banner

রবিবার, ০৫ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 307 বার পঠিত

 

মোরা জোনাকি হতে চাই……৩

মোরা জোনাকি হতে চাই……৩


আফরোজা হাসান


ছবি আঁকার ফাঁকে ফাঁকে বোনের কর্মকান্ড দেখছিল আর মিটিমিটি হাসছিলো নূরি। সারাবছর বইয়ের ধারে কাছে না ঘেঁষে পরীক্ষার আগের দিন নাকে মুখে পড়ে পরীক্ষা দেবার অভ্যাস রুহির। আগামীকাল পরীক্ষা তাই স্বভাব মতো নাকে মুখে পড়ছে সে। কিছুক্ষণ টেবিলে বসে পড়ছে তো কিছুক্ষণ ঘর ভরে পায়চারী করছে আর পড়ছে। একসময় বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে পড়লো সে।

নূরি হাসতে হাসতে বলল, মাঝে মাঝে একটু বই নিয়ে বসলেই তো আর পরীক্ষার আগে এমন হয় না।

পরীক্ষার আগের দিন পড়ে পাশ করতে পারলে সারাবছর পড়ার দরকার কি? আমার জীবনের মিশন তোর মতো পণ্ডিত হওয়া না। আমি জীবনটাকে উপভোগ করতে চাই। জবাব দিলো রুহি।

পড়াশোনা না করার সাথে জীবনকে উপভোগের কি সম্পর্ক?

সম্পর্ক আছে মাই ডিয়ার লিটল সিসটার। পরীক্ষার হলে কম্পায়মান মনে ঢোকা, প্রশ্ন কমন পড়বে তো সেই টেনশন করা, রেজাল্টের আগের রাতে ঘুম বন্ধ, রেজাল্টের দিন সকালে গলা দিয়ে খাদ্য না নামা, হায়…. এসবের যে কি মজা তা কি তুই বুঝিস?

নূরি হাসতে হাসতে বলল, আল্লাহ না বোঝাক আমাকে। প্রিপারেশনের কি অবস্থা?

এখনো বুঝতে পারছি না।

কখন বুঝতে পারবে?

পরীক্ষার খাতায় সব সুন্দর মতো লিখার পর বুঝতে পারবো। আমার জন্য একটু চা-নাস্তার ব্যবস্থা করতে পারবি বুবু? পড়তে পড়তে ক্ষুধা লেগে গিয়েছে।

আমি রুমে আসার সময়ই তোমার জন্য নাস্তা নিয়ে এসেছি। পড়তে পড়তে তোমার ক্ষুধা লাগা তো নতুন কিছু না।

এজন্যই তো বলি তোর কোন তুলনা হয়না। হে আল্লাহ আমার বোনটিকে মনের মতো একটা স্বামী মিলিয়ে দিয়েন। আমীন।
বোনের দুষ্টুমি করা স্বভাব জানে নূরি তাই হেসে নিজের কাজে মন দিলো। উঠে এসে পেছন থেকে বোনকে জড়িয়ে ধরে আদর করে রুহি হেসে বলল, মাশাআল্লাহ! তোর পেইন্টিং তো অসাধারণ সুন্দর হচ্ছে রে বুবু। কিন্তু রাতের আকাশে রংধনু?

হুম! যদি আরেকটু পড়াশোনা করতেন তাহলে জানতেন যে, রংধনু যেমন সুর্যের আলোতে দেখা যায় তেমনি চাঁদের আলোতেও দেখা যাওয়া সম্ভব। যেদিন চাঁদের আলোয় আকাশ আলোকিত হয়ে যায় তখন আকাশে রংধনুর সৃষ্টি হয়। কম আলোয় আমরা দেখতে পাই না বলে সেই রংধনু দৃষ্টিগোচর হয়না। আমি কেমন ছবি আঁকতে চাইছি জানিস? চাঁদের বাসন্তি আলো, রংধনুর রঙয়ের ছটা, হাজার তারার মেলার এক আকাশের। যে ছবিটার দিকে তাকালে মনেহবে রাতচড়া পাখীরা চমকে চমকে ডেকে ফিরছে আবছায়া প্রান্তরে, কান পাতলেই বুঝি শোনা যাবে ঝিঁঝিঁর ডাক, মনেহবে ঐ তো শুকনো পাতা গড়িয়ে যাচ্ছে পাথরের বুকে।

হুমম…খুব কাব্যিক মুডে আছেন মনেহচ্ছে। এসব তো ভালো লক্ষণ না।

আমার লক্ষণ নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। আপনি ক্ষুধা নিবৃত্ত করে পাঠ্যায়নে মনোনিবেশ করুণ।

কিছুক্ষণ চুপ করে ছবি আঁকা দেখার পর রুহি বলল, আচ্ছা নূরি লক্ষ্মা ধাতু জিনিসটা কি?

হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন?

আজ সকালে ছোট মামা বললো যে আমার মধ্যে নাকি লক্ষ্মা ধাতুর যথেষ্ট ঘাতটি আছে।

নূরি হাসতে হাসতে, মামা সকালে লক্ষ্মীর উপরে একটা আর্টিকেল পড়েছে তারপর থেকে বাড়ির সবার মধ্যে লক্ষ্মা ধাতুর মাত্রা নির্ধারন করছে।

সেটা কি রকম?

লক্ষ্মী কথাটা এসেছে লক্ষ্মা ধাতু থেকে। যার অর্থ হল আলোচনা, চিহ্নীকরণ, অংকন, জ্ঞান, দর্শন। আর লক্ষ্মীর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে যে, অতি সাধারণ একটি মেয়ে যখন তার অন্তর্গত ভক্তি আর জ্ঞানের সমন্বয় ঘটিয়ে আচারনিষ্ঠ জীবনযাপনে উদ্দেপিত হয় তখনই কেবল তাকে লক্ষ্মী বলে সম্বোধন করা যায়।

কি সাংঘাতিক সংজ্ঞা।

এখানেই শেষ না বুবুজান। আরো বলা হয়েছে নারী তখনই মহিমান্বিত হতে পারে যখন তার মধ্যে সদাচার থাকে। সদাচার মানে বাঁচার আচার। যে আচার মানুষকে সুন্দর সমৃদ্ধশালী জীবনের পথ দেখায়। সদাচার এমন একটি গুণ যার ফলে নারী নিজের অজান্তেই পুরুষের জন্য কল্যাণময়ী, মঙ্গলময়ীতে পরিণত হয়। আর সদাচারবিহীন নারী মানেই পদে পদে ধ্বংস অনিবার্য।

হুমম… গাইড লাইন হিসেবে নেয়া যায় কথাগুলো তাই না?

বাঁচার যে আচার ইসলাম আমাদেরকে দেয় সেটা মেনে চললে সদাচারিণী হওয়া কোন ব্যাপারই না। আর এরজন্য বেশী বেশী জ্ঞানার্জন করা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। কারণ জ্ঞানই আমাদেরকে শেখায় কিভাবে মনের মালিক হয়ে অনুভূতি ও কল্পনার রস আস্বাদন করে জীবনকে উপভোগ করতে হয়। তাছাড়া একজন মানুষ যথার্থ মানুষ হয় অন্তরের ঐশ্বর্যের কারণে। আর মনের এই ঐশ্বর্যের নাম ধর্মীয় মূল্যবোধ।

বুঝলাম লক্ষ্মা ধাতুর ঘাতটি দূর করা যথেষ্ট কঠিন কাজ।

চলবে
পর্ব-৪

Facebook Comments