banner

রবিবার, ০৫ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 407 বার পঠিত

 

ভণ্ডামি 

ভণ্ডামি


ফাতিমা মারিয়াম


এক
রশিদ যতই চেষ্টা করছে সংসারের অভাব কাটাতে পারছে না। দিনদিন সংসারের নানান চাহিদা বেড়েই চলেছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সে। কতটুকুই বা সামাল দিতে পারে? আয় যা হয় তাতে কোনমতে খেয়ে পরে চলে। বাচ্চাদের স্কুল কোচিং এসব খরচ তার জন্য বিলাসিতা।

রশিদ গ্রামে থাকে। স্থানীয় বাজারে তার একটি মুদি দোকান আছে। দোকান ছোট…পুঁজিও কম। ফলে আয় কম। তাছাড়াও বেচা বিক্রিও সামান্য হয়। কারণ বাজারে বেশ কয়েকটা দোকান আছে। তাদের পুঁজি রশিদের চাইতে বেশি হওয়ায় তাদের দোকানেই খরিদ্দার বেশি।

দোকানের আয় বাড়ানোর জন্য রশিদের বউ মিনু পরামর্শ দেয় সমিতি থেকে ঋণ তুলে দোকানে মাল উঠাতে। সমিতি থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়ে রশিদ দোকানে মাল ওঠায়। বেচা বাড়ে……আয়ও বাড়ে।

হঠাৎ বেশি টাকা হাতে আসায় সে বেহিসাবি হয়ে যায়। তার চরিত্রের কিছুটা দোষ আগেও ছিল। এখন আরো বেড়ে গেছে। মিনুর হাতেও বেশ টাকা দেয়। আর সেও খরচ করতে থাকে। সমিতির কিস্তি নিয়মিত পরিশোধ করেনা। সমিতি তাকে নোটিশ দেয়…আগের টাকাসহ বাকী টাকা শোধ করতে।

মিনু নিরুপায় হয়ে বাবার বাড়ির এলাকার এক এনজিও থেকে টাকা নিয়ে সমিতির টাকা শোধ করে। এনজিওর প্রথম কয়েক কিস্তি নিয়মিত শোধ করে।কিছুদিন পর থেকে এনজিওর টাকা শোধেও দুজনে টাল বাহানা শুরু করে। এক কিস্তি দেয় তো দুই কিস্তি দেয় না। তারা বার বার সতর্ক করতে থাকে।

দুই…

এদিকে দোকানের পুঁজিও অনেক কমে গেছে। আরো কিছু মানুষ রশিদর কাছে টাকা পায়। এদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে টাকা ধার করেছিল। মোটকথা এখন সে ঋণের দায়ে জর্জরিত। দিনরাত মিনুর খোঁটা শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা। মিনু এখন আর অভাব সহ্য করতে পারেনা। আর কতইবা সহ্য করবে? এটা রশিদ বোঝে। আর বোঝে বলেই সে মিনুকে কিছুই বলে না। খালি দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

মিনু এবার তাকে পরামর্শ দেয় বিদেশ যাওয়ার। এলাকার কত মানুষই তো বিদেশ গিয়ে অনেক টাকা ইনকাম করেছে। এখন তাদের বেশ ভালো অবস্থা। অনেক চিন্তা ভাবনা করে আত্মীয়দের কাছে থেকে ঋণ করে, বউয়ের গয়না বিক্রি করে, গরু বিক্রি করে রশিদ প্রবাসের পথে পাড়ি জমায়।

মাথায় এত ঋণের চাপে রশিদর দিশাহারা অবস্থা। প্রবাসে গিয়েও ভালো কোন কাজ পায় নি। যা বেতন পায় তাতে নিজের এবং পরিবারের মোটামুটি চলে…… মিনু সংসার খরচের পরে খুব সামান্যই জমাতে পারে। অল্প অল্প করে ঋণ শোধ করছে।

প্রায় তিন বছর হয়ে গেছে এখনো রশিদ বাড়ি আসতে পারে নি। মিনুর কাছে ফোন করলেও শান্তি নাই। এটা সেটা কথা শোনায়। অমুক বিদেশ গেল তমুক বিদেশ গেল…তারা কত টাকা পাঠায় আর তুমি………

তিন…

রশিদ অনেকক্ষণ ধরে মিনুর নাম্বারে ফোন দিচ্ছে। কিন্তু ওকে পাচ্ছে না। লাইন বিজি দেখায়। প্রায় এক ঘণ্টা পর সে বউকে ফ্রি পেল।

-কী ব্যাপার? তুমি কার সাথে কথা কইতাছিলা? আমি অনেক সময় ধইরা তোমার লাইন বিজি দেখলাম।

-আমি? আমি তো এতক্ষণ ছোডমামার লগে কথা কইতাছিলাম!

রশিদ মিনুর সাথে কথা শেষ করে মিনুর ছোট মামাকে ফোন দিল।

-মামা মিনু কি আইজগা ফোনে আফনের লগে কতা কইসে?

-না তো বাবা আমার লগে তো মিনুর অনেকদিন দইরাই কতা অয় না।

রশিদ এবার মিনুর মাকে ফোন দিয়ে এই ঘটনা জানাল। আরো জানাল আজ অনেকদিন ধরেই সে ফোন করলে ফোন বিজি পায়। জানতে চাইলে মিনু সব সময় একেক জনের নাম বলে পার পায়। তার এতে বেশ সন্দেহ হচ্ছিল। তাই সে ছোট মামাকে ফোন করে নিশ্চিন্ত হয়েছে। মিনুর মাও বেশ অবাক হয়ে গেলেন। মেয়ে এতক্ষণ কার সাথে কথা বলে? রশিদ আরো বলে যে – মিনু প্রায়ই খুব সাজগোজ কইরা কই জানি যায়। গ্রামের দুই তিনজন আমারে এইটা জানাইছে। আপনি এর একটা বিহিত করেন।

মিনুর মা মিনুকে জিজ্ঞাসা করায় সে অস্বীকার করে বলল -সব মিছা কতা মা। পয়সা কামাইয়ের মুরোদ নাই আবার আমারে সন্দেহ করে! ও নিজে যেমন আমারেও তেমন মনে করে? তোমার মনে নাই পাঁচ বছর আগে তার চাচাতো বাইয়ের বউয়ের লগে কি কাহিনিডাই না করল! তার আরো অনেক গটনা আছে আমি অনেকগুলাই জানি। সবতো আর তোমগোরে কই না। খালি আমি দেইখ্যা হের লগে সংসার করি আর অন্য কোন মেয়ে হইলে বহুত আগেই চইল্যা যাইত। তুমি এইসব কতা বিশ্বাস করবা না মা। সে অহনো অনেক মাইয়ার লগে সম্পর্ক রাখছে। ফোনে কতা কয়।

রশিদ ভাবছে মিনুকে এই ঘটনা নিয়ে কোণঠাসা করে রাখবে।

তাসলিমার নাম্বারে ফোন দিয়ে রশিদ অপেক্ষায় আছে কখন তাসলিমা রিসিভ করবে!

রশিদ এবং মিনুর ছেলে মেয়ে দুইটা বড় হচ্ছে। তাদের এই অপরিণামদর্শী আচরণের জন্য সন্তানরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা কেউই ভাবছে না।

Facebook Comments