banner

রবিবার, ০৫ মে ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 352 বার পঠিত

 

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-১৩

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-১৩


আফরোজা হাসান


মাতৃত্বের গুণাবলী মেয়েরা মনেহয় জন্মের সময়ই সাথে করে নিয়ে আসে। তাই তো ছোট্ট একটা বাচ্চা মেয়েকেও দেখা যায় পরম মমতায় আদর-যত্ন করছে তার খেলনা পুতুলটাকে। শাবাবের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ভাবনাটা মনে এলো আরিফীর। শাবাবের মত অস্থির সদাচঞ্চল একটা মেয়ে হঠাৎ কেমন বদলে গিয়েছে গত কয়েকদিনে। গত দুই সপ্তাহের প্রতিটা দিন মাহাম ও শাবাব চাইল্ড হোমে এসেছে। সারাদিন বাচ্চাদের সাথে সময় কাটিয়ে রাতে বাসায় গিয়েছে। স্বাভাবিক বাচ্চাদের সাথে সময় কাটানো আর এই স্পেশ্যাল বাচ্চাগুলোর সাথে সময় কাটানোর মধ্যে অনেক পার্থক্য। কিন্তু নিজেদের আদর-ভালোবাসা-মমতার চাদরে জড়িয়ে মাহাম ও শাবাব ঠিকই বাচ্চাদের মনে স্থান করে নিয়েছে।

শাবাব তো আরিফীকে নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে দেশে ফিরে পরীক্ষা শেষ হলেই আবার চলে আসবে এখানে। এই বাচ্চাগুলোর সেবায় আত্মনিয়োগ করতে চায় সে। আরিফী শাবাবকে এত সিরিয়াস হতে কোনদিন দেখেনি। অবশ্য শাবাব সিরিয়াস হতে পারে এই ধারণাই ছিল না তার। একটা বাচ্চাকে হেঁটে হেঁটে ঘুম পারাচ্ছে শাবাব। চেহারা দেখে মনেহচ্ছে গভীর কোন চিন্তায় মগ্ন। এগিয়ে গেলো আরিফী। শাবাবের কাঁধে হাত রেখে বলল, ঘুমিয়ে গিয়েছে শুইয়ে দাও। বাচ্চাটাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বাইরে বেড়িয়ে এলো দু’জন। এত চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন তোমাকে? জানতে চাইলো আরিফী।

শাবাব জবাব দিলো, নিজের সন্তান হলে মেয়েরা খুব স্বার্থপর টাইপ হয়ে যায় সেটা কি তুমি জানো?

হুম…শুনেছি। কিছু অবশ্য দেখেছিও।

আমিও এমনটা হতে দেখেছি। আমাদের এক ক্লাস ফ্রেন্ডের বোন বাচ্চা হবার সময় মারা গিয়েছিলো। এরপর বোনের স্বামীর সাথে ওর বিয়ে হয়েছে। অনেক আদর করতো বোনের বাচ্চাটিকে। কিন্তু নিজে কনসিভ করার পর বাচ্চাটিকে ওর নানীর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। কারণ বাচ্চার খেয়াল রাখতে গেলে নিজের শরীরের যত্ন নিতে পারবে না ঠিকমত। যদি ঐ বাচ্চাটি ওর নিজের হতো তাহলে কি এই কাজ করতো? কখনোই না। আমি তাই ঠিক করেছি আমরা কখনই বাবু নেবো না।

হাসি চাপলো আরিফী। এর সাথে আমাদের বাবু নেবার কি সম্পর্ক? জানতে চাইলো।

শাবাব বলল, নিজের বাবু হলে আমিও যদি স্বার্থপর হয়ে যাই তাহলে? তখন যদি আর আমার এই বাবুগুলোর কাছে আসতে ইচ্ছে না করে?

তুমি এভাবে চিন্তা করছো কেন শাবাব?

কারণ এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক। মাতৃত্ব মেয়েদের সবচেয়ে স্পর্শকাতর জায়গা। মেয়েদের কাছে তাই নিজের সন্তান সবচেয়ে বেশি স্পেশ্যাল। নিজের সন্তানকে দুনিয়ার সব দুঃখ-কষ্ট থেকে আগলে রাখতে চায় সবসময়।

এই ব্যাপারে আমি তোমার সাথে একমত না হয়ে পারছি না। শুধু দুঃখ-কষ্ট কেন কিছু কিছু মা আছেন যারা তাদের কন্যাদের তাদের স্বামীদের কাছ থেকেও আগলে রাখেন।
শাবাব চোখ বড় বড় করে বলল, খবরদার আমার মামণিকে মিন করে কিছু বলবে না।

আরিফী হেসে বলল, না বলে কোন উপায় আছে? চাচী যেভাবে তোমাদের দুবোনকে পাহাড়া দেন, অবিবাহিত মেয়েদেরকেও এভাবে পাহাড়া দেয় কিনা কোন মা সন্দেহ। সুতরাং চাইলেও আমরা কখনো বাবু নিতে পারবো কিনা সেটা একমাত্র আল্লাহ জানেন। কেননা শ্বাশুড়ি আম্মা তো সীসা ঢালা প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আমাদের মাঝে। আমি লেখক হলে ‘শ্বাশুড়ি যখন ভিলেন’ শিরোনামে একটা গল্প লিখে ফেলতাম।

আরিফীকে মেরে শাবাব বলল, অনেক খারাপ কথা বলা শিখেছো তুমি। আমার মামণি যা করে ঠিকই করে। এমন খারাপ ছেলের কাছে আসতে দেবে কেন আমাকে? যাও বসবোই না তোমার কাছে। শাবাব উঠে হাঁটতে শুরু করলে। আরিফীও হাসতে হাসতে পিছু নিলো।

চলবে…
পর্ব-১২

Facebook Comments