমনটাই ভাবতাম,এত কষ্ট করে পড়েছি কি সংসার করার জন্যে?তবে ক্যারিয়ারিস্ট মেয়েদেরও অনেককেই দেখেছি,সুন্দর করে সংসার করতে,বাচ্চা মানুষ করতে দেখেছি।যাইহোক,যে মেয়েরা ক্যারিয়ার স্যাক্রিফাইস করে বা ক্যারিয়ারের সাথে থেকেও সুন্দর করে বাচ্চাকে গড়ে তুলছেন সবার জন্যে আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালবাসা সবসময়।

©মিথিলা ফেরদৌস

 

কুড়িগ্রামে চটের বস্তা গায়ে দিয়ে এক বৃদ্ধার শীত নিবারণের ছবি ভাইরাল,

কুড়িগ্রামে চটের বস্তা গায়ে দিয়ে এক বৃদ্ধার শীত নিবারণের ছবি ভাইরাল,


নারী সংবাদ


মো. আখতারুজ্জামান : আমরা শীতকে উপভোগ করার জন্য নানা পরিকল্পনা করে থাকি। আবার অনেকেই এই শীতেই নিদারুণ কষ্টও করে। সেই কষ্টের দৃশ্য মোবাইল ফোনে তুলে সোশাল মিডিয়া দিলে তা ভাইরাল হয়ে যায়। এমনই এক ঘটনা ঘটেছে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নে।
নাজমুল কুড়িগ্রাম নামের একজন তার ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দেন। পরে রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেখানকার ইউপি চেয়ারম্যানকে ওই বৃদ্ধার বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে বলেন।
নাজমুল তার স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘ছবিটা ১৯৭৪ সালের মহাদুর্ভিক্ষের সময়ের নয়; ২০১৯ সালের আজকের। যখন আমাদের মাথাপিছু আয় ১৯০৯ ডলার বা প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। কুড়িগ্রামের ১০০ জনে ৭১ জন মানুষ যে দরিদ্র তা বোঝাতে এই ছবিটাই যথেষ্ট বলে মনে করি। আমাদের রাজারহাটের ছিনাই ইউনিয়নের মহিধর এলাকায় শীতবস্ত্র দিতে গিয়ে চটের বস্তা গায়ে দিয়ে শীত নিবারনের এই চিত্রটা ধারণ করেছে এক ছোট ভাই। খোঁজ নিলে দেখা যাবে টাকার অভাবে হয়তো তার বয়ষ্ক ভাতা হয় নাই, স্বামী মারা গেলেও বিধবা ভাতা হয়তো এই “মা” পাননা কারণ ঘুষের ওই টাকা তার নাই। খড় বা সিন্ডার বেড়া দিয়ে বানানো ঘরটার গঠন দেখলেই বুঝা যায় কতোটা অসহ্য যন্ত্রণায় এতোদিন ছিলেন তিনি। সামান্য একটা কম্বলও জোগাড় হয়নি।
ধন্যবাদ কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়ন মানব কল্যাণ সংগঠনকে এ বৃদ্ধ মায়ের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। আমরা গরিবরাই নিজেদের কষ্টের টাকায় এসব অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে থাকবো, ইনশাআল্লাহ।’ পোস্ট দেয়ার কয়েক ঘন্টা পরে রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার যোবায়ের হোসেন ছিনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে অসহায় সেই বিধবার বয়ষ্ক ভাতা আছে কিনা সে ব্যাপারে খোঁজ নিতে বলেন। না থাকলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়াসহ পরিবারের সার্বিক ব্যাপারে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন।

সুত্রঃ আমাদের সময়।

 

মুখে ভর দিয়ে লিখেই পিইসিতে জিপিএ ৫ পেল লিতুন জিরা

মুখে ভর দিয়ে লিখেই পিইসিতে জিপিএ ৫ পেল লিতুন জিরা


নারী সংবাদ


দুই হাত-পা ছাড়াই জন্ম নেয়া লিতুন জিরা মুখে ভর দিয়ে লিখেই এবার পিইসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে।

লিতুন জিরা যশোরের মনিরামপুর উপজেলার শেকপাড়া খানপুর গ্রামের হাবিবুর রহমানের মেয়ে। সে এবার উপজেলার খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিইসি পরীক্ষায় অংশ নেয়।

লিতুন জিরা পরনির্ভর হয়ে সমাজের বোঝা হতে চায় না। লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হয়ে আরও ১০ জন মানুষের মতো আত্মনির্ভরশীল হতে চায় জন্ম থেকে দুই হাত-পা ছাড়া জন্ম নেয়া লিতুন জিরা। মুখ দিয়ে লিখেই মেধার সাক্ষর রেখেছে এই শিক্ষার্থী।

স্থানীয়রা জানান, লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহী লিতুন জিরা প্রখর মেধাবী। হুইল চেয়ারেই বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করে প্রখর মেধাবী এ-প্লাস পেয়ে লিতুন জিরা মেধার সাক্ষর রাখল। বর্তমানে হুইল চেয়ারটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তা চলাচলের প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

মেধাবী এ শিক্ষার্থীর বাবা উপজেলার এ আর মহিলা কলেজের প্রভাষক। তিনি গত ১৭ বছর ধরে ওই কলেজে চাকরি করলেও আজও কলেজটি এমপিওভুক্ত হয়নি। তার বাবাই সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। কিন্তু বেতন না পাওয়ায় খুব কষ্টে তাদের সংসার চলে।

লিতুন জিরার বাবা হাবিবুর রহমান ও মা জাহানারা বেগম বলেন, জন্মের পর মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা চিন্তা ছিল তাদের। এখন মেয়ের মেধা তাদের আশার সঞ্চার করেছে। লিতুন জিরা আর ১০ জন শিশুর মতো স্বাভাবিকভাবেই খাওয়া-দাওয়া, গোছল সবকিছুই করতে পারে। মুখ দিয়েই লিখে সে। তার চমৎকার হাতের লেখা যে কারো দৃষ্টি কাড়বে।

এ সময় কথা হয় লিতুনের সঙ্গে। তার একটাই ইচ্ছা, পরনির্ভর না হয়ে লেখাপড়া শিখে নিজেই কিছু করতে চাই।

তবে, কিছুদিন আগে মারা যাওয়া দাদুর জন্য খুব মন খারাপ লিতুন জিরা। দাদু বেঁচে থাকলে তিনি খুব খুশি হতেন বলে জানাল লিতুন জিরা।

লিতুন জিরার প্রধান শিক্ষক সাজেদা খাতুন বলেন, তার ২৯ বছর শিক্ষকতা জীবনে লিতুন জিরার মতো মেধাবী শিক্ষার্থীর দেখা পাননি। এককথায় সে অসম্ভব মেধাবী। শুধু লেখাপড়ায় না, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও অন্যদের থেকে অনেক ভালো লিতুন।

সুত্রঃ যুগান্তর।

 

সালতামামি ২০১৯ (নারী সংবাদ)

সালতামামি ২০১৯ (নারী সংবাদ)


নারী সংবাদ


সালটি শেষ হবে কিছুক্ষণের মধ্যেই ২০১৯ সাল। সারা বিশ্বের নারীদের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটি বছর। দেশের রাজনীতি, খেলাধুলা, শিক্ষা, মানবাধিকার, ক্ষমতায়ন, সমাজসেবা প্রভৃতি ক্ষেত্রে নারীরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এখনও রাখছেন।এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অবদান রেখেছেন নারীরা। আবার- ভালো খবরের পাশাপাশি দুশ্চিন্তা জাগানিয়া খারাপ খবরেরও কমতি ছিলো না বছরজুড়ে। খুন-ধর্ষণসহ বহু অপ্রত্যাশিত, বহু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটে গেল বছরটিতে। তাই প্রাপ্তির হিসাবের চেয়ে অপ্রাপ্তির হিসাবও কম নয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম নারী উপাচার্য গত ৩ নভেম্বর যোগ দিয়েছেন অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার।

ভারতের পন্ডিচেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ বিষয়ে মার্স্টার্সে সর্বোচ্চ নম্বরের অধিকারী রাবিহা আব্দুরেহিমকে হিজাবের কারণে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। সমাবর্তনে যোগ দিতে হলে হিজাব খুলে আসতে হবে, এমন শর্ত দেওয়ায় তিনি স্বর্ণপদক প্রত্যাখ্যান করে শুধু সার্টিফিকেট নিয়েই বাসায় চলে যান।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেশের সব স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে নারীদের ফ্রি ন্যাপকিন পাবার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন নারীদের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে। জহিরন বেওয়া যার বয়স ৯২ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু মনের উদ্যমতা, সাহসিকতা, কর্মের দক্ষতা-সখ্যতা সাথে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছেন লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ী ইউপির সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে।

বোরকা পরেই সাংবাদিক হিসেবে বিখ্যাত হচ্ছেন পাকিস্তানী দুজন সাহসী নারী সাবিহা ও লতিফা। তাদের ভাষায়, ‘আমাদের বোরকা জার্নালিস্ট নামের যে প্রকল্পটি মুসলিম মেয়ের জন্য চালু করেছি, তা প্রসারিত করতে আরো বেশি মেয়েরা এগিয়ে আসার প্রয়োজন।’ ফাতিমা কানাডার সংসদের বিরুদ্ধে প্রায় একাই লড়ে বিজয়ী হওয়া ঈমানোদ্দীপ্ত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক কিশোরীর নাম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যখন একে একে হিজাব ও নিকাব নিষিদ্ধ হচ্ছিল, তারই ধারাবাহিকতায় কানাডাতেও কয়েকমাস আগে প্রকাশ্যে নিকাব নিষিদ্ধ করে একটা আইন পাস হয়। যার নাম বিল-৬২। এর বিপক্ষে আইনী লড়াই করে জয়ী হন ফাতিমা।

ব্রিটিশ নির্বাচনে চার বাঙালি নারীর জয়
ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে এবার জয় পেয়েছেন চার বাঙালি নারী। তারা হলেন- টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক, রুশনারা আলী, রূপা হক ও আফসানা বেগম।

বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটের ইতিহাসে দারুণ সফল বছর ছিল ২০১৮। তবে সেই সাফল্যের রেশ ধরে ২০১৯-এর ডিসেম্বরে নেপালে অনুষ্ঠিত এসএ গেমসের আর্চারি ডিসিপ্লিনে এবারই প্রথম ১০ টি ইভেন্টের সবগুলোতেই স্বর্ণ জিতেছে বাংলাদেশ! মেয়েদের কম্পাউন্ড এককে স্বর্ণ পদক জিতেছে বাংলাদেশের সোমা বিশ্বাস। দলগততেও স্বর্ণ জিতেন তিনি। এছাড়া ব্যক্তিগত নারী রিকার্ভে স্বর্ণ জেতেন ইতি খাতুন। কারাতেতে স্বর্ণ আসে হোমায়রা আক্তার প্রিয়া এবং অন্তরার হাত ধরে । আর ফ্যান্সিংয়ে স্বর্ণ জিতেন ফাতেমা মুজিব।

 

স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে গণধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগ, আটক ২

স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে গণধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগ, আটক ২


নারী সংবাদ


ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে তাকে গণধর্ষণের সহযোগিতা করেছেন বলে স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন স্ত্রী। শনিবার দিবাগত রাতে উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের চরপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

রোববার রাতে ওই গৃহবধূ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় স্বামীসহ দুই অভিযুক্তকে আটকের পর আজ সোমবার দুপুরে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, শনিবার বিকেলে স্বামী রতন মিয়ার সাথে ঈশ্বরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসের পেছনে বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ খুঁজতে যান ওই গৃহবধূ। কোনো বাসায় কাজ না পেয়ে স্বামীর সাথে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে জাটিয়া ইউনিয়নের শিমুলতলী গিয়ে বাড়ি না ফিরে শিবপুর গ্রামের দরগায় গৃহবধূকে নিয়ে গান শুনতে যান রতন। গান শুনে রাত ১১টার দিকে হেঁটে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য তারা রওয়ানা হন। দ্রত বাড়িতে যাওয়া যাবে- এ কথা বলে রাস্তা দিয়ে না গিয়ে ক্ষেতের মাঝখান দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

এর পর জাটিয়া ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের বাবু মিয়ার একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে যান রতন। সেখানে গিয়ে স্ত্রীকে মারধর করে অপেক্ষমাণ লম্পটদের হাতে তুলে দেন তিনি। সেখানে রাতভর পালাক্রমে ধর্ষিত হন ওই গৃহবধূ।

রোববার ভোরে সেখান থেকে পালিয়ে এসে গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূ থানায় হাজির হন। পরে পুলিশ ওই এলাকায় অভিযান শুরু করে। আটক করা হয় প্রধান অভিযুক্ত স্বামী রতনসহ সরিষা ইউনিয়নের লংগাইল গ্রামের আবদুস সোবহানের ছেলে নজরুল ইসলামকেও।

ঈশ্বরগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জয়নাল আবেদীন বলেন, স্ত্রীকে ধর্ষকদের হাতে তুলে দেন স্বামী। গণধর্ষণের ঘটনার এমন খবর পেয়ে তার স্বামীসহ দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য অভিযুক্তদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলছে।
সুত্রঃ নয়াদিগন্ত

 

মনের খোরাক

মনের খোরাক


কানিজ ফাতিমা


প্রকৃতিতে আমার কোনো ক্লান্তি নাই, ঘন্টা কেন, দিনের পর দিন একই দৃশ্যে তাকিয়ে থেকেও চোখ ফেরেনা আমার। কেউ হয়ত ভাববে, কি দেখে এত চেয়ে চেয়ে ? নিরত দু’চোখ মেলে পথের ধারের বনফুল দেখি,ছোট্ট ডোবায় হাসের নিস্তব্দ ভেসে যাওয়া দেখি, আকাশের মেঘ দেখি- সাদা মেঘ, ধুসর মেঘ, ঘন মেঘ, তুলির ছোপ মেঘ আর চপলা মেঘ – ক্লান্তিরা কখন ক্লান্ত হয়ে ফিরে যায় আমার অক্লান্ত চেয়ে থাকা দেখে। সাদা কয়েকটা মেঘের টুকরায় এত দেখার কি আছে ? আমার আছে। একটা কালো পাখির লেজ দোলানো, গাছের ডালে মৃদু-মন্দ বাতাসে পলকা বরফের ঝুর ঝুর ঝরে পরা, শীতের বাতাসে শুকনো পাতার ফুরুত ফুরুত ওড়া, পথিকের হেটে যাওয়া, হাত নাড়ানো, স্কুলের সামনের গাছটার সোজা উপরের দিকে উঠতে উঠতে হতাঠ বেঁকে যাওয়া, গাড়ীর দরজা খুলে একজন মহিলার বের হয়ে আসা – এসব সাধারণ দৃশ্যেও আমার বিস্তর আগ্রহ। সিনেমা দেখে, গল্প করে, আড্ডা দিয়ে আমার বিনোদনের দরকার হয় না, চারপাশই আমার বিনোদনের উত্স। প্রকৃতির পানে নীরব চাহনীতেই মিশে থাকে আমার মনের খোরাক।
স্টাফ রুমের পুরো দেয়াল জুড়ে কাচের জানালাটা আমার খুব প্রিয়। অতি ব্যস্ত সিডিউলেও সুযোগ করে জানলার ধরে বসে একটু জিরিয়ে নেই। কলিগরা সবাই যখন গল্পে বা পেশাগত আলাপচারিতায় ব্যস্ত, আমি তখন হারিয়ে যাই আমার গোপন দৃষ্টির ভুবনে, পেছনের কিছুই টানেনা আর – জেগে থাকে শুধু সামনের দিগন্তে দু’চোখের তাপসী ধ্যান। দু’টো বাচ্চা নিয়ে এক মা বেরিয়ে এলো গাড়ী থেকে, মাঝারী ঠান্ডা, তাই ওদের কারো পায়েই ভারী বুট নেই, হালকা জুতো। ওরা হেটে আসছে আমার দিকে। মানুষের হাটাও যে কত বিচিত্র! – উলম্ব হাটা, ঝুলন্ত হাটা , ক্লান্ত হাটা, আত্মবিশ্বাসী হাটা, বিষন্ন হাটা, কৃত্রিম হাটা- আরো কত কী ! মহিলাটি আত্মবিশ্বাসী হাটা হাটছে, বাচ্চা দু’টোকে একটু আগলে নিয়ে। তার মুখ আমি দেখতে পাচ্ছিনা , কিন্তু এত দূর থেকেও তার বাচ্চা আগলে দৃঢ় হাটার ভঙ্গীতে তাকে অপূর্ব লাগছে। ওই যে পেছনের পার্কিং লট থেকে বেরিয়ে এলেন আরেক মহিলা। বয়স পূর্বের মহিলার মতই হবে বোধ করি, কিন্তু হাটছেন কিশোরী ছন্দে, জ্যাকেটের জীপার এর মধ্যখান থেকে বেরিয়ে এসে একটা সরু সাদা রেখা দুভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়ে দু’ কানে মিশেছে – আশংকা করি সে গাড়ী চালানোর সময়ও এ দু’টোকে কান থেকে নামায়নি। অদ্ভুত ভাবে হাটছে মহিলা। বরফ কিছুটা গলে গেলেও এখানে সেখানে স্তুপ স্নো এখনো রয়ে গেছে, আর তার নীচে লুকিয়ে থাকা ছোপ ছোপ বরফ জমে আছে কোথাও কোথাও। এর মাঝ দিয়ে মহিলাটা একে বেকে হাটছে, নতুন হাটতে শেখা বাচ্চদের মত – পার্থক্য শধু এইযে তার পুরোটাই কৃত্তিম, বাচ্চদের অকৃত্তিম টলমলে হাটা নয়। দোতলার জানালায় বসে দেখলাম পার্কিং লটের মাঝা মাঝি থেকে স্কুলের গেটে ঢোকা পর্যন্ত এতগুলো পদক্ষেপের একটিতেও মহিলার দৃঢ়তা ছিলনা একফোটা। ভাবছিলাম এই বয়সের এক মহিলা কেন বরফের পিচ্ছিল পথে হাটার জন্য বেছে নিয়েছেন সরু হিলের বুট, কেন তিনি নিজেই নিজের চলাকে করেছেন বিপজ্জনক, কেন তিনি তার নিজের কোমরে, মেরুদন্ডে সৃষ্টি করছেন অতিরিক্ত ক্ষতিকর চাপ? এবং সর্বপরি যে “সৌন্দর্য” বা “স্মার্ট নেস” এর জন্য তিনি এই কষ্ট ও বিপদকে মেনে নিয়েছেন সেটার লেশ মাত্রও তো দেখতে পাচ্ছিনা আমি তার ভীরু, আত্ববিশ্বাসহীন, অনেকটা ভাড়ীয় হাটায়। তারপরও কেনো তিনি এটাকেই মনে করছেন “ফ্যাশন”?
ফেসবুকে ঢাকার উঠতি বয়সের কিছু তরুনীদের ছবি দেখি টাইট জিন্সের প্যান্টে। এসব প্যান্ট তৈরী করা হয় শীতের দেশের জন্য। বাংলাদেশের গরম আবহাওয়ায় যে তাদের অনেক কষ্টে এই “ফ্যাশন” কে ধারণ করতে হচ্ছে তা বুঝতে কারো কষ্ট হবার কথা নয়। কষ্ট হোক তবু “স্মার্ট” তো হতে হবে।
আচ্ছা, স্মার্টনেসের সংগাটা কি? বরফের ওপর বিপজ্জনক ও ক্ষতিকর উচু হিল? গরমে মোটা টাইট প্যান্ট? নাকি আবহাওয়া অনুযায়ী সঠিক পোশাক নির্ধারণের মত মগজের ক্ষমতা? কে বেশী স্মার্ট, যে টিভির বিজ্ঞাপন দেখে বরফের মধ্যেও হিল পরে ভাড়ীয় হাটা হাটে নাকি যে আবহাওয়া সম্পর্কে অবগত থাকে এবং নিজের মাথার ব্যাবহার করে সঠিক জুতা নির্ধারণ করার ক্ষমতা রাখে? যে হকার্সে গিয়ে টাইট জিন্স কিনে টেনে-টুনে শরীরে ঢুকায়, নাকি যে জানে যে গরম আবহাওয়ায় ঢিলা- ঢালা পোষাক আর হালকা মেকআপ বেশী উপযোগী? কে বেশী স্মার্ট, যে নিজের মাথার ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত নেয়, নাকি যে নিজের চোখের মাথা খেয়ে মিডিয়ায় দেখানো অখ্যাদ্য কুখাদ্যকে বিশেষ “সুখাদ্য” হিসাবে চোখ বুজে গেলে?
সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমান প্রাণী হয়েও আমরা কিভাবে নিজের মস্তিস্কের হালটা নিশ্চিন্তে ছেড়ে দিতে পারি মিডিয়ার ওপরে? আমরা যখন নিজের ভাবনা নিজে নাভেবে মিডিয়াকে ভাবিয়ে নিতে দেই তখনই মিডিয়ার প্রচারে মিথ্যা আর অসুন্দর গুলো আমাদের মস্তিস্ককোষে বাসা বাধে সুন্দর আর সত্য রূপে। ক্রমে ক্রমে আমরা মানুষেরা হারিয়ে ফেলি আমাদের দৃষ্টিশক্তি, ক্ষয়ে যায় আমাদের চিন্তাশক্তি- চরম অসুন্দর দৃশ্যগুলো রুপান্তরিত হর সুন্দরতমে; দৃষ্টিকটু হয়ে ওঠে আকর্ষনীয়, মিথ্যা রুপান্তরিত হয় একমাত্র সত্যে, চক্রান্ত মূর্ত হয় চেতনায়। অবশেষে সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমান মানুষ হয়ে যায় বুদ্ধিহীন মিডিয়াধীন এক পরজীবীতে, এভাবেই হারিয়ে যায় তার স্বাধীনতা আর শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয়।

 

ধর্মীয় বিতর্কে আটকে গেল ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ স্থাপন

ধর্মীয় বিতর্কে আটকে গেল ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ স্থাপন


স্বাস্থ্যকথা


এতিম-বিপন্ন শিশুদের জন্য দেশে প্রথমবারের মতো যাত্রা শুরু মায়ের বুকের দুধ সংরক্ষণের ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ চালুর উদ্যোগ নেওয়া হলেও ধর্মীয় প্রশ্নে বিরোধিতার মুখে আটকে গেছে। এতে আইনগত ও ধর্মীয় সমস্যা আছে মর্মে ‘মিল্ক ব্যাংক’ স্থাপনের বিরোধিতা করে এবং এ ব্যাপারে যথাযথ শর্তারোপ চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

রোববার (২৯ ডিসেম্বর) জনস্বার্থে নোটিশটি পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান।

নোটিশে ধর্ম মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, শিশু-মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (আইসিএমএইচ), নবজাতক পরিচর্যা কেন্দ্র (স্ক্যানো), নবজাতক আইসিইউ (এনআইসিইউ) এবং ঢাকা জেলা প্রশাসককে বিবাদী করা হয়েছে।

আইনজীবীর পাঠানো নোটিশে বলা হয়েছে, ‘‘ইসলাম ধর্মমতে, কোনো শিশু কোনো মহিলার দুধ পান করলে ওই মহিলা ওই শিশুর দুধমাতা হয়ে যায় এবং উক্ত মহিলার সন্তানরা উক্ত শিশুর ভাইবোন হিসেবে গণ্য হয়। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশে উক্ত ‘মিল্ক ব্যাংক’ স্থাপনের ফলে একই মায়ের দুধ পানের কারণে ভবিষ্যতে ভাইবোনের মধ্যে বিয়ে হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যা চরমভাবে সামাজিক অরাজকতা সৃষ্টি করবে। পাশাপাশি ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী, ভাই ও বোনের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ এবং তা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় আইন ‘মুসলিম ব্যক্তিগত আইন (শরীয়ত) প্রয়োগ আইন, ১৯৩৭’ এর সরাসরি লঙ্ঘন।”

এ ব্যাপারে হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকের সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. মজিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, এই কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। এটা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার পর সবার সম্মতি পেলে সম্ভব হলে এটা চালাব।

প্রসঙ্গত, হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকের উদ্যোগটি ঢাকা জেলার মাতুয়াইলের শিশু-মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের (আইসিএমএইচ) নবজাতক পরিচর্যা কেন্দ্র (স্ক্যানো) এবং নবজাতক আইসিইউ (এনআইসিইউ)-এর নিজস্ব উদ্যোগ। বেসরকারি আর্থিক সহায়তায় ব্যাংকটি স্থাপন করা হয়েছে। এটি গত ১ ডিসেম্বর চালু হলেও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে।

আইসিএমএইচ ক্যাঙারু মাদার কেয়ারে মা ছাড়া খালা, নানি বা অন্যদের সঙ্গে যে নবজাতকদের রাখা হচ্ছে, তারাও এই দুধ খেতে পারবে। স্ক্যানো ও এনআইসিইউতে থাকা অপরিণত বয়সে জন্ম নেওয়া ও অসুস্থ নবজাতকদের সংরক্ষণ করে রাখা দুধ খাওয়ানো হবে। ৩৭ সপ্তাহের আগে জন্ম নেওয়া ২ হাজার গ্রামের কম ওজনের নবজাতকদের মা বা অন্য অভিভাবকদের ত্বকের সংস্পর্শে রেখে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করাকে ক্যাঙারু মাদার কেয়ার বলে।

এ ছাড়া দত্তক নেওয়া সন্তানের অভিভাবকেরা এখান থেকে দুধ নিয়ে খাওয়াতে পারবেন। বিভিন্ন সময় স্বজনেরা নবজাতককে ফেলে দেন, এই স্বজন-পরিত্যক্ত নবজাতকদের বাঁচাতেও মিল্ক ব্যাংক কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। মায়েদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ ও বিতরণে কোনো ধরনের আর্থিক সুবিধা নেওয়া হবে না।

আইসিএমএইচ স্বায়ত্তশাসিত একটি প্রতিষ্ঠান। এর যাত্রা শুরু ১৯৯৮ সালে। সরকার, বিভিন্ন দেশি–বিদেশি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা বা ব্যক্তির অনুদান এবং ইনস্টিটিউটের নিজস্ব অর্থ মিলিয়ে এটি পরিচালিত হচ্ছে। ইনস্টিটিউটটির দেওয়া তথ্য বলছে, গত বছর স্ক্যানো এবং এনআইসিইউতে ১ হাজার ৮৬৫ জন নবজাতক ভর্তি হয়। এর মধ্যে ৪৮৮ জনই ছিল গুরুতর অসুস্থ।

গত বছরের জানুয়ারি মাস থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত মোট ২৫ জন মাতৃহীন নবজাতক ভর্তি ছিল। ৩৭ জনই ছিল দত্তক নেওয়া। এদের অধিকাংশই মারা যায়। বুকের দুধ খাওয়ানো সম্ভব হলে এদের অনেককেই বাঁচানো সম্ভব হতো।

সম্প্রতি আইসিএমএইচে গিয়ে দেখা যায়, ইনস্টিটিউটের দোতলায় হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকের জন্য পাস্তুরাইজিং মেশিন, অত্যাধুনিক ফ্রিজসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বসানো হয়েছে। ব্যাংকের জনবলকে প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ অন্যান্য কার্যক্রম চলছে। হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকে সংরক্ষিত মায়ের বুকের দুধ তিন মাস থেকে সর্বোচ্চ ১৮ মাস পর্যন্ত সম্পূর্ণ গুণগত মান বজায় রেখে ভালো থাকবে। এই ব্যাংকের মাধ্যমে দুধের বিভিন্ন অংশ যেমন শর্করা, প্রোটিন ও চর্বি উপাদান আলাদা আলাদা করে প্রয়োজনমতো নবজাতককে খাওয়ানো সম্ভব হবে। আর ব্যাংক থেকে নেওয়া দুধ বাড়িতে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত ভালো থাকবে।

সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা বলছেন, মিল্ক ব্যাংক স্থাপনের ফলে বাজারজাত করা মায়ের দুধের বিকল্প শিশুখাদ্যের ব্যবহার কমবে। নবজাতকদের বুকের দুধ খাওয়ানোর ফলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। নবজাতকের মৃত্যুঝুঁকি ও অপুষ্টির হার কমানো সম্ভব হবে।

আইসিএমএইচের সহযোগী অধ্যাপক মজিবুর রহমান হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ব্যাংক চালু করার আগে তিনি নিজে স্পেন ও ভারতের দুটি হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক পরিদর্শন করে এসেছেন। তিনি বললেন, যে মায়েদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করা হবে, সেই মায়েদের মারাত্মক রোগ (হেপাটাইটিস বি এবং এইচআইভি) আছে কি না তা পরীক্ষা করে করে দুধ সংগ্রহ করা হবে, যাতে নবজাতক রোগের ঝুঁকিতে না পড়ে।

ইনস্টিটিউটের এনআইসিইউ এবং স্ক্যানোর ইনচার্জ এবং মিল্ক ব্যাংকের সমন্বয়ক মজিবুর রহমান জানান, সবচেয়ে বেশি (২১৬ টি) হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক রয়েছে ব্রাজিলে, যার মাধ্যমে ২৮ শতাংশ নবজাতকের মৃত্যু রোধ এবং ৭৩ শতাংশ শিশুর অপুষ্টি রোধ করা সম্ভব হয়েছে। এমনকি ভারতেও ব্যাংক স্থাপনের পর নবজাতকের মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হয়েছে।

আইসিএমএইচের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক এম এ মান্নান বললেন, বাংলাদেশে যেহেতু প্রথমবারের মতো এ ধরনের একটি ব্যাংকের যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে, তাই বিভিন্ন দিক বিবেচনায় নিয়ে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। মায়ের বুকের দুধ সংগ্রহ এবং অন্য নবজাতকদের খাওয়ানোর ক্ষেত্রে যাতে ইসলামি শরিয়াহর কোনো লঙ্ঘন না হয়, সে ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। মুসলিম দেশের মধ্যে কুয়েতে প্রথম হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক স্থাপন করা হয়। এ ছাড়া ইরান, ইরাক, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া ও পাকিস্তানসহ অনেক মুসলিম দেশ হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছে। ওই দেশগুলো কীভাবে ব্যাংক পরিচালনা করছে, তার বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা করা হয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্তাব্যক্তিদের মতামত নেওয়া হচ্ছে।

ব্যক্তি উদ্যোগ এবং বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠীর সহায়তায় মিল্ক ব্যাংকটি স্থাপনে এখন পর্যন্ত এক কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে। তবে অধ্যাপক মান্নান বললেন, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য এ ধরনের ব্যাংক পরিচালনা ব্যয়বহুল হলেও সরকারের জন্য এ খরচ তেমন বেশি নয়। আর নবজাতকদের বাঁচাতে এ ব্যাংক যে ভূমিকা রাখবে, সে তুলনায় এ খরচ কিছুই না।

সুত্রঃ মেডিভয়েস রিপোর্ট

 

স্বাস্থ্যসেবার নৈতিকতা

স্বাস্থ্যসেবার নৈতিকতা


ফারাহ দিবা


স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত যে কোন কর্মীদের জন্য নৈতিকতার বিষয়গুলো অনেক ছোটখাট কাজের ভেতর দিয়ে অনেকে আমরা না জেনে বা না বুঝে ভংগ করে ফেলি। এটা অনেকটা স্বামী-স্ত্রী-র সর্ম্পকের মত নিয়ে থাকি। যেমন, আমরা বিয়ে করি, জানি যে বেশ কিছু র্শত মেনে চলার প্রতিজ্ঞা করে ঐ সর্ম্পকটি আমরা স্থাপন করতে যাচ্ছি। কিন্তু আমরা ভাল করে সেগুলো জানার চেষ্টা করি না। সই করি র্শতগুলোতে কি আছে না জেনে। তবে অবশ্য্ই কেউ কেউ আছেন যারা পড়েন এবং সেগুলো মেনে চলেন। আমি শ্রদ্ধার সাথে তাদের কথা মনে করি। কিন্তু আমরা বেশীরভাগ্ই পড়ি না বা বিয়ের মুহূর্তের আনন্দানুভূতিতে, সময়ের অভাবে, “পরে সময় করে পড়বো”, “আরে এগুলোতো গতবাঁধা কথা, এ আবার পড়ার কি আছে?” ইত্যাদি ভাবনায় পড়া হয় না। কিন্তু তারপর আর ফিরে দেখা হয় না বা পড়াও হয় না, কি শর্ত আমি মেনে নিয়েছিলাম বা কি পালন করবো বলে আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। মনেও থাকে না যে এই ভুলে যাওয়া আর না মেনে চলা “প্রতিজ্ঞাভঙ্গের” সামিল। ঠিক তেমনি স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত যে কোন কর্মীর সাথে সেবাগ্রহীতার “সর্ম্পকের” মধ্যকার র্শতগুলো না মেনে চলা হচ্ছে “স্বাস্থ্যপেশাজীবির নৈতিকতার প্রতিজ্ঞাভঙ্গের” সামিল। যেমন, অনেক সময় আমরা খুব সহজভাবে ধরে নিই যে কোন রোগীর সাথে কাজে যে সফলতা হয়েছে তা রোগীর নাম, ধাম অপ্রকাশিত রেখে প্রকাশ করলে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু অসুবিধা আছে, যদি না আমরা কিছু নৈতিকতার কিছু বিষয় পালন বা মেনে না নিয়ে এহেন কাজগুলো করি। নৈতিকতার র্শত হিসেবে রোগীর কাছ থেকে বেশ কিছু বিষয়ে অনুমতি নেবার কথা, যেমন, প্রথমত: যে তার নাম-পরিচয় গোপন করে তার সমস্যা ও সমাধানের বিষয়গুলো কি তা তুলে ধরতে পারি কিনা? দ্বিতীয়ত: আমি কোথায় তার কথা তুলে ধরতে চা্ই , আমার পেশার সহকর্মীদের কাছে, অন্যান্য সহসম্পর্কিত পেশার সহকর্মীদের সাথে, বৈজ্ঞানিক বা দৈনিক পত্র-পত্রিকায় বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে্ । তৃতীয়ত: আমার এ তথ্য সহভাগের উদ্দেশ্য কি? যেমন, এক্ই পেশার সহকর্মীদের সাথে সমস্যাটি বিশেষ ধরনের তাই তাদের সাথে নিজের অভিজ্ঞতা সহভাগ করলে অন্যান্য সম্ভাব্য সমধরনের সেবাগ্রহীতার উপকারে আসতে পারে; বা অন্যান্য সহসম্পর্কিত পেশার সহকর্মীদের সাথে সহভাগ করা কারণ, কিভাবে একটি বিশেষ সমস্যা বিবিধ ধরনের স্বাস্থ্যসেবার সমন্বয়ে সমাধান সম্ভব অথবা সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধিতে বা নিজের প্রচার বা প্রসারের মাধ্যমে আরও সেবাগ্রহীতার দৃষ্টি আর্কষণ। এগুলোর যে কোনটির প্রতি সেবাগ্রহীতার অনুমতি ব্যতিরেকে আমরা কোন সেবাগ্রহীতার নাম-ধাম প্রকাশ না করলেও আসলে কোন কথা প্রকাশ করতে পারি না। আর ছবি (স্থির চিত্র/চলচিত্র) ব্যবহার করে তো কোন ভাবেই নয়। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, স্বাস্থ্যপেশাজীবির জীবনে নৈতিকতার বিষয়টি খুব নাজুক। তাই আমাদের উচিৎ নিজের পেশার নৈতিকতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা নেয়া এবং তা মেনে চলা। কার্যক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত ভেবে দেখা কোন “অসংগতিপূর্ণ অবস্থান” (conflict of interest) তৈরী হচ্ছে কিনা। হলে তা কি করলে প্রতিহত করা যাবে। অর্থাৎ পেশাদার হিসেবে করা প্রতিজ্ঞা ও প্রতিশ্রুতিগুলো মাঝে মাঝে পর্যালোচনা করে দেখা যাতে বুঝতে পারি পেশার সীমার ভিতর আছি কিনা এবং যা করার নয় তা করে ফেলছি কিনা। কারন স্বাস্থ্যসেবার প্রথম ও প্রধান শর্ত্ হলো সেবাগ্রহীতার প্রতি করা অঙ্গীকার মেনে চলা।

 

ভাপা পিঠা বানানো সহজ উপায়

ভাপা পিঠা বানানো সহজ উপায়


আরণ্যক শবনম


ডিসেম্ববের মাঝামাঝি শীত বাড়তে শুরু করেছে একটু একটু করে, সাথে সকালের মিষ্টি কুয়াশার রেশ। ঘুম ভাঙতেই যদি আপনার সামনে আম্মা ভাপা পিঠে নিয়ে হাজির হন, কেমন খুশি লাগবে বলুন তো?বাসার সবাইকে চমকে দিতে।

পিঠা তৈরি করতে যা লাগছে,

১/আতপ চালের গুড়া
২/পাঠালী গুড়
৩/নারকেল
৪/লবন

আর পিঠা তৈরিতে যে উপকরণ লাগছে,

১/মাঝারী সাইজের ভাতের হাড়ি কিংবা যেকোন পাতিল; সাথে ঐ মাপের ঢাকনা
২/কিছু নেটের ব্যাগ বা নেটের টুকরো।
৩/লবনের বাটি কিংবা স্টিলের গোল বাটি
এ পিঠার রেসিপি এজন্যই আরো সহজ যে আপনাকে আলাদা করে পিঠার সাজ, কিংবা আলাদা কিছু কিনতে হবে না।

চালের গুড়া: বাসায় আতপ চাল ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিয়ে মেশিনে চাল গুড়া করিয়ে নিবেন, ভিজা চালের গুড়া সপ্তাহখানেক ভালো থাকে, রোদে শুকিয়ে রাখলে আরো কিছুদিন। পিঠার তৈরি জন্য একটা বড়ো বোল এ চালের গুঁড়া নিয়ে, সামান্য লবন নিতে হবে, এরপর অল্প অল্প করে পানি নিয়ে চালের গুড়াকে একটু ভিজিয়ে নিতে হবে, পানি খুবই সামান্য, তারপর, চালনি দিয়ে চেলে ঝরঝরে করে নিতে হবে। ভিজা চালের গুড়ায় খুব অল্প পানিই যথেষ্ট। ভাপা পিঠা যেহেতু ভাপে তৈরি হয়, সেহেতু চালের গুড়াকে হালকা ভিজিয়ে নিতে হয়।

নারিকেল ও গুড় : নারিকেল কুড়িয়ে নিতে হবে, হাত কোড়ানি ব্যবহার করতে পারেন। বাজারে আসা নতুন গুড় বেশ নরম থাকে, সেগুলো পাতলা করে ঝুড়া করে নিতে হবে। ব্যস, পিঠার উপকরণ প্রায় প্রস্তুত।

এবার, আসল প্রস্তুতি যেটার জন্যই আসলে, অনেকে পিঠা বানাতে চান না, ঝামেলার মনে করেন, সেটা খুব সহজে
তৈরি করে নিতে পারেন। ভাতের হাড়ি কিংবা যেকোন ঢাকনাসহ হাড়ি (যেটাতে পর্যাপ্ত পানি নেওয়া যাবে বাষ্প পাওয়ার জন্য) হাড়ির মুখ নেটের টুকরো ডাবল ভাজ দিয়ে সুন্দর করে বেঁধে ফেলুন।
আমি হিটারে পানি গরম করে ঢেলে নিয়ে, চুলায় বসিয়ে নিয়েছি যাতে তাড়াতাড়ি ভাপটা পাওয়া যায়, গ্যাসও অপচয় কম হবে।

যথেষ্ট ভাপ উঠতে শুরু করলে, পিঠার পুড় ও চাল দিয়ে সাজিয়ে নিয়ে হবে। আমি টিফিন বক্সের ছোট বাটি ব্যবহার করেছি, প্রথমে কিছু চালের গুড়া নিয়ে নারকেল কিমা আর গুড় দিয়ে নিন, তারপর উপর অংশে আস্তে আস্তে চালের গুড়া দিয়ে ঢেকে দিন, গুড়া অল্প অল্প করে নিয়ে আলতো করে করতে হবে। একসাথে বেশী করে নিয়ে বেশী চেপে দিলে পিঠা তোলার সময় ভেঙ্গে যেতে পারে। পিঠা সাজানো হয়ে গেলে বাকী নেট দিয়ে,আমি দু’টা ঝালি ভালো করে ধুয়ে নিয়েছি, সেটা দিয়ে পিঠা জড়িয়ে হাড়ির উপর আস্তে করে বসাতে হবে।এসময় চুলোর আঁচ কমিয়ে নিলে ভালো। এরপর বাতিতে আলতো টোকা দিলে বাতিটা তুলে নিয়ে অবশিষ্ট নেট ভালোভাবে জড়িয়ে ঢাকনা দিয়ে দিতে হবে। এরপর মিনিট খানেক পর অপেক্ষার পালা, পিঠার তুলবার সময় চুলোর আঁচ কমিয়ে নিয়ে হবে। পিঠার তোলার পর আস্তে আস্তে নেট ছাড়িয়ে নিন। এভাবে চালের গুড়া একটু ভিজিয়ে নিয়ে, প্রয়োজনমত পিঠা বানিয়ে নিন ঘরে বসেই।

 

হিজাব খুলতে বলায় স্বর্ণপদক প্রত্যাখ্যান সেরা ছাত্রীর

হিজাব খুলতে বলায় স্বর্ণপদক প্রত্যাখ্যান সেরা ছাত্রীর


নারী সংবাদ


ভারতের পন্ডিচেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ বিষয়ে মার্স্টার্সে সর্বোচ্চ নম্বরের অধিকারী রাবিহা আব্দুরেহিমকে হিজাবের কারণে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। সমাবর্তনে যোগ দিতে হলে হিজাব খুলে আসতে হবে, এমন শর্ত দেওয়ায় তিনি স্বর্ণপদক প্রত্যাখ্যান করে শুধু সার্টিফিকেট নিয়েই বাসায় চলে যান। খবর পার্সটুডের

গতকাল (সোমবার) এ ঘটনা ঘটেছে বলে আজ ভারতীয় গণমাধ্যম খবর দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির জওহরলাল নেহরু অডিটরিয়ামে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দ।

তার হাত থেকেই সাফল্যের পুরস্কার নিতে গিয়েছিলেন রাবিহা। কিন্তু সেই সময় অনুষ্ঠানে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি তাকে। কারণ সেই হিজাব।

রাবিহা গণমাধ্যমকে বলেছেন, রাষ্ট্রপতি আসার কিছুক্ষণ আগেই তিনি অডিটরিয়ামে ঢুকতে যান। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে বাধা দেয়। বলা হয় হিজাব খুলতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমার সঙ্গে যে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে- তার প্রতিবাদেই আমি পদক নিতে অস্বীকার করি।

প্রেসিডেন্ট অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করার পর তাকে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয় বলে জানান এই সেরা ছাত্রী।

সুত্রঃ ডেইলি ক্যাম্পাস।

 

শিশুর বেড়ে ওঠায় মা-বাবার সু-সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

শিশুর বেড়ে ওঠায় মা-বাবার সু-সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ


স্বাস্থ্য কথা


দশ বছর বয়সী রাইয়ান মাঠের এক কোনে বসে আছে। তার সমবয়সী বাচ্চারা মাঠে খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকলেও খেলায় কোন মন নেই তার। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। কী যেন দেখছে। এরমধ্যে তার কয়েকজন বন্ধু তাকে খেলার জন্য ডাকতে আসলেও যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেল রাইয়ানের বাবা আর মায়ের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। প্রায় প্রতিদিনই ঝগড়া হয় তাদের মধ্যে। এমনকি মাঝে মাঝে মারধরও চলে। সবই হয় রাইয়ানের সামনে। এসব দেখে সে অনেকটা ভীত হয়ে পড়েছে। সে এখন কারো সাথে কথা বলতে ভয় পায়। আর তাই এই অল্প বয়সেই এত উদাসীন থাকে রাইয়ান।
মাইশার বর্তমান অবস্থা ঠিক রাইয়ানের মত। পনের বছর বয়সী মাইশা এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। কিন্তু কোনভাবেই সে পড়ায় মন বসাতে পারছে না। স্কুলের মডেল টেস্ট’র রেজাল্টও খুব ভালো করেনি। কিন্তু ক্লাস নাইন পর্যন্ত তার রোল নাম্বার এক থেকে তিনের মধ্যে ছিল সব সময়। সবার কাছেই খুব আদরের ছিল মাইশা। টেষ্টের রেজাল্টের পর স্কুলের ক্লাস টিচার তাকে একলা ডেকে নিয়ে তার কাছ থেকে জানতে চান- কেন এমন হচ্ছে? অনেকক্ষণ তার সাথে কথা বলার পর ক্লাস শিক্ষক জানতে পারেন, মাইশার বাবা-মায়ের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না গত কয়েক মাস ধরে। বাসায় প্রতিনিয়তই ঝগড়া লেগে থাকে। তাই সে মনযোগ দিতে পারছে না পড়াশোনায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধুলা অত্যন্ত জরুরী। শিশুর বিকাশ নিয়ে অধিকাংশ বাবা-মা’ই এখন বেশ সচেতন। তাদের সার্বক্ষনিক চেষ্টা থাকে তাদের বাচ্চাদের সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাবা-মাদের নিজেদের মধ্যকার সমস্যা এত বেড়ে যায় যে, তারা আর বাচ্চাদের দিকে মনোযোগ দিতে পারেন না। আর এই অমনোযোগীতার কারনেই অনেক বাচ্চা অবসাদে ভোগে, খারাপ পথে চলে যায়।
তাদের মতে বাচ্চাদের সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রম এবং ধৈর্য্য। বাচ্চাদের বুঝাতে হবে যে, তারাই বাবা-মায়ের অমূল্য সম্পদ। অত্যন্ত যতœ দিয়ে তাদের বড় করে তুলতে হবে। জীবনের প্রতিটি নিয়ম-কানুন তাদের শেখাতে হবে।
শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মুরাদ হোসেন মোল্লা বলেন, প্রায় সব বাচ্চাই দুষ্টুমি করে। কিন্তু অতিরিক্ত দুষ্টুমির জন্য বাচ্চাদের ভয় দেখালে বা তাদের মারধর করলে সমস্যার সমাধান হয় না। বরং এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। শিশুরা সব সময় একটা আতঙ্কের মধ্যে থাকে। এবং এসব শিশুদের অত্মবিশ্বাষ কমে যায়। তাদেরকে বারবার করে বুঝাতে হবেÑ কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ। শিশুর কথাও খুব মনোযোগ সহকারে শুনতে হবে।
তিনি বলেন, শিশুদের মধ্যে আত্মসম্মানবোধ বাড়িয়ে তুলতে হবে। তাদের সাথে সব সময় আলোচনা করতে হবে। তার চাহিদার কথা, তার ইচ্ছার কথা শুনতে হবে। পাশাপাশি শিশুর ভালো কাজের প্রশংসাও করতে হবে। তাদের পছন্দের বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে।
ডা. মুরাদ বলেন, অনেক বাবা-মা’ই সন্তানদের বাইরে খেলাধুলা করতে দিতে চান না। এটা সন্তানের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে অত্যন্ত বড় বাধা। শিশুরা খেলাধুলা করলে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকে। অন্য বাচ্চাদের সাথে বন্ধুত্ব তৈরী হয়। এতে তার যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ে। শিশু মানসিকভাবেও সুস্থ থাকে।
এছাড়াও সন্তানদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়েও মনোযোগী হতে হবে। তাদেরকে এ বিষয়ে জ্ঞান দিতে হবে। নিজের বিছানা সব সময় পরিষ্কার রাখার শিক্ষা, বইপত্র গুছিয়ে রাখার শিক্ষা তাকে ছোটকাল থেকে দিতে হবে। এছাড়াও বাচ্চাদের সামনে বড়দের কথা বলার সময় অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সব ধরনের আলোচনা শিশুদের সামনে না করাই ভালো। কারণ এতে করে বাচ্চাদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে শিশুদের সামনে বড়দের ঝগড়া-বিবাদ করা যাবে না। বিশেষ করে বাবা-মা’র মধ্যকার ঝগড়া বাচ্চাদের মনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরী করে। অনেক সময় বাচ্চারা অবসাদে ভুগতে থাকে।
সুত্রঃ বাসস।

 

এই মুহূর্তে কেউ নেই

এই মুহূর্তে কেউ নেই


ইশরাত জাহান রুবাইয়া


সাড়ে ৪ বছরের দীপ্তর শখ হয়েছে সুপারম্যান হবে। সুপারম্যান তার হিরো। কী সুন্দর করে সে উড়ে চলতে পারে, কার্টুনে দেখেছে দীপ্ত। সেও ওরকম করে উড়বে। ড্রয়ার থেকে মায়ের একটা বড় ওড়না বের করলো। ওড়নাটা দুইভাঁজ করে একপ্রান্ত পিঠের উপর দিয়ে গলার কাছে এনে বাঁধলো। পা টিপে টিপে মায়ের রুমে এসে দেখলো মা ঘুমাচ্ছে। এইতো সুযোগ একা একা ছাদে যাওয়ার। ছাদে গিয়েই সুপারম্যানের মত উড়াল দেবে সে।
শম্পার চোখদুটো তখন লেগে এসেছে কেবল। এমন সময় দরজা খোলার অাওয়াজে ঘুম ভেঙে গেল। লাফ দিয়ে উঠে বসলো সে। বাসায়তো মা ছেলে ছাড়া এই মুহূর্তে কেউ নেই। দরজাটা খুললো কে তবে! দীপ্ত বাইরে যাচ্ছেনাতো একা একা! দৌড়ে এসে দেখে দীপ্ত সিড়ি দিয়ে উপরে উঠছে। সেও ছেলের পিছু নিল। শম্পা পৌঁছতে পৌঁছতে দীপ্ত ছাদের রেলিং এ উঠে দাঁড়িয়েছে। দুইহাত দুইপাশে ছড়িয়ে যেইনা একপা বাঁড়িয়েছে ওমনি দৌড়ে এসে ছেলেকে শক্ত করে ধরে ফেললো শম্পা। দীপ্তর সে কী কান্না! অনেক অনুরোধ করলো অন্তত একটা বার ওকে উড়তে দিতে। শম্পা কোনোভাবেই রাজী না। পাঁজাকোলা করে তাকে তুলে নিয়ে ঘরে ছুটলো সে। হাত পা ছুঁড়ে কান্না করতে করতে দীপ্ত বললো তুমি অামার পছন্দের কিচ্ছু করতে দাওনা! সুপারম্যান হতে দাওনা! তুমি অনেক অনেক পঁচা মা, তুমি ভালোনা!
.
.
দীপ্তকে ছাদ থেকে লাফ দিতে দেয়নি বলে শম্পা কি অাসলেই পঁচা মা হয়ে গেছে? একবাক্যে সবাই বলবে, কখনোই না! দীপ্ত জানেনা ১১তলা থেকে লাফ দিলে কী ঘটবে! কিন্তু শম্পা জানে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে তার কলিজার টুকরা বাচ্চাটা। দীপ্ত মনে করে সে লাফ দিলে সুপারম্যানের মত উড়ে যাবে। কিন্তু শম্পা জানে বাস্তবে কী ঘটবে। বাচ্চা যতই অনুনয় বিনয় করুক, যতই জেদ করুক, যতই তাকে পঁচা মা বলুক; সে দীপ্তকে এই শখ পূর্ণ করতে দেবেনা। কেন ই বা জেনে শুনে সন্তানকে অাগুনে ঝাঁপ দিতে দেবে সে?
.
অাসুন, এবার অন্য কিছু ভাবি।
অনেকসময় অামরা অাল্লাহর কাছে অনেক কিছু চাই। কোনটা তিনি দেন, কোনটা দেননা। হ্যাঁ কখনো এমন কিছু তিনি দেননা যেটা অামরা অনেক বেশি পছন্দ করি। তখন হতাশ হয়ে অামাদের অনেকই অাল্লাহর উপর অভিমান করে বসেন। এত চাইলাম, দিলেননা অাল্লাহ! কেন, কী হত দিলে? তাঁর ভান্ডারে তো কিছুর অভাব নেই! তাঁর পক্ষেতো অসম্ভব বলে কিছু নেই! তবুও কেন দিলেননা! কেন???
শত অভিযোগ অার অাক্ষেপে অভিমানে অনেকে মুখ ফিরিয়ে নেই।
.
দৃষ্টি সীমাবদ্ধ অামাদের। ভবিষ্যত অামাদের অজানা। অামরা জানিনা জীবনপথে অামাদের সামনে কী অাছে। তিনি জানেন। সঅঅব জানেন। জেনেশুনে তিনি অামাদের সেসব অাব্দারগুলো পূর্ণ করেননা, যেগুলো পূর্ণ হলে অামরাই ক্ষতিগ্রস্ত হব। দীপ্তর মত অামাদের অভিমান হয়। অাক্ষেপ করি, অভিযোগ করি।
মা জন্ম দিয়েছেন বলে এত ভালোবাসেন, এত মমতাময়ী, সন্তানের কল্যাণলামী। অার যিনি সৃষ্টি করেছেন এত যত্নে তিনি কতটা কল্যাণকামী হতে পারেন? তিনি কতটা ভালোবাসেন বান্দাহকে? বান্দাহর ভালো-মন্দ, কল্যান-অকল্যান তাঁর মত ভালো অার কে বোঝে! কী করে তিনি সেই অাব্দারগুলো পূর্ণ করবেন যেগুলো বান্দাহর জন্য অকল্যানকর! যেগুলো পূর্ণ করলে বান্দা ভবিষ্যতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে! তাই তিনি সেই অাবদারগুলো পূর্ণ করেননা, কিন্তু খালি হাতেও ফিরিয়ে দেননা। কখনো সেসব বদলে দেন উত্তম কল্যানকর অন্যকিছুর দ্বারা। কখনো সেইসবের বদলে জমা করে রাখেন কিছু অভাবনীয় পুরষ্কার! এক অবশ্যম্ভাবী দিনে বান্দাহ তা প্রত্যক্ষ করে অাপ্লুত হবে। সিজদায় পড়ে যাবে। নতমস্তকে অান্তরিক স্বীকারোক্তি দেবে, অামার রব! নিঃসন্দেহে অাপনি মহীয়ান!
.
“তোমাদের কাছে হয়তো কোন একটা বিষয় পছন্দ সই নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে তা অকল্যাণকর। বস্তুতঃ আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না। [সুরা বাকারা: ২১৬