banner

বুধবার, ০১ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 448 বার পঠিত

 

‘রাজুমার’


ইন্টারন্যাশনাল উইমেন্স


টেকনাফে এসে নিজের  স্বামীর সাথে দেখা হলেও ভাই-বোন ও মায়ের সন্ধান পাননি। নিজের সন্তানের খোঁজ মেলেনি। রাজুমার মতো এ রকম হাজারো মানুষের নিদারুণ কষ্টের বিভীষিকার কথা লিখলে সমাপ্তি টানা যাবে না। আল-জাজিরা ইংলিশ নিউজ নেটওয়ার্ক সাম্প্রতিক একজন বোনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, রোহিঙ্গা মুসলিম বোন রাজুমার জীবন থেকে নেওয়া। ২০ বছর বয়সি রাজুমা বেগম অল্প বয়সে অসংখ্য বাস্তবতার সম্মুখিন হয়েছেন। গত বছর ৩০শে আগস্ট তুলা টোলির গণহত্যা থেকে বেঁচে ফিরেছেন। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সহিংসতার সবচেয়ে নৃশংস ঘটনার স্বীকার এই বোন পালিয়ে বাঁচেন। গ্রামবাসীদের সাথে নদীর তীরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাকেও যেখানে পুরুষরা মহিলা ও শিশুদের থেকে পৃথক করা হয়। অনেককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল, তাকে কুপিয়ে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। রাজুমা তখন তার ছেলে মোহাম্মদ সাদ্দিককে নিজের হাতেই ধরে রেখেছিলেন। এরপর কিছু সৈন্য মহিলাদের দলে  দলে ভাগ করে নিয়ে গিয়েছিল জোর করে। রাজুমা কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের একটি বিদ্যালয়ে বক্তব্য রাখেন, তিনি তখন বলেছিলেন, “তারা আমাকে বাড়ির ভিতরে আরও চার মহিলার সাথে নিয়ে যায়।” “তারা আমার ছেলেকে আমার বাহু থেকে ছিটকে ফেলে দেয় [মাটিতে], আমি দেখেছি তার মধ্যে একজন বার্মিজ সৈন্য আমার শিশু পুত্রকে আগুনের দিকে ছুঁড়ে মারে, আমি শুনতে পেলাম যে সে জ্বলন্ত অবস্থায় চিৎকার করছে” “মা বাঁচাও” তিনি  আরও বলেছিলেন, আমার মাথায় সবসময় ঘুরতে থাকে সন্তানের কবর দেওয়ার আগপর্যন্ত একসূরে হাত দিয়ে ডাকা আর বিলাপের কান্না। “কেউ ‘মা’ বলে ডাক শুনলেই আমার বুকটা ফেটে যায়,” রাজুমা চিত্কার করে বলেন। “আমার একটি ছোট ভাই ছিল যার বয়স ১০ বছর। আমার তার কথা কথা ভাবলে খারাপ লাগে ,কারণ তারা তাকে ধরেছিল এবং আমি তাকে বাঁচাতে পারিনি”” রাজুমাকে তিনটি মা, এক কিশোরী মেয়ে এবং এক মহিলার সাথে যার বয়স প্রায় ৫০ বছর তাদের একটি ঘরে রাখা হয়েছিল। প্রবীণ মহিলা বাদে সৈন্যরা তাদের সবাইকে ধর্ষণ করেছিল। রাজুমাকে তার দু-তিন  ঘণ্টা ধরে দু’জন লোক অত্যাচার করেন। এরপরে, তারা মহিলাদের কাঠের লাঠি দিয়ে মারধর করতে।  তারপরে তারা মারা গেছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য তাদের উপর তিনবার মশাল জ্বালান। সৈন্যরা তাদের বাড়ির ভিতরে আটকে রেখে আগুন ধরিয়ে দেন। জলন্ত আগুনের তাপে রাজুমাকে পুনরায়  জ্ঞান ফিরে আসে করে, সে বাঁশের দেয়াল ভেঙে পালাতে সক্ষম হয়েছিলেন বলে বেঁচে যান। তিনি একদিন পাহাড়ে লুকিয়ে ছিলেন এবং ওপার থেকে বেরিয়ে আসার সময় তাঁর গ্রামের আরও তিন মহিলা ও এক অনাথের মুখোমুখি হন। রোহিঙ্গা প্রদেশ থেকে পালিয়ে পরিত্যাক্ত পোশাক পরেছিলেন। তিনি যখন সীমান্ত পেরিয়েছিলেন, তখন বাংলাদেশ সরকার তাকে কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে পৌঁছাতে সহায়তা করেন। যেখানে একটি ক্লিনিকে তাঁর চিকিত্সা দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশে মায়ানমারের সৈন্যরা গণধর্ষণ ও তার শিশু পুত্র হত্যার সাক্ষী।রাজুমা কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে পুনরায় তার স্বামীকে খুঁজে পান।

Facebook Comments