banner

বুধবার, ০৮ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 619 বার পঠিত

 

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার পর্ব -৬

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার পর্ব -৬


নারীর জন্য আইন


নীচের ছকে স্বামী, মাতা ও পিতার সাথে একজন ছেলের অবস্থান ও হিস্সা দেখানো হল।

ছক নং ৩.

স্বামী, মাতা ও পিতার সাথে একজন ছেলের অবস্থানের উদাহরণ: [সকলের ঐক্যমত্য অনুসারে] :

১২         ১২                    মা.        তা.             সম্পদের পরিমান ৬,০০,০০০ টাকা      স্বামী                   মাতা                          পিতা               ছেলে ১ জন                                                             অবশিষ্ট অংশ=                  =                 =                 =  =      ৩                =  ২                  =  ২                   =  ৫=  ১,৫০,০০০ টাকা = ১,০০,০০০ টাকা =১,০০,০০০ টাকা   =২,৫০,০০০ টাকা নোট: কুরআনের বিধান অনুসারে মৃতের স্বামী এক চতুর্থাংশ অনুসারে ১,৫০,০০০ টাকা, মাতা এক ষষ্টাংশ অনুসারে ১,০০,০০০ টাকা ও পিতা এক ষষ্টাংশ অনুসারে ১,০০,০০০ টাকা পাওয়ার কথা। আর অবশিষ্ট অংশে ২,৫০,০০০ টাকা ছেলে পাবে মাওলা হিসাবে। সকল ছাহাবী ও ফুকাহাগণ এ ক্ষেত্রে একমত। এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে একথা দৃঢ়তার সাথে বলা যায় যে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. এর মতামত অনুসারে কন্যা সন্তানদেরকে মাওলা গণ্য করে অবশিষ্টাংশ প্রদান করাই সঠিক সিদ্ধান্ত। কারণ কোন মেয়ের স্থলে ছেলে থাকলে সে ছেলে যতটুকু পাবে, সে মেয়ে কখনোই এর চেয়ে বেশী পেতে পারে না।

গ.  সূরা নিসার ১৭৬ নং আয়াতই প্রকৃতপক্ষে আছাবা সংক্রান্ত থিওরীর ত্র“টি নির্দেকশ। এ আয়াতে ‘ওলাদ’ বলতে শুধুমাত্র ‘পুত্র-সন্তান’ বুঝায়- এমন দাবী একটি হাস্যকর দাবী। কারণ রাসূলুল্লাহ সা. এমন কথা বলে যাননি, এমন কি কোন ছাহাবীই এমন ধরণের ব্যাখ্যা করেন নি। অর্থাৎ এ রকম ব্যাখ্যার স্বপক্ষে কোন দলীল নেই। আরবী অভিধান, ভাষার ব্যবহার ও কুরআনে ব্যবহৃত ওলাদ শব্দের ব্যাখ্যা গুলোকে বিবেচনা করলে একথা দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ওলাদ অর্থ হল সন্তান। গাণিতিক বিশ্লেষণেও প্রমাণীত হয় যে, কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে ভাইবোন কোন হিস্সার অধিকারী নন। এ সমাধান ‘ওলাদ’ শব্দের অর্থ বুঝতেও সাহায্য করে। যেমন নিম্নোক্ত ছকে দেখুন: ছক নং – ৪.  একজন কন্যার সাথে স্বামী এবং ভাই থাকলে তার সমাধান [ফুকাহাদের মতানুসারে]:                      ৪                      মা.                   সম্পদের পরিমান ৬,০০,০০০ টাকা        স্বামী                    কন্যা ১ জন                     ভাই ১ জন কিংবা একাধিক                                                                 অবশিষ্ট অংশ =      ১                             ২                                      ১ =  ১,৫০,০০০ টাকা   =  ৩,০০,০০০ টাকা                =  ১,৫০,০০০ টাকানোট: সন্তান থাকলে স্বামী এক চতুর্থাংশ পান, তাই তাকে  অংশ দেয়া হয়েছে। কন্যার সংখ্যা একজন হলে, তাদের মতানুসারে, সে পায় অংশ। কারণ তারা কন্যাদেরকে যবীল ফুরূজ বলে বিবেচনা করেন। আর ভাই পাবে অবশিষ্ট  অংশ। কারণ তারা ভাইকে ‘আছাবা’ গণ্য করে অবশিষ্ট অংশের অধিকারী বলে দাবী করেন এবং কন্যা সন্তানের সাথে সেও আছাবা হিসাবে হিস্সাদার বলে মনে করেন। এ কারণে ভাই একজন হোক অথবা একাধিক, কন্যা সন্তানের সাথে সে বা তারা অবশিষ্ট হিস্সা পাবে বলে তারা ঘোষনা করেন। এ হিসাবে ভাই একজন অথবা একাধিক হলে তারা অবশিষ্ট  অংশ পাবে। টাকার অংকে স্বামী পাবে ১,৫০,০০০/- টাকা, কন্যা পাবে ৩,০০,০০০/- টাকা এবং ভাই পাবে অবশিষ্ট ১,৫০,০০০/- টাকা।কিন্তু তাদের এ সমাধান সঠিক ও যুক্তিভিত্তিক নয়। যদি কন্যা সন্তানকে ‘ওলাদ’ বলে স্বীকার করা হয়, তাহলে স্বামীকে এক চতুর্থাংশ দেয়া সঠিক আছে কিন্তু ভাইকে কোন হিস্সা দেয়া সঠিক নয়। কারণ আল্লাহ তা’আলা বলেছেন: وَهُـوَ يَـرِثـُهَـآ اِنْ لـَمْ يَـكـُن لـَّهَـا وَلـَدٌ ‘‘এবং সে ব্যক্তিও (ভাই) তার মৃত বোনের উত্তরাধিকারী হবে, যদি তার (মৃত বোনের) কোন ‘ওলাদ’ (সন্তান) না থাকে। (সূরা নিসা- ১৭৬)।” যেহেতু কন্যাকে ‘ওলাদ’ বা সন্তান বলে স্বীকার করা হয়েছে, সুতরাং সে ‘ওলাদ’ বা সন্তানের উপস্থিতিতে ভাই কিছুই পেতে পারে না। আর যদি কন্যা সন্তানকে ‘ওলাদ’ বলে স্বীকার করা না হয়, তাহলে স্বামীকে মোট সম্পদের অর্ধেক হিস্সা দিতে হবে। কারণ আল্লাহ বলেছেন: وَلـَكـُمْ نـِصْـفُ مـَا تـَرَكَ اَزْوَاجـُكـُمْ اِنْ لـَمْ يـَكـُن لـَّهـُنَّ وَلـَدٌ فـَاِنْ كـَانَ لـَهـُنَّ وَلـَدٌ فـَلـَكـُمُ الـرُّبـُعُ مـِمـَّا تـَرَكـْنَ “তোমাদের জন্য অর্ধাংশ বরাদ্দ থাকবে যা কিছু তোমাদের স্ত্রীগণ রেখে মারা যাবে তাতে, যদি তাদের কোন ‘ওলাদ’ (সন্তান) না থাকে। তবে যদি তাদের কোন ‘ওলাদ’ (সন্তান) থাকে, তাহলে তোমরা এক চতুর্থাংশ পাবে যা কিছু তারা ছেড়ে যাবে তাতে।” (সূরা নিসা -১২)। এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, ‘ওলাদ’ বা সন্তান না থাকলে স্বামী পাবে সম্পদের অর্ধেক। কন্যা সন্তানকে যদি ‘ওলাদ’ বলে স্বীকার করা না হয়, তাহেল স্বামীকে অর্ধেক দিতে হবে। তা কুরআনের নির্দেশ। তখন স্বামী পাবে অর্ধেক আর কন্যা সন্তান তো তাদের মতানুসারে একজন হলে অর্ধেক পায়, সুতরাং বাকী অর্ধেক কন্যা নেবে।

শেষ পর্ব

কানিজ ফাতিমা ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহিত

Facebook Comments