banner

রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 380 বার পঠিত

 

‘আকাশের চাঁদ এসে আমার পকেটে ঢুকেছে’

‘আকাশের চাঁদ এসে আমার পকেটে ঢুকেছে’


মুনির হাসান


মাওলানা আবদুল মালেকের বাড়ি চট্টগ্রামে। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন, আর পড়েছেন দেওবন্ধে। অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খাঁ খোঁজ করছেন সে সব তরুণদের যারা তাঁর সঙ্গে টাঙ্গাইলের করটিয়ায় সাদত কলেজ গড়ে তুলবেন। চট্টগ্রামের খান এ আলম খানের সুবাদে ইব্রাহিম খাঁ জানতে পারেন মাওলানা আবদুল মালেকের কথা। আরবি, উর্দু ও ফার্সি ভাষায় সমান বুৎপত্তি। খোঁজ করে নিয়ে গেলেন মাওলানাকে। সেখানেই একটা কলেজ গড়ার সংগ্রামে রত হলেন তিনি।

বেশ কয়েক বছর পরের কথা। মাওলানা অস্থির। চতুর্থ সন্তানের জন্মের খবরের জন্য অপেক্ষা করছেন। স্ত্রী গ্রামের বাড়িতে। সময় চলে যায় কিন্তু কোন খবর পান না। মাওলানা জানেন না, চতুর্থ সন্তানটিও মেয়ে হওয়ায় তার স্ত্রী তাকে জানাতে সময় নিচ্ছেন। এমন এক অস্থির সময়ে এক রাতে মাওলানা আবদুল মালেক স্বপ্নে দেখলেন আকাশের চাঁদ তাঁর পকেটে ঢুকে পড়েছে।

সকালেই স্ত্রীকে চিঠি লিখলেন – তোমরা সবাই নিশ্চয়ই ভাল আছো। আমি জানি আমার একটি মেয়ে হয়েছে। তুমি মন খারাপ করো না। আমি স্বপ্নে দেখেছি রাব্বুল আলামিন আমাদের ঘরে আকাশের চাঁদ পাঠিয়েছেন।

মাওলানা আবুদল মালেকের স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। তাঁর চতুর্থ সন্তান ডা. সায়েবা আখ্তার কিছুক্ষণ আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে একুশে পদক গ্রহণ করেছেন।
তাঁর উদ্ভাবিত ‘সায়েবা’স মেথড’ এখন সারা বিশ্বে হাজার হাজার মায়ের জীবন বাঁচায়।
সারা বিশ্বে প্রতি দুই মিনিটে একজন করে প্রসূতি মায়ের মৃত্যু ঘটছে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে। এর ৩০ শতাংশের জন্য দায়ী প্রসবকালীন রক্তক্ষরণ। সে হিসাবে প্রতিবছর ১৩ লাখ মায়ের মৃত্যু ঘটে প্রসবকালীন রক্তক্ষরণে। আরও ২৬ লাখ নারী মাতৃত্বের সক্ষমতা হারান। এর বড় অংশই ঘটে গরিব দেশগুলোতে।
প্রসব পরবর্তী জরায়ূর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে বাংলাদেশ সহ গরীব দেশগুলোতে প্রতি বছরই অসংখ্য মায়ের মৃত্যু হয়। বাংলাদেশে প্রসবকালীন মাতৃমৃত্যুর অন্যতম একটি কারণই এই ধরণের রক্তক্ষরণ।
উন্নত বিশ্বে এটি ঠেকাতে যে ডিভাইসটি ব্যবহার করা হয় সেটির দাম বাংলাদেশী টাকায় ২৪ হাজার টাকা! পাওয়াও যায় না। প্রযুক্তিটি মূলত একটি বেলুন, যেটি জরায়ুর ভেতরে ঢুকিয়ে ফুলিয়ে দিলেই কার্যত রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজে কাজ করার সময় প্রফেসর সায়েবা আখ্তার ভাবতেন – একটি বেলুনই কত জীবন বাঁচাতে পারে।
বেলুন চিন্তায় অস্থির নির্ঘুম রাতে সায়েবা আখতার ভাবেন বাচ্চাদের খেলনা বেলুনের কথা। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি সেই সময়কার কথা স্মরণ করেছেন -“মাঝে মাঝে আমি দেখেছি গ্রামে কনডমকে ওরা বাতাস দিয়ে ফুলিয়ে খেলনা হিসেবে ব্যবহার করে। হঠাৎ আমার মনে হল এই কনডমকেই তো আমি ইউটেরাসের (জরায়ু) ভেতর দিতে পারি। কনডম একটা মেডিকেল ডিভাইস। কাজে সমস্যাতো নাই। এটাকে যদি ইউটেরাসের ভেতর ঢুকিয়ে তারপর ফুলিয়ে চাপ সৃষ্টি করি, তাহলে হয়তো রক্তপাত বন্ধ হবে”। সকালে উঠেই দেখলেন, কনডম কতটুকু পানি বা স্যালাইন ধরতে পারে। দেখা গেল ‘১ লিটার ফ্লুইড ওটার ভেতরে ঢুকিয়ে অনেক চেষ্টা করেও সেটিকে ফাটানো যায় না’।
পরদিনই হাসপাতালে তিনি প্রথম কেস পেয়ে গেলেন। ততক্ষণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণন ঠেকাতে রোগির জরায়ু কেটে ফেলার সিদ্ধান্তি নিয়ে ফেলেছে ডাক্তার।
সায়েবা আখতার বলছেন, “আমি বললাম একটু অপেক্ষা কর। সে-ই আমার প্রথম কেস, যেখানে আমরা কনডমটাকে ক্যাথেটার দিয়ে বেঁধে ওর ইউটেরাসের ভেতর ঢুকিয়ে স্যালাইন দিয়ে ফুলিয়ে দেওয়ার পর পনেরো মিনিটের মধ্যেই ব্লিডিং বন্ধ হয়ে গেল”। পুরো ব্যবস্থাটি করতে খরচ হল একশ টাকারও কম।

সেই থেকে এই মেথড বিশ্ব জুড়ে সায়েবা’স মেথড নামে পরিচিত।

আপনাকে অভিনন্দন ছোটমনি। আল্লাহ আপনাকে হায়াতে তৈয়বা দান করুন।

আপনার পদ্ধতি ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্বজুড়ে!

Facebook Comments